Thursday, July 17, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 369



হৃদয় জুড়ে শুধু আপনি ২ পর্ব-১১+১২

0

#হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি[২]
#পর্ব_১১
#জান্নাত_সুলতানা

-“বাসায় যেতে হবে না?”

সায়রা মিশানের গলায় মুখ গুঁজে ঘুমিয়ে আছে। মিশান কখন থেকে উঠতে বলছে কিন্তু এই মেয়ের কোনো রকম প্রতিক্রিয়া নেই।
মিশান এবার মহা বিরক্ত। ভ্রু কুঁচকে আসে ওর।একটা মানুষ এতো কি করে ঘুমুতে পারে ও ভেবে পায় না। সকাল ন’টা বাজতে চলে এই মেয়ের কি সে খেয়াল আছে।
মিশান আবারও মাথায় হাত বুলিয়ে বউয়ের।
বেশ শান্ত কন্ঠে বলে উঠে

-“আচ্ছা বাসায় যাব না।
তাহলে তোকে আদর করি।”

মিশান দুষ্ট কন্ঠে বলে উঠে।
সায়রা মিশানের বুক হতে মাথা তুলে ঘুম ঘুম চোখে পিটপিট করে তাকিয়ে ধরে আসা গলায় বলে

-“আমি জানি আপনি এটা কিছুতেই আজ করতে পারবেন না। ”

কথা শেষ মুচকি হেসে আবারও আগের স্থানে মাথা এলিয়ে ঘুমের দেশে তলিয়ে যায় সায়রা।
মিশান আর কিছু বলে না। কি বা বলবে।যাই একটা বুদ্ধি বের করে ছিল। তবে সেটাও কাজে দিলো না।
তাই চুপ করে নিজেও প্রেয়সীর শরীরের গন্ধ নিয়ে লম্বা শ্বাস টেনে।
এক সময় মিশান নিজেও আবার ঘুমি পরে।
সায়রা নড়েচড়ে আবারও ঘুমিয়ে যেতে গিয়ে পারলো না।
পেটে ক্ষুধা অনুভব করে।ঝট করে চোখ খোলে অতঃপর মিশানের চাপ দাঁড়ি ফাঁকে ঠোঁট জোড়া নজর পরে।
কি সুন্দর ঘুমিয়ে আছে। দেখতে বেশ লাগছে।
এসব ভেবেই সায়রা
আস্তে ধিরে বালিশের পাশে থাকে মিশানের ফোন টা হাতে নিয়ে টাইম দেখে ধড়ফড়িয়ে উঠে বসে।
ফোন বিছানায় ফেলে মিশান কে ডাকতে লাগলো

-“বারো টা বজে বাসায় যাব না? উঠুন। ”

মিশান নড়েচড়ে উঠে বসে। তার পর আড়মোড়া ভেঙ্গে বলে উঠে

-“তুই ফ্রেশ হয়ে আয়।”

সায়রা আর কিছু বলে না উঠে গিয়ে কাল রাতে বাসা থেকে পড়ে আসা কাপড় গুলো শপিং থেকে বেড় করে ওয়াশ রুমে চলে যায়।
মিশানও ফোন হাতে কাউ কে কল লাগায়। ফোনে কথা শেষ করে মিশান সোফায় বসে অপেক্ষা করে সায়রা বেড়িয়ে আসার।সায়রা সাত কি আট মিনিটের এর মধ্যে বেড়িয়ে আসে।
শুধু কাপড় পাল্টে এসছে।
মিশান একবার আঁড়চোখে তাকিয়ে ফোন টা সোফায় রাখে।
সায়রা কাল পড়ে আসা চাদর টা নিয়ে সেটা ওর শরীরে জড়িয়ে দিতে দিতে বলে উঠে

-“দরজা কেউ নক করলে একটু ফাঁক করে খাবার টা রেখে দিবি।
ঠিক আছে?”

-“হুম। ”

কথা শেষ মিশান ওয়াশরুমে চলে যায়। সায়রাও আর কি করবে বিছানায় পা গুটি কম্বল মুড়ি দিয়ে বসে থাকে।
এর মিনিট দুই এক এর মাথায় দরজা কেউ নক। সায়রা গায়ে চাদর টা পেচিয়ে দরজা টা হালকা খোলে উঁকি দিয়ে দেখলো একটা মেয়ে আর একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে হাতে খাবার এর ট্রে।সায়রা ছেলে টার হাত থেকে একটা ট্রে নেয়।আর মেয়ে টাকে বলে ওর সাথে আসার জন্য।
মেয়ে টা ভিতরে আসে সায়রা খাবার গুলো রেখে পেছনে ফিরে মেয়ে টা কে বলে রাখতে। ঠিক তখনি ওয়াশরুমের দরজা খোলে মিশান বেড়িয়ে আসে।
আর মেয়ে টা হা করে তাকিয়ে থাকে। এদিকে সায়রা রাগে ফুঁসছে। মেয়েটা কে মনে মনে একশ’রও বেশি গালি দিয়ে ফেলে।আর এদিকে
মিশান সায়রার দিকে কটমট করে তাকিয়ে মেয়ে টা কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে

-“আপনি আসতে পারেন।”

মেয়ে টা লজ্জা পায়।তার পর রুম থেকে বেড়িয়ে যেতেই মিশান শব্দ করে দরজা টা লাগিয়ে ঝড়ে বেগে এসে সায়রার বাহু খামচে খাবলে ধরে।

অতঃপর দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠে

-“বলেছিলাম না দরজা টা একটু ফাঁক করে খাবার টা নিতে?
তাও কেন শুনলি না আমার কথা?”

সায়রা ভয় পায় না নিজেও উল্টো বলে উঠে

-“আপনার তো খুশি হওয়ার কথা।”

মিশান অবাক হয়।তবে বুঝতে পারে বউ তার রেগে আছে। এখন নিজেও রাগলে ভালোর চাই খারাপ এ হবে বেশি।
আর দুজনেই আগুন হলে কি করে হবে। লোহা পেটানোর জন্য তো কাউকে হাতুড়ি হতে হবে।

-“আচ্ছা আপনাকে এতো সুন্দর কে হতে বলেছে?
একটু কম সুন্দর হলে কি এমন ক্ষতি হতো।”

মিশানের ভাবনার মাঝেই সায়রা অসহায় চোখে তাকিয়ে বলে।

মিশান ভেবাচেকা খেয়ে গেলো।
এই মেয়ে এসব কি বলছে। মিশান আর বেশি ঘাঁটে না।

সায়রা কে ছেড়ে দিয়ে টেবিলে রাখা খাবার গুলো পেকেট থেকে বের করে নিয়ে সায়রা কে ডাকে

-“এদিকে আয়।”

-“খাব না আমি বাসায় যাবো।”

-“দুই সেকেন্ড এর মধ্যে আমার পাশে এসে না বসলে তোর খবর আছে।”

ব্যস আর কি মিশানের এই চাপা ধমকে সুর সুর করে সায়রা মিশানের পাশে গিয়ে বসে পড়ে।
মিশানও ওকে খাইয়ে দেয়।
সাথে নিজেও খায়।

-“কাল রাতেও মেয়ে টা খাবার দিতে এসে কেমন করে তাকিয়ে ছিল।
তাই তোকে আজ দরজা টা বেশি খুলতে না করেছিলাম।
কিন্তু তুই তো তুই। নিজে খাল কেটে কুমির এনে এখন আমার সাথে রাগ দেখাচ্ছি।
যেখানে আমি তোকে আগেই থেকেই সাবধানে করেছিলাম।”

-“আমি অতো কিছু ভাবিনি। ”

-“তা ভাববি কেন।
শুধু আমার সাথে কিভাবে রাগ দেখাবি অভিমান করবি।
এই তো তোর কাজ।”

মিশানের এই কথা টা সায়রার বেশ খারাপ লাগলো।
সত্যি তো ও নিজে সব সময় মিশান কে ভুল বুঝে।

—————–

সায়রা আর মিশান বাড়ির ভিতরে ঢুকতেই দেখলো পুরো বাড়ি অন্ধকার। এখন বিকেল হয়ে গিয়েছে কিন্তু এমন সময় বাড়ির এমন অবস্থা সায়রা ভয় পেলো তবে মিশান ঠাঁই দাঁড়িয়ে যেনো এসব কিছুই না।

-“Happy birthday”

সবাই এক সাথে বলে উঠে আর ঠিক তখনি পুরো বাড়ি আলোকিত হয়।
সায়রা এসব দেখে অবাক হয়।কিন্তু মনে অনেক খুশি হয়।
তার পর সবাই একে একে শুভেচ্ছা জানায় সায়রা কে।
সবাই অনেক সুন্দর করে সাজুগুজু করে আছে।
আর শুধু সায়রা রাতের পোষাক পড়ে উপর চাদর জড়িয়ে। সায়রার মনে মনে হেসেছে। তবে মুখে তা প্রকাশ করে নি।
তার পর কেক কেটে আড্ডা দিয়ে রাতে খাবার খেয়ে সবাই যার যার রুমে চলে যায়।
এর মধ্যে অবশ্য মিশান একবার রুমে গিয়েছে তবে সায়রা একবারে এখন এসছে রুমে।
কিন্তু রুমে এসেই সায়রার চোখ চড়কগাছ।
মিশান সত্যি সত্যি ওই দিনের বলা কথা রেখেছে। ওই দিনের পিক টা বাঁধিয়ে এনেছে।ছিঃ কি অশ্লীল অসভ্য মানুষ।
সায়রা ধুপধাপ পা ফেলে ছবি টার সামনে গিয়ে যেই না ছবি টা ধরতে যাবে আর অমনি মিশান এসে এক ঝটকায় ওকে টেনে নিয়ে জড়িয়ে ধরে।
সায়রা ভয়ে খামচে ধরে মিশানের পিঠ।

-“অসভ্য লোক।
এটা কেউ দেখলে কি হবে আপনি এক বারও ভেবেছেন? ”

জড়িয়ে থাকা অবস্থা বলে উঠে সায়রা।
মিশান হাসে হো হা করে হাসে। অতঃপর সায়রা কে ছেড়ে দিয়ে বলে

-“তুই হয়তো ভুলে যাচ্ছিস আমাদের রুমে কেউ আসে না।
আর আমি তোর হাসবেন্ড।”

সায়রা আর কিছু বলে না। চুপ চাপ ওয়াশরুমে চলে যায়। বলে কিছু লাভ নেই এই অসভ্য মানুষ কে।
আর মিশান ছবি টার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসে।
ছবিটায় সায়রা শরীরের কাপড় ঠিক নেই যার ফলে শরীরের বেশির ভাগ অংশ উন্মুক্ত। আর ও মিশানের গলায় মুখ গুঁজে আছে। তবে মুখ টা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। মিশান নিজেও সায়রা কে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে। তবে মিশান নিজেও একদম উন্মুক্ত।
এসব ভাবতে ভাবতে সায়রা ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে এসে নিজের প্রয়োজনীয় সব কাজ শেষ করে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ে।
মিশানও ফ্রেশ হয়ে এসে সায়রা কে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়ে

-“বেশি খারাপ লাগছে? ”

জিজ্ঞেস করে মিশান।সায়রা মুচকি হেসে মিশানের বুকে নাক মুখ ঘঁষে জানায়

-“হুম একটু একটু লাগছে।”

-“আচ্ছা তুই ঘুমিয়ে পর আমি বিলি কেটে দিচ্ছি। ”

সায়রা কিছু বলে না চোখ বন্ধ করে।
মিশানও প্রেয়সীর মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।

——-

-“আপনি কেন আমায় ভালোবাসেন না,প্রহর ভাই?”

রুহির করা প্রশ্নে প্রহর মোটেও অবাক হয় না।এটা হওয়ারই ছিল।

প্রহার বইয়ের পৃষ্ঠা উল্টাতে উল্টাতে বেশ শান্ত কন্ঠে বলে

-“আড়াই মাস হয়েছে এখানে এসছো।
এর মধ্যে তুমি আমায় ভালোবাসো বলছো। কিন্তু সত্যি কি তুমি আমায় ভালোবাসো? ”

প্রহরের প্রশ্নে রুহি মাথা নুইয়ে নেয়। আসলেই তো ওতো একবারও এটা ভাবে নি। কিন্তু ওর মনে মাথায় সব সময় প্রহরের কথা ঘুরে। প্রহর এর সব দিক ভাবতে ভালো লাগে।

-“আমি জানি না।
তবে আপনার কথা ভাবতে আমার ভালে লাগে।”

-“আমার প্রশ্নের উত্তর যখন জানবে তখন না হয় ভালোবাসার দাবি নিয়ে এসো।
সে দিন ফিরিয়ে দেবো না।”

#চলবে…..

#হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি[২]
#পর্ব_১২
#জান্নাত_সুলতানা

-“শোন বেশি লাফালাফি করবি না।
ঠিক আছে? ”

-“আমি ছোট নই।”

-“ছোট নয় তবে পাগল তুই।”

আর শোনে না সায়রা এক দৌড়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে যায়।
মিশান ফুস করে শ্বাস ফেলে। কি লাভ হলো এতো করে বলে সেই তো দৌড়াদৌড়ি করছে।

মিশান বড় বড় কদম ফেলে ওয়াশ রুমে চলে যায় ফ্রেশ হতে।
কত কাজ বাকি এক মাত্র বোনের বিয়ে বলে কথা।

———

দেখতে দেখতে একটা বছর কেটে গিয়েছে। আরভীর এইচএসসি পরীক্ষা শেষ হয়েছে দশ কি বারো দিন হবে।
এ-র মধ্যেই সোহান তার বাবা মা কে আবারও আয়ান চৌধুরীর সাথে কথা বলতে বলে বিয়ে ডেট ফাইনাল করে নিয়েছে।

আয়না রাহাতও দেশে এসছে বড় মেয়ে ইনিয়া কে নিয়ে। সামনে মাসে ইনিয়ারও বিয়ে। ছেলে ডক্টর। ছেলেরাও ঢাকাতেই থাকে। বিয়ের পর ইনিয়া দেশেই থাকবে।
আর আয়না রাহাতও আর লন্ডন যাবে না।রুহি কেও এবার ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে ভর্তি করা হয়েছে আরভীর কলেজ।
যদিও আরভীর সমানেই ছিল রুহি তবে এক বছর পিছিয়ে গিয়েছে।

———–

সামনে সাপ্তাহে বিয়ে। আজ সবাই শপিং এ যাবে। সবাই রেডি হয়ে চলে এসছে শুধু মিশান আর প্রহর বাড়ির ভিতরে থেকে এখনো আসে নি।
সাদনান মির্জা একটা গাড়ি ডাইভিং সিটে বসে আছে তার পাশে আয়ান চৌধুরী। পেছনে মাইশা,প্রিয়তা বসে আছে। আরও একজন বসা যাবে তবে রুহি, আরভী,সায়রা ওরা কেউ এখনো বসে নি গাড়িতে দাঁড়িয়ে আছে ওরা।
আয়ান চৌধুরী এবার বিরক্ত হলেন। ডাকলেন আরভী কে

-“ওদের ডেকে নিয়ে আয়তো।”

-“আচ্ছা।”

আরভী কথা শেষ বাড়ির ভিতরে চলে গেলো। মিনিট দুই এক এর মাথায় আরভী সহ মিশান প্রহর সবাই এলো।
আরভী সোজা গিয়ে মাইশার আর প্রিয়তা মাঝ খানে গিয়ে বসে পড়ে।

-“তুই ওদের নিয়ে আয়।”

সাদনান মির্জা মিশান কে উদ্দেশ্য করে কথা টা বলে।
মিশান মাথা নাড়ে যার মানে আচ্ছা।
সাদনান মির্জাও গাড়ি স্টাট দিয়ে চলে যায়।প্রহর গিয়ে ডাইভিং সিটে বসে সায়রা পেছনে বসে আছে
মিশান এসে ধপ করে সায়রার পাশে বসে গাড়ির দরজা টা ধড়াম করে লাগিয়ে দেয়।
এদিকে রুহি এখনো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবছে পেছনে সায়রার পাশে বসবে না-কি সামনে প্রহরের পাশে।

-“কি এখনো দাড়িয়ে আছিস যে?”

ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করে মিশান। সায়রা কিছু বলার জন্য মুখ খুলবে তার আগেই মিশান সায়রা হাত চেপে ধরে রুহি কে আবারও বলে

-“সামনে বসে পড়।”

-“হুম।”

বলেই রুহি গিয়ে প্রহরের পাশে বসে পড়ে। প্রহর এক বার রুহির দিকে তাকিয়ে গাড়ি স্টাট দেয়।

সবাই কাপড় দেখছে। সবাই বললে ভুল হবে। ছেলেরা সবাই কেউ চেয়ারে বসে কেউ ফোনে কথা বলছে কেউ
বা গেমস খেলছে। শুধু মহিলারা সব পছন্দ করছে।
মিশান নেই এখানে মিশান কোথাও একটা গিয়েছে।
বারোটা নাগাদ সবাই মার্কেট এসছে আর এখন সন্ধ্যা ছয়টা র বেশি সময় বাজে। সব কেনাকাটা করা শেষ।
এখন সবাই রেস্টুরেন্টে এ যাবে খাবার খেয়ে তার পর বাসায় চলে যাবে।

————-

-“মা আমার কফি টা একটু কষ্ট করে কাউ কে দিয়ে রুমে পাঠিয়ে দিও।”

প্রহর কথা টা বলার সময় রুহির দিকে তাকায় একবার।অতঃপর প্রহর সিঁড়ি দিয়ে উপর নিজের রুমে চলে যায়।
সবাই ফ্রেশ হয়ে এসছে রাতে আর কেউ খাবার খাবে না তাই এখন কিছু কিছু কাপড় এখন দেখে নিবে।
প্রহরের বলা কথায় মাইশা কিছু বুঝলো কি? হয়তো।

-“শোন রুহি।
একটা কফি করে প্রহর কে দিয়ে আয় না মা।”

প্রহর যখন কথা টা বলেছে তখনি রুহির আগমন ঘটেছে।

-“আচ্ছা।”

রুহির জোর পূর্বক হেসে বলে। প্রিয়তা মির্জা অবশ্য নিজে দিতে চে্য্য়ে ছিল তবে মাইশা যেতে দিলো না। রুহি নিজেও পারবে জানায়। তাই তিনিও বেশি ঘাটেঁ না। অতঃপর রুহি কিছু বিরবির করতে করতে রান্না ঘরে চলে যায়।
তার পর কফি বানিয়ে নিয়ে প্রহর এর রুমে এর উদ্দেশ্য হাঁটা লাগায়।তবে ওর ভিষণ ভয় করছে।
কারণ টা হলো ও কাল থেকে এক বারও প্রহর এর সাথে কথা বলে নি উল্টো কালকের আগের দিন কলেজে এক ছেলের সাথে ফ্রেন্ডশিপ করছে।
আর সেই ছেলে ওকে এনে কালকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছে।
আবার কাল ফোন দিয়ে ছিল রুহি ফোনে তখন কথা বলছিল আর ঠিক তখনি প্রহর ফোন দিয়ে মোবাইল ওয়েটিং এ পেয়েছিল।
প্রহর এটা নিয়ে ওকে কিছু বলে নি তবে রুহির নিজের ভয় সাথে কিছু টা অপরাধ বোধ করছে।
তাই নিজ থেকে কিছু বলার সাহস পাচ্ছে না।ছয় মাস আগে যখন প্রহর ওকে মেনে নিয়ে ছিল তখন ও নিজেই বলে ছিল কখনো কোনো ছেলে ফ্রেন্ড বানাবে না। কখনো প্রহর এর কষ্ট হয় এমন কিছু করবে না।
কিন্তু ও তো সে সব কথা রাখতে পারছে না।
ছেলে ফ্রেন্ডও বানিয়েছে।আবার আজ এক দিন এক রাত ধরে কথা না বলে প্রহর কে কষ্টও দিচ্ছে।
যদিও ছেলে টার সাথে ও ইচ্ছে করে ফ্রেন্ডশিপ করে নি। তবে ছেলে টার মা কিছু দিন আগে মা-রা গিয়েছে সেই জন্য ওর খারাপ লেগেছে এসব শুনে তাই ছেলেটার সাথে এমনি কথা বলে যাতে ছেলে টা একটু স্বভাবিক হয়।

রুহি এসব ভাবতে ভাবতে এসে প্রহর এর রুমে সামনে দাঁড়াল।

-“কফি।”

প্রহর বিছানায় বসা থেকেই বলে উঠে

-“রুমে এসে দিয়ে যাও।”

রুহি পা টিপে টিপে এগিয়ে গিয়ে কফি টা বিছানার পাশে থাকা টেবিলে রেখে দিয়ে চলে আসতে গিয়ে প্রহর এর কথায় স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে।

-“বলেছিলাম না।
সব তোমার আবেগ মিলল তো?”

কথা টা বলতে বলতে বিছানা হতে নেমে দাঁড়ায় প্রহর।
রুহি কিছু বলছে না। কারণ প্রহর যা বলছে সব টা মিথ্যা। প্রহর ওর আবেগ না ভালোবাসার,শখের।
তবে কিছু বলে না রুহি মন বাগানে অভিমান জমছে।
আজ দেড় বছর ধরে ওর পেছন পেছন ঘুরছে আর এই লোক এখনো বলছে আবেগ থেকে এসব করছে।
যদি আবেগ হতো তাহলে নিশ্চয়ই এতো দিন ওনার কাছে ভালোবাসার দাবি নিয়ে সব সময় ওনার দরজা এসে দাঁড়াতো না। ওনাকে ভালোবাসে, ভালোবাসে বলে পাগলামি করতো না।

-“তোমার আবেগ, মোহ যাই হই আমি।
কিন্তু তুমি আমার ভালোবাসা আর সেই ভালোবাসায় দিয়ে তোমাকে আমি আমার জীবনে আবদ্ধ করে নেবো।
আর সেটা তোমার ইচ্ছেকৃত হোক বা অনিচ্ছেকৃত। ”

প্রহরের কথা রুহির মন শরীর জুড়ে শীতল স্রোত বয়ে গেলো। সাথে অনেক টা অবাক হলো। কেন না প্রহর রুহির সাথে রিলেশনশিপ এ থাকলেও কেমন আলগা আলগা থাকতো।রুহি বেচারি বেশি বকবক করতো।
আর প্রহর আচার আচরণ দেখে কখনো মনে হয় নি প্রহর এমন ভয়ংকর প্রেমিক পুরুষ হতে পারে।

———-

-“এটা কিসের পেকেট ?আর এটা কখন নিয়েছেন আপনি?
আমি তো দেখলাম না।”

সায়রা সোফায় থাকা একটা পেকেট হাতে নিয়ে ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করে মিশান কে।
মিশান ল্যাপটপ থেকে দৃষ্টি সড়িয়ে সায়রার দিকে তাকিয়ে বলে উঠে

-“আগেই নিয়ে গাড়িতে পেছনে রেখে দিয়ে ছিলাম তাই দেখিস নি।
আর ভিতরে কি আছে সেটা না হয় নিজেই দেখ।”

সায়রা মিশানের অনুমতি পেয়ে ঝটপট পেকেট টা খুলেই ওর চোখ বড় বড় হয়ে গেলো।
সাথে লজ্জাও পেলে তড়িঘড়ি করে আবারও আগের স্থানে রেখে দেয় পকেটে থাকা জিনিস গুলো। অতঃপর আমতা আমতা করে বলে উঠে

-“আপনি মনে হয় ভুল করে করোর জিনিস নিয়ে এসছেন।”

মিশান বালিশ সহ ল্যাপটপ বিছানায় রেখে উঠে এসে সায়রার পেছনে দাঁড়িয়ে ওকে নিজের বুকে আগলে ধরে।
গলায় নাক ঘঁষে জানায়

-“ভুল না ইচ্ছে করে এনেছি।
আর এটা তুই এখন পড়বি।”

-“না,প্লিজ।”

ফট করে না করে সায়রা।

তবে মিশান শোনে না বেশ আদুরে কণ্ঠে আবদার করে

-“জাস্ট একবার।
প্লিজ।”

ব্যস সায়রা গলে যায়।তবে এটা কি আদৌও পড়ে মিশানের সামনে এসে দাঁড়াতে পারবে ও?
কি অসভ্য আবদার। পরক্ষণেই সায়রা ভাবে পুরো মানুষটাই তো অসভ্য তো আবদার গুলো তো তেমন অসভ্যই হবে।
এসব ভেবেই সায়রা পেকেট থেকে মিশানের আনা ড্রেস টা নিয়ে ওয়াশরুম চলে যায়।

#চলবে…

হৃদয় জুড়ে শুধু আপনি ২ পর্ব-১০

0

#হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি[২]
#পর্ব_১০
#জান্নাত_সুলতানা

-“ক’টা বাজে?”

সায়রা রুমে ডুকতেই মিশান ফোন টা সোফায় ছুঁড়ে ফেলে দাঁতে দাঁত চেপে জিজ্ঞেস করে সায়রা কে।

-“দেওয়ালে ঘড়ি আছে।ড্রেসিং টেবিলের উপর আপনার ঘড়ি আছে।
দেখে নিন। এটার জন্য এভাবে ডাকার কি আছে?হু।”

আলমারি হতে রাতের পোষাক নেয় কথার বলার মাঝে। কথা শেষ মুখ ভেংচি কাটে সায়রা। মিশান কে আর কিছু বলতে না দিয়ে ওয়াশরুম চলে গেলো।
মিশান তাজ্জব বনে গেলো। কি জিজ্ঞেস করলো আর এই মেয়ে কি উত্তর দিলো।
মিনিট দুই এক পর সায়রা ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে এলো।
মিশান বিছানায় কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে ফোন হাতে নিয়ে ছিল মাত্র।
কিন্তু ফোন আর দেখা হলো না। সায়রা ওড়না সোফায় রেখে ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে অতঃপর চুল গুলো বিনুনি করে।
ততক্ষণে মিশান তার বউয়ের পেছনে দাঁড়িয়ে। সায়রা নিচে তাকি ছিল। হঠাৎ আয়নায় মিশানের প্রতিবিম্ব দেখে ভয় পেয়ে বুকে থুতু দেয়।
মিশান মুচকি হাসে তবে চোখে রয়েছে এক অদ্ভুত রকম নেশা।
যা সায়রা ছোট্ট দেহ কাঁপুনি ধরাতে যথেষ্ট।

-“কিছু বলবেন?”

সায়রা নিজে কে সামলে নেয় প্রশ্ন করে মিশান কে। তবে মিশান কিছু বলে না।
আলমারি হতে চাদর নামিয়ে আনে।বউয়ের গায়ে জড়িয়ে দেয় তা।অতঃপর পাঁজা কোলে তোলে নেয়। রুম থেকে বেড়িয়ে নিচে এসে গেটের সামনে নামিয়ে দিয়ে দাঁড়াতে বলে গাড়ি বের করতে যায়।
গাড়ি বের করে নিয়ে আসে।তার পর গাড়ি নেমে এসে সায়রার কাছে দিয়ে দরজা খুলে দেয়।সায়রা প্রশ্নতুর চাহনিতে তাকায়।
মিশান দরজা টা ছেড়ে দিয়ে দু’হাত দ্বারা সায়রার মুখ টা হাতের আঁজল নিয়ে মোলায়েম কণ্ঠে বলে

-“বিশ্বাস আছে?”

সায়রা মুচকি হেসে মাথা উপর নিচ করে যার অর্থ “হুম”। মিশান নিজের ওষ্ঠ ছুঁয়ে দেয় বউয়ের ললাটে।
তার পর সায়রা সামনে বসিয়ে নিজেও গিয়ে ডাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টাট করে।প্রায় দশ এগারো মিনিট পর মিশান গাড়ি থামায় এক টা শপিং মলের সামনে।
সায়রা অবাক হলো রাত বাজে দশ টার বেশি আর ওনি এখন শপিং করতে এসছে।

-” বেড়িয়ে আয়।”

মিশানের ডাকে সায়রার ভাবনা জগৎ থেকে বেড়িয়ে আসে।কিছু জিজ্ঞেস করতে গিয়েও করে না। গাড়িতে উঠার আগে মিশানের বলা কথা মনে পড়ে তাই আর কিছু না বলে গাড়ি থেকে নেমে মিশানের সঙ্গে পা মেলায়।
অনেক গুলো দোকান ঘুরাঘুরি করে মিশান এক টা নেভি কালার একটা ড্রেস নিয়ে তা সায়রার হাতে ধরিয়ে দিয়ে সেটা পড়ে আসতে বলে।
সায়রা মুচকি হেসে ড্রেস নিয়ে চেঞ্জ করতে চলে যায়।মিনিট পাঁচ এক পর সায়রা ড্রেস টা পড়ে আসে। মিশান এর মধ্যে বিল মিটিয়ে নিয়েছে। সায়রা এসে মিশানের পাশে দাঁড়ায়। মিশান এক পলক তাকায় বউদের দিকে। অতঃপর সায়রার হাতে থাকা পড়ে আসা কাপড়ের শপিং ব্যাগ টা নিজে হাতে নেয় অন্য হাত দ্বারা সায়রা বাম হাত আঁকড়ে ধরে শপিং মল থেকে বেড়িয়ে আসে।
হাতে থাকা শপিং ব্যাগ টা পেছনে রেখে গাড়ি স্টাট দেয়। গাড়ি তে টুকিটাকি কথা বলছে তবে সায়রা আর এক বারও জিজ্ঞেস করে নি ওরা কোথায় যাচ্ছে।
প্রায় আধঘন্টার পর মিশান একটা রিসোর্ট এর সামনে গাড়ি থামায়।সায়রা নেমে দাঁড়ায় মিশান গিয়ে গাড়ি পার্কিং করে আসে।
এর পর দু’জনেই রিসোর্ট এর ভিতরের দিকে পা বাড়ায়। রিসোর্ট টা বেশ নিরিবিলি। শহর থেকে একটু দূরে।
দেখতেও বেশ চারদিকে গাছে গেঁড়া লাইটিং করা সেই জন্য আরো বেশি সুন্দর দেখতে লাগছে সায়রার কাছে।
ওরা করিডর দিয়ে একবারে শেষ মাথার এর একটা কক্ষে গেলো।
আর এই কক্ষটার বাহির টা আরো সুন্দর করে সাজানো।
মিশান দরজা টা হালকা একটু ফাঁক করে অন্য হাত দিয়ে সায়রার চোখের উপর রাখে।
সায়রা চুপটি করে থাকে। মিশান সায়রা কে নিয়ে রুমে ঢুকে হাত টা চোখের উপর থেকে সরিয়ে নিতে সায়রার মুখ হা করে তাকিয়ে থাকে।
পুরো টা রুমে বেলুন আর মোমবাতি দিয়ে সাজানো বিছানা টাও ফুল দিয়ে সাজানো। আর রুমের মাঝখানে সেন্টার টেবিলে একটা কেক রাখা তাতে কিছু লেখা আছে তবে অতো দূর থেকে তা স্পষ্ট নয়।
মিশান সায়রা কে এভাবে হা করে থাকতে দেখে মুখ গম্ভীর করে বলে

-“মুখ টা বন্ধ করো।”

সায়রা হকচকিয়ে যায় তড়িঘড়ি করে মুখে হাত দেয়।
তার পর মিশানের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে

-“এসব কি?”

কিছু বলে না মিশান। হাত ধরে এগিয়ে সেন্টার টেবিলে রাখা কেক টার সামনে দাঁড়ায়।
কেক টার উপর সুন্দর করে ওর নাম লেখা।
সায়রা হঠাৎ মনে পরে আজ তো ওর জন্ম দিন আর ও তো ভুলে বসে ছিল।
সায়রা বেশি কিছু ভাবে না এক লাফে মিশানের গলা জড়িয়ে ধরে ঝুলে পরে।
মিশান নিজে জড়িয়ে ধরে মুচকি হেসে বলে উঠে

-” Happy birthday. koliza”

অতঃপর গলায় মুখ গুঁজে শব্দ করে চুমু আঁকে বউয়ের কাঁধে।
সায়রা কেঁপে উঠে। তৎক্ষনাৎ ছেড়ে দেয় দু পা পিছিয়ে গিয়ে দাড়ায়।
মিশান অন্য সময় হলে হয়তো বিরক্ত হতো।তবে এখন বিরক্ত হলে না। অসহায় চোখে তাকায় বউয়ের দিকে।যে এখন মাথায় নুয়ে দাঁড়িয়ে।
বিয়ের দু মাসে গতে এক মাস ধরে রোজ নিয়মিত আদর, ভালোবাসা দিয়ে আসছে। তবুও একটু ছুঁয়ে দিলে এখন প্রথম রাতের মতোই কেঁপে কেঁপে উঠে। মিশান এতে বিরক্ত হয়।তবে কখনো তা প্রকাশ করে না।
মুখ চোখ শক্ত করে বলে

-“চল কেক কাট।”

সায়রা তড়িৎগতিতে মিশানের মুখের দিকে তাকালো। মিশান চুল খামচে ধরে অন্য দিকে তাকিয়ে।
তবে কিছু ভাবে মিশান। তার পর আবারও সায়রার হাত ধরে মুচকি হাসে। অতঃপর কেক টা কেটে নেয় সায়রা মিশান কে খাইয়ে দেয়।
মিশানও একটু নিয়ে বাকি টা সায়রা কে খাইয়ে দেয়।
মিশান কালো জিন্স আর একটা কলো জ্যাকেট পড়া।
জিন্স এর পকেট হতে হাতরে এক জোড়া গোল্ড এর নুপুর বের করে।
নিচে হাঁটু গেড়ে বসে সায়রার পায়ে যেই না হাত দিতে যাবে অমনি সায়রা দু পা পিছিয়ে গিয়ে আমতা আমতা করে বলে উঠে

-“কি করছেন আপনি?
আমি পড়ে নেবো। আপনি আমার কাছে দিন।”

-“থাপ্পড়ে তোর সব দাঁত ফেলে দেবো,ইডিয়েট।
পা দে।”

কথা শেষ মিশান নিজের ফোনে ক্যামেরা অন করে সেটায় টাইমার সেট করে সেন্টার টেবিল রেখে পা টেনে এনে নিজের উরুতে রাখে। আর সেই সুন্দর মূহুর্ত টা ক্যামেরা বন্দি হয়ে যায়।

মিশান নুপুর গুলো পড়িয়ে দিয়ে উঠে দাড়ায়।
অতঃপর ফোন টা আগের স্থানে রেখে সায়রার হাত ধরে নিয়ে রুমের এক কর্নারে দাঁড়ায় আবারও ফোনে সেটা ক্যামেরা বন্দী হয়ে যায়।

সায়রা শুধু মিশানের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে।
যার কারণে ফোনে পিকচার গুলো বেশ হয়েছে।
বেশ অনেকখন পর দরজায় কেউ নক করে।
মিশান গিয়ে দরজা খুলে তার পর হাতে কিছু খাবার নিয়ে ফিরে এসে খাবার গুলো রেখে দরজা টা আবার আটকে আসে।

-“চল খাবার খেতে আয়।”

-“কিন্তু আমরা তো বাসায় খেয়ে এসছি।”

-“তোকে জিজ্ঞেস করেছি?”

-“কিন্তু আমার,,,

-“চুপ চাপ খেতে আয় যদি থাপ্পড় খেতে না চাস।”

অগত্যা সায়রা কেও বাধ্য হয়ে মিশানের পাশে বসতে হলো। সব সময় শুধু ভয় দেখায়।
অবশ্য মনে মনে বেশ কিছু খারাপ কথাও বলে নিয়েছে সায়রা মিশান কে।

মিশান নিজেও খাচ্ছে সায়রাকেও খাইয়ে দিচ্ছে। খাবার শেষ মিশান বেসিনে হাত ধুয়ে। সায়রাকেও পানি দিয়ে নিজেও পানি খেয়ে নেয়।

সব রেখে সায়রা কে মিশান কোলে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে নিজেও আঁকড়ে ধরে বউ কে।

-“আদর করবো?”

-“অসুস্থ।”

মিশানের করা প্রশ্নে মিনমিন করে জানায় সায়রা।

মিশান নিজের ওষ্ঠ বউয়ের ওষ্ঠ ছুঁয়ে দেয় আলগোছে।

-“আচ্ছা, ঘুমিয়ে পর।
কাল সকালে বাসায় চলে যাব।”

বলে জড়িয়ে ধরে সায়রা কে সায়রাও নিজেও জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পরে।

মিশান কখনো সায়রা’র ইচ্ছার বিরুদ্ধে কখনো বেশি ঘনিষ্ঠ হয় না। শুধু চুমু খায়।

#চলবে….

হৃদয় জুড়ে শুধু আপনি ২ পর্ব-০৯

0

#হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি[২]
#পর্ব_৯
#জান্নাত_সুলতানা

-“এতো রাতে ছাঁদে কেনো ডেকেছেন, সোহান ভাই?”

সোহান ছাঁদের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে ছিল।
আরভীর প্রশ্ন পেছন ঘুরে। মেয়ে টা জড়সড় হয়ে সোহানের দেখে বেশ অনেক টা দূরে দাঁড়িয়ে।
সোহান হালকা হাসে। এগিয়ে গিয়ে চাদরের আড়ালে থাকা আরভীর ছোট হাত টা নিজের শক্ত দানবের হাতের মাঝে মুঠোয় পুরে নিয়ে নিজের পাশে এনে দাঁড় করায়।

-“প্রেম করতে ডেকেছি। ”

সোহান মুখ টিপে হেসে বলে।

-“রাত সাড়ে বারো টা বাজে, সোহান ভাই। ”

-“তো কি হয়েছে?”

-“কি হয়েছে মানে আপনি দেখেছেন বাহিরে কি পরিমাণ ঠান্ডা?
এর মধ্যে আপনি এসব বলছেন।”

-“হুম এবার কষ্ট করে শীত টা কাটিয়ে দে।
আগামী বছর এতো কষ্ট পেতে হবে না রে পিচ্চি।
আর শোন এমন শুটকি শরীর নিয়ে ভালোবাসলে হবে না ভালোবাসা বহন করার মতো শক্তি থাকা লাগবে।”

কথা শেষ সোহান নিজের বাম চোখ টিপে।

সপ্তদশী কন্যা আরভী।ওতো টাও চালাক নয় তবে এখন কার যোগে চালাক না হলেও উপায় নেই।
আর কিছু বুঝুক বা না বুঝুক তার সোহান ভাই যে ভালো কিছুর ইংগিত দিচ্ছে না তা বেশ বুঝলো আরভী। তবে কথা টা ততটা পাত্তা দিলো না।

-“কেন ডেকেছেন? ”

আবারও প্রশ্ন করে আরভী।

-“কাল তো চলে যাবো।
তোকে এক বার জড়িয়ে ধরি?
প্লিজ। ”

কি সুন্দর আবদার। আরভী কি বলবে কি করবে বুঝতে পারছে না মেয়ে টা। কাল যে সোহান ভাই’রা চলে যাবে এটাও শুনেছে। সেই থেকে ওর কেমন মন টা খারাপ লাগছে। আজ চার দিন হয় ওদের এনগেজমেন্ট হয়েছে।
আরভীর নিজেরও কেমন মন টা চাইছে একবার জড়িয়ে ধরতে সোহান কে।
তবে কোথাও একটা জড়তা কাজ করছে।

-“প্লিজ এবার।
বিয়ের আগে আর কিছু চাইবো না।”

এবার বেশ করুন শোনায় কণ্ঠ।
আরভী আর বেশি কিছু ভাবে না ঝাপটে গলা জড়িয়ে ধরে। আরভীর শরীর হতে চাদর ঝুলে পরে নিচে। কিন্তু সে দিকে খেয়াল নেই মেয়েটার।
সোহান আকস্মিক আক্রমনে দু পা পিছিয়ে যায়।তবে পরক্ষণেই মুখে হাসি ফোটে। মুচকি হেসে শক্ত করে কোমর জড়িয়ে ধরে নিজের শরীরের সঙ্গে মিশিয়ে নেয় প্রেয়সী কে।

—————–

সকাল আটটা বাজে। সবাই নাস্তা করছে। সায়রা আজ নিজে হাতে খাবার খাচ্ছে। সাদনান মির্জা সে তো গম্ভীর হয়ে খাবার মুখে পুরে টপাটপ গিলছে। মিশান নিজে খাচ্ছে তবে আঁড়চোখে বউ কে দেখছে।
নাস্তা করে সোহান রা আজ চলে যাবে।খাবার শেষ সবাই চলে গেলো যার যার রুমে। সোহান রা চলে যাওয়ার পর যে যার কাজে বেরোবে।
মাইশা প্রিয়তা টেবিল গুছিয়ে রাখছে। কম বেশ সবাই চলে গিয়েছে ডাইনিং ছেড়ে শুধু রুহি সোফায় মিনি কম্বল মুড়ি দিয়ে টিভি দেখছে। আর মিশান এখনো খাবার টেবিলে চেয়ারে বসে।
যা দেখে মাইশা চৌধুরীর ভ্রু কুঁচকে আসে।
তবে কিছু বলে না। কিন্তু প্রিয়তা মির্জা কৌতুহল নিয়ে প্রশ্ন করে

-“তোর কি কিছু লাগবে?”

-“হ্যাঁ,আমার বউয়ের জন্য খাবার লাগবে।”

-“কিন্তু এই মাত্র তো নাস্তা করে গেলো।”

মাইশা বলে উঠে।
প্রিয়তা চুপ করে থাকে। সে নিজেও দেখেছে মেয়ে টা তার খাবার শুধু নড়াচড়া করছে। মুখে তুলে নি।তবে অভিমানের তাড়নায় কিছু বলে নি।
কিন্তু প্রিয়তার বেশ খুশি লাগছে কারণ তার মেয়ে খায় নি সেটা ও নিজে ছাড়াও আরও কেউ লক্ষ করছে।

-“মা ও খায় নি।
তুমি তো এখানে ছিল না তাই দেখো নি।”

-“হয়তো। আচ্ছা , তুই বস আমি খাবার দিচ্ছি।”

কথা শেষ করে মাইশা রান্না ঘরের দিকে ছুটে। প্রিয়তা মির্জা এক মনে টেবিল গুছাতে থাকে।

-“মনি ও ছোট।
তুমি প্লিজ রাগ করে থেকো না।
আর তাছাড়া ও তো এখন নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে। ”

-“হুম তাই।
তবে ও যেটা করেছে। সেটা এতো তাড়াতাড়ি ভুলারও কথা নয়।”

বলেই তিনি রুমের উদ্দেশ্যে পা বাড়ায়। সাদনান মির্জা ডাকছে ওনাকে। তিনি নিজের ফোন খুঁজে পাচ্ছে না। তাই প্রিয়তা মির্জা চলে গেলো।
এর মধ্যে মাইশাও খাবার নিয়ে এসে মিশান আর প্রিয়তার কথা গুলো শোনে।

-“মা তুমি মনি কে বোঝাও।
ও কষ্ট পাচ্ছে।
বাড়ি এসছি আজ পাঁচ দিন হতে চলে। এর মধ্যে এক বারও বাবাই,মনি কেউ ওর সাথে কথা বলে না।”

-“আমি তো ওকে অনেক বার বুঝিয়েছি।
তবে তোর এক্সিডেন্ট এর বিষয় টা ওরা মানতে পারছে না। ”

-” মা আমার কিছু হয় নি তো।”

-“আচ্ছা তুই তোর বাবাই’র সাথে কথা বল।”

-“হুম। ”

কথা শেষ মিশান সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে নিজের রুমে চলে এলো।
রুমে এসে সায়রা কে মিশান দেখতে পেলো না। কপাল বাজ পড়ে মিশানের।
হাতে থাকা খাবার প্লেট টা নিয়ে বারান্দায় দিকে এগিয়ে গেলো। সায়রা রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে।

-“এদিকে আয়।”

সাইডে থাকা সোফায় এক পাশে বসে খাবার প্লেট টা সেন্টার টেবিলে রাখে মিশান।
কিন্তু সায়রা কোনো হেলদুল নেই।এখন আগের স্থানে একই অবস্থা দাঁড়িয়ে।
মিশান ফুস করে শ্বাস টানে অতঃপর সোফা ছেড়ে উঠে গিয়ে টেনে এনে নিজের একটা উরুতে বসায়।

-“হা কর।”

আদেশের সুরে বলে মিশান। কিন্তু সায়রার চোখে জলে টলমল করছে।
মিশান জানে এই চোখের পানির কারণ।

-“সব ঠিক হয়ে যাবে, জান।
খাবার টা খেয়ে নে, প্লিজ। ”

কথা শেষ নিজের অধর ছুঁয়ে বউয়ের ললাটে।
সায়রা চোখ বন্ধ করে আর অমনি এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে গাল বেয়ে।
মিশান বাম হাতের বৃদ্ধা আঙ্গুলের সাহায্য তা মুছে দেয়।
তার পর সায়রা কে চোখ দিয়ে ইশারা করে নিজে হাতে থাকা খাবার টা নিতে বলে।অতঃপর খাবার টা মুখে পুরে নেয় সায়রা।

সায়রা মুচকি হাসে চুখে জল মুখে হাসি।বেশ আদুরে লাগছে দেখতে মিশানের কাছে।
মন চাইছে একটু আদর করে দিতে।তবে এখন আদর করা যাবে না।
সোহানদের এগিয়ে দিয়ে অফিস যেতে হবে আবার।
এসব ভাবতে ভাবতে সায়রা কে সব টা খাবার খাইয়ে এঁটো প্লেট রেখে রুমে এসে বেসিনে হাত ধুয়ে বউয়ের জন্য পানি নিয়ে বেলকনিতে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই দেখলো সায়রা রুমে এসছে।
তাই মিশান আর ওদিকে গেলো না। পানি টা খেতে বলে নিজে ফ্রেশ হতে চলে গেলো ওয়াশ রুমে।
ফ্রেশ হয়ে বেড়িয়ে এসে রেডি হয়ে বউয়ের কপালে চুমু খেয়ে বউয়ের হাত ধরে নিচে চলে এলো। এর মধ্যে এক বার নিচ থেকে ডাক পরেছে সোহনা রা রেডি হয়ে অপেক্ষা করছে।
মিশান আসতেই সোহান রা সবাইর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে পড়ে।

———————-

-“বাবাই ও কষ্ট পাচ্ছে। ”

-“পাঁচ দিন মাত্র এটাই সহ্য হচ্ছে না।
আর আমাদের যে একুশ দিন কষ্ট দিলো।
আর বাকি সব ভুল গুলো তো বাদ দিলাম। তোর,,,

-“বাবাই প্লিজ আমার কিছু হয় নি তো।”

-“হতে পারতো মিশান।”

-“বাবাই ওর দিক থেকে ভাবলে কিন্তু ও নিজের স্থানে সত্যি টা জানার আগে পযন্ত ঠিক ছিল। ”

মিশানের এই কথায় সাদনান মির্জা চুপ করে গেলো।
সত্যি তো। কিন্তু প্রথম থেকে ভুল গুলো তো ও নিজে করে এসছে। তবে মনে মনে স্থির করলেন বাড়ি গিয়ে মেয়ে’র সাথে সব দূরত্ব আজ মিটিয়ে নেবে।
মিশানের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। অতঃপর কেবিন থেকে বেড়িয়ে গেলো।
সত্যি তার মেয়ে ভাগবতী। এতো এতো ভুল করার পরেও কত টা ভালোবাসে তার মেয়ে কে এই ছেলে টা ভেবে মন টায় বেশ আনন্দ অনুভব করলেন।

————–

সন্ধ্যা সাদনান মির্জা সহ মিশান আয়ান অফিস থেকে তারাতাড়ি ফিরে এলেন।
সাদনান মির্জা সাথে করে সব সময় এর মতো করে মেয়ে’র পছন্দের সব খাবার নিয়ে এসছে।
বাসায় এসেই হাঁক ছেড়ে মেয়ে’কে ডাকলে। সায়রা দৌড়ে নিচে আসে সাথে আসে রুহি,আরভী। মূলত ওদের সাথে বসে গল্প করছিল সায়রা। সায়রা বাবা কে দেখেই অবাক হয়ে গেলো।
সাথে খুশিও হলো।এটা ভেবে যে বাবা আর ওর উপর রাগ করে নেই।
অতঃপর সবাই মিলে আড্ডা খাওয়া শেষ করে রুমে চলে।
গেলো আজ সাদনান মির্জা মেয়ে কে আবার আগের মতো করে নিজ হাতে তোলে খাইয়ে দিয়েছে।
বাড়ি সবাই খুশি তবে প্রিয়তা মির্জা সব সময়ের মতো গম্ভীর হয়ে ছিলেন।
সায়রা জানে মা তার উপর বেশিখন রাগ করে থাকতে পারবে না তাই মন বেশি খারাপ হয় নি।
আর দোষ টা তো তারই নিজের। কেন সব টা না যেনো এরকম করলো।
সায়রা মা,আর বড় মনির সঙ্গে হাতে সব গুছিয়ে রাখছিল।
ঠিক তখনি উপর থেকে মিশানের ডাক পরে।কাজও প্রায় শেষ তাই মাইশা ওকে ঠেলেঠুলে উপর রুমে পাঠিয়ে দিলো।

#চলবে….

[[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ।]

হৃদয় জুড়ে শুধু আপনি ২ পর্ব-০৮

0

#হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি[২]
#পর্ব_৮
#জান্নাত_সুলতানা

-“মা বাবা কে আয়ান মামার সাথে কথা বলতে বলো।”

-“ও এখন রাজি হয় নি?”

-“না।আমার মনে হয় ও ভয় পাচ্ছে মা।”

-“হবে হয়তো।
আচ্ছা আমি তোর বাবার সাথে কথা বলবো।”

-“হুম। ”

সারা আহামেদ আর কিছু বলে না ছেলের মাথায় বিলি কাটতে থাকে।
সোহান যে আরভী কে ভালোবাসে সেটা সারা আহামেদ জানে।
তিনি প্রথমই বলে ছিল আয়ান চৌধুরীর সাথে কথা বলে সব পাকা করে রাখতে।
তবে সোহান না করেছে। সে চাইতো তার প্রেয়সীও তাকে নিজ থেকে ভালোবেসে মেনে নিক।
সোহান ওই দিন আরভীর চোখের ভাষা বুঝতে পেরেছে। নিজের জন্য এই ডাগর ডাগর আঁখি জোড়ায় ওর জন্য ভালোবাসা দেখেছে। মেয়ে টাও ওকে ভালোবাসে তবে কোনো এক অজানা কারণে তা প্রকাশ করছে না।

———-

রুহি,আরভী কে আজ সাদনান মির্জা ঘুরতে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু জরুরি মিটিং থাকার কারণে তা আর হলো না।আয়ানও সাথে আছে।
রাহান কোথাও এক ফ্রেন্ড এর সাথে দেখা করতে গিয়েছে।অগত্যা সোহান আর প্রহর কে দিয়ে পাঠিয়েছে রুহি,আরভী কে।
প্রহর রাজি ছিল না। কিন্তু প্রিয়তা মির্জার জোড়া জুড়ি।আবার নিজেও কি ভেবে যেনো রাজি হলো।
কিন্তু সোহান বেশ খুশি। কেন না আবারও কিছু সময় খুব কাছ হতে প্রেয়সী কে দেখতে পাবে।
ওরা প্রথম এ আরভীর কলেজ যাবে কারণ রুহি আবদার জরেছে আরভীর কেলেজ দেখবে।
চার জন মিলে সারা বিকেল ঘুরাঘুরি করে সন্ধ্যা বাসায় ফিরে এলো।সাথে নিয়ে এসছে কিছু ভাজাপোড়া মূলত নিজেরা যা খেয়েছে তার সব কিছুই, সারা,প্রিয়তা,মাইশার জন্য নিয়ে এসছে।
তার পর আবার বসার ঘরে এক দফা আড্ডা দিয়ে যে যার রুমে চলে গেলো। ওরা চার জন আর নিচে আসবে না বলে জানিয়েছে।
বাহিরে ঘুরাঘুরি করে ক্লান্ত।
তাই আর কেউ দ্বিধা মত পোষণ করে নি।
রাত সাড়ে আটটা নাগাত আয়ান, সাদনান, রাহান বাসায় ফিরে।
সবাই ফ্রেশ হতে চলে গেলো।
তবে এর মধ্যে সারা আহামেদ দুপুরে ছেলের বলা কথাও বলে দিয়েছে রাহান আহামেদ এর নিকট।
রাহান আহামেদও রাজি হয়েছে এখন কথা টা আয়ান আর সাদনান মির্জার কাছে পারতে পারলে হয়।
রাত নয় টা নাগাদ সবাই ডাইনিং এ উপস্থিত হলো।
খাবার খাওয়া শেষ সবাই ড্রয়িং রুমে বসে।

-“ভাই সোহান আরভী কে,,,

-“হুম আমি জানি। তবে আমি আমার ভায়রা ভাইয়ের মেয়ে কে তো আর বেকার ছেলের কাছে বিয়ে দিতে পারি না।
আশা করি আমি কি বলছি বুঝতে পরেছিস।”

-“হুম, তবে আমার ছেলে কিন্তু বেকার নয় ভাইয়া।
আমার ছেলে লেখা পড়ার পাশাপাশি তার বাবার সাথে নিজেদের ব্যবসাও সামলাচ্ছে। ”

সাদনানের কথায় মুচকি হেসে বলে সারা।আয়ান,মাইশা দু’জন তারা দর্শক।

-“ভাই আমি বলছিলাম কি।
এখন না হয় পাকাপাকি করে রাখা যাক?”

রাহানের কথায় আয়ানও যেনো কিছু টা মত আছে। সাদনান যেনো তা বুঝতে পারলো।
তবু্ও নিজে নিজের মত প্রকাশ করে দিলো।

-“আয়ান, মাইশা তোদের কি মত?
আর মেয়ে তোদের একার নয়।তাই আমি চাই রাহানের কথা থাক।”

আয়ান মুচকি হাসে আয়ান জানে সাদনান ওর চোখ দেখে বুঝতে পেরেছে। তবুও ফর্মালিটি করছে।

-“তোমার যা ভালো মনে হয়।”

আয়ানের সাথে তাল মিলিয়ে মাইশাও বলে

-“হ্যাঁ ভাই। আমাদের কোনো আপত্তি নেই। ”

-“সে না হয় হলো।
তবে আরভী?”

প্রিয়তা মির্জা চিন্তিত কণ্ঠে বলে। সবাই কিছু টা ভাবনায় পড়ে প্রিয়তার কথায়।
তবে সাদনান মুচকি হাসে।

-“বাবাইর উপর দিয়ে আরভী কিছু বলবে না।
আর যেখানে নিজেও সোহান কে ভালোবাসে। ”

সাদনানের কথায় সবাই অবাক হয় শুধু রাহান,সারা বাদে।
তবে মুখে তা কেউ প্রকাশ করে না।
কারণ এটা জানা সাদনানের কাছে কোনো বিষয়ই না।
সাদনান নামক মানব টাই এমন। একটা রহস্যময়। যেখানে নিজের স্ত্রী এখনো তার রহস্যের উন্মোচন করতে পারেনি এতো বছরেও সেখানে আয়ান,মাইশার জন্য তো এসব বিলাসিতা।

-“তাহলে আমরা কুমিল্লা যাওয়ার আগেই কাজ টা সেরে ফেলা যাক।”
অতঃপর সবাই রাজি হলো।
তবে আয়ান শর্ত রেখেছে মেয়ের সাথে কথা বলে মেয়ে রাজি হলে তার পরই বিয়ে ব্যাপারে এগুবে নয়তো না।
এতে অবশ্য কারোর উপর তেমন প্রভাব বিস্তার করে নি।
কারণ আরভী নরম মনের, শান্ত আর চুপচাপ স্বভাবের। আরভী কখনো বাবার উপর দিয়ে কিছু বলবে না।

—————–

-“আল্লাহ আপনি কেন এসব করতে গেলেন?
আমি তো নামাজ টা শেষ করে এসে করতাম। ”

-“আমার ইচ্ছে। ”

-“তাই বলে এসব?”

-“তুই টেবিলে বস।
আমি খাবার দিচ্ছি। ”

সায়রার প্রশ্নের জবাব না দিয়ে উল্টো নিজে আদেশ করে।
অগত্যা সায়রা বাধ্য মেয়ের মতো গিয়ে ডাইনিং টেবিলে বসে পরে।
সকালে খাবার মিশান বাইরে থেকে আনিয়ে ছিল। তার পর দু’জন খেয়ে ঘুমিয়ে ছিল। ঘুম থেকে দুপুরে উঠে সায়রা মিশান কে পাশে পায়নি।
ওয়াশরুমে নিজের মিশানের কাপড় রাখা ছিল। ভেবে ছিল ধুয়ে দিয়ে নামজ পড়ে নিবে। কিন্তু ওয়াশরুমের ভিতর কোনো কাপড় ছিল না।তাই বেলকনিতে গিয়ে দেখে।
আর সেখানেই দেখতে পায় নিজের আর মিশানের কাপড় ধুয়ে শুকাতে দেওয়া।
সায়রার আর বুঝতে বাকি থাকে না এসব মিশান করেছে। শুধু মুচকি হেসে ছিল।
অতঃপর ভেবেছিল নামাজ পড়ে রান্না করে নিবে।
কিন্তু রান্না ঘরে এসো দেখা মিলে মিশান অলরেডি রান্না করে নিয়েছে।

-“হা কর।”

সায়রা ভাবনার জগতে এতো টা বিভোর যে মিশান সামনে খাবার নিয়ে বসে সে টাও খেয়াল করে নি।

সায়রা ভাবনা বাদ দিয়ে চুপ চাপ হা করে তবে মুখে নিতে ঠোঁটে লেগে ঠোঁট জ্বলে উঠে।

-“জ্বলে।আমি খাব না।”

অসহায় ফেস করে বলে সায়রা

মিশান সায়রার ঠোঁটে হালকা করে নিজের ঠোঁট ছোঁয়া।
তার পর আদুরে কণ্ঠে জানায়

-“সরি জান।
খাবার টা খেয়ে নে।ঔষুধ দেবো।খেলে ঠিক হয়ে যাবে।”

সায়রা আর কিছু বলে না পানি নিয়ে কোনো রকম গিলে নেয় খাবার। সকালে খাবার টা ততটা ঝাল ছিল না
তাই তখন এতো টা বুঝতে পারে নি তবে এখন বেশ জ্বলছে ঠোঁটে।
সায়রা কে খাইয়ে দিচ্ছে সাথে নিজেও খাচ্ছে মিশান।
খাওয়া শেষ মিশান সব গুছিয়ে রাখে।
সায়রা করতে চেয়েছিল তবে মিশান দেয় নি। সব গুছিয়ে রেখে এসে সায়রা কে চেয়ার থেকে কোলে করে রুমে এনে বিছানায় শুয়ে দিয়ে সায়রা কে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়ে মিশান।

-“সকাল থেকে আমাক পাগল করে রেখেছি।
এখন আমি ঘুমবো সাথে তুইও।”

-“আপনি ঘুমুতে পারেন নি আপনি ঘুমান।আমাকে ছাড়ুন।
আমি ঘুমবো না।”

-“দেখ বেশি নড়াচড়া করবি না। না ঘুমালে চুপ করে শুয়ে থাক আর আমাকে ঘুমুতে দে।”

-“আরে,,,

আর কিছু বলতে পারে না সায়রা মিশান তার আগেই ওর মুখ নিজের ঠোঁট দ্বারা বন্ধ করে দেয়।

গাঢ় একটা চুম্বনে আবদ্ধ হয়।এখন আর তেমন একটা কষ্ট হয় না সায়রার এখন নিজেও সাথে সাথে রেসপন্স করে।
বেশ অনেক টা সময় পর মিশান সায়রা কে ছেড়ে দিয়ে। ওকে নিচে ফেলে ওর উপর চেপে বসে
অতঃপর নেশা মিশানো কণ্ঠে বলে উঠে

-“ঘুমিয়ে গেলো বেঁচে যেতি।
তবে এখন যা হবে সব টার জন্য তুই দ্বায়ী, সুইটহার্ট।

কথা শেষ করেই নিজের হাতের এলোমেলো স্পর্শে পাগল করে মেয়ে টা কে অতঃপর দুজন পাড়ি দেয় ভালোবাসার সমুদ্রের।

#চলবে…..

[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ।]

হৃদয় জুড়ে শুধু আপনি ২ বোনাস পর্ব

0

#হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি[২]
#বোনাস_পর্ব
#জান্নাত_সুলতানা

[পর্ব টা কিছু টা রোমান্টিক পড়তে না চাইলে স্কিপ করতে পারেন]

-“আমি জানি না তোকে কবে কখন কিভাবে ভালোবেসেছি। ছোট বেলা যখন তুই আমার পেছন পেছন ঘুরতি তখন আমার বিরক্ত লাগতো।তোকে এ নিয়ে অনেক বার বকাঝকাও করেছি।তার পর যখন তুই আস্তে আস্তে আমার সাথে কথা বলতি না। বিরক্ত করতি না অন্য ছেলেদের সাথে খেলতে যেতি তখন আমার রাগ লাগতো।আর সেই জন্যই পরে তোকে কোনো ছেলের সাথে মিশতে দিতাম না।
তবে তুই তখন আমার আবেগ, মোহ নাকি ভালোবাসা সে টা বুঝতে পারি নি। দিন এভাবেই যেতে লাগলো। কিন্তু
আমি একটা সময় বুঝতে পাড়লাম আমি তোকে ভালোবাসি।
আর সেই থেকে তোকে আগলে আগলে রাখতাম। তবে তুই তখন আমাকে ভালোবেসে নয়। একটা নেশা ছিলাম আমি তোর। তাই তুই সব সময় আমার সাথে সাথে থাকতি।
আর তুই যখন একটু বড় হলি তখন আমি তোর জেদে পরিণত হলাম।তবে সে টা শুধু পড়া লেখা থেকে বেচে যাওয়ার জন্য আমাকে চাইতি। ভাবতি একবার যদি বিয়ে হয়ে যায় তবে হয়তো আর পড়তে হবে না(হালকা করে একটু হাসে মিশান )
কিন্তু তোর সব কারসাজি বাবাই বুঝতে পেরে যায়।
এটা আমাকে বাবাই বলেছিল। আর এটা শুনার পর আমার অনেক রাগ হয়েছিল। তখন বাবাই আমাকে শর্ত দিলো। তোর সাথে আমি যেনো খারাপ ব্যবহার করি। Even আমি যেনো তোর সাথে বিদেশ যাওয়ার পর কোনো রকম যোগাযোগও না করি।আমি অবশ্য প্রথম এ এসব মানতে চাই নি।কিন্তু বাবাই বলছিল এতে নাকি তুই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করবি। আর হলোও তাই।
এতে অবশ্য আমার কোনো লাভ হয়নি। তুই ভুল বুঝলি। তবে ভালো তো বেসে ফেলেছি এটাই ভেবেই অনেক শান্তি লাগতো।
আর এখন তুই আমার অর্ধাঙ্গিনী। তুই চাইলেও আমার সাথে থাকতে হবে আর না চাইলে তোকে কি করে আমার কাছে রাখতে হবে সে পথও আমার জানা আছে, সুইটহার্ট।

কথা গুলো এক নিশ্বাসে বলেই মিশান সায়রা ঠোঁটে নিজের ঠোঁট ছোঁয়া দেয়।
সায়রা এতোখন মন দিয়ে কথা গুলো শুনছিল। ওর বাবা এসব করেছে।এই জন্যই বুঝি মা বিকেলে ফোনে কোনো সত্যি কথার কথা বলছিল।
তবে মিশানের লাস্ট কথায় এসব ভাবনা আর ভাবা হলো না।
ভ্রু কুঁচকে আসে।
এটা কি প্রপোজ বলে নাকি বন্দি করে রাখার হুমকি?
সায়রার বোধগম্য হলো না। মিশান দোলনায় বসে আছে আর সায়রা মিশানের কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে।
মিশান একটু কাত হয়ে নিজে পরিহিত থ্রি কোয়ার্টার পেন্ট এর পকেট হাতিয়ে একটা রিং বের করে।
তার পর সায়রার বাম হাত টা টেনে ধরে সেটা অনামিকা আঙুলে পরিয়ে দেয়।
সায়রা হাতের দিকে তাকালো রিং টা আবছা আবছা আলোয়ে সে টা চিক চিক করছে।
সায়রা বুঝলো এটা ডায়মন্ড এর রিং। রিং টা যে যথেষ্ট দামি সে টা এটা দেখেই বুঝা যাচ্ছে। এর মধ্যে মিশান পকেট থেকে আরও একটা কিছু বের করে। অতঃপর সায়রা কে দোলনায় বসিয়ে একটা লকেটও পরিয়ে দেয় ওর গলায়।
সায়রা এবার বেশ অবাক হলো।

-“আপনি এসব কোথা থেকে এনেছেন? ”

-“এগুলো লন্ডন যাওয়ার পড় থেকে মাঝে মাঝে কিছু কাজ করতাম আর তখন থেকেই টাকা জমিয়ে এসব বানিয়ে রেখেছি।
আরও আছে বাসায়। এগুলো সাথে নিয়ে এসেছিলাম তাই দিয়ে দিলাম।”

-“আপনি ওখানে কাজ করতেন?”

অবাক হয়ে প্রশ্ন করে।

-“হুম মাঝে মাঝে যেতাম তবে সে টা কেউ জানে না।
আজ তোকে বললাম। ”

-“কিন্তু এসব কেন করতেন? ”

-“তুই ওইসব বুঝবি না, ইডিয়েড।
তবে এটা জেনে রাখ পুরুষ তার শখের নারীর জন্য সব করতে পারে।
পুরুষ মানুষের ভালোবাসা যদি সত্যি হয়।সেটা সুন্দর সাথে ভয়ংকরও বটে।
সে টা তোকে একটু পরেই বুঝিয়ে দেবো, সুইটহার্ট। ”

কথা গুলো বলেই এক টানে সায়রা কে দাঁড় করিয়ে আবারও কোলে নিয়ে হাঁটা ধরে রুমের উদ্দেশ্যে।
সায়রা কিছু বুঝতে পারছে না মিশান কি করবে। আর কি সব বলছিল তখন।
সায়রার ভাবনার মাঝেই মিশান ওকে রুমে এনে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে দরজা আটকে বড় লাইট অফ করে ড্রিম লাইট অন করে।
তার পর ফিরে এসে সায়রা সামনে হাঁটু গেড়ে বসে ওর এক টা হাত নিজের হাতের মুঠো নিয়ে আলতো করে ঠোঁটের পরশ দিলো হাতের পাতায়।
অতঃপর ধীরে কন্ঠে বলতে লাগলো

-“আমার তোকে চাই জান।
একান্তই নিজের করে। তোকে আমাতে আবদ্ধ করতে চাই।
আমি যখন থেকে বুঝতে পেরেছে তোকে ভালোবাসি ঠিক তখন থেকে আমার পুরুষালী সত্ত্বা তোকে চাইতো।
আমি জানি এটা শোনার পর তোর মনে প্রশ্ন জাগবে যে এটা আবার কেমন ভালোবাসা তবে আমার ভালোবাসার একটা অংশ এটা আর এটা শুধু তোকে ঘিরে।আর মরণের আগে পযন্ত তোর মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকবে।
ভালোবাসি সুইটহার্ট। ”

কথা টা বলে আর এক সেকেন্ডও দেড়ি করে না মিশান এক ধাক্কা সায়রা কে বিছানায় ফেলে নিজের দু হাত দ্বারা সায়রার মুখ খানা নিজের হাতের মাঝে বন্দী করে নিজের পুরুষালী ঠোঁট জোড়া দিয়ে মেয়ে টার ঠোঁট জোড়া আয়েত্তে নিয়ে নেয়।

সায়রা আবেশে চোখ বন্ধ করে। বেশ কিছুখন পর মিশান সায়রা কে ছেড়ে দিয়ে হাত রাখে শাড়ীর আঁচলে।
সায়রা তখন শ্বাস নিতে ব্যস্ত। মিশান তার প্রেয়সীর দিকে পূরণ দৃষ্টি দিলো যদিও সব আবছা আবছা দেখা যাচ্ছে।
যার ফলে মিশান আরও উন্মাদ হলো সাথে নিজের এলোমেলো স্পর্শ সামনের রমণী টাকেও পাগল করে দিলো।
সায়রাও জড়িয়ে ধরলো মিশান কে।
তবে মিশানের ওজন হাইট দুটি সায়রার তোলনায় আকাশচুম্বী।
যার ধরুনে মেয়ে টার কষ্ট টা একটু বেশি হলো।তবে অজানা এক আনন্দে পেয়েছ।
সাথে সামনে থাকা স্বামী নামক ভালোবাসার মানুুটাকেও বাঁধা দিয়ে তা নষ্ট করতে পারে নি।

-“সরি সুইটহার্ট।
আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে।”

কথা টা বলেই মিশান সায়রার গলায় মুখ গুঁজে।

-“ভালোবাসি মিশান ভা,,

-“উঁহু, স্বামী হই তোর।”

-“হুম, ছোট বেলার অভ্যাস। ”

আর কোনো রকম উত্তর আসে না মিশানের দিক হতে। সায়রাও আর কিছু বলে না সঙ্গ দেয় স্বামী নামক একান্ত নিজের পুরষ টার পাগলামিতে।

————–

সায়রা মিশানের গলায় মুখ গুঁজে ঘুমিয়ে আছে।মিশান এক হাতে ফোনে কিছু করছে। আর মিট মিট করে হাসছে। আর অন্য হাতে প্রেয়সী কে আগলে রেখেছে।
আবার একটু পর পর সায়রার মাথার তালুতে চুমু খায়।
সায়রা নড়েচড়ে ঘুম ঘুম চোখে পিটপিট করে তাকায় তার পর আবারও ঘুমের দেশে তলিয়ে যায়।
কিন্তু এবার মিশানের দিকে তাকিয়ে আর চোখে ঘুম সব উড়ে গেলো।চটপট উঠে পাশ হতে শাড়ী টা কোনো রকম গায়ে পেচিয়ে নিলো।
মিশান হো হা করে হেসে দিল।

-“তোর সব কাল রাতেই আমি দেখে নিয়েছি, সুইটহার্ট। ”

বলেই এক টানে সায়রা কে নিজের কোলের উপর এনে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে অতঃপর বিছানায় পরে থাকা ফোন টা হাতে নিয়ে সায়রার সামনে ধরে।

সায়রা চোখ বড় বড় করে ফোনের দিকে তাকিয়ে হুট করে ফোন টা কেড়ে নিতে গেলেই মিশান তা হতে দিলো না।

-“আপনি এটা কখন কেরেছেন অসভ্য মানুষ?
প্লিজ কেটে দিন।”

অসহায় ফেস করে বলে সায়রা। যা দেখে মিশান আবারও এক দফা হেসে নিয়ে বলে

-“দেখতে কিন্তু অনেক হট লাগছে।
ভাবছি এটা বড় করে প্রিন্ট করে আমাদের ব্রেড রুমে ঝুলি রাখবো।
কি বলিস?”

কথা গুলো বলেই মিশান এক টা চোখ টিপ দিলো।
আর সায়রা লজ্জা রংধনু হয়ে মিশানের বুকে মাথা রেখে তা আড়ালে করে।

#চলবে…

হৃদয় জুড়ে শুধু আপনি ২ পর্ব-০৭

0

#হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি[২]
#পর্ব_৭
#জান্নাত_সুলতানা

-“আ’ম সরি মিশান ভাই।
সব আমার জন্য হয়েছে। আমি কি করে এটা করতে পারলাম?
ওই দিন রাতে যদি বড় কোনো অঘটন ঘ,,,,

আর কিছু বলতে পারে না সায়রা। মিশান ওকে এক ঝটকায় ড্রেসিং টেবিলের উপর বসিয়ে দিয়ে দু হাত দ্বারা সায়রা কোমর জড়িয়ে ধরে নিজের পুরুষালী শক্ত ঠোঁট দিয়ে মেয়েটার পাতলা ঠোঁট জোড়া চেপে ধরে।
সায়রা মিশানের কাঁধে এক হাত রাখে। অন্য হাত মাথার পেছনে রাখে চুলের বাজে।
মিশান উদোম শরীরের থাকার ধরুনে সায়রা নখ গেঁথে গেলো মিশানের কাঁধের কিছু টা নিচে।
অন্য হাত দ্বারা মিশানের মাথার ছোট ছোট চুল গুলো খামচে ধরে।
মিশানের ভ্রু কুঁচকে আসে।
তবে পাত্তা দেয় না। নিজের মতো করে ভালোবাসার পরশ দিতে থাকে মেয়ে টার ঠোঁটে। আরও কিছু টা নিকটে আনে বউ কে।
মিনিট দুই এক হয়ে এলো হয়তো। সায়রা শ্বাস নিতে পারছে না।
চোখ বড় বড় করে।মিশানের কাঁধ, চুল হতে নিজের হাত দুটি সরিয়ে নেয়। অতঃপর নিজের হাত, পা ছুঁড়া ছুঁড়ি করতে লাগলো।
মিশান ছেড়ে দিলো।
সায়রা দূরত্বগতিতে শ্বাস নিতে লাগলো । আরও একটু থাকলে হয়তো ওর শ্বাস বন্ধ হয়ে যেতো।
এদিকে মিশান নিজের বাম হাতের বৃদ্ধা আঙ্গুল দ্বারা নিজের ঠোঁট মুছে সায়রার দিকে তাকায়।
মেয়ে টা এখন চোখ বন্ধ করে হাঁপিয়ে যাচ্ছে।
মিশান অসহায় ফেস করে বউ কে দেখছে । মিশান ভাবে শুধু দু মিনিট চুমুতেই এই অবস্থা বউয়ের। না জানি বাসর করলে কি অবস্থা হয়।

-“আপনার কি বৃদ্ধি নেয় মিশান ভাই?
কিভাবে ঠো,,,

ছিঃ ছিঃ কি বলতে যাচ্ছিল ও? ভেবে লজ্জায় সায়রার ছোট মুখ খানা রং পরিবর্তন হলো।
মিশান দুষ্ট হাসে। নিজের তর্জনী আঙ্গুল দিয়ে সায়রার কপালের সাইডে দিয়ে স্লাইড করতে করতে বলে

-“হুম, তুই তো ছোট বেলা থেকেই আমার ভালোবাসা চাইতি।
কিন্তু আমার ভালোবাসা রুপে ভয়ংকর অত্যাচার সহ্য করার মতো ক্ষমতা না তোর আগে ছিল আর না এখন হয়েছে।
তবে আমার কিছু করার নেই।
আমি যেমনি করি তোকে সেটা সহ্য করতে হবে, সুইটহার্ট।

-“আমি ফ্রেশ হবো।”

একটা ঢোক গিলে মিনমিন করে বলে সায়রা।
মিশান মুখ হতে হাত নামিয়ে নেয়।
সায়রা যেনো হাঁপ ছেড়ে বাঁচে। ঝট করে ড্রেসিং টেবিলের উপর হতে নেমে গিয়ে মিশানের থেকে দু হাত দূরে দাঁড়ায়।
এই অসভ্য লোক কি সব বলছে। আর বেশিখন এখানে থাকলে ওর হার্ট অ্যাটাক হবে নিশ্চিত। এই বেয়াদব মার্কা হার্ট টাও আজ বেশি লাফা লাফি করছে।

-“তোর কাপড় আছে এ বাসায়?”

-“না।আমি অনেক দিন পরেই এসছি এ বাসায়।”

-“আচ্ছা তুই ফ্রেশ হয়ে আয়।
আমি দেখছি কি করা যায়।”

বলেই মিশান থ্রি কোয়ার্টার একটা পেন্ট আর টি-শার্ট নিয়ে অন্য রুমে চলে গেলো।
সায়রাও ফ্রেশ হতে চলে গেলো।
মিনিট দশ এক পরে মিশান রুমে এলো।সায়রা তখন ওয়াশ রুমে পানি পড়ার শব্দ হচ্ছে। হয়তো সাওয়ার নিচ্ছে।
মিশান শাড়ী টা বিছানায় রাখে।
শাড়ীর সাথে প্রয়োজনীয় সব নিয়ে ওয়াশরুমের দরজায় নক করে।

-“এগুলো পেয়েছি মা-র রুমে। তোর হয়তো এতে হয়ে যাবে।
আর আমি ড্রেস অনলাইনে অর্ডার করে রেখেছি।
সন্ধ্যা হবে আসতে আসতে।
ততক্ষণে তুই এগুলো কষ্ট করে পড়ে নে।”

সায়রা দরজা টা অল্প ফাঁক করে মাথা টা বের করে বলে

-“আচ্ছা।”

বলেই মিশানের হাত থেকে কাপড় গুলো নিতে গিয়ে ওর হাত মিশানের হাত স্পর্শ করলো।
মিশান ওর হাতের দিকে তাকিয়ে একটা ফাঁকা ঢুক গিলে।
সায়রার হাতে কালো লম্বা লম্বা লোম গুলোতে বিন্দু বিন্দু পানি জমে আছে।
মিশান দৃষ্টি অন্য দিকে ঘুরায়। নয়তো যে অনর্থ হতে বেশি দেড়ি হবে না।
সায়রাও কাপড় নিয়ে দরজা ফের লাগায়।
কিন্তু শাড়ীর সব প্রয়োজনীয় জিনিসের মেয়েলী গো’পন ব’স্তুর দেখে মেয়ে টার চোখ বেড়িয়ে আসার উপক্রম হলো।
ও ভাবছে মিশান ভাইয়ের সামনে কি করে দাঁড়াবে।
কি লজ্জার ব্যাপার।
কিন্তু ও তো আর জানে না মিশান কাপড়ের বাজই খুলে দেখে নি।
তাই এটাও মিশানের নজরে পড়ে নি।

সায়রা সব পড়ে তার পর গায়ে একটা তোয়ালে জড়িয়ে দরজা টা হালকা ফাঁক করে মাথা টা বাহির করে ঘরের ভিতর চোখ বুলাতেই দেখা মিলে মিশান এর। সোফায় বসে ফোনে কিছু করছে।
সায়রা একটা ঢুক গিলে।
এখন কি করবে কি করে এমন অবস্থায় মিশান ভাইয়ের সামনে দিয়ে রুমে গিয়ে কাপড় পড়বে?

-“বেরিয়ে আয়।”

সায়রার ভাবনার মাঝেই মিশান ফোনে চোখ রেখেই কথা টা বলে উঠে।
সায়রা একটা ঢুক গিলে আমতা আমতা করে বলে

-“আপনি বাহিরে যান।”

-“থাপ্পড়ে তোর সব দাঁত ফেলে দেবো, ইডিয়েট।
বেরিয়ে আয়।”

মিশানের ধমকে সায়রা চট করে বেরিয়ে এসে মাথা নিচু করে দাঁড়ায় মিশানের সামনে।
মিশান মাথা উঠিয়ে এক পলক সায়রা কে দেখে আবারও চোখ ঘুরায় অন্য দিকে।
তার পর উঠে গিয়ে শাড়ী টা বিছানা হতে হাতে নেয়।
অতঃপর এক বার সায়রার দিকে তো এক বার হাতে থাকা শাড়ী টার দিকে।
ও তো তখন তাড়াহুড়ো তাড়নায় শাড়ী টা ভালো করে দেখে অব্দি নি।
মিশানের চোখ বেরিয়ে আসার জোগাড়।
এই মেয়ে কে দেখলেই ওর সব এলোমেলো লাগে। আর এখন যদি এই শাড়ী পড়ে ওর সামনে ঘুর ঘুর করে না জানি কি অঘটন ঘটিয়ে ফেলে।
কিন্তু এটা ছাড়া তো আর শাড়ীও নেই।

-“আপনি আমার কাছে দেন।
আমি পড়ে নেবো।”

-“তুই পড়তে পারবি না।
আমি পড়িয়ে দিচ্ছি। ”

মিশানের কথায় সায়রা চোখ রসগোল্লারনেয় বড় বড় করে তাকায়।
তবে মিশান সে সব পাত্তা দেয় না। খুব স্বাভাবিক ভাবে এগিয়ে এসে সায়রা গায়ে জড়ানো তোয়ালেতে হাত রাখে।
সায়রা এক মূহুর্ত দেড়ি করে না চোখ খিঁচে বন্ধ করে নেয়।
মিশান মুচকি হাসে অতঃপর সায়রার পেছনে থাকা সুইচ বোর্ড চেপে লাইট অফ করে দেয়।
আর অমনি সারা ঘরে অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পরে।
শুধু বারান্দা দিয়ে আসা অল্প অল্প আলোয়ে দু টি ছায়া মূর্তির অবয়ব হলো।

-“চোখ খোল। ”

মিশান মৃদু কন্ঠে বলে।

-“না। আপনি আগে বাহিরে যান। ”

আমতা আমতা করে বলে সায়রা।

-“খোলতে বলেছি, ইডিয়েট।”

ব্যস কাজ হয়ে গেলো মিশানের চাপা ধমকে।
চট করে চোখ খোলে সায়রা। তবে সামনে শুধু একটা ছায়া মূর্তি দেখতে পেলো।আর পুরো রুম জুড়ে বিরাজমান অন্ধকারে।
সায়রা অবাক হলো।
সে টা সামনে দাড়ানো মিশান তা অন্ধকারের মাঝেও ঠাহর করতে সক্ষম হলো।
ঠোঁট এলিয়ে হাসে শব্দহীন হাসি যা সামনে দাঁড়ানো রমণী তা টের পেলো না।
কিন্তু কোমরে শক্ত হাতের শীতল স্পর্শ পেলো।মিশান এক ঝটকায় সায়রা কে নিজের নিকট আনে।
অতঃপর শরীর হতে তোয়ালে টা নিচে ফেলে দিয়ে শাড়ীর আঁচল গুঁজে কোমরে।
সায়রা শক্ত করে মিশানের পেটের কাছে ধরে রাখা স্থানে খামচে ধরে।
মিশান চোখ বন্ধ করে জুড়ে জুড়ে নিশ্বাস ছাড়ে দু বার।যা সায়রার চোখ মুখে উপচে পড়লো।
সায়রা কি বুঝলো কে জানে।
হাত সরিয়ে নিলো মিশান শরীর থেকে। মিশানও যেনো হাঁপ ছেড়ে বাঁচলো।নিজে কে কন্টোল করে শাড়ী টা ধীরে ধীরে পড়াতে সক্ষম হলো। তার পর
সুইচ টিপে লাইট অন করতেই দেখা মিলে শাড়ী পরিহিত এক যুবতি মেয়ের যার রুপ শাড়ী পড়ার ফলে যেনো আরো কয়েক গুণ বেরে গিয়েছে।
মিশান এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে তার প্রেয়সীর দিকে তবে সায়রা তাকিয়ে মেঝের দিকে।
কিন্তু এতো সুন্দর মূহুর্তে বাড়ির কলিং বেল টা সশব্দে বেজে উঠলো।
তবে মিশান বোধহয় শুনতে পেয়েও পেলো না।
সায়রার ডাকে সম্মতি ফিরে পেলো

-“হ্যাঁ। আমি দেখছি।
খবরদার সায়রা রুম থেকে এক পা নাড়াচাড়া করবি না।”

কথা শেষ করেই মিশান চলে গেলো নিচে দরজা খোলতে।
সায়রাও পা টিপে টিপে অন্য রুমে চলে এলো।
মূলত ওরা এখন মিশানের রুমে ছিল আর এটা হচ্ছে সায়রার বাবা মার রুম।
এই বাড়ি টাও বিশাল বড় সবার যার যার নিজস্ব রুম আছে।
বাড়ির সব সদস্যরা মাঝে মাঝে এখানে বেড়াতে আসে।
আর দু এক দিন থাকে তার পর আবার ফিরে যায়।
তবে এখানের সব প্রয়োজনীয় জিনিস এখানেই রেখে যায়।
কিন্তু সায়রা মিশান বিদেশ চলে যাওয়ার পর আর আসা হয় নি যদিও সবাই এসছে তবে ও আসে নি।
সায়রা নিজের মা-বাবার রুমে এসে এখানে থাকা কিছু সাজার সরঞ্জাম দিয়ে হালকা করে সেজে নেয়।
তার পর আবারও মিশানের রুমের উদ্দেশ্য অগ্রসর হয়।
মিশান কিছু পেকেট নিয়ে রুমে এসে দেখলো সায়রা রুমে নেই।
হাতে থাকা পেকেট গুলো সোফায় রেখে বাহিরে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই নজর এলো সায়রা রুমে ঢুকছে।
মিশানের হার্ট বিট কয়েক টা মিস হয়ে গেলো বোধহয়।

-“আয় খেয়ে নে।”

নিজে কে সামলে নিয়ে বলে মিশান।
সায়রা পা টিপে টিপে এগিয়ে এলো। এখন হয়তো সন্ধ্যা সাত টার বেশি সময় বাজে। আর ও খাবার খেয়েছে এগারো টার দিকে ভার্সিটিতে।
তার পর টিউশন করিয়ে বাসায় ফিরার পরতো মিশান গিয়ে ধরে নিয়ে এসছে।
পেটে ক্ষুধা থাকায় আর কথা বাড়ায় না। চুপচাপ খেয়ে নিলো।
মিশান নিজেও খেয়ে নেয়।দুজনে একই প্লেটে।
সায়রা অবশ্য লজ্জা পাচ্ছিল তবে মিশানের কোনো হেলেদুলে ছিল না।
খাবার শেষ মিশান সব নিচে গিয়ে রেখে আসে।
অতঃপর ফিরে এসে বউ কোলে নিয়ে হাঁটা ধরে ছাঁদের উদ্দেশ্য।

#চলবে….

[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ।]

হৃদয় জুড়ে শুধু আপনি ২ পর্ব-০৬

0

#হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি[২]
#পর্ব_৬
#জান্নাত_সুলতানা

-“তোর খুব শখ না আমার থেকে পালানোর?
তোর এই শখ আমি আজ মিটিয়ে দেবে, সুইটহার্ট। ”

কথা গুলো বলেই মিশান সায়রা কে পাঁজা কোলে তোলে।
সায়রা হাত পা ছুঁড়া ছুঁড়ি করতে লাগলো। তবে মিশানের বলিষ্ঠ শরীরে কাছে সায়রা শরীর নিতান্তই পুঁটি মাছ। তাই পেরে উঠলো না।
মিশান মুনিয়ার বাসা থেকে বেড়িয়ে এসে গাড়িতে দরজা টা এক হাত দ্বারা কোনো রকম খোলে সায়রা কে গাড়িতে বসিয়ে নিজেও ঘুরে এসে ডাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টাট দেয়।
এদিকে সায়রা বকবক করেই যাচ্ছে।
মিশান সে সব পাত্তা না দিয়ে ফোন টা হাতে নিয়ে কাউকে কল লাগায়।
দু’বার রিং হওয়ার পর কল টা রিসিভ হলো।

-“হ্যাঁ, বাবাই আমি ওকে নিয়ে আমাদের বাগান বাড়িতে যাচ্ছি। হুম, হ্যাঁ কয় দিন ওখানেই থাকবো।
হ্যাঁ তুমি মনি কে আর মাকেও বলে দিও।”

ওপাশের ব্যক্তি টা আচ্ছা বলে কল কাটে
তবে মিশান কান হতে ফোন নামায় না।
সায়রার দিকে তাকিয়ে দৃষ্ট হেসে আবারও গাড়ি চালাতে চালাতে বলে

-“হ্যাঁ বাবাই তোমাকে খুব শীগগির নানা ডাকার মতো কাউ কে আনার জন্য মিশন আজ থেকেই শুরু করবো।”

সায়রা মিশানের এমন কথায় চোখ বড় বড় করে তাকায়।
মিশান সে সব পাত্তা না দিয়ে ফোন টা সিটের পাশে রেখে গাড়ি চালাতে মন দেয়।

সায়রাও আর কিছু বলে না। কি বলবে এই অসভ্য মানুষ টা কে।
তবে সায়রা একটা জিনিস খেয়াল করেছে।
মিশান আগের চাইতে অনেক টা শুকিয়ে গিয়েছে।
মাথার চুল গুলো একদম ছোট ছোট।
আজ একুশ দিন পর দেখা কেমন অগোছালো লাগছ এই মানুষ টাকে।
সব সময় পরিপাটি গুছানো মানুষ টা কে আজ এমন কেন লাগছে?
কিন্তু উওর টা যে ওর কাছে নেই।

—————-

মিশান এখন মোটামুটি সুস্থ আছে। সায়রা বাসা থেকে চলে এসছে আজ একুশ দিন হয়। সবাই সায়রার সাথে কম বেশি যোগাযোগ করার চেষ্টা করছে তবে প্রতি বারের মতো ফোন টা বন্ধ দেখাতো।
আগে সবার উপর সায়রার অভিমান ছিল। তবে এখন তা উল্টো হয়েছে সবাই এখন সায়রার উপর অভিমান করে আছে।
তবে মিশান কারোর উপর রাগ অভিমান আছে কি না তা কেউই বুঝতে পারছে না।
অবশ্য বুঝবে কি করে মিশান সেরকম কেনো আচরণ করে নি।
সাদনান মির্জা একটু অনুতপ্ত। দুই বাবা,মেয়ের পাল্লায় পড়ে মাঝে ছেলে টা কষ্ট পাচ্ছে। কেন না ওনি তো পাঁচ বছর আগে এরকম টা করতে মিশান কে বলেছিল।
সেই অনুযায়ী মিশান চলেছে।
সে টার অবশ্য যুক্তিযুক্ত কারণ ছিল। পাঁচ বছর আগে সায়রা আচরণ ছিল কিছু টা ছন্নছাড়া। লেখা পড়ার প্রতি কোনো আগ্রহ ছিল না।সব সময় মিশানের পিছু পিছু ঘুরতো। সবাই বিষয় টা তখন ততটা পাত্তা দেয় নি। ভেবেছে ছোট আর বাড়িতে তো এই দুই টা ছাড়া কোনো বাচ্চা নে তাই হয়তো সায়রা এমন করে।তবে বিপত্তি সৃষ্টি হলো তখন যখন মিশানের লন্ডন যাওয়ার সময় হলো।
পাগলামি টা আরও কয়েকগুণ বেড়ে গিয়ে ছিল।
সবাই বুঝিয়ে ছিল মিশান ফিরে আসবে কয়েক বছর পর।
কিন্তু এতো এতো বুঝানোর ভিড়েও মেয়ে টা মিশান কে কিছুতেই ছাড়তে রাজি ছিল না।
সবাই ভেবে ছিল বিয়ে দিলে হয়তো ঠিক হবে।
কিন্তু না সায়রা তখন মিশান কে ভালোবেসে এসব করেনি করে ছিল ও লেখা পড়া থেকে বেঁচে যাওয়ার জন্য। তবে আবেগও ছিল সব টা।
সাদনান মির্জা সে টা বুঝতে পারে।
আর মিশান কে বলেছিল যাতে করে সায়রার সাথে খারাপ আচরণ করে আর ওকে নিজের যোগ্য হতে বলে।
আর হলোও তাই মিশানের কথায় আজ জেদ করে এতটুকু।
কিন্তু আগে ভালো না বাসলেও অপেক্ষা করতে করতে তা আবেগ আর জেদ থেকে ভালোবাসা পরিণত হয়েছে।
কিন্তু তত দিনে মেয়েটার মনে মিশানের জন্য অভিমানের পাহাড় হয়ে গিয়েছে।
তখন সায়রার মনে হতো তখন একটু ভালো করে বুঝাইলে তো বুঝতো।
কিন্তু ও সে সব তো অনেক করেছিল সবাই।
কিন্তু তখন আবেগের বশে এসব কিছু তিক্ত খারাপ কথা মনে হতো।
কিন্তু মন টা মানতে নারাজ। সব দোষ মিশান কে দিতে বসে থাকে।

———-

-“আমি থাকবো না আপনার সাথে।
বাসায় যাব আমি। নামিয়ে দিন আমাকে।”

-“যাবো তো তবে কয় দিন পর।
তোর মতো আরও একটা সায়রা আনার ব্যবস্থা করে তার পর, সুইটহার্ট।

কথা টা বলেই মিশান সায়রা কে বিছানায় ধপ করে ফেলে দিলো।
সায়রা নাক মুখ কুঁচকে নিলো।
মিশান সে সব উপেক্ষা করে গিয়ে দরজা টা লক করে দেয়। নিজের হাত ঘড়ি, ওয়ালেট, ফোন সব সেন্টার টেবিলে রাখে।
তার পর আলমারি খোলে একটা তোয়ালে নিয়ে ফ্রেশ হতে ওয়াশ রুম চলে গেলো।
সায়রা বিছানা হতে ওঠে গিয়ে কতখন দরজা টা টানাটানি করেও কোনো কিছু করতে পারলো না।
তাই ফিরে এসে রুমে বিছানায় ধপ করে বসে বিরবির করে মিশান কে আচ্ছা মতো বকতে লাগলো।
আর ঠিক তখনি সেন্টার টেবিলে উপর রাখা মিশানের ফোন টা আলো জ্বলে উঠলো। সাইলেন্ট করার সে জন্য কোনো শব্দ হচ্ছে না।
সায়রা একবার ওয়াশরুমের দরজায় তাকায় তো একবার ফোন টার দিকে।
ধরবে কি ধরবে না দ্বিধা আছে।
স্বামী হয় ওর অধিকার আছে, হুু। এসব ভাবতে ভাবতেই কল টা কেটে গেলো।
সায়রা তখন মাত্র ফোন টা হাতে নিয়েছে। দেখলো মনি দিয়ে এক টা নাম্বার সেভ করা আর সেটা থেকেই কল টা এসছে। ওর বুঝতে বাকি নেই ওর মা ফোন করেছে। ইশ কত দিন মা-বাবার সঙ্গে কথা হয় না। সায়রার ইচ্ছে হলো কল দিয়ে কথা বলতে
তবে লক না জানায় সেটা আর করতে পারে না।এসব ভেবেই ফোন টা আবার আগের স্থানে রাখতে যাবে তখনি আবার আলো জ্বলে ফোন টায়।

সায়রা দেড়ি করে না চট করে কল টা রিসিভ করে কানে দিতে ওর বুকের ভিতর ধক করে উঠলো কি বলছে ওর মা এসব।

-“মিশান ওষুধ গুলো কিন্তু নিয়ম করে খাবি আর মলম গুলো ঠিক সময় ব্যবহার করবি।
আর শোন ও যদি তোকে কিছু বলে বা আবারও কিছু উল্টো পাল্টা কিছু করে তবে আমি কিন্তু এবার সত্যি সত্যিই ওকে,,,

-“মা তুমি কি বলছো এসব?
মিশান ভাই, কিসের ওষুধ? কিসের সত্যি?
আমি কিছু বুঝতে পারছি না। ”

প্রিয়তা মির্জা ঠোঁট গোল করে নিশ্বাস ছাড়ে
পর পরই বলে উঠে

-“ওহ, তুমি।

-“মা তুমি রেগে আছো?”

প্রিয়তা মির্জা মেয়ের উপর রেগে থাকলে তুমি করে বলে।
সায়রা বুঝলো না মা কেন তার উপর রেগে আছে?
যেখানে সব দোষ মিশান ভাইয়ের।

-“রেগে থাকার কথা নয় কি?
দুই বাপ, মেয়ে মিলে ছেলে টা কে মেরে ফেলতে চাইছো তোমরা?”

-“আমি কি করেছি? তুমি আগে আমার প্রশ্নের উত্তর দে,,,

-“সময় হলে সব বুঝতে পারবে।
আর একটা কথা ছেলে টাকে দয়া করে আর কষ্ট দিও না।
মরতে মরতে বেঁচে এসেছে ছেলে টা আমার।”

কথা গুলো এক নিশ্বাসে বলে প্রিয়তা লাইন কাটে।
সায়রা এখনো ঠাঁই দাঁড়িয়ে ওর মাথায় কিছুই ঢুকছে না।

আর ঠিক তখনি ওয়াশরুমের দরজা টা খট করে খুলে মিশান বেড়িয়ে এলো।
গায়ে শুধু একটা তোয়ালে জড়িয়ে।
যার ফলে শরীরে বেশির ভাগ অংশ উন্মুক্ত।
যার ফলে শরীরে ক্ষত স্থান গুলো চোখে পরছে। সায়রা অন্য সময় হলে হয়তো মিশান কে এভাবে দেখলে লজ্জা রংধনু রং ধারণ করতো।
কিন্তু এখন ওর মনে একটাই প্রশ্ন মিশান ভাইয়ের এমন অবস্থা কেন?

-“এমন হা করে তাকানোর কি আছে?
এমন তো প্রথম দেখিস নি লন্ডন যাওয়ার আগেও অনেক বার এভাবে দেখেছিস।আসার পরেও দেখেছিস আর ভবিষ্যতেও দেখতে পারবি।
এখন ফ্রেশ হয়ে আয়।”

মিশান কথা গুলো বলতে বলতে আলমারি থেকে নিজের কাপড় খুঁজে বের করছিল।
কিন্তু পিঠে নরম হাতের স্পর্শ পেতে চট করে পেছন ফিরতে চোখে পরে প্রেয়সীর জলে টইটম্বুর করা আঁখি জোড়া।

-“এই জান কি হয়েছে?তুমি কাঁদছো,,,

আর কিছু বলতে পারে না মিশান সায়রা জড়িয়ে ধরে
শব্দ করে কেঁদে ফেলে মেয়ে টা।

-“এসব কি করে হয়েছে? ”

জড়িয়ে ধরে অবস্থায় জিজ্ঞেস করে সায়রা মিশান ওকে ধরে নিজের নিকট হতে আলগা করে।
ধীরে গলায় বলে

-“এক্সিডেন্ট।
তুই ওই দিন চলে যাওয়ার পর খুঁজতে গিয়ে যখন দেখেছিলাম তুই একটা মেয়ের হাত ধরে দৌড়ে চলে যাচ্ছিস তখন আমিও গাড়ি থেকে নামি।
তবে তোর কাছে পৌঁছানোর আগেই একটা গাড়ি এসে ধাক্কা দিলো।
তার পর আর কি।”

সায়রা বাকরূদ্ধ কি বলবে বুঝতে পারছে না। ওর জন্য সব সব দোষ ওর কি করে করতে পারলো এমনটা? ওতো ভালোবাসে মিশান ভাই কে।
আজ যদি বড় কোনো ক্ষতি হয় যেতো?
না আর কোথাও যাবে না মিশান ভাইকে ফেলে।
এসব ভেবেই আবারও মিশানের গলা জড়িয়ে ধরে।
মিশানও প্রেয়সী কে দু হাতে আগলে নেয়।
যার ফলে মেয়ে টার পা কিছু টা মেঝে হতে উপরে উঠে
শূন্যে ঝুলে।

#চলবে…

হৃদয় জুড়ে শুধু আপনি ২ পর্ব-০৫

0

#হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি[২]
#পর্ব_৫
#জান্নাত_সুলতানা

-“ভাইয়া আপু কে না কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না।”

আরভী হন্তদন্ত হয়ে উপর থেকে সায়রার রুম হতে এসে মিশান কে উদ্দেশ্য করে কথা টা বলে

-“দেখ হয়তো রুমে শুয়ে আছে।
ওতো বলে গেলো ওর মাথা ব্যথা করছে।”

সারা আহমেদ জানায়।
কিন্তু মিশান কারোর কথা আর শুনে না। সোফা ছেড়ে দৌড়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে সায়রার রুমে গিয়ে ওকে পাগলের মতো ডাকতে থাকে।
তবে সায়রা রুমে কোথাও নেই।
ততক্ষণে বাড়ির সব সদস্যরা সায়রার রুমে উপস্থিত হয়েছে।
ঘন্টা খানিক আগেই সায়রা আর মিশানের বিয়ের কাজ টা ঘরোয়া ভাবে সম্পূর্ণ হয়েছে। এখন রাত আটটা। বিয়ে সন্ধ্যা হয়েছে। বেশি কেউ ছিল না তাদের পরিবারের মানুষ জন ছাড়া। বিয়ের পর সবাই গল্প করছিল। কিন্তু সায়রা হঠাৎ করে বলে ওর না-কি মাথা ব্যথা করছে।
তাই ও উপরে চলে গিয়ে ছিল। মিশান বিয়ের পর কোথাও একটা গিয়েছিল। ফিরেছে মিনিট পাঁচ এক হবে হয়তো।
সায়রা কিছুতেই বিয়ে করতে রাজি ছিল না।
কিন্তু সবার খুশির কথা ভেবে আর না করে নি।
তবে মেয়ে টা মনে মনে একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো।

-“মিশান এদিকে আয়।”

প্রিয়তা মির্জা বেলকনি হতে মিশান কে ডাকে।
মিশান সেদিকে এগিয়ে গিয়ে দেখলো তার মনি বেলকনির রেলিং ধরে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।
মিশান নিচে তাকাতেই ওর বুকের ভিতর ধক করে উঠলো।
একে একে সবাই এসে দেখলো।আর অবাক হলো।
সাদনান মির্জা যেনো বাকরূদ্ধ হয়ে গিয়েছে। কিছু ভাবতে পারছেনা।
মেয়ে টা এমন একটা কাজ করতে পাড়ে কারোর মাথাতেই আসে নি এমন চিন্তা।
দুইটা শাড়ী ঝুলছে আর সেই শাড়ী বেয়ে সায়রা বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়েছে।

-“কোথায় যাচ্ছিস?”

সারা জিজ্ঞেস করে।

-“মনি ও হয়তো বেশি দূর যেতে পারে নি। আমি খুঁজলে পেয়ে যাব।”

কথা টা বলেই মিশান আর এক দন্ড দাঁড়ায় না দৌড়ে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গাড়ি নিয়ে শাঁই শাঁই করে মেইন রোডের চলে গেলো।
ঘটনা এতো দূরত্ব ঘটেছে যে সবাইর এখন কিছু বোধগম্য হচ্ছে না।
প্রিয়তা মির্জা সাদনানের সামনে এসে দাঁড়ায়।

-“আপনিও যান না।
ছেলে মেয়ে দুটি কোথায় একটু দেখুন না।”

প্রিয়তার কথা সবটা না শুনেই সাদনান হাঁটা ধরলো।
আর ওর পেছন পেছন সোহান,প্রহর, আয়ানও চলে গেলো।
রাহান আর গেলো না বাড়িতেও তো একটা পুরুষ মানুষ থাকা দরকার। তাই রাহান থেকে গেলো।

———

মিশান গাড়ি চালাতে চালাতে সায়রা কে চার দিকে খুঁজে চলেছে। বাড়ি থেকে এইখানে হেঁটে আসতে দশ মিনিট লাগে। আর মিশান গাড়ি এতো জোরে চালাচ্ছে যে চার মিনিটে এখানে চলে এসছে।
কিন্তু এতো মানুষ জন গাড়ি সব মিলি সায়রা কে কোথাও দেখা যাচ্ছে না।
হঠাৎ মিশান রাস্তার অপর পাশে চোখ পড়তেই দেখলো দু’টা মেয়ে হাত ধরে অনেক তাড়াহুড়ো সহিতে পা চালাচ্ছে।
মিশানের বুঝতে বাকি থাকে না একটা সায়রা।
আর সে মেয়ে টাকে মিশান এতো দূর হওয়াতে চিন্তে পারলো না।
মিশান তৎক্ষনাৎ মাঝ রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে দরজা খোলে কোনো দিকে না তাকিয়ে ছুটতে লাগলো।
তবে বেশি দূর আগাতে পারলো না।
একটা গাড়ি এসে মিশানকে ধাক্কা দিলো।
যার ফলে মিশান ছিটকে গিয়ে পিচ ঢালা রাস্তায় পরে হাত পায়েও মাথায়ও চোট পেলো।
কিন্তু ততক্ষণে সায়রা এই স্থান হতে অনেক টা দূরে চলে গিয়েছে।
গাড়ি মালিক দূরত্ব নেমে আসে।
এর মধ্যে আশে পাশের মানুষ জন এম্বুলেন্স ফোন করে দিয়েছে।
ঠিক তখনি একটা গাড়ি এসে এখানে থামে। আর গাড়ির ভিতরে থাকা মানুষ গুলো সাদনানরা। সাদনান রা সবাই যেনো মিশান কে এভাবে দেখে কথা বলার শক্তি পাচ্ছে না।ভিড় ঠেলে দূরত্ব পায়ে এগিয়ে আসে প্রহর, সোহান, সাদনান, আয়ান। আয়ানের চোখ দিয়ে টুপটাপ জল গড়িয়ে পরছে।এই ছেলের কিছু হলে যে তার ভালোবাসার স্ত্রী পাগল হয়ে যাবে। সাদনান কোনো এক কারণে নিজে কেই এসবের জন্য দায়ি করে বসলো।
অতঃপর সোহান আর প্রহর আরোও কিছু আশেপাশের লোক মিলে এসে মিশান কে ধরাধরি করে ওদের গাড়িতে করে হসপিটালের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। এখন এম্বুলেন্স এর জন্য অপেক্ষা করার মতো বোকামির কোনো মানি হয় না।
মিশানের তখনও হালকা হালকা হুস আছে। মাথার বাম সাইড হতে লাল তরল রক্ত গড়িয়ে পরছে।
মিশান বিরবির করে কিছু বলছে।
প্রহর সেটা লক্ষ করে নিজের কানটা মিশানের মুখের কাছে নেয়

-“ও চলে যাচ্ছে।
আমি দেখেছি। ”

ব্যস এটুকু বলতে বলতে মিশান চোখ জোড়া বন্ধ করে নিলো।

প্রহর যেনো অবাকের চরমপন্থী। তার বোন কতটা ভাগবতী ভাবতেই অবাক লাগছে।
একটা মানুষ মৃত্যু পথ যাত্রী কিন্তু সে তার ভালোবাসার মানুষটার কথা চিন্তা করছে।
কতটা ভালোবাসলে এমনটা সম্ভব। প্রহর সে টা জানে না তবে তার বোনের প্রতি এক রাশ রাগ জন্ম নিলো।

সোহান গাড়ি চালাচ্ছে আয়ান মিশানের পা কোলে নিয়ে বসে আর সাদনান সামনে বসে।

————

সায়রা ওর এক ফ্রেন্ড নাম মুনিয়া ওর বাসায় এসেছে। মূলত ওর সাথে কথা বলে আগে থেকেই সব ঠিক করে রেখে ছিল।
মুনিয়ার স্বামী বিদেশে থাকে।
এখন আপাতত এখানে থাকবে আর দুটা টিউশনি যোগাড় করে দিয়েছে মুনিয়া।
এতে ওর ভালোই চলে যাবে দিন। তবে এখানে থাকবে না সায়রা ভাবছে।
সায়রা মুনিয়ার সঙ্গে কথা বলছে। ঠিক তখনি ওর হাতে থাকা ফোন টা সশব্দে বেজে উঠে। প্রহর ফোন দিয়েছে।
সায়রা কল টা কেটে দিয়ে ফোন টা বন্ধ করে দিলো।
অতঃপর আবারও কথা বলায় মত্ত হলো। তবে ওর মন টা যেনো কেমন অশান্ত লাগছে।
বার বার মনে হচ্ছে কিছু একটা হারিয়ে ফেলেছে।
সায়রা পরক্ষণেই ভাবে হয়তো বাড়ি থেকে না বলে চলে এসছে তাই এমন লাগছে।
এসব ভেবেই নিজে কে নিজে শান্তা দিচ্ছে।
ও হয়তো কল্পনাতেও ভাবে নি ওর কারণেই ওর ভালোবাসার মানুষটা মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছে।

——–

দেড় ঘন্টার বেশি সময় ধরে সবাই ওটি’র সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
অপেক্ষা করছে কখন লাল বাতি টা বন্ধ হবে।
আর দোয়া করছে যেনো খারাপ কিছু না হয়।
মাইশা চৌধুরী কে পাশের কেবিনে রাখা হয়েছে সাথে রুহি আছে।
মাইশা এসব শুনে কান্না করতে করতে প্রেশার কমে গিয়েছে।
শরীর দূর্বলের কারণে বেহুশ হয়ে গিয়েছে।

ঘড়ির কাঁটা জানান দিচ্ছে রাত প্রায় দশ টার কোঠা ছাড়িয়ে।
কিন্তু সবাই চিন্তিত মুখে বসে আছে। কারোর খাওয়া নাওয়া কিছুই নেই। অথচ ঘন্টা তিনেক আগেও একটা বিয়ে বাড়িতে যা যা তৈরি করা হয় তার সব কিছু করেছিল।
আর সে সব খাবার গুলোও এভাবে পড়ে আছে।

-“বাবা?”

লাল লাইট টা অফ হয়েছে। দরজা ঠেলে দুজন ডক্টর কে বেড়িয়ে আসতে দেখেই আরভী আয়ান চৌধুরী কে ইশারা করে।
সাদনান, রাহান এগিয়ে গিয়ে ডক্টর কে কিছু বলার আগেই ডক্টর হাসি হাসি মুখ করে জানায়

-“পেশেন্ট এখন বিপদ মুক্ত।
তবে সব সময় খেয়াল রাখবেন। আমি কাল সকালে এসে আরও একবার চেকাপ করে যাবো।”

-“ধন্যবাদ ডক্টর। ”

সাদনান বলে।

-“মির্জা সাহেব এটা আমাদের ডিউটি।
এক ঘন্টা পর দেখা করতে পারবেন।”

ডক্টর মুচকি হেসে বলে।
তার পর ডক্টর চলে গেলো।
আরভী গিয়েছে মাইশা চৌধুরীর কাছে।
মাইশা চৌধুরী এখন সুস্থ আছে।
তাই ওনিও এসে সবার সাথে অপেক্ষা করতে লাগলো কখন ছেলের সাথে দেখা করব,একটু ছুঁয়ে দেখবে সে আশায়।

————

-“এখন কেমন লাগছে বাবা?”

মিশানের মাথায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করে মাইশা।
মিশান পিটপিট করে চোখ খুলে মার দিকে তাকিয়ে ঠোঁট প্রসারিত করে হালকা হাসে।
অতঃপর মায়ের সঙ্গে কথা বলে।
ঠোঁটের কোনেও ফোলা।মাথায় বেন্ডেজ।
পায়েও বেন্ডেজ করা।
হাতে শরীরে বিভিন্ন জায়গা ক্ষত বিক্ষত হয়েছে।
একে একে সবাই এসে দেখা করে যায়।
কিন্তু তার প্রেয়সীর দেখা নেই।
ডক্টর বলেছে তিন দিন পর রিলিজ দেওয়া হবে মিশান কে।
কিন্তু আয়ান, সাদনান কিছুতেই মিশান কে হসপিটালে রাখবে না।
বাড়িতে নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করবে তারা।
সেই জন্য কাল সকালেই তারা মিশান কে বাড়িতে নিয়ে যাবে।
এরমধ্যে কেউ আর সায়রার খুঁজ করে নি। কেন করবে?
কি করে করতে পারলো এমন একটা কাহিনি।
আবারও পাঁচ বছর আগের সেই ছন্নছাড়া সায়রা কি করে হতে পারলো মেয়ে টা?
তবে প্রহর,রুহি, আরভী,সোহান ওরা অনেক বার করে কল দিয়েছে সায়রা কে তবে প্রতি বারই ফোন টা বন্ধ দেখাচ্ছে।

————–

মিশান কে বাড়ি নিয়ে গিয়েছে আজ দু দিন হয়।
সাদনান মির্জা খবর নিয়ে জানতে পেরেছে ওই দিন রাতে সায়রা কে দেখার পর মিশান গাড়ি থেকে নেমে যাওয়ার পথে এক্সিডেন্ট টা হয়েছে।
সেই থেকে তিনি মেয়ের প্রতি এক রাশ অভিমান জমা হয়েছে।
তিনি খবর নিয়ে এটা জানতে পেরেছে সায়রা এখন ওর এক ফ্রেন্ড এর বাসায় আছে।
তিনি চাইলে মেয়ে কে নিয়ে আসতে পারে তবে মিশান না করেছে।
সবাই চাইছিল যেনো মিশানের এক্সিডেন্ট এর খবর টা সায়রা কে দেওয়া হয়। আর ওকেও যেনো ফিরে আনা হয়।
কিন্তু বাঁধ সাধলো মিশান।
সে সবাই কে কিছু করতে বা বলতে না করে দিয়েছে।
বলেছে নিজে সুস্থ হয়ে তার পর যা করার দরকার হয় করবে।

#চলবে…

হৃদয় জুড়ে শুধু আপনি ২ পর্ব-০৪

0

#হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি[২]
#পর্ব_৪
#জান্নাত_সুলতানা

-“এমন ভাবে বলছেন মনে হয় আমি আপনা কে বিয়ে করতে সেজেগুজে বসে আছি,হুু।”

ফিসফিস করে কথা টা বলেই সায়রা ভেংচি কাটে।
মিশান মুচকি হাসে।

অতঃপর মিশান নিজেও সায়রার মতো ফিসফিস করে বলে

-“সেটা তো সময় হলেই দেখা যাবে, সুইটহার্ট। ”

মিশানের কথা শুনে সায়রা খাবার তালুতে উঠে।
সাদনান মির্জা তড়িঘড়ি করে মেয়ের মুখের সামনে পানি ধরে।
সায়রা বাবার হাত হতে পানির গ্লাস নিয়ে সবটা পানি এক চুমুকে খেয়ে নিলো।

-“বাবা আর না।
তুমি খেয়ে নেও। ”

কথা টা সাদনান মির্জা কে উদ্দেশ্য করে বলেই আর এক দন্ড চেয়ারে বসে না। হন্তদন্ত হয়ে উঠে উপরে নিজের রুমে যেতে যেতে বিরবির করে নিজে নিজেই বলে উঠে

-“মিশান ভাই কি করে এতো টা স্বাভাবিক আছে?
আচ্ছা এটা কি ঝর আসার পূর্বাভাস? ”

———–

-“এখন নিশ্চয়ই তোমার মেয়ে কে আমার সাথে বিয়ে দিতে কোনো সমস্যা নেই বাবাই?
আমি বাবা-মা কে রাতে তোমার সাথে কথা বলতে পাঠাবো।”

মিশান গাড়ি চালাতে চালাতে সাদনান মির্জা কে বলে।

-“আচ্ছা।”

সাদনান মির্জা ছোট করে বলে

তিনি এটা এই পাঁচ বছরে হারে টের পেয়েছে এই ছেলে তার মেয়ে কে তার চাইতেও বেশি ভালোবাসে।
আর কি বা বলবে? ওনি তো নিজেই কথা দিয়েছে লেখা পড়া শেষ করে প্রতিষ্ঠিত হতে পারলে তার মেয়ে কে মিশান এর সঙ্গে বিয়ে দেবে। এখন তো মিশান প্রতিষ্ঠিত।
আর সেই সাথে দিয়েছিল কিছু কঠিন শর্ত। সেই জন্যই তো সায়রা আর মিশান এর দূরত্ব টা আজ এতো বেড়েছে। আর সেই দূরত্ব তো ওনাকেই মিটিয়ে দিতে হবে।
তবেই না মিশান যেমন তার কথা রেখেছে তেমন ওনাকেও তো নিজের কথা রাখতে হবে।
যদি সেই কথা রাখতে মেয়ের প্রতি একটু কঠিন হতে হয়। তা হলে না হয় তাই হবে।
কিন্তু যোগ্য পাত্রের হাতে তো তোলে দিতে পারবে।

—————-

-“সোহান ভাই আমার কলেজ লেট হয়ে যাচ্ছে।
আপনি কেন গাড়ি ওই দিকে নিচ্ছেন? ”

সোহান হঠাৎ গাড়ি থামিয়ে দিয়ে আরভী কে নিজের নিকট আনে।
নিজের শক্ত খসখসে চামড়ার হাত জোড়া দ্বারা মেয়েটার নরম তুলতুলে ছোট মুখশ্রী হাতের আঁজল নিয়ে কাতর কন্ঠে প্রশ্ন করে

-“এই পুচকে তুই সত্যি কিছু বুঝিস না?”

-“কি বুঝার কথা বলছেন সোহান ভাই?”

ষোড়শী কন্যা আরভী কিছু বুঝতে পারে না।সোহান ভাই কেন এমন প্রশ্ন করছে? আর ওনি ওর এতো টা কাছেই বা কেন এসছে?তবে কিশোরীর আরভীর সোহানের এমন চাউনি। খুব করে মন টা খারাপ করছে।ওনি কেন মুখ এমন মলিন করে রেখেছে? ওনাকে এভাবে দেখতে মোটেও ভালো লাগছে না এই ছোট্ট আরভীর। নিজেও মলিন করে মুখ।অতঃপর অবুঝ গলায় উল্টো প্রশ্ন করে সোহান নামক সুদর্শন যুবক টা কে।

-“তুই এতো টাও ছোট নয়।
তুই কি কিছুই বুঝতে পারিস না?কেন আমি সব কিছু ছেড়ে ছুঁড়ে কয় দিন পর পর ঢাকা আসি? কেন রাত বিরেতে তোর কাছে একটু কল দেই? তোর কোনো আবদার কেন আমি ফেলে দিতে পারি না?
এই পুচকে বল না তুই কি কিছু বুঝতে পারিস না?”

কথা গুলো বলেই সোহান আরভীর কপালে আলতো করে নিজের ওষ্ঠ ছুঁয়ে দেয়।
আরভী আবেশে চোখ বন্ধ করে নেয়।
ও যে বুঝে না এমন টা নয়। বুঝে তবে ভয় হয়। যদি বাবা বা বাবাই রা কেউ জানতে পারে?তারা যদি ভবিষ্যতে না মেনে নেয়? তখন তো বেশি কষ্ট হবে । এই জন্যই তো অনূভুতি গুলো কখনো প্রকাশ করে না। নিজের মাঝেই সেই দুবছর ধরে চাপা দিয়ে রেখে আসছে। আর
তাই তো সোহান নামক সুদর্শন যুবক টার নিকট হতে পালিয়ে পালিয়ে বেড়ায় সব সময় তবে আজ মনে হয় আর সেটা এই লোক করতে দিবে না।
বুকের ভিতর লুকানো সব অনূভুতি মুখ দিয়ে বেড় করেই ছাড়বে।

-“এই পুচকে বল না কিছু। আমার ভিষণ বাজে ভাবে এখানে ব্যথা হয়। তোরও কি এমন হয়?”

নিজের এক হাত দ্বারা নেবি কালার সার্ট এ মোড়ানো শরীরে বুকের বা পাশে টায় ইশারা করে বলে।

-“আমার কেন এমন হবে সোহান ভাই?
আমারতো বুকে ব্যথা করে না।
আপনি ডাক্তার দেখান।
আপনার মনে হয় বড় কোনো অসুখ করেছে।”

-“ডাক্তার দেখাতে হবে নারে।
তুই আমার হলেই ভালো হয়ে যাবে।”

-“আমার লেট হচ্ছে সোহান ভাই।”

সোহান আরভী কে আবারও পূর্বের স্থানে বসিয়ে দেয়।
কিছু ভাবে। এই মেয়ে এভাবে কিছুতেই রাজি হবে না সোহান বুঝতে পারলো।
কারণ এর আগেও আরভী কে সোহান বেশ কয়েক বার ইংগিত দিয়ে বুঝিয়েছে।তখন ভাবতো আরভী ছোট্ট তাই হয়তো এতো গভীরে ভাবে না।
কিন্তু আজ সরাসরিও যখন মেয়ে টা কথা টা এড়িয়ে যাচ্ছে।
তার মানে নিশ্চয়ই কোনো কারণ তো আছেই।

-“চল যা ক্লাস শুরু হতে এখনো তেরো মিনিট বাকি আছে।
আমি নিতে আসবো।”

-“আচ্ছা। ”

ছোট জবাব দিয়ে আরভী গাড়ি হতে খুশি খুশি মনে নেমে কলেজের ভিতর চলে এলো।
ও আজ ভিষণ খুশি। খুশি হবে না?
ওর ভালোবাসার মানুষটাই ওকে আজ প্রপোজ করেছে।ভাবতেই আনন্দে মেয়েটার চোখ চিকচিক করে উঠে।
তবে পরক্ষণেই কিছু মনে পড়তে হাসি খুশি মুখটা মলিন হয়ে আসে।

—————-

-“তাহলে কালই একটা কাজি ডেকে নেই।
আর আমাদের সবাই তো এখন ঢাকাতেই রয়েছে।
কি বলো সাদনান ভাই?”

আয়ান চৌধুরী সাদনান মির্জার উদ্দেশ্য বলে।
সাদনান মির্জা হালকা হাসে। বউয়ের দিকে তাকিয়ে বলে

-“হুম তোর যা ভালো মনে হয়।”

-“কিন্তু সায়রা কি রাজি হবে ভাই?”

সারা আহমেদ প্রশ্ন করে

-“এসব নিয়ে তোরা ভাবিস না।
আমি আমার মা কে রাজি করিয়ে নেব,,

-“কি রাজি করাবে?
তোমার ভায়রা ভাই এর ওই চরিত্রহীন ছেলে কে বিয়ে করে নিতে?
তবে এরকম ভেবে থাকলে কান খুলে শুনে রাখো।
আমি কিছুতেই মিশান ভাই কে বিয়ে করবো না।”

কথা গুলো বলতে বলতে সায়রা ঘরের ভিতর প্রবেশ করে।
প্রিয়তা মির্জা এগিয়ে গেলো। সারাও গেলো সাথে মাইশা। ওরা জানে প্রিয়তা এখন মেয়ে কে বেশ কিছু কটু কথা শুনাবে আর হলো তাই সায়রা কেন বড়দের মাঝে কথা বলতে এলো এই নিয়ে মেয়ে কে আচ্ছা মতো জারতে লাগলো প্রিয়তা মির্জা।
মাইশা সায়রা কে আগলে নিলো।
সারা প্রিয়তা মির্জা কে থামানোর চেষ্টা করছে।
ততক্ষণে রুহি,আরভী,প্রহর,সোহান সবাই সাদনান প্রিয়তার বেড রুমে হাজির হয়েছে শোরগোল এর আওয়াজে।
মিশান বাসায় নেই মূলত সন্ধ্যা অফিস থেকে ফিরে কোথাও বেড়িয়েছে।বলেছে ডিনার করে ফিরবে।
তাই সবাই ডিনার করে নিয়েছে।রাত প্রায় এগারো টার কোঠা পেড়িয়েছে।

-“আমি আপনার মতামত চাইনি।
আর কালই বিয়ে। মিশান কেই বিয়ে করতে হবে আপনার।
যে যার ঘরে যাও।”

সাদনান বেশ শান্ত কন্ঠে জানায়। অতঃপর দরজার পাশে দাঁড়ানো আরভীদের সকল কে উদ্দেশ্য পরের কথা টা বলে।
সায়রা যেনো স্তব্ধ।কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না।বাবা কখনো এমন করে কথা বলে নি আজ নিয়ে দু’বার এমন করে কথা বলল।
প্রথম বলেছিল যখন ও এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার পর যখন বলেছিল ও আর পড়তে চায় না তখন। আর আজ দ্বিতীয় বার বিয়ে নিয়ে।
কিন্তু ও মিশান কে বিয়ে করবে না। কিছুতেই না।
কিন্তু ভয়ে এই কথা গুলো কণ্ঠনালি দিয়ে এসব কথা পেট হতে মুখ পযন্ত আসতে চাইছে না।

————

রাত প্রায় একটা মিশান বাড়ি ফিরছে। সায়রা এতোখন বেলকনিতে বসে মিশানের ফিরার অপেক্ষা করছিল।
মিশানের গাড়ি বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করতে দেখেই সায়রা নিজের ঘর ছেড়ে মিশানের ঘরের উদ্দেশ্যে পা বাড়াল।
মিশান ভাইকে সরাসরি বলে দিবে ও তাকে বিয়ে করতে চায় না।
কিন্তু আদোও কি ও এসব কথা মিশান ভাই কে বলতে পারবে?
যতই রাগ, অভিমান, অভিযোগ থাক দিন শেষে তো এই ব্যক্তি টা কে ভালোবাসে।
দিনের আঁধারে যতই সবার সামনে হাসি খুশি থাকে।রাত হলে তো এই ব্যক্তি টাকে নিয়েই ভাবতে ভালো লাগে।
কিন্তু মিশান নামক পাষাণ পুরুষ কে সে সব কিছুতেই বুঝতে দেওয়া যাবে না।
এসব ভাবতে ভাবতেই সায়রা এসে মিশানের ঘরের দরজার সামনে দাঁড়াল।
কিন্তু কোনো এক অজানা ভয়ে ওর হাত – পা সব কাপছে।
মিনিট পাঁচ এক এর সময় ধরে সায়রা মিশান এর দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে তবে ভিতরে যাওয়ার মতো সাহস পাচ্ছে না।

-“তুই ভিতরে আসবি না আমি ঘুমিয়ে যাব?”

সায়রা চমকালো হকচকিয়ে উঠলো ।মিশান ভাই কি করে বুঝলেন ও এখানে দাঁড়িয়ে আছে?দেখার তো কোনো সুযোগ নেই।
এসব ভাবনার মাঝেই সায়রা কে হেঁচকা টানে মিশান কক্ষের ভিতর নিয়ে দরজা পাশে দেওয়ালে চেপে ধরে।

-“কি করছেন?দূরে যান।”

সায়রা ভয়ে চোখ বন্ধ করে আমতা আমতা করে বলে।

-“এখন ভয় কেন পাচ্ছিস?
বল কি বলতে যেনো এসছিস?
হ্যাঁ মনে পরেছে। তুই আমার মতো চরিত্রহীন ছেলে কে বিয়ে করবি না।
এটাই তো?”

-“হ্যাঁ। যা শুনেছেন একদম সঠিক কথা শুনেছেন। করবো না আমি আপনার মতো ঠকবাজ,চরিত্রহীন,,

আর কিছু বলতে পারে না সায়রা সে পথ যে মিশান বন্ধ করে দিয়েছে।
নিজের ওষ্ঠ দ্বারা মেয়েটার ওষ্ঠ চেপে ধরে।
সায়রা বিষয় টা বুঝতে সেকেন্ড এর মতো সময় লাগলো।
পরক্ষণেই বুঝতে পেরে মেয়েটার সারা শরীর জমে গেলো।
মিশান দু হাতে শক্ত করে সায়রার কোমর জড়িয়ে ধরে নিজের আরো কিছু টা নিকটে নিয়ে এলো।
সায়রা হাত দিয়ে মিশান কে ঠেলে সড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে।
তবে সে ব্যর্থ। এক ফোঁটাও নড়াতে পারলো না মিশান কে। এম বলিষ্ঠ শরীরে একটা পুরুষ কে ওর মতো একটা মাছি ঠেলে সরিয়ে দেওয়া বিলাসিতা। সায়রা দম বন্ধ হয়ে আসার জোগাড়।
মিশান বেশ সময় নিয়ে সায়রা কে ছেড়ে দিয়ে ওর মুখ টা দু হাত মাঝে নিলো।
সায়রা চোখ বন্ধ করে শ্বাস টানছে।
অতঃপর চোখ পিটপিট করে সামনে তাকালো।
মিশান এখনো ওর দিকে তাকিয়ে আছে।
সায়রা মিশানের চোখাচোখি হতেই বুকের ভিতর ধক করে উঠলো।
সঙ্গে সঙ্গে চোখ নামায় সায়রা।
মিশান এক মোহনীয় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

-“আমি তোকে সে দিন ফিরিয়ে দিয়েছি ঠিকি।
তবে আমি তোকে বলেছিলাম যে দিন লেখা পড়া করে আমার যোগ্য হতে পারবি।
সে দিন আমি তোকে বিয়ে করবো। ”

-“কিন্তু আমি এখন আপনা কে বিয়ে করতে চাই না।”

-“তুই চাস বা না চাস। তুই শুধু আমার আর আমাকেই তোকে বিয়ে করতে হবে।
নিজ ইচ্ছায় করলে ভালো। আর নয়তো আমি আমার মতো করে তোকে নিজের করে নেবো, সুইটহার্ট। ”

#চলবে….

হৃদয় জুড়ে শুধু আপনি ২ পর্ব-০৩

0

#হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি[২]
#পর্ব_৩
#জান্নাত_সুলতানা

-” তবে তোর ঠোঁট গুলো কিন্তু দেখতে একদম চেরি’র মতো।
একবার টেস্ট করব,,,

মিশান কে সব টা সম্পূর্ণ করতে না দিয়েই
সায়রা মিশান কে ধাক্কা দিয়ে সড়িয়ে দিয়ে নিজে কে ছাড়িয়ে নিলো মিশানের শক্ত বাঁধন হতে।
অতঃপর ঘৃণার দৃষ্টি তাকায় মিশানের দিকে।
মেয়ে টার চোখ চিকচিক করছে।
ঘৃণায় ওর সারা শরীর কাপছে। কন্ঠ নালি দিয়ে কোনো শব্দ বেড় করতে পারে না।
কিন্তু ওর ইচ্ছে করছে মিশান কে কিছু কটু বাক্য শুনিয়ে দিতে।
মিশান কে লেখা পড়া করার জন্য লন্ডন পাঠানো হয়েছে।
মানে ভালো ভাবে পড়া লেখা করে যেনো সে জন্য। সুশিক্ষিত হওয়ার জন্য।
কিন্তু সায়রার মনে হচ্ছে ভালো নয়,সুশিক্ষিত নয়, বিদেশে থেকে বিদেশি হাওয়া মিশান একজন অসভ্য, লজ্জাহীন মানুষে পরিণত হয়েছে। না হলে একটা মেয়ে কে কি করে এমন অসভ্য মার্কা কথা বলতে পারে।
মিশান এখনো বাকা হেসে তাকিয়ে আছে। এটা দেখে সায়রার আরও রাগ লাগলো তবে কিছু না বলেই এক ছুটে ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে পড়ে।
মিশানের চোখে মুখে তখন লেগে রয়েছে এক অদ্ভুত রকম হাসি।
অতঃপর নিজের ডান হাত দ্বারা মাথার চুল খামচে ধরে বিরবির করে বলে

-“এখন তো কিছুই করলাম না তার আগেই এমন অবস্থা।
সবে তো শুরু। তোমাকে তো আরও অনেক কিছু সহ্য করতে হবে, সুইটহার্ট।

কথা গুলো বলেই কফির মগ হাতে সেটায় চুমুক বসায় মিশান।

—————-

রাত বারো টার বেশি সময় বাজে।
সবাই খাবার খেয়ে যে যার রুমে চলে গিয়েছে।
বসার ঘর খাবার ঘর একদম নিস্তব্ধতা বিরাজমান।
রুহি পানি নিতে এসছে। রুমে পানি নেই আর আরভী ঘুমি আছে। তাই আর ডাকতে ইচ্ছে করে নি। কিন্তু এখন উপর থেকে নিচ পযন্ত এসে বেচারি চার পাশ এমন স্তব্ধ দেখে ভয়ে কোনো দিক নড়াচড়া করার সাহস কুলিয়ে উঠতে পারছে না। শুধু এদিক ওদিক নজর ঘুরিয়ে দেখছে।
যদি কেউ আসে। সে আশায়। আর এলো কেউ উপর থেকে ঠকঠক শব্দ করে সিঁড়ি বেয়ে নামছে।রুহি সিঁড়ি হতে একটু সামনে দাঁড়িয়ে।
পেছন ফিরছে না। মেয়ে টা ভয় পাচ্ছে।
প্রহর এমনিতেও অনেক রাত অব্দি পড়ে। আর এখন তো কয় দিন পর পরীক্ষা সেই জন্য একটু বেশি রাত জাগে। আর রাত জাগলে প্রহর কফি খেতে হয়।তাই কফি বানাতে এসছে।কিন্তু ড্রয়িং পেরিয়ে যাবার সময় সামনে কাউ কে নজরে এলো।

-“কে? আরভী?”

প্রহর ভাবছে আরভী। তাই প্রশ্ন করে।

-“না আমি রুহি। ”

কথা টা বলতে বলতে প্রহরের দিকে ফিরে রুহি।

-“ওহ আচ্ছা। এখানে দাঁড়িয়ে আছো যে?শরীর খারাপ লাগছে? ”

-“না আসলে ভাইয়া। আমি পানি নিতে এসছি। কিন্তু ভয় লাগছিলো তাই,,

রুহি আমতা আমতা করে। প্রহরের ভ্রু কুঁচকে আসে। এই মেয়ের বয়স তো সতেরো আশেপাশে হবে হয়তো। বিয়ে দিলে তো বাচ্চা কাচ্চা দু এক টা থাকতো। সে তো শুনে ছিল তার দাদির ষোল বছরে বিয়ে হয়েছে। আর মায়ের সতেরো।আর নিজের সায়রা ফুফির আঠারো। আর এই মেয়ে কি না সামান্য পানি নিতে এসে ভয় পাচ্ছে।

-“তুমি করেই বলি। কারণ তুমি হয়তো আমার বছর তিন বা এর চেয়ে ছোট হবে।
তুমি আমার সাথে এসো। আমি রান্না ঘরে যাচ্ছি কফি বানাতে।”

-“আচ্ছা। ”

রুহি মনে মনে প্রহর নামক এই সুদর্শন যুবক টা কে বেশ কয়েক বার ধন্যবাদ জানালো।
তার পর প্রহরের পেছন পেছন রুহিও রান্না ঘরে এসে ফিল্টার হতে জগে পানি নিয়ে নেয়।
প্রহরও কফি বানাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
রুহি পানি নিয়ে প্রহরের থেকে কিছু টা দূরে রান্না ঘরের এক পাশে দাঁড়িয়ে আছে।

-“তোমার জন্য করবো ?”

-“না ভাইয়া। ”

প্রহরও আর কিছু বলে না কফি নিয়ে আবারও প্রহর রান্না ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে উপর নিজের রুমে দিকে হাঁটা ধরে।
রুহিও প্রহর কে অনুসরণ করে।

-“ধন্যবাদ ভাই।”

রুহি আরভীর রুমের সামনে এসে পেছন থেকে মুচকি হেসে বলে উঠে।

প্রহর পেছন ফিরে উত্তর বিনিময় নিজেও হালকা হেসে চলে আসে। রুহি রুমে চলে যায়।

—————–

-“আমি তো চেয়েছিলাম তোকে সুইটহার্ট।
কিন্তু তোর হারামি বাপ। তোকে আমায় দিলো না। আর উল্টো শর্ত জুড়ে দিলো।
বলে কি না তার মেয়ে কে মন থেকে ভালোবাসতে হবে।
কেন? আমি কি তোকে আবেগ দিয়ে ভালোবাসি? কিন্তু তুই আমার আবেগ, মোহ কোনো টাই না। তুই তো আমার ভালোবাসা।
এতো দিনে নিশ্চয়ই তোর বাপ সে টা বুঝে গিয়েছে। এখন ভালোয় ভালোয় তোকে আমায় দিয়ে দিলেই হয়।
আর না দিলেই বা কি আমি তোকে আমার করে নেবো,হুু।”

কথা গুলো বিরবির করে বলেই মিশান সায়রা নামক ঘুমন্ত রমণীর কপালে খুব সাবধানের সহিতে নিজের ওষ্ঠ ছুঁয়ে দেয়।

তার পর অনেকখন তার প্রেয়সীর পাশে বসে এক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে।
যেনো বহু দিনের তৃষ্ণার তো।হুম বহু দিনেরই তো কত টা দিন সাপ্তাহ মাস বছর দূরে থেকেছে শুধু ও মেয়ে টা কে সারা জীবন কাছ থেকে দেখবে বলে একটু ভালেবাসবে বলে।
রাত দু টার বেশি সময় বাজে। ঘড়ির কাঁটা জানান দিচ্ছে।
মিশান তার প্রেয়সীর কপালে আবারও ওষ্ঠ ছুঁয়ে ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে এলো নিজেও ঘুমানো দরকার একটু। কাল আবার বাবা আর বাবাইর সাথে অফিস জয়েন করতে হবে।
এসব ভাবতে ভাবতেই মিশান গিয়ে নিজের রুমে শুয়ে পরে।
সায়রা রাতে দরজা আটকে ঘুমায় না। কারণ সাদনান মির্জা রাতে ঘুম থেকে উঠে গিয়ে মেয়ে কে দু তিন বার এর মতো করে দেখে আসে। মেয়ে তার বড্ড শখের। ভালোবাসার প্রথম চিহ্ন।
আর এই সুযোগ টাই মিশান কাজে লাগিয়ে সাদনান মির্জা বেড়িয়ে যাওয়ার পর পরই নিজে গিয়ে প্রেয়সীর পাশে বসে ছিল।

————

সকালে সবাই ডাইনিং টেবিল বসে। সারা,মাইশা,প্রিয়তা তিন ননদ,ভাবি, বোন মিলে সবাই কে নাস্তা টেবিল সহ রান্না ঘরে ছুটাছুটি করে সবাই কে সকালের খাবার দিচ্ছে।
মিশান আর প্রহর এখনো আসে নি।
ওদের ডাকা হয়ছে।তারা ফ্রেশ হয়ে আসছে।
সকলা আট টার বেশি সময় বাজে এখন।
সায়রার ওর বাবার পাশে বসে।
ওর ডান দিকের চেয়ার টা ফাঁকা এটাতে সব সময় প্রহর বসে। তার পর আরভী আর সাদনানের বরাবর বসে আয়ান আর ওপাশেও তিন টা চেয়ারে খালি থাকে তবে আজ সদস্য সংখ্যা বেড়েছ। সোহান, রাহানও সাথে যোগ হয়েছে। এখন এ পাশে একটা চেয়ার ফাঁকা ওপাশে একটা ফাঁকা রয়েছে। রুহি এখনো ঘুমিয়ে আছে।
ও আরও পরে উঠবে।
সায়রা কে সাদনান মির্জা খাবার মুখে তোলে খাইয়ে দিচ্ছে। এটা ওনি নতুন নয় বাসায় থাকলে সব সময়ই মেয়ে কে নিজে হাতে খাইয়ে দেয়।
সায়রা এক মনে খাবার গিলেই যাচ্ছে ওর কোনো দিকে নজর নেই।
কিন্তু এতো মনযোগ সহকারে খাবার খাওয়াতে কেউ নষ্ট করে দিয়ে ঠকঠক শব্দ করে উপর হতে সিঁড়ি দিয়ে নেমে আসছে।
বিরক্ত ভরা মুখ নিয়ে সায়রা সহ বাকি রা সবাই সিঁড়ির দিকে তাকাতেই একজন সুদর্শন পুরুষের দেখা মিলে।

আর সে সুদর্শন পুরুষ কে দেখে সায়রা বিরক্ত ভুলে মুগ্ধ নয়নে চেয়ে রইলো।
কারণ সেই সুদর্শন পুরুষ টাও যে তারই ভালোবাসার মানুষ মিশান। মিশান একদম রেডি হয়ে নিচে এসছে।
কালো সুট পরে আছে।সুন্দর শরীরের কালো রং টা যেনো ভিষণ ভাবে আকর্ষণ করছে সায়রা কে।
সায়রা খাবার মুখ নিয়ে সে টা আর নড়াচরা করছে না।
মুখে নিয়ে বসে আছে।
সায়রা চেয়ে থাকতে থাকতেই মিশান এসে ওর পাশের চেয়ের টায় ধপ করে বসে পড়ে।

তার প্লেট উল্টে সারা আহমেদ কে খাবার দিতে বলে।
অতঃপর সায়রার দিকে হালকা ঝুঁকে ওষ্ঠ নেড়ে কিছু আওড়ায়

-“আমাকে চোখ দিয়ে বিয়ের পরেও গিলতে পারবি।
এখন না হয় মুখের খাবার টা গিলে নে।”

#চলবে..

[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ।]