#আছো_তুমি_হৃদয়জুড়ে
#পর্ব_৭
#জাফিরাহ_জারিন
খাটের উপর বসে পা দোলাচ্ছে মিহি।এখন তার হাতে কোনো কাজ নেই।সব কাজ শেষ।রিশান খাটে বসে খেলছে।রিদিম সোফায় বসে ল্যাপটপে কাজ করছে।মিহিকে দেখে বোঝা যাচ্ছে যে সে বোরিং ফিল করছে।তাই রিদিম বললো,
“শপিং এ যাবে??”
“ভাল্লাগে শপিং করতে।”
“শপিং করা লাগবে না।এমনি ঘুরে আসি চলো।”
“হুম।যাওয়া যায়।বাসায় বসে বোরিং লাগছে।”
“ওকে রেডি হয়ে নাও।”
এরপর মিহি রিশানকে রেডি করে নিজেও রেডি হয়ে নিলো।রিদিমও রেডি হয়ে গাড়ি বের করলো।এরপর তারা তিনজন মিলে শপিং এ গেলো।হঠাৎ করেই মিহি গাড়ি থামাতে বললো।রিদিম গাড়ি থামালো।
“কি হলো??এভাবে গাড়ি থামাতে বললে যে??”
“ওই দেখুন ফুচকা।চলুন ফুচকা খাবো।অনেকদিন খাই নি।”
রিদিম গাড়ি ঘুরিয়ে ফুচকাওয়ালার কাছে নিয়ে গেল।মিহি সাথে সাথে গাড়ি থেকে নেমে গিয়ে ফুচকার অর্ডার দিলো।
ফুচকাওয়ালা মিহির কথামত এক প্লেট ফুচকা বানিয়ে দিলো।ফুচকার প্রতি মিহিকে এত উৎসাহিত হতে দেখে রিদিমের মাথায় একটা দুষ্টু বুদ্ধি এলো।রিদিম রিশানের কাছে গিয়ে রিশানের কানে কানে কিছু একটা বললো।নিজের বাবার কথা শুনে রিশান মুখ টিপে হাসলো।রিদিম এবং রিশান দুইজনের মুখেই শয়তানি হাসি।রিশান মিহিকে বললো,
“মাম্মাম আমার শার্টের বোতাম খুলে গেছে।লাগিয়ে দাও।”
রিশানের কথা শুনে মিহি ফুচকার প্লেট রেখে রিশানের কাছে গেলো।রিশানের শার্টের বোতাম লাগিয়ে আবার ফুচকার কাছে এলো।কিন্তু প্লেট হাতে নিয়ে মিহি অবাক।তার প্লেটে তো ১০টা ফুচকা ছিল।এখন ৯টা ফুচকা। মিহি ফুচকা খেতে যাবে তখনই রিশান ডাকলো,
“মাম্মাম!!”
“কি হয়েছে আব্বু??”
“জুতো খুলে গেছে।পড়িয়ে দাও।”
মিহি আবারও প্লেট রেখে রিশানের কাছে গিয়ে তার জুতা ঠিক করে দিলো।এবারও মিহি প্লেট হাতে নিয়ে অবাক।প্লেটে আরও একটা ফুচকা কমে গেছে।আগে ছিল ৯টি ফুচকা এখন আছে ৮টি ফুচকা। মিহি তার ডানদিকে তাকিয়ে দেখলো রিদিম হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছে।মিহি একবার বাম দিকে তাকালো।দেখলো রিশান মুখে হাত দিয়ে হাসছে।মিহি এতক্ষণে বুঝতে পারলো যে রিশান আর রিদিম দুজন মিলে ওর সাথে মজা করছে।রিশান মিহিকে ডাকছে।মিহি যখনই তার কাছে যাচ্ছে রিদিম একটা করে ফুচকা খেয়ে নিচ্ছে।মিহি রাগিভাবে রিদিমের দিকে তাকালো।
“প্ল্যানটা আপনার ছিল তাই না??”
“কিসের প্ল্যান?? আমি তো কোনো প্ল্যানই করি নি।”
“আমার সাথে মজা হচ্ছে??”
“না না।আমার ঘাড়ে কয়টা মাথা যে তোমার সাথে মজা করব??”
“ঠিক হচ্ছে না কিন্তু।”
রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বললো মিহি।
“আরে রাগ করছো কেন??আমরা তো জাস্ট মজা করছিলাম।”
“হুহ!!!”
“পাপা!!”
“ইয়েস রিশান।”
“ওই দেখো প্লে গ্রাউন্ড। আমি ওখানে গিয়ে খেলি??”
“ওকে আব্বু।সাবধানে যাও।”
এরপর রিশান প্লে গ্রাউন্ডে গিয়ে খেলতে লাগলো।আর রিদিম আর মিহি ঘুরতে লাগলো।হঠাৎ কারোর ডাক শুনে পিছে ঘুরে তাকায় রিদিম।কিন্তু পিছে ঘুরে থমকে যায় সে।রিদিমকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মিহিও পিছে ঘুরলো।যাকে দেখলো মিহিও অবাক হয়ে গেলো।কারণ তাদের সামনে নিয়া দাঁড়িয়ে আছে।
“কেমন আছো রিদিম??”
নিয়া মুখে বাকা হাসি নিয়ে জিজ্ঞাসা করলো।
“ভালোই আছি।অনেক বেশি ভালো আছি।”
শান্ত স্বরে উত্তর দিল রিদিম।
“তুমি কেমন আছো”
“অনেক অনেক ভালো।জানো আমার বর্তমান স্বামী কতটা আরামে রেখেছে আমাকে!!আমাকে বাসার কোনো কাজই করতে হয় না।বাসায় ৪ জন কাজের লোক আছে।আমি সারাদিন যা খুশি তাই করতে পারি।”
“আর কিছু বলবে??”
“আর কিছু বললে সহ্য হবে তো তোমার??”
“এতক্ষণ যখন সহ্য করেছি তখন বাকিটাও সহ্য করতে পারবো।”
“বাদ দাও।আমার যা দরকার ছিল তা কোনোদিনও তুমি আমাকে দিতে পারতে না।তাই বাই বাই।”
“গুড বাই।আর আমিও অনেক ভালো আছি।”
রিদিম আর সেখানে দাঁড়ালো না।মিহিকে নিয়ে চলে এলো।এরপর প্লে গ্রাউন্ড থেকে রিশানকে নিয়ে চলে এলো বাসায়।
_____________________________________
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল আচড়াচ্ছে মিহি।হঠাৎ করেই তার নিয়ার কথা মনে পড়লো।মিহি একা একাই বলতে লাগলো,
“মিস নিয়া!!!যদি আপনার এত আরামেই থাকার দরকার তাহলে বিয়ে কেন করলেন??চিরকুমারী হয়েই তো থাকতে পারতেন।তাই না??এহ!!তার সোয়ামী তাকে কত্ত ভালো রেখেছে।এই শোন তুই খালি ওই আরামটাই পাচ্ছিস।রিদিম তোকে যেই ভালোবাসাটা দিয়েছে সেটা অন্য কেউ তোকে দিতে পারবে না।”
কিছুক্ষণ থেমে আবার বলতে শুরু করলো সে,
“আর এই যে মিস্টার রিদিম।আপনার লজ্জা করে না নিজের বউকে সাথে রেখে নিজের প্রাক্তনের সাথে কথা বলতে??কি এটিটিউড!! আপনাকে তো এই অপরাধে জেলে দেওয়া উচিৎ। আর……”
মিহি আর কিছু বলবে তার আগেই মিহির মুখ বন্ধ হয়ে গেল।কারণ রিদিম দরজার সাথে হেলান দিয়ে বুকে হাতগুজে দাঁড়িয়ে আছে।
“কি হলো থামলে কেন??বলো।আমি শুনছি।বলো বলো।”
“না মা..মানে ওই আরকি!!”
রিদিম ধীরে ধীরে মিহির দিকে এগিয়ে এলো।রিদিমকে কাছে আসতে দেখে মিহি একটা ঢোক গিললো।এখন কি হবে আল্লাহই জানে।রিদিম মিহির কাছে এসে মিহিকে পিছে থেকে জড়িয়ে ধরলো।রিদিম মিহির কাধে নিজের থুতনি রেখে বলতে শুরু করলো,
“আমি খুব খারাপ তাই না??”
“না।”
“আমার অনেক এটিটিউড। তাইনা??”
“উহুম।”
“এতক্ষণ তো এগুলোই বলছিলে।আমাকে তো জেলে দেওয়া উচিৎ। ”
“না মানে…”
“তো মেডাম আমি খারাপ হই আর ভালো হই।রাগী হই আর বদমেজাজি হই।এটিটিউড থাকুক আর না থাকুক।যেরকমই হই না কেনো আফটার অল হাজবেন্ড তো তোমারই।তাইনা??”
“হুম।”
“ভালোবাসি।”
“আমিও”
——————-সমাপ্ত——————–
আছো তুমি হৃদয়জুড়ে পর্ব-০৭ এবং শেষ পর্ব
আছো তুমি হৃদয়জুড়ে পর্ব-০৬
#আছো_তুমি_হৃদয়জুড়ে
#পর্ব_৬
#জাফিরাহ_জারিন
দরজা খুলে দেওয়ার সাথে সাথেই রিদিমের চোখ আটকে গেল মিহিতে।শাড়িতে অপরূপ লাগছে তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা এই নারীকে।রিদিম যেন সম্মোহিত হয়ে গেছে।সে নড়াচড়া করতেও ভুলে গেছে।
“কি হলো ভিতরে আসুন।”
মিহির কথা শুনে ধ্যান ভাঙলো রিদিমের।রিদিম ঘরে ঢুকে সোজা ফ্রেশ হতে চলে গেল।মিহি টেবিলে খাবার সাজাতে লাগলো।রিদিম ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে মিহি টেবিলে খাবার সাজাচ্ছে।
“তুমি খাও নি??”
রিদিম মিহিকে জিজ্ঞাসা করলো।
“না।আপনার জন্য বসে ছিলাম।”
“আমি কি বলেছিলাম বসে থাকতে??”
“রাত ১১:৩০ বাজে।এই সময় আপনার সাথে ঝগড়া করার কোনো ইচ্ছে নেই।চুপচাপ খেতে বসুন।”
রিদিম আর কোনো কথা না বাড়িয়ে খেতে বসলো।কিন্তু আজ যেন রিদিমের গলা দিয়ে খাবার নামছে না।কারণ রিদিম তো মিহিতে আটকে আছে।রিদিম হাজার চেষ্টা করেও মিহির দিক থেকে চোখ ফেরাতে পারছে না।মিহি খেয়াল করলো রিদিম খাওয়া বাদ দিয়ে বসে আছে।মিহি জিজ্ঞাসা করলো রিদিমকে,
“কি হলো খাচ্ছেন না যে??”
“কোথায়??আমি তো খাচ্ছিই।”
রিদিম মিহির কথাকে পাশ কাটিয়ে গেল।মিহিও প্রতিউত্তরে কিছু বললো না।রিদিম খাওয়া শেষ করে ছাদে চলে গেল।মিহি খাবারগুলো গুছিয়ে রেখে রুমে চলে এলো।
ড্রেসিংটেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে নিজের হাতের চুড়িগুলো এক এক করে খুলছে মিহি।মিহির মনে আজ বিষন্নতার মেঘ বিরাজ করছে।এত সুন্দর করে সাজলো সে।তবুও কি রিদিমের চোখে পড়লো না।রিদিম কি একবারও বলতে পারতো না যে,
“মিহি আজ তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে।”
এরকমটা বললে কি খুব ক্ষতি হয়ে যেতো??হঠাৎ করেই রুমের লাইট অফ হয়ে গেল।কারেন্ট চলে গেছে।বাহিরে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে।এর মধ্যে রিদিম ছাদে গিয়েছে।সত্যি মিহি বুঝতে পারে না এই মানুষটাকে। হঠাৎ পেটে কারোর হাতের ঠান্ডা স্পর্শ পেতেই শিউরে উঠে মিহি।সামনে আয়নার দিকে তাকাতেই বাহিরে থেকে আসা আবছা আলোয় মিহি বুঝতে পারলো যে তার পিছনে রিদিম দাঁড়িয়ে আছে।রিদিম এভাবে জড়িয়ে ধরায় মিহি যেন বরফের মত জমে গেছে।রিদিমের উষ্ণ নিঃশ্বাস মিহির ঘাড়ে পড়ছে।মিহি একদম স্ট্যাচু হয়ে গেছে।সবকিছু কেমন যেন এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।রিদিম মিহির ঘাড়ে ছোট্ট করে একটা চুমু খেলো।কেঁপে উঠলো মিহি।রিদিম মিহিকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিল।মিহি চোখ বন্ধ করে রেখেছে।রিদিম মিহির মুখটা কাছে নিয়ে এলো।মিহি চোখমুখ খিঁচে বন্ধ করে রেখেছে।রিদিম মিহির ঠোটজোড়া নিজের আয়ত্তে নিয়ে নিলো।রিদিম যেন মিহিতে হারিয়ে গেছে। রিদিম মিহিকে কোলে তুলে নিলো।আজ রাতটা নাহয় তাদের দুজনের ভালোবাসায় পূর্ণতা পাক।
______________________________________
জানালার পর্দা ভেদ করে সূর্যের মিষ্টি আলো মুখে এসে পড়তেই ঘুম ভেঙে গেলো মিহির।আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসলো সে।পাশে ফিরে একবার ঘুমন্ত রিদিমের দিকে তাকালো সে।ঘুমন্ত অবস্থায় কতটা মায়াবি লাগছে তাকে।কাল রাতের কথা মাথায় আসতেই লজ্জায় কুঁকড়ে যাচ্ছে সে।ধীরে ধীরে মিহি উঠে গিয়ে ওয়াশরুমে গেল।এরপর সে গোসল করে ফ্রেশ হয়ে বের হলো।বেরিয়ে মিহি অবাক হয়ে গেল।রিদিম ঘরে নেই।মিহি বাহিরে গেল।পুরো বাড়ি খুজেও কোথাও রিদিমকে পেল না।রিদিমের গাড়িও নেই।তার মানে রিদিম চলে গেছে।কিন্তু তবুও একবার মিহিকে জানিয়ে যাওয়া উচিৎ ছিল রিদিমের।এই কথা ভাবতেই মিহির মনে একটু অভিমান হলো।
___________________________________
নদীর পাড়ে বসে আছে রিদিম।নিজের উপর নিজেরই ধিক্কার হচ্ছে রিদিমের।কাল রাতে নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারে নি সে।মোহের বশে মিহিকে কাছে টেনে নিয়েছিল সে।কিন্তু এখন তার মনে হচ্ছে যে সে ভুল করেছে।এখন তার নিজের কাছেই খুব খারাপ লাগছে।তাই আজ সকালে মিহির মুখোমুখি হওয়ার আগেই বাড়ি থেকে চলে এসেছে।
রাত ১০টা,
কিছুক্ষণ আগে বাড়ি ফিরেছে রিদিম।বাড়ি ফিরেই শুয়ে পড়েছে সে।মিহির কাছে রিদিমের ব্যবহার একটু অন্যরকম লাগছে।সেই সকালে না খেয়ে বেড়িয়েছিল আবার এখন এসে না খেয়েই শুয়ে পড়েছে।সারাদিনে কিছু খেয়েছে কিনা তা জানা নেই মিহির।
“খাওয়া-দাওয়া করবে না??”
মিহি রিদিমকে জিজ্ঞাসা করলো।
“খাওয়ার ইচ্ছে নেই।”
রিদিমের উত্তর শুনে মিহির খুব রাগ হলো।মিহিও না খেয়ে শুয়ে পড়লো।মিহিও আজকে সারাদিন কিছু খায় নি।কারণ সে জানে না রিদিম খেয়েছে নাকি।দুজনেই সারাদিন না খাওয়া কিন্তু কেউ কিছু বলছে না।
______________________________________
এভাবেই দিন যাচ্ছে।তিনদিন চলে গেছে।রিদিম এখনও মিহির মুখোমুখি হয় না।মিহি ঘুম থেকে ওঠার আগে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যায়।আবার অনেক রাত করে বাড়ি ফেরে।মিহির এসব খুব খারাপ লাগে।রিদিমও ভিতরে ভিতরে অসহ্যকর একটা পরিস্থিতির শিকার হচ্ছে।কিন্তু তা মিহিকে বুঝতে দিচ্ছে না।মিহি ঠিক করেছে আজকে সে এর একটা বিহিত করেই ছাড়বে।
রাত ১টা,
রিদিম কিছুক্ষণ আগে বাড়ি ফিরেছে।ফ্রেশ হয়ে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।মিহি গিয়ে রিদিমের পিছে দাঁড়ালো।নিজের পিছনে কারোর উপস্থিতি টের পেয়ে রিদিম বুঝতে পারলো যে মিহি তার পিছে দাঁড়িয়ে আছে।কিন্তু রিদিম কিছু বললো না।
“আমার আপনার সাথে কিছু কথা ছিল।”
“বলো কি বলবে??”
“আপনি কি আমাকে ইগনোর করছেন??”
“ইগনোর করতে যাবো কেন??”
“তাহলে এরকম কেন করছেন??সকালে আমি উঠার আগেই বেড়িয়ে যান আবার রাত করে বাড়ি ফেরেন।”
“কাজের চাও বেশি তাই।”
“সত্যিই কি তাই??নাকি আমার থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য??”
“তা কেন হতে যাবে??”
এবার মিহির প্রচুর রাগ হলো।মিহি এগিয়ে গিয়ে রিদিমের শার্টের কলার টেনে নিজের দিকে ঘুরালো।
“মজা পেয়েছেন আমাকে??একরাতে কাছে টেনে নেবেন।তারপর আমাকে ইগনোর করবেন।কি ভাবেন কি আমাকে??যদি ভালোই না বাসেন তাহলে সেদিন কাছে কেন টেনে নিলেন??আর…….”
মিহি আর কিছু বলবে তার আগেই রিদিম মিহির ঠোট নিজের আয়ত্তে নিয়ে নিল।কিছুক্ষণ পর ছেড়ে দিল।
“তোমার সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবে।প্রথমত তোমাকে কেন কাছে টেনে নিয়েছিলাম??এর উত্তর তুমি নিজেই আমাকে করেছিলে।বাসার মধ্যে এভাবে যদি সেজে থাকো তাহলে কোনোমতেই নিজেকে কান্ট্রোল করা সম্ভব নয়।এবার আসি দ্বিতীয় প্রশ্ন।কেন তোমাকে ইগনোর করলাম??কারণ আমার নিজেরই নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছিল।কারণ মন থেকে কাছে টেনে নিই নি তাই।”
“তাহলে…”
“ওয়েট।আমার কথা শেষ হয় নি।তুমি এটাই তো জিজ্ঞাসা করবে যে আমি কেন কিছুক্ষণ আগে আবার কাছে টেনে নিলাম।তাই তো??”
“হুম।”
“তার কারণ এই তিনদিনে আমি প্রতিটক মুহুর্তে উপলব্ধি করেছি যে আমি তোমাকে মোহের বশে কাছে টেনে নিই নি।আমি ধীরে ধীরে তোমাকে ভালোবাসতে শুরু করেছি।হ্যা মিহি।আমি তোমাকে ভালোবাসি।”
মিহি যেন স্তব্ধ হয়ে গেছে।এই কথাটা শোনার জন্য সে এতদিন অপেক্ষায় ছিল।আজ সে তা শুনতে পেল।মিহি হঠাৎ করেই রিদিমকে জড়িয়ে ধরলো।রিদিমও হালকা হেসে মিহিকে জড়িয়ে ধরলো।
চলবে………………….
আছো তুমি হৃদয়জুড়ে পর্ব-০৫
#আছো_তুমি_হৃদয়জুড়ে
#পর্ব_৫
#জাফিরাহ_জারিন
রুমে ঢুকে রিদিম দেখলো নিয়া খাটের একপাশে হেলান দিয়ে শুয়ে আছে।তার পাশে ছোট্ট এক বছর বয়সী রিশান খেলনা নিয়ে খেলা করছে।রিদিম গিয়ে নিয়াকে ডাকলো।
“নিয়া,আমার তোমার সাথে কিছু কথা আছে।”
“তুমি কিছু বলবে তার আগে আমি তোমাকে কিছু বলতে চাই।”
“কি বলবে??”
“রিদিম আমি তোমার থেকে মুক্তি চাই।আমার পক্ষে আর এই সম্পর্কটা রাখা সম্ভব না।”
“মানে??”
কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে জিজ্ঞাসা করলো রিদিম।
“মানেটা খুব সহজ।আমি ডিভোর্স চাই।”
নিয়ার এই কথাটা যেন বুলেটের মত আঘাত হানলো রিদিমের বুকে।
“দেখো নিয়া।আমরা কোনো রিলেশনে নেই যে তুমি এভাবে সম্পর্কটা ভেঙে দেবে।আমরা বিবাহিত আর আমাদের একটা ছেলেও আছে।”
“দেখো রিদিম আমি এসব কিছু জানি না।আমি শুধু মুক্তি চাই ব্যস।”
নিজের বাবা-মাকে এভাবে ঝগড়া করতে দেখে ভয়ে কান্না করে দিল রিশান।রিশানের কান্না শুনে ইলারা বেগম ছুটে এলেন।তিনি এসে দেখেন যে রিশান কাঁদছে আর অন্যদিকে নিয়া রিদিমের সাথে ঝগড়া করছে।
ইলারা বেগম গিয়ে রিশানকে কোলে তুলে নিলেন ও রিশানের কান্না থামালেন।
“কি হয়েছে তোমাদের??ঝগড়া করছো কেন তোমরা??আর এইদিকে যে রিশান দাদুভাই কাঁদছে সেদিকে কারোর খেয়াল নেই।”
“দেখুন মা ঝগড়া আমি না আপনার ছেলে করছে।আমি তো সোজাসুজি তার কাছে ডিভোর্স চেয়েছি।কিন্তু সে কিছুতেই রাজি হচ্ছে না।”
নিয়ার কথা শুনে ইলারা বেগম অবাকের চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌছে গেলেন।
“এসব কি বলছো বৌমা!!তুমি ডিভোর্স চাইছো কেন??আর তুমি একবারও রিশান দাদুভাইয়ের কথা ভাবছো না!”
“আপনার তো খুব পছন্দ আপনার নাতিকে।তো রেখে দিন নিজের কাছে।আমি তো রিশানকে নিয়ে যেতে চাই নি।”
“আর কিছু বলবে??”
খুবই শান্ত স্বরে জিজ্ঞাসা করলো রিদিম।
“না।আমার ডিসিশন ফাইনাল।আই ওয়ান্ট ডিভোর্স। ”
নিয়া রিদিমের প্রশ্নের সোজাসুজি উত্তর দিল।
“ওকে।আমি উকিলের সাথে কথা বলছি।আগামী সপ্তাহের মধ্যে ডিভোর্স পেয়ে যাবে।”
এই বলে রিদিম তখনই রুম থেকে বেরিয়ে গেল।রিদিমের কথা শুনে নিয়া এক স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো।ইলারা বেগম রিশানকে তার কাছে নিয়ে গেলেন।রিদিম আর রিশান, এই দুইজনের জন্য ইলারা বেগমের কাঁদছেন। তিনি জানেন তার ছেলে নিয়াকে কতটা ভালোবাসে।কিন্তু নিয়ার কাছে এ ভালোবাসার কোনো মূল্য নেই।আর ছোট্ট রিশানের এখন মা-বাবা দুজনকেই দরকার।সে কি করে থাকবে মা ছাড়া!!!
এক সপ্তাহ পর,
আজ রিদিম আর নিয়ার ডিভোর্স হয়ে গেছে।রিদিম একবার চেয়েছিল নিয়াকে বলতে যে “রিশানের কথা ভেবে অন্তত সম্পর্কটা নষ্ট করো না।” কিন্তু রিদিম বলে নি।কারণ নিয়া মা হওয়ার যোগ্য না।যার নিজের সন্তানের জন্য বিন্দুমাত্র চিন্তা নেই সে মা নামের কলঙ্ক।
______________________________________
দেখতে দেখতে দুই বছর কেটে গেছে।রিশানের বয়স এখন ৩ বছর।এখন সে কথা বলতে পারে,হাটতে পারে সব পারে।রিশান এখন সারাদিন তার দাদীর কাছেই থাকে।আর রাতে বাবার কাছে থাকে।আগে সে মায়ের কথা জিজ্ঞাসা করতো।কিন্তু সে যখন বুঝলো যে তার মায়ের কথা বললে বাবা কষ্ট পায় তখন থেকে আর রিশান তার মায়ের কথা জিজ্ঞাসা করে না।কারণ রিশান সবথেকে বেশি তার বাবাকে ভালোবাসে।রিদিমও এখন রিশানকে নিয়েই থাকে।এখন আর নিয়ার কথা মনে হয় না।এখন তো রিদিম নিয়াকে ধন্যবাদ দেয় কারণ নিয়া রিদিমকে তার বেচে থাকার অবলম্বন রিশান দিয়ে গেছে।
আজ মিহি বিদেশ থেকে দেশে ফিরছে।ইদানিং তার বাবার শরীরটা ভালো নেই।ডক্টর দেখানো দরকার।মাহিম মাত্র ক্লাস ১০ এ পড়ে।এখন সে বাবাকে ঠিকমত ডক্টর দেখাতে পারবে না।মিহির মা একা কিছু করতে পারবেন না।তাই মিহি দেশে ফিরছে।কিছুক্ষণ আগেই প্লেন বাংলাদেশ এয়ারপোর্ট এ ল্যান্ড করেছে।মিহি সেখান থেকে গাড়িতে করে বাড়ি ফিরলো।বাড়ি ফিরেই সে সবার আগে নিজের বাবার কাছে গেল।মিহির বাবা নিজের মেয়েকে পেয়েই অর্ধেক সুস্থ হয়ে গেছেন।এরপর মিহি তার মা এবং ভাইয়ের সাথে দেখা করলো।মিহিদের বাড়িতে আজ অনেক বছর পর আবার সেই আগের রূপ ফিরে এলো।____________________________________
আজ ইলারা বেগম মিহির সাথে দেখা করতে এসেছেন।তার সাথে রিশানও এসেছে।
ইলারা:ভালো আছো মিহি মা??
মিহি:জ্বি মামণি।তুমি কেমন আছে??
ইলারা:এইতো আছি কোনো রকম।
রিশান:দিদা!!এইটা কে??
ইলারা:এইটা তোমার মিহি আন্টি।
রিশান একবার মিহিকে ভালো করে দেখে নিলো।তারপর গিয়ে মিহির কাছে দাঁড়ালো। মিহি শুধু চুপচাপ রিশানের কর্মকাণ্ড দেখছে।
রিশান:আন্টি আন্টি!!!তুমি আমার সাথে খেলবে??
মিহি রিশানকে কোলে তুলে নিল।
মিহি:তুমি খেলতে চাও??
রিশান:হুম।
মিহি:তাহলে চলো খেলি।
মিহি রিশানকে নিজের রুমে নিয়ে গেলো।সেখানে গিয়ে মিহি আর রিশান দুজনে মিলে খেলছে।মিহির মা আর ইলারা বেগম গল্প করছেন।অনেক্ষণ পর ইলারা বেগম বাড়ি যেতে উদ্যত হলেন।তিনি মিহির রুমের সামনে গিয়ে থমকে দাঁড়ালেন। মিহি আর রিশান খেলছে।মিহি রিশানের সাথে দুষ্টুমি করছে আর রিশান হাসছে।নিজের নাতিকে এভাবে হাসতে দেখেন নি ইলারা।রিশান আজ মন খুলে হাসছে।হঠাৎ করেই ইলারা বেগমের মাথায় একটা বুদ্ধি এলো।তিনি আর দেরী না করে মিহির মার কাছে গেলেন।
ইলারা:আমার একটা আবদার আছে।রাখবেন??
মিহির মা:কি আবদার আপা??
ইলারা:আমি মিহিকে আমার বাড়ির বউ করে নিয়ে যেতে চাই।দেবেন আপনার মেয়েকে??
মিহির মা এরকম আবদার শুনে একটু বিস্মিত হলেন।
মিহির মা:দেখুন আগে মিহির মতামত নেওয়া উচিৎ।
মিহির মা মিহিকে ডাকলেন।মিহি রিশানকে খেলনা দিয়ে বসিয়ে রেখে মায়ের কাছে এলো।
মিহি:ডাকছিলে মা??
মিহির মা:হ্যা।ইলারা আপা তোকে কিছু বলতে চান।
মিহি:কি বলবে মামণি??
ইলারা:রিশানের মা হবে??
মিহি যেন এই কথাটা আশা করে নি।যেই মানুষটার বউ হওয়ার স্বপ্ন মিহি এতবছর ধরে দেখেছে আজ তা সত্যি হবে।মিহির একবার ইচ্ছে করছিল না বলতে।পাচ বছর আগে যখন মিহি তার ভালোবাসা বিসর্জন দিয়েছে তবে আজ কেন?? কিন্তু ছোট্ট রিশানেত দিকে তাকিয়ে মিহি “না” বলতে পারে নি।রিশানের একজন মা দরকার।ছেলেটা তবেই ভালোমত বেড়ে উঠবে।তাই রিশানের কথা চিন্তা করে মিহি রাজি হয়ে যায়।রিশান তো খুব খুশি।সে তো এখন থেকেই মিহিকে “মাম্মাম” বলে ডাকতে শুরু করেছে।রিদিম প্রথমে রাগ হয়েছিল বিয়ের কথা শুনে।কিন্তু রিশানের খুশি দেখে রিদিমও আর না করতে পারে নি।অবশেষে মিহি আর রিদিমের বিয়েটা হয়েই গেলো।
বর্তমান,
ঘড়ির কাটা জানান দিচ্ছে যে রাত ১১টা বাজতে চললো।রিদিম এতক্ষণ তার অতীতের ভাবনায় ডুবে ছিল।সত্যিই অতীত এক অদ্ভুত জিনিস।রিদিম গাড়ির চাবিটা হাতে করে গ্যারেজে গেল।এখন তাকে বাড়ি ফিরতে হবে।
বাড়ি ফিরে কলিংবেল চাপতেই মিহি ছুটে এসে দরজা খুলে দিল।এতক্ষণ সে রিদিমের অপেক্ষায় ছিল।এত তাড়াতাড়ি দরজা খুলে দেওয়াতে রিদিম বেশ অবাক হলো।মেয়েটা এখনও তার জন্য জেগে বসে আছে।কিন্তু আরও অবাক হলো যখন মিহি দরজা খুলে দিল।
চলবে…………………….
আছো তুমি হৃদয়জুড়ে পর্ব-০৪
#আছো_তুমি_হৃদয়জুড়ে
#পর্ব_৪
#জাফিরাহ_জারিন
আজ মিহির খুব ইচ্ছে করতে সাজতে।মায়ের বাসায় থাকতে সে মাঝে মাঝেই সাজতো।আজও তার ইচ্ছে করছে সাজতে।তার অবশ্য কিছু কারণ আছে।আজ বাসায় কেউ নেই।মিহির শ্বশুর-শ্বাশুড়ি আজ নিজেদের গ্রামের বাড়িতে গিয়েছে।রিশানও তাদের সাথে যেতে চেয়েছিল।তাই ইলারা বেগম রিশানকে নিয়ে গেছেন।যেহেতু এতদিন ইলারা বেগম রিশানকে সামলিয়েছেন তাই রিশানকে নিতে তার কোনো সমস্যা হয় নি।আজ রিদিমেরও অফিসে কাজের চাপ বেশি।তাই রিদিমেরও আজকে আসতে দেরী হবে।তাই পুরো বাড়ি ফাকা।আর এজন্যই মিহির আজকে সাজতে ইচ্ছে হচ্ছে।এমনি সময় বাসার সব কাজকর্ম শেষ করে রিশানকে সামলিয়ে আর নিজেকে সময় দিতে পারে না মিহি।তাই আজকে সে সাজবে।মিহি হাতমুখ ধুয়ে এসে ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসলো।
______________________________________
অফিসের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে রিদিম।আজ তার অতীত খুব করে মনে পড়ছে।ইদানিং তার অতীত তাকে অনেক পীড়া দেয়।বিশেষ করে এই মিহি নামক নারী তার জীবনে আসার পর থেকে রিদিমের অতীত তাকে আরও বেশি তাড়া করে বেড়ায়।
অতীত,
আজ রিদিম তার মা-বাবাকে নিয়ার ব্যাপারে বলবে।রিদিম এবার নিয়াকে নিজের জীবনসঙ্গী হিসেবে চায়।রিদিম তার মায়ের রুমের সামনে গিয়ে দরজায় নক করলো।
রিদিম:আসবো মা??
ইলারা:আরে আয়।কিছু বলবি??
রিদিম:হুম।
ইলারা:কি??
রিদিম:মা আসলে আমি নিয়াকে ভালোবাসি।আমি নিয়াকে বিয়ে করতে চাই।
ইলারা:ফাইনালি তুই বিয়ের কথা মুখে আনলি।তোর খুশিতেই আমার খুশি।আমি তোর বাবার সাথে কথা বলছি আর তোর এবং নিয়ার বিয়ের ব্যাবস্থা করছি।ওকে??
রিদিম:লাভ ইউ মা।
ইলারা:লাভ ইউ টু ডিয়ার।
এক সপ্তাহ পর,
মিহি সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতেই দেখতে পেল তার মা আর ইলারা বেগম বসে গল্প করছেন।
ইলারা:আরে মিহি মা!!কেমন আছো??
মিহি:আলহামদুলিল্লাহ ভালো মামনি।তুমি কেমন আছো??
ইলারা:আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।
মিহির মা: আরে মিহি জানিস।আগামী শুক্রবার রিদিমের বিয়ে ঠিক হয়েছে।
এই কথাটা শুনে মিহির মাথায় যেন বাজ পড়লো।তার সামনেই তার ভালোবাসার মানুষের বিয়ে হয়ে যাবে।অথচ তাকে সহ্য করতে হবে।এটা সে কিছুতেই পারবে না।মিহির পক্ষে আর সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা সম্ভব না।
মিহি:মা!!আমি একটু আসছি।
কোনোমতে এটা বলে মিহি দৌড়ে তার রুমে চলে এলো।এতটা কষ্ট সে কোনোদিনও পায় নি।মনে হচ্ছে কেউ তার হৃদয়ে ক্রমাগত ছুরি দিয়ে আঘাত করছে।মিহির খুব কষ্ট হচ্ছ্র সে পারছে না কিছুতেই এই বিয়েটা মেনে নিতে।কিন্তু সে কিই বা করতে পারে!!রিদিম তো এই বিয়েতেই খুশি।তাই মনে মনে একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নিলো মিহি।
রাতের বেলা,
মিহি:আসব বাবা??
মিহির বাবা:আরে মিহি মা!!কিছু বলবে আম্মু??
মিহি:হ্যা বাবা।
মিহির বাবা:কি বলবে আম্মু??
মিহি:বাবা আমি বিদেশ যেতে চাই।আমার মনে হয় বিদশ গেলে আমি বেশি ভালো থাকবো।
মিহির বাবা:ইটস ওকে আম্মু।রিদিমের বিয়েটা হয়ে যাক তারপর আমি তোমার যাওয়ার ব্যবস্থা করছি।
মিহি:না বাবা।তার আগেই যেতে হবে।পরশু দিন বিদেশে স্টাডির জন্য রেজিস্ট্রেশন করার লাস্ট ডেট।
মিহির বাবা:ওকে আম্মু।তুমি যা চাও তাই হবে।
মিহি:থ্যাংক ইউ বাবা।
এরপর তাই হলো।রিদিমের বিয়ের দিন মিহি দেশ ছেড়ে পাড়ি জমালো বিদেশে।নিজের ভালোবাসার মানুষটার খুশির জন্য নিজের ভালোবাসাকে মাটিচাপা দিলো সে।অবশেষে রিদিম আর নিয়ার বিয়ে হয়ে গেলো।
____________________________________
১ বছর পর,
আজ রিদিমদের বাড়িতে এক উৎসবমুখর পরিবেশ।কারণে আজ সবাই জানতে পেরেছে যে নিয়া মা হতে চলেছে।রিদিমের তো খুশির শেষ নেই।নিজের অনাগত সন্তানকে নিয়ে সে খুব উৎফুল্ল।নিয়াকে তো খাট থেকে নামতে নিষেধ করে দিয়েছে সে।এখন থেকে নাকি নিয়ার সব কাজ সে করবে।রিদিমের এরকম পাগলামি দেখে নিয়া হেসে দিল।সত্যিই ছেলেটা তাকে খুব ভালোবাসে।
ধীরে ধীরে সময় যেতে লাগলো।দেখতে দেখতে ছয় মাস কেটে গেছে।নিয়ার পেটটা বেশ অনেকটাই বড় হয়েছে।এখন তো প্রায়ই রিদিম নিয়ার পেটের সাথে কান লাগিয়ে বেবির হৃদস্পন্দর শোনে।রিদিমের জন্য এটা এখন ডেইলি রুটিন হয়ে গেছে।প্রতিদিন অফিস থেকে ফিরেই সে সবার আগে নিয়ার কাছে যায়।প্রথমে সে নিয়ার কপালে চুমু খায় তারপর সে নিয়ার পেটে কান লাগিয়ে বেবির স্পন্দন শোনে।রিদিমের কাছে এটা একটা নেশার মত হয়ে গেছে এখন।নিয়ার তো খুব মজা লাগে রিদিমের এরকম বাচ্চামো দেখতে।
______________________________________
অনেক্ষণ যাবত মিহির ফোন বেজে চলেছে।মিহি এইমাত্র ভার্সিটি থেকে ফিরে ফ্রেশ হতে গেছিল।এসে দেখে তার মা ফোন দিয়েছে।মিহি তার মাকে কল ব্যাক করলো।
মিহি:কেমন আছো মা??
মিহির মা:আমি ভালো আছি।তুমি কেমন আছো মা??
মিহি:আমিও ভালো আছি।বাবা,মাহিম ওরা সবাই কেমন আছে??
মিহির মা:ওরা সবাইও ভালো আছে।তোর পড়াশোনা কেমন চলছে??ঠিকমত খাওয়া-দাওয়া করছিস তো??
মিহি:হ্যা মা।সব ঠিকঠাক চলছে।
মিহির মা:জানিস নিয়া মা হতে চলেছে আর রিদিম বাবা হতে চলেছে।
মিহি:এর থেকে খুশির খবর আর কি হতে পারে মা!! আমি এখন রাখছি পরে কথা হবে।বাই।
এই বলে ফোন কেটে দিল মিহি।ফোন রাখতেই কান্নায় ভেঙে পড়লো সে।মিহি তো এখনও রিদিমকে ভালোবাসে।আচ্ছা যদি নিয়ার জায়গায় মিহি থাকতো তাহলে কি খুব খারাপ হতো!!একেই হয়ত নিয়তি বলে।
____________________________________
হসপিটালের করিডোরে পায়চারী করছে রিদিম।ভিতরে অপারেশন থিয়েটারে নিয়া রয়েছে।আজ নিয়ার ডেলিভারি ডেট।কিছুক্ষণ পরই বাচ্চার কান্নার আওয়াজ গেল রিদিমের কানে।নার্স একটা ছোট্ট বাচ্চাকে এনে রিদিমের কোলে দিল।
নার্স:কংগ্রাচুলেশনস স্যার।আপনার ছেলে হয়েছে।
রিদিম:আমার ওয়াইফ কেমন আছে??
নার্স:তিনিও সুস্থ আছে।কিছুক্ষণ পরই তাকে কেবিনে দেওয়া হবে।
রিদিম নিজের ছেলের দিকে তাকিয়ে দেখলো।খুব মিষ্টি দেখতে হয়েছে।দেখতে হুবহু একদম রিদিমের মত।
তিনদিন পর নিয়াকে হসপিটাল থেকে ডিসচার্জ করা হলো।বাড়ির সবাই তো পরিবারের ছোট্ট সদস্যকে নিয়ে ব্যস্ত।ইলারা বেগম নিজের নাতির নাম রেখেছেন “রিশান”। রিশানের সাথে ইলারা বেগমের খুব ভাব জমেছে।সারাদিন রিশান ইলারা বেগমের কাছেই থাকে।মিসেস ইলারাও তার নাতিকে নিয়ে খুব খুশি।সারাদিন রিশানকে নিয়েই তার কেটে যায়।
১ বছর পর,
ইদানিং নিয়া একটু অন্যরকম ব্যবহার করছে।সবসময় অন্যমনস্ক থাকে।রিশানের দিকেও ঠিকমত খেয়াল রাখে না সে।রিদিমের সাথেও প্রায়ই ঝগড়া হয় তার।রিদিমের খুব খারাপ লাগে নিয়ার এরকম ব্যবহারে। কিন্তু যতই হোক সে তো নিয়াকে ভালোবাসে।তাই কিছু বলে না।কিন্তু ইদানিং নিয়া একটু বেশিই বাড়াবাড়ি করছে সে।তাই রিদিম ঠিক করেছে আজকে সে নিয়ার সাথে কথা বলে সব ক্লিয়ার করবে।
চলবে………………..
আছো তুমি হৃদয়জুড়ে পর্ব-০৩
#আছো_তুমি_হৃদয়জুড়ে
#পর্ব_৩
#জাফিরাহ_জারিন
“ডাকছিলেন আমাকে??”
রিদিমের সামনে দাঁড়িয়ে বললো মিহি।
“হুম।রিশান কোথায়??”
“নিচে।মাহিমের রুমে মাহিমের সাথে খেলছে।”
“ওহ।কখন উঠেছে ঘুম থেকে??”
“সকাল ৭টার সময়।”
“ও এইরকম টাইমেই প্রতিদিন ঘুম থেকে ওঠে।”
“ওহ”
এরপর রিদিম আর কথা না বাড়িয়ে ফ্রেশ হতে গেল।রিদিম যেতেই মিহি বিছানা গোছাতে শুরু করলো।একটু পর রিদিম ফ্রেশ হয়ে নিচে রিশানের কাছে গেল।আর মিহিও গেল রিশানকে খাওয়াতে।
দুপুর ৩টা,
ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি ড্রাইভ করছে রিদিম।পাশেই মিহি বসে আছে।আর মিহির কোলে রিশান।দুপুরে খাওয়া-দাওয়ার পর মিহিদের বাড়ি থেকে রিদিমদের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে তারা।কিছুক্ষণ আগে গোসল করায় মিহির চুলগুলো এখনও ভেজা আছে।তাই মিহি চুল ছেড়ে দিয়েছে।বাতাসের কারণে মিহির উড়ন্ত চুলগুলো বারবার গিয়ে রিদিমের মুখে বারি খাচ্ছে। কিন্তু অদ্ভুত হলেও সত্যি যে এতে রিদিমের একটুও বিরক্তি লাগছে না।বরং মিহির চুলের এক মাতাল করা ঘ্রাণ পাচ্ছে রিদিম।
“পাপা!!!গাড়ি থামাও।”
হঠাৎ করেই রিশান রিদিমকে বললো গাড়ি থামাতে।রিশান এভাবে বলায় রিদিম তাড়াতাড়ি করে গাড়ি থামালো।
“কি হয়েছে আব্বু??তুমি এভাবে গাড়ি থামাতে বললে কেন??”
রিশানকে জিজ্ঞাসা করলো রিদিম।
“পাপা দেখো ওইখানে।”
রিশানের কথা শুনে রিদিম আর মিহি দুজনেই ওইদিকে তাকালো।দেখলো সেখানে একটা পার্ক আছে।সেই পার্কে ছোট ছোট বাচ্চারা খেলছে।
“তুমি কি এখন ওই পার্কে যেতে চাও সোনা??”
“হুম।”
এরপর রিদিম গাড়ি স্টার্ট করে পার্কিং এরিয়াতে নিয়ে গিয়ে গাড়ি থামালো।এরপর রিদিম,রিশান এবং মিহি সবাই গাড়ি থেকে নামলো।গাড়ি থেকে নেমেই রিশান ছুটে গেল পার্কের ভিতরে।রিশানের পিছন পিছন রিদিম আর মিহিও গেল।রিশান গিয়েই একটা দোলনায় বসলো।রিদিম আর মাহি গিয়ে সেই দোলনায় ধীরে ধীরে ধাক্কা দিতে লাগলো।রিদিম একদৃস্টিতে দোলনার দিকে তাকিয়ে আছে।কারণ এই দোলনা আরও একবার তাকে তার অতীত মনে করিয়ে দিচ্ছে।
অতীত,
পার্কে দাঁড়িয়ে বারবার হাত ঘড়িতে সময় দেখছে রিদিম।গত আধঘণ্টা যাবত সে তার প্রেয়সীর অপেক্ষায় আছে।কিন্তু তার প্রেয়সী এখনও আসছে না।আরও কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর অবশেষে রিদিম তার প্রিয়তমার দেখা পেল।
“সরি রিদিম।লেট হয়ে গেলো।”
“ইটস ওকে নিয়া।”
“চলো না দোলনায় বসি।”
রিদিমের দিকে তাকিয়ে আবদারের সুরে বললো নিয়া।
“না।আমার দোলনায় বসতে ভালো লাগে না।”
“প্লিজ রিদিম।একবার বসো।অন্তত আমার জন্য একবার হলেও বসো।”
নিয়ার এরকম আবদার ফেলতে পারলো না রিদিম।সে আর নিয়া একে অপরের হাত ধরে দোলনার কাছে গেল।নিয়া দোলনার একপাশে বসে রিদিমকে দোলনার অপরপাশে বসতে ইশারা করলো।অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র নিয়ার কথা রাখতে রিদিম গিয়ে দোলনার অপরপাশে নিয়ার সাথে বসলো।এরপর নিয়া আর রিদিম দোলনায় বসে দোল খেতে লাগলো।কিছুক্ষণ পর রিদিম দোলনা থেকে নেমে গেল।আর দোলনার পিছে দাঁড়িয়ে দোলনায় ধাক্কা দিতে লাগলো।
(নিয়া আর রিদিম ক্লাসমেট। তারা একই ভার্সিটিতে পড়ে।অনার্স ১ম বর্ষ থেকেই তাদের একে অপরের সাথে পরিচয়। তাদের মধ্যে ছিল খুব ভালো বন্ধুত্ব। সময় বাড়ার সাথে সাথে তাদের এই বন্ধুত্ব আরও দৃঢ় হতে থাকে এবং একসময় এই বন্ধুত্ব ভালোবাসায় পরিণত হয়।এখন নিয়া ও রিদিম একে অপরকে খুব ভালোবাসে।)
বর্তমান,
“পাপা চলো।এবার বাড়িতে যায়।আমি দাদুকে অনেক মিস করছি।”
রিশানের কথা শুনে রিদিমের ধ্যান ভাঙলো।সে রিশানকে কোলে তুলে নিলো।রিশানের মুখে অনেকবার চুমু খেলো।
“কি হয়েছে পাপা??”
“কিচ্ছু হয় নি সোনা।চলো যায়।”
অনেকটা ধরা গলায় বললো রিদিম।রিদিমের এরকম কন্ঠ যেন মিহির বুকে তীরের মত গিয়ে লাগলো।মিহি খুব ভালোমত বুঝতে পারছে রিদিমের নিয়ার কথা মনে পড়ছে।কেন মনে পড়ছে সেটাও মিহি জানে।
অতীত,
আজ মিহি ও তার বন্ধুরা পার্কে বেড়াতে এসেছে।সেদিন রিদিমকে দেখার পর থেকেই মিহির মনে অন্যরকম একটা অনুভুতি সৃষ্টি হয়েছে।যা দিনে দিনে আরও তীব্র হয়ে উঠছে।এখন মিহি প্রায়ই রিদিমদের বাড়িতে যায়।সবাইকে বলে সে তার মামণি ইলারা বেগমের সাথে গল্প করতে যাচ্ছে।মিহি সেখানে গিয়েও ইলারা বেগমের সাথে গল্প করে।কিন্তু মিহি আসলে সেখানে যায় রিদিমকে দেখতে।ধীরে ধীরে রিদিম নামক মানুষটার প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ছে সে।পার্কে বসে মিহি আর মিহির বন্ধুরা কিছু খাওয়ার প্ল্যান করলো।মিহি সবার জন্য খাবার অর্ডার করতে গেল।কিন্তু ঠিক তখনই সে এমন কিছু একটা দেখলো যা সে কল্পনা করে নি।মিহির মনে হলো যে সে রিদিমকে দেখলো।সে ভাবলো যে এটা তার মনের ভুল।তাই সে কিছুটা এগিয়ে গেল।কিন্তু তখনও সে রিদিমকেই দেখতে পেল।কিন্তু রিদিমের সাথে এই মেয়েটা কে??মিহি আরও একটু এগিয়ে গেলো।নিয়া ও রিদিমের কথোপকথন শুনে মিহি খুব ভালোমত বুঝতে পারলো যে রিদিম ও নিয়া একে অপরকে ভালোবাসে। “রিদিমকে কাউকে ভালোবাসে,-এই কথাটা যেন মিহি বিশ্বাস করতে পারছিল না।মিহির চোখ বেয়ে অশ্রুকণা যেন ছুটে বেরিয়ে আসতে চাইছে।মিহি আর সেখানে দাঁড়াতে পারলো না।কাউকে কিছু না বলে ছুটে পার্কে থেকে বেরিয়ে এলো সে।বাসায় এসে নিজের রুমের দরজা লাগিয়ে বালিশে মুখ গুঁজে কান্না শুরু করলো সে।এতটা কষ্ট মিহি কোনোদিনও পায় নি।তবে কি মিহির ভালোবাসা সারাজীবন একতরফা ভালোবাসা হয়েই থেকে যাবে??
বর্তমান,
গাড়ির হর্ণ শুনে মিহির ধ্যান ভাঙলো।তারা বাড়িতে পৌছে গেছে।রিশান অলরেডি গাড়ি থেকে নেমে গেছে।মিহি নামছে না দেখে রিদিম গাড়ির হর্ণ দিয়েছিল।মিহি ধীরে ধীরে গাড়ি থেকে নেমে বাড়ির ভিতরে গেল।এরপর রিদিম গাড়ি পার্ক করে রিদিমও বাড়ির ভিতরে গেল।রিশান বাড়ির ভিতরে গিয়েই ছুটে গেল তার দাদুর রুমে।
“দিদা!!!”
“আরে দাদুভাই!! ”
রিশান ছুটে গিয়ে তার দিদার কোলে উঠলো।রিশানের দিদা রিশানকে কোলে নিয়ে তার গালে চুমু খেল।
“জানো দিদা আমি তোমাকে অনেক মিস করেছি।”
“আমিও তোমাকে অনেক মিস করেছি দাদুভাই।”
“রিশান আব্বু।চলো জামাকাপড় পাল্ট ফ্রেশ হয়ে নাও।” ঘরে ঢুকতে ঢুকতে কথাটা বললো মিহি।
“কেমন আছো মিহি মা??”
“ভালো আছি মামণি।তুমি ভালো আছো??আর কালকে নিজের ওষুধ ঠিকমত খেয়েছিলে??”
“হুম।খেয়েছি”
“গুড গার্ল”
মিহি কথা শুনে রিশান এবং ইলারা বেগম দুজনেই হেসে দিলেন।
“আম্মু গুড গার্ল/বয় তো শুধু ছোটদের বলে।দিদা তো আর ছোট না।”
“হুম তাই তো।কিন্তু জানো আব্বু যারা গুড হয় তারা বড় হোক ছোট হোক সবসময়ই তাদেরকে গুড বলা যায়।”
“ওহ”
“হুম।এবার চলো ফ্রেশ হয়ে নেবে।”
এই বলে মিহি রিশানকে কোলে তুলে নিল।এরপর সে রিশানকে রুমে নিয়ে গিয়ে হাতমুখ ধুয়ে দিল।
চলবে………………………..
আছো তুমি হৃদয়জুড়ে পর্ব-০২
#আছো_তুমি_হৃদয়জুড়ে
#পর্ব_২
#জাফিরাহ_জারিন
“নিজের জামাইকে এনেছিস ভালো কথা।তাই বলে নিজের সৎ ছেলেকেও আনবি!!”
কথাটা শুনে থমকে দাঁড়ায় মিহি।সে জানে এই কথাটা কে বলেছে।তাই অযথা কথা না বাড়িয়ে সেখান থেকে চলে যেতে লাগলো মিহি।কিন্তু আবারও সেই একই কণ্ঠস্বর কানে এলো।
“এখন মুখ লুকিয়ে পালাচ্ছিস কেন??”
এবার আর মিহি চুপ করে থাকতে পারলো না।এবার সে পিছে ঘুরে সেই মানুষটির মুখোমুখি দাঁড়ালো।
“দেখো ছোট চাচী।আমি তোমার কোনো পাকা ধানে মই দিই নি।তাই আমার সংসারে নাক গলাতে এসো না।আর রিশান আমার সৎ ছেলে নয়।সে আমার নিজের ছেলে।সৎ ছেলে তখনই হয় যখন কোনো মা নিজের ছেলেকে সৎ ছেলে মনে করে।অন্যথায় ছেলে ছেলেই হয়।”
মিহির এইরকম সোজাসাপ্টা জবাব যেন তীরের মতো লাগলো মিহির ছোট চাচীর গায়ে।রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে তার।তিনি মিহির দিকে অগ্নিদৃস্টি নিক্ষেপ করে বললেন,
“এখন খুব বড় বড় কথা বের হচ্ছে মুখ থেকে।দেখব কতদিন থাকে তোর এই মহত্ব।দুইদিন পর যখন দেখবি নিজের বাচ্চা নেই।তখন
দেখব কিভাবে বলিস ওই বাচ্চাটা তোর নিজের ছেলে।”
এই বলে হনহন করে নিচে চলে গেলেন মিহির ছোট চাচী।মিহি কিছুক্ষণ সেখানে দাঁড়িয়ে তার ছোট চাচীর যাওয়ার পথে তাকিয়ে ছিল।এরপর মিহিও নিজের রুমে চলে গেল।
রাত ২টা,
পুরো বাড়ি নিস্তব্ধ।সবাই ঘুমাতে ব্যস্ত।কিন্তু মিহির চোখে ঘুম নেই।সে একদৃস্টিতে রিদিম আর রিশানের দিকে তাকিয়ে আছে।রিশান আজকে মিহির কাছে গল্প শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়েছে।খাটের একপাশে রিদিম আর একপাশে মিহি।মাঝে রিশান ঘুমিয়েছে।মিহি রিদিমের দিকে তাকিয়ে অতীতের কথা ভাবছে।একসময় রিদিমকে পাগলের মত ভালোবাসতো মিহি।মাঝখানে ৫ বছর কেটে গেছে।সবকিছু পরিবর্তন হয়েছে।কিন্তু রিদিমের প্রতি মিহির ভালোবাসা একবিন্দুও কমে নি।মিহি চোখ বন্ধ করে তার আর রিদিমের প্রথম দেখার কথা ভাবতে লাগলো।
অতীত,
আজ মিহি ও মিহির পরিবার মিহির বাবার এক বন্ধুর বাসায় বেড়াতে যাবে।মিহি যেতে চায় না।কিন্তু তার মায়ের জোর করছে বলে ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও তাকে যেতে হচ্ছে।মিহির না যেতে চাওয়ার কারণ হচ্ছে সেখানে গিয়ে ভদ্র বাচ্চার মত চুপচাপ বসে থাকতে হয়।যা মিহির পক্ষে একেবারেই অসম্ভব। তবুও সে গেলো।সেখানে যেতেই ইলারা বেগম পরম স্নেহের সাথে মিহিকে স্বাগতম জানালেন।
ইলারা: কেমন আছো মিহি আম্মু??
মিহি:আলহামদুলিল্লাহ ভালো।তুমি কেমন আছো মামণি??
ইলারা:আমিও ভালো আছি আম্মু।
এরপর তারা সবাই মিলে বসে আড্ডা দিতে লাগলো।মিহির বড়দের সাথে আড্ডা দিতে ভালো লাগছিল না।তাই সে উঠে গিয়ে পুরো বাড়ি ঘুরে ঘুরে দেখছিল।ঘুরতে ঘুরতে একসময় সে একটা রুমে গেল।রুমটা খুব সুন্দর করে সাজানো।মিহির রুমটা খুব ভালো লেগেছে।তাই সে রুমটাকে খুবই আগ্রহের সাথে পর্যবেক্ষণ করছিল।এমন সময় তার কানে এলো,
“কারোর পারমিশন ছাড়া তার রুমে ঢোকা উচিৎ নয়।এইটা কি আপনি জানেন না??”
কথাটা কানে আসতেই মিহি পিছে ঘুরলো।দেখলো একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে।বয়স ২২ এর কাছাকাছি। দেখতে খুবই সুন্দর। প্রথমবার দেখাতেই মিহির ভালো লেগেছে ছেলেটাকে।
“কি হলো কি বললাম কানে গেল না??”
ছেলেটার কথা শুনে মিহির ধ্যান ভাঙলো।
“আসলে বাড়িটে ঘুরে ঘুরে দেখছিলাম।ভুল করে এখানে এসে পড়েছি।সরি”
ইনোসেন্ট ফেস বানিয়ে বললো মিহি।মিহির কথার জবাবে বললো,
“ভুল করে এসেছেন ভালো কথা।এবার ঠিক করে বেরিয়ে যান।”
রিদিমের এরকম কথা শুনে মিহির প্রচন্ড রাগ হলো।মাহিম হলে এতক্ষণে ঠাস করে একটা থাপ্পড় দিত মিহি।কিন্তু প্রথমবার কারোর বাসায় এসে ঝগড়া করাটা খুবই খারাপ দেখায়। তাই সে আর কথা না বাড়িয়ে রুমের বাহিরে হাটা ধরলো।রিদিম কিছুক্ষণ মিহির যাওয়ার পথে তাকিয়ে রইল।তারপর সে ল্যাপটপ নিয়ে বসে নিজের কাজে মন দিল।
মিহি সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামছে আর রিদিমকে বকছে।
“এহ!!কি এটিটিউড। ভুল করে না হয় তার ঘরেই ঢুকে পড়েছি। তাই বলে এভাবে অপমান করবে!!মনে হচ্ছে ঘরে সাত রাজার লুণ্ঠিত ধনসম্পদ লুকিয়ে রেখেছেন তিনি।আর আমি মনে সেগুলো চুরি করতে গেছি।”
“কাকে এভাবে বকছো মিহি আম্মু!!”,বললেন ইলারা বেগম।
“মি.এটিটিউডের বস্তাকে।”
“মানে??কার কথা বলছো আম্মু??”
“এইরে!!মামণির সামনে এসব কি বলে ফেললাম!!”,মনে মনে বললো মিহি।
“না মানে আসলে ওইযে ওই ছেলেটা….”
“তুমি রিদিমের কথা বলছো??”
“রিদিম কে??”একটু সন্দেহের সাথে জিজ্ঞাসা করলো মিহি।
“রিদিম আমার ছেলে।একটু রাগী।কিন্তু মনটা ভালো।”,বললো ইলারা বেগম।
“ওহ আচ্ছা।”বললো মিহি।এরপর সে নিজেই নিজেকে বললো,
“মামণি মানুষটা কত্ত ভালো।অথচ তার ছেলেকে দেখো।কি রাগি আর মুডি।প্রথম দেখায় কি সুন্দর লেগেছিল।কিন্তু এখন তো দেখছি…”
বর্তমান,
“মাম্মাম!!! ”
রিশানের ডাকে ঘুম ভাঙলো মিহির।অতীতের কথা ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে
সেটা খেয়াল নেই মিহির।আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসলো সে।পাশে তাকিয়ে দেখে রিদিম এখনও ঘুমিয়ে আছে।ঘড়িতে বাজে সকাল ৭টা।মিহি রিশানকে বললো,
“এত সকালে ঘুম থেকে উঠেছো কেন আব্বু??”
“আর ঘুমোতে ইচ্ছে করছে না।”
“তো এখন কি করতে ইচ্ছে করছে??”
“খেলতে”।
রিশানের উত্তর শুনে মিহির মাথায় একটা দুষ্টুমি বুদ্ধি এলো।অনেকদিন ধরে একজনকে জ্বালানো হয় নি।আজকে সুযোগ পেয়েছে।
“ঠিক আছে আব্বু।চলো তোমাকে একজায়গায় নিয়ে যায়।সেখানে গিয়ে খুব খেলবে।ওকে??”
“ওকে মাম্মাম। ”
এরপর মিহি রিশানকে রেডি করে রুম থেকে বের হয়ে গেল।এরপর সে ধীর পায়ে গিয়ে একটা দরজার সামনে দাঁড়ালো। মিহি নক করলো সেই দরজায়।কয়েকবার নক করতেই গেট খুললো একটা ছেলে।মিহিকে এইসময় দেখে ভুত দেখার মত চমকে উঠলো।না জানি এখন তার কপালে কি আছে??
“আপু তু…তুই এখানে!!”ভয়ে ভয়ে বললো মাহিম।
“কেন অন্য কারোর আসার কথা বুঝি?”
“না….না মানে ওই আরকি!!”
“রিশান আব্বু চলো ভিতরে যায়।”
এই বলে মিহি মাহিমকে ঠেলে রিশানকে নিয়ে ভিতরে ঢুকলো।এরপর রিশানকে সে সোফায় বসিয়ে দিল।আর মাহিমের উদ্দেশ্যে বললো,
“শোন।রিশান এখন খেলত্র চায়।আর তুই এখন ওর সাথে খেলবি।যদি উল্টা-পাল্টা কিছু করিস তাহলে তো জানিসই”
“হুম।বুঝেছি”
এই বলে মিহি রুম থেকে বেরিয়ে গেল।কিছুক্ষণ পর সে আরও একবার রুমে উকি দিল।সে দেখলো মাহিম আর রিশান খেলছে।তারা দুইজনই খুব মজা করে খেলছে।মুহুর্তের মধ্যেই রিশান আর মাহিমের খুব ভালো ভাব জমেছে।হঠাৎ মিহির কানে রিদিমের কণ্ঠস্বর এলো।রিদিম মিহিকে ডাকছে।মিহি তাড়াতাড়ি করে গেল রিদিমের কাছে।
চলবে…………………..
আছো তুমি হৃদয়জুড়ে পর্ব-০১
#আছো_তুমি_হৃদয়জুড়ে
#পর্ব_১
#জাফিরাহ_জারিন
“পাপা!!এইটা কি আমার নতুন মাম্মাম??”
ছোট্ট ৩ বছর বয়সী রিশান জিজ্ঞাসা করলো তার বাবাকে।কিন্তু তার বাবা কোনো উত্তর দিল না।নিজের ছেলেকে চুপ থাকতে দেখে ইলারা বেগম অর্থাৎ রিশানের দাদী রিশানকে বললো,
“হ্যা দাদুভাই।এইটা তোমার নতুন মাম্মাম।”
নিজের দাদীর কাছ থেকে সম্মতি পেয়ে ছোট্ট রিশান ছুটে গেল মিহির কাছে।মিহির কাছে গিয়ে মিহির কোলে উঠে বসলো রিশান।তারপর সে মিহিকে জিজ্ঞাসা করলো,
“আচ্ছা তুমি তো আমার নতুন মাম্মাম তাইনা??”
“হুম”,উত্তর দিল মিহি।
“তাহলে তুমি আমাকে অনেক অনেক আদর করবে তো??”
“অবশ্যই করব সোনা।”
“জানো আমার বন্ধুদের মাম্মামরা তাদেরকে কত্ত আদর করে।তাদেরকে খাইয়ে দেয়,ঘুম পাড়িয়ে দেয়,কিন্তু আমাকে তো দিদা ঘুম পাড়িয়ে দিত,খাইয়ে দিত।এখন থেকে তুমি দেবে তো মাম্মাম?? ”
“অবশ্যই দেব সোনা।কেন দেব না??”
“রিশান দাদুভাই!!এবার এসো মাম্মামকে আর পাপাকে ঘুমাতে দাও।”ইলারা বেগম বললো তার নাতিকে।
“না।আমি আজকে মাম্মাম আর পাপার কাছে ঘুমাবো।”মুখ ফুলিয়ে বললো রিশান।
“তা হয় না দাদুভাই। আজকে তুমি আমার কাছে ঘুমাও।কালকে তোমার মা-বাবার কাছে ঘুম এসো।কেমন??”
“ঠিক আছে”,ঠোট উল্টে জবাব দিল রিশান।তারপর রিশান আর ইলারা বেগম চলে গেলেন।রিশান আর ইলারা বেগম চলে যেতেই রিদিম এসে ধাম করে দরজাটা বন্ধ করে দিল।এরপর দরজার সাথে হেলান দিয়ে শান্ত দৃস্টিতে মিহির দিকে তাকালো।রিদিমের এই শান্ত চাহনি যে কতটা ভয়ংকর হতে পারে তা খুব ভালো করেই জানে মিহি।একটা শুকনো ঢোক গিলে পরবর্তীতে আসা ঝড়ের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করে নিল সে।
“একটা কথা পরিষ্কার করে বলে দিচ্ছি মিহি।তোমাকে আমি বিয়ে করেছি শুধুমাত্র রিশানের জন্য।রিশানের একজন মায়ের দরকার।আমার আমার মায়ের মতে রিশানের জন্য তোমার থেকে ভালো মা আর কেউ হতে পারে না।তাই শুধুমাত্র রিশানের মুখের দিকে তাকিয়ে আমি বিয়েটা করেছি।স্ত্রী হিসেবে তোমার প্রাপ্য সব অধিকারই তুমি পাবে।তবে “ভালোবাসা” নামক জিনিসটা কখনও আমার থেকে আশা করো না।আশা করি বুঝতে পেরেছো”।একনিঃশ্বাসে কথাগুলো বললো রিদিম।যেন আগে থেকেই এসব বলার জন্য প্রস্তুত ছিল সে।কিন্তু তার এই কথাগুলো মিহির উপর যে কিরকম প্রভাব ফেলেছে তা শুধু মিহিই জানে।কোনোমতে নিজের কান্না আটকিয়ে ধীর গলায় উত্তর দিল সে,
“হুম।বুঝেছি।”
“গুড।বুঝতে পারলেই ভালো।”
এই বলে বিছানার একপাশে এসে শুয়ে পড়লো রিদিম।
“আলমারির ভিতরে কোলবালিশ আছে।শুয়ে পড়ার আগে কোলবালিশটা আমাদের মাঝখানে রেখে দিও।”
“আর কিছু বলবেন??”
“না”।
মিহি ধীরে ধীরে উঠে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিল।এরপর রিদিমের কথামত আলমারির থেকে কোলবালিশ নিয়ে এসে তার আর রিদিমের মাঝে রেখে দিল।এরপর সে খাটের অপর পাশে শুয়ে পড়লো।কিন্তু কিছুতেই ঘুম আসছে না মিহির।তাই সে অন্যদিকে ফিরলো।খুবই সুক্ষ্মভাবে রিদিমকে পর্যবেক্ষণ করছে মিহি।ঘুমন্ত অবস্থায় কতটা মায়াবি লাগছে রিদিমকে।কি অদ্ভুত নিয়তি!!আজ থেকে ৫ বছর আগে যেই মানুষটার খুশির জন্য এই দেশ ছেড়ে বিদেশে পাড়ি দিতে হয়েছিল মিহিকে আজ সেই মানুষটাকেই নিজের জীবনসঙ্গী হিসেবে পেয়েছে মিহি।একসময় এই মানুষটার ভালোবাসা চেয়েও পায় নি মিহি আর আজ এই মানুষটার ভালোবাসা পেয়েও পাচ্ছে না সে।আগামী দিনগুলোতে কি হতে চলেছে তা জানা নেই মিহির।তবে সে শুধু এটুকুই চায় যে এই রিদিম নামক মানুষটা তাকে একটু ভালোবাসুক।আর কিচ্ছু লাগবে না তার।
______________________________________
সূর্যের আলো এসে মুখের উপর পড়তেই ঘুম ভেঙে গেল রিদিমের।আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসলো সে।পাশে তাকাতেই মিহির ঘুমন্ত চেহারাটা চোখে পড়লো রিদিমের।ঘুমন্ত অবস্থায় অনেক আবেদনময়ী লাগছে মিহিকে।কিন্তু না,এইবার আর কারোর মায়ায় জড়াবে না রিদিম।একবার মায়ার বাধনে আবদ্ধ হয়ে নিজের সবকিছু হারিয়েছে সে।এখন শুধু তার কাছে রিশান আছে।তাই আরও একবার নিজেকে মায়ায় বেড়াজালে আবদ্ধ করে রিশানকে হারাতে পারবে না সে।তাই অতি দ্রুত মিহির দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে নিল সে।এরপর উঠে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিল সে।পানির শব্দ কানে যেতেই ঘুম ভেঙে গেল মিহির।আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসলো সে।খেয়াল করলো রিদিম তার পাশে নেই।ওয়াশরুম থেকে পানির শব্দ আসছে।তার মানে রিদিম ফ্রেশ হতে গেছে।মিহি বিছানা থেকে নেমে খুব সুন্দর করে বিছানা গুছিয়ে রেখে দিল।হঠাৎ দরজায় কেউ নক করতেই মিহি নিজের মাথায় ঘোমটা টেনে নিল।তারপর গিয়ে দরজা খুললো।দরজা খুলতেই একজোড়া ছোট্ট কোমল হাত জড়িয়ে ধরলো তাকে।রিশানকে দেখে একটা মিষ্টি হাসি উপহার দিল মিহি।পরম মমতার সহিত রিশানকে কোলে তুলে নিল মিহি।রিশানের গালে একটা চুমু খেল সে।
“গুড মর্নিং মাম্মাম। ”
“গুড মর্নিং ডিয়ার।ঘুম কেমন হলো তোমার রিশান সোনা??”
“হুম ভালো।কিন্তু তোমাকে আর পাপাকে মিস করেছি।দিদা আমাকে তোমাদের কাছে আসতেই দিচ্ছিলো না।”
“সমস্যা নেই সোনা।আজকে তুমি আমাদের কাছেই ঘুমিও কেমন!!”
“ইয়েএএএ!!!আজকে অনেক মজা হবে।তুমি আমাকে গল্প শুনিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেবে তো মাম্মাম?? ”
“অবশ্যই। আমার লক্ষ্মীসোনাকে আমি অনেক অনেক গল্প শোনাবো।”
“ইইইইইইই!!!কি মজা!!!” হাত তালি দিতে দিতে বললো রিশান।
রিশানকে এভাবে হাসতে দেখে খুব ভালো লাগছে মিহির।প্রথম যখন রিশানকে দেখেছিল ছেলেটার মন খারাপ ছিল।আজকে ওকে খুশি দেখে আনন্দ হচ্ছে মিহির।
“গুড মর্নিং পাপা।”
রিশানের কথা শুনে পিছে ঘুরলো মিহি।দেখলো রিদিম দাঁড়িয়ে আছে।মনে হচ্ছে এইমাত্র গোসল করছে।চুল থেকে এখনও টপটপ করে পানি পড়ছে।রিদিম একটা ব্ল্যাক কালার টাউজার আর গ্রিন কালার টি-শার্ট পড়ে আছে।দেখতে খুব সুন্দর লাগছে।আরও একবার নতুন করে এই মানুষটার প্রেমে পড়ছে সে।রিদিম এগিয়ে এসে মিহির কোল থেকে রিশানকে নিল।
“গুড মর্নিং মাই সন।ব্রেকফাস্ট করেছো??”
“নো পাপা।আমি তো আজকে মাম্মামের হাত থেকে খাবো।”
রিদিম একবার মিহির দিকে তাকালো।নিজের ব্যাগ থেকে জামাকাপড় বের করছে মিহি।
“ঠিক আছে।তো চলো এখন ডাইনিং টেবিলে গিয়ে বসি।মাম্মাম ততক্ষণে ফ্রেশ হয়ে আসুক।”
“ওকে পাপা।”
এরপর রিদিম আর রিশান খেতে গেল।আর মিহি গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিল।
_______________________________________
কমিউনিটি সেন্টারে একে একে গেস্টরা আসতে শুরু করেছে।রিদিম সব গেস্টদেরকে স্বাগতম জানাচ্ছে।রিদিম একটা ব্লু কালার স্যুট পড়েছে।রিশানও নিজের বাবার সাথে মিলিয়ে ব্লু কালার স্যুট পড়েছে।বাবা-ছেলেকে দেখতে একদম একইরকম লাগছে।মিহি তো মুগ্ধ নয়নে রিদিম আর রিশানকে দেখছে।মিহি একটা ব্লু কালার লেহেঙ্গা পড়েছে।তাকেও অসম্ভব সুন্দর দেখাচ্ছে।আজ রিদিম ও মিহির বৌভাতের অনুষ্ঠান।খুব সুন্দর ভাবেই অনুষ্ঠান সম্পন্ন হলো।রিদিমের ফ্রেন্ডরা তো মিহিকে নিয়ে প্রচুর জ্বালিয়েছে রিদিমকে।যদিও রিদিমের খু রাগ হচ্ছিল।কিন্তু ভদ্রতার খাতিরে তাদের কিছুই বলে নি সে।একপর্যায়ে ফটোগ্রাফার তাদের দুজনের কাপল পিক তুলতে চাইলে কিছুতেই স্বীকার হয় নি রিদিম।কিন্তু পরে রিশান জোর করেছিল বলে রিদিম মিহির সাথে কাপল পিক তুলতে বাধ্য হয়।ফটো তোলার সময় অনেকটাই কাছাকাছি ছিল রিদিম আর মিহি।এমনটা হওয়ায় মিহির মনে এক আলাদা অনুভূতি হচ্ছিল।কিন্তু সেই অনুভূতিকে মনের মধ্যেই রেখে দিয়েছিল সে।
_____________________________________
বৌভাতের অনুষ্ঠান শেষে নিয়ম অনুযায়ী রিদিম আর মিহিকে মিহিদের বাড়িতে যেতে হবে।তাদের সাথে রিশানও যাবে।
মিহিদের বাড়িতে,
নতুন মেয়ের জামাইকে সাদরে গ্রহণ করলেন মিহির মা মিনতি বেগম।নিজের মেয়ের জামাই এর আদর-যত্নে কোনো অংশে কমতি রাখলেন না তিনি।রিশানকেও একদম নিজের নাতির মতোই আদর করেছে মিহির মা-বাবা।খাওয়া-দাওয়া শেষে মিহির মা মিহিকে বললেন রিদিম ও রিশানকে নিয়ে মিহির রুমে নিয়ে যেতে।মিহিও মায়ের কথামত রিদিম আর রিশানকে তার নিজের রুমে নিয়ে গেল।কিন্তু রুমের সামনে যেতেই মিহির কানে এলো,
“নিজের জামাইকে এনেছিস ভালো কথা।তাই বলে নিজের সৎ ছেলেকেও আনবি!!”
চলবে…………………..
Khatarnak Isq Part-13 and Last part
#Khatarnak_Isq.[Impossible Love]
#Sumaiya_Moni.
#Part_13.[ অন্তিম পর্ব ]
_______________________
দিন শেষে রাত হয়ে এলো।চার দিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার। চাঁদের ছিঁটেফোঁটাও নেই আকাশে। এদিকে যুদ্ধের জন্য এলেন ও জ্বীন রা প্রস্তুত।ভ্যাম্পায়ার রাজ্যের বাহিরে সবাই এক জোট হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এলেন সবাইকে বলে কয়ে দিচ্ছে। সবাই প্রস্তুত আছে। নিজের বিশাল ভ্যাম্পায়ার ও জ্বীন সৈন্য নিয়ে যুদ্ধের উদ্দেশ্য গেল এলেন।চোখে ভয়ংকর রাগ।
অন্যপ্রান্তে..
স্যাম নেকড়েদের নিয়ে জিনানের সাথে হাত মিলিয়েছে। তারাও যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত। কিন্তু তাদের চেয়ে এলেনদের লোক সংখ্যা বেশি।এটা জিনান জানত। তাই তিনি একটু চিন্তিত।
-“জিনান আপনি এত টেনশন নিবেন না। আমাদের শক্তি দিয়ে মারব এলেনকে।” স্যাম বলে।
-“তুমি বুঝতে পারছো না। এলেন কোনো সাধারণ ভ্যাম্পায়ার নয়। ভ্যাম্পায়ার মন্সটার। আমরা ওর সামনে কিছুই না। খুব শক্তিশালি এলেন।” টেনশন নিয়ে কথাটা বললেন।
-“আহহ! আপনি এত টেনশন করবেন না। আমাদের কাছে কায়রা আছে। এলেনকে নত হতেই হবে আমাদের কাছে।”ইয়ান বলে।
-“হুম! কায়রাকে দিয়ে এলেনকে জব্দ করব। ”
-“সব কিছু এতটা সহজ না!” এলেন উড়ে তাদের সামনে নিচে নামতে নামতে বলে কথাটা।
তারা চমকে যায় এলেনকে দেখে। স্যাম এলেন নামটা মুখে উচ্চারণ করতেই মুখের ভেতর রুপোর তৈরি তলোয়ার ঢুকিয়ে দেয়। স্যাম মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। এলেন জিনান ও ইয়ানের দিকে হিংস্র চোখে তাকিয়ে বলে,
-“এবার তোদের পালা।”
-“আয় দেখি কে কাকে মারে।” বলেই জিনান, ইয়ান ঝাঁপিয়ে পড়ে এলেনের উপর। তিন জনের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়ে গেছে। বাহিরেও তুমুলযুদ্ধ শুরু হয়েছে।
আলফি আস্তে আস্তে মাথায় হাত দিয়ে দেখল কেটে গেছে। ওঠে বসতেই নিজেকে কোনো এক শক্তির দ্বারা আবদ্ধ থাকতে দেখে নিজেকে। যার কারণে এক পাও সামনে যেতে পারছে না। বাহিরে প্রচন্ড শব্দ হচ্ছে। মনে হচ্ছে যুদ্ধ চলছে। আলফি নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে। নিজের শক্তি দিয়ে বার বার বেঁধে রাখার শক্তিকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু হচ্ছে না। হঠাৎ খট করে একটা শব্দ হয়। আলফি সামনে তাকিয়ে দেখে এরোন এসেছে। এরোন কোনো কথা না বলে রুপোর তৈরি তলোয়ার দিয়ে চার দিকে আঘাত করতেই আলফির শরীর হালকা হয়ে যায়। আলফি মুক্ত হয়ে যায়। মুক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আলফি এরোনকে জিজ্ঞেস করে,
-“বাহিরে কী হচ্ছে এরোন ভাইয়া?”
-“যুদ্ধ!”
আলফি অবাক হয়ে যায়। বলে,
-“যুদ্ধ! ”
-“হ্যাঁ! এসো আমার সাথে।”
আলফি বের হবার আগে ইমতিয়াজকে মুক্ত করে বের হয়। আলফি বাহিরে নজর ফেলতেই রূপপরিবর্তন করে ফেলে। হিংস্র পরীর রূপ ধারণ করে নিজের জ্বীনি তলোয়ার নিয়ে হামলা করে নেকড়ে ও দুষ্ট জ্বীন দের উপর। ভ্যাম্পায়ার ও জ্বীনরা আলফিকে দেখে যুদ্ধ থামিয়ে তাকিয়ে থাকে। আলফি এক এক করে ভ্যাম্পায়ার ও জ্বীনদের মেরে ফেলছে। সাথে এরোন,ইয়াঙ্কও।
এইপ্রান্তে….
এলেন এখনো ইয়ান ও জিনানের সাথে মারামারি করছে। তারা দু’জন এলেনের সাথে পেরে উঠছে না। এলেনের শক্তির কাছে দুষ্ট জ্বীনের শক্তি কিছুই না এমনটা মনে হচ্ছে। মারামারির এক পর্যায় আলফি সেখানে উপস্থিত হয়। আলফিকে দেখে ইয়ান তেড়ে আসে ওর কাছে। এলেন চিল্লিয়ে আলফিকে বলে,
-“আলফি তুমি এখান থেকে চলে যাও। আমি একাই ওদের সাথে লড়াই করবো।”
-“নাহ!”
বলেই আলফি ইয়ানের সাথে মারামারি করতে থাকে। চারজনের মধ্যে তুমুল মারামারি চলতে থাকে। ইয়ান,জিনান এক পর্যায় শক্তি হারিয়ে দুর্বল হয়ে যায়। আলফি এই সুযোগে তলোয়ার দিয়ে প্রথমে ইয়ানের বুকে গেথে দেয়। ফের ঘুরে গিয়ে জিনানের বুকে ঢুকিয়ে দেয়। তাঁদের মৃত্যু হয়ে যায়। কালো ধোঁয়ার মতো তাঁদের দেহ বাতাসে মিশে যায়।
আলফি নিচের দিকে তাকিয়ে আছে হাতে তলোয়ার নিয়ে। চোখের কোণায় পানি। যাকে এতদিন মামা বলে ডেকেছে। যার আদরে বড় হয়েছে তাকে আজ নিজ হাতে মেরে ফেললো। নাক টেনে চোখের পানি মুছে ফেলে। নিজেকে শক্ত করে তলোয়ার মুঠিবদ্ধ করে দাঁড়ায়। এলেন পিছন থেকে হেঁটে আলফির কাছে আসে।
যুদ্ধ শেষ,সব কিছু শান্ত হয়ে গেছে । আলফি ওদের জ্বীনজাতিদের নিয়ে রাজ্যে ফিরে আসে। সাথে এলেন,এরোন ইয়াঙ্কে নিয়ে। ভ্যাম্পায়ার রা এখন জ্বীনদের বন্ধু বলা যায়। ইমতিয়াজ জ্বীন ও ভ্যাম্পায়ার দের সামনে দাঁড় করিয়ে ঘোষণা করে,
-“আমাদের রাজ্যের শাহজাদী কায়রার সাথে ভ্যাম্পায়ার রাজ্যের কিং আরলেনের বিবাহ হবে।”
কথাটা শুনে আলফি,এলেন ইমতিয়াজের দিকে তাকায়। ওরা বুঝতে পারছে না এটা কিভাবে সম্ভব।
ইমতিয়াজ হেসে বলে,
-“তোমরা অবাক হয়েছো তাই তো? সত্যিটা শোনো তাহলে। আলফির বাবা ছিল জ্বীন। আর মা ছিল ভ্যাম্পায়ার। তারাও ভালোবেসে বিয়ে করেছেন। তাঁদের বিয়ের পর অনেক ভ্যাম্পায়ার ও জ্বীনরা ক্ষেপে যায়। যার কারণে তারা বেশিদিন এক সাথে থাকতে পারে না। এবিলের বাবার হাতে মৃত্যু হয় তাঁদের। জিনানকে বিশ্বাস করে মামা বলে দাবী করে তাঁর হাতে তুলে দেই। কিন্তু তিনি তোমাকে তাঁর খারাপ কাজে ব্যবহার করতে চেয়েছিল। কালো জাদুর মাধ্যমে তোমাকে মেরে জ্বীনি তলোয়ার পেতে চেয়েছিল। কিন্তু তা আর হলো না।”
আলফি,এলেন অবাক হয়ে যায় তাঁর কথা শুনে। শুধু তারা নয় এরোনো অবাক হয়। কিন্তু ইয়াঙ্ক সব জানত। ইমতিয়াজ আরো বলে,
-“এই যে ইয়াঙ্ককে দেখছো। ওনি তোমার আসল মামা। তোমার মা এলিসার আপন ভাই। ”
আলফি ইয়াঙ্কের দিকে তাকায়। ইয়াঙ্ক মৃদু হাসে। আলফি মামা বলে ডেকে তাকে জড়িয়ে ধরে।
-“তাঁর মানে আলফি অর্ধেক ভ্যাম্পায়ার,অর্ধেক পরী?” এলেন প্রশ্ন করে।
-“হ্যাঁ!”
-“এই জন্য আমি আলফির রক্ত খেতে পারিনি। কারণ আলফির শরীরে ভ্যাম্পায়ারের শক্তি ছিল।”
-“হ্যাঁ,আরলেন।”
এলেনের কাছে সবটা খোলাসা হয়। বুঝতে পারে সব।
-“কায়রা আমাকে মাফ করে দেও। আগে বলতে গিয়েও বলতে পারিনি আমি।”
-“মাফ চেয়ে আমাকে ছোট করবেন না চাচ্চু। আপনি কোনো অন্যায় করেননি।”
ইমতিয়াজ মুচকি হেসে আলফির মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।
দুই দিন পর।
রাতে…
আজ এলেন ও আলফির বাসর রাত। আলফি বিছানায় বসে আছে চুপটি করে। খুব ধুমধাম ভাবেই ওদের বিয়ে হয়েছে। ছিল না কোনো কিছুর কমতি। এলেন একটি গোলাপ ফুল হাতে নিয়ে এসে বসে। আলফির দিকে তাকিয়ে থুতনিতে হাত রেখে উঁচু করে।
-“আলফি? তোমাদের ইসলামে কী যেন বলে? ও হ্যাঁ! মাশাআল্লাহ! ”
আলফি হেসে দেয়। এলেনও ঠোঁটে হাসি রেখে বলে,
-“কী? ঠিক হয়নি?”
-“হয়েছে।”
এলেন গোলাপ ফুল আলফির দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,
-“সবার ভালোবাসার মতো আমাদের ভালোবাসাটা এক নয়। আমাদের ভালোসাটার নতুন নাম দরকার। আর সেই নামটা হবে #Khatarnak_Isq. কী নাম ঠিক আছে?”
আলফি প্রত্যুত্তরে মুচকি হাসে। এলেনের হাত থেকে ফুলটা নেয়। এলেন আলফিকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে বলে,
-“আই লাভ ইউ কায়রা। ”
-“লাভ ইউ টু আরলেন।”
দুজনে ভালোবাসার সমুদ্রে ডুব দেয়। নিজেদের ভালোবাসায় মগ্ন হয়ে যায়।এক হয়ে যায় জনম জনমের জন্য।
-“শালার এলেন বিয়ে করে মজা করে বাসর ঘর করছে। আর আমি এখনে সিংগেল রয়ে গেলাম।” এরোন বিরক্ত নিয়ে কথাটা বলে। লিনার এরোনের পিছনে দাঁড়িয়ে কথাটা শুনে হাসতে থাকে।এরোন ঝড়ের বেগে লিনারের সামনে এসে মুখে কাছে গিয়ে বলে,
-“আমারও একদিন সময় আসবে। তখন তোমার এই কুটকুটি হাসি ফুসসস হয়ে যাবে। ডাকলেও দেখা মিলবে না হুহ!”
লিনার এরোনের কপালে এক আঙুল রেখে দূরে সরিয়ে বলে,
-“আগে আসুক সেই দিন। তারপর দেখা যাবে নে।” কিছুটা ভাব নিয়ে বলে লিনার।
-“ওক্কে বেবি….! হবে।”
-“কী হবে?”
-“প্লে!”
-“শয়তান!”
-“আরে না আমি ভ্যাম্পায়ার!” হেসে দিয়ে লিসারকে জড়িয়ে ধরে। লিনারও হেসে দেয়।
সমুদ্র পর্যন্ত পৌঁছানোর জন্য নদী যেমন নিজেই নিজের রাস্তা খুঁজে নেয়। সত্যিকারের ভালোবাসাও ঠিক তেমন,দেখতে যতোই অসম্ভব,ভয়ংকর হোক না কেনো। নিজেই নিজের পূর্নতা পাবার রাস্তা খুঁজে নেয়।
সমাপ্ত।
Khatarnak Isq Part-12
#Khatarnak_Isq.[Impossible Love]
#Sumaiya_Moni.
#Part_12.
_______________________
খুশিতে আত্মহারা এলেন। ভাবতে পারেনি আলফি ওকে ভালোবাসে। পার্টি থেকে বাসায় এসে আলফি বের হয় এলেনের সাথে দেখা করার জন্য। আজ তারা অনেক খুশি। তাঁরা ভরা আকাশ জুড়ে উঁড়ে বেড়াচ্ছে এক জন আরেক জনের হাত ধরে। এলেন হাত ছড়িয়ে জোরে চিৎকার করে বলে,আই লাভ ইউ আলফি। আই লাভ ইউ। আলফিও জোরে চিল্লিয়ে এলেনকে ভালোবাসি বলে। দু’জন দু্জনকে জড়িয়ে ধরে।
মাটিতে দাঁড়িয়ে ইয়ান সব কিছু দেখছে। রাগ ক্ষোভ তার মনের মধ্যে বাসা বেঁধেছে। পার্টিতে সময় থামিয়ে দেওয়ার পর সবাই স্যাচু হয়ে বসে থালকেও ইয়ান স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু এলেন,আলফিকে সেটা বুঝতে দেয়নি। চুপ করে আলফির কথা গুলো শুনে গেছে। এখন ওদের এক সাথে দেখে রেগেমেগে আগুন হয়ে আছে ইয়ান। আলফি তার রুল ভঙ্গ করেছে। তার সাথে ওর মামা জিনানের কথা অমান্য করেছে। ওদের প্রেম লিলা না দেখে ইয়ান চলে আসে বাসায়। জিনানকে সবটা খুলে বলে। জিনানও আলফির উপর ক্ষিপ্ত হয়ে যায়। এখন কিছু বলবে না। যা বলার আলফি বাড়ি ফিরলে বলবে। অপেক্ষা করেন তারা।
-“এলেন এখন আমাকে যেতে হবে। তুমি তোমার রাজ্যে ফিরে যাও।”
-“আর কিছুক্ষণ সময় থাকো আলফি। পরে যেও।”
-“নাহ! এখনি যাব। আমার জ্বীন রাজ্যে যেতে হবে।”
-“কেন?”
-“আমার মামাকে তোমার কথা বললে বুঝবে না। তাই ইমতিয়াজ চাচ্চুকে সব বুঝিয়ে বলতে হবে আমার। তিনি আমার কথা ঠিক বুঝবেন।”
-“আমাদের ভালোবাসার কথা বলবে না তাকে?”
-“হ্যাঁ! আমাদের ভালোবাসার কথা তাকে বলব।”
-“যদি মেনে না নেয়?”
আলফি সরু নিশ্বাস ফেলে,
-“জানি না কপালে কী লেখা আছে। কিন্তু আমি তোমাকে হারাতে চাই না এলেন।”
-“আমিও চাই না আলফি।” কথাটা বলে এলেন আলফির গালে হাত দেয়। আলফি এলেনকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। কিছুক্ষণ পর ছেড়ে দেয় আলফি। এলেনকে বিদায় দিয়ে চলে আসে জ্বীন রাজ্যে। সেখানে এসে জানতে পারে ইমতিয়াজ কে পাওয়া যাচ্ছে না আজ দু দিন হলো। আলফি অবাক হয় সবার কথা শুনে। জ্বীন-পরীরা এটাও বলে এই বিষয়টা নাকি ইয়ান,জিনান জানত। অথচ,আলফিকে একটিবারও বলেনি। রাগ হচ্ছে আলফির। মনের মধ্যে কেমন যেন তাদের প্রতি সন্দেহ তৈরি হচ্ছে। আলফি তাদের উদ্দেশ্যে বলে,
-“আমি আদেশ দিলাম আপনাদের। এই জ্বীন রাজ্যে ইয়ান ও আমার মামা জিনানকে প্রবেশ করতে দিবেন না। যদি তাদের কোনো গুপ্তচর সঙ্গি এখানে থেকে থাকেন। আর পরবর্তীতে সেটা জানতে পারি। তাহলে তার মৃত্যু আমার হাতেই হবে।”
সবাই আলফির কথায় সহমত হয়। আলফি চলে আসে বাসায়।
.
.
ভ্যাম্পায়ার কিংডম…..
এলেন রাজ্যে ফিরে দেখে কিছু দুষ্ট জ্বীনরা ওদের রাজ্যে আক্রমণ করেছে। কিছু ভ্যাম্পায়ার ও জ্বীনদের লাশ পড়ে আছে চারদিক। আর তার চেয়ে বড় বিষয় কিং এবিলকে জ্বীনরা মেরে ফেলেছে। ইয়াঙ্ক রাজ্যে থাকলেও এরোনও রাজ্যে ছিল না। এলেন ওর ড্যাডের মৃত্যুতে অনেকটা ভেঙে পড়ে। হতাশ হয়ে যায় কী করবে এটা ভেবে। ইয়াঙ্ক এলেনের কাঁধে হাত রেখে বলে,
-“এলেন! এসব শাহজাদী কায়রা করিয়েছে। কায়রা চায় ভ্যাম্পায়ার রাজ্য ধ্বংস করে দিতে। ভ্যাম্পায়ারদের দুনিয়া থেকে বিলুপ্ত করে দিতে।”
এলেন ইয়াঙ্কের কথাটা শুনে তাঁর দিকে রক্তচক্ষে তাকায়। বলে,
-“কায়রা আমার ভালোবাসা। আরেকটা মিথ্যে কথা বললে আপনার দেহে জনটা থাকবে না।”
ইয়াঙ্ক এলেনের কথা শুনে চুপশে যায়। কথাটা বলে এরোনের উদ্দেশ্যে বলে,
-“এরোন! তুই রাজ্যে থাক। আমি আলফির কাছে যাচ্ছি। আমার মনে হচ্ছে আলফি বিপদে আছে।”
-“আচ্ছা যাহ তুই। আমি আছি এখানে।”
এলেন দেরি না করে পাখা মেলে উড়ে যায় আকাশে। আলফিদের বাড়িতে এসে দেখে কেউ নেই। পুরো বাড়ি ফাঁকা। ড্রইংরুমের জীনিস পত্র এলোমেলো হয়ে পড়ে আছে। এলেন প্রত্যেকটা জিনিস স্পর্শ করে দেখতে থাকে কিছুক্ষণ আগে এখানে কী হয়েছিল।
-“আলফি তুমি আমার নির্দেশ অমান্য করেছো। আরলেনকে তুমি মারোনি। ” রেগে বলেন জিনান।
-“আরলেরদের কোনো দোষ নেই। এসব যা হচ্ছে স্যামের জন্য হচ্ছে। স্যাম নেকড়েদের সাথে মিলে মানুষদের মারছে। ”
-“সত্যি,মিথ্যে তুমি কী করে জানলে? আর তুমি কী এটা ভুলে গেছো তোমার বাবা,মা কে এলেনের বাবা মেরেছে।”
-“ভুলে যাওয়ার মেয়ে আমি নই! আমি তাকে জিজ্ঞেস করবো কেনো সে আমার বাবা,মা কে মেরেছে। কী হাছিল করেছে তাঁদের মেরে।”
-“এগুলো জিজ্ঞেস করার সময় এখন নয়। ভ্যাম্পায়ারদের তুমি শেষ করে দিনে। ওদের বিলুপ্ত করে দিবে দুনিয়া থেকে।”
-“মামা,আপনি এত পাষান কবে থেকে হলেন? নাকি এত দিন মিথ্যে নাটক করেছিলেন আমার সাথে?”
-“কী বলতে চাও তুমি?” রেগে বলে জিনান।
-“এটা বলতে চাই আমি,ইমতিয়াজ চাচ্চু আজ দু দিন ধরে ঘায়েব! অথচ,আপনারা দু’জন এটা জেনেও আমাকে বলেনি কেন? কী কারণ ছিল না বলার?”
জিনান পৈশাচিক হাসি দেয়। বলে,
-“সে তো আমার কাছেই বন্দি। এখন তোকেও বন্দি করবো আমি।” বলেই আমফিকে ধরতে নিলে আলফি সরে আসে। ইয়ানও তার আসল রূপে দেখায় জিনানের মতো। আলফি ভাবতেও পারেনি ইয়ানও ওর মামার সাথে খারাপ কাজে লিপ্ত ছিল। আলফির সাথে তাঁদের দুজনার হাতাহাতি শুরু হয়ে যায়৷ আলফি বেশ শক্তিশালী হলেও তাঁদের সাথে একা মোকাবেলা করা সম্ভব হয় না। আলফি তলোয়ার আনতে নিলেই জিনান আলফিকে আটকে ফেলে কোনো এক শক্তি দিয়ে। আলফি নড়াচড়া করতে পারে না। শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। অনেক চেষ্টা করে নিজেকে ছাড়ানোর। জিনান কোনো এক দঁড়ি বের করে। আলফির গায়ে জড়িয়ে জোরে টান দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জোরে চিৎকার করে ওঠে আলফি। কিছুক্ষণের মধ্যেই নিস্তেজ হয়ে যায় আলফি।
জিনান ইয়ানকে নির্দেশ দেয় আলফিকে তাঁদের রাজ্যে নিয়ে যেতে। ইয়ান আলফিকে নিয়ে যায়। জিনানও চলে যায় সেখান থেকে।
এলেন বুঝতে পারে আলফি এখন কোথায় আছে।কারা এর সাথে জড়িত। দৌড়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। নিজের রাজ্যে ফিরে এসে আগে কিং এবিলের মৃত দেহ একটি কফিনে রেখে দেয় যত্ন সহকারে।
তারপর রাজ্যে ঘোষণা করে,
-“আজ থেকে আমি এই ভ্যাম্পায়ার কিংডমের কিং। আপনাদের সুযোগ সুবিধা দেখবাল করার ভাব আমার উপর দিন।”
আগে থেকে সবাই জানত এলেন পরবর্তীতে এই রাজ্যের কিং হবে। তাই সবাই এলেনকে মেনে নেয়।কারো কোনো আপত্তি থাকে না। আরো সবাই খুশি হয় এলেনকে কিং হিসাবে পেয়ে। এলেন কোষাগারে দাঁড়িয়ে নিজের শক্তি প্রয়োগ করে রাজ্যের চারদিক ঘেরাও করে ফেলে শক্তি দিয়ে। কিছুক্ষণ পর সবকিছু স্বাভাবিক হয়।এলেন বলে,
-” আজকের পর থেকে ভ্যাম্পায়ার ছাড়া। এই রাজ্যে কেউ প্রবেশ করতে পারছে না। শুধু পবিত্র আত্মা প্রবেশ করতে পারবে। ”
এলেন চুপ থেকে ফের চিল্লিয়ে বলে,
-“যুদ্ধ হবে। দুষ্ট জ্বীন ও স্যামের সাথে। ওদের এই দুনিয়া থেকে বিলুপ্ত করে দেবো আমরা। ”
-“এলেন আমাদের কাছে বেশি লোক নেই। কী…….।”
এলেন এরোনকে থামিয়ে বলে,
-“জানা আছে আমার। তাই জ্বীন রাজ্যে গিয়ে তাঁদের সাথে করা বলবো আমি। কায়রা এখন দুষ্ট জ্বীন জিনান ও ইয়ানের কাছে বন্দি। তাঁদের শাহজাদীকে মুক্ত করার কথা বললে তারা নিশ্চয়ই আমাদের সাহায্য করবে।”
-“সেটাই কর এলেন। তুই জ্বীন রাজ্যে যা। গিয়ে জ্বীনদের সাথে কথা বল।”
-“হুম।”
এলেন সময় বিলম্ব না করে জ্বীন রাজ্যের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। জ্বীন রাজ্য এখান থেকে অনেক দূরে। এদিকে সকাল হতে চলল। তার আগে সেখানে পৌঁছাতে হবে এলেনের। এলেন বাতাসের বেগে খুব দ্রুত দৌড়ে জ্বীন রাজ্যে পৌঁছায়। প্রথমে তারা ভ্যাম্পায়ার দেখে এলেনকে প্রবেশ করতে দেয় না। এলেন কায়রার বিপদের কথা বলে।এটা শুনে তারা এলেনকে ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়। এলেন সবাইকে এক সাথে জড়ো করে বলে,
-“আমি ভ্যাম্পায়ার কিংডমের কিং আরলেন জর্জ। আপনাদের জ্বীন রাজ্যের শাহজাদী কায়রাকে আমি ভালোবাসি। ”
এটা শুনে সবাই অবাক হয়ে যায়। যে যার মুখের দিকে তাকিয়ে তাকে। এলেন তাদের অবাক হওয়া চেয়ারা দেখে বলে,
-“আপনারা অবাক হবেন না। আমার আপনাদের কাছ থেকে সাহায্যের প্রয়োজন। কায়রাকে আপনাদের সদস্য জিনান ও ইয়ান তাদের রাজ্যে নিয়ে গেছে। তাঁদের হাত থেকে কায়রাকে মুক্ত করাতে হলে আমাদের যুদ্ধের সম্মুখীন হতে হবে। আমাদের ভ্যাম্পায়ার লোকজন সংখ্যায় কম। তাই আমি আপনাদের কাছে সাহায্য চাইতে এসেছি। জানি আমরা আপনাদের অনেক ক্ষতি করেছি। কিন্তু তাঁর প্রায়শচিত্ত করার সুযোগ টুকু আমাকে দিন আপনারা।”
এলেনের কথা শুনে সবাই কিছুক্ষণ ভাবে। তারপর সবাই এলেনের কথায় রাজি হয়। তাঁদের সাথে যুদ্ধ করার জন্য । এলেন আসার আলো দেখতে পায়। ভেতরে ভেতরে খুশি হয়। ফিরে পাবে ভালোবাসার মানুষটিকে। ধ্বংস করছে দুষ্ট লোকদের।
.
.
.
.
.
.
.
Continue To……..
Khatarnak Isq Part-11
#Khatarnak_Isq.[Impossible Love]
#Sumaiya_Moni.
#Part_11.
_______________________
হাওয়ায় ভেসে রয়েছে এলেনের দেহ। গা থেকে আলোর রশ্মি বের হচ্ছে। রুমটিতে তখনো বাতাস বইছে খুব জোরে। বইয়ের ভেতর থেকে রেড আলো বের হয়ে এলেনের গায়ে প্রবেশ করছে। ধীরে ধীরে এলেনের শরীরের ক্ষত গুলো সেরে যাচ্ছে। পুরো ক্ষত সেরে যাওয়ার পর এলেন চোখ মেলে তাকায়। শোয়া থেকে সোজা হয়ে দাঁড়ায়। এখনো হাওয়ায় ভেসে আছে। বইটি বন্ধ হয়ে যায়। এলেন উল্টো দিক ঘুরে রয়। মাথা উপরের দিকে তুলতেই চোখ জোড়া লাল দেখা যায়। সর্বশক্তি দিয়ে জোরে চিৎকার করে এলেন। সাথে সাথে এলেনের পিঠের পেছন থেকে কালো রঙের বড়সড় দুটি পাখা বেরিয়ে আসে। সামনের দিক ঘুরতেই এলেন ড্যাড,এরোন,ইয়াঙ্ক কে দেখতে পায়। তারা এলেনকে সুস্থ দেখে খুশি হয়। কিংয়ের চোখ জোড়া খুশিতে চকচক করে ওঠে। এলেন তাদের পাত্তা না দিয়ে জানালা ভেঙে বেরিয়ে যায় বাহিরে। ডাকা ঝাপটে আকাশে উড়তে থাকে।
চট করে এলেনের মনে পড়ে আলফির কথা। এলেন রাগী মুড নিয়ে আলফির বাড়ির দিকে যেতে শুরু করে।
.
.
-“আলফি আরলেনকে মারো নি তুমি?” জিনান প্রশ্ন করেন।
আলফি চুপ।
-“আলফি আমি তোমাকে কিছু জিজ্ঞেস করেছি।”
-“নাহ! মারতে পারিনি। কারণ আমার দ্বারা কাউকে হত্যা করা সম্ভব নয়।” আলফি ঝাড়ি দিয়ে বলে।
-“অসম্ভব কে সম্ভব করতে হবে। কেন বুঝতে পারছো না তুমি?”
-“মামা কিছুক্ষণের জন্য আমি একটু একা থাকতে চাই।”
-“আলফি!…”
আলফি বারান্দা থেকে ডানা ঝাপটে উড়ে যায় আকাশে। জিনানের ভীষণ রাগ হচ্ছে।
-“মামা,আপনি টেনশন করবেন না। আমি ব্যাপারটা দেখছি। আলফিকে বুঝাবো নে।”
-“আলফিকে বলো আরলেন কে যেন তাড়াতাড়ি মেরে ফেলে।”
-“জী,আমি বলব।”
জিনান রুম থেকে বের হয়ে যায়। ইয়ান বারান্দায় এসে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে,
-“কোথায় গেল মেয়েটা।”
.
.
মুখ গোমড়া করে আকাশে উড়ে বেড়াচ্ছে। উড়ে কোথায় যাচ্ছে সেটা জানে না। মনের মধ্যে যন্ত্রণা দায়ক একটি পাথর পড়ে আছে। সরে যাওয়ার কোনো ওয়ে নেই। আচমকা বাতাশের বেগে আলফিকে কেউ জড়িয়ে ধরে সামনে থেকে। আলফির চুল খোলা ছিল। মুখের উপর চুল গুলো পড়ে আছে। যার কারণে ঠিক মতো দেখতে পাচ্ছে না। হাত দিয়ে চুল সরাতে নিলেই সামনে থেকে বাতাস আসে। সব চুল মুখের উপর থেকে সরে যায়। এলেনের চেহারা আলফির সামনে স্পষ্ট হয়। আলফির কাছে বেশ অবাক লাগছে এলেনের পরিবর্তন দেখে। পিঠে ওর মতো পাখা দেখে আলফির আরো অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। এলেন গম্ভীর কন্ঠে বলে,
-“কী? চিনতে কষ্ট হচ্ছে?”
আলফি কপাল কুঁচকে ফেলে।
-“আমি সেই! যাকে অর্ধেক মেরে ফেলেছিলে।”
আলফি চুপ করে আছে।
-“কেনো মেরেছিলে আমায়? তোমার মামার কথা শুনে?”
কথা বলার ভাষা আলফির নেই। এলেন সব কথা শুনে ফেলে আলফির বাসায় এসে।
-“মারতে যখন চেয়েছিলে তখন মেরে ফেলোনি কেন? কিসের আপত্তি ছিল আমাকে মারতে?”
আলফি এবারও চুপ।
-“একটি বারও যাচাই করে দেখলে না,কে বা কারা ঐ নিরীহ মানুষদের মেরেছে।”
আলফির কপালে ভাজ পড়ে।
-“স্যাম,আমাদের রাজ্য থেকে বেরিয়ে নেকড়েদের সাথে যোগ হয়েছে। সে এসব তান্ডব বাঁধিয়ে যাচ্ছে।”
এলেন আলফিকে ছেড়ে দেয়। উল্টো দিক ফিরে বলে,
-“আমি আগের মতো সাধারণ ভ্যাম্পায়ার আর নই! ভ্যাম্পায়ার মন্সটার।”
আলফি আতংক নিয়ে এলেনের দিকে তাকায়।
এলেন আলফির চোখের দিকে তাকিয়ে মৃদ কন্ঠে বলে,
-“তুমি আমাকে ভালোবাস না জানি। কিন্তু আমি তোমাকে নিজের থেকে বেশি ভালোবাসি। হ্যাঁ! এটাও জানি আমাদের মিল হবে না। আগে তুমি বলতে। এখন আমি বলবো। আমার কাছ থেকে দূরে থেকো আলফি। ইউ টেক কেয়ার! ”
এলেন চলে যায় কথা শেষ করে। আলফি এলেনের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে চোখের পানি ফেলতে থাকে। এলেনেরও যে কষ্টে বুকটা ভার হয়ে গেছে। আলফি চিৎকার করে কাঁদতে থাকে। এলেনের কথা গুলো শুনে নিজেকে ঠিক রাখতে পারছে না। খুব কষ্ট হচ্ছে।
এলেন রাজ্যে ফিরে আসে। কক্ষে এসে সোফায় গা এলিয়ে দেয়। মনের মধ্যে পাথর পড়ে আছে। সরে যাওয়ার কোনো উপায় নেই। এরোন এলেনের কক্ষে এসে পাশে বসে মৃদ কন্ঠে জিজ্ঞেস করে,
-“শেষ করে দিলি ভালোবাসা।”
এলেন চুপ করে আছে।
-“ভালোবাসা জাত-ধর্ম দিয়ে হয় না।”
-“আই নো…।” এলেন গম্ভীর কণ্ঠে বলে।
-“তাহলে?”
-“আলফি আমাকে ভালোবাসে না।”
-“নিজ মুখে বলেছে?”
-“নাহ!”
-“তাহলে তোর ভুল ধারণা।”
-“সঠিক!”
-“উঁহু! ভুল। লিনা আমাকে ভালোবাসে। সেটা আমি যখন ওঁকে কঁড়া ভাবে জিজ্ঞেস করি তখনি বলে দিয়েছে। এই জন্য লিনা আমাকে দেখে হাসত।”
-“তোর সত্যিটা জানিয়েছিস?”
-“হ্যাঁ! তবে প্রথম ভয় পেলেও এখন ওর দুনিয়া জুড়ে আমি আছি।”
এলেন বাঁকা হাসে। বলে,
-“তুই লাকি!”
-“আমার থেকে তুই বেশি লাকি।”
এলেন তাচ্ছিল্য হাসে।
-“হাসিস না!আমি যদি মানুষকে ভালোবাসতে পারি। তাহলে তুই কেন একজন পরীকে ভালোবাসতে পারবি না। হবে না হয় এটা #Khatarnak_Isq. সমস্যা কী?”
Khatarnak_Isq কথাটা শুনে আলফির কথা কথা গুলো মনে পড়ে। আলফি ওঁকে এই কথা গুলো বলেছিল। এলেন সোজা হয়ে বসে। ঠোঁটে বাঁকা হাসি ফুটিয়ে বলে,
-“নিউ প্রেমের কাহিনি হবে #Khatarnak_Isq.কিন্তু তার আগে স্যামের খবর নিতে হবে।” বলেই ওঠে যায় এলেন। এরোন এলেনের কথা ঠিক বুঝতে পারেনি।
___________________
সকালে………
ঘুম থেকে ওঠতে আলফির দেরি হয়ে যায়।ফোনের কথা মনে পড়তেই মনে পড়ে কাল রাত থেকে ফোনের কোনো খোঁজ খবর ছিল না। বালিশের পাশ থেকে ফোনটি নিতেই জনের নাম্বার স্ক্রিনে ভেসে ওঠে। আলফি কল ব্যাক দিতেই জন রিসিভ করে বলে,
-“হেই আলফি! আজ রাতে আমাদের বাড়িতে এসো। ছোট্ট পার্টির আয়োজন করা হয়েছে। ”
-“কিসের?”
-“এমনি!চলে এসো।”
-“নট!”
-“হোয়াই?”
-“কোনো কারণ নেই।”
-“তাহলে আসতে হবে।”
-“কিন্তু….হ্যালো..হ্যা..বদ ছেলেটা লাইন কেটে দিয়েছে।”
আলফি ছোট্ট নিশ্বাস ফেলে। রাতে বলা এলেনের কথা মনে পড়তেই বুকের মধ্যে মোচড় দিয়ে ওঠে। তাড়াতাড়ি করে বিছানা থেকে নেমে যায়। কিছুতেই এলেনের কথা মনে করতে চায় না আলফি। ভুলে যাওয়াই শ্রেয়।
.
.
কাল রাতে কয়েকজন নেকড়েদের মৃত দেহ পাওয়া গেছে জঙ্গলে। স্যামের কাছে এ খবর পৌঁছে গেছে খুব দ্রুত। এলেনের নতুন রূপের ব্যাপারে সবার কাছেই অজানা। এটা গোপন রাখতে বলেছে কিং এবিল। স্যাম ভেবে পাচ্ছে না কে এই কাজ করল। কে মারল ওর লোকদের। নেকড়ে রা ভয় আছে। যখন তখন তাঁদের মৃত্যু হতে পারে এই ভেবে।
স্যামও বেশ আতঙ্কের মধ্যে আছে। লোক বাড়াতে হবে নিজের দলে। তার জন্য ভ্যাম্পায়ার লাগবে। স্যাম নেকড়েদের আদেশ দেয় মানুষ ধরে নিয়ে আসতে। তাঁদের কে ভ্যাম্পায়ার বানাবে স্যাম। এবং নিজের দলে সামিল করবে।
______________
লিনা,ম্যারি,এনা আলফির কাছে আসে। এখান থেকেই নাকি তারা পার্টিতে যাবে। আলফি যাওয়ার জন্য রাজি ছিল না। ওদের তিনজনের জোরাজোরিতে রাজি হয়ে যায়। আলফি এখন নিরুপায়। তবে আলফি খেয়াল করে লিনা কেমন যেন অন্যরকম ব্যবহার করছে। এনা,ম্যারির আড়ালে লিনাকে রুমে নিয়ে এসে জিজ্ঞেস করে,
-“তুই কী এরোনকে লাভ করিস?”
-“তুই বুঝলি কী করে?” অবাক হয়ে বলে লিনা।
আলফি কপালে হাত দেয়। আসলে আলফি না জেনে কথাটা বলেছিল জাস্ট বারি দেওয়ার জন্য। কিন্তু লিনা সত্যি বলেদিয়েছে।
-“কি হলো বল। তুই কী করে জানলি?”
-“আমি জানি না। জাস্ট তোকে জিজ্ঞেস করলাম। কিন্তু তুই সত্যি টা বলে দিলি।”
-“কী বলিস। যাক তুই জানলে সমস্যা নেই।” মৃদ হেসে বলে লিনা।
-“এরোনের সত্যিটা জানিস তো?”
লিনার কপাল কুঁচকে যায়। বলে,
-“তুই এটাও জানিস?”
-“হ্যাঁ।”
-“যেনে গেলি এরোন ভ্যাম্পায়ার। আর কি কি জানিস তুই বল। আমার মনে হয় তুই মানুষ না।”
-“আসলেই! আমি মানুষ না।”
লিনার চোখ বড় বড় হয়ে যায়। আলফি ফিক করে হেসে দিয়ে বলে,
-“আমি জ্যোতিষি!”
-“হাট!”
-“এই যাহ! বিশ্বাস করলি না।”
-“মোটেও না। এখন বল তুই এরোনের সত্যি টা কিভাবে জানলি?”
-“ঐযে,তোকে খোঁচা দিয়ে।”
-“শীট! তুই অনেক চালাক আলফি।”
-“মানলি তো!” ভাব নিয়ে বলে আলফি।
-“হু। বাট আলফি এরোনের ব্যাপারে কাউকে বলিস না। ও খারাপ ভ্যাম্পায়ার না।”
-“তাই।”
-“হুম! আমি সত্যিই এরোন কে খুব ভালোবাসি। ওঁকে ছাড়া নিজেকে অন্য কারো সাথে ভাবতে পারি না। ভ্যাম্পায়ার তাতে কি। আমার ভালোবাসা সত্যি!”
লিনার আবেগি কথা শুনে আলফি চুপ হয়ে যায়। মনে পড়ে যায় কাল রাতের এলেনের কথা। লিনা যদি মানুষ হয়ে এরোনকে ভালোবাসতে পারে। তাহলে আমাদের সমস্যা কী?
-“আলফি! আমার কথা শুনছিস তুই?”
-“হ্যাঁ… হ্যাঁ। ”
-“বুঝতে পারছিস তো আমি কতটা ভালোবাসি এরোনকে।”
-“হুম।”
তখনি ওদের মাঝে এনা এসে উপস্থিত হয়। খুশি মুডে বলে,
-“আলফি,আলফি…আমি পাগল হয়ে যাব।”
আলফি সরু চোখে তাকিয়ে বলে,
-“যা! তাহলে।”
-“আরে দূর! কথাটা শোন। এলেন আমাকে কল দিয়ে বলেছে পার্টিতে আসলে কালো রঙের ড্রেস পড়ে আসতে। এলেনও নাকি কালো রঙের পোশাক পড়ে আসবে। ”
এনার কথা শুনে আলফির রাগ লাগছে। তারপরও হেসে হেসে বলে,
-“তারপর! ”
-“দেখ! এখন তারপর তারপর শুরু করবি না।তোর স্বভাব ভালো না।”
-“তারপর! ”
-“আলফি?”
-“সামনে দাঁড়িয়ে আছি দেখতে পাচ্ছিস না?”
-“দোস্ত প্লিজ! এমন করিস না। আমি এলেনকে লাভ করি। ওঁকে না পেলে আমি মরে যাব।”
-“ওভার অভিনয়! ” বলেই আলফি লিনা হাসতে লাগল।
এনা রাগে ফোম ফোম করছে।বলে,
-“থামবি না তোরা।”
-“আচ্ছা বল।”
-“আমি আজ এলেনকে প্রপোজ করবো।”
-“লিনা তুই এনার কথা গুলো শুনে রাখ। পরে আমাকে বলিস ওকে।” বলেই আলফি চলে যায়।
লিনা এনার দিকে তাকিয়ে বলে,
-“হুম তারপর বল এনা।”
-“তারপর আমার মাথা।”
-“সাথে এলেনেরটাও।” বলেই দৌড় লিনা।
-“লিনা!”
.
আলফি অন্য রুমে এসে হেসে লুটোপুটি খাচ্ছে। কারণ আলফি ভালো করেই জানে এলেন এখন যা করবে সব আলফিকে জেলাস ফিল করার জন্য করবে। আলফি নিজেও কম কিসে। এলেনকে ওর কাছ থেকে সরানোর এটাই ভালো চান্স। ইয়ানের রুমে এসে রাতের পার্টির কথা বলে। ইয়ানকেও সাথে নিয়ে যাবে আলফি। এবার হবে খেলা। ভেবেই আলফির হাসি পাচ্ছে।
রাতে……..
তিন বান্ধবী এক প্রকার যুদ্ধ করেই ইয়ারকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়। জনের বাড়িতে এসে দেখে এলেন,এরোন আগে থেকেই উপস্থিত। আলফি ইচ্ছে করেই এলেনের দিকে তাকায়নি। এলেন মুড নিয়ে বসে আছে সোফায়। এনাকে ইশারায় কাছে আসতে বলে এলেন। এনা খুশিতে গদগদ করে এলেনের পাশে বসে। আলফির তাতে কিছু যায় আসে না। এলেনকে দেখিয়ে আলফি ইয়ানের গা ঘেঁষে বসে। সবাই একে অপরের সাথে কথা বলতে থাকে। এলেন এনার হাত ধরে আলফিকে দেখিয়ে। আলফি ওর মাথাটা ইয়ানের কাঁধে রাখে। এলেন এনার গা ঘেঁষে বসে। আলফি হাই তুলে ইয়ানের হাত জড়িয়ে ধরে।
এলেন ভেতরে ভেতরে রাগে বোম হয়ে যাচ্ছে। একটু নাড়া দিলেই ফেঁটে যাবে। আলফির তাতে কিছু যায় আসে না।
এলেন এক পর্যায় বসে না থেকে এনাকে নিয়ে কাপল ডান্স করতে থাকে। এনা তো সেই লেভেলের খুশি। আলফি এবার বড় হাই তুলে ইয়ানের পিঠে মাথা রাখে। ইয়ান জাস্ট চুপ করে আলফির কাণ্ড গুলো দেখে যাচ্ছে। পিঠে মাথা রেখে মজা পাচ্ছে না। আবার কাঁধে মাথা রাখে। নাহ! এবারও মজা পাচ্ছে না। আলফি এবার ইয়ানের কোলে মাথা রাখে। এলেন এটা দেখে রাগে দাঁতে দাঁত চেপে এনার হাত শক্ত করে ধরে। এনা ব্যাথায় ‘আহহ!’ করে। এলেন হাত ছেড়ে দেয়। স্পেশাল শক্তি দিয়ে সময় বন্ধ করে দেয়। সব কিছু স্টপ হয়ে যায়। আলফি সেটা বুঝতে পেরেও চুপ করে ইয়ানের কোলে শুয়ে থাকে। এলেন তেড়ে এসে আলফির হাত ধরে চট করে দাঁড় করায়। রেগে চিবিয়ে চিবিয়ে বলে,
-“সমস্যা কি? ঠিক মতো এক জাগায় বসতে পারো না নাকি?”
-“আমি বসে থাকি,দাঁড়িয়ে থাকি,শুয়ে থাকি তাতে আপনার কি? আপনার তো কোনো সমস্যা হওয়ার কথায় নয়। আপনি তো দিব্যি ডান্স করছেন এনার সাথে। ওয়েট! একটা পোঁড়া গন্ধ নাকে আসছে।” আঙুল তুলে বলে আলফি।
-“হ্যাঁ! আমার হৃদয় পুঁড়ছে।” ঝাঁড়ি দিয়ে বলে এলেন।
-“কে যেন,কী বলেছিল কাল… আমার কাছ থেকে দূরে থাকো আলফি।” অন্যমনস্ক হয়ে ভাবতে ভাবতে বলে আলফি।
সহ্যের সীমা পার হয়ে গেছে। এলেন আলফির বাহু জোরে চেপে ধরে ধমক দিয়ে বলে,
-“মজার পাত্র পেয়েছো আমায়। কী ভাবো তুমি নিজেকে? ভালোবাসা কী বুঝো? কখনো ভালোবেসেছো কাউকে। প্রিয় মানুষটিকে অন্য কারো সাথে দেখলে কতটা পুঁড়ে বুঝো তুমি?”
আলফি নরম ভঙ্গিতে এলেনের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে। এলেন আলফিকে ছেড়ে দেয়। নরজ সরিয়ে মুখ থেকে ‘স্যরি’ উচ্চারণ করে চলে যায়। কিন্তু বেশি দূর যেতে পারে না। তার আগেই আলফি এলেনের সামনে এসে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। কান্না জড়িত কন্ঠে বলে,
-“সব কিছু বুঝি আমি। এটাও বুঝতে পেরেছি কায়রা তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছে। থাকতে পারবে না তোমাকে ছাড়া। She Love Her. She Love Her Alen…..।”
.
.
.
.
.
.
Continue To…….