Friday, July 11, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1396



চন্দ্ররঙা প্রেম পর্ব-০৫

0

#চন্দ্ররঙা_প্রেম
#পর্ব-৫
#আর্শিয়া_সেহের

-“মেহেদী ভাইয়া, তুমি চাকরি পেয়েছো সেই উপলক্ষে আজকে ট্রিট চাই।”
মেহেদীর একবার বলতে ইচ্ছে করলো ,’আমাকে ভাইয়া ডাকলে কোনো ট্রিট দিবো না।’ কিন্তু মুখ ফুটে সে কথা বলা হলো না। এই মেয়েটার সবকিছুই সে মেনে নেয়। মেনে নিতে ভালো লাগে। এই যে ,রুমঝুম তাকে ভাইয়া ডাকে,এটা তার খারাপ লাগলেও সে অনায়াসে মেনে নেয়। এই জিনিসটার মধ্যেও অসম্ভব শান্তি পায় ।
মেহেদী মুখে হাসি ফুটিয়ে বললো,
-“অবশ্যই ট্রিট দিবো। অপেক্ষা করো একটু। আমি ফ্রেশ হয়ে খেয়ে আসছি।”
-“আচ্ছা এসো।”

আধঘন্টায় মেহেদী সব কাজ সেরে রুমঝুম আর মেঘাকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লো। দুজন মেহেদীর টাকায় প্রান ভরে ফুসকা খেলো।আর মেহেদী প্রান ভরে দেখলো তার দুই প্রিয় রমনীর খাওয়া। একজন তার বোন অন্যজন হৃদয়ের গহীনে রাজ করা এক রানী।তার ঝুমরানী।

ফুসকা খাওয়া শেষ করে আশেপাশে কিছুসময় ঘোরাঘুরি করলো তিনজন। সন্ধ্যার আগে আগে মেহেদী বাড়ি ফেরার জন্য গাড়ি ঠিক করতে গেলে ঝুম বললো,
-“আমার আরেকটা কাজ ছিলো মেহেদী ভাইয়া।”
-“কি কাজ?”
-“একটা নতুন সীম কার্ড কিনতে হবে।”
-” নতুন সীমকার্ড কেন?”
-“পুরাতনটা ব্যবহার করবে না তাই। তুই এতো কথা বলিস কেন?”
মেহেদী আর কোনো কথা না বলে দু’জনকে নিয়ে সীমকার্ড কিনতে গেলো।

সীমকার্ড মেঘার নামে রেজিস্ট্রেশন করতে দেখে মেহেদী বললো,
-“ঝুমের সীম তোর আইডি কার্ড দিয়ে কিনছিস কেন?”
-“ভাইয়া ও লুকিয়ে এসেছে।আর ও লুকিয়ে থাকতে চায়। বুঝেছিস?”
-” হুম ।”

বাড়িতে ফিরতে ফিরতে রাত আটটা বাজলো ওদের। রুমঝুম ফ্রেশ হয়ে সীমকার্ড ওপেন করলো। সেই নাম্বার দিয়ে সবার প্রথমে এসএমএস করলো রুশানকে। প্রায় তিন মিনিট পর রুশানের রিপ্লাই পেয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো রুমঝুম।
রুশান রুমঝুমের নাম্বার মুখস্থ করে নিলো।তারপর নাম্বারটা ডিলিট করে দিলো ফোন থেকে। তবে রুমঝুমের বাদ দেওয়া নাম্বারটা ফোনে সেভ করে রেখে দিলো।

-“ঝুম, খেতে আয়। মা ডাকছে।”
মেঘা রুমে ঢুকতে ঢুকতে বললো।
-“আসছি, দাঁড়া।”
-“দাঁড়াতে পারবো না।”
-“তাইলে বস।”
দুজনই হেঁসে উঠলো কথার মাঝে। বাইরে থেকে আসার পর রুমঝুমের মনটাও বেশ উৎফুল্ল হয়ে উঠেছে।

রুমঝুম আর মেঘা একসাথে এলো ডাইনিং এ। তাদেরকে আসতে দেখে মাহেরা খাতুন মেহেদীকেও ডাকলেন।মেঘার বাবা গতবছর মারা গেছেন। বাবা মারা যাওয়ার পর তারা চট্টগ্রাম শিফট হয়েছে।

খেতে খেতে মাহেরা খাতুন বললেন,
-” আমি মেঘার কাছে সবটাই শুনেছি ,ঝুম। তুই নাকি বাসা ভাড়া থাকার কথা বলেছিস?”
-“হ্যাঁ আন্টি। আসলে…”
রুমঝুমের কথার মাঝেই তিনি বললেন,
-“কোনো‌ আসলে না ঝুম,তুই আমার বাড়িতেই থাকবি। আমার আরেক মেয়েকে কি আমি খাওয়াইনি এতোদিন? এখন মিলি নেই ,সেই জায়গায় তুই আছিস।‌ মিলির রিজিকের টুকু এখন তুই খাবি। তুই আমার কাছে এবাড়িতেই থাক মা। কি রে মেহেদী তুই কিছু বল?”
-“হ্যাঁ হ্যাঁ ঝুম।তুমি এখানেই থাকো। এখানে তোমার কোনো সমস্যা হবে না। যতদিন ইচ্ছা থাকো।”
মনে মনে বললো,’সারাজীবন থেকে যাও। তোমায় দেখে দেখে নয়ন জুড়াক আমার।’

রুমঝুমের চোখ পানিতে ভরে উঠলো। এরা ওর আপন‌ কেউ না তবুও কতটা সাপোর্ট করছে ওকে। সে চুপচাপ মাথা হেলিয়ে সম্মতি জানালো।

মেঘা বললো,
-“ওর তো‌ ভার্সিটিতেও ভর্তি হতে হবে। ওখান থেকে কাগজপত্র তো‌ আনা হয়নি।”
-“ওটা নিয়ে তোর মাথা ঘামাতে হবে না। ওর ভর্তির বন্দোবস্ত আমি করে ফেলবো। কাল থেকে ওকে সাথে নিয়ে ভার্সিটিতে যাস।”
রুমঝুম মেহেদীর কথায় কৃতজ্ঞতাপূর্ন দৃষ্টিতে তাকালো তার দিকে। মেহেদী সেদিকে চেয়ে মুচকি হেঁসে বললো,
-“তোমার আগের ভার্সিটিতে সবকিছু গোপন থাকবে। সে ব্যবস্থাও আমি করবো।”

রুমঝুম কেঁদে উঠলো এবার। কান্নাজড়িত কণ্ঠে বললো,
-“তোমাদেরকে ধন্যবাদ জানানোর ভাষা আমার নেই । অনেক উপকার করেছো আমার। তোমাদের কাছে চির কৃতজ্ঞ থাকব আমি।”
মেহেদী মনে মনে বললো, ‘ধন্যবাদ জানাতে হবে না,অল্প একটু ভালো তো‌ বাসতে পারো।’

তাহমিনা বেগম আরমানের মুখোমুখি বসে আছে। আরমান ভয়ংকর চাহনি‌ নিক্ষেপ করে আছে তাহমিনা বেগমের দিকে। তাহমিনা বেগমের হার্টবিট বেড়ে গেছে দ্বিগুনেরও বেশি। সে একদম চুপচাপ বসে আছে সোফায় আর মনে মনে রুমঝুমের চৌদ্দ গোষ্ঠী উদ্ধার করছে। একসময় আরমান চিৎকার করে বলে উঠলো,

-“আপনার মেয়ে এই শহরেই নেই। পুরো দুইটা দিন হয়ে গেছে সে আমাদের নাগালের বাইরে। আমি পুরো শহরে লোক‌ লাগিয়ে খুঁজেছি ওকে। ও কোথাও নেই । বুঝতে পারছেন আপনি আমার কথা?”

আরমানের তেজী কন্ঠের সামনে বিড়াল ছানা হয়ে পড়লেন তাহমিনা বেগম। তোতলাতে তোতলাতে বললো,
-“ক..কি বুঝবো? ”

-” আপনার মেয়ে খুলনা-যশোর কোথাও নেই। আপনার কথা মতো আমি ওর খালা বাড়িতেও খোঁজ নিয়েছিলাম।ও গতকাল সেখানে গিয়েছিলো আর গতকালই সেখান থেকে চলে গেছে। ওখান থেকে কোথায় চলে গেছে কেউ জানেনা। ”
-“এখন আমি কি করবো বলো ? আমি তো জানি না।”

-“আপনি জানেন না কিন্তু আপনার ছেলে জানে। রুমঝুমকে না পেলে‌ সেই খেসারত আপনার ছেলেকে দিতে হবে। কথাটা মাথায় রাখবেন।”
তাহমিনা বেগম আঁতকে উঠলেন। সে নিজের ছেলেকে‌ কোনভাবেই হারাতে পারবেন‌ না। ছেলে হারানোর ভয়ে তিনি‌ কেঁদেই ফেললেন।

তাহমিনা বেগমের কান্নায় বিরক্ত হলো আরমান। একে তো‌ ছেলের থেকে রুমঝুমের নাম্বার বা ঠিকানা কোনোটাই জোগাড় করতে পারে নি আবার এখানে এসে মরা কান্না কাঁদছে। আরমান ধপধপ শব্দ তুলে বড়বড় পা ফেলে সেখান থেকে চলে গেলো। পাখিকে তো সে খাঁচায় আটকাবেই। সোনার ডিম পাড়া পাখি বলে কথা।

তাহমিনা বেগম বিলাপ করেই চলেছেন। তার ভুলের মাশুল যেন তার ছেলেকে না দিতে হয়। তার ছেলে তো কোনো দোষ করেনি। তার পাপের শাস্তি তার ছেলে কেন পাবে?

-“শান, আর ইউ ওকে? সারাদিন তোর কোনো খোঁজ নেই। কোথায় তুই? ”
তিহানের কথায় শান হালকা হাসলো। এই ছেলেটার এই এক সমস্যা। সবকিছুতে অল্পেই সিরিয়াস হয়ে পড়ে। মাত্র কয়েক ঘন্টা শানের খোঁজ পায়নি বলে বিচলিত হয়ে পড়েছে।
অন্যদিকে প্রান্ত,সে একবছর কারো খোঁজ না পেলেও বিচলিত হবে না। সে বিশ্বাস করে সঠিক সময়ে সকলেই গর্ত থেকে বেরিয়ে সামনে চলে আসবে।

শানের উত্তর না‌ পেয়ে তিহান আবারও বললো,
-“শান , আর ইউ দেয়ার? আমাকে শুনতে পাচ্ছিস তুই? ”
-“হ্যাঁ হ্যাঁ শুনতে পাচ্ছি। আসলে আমি টায়ার্ড ছিলাম খুব। বাসায় এসে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম বলে ভার্সিটিতে যেতে পারিনি ।তবে কাল বেঁচে থাকলে যাবো, পাক্কা।”
-“মনে থাকে যেন। তুই তো এমন ছিলিনা। কখনো কথা দিয়ে তার হেরফের করিসনি।আজ কি হলো তোর বুঝলাম না।”
শান মনে মনে বললো,’আমার গতানুগতিক জীবনেই হেরফের হচ্ছে আর তুই আছিস কথা দেওয়া নিয়ে’। তবে মুখে বললো,
-“আরে কিছুই হয়নি। রাখছি এখন। ”

ফোন রেখে নিজের খাঁড়া চুল গুলোর মধ্যে হাত ঢুকিয়ে মাথা চেপে ধরে বসে রইলো শান। নিজ দুনিয়া থেকে হারিয়ে গেছে সে।কোথায় হারাচ্ছে সেটা বুঝতে পারছে না। তবে তার সবকিছু যে উলটপালট হয়ে যাচ্ছে সেটা বেশ বুঝতে পারছে।
শানের ভাবনার মাঝেই দরজায় টোকা পড়লো।
-“শাফায়াত,খেতে এসো। ডিনার টেবিলে সবাই অপেক্ষা করছে।”

শান‌ মুখ উঠিয়ে দরজা না খুলেই বললো,
-“আমি একটু পরে আসছি, আম্মু। তোমরা শুরু করো।”
-“আমরা অপেক্ষা করছি। দ্রুত এসো।”
শান লম্বা একটা নিঃশ্বাস ফেললো। সে জানে তাকে ছাড়া তার বাবা-মা, ভাই-বোন কেউই খেতে বসবে না।
বেলকনির দরজা ঠেলে বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ালো শান। চাঁদের আলো তার উজ্জ্বল, স্নিগ্ধ আভা না ছড়ালেও আকাশে সাধু-সন্ন্যাসী বেশ ধারন করে ঠিকই বসে আছে।

কি আশ্চর্য! চাঁদের দিকে তাকালেও চন্দ্রকন্যার চেহারা ভেসে ওঠে। সব দোষ ওই সিন্থিয়ার।ও যদি মেয়েটাকে না দেখাতো তবে এসব কিছুই হতো না।
না না সিন্থিয়ার দোষ না। ও তো এর আগেও কতশত মেয়েকে দেখিয়েছে ।কই? তাদের জন্য তো শানের এমন লাগেনি। তাহলে?
হুম পেয়েছে। সব দোষ ওই চাঁদের বাচ্চার। কি দরকার ছিলো নিজের আলোতে ওই মেয়েকে রাঙানোর? চন্দ্র রঙে ওকে রাঙিয়েই তো আমার সর্বনাশ করে ফেললো। এখন যেদিকে তাকাই সেদিকেই চন্দ্রকন্যা। ধেত ভাল্লাগে না।

শান বিরবির করতে করতে খাবার টেবিলে উপস্থিত হলো।তার পুরো পরিবার সেখানে অপেক্ষা করছে।শান এসে নিজের জায়গায় বসে পড়লো। শানকে বসতে দেখে তার মা শাফিয়া আক্তার সবাইকে খাবার দেওয়া শুরু করলেন।
-“এই ভাইয়া তোমার না আজকে আমাকে ম্যাথ করিয়ে দেওয়ার কথা ছিলো? সেটা না করিয়ে দিয়ে সারাদিন ঘরে পড়ে পড়ে ঘুমালে কেন?”
-“শান্ত,এগুলো‌ কেমন কথা? ভাইয়ার খারাপ লাগছিলো তাই তোমাকে ম্যাথ করিয়ে দিতে পারেনি। কাল করে নিয়ো ভাইয়ার থেকে। এখন চুপচাপ খাও।”

মায়ের ধমকানীতে চুপ হয়ে গেলো শান্ত। তার মা বড় ভাইয়াকে বেশি ভালোবাসে ভেবে কাঁদতে যাবে তক্ষুনি শাফিয়া আক্তার আবার হুকুম করলো,
-“ভাইয়াকে পানির জগ এগিয়ে দাও ,শান্ত।”
বেচারা নিরীহ শান্ত আর কান্না করার অবকাশ পেলো না। মনে মনে ভেবে রাখলো রুমে গিয়ে শান্তিতে কান্না করবে।

শানের এদিকে কোথাও ধ্যান জ্ঞান নেই। সে প্লেটে খাবারের মধ্যে আঙুল দিয়ে আঁকিবুঁকি করছে। শানের বাবা ইমতিয়াজ মাহমুদ সেটা বেশ কিছুক্ষণ ধরে খেয়াল করছেন। শান বেশ কিছুক্ষণ খাবার নিয়ে নাড়াচাড়া করলো। তারপর মুখে একটু খাবার দিয়েই উঠে পড়লো ডাইনিং টেবিল থেকে। সেদিকে তাকিয়ে ইমতিয়াজ মাহমুদ মুচকি হাসলেন।
শানের পরপরই শান্ত উঠে চলে গেলো। ইমতিয়াজ মাহমুদ হাঁসি হাঁসি মুখ করে বললেন,
-“বুঝলে শাফু, আমাদের বড় ছেলে বোধহয় প্রেমে পড়েছে।”

কথা শেষ হতেই ইমতিয়াজ মাহমুদের কানে এলো একজোড়া মেয়েলি কন্ঠের চমৎকার হাঁসির শব্দ। মনে হচ্ছে তারা কোনো বড়সড় জোকস্ শুনেছে। ইমতিয়াজ মাহমুদ ভ্রু কুঁচকে তাকালো নিজ স্ত্রী ও কন্যার দিকে। শিরীন হাঁসতে হাঁসতেই বললো,
-“থ্যাংকস পাপা,আমার খাবার হজমে সহায়তা করার জন্য।”
ইমতিয়াজ মাহমুদ বুঝতে না পেরে বললেন,
-” মানে? আমি কিভাবে তোমার খাবার হজমে সহায়তা করলাম?”

-” এই যে, এত্তো সুন্দর একটা জোকস্ বলে। তোমার ওই গোমড়া মুখো ছেলে নাকি করবে প্রেম।”
-“আমিও তো ওমন গোমড়া মুখোই ছিলাম প্রেম করা….. আআউউ
সম্পূর্ণ কথা শেষ করার আগেই শাফিয়া আক্তার তার উড়ুতে চিমটি কাটলেন। ফিসফিসিয়ে বললেন,
-“মেয়ের সামনে একটু সামলে কথা বলতে পারো না? হাঁদারাম।”

শিরীন পেট ফাটা হাসি হাঁসতে হাঁসতে টেবিল ছেড়ে উঠে গেলো। ইমতিয়াজ মাহমুদ কাঁদো কাঁদো গলায় বললেন,
-” আমি মিথ্যা কি বলছিলাম যে চিমটি দিলে? তোমার সাথে প্রেম করার আগে তো আমিও গোমড়া মুখোই ছিলাম।”
-“হ্যাঁ,আমার মাথা ছিলে। এখন‌ বলো , তোমার কেন মনে হলো আমার ছেলে প্রেম করতেছে?”
-“আরে আমিও যখন নতুন নতুন তোমার প্রেমে পড়ছিলাম তখন এরকম নিজেকে সারাদিন ঘরবন্দি রাখতেন আর তোমার কথা ভাবতাম। তারপর ঠিক মতো খেতেও পারতাম না। খাবার রেখে উঠে যেতাম। খেতে ইচ্ছে করতো না। তোমার ছেলেরও এমন লক্ষন প্রকাশ পাচ্ছে বুঝলে?”

শাফিয়া আক্তার চোখ বড় বড় করে তাকালেন স্বামীর দিকে। তার কোনোভাবেই বিশ্বাস হচ্ছে না তার ছেলে প্রেমে পরতে পারে। শাফিয়া আক্তারের এমন মুখভঙ্গি দেখে ইমতিয়াজ মাহমুদ ঠোঁট টিপে টিপে হাসতে লাগলেন।

চলবে…………

(ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।)

চন্দ্ররঙা প্রেম পর্ব-০৪

0

#চন্দ্ররঙা_প্রেম
#পর্ব-৪
#আর্শিয়া_সেহের

আলোয় ঝলমল করছে প্রকৃতি। রৌদ্রের তেজ খুব একটা নেই। প্রকৃতিতে কোলাহল বেড়ে গেছে।
শান চুপচাপ গাড়ি চালাচ্ছে। গাড়ি চালানোর ফাঁকে ফাঁকে আড়চোখে রুমঝুমের দিকে বার কয়েক দেখেছে। মেয়েটাকে যত দেখছে ততই ওর ভালো লাগছে। তবে কি ও প্রেমে পরছে?
উহু, উহু,মোটেও প্রেমে পরা যাবে না। প্রেম সাংঘাতিক খারাপ জিনিস।

শান নিজের মনকে বোঝাতে বোঝাতেই বাসস্ট্যান্ডে এসে পৌঁছালো। রুমঝুম তড়িঘড়ি করে নামলো‌ গাড়ি থেকে। ব্যাগটা নামিয়ে শানকে ধন্যবাদ দিতে যাবে তার আগেই শান গাড়ি নিয়ে সাঁই করে চলে গেলো। রুমঝুম হতভম্বের মতো দাঁড়িয়ে রইলো। শানের ভাব দেখে ওর শরীর জ্বলে যাচ্ছে। একটা ধন্যবাদ দেওয়ার সুযোগও দিলো না। হুহ।

ফোন বের করে মেঘার নাম্বারে কল করতে যাবে তার আগেই মেঘা চলে এলো। রাগী কন্ঠে প্রশ্ন করলো,
-“তোর‌ বাস ভোরে পৌঁছেছে। তুই এতক্ষণ কোথায় ছিলি?”
রুমঝুমের মুখটা শুকিয়ে উঠলো। মিনমিন করে বললো,
-“গাড়ি ঠিক কর তারপর বলছি।”
মেঘা কথা না বাড়িয়ে গাড়ি ঠিক করলো। বাসস্ট্যান্ড থেকে মেঘার বাড়িতে যেতে প্রায় এক ঘন্টা সময় লাগে।

গাড়িতে বসে মেঘা প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকালো রুমঝুমের দিকে। রুমঝুম হেঁসে দিলো।বললো,
-“আজকের টা শুনবি নাকি আমার বাড়ি ছাড়ার কারনসহ সব বলবো?”

মেঘা নড়েচড়ে বসে বললো,
-“সব শুনবো। সব বল ।”
রুমঝুম রয়ে সয়ে একে একে সবকিছু বললো। সকালের ঘটনা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেললো রুমঝুম। মেঘাও কেঁদে দিলো। ওই মানুষগুলো না থাকলে আজ রুমঝুমের সাথে কি হতো সেটা ভেবেই ওর শরীর শিউরে উঠলো।

রুমঝুম চোখ মুছলো। ওর আর আগের মতো ভয় লাগছে না। সিন্থিয়ার কথাগুলো ম্যাজিকের মতো কাজ করেছে। রুমঝুম এখন কাঁদলেও ভেঙে পড়ছে না‌। বেশ সাহস সাহস অনুভুত হচ্ছে।
-“আর কতক্ষন লাগবে ,মেঘা?”
-“এইতো চলে এসেছি। আর দুই তিন মিনিট লাগবে।”

রুমঝুম বাইরে তাকালো। সুন্দর একটা জায়গা। চট্টগ্রাম আসলেই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি। রুমঝুম মেঘার হাত ধরে বাচ্চাদের মতো বললো,
-“আমাকে সুন্দর জায়গা গুলোতে ঘুরতে নিয়ে যাবি সময় করে ? বল বল।”
মেঘা হেঁসে ফেললো। বললো ,
-“নিয়ে যাবো ।এখন নাম। চলে এসেছি।”

দুজন গাড়ি থেকে নামলো। রুমঝুম তাকিয়ে দেখলো ছোট খাট ছিমছাম গড়নের বেশ সুন্দর একটা বাড়ি। বাড়ির পিছন দিকে সারি সারি লম্বা লম্বা গাছ । বাড়িটা দেখেই রুমঝুমের খুব পছন্দ হলো।
বাড়িতে ঢুকতে ঢুকতে মেঘাকে প্রশ্ন করলো,
-“আমার জন্য থাকার জায়গা খুঁজতে বলেছিলাম সেটা কতদূর?”
-“আগে বাড়িতে চল। ওটা পরে দেখবো।”

বাড়িতে ঢোকার সাথে সাথেই মেঘার মা মাহেরা খাতুন এসে জড়িয়ে ধরলো রুমঝুমকে।
-“কেমন আছিস, ঝুম? কতদিন পর তোকে দেখলাম।”
-“ভালো‌ আছি আন্টি। তোমরা সবাই কেমন আছো?”
-“আমরাও ভালো আছি। যা ঘরে গিয়ে রেস্ট নে। মেঘা,মিলির রুমটা খুলে দে ঝুম কে।”
-“আচ্ছা মা। ঝুম চল।”

দুজনই ঘরে দিকে হাঁটা ধরলো। হঠাৎ করেই কোথা থেকে সামনে এসে দাঁড়ালো মেঘার ভাই মেহেদী।
মেহেদীকে দেখেই রুমঝুম একগাল হেঁসে বলো,
-“কেমন আছো, মেহেদী ভাইয়া?”
রুমঝুমের মুখে ভাইয়া ডাক শুনলেই মেহেদীর মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে যায়। মেয়েটা এমন ভাবে ভাইয়া ডাকে যেন ওর নিজের ভাইকেই ডাকছে।

জোরপূর্বক মুখে হাসি ফুটিয়ে মেহেদী বললো,
-“ভালো আছি রুমঝুম। তুমি যাও রেস্ট নাও।”
রুমঝুম বেশ অবাক হলো। সবাই‌ এমন আচরণ করছে যেন ওর এখানে আসা,থাকা একদমই স্বাভাবিক ব্যাপার। তবে ব্যাপারটাকে তেমন পাত্তা দিলো না। আজ রাতেই মেঘার সাথে তার বাসা ঠিক করা, কয়েকটা টিউশন জোগাড় করা এসব নিয়ে সিরিয়াসলি কথা বলতে হবে । রুমঝুম গিয়ে ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পড়লো ।শরীরটা বেশ ক্লান্ত লাগছে ওর।

-“রুশান , এদিকে আয়।কথা আছে তোর সাথে।”
-“হ্যাঁ বলো মা। একটু তাড়াতাড়ি বলো , আমাকে কলেজে যেতে হবে।”
-“ইদানিং আমার সামনে একটু বেশিই ব্যস্ততা দেখাস মনে হচ্ছে। ওই মেয়েটার জন্য আমার সাথে দূরত্ব সৃষ্টি করছিস তুই?”
-“ওই মেয়েটা, ওই মেয়েটা কি মা? ও আমার আপু হয়। আমার একই পিতার ঔরসে জন্মেছি। বারবার আপুকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে কথা বলবে না।”

ছেলের কথায় তাহমিনা বেগমের শরীর জ্বলে উঠলো। ইচ্ছে করছে ছেলেটাকে এখানে পুঁতে দিতে। তবে সে এটা কখনোই পারবে না। নিজের আদরের একমাত্র ছেলে বলে কথা।
যাই হোক, এখন ঠান্ডা মাথায় কাজ করতে হবে তাকে। গলার স্বরটা নরম করে বললো,
-“শোন না বাবা,তুই জানিস ঝুম কোথায় আছে?”

রুশান ভ্রু কুঁচকে তাকালো তার মায়ের দিকে। হঠাৎ রুমঝুমের কথা এতো নরম সুরে জানতে চাচ্ছে কেন? ডাল মে জারুর কুচ কালা হ্যায়।
রুশান‌ একটু চুপ থেকে বললো,
-“আমি জানি না আপু কোথায় আছে। আর কিছু বলবা?”

তাহমিনা বেগমের রাগ তরতর করে বাড়ছে। তবুও নিজেকে সংযত করে প্রশ্ন করলো,
-“আচ্ছা রুমঝুমের নাম্বার তো আছে তোর কাছে।সেটা দে।”
-“আপুর যে নাম্বারটা আমার কাছে আছে সেটা বন্ধ। আমার লেট হয়ে যাচ্ছে। আমি গেলাম।”
বলেই একছুটে বেরিয়ে গেলো রুশান। সে যথেষ্ঠ বুদ্ধিমান ছেলে। তার মা কি করতে চাইছে সেটা একটু হলেও আন্দাজ করতে পেরেছে সে।

কলেজ মাঠে বসে রুমঝুমকে ফোন করলো রুশান। রুমঝুম তখন বেঘোরে ঘুমুচ্ছে। রিংটোনের শব্দে ঘুম ভাঙলো রুমঝুমের। ঘুমু ঘুমু চোখে ফোন হাতে নিয়ে দেখলো রুশানের নাম্বার। ফোন রিসিভ করে চোখ বন্ধ করেই কানে ধরলো ফোনটা। ওপাশ দিয়ে শব্দ এলো,
-“হ্যালো আপু।কেমন আছো?”

রুমঝুম চোখ বুজেই মুচকি হাসলো। বললো,
-“ভালো আছি পিচ্চি। তুই কেমন আছিস?”
রুশান‌ শব্দ করে হেঁসে উঠলো।
-“কে পিচ্চি সেটা এখন ভয়েস শুনলেই মানুষ বুঝতো। তুমি ঘুম জড়ানো কন্ঠে কথা বললে একদম বাচ্চা বাচ্চা লাগে হাহাহা।”
-“এই চুপ।হাসবি না।বিচ্চু কোথাকার।”

রুশান‌ আবারও হাসলো। রুমঝুম বিছানায় উঠে বসতে বসতে বললো,
-“কি করছিস?”
-“এইতো কলেজে বসে আছি। বাড়িতে থাকলে মা সারাক্ষণ জেরা করতে থাকে। ভাল্লাগে না।”
-“আহারে। আমার জন্য ভাইটার খুব ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।”
-“তেমন‌ কিছু না আপু। আজ তো তোমার নাম্বার চাচ্চিলো আমার কাছে।”
-“আমার নাম্বার কেন?”
অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলো‌ রুমঝুম।

-“আমি ঠিক জানিনা। আচ্ছা শুনো আপু?”
-“হুম বল।”
-“তুমি নাম্বারটা চেন্জ করে ফেলো। মানে বুঝোইতো এখন কতোভাবেই মানুষকে খুঁজে বের করা যায়। তাছাড়া ওই আরমান লোকটাকে একদমই সুবিধার মনে হয় না আমার।বেশ পাওয়ারফুল আছে লোকটা।”

রুমঝুমের হঠাৎ বেশ ভয় লেগে উঠলো। নিচু স্বরে বললো,
-“ঠিকই বলেছিস তুই। আমি আগে এসব ভাবিনি রে ভাই। নাম্বার আজ বিকেলেই চেন্জ করে ফেলবো। নতুন নাম্বার দিয়ে সবার প্রথম তোকেই এসএমএস করবো।”
রুশান‌ তৃপ্তির হাসি হাসলো। এরকম একটা মেয়েকে ওর মা কিভাবে দূরে ঠেলে রাখে ও বুঝতে পারে না।

রুশানের কোনো উত্তর না পেয়ে রুমঝুম বললো,
-“আচ্ছা ভাই,এখন তাহলে রাখি।”
-“আপু শুনো,আরেকটা কথা ছিলো।”
-“হ্যাঁ বল।কি কথা?”
-“আমি নিজেও যদি কখনো ফোন করে তোমাকে জিজ্ঞেস করি তুমি কোথায় আছো , তুমি উত্তর করবে না। আই রিপিট, তুমি ভুল করেও উত্তর দিবে না। আশা করি আমি কেন এটা বললাম তুমি বুঝেছো। রাখছি আপু।”
রুশান ফোন কাঁটার পর বেশ কিছুক্ষণ রুমঝুম থম মেরে পড়ে ছিলো। রুশানের কথার মানে খুঁজে পেয়েই ঠোঁটে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলো তার। ছেলেটা দিনদিন বেশ বুদ্ধিমান হয়ে উঠছে।

দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো সাড়ে বারোটা বাজে। রুমঝুম ফ্রেশ হয়ে রুমের বাইরে এলো। মেঘা আর মাহেরা খাতুন মিলে রান্না করছে। রুমঝুম তাদের কাছে গিয়ে দাঁড়ালো।
-“কিরে ঝুম, এতো তাড়াতাড়ি উঠে পড়লি কেন?”
-“রুশান কল করেছিলো তাই। আচ্ছা শোন মেঘা, বিকেলে একটু বের হবি আমার সাথে? কিছু দরকার ছিলো। ”

মেঘার উত্তর দেওয়ার আগেই মাহেরা খাতুন বলে উঠলেন,
-“কেন বের হবে না? ওর কি বাড়িতে কাজ আছে কোনো? দুজন বের হয়ে ঘুরে আসিস। তোরও একটু ভালো লাগবে।”
মাহেরা খাতুনের কথায় মাথা নিচু করে হাসলো রুমঝুম। আশেপাশে মেহেদীকে না দেখে বললো,
-“মেহেদী ভাইয়া কোথায়? তাকে দেখছি না তো।”
-“আরে তুই তো জানিস না। দুমাস আগেই আমার ভার্সিটিতে ভাইয়ার চাকরি হয়েছে।সে এখন টিচার বুঝলি? ফিরতে বিকেল হবে।”
রুমঝুম বিষ্ময়ে হা করে তাকিয়ে রইলো।তারপর হুট করে চেঁচিয়ে বললো,
-“তাহলে তো আজকে মেহেদী ভাইয়ার কাছ থেকে ট্রিট নিবো। কি মজা।”
-“তোর উছিলায় আমিও আরেকবার পাবো তাহলে।”
-“ইশশ তোরে কেন দিবে? আমি একা নিবো।”
-“হ্যাঁ হ্যাঁ তুই একা নিবি আর আমি তো বসে বসে আঙ্গুল চুষবো।”

রুমঝুম আর মেঘার ঝগড়া শুনে মুচকি মুচকি হাসছে মাহেরা খাতুন। আগে যখন মিলি ছিলো তখনও দুইবোন সারাক্ষণ এমন ঝগড়াঝাঁটি করতেই থাকতো। মিলির বিয়ে হওয়ার পর থেকে বাড়িটা কেমন নিরব হয়ে গেছে। মেয়েটাকে নিয়ে তার স্বামী বিয়ের পর পরই ডেনমার্কে পাড়ি জমিয়েছে। কবে দেশে আসবে কে জানে?
রুমঝুম আসায় বহুদিন পর বাড়িটাতে যেন প্রান ফিরেছে। বেশ শান্তি লাগছে মাহেরা খাতুনের মনে আজ।

….

-“কি ব্যাপার বলতো বিথী? শানের কোনো খোঁজই পাওয়া যাচ্ছে না। কত করে বললাম একটার মধ্যে ভার্সিটিতে আসতে অথচ তার কোনো পাত্তাই নেই।”
তিহানের কথা শুনে বিথী বললো,
-“তুমি যেখানে,আমি সেখানে ।তবে আমি কি করে জানবো?”
প্রান্ত গিটারে টুংটাং করতে করতে বললো,
-“সেই সকালে মেয়েটাকে নিয়ে বের হওয়ার পর থেকেই তো সে লাপাত্তা।”
বিথী সিন্থিয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,
-“এই সিন্থু ,তুই জানিস নাকি ও কোথায়? ফোনেও তো পাচ্ছিনা ওকে।”

সিন্থিয়ার কোনো হেলদোল না দেখে তিনজনই ফিরলো সিন্থিয়ার দিকে। দেখলো সিন্থিয়া একদৃষ্টিতে হা করে কোথাও তাকিয়ে আছে। তিনজনই সিন্থিয়ার দৃষ্টি অনুসরণ করে সেদিকে তাকালো। দেখলো মেহেদী স্যার ক্যাম্পাসের এক কোনে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছে। সেদিকেই তাকিয়ে আছে সিন্থিয়া।

প্রান্ত বিরবির করে বললো,
-“সারাজীবন শুধু দেখেই যা ।”

চলবে……….

(রি-চেক দেওয়া হয়নি। ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।)

চন্দ্ররঙা প্রেম পর্ব-০৩

0

#চন্দ্ররঙা_প্রেম
#পর্ব-৩
#আর্শিয়া_সেহের

সিন্থিয়ার হঠাৎ চিৎকার করে বলা কথাগুলো শান প্রথমে বুঝতে পারলো না। শান‌ হতভম্বের মতো প্রশ্ন করলো,
-“কে রুমঝুম? কোন মেয়েটা? কে নিয়ে গেছে? কোথায় নিয়ে গেছে?”

সিন্থিয়া অতিরিক্ত উত্তেজিত হয়ে গেছে বিধায় কথা বলতে পারছে না। সে শুধু হাঁসফাঁস করছে আর আঙুল দিয়ে যেদিকে বাস গেছে সেদিকে ইশারা করছে । শান সিন্থিয়ার অবস্থা বুঝতে পেরে ওর কাছে এসে বললো,
-“রিল্যাক্স সিন্থু। ঠিক মতো বল‌ কি হয়েছে। ঠিক মতো না বললে আমি বুঝবো কিভাবে?”

সিন্থিয়া আচমকা কেঁদে দিলো। একটু সময়েই মেয়েটার প্রতি ভীষণ টান জন্মে গেছে ওর। মেয়েটার জন্য অতিরিক্ত ভয় পেয়েই এমন উত্তেজিত হয়ে পড়েছে। তবুও নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে বললো,
-“বাসে যে মেয়েটাকে দেখিয়েছিলাম না তোকে? ও.. ওই মেয়েটাই রুমঝুম। ওকে ওই বাসের ড্রাইভার, কন্ট্রাকটর মিলে কোথায় নিয়ে গেলো ওদিকে। আমি ওকে বাঁচাতে পারলাম না শান।”
কথাগুলো বলে আবারও ডুকরে কেঁদে উঠলো সিন্থিয়া।

সিন্থিয়ার কথা মস্তিষ্ক অবধি পৌঁছানো মাত্রই স্তব্ধ হয়ে গেলো শান। ওই মেয়েটা রুমঝুম মানে তার চন্দ্রকন্যার নাম রুমঝুম। মেয়েটা বাসের মধ্যে একা। মূহুর্তেই সতর্ক হয়ে উঠেলো শান। পাঁচ বন্ধুর মধ্যে বুদ্ধিতে শানই এগিয়ে। সে সবকিছুতে ভেঙে পড়ে না বরং মোকাবেলা করতে পছন্দ করে।শান কিছু একটা ভেবে বললো,
-“আই থিংক, আমি জানি ওরা মেয়েটাকে নিয়ে কোথায় যেতে পারে।”

সিন্থিয়ার হাত ধরে তড়িৎ গতিতে ছুটে গিয়ে গাড়িতে বসলো দুইজন। বাকিরাও হুড়মুড় করে ঢুকে পড়লো। ওরা তিনজন ঘটনার কিছুই বুঝতে পারছে না। সবটাই ওদের মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।

শান ড্রাইভারকে উদ্দেশ্য করে বললো,
-“চাচা আপনি বাড়ি যান। বাবাকে বলবেন আমার ফিরতে একটু দেরী হবে।”
বলেই হাওয়ায় বেগে গাড়ি চালানো শুরু করে দিলো শান।

বিথী প্রান্তকে বললো,
-“কি হচ্ছে রে? কিছু বুঝতেছিস?”
প্রান্ত ঠোঁট উল্টে ডানে বায়ে মাথা নাড়িয়ে না বোঝালো অর্থাৎ সে কিছু বুঝতেছে না। তিহানের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করার আগেই সে জবাব দিলো,
-“আমিও কিছু জানিনা।”

অগত্যা বিথীর সিন্থিয়াকে প্রশ্ন করা লাগলো। সিন্থিয়া ওদেরকে শর্টকাটে সবটা বললো।
সাথে সাথেই প্রান্তের চোখ মুখ লাল হয়ে উঠলো। মনে পড়লো কিছু বিভৎস স্মৃতি। মুখ দিয়ে বিরবির করে উচ্চারণ করলো,
-“কুত্তার বাচ্চা গুলারে হাতের নাগালে পাইলে জ্যান্ত দাফন কইরা ফালাবো ।”

বিথীর কানে প্রান্তের বিরবির করে বলা কথা পুরোটাই পৌঁছেছে। মূহুর্তের মাঝে বিথীর মনটাও বিষাদে ঢেকে গেলো। এমন একটা ঘটনায় তো প্রান্তের জীবনটাও থমকে গিয়েছিলো। প্রানপ্রিয় ছোটবো….
বিথী আরো কিছু ভাবার আগেই ব্রেক কষলো শান। সামনেই সেই বাসটা দাঁড়ানো। পাঁচ জনই গাড়ি থেকে নেমে দ্রুত পা চালালো সেদিকে। বাসের দরজা খোলা। তিহান‌ গাড়ির মধ্যে উঁকি মেরে বললো,
-“ভেতরে কেউ নেই।”

সিন্থিয়া এবার আশেপাশে নজর দিলো। জায়গাটা জঙ্গল ধরনের। ভোরের আলো ফুটলেও এখানটা বেশ অন্ধকার।একজনকে মেরে ফেলে রেখে গেলেও কেউ টের পাবে না। আশেপাশে মানুষের অস্তিত্ব নেই বললেই চলে।
শান নিজের জায়গাতে অনড় দাঁড়িয়ে আছে। কোথায় খুঁজবে এখন‌ চন্দ্রকন্যাকে?

হঠাৎ প্রান্ত চেঁচিয়ে বললো,
-“শান‌, এদিকে আয়।”
শানের আগেই দৌড়ে গেলো‌ সিন্থিয়া। রুমঝুমের সাদা ওড়নাটা সেখানে ফেলানো। সিন্থিয়া সেটাকে হাতে তুলে নিলো। শান বললো,
-“ওরা এখানেই আছে। আশেপাশে খোঁজ। কুইক।”

শান খুব চেপে চেপে পা ফেলছে। ওর মনে হচ্ছে আশেপাশে কেউ আছে। হঠাৎ করেই ওর মনে হলো বাম সাইডের বাঁশঝাড়ের পেছন থেকে চাপা গোঙানির আওয়াজ আসছে। প্রায় বিশ হাত দূরে থাকা প্রান্তকে ইশারায় ডাকলো শান।

ড্রাইভার লোকটা রুমঝুমের পেটের উপর বসে মুখ চেপে ধরে রেখেছে। হেল্পার ছেলেটা রুমঝুমের দুইপা ধরে রেখেছে আর কন্ট্রাকটর দুই হাত ধরে রেখেছে। আর কিছুক্ষণ গেলে রুমঝুম শ্বাসরোধ হয়ে মারা যাবে এমন উপক্রম হয়েছে তার। ভয়ে রুমঝুমের অর্ধেক জীবন বেরিয়ে গেছে। দুচোখ দিয়ে পানি পড়ছে অনবরত।

আচমকাই দুপাশ থেকে প্রান্ত আর শান‌ এসে কন্ট্রাকটর আর হেল্পার ছেলেটির মাথায় মোটা লাঠি দিয়ে আঘাত করলো । দুজনেই রুমঝুমকে ছেড়ে দিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো। ড্রাইভার ওদের দেখে ভয়ে রুমঝুমকে ছেড়ে পালাতে গেলে দুজনেই ধরে ফেললো তাকে। প্রান্ত ইচ্ছে মতো‌ গালি দিচ্ছে আর কিল ঘুষি মারছে ড্রাইভার বেটাকে।
-“শালা,মেয়ে দেখলেই পুরুষত্ব জেগে ওঠে? ঘরে বউ নেই তোর? নিজের মেয়ের বয়সী মেয়েদের পেছনে পরিস। তোদের মতো নরপশুর জন্য কত পরিবার অকালে মরে জানিস? জানবি না তো। জানবি কিভাবে? তাদের তো আত্মার মরন হয়। মরন হয় হাসি খুশি আর আনন্দের। এসবের মৃত্যু দেখা যায় না তো জানবি কিভাবে।”
প্রান্ত এসব বলছে আর নিজের শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে মারছে ড্রাইভারকে। ড্রাইভার লোকটা প্রান্তের মার খেয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো। তার আর বিন্দুমাত্র নড়ার শক্তি নেই।

ততক্ষণে তিহান,বিথী আর সিন্থিয়া অনেকগুলো দড়ি নিয়ে চলে এসেছে।সিন্থিয়া রুমঝুমকে দেখেই দৌড়ে গেলো ওর কাছে। সাদা ওড়নাটা‌ জড়িয়ে দিলো রুমঝুমের গায়ে। রুমঝুম চুপচাপ বসে আছে। ওর চোখের পলকও পড়ছে না। জীবনের এতো চড়াই উৎরাই বারবার ওকেই কেন পার হতে হচ্ছে?

সিন্থিয়া রুমঝুমের ভাবান্তর না দেখে ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। রুমঝুম তবুও কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালো না।

প্রান্ত শান্ত কন্ঠে সিন্থিয়া আর বিথীকে উদ্দেশ্য করে বললো,
-“মেয়েটাকে নিয়ে যা এখান‌ থেকে। তিনজনই গাড়িতে বস গিয়ে। আমরা আসছি।”

বিথী আর সিন্থিয়া বিনা বাক্যব্যয়ে রুমঝুমকে উঠিয়ে নিয়ে গাড়ির দিকে চলে গেলো। শান শান্ত দৃষ্টিতে দেখছে রুমঝুমের হেঁটে যাওয়া। অতিরিক্ত ভয়ে মেয়েটা চুপসে গেছে। কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে না ওর মধ্যে।
ওরা তিনজন চোখের আড়াল হতেই প্রান্ত আবার লাথি মারলো ড্রাইভারের মুখ বরাবর।এরপর তিনজনের সমস্ত শরীরের জামাকাপড় খুলে ফেললো। তিনজনের প্যান্ট দিয়ে তিনজনের মুখ বেঁধে দিলো। ওদের দিকে তাকাতেও ঘৃনা লাগছে তিহান‌ আর শানের। তবে প্রান্তের জন্য এগুলো করতেই হচ্ছে। প্রান্ত ওদের উচিত শাস্তি না দিয়ে এখান থেকে চুল পরিমানও নড়বে না।

কন্ট্রাকটর এর দেহটা টেনে নেওয়ার সময় শানের চোখ পড়লো একটা দুলের দিকে। এখানেই রুমঝুম পড়ে ছিলো। শান দুলটা তুলে নিলো। মূহুর্তেই শরীরের রক্ত টগবগ করে ফুটে উঠলো। আজ ওরা খুঁজে না পেলে‌ কি হতো তার চন্দ্রকন্যার। শান সজোরে লাথি মারলো কন্ট্রাকটর লোকটিকে। লোকটা কিছুটা কঁকিয়ে উঠে আবারো চুপ হয়ে গেলো।

ওই লোক তিনটিকে একটা মোটা গাছের সাথে বিবস্ত্র করে মোটা দড়ি দিয়ে বেঁধে ফেললো প্রান্ত,তিহান আর শান। তিনজনেরই মুখ আর‌ পা ও বাঁধা। তাদের মোবাইল সহ যাবতীয় সবকিছু ইট দিয়ে থেতলে মাটিতে পুঁতে ফেললো । সমস্ত‌ কাজ শেষে তিনজনের গায়েই থুতু ছিটিয়ে দিলো তিহান। কি জঘন্য লোক এরা। ছিঃ।
চলে যেতে যেতে প্রান্ত বললো,
-“যদি‌ কেউ বাঁচাতে আসে তো বাঁচিস নাহলে এখানেই পঁচে মরিস অমানুষ গুলা।”

তিনজনই অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো তাদের যাওয়ার দিকে।এই জঙ্গলে ওদের তিনজনকে বাঁচাতে কেউই আসবে না সেটা তারা জানে। তবে কি তাদের পাপের মাসুল গোনার সময় হয়ে গেছে? পাপের ঘড়া বোধহয় পূর্ণ হয়েছে এবার।

শান আর তিহান গাড়িতে উঠে বসলো। প্রান্ত গিয়ে বসলো বাসের ড্রাইভিং সিটে।
রুমঝুমকে জড়িয়ে ধরে বসে আছে সিন্থিয়া আর বিথী । শান একনজর সেদিকে তাকালো। ভয়ে মেয়েটার চোখমুখে শুকিয়ে আছে।
শান‌ গাড়ি হাইওয়েতে নিয়ে গেলো। পেছনে প্রান্ত বাস চালিয়ে আসছে। সকাল সাড়ে আটটা বেজে গেছে ইতিমধ্যে। হাইওয়ে বেশ নির্জন আছে এখনো । প্রান্ত সুযোগ বুঝে গাড়িটাকে একটা গাছের সাথে সংঘর্ষ করিয়ে দিলো যাতে সবাই বুঝতে পারে যে গাড়ির বেহাল দশার জন্য ড্রাইভার সহ বাকি দুজন পালিয়েছে। গাড়ির সামনের কাঁচও ভেঙে দিলো।
সবকিছু প্লান অনুযায়ী সুন্দর মতো গুছিয়ে টুপ করে গাড়িতে গিয়ে বসলো। শান আর তিহান হেঁসে উঠলো ওকে দেখে।

সিন্থিয়া বললো,
-“এখন কোথায় যাবো আমরা?”
-“কোথায় মানে? আমার বাড়িতে।”
শান সোজাসাপ্টা জবাব দিলো।
বিথী বললো,
-” কিন্তু আংকেল আন্টিকে কি বলবি যদি রুমঝুমের কথা জিজ্ঞাসা করে? মেয়েটাকে তো এখন‌ একা একা ছেড়ে দেওয়া যাবে না।”

সিন্থিয়া বললো,
-“আমার ফ্লাটে চল। ওখানে সমস্যা হবে না।”
শান মাথা নাড়িয়ে সিন্থিয়ার ফ্ল্যাটের দিকে গাড়ি চালানো শুরু করলো।

পঁয়ত্রিশ মিনিটের মধ্যে ওরা সিন্থিয়ার ফ্লাটে চলে এলো। সিন্থিয়া শান,তিহান‌ আর প্রান্তকে সোফায় বসতে দিয়ে বিথীর সাহায্য নিয়ে রুমঝুমকে বেডরুমে নিয়ে গেলো। আসার সময় প্রান্ত রুমঝুমের ব্যাগটা বাস থেকে নিয়ে এসেছিলো। বিথী রুমঝুমকে ওখান থেকে একটা জামা বের করে দিয়ে বললো ,
-“ওয়াশরুম থেকে চেন্জ করে আসো।”

রুমঝুম প্রায় পনেরো মিনিট সময় নিয়ে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে এলো। বিছানায় সিন্থিয়া বসে আছে পাউরুটি,কলা আর দুধ নিয়ে। একটা বাটিতে আপেলও কাঁটা আছে। রুমঝুম দৌড়ে গিয়ে মেঝেতে বসে সিন্থিয়ার কোলে মাথা রেখে কান্না করে দিলো। কাঁদতে কাঁদতে বললো,
-” আজ তুমি আমার অনেক বড় উপকার করলে সিন্থিয়া আপু। তুমি না থাকলে আজ আমার সাথে কি কি হতো আমি কল্পনাও করতে পারছি না।আমি তোমার‌ কাছে আজীবন কৃতজ্ঞ থাকবো আপু।”

সিন্থিয়া রুমঝুমকে টেনে তুললো। দুহাত দিয়ে চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বললো,
-“পাগলী মেয়ে। আপু ডাকছো আবার কৃতজ্ঞ থাকবা বলছো? ”
রুমঝুম মাথা নিচু করে ফেললো। সিন্থিয়া ওর দিকে খাবারের ট্রে টা এগিয়ে দিয়ে বললো ,
-“এগুলো সব শেষ করো। এর চেয়ে বেশি কিছু আমার বাড়িতে নেই।”

খাবার দেখে রুমঝুমের পেটের মধ্যে মোচড় দিয়ে উঠলো। কাল বিকেল থেকেই না খাওয়া সে। চুপচাপ খেয়ে নিলো সবটা। খাওয়া শেষ করতেই মেঘার কল এলো ফোনে। রুমঝুম রিসিভ করতেই মেঘা বললো,
-“কোথায় তুই? দশ মিনিট যাবৎ খুঁজেই যাচ্ছি।”
-“আরেকটু অপেক্ষা কর প্লিজ। আমি আসছি। এসে সবটা বলবো।”
-” আচ্ছা ঠিক আছে।”
রুমঝুম কল কেটে সিন্থিয়াকে বললো,
-“এখান থেকে বাসস্ট্যান্ড কতদূরে, আপু?
-“এই ধরো, আঠারো-বিশ মিনিটের রাস্তা।কেন?”
-“আমার বান্ধবী ওখানে অপেক্ষা করছে আমার জন্য। আমাকে যেতে হবে।”

সিন্থিয়ার মুখটা মলিন হয়ে উঠলো। মেয়েটাকে ছাড়তে ইচ্ছে করছে না। যদি আবার কোনো বিপদ হয়? সিন্থিয়া বেশ সিরিয়াস হয়ে বললো,
-“রুমঝুম,চলার পথে খুব শক্ত হতে হয় । একটুতে দূর্বল হলে চলবে না। সবসময় বিপরীত দিকে যে থাকবে তার সাথে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চালিয়ে যেতে হয়। বুঝেছো?”
রুমঝুম কিছু না বুঝলেও মাথা নাড়ালো মানে সে বুঝেছে। সিন্থিয়া মুচকি হেঁসে ওকে নিয়ে ড্রয়িং রুমে এলো। শান আড়চোখে তাকালো রুমঝুমের দিকে। ধূসর রঙের একটা থ্রিপিস পড়েছে রুমঝুম। বেশ স্নিগ্ধ আর সতেজ লাগছে দেখতে এখন।

শানের ঘোর কাটলো সিন্থিয়ার কথায়।
-“ওর বান্ধবী বাসস্ট্যান্ডে অপেক্ষা করছে,শান। ওকে একটু ওখানে নামিয়ে দিয়ে আয়।”
শান মনে মনে বেশ খূশি হলেও‌ প্রকাশ করলো না। মুখে বিরক্তি ভাব এনে বললো,
-“ঠিক আছে, বের হতে বল।”
বলেই হনহন করে বেরিয়ে গেলো। রুমঝুমের কেন জানি এই ব্যাপারটা খারাপ লাগলো। লোকটা এমন‌ কেন?

রুমঝুম ইতস্তত করে সবার দিকে তাকালো।সবাই তার দিকেই তাকিয়ে আছে। রুমঝুম চোখ নামিয়ে নিয়ে বললো,
-“আপনারা আমার অনেক বড় উপকার করেছেন। আপনাদের সবাইকে অনেক ধন্যবাদ। আমি সত্যিই আপনাদের কাছে চির কৃতজ্ঞ থাকব।”
তিহান‌ বলে উঠলো,
-“ধন্যবাদ না ট্রিট চাই।”
তিহানের কথায় হেঁসে উঠলো সবাই। রুমঝুম সবার থেকে বিদায় নিয়ে ব্যাগ উঠিয়ে বের হতে গিয়ে বাঁধলো আরেক বিপত্তি। ব্যাগের কোনায় পা বেঁধে উপুড় হয়ে পড়ে যেতে লাগলো। তবে পড়ার আগেই প্রান্ত এসে ধরে ফেললো। প্রান্ত ধরায় রুমঝুমের অস্বস্তি লাগা শুরু হলো। প্রান্ত সেটা বুঝতে পেরে রুমঝুমকে সোজা দাঁড় করিয়ে দিয়ে বললো,
-” খারাপ কিছু মনে করো না । তোমার মধ্যে নিজের ছোটবোনকে দেখেছি আমি। তুমি আমার ছোটবোনের মতো। তোমাকে বাজে উদ্দেশ্যে ধরিনি আমি বোন। শুধুমাত্র পড়ে যাচ্ছিলে বলে..”

রুমঝুমের মুখে হাঁসি ফুটে উঠলো। হেঁসেই বললো,
-“ইটস্ ওকে ভাইয়া। ধন্যবাদ আপনাকে। আসি তাহলে আমি।”
-“হুম,সাবধানে যেয়ো।”
রুমঝুম সবার দিকে একনজর তাকিয়ে বেরিয়ে গেলো ফ্ল্যাট থেকে। সিন্থিয়া রুমঝুমের যাওয়ার পথে তাকিয়ে বললো,
-“আল্লাহ, মেয়েটার সহায় হোন।”

————————————

-“দেখুন শাশুড়ি আম্মা, ঝুম কে আমার সাথে বিয়ে দেওয়ার কথা বলে অনেক কিছু হাতিয়েছেন আমার থেকে ।অথচ বিয়ের দিন মেয়ে নাই হয়ে গেছে। আপনি বলেছেন ওকে খুঁজে এনে দেবেন আর এখন বলছেন ও কোথায় আছে জানেন না? নাটক করার জায়গা পাচ্ছেন না আপনি?”

আরমান আহমেদের মৃদু চিৎকার করে বলা কথায় হালকা কেঁপে উঠলো তাহমিনা বেগম। তবে সেটা প্রকাশ করলেন না। গলায় যথেষ্ট তেজ ঢেলে বললেন,
-“আমি তোমাকে আগেই বলেছিলাম ওই মেয়ে সুবিধার না। তুমি বলেছিলে ও পালাতে পারবে না। তুমি নাকি ওর পালানোর রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছো। তাহলে এখন আমাকে এসব শুনাচ্ছো কেন?”

-“রাস্তা বন্ধ করেছিলাম তো। তবে আমি ঘুনাক্ষরেও বুঝতে পারিনি যে ও‌ দেয়াল টপকে পালাতে পারে।”

-“আমি তো‌ তোমাকে বলেই দিয়েছি ওই মেয়ে এখন‌ তোমার। ওকে খুঁজে এনে যা খুশি করো তুমি। আমরা কেউ দেখতেও যাবো না।”

আরমান ঈষৎ হাসলো। ফিসফিসিয়ে বললো,
-“এই কথাটা মাথায় থাকে যেন। আপনি আসবেন না আমি জানি তবে আপনার হাজবেন্ড আর ছেলেকে আটকানোর দায়িত্বটাও কিন্তু আমার। মনে রাখবেন, রুমঝুমকে আমার কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন আপনি।”

তাহমিনা বেগম শুকনো ঢোক গিললো। টাকার জন্য সে রুমঝুমকে বিক্রি করেছে এটা কেউ জানেনা। সবাই জানে বড়লোক ছেলে দেখে রুমঝুমকে জোড় করে বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। সত্যিটা সবাই জানলে তার কি হবে সেটা ভেবেই ঘাম ছুটে গেলো তার।

চলবে……….

চন্দ্ররঙা প্রেম পর্ব-০২

0

#চন্দ্ররঙা_প্রেম
#পর্ব-২
#আর্শিয়া_সেহের

বাস চলছে আপন‌ গতিতে। গাছপালা গুলো সব উল্টা দিকে দৌড়াচ্ছে। এই দৃশ্য রুমঝুমের খুব প্রিয়। বাসের মধ্যে সবাই চুপচাপ বসে থাকলেও চুপ করে নেই ওই পাঁচ সদস্যের বিচ্ছু বাহীনি। তাদের বকবকানি চলছে তো চলছেই। রুমঝুমের ইচ্ছে করলো ওদের কথা শোনার। তাই প্রকৃতি থেকে মুখ ফিরিয়ে ওদের কথা শোনায় মগ্ন হলো।

-“প্রান্ত ,একটা গান ধর না। জার্নি টা বোরিং লাগতেছে রে। ”
-” চল ফুট। রাত কয়টা বাজে সে খেয়াল আছে তোর ? বাসের লোক সব ঘুমাচ্ছে আর উনি আসছে গান শুনতে।”
প্রান্তর কথায় মুখ ভার করে বসলো সিন্থিয়া।
বিথী সেটা দেখে সিন্থিয়ার দিকে ফিরে বললো,
-“এটা কি গান শোনার সময় সিন্থু? এমন বাচ্চামি করিস না তো।”
ওদের এতো কথায় বিরক্ত হলো শান। ভরাট কন্ঠে বললো,
-“সবগুলো চুপ কর এবার। আর একটা কথাও বলবি তো বাস থেকে ফেলে দিবো। তোরা ভালো করেই জানিস ইন..”

শানকে শেষ করতে না দিয়ে বাকি চারজন একসাথে বলে উঠলো,
-“আমরা ভালো করেই জানি ‘ইনজামুল শাফায়াত শান’ রেগে গেলে যা ইচ্ছা করতে পারে।”
বলেই অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো চারজন। তাদের কথা শুনে রুমঝুমও মুচকি হাসলো।

রাত সাড়ে দশটার মতো বাজে। আকাশে আজও বড় একটা চাঁদ দেখা যাচ্ছে তবে সেটা গতকালকের চেয়ে কিছুটা ছোট। চাঁদের আলোতে বাইরের সবকিছুই আলোকিত হয়ে আছে।
রুমঝুম চুলগুলো হাতখোপা করে সিটে গা এলিয়ে বসে আছে। মুখটা জানালার দিকে হালকা কাত করে রেখেছে। এতে করে চাঁদের আলো সরাসরি রুমঝুমের মুখে এসে পড়েছে। চাঁদের আলোতে রুমঝুমকে অপরুপা লাগছে।

সিন্থিয়া বোরিং হয়ে সিট থেকে উঠে দাঁড়ালো। চঞ্চল প্রকৃতির সিন্থিয়া এভাবে চুপচাপ জার্নি করাটা একদমই মানতে পারছে না। সে সিট থেকে উঠে দাঁড়িয়ে পেছনে থাকা যাত্রীদের দেখছে। একটা বাচ্চার দিকে নজর পড়তেই দেখলো বাচ্চাটা ওর দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। সিন্থিয়া বাচ্চাটার দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ দিলো সাথে ফ্লাইং কিস ছুড়লো। বাচ্চাটা সাথে সাথে কান্না জুড়ে দিলো। বাচ্চাটার কান্নায় সিন্থিয়া ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো। আজকালকার বাচ্চারা তো ফ্লার্ট করা পছন্দ করে তবে এটা ভিন্ন কেন? সিন্থিয়া অতশত না ভেবে অন্যদের দেখতে ব্যাস্ত হলো।

সবার দিকে চোখ বুলাতে বুলাতে সিন্থিয়ার চোখ আটকে গেলো নীল-সাদা জামা পড়া একটা মেয়ের দিকে। চাঁদের আলোতে হুরপরী মনে হচ্ছে। সিন্থিয়া মৃদু চিৎকার দিয়ে বললো,
-“সো কিউট গার্ল।”
বলেই পাশে থাকা শানকে ঠেলতে লাগলো মেয়েটাকে দেখার জন্য। শান বিরক্ত ভঙ্গিতে বললো,

-“চুপচাপ বস মেরি মা। মৃগী রোগ হইছে নাকি?এরকম ঠেলাঠেলি করস ক্যান?”

সিন্থিয়া চোখ গরম করে তাকিয়ে বললো‌,
-“ওই মেয়েটাকে একবার দেখ দোস্ত। আরে দেখ না। ওঠ।”

সিন্থিয়ার ঠেলাঠেলিতে শান আর বসে থাকতে পারলো‌ না। সে জানে যতক্ষণ সিন্থিয়া নিজের উদ্দেশ্য পূরণে সফল না হয় ততক্ষণ এরকম করতেই থাকে।
শান একপ্রকার বাধ্য হয়ে উঠে দাঁড়ালো সিন্থিয়ার পাশে। সিন্থিয়ার ইশারা মতো বিরক্তিসূচক চাহনিতে তাকালো সেদিকে। একবার তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে বুঝতে পারলো ওর একটা হার্টবিট মিস হয়েছে। আবার তাকালো সেদিকে। চাঁদের স্নিগ্ধ আলোতে ভেসে বেড়াচ্ছে একটা মায়াবী মুখ।এই প্রথম নিজের মা আর বোন ছাড়া কোনো মেয়েকে অতি আপন মনে হচ্ছে তার। শান রুমঝুমের দিকে তাকিয়ে পলক ফেলাটাও যেন ভুলে গেলো।

সিন্থিয়া পাশ থেকে বললো,
-“মেয়েটা সুন্দর না, বল?”
শান আনমনেই বললো,
-“চন্দ্রকন্যা দেখতে সুন্দরই হয়।”

সিন্থিয়া খিলখিল করে হেসে উঠলো।বললো,
-“আয় হায়! দি গ্রেট ইনজামুল শাফায়াত শানের কি লাভ এ্যাট ফার্স্ট সাইট হয়ে গেলো?”

সিন্থিয়ার কথায় ঘোর কাটলো শানের। কি থেকে কি বলে ফেললো ভেবে থতমত খেয়ে গেলো সে। তবুও নিজেকে সামলে নিয়ে কপাল কুঁচকে আমতাআমতা করে উত্তর দিলো ,
-” লাভ না ছাই। ফালতু কথা বলিস না, সিন্থু। আর এখন আমাকে একদম জ্বালাবি না বলে দিচ্ছি।”
সিটে বসতে বসতে বললো শান। মুখে এসব বললেও মনের মধ্যে উথালপাথাল শুরু হয়ে গেছে ততক্ষনে। শানের নিজের উপরই রাগ হচ্ছে। কেন যে সিন্থিয়ার কথায় মেয়েটাকে দেখতে গেল। শান মনে মনে নিজেই নিজেকে বললো,
-“নো শান নো। এসব প্রেম পিরিতি কিচ্ছু না। একদম ওসব ভাববি না। ”
নিজ মনে নিজেকে কিছুক্ষণ শাসালো শান। তারপর চোখ বন্ধ করে সিটে হেলান দিলো।
কি যন্ত্রণা!মেয়েটার মুখ চোখের পাতায়ও ভেসে উঠছে। সিন্থিয়ার জন্যই এমন হচ্ছে ভেবে সাথে সাথে চোখ খুলে রাগী দৃষ্টিতে পাশে বসা সিন্থিয়ার দিকে তাকালো শান।
কিন্তু একি! সিন্থিয়া সিটে নেই। উঁকি ঝুঁকি মেরে দেখলো সিন্থিয়া তার চন্দ্রকন্যার পাশের সিটে গিয়ে বসেছে।
বাসে তিন চারজন না উঠায় সিটগুলো ফাঁকা থেকে গেছে। মেয়েটার পাশের সিটের লোকটাও আসেনি তাই সেই সিটটাও ফাঁকা পড়ে আছে।

বিথী, প্রান্ত আর তিহান ও তাকালো সিন্থিয়ার দিকে। কি সুন্দর গল্প শুরু করে দিয়েছে মেয়েটার সাথে। তিনজনই মেয়েটাকে একপলক দেখলো। তিহান শানের দিকে তাকিয়ে বললো,
-” মেয়েটা কি সিন্থুর পরিচিত?”

শান মুখ বাঁকিয়ে উত্তর দিলো,
-“আরে নাহ। মেয়েটাকে দেখে ক্রাশ খাইছে সে।”
শানের কথায় তিনজনই হো হো করে হেঁসে উঠলো।

..

-“হেই, আমি সিন্থিয়া। তোমাকে আমার দারুন লেগেছে। গল্প করবে আমার সাথে?”
রুমঝুম আগেই বুঝেছে মেয়েটা বেশ কথা বলতে জানে। অবশ্য রুমঝুমও খুব একটা শান্ত মেয়ে নয়। পরিস্থিতির চাপে এখন শান্ত হয়ে আছে সে।
রুমঝুম মুচকি হেঁসে বললো,
-“করবো না কেন? তুমি গল্প শুরু করো।”

কান খাঁড়া করে রাখায় রুমঝুমের কন্ঠস্বর শানের কান অবধি পৌঁছে গেলো।কি সুন্দর রিনরিনে কন্ঠে কথা বলছে মেয়েটা। তাতে তার কি? আজব তো। একটা মেয়ের কন্ঠ শুনে এতো খুশি হওয়ার তো কিছু নেই। শান নিজে নিজেকে ধমকিয়ে কালে ইয়ারফোন গুজে নিলো। শানের এসব কাজকর্ম প্রান্ত লক্ষ্য করলো। সে ভাবছে, ছেলেটার মাথার তার ছিড়লো কখন?

সিন্থিয়া রুমঝুমের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো,
-“আচ্ছা তোমার নাম কি?”
-“আশফিয়া জান্নাত রুমঝুম। ”
-“ওয়াও, দারুন নাম তো তোমার। আচ্ছা তুমি চট্টগ্রামে কোথায় যাচ্ছো?”
রুমঝুম কোনো উত্তর দিতে পারলো না। কি বলবে ও? মেয়েটা নিশ্চয়ই এরপর জিজ্ঞাসা করবে,ও কেন যাচ্ছে? বাড়ি থাকছে না কেন? এসবের কি উত্তর দেবে ও? আজ নিজেকে বড্ড অসহায় মনে হচ্ছে।

-“তোমার মেয়ে আমাদের নাক-কান কেটে পালিয়ে গেছে আর তুমি? ওকে খোঁজার কোনো চেষ্টাই করছো না? ওকে খুঁজে এনে হাত-পা কেটে ঘরে বসিয়ে না রাখা অবধি শান্তি হচ্ছে না আমার।”

-“তোমার দায়িত্বে রেখেই তো আমি ব্যাবসার কাজটা দেখতে মোংলা গিয়েছিলাম। তুমি তাড়াহুড়ো করে আমার অনুপস্থিতিতে ওকে জোড় করে বিয়ে দিতে গিয়েছিলে । তাও আবার ওইরকম একটা লোকের সাথে। এখানে ও পালিয়ে গিয়ে ভুল কি করেছে?”

রাগে ফুঁসে উঠলো তাহমিনা বেগম। চোখ গরম করে তাকিয়ে আছে রেজাউল তালুকদারের দিকে। মেয়ে পালানোর পর জরুরি তলব করে এনেছেন স্বামীকে। সে এসে পৌঁছেছে রাত দশটায়। এখন মেয়েকে খুঁজে শাস্তি দেবে তা না করে মেয়ের কাজে সায় দিচ্ছে।
তাহমিনার রাগকে আরো কয়েক ডিগ্রি বাড়াতেই যেন তার সামনে দেখা দিলো রুশান। রুশানকে দেখেই বাজখাঁই গলাই তাহমিনা বেগম বলে উঠলেন,
-“এই ছেলের জন্যই ওই মেয়ে পালাতে পেরেছে। আমি খুব ভালো করে জানি ওকে পালানোর জন্য এই হারামজাদা উষ্কানি দিয়েছে। ইচ্ছে করছে এটাকে ধরে…”
আর কিছু বলতে পারলেন না তাহমিনা বেগম।রুশান আগুনে কেরোসিন ঢালার মতন করে প্রশ্ন করলো,
-“কি ইচ্ছে করছে আম্মা?”

তাহমিনা তেড়ে যাচ্ছিলো রুশানের দিকে। রেজাউল সাহেব তাকে থামিয়ে দিলেন। শান্ত কন্ঠে বললেন,
-“এসব নিয়ে আর কোনো ঝামেলা করো না তাহু। আমি দেখছি ব্যাপারটা।”

তাহমিনা বেগম স্বামীর দিকে একপলক তাকিয়ে ফুঁসতে ফুঁসতে নিজের ঘরে চলে গেলেন।রুশানও নিজের রুমে চলে গেলো। রেজাউল সাহেব সোফায় বসে পড়লেন। মেয়েটার জন্মের পর থেকেই ওর সাথে অন্যায় করে চলছে তারা‌। এবার অন্তত মেয়েটাকে নিজের মতো বাঁচতে দেওয়া উচিত।

রেজাউল সাহেব ধীরগতিতে বাড়ি থেকে বের হলো। মাথার উপর বিস্তির্ণ আকাশ। আকাশের মাঝবরাবর উজ্জ্বল একটা তারা দেখা যাচ্ছে। সেদিকে তাকিয়ে অপরাধী কন্ঠে রেজাউল সাহেব বললো,
-“আমাকে ক্ষমা করে দিও, রেহনুমা। আমাদের মেয়েটাকে আমি সুস্থ, স্বাভাবিক, সুন্দর একটা জীবন দিতে পারিনি।”

বাস চট্টগ্রামে এসে পৌঁছালো প্রায় ভোরের দিকে। ভোরের আলো তখনও ফোঁটে নি। একে একে সবাই নেমে পড়েছে বাস থেকে।
বাস যেখানে থেমেছে সেখান থেকে কিছুটা দূরে গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছে শানের বাবার পাঠানো ড্রাইভার। শান‌ আগেভাগে নেমে সবার ব্যাগ নিয়ে গাড়িতে তুলছে। বাকিরাও‌ নেমে পড়েছে। শান ব্যাগ নেওয়ার ফাঁকে ফাঁকে আশেপাশে দেখছে তার চন্দ্রকন্যা নেমেছে কি না। কিন্তু নাহ,তার দেখা পাওয়া যাচ্ছে না।

বাস থেকে সবার শেষে সিন্থিয়া নামছিলো। নামার সময় দেখলো‌ ড্রাইভার কেমন লোলুপ দৃষ্টিতে বাসের পেছন দিকে তাকিয়ে আছে। সিন্থিয়া মাথা ঘুরিয়ে দেখলো রুমঝুম এখনো সিটে গা এলিয়ে ঘুমিয়ে আছে। মেয়েটা ওকে বলেছিলো সে দুইরাত ঘুমায়নি। তাই ওকে ঘুমাতে দিয়ে সিন্থিয়া উঠে এসেছিলো। সিন্থিয়া বাসের দরজায় দাঁড়িয়েই জোরে রুমঝুমের নাম ধরে ডেকে উঠলো।
ধড়পড়িয়ে উঠলো রুমঝুম। উঠে দেখলো পুরো বাস ফাঁকা। ড্রাইভার, কন্ট্রাকটর সবাই সিন্থিয়ার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। রুমঝুম সেদিকে তোয়াক্কা না করে বললো,
-“আমরা কি চলে এসেছি?”
-“হ্যাঁ,নেমে এসো।”
রুমঝুম ব্যাগ নিয়ে সিট থেকে বের হচ্ছিলো। তখন হেল্পার ছেলেটি সিন্থিয়াকে বললো, -“আপা,সরেন।আমি নামমু।”

সিন্থিয়ার সামনেই ছেলেটা দাঁড়ানো। অগত্যা সিন্থিয়াকে নিচে নেমে দাঁড়াতে হলো। সাথে সাথেই সাঁই সাঁই করে চলে গেলো বাসটি। বাসের ভেতর থেকে রিনরিনে চিকন কন্ঠে হালকা চিৎকার ভেসে এলো।
-“বাস থামান,বাস থামান।আমি নামবো।”

সিন্থিয়া কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না। সে মেয়েটাকে বাঁচাতে পারলো না। তখনই পেছন থেকে শানের কন্ঠ ভেসে এলো। সিন্থিয়া সঙ্গে সঙ্গে চিৎকার করে বলে উঠলো,
-“ওই বাসের মধ্যে রুমঝুম রয়েছে, শান। পশুগুলো ওকে নিয়ে গেছে রে। আমি বাঁচাতে পারিনি মেয়েটাকে।”

চলবে…….

(ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।)

চন্দ্ররঙা প্রেম পর্ব-০১

0

#চন্দ্ররঙা_প্রেম
#পর্ব-১
#আর্শিয়া_সেহের

-“আপু আজ রাতেই তুমি এ শহর ছেড়ে পালিয়ে যাও। ওই খারাপ লোকটাকে বিয়ে করো না আপু। আমি সব ব্যবস্থা করে রেখেছি ,তুমি চলে যাও।”

নিজের সতেরো বছর বয়সী ভাইয়ের মুখে এমন কথা শুনে কিছু বলার মতো খুঁজে পেলো না রুমঝুম। যেখানে বাড়ির কেউ তার কথা একটিবারের জন্য ভেবে দেখেনি সেখানে তার এই ছোট্ট ভাইটা তার জন্য এতো কিছু ভেবেছে? কান্নাজড়িত গলায় রুমঝুম বললো,
-“আমি চলে গেলে বাবা-মা সমাজে মুখ দেখাতে পারবে না, রুশান।”

-“আপু প্লিজ। ওই মহিলাকে মা ডেকো না তুমি। সে তোমার মতো ফুলের মা হওয়ার যোগ্য না আপু। জঘন্য নোংরা খেলা খেলছে ওরা তোমার সাথে। আপু পালিয়ে যাও তুমি। মরে যাবে ওদের ফাঁদে পা দিলে। প্লিজ আপু পালাও।”

রুশানকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠলো রুমঝুম। সে কোথায় যাবে?কিভাবে যাবে? এই ভাইকে ছেড়ে কিভাবে থাকবে সে?

রুশান রুমঝুমকে ছেড়ে এক দৌড়ে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেলো। রুমঝুম অশ্রুসিক্ত চোখে সেদিকে তাকিয়ে ছিলো। মিনিট তিনেকের মধ্যেই আবার ফিরে এলো রুশান। তার টিশার্ট পেটের কাছ থেকে কিছুটা উঁচু করে তার মধ্যেই কিছু এনেছে সে। বিছানায় এসেই টিশার্টের উঁচু করে ধরা স্থানটুকু ছেড়ে দিলো রুশান। সাথে সাথেই বিছানায় পড়লো পাঁচ,দশ,বিশ, পঞ্চাশ, একশো টাকার কয়েকটি নোট সহ বেশ কয়েকটি কয়েন।

রুমঝুম এগুলো দেখে ভাইয়ের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো। রুশান বললো,
-“এই টাকা গুলো ব্যাংকে জমিয়েছিলাম আপু। আমি জানি তোমার কাছে টাকা নেই। এগুলো তুমি রাখো। ভেবো না টাকাগুলো একদম দিয়ে দিচ্ছি। সময়মতো সুদসমেত ফিরিয়ে নিবো , বুঝলে? ”

রুমঝুম চোখ ভর্তি পানি নিয়েও হেঁসে ফেললো। সেদিনের পিচ্চি ছেলেটা কত বড় হয়ে গেছে। তার জন্য ভাবছে। সে চলে গেলে ছেলেটার উপর বেশ বড়সড় ঝড় আসবে।তবে রুশানকে ওর মা তেমন কিছু বলবে না , নিজের ছেলে তো। রুমঝুমের ভাবনার মধ্যেই রুশান বললো,
-“আপু,ভোর পাঁচটার মধ্যে বেরিয়ে পড়বে।”

রুমঝুম কিছু বললো না। চাপা কান্না কাঁদতে থাকলো সে। দ্বিধায় ভুগছে সে। রুশান জবাব না পেয়ে আবার বললো,
-“যাবে তো আপু?”

কি করুন স্বরে কথাটা বললো রুশান। বোনকে বাঁচাতে কত চেষ্টা ছেলেটার। রুমঝুমকে আলোর পথে পাঠানোর জন্য কত আয়োজন করেছে সে।
রুমঝুম ঠোঁটের কোণে একটু হাসি ফুটিয়ে বললো,
-“যাবো ভাই। আমি যাবো। তুই এতো ভালোবাসিস কেন আমাকে? আমি তো তোর নিজের…

রুশান রুমঝুমের মুখ চেপে ধরলো বাকি কথা বলার আগেই। জোর গলায় বললো,
-“তুমি আমার আপু। আমার নিজের আপু। আমার ঝুম আপু।”

রুমঝুমের মুখে হাসি ফুটলো। তৃপ্তির হাসি। যাক,তারও নিজের কেউ আছে।

দরজার বাইরে কারো পায়ের আওয়াজ পেয়ে সতর্ক হয়ে উঠলো দুই ভাইবোন। রুমঝুম সব টাকা গুলো গুছিয়ে নিয়েছে। রুশানকে বিছানায় বসিয়ে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, কাপড় চোপড়, কাগজপত্র নিয়ে ব্যাগ গুছিয়ে ফেললো। রুশানের বারবার চোখ ভিজে উঠছে। সে নিজ দায়িত্বে তার আপুকে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে পাঠাচ্ছে। রুশান বিরবির করে বললো,”আমার আপুকে তুমি রক্ষা করো আল্লাহ।ওকে ভালো রেখো।”

অনেক রাত পর্যন্ত দুই ভাইবোন ছাদে বসে গল্প করলো। আবার কবে দুইজন দুইজনকে পাবে কেউই জানে না। মন ভরে গল্প করলো অনেক রাত অবধি। একসময় রুমঝুম বললো,
-“এখন গিয়ে ঘুমিয়ে পড় রুশান। অনেক রাত হয়েছে।”

-“তুমিও গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো আপু।আমি একটু পরে যাচ্ছি।”

রুমঝুম আর কিছু বললো না। চুপচাপ চলে গেলো ছাদ থেকে। রুশান সেদিকে একবার দেখে চোখ ফিরিয়ে নিলো। আকাশে আজ মস্ত বড় থলের মতো একটা চাঁদ উঠেছে। চাঁদের আলোতে ঝলমল করছে চারপাশ। রুশান চাঁদের পানে তাকিয়ে নিজ মনে বললো,
-“আমার আপুর প্রতিটা দিন যেন এমন চাঁদের মতো আলো ঝলমলে হয়। চাঁদের আলোর মতো স্নিগ্ধতায় ঢাকা থাকুক ওর জীবন। ”

ভোর চারটা বেজে উনচল্লিশ মিনিট। গুটি গুটি পা ফেলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলো রুমঝুম। সামনের গেইটে দারোয়ান থাকে তাই রুশান তাদের বাড়ির পেছন দিকে একটা মই রেখে এসেছে। রুমঝুমকে ওই দিক দিয়েই যেতে বলেছে রুশান।
একদম শেষ মাথায় মই পেয়ে গেলো রুমঝুম। মইটা পাঁচিলের সাথে ভালোভাবে সেট করে আস্তে আস্তে উঠে পড়লো পাঁচিলের উপর। পাঁচিলের ওপারে এই জায়গাটা বেশ উঁচু। লাফ দিলে তেমন ব্যাথা লাগবে না। রুশান সবকিছু আগে থেকেই দেখে নিয়েছে। রুমঝুম আরেকবার তাকালো আবছা আলোয় দাঁড়িয়ে থাকা দোতলা বাড়িটার দিকে। তার জীবনের বিশটি বছর কেটেছে এবাড়িতে। তার শৈশব, কৈশরের সাক্ষী এ বাড়িটি। এ বাড়িতে রেখে যাচ্ছে অনেক কিছু।

রুমঝুম মুখ ফিরিয়ে নিলো। তখনি মনে হলো আবছা আলোর আড়াল থেকে কেউ তাকে দেখছে। আরেকবার চোখ ফেরালো বাড়ির দিকে। আবছা আলোতেই খুঁজে পেলো তাকে। দোতলার কর্নারের ঘর থেকে তাকিয়ে আছে এক জোড়া চোখ। উহু এটা আর কেউ না,তার ছোট্ট ভাই রুশান। রুমঝুমের মনে হলো রুশান চিৎকার করে বলতে চাইছে,
-“আপু, আবার ফিরবে তো?”

রুমঝুমেরও চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করলো,
-“আমি ফিরবো ভাই,তোর জন্য হলেও ফিরবো।”
কিন্তু আফসোস!সেটা বলা হলো‌ না।পাছে কেউ শুনে ফেলে।

রুশান দোতলা থেকে হাত নেড়ে বিদায় দিলো প্রাণপ্রিয় বোনকে। রুমঝুমও কিঞ্চিত হেসে হাত নাড়লো। তারপর লাফ দিয়ে পড়লো দেয়ালের ওপারে। হারিয়ে গেলো রুশানের চোখের সামনে দিয়ে। তবুও রুশান একদৃষ্টিতে চেয়ে আছে সেদিকে। তার সবচেয়ে বড় শুভাকাঙ্ক্ষী বিদায় নিলো তার থেকে।

কিছু একটা মনে পড়তেই রুশান চুপচাপ বেরিয়ে এলো বাড়ি থেকে। বাড়ির পেছনে এসে সরিয়ে ফেললো মইটা। তার আপুর যাত্রাপথে কোনো বাঁধা না আসুক। বিরবির করে বললো, “তোমার জীবনযাত্রা শুভ হোক,আপু।”

..

শুনশান রাস্তায় প্রায় পঁয়ত্রিশ মিনিট ধরে হেঁটে চলেছে রুমঝুম। চারপাশে আলো ছড়িয়ে পড়েছে। আলোয় পৃথিবী ভরে উঠলেও সে যেন অন্ধকারেই রয়ে গেছে। কোথায় যাবে সে এখন?

হাঁটতে হাঁটতে বাসস্ট্যান্ডে এসে দাড়ালো রুমঝুম। চারপাশে লোকজনের আনাগোনা শুরু হয়েছে। হঠাৎ ওর মনে হলো খালার কাছে যাওয়ার কথা। খালা তো ওকে অনেক ভালোবাসে। সে নিশ্চয়ই ফেলবে না তার কাছে গেলে। যেমন ভাবা তেমন কাজ। বাসস্ট্যান্ডের পাশের এক হোটেল থেকে পাউরুটি আর কলা কিনে নিয়ে বাসে উঠে পড়লো সে। গন্তব্য যশোর।

বাসে উঠলে আশেপাশের প্রকৃতিতে মত্ত হয়ে থাকে রুমঝুম। প্রকৃতি যেন তাকে হাতছানি দিয়ে ডাকে। গাছপালা, নদীনালা,পাহাড়পর্বত , আকাশবাতাস এগুলোর সাথে রুমঝুমের ভীষণ সখ্যতা।
বাস চলতে আরম্ভ করলে বাতাসের ঝাপটা এসে রুমঝুমকে ছুঁয়ে গেলো। নিজেকে প্রকৃতিকন্যা মনে হচ্ছিলো রুমঝুমের।

বেলা ১২ টার মধ্যে রুমঝুম যশোর এসে পৌঁছালো। প্রায় দুই বছর পর সে যশোরে এসেছে। খালার বাড়িতে পৌঁছাতে তার আরো বিশ মিনিট লাগলো। শুক্রবার হওয়ায় তার খালুও আজ বাড়িতে আছে।

অবেলায় রুমঝুমকে দেখে তার খালা-খালু দুজনেই বেশ অবাক হলো। খালা এগিয়ে গিয়ে রুমঝুমের কাছে দাঁড়াতেই রুমঝুম তার বুকে হামলে পড়ে হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করলো।খালার গায়ে নাকি মা মা গন্ধ পাওয়া যায়। রুমঝুমও খালাকে জড়িয়ে ধরলে মা মা সুবাস পায়। শান্তি লাগে তার।

রুমঝুমের খালা ওকে এভাবে কাঁদতে দেখে ভয় পেয়ে গেলো। রুমঝুমকে বুক থেকে উঠিয়ে সোফায় বসিয়ে পানি খেতে দিলো। তারপর ওকে এভাবে চলে আসার কারন জিজ্ঞেস করলো। রুমঝুম কাঁদতে কাঁদতে খালাকে সব বললো। খালা‌ ওর মাথায় হাত রেখে বললো‌,তুই এখানেই থাক মা। ওই নরপিশাচদের কাছে আর যেতে হবে না।

রুমঝুমের খালু কিছু না বলেই রুমে চলে গেলো। সেটা দেখে তার খালাও সেদিকে গেলো। রুমঝুম ব্যাগ নিয়ে গেস্ট রুমের দিকে যাওয়ার সময় শুনতে পেলো খালা-খালু কিছু নিয়ে তর্ক করছে। কিছুটা শোনার পর সে বুঝলো তাকে নিয়েই তর্কাতর্কি চলছে সেখানে। খালুর স্পষ্ট কন্ঠস্বর শুনলো সে।
-“তোমার বোনের মেয়েকে আমি এবাড়িতে রাখতে পারবো‌ না। যেভাবে মেহমান বেড়াতে আসে সেভাবেই কিছুদিন থেকে যেন চলে যায়।”

-“তোমার মাথা খারাপ হয়েছে? মেয়েটা কোথায় যাব? ওই বাড়িতে গেলে ওর সাথে কি কি হতে পারে সে ধারনা‌ আছে তোমার?”

-“আমি জানিনা ওর কি হবে,কোথায় যাবে? ওকে আমি এবাড়িতে রাখবো‌ না ব্যাস। তোমার যদি বোনের মেয়ের জন্য এতোই কষ্ট লাগে তাহলে তাকে সাথে নিয়ে তুমিও বেরিয়ে যাও।”

রুমঝুম আর কিছু শুনলো না। চুপচাপ হেঁটে রুমে চলে গেলো। তার জীবনটা যেন হাওয়ায় ভাসছে। কখন কোথায় যাচ্ছে সে নিজেও বুঝতে পারছে না।
রুমঝুম সিদ্ধান্ত নিলো সে এখানে থাকবে না। তার জন্য তার খালার সমস্যা হোক এটা ও কখনোই চায়নি।
বিছানায় বসে রুমঝুম ভাবছে, ও কোথায় যাবে?এ শহর ছেড়ে অনেক দূরে যেতে হবে ওকে। সবার আড়ালে।

হঠাৎ করেই রুমঝুমের মনে পড়লো ওর বান্ধবী মেঘার কথা। মেঘা গতবছর চট্রগ্রামে শিফট হয়েছে। বেস্ট ফ্রেন্ড না হলেও বেস্ট ফ্রেন্ড থেকে কোনো অংশে কম নয় দুজন দুজনার। শেষ কয়েকদিন ধরে পারিবারিক ঝামেলার কারনে মেঘার সাথে যোগাযোগ করা হয়নি রুমঝুমের।
রুমঝুম ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে মেঘাকে কল করলো। প্রথমবারেই কল রিসিভ করলো মেঘা।
-“হ্যাঁ ঝুম,বল। কেমন আছিস?”

রুমঝুম ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো। রুমঝুমের কান্নায় থতমত খেয়ে গেলো মেঘা। সে উত্তেজিত হয়ে বললো,
-“কাঁদছিস কেন ঝুম? আমাকে বল। কি হয়েছে তোর?”
রুমঝুম কান্না দমিয়ে ভাঙা গলায় বললো,
-“আমাকে তোর শহরে থাকার একটা জায়গা খুঁজে দিবি মেঘা? এই বিষাক্ত শহর থেকে মুক্তি চাই আমি।”
মেঘা বুঝলো সিরিয়াস কিছু হয়েছে। তাই আর প্রশ্ন করলো না। পরের বাসেই রুমঝুমকে চট্টগ্রাম যেতে বললো মেঘা।
রুমঝুম জানতো এই মেয়েটা তাকে কখনো ফেরাবে না। থাকার জায়গা হয়ে গেলে সেখানে গিয়ে নিজের চলার মতো কাজ ও পেয়ে যাবে ও। দরকার হলে মেঘাকে বলে কয়েকটি টিউশনি ঠিক করে নিবে।

রাত আটটার বাসে চট্টগ্রাম যাত্রা শুরু করলো রুমঝুম। খালার ওখান থেকে আসার সময় খালা কাঁদতে কাঁদতে ওর হাতে হাজার বিশেক টাকা গুঁজে দিয়েছে। আচেনা শহরে কখন কি দরকার পরে বলা তো যায় না। রুমঝুম জানালা দিয়ে তাকিয়ে আছে দূর আকাশে। আজ এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে পা বাড়াচ্ছে সে।

..

-” ওইটা আমার সিট সিন্থিয়া। তুই ওখানে কেন বসলি?”
-“আমি জানালার কাছে বসবো তাই। তুই গিয়ে শান এর সিটে বসে পর,বিথী । ওরটাও তো জানালার কাছে।”
-“আমি এখানেই বসবো ।ওঠ তুই ।”
উচ্চ কন্ঠের মেয়েলি গলায় রুমঝুম তাকালো বাসের সামনের দিকে। পাঁচ সদস্যের একটা দল উঠেছে গাড়িতে। সেখানে দুইটা মেয়ে আর তিনটা ছেলে। মেয়ে দুটোই চেঁচামেচি করছে।
রুমঝুম সেদিকে একবার তাকিয়ে আবার জানালার বাইরে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো। তার মাথায় এখন শুধুই অদূর ভবিষ্যতের চিন্তা।

চলবে………

কাঠগোলাপের মোহে পর্ব-২০ এবং শেষ পর্ব

0

#কাঠগোলাপের মোহে🌻
#মোনামী_শেখ
#part:20+অন্তিম পর্ব

আজ নিয়ে ৫ দিন হয়ে যায় প্রণয় ভাইয়ার সাথে কথা বলিনি।সেদিন প্রণয় ভাইয়ার ওমন ব্যাবহার আমাকে খুব কষ্ট দিয়েছিলো।ঠোঁটে এখনো ব্যাথা তবে সেই ব্যাথা মূল্যহীন হলেও মনের ব্যাথাটাই গুরুত্বপূর্ণ। বাহিরের ঘা শুকালেও মনে ঘা শুকাবার নয়।

নিরা আপুর বিয়ে হয়েছে কাল।তবে আমরা সেখানে যাইনি যেহেতু আমার বা খালামনিদের সাথে বড় মামার
কোনো সম্পর্ক নেই।তবে আহানের পক্ষ থেকে আমাদের ইনভাইট করা হয়েছিল কিন্তু আমরা কেউ যাইনি।

এখন সন্ধ্যা 6টা বাজে।ছাদে দোলনায় বসে আছি।এই সময়টা আমার খুব পছন্দের।সূর্য অস্ত যাচ্ছে। আকাশটা হালকা হালকা লাল আভায় ছেয়ে গেছে।এক ঝাঁক পাখি উড়ছে আকাশের বুক জুড়ে।মৃদু বাতাসে গাছপালার ডগা গুলো দুলছে আপন মনে।ছাদে রঙবেঙ্গের ফুলের গাছ গুলো দেখলেই মনটা ভরে যায়।এত কিছুর মধ্যেও সবকিছুই কেমন শূন্য শূন্য লাগছে।কিছুই ভালো লাগছেনা। অদ্ভুত এক যন্ত্রনা হৃদয় জুড়ে।

মনটা ভালো করার জন্য চোখ বুঝে একটা গানের সুর গলায় তুললাম____

বকুলের মালা শুকাবে
রেখে দেবো তার সুরভি
দিন গিয়ে রাতে লুকাবে
মুছোনাকো আমারি ছবি
আমি মিনতি করে গেলাম
তুমি চোখের আড়াল হও
কাছে কিবা দুরে রও
মনে রেখো আমিও ছিলাম
এই মন তোমাকে দিলাম”!!
এই প্রেম তোমাকে দিলাম”!!

গানটা শেষ হতেই চোখ খুলে সামনে ইভানি আপুকে দেখতে পেলাম।তিনি আমার সামনে দাড়িয়ে ছিলেন।আমার চোখে তার চোখ পড়তেই তিনি মুচকি হেসে আমার পাশে বসলেন।

__ অয়ত্রি তুমি অনেক সুন্দর গান করো???

__না আপু।এই একটু আধটু গান পারি।বাট ওতোটাও না।

___কে বলেছে তুমি একটু আধটু গান পারো??তুমি অনেক সুন্দর গান গাও। তোমার গলার সুর ও অনেক ভালো।

____আমি মুচকি হাসলাম ইভানি আপুর কথায়….

____আচ্ছা অয়ত্রি তোমায় একটা কথা বলি?

____হুম বলেন আপু”!

____তুমি কি প্রণয়কে লাভ করো!??সত্যি বলবা!

আমি এবার ইভানি আপুর কথায় ভরকে গেলাম!!!কি উওর দিবো আমি?এই উত্তরটা তো আমারি অজানা!!

___বলো অয়ত্রি??

___এই প্রসঙ্গে পরে কথা বলি।আপনি কাউকে ভালোবাসেন না আপু??

আমার কথায় হেসে ফেললো ইভানি আপু…

____ কি হলো আপু হাসলো কেন??হাসার মতো কোনো কথা তো আমি বলিনি…অবাক হয়ে বললাম আমি।

____ আবার আসলে তোমার কথাটা শুনে আমার হাসিই পেলো।

____কেনো??

____ও কিছুনা।আচ্ছা তুমি জানতে চাও আমি কাউকে ভালোবাসি কিনা??

___হ্যাঁ!!!

___আমি প্রণয় কে ভালোবাসি!!

এবার ইভানির আপুর কথায় বুকটা ধক করে উঠলো এবং অতিমাত্রায় অবাকও হলাম।

____ কি হলো অয়ত্রি অবাক হলে আমার কথায়??
কিন্তু আমি সত্যি প্রণয়কে ভালোবাসি।প্রথম দেখায় ওকে ভালোবেসে ফেলেছি।যাকে বলে লাভ এন্ড ফাস্ট সাইট।আমায় বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছিলো।এংজেমেন্টও
হয়ে গিয়েছিলো।বিয়েটাতে সেইভাবে আমি খুশি ছিলাম না।তবুও বাবার কথায় রাজি হয়েছিলাম।জিবনে কোনো ছেলেকে পাত্তা দেই নি আমি।কিন্তু প্রণয়!!প্রণয়কে দেখেই মনে এক অদ্ভুত ও অজানা অনুভূতির সৃষ্টি হয়।আস্তে আস্তে বুঝতে পারি আমি প্রণয়ের উপর উইক হয়ে পড়েছি।ভালোবেসে ফেলেছি অতিমাত্রায় তাকে ভালোবেসে ফেলেছি। কিন্তু যাকে ভালোবাসলাম তাকেই পেলাম না।এটা হয়তো হওয়ার ছিলো।

জানো অয়ত্রি আমি ভার্সিটি পড়াকালিন একটা ছেলে আমাকে ভালোবাসতো।শুধু ভালোবাসতো নাহ পুরো পাগল ছিলো আমার জন্য।ভার্সিটিতে শান্তি মতো চলাফেরা করতে পারতাম না।যেখানেই যেতাম সেই ছেলেটির যেতো।সারাক্ষণ ভালোবাসি ভালোবাসি বলে কানের কাছে ঘ্যান ঘ্যান করতো।আমার খুব বিরক্ত লাগতো। যেহেতু ছেলেটাকে আমি ভালোবাসিনি কখনো।এমন নয় যে ছেলেটা অসুন্দর।
ছেলেটা দেখতেও ভালো পড়া শুনাতেও ভালো ফ্যামেলি স্টাটাসও মোটামুটি ভালো।কিন্তু এত কিছুতেও আমার তাকে ভালো লাগেবি। একদিন ভার্সিটির সবার সামনে আমায় প্রপোজ করায় তাকে থাপ্পড় মেরে অপমান করে তারিয়ে দি।সে শুধু একটাই কথা বলেছিলো সেদিন ___সে আমায় ভালোবাসবে আর বেসেও যাবে সারাজিবন।আমার জন্য জিবনের শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত অপেক্ষা করবে।কথাগুলো বলেই একটা হতাশার শ্বাস ছাড়লো ইভানি আপু।

ইভানি আপুর কথা শুনে বুকের ভেতর তোলপার শুরু হয়ে গিয়েছে।কষ্ট হচ্ছে খুব।বারবার মনে হচ্ছে আমি কোনো ভুল করছি না তো আমি কোনো ভুল করছি নাতো।আমি প্রণয় ভাইয়াকে নিজের অজান্তে কষ্ট দিচ্ছি না তো!!!তিনি রাগা রাগি করেন ঠিকই কিন্তু তার চোখে আমার জন্য তীব্র অনুভূতি দেখেছি।তার জন্য আমার কষ্ট হয়,। আমার অভিমান,অভিযোগ শুধুই সে।
রাজশাহী যাওয়ার তিনি একটা দিনও আমায় ফোন দেননি।এরজন্য খুব কষ্ট পেয়েছিলাম আমি।অভিমানও হয়েছিলো খুব।এসব ভাবছি তখনি ইভানি আপু বলে উঠলেন__

___যানো অয়ত্রি!!!তোমায় না প্রণয় খুব ভালোবাসে।ও মুখে সেই ভাবে প্রকাশ করেনি।কিন্তু বলেছে ও নাকি একজন কে ভালোবাসে।তোমার কথা যখন জানতে পারলাম-তুমিই প্রণয়ের ভালোবাসা।প্রণয় চোখে মুখে তোমার জন্য অনুভূতি বিদ্যামান সর্বদা।এবং আমি এটাও জানি তুমিও প্রণয়কে ভালোবাসো।তোমার চোখে আমি প্রণয়ের জন্য অনুভূতি ও চঞ্চলতা দেখেছি।কিন্তু মুখে প্রকাশ করতে পারছোনা?? তাইনা!!??

আমি এবার একটু অবাকই হলাম।কারণ আমি নিজেই এতোদিন স্বীকার করতে চাইনি যে আমি প্রণয় ভাইয়াকে ভালোবাসি।এখন আমি যতটা কষ্ট পাচ্ছি তিনিও হয়তো তার চেয়েও বেশি কষ্ট পেয়েছেন।যখন আমি আহানকে পছন্দ করতাম।সেদিন ইভানি আপু আর প্রণয়কে একসাথে দেখে খুব কষ্ট পেয়েছি।বুকের ভেতর চিনচিন করছিলো সেদিন।

অবশ্য ইভানি আপু প্রণয় ভাইয়াকে ভালোবাসে এটা শুনে আমার হিংসে হয়নি কারণ প্রণয় ভাইয়া আমাকে ভালোবাসে।ইভানি আপুর জন্য কষ্ট হচ্ছে।যতই হোক সেও একজন মেয়ে।আমার মতো সেও একজন কে ভালোবেসেছে কিন্তু তাকে পায়নি।এটা কষ্টেরি কথা।
এসব মনে মনে ভাবছি হঠাৎ ইভানির আপুর কথায় ধ্যান ভাঙ্গলো।

___শোনো অয়ত্রি তুমি আজ তোমার মনের কথা প্রণয়কে জানিয়ে দাও।তোমাদের দাম্পত্যে জীবনে ফের নতুন করে শুরু করো।প্রণয়কে আর কষ্ট দিও না প্লিজ।এটা আমার রিকুয়েষ্ট।

___হুম আপু।বলেই ছাদ থেকে দ্রুত নেমে গেলাম।ইভানি আপুকে রেখেই।

ইভানির চোখ দিয়ে ঝড়ছে অঝোর শ্রাবণ।বুকে চারা দিয়ে উঠছে ভালোবাসার মানুষ কে নিজের করে না পাওয়ার যন্ত্রণা!!!আজ ইভানি অনুতপ্ত__ খুব করে অনুতপ্ত!!সেই একপাক্ষিক প্রেমিকের কথা খুব মনে পড়ছে।তাকে কষ্ট দেওয়ার পরিনাম হয়তো আজ সে পাচ্ছে।হারে হারে বুঝতে পারছে একপাক্ষিক ভালোবাসার কি যন্ত্রনা।

___যদি তুমি ফিরে এসো।অবশ্যই নিজেকে সুদরে নিজের না হোক তোমার ভালোবাসা পরিপূর্ণ করবো।আমি না হয় অপূর্ণই থেকে গেলাম এই ভালোবাসা নামক ইচ্ছেগোলক থেকে!!! ইভানি আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো কথা গুলো।

[এখানে ইভানি ভার্সিটির সেই ছেলেটির কথা বলেছে]

রাত তখন ৯টা বাজে।রুমে শুয়ে ফোন চালাচ্ছি।প্রণয় ভাইয়া খাটের কোণায় ল্যাপটপ নিয়ে কি জানি করছে।
খনে খনে আড়চোখে আমাকে দেখছে।আমি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে ফোন চালাচ্ছি।হঠাৎ খালা মনির ডাক পড়ল।নিচ থেকে তিনি আমাকে ডাকছেন।তাই ফোনটা বালিশের নিচে রেখে নিচে গেলাম।

নিচে ডয়িংরুমে খালামনি আর ছোটআব্বু বসে আছে।তাদের মুখ জুড়ে চিন্তার ছাপ দেখেতে পারছি।আমি গিয়ে তাদের মুখো মুখি সোফায় গিয়ে বসলাম।আর বললাম___কি হয়েছে খালামনি ডাকলে কেন???কোনো সমস্যা হয়েছে কি??

___নাহ কোনো সমস্যা হয়নি।তবে তোকে আজ কিছু বলতে চাই। বললেন খালা মনি।

___হুম বলো?? ভ্রু কুচকে বললাম আমি।

___তুই জানতে চাস? তোর বাবা মা তোর সাথে খারাপ ব্যাবহার ও মারধোর কেন করতো???বললেন ছোট আব্বু।

___ হুম মিহি কন্ঠে বলে উঠলাম আমি।

___তুই যাদের নিজের বাবা মা বোন ভাই ভাবছিস।তারা তোর নিজের বাবা মা নয়।খালামনি কাঠ কাঠ গলায় বলে উঠলো।

___মনে হয় আমার মাথায় বাজ পড়লো খালামনির কথায়!!নিজের কানকে বা খালামনিকে বিশ্বাস করতে পারছিনা।এই কথাটা শুনে বুকে মধ্যে মোচর দিয়ে উঠলো।চোখে পানি টলমল করছে।

__ ককক কি বলছো খালা মনি??অবিশ্বাস্যও স্বরে বলে উঠলাম আমি।

___তোর খালা মনি যা বলছে সব ঠিক।
আমার বাবা মানে তোর দাদা তোকে একটা নির্জন রাস্তার ধারে কুড়িয়ে পায়।এবং তোকে এনে আমার ভাই যাকে তুই বাবা ভাবিস তার হাতে তোকে দেয়।এবং তোকে ভালোভাবে মানুষ করতে বলে।তোকে ১ বছর পর্যন্ত তোর দাদাই মানুষ করেছে। তিনি যখন মারা যান তখন তোকে ওদের হাতে তুলে দেয়।তোকে মেয়ের পরিচয়ে বড় করতে বলে তোর দাদা।তোর বাবাকে ওয়াদা করায় এবং তোর দাদার শেষ ইচ্ছে বলে তোকে ওরা মেয়ের পরিচয়ে বড় করেছে।কিন্তু মেয়ের মতো ভালোবাসাটা দেয়নি।বলেই চোশমার নিচ থেকে চোখের পানি মুছলেন ছোট আব্বু!!!

খালামনিও কাঁদছে।আমি শূন্য চোখে তাদের দিকে চেয়ে থাকলাম কিছুক্ষণ।

__খালামনি আমি তাহলে এতিম।বলোনা আমি কি এতিম???বলেই ডুকরে উঠলাম।

খালামনি আমাকে জরিয়ে ধরলো।আমিও তাকে ঝাপটে ধরে কাদতে লাগলাম।কষ্টে আমার কলিজা ছিরে যাওয়ার মতো অবস্থা।কানে একটাই কথা বাজছে
আমি এতিম!আমি এতিম!!

আমার নিজের কেউ নেই।আমার নিজের বাবা মা নেই।আমার অন্যদের মতো একটা পরিবার নেই!!আমায় রাস্তায় ফেলে চলে গেছিলো আমার বাবা–মা!!! আমি এতোটাই অভাগি।আমি এতিমমমম।

বারবার ডুকরে ডুকরে কান্না করছি কিন্তু কষ্টটা কমছেই নাহ!!!বরং বেরেই চলেছে।

হঠাৎ চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে আসলো।মাথাটা ঘুরছে।
কেমন জেনো লাগছে আমার!!!হঠাৎ জ্ঞান হারালাম।

________________________________

রাত ১২টা_______

পিটপিট করে চোখ খুলে দেখলাম আমি বিছানায় শুয়ে আছি।আমার হাত ধরে বসে আছেন প্রণয় ভাইয়া।
তার পাশেই দারানো খালামনি,ছোট আব্বু,ইভানি আপু।
তাদের চোখ দেখে বুঝতে পারলাম তারা আমার জ্ঞান ফেরার অপেক্ষায় ছিলো।

___সবাই এখান রুমে যাও কাল কথা হবে।বললো প্রণয় ভাইয়া।

তার কথায় প্রতিবাদ করলো না কেউ।সবাই চলে গেলো বিনা শব্দে।

উঠে বসার চেষ্টা করলাম।কিন্তু পারলাম না।মাথাটা ভার হয়ে আছে।প্রণয় ভাইয়া আমাকে শোয়া থেকে তুলে বসিয়ে দিলেন।

___জান পাখি।এখন কেমন লাগছে??সুস্থ লাগছে তো??আমার গালে হাতে স্পর্শ করে বললো কথা গুলো বললো প্রণয় ভাই।তার মুখের দিকে তাকালাম।তার চুল গুলো উশকোখুশকো।মুখটায় বিষাদের ছায়া চোখে অপার চঞ্চলতা।দেখেই বোঝা যাচ্ছে আমি যাতনা কষ্ট পেয়েছি! তার চেয়ে আমার কষ্ট দেখে বেশি কষ্ট পাচ্ছে প্রণয় ভাইয়া। আমার ফের কিছুক্ষণ আগের কষ্টটা বুকে চারা দিয়ে উঠলো।

প্রণয় ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলাম আমি।
তিনি আমায় জড়িয়ে ধরলেন।আমি কেঁদেই যাচ্ছি।
তিনি মাথায় হাত বুলাচ্ছে আর বলছেন কেঁদো না জান পাখি প্লিজ।শরীর খারাপ করবে।

কেন জানিনা তার কথায় আমি ভরসা পাচ্ছি।তার বুকে মাথা রেখে অন্যরকম শান্তি অনুভব হচ্ছে।

এভাবেই কিছুক্ষণ পর ঘুমিয়ে গেছি টেরি পায়নি।

____________________

চোখে কিছুর তীব্র আলোর ঝলকানিতে ঘুম ভাঙ্গলো।
আস্তে আস্তে চোখ খুলে দেখলাম সূর্যের আলো জানালা ভেদ করে চোখে মুখে পড়ছে।নড়ে চড়ে উঠতে গেলেই আটকে গেলাম।কারণ প্রণয় ভাইয়া আমাকে আস্টেপিস্টে জড়িয়ে ধরে আছে।তার দৃষ্টি আমার উপর।তাকে এভাবে দেখে লজ্জা পেলাম।

চুলগুলো এলোমেলো।ঘুমঘুম চোখ,ঠোঁটের কোণে মুচকি আছি।আমার হৃদয়কে কাপিয়ে তুলছে।

__ জানপাখি এভাবে তাকাবে না বলেদিলাম।আমি কন্টললেস হয়ে পরবো।তখন কিন্তু আমাকে দোষারপ করতে পারবেনা।বলেন মুচকি হাসি দিলেন তিনি।

তার কথায় একরাশ লজ্জা আময় ঘিরে ধরলো।

তিনি এবার আমার কপালে টুপ করে চুমু দিয়ে বললেন __আমার লজ্জাবতী বউরে।

তার মুখে বউ ডাক শুনে কেমন এক অদ্ভুত সুখানুভূতি হলো।হৃদয় ঘুরে ছেয়ে গেলো প্রাশান্তির ছায়া।
কিন্ত হঠাৎ কালকের কথাগুলো আবার মনে পড়ে গেলো।মনে পড়ে গেলো আমি এতিম।আমি এতিম..

তখনি আবার বুকজুড়ে হাহাকার করে উঠলো।
প্রণয় ভাইয়াকে ধাক্কা দিয়ে নিজের কাছ থেকে সরিয়ে
হনহন করে ওয়াশরুমে গেলাম।

তিনি আমার ব্যাবহার দেখে হতবাক হয়েছেন।এটা নিশ্চিত আমি।

ওয়াশরুম থেকে বেরোতেই প্রণয় ভাইয়া আমার দিকে তাকালেন।এরপর ওশাসরুমে ধুঁকলো।

আমি রেডি হয়ে নিচে গেলাম।

নিচে ইভানি আপু,খালামনি, ছোট আব্বু,শাপলাকে দেখতে পেলাম।

নিচে যেতেই খালামনি বলে উঠলো___মা তোর শরীর ঠিক আছে তো???

___হুম।বলেই সোফায় আসলাম।

খালা মনি এসে আমার পাশে বসলো।মাথা আলতো স্পর্শ করে বললো__আমাকে কি তোর মা বলে মানিশ না??আমরা কি তোকে তোর মা বাবার আদর দিতে পারিনি??!

___ না খালামনি এভাবে বলো না।তোমরা ছারা আমার আর কে আছে??তোমরাই তো আমাকে নিজের মেয়ের মতো আদর যত্ন ভালোবাসা দিয়ে বড় করছো।বাবা মায়ের অভাব কি বুঝিনি তোমাদের কাছে এসে।

___তাহলে কেন তুই নিজেকে এতিম ভাবিস??
বলেন ছোট আব্বু…

___কিন্তু এটা তো সত্যি যে আমি এতিম।

___তুই যদি আর একবার বলিস এতিম তাহলে তুই আমাকে আর খালা মনি বলে ডাকবিনা।
কাঠ কাঠ গলায় বললো খালামনি।

__প্লিজ খালামনি এভাবে বলিওনা।আমি আর কক্ষনো বলবো না এই কথা।

__একটা শর্ত আছে??

___কি শর্ত খালামনি?একটা শুকনো ঢোক গিলে বললাম আমি!

___তোকে এখন থেকে আমাকে মা আর তোর ছোট আব্বুকে আব্বু বলে ডাকতে হবে শুধু ডাকতে নয় মন থেকে মানতেও হবে???বল পারবি??

___আমি খালামনিকে জড়িয়ে ধরে বললাম..খুব পারবো খালামনি।

উপস্থিত সবাই আমার কথায় হেঁসে দিলো।

মনটা এতোক্ষণে হালকা হলো
নিজেকে আর একা ভাববো না।কারণ আমার পরিবার আছে আমার বাবা মা ও আছে।

___অয়ত্রি নিজেকে একা ভাববেনা।তোমার এত কিউট কিউট বাবা মা থাকতে তুমি নিজেকে এতিম ভাবো??এটা কিন্তু ঠিক নয়।বললো ইভানি আপু।

ইভানি আপুর কথায় হেঁসে উঠলো সবাই
সাথে আমিও।

সবাই খাবার খেতে বসালাম।তখনি নিচে এলো প্রণয় ভাইয়া।

আমার দিকে একবার তাকিয়ে৷ হনহন করে বাড়ির বাইরে চলে গেলো প্রণয় ভাইয়া।

সবাই একটু অবাক হলো কিন্তু আমি নই।কারণ তিনি আমার উপরে রাগ করছে।কিন্তু আজ তার সব রাগ,অভিমান,অভিযোগ, কষ্ট সব ভুলিয়ে দেবো।অনেক বড়ো সারপ্রাইজ দিবো তাকে।মনে মনে বলেই হাসলাম।

এরপর সবাই খাওয়া দাওয়া করে গেলাম।কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে দিলাম।
_____________________________

এদিকে নিরা আহনকে সবসময় স্বাভাবিক ও খুশিতে
রাখার চেষ্টা করে।আর আহান নিরার ব্যবাহার ও তার প্রতি কেয়ার দেখে অবাক এক কথায় মুগ্ধ।

নিরা আর আহানের সম্পর্কো টা স্বাভাবিক তবে আহান নিরুকে পুরোপুরি ভাবে অয়ত্রির জায়গায় বসাতে পারেনি।তবু আহান খুব করে চেষ্টা করে নিজেকে স্বাভাবিক রাখার।

নিরাকে নিজের জিবন সাথী হিসেবে পেয়ে আহান খুব খুশি।যেহেতু বিয়ে একটা পবিত্র সম্পর্ক সেহেতু আল্লাহ অবশ্যই তাদের মধ্যে ভালোবাসা সৃষ্টি করবে।

নিরা ছাদে কর্ণিশ ঘেঁসে দাড়িয়ে আছে। রাত তখন ১০ টা।মনটা খারাপ তার। যখন অয়ত্রি কোনো তার বিষয়ে সব বললো।অয়ত্রিকে নিজের বোনের মতোই দেখে নিরা।অয়ত্রি এতদিনে সুখের ঠিকানা পেয়েছে।প্রণয় তাকে খুব ভালোবাসে। আর অয়ত্রিও।

এসব ভাবছিলো তখনি তার পাশে এসে দাড়ালো আহান।

আহান নিরুকে কোলে তুলে নিয়ে দোলনায় বসিয়ে দিলো।আহানের এহেন আচরণে হতবাক।

___নিরুপাখি অবাক হোয়না।তুমি আমার কাঁধে মাথা রাখো।আজ আমরা দুজনে চন্দ্র বিলাস করবো। বিলাস করবো।

নিরা আহানের কথায় হেঁসে কাঁধে মাথা রাখলো।আহানও মুচকি হাসলো।দুজনেই চাঁদের দিকে তাকিয়ে নিস্তব্ধ ভালোবাসার নিয়ে চন্দ্রবিলাস করছে!!

_____________________________________________

এদিকে ইভানি ব্যালকানিতে দাড়িয়ে আছে।মনে হাজার
চঞ্চলতা ও ব্যাকুলতা।খনে খনে পরছে দীর্ঘশ্বাস।তার ভালোবাসার মানুষটি তার হয়নি।তবে তার ভালোবাসার মানুষটি পেয়েছে তো তার ভালোবাসার মানুষটিকে।প্রণয় খুশি থাকলেসেও খুশি।

প্রিয় অতি চেয়েও পাইনিকো তোমারে
হয়তো ললাটে লেখাই ছিলো মোর এটাই
তাই বলিয়া কি বাঁধিয়া রাখিবো তোমারে??
না,না,আমিতো তাহা করিবো না।
তোমারে উড়িয়ে দিবো ওই নিলাম্বর মুক্ত আকাশে।
মন আকাশে পাখি হয়ে থাকিয়ো মোর নিজ মনে।
ধরা নাহি পাইলাম তোমার।দেখা তো পাইবো সাঁঝ বিকেলে!!! 👉(মোনামি শেখ)…..!!!

[নিচে লেখিকা তার মনে কথা প্রকাশ করেছেন তা পড়বেন প্লিজ।১মিনিট সময় কি দিতে পারবেনা???]

🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼

রাত বাজে ১১টা প্রণয় বাড়ি ফিরে রুমে ডুকতে অবাক কারণ রুমের লাইট ওফ।সে একটু এগিয়ে রুমে লাইট অন করতে যাবে তখনি কেউ মোম বাতি জ্বালাতে শুরু করে।প্রণয় ভ্রু কুঁচকে দেখে যাচ্ছে।মোমবাতি জ্বালানো ব্যাক্তি টাকে একটু আধটু দেখা যাচ্ছে তার পেছন থেকে।

সব মোমবাতি জ্বালানো হলেই সেই ব্যাক্তিটি পেছন ঘুরে তাকালো।

প্রণয় সেই মানুষটিকে দেখে বড়সর ধরণের একটা শক খেলো।কারণ প্রণয়ের সামনে বউ সেজে হাসি মুখ নিয়ে দাড়িয়ে আছি আমি।

আমি এগিয়ে গিয়ে তার সামনে দাঁড়ালাম। প্রণয় ভাইয়ার গলা জড়িয়ে ধরলাম।সে এবার আরো অবাক হলো।এবার তাকে আরো অবাক করে দেওয়ার জন্য কপালে টুপ করে একটা কিস করে বসলাম।

আমাকে কি ক্ষমা করা যায়না প্রণয় ভাইয়া।আমরা কি আবার নিজেদের জিবন নতুন করে শুরু করতে পারিনা?? হ্যাঁ আমি অনেক ভুল করেছি আপনাকে কষ্টও দিয়েছি কিন্তু সেটা নিজের অজান্তে।এবং সব জানার পরেও আপনাকে কষ্ট দিয়েছি।তার জন্য ক্ষমা করে দিন প্লিজ??!মিনতি কন্ঠে বলে উঠলাম আমি।

তিনি কিছুক্ষণ চুপ থাকলেন এর পর বললেন___ক্ষমা করে দিতে পারি তবে একটা শর্তে??!

___আমি আপনার সব শর্তে রাজি!!!

___আমাকে আর প্রণয় ভাইয়া বলে ডাকতে পারবিনা।
শুধু প্রণয় বলে ডাকবি।আর আপনি আপনি করা যাবেনা তুমি ছারা।বুঝেছো মাই লাভলি ওয়াইফ??

___হুম বুঝতে পেরেছি।কি বলেছেন আপনি!!

___আবার আপনি??

____ওহ সরি।

___এবার তুমি এমন কিছু বলো যাতে আমি খুশি হয়ে যাই!!!প্রণয় ভাইয়া বললো।

আমি কিছুক্ষণ ভেবে আমার মুখটা তার কানের কাছে নিয়ে ফিসফিসে বললাম____আই লাভ ইউ!!!আমি তোমাকে ভালোবাসি প্রণয়!!!বলেই তার কানের পাতায়
একটা চুমু খেলাম।শিউরে উঠলো প্রণয় ভাইয়া।আর আমার কোমর টেনে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে বললো___আই লাভ ইউ টু মাই লাভলি ওয়াইফ।
আমি তার কথা শুনে মুচকি হাঁসলাম।

আমি তার দিকে তাকিয়ে আছি আর সেও আমার দিকে তাকিয়ে আছে।দুজনের চোখে ভালোবাসার উত্তাল ঢেউ উঠেছে।দুজনের দুটি হৃদয় আজ মিশে একটিতে পরিণত হয়েছে।আমি আমার হৃদয় তার হৃদয়ে স্থাপন করলাম।

প্রণয় আমার ঠোঁটে তার ঠোঁট মিশিয়ে দিলো।আবেশে শুষে নিতে লাগলো আমার উষ্ঠ।না জানি কত বছরের তৃষ্ণা নিবারণ হবে আজ!!!👇

👉ইভানি ও আহান👇

[ অনেকেই ইভানিকে অপছন্দ করেন।তবে আমি নায়ক নায়িকার চেয়ে ইভানিকে বেশি পছন্দ করি।ইভানির মতো অনেকেই আছেন।যারা গোপনে প্রিয় মানুষটাকে ভালোবেসে যায়।প্রিয় মানুষটার ভালো থাকাই তাদের
কাছ ভালোথাকার ঔষুধ!!! তারাই ভালোবাসা কি তা বেশি করে উপলব্ধি করতে পারে।আর আহান ও আমার প্রিয় চরিত্র। আহান অয়ত্রি ভালোবেসেও অয়ত্রিকে পায়নি।তবুও স কোনো মিলেনি করেনি।নিজেকে প্রণয় ও অয়ত্রির কাছ থেকে দূরে সরানো চেষ্টা করছে।অন্য প্রমিকদের মত নিজেকে অন্ধকারে জগৎ ঠেলে দেয়নি।বরং সে নতুন করে আবার জিবনটা শুরু করেছে।নিরা আর আহানের জুটিটা অনেক কিউট ]

[সবার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি যদি কোনো ভুলত্রুটি করে থাকি বা কারো মনে কষ্ট দিয়ে থাকি তাহলে মাফ করে দিবেন।]

সমাপ্ত।

কাঠগোলাপের মোহে পর্ব-১৯

0

#কাঠগোলাপের_মোহে🌻
#মোনামী_শেখ
#part:19

নিরা আপনি আমাকে বিয়ে করবেন?কোনো ভণিতা ছরাই বললো আহান।

নিরা চমকে উঠলো আহানের কথায়।একি বলছে আহান.?সজ্ঞানে কথাটা বলেছে বলে মনে হচ্ছেনা নিরার।

__আবার আ আপনি ঠিক আছেন তো আহান??ভেবে চিন্তে কথাগুলো বলছেন তো???

__হ্যা আমি ভেবে চিন্তে সজ্ঞানে কথাটা বলেছি।আপনি কি আমায় বিয়ে করবেন??

___ আপনি কি অয়ত্রিকে ভুলতে পেরেছেন??

___ নাহ ভুলতে পারিনি।তবে ভোলার চেষ্টা করছি।

___আপনি অয়ত্রিকে ভালোবাসেন আর ভালোবাসার মানুষকে কখনো ভোলা যায়না।

___হ্যাঁ আমি অয়ত্রিকে ভালোবাসতাম আর এখনো ভালোবাসি।

কথাটা শুনে বুকটা মোচর দিয়ে উঠলো নিরার।

___ তো আপনি আবার আমায় বিয়ে করতে কেন চাইছেন??

___অয়ত্রি আমার অতিতর আর আপনি আমার বর্তমান ও ভবিষ্যৎ। এটা ঠিক অয়ত্রি যায়গা আমি কাউকে দিতে পারবোনা ঠিকি।কিন্তু আপনাকেও এটুকু বলেই থামলো আহান।

___ আমাকে কি ভালোবাসতে পারবেন??

___খুব করে চেষ্টা করবো।তবে আপনার মতো জিবন সঙ্গী আমি কোথাও খুজে পাবনা।আপনাকে এখন নিজের করে পেতে চাই।আপনি না হয় আমার জিবন সাথী হলেন।অনেকেই তো তার ভালোবাসার মানুষকে নিজের করে পায়না তা বলেকি তারা অন্যকাউকে তার জিবনে জায়গা দেয়না বা ভালোবাসতে পারেনা??

___ হ্যাঁ পারে।ভালোবাসাটা সবার কাছে তারতার মতো সঙ্ঘায় সঙ্ঘায়িত।মানুষ হাজারবার প্রেমে পড়েতে পারে।কিন্তু প্রিয় মানুষটার ভালোবাসাটা সবাইকে দিতে পারেনা। মিহি গলায় বললো নিরা।

___হুম সেটাই।তবে আপনাকে একটা কথা দিতে পারি
আপনাকে কখনো কষ্ট দিবোনা।আপনার যথেষ্ট খেয়াল রাখবো আমি।

___হুম।

___ আপনাকে এখনি ডিসিশন নিতে হবেনা।আপনি আরো দুদিন সময় নিন।

___ আচ্ছা। বাই বলেই ফোনটা কেটে দিলো নিরা।লম্বা একটা শ্বাস ছাড়লো মনে হয় এতক্ষণ যে দাম বন্ধ করে ছিলো।ঠোঁট কামড়ে ধরে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করছে নিরা।কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে মাথার উপরে ফ্যান ঘুরা সত্বেও।হার্ডবিড দ্রুত গতিতে চলছে।
আহানের বলা প্রত্যেকটি কথা বার বার তার হৃদয়কে অযাচিত ভাবে কাঁপিয়ে তুলেছে। অবশ্য এগুলো হওয়ার কারণ অতিরিক্ত এক্সসাইডমেন্ট।

সেইদিন আহানের সাথে নিরার কথা হওয়ার পর কেটে গেছে একমাস।এই একমাসে প্রতিদিন একবার হলেও কথা হয়েছে নিরা ও আহানের।নিরা আহান কে মানুষিক ভাবে অনেক সাপোর্ট করছে।আহানকে সে আবার নতুন করে বাঁচতে শিখিয়েছে।এই মাসে আহসানকে নিরা ভালোবেসে ফেলেছে।আগে থেকেই আহানকে পছন্দ করতো নিরা।টিভিতে ফেসবুকে আহানের অনেক ছবি দেখেছে সে।আহান তার ক্রাশ ছিলো।

আর এদিকে প্রণয় অয়ত্রিতে প্রতিনিয়ত কেয়ার, শাসন,ভালোবাসা দিয়েছে।আর অয়ত্রি ও প্রণয়ের প্রেমে পড়ে গেছে বলতে।বিয়ে নামক পবিত্র সম্পের্কো কে কখনো অস্বীকার করেনি অয়ত্রি বা প্রণয়।তবে ভালোবাসাও প্রকাশ্যে আসেনি।সাধারণত প্রণয় কেয়ারিং দেখালেও অয়ত্রি এতে কোনো ভাব প্রকাশ করেনি বাহির থেকে।ভিতরে ভিতরে সেও আহানের এমন কেয়ারিং দেখে প্রেমে পড়ে গেছে নিজের অজান্তেই।তবে মুখ কোনো কিছুই প্রকাশ করেনা।আহান ব্যালকানিতে দাড়িয়ে এসব ভাবছে।
_____________________

ফাইনালি সে তার ভালোবাসার মানুষটিকে পাবে!!এটা ভাবতেই অন্যরকম ফিলিংসের সাথে পরিচয় হচ্ছে নিরা।

__ওহ গড এটা স্বপ্ন নাকি সত্যি ??আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা।নিরা বিরবির করে কথাটা বললো।

তখনি তার রুমে ধুকলাম আমি।আমি নিরাপুকে এমন ব্যাস্ত দেখে বললাম___নিরাপু কি হয়েছে তোমার???

নিরা পিছন ফিরা অয়ত্রিকে দেখেই দৌড়ে গিয়ে অয়ত্রিকে জড়িয়ে ধরে বললো___অয়ত্রি আহান আমাকে আজ একটা বড় সারপ্রাইজ দিয়েছে।

__ কি সারপ্রাইজ আপু??

___আহান আমাকে বিয়ের প্রোপজাল দিয়েছে।

নিরাপুর কথা কেমন যেন লাগলো আমার।তাও হাসি মুখে নিরাপুকে বললাম__ওহ তাই নাকি আপু??

___ হুম তাই!!!আমি খুব খুশি।লজ্জা মুখ নিয়ে বললো নিরাপু।

___তো বিয়ের তোর জোর শুরু করো।মামা মামিকে জানাও।আমি গিয়ে খালামনি আর ছোট আব্বুকে জানাই গিয়ে।হেঁসে হেঁসে বললাম আমি।

___হুম তুই জানা।আমি আজই বাসায় গিয়ে মা বাবাকে জানাচ্ছি তারা অমত করবেনা আমার বিশ্বাস।

___ আচ্ছা।বলেই রুম থেকে বেড়িয়ে গেলাম আমি।
___________________________________

প্রণয় কয়েকদিনের জন্য রাজশাহী গিয়েছে।বিশেষ করে ইভানির বাবার অনুরোধে।

প্রণয় ইভানির কেবিনে ইভানির বেডের সাইডে বসে আছে।আর ইভানি তাকে পলক পড়া হীন ভাবে দেখেই চলেছে।

____ মিস ইভানি আপনি কি এখন সুস্থ বোধ করছেন.?বললো প্রণয়।

___খুব সুস্থ বোধ করছি।মুচকি হেসে বললো ইভানি।

___ আপনি কেন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন??শুনেছি আপনি নাকি ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করেনা??সারাদিন নিজেকে রুমে বন্ধী করে রাখেন।এটা তো ঠিকনা মিস ইভানি।

____তুমি পাশে থাকলে কখনোই আর এমন করবোনা।তুমি থাকবে সারাজীবন আমার পাশে??আহবানে হাতদুটো নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বললো ইভানি।

___ মিস ইভানি আমি আগে থেকেই জানতাম আপনি আমার উপর দূর্বল কিন্তু এটা দূর্বল সেটা জানতাম নাহ।

___তুমি সব জানতে প্রণয়??? কিন্তু তবুও আমায় ইগনোর করেছো??

___ আমি আরেক জনকে ভালোবাসি।তার সাথে আমার বিয়েও হয়েছে।

প্রণয়ের কথা শুনে চোখে বৃষ্টির ধল নেমেছে ইভানির।
নিজের প্রিয় মানুষের মুখে যদি অন্যকারো নাম শোনে তাহলে তার কোন কষ্ট তা আজ বুঝতে পেরেছে ইভানি।

হৃদয়টা জ্বলে পুরো খাক হয়ে যাচ্ছে।কিছুতেই এই কথা মানতে পারছেনা ইভানি।তবুও ইভানি বললো___
সরি প্রণয় আমি তোমার বিষয়ে এসব জানতাম না।জানলে তো এটুকু বলেই থামলো ইভানি।

আমি জানি ভালোবাসার মানুষটাকে কাছে না পাওয়ার যন্ত্রনা কতটা।কারণ আমিও কাউকে ভালোবাসি।তাও বলছি নিজের জীবনটাকে গুছিয়ে নাও।তোমার এই মূল্যবান জিবনটা নষ্ট করিওনা।আমার চেয়ে ভালো কাউকে তুমি পাবে।আল্লাহ আমাকে তোমার কপালে রাখেনি সেহেতু তোমার কপালে এমন একজনকে রেখেছে যে তোমাকে আজীবন ভালোবাসা দিয়ে ভরিয়ে রাখবে।ইভানির দিকে তাকিয়ে বললো প্রণয়।

ইভানি মনোযোগ দিয়ে প্রণয়ের কথাগুলো শুনলো।প্রণয়ের কথাগুলো ঠিক কিন্তু তবুও তার মন যে মানছেন।

___ প্রণয় আমার একটা কথা রাখবে তুমি???

____হুম বলেন মিস ইভানি!?

___আমাকে আপনার বন্ধু বানাতে হবে এবং আপনাকে তুমি বলে সম্মোধন করতে হবে।

___হুম অবশ্যই বলেই হাসলো প্রণয়।

___ইভানি শুধু মলিন হাসলো
কিন্তু তার চোখে মুখে বিষাদের ছায়া।তার চোখেও কষ্ট অনুভব করা যাচ্ছে।
_____________________

নিরা তার বাবা মাকে বিয়ের কথা জানিয়েছে।তারা এক কথায় রাজি কারণ ছেলে ভালো পরিবার ভালো তাই।
নিরা জানিয়েছে আজি সে দেশে ফিরছে।তবে এটা গোপন রেখেছে যে “সে অনেক আগেই দেশে ফিরেছে।

নিরাপু চলে যাওয়া সময় খুব কেঁদেছে।তবে সে একদিক দিয়ে খুব খুশি যে সে বিয়ের পর আমাদের এখানে থাকবে।যেহেতু আহানের বাসা এখানেই।
___________________________________________

চারদিন হয়ে গেলো আহান আমার কোনো খোঁজ নেয়নি না কোনো ফোন কল করেছে।অবশ্য আমি ফোন করিনি তাকে।এটা ভেবেই হয়তো সে আমাকে ফোন দেয়নি।

বিছানায় শুয়ে মনে মনে বলছিলাম কথাগুলো তখনি কলিং বেল বেজে উঠলো।তাই দরজা খুলে দেয়ার জন্য নিচে গেলাম।আজ বাসায় আমি ছারা কেউ নেই।খালা মনি ছোট আব্বু একটু বেড়িয়েছে।আর শাপলার আজ আসেনি।

নিচে গিয়ে দরজা খুলে দেখলাম তাতে আমি অবাকের শেঘপ্রান্তে এসে পড়েছি।কারণ আমার সামনে প্রণয় ভাইয়া ও তার সাথে একটা মেয়ে দাড়িয়ে আছে।মেয়েটা কেমন যেন করে আমাকে দেখছে।

দরজা আগলে ধরে থাকবি নাকি সারাদিন??বললেন প্রণয় ভাইয়া।

আমি দরজার সামন থেকে সড়ে দারালাম।তারা ভিতরে ধুকলো।

ইভানি প্রণয়কে বললো___প্রণয় তোমার বউকে দেখতে পাচ্ছিনা যে???

___, তোমার সামনেই দাড়িয়ে আছে আমার বউ।প্রনয় উত্তর দিলো।প্রণয় ভাইয়ার কথায় মেয়েটা আমায় চোখ ঘুরিয়ে ঘুড়িয়ে দেখতে দেখতে বললো___

____ তো অয়ত্রি কেমন আছো তুমি???আর প্রণয় তোমার বউ কিন্তু অনেক কিউট হুম…

___আলহামদুলিল্লাহ। আপনি???

___ভালোই।আর তুমি হয়তো জানোনা আমি কে?

___ আমি না সূচক মাথা নাড়ালাম।

___আমি ইভানি চৌধুরী।প্রণয়ে বন্ধু।

____ আমি এবার কৌতুহল ঝেরে ফেলে বললাম।ওহ আচ্ছা।তো আপু আপনি চলুন আমি তোমাকে গেস্ট রুমে নিয়ে যাই। নিশ্চয়ই টায়ার্ড তুমি.?

ইভানি হেসে উওর দিলো হ্যাঁ।
তো ইভানি পরে কথা হচ্ছে বলেই প্রণয় ভাইয়া নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালো।

আর আমি ইভানি আপুকে গেস্ট রুমে নিয়ে গেলাম।
ইভানি আপুকে রুমে পৌছে দিয়ে নিজের রুমে গেলাম।

রুমে প্রণয় ভাইয়া নেই।হয়তো ওয়াশরুমে আছে।আমি ব্যালকানিতে গেলাম।

প্রণয় ভাইয়াকে যখন ইভানি আপুর সাথে দেখলাম তখন বুকে অদ্ভুত রকমের কষ্ট অনুভব করলাম।কিছু হারানো ভয় মনে জেঁকে বসেছিলো।এখনো সেই ভয় রয়ে গেছে মনে।মনে মনে ঠিকই প্রণয় ভাইয়াকে ভালোবেসে ফেলেছি কিন্তু মুখে তা প্রকাশ করতে পারছিনা।খুব করে ডুবে গেছি তার প্রেমে।সারাক্ষণ প্রণয় ভাইয়াকে আমার এই বেহায়া চোখ দুটো খুঁজে বেড়ায়।মন চায় তার পাশে সবসময় থাকতে।বিলিন হয়ে যাচ্ছি তার প্রেমের আগুনে। হয়তো তারো এমন অনুভূতি হয়েছিল।কিন্তু আমি তা বুঝতে পারিনি।না বুঝতে চেয়েছি।মনে মনে বলছিলাম কথাগুলো।তখনি পিছনে কারো অস্তিত্ব টের পেলাম।

বুঝতে পেরেছি কে আমার পিছনে দাড়িয়ে আছে।তাই
পিছন ফিরা রুমে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালাম।তখনি আমার হাত টেনে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো।

আমি তাকে নিজের কাছ থেকে সরিয়ে নিতে চাইলাম।
কিন্তু সে আরো জোরে আমাকে চেপে ধরলো।

__ ছাড়ুন আমায়।বিরক্ত নিয়ে বললাম আমি।

___জানপাখি রাগ করেছো আমার উপর???

___ নাহ।কেন আমি আপনার উপর রাগ করবো বলেন তো??

এবার তিনি আমার ঠোঁটে টুপ করে একটা চুমু দিয়ে বললো__এইযে তোমায় এ কদিন ফোন দেইনি।

___ নাহতো।আপনি আমার কে যে আপনার উপর রাগ করে থাকবো।মানুষতো তার আপনজনের উপর রাগ করে বাইরের মানুষের উপর নয়।শক্ত গলায় বললাম আমি।

আমার কথাগুলো শুনো প্রণয় ভাইয়া আমার দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকালো চোয়াল শক্ত করে।আমি তার এমন রুপ দেখে ভয়ে সিটিয়ে গেলাম।আজ নিশ্চয় তিনি আমায় তুলে আছার মারবে।

এবার তিনি আমায় দেয়ালের সাথে চেপে ধরলেন।আমার আমার ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে দিলেন।কামড়ে কামড়ে ঠোঁটকে জখম করছে প্রণয় ভাইয়া।আর এদিকে আমার অবস্থা করুন।চোখের জল ফেলছি তার কাছথেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছি কিন্তু তার সাথে পেরে উঠছিনা।কাঁটা মুরগির মতো ছটফট করছি ব্যাথায়।একসময় জ্ঞান হারালাম।

to best continue….

[গল্পের পার্টটা একটি এলোমেলো লাগতে পারে তার জন্য সরি]

কাঠগোলাপের মোহে পর্ব-১৮

0

#কাঠগোলাপের মোহে
#মোনামী_শেখ
#part:18

মানুষের জিবনে ভালোবাসা এমনই এক মানুষিক ও শারীরিক বিষয়,যা অবশ্যই যে কোনো সূত্রের চেয়েও উর্দ্ধে।যেটাতে কোনোরুপ হিসাব করেও নির্দিষ্ট ফল বের করার তেমন কোনো সুযোগ থাকেনা।সুতরাং কারো প্রেম—ভালোবাসাকে কেন্দ্র করে যে কোনো মন্তব্য করা কিন্তু বোকামি।এবং আমি বিশ্বাস করি যে, কোনো ব্যাক্তির একান্তই আধ্যাত্বিক রুচিবোধটা দৈবাৎ যখন এক সময়ে ঐ বিপরীত লিঙ্গের প্রতি সেইসব ইন্ধন বা উদ্দেশ্যে আকৃষ্ট হয়। সেটাই মূলত ভালোবাসা!!!

আহানের সামনে দাড়িয়ে কথাগুলো বললো নিরা!!!
আহানের এলোমেলো চোখগুলো শান্ত হওয়ে এলো নিরার কথায়।

তো মিস্টার আহান বুঝেছেন নিশ্চই আমার কথাগুলো।
আপনিও ভালোবাসেন অয়ত্রিকে আর প্রণয় ভাইয়াও ভালোবাসে অয়ত্রিকে।কিন্তু আপনি যতটানা পুড়েছেন প্রেমাগুনে তার চেয়ে দ্বিগুণ জ্বলেছে প্রণয় ভাইয়া।
এটা ঠিক ভালোবাসার মানুষকে কখনো জোর করে
পাওয়া যায়না।কিন্তু মনে বিশ্বাস আর ভালোবাসার জোড়ালো টান থাকলে সে অবশ্যই একদিন ঠিকই ভালোবাসা বুঝতে সক্ষম হবে।আর সেই কাজটা করেছে প্রণয় ভাইয়া।নিরা কাঠ কাঠ গলায় কথাগুলো বললো।

__ আব আমি অয়ত্রিকে ভালোবাসি আর অয়ত্রি ও আমায়!!

___ অয়ত্রি আপনাকে ভালোবাসে এটা কি আপনাকে বলেছে??

___না!!

___অয়ত্রি আপনাকে পছন্দ করতো ভালোবাসতো না।
আর ভালোলাগা ভালোবাসা একনয় সেটা তো আপনি জানেন ওই তবে আপনি কেন এই কথাটা সবাই জানে।

__ কিন্তু অয়ত্রি তো প্রণয়কে ভালোওবাসেনা সাথে পছন্দ করেও করে নাহ!!

___ হুম তা ঠিক।তবে অয়ত্রি ও প্রণয় এরা দুজন এখন একটা পবিত্র সম্পের্ক আবদ্ধ হয়েছে।এই সম্পর্কের একটা জোড়ালো টান আছে।এটা নিশ্চয় আপনি জানেন।

__কোনো কিন্তু নয় মিস্টার আহান।আপনি বোঝার চেষ্টা করুন।ওদের দুজনকে ওদের মতো থাকতে দিন।আর ভালোবাসার প্রাপ্তি মানে শুধু এই নয় যে ভালোবাসার মানুষটাকে নিজের করে পাওয়া। ভালোবাসার মানুষকে নিভৃতে যত্নে দূরথেকে ভালোবেসে যাওয়া একধরণের বড় প্রাপ্তি।দূর থেকেও ভালোবাসা যায় মিস্টার আহান যদি আপনার ভালোবাসা সত্যি হয়।

নিরার কথাগুলো শুনে বুকটা ধক করে উঠলো আহানের ।এবার কি তার ভালোবাসার প্রমাণ সরুপ অয়ত্রিকে অন্যকারো হতে দেবে।নিজের ভালোবাসার মানুষটিকে অন্যকারো হতে দেখার মতো কষ্ট আর কিছুই হতে পারেনা।

আপনি আমার কথাগুলো একবার মন দিয়ে ভেবে দেখবেন মিস্টার আহান…আর আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।বলেই ওখান থেকে চলে গেলো নিরা।

আহান ধুপ করে পিছ রাস্তায় বসে পড়লো।হৃদয়ে পাওয়া না পাওয়ার ঝড় উঠেছে।কি এক অদ্ভুত যন্ত্রণা হচ্ছে তার বুকে।অয়ত্রির বিয়ের কথা শুনে কয়েক মহূর্তের জন্য থমকে গিয়েছিলো সে।পুরো পৃথিবীটার ভার যেন মাথায় এসে পড়েছে এমন মনে হচ্ছিলো আহানের।মানতে নারাজ ছিলো আহান যে অয়ত্রির বিয়ে হয়ে গেছে তাও আবার তারই সম্মতিতে।
___________________________________________
বিকেল বাজে ৫ টা

ছাদে দাঁড়িয়ে আছি।আকাশটায় আজ বড়বড় কালোমেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে।খুব মেঘ করেছে আকাশ।আকাশের হয়তো মন খারাপ আজ।আকাশের সাথে তাল মিলিয়ে আমারো মনটা আজ খুব খারাপ।মুখে জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে বিষাদের ছায়া। বাবা,মায়ের,ভাইবোনদের কথা খুব মনে পড়ছে আমার।
তাদের কথা আমার মনে পড়লেও আমার কথা হয়তো তাদের মনে পড়েনা।কত বছর হয়ে গেলো একটা দিনো তারা আমার খোঁজ করেনি।তাদের কাছে আমি আপদ ছিলাম আর আপদ বিদায় হলেতো সেই আপদকে ফের খোঁজ করার কোনো মানে নেই।খুশিতেই আছে তারা।আল্লাহ যেন তাদের সবসময় খুশিতেই রাখে।আল্লাহর কাছে এটাই চাওয়া।এসব মনে মনে ভাবছিলাম হঠাৎ ঘারে কারো স্পর্শ পেয়ে চমকে উঠলাম।পিছন ফিরে দেখলাম নিরাপু সন্ধিহান চোখ আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

___ নিরাপু কখন এলে!সেই কখন বাসা থেকে বেড়িয়েছো।আর এখন ফিরলে??

___ হুম একটু আগে ফিরেছি।ফ্রেশ হয়ে খেয়েদেয় তোর কাছে এলাম।ফুপি বললো তুই ছাদে এসেছিস তাই ছুটে আসলাম এখানে।

___ কেন আপু কিছু হয়েছে নাকি???

___ আজ আহানের সাথে দেখা হয়েছিলো।ছেলেটির অবস্থা করুন।

নিরাপুর কথা শুনে বুকটা ধক করে উঠলো।অজানা ভয় মনের মধ্যে লাগতে শুরু করলো।আহানের আবার কিছু হয়নি তো।

__ কক কি হয়েছে আপু আহানের??কাঁপা কাঁপা গলা বললাম আমি।

___ তোর বিয়ের কথা শুনে আহান খুব কষ্ট পেয়েছে।পাগলের মতো রাস্তায় ঘিরে বেড়াচ্ছে।

___ কে কে কেন আপু আহান কেউ আমার বিয়েতে কষ্ট পেয়েছে।?আর আহানকে কিভাবে চিনো তুমি আপু??অবাক হয়ে বললাম আমি।

__ আহনকে আগে থেকেই চিনি আমি।যেহেতু সে একজন নামকরা মডেল।

__কিন্তু আহানের আর আমার ব্যাপারে তুমি জানলে কিভাবে??

___প্রণয় ভাইয়া বলেছে।

__ প্রণয় ভাইয়া বলেছেহ!!!অবাক হয়ে বললাম আমি।

___হুম সে সবকিছুই আমাকে বলেছে।first to last
এটা ভাবিসনা যে প্রণয় ভাইয়া তোর ব্যাপারে৷
তোর ব্যাপারে সব কিছু জানে প্রণয় ভাইয়া।তুই কি
তুই কি করিস না করিস বা আহানের সাথে তোর
কেমন সম্পর্ক কেমন করে চিনিস তুই আহান
তোকে চেনে কিভাবে?তোকে ভালোবাসে কিনা
সব জানেন তিনি।

আমি নিরাপুর কথাগুলো শুনে বড়সড় একটা শক খেয়েছি।মাথায় একটা কথাই ঘুড়ছে আমার বিষয়ে এতকিছু প্রণয় ভাইয়া জানলো কিভাবে।সে কি আমায় নিয়ে পিএইচডি করেছে নাকি হাহ!!!

___ আশচার্য ব্যাপার!!!তিনি কেন আমার ব্যাপারে এত নাক গলাবে কেন??আমার ব্যাপারে এত কিছু জেনে তার লাভ কি??

___কারণ তিনি তোকে ভালোবাসে!!!

এবার বরাবড় একটা ধাক্কা খেলাম!!!কথাটা কানে ঝনঝন করে বাজছে।কি বলছে নিরাপু!! প্রণয় ভাইয়া আমাকে ভালোবাসে??এটা হওয়ার ছিলো কি??আমার তো কিছুতেই এই কথা বিশ্বাস হচ্ছে নাহ।

___ নিরাপদ তুমি আমার সাথে মজা করছো তাইনা??আমাকে কনফিউজড করার জন্য।

___ না অয়ত্রি আমি তোর সাথে কোনো মজা করছিনা।
যা বলছি সব সত্যি।

___ প্রণয় ভাইয়ার আচরণে আমি কখনো ভালোবাসা খুজে পাইনি।

__ কারণ তুই ভালোবাসা খুঁজতে চাসনি। না বুঝতে চেয়েছিস!!বরং সবসময় আমায় কষ্ট দিয়ে এসেছে।

___ আমি আহসানকে পছন্দ করতাম আপু।আর প্রণয় ভাইয়াতো এই কথাটা আমাকে বলেনি।

___ বলার সময় আসলে ঠিকি বলবে।তবে একটা কথা মনে রাখিস প্রণয় ভাইয়া তোকে নিজের চাইতেও বেশি ভালোবাসে।আর তুই এখন প্রণয় ভাইয়ার বিবাহিত স্ত্রী।
এই সম্পর্কোটাকে অস্বীকার করার সাহস তুই দেখাস না।আশা করছি তুই এই সম্পর্কোটা মেনে নিবি।বলেই নিরা হনহন করে ছাদ থেকে নেমে গেলো।

তার পিছন পিছন আমিও নিচে গেলাম।মাথায় শুধু নিরাপুর কথাই ঘুরছে।নিশ্চিত এবার আমার পাবনা হসপিটালে ভর্তি হতে হবে।

ফ্লাসব্যাক……👇

নিরা মার্কেটে গিয়েছিলো কিছু কসমেটিকস আনতে।
রাস্তায় কিছু ছেলে তাকে টিস্যু করছিলো।রাস্তার ওপাশে দাড়িয়ে ছিলো আহান।নিরাকে দেখতে পেয়ে চিনে ফেলে আহান।কারণ সেদিন অয়ত্রির সাথে দেখেছিলো। তাই আহান নিরার কাছে গেলো।ছেলেগুলো আহসানকে দেখেই পালালো। তারপর নিরা সহ একটু রাস্তার ওপারে একটা গাছের সামনে দাড়ালো।আহান বললো আপনি এখানে??

__একটু কাজে এসেছিলাম।আপনি মিস্টার আহান??

___ হ্যাঁ।আচ্ছা অয়ত্রি আপনার সাথে আসেনি??

___নাহ। অয়ত্রি ওর হাজবেন্ডের সাথে আছে।

___ what এটা কি বলছেন আপনি??মাথাটা ঠিক আছে তো আপনার??

__ মাথা ঠিক আছে আপনার??

__প্রণয় ভাইয়ার সাথে অয়ত্রির বিয়ে হয়েছে কাল।

___ কিন্তু প্রণয় তো অয়ত্রিকে সয্যই করতে পারে না।
তাহলে কেন প্রণয় কেন অয়ত্রিকে বিয়ে করল?

___ কারণ প্রণয় ভাইয়া অয়ত্রিকে ভালোবাসে তাই।

👉পরের টুকু তো আপনারা জানেন ওই..

রাত দশটা______

রুমে শুয়ে কানে হেডফোন লাগিয়ে চোখ বুঝে বিরহের একটা শুনছিলাম আর নিরাপু আর প্রণয় ভাইয়ার কথা ভাবছিলাম।হঠাৎ পেটে কারো স্পর্শ পেয়ে শিউরে উঠলাম আমি।চোখ খুলে দেখলাম প্রণয় ভাইয়া আমার পাশে শুয়ে আমাকে তার ডানহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে চোখ বুঝে আছে।তার মুখের দিকে তাকাতেই হার্ডবিড ধপাশ ধপাশ শুরু করে দিয়ে।খুব মনোযোগ দিয়ে তার মুখটা দেখতে লাগলাম।

ঘুমের মাঝেও চোখের পাতা গুলো কেঁপে কেঁপে উঠছে।
ঠোঁটের নিচে কালো তিলটা ফর্সা মুখটায় খুব মানিয়েছে।চিকনচিকন হালকা পিংক কালারের ঠোঁট গুলো দেখেই বুকে মোচর দিয়ে উঠলো।ছেলেদের ঠোঁট এতো আর্কষনীয় হয় এটা আমার ভাবনার বাহিরে ছিলো।কালো ও হালকা ব্রাউনের সংমিশ্রণে সিল্ক চুলগুলো কিছুআংশ কপালে এসে পড়েছে।ফ্যানের বাতাসে চুলগুলো উড়ছে।আর জিম করা বডির কারণে আরো আর্কষনীয় লাগে তাকে।কোনো নায়কের থেকে কম নয়।

হঠাৎ আমার হাত চলে গেলো প্রণয় ভাইয়ার চুলে।আলতো করে স্পর্শ করলাম তার গুলো।কি নরম সফট সিল্ক চুল।চুলগুলো আমি হাত দিয়ে বুলিয়ে দিচ্ছি।

প্রণয় ভাইয়ার মুখেরদিকে চোখ পড়তেই চমকে গিয়ে দুরে সরে গেলাম।তিনি আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।
তাহলে এতক্ষন তিনি জেগে ছিলনা আর আমার কান্ড দেখছিলেন।ভাবতেই একরাশ লজ্জা আমায় ঘিরে ধরলো।

আমি তার উল্টো পাশ হয়ে শুয়ে পড়লাম।না জানি তিনি কি ভাবছেন আমার কান্ড দেখে।নিশ্চিত আমায় ছ্যাচড়া মেয়ে ভাবছেন।

★★★★★★★★★★★★★

প্রণয়ের মুখে মুচকি হাসি ফুটে উঠলো।তার প্রিয়তমার কান্ড দেখে।মনে প্রশান্তিতে ছেয়ে গেছে।সে বুঝতে পেরেছে তার ভালোবাসার জয় বেশি দুরে নয়।অয়ত্রিও তার কাছাকাছি আসছে।

__জানপাখি তোমাকে তো আমায় ভালোবাসতেন হবে।
জনম জনমের তরে।তুমি শুধু প্রণয়ের।আর প্রণয়ের এর ওই থাকবে।

প্রণয় ভাইয়া এবার আমার হাতটেনে ঘুরিয়ে তার কাছে নিয়ে এলেন।বুকে সাথে জড়িয়ে নিলেন।

___ এই কি কি করছেন ছাড়ুন আমায়। বলেই তার কাছ থেকে ছারা পাওয়ার জন্য মুছরামুছরি শুরু করে দিলাম।কিন্তু তাও আমায় ছাড়লোনা।

___চুপ করে ঘুমিয়ে পড়ো।নয়তো আমি কি করতে পারি তা তুমি ভালো করেই জানো।কাঠ কাঠ গলায় বললেন প্রণয় ভাইয়া।

___ তার কথা শুনে শুকনো একটা ঢোক গিললাম।আমি এটা ভালোকরেই জানি প্রণয় ভাইয়া যা বলে তাই করে।তাই আর বাড়াবাড়ি করলাম নাহ।চুপচাপ হয়ে গেলাম।চোখ বন্ধ করে আছি।প্রণয় ভাইয়া হার্ডবিড শুনতে পারছি।
কেমন যেন এলোমেলো অনুভূতির সৃষ্টি হচ্ছে। যখন থেকে শুনেছি এই এলিয়েনটা নাকি আমায় ভালোবাসে!!!
_________________
ইভানি যদি জানতে পারে প্রণয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে তাহলে ইভানির পাগলামিরই মাত্রা আরো বেরে যাবে ইভানির মাকে বললেন ইভানির বাবা।

তা শুনে শাড়ির আঁচলে চোখ মুছলো ইভানির মা।
মেয়েটাকে আমার ভালোকরে দাও আল্লাহ। আমি তোমার কাছে হাত জোর করে ভিক্ষা চেয়ে বলছি।ইভানির মা মনে মনে বলছেন কথাগুলো।

>>>>>to be continue….

👉 গল্পটা রিচেইক করিনি…..sorry👇

কাঠগোলাপের মোহে পর্ব-১৭

0

#কাঠগোলাপের মোহে🌼
#মোনামী_শেখ
#part:বোনাস + 17

বউ সেজে বসে আছি চোখে পানি আর একরাজ বিরক্ত+রাগ।রাগে চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে।ইচ্ছে করছে আমার সদ্যবিবাহিত বরের মাথা ফাটিয়ে দিতে।রাগে শরীরটা কিরমির করছে।কপালে আমার এই এলিয়েনটারেই রেখেছিলো আল্লাহ।!!

তখন দরজায় খট করে শব্দ হলো।মাথা তুলে দেখলাম
প্রণয় ভাইয়া রুমে ধুকে দরজার সিটকিনি দিচ্ছেন।আমার ভয়ে গলা শুকিয়ে এলো।রাগ,বিরক্তি সব তাকে দেখেই উধাও।থরথর করে কাঁপতে শুরু করে দিয়েছে আমার হাত পা।নিজেকে এখন মৃগি রোগি মনে হচ্ছে।

প্রণয় ভাইয়ার মুচকি হাসিটা বুকে বিধলো।বুকটা ধকধক করেই চলেছে।তার এই হাসি দেখে মনে পড়ে গেলো___ গায়ে হলুদের সময় তার কথা গুলো এখন মনে পড়ছে আর শিউরে শিউরে ওঠছি।

জান পাখি ডোন্ট ওয়ারি কিছুক্ষণ পর যা হবে তা কল্পনাও করতে পারবে বাহ।দুষ্টু হেসে আমার কানে কানে ফিসফিস করে বললো প্রণয় ভাইয়া।

তার কথা শুনে মেজাজ আমার তুঙ্গে উঠে গিয়েছিলো।
মনে মনে বলেছিলাম একে বাসর রাতেই দুধে বিষ মিশিয়ে খাইয়ে দিয়ে মেরে ফেলবো এই এলিয়েন টাকে।
কিন্তু এখন বুঝতে পারছি এইসব আমার নিছক স্বপ্ন ছারা কিছুই নাহ।ভয়ে একেবারে পুরির মতো হয়ে গেছি।

না জানি আজ এই এলিয়েনটা আমার চিবিয়ে চিবিয়ে খায়!!!!

প্রণয় ভাইয়া আমার সামনে আসতেই আমি খাট থেকে
নেমে তাকে সালাম করলাম।তিনি অবাক হয়ে আমায় দেখছেন।ভাবছেন হয়তো এ কি আসলেই অয়ত্রি???

কিন্ত এখন এসব করছি কারণ নিজেকে এই এলিয়েনটার হাত থেকে বাঁচতে হবে আমায়।নিরাপু যা যা বলেছে আর ইউটিউবে যা দেখেছি তাই করতে হবে।

এবার দুধের গ্লাসটা টেবিলের উপর থেকে নিয়ে তার সামনে ধরলাম।তিনি এখনো আমার চোখ বড়বড় করে দেখেই চলেছেন!!

__ নিন খান।হা করে তাকিয়ে আছেন কেন?? বললাম আমি।

তিনি আমার দিকে তাকিয়েই আমার হাতে থাকা দুধের গ্লাসটা নিয়ে ঢকঢক করে সব খেয়ে ফেললেন।

এবার আমি হেসে তার আরো কাছে গিয়ে দাড়ালাম।দুজনের মধ্যে ৩ ইঞ্চি পরিমাণ ফাঁক রয়েছে।
আমি তার সেরোনায়ির বোতাম গুলো খুলতে লাগলাম।তিনি এবার একটা বড়সর ঝটকা খেলেন।

নিজেকে পাগল পাগল মনে হচ্ছে। কি করছি না করছি সব মাথা থেকে আউট হয়ে গেছে।এখন শুধু একটাই কথা প্রণয় ভাইয়ার হাত থেকে বাঁচতে হবে।সে যে করেই হোকনা কেন।

প্রণয় ভাইয়ার চাহনি আমায় বড্ড লজ্জায় ফেলছে।তার চোখ দুটো কি যেন বলছে।কিন্তু সেটা বোঝার ক্ষমতা আমার নেই।

পুরো সেরোয়ানির বোতাম খোলা হলে আমার হাতটা তার বুকের বামপাশে রাখলাম।তিনি কেঁপে উঠলেন।

__ যা যা যান ফ্রেশ হয়ে আসুন।নামাজ পড়তে হবে।কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললাম আমি।

তিনি আমার কানের কাছে তার মুখটা এনে স্লো ভয়েসে বললেন__ শুধু এটুকুই। ভাবছিলাম আজ বউরের আদর পাবো কিন্ত নাহ তা হলো না।তবে no problem আমি নাহয় আজ আমার বউকে মন ভয়ে আদর করবো!!কি বলো জানপাখি??

আমি এবার হতবাক হয়ে তার দিকে চোখ গুলো বড়বড় করে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করছি তিনি কি মিন করছেন??আমার ফেস দেখে একটা টেডি স্মাইল দিয়ে ওয়াসরুমে ঢুকে গেলেন।আর আমি থ হয়ে দাড়িয়ে আছি!!!

প্রণয় ভাইয়া ওয়াসরুম থেকে বেরোতেই আমি ওয়াসরুমে ধুকে গেলাম। এরপর দুজনেই নামাজ পড়লাম।নামাজ শেষ করে মাথায় পেচানো ওড়নাটা খুলে ফেললাম।মাথার চুল ভিজা যার কারণে জামার কোমড়ের সাইডটা পুরোটাই ভিজে গেছে।

টাওয়ার নিয়ে আয়নার সামনে গিয়ে চুলগুলো ঝাড়তে লাগলাম।

আয়নার চোখ পড়তেই দেখলাম প্রণয় ভাইয়া সোফায় বসে আমার দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে।এবার আমার অসস্থি হচ্ছে।তাই চুল মুছা হলে ব্যালকানিতে গেলাম।টাওয়াল টা মেলে দিয়ে ব্যালকানির গিরিল মুঠোবন্দি করে আকাশ পানে চাইলাম।

আহা কি সুন্দর চাঁদ উঠেছে আজ।চাঁদটার পাশে করিয়ে ছিটিয়ে আছে হাজারো তারা।তারাও আজ চাঁদের এই রুপ দেখে মিটিমিটি হাসছে।চাঁদ চারিপাশে তার আলোয় আলোকিত করেছে।এই রঙিন পৃথিবীটা এখন সাদাকালোয় আবৃত হয়েছে।সাদাকালো পৃথিবীর রুপ অন্যরকম স্নিগ্ধ, মোহনীয়,সাথে সম্মোহনীয় বটে।
মনে মনে ভাবছি এসব তখনি পেছনে কারো নিশ্বাসের শব্দ শুনতে পাই।তবে পেছন ঘুরে দেখলাম না কে ওটা।দেখার বা জানার কৌতুহল এই মহুর্তে আমার নেই।তবে আমার পেছনে প্রণয় ভাইয়া দাড়িয়ে আছেন।

তিনি এবার পেছন থেকে আমায় জরিয়ে ধরলেন।আর কানে কানে বললেন___ তো জানপাখি রোমান্স স্টাডি করবো নাকি।

তার এমন কথায় আমি এবার শুকনো ধোক গিললাম।

আমি ঘুমানো আমার ঘুম পাচ্ছে। বলেই তাকে বিজয়ের কাছ থেকে সরিয়ে রুমে গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লাম।
তিনি আমার আর কিছু বললেন নাহ।তিনি এখনো ব্যালকানিতে দাড়িয়ে আছেন।

আজ থেকে ৫ দিন আগের কথা_______

রাতে রুমে শুয়ে আমি আর নিরাপু গল্প করছিলাম।তখনি খালামনি ও ছোট আব্বু এসে হাজির। আমি তাদের দেখে একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললাম___আরে খালামনি, ছোট আব্বু তোমরা??এসো বসো??তারা সোফায় বসলেন।

__ মা অয়ত্রি তোকে একটা কথা বলি রাখবিতো আমাদের কথা???বললো খালামনি।

___ হুম বলো। তোমারদের কথা আমি সবসময় রাখবো।তোমরা যেটা বলবে আমি সেটাই করবো।তোমরা আমার বাবা মা।আমার একমাত্র অভিবাবোক তোমরা।

আমরা চাই তোর আর প্রণয়ের বিয়ে হোক।তোকে ছেরে আমরা থকতে পারবোনা।আর প্রণয় তোকে খুব সুখে রাখবে এটা আমাদের বিশ্বাস। আমরা চাই সবাই একসাথে সারাজীবন থাকতে।ছোট আব্বু আমার মাথায় আলতো হাতে বুলিয়ে দিয়ে বললেন।

আমি তো স্টাচু।কারণ তাদের কথাগুলো আমার পুরো মস্তিষ্ক কাঁপিয়ে তুলেছে।মুখ অটোমেটিকলি বন্ধ হওয়ার উপক্রম।কানে শুধু তাদেরই কথা ঝনঝন করে
বাজছে।

___কি হলো অয়ত্রি কথা বল???বললেন খালা মনি।

___ ককক কি বলছো তোমরা এসব হ্যাঁ??মাথা ঠিক আছে তো তোমাদের??কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললাম আমি।

__ আমরা যা বলছি সব ভেবে চিন্তে বলছি।তুই কি আমাদের এটুকু আবদার রাখতে পারবিনা ।ছোট আব্বু আমার দিকে তাকিয়ে কাঠকাঠ গলায় বললেন।

তোমাদের কাছে এই ব্যাপার সামান্য বাট আমার আছে এটার মতো বড় আর ভয়ঙ্কর ব্যাপার ছারা আর কিছুই না।নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মারার মতো হবে যদি আমি ওই এলিয়েন টাকে বিয়ে করি।কিন্তু আমি কিভাবেই বা তাদের কথা ফেলবো!!!তারাই তো আমার আসল আপনজন।এই হৃদয়ে আমার বাবা মায়ের উপরে আমি তাদের স্থান দিয়েছি ।তাদের কিছুতেই কষ্ট দিতে পারবোনা।নিজের জিবন দিয়ে হলেও তাদের খেয়াল রাখবো।মনে মনে ভেবে বললাম___ আমি তোমাদের কথায় রাজি।কিন্তু প্রণয় ভাইয়া রাজি তো এই বিয়েতে??

__না প্রণয়কে এখনো এই বিষয়ে কিছু বলিনি আমরা।তবে বলবো।তোর মতামত টাই আমাদের কাছে জরুরি।খালামনি মুচকি হেসে বললেন।

__তাহলে আমার ভাবি হতে যাচ্ছিস তুই অয়ত্রি চোখ টিপে শয়তানি হাসি দিয়ে বললো নিরাপু।আমি তার কথা চোখ রাঙালাম।

উপস্থিত সবাই হেঁসে উঠলো।এবার আমার লজ্জা হচ্ছে
তবে মনে মনে হাফ ছেরে বাঁচলাম কারণ আমি নিশ্চত প্রণয় ভাইয়া এই বিয়েতে রাজি হবে নাহ।

____ সকালে আড়মোড়া ভেঙে হাই তুলতে তুলতে উঠলাম আমি।নিরাপু এখনো বেঘোরে ঘুমাচ্ছে।আমি উঠে ওয়াসরুমে গেলাম।

___ নিচে গিয়ে দেখলাম প্রণয় ভাইয়া সোফায় বসে পায়ের উপর পা তুলে পেপার পড়ছে।সুটবুট পরে আছেন।হয়তো কোথাও যাবেন।আমি রান্না ঘরে গেলাম।দুকাপ কফি নিয়ে রুমে গেলাম।নিরাপদ ওয়াসরুমে গেছে।তাই তার কফির মগটা টেবিলের উপর থেকে ব্যালকানিতে গেলাম।

এভাবে কেটে গেলো আরো ৩ দিন।আহান ফোন দিলে আমি রিভিউস করিনা।বিরক্ত লাগে এখন তাকে।বিকেলে বিছানায় শুয়ে আছি।তখনি হুরমুর করে রুমে ধুকলো প্রণয় ভাইয়া। আমি দাড়িয়ে গেলাম তাকে এই ভাবে দেখে।

__একটা শপিং ব্যাগ দিয়ে বললেন রেডি হয়ে নে।

আমি অবাক হয়ে বললাম কেন??তিনি বললেন
আজ তোর আর আমার বিয়ে।গায়ে হলুদের জন্য রেডি হয়ে নে।

আমি ক্ষিপ্ত গলায় বললাম___

আপনি আমার খালাতো + চাচাতো ভাই আর আপনি কিনা আমাকে বিয়ে করতে চাইছেন??আপনার মাথায় কি কোনো জ্ঞান বুদ্ধি নেই??নির্রলজ্জ একটা।ঘৃণায় মুখটা বাকিয়ে কথাগুলো প্রণয় ভাইয়াকে উদ্দেশ্যে করে বললাম।

তিনি আমার কথা শুনে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলেন।রাগি চোখে আমার দিকে তাকিয়ে একপা এগিয়ে আমার কোমড় চেপে ধরলো।আমি ব্যাঁথা কুকিয়ে উঠলাম।প্রণয় ভাইয়ার নখ গুলো এসে ঠেকেছে আমার পেটের সাইডে!!!

ভাইয়া আমার খুব লাগছে।ছেড়ে দিন আমায়!প্রণয় ভাইয়াকে আমার কাছ থেকে সরানোর চেষ্টা করতে করতে বললাম আমি।

তিনি এবার দিগুণ জোরে আমার কোমর চেপে ধরলেন ব্যাথা সয্য করতে না পেরে জোরে কেঁদেই ফেললাম।

তোর শরীরে লাগছে আমার যে বুকে লাগছে।আমার ব্যাথা যে নিরবে সয্য করতে হয়।সেটা?সেটা কে দেখবে?আমার মুখ চেপে ধরে কথাগুলো বললেন তিনি।

___ আমি নিরবে চোখের জল ফেলেই যাচ্ছি। কিন্তু আমার এই চোখের জল তার বরফপিন্ডের মতো মনটা একটুও গলাতে পারলোনা।

প্লিজ ভাইয়া আমি এমন কথা আর বলবো না।মুখ ফসকে কথাটা বেড়িয়ে গেছে।এবারের মতো মাফ করে দিন।বললাম আমি।

তিনি সরু চোখে আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে আমায় তার কাছ থেকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে হনহন করে আমার রুম থেকে চলে গেলেন তিনি।

আমি এবার শব্দ করে কাঁদতে লাগলাম।কিছুক্ষণ পর নিরাপু এসে আমায় কাঁদতে দেখে বললো কাঁদিস না অয়ত্রি।তুই জিবনে খুব সুখি হবি।তুই যে তার প্রাণ ভোঁমটা।একদিন তুই নিজেই এই সম্পর্কের মায়ার জড়াবি।আমার গালে হাত রেখে বললো নিরাপু।আমি তার কথার আগামাথা কিছুই বুঝলাম না।

তাই আমি বললাম কি বললে আপু প্লিজ স্পষ্ট করে বলো।

নিরাপু বললো তোর কিছুই বোঝা লাগবেনা তুই আয় তোকে আমি রেডি করিয়ে দেই।বলেই আমাকে শাড়ি পড়াতে তিনি ব্যাস্ত হয়ে পড়লো।

বিয়েটা ঘরোয়া ভাবেই হচ্ছে।কাছের কিছু আত্মীয় স্বজন আর ছোট আব্বুর বন্ধুরা বিয়েতে উপস্থিত ছিলো।

আমাকে রেডি করিয়ে নিচে নিয়ে গেলো নিরাপু।নিচে নামতেই আচমকা প্রণয় ভাইয়ার চোখে চোখ পড়ল আমার।তিনি আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেঁসে চোখ মারলেন।

ওরে শয়তান।মানুষের সামনে নিজেকে ফিটফাস রাখিস আর ভিতরে সদর ঘাট।এতোদিন তোকে রাগী মানুষ ভাবতাম আর আজ তোর আরো একটা রুপ দেখে নিলাম।লুচু একটা তার সাথে বহুরুপীও।হাহ।মুখ বাঁকিয়ে মনে মনে বললাম আমি।

হাতে মেহেদি গালে গলায় হাতে হলুদের পরিপূর্ণ। মাথাটা এনমিতেই খারাপ এখন আরো খারাপ হচ্ছে।
কারণ হলুদ আমার অসয্য লাগে।সবার হলুদ পছন্দ হলেও আমার না।আশে পাশে বাড়ির কেউ নেই আমার সাথে।প্রণয় ভাইয়া তার বন্ধুদের নিয়ে ছাদে গিয়েছেন হয়তো। আর কিছু কাজিন আমার পাশে বসে হাসাহাসি করছে আর বলছে অয়ত্রি তুই কিন্তু সেই লাকি এমন একজন কে বর হিসেবে পেয়ে।এত handsome styles
attitude parson কে পাওয়া তো ভাগ্যের ব্যাপার।প্রণয় ভাইয়া তো আমাদের একমাএ ক্রাশ।তোর জায়গায় আমি হলে এতক্ষণ নাচানাচি শুরু করে দিতাম বলেই হাসতে লাগলো একটা মেয়ে।

মেয়েটার কথায় আমার গা পিত্তি জ্বলে যাওয়াও মতো অবস্থা। মন চাচ্ছে মেয়েটাকে আমার জায়গায় বসিয়ে দি।

হুহ পেত্নি দের কথা শোনো!!!আমি নাকি লাকি।আমি লাকি না অন্যকিছু তার আমার মন জানে।নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মারছি।এটা জেনেও কিছু করার নেই।আমার জায়গায় তোরা হলো এতক্ষণে বেলুনের ফুসসস করে আকাশে উড়ে যেতি। মনে মনে বললাম আমি।

খানিক্ষন বাদে নিরাপু এসে আমায় নিয়ে গেলো রুমে।
ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলাম।নিরাপু একটা লেহেঙ্গা আমার হাতে ধরিয়ে দিয়েছেন আমি সেটা পড়েই বেড়োলাম।

কোনো পার্লারের মেয়ে আসেনি সাজাতে নিরাপু আমাশা সাজিয়ে দিয়েছে।নিজেকে আয়নায় দেখে মনে হলো এটা আমি নই।এটা অন্যকেউ।কারণ নিজেকে আজ অন্যরুপে আবিষ্কার করলাম।ভারি মেকআপে আমার আসল মুখখানা ঢেকে গেছে।আগে কখনো ভারি মেকআপ করিনি।তাই নিজেকে অন্যরকম লাগছে সাথে সুন্দর ও লাগছে হয়তো।তবে নিজের প্রসংশ নিজে করলাম নাহ।

চোখ দিয়ে টুপটুপ করে পানি পড়ছে।কিছুক্ষণ আগে আমাদের বিয়েটা সম্পন্ন হয়েছে।৫ লাখ ৫ হাজার টাকা দেনমোহর ধার্য করে আমার আর প্রণয় ভাইয়ার বিয়ে সমপন্ন হলো। কবুল বলতে গিয়ে কেমন যেন এক অনুভূতি হচ্ছিল আমার।

এরপর নিরাপদ আমায় রুমে বসিয়ে দিয়ে এলো।
আর বললো___প্রণয়কে রাগাস না একটু আদর যত্ন করলে তোকে কোনো শাস্তি পেতে হবেনা।প্রণয় ভাইয়া কিন্তু তোর উপর রেগে আছে।আরো কিছু পরামর্শ দিয়ে চলে গেলো নিরাপু

👉তার পরের টুকু তো আপনারা জানেন ওই……🥰

সকালে উঠে বুকে ভারি কিছু অনুভব করতেই টুপ করে চোক খুলে যা দেখলাম তাতে আমার চোখ চড়কগাছ।
প্রণয় ভাইয়া আমাকে আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে ধরে আরামে ঘুমাচ্ছেন আমার কোলবালিশ মনে করে।ভাবা যায় বিষয়টা।কি ডেঞ্জারাস লোকের পাল্লায় পড়লামরে বাবাহ!!

>>>to be continue 👈

>>>গল্পটা রিচেই করিনি সময় সল্পতার কারণে…

কাঠগোলাপের মোহে পর্ব-১৬

0

#কাঠগোলাপের মোহে🌻
#মোনামী শেখ
#part:16

নিরাপু সহ আজ একটু বেড়িয়েছি।
অনেকদিন কোথাও ঘুরতে যাওয়া হয়না তাই আজ দুজনে ঘুরতে বেড়িয়েছি।

বাড়ির গাড়ি নেইনি।রিকশা করে ঘুরে বেড়াবো।ফুচকা খাবো,আইসক্রিম খাবো।ভাবতেই মনটা খুশিতে নাচতে চাইছে।

নিরাপু শাড়ি পড়েছে সাথে আমিও শাড়ি পড়েছি।
গোল্ডেন পাড়ে ব্লাক কলারের হাফসিল্ক শাড়ি সাথে স্টোনের দুল,কালো চুড়ি,চোখে কাজল,চুলগুলো পিঠ পর্যন্ত ছেড়ে দেয়া,ঠোঁটে হালকা পিংক কালারের লিববাম।ব্যাস এটুকু সাজেই আমারা দুজন কম্মিলিট।

দুজনে ঘর থেকে বেরিয়ে নিচে নামছি আর টুকটাক কথা বলছি।হঠাৎ চোখ পড়লো সোফায় বসে থাকা প্রণয় ভাইয়ার উপর।তিনি কেমন যেন অদ্ভুদ ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।তার চোখে না রাগ আছে না অবকতা আছে একরাশ মুগ্ধতা।এটা বুঝতে পেরেছি।

মনে হঠাৎ একটা শয়তানি বুদ্ধির আগমন ঘটলো।মুচকি হেসে টুপ করে ডান চোখটা টিপে দিলাম
প্রণয় ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে।আমার এহেন কান্ডে হচকচিয়ে উঠলেন তিনি।চোখ রাঙালেন।আমি তা দেখে
মুচকি হেঁসে একটা ফ্লাইংকিস ছুড়লাম।তিনি এবার কিছুনা না বলে হনহন করে বসা থেকে উঠে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গেলেন।

আমি এবার হেসেই দিলাম।মনে অনেক শান্তি পাচ্ছি।যাক এই এলিয়েনটাকে তো একটু হলেও জ্বালাতে পেরেছি।নিরাপু আমার কান্ড দেখে কেন জানি কিছু বললো না শুধু মুচকি হাসলো।আমি একটু অবাকই হলাম কিন্তু তা মুখে প্রকাশ করলাম নাহ।

বাড়ি থেকে বেড়িয়ে রাস্তার মোড়ে গিয়ে একটা রিকশা নিলাম।সাভার সৃতিসৌধ পার্কে যাবো দুজনে আজ।

৩০ মিনিট পৌছে গেলাম ওখানে।প্রথমে গেলাম নাগরদোলার কাছে।দুজনে চড়ালাম।ভয়ে আমার প্রাণ যায় যায় অবস্থা কারণ নাগরদোলা আমাদের একবার নীচে একবার উপরে।কলিজা শুকিয়ে যাচ্ছে প্রতিবার ওই।নিরাপুর হাতটা শক্ত করে ধরে আছি।যেই না নাগরদোলা নিচে নামছে চোখ খিঁচে বন্ধ করছি।
কিছুক্ষণ পর নাগরদোলা থেকে নেমে সামনে এগিয়ে স্পিড বোডে চড়ালাম। আহা কি যে মজা লাগছে বলে বুঝাতে পারবো না।

স্পিড বোড থেকে নেমে দুজনে পাপর নিয়ে খেতে খেতে হাঁটছি আর টুকটাক কথা বলছি।এখানে এসেই মনটা অনেক ভালো হয়ে গেলো। কত কাপল চোখের সামনে আসছে যাচ্ছে তা দেখে নিজেকে সিঙ্গেল সিঙ্গল মনে হলো।বাট এটা কোনো বিষয় না।

চোখ দিয়ে টুপটুপ করে জল পড়ে মুখ দিয়ে শোনানোর আওয়াজ বেড়োচ্ছে না চাইতেও।ফুচকায় এত পরিমাণ ঝাল নিয়েছি তা বলার মতো না।নিরাপু আমার ফুচকা খাওয়া দেখে কনফিউশনে পড়ে গেছে।কারণ আমার মতো একটা মেয়ে এত ঝাল খাচ্ছে এটা তার চিন্তার বাহিরে ছিলো।

এক বোতল পানি এক নিশ্বাসে খেয়ে ফেললাম।তবুও ঝাল কমছে না।তাই নিরাপু কে বললাম একটা আইসক্রিম আনতে।নিরাপুও ছুটে গেলো সাথ সাথ আইসক্রিম আনতে।

আইসক্রিম আমার চোখের সামনে দেখতে পেয়েই ঝট করে নিরাপুর হাত থেকে নিয়ে মুখে পুরে দিলাম।কিছুক্ষণ পর ঝালের কোনো অস্তিত্বই রইলো নাহ।

একটা লম্বা নিশ্বাস নিয়ে মাথা তুলে উপরে তাকাতেই দেখলাম নিরাপু কোমরে হাত রেখে রাগি ফেস নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে আমি তা দেখে মুচকি হেসে বললাম___সরি নিরাপু আর এই ভুল হবেনা।প্লিজ রাগ করিও না।

নিরাপু আমার কথা শুনে বললো__ তুই আজ যে কান্ডটা করছিস তাতে আমার বুকটা কাপছিলো।তুই এত ঝাল কবে খাওয়া শিখলি??বাড়িতে তো একটু ঝাল খেতেই হা হু শুরু করে দিস আর বাহিরে ঠিকি টেম্পু চালাস হা???এত ঝাল খাওয়া সাস্থের জন্য ক্ষতিকর বুঝেছিস???

___আপু সরি বললাম তো।আর এই কাজ করবোনা কোনো দিনও।কান ধরে ইনোসেন্ট ফেস নিয়ে কথাটা বললাম আমি।

এবার আপু আমার কথায় কিছু বললো না শুধু মুচকি হাসলো।

আরো কিছুক্ষণ পার্কে থেকে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়না হলাম।হঠাৎ আমার চোখ গেলো রাস্তার পাশে একজোড়া জুটির উপর।দুজন দুজনকে জড়িয়ে আছে।সে আর কেউ নয় আহান।আহান একটা মেয়েকে জড়িয়ে মুচকি হাসছে।যা দেখে আমার বুকটা ছেৎ করে উঠলো।

আহানের গার্লফ্রেন্ড থাকা সত্বেও সে আমার সাথে কথা বলতো।এমন ভাব করতো যেন সে আমাকে পছন্দ করতো।কিন্তু আমার ধারণা আজ ভুল প্রমাণিত হলো।নিজেকে খুব ছোট মনে হলো আমার।একজনের বয়ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলতে বা মিশতে।হ্যাঁ আমি তাকে পছন্দ করি কিন্তু ভালোবাসি কিনা তা জানিনা।
তবুও আমার চোখের কোনে পানি জমে গেলো।ভিতরে কষ্ট অনুভব করছি।এতদিন ভুল করছিলাম।হে আল্লাহ আমাকে তুমি ক্ষমা করে দিও।মনে মনে বলেই চোখের পানিটুকু মুছলাম।

নিরা অয়ত্রি সাড়াশব্দ না পেয়ে বললো___কিরে অয়ত্রি কথা বলছিস না যে??এনমি হলে তো সারাক্ষণ বকবক করেই যাস।

__নাহ আপু কিছু হয়নি এমনিতেই।টায়ার্ড লাগছে তো তাই।মিহি গলায় জবাব দিলাম আমি।

___ এই অয়ত্রি তোর শরীর খারাপ লাগছেনা তো??একটু আগে এত ঝাল খেয়েছিস।

___ না আপু এসবের কিছুইনা।যাস্ট একটু টায়ার্ড লাগছে।এই আর কি।

___ওহ আচ্ছা।সন্দিহান কন্ঠে বললো নিরাপু।

বাড়িতে পৌঁছালাম ৩০ মিনিট পর।দরজার সামনে দাড়িয়ে কলিং বেলে চাপ দিলাম।কিছুক্ষণ পর শাপলা এসে দরজাটা খুললো।

আমি সরাসরি রুমে চলে গেলাম।রুমে গিয়ে ওয়াসরুমে ঢুকে পড়লাম।আমি ফ্রেশ হয়ে বেরোতেই নিরাপু ওয়াশরুমে ধুকে পড়লো।

হঠাৎ পুষির কথা মনে পড়লো।তাই ব্যালকানিতে গেলাম কিন্তু নাহ পুষি ব্যালকানিতে নেই আর ঘরেও নেই।তাহলে কোথায় গেলো পুষি??চিন্তা হচ্ছে এবার।

হঠাৎ মনে পড়লো পুষি আমার রুম ছারা একমাএ প্রণয় ভাইয়ার রুমে যায়।তাই প্রণয় ভাইয়ার রুমের দিকে গেলাম।দরজার সামনে দাড়িয়ে দরজাটা হালকা একটু ঠেলে উঁকি দিয়ে যা দেখলাম তা বলার মতো নয়??

প্রণয় ভাইয়া বিছানায় বসে পুষিকে নিজের কোলে রেখে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। এটা স্বপ্ন দেখছি নাকি সত্যি তা যাচাই করতে হাতে একটা জোরে চিমটি কাটলাম।জোরে চিল্লিয়ে উঠলাম। হাতে খুব জোরে লেগেছে তার মানে সত্যি দেখছি!!!চোখ দুটো তো অটমেটিকলি বড়বড় রসগোল্লার মতো হয়ে গিয়েছে।

ঠোঁট কামড়ে হাতের চিমটি কাটা জায়গাটায় হাত বুলাচ্ছিলাম।আচমকা মাথা তুলতেই দেখলাম প্রণয় ভাইয়া আমার সামনে পকেটে দুহাত গুজে নায়ক স্টাইলে দাড়িয়ে বাঁকা চোখে তাকিয়ে আছে।তা দেখে শুকনো ধোক গিললাম আমি।আজও আমায় এই শয়তান পুষির জন্য শাস্তি পেতে হবে।আর এই এলিয়েনটা দেখো কিভাবে তাকিয়ে আছে হুহ।

আ-আ আসলে ভাইয়া হয়েছে কি!আজ একটু বেরিয়ে ছিলাম। আর এই সুযোগে পুষি তোমার রুমে এসে পড়েছে।সরি।প্লিজ আমায় শাস্তি দিওনা।আর কোনো দিন পুষি তোমার রুমে আসবেনা।এই আমি কথা দিচ্ছি।ভয়ে ভয়ে বললাম আমি।

__ এখন থেকে পুষি আমার রুমেই থাকবে।গম্ভীর ভাবে উওর দিলেন প্রণয় ভাইয়া।

__ তার কথায় আমি আরেক দফা অবাক হলাম।কারণ যে পুষিকে তিনি দু’চোখে সয্যই করতে পারেননা।এমন কি বাড়িতে কোনো পশু পাখি রাখা তিনি অপছন্দ করেন। সেই কিনা পুষিকে তার ঘরে রাখতে চাইছেন?

ইনি প্রণয় ভাইয়া তো???
একটু এগিয়ে গিয়ে প্রণয় ভাইয়ার সামনে দাড়ালাম।তারপর তার গালে আমার হাত রাখলাম।তিনি হয়তো কেঁপে উঠলেন।তার চুল, চোখ,মুখ,হাত দিয়ে ছুঁয়ে ছুয়ে দেখছিলাম।তার ঠোঁটে আমার হাত পড়তেই কেঁপে উঠলাম।হুশ আসতেই পিছনে ছিটকে গেলাম।এতক্ষণ তাহলে আমার হুশ ছিলো না!!
নিজের কান্ড কারখানায় নিজেই লজ্জায় মরি মরি অবস্থা!!!

ভাইয়া আমার ভুল হয়ে গেছে।আমার হুশ ছিলোনা।আমি পরিক্ষা করছিলাম তুমি আমাদের প্রণয় তো??মিহি গলায় বললাম আমি।
আমার কথায় তার মুখে ভঙ্গি একদম স্বাভাবিক রয়েছে।

তিনি এবার আমার কোমর জরিয়ে ধরে তার বুকের সাথে মিশিয়ে নিলেন। আমি তাকে চোখ বড়বড় করে তাকিয়েই আছি।

তিনি ফট করে আমার নাকের নিচের তিল টায় চুমু খেয়ে বললেন___ তো বল আমি কে??

__ আবব আপনি কে?আমি তা জানবো কি ককক করে??আপনি প্রণয় ভাইয়া নন তাইনা??ভয়ে ভয়ে বললাম আমি।

তিনি আবার আমার গালে একটা চুমু দিয়ে বললেন__আমিই তোর প্রণয় ভাইয়া নই।আমি তোর প্রণয়।

তার মুখটা আমার কানের কাছে নিয়ে এসে ফিসফিস করে কথাটা বললেন তিনি।আমি কেঁপে উঠছি বারবার।কেমন যেন এক অনুভূতি হচ্ছে।তার কারণ খুঁজছিনা আপাতদ… আমি তো তার কথা গুলোর উওর খুজতে মত্ত!!!

__আপনি কি সত্যি প্রণয় ভাইয়া নন??কাঁদো কাঁদো ফেস নিয়ে বললাম আমি।

___ তিনি এবার আমার কপালে চুমু দিয়ে একগাল হেসে বললো তোমার এখন এসব নিয়ে ভাবা লাগবেনা।কদিন পরেই সব বুঝতে পারবে।তিনি আমার নাকে তার নাক ষসতে ঘসতে বললেন।

__ছেরেদিন আমায়।ঘরে যাবো।বললাম আমি।তিনি আমায় ছেরে দিলেন।

আমি পেছন ঘুরে নিজের রুমের দিকে পা বাড়াতেই তিনি আমার হাত টেনে পেছন থেকে বুকের সাথে মিশিয়ে নিয়ে আমার কাঁপালে চুমু দিয়ে বললেন__এখন যাও!!আমি হতভম্ভ হয়ে নিজের রুমে গেলাম।আমি এখনো শকে আছি।

হার্ডবিড দ্রুত চলাচল করছে।মাথা ভনভন করছে।দরজার সামনে আসতেই কারো সাথে ধাক্কা খেলাম।

ওমা গোওওও কোমর টা বুঝি গেলরে গেলো।মেঝেতে বসে কোমড়ে হাত দিয়ে বললো শাপলা।
আমার এবার হুশ ফিরলো।ইশশশ কি হচ্ছে এসব আমার সাথে আল্লাহ প্লিজ বলো???!!!
________________________________

এদিকে ইভানি হাসপাতালে বেডে শুয়ে আছে।তার পাশে কান্নারত অবস্থায় বসে আছে তার মা।
ইভানি শুধু প্রণয় প্রণয় করছে।ডাক্তার নার্স ও তার এই কান্ড দেখে অবাক +বিরক্ত!!কেউ কেউ বলছেন ইভানি ম্যাডাম সত্যিই খুব ভালোবেসে ফেলেছেন প্রণয় স্যার কে।

👉সরি গাইস গল্পটা রিচেই করিনি…