Wednesday, July 16, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 367



প্রণয়ের রংধনু পর্ব-১২+১৩

0

#প্রণয়ের_রংধনু🖤
#পর্ব- ১২
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
‘ নিজের প্রাক্তনের সাথে আপনি এখনো যোগাযোগ রেখে চলেছেন মিস অনন্যা, এম আই রাইট?’
ফারিশের প্রশ্নে বিন্দুমাত্র অবাক হয়নি অনন্যা। সে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে। কোন জবাব দেয় না। ফারিশ ফের আরেকটি সিগারেট জ্বালাতে জ্বালাতে বলে,
‘নিরবতা সম্মতির লক্ষন, মিস। ‘

‘ আমি কিন্তু একবারও অস্বীকার করেনি। তাছাড়া আমি কার সাথে যোগাযোগ করবো কিংবা করবো না। তার জন্যে অন্তুত আপনার থেকে পারমিশন নিবো না মি: ফারিশ খান। ‘

অনন্যার অকপটে বলা কথাগুলো শুনে সিগারেট টা ফেলে দিয়ে, পায়ের নীচে পিষে ফেলে ফারিশ।

‘ আপনার কথা শেষ হয়ে থাকলে, আমি এখন আসছি।’
ফারিশ তৎক্ষনাৎ তড়িৎ গতিতে উঠে দাঁড়িয়ে বললো, ‘ ওয়েট মিস অনন্যা। এখনো কিন্তু আপনার শাস্তি বাকি রয়েছে। ‘

অনন্যা কাঠকাঠ গলায় বললো, ‘ আপনার ভাষ্যমতে আমি অন্যায় করেছি যখন, তখন আমি আপনার দেওয়া যেকোন শাস্তি মাথা পেতে নিবো। অনন্যা হাওলাদার কখনো শাস্তিকে ভয় পায় না। ‘

‘ ওহ আই সি আজ আমিও দেখবো, আপনার কতটা সাহস মিস অনন্যা। ‘ কথাটি বলেই ফারিশ এক পা দু পা করে অনন্যার দিকে এগিয়ে যায়। ফারিশকে এগোতে দেখে, অনন্যাও পিছিয়ে যেতে থাকে। ফারিশ এগোতে এগোতে অনন্যার অনেকটা কাছে চলে আসে। দুজনেই যেন দুজনের নি:শ্বাসের শব্দ শুনতে পারছিলো। ফারিশ আরেকটু এগোতেই, তৎক্ষনাৎ পিছিয়ে যেতে গিয়ে, সুইমিংপুলে পরে যায় অনন্যা। তা দেখে বাঁকা হাসে ফারিশ। অনন্যা হাতড়ে পানিতে কোনমতো সাঁতরে উঠার চেষ্টা করে, কিন্তু সে কিছুতেই ঠায় পাচ্ছে না। সুইমিংপুলটা বেশ গভীর! সে সাঁতার পারে না। নি:শ্বাসটুকু আটকে যাওয়ার অবস্হা তার। সে হাত উঁচিয়ে বার বার সাহায্য চাওয়ার চেষ্টা করছে কিন্তু ফারিশ এগিয়ে গেলো না। সে সিটি বাজিয়ে সুইমিংপুলের চারিপাশে অনবরত ঘুরতে লাগলো। বেশ আনন্দ লাগছে তার! প্রতিশোধের তীব্র নেশা ফারিশের মস্তিকে প্রবেশ করছে, যার ফল অতি ভয়ংকর হতে চলেছে।

_________________

মিসেস শেফা বেগম তার স্বামীর জন্যে খাবার নিয়ে হসপিটালে এসেছেন, তার স্বামীর অবস্হা শোচনীয় না হলেও, তেমন উন্নতি হয়নি। তিনি কেবিনে প্রবেশ করতেই দেখলেন, লতিফ হাওলাদারের মুখে মাস্ক খুলে, শেফা বেগমকে কাছে ডাকছেন। তিনি দ্রুত এগিয়ে গিয়ে বসে বললেন,

‘ তুমি মাস্ক খুলে ফেললে কেন? যদি কেন সমস্যা হয়। তাড়াতাড়ি লাগিয়ে ফেলো। ‘

লতিফ হাওলাদার জোড় জোড়ে নি:শ্বাস ছেড়ে বললেন, ‘ আগে তুমি বলো, আমার মেয়ে কোথায় শেফা? তুমি কি লুকাচ্ছো আমার থেকে? আমার মেয়ে, আমার এমন অবস্হাতেও কেন হাসপাতালে আসছে না। তার মানে কিছু তো একটা হয়েছে। উত্তর দাও, শেফা। ‘

লতিফ হাওলাদার কথাগুলো বলার সময় বুকে হাতে দিয়ে জোড়ে জোড়ে নি:শ্বাস ফেলছেন। শেফা ঘাবড়ে গিয়ে বললেন, ‘ ওগো! তুমি শান্ত হও। এইভাবে উত্তেজিত হয়ে পরলে, তুমি অসুস্হ হয়ে যাবে। ‘

লতিফ হাওলাদার স্ত্রীর কথা শুনলেন, তিনি ফের প্রশ্ন করলেন,’ আমাকে উত্তর দাও শেফা। আমার মেয়ে কোথায়? সে ঠিক আছে তো?’

শেফা বেগম দীর্ঘশ্বাস ফেলে, শুরু থেকে সকল কিছু খুলে বলতে থাকলেন।

_________________
অপরদিকে, অভি তার উকালতির বইগুলে নিয়ে স্টাডি রুমে বসে ছিলো। মনটা তার বড় আনচান করছে। অস্হির অস্হির লাগছে! একটু আগেও তো
অনন্যার সাথে কথা হয়েছিলো কিন্তু তবুও কেন যেন তার মন মানছে না। মনে হচ্ছে কোন কিছুই ঠিক নেই। অনন্যা ফারিশ খানের বাড়িতে আছে, বিষয়টি জানার পর থেকেই বেশ অদ্ভুদ লাগছে তার। অনন্যার জন্যেও দুশ্চিন্তা অনুভব হচ্ছে তার। অনন্যার সাথে কথা না বললে বোধহয় তার দুশ্চিন্তা দূর হবে না। অভি হাত বাড়িয়ে ফোনটা হাতে নিলো নিজের সমস্ত ইগোকে সরিয়ে, পুনরায় ফোন করলো অনন্যাকে। বেশ অনেকক্ষন রিং হলো কিন্তু কেউ ধরলো না। অভি ফোনটা রেখে, মাথায় হাত দিয়ে বিড়বিড়িয়ে বললো, ‘ আমার এতো অস্হির লাগছে কেন? অনন্যা ঠিক আছে তো?’

__________
অনন্যা হাত বাড়িয়ে কোণায় গিয়ে, ঠায় নেওয়ার শক্তিটুকুও পাচ্ছে না। সারা শরীর তার ঠান্ডায় যেন জমে বরফ হয়ে গিয়েছে। ঠোট নাড়িয়ে কি যেন বিড়বিড়িয়ে যাচ্ছে সে। অনন্যার মনে হচ্ছে সে অতলে ডুবে গিয়ে, হারিয়ে যাবে অচিনপুরে। যেখানে কেউ তাকে ভুল বুঝবে না। কেউ তাকে শাস্তি দিবে না। সে মুক্ত পাখির ন্যায়,নতুন করে বাঁচবে। অনন্যা ডুবে যাওয়ার পূর্বেই, ফারিশ সুইমিংপুল লাফ দিয়ে, সাঁতরে অনন্যার হাত ধরে, তাকে পাজকোলে তুলে, উপরে নিয়ে আসে। অনন্যার আখিজোড়া নিবদ্ধ! গোলাপী চিকন অধরজোড়া কেঁপে চলেছে অনবরত। ফারিশ অনন্যাকে নিয়ে তার ঘরের দিকে নিয়ে যেতে থাকে। তখন রাত ১২ টা। ক্লাব থেকে আজ বেশ তাড়াতাড়ি ফিরেছে আরশ। কি মনে করে যেন সে অনন্যার ঘরের দিকে পা বাড়াতে গিয়ে, থেমে যায়। অনন্যাকে কোলে নিয়ে, ফারিশ অনন্যার ঘরে প্রবেশ করছে। তা দেখে ভ্রু কুচকে তাঁকিয়ে, তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে আরশ বলে, ‘ ওহ আচ্ছা! তবে এই ব্যাপার! দিনের বেলা অনন্যা হয়ে যায় ফারিশ খানের পার্সোনাল সার্ভেন্ট এবং রাতের বেলা তার বেড পার্ট! ওয়াও ভেইরি ইন্টারেস্টিং। ‘
আরশ সেখানে না দাঁড়িয়ে, উপরে নিজের ঘরে চলে যায়।
ফারিশ অনন্যাকে বিছানায় শুয়িয়ে দিয়ে , তার দিকে তাঁকিয়ে, গম্ভীর গলায় শুধালো, ‘ সামান্য শাস্তিতেই এমন অবস্হা? এখনো তো সামনে অনেক বড় বড় শাস্তি, আপনার জন্যে অপেক্ষা করছে মিস অনন্যা! আজ বুঝলেন? মৃত্যুর দিকে ধাবিত হওয়ার সময় যন্ত্রনা টা ঠিক কতটা ভয়ংকর? সেই ভয়ংকর যন্ত্রনা আমি ছোট বেলা থেকে প্রতিটা মুহুর্তে অনুভব করেছি, এখনো করছি। ভুলতে পারি না সেই ভয়ংকর কালো অতীত। মনে হয় এই বুঝি ম/রে যাবো। ‘

কথাগুলো বলতে গিয়ে গলা ধরে আসে ফারিশের। অনন্যা অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলো, তাই ফারিশের কথাগুলো শুনেনি। ফারিশও বুঝতে পারে, অনন্যার জ্ঞান নেই। সে ঘর থেকে বেড়িয়ে যেতে নিলে, আটকে পরে যায়। কারণ তার ঘড়ির সাথে, অনন্যার ওড়না আটকে গিয়েছে। ফারিশ এগিয়ে নিজের ঘড়ি থেকে অনন্যার ওডনাটি ছাড়িয়ে নিতে থাকে, কিন্তু তখনি কেঁপে উঠে অনন্যা। তার জ্ঞান ফিরছে কিন্তু সম্পূর্ণভাবে নয়। শরীর তার অনবরত ঠান্ডায় কেঁপে চলেছে। ফারিশ নিজের ঘড়ি ছাড়িয়ে, অনন্যাকে গুরুত্ব না দিয়ে, উঠে যেতে গিয়েও কী ভেবে যেন থেমে যায়। মেয়েটা ঠান্ডায় কাঁপছে। বেশ অনেক্ষন পানিতে ছিলো। ফারিশ পাশে থাকা কম্বলটি নিয়ে না চাইতেও, অনন্যার গাঁয়ে ভালোভাবে জড়িয়ে দেয়। যেন কাঁপুনি টা কমে যায়। অত:পর সে ঘর থেকে বেড়িতোই,দেখতে পায় করিমা দরজায় দাঁড়িয়ে আছে। ফারিশকে দেখেই, করিমা মাথা নিচু করে ফেলে। ফারিশ গম্ভীর সুরে বলে,

‘ উনার কাপড় চেঞ্জ করে দিও, নাহলে ভেজা কাপড়ে ঠান্ডা লেগে, জ্বর এসে যাবে। ‘

‘ জ্বে, আইচ্ছা স্যার। ‘ বলে মাথা নাড়ায় করিমা। ফারিশ উপরে চলে যায়। ফারিশ চলে যেতেই, মুখ বেকিয়ে করিমা বলে, ‘ কেমন বেডার ঘরে বেডা! নিজে শাস্তি দিয়া, আবার দরদ দেখাইয়া নিজেই কম্বল জড়াইয়া দিয়া দেয়। সত্যি বেডা মাইষ্যের মতগতি বুঝি না। ‘

ফারিশ তার ঘরে এসে রকিং চেয়ারে বসে পরে। আখিজোড়া নিবদ্ধ করলেই, সেই ঠান্ডায় কাঁপুনি দেওয়া, অনন্যার সেই অসহায় মুখস্রী খানা ভেঁসে উঠে। ফারিশ তৎক্ষনাৎ বিষয়টি মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে ভাবে, এই শাস্তি তো সামান্য! সামনে অনেক বড় কিছু অপেক্ষা করছে অনন্যার জন্যে। ফারিশ অধরের কোণে বাঁকা হাসি ফুটিয়ে বলে,

‘ আপনাকে দূর্বল হলে চলবে না মিস অনন্যা। ইউ নো ওয়াট? আই ডোন্ট লাইক দিজ টাইপ অফ ওইকনেস। ‘

চলবে।

#প্রণয়ের_রংধনু ✨
#পর্ব- ১৩
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
গভীর রাতে বেশ জ্বর উঠে গেলো অনন্যার। ঘেমে একাকার হয়ে আছে সে তবুও মৃদ্যু মৃদ্যু কাঁপছে। অধরজোড়া নাড়াতে পারছে না। তবুও অস্পষ্ট কন্ঠে আওড়ে যাচ্ছে ‘ পানি, পানি! ‘ বেশ কিছুক্ষন ঠান্ডা পানিতে থাকার ফলে গা কাঁপিয়ে জ্বর উঠেছে তার। তার বিছানার পাশে একটা ভাঙ্গা জগ ছিলো। তাতে সামান্য পানি ছিলো, অনন্যা হাত বাড়াতেই নিলেই, জগটা তৎক্ষনাৎ নীচে পরে গিয়ে সম্পূর্ণ ফেটে যায়। অনন্যা হতাশার নি:শ্বাস ফেলে। তার মনে হচ্ছে সে পানিটুকু না পান করলে, বোধহয় আজই প্রাণ হারিয়ে ফেলবে, কিন্তু সে বাঁচতে চায়। নিজেকে সম্পূর্ণ রুপে নির্দোশ প্রমাণ করতে চায় সকলের সামনে। তার ফোনটাও অপরপাশে বেজে চলেছে, ফোনের অপাশে অভি রয়েছে, সে চিন্তিত হয়ে পরেছে, কেননা আধাঘন্টা যাবত সে অনন্যাকে ফোন করছে কিন্তু অনন্যা ধরছে না। এতো রাতে ব্যাস্ত হবার কথা নয়! এই সময়টা ঘুমানোর, কিন্তু রাতে কি এমন কাজে ব্যাস্ত রয়েছে অনন্যা? যার ফলে একটিবারের জন্যে হলেও ফোন রিসিভ করছে না সে। মনটা খচখচ করছে তার। না চাইতেও অনেক ধরনের নেতিবাচক ভাবনা মাথায় আসছে তার। তাছাড়াও ফারিশের সাথে অনন্যার সম্পর্কের ব্যাপারে কোন সংদেহ প্রকাশ করার অবকাস নেই, কারণ অনন্যা নিজেই নিজেকে ফারিশের রক্ষিতা হিসেবে পরিচয় দিয়েছে অভির কাছে। কিন্তু তবুও একটা কিন্তু থেকে যায়! অভি ঠিক করেছে সে সময় নষ্ট করবে না। সকালেই বেড়িযে পরবে হসপিটালের উদ্দেশ্য। সেখানে শেফা বেগমের সাথে তাকে কথা বলতে হবে।

অপরদিকে…অনন্যা জ্বর গায়ে উঠে দাঁড়িয়ে ঘর থেকে ঢুলতে ঢুলতে বেড়িয়ে যায়। গলা তার শুকিয়ে যায় যায় অবস্হা! পানি পান না করলে উপায় নেই। ফারিশ সিড়ির উপরে দাঁড়িয়ে ফোন স্ক্রল করছিলো, তার দৃষ্টি নীচের দিকে যেতেই, দেখতে পায় ক্লান্ত অসুস্হ শরীরে রান্নাঘরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে অনন্যা। ফারিশ তেমন গুরুত্ব না দিয়ে, নিজের ঘরের দিকে পা বাড়াতে নিলে দেখতে পায়, আরশ ও নিজের রুম থেকে বেড়িয়ে নীচের দিকে যাচ্ছে। হাতে তার পানির জগ, হয়তো তার ঘরে থাকা জগের পানি ফুরিয়ে গিয়েছে, তাই নীচ থেকে পানি নিতে যাচ্ছে। সে হয়তো ফারিশকে খেয়াল করেনি। কি যেনো ভেবে থেমে যায় ফারিশ, নিজের ঘরের দিকে পা বাড়ায় না। সে নীচের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে, সিড়ি থেকে নেমে যেতে থাকে। অনন্যা জগটা হাতে নিয়ে গ্লাসে পানে ঢেলে খেতে গিয়ে ও মাথা ঘুড়িয়ে যায় তার। আরশ এগিয়ে, অনন্যাকে ধরতে চাইলে, তাতে বাঁধ সাধে ফারিশ। আরশ ফারিশকে দেখে মিনমিনিয়ে গলায় বলে, ‘ ভাইয়া, তুমি? উনি তো পরে যাবে বোধহয়। ‘

‘ উনাকে নিজে থেকে উঠে দাঁড়াতে দাও। আমিও দেখতে চাই উনি ঠিক কতটা স্ট্রং!আদোও কারো সাহায্য ব্যাতীত, উনি ঘুড়ে দাঁড়াতেন পারে কি না। সেইটাই দেখার বিষয়। ‘

ফারিশের কথা শুনে ভ্রু কুচকে তাঁকায় আরশ। অনন্যা পরে যেতে গিয়েও নিজেকে সামলে নিয়ে,ঢগঢগ করে পানি খেয়ে ফেলে। অত:পর তার চোখ যায় সামনে দাঁড়িয়ে থাকা আরশ এবং ফারিশের দিকে। সে জ্বর নিয়েও যথাসম্ভব নিজেকে শক্ত রেখে, দাঁড়িয়ে থেকে প্রশ্ন করে, ‘ আপনাদের কি এখন কিছু লাগবে? ‘

ফারিশ এগিয়ে এসে বলে, ‘ আপনি আমার সাথে উপরে আসুন। ‘

বলেই উপরে চলে যায় ফারিশ। অনন্যাও গ্লাস টা রেখে, ক্লান্ত শরীরে সিড়ি বেয়ে উপরে চলে যেতে নিলে, পিছন থেকে আরশ কিছুটা নোংরা ভাবে বলে উঠে, ‘ মিস অনন্যা! যেই সুখের আশায় শত অসুস্হতা নিয়ে আপনি ফারিশ খানের কাছে যাচ্ছেন, তার থেকে কম সুখ আমি দিবো না। খান বাড়ির ছেলে আমি, এক রাতের জন্যে খুশি করতে পারলে, ভালো এমাউন্টই পাবেন আপনি। আজকে আপনি ব্যাস্ত বুঝতে পারছি, তবে কাল কিংবা যেকোন সময় যখন ফারিশ খানের সাথে আপনার সিডিউল থাকবে না, তখন আমাকে সময় দিলেই চলবে। ‘

অনন্যা থেমে যায়, সে শক্ত মুখে দাঁড়িয়ে থাকে। কোনরুপ জবাব দেয় না। আরশ নিজের চুল ঝাঁকিয়ে অনন্যার দিকে কুৎসিত দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে ফের বলতে থাকে, ‘ আসলে অনেক মেয়ের সাথেই রাত কাটানো হয়েছে। আরশ খানের জন্যে মেয়ের অভাব হয়না, কিন্তু আপনার ফিগারটা….’

সম্পূর্ণ কথা শেষ করার পূর্বেই, সর্বশক্তি দিয়ে অসুস্হ অবস্হাতেই, আরশের গালে ঠাটিয়ে চর বসিয়ে দিলো অনন্যা। আরশ কিছুটা পিছে হটে গেলো! অনন্যা গলার স্বর কিছুটা উচুঁ করে বললো, ‘ আজকে শুধু হাত উঠেছে, কাল কিন্তু আমার জুতা আপনার গালে থাকবে, যদি আবারোও আপনি আমার প্রতি কোনপ্রকার কুমন্তব্য পোষণ করেন। আমি আবারোও বলছি, আমি অনন্যা হাওলাদার খেটে কাজ করবো কিন্তু নিজের আত্মসম্মানের সাথে কখনো আপস করবো না। মাইন্ড ইট মি: আরশ খান।’

গালে হাত রেখে থরথর করে রাগে কাঁপতে থাকে আরশ। অনন্যা উপরে উঠে চলে যায়। অপরদিকে ক্ষোভে একপ্রকার বিক্ষিপ্ত হয়ে যাচ্ছে আরশ। সে বিড়বিড়িয়ে বলতে থাকে, ‘ আরশ খানের গাঁয়ে হাত তোলার শাস্তি তোমাকে পেতেই হবে অনন্যা। একদিনের জন্যে হলেও তোমায় আমি আমার বিছানায় এনে ফেলবো। ‘

সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে, ফারিশের রুমের সামনে দাঁড়িয়ে, অনন্যা মুখ চেপে কেঁদে ফেলে। ফারিশ খানের মতো জঘন্য লোকের ভাই আরশ, তার থেকে কি আর ভালো কিছু আশা করা যায়? সবসময় মেয়েদের সাথেই এমন হয় কেন? সমাজের লোকেরা কী আরশের মতো মুখোশরুপী ভদ্র মানুষদের আসল চেহারা দেখতে পায় না? রাস্তাঘাটেও মেয়েরা নিরাপদ নয়, সেখানেও তাদেরকে শকুনের মতো গিলে খাওয়ার জন্যে উৎ পেতে রয়েছে অনেকেই। দিনশেষে ফারিশ খানের মতো খারাপ মানুষেরা কত সহজেই, অনন্যার মতো মেয়েদের গাঁয়ে চরিত্রহীনার কলঙ্কের কালি লাগিয়ে দেয় এবং সেই কলঙ্ককে কত সহজেই যাচাই বাছাই না করে অকপটে স্বাকীর করে সমাজ! সেই সমাজকে আজ মন থেকে ধিক্কার জানায় অনন্যা। যেখানে শুধু মেয়েদের পায়ের নীচে পি/ষে ফেলা হয়। অনন্যার ভাবনার মাঝেই, ফারিশ হাক ছেড়ে ডাকে, ‘ মিস অনন্যা! সময় নষ্ট করা আমি একদমই পছন্দ করি না। আই জাস্ট ডোন্ট লাইক দিজ টাইপ অফ টাইম ওয়েস্টিং, সো কাম হেয়ার মাই রুম, ফাস্ট! ‘

অনন্যা নিজের আখিজোড়ার অশ্রুটুকু মুছে ফারিশের রুমে প্রবেশ করে, নীচের ঘটনাটি ঘটার পরে, তার মনে ফারিশকে নিয়েও ভয় ঢুকে গিয়েছে। এতো রাতে ফারিশ তাকে কেন তার রুমে ডেকেছে? কোন কু মতলবে নয় তো? ফারিশের মতো মানুষকে দিয়েও তো ভরসা নেই।

‘ হ্যা বেশ বড়সড় কু মতবলেই আপনাকে আমার রুমে ডেকে পাঠিয়েছি। ‘

ফারিশের কথা শুনে চমকে উঠে অনন্যা। সে ভাবে তার মনের কথা ফারিশ কী করে বুঝলো? ফারিশ গম্ভীর গলায় বলে উঠে, ‘ সোফায় গিয়ে বসে পড়ুন। ‘

‘ জ্বী? ‘

‘ সহজ একটা কথা বলেছি। আশা করি বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। ‘

অনন্যায় সোফা গিয়ে বসে পরে। ফারিশ একটা ওষুধের ট্যাবলেট হাতে নিয়ে, অনন্যার দিকে এগিয়ে বলে, ‘ আপনার ভাষ্যমতে, আমি অতি জঘন্য, খারাপ লোক, হ্যা আমি অনেক খারাপ। তার প্রমাণ সামনে অনেক পাবেন, কিন্তু আমি রেপিস্ট নই। ওষুধ টা খেয়ে নিন। জ্বর সেরে যাবে। ‘

অনন্যা ওষুধ টা নিলো। তার কপালে চিন্তার ভাজ পরে আছে। ফারিশ এসির রিমোর্ট হাতে নিয়ে, এসি সামান্য মাত্রায় রেখে দিলো। অত:পর অনন্যাকে হাত দিয়ে ইশারা করে, বিছানার পাশে থাকা টেবিলের থাকা দুধের গ্লাস খানা দেখিয়ে বললো, ‘ ওষুধ টা খেয়ে, দুধ খেয়ে নিবেন। আশা করি, সকালের মধ্যে জ্বরটা কমে যাবে। কিছুটা দূর্বল লাগবে, তবে জ্বর সেরে যাবে। আপাতত স্টোর রুমে যেতে হবে না। আমার রুমের সোফা অনেক বড়, এখানে ঘুমিয়ে পড়ুন। আমি বাইরে বের হচ্ছি, আপনি লক করে ঘুমাবেন। আপনাকে আমার ঘরে থাকতে দেওয়ার কারণও আছে, এখন এই রাতে অন্য রুমে যেতে গেলে, অনেকেই আপনাকে দেখতে পেয়ে, হাজার টা প্রশ্নের ঝুলি খুলে বসবে। আমার রুমটা বাড়ির একদম কর্নারে, কেউ আসেও না এদিকে তেমন, আর হ্যা! ভুলেও আমার বিছানায় ঘুমাতে যাবেন না। আমার বিছানায় কোন মেয়ে ঘুমাক, আই জাস্ট ডোন্ট লাইক দিজ। আমার রুমেও কোন মেয়ে থাকুক, তা আমি পছন্দ করেনি কিন্তু এখন সিচুয়েশনে টা ভিন্ন, তাই এলাও করছি৷ ‘

কথাগুলো একনাগাড়ে বলে থামলো ফারিশ। অনন্যা সোফা থেকে উঠতে উঠতে বললো,

‘ আমার আপনার বিলাসবহুল ঘরে থাকার কোন শখ নেই। আমি স্টোর রুমে যাচ্ছি। সবকিছুতে মানিয়ে নিতে জানি আমি।

‘ আপনি এখন আমার সার্ভেন্ট। আমার আন্ডারে আছেন, তাই আমার অর্ডারই শেষ অর্ডার, মিস অনন্যা হাওলাদার। ‘

অনন্যা মুখ বেকিয়ে বিড়বিড়িয়ে বললো, ‘ বদ লোক একটা! নিজে এমন অবস্হা করে, আবার নিজেই দরদ দেখাচ্ছে। ‘

অনন্যা বিড়বিড় করে বললেও, তা স্পষ্ট শুনতে পেলো ফারিশ। সে কঠোর গলায় উত্তর দিলো,

‘ আমি কোনপ্রকার দরদ দেখাচ্ছি না মিস অনন্যা। কারো প্রতি দরদ দেখানোর কোনপ্রকার শখ বা ইন্টারেস্ট নেই আমার। অসুস্হতার মতো লেইম অজুহাত দিয়ে, আপনি যেন কোনভাবে কাজে ফাঁকি দিতে না পারেন,তাই এমন ব্যাবস্হা! ‘

বলেই শিষ বাজাতে বাজাতে ঘর থেকেবেড়িযে যায় ফারিশ। ফারিশের কথা শুনে রাগ হলোও, সেই রাগকে দমিয়ে রেখে ওষুধ টা খেয়ে ফেলে অনন্যা। আপাতত তাকে সুস্হ থাকতে হবে। নাহলে সে নিজের লড়াই চালিয়ে যেতে পারবে না। অনন্যা দরজা আটকে, দুধটাও খেয়ে নেয়। গরম দুধটা খাওয়ার পরে, তার শরীরটা কিছুটা ভালো লাগছে, সো সোফায় গা এলিয়ে দিতেই, তার চোখ যায় একটি ফ্রেমের দিকে।
চলবে কি?

প্রণয়ের রংধনু পর্ব-১০+১১

0

#প্রণয়ের_রংধনু🖤
#পর্ব-১০ +১১
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
‘তুমি এখনো তোমার প্রাক্তনকে ভুলতে পারছো না অভি। অথচ কিছুদিন পর তোমার এবং জুঁইয়ের বিয়ে। ‘

অভির রুমের আলমারিতে পাওয়া একটি ফ্রেমে অনন্যার বাঁধানো হাঁসিমাখা মুখস্রী দেখে ক্ষিপ্ত সুরে প্রশ্ন করলেন অভির মা।

‘ একজনকে ভুলে না গিয়ে, অন্যজনকে বুঝি বিয়ে করা যায় না? ‘

‘ ওয়াট? কি বলছো তুমি এইসব? তার মানে তুমি ওই চরিত্রহীন মেয়েটাকে ভুলতে চাইছো। ‘

অভি কোনরুপ কথা বলে, গাঁয়ের থেকে কোট ফেলে দেয়। বিছানায় স্টান হয়ে শুয়ে, ঘুড়ন্ত ফ্যানের দিকে তাঁকিয়ে থাকে। ছেলের থেকে কোনরুপ উত্তর না পেয়ে বুশরা বেগম রাগে ফুশতে থাকে। স্বামী মা/রা
যাওয়ার পরে, একাই বড় করে গিয়েছেন ছেলেকে। ছেলে তার দিনের পর দিন কষ্ট পেয়ে যাচ্ছে অথচ মা হয়ে, তিনি দেখে যাচ্ছেন, না তাকে যথাসম্ভব কথা বলতে হবে, বিয়ের তারিখ এগিয়ে নিয়ে আসতে হবে। জুঁইয়ের বাবা নিজেও বিয়ের ব্যাপার নিয়ে বেশ আগ্রহ দেখাচ্ছেন। বুশরা বেগম চলে গেলেন। অভির অস্হির অস্হির লাগছে প্রচন্ড। এসির রিমোর্ট হাতে নিয়ে পাওয়ার বাড়িয়ে দিলো, তবুও বেশ ঘামছে সে।
তার দৃষ্টি জানালার দিকে। আকাশে উঁকি দিচ্ছে এক ফালি চাঁদ! সেই চাঁদের মতো স্নিগ্ধ সুন্দর ছিলো তার প্রেমিকা অনন্যা। তাই বোধহয় চাঁদের ন্যায় অনন্যা নামক রমনীর গাঁয়েও আজ চরিত্রহীনার কলঙ্ক! তবুও মন মানতে চাইছে না অভির। আখিজোড়া ঝাপ্সা হয়ে যাচ্ছে তার। শুধু মনে হচ্ছে না,না! একদম নয়! তার স্নিগ্ধ সুন্দর অনন্যার গাঁয়ে নেই কোন কলঙ্ক, সে পবিত্র! বড্ড পবিত্র! কিন্তু তার ভাবনারকে বারংবার ভুল প্রমাণ করে দিচ্ছে বিয়ের দিনে দেখানো সেই ভিডিওটি। মন- মস্তিষ্ক ভয়ংকের যুদ্ধে পি/ষে যাচ্ছে অভি। অভি না চাইতেও অনন্যাকে ফোন করলো। অনন্যা রান্নাঘরে ছিলো, অচেনা নাম্বার দেখেও কি মনে করে, যেন ফোনটা ধরলো। অপাশ থেকে নিজের নি:শ্বাস টুকু অব্দি যথাসম্ভব দমিয়ে রাখার প্রয়াস করলো অভি,যেন এইবার অন্তত তাকে চিনতে ব্যার্থ কিন্তু মানুষ কী আর নি:শ্বাস দমিয়ে রাখতে পারে? সে বেশ বড় এক দীর্ঘশ্বাস ফেললো। এই মুহুর্ত তাকে বড় এক চোর মনে হচ্ছে অপরপ্রান্তের টেলিফোনে রয়েছে বড় এক দারোগা। যার সাথে উল্টাপাল্টা কথা বললেই, সে তৎক্ষনাৎ হাজতে দিয়ে আসবে। দুজনের মধ্যেই পিনপিন নিরবতা। নিরবতা ভেঙ্গে অনন্যা কঠোর গলায় শুধায়, ‘ ফোন করেছেন কেন? অভি শিকদারের এতো খারাপ দিন চলে আসলো? আমার মতো একজন দুশ্চরিত্র নষ্টা মেয়েকে, ফোন করার প্রয়োজন বোধ করলেন, হঠাৎ। ‘
অভি উত্তর দিলো না। করিমা একটা ট্রে হাতে নিয়ে,অনন্যার দিকে এগিয়ে বললো, ‘ স্যার আপনারে ডাকতাছে আফা। হের নাকি কিসব ক্লাইন্ট ফ্লাইন্ট আইছে। খাবার দেওয়ান লাগবো।’
অনন্যা মাথা নাড়িয়ে, ফোনটা হাতে নিয়ে বললো,

‘ নিশ্চই খবর শুনেছো, আমি ফারিশ খানের বাড়িতে আছি। কেন ফোন করে বিরক্ত করছো?’

অভির আখিজোড়া বেয়ে জল গড়িয়ে পরলো, সে থমথমে গলায় উত্তর দিলো,

‘ তুমি সত্যিই ফারিশ খানের বাড়িতে আছো? ‘

‘ মিথ্যে মিথ্যে কেউ কারো বাড়িতে থাকতে বুঝি?’

‘ হেয়ালি করো না অনন্যা। সেখানে কি কারণে রয়েছো? ‘

অধরের কোণে হাল্কা তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটে উঠে অনন্যায়। সে কঠোর গলায় জবাব দেয়,

‘ এমন প্রশ্ন যুক্তিহীন! তোমাদের ভাষ্যমতে আমার মতো নষ্টা মেয়েরা ফারিশ খানদের যেসব সার্ভিস দেওয়ার জন্যে তাদের বাড়িতে থাকে, আমিও ঠিক সেইসব সার্ভিস দেওয়ার জন্যেই, আজ ফারিশ খানের বাড়িতে আছি। ধরে নিতে পারো, এক কথায় রক্ষিতা হিসেবে রয়েছি। ‘

কথাটি বলেই কট করে ফোন কেটে দেয় অনন্যা। অভি বিছানায় পুনরায় বসে পরে।
‘রক্ষিতা’ শব্দটি একদম বুকে গিয়ে লাগলো অভির।সে নিজেও এমন বাজে বাজে শব্দগুলো অনন্যার জন্যে ব্যাবহার করছে কিন্তু আজ অনন্যা নিজে আজ নিজেকে ‘রক্ষিতা’ বলে সম্মোধন করায়, যন্ত্রনা আজ বেশ অনুভব করছে অভি! আচ্ছা সে যখন অনন্যাকে এতো বাজে ভাবে অপমান করেছিলো তখন কেমন মনের অবস্হা ছিলো অনন্যার? একবারও কি অনুভব করতে চেয়েছিলো সে? আজ নিজেকেই প্রশ্নগুলো বিড়বিড়িয়ে করছে অভি। উত্তর আসে, না! অর্থাৎ সে কখনোই অনুভব করার চেষ্টা করে নি। মেনে নিতে আজ তার কষ্ট হচ্ছে আদোও কী অনন্যা ফারিশের রক্ষিতা হয়ে, তার বাড়িতে রয়েছে? সত্যিটা কে বলবে তাকে? পরক্ষনেই অভির মস্তিকে শেফা বেগমের নামটি আসে।

_______________

হাতে থেকে ফোনটা রান্নাঘরের এক পাশে রেখে পিলারে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে, ফুপিঁয়ে উঠে অনন্যা। মুখে হাত রেখে নিচু গলায় শুধায় সে, ‘ কেন ফোন করছো অভি? কেন দূর্বল করতে চাইছো আমায়? তুমি কী বুঝতে পারো না? আমার বড্ড কষ্ট হচ্ছে। ছাড়খাড় হয়ে যাচ্ছে কলিজা। আমায় দূর্বল করো না, তুমি। ‘

করিমা পাশেই দাঁড়িয়ে ট্রে তে খাবার সাঁজিয়ে চলে যাচ্ছিলো, হঠাৎ অনন্যাকে ফুপিঁয়ে উঠতে দেখে প্রশ্ন করে, ‘ আফামনি আপনে কী কানতাছেন? কেল্লেইগা? আইজক্যা স্যার অনেক কাম করাচ্ছে তার লেইগা? বুঝি আফা, আপনে হলেন বড়লোকের মাইয়া, এতো কাজ করার কী অভ্যাস আছে?’

অনন্যা নাক টেনে, হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে, নিজের অশ্রুটুকু মুছে তড়িৎগতিতে বলে,

‘ তেমন কিছুই না। তুমি বরং আমার সাথে চলো। আমরা একসাথে খাবার পরিবেশন করি। টেবিলে উনার ক্লাইন্টরা অপেক্ষা করছে। ‘

করিমা সঙ্গে সঙ্গে বলে, ‘ আফা আপনে আজ মেলা কাম করছেন। আপনের আর যাইয়া লাভ নাই। আমি বরং বাকি কামের আফা গো লইয়া, খাবার পরিবেশন করমু নে। কামের লোকের কী অভাব আছে এই বাড়িতে? সব কাজ আপনে করবেন কেন?’

‘ কিন্তু আমায় যখন ডেকেছেন তোমার স্যার, তার মানে আমাকেই যেতে হবে। নাহলে পরে দেখবে ঝামেলা শুরু করে দিবে। ‘

করিমা অনন্যার কথা শুনে মাথা ঝুঁকিয়ে সম্মতি জানালো, অর্থাৎ ফারিশ ঝামেলা নয় বিরাট ঝামেলা করলেও করতে পারে।

___________________
ড্রাইনিং টেবিলে ফারিশের বেশ কয়েকজন ক্লাইন্ট বসে আছেন। তাদের সাথে বসে আছেন রুমা খান, ফারিশ এবং ফারিশের ছোট কাকা খালেদ খান। করিমা এবং অনন্যা হাতে হাতে সমস্ত পদের খাবার টেবিলে পরিবেশন করে যাচ্ছে। ফারিশ ভ্রুজোড়া আপনআপনি কুচকে যায়। সে কল্পনা করে, তার দেওয়া এতো বড় লিস্টে থাকা প্রতিটি পদ রান্না করে ফেলবে অনন্যা! সে অফিসের মধ্যেই সিসিটিভ দিয়ে রান্নাঘরের কর্মকান্ডে নজর রেখেছে, মেয়েটা কোন ভাবেই সাহায্য নেয়নি, ইউটিউব দেখেই এতো রান্না করে ফেললো। অনন্যার পিছন পিছনে মিষ্টিও দাঁড়িয়ে রয়েছে। সে যেন দেহরক্ষীর মতো তার মাকে র‍ক্ষা করে চলেছে, যেন কোন অচিনপুরের রক্ষিস এসে তার মাকে কেড়ে নিতে চাইবে তখন সে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়ে তার মাকে রক্ষা করবে। মেয়ের কান্ডে হতাশ হয়ে ফারিশও কিছু বললো না। কারণ সে জানে সে যতই বলুক, বাবা হিসেবে দিনশেষে সে তার মেয়ের জেদের কাছে হারতে বাধ্য! অনন্যা ক্লাইন্টদের, রুমা খান, খালেদ খানকে পরিবেশন করে। ফারিশকে পরিবারণ করতে চাইলে, ফারিশ হাত উচিয়ে বলে, ‘ আমাকে এইসব খাবার দিবেন না। আই জাস্ট ডোন্ট লাইক দিজ টাইপ অফ অয়েলি ফুডস! গিভ মাই স্যালাড।’

অনন্যা ছোট্ট ‘ ওহ! আমি এখুনি নিয়ে আসছি।’ বলেই আবারো রান্নাঘরের দিকে ছুটে গেলো। রুমা খান হতাশ নয়নে তাঁকালেন সেদিকে। মেয়েটা সকাল থেকে কত খাটুনি করে যাচ্ছে। অনন্যা রান্নাঘরে গিয়ে,সালাদ বানিয়ে আবারোও ফিরে আসে। ততক্ষনে সবাই খাওয়া শুরু করে দিয়েছিলো। একজন ক্লাইন্ট খাবার খেতে খেতেই উৎফল্লিত হয়ে বললেন, ‘ খাবার টা যথেষ্ট সুস্বাদু হয়েছে। কে রান্না করেছে? ‘

করিমা সঙ্গে সঙ্গে অনন্যার দিকে ইশারা করে, ‘ এইযে অনন্যা আপামনি ইস্পিশেলি আপনাগো লেইগা হেই সকাল থেইকা রান্না করছে। ‘

আরেকজন ক্লাইন্টও বলেন, ‘ খুবই টেইস্টি! জাস্ট ওয়ান্ডারফুল। ‘

রুমা খান তার পাশে দাঁড়ানো অনন্যার মাথায় হাত রেখে হাসিমুখে বললেন,’ এতো মজা হবে খেতে কল্পনা করে নি। তুমি কী আগে থেকেই রান্না করতে পারতে?’

‘ আঙ্গে না, টুকটাক রান্না পারি। তবে বেশিরভাগই ইউটিউব দেখে আজই শিখে নিলাম। ‘

অনন্যার কথা শুনে ফারিশ বিড়বিড়িয়ে বলতে থাকে, ‘ সত্যিই মেয়েটার দম আছে। ‘

অপরপাশে দাঁড়িয়ে থাকা রেশমি খান সবকিছু শুনে বিরক্তবোধ করছেন। সে নিজেও তো অনেকবার নিজ হাতে রান্না করে, ক্লাইন্টদের খায়িয়েছেন, তখন তো তার এমনভাবে প্রশংসা করা হয়নি।যত্তসব আদিক্ষেতা!

সকলের প্রশংসা শুনে অনন্যার আজ তার বাবার কথা বড্ড মনে পরছে। সে একবার বাবা – মায়ের অনুমতি ব্যাতীত রান্নাঘরে লুকিয়ে গিয়ে, নিজ হাতে বাবার জন্যে বিরিয়ানি রান্না করেছিলো, তখন তার বাবার সে কী রাগ! তার রাজকন্যা কেন আগুনের সামনে যাবে? তার ভাষ্যমতে অনন্যা বিরাট বড অন্যায় করেছে! সেই অন্যায়ের জন্যে জেলে পাঠানোর ব্যাবস্হা থাকলে, তিনি বোধহয় অনন্যাকে জেলে পাঠিয়ে দিতেন, কিন্তু অনন্যার রান্না করা সেই
বিরিয়ানী খেয়ে, তার সমস্ত রাগ নিমিষেই উধাও হয়ে গিয়েছিলো। তিনি বলেছেন, ‘ শুনো মা, তুমি বিরাট বড় অন্যায় করেছো, ভেবেছিলাম তোমায় জেলে পাঠাবো কিন্তু বিরিয়ানি নামক ঘুষ খেয়ে, তোমায় ছেড়ে দিলাম, কিন্ত বারংবার ঘুষ দিয়ে তুমি বেঁচে যাবে না। পরবর্তীতে কঠিন স্টেপ নিবো তোমার বিরুদ্ধে। পারলে হাইকোর্টে যাবো। নতুন আইন পাশ করিয়ে, তোমায় জেলে পাঠাবো।’

অনন্যার বাবার সেই কথাগুলো ভেবে সকলের আড়ালে ফিক করে হেসে উঠে অনন্যা। মিষ্টি তখন কোমড়ে হাত দিয়ে সকলের দিকে তাঁকিয়ে বলে,

‘ মিষ্টির মায়ের রান্না ভালো না হয়ে যাবে কোথায়? মিষ্টির মা সবার থেকে আলাদা। একদম আলাদা।’

মিষ্টির কথায়, একজন ক্লাইন্ট ফারিশকে উদ্দেশ্য করে বলে, ‘ ওহো! উনি তবে হচ্ছেন মিসেস খান। আপনার মিসেসের রান্নার হাত বেশ ভালো। মিসেস খান, আপনার রান্না খেতে কিন্তু আমরা প্রায় প্রায় চলে আসবে। ‘

ক্লাইন্টের কথা শুনে সকলেরই বিষম খাওয়ার মতো অবস্হা হলেও,রুমা খান কথাটি শুনে মুচকি হাসতে থাকেন। রেশমি খান দ্রুত এগিয়ে এসে বললেন, ‘ আরে না, না! আপনারা…….

রেশমি খানের কথা শেষ হওয়ার পূর্বে, ফারিশ গম্ভীর গলায় শুধায়, ‘ ডোন্ট বি সিরিয়াস ফর মাই ডটার অপিনিয়ন! সি ইজ জাস্ট আ সার্ভেন্ট। বাকি কাজের লোকদের মতো সে ও একজন কাজের লোক, আর কিছুই নয়। ‘

‘ ওহ, সরি মি: ফারিশ। ‘

রুমা খানের চোখমুখে অন্ধকার ঘনিয়ে আসলো ফারিশের কথা শুনে। ফারিশের উত্তরে তেমন কোন প্রভাব পরলো না অনন্যার। সে যথেষ্ট শক্ত হয়েই দাঁড়িয়ে আছে। ফারিশের থেকে এমন উত্তরই আশা করেছিলো সে।

_________________

ফারিশ খাবার হাতে নিয়ে, মিষ্টির রুমে এসে দেখে মিষ্টি তার ময়না পাখির সাথে আনমনে কথা বলছে, মুখস্রী দেখেই মনে হচ্ছে তার মনের অবস্হা তেমন একটা ভালো নেই। ফারিশ হাক ছেড়ে ডাকলো,

‘ মা, চলো এসো। খাবার খেয়ে নিবে। ‘

মিষ্টি বারান্দা থেকেই জবাব দিলো, ‘ বাপি আজ আমি তোমার কাছে খাবো না। সকালে মতো মায়ের কাছেই খাবো। তুমি মাকে ডেকে দাও। ‘

অনন্যার কথা শুনে সজোড়ে প্লেট টা বেশ আওয়াজ করে টেবিলে রাখে ফারিশ।অনন্যা রুমের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলো, ভিতর থেকে পাওয়া শব্দ শুনে থেমে যায়। ফারিশ রেগেই ঘর থেকে বেড়িয়ে গিয়ে, অনন্যার সামনাসামনি চলে এসে বলে, ‘ মিষ্টি আপনার হাতে খাবে বলছে, মিষ্টিকে খায়িয়ে, ছাদে আসবেন। কাজ আছে। ‘

ফারিশ কথাটি বলেই গটগট পায়ে ছাদের দিকে যেতে থাকে। অনন্যা দীর্ঘশ্বাস ফেলে, অনন্যার রুমে প্রবেশ করে। অনন্যাকে দেখেই, মিষ্টি খুশি হয়ে বারান্দা থেকে বেড়িয়ে, অনন্যাকে জাপটে ধরে। অনন্যাও মুচকি হেসে, মিষ্টিকে বিছানায় বসায়। অত:পর প্লেট টা হাতে নিয়ে, ভাত মাখতে মাখতে বলে, ‘ তুমি কিন্তু একটা কাজ খারাপ করেছো মা। তোমার বাবা এতো ব্যাস্ততার মাঝেও, তোমাকে খায়িয়ে দিতে এসেছিলো কিন্তু তুমি তাকে কেন ফিরিয়ে দিলে কেন? এইটা কী ঠিক হয়েছে বলো?’

মিষ্টি সঙ্গে সঙ্গে মাথা নাড়িয়ে বলে, ‘ বাপি কী তার মিষ্টির সাথে রাগ করেছে? ‘

অনন্যা মিষ্টি হেসে জবাব দেয়, ‘ বাপি, তো তার প্রিন্সেসকে এত্তোগুলো ভালোবাসে, সে কি তার মিষ্টির সাথে রাগ করে থাকতে পারবে বলো?’

‘ উহু’ বলে মিষ্টি ঠোট উল্টে ফেলে। অনন্যা পুনরায় হেসে , মিষ্টিকে বুকের সাথে মিশিয়ে বলে,

‘ তুমি তোমার বাপিকে৷ অনেক ভালোবাসো তাইনা?’

‘ অনেক অনেক, একদম তোমার মতো। ‘

বলেই মিষ্টি অনন্যাকে গালে চুমু দিয়ে দেয়।

________________

মিষ্টিকে খায়িয়ে , ঘুম পারিয়ে দিয়েছে অনন্যা। অত:পর সে ছাদের উদ্দেশ্য রওনা দেয়। বিশাল এড়িয়ে জুড়ে রুফ টপ। বিভিন্ন ছোট বড় দেশি বিদেশি গাছের সম্মোময়ে ছাদটিকে সাঁজানো হয়েছে। যেন আরো একটি বাগান। ছাদেও সুইমিংপুল। গোলাপ ফুলগাছের মধ্যে ছোট্র একটি দোলনা রয়েছে। অদ্ভুদ ভাবে গোলাপ গাছের ফুলগুলো কালো, অর্থাৎ ব্ল্যাক রোজ। সেই ব্ল্যাক রোজের মাঝখানে থাকা দোলনায় পা ঝুলিয়ে, টি- শার্ট পরিহীত এবং কালো ট্রাউজার পরিহীত ফারিশ বসে আছে। হাতে তার সিগারেট! সে সিগারেটে লম্বা এক টান দিয়ে শীতলভাবে অনন্যার দিকে তাঁকালো। অনন্যা সেই চাহনী দেখে শিউরে উঠলো। ফারিশ আকাশের দিকে তাঁকিয়ে শীতল গলায় বললো,

‘ আপনাকে রান্নার যেই টাস্ক দেওয়া হয়েছিলো, তার বিরাট একটা রুল ব্রেক করেছেন। ‘

ফারিশের কথা শুনে ভ্রু কুচকে তাঁকায় অনন্যা। তার জানামতে, সে তো কারো সাহায্য নেয়নি তবে কোন নিয়ম ভঙ্গ করেছে সে? অনন্যা কাঠকাঠ গলায় জবাব দেয়, ‘ মি: ফারিশ খান, আপনার ইনফরমেশনের জন্যে বলে দেই, আমি কারো থেকে কোন প্রকার সাহায্য নেই। তা আপনি নিজেও জানেন, বিকজ রান্নাঘরে আপনার গোপন ক্যামেরা ফিট করা আছে। আপনি সবকিছুই অফিসে বসে দেখছেন। ‘

অনন্যার কথা শুনে চমকে উঠে ফারিশ। তার ধারণামতে কারো পক্ষে তো জানা কথা নয়, রান্নাঘরে তার গোপন ক্যামেরা আছে।

‘ চমকে উঠলেন বুঝি? এইসব গোপন ক্যামেরা ট্যামেরা বেশিক্ষন অনন্যা হাওলাদারের চোখকে ফাঁকি দিতে পারবে না। আমার নজর অতি সুক্ষ্ম!’

ফারিশ বিরক্ত হয়ে বলে, ‘ এইবার কাজের কথায় আসা যাক? আমি একবারও বলেনি, রান্নার টাস্কে আপনি কোনভাবে ইন্টারনেটের সাহায্য নিতে পারবেন, কিংবা একবারও আমার অনুমতি আপনি নেন নি। সেই হিসেবে আপনি রুলস ব্রেক করেছেন। শাস্তি তো পেতেই হবে। ‘

ফারিশের কথা শুনে অবাক হয়ে যায় অনন্যা। লোকটা তাকে কৌশলে জব্দ করে, শাস্তি দিতে চাইছে এইভাবে, কিন্তু কী শাস্তি দিবে তাকে?

চলবে।

প্রণয়ের রংধনু পর্ব-০৯

0

#প্রণয়ের_রংধনু ✨
#পর্ব-৯
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
ফারিশ তার কেবিনে থাকা জুঁইকে দেখে ভ্রু কুচকে তাঁকায়। জুঁই ফারিশকে দেখেই দৌড়ে গিয়ে, ঝাপটে জড়িয়ে ধরে ফারিশকে। ফারিশ তৎক্ষনাৎ জুঁইকে নিজের থেকে সরিয়ে চেঁচিয়ে বলে, ‘ ওয়াট হেপেন্ড ইউথ ইউ? আর ইউ ইডিয়েট? তুমি জানো না? কোন মেয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরুক, আমি তা মোটেও পছন্দ করি না। নেক্সট টাইম এমন কাজ করলে, কিন্তু এর পরিনতি খুবই খারাপ হবে। ‘
কথাটি বলেই, ফারিশ তার চেয়ারে গিয়ে বসে। জুঁই রাগে থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে বলে, ‘ সেদিন অজ্ঞান অবস্হায় অনন্যাকে জড়িয়ে ধরার সময়, তোমার এই নিয়ম কোথায় ছিলো ফারিশ?’

ফারিশ শান্ত দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে বলে, ‘ ফাষ্ট অফ অল, আমাকে ফারিশ ভাইয়া বলে সম্মোধন করো এবং দ্বিতীয়ত আমি ভালোবেসে সেদিন অনন্যাকে জড়িয়ে ধরে নি তুমিও জানো। বাই দ্যা ওয়ে ফারিশ খান কাউকে কৈফিয়ত দিতে ইন্টারেস্ট নয়। আই জাস্ট ডোন্ট লাইক দিজ। ‘

জুঁই ফারিশের থেকে তার ফাইল কেড়ে নিয়ে প্রশ্ন করে, ‘ ভাইয়া বলবো মানে কী?’

‘ হ্যা এনা আমাকে ভাই বলে সম্মোধন করে, তাই তুমিও করবে। ‘

‘ এনা তোমার বোন ফারিশ, আমি নই। ভুলে যেও না। শুধুমাত্র তোমাকে সাহায্য করবো বলে, নিজের বন্ধুকে ঠকিয়েছি এমনকি অভির সাথে মিথ্যে প্রেমের অভিনয়ও করছি, যেনো অভিকে অনন্যা তার কঠিন মুহুর্তে কোন ভাবেই পাশে না পায়। ‘

জুঁই সম্পর্কে ফারিশের ছোট চাচি অর্থাৎ রেশমি খানের বোনের মেয়ে। ছোট বেলা থেকেই সে পছন্দ করে ফারিশকে কিন্তু প্রতিবারই প্রতাক্ষ্যান করেছে তাকে ফারিশ। ফারিশ বিরক্ত হয়ে উঠে দাঁড়িয়ে, জুঁইয়ের থেকে ফাইল টা হাতে নিয়ে বলে,

‘ আমি একবারও তোমায় বলেনি অভির সাথে মিথ্যে প্রেমের অভিনয় করতে। আমি শুধু অনন্যার সাথে ফেইক ভিডিও তৈরিতে তোমার হেল্প চেয়েছিলাম।
কিন্তু তার বদলে মোটা টাকার অফার ও দিয়েছিলাম।’

জুঁই ফারিশের গালে হাত রেখে কান্নার সুরে বলে,

‘ আমি তো টাকার জন্যে তোমায় হেল্প করেনি, আমি শুধু চেয়েছিলাম যেনো তুমি আমায় ভালোবাসো। আমার ভালোবাসা লাগবে শুধু। একবার আমার অনুভুতিগুলোকে অনুভব করো ফারিশ। আমি তোমায় বড্ড ভালোবাসি। ‘

জুঁইয়ের থেকে ফারিশ নিজেকে সম্পূর্ন ছাড়িয়ে নিতেই, কিছুটা পিছু হটে যায় জুঁই। ফারিশ জুঁইয়ের দিকে আঙ্গুল তাঁক করে চেঁচিয়ে বলে,

‘ আমি জাস্ট ১০ সেকেন্ড টাইম দিবো, জাস্ট ১০ সেকেন্ড এর মধ্যে আমার অফিস থেকে বেড়িযে যাবে। সময়ের হের ফের হলে, আমি ভুলে যাবো তুমি রেশমি খানের ভাগ্নি। জাস্ট গেট আউট। ‘

ফারিশের রক্তচক্ষু চাহনীতে ভয়ে কেঁপে উঠে,জুঁই তড়িঘড়ি করে বেড়িয়ে যায়। জুঁই চলে যেতেই,ফারিশ তার চেয়ারে বসে জোড়ে জোড়ে নি:শ্বাস থাকে। নিজের আখিজোড়া নিবদ্ধ করে ভাবতে থাকে, ‘ আই ডোন্ট ওয়ান্ট লাভ…আই জাস্ট নো নিড দিজ।’

_________________________
রুমা খানের কথা শুনে, অনন্যা উঠে দাঁড়ায়। রুমা খানকে দেখে মিষ্টি রুমা খানের কাছে গিয়ে জড়িয়ে হাঁসিমুখে বলে, ‘ দেখো বড় গ্রেনি মিষ্টির মা চলে এসেছে। আমি আমার মাকে কোথায় যেতে দিবো না।’

রুমা খান মিষ্টির মাথায় হাত বুলিয়ে, অনন্যার দিকে তাঁকিয়ে বলে, ‘ তুমি চিন্তা করো না মা। তোমার মা, কোথাও যাচ্ছে না। মিষ্টির মা তার কাছেই থাকবে এখন থেকে। ‘

রুমা খানের কথা শুনে জোড়ে জোড়ে হাত তালি বাজাতে থাকে মিষ্টি। অনন্যা অবাক হয়ে রুমা খানের দিকে তাঁকায়। রুমা খান অনন্যার চাহনী বুঝতে পেরে, মিষ্টির গালে চুমু খেয়ে বললেন,

‘ মিষ্টি মা এখন তুমি লক্ষ্যি মেয়ের মতো খেয়ে নাও। আমি তোমার মায়ের সাথে একটু কথা বলবো।’

মিষ্টি চলে যেতেই, অনন্যা রুমা খানের দিকে তাঁকিয়ে প্রশ্ন করে, ‘ ম্যাম আপনি মিষ্টিকে কেন বললেন? আমি ওর মা। ‘

রুমা খান তার চশমার ফ্রেম ঠিক করতে করতে, বিছানায় বসে। হাতের ইশারায় অনন্যাকেও তার পাশে বসতে বলে। অনন্যাও রুমা খানের সামনে থাকা চেয়ার বসে পরে। রুমা খান কিছুক্ষন থেমে বলতে থাকেন, ‘ আমি জানি, তোমার মনে অনেক প্রশ্ন রয়েছে। সবটাই বলছি আমি। মিষ্টি বাচ্চা এক মেয়ে। খুব ছোটবেলা থেকেই মাকে ছাড়া বড় হচ্ছে সে। কখনো সে তার মাকে দেখেনি। ছোট্ট মেয়েটাকে নিজেই একা বড় করে চলেছে ফারিশ। বাচ্চা মানুষ তো তবুও প্রতিনিয়ত মাকে খুঁজে বেড়ায়। একজন সন্তানের যেমন তার বাবাকে প্রয়োজন। তেমনি প্রয়োজন তার মাকে। ‘

অনন্যা বড্ড মনোযোগ সহকারে রুমা খানের কথা গুলো শুনে চলেছে। রুমা খান ফের বলতে থাকলেন,

‘ আমি প্রায়ই মিষ্টিকে সান্ত্বনা দেই, তার মা একদিন আসবে। মেয়েটা মায়ের জন্যে কান্না করতো, তাই একপ্রকার সান্তনা দিয়ে বলতাম, তার মা একদিন হুট করে সাদা পরীর বেশে এসে, মিষ্টির কাছে ধরা দিবে এবং নিজের দিকে একবার তাঁকিয়ে দেখো তোমার পড়নেও সেই সাদা সেলোয়ার কামিজ। স্নিগ্ধ সুন্দর মুখস্রী। টানা টানা হরিনের ন্যায় মায়াবী আখিজোড়া। ঠিক আমার সেই বর্ননার মতো সাদা এক পরী। তাছাড়া ইশিতার সাথে তোমার চেহারার কিছু কিছু মিল রয়েছে। ইশিতাকে কখনো সামনসামনি দেখনি মিষ্টি। ছবিতে যা একটু দেখেছে। তাই তোমাকে দেখেই সে তার মা ভেবে ফেলেছে। আশা করি তুমি বুঝবে এখন। মেয়েটার বড্ড প্রয়োজন তার মাকে।’

রুমা খান মিষ্টির রুমের বিছানার সাথে থাকা ছোট্ট ড্রয়ার থেকে ইশিতার একটি ছবি বের করে দেখালো অনন্যাকে। অনন্যা বেশ মুগ্ধতা নিয়ে ইশিতার ছবিখানার দিকে তাঁকিয়ে, মিষ্টি হাঁসি উপহার দিলো। সাদা পারের গোলাপী তাঁতের শাড়ি পরহিত রমনী, মাথায় শাড়ির আচল দিয়ে ঘোমটা দেয়া। সাঁজহীন সুন্দর মুখস্রী। ছবিটা দেখে অনন্যার মনে হচ্ছে, বাগানে দাঁড়িয়ে ফুলের গাছে পানি দেওয়ার রমনীর দৃশ্য বড্ড মুগ্ধতা নিয়ে কেউ নিজের ক্যামেরা বন্ধী করে নিয়েছে। ইশিতাকে ভালো করে পর্যবেক্ষন করে অনন্যা বুঝতে পারলো সম্পূর্ন না হলেও, ইশিতার চেহারা কিছুটা হলেও অনন্যার চেহারার সাথে মিলে যায়।

‘ ইশিতা কোথায়? ‘

‘ সে, মিষ্টির জন্মের সময়ই মা/রা গিয়েছিলো। ‘

‘ ওহ ‘ বলে থামলো অনন্যা। অর্থাৎ ইশিতা ফারিশের স্ত্রী ছিলো কিন্তু তাদের বিয়ে হয়েছিলো কীভাবে? এমন হার্টলেস লোকের সাথে ইশিতা সংসার কীভাবে করতো? জানার বড্ড কৌতহূল জন্ম নিলো অনন্যার মনে। তবে অনন্যা করলো অন্য প্রশ্ন। সে ছবিটার দিকে তাঁকিয়ে থেকেই জিজ্ঞাসা করলো,

‘ মিসেস ইশিতা বড্ড সুন্দরী ছিলেন। তার এই ছবিটা বড্ড ভালোবাসা নিয়ে তোলা হয়েছিলো, কিন্তু কে তুলেছিলো? ওই হার্টলেস লোকটা? উনার মতো হার্টলেস লোকের মনে বুঝি ভালোবাসা ও আছে। ‘

রুমা খান তৎক্ষনাৎ বলেন,’ আরে না না। ফারিশ তুলে নি..’

রুমা খানের কথা বোধহয় কান অবদি পৌঁছায় নি অনন্যার। নীচ থেকে রেশমি খান অননরত অনন্যার নাম সম্মোধন করে চেঁচিয়ে যাচ্ছেন। অনন্যা দ্রুত উঠে, রুমা খানের হাতে ছবিটা দিয়ে, তাড়াহুড়োর সাথে বললো, ‘ আমি যাচ্ছি ম্যাম। রেশমি ম্যাম নীচে ডাকছে। আপনার সাথে কথা বলে খুব ভালো লাগলো।’

রুমা খান অনন্যার মাথায় হাত বুলিয়ে বললে, ‘ এনা- আরশের মতো তুমিও আমায় দাদি বলে ডাকলে, আমি খুশি হবো। তুমিও তো আমার নাতনী। ‘

রুমা খানের কথা শুনে ক্ষীন্ন হাসে অনন্যা।

______________

অনন্যা নীচে নামতেই, রেশমি খান রান্নাঘর থেকে বেড়িয়ে এসে বললেন, ‘ তা লাটসাহেবের বেটি! বুঝলাম তুমি আমাদের কোন ফরমাস খাটতে আসো নি, কিন্তু এত্তো এত্তো পদের রান্নার যে লিস্ট ফারিশ ধরিয়ে দিয়ে গিয়েছে, তা করবে কখন? বেলা যে পেরিয়ে যায়। ‘

অনন্যা কোন উত্তর না দিয়ে, ওড়নাটা গাঁয়ে ভালোভাবে জড়িয়ে, রান্নাঘরে ঢুকে গেলো। রেশমি খান ভ্রু কুচকে বললেন, ‘ লাটসাহেবের মেয়ে কী বোবা নাকী। ‘

‘ এখন যদি উত্তর দিতে যাই, তখন তো বলবেন লাটসাহেবের মেয়ের মুখে বলি ফুটেছে। কি তার কথার ধরণ! ‘

অনন্যার উত্তরে, রেগে আগুন হয়ে গেলেন মিসেস রেশমি। রেশমি খান ক্ষিপ্ত গলায় বললেন,

‘ এই মেয়ের সাহস কি? রেশমি খানকে টেক্কা দিয়ে কথা বলছে। ‘

এনা ভার্সিটির থেকে এসেছিলো সবেমাত্র, মায়ের কথা শুনে সে ফিক করে হেসে উঠলো। রেশমি খান হয়তো আরো কিছু বলতে চাইছিলেন, কিন্তু মিষ্টি দ্রুত এসে, অনন্যাকে ঝাপ্টে ধরে বলে,

‘ ছোট দিদুন, তুমি কেন মিষ্টির মাকে বকছো? দেখছো না আমার মা কতদিন পরে, তার মিষ্টির কাছে ফিরে এসেছে, কই ভালো করে কথা বলবে, তা না করে, বকেই যাচ্ছো। ‘

‘ এসেছেন আরেকজন জ্ঞান দিতে আমাকে। পাঁকা মেয়ে একটা। আবার মা বলে ঢং করা হচ্ছে। হু!’

রেশমি কথাটি বলেই রাগে গটগট পায়ে উপরে চলে যায়।এনাও উপরে চলে যায়। অনন্যা সামান্য ঝুঁকে মিষ্টির মাথায় হাত বুলিয়ে, ‘ তা মা, তুমি এখন নীচে নেমে এলে কেন? চুলোর কাছে বেশিক্ষন থাকতে নেই। ‘

‘ না, মা। আজ মিষ্টি তার মাকে ছেড়ে কোথাও যাবে না। আমিও তোমার সাথে আজকে সারাদিন থাকবো।’

মিষ্টির কথা শুনে আলতো হেঁসে তার চুলগুলো হাত দিয়ে এলোমেলো করে দেয় অনন্যা। মিষ্টিও খিলখিলিয়ে হেসে উঠে। বাচ্চা মেয়েটা সত্যি মিষ্টির মতো। যে কেউ দেখলে তাকে ভালো না বেসে থাকতে
পারবে না। অনন্যার বড্ড মায়া হয়। অনন্যা মনে মনে স্হীর করে, যতদিন সে থাকবে, সে নিজের মমতা দিয়ে আগলে রাখবে মা- মরা মেয়েটিকে। মায়ের জায়গা কেউ নিতে পারবে না অন্তত মায়ের মতো হলেও সবটুকু দিয়ে ভালোবাসবে মিষ্টিকে।

__________________

রান্নাঘরের এক কোণে আনমনে দাঁড়িয়ে আছে, অনন্যা। মিষ্টি পাইচারি করতে করতে অনন্যাকে দাঁড়িয়ে থাকতে বললো, ‘ কি ভাবছো মিষ্টির মা?’

‘ তোমার খারুশ বাবা এতোগুলো রান্নার লিস্ট ধরিয়ে গিয়েছে, কিন্তু আমি তো এইসব রান্না পারিই না।’

‘ খারুশ বাবা’ শব্দটি বেশ মনে ধরেছে মিষ্টির। সে যদি তার বাবাকে বাপি না ডেকে খারুশ বাবা বলে সম্মোধন করে, তবে কেমন হবে? যেমন…

‘ খারুশ বাবা তুমি মিষ্টির মাকে এতো রান্না করতে বলেছো কেন?মিষ্টির মা তো রান্না করতে পারে না এতো। মিষ্টির মায়ের বুঝি কষ্ট হবে না? মিষ্টির মাকে এতো রান্না করতে বলবে না। নাহলে মিষ্টি কিন্তু তার খারুশ বাবাকে খুব বকুনি দিবে। ‘

মিষ্টির ভাবনাকে বাস্তবে রুপান্তরিত করতে, মিষ্টি রান্নাঘর থেকে চলে যেতে উদদ্ব হলে, পিছন থেকে অনন্যা ডেকে উঠে, ‘ কোথায় যাচ্ছো মিষ্টি? কিছু খাবে? ‘

‘ বাপিকে বলে দিবো, তুমি রান্না করতে পারবে না। তোমায় যেন ছুটি দিয়ে দেয়। ‘

অনন্যা তৎক্ষনাৎ বলে উঠে, ‘ না, মা! এমন করো না। দেখবে তোমার খারুশ বাবা তোমাকেও বকবে, আমাকেও উল্টো বকবে। ‘

মিষ্টি ঠোট উল্টে বলে, ‘ তবে কি করা যায়? ‘

‘ ইউটিউব দেখে রান্না করা যায়। ‘

অনন্যার কথা শুনে পাশে থাকা করিমা চটজলদি উত্তর দেয়, ‘ কিন্তু আফা, খাবারে যদি উনিশ- বিশ হয়, তাইলে কিন্তু স্যার মেলা রাগ করব। ‘

‘ কিন্তু চেষ্টা তো করতে হবে তাইনা? তুমি কিংবা অন্য কোন সার্ভেন্টের সাহায্য তো নিতে পারবো না। এদিকে রান্না গুলোও পারিনা। সেই দিক বিচারে, আপাতত ইউটিউবই ভরসা। করিমা আপু জিনিস গুলো নিয়ে আসো। আমি রান্না শুরু করছি। ‘

অনন্যা ইউটিউভের ভিডিও মনোযোগ সহকারে দেখে, অত:পর রান্না শুরু করে দেয় অনন্যা। মিষ্টি গালে হাত দিয়ে মনোযোগ সহকারে তার মাকে দেখতে থাকে। যেন বেশ ইন্টারেস্টিং নাটকের সিকোয়্যাল চলছে। নাটকের মা – মেয়ে রান্নাঘরে আছে, কিছুক্ষন পর অফিস থেকে সেই নাটকে বাবার ভূমিকায় এন্ট্রি নিবে ফারিশ খান। সে অতি আদরে মেয়েকে বুকে জড়িয়ে, অনন্যার পাশে দাঁড়িয়ে, অনন্যাকে জ্বালাতন করার চেষ্টা করবে। সবাই দূর থেকে বলবে কি সুন্দর পরিবার! কিন্তু বাস্তবতা আলাদা। আরশ কফি হাতে সোফায় বসে এক দৃষ্টিতে বসে অনন্যার দিকে তাঁকিয়ে রইলো কিন্তু কোন কথা বললো না।

______________________
দুপুর পেরিয়ে, রাত ১০ টা বাজতে চললো। সকাল থেকে না খেয়ে এক টানা রান্না করে যাচ্ছে অনন্যা। কষ্ট হলেও সে বিরতি নেয়নি। সময়ের হের ফের হলে ফারিশ এসে ঝামেলা করবে। কিছুক্ষন পরেই ফারিশ চলে আসবে। তার মধ্যেই, অনন্যার ফোনের রিং বেজে উঠে……..

শব্দসংখ্যা-১৬৪২
চলবে কি?

প্রণয়ের রংধনু পর্ব-০৮

0

#প্রণয়ের_রংধনু🖤
#পর্ব- ৮
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
স্টোর রুমে কোন অপরিচিত ছেলের উপস্হিতি টের পেয়ে কিছুটা ভিতু গলায় শুধায় অনন্যা, ‘ কে? কে ওখানে?’ অনন্যার গলার আওয়াজ পেয়ে, স্টোর রুমের শেষ প্রান্ত থেকে অতি সুদর্শন এক যুবক বেড়িয়ে আসে। পরিষ্কার মুখস্রী, মুখে নেই কোন চাপ দাড়ি। উচ্চতা ফারিশের থেকে কিছুটা কম হবে। পড়নে কালো শার্ট গাঁয়ে এবং একটা সাদা ট্রাউজার। বয়স ২৩-২৪ হবে। ছেলেটির মুখস্রী দেখে,
যে কেউ আন্দাজ করতে পারবে, সে ফারিশের ভাই। ফারিশের মতো গাঁয়ের রং। তার চোখে নেই কোন মোটা ফ্রেমের চশমা। যুবকটি ধীর পায়ে এগিয়ে, অনন্যাকে পা থেকে মা অব্দি পর্যবেক্ষন করে, হেঁসে বললো,

‘ নীচ থেকে শুনছিলাম, কোন এক বড় বিসনেজনম্যানের একমাত্র মেয়ে, ফারিশ ভাইয়ের পার্সোনাল কাজের লোক হয়ে আমাদের বাড়িতে এসেছে। ব্যাপারটা খুব ইন্টারেস্টিং লাগলো, তাই চট করে আপনাকে দেখতে এলাম। ভাবলাম ইন্টারেস্টিং কিছু দেখতে চাচ্ছি, কিছুটা ইন্টারেস্টিং ভাবে আপনার সামনে এন্ট্রি নিলে, বিষয়টি বেশ মজাদার হবে। তাই বাগানের পথ ধরে, স্টোর রুমের পিছনের দরজা দিয়ে, স্টোর রুমে ঢুকলাম। উদ্দেশ্য আপনাকে ভয় দেখানো। আপনি কিচ্ছুক্ষন জন্যে ভয় পেয়েছেন,তাই না?’

‘ না, আমি ভয় পায় নি। ‘

অনন্যার থেকে এমন উত্তর পেয়ে, তার সামনে থাকা যুবকটি বেশ হতাশ হলো। হতাশ গলায় শুধালো,

‘ মিথ্যে বলবেন না, আপনি ভয় পেয়েছেন।আপনার গলায় তা স্পষ্ট! বাই দ্যা ওয়ে, আমি আরশ খান, ফারিশ খানের একমাত্র ছোট ভাই। নাইস টু মিট ইউ।’

আরশ হাত বাড়িয়ে দিলো, অনন্যার দিকে। অনন্যা স্বাভাবিক ভাবেই আরশের সাথে হাত বাড়িতে দিতেই, আরশ অদ্ভুদ ভাবে স্পর্শ করলো অনন্যার হাত। তৎক্ষনাৎ আরশের থেকে নিজের হাত সরিয়ে ফেললো অনন্যা। তা দেখে ক্ষীন্ন হাসলো আরশ। অনন্যার বেশ অস্বস্হি লাগছিলো আরশের আচার- আচরণে। আরশ হয়তো কিছু বলতে চেয়েছিলো কিন্তু করিমা ঝাড়ু হাতে নিয়ে চলে আসায় সে দমে যায়। করিমা আরশকে দেখে মাথা নিচু করে বলে,

‘ ছোড ভাইজান, আপনে এখানে কি করতাছেন? আপনে তো দুপুর ১টার আগে উঠেন না। আইজ হঠাৎ কি হইলো?’

আরশ করিমার প্রশ্নে কিছুটা বিরক্ত হয়ে, ধমকে বলে, ‘ ইচ্ছে হয়েছে তাই এসেছি, তোকে কি তার জন্যে কৈফিয়ত দিতে হবে নাকি? ‘

করিমা আরশের কথা শুনে, মাথা নিচু করে ভেংচি কাটে। আরশ চলে যেতে নিলে, পুনরায় অনন্যার কাছে ফিরে এসে, কিছুটা বিদ্রোপ ভঙ্গিতে অনুরোধ করে বলে, ‘ মিস অনন্যা, কাইন্ডলি আমার ঘরে এক কাপ, কফি নিয়ে আসুন। আজকের সকালটি আপনার হাতের সুস্বাদু কফি দিয়ে শুরু করতে চাই।’

আরশ কথাটি বলেই শিষ বাজাতে বাজাতে চলে যায়। আরশ চলে যেতেই করিমা মাথা উঁচিয়ে, মুখ বেকিয়ে বিড়বিড়িয়ে বলে, নতুন বেডির গ্রেরান পাইলেই, শয়তানডার মাথা নষ্ট হইয়া যায়। ‘

করিমার কথা শুনে, অনন্যা অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলো, ‘ কিছু বললে করিমা আপু? ‘

করিমা চট করে মাথা নাড়িয়ে বলতে থাকে,’ না, না। কেবল তো নতুন আইছেন আফা। আস্তে আস্তে সবকিছুই বুঝে যাবেন, কে আসলে কেমন। ‘

করিমার কথায় ততটা মাথা না ঘামিয়ে, করিমার নিয়ে আসা ঝাড়ু অনন্যা হাতে নিয়ে, কি যেন ভেবে পুনরায় রেখে দিয়ে, করিমার দিকে তাঁকিয়ে বললো,

‘ আচ্ছা করিমা আপু, আপনাদের রান্নাঘরে আমায় নিয়ে যাবেন? একটু দেখিয়ে দিবেন, কোথায় কি আছে। ‘

‘ এখন রান্নাঘরে গিয়ে কি করবেন আফা?’

‘ কফি করবো। কাজের লোক বলে কথা, এখন তো সকলের ফয়-ফরমাশ খাটতে হবে। ‘

___________________

ফারিশ বেশ বিরক্ত হয়েই, অফিসে যাওয়ার জন্যে রেডি হচ্ছে। কেন যেন প্রচন্ড রাগ হচ্ছে অনন্যার প্রতি। আসতে না আসতেই, তার থেকে তার মেয়েকে দূরে সরিয়ে নিচ্ছে। মেয়ে এখন মা -মা বলতে অজ্ঞান। এতো জোড় করার পরেও তার হাতে খেতে চাইলো না মিষ্টি, কিন্তু যাই হোক মিষ্টির অন্যায় আবদার সে মেনে নিবে না। তাকে বুঝতে হবে, মিষ্টি তার মা নয়। ফারিশ ড্রেসিং টেবিলে থাকা ফাইলটা হাতে নিয়ে, নীচে নামতে নামতে খেয়াল করে, রান্নাঘরের এক কোণে দাঁড়িয়ে কফি তৈরি করছে অনন্যা। করিমা উপরে যাচ্ছিলো, ফারিশ করিমাকে দেখে প্রশ্ন করে, ‘ কার জন্যে কফি তৈরি করছেন উনি?’

করিমা ফারিশের প্রশ্ন শুনে, দাঁড়িয়ে গিয়ে উত্তর দেয়, ‘ আসলে, ছোড ভাইজান আফা মনিরে কইছে, আফামনি যেন নিজ হাতে কফি বানায় ছোড বাইজাইনের লেইগা। ‘

করিমার কথা শুনে ভ্রু কুচকে তাঁকায় ফারিশ। অনন্যাকে নিয়ে আসা হয়েছে ফারিশের পার্সোনাল সার্ভেন্ট হিসাবে, সেখানে তার অনুমতি ব্যাতীত বাড়ির অন্য কারো কাজ কোন সাহসে করছে অনন্যা? ফারিশ রান্নাঘরে গিয়ে পকেটে হাত গুজে বলে, ‘ মিস অনন্যা, আমার বাড়িতে আমার অনুমতি ব্যাতীত, কফি করার সাহস কে দিয়েছে?’

অনন্যা কিছুটা বিরক্তি নিয়ে বললো, ‘ সামান্য কফি করার জন্যেও বুঝি আপনার অনুমতি লাগবে?’

‘ অবশ্যই লাগবে। আপনি ভুলে যাবেন না, আপনি শুধুমাত্র আমার পার্সোনাল সার্ভেন্ট। যার-তার ফরমাশ খাটতে আপনাকে নিয়ে আসা হয়নি। ‘

আরশ নীচে নামছিলো, তাকে উদ্দেশ্য করেই যে ফারিশ কথাটি বলেছে তা বুঝতে অসুবিধা হলো না তার। রেশমি খান ড্রাইনিং টেবিলে বসে ছিলেন। ফারিশের কথা শুনে তিনি উচু গলায় বললেন,

‘ তা বাবা ফারিশ! তোমার পার্সোনাল সার্ভেন্ট, আমার ছেলের জন্যে একটু কফি বানালে, তার হাতে ফসকা পরে যাবে নাকি? ‘

‘ আপনি খুব ভালো করেই জানেন, মিসেস রেশমি খান বাড়তি কথা আমার মোটেও পছন্দ নয়। আমি যখন বলেছি, উনি এই বাড়ির অন্য কারো কোন কাজ করবে না, তার মানে করবে না। ‘

ফারিশ কথাটি বলেই, অনন্যার হাত থেকে কফির মগটা ছুড়ে ফেলো দিলো । চুলা থেকে নামানো সদ্য কফি কিছুটা ছিটিয়ে আসলো অনন্যার পায়ে। অনন্যা ব্যাথায় টু শব্দ অব্দি করলো না। শুধু দেখতে থাকলো ফারিশের অদ্ভুদ কান্ড। মানুষটা এমন কেন? আরশের জন্যে বানানো কফি এইভাবে ফেলে দেওয়ায় বেশ রাগ হলো আরশের তবুও ফারিশের সামনে কথা বলার সাহস নেই তার। ফারিশ গম্ভীর হয়ে, বেশ বড় এক লিস্ট অনন্যার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো,

‘ মিস অনন্যা! আজ আমার অনেক গুলো ক্লাইন্ট আসবে ডিনারে। লিস্ট অনুযায়ী, প্রতিটা মেন্যু আমার রেডি চায়। কারো সাহায্য ভুলেও নিবেন না আপনি। মাইন্ট ইট। ‘

ফারিশের দেওয়া এতো বড় লিস্ট দেখে থ হয়ে যায়
অনন্যা। এতো পদ রান্না করতে করতে, দিন পেরিয়ে রাত হয়ে যাবে। তার থেকেও বড় কথা, সে এতো পদ রান্না করতে পারে না। বাবা- মায়ের বড্ড আদরের ছিলো অনন্যা। তার বাবা কখনো তাকে রান্নাঘরের আশে পাশেও ঘেষতে দেইনি। যতটুকুই সে রান্না শিখেছে, কলেজ- ভার্সিটির পিকনিকে। মনে মনে বেশ কয়েকদফা ইচ্ছেমতো গালি দিচ্ছে অনন্যা,ফারিশকে। অনন্যার মনের অবস্হস বুঝতে পেরে, ফারিশ বাঁকা হেসে অন্যন্যার দিকে ঝুঁকে বলে,

‘ কাজ বাদ দিয়ে, দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সময় নষ্ট করবেন না মিস। আই জাস্ট ডোন্ট লাইক দিজ, সো প্লিয স্টার্ট, নাহলে এর পরিনতি খুবই করুন হবে আপনার জন্যে। আই থিংক আপনি বুঝতে পারছেন। ‘

______________________

মিষ্টি তার ময়না পাখির সামনে দাঁড়িয়ে, শুকনো মুখে বলে, ‘ ময়না জানিস? আমার মা এসেছে, কিন্তু বাপি বলছে উনি নাকি আমার মা নয়, কিন্তু আমি জানিই উনিই আমার মা। ‘

অপরদিকে অনন্যা করিমার থেকে শুনেছে মিষ্টি কিচ্ছু খায় নি। সকালে মেয়েটি দেখেই বেশ মায়া জন্মে গিয়েছিলো অনন্যার। সে ঠিক করেছে নিজ হাতে মেয়েটিকে খাওয়িয়ে দিয়ে আসবে। ফারিশ অফিসে। এই সুযোগে মিষ্টির কাছে সে যেতে পারবে।তাই সে নিজেই ব্রেকফাস্ট নিয়ে, মিষ্টির রুমে নক করে বলে,

‘ আসবো মিষ্টি মা?’

মিষ্টি অনন্যাকে দেখেই সঙ্গে সঙ্গে দৌড়ে ঝাপ্টে ধরে খুশি হয়ে বলে, ‘ মিষ্টির মা, তুমি এসেছো?’

অনন্যা মিষ্টির গালে হাত রেখে বলে, ‘ তুমি না খেয়ে, আছো কেন মিষ্টি? না খেয়ে থাকলে কিন্তু অসুস্হ হয়ে পরবে । ‘

মিষ্টি তার ফোকলা দাঁতের হাসি দিয়ে বললো,

‘ আমি শুনেছি সন্তান না খেয়ে থাকলে, তার মা ঠিক আসে। আমি জানতাম আমি না খেয়ে থাকলে, তুমি ঠিক আসবে আমাকে খায়িয়ে দিতে। যে যাই বলুক, আমি জানি তুমিই মিষ্টির মা। ‘

মিষ্টি কথাটি বলেই, অনন্যাকে জড়িয়ে ধরলো। অনন্যাও মিষ্টিকে বুকের সাথে মিশিয়ে আদর করতে থাকে। বড্ড মিষ্টি বাচ্চাটা। তাকে কেমন সহজেই আপন করে নিয়েছে, কিন্তু মিষ্টি তাকে বার বার মা বলছে কেন?মিষ্টির আসল মা কোথায়?

অনন্যার ভাবনার মাঝেই, রুমা খান দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বললেন,’ আমি জানি অনন্যা তুমি কী ভাবছো। আসলে আমার জন্যে, মিষ্টি তোমায় নিজের মা ভাবছে।’

চলবে কি?

প্রণয়ের রংধনু পর্ব-০৭

0

#প্রণয়ের_রংধনু
#পর্ব-৭
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
হুট করে চার-পাঁচ বছরের বাচ্চা মেয়ে এসে অনন্যাকে ‘মা ‘ বলে সম্মোধন করায়, বেশ খানিক্টা চমকে উঠে অনন্যা। মেয়েটা তাকে মা বলে ডাকছে কেন? ছাদের উপরে বসে, মিষ্টির এমন আচরন দেখে ফারিশও অবাক বনে যায়। সে দ্রুত পায়ে নীচে চলে যায়।মিষ্টি অনন্যার ওড়না টেনে ধরে খুশি হয়ে বলে, ‘ মা! তুমি ফাইনালি চলে এসেছো! আজ আমি অনেক হেপ্পি মা। জানো আমি কবে থেকে তোমার জন্যে ওয়েট করছি। সবাই বলে, তুমি নাকি আকাশের স্টার হয়ে গিয়েছো, বাট আমি জানতাম, তুমি আসবে। ‘
অচেনা বাচ্চা মেয়েটার কথা শুনে, বুকের ভিতরে চিনচিন করে ব্যাথা করে উঠলো অনন্যার। সে নিচু হয়ে, পরম মমতা নিয়ে মিষ্টির গালে হাত রেখে বলে,

‘ তুমি কে মামনী? কে তোমার মা? ‘

‘ ওমা! মা, তুমি আমায় চিনতে পারছো না কেন? আমি তো মিষ্টি, আর তুমি আমার হচ্ছো এই মিষ্টির মা। ‘

মিষ্টির কথার বিপরীতে, অনন্যা কিছু বলতে নিলে, পছন থেকে ফারিশ এগিয়ে এসে, হাক ছেড়ে ডাকতে থাকে, ‘ মিষ্টি! তুমি ওখানে কি করছো মা? কাম হেয়ার, মাই প্রিন্সেস! ‘

মিষ্টি অনন্যার হাত ধরে, তাকে নিয়ে ফারিশের সামনে দাঁড়িয়ে, হাঁসিমুখে অনন্যাকে দেখিয়ে বলে,

‘ দেখো বাপি! মিষ্টির মা চলে এসেছে। মিষ্টির মা স্টার হয়ে যায়নি। ‘

ফারিশ গম্ভীর গলায় বলে, ‘ মা, উনি তোমার মা নন।’

‘না, বাপি তুমি মিথ্যে বলছো। আমি জানি উনিই মিষ্টির মা। ‘

কথাটি বলেই বেশ শক্ত করে অনন্যাকে জড়িয়ে ধরে রাখে মিষ্টি। যেন সে ছেড়ে দিলেই, অনন্যা পালিয়ে যাবে। অপরদিকে অনন্যা এক ঘোরের মধ্যে অবস্হান করছে, যেন সে বর্তমানের পরিস্হিতি ঠিক বুঝে – শুনে উঠতে পারছে না। বাচ্চা মেয়েটা, ফারিশকে বাপি বলে সম্মোধন করছে, অর্থাৎ মেয়েটির বাবা ফারিশ, তাহলে মিষ্টির মা কোথায়? নিশ্চই সে ফারিশের স্ত্রী, তবে সেই স্ত্রী এখানে নেই কেন? বাচ্চা মেয়েটিই বা হঠাৎ প্রথম পরিচয়ে অনন্যাকে নিজের মা ভাবছে কেন? বেশ রহস্য! জটিল এক রহস্য! যা ভেদ করতে পারছে না অনন্যা। ফারিশ বেশ বিরক্ত হয়েই, স্টাফকে আদেশের সুরে বলে,

‘ এখুনি মিষ্টিকে তার রুমে নিয়ে গিয়ে, ব্রেকফাস্ট করাও। ‘

ফারিশের আদেশ শুনে স্টাফ বেশ ভয় পেয়ে, মিষ্টিকে জোড় করে অনন্যার থেকে ছাড়িয়ে নিলো। মিষ্টিকে অনন্যার থেকে আলাদা করে নেওয়ায়, মিষ্টি জোড়ে জোড়ে কান্না করতে লাগলো। স্টাফ তবুও জোড় করে,মিষ্টিকে কোলে নিয়ে ভিতরে চলে গেলো।
মিষ্টি এইভাবে কান্না করায়, অনন্যারও বেশ খারাপ লাগলো, তার উপর ফারিশের উপরও দ্বিগুন রাগ উঠলো! লোকটা নিজের মেয়ের প্রতিও কেন এতো কঠোর? মিষ্টি তার কাছে কিছুক্ষন থাকলে কি এমন হয়ে যেতো?অনন্যা বিড়বিড়িয়ে বলতে লাগলো,
‘ হার্টলেস লোক একটা! ‘

অনন্যার সেই কথা ঠিকই কানে এসেছিলো, ফারিশের। ফারিশ তা শুনে, বাঁকা হেসে আপনমনে বলতে থাকে, ‘ ইউ আর টোটালি রাইট মিস অনন্যা! ফারিশ খানের মতো হার্টলেস কেউ নেই, তার প্রতি পদে পদে আপনি টের পাবেন। ‘

_________________________

অভি তার রুমে বসে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে, কোর্ট পরছিলো, হাতে তার সময় বড্ড কাম! বেশ কিছু জটিল কাজ নিয়ে তাকে আজ ক্লাইন্দের সাথে মিটিং এ বসতে হবে। সে জেল নিয়ে চুল সেট করতে নিলে, ভেবে উঠে, অনন্যা এখানে থাকলে কেমন হতো? সে বোধহয় বিছানায় পা ঝুলিয়ে বসে বসে ড্যাবড্যাব করে কিছুক্ষন তাঁকিয়ে থাকতো,যেন জেল দিয়ে চুল সেট করা, তার জন্যে পৃথিবীর এক অন্যতম অদ্ভুদ কাজ। অনন্যা হয়তো বসা থেকেই উঠে দাঁড়িয়েই এসে, অভির সেট করা চুলগুলো এলোমেলো করে দিতো। অভি তখন রাগান্বিত হলেই, ঠোট ফুলিয়ে হয়তো বলতো, ‘ এলোমেলো চুলে বেশ মানায় তোমায় অভি! বেশ সুদর্শন লাগে, তা কি তুমি খেয়াল করে দেখেছো? ‘

অনন্যার কথা ভাবতেই ফিক করে হেঁসে উঠে অভি। তার অনন্যাকে নিয়ে ভাবনাগুলো যুক্তিহীন হয় বরং চিরন্তর সত্য, কারণ তাদের বিয়ে ঠিক হওয়ার পরে, অনন্যা প্রায় সকাল সকাল অভিদের বাড়িতে চলে আসতো। লুকিয়ে লুকিয়ে এসে , অভির অফিসে যাওয়ার পূর্বে, তার চুলগুলো এলোমেলো করে দিতো। অনন্যার সেই মায়াবী মুখের দিকে তাঁকিয়ে রাগও করতে পারতো না অভি। হেঁসে উঠে, অনন্যাকে জড়িয়ে ধরতো। অভির ভাবনার মাঝেই, কেউ দরজায় নক করে মেয়েলি কন্ঠে জিজ্ঞাসা করে,

‘ আসবো, অভি? ‘

অভি কিছু না ভেবেই বলে আপনমনে বলে উঠে,

‘ উহু! একদম আসবে না অনন্যা। আজ তোমায় আমি আমার চুলগুলো এলোমেলো করতে দিবো না, এবং আজকে তোমার ওই ইনোসেন্ট ফেস ও আমার রাগ গলাতে পারবে না। খবরদার, বাইরে থাকো।’

অভির কথা শুনে জুঁই থমকে দাঁড়ায়। সে এখানে এসে, এমন মুহুর্তে অভির মুখে ‘ অনন্যা’ নামটি আশা করেনি। অভি কিসব বলে যাচ্ছে? সে কি কোনভাবে অনন্যাকে কল্পনা করছে? জুঁই অভির সামনে এসে, অভিকে নিজের দিকে ফিরিয়ে, কঠোর গলায় শুধায়,’ কিসব বলছো তুমি, অভি? তুমি কী কোনভাবে আমাকে অনন্যা ভাবছো? কি করে পারছো তুমি? এখনো তুমি ওই চরিত্রহীন মেয়েটাকে নিয়ে ভাবছো? যে তোমাকে এতো বাজে ভাবে ঠকিয়েছে। ‘

জুঁইয়ের কথায় হুশ ফেরে অভির। সত্যি সে কি ভেবে চলছিলো এতোক্ষন? সে কিছুতেই অনন্যাকে ভুলে থাকতে পারছে না। অভি থমথমে গলায় বলে,

‘ আমার জরুরী মিটিং আছে জুঁই। তুমি মায়ের সাথে গিয়ে বরং গল্প করো। পরে দেখা হচ্ছে। ‘

অভি কথাটি বলেই একপ্রকার জুঁইকে এড়িয়ে, বেড়িয়ে যায়। অভি বেড়িয়ে যেতেই, জুঁই
‘ অনন্যা,মাই ফুট। ‘ বলে চেঁচিয়ে উঠে।

__________________

অনন্যা বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে, সর্বপ্রথম দেখে বেশ বড় ড্রাইয়িং রুম তার পাশাপাশিই রয়েছে এটাচ করা ডাইনিং রুমের সাথে রান্নাঘর। রুমা খান টেবিলে সবেমাত্র বসেছেন। রুমা খানের ছোট ছেলে খালেদ খান খবরের কাগজ নিয়ে মায়ের পাশে বসে আছেন। খালেদ খানের বউ রেশমি কাজের লোকদের দিয়ে খাবার পরিবেশন করছিলো। খালেদ খানের বড় মেয়ে এনা ভার্সিটি যাওয়ার জন্যে নীচে এসে, সোফায় বসে ব্রেকফাস্ট করছিলো। রুমা খান, রেশমা খানকে প্রশ্ন করে, ‘ সবাইকে দেখছি, আরশ কোথায়? ‘
রেশমা বেশ বিচলিত হয়ে উত্তর দেয়,
‘ আসলে, আরশ কাল অফিসের কাজে বেশ ব্যাস্ত ছিলো। রাত করে বাড়িতে ফিরিছে, এখন ঘুমাচ্ছে।’

‘ ছেলের দোষ আর কত ঢাকবে বউমা? তোমার ছেলে একবারও অফিসে পা দিয়েছে, বিদেশ থেকে আসার পর? অপরদিকে, আমার ফারিশকে দেখো, সারাদিন শুধু অফিস! কাজ ছাড়া সে চলতেই পারে না, আর অন্যদিকে তোমার ছেলে, পার্টি করে টাকা উড়ানো ছাড়া আর করেই বা কী?’

রুমা খানের কথা শুনে মুখ বেকিয়ে, ব্রেডে জেলি লাগাতে থাকে। খালেদ খানও নিষ্চুপ থাকেন।

অপরদিকে, ফারিশ বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে, সকলের সামনে দাঁড়িয়ে,

‘ লিসেন এভ্রিবডি! ইউ নিড সাম এটেনশন ফর ইউ। ‘

ফারিশের কথা শুনে, সকলে ফারিশের দিকে তাঁকাতেই, চমকে উঠে। বিশেষ করে খালেদ খান এবং রুমা খান। কারণ তারা লতিফ হাওলাদের মেয়ে, অনন্যাকে যথেষ্ট ভালো করে চিনে। রেশমা খান অন্যন্যাকে দেখে ভ্রু কুচকে বলেন,

‘ এই মেয়ে কে? দেখে তো ভদ্র ঘরের মেয়ে মনে হচ্ছে।’

‘ ও লতিফ ভাইয়ের মেয়ে না?’

খালেদ খানের প্রশ্ন শুনে, ফারিশ বাঁকা হেসে বলে, ‘ হ্যা! দ্যা গ্রেট বিসনেজম্যান, লতিফ হাওলাদারের একমাত্র মেয়ে, যার এখন বর্তমান পরিচয়, ফারিশ খানের পার্সোনাল সার্ভেন্ট! যার কাজ হবে, ফারিশ খানের সেবা – যত্ন করা। আশা করি, সবার কোন আপত্তি নেই, থাকলেও আমার কিছু যায় আসে না।
আমি এই নিয়ে আর কোন কুইশচেন শুনতে চাই না। ‘

কথাটি বলেই, ফারিশ একজন সার্ভেন্ট করিমাকে চোখ দিয়ে ইশারা করে। ফারিশের ইশারা পেয়ে, করিমা অনন্যার কাছে এসে বলে, ‘ আপা আপনে আমার সাথে আসেন। আমি আপনার ঘর দেহাই দিতাছি। ‘

করিমার কথা শুনে, অনন্যা করিমার সাথে তার পিছনে পিছনে যায়। ফারিশও দ্রুত পায়ে উপরের দিকে চলে যায়। বাড়ির সকলের গতিবিধি দেখে অনন্যার মনে হচ্ছে, তারা সকলেই যথেষ্ট ভালোভাবে তার বাবা, লতিফ হাওলারকে চিনে, কিন্তু কীভাবে? কি সম্পর্ক তার বাবার খান বাড়ির সাথে? কিন্তু তার বাবা তো কখনোই, তাকে খান বাড়ি সম্পর্কে বলেনি। না, সবকিছু জানতে হবে অনন্যাকে। বেশ জটিল সবকিছু, কিন্তু সে সবকিছুর রহস্য ভেদ করবেই।

অনন্যাকে, ফারিশ নিজের কাজের লোক হিসেবে নিয়ে আসায়, খালেদ খানের কপালে চিন্তার ভাঁজ পরে যায়। এনা খালেদ খানের কাছে এসে বললেন,

‘ বাবা! ওই মেয়েটা কে? লতিফ খানই বা কে? ‘

মেয়ের কথা শুনে, রেশমি খানও তার স্বামীকে প্রশ্ন করে, ‘ ফারিশের কথা শুনে, মনে হলো বড় লাটসাহেবের বেটি, কিন্তু সে ফারিশের কাজের লোক হয়ে এই বাড়িতে এলো কেন?’

খালেদ খান বিরক্ত হলেন তাদের প্রশ্নে। রুমা খান বললো, ‘ তোমরা মা – মেয়ে চুপ থাকবে? এতো কৌতহূল ভালো না। ছোট খোকাকে প্রশ্ন করে লাভ নেই। নিজেদের কাজে করো। ‘

রুমা খান কথাটি বলেই উঠে দাঁড়ালেন। বেশ চিন্তিত দেখাচ্ছে তাকে। কাল ফারিশের কথা শুনেই, সে বুঝতে পেরেছিলো ভয়ংকর কিছু ঘটাতে চলেছে ফারিশ। রুমা খানের চিন্তা হচ্ছে অনন্যার জন্যে। বাবার করা কৃতকর্মের শাস্তি মাঝখান দিয়ে নির্দোশ মেয়েটা পাবে, না তাকে ফারিশের সাথে কথা বলতে হবে।

____________________

ফারিশ ঘরে এসে দেখে, মিষ্টি বিছানায় বসে মুখ কালো করে আছে। ফারিশকে দেখেই, সে এগিয়ে এসে বলে, ‘ বাপি! মা কোথায়? ‘

মিষ্টির কথা শুনে ফারিশ এগিয়ে গিয়ে, পাশে থাকা টেবিলে থেকে দুধের গ্লাসটি মিষ্টির দিকে এগিয়ে বলে,

‘ ফার্স্ট অফ অল! সে আমাদের বাড়ির সামান্য এক কাজের লোক মা, সে তোমার মা নয়। তুমি এইবার গুড গার্লের মতো দুধ খেয়ে নাও মা। ‘

মিষ্টি দুধের গ্লাস টা সরিয়ে, চিৎকার করে বলে,

‘ আমি খাবো না বাপি। আমি কিছুতেই খাবো না। আমাকে বড় গ্রেনি বলেছে, আমি জানি সেই আমার মা। ‘

মিষ্টির কথা শুনে, ফারিশ ধমক দিয়ে বলে উঠে,

‘ একদম অবাধ্য হবে না, মা। আমি যেমন আদর করতে পারি, তেমনি শাসন করতে পারি। চুপচাপ দুধ খেয়ে নিবে। কিছুক্ষন পর চিটার আসবে। আমি যেন তোমার মুখে এইসব কথা আর না শুনি। ‘

কথাটি বলেই, রেগে বেড়িয়ে যায় ফারিশ। ফারিশের থেকে বকা খেয়ে, মিষ্টি জোড়ে জোড়ে কান্না করা শুরু করে।

অপরদিকে, করিমা বাড়ির শেষ প্রান্তের একটি স্টোর রুমে নিয়ে আসে অনন্যাকে। অনন্যা অবাক হয়ে যায়, এতো বড় বাড়িতে তার ঠায় হলো, পুরাতন এক স্টোর রুমে? করিমা মাথা নিচু করে বলে,

‘ বড্ড খারাপ লাগতাছি আপামনি। আমাদের কাজের লোকেদের রুমও এর থেইকা ভালো। জানি আপনার কষ্ট হবে, কিন্তু কি করার বলেন? ফারিশ স্যারের হুকুম বলে কথা, অগ্রেহ্য করতে পারি না। ‘

অনন্যা করিমার কথা শুনে, আলতো হেঁসে জবাব দেয়, ‘ সমস্যা নেই, আই ইউল মেনেজ। আমি ঠিক থাকতে পারবো। তুমি পারলে একটা ঝাড়ু জোগাড় করে দাও। আমি রুমটাকে পরিষ্কার করে দিবো। ‘

করিমা মাথা নিচু করে ‘আইচ্ছা’ বলে যায়। করিমা চলে যেতেই, অনন্যা স্টোর রুমের দরজা খুলে, সেখানে প্রবেশ করে। স্টোর রুম বেশ অন্ধকার। সেই অন্ধকারের মাঝে, হঠাৎ এক পুরুষের অবয় দেখে সে চমকে উঠে।

চলবে কি?

প্রণয়ের রংধনু পর্ব-০৬

0

#প্রণয়ের_রংধনু
#পর্ব- ৬
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
মাঝরাতে হঠাৎ করে অচেনা নাম্বার থেকে ফোন আসায় চমকে উঠলো অনন্যা। হাত বাড়িয়ে ফোন রিসিভ করতেই, ‘ হ্যালো,কে বলছেন?’ বলে উঠলো অনন্যা। ফোনের অপাশ থেকে কোনরুপ উত্তর এলো না। ফোনের অপাশে থাকা ব্যাক্তি তীব্রভাবে নি:শ্বাস ফেলতে লাগলো। তীব্র নি:শ্বাসের শব্দে অনন্যার বুকখানা আনচান, আনচান করতে লাগলো। অনন্যা কোনরকম অধর নাড়িয়ে, প্রশ্ন করলো,
‘ অভি! তুমি? ‘
ফোনের অপাশে থাকা অভি চমকে উঠলো। সে বোধহয় কল্পনা করেনি, কোনপ্রকার উত্তর না দিলেও, যথেষ্ট নিঁখুতভাবে তাকে ধরে ফেলবে অনন্যা। মেয়েদের আশ্চর্য এক ক্ষমতা রয়েছে তাই বোধহয় অনন্যা তাকে ধরে ফেলেছে, কিন্তু সব মেয়েদের সেই ক্ষমতা থাকে না। কিছু কিছু মেয়ের সেই অসমান্য ক্ষমতা থাকে। অনন্যা তাদের মধ্যে সেই একজন, তাইতো কত নিঁখুতভাবে তাকে ঠকিয়ে ফেলেছিলো। অভি তড়িৎ গতিতে ফোন কেটে দিয়ে জোড়ে জোড়ে নি:শ্বাস ফেললো। তার মাঝরাতে কি যেন হয়েছিলো, সে সঠিকভাবে বুঝতে পারছে না। অনন্যার কন্ঠ বড্ড শুনতে ইচ্ছে করছিলো তার। কি মিষ্টি কন্ঠস্বর মেয়েটার গলা! সে বিছানা থেকে উঠে গিয়ে তার অন্য একটা নাম্বার দিয়ে, কিছু না ভেবেই অনন্যাকে ফোন করে বসে, কিন্তু অনন্যা তাকে এইভাবে ধরে ফেলবে তা ঠাওড় করতে পারে নি সে। অনন্যা তার হাতের ফোনটি রেখে দিয়ে, জানালার কাছে দাঁড়ায়। অভি হয়তো ভাবছে অনন্যার কোন এক বিশেষ ক্ষমতা রয়েছে কিন্তু সে আদোও বুঝলো না, অভির প্রতিটা নি:শ্বাসের শব্দ অনন্যার কাছে ঠিক কতটা পরিচিত! প্রায় অফিসের ফাঁকে অভি, অনন্যার ভার্সিটি পৌঁছে, তার ক্যাম্পাসের পাশের পার্কে অনন্যাকে নিয়ে যেতো। সেখানে তাদের একটি নির্দিষ্ট বেঞ্চ ছিলো। অনন্যাকে সেখানে বসিয়ে, অভি অনন্যার কোলে মাথা রেখে স্টান হয়ে শুয়ে পরতো। অত:পর গম্ভীর গলায় শুধাতো, ‘ অনন্যা! আমায় বিরক্ত করবে না। আমার বড্ড ঘুম প্রয়োজন। তোমার কোলে মাথা রাখলেই সে ঘুম আসবে, অন্যথায় আসবে না। ঘড়ি ধরে, টানা ৪৫মিনিট পর আমায় জাগিয়ে দিবে। সময়ের হের -ফের করবে না।
আমায় অফিস পৌঁছাতে হবে, তাছাড়া তোমারও ক্লাস আছে। ক্লাস ফাঁকি দিয়ে প্রেম করা অন্যায়, বুঝলে? ‘

‘ হ্যা বুঝলাম। ‘

‘ আচ্ছা তুমি বিরক্ত হচ্ছো না তো? ‘

‘ না, হচ্ছি না। তুমি ঘুমাও। ‘

অভি তখন পরম শান্তিতে ঘুমিয়ে পরতো। অনন্যা তখন ঘুমন্ত অভির দিকে পরম মায়া নিয়ে তাঁকিয়ে থাকতো। ছেলে মানুষরাও ঘুমালে বুঝি তাদের এতোটা নিষ্পাপ লাগে, কই সেই কথা তো সে আগে জানতো না। অভির ভাষ্যমতে সেদিন অনন্যা ইচ্ছেকৃত অন্যায় করেছিলো। ৪৫ মিনিট নয় বরং টানা ১ ঘন্টা পর অভিকে জাগিয়ে দিয়েছিলো।

________________
পুরনো সেই দিনের কথা মনে পরতেই, অনন্যার আখিজোড়া বেয়ে টুপ করে অশ্রু গড়িয়ে পরে। জুঁই বড্ড ভাগ্যমতী মেয়ে, অভির সেই ঘুমন্ত মুখস্রী রোজ রোজ দেখবে, সেই মুখস্রী দেখে তার সারাদিনের ক্লান্তি মুহুর্তেই দূরে চলে যাবে। আচ্ছা জুঁই কি তবে এর জন্যেই এইভাবে তাকে ঠকালো? তার সাথে প্রতারণা করলো। জুঁইও অভিকে ভালোবাসতো, তা কখনো টের পায়নি অনন্যা। আচ্ছা জুঁই কোনভাবে ফারিশ খানের সাথে জড়িত নয় তো? বেশ অনেকগুলো কথা মাথায় ঘুড়পাক খাচ্ছে। অনন্যার বেশ ভালো করে মনে আছে, সেদিন তাদের বন্ধু রাহেলের বার্থডে পার্টিতে,ড্রিংক করে সে প্রায় অজ্ঞান হয়ে পরেছিলো। পরেরদিন সকালে সে নিজেকে তাদের আরেক বন্ধু শিফালির বাড়িতে আবিষ্কার করেছিলো, কিন্তু অবাক করার বিষয় পার্টিতে কিংবা শিফালির বাড়িতে কোথাও জুঁইয়ের উপস্হিতি ছিলো না। তবে জুঁই কীকরে সবকিছুর মধ্যে জড়িত থাকবে? শিফালির কথা মস্তিষ্কে আসতেই, তড়িৎ গতিতে উঠে বসে অনন্যা। সেদিন রাতে আসলে কি হয়েছে, তা সঠিকভাবে কেবল তাকে শেফালি বলতে পারবে। অনন্যা তার ফোন হাতে নিয়ে শেফালিকে কল করে।

____________________
অপরদিকে, ফারিশ সিড়ি বেয়ে উপরে উঠতেই, তার দাদী রুমা খানের মুখোমুখি হয়। দাদিকে দেখে ভ্রু কুচকে, ফারিশ জিজ্ঞাসা করে, ‘ এতো রাত অব্দি জেগে আছো কেন দাদী? তোমার যে প্রেশার হাই! ভুলে গেলে? ‘

রুমা খান গম্ভীর মুখে উত্তর দেয়, ‘ আমার কথা বাদ দাও দাদুভাই। এই বুড়ির কথা কী, তোমার আদোও মনে থাকে? সারাদিন শুধু কাজ আর কাজ। সেই সকালে যাও, আর ফিরে আসো সেই রাতে।বাড়িতে যে তোমার নিজেদের লোকেরা আছে, সেইটাই ভুলে যাও। ‘

ফারিশ তার ব্লেজার খুলতে খুলতে, ঝুঁকে তার দাদির হাত ধরে বলে, ‘ আমার জীবনে তুমি আর মিষ্টি ছাড়া আর কে আছে বলো? তোমাদের জন্যেই আমি এতোকিছুর পরেও খান বাড়িতে রয়েছি। নাহলে সেই কবেই সকলের আড়ালে দূরে সরে যেতাম। ‘

ফারিশ কথাটি বলে মিষ্টির রুমের দিকে পা বাড়াতে নিলে, পিছন থেকে রুমা খান প্রশ্ন করেন,

‘ কালকে কে এমন আসছে দাদুভাই? নতুন কোন কাজের লোক রেখেছো? ‘

‘ হ্যা দাদি! বিশেষ এক কাজের লোক। যাকে দেখে তোমার চোখ ছানাবড়া হয়ে যাবে। ‘

‘ মানে! কি বলতে চাইছো দাদুভাই? ‘

‘ অনেক পুরনো হিসাব জমা হয়ে আছে দাদি। সবকিছুর হিসাব নিবে ফারিশ খান। জাস্ট ওয়েট এন্ড সি! ‘

বেশ গম্ভীরভাবে কথাটি বলেই, ফারিশ মিষ্টির রুমে চলে গেলো ফারিশ। অপরদিকে রুমা খান বেশ ঘাবড়ে গেলেন। তার মন বলছে,ফারিশ এক ভয়ংকর খেলায় মেতে উঠেছে!

ফারিশ খুব সাবধানে পা ফেলে মিষ্টির রুমে প্রবেশ করে, যেন মিষ্টির ঘুম ভেঙ্গে না যায়। ফারিশ গিয়ে তার মেয়ের পাশে বসে, মাথায় হাত বুলাতে থাকে। তার ছোট্ট নিষ্পাপ মেয়েটির মুখস্রীখানা দেখলেই, তার সারাদিনের ক্লান্তি নিমিষেই পালিয়ে যায়। তার মনে হয়, আজ মিষ্টি আছে বলেই, ফারিশ তার বেঁচে থাকার কারণ খুঁজে পেয়েছে। নতুনভাবে বাঁচতে শিখেছে। তখনি সে শুনতে পায়,মিষ্টি আদো আদো গলায় ঘুমের মাঝে শুধাচ্ছে, ‘ মা, মা! কোথায় তুমি? আই নিড ইউ মা। ‘

মিষ্টির কথা শুনে বুকের ভিতর মোচর দিয়ে উঠে ফারিশের। ফারিশ নরম গলায়, মিষ্টির মাথায় হাত বুলিয়ে বলে, ‘ মিষ্টি মা? তোমার কষ্ট হচ্ছে? দেখো তোমার বাপি এসেছে। আমিই তোমার বাবা, আমিই তোমার মা, সোনা। ‘

মিষ্টি কোনরুপ জবাব না দিয়ে, ফের গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পরলো। ফারিশ ঝুঁকে মিষ্টির ললাটে ভালোবেসে চুমু দিয়ে দেয়। সে ঠিক করলো,আজ সে তার মেয়ের কাছেই ঘুমাবে।

________________

অন্যদিকে বেশ কিছুক্ষন যাবৎ অনন্যা শেফালিকে কল করে যাচ্ছে কিন্তু রিং হয়েই যাচ্ছে, ধরছে না। হয়তো ঘুমে আছন্ন তাই ফোন ধরছে না, হয়তো এমনও হতো পারে, অনন্যার নাম্বারটাই সে ব্লক লিষ্টে ফেলে রেখেছে। কিন্তু শেফালি এমন কেন করবে?কিচ্ছু ভাবতে পারছে অনন্যা। সে ঠিক করলো খুব সকালেই, সে শেফালির বাড়ির পৌঁছে যাবে। রাত পেরিয়ে ভোরের আলো ফুটলো। অনন্যার মা মাঝরাতেই, হসপিটালে চলে গিয়েছিলো, কিন্তু যাওয়ার আগে সে আরো একবার বেশ অনেকক্ষন যাবৎ অনন্যাকে বুঝিয়েছিলো সে যেন অভিমান না করে, নিজের এতো বড় ক্ষতি না করে, কিন্তু অনন্যা এক কথার মানুষ, সে শেফা বেগমের সমস্ত কথাকে অগ্রাহ্য করে, নিজের ঘরে এসে দরজা বন্ধ করে বসে ছিলো। ঘড়িতে সকাল ৮টা বাজে। অনন্যা ঠিক করে, খান বাড়ি পৌঁছে যাওয়ার আগে, সে একবার শেফালির সাথে কথা বলবে, কিন্তু সে উপায়ও নেই। ফারিশের দেহরক্ষী সর্বক্ষন যাবৎ গেটের বাইরে পাহাড়া দিচ্ছে। তাদের ভাষ্যমতে ফারিশের ধারণা শেষ মুহূর্তে হয়তো পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করতে পারে অনন্যা। তাই সে কোনপ্রকার ঝুঁকি নিতে রাজি নয়। যথাসময় ঠিক ১০টা ৩০ মিনিটে বাড়ির গেটে, অনন্যার জন্যে গাড়ি এসে উপস্হিত হয়। অনন্যা তার রুমকে ভালো করে দেখে নিয়ে, দ্রুত বেড়িয়ে যায়। অত:পর গাড়িতে উঠে বসে। গাড়ি চলেছে আপনমনে। অনন্যা জানে তার জন্যে পদে পদে বিপদ অপেক্ষা করছে, কিন্তু নিজেকে নির্দোশ প্রমাণ করে, সে ঠিকই ফারিশের থেকে নিজেকে মুক্ত করে বেড়িয়ে আসবে।

অনন্যার ভাবনার মাঝেই, তাদের গাড়ি খান বাড়ির গেটের সামনে এসে থামে। অনন্যা গাড়ি থেকে বেড়োতেই অবাক হয়ে যায়। বেশ বড় জায়গা জুড়ে বিশাল গার্ডেনের এড়িয়া। আশে পাশে নানা গাছ-পালার ছড়াছড়ি। বাগানের ঠিক মধ্যখানে বিশাল এক সুইমিং পুল। তার ঠিক সামনে ডুপ্লেক্স বিশিষ্ট বেশ বড় এক বাড়ি! হয়তো শহরের সবথেকে বড় নামি দামি বাড়ি। বিশিষ্ট ব্যাবসায়ী আরবাজের খানের বাড়ি বলে কথা। বাড়ির সামনের দেয়ালটুকু বেশ সুন্দর করে পাথর দিয়ে সাঁজানো। ফারিশ তার ছাদে দাঁড়িয়ে কফির কাপে চুমুক দিচ্ছিলো, ঘড়ির দিকে তাঁকিয়ে, সে শান্ত দৃষ্টিতে বাগানে থাকা রমনীর দিকে তাঁকায়। অত:পর রহস্যময় হাঁসি, হেসে বলে,

‘ ফারিশ খানের ডেভিল রাজ্যে আপনাকে সুস্বাতম মিস অনন্যা হাওলাদার। ‘

অনন্যার ভাবনার বিঘ্ন ঘটিয়ে, একটি ছোট্ট মেয়ে দৌড়ে এসে, তাকে হুট করকঝাপ্টে ধরে বলে, মা! তুমি এসেছো? ‘
চলবে কি?
নোট: আপনাদের এইসব নেগেটিভ কমেন্ট বন্ধ করুন প্লিয! ইচ্ছে না হলে পড়িয়েন না। আপনাদের কমেন্ট দেখে আমি বিরক্ত ছাড়া আর কিছুই হয়না। মানে অদ্ভুদ লাগে, ফ্রি তে লিখবো তাও কথা শুনতে হবে? আপনাদের কমেন্টে আমি আমার প্লট চেঞ্জ করবো না বা করছি না। পারলে কোন এক গল্পের সাথে আমার গল্পেের লাইন টু লাইন বা প্লট টু প্লট ভালো করে মিলিয়ে দেখান। তারপর এইসব কমেন্ট করবেন। যথেষ্ট হয়েছে!

প্রণয়ের রংধনু পর্ব-০৫

0

#প্রণয়ের_রংধনু
#পর্ব- ৫
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
‘ আমি আপনার কনট্রার্ক পেপারে সাইন করতে রাজি, মি: ফারিশ খান। ‘
ফারিশ কথাটি শুনে তিক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তার সামনে থাকা সেলোয়ার কামিজ পরিহিত রমনীর দিকে তাঁকিয়ে আছে। মুখশ্রীতে তার যথেষ্ট অস্হিরতা ফুটে উঠেছে। ফারিশের ধারণা মানুষ চরম উত্তেজনায় জীবনের সবথেকে বড় ভুল সিধান্ত নেয়,কারণ এই সিদ্ধান্ত এর পরিমানে পরবর্তীতে ভয়ংকর থেকে ভয়ংকর হয়। কিছুক্ষন পূর্বেই অনন্যা হুট করে, ফারিশের কেবিনে এসে,শান্ত গলায় জানায় সে ফারিশের শর্তে রাজি।ফারিশ কোনরুপ প্রশ্ন না করে, কন্ট্রাক্ট পেপারটি অনন্যার দিকে একপ্রকার ছুড়ে দিতেই, অনন্যা সাথে সাথে পেপারটি খপ করে ধরে ফেলে, তা দেখে বাঁকা হাসি দিয়ে, ফারিশ বলে, ‘ভালো করে কন্ট্রাক্ট পেপারটি পড়ুন মিস অনন্যা। আমি আপনাদের কম্পানি ফিরিয়ে দিলে, আপনাকে আজীবনের জন্যে এই ফারিশ খানের সার্ভেন্ট হয়ে কাটিয়ে দিতে হবে। ‘
ফারিশের কথা শুনে অনন্যা ভালো করে পেপারটির দিকে তাঁকিয়ে, চটজলদি কলমটি হাতে নিয়ে, ফারিশের দিকে তাঁকিয়ে বলে, ‘ তবে আমারোও শর্ত আছে, ফারিশ খান।’

‘ কি শর্ত? ‘

‘ আমাকে আজ রাতটা সময় দিতে হবে। আপনি কাল ঠিক সকাল সাড়ে ১০টার দিকে, গাড়ি পাঠিয়ে দিবেন। আমি আপানার বাড়িতে চলে যাবো। ‘

ফারিশ ভ্রু কুচকে প্রশ্ন করে, ‘ সকাল সাড়ে ১০টা কেন? ‘

অনন্যা ফারিশের সামনে থাকা চেয়ারে বসে বলে,’ সকাল ১০টার আগে আমার ঘুম ভাঙ্গবে না। কম স্ট্রেস যায়নি দুইদিন। আই নিড সাম রেস্ট! ঘুম ভালো না হলে, আপনার বাড়িতে গিয়ে, কি কাজ করবো? আচ্ছা বলুন, আমার শর্তে কি আপনি রাজি?’

ফারিশের মুখশ্রীতে কাঠিন্যভাব বিরাজমান! মেয়েটা কি তার সাথে মশকরা করছে? রাগ হলেও, নিজেকে যথাসম্ভব নিয়ন্ত্রন করে সে। এখন তাকে শান্ত থাকতে হবে, রাগ মানুষের সবথেকে বড় শত্রু! যথাসম্ভব নিয়ন্ত্রন থেকে, বিপরীতের শত্রুকে প্রতিহত করতে হবে। ফারিশকে নিষ্চুপ থাকতে দেখে,অনন্যা নিজ থেকেই বলে, ‘ চুপ আছেন, তার মানে আপনি আমার শর্তে রাজি। আমি তাহলে সাইন করে দিচ্ছি।’

ফারিশের জবাবের অপেক্ষা না করে,সঙ্গে সঙ্গে পেপারে সাইন করে দেয় অনন্যা।অত:পর তড়িৎ গতিতে, উঠে দাঁড়িয়ে বলে, ‘ আপনি এখন আমাদের কম্পানি আমাদের ফেরত দিয়ে দিবেন তো? আমার বাপির চিকিৎসা আটকে যাবে, আজকে রাতের মধ্যে ক্যাশ জমা না দিলে। ‘

ফারিশ গম্ভীর গলায় বলে, ‘ সব ব্যাবস্হা হয়ে গিয়েছে। ফারিশ খানের কাজ টাইম টু টাইম হয়। ‘
‘ মানে? ‘

অনন্যার প্রশ্নের সাথে সাথেই, অনন্যার বাবার ম্যানেজার সেখানে এসে বললেন, ‘ ম্যাম! আপনি অফিসে ঢুকার সাথে সাথেই, স্যার তার লোকদের বলে, আমাদের কম্পানির এক্সেস, আমাদের ফেরত দিয়ে দিয়েছে। আমি ইতিমধ্যে,হসপিটালে কাউন্টারে ক্যাশ পাঠানোর ব্যাব্সহাও করে দিয়েছি। ‘

ম্যানেজারের কথা শুনে, অনন্যা ফারিশের দিকে তাঁকিয়ে দেখতে পায়, ফারিশের কোন প্রতিক্রিয়া নেই, সে আপনমনে ল্যাপটপে টাইপিং করে যাচ্ছে। টাইপিং করার মাঝে, সে অনন্যার দিকে তাঁকিয়ে, গম্ভীর গলায় শুধায়, ‘ ইউ কেন গো নাও, মিস অনন্যা। কাল দেখা হচ্ছে। ঠিক সাড়ে ১০টা ৩০ মিনিটে, আপনার বাড়ির সামনে গাড়ি থাকবে। ‘

ফারিশের কথা শুনে কিছুটা গম্ভীর হয়ে বেড়িয়ে যায় অনন্যা এবং মেনেজার। অনন্যা বেড়িয়ে যেতেই, ফারিশ ল্যাপটপ বন্ধ করে উঠে দাঁড়ায়। সে যথেষ্ট ভালো করে লক্ষ্য করেছিলো, সাইন করার সময় কতটা ঘৃণা ছিলো অনন্যার আখিজোড়ায়। সে যেন তার ভিতরের রাগটুকু দমিয়ে রেখেছিলো। অন্য এক প্ল্যান, অনন্যার মাথায় ঘুড়ছে। তা খুব ভালোভাবে টের পেয়েছে ফারিশ। আজকে তার কার্যক্রম দেখে, ফারিশ খুব ভালোভাবে বুঝতে পেরেছে, অনন্যা যথেষ্ট বুদ্ধিমতী, তবুও তাচ্ছিল্য করে ফারিশ বলে উঠে, ‘গেমের ব্যাপারে আপনি বড্ড কাঁচা মিস অনন্যা। যেই স্ট্রাটাজি নিয়ে, আপনি খান বাড়িতে আসছেন, তা সম্পূর্ন ফ্লপ হয়ে যাবে। ‘
ফারিশ একটা সিগারেট ধরিয়ে, হঠাৎ খুব জোড়ে জোড়ে ঘড় কাঁপিয়ে হেসে উঠে। হাঁসতে হাঁসতে হঠাৎই সে প্রচন্ড ক্ষোভ নিয়ে, পাশের কাচের ফুলদানিগুলো সজোড়ে টেবিলের সাথে আঘাত করে টুকরো টুকরো করে ভেঙ্গে ফেলে। ফারিশের কেবিন থেকে শব্দ শুনে, সমস্ত স্টাফ রা কেঁপে উঠে। ফারিশ বিড়বিড়িয়ে বলতে থাকে, ‘ মি: লতিফ হাওলাদার। আপনার সবথেকে কাছের মানুষকে তিলে তিলে কষ্ট দিয়ে, আপনাকে বুঝিয়ে দিবো, নিজের আপন মানুষকে হারানোর বেদনা,কতটা তীব্র! ‘

________________________

অপরদিকে, অনন্যা ব্যাগ গুছাতে গুছাতে ভাবছে, তার পক্ষে সাইন করা ছাড়া আর কোন উপায় ছিলো না।তাছাডাও নিজেকে সকলের সামনে প্রমাণ করার জন্যে এবং কেন ফারিশ খান তাদের ক্ষতি করে চলেছে, তার কারনসহ, সবকিছু জানতে হলেও, তাকে খান বাড়িতে যেতে হবে। অনন্যা বিড়বিড়িয়ে বলে, ‘ একবার শুধু নিজেকে প্রমাণ করি,তারপর আমি সেই খান বাড়ি থেকে বেড়িয়ে আসবো, ফারিশ খান কেন? কারো সাধ্য নেই, অনন্যা হাওলাদারকে আটকে রাখার। ‘
তখনি অনন্যার দরজায় কেউ কড়া নাড়ে। অনন্যা দরজা খুলতই, মিসেস শেফা বেগম হুড়মুড়িয়ে ঘরে ঢুকে, প্রশ্ন করেন, ‘ এইসব আমি শুনছি অনন্যা? তুই নাকি ওই ফারিশ খানের কাজের লোক হওয়ার শর্তে
রাজি হয়েছিস। ‘

‘ তো কী করতাম?তোমার ভাষ্যমতে ম/রে গেলি বুঝি বেশি খুশি হতে?’

অনন্যার এমন প্রশ্নে হচকিয়ে যায় মিসেস শেফা বেগম। অনন্যা ব্যাগ গুছাতে গুছাতে বলে,

‘ আমি কি করবো না করবো! তা নিয়ে, তোমায় ভাবতে হবেনা। তোমাদের টাকার ব্যাব্সহা করে দিয়েছি, এইবার আমাকে রেহাই দাও। তাছাড়া তোমার ভাষ্যমতে আমার মতো চরিত্রহীন মেয়ের জন্যে আজ তোমাদের এই অবস্হা! আমার মতো মেয়ের জন্মের সময় ম/রে গেলেই বেশ হতো। তাইতো তোমাদের একেবারে মুক্তি দিয়ে চলে যাচ্ছি। কোন কথা বলবে না বিপরীতে। তোমার কথা আমি শুনছি না, মা। সো প্লিয লিভ মাই রুম! ‘

মিস শেফা বেগম আহত নয়নে মেয়ের দিকে তাঁকালেন, মেয়ে তার বড্ড অভিমানী! অভিমান করে বড় এক সর্বনাশের দিকে পা বাড়াচ্ছে, তিনি মা হয়ে তা সইবে কীকরে? তিনি জানেন তার কথার আপাতত কোন মূল্য নেই অনন্যার। সে যা ঠিক করেছে, তাই করবে। তিনি আচঁলে মুখ গুজে বেড়িয়ল যান। অনন্যা ছোট্ট দীর্ঘশ্বাস ফেলে, ব্যাগ গুছিয়ে ড্রয়ার থেকে তার আমেরিকা যাওয়ার পার্সপোর্টটা বের করে। সে অনেকদিন আগে স্কলারশিপ পেয়েছিলো আমেরিকা যাওয়ার কিন্তু অভির সাথে বিয়ে ঠিক হওয়ায় সে যায়নি। তবে এইবার সে যাবে। শুধু সময়ের অপেক্ষা। সমস্ত মায়ার বন্ধন ছিন্ন করে,সে চলে যাবে। আচ্ছা তখন কি অভির কষ্ট হবে? তীব্র অপরাধবোধ কি তার ভিতরটাকে জ্বলিয়ে দিবে?

__________________________

অপরদিকে অভি চিন্তিত মুখে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করছে, তার শুধু মনে হচ্ছে কিছু তো একটা ভুল হচ্ছে কিন্তু কি ভুল হচ্ছে? সে যথেষ্ট ভালো করে ভিডিওটি দেখেছে। ভিডিওটি কিছুতেই মিথ্যে হতে পারে না। ভিডিও এর কথা ফের মাথায় আসতেই, তীব্র যন্ত্রনা হতে থাকে মাথায়। পরক্ষনেই অভি ভাবে, সে কোন ভুল করছে না। সে যা যা করেছে একদম ঠিক করেছে। অনন্যার মতো ঠকবাজ মেয়েরা অপমানেরই যোগ্য! অভি কোনরকমে বাড়ির ভিতর প্রবেশ করতেই, অভির মা ছেলেকে দেখে এগিয়ে হাঁসিমুখে প্রশ্ন করেন, ‘ জুঁইয়ের বাবা ফোন করেছিলেন। তুই নাকি জুঁইকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছিস? ‘

অভি কোনরুপ জবাব দিলো না। অভির মা ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে বলতে লাগলেন, ‘ এইবার একটা কাজের মতো কাজ করেছিস বাবা। জুঁই মেয়েটা অসম্ভব ভালো। আমার তো শুরু থেকেই জুঁইকে পছন্দ ছিলো, তোর জোড়াজুড়িতে ওই চরিত্রহীন মেয়েকে, ঘরের বউ করতে চেয়েছিলাম। যাক বাবা!
আল্লাহ আমাদের সঠিক সময়ে, চোখে আঙ্গুল দিয়ে সবটা দেখিয়েছেন। ‘

‘ মা, দয়া করে থামবে? এক কথা আমার বার বার শুনতে ইচ্ছে করছে না। ‘

‘ ওমা! সত্যিই তো বলছি। এইভাবে চটে যাচ্ছিস কেন? আমি চাইছি, যথা দ্রুত সম্ভব তোর সাথে জুঁইয়ের এন্গেজম্যান্টের ব্যাব্সহা করতে। তোর কোন আপত্তি নেই তো বাবা? ‘

অভি নিচু হয়ে, ক্লান্ত গলায় বললো, ‘ তোমার যা ইচ্ছে করো কিন্তু আপাতত এইসব বিষয়ে আমাকে ঢুকিও না। আম টু মাচ টায়ার্ড নাও। আমি নিড সাম রেস্ট। ‘

ছেলের অনুমতি পেয়ে,খুশিতে আখিকোড়া চকচক করে উঠলো অভির মায়ের। অভি শুকনো হাসি দিয়ে উপরের সিড়ি বেয়ে চলে গেলো। সেই হাসির মাঝে তীব্র কষ্ট কি উপলব্ধি করতে পারলো অভির মা? হয়তো না। সেই কষ্ট একান্ত অভির।

________________________
ফারিশ বেশ গভীর রাতে বাড়ির ভিতর ঢুকতেই বুঝতে পারে, সকলে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। সে একজন স্টাফকে প্রশ্ন করে,

‘ মিষ্টি মা, কোথায়? ঘুমাচ্ছে?’

ফারিশকে দিকে এগিয়ে, সেই স্টাফ মাথা নিচু করে বলে,

‘ ছোট স্যার! মিষ্টি ম্যাডাম না খেয়েই ঘুমিয়ে পরেছে। সে বলেছে, আপনি না খায়িয়ে দিলে সে খাবে না। ‘

‘ ওয়াট! মিষ্টি এতোক্ষন যাবৎ না খেয়ে আছে? তোমরা একটা ছোট্ট মেয়েকে বুঝিয়ে – শুনিয়ে খাওয়াতে পারলে না? ‘

বেশ চেঁচিয়েই প্রশ্ন করে ফারিশ। স্টাফ মাথা নিচু করে ফেলে। ফারিশ জোড়ে জোড়ে নি:শ্বাস ফেলে, পরক্ষনে বলে, ‘ আচ্ছা শুনে নাও, তোমাদের পাশের ঘরটা পরিষ্কার করে রেখো। কালকে একজন আসছে। ‘

স্টাফটি মাথা নিচু করে ‘ আচ্ছা ‘ বলে চলে যায়। ফারিশের দাদি রুমা খান উপর থেকে ফারিশের কথা শুনে ভ্রু কুচকে তাঁকায়। কালকে কে আসবে? যার জন্যে রুম পরিষ্কার করাচ্ছে ফারিশ।

____________________
অপরদিকে মাঝরাতে অনন্যার ফোনে অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন আসে…….
চলবে কি?

প্রণয়ের রংধনু পর্ব-০৪

0

#প্রণয়ের_রংধনু ✨
#পর্ব-৪
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
‘ এই মাইয়া এক রাইতের জন্যে তোমার রেট কত?’

পাশের কয়েকজন বখাটের মধ্যে একজনের প্রশ্নে অবাক হয়ে তাঁকালো অনন্যা। রাস্তার অপাশে কয়েকজন বখাটের মধ্যে হ্যাংলা পাতলা,মাথায় টাক বিশিষ্ট লোকের হঠাৎ অনন্যার দিকে কুনজর পরে, তখনি সে এমন প্রশ্ন করে। লোকটার কথায় সায় দিয়ে, তার পাশের বখাটেরাও শিটি বাজাতে থাকে। অনন্যা সবেমাত্র ব্যাংক থেকে বেড়িয়েছে, হাতে কালো ব্যাগ, তাতে রয়েছে টাকা। ব্যাংক বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো।কিন্তু ম্যানেজার, লতিফ সাহেবের ঘনিষ্ট বন্ধু হওয়ায়, রাতের দিকে টাকা তুলতে তেমন কোন কষ্ট হয়নি অনন্যার। ভদ্রলোক যথেষ্ট স্নেহ করেন তাকে কিন্তু ব্যাংকের বাইরে এসে এমন বাজে পরিস্হিতির মুখোমুখি হতে হবে, তা বোধহয় কল্পনা করেনি অনন্যা। এমন কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যা গা গুলিয়ে আসছে অনন্যার। অনন্যা কোনরুপ জবাব না দিয়ে, দ্রুত গাড়িতে উঠে। সেই হ্যাংলা পাতলা রোগা লোকটি অনন্যার সেই গাড়িটির দিকে তাঁকিয়ে কুৎসিত হাসি দিয়ে, নিজের দলবলদের নিয়ে, বাইক নিয়ে গাড়ির পিছনে যেতে থাকে। ব্যাংক থেকে কিছুদূর আসতেই, হঠাৎ অনন্যার গাড়িটা থেমে যায়। অনন্যা ‘ ওহ শিট ‘ বলে উঠে। অনন্যা বুঝতে পারে, হয়তো গাড়ির চাকা পাঞ্চার হয়ে গিয়েছে। সে গাড়িটা থেকে নেমে, পিছনের ডেকিতে চাকা খুঁজতে শুরু করে, কিন্তু এক্সট্রা চাকা নেই। অনন্যা গাড়ি লক করে।অত:পর পার্স থেকে ফোন বের করে, মেনেজারকে ফোন করে জানায়, সে যেন ম্যাকানিক নিয়ে এসে, গাড়িটি সারিয়ে বাড়িয়ে পৌঁছে দেয়। অনন্যা গাড়ি সাড়ানো অব্দি অপেক্ষা করতে পারবে না, তাকে যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি হাসপাতালে পৌঁছাতে হবে। অনন্যার মনে হলো তার পদে পদে বিপদ! কোন কাজ সুষ্ঠুভাবে হবেনা, হয়তো ঘেটে যাবে। গাড়িটাই বা এসময়ে খারাপ হবে কেন? সে রিকশার জন্যে অপেক্ষা করলেও, তার মনের সংশয় হচ্ছে, আদোও কি সে রিকশা পাবে? হয়তো আজ ভাগ্য কোনভাবেই তার সহায় নয়। কথাগুলো ভেবে অনন্যা না দাঁড়িয়ে, হেটে সামনের দিকে যেতে লাগলো কিন্তু বিপত্তি ঘটলো গলির সামনে এসে। সেই বখাটেগুলো বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো। অনন্যাকে ফের আরেক পলক দেখে বিকৃতভাবে তাঁকালো হ্যাংলা পাতলা লোকটি। মুখে কুৎসিত হাঁসির রেশ! লোকটা আবারোও বলে উঠলো, ‘ কি মাইয়া? আসো, আমাগো লগে। এক রাইতের সুখ দিলে, মেলা টাকা পাইবা। তোমার শরীর আমার মেলা পছন্দ হইছে। ‘
লোকটির কথা শুনে তার সাথে বখাটেরাও বিচ্ছিরি ভাবে হাঁসতে থাকে। তাদের কথাবার্তা এবং বিচ্ছিরি অঙ্গবঙ্গিতে ঘৃণায় গা রি রি করতে থাকে অনন্যার। অনন্যা রাগে সামনে এগিয়ে লোকটার গালে থাপ্পড় মে/রে চেঁচিয়ে বলে, ‘ লজ্জা হওয়া উচিৎ আপনাদের। একজন মেয়েকে সম্মান করতে না পারলে, অন্তত অসম্মান করবেন না। মেয়েরা কি আপনাদের কাছে পন্য? এতোটা কুৎসিত মানুষিকতা কিকরে হতে পারে আপনাদের?’

বখাটে লোকটির মুখস্রীর ধরণ পরক্ষনেই পাল্টে যায়। ছোট ছোট আখিজোড়ায় ক্রোধে টকটকে লাল হয়ে যায়। তার পাশে থাকা কম বয়স্ক বখাটে ছেলেটি, অনন্যার দিকে তাঁকিয়ে বলে, ‘ এত্তো বড় সাহস! ভালো কথার দাম নেই ওস্তাদ। ওরে তুলে নিয়ে যাই, চলেন। এমন অবস্হা আজকে করবো, এই দেমাগী কখনো নিজের চেহারা সমাজের সামনে দেহাইতে পারবো না। ‘

অনন্যা বুঝতে পারে, অনন্যা যতই সাহস দেখাক, এতোগুলো বাজে বখাটাদের সাথে সে কিছুতেই পেরে উঠবে না। সে পিছাতে থাকে, কিন্তু বখাটেগুলো যখন তার দিকে এগিয়ে আসছে, সে তখন দৌড়ে সামনের দিকে যেতে থাকে। পিছনে পিছনে বখাটে গুলোও দৌড়াতে থাকে। তার কিছুটা দূরেই, ফারিশ গাড়িতে বসে ছিলো। সে ইচ্ছে করেই, অনন্যাকে সাহায্য করছে না, কারণ সে অবগত হতে চায় অনন্যার সাহস সম্পর্কে। অনাকাঙ্ক্ষিত বিপদে পরলে সে কীভাবে নিজেকে রক্ষা করে, সেই সম্পর্কে ধারণা নিতে চায়। ফারিশ গাড়ির জানালা নামাতে নামাতে বলে, ‘ যেকোনে গেমে নিজের শত্রুপক্ষকে ঘায়েল করতে গেলে, তার সাহস, তার দুর্বলতা সম্পর্কে প্রতক্ষভাবে অবগত থাকতে হয়।তবেই সেই শত্রুকে হারানো সহজ, নাহলে গেম জটিল থেকে জটিলতর হতে থাকে। গেম শেষ হয় না, চলতেই থাকে। তখন মজাও ফিকে হয়ে যায়। ‘

ফারিশ কথাটি বলেই সিগারেট ধরায়,কিন্তু তার মনে হয়, অনন্যা নামক রমনী অন্যদের মতো নয়, সে ব্যাতিক্রম!
অনন্যা দৌড়াতে দৌড়াতে পরে যায়, তার হাতে থাকা টাকার ব্যাগটাও রাস্তার পাশে গিয়ে ছিটকে পরে যায়। বখাটে লোকগুলো এসে থেমে যায়। সেই হ্যাংলা পাতলা লোকটা এগোতে নিলেই, অনন্যা তার পাশে থাকা ভারি ইটের টুকরো নিয়ে, লোকটার কপাল বরাবর ছুড়ে মারে। লোকটা সজোড়ে আঘা/ত পেয়ে মাটিতে বসে পরে। বাকিরা তা দেখে, লোকটাকে নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পরে। অনন্যা সেই সুযোগে দৌড়াতে থাকে, দৌড়াতে দৌড়াতে হঠাৎ আরেকজনের গাঁয়ের সাথে ধাক্কা খায়।

____________________

পাঁচ বছরের ছোট্ট মিষ্টি তার রুমে খাটের উপর বসে,আকাঁআকি করছিলো। একজন সার্ভেন্ট রুমে এসে, দরজায় কড়া নাড়তেই, সে খাট থেকে নেমে যায়। মহিলা সার্ভেন্টটি খাবার হাতে, বিছানার পাশে খাবার রেখে বললো, ‘ মিষ্টি সোনা, খেয়ে নাও। রাত হয়ে গিয়েছে, অনেক। ‘

মিষ্টি মুখ বেঁকিয়ে বললো, ‘ বাপি কোথায়? বাপি, নিজ হাতে খায়িয়ে না দিলে, খাবো না। যাও, তুমি।’

‘ এমনভাবে বলে না, মা! ছোট স্যার তো কাজে আছে। ফিরতে অনেক রাত হবে। সেই পর্যন্ত না খেয়ে থাকবে? ‘

‘ হ্যা, হ্যা। না খেয়েই থাকবো। বাপি না আসা অব্দি মিষ্টি কিচ্ছু খাবেনা। ‘

বলেই মিষ্টি বারান্দায় চলে গেলো। সেখানে তার পোষা একটি ময়না আছে। তার বাপি তার জন্মদিনে দিয়েছিলো। মিষ্টির বেশিরভাগই সময়ই তার ময়নার সাথে কাটে। মিষ্টি বেশ উৎসাহ নিয়ে বলে,

‘ ময়না! এই ময়না! বল মিষ্টি। ডাক তো আমায়। ‘

ময়না ডাকে না, মিষ্টি প্রায় প্রতিদিন তার ময়নাকে মিষ্টি বলা ডাক শেখায়, কিন্তু ময়না কিছুতেই তাকে মিষ্টি বলে ডাকে না, কিন্তু তার বাপি তাকে বলেছিলো ময়না পাখি নাম ধরে ডাকতে পারে, তবে তার নাম ধরে ডাকছে না কেন? ময়নার কাছে বোধহয় মিষ্টি নাম উচ্চারণ বেশ কঠিন মনে হচ্ছে, তবুও মিষ্টি চেষ্টা চালিয়ে যাবে। তার বিশ্বাস কোন এক ভোরে তার ময়না চেঁচিয়ে ডাকবে, ‘ মিষ্টি, মিষ্টি……..’

_________________

অনন্যা তার সামনে থাকা ব্যাক্তিটিকে দেখে তৎক্ষনাৎ সরে যায়। অভি অবাক দৃষ্টিতে তার দিকে তাঁকিয়ে আছে। অভি বুঝতে পারছে না, অনন্যা কেন দৌড়ে আসছে। অভি তার চেম্বার থেকে গাড়ি করে, বাড়ি ফিরছিলো, হঠাৎ অনন্যাকে দৌড়ে আসতে দেখে, গাড়ি থেকে বেড়িয়ে আসে।তখনি অনন্যা দৌড়াতে দৌড়াতে সরাসরি অভির বুকে গিয়ে হুমড়ি খেয়ে পরে। অভি অনন্যাকে বিধস্ত অবস্হায় দেখে বলে, ‘ কি হয়েছে তোমার অনন্যা? ‘

তখনি অভি দেখতে পায়, পিছনে পিছনে সেই বখাটে গুলোও আসছে, যার মধ্যে একজনের মাথায় বেশ বাজেভাবে জখম হয়ে আছে। সেই বখাটের দেখে, অভির বুঝতে বাকি নেই, অনন্যা কেন দৌড়ে আসছিলো।

‘ রাস্কেলগুলোর সাহস দেখে,সত্যিই অবাক হচ্ছি। ওয়েট! ওদের দেখাচ্ছি মজা। ‘

বলে অভি বখাটাদের সামনে যেতে নিলেই, অনন্যা হাত বাড়িয়ে অভিকে থামিয়ে, কঠোর গলায় বলতে থাকে, ‘ থ্যাংকস ফর ইউর কনসার্ন, কিন্তু অভি শিকদারের একজন নষ্টা মেয়ের জন্যে, নিজের মূল্যবান সময় নষ্টা করা অনুচিত। ‘

অনন্যার কথা শুনে অভি থেমে যায়। অনন্যা হাতের ইশারা করে, অভিকে সামনে তাঁকাতে বলে। অভি সামনে তাঁকাতেই দেখে, ইতিমধ্যে পুলিশ এসে, সেই বখাটেদের ধরে ফেলেছে। অনন্যা দৌড়াতেই দৌড়াতেই, ত্রিপল নাইনে ডায়েল করে, ফোন করে ফেলেছিলো। পাশেই থানা ছিলো বিধায়, অনন্যার ফোন পেয়ে, তৎক্ষনাৎ পুলিশ চলে আসে। অনন্যা অভির দিকে তাঁকিয়ে মুচকি হেসে বলে,

‘ অনন্যা নিজের বিপদ, একাই কাটিয়ে উঠতে পারে।
তার জন্যে আপনার মতো মানুষের অন্তত সাহায্যের প্রয়োজন হবে না। আপনি বরং, আপনার হবু বউকে নিয়ে চিন্তা করুন। আমাকে নিয়ে চিন্তা না করলেও চলবে। আমার জন্যে আমি একাই যথেষ্ট। ‘

কথাটি বলেই অনন্যা চলে যায়। অভি সেখানে দাঁড়িয়ে পরে। এতোক্ষন যাবৎ সমস্ত কিছুই পর্যবেক্ষন করে যাচ্ছিলো, ফারিশ। সর্বশেষে সে বাঁকা হেসে, গাড়ি ঘুড়িয়ে, অফিসের দিকে রওনা হয়।

_______________________
অন্যদিকে অনন্যা সেই গলিতে এসে হন্ন হয়ে সেই টাকার কালো ব্যাগটি খুঁজতে থাকে, কিন্তু কিছুতেই পায় না। এই ঢাকা শহরে এতোগুলো টাকার ব্যাগ পেয়ে, কেউ নিশ্চই বুঝি হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে থেকে অপেক্ষা করবে না,ফেরত দেওয়ার জন্যে। এমন মানুষ দূর্লভ বটে। সৎ মানুষের থেকে অসৎ মানুষের
সংখ্যাই বেশি। অনন্যা ধপ করে বসে পরে। এতো চেষ্টা করেও, কোন লাভ হলো না। প্রচুর কাঁদতে ইচ্ছে করছে, কিন্তু ভাগ্যের পরিহাসে, আজ কেউ তার পাশে নাই। না আছে বাবা-মা, না আছে ভালোবাসার মানুষ আর না আছে কোন বন্ধু, যার বুকে মাথা রেখে বেশ কিছুক্ষন কেঁদে হাল্কা হওয়া যাবে, কিন্তু অনন্যা ভাবে তাকে কাঁদলে চলবে না। তার বাবার জন্যে হলেও, তাকে শক্ত থাকতে হবে।
___________________
ফারিশ কিছু ফাইল ঘাটছিলো, নজর তার সামনে থাকা সিসিটিভি ফুটেজের স্ক্রিনের উপর। হঠাৎই তার অধরে রহস্যময় হাঁসি ফুঠে উঠে……

চলবে কি?

প্রণয়ের রংধনু পর্ব-০৩

0

#প্রণয়ের_রংধনু ✨
#পর্ব-৩
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
নিজের ভালোবাসার মানুষের বুকে অন্য এক মেয়েকে দেখলে,তা কতটা যন্ত্রনাময় হয়, একটি মেয়ের জন্যে তা হয়তো বর্ণনা করে মুশকিল।অনন্যা আসার পূর্বে জুঁই এসেই হুট করে অভিকে জড়িয়ে ধরে বলে, ‘ আমি তোমায় অনেক ভালোবাসি। কেন বুঝোনা তুমি? অনন্যা তোমায় কখনো ভালোবাসে নি। আমি বলেছিলাম তোমায় অভি! অনন্যা ভালো মেয়ে না। ওর চরিত্রে সমস্যা আছে, কিন্তু আমার কোন কথাই তো বিশ্বাস করো নি, তুমি। আজ বুঝতে পারলে তো? সেদিন আমার কথা অবিশ্বাস করে কতটা ভুল করেছিলে।’
জুঁইয়ের কথা শুনে অভির মনে পরে যায়, হ্যা জুঁই তাকে বহুবার অনন্যার চরিত্র সমন্ধে বারংবার সর্তক করলেও, সে শুনেনি বরং সে বারংবার এড়িয়ে গিয়েছে। অনন্যার প্রেমে সে একপ্রকার অন্ধ হয়ে গিয়েছিলো। তাই ফলস্বরুপ এতো বাজেভাবে ঠকতে হলো তাকে। অভির ভাবনার মাঝেই, সেখানে অনন্যা এসে, তাদের একসাথে ঘনিষ্ঠ অবস্হায় দেখে ফেলে। অভি এতোক্ষন যাবৎ জুঁইকে নিজের থেকে সরাতে চাইলেও, অনন্যাকে দেখে সে জুঁইকে সরানোর বিন্দুমাত্র প্রয়াস করলো না। অনন্যাকে দেখে বেশ ক্ষোভ নিয়ে, নিজ থেকেই অভির থেকে সরে দাঁড়ালো জুঁই। অনন্যা কাঁপা কাঁপা গলায় বলতে থাকে, ‘ জুঁই তুই এখানে? কি করছিস এইসব?’

জুঁই কিছু বলার পূর্বে, অভি এগিয়ে এসে বলে,

‘ তার আগে তুমি বলো! কেন এসেছো এখানে? ওহো! বিয়ের বেনারসি এখনো গাঁয়ে! তা কোন আশায় এসেছো এখানে? হাত- পা ধরে বিয়ে করতে বলবে নিশ্চই, ‘আমাকে বিয়ে করো অভি! ‘কেন যার সাথে রাত কাটিয়েছো দিনের পর দিন সে বুঝি এখন ছুড়ে ফেলে দিচ্ছে ?’
জুঁই অভির কথা শুনে মুচকি হাঁসে। এতোদিন ধরে সে যা চাচ্ছিলো তাই হয়েছে। অনন্যা অভির কথা শুনে বিন্দুমাত্র অবাক হয়না। কারণ যেই মানুষটি ভরা বিয়ের আসরে, এতো বাজে বাজে কথা বলে অপমান করতে পেরেছে, সে নিশ্চই এখন সম্মানজনক কোন কথা বলবে না। অনন্যার ভাবনার মাঝেই, অভি পুনরায় কটাক্ষ করে বলে,

‘ এতো ঘটনা ঘটার পরেও কীকরে পারলে আমার সামনে বেহায়ার মতো আসতে, লজ্জা করলো না? ছিহ! একজন প্রস্টেটিউটেরও বোধহয় তোমার থেকে বেশি মান- সম্মান বোধটুকু আছে। ‘

অভির শেষ কথা টুকু শুনে গাঁ শিউরে উঠছে অনন্যার। একজন মানুষ কীকরে তার নিজের ভালোবাসার মানুষকে এতোটা অসম্মান করতে পারে? বারংবার তাকে একজন পতিতার সাথে তুলনা করে যাচ্ছে অভি।নিজের ভেতরের ক্ষোভটুকুকে নিয়ন্ত্রন করতে পারলো না অনন্যা। ঠাটিয়ে পরপর অভির দুটো গালে, দুটো করে
থাপ্প/ড় বসিয়ে দিলো সে। জুঁই হতভম্ব! অভি নিজের গালে হাত রেখে মাথা নিচু করে ফেললো। রাগে- দু:খে, কান্নামিশ্রিত গলায় অনন্যা বলতে থাকে,
‘ আমার আজ নিজের প্রতি সত্যিই লজ্জা করছে অভি। আমি তোমার মতো মানুষকে ভালোবেসেছি। যেই মানুষ সম্মানই করতে পারে না, তার ভালোবাসার উপরই আমার সংদেহ হচ্ছে। আদোও কখনো তুমি আমায় ভালোবেসে ছিলে তো! আমারই দোষ, আমি বোকার মতো ভেবে বসেছিলাম এই বিপদের সময় হয়তো তুমি আমায় ফিরিয়ে দিবেনা, কিন্তু তুমি আমায় কি নিখুঁতভাবে ভুলটা শুধরে দিলে। ‘

কথাটি বলে অনন্যা চলে যেতে নিলে, অভি জুঁইয়ের হাত ধরে অনন্যাকে শুনিয়ে বলে, ‘ তুমি আমাকে ভালোবাসো তাইনা জুঁই? ‘

অভির কথা শুনে জুঁই সঙ্গে সঙ্গে বলে, ‘ হ্যা অভি! আমি তোমায় অনেক ভালোবাসি। অনেক অনেক! ‘

অভি অনন্যার দিকে তাঁকিয়ে বলে, ‘ তবে আজ অভি শিকদার তোমায় কথা দিচ্ছে বিয়ে করলে, তোমাকেই করবে। নিজের জীবন আমি গুঁছিয়ে নিবো। কোন চরিত্রহীন মেয়ের জন্যে আমার জীবন থেমে থাকবে না।’
অভির কথা শুনে জুঁই খুশি হয়ে অভিকে জড়িয়ে ধরে। নিজের বন্ধুর বিশ্বাসঘাতকতাও অবাক করলো না অনন্যাকে। তার ভাগ্যের প্রতি আজকাল তার প্রচুর হাঁসি পায়। অনন্যা অভির দিকে ফিরে তাঁকিয়ে অশ্রুসিক্ত নয়নে চেয়ে বলে,

‘ চলে যাচ্ছি আমি অভি! আজ আমিও কথা দিচ্ছি, কখনো এই চরিত্রহীন মেয়েটাকে তোমার দেখতে হবেনা, তুমি চাইলেও তাকে কখনো দেখতে পারবে না।তবে কে বলতে পারে? একদিন এই চরিত্রহীন মেয়েটার জন্যেই হয়তো তোমাকে আফসোস করতে হবে। ‘

‘ হ্যা আফসোস হচ্ছে। বড্ড আফসোস হচ্ছে, তোমার মতো মেয়েকে এই অভি শিকদার ভালোবেসে ছিলো। নাও জাস্ট লিভ প্লিয। ‘

অনন্যা কোনপ্রকার উত্তর দিলো না। অভি লক্ষ্য করছে অনন্যার অশ্রুসিক্ত নয়নে কাজল ঘেটে একশা অবস্হা, তবুও কি সুন্দর স্নিগ্ধ লাগছে মেয়েটাকে! কি পবিত্র লাগছে কিন্তু বাস্তবতা চরম ভিন্ন! অভি মুখ ঘুড়িয়ে ফেলে। অনন্যা সামান্য তাচ্ছিল্যের হাঁসি হেসে বের হয়ে যায়। অনন্যা বেরিয়ে যেতেই, জুঁইকে নিজের থেকে সরিয়ে, অভি বলে উঠে,

‘ জুঁই এখন তুমি যাও। আমাকে দয়া করে একা থাকতে দাও। ‘

‘ কিন্তু অভি……’

‘ প্লিয লিভ মি এলন। ‘

জুঁই মাথা নাড়িয়ে চলে গেলো। অভি দীর্ঘশ্বাস ফেলে, রকিং চেয়ারে, কপালে হাত রেখে বসে থাকে।
_____________

অভির অফিস থেকেই অনন্যা হসপিটালে ছুটে যায় তার বাবাকে একঝলক দেখতে। সেখানে শেফা বেগম মাথায় হাত দিয়ে বসে ছিলেন। মাকে দেখে বুক কেঁপে উঠে অনন্যার। মধয়বস্কক হলেও যথেষ্ট সুন্দরী শেফা বেগম। কিছুমুহুর্তের মধ্যে নানা দুশ্চিন্তায় চোখের নীচে কালো দাগ পরে গিয়েছে। বেশ অসহায় লাগছে নিজের কাছে অনন্যাকে। সে চাইলেও কিছু করতে পারছে না। আজ ফারিশ নামক নিকৃষ্ট লোকের জন্যে জীবনের এমন করুন পর্যায়ে এসে ঠেকেছে অনন্যার। অনন্যা নিজের অশ্রুটুকু মুছে, শেফা বেগমের কাঁধে হাত রাখতেই, তিনি তড়িৎ গতিতে মাথা উঁচু করে তাঁকালেন। মনের এমন জটিল অবস্হায় সমস্ত ক্ষোভ তিনি অনন্যার দিকে উগড়ে দিয়ে বললেন, ‘ টাকা জোগাড় হয়েছে?’

অনন্যা মাথা নাড়িয়ে ‘না ‘ বলে। অর্থাৎ সে পারেনি। শেফা বেগম শক্ত করে অনন্যার বাহু চেপে ধরে, প্রশ্ন করে,
‘ তাহলে কেন এসেছিস তুই? আমাদের এতো বড় ক্ষতি করেও কি তোর শান্তি হয়নি? নষ্টা মেয়ে-মানুষ! এতো বড় কান্ড করেও, কী করে পারছে সামনে আসতে! তোর শোকেই মানুষটা আজ মৃত্যুযাত্রী। ‘

অনন্যা কাঁদতে কাঁদতে মায়ের হাত শক্ত করে চেপে ধরে বলে, ‘ মা! আমার উপর দয়া করে বিশ্বাস করো। তোমরা আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলে, আমার কীকরে বাঁচবো বলো? ‘

শেফা বেগম তৎক্ষনাৎ চিৎকারের সহিত উত্তর বললেন, ‘ তাহলে ম/রে যা। অন্তত ম/রে গিয়ে আমাদের উদ্ধার কর। ‘

মায়ের কথা শুনে অনন্যা ভাবতে থাকে, সে কি তবে সত্যিই নিজেকে শেষ করে দিবে? সে ম/রে গেলেই
কি তবে তার বাবা- মায়ের ঝামেলা শেষ হবে? পরক্ষনেই সে ভাবলো, সে কেন ম/রবে? সে তো কোন অন্যায় করেনি। তাকে উঠে দাঁড়াতে হবে। নিজেকে প্রমাণ করতে হবে। অনন্যার মনে পরে যায়,ছোটবেলায় যখন সে একবার পরে গিয়ে ব্যাথা পেয়েছিলো, তখন সে কি তার কান্না। তখন তার বাবা তার হাত ধরে তাকে উঠিয়ে, মাথায় হাত রেখে বলেছিলে, ‘ ডোন্ট ক্রাই মাই প্রিন্সেস! আমার প্রিন্সেস তো এতো দূর্বল নয়, সামান্য আঘাতে দূর্বল হলে চলবে না, আমার সোনা। দুনিয়াটা বেশ কঠিন, মা। অনেক বড় বড় লড়াই তোমাকে সাহসের সহিত লড়তে হবে। মনে রেখো মা! তোমার বাপি সবসময় তোমার সাথে থাকবে না। একটা সময় কেউ থাকবে না তোমার পাশে, সবাই তোমাকে একা করে দিবে,কিন্তু তুমি লড়াই চালিয়ে যেও। কারণ তুমি আমার স্ট্রং প্রিন্সেস। ‘

ছোটবেলায় বাবার বলা সেই কথাগুলো মনে পরতেই, নিজেকে সামলিয়ে নেয় অনন্যা। সে তো দূর্বল নয়, তাকে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে হবে, তবে তার আগে, তার বাবার চিকিৎসার জন্যে তাকে টাকা জোগাড় হবে।

_________________________
সন্ধ্যা সারে ৭টা বাজতে চললো। রাত ১১টার মধ্যে হসপিটালে টাকা জমা দিতে হবে অনন্যাকে। অনন্যা হাল ছেড়ে দেয়নি। সে নিজের বাসায় এসে, ফ্রেশ হয়ে বিয়ের বেনারসি খুলে, সুতির সেলোয়ার কামিজ পরে ফেলে। তার এখন নিজেকে শক্ত রাখতে হবে, নিজের বাবা- মায়ের জন্যে হলেও। সে তার বাবার রুমের আলমারি ঘেটে কয়েকটা ফাইল বের করে, ঘাটতে থাকে। অনন্যার নামে বেশ কয়েকটি ডিপোজিট করেছেন লতিফ হাওলাদার। সেইগুলো ভেঙ্গেই আজকের মতো হসপিটালের বিল পরিশোধ করতে পারবে অনন্যা, বাকিটা কালকে জোগাড় করে ফেলবে। অনন্যা ফাইলগুলো হাতে নিয়ে বাইরে এসে,নিজেই গাড়ি ড্রাইভ করে বেড়িয়ে পরলো ব্যাংকের উদ্দেশ্যে। অনন্যা হয়তো জানেনা, তার পিছনে পিছনে বেশ কিছু গাড়ি রয়েছে, যারা প্রতিনিয়ত অনন্যাকে ফলো করছে। অনন্যা ব্যাংকের সামনের গাড়ি থামিয়ে, ব্যাংকের ভেতরে চলে যায়। অনন্যার পিছনে পিছনে, কালো পরিহিত কিছু লোকগুলোও ভিতরে প্রবেশ করে। অনন্যা কাউন্টারে গিয়ে, মেনেজারের সাথে দেখা করে,কথা বলতে থাকে।
অপরদিকে,ফারিশ নিজের অফিসে বসে, হাতের উপর হাত রেখে ল্যাপটপে অনন্যার কার্যক্রম দেখতে থাকে। কালো পোষাক পরিহিত লোকগুলো ফারিশের, যারা সর্বোক্ষন অনন্যাকে নজরে নজরে রেখেছে। ফারিশ অনন্যার দিকে তাঁকিয়ে মুচকি হেসে বলে, ‘ দম আছে মেয়েটার। ভেইরি ইন্টারেস্টিং গার্ল! আই রেইলি লাইক দিজ টাইপ অফ ইনার্জি। আহ,দ্যা গেম ইউল বি ভেইরি ইন্টারেস্টিং ইউথ হার।’
___________

ফিক্সড ডিপোজিটে একসাথে সব ক্যাশ না পেলেও, ২লাখের মতো ক্যাশ জোগাড় করতে পেরেছে অনন্যা। সেই টাকা দিয়ে অন্তত তার বাবার আজকের হসপিটালের বিলটুকু পরিশোধ করতে পারবে অনন্যা। টাকাগুলো নিয়ে ব্যাংক থেকে খুশিমনে বেড়িয়ে যায় অনন্যা কিন্তু ব্যাংক থেকে বেড়িয়ে আসতেই, অবাক হয়ে যায় সে।

চলবে কি?

প্রণয়ের রংধনু পর্ব-০২

0

#প্রণয়ের_রংধনু✨
#পর্ব-২
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
‘তোমার মতো চরিত্রহীন মেয়ের,এই অভি শিকদারের বউ হওয়ার কোন যোগ্যতাই নেই। তোমার মতো তোমার ভালোবাসাও সস্তা! কি করে পারলে এতো নিঁখুতভাবে নাটক করতে?’
অনন্যার ছবির দিকে তাঁকিয়ে, একমনে কথাগুলো বিড়বিড়িয়ে যাচ্ছে অভি। বুকটা কষ্টে দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে তার। তার সারা ঘর আজ অন্ধকার! নেই কোন সাজসজ্জা। অথচ আজ তার ঘর আলো করে, অনন্যার বধুরুপে আসার কথা ছিলো, তার ঘরও ফুলে ফুলে বাসরের সজ্জায় সজ্জিত হতো, অথচ সবকিছু নিমিষেই শেষ হয়ে গেলো! কীকরে পারলো অনন্যা? এতো বড় বিশ্বাসঘাতকতা করতে? ছেলে মানুষ সহজে নাকি কাঁদে না। তাহলে আজ অভির আখিজোড়ায় কেন অশ্রুবিন্দু বিদ্যমান? বিষয়টা ভেবে অভির অদ্ভুদ লাগলো, হ্যা তার আখিজোড়া বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পরছে,কারণ তার শখের নারী আজ তাকে সবথেকে বড় আঘাত উপহার স্বরুপ দিয়েছে। অভির দুনিয়া জুড়ে যেই রমনীর অস্তিত্ব বিরাজমান ছিলো,আজ সেই রমনী তাকে শূন্য করে দিয়েছে। ব্যাপারগুলো বেশকিছুক্ষন ভেবে তাচ্ছিল্যের হাসি হাঁসলো অভি।

_______
অনন্যা পিটপিট করে নিজের আখিজোড়া খুললো। মাথায় বেশ যন্ত্রনা হচ্ছে তার। আখিজোড়া খুলে তাঁকিয়ে,আশেপাশে পর্যবেক্ষন করে বুঝতে পারলো সে একটি অপরিচিত ফ্লাটে অবস্হান করছে। সে শুয়া থেকে আস্তে ধীরে উঠে, বিছানায় হেলান দিয়ে বসতেই, পাশের সোফায় সেই ফারিশ নামক নিকৃষ্ট যুবককে দেখে চমকে উঠলো! হ্যা ফারিশ তার কাছে বর্তমানে দুনিয়ার সবথেকে নিকৃষ্ট এবং ঘৃনিত ব্যাক্তি! ফারিশ সোফায় এক পায়ের উপর আরেক পা রেখে, আরামের সহিত বাম হাতে সিগারেট নিয়ে, অপরহাতে ফোন টিপছে। ফারিশকে দেখে অনন্যার কিছুক্ষন আগের কথা মনে পরলো, সে রাস্তায় যেই কালো গাড়িটিকে নিজের দিকে এগিয়ে আসতে দেখে, অজ্ঞান হয়ে পরেছিলো। তাহলে সেই কালো গাড়ির ফারিশ খানের ছিলো! আচ্ছা লোকটা তাকে এই নির্জন ফ্লাটে নিয়ে এসেছে কেন? কোনো কু মতলবে? নিজের দিকে ভালো করে তাঁকাতেই, স্বস্হির নি:শ্বাস ফেললো সে, গাঁয়ে এখনো সেই বিয়ের বেনারশি। অর্থাৎ লোকটি এখনো তার সাথে কোন খারাপ কিছু করেনি। অনন্যাকে দেখে ফারিশ বাঁকা হেসে, প্রশ্ন করলো, ‘ এতো দূর্বল আপনি? সামান্য একটা কারণে অজ্ঞান হয়ে গেলেন? এইভাবে চলতে থাকলে তো হবেনা। ইউ নো! আই টোটালি ডোন্ট লাইক দিজ টাইপ অফ ইউক গার্লস! এদের সাথে গেম খেলেও মজা নেই। ‘

ফারিশের গাঁ জ্বলানো কথা শুনে,ক্ষোভ নিয়ে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়াল অনন্যা। অত:পর ফারিশের সামনে থাকা টি টেবিলে সজোড়ে হাত দিয়ে শব্দ করে বললো, ‘ তার আগে আপনি আমার প্রশ্নের জবাব দিন, কেন করছেন আপনি এইসব? আমি তো আপনাকে চিনতামও না,তাহলে ওই ফেইক ভিডিও কী করে করলেন আপনি? আজ আপনার জন্যে আমার আমার বিয়ে ভেঙ্গে গেলো। আমার বাবা আজ মৃত্যুপথযাত্রী। তার চিকিৎসা অব্দিও আমি করাতে পারছি না, কারণ আমাদের কম্পানি এখন আপনার। কেন করছেন আপনি আমাদের ক্ষতি? কিসের শত্রুতা আপনার?

বেশ খানিক্টা উত্তেজনার সহিত কথাগুলো একদমে বলে ফেলে অনন্যা। ফারিশ কোনরুপ বিপরীত প্রতিক্রিয়া দেখালো না। সে নিজের চশমা ঠিক করতে করতে শান্ত গলায় উত্তর দিলো,

‘ ফার্স্ট অফ অল! ভিডিওটি একদমই ফেইক না।আর সেকেন্ডলি ফারিশ খান কারো প্রশ্নের জবাব দিতে বাধয় নয়, অন্তুত আপনার প্রশ্নের তো নয়-ই ‘

ফারিশের এমন গাঁ ছাড়া কথা শুনে নিজেকে সামলাতে পারলো না অনন্যা। উত্তেজিত হয়ে, দ্বিগুন চিৎকারের সহিত বললো,

‘ জবাব দিতে বাধ্য নন?এর মানে কি? আপনি একটা মেয়ের সম্মান নিয়ে খেলবেন, তার পরিবারকে নিমিষের মধ্যেই রাস্তায় দাঁড় করিয়ে দিবেন, অথচ জবাব দিতে পারবেন না? আপনাকে তো আজ জবাব দিতেই হবে, ফারিশ খান। ‘

ফারিশ এতোক্ষন শান্ত থাকলেও, এইবার সে নিজেকে শান্ত রাখতে পারলো না। মস্তিষ্কে এসে হানা দিলো ভয়ংকর ক্রোধ! এইটুকু মেয়ের কাছে কিনা ফারিশ খানকে জবাব দিতে হবে? যার ভয়ে গোটা বাড়ি থেকে শুরু করে, বড় বড় বিসনেজম্যানরাও কেঁপে উঠে, সে কিনা একটি মেয়েকে জবাব দিতে যাবে? ব্যাপারটা বেশ হাস্যকর হলেও, রাগ হলো ফারিশের। সে এক পা -দু পা করে অনন্যার দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো। ফারিশকে হুট করে এগিয়ে যেতে দেখে, দ্রুত ভয়ে পিছাতে লাগলো অনন্যা। তার সামনে থাকা যুবকটিকে এই মুহুর্তে যথেষ্ট ভয়ংকর লাগছে অনন্যার। অনন্যা দেয়ালে সাথে ঠেকে গেলে, তাকে হেচকে টান দিয়ে নিজের কাছে টেনে আনে ফারিশ। ফারিশের এতোটা কাছে আসায় নি:শ্বাসের গতি তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে যায় অনন্যার। ফারিশ
খপ করে অনন্যার ডান হাতখানা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে, দাঁতে দাঁত চেপে বলতে থাকে,

‘ ফারিশ খানের সামনে উচ্চগলায় কথা বলার সাহস ভুলেও আর দেখাবেন না। আই টোলাটি ডোন্ট লাইক ইট গার্ল! ‘

বলেই নিজের জ্বলন্ত সিগারেটটি অনন্যার হাতের কব্জিতে দিয়ে, চেপে ধরে রাখে। জ্বলন্ত সিগারেটটি এইভাবে কোন মানুষ হাতের কব্জির সাথে চেপে ধরতে পারে, তা স্বপ্নেও কল্পনা করেনি অনন্যা। অনন্যা ব্যাথায় কাতড়ে উঠে। আখিজোড়া থেকে টুপটুপ করে অশ্রু গড়িয়ে পরছে তার। অনন্যা চাইলেও নিজের থেকে ফারিশকে সরাতে পারছে না। শক্তির তুলনায়, বিশালদেহী ফারিশের কাছে সে অতি নগন্য এক রমনী। অনন্যার এই ছটফট যেন বেশ তৃপ্তি দিচ্ছে ফারিশকে। সে বেশ কিছুক্ষন পরে, অনন্যাকে ছেড়ে দিয়ে, সিগারেটটি জানালা দিয়ে, বাইরে দিয়ে ছুড়ে ফেলে। অনন্যা হাতের কব্জি ধরে বসে পরে, পুড়ে গিয়ে ফোসকা পরে গেছে কব্জিতে। অনন্যা কাঁদতে কাঁদতে ফারিশের দিকে তাঁকায়।
‘এখন থেকে আমাকে কিছু বলার আগে নিজের হাতের দিকে তাঁকাবেন! ফারিশ খানের সামনে গলাবাজি করার পরিনতি কতটা ভয়ংকর। ‘

কথাটি বলেই আরাম করে ফের সোফায় বসে পরে ফারিশ , যেন কিছুই হয়নি। একটা মানুষ এতোটা নির্দয় কী করে হতে পারে? অনন্যা বুঝেছে লোকটার সাথে তর্ক করে লাভ নেই, তাকে আপাতত নিজের বাবাকে বাঁচাতে হবে চিকিৎসা করিয়ে। তাই সে ফারিশের মুখোমুখি বসে নিচু গলায় বলে, ‘ আমাদের কম্পানি কেন আপনি নিজের এক্সেসে নিয়েছেন? আমরা ব্যাংক থেকে ক্যাশটাও তুলতে পারছি না। এই মুহুর্তে আমার বাবার জীবন বাঁচাতে ক্যাশ টাকা গুলো বড্ড জরুরী। দয়া করুন! আমার বাবার চিকিৎসাটা খুবই দরকার। ‘

ফারিশ নিজের চোয়ালে হাত দিয়ে স্লাইড করতে করতে বলে, ‘ তাহলে আমি কী করতে পারি? মি: লতিফ হাওলাদার নিজ হাতে মোটা অংকের টাকার বিনময়ে তার কম্পানির ৮০℅ শেয়ার বিক্রি করেছেন। আমার কাছে যথেষ্ট ডকুমেন্ট রয়েছে। ‘

কথাটি বলেই, ফারিশ ড্রয়ার থেকে একটা ফাইল এনে, অনন্যার দিকে ছুড়ে দিলো। ফাইলগুলো দেখে মুখে হাত দিয়ে ফেললো অনন্যা। সত্যি পেপারগুলোতে তার বাবার সাইন জ্বলজ্বল করছে। কিন্তু তার বাবা কেন তার সাধের কম্পানি বিক্রি করবে, তাও আবার ফারিশ খানের মতো জঘন্য লোকের কাছে। সব হিসাব গড়মিল হয়ে যাচ্ছে তার। ফারিশ খান নিশ্চই কোন কারসাজি করেছে, কিন্তু এখন এইসব ভাবার সময় নেই, তাকে যে করেই হোক টাকা জোগাড় করতে হবে। তার ভাবনার মাঝেই হঠাৎ ফারিশ বলে উঠে,

‘ আমি জানি আপনি এখন আপনার বাবার চিকিৎসার টাকা জোগাড় করার কথা ভাবছেন। এই বিষয়ে আমি আপনাকে একটা হেল্প করতে পারি, মিস অনন্যা। ‘

ফারিশের কথা শুনে, চমকে উঠে অনন্যা। ফারিশ পকেটে হাত গুজে, অনন্যার আশে-পাশে ঘুড়তে ঘুড়তে বলে, ‘ আমি চাইলেই আপনাদের কম্পানি রিটার্ন দিতে পারি, কিন্তু একটা শর্তে! ‘

‘ কি শর্ত?’

অনন্যার পাল্টা প্রশ্নে ফারিশ বাঁকা হাসি দিয়ে, একটি কন্ট্রাক্ট পেপার অনন্যার দিকে এগিয়ে বলে,

‘ আজীবনের জন্যে আমার বাড়ির কাজের লোক হয়ে থাকতে হবে আপনাকে। আজীবন! ‘

ফারিশের শর্তে ভরকে যায় অনন্যা। অনন্যা হাওলাদার শেষে কিনা ফারিশ খানের মতো নিকৃষ্ট মানুষের বাড়ির কাজের লোক হবে? তাও সারাজীবনের জন্যে? কখনো না! অনন্যা ঘুড়ে দাঁড়িয়ে, হাতের উপর হাত ভাজ রেখে বললো, ‘ হাও ডেয়ার ইউ টু টক মি লাইক দিজ! আমি কিনা আপনার বাড়ির কাজের লোক হবো? শুনে রাখুন মি: ফারিশ খান! মেয়েরা কোন পন্য নয়,যাকে আপনি কিনে ফেলবেন। দরকার নেই আপনার সাহায্যের। আমি নিজেই টাকা জোগাড় করে, আমার বাবার চিকিৎসা করাবো। ‘

কথাটি বলেই অনন্যা কন্ট্রাক্ট পেপারটি ফারিশের হাতে ধরিয়ে দিয়ে, হনহনিয়ে ফারিশের ফ্লাট থেকে বেড়িয়ে যায়। সদর দরজার দিকে তাঁকিয়ে, ফের বাঁকা হাসে ফারিশ। সে জানে আজ না হয় কাল, তার সদর দরজাতেই ফিরে আসতে হবে মিস অনন্যা তালুকদারকে। ফারিশ কন্ট্রাক্ট পেপারটির দিকে তাকিয়ে তাঁকিয়ে বলে,

‘ দ্যা গেইম হেজ অলরেডি স্টার্টেড। ‘

___________________
অপরদিকে কাউকে কিছু না বলে, বাড়ি থেকে বেড়িয়ে নিজের চেম্বারে চলে আসে অভি। বেশ বড় একজন উকিল সে। যখন সে নি:সঙ্গতা অনুভব করে, তখন সে নিজের চেম্বারে এসে পরে। নিজের ঘরে সে থাকতে পারছিলো না, তাই উপায় না পেয়ে সে চেম্বারে চলে এলো। তখনি সেখানে জুঁই এর আবির্ভাব হয়। জুঁই সম্পর্কে অনন্যার একজন ভালো বন্ধু এবং ক্লাসমেট। অনন্যার সাথে অভির সম্পর্ক থাকাকালীন সে অভিরও যথেষ্ট ভালো বন্ধু হয়ে উঠে। সে অভির বাড়িতে গিয়ে, অভিকে না পেয়ে চেম্বারে চলে এসেছে। সে জানে অভির যা মনের অবস্হা, তাতে অভিকে তার চেম্বারেই পাওয়া যাবে। জুঁই এগিয়ে এসে, অভির কাঁধে হাত রেখে বলে,

‘ অভি! শুনছো? আমি জুঁই। ‘

অভি মাথা নুইয়ে ছিলো, জুঁইকে দেখে বলে ‘ তুমি এখানে হঠাৎ? ‘

_________________

অপরদিকে অনন্যা ভাবছে এই মুহুর্তে সে কি করবে? সে কিছুতেই ওই নিকৃষ্ট লোকের কাছে মাথা নত করবে না, অন্যদিকে সময় পেরিয়ে যাচ্ছে। রাতের মধ্যে তাকে টাকা জমা দিতে হবে, নাহলে তার বাবার চিকিৎসা বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু এতো কম সময়ে, এতো টাকা সে কী করে জোগাড় করবে? তখনি তার হুট করে অভির কথা মনে পরে। এই বিপদের সময় নিশ্চই তার অভি তাকে ফিরিয়ে দিবে না,যতই অবিশ্বাস করুক না কেন। অনন্যার অভির বাড়ির একজন কাজের লোককে ফোন দিয়ে, খবর পায় অভি তার চেম্বারে। তাই সে সময় নষ্ট না করে, অভির চেম্বারের দিকে রওনা দেয়। অভির চেম্বারে গিয়ে, হঠাৎ সে থমকে দাঁড়ায়।

চলবে কি?