Friday, July 11, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1398



কাঠগোলাপের মোহে পর্ব-০৪

0

#কাঠগোলাপের মোহে🌼
#মোনামী শেখ
#part:____4

এই ইডিয়েট মেয়ে সবসময় পাকামি ছাড়া আর কিছুই পারোনা তাইনা।সামান্য কমন সেন্সটুকুও নেই। স্টুপিড
বলেই আমার দিকে এগোতে লাগলো প্রণয় ভাইয়া।
যা দেখে পুনরায় আত্মাটা কেঁপে উঠল আমার।ইশ এখন নিজের বোকামির জন্য এখন নিজেই পস্তাচ্ছি!!

এইরে আজ আর তোর রোক্ষে নেই অয়ত্রি।আজ এই এলিয়েনটা তোকে খেয়েই ফেলবে।তোর সব রক্ত চুষে খাবে।প্রণয় ভাইয়ার চোখ দেখেই তা বুঝতে পারছি!!আল্লাহ বাঁচাও আমায়। মনে মনে বলছি।

কিছুটা কাছে আসতেই ভয়ে চোখ দুটো বন্ধ করে নিলাম।ভয়ে একদম সিটিয়ে গেছি যাকে বলে।এই বুঝি ঠাসসস করে গালে একটা চড় বসিয়ে দেয়!!!

প্রণয় ভাইয়া আমার অনেকটা কাছেই এসেছে তা আমি তার পারফিউম এর ঘ্রাণে বুঝতে পেরেছি।প্রণয় ভাইয়া যে পারফিউমটা ইউস করে সেটা আমার খুব পছন্দের একটা পারফিউম।

কিছুক্ষণ কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে পিটপিট করে চোখ খুললাম।চোখ খুলে প্রণয় ভাইয়ার দিকে তাকালাম।তিনি আমার দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে চেয়ে আছে।তার চাহনিতে আমার কেমন জানি অসস্থি হচ্ছে।তাই একটু কাশির অভিনয় করে নড়েচড়ে বসলাম। আমার কাশির শব্দে ঘোর কাটলো প্রণয় ভাইয়ার। তিনি আবারো

আমার দিকে একটু এগিয়ে এলেন যা দেখে আবারো আত্তাটা লাফিয়ে দিয়ে।মনে হয় এবার সেই কাঙ্ক্ষিত সময় এসে গেছে।এবার নিশ্চিত আমার গালে দু-তিনটে চড় পরবেই।কিন্তু আমার ধারণা ভুল প্রামাণিত করে আমার সিটের পাশে থাকা সিটবেল্ট লাগিয়ে দিলো।তার নিজের জায়গায় গিয়ে ড্রাইভ করতে শুরু করলো।

ক্ষনে ক্ষনে আমাকে অবাক করে দিচ্ছে এই প্রণয় ভাইয়া।তার এসব আচরণে খুবই হতবাক আমি।আগেরকার প্রণয় ভাইয়া আর এখনকার প্রণয় ভাইয়ার চরিত্রের মধ্যে অনেক পার্থক্য খুঁজে পাচ্ছি। মনে মনে এসব ভাবছি আমি।

কিছুক্ষণ আগের ঘটনা–

কোচিং শেষএ গেটের সামনে আসতেই প্রণয় ভাইয়ার গাড়িটা দেখতে পাই।আর অবাকও হই অনেক।কারণ প্রণয় ভাইয়া যে আমাকে নিতে এসেছে!!

এই এলিয়েনটা দেখি সারাক্ষণ আমায় পিছু নিতে থাকে।আর বেশ প্যারাও দেয়।আর পারছিনা বাবাহ।এর জ্বালায় জিবনটা অংরা ছাই হয়ে যাচ্ছে। কোথায় এখন লাইফটা ইনজয় করবো।তা না এখন এলিয়েন এর জন্য লাইফটাই টানাটানি পড়ে গেছে।এসব ভাবতে ভাবতে গাড়ির সামনে গিয়ে দাড়ালাম।

আমায় দেখে গাড়িতে বসতে বললো প্রণয় ভাইয়া।
গাড়িতে উঠে বসলাম।গাড়িতে বসেই ব্যাগ থেকে ফোনটা বের করলাম।

গাড়ি স্টাডি দিতেই সামনে দিকে হঠাৎ ঝুকে পড়লাম।মাথায় একটু ব্যাথাও পেয়েছি।কপালে হাত রেখে ঠোঁট কামড়ে মাথা তুলে প্রণয় ভাইয়ার দিকে চোখ গেলো আমার।

তার পরেরটা তো আপনারা জানেন ওই!!

একটু আগে বৃষ্টি হয়েছে যার ফলে পুরো প্রকৃতির রুপ আরো দ্বিগুন বাড়িয়ে দিয়েছে।গাছের পাতাগুলো চকচকে সবুজ হয়ে গেছে।বৃষ্টি হওয়ার পর আবহাওয়া খুব পরিষ্কার হয়ে গেছে।কিন্তু এখনো কালো মেঘের ভেলা ভাসছে আকাশের বুক জুড়ে।

গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরের দৃশ্য দেখছি।চুলগুলো অবাধ্য হয়ে বাতাসের সাথে পাল্লা দিয়ে উড়ছে।মুখের সামনে আসা ছোট ছোট চুলগুলো গুলো খুব বিরক্ত করছে আমায়।তাই একরাশ বিরক্তি নিয়ে বারবার কানের পিঠে গুজে দিচ্ছি চুলগুলো। ইশ খুব ইচ্ছে করছে বাইরে গিয়ে ছুটে বেড়াতে।এইরকম একটা পরিবেশে আপনাআপনিই মনটা শান্তিতে ছেঁয়ে যায়। খুব বৃষ্টিতে ভিজতে খুব ইচ্ছে করছে।

বৃষ্টি আমার অন্যতম দূর্বলতা।
এইসময় বাড়িতে থাকলে বৃষ্টিতে ভিজতাম।বৃষ্টিতে ভিজলে আমার জ্বর আসবেই।কিন্তু তবুও বৃষ্টিতে ভিজবোই।এর জন্য খালামনি কতবার আমায় কান ধরিয়ে একপায়ে দাঁড় করিয়ে রেখেছিলো তার কোনো হিসাব নেই!! এখন তো এই এলিয়েনটার জন্যও বৃষ্টিতে ভিজতে পারবোনা।কিন্তু তবুও চেষ্টা করবো।

এসব ভাবতে ভাবতেই বাড়িতে পৌঁছে গেলাম। প্রণয় ভাইয়াকে রেখেই দৌড়ে বাড়িতে ধুকে পড়লাম।
ডাইনিংরুমে খালামনিকে দেখে সালাম দিয়ে টুকটাক কথা বলে ঘরে চলে গেলাম।

ঘরে ঢুকেই ওয়াশরুম ডুকে পড়লাম।ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বেড়োতেই দরজার সামনে পুষিকে দেখতে পড়লাম। হাটু গেরে পুষিকে কোলে নিলাম।বেচারি হয়তো আমায় খুব মিস করেছে।এতক্ষন হয়তো সারাঘর দাফিয়ে বেড়িয়েছে। আমাকে দেখতে না পেয়ে।

পুষিকে কিছুক্ষণ আদর করে রুমে রেখে নিচে গেলাম।
খুব খিদে পেয়েছে। তাই আর দেরি না করে নিচে গেলাম। নিচে গিয়ে ডাইনিং এ প্রণয় ভাইয়াকে দেখতে পেলাম।চেয়ারে বসে ফোন টিপছে আর আপেল খাচ্ছে
আমি ওসব তোয়াক্কা না করে।চেয়ার টেনে খেতে বসলাম।প্রণয় ভাইয়া আমাকে আড়চোখে একবার দেখে আবার নিজের কাজে মন দিলো। আমি খাওয়া শেষ করে উপরে গেলাম।

__ঘরে গিয়ে বিছানায় সটান দিয়ে শুয়ে পড়লাম। বালিশের নিচ থেকে ফোনটা বের করে ফেসবুকে লগইন করলাম।লগইন করার সাথে সাথে আহানের পিক দেখতে পেলাম। পিকটা দেখেই আবার বড়সর একটা ক্রাশ খেলাম।আকাশি কালার পাঞ্জাবিতে আহানকে অপরূপ লাগছে।ঠোঁটের কোণে ঝুলে থাকা মিষ্টি হাসিটা হৃদয়ে কম্পন তুলে দেয় আমার। সেটা যে কেন তা আমি জানিনা!!!

আহানকে জাস্ট আমার ভালো লাগে।আমি সেই ভালোলাগাটাকে ভালোলাগা হিসেবেই ধরে রেখেছি।তার বেশি তাকে নিয়ে কিছুই ভাবিনা আমি। তার সাথে আমার দুএকদিন ওই দেখা হয়েছে।তার বেশি হয়নি।
যেহেতু আহান একজন প্রফেশনাল মডেল তাই সে বাড়িতে খুব কমই থাকে।ঢাকার বাইরে বেশির ভাগ থাকেন।

আজও আহানের প্রোফাইলে ঘুরে এলাম।তার সব পিক গুলোই ফাস্ট ওয়াও।মেয়েরা তো কমেন্ট বক্স এসে হুরাহুরি শুরু করে দেয়। বাট আমি তার পিক শুধু একটা কমেন্ট ওই করি।তা হলো নাইচ এ ছাড়া কোনো কমেন্ট ওই আমি করিনা বা করতেও চাইনা। কারণ মানুষ আমাকে ছ্যাছড়া ভাবুক তা আমি চাইনা।

ফেসবুকে ভিডিও গান দেখছিলাম শুয়ে শুয়ে তখনি মনে পড়লো কোচিং এর দেওয়া হোমওয়ার্ক এখনো বাকি তাই পড়তে বসলাম।

প্রায় ৪ টায় পড়ার টেবিল থেকে উঠলাম। কোমরটা ব্যাথা করছে।আমি আবার বেশিক্ষণ বসে থাকতে পারিনা। তাই ব্যালকানিতে গেলাম।

আকাশটা অনেক মেঘ করেছে।কিছুক্ষণের মধ্যই বৃষ্টি শুরু হবে মনে হয়। বিকেল চারটা বাজে বাট বাইরের দৃশ্য দেখে মনে হচ্ছে সন্ধ্যা ৬ টা বাজে।

ব্যালকানিতে দাঁড়িয়ে বাইরের মোহনীয় সৌন্দর্য উপভোগ করছিলাম।

হঠাৎ করে ঝুম বৃষ্টি নামলো আকাশের বুক চিরে।সাথে সাথে আমার মনটাও নেচে উঠলো।বৃষ্টি দেখে নিজেকে সামলাতে পারছিনা।মনটা আকুপাকু করছে বৃষ্টির পানিতে নিজেকে ভাসিয়ে দিতে। কিন্তু সমস্যা একটাই সেটা হলো প্রণয় ভাইয়া সে যদি দেখে নেয় আমি এই অবেলায় বৃষ্টিতে ভিজছি তাহলে মাথায় তুলে আছার মারবে।কিন্তু এই বৃষ্টি দেখে নিজেকে আমি কোনো মতেই আটকাতে পারবোনা। তাই চুপ করে ছাদে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালাম।

ছাদের দরজাটা খুলেই লাফিয়ে ছাদে উঠলাম।আশে পাশের বাড়ির ছাদ গুলো দেখে নিলাম কেউ আছে কিনা।নাহ কেউ নেই আপাদত। তাই মনের সুখে দু হাত মেলে বৃষ্টিতে ভিজতে লাগলাম।ইশ কি যে ভালো লাগছে তা বলে বোঝাতে পারবো না।

বৃষ্টির ফোঁটা গুলো ছুয়ে দিচ্ছে আমার মুখ চোখ তার সাথে অশান্ত চঞ্চল হৃদয়টাকেও।

হঠাৎ পিছনে কারো অস্তিত্ব টের পেলাম।কেউ মনে হয় আমার পিছনে দাড়িয়ে আছে। এটা ভাবতেই একটা শুকনো ধোক গিললাম। আস্তে আস্তে পিছনে ঘুরলাম।
পিছন ঘুরতেই প্রণয় ভাইয়াকে দেখতে পেলাম।
তিনি আমার দিকে কেমন যেন অদ্ভুদ চোখে তাকিয়ে আছেন।তার চোখে কৌতুহল ও দেখতে পেলাম বাট সেটা কি জন্য সেটা জানিনা।

হঠাৎ চোখ পড়ল প্রণয় ভাইয়ার ঠোঁটের দিকে।হালকা গোলাপি ঠোঁট গুলোকে বৃষ্টির পানি ছুঁইয়ে দিচ্ছে।হালকা হালকা থেমে ঠোঁট জোড়া কেঁপে উঠছে।চোখের পাতাগুলো পাখির মতোন ডানা ঝাপটাচ্ছে ক্ষনে ক্ষনে।যা আমার হৃদয়ে এক আলাদা অনুভূতির সৃষ্টি করছে।

প্রণয় চেয়ে আছে অয়ত্রির দিকে।বৃষ্টির ফোটা ফোটা বিন্দু বিন্দু মুক্তর ন্যায় পানি গুলো অয়ত্রির কপাল বেয়ে চোখ স্পর্ষ করছে।চোখ থেকে পানি গুলো গোলাপি ঠোঁট জোড়া ছুইয়ে দিচ্ছে অচিরেই। কি ভয়ঙ্কর অপরূপ লাগছে মেয়েটাকে। প্রণয় হার্ডবিড লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে চলছে। কখন যানিনা সে হার্ডফেল করে বসে।

হঠাৎ বজ্রাআঘাতে চমকে গিয়ে প্রণয়কে জড়িয়ে ধরলাম।কেঁপে উঠলো প্রণয় ভাইয়া।
বিদ্যুতচমকানো তে খুব ভয় পাই আমি।এটা আমার অন্যতম শত্রু নিরর্ধায় তা বলতে পারি।

এখনো প্রণয়কে ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরে ভয়ে কেঁপে যাচ্ছি। প্রণয়ের ভাইয়ার হুশ থাকায় তিনি আমাকে নিজের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দিলো।

সেই মহূর্তে আমার কোনো হুশ ছিলোনা।যখন হুশ এলো___

ইশ ছিছিছি এটা আমি কি করলাম।আমি কিনা প্রণয় ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরলাম। না জানি তিনি আমাকে কি ভাবছেন।আসলে তুই একটা বুদ্ধু অয়ত্রি।জ্বিভের কোণে কামড়ে মনে মনে বললাম কথা গুলো।

কিরে এই অসময় বৃষ্টিতে ভিজছিস কেন???কাঠ কাঠ কন্ঠে বললো প্রণয় ভাইয়া।

আআ আসলে ভাইয়া ছাদে কাপড় চোপড় তুলতে এসে ভিভি ভিজে গেছি।তোতলাতে তোতলাতে বললাম।

প্রণয় ভাইয়া আর কিছুনা বলে আমার হাত ধরে ছাদ থেকে নামতে লাগলেন।আর এদিকে আমার ভয়ে প্রাণ যায় যায় অবস্থা। যদি খালামনি জানতে পারে আমি বৃষ্টিতে ভিজেছি তাহলে তো আমার রক্ষে থাকবেনা।কিন্তু তার আগে প্রণয় ভাইয়ার হাত থেকে আমার বাঁচতে হবে!!!

👉continue 👈💯

কাঠগোলাপের মোহে পর্ব-০৩

0

#কাঠগোলাপের মোহে🌼
#মোনামী শেখ
#part:___3

আজ দুইদিন ধরে প্রণয় ভাইয়ার ছায়াটাও পেরোইনা আমি!! আর আপদত দেখতেও চাইছিনা। সেদিনের ঘটনার পর থেকে ২ দিন রুম থেকে বেরোয়নি আমি!

সেদিন প্রণয় ভাইয়ার আচরণ খুবকরে বিভ্রতো করেছিলো আমায়।

কারণ সেদিন প্রায় ৫ মিনিটের মতো তার বুকের সাথে আমায় চেপে ধরে ছিলেন।আমার এমন মনে হচ্ছিল যে ওনি আমায় ছেড়ে দিলে হয়তো আমি কোথায় পালিয়ে যাবো। আমি এই ৫ মিনিটে প্রণয় ভাইয়ার থেকে নিজেকে ছাড়ানোর অনেক চেষ্টা করেছি।কিন্তু সফল হয়নি। তার জিম করা বডির শক্তির সাথে পেরে উঠিনি আমি।

সামনে আমার h s c exam তাই এমনিতেও আমি বাইরে বেড়োনো আড্ডা দেয়া কমিয়ে দিয়েছি।ছোট আব্বুর কড়া নিষেধাজ্ঞা পরিক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত বাড়িথেকে বেরোতে পারবোনা প্রয়োজন ছাড়া। এদুদিন খালামনি বা শাপলা এসে খাবার দিয়ে গেছে।আর রাত করে ছোট আব্বু আমার রুমে এসে কথাবার্তা বলে গেছে। তিনি সারাদিন প্রায় অফিসেই কাটায় শুধু শুক্রবার বাদে।তাই রাত করেই সময় পায় সবার সাথে গল্পগুজব করার।

ভোর ৬টা বাজে_____
ব্যালকানির গিরিল দুহাতে মুঠোবন্দি করে বাইরে তাকিয়ে মনে মনে ভাবছিলাম কথাগুলো।তখনি পিছন থেকে পুষির ম্যাও ম্যাও ডাক শুনতে পাই।

আমি পিছন ঘুরে পুষিকে কোলে তুলে নিলাম। পুষি মুখটা কেমন যানি করে রেখেছো। হয়তো রুম থেকে বেরোতে বা বেড়াতে নিয়ে যাইনা বলে এমন করছে।
এদুদিন আমিও বেড়োইনি আর পুষিকে না বেরোতে দিয়েছি

পুষির মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে চোখ পড়লো কাঠগোলাপের গাছটার দিকে।খুশি মনে এগিয়ে গেলাম তার কাছে। আজও ৩টা ফুল ফুটেছে। তা দেখে হৃদয়টা প্রশান্তিতে ছেয়ে গেলো।

পুষির মাথা থেকে হাত সরিয়ে সদ্যফোঁটা কাঠগোলাপের পাপড়ি গুলো ছুঁয়ে ছুয়ে দেখলাম। মাথাটা নিচু করে পাপড়ি গুলোতে নাক ডুবিয়ে দিলাম।
কাঠগোলাপের ঘ্রান আমার তার নেশায় আসক্ত করে বরংবার।প্রায় একমিনিট ধরে পাপড়ির উপর থেকে মাথা তুলে পুষিকে ব্যালকানিতে রেখে রুমে ডুকলাম।

রুমে ডুকেই দরজার সামনে কাউকে দেখে চরম অবাক হলাম আমি।অটোমেটেকলি আমার চোখদুটো বড় বড় রসগোল্লার মতো হয়ে গিয়েছে।

দরজার হেলান দিয়ে বুকে হাত গুজে আমার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে প্রণয় ভাইয়া।

আমি অবাক এইজন্যই যে__ যে প্রণয় ভাইয়া এই দু-মাসে আমার রুমে আসা তো দূরের কথা তার ডান পা টা পর্যন্ত এগোইনি!!! সে আজ আমার রুমে!!! ভাবা যায় বিষয়টা!!??

__কিরে এভাবে ভূত দেখার মতো চমকে উঠলি কেন??
প্রণয় ভাইয়ার কথায় ভাবনার জগৎ থেকে বেড়িয়ে চমকে উঠলাম আমি।

__ভূত ওই তো দেখছি আজ চোখের সামনে বলেই দুহাতে মুখ চেপে ধরেলাম আমি। একি বলে ফেললাম আমি!!!

প্রণয় ভাইয়া আমার কথা কোনো রিজেক্ট করলেন না কিন্তু আস্তে আস্তে একপা একপা করে আমার দিকে এগোতে লাগলেন!! যা দেখে আমার আত্মাটা লাফিয়ে উঠলো।

এইরে আজ আবার এলিয়েন টার সামনে ভুলভাল বকে ফেললি।আজ তোকে মাথায় নিয়ে আচার মারবে দেখিস।মনে মনে বললাম।

ভাইয়ার এগোনো দেখে আমিও একপা একপা করে পেছোতে লাগলাম। একসময় দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলো আমার!!!

৩ ইঞ্চি দূরত্ব আমার আর প্রণয় ভাইয়ার। তিনি এবার ঠোঁট কামড়ে অদ্ভুত চোখে তাকালেন আমার দিকে!!

আমি তার মতলবটা বুঝার চেষ্টা করছি কিন্তু আমি ব্যার্থ…

এবার প্রণয় ভাইয়া আরো একপা এগোলেন তা দেখে একটা শুকনো ধোক গিললাম আমি।

এরপর কিছুটা ঝুকে আমার মুখে সামনে আসতে লাগলেই ভয়ে চোখদুটো বন্ধ করে ফেললাম আমি।
হঠাৎ ভাইয়ার স্পর্শ পেয়ে কেঁপে উঠলাম।

মুখের সামনে আসা ছোট ছোট চুলগুলো গুলো কানের পিঠে গুঁজে দিলেন প্রণয় ভাইয়া।যদিও আমার চোখ বন্ধ তবুও আমি এটা অনুভব কারতে পারছি।

কিছুক্ষণ পর আর কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে পিটপিট করে চোখ খুললাম।

প্রণয় ভাইয়া আমার দিকে একদৃষ্টিতে চেয়ে আছে।কেন জানিনা বুকটা ধক করে উঠলো আমার।

আমি এবার ভাইয়াকে বললাম— ভাইয়া আপনি কি জন্য এখানে এসেছেন বলবেন প্লিজ?? আমার পড়ালেখা আছে।

ভাইয়া কিছুক্ষণ পর জবাব দিলো— রেডি হয়ে নিচে আয়।কোচিংয়ে যাবি।বলেই হন হন করে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো।
তা দেখে হাফ ছেড়ে বাঁচলাম আমি!!!

ওফফফ এই এলিয়েনটার জন্য কোথাও শান্তি নেই।
যেখানেই যাই সেখানেই প্যারা দেয় এই লোক।
কি অদ্ভূত চাহনি লোকটার!!! গিরগিটির মতো রং পাল্টায় লোকটা। সেদিনের পর থেকে তাকে অন্যরুম দেখছি যা আমার কল্পানারো বাইরে!!

এই দুই মাসে প্রয়োজন ছাড়া আমার সাথে একটা কথাও বলেনি প্রণয় ভাইয়া। কিন্তু ডেভিলদের মতো অত্যাচার করতে ঠিকেই পেরেছে।তাও ওই পুষির জন্য।
বা অহেতুক কথা বলার জন্য!!! তার কাছে নাকি আমার সব কথাই অহেতুক। কখনো বা অসাবধানতার কারণে তার প্রিয় পারফিউম বা ল্যাপটপ টা ভাঙ্গার কারণে।

এসব বকতে বকতে চোখ পড়লো দেয়ালে ঘরটির কাটার উপর… ৭ টা ৩০ বাজে। তাই বকবকানি বন্ধ করে ওয়াশরুমে ঢুকলাম আমি।

______________________________________________

এদিকে প্রণয় রুমে পায়চারি করছে আর ভাবছে— সে কেন এভাবে হুট করে অয়ত্রির রুমে গেলো!! আর অয়ত্রিকে দেখলেই বা নিজের মধ্যে থাকেনা কেন সে!
কয়েকদিন ধরে নিজের আচরণে নিজেই অবাক সে!

সেদির রাতের আর আজকের ঘটনাটা খুব বেশি করে ভাবাচ্ছে প্রণয়কে। কিন্তু কোনো উওর ওই খুঁজে পাচ্ছেনা সে।

এসবে ভাবতে ভাবতেই পকেটে রাখা ফোনটা বেজে উঠলো প্রণয়ের।তাই পকেট থেকে ফোনটা বের করে কল রিসিভ করে কানে ধরলো।কিছুক্ষণ পর ওকে বলেই ফোন কেটে দিলো প্রণয়।ওপাশ থেকে কি বললো তা শোনা গেলো না।

ড্রেসিং টেবিল থেকে ঘরিটা নিয়ে পড়তে পড়তে নিচে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো প্রণয়।

ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে ড্রেসিংটেবিলের সামনে দাড়ালাম।

আজ ব্লু কালারে লং টপস সাথে ব্লাক জিন্স।গলায় কালো কালারের স্কার্ফ ঝোলানো।

চুলগুলো ফ্যানের বাতাসে হালকা শুকিয়ে ঝুটি করে নিলাম। মুখে পন্ডস স্নো মেখে নিলাম। চোখে কাজল আর ঠোঁটে লিববাম দিয়ে আয়নার আরেকবার নিজেকে চেক করে টেবিলের উপর থেকে ব্যাগটা কাঁধে নিয়ে ঘড়ি পড়তে পড়তে নিচে গেলাম।

নিচে গিয়ে দেখলাম ছোটআব্বু খালামনি প্রণয় ভাইয়া বসে আছে।তবে প্রণয় ভাইয়া শুধু বসে নেই।তিনি গিলতে ব্যাস্ত।আর খালা মনি আর ছোটআব্বু আমার অপেক্ষায় এখনো বসে আছে তা আমি ভালোকরেই জানি।

সবাইকে সালাম দিয়ে চেয়ার টেন খালামনির পাশে বসে পড়লাম।

তখনি ছোট আব্বু বলে উঠলেন— মাই লিটল প্রিন্সেস কেমন আছো??

আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি ছোট আব্বু।তুমি?? হেসে বললাম ছোট আব্বুকে।

ভেরি গুড। তোমার আইসিটি সাবজেক্টের জন্য একাটা কোচিং ঠিক করেছি।এই দুইমাসে তোমায় দুইবার আইসিটি সাবজেক্ট রিভেজ দেয়া লাগবে।কথা গুলো বললো ছোট আব্বু।

ছোট আব্বুর কথা শুনেই মাথাটা ঘুরে গেল। যে আইসিটি বই আমার চরম ও দ্বিতীয় নম্বর শত্রু। সেই শত্রুকেই আমার পিছনে এলিয়ে দিলো ছোট আব্বু।
আইসিটি বইটা পড়তে একদম বিরক্ত লাগে আমার।
কিন্তু কিছু করার নাই।ছোট আব্বুর মুখের উপর কথা বলার সাহস নেই আমার। তাই মলিন হেঁসে বললাম—

হুম ঠিক করেছো ছোটআব্বু। আসলে আইসিটি বইটা আরেক বার রিভেজ দিলো ভালোই হবে।

আমার কথা শুনে প্রণয় ভাইয়া খাওয়া ছেরে মাথা তুলে আমার দিকে একবার তাকিয়ে চোখ নামিয়ে পুনরায় আবার খাওয়ায় মন দিলো।

খালামনিও আমার কথায় মুচকি হাসি দিলো।

ছোটআব্বু হেসে বললেন — হুম এবার কিন্তু তোমাকে খুব ভালো রেজাল্ট করে ঢাকা ভার্সিটিতে চান্স পেতে হবে।

আমি মুচকি হেসে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ালাম।

তোকে আজ প্রণয় কোচিং-এ দিয়ে আসবে বললো খালা মনি।

আমি খালা মনির কথায় বাইরে থেকে কোনো রিয়াকশন দেখালাম না। কিন্তু আমার ভিতরটা জ্বলে পুড়ে খাক হবার অবস্থা।

এনমিতেই আইসিটি নামের শত্রু পিছন ধরেছে এবার এই এলিয়েনটাও এখন আমার পিছু নেবে।

খাওয়া দাওয়া শেষ এ খালামনিকে বিদায় দিয়ে প্রণয় ভাইয়ার গাড়িতে উঠলাম। প্রণয় ভাইয়ার উপর চোখ পড়তেই মুখ দিয়ে অটমেটিকলি বেড়িয়ে এলো ওয়াও।কারণ আজ প্রণয় ভাইয়াকে মাত্রাত্বিক হ্যান্ডসাম লাগছে।

কালো টি শার্ট কালো জিন্স, কালো সানগ্লাস চুল গুলো স্পাইক করা সাথে তো আছে ওনার মুডে ভরা এটিউড। পরাই মিস্টার মেসিং লাগছে আজ তাকে।
কালো টিশার্টে তাকে পুরাই হিরো হিরো লাগছে। আমি ভাবছি আজ কতজন মেয়ে তার উপর ক্রাশ খেতে
পারে!!!

অবশ্য আমার প্রথম ক্রাশ কিন্তু প্রণয় ভাইয়া।প্রথম যেদিন দেখেছিলাম সেদিন খুব বড়সরো একধরণের ক্রাশ খাইছিলাম। বাট আস্তে আস্তে সেই ক্রাশ আমার বাশ হয়ে উঠলো।

👉★★★continue★★★ 👈

কাঠগোলাপের মোহে পর্ব-০২

0

#কাঠগোলাপের মোহে🌼
#মোনামী শেখ
#part:2

— তোকে কি ছাদে ছেলেদের উঁকিঝুঁকি দিয়ে দেখার জন্য এ বাড়িতে রাখা হয়েছে??পকেটে দুইহাত গুজে রেগে চোয়াল শক্ত করে কথাটা বললো প্রণয় ভাইয়া!!!

বিকেল ৫ টা…
ছাদের কর্ণিশ ঘেষে দাড়িয়ে পাশের বিল্ডিংএ আমার ২ নম্বর ক্রাশ কে একটা নজর দেখার চেষ্টা করছিলাম।
কিন্তু তখনই পিছনে কারো অস্তিত্ব টের পাই।তখন আর আমার বুঝতে বাকি রইলো না যে কে আমার পিছনে দাড়িয়ে আছে।

পিছনে আমার জম প্রণয় ভাইয়া দাড়িয়ে আছে। আমি আস্তে আস্তে প্রণয় ভাইয়ার দিকে ঘুরলাম। তখনি এই কথাটা বললো আমায় প্রণয় ভাইয়া।

আমার কলিজাটা মোচর দিয়ে উঠলো।হৃৎস্পন্দন থেমে থেমে কাজ করছিলো।প্রণয় ভাইয়ার এহেন রুপ দেখে।এখন শান্তদৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আমার উপরের অপেক্ষা করছেন তিনি!!!বুঝতে পারছি ঝড় আসার পূবাভাস দিচ্ছেন তিনি।

এসব মনে মনে ভাবতে না ভাবতেই আবার প্রণয় ভাইয়া বলে উঠলেন–কিরে ওই রকম করে কি দেখছিস আমায়??তোর নাগরের সাথে আমায় মেলানোর চেষ্টা করছিস নাকি???

আমি এবার কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে উঠলাম– ভা ভা ভাইয়া আসলে তুতু তুমি যা ভাবছো ঠিক তাতা তা নয়।
আমি তো ঐ খানে একটা আজব এলিয়েন কে দেখছিলাম।

আমার কথা মাথামুন্ডু না বুঝতে পেরে প্রণয় ভাইয়া আমাকে জোরে একটা ধমক দিয়ে বললো–ফাজলামো করিস আমার সাথে??

আমি উত্তেজনায় কি বলেছি তা বুঝতে পারার সাথ সাথ জ্বিভের আগালে দিলাম এক কামড়। ব্যাস ব্যাথায় আবার চিল্লিয়ে উঠলাম।

আমার চিল্লানো দেখে প্রণয় ভাইয়া কিছুনা বলেই হনহন করে ছাদ থেকে নেমে গেলেন।

ভাইয়ার এহেন কান্ড চরম অবাক হলাম আমি!!!

কি হলো এই এলিয়েনটার আবার ?!কিছুনা বলেই চলে গেলো?? এতক্ষণে হয়তো আমার পিন্ডচটকানো শেষ করতো।কিন্তু তা না করে চলে গেল কেনো??? নিশ্চিত মনে মনে কোনো ফন্দি এঁটেছে। নয়তো আমার পিছনে লাগার সুযোগটা তিনি এভাবে ছেড়ে দিতেন না।
আবার এটাও হতে পারে তিনি কালকের ব্যাবহারের জন্য অনুতপ্ত তাই আজ আর কিছু বললো না।

মাথা চুলকাতে চুলকাতে কথাগুলো ভাবছিলাম তখনি পাশের বিল্ডিং থেকে অরিন এর ডাক পড়লো।

অরিনঃএই অয়ত্রি কি খবর একাভাবে পিলারের মতো দাড়িয়ে আছিস কেন???

আরেহ না কিছুনা।তা তোর কি খবর রে অরিনোকো??

–এই অয়ত্রি এই!! তোর এসব আজব নামে আমাকে আর ডাকবিনা বলে দিলাম। আমার এত সুন্দর নামটা তুই ঘুরিয়ে পেচিয়ে চুইম গামের আটার মতো করে দিয়েছিস।কোমরে হাত গুজে বললো অরিন।

আমি অরিন এর কথা দাত কেলিয়ে হাসতে লাগলাম।
কারণ অরিন রেগে গেছে।আর কোনো রাগান্বিত মানুষের সামনে দাতঁ কেলিয়ে হাসতে আমার খুব ভালোলাগে।একথায় কাটা ঘায়ে নুনের ছিটে দেয়া যাকে বলে।

এই অয়ত্রি তোর সাথে কিন্তু আড়ি দিবো বলে দিলাম।দাঁত কিড়মিড়িয়ে বললো অরিন।

— এবার হাসি থামিয়ে নিজেকে শান্ত করে বললাম–আচ্ছা বাবা সরি। তো মাই ডিয়ার ফ্রেন্ড তোর পড়ালেখার কি খবর??

অরিনঃবেশ ভালোই।তোর??

—হুম আমারো আল্লাহর মতে কোনোরকম ভালোই চলছে।

অনির এবার নিজের ভাবভঙ্গি পাল্টে লজ্জা মিশ্রিত হাসি দিয়ে বললো–

অরিনঃ এই অয়ত্রি জানুওওও

অরিনের এমন মুধুময় ডাক শুনে আমার আর বুঝতে বাকি রইলো না অরিন এবার কি বলবে..প্রণয় ভাইয়ার গুণগানের রেকর্ড বাজানো শুরু করবে।আর আমার কানটা ঝালাফালা করে ছাড়বে।

__অরিনোকো বাইইইইইইইইইই বলেই দৌড়ে ছাদ থেকে নেমে গেলাম।

আর কিছুক্ষণ ছাদে থাকলে আমার মাথাটা ঘোলা ডিমের ন্যায় করে ছাড়তো অরিন।

অনির ডায়লগ—

এই অয়ত্রি প্রণয় ভাইয়া কই রে??প্রণয় ভাইয়ার সাথে কি তোর আজ দেখা হয়েছিলো??প্রণয় ভাইয়ার শরীর ঠিক আছে তো??আজ তিনি কি পোশাক পড়েছেন??কি খেয়েছেন??হসপিটালে গিয়েছিলেন কি?? প্রণয় ভাইয়ার কোনো গার্লফ্রেন্ড আছে কি?? আমাকে একটু চান্স পাওয়াই দিবি দোস্ত??আমি তোর ভাবি হতে চাই রে অয়ত্রি!!!! দীর্ঘ ২ মাস ধরেই এসব শুনতে হচ্ছে আমায়।এখন আবার এসব বলেই আমার মাথার মগজ ধোলাই দিতো তাই এভাবে ছাদ থেকে নেমে গেলাম।

অরিন প্রণয় ভাইয়ার পেছনে পড়েই আছে।আর অরিন এর লক্ষ প্রণয় ভাইয়াকে পটানো। জানিনা ওই উল্লুখটার মাঝে কি পেয়েছে অরিন!!!

২ মাস হতে প্রণয় ভাইয়াকে চেনে সে।
শুধু অরিন নয় আমাদের পুরো পাড়া এই শহরের প্রায় সব মেয়েরাই ডক্টর প্রণয় প্রহসন কে চেনে।এবং তার উপর চরম লেভেলের ক্রাশিত। যার জন্য প্রতিনিয়ত বিরক্ত আর হ্যারেস আমি। যেখানে যাই সেখানেই শুনতে হয়— এই অয়ত্রি তোর প্রণয় ভাইয়া সেই লেভেলের হ্যান্ডসাম,স্টাইলিস সুদর্শন ও গুড পারসোনালিটির মানুষ।প্লিজ তোর প্রণয় ভাইয়ার নাম্বার টা দিবি??ব্লা ব্লা ব্লা ব্লা আরো কত কি যে আমাকে শুনতে হয় তার কোনো ইয়ত্তা নেই।

বাড়িতে এই এলিয়েনের জ্বালাতন বাহিরে এই এলিয়েনের জন্য আরেক পাগল এলিয়েনরা জ্বালাতন করে!!

না এসব আর ভাববোনা। এসব ভাবলেই মাথাটা কেমন চক্কর দিয়ে উঠে ডান হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরে মনে মনে বললাম।

ছাদ থেকে নেমে সোজা নিজের রুমে চলে গেলাম। গিয়েই সটান দিয়ে শুয়ে পড়লাম বিছানায়। বালিশের নিচ থেকে ফোনটা বের করে ফেসবুকে লগইন করলাম।

ফেসবুকে লগইন করতে না করতেই আমার ২ নম্বর ক্রাশ আহানের একটা পিক দেখতে পেলাম। পিকটা দেখতে মনটা শান্ত ও ক্লান্ত ভাবটা কমে গেলো।

আহানের আইডিটে ক্লিক করলাম।প্রায় দুইদিন ধরে ফেসবুকে ঢুকিনা।কারণ এই দুইদিন ওয়াইফাই কানেকশনের একটু প্রব্লেম ছিলো।

আহানের আইডিতে গিয়ে দেখলাম নতুন পাঁচটা পিক আপলোড করেছে।পিক গুলা যাস্ট ওয়াও।আর লাইক কমেন্টও পড়েছে হাজার হাজার।
আহানের একটা পিকে কমেন্ট করতে যাবো তখনি খালামনির ডাক কানে পড়লো।তাই ফোনটা বন্ধ করে বালিশের নিচে রেখে খালামনির কাছে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালাম।

নিচে গিয়ে দেখলাম খালামনি সোফায় বসে আছেন।
আমিও গিয়ে খালা মনির পাশে গিয়ে বসে পড়লাম।

খালামনি বললো— কিরো অয়ত্রি আজ চা খেতে নিচে আসিস নি যে?? তোর তো এই সময়টা চা খাওয়া মিস হয়না??? তাই তোকে ডাকলাম।

আমি— আসলে খালামনি মনে ছিলোনা গো একদমই।ছাদে অরিনের সাথে কথা বলছিলাম তো তাই।

তখনি চা নিয়ে আসলো শাপলা।

––এইযে অয়ত্রি আফা আর খালাআম্মা তোমাদের চা বলেই চায়ের কাপ আমার আর খালামনির হাতে ধরিয়ে দিলো শাপলা।

আমি আর দেরি না করে চায়ে চুমুক দিলাম।একচুমুক মুখে শুষে নিতেই চোখ বুঝে ফেললাম।চা টা অসাধারণ বানিয়েছে শাপলা। ইভেন চা টা খুব ভালো বানায় শাপলা।

—কিরে শাপলা তুই আজ চা খাবি না? বললো খালামনি।

না আজই চা খামুনা খালা।ভাল লাগতেছে না।সোফায় বসতে বসতে বললো শাপলা।

— শাপলা তোর বাড়ির সবাই ভালো আছে তো?? খালা কেমন আছে??শাপলাকে উদ্দেশ্য করে বললাম আমি।

— হ আফা আম্মা ভালোই আছে।বাড়ির সবাই ও ভালো আছে।তয় এখখান খবর আছে তোমাদের দেওয়ার..
লজ্জা লজ্জা ভাব নিয়ে বললো শাপলা।

—কি খবর রে শাপলা???ভ্রু কুঁচকে বললো খালামনি।

— খালা আমারে না কাল দেখতে আইছিলো।মাথা নিচু করে বললো শাপলা।

___সেটা তো ভালো খবর রে শাপলা।তা পাএ পক্ষ কি তোকে পছন্দ করেছে???খালামনি কিছুটা হাসিমুখ করে বললো।

আমি ওদের কথা চুপচাপ শুনে যাচ্ছি চায়ে চুমুক দিতে দিতে। কারণ চা খাবার সময় আমি কোনো কথা বলিনা প্রয়োজন ছাড়া।

_______________________________________________

রাত ১০ টা

খাবার টেবিলে বসে আছি। আমার পাশে বসেছে প্রণয় ভাইয়া। প্রতিদিনের মতো আজও তার মুখটা কালুপেচাঁর মতো করে রেখেছে।তবে আজ তাকে একটু বেশিই গম্ভীর দেখাচ্ছে।

খাওয়া দাওয়া শেষ হতেই নিজের রুমে চলে গেলেন প্রণয় ভাইয়া।

আমি খাওয়াদাওয়া সেরে কিছুক্ষণ খালামনি ও ছোট আব্বুর সাথে গল্প করে রুমে গেলাম।

রুমে গিয়ে কিছুক্ষন রেস্ট নিয়ে পড়তে বসলাম।

টানা ৩ ঘন্টা পড়ে হাই তুলতে তুলতে পড়ার টেবিল থেকে উঠলাম। খুব পিপাসা পেয়েছে তাই পানির জগটা হাতে নিলাম পানি খাওয়ার জন্য কিন্তু ভাগ্য খারাপ জগে এক ফোটাও পানি নেই। তাই নিচে গেলাম পানি আনার জন্য।

রান্না ঘরে অনেক অন্ধকার। তাই লাইট জ্বালানোর জন্য পা বাড়ালেই হঠাৎ কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে নিচে পড়ে গেলাম।

এইরে আমার কোমরটা বুঝি গেলো।আর কখনো হয়তো উঠে দাড়াতে পারবোনা।না পারবো নাচতে চোখ বুঝে মনে মনে ভাবছিলাম। হঠাৎ মনে হলো কোমরে একটুও ব্যাথা অনুভব হচ্ছেনা আমার। তাই চোখ খুলে যা দেখলাম তাতে আমি কয়েক সেকেন্ডের জন্য থমকে গিয়েছিলাম। কারণ আমি প্রণয় ভাইয়ার বুকের উপর শুয়ে আছি। আর প্রণয় ভাইয়া আমার দিকে কেমন যেন দৃষ্টিতে চেয়ে আছেন। ডয়িংরুমের কিছুটা আলো এসে প্রণয় ভাইয়ার মুখে পড়েছে।যার জন্য তার মুখটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।

প্রণয় ভাইয়া আমার কোমর জরিয়ে আছে এটা বুঝতে পেরে আমি উঠতে নিলেই প্রণয় ভাইয়া আমার মাথা টেনে তার বুকের সাথে জড়িয়ে নিলো। আমার এবার হার্ডএ্যাটাক হওয়ার মতো অবস্থা হলো। সাথে প্রণয় ভাইয়া হার্ডবিড শুনতে পাচ্ছি।যা আমার হার্ডবিডকে আরো দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে!!! কান দিয়ে অদৃশ্য গরম ধোঁয়া বেড়োচ্ছে। শরীর টা অবশ হতে চাচ্ছে!!!

👉continue 👈

কাঠগোলাপের মোহে পর্ব-০১

0

#কাঠগোলাপের মোহে🌼
#মোনামি শেখ
#part:1

ভাইয়া প্লিজ ছেরে দেন প্লিজ ভাইয়া।আর জিবনেও আপনার রুমে আসবোনা।প্লিজ এই বারটি আমায় মাফ করে দেন।প্লিজজজজজজজজ……..!!!

এত করে বলার পরেও আমার হাতটা ছাড়ছেনা প্রণয়
ভাইয়া।

এদিকে ব্যাথার চোটে চোখ বেয়ে ঝরছে আমার অমূল্য অশ্রু। এই সময়টা যেন বেশ করে উপভোগ করছে প্রণয় ভাইয়া তা বেশ ভালোকরেই বুঝতে পারছি।আমার আর্তনাদ যেন তার মনে পৈশাচিক আনন্দের ঝড় তুলছে অনবরত।

এবার আর সয্য করতে না পেরে দিলাম গগনবিদারী এক চিৎকার। চমকে গিয়ে পেছন থেকে মোচড়ানো হাতটা ছেড়ে দিয়ে সরে গেলেন প্রণয় ভাইয়া। আমি অনেক কষ্টে হাতটা নিজের দিকে ঘুরিয়ে আনলাম।

হাতটার অবস্থা দেখে আত্মাটা কেঁপে উঠল আমার। ইশ কি হয়েছে হাতটা।অনেক্ষন হাতটা চেপে রাখায় রক্ত জমাট বেধে লাল টকটকে হয়ে গেছে সাথে প্রণয় ভাইয়ার হাতের পাঁচ পাঁচটা আঙ্গুলের ছাপ স্পষ্ট। কেমন যেন ব্যাথা করছে বারবার।কেমন যেমনটা যে কি সেটা জানা নেই আমার এই মহূর্তে।

প্রণয় ভাইয়া সোফায় ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বসে আছে। আমার ঐ রকম চিৎকারে কেউ ছুটে আসেনি এই রুমে।কারণ রুমটা সাউন্ড প্রুভ। এই কথা কিছুমহূর্তের জন্য হয়তো প্রণয় ভাইয়া ভুলে গিয়েছিলো।তাই আমার হাতটা ছেরে দিয়েছে। যাই হোক আজ নিজের অজান্তেই নিজে বেঁচে গেছি এই মানুষ রুপি এলিয়েন টার হাত থেকে।

এসব ভাবতে ভাবতেই প্রণয় ভাইয়ার রুম থেকে দৌড়ে বেড়িয়ে নিজের রুমে যেতে লাগলাম।

নিজের রুমে গিয়ে একটা বড় নিশ্বাস নিয়ে নিজেকে শান্ত করতে চেষ্টা করলাম। চোখের পানি নাকের পানি মিশে একাকার হয়ে গেছে।

কোনো মতে বাম হাত দিয়ে চোখ মুখ মুছে নিলাম। তারপর কাবার্ড থেকে জামাকাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকলাম। ওয়াশরুমে ধুকে দরজাটা লাগিয়ে সামন ঘুরতেই আয়নায় নিজের মুখটা চোখে পড়লো আমার।

আয়নার আরো কাছে এগিয়ে গেলাম আমি। আয়নার কাছে গিয়ে খুটিয়ে খুটিয়ে নিজের মুখটা দেখতে লাগলাম। চোখ গুলো ফুলে লাল লাল হয়ে গেছে।নাকের ডগাটা লালচে আভা ধারণ করছে।সাথে সাথে গাল গুলোও ফুলে উঠেছে। মুখটা কেমন যে পানসে পানসে দেখাচ্ছে!!!

__ ইশ আমার মুখটার কি অবস্থাই নাই করছে। ওই ভিন্ন জগতের এলিয়েন এর ঘরে জিবনও আর ধুকবো না। নিজের ইচ্ছেয়। আল্লাহ তুমি আর ঔ এলিয়েন এর ঘরে আমায় আর নিয়ে যাই ও না প্লিজ। তোমার কাছে এখন এটাই আমার চাওয়া।

আর সব দোশ ওই পুষির। বেচারি ওই যদি দৌড়ে ওই এলিয়েন টার ঘরে গিয়ে ধুকে না পড়তো তো আমিও আর ঐ ঘরে যেতাম না।এত মানুষের ঘর থাকতে পুষির নাকি প্রণয় ভাইয়ার রুমেই যাওয়া চাই।আর ওর সব দোশ এসে পড়ে আমার এই অবলা ঘাড়ে।

এনমিতেই পশু পাখিকে বাড়িতে রাখা পছন্দ করেন না প্রণয় ভাইয়া।অবশ্য নিজেই তো একটা ভিনগ্রহের প্রাণী। তাই অন্য প্রাণীকে সয্য হয়না তার বিশেষ করে আমার পুষিকে। এই আমার পুষির.. তার আবার ওই প্রণয়কেই পছন্দ।ঘুরে ফিরে খালি প্রণয়ের রুমে ধুকে পড়ে শত বাধা দেওয়া শর্তেও!!!

যাই হোক এখন যা হবার হয়ে গেছে। এখন ঝটপট শাওয়ার টা সেড়ে নেই।এনমিতেই আজ বাইরে একটু ঠান্ডা ঠান্ডা আবহওয়া। তাই কোনো প্রকার রিস্ক নিতে চাচ্ছিনা।

শাওয়ার নিয়ে কেবল বাইরে বেড়িয়েছি তখন দরজার ওপাশে দাড়িয়ে আমাকে ডেকে যাচ্ছে খালামনি।

কলি বেগমঃঅয়ত্রি এই অয়ত্রি দরজাটা খোল।এখনো খেতে নিচে আসিস নি কেনো???

আমি– আসছি খালালমনি একটু ওয়েট করো। বলেই ব্যালকানিতে গিয়ে ভেজা তোয়ালেটা মেলে দিয়ে দরজার কাছে গিয়ে দরজাটা খুলে দিলাম।

দরজাটা খুলে দিতেই খালামনি আমার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে।

__কি হয়েছে খালামনি এভাবে আমাকে দেখছো কেন?

কলি বেগমঃতুই এত রাতে শাওয়ার নিলি কেনো???

—আসলে শরীরটা কেমন যেন গুলাচ্ছিলো আর মাথাটাও ধরেছিলো তাই শাওয়ার নিলাম।এখন একটু বেটার ফিল করছি।তুমি চিন্তা করিও না।

কলি বেগমঃতা বলে তুই এত রাতে শাওয়ার নিবি??যদি আবার জ্বর-টর বাঁধিয়ে ফেলিস??সামনেই তোর এইচএসসি ফাইনাল পরিক্ষা। এটা তো তোকে মাথায় রাখতে হবে তাইনা????

__সরি মাই ডিয়ার খালামনি।এসব বাদ দাও।আমার খুব ক্ষিদে পেয়েছে।তাই চলো। বলেই খালামনির হাত ধরে নিচে যেতে লাগলাম।

নিচে গিয়ে দেখলাম আমার খালু যাকে আমি ছোটআব্বু বলেই ডাকি।তিনি ডাইনিং টেবিলে বসে আছে। আমাকে দেখেই মুচকি হাসি দিয়ে আমন্ত্রন জানালেন।
আর তার পাশেই সেই ঘাড়ত্যারা এলিয়েন প্রণয় ভাইয়াটা বসে নিজের মতো খাবার গোন্ডে পিন্ডে গিলছে।মনে হয় সাত জন্মেও এই খাবারের নাগাল পায়নি তিনি হুহ।আমার হাতের বারোটা বাজিয়ে এখন নিজে কি শান্তি করে খাচ্ছে। অথচ আমি এখন ভেবে কুলকিণারা পাচ্ছিনা যে কিভাবে নিজের হাতে খাবো।হাতটা ব্যাথায় মনে হয় পঁচে গেছে এমন মনে হচ্ছে। আর খালামনি ও ছোটআব্বু যদি দেখে আমার হাতের এই অবস্থা তো নিশ্চিত বাড়িতে লঙ্কাকাণ্ড বাধিয়ে দিবে। যদিও তারা প্রণয় ভাইয়ার মুখের উপর বেশি কথা বলতে পারবেনা। এসব মন মনেই আলোচনা করলাম।

খালামনি প্লেটে খাবার দিলো আমি করুন চোখে খাবার গুলো দেখে যাচ্ছি।হঠাৎ মাথায় একটা বুদ্ধি এলো।তাই চট করে খালামনিকে বললাম– খালামনি আজ আমার তোমার হাতে খাইয়ে দাওনা প্লিজ।আমার আজ নিজ হাতে খেতে ইচ্ছে করছে না।

আমার কথায় হেসে ফেললো ছোট বাবা আর খালামনি। আর প্রণয় ভাইয়া একবার আমার দিকে তাকিয়ে আবার চোখ নামিয়ে নিজের মতো করে খেতে লাগলো।

এরপর খালামনি আমায় খাইয়ে দিলো।আমি বেশ আয়েশ করেই খেলাম।মনেই নাই যে আমার হাতটার যাচ্ছেতাই অবস্থা।

খাওয়া শেষে পড়ালেখার অজুহাতে সোজা রুমে চলে এলাম।এসেই ড্রায়ার থেকে মুভ মলম টা বের করে নিজের হাতে লাগিয়ে নিলাম। আর মনে মনে ওই মুখ পোড়া এলিয়েনটাকে গালি দিতে লাগলাম।যাই হোক ওই এলিয়েনটারে গালি দিয়ে অন্তত নিজের মনের কিছুটা ক্ষতটা সাড়াতে পারবো।

__হাতে মলমটা লাগানো হলেই সোজা গিয়ে কোম্বল জড়িয়ে শুয়ে পড়লাম।আজ আর রাত জেগে পড়বোনা।

বালিশের নিচ থেকে ফোনটা বের করে দেখলাম ১১ টা বাজে।তাই চটপট ফোনটা যথাস্থানে রেখে ঘুমিয়ে পড়লাম।

আর এদিকে প্রণয় ব্যালকানিতে দারিয়ে একটার পর একটা সিগারেট ফুকছে। সিগারেটের বিষাক্ত ধোয়া গুলো মিশে যাচ্ছে হাওয়ায়।

বাইরের দৃশ্যটা আজ অন্যরকম ওই লাগছে তার কাছে। আজ আকাশে কোনো চাঁদ উঠেনি না উঠেছে তাঁরা তবুও চারিপাশ একটু আবছা আবছা দেখা যাচ্ছে। হালকা মৃদু বাতাস এসে ছুয়ে যাচ্ছে প্রণয়ের সিল্কি চুলগুলো।আর তার সাথে জেগে উঠেছে গায়ের প্রত্যেকটা লোমকূপ।

হঠাৎ হঠাৎ গা কাঁপুনি দিয়ে উঠছে প্রণয়ের। কিন্তু এতকিছুর পরেও চোখে ভাসছে অয়ত্রির সেই চোখের পানি গুলো।অজান্তেই সে বারবার অয়ত্রিকে কষ্ট দিয়ে ফেলে এটা সে কেন করে তা সে নিজেই জানেনা।তবে সে অয়ত্রিকে সয্য করতে পারেনা।বিশেষ করে অয়ত্রির ছেলেমানুষী গুলো। অয়ত্রির করা সেই ভুল টা আজও চোখে ভাসে প্রণয়ের।তাই হয়তো সে অয়ত্রিকে দেখতে পারেনা।

এসব ভাবতে ভাবতেই ১টা বেজে যায়।মোবাইলে টাইমটা দেখে নিয়ে ঘুমতে যায় প্রণয়।

সকালে আড়মোড়া ভেঙ্গে হাই তুলতে তুলতে ঘুম থেকে উঠলাম। উঠেই দেয়ালে ঘড়িটির দিকে তাকালাম।সকাল ৭ টা বাজে। নাহ প্রায় ঠিক টাইমেই উঠেছি।যদিও একটু লেটও হয়েছে।তবে সেটা গুরুতর বিষয় নয়।

হঠাৎ মাথার চুল গুলো ঠিক করতে করতে কালকের ঘটনাটা মনে পড়লো।তাই চুল গুলো ঠিক করে নারিয়ে চারিয়ে দেখলাম।নাহ ব্যাথাটা একটু কমেছে।তবে পুরোটা কমে নি।

আর দেরি না করে ওয়াশরুমে ঢুকলাম।ফ্রেশ হয়ে ব্যালকানিতে গেলাম।ব্যালকানিতে গিয়েই চোখ পড়লো
পুষির উপর। ব্যালকানির কোন ঘেঁষে গুটিশুটি মেরে বসে আছে। আমি গিয়ে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলাম।
কালকের ঘটনাটার পর ওর কথা মনেই ছিলোনা আমার।

কাল প্রণয় ভাইয়ার ধমক খেয়ে দৌড়ে ঘরে এসে নিজের আস্তানায় ধুকে পড়েছে বেচারি।সকালের আলো ফুটতেই হয়তো এখানে বসে গেছে। আজ আর পুষির সাথে কথা বলবোনা। এটা কাল প্রণয় ভাইয়ার রুমে থাকতেই ঠিক করে নিয়েছি। তাই আজ আর পুষির সাথে কথা বললাম না।

পুষিকে রেখে উঠে দাড়িয়ে আমার প্রিয় কাঠ গোলাপের
গাছের কাছে গেলাম। আজ আরোও ২ টা কাঠগোলাপ ফুটেছে।তা দেখে আমার মনটা আনন্দে নেচে উঠলো।
এই কাঠগোলাপ ওই হলো আমার একমাএ মোহ। কাঠগোলাপ আমার একমাএ বেস্টফ্রেন্ড।আমার সর্বক্ষনের সাথী। আমার নেশাও বটে।

এটা আমার ১৫ তম জম্মদিনে প্রণয় ভাইয়া খালামনির দ্বারা আমায় গিফট করেছিলো। তখন গাছটা অনেক ছোট ছিলো। কিন্তু এখন অনেকটা বড় হয়ে গেছে।

তখন প্রণয় ভাইয়া বিদেশে ছিলো।পড়ালেখার কারণে সে আমেরিকাতে ৫ বছর ছিলো। ২ মাস হয়ছে তিনি দেশে ফিরেছেন।সাথে আমার জম হয়েও ফিরে এসেছেন।

এই দুইমাস একটা দিনও তার জন্য শান্তিতে কাটাতে পারিনি।

👉চলবে👈🌼

অবশেষে পর্ব-০৯ এবং শেষ পর্ব

0

গল্প : অবশেষে | পর্ব : নয়/শেষ পর্ব

বড়ো বড়ো পা ফেলে এগিয়ে যাচ্ছে দিয়া। পরনের লেহেঙ্গা দু’হাতে আগলে ধরে এক পা এক পা ফেলে এগোচ্ছে আর পিছন ফিরে তাকাচ্ছে সে। তার থেকে হাত দশেক দূরে দূরে হাঁটছে রোদ। মাঝে মাঝে গলা ছেড়ে ডাকছে, এই, দাঁড়া। ভালো হবে না কিন্তু। দিয়া, দাঁড়া।

এমনিতেই সূ্র্যটা মাথার উপর। অসহ্য গরম লাগছে। তার উপর গায়ে জড়ানো ভারী পোষাক। দিয়ার গা থেকে দরদর করে ঘাম ঝড়ছে। দিয়া এক আধবার কপালের ঘাম মুছে নিয়ে এদিক ওদিক দেখে নিচ্ছে। আশপাশের লোকজন উৎসুক ভঙ্গিতে পিটপিট করে তাকাচ্ছে। তাকানোই স্বাভাবিক। বিয়ের সাজে সজ্জিত একটি মেয়ে ছুটছে এবং তার পিছু নিয়েছে একটি সুদর্শন যুবক। এ-দৃশ্য নিঃসন্দেহে প্রথমবার দেখছে ওঁরা।

রোদ আবার ডাকল, আরে কথা তো শুনবি, না কি? একটু দাঁড়া। এভাবে পালিয়ে কতটা পথ যেতে পারবি বল তো?

কথা সত্য। এভাবে ছুটে ছুটে বেশিদূর যাওয়া সম্ভব নয়। এখনই হাঁফ ধরে যাচ্ছে। গলা শুকিয়ে কাঠ। এই মুহূর্তে এক গ্লাস পানি প্রয়োজন। কিন্তু না, থামা যাবে না। দিয়া ছুটে। ছুটতেই থাকে। রাস্তার দু’পাশের মানুষ তীব্র আগ্রহ নিয়ে সেই দৃশ্য দেখে। কেউ কেউ আড়ালে কাউকে ডেকে নিয়ে ফিসফিস করে বলে, দ্যাখ, মাইয়্যাডা ভাগতাছে।
অন্যজন বলে, তয় পোলাডা ক্যাডা? ওয় মাইয়্যার পিছে ভাগতাছে ক্যা?

এবার রোদ দৌড়ে এসে দিয়ার পথ আটকে দাঁড়ায়। লম্বা লম্বা নিঃশ্বাস নিতে নিতে বলে, একটু পরে আমি তো জামাই হব। কিছুটা সম্মান দে! এভাবে ইগনোর করে আগে আগে ছুটলে হবে? আমার হাত ধর। একসাথে পালাই।

ইশ! জামাই হবে! বিয়ে করলে তো! দিয়া মুখ ভেঙচিয়ে বলে।

বিয়ে করবি না? তুই করবি তোর বাপ করবে।

তাহলে যাও। বাবাকে বিয়ে করো গিয়ে।

এই মুহূর্তে মজা করতে পারছিস দিয়া? তুই আমাকে ঠিক বিপদে ফেলবি। বলে পকেট থেকে ফোন বের করে রোদ। এক হাত দিয়ে দিয়াকে ধরে রাখে। অন্য হাত দিয়ে স্মার্টফোন।

হ্যালো, রবিন?

হ্যাঁ, বল।

একটা হেল্প লাগবে দোস্ত। এজন্য ফোন করেছি।

জানি জানি। বিপদে না পড়লে আমাদের কথা মনে পড়ে না। বিপদে পড়েছিস বলেই ফোন দিয়েছিস।

বাজে কথা রাখ। কাজের কথা বলি।

বকো।

একজন কাজী যোগাড় করে দিতে পারবি?

ওরে-বাবা! ঘটনা কী রে? সি-ধা কাজী? মেয়ে পেলি কই?

মেয়ের চিন্তা তোকে করতে হবে না। মেয়েকে বিয়ের আসর থেকে তুলে এনেছি। তুই শুধু কাজী যোগাড় কর। আর হ্যাঁ, সাক্ষীও লাগবে।

সে-সব হবে মামা। কিন্তু…

কিন্তু কী? ট্রিট তো? পাবি।

উঁহু। ট্রিট তো দিবিই। আর কিছু…

আর কিছু মানে?

দোস্ত। সোজা সাপটা বলি। তোর পুরনো বাইকটা আমার লাগবে।

বিপদে পড়েছি বলে স্বার্থ উদ্ধার করে নিচ্ছিস? তবে মনে রাখিস, এক মাঘে শীত যায় না।

তাহলে বাইকটা দিচ্ছিস?

ভেবে দেখব। তুই আজকেই কাজী আর সাক্ষী নিয়ে আমার ফ্ল্যাটে আয়।

ওক্কা দোস্ত। যো হুকুম।

সন্ধ্যার আগে আগে ওঁদের বিয়েটা হয়ে যায়। চড়ুই পাখির মতো সারাক্ষন এখানে ওখানে লাফিয়ে বেড়ানো দিয়া কেমন যেন শান্ত হয়ে যায়। তার চঞ্চল চোখদু’টো স্থির হয়ে আসে। গভীর রাতে নিঃস্তব্ধ বেলকনিতে একা একা দাঁড়িয়ে কী যেন ভাবে আর আনমনে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে দিয়া। দূর আকাশে ভেসে বেড়ানো গোলাকার চাঁদটাও বুঝি তার মতোই একা!

রোদ কখন দিয়ার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে, খেয়াল নেই। যখন রোদের আঙুলগুলো দিয়ার কপালের চুল সরিয়ে দেয়, তখন দিয়া মৃদু কেঁপে উঠে রোদের মুখের দিকে তাকায়। রোদ মুখ বাঁকিয়ে বলে, খুব তো বাড় বেড়েছিলি। আমাকে তুই করে বলেছিস। গালি দিয়েছিস। এবার কী শাস্তি দেব বল?

দিয়া কোমল গলায় বলে, শাস্তি? সে তো আমি পেয়েই গেছি।

ও-কী-রে! কখন দিলাম?

আমাকে আমার মা-বাবার কাছে থেকে কেড়ে আনলে। এটা কি শাস্তির পর্যায়ে পড়ে না?

দূর! সব মেয়েই তো একসময় তার ভালোবাসার মানুষের কাছে যায়।

দিয়া দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে, তা যায়। তবে মেয়েদের প্রথম ভালোবাসা তাদের মা-বাবা। যারা তাকে জন্ম দেয়। কোলেপিঠে করে মানুষ করে। কথা বলতে শিখায়। হাঁটতে শিখায়। বাঁচতে শিখায়। ঘটনাক্রমে হয়তো একসময় সব মেয়ের জীবনেই কোনো এক সুপুরুষ আসে। তবে সেটা মেয়েদের জন্য যেমন সুখকর তেমনি কষ্টদায়ক। সারা জীবনের ভালোবাসার মানুষদের ছেড়ে আসাটা এক ধরণের শাস্তিই। সেটা কোনো পুরুষ কখনো বুঝবে না।

বা-বা! রাজকন্যার মুখে বুলি ফুটেছে! কিন্তু তোর এসব কথা আমি মানি না। তোকে শাস্তি দেব মানে দেব।

দিয়া ঠোঁট উল্টে বলে, কচু! শাস্তি পাবার জন্য বিয়ে করেছি নাকি?

ও-তাই! তবে কেন বিয়ে করেছিস শুনি?

দিয়া মুখ টিপে হাসে। রোদ ভ্রু কুঁচকে বলে, খুব দুষ্টু হয়েছিস, না? নটি গার্ল!

দিয়া লজ্জায় মাথা নিচু করে রাখে। রোদ একটু এগিয়ে যায়। আরো একটু এগোয়। শেষমেশ দিয়ার চুলের ঘ্রাণ নিয়ে ফিসফিস করে বলে, শাস্তিটা তোকে পেতেই হবে। যতই ধানাই পানাই করিস না কেন। আজ তোর রক্ষে নেই।

রোদের বুকে আলতো ধাক্কা দিয়ে ভেতরের ঘরে চলে যায় দিয়া। কে জানে কেন, তার বুকে আজ উত্তাল ঢেউ। ঘন ঘন নিঃশ্বাস কিছুতেই শান্ত হতে চাইছে না। শত কষ্টের মাঝেও ঠোঁটে হাসি লেপ্টে আছে। রোদ হঠাৎ পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে ফিসফিস করে বলে, শাস্তিটা তবে দিয়েই দেই। কী বলিস?

সমাপ্ত।

অবশেষে পর্ব-০৮

0

গল্প : অবশেষে | পর্ব : আট

সে-রাতে ঘুম হলো না দিয়ার। পুরো রাত শুয়ে বসে কাটিয়ে দিলো। ভেতর থেকে উথলে পড়তে লাগল রাগ, ক্ষোভ, অভিমান। মাঝে মাঝে আপনমনে ভাবতে ভাবতে কেঁপে কেঁপে উঠল সে। আবার কখনো সখনো রোদের কান্নাভেজা মুখটা চোখের সামনে ভেসে উঠতেই বিষিয়ে উঠল পুরো শরীর।

তারা দু’জনেই পরিবর্তন হয়েছে। রাগী, গম্ভীর রোদ চোখের জল ফেলে কেঁদেছে। আর দিয়া যার নাম শুনলে ভয়ে কুঁকড়ে যেত, যার ছায়া দেখলে থরথর করে কাঁপত, সেই রোদকে সে গালি দিয়েছে। তুই করে বলেছে। রোদ রেগে যায়নি। বাধা দেয়নি। চোখের জল ফেলতে ফেলতে হারিয়ে গেছে।

দিয়ার চোখের সামনে রোদের কান্নাভেজা মুখটা আবার ভেসে উঠে। সেই সঙ্গে উথলে পড়ে রাগ, ক্ষোভ, ঘৃণা।

শেষরাতে সবাই যখন গভীর নিদ্রায় আচ্ছন্ন, তখন দিয়া রোদের নাম্বার ডায়েল করে। ফোন রিসিভ করতেই হড়বড় করে বলে, তুই কোনোদিন আমার সামনে আসবি না।

ওপাশ থেকে কোনোরকম সাড়াশব্দ পাওয়া যায় না। দিয়া আবার বলে, তুই আর কোনোদিন আমাকে ফোন দিবি না।

রোদও সারারাত ঘুমায়নি। বেলকনিতে দাঁড়িয়ে মেঘলা আকাশ দেখছিল। বিষণ্নতার শহরে সে এক ক্লান্ত পথিক। দীর্ঘশ্বাসের বাতাসে মিশ্রিত ধুলো। এতক্ষণ সে বিষণ্নতায় ডুবে ছিল। তাই দিয়ার কথায় নতুন করে কষ্ট পাবার কিছু নেই। সে পাথারের মূর্তির মতো শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। হাতের স্মার্টফোনটা আলতো করে চেপে রাখে গালের কাছে।

আমি বিয়ে করে নিচ্ছি। ভালো থাকিস তুই।

দিয়া থেমে যাবার আগেই রোদ বলে উঠে, তুই তুই করে বলছিস যে? বড্ড বাড় বেড়েছে না?

একশো বার বলব। হাজার বার বলব। তুই তুই তুই। কী করবি? মারবি? আয়, মার এসে।

দিয়ার এসব কথায় রোদের বিষণ্নতা উবে যায়। সে হাসি চেপে বলে, খুব খারাপ হবে কিন্তু দিয়া। খুব খারাপ হবে বলে দিলাম।

কী করবি? তোকে আমি ভয় পাই নাকি?

কী করব?

হ্যাঁ, কী করবি? তোর দৌড় চড়, থাপ্পড় মারা পর্যন্ত৷ এর বেশি কিছু করার মুরোদ আছে?

রোদ গলা নামিয়ে বলে, খুব যতনে জড়িয়ে ধরব। ভালোবেসে জড়িয়ে রাখব বুকের মাঝে। সহ্য করতে পারবি তো?

দিয়া হয়তো তা-ই চাইছিল। রোদ এমন করে আগলে নিলে সে হয়তো অসহ্য আনন্দে কেঁদেই ফেলত। তবে কি রোদ তার মনের সব কথা জানে? বুঝতে পারে তার আকুলতা?

পরদিন বাবা দিয়াকে ডেকে পাঠালেন। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে এলোমেলোভাবে প্রশ্ন করলেন, আরেকবার ভেবে দেখা যায় না?

দিয়া মলিন মুখে বলে, কী ভাবব বাবা?

তুই কি মাহফুজকেই বিয়ে করবি?

হ্যাঁ।

শোন, তুই এখন বড়ো হয়েছিস। নিজের ভালোমন্দ বুঝার বয়স হয়েছে। অনেক আগে আমরা রোদের সঙ্গে তোর বিয়ে দেব বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। তবে তোর ভালোর জন্য আমরা আমাদের প্রতিশ্রুতি ভেঙে গুড়িয়ে দিতে পারি। শুধু একটি অনুরোধ, আরো একবার ভেবে দেখ।

ভাববার কী আছে বাবা?

অনেক কিছুই আরে রে মা। সেদিন মাহফুজের পরিবার তোকে দেখে যাবার পর রোদ এসেছিল। ছেলেটা ভালো নেই। একদম ভালো নেই। বলে মাথা ঝাঁকান তিনি।

সে ভালো আছে। খুব ভালো আছে। দিয়া রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বলে।

তোদের মধ্যে কী হয়েছে জানি না। কখনো জানতেও চাইব না। তবে এতটুকু বলে রাখি, রাগের মাথায় সিদ্ধান্ত নিয়ে পুরো জীবনটা ধ্বংস করে দিস না।

দিয়া সে-সব কথা কানে নেয় না। উঠে যেতে যেতে বলে, আমি রেগে নেই বাবা। আজই মাহফুজের বাসায় ফোন দাও। আগামী শুক্রবারে বিয়ের কাজটা মিটিয়ে ফেলতে বলো।

তুই তাহলে ভেবে দেখবি না?

ভাববার কিছু নেই বাবা। বলে বেরিয়ে যায় দিয়া।

বিয়ের দিন। অর্থাৎ শুক্রবার দুপুরে যখন দিয়াকে পার্লারে নিয়ে যাওয়া হয়, যখন তাকে নতুন বউয়ের বেশে সাজানো হয়, তখন সে কাঠের মূর্তির মতো স্তব্ধ হয়ে বসে থাকে। আজ তার চোখে চঞ্চলতা নেই। মুখে হাসি নেই। চোখ তুলে নিজেকে আয়নায় দেখে নেবার আকুলতা নেই। সে চুপচাপ বসে থাকে। আর নিজেকে, নিজের মনকে সামলে রাখতে চায়। পারে না। ভেতর থেকে উথলে উথলে উঠে কান্নার ঢেউ। চোখ দিয়ে জল আসে না। সেই জল অনেক আগেই ফুরিয়ে গেছে। তার কেবল মনে পড়ে রোদের কথা। রোদের সঙ্গে ফেলে আসা স্মৃতির কথা।

দিয়া হঠাৎ ছোটোবেলায় হারিয়ে যায়। যখন সে ছিল। তার পাশাপাশি ছিল রোদ।

সুনামগঞ্জ, সিলেট। যেখানে রোদের ছেলেবেলা কেটেছে। সেখানে আছে হাওড়-খাল-বিল, আছে নৌকো, আছে বিদীর্ণ আবাদি জমি। সেই জমির আলপথ দিয়ে ছুটে বেড়াত তারা। দিয়া আর রোদ। একবার হলো কি, ভর দুপুরে ছোট্ট খাল সেঁচে মাছ ধরছিল রোদ। দিয়া দূরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিল। হঠাৎ ইচ্ছে হলো সে-ও মাছ ধরবে। অমনি মাছের খলইটা হাত থেকে নামিয়ে রেখে বলল, ভাইয়া, আমিও মাছ ধরব।

রোদ তখন হাঁটু সমান কাদায় দাঁড়িয়ে মাছ খুঁজছে। পুঁটি, কৈ, মাগুর, টেংরা এসব। দিয়ার কথা শুনে বাঁ হাতের পিঠ দিয়ে কপালের ঘাম মুছে নিয়ে বলল, কাদায় নামলে কিন্তু একটা মার-ও মাটিতে পড়বে না। মেরে একদম পিঠ ভেঙে ফেলব। বলে মাথা নুইয়ে আবারও মাছ ধরতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। কিছুক্ষণ পর কী একটা মাছ ধরে খলইয়ে রাখার সময় দেখল, দিয়ার চোখ বেয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে। তখন রোদ মুখ বাঁকিয়ে চোঁ-চোঁ শব্দ করে বলল, কিছু বললেই কান্না চলে আসে! আচ্ছা আয়। কিন্তু কাদায় ডুবে গেলে টেনে তুলতে পারব না।

দিয়া মনের আনন্দে তরতর করে কাদায় নেমে যায়। একটু এগোতেই পা-দু’টো হাঁটু পর্যন্ত দেবে যায়। রোদ আগেই বলেছে সাহায্য চাওয়া যাবে না। সুতরাং দিয়া সেখানে দাঁড়িয়েই কাদায় হাত ডুবিয়ে দেয়। একটু দু’টি মাছ হাতে লাগলে খপ করে ধরে ফেলবে।

ভাইয়া, এখানে কী যেন নড়ছে!

মাছ নড়ছে। ধরে ফেল। রোদ মাথা না তুলেই বলে।

দিয়া একসঙ্গে দু’হাত কাদায ডুবিয়ে দেয়। এবং সঙ্গে সঙ্গে একটা মাছ ধরে ফেলে। মাছটা কেমন যেন। সরু, পিচ্ছিল, লম্বা। সেটাকে কাদার ভিতর থেকে টেনে বের করেই চিৎকার দেয় দিয়া, ও-আম্মাগো!

রোদ সঙ্গে সঙ্গে মাথা তুলে বলে, কী রে?

দিয়া দু’হাত ঝাড়তে ঝাড়তে বলে, সাপ। সাপ ধরে ফেলেছিলাম।

কামড় দিয়েছে?

না।

তাহলে ভাগ। তোকে মাছ ধরতে হবে না।

এরপর দিয়া আর কোনোদিন কাদায় তো দূর, পুকুরে পর্যন্ত নামেনি।

ফোন বাজছে। পার্লারে বসে বসে কী যেন ভাবছে দিয়া। রোদ একের পর এক ফোন দিয়েই যাচ্ছে। দিয়া ফোন ধরবে না। তার কোনো আগ্রহ নেই।

হঠাৎ পার্লারের স্লাইড ডোর খুলে কে যেন ভিতরে চলে এল। দিয়া সেদিকে তাকাল না। পার্লারের মেয়েটা বলল, স্যার, এখানে পুরুষ প্রবেশ নিষেধ।

কিন্তু আগন্তুক শুনতে নারাজ। সে সোজা এসে দিয়ার কান টেনে ধরে। দিয়া উঃ, মাগো! বলে আর্তনাদ করে উঠে দাঁড়িয়ে দেখে রোদ তার কান টেনে ধরেছে।

ফোন রিসিভ করছিস না কেন? রোদ উদ্বেগের সঙ্গে বলে।

পার্লারের মেয়েগুলো থ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। দিয়া কান ছাড়িয়ে নিয়ে বলে, রিসিভ করব না। কী করবে?

কী করব? তোকে নিয়ে পালিয়ে যাব। হারিয়ে যাব দূরে কোথাও। সেখানে তোকে লুকিয়ে রাখব।

দিয়া নাক ফুলিয়ে বলে, তাহলে মাহফুজের কী হবে?

সে অন্য কাউকে বিয়ে করে নেবে।

এটা কিন্তু ঠিক না।

ভালোবাসায় ঠিক বেঠিক কিছু নেই রে। ভালোবেসেছিস তো মরেছিস। আমাকেই দেখ। আত্মসম্মান বিসর্জন দিয়ে তোকে নিতে এসেছি।

আমি যদি না যাই?

জোর করে নিয়ে যাব।

যদি চিৎকার করি?

সবার সামনে দিয়ে নিয়ে যাব।

আর যদি মরে যাই?

সহসা দিয়ার মুখ চেপে ধরে রোদ। ফিসফিস করে বলে, তা হলে আমিও মরে যাব।

চলবে
মো. ইয়াছিন
#অবশেষে
গত পর্বের লিংক :
গল্প : অবশেষে | পর্ব : আট

সে-রাতে ঘুম হলো না দিয়ার। পুরো রাত শুয়ে বসে কাটিয়ে দিলো। ভেতর থেকে উথলে পড়তে লাগল রাগ, ক্ষোভ, অভিমান। মাঝে মাঝে আপনমনে ভাবতে ভাবতে কেঁপে কেঁপে উঠল সে। আবার কখনো সখনো রোদের কান্নাভেজা মুখটা চোখের সামনে ভেসে উঠতেই বিষিয়ে উঠল পুরো শরীর।

তারা দু’জনেই পরিবর্তন হয়েছে। রাগী, গম্ভীর রোদ চোখের জল ফেলে কেঁদেছে। আর দিয়া যার নাম শুনলে ভয়ে কুঁকড়ে যেত, যার ছায়া দেখলে থরথর করে কাঁপত, সেই রোদকে সে গালি দিয়েছে। তুই করে বলেছে। রোদ রেগে যায়নি। বাধা দেয়নি। চোখের জল ফেলতে ফেলতে হারিয়ে গেছে।

দিয়ার চোখের সামনে রোদের কান্নাভেজা মুখটা আবার ভেসে উঠে। সেই সঙ্গে উথলে পড়ে রাগ, ক্ষোভ, ঘৃণা।

শেষরাতে সবাই যখন গভীর নিদ্রায় আচ্ছন্ন, তখন দিয়া রোদের নাম্বার ডায়েল করে। ফোন রিসিভ করতেই হড়বড় করে বলে, তুই কোনোদিন আমার সামনে আসবি না।

ওপাশ থেকে কোনোরকম সাড়াশব্দ পাওয়া যায় না। দিয়া আবার বলে, তুই আর কোনোদিন আমাকে ফোন দিবি না।

রোদও সারারাত ঘুমায়নি। বেলকনিতে দাঁড়িয়ে মেঘলা আকাশ দেখছিল। বিষণ্নতার শহরে সে এক ক্লান্ত পথিক। দীর্ঘশ্বাসের বাতাসে মিশ্রিত ধুলো। এতক্ষণ সে বিষণ্নতায় ডুবে ছিল। তাই দিয়ার কথায় নতুন করে কষ্ট পাবার কিছু নেই। সে পাথারের মূর্তির মতো শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। হাতের স্মার্টফোনটা আলতো করে চেপে রাখে গালের কাছে।

আমি বিয়ে করে নিচ্ছি। ভালো থাকিস তুই।

দিয়া থেমে যাবার আগেই রোদ বলে উঠে, তুই তুই করে বলছিস যে? বড্ড বাড় বেড়েছে না?

একশো বার বলব। হাজার বার বলব। তুই তুই তুই। কী করবি? মারবি? আয়, মার এসে।

দিয়ার এসব কথায় রোদের বিষণ্নতা উবে যায়। সে হাসি চেপে বলে, খুব খারাপ হবে কিন্তু দিয়া। খুব খারাপ হবে বলে দিলাম।

কী করবি? তোকে আমি ভয় পাই নাকি?

কী করব?

হ্যাঁ, কী করবি? তোর দৌড় চড়, থাপ্পড় মারা পর্যন্ত৷ এর বেশি কিছু করার মুরোদ আছে?

রোদ গলা নামিয়ে বলে, খুব যতনে জড়িয়ে ধরব। ভালোবেসে জড়িয়ে রাখব বুকের মাঝে। সহ্য করতে পারবি তো?

দিয়া হয়তো তা-ই চাইছিল। রোদ এমন করে আগলে নিলে সে হয়তো অসহ্য আনন্দে কেঁদেই ফেলত। তবে কি রোদ তার মনের সব কথা জানে? বুঝতে পারে তার আকুলতা?

পরদিন বাবা দিয়াকে ডেকে পাঠালেন। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে এলোমেলোভাবে প্রশ্ন করলেন, আরেকবার ভেবে দেখা যায় না?

দিয়া মলিন মুখে বলে, কী ভাবব বাবা?

তুই কি মাহফুজকেই বিয়ে করবি?

হ্যাঁ।

শোন, তুই এখন বড়ো হয়েছিস। নিজের ভালোমন্দ বুঝার বয়স হয়েছে। অনেক আগে আমরা রোদের সঙ্গে তোর বিয়ে দেব বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। তবে তোর ভালোর জন্য আমরা আমাদের প্রতিশ্রুতি ভেঙে গুড়িয়ে দিতে পারি। শুধু একটি অনুরোধ, আরো একবার ভেবে দেখ।

ভাববার কী আছে বাবা?

অনেক কিছুই আরে রে মা। সেদিন মাহফুজের পরিবার তোকে দেখে যাবার পর রোদ এসেছিল। ছেলেটা ভালো নেই। একদম ভালো নেই। বলে মাথা ঝাঁকান তিনি।

সে ভালো আছে। খুব ভালো আছে। দিয়া রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বলে।

তোদের মধ্যে কী হয়েছে জানি না। কখনো জানতেও চাইব না। তবে এতটুকু বলে রাখি, রাগের মাথায় সিদ্ধান্ত নিয়ে পুরো জীবনটা ধ্বংস করে দিস না।

দিয়া সে-সব কথা কানে নেয় না। উঠে যেতে যেতে বলে, আমি রেগে নেই বাবা। আজই মাহফুজের বাসায় ফোন দাও। আগামী শুক্রবারে বিয়ের কাজটা মিটিয়ে ফেলতে বলো।

তুই তাহলে ভেবে দেখবি না?

ভাববার কিছু নেই বাবা। বলে বেরিয়ে যায় দিয়া।

বিয়ের দিন। অর্থাৎ শুক্রবার দুপুরে যখন দিয়াকে পার্লারে নিয়ে যাওয়া হয়, যখন তাকে নতুন বউয়ের বেশে সাজানো হয়, তখন সে কাঠের মূর্তির মতো স্তব্ধ হয়ে বসে থাকে। আজ তার চোখে চঞ্চলতা নেই। মুখে হাসি নেই। চোখ তুলে নিজেকে আয়নায় দেখে নেবার আকুলতা নেই। সে চুপচাপ বসে থাকে। আর নিজেকে, নিজের মনকে সামলে রাখতে চায়। পারে না। ভেতর থেকে উথলে উথলে উঠে কান্নার ঢেউ। চোখ দিয়ে জল আসে না। সেই জল অনেক আগেই ফুরিয়ে গেছে। তার কেবল মনে পড়ে রোদের কথা। রোদের সঙ্গে ফেলে আসা স্মৃতির কথা।

দিয়া হঠাৎ ছোটোবেলায় হারিয়ে যায়। যখন সে ছিল। তার পাশাপাশি ছিল রোদ।

সুনামগঞ্জ, সিলেট। যেখানে রোদের ছেলেবেলা কেটেছে। সেখানে আছে হাওড়-খাল-বিল, আছে নৌকো, আছে বিদীর্ণ আবাদি জমি। সেই জমির আলপথ দিয়ে ছুটে বেড়াত তারা। দিয়া আর রোদ। একবার হলো কি, ভর দুপুরে ছোট্ট খাল সেঁচে মাছ ধরছিল রোদ। দিয়া দূরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিল। হঠাৎ ইচ্ছে হলো সে-ও মাছ ধরবে। অমনি মাছের খলইটা হাত থেকে নামিয়ে রেখে বলল, ভাইয়া, আমিও মাছ ধরব।

রোদ তখন হাঁটু সমান কাদায় দাঁড়িয়ে মাছ খুঁজছে। পুঁটি, কৈ, মাগুর, টেংরা এসব। দিয়ার কথা শুনে বাঁ হাতের পিঠ দিয়ে কপালের ঘাম মুছে নিয়ে বলল, কাদায় নামলে কিন্তু একটা মার-ও মাটিতে পড়বে না। মেরে একদম পিঠ ভেঙে ফেলব। বলে মাথা নুইয়ে আবারও মাছ ধরতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। কিছুক্ষণ পর কী একটা মাছ ধরে খলইয়ে রাখার সময় দেখল, দিয়ার চোখ বেয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে। তখন রোদ মুখ বাঁকিয়ে চোঁ-চোঁ শব্দ করে বলল, কিছু বললেই কান্না চলে আসে! আচ্ছা আয়। কিন্তু কাদায় ডুবে গেলে টেনে তুলতে পারব না।

দিয়া মনের আনন্দে তরতর করে কাদায় নেমে যায়। একটু এগোতেই পা-দু’টো হাঁটু পর্যন্ত দেবে যায়। রোদ আগেই বলেছে সাহায্য চাওয়া যাবে না। সুতরাং দিয়া সেখানে দাঁড়িয়েই কাদায় হাত ডুবিয়ে দেয়। একটু দু’টি মাছ হাতে লাগলে খপ করে ধরে ফেলবে।

ভাইয়া, এখানে কী যেন নড়ছে!

মাছ নড়ছে। ধরে ফেল। রোদ মাথা না তুলেই বলে।

দিয়া একসঙ্গে দু’হাত কাদায ডুবিয়ে দেয়। এবং সঙ্গে সঙ্গে একটা মাছ ধরে ফেলে। মাছটা কেমন যেন। সরু, পিচ্ছিল, লম্বা। সেটাকে কাদার ভিতর থেকে টেনে বের করেই চিৎকার দেয় দিয়া, ও-আম্মাগো!

রোদ সঙ্গে সঙ্গে মাথা তুলে বলে, কী রে?

দিয়া দু’হাত ঝাড়তে ঝাড়তে বলে, সাপ। সাপ ধরে ফেলেছিলাম।

কামড় দিয়েছে?

না।

তাহলে ভাগ। তোকে মাছ ধরতে হবে না।

এরপর দিয়া আর কোনোদিন কাদায় তো দূর, পুকুরে পর্যন্ত নামেনি।

ফোন বাজছে। পার্লারে বসে বসে কী যেন ভাবছে দিয়া। রোদ একের পর এক ফোন দিয়েই যাচ্ছে। দিয়া ফোন ধরবে না। তার কোনো আগ্রহ নেই।

হঠাৎ পার্লারের স্লাইড ডোর খুলে কে যেন ভিতরে চলে এল। দিয়া সেদিকে তাকাল না। পার্লারের মেয়েটা বলল, স্যার, এখানে পুরুষ প্রবেশ নিষেধ।

কিন্তু আগন্তুক শুনতে নারাজ। সে সোজা এসে দিয়ার কান টেনে ধরে। দিয়া উঃ, মাগো! বলে আর্তনাদ করে উঠে দাঁড়িয়ে দেখে রোদ তার কান টেনে ধরেছে।

ফোন রিসিভ করছিস না কেন? রোদ উদ্বেগের সঙ্গে বলে।

পার্লারের মেয়েগুলো থ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। দিয়া কান ছাড়িয়ে নিয়ে বলে, রিসিভ করব না। কী করবে?

কী করব? তোকে নিয়ে পালিয়ে যাব। হারিয়ে যাব দূরে কোথাও। সেখানে তোকে লুকিয়ে রাখব।

দিয়া নাক ফুলিয়ে বলে, তাহলে মাহফুজের কী হবে?

সে অন্য কাউকে বিয়ে করে নেবে।

এটা কিন্তু ঠিক না।

ভালোবাসায় ঠিক বেঠিক কিছু নেই রে। ভালোবেসেছিস তো মরেছিস। আমাকেই দেখ। আত্মসম্মান বিসর্জন দিয়ে তোকে নিতে এসেছি।

আমি যদি না যাই?

জোর করে নিয়ে যাব।

যদি চিৎকার করি?

সবার সামনে দিয়ে নিয়ে যাব।

আর যদি মরে যাই?

সহসা দিয়ার মুখ চেপে ধরে রোদ। ফিসফিস করে বলে, তা হলে আমিও মরে যাব।

চলবে

অবশেষে পর্ব-০৭

0

গল্প : অবশেষে | পর্ব : সাত

দিয়া!

বলুন।

এখনও আপনি করে বলছো! দু’দিন পর আমাদের বিয়ে। তুমি করে বলো। আর জানো তো, তুমি করে বললে প্রেম-ভালোবাসা মজবুত হয়। মায়া জন্মে। বলে আরো একটু কাছে এসে দাঁড়ায় মাহফুজ। অন্ধকার ছাদে তারা দু’জন পাশাপাশি দাঁড়িয়ে।

সন্ধ্যার পর হুট করে চলে এসেছে মাহফুজ। তার হাতে ইয়া বড়ো মাছ। আরো কী কী যেন এনেছে। ভরসন্ধ্যায় মাছ কোত্থেকে নিয়ে এসেছে, সে-কথা কেউ জিজ্ঞেস করল না। দিয়ার মা আহ্লাদে আটখানা হয়ে বললেন, আরে! এ-কী কান্ড! এতো বড়ো মাছ! এটা আনতে গেলে কেন? শুধু শুধু টাকা নষ্ট।

বলে তিনি থেমে গেলেন না। মাছটা দু’হাত দিয়ে ধরে নিয়ে যেতে যেতে বললেন, বড়ো চাকরি করছো ভালো কথা। মোটা বেতন পাও সে-ও ভালো কথা। কিন্তু তাই বলে এভাবে টাকা খরচ করবে? এখনই হিসেব করে চলতে শুরু করো। ক’দিন পর বিয়ে করবে। বাচ্চাকাচ্চা হবে। তাদের ভবিষ্যতের কথাওতো চিন্তা করতে হবে। না কি?

মুখে এসব কথা বললেও দিয়ার মা বেজায় খুশি। তবে দিয়ার বাবা গম্ভীর। তিনি চোখের সামনে সবকিছু এলোমেলো দেখছেন। ইচ্ছে করলেও গুছিয়ে নিতে পারছেন না। তিনি জানেন, দিয়া মাহফুজের সঙ্গে ভালো থাকবে না। দিয়া নিজেও এ-কথা জানে। জেনেশুনে কেন যে জ্বলন্ত আগুনে পা দিতে চলেছে, তা কেউই জানে না।

মাহফুজ মিহি গলায় প্রশ্ন করে, দিয়া কোথায় আন্টি?

দিয়ার মা আহ্লাদী গলায় বলেন, ঘরেই আছে; যাও।

কিন্তু পুরো ঘরে দিয়াকে পাওয়া গেল না। দিয়া অন্ধকার ছাদে একা একা দাঁড়িয়ে। মাহফুজ যখন চুপিচুপি দিয়ার পাশে গিয়ে দাঁড়ায়, তখন দিয়া একটুও কেঁপে উঠে না। একটুও অবাক হয় না। বরঞ্চ কাঠের মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে থাকে।

মাহফুজ মিয়নো গলায় ডাকে, দিয়া!

বলুন। দিয়া ফিরে তাকায় না। যেমন ছিল তেমনই দাঁড়িয়ে থাকে।

এখনও আপনি করে বলছো! দু’দিন পর আমাদের বিয়ে। তুমি করে বলো। আর জানো তো, তুমি করে বললে প্রেম-ভালোবাসা মজবুত হয়। মায়া জন্মে।

বলো। দিয়ার কণ্ঠে বিরক্তি স্পষ্ট।

মন খারাপ?

না।

তোমাকে একটা জায়গায় নিয়ে যেতে এসেছি। যাবে আমার সঙ্গে?

কোথায়? এতক্ষণে মুখ তুলে তাকায় দিয়া।

আমার ফ্ল্যাটে। নতুন কিছু জিনিসপত্র কিনে ঘরে সাজিয়েছি। তোমার জন্য। তাই ভাবলাম, সবার আগে তোমাকেই দেখাই!

দিয়ার মন সায় দিচ্ছিল না। তবুও কী যেন মনে করে মাহফুজের সাথে তার ফ্ল্যাটে যেতে রাজি হয়ে গেল। ফ্ল্যাটটা নিঃসন্দেহে খুব যত্ন করে সাজানো হয়েছে। সব আসবাবপত্র দামি দামি। বেশিরভাগ বিদেশ থেকে আনিয়েছে। মাহফুজ ঘুরে ঘুরে দেখায় আর বলে, এটা ইতালি থেকে আনিয়েছি। এটা অস্ট্রেলিয়া থেকে। এটা থাইল্যান্ড। আর এটা আমি চাইনা থেকে এনেছি।

এইসব চোখ জোড়ানো জিনিসপত্র দেখে মন ভরে না দিয়ার। তার মনটা রোদের ঘরের পুরনো জিনিসপত্রে আটকে আছে। সে-সব জিনিসে আলাদা মায়া। আলাদা টান। আলাদা অনুভূতি। কারণ, সব জিনিসেই রোদের ছোঁয়া আছে। এখানে তা নেই।

শুক্রবার সন্ধ্যা সাতটায় অনুর বিয়ে। বিয়েটা তার বয়ফ্রেন্ড আফফাতের সঙ্গেই হচ্ছে। সেই খুশিতে অনু নিজে এসে দাওয়াত করেছে। দিয়ার মুখ ফ্যাকাশে। সে বিয়েতে যাবে না। আফফাত রোদের খুব কাচের বন্ধু। সুতরাং বিয়েতে রোদ আসবে। তার সামনে পড়লে দিয়ার মন আরো খারাপ হয়ে যাবে। হয়তো সে সেখানেই কেঁদে ফেলবে। বিয়ে বাড়িতে এমন হলে খুবই বিচ্ছিরি দেখাবে। কনে কাঁদছে না, কনের বান্ধবী কাঁদছে!

সুতরাং দিয়া যাবে না। এদিকে অনু জেদ ধরে বসল। দিয়া বিয়েতে না গেলে সে বিয়েই করবে না। এই তার কসম। এবং এ-ও বলল যে, বিয়েতে না গেলে দিয়া যেন আর কোনোদিন তার মুখ না দেখে।

তবুও দিয়া ভেবে রেখেছিল, সে বিয়েতে যাবে না। কিন্তু আজ সকাল থেকেই মনটা খচখচ করছিল। অনু এত করে বলেছে। তার পরও না যাওয়া কি ঠিক হবে?

অগত্যা দিয়া চলে এল। অনু দূর থেকে ডাকল। কাছে যেতেই মুখে ভেঙচিয়ে বলল, যাক! এলি তবে!

হুঁ, এলাম। দিয়ার মুখ মলিন।

তোর বরটার কী হয়েছে বল তো? হঠাৎ এমন চুপসে গেল কেন? কেমন যেন মনমরা দেখাচ্ছে।

বর! দিয়ার বর! অনু কি রোদের কথাই বলছে? বরের কথা শুনেই দিয়ার হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়। সে প্রসঙ্গ এড়িয়ে বলে, দুলাভাই কই রে?

ওঁর কথা বাদ দে! তোর বরের কথা বল। লোকটা অসুখ-টসুখে পড়ল নাকি?

দিয়া আবার প্রসঙ্গ পাল্টাল, তোকে আজ পরীর মতো লাগছে। দুলাভাইকে নিশ্চয়ই রাজপুত্রের মতো লাগছে! কোথায় উনি?

উফ! আসার পর থেকে দুলাভাই দুলাভাই! জ্বালিয়ে খেলি! আয় তোকে তোর দুলাভাইয়ের কাছে নিয়ে যাই। বলে কপাল চাপড়ে দিয়ার হাত ধরে টেনে নিয়ে যায় অনু। ভীড় ঠেলে আফফাতের সামনে দাঁড়িয়ে বলে, এই দ্যাখ তোর দুলাভাই। হলো? এবার শান্তি?

দিয়া লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে রাখে। অনু হঠাৎ বলে উঠে, এইযে ভাইয়া! আপনার বউকে সামলান। সে দুলাভাই দুলাভাই করে মরছে।

সহসা চোখ তুলে তাকায় দিয়া। তার থেকে খানিক দূরে আফফাতের পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে রোদ। চোখাচোখি হতেই একসঙ্গে দৃষ্টি নামিয়ে নেয় রোদ এবং দিয়া। এই অপ্রত্যাশিত দৃষ্টি বিনিময় দু’জনের বুকেই ঝড় তুলে দিয়েছে। দু’জনেই চুপচাপ। দু’জনেই আহত। দু’জনের বুকেই পাহাড় সমান বেদনা।

আমি আসছি। বলে ইতস্তত করতে করতে ভীড়ের মধ্যে হারিয়ে যায় দিয়া। রোদ কিছু না বলেই অন্য দিকে চলে যায়। অনু অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। কী হলো এটা! ওঁরা এভাবে চলে গেল কেন? তবে এই ভাবনা বেশি সময় স্থায়ী হলো না। ক্যামেরাম্যান সামনে আসতেই ছবি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল অনু।

চোখের জল মুছতে মুছতে পা চালিয়ে হাঁটে দিয়া। রাস্তাটা অন্ধকার। কোনো কোনো ল্যাম্পপোস্টে আলো জ্বলছে। কোনোটায় জ্বলছে না। দিয়া হেঁচকি তুলে কেঁদে কেঁদে পা চালায়। হঠাৎ মনে হয়, কে যেন তাকে অনুসরণ করছে।

প্রায় দশ হাত দূরে দূরে হাঁটছিল রোদ। দিয়া থেমে যাওয়ায় সে-ও থমকে দাঁড়াল। দিয়া ঘাড় ঘুরিয়ে পেছন দিকটা এক পলক দেখে নিয়ে আবার হাঁটতে শুরু করে। বাঁ দিকের গলিতে ঢুকতেই রোদ দৌড়ে গিয়ে পথ আটকায়। বলে, এদিকে যাস না। বিপদ হবে।

দিয়া অভিমানী গলায় বলে, এদিকেই যাব।

আমি বলেছি যাবি না। এদিকে অনেক বখাটে থাকে। ওরা অস্ত্রধারী। আমি চাইলেও তোকে সাহায্য করতে পারব না।

দিয়া আরো দু’পা এগোয়। রোদ ধমক দিয়ে বলে, কথা কানে যায় না? আমি মানা করেছি মানে তুই যাবি না।

দিয়া উল্টো উঁচু গলায় বলে, একশো বার যাব। হাজার বার যাব। আজ আমি যাবই।

আরো এক পা এগোতেই রোদ দিয়ার গালে চড় বসিয়ে দেয়। এর আগেও সে দিয়াকে মেরেছে। অনুশোচনা হয়নি। কিন্তু আজ রোদের ভেতরটা চাপা আর্তনাদে ভরে উঠেছে। এ-কী করল সে?

দিয়া কেঁদে কেঁদে বলে, আজ আমি এই পথ দিয়েই যাব। আজ আমাকে কেউ আটকাতে পারবে না।

রোদের মাথাটা হঠাৎ দপ করে জ্বলে উঠে। সে দাঁত কটমট করে বলে, শুনবি না? শুনবি না আমার কথা?

দিয়া প্রচন্ড অভিমানে বলে, না, শুনব না।
কিন্তু রোদের মুখের দিকে তাকিয়ে আঁতকে উঠে দিয়া। রোদের চোখ দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ছে। সে কাঁদছে!

দিয়া হাউমাউ করে বলে, শালা! তুই কাঁদছিস কেন? তুই কাঁদছিস কেন শালা?

রোদ কান্নাভেজা কণ্ঠে বলে, তোর জন্য কাঁদি। তোর জন্য। বলতে বলতে পা চালায়। দিয়া শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। তার ভেতরটা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে। ফুলে ফুলে বেরিয়ে আসছে কান্নার ঢেউ।

চলবে

অবশেষে পর্ব-০৬

0

গল্প : অবশেষে | পর্ব : ছয়

দিয়া যখন কলেজে পড়ত, তখন তার এক সহপাঠী ছিল। মাহফুজ নাম। ছেলেটা স্মার্ট, পড়াশোনায় ভালো। এমনকি তার ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ডও খুব ভালো। এদিকে দিয়ার মতো রূপবতী পুরো কলেজে দ্বিতীয়টি চোখে পড়ে না। আর তাই হয়তো মাহফুজের দৃষ্টি পড়েছিল দিয়ার উপর। কিন্তু দিয়াকে সে ঠিক বুঝতে পারত না। মেয়েটা একটু অন্যরকম। ছেলেদের থেকে দূরে দূরে থাকে। মেয়ে বান্ধবীও খুব একটা নেই। কলেজে নিয়মিত আসে না। তবুও কী করে যেন ভালো মার্কস পেয়ে যায়।

একটা বছর দেখতে দেখতেই কেটে যায়। দ্বিতীয় বর্ষের শুরুতে মাহফুজ দিয়াকে প্রেম নিবেদন করে। তবে সরাসরি নয়। চিঠির মাধ্যমে। চিঠিটা এক বান্ধবীর হাতে দিয়ে বলেছিল, এটা দিয়ার হাতে দিয়ে দিও প্লিজ। বোলো জবাবের অপেক্ষায় থাকব।

কিন্তু এক মাস কেটে যাওয়ার পরও জবাব পাওয়া গেল না। এবার মাহফুজ সরাসরি দিয়ার সামনে গিয়ে দাঁড়াল। কোনো প্রকার ভনিতা ছাড়াই বলে ফেলল, তোমাকে ভালোবাসি। বিয়ে করতে চাই।

তখনও দিয়া এড়িয়ে গেল। মাহফুজ দমে না গিয়ে আরও একবার চেষ্টা করল। তবে এবার সে একা নয়। তার পুরো পরিবার একসঙ্গে মাঠে নামল। সবাই একযোগে দিয়ার বাবার সামনে গিয়ে দাঁড়াল।

দিয়ার বাবা অমায়িক মানুষ। তিনি সবাইকে বসতে দিলেন। চা-নাশতা খাওয়া হলো। মাহফুজের পরিবার দিয়াকে চায় সেটাও জানানো হলো। এমনকি দুপুরের খাবারটাও খাওয়া হলো একসাথে। যেন কত আগের পরিচিত তারা! এমন আচরণ দেখে মাহফুজের পরিবার পুনঃপুন মুগ্ধ। তারা বউ করে কাউকে ঘরে নিলে একমাত্র দিয়াকেই নেবে।

মাহফুজের পরিবার যখন মনে মনে ধরেই নিয়েছিল বিয়েটা হচ্ছে, ঠিক তখনই দিয়ার বাবা আসল কথাটা বললেন। দিয়ার বিয়ে অনেক আগে থেকে ঠিক হয়ে আছে। রোদের সঙ্গে। মাহফুজের পরিবার চাঁদ হাতে পেয়েও পেল না। তারা যখন নিরাশ হয়ে চলে যাবার উদ্যোগ করছিল, তখন মাহফুজ গোঁ ধরে বসল৷ সে দিয়াকে আঙটি না পরিয়ে এক পা-ও নড়বে না। কিন্তু দিয়ার বিয়ে যে আগে থেকে ঠিক হয়ে আছে!

সেদিন মাহফুজ চলে যেতে বাধ্য হলেও একেবারে আশা ছেড়ে দেয়নি। দিয়ার পথ আটকানো, ফুল দেওয়া, মিষ্টি মিষ্টি দু’একটা কথা শোনানো এসব প্রায়ই করত। দিয়া পাত্তা দিত না। যথাসাধ্য এড়িয়ে যেত।

শেষের দিকে মাহফুজ হাল ছেড়ে দিয়েছিল। এবং সেই সাথে মেয়েদের উপর প্রবল বিরক্তিও জন্মেছিল ভিতরে ভিতরে। মেয়েরা এমন কেন? এদের বুঝতে পারার ক্ষমতা কি কোনো পুরুষ কোনো কালে পাবে না? আগে মাহফুজের কয়েকজন মেয়ে বন্ধু ছিল। দিয়ার কাছে বারবার ব্যর্থ হবার পর মেয়ে বন্ধুগুলোর সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছিল সে। বন্ধ মানে সম্পূর্ণ বন্ধ। যদিও ওঁদের কোনো দোষ ছিল না। কিন্তু মাহফুজের বিরক্তি সব মেয়েদের প্রতি এসেছিল৷

সেই মাহফুজ এত বছর পর আজ দিয়াকে দেখে গেছে। স্ত্রী হিসেবে দিয়াকে তার অনেক আগে থেকেই পছন্দ। শুধু দিয়া মত দেওয়া বাকি ছিল। এবার যেহেতু সে নিজে থেকে ডাকিয়েছে, তার মানে সে রাজি। যদিও আঙটি পরানো কিংবা বিয়ের তারিখ নিয়ে কথা হয়নি। দেখাদেখি হয়েছে শুধু।

সব কথা জানে রোদ। আবার জানতে এসেছে। দিয়ার বাবার মুখে শেভিং ক্রিম। তিনি দাড়ি কামাচ্ছিলেন। রোদকে দেখেই বললেন, আরে! কী খবর? বোসো বোসো। মুখ ধুয়ে আসি।

তিনি মুখ ধুয়ে আসার পর রোদ মুখ তুলে তাকায়। বলে, আজ নাকি বরপক্ষ দিয়াকে দেখতে এসেছিল?

দিয়ার বাবা দৃষ্টি নত করে ফেলেন। তার চোখে মুখে অপরাধীর ছায়া। তবে তিনি কোনো অপরাধ করেননি। রোদকে না জানিয়ে আরেকপক্ষের সামনে দিয়াকে উপস্থিত করেছেন। এই যা! কিন্তু এ-ই তার কাছে পাহাড় সমান অপরাধ বলে মনে হচ্ছে। তিনি এই মুহূর্তে রোদের দৃষ্টির আড়ালে চলে যেতে পারলে বাঁচেন!

তোমাদের মধ্যে কি ঝগড়া টগড়া কিছু হয়েছে?

রোদ গলা ঝেড়ে বলে, ঝগড়া হয়নি। দিয়া যা করেছে ভালোই করেছে। আমিও তাই চেয়েছিলাম।

দিয়ার বাবা অবাক হয়ে চেয়ে থাকেন। রোদ মুচকি হেসে বেরিয়ে আসে। তার হাতে দু’টো তাজা লাল গোলাপ। একটি চকোলেট। আর একটি উপন্যাসের বই।

বাসায় ফিরে সদ্য কেনা উপন্যাসের বইয়ে আগুন ধরিয়ে দেয় রোদ। সেই আগুনে চকোলেট পোড়ায়। পোড়ায় একজোড়া লাল গোলাপ। এগুলো সে দিয়াকে দেবে বলে কিনেছিল। দেওয়া হলো না। আজ তার সবকিছু কেমন যেন বিষাদ লাগছে। সে নিজেই বলেছিল দিয়া যেন জীবনসঙ্গী হিসেবে অন্য কাউকে বেছে নেয়। কিন্তু দিয়া এত সহজে মেনে নেবে, তা ভাবনার বাইরে ছিল।

অন্ধকার ছাদে উঠে আসে রোদ। ছাদের এই জায়গায়। ঠিক এই জায়গায় দিয়াকে দাঁড় করিয়ে রেখেছিল রোদ। তখন বৃষ্টি ছিল। ঝুম বৃষ্টি। এখন বৃষ্টি নেই। আকাশটা কেমন যেন থমথমে হয়ে আছে। চাঁদ নেই। তারা নেই। রোদের মনের আকাশেও চাঁদ নেই। তারা নেই। আছে শুধু খন্ড খন্ড পাহাড় সমান বিষাদ। সেই বিষাদ প্রতিনিয়ত চিবিয়ে খাচ্ছে।

রোদের চোখের কোলে বিন্দু বিন্দু জল জমেছে। যতদূর মনে পড়ে, মুখে বুলি ফুটবার পর সে কোনোদিন কাঁদেনি। আজ কাঁদছে। কিন্তু কেন? দিয়ার জন্য? দিয়াকে তো সে নিজেই দূরে সরিয়ে দিয়েছে। তবে কেন?

নাহ!
রোদ সত্যি সত্যি দিয়াকে ভালোবাসে। সেই দিয়া দূরে সরে গেলে রোদ ভালো থাকবে না। একদম না। তবে কি ফোন দিয়ে দিয়ার রাগ ভাঙানোর চেষ্টা করা উচিৎ? মনের সব কথা বলে দেওয়া উচিৎ?
এই মুহূর্তে যদি দিয়া সামনে থাকত, তবে রোদ ছুটে গিয়ে দিয়ার মাথাটা শক্ত করে বুকের সাথে চেপে রাখত। ফিসফিস করে বলত, তুই আমার ভালো থাকার ওষুধ। দিনশেষে আমার তোকেই চাই।

একটা চাপা দীর্ঘশ্বাসে বাতাস ভারী হয়। রোদ পকেট থেকে স্মার্টফোন বের করেও দিয়াকে ফোন দেয় না। তার এবং দিয়ার মাঝখানে বর্তমানে যে দেয়াল দাঁড়িয়ে, সেই দেয়ালের নাম ইগো। সেই ইগো তাকে দমিয়ে রাখে। রোদ সত্যি সত্যি থেমে যায়। সে দিয়াকে আগ বাড়িয়ে ফোন দেবে না। কী দরকার ইমেজ ছোটো করার?

বহুদিন পর রোদ মায়ের কাছে যায়। তখন রাতের একটা। মা রোদকে দেখে আঁতকে উঠেন, কী রে বাপ! এত রাতে!

রোদ কথা বলে না। মা’র হাত ধরে বিছানায় টেনে নিয়ে যায়। মা’কে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে তার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ে। মা আন্দাজ করে নেন, খারাপ কিছু ঘটেছে। না হলে রোদ এমন করার কথা না।

আমি আর দেশে থাকব না, মা। যত দ্রুত সম্ভব দেশের বাইরে চলে যাব। রোদ মায়ের কোলে মুখ গুঁজে বলে। মা তার চুলের ফাঁকা আঙুল বুলিয়ে দিতে দিতে বলেন, তাই যাস। কিন্তু হঠাৎ করে কী হলো যার জন্য তুই বিদেশে চলে যাবি?

সে কথার জবাব দেয় না রোদ। তার চোখদু’টো ভিজে চপচপ করছে। গলাটা ধরে এসেছে। কথা বলার মতো শক্তি নেই। রোদ ধরা গলায় বলে, কালকেই ভিসার জন্য অ্যাপ্লাই করব। দোয়া কোরো আমার জন্য।

চলবে

অবশেষে পর্ব-০৫

0

গল্প : অবশেষে | পর্ব : পাঁচ

কিন্তু এই সিক্রেট রুমের কী দরকার ছিল?

দিয়ার প্রশ্নের জবাবে রোদ মুচকি হাসে শুধু।
এই ঘরটা বিশাল বড়ো। গাদাগাদি জিনিসপত্র এলোমেলো করে রাখা। বেশিরভাগ জিনিস ফেলনা, নষ্ট। সেগুলো কোনো রকম কাজে আসবে বলে মনে হয় না। দিয়ার দৃষ্টি আটকায় মেঝেতে পড়ে থাকা গোলাকার স্টিলের বাক্সটার উপর। দিয়া সেটা হাতে তুলে নেয়। বলে, এটা কী জিনিস?

জিনিস বলিস না। এটা একটা বাক্স। স্পেশাল বাক্স। স্পেশাল কেন জানিস?

কেন? দিয়া সচকিত প্রশ্ন করে।

রোদ দম নিয়ে বলে, এটা দিয়ে তুই আমাকে আঘাত করেছিলি। তোর হয়তো মনে নেই। তখন আমরা খুব ছোটো ছিলাম। আমার কপালে যে দাগটা দেখছিস… বলে কপালের উপর থেকে চুল সরিয়ে বহু পুরনো কাটা দাগ দেখায় রোদ।

এই এখানটায় ছুঁড়ে মেরেছিলি। কেটে গিয়েছিল অনেকখানি।

দিয়া অপরাধবোধে দৃষ্টি নামিয়ে নেয়। ছোটোবেলা সে রোদকে আঘাত করেছে! ভাবতেই অবাক লাগে। এই প্রতিশোধ-ই বোধহয় নিচ্ছে রোদ। ভালোবেসেও বাসছে না। নানান ছুতো করে শাস্তি দিচ্ছে। আর…

এ-ঘরে জানালা নেই। ফ্যানও নেই। গাদাগাদি জিনিসপত্র কেমন যেন গন্ধ ছড়াচ্ছে। গরম লাগছে খুব। দম বন্ধ হয়ে আসার উপক্রম। দিয়ার গা থেকে দরদর করে ঘাম ঝড়ছে। পরনের হালকা নীল জামার পিঠের দিকে, বগলের নিচে আরও বিভিন্ন জায়গায় ভিজে জবজবা হয়ে আছে। অস্বস্তি লাগছে। এই মুহূর্তে কাপড়গুলো বদলে ফেলতে পারলে ভালো হত।

এই জুতোজোড়া কার? দিয়া প্রশ্ন করে।

খুব ছোটো ছোটো একজোড়া জুতো হাতে তুলে নেয় রোদ। জুতোজোড়া কোলে নিয়ে বলে, এগুলো তুই পরতি। তখন তোর বয়স তিন বছর।

আর এই কানের ঝুমকো? এই নূপুর? এই চুড়িগুলো? আর এই ওড়না? এরকম ওড়না তো আমারও ছিল। কয়েকদিন ধরে খুঁজে পাচ্ছি না।

রোদ মাথা নিচু করে বলে, সবকিছু তোরই। আমি চুরি করেছি।

চলে আসার সময় এক টুকরো ভাঁজ করা কাগজ এগিয়ে দেয় রোদ। দিয়া কাগজ হাতে নিয়ে বলে, এটা কী?

চিরকুট। সময় করে পড়ে নিস।

দিয়া সঙ্গে সঙ্গে কাগজের ভাঁজ খুলতে যাচ্ছিল। রোদ বাধা দিয়ে বলে, এখন না। বাসায় গিয়ে পড়বি। স্পেশাল। বলে চোখ টিপ দেয় রোদ। দিয়া মৃদু হেসে বেরিয়ে আসে।

বাসায় এসে ভাবতে বসে যায় দিয়া। চিঠিটা এখন পড়বে? না কি গভীর রাতে পড়লে ভালো হবে? কী আছে এই চিঠিতে? রোদ তো দিয়াকে ভয় পায় না। যা বলার, দিয়ার সামনে দাঁড়িয়ে বলে ফেলতে পারত। তবে চিঠি লিখতে গেল কেন?

ভাঁজ করা কাগজের টুকরোটা বালিশের নিচে রেখে বাথরুমে চলে যায় দিয়া। লম্বা সময় শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে থাকে। বেরিয়ে এসে বই পড়ে। বিছানায় গড়াগড়ি খায়। উদ্বেগ কাটে না। কী আছে চিঠিতে?

রাত বারোটায় বালিশের নিচ থেকে চিঠিটা বের করে আনে দিয়া। কাগজের ভাঁজ খুলতেই আরো এক টুকরো কাগজ পড়ে যায়। সেই ছোট্ট কাগজে বড়োবড়ো অক্ষরে লেখা, ভুল বুঝিস না।
আশ্চর্য! ভুল বুঝবে কেন?

সব চিন্তা বাদ দিয়ে মূল চিঠি পড়তে শুরু করে দিয়া।

প্রিয় বউ,
স্যরি, তোকে বউ বলেই সম্বোধন করলাম। এজন্য ক্ষমা চাই। কিন্তু কী জানিস, তোকে আমার বউ বলে ডাকতেই ভালো লাগে। তাই ডাকলাম। মন খারাপ করিস না। লক্ষ্মী বউ!

তোর আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে সেই ছোটোবেলায়। তখন অতশত বুঝতাম না। শুধু পরিবারের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, একদিন তুই আমার বউ হবি।

ভালোবাসার মানে তখন মা-বাবা আর বুড়ো দাদু। কিন্তু একদিন, হঠাৎ একদিন। স্যরি, দিন নয়, রাত। এক রাতে যখন তুই বিপদে পড়েছিলি, তখন তখন আমিই তোকে সাহায্য করেছিলাম। সেদিন রাত ন’টায় কোচিং শেষে বাসায় ফিরছিলি। হঠাৎ ঝুম বৃষ্টি। অবশ্য, তোর সঙ্গে ছাতা ছিল। বৃষ্টির জল তোকে ছুঁতে না পারলেও একদল বখাটে ছুঁতে চেয়েছিল তোর নরম শরীর। ভোগ করতে চেয়েছিল তোকে। সেদিন ঠিক সময়ে যদি সেখানে উপস্থিত না হতাম, তবে হয়তো…

পরদিন আমিই ওই কোচিং সেন্টার বন্ধ করিয়েছিলাম। রাত ন’টা পর্যন্ত কোচিং। মেয়েদের সেইফটি কে দেবে? কোচিংয়ের এক স্যার এলোমেলো যুক্তি দিচ্ছিল। সেদিন ইয়া বড়ো ইট স্যারের মাথায় মেরেছিলাম। তারপর তোর হাত ধরে ভোঁ-দৌড়!

সেদিনের কথা আজও মনে পড়ে। তখন তুই ক্লাস এইটে পড়িস। আর আমি ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে। সেদিন তোর হাত ধরে পালানোর সময়ের অনুভূতি লিখে প্রকাশ করার মতো না। বিশ্বাস কর, সেদিনের অনুভূতি আমি কোনোদিন ভুলতে পারব না। সেদিন প্রথমবার মনে হয়েছিল, আমি তোকে ভালোবাসি।

এটুকু পড়ে স্তব্ধ হয়ে বসে থাকে দিয়া। তার হাত কাঁপছে। পা কাঁপছে। বুক কাঁপছে। চোখের কোলে বিন্দু বিন্দু জল। এ-অশ্রু আনন্দের। দিয়া লম্বা নিঃশ্বাস ছেড়ে চিঠির বাকি অংশ পড়তে শুরু করে।

তবে তোর ফেলনা জিনিসপত্র একদম ছোটোবেলা থেকেই সংগ্রহ করে রাখতাম। তোর ছেঁড়া জুতো, আধ-খাওয়া ললিপপ, পুরনো ফ্রক এইসব। কিন্তু সেদিনের পর থেকে তোর জিনিসপত্র চুরি করতে শুরু করেছিলাম। সেসব চুরি করে জমানো জিনিসপত্র একটা গোপন ঘরে রেখে দিয়েছি। আমার সিক্রেট রুমে।

কিন্তু ইদানীং খুব দ্বিধায় ভোগছি, জানিস? আমি কিন্তু আজও তোকে ভালোবাসি। এই ভালোবাসা কীরকম, তা জানি না। তবে বাসি। এটাই সত্যি। তবে দ্বিধা হচ্ছে অন্য জায়গায়। আমাদের বিয়ে নিয়ে আজকাল খুব বলাবলি হচ্ছে জানিস তো? দুই পরিবারই চাচ্ছে বিয়েটা যত দ্রুত সম্ভব হয়ে যাক। কিন্তু বিয়ের কথা উঠতেই আমার খারাপ লাগা শুরু হয়। মনে হয়, কেউ আমাকে খাঁচায় বন্দি করতে চলেছে।

আশা করি বুঝতে পারছিস, কী বলতে চাচ্ছি। তুই বুদ্ধিমতী মেয়ে। সব বুঝিস, জানিস। আমার মনের ব্যাপারটাও বুঝবি। আমি তোকে সত্যি ভালোবাসি। তবে এখনি বিয়ের কথা ভাবতে পারছি না। কতদিন পর বিয়ের কথা ভাবতে পারব তা-ও জানি না। তবে আমার মনে হয়, তোর অন্য কাউকে বিয়ে করে নেওয়া উচিত। কেন শুধু শুধু আমার মতো একজনের জন্য অপেক্ষায় থাকবি?

ভুল বুঝিস না, লক্ষ্মী বউ। আবার বউ ডাকলাম। ক্ষমা করে দিস। তুই ভালো থাক এ-ই আমি চাই।

ইতি,
তোর বর।

ফোঁটা ফোঁটা অশ্রুজল পড়ে হাতের চিঠিটা ভিজে যাচ্ছে। দিয়ার বুক দুরুদুরু করছে। নিঃশ্বাসে কাঁপন। শরীর এতটাই দুর্বল, নড়াচড়া অবধি করতে পারছে না। দিয়া এভাবে শক্ত পাথরের মতো বসে থাকে প্রায় এক ঘন্টা। বাথরুমে গিয়ে মুখে এক ঝাপটা পানি মেরে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে থাকে। সে কি দেখতে খারাপ? কিন্তু সবাই যে বলে দিয়ার মতো সুন্দরী এ-এলাকায় একটাও নেই! বাবা বলেন দিয়ার মতো সুন্দরী পুরো সিলেটে দ্বিতীয়টি নেই!

দরজায় দাঁড়িয়ে ধরা গলায় ডাক দেয় দিয়া, বাবা, ও-বাবা!

কী রে, এখনও ঘুমাসনি? বাবা ঘুম জড়ানো চোখে বলেন।

আমি বিয়েটা করছি না বাবা। দিয়া গম্ভীর গলায় বলে।

কেন রে? রোদের সাথে ঝগড়া হয়েছে নাকি?

না, ঝগড়া হয়নি। ওঁকে আমার পছন্দ না। তুমি অন্য কাউকে দ্যাখো। আমি এ-মাসেই বিয়ে করব।

চলবে

অবশেষে পর্ব-০৪

0

গল্প : অবশেষে | পর্ব : চার

শীতের সকালে পরম মুহূর্তে কতটা সময় কেটে গিয়েছিল তারা কেউই জানে না। দিয়া যখন একটু দূরে সরে গেল, তখন তার চোখের কোলে জল। রোদ বাঁ হাতের পিঠ দিয়ে ঠোঁট মুছে বলে, খুব সেয়ানা হইছিস! তবে মনে রাখিস, এই রোদকে বশ করা অত সহজ না। বলে শার্টের কলার ঝাড়া দিয়ে চলে যায়। দিয়া চোখের কোলে জল নিয়ে বসে থাকে। হঠাৎ বিছানার উপরে থাকা মোবাইল ফোনটা মৃদু কম্পন তুলে বেজে উঠে।

হ্যালো, অনু, বল! দিয়া ফোন কানে লাগিয়ে বলে।

ওপাশ থেকে চঞ্চল নারীকণ্ঠ ভেসে আসে, কই রে, আসছিস তো? দশটার মধ্যে রেস্তোরাঁয় পৌঁছতে হবে।

আসছি, আসছি। মনে আছে। বলে ফোন রেখে থম মেরে বসে থাকে দিয়া। আজ তার বান্ধবী অনুর অ্যানিভার্সারী। ম্যারেজ অ্যানিভার্সারী নয়। আজ অনু আর তার বয়ফ্রেন্ডের প্রেম জীবনের এক বছর পূর্ণ হলো। অনুর ধারণা, আজ তার বয়ফ্রেন্ড তাকে বিয়ের প্রপোজাল দেবে। তাই সে একটু টেনশানে আছে। আর এজন্যই দিয়াকে রেস্তোরাঁয় আসতে বলেছে। সে পাশে থাকলে টেনশান কিছুটা হলেও কমবে।

ওঁরা দেখা করার কথা সকাল দশটায়। শহরের কোনো এক গলির ছোটো রেস্তোরাঁয়। রেস্তোরাঁর নাম জেবা ফুড। আজ থেকে এক বছর আগে এক দিন সকাল দশটায় এই রেস্তোরাঁয় দেখা হয়েছিল দু’জনের। তারপর নাম্বার আদান প্রদান। কথা বলা। একসময় প্রেম। সে-সব কথা দিয়া বহুবার শুনেছে। অনু কাল রাতেও পইপই করে বলে দিয়েছে, ঠিক সময়ে চলে আসবি কিন্তু। দেড়ি করিস না। মনে থাকে যেন, সকাল দশটা। শার্প।

দিয়া মুখ ফুলিয়ে বলেছে, কেন রে ভাই? তোর বয়ফ্রেন্ড। তুই দেখা করবি। মাঝখানে আমাকে টানতে যাবি কেন? আমাকে কাবাব-মে-হাড্ডি বানানোর কী দরকার?

অনুর এক কথা, টেনশান হচ্ছে খুব। তুই সঙ্গে থাকলে সেটা কমবে। মানা করিস না। প্লিজ! প্লিজ! প্লিজ!

দিয়া যখন রেস্তোরাঁয় পা রাখল, তখন দশটা বেজে সতেরো মিনিট। দিয়া জিভ কেটে ভেতরে পা বাড়ায়। পুরো রেস্তোরাঁয় ছড়ানো ছিটানো টেবিল চেয়ারগুলো খুব সুন্দর করে সাজিয়ে রাখা। একজন কাস্টমারও নেই। হয়তো পুরোটা বুক করা হয়েছে। দেয়ালে টানানো ডিজিটাল ঘড়িটা জানান দিচ্ছে, দশটা বেজে আঠারো মিনিট। রেস্তোরাঁর একদম শেষ মাথায় বসে আছে দু’জন। একজন অনু। আরেকজন…

অনু চেয়ার ছেড়ে উঠে এসে বলে, এখন এসেছিস! বলেছিলাম ঠিক দশটায় আসতে। এখন দশটা আঠারো। তোর তো টাইম সেন্স একদম নেই! বলে হাত ধরে টেনে নিয়ে যায়। টেবিলের উপর দুই পাউন্ডের কেক রাখা। কেকে লেখা, হ্যাপি অ্যানিভার্সারী। কিন্তু চেয়ারে বসে থাকা মানুষটা! চেয়ারে বসে থাকা মানুষটা স্বয়ং রোদ!
সহসা দিয়ার বুক ধক করে উঠে। তবে কি রোদই অনুর বয়ফ্রেন্ড? দিয়ার হাত-পা কাঁপতে থাকে। চোখের কোনে জল জমে যায়। সে কাঁপা হাতে ঝাপসা চোখ মুছে নেয়। হাতের পার্সটা মাটিতে পড়ে যায়। সেদিকে খেয়াল নেই। হঠাৎ অনুর স্পর্শে দিয়ার ঘোর কাটে। দিয়া স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু পেরে উঠে না৷ তার বুক এত দ্রুত ধুকপুক করতে থাকে যে…

অনু রোদকে বলে, এই হলো আমার বান্ধবী। দিয়া।

রোদ সঙ্গে সঙ্গে চোখ তুলে তাকায় এবং বলে, তুই! তুই এখানে কী করতে এসেছিস?

দিয়ার গলা দিয়ে কথা বেরোয় না। অনু সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে, আপনি চেনেন ওঁকে?

রোদ তাচ্ছিল্য করে বলে, আমার বউকে আমি চিনব না?

অনু যেন আকাশ থেকে পড়ে। বলে, দিয়ার বাচ্চা! তুই বলেছিস তোর বিয়ে হয়নি। এদিকে তোর জামাই আছে! চিটার! লায়ার!

দিয়া হতভম্বের মতো দাঁড়িয়ে থাকে। কী হচ্ছে এসব! রোদ বলে, সে-সব কথা বাদ দিন। আপনার বয়ফ্রেন্ড এখনও আসছে না কেন?

অনু তাচ্ছিল্য করে বলে, শুধু আমার বয়ফ্রেন্ড? আপনার বন্ধু না?

এতক্ষণ দিয়ার মনে হচ্ছিল, বুকের উপর কে যেন পাথর চাপা দিয়েছে। এই মুহূর্তে একটু স্বস্তি মিলল। যাক! রোদ তা হলে অনুর বয়ফ্রেন্ড না! অনুর বয়ফ্রেন্ডের বন্ধু!

এই, দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কী দেখছিস? বোস! রোদ দিয়াকে ধমক দিয়ে বলে।

অনু মৃদু হেসে বলে, আপনি অনুকে তুই করে বলেন! ব্যাপারটা কিউট কিন্ত!

রোদ বলে, আমাদের আরো অনেক কিউট কিউট ব্যাপার আছে। সেসব বললে দিয়া রাগ করবে।

দিয়াও আপনাকে তুই করে বলে নাকি? অনু প্রশ্ন করে।

আমাকে তুই করে বলবে! কান টেনে ছিঁড়ে ফেলব না?

রোদের কথায় দিয়া মুখ ভেঙচায়। অনু বলে, সত্যি ভাইয়া, আপনার কথাবার্তা খুবই কিউট এবং রোমান্টিক। কিন্তু আপনার বউ মোটেও সেরকম না। ওঁ আস্ত একটা লায়ার। না হলে আমি তার এত কাছের বান্ধবী, অথচ তার বিয়েতে আমাকে দাওয়াত দিলো না! বলে কিনা, সে নাকি এখনও আনম্যারেড!

রোদ চোখ রাঙিয়ে বলে, কী রে, এসব বলেছিস তুই?

দিয়া ঠোঁট উল্টে জবাব দেয়, ঠিকই তো বলেছি!

রোদ কোনোকিছু না ভেবেই বলে, তা হলে আজ ভোরে ঘুম থেকে উঠে গোসল…

দিয়া রোদের মুখে আঙুল দিয়ে বলে, চুপ!

অনু মুখ টিপে হাসে। দিয়া বলে, তুই ভাইয়ার কথা বিশ্বাস করিস না। উনি মিথ্যে বলছে।

অনু অবাক হয়ে বলে, ও-কীরে! নিজের বরকে ভাইয়া বলছিস!

দিয়া ভেঙচি দিয়ে বলে, বর না কচু! হুহ্!

অনুর বয়ফ্রেন্ড যখন আসে, তখন দশটা পঁয়ত্রিশ মিনিট। অনু একশ্বাসে বলে, দশটায় আসার কথা। এখন কয়টা বাজে? তোমার কি একটুও টাইম সেন্স নেই? আজ আমাদের অ্যানিভার্সারী। তুমি আজকেও লেট করলে!

সঙ্গে সঙ্গে রোদ বলে উঠে, শালা! দশটায় আসতে বলে নিজেই সাড়ে দশটায় আসলি? আমার টাইমের ভ্যালু কে দিবে?

কেক কাটার পর রোদ বাহানা করে বেরিয়ে আসে। দিয়াকে বলে, এই, তুই আমার সাথে আয়।

রাস্তায় নেমে এসে রোদ বলে, আজ তোকে একটা বিশেষ জায়গায় নিয়ে যাব।

দিয়া প্রশ্ন করে, কোথায় নিয়ে যাবে?

এত প্রশ্ন করিস না। গেলেই দেখতে পারবি।

তারা যখন রিকশা করে রোদের বাসার সামনে আসে, তখন দিয়া সন্দেহের স্বরে বলে, এই তোমার বিশেষ জায়গা?

রোদ নিশ্চুপ। তার শোবার ঘরে ফ্রেমে বাঁধাই করা বিশাল ছবি দেয়ালের সাথে লেপ্টে আছে। সেই ছবিটা রোদের৷ সেটা ঠেলে দিতেই নতুন প্রবেশ পথ উন্মুক্ত হয়। ভিতরের ঘরটা অন্ধকার। রোদ চোখ টিপে বলে, আমার সিক্রেট রুম। চল তোকে দেখাই।

সুইচ টিপতেই ঘরটা ঝলমলে আলোয় আলোকিত হয়ে যায়৷ ঘরে জিনিসপত্র অনেক। সবার আগে চোখ পড়ে দেয়ালে ঝুলন্ত বাচ্চা শিশুর ছবির দিকে। রোদ ছবিটা দেখিয়ে বলে, এটা কে, বলতে পারিস?

দিয়া অনেক্ষণ চেয়ে থেকে বলে, এটা কার ছবি?

চিনতে পারছিস না?

দিয়া মুখে আঙুল দিয়ে বলে, না তো! কে ওঁ?

রোদ ছবিতে স্পর্শ করে বলে, ঠোঁটের তিলটা দ্যাখ।

মুহূর্তেই দিয়ার আপাদমস্তকে শিহরণ জাগে। সে বিস্ফোরিত কণ্ঠে বলে, আমার ছবি!

চলবে
মো. ইয়াছিন
#অবশেষে