Khatarnak Isq Part-09

0
1856

#Khatarnak_Isq.[Impossible Love]
#Sumaiya_Moni.
#Part_09.
_______________________
রাতে….

আলফি ইয়ানের সাথে সময় কাটিয়ে রুমে ফিরে আসে।গেট লক করে পিছনে ফিরতেই বিছানার আয়েস করে শুয়ে থাকতে দেখে এলেনকে। এলেনকে দেখে আলফি সকড না হবে দু হাত বগলদাবা করে দাঁড়ায়। এলেন ওর হাতের ফোনটা পকেটে রেখে ওঠে দাঁড়িয়ে সুইট স্মাইল দিয়ে বলে,
-“কী সকড হও নি?”

আলফি মাথা আস্তে করে এপাশ,ওপাশ দুলায়। যার উত্তর ‘না’।

-“তাহলে?”

-“তাহলে,গেট আউট!”

-“হেই তুমি আমাকে ঘর থেকে বের হয়ে যেতে বলছো? জানো তুমি আমি কে?”

-“অবশ্যই জানি!”

-“বলো তাহলে?”

-“ঘাটিয়া,রক্তচোষা হিংস্র ভ্যাম্পায়ার।”

-“আরো একটি আছে?”

-“কী?”

এলেন চট করে বিছানা থেকে নিচে নেমে আলফির দিকে দু তিন কদমে এগিয়ে আসছে। আলফি স্ট্যাচুর মতো সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে। এলেন আলফির কাছে এসে চেহারার সামনে ঝুঁকে বলে,
-“লাভার বয়!”

আলফি বিরক্তিকর আচরণ করে। বিরক্ত ভাব নিয়েই বলে,
-“মোটেও মানাচ্ছে না।”

-“মানিয়ে দেখাই?” কথাটা বলে নিচের ঠোঁট কামড় দিয়ে ধরে এলেন।

-“আপনি যে একটা বেহায়া,সেটা নিশ্চয়ই জানেন?”

-“হুম! বাট তোমার কাছে বেহায়া হলে সমস্যা নেই।”

-“বের হয়ে যান রুম থেকে।”গেটের দিকে ইশারা করে বলে আলফি।

এলেন গম্ভীর একটা মুড নিয়ে জ্যাকেটের চেইন খুলে চট করে আলফির কোমড় পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে। আলফি অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে এলেনের দিকে। এলেন আলফির চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে। আলফি চোখের পলক ফেলে কপাল কুঁচকে তাকায়। কী আছে ঐ চোখে? আমি কেন হারিয়ে যাচ্ছি? চোখ ফেরানো মুশকিল হয়ে পড়েছে আলফির। এলেন আলফির চোখের দিকে তাকিয়ে নরম কন্ঠে বলে,
-“জানি না কী হয়েছে? তোমার সাথে দেখা হবার পর থেকে আমি নিজেকে গুছিয়ে নিয়েছি। এই এলেন মানুষের রক্ত খেতো। যখনি নেশা জাগত!
কিন্তু তোমাকে দেখার পর এই এলেন পুরো চেঞ্জ হয়ে গেছে। নিজেকে কন্ট্রোল করতে শিখেছি। ভালোবাসা কী বুঝেছি। তোমার কাছে আসলে জানি না কী হয় আমার।”

আলফি কথা গুলো শুনে এলেনের চোখের দিক থেকে নজর সরাতে পারছে না। এলেন আলফির দিকে তাকিয়ে থাকার এক পর্যায়ে ফিক করে হেসে দেয়। আলফির কপালে ভাজ পড়ে। এলেন হাসতে হাসতে আলফিকে ছেড়ে দেয়।

আলফির রাগ হচ্ছে এখন। কিছু বলতেও পারছে না। সহ্য করতে হচ্ছে মুখ বুঁজে। এলেন হাসি থামিয়ে বলে,
-“তুমি মনে করেছো আমি এগুলা বলবো? উঁহু! যে কোনো মানুষের রক্ত খেতে পারি আমি। তোমারটাও….।” বলেই এলেন ঝড়েরবেগে আলফিকে পিছন দিক ঘুরিয়ে ধরে।

এলেনের চোখ লাল বর্ন ধারণ করে। সামনের দাঁত দুটি বড় হয়ে যায়। আলফি নিজেকে এত জোর দিয়ে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে না। দেখার পালা এলেন কী করে। আগের মতো এলেন আলফির ঘাড়ে যতবার কামড় দিতে যায় ততবার ফিরে আসে। এবারও কোনো শক্তি এলেনকে বাঁধা দিচ্ছে। এলেনের মাথায় রাগ চটে বসে। এত চেষ্টা করার পরও আলফির ঘাড়ে কামড় বসাতে পারেনি। এলেন রাগের বশে আলফির হাত ধরে টেনে বিছানার উপর ছুঁড়ে মারে।আলফি বিছানার উপর উপুর হয়ে পড়ে। এলেন আগের রূপে ফিরে এসে বারান্দা থেকে চলে যেতে নিলে বলে যায়,
-“যা বলেছিলাম সব সত্যি ছিল। বাট……।”

বাকিটা না বলেই বাতাসের বেগে উধাও হয়ে যায়।আলফি ওঠে বসে বারান্দায় এসে দেখে এলেন নেই। আলফি নিজের রূপ পরিবর্তন করতেই পিছন থেকে দুটি সাদা রঙের পাখা বেরিয়ে আসে। উড়ে যায় আকাশে। এলেনকে খুঁজতে থাকে। আলফি জঙ্গলের ভেতরে প্রবেশ করে অদৃশ্য হয়ে যায়। নিচে নেমে আসতেই আলফি এলেনকে খুঁজে পায়।।ওর সাথে এরোনও ছিল। এলেন একটি বাদুড়কে ধরে তার রক্ত চুষে খাচ্ছিল। খাওয়া শেষে বাদুড়টিকে দূরে ছুঁড়ে মেরে উপরের দিকে তাকিয়ে জোরে চিৎকার দেয়। চিৎকারের শব্দ সারা জঙ্গল ছড়িয়ে পড়ে।

-“এলেন! শান্ত হ দোস্ত।”

এলেন জোরে জোরে নিশ্বাস ফেলে আগের রূপে ফিরে আসতে আরম্ভ করে। স্বাভাবিক রূপে ফিরে আসে। এরোন এলেনের কাঁধে হাত রেখে বলে,
-“কী হয়েছে দোস্ত! এগুলো কী? তুই মানুষের রক্ত ছেড়ে পশুপাখি দের রক্ত খাচ্ছিস কেন?”

এলেন উত্তেজিত কন্ঠে বলে,
-“বুঝতে পারছি না কী হয়েছে আমার। যখন থেকে আমার মুলাকাত আলফির সাথে হয়েছে…পুরো চেঞ্জ হয়ে গেছি। কেন? কী কারনে এমটা হচ্ছে। আই ডোন্ট নো!”

এরোন চুপ করে এলেনের কথা শুনছে। এলেন আরো বলে,
-“আজকেও আমি চেষ্টা করেছি আলফির রক্ত খাওয়ার। পারিনি! আলফি কে? কেন আমি অন্য মানুষের মতো ওর রক্ত খেতে পারছি না…..।”

-“আলফি কী তাহলে শাহাজাদী কায়রা? ”

-“জানি না।”

কিছুক্ষণ চুপ করে রয় দু জনেই। তারপর এরোন এলেনের পাশে এসে বলে,
-“তুই কী আলফিকে ভালোবাসিস? ”

এলেন কেনো উত্তর দেয় না। চলে যায় সেখান থেকে। এরোনও চলে আসে। আলফি আড়াল থেকে বের হয়। ওদের কথোপকথন সব শুনেছে। আলফি এলেনের এমন ব্যবহার দেখে আশ্চর্য!
ওর জন্য কিভাবে এমন পরিবর্তন হলো আলফি নিজেও ভেবে পাচ্ছে না। জ্বীন রাজ্যে যাওয়া দরকার। আলফি উড়ে যায় আকাশে। জ্বীন রাজ্যে চলে আসে। কিছুক্ষণ রাজ কোষাগারে থেকে চলে আসে বাসায়। সকালে আগের ন্যায় কলেজে আসে।
গাড়ি থেকে নামতেই মাঠে ছাত্র-ছাত্রী দের ভীড় দেখতে পায়। আলফি অবাক হয়। সেখানে এনা,লিনা,ম্যারি,জন,জি-তাও দাঁড়িয়ে ছিল। এনা ভয়ে জনের হাত ধরে রেখেছে। আলফি দ্রুত পায়ে হেঁটে ওদের কাছে আসে। জিজ্ঞেস করে,
-“কী হয়েছে? ভীড় কেন?”

-“দেখে আয়।” লিনা বলে।

আলফি কিছু বলে না। ভীড় ঠেলে ভেতরে গিয়ে দেখে একটি মেয়ে মাটিতে উপুড় হয়ে পড়ে আছে। সম্ভবত মৃত। আলফির নজর পড়ে মেয়েটির ঘাড়ের দিকে। যেটা দেখে আলফির বুঝতে দেরি হয় না মেয়েটি কিভাবে মারা গেছে। রাগে আলফি স্ট্যাচুর মতো দাঁড়িয়ে আছে। চোখ বন্ধ করে এলেন কোথায় আছে বুঝার ট্রাই করে। আলফি ওর শক্তি প্রয়োগ করে বুঝতে পারে এলেন কোথায় আছে। কলেজের বাস্কেট বল খেলাঘরে। আলফি ওদের কিছু না বলেই দ্রুত সেখানে আসে। এসে দেখে এলেন একা একা বাস্কেট বল খেলছে। আলফি এলেনের সামনে এসে হাত থেকে বল নিয়ে ছুঁড়ে অন্য পাশে ফেলে দেয়। তারপর এলেনের বুকের উপর দু হাত দিয়ে ধাক্কা মেরে বলে,
-“আপনাদের ভ্যাম্পায়ারের লোকরা ঔ মেয়েটিকে মেরেছে। আর কত দিন? আর কত দিন আপনারা এভাবে নিরীহ মানুষের রক্ত খেয়ে বেঁচে থাকতে চান? তাঁদেরও তো বেঁচে থাকার অধিকার আছে। আছে তাঁদের হাজারো স্বপ্ন। একটি জীবনের মূল্য অনেক বেশি! যেটা আপনাদের মতো রাক্ষস ভ্যাম্পায়ার রা বুঝবে নাহ!” লাস্টের কথাটা চিল্লিয়ে বলে আলফি।

এলেন চুপ করে ঘাড় নিচের দিকে নামিয়ে আলফির কথা গুলো শুনছিল। আলফি আরো বলে,
-“আপনাদের হার্ট নেই। নেই মমতা মাখা হৃদয়। আছে শুধু পাথর দিল। যেটা দিয়ে পারেন শুধু মানুষের রক্ত খেতে। প্রিয় মানুষটিকে কেঁড়ে নিতে। ঐ মৃত মেয়েটি কারো মেয়ে,কারো বোন,কারো ভালোবাসার মানুষ ছিল। যদি জানতে পারে সে এখন আর দুনিয়াতে নেই। তখন কী সিচুয়েশন দাঁড়াবে ভাবতে পারছেন? বুঝতে পারছেন তাঁদের কী হবে? অবশ্য! বুঝবেন কী করে। আপনাদের তো…….!”

আলফি আর কিছু বলতে চায় না। ঘৃণা লাগছে ভ্যাম্পায়ারদের উপর। দ্রুত চলে আসে বাহিরে। আলফি চলে যাওয়ার পর এরোন এলেনের পাশে এসে দাঁড়িয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে বলে,
-“এলেন কাজটা কিন্তু স্যামের ছিল। তবে, আলফি ঠিক বলেছে। আমি আগে থেকেই তোকে এসব বিষয় বলেছিলাম। কিন্তু তুই আমার কথা শুনিসনি। তোর জন্য আমিও অনেক নিরীহ মানুষকে মেরেছি। তাঁদের কাছ থেকে তাঁর প্রিয় মানুষটিকে কেঁড়ে নিয়েছে।” এতটুকু বলে এরোন থেমে যায়। দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবার বলে,
-“দোস্ত,চাইলেই তুই সব কিছু বদলাতে পারিস। কত বছর ধরে এই জ্বীনদের সাথে আমাদের যুদ্ধ চলছে। এগুলো আটকাতে পারিস। দোষটা কিন্তু আমাদের ছিল। সব জানা আছে তোর। আগামীতে তুই হবি আমাদের কিং..। এবার একটু ভাব। তোর হাতেই এখন সব কিছু।”

বলে এরোনও চলে যায়। এলেন একা দাঁড়িয়ে থাকে।
.
ক্যান্টিনে ওরা সবাই এক সাথে বসে আছে। সবার মন খারাপ। কলেজে এমন একটা ঘটনা ঘটবে এটা সবার ধারনার বাহিরে ছিল। পাঁচদিন কলেজ বন্ধ থাকবে। ছাত্র-ছাত্রীদের মনের মধ্যে ভয় ডুকে গেছে। তাই প্রিন্সিপাল স্যার এই আদেশ দিয়েছে। সবাই মুখ ভার করে বসে আছে। আলফি ওঠতে লিনে এনা বলে,
-“কোথায় যাচ্ছিস?”

-“বাসায় যাচ্ছি।”

-“কেন? আরেকটু বোস।”

-“নাহ! ভালো লাগছে না।” বলেই আর কথা না বাড়িয়ে চলে যায়।
.
.
-“কিং আর জ্বীন রাজ্যের শাহজাদী কায়রাকে আমি আমার হাতের মুঠোয় আনতে চাই। কিন্তু তার জন্য তোমাদের সাহায্য প্রযোজন।” স্যাম নেকড়ে দের বলে কথা গুলো।

নেকড়ে মানবরা সবাই জড়ো হয়েছে স্যামের সামনে। সবাইকে স্যাম তাঁর নির্দেশ পালন করতে বলে। নেকড়েদের বাধ্য করায় তার আদেশ পালন করার জন্য।

-“এখন থেকে মানুষের মাংস খেয়ে নিজেদের খুদা মিটাবে। ভ্যাম্পায়ার, জ্বীনদের সাথে লড়াই করবে। নিজেদের বল শক্তি তাঁদের দেখাবে। দেখাবে তাদের চেয়ে তোমরাও কম শক্তিশালী নও। ”

সবাই স্যামের কথায় সায় দেয়। স্যাম নেকড়েদের আরো অনেক কিছু বলে উসকাতে থাকে। নেকড়ে রা স্যামের কথা মেনে নেয়।
.
.
-“ইয়ান,কি করবো বুঝতে পারছি না। দিন দিন অনেক মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। শুধু মাত্র ভ্যাম্পায়ারদের কারণে।” আলফি উত্তেজিত কন্ঠে কথাটা বলে।

-“জানি,তবে কিছু একটা করতে হবে আমাদের। ”

-“কী করবো ভেবে পাচ্ছি না।”

-“নিজেকে শান্ত করো। মাথা গরম করলে হবে না।”

-“কিভাবে করবো? মাঝে মাঝে মন চায় ভ্যাম্পায়ার কিংডমে গিয়ে সব ভ্যাম্পায়ারদের মেরে দেই।”

-“এটা সম্ভব না আলফি। ভুলে যেও না। কিং ও আরলেন অনেক শক্তিশালী।” জিনান কথাটা বলতে বলতে ড্রইংরুমে আসেন।

-“চাচ্চু ঠিক বলেছে। তোমার একার পক্ষে তাদের সাথে লড়াই করা সম্ভব না।”

-“তাহলে কী করবো মামা। ওরা নিরীহ মানুষকে……।”

-“জানি! বলতে হবে না। যাহ করার আস্তে ধীরে করতে হবে। কিং কে মারার আগে আরলেনকে মারতে হবে। আরলেনকে মারবে তুমি আলফি।”

কথাটা শুনে কেন জানি আলফির মনের মধ্যে ধুক করে ওঠে। আলফি হ্যাঁ,না কিছু বলে না। চুপ করে বসে থাকে।

-“আলফি! আমি কি বলেছি শুনেছো?”

-“হ্যাঁ! মামা শুনেছি।”

-“আজ থেকে মিশন চালু করে দেও। যে ভাবেই হোক আরলেন কে মারতেই হবে। তাহলেই কিংয়ের অর্ধেক শক্তি কমে যাবে।”

আলফি এবারও জিনানের কথায় কিছু বলে না। চুপ করে রয়।

-“আলফি….।”

-“মামা আমি বুঝতে পেরেছি। আর বলার দরকার নেই।” কথাটা বলে আলফি উপরে চলে আসে।

ইয়ান,জিনানা তারা তাদের মধ্যে কথপোকথন চালিয়ে যায়।

আলফি বারান্দায় এসে দাঁড়ায়। আজ থেকে এলেনের সাথে প্রথম দেখা হবার মুহূর্ত গুলো ভাবতে থাকে আলফি।ভাবতে ভাবতে হারিয়ে যায় অন্য জগতে। সেখানে শুধু এলেনের বিচরণ।
.
.
রাতে…

নেকড়েদের সাথে নিয়ে স্যাম তার শিকারে বের হয়েছে। জঙ্গল থেকে একটু দূরে একটি চৌচালা ঘর ছিল। সেখানে চারজন দাম্পত্যি বসবাস করতো। স্যাম সেই বাড়িতে গিয়ে হামলা করে। প্রথমে স্যাম তাঁদের রক্ত চুষে খেয়ে নেয়। তারপর নেকড়ে রা তাঁদের শরীরের মাংস ছিঁড়ে ছিঁড়ে খেতে থাকে। বাসাটি জঙ্গলের ভেতরে থাকায় তাঁদের কষ্টের আর্তচিৎকার কারো কান অব্ধি পৌঁছায়নি। সারা জঙ্গল ছড়িয় পড়ে তাঁদের আর্তচিৎকার। কিছুক্ষণ পর সব স্বাভাবিক হয়ে যায়। বুঝা যাচ্ছে তারা আর বেঁচে নেই। নেই তাঁদের নিথর দেহ খানা।
.
.
.
.
.
.
Continue To……..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে