Wednesday, July 16, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 368



প্রণয়ের রংধনু পর্ব-০১

0

#প্রণয়ের_রংধনু ✨
#পর্ব- ১
#Jannatul_ferdousi_rimi (লেখিকা)

বিয়ে শুরু হওয়ার আগ মুহুর্তে নিজের বাগদত্তাকে সকলে সামনে টেনে হিচড়ে নিয়ে এসে,তার গালে থাপ্পড় বসিয়ে বসিয়ে দিলো অভি।লজ্জায় অপমানে
অনন্যা মাথা নুইয়ে ফেললো। কিছুক্ষন পরেই তার এবং অভির বিয়ে শুরু হওয়ার কথা অথচ অভি তাকে সকলের সামনে এনে গাঁয়ে হাত তুললো? অশ্রুে আখিজোড়া টলমল করছে অনন্যার। দাঁড়ানোর শক্তিটুকুও পাচ্ছেনা। অপরদিকে অভির রাগে শরীর থরথর করে কাঁপছে। যেই রমনীকে প্রাণীর অধিক ভালোবেসে ছিলো, সে কিনা তাকে এমন বিচ্ছিরি ভাবে ঠকালো? অনন্যার মাথা তুলে উপস্হিত সকলকে পর্যবেক্ষন করলো। বিয়ের আসরে নববধুর গাঁয়ে তার হবু স্বামী হাত তুললো, অথচ কেউ সামান্যটুকু প্রতিবাদ করলো না? তার বাবা- মা পর্যন্তও না? তার বাবাও মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছেন,মায়ের মুখেও ফুটে উঠেছে অসহায়ত্বের ছাপ! অনন্যা অভির দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে বললো, ‘ অভি তুমি আমায় মা/রলে?
আমি তোমার বাগদত্তা! তোমার ভালোবাসা! কি করে পারলে তুমি? ‘
অভি সঙ্গে সঙ্গে উচ্চস্বরে চেঁচিয়ে শুধালো, ‘ ভালোবাসা কিসের ভালোবাসা? আমি ভাবতেও নিজের প্রতি ঘৃণা জন্ম নিচ্ছে, আমি তোমার মতো নষ্টা মেয়েকে এতোদিন ধরে ভালোবেসে এসেছি। ছিহ! ‘
অনন্যা বুঝতে পারছে কিসের জন্যে তাকে দোষারুপ
করা হচ্ছে। তার ভালোবাসার মানুষটি অব্দি তাকে
‘নষ্টা মেয়ে’ উপাধিতে ভুষিত করছে। অভি একরাশ ঘৃণা নিয়ে সামনের দিকে আঙ্গুল তাঁক করে। অভির ইশারা অনুসরণ করতেই, এক মুহুর্তের জন্যে থমকে যায় অনন্যা। থরথর করে কাঁপতে থাকে তার সবার্ঙ্গ। কেননা সামনে সাদা পর্দায় অস্পষ্টভাবে পদর্শিত হয়েছে অনন্যার সাথে একজন যুবকের অন্তরঙ্গ মুহুর্তে, যদিও অস্পষ্ট ভিডিও! ভিডিওতে হোটেলের একটি রুমে, যুবকটি বুকে মাথা রেখে শুয়ে আছে অনন্যা! হুট করে ভিডিওটি বন্ধ হয়ে যায়। যুবকটি আর কেউ নয় বরং শহরের নামকড়া বিসনেজম্যানের ছেলে আরবাজের খানের জ্যেষ্ট পুত্র ফারিশ খান। যার সাথে পূর্ব কোন পরিচয় ছিলো না অনন্যার। এইসব ভিডিও সম্পূর্ন ভিত্তিহীন! সবকিছু মনগড়া! কিন্তু তার কথা কি আদোও কেউ বিশ্বাস করবে? সকলেই মুখেই একরাশ অবিশ্বাসের ছাপ স্পষ্ট! অভির মা, অনন্যার বাবা জনবা লতিফ সাহেবের সামনে এসে, কঠোর গলায় বললেন, ‘ আপনার মেয়ের চরিত্র সম্পর্কে যদি আগে অবগত হয়ে যেতাম, তবে আজ এইভাবে অপমানিত হতে হতো না। ছিহ! শহরের একজন বিশিষ্ট ব্যাবসায়ী আপনি! অথচ মেয়েকে এই শিক্ষা দিয়েছেন? আপনার কি টাকার অভাব পরেছে নাকি? যার জন্যে আপনার মেয়ে, ফারিশ খানের টাকা দেখে তার সাথে রাত কাটাতেও দিদ্বাবোধ করলো না। ‘
জনাব লতিফ হাওলাদার ব্যাথিত হয়ে, বুকে হাত রাখলেন। বেশ কয়েকবছর যাবত হার্টের সমস্যা তার শরীরে বাসা বেঁধে আছে। লতিফ সাহেবের মনে হচ্ছে তার হার্ট অ্যাটাক হবে! যাকে বলে বড়সড় অ্যাটাক! তার একমাত্র আদরের মেয়ের চরিত্রের দিকে আঙ্গুল তুলে দেয়া হয়েছে এর থেকে বড় অপমান তার কাছে আর কিছুই নেই। অনন্যা অভি হাত ধরে করুণার সুরে বললো, ‘ অভি! বিশ্বাস করো! ভিডিওটি সম্পূর্ণ মিথ্যে। আমি তো ওই লোককে চিনিও না। তুমি তো আমাকে এতোবছর ধরে দেখছো অভি। টানা পাঁচ বছরের প্রেমের সম্পর্ক ছিলো আমাদের। দয়া করে আমাকে বিশ্বাস করো।’

অনন্যার বিপরীতে অভি কিছু বলতে চাইলে, কেউ বলে উঠে,
‘ তারমানে আপনি বলতে চাইছিলেন? সেই রাতে আমাদের মধ্যে কিচ্ছুটি হয়নি মিস অনন্যা? ‘
গম্ভীর স্বরে বলা মানবটির কথা শুনে তার দিকে তাঁকিয়ে, চমকে উঠলো অনন্যা। তার সামনে স্বয়ং ফারিশ খান দাঁড়িয়ে রয়েছে। শক্তপোক্ত হলুদে ফর্সা মুখশ্রী, বিশাল দেহী শরীর। উচ্চতা ছয় ফুটের উপরে। চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা। চুলগুলো কোকড়ানো। সবমিলিয়ে সাদা ব্লেজার পরিহিত সুদর্শন একজন পুরুষ। তবে তার মন ঠিক ততটাই নোংরামিতে ভরে আছে, তা বুঝতে বাকি নেই অনন্যার। ফারিশ খানের পিছনে তার বেশ কয়েকজন বডিগার্ড ছড়িয়ে ছিটিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ফারিশ খানকে দেখেই লতিফ হাওলাদাটর হুট করে ঘামতে লাগলেন। শরীর যেন ঢলে পরবে। মস্তিষ্ক কাজ করা সম্পূর্ন বন্ধ হয়ে গেছে তার। অপরদিকে, অনন্যা ফারিশের শার্টের কলার ধরে চেঁচিয়ে বলতে থাকে, ‘ আমি আপনার সাথে রাত কাটিয়েছি? আমি তো আপনাকে চিনিই না, সেখানে রাত কাটানোর প্রসঙ্গ থাকছে কোথায়? আর এইসব মিথ্যে, বানায়োট ভিডিওটার মানে কি? আপনি সবাইকে বলে দিন, দয়া করে এইসব

ফারিশ ঙ্গে নিজের মুখশ্রী শক্ত করে, নিজের শার্টের কলার থেকে অনন্যার হাত সরিয়ে শান্ত সুরে বলে, ‘ ডোন্ট ডেয়ার টু টাচ ফারিশ খান। জাস্ট ডোন্ট।’

অত:পর ফারিশ লতিফ হাওলাদারের দিকে তাচ্ছিল্যের সাথে বললো, ‘ ফারিশ খানের একদিনের বেড পার্টনার হওয়া অনেক মেয়ের কাছেই ড্রিম! সেই সুযোগ আপনার মেয়ে কীকরে হাতছাডা করে?তাইতো সেইদিন আমার অফার কি সুন্দরভাবে এক্সেপট করলো। আপনার মেয়ের কি সুন্দর চরিত্র!জাস্ট ওয়াও! ‘
বলেই জোড়ে জোড়ে হাতে তালি দিতে থাকলো ফারিশ। দৃষ্টি তার লতিফ হাওলাদের প্রতি নিবদ্ধ! লতিফ হাওলাদার ধপ করে বসে পরলেন চেয়ারে।
এই মুহুর্তে অনন্যার কাছে ফারিশ খান নামক যুবককে দুনিয়ার সবথেকে বড় নিকষ্ট ব্যাক্তি মনে হচ্ছে। এতো বড় মিথ্যে কথাগুলো কীকরে অকপটে বলে দিতে পারছে সে? তার কি একটুও নিজের বিবেকে বাঁধছে না? অনন্যা ধীর কন্ঠে হাত জোড় করে বলতে লাগলো, ‘ দয়া করে এইসব মিথ্যারচার বন্ধ করুন।’

‘ ইউ সেইড আম লাইয়িং রাইট? মিসেস শেফা হাওলাদার, বলুন তো ২১ আগষ্ট রাতে,আপনার মেয়ে কী বাড়িতে ছিলো? ‘

হঠাৎ ফারিশ অনন্যার মাকে প্রশ্ন করায় তিনি চমকে উঠেন। থতমতে হয়ে জবাব দেন, ‘ আসলে না। ‘
পরেরটুকু তাকে আর বলতে দিলো না ফারিশ। হাত থামিয়ে, অনন্যাকে পাল্টা প্রশ্ন করলো, ‘ সেই রাতে নিজের বাড়িতে ছিলেন না আপনি। তবে কোথায় ছিলেন? ‘

ফারিশের প্রশ্নে চুপ হয়ে যায় অনন্যা। সেই রাতের কথা তার মনে নেই। সে একপ্রকার অজ্ঞান হয়ে ছিলো, কিন্তু কোথাও একটি বিরাট বড় ভুল হচ্ছে। সে কখনোই এমন কাজ করবে না, তা হোক সজ্ঞানে কিংবা অজ্ঞানরত অবস্হায়। তাকে চরমভাবো ফাঁসানো হচ্ছে। চারদিকে কানাঘুষা শুরু হয়ে গিয়েছে। সকলে ছিহ, ছিহ, করা শুরু করে দিয়েছে। অথচ কেউ ফারিশের দিকে ভুলেও আঙ্গুল তুলছে না। তুলবেই বা কেন? একটা সমাজের কাছে সবসময় একজন মেয়ের দোষই প্রাধান্য পেয়ে এসেছে। অভি এগিয়ে এসে, অনন্যাকে ঘুড়িয়ে তার বাহু শক্ত করে চেপে বললো, ‘ কেন করলে এমন? কিসের অভাব তোমার? এতো নিচে নেমে গেলে তুমি? আমি ভাবতেও পারছি না অনন্যা! মা চলো! এখানে থাকার আর মানেই হয়না। ‘

অভির চোখে নিজের জন্যে ঘৃণা দেখে কাঁদতে কাঁদতে, অনন্যা অভির হাত ধরে বলতে লাগলো, ‘ আমায় বিশ্বাস করো। তোমার অনন্যা এমন কাজ করতে পারে না। দয়া করে যেও না অভি। আমার তোমাকে বড্ড বেশি প্রয়োজন। আজকে তো আমাদের বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো। ‘

‘ বিয়ে? তাও তোমার মতো চরিত্রহীন মেয়েকে? কখনো না! তোমার মতো মেয়ের দিকে এই অভি শিকদার কখনোই ফিরে তাঁকাবে না। একজন প্রস্টেটিউট আর তোমার মধ্যে পার্থক্যই বা কী? ‘

অভির কথা শুনে, তার হাত ছেড়ে দিলো অনন্যা। শেষ অব্দি তাকে পতিতার সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে? এতো অসম্মান কিংবা অপমান সে সইতে পারছে না। ফারিশ বাঁকা হেসে বিড়বিড়িয়ে বলে, ‘ জাস্ট সো ক্লড লাভ ইয়ার! ভালোবাসে অথচ নিজের ভালোবাসার মানুষকে বিশ্বাস করতে পারেনা। ‘

অভির মা ছেলেকে এবং বাকি বরপক্ষকে নিয়ে, চলে যেতে উদ্বত হলে, পিছন থেকে অভিকে উদ্দেশ্য করে, অনন্যা তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলে,

‘ মি: অভি শিকদার, কে বলতে পারে? এই নষ্ট মেয়ের কাছেই হয়তো আপনাকে একদিন ফিরে আসতে হবে, কিন্তু সেদিন চাইলেও আপনি আর ফিরতে পারবেন না। সমস্ত পথ আজ নিজ হাতে আপনি বন্ধ করে দিয়ে যাচ্ছেন। যেই কঠিন মুহুর্তে আপনার সঙ্গ আমার যেখানে সবথেকে বেশি প্রয়োজনীয়, সেখানে আপনি আমাকে একা করে চলে যাচ্ছেন। আজ না হয় কাল, বিরাট বড় এক ধাক্কা আপনি খাবেনই। মনে রাখবেন, কিন্তু। ‘

অভির মা মুখ বেকিয়ে, ছেলের হাত ধরে বললেন, ‘ চোরের মায়ের বড় গলা! এতো কান্ড করেও, নষ্টা মেয়েটার কথা যেন থামছেই না। শুনো রাখো মেয়ে,আমার ছেলেকে আমি যথেষ্ট ভদ্র, সুন্দরী মেয়ে দেখে বিয়ে দিবো। যে তোমার মতো নষ্টা হবেনা। ‘

কথাগুলো বলেই, অভির মা তার ছেলেকে নিয়ে বেড়িয়ে গেলেন। বিয়ের আসরে নিজের মেয়ের বিয়ে ভেঙ্গে যেতে দেখে, বুকে হাত রেখে ব্যাথায় কাতড়ে উঠলেন লতিফ সাহেব। নিজের বাবার এমন ভয়ংকর অবস্হা দেখে দ্রুত তার বাবার কাছে ছুটে এলো অনন্যা। লতিফ সাহেবের চোখমুখে অসহাত্ব! হাত – পায়ে চরম খিঁচুনি ধরে গিয়েছে তার। অনন্যার মা স্বামীর অবস্হা দেখে দ্রুত ড্রাইভারকে গাড়ি বের করতে বললেন। ফারিশ সবকিছুই শান্ত হয়ে পর্যবেক্ষন করে যাচ্ছে। অধরের কোণে তার বাঁকা হাসি বিদ্যমান। আজ লতিফ সাহেবের এই অসহায়ত্ব তাকে পৌচাশিক আনন্দ দিচ্ছে। সে তার চশমা ঠিক করে, নিজের বডিগার্ডদের নিয়ে বেড়িয়ে যায়। তার কাজে সে সফল হয়ে গিয়েছে। অনন্যা সেই নিকৃষ্ট মানুষটির যাওয়ার পানে ঘৃণার দৃষ্টিতে তাঁকায়। সে বুঝতে পারছে না, কেন এইসব করলো লোকটা?

_________________

লতিফ সাহেবের বড়সড় হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। তাকে আইসিউতে ভর্তি করা হয়েছে। এই প্রথম হার্ট অ্যাটাক হয়েছে তার। নিজের প্রানেরপ্রিয় মেয়ের এমন অপমান সহ্য করা কোন পিতার পক্ষেই বোধহয় সম্ভব নয়। আইসিউর বাইরে অনন্যা এবং তার মা অপেক্ষা করছে। অনন্যার মা কেমন পাথর হয়ে বসে আছেন। কি থেকে কি হয়ে গেলো! অনন্যার গাঁয়ে এখনো বিয়ের বেনারসী। কাজল ঘেটে তার একশা হয়ে আছে। ডক্টর কিছুক্ষন পরে বেড়িয়ে বললেন, ‘ জনাব লতিফের অবস্হা খুবই করুন! তাকে ২৪ ঘন্টা আপাতত আইসিউতেই থাকতে হবে। ‘
মিসেস শেফা এগিয়ে এসে বললেন, ‘ উনি ঠিক হয়ে যাবেন তো? ‘

‘ আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি। বেশ বড়সড় ধাক্কা অ্যাটাক হয়েছে। আপ্নারা দ্রুত কেশ কাউন্টারে জমা দিয়ে দিন। ‘

মিসেস শেফা মাথা নাড়িয়ে ‘ ঠিক আছে ‘ বললেন।
অনন্যা ডক্টরের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করে, ‘ আমি কি একটিবার আমার বাবাকে দেখতে পারি? ‘

‘একদমই নয়! কোন সাহসে তুমি তোমার বাবাকে দেখতে চাইছো? আজ যা হয়েছে সবটা তোমার জন্যে অনন্যা। তোমার মতো মেয়েকে জন্ম দিয়ে, আজ আমরা এতোটা অসম্মানিত হয়েছি। তোমার বাবা আজ মৃত্যু পথযাত্রী। তোমার মতো মেয়ে জন্মের সময় মা/রা গেলেই বোধহয় ভালো হতো।’

নিজের মায়ের মুখে এমন কথা শুনে অনন্যার আজ সত্যিই ম/রে যেতে ইচ্ছে করছে। তার মা অব্দি তাকে বিশ্বাস করলো না।

হঠাৎ সেখানে তাদের ম্যানেজার রফিক সাহেব এসে হাজির হলেন। রফিক সাহেবকে দেখে, মিসেস শেফা বললেন, ‘ ম্যানাজার সাহেব! আপনাকে ক্যাশ আনতে বলেছিলাম, এনেছেন আপনি? ‘

‘ সরি ম্যাম! আজকেই জানতে পারলাম, স্যার নাকি আমাদের কম্পানির প্রায় ৮০℅ শেয়ার ফারিশ খানকে বিক্রি করেছে। আমাদের তো আর কিছুই রইলো না। ব্যাংকেও লোন চলছে। সেখানে এতোগুলো ক্যাশ কীভাবে ম্যানেজ করবো? ‘

মিসেস শেফা মাথায় হাত দিয়ে বসে বললেন, ‘ তাহলে উনার কি তবে চিকিৎসা হবেনা? ‘

অনন্যা তার মায়ের কাছে বসে তড়িৎ গতিতে বললো ‘ হবে মা! তোমাদের মেয়ে বেঁচে থাকতে, তার বাবার চিকিৎসা বন্ধ হবেনা। ‘

কথাটি বলেই দ উঠে দাঁড়ায় অনন্যা। রাগে তার শরীর কাঁপছে। তাদের আজকের এই অবস্হার জন্যে ফারিশ খান দায়ী। লোকটাকে আজ জবাব দিতেই হবে। কেন সে এমন করছে! অনন্যা দ্রুত হসপিটাল থেকে হনহনিয়ে বেড়িয়ে যায়। মিসেস শেফা চোখ বুজে কাঁদতে থাকেন। রাস্তায় দ্রুত হেটে যাচ্ছিলো অনন্যা। উদ্দেশ্য ফারিশ খানের অফিস! কিন্তু হঠাৎ তার সামনে একটি কালো গাড়ি চলে আসে, অনন্যার শরীর দূর্বল ছিলো। সে গাড়িটাকে নিজের দিকে এগিয়ে আসতে দেখে, অজ্ঞান হয়ে পরে।

চলবে কি?

ত্রিধারে তরঙ্গলীলা পর্ব-৯১ এবং শেষ পর্ব

0

#ত্রিধারে_তরঙ্গলীলা
|৯১|
আইয়াজ, ফারাহর বাচ্চা দুটো খুবই শান্ত প্রকৃতির হয়েছে। ভাগ্যিস ওরা শান্ত। নয়তো জমজ দুটো সামলাতে হিমশিম খেতো ফারাহ। বিছানায় দুই ভাইকে বসিয়ে তৈরি হচ্ছে আইয়াজ, ফারাহ। বাচ্চারা খেলনা দিয়ে খেলায় মগ্ন। শাড়ি পরায় ব্যস্ত ফারাহ। ওর শাড়ি পারপেল এবং গোল্ডেন কালারের কম্বিনেশন। সুস্বাস্থের অধিকারী সে। ধবধবে ফর্সা শরীরে কী সুন্দর যে মানিয়েছে শাড়িটা! আইয়াজ শুধু তাকিয়েই আছে। লাস্ট কবে ফারাহকে এভাবে দেখেছিল? আপাতত মাথা ঝিম ধরে আছে। তাই মনে করতে পারল না। চশমার আড়ালে থাকা চোখ দুটো শুধু নির্নিমেষে তাকিয়ে রইল। আইয়াজের পরনে ফরমাল শার্ট, প্যান্ট। সাদা শার্টের ওপর গোল্ডেন কালার ওয়েস্ট কটি। তিন বন্ধু প্ল্যান করেই এই ড্রেসআপে তৈরি হয়েছে। এরপর তিন জোড়া কাপল যখন এক হবে। সৃষ্টি হবে এক দারুণ আমেজ।

‘ এই আয়াজ কুঁচি টা ধরে দাও না। ‘

ফারাহর ডাকে সংবিৎ ফিরল আইয়াজের। নাকের ডগায় আসা চশমাটা উপরের দিকে ঠেলে এগিয়ে এলো। সহসা স্মার্ট, শ্যামাঙ্গ পুরুষটির পানে চোখ পড়তেই মনে মনে তিনবার মাশা-আল্লাহ পড়ল ফারাহ। আইয়াজ সাবলীল ভাবে হাঁটু ভাঁজ করে বসল ওর সম্মুখে। ফারাহ মুগ্ধতা ভরে হাসল কিঞ্চিৎ। এরপর সে কুঁচি করল আইয়াজ নিচ থেকে পরিপাটি করে ধরে রইল। সম্পূর্ণ কুঁচি ঠিকঠাক হওয়ার পর উঠে দাঁড়াল আইয়াজ। প্রেয়সীর মুখোমুখি হয়ে বিমুগ্ধ কণ্ঠে বলল,

‘ পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরী নারীটিই আমার বউ। ‘

‘ নিজের বউকে সবার কাছেই সুন্দরী লাগে। ‘

‘ কে বলল? অনেক পুরুষের চোখে ঘরের বউয়ের চেয়ে পরের বউ বেশি সুন্দরী লাগে। ‘

‘ তাই বুঝি, এক্সপেরিয়েন্স আছে নাকি সিনিয়র সাহেব? ‘

বহুদিন পর ফারাহর মুখে সিনিয়র সাহেব শুনল আইয়াজ। দারুণ লাগল শুনতে। সেই প্রেমের শুরুতে কী মিষ্টি করেই না ডাকত, সিনিয়র সাহেব শুনছেন? কিন্তু আজ কি খোঁচা মিশে ছিল? নিমেষে জিভ কামড়াল আইয়াজ। মাথা ঝাঁকিয়ে বলল,

‘ আস্তাগফিরুল্লাহ! কী বলো হুম এসব বাজে কথা। ‘

বলেই দু’হাতে ফারাহর দু কাঁধ স্পর্শ করল সে। মুখ নিচু করে প্রিয় মুখটির ছোট্ট কপালে গভীর চুম্বন এঁটে বলল,

‘ আমার প্রথম, একমাত্র এবং শেষ মুগ্ধতা তুমি প্রিয়তমা সহধর্মিণী। ‘

আবেগাপ্লুত হয়ে হেসে ফেলল ফারাহ৷ দুহাতে আলতো করে জড়িয়ে ধরল প্রিয়তম পুরুষকে। এই ভদ্রলোক তার জীবনে ঠিক কতখানি? তা বলে কয়ে বোঝানো সম্ভব হবে না। এই ভদ্রলোকের স্ত্রী হতে পেরে সে গর্বিত ভীষণ। পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী বউদের মধ্যে অন্যতম সে৷
.
.
চৌধুরী বাড়ির ড্রয়িংরুমটা সুন্দর করে ডেকোরেশন করা হয়েছে। খুব অল্প সময়ে দারুণ আয়োজন। সিমরান নিজেকে যত্ন নিয়ে সাজাতে মশগুল ছিল বলে এসবে নজর দিতে পারেনি৷ নিজেকে পুরোপুরি তৈরি করে নিয়ে দেখল সন্ধ্যা পেরিয়ে গেছে। টনক নড়ল মুহুর্তেই। সন্ধ্যা হয়ে গেল অথচ সৌধ এসে পৌঁছাল না তার কাছে? বুকের ভেতরটায় ছটফট শুরু হলো এবার৷ ঢোক গিলে নীরস গলাটা ভিজিয়ে নিয়ে ফোন করল সৌধকে। রিং হলো কিন্তু রিসিভ করল না। এমন করছে কেন মানুষটা? সে যে আর নিতে পারছে না এসব৷ মন যেন কেমন কেমন করে উঠল৷ সন্দেহের একটা বীজ দাঁনা বেঁধে রইল অন্তরে। ঘর ছেড়ে বেরিয়ে নিচে নামতে নামতে খেয়াল করল ড্রয়িং রুমটা অন্যরকম সুন্দর লাগছে। ভালোভাবে নজর বুলাতেই মনটা চনমনে হয়ে গেল। এত সুন্দর আয়োজন কে করল? তার শশুর, শাশুড়ি নাকি সৌধ? হৃৎস্পন্দন বেড়ে গেল। তাহানীকে ডাকল হাঁক ছেড়ে। ব্রাইডাল লুকে সেজে ল্যাহেঙ্গার দুপাশে ধরে প্রিন্সেসের মতো এগিয়ে এলো তাহানী৷ মাথা দুলিয়ে বলল,

‘ সারপ্রাইজ ভাবিপা। ‘

উত্তেজনায় বুক কেঁপে কেঁপে উঠল সিমরানের। তানজিম চৌধুরী এসে বললেন,

‘ সৌধ পৌঁছে যাবে কিছুক্ষণের মধ্যেই। তাই জানালো, তুমি যেন হালকা কিছু খেয়ে নাও। চলো তাহানী আর তোমার জন্য খাবার বেড়েছি। ‘

ভ্রু কুঁচকে ফেলল সিমরান। কিছু খাবে মানে? সৌধ বলেছিল, তাকে নিয়ে বাইরে ডিনার করবে। তাহলে এখন কেন কিছু খেয়ে নেবে? সবকিছু ওরই এমন উলোটপালোট লাগছে? নাকি সৌধ সহ সবাই উলোটপালোট আচরণ করছে ওর সঙ্গে? সবাইকে অদ্ভুত আর অচেনা লাগছে কেন? তীব্র অস্বস্তি নিয়ে
হালকা কিছু খেয়ে নিল সে। এরপর অপেক্ষা করতে লাগল স্বামীর জন্য। অপেক্ষার পালা বাড়তে লাগল। ঘনিয়ে এলো রাত। অথচ সৌধ এসে পৌঁছাল না। বাড়ির সবাই ডিনার করে যে যার ঘরে চলে গেল। সিমরানকে অসংখ্যবার বললেও সে আর কিছু মুখে তুলল না। সারাক্ষণ ছটফট ছটফট করে কাটাতে লাগল। সৌধর ফোন বরাবরের মতোই বন্ধ।

রাত এগারোটা। নিজের ঘরে স্তব্ধ মুখে বসে আছে সিমরান। তাহানী পাশে ভীত মুখে বসে। পরিস্থিতি বুঝে উঠতে পারছে না ছোট্ট ওই মেয়েটিও। ছোটো ভাইয়া এতসব আয়োজন করেও কেন আসছে না? ভাবিপার যে খুব কষ্ট হচ্ছে। আচমকা ফোন বেজে উঠল সিমরানের। স্ক্রিনে সৌধর নাম্বার দেখতেই ঝড়ের গতিতে রিসিভ করল। ওপাশে সৌধর ধীরস্থির কণ্ঠ,

‘ সিনুপাকনি আমি বোধহয় আজ পৌঁছাতে পারব না…’

‘ ওহ! ইট’স ওকে। ‘

বলেই সৌধকে আর কিছু বলার সুযোগ দিল না।
নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে কল কেটে ফোন বন্ধ করে রাখল।
এরপর শান্ত দৃষ্টিতে তাকাল তাহানীর পানে। অনুরোধ করে বলল,

‘ আমি একটু একা থাকতে চাই তাহানী, সম্পূর্ণ একা। তুমি নিজের ঘরে যাবে প্লিজ? তোমার ভাইয়া আসবে না আজ। ঘুমিয়ে পড়ো গিয়ে। ‘

ভাবিপার থমথমে মুখ, রক্তবর্ণ চোখ দেখে ভয়ে শিউরে উঠল তাহানী। মাথা কাৎ করে সায় দিয়ে ধীরপায়ে বেড়িয়ে গেল সে। ও বেড়িয়ে যেতেই উঠে দাঁড়াল সিমরান। তীব্র অভিমান আর সাংঘাতিক ক্রোধ ওর শরীরটা অবশ করে দিচ্ছিল। নিজেকে কোনোরকমে সামলে নিয়ে দরজা আঁটকে দিল। এরপরই শুরু করল পরিচিত এক তাণ্ডবলীলা। তার আর সৌধর গোছাল, পরিপাটি সুন্দর ঘরটায় কতক্ষণ ধ্বংসলীলা চলল। বিছানার চাদর টেনেহিঁচড়ে ফেলে দিল নিচে। ড্রেসিং টেবিলের সামনে থাকা সাজগোজের জিনিস ফেলে ভেঙেচুরে একাকার। আয়নাটা পর্যন্ত অক্ষত রাখল না। বিধ্বংসী সে পরিবেশ সৃষ্টি করে নিজেই আবার ভয় পেয়ে গেল৷ ছোট্টবেলা থেকেই অতিরিক্ত রাগে মাথা ঠিক থাকে না তার। এ স্বভাবটা পেয়েছে মায়ের থেকে। তবে সৌধর সান্নিধ্য পেলে এ পৃথিবীর সবচেয়ে নমনীয় নারীটিই যেন সে হয়ে যায়। সবাই জানে সেদিনের সিমরান থেকে আজকের সিমরানের পরিবর্তনটুকু সম্ভব হয়েছে একমাত্র সৌধর জন্যই। একজন ব্যক্তিত্ববান, সুপুরুষকে ভালোবেসে মেয়েটা কী নিখুঁতভাবে নিজেকে পরিবর্তন করেছে। সেই পরিবর্তনের খোলস যে কোনো মুহুর্তে উঠে যেতে পারে কেবল সৌধর অনুপস্থিতি, অবহেলা আর উপেক্ষাতে। এ খবর কি কেউ জানে? জানে না। তাই বলে শরীরের এমন অবস্থায় সিমরান এসব করবে? সে তো এখন আর একা নেই! একটুও হুঁশ ছিল না একটুও না৷ আকস্মিক আহত সুরে সে বলল,

‘ ওহ আল্লাহ সাহায্য করো আমাকে ‘

সর্বাঙ্গ থরথর করে কেঁপে উঠল মেয়েটার৷ ভয়ে, ব্যর্থ চিত্তে দরজায় পিঠ ঠেকিয়ে বসে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগল। কেউ ভালোবাসে না তাকে কেউ না৷ কেউ নেই তার কেউ নেই। এ পৃথিবীতে সে সম্পূর্ণ একা। এমন অনুভূতিতেই আচ্ছন্ন হয়ে রইল মন, মস্তিষ্ক সবটা জুড়ে৷
.
বারোটা বাজতে আর মাত্র পাঁচ মিনিট৷ বাচ্চারা কেউ জেগে নেই। নামী আর ফারাহ আগে প্রবেশ করল চৌধুরী বাড়িতে। বাচ্চাদের জন্য গুছিয়ে রাখা ঘরটায় গিয়ে শুইয়ে দিল ওদের। এরপর বেরিয়ে এসে তাহানীকে জিজ্ঞেস করল,

‘ সিনু কোথায়? ‘

মুখ ভাড় করে তাহানী জবাব দিতেই নামীর চোখ কপালে। তাহানীকে বের করে দিয়ে রুমে দরজা আঁটকেছে সিনু! মেয়েটার যা সাংঘাতিক রাগ, অভিমান। কান্নাকাটি করছে নিশ্চয়ই। ভাঙচুর এ বাড়ি করার সম্ভাবনা ক্ষীণ। তাই অতো বেশি টেনশন নিল না। ফারাহকে ভেতরে থাকতে বলে সে বেরিয়ে গেল সৌধদের কাছে। বিবাহবার্ষিকী উপলক্ষে অনেক আগে থেকেই পরিকল্পনা করে রেখেছিল সৌধ। সিমরানকে ঘুণাক্ষরেও কিছু টের পেতে দেয়নি। ও শুধু জানে বিবাহবার্ষিকী উপলক্ষে সৌধ আসবে। বাড়িতে ছোটোখাটো একটি আয়োজন হবে। সে জানে না তার বর দুদিন আগেই এসেছে। উঠেছে তার ভাইয়ার বাড়িতে। এরপর ভাইয়া, ভাবি সহ বন্ধু, বন্ধুর বউ নিয়ে জমকালো আয়োজনের পরিকল্পনা করেছে। শেষ সময়ে বউকে নিরাশ করে আচমকা সারপ্রাইজ দেবার তীক্ষ্ণ পরিকল্পনা। সে অনুযায়ী সবটাই সুন্দর মতোন শুরু করল ওরা।

ড্রয়িং রুমটা এখন কয়েকরকম আলোয় ঝলমল করছে। বাড়ির কাজের লোকেরা মিলে কেক, কোমল পানীয় সাজিয়ে দিয়ে গেল। ঝুমায়না ভাবি আগে থেকেই জানত ছোটোখাটো অনুষ্ঠান হবে। তাই সেও সেজেগুজে উপস্থিত। তাহানী লাইটিং বেলুনের সঙ্গে সেলফি নিচ্ছে। সুহাস গাড়ি থেকে গিটার নিয়ে এলো। আইয়াজ, ফারাহর ফটোশুট করে দিচ্ছে সৌধর কাজিন ব্রাদার। সৌধ মাইক্রোফোনটা লাগিয়ে একটু কথা বলল,

‘ ঠিকঠাক শোনা যাচ্ছে? ‘

নামী ত্বরিত তর্জনী ঠোঁটে চেপে ফিসফিস করে বলল,

‘ জি ভাইয়া, জি ভাইয়া শোনা যাচ্ছে। সব ওকে। ‘

স্মিত হাসল সৌধ। সবাই নিজেদের মতো করে দাঁড়াল আশপাশে। সৌধ গিটার নিয়ে একদম সবার মাঝখানে রাখা ডিজাইনার আসনে বসল। ওরা দারুণ আমেজ নিয়ে উৎসাহ দিল মধ্যমণিকে। দেয়াল ঘড়িতে এক পলক তাকিয়ে কাজিন ব্রাদার ছামির দিকে তাকাল সৌধ। চোখে ইশারায় বোঝাল,

‘ ফটোশুট যেন সুন্দর হয়। ‘

এরপর আরেক কাজিন এনামুলকে মুখ ফুটেই বলল,

‘ শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ঠিকঠাক ভিডিয়ো চাই। না পেলেই শব্দহীন মাইর। ‘

অতঃপর সন্তর্পণে চোখ বুজল সুপুরুষটি। গিটারের তালে তালে তুলল সুর গেয়ে উঠল গান,

” আ আ আ
লাবো কো লাবো পে সাজাও
কেয়া হো তুম মুঝে আব বাতাও
লাবো কো লাবো পে সাজাও
কেয়া হো তুম মুঝে আব বাতাও

তোড় দো খুদ কো তুম
বাহো মে মেরী
বাহো মে মেরী
বাহো মে মেরী বাহো মে…”

হাঁটুতে মুখ গুঁজে কাঁদছিল সিমরান। আকস্মিক চিরচেনা সুর শুনে চকিতে মাথা তুলল। শরীরে বিদ্যুৎ ঝটকা লাগল যেন। উলোটপালোট অনুভূতিতে সিক্ত হয়ে উঠে দাঁড়াল সটান। সৌধ এসেছে! ত্বরিত দরজা খুলে প্রায় ছুটে বের হতেই এবার স্পষ্ট শুনল, বুঝতে পারল অনেক কিছুই। সব তাহলে পরিকল্পিত? ওর জন্য সারপ্রাইজ প্ল্যান ছিল! নিজের বোকামিতে লজ্জিত হলো ভীষণ। ছিঃ ছিঃ। কিন্তু তারই বা দোষ কতটুকু? সে কী সিচুয়েশনে আছে মানুষটা যদি জানত। তাহলে কি এতটা প্রেশার দিতে পারত? নিমেষে পায়ের গতি বাড়াল সে। সিঁড়িতে পা ফেলতেই শিউরে উঠল। হায় হায় এ কী পাগলামি করছে? এমন উদ্ভ্রান্তের মতো ছুটা যাবে না এখন। অতি সাবধানে চলতে হবে। সিঁড়ি বেয়ে নামতে হবে। কোনো তাড়া নেই। ধীরেসুস্থে নামবে সে। আর বোকামি নয় একটুও বোকামি নয়৷

বিধ্বস্ত মুখ। লাল টকটকে চোখ। কান্নাকাটি করে নাকের ডগা পর্যন্ত লাল করে রেখেছে। দুই গালে এখনো অশ্রুজলের দাগ স্পষ্ট। কোমর সমাল লম্বা, খোলা এলোমেলো চুল। মেরুন কালারের বেনারসি পরিহিত রমণী অতি সাবধানে নিচে নামছে। দৃষ্টি তার বিস্মিত, পলকহীন। স্থির কেবল তার গায়ক সাহেবের পানে। আপাদমস্তক সৌধকে দেখল সিমরান। কালো প্যান্ট, সাদা শার্ট পরনে মানুষটার। শার্টের ওপর তার শাড়ির রঙে মিলে যায় এমন রঙা ওয়েস্ট কটি। চোখ দু’টো বন্ধ। কপালে ছড়িয়ে আছে কয়েক ছোটা এলোমেলো ছোটো ছোটো চুল। ফর্সা ভারিক্কি দুগাল ভর্তি ঘন কালো খোঁচা খোঁচা দাঁড়িতে কী যে অমায়িক সুন্দর লাগছে! পুরুষালি পুরো ঠোঁটজোড়া নিগুঢ় আকর্ষণ ধরে গেয়ে চলেছে। সিমরানের উপস্থিতি টের পেয়ে আচমকা চোখ খুলল সৌধ। অর্ধাঙ্গিনীকে দর্শন করেই চট করে উঠে দাঁড়াল। সিঁড়ির ধাপগুলো শেষ সিমরানের। এবার সরাসরি এসে দাঁড়াল সৌধর সামনে। আশপাশে কে আছে, কী আছে কিচ্ছুটি দেখল না। একদিকে চাপা অভিমান অন্যদিকে তীব্র আকর্ষণ আর আনন্দানুভূতিতে আচ্ছন্ন হয়ে রইল। সৌধ থেমে রইল না। থেমে রইল না ওর ঠোঁটজোড়া আর মাতাল করা কণ্ঠস্বর,

” আ আ
তেরেহি এহসাসো মে
ভীগে লম্হাটো মে
মুঝকো ডূবা তিশ্নগী সী হে
তেরী আদাও সে দিলকাশ খতাও সে
ইন লাম্হো মে জ়িন্দেগী সী হে
হায়া কো জ়ারা ভূল জা
মেরে হী তেরহা পেশ আ

খো ভী দো খুদ কো তুম
রাতো মে মেরী
রাতো মে মেরি রাতো মে মেরী
রাতো মে… ”

হাত বাড়াল সৌধ। অবচেতনেই নিজের হাতটা তুলে দিল সিমরান। প্রিয়তম পুরুষটার এ কী সম্মোহনী শক্তি? অবাক না হয়ে পারল না সে। সকলের সামনেই ওর হাতের পিঠে গাঢ় করে চুমু খেল সৌধ। ত্বরিত কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল,

‘ হ্যাপি সেকেন্ড ম্যারেজ এনিভার্সারি ডিয়ার। আমার হওয়ার আজ দুবছর তোমার। ভালোবাসি বউপাখি।’

আবেশে চোখ গলে অশ্রু ঝড়ে পড়ল সিমরানের। সৌধ ওকে টেনে নিয়ে এবার সকলের সামনে দাঁড় করালো। সবাই মিলে উইশ করল ওকে। আনন্দে দিশেহারা হয়ে গেল মেয়েটা। তাহানী চিৎকার করে বলল,

‘ ছোটো ভাইয়া গান শেষ করো। ‘

সচকিত হলো সৌধ। ফের বউয়ের চোখে চোখ রেখে গাইল,

আ আ
লাবো কো লাবো পে সাজাও
কেয়া হো তুম মুঝে আব বাতাও
লাবো কো লাবো পে সাজাও
কেয়া হো তুম মুঝে আব বাতাও

তেরে জ়্জবাতো মে
মেহকী সী সাঁসো মে
এ জো মেহেক সৈংডলী সী হে
দিল কী পনাহোং মে
বিখরী সী আহোং মে
সোনে কী খোয়াইশ জাগী সী হে
চেহরে সে চেহরা ছুপাও
সিনে কী ধাড়কান সুনাও
দেখলো খুদ কো তুম
আঁখো মে মেরী
আঁখো মে মেরী
আঁখো মে মেরী
আঁখো মে
আ আ
লাবো কো লাবো পে সাজাও
কেয়া হো তুম মুঝে আব বাতাও. ”
.
.
এতবড়ো সারপ্রাইজের জন্য প্রস্তুত ছিল না সিমরান।
তাই সৌধকেও সবচেয়ে বড়ো সারপ্রাইজ উহুম সেরা সারপ্রাইজটা দিল। কেক কাটার পূর্বমুহূর্ত। হঠাৎ সৌধর খুব কাছাকাছি এলো সে। কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল,

‘ কেউ একজন আসছে ডক্টর, আমরা দুই থেকে তিন হতে যাচ্ছি…! ”

আশ্চর্য মুখে তাকিয়ে রইল সৌধ। এভাবেও কেউ বাবা হওয়ার সংবাদ দেয়? স্তম্ভিত মুখাবয়বে আপাদমস্তক দেখল সিমরানকে। এরপর সচেতন দৃষ্টিতে আশপাশে সকলের পানে তাকাল। সুহাস ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে ওর পানে। বোঝার চেষ্টা করছে হঠাৎ বন্ধু থমকে গেছে কেন? সিনু কী বলছে ওকে? সুহাসের ছোটো ছোটো চোখ দেখে সৌধ ফের সিমরানের পানে তাকাল। কোনোকিছু না ভেবে প্রচণ্ড শক্ত করে জড়িয়ে ধরল সিনুকে। আবেগে ঘনীভূত হয়ে হুহু করে কেঁদে ফেলল সিমরান। সৌধর চোখ দুটোও পানি চিকচিক করছে। অধর কামড়ে হাসছে সে। প্রাপ্তির হাসি। উপস্থিত সবাই নির্বাক। হতভম্ব সুহাস এগিয়ে এলো। থমথমে কণ্ঠে শুধাল,

‘ কী হয়েছে! ‘

নিমেষে সৌধ ছেড়ে দিল সিমরানকে। নিজেকে যথাসম্ভব সামলে নিল সিমরান। সৌধ সুহাসের দিকে এগিয়ে গিয়ে ওকেও জড়িয়ে ধরল। পিঠে চাপড় দিয়ে বলল,

‘ মামা হচ্ছিস দোস্ত, মামা। ‘

মুহুর্তেই ঝড়ের বেগে ছুটে এলো আইয়াজ। পেছন থেকে জড়িয়ে ধরল সৌধকে। বলল,

‘কংগ্রাচুলেশনস দোস্ত! ‘

সামনে থেকে জড়িয়ে ধরল সুহাস,

‘ কংগ্রাচুলেশনস সৌধ, বাবা হচ্ছিস। ‘

এদিকে নামী, ফারাহও আনন্দিত চিত্তে সিমরানকে অভিনন্দন জানালো। নামীর বুকে মাথা রেখে লজ্জা লুকালো সিমরান। কী একটা শান্ত, শীতল সুখে টগবগ করতে থাকল ওদের প্রত্যেকের হৃদয় আহা!

আইয়াজ, ফারাহর চোখাচোখি হলো তখন। তৃপ্তির হাসি বিনিময় হলো ওদের৷ পুরোনো স্মৃতি, বর্তমান আর ভবিষ্যত সব মিলিয়ে আজ ওরা একাকার।

সুহাস এগিয়ে এলো বোনের কাছে। সিমরান ভাবিকে ছেড়ে এবার ভাইয়ের বুকে মুখ লুকাল। সুহাস ওর মাথায় হাত বুলিয়ে নামীকে বলল,

‘ আমার ছোট্ট পরীটাও মা হবে নামী। ‘

চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে উঠল সুহাসের। আচমকা বাবা, মায়ের মুখটা ভেসে উঠল চোখের পাতায়৷ কেঁপে উঠল বুক। ঠোঁট চেপে কান্না আটকালো সে। নামী ওর অনুভূতি বুঝতে পেরে পাশে এসে দাঁড়াল। কাঁধে হাত রেখে বলল,

‘ বাবা, মা নেই তো কী হয়েছে সুহাস? তাদের দোয়া, ভালোবাসা সবসময় আমাদের ওপর আছে। ‘

সিমরান মাথা তুলল তখন। ভাইয়ের পানে তাকিয়ে সান্ত্বনা দিল,

‘ তুমি, ভাবিপু, সৌধ তোমরা সবাই আছো তো। আমার একটুও কষ্ট হচ্ছে ভাইয়া। আমি তোমাদের মাঝেই বাবা, মাকে খুঁজে পাই। ‘

কান্না গিলে ভাইকে সান্ত্বনা দিল সিমরান। ও সান্ত্বনা দিলেও ওর ভেতরের দুঃখটা টের পেল সৌধ। কাছে এসে পাশে দাঁড়াল। হাত বাড়িয়ে বুকে আগলে ধরল বউকে। অশ্রুসিক্ত দৃষ্টিতে সিনু তাকাল সৌধর পানে। এই মানুষটা তাকে ভালোবাসে জানত৷ কিন্তু সেই ভালোবাসার গভীরতা এতটুকু। বিশেষত্ব এত অসাধারণ ঘুণাক্ষরেও টের পায়নি। এই মানুষটা জুড়ে এত অসাধারণত্ব কেন? আপাদমস্তক বিশেষত্ব নিয়েই যেন জন্মেছে মানুষটা। যার সঙ্গিনী হয়ে নিজেকে চরম সৌভাগ্যবতী মনে হয়।

পরিশিষ্টঃ
মানুষের জীবন একটাই৷ এই এক জীবনে গল্প তৈরি হয় অজস্র। সে গল্প গুলোর সমাপ্তিও ঘটে। তৈরি হয় নতুন গল্প। এত গল্পের ভীড়ে আবার কিছু গল্প থাকে আমাদের অজানা। কিছু থাকে যার আংশিক মাত্র জানতে পারি। বাকিটা জানতে হৃদয় তৃষ্ণার্ত হয়ে রয়। পরিপূর্ণতা, অপ্রাপ্তি, তৃষ্ণা বা জানা গল্প, অজানা গল্প, আংশিক জানা গল্পের বাকিটা জানার তৃষ্ণা। এসব জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। যে অংশ জুড়ে থাকে অদৃশ্য এক ঢেউয়ের খেলা। মানব জীবনের এক আশ্চর্য তরঙ্গলীলা। ত্রিধারে তরঙ্গলীলা এমনই এক বিস্ময়কর নাম, গল্প, উপন্যাস।

___________________সমাপ্ত______________________

® জান্নাতুল নাঈমা

ত্রিধারে তরঙ্গলীলা পর্ব-৯০

0

#ত্রিধারে_তরঙ্গলীলা
|৯০|
সুখ, দুঃখ, প্রাপ্তি, অপ্রাপ্তি মিলিয়ে বিবাহিত জীবনের
অনেকগুলো দিন পেরিয়ে গেছে। সুহাস, নামীর বিয়ের বয়স আট বছর। আইয়াজ, ফারাহর চার। সৌধ, সিমরানের দু’বছর পূর্ণ হবে আগামী সপ্তাহে।
ওদের বন্ধুমহলের সকলেই সফল। ক্যারিয়ার, সংসার নিয়ে ভীষণ ব্যস্ত। একজন যাও বাকি ছিল তারও বিয়ের সানাই বাজতে চলেছে। সৌধ, সিনুর ম্যারেজ এনিভার্সারির পরপরই বিয়ের ডেট ফিক্সড হয়েছে। আজিজের বিয়েতে ওরা সব বন্ধু, বান্ধবী আর তাদের ছানাপোনারা যাবে। কচি মেয়ে খুঁজে চলা আজিজ অবশেষে একুশ বছর বয়সী এক সুন্দরী তরুণিমার স্বামী হতে চলেছে। পাত্রীর নাম তামান্না জাহান তৃষা। আগামী সপ্তাহের শুক্রবার মোঃ আজিজ মিঞা এবং তামান্না জাহান তৃষার শুভ বিবাহ অনুষ্ঠিত হবে। সে বিয়েতে বন্ধুদের সপরিবার আমন্ত্রিত।

দেড় মাস হয়ে এলো। সৌধ ছুটি পায়নি। আসেনি বাড়িতে। হয়নি বউ এবং পরিবারের সঙ্গে সশরীরে সাক্ষাৎ। কথা ছিল সিনুর ফাইনাল পরীক্ষার পর ওকে তার কাছে নিয়ে যাবে। কী জানি পরে কী ভেবে আর নেয়নি। তার নিজেরও এখানকার হসপিটালে চলে আসার সম্ভাবনা বর্তমানে ক্ষীণ। সিমরান পরীক্ষার পর ইনিয়েবিনিয়ে বহুবার বুঝাতে চেয়েছে তার কাছে নিয়ে যেতে। প্রতিবারই বিষয়টা এড়িয়ে গেছে সৌধ। এই এড়িয়ে যাওয়া নিয়ে একদিন দুজনের ঝগড়া হলো। ঝগড়াটা অবশ্য মৌনতার। সৌধ যেমন কথা এড়িয়ে গেছে। সিনুও তেমন সৌধকে এড়িয়ে চলেছে। ব্যস দুজনার শীতল বিরোধ। সেই বিরোধ কাটল সৌধর একটা ছোট্ট এক্সিডেন্টে। কে জানে এক্সিডেন্টটা ইচ্ছেকৃত কিনা। সিমরানের এখনো বেশ সন্দেহ হয়৷ এমন সচেতন মানুষ কিনা বাইক এক্সিডেন্ট করে! যেমন তেমন এক্সিডেন্ট নয় কপালের বাম সাইটে আলুর মতো ফুলে নীল বর্ণ হয়ে ছিল। যা দেখে বেচারি সিনুর সব অভিমানী আগুন নিভে বরফজলে রূপান্তরিত হয়। সৌধও ওকে ঠেশ দিয়ে বলতে ভুলে না,

‘ বউ যদি সর্বক্ষণ এমন রাগ, জেদ, ক্ষোভ নিয়ে থাকে স্বামীর তো অমঙ্গল হবেই। এজন্যই গুরুজনেরা বলেন, স্বামীর ওপর অসন্তুষ্ট হতে নেই। এতে তাদের অমঙ্গল হয়। ‘

কেঁদে গাল ভাসিয়ে সিমরান জড়িয়ে ধরে তাকে। ব্যথা পাওয়া অংশে চুমু খেয়ে বলে,

‘ নিতে হবে না তোমার কাছে। আমার কোনো অসন্তুষ্টি নেই। আমি যথেষ্ট সন্তুষ্ট। সন্তুষ্ট বলেই স্বামীর কাছাকাছি থাকতে চেয়েছি। তাই অভিমান করে আছি। এজন্য এতবড়ো আঘাত পেতে হবে?’

আহ! সে কী কান্না। সৌধ ওর মাথায় হাত বুলিয়ে সান্ত্বনা দিল,

‘ সিনুপাকনি, আমার উপর ভরসা রাখো। সঠিক সময় বুঝে ঠিক চলে আসব। ওখানে কেন নিচ্ছি না সেটাও বলব। ‘

সেই এক্সিডেন্টটা যে বাইক এক্সিডেন্ট না পরবর্তীতে টের পেয়েছে সিমরান। ইচ্ছেকৃত দেয়ালে মাথা ঠুকে এমন করেছে কিনা কে জানে! মানুষটার যা তীক্ষ্ণ বুদ্ধি। বউয়ের প্রেমে উন্মাদ, বুদ্ধুও বলা যাবে এ ঘটনার পর৷
.
.
ক’দিন ধরেই জ্বর ছিল সিমরানের। দুদিন আগে শাশুড়ি মা ডক্টরের কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন। কিছু পরীক্ষা দিয়েছিল ডক্টর। রিপোর্ট পেয়েছে গতকাল। রিপোর্ট সম্পর্কে এ বাড়ির কেউ কিচ্ছু জানে না। এক শাশুড়ী আর বউ মা ছাড়া। সৌধকে পর্যন্ত জানানো হলো না। শুধু তাই নয়। রিপোর্ট গুলো দেখার পর সৌধর সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে সিমরান৷ বেড়েছে কান্নাকাটি আর থেকেথেকে ভয়ে থরথর করে কাঁপা। মাঝেমধ্যে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বিস্ময় ভরে নিজেকে দেখে। বেলকনিতে গিয়ে চুপটি করে বসে থাকে। রাতে ঘুম হয় না ঠিকঠাক। মাঝরাতে উঠে বসে থাকে। গুটিগুটি পায়ে ঘুরে বেড়ায় ঘরজুড়ে। খাবারদাবারে ভয়াবহ অরুচি। ওর বেহাল দশা দেখে সর্বক্ষণ ওকে সামলে চলেছে শাশুড়ি মা। রাতে ওর কাছে থাকতেও চেয়েছেন। বেচারি বলেছে,

‘ আম্মা প্লিজ এটা করো না। আমি খুব লজ্জা পাবো তোমার সাথে ঘুমুতে। ‘

তানজিম চৌধুরী স্পেস দিয়েছে রাতটুকু। এরপর হুট করে একবার এসে বললেন,

‘ সিনু, ছেলেটাকে কিছু জানাতেও দিচ্ছ না। তুমিও ওর সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছ। ও তো ভীষণ টেনশনে আছে মা। আর ভুলে গেছ আসছে সোমবার তোমাদের বিবাহবার্ষিকী? ছেলেটাকে ফোন করে কথা বলো। কবে ছুটি নেবে শোনো। আর ছেলেমানুষী করো না। ‘

শাশুড়ির কথা শুনে বুক ধক করে উঠে সিমরানের। চোখ দুটো গোল গোল হয়ে যায়। নেক্সট উইকে তাদের ম্যারেজ এনিভার্সারি! শিরশির করে উঠে সর্বাঙ্গ। উত্তেজনায় থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে বন্ধ ফোনটা চালু করে৷ সৌধর নাম্বার ডায়াল করতে উদ্যত হয়েও থেমে যায়৷ সঙ্গে সঙ্গে কল আসে সুহাসের। আকস্মিক ভাইয়ের ফোন পেয়ে স্তম্ভিত হয় সে। পরমুহূর্তে সচকিত হয়ে রিসিভ করেই কান্না বিগলিত কণ্ঠে বলল,

‘ ব্রো, কেমন আছো? কোথায় আছো তুমি? ‘

‘ হসপিটালে আছি! কি হয়েছে সিনু কণ্ঠ এমন লাগছে কেন? কাল থেকে ট্রাই করছি। ফোন বন্ধ ছিল কেন তোর? সৌধর সঙ্গে ঝগড়া করেছিস? ‘

‘ না, একদমই না। ‘

ফের কান্নারত কণ্ঠ। সুহাস দিশেহারা।

‘ বোন শরীর খারাপ! নামীকে পাঠিয়ে দিব তোর কাছে? দাঁড়া ফোন করছি ওকে। ‘

বিরক্ত হলো সিমরান। চাপা ধমক দিয়ে বলল,

‘ কিচ্ছু হয়নি আমার, একদম ঠিক আছি। একটু জ্বর হয়েছে এই যা। মনের আনন্দেও কাঁদা যাবে না তোমার কাছে? আতঙ্কিত করে ফেলো ধ্যাৎ ভাল্লাগে না। ‘

বলেই বিরক্ত হয়ে কল কেটে দিল সে। সুহাস হতভম্ব হয়ে বসে রইল। মনের আনন্দে বোন কাঁদছে? এমন কি আনন্দ যে অমন করে কাঁদতে হবে? ভেবেই তৎক্ষনাৎ নামীর নাম্বার ডায়াল করল ও। নামী তখন তার পাশের ক্লিনিকে ছিল। কল রিসিভ করতেই সে চঞ্চল কণ্ঠে বলল,

‘ কী করছ নামীদামী খুব বেশি ব্যস্ত আছো কি? ‘

‘ কেন কী হয়েছে! এনি প্রবলেম? ‘

‘ সিনু কাঁদছে। আমাকে বলল আনন্দে কাঁদছে। তুমি ওকে ফোন করে জিজ্ঞেস করো তো সৌধর সঙ্গে ঝামেলা হয়েছে কিনা? জীবনে কক্ষনো ও আনন্দে কাঁদেনি। ওহহো বিয়ের সময় কেঁদেছিল। বাট এছাড়া কাঁদেনি। এই নামী, মা, বাবা তো নেই। ওর কোনো সমস্যা হলে সেভাবে কাউকে বলতেও পারে না। সাংসারিক জটিলতা গুলো আমি অতো বুঝি না৷ তুমি জাস্ট কল করে সিয়র হও ও কেন কাঁদছে। বাড়ির কারো সঙ্গে সমস্যা নাকি সৌধর সঙ্গে৷ কাইন্ডলি আমাকে জানাও। বাকিটা আমি বুঝে নিচ্ছি।’

একদমে কথাগুলো বলে থামল সুহাস। নামী ভ্রু কুঁচকে বলল,

‘ তোমাকে কিচ্ছু সামলাতে হবে না সুহাস। যা করছ সেটাই মন দিয়ে করো। বাকিটা আমি দেখছি। অযথা টেনশন করো না। সিরিয়াস কিছু না বোঝাই যাচ্ছে। ‘

‘ হেলাফেলা করো না নামী। তুমি সিনুকে জানো না। ও খুব জেদি। হতে পারে আনন্দে কান্না করছে এটা জেদ করে বলেছে। ওর হয়তো সত্যি কিছু নিয়ে দুঃখ হচ্ছে। ‘

‘ আচ্ছা আমি কল দিচ্ছি। তুমি রাখো। ‘

‘ আর শোনো কোনোভাবে যেন আমাদের প্ল্যান টের না পায়। সাবধানে কথা বলো। ‘

‘ হয়েছে আমাকে সাবধান করতে হবে না। আমি তোমার মতো পেট পাতলা নই। ‘

‘ ওকে ডার্লিং। ‘

নামী ফোন কাটতে উদ্যত হয়৷ সুহাস ত্বরিত আবার বলে,

‘ আধঘন্টা পর ফ্রি হবো। সুহৃদকে আমার কাছে পাঠিয়ে দিও। ‘

ছোটো বাচ্চাকে একা অন্য কারো দায়িত্বে রেখে ওরা কাজে আসে না। সঙ্গে করে নিয়েই আসে। দুজন মিলে খুব সুন্দর করেই ঘরে, বাইরে আর বাচ্চা সামলায়। যেহেতু নিজেদেরই হসপিটালে নামী কর্মরত। সেহেতু সুহৃদকে এখানে বাসার মতো করেই রাখতে পারে। সর্বক্ষণ দেখভালের জন্য একজন বিশ্বস্ত মেয়ে কর্মচারী রেখেছে। ছেলেকে কর্মচারীর কাছে রাখলেও সে নজর রাখতে পারে। সময়ও দিতে পারে পর্যাপ্ত। খাওয়া, গোসল, ঘুমের সময় মায়ের সান্নিধ্যই পায় সুহৃদ। এ ব্যাপারে নামীর থেকেও সুহাস বেশি স্ট্রং। সে বলে দিয়েছে প্রয়োজনে সব একা হাতে সামলাবে। তবু ছেলেকে প্রপার গাইড, অ্যাটেনশন দিতে হবে। নিজের বেড়ে উঠা আর ছেলের বেড়ে উঠায় ফাঁক রাখবে সে৷ কারণ একজন ভুক্তভোগী বাবা কক্ষনো চায় না। তার মতো তার সন্তানরাও ভুক্তভোগী হোক৷ এছাড়া ওদের মধ্যে এও কথা হয়েছে। সুহৃদ যথেষ্ট বড়ো না হওয়া পর্যন্ত সেকেন্ড বেবি নেবে না৷ এত বড়ো দায়িত্ব, সংসার সামলে দুটো বেবির টেককেয়ার কঠিনই হয়ে যাবে। আজ যদি উদয়িনী বা সোহান খন্দকার বেঁচে থাকতেন। সুহাস, নামীর স্ট্রাগল গুলো অন্যরকম সুখময় হতো৷ এখনো সুখী তারা। তবু দিনশেষে একটা শূন্যতা থেকেই যায়।

‘ ওকে রাখছি। ‘

ফোন কেটে সিমরানকে কল করল নামী। দশ মিনিটের মতো কথা বলে সব স্বাভাবিকই লাগল। সত্যি বলতে সিমরান সচেতন হয়ে গেছে নামীর কল পেয়ে। ঢের বুঝেছে ভাইয়ের পাগলামি! সে অতো সহজে ধরা দেওয়ার মেয়ে নয়৷ ননদের সঙ্গে কথা বলে স্বামীকে ফোন করে ঝাড়ল নামী। সুহাস ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বসে রইল। বোন রাগ করে ফোন কেটে দিল। এখন বউ ফোন করে ঝাড়ল কতক্ষণ। আজ হচ্ছে টা কী তার সঙ্গে? কী আশ্চর্য! এই দুই নারী তার ইমোশন বুঝে না কেন? কেন?
.
.
একই সপ্তাহে দুটো ইনভিটেশন পেয়েছে আইয়াজ, ফারাহ৷ সৌধ, সিমরানের বিবাহবার্ষিকী। আর আজিজের বিয়ের দাওয়াত। বেবি হবার পর ওরা কোথাও যায়নি। আনান, ফানানের বয়স প্রায় ছ’মাস হতে চলল। তাই এবার বেড়াতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল আইয়াজ। ব্যাগপ্যাক গুছিয়ে তৈরি। প্রথমে গিয়ে সুহাসের বাসায় উঠবে। এরপর সৌধর বাড়ি। সেখান থেকে আজিজের বিয়ে কাটিয়ে ব্যাক করবে ঢাকায়। বন্ধুদের মধ্যে কে কে যাচ্ছে খোঁজ, খবরও নিয়ে নিল। নিধির প্র্যাগ্নেসির সিক্স মান্থ চলে। বেশকিছু কমপ্লিকেশন দেখা দিয়েছে ওর। তাই সৌধর বাড়িতে আসার সম্ভাবনা নেই। আজিজের বিয়েতে যাবে কিনা এ নিয়েও সন্দিহান। আইয়াজ সৌধর বাড়িতে আসার জন্য জোর করল না৷ তবে আজিজের বিয়েতে যদি সম্ভব হয় আসতে বলেছে। কারণ বিয়ে, সংসার আর বাচ্চা হবার পর এ প্রথম ওরা সব বন্ধু একসঙ্গে হচ্ছে। আজিজের বিয়ে উপলক্ষে। প্রাচীও আসবে তার সাড়ে চার মাসের ছেলে প্রাণ ভৌমিককে নিয়ে।

শরীর ভালো নেই৷ মনে তীব্র উত্তেজনা। সব মিলিয়ে সৌধর সঙ্গে যোগাযোগ রাখেনি সিমরান৷ আরমাত্র দুদিন পর তাদের বিয়ের দু’বছর পূর্ণ হবে৷ এবার সৌধর সঙ্গে কথা বলা উচিত। না হয় খুব অন্যায় হবে। তাছাড়া অতদূর থেকে মানুষটা আসবে। সে খোঁজখবর না নিলে মন ভার থাকবে। অন্যমনস্ক হয়ে বিপদ ঘটাবে। আর তারও টেনশন বাড়বে৷ এই মুহুর্তে এত টেনশন নেয়া অনুচিত। সব ভেবেচিন্তে শাশুড়ির আদেশ, অনুরোধ শুনে বরকে কল করল সে। সৌধ তখন মহাব্যস্ততার ভাণ করল। কল রিসিভ করে বলল,

‘ কেমন আছো সিনু? শরীর ঠিক আছে? ‘

এমন স্বাভাবিক কণ্ঠ দেখে কপালে ভাঁজ পড়ল ওর। যদিও সে জানে মানুষটা মায়ের কাছে ঠিক বউয়ের খোঁজ নিয়েছে। এছাড়া পার্সনাল এসিস্ট্যান্ট তাহানী তো আছেই। তাই বলে সে যে অসুস্থ হয়ে ফোন অফ করে রেখেছিল। কয়েকদিন কথা বলেনি এরজন্য একটুও উতলা হবে না? আশ্চর্য! একবার জিজ্ঞেস পর্যন্ত করল না ‘ সিনু জ্বর কমেছে? রিপোর্টে কী এসেছে? রিপোর্ট গুলো কই? দেখালে না তো আমাকে? ‘

একটু রাগও করল না সৌধ। একটা ধমক দিয়ে শাসন পর্যন্ত করল না। বুকের ভেতর চিনচিন করে উঠল এবার। সে শাশুড়িকে বলেছিল, সৌধকে সারপ্রাইজ দেবে। তাই যেন আসল ব্যাপারটা চেপে শুধু জ্বর এসেছে জানায়। স্বাভাবিক জ্বর। ক’দিন মেডিসিন নিলেই সেরে যাবে। তানজিম চৌধুরী এক কথার মানুষ। দুনিয়া নড়চড় হবে। তার কথা নড়বে না। ছেলেকে যতই ভালোবাসুক। বউমাকে দেওয়া কথা রেখেছেন সে। জানে সিনু। তবু সৌধর মাঝে তাকে নিয়ে আকুলতা আশা করেছিল। দীর্ঘশ্বাস ফেলল সে। তীব্র অভিমানী গলায় বলল,

‘ আমি ভালো আছি৷ তুমি কেমন আছো?’

ফোনের ওপাশে মুচকি হাসল সৌধ। বলল,

‘ আলহামদুলিল্লাহ। আমি বিজি আছি বুঝলে রাতে কল করব। টেক কেয়ার। ‘

ফোন কেটে দিল সৌধ। সিমরানের মুখ হা হয়ে গেল। দু-চোখে উপচে পড়ল বিস্ময়! নিজেকে আর সামলাতে পারল না যেন। আবার কল করল। রিসিভ হতেই উত্তেজিত হয়ে বলল,

‘ কীসের ব্যস্ততা তোমার? আমি কল করেছি মানে তুমি এক্ষুনি আমাকে সময় দেবে। এক্ষুনি মানে এক্ষুনি। ‘

চোখ, মুখ লাল করে চিৎকার করে কথাটা বলল সিমরান। ওপাশে ভড়কে গেল সৌধ। হকচকিয়ে ঢোক গিলল কয়েকবার৷ অত্যন্ত শান্ত, শীতল কণ্ঠে বলল,

‘ কুল ডাউন সিনুপাকনি। ওকে ডান সব কাজ বন্ধ আমার। ভিডিয়ো কল করছি। আসো হোয়াটসঅ্যাপ আসো।’

ফুঁসে উঠে সিমরান বলল,

‘ যাব না আমি। ‘

হাঁপ ছেড়ে বাঁচল সৌধ। ভিডিয়ো কলের জন্য মোটেই প্রস্তুত নয় সে। স্বস্তি নিয়ে বলল,

‘ ওকে যেতে হবে না। কী করছ এখন? ‘

মুখ ভেঙচি দিয়ে বিড়বিড় করল সিমরান,

‘ এখন দরদ দেখাচ্ছে, কিচ্ছু বলব না কিচ্ছু না। ‘

এরপর তেজস্বী গলায় বলল,

‘ দুদিন পর যে আমাদের ম্যারেজ এনিভার্সারি সেই হুঁশ কারো নেই। থাকবে কী করে? তার কাছে কাজটাই সব আমার কোনো মূল্য নেই। আমি একদম ভেল্যুলেস এখন। ‘

ঠোঁটে ঠোঁট চেপে হাসি আটকালো সৌধ। বলল,

‘ কাল সকালে রওনা হচ্ছি ডিয়ার। বিকেলে তোমার নামে কিছু পার্সেল যাবে রিসিভ করো কেমন। ‘

হৃৎস্পন্দন বেড়ে গেল সিমরানের। আর কিছু বলার মুখ রইল না। অন্যরকম আরাম আর ভালো লাগা ঘিরে ধরল ওকে। নিমেষে ঘুম পেয়ে গেল খুব। হাই তুলতে তুলতে বলল,

‘ আমার ভীষণ ঘুম পাচ্ছে। তুমি সাবধানে এসো। রওনা হবার আগে আমাকে টেক্সট করে রাখবে কিন্তু। ‘

কল কেটে দিল সিমরান। সৌধ ফোন কাটতেই ওপাশে হাসির ঢল নামল। এই হাসির মালিক গুলো আর কেউ নয়। নামী, ফারাহ, আইয়াজ আর সুহাস। সঙ্গে ছোটো ছোটো বাচ্চারা তো আছেই। যারা বাবা, মায়ের হাসি দেখে দেখে খিলখিলিয়ে হেসে চলেছে।
.
.
ভোরবেলা থেকে ফোন ধরে বসে আছে সিমরান। সৌধর একটা ফোনকল বা ম্যাসেজ কিচ্ছু আসেনি। মন খারাপ হলো ভীষণ। কল করল নামীকে। কিছুক্ষণ কথা বলে, সুহৃদকে দেখে মনটা হালকা করে নিল। শরীর ভালো লাগছে না। ব্রেকফাস্টের জন্য ডাকতে এলো তাহানী। ইচ্ছে না করলেও বাধ্য হয়ে নিচে গেল। সবার সঙ্গে বসে খেতে। তানজিম চৌধুরী তার জন্য আলদা ব্রেকফাস্ট দিলেন। তা দেখে বাঁকা চোখে তাকাল ঝুমায়না৷ সন্দেহ তৈরি হলো মনে। সিমরান ডিম দেখে নাক কুঁচকালো। স্যান্ডউইচ মুখে দিতেই বিশ্রী একটা গন্ধে পেটের ভিতর মোচড় দিয়ে উঠল৷ করুণ চোখে তাকাল শাশুড়ির পানে। বুঝালো এটাও সম্ভব হচ্ছে না। তানজিম চৌধুরীর মাথায় হাত। ডিম খাবে না সবজি দিয়ে স্যান্ডউইচ করেছে তাও মুখে রুচছে না। চিন্তান্বিত হয়ে সে কাছে এসে নিচু স্বরে বললেন,

‘ সকালবেলা কিছু তো খেতে হবে। সাদা ভাত বসাতে বলি৷ কী দিয়ে খাবে বলো। ‘

জুসের গ্লাস টেনে নিয়ে সিমরান বলল,

‘ এটাই হবে। ভাত খাব না এখন। ‘

চোখ রাঙালেন তানজিম চৌধুরী। বললেন,

‘ বকা খাওয়ার ধান্ধা করছ? আমি বকব ন। আমার ছেলে জানলে খবর হয়ে যাবে বুঝছ? সাদা ভাতের সঙ্গে দুটো ভর্তা আইটেম করতে বলি। আপাতত কষ্ট করে ডিম টুকু খেয়ে উপরে যাও। চোখমুখের কী অবস্থা হয়েছে এখনি! ‘

মুখ কাচুমাচু করে বসে রইল সিমরান৷ ঝুমায়না কান পেতে ছিল। হঠাৎ এত ফিসফাস! খাবার নিয়ে টালবাহানা! মুখোভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছে এক্ষুনি বমি করে দেবে এই মেয়ে। তাহলে কী ঘটনা কিছু ঘটেই গেল! এই সেরেছে এখন তো ন্যাকামির ফ্যাক্টরি খুলবে এরা৷ সেসব দেখে দেখে তার না আবার পিত্তি জ্বলে যায়। বাবা গো বাবা রক্ষা করো এসব থেকে। ঘনঘন দীর্ঘশ্বাস ফেলল ঝুমায়না৷ আঁকাবাঁকা চোখে তাকিয়ে দেখতে লাগল সিমরানের চলনবলন।

সকাল পেরিয়ে দুপুর গড়াল অস্থিরতা নিয়ে। সবকিছু এবার অসহ্য লাগছে সিমরানের। এ বাড়ির প্রতিটা মানুষকে রহস্যময় লাগছে। কাউকে সহ্য হচ্ছে না আর৷ তাহানীকে পর্যন্ত না৷ সৌধর ফোন বন্ধ। শাশুড়িকে কতবার জানালো। সে নিরুত্তর, নির্লিপ্ত। কেউ এ ব্যাপারে গুরুত্ব দিচ্ছে না৷ আর না আগ্রহ প্রকাশ করছে। ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙে গেল মেয়েটার। কাঁদতে কাঁদতে কল করল সুহাসকে। সব শুনে সুহাস শান্ত করার চেষ্টা করল ওকে। গালাগাল করল সৌধকে। সিমরান শান্ত হলো না৷ সুহাস বলল,

‘ তুই ফোনটা কাট আমি বিশ মিনিটের মধ্যে ওর খবর এনে দিচ্ছি। ‘

আশ্বস্ত হয়ে ফোন কাটল সিনু। ঠিক দশমিনিটের মাথায় কল এলো সৌধর। প্রচণ্ড মেজাজ দেখিয়ে বলল,

‘ কী হচ্ছে সিনু? আমি রাস্তায় আছি। বাচ্চাদের মতো আচরণ করছ কেন? বিকেল হতে চলল। খেয়েদেয়ে তৈরি হও। আজ আমরা বাইরে ডিনার করব। পার্সেল খুলে দেখেছিলে? ঝটপট তৈরি হয়ে নাও বউ। আমি আসছি। ‘

সিমরানকে কিছু বলার সুযোগ দিল না। ফোন কেটে দিল। ভোঁতা একটা অনুভূতি নিয়ে সিমরান পার্সেলটা নেড়েচেড়ে দেখল। গতকাল সন্ধ্যায় হাতে পেয়েছে এটা। খুলে দেখেনি। আজ রাত বারোটায় তাদের বিবাহবার্ষিকী দিন পড়বে। সৌধ এক্ষুনি তৈরি হতে বলেছে। এসে ডিনার করবে একসঙ্গে। তাহলে নিশ্চয়ই সন্ধ্যার মধ্যে পৌঁছাবে? সমস্ত দুঃশ্চিন্তা ঝেড়ে নিচে গিয়ে আগে খাবার খেল সে। তারপর উপরে এসে পার্সেল খুলতেই মনটা ফুরফুরে হয়ে গেল!

ভালোবাসার মানুষের দেওয়া প্রতিটি জিনিসই খুব স্পেশাল হয়। সিমরানেরও হলো। মেরুন কালারের বেনারসি সিল্ক শাড়িটা দেখেই ওর প্রাণ জুড়িয়ে গেল। শাড়ির সঙ্গে সিম্পল কিছু গোল্ডের জুয়েলারি। একটা চিরকুটও রয়েছে। তাতে লেখা: ” নিজেকে সাজাও বউপাখি। যত্ন নিয়ে সাজাও। তোমার উন্মত্ত প্রণয়পুরুষ আসছে, তার চোখ ঝলসাতে। হৃদয়ে বইয়ে চলা উত্তাল তরঙ্গে আরো গভীরভাবে বিলীন হতে। ”

চিরকুটের লেখা পড়ে রমণীর সর্বাঙ্গে ঝংকার বয়ে গেল যেন। তীব্র লজ্জায় গাল দু’টো লাল হয়ে উঠল৷ কান দুটোতে যেন উষ্ণ হাওয়া বেরুচ্ছে। এত অস্থিরতা, অপেক্ষার পর এই সুখ যে তার প্রাপ্যই। শুধু সে নয় তাকেও দেবে সুখ। যে সুখ স্বর্গসুখের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। হৃদয়ে ধুকপুকানি নিয়ে প্রিয় পুরুষটির জন্য নিজেকে সযত্নে সাজাতে লাগল সিমরান।
.
.
সুহৃদকে শার্ট, প্যান্ট পরিয়ে মাথায় লাল ক্যাপ আর পায়ে লাল জুতো পরিয়ে দিল নামী। এরপর কপালে স্নেহভরে চুমু দিয়ে বলল,

‘ আমার সুদর্শন রাজকুমার। ‘

সুহাস তৈরি হচ্ছিল। মা ছেলের ভালোবাসার মুহুর্তটুকু দেখে ত্বরিত সামনে চলে এলো। মুখ এগিয়ে ঠোঁটে ইশারা করে বলল,

‘ নাও ঝটপট লিপ কিস করে দাও তো নামীদামী। আর অবশ্যই বলবে আমার সুদর্শন মহারাজ। ‘

মুখ ভেঙচাল নামী। ছেলেকে চুপচাপ বসতে বলে নিজে আয়নার সামনে চলে গেল। সুহৃদ হাসি-হাসি মুখে সুহাসের পানে তাকিয়ে বলল,

‘ পাপাহ। ‘

‘ ইয়েস পাপা? ‘

‘ পুপফিহ দাই। ‘

‘ ফুপি যাই ‘ বলেই খুশিতে গদগদ হয়ে হাত তালি দিল। নামী কাল থেকে তাকে শেখাচ্ছে, আমরা তোমার ফুপি বাড়ি যাব। অত্যন্ত চঞ্চল প্রকৃতির ছেলে সুহৃদ। বাবার মতো ডানপিটে হবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। এবার মায়ের মতো জ্ঞান, বুদ্ধি হলেই হয়। দু, চারকথা ভালোই বলতে পারে বাচ্চাটা। তবে কিছু স্পষ্ট কিছু অস্পষ্ট। দাদা, পাপা, মাম্মা স্পষ্টই বলে। আইয়াজ, সৌধকে মামা ডেকেছে। সুহাস যদিও চাচ্চু শেখাতে চেষ্টা করেছিল। ওর কাছে চাচ্চু কঠিন। তাই নামীর শেখানো মামাই কব্জা করে নিয়েছে। কিন্তু ফুপিটা স্পষ্ট হচ্ছে না৷ ফুপিকে পুপফিহ বলছে বারবার। এই নিয়ে গতরাতে সৌধর সে কী হাসি! সুহৃদের গাল টিপে বলেছে,

‘ কীরে ব্যাটা ফুপিকে পুপফিহ বলছিস তাহলে ফুপাকে কী বলবি পুপফা? ‘

মেজেন্ডা কালার বেনারসি পরেছে নামী। এখন মিলিয়ে কিছু গয়না পরছে। সুহাসের পরনে ফরমাল শার্ট-প্যান্ট। শার্টের ওপর স্ত্রীর শাড়ির কালারের সঙ্গে মিলিয়ে ওয়েস্ট কোট। দেখতে মারাত্মক সুদর্শন লাগছে। চোখ সরানো দায় হয়ে পড়েছে নামীর৷ তবু সরিয়ে রাখছে। নয়তো ছেলের বাবার ভাব বেড়ে যাবে। নিজেকে যতই সুদর্শন লাগুক সেসব ফিঁকে সুহাসের কাছে৷ তার কাছে আয়নার সামনে দাঁড়ানো ওই শ্যামাঙ্গিনী বধূটিই পৃথিবীর সবচেয়ে সুদর্শনা। এই মেয়েটি জীবনে না এলে কতকিছু অজানা রয়ে যেত তার। ভাগ্যিস বাবা জোর করে মেয়েটাকে গছিয়ে দিয়েছিল। না হলে যে তার কী হতো! চাকচিক্যময় রমণীদের ভীড়ে খাঁটি সোনার নাগাল পেত না। অপলক দৃষ্টিতে নামীর পানে তাকিয়ে ধীরপায়ে এগিয়ে এলো সুহাস। নামী হার পরছিল গলায়৷ সে গিয়ে সাহায্য করল। বলিষ্ঠ, লম্বাটে সুপুরুষটি পেছনে দাঁড়াতেই বুক ধক করে উঠে নামীর। ধূসর বর্ণের ওই গভীর চোখ দু’টো কীভাবে দেখছে তাকে। হার পরানো শেষে ঘুরে দাঁড়াল নামী৷ কাজল কালো চোখদুটোতে হাসির ঝলক তুলে ভ্রু নাচিয়ে বলল,

‘ কী মশাই দারুণ মুডে আছেন মনে হচ্ছে? এনিভার্সারি আপনার বন্ধুর আপনার নয় ওকে। ‘

আলগোছে ওর কোমর প্যাঁচিয়ে ধরল সুহাস। অধর কামড়ে দুষ্টু হেসে একদম নিজের কাছে টেনে নিল বউকে। চোখ রাঙিয়ে তাকাল নামী৷ ঘাড় বাঁকিয়ে দেখল সুহৃদ খেলনা নিয়ে ছুটোছুটি করছে। এদিকে তাল নেই। যাক বাঁচা গেল। নির্লজ্জ বাপের পাল্লায় পড়ে ছেলেটা কবে জানি রসাতলে যায়। বিরবির করে এসব বলতেই সুহাস ওর লিপস্টিক দেওয়া ঠোঁটের স্বাদ নিতে উদ্যত হয়। হাত বাড়িয়ে বাঁধা দেয় সে। বলে,

‘ আরে আজব লোক! দেখছ না লিপস্টিক দিয়েছি?’

‘ ওহহো ডার্লিং এই লিপস্টিক খেয়ে পেট ভরিয়ে ফেললেও কিচ্ছু হবে না৷ কেনার সময় জেনেশুনেই কিনেছি। ‘

‘ মানে! সিরিয়াসলি, এতটা অধঃপতন হয়েছে তোমার? দিনদিন বয়স বাড়ছে না কমছে? এক ছেলের বাপ হয়েও নির্লজ্জতা কমল না। আমার সঙ্গে বেশরম আচরণ করো ওকে ইট’স ফাইন। বউ আমি। তাই বলে কসমেটিকসের দোকানে গিয়ে তুমি এসব করবে? ‘

রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে সুহাসের কলার চেপে ধরল নামী। অগ্নি চোখে তাকিয়ে ফের বলল,

‘ সত্যি করে বলো মেয়ে ছিল না ছেলে? তুমি কীভাবে কী বলে কিনেছ? ‘

মিটিমিটি হাসল সুহাস। একহাতে ওকে জড়িয়ে ধরে অপরহাতে সামনে আসা চুলগুলো কানে গুঁজে দিয়ে বলল,

‘ ছেলেটা আমার বন্ধুলোক। কলেজ জীবনে ওর থেকে কসমেটিকস নিয়ে গার্লফ্রেন্ডদের গিফট করেছি। তো ফাইনালি ওর কাছে বউয়ের জন্য কিছু কিনতে গিয়েছিলাম৷ তোমারও লিপস্টিক দরকার ছিল। বাবুর জন্য সময় করে যেতে পারো না। তাই ভালো ব্র্যান্ডের এক বক্স লিপস্টিকও চাইলাম। সাথে ফিসফিস প্রশ্ন করলাম, পেটে গেলে হজম হবে তো? ও দাঁত ক্যালিয়ে হেসে বলল, ‘ এই লিপস্টিক পেটে যেতে দেরি হজম হতে দেরি নেই। ‘ ব্যস নিয়ে এলাম। বাপ্রে তোমাদের লিপস্টিকের দাম দিয়ে তো আমার সাতদিনের খরচ উঠে যাবে! ‘

সত্যি বলতে বলতে এত বেশি সত্যি বলে ফেলল যে নামী কিলগুঁতো থাপ্পড় দিয়ে ওর বুক ব্যথা করে ফেলল। তবু ছাড়ল না সুহাসে। নামী আহাজারি করল,

‘ সারাজীবন কোনো ছেলেকে কাছ ঘেঁষতে দিইনি৷ সেই আমার কপালেই এমন রোমিও জুটেছিল! ‘

সুহাসের টনক নড়ল এবার। জিভ কামড়ে ধরে ইনোসেন্ট মুখে বলল,

‘ ট্রাস্ট মি জান আমি ভালো হয়ে গেছি। এই তোমার ঠোঁটে চুমু খেয়ে বলছি, আমার চারধারে এক নামী আমার সুহাসিনী ছাড়া আর কোনো রমণীর অস্তিত্ব নেই। ‘

বলেই চট করে নামীর ঠোঁটে চুমু খেল সে। নামী ঠোঁট মুছে নিরাশ চিত্তে বলল,

‘ হয়েছে হয়েছে বুঝেছি আপনি আমার সাধু জামাই।
এবার ছাড়ুন রেডি হতে দিন৷ ‘

ওদের এই খুনসুটি মুহুর্তে দরজার সামনে এসে দাঁড়াল সৌধ৷ গলা খাঁকারি দিয়ে বলল,

‘ তোরা বরং থেকে যা সুহাস। আমি সুহৃদকে নিয়ে যাই।’

নিমেষে ছিঁটকে সরে গেল দুজন। সুহাস লজ্জা পেল না অবশ্য। কিন্তু নামী তীব্র লজ্জায় চোখ, মুখ অন্ধকার করে বিরবির করে বকে দিল সুহাসকে।

|চলবে|
® জান্নাতুল নাঈমা

হৃদয় জুড়ে শুধু আপনি ২ পর্ব-২৪ এবং শেষ পর্ব

0

#হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি[২]
#অন্তিম_পর্ব
#জান্নাত_সুলতানা

-“কলিজা আর একটু এই তো আমরা এসে পরেছি।
তুই চোখ বন্ধ করিস না কষ্ট করে একটু,,,

-“মিশান,,মিশান,,

-“হ্যাঁ,হ্যাঁ?
বেশি কষ্ট,,,

-“আপনি শান্ত হোন আমি ঠিক আছি।
আল্লাহর উপর ভরসা রাখুন আমার কিছু হবে না।”

মিশান শোনে না বউয়ের কথা।
উল্টো নিজের বাবা কে তাগাদা দেয়

-“বাবা আরও একটু জোরে চালাও না।”

ছেলের কণ্ঠ উত্তেজিত সাথে কি করুন আয়ানের বুক ধক করে উঠে।
আয়ানের পাশে বসা সাদনান মাইশা,প্রিয়তা মিশান কে আশ্বাস দেয়।
এটা ওটা বোঝাতে থাকে।
আর আয়ান নিজের কিছু পুরোনো সৃতিচারণ করে।
যখন মাইশা চৌধুরী লেভার পেইন উঠে ছিল মিশানের সময় তখন কি ভয় টা না পেয়ে ছিল তবে আয়ানের বাবা ছিল আশ্বাস দিয়েছে সাথে ছিল সাথে এখন বর্তমান অবস্থানরত পরিবারে প্রতি টা সদস্য।
যদিও সেই মানুষ গুলো এখন বেঁচে নেই।
তবে শুধু ছিল না মা।তাই তো সায়রা যখন সাদনান মির্জার ঘর আলো করে এসেছি তখন “মা” ডেকেছে।
আর আজ চব্বিশ বছর পর সেই মা আজ নিজের সন্তানের জন্ম জন্য আজ ব্যথায় ছটফট করছে।

—————

দেখতে দেখতে সাত টা মাস কেটে গিয়েছে। আজ নয় মাসের শেষ এর দিকে সায়রার লেভার পেইন উঠেছে। যদিও সময় এখনো আসে নি। সামনে আরও পাঁচ সাত দিনের মতো বাকি ছিল। তার আগে লেভার পেইন উঠেছে।
রুহি প্রহর এর বিয়ে হয়েছে দু মাসের বেশি সময় হবে।
ইনিয়া শশুর বাড়ি আছে। ইনিয়ার দেবরও বিয়ে করেছে।রুহির এক ফ্রেন্ড কে।মূলত রুহির এনগেজমেন্ট হয়ে যাওয়াতে বেচারা কষ্ট পেয়েছিল। কারণ রুহি কে ওর ভালো লাগতো তবে এনগেজমেন্ট হওয়ার পর সে টা বেশি করে উপলব্ধি করতে পারছিল।
আর তাই নিজের মনে কথা গুলো বলতে এক দিন রুহির কলেজে গিয়ে ছিল নিজের মনের কথা গুলো বলে চেষ্টা করতে চেয়েছিল রুহি কে নিজের করে পাওয়ার। তবে সেখানে যাওয়ার পর রুহির এক ফ্রেন্ড কে ওর ভালো লেগে যায়। আর সেখানে থেকেই মেয়ে টার সাথে কথা হতো। তার পর পরিবার নিয়ে মেয়ে টা কে বিয়ে করে নেয়। মাসখানেক হবে।
সারা আহামেদ এবার তার কথা রেখেছে।
ঢাকাতেই ভাইয়ের বাড়িতে রয়ে গিয়েছে।
আর তাদের ঢাকায় যে কোম্পানি টা আছে।সেটার দেখভাল করে দুই বাপ ছেলে মিলে।

—————-

-“মা কে একদম জ্বালবে না।
okay?”

দুই টা দুই বছরের বাচ্চা কে মিশান কথা গুলো আদুরে কণ্ঠে আদেশের সুরে বলে উঠে।

-“okay পাপা।”

দু জনেই আদোও আদোও কণ্ঠে জবাব দেয়।
মিশান মুচকি হেসে ওদের দু জন কে কোলে নিয়ে উঠে রুম থেকে বেড়িয়ে লিভিং রুমে আসে।
ওরা এখন নিচে থাকে তার কারণ প্রথম সায়রা ছিল প্রেগ্ন্যাসির সময় আর এখন এই বাচ্চা পাটি।
উপরে থাকলে সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে কখন কোথায় পড়ে ব্যতা ট্যথা পেয়ে যায় ঠিক নেই। মিশা কোনো রিস্ক নিতে চায় না
তাই মিশান রা এখন নিচে একটা রুমে থাকে।
মিশান বাচ্চা দের নিয়ে লিভিং রুম আসতেই দেখা মিলে সবার। সাদনান মির্জা নাতনি কে আদুরে কণ্ঠে ডেকে উঠে

-“মিশ্র নানু ভাই।”

কথা টা বলতে বলতে মিশানের কোল হতে মিশ্র কে নিয়ে সোফায় বসে আদর করতে লাগলো।
সারা আহামেদ এসে সায়ন কে কোলে তুলে আদর করতে থাকে।
আর বাকি রা ডাইনিং এ সকালের নাস্তা রেডি করছে।
মিশান বউ কে খুঁজছে।
অনেকক্ষণ খোঁজার পর দেখা মিলে রান্না ঘর থেকে ওড়নায় হাত মুছতে মুছতে বেরিয়ে আসছে।
মিশান বেশি কিছু না ভেবে চেয়ারে বসে পড়ে।
আস্তে আস্তে সবাই এসে গেলো।
সবাই নাস্তা করতে লাগলো।
আর সারা আহামেদ মিশ্র আর সায়ন কে তাদের খাবার খাইয়ে দিতে লাগলো।

—————–

দেখতে দেখতে দু টি বছর কেটেছে। সে দিন মিশান আর সায়রার ঘর আলো করে তাদের দু টি চাঁদ হয়েছে।
টুইন বেবি হয়েছে যদিও আগে টেস্ট করে তাড়া জানতে পেরেছিল। সায়রা বেবি হওয়ার ছয় মাস পযন্ত অসুস্থ ছিল। বেবিদের দেখাশোনা সাথে সায়রার অসুস্থ।
সব মিলিয়ে মিশান অবস্থা করুন ছিল।
যদিও তার বেশি কিছু করতে হয় নি।দুই মা সাথে এক মনি।
তার সাথে রয়েছে রুহি, আরভী তবুও বউ তার অসুস্থ নিজের কেমন অশান্তি লাগতো।
সায়রা যখন ওটিতে ছিল ডক্টর তখন বলেছিল দুই টা বেবি হয়তো বাঁচাতে পারবেন না তখন মিশান মনে একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো।
তার পর সায়রা ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠলো। আর আজ দু বছর পর দু।দিন আগে যখন মিশানের সাথে আবারও বাচ্চার কথা উঠলো তখন মিশান সোজা বলে দিয়েছে আর এখন সে আর বাচ্চা চায় না।
কিন্তু নাছোরবান্দা সায়রা মানতে নারাজ তখন মিশান রাগের মাথায় থাপ্পড় দিয়ে ফেলেছে।
যার কারণে বউ তার আজ দু দিন ধরে অভিমান করে আছে।
অবশ্য মিশান সেটা দীর্ঘস্থায়ী হতে দিতো না। তবে অফিসে দু দিন বেশি কাজ থাকায় বউ কে সময় দিতে পারে নি।
আজ সকাল সকাল অফিস থেকে চলে আসবে আর বউয়ের অভিমান ভেঙে দিবে।
এসব ভাবতে ভাবতে মিশান নাস্তা করে ছেলে মেয়ে কে আদর করে অফিসে চলে গেলো।
আর রুহি, আরভীও বাচ্চা দের নিয়ে রুমে চলে গেলো শুধু সায়রা রান্না ঘরে মাইশার সঙ্গে সব গুছিয়ে রাখতে গেলো।
সায়রা থালা গুলো বেসিনে রেখে চলে আসতে নিলেই মাইশা চৌধুরী সায়রা হাত ধরে ওনার সাথে যাওয়ার জন্য বলে।
সায়রা মুচকি হেসে ওনার পেছন পেছন ওনার রুমে এলো।

-“তোর যখন লেভার পেইন উঠলো।আমার ছেলে অর্ধেক পাগল হয়ে পরেছিল।তুই হয়তো কিছু টা দেখে ছিলি।কারণ তোর তখন সামান্য জ্ঞান ছিল। আর যখন হসপিটাল নিতে নিতে তুই অজ্ঞান হয়ে পরেছিল তখন আমার ছেলের চোখের পানি তার একটা সার্ট এর বুকের কাছের অংশ টা আর বাম হাত টা অর্ধেক ভিজে গিয়ে ছিল চোখের জলে।
তার পর তোকে ওটিতে নেওয়া হলো।ডক্টর বলেছিল তোর অবস্থা ভালো তবে বাচ্চা দু টা থেকে ছেলে বাবু টার না-কি নাও বাঁচতে পারে কারণ হসপিটাল নিতে নিতে অনেক দেড়ি হয়ে গিয়েছিল। তখন আমার ছেলের পুরো পাগল। দৌড়ে চলে গিয়েছিল মসজিদে নামাজ পড়তে।আর ও যখন ফিরে এলো তখন তোরা তিন জনেই সুস্থ ছিলি।
সে দিন শেষ আমার ছেলে বাচ্চা দের কোলে নিয়ে কেঁদে ছিল এই দুই বছরে আমি আমার ছেলে কে আর কাঁদতে দেখি নি।
তবে দু দিন আগে ও আমার কাছে এসে খুব করে আবার সে দিনের নয় কান্না করলো। এই কান্নার কারণ ও সে দিন মসজিদে আল্লাহর দরবারে তোদের তিন জনের সুস্থতা কামনে করেছে। সাথে নিয়ে ছিল এক টা কঠিন সিদ্ধান্ত।
আর সে টা হলো আর কোনো দিন ও সন্তান নিবে না।
ওর বিশ্বাস আল্লাহ ওর কথা রেখেছে দিয়েছে ফিরিয়ে তোদের সুস্থ করে। আল্লাহ যদি তার কথা রাখে তবে ও কেন সেই কথা রাখতে পারবে না?
আশা করি এই বিষয় আর কিছু জানার নেই।
এখন তোমার যা ভালো মনে হয় তাই করো।

এক নিশ্বাসে কথা গুলো বলেই থামল মাইশা চৌধুরী।
পাশে থাকা টেবিল থেকে পানি এনে সায়রা সে টা এগিয়ে দেয়।
মাইশা চৌধুরী পানি টা খেয়ে গ্লাস টা তিনি যথাস্থানে রেখে দিয়ে পেছনে ফিরে সায়রার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে।
সায়রাও তাকে জড়িয়ে ধরে বলে উঠে

-“তুমি চিন্তা করো না। ”

মাইশা চৌধুরী কিছু বলে না সায়রা ওনাকে ছেড়ে দিয়ে ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে যায়

——–

-“বাবা মা কোথায়? ”

মিশ্র আর সায়ন খেলছে বিছানায় বসে।মিশান অফিস থেকে এসছে রুমে এসে বাচ্চাদের একা দেখে ভ্রু কুঁচকে আসে।
তবে বাচ্চাদের সেটা বুঝতে না দিয়ে শান্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করে।

-“মেজো মার সাথে উপর রুমে। ”

মিশ্র আদোও আদোও কণ্ঠে বাবার প্রশ্নের জবাব দেয়।

-“আচ্ছা তোমরা বসো।
পাপা ফ্রেশ হয়ে আসছি।”

-“okay”

সায়ন বলে উঠে।
মিশান দুজনের কপালে চুমু খেয়ে মুচকি হেসে তোয়ালে নিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসে।
তার পর বাচ্চা দের কোলে নিয়ে রুমে থেকে বেড়িয়ে লিভিং রুমে এসে প্রিয়তা মির্জার কাছে ছেলে মেয়ে কে দিয়ে নিজের মা কে খাবার দিতে বলে।
মাইশা চৌধুরী খাবার বেড়ে দেয়।

-“মা নয় টার বেশি সময় বাজে।
ওরা এখনো ঘুমায় নি কেন?”

মিশান খাবার খেতে খেতে মা কে প্রশ্ন করে।

-“আমি আর সারা তো গিয়ে ছিলাম ঘুমা পাড়াতে।
কিন্তু ওরাই তো বলল তুই আসলে ঘুমুবে।”

মিশান আর কিছু বলে না খাবার খেয়ে বাচ্চা দের নিয়ে রুমে এসে ওদের ঘুম পাড়িয়ে দেয়।

তার পর উঠে রুম থেকে বেড়িয়ে নিজের উপর আগের রুমে উদ্দেশ্য উপর হাঁটা ধরে।
রুমে সামনে এসে মিশান দেখলো দরজা টা হালকা করে ভিড়ানো দরজা টা আর ভিতর থেকে হালকা আলো আসছে।
মিশান বেশি কিছু ভাবে না দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকে পরে।
আর সামনে তাকাতেই দেখা মিলে বাড়ির প্রতি টা সদস্য। আছে শুধু প্রহর আর রুহি নেই। কিন্তু মিশান সে দিকে না তাকিয়ে বিছানার কাছে উপর দেয়ালে কিছু এক টা খুঁজে নাই দেখে চোখ বন্ধ করে শ্বাস টানে যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচল।
মিশান চোখ বন্ধরত অবস্থায় আদোও আদোও কণ্ঠে দুই টা বাচ্চার বলে উঠে

-“happy birthday papa”

মিশান ধপ করে চোখ খোলে অবাক নয়নে পেছনে ফিরে দেখলো প্রহর আর রুহি ওদের বাচ্চাদের কলো নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

-“ওরা তো ঘুমিয়ে,,,

-“আমরা ঘুমুই নি।”

-“আচ্ছা চলো এখন এগারো টা বেশি সময় বাজে।
কেক কাটো আমার ঘুম পাচ্ছে। ”

মাঝে ফোড়ন কেটে বলে উঠে সোহান।
সবাই শব্দ করে হেসে দিলো।
সোহান একটু বেশি ঘুম পাগল সাথে বউ।আর এটা সবাই জানে।
অতঃপর মিশান ওর দুই বাচ্চা কে দুই দিক দিয়ে নিয়ে কেক টা কেটে সবাই খাইয়ে দেয়।
আর ঠিক তক্ষুনি প্রহর ওর ক্যামেরা টা নিয়ে আসে।
সাথে আনে বাড়ির দারোয়ান চাচা কে।
তার পর সবাই কে এক সাথে করে মিশ্র কে প্রহর কোলে নেয় সায়ন কে মিশান নেই মিশানের বা পাশে বউ কে নিয়ে ডান পাশে মাকে তার পর বাবা কে।প্রিয়তার পাশে সায়রা তার পাশে রাহান সোহান,আরভী,আর সাদনান মির্জার পাশে প্রহর, রুহি সবাই ঠিক ঠাক ভাবে দাঁড়ানোর পর সেটা দারোয়ান চাচা ক্যামেরা বন্দী করে নিলো।
আর তাদের সুন্দর পরিবার এক টা প্রতিবিম্ব সেখানে আবদ্ধ হলো।
হয়তো কোনো এক শীতের সকালে কেউ কেউ বা হয়তো তখন থাকবে না। আর কিছু বৃদ্ধ মানুষ হয়তো তখন এই ছবির দিকে তাকিয়ে হারিয়ে যাবে নিজের যৌবনের সৃতিতে আর মুচকি হেসে হঠাৎ করে বলে উঠবে #হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি আজও আছেন।

~সমাপ্ত~

হৃদয় জুড়ে শুধু আপনি ২ পর্ব-২৩

0

#হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি[২]
#পর্ব_২৩
#জান্নাত_সুলতানা

-“রাহাত ভাই।
একটা জিনিস চাই দিবেন?”

আজ সকালেই সবাই মার্কেট করেছে।আর সে গুলো এখন রাতে খাবার পর বসে দেখছে।
এর মধ্যে প্রিয়তা মির্জা প্রশ্ন টা করে।

-“আরে আমার ছোট বোনের কি চাই বলো একবার।
আমি আমার যথাসাধ্য চেষ্টা করবো। ”

রাহাত সাহেব হেসে দিয়ে উৎসাহ দিয়ে নিজের মতামত জানায়।

-“আপনার ছোট জান টাকে আমায় দিয়ে দিন।
আমার মেয়ের মতো করে রাখার চেষ্টা করবো।
আর আমাদের পরিবার সম্পর্কে আপনার কোনো অভিযোগ হতে দেবো না।”

কেউ কেউ অবাক হয়েছে তো কেউ কেউ খুব খুশি আর রুহি লজ্জা পাচ্ছে।
কিন্তু প্রহর এর কোনো ভাবান্তর নেই।
সোহান শয়তানি হেসে প্রহর কে খুঁচা তে লাগলো।
মিশান কটমট করে সায়রার দিকে তাকাল সায়রা কেবলা’র মতো একটা হাসি দিয়ে মিশান কে ইশারা করে রুমে আসার জন্য আর নিজেও উপরে দিকে চলে যায়।
মিশান হড়হড় করে উঠে বউয়ের পেছনে পেছন চলে গেলো।
রুহি কে টেনে নিয়ে আরভীও চলে গেলো।
ইনিয়া নেই রুমে হয়তো ইকবাল এর সাথে ফোমে কথা বলছে। স্টেলা নামের মেয়ে টা আজ সকালেই চলে গিয়েছে।
এই দু দিন খুব স্বাভাবিক ভাবে চলা ফেরা করছে। সবার সাথে মিলেমিশে থাকতো।কথা গুলো বেশি সুন্দর ছিল সায়রার ভালো লাগতো। স্টেলা নিজের আর মিশানের সম্পর্কের কথা সব বলেছে সায়রা কে।সায়রার অবশ্য মনে মনে অনুতপ্ত হয়েছে।মিশান কে ভুল বোঝার জন্য। তবে মেয়ে টাকে বেশ মনে ধরেছিল সবার। সবাই বলে ছিল বিয়ের পরে যেতো কিন্তু মেয়ে টার বাবা আর্জেন্ট কোনো দরকারে ইমারজেন্সি ফ্লাইট এ চলে যেতে বলেছে।

-“প্রহর, তুমি কি বলো?
অবশ্য তুমি যাই বলো।
আমার বোন আমার কাছে কিছু চেয়েছে আমি কি তা না দিয়ে থাকতে পারি?
তবে আমার একটা শর্ত আছে। ”

রহাত সাহেব এর শর্ত কথা শুনে সবাই অবাক হয়।
প্রহর মুখ মলিন করে মায়ের দিকে তাকিয়ে থাকে।
সাদনান মির্জা এবার মুখ খোলে

-“দেখুন ভাই।
আপনি আমার বড়।
তাই আপনার জিনিসের অসম্মান যেনো না হয় আমরা আমাদের যথাসাধ্য চেষ্টা করবো। ”

আয়ানও বলে উঠে

-“আচ্ছা আগে বলো ভাই।”

রাহাত সাহেব স্ত্রী দিকে একবার আঁড়চোখে তাকিয়ে নড়েচড়ে বসে।
তার পর গম্ভীর কণ্ঠে বলে

-“আসলে ওর পড়া লেখার ব্যাপার টা নিয়ে।
ওতো পড়া নিয়ে ভীষণ ফা,,,

-“বড় বাবাই তুমি চিন্তা করো না।
রুহি কে প্রহর বিয়ের পরও পড়াবে।”

রাহাত সাহেব কে সব টা কথা সম্পূর্ণ করতে না দিয়ে সোহান বলে উঠে।

সবাই মেনে নেয়।
অতঃপর সবাই মিলে ঠিক করে ইনিয়ার বিয়ের দিন এনগেজমেন্ট হবে।
আর রুহির পরীক্ষার পর বিয়ে।

—————

-“তুই আগে থেকে সব জানতি?”

মিশান সায়রা কে রুমে এসে কিছু টা ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে।

-“আরে আপনি রেগে যাচ্ছেন কেন?
বলছি তো সব।”

-“এখন তো সব আমিও জানি, হু।”

সায়রার কথায় মুখ ভেংচি কেটে বলে উঠে মিশান

-“কচু জানেন।
প্রহর রুহি ওরা দুজন দুজন কে আগে থেকে ভালোবাসে।
কম বেশ সবাই জানতো।
শুধু আপনারা কয়েকজন ছাড়া।

————–

পার্লার থেকে তিন জন্য মেয়ে আনা হয়ছে।
একজন রুহি কে এনগেজমেন্ট এর জন্য তৈরি করছে।
আর বাকি দু জন ইনিয়া কে।
সকাল এগারো টা বাজে ইকবালরা বারোটা নাগাদ আসবে।
সায়রা নিচে রান্না ঘরে সবার সাথে হাতে হাতে কাজ করছে।
মিশান অনেক আগেই তাকে ডেকেছে।
কিন্তু বেচারি যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে না।
দুই দুই টা অনুষ্ঠান বলে কথা কত লোকজন মানুষ গিজগিজ করছে।
নাস্তা এটা সেটা তাদের এগিয়ে দিতে হচ্ছে।
সায়রা ছয় টা শরবত এর গ্লাস একটা ট্রে তে নিয়ে লিভিং রুমে বসে থাকা মহিলাদের দিয়ে কোনো রকম তাদের সাথে হালকা কথা বলে রুমের উদ্দেশ্য ছুটতে লাগলো।
শরীর টাও বেশি দূর্বল লাগছে।
সায়রা ভাবছে হয়তো সকাল থেকে কিছু খাওয়া হয়নি তাই এমন লাগছে।
মাথা টা খানিকন বাদে বাদে চক্কর দিচ্ছে।
এ-সব ভাবতে ভাবতে সায়রা কোনো রকম সিঁড়ি গুলো পার করে উপর এলো।
কিন্তু পা গুলো আর হাঁটতে সায় দিচ্ছে না।
অনেক কষ্ট করে তিন চার পা কদম হাঁটার পর হুট করে মাথা টা বেশি ঘুরাতে লাগলো।
সায়রা চট করে করিডর এর রেলিং ধরে এক হাতে মাথা চেপে নিচে বসে পরলো।
উপর তেমন মানুষ নেই শুধু ইনিয়ার রুম আর রুহির রুম থেকে মেয়েদের কথার শব্দ ভেসে আছে।
আর বাকি সব মানুষ নিচে আর বিয়ের জন্য বাগানে জায়গা করা হয়েছে সেখানে।
সায়রা নিচে বসেও রক্ষা পায় না সারা শরীর ছেড়ে দিচ্ছে।
মেঝেতে পড়তে যাচ্ছিল।
কিন্তু তার আগেই হুট করে কেউ কোলে তুলে নেয়।
সায়রা পিটপিট করে অতি পরিচিত একটা মুখ দেখতে পায় যা দেখে ঠোঁটের কোনে হাসি ফোটে উঠে তার পর নিশ্চিন্তে চোখ বন্ধ কর নেয়।
মিশান সায়রা কে কোলে তুলে আবারও নিচে নেমে দুই মাকে ডাকতে থাকে।
তাদের কাউ কে কিছু বলতে হয়নি।
মিশান এমনি হসপিটালের উদ্দেশ্য রওনা দেয়।

————–

-“আমি বলেছিলাম সব সময় ওনার খেয়াল রাখার জন্য। ”

মহিলা ডক্টর টা গম্ভীর মুখ করে প্রেসক্রিপশনে কিছু লিখতে লিখতে বলে উঠে

-“সরি ডক্টর বাড়িতে বিয়ে।
সে জন্য খেয়াল করি নি।
বলুন না কিছু হয়ে নি তো ওর?”

বেশ উত্তেজিত হয়ে প্রশ্ন গুলো করেই বসে মিশান।
যা দেখে মহিলা ডক্টর টা মুচকি হাসে।
মাথা নেড়ে জবাব দেয়

-“না তবে ওনার খেয়াল রাখবেন
সাথে নিজের হবু বাচ্চারও।”

মিশান স্তব্ধ। কি বলল ডক্টর ও কি বলবে বুঝতে পারছে না। না-কি কণ্ঠনালী দিয়ে কিছু বের করতে পারছে না।
ওর চোখ চিকচিক করে উঠে।
আচ্ছা ও কি ভীষণ খুশি হয়েছে?
ডক্টর মিশানের দিকে হালকে হেসে তাকিয়ে আছে।
যা দেখে মিশান চোখ ঘুরায় অন্য দিকে।
চার দিকে এলোমেলো দৃষ্টি ফেলে ডক্টর এর দিকে ফের তাকি কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে প্রশ্ন করে

-“আপনি সত্যি বলছেন?”

কিন্তু ডক্টর কিছু বলার আগে সায়রা পাশের বেড থেকে মিশান কে আস্তে করে ডেকে উঠে

-“মিশান।”

মিশান তড়িৎ গতিতে ডক্টর এর সামনে থেকে উঠে বউয়ের পাশে দাঁড়িয়ে সায়রার এক বাহু ধরে উঠতে বসতে সাহায্য করে।

-“এই নিন প্রেগ্ন্যাসির সময় এক জন মায়ের খাবার লিস্টে।”

মিশান সেটা সায়রার হাতে দিয়ে নিজে সায়রা কে কোলে নিয়ে ডক্টর কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে

-“পেমেন্ট আপনার একাউন্টে পৌঁছে যাবে।”

মিশান দারোয়ান কে দিয়ে গাড়ির দরজা খুলে বউ কে বসিয়ে দিয়ে গাড়ি স্টাট করে নিজের বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা দেয়। সায়রা তখন ডক্টর এর কথা শুনেছে।ও দেখেছে মিশানের চোখে পানি ছিল। ও নিজেও কি ভীষণ খুশি তবে কোনো এক অজানা কারণে মিশানের সাথে আর কথা বলে না।
ভাবে হয়তো মিশান নিজ থেকে বলবে।
মিশানের সাথে শুধু ফোনটা আছে টাকা পয়সা কিছু নেই কারণ তখন মিশান ফোন স্ক্রল করতে করতে রুম থেকে বেড়িয়ে ছিল। কিন্তু বউকে ওই অবস্থায় দেখে
তাই ফোন টা তখন ট্রাউজার এর পকেটে নিয়ে বউ কে কোলে নিয়ে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে এসছে।
প্রহর সাদনান মির্জা আসতে চেয়েছে তবে মিশান কাউকে সাথে আনে নি।
বাড়িতে কত কাজ।
বলেছে দরকার পড়লে ফোন দেবো।
মিশান ফোন ট্রাউজার এর পকেটে থেকে বের করে একটা নাম্বারে ফোন লাগায় রিং হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ফোনটা রিসিভ হলো
তবে ওপাশের ব্যক্তি টা কে কিছু বলতে না দিয়ে মিশান গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠে

-“বাবাই আমরা বাড়িতে চলে যাচ্ছি।
তোমরা সব কাজ শেষ করে সন্ধ্যায় চলে এসো।”

সাদনান মির্জা ওপাশ থেকে কি বলল তা শোনা গেলো না।
মিশান “আচ্ছা” বলে ফোন কেটে ডাইভিং এ মনোযোগ দেয়।
তবে অদ্ভুত ব্যাপার হলো মিশান সায়রার সাথে কোনো কথা বলে না।
সায়রাও কিছু বলছে না একটা হাত নিজের পেটে রেখে চুপচাপ বসে আছে।
যেনো এই কথা না বলার মানে “আপনি কথা না বললে নাই এখন আমার বাচ্চা আছে।আমি তার সাথে কথা বলে সময় কাটাতে পারবো।”

#চলবে…

হৃদয় জুড়ে শুধু আপনি ২ পর্ব-২১+২২

0

#হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি[২]
#পর্ব_২১
#জান্নাত_সুলতানা

-“আপনি কেন এসছেন প্রহর ভাই?
আজ তো আমি আমাদের বাসায় চলে যাব।
আর ইকবাল ভাই আমাকে নিতে আসার কথা।”

রুহি পরীক্ষা দিয়ে বেরিয়ে এসে গেইট থেকে প্রহর এর গাড়ি থেকে এগিয়ে আসে।
তখন প্রহর গাড়ির পেছনে দাঁড়িয়ে ফোন টিপছিল।
আর প্রহর কে দেখে ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে রুহি।

প্রহর একবার রুহির দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে গাড়িতে বসতে বসতে জবাব দেয়।

-“গাড়ি তে বসো বলছি।”

রুহি কিছু বলে না মাথা নেড়ে প্রহর এর পাশে বসে পড়ে।
আর ততক্ষণে প্রহর একটা পানির বোতল সাথে কিছু দোকানের হাবিজাবি খাবার এগিয়ে দেয়।
রুহিও পানি নিয়ে সেটা দিয়ে গাড়ি থেকে জানলা দিয়ে মুখ ধুয়ে সে গুলো খেতে থাকে।
আর প্রহর কতক্ষণ তাকিয়ে থেকে ধিরে গলায় জানান দেয় কিছু কথা

-“তোমাকে ইকবাল ভাই নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল।
কিন্তু ওনার ইমারজেন্সি পরে যাওয়াতে তিনি আসতে পারবে না।
তাই এনামুল নিজ থেকে আগ্রহ দেখিয়ে বলেছে সে নিতে আসবে আর এ কথা টা ইনিয়া আপু ইকবাল ভাইয়ের কাছ থেকে জানার পর পরই আমাকে বলেছে।
আর তাই আমি নিতে এসছি।”

রুহির কেনো হেলদুল নেই সে এক মনে চকলেট খেতে খেতে খুব স্বাভাবিক ভাবে প্রশ্ন করে

-“তো কি হতো এনামু,,,

-“এই মেয়ে তুমি কি ওই দিনের ঘটনা
ভুলে গিয়েছো?
তুমি চাইলে আবার রিপিট করতে পারি আমি।”

বাকা হেসে বলে প্রহর।

রুহি তৎক্ষনাৎ চকলেট খাওয়া বন্ধ করে ঠোঁট নিজের দু হাত দিয়ে আড়াল করে ফেলে।
আর মাথা নাড়ে যার অর্থ “না”।
প্রহর হালকা হেসে গাড়ি স্টাট করে।

—————–

আজ রুহির শেষ পরীক্ষা ছিল।
দেখতে দেখতে পনেরো দিনের বেশি সময় কেটে গিয়েছে।
সামনে সাপ্তাহে ইনিয়ার বিয়ে।
তাই রুহি আজ নিজেদের বাসায় চলে যাচ্ছে।
আর আয়ান চৌধুরী সপরিবারে নিয়ে দু দিন বাদেই যাবে।

—————-

-” আপনার সব আমি গুছিয়ে নিয়েছি ।
আপনি একবার চেকিং করি নিবেন?”

সায়রা কথা টা বলে চুল গুলো হাত খোপা করতে করতে বিছানার এক পাশে বসে। মিশান ল্যাপটপে কোলে নিয়ে তাতে কিছু করছিল।
কিন্তু বউয়ের কথা ল্যাপটপ বিছানার পাশে টেবিলে রেখে বউ কে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে গলায় নাক ঘষেঁ মিনমিন করে উত্তর দেয়

-“তার দরকার নেই।
আমি জানি তো আমার বউ সব ঠিক ঠাক নেবে।”

-“হয়েছে ছাড়ুন ঢং করতে হবে না। রাত কয়টা বাজে সে খেয়াল আছে?
কাল সকাল সকাল উঠতে হবে।”

সায়রা মিশানের থেকে ছোটার চেষ্টা করতে করতে বলে।
কিন্তু মিশান শুনলে তো।
সে তো বউ কে চুমু খেতে ব্যস্ত।

সায়রাও কেমন মিশানের স্পর্শে শরীর ছেড়ে দিচ্ছে।
কিন্তু তবুও চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে শ্বাস ফেলে জানায়

-“মিশান।
কাল সকালে তো,,,

-“উঁহু, কোনো কথা না সুইটহার্ট।
আমরা সবার পরে যাব।”

মিশান আর কিছু শোনে না সায়রা কে শুইয়ে দিয়ে নিজেও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বউ কে।
আর ডুবে যায় একে অপরের মাঝে।

————-

-“শোনো খাবার রান্না করা আছে।
গরম করে খেয়ে নিও।”

প্রিয়তা মির্জা মেয়ে কে উদ্দেশ্য করে কথা টা বলে উঠে।

-“মা আমি বলছিলাম আমরাও তোমাদের স,,,,

-“হ্যাঁ মনি আমরা পারবো।
তোমরা যাও।
বাবাই হয়তো অপেক্ষা করছে। ”

সায়রা কে সব টা কথা সম্পূর্ণ করতে না দিয়ে মিশান প্রিয়তা মির্জা কে আশ্বাস দিয়ে বলে উঠে।
প্রিয়তা মির্জা মুচকি হেসে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যায় পেছন পেছন মাইশা চৌধুরীও চলে যায়।
অতঃপর সবাই বাড়ি থেকে এক এক করে বেরিয়ে যায়।
আজ সবাই যাওয়ার কথা থাকলেও সায়রা, মিশান,সোহান, আরভী যাবে না। তারা সন্ধ্যা যাবে।
মিশান বলেছে কি একটা কাজ আছে পরে যাবে।
তাই ওনারা সায়রা আর আরভী কে রেখে গিয়েছে। সায়রা একা একা থাকবে তাই আরভী কেও দিয়ে যাচ্ছে। দু জনে এক সাথে থাকলে সময় কেটে যাবে যেহেতু মিশা বাহিরে থাকবে।
আসলে কথা হলো মিশানের কোনো কাজ ফাজ কিছু নেই।
কিন্তু আরভী কেও রেখে যাবে শুনে বেচারা সোহানের দিকে অসহায় চোখে তাকিয়ে ছিলো।
সোহান বুঝতে পেরেছিল কিছু একটা এই বেডা মিশানের মাথায় ঘুরছে তাই নিজেও মিশানের সাথে যাবে বলে জানিছিল।
কেউ কিছু বলে নি।
যাক যার যখন ভালো লাগে তাড়া কেউ তো আর ছোট নেই।
তাই বড় রা সকালে যাচ্ছে সাথে প্রহর তো আগে আগে গিয়ে গাড়ির ডাইভিং সিটে বসে আছে।
কেন না তার প্রাণভোমরা যে সেখানে রয়েছে।
এটা দেখে সোহান অবশ্য প্রহর কে কম খোঁচায় নি।
প্রহর কিছু বলে নি মুখ বুঁজে সব সহ্য করেছে।
কারণ টা হলো এতো দিন প্রহরও সোহান কে কম জ্বালায় নি।
যখনি সোহানের সাথে প্রহর ফোনে কথা বলতে তখনি সোহা যদি জিজ্ঞেস করতো “কি করিস?” তখনি প্রহর সোহান কে খেপানোর জন্য বলতো “তোর বউয়ের সাথে আছি”।
ব্যস সোহান তখন ইচ্ছে মতো প্রহর কে গা’লা’গা’লি করে ফোন রেখে দিতো।
যদিও ও জানতো প্রহর মজা করছে।
কিন্তু তবুও কেন যেনো বেচারা সোহানের সহ্য হতো না।
কিন্তু পরে ঠিক আবার দু জনের গলায় গলায় ভাব হয়েই যেতো।

————-

সবাই সেই সকালে চলে গিয়েছে এখন বিকেলে চারটি।
দুপুরে খাবার খেয়ে মিশান, সোহানও কোথাও একটা গিয়েছে। তাদেরও কোনে খুঁজ নেই।
সায়রা, আরভী বসে বসে গল্প করছে আরভীর রুমে।
সায়রা অবশ্য ছাঁদে যেতে চেয়েছে কিন্তু আরভী যাচ্ছে না।
বলছে ওর না-কি ভালো লাগছে না তাই ও শুয়ে আছে।
সাথে সায়রা কে নিজের পাশে বসিয়ে রেখেছে।
সায়রার কেন জানি মনে হচ্ছে আরভী ওর কাছ থেকে কিছু একটা লোকাচ্ছে।
কিন্তু পরক্ষণেই ভাবে কি লোকাবে।
হয়তো ওর মনের ভুল তাই নিজের মন কে আবোল তাবোল বুঝিয়ে নিজেও গল্প করতে ব্যস্ত হয়ে পরলো।
দু বোন একই বাড়িতে থাকে অথচ মনে হচ্ছে কত বছর পর দেখা হয়েছে।
এমন করে কবে আরভীর সাথে এতো টা সময় আড্ডা দিয়েছে সায়রার মনে পরছে না।
যখনি বসে কোনো না কোনো কাজ, নয়তো মিশান ডাকে।বাড়িতে অনেক দিন পর এভাবে দু বোন এক সাথে আছে।
কেউ জ্বালাচ্ছে না।
কিন্তু বিয়ের পর যতবার আড্ডা দিতে বসে ঠিক তক্ষুনি কোনো না কোনো কারণে সে টা আর হয় না।এই জন্যই বুঝি মানুষ বলে” গাঙে গাঙে দেখা হলেও বোনে বোনে হয় না”।
আরভী শোয়া থেকে উঠে বিছানার সাইডে টেবিল থেকে পানি খেয়ে আবারও বসতে নিলে ফোনে টুং করে শব্দ হলো।
সায়রা ততক্ষণে ড্রেসিং টেবিলের সামনে এটা সেটা নেড়ে চেড়ে দেখছে।
আরভী নিজের ফোন টা হাতে নিয়ে দেখলো মিশান দিয়েছে মেসেজ টা।
আরভী মেসেজ টা পড়ে ফোন টা নিয়ে সায়রা কাছে গিয়ে ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ার থেকে একটা প্যাকেট বের করে।
সায়রা সে দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকায়।
কৌতূহল নিয়ে প্রশ্ন করে

-“এটা কি?”

আরভী মুচকি হেসে বলে

-“এটা ভাইয়া দিয়েছে।
তুমি পড়ে রেডি হয়ে আসো।
আমিও আসছি।

-“রেডি কেন হবো?
আর আমরা তো একটু পর আয়না মনির বাসায় চলে যাব।”

-“বেশি কথা বলো না।
আমিও কিছু জানি না। তুমি রেডি হয়ে নেও।
ভাইয়ার কাছ থেকে সব জেনে নিও।”

কথা শেষ আরভী সায়রার হাতে প্যাকেট টা দিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো।
সায়রা কিছু বুঝলো না।
তবে বেশি কিছু না ভেবে প্যাকেট টা খোলে।
আর সেখানে একটা কালো রং এর শাড়ী পেলো সাথে শাড়ীর সব প্রয়োজনীয় জিনিস।
সায়রা বেশি কিছু না ভেবে সেটা পড়ে রেডি হয়ে নিজের ফোন টা নিয়ে বেরিয়ে এলো আরভীর রুম থেকে।
আরভী কে দু তিন বারের মতো ডাকলো তবে কোনো সাড়াশব্দ পেলো না।
সায়রা সিঁড়ির কাছে এসে নিচে নামতে নিলে লাইট গুলো সব অফ হয়ে পুরো বাড়ি অন্ধকার হয়ে এলো।
আর ঠিক তক্ষুনি সায়রা নিজের গলায় কারোর গরম নিশ্বাস পড়ায় কেঁপে উঠল। কিন্তু পেছন ফিরার সাহস পেলো না।
ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইলো।
কারোর একটা শক্ত ঠান্ডা হাত ওর পেটে বিচরণ করতে লাগলো।
আর সেই হাতের মালিক হুট করেই সায়রা কে কোলে তুলে উল্টো ঘুরে হাঁটা ধরলো সায়রা চুপ করে গলা জড়িয়ে আছে।
কারণ স্পর্শ গুলো যে ওর অতি পরিচিত।
আর মানুষ টা যে আর কেউ নয় ওর একান্তই ব্যক্তিগত স্বামী নামক ভালোবাসার পুরুষ টা।

সায়রা চোখ বন্ধ করে শ্বাস টানে লম্বা মিশানের গায়ে থেকে আসা পারফিউম এর স্মেইল টা যে ওর ভিতর টাকে নাড়িয়ে দিচ্ছে।
সব এলোমেলো লাগছে।
মিশানের গলায় খামচে ধরে।
মিশান ততক্ষণে বউ কে নিয়ে নিজদের রুমে এসে সায়রা কে দরজার পাশে থাকা ছোট টেবিল টায় বসিয়ে দিয়ে মুখ টা উঁচু করে নিজের অধর জোড়া দিয়ে সায়রার অধর জোড়া চেপে ধরে পাগলের মতো ভালোবাসার পরশ দিতে থাকে।
নিজের অবাধ্য হাত জোড়া বিচরণ করে বউয়ের পেটে।
বেশ অনেক টা সময় নিয়ে গাঢ় একটা চুম্বনে আবদ্ধ হয়।
সায়রাও স্বামীর সঙ্গে তাল মিলিয়া।
কিন্তু মিশান হুট করে ছেড়ে দেয় বউ কে।
নিজের বৃদ্ধা আঙ্গুল দ্বারা সায়রার ঠোঁট মুছে দিয়ে টেবিলের উপর থেকে নামতে ইশারা করে।
সায়রাও নেমে পড়ে। মিশান একটা কালো সুট পরে আছে।সায়রার সাথে মিলিয়ে। সায়রা মুগ্ধতা নিয়ে দেখলো স্বামী কে।তার পর মিশানের পেছন পেছন বেলকনিতে যায়।

-“এতো কিছু কখন করেছেন?”

সায়রা অবাক হয়ে প্রশ্ন করে মিশান কে।
মিশান মুচকি হাসে।
কিছু বলে না বউয়ের হাত ধরে সামনে এগিয়ে যায়।
সেন্টার টেবিলে থাকা কেক টার সামনে দাঁড়ায়।
সায়রা এবার আরও এক দফা অবাক হয় সাথে খুশি তো আছে।
ঝাপটে জড়িয়ে ধরে মিশান কে।
খুশি তে চোখে জল চলে এসছে।
চোখ চিকচিক করছে কিন্তু মুখে হাসি লেপটে আছে।
কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলে উঠে

-“আমার তো মনেই ছিল না।
আজ আমাদের বিবাহ বার্ষিকী।”

মিশান নিজেও জড়িয়ে ধরে বউয়ের মাথায় তালুতে চুমু আঁকে।

-“Happy anniversary bow”

সায়রা ছেড়ে দেয় মিশান কে নাক টেনে নিজেও বলে উঠে

-“Happy anniversary jamai”

মিশান শব্দ করে হেসে উঠে।
সায়রা এটা মিশান কে এনিয়ে দুবার জামাই বলল। গত বার প্রথম বলেছিল মিশানের বার্থডে তে।
আর আজ দ্বিতীয় বার।

মিশানের হাসি দেখে সায়রাও হেসে দিল।
অতঃপর দু’জন মিলে কেক টা কেটে নিলো।
এখন সন্ধ্যায়।
সায়রা হঠাৎ কিছু মনে করার মতো করে বলে উঠে

-“আরভী, সোহান?”

-“ওরা চলে গিয়েছে পাঁচ টার দিকে।”

মিশান সায়রার কাঁধে চুমু খেয়ে খুব স্বাভাবিক ভাবে উত্তর দেয়।

-“ওহ।”

সায়রার কথা শেষ করার সাথে সাথে মিশান সায়রা কে সোফায় শুয়ে দিয়ে গলায় মুখ গুঁজে দেয়।
সায়রা মিশানের একটা উরুতে বসে ছিল বেলকনিতে থাকা সোফায়।
আর হুট করেই মিশান ওকে নিজের মাঝে আবদ্ধ করে নেয়।

-“আমরা যাব না?”

-“হুম।
একটু পর।
একটু আদর করি?”

অনুমতির সুরে বলে উঠে মিশান।
সায়রা মুচকি হাসে এই লোক এখন না করলে শোনবে মনে হয়।
এমন একটা ভাব করছে।
তাই মিশান কে সায়রা নিজে উল্টো প্রশ্ন করে

-“যদি না করি শুনবেন?”

-“সে টা তুই ভালো করেই জানিস।”

আর কোনো কথা হয় না।
শুধু ভালোবাসা আদান-প্রদান করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে দুই মানব মানবী।

——

রাত সাত টা বাজে সায়রা নিজে ফ্রেশ হয়ে এলে মিশান ফ্রেশ হতে চলে যায়।
সায়রা এসে রেডি হয়ে নেয়।
মিশান গোসল শেষ নিজের কাপড় সহ বউয়ের কাপড় ধুয়ে বেলকনিতে মেলে দিয়ে আসে।
তার পর রেডি হয়ে দুজনেই রুহিদের বাসার উদ্দেশ্য রওনা হয়।

#চলবে….

#হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি[২]
#পর্ব_২২
#জান্নাত_সুলতানা

সায়রা আর মিশান বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে পঁচিশ কি ছাব্বিশ বছরের একটা রমণী হুট করে কোথা থেকে এসে মিশান কে জড়িয়ে ধরে। রমণী টা নিসন্দেহে একজন বিদেশি মানুষ।
তার পোশাক, চুল শরীর দেখে যে কেউ বলে দিতে পারবে।
সায়রা স্তব্ধ। মিশান নিজেও অবাক।
মেয়ে টা মিশানের বুকে লেপটে আছে।
মিশান নিজের দু হাত উঁচু করে আছে।
বাড়ির কেউ কেউ আবাক নয়নে তাকিয়ে তো কেউ খুব স্বাভাবিক ভাবে আছে।
যেনো এটা খুব স্বাভাবিক একটা বিষয় আর এটা ওনারা এর আগেও দেখেছে।

-“স্টেলা ওরা মাত্র এলো।
ফ্রেশ হতে যেতে তো দাও।”

ইনিয়া কথা টা সাইড থেকে বলে উঠে।
মূলত ও এসছিল সায়রা কে দেখে জড়িয়ে ধরবে বলে।
কিন্তু তার আগেই স্টেলা নামের মেয়ে টা হুট করে এসে পরায় ইনিয়া নিজেই যে কাজের জন্য এসছে সে টা ভুলে গিয়েছে।

রুহির এতোক্ষণ চুপ করে সব দেখছিল।
তবে এখনো মিশান কে ছাড়তে না দেখে নিজে এগিয়ে গিয়ে স্টেলা নামক মেয়ে টা কে ছাড়ানোর চেষ্টা করে বলে উঠে

-“স্টেলা আপু ছাড়ো ভাইয়া কে।
এটা বাংলাদেশ।”

লাস্ট এর কথা টা কিছু টা দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠে।
স্টেলা সে সব পাত্তা না দিয়ে মিশানের কোমর জড়িয়ে ধরে নেকা কণ্ঠে ভাংগা ভাংগা বাংলা ভাষায় জিজ্ঞেস করে

-“মিশান তুমি লন্ডন থেকে চলে আসার পর আমার সাথে কেন একবারও কন্টাক্ট করো নি?”

মিশান ততক্ষণে মেয়ে টা কে নিজের কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে কিছু টা দূরে দাঁড় করিয়ে বিরক্তির সুরে জবাব দেয়

-“স্টেলা আপনার সাথে আমার এমন কোনো সম্পর্ক ছিল না যে আপনার সাথে আমার সব সময় কন্টাক্ট করতে হবে।
না কোনো commitment ছিল।
আপনি জাস্ট আমার আপুর ফ্রেন্ড।
আর মিট মাই ওয়াইফ সায়রা মিশান চৌধুরী।”

-“সায়রা আপু এটা হচ্ছে ইনিয়া আপুর ফ্রেন্ড ওনি আজ সকালেই লন্ডন থেকে এখানে এসছে।”

মিশান সায়রা কে পরিচয় দিয়ে স্টেলার কথা বলতে যাচ্ছিল।
কিন্তু তার আগে রুহি পরিচয় দিয়ে দেয়।সায়রা জোর করে একটু হাসে। মেয়ে টা মুখ টা গমন করে থাকে আর কিছু বলে না। সায়রা ইনিয়ার সাথে কথা বলে।

-“আচ্ছা এখন যা তোরা ফ্রেশ হয়ে আয়।
রাত দশ টা বাজে।
খাবার টা সবাই খেয়ে নেও।”

আয়না বলে উঠে।
অতঃপর মহিলারা সব রান্না ঘরে চলে গেলো।পুরুষ রা সবাই সোফায় কেউ বা চেয়ারে বসে আড্ডা দিতে ব্যস্ত হয়ে পরলো।
রুহি সায়রা আর মিশান কে ওদের একটা রুমে নিয়ে চলে যায় ইনিয়া স্টেলা নামের মেয়ে টা কে নিয়ে ওর রুমে চলে যায়।

-“তোমরা তো কাঁপল।
তাই তোমরা যে কয় দিন থাকবা এটাতেই থাকবে।”

রুহি কথা টা ঠোঁট টিপে হেসে বলে উঠে

-“বেশি পাকা হচ্ছি প,,,

-“আমি যাই।”

সায়রা কে সব টা সম্পূর্ণ করতে না দিয়ে রুহি দৌড়ে চলে যেতে যেতে বলে।
“প” শুনে মিশান ভ্রু কুঁচকে সায়রার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে

-“তুই তখন কি বলছিলি?”

সায়রা কিছু না বলে খুব স্বাভাবিক ভাবে ওয়াশ রুম চলে যায়।
যেনো সে ছাড়া এ রুমে আর কেউ নেই।

-“বেগম দেখিয়ে অভিমান করেছে।
আচ্ছা কোনো ব্যাপার না।”

মিশান কোমরে এক হাত রেখে আর হাত মাথার পেছনে চুল খামচে ধরে বিরবির করে বলে।

——————–
রাতে খাবার খাওয়ার পর সায়রা আর রুমে আসে না।
মিশান কখন থেকে বসে আছে।
কিন্তু তার বউয়ের কোনো পাত্তা নেই।
এবার মিশান বেশ বিরক্ত হয়।
বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়।
ঘর থেকে বেড়িয়ে যাওয়ার জন্য দরজার কাছে যেতেই দেখা মিলে সোহানের।
ভ্রু কুঁচকে আসে।
ভ্রু আড়াআড়ি করে প্রশ্ন করে

-“তুই এখানে?”

-“হুম আমি।
তোমার সাথে থাকব।
ওরা তিন বোন না-কি আজ এক সঙ্গে থাকবে।
তাই আমাকে ঠেলেঠুলে রুম থেকে বের করে দিয়ে বলছে।
আমি তোমার সাথে যেনো থাকি।”

সোহান কথা গুলো বলতে বলতে গিয়ে বিছানার ধরাস করে শুয়ে পড়ে।
মিশান বেরিয়ে যেতে নিলেই সোহান আবারও বলে উঠে

-“যেয়েও না।
লাভ হবে না।
আমি কম চেষ্টা করি নি।দরজা বন্ধ।”

মিশানের মুখ মলিন হয়ে আসে। এই মেয়ের এতো অভিমান সব টা নিজের চোখের সামনে দেখার পরেও কি করে এমনটা করতে পারছে। সাথে অন্যদের মাঝেও ঝামেলা করছে।
এসব ভাবতে ভাবতে মিশান গিয়ে সোহানের পাশে বিছানায় ধপ করে শুয়ে উদাসীন কণ্ঠে বলে উঠে

-“ঘুমিয়ে পর।
এক দিন বউ ছাড়া তেমন কিছু হবে না।”

-“হুম।
আমি বিয়ে করছি সবে এক মাসের বেশি ভাই।”

-“বউয়ের বড় ভাই আমি।
শালা।”

-“তুমি ভুলে যাচ্ছো।
আগে বড় ভাই তার পর আমার বোনের হাসবেন্ড।
তার পর বউয়ের ভাই,হু।”

মিশান কিছু বলে না।
মিনিট পাঁচ এক সময় দু’জন চুপ চাপ থাকে।
তার পর মিশান হঠাৎ বলে উঠে

-“সিগারেট?”

-“কই পাবা?
আমার কাছে নাই।
তোমার বোন দেখলে খবর আছে।”

সোহান অসহায় কণ্ঠে জানায়।

-“আরে বেডা।
আমার কাছে আছে।

মিশান বেশ ভাব নিয়ে জবাব দেয়

-“তাহলে হয়ে যাক।”

খুশি হয়ে বলে উঠে সোহান

-“হুম এমনিতেও
ঘুম আসবে না আজ।”

বলেই বিছানা হতে নেমে গিয়ে নিজের সুটকেস টা খোলে সেখান থেকে এক প্যাকেট সিগারেট আনে।
তার পর ওয়ারড্রব এর উপর থেকে লাইটার নিয়ে আসে সেখানে তিন টা মোমবাতিও আছে।
হয়তো কারেন্ট না থাকলে ওগুলোর প্রয়োজন পরে।
তার পর দুজনে বেলকনিতে গিয়ে একটা তোয়ালে বিছিয়ে মেঝেতে বসে পড়ে।
অতঃপর মিশান সিগারেট ধরিয়ে মুখে পুরে।
সোহানও মিশান কে অনুকরণ করে।
মিশান সিগারেটের ছাই ফেলে ধীরে কন্ঠে নিজের লন্ডন থাকাকালীন স্টেলা সম্পর্কে বলতে লাগলো

-“আমি যখন লন্ডন যাই তখন থেকেই ওনি আমার পেছন পেছন ঘুরতো। আমি কখনো পাত্তা দেই নি।কারণ আমার মনে সব সময় তোর বোন ছিল।
কিন্তু ওনাকে কিছু বলতে পারতাম না বয়সে বড় ছিল +ওনার বাবা ওখানের আমি যে ভার্সিটিতে পড়তাম সেখানের প্রফেসর ছিল।
আমি যদি ওনাকে কিছু বলতাম তো ওনি ওনার বাবা কে বলতো। আর ওনার বাবার একমাত্র মেয়ে ওনি সাথে জেদি।
তাই ওনার বাবা চাইলে আমাকে যখন তখন যে কোনো কিছু করতে পারতো।
তাই কখনো কিছু বলার সাহস হয়নি।
শুধু সব সময় মনে মনে দোয়া করতাম তাড়াতাড়ি যেনো লেখাপড়া শেষ করে দেশে ফিরতে পারি।
কারণ ওনার ইচ্ছে ছিল আমার পড়া লেখা শেষ আমাকে বিয়ে করবে।
কিন্তু অদ্ভুত ভাবে আমার ফাইনাল ইয়ারে সময় ওনি তিন বছরের জন্য আমেরিকা চলে যায় কোনো এক কারণে যদিও কারণ টা আমার অজানা।
আর আমার পরীক্ষার পর আমি দেশে চলে আসি।
এই হচ্ছে কাহিনি। আর আজকের টা তো তোদের সবার চোখের সামনে হলো তবুও তোর বোনের এমন করার কোনো ভিত্তি আছে কি?
হ্যাঁ আমার এসব আগে বলার দরকার ছিল ওকে।
কিন্তু আমাদের মাঝে কিছু থাকলে তো বলতাম।
আর এখন যখন বলার মতো একটা কারণ হলো তখন তোর বোন অভিমান করে রয়ইলো।
একবারও আমাকে জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন মনে করলো না।
আমার মুখ থেকে একবার শোনার প্রয়োজনবোধ করলো না।”

সোহান মন দিয়ে মিশানের কথা গুলো শুনছে।
মিশান আরেক টা সিগারেটে আগুন ধরিয়ে ঠোঁটে চেপে ধরে।
সোহান নিজের টা শেষ করে বলে উঠে

-“ভাই আর খেয়েও না।
আর ও হয়তো একটু রাগ করেছে।
ভালোবাসার মানুষটার পাশে অন্য কাউকে দেখলে যে কারোর রাগ লাগবে।
সেখানে তুমি ওর স্বামী আর মেয়ে টা তোমাকে জড়িয়ে ধরে ছিল।
খারাপ লাগা রাগ হওয়া টা স্বাভাবিক।
এখন চলো ঘুমাবে।
দেখবে কাল সব ঠিক হয়ে যাবে।”

সোহানের দিকে তাকিয়ে মিশান মুচকি হাসে।
তার পর দুজনে রুমে এসে শুয়ে পরে।

#চলবে…..

[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ।]

হৃদয় জুড়ে শুধু আপনি ২ পর্ব-১৯+২০

0

#হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি[২]
#পর্ব_১৯
#জান্নাত_সুলতানা

-” কি শুরু করেছিস তুই?
আজ সারা দিন রুমে কেন আসিস নি?”

-“ছাড়ুন তো।
বিরক্ত করবেন।”

মিশান চোখ বড় বড় করে সায়রার দিকে তাকালো।
কি বলছে এই মেয়ে মিশান নিজে ওকে বিরক্ত করছে নাকি ও নিজেই ছোট বেলা থেকে মিশান কে বিরক্ত করছে?

-“থাপ্পড়ে তোর সব বিরক্তি আমি ছুটিয়ে দেবো, ইডিয়েট।”

-“ভয় দেখাচ্ছেন?”

কথা শেষ করার আগেই মিশান ওর কোমর টেনে নিজের কাছে আনে।
গালে হাত দিয়ে আঁকিবুঁকি করতে করতে বলে

-“ভয় তোকে?
না আমি তো শুধু আদর করবো।”

-“এই দূরে সরেন।
একদম এখন নেকামি করতে আসবেন না।”

সায়রা মিশানের থেকে নিজে কে ছাড়িয়ে নিলো।
আলমারির দিকে এগিয়ে গেলো।
সেটা খোলে কিছু খুঁজতে খুঁজতে বিরবির করে

-“এখন ঢং করতে এসছে, হু।
যখন একটা জিনিস চাইলাম আর অমনি না করে দিলো।
হনুমান, টিকটিকি।”

-“সব তোর বর।”

সায়রা মিশানের কথা শুনে পেছন ফিরে ধাক্কা খেলো মিশান এর শক্ত চওড়া শরীর টার সঙ্গে।
তৎক্ষনাৎ নাকে হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো।
ব্যথা পেয়েছে।
তবে মিশানের বুকে আরেক হাত দিয়ে ধাক্কা দিতে দিতে বলল

-“আপনি এখানে কি করছেন?
যখন তখন যেখানে সেখানে চলে আসেন।”

-“হু, ধাক্কাই এই অবস্থা।
নিজেই এখনো বাচ্চা।
আবার বাচ্চা নেওয়ার জন্য উতলা হয়ে আছে।”

মিশান কিছু টা তাচ্ছিল্যের সুরে কথা টা বলে।
সায়রা একটু খারাপ লাগে। কিন্তু তা প্রকাশ করে না।
নিজেও তেজ নিয়ে বলে উঠে

-“দেখুন,,

-“এখন দেখার সময় নেই, সুইটহার্ট।
একটু বের হচ্ছি।
ফিরতে রাত হবে। রাতে এসে সব দেখবো।
ঠিক আছে?”

কথা শেষ মিশান নিজের প্রয়োজনীয় সব নিয়ে ওয়াশ রুম চলে গেলো।
সায়রা মুখ ভেংচি কেটে ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে গেলো।
রুহির কাছে যাবে আর রাতেও আজ সেখানে থাকবে বলে মনে মনে ঠিক করে নিলো।
কিন্তু করিডর সবটা শেষ করে রুহির রুমে যাওয়ার আগেই মিশান এসে ওকে ঝট করে পেছন থেকে কোলে তুলে নিল।
সায়রা হকচকিয়ে উঠলো। ভয় চোখ বন্ধ করে মিশানের গলা জড়িয়ে ধরে।

-“এই আপনি না ফ্রেশ হতে গিয়েছিলেন?
ফ্রেশ না হয়ে আবার আমাকে কেন কোলে নিয়েছেন?”

-“উফ,আমি তো বলতেই ভুলে গিয়েছি আমি একা না।
তুইও যাচ্ছিস আমার সাথে। ”

-“আম,,,

-“চুপ আর একটাও কথা না।
বোরকা পড়ে রেডি হয়ে নে।”

সায়রা কে কোল থেকে নামিয়ে দিয়ে নিজেও আবার ফ্রেশ হতে যায়।
সায়রা বিছানায় সে ভাবে বসে থাকে।
মিশান মিনিট পাঁচের মাথায় বেরিয়ে আসে।
কিন্তু সায়রা কে এখনো আগের যায়গায় বসে থাকতে দেখে চোয়াল শক্ত হয়ে যায়।

ঝড়ের বেগে এগিয়ে গিয়ে এক টানে বসা থেকে টেনে তুলে।

-“কি সমস্যা তোর?
এমন কেন করছি?”

দাঁতে দাঁত চেপে বাহু ঝাঁকিয়ে প্রশ্ন করে।
সায়রা ব্যথা পায়।
নিজের হাত দিয়ে মিশানের হাত সরানোর চেষ্টা করে।
চোখ চিকচিক করে।
মিশানের মন বউয়ের চোখে পানি দেখে গলে।
আস্তে করে হাতের বাঁধন হালকা করে।
চোখ বন্ধ করে নিজের মাথার চুল খামচে ধরে।
রাগ কমানোর চেষ্টা করে।
অতঃপর নিজের দু হাতের আঁজলে বউয়ের মুখ নিয়ে নেয়।

-“আজ ডক্টর এর কাছে যাব।
ওনি বলেছে একটা টেস্ট করবে।
যদি দেখে সমস্যা পজিটিভ হয়েছে তবে আমরা বেবি নিতে পারবো।
তুই,,,

-“আর যদি নেগেটিভ আসে?”

মিশানের সব টা কথা না শুনেই প্রশ্ন করে বসে সায়রা।
মিশান হাসে আলতো করে হেসে জবাব দেয়

-“তোর ইচ্ছে আমি পূরণ করে দেবো।”

সায়রা বিস্ময় নিয়ে তাকায় মিশানের দিকে পরক্ষণে মুচকি হেসে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে স্বামী কে।
মিশান নিজেও হাত রাখে বউয়ের পিঠে।
আর মনে মনে ভাবে”আল্লাহ যেনো তোর ইচ্ছে পূরণ করে জান। আমিও চাই একটা বেবি যে তোকে মা আর আমাকে বাবা ডাকবে আদো আদো কণ্ঠে। পুরো বাড়ি মাতিয়ে রাখবে। কিন্তু তোর কিছু হয় গেলে আমি কি করে বাঁচব। তুই থাকলে আমার আর কিছু চাই না”।

-“যা রেডি হ।”

সায়রা মিশান কে ছেড়ে দেয়।তার পর আলমারি থেকে বোরকা বের করে পড়ে নেয়।
তার পর রেডি হয়ে নিচে চলে আসে।
প্রিয়তা মির্জা মাইশা চৌধুরী দুবোন মিলে রান্না ঘরে নাস্তা বানাচ্ছে।
রুহি, আরভী, সোহান,প্রহর লিভিং রুমে বসে টিভিতে কাটুন দেখছে। আর রাহান আহামেদ ডাইনিং এ বসে কফি খাচ্ছে। সারা আহামেদ নাস্তার জন্য সব ব্যবস্থা করছে।
সায়রা আর মিশান এগিয়ে গিয়ে সারা আহামেদর কাছে বলে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে পরলো।

————

সায়রা মিশান বসে অপেক্ষা করছে ডক্টর এর জন্য।
ডক্টর ওটিতে আছে।
অপারেশন শেষ করে এসে রোগী দেখবে।
অনেক রোগি এখানে কম বেশ সব মহিলাদের পেট উঁচু।
দেখে বোঝা যাচ্ছে ওনাদের দেহ আর একটা প্রাণ বেরে উঠছে।
সায়রা সবাই কে দেখছে।
মুগ্ধতা নিয়ে। আর ভাবছে ওরও তাদের মতো এক দিন পেট টা এমন উঁচু হবে।
সায়রা মাথা ঘুরিয়ে মিশানের দিকে চাইলো যে নিজের মনে ফোন ঘাঁটতে ব্যস্ত।
সায়রা মিশানের দিকে তাকিয়ে মুখ টা শুকিয়ে যায়।
এই লোক চাইলে এতো দিনে তার ইচ্ছে গুলো পূরণ হয়ে যেতো।
সব দোষ এই মিশান নামক হনুমানের।

এর মাঝে ডক্টর এর এসিস্ট্যান্ট জানলো ডক্টর এসছে।
দুই এক জন কেবিনেও গেলো।
প্রায় আধঘন্টার পর সায়রার সিরিয়াল এলো।
মিশান ওকে নিয়ে ডক্টর চেম্বারে ভিতর এলো।
ওরা এসেই আগে টেস্ট করে নিয়েছে।
তাই রিপোর্ট দেখালো।
ডক্টর রিপোর্ট দেখে জানালো সমস্যা টা ঠিক হচ্ছে।
তবে এখন বেবি নিতে পারবে।
কিন্তু রোগীর যত্ন নিতে হবে।
সব সময় চোখে চোখে রাখতে হবে।
মিশান ডক্টর এর সঙ্গে কথা বলে সায়রা কে নিয়ে হসপিটাল থেকে সোজা একটা রেস্টুরেন্টে চলে এলো।
এর মধ্যে একবারও মিশান কথা বলে নি সায়রার সঙ্গে। তবে সায়রা সে সব পাত্তা দিচ্ছে না সে নিজের মতো করে বকবক করেই যাচ্ছে।
বেচারি ভীষণ খুশি কি না।
তার পর ওরা রাতের ডিনার করে এর পর বাড়ি ফিরে এলো।
রাত তখন নয় টা। সবাই ডাইনিং টেবিল খাবার খাচ্ছে।
সবার সাথে হালকা কথা বলে মিশান রুমে চলে যায়।
আর সায়রা তখনি বোরকা খোলে সোফায় রেখে গিয়ে মা, মনি দের সাথে কাজ করতে করতে ডক্টর এর বলা সব কথা ফাশ করে দিতে লাগলো।
সবার খাবার খেয়ে লিভিং রুমে বসে আবারও একদফা আড্ডা দিলো।
রাত সাড়ে দশ টার দিকে সায়রা ঘরে এলো মিশানের জন্য কফি নিয়ে।
এটা মিশানের অভ্যাস রাতে ঘুমুতে যাওয়ার আগে এক মগ কফি খাবেই খাবে।
যদি মা, বউ, মনি ব্যস্ত থাকে তবে নিজে বানিয়ে নেয়।

এসেই মিশান কে রুমে পায় না সায়রা হাতে থাকা কাপড় গুলো সোফায় রেখে হাতে থাকা গরম ধুঁয়া উঠা কফির মগ টা নিয়ে বেলকনির দিকে এগিয়ে গেলো।
বেলকনির লাইট অফ।
শুধু চার দিকের চাঁদের আলো এসে পড়ছে।
যার মধ্যে মিশানের হাতে মিটমিট করে জ্বলতে থাকা সিগারেট টা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে

-“আগে তো কখনো দেখি নি?”

সায়রা মগ টা রেলিং এর উপর রেখে কণ্ঠে অভিমান নিয়ে বলে কথা টা।

-“আগে কখনো তোকে হারানোর ভয় ছিল না।
তাই দেখিস নি।”

শান্ত কণ্ঠে সহজ উত্তর।
কিন্তু সায়রার কাছে এটা বেশ কঠিন আর বিরক্তিকর উত্তর মনে হলো।

-“কি হয়েছে আপনার?
এমন উদাস কেন?
আমি এখন সুস্থ আপনার তো খুশি হবার কথা। ”

মিশান সিগারেট ততক্ষণে ফেলে দিয়েছে।
ঝট করে ঘুরে আচমকাই জড়িয়ে ধরে সায়রা কে। সায়রা আকস্মিক ঘটনায় একটু চমকে উঠলো।
কিন্তু ঘটনা বুঝতে পেরে নিজেও জড়িয়ে নিলো মিশান কে।
কিন্তু মিনিট দুই এক পেরোতেই কাঁধে ভেজা অনুভব করলো।

-“তোকে আমি হারাতে পারবো না কলিজা।
আমরা না হয় বাচ্চা না নেই।
প্লিজ। ”

ধরে আসা গলায় মিশান কথা গুলো বলে সায়রা কে ছেড়ে দিয়ে নিজের বাহুর সাহায্য চোখ থেকে গড়িয়ে পড়া জল মুছে নিলো।
অতঃপর আলতো করে সায়রার কপালে নিজের সিগারেটে পোড়া গোলাপি ঠোঁট জোড়া ছুঁয়ে দিল।
সায়রা এতোক্ষণ স্তব্ধ হয়ে ছিল।
একটা পুরুষ কতাটা ভালেবাসলে তার শখের নারীর জন্য চোখ দিয়ে পানি আসতে পারে সায়রা জানে না।
কিন্তু ওর আজ মনে হচ্ছে ও সত্যি ভাগ্যবতী।
সায়রা চোখ বন্ধ করতে বাম চোখ থেকে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে।

মিশান নিজের অধর জোড়া দিয়ে বেশ অনেক টা সময় নিয়ে গাঢ় একটা ভালোবাসার পরশ দিলো বউয়ের কপালে।

-“আপনার ভালোবাসার জোরে আমাকে আল্লাহ ছাড়া কেউ কেরে নিতে পারবে না মিশান।
আল্লাহর উপর ভরসা রাখুন আমার কিছু হবে না।”

-“তবুও আমার ভয়,,,

-“প্লিজ।”

মিশান কে সব টা কথা শেষ করতে না দিয়ে সায়রা অনুরোধের সুরে বলে উঠে।

মিশান আর কিছু বলে না রেলিং এর উপর থেকে কফির মগ নিয়ে সায়রার হাতে দেয়।
সায়রা এক চুমুক দিয়ে তা আবারও মিশানের হাতে মগ ফিরে দেয়।
মিশান দুটা চুমুক দিয়ে মগ টা ওখানে থাকা পাশের সেন্টার টেবিলে রেখে।
সায়রা কে কোলে নিয়ে রুমে চলে আসে।

#চলবে…..

#হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি[২]
#পর্ব_২০
#জান্নাত_সুলতানা

-“তোর কিছু হলে আমি নিজেও শেষ হয়ে যাব, কলিজা।”

সায়রা কে বিছানায় শুয়ে দিয়ে মিশান সায়রার গালে হাত রেখে করুন কণ্ঠে কথা টা বলে উঠে।

-“ভরসা রাখুন কিছু হবে না আমার, মিশান।”

সায়রা ভরসা দেয় স্বামী কে নিজেও বাম হাত মিশানের খুঁচা খুঁচা দাঁড়ি ভরতি গালে হাত বুলিয়ে
কথা টা শেষ করে সায়রা মিশানের অধরে আলতো করে ঠোঁট ছুঁয়ে দিয়ে সরে আসতে নিলেই মিশান সায়রার মাথার পেছনে হাত দিয়ে নিজের অধর দ্বারা সায়রার অধর চেপে ধরে ভালোবাসার পরশ দিতে থাকে সায়রাও চোখ বন্ধ করে তা গ্রহণ করে।
কিন্তু হাত তার মিশানের সার্ট এর বোতামে।
আস্তে আস্তে সব কটা বোতাম খোলা নেয়।
মিশান সায়রা কে ছেড়ে দিয়ে গায়ে থাকা সার্ট টা খোলে ছুঁড়ে ফেলে মেঝেতে।
সায়রা পরিহিত মেয়েলী পাতলা টি-শার্ট টা সরিয়ে চুমু আঁকে পেটে, গলা।
আর নিজের মতো করে ভালোবাসতে থাকে বউ কে।
সায়রাও সুখের জল গড়িয়ে পড়ে চক্ষু হতে। সায়রা কিছু সমস্যা থাকায় যতবারই স্বামী স্ত্রীর মতো করে ভালোবাসা আদান-প্রদান করে ঠিক ততবারই মেয়ে টা ব্যথায় নুয়ে পরে।মিশান যে সেটা বুজে না তেমন নয়।কিন্তু সায়রা মিশান কে দূরে যেতে দেয় না। নিজের কষ্টে তা কখনো মিশানের সুখে বাঁধা হয় না।কিন্তু এবার কষ্টের চেয়ে আনন্দ বেশি হচ্ছে কেন না সে হয়তো
এবার সে তার ইচ্ছে পূরণ, মা হওয়ার আনন্দ সুখের দিকে এক ধাপ এগিয়ে গেলো।

————–

-“আমি বলি কি সারা তোরা বরং এখানে থেকে যা।
তাছাড়া সামনে মাসেও তো ইনিয়া টার বিয়ে।
সাদনান ভাই আপনি কি বলেন?”

-“আমি কি বলবো।
বাবা মা চলে যাওয়ার পর থেকে তো সব সময়ই বলে এসছি যেনো এখানেই সেটেল্ড হয়।
কিন্তু ওনি তো ওনার জন্মস্থান ছেড়ে আসবে না।
যেনো ঢাকা থেকে কুমিল্লা টা বেশি দূর।
চাইলে যখন তখন যাওয়া যাবে।
আমি আর এ বিষয়ে কিছু বলতে চাই না।”

সাদনান মির্জা কথা গুলো বলেই গটগট পায়ে লিভিং রুম থেকে প্রস্থান নিলেন।
সবাই মুখ টিপে হাসে।
শুধু সারা অসহায় চোখে তাকিয়ে স্বামী রাহান আহামেদ এর দিকে।
কিন্তু ব্যবহার টা হলো তিনিও হাসছে।

-“আমি এবার ঢাকা থেকে আর কোথাও যাচ্ছি না।”

সায়রা আহামেদও কথা শেষ হনহনিয়ে লিভিং রুম ছেড়ে নিজের জন্য বরাদ্দকৃত রুমে চলে গেলো।
ওনার পেছনে রাহান আহামেদও চলে গেলো।
যা দেখে আয়ান হো হা করে হেসে দিলো।
আর বাকিরা ঠোঁট টিপে হাসে।

-“এই রাহান টা এখনো আগের মতোই রয়ে গিয়েছে।”

কথা গুলো বলে তিনি মাইশা চৌধুরী কে ইশারা করে নিজেও লিভিং রুম ছাড়ে।
প্রিয়তা মির্জাও চলে নিজের রুমে জামাই তার নিশ্চয়ই খেপেছ। এতোক্ষণ রুমে একা একা তিনি কিছুতেই থাকতে চায় না।
বুড়ো হয়েছে কিন্তু বউ তার সব সময় আশেপাশে চাই।
আর এই বুড়ো বুড়ির কাণ্ডে দেখে লিভিং রুমে বসে থাকা সব কয় টার ছেলে মেয়ে হেসে কুটিকুটি হতে লাগলো।
————-

সাদনান মির্জা বোনের সাথে কিছু টা রাগ সাথে অভিমান বাবা-মা মারা যাওয়ার পর ওনাকে ঢাকাতে থাকতে বলা হয়েছে।
ওনি বলেছিল বাপের বাড়ি থাকলে লোকে খারাপ বলবে আর নিজের দাম থাকে না।
সবাই কথা টায় মনে মনে কষ্ট পেয়েছে কারণ প্রিয়তা মির্জা বা মাইশা চৌধুরী কেউ এমন না তবে মুখে তা কেউ প্রকাশ করে নি। তবে সারা আহামেদও কথা টা তেমন কাউ কে উদ্দেশ্য করে বলে নি। কিন্তু তিনি হয়তো এটাই জানে না তার এই ভিত্তিহীন কথা টাতে তার অজান্তেই কেউ কেউ ভীষণ ভাবে কষ্ট পেয়েছে।
আজ্জম মির্জা গত হওয়ার পর ওনার স্ত্রী সালেহা বেগমও বেশি দিন বাঁচে নি। স্বামীর শোকে শোকে তিনি বছর ঘুরেতে স্বামীর কাছে চলে যায়। তখন সাদনান মির্জা মা-বাবা দু’জন কে হারিয়ে সাদনান মির্জা বলেছিল বোন সারা আহামেদ যেনো আলাদা ফ্ল্যাট এ থাকে তবুও যাতে সবার কাছাকাছি থাকে কিন্তু তিনি তাতেও রাজি হয় নি।
ছেড়ে আসে নি শশুরের আগের পুরোনো ভিটা।
এটা নিয়ে সারা আহামেদের উপর কিছু টা রাগ থেকেই আর আগের মতো বোনের সাথে তেমন আর ওতো টা গদগদ ভাব নেই।
কথাও কম বলে খুব প্রয়োজন ছাড়া কথা বলে না।
তবে সারা আহামেদ এর এতে কিছু আসে যায় না সে এক মাস পনেরো দিন পর পর সপরিবারে ঢাকা চলে আসে।
এতে সবাই খুশি হয় কিন্তু এক্কেবারে না থেকে যাওয়ার জন্য সবাই খুশি টা প্রকাশ করে না।

——–

আজ থেকে রুহির টেস্ট পরীক্ষা শুরু। সকালে রুহি কলেজের জন্য এক্কেবারে রেডি হয়ে এসছে।
সবাই নাস্তা করছে।
এখন আর আগের মতো আরভী, সায়রা আগে আগে নাস্তা করতে বসে যায় না। মা দের সাথে এটা সে টা এগিয়ে দিয়ে সাহায্য করে।যা দেখে রুহির ইচ্ছে হয় সেও এমন কাজ করবে পড়া লেখা করবে না।
এসব পড়া লেখা ভালো লাগে না তার।
কিন্তু এই ইচ্ছের কথা প্রহর এর কাছে জানানোর পর সে এক কথায় বলে দিয়েছে “কম পক্ষে অনার্স শেষ করা লাগবে না হলে সে এই মেয়ে কে বিয়ে করবে না।সে একজন ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট স্কুল থেকে শুরু করে সে সব সময় টপ করেছে। আর সেখানে তার বউ কি না সামান্য ইন্টার পাস।এটা সে কিছুতেই হতে দিবে না। যত যাই হোক সে এই মেয়ে কে পড়া লেখা করাবেই।”
ব্যস রুহি সেই থেকে মন দিয়ে পড়া লেখা করছে।
প্রহর এর ভার্সিটিতে তাকে চান্স পেতেই হবে।
এসব ভাবতে রুহি খাবার শেষ আয়ান চৌধুরী সাথে কলেজের উদ্দেশ্য বেরিয়ে পড়ে।
সবাই যার যার কাজে চলে গেলো।
মিশান আজ এখনো ঘুম থেকে উঠে নি কাল অফিস থেকে দেড়ি করে ফিরেছে।
কিছু মিটিং থাকার সুবাদে।
তাই এখনো ঘুমে সে।
সারা আহামেদ একটা থালায় নাস্তা নিয়ে সে টা সায়রার হাতে ধরিয়ে দিয়ে মিশানের রুমে পাঠিয়ে দেয়।
সে বসেছিল মাত্র প্রহর,সোহান,আরভীর সাথে আড্ডা দিবে বলে কিন্তু তা আর হলো না।
মনির থেকে নাস্তা নিয়ে নিজেদের রুমে চলে আসে।
এসে দেখলো মিশান মহাশয় এখনে কম্বল মুড়ি দিয়ে খালি গায়ে উবুড় হয়ে ঘুমাচ্ছে।
কম্বল অর্ধেক নিচে পরে আছে।
সায়রা ফোঁস করে শ্বাস ফেলে এগিয়ে গিয়ে খাবার থালা সেন্টার টেবিলে রেখে মেঝেতে পড়ে থাকা কম্বল এর অংশ উঠিয়ে বিছানায় রাখে।
অতঃপর নিজের ঠান্ডা হাত টা মিশানের পিঠে রেখে হালকা করে ডাকে

-“উঠুন।
খাবার খেয়ে আবার ঘুমাবেন না হয়।”

মিশান নড়েচড়ে সায়রা হাত নিজের পিঠের উপর থেকে নিজের বুকের মধ্যে চেপে ধরে আবারও ঘুমিয়ে পড়ে।
সায়রাও চুপ করে স্বামীর মুখে পানে চেয়ে থাকে।
আর ভাবে “কে বলেছে ঘুমিয়ে থাকলে শুধু মেয়েদের সুন্দর লাগে।শুধু মেয়েদের না ছেলেদেরও লাগে। এই যে তার স্বামী কে এখন আস্ত একটা মায়ার খনি মনে হচ্ছে।”
এসব ভাবতে ভাবতে সায়রা মিশানের চুলের ফাঁকে হাত ঠুকিয়ে ঘুমন্ত মিশানের এলোমেলো চুল গুলো আরও একটু এলোমেলো করে দেয়।
মিশান ঘুমের মাঝে ভ্রু কুঁচকে নেয়। এটা তার মোটেও পছন্দ নয়।
সায়রার পিড়াপিড়িতে মিশানের ঘুম ছুটে গেলো।
উঠে বসলো কম্বল সরিয়ে ঘুম চোখে জিজ্ঞেস করলো

-“কি হয়েছে, সুইটহার্ট?
জ্বালানো হচ্ছে কেন?
কাল অনেক কাজ করেছি।অনেক বড় এক টা ডিল ফাইনাল করেছি।”

-“আমি জানি তো।
ফ্রেশ হয়ে খাবার খেতে হবে না?”

মিশান ততক্ষণে নেশাক্ত দৃষ্টিতে বউয়ের দিকে তাকায়।
সায়রা কথা শেষ উঠে যেতে নিলেই মিশান খপ করে বউয়ের হাত ধরে আটকে দেয়।
সায়রা পেছন ফিরে মিশানের দিকে জিজ্ঞেসা দৃষ্টিতে তাকায়
আর অমনি মিশান একটানে বউকে নিজের কোলে এনে ফেলে শক্ত করে কোমর জড়িয়ে ধরে নেশাতুর কণ্ঠে বলে উঠে

-“এখন খাবার নয় অন্য কিছু চাই।”

সায়রা নাক মুখ কুঁচকে নেয় মিশানের কথা।
ভ্রু কুঁচকে বলে উঠে

-“আপনি তো ফ্রেশ হন,,

পুরো টা শেষ করতে পারে না সায়রা মিশান তার আগে নিজের পুরুষালী শক্ত অধর দ্বারা সায়রার অধর চেপে ধরে।
নিজের হাতের এলোমেলো স্পর্শে পাগল করে বউ কে।
সায়রা বাধ্য হয়ে হারমানে স্বামীর ভালোবাসার কাছে।
নিজেও সঙ্গ দেয় স্বামীর।
মিশান নিজেও নিজের ভালোবাসার চাদরে মুড়ি নেয় বউ কে।
অবহেলিত পরে রয় সেন্টার টেবিলে থাকা খাবার থালা।
সাথে দুট মনের অস্তিত্বের ভালোবাসার মিলনের সাক্ষী হয় এই শীতের সকালে পর্দার ফাঁক ভেদ করে আসা মিষ্টি রোদ টা।

#চলবে…

[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ।]

হৃদয় জুড়ে শুধু আপনি ২ পর্ব-১৭+১৮

0

#হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি[২]
#পর্ব_১৭
#জান্নাত_সুলতানা

-“আচ্ছা আমি কি ঘুমিয়ে আছি?”

মিশান মুখের খাবার টা শেষ করে জিজ্ঞেস করে।
সায়রা মিশানের মুখের আবারও খাবার পুরে জবাব দেয়

-“না মিস্টার চৌধুরী।
আপনি জেগে আছেন।
আর বউয়ের হাতে খাবার খাচ্ছেন। ”

মিশান আর কিছু বলে না। বউয়ের হাতে চুপ চাপ খাবার খেয়ে নেয়।
মিশান বুঝতে পারছে কাল রাতের ডোজ টা ভালোই কাজে দিয়েছে।

-“শুনুন আমি এখন আরভীর কাছে যাচ্ছি।
রুমে কখন আসতে পারবো জানি না।
আপনার সব প্রয়োজনীয় জিনিস সোফায় রেখে দিয়েছি।”

মিশান কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে সায়রা এঁটো প্লেট নিয়ে রুম ছেড়ে বেড়িয়ে গেলো।

মিশান আর বসে থাকে না।
নিজেও বেরিয়ে ছাঁদে চলে গেলো।
কাল রাতের পর আর একবারও ওই দিকে যাওয়া হয় নি। অবশ্য কাজের জন্য সব লোক আছে।
শুধু একটু আধটু দেখিয়ে দিলেই হয়।
আর তাছাড়া প্রহর, আয়ান চৌধুরী, সাদনান মির্জা সাথে প্রহর আর মিশানের কিছু ফ্রেন্ডও আছে।
ওরা অবশ্য কাল সকালেই এসছে।
যদিও এতো হুলস্থুলের মাঝে কারোর সাথেই তেমন কথা হয় নি।
আর বউ তার কোনো ছেলের সাথেই কথা বলে না।
সেই ছোট্ট বেলার কথা আজও রেখে দিয়েছে।
এসব ভাবতে ভাবতে মিশান ছাঁদে চলে আসে।
অতঃপর সবার সাথে কাজে যোগ দেয়।

—————–

বিয়ে বাড়ি বলে কথা কত কাজ। কেউ হাত গুটি বসে নেই।সোহানদের নিমন্ত্রিত মেহমানগন সবাই কম বেশ এসে পড়েছে।
সকলকেই নাস্তা পানি দিতে হচ্ছে।
এর মধ্যে উপর থেকে মিশানের ডাক এলো উপরেও কিছু নাস্তা দিয়ে আসার জন্য।

কারোর হাত ফাঁকা নেই প্রিয়তা মির্জা মেয়ে কে ডেকে এক টা ট্রে হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলেন

-“এগুলো ছাঁদে একটু দিয়ে আয়।”

সায়রা কিছু বলে না চুপ চাপ মাথা নেড়ে উপর ছাঁদের উদ্দেশ্য পা বাড়ায়।

কিন্তু ছাঁদে আর যেতে হয় না।
প্রহর নেমে এসে বোনের হাত থেকে ট্রে নিয়ে বোন কে আবার নিচে পাঠিয়ে দেয়।
মূলত মিশান পাঠিয়েছে প্রহর কে।
কারণ এখন নিচে কোনে মহিলা যে আসবে না তা বেশ আন্দাজ করতে পেড়ে প্রহর কে পাঠিয়েছে উপর তার বউ যে নো না আসে।
কারণ সেখানে কম বেশ অনেক ছেলে আছে বাহিরের।

————————

আরভী মিশান কে ঝাপটে ধরে কেঁদেই চলেছে।
বিয়ের কাজ একটু আগেই শেষ হয়েছে।
যদিও আরভী আজ কুমিল্লা যাবে না।
কিন্তু ওর কান্না কেন করছে সেটা কেউ বুঝতে পারছে না।
এবার রুহি নাক মুখ কুঁচকে নিলো।
এগিয়ে এলো ভিড় ঠেলে।
আরভীর হাতে চিমটি কেটে ফিসফিস করে বলে

-“এই তুই কান্না কেন করছি?
তুই তো আজ শশুর বাড়ি যাচ্ছিস না তবুও কেন কান্না করছি?”

রুহি কথা টা ফিসফিস করে বললেও সায়রা আর ইনিয়া পাশ থেকে শুনে ফেলে।
ইনিয়া বোন কে টেনে নেয় সাইডে।
আরভীও ততক্ষণে কান্না বন্ধ করেছে। সাথে লজ্জাও পাচ্ছে সত্যি তো।
তবে কোনো এক অজানা কারণে মনে হচ্ছে আজ থেকে সে এ বাড়ির মেহমান।
আয়না মেয়ে কে বকাঝকা করে।
সায়রা আরভী কে নিয়ে ওর রুমে চলে যায়।

————

-“শোন আরভী সোহান ভাইয়া এলে ওনার পায়ে হাত দিয়ে সালাম করবি।”

-“এই তুই এসব কি বলছি?”

ইনিয়া রুহি কে শাড়ী পড়াতে পড়াতে ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে।

-“কেন তোমার শাশুড়ী আর কয়েকজন মহিলাও তো বলাবলি করছিল এটা নাকি নিয়ম।”

-“তুই চুপ করবি?
আর এসব আজগুবী কথা যেনো তোর মুখে না শুনি।”

দু বোনের কথার মাঝে সায়রা বলে উঠে

-“তুই বরং প্রহর এর পায়ে হাত দিয়ে,,,

-“তুমি চুপ করো।
আমাকে লজ্জা না দিলে তোমার পেটের খাবার হজম হয় না।”

সায়রার পুরো কথা না শুনেই বলে উঠে রুহি।
আরভী ফিক করে হেসে দেয় রুহির কথায়।
সায়রা আর ইনিয়াও হাসে। রুহি এক দৌড়ে ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে যায়।

————

সারা দিনের জমজমাট পরিবেশ টা কেমন নিশ্চুপ হয়ে গিয়েছে, বাড়ি একদম শান্ত কোনো সারা শব্দ নেই।কিছু মেহমান রয়েছে কিছু বিদায় নিয়েছে।
রাত এগারোটা বাজে এখন। সবাই ঘুমিয়ে পরেছে।
সোহান ফ্রেশ হয়ে এসে আরভী কে আদেশের সুরে বলল

-“যা ফ্রেশ হয়ে আয়।
নামাজ পড়তে হবে। ”

-“আচ্ছা।”

আরভী বাধ্য মেয়ের মতো বলে।
উঠে ওয়াশরুম চলে যায়।
সোহান মুচকি হাসে।
একটা জায়নামাজ তাই এটা বিছিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে একটু সামনে এক পাশে।
আরভী ফ্রেশ হয়ে এলে বউ কে ডেকে এনে নিজের কিছু টা পেছনে দাঁড়াতে ইশারা করে।
আরভীও দাঁড়ায়।
নামাজ শেষ সোহান বিছানার এক পাশে পা ঝুলিয়ে বসে।
আরভী তখন জায়নামাজ গুছিয়ে রেখে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে গায়ের গহনা গুলো খোলার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।
তবে সব খোলে নিলেও কোমরে বিছা টা খোলতে সক্ষম নয়।

সোহান মুচকি হেসে উঠে গিয়ে সেটা খোলে দেয়।
কিন্তু নিজের অবাধ্য চোখ জোড়া আটকে যায় আরভীর ঢেউ খেলানো কোমরে।
না চাইতেও চুমু আঁকে সেথায়।
আরভী খামচে ধরে সোহানের চুল।
সোহান কিছু একটা ভেবে ছেড়ে দেয় আরভী কে উঠে দাঁড়িয়ে।
ট্রাউজার এর পকেটে বাম হাত ঢুকিয়ে একটা ছোট বক্স বের করে।
আরভীর সামনে খোলে ধরে।
একটা ডায়মন্ড এর রিং।

-“আমার এতটুকু সামর্থ্য রে পিচ্চি।
তবে তোর কাবিনের টাকা সব টা জোগাড় আছে।
কাল বাসায় গিয়ে দিয়ে দেবো।
আর এটা আজকের রাতের উপহার।
কিন্তু আমি আমার সাধ্য মতো চেষ্টা করবো জীবনে অর্থে দিক দিয়ে তোকে খুশি রাখার জন্য।”

সোহানের পুরো কথা শুনে না আরভী। তার আগেই নিজে থেকে জড়িয়ে ধরে সোহান কে।

-“আমার এসব চাই না।
শুধু আপনার ভালোবাসা পেলেই হবে সোহান ভাই।”

সোহান আরভীর বাম হাত টায় রিং টা পড়িয়ে দিচ্ছিল।
কিন্তু ভাই ডাক শোনে এক সেকেন্ড থেমে এক ধাক্কা সেটা অনামিকা আঙুলে পড়িয়ে দিয়ে।
আরভী কে নিজের শরীর থেকে আলগা করে দিয়ে ঝট করে কোলে তোলে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে আরভী উপর নিজের সম্পূর্ণ ভর ছেড়ে নিজের বাম হাতের তর্জনী আঙ্গুল দ্বারা মুখের সাইডে ঠোঁটে স্লাইড করতে করতে নেশাক্ত কণ্ঠে বলে উঠে

-“আজকের পর যেনো আর কখনো ভাই ডাকতে না পারিস তার ব্যবস্থা করি?
কি রাজি?”

আরভী এতোক্ষণে বুঝতে পারলো সোহন হুট করে এমন করার কারণ।
আরভীর হাত জোড়া সোহানের বুকে ঠেকানো ছিল।
তবে মূহুর্তের মাঝে তা পিঠে নিয়ে হালকা উঁচু হয়ে জড়িয়ে ধরে সোহান কে।

সোহান যেনো তার উত্তর পেয়ে গেলো।
গলায় মুখ গুঁজে পাগলের মতো চুমু আঁকে সেখানে।
আরভী কাঁপছে ভীষণ বাজে ভাবে কাঁপছে।
চোখ বন্ধ করে আছে। চোখের পাতা গুলো থেকে থেকে নড়ছে।
চিকন পাতলা ঠোঁট জোড়া কেমন শুকিয়ে আছে।
সোহানের আর এক সেকেন্ডও দেড়ি করে না।
আরভীর ঠোঁট জোড়া নিজের ঠোঁটের সাহায্য তা মুখে পুরে নেয়।
গভীর হয় স্পর্শ।
আরভী তলিয়ে যাচ্ছে সোহানের ভালোবাসার সমুদ্রের।
এই ভালোবাসার বাঁধন ভেঙ্গে চাইলো বেরোতে পারবে না তারা দুজন।
আর হয়তো চায়ও না তারা কেউ এতো শক্ত বাঁধন ভেঙ্গে ফেলতে।

———–

-“এই তুই ওখানে কি করছিস?”

মিশান ওয়াশ রুম থেকে বেরিয়ে তোয়ালে দিয়ে শরীর মুছতে মুছতে ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে সায়রা কে।
সায়রা মিশান কে দেখেই আলমারি থেকে তড়িঘড়ি করে কিছু একটা বের করতে নিয়েও আবার তা যথাস্থানে রেখে পেছনে ফিরে আমতা আমতা করে বলে উঠে

-“কই কিছু না তো।
আপনি,,,

-“কফি লাগবে।”

সায়রা কে সবটা কথা সম্পূর্ণ করতে না দিয়ে আদেশের সুরে বলে উঠে মিশান।
সায়রা অসহায় ফেস করে তাকিয়ে মিশানের দিকে।
এখন কিছুতেই নড়বে না ও।
কিন্তু মিশান কে সেটা বুঝতে না দিয়ে মিনমিন করে জবাব দেয়

-“আপনি একটু কষ্ট করে আজ নিজে বানিয়ে নিন না।
প্লিজ। ”

কি সুন্দর আবদার ফেলে দেওয়া যায় কি।
মিশানও ফেলতে পারে না।
চুপচাপ তোয়ালে সোফায় ফেলে হনহনিয়ে রুম ছেড়ে বেড়িয়ে গেলো।
সায়রা বুকে হাত দিয়ে ফুস করে শ্বাস ছাড়ে।
অতঃপর পেছন ফিরে আবারও আগের নেওয়া অতি গোপনীয় জিনিস টা হাতে নিয়ে বিরবির করে বলে উঠে

-“নিজে যেমন অসভ্য চিন্তা ভাবনাও তেমন।
কিন্তু অসভ্য জামাই আজ আপনার ঘুম আমি হারাম করে দেবো।”

#চলবে…..

[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ।]

#হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি[২]
#পর্ব_১৮
#জান্নাত_সুলতানা

-“সায়রা?”

মিশান রুমে ঢুকে বউ কে রুমে না দেখে ডাকে সায়রা কে।
সায়রা ওয়াশ রুম থেকে উত্তর দেয়

-“হ্যাঁ, আসছি।”

মিশান আর কিছু বলে না কফির কাপে চুমুক বসাতে বসাতে বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ায়।
রেলিং ধরে খোলা আকাশের দিকে তাকায়।
বাড়ি টা শহর থেকে কিছু টা দূরে তবে অতো টাও দূরে নয়।
মাইশা চৌধুরী আর প্রিয়তা মির্জার আবদারেই নতুন বাড়ি শহর থেকে দূরে বানানো হয়েছে।চার দিকে সুন্দর করে বাউন্ডারি আর তার ভিতরে নানা রকমের গাছ।
আর তার মধ্যে এই দোতলায় একটা উপর নিচ মিলিয়ে দশ রুমের একটা বাড়ি। তার পেছনে রয়েছে গেস্ট হাউজ।
বাড়ি টা বেশ সুন্দর।
যে কারোর নজর এই বাড়ি টার উপর না চাইতেও পড়বে।
বাড়ি টার ঠিক সামনে রয়েছে শান বাধানো একটা পুকুর। দেখতে অনেক সুন্দর পুকুর টা।কিন্তু এখন মিশানের রুম
উপর থেকে চাঁদের আলোয়ে এখন আরও বেশি আকর্ষণীয় লাগছে।
হাতের কফি তার ঠান্ডা হয়েছে অনেক আগেই।
মিশান এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে সে দিকে।
কিন্তু দৃষ্টি তার সে দিকে থাকলে সে বেশ ভালো করেই টের পেয়েছে বউ তার ঠিক পেছনে দাঁড়িয়ে।
শীতের মৌসুম না হলে মিশান এখন বউ কে নিয়ে সত্যি বাগানে যেতো।

-“চাদর নিয়ে এসছিস তো?”

মিশান কথা টা বলার অনেকক্ষণ ধরে কোনো উত্তর আসছে না। মিশানের ভ্রু কুঁচকে আসে।
শুধু জোরে জোরে শ্বাস নেওয়ার শব্দ হচ্ছে।
মনে হচ্ছে পেছনে দাঁড়ানো নারী টা বেশ ঘাবড়ে আছে।

মিশান এবার কফির মগ টা রেলিং এর উপর রেখে পেছন ফিরে তবে কিছু বোঝার আগেই সায়রা মিশান কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।
মিশান স্তব্ধ।
কি ছিল একটু আগে ওটা।
আর ভাবতে পারে না মিশান।না চাইতেও সায়রার উন্মুক্ত পিঠে হাত রাখে।
আর সায়রা আরও একটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরার বাঁধন।
যেনো নিজের শরীর টাকে লুকাতে চাইছে চোখ বন্ধ করে।
কিছু টা কাকের মতো। কাক যেমন কিছু লুকানোর সময় চোখ বন্ধ করে মনে মনে ভাবে আমি দেখতে পাচ্ছি না মানে কেউই দেখতে পাচ্ছে না।
সায়রার ঠিক সেই দশা।

-“তুই,,

-“প্লিজ কিছু বলবেন না।
আমার এমনিতেই কেমন লাগছে।”

-“আচ্ছা বলবো না।
তবে না হয় করে দেখাই।”

নেশাতুর কণ্ঠে কথা টা বলেই মিশান সায়রা কে আরও কিছু টা শক্ত করে জড়িয়ে ধরে নিজের শরীরের সঙ্গে মিশিয়ে নেয়।
সায়রা এখন শুধু মিশানের গলায় ঝুলে আছে।
মিশান এভাবে থেকেই সায়রা কে নিয়ে ধীরে পায়ে হেঁটে হেঁটে রুমের ভিতর প্রবেশ করে।

-“এক বার দেখবো?”
প্লিজ। ”

-“না।
লাইট অফ করুন। ”

মিশান শোনে না কিছু।
নিজের শরীর থেকে আলগা করে সায়রা কে মূহুর্তের মধ্যে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় বিছানায়।
সায়রা নিজে কে লুকাতে ব্যস্ত। কিন্তু সামনে দাঁড়ানো মিশান বউয়ের এই রুপে পাগল, উন্মাদ। সায়রা ততক্ষণে আবারও এসে নিজের লজ্জা লুকাতে স্বামীর বুকে মুখ গুঁজে।
তবে মিশান ভাবছে একটা সর্ট পাতলা ফতুয়া যে তার বউ কে এতো টা আকর্ষণীয় লাগবে মিশান কল্পনাও করে নি।
সুন্দর শরীরে কালো রং এর এই ড্রেস টা যে এতো টা মোহনীয় লাগবে।
মিশান এসব ভাবতে ভাবতে বলে উঠে

-“এতো সুন্দর মূহুর্তে কি লাইট টা অফ করলে সেটা উপলব্ধি করা যাবে?”

সায়রা কতক্ষণ চুপ থাকে।
তার পর জোরে জোরে কয়েক বার শ্বাস টেনে বলে উঠে

-“রাজি, যদি।
আপনিও আমার কথায় রাজি হন তবে।”

মিশানের চোয়াল শক্ত হয়।
সায়রার পিঠে থাকা হাত মুঠোবন্দি করে নামিয়ে নেয় সেখান থেকে।
শক্ত হাতে বাহু খামচে ধরে বউয়ের।

-“তুই ভালো করেই জানিস তোর শরীরের অবস্থা।”

তার পর একটু চুপ থেকে আবারও বলে উঠে

-“যা ড্রেস চেঞ্জ করে আয়।
এই ঠান্ডায় এসব পড়তে হবে না।”

তার পর বউ কে ছাড়িয়ে গিয়ে বিছানার এক পাশে গুটি শুটি মেরে শুয়ে পড়ে।
সায়রারও অভিমান জমে মনে।
চুপ চাপ রাতের পোষাক পড়ে এসে লাইট অফ করে অন্য পাশ ফিরে শুয়ে পড়ে।
এক টা বাচ্চাই তো।এমন করার কি আছে সায়রা বুঝতে পারছে না।
কিন্তু ও তো আর জানে না।বাচ্চা নিলে হয় বাচ্চা নয় ও নিজে যে কোনো এক জন থাকবে।
সেই ভয়ে মিশান বাচ্চা নিতে রাজি না।

—————

সবাই নাস্তার টেবিলে বসে আছে। শুধু সায়রা আর আরভী ছাড়া।সায়রা গিয়েছে আরভীর জন্য নাস্তা দিতে। সোহান হালকা নাস্তা করে ডাইনিং টেবিল ছাড়ে।
হন্তদন্ত হয়ে উপর চলে গেলো।
রুহি কলেজ যাবে তাই একবারে রেডি হয়ে এসছে।
প্রহর এর আজ এক টা পরীক্ষা আছে তাই সেও নাস্তা শেষ গাড়ি চাবি নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছিল।
কিন্তু প্রিয়তা মির্জা আদেশে রুহি কেও সাথে নিতে হলো।
প্রহর মায়ের কথা মতো রুহি কে সাথে নিয়ে গেলো।

———-

-“তুই কি রে?
মেয়েটার কি অবস্থা করেছিস?”

-“তুই এসব রাখ বইন।
আগে বল ওর জন্য কি ডক্টর আনবো?
নাকি আমি গিয়ে ফার্মেসি থেকে ঔষুধ নেবো?”

সায়রা কে সোহান করুন কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে।
সায়রার হাসি পাচ্ছে সোহানের এমন অবস্থা থেকে তবে আরভীর দিকে নজর দিতেই দেখলো ও ব্যথায় কাতরাচ্ছে।
তাই আবার হালকা মেকি রাগ দেখিয়ে বলে উঠে

-“আমার বোন টা ছোট তোর সে দিকে খেয়াল রাখা দরকার ছিল।”

সায়রা কথা গুলো গম্ভীর কণ্ঠে বলেই ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে গেলো। সোহান গিয়ে বউয়ের পাশে বসে নিজে আরভীর মুখে খাবার দেয়।
সোহান জানে সায়রা কিছু একটা ব্যবস্থা তো করবেই।ঠিক হলো সোহানের ভাবনা। সায়রা
ফিরে এলো মিনিট দুই এক এর মাথায় হাতে কিছু ঔষুধ।
ঔষুধ গুলো সেন্টার টেবিলে রাখে।

-“খাবার শেষ সব গুলো থেকে এক টা এক টা ওষুধ খাইয়ে দিবি।”

কথা শেষ আরভীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে মুচকি হেসে চলে গেলো।

সোহানের ভালোবাসা আরভী মন নিতে পারলেও দৈহিক গঠন দিয়ে সোহানের ভালোবাসা আরভী নিতে পারে নি।
প্রথম হয়তো তাই এতো টা কষ্ট পেয়েছে।
সোহানের সেই রাত থেকে দু চোখ এর পাতা আর এক করতে পারে নি।
তার ভালোবাসার মানুষ টা যে পাশে শুয়ে ছটফট করছে তাহলে সে কি করে ঘুমুবে।
আযানের সাথে সাথে বউ কে গরম পানি দিয়ে গোসল করিয়ে দিয়েছে। সাথে নিজেও করেছে।
কি করবে কিছুই বুঝতে পারছিল না।
কাকে বলবে।
প্রহর সে তো বিয়েই করে নি।
আর মিশান?
সে টা কি ভাবে বোনের এসব কথা ভাই কে কি করে বলবে।
আর সায়রা কেও ডাকতে পারে নি।
এতো সকালে সায়রা কে ডাকতে গেলে মিশান তো শুনতো সাথে বাড়ি সবাই।
এর মধ্যে আরভী একটু ঘুমিয়ে ছিল।
তাই নাস্তার টেবিলে ডাক পড়ার সাথে সাথে নিচে গিয়ে বলছে আরভী ঘুমিয়ে আছে।
আর নিজে সায়রা কে ফোনে মেসেজ দিয়ে বলেছিল যাতে আরভীর রুমে একবার আসে আর নিজেও অর্ধেক নাস্তা করে ছুটে আসে রুমে।

—————

-“কোনো ছেলের সাথে কথা বলবা না।
বুঝচ্ছো?”

-“একশ বার বলবো।
আপনার কি?”

-“এই মেয়ে বেশি বলছো কিন্তু।”

-“তো কি করবেন?
আমার যার সাথে ভালো লাগে তার সাথে কথা বলবো তাতে আপনার কি?”

কথা টা শেষ করার সঙ্গে সঙ্গে রুহির ঠোঁট প্রহর নিজের ঠোঁটের সাহায্য আঁকড়ে ধরে।
রুহির ব্যাপার টা বুঝতে একটু সময় লাগলো।
যখন বুঝতে পারলো ততক্ষণে শ্বাস বন্ধ হয়ে আসার জোগাড়।
নিজের ছোট ছোট হাত জোড়া দিয়ে প্রহর এর বুকে ধাক্কা দিতে সাথে থাপ্পড় তো আছে।
তবে প্রহর এর মতো সুঠাম দেহের অধিকারী পুরুষের কাছে এসব নিছক তুচ্ছ।
প্রহর আরও কিছু টা নিজের সন্নিকটে আনে রুহি কে মাথার পেছনে হাত দিয়ে।
অন্য হাত কোমরে।
নিজের ইচ্ছে মতো সময় নিয়ে ভালোবাসার মানুষটার অধরে ভালোবাসা পরশ দেওয়ার পর নিজ থেকে সরে আসে। রুহি জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে।
যেনো আর কিছুক্ষণ থাকলে দম আটকে মরে যেতো।
চোখ চিকচিক করে।
প্রহর নিজের বৃদ্ধা আঙ্গুল দ্বারা রুহির ঠোঁট স্লাইড করতে করতে বলে উঠে

-“আর কখনো কোনো ছেলের কথা মুখে আনলে ঠিক এভাবে দম আটকে মেরে দেবো।
সাথে নিজেও।”

রুহি আর কিছু বলে না। চুপচাপ গাড়ি থেকে নেমে গেইট দিয়ে কলেজের ভিতর চলে গেলো।
প্রহর গাড়ি নিয়ে নিজের ভার্সিটির উদ্দেশ্য চলে যায়।

#চলবে………

[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ।]

হৃদয় জুড়ে শুধু আপনি পর্ব-১৫+১৬

0

#হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি[২]
#পর্ব_১৫
#জান্নাত_সুলতানা

-“তুই শাড়ী পড়তে পারবি না।
অন্য কিছু পড়ে রেডি হয়ে নে।”

মিশান রুমে এসে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে হাতে পরিহিত ঘড়ি টা খুলতে খুলতে বলে

-“আপনি সাহায্য করলে পড়তে পারব,,,

আর বলা হয় না সায়রার মিশানের দিকে দৃষ্টি যেতে।মিশান শান্ত চোখ চেয়ে আছে।

বিকালে খাবার খাইয়ে দিয়ে মিশান সায়রা কে কোলে করে সায়রার বাবা-মায়ের রুম থেকে নিজেদের রুমে এনে গম্ভীর কন্ঠে আদেশ করে গিয়েছিল যেনো সায়রা বিছানা থেকে এক পা নড়াচড়া না করে।
আর যদি করে তার ফল ভালো হবে না। মিশান পুরো টা সময় চুপ ছিল শুধু এই একটা কথাই বলে ছিল যার কারণে সায়রা ভয়ে আর কোনো কথা বলে নি।
সায়রা কে কিছু বলতে না দেখে মিশান ফোঁস করে শ্বাস ছাড়ে ধুপধাপ পা ফেলে রুম ছেড়ে বেড়িয়ে ছিল আর এখন সন্ধ্যায় এলো।

-“আ,,,

-“ফ্রেশ হবি?”

-“না।”

-“আমি ফ্রেশ হয়ে এসে শাড়ী টা পড়িয়ে দিচ্ছি?”

-“হুম।”

অতঃপর মিশান তোয়ালে নিয়ে ওয়াশ রুম চলে যায়।সায়রাও আলমারি খোলে হলুদের মাঝে লাল পারের একটা শাড়ী বের করে।
হলুদে সব মেয়ে রা এক রকম পড়বে।আর পুরুষ সাদা পাঞ্জাবি।
সায়রা শাড়ী সহ প্রয়োজনীয় সব বের করে পড়ে নেয়।
সায়রা নিজে নিজেই শাড়ী টা কোনো রকম পড়ে।
মিশানও ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে এসে একটু ঠিকঠাক করে।তার পর মিশান নিজেও রেডি হয় আর সায়রা হালকা করে সেজে নেয়।
মিশান একবার আঁড়চোখে বউয়ের দিকে তাকিয়ে আবার সঙ্গে সঙ্গে চোখ অন্য দিকে ঘুরিয়ে নেয়। তার পর বউকে নিয়ে ছাঁদের উদ্দেশ্য হাঁটা ধরে।
সবাই অনেক আগেই চলে গিয়েছে। নিচে একদম ফাঁকা।

-“শোন একদম লাফালাফি করবি না।
আর উপর অনেক বাহিরের লোক আছে। তাদের থেকে দূরে থাকবি।”

-“আচ্ছা।”

এখন আচ্ছা বলছে পরে দেখা যাবে কি না কি করে বসে আছে তার ঠিক নেই।
এসব ভাবতে ভাবতে উপর এসে পরে
তার পর মিশান সায়রা কে রুহি আর ইনিয়ার কাছে বসিয়ে দিয়ে অন্য দিকে চলে গেলো।
সোহান আর আরভী কে একসাথই বসানো হয়েছে। সব মহিলার আগে হলুদ দেবে তার পর পুরুষ রা দেবো এর পর তারা চলে গেলে মেয়েরা আর ছেলেরা মিলে সবাই যে যার মতো করে মজা করবে। রুহি সায়রা কে সব বুঝিয়ে দিচ্ছে। কারান ওরা আজেকের যা প্ল্যান আছে সায়রা তার কিছুতেই ছিল না তাই সব জেনে নিচ্ছে।

সায়রা মনে যোগ সহকারে রুহির কথা শুনছে।মাঝে ইনিয়াও বলছে।
ওদের কথার মাঝেই ইনিয়াকে উদ্দেশ্য করে কেউ বলে উঠে

-“ভাবি আপনি এখানে ভাইয়া আর মা আপনাকে ডাকছে। ”

ছেলেটার কথায় প্রহর সহ সবাই তাকায়।
ইনিয়া মুচকি হেসে বলে

-“আমি যাচ্ছি।”

বলেই ইনিয়া চলে যায়।রুহি ভদ্রতার খাতিরে ছেল টা কে বসতে বলে আর অমনি ছেলে টা রুহি আর সায়রার মাঝে ইনিয়া যেটায় বসে ছিল ওটায় ধপ করে বসে পড়ে।
ইনিয়ার যার সাথে বিয়ে ঠিক হয়ে আছে ওর নাম ইকবাল ওর বাবা নেই মা আর ছোট এক ভাই আছে।
ওনারও আজ বিকেলে এসে।

-“বেয়াইন কে তো পাওয়া যায় না।
কোথায় থাকো সারা দিন? ”

-“সারা দিন কই ভাইয়া আপনি তো এলেন বিকেলে।”

রুহির এমন কথায় এনামুল নামক ছেলে টা কেমন থমথমে খেয়ে গেলো। সায়রা আর প্রহর মুখ টিপে হাসে। ছেলে টা কেমন অসহায় লাগলো।
তবে নিজে কে সামলে নিয়ে সায়রার দিকে আড়চোখ তাকায়। তার পর রুহির দিকে তাকিয়ে ইশারা কিছু জিজ্ঞেস করে
রুহি বুঝতে পারে লম্বা চওড়া একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে বলে

-“এটা আমার মিশান ভাইয়ার বউ।
প্রহর ভাই এর বোন।
আর আমার মিষ্টি ভাবি।”

ব্যস ছেলেটার মুখ কেমন অন্ধকার হয়ে গেলো যেনো বিরিয়ানির মাঝে এলাচি কামড় পড়ার মতো অবস্থা।
রুহি সায়রা দিকে তাকিয়ে সায়রা কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে

-“এটা আপুর দেবর এনামুল ভাইয়া।
তুমি তো বিকেলে নিচে ছিলে না তারা যখন এসছে। তাই পরিচয় হয় নি।
বাকি সবার সাথে হয়েছে।”

সায়রাও সৌজন্যে মূলক হাসি দিয়ে ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করে।
তার পর ছেলে টা চলে যায়।
আর রুহি হো হা করে হেসে উঠে। প্রহর আর সায়রা ভ্রু কুঁচকে তাকায় রুহি এমন হাসির মানে ওরা ধরতে পারছে না।

-“এভাবে হাসছিস কেন তুই?”

-“তুমি দেখনি ছেলে টার কি অবস্থা হয়ে ছিল তুমি আমার ভাবি জেনে।”

বলেই আবার হেসে উঠে তবে সায়রার কথা রুহির লজ্জায় হাসি বন্ধ হয়ে গেলো

-“আমি তোর ভাবি না তুই আমার।”

কথা শেষ সায়রা উঠে মা, খালা,ফুপির কাছে চলে গেলো।

-“ছেলে টার সাথে বেশি কথা বলবা না।
বুঝতে পারছো?”

-“আপনি তো এখন এখানে ছিলেন।”

-“হুম তবুও।
মেয়ে মানুষ।”

কথা টা বলে প্রহরও চেয়ার ছেড়ে সোহান আর আরভীর দিকে এগিয়ে গেলো।
রুহি প্রহর এর কথা টা বুঝতে একটু সময় লাগলো
বুঝতে পেরে বসা ছেড়ে দৌড়ে এসে প্রহর কে নিজেও বলে উঠে

-“একেই বলে বেডা মানুষ।”

বলে মুখ ভেংচি কেটে প্রহর এর আগে গিয়ে রুহির পাশে বসে ছবি তুলতে লাগলো।
প্রহর ভেবাচেকা খেয়ে গেলো। এই মেয়ে কোনো কথা মাটিতে পড়তে দেবে না সব কথার উত্তর মুখে নিয়ে বসে থাকে।
এসব ভেবেই প্রহর ফোঁস করে নিশ্বাস ছাড়ে।

————

রাত দশ টা বাজে এখন। সায়রা কে মিশান টেনেটুনে জোর করে ঘরে নি এসছে।
হলুদ দেওয়া শেষ এখন সবাই মজা করে আরও পরে ঘুমাবে।
সায়রাও বায়না ধরেছে সেও থাকবে সবার সাথে। কিন্তু মিশান কিছু না বলে কটমট করে তাকিয়ে ছিল একবার।
ব্যস আহ্লাদী সায়রা তার বড় মনি কে গিয়ে নিচ থেকে ডেকে এনে বলেছিল যাতে মিশানের কাছে সুপারিশ করে তবে মিশান মার কথা শুনে নি। উল্টো মা কে সহ ঠেলেঠুলে নিচে পাঠিয়ে বউ কে সবার সামনে থেকে কোলে করে রুমে এনে বিছানায় ছুড়ে ফেলে দিয়ে দরজা বন্ধ করে নিজে পাঞ্জাবি খোলে ওয়াশ রুম চলে যায় ফ্রেশ হতে।
সায়রা সেভাবে পড়ে থাকে।মিশান ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে এসে খাবার আনতে চলে যায়।
সায়রা তখন উঠে গিয়ে শাড়ী পাল্টে রাতের পোষাক পড়ে ফেলে।
মিশান খাবার নিয়ে কক্ষে প্রবেশ করে দেখলো বউ তার কোমরের নিচে পড়ে চুল গুলো আঁচড়ে বেনুনি করতে ভাগ করছে।
মিশান খাবারের থালা সেন্টার টেবিলে রেখে চুল গুলো নিজের হাতে নিয়ে নেয়।
সায়রাও বুঝতে পেরে ছেড়ে দিয়ে চুপচাপ বসে থাকে। মিশান কাজ শেষ সায়রা কে খাটে বসিয়ে নিজে বেসিন হতে হাত ধুয়ে এসে দেখলো সায়রা কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়েছে।যা দেখে সারা দিনের চেপে রাখা মিশানের রাগ সব বেরিয়ে এলো।
এক টানে শুয়া থেকে তুলে বসি খামচে ধরে সায়রা বাহু।
হিসহিসিয়ে বলে উঠে

-“মেরে ফেলতে চাস আমায়?
তুই কি বাচ্চা এমন অবুঝের মতো কেন আচরণ করিস?কই রুহি আরভীওরা তো এমন করে না।সব সময় কেন আমি তোকে সামলাতে হবে তুই নিজে পারিস না।ছোট বেলায়ও শান্তি দিস নি। বিদেশ থেকে আসার পড়েও দিচ্ছিস না।সেই প্রথম থেকে একের পর এক ভুল করেই যাচ্ছিস। আচ্ছা সে সব বাঁধ তুই নিজের খাবার টা তে অন্তত খেতে পারিস। কিন্তু তুই সব সময় আমাকে টেনশনে কিভাবে রাখা যায়। সে সব করতে প্রস্তুত থাকিস।
কেন রে আমাকে তের মানুষ মনে হয় না। আমি কেন সব সময় তোর পেছন পেছন ঘুরবো?”

সায়রা বাকরূদ্ধ ও কি সত্যি এবার একটু বেশি বেশি করে ফেলেছে?
ওর মনের কোথাও একটা থেকে উত্তর এলো হ্যাঁ করেছিস এতো সেই প্রথম থেকে করে এসছি। আর প্রতি বার ছেলে টা তোকে আগলে আগলে রাখছে।
আর আজ তোর ভালোর জন্যেই তো ছাঁদ থেকে নিয়ে এসছে তাহলে কেন তুই ছেলে টার উপর রাগ করে না খেয়ে শুয়ে পড়লি?
এখন যদি মিশান চলে যায় রুম থেকে। সায়রার এসব ভাবনার কালেই মিশাল ওকে বিছানা ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে রুম ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য অগ্রসর হয়।তবে বেরিয়ে যাওয়ার আগেই সায়রা বিছানা থেকে উঠতে গিয়ে মিশান কে ডেকে উঠে ধপাস করে ফ্লোরে পড়ে যায়।

#চলবে….
[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ।]

#হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি[২]
#পর্ব_১৬
#জান্নাত_সুলতানা

-“মিশা,,,

পুরোটা শেষ করার আগেই ড্রেসিং টেবিলের সামনে থাকা টোলে পা বেঁধে সায়রা নিচে পরে যায়।মিশান মাত্র দরজার ছিটকিনি খোলতে যাচ্ছিল তবে আর খোলা হয় না।দৌড়ে এসে সায়রা কে নিচ থেকে কোলে তোলে বিছানায় শুয়ে দিয়ে পাগলের মতো করে জিজ্ঞেস করতে থাকে কোথায় ব্যথা পেয়েছে পরে গেলো কি করে।
এসব জিজ্ঞেস করতে করতে মিশানের নজর গেলো সায়রার গলার কাছে হাড্ডি টার কাছে লাল হয়ে ফোলে উঠছে।
মূলত অতিরিক্ত চিকন হওয়ার কারণ গলার হাড্ডি গুলো স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।
সায়রা চোখ বন্ধ রেখেই বলে উঠলো

-“আমি ঠিক আছি।
পেটে ক্ষুধা। ”

-“তুই বস।”

কথা টা বলেই মিশান গিয়ে ড্রেসিং টেবিলের উপর থেকে একটা মলম নিয়ে আসে তার পর সেটা খুব সাবধানের সহিতে সায়রার গলার কাছেটায় লাগিয়ে দিয়ে মলম টা আবার যথা স্থানে রেখে দিয়ে হাত ধুয়ে খাবার খাইয়ে দিতে থাকে সায়রা কে।
তবে অদ্ভুত ব্যাপার হলো প্রতি বার সায়রা কে খাইয়ে দেওয়ার সময় নিজেও খেয়ে নেয়।কিন্তু আজ শুধু সায়রা কে খাইয়ে দিচ্ছে।

-“আপনিও খেয়ে নিন না।”

মিনমিন করে বলে উঠে সায়রা। কিন্তু মিশান কিছু বলে না। তাই দেখে সায়রা এবার কান্না পায়।
অর্ধেক খাবার শেষ হয়েছে কেবল সায়রা তখন মিনমিন করে জানায়

-“আমি আর খাব না?”

মিশান বউয়ের দিকে একবার শান্ত চোখে তাকায়।তার পর কিছু না বলে খাবার থালাতে পাশে থাকা পানির গ্লাস হাতে পানি ঢালতে নিলেই সায়রা মিশানের হাত ধরে আটকে দেয়।
মিশান সে দিকে একবার তাকি সায়রার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকায়।

-“হাত সরা।”

-“না।”

কথা নাকচ করে সায়রা অতঃপর মিশানের হাতে থাকা খাবার থালা নিজে হাতে নিয়ে সে টা থেকে ভাত মেখে মিশানের মুখের সামনে ধরে বলে উঠে

-“খেয়ে নিন না, প্লিজ।

কণ্ঠে করুন। সাথে আবদার। এমব আবদার কি করে ফিরিয়ে দেওয়া যায় মিশান জানে না। ঘাঁটতে চায় না বেশি।
রাতও অনেক বেড়েছে বউয়ের রেস্ট দরকার। তাই কথা বাড়ায় না চুপ চাপ মুখ খুলে।
সায়রার ছোট ছোট হাতের সাহায্য খাবার পুরে দেয় মিশানের মুখে।

খাবার শেষ মিশান নিজে হাত ধুয়ে বউ কে হাত ধুয়ে দেয়।
বড় লাইট অফ করে ছোট লাইট অন করে গিয়ে বউয়ের থেকে অনেক টা দূরত্ব রেখে শুয়ে পড়ে।
সায়রার বুঝতে পারছে জামাই তার রাগ বেশি করেছে।সায়রা মিশানের দিকে ফিরে দু’হাতে সাহায্য শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।
মিশান হাত সরিয়ে দেয়।কিন্তু সায়রা ফের রাখে।চার পাঁচ বার এমন করার পর মিশান এবার বিরক্ত হয়। হাত ধরে বউ কে নিয়ে নিজেও উঠে বসে দাঁত কটমট করে বলে উঠে

-“কি সমস্যা?
শান্তিতে ঘুমুতেও দিবি না?”

-“সরি।
আর কখনো এমন করবো না।
খাবার ঠিক মতো খাব।”

বাচ্চা বাচ্চা ফেস করে বলে উঠে সায়রা
বউয়ের এমন কথায় মিশানের রাগ তো পরে।
তবুও মুখে রাগি ভাব রেখে আবারও বলে উঠে

-“এটা তো রোজ বলিস।
কখনো মনে থাকে কি?”

-“এবার থেকে মনে থাকবে সত্যি।”

-“ঘুমিয়ে যা।”

কথা শেষ মিশান কম্বল টেনে শুয়ে পড়ে।
কিন্তু সায়রা কম্বল এর নিচ দিয়ে মিশানের শরীরের উপর নিজের অর্ধেক শরীর এলিয়ে দেয়।
মিশান কোনো নড়াচড়া না করেই চোখ বন্ধ রেখে বলে উঠে

-“আবার কি চাই?”

-“আদর।’

-“ডক্টর না করেছে।
শরীর দূর্বল।”

-“আমি পারবো।”

আর কিছু বলে না মিশান।
ঝট করে বউ কে নিজের উপর থেকে নিচে ফেলে দিলো।
নিজের এক হাত বউয়ের গালে ঠেকিয়ে আদুরে কণ্ঠে বলে উঠে

-“সরি সুইটহার্ট।
আমি তখন ওভাবে বলতে চাই নি।
কিন্তু কি করবো বল?
তুই কেন বুঝিস না। তোর জন্য আমাদের সবার কতটা চিন্তা হয়।”

-“আ’ম সরি।
আর এমন করবো না। ”

-“হুম। ”

কথা শেষ মিশান সায়রা কে আরও একটু টেনে নিজের কাছে এনে গলায় মুখ গুঁজে চুমু আঁকে সেখানে।
সায়রা শক্ত করে জড়িয়ে ধরে মিশান কে।

——————

আরভী দাঁড়িয়ে আছে নিজের বেলকনিতে।সামনে দাঁড়িয়ে সোহান।

-“আপনি এতো রাতে পাইপ দিয়ে কেন আসতে গেলেন সোহান ভাই?
আমাকে বললে হতো দরজা খোলে দিতাম।”

ফিসফিস করে বলে আরভী।কারণ রুমে রুহি, ইনিয়া ঘুমিয়ে আছে।

আরভীর এমন বোকা বোকা কথায় সোহান কি বলবে বুঝতে পারছে না।
এই মেয়ে কি সত্যি বোকা কিছু বোঝে না?
বিয়ের আগের দিন রাতে বর যদি বউয়ের সঙ্গে দেখা করার জন্য দরজা দিয়ে আসে তা হলে বাড়ি মানুষ আত্মীয় স্বজনরা কি চোখে দেখবে।

-“তোকে এতো কিছু ভাবতে বলেছি?
চুপ চাপ চাদর টা সরা।
আর হাত বের কর।”

সোহানের এমন কথায় আরভী চোখ বড় বড় করে বলে উঠে

-“আপনি পাগল কত ঠান্ডা বাহিরে দেখছেন।
আর আপনি কিছু পড়েন নি কেন?”

সোহান শুধু একটা কফি কালার সার্ট পড়ে আছে।
সোহান আরভীর কথায় কান দেয় না।
নিজে আরভীর হাত টেনে আনে চাদর এর নিচ থেকে।
নিজে পরিহিত ট্রাউজার এর পকেট হতে একটা মেহেদী বের করে আরভীর লাল টকটকে মেহেদী রাঙা হাতের মাঝ খানে গোল বৃত্ত টায় সুন্দর করে নিজের আর আরভীর নামের প্রথম অক্ষর লিখে দেয়।

-“এটা কেন ফাঁকা রেখেছিস?”

-“রুহি বলেছিল লিখে দিতে।
আমি না করেছি।”

সোহান ভ্রু কুঁচকে তাকায় আরভী দিকে কৌতুহল নিয়ে আবারও প্রশ্ন করে

-“কেন?”

-“আমি জানতাম আপনি আসবেন। ”

মুচকি হেসে বলে আরভী।
সোহান খুশি হয়। তার পিচ্চি বড় হয়ে গিয়েছে।
জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করে তবে নিজেই কোনো একদিন বলেছিল বিয়ের আগে আর কখনো কিছু চাইবে না।
কথার খেলাফ হয় এমন করতে চায় না সোহান।

-“ঘুমি পড়।
কাল তো আবার সারা দিন অনেক ধকল যাবে।”

কথা টা বলেই সোহান ফিরে যাবার জন্য পা বারাতে আরভী পেছন থেকে ঝাপটে ধরে সোহান কে।
সোহান স্তব্ধ। এটা কি সত্যি নাকি কল্পনা?
নিজেই নিজের হাতে চুম টি কাটতে গিয়ে ভুল বসত আরভীর হাতে পরে যায়।
ব্যথাতুর শব্দ করে আরভী ছেড়ে দিয়ে দূরে সরে দাঁড়ায় আরভী।
অসহায় চোখে তাকিয়ে বলে উঠে

-“এটা কি জড়িয়ে ধরার প্রতিদান?”

সোহান তড়িঘড়ি করে হাত টেনে ধরে আরভীর।
অস্তির হয়ে বলতে থাকে

-“ইস, আমি বুঝতে পারি নি ওটা তোর হাত ছিল।
সরি।”

-“হুম।
একটা? ”

-“হুম। ”

সোহান দেড়ি করে না আলতো করে ঠোঁট ছুঁয়ে দেয় আরভীর হাতের লাল হয়ে যাওয়া জায়গায়।

—————-

মিশান সকালে ঘুম থেকে উঠে বউ কে পাশে পায় না।
ভ্রু কুঁচকে আসে।
এতো সকালে তো তার বউ ঘুম থেকে উঠে না।
নামাজ শেষ আবারও ঘুমিয়ে পড়ে।আর উঠে নাস্তা করার মিনিট খানেক আগে।
আর আজ সাত টা বাজে বিছানায় নেই।
ব্যাপার টা বড় অদ্ভুত।

এসব ভেবেই মিশান বিছানা ছেড়ে উঠতে নিলেই কেউ খট করে দরজা খোলে রুমে আসে।
মিশান তো চোখ বড় বড় করে সে দিকে তাকিয়ে থাকে।
কিন্তু সামনের নারীর সে দিকে পাত্তা না দিয়ে খাবার থালা সেন্টার টেবিলে রেখে সোফা থেকে তোয়ালে এনে মিশানের হাতে দিয়ে কোমরে শাড়ীর আঁচল গুঁজে বিছানা গুছাতে গুছাতে বলে উঠে

-“এখনো বসে আছেন যে?
ওয়াশ রুমে গরম পানি রাখা আছে। ঠান্ডা হয়ে যাবে।
ফ্রেশ হয়ে আসুন। ”

-“তুই?”

-“আপনার বউ।”

-“কিন্তু তুই তো আটটা বাজে ঘুম থেকে উঠিস?”

-“এখন থেকে সকালে উঠবো।”

মিশান আর কিছু বলার আগেই সায়রা ওকে ঠেলেঠুলে ওয়াশ রুম পাঠিয়ে দেয়।

#চলবে….

[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ।]

হৃদয় জুড়ে শুধু আপনি ২ পর্ব-১৩+১৪

0

#হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি[২]
#পর্ব_১৩
#জান্নাত_সুলতানা

-“কি হলো বেড়িয়ে আয়।”

সায়রা সেই আধঘন্টা যাবত ওয়াশ রুমে।
কোনো রকম সারা শব্দ করছে না। মিশান পাঁচ মিনিট ধরে ডেকেই যাচ্ছে তবে এই মেয়ের কোনো হেলদুল নেই।
মিশান এবার বেজায় বিরক্ত। ফুস করে নিশ্বাস ছাড়ে।

অতঃপর দাঁতে দাঁত চেপে ধমকের সুরে বলে উঠে।

-“তুই পাঁচ সেকেন্ড এর মধ্যে বেড়িয়ে আসবি।
নয়তো সারা রাত ওয়াশ রুমে আটকে থাকতে হবে।”

কি ছিল কণ্ঠে? কথা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দরজার ওপাশ হতে উত্তর এলো।

-“আপনি লাইট অফ করে দিন।
তাহলে আমি বেরোবো। ”

-“তোর কি আমাকে পাগল মনে হয়?”

-“আপনি পাগলি না হলে এমন কাপড় কেউ আনে।
অসভ্য লোক। ”

লাস্ট কথা টা বিরবির করে বলে।
মিশান শোন তবে কিছু বলে না। আদুরে কণ্ঠে বলে উঠে

-“সুইটহার্ট, প্লিজ বেড়িয়ে আয়।
তুই জানিস এটা তিন দিন আগে থেকে অর্ডার করে রেখেছিলাম কিন্তু আজ গিয়ে দেখি সেটা অন্য কেউ নিয়ে যাচ্ছে।
তাই এটার যা দাম তার ডাবল দাম দিয়ে ড্রেস টা এনেছি।
আর তুই?
প্লিজ বেড়িয়ে আয়।”

-“তো কে বলেছে এমন অসভ্য ড্রেস এতো দাম দিয়ে আনতে?
কেন এনেছেন শুনি?”

সায়রা এখনো ড্রেস পড়ে নি হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সেটা উল্টে পাল্টে দেখই যাচ্ছে আধঘন্টা যাবত।

মিশান দুষ্ট হেসে বলে উঠে

-“শুনতে হবে না।
তুই বেড়িয়ে আয় করে দেখাচ্ছি।”

-“প্লিজ না।”

মিশান মিনিট খানিক্ষন চুপ থাকে। সায়রাও চুপ করে আছে মিশান কি বলে তা শুনার জন্য।
অতঃপর মিশানের গম্ভীর কণ্ঠ ভেসে এলো

-“পড়তে হবে না।
বেড়িয়ে আয়।
বেশিক্ষণ ওয়াশ রুমে থাকলে ঠান্ডা লেগে যাবে।”

বলেই মিশান গিয়ে বিছানায় কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়ে।

সায়রাও বেড়িয়ে এসে প্যাকেট রুমে থেকে যেভাবে নিয়েছে ঠিক সেভাবে আলমারিতে তুলে রাখে।
অতঃপর রাতের পোষাক নিয়ে ওয়াশ রুমে ফ্রেশ হতে চলে যায়।
ফ্রেশ হয়ে এসে নিজেও কম্বল এর ভিতর ঢুকে মিশান কে জড়িয়ে ধরে।
কিন্তু মিশান দিক হতে কোনো রেসপন্স আসে না।সায়রা মিশানের টি-শার্ট সরিয়ে কাঁধে চুমু খায়।
তবুও মিশানের কোনো রকম উত্তর নেই। সায়রা এবার কম্বল সরিয়ে দিয়ে মিশানের উপর উঠে মিশানের কপালে, চোখে চুমু আঁকে।
মিশান এতোখন চোখ বন্ধ করে ছিল। কিন্তু এই মেয়ে আর সেটা হতে দিলো কই।বউ যদি এমন এলোমেলো স্পর্শ করে তো স্বামী হয়ে কি করে সেটা কে উপেক্ষা করা যায়।
মিশানও পারে নি। চোখ খুলে সায়রা কে নিজের সাথে শক্ত করে চেপে ধরে।
সময় দেওয়ার মতো করে আদেশের সুরে বউ কে জানিয়ে দেয়

-“এখন পড়তে হবে না।
যখন তোর মনে হবে আমার আবদার নামক তোর ভাষায় অসভ্য ড্রেস টা পড়ে আমরা শখ পূরণ করা দরকার তখনি পড়িস।
তবে পড়তে তোকে হবেই।”

সায়রা কিছু বলে না মন দিয়ে মিশানের কথা শুনছে।
মিশান সায়রার কিছু বলতে না দেখে আবারও বলে উঠে

-“কি?”

-“হুম।”

-“টেস্ট করেছিস?”

-“হুম।”

সায়রা আর কিছু বলার আগেই মিশান উত্তেজিত হয়ে প্রশ্ন করে

-“কি এসছে?
পজিটিভ? ”

মিশানের প্রশ্নে সায়রার মুখ আধার নামে।

-“না।”

মুখ মলিন করে উত্তর দেয় সায়রা।যা দেখে মুচকি হাসে মিশান। মনে মনে বেশ খুশি হয়। খুশি হওয়ার কারণ ডক্টর না করেছে এখন বেবি নিতে। ওরা দুজন ওই দিন গিয়ে ছিল ডক্টর এর কাছে।বেবি নিতে পারবে কি না বেবি নিলে সায়রা কোনো সমস্যা হবে কি না সেই জন্য। মূলত সায়রার শারীরিক কিছু সমস্যা আছে সেই জন্যই ডক্টর এর কাছে যাওয়ার মূল উদ্দেশ্য। ডক্টর কিছু টেস্ট করে জানিয়েছে সায়রার কিছু শারীরিক সমস্যা আছে যাতে করে এখন বেবি নিলে নাও টিকতে পারে। মানে বেবি ক্যারি করার মতো ওর জরায়ু সক্ষম নয়। আর যদিও টিকে তবে সায়রার সমস্যা হবে।
তাই এখন বেবি নিতে না করেছে। আর সমস্যা টা ঠিক হওয়ার জন্য কিছু মেডিসিন দিয়েছে।
বলেছে বছর খানিক অপেক্ষা করে যেনো বেবি নেয়।
কিন্তু সায়রা সে সব শুনলে তো।
ঠিক মতো ডক্টর এর দেওয়া মেডিসিন নেয় না। আবার পিলও নিতে চায় না মিশান ঝুর করে দিতে হয় তবে সায়রা বেশির ভাগ সময় মুখে নিয়ে তা ফেলে দেয়। তাই মিশানও এখন আর ঝুর করে না।চলুক এ মেয়ে তার মর্জি মতো।
আর আল্লাহ যদি চায় তবে না হয় হলো একটা অস্তিত্বের প্রণয়।
ডক্টর দেখিয়েছে ছয় মাসের মতো হতে চলে এখন নিশ্চয়ই সমস্যা টা কিছু টা কমে গিয়েছে। এস ভাবতে ভাবতে বউয়ের ঠোঁটে নিজের ঠোঁটে ছুঁয়ে দেয় আলগোছে মিশান।
অতঃপর এক ঝটকায় বউ কে নিজের উপর থেকে নিচে ফেলে দিয়ে নিজে চেপে বসে বউয়ের উপর।
সায়রা খরগোশ ছাপা গেঞ্জি টা পেটের উপর হতে সরিয়ে সেখানেও চুমু একেঁ দিয়ে বলে উঠে

-“মন খারাপ করে না, জান।
আর তাছাড়া ডক্টরও তো বলেছে আমরা যেনো এখন বেবি না নেই।
নিলে তো তোর সমস্যা হবে।”

মিশানের এমন কথায় সায়রা মুখ ভেংচি কাটে। মিশানের কথা ওর মোটেও পছন্দ হয়নি। তবে মুখে কিছু না বলেই মিশানের বুকে চুমু খায় নিজে।

-“আদর চাই?”

-“হুম অনেক।”

এমন উত্তর কি উপেক্ষা করা যায়?উঁহু,মোটেও না।যেখান সামনে থাকা পুরুষ স্বামী কম প্রেমিক পুরুষ বেশি।
সেখানে এমন উত্তর যে এই পুরুষ টার কাছে হাতে চাঁদ পাওয়ার মতো অনূভুতি।
চেপে ধরে বউ কে নিজের শক্ত ঠোঁটের স্পর্শে দেয় বউয়ের অধরে।
অতঃপর হারিয়ে যায় একে অপরের ভালোবাসায়।

————

-“এই উঠুন।”

-“উমম জান ডাকে না।”

সায়রার বুকের ভিতর ধক করে উঠে। এই লোকের এমন ঘুম জড়ানো কণ্ঠে যে সায়রা নামক রমণীর মন দুয়ারে কিছু একটা হয়। এই লোক কি তা জানে?
উঁহু, জানলে নিশ্চয়ই এভাবে কখনো বলতো না।
মিশান নড়েচড়ে আবারও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বউ কে সায়রার শ্বাস বন্ধ হয়ে আসার জোগাড়। মিশানের বুক হতে
মাথা টা একটু উঁচু করে। বুকের ঠিক মধ্যিখানে দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরে।
মিশানের ঘুম ততক্ষণে পালিয়েছে।

মুখ দিয়ে হালকা ব্যথাতুর শব্দ করে বলে উঠে

-“আহ,,
কি করলি এটা?”

-“তো কখন থেকে ডাকছি।
উঠছেন না কেন?”
নামাজের সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে। উঠুন।”

কথা গুলো বলতে বলতে সায়রা নিজে কে মিশানের বাঁধন হতে আলগা হয়ে যায়।
মিশান কিছু বলে না। নিজেও উঠে বসে। ভালোবাসার মূহুর্ত শেষ গোসল করে এসে ঘুমিয়েছে বেশিক্ষণ হয় নি। যদিও গরম পানি দিয়ে করেছে তবে শীতের মৌসুমে তো তাই শীত শীত লাগছে।সাথে চোখ জ্বালা করছে। তাই চোখ কচলে বউয়ের দিক দৃষ্টি দিতেই সব আবারও এলোমেলো হয়ে গেলো। পাশে থাকা চাদর জড়িয়ে দেয় বউয়ের গায়ে সাথে নিজেও টি-শার্ট গায় দিয়ে বউ কে কোলে তোলে ওয়াশরুমের উদ্দেশ্য হাঁটা ধরে।
অতঃপর বউ কে ফ্রেশ করিয়ে নিজেও ফ্রেশ হয়ে এসে দেখলো সায়রা নিজে দুটি জায়নামাজ বিছিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
মিশান আসলে সায়রা নিজে টুপি এগিয়ে দেয় স্বামীকে।তার পর দু’জনে নামাজ পড়ে নেয়।

-“ভার্সিটিতে যেতে পারবি?
বেশি কষ্ট হচ্ছে?”

নামাজ শেষ দু-জনে শুয়ে আছে। মিশান তখনি হঠাৎ প্রশ্ন টা করে। প্রশ্ন টা করার কারণ বউ তার ভালোবাসার ভার এখনো সামলে উঠতে পারে না।
সায়রা বেশ রয়ে সয়ে উওর দেয়

-“হুম একটু একটু পেট ব্যথা করছে।
তবে ভার্সিটি যেতে পারবো। আজ সব নোট কালেক্ট করতে হবে। বিয়ের ঝামেলায় তো ক’দিন যেতে পারবো না।”

-“তোকে ভার্সিটিতে পৌঁছে দিয়ে আমি ইনিয়া আপুদের আনতে যাব।
তোর ছুটির পর দাঁড়াবি প্রহর নিয়ে আসবে।
আমি বলে দেবো।

-“আচ্ছা।”

আর কিছু বলে না মিশান বউ কে বুকে আগলে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে আবারও।সারা রাত ঘুমুতে পারে নি এখন একটু ঘুমানো প্রয়োজন।

#চলবে…

#হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি[২]
#পর্ব_১৪
#জান্নাত_সুলতানা

-“শরীর কি বেশি খারাপ লাগছে, সুইটহার্ট?”

-“না।একটু শুয়ে থাকলে ঠিক হয়ে যাবে।
আপনি যান তো ওই দিকে নিশ্চয়ই আপনাকে সবাই খুঁজচ্ছে।
কত কাজ। আমি একটু পর নিচে আসছি।”

সায়রা মিশান কে ঠেলেঠুলে রুম থেকে বের করে দিলো।
সায়রা এসে আবারও বিছানায় শুয়ে পড়ে।
মিশান সিঁড়ি কোঠায় কাছে গিয়ে হঠাৎ কিছু মনে করার মতো করে দাঁড়িয়ে যায়।
কিছু ভেবে আবারও রুমে ফিরে আসে। রুমে এসে দরজা টা লক করে। সায়রা চোখ বন্ধ করে ছিল। কিন্তু দরজা লক করার শব্দে চোখ খোলে মিশান কে আবারও রুমে দেখে ভ্রু কুঁচকে আসে।

-“আপনি?
কিছু দরকার?”

-“খাবার কেন খাসনি?”

মিশানের এমন সোজাসাপটা প্রশ্নে সায়রা ভয়ে শুকনো একটা ঢুক গিলে।
সায়রা আমতা আমতা করে বলে

-“খে,,,

-“চুপ একদম চুপ।
আর একটা মিথ্যাও না। নিচে চল।”

-“আপনি আমার কথা টা শুনুন।”

-“থাপ্পড়ে তোর সব দাঁত ফেলে দেবো, ইডিয়েট।”

কথা শেষ মিশান সায়রা কে টেনে নিয়ে যেতে থাকে।
তার পর রুম থেকে বেড়িয়ে সোজা নিচে এসে রান্না ঘরে চলে যায়।

-“ওকে এভাবে টানছিস কেন?”

মাইশা চৌধুরী প্রশ্ন করে। মিশান মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে উঠে

-“মা ও কিছু খায় নি।
তাই তখন রুমে মাথা ঘুরে পড়ে যাচ্ছিল। ভাগ্য ভালো আমি তখন রুমে গিয়েছিলাম।”

-“সে কি কথা সায়রা? এটা একদম ঠিক হয় নি।
তুই তো দেখছি মিশান তোর বাবা সবাই কাজে কতটা ব্যস্ত তবুও কেন খাবার টা খাস না।”

মাইশা চৌধুরী কথা বলতে বলতে থালায় খাবার নিয়ে নিলেন।
অতঃপর সেটা মিশানের হাতে দিয়ে তিনি সব কাজের লোকদের নিয়ে রান্না ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে গেলো। বিয়ে বাড়ি বলে কথা কত মানুষ জন ডাইনিং টেবিল লিভিং রুম সব জায়গায় মানুষ জনে গিজগিজ করছে।
রান্না ঘরে জায়গায় টাই একটু ফাঁকা। মিশান সায়রাকে চুলার পাশে ফাঁকা জায়গা টায় বসিয়ে দিয়ে নিজে বেসিনে হাত ধুয়ে সায়রার মুখে খাবার তুলে দিতে লাগলো।
দুবার খাবার মুখে দেওয়ার পর সায়রার হঠাৎ করে মাথা টা চক্কর দিয়ে উঠে।
মাথার এক পাশ বাম হাত দ্বারা চেপে ধরতেই মিশান নিজেও হাতা থাকা খাবার থালা পাশে রেখে বউ কে এক হাত দিয়ে ডান পাশ দিয়ে জড়িয়ে ধরে মাইশা চৌধুরী প্রিয়তা মির্জা কে ডেকে উঠে।
তারা সবাই লিভিং রুমে বসে ছিল। তাই মিশানের এমন ডাকে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসে সবাই।
সাদনান মির্জা এসে মেয়ে কে কোলে তোলে আয়ান কে গাড়ি বের করতে বলে। আয়ানও গাড়ি বের করে মিশান ততক্ষণে নিজের এঁটো হাত ধুয়ে এসে গাড়িতে বসে পড়ে।
অতঃপর সায়রার মাথা টা নিজের কোলে নিয়ে নেয়।আয়ানও গাড়ি স্টাট দিয়ে হসপিটালের উদ্দেশ্য চলে।

———

আজ সন্ধ্যা আরভীর গায়ে হলুদ। সোহানরাও বিকেলের দিকে এসে যাবে।
মূলত দু’পক্ষই এক বাড়িতে থেকে বিয়ে হবে। বিয়ের দিন রাতে বর থাকবে আর সব আত্মীয় বিদায় নিবে।
আয়না, রাহাত তাদের নিজেদের বড় মেয়ে কে নিয়ে ওই দিন নিজেদের ফ্ল্যাট থেকে এখানে এসে পড়েছে। সব আত্মীয় চলে এসছে।
বাড়িতে অনেক মেহমান।মানুষ বেশি হলে তো কাজও বেশি হবে।যদিও কেউ নিজের হাতে ধরে কিছু করছে না। তবে কাজের লোকদের তো সব বুঝিয়ে দিয়ে সাথে সাথে থাকা লাগে।
আর এই ফাঁকেই সায়রা নামক মিশানের আহ্লাদী বউ নিজের খাবার নিয়ে বেশ অনিহা করছে।
যা এতো কাজের ফাঁকে কারোরই চোখে পরে না।
সকাল এগারো টার দিকে যখন মিশান নিচের কিছু লাইটিং এর কাজ লোকদের দেখিয়ে দিয়ে উপর নিজের রুমে আসে। রুমে আসার মূল কারণ বউ কে একটু মন ভরে দেখা। সে দিন রাতে যে ভালোবাসা আদান-প্রদান হয়েছে এর পর কাজের চাপে আর তেমন কিছু তো দূর বউয়ের দেখা পাওয়াও হয় না।
এসব ভাবতে ভাবতে যখন রুমে ঢোকে ঠিক তখনি সায়রা ফ্রেশ হয়ে ওয়াশ রুম থেকে বেড়িয়ে আসছিল।
তবে মাথা টা হঠাৎ ঘুরে উঠে আর তখনি কেউ এসে নিজের শক্ত চওড়া বুক আগলে নে সায়রার ছোট তুলতুলে দেহখানা।
চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে মিশান কে দেখে নিজেও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ছিল সায়রা।
তার পর বেশ অনেক টা সময় বউয়ের কাছে থাকার পর সায়রা আবারও মিশান কে ঠেলেঠুলে পাঠিয়ে দিয়ে ছিল। যাতে করে খাবার নিয়ে মিশান কিছু টের না পায়।
কিন্তু শেষ রক্ষা আর হলো না মিশান ঠিক ও খাবার খায় নি সেটা ধরে ফেলে।

——————

-“মির্জা সাহেব।
সায়রা মামুনির কি বিয়ে হয়ে গিয়েছে?”

সাদনান মির্জার পারিবারিক ডক্টর এর কাছে নিয়ে এসছে সায়রা কে।
আর তিনি জানেন না তাই এমন প্রশ্ন।
ডক্টর এর প্রশ্নে সাদনান মির্জা কিছু বলবে তার আগেই মিশান জানিয়ে দেয়

-“আমি ওর হাসবেন্ড।
কি হয়েছে ওর এখনো জ্ঞান ফিরছে না কেন?”

মহিলা ডক্টর মুচকি হাসে মিশানের এমন তড়িৎ গতিতে উত্তর দেওয়া দেখে।

ঠোঁট এলিয়ে হেসে নিজেও উওর করে

-“আয়ান চৌধুরীর ছেলে মিশান চৌধুরী।”

-“হুম।
বছরের বেশি হয় বিয়ে হয়েছে।
ও বিদেশ ছিল। হুট করে হয়ে গিয়েছে তাই কাউ কে আর জানানো হয় নি।”

-“ওর শরীর দূর্বল।
খাবার দিবেন বেশি বেশি।আর যত্ন নিবেন শরীরের প্রতি খেয়াল রাখবেন।
খাবার যেনো কোনো হেলাফেলা না করে।”

-“আচ্ছা।”

সায়রা বেডে ঘুমি আছে। মিশান কোলে নিয়ে ডক্টর কেবিন হতে বেরিয়ে আসে।
সায়রা কে ঘুমের ঔষধ দেওয়া হয়েছে। তাই ও ঘুমিয়ে আছে।

মিশান হসপিটাল থেকে বেড়িয়ে এলে আয়ান চৌধুরীও আগে আগে এসে গাড়ি দরজা খুলে দেয়।
মিশান মুচকি হাসে।অতঃপর বউকে সিটে বসিয়ে নিজে বসে বউয়ের মাথা নিজের কাঁধে রাখে।
এবার আর সাদনান মির্জা পেছনে বসে না ভায়রা ভাইয়ের সাথে সামনে বসে পড়ে। মেয়ে কে তিনি প্রচুর পরিমাণ ভালোবাসে। আর তিনি সব সময় চাইতেন তার এই ছন্নছাড়া মেকে ওনার নিজের থেকেও তার মেয়ে কে কেউ ভালোবাসুক আর তার হাতে তোলে দিয়ে তিনি নিশ্চিন্ত হতে চাইতেন। আর আজ তিনি নিশ্চিন্ত। পেড়েছেন তিনি মেয়ে কে যোগ্য পাত্রের হাতে তুলে দিতে।

——-

মিশান সায়রা কে সাদনান প্রিয়তার রুমে বিছানা শুয়ে দিয়ে নিজে রুমে চলে যায় ফ্রেশ হতে।
সবাই দাঁড়িয়ে আছে। সবাই ভেবেছে সুখবর আসবে হয়তো কিন্তু উল্টো বেচারি অসুস্থ তাই সবার মন খারাপ।বিয়ে বাড়ির কেমন থমথমে হয়ে আছে।

সাদনান মির্জা কিছুখন পর রুমে এলো ততক্ষণে সায়রা জেগে গিয়েছে আর সবার সাথে টুকটাক কথা বলছে।

-“চলো সবাই যার যার কাজে যাও।
আর ওকে রেস্ট করতে দেও।”

সবাই চুপচাপ বেড়িয়ে গেলো।
সাদনান মির্জা মেয়ের কাছে গিয়ে পাশে বসে মাথা হাত বুলিয়ে বেশ আদুরে কণ্ঠে মেয়ে কে বেশ অনেক টা সময় নিয়ে বোঝালো যাতে খাবার ঠিক মতো খায় আর শরীরের যত্ন করে।
এভাবে থাকলে তো আর হবে না। এই যে আজ এমন একটা দিনেও তার জন্য সবাই কত টা চিন্তিত।
এসব কতক্ষণ বোঝাল।
সায়রাও বাবা কে সম্মতি দিলো সে আর কোনো কিছু হেলাফেলা করবে না।
সাদনান মির্জা মেয়ে কে বুঝিয়ে দিয়ে কপালে চুমু একেঁ ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে যায়।
আর ঠিক তখনি মিশান খাবার থালা হতে মিশান রুমে ঢোকে।
সাদনান তাকায় মিশানের দিকে মিশান চোখ দিয়ে ইশারায় সাদনান কে আশ্বাস দেয়।
সাদনান মুচকি হেসে চলে যায়।মিশান নিজও খাবারের থালা হাতে রুমে ঢুকে।
সায়রা কে শুয়া থেকে তোলে বসিয়ে ওয়াশ রুম থেকে তোয়ালে ভিজিয়ে আনে সাথে মগে করে পানি।
তার পর সুন্দর করে বউদের শরীর মুছিয়া দেয়।
অতঃপর খাবার খাইয়ে দিয়ে মেডিসিন দেয়।কিন্তু একটা কথাও বলে না। সায়রা ভয়ে কিছু বলছে না। এটা যে ঝড় আসার পূর্বাভাস এটা বেশ বুঝতে পারছে।

#চলবে…..