Friday, July 11, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1397



কাঠগোলাপের মোহে পর্ব-১৫

0

#কাঠগোলাপের মোহে
#মোনামি শেখ
#part:15

ঘরে শুয়ে শুয়ে ফোনে কথা বলছিলাম আহানের সাথে।নিরাপু ছাদে গিয়েছে।হঠাৎ কেউ আমার হাত টেনে শোয়া থেকে তুলে বুকে জড়িয়ে নিলো।আমার আর বুঝতে বাকি রইলো না যে কে আমায় জড়িয়ে ধরেছে।প্রণয় ভাইয়া আমাকে জরিয়ে ধরছেন।তার পারফিউম ঘ্রাণ নাকে আসতেই বুঝতে পেরেছি।তার বুকের হার্ডবিড শুনতে পারছি।কেমন যেন এক অনুভূতি হচ্ছে আমার।মুখ দিয়ে কথাও বেড়োচ্ছে না।আমাকে জরিয়ে ধরে বড়বড় নিশ্বাস নিচ্ছেন প্রণয় ভাইয়া।আমি বুঝতে পেরেছি তার কিছু একটা হয়েছে।

__ভাইয়া কি হয়েছে আপনার???বলুন আমায়??আমি তার গালে হাত রেখে বললাম।
তিনি আমার দিকে চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে আছেন?
__কি হয়েছে বলবেন তো??

আর কিছু বলতে পারলাম না তার আগেই আমার ঠোঁটে নিজের ঠোঁট মিশিয়ে নিলেন প্রণয় ভাইয়া।আমি কেঁপে উঠলাম।অদ।অদ্ভুত এক অনুভূতির সাথে পরিচিত হলাম আমি।এইরকম কিছুটা সময় থমকে ছিলাম।পরে হুশ আসতেই তার কাছ থেকে নিজের ছাড়িয়ে নিতে চাইলাম কিন্তু পারলাম নাহ।এবার তার পিঠে কিল ঘুসি মেরেই চলেছি কিন্তু এতে তার একফোটাও টনক নাড়লো না। নিশ্বাস আমার বন্ধ হওয়ার উপক্রম।তখনই আমাকে ছেড়ে দিয়ে বড়বড় শ্বাস নিতে লাগলো প্রণয় ভাইয়া।আমি রাগি চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছি।রাগে আমার শরীর কাঁপছে। ইচ্ছে করছে তার গলাটা টিপে দি।

কিন্তু তিনি আমার দিকে না তাকিয়েই হনহন করে চলে গেলো।এবার আমার ভিষণ কান্না পাচ্ছে।

এদিকে প্রণয় নিজের রুমে এসে দরজা ঠাস করে বন্ধ করে দরজায় হেলান দিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করছে।আজ সে তার প্রয়সির খুব কাছে গিয়েছিলো।প্রেয়সির কাছে গিয়ে তীব্র অনুভুতিতে ভাসছিলো সে।

প্রেয়সির কাঁপা কাঁপা গোলাপি ঠোঁট জোড়া খুব টান ছিলো প্রণয়কে।নিজেকে দমানোর খুব চেষ্টা করছিলো প্রণয় কিন্তু তার বেহায়া চোখ তো শুধু অয়ত্রিতেই আবদ্ধ হয় বারবার।

তোমার প্রেমের তীব্র অনুভূতিতে আমি যতাটা পুড়েছি তার চেয়ে দ্বিগুণ অনুভূতিতে তোমার পোড়াবো।কাল থেকে শুরু তোমার প্রতি আমার ভয়ঙ্কর ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ।রেডি থেকো জান।কাল থেকে তুমি এক অন্য প্রণয়ের সঙ্গে পরিচিত হবে।বলেই ডেভিল স্মাইল দিলো প্রণয়।

___ নিরা ঘরে ধুকতেই দেখতে পায় অয়ত্রি একধান্দায় বসে আছে।চোখের কোণে পানি চিকচিক করেছে।নিরা দ্রুত পায়ে এগিয়ে অয়ত্রির পাশে গিয়ে বসলো।

___ অয়ত্রি তোর কি হয়েছে??কাদছিস কেনো??

নিরাপুর কথায় ধ্যান ভাঙ্গলো আমার।চোখের পানি মুছে বললাম__ কই কাঁদছি আপু??চোখে কি জানি পড়ছে।আরও তুমি কখন ছাদ থেকে এলে??

___ এই এখনি এলাম।আর এসেই দেখলাম তুই কাঁদছিলি??

__আরেহ না আপু।চলো আপু ব্যালকানিতে গিয়ে বসি.

___চল!!!

ব্যালকানিতে গিয়ে বসলাম।পুষি ব্যালকানির কোণ ঘেঁসে গুটিশুটি মেয়ে শুয়ে আছে। বাইরে আজ আকাশটা পরিষ্কার। পুরো আকাশটাই গাড়োনিল রঙে ঢাকা।মাঝে মাঝে কয়েকটা সাদা মেঘের ভেলা ভাসছে।
আকাশটা দেখতে খুব আর্কষনীয় লাগছে।বিশেষ করে আমার কাছে।আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি নির্লিপ্ত কন্ঠে নিরাপুকে উদ্দেশ্যে করে বললাম___নিরাপদ তুমি যে এখানে এসেছো।মামা,মামি যদি জানতে পারে তাহলে তো খুব রাগ করবে!!

___হুম।তো??তার জন্য কি আমি আমার ফুফির বাড়ি আসবো না??তাদের মতো আমি নই।যে নিজের ফুপি আদর থেকে নিজেকে বঞ্চিত করবো!!বাবা মা ফুপিকে
মানুক বা নায়ি মানুক কিন্তু আমি মানি।আমার মতে ফুপি সেদিন কোনো ভুল করেনি। নিরাপু কাঠকাঠ গলায় বললো।

[ আমার মায়ের বোন প্রণয় ভাইয়ার মা আর প্রণয় ভাইয়ার বাবা আমার ছোট বাচ্চু।প্রণয় ভাইয়ার মা বাবা তারা পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করেন।আমার মা যেহেতু খালামনির বোন সেই সুত্রে আমাদের বাড়ি প্রায় আসতেন।আর এদিকে আমার চাচ্চু খালামনি কে পছন্দ করতেন।এভাবেই হয়তো তাদের প্রেম হয়েছিলো।আর দুজন দুজনকে খুব ভালোবাসতো।তাদের কথা বাড়িতে জেনে গিয়েছিলো।
কিন্তু তারা মেনে নিতে অস্বীকার করেছিলো।কারণ খালামনির বিয়ে নানুর বন্ধুর ছেলের সাথে ঠিক করা ছিলো।কিন্তু সেটা খালামনি জানতেন না।তার কিছুদিন পড় খালামনির বিয়ের তোড়জোড় শুরু হয়ে যায়।ছোট আব্বু বিয়েটা কিছুতেই আটকাতে পারছিলেন না বলে খালামনিকে নিয়ে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করেন ছোট আব্বু।পরে নানু খালামনি কে ত্যাগ করেন।আর আমার বাবাও ছোটআব্বুকে ত্যাগ করেন। খালামনির কাছে শুনেছি আমি]

__ নিরাপু তুমি বাড়িতে ফিরবে কখন??তুমি কিন্তু এখানে আর কয়েকমাস থাকবে বলে দিলাম হুম?!!মুখ ফুলিয়ে বললাম আমি।

___ এতোদিন থাকবো না।মাস খানিক পড় চলে যাবো।তোর বিয়ের দাওয়াত না খেয়েই আমি চলে যাব??এটা হয় নাকি??

আমি নিশাপুর কথা চোখ বরবড় করে তার দিকে তাকালাম।আর বললাম__ আমার বিয়ে??আমার বিয়ে কোথায় শুনলে তুমি??যেভাবে বলছো মনে হয় সত্যিই এই মাসে আমার বিয়ে!!হুহ

___ বিয়ে তো হতেও পারে বলাতো যায়না।আল্লাহ কার কপালে কি রাখছে বলা যায়???ভ্রু কুচকে মুচকি হেসে আমাকে বললো নিরাপু।

___ আপু তাহলে তুমি আমাকে বিয়ে করতে বলছো।কিন্তু আমিতো এখন বিয়ে করতে চাইছিনা।পড়ালেখা শেষ করবো তারপর বিয়ের কথা ভেবে দেখবো।

___পড়ালেখা বিয়ের পরেও করতে পারবি বুঝেছিস??
নিরাপু বললো।

___ তবুও পড়ালেখা শেষ করেই বিয়ে করবো আমি তার আগে না।

___ দেখা যাবে।বললো নিরাপু।তখনই তার ফোনটা বেজে উঠলো।

নিরাপু মুচকি হেঁসে ফোনটা রিসিভ করলো।আমি কফি বানাতে চলে গেলাম।

রান্না ঘরে গিয়ে দেখলাম শাপলা সবজি কাটছে।আমাকে দেখেই একটা মন ভুলানো হাসি দিয়ে বললো__আফা কেমন আছেন??আজই আপনারে একবারে নিচে আসতে দেখি নাই।

___ প্রয়োজন হয়নি তাই নিচে আসিনি।তোর বিয়ের কি খবর??কফির পানি চুলায় দিতে দিতে বললাম ওকে।

___বিয়া ঠিক হইয়া গেছে আফা।আইজ উনি আমারে নিয়া বেড়াইতে নিয়া যাইবো।লজ্জা লজ্জা ভাব নিয়ে বললো শাপলা।

___আমার কাছে আসিস আমি তো তোকে সুন্দর করে সাজিয়ে দিবো।আর দেখবি তোর হবু বর তোকে দেখে প্রেমে পড়ে যাবে।চোখ মেরে শাপলাকে বললাম।

___শাপলা আমার কথায় ভিষন লজ্জা পেলো।আমি পর এমন কান্ড দেখে হেসেই ফেললাম।

এরপর কফি নিয়ে ব্যাকানিতে গেলাম নিরাপু ফোন ঘাটাঘাটি করছেন।তার সামনে কফির মগ্ন এগিয়ে দিলাম।তিনি thanks বলে আমার হাত থেকে কফির মগটা নিলো।

দুজনে কফি খাচ্ছিলাম আর গল্প করছিলাম।

রাতে বিছানায় শুয়ে ফেসবুকে চালাচ্ছিলাম।তখনি নিরাপদ রুমে এসে বললো__ অয়ত্রি তোকে প্রণয় ডাকছে।

নিরাপদ কথায় একটা শুকনো ঢোক গিললাম।আর অবাক ও হলাম।কারণ প্রণয় ভাইয়াতো আমাকে তার রুমে ধুকতেই দেয়না।সে নাকি আজ আমাকে তার রুমে ডেকেছে।ভাবা যায় বিষয়টা.?প্রণয় ভাইয়া বাসায় আসার পর থেকেই তিনি আমার একেরপর এক চমকে দিচ্ছেন।আমার মনে হয়ে ইনি প্রণয় ভাইয়া নয়।ইনি প্রণয় ভাইয়া জমজ!!!

এসব মনে মনে ভাবতে ভাবতে প্রণয় ভাইয়ার রুমে সামনে এসে দাড়ালাম। হাত পা কাঁপছে আমার সাথে ভয় ও করছে।না জানি এই বহুরূপী আবার কি রুপ দেখায়।

দরজায় টোকা দিয়ে বললাম ভাইয়া আসবো…এটুকু বলতেই দরজার ভিতর থেকে আমার হাত টেনে রুমের ভিতরে আনলো প্রণয় ভাইয়া।

তারপর আমাকে কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় বসিয়ে নিয়ে আমার কোলে শুয়ে বললো___ মাথাটা টিপে দে খুব ব্যাথা করছে।

আর কত অবাক হতবাক হবো আমি??না জানি কখন আমি এই অবাক, হতবাক হতে হতে হার্ডএ্যাটাক না করে বসি।

প্রণয় ভাইয়ার চুলগুলো খুব সফট ও সিল্ক।তার চুল গুলো আলতো করে বুলিয়ে দিচ্ছি আমি।আজ কেন জানিনা প্রণয় ভাইয়ের এহেন কান্ডগুলোতে বিরক্ত হচ্ছিনা আমি।শুধু দফায়,দফায় অবাক হচ্ছি।

🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼

এদিকে ইভানি রুমে পাইচারি করছে আর প্রণয়কে কে ফোনের উপর ফোন দিয়েই চলেছে।কিন্ত ওপাশ থেকে ফোন রিসিভ হচ্ছেনা।এবার ইভানি রেগে ফোনটা আছার মারলো।সাথে সাথেই ফোনটা চূণবিচূর্ণ হয়ে গেলো।রাগে নিজের চুল নিজেই টেনে ছিরতে চাচ্ছে ইভানি। তার মস্তিষ্ক যেন কাজ করাই বন্ধ হয়ে গেছে।
চোখ দুটো ঝাপছা হয়ে আসছে।হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে গেলো ইভানি।

অপর রুম থেকে ইভানির ঘরে কিছু পড়ার শব্দে শুনে নিজের রুম থেকে দৌড়ে বেড়িয়ে ইভানির রুমের দিকে গেলো ইভানির বাবা।

(গল্পটা রিচেইক করিনি। সরি গাইস)

কাঠগোলাপের মোহে পর্ব-১৪

0

#কাঠগোলাপের_মোহে🌻
#মোনামী_শেখ
#part:_____14

পেছন থেকে প্রণয় ভাইয়া আমার হাতটা মুছরে ধরেছেন।ব্যাথায় ঠোঁট কামড়ে চোখের জল ফেলছি।কিন্তু তার এতে কিছুই যায় আসেনা।তার তো এখন আমার উপর রাগ মেটানোর পালা।এবার প্রণয় ভাইয়া আমার হাতটা মুছরে দিলেন।আমি গগনবিদারী এক চিৎকার দিলাম।

চিৎকার দিয়ে উঠে বসলাম।কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে।গলা শুকিয়ে কাট হয়ে গেছে।বুকটা দুরুদুরু করছে।চারিপাশে চোখ বুলিয়ে বুঝলাম আমি স্বপ্ন দেখছিলাম এতক্ষণ।
কয়েকটা বড়বড় নিশ্বাস নিয়ে
নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করলাম।বেডসাইডের পাশে টেবিলের উপর থেকে পানির গ্লাস নিয়ে ঢকঢক করে সবটুকু পানি শেষ করলাম।এখন একটু বেটার ফিল করছি।
এই খাটাশটা এখন ঘুমেও আমায় টর্চার করে।ইশশ মনে হয় কপালে শনি আছে।

নিরাপু বাইরে গেছে হয়তো।আর রুমটাও সাউন্ড প্রুভ তাই কেউ চিৎকার শুনতে পায়নি।বিকেলের দিকে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম সন্ধ্যা ছয়টা বাজে।তাই ফ্রেশ হতে ওয়াশরুমে ঢুকলাম।

ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে নিচে গেলান।নিচে ডয়িংরুমে প্রণয় ভাইয়া আর নিরাপু বসে কথা বলছে।নিরাপু আমাকে দেখে একটা মিষ্টি হাসি দিলো।আর প্রণয় ভাইয়া আমাকে এক পলক দেখে চোখ নামিয়ে পুনরায় নিরাপুর সাথে কথা বলতে লাগলো।

আমি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে রান্নাঘরে গিয়ে ফ্রিজ থেকে দুই বের করে কিছুটা বাটিতে নিয়ে বাকিটা ফ্রিজে ঢুকিয়ে ডয়িংরুমের দিকে গেলাম।

আমি গিয়ে নিরাপুর পাশে বসলাম। নিরাপু আর প্রণয় ভাইয়া নিজেদের মতো কথা বলেই চলেছে।হয়তো ইনর্পটেন্ট কিছু।যেহেতু প্রণয় ভাইয়া একজন ডক্টর আর নিরাপু ও ডাক্তারি পড়ছে।

আমি টিভি চালু করে মাছরাঙা চ্যানেলে দিয়ে মটুপাতলু দেখছি আর দুই খাচ্ছি। হঠাৎ মটুপাতলুর হাসির কিছু সিন দেখে গলা ফাটিয়ে হাসতে লাগলাম।আর সোফায় গড়াগড়ি খাচ্ছিলাম।
বিকজ এমন হাসির সিন দেখে নিজেকে আটকাতে পারিনি।আর আমার ক্রাশ পাতলু।পাতলুকে আমার খুব পছন্দ কারণ পাতলুর মাথায় অলটাইম বুদ্ধির বাতি জ্বলতে থাকে।চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা যেটা আমার খুবই পছন্দ।আর মুটুর শুধু খাই খাই সেটা বিরক্ত লাগে আমার।

হাসতে হাসতে হঠাৎ চোখ যায় নিরাপু আর প্রণয় ভাইয়ার দিকে।তারা চোখ ছোটছোট করে আমার দিকে চেয়ে আছে।মুখে তাদের বিষ্ময়।আমি তাদের এই অবস্থা দেখে ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলাম।এতক্ষণে মনে পড়ল আমি কি কন্ডটাই না করছিলাম।

চপাত করে টিভি বন্ধ করে দৌড়ে রুমে চলে গেলাম।

রুমে এসে বিছানায় সটান দিয়ে শুয়ে পড়লাম।লজ্জা করছে ভিষন না জানি আপু আর প্রণয় ভাইয়া কি ভাবছে আমাকে নিয়ে।

রাতে সবাই খেতে বসেছি।আমি নিজের মতো করে মাথা নিচু করে খেয়ে যাচ্ছি।হঠাৎ মনে হলে কে যেন আমার পায়ে স্লাইড করছে।আর বার বার কেঁপে উঠছি।সাথে রাগও হচ্ছে।সবার মুখের দিকে দেখলাম নাহ কারো মুখ দেখে সন্দেহ করার উপায় নেই।তবে??

আমার সামনা সামনি প্রণয় ভাইয়া বসেছেন।কিন্তু তিনি কি এমনটা করতে পারেন কি??এটাই ভাবাচ্ছে আমায়।
আবার পায়ে কেউ স্লাইড করতে লাগলো।এবার সয্য করতে না পেরে খাবার টেবিলে থেকে উঠে গেলাম।খালামনিকে বললাম আমার খাওয়া হয়ে গেছে।তাই তিনি আর কিছু বলেননি।

ব্যালকানিতে চেয়ারে বসে আছি।তখনকার বিষয়টা ভাবাচ্ছে আমায়।কিন্তু এর সমাধান কিছুতেই পেলামনা।তাই ওটা নিয়ে আর মাথা ঘামালাম নাহ।

আকাশটা আজ বড্ড মেঘ করেছে।সঙ্গে বাতাস ও বইছে।যেহেতু বর্ষাকালের শুরু তো বৃষ্টি হবেই।আমার তো বৃষ্টি ভালোলাগে।তাই এইরকম আবহাওয়া আমার খুব প্রিয়।চেয়ার থেকে উঠে ব্যালকানির লাইট অফ করে দিয়ে একটু এগিয়ে দুহাতে গিরিল মুঠোবন্দি করে আকাশের দিকে চেয়ে আছি।এরিমধ্যে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়তে শুরু করে দিয়েছে।বাতাসের ঝাপটায় সেই বৃষ্টির ফোয়ারা গুলো মুখে এসে পড়ছে।আমি আবেশে চোখ দুটো বন্ধ করে নিলাম।অনুভব করছি চারিপাশের সবকিছু।

অতিতের সেই বিষাক্ত স্মৃতি আমাকে জোরপূর্বক হাতটেনে অতীতে নিয়ে গেলো।চোখে ভেসে উঠলো এক
ভয়ঙ্কর ঘটনা।ক্লাস নাইনে সবে উঠেছি।কিশোরী ভাবটা শরীর মন দুটোতেই বিরাজ করতে শুরু করেছে।অবুঝ মনটা যেন বুঝের পথে একপা একপা করে এগোতে লাগলো। সাথে সাথে কষ্টগুলোও দ্বিগুণ ভাবে চারা দিয়ে উঠলো আমার মনে। সেদিন ছিলো শুক্রবার। বাথরুমে নিজের কাপড়গুলো ধুচ্ছিলাম।তখনি বাইরে থেকে মায়ের কর্কশ কন্ঠ ভেসে আসলো আমার কানে তাই দৌড়ে মায়ে কাছে গেলাম।

মায়ের কাছে যেতেই তিনি বললেন__ তোকে আজ দেখতে আসবে।এই নে ধরে এই শাড়িটা পড়ে সেজেগুজে পাত্রপক্ষের সামনে আসবি। বুঝেছিস।

আমি সেদিন অনেকটাই অবাক হয়েছিলাম।কারণ সবে আমি ক্লাস নাইনে উঠেছি।বয়স ১৫ কি ১৬ হবে।আর আমার বড় আপু এবার এসএসসি পরিক্ষ দিয়ে কলেজে উঠেছে।আপুকে বিয়ের দেয়ার কথা মা বাবা কারো মুখে শুনিনি এখন পর্যন্ত।কিন্তু আমার!!!”

আর কিছু ভাবতে পারলাম না তার আগেই মা বলে উঠলো___ কিরে কথা কানে যায়নি??যা রুমে যা।

আমি আর কথা না বাড়িয়ে রুমে গেলাম।বাকি কাপড় গুলো ধুয়ে ছাদে মেলে দিতে গেলাম।

সেজেগুজে পাত্রপক্ষের সামনে বসে আছি।মুখ জুড়ে আমার বিরক্তর ছাপ।সামনে একজন বয়ষ্ক মহিলা তার সাথে একজন পুরুষ বসে আছেন।তাকে অবশ্য ছেলে বলা চলেনা।বয়স মনে হয় একটু বেশিই।

মহিলাটি আমাকে নানা ধরনের প্রশ্ন করছেন।হটাচ্ছেন।চুল দেখছেন।পরে তিনি বললেন___ বাবা নয়ন এই মেয়ে তো আগের বউয়ের চেয়ে হাজার গুণে সুন্দরী আমার তো মনে ধরেছে।তুই কি বলিস নয়ন??

আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার মতো অবস্থা হলো।
এই ছেলের সাথে আমার বিয়ে দিতে চাচ্ছে মা বাবা!!!
যার কিনা আগেও একবার বিয়ে হয়েছে।বাবা,মার কি সামান্যতম মায়াটুকু কি আমার উপড় নেই।আমি এতটাই খারাপ।বোঝা হয়ে গেছি আমি বাবা মায়ের কাছে!!!মনে হাজারো পশ্ন,কষ্ট থাকলেও তা আমি কারো সামনে প্রকাশ করতে পারিনা।

ছলছল চোখে মায়ের দিকে তাকালাম।মায়ের চোখ খুশিতে চিকচিক করছে।হয়তো তিনি ভাবছেন এবার তার ঘার থেকে বোঝাটা নামবে।

রুমে শুয়ে কাঁদছি আর ভাবছি আমার ভাগ্যের পরিহাস।সবাই সবার মায়ের ভালোবাসা পেয়েছি এমনি কি আমার সামনেই আমার বড় বোন ভাইয়া তাদের কত আদর করে মা।কিন্তু আমি মায়ের ভালোবাসা বলতেই কিছু পাইনি।কোনোদিন আলতো করে মাথায় হাতটুকুও বুলিয়ে দেয়নি আমার মা।

তখনি হন্তদন্ত হয়ে রুমে ধুকলো মা।আমি চোখ মুছে শোয়া থেকে উঠে বসলাম।

পাত্রপক্ষ তোকে পছন্দ করেছে।কালকেই তোর বিয়ে।
বললেন মা।

কিন্তু মা আমি এই বিয়ে করতে পারবোনা।আমার এখনো বিয়ের বয়স হয়নি।আর ছেলের আগেও একটা বিয়ে হয়েছিলো।আমি ওই রকম ছেলেকে কিছুতেই বিয়ে করবোনা।কাঠকাঠ গলায় বললাম আমি”!!

সাথে সাথে মা আমার চুলমুঠি নিজের হাতে জোরে মুঠো করে ধরে হুঙ্কার দিয়ে বললো___ তুই বিয়ে করবিনা তোর ঘার করবে।নবাব নন্দিনী এসেছে বিয়ে করবেনা।ওই রকম ঘরে কপাল করে সমন্ধ পাওয়া যায়।আর ইনি কিনা বলছে বিয়ে করবেনা।হাহ!

__তাহলে আপুর সাথে বিয়ে দিয়ে দাও।যেহেতু তোমার মতে এই সমন্ধটা ভালো।

___কি কি বললি ওই রকম ছেলের সাথে আমার মেয়ের বিয়ে দিবো?কক্ষনো না। আমার মেয়ে ফেলনা নাকি??

___তাহলে মা আমি কি তোমার মেয়ে নই??আমি কি তোমার কাছে ফেলনা??

___মা এবার আমার কথায় থতমত খেয়ে গেলো।আমার চুলের মুঠি ছেরে দিয়ে হনহন করে চলে গেলো।কিন্তু যাওয়ার আগে বলে গেলো এই বিয়ে আমাকে করতেই হবে!!!

কিন্তু আমি মনে মনে সিন্ধান্ত নিয়েছি এই বিয়ে আমি কিছুতেই করবোনা।সে যাই হয়ে যাকনা কেন!!!

২ দিন পর_______

আমাকে জোর করে বউ সাজিয়ে বসিয়ে রাখা হয়েছে।
চোখে পানি টলোমলো করছে।হাজারো চিন্তা মাথার ঘুরপাক খাচ্ছে।

হঠাৎ শুনতে পেলাম বর এসেছে।বর এসেছে।আমার পাশে থাকা সব মেয়ে দৌড়ে গেলো সেখানে।আমি এখন রুমে একটা বসে আছি।এবার মাথায় একটা প্লান আসলো।তাই বিছানা থেকে নেমে জানালা খুলে দিলাম এক ঝাপ।দৌড়াতে দৌড়াতে পৌঁছালাম রাস্তার পাশে একটা পুকুর পাড়ে।ভেবে নিয়েছি বর যাত্রী ফিরে না যাওয়া পর্যন্ত আমি এখানেই লুকিয়ে থাকবো।

রাত ১টা বাজে আমি এখনো এখানেই দাড়িয়ে আছি।ভয় লাগছে খুব কিন্তু কিছু করার নেই।একটু পর বাড়ির উদেশ্যে পা বাড়ালাম।বুকটা ধকধক করছে।পা দুটো থরথর করে কাঁপছে। বাড়িতে গেলেই আবার একটা ঝড় বয়ে যাবে আমার উপর তা আমি ভালো করেই জানি।

বাড়িতে পৌঁছাতেই মা তেড়ে আসলো আমার উপর।চুলের মুঠি ধরে খুন্তি দিয়ে একের পর এক ঘা দিয়ে যাচ্ছে আমার পিঠে। পিঠ দিয়ে রক্ত ঝড়ছে তা আমি ভালোকরেই অনুভব করছি।কষ্টের তারনায় চিৎকার করছি কিন্তু আমার সামনে দাড়িয়ে থাকা নিজের মানুষগুলোর এতে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।বরং তারা আমার বেদনাভরা চিৎকারে মজা পাচ্ছে। তাদের হাড় জুড়চ্ছে হয়তো।বাবাও রাগী দৃষ্টিতে আমার দিকে চেয়ে আছে।

সেদিনের পর থেকে ১মাস বিছানায় পড়ে ছিলাম।বিছানায় পড়েছিলাম বললে ভুল হবে।কিছুটা সুস্থ হলেই বাড়ির সব কাজ আমায় দিয়ে করিয়ে নিতো মা।ফের অসুস্থ হয়ে পড়তাম।

অতিত থেকে ফিরে এলাম।

চোখ বুঝে এসব ভাবছিলাম কিন্তু চোখের কোণ বেয়ে জল পড়ছে ঠিকই।তখনি ঘাড়ে কারো হাতের স্পর্ষ পেয়ে চমকে উঠলাম।চোখের পানি মুছে পিছন ঘুরে দেখলাম নিরাপু। ব্যালকানির লাইট জ্বলছে।

নিরাপু কে দেখে মলিন হাসলাম।নিরাপু আমাকে পর্যবেক্ষন করছে।হয়তো কিছুর আছে পেয়েছে।

__কিরে অয়ত্রি এখানে কি করছিস?

___না আপু এনমিতেই দাড়িয়ে ছিলাম।

__তোর চোখ গুলো লাল কেন?? কাঁদছিলি নাকি তুই??

___ না আপু।আমার না খুব ঘুম পাচ্ছে চলো ঘুমি পড়ি হাই তোলার ভান করে বললাম।

___নিরাপু আর কিছু বললো না।আমি নিরাপুর হাত ধরে রুমে গেলাম।

👉to be continue…

কাঠগোলাপের মোহে পর্ব-১৩

0

#কাঠগোলাপের মোহে🌻
#মোনামি শেখ
#part:______13

ভাইয়া আপনি??আপনি এখানে!! আর আমাকেই বা এভাবে জড়িয়ে ধরেছেন কেন???অবাক হয়ে প্রণয় ভাইয়ার দিকে চেয়ে কথা গুলো বললাম আমি।

আর প্রণয় ভাইয়া অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করলো আমার উপর।আনি একটা শুকনো ঢোক গিললাম।এই খাটাশটা আবার আমার জিবনটাকে সাহারা মরুভূমির করে দিতে এসেছে নিশ্চয়।

কিছুক্ষণ পর তিনি আমাকে বললেন__নিচে তাঁকা

আমি নিচে তাকাতেই কলিজা শুকিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়ে দাঁড়ালো। আর ২ পা বাড়ালেই আমি ছাদ থেকে পড়ে যেতাম।আর প্রণয় ভাইয়া আমাকে বাঁচিয়েছেন।পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে।

ছাদের এককোণে কোনে কোনো রেলিং দেয়া নেই।আর আমি আহানের সাথে কথা বলতে বলতে কখন যে এই কোণটায় এসে পড়েছি তা লক্ষ্যই করিনি।আহানের সাথে কথা বলারত অবস্থা পিছন থেকে আমাকে জড়িয়ে ধরে তা টের পেয়ে পিছন ঘুরতেই ভাইয়াকে দেখতে পাই।

তার পরেরটুকু তো আপনারা জানেন ওই…

এবার মাথা তুলে ভাইয়াকে সরি বললাম।
তিনি কিছুনা বলেই ধাক্কা দিয়ে আমায় তার কাছ থেকে সড়িয়ে নিলেন।আর হনহন করে ছাদ থেকে চলে গেলেন।

আমি হাফ ছেড়ে বাঁচালাম।এইবারে জোর বাঁচা বেঁচে গেলাম।

আহানকে আর ফোন দিলাম না। কিছুক্ষণ ছাদে থেকে নিচে গেলাম।রান্নাঘর থেকে কফি বানিয়ে নিয়ে নিজের রুমে চলে গেলাম।

আধশোয়া হয়ে হুমায়ুন আহমেদের লেখা উপন্যাস “রুপা” বইটা পড়ছি আর ফাঁকে ফাঁকে কফিতে চুমুক দিচ্ছি।ভালোই লাগছে উপন্যাসটা পড়তে। হুমায়ুন আহমেদের লেখা মৃন্মীয়ি উপন্যাসটাও আমার খুব প্রিয়।তার লেখা আরো একটি” নীল অপরাজিতা “। উপন্যাস টা পড়া এখোনো বাকি আছে।

আমি ফেসবুকে স্টোরি পড়তে ভালোবাসি।বলতে গেলে এটাও এক প্রকারের নেশা। আমার প্রিয় লেখিকাদের লিস্টে___ অনিমা কোতয়াল,ইলমা বেহরোজ,মৌরি মরিয়ম,ইতি চৌধুরী, তৃধা আনিকা,তৃধা মোহিনী,আরো অনেকেই এই আছেন।তবে ছেলে লেখকের গল্প আমি মোটেও পড়িনা শুধু হুমায়ুন আহমেদের ছাড়া।ছেলেদের লেখা গল্প পড়তে কেন জানিনা আমার ভালো লাগেনা। তবে বিখ্যাত ব্যক্তির কথা আলাদা।

কিছুক্ষণ পর রুমে ধুকলো নিরা আপু।নিরা দৌড়ে এসে আমাকে ঝাপটে ধরলো আর আমিও।আমি সারপ্রাইজ নিরাপু কে দেখে।

__ নিরাপু তুমি? তুমি কখন এলে!! এক্সসাইটেড হয়ে চিল্লিয়ে বললাম আমি।

___ আরে বানু আস্তে আস্তে।এত এক্সসাইডম্যান তোর শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর।আমার গালে ঠাস করে একটা চুমু খেয়ে বললো নিরাপু।

__আমিও নিরাপুর গালে ঠাসসস করে একটা চুমু দিয়ে বললাম__ তুমি এখানে এসেছো তা আমার কল্পনারো বাইরে।তাই এক্সসাইটেড হয়ে পড়েছিলাম।সরি আপু ওওওও…

নিরাপু আমার কথা হেঁসে দিলো।আর বললো___ তুই অসুস্থ এটা জেনে আমি কি করে না এসে থাকতে পারি বল??আর আমার ফাইনাল পরিক্ষা শেষ তাই আর দেরি না করে দেশে ফিরে এলাম।

___ তা তুমি কখন দেশে ফিরেছো??আর আমাকেও জানাওনি তোমার আশার কথা??মুখটা হুতুম পেশার মতো হোপ করে বললাম আমি।

__ এয়ারপোর্ট থেকে নেমে সোজা এখানে এসেছি। বাড়িতে কেউ জানেনা। আমার আসার খবর শুধু প্রণয় ওই জানতো। ফুফি, ফুপা আমাকে দেখে সে লেভেলের ঝটকা খেয়েছেরে বনুওও।বলে হেঁসে কুটিকুটি নিরাপু।

___ আমি কিন্তু সেইইই খুশি আপু।যা তোমাকে বলে বুঝাতে পারবোনা গো!!

___ আমিও অনেককক খুশি। তবে তোর অসুস্থতার কথা শুনে খুব টেনশনে পড়ে গিয়েছিলাম।

___ এই আপু যাও আগে ফ্রেশ হয়ে আসো।খুব টায়ার্ড দেখাচ্ছে তোমায়।পড়ে কথা হবে।

নিরা আপু ওকে বলে লাগেজ থেকে জামা বের করে নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকলো।

রাতে সবাই একসাথে খেতে বসেছি।আমার পাশে নিরাপু তার পাশে প্রণয় ভাইয়া।আর ওপর পাশে খালামনি ও ছোট আব্বু বসেছে।

খালামনি ছোট আব্বু সবাই খুব খুব খুশি নিরাপু আসাতে।কয়েক বছর ধরে লেখাপড়ার উদ্দেশ্যে আমেরিকার ছিলো নিরাপু। তাই এতদিন পর নিরাপুকে দেখে সবারই ভালো লাগছে।

খাওয়া শেষে প্রণয় ভাইয়া রুমে চলে গেলেন।আর আমরা ৪জন মিলে অনেক্ষণ আড্ডা দিলাম।এর পর নিরাপু আমি দুজনেই রুমে চলে গেলাম।

রাত ১১ঃ৩৪ বাজে।তাই আর গল্পসল্প না করে ঘুমিয়ে পড়লাম।

খুব ভোরে উঠে নামাজ আদায় করে দুজনেই হাটতে বেড়োলাম।

হাটতে হাটতে আহানের বাড়ির সামনে আসতেই আমার চোখ পড়লো ব্যলকানিতে দাড়িয়ে থাকা সদ্য ঘুম জড়ানো আহানের মুখ।বুকটা কেমন জানি করে উঠলো তাই সাথ সাথ চোখ নামিয়ে ফেললাম।নিরাপুকে নিয়ে আবার বাড়ির যাওয়ার জন্য হাঁটা ধরলাম।

আর এদিকে অয়ত্রিকে দেখে মিটিমিটি হাসছে আহান।
অয়ত্রিকে দেখে মনে শান্তি পেলো সে।খুব করে তার ইচ্ছে করে অয়ত্রি হাতটা ধরে ঝুম বৃষ্টির দিনে হাঁটার।
অয়ত্রি কপালে পড়া অবাধ্য ছোট ছোট চুলগুলো সযত্নে কানের পিঠে গুজে দেয়া।সবচেয়ে বেশি ইচ্ছে কেটে অয়ত্রির নাকের নিচের তিল টাকে ছোট ছোট চুমুই ভরিয়ে দেয়া। নিজের মনে আক্ষাঙ্খা গুলো যেন তীব্র ভাবে নাড়া দিচ্ছে আহানকে।
__________________________________________

আর এদিকে ইভানি প্রণয় চলে যাওয়ার কথা শুনে পাগলের মতো অবস্থা হয়েছে।সারাদিন রুমে নিজেকে বন্ধী করে রাখে আর প্রণয়ের ছবি বুকে ধরে কাঁদে।
তার মনে একটাই আশঙ্কা প্রণয় যদি আর ফিরে না আসে!!!প্রণয় ইভানির তার প্রতি দূর্বলতা বুঝতে পারেনি বা বুঝতেও চায়নি এটা ইভানি ভালোকরেই জানে।এবার প্রণয় আসলেই ইভানি তার মনের কথা
প্রণয় কে বলবে। সে এটা ঠিক করেছে।

_______________

সকালের খাওয়া দাওয়া শেষে
আপু সহ রুমে বসে গল্প করছি। আমার কোলে পুষি চুপটি করে শুয়ে আছে। কিছুক্ষণ পর পাশের রুম থেকে খালামনির ডাক শুনতে পেলাম।তিনি আমাকে
ডাকছেন।তাই আপুকে রুমে রেখে তারাহুরা করে তার রুমের দিকে যেতে লাগলাম।

তখনই কিছুর সাথে ধাক্কা খেয়ে ধপাস করে পড়ে গেলাম।ব্যাথা কম পেয়েছি।কোমরে হাত দিয়ে মাথা তুলে দেখে প্রণয় ভাইয়া আমার সামনে দাড়িয়ে আছেন।তার মানে তার সাথেই ধাক্কাটা খেয়েছি। আর ভাইয়া আমাকে দেখে মিটিমিটি হাসছে যা দেখে আত্মাটা লাফিয়ে উঠলো।প্রণয় ভাইয়াকে আমার সামনে হাসতে আজ প্রথম দেখলাম।তিনিঔ হাসতেও পারেন!!!

একের পর এক অবাক কান্ড আমার সাথে ঘটেই চলেছে।অবশ্য তার হাসিটা দেখে যে কোনো মেয়ে পাগল হয়ে যাবে।কিন্তু এখন আমার রাগ হচ্ছে তার হাসি দেখে।একেবারে কাটা ঘায়ে নুনের ছিটের মতো। তাই আমি তারাহুরো করে উঠে তাকে কিছু বলতে যাবো তার আগেই তিনি আমার কোমর জড়িয়ে তার বুকের সাথে মিশিয়ে নিয়ে আমার দিকে কেমন জানি করে তাকিয়ে আছেন।এতক্ষনে আমার কাঁপা কাঁপি শুরু হয়ে গেছে।আর রাগ সে তো ফুস করে উড়ে গেছে।

আমার কেমন জানি এক অনুভূতি হচ্ছে কিন্তু সেই অনুভুতির ব্যাখা আমার জানা নেই।

👉to be continue…

কাঠগোলাপের মোহে পর্ব-১২

0

#কাঠগোলাপের মোহে🌻
#মোনামী_শেখ
#part:12

এভাবেই কেটে গেলো কিছুদিন।আহানের সাথে অল্পসল্প কথা হয়।দেখা হলে বা ফেসবুকে।

ব্যালকানীতে দাড়িয়ে আছি।রাত বাজে তখন ১০।কিছুতেই ঘুম আসছে না।মনটা কেমন জানি উশখুশ করছে।কিছুতেই কিছু ভালোলাগছেনা আমার।
আকাশে আজ গোলাকার মালার ন্যায় চাঁদ উঠেছে সেই চাঁদের আলোয় চারিপাশ পরিষ্কার ভাবে দেখা যাচ্ছে।হঠাৎ হঠাৎ দমকা হাওয়া বইছে।গিরিলে ঝোলানো টবে পূর্তলিকার গাছ গুলো কত সুন্দর লাগছে।ফুল ছাড়াও।আর আমার কাঠগোলাপের গাছটায় দুটো ফুল এখনো বিদ্যানান।মুগ্ধ করার মতো এত কিছু থাকলেও আমার কিছুই ভালো লাগছেনা আজ।

ব্যালকানি থেকে রুমে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই মাথাটা কেমন ঘুরতে লাগলো।আমার মনে হচ্ছে পুরো পৃথিবীটাই ঘুরছে আমার চারিপাশে।চোখ গুলোও ঝাপশা হয়ে আসছে।কিছুতেই আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না।জ্ঞান হারালাম।

__________________________

পিটপিট করে তাকালাম।মাথাটা ভার ভার লাগছে।চারিপাশে চোখ ঘুরিয়ে দেখে বুঝতে পারলাম আমি হাসপাতালে।ঘড়ির কাটায় ১২ টা বাজে কিন্তু সেটা দিন না রাত তা বুঝতে পারলাম না।

সোয়া থেকে উঠতে যাবো তখনই হাতের লাগানো ক্যালোনায় টান পড়লো।ব্যাথার চোটে ঠোঁট নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরলাম।চোখে কোণে পানি জমে আছে।শরীরে কোনো শক্তি পাচ্ছিনা।খুবই দূর্বল লাগছে নিজেকে।গলাটাও শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে পানির অভাবে।ডান হাতে ক্যানোলা লাগলো আর ডানপাশের টেবিলটায় পানির জগ ও গ্লাস রাখা আছে। তাই পানির গ্লাসটা হাতে নিতে পারছিনা।

হঠাৎ মুখের সামনে পানির গ্লাস দেখতে পেয়ে বাম হাত দিয়ে চট করে নিয়ে ঢকঢক করে খেতে লাগলাম।পানি খাওয়া শেষে একটা লম্বা নিশ্বাস নিলাম।তারপর পানি কে দিয়েছি তাকে দেখার জন্য মাথা তুলতেই অবাকের চরম সিমায় পৌঁছে গেছে।চোখ দুটোও যে কোটোর থেকে বেড়িয়ে আসতে চাইছে।

আমার সামনে আর কেউ নয় প্রণয় ভাইয়া দাড়িয়ে আহত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।তাকে কেমন যেন বিধস্ত লাগছে।চুলগুলো এলোমেলো।চোখ গুলো লাল আভায় ছেয়ে আছে।এর কারণ আমি বুঝলাম না।

__ভাইয়া আপনি এখনে??মিহি গলায় প্রশ্ন করলাম তাকে।

___তিনি কিছু বললেন না।আমার দিকে আর একবার তাকিয়ে রুম থেকে হনহন করে চলে গেল।তার এমন কান্ডে আমি ভ্যাবাচেকা খেলাম।তার সাথে রাগও হলো।

__নিজেকে মনে হন কোনো দেশের রাজপুত্র ভাবে।কারো কথায় তার কিচ্ছু যায় আসেনা।এমন ভাব দেখলে গা টা জ্বলে উঠে।মনে মনে বলে উঠলাম।

কিছুক্ষণ পর রুমে ডাক্তার সাথে ছোট আব্বু ঢুকলেন।
ছোট আব্বু ছুটে এসে আমার কাছে এসে বসলো আর হন্তদন্ত হয়ে বললো___ মা তোর জ্ঞান ফিরেছে??তুই ঠিক আছিস তো?এখন কোনো কষ্ট হচ্ছেনা তো??

আমি মুচকি হেসে বললাম___ হ্যাঁ ছোট আব্বু আমি ঠিক আছি।আর এখন খানিকটা সুস্থ বোধ করিনি।তাই তুমি চিন্তা করিও না।

মা জানিস আমি আর তোর খালা মনি খুব চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম। তোর খালামনি তোর ঔ অবস্থা দেখে খুব ভেঙে পড়েছিলেন।কান্না করতে করতে নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন তিনি।

__খালামনি ঠিক আছে তো? খালামনি কোথায়?এখানে দেখছিনা কেন?এবার আমি হন্তদন্ত হয়ে বললাম।

___ তোর খালামনি এখন বাসায় আছে।প্রণয় ফোন করে তোর জ্ঞান ফেরার কথা বলে দিয়েছে।তুই চিন্তা করিসনা।আজই তোকে বাসায় নিয়ে যাবো।এখানে রাখবোনা তোকে।

___আচ্ছা ছোট আব্বু প্রণয় ভাইয়া কখন এলেন এখানে??

____ সকালে এসেছে।তোর খবর দেয়া মাত্রই প্রণয় ঢাকার উদ্দেশ্য রওনা দিয়েছিলো।তোর কথা শোনার পর প্রণয় খুব কষ্ট পেয়েছেরে মা।

___ আমি আবারো একধাপ বেশি অবাক হলাম।ছোট আব্বুর কথা শুনে।প্রণয় ভাইয়া আমার অসুস্থার কথা শুনে কষ্ট পেয়েছেন।এটা খুব অবাক করার বিষয়।নাহ এসব নিয়া আর ভাবলাম না।মাথায় চাপ সৃষ্টি হচ্ছে।

সন্ধ্যা হতে হতে বাসায় ফিরলাম। খালামনি আমাকে দেখেই জড়িয়ে ধরলো।আমি কাঁদছি আর খালামনিও।
খালামনিকে জড়িয়ে ধরে মায়ের কথা মনে পড়ছে।ইশশ আজ যদি মা আমাকে বুকে জড়িয়ে রাখতো।একটু ভালোবাসতো একটু!!!

তাহলে আমি আর তার কাছে কিছুই চাইতাম না।তবে হ্যাঁ খালামনি কে আনি আমার মায়ের আসনে বসাতে শুরু করেছি।আমি তাকেই এখন আমার মা ভাবি।তার আদর ভালোবাসা আমার পুনরায় বাঁচতে শিখিয়েছে।আমি একটা পরিবার পেয়েছি এটা ভাবলেই নিজেকে পরিপূর্ণ মনে হয়।

___ অয়ত্রি মা তুই ঠিক আছিস তো??তোর শরীরটা এখন ভালে আছে তো??

___হুম খালামনি আমি একদম ঠিক আছি।দেখো তোমার সামনে আমি দাড়িয়ে আছি।দুষ্ট হেসে খালামনিকে উদ্দেশ্য করে বললাম।

___ আমার পাগলি মেয়েটা।বলেই আমার কপালে ভালোবাসার পরস এঁকে দিলো।এরপর আমাকে ঘরে নিয়ে গেলো।প্রণয় ভাইয়া নিজের রুমে গেলো।ছোট আব্বু ওষুধ আনতে গেছেন।

ঘরে শুয়ে আছি।তখনি বালিশের নিচ থেকে ফোনটা বেজে উঠলো। বালিশের নিচ থেকে ফোনটা বেড় করে দেখলাম আহান কল করেছে।অজান্তেই ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি ফুটে উঠলো আমার।

কল রিসিভ করতেই ওপারে থেকে আহান ব্যাস্ত হয়ে বললো__অয়ত্রি কাল থেকে কল করে যাচ্ছি রিসিভ করছোনা কেনো??কি হয়েছে তোমার??জানো কতো টেনশন হচ্ছিল আমার।

আমি আহানের কথায় হেসে উঠলাম।আহান নিশ্চিত ভরকে গেছে আমার হাসি শুনে।

__কি হলো অয়ত্রি তুমি আমার কথায় হাসছো কেন?আমি কি হাসার মতো কিছু বলেছি!!!??

____এমনিই হাসলাম।আমাকে নিয়ে এত টেন্স কেন আপনি??হুম!!

___তুমি আমার কে সেটা আমার আল্লাহ আর আমি জানি। খুব শিগ্রই তুমিও জানতে পারবে।মনে মনে বললো আহান।

____তুমি আমার কে সেটা পরের কথা।আগে বলো তুমি তুমি আমার ফোন ধরছিলেনা কেন??

___ আসলে কাল রাতে আমি সেন্সেলেস হয়ে পড়ছিলাম।আজ সকালে নিজেকে হাসপাতালে আবিষ্কার করি।এখন বাড়ি আসলাম।

অয়ত্রির কথা বুকটা ধক করে উঠলো আহানের।অজানা ভয় মনে কাজ করতে লাগলো।

___ হোয়াট…তুমি অসুস্থ হয়েছিলাম।এখন কেমন আছো??কাঁপ কাঁপা কন্ঠে বললো আহান।

___ হুম আমি এখন একদম ঠিক আছি।শুধু শরীরটা একটু দূর্বল।

___এই শোনো ঠিকমতো খাওয়াদাওয়া করবে।কোনো দুষ্টিমি করবে না!আর শোনে কাল ছাদে দাড়িয়ে থাকবে তোমায় একটি বার দেখবো।

দরজার সামনে কারো ছায়া দেখে ভয় পেয়ে গেলাম।
তাই আহানকে ওকে বলেই ফোনটা কেটে দিলাম।
তখনি ঘরে ধুকলো প্রণয় ভাইয়া।

তিনি ধীরে ধীরে এসে আমার বেডের কাছে টুল নিয়ে বসলেন।তার চোখ গুলো হয়তো কিছু বলছে বাট সেই চোখের ভাষা বোঝার ক্ষমতা হয়তো আমার নেই!!!

তার হাতের বাটিটা দেখে বুঝলাম কিসের জন্য তিনি আমার ঘরে এসেছে।

তিনি সুপ নিয়ে আমার মুখের সামনে ধরছে। আমি তো এবার ৩ ধাপে কারেন্টের শক খাওয়ার মতো অবাক হলাম।এবার মনে হয় আমি হার্ডফেল করবো।একের পর এক ঝটকা।এগুলো সহ্য করবো কি ভাবে!!!

__কিরে খাচ্ছিস না কেন??বললেন তিনি।

___আমি চচাত করে খেয়ে সুপ খেয়ে নিলাম।তিনি বার বার আমাকে খাইয়ে দিচ্ছে। আমিও বিনাবাক্যে খেয়ে নিচ্ছি।তার মুখের উপর কথা বলার সাহস আমার নেই বললেই চলে!!!

খাওয়া শেষে ওষুধ খাইয়ে তিনি টিশু দিয়ে আমার মুখটা মুছে দিলেন।আমিতো অবাক হয়ে তার কার্যকলাপ গুলো দেখে যাচ্ছি।

এবার তিনি আমার কপালে তার ঠোঁট ছোঁয়ালেন।কেঁপে উঠলাম। আমি এককাথায় বাকরুদ্ধ!! হার্ডবিদ অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে গেছে।মন শুধু বলছে___এটা কি হলো!!!🥴🥴🥴

👉to be continue…

(গল্পটা রিচেইক করা সময় পাইনি।তাই সবাই ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন)👇

কাঠগোলাপের মোহে পর্ব-১১

0

#কাঠগোলাপের_মোহে🌻
#মোনামী_শেখ
#part:____11

আজ একটু কেনাকাটা করতে বেড়িয়েছি ।কাউকে সাথে নেইনি।আমার আবার এবার একা-একা শপিং করতে ভালোই লাগে। বাড়িতে গাড়ি থাকে শর্তেও রিকশা করেই বেড়োলা। রিকশায় চড়তে আমার ভিষন ভালো লাগে।

“ইশ কেউ একজন থাকতো।তার সাথে রিকশায় বসে হাতে হাত রেখে এই ব্যাস্ত শহরটাকে ঘুরেফিরে দেখতাম।আর মরিয়া হয়ে খুঁজে বেড়াতাম কোলাহল পূর্ণ একটি নদীর তীর ও খোলা নীলাভ আকাশ। সেই আকাশে উড়ে বেড়াতো একঝাক শালিক। মনে মনে ভাবছি আমি। যখন ধ্যান ভাঙ্গলো তখন নিজের ভাবনাগুলো মনে করে লজ্জা পেলাম।

শপিংমলে পৌঁছালাম।দরজা ঠেলে ভিতরে ধুকতে যাবো ওমনি ওড়নায় টান পড়ল।আমি অবাক হয়ে পিছন ফিরে দেখলাম।একটা ৭কি ৮ বছরের বাচ্চা মেয়ে আমার ওড়নার কোণ নিজের আঙ্গুলোর ভাজে রেখে আমার দিকে অসহায় চোখে দাড়িয়ে আছে।

খুব ভালো ভাবে পর্যবেক্ষন করলাম__মেয়েটির মুখের ফেসটা অনেক মায়াবি।যদিও গাঁয়ের রঙ চাপা ফর্সা।নাকে একটা আধো রঙ উঠা সিটিগোল্ডের নথ।গায়ে ছেড়া ফ্রক। চুলগুলো উশখো খুশকো।মুখে বিষাদের ছায়া।

আমি মেয়েটির কাছে গিয়ে মাথা নীচু করে তার গালে হাত রেখে বললাম— কি হয়েছে মামনি??কোনো সমস্যা??

মেয়েটি আমার প্রশ্নের উত্তর হিসেবে না সূচক উত্তর দিলো।আমি মিষ্টি হেসে বললাম—তাহলে কি তোমার ক্ষিদে পেয়েছে??

মেয়েটি এবার মিহি ও দূর্বল কন্ঠে বললো— আমার ছোড বোইনের বিরিয়ানি খাওনের খুব ইচ্ছে করতাছিলো তাই ভিক্ষা করতে বাইর হইছি।কিন্তু এহন পর্যন্ত ৫০টাকাও তুলতে পারিনাই।আপা আমারে কিছু টাকা দিবেন??

মেয়েটার কথা খুব খারাপ লাগলো।নিজের প্রতি নিজেরি ঘৃণা লাগতেছে।কতটাকা কত খানে খরচ করি।
অযাথা খরচেরও হিসাব নাই।অথচ এই অযাথা খরচ না করে যদি এই টাকা গুলো দিয়ে এদের মতো বাচ্চাদের অমূল্য হাসিটা কিনতে পারতাম কতইনা ভালোহতো।এমন না যে আমি কাউকে সাহায্য বা দান করিনা।কিন্তু তাও এদের মতো বাচ্চাদের যদি তাদের একটা হলেও ইচ্ছে পূরণ করতে পারি তাহলে নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখি হবো আমি।এসব মনে মনে ভাবছিলাম।তখনি মেয়েটার কথায় হুশ ফিরলো।

___আপা দিবেন কিছু টাকা??

___আচ্ছা।তুমি আমার সাথে চলো।বলেই মেয়েটার হাত ধরে শপিংমলে ধুকলাম।

মেয়েদের ড্রেস শপে ধুকে ওকে ২টো জামা।ওর বোনকে ২টো জামা কিনে দিলাম।আজ যা টাকা এনেছি তা দিয়ে মেয়েটার ইচ্ছে পূরণ করবো।যা বাকি থাকবে তা মেয়েটার হাতে দিবো।

____ মেয়েটা অবিশ্বাস্য ও ছলছল চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আমি মেয়েটার মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে দিলাম।ও মুচকি হাসলো।

এরপর ওকে একজোড়া সেন্ডেল একজোড়া হিল।সাথে ওর বোনের ও।মেয়েটা এখনো শুধু আমার দিকেই তাকিয়ে আছে।

শপিং শেষে একটা রেস্টুরেন্টে ডুকলাম। ওকে বসিয়ে দিয়ে আমি বসে পড়লা।আশেপাশের লোকজন কেমন যেন দৃষ্টি আমাদের দিকে তাকিয়ে গুজুরগুজুর ফুসুরফুসুর করতে লাগলো।অবশ্য আমি এতে কান দিলাম না।

মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করলাম কি খাবে..??
সে উওর দিলো বিরিয়ানি। আমি ২ প্লেট বিরিয়ানি আর কাবাব অর্ডার দিলাম।

খাবার চলে টেবিলে আসতেই মেয়েটা খাবারের দিকে তাকাচ্ছে একবার আমার দিকে তাকাচ্ছে একবার।
আমি মেয়েটার কৌতুহল বুঝতে পেরে বললাম____
ঝুমুর আমার দিকে না তাকিয়ে মন দিয়ে খাও।

সে মাথা নাড়িয়ে না সূচক উত্তর দিলো। আমি অবাক হয়ে বললাম—খাবেনা কেন??

___এই বিরিয়ানিটা প্যাকেট কইরা দেন।আমি আমার বইনের জন্য লইয়া যামু।

আমি এবার মেয়েটার কথায় হেসে উঠলাম।ও হয়তো অন্যকিছু মনে করছে।তাই আমি বললাম___ঝুমুর তুমি এটা খাও।তোমার বোনের জন্যও নিয়ে যেও পরে।এবার তার চোখে মুখে হাসির ঝলক দেখতে পেলাম।আমারো খুব ভালো লাগছে।

দুজনেই খাওয়া শুরু করলাম।খাওয়া শেষে দুটো আইসক্রিম অডার দিলাম।

আইসক্রিম খেতে খেতে জিজ্ঞেস করলাম— আচ্ছা ঝুমুর তোমার মা,বাবা নেই??

___ মায় তো মানুষের বাড়িতে বাড়িতে কাজ করে।আর আব্বা ৩ বছর আগে মারা গেছে।ভারাক্রান্ত গলায় জবাব দিলো জবাব দিলো মেয়েটি।

___ মেয়েটির কথায় বুকটা ধক করে উঠলো আমার।মেয়েটি এতিম।বাবা নেই। কিন্তু আমার যে বাবা থেকেও নেই।আমার পুরো পরিবার থাকা শর্তেও কেউ নেই।তবে হ্যাঁ আমার মায়ের সমান খালামনি বাবার সমান ছোটআব্বু তো আছেন।এরাই এখন আমার পরিবার তাই এসব নিয়ে কষ্ট পবার কোনো কারণ নেই।নিজেই নিজেকে শান্তনা দিলাম।

মেয়েটার সাথে আরো কিছুক্ষণ গল্প করেলাম।এরপর বিরিয়ানির তিনটা প্যাকেট সাথে দুটো আইসক্রিম কাপ
প্যাক করে ওর হাতে ধরিয়ে দিলাম।মেয়েটা কান্না করতে করতে আমাকে জড়িয়ে ধরলো।আমি মেয়েটাকে জড়িয়ে ধরলাম।

“আপা আপনের মতো মানুষ হয়না।আপনার জন্য আইজ আমার বইনের ইচ্ছেটা পূরণ হইলো।আল্লাহ আপনার মনের আশা পূর্ণ করবো দেখিয়েন।আমি আমার মায়রে কমু আপনার জন্য করতে।আল্লাহ আপনারে যুগযুগ বাঁচায় রাখুক।মেয়েটা বললো কৃতজ্ঞতা প্রকাশের সাথে বললো আমাকে।

আমি মেয়েটার কথায় মুচকি হাসলাম।এবার রেস্টুরেন্টে থেকে বেড়িয়ে মেয়েটাকে তার বাড়ির উদ্দেশ্যে যাওয়ার জন্য রিকশায় বসিয়ে দিলাম।হাতে গুজে দিলাম ১ হাজার টাকার ২টা নোট।মেয়েটা এবার চোখ বড়বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আমি মেয়েটার কপালে একটা চুমু দিয়ে বললাম—এই টাকাটা দিয়ে তোমার মাকে কিছু কিনে দিও।আর বাকি টাকা দিয়ে বাজার করিও।মেয়েটি মাথা নাড়ালো।

মেয়েটির ঠিকানা নিয়ে রেখেছি।প্রয়োজন হলে আবারো যাবো।

মেয়েটিকে বিদায় দিয়ে পিছন ঘুরতেই কাউকে আমার সামনে দাড়ানো দেখে চমকে গেলাম।
আহান ভ্রু কুঁচকে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।সেদিনের মতো মুখে মাস্ক পড়া আর সানগ্লাসটা টিশার্টে গুজে দেয়া।আজ নীল কালারের টিশার্ট তার সাথে মিলিয়ে জিন্স।

___মিস অয়ত্রি তুমি এখানে??

___ হ্যাঁ আসলে একটু কাজ ছিলো তাই।এখন বাড়ি ফিরবো।

___ ওহ আচ্ছা। আমি বাড়ি ফিরছি।চলো আমার সাথে।

___ আরে না না।আমি একায় যেতে পারবো।সামনের মোড়ে রিকশা নিয়ে চলে যাবো।

___ আমি তোমার কোনো কথা শুনবো না মিস অয়ত্রি।
বলেই আমার হাতটেনে কয়েকপা এগিয়ে তার গাড়িতে বসিয়ে দিলো।আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে।

জানলাম মুখ করে বসে বাইরের দৃশ্য দেখছি।না হলে হয়তো এই বেহায়া চোখ দুটো হয়তো আহানের দিকেই যেতো।ক্রাশের সাথে বসে আছি। অনুভূতিতা কেমন হওয়া উচিত!!!

আর আহন ড্রাইভ করছে আর ফাঁকে ফাঁকে অয়ত্রির দিকে তাকাচ্ছে। কখনো বা মুচকি মুচকি হাসছে। আজ সে তার প্রেয়সির সব কান্ডকারখানা গুলে দেখেছে।আর এতে সে আরো একধাপ তার মায়ায় পড়ে গেছে।

🍁🍁🍁_____________________________🍁🍁🍁

এদিকে প্রণয় ইভানির জ্বালায় চরম বিরক্ত হয়ে পড়েছে।প্রণয়ের ক্যাবিনে গিয়ে বকবক শুরু করে দিয়েছে।ভদ্রতার খাতিরে প্রণয় কিছুই বলতে পারছেনা।
না হলে মেয়েটাকে এখনি ক্যাবিন থেকে বেড় করে দিতো।অবশ্য মেয়েটার কথা বার্তায় চঞ্চল হলেও পোশাক পরিছেদ্দ আধনিক মেয়েদের মতো না।হিজাবের সাথে লং থ্রিপিজ পড়ে ইভানি।আর ইভানি দেখতেও অতি সুন্দরী।যে কেউ তাকে প্রথম দেখায় ক্রাশ খাবে।তবে প্রণয় ইভানির উপর না ক্রাশ খেয়েছে না তার মনে ধরেছে।করেছে।তার মনে তো অন্যজনের বসত।তার হৃদয়জুড়ে শুধু তার সেই জনের নাম!!!

___প্রণয় চলুন না আজ কোনো রেস্তোরাঁতে ডিনারটা সেরে ফেলি।আকুতি ভরা কন্ঠে বললো ইভানি।

____ আজ আমার অনেক কাজ আছে মিসেস ইভানি।তাই আজ আপনার আবদারটা রাখতে পারলাম না।

____ আমি মিসেস নই মিস

___ আপনি তো বাগদত্তা তাহলে আপনি কিভাবে মিস হন??

___ বিয়েটা ক্যান্সেল হয়ে গেছে।

___ওহ। কেন বিয়েটা ক্যান্সেল হলো??

___ ওসব কথা পড়ে হবে।আগে আমার আবদারটা রাখুন প্রণয়।প্লিজ

___ আমিতো বললাম আজ আমার অনেক কাজ আছে।

___আজ কোনো অজুহাত শুনবো না।এই বলে দুদিন ঘুড়িয়েছেন আমায়।কিন্তু আজ আমার আবদরটা পূরণ করতেই হবে আপনাকে প্রণয়।

কি আর করার প্রণয় না চাওয়া শর্তেও ইভানির সাথে ডিনার করার জন্য বেড়িয়ে পড়লো। মনে মনে তো প্রণয় রেগে বোম।বাট ইভানি তো খুশিতে কাঁপতে শুরু করেছে।মনে মনে প্রেমের পায়রা সারা আকাশে উড়ছে ইভানির।

👉To be continue…

কাঠগোলাপের মোহে পর্ব-১০

0

#কাঠগোলাপের মোহে🌼
#মোনামী_শেখ
#part:____10

__ বাবা আমি এই বিয়ে করতে পারবোনা।তুমি এই বিয়ে ক্যান্সেল করে দাও।

___হোয়াট?!!! আর ইউ সিরিয়াস?? তুমি কি কথাগুলো ভেবে চিন্তে বলছো??

___ তুমি জানো আমি যা বলি তাই করি।আর আমি যা বলেছি তা ভেবে চিন্তেই বলেছি।

___ তোমার বাকদান হয়ে গেছে।সামনের মাসেই তোমার বিয়ে।আর তুমি কিনা বলছো তুমি এই বিয়ে করবে না??

___ হ্যাঁ আমি এই বিয়ে করবোনা।আর এটাই আমার শেষ কথা।বলেই ডয়িংরুম থেকে সোজা নিজের ঘরে চলে গেলো ইভানি।

আর তা দেখে মিস্টার হাসান বললেন___ ইভানি,ইভানি
কিন্তু তার আগেই নিজের রুমে গিয়ে খট করে দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে সোজা ওয়াশরুমে ধুকলো ইভানি।

বেসিকের সামনে দাড়িয়ে চোখ বুঝে চোখে মুখে পানি দিচ্ছে ইভানি।চোখ বুঝে সে শুধু প্রণয়ে মুখটা দেখতে পেল।মুখে ফুটে উঠলো চওড়া হাসি।

তোমাকে ভালোবেসে ফেলিছি।তোমাকে আমার চাই মিস্টার প্রণয় প্রহসন।সয়নে,স্বপ্নে,জাগরণে এখন শুধু তোমারই বিচরণ।প্রথম দেখায় ভালোবাসা হয় কিনা জানি।আমি অন্তত এটা বিশ্বাস করতাম না।কিন্তু তোমার প্রেমে পড়ে তা আমি বুঝতে পেরেছি।
________________________________________________

আজ লাস্ট পরিক্ষা দিয়ে হল থেকে বেরোলাম অরিন সহ।লম্বা একটা নিশ্বাস ছাড়লাম।যে নিশ্বাসে এতদিন চিন্তা,ভয়,রাগ,হতাশা ছিলো তাও আবার এই পরিক্ষার জন্য।কিন্তু এখন আমি ফুল ফ্রী টেনশন মুক্ত যাকে বলে।

অরনি সহ মাঠের সাইডে থাকা ফুচকার দোকানের সামনে গিয়ে চেয়ার টেনে বসলাম দুজনেই।আজ ফুচকা পার্টি হবে।আমি তো সেই রকমের এক্সসাইডেট। কারণ অনেকদিন হলো ফুচকা খাওয়া হয়না।আজ ২ প্লেট ফুচকা খাব বলে ঠিক করেছি।

___ অরিন আজ দুই প্লেট ফুচকা খাবো।

আমার কথায় অরিন চোখ দুটো বড়বড় করে আমার দিকে তাকালো আর বললো—অয়ত্রি তোর মাথা ঠিক আছে??তুই একসাথে দুপ্লেট ফুচকা খাবি??

___ হ্যাঁ তাতে সমস্যা কি।তুই ও খাবি।মিহি হেঁসে বললাম আমি।কারণ আমি জানি অরিন ফুচকা বেশি পছন্দ করেনা।১ প্লেট ফুচকা খেতেই অরিন হিমশিম খেয়ে যায় আর ২ প্লেট ফুচকা তো অনেক দূরের কথা।
এসব ভেবেই মুখ টিপে হাসলাম আমি।

__ অয়ত্রি তোর কয়েক প্লেট ফুচকা খেতে ইচ্ছে করে তুই খা।আমাকে জোর করবিনা।ওকে।

___ না না জানু তা তো হবেনা।তোকে দুই প্লেট ফুচকা খেতে হবে।তুই সেদিন ট্রিট দিতে চেয়েছিলি।তো আমি সেই ট্রিটের বদলে এটা চাইছি।

___অয়ত্রি তুই আমার সাথে এমন করিসনা প্লিজ।আমি কখনোই দুই প্লট ফুচকা খেতে পারবোনা।১ প্লেট হলেই যথেষ্ট।

___অরিনের কথায় কিছু বলতে যাবো তার আগে আমাদের টেবিলে একজন চোখে সানগ্লাস ও মাস্ক পড়া ছেলে বসলো।আমি অবাক হয়ে ছেলেটার দিকে তাকালাম।কারণ ছেলেটাকে চেনা চেনা লাগছে।আহানের মতো লাগছে। বাট আহান কেনো বা এখানে আসবে।দূর এসব আজাইরা গোয়েন্দাগিরি কম কর।নিজে নিজেকেই বললাম মনে মনে।

এবার ফুচকার প্লেট টেবিলে এসে পড়েছে।তাই আমি আর দেরি না করে খেতে লাগলাম।অরিন মুখ বাঁকা করে খাচ্ছে।২টা ফুচকা খাওয়া হতে আর একটা হাতে নিয়ে মাথা তুলে যখনই মুখে দিতে যাবো তখনি কাউকে দেখে আমার চোখ চড়কগাছ।

হায় হায় এ আমি কাকে দেখছি!!!তাহলে এতক্ষণ যা ভাবছিলাম তাই ঠিক।আহান আমার সামনে বসে আছে।আমি অরিনের হাতের কুনুইয়ে চিমটি কেটে কানে কানে বললাম___ দেখ অরিনোকো আমাদের সামনে কে বসে আছে!!!

অরিন মাথা ঘুড়িয়ে আহনকে দেখে খুশিতে লাফিয়ে উঠলো। আশে পাশের মানুষ অবাক চোখে অরিনের কান্ড দেখছে।তারা অরিনকে হয়তো হাফ মেন্টাল ভেবে ফেলেছেন অরিনের লাফানো আর চিৎকারে।আর সামনে বসে থাকা আহান অরিনের এহেন কান্ড ভরকে গেছে।

আরে আহান চৌধুরী আপনি এখানে??তাও আবার আমাদের টেবিলে বসে চটপটি খাচ্ছেন।ওমাআআআ
তা ভাবা যায়!!!

এবার আমি অরিনের হাত টেনে চেয়ারে বসিয়ে নিজেও বসে পড়লাম।

আসলে সরি।আপনাকে এখানে দেখে অরিন একটু বেশি এক্সসাইটেড হয়ে পড়েছিল।তাই এইভাবে বলেই একটা চাপা মার্কা হাসি দিলাম আমি।

তিনি এবার আমার চোখে নিজের চোখ আবদ্ধ করে বললো— তো মিস আপনি এক্সসাইটেড হননি আমাকে দেখে??

আমি আহানের কথায় থতমত খেয়ে গেলাম।চোখ বড় বড় করে তার দিকে তাকিয়ে আছি আর মনে মনে বলছি____ আপনাকে দেখে আমি হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম।যার জন্য আপনাকে দেখে উত্তেজিত হওয়ার সময় ওই পাইনি। আপনাকে চোখে সামনে পাশের চেয়ারে বসা দেখা আমি হতবাক,অবাক,আশচার্য সবই হয়েছি।আর খুশি হয়েছি কিনা তা এখনো নিজেই বুঝতে পারিনি।তবে আপনাকে চোখে সামনে দেখে আমার মনের আশা একটা পূরণ হয়েছে।এরজন্য আল্লাহর কাছে হাজারো শুকরিয়া।

হঠাৎ তিনি আমার চোখে সামনে চুটকি মেরে বললেন__
হ্যালো মিস কোথায় হাড়িয়ে গেলেন??

____না না কিছুনা।এমনিই আর কি।বাড়িতে একটা কাজের কথা মনে পড়ে গেলো।তাই আমাকে বাড়ি ফিরতে হবে তাড়াতাড়ি। চল অরিন।

বলেই অরিনের দিকে তাকালাম। অরিন আমার দিকে অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে আছে।তার কারণটা আমি ভালোকরেই জানি।

হেই মিস অয়ত্রি এত তারাতারি বাসায় ফিরবেন কেনো?একটু আড্ডা দেয়া যাক।আমার মতো একজন হ্যান্ডসাম ছেলে আপনাদের সাথে যেচে কথা বলছে আবার আড্ডা দেয়া অফার দিচ্ছে আর আপনি কিনা তা ক্যানন্সেল করতে চাচ্ছেন?ভেরি স্ট্রেন্জ!!! ভ্রু কুঁচকে মুখে মুচকি হাসি নিয়ে আমাকে আর অরিনকে উদ্দেশ্য করে বললো আহান।

হ্যাঁ হ্যাঁ আমারা আপনার সাথে আড্ডা দেওয়ার জন্য রাজিই।আপনার মতো একজন মানুষ আমাদের সাথে নিজ ইচ্ছেয় আড্ডা দিতে চাচ্ছে সেটা কি রিফিউজ করা যায়?? কোনো ভাবেই যায়না।উত্তেজিত হয়ে টপাটপ কথাগুলো বলে দিলো অরিন।

আমি অরিনের দিকে চেয়ে বোঝার চেষ্টা করছি।অরিনের মতলবটা কি??

অরিনের কথায় হাসলো আহান।এবার আমাকে উদ্দেশ্যে করে বলল আহান— তো আপনি কি আমাকে রিফিউজ করবেন।নাকি আমার এই সামান্য আবদারটা রাখবেন??

এইরে কি বিপদেই না পড়লাম এই গাড়ি অরিন টার জন্য।এখন তো না ও বলতে পারবো।তাই কি আর করার হ্যাঁ বলতে হবে।

আসলে বাড়িতে কাজ ছিলো তাই বলছি।আপনি আবার অন্য ভাবে মাইন্ড করিয়েন না। কাজটা কাল ও করা যাব।যেহেতু আপনার মতো একজন মানুষ আমাদের কাছে এইটুকু একটা আবদার করেছে সেটা তো পূরণ করার দায়িত্ব আমাদের।কি বলেন??বলেই হাসলাম।

আহান ও আমার কথায় হেসে ফেললো।আমি অবাক চোখে আহানের হাসিটা দেখতে লাগলাম।কি সুন্দর হাসি।ছেলে মানুষের হাসি বুঝি এত সুন্দর হয়!!!

____________________________________________

রাত দশটা____ ব্যালকানিতে দাড়িয়ে গরম ধোঁয়া উড়ানো কফিতে ক্ষনে ক্ষনে চুমুক দিচ্ছে আর মনে মনে ব্লাসি করছে আহান। অয়ত্রির সাথে কাটানো সময়গুলো তাকে বরংবার ভাবাচ্ছে কিন্তু এতে সে বিরক্ত হচ্ছেনা বরং সে মুচকি মুচকি হাসছে।আরও অয়ত্রি মুখটা চোখ বুঝে কল্পনা করছে।

অয়ত্রি নাকের নিচের তিলটা আহানকে নেশায় জড়ায়।হালকা পিংক কালারের ঠোঁটগুলো হঠাৎ হঠাৎ কেঁপে উঠা দেখে বুকের ভেতর ধকধক শুরু হয়ে যায় আহানের।পিটপিট করে তাকানো অয়ত্রির চোখগুলো আহানের চোখকে আবদ্ধ করে।অয়ত্রির লম্বা সিল্ক চুলগুলো আঙ্গুলের ভাজে নিয়ে খেলতে ইচ্ছে করে তার।

অনেক আগে থেকেই তো তার মায়ায় পড়ে গেছি।কিন্তু তা প্রকাশ করতে পারিনি এখন পর্যন্ত।কিন্তু হ্যাঁ এখন আস্তে আস্তে অনুভুতি গুলোর তার সামনে।এতদিন যে তীব্রো অনুভুতিতে আমি ঝলসে পুড়েছি এবার এই অনুভুতিতে তোমাকেও পোড়াবো। বলেই মিটিমিটি হাসতে লাগলো আহান।
_________________________________________
ইশ মাথাটা এত ব্যাথা করছে কেন তা বুঝতে পারছিনা।
ড্রয়ার থেকে পেইনকিলার নিয়ে মাথা মেছেস করে নিলাম কিছুক্ষণ।

চোখ বুঝলেই আহানের সেই মারাত্মক হাসি আমার কল্পনায় ভেসে উঠে।আর হৃদপিণ্ডটাও লাফিয়ে উঠে।
কি যে করি!!! আহান আমার ক্রাশ ঠিক আছে।বাট বন্ধুত্ব করাটা ঠিক হয়নি।আর আজ যা যা হয়েছে সব ওই অরিন টার জন্য।আহানকে সামনাসামনি দেখেছি এটাই আমার জন্য যথেষ্ট ছিলো।বাট ____আর কিছু বলতে পারলাম না।তার আগেই ফোনটা বেজে উঠলো।
বালিশের নিচ থেকে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলাম আননোন নাম্বারে ফোন এসেছে।যা দেখে চরম পর্যায়ে বিরক্ত হলাম।এত রাতে আবার কে ফোন দিলো।ফোনটা ধরলাম।

__হ্যালো আসসালামু আলাইকুম।
কিন্তু ওপাশ থেকে কোনো সাড়া শব্দ পাওয়া গেলো না।
তাই আবার বললাম____ হ্যালো শুনতে পাচ্ছেন??
নাহ এবারো সাড়া পেলাম না। শুধু একটা গভীর নিশ্বাসের শব্দ শুনতে পেলাম।

তার মানে ফোনের ওপাশের লোকটা ইচ্ছে করেই কথা বলছেনা!!!
এবার মাথায় রাগ চড়ে গেলো।তাই বললোই ফেলাম__
এই বয়রা,কানা,বান্দর কথা বলিস না কেন??কথাই যখন বলবনা তো ফোন কেন দিছিস???লজ্জা করেনা? এত রাতে একটা মেয়েকে ফোন দিয়ে ডিসটার্ভ করিস?
বলেই ফোনটা কেটে দিলাম।ধুপ করে শুয়ে চোখ বুঝে রইলাম।

ফোনের ওপাশের লোকটা অয়ত্রির কথা শুনো মিটিমিটি হাসছে আর বলছে__ জান তুমি এখনো আগের মতোই রয়েছো। হাত পায়ে বড় হলেও মেচিওরিটি বড়ো হও নি!! তবে সমস্যা নেই।আমার খাঁচায় বন্দি হলে টিকি তুমি মেচিওরিটি বুঝে যাবে।

👉to be continue….

কাঠগোলাপের মোহে পর্ব-৮+৯

0

#কাঠগোলাপের_মোহে🌼
#মোনামী_শেখ
#part:8+9

আমি উর্মি বা এই নামে কাউকে চিনি না।দয়াকরে আমাকে যেতে দিন।লেট হয়ে যাচ্ছে।এই অরিন চল..
বলেই কিছুদূর যেতেই রিকশায় উঠে দুজনে বাড়ির দিকে রওনা হলাম।

কিছুক্ষণ আগে_____

আইসক্রিম ভ্যানের কাছে যখন গেলাম তখন পিছন থেকে কারো ডাক শুনে পিছন ঘুরলাম।তাকে দেখে বুকটা ধক করে উঠলো।মনে পড়ে যাচ্ছে সেই অতিতের ভয়ঙ্করদিন গুলোর কথা।যা আমার মস্তিষ্কের উপর প্রখর ভাবে চাপ ফেলছিলো। তৎক্ষনাৎ চোখ দুটোও ছি ছল করছিলো জলে।

___কিরে অরত্রি তুই এখানে???এখানে কিভাবে এলি তুই??অবিষাশ্য চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বললো আমার বড়বোন উর্মি।

___আপনি ভুল করছেন আমার নাম অয়ত্রি নয়।মিহি কন্ঠে বললাম।

___কিহ!! তুই অয়ত্রি নস??তুয়ি অয়ত্রি।মিথ্যা বলছিস কেন??ভ্রু কুঁচকে বললো উর্মি আপু।

__না আমি অয়ত্রি নই। আর আপনাকেও আমি চিনি না।

___কিন্তু___ উর্মি আপুকে আর কিছু বলার সুযোগ দিলাম না।

বাকিটা তো আপনার জানেন ওই।

আমার চোখ দিয়ে টপটপ করে ঝড়ে পড়েছে কষ্টের বহিঃপ্রকাশকৃত জল।

আর অরিন অবাক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

__কিরে অয়ত্রি তুই কাঁদছিস কেনো???আর ঐ মেয়েটার সামনে তখন মিথ্যা বললি কেন???যে তুই অয়ত্রি নস??

আমি চোখ মুছে অরিনের দিকে তাকালাম আর বললাম__ এমনি কাঁদছি। আর ঐ মেয়েটা আমার বড় বোন উর্মি।

__ওহ।তাহলে তুই বললি কেন যে তুই অয়ত্রি নস?আর তুই তোর বোন কে চিনলেও না চেনার ভান করলি কেন??

__আমার পরিবারের সাথে আমার কোনো যোগাযোগ বা সম্পর্ক নেই।প্লিজ আর কিছু আমায় জিজ্ঞেস করিস না।

___আচ্ছা।এই নে ধর আইসক্রিম।গলেই গেছে মনে হয়।
আইসক্রিমের কাপটা আমার হাতে দিয়ে বললো অরিন।

কিছুক্ষণ পর ফোনটা বেজে উঠলো।ব্যাগ থেকে ফোনটা বের করে রিসিভ করলাম।ছোট আব্বু ফোন দিয়েছে।

__ আসসালামু আলাইকুম??

___ওলাইকুম আসসালাম।অয়ত্রি কোথায় তুমি??আমি তোমার জন্য গাড়ি পাঠিয়ে দিচ্ছি।তুমি ওটাতে করে বাসায় চলে যাও। আজ অফিসে আমার একটু ইনর্পটেন্ট কাজ পরে গেছে তো তাই তোমাকে নিতে যেতে পারিনি।

___ ইটস ওকে। আসলে ছোট আব্বু আমি এখন অরিনের সাথে রিকশায় আছি।আমরা বাসায় যাচ্ছি।গাড়ি পাঠানোর আর প্রয়োজন নেই।

___ আচ্ছা। দেখে শুনে যেয়ো।আর কাল থেকে গাড়িতে করেই যাওয়া আসা করবে।বুঝেছো??

___হুম বুঝেছি।আল্লাহ হাফেজ। রাতে দেখা হচ্ছে।

___আল্লাহ হাফেজ মামনি। বলেই ফোনটা কেটে দিলো ছোট আব্বু।

__ ফোনটা ব্যাগে ঢুকিয়ে আইসক্রিম খেতে লাগলাম।
আইসক্রিম খাচ্ছি আর ঢাকা শহরের ব্যাস্ত নগরী পর্যবেক্ষন করছি।

হঠাৎ চোখ গেলো একটা ব্লাক কালারের গাড়ির উপর।
চোখে সানগ্লাস মুখে মাস্ক পড়া একটা লোক ওই গাড়িতে বসে আছে। আমার কেন জানিনা লোকটাকে দেখে মনে হচ্ছে চেনা চেনা।কিন্তু কে??সেটা তো মাথায় আসছে না।চুলের কাটিং,বডি সেপ,ফর্সা কুঁচকে রাখা কপালটা আর বড় কথা প্রণয় ভাইয়ার একটা ঘড়ির মতো সেই ঘড়ি সেই লোকটার
হাতে।সব মিলিয়ে তার সাথে প্রণয় ভাইয়ার মিল পেলাম। কিন্তু প্রণয় ভাইয়া তিনি তো রাজশাহীতে।আর এখন আসার ও কথা নয়।হয়তো আমারি ভুল। কারণ পাই রকম কত ঘড়ি কতজনের আছে।তবে মনে মনে সেই খচখচানিটা এখনো দূর হচ্ছে না!!!

এসব ভাবছি হঠাৎ অরিনের কথায় হুশ ফিরলো আমার।

__কি অয়ত্রি তোর কি হয়েছে?? ঝৃষি মনিঝৃষিদের মতো ধ্যান ধরে বসে আছিস কেনো???

__আরেহ কিছুনা।এনমিই।মলিন হেসে বললাম অরিনকে।

অরিনের সামনে প্রণয় ভাইয়ার নামটা মুখে তোলাই যাবেনা।নয়তো আবার সেই ভাঙা রেকর্ড চালু হয়ে যাবে।আর মাঝখান থেকে আমার কানটা ঝালাফালা করে দিবে।

আর কিছুক্ষণ পর বাসায় পৌঁছে গেলাম।বাসায় গিয়ে দেখলাম খালামনি ঘরে বসে কুরআন শরিফ পড়ছে।তাই তাকে আর ডিসটার্ভ করলাম না।আমি সোজা রুমে চলে গেলাম।

ওফফফফফ খুব ক্লান্ত লাগছে।মাথা ঝিমঝিম করছে।
চোখ দুটো মনে হয় ব্যাথায় ফেটে যাচ্ছে। তাই আর দেরি না করে আলমারি থেকে কাপড় নিয়ে সোজা ওয়াশরুমে ঢুকে পেলাম।

ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে ব্যালকানিতে গেলাম। পুষি দরকার এক কোণে গুটিশুটি মেরে বসে আছে।তা দেখে আমার খুব মায়া লাগলো। একদিন পুষির সাথে খুব কম সময় স্পেন্ড করেছি। আর এনমি হলে সেসারাদিন প্রায় আমার সাথেই ঘুরতো।

হাটু গেরে বসে পুরির মাথায় হাত বুলিয়ে দিলাম।পুষি মুখ তুলে চাইলো।আমাকে দেখে খুশিতে তার চোখ দুটো চকচক করে উঠলো।আমি হেসে কোলো নিলাম তাকে।সে মৃদু স্বরে ম্যাও করে উঠলো।

আমি আস্তে করে তার নাকটা টিপে দিলাম।আর বললাম__ মন খারাপ করিসনা পুষি।দেখছিস ওই তো
কি ব্যাস্ততায় দিনকাল কাটছে।

সে বেচারি মাথা নাড়ালো।হয়তো বুঝেছে কি বলছি আমি।

পাশের রুম থেকে খালামনির ডাকছে আমায়।তাই পুষিকে চেয়ারের উপর রেখে খালা মনির ঘরের উদ্দেশ্যে পা বাড়ালাম।

__খালামনি ডাকছিলে আমায়?ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বললাম আমি।

___ হুম।কেমন পরিক্ষা দিলি মা??? পরিক্ষার হলে কোনো সমস্যা হয়নি তো ?? বললো খালামনি।

__ না খালামনি কোনো সমস্যা হয়নি। আর পরিক্ষা আল্লাহর রহমতে আর তোমাদের দোয়ায় ভালোই হয়েছে।হেঁসে বললাম খালামনিকে।

__ তোর ছোটআব্বু তো তোকে পৌঁছে দেয়নি তাহলে তুই আসলি কার সাথে??

___ অরিনের সাথে রিকশা করে এসেছি। জানো খালা মনি আজ উর্মি আপুর সাথে দেখা হয়েছিলো।

কথাটা শুনে বিষ্ময়কর চোখে আমার দিকে তাকালো খালামনি আর বললো__ উর্মি এখানে কেন??তাও আবার তোর পরিক্ষার সেন্টারে!!!

__হুম খালামনি।আমার সাথে কথা বলতে চেয়েছিলো বাট আমি বলিনি।আর চাইও না ওর সাথে কথা বলতে।

part:9

___ ঠিক করেছিস একদম।ওর মতো বোন আমি জিবনে আর কোথাও দেখিনি।যে কিনা নিজের ছোট বোনকে মিথ্যা অপবাদে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। আর তোর মা?? সে তো মা হওয়ার যোগ্যতাই রাখে না।মা নামে কলঙ্ক সে।যদিও সে আমার নিজের বোন। উর্মি যদি সেদিন ওমনটা না করতো তাহলে আজ তুই পরিবার ছাড়া হতিনা।

___ জানো খালামনি আজও সেই ভয়ঙ্কর অতিত আমায় প্রতিরাতে কাঁদায়। ছোট ভাইটার করুন আর মায়াময় মুখটা আমার সারাক্ষণ মনে পড়ে।হয়তো আল্লাহ তাকে ভালোই রেখেছে।আজও হয়তো তার অয়ত্রি আপুর জন্য অপেক্ষা করে বসে আছে। আর ভাবছে কখন তার অয়ত্রি আপু এসে তার রাগ ভাঙ্গাবে।কিন্তু আমি যে আর ঐ বাড়িতে ফিরেবো কখনো খালামনি।চোখ বেয়ে টুপটুপ করে পানি পড়ছে আর কথাগুলো বলতে যেয়ে গলাটা কেঁপে কেঁপে উঠছে আমার।

___ তোকে শান্তনা দেয়ার ভাষা আমার নেইরে মা।তবুও বলবো নিজেকে শক্ত কর।আর কখনোই নিজেকে একা ভাবিনা।আমরা তোর পাশে আছি সারাজিবন।খালা মনি আমাকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে বললো কথাগুলো।

___ বুঝতে শিখেছি থেকে মা কখনোই বুকে জড়িয়ে আমাকে আদর করেননি।না কখনো নিজের হাতে আমাকে কখনো খাইয়ে দিয়েছে।কিন্তু আপুকে ভাইয়া আদর করে নিজের হাতে খাইয়ে দিতো প্রতিদিন।আমার বাবা মা থাকা সত্বেও আমি অনাথ।এর থেকে বড় কথা আরও কি হতে পারে।

___ তোকে না বলছি ঐসব বিষয় নিয়ে আর ভাববিনা।তাহলে তোর ব্রেনে চাপ পড়বে।আর তার পর কি হবে সেটা তো জানিস ওই।

___ হুম জানি।

___ তাহলে এখন আয় খাবার খেতে যাই।তোর জন্য এখনো খাইনি আমি।বললো খালামনি।

___ আচ্ছা চলো।বলে দুজনেই নিচে গেলাম।

এভাবেই কেটে গেলে কয়েকটা দিন।পরিক্ষা ও শেষের পথে।

দিন গুলো খুব ব্যাস্ততায় কাটছে।এর মধ্যে প্রণয় ভাইয়ার কথা আমি প্রায় ভুলতেই বসেছি।

________________________________________________

এদিকে প্রণয় হসপিটালের ক্যাবিনে বসে ফাইল দেখছে। তখনি দরজায় নক দিলো কেউ। প্রণয় বললো— কামইন…

দরজার বাইরে থাকা মানুষটি ভিতরে প্রবেশ করলো।
প্রণয় মাথা তুলে মানুষটির দিকে তাকালো।

সামনে দাড়িয়ে আছে এই হসপিটালের মালিকের মেয়ে ইভানি চৌধুরী ।মুচকি হেসে প্রণয়ের দিকে তাকিয়ে আছে।

___ ওহ মিসেস ইভানি আপনি??প্লিজ বসুন।বললো প্রণয়।

ইভানির হাসিটা এবার চওড়া হলো।সে এগিয়ে এসে সামনের চেয়ারটায় প্রণয়ের মুখোমুখি বসলো।

তো মিসেস ইভানি কোনো সমস্যা?সোজা সাপটা ভাবে বললো প্রণয়।

___ আরেহ না মিস্টার প্রণয় তেমন কিছুই না।যাষ্ট আপনার সাথে দেখা করতে এলাম। এখানে আপনার কোনো প্রব্লেম হচ্ছেনা তো।বললো ইভানি।

___না কোনো সমস্যা হচ্ছে। সব ভালোই চলছে। তো চা না কফি???

___ না কিছুই খাবোনা এখন। তবে আপনি যদি চান তাহলে কোনো রেস্টুরেন্টে ডিনারটা সাড়তে পারি।মুচকি হেসে বললো ইভানি।

___ সরি মিসেস ইভানি আমার কিছু ইর্পটেন্ট কাজ আছে আজ তা আপনার ইচ্ছেটা পূরণ করতে পারলাম না। ফাইলগুলো দেখছে আর বলছে প্রণয়।

___ ওকে ওকে নো প্রব্লেম।আরেকদিন না হয় আমার ইচ্ছেটা পূরণ করলেন। আর একটা কথা; আমি কি আপনাকে প্রণয় বলে সম্বদ্ধন করতে পারি।

___ ওকে। আমার এখন কিছু কাজ আছে।সব কাজ গুলো করতে হবে। সো__ আর কিছু বললো না প্রণয়।

___ ইভানি বুঝতে পেরেছে কি বলতে চাইছে প্রণয়।তাই সে চেয়ার থেকে উঠে প্রণয়ের দিকে তাকিয়ে লজ্জামাখা হাসি দিয়ে বাই বলে চলে গেলো।

এবার প্রণয় পকেট থেকে ফোনটা বের কর গ্যালারিতে ধুকলো।একজনের কিছু পিকচার বারবার দেখছে প্রণয়।ঠোঁটের কোণে ফুঠে উঠেছে মুচকি হাসি।

তোমাকে ভালোবাসি।আর এটা আমি বুঝতে পেরেছি।আর হ্যাঁ জান খুব তারাতারি ফিরবো তোমার কাছে।তোমাকে নিজের করে নিবো। বলেই ডেভিল স্মাইল দিলো প্রণয়!!!

👉to be continue 🌼🌼🌼

কাঠগোলাপের মোহে পর্ব-০৭

0

#কাঠগোলাপের_মোহে🌼
#মোনামী_শেখ
#part____7

কি আছে তোমার মাঝে?!যা আমাকে চুম্বকের মতো টানে তোমার কাছে।না চাইতেও তোমার কথা বারবার মনে পড়ে।কি আছে তোমার ঐ চোখে যা আমায় তার নেশায় মত্ত করতে চায়।একটা ছবি হাতে নিয়ে একদৃষ্টিতে চেয়ে কথাগুলো বলছে প্রণয়।হুটহাঠ কিছু মনে পড়াতে মুচকি মুচকি হাসছে প্রণয়।এবার সে নিজের আচরণে নিজেই অবাক!!!

🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁
বিকেল ৫টা________

ছাদের কর্ণিশ ঘেশে গালে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছি।আজকে প্রকৃতির এমন রূপ দেখে আশচার্য আমি।
আকাশের রং আজ ধূসরলাল আভায় ছেয়ে গেছে।
একঝাঁক পাখি উড়ে বেড়াচ্ছে মুক্ত আকাশে।সাথে কয়েকটা ঘুড়িও উড়েছে।রঙবেরঙে ঘুড়িগুলো আকাশকে ছোঁয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করছে।যদিও সেটা অসম্ভব।হঠাৎ হঠাৎ দমকা হাওয়া এসে দোল দিয়ে যাচ্ছে গাছপালা ও মেলে দেয়া আধভেজা কাপড় গুলোকে।

ছাদের মধ্যে জমায়েত কিছু কিছু ফুলের টবে দু একটা করে ফুল বিদ্যামান।সেগুলো তো হেসে হেসে দোল খাচ্ছে হাওয়ার স্পর্শে… পূতলিকা,রেইনলিলি,মাসরোজ নাইটকুইন,নয়নতারা,গোলাপ,বেলি,অপরাজিতা,
বেবিটিয়ার্স,ইঞ্চিপ্লান্ট এইসব ফুলের গাছ আছে এই ছাদে। বেশির ভাগ সব গাছ আমি লাগিয়েছি।তাই এই গাছগুলোকে আমি খুবই ভালোবাসি আর যত্নও করি।কিন্তু এ কদিন গাছগুলোর যত্ন ঠিক ভাবে নিতে পারিনি। কিন্তু এখন নিবো।
গাছগুলোকে খুব মনে দিয়ে পর্যবেক্ষন করছি আমি।
কিছু একটা মনে হতেই গোলাপ গাছের কাছে গিয়ে একটা লাল গোলাপ ছিড়লাম।আর খোঁপায় গুজে নিলাম। সাথে কয়েকটা সেলফিও তুললাম।তখনি পাশের ছাদ থেকে ডাক পড়লো অরিনের।

কিরে অয়ত্রি আজ তোকে এত খুশি দেখাচ্ছে কেন রে??ভ্রু কুঁচকে বললো অরিন।

__কারণ তোর জন্য একটা সুখবর রয়েছে তাই।এক গাল হেসে অরিনকে উদ্দেশ্য করে বললাম।

__কি খবর রে অয়ত্রি??প্রণয় ভাইয়ার ব্যাপারে নাকি???ব্যাস্ত হয়ে বললো অরিন।

__এবারো একগাল হেসে বললাম— হুম রে অরিনোকো তুই ঠিক ধরেছিস।

__প্লিজ বলনা??প্রণয় ভাইয়া কি কিছু বলেছে???আমার কথাটা বলেছিস তাকে??চোখ দুটো গোল আলুর মতো করে বললো অরিন।

__প্রণয় ভাইয়া না কাল এটুকু বলেই থামলাম।

__কিকি কি বলেছে??থামলি কেন বল প্লিজ।অধিক পরিমাণে আগ্রহ নিয়ে বললো অরিন।

__এবার যা বলতে চলেছি তাতে মনে হয় তোর ক্রাশ খাওয়া পেটটার হাওয়া ফুসসস হয়ে যাবে।মুখ টিপে হেঁসে মনে মনে কথা গুলো বললাম।

__আসলে হয়েছে কি— পুনরায় এটুকু বলেই থামলাম।

__তুই মজা না করে বলনা প্লিজ।তোকে আমি ফুচকা ট্রিট দিবো বলনা কথাটা।

প্রণয় ভাইয়া কাল রাজশাহী চলে গেছেন।ওখানে তিনি জব করবেন।মুখটা কালো করে বললাম কথাটা।আর অন্যদিকে মনে মনে হাসছি।

নাআআআআ অয়ত্রি তুই মিথ্যে বলছিস।আমার সাথে মজা করছিস তাইনা??এখনি তো বললি আমার জন্য সুখবর আছে।তাহলে???

কেনো আমার কাছে তো সুখবরি।ভাইয়া জব পেয়েছেন তাও আবার বেশ ভালো পোস্টেই।এটা তো তোর কাছে সুখবর ওই।কেন তোর কাছে এটা সুখবর না??

জব পেয়েছেন ভালো কথা।কিন্তু তা বলে তিনি রাজশাহী চলে গেলেন।এখন তো ওনাকে আর এক নজর ও দেখতে পারবোনা।কাঁদো কাঁদো ফেস নিয়ে বললো অরিন।

ওহ তাই বুঝি?? আমি ভেবেছিলাম তুই এই খবরটা শুনে খুশি হবি।কিন্তু তুই যে প্রণয় ভাইয়ার বিরহ সয্য করতে পারবিনা তা তো আমার জানা ছিলোনা।কিছু না জানার ভান করে বললাম।

ইশ আগে তো প্রণয় ভাইয়াকে দুদিনে একদিনে দেখতে পেতাম।কিন্তু এখন তো তাও হবে না।মুখটা হুতুম পেঁচার মতো করে কথাগুলো বললো অরিন।

মন খারাপ করিসনা অরিনোকো। ভাইয়া তো আর সারা জিনবনের জন্য রাজশাহী যাননি।প্রতি মাসে বা বছরে এখানে একবার হলেও আসবে তাইনা।

হুম রে অয়ত্রি। কিন্তু আমি তো হারিয়ে ফেলাম ওনাকে।যদি ওখানে গিয়ে কোনো মেয়েকে গার্লফ্রেন্ড বা বিয়ে করে নেয় তবে???বললো অরিন।

কি আর করার। তোর ক্রাশ বাঁশে পরিণত হবে।এই আরকি। বলেই গুনগুনকরে আস্তে করে ছাদ থেকে নেমে গেলাম।অরিনের মুখটা দেখার মতো ছিলো।আমার তো পেট ফেটে হাসি বেড়িয়ে আসতে চাইছে।প্রণয় ভাইয়া যাওয়ার কথাটা অরিন প্রণয় ভাইয়ার ক্রাশ খাওয়া মেয়েদের বলে বেড়াবে। আর সবার মুখে নেমে আসবে কালো আঁধার। হিহিহিহি…

৭টা বাজে এখন….
রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে পড়তে বসলাম।

____________________________________________

প্রণয় ইতিমধ্যেই তার গন্তব্য স্থলে পৌঁছে গেছে।কাল থেকে হাসপাতালে জয়েন করবে।

রাত দশটা বাজে_____

প্রণয় ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে বিছানার উপর থেকে ফোনটা নিয়ে বাড়িতে ফোন দিলো।তার মায়ের সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে ফোনটা রেখে দিয়ে ব্যালকানিতে গেলো।

আকাশে আজ থালার ন্যায় চাঁদ উঠেছে। তার আলো ছড়াচ্ছে চারিপাশে।চাঁদের আলো গিরিল ভেদ করে কিছুআংশ প্রণয়ের মুখে এসে পড়েছে।মৃদু বাতাসে প্রণয়ের সিল্ক চুল গুলো গাছাড়া ভাব নিয়ে আপন মনেদোল খাচ্ছে। ঠোঁটের নিচের তিলটা প্রণয়ের সৌন্দর্য আরো দ্বিগুন বাড়িয়ে দিয়েছে। ডাগর ডাগর চোখের পাতা গুলো মাঝে মাঝে পাখির মতো ডানা ঝাপটাচ্ছে। ফার্সা নাকটা হালকা লাল আভায় ছেয়ে গেছে।ঠোঁটের কোণে লেগে আছে মুচকি হাসি। কোনো নায়কের থেকে কম লাগছেনা প্রণয়কে।

___ এ কেমন আসক্তি যা অন্য আসক্তিকেও হার মানায় নিমিষেই।তার কথা কেন এতো মনে পড়ছে??কি এক অদ্ভুত যন্ত্রনা হচ্ছে বুকে। যার নাম আমার অজানা। কি আছে তার ঔ কাজলরাঙা চোখে?? তার চুলের মাতাল করা ঘ্রাণ জড়িয়ে গেছে আমার প্রতিটা শ্বাস প্রশ্বাসে। তার ওই কাঁপা কাঁপা ঠোঁট বুকের হৃৎস্পন্দন বাড়িয়ে দেয়। চোখ বুঝলেই তার মুখটাই ভেসে উঠে।সয়নে স্বপ্ননে শুধুই তার আনাগোনা।কেন?? কেন এমন হচ্ছে??? কেন???!!! বলেই মাথার চুল গুলো দুহাতে মুঠোবন্দি করে টানতে লাগলো প্রণয়।

___এ নিয়ে ৩টা সিগারেট শেষ করলাম।কিন্তু কিছুতেই তার চিন্তা মাথা থেকে নামছে না।

দেয়ালে একাটা লাথি দিয়ে রুমে গেলো প্রণয়…

_______________________________________________

ইশ মাথা ঘুরছে।এত এত পড়া কিভাবে এত তাড়াতাড়ি রিভেজ দিবো। বিশেষ করে আইসিটি। এই ব্যাটাTo👉আরো বেশি কইরা গিট্টু লাগায় দিসে।কিছুতেই মাথায় ধুকতে চায়না।বুঝিনা কি এমন শত্রুতা আমার সাথে এই আইসিটির।এক শত্রু তো আল্লাহর রহমতে বিদায় হইছে।এবার এই শত্রু বিদায় হইলেই বাঁচি। পড়ার টেবিলে আইসিটি বই সামনে রেখে গালে হাত দিয়ে বললাম কথাগুলো।

নাহ আর পড়বো এখন রিলাস্কে ঘুম দিবো বলেই পড়ার টেবিল থেকে উঠে বিছানায় গিয়ে সটান দিয়ে শুয়ে পড়লাম।

আস্তে আস্তে স্বইচ্ছায় ঘুমের দেশে তলিয়ে যেতে লাগলাম।

এভাবেই কেটে গেলো কয়েকটা দিন।পরিক্ষা চলেই এলো।আর আমার লো পেশার হাই পেশার পরিণত হলো😴!!রাতে ঘুম নেই দিনে খাওয়া নেই।শুধু পড়া আর পড়াহ।ধুতেরি জিবনটাই বদনা থুক্কু বেদনা। হিহিহিহিহি🙃…

🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁

আজ পরিক্ষার প্রথম দিন।সকালে উঠে গোসল করে নামাজ পড়ে ১৫ মিনিটের মতো বাংলা সাবজেক্ট রিভেজ দিয়েছি।

আমি তো খুব এক্সসাইটেড!!বুকটা দূরদূর করছে।হাত পা গুলো মৃগি রোগটির মতো কাঁপছে থেমে থেমে।ড্রোয়িংরুমে খালামনি,ছোটআব্বু,শাপলা দাড়িয়ে আছে।ছোট আব্বু আজ অফিসে যায়নি কারণ আজ আমায় পরিক্ষার হলে তিনিই নিয়ে যাবেন।

সবাইলে বললাম আমার জন্য দোয়া করতে।সবাই একগাল হেঁসে আমার মাথা হাত বুলিয়ে দোয়া করলো।এরপর খালামনি আমায় একটা সুন্দর কলম গিফ্ট করলো।ছোট আব্বু একটা ঘড়ি আর শাপলা একটা পেন্সিল বক্স।আমি অবশ্য এতেই বেজায় খুশি!!!হঠাৎ মনে পড়ে গেলো অতিতের কিছুআংশ।

যখন আমি ক্লাস এইটের পরিক্ষা দেই তখন আমার বাবা ১০০ টাকা হাতে ধরিয়ে দিয়েছিলেন।মা তো সেদিন কিছুই দেননি।না মাথায় হাতবুলিয়ে আমার জন্য দোয়া করেছিলো।আর আপু একটা ৫টাকা দামি কলম দিয়েছিলো তাও আবার মুখটা বেঁকিয়ে । আর ছোট ভাইটা আমার গালে একটা চুমু দিয়ে বলেছিলো— আপু তুমি পরিক্ষায় অনেক ভালো রেজাল্ট করবে দেখিও।আমি না আজ সকালে নামাজ পড়ে তোমার জন্য দোয়া করছি। ছোট ভাইটার কথা শুনে খুশিতে আমার চোখ দুটো ছলছল হয়ে উঠেছিলো। মনে হয়েছিলো এই একজনই আমার অতি আপন।

এসব ভাবছি তখনি কারো ডাকে ধ্যান ভাঙলো আমার।

কিরে অয়ত্রি কি ভাবছিস???কখন থেকে ডাকছি সাড়াই দিচ্ছিন না??চিন্তিত কন্ঠে বললো খালামনি।

আমি কিছু না বলতেই ছোট আব্বু বললো ___ অয়ত্রি মা এত টেনশন করার কিছু নেই।এটা যাস্ট একটা পরিক্ষা এটাকে এত সিরিয়াস ভাবে নিওনা।না হলে পরিক্ষার হলে ধুকতে না ধুতেই সব পড়া মাথা থেকে বেড়িয়ে যাবে।

আমি ছোট আব্বুর কথায় হেসে ফেললাম।আর বললাম___ না ছোট আব্বু আর টেনশন করবোনা।

তো চলো লেট হয়ে যাচ্ছে। বলেই দরজা খুলে বেড়িয়ে গেলেন তিনি।আমি খালামনির কপালে একটা চুমু দিয়ে ভোঁ দৌড়। আমার এহেন কান্ডে উচ্চ স্বরে হেসে উঠলো খালামনি তা আমি শুনতে পেলাম।

পরিক্ষা শেষে অরিন আর আমি একসাথে হল থেকে বেরোলাম।

অরিনের মুখটা চুপসে রয়ে আছে। তার কারণ অবশ্য আমি জানি।

কিরে অরিনোকো তোর কি হয়েছে এভাবে মুখটা গোল টমেটোর মতো করে কেন রেখেছিস???

কিছু না।মুখটা বেঁকিয়ে বললো অরিন।

আচ্ছা চল আইসক্রিম খাবো।পরিক্ষা যেহেতু ভালো হয়েছে সেহেতু তোকে আজ আইসক্রিম ট্রিট দিবো কেমন???মুচকি হেঁসে বললা আমি।

__আচ্ছা চল। বললো অরিন।

আইসক্রিমের ভ্যানের সামনে আসতেই কে যে আমাকে পিছন থেকে ডাক দিলো।আমি পিছন ফিরে তাকাতেই
সেই মানুষটাকে দেখে আমার চোখ দুটো ছলছল হয়ে উঠলো। সাথে অনেক অবাক হয়েছি।বুকে সেই ব্যাথাটা পুনরায় জেগে উঠছে!!!

👉To be continue…

কাঠগোলাপের মোহ পর্ব-০৬

0

#কাঠগোলাপের_মোহে🌼
#মোনামী_শেখ
#part:6

আজ প্রণয় ভাইয়া চলে যাচ্ছেন।ওনি
রাজশাহী মেডিকেল কলেজে সিনিয়র ডক্টর হিসেবে জয়েন করেছেন।প্রণয় ভাইয়া চলে যাচ্ছে এই খবরটা শুনে যে আমি কতটা খুশি হয়েছি তা বলার বাহিরে।

যখনি খালামনি এই খবরটা আমাকে দিয়েছেন।তখনি আমি খুশির জোয়ারে ভাসছিলাম।মুখে প্রকাশ করিনি যে আমি তার যাওয়ায় খুশি।কিন্তু মনে মনে আমার লাড্ডু ফুটছিলো।

ঘরে গিয়ে উরাধুরা ডান্স করেছি।মন খারাপ টাও নিমিষে উধাও হয়ে গিয়েছে।

আজ রাতে তিনি রাজশাহী যাওয়ার পথে রওনা দিবেন। আর আমি এক নতুন ভোরের মুখ দেখবো।আমার জন্য বিষয়টা প্রাণখোলা শান্তির নিশ্বাসের মতো।

এখন বিকেল ৪ঃ৩০ বাজে ছাদে দাড়িয়ে আছি।
আজ বিকেলটা অনেক সুন্দর শান্ত ও নিরবতায় পরিপূর্ণ।তার সাথে সূর্য অস্ত যাওয়ার দৃশ্যটা আরো বেশি রোমাঞ্চকর।বাবুইপাখির ঝাকগুলো মুক্ত আকাশে স্বাধীন ভাবে আপন মনে উড়ে বেড়াচ্ছে।আকাশের দিকে তাকিয়ে এসব দেখছি প্রাণ খুলে নিশ্বাস নিয়ে।

হঠাৎ ইচ্ছে হলো তাই আপন মনে গুনগুনিয়ে একটা গানের সুর তুললাম গলায়_

আমার কল্পনা জুড়ে যে গল্পেরা ছিলো!!
আড়ালে সব লুকোনো!
সেই গল্পেরা সব __রঙিন হলো পলকে!!!
তোমাকে হঠাৎ পেয়ে যেন!!

প্রেম তুমি আসবে এভাবে!!
আবার হারিয়ে যাবে ভাবিনি!!!
আজও আছে সে পথ!!!
শুধু নেই তুমি!!!
বলো কোথায় আছো অভিমানী!!!

আমার কল্পনা জুড়ে যে গল্পেরা ছিলো!!
আড়ালে সব লুকোনো!
সেই গল্পেরা সব __রঙিন হলো পলকে!!!
তোমাকে হঠাৎ পেয়ে যেন!!

অয়ত্রি বাদেও একজন আছে যে তার গানটা মন দিয়ে শুনছে। সে আর কেউ নয় প্রণয়!!!
____________________________________________

ছাদের দরজায় হেলান দিয়ে বুকে হাত গুজে বাঁকা চোখে অয়ত্রিকে দেখছে আর মন দিয়ে গানটা শুনছে।
গানটা কেনো জানিনা প্রণয়ে বুকে গিয়ে বিধছে।কেমন যেন রকমের অদ্ভুত কষ্ট হচ্ছে প্রণয়ের তা সে জানেনা।অপাদত সে এখন তা জানতেও চাইছেনা।

বাতাসে অয়ত্রির কোমর পর্যন্ত ছেয়ে যাওয়া চুল গুলো উড়ছে আপন ছন্দে। মুখে লেগে থাকা মিষ্টি হাসি নিয়ে গানটা গাইছে অয়ত্রি। তা মন দিয়ে পর্যবেক্ষন করছে প্রণয়।

এক কথায় বলতে গেলে সে এখন অয়ত্রিতেই আবদ্ধ।
প্রতিবারি তাকে অয়ত্রির বিভিন্ন রুপ আকর্ষিত করে।
কখনো ভিতু মুখখানা কখনো তার দুষ্টমিগুলো কখনো কান্নামিশ্রিত লাল আভায় ছেয়ে যাওয়া নাক ও গালদুটো। বা কখনো এই উদাসিনী রুপ।সবগুলোতেই ঘায়েল প্রণয়।কিন্তু কেন তা সে জানেনা।
এসব মনে মনে ভাবছে প্রণয়।

🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁

গানটা শেষ হতেই চোখ দুটো খুললাম।এতক্ষণ গানটা খুব মন দিয়ে গেয়েছিলাম আর কল্পনার জগৎ এ ভাসছিলাম।

যে গানটা গাইলাম সেটা তাহসানের কন্ঠে গাওয়া।
আমার প্রিয় গান।

হঠাৎ আমার চোখ গেলো পাশের বিল্ডিংয়ে।সেখানে
আহান তার সাথে আর কয়েকজন মেয়ে ছেলে বসে আছে।তারা কি করছে তা বোঝা যাচ্ছেনা।হয়তো গল্প করছে।কারণ আমাদের বিল্ডিংটা থেকে প্রায় কিছুটা দুরত্ব আছে যার কারণে তাদের দেখা গেলেও তাদের কথাবাত্রা শোনা যায়না।

আমি সরু চোখে আহানের দিকে তাকিয়ে দেখলাম।সে আজ এ্যাশ কালারের একটা টিশার্ট ও আর সেইম কালারের থ্রিকোয়ার্টার পেন্ট। দেখে আরেক দফা ক্রাশ খেলাম।হার্ডবিড জোরে লাফাচ্ছে।অজ্ঞান হওয়ারি শুধু বাকি আছে আমার!!!আজ সেই হ্যাডসাম লাগছে আহানকে। আজ তাকে দেখে কত মেয়ে যে পুনরায় ক্রাশ খাবে তার কোনো হিসাব নেই।

এসব ভাবতে ভাবতে মনে আসলো একটা ইচ্ছে। তাই হাতে থাকা ফোনটা দিয়ে আহানের ছবি তুলতে লাগলাম।

তখনি কেউ ঝড়ের বেগে এসে আমার হাত থেকে ফোনটা কেড়ে নিয়ে দিলো এক আচাড়।শেষ আমার মোবাইলের জাহানডা শেষ। নিচে মোবাইলটার ভাঙ্গা টুকরাগুলো থমকে দেখতে লাগলাম। কিছুক্ষণ পড় মাথা তুলে সেই মানুষটার দিকে তাকাল। সে আর কেউ নয় এলিয়েন প্রণয় ভাইয়া।

লাল লাল চোখ নিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে সাপের মতো ফনা তুলে ফুস ফুস করছে আর আমার দিকে চেয়ে আছে। আমি ভয়ে সিটিয়ে গেলাম।মোবাইল ভাঙার শাস্তি তো দূর কথাই মুখ দিয়ে বেড়োচ্ছে না আমার। আমি শুকনো ধোক গিলছি আর মনে মনে আল্লাহ কে ডাকছি।আজ আমায় এলিয়েন দের মতো আস্ত চিবিয়ে খাবে এই খবিশ প্রণয় ভাইয়া।

কিছুক্ষণ পর মনে সাহস জুগিয়ে প্রণয় ভাইয়াকে বললাম— ভাইয়া আপ–নিই? আর কিছু বলতে পারলাম না।তার আগেই ঠাসসস করে বাম গালে একটা চড় বসিয়ে দিলেন প্রণয় ভাইয়া। আমি গালে হাত বেকুবের মতো তার দিকে তাকিয়ে আছি???

তিনি এবার রেগে হুঙ্কার দিয়ে বললেন— তোর যদি এতই ইচ্ছে নাগরকে দেখার তো যা তো সেই নাগরের বাসা যা!!আমার বাড়ির ছাদে তোর কিসের এত নষ্টামি?? এই জন্যই তোর বাবা মা তোকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে।
তোর মতো নষ্টা চরিত্রহীন মেয়েকে কে নিজের ঘরে রেখে মুখদাড়ি পোড়াতে যাবে??? আমি এখনই গিয়ে মাকে বলছি এই নষ্টা মেয়েকে বাড়ি থেকে বেড় করে দেয়।আমি চাইনা আমাদের এই পাড়ায় নিজের রেপুটেশন নষ্ট করতে।

আমি পুনরায় নতুন করে প্রণয় ভাইয়া বলা কথা গুলো শুনছি আর কেঁদেই যাচ্ছি। কারণ কথাগুলো ডাইরেক্টলি বুকে গিয়ে বিধেছে!!! খুব কষ্ট হচ্ছে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারছিনা। চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে আসছে। একসময় জ্ঞান হারালাম।

রাত ১১টা বাজে____

পিটপিট করে চোখ খুলে নিজেকে রুমে আবিষ্কার করলাম।ঘড়ির কাটায় দেখলাম ১১ বেজে ৩০ মিনিট।
বিছানা থেকে উঠতে নিলেই মাথার ব্যাথা অনুভব করলাম। আবার শুয়ে পড়লাম। মাথাটা কেমন জানি ভার ভার লাগছে।

হঠাৎ বিকেল কার কথা মনে পড়লো। আপনাআপনিই
চোখ দিয়ে ঝড়তে শুরু করলো অঝোর শ্রাবণ।
তখন প্রণয় ভাইয়ার কথাগুলোয় খুব কষ্ট পেয়েছিলাম।যা বলার বাহিরে।নিজেকে আজ নতুন করে অসহায় মনে হচ্ছে।যেখানে নিজের বাবা মা আমাকে কত অপমান করে বাড়ি থেকে বেড় করে দিয়েছে সেই তুলনায় প্রণয় ভাইয়া কথা গুলো কিছুই না। তবুও কষ্ট হয়। সব কষ্ট সয্য করে দিন শেষে মিথ্যা অভিনয়টা করতেই হয়।হেঁসেই অভিনয়টা করি।

এসব ভাবতে ভাবতেই খালমনি আমার আমর রুমে প্রবেশ করলো।

ধীর পায়ে এসে আমার পাশে বসলো।পরম মমতায় হাত বুলিয়ে দিলো মাথায় আর বললো— মা অয়ত্রি এখন ঠিক আছিস তো???

__হ্যাঁ খালামনি এখন একটু বেটার ফিল করছি।কোমল কন্ঠে বললাম।

__ হ্যাঁরে তুই কিভাবে অজ্ঞান হয়ে গেলি???কি হয়েছিলো???প্রণয় তোকে ছাদ থেকে কোলে কেটে নিয়ে এসে তোর রুমে এনেছে।আমি তো অবাকই হয়েছিলাম কলিজাটা ধক করে উঠেছিলো আমার রে মা।ধরা গলায় বললো খালামনি।
___মাথাটা ঘুরছিলো খুব তো হয়তো তাই বললাম খালামনিকে।

___ মা নিজের একটু খেলার রাখ সামনে পরিক্ষা। এইসময় কোনো টেনশন করবিনা।তাহলে পড়ালেখা থেকে মনোযোগ উঠে যাবে।আর মানসিক স্ট্রেজ বেশি হওয়ার ফলে তুই অজ্ঞান হয়ে গেছিস তা আমি ভালো করেই জানি। শক্ত গলায় বললো খালামনি।

___আরে না খালি তুমি যা ভাবছো তা নয়।

___ তোর কি বড় আপার কথা মনে পড়ছে অয়ত্রি???

___না খালামনি তাদের কথা আমার আর মনে পড়েনা।
তুমিই আমার মা আর ছোট আব্বু আমার বাবা এটাই আমার বর্তমান পরিচয়। আর আমি এটা মানি।

___ মারে তুই আমার মেয়ে এটা আমি আর তোর ছোট আব্বু মানে।তোকে খুব ভালোবাসে তোর ছোট আব্বু।
তোকে নিজের মেয়ের স্থান দিয়েছে।আর আমিও তোকে খুব ভালোবাসি মা। তুই কখনো ভাবিসনা তুই একা।তোর কেউ নেই।আর কেউ পাশে না থাকলেও তোর এই খালামনি ও তোর ছোটআব্বু তোর পাশে আছে।

__ হুম খালামনি তা আমি ভালোকরেই জানি।যখন আমার নিজের বাবা মা আমাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিলো তখন তোমার আমার পাশে ছিলো।আমার মাথা তোমাদের আর্শীরবাদের হাত রেখেছিলে। সযত্নে বুকে আগলে রেখে ছিলো।কোনো দিন ও বিন্দু পরিমাণ কষ্ট দাওনি।

___ আসলেই তুই অনেক কষ্ট পেয়েছিস মা। ঐ মানুষ নামের জানোয়ারদের হাত থেকে তুই বেঁচে গেছিস এটাই অনেক।

___হুম।

___ওহ তোকে তো বলাই হয়নি প্রণয় চলে গেছে।তুই ঘুমোচ্ছিলি বলে তোকে আর ডাকিনি।

___ওহ।আচ্ছা।

___তুই বোস।আমি তোর খাবার নিয়ে আসছি।কেমন??
বলেই রুম থেকে চলে গেলো খালা মনি।

___প্রণয় ভাইয়া চলে গিয়েছেন।এটা শুনে মনটা প্রশান্তিতে ছেয়ে গেলো।আর যাই হোক ওই মানুষটাকে আর আমায় ফেস করতে হবেনা।

👉continue 👈

কাঠগোলের মোহে পর্ব-০৫

0

#কাঠগোলের_মোহে🌼
#মোনামী শেখ
#part:____5

আজ এই এলিয়েনটাকে মজা দেখাবো।খালামনির কানে আমার নামে বিষ ঢেলে এখন শান্তিতে ঘুমোচ্ছিস??দ্বারা তোর ঘুমের ১২ টা ৫০ বাজাবো হুহ।

এসব বলতে বলতে নিজের রুমে চলে গেলাম।

বৃষ্টিতে ভিজবার কারণে খালামনি আজ আমায় ইচ্ছে মতো বকেছে।প্রণয় ভাইয়া আমার নামে খালামনিকে বিচার দিয়েছে। বৃষ্টিতে ভিজেছি জন্য। আর খালামনিও আমার কান ধরিয়ে রেখে ইচ্ছে মতো বকেছে।
যার কারণে মাথায় আমার নিভৃত আগুন জ্বলছে।রাগ টাকে সামলানোটা বড় দায় হয়ে পড়েছে।
আমি সহজে যেমন রাগি না।তেমনি রাগলেও সহজে সেই রাগ কমে না।এটাই আমি।তাই ঠিক করেছি আজ প্রণয় ভাইয়াকে জব্দ করবোই।

প্রণয় ভাইয়ার ঘরে একবার উঁকি দিয়ে দেখে এসেছি।
তিনি শান্তির ঘুম ঘুমোচ্ছেন। যেটা দেখে আমার মাথায় আরো একধাপ বেশি রাগ ও জেদের সৃষ্টি হলো।

এখন রাত ১২ঃ৩০ বাজে __ ঘরে পায়চারি করছিলাম আর মনে মনে এসব ভাবছিলাম। হঠাৎ মাথায় একটা জব্বার আইডিয়া এলো।পৈশাচিক হাসি দিলাম।

ড্রেসিংটেবিল থেকে লিপস্টিক ও আইসেডো টা নিলাম।
তারপর আস্তে আস্তে প্রণয় ভাইয়ার রুমের দিকে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালাম।

প্রণয় ভাইয়ার রুমের দরজার সামনে আসতে পা দুটো কাঁপা কাঁপি শুরু করে দিলো। তবুও নিজেকে সামলে দরজাটা হালকা খুলে নিস্বশব্দে রুমে প্রবেশ করলাম।

এবার গুটিগুটি পায়ে প্রণয় ভাইয়ার খাটের কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম। আস্তে করে ফ্লোরে হাটু গেরে বসলাম।

প্রণয় ভাইয়া উপুর হয়ে মুখটা ডান কাত করে শুয়ে আছে। আমি খুব সাবধানে লিপস্টিকের ঢাকনাটা খুলে হাত বাড়িয়ে প্রণয় ভাইয়া ঠোঁটের কাছে ধরলাম।হাতটা থরথর করে কাঁপছে। তবুও থামলাম না। লিপিস্টিকটা আস্তে আস্তে প্রণয় ভাইয়ার ঠোঁটে ছোঁয়াতে লাগলাম।

প্রণয় ভাইয়া হালকা নড়ে উঠলো।তা দেখে আমার আত্মাটা কেঁপে উঠল। যদি জেগে উঠে তাহলে আর আমার রক্ষে নেই। আমি নিশ্চিত!! তাই আস্তে করে প্রণয় ভাইয়ার খাটের তলায় ধুকে পড়লাম। কিছুক্ষণ পড় খাটের তলা থেকে বেড়িয়ে প্রণয় ভাইয়ার দিকে তাকালাম। নাহ তিনি এখনো বেঘোরে ঘুমোচ্ছেন।

এবার আইসেডো টা তার চোখে মুখে দিয়ে দিতে লাগলাম। নির্বিঘ্নে কাজটা সম্পন্ন করলাম।

কাজ শেষে প্রণয় ভাইয়ার দিকে একবার তাকালাম।পেট ফেটে হাসি বেরিয়ে আসতে চাইছে। মুখ টিপে নিজের হাসি থামাতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এরপর ফোনে প্রণয় ভাইয়ার কয়েকটা ছবি তুলেই আমি ভাগালটু।

রুমে এসেই হাসতে শুরু করলাম।হাসতে হাসতে পেট ব্যাথা হওয়ার উপক্রম।সাথে উরাধুরা ডান্স ও করলাম।
মনটা আমার এখন শান্ত অনুভব করছে।আর রাগ নেই।
সব রাগ হাসির ছলে ফুসসস করে হাওয়া হয়ে গেছো!!

জানি সকালে উঠে প্রণয় ভাইয়া লঙ্কাকান্ড বাজিয়ে দেবে।বাট সেটা কালকের ব্যাপার সেহেতু কাল দেখা যাবে। আমি নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়লাম।

সকাল ৮টা আড়মোড়া ভেঙে ঘুম থেকে উঠলাম। পুরো শরীরটা ম্যাজ ম্যাজ করছে।জ্বর আসার সব লক্ষন ধীরে ধীরে প্রকাশ পাচ্ছে আমার শরীরে তা আমি খুব ভালো ভাবেই অনুভব করছি। কাল বৃষ্টিতে ভেজার ফল সরূপ এগুলো ঘটছে।

বিছানা থেকে উঠে ওয়াশরুমে গেলাম।ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে সোজা ব্যালকানিতে গেলাম।
আজ আকাশের বুক জুড়ে সাদা মেঘের ভেলা ভাসছে।
রোদের ঝিলিক এসে পড়ছে সবুজ গাছপালার উপর।ক্ষনে ক্ষনে দমকা হাওয়া এসে নাড়িয়ে যাচ্ছে গাছের পাতাগুলোকে।সাথে আমার এলোমেলো চুল গুলোও বাতাসের সাথে পাল্লা দিয়ে আপন মনে উড়ছে।

খুব করে প্রকৃতির এই দৃশ্য আমি উপভোগ করছি। হঠাৎ নিচ থেকে চিল্লাচিল্লি আওয়াজ আমার কানে এলো।তার তারাহুরো করে নিচে গেলাম।

নিচে গিয়ে দেখলাম। প্রণয় ভাইয়া চিৎকার করছেন আর বলছেন__ কার এতো বড়ো সাহস আমার মুখের এই অবস্থা করছে।এসব থার্ডক্লাস জিনিস আমার মুখে মাখিয়ে জোকার বানিয়ে দিয়েছে।এক্ষনি তাকে আমার সামনে নিয়ে এসো…ফাস্ট।

প্রণয় ভাইয়ার এমন কথায় একটা শুকনো ধোক গিললাম। সকালে উঠে আমার এই ব্যাপারটা মাথাই ছিলোনা।

সামনেই খালামনি কাচুমাচু মুখ নিয়ে প্রণয় ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছেন।ছোট আব্বু মুখ টিপে হাসছেন ক্ষনে ক্ষনে।আর শাপলা ভিত চোখ নিয়ে প্রণয় ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।আর আমি সবার মুখ গুলো পরিদর্শন করছি।

হঠাৎ চোখ পড়লো প্রণয় ভাইয়া দিকে।তিনি রক্তচক্ষু নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে ফোঁস ফোঁস করছে। বুকটা ধক করে উঠলো। সাথে সাথে অটোমেটিকলি আমার হাত পা কাঁপা কাঁপি শুরু করে দিলো।

তুই এসব করেছিস তাইনা অয়ত্রি? রাগি গলায় বললো প্রণয় ভাইয়া।

না না ভাইয়া আমি কেন এসব করতে যাবো বলোতো??
আমার কি খেয়েদেয়ে কাম নেই যে এই কাজ করতে যাবো।ভীত কন্ঠে বললাম আমি।

এই বাড়িতে লিপিস্টিক কে ইউস করে??? মা তুমি কি লিপস্টিক ইউস করো.?

না না বাবা কি বলিস এসব!! আমি এই বয়সে এসে লিপস্টিক ইউস করবো?? বললো খালামনি।

শাপলা তুই কি লিপস্টিক ইউস করিস??

না না ভাইজান।আমি তো এইখানে থাকি ওই না।লিপস্টিক তো আমার বাড়িতে আছে।কাঁপা কাঁপা কন্ঠে জবাব দিলো শাপলা।

এবার প্রণয় ভাইয়া পুনরায় আমার দিকে তাকালো।আর বললো— অয়ত্রি তুই লিপস্টিক ইউস করিস না??

হ্যাঁ হ্যাঁ কিকি কিন্তু__ আর কিছু বলার আগেই প্রণয় ভাইয়া আমার হাতটা শক্ত করে ধরে উপরে নিয়ে যেতে লাগলো। খালামনি ছোট আব্বু শাপলা সবাই আমার দিকে অবাক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে।।

আমি অসহায় ফেস নিয়ে পিছন ফিরে তাদের দেখছি।

প্রনয় ভাইয়া তার রুমে আমাকে নিয়ে গিয়ে ধুকে দরজাটা ঠাসস করে লাগিয়ে আমাকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো।ব্যাথায় কুকিয়ে উঠলাম।পিঠে খুব জোরই ব্যাথা পেয়েছি।

কিন্তু তাতে প্রণয় ভাইয়ার কিছু যায় আসেনা। তিনি এখনো রাগি দৃষ্টিতে আমার দিকে চেয়ে আছেন।

ভাভা ভাইয়া আপনি আমায় এ এ এখানে কেন নিয়ে এলেন আর দরজাটাই বা কেন বন্ধ করলেন।বললাম আমি।

__ সেটা একটু পড়েই বুঝতে পারবি।আমার সাথে ফাজলামো করার ফল তুই হারে হারে টের পাবি। শক্ত গলায় বললো প্রণয় ভাইয়া।

আমি কিছু করিনি ভাইয়া বিশ্বাস করো।আমি তো কাল সারা রাত ঘুমিয়ো ছিলাম।চট করে কথাটা বলে ফেললাম।

তিনি এবার আস্তে আস্তে তার মুখটা আমার মুখের দিকে এগোতে লাগলেন।
২ ইঞ্চি দূরত্ব এখন আমাদের মধ্যে।অদ্ভুত দৃষ্টিতে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে আছেন তিনি।

এবার স্লো বয়েসে বললেন— কি বললি আরেক বার বল।

আমি ধোক গিলো বললাম— ভাইয়া এই শেষ বারের মতো ক্ষমা করে দাও প্লিজ।আমি জিবনেও আর এমন জঘণ্য কাজ করবোনা।প্লিজ কাঁদো কাঁদো ফেস নিয়ে বললাম আমি!!!

সব ভুলের ক্ষমা হয়না।আমি! এই প্রণয় প্রহসন নিজের অপমান কখনো সয্য করেনা।বললেন তিনি।

কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থেকে আচমকাই আমার ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে দিলো প্রণয় ভাইয়া।আমি কেঁপে উঠলাম। বাকরূদ্ধ হয়ে রইলাম।

কিছু বুঝে উঠার আগেই তিনি👇

জোরে জোড়ে আমার ঘাড়ে কামড়াতে লাগলো প্রণয় ভাইয়া।আমি ব্যাথার চোটে কেঁদেই দিলাম। প্রণয় ভাইয়াকে নিজের থেকে ছাড়ানোর জন্য অনবরত তার পিটে কিল ঘুসি মেরেই চলেছি কিন্তু সে কিছুতেই আমাকে ছাড়ছে।

এদিকে আমার জান যায় যায় অবস্থা।ঠোঁট চেপে সহ্য করছি প্রণয় ভাইয় এমন নৃশংস অত্যাচারে আমার চোখে বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে অশ্রু যা ব্যাথার বহিপ্রকাশ ঘটাচ্ছে।

২ মিনিট পড় প্রণয় ভাইয়া ছাড়লো আমায়।আমার শরীর নিস্তেজ হয়ে পড়ছে। মাথাটা প্রচন্ড ব্যাথা করছে।
ব্যাথার চোটে পুরো দুনিয়াটা কেমন জানি বিষাদময় লাগছে।ঘারে কামড়ানো অংশ গুলো জ্বালা পোড়া করছে।

প্রণয় ভাইয়া ডোন্টকেয়ার ভাব নিয়ে সোফায় বসে আছে। আমি ঘৃণার দৃষ্টিতে তার দিকে চেয়ে আছি।

আর একমুহূর্তে আমি আর তার রুমে থাকলাম না দৌড়ে নিজের রুমে গিয়ে ঠাসসস করে দরজা লাগিয়ে বিছানায় ঝাঁপিয়ে পড়ে কাঁদতে লাগলাম।

আজ নিজেকে খুব করে একা লাগছে। মনে পড়ছে বাবা মায়ের কথা।তারাও তো আমাকে অবহেলায় আলগোছে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিলো। একটুও দয়ামায়া সেদিন তাদের চোখে মুখে দেখিনি আমি।বরং শুধু হিংস্রতা দেখেছিলাম।

অতিত পুনরায় আমায় মস্তিষ্কে কালবৈশাখী ঝড় তুলছে।অতিতের কথা মনে পড়লেই নিজেকে আর সামলে রাখতে পারিনা। ওই দূর্বিষহ কষ্টময় অতিত এখনো আমার হৃদয়কে জ্বালিয়ে পুরিয়ে খাক করে দেয়।
কষ্টের একখন্ড কালো মেঘ এখনো আমার হৃদয়ের আকাশে ভেসে বেড়ায়। বাবা মায়ের অভাবটা খালামনি আর ছোট আব্বু পুষিয়ে দিয়েছে তাদের ভালোবাসা দিয়ে। কিন্তু তবুও বাবা মায়ের কথা খুব মনে পড়ে।

আমি আসলেই অভাগী।ভাগ্যটাও আমার সহায় নয়।বাবা মা ভাই বোনের ভালোবাসাটা আমার ভাগ্যে ছিলোনা!!!

বাহির থেকে নিজেকে খুব হাসি খুশি স্বাভাবিক দেখাই।
কিন্তু ভিতরের অবস্থা আমার আল্লাহ আর একমাএ আমি জানি। আর কেউ জানেনা।

👉continue👈 💯