-“আমি রুমে যাচ্ছি মনি। ফ্রেশ হতে।
আমার কফি টা কাউ কে দিয়ে একটু রুমে পাঠিয়ে দিও।”
প্রিয়তা মির্জা কে উদ্দেশ্য করে বলে মিশান।
-“আচ্ছা। ”
প্রিয়তা মির্জা ছোট করে বলে।
মিশান সোফায় ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। কোনো দিকে না তাকিয়ে গটগট পায়ে হনহনিয়ে সিড়ি দিয়ে উপর নিজের রুমে চলে গেলো।
সায়রা নির্বিকার। কোনো রকম নড়াচড়া নেই।
-“তোমার শরীর কি এখনো খারাপ লাগছে? ”
সোফায় বসে থাকা রুহি কে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন করে রাহান আহামেদ।
রুহি মাথা নাড়ায়। যার অর্থ “না”।
-” আচ্ছা রুহি চল তোকে আমি রুমে দিয়ে আসি।”
আরভী কথা গুলো বলেই রুহির এক হাত ধরে। আরভী রুহির পেছনে দাঁড়িয়ে ছিল।
রুহিও মুচকি হাসে। তার পর আরভীর সাহায্যে সে রুমে চলে গেলো।
সবাই বসার ঘর ছেড়ে যে যার মতো করে চলে গেলো।
কি সুন্দর মিষ্টি দেখতে মেয়ে টা। হাসলে এক গালে টোল পরে। সায়রা মেয়ে হয়েও মনে মনে মেয়ে টার হাসির প্রশংসা করছে।
ছেলেরা তো নিশ্চয়ই সে হাসিতে প্রেম এ পড়বে।
আসলে মেয়ে টাই দেখতে অনেক সুন্দর। গায়ের রংটা বেশি সাদা নয়।কিন্তু তবুও মেয়ে টার চেয়ারায় একটা অদ্ভুত রকম মায়া আছে।
যে কেউ নিঃসন্দেহে মেয়ে টার মায়া পড়বে।
কিন্তু সায়রার মেয়ে টা কে এখন ওর কাছে আস্ত রাক্ষসীর মতো লাগছে। মেয়ে টার হাসিটাও ওর গায়ে কাঁটার মতো বিঁধেছে। কারণ ক্ষুন্ন পূর্বে মেয়ে টা তার ভালোবাসার মানুষটার কোলে ছিল।
সায়রার ভাবনার মাঝেই
সাদনান মির্জা মেয়ের কপালে চুমু আঁকে।
সায়রা বাবার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে।
বিনিময় সাদনান মির্জা নিজেও হাসে।
-“আমার মা কি আজ শাড়ী পড়ে থাকবে?
খাবার খেতে হবে না?”
-“আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।”
বাবার প্রশ্নে সায়রা জানায়।
সাদনান সম্মতি দেয়।
অতঃপর মেয়ে কে ছেড়ে দিয়ে নিজেও কক্ষের দিকে চলে গেলো।
সায়রাও সোফা হতে উঠে রুমে যাওয়ার জন্য পা বারাতেই পেছন থেকে প্রিয়তা মির্জার ডাক পড়ে
-“শোন তুই তো উপরে যাচ্ছিস।
কফি টা নিয়ে যা। মিশান কে দিয়ে দিস।
আমার অনেক কাজ।কেউ ফ্রী নেই।”
কথা গুলো বলেই সায়রা’র হাতে কফির মগ টা দিয়ে সায়রা কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে প্রিয়তা মির্জা হন্তদন্ত হয়ে রান্না ঘরের দিকে চলে গেলো।
কারণ সারা আহামেদ তাকে ডাকছে।
অগত্যা সায়রা কেও বাধ্য হয়ে কফি নিয়ে মিশান নামক ব্যক্তিটার কক্ষের দিকে পা বাড়াতে হলো।
——————-
সায়রা যখন দরজা খুলে তখন মিশান আরভীর বয়সী এক টা মেয়ে কে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। মেয়ে টাকে সায়রা চিনে, আয়না ফুফির মেয়ে। তবে অবাক হয়ে ছিল। শুধু অবাক হয়নি অবাকের চরমপন্থী ছিল সায়রা। মিশান কে এমন অবস্থা দেখে।
মিশানের ঠিক পেছনে দাঁড়িয়ে ছিল সোহান।
তার থেকে কিছু টা দূরে ছিল আয়ান,সাদনান,রাহান।
মেয়ে টা চোখ বন্ধ করে মিশানের গলা জড়িয়ে ছিল।
মেয়ে টার চোখ মুখ শুকিয়ে ছিল। দেখেই বোঝা যাচ্ছিল মেয়ে টা বেশ ক্লান্ত।
হয়তো এই প্রথম এতো টা পথ জার্নি করে মেয়ে টা ক্লান্ত।
এয়ারপোর্টে থেকে বেরিয়ে মিশানদের বাড়িতে আসতে ঘন্টা সময়ের এর মতো লাগে।
এই রাস্তা টা আসার সময় মেয়ে টা বেশ কয়েক বার বমিও করেছে।
আগেও কিছু খায়নি আর শুধু বমি করার কারণ মেয়েটা একদম নেতিয়ে পড়েছিল।
গাড়ি থেকে নেমে বাড়ির ভিতরে হেঁটে হেঁটে প্রবেশ করার মতো অবস্থায় ছিল না মেয়ে টা।
তাই তো বাধ্য হয়ে মিশান কে কোলে নিতে হয়ছে।
যদিও সাথে সোহান ছিল। তবুও হুট করে তো আর নিজের খালাতো বোন কে কোনো ছেলের কোলে দিতে পারে না। যতই ফুফাত ভাই হোক তবে মেয়ে টা তো সোহান কে চিনে না।
রুহি আয়নার ছোট মেয়ে। ওর জন্ম লন্ডন যাওয়ার পর হয়েছে।
———–
সায়রা মিশান এর রুমে সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
ভিতরে যাওয়ার জন্য সাহস কুলিয়ে উঠতে পারছে না।
বহু দিন, উঁহু দিন নয় পাঁচ বছর পর এই কক্ষের সামনে এলো। মিশানের রুম টা উপরে একদম শেষের দিকে হওয়াতে এদিক টায় কম আসা হয় প্রায় সবার।
তবে মিশানের অনুপস্থিতিতে রুম টা কে মাইশা চৌধুরী নয়তো প্রিয়তা মির্জা দুজনের এক জন কয়েক দিন পর পর রুম টাকে গুছিয়ে রেখেছে।
মিশান সুদূর লন্ডন যাওয়ার আগের দিন যে মেয়ে টা কান্না করতে করতে এই রুমের সামনে থেকে বিদায় নিয়ে ছিল। তার পর আর আসা হয়নি।
আজ আবার এসছে।
কোনো এক অজানা ভয়ে রুম টার ভিতর পা দুটি যেনো যেতে যাচ্ছে না।
মন টা কেমন বিষন্ন হয়ে আসছে।
না এখানে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকলে হবে না। যেতে তো হবে।
যেখান দায়িত্ব টা তার মা দিয়েছে। আর যেখানে মিশান কে তিনি বোনের ছেলে কম নিজের ছেলে মানে বেশি। আর কফি টা সেখানে মিশানের জন্য পাঠানো হয়েছে।
আর যদি কোনো গন্ডগোল হয় তবে তার মা তাকে আজ বাড়ি ছাড়া করবে।
এসব ভেবেই সায়রা দরজা টা হালকা করে নিজের ছোট্ট হাত টা রাখে।
আর অমনি দরজা টা কে’র কে’র আওয়াজ তুলে এতটুকু ফাক হলো। যতটুকু দিয়ে মিশান এর ঘরের সবটাই অতি সহজেই সব টা অবলোকন করা যাবে।
সায়রা সেই ফাঁকের সাহায্যে ঘরের সব টা পর্যবেক্ষণ করে নিলো।
না, ঘরে কেউ নেই।
সায়রা লম্বা একটা দম নিলো। অতঃপর ভাবলো কফির মগ টা রেখে মিশান রুমে আসার আগে চলে যাবে।
কিন্তু সায়রার কপাল কি আর এতো ভালো?
উঁহু, মোটেও নয়।
কফির মগ বিছানায় পাশে টেবিলে রেখে যেই না পেছন ফিরতে যাবে তখনি খট করে ওয়াশরুমের দরজা টা খুলে মিশান বেড়িয়ে এলো।
ঘরে শুধু ড্রিম লাইট জ্বলছে যার কারনে রুমে পর্যাপ্ত আলো নেই। আর সায়রা কে মিশান খেয়াল করে নি।
আর এদিকে সায়রা চুপটি করে দাঁড়িয়ে আছে। এদিক ওদিকে কোনো দিক নড়াচড়া করছে না।
ওর মনে হচ্ছে পেছন ফিরলেই কোনো অঘটন ঘটে যাবে।
মিশান ভাই নিশ্চয়ই আবার আগের মতো করে ধাক্কা দিয়ে বের করে দেবো।
এসব ভাবতে ভাবতে আস্তে আস্তে করে পেছন ফিরে।
কিন্তু না কেউ নেই।
চার দিকে চোখ বুলায় সায়রা।
অতঃপর মিশানের দেখা মিলে।
আলমারির সামনে মেঝেতে
বসে। নিজা আনা সাথে ব্যাগ হাতরে কিছু খোঁজে বেড়াচ্ছে। সায়রা খুশি হলো এটা ভেবে যে মিশান তাকে দেখতে পায় নি তা হলে।
এসব ভেবেই আস্তে করে এগিয়ে গেলো দরজা নিকট।
তবে ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে যাবার আগেই এক টা শক্ত দানবের হাত তার ছোট নরম তুলতুলে হাত টা টেনে ধরলো।
সায়রা চোখ খিঁচে বন্ধ করে নিলো। যা ভয়ে পাচ্ছিল তাই হবে।
এখন নিশ্চিত মিশান আবার আগের নেয় এক গাদা অপমান করবে।
এ-সব মাথায় আসতেই সায়রার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেলো।
ওর খুব করে এখন পানির পিপাসা পেলো।তবে এখন পানি গিলার সময় নয়।
মিশান ভাইয় অপমান গিলার সময়। এসব ভেবেই সায়রা ফাঁকা এক টা ঢোক গিলে নিলো।
কয়েক ঘন্টা আগে লাগানো হালকা গোলাপী লিপস্টিক আবৃত ওষ্ঠ জোড়া জ্বি হা দ্বারা ভিজিয়ে নিলো।
-“ছোট বেলার স্বভাব টা এখনো ছাড়তে পারিস নি?”
মিশানের এমন গম্ভীর কন্ঠে করা প্রশ্নে সায়রার চোখ বড় বড় করে তাকাতেই করিডর ওপাশে থাকা পিলার টা নজরে পড়লো।
এই ব্যক্তি ওর সাথে এভাবে এতো সহজ সাবলীল গলায় কিভাবে কথা বলছে?
যেখান মিশান নামক ব্যক্তি টাকে দেখলেই ওর গলা শুকিয়ে যাচ্ছে।
সায়রার ভাবনার মাঝেই মিশান এক টানে ওর দিকে ঘুরিয়ে মেয়ে টার কোমর জড়িয়ে ধরে।
মিশান সাওয়ার নেওয়ার কারণে ওর হাতের স্পর্শ বরফের মতো ঠান্ডা মনে হলো সায়রার কাছে।
সে স্পর্শে সায়রা নামক রমণীর ছোট্ট দেহপিঞ্জর কেঁপে উঠল।
মিশান সায়রার শরীর দিকে তাকিয়ে উপর হতে নিচ পযন্ত চোখ ঘুরিয়ে চাইলো।
সায়রা এখন দৃষ্টি নত।
মিশান চোখে হাসে।সায়রার আড়ালে।
অতঃপর কেমন নাক মুখ কুঁচকে বলে
-” বড় হয়ে দেখতে এতো টা খারাপ হবি ভাবি নি।
মিশান এক হাত সায়রার কোমরে রেখে আর হাতের তর্জনি আঙ্গুল দ্বারা নিজের গোলাপি ওষ্ঠ ছুঁয়ে কিছু ভাবে। অতঃপর
ভ্রু কুঁচকে মেয়ে টার দিকে পূর্ণ দৃষ্টি দেয়।
পর পরই শক্ত কন্ঠে কিছু বাক্য প্রয়োগ করে
-“বিয়ের আগে যদি কখনো আর শাড়ী পড়তে দেখেছি।
তবে বাসর রাতে ব’স্তু ছা’ড়া’ই সারা রাত দাঁড় করিয়ে রাখবো,ইডিয়েট।”
মিশান এর করা প্রশ্নে ষোড়শী কন্যা সায়রার সহজ সরল উওর
-“ষোল বছর হতে আর তিন মাস বাকি।
চলো না আমরা বিয়ে করে ফেলি। তুমি তো কাল চলে যাবে লন্ডন। ”
-“কিসে পড়িস তুই?
কি যোগ্যতা আছে তোর আমার বউ হওয়ার?”
মিশানের এমন কথায় কিশোরী সায়রা বিস্ময় নিয়ে প্রশ্ন
-“তুমি এসব কেন বলছো?
তুমি তো আমায় ভালোবাসো।”
-“কে বলেছে আমি তোকে ভালোবাসি?
বা কখনো আমি নিজে তোকে বলেছি যে আমি তোকে ভালোবাসি?
শুন যে দিন লেখা পড়া করে আমার যোগ্য হতে পারবি সে দিন আমি তোকে বিয়ে করবো।
এখন যা আমার রুম থেকে বিদায় হও।
অনেক কাজ এখনো বাকি আছে আমার।
কাল সকালে আমার ফ্লাইট। ”
মিশানের এমন ব্যবহারে যেনো ছোট সয়ারা বাকরুদ্ধ।
এই মূহুর্তে কি বলা উচিত এই কিশোরীর মাথা আসছে না।
কথা গুলো বলতে বলতে মিশান সায়রাকে ঘর থেকে ঠেলে বের করে দিয়ে ভিতর থেকে দরজা টা ঠাস করে বন্ধ করে দেয়।
সায়রা চোখ ততক্ষণে জল গড়িয়ে পড়ছে।
সায়রা যেনো দরজা বন্ধ করার শব্দে সম্মতি ফিরে পেলো
আর তৎক্ষনাৎ ছোট সায়রা ছোট ছোট হাত দ্বারা দিয়ে আবারও মিশানের কক্ষের দরজায় কড়া আঘাত করে।
-“প্লিজ মিশান ভাই এমন করে বলো না।
আমি সত্যি তোমায় ভালোবাসি। ”
কিন্তু না খোলে নি সে দিন মিশান তার রুমের দরজা আর নাই কোনো উত্তর দিয়েছে ছোট সায়রার এতো এতো করা প্রশ্নের।
—————
-“শোন আজ ভার্সিটি না গেলে হয় না?”
প্রিয়তা মির্জা রান্না ঘর থেকে পানির গ্লাস নিয়ে ডাইনিং টেবিল রাখতে রাখতে মেয়ে কে প্রশ্ন করে।
সাদনান মির্জা মেয়ের মুখে খাবার তোলে দিচ্ছে।
পাশে প্রহর বসে আরভীর সঙ্গে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে কথা বলছে আর নাস্তা করছে।
সামনের চেয়ারে আয়ান বসে পেপার পড়ছে আর কফি খাচ্ছে। মাইশা রান্না ঘরে পরটা বানাচ্ছে।
-“না মা আজ একটা পরীক্ষা আছে যেতে হবে।”
-“আচ্ছা তাড়াতাড়ি ফিরবার চেষ্টা করিস।
তোর ছোট মনি আসবে।”
-“হ্যাঁ, বাবা গিয়ে নিয়ে আসবো।
প্রহর আর আরভী তোমরাও কলেজ ছুটির পর আপুর জন্য দাঁড়াবা।
আমি অফিস থেকে তাড়াতাড়ি ফিরবো।
আয়ান কি আজ অফিস যাবি?”
আয়ানের চৌধুরী কে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন সাদনান মির্জা।
-“না তুমি যাও।
আমি রাহানদের নিতে যাব।”
-“আচ্ছা। ”
তার পর সবাই খাবার খেয়ে যে যার কাজে চলে গেলো।
প্রিয়তা আর মাইশা দু’জনে রান্না ঘরের দিকে চলে গেলো।
অনেক কিছু করতে হবে।
আজ পাঁচ বছর পর বাড়ির ছেলে বাড়ি ফিরবে বলে কথা।
—————–
সে দিন মিশান লন্ডন চলে যাওয়ার পর আজ পাঁচ বছর কেটে গেছে।
সায়রা মিশানের সাথে এই পাঁচ বছরে এক বারও যোগাযোগ করে নি।
কিন্তু চুপিচুপি ঠিক মিশান কে দেখেছে।
মিশান দেখতে আগের চাইতে অনেক সুন্দর হয়েছে।
সায়রা মিশানের ছবি আরভীর ফোনে দেখেছে।
আরভী আয়ান আর মাইশার মেয়ে।
মিশান যখন বাড়ির সবার সাথে ভিডিও কলে কথা বলতো তখন সায়রা আগে পিছে ঘুরঘুর করতো। তবে মিশান কখনো সায়রার সাথে কথা বলতো না।
তাই সায়রাও নিজে কে শক্ত করে নিয়েছে।
এখন মিশান বাড়ির সবার সাথে যখন কথা বলে তখন সায়রা নিজের রুমে দরজা বন্ধ করে বসে থাকে। আর আগের মতো বেহায়াপনা করে না।
নিজে কে গড়েছে। এসএসসি তে ভালো রেজাল্ট না করলেও এচএসসি তে ভালো রেজাল্ট করেছে। ভালো ভার্সিটিতে চান্স পেয়েছে।
মন দিয়ে লেখা পড়া করছে।
তবে অদ্ভুত ব্যাপার হলো কেউ এই সব নিয়ে কখনো কোনো কথা বলে না। যেমন এই যে মিশান কেন সায়রার সাথে কথা বলে না? সায়রার খারাপ লাগে কেউ কেন মিশান কে কিছু বলে না? আবার মাঝে মাঝে সন্দেহ হয়।
মিশান ভাই কি সবাই কে বলে দিয়েছে? সে যে মিশান কে ভালোবাসে।
কিন্তু জানলে কেউ কিছু বলে না কেন? সায়রার এই ছোট্ট মাথায়
এতো এতো প্রশ্ন কিন্তু উত্তর কে দিবে?
বাড়ির সবাই জানে আজ রাত সাত টার সময় মিশান বাংলাদেশ আসছে। শুধু সায়রা ছাড়া।
মিশান নিজেই জানাতে না করেছে।
এই জন্যই রাহানরা সবাই আজ ঢাকা আসছে।
—————-
-“আপু চলো না আমরা শাড়ী পড়ি প্লিজ। ”
সন্ধ্যা ছয় টার বেশি সময় বাজে এখন
সায়রা দোলনায় বসে কোনো একটা গল্পের বই পড়ছিল।
ঠিক তখনি আরভী ওর পাশে বসতে বসতে কথা টা বলে।
সায়রা কিছু না বলে বই টা বন্ধ করে।
অতঃপর থুতনিতে হাত রাখে।
কিছু ভাবে। মলিন হয় মুখ।
-“কিন্তু আমি তো শাড়ী পড়তে পারি না। আর না তুই পারিস।
মা, ছোট মনি বড় মনি আজ অনেক কাজ করছে।
তাহলে পড়িয়ে টা দেবে কে?”
-“হুম,,
আপু আমরা ইউটিউব এ ভিডিও দেখে পড়তে পারি।”
প্রথম মন খারাপ করলেও পরে বেশ উৎসাহ নিয়ে বলে আরভী।
-“হ্যাঁ। এটা করা যায়।
তবে চল পড়ে ফেলা যাক।”
সায়রা আর আরভী বেলকনি হতে রুমে এসে সায়রা আলমারি খোলে দুটো শাড়ী বের করে একটা আরভী আর একটা নিজে নেয়।সব প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে ফোনে ভিডিও দেখে দেখে শাড়ী পড়তে শুরু করে। বেশ অনেক টা সময় নিয়ে দু’জনে
শাড়ী পড়তে সক্ষম হয়। তার পর দুজনে হালকা করে সাজুগুজু করে নিচে চলে আসে।
কারণ ছবি তোলার জন্য এখন তাদের প্রহর কে প্রয়োজন।
প্রহর সোফায় বসে কাগজে কিছু লিখছে।
প্রহর এভার অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে ভর্তি হ’য়েছে।
আবার পরীক্ষাও শুরু হবে কয় দিন পর তাই বেশ চাপ যাচ্ছে পড়ার।
আর প্রহর পড়া লেখা নিয়ে অনেক সচেতন সাথে ব্রিলিয়ান্ট। তাই তো ক্লাস টু না পড়ে থ্রি তে ভর্তি হয়ে গিয়েছিল। এই জন্যেই তো সায়রার এক বছর জুনিয়র।
-“ভাই তুই কি কিছু করছি?”
-“হুম সামনে পরীক্ষা।
তোর কিছু লাগবে?”
-“হুম তোকে।সাথে তোর ক্যামেরাটাও।”
-“আচ্ছা। এখন তো রাত বাহিরে তো নিশ্চয়ই যাবি না।
তোরা বরং দরজার ডান পাশে সিঁড়ি কাছটায় দাঁড়া আমি রুম থেকে ক্যামেরা নিয়ে আসছি।”
-“আচ্ছা। ”
প্রহর উপরে নিজের রুমের দিকে চলে গেলো। সে বোনের শাড়ী পড়া দেখেই বুঝতে পেরেছে।
সায়রাও আরভী কে নিয়ে প্রহর এর কথা মতো দরজার পাশে গিয়ে দাঁড়ায় সাথে আরভী বিভিন্ন রকম স্টাইল করছে।কিভাবে ছবি তোল কি করবে এসব বলছে সায়রা কে।
বেশ অনেক টা সময় নিয়ে যখন প্রহর আসছে না দেখে আরভী গেলো উপরে প্রহরের খুঁজ করতে।
ঠিক সে সময় বাড়ি বাহিরে গাড়ি শব্দ হলো।
সায়রা ভাবলো হয়তো ওর বাবা আর বাবাই এসছে।রাত আটটা বাজতে চলে।
তাই খুশি হয় কারণ সাদনান মির্জা মেয়ে কে এভাবে দেখলে অনেক খুশি হবে ভেবেই সায়রা বেশ উৎফুল্লতা নিয়ে মেইন দরজা খোলে।কিন্তু দরজা ওপাশের ব্যক্তি গুলো কে দেখে নিমিষেই হাসি খুশি মুখ টা বিষাদময় হয়ে উঠে।
-“কি রে তুই এভাবে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?
ওদের কে ভিতর ডুকতে দে।
দেখেছিস না ছেলে টা মেয়ে টা কে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে?”
প্রিয়তা মির্জা কথা গুলো বলতে বলতে এসে সায়রা কে দরজা হতে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে ওপাশে থাকা মানুষ গুলো কে ভিতরে ডুকতে বলে।
অতঃপর নিজেও হন্তদন্ত হয়ে ডাইনিং টেবিল হতে পানির গ্লাস আনে।
ততক্ষণে বাহিরে থাকা প্রতি টা ব্যক্তি বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করেছে।
#চলবে….
[season 2 বেশি বড় হবে না। ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ।]
আকস্মিক ভাবে রুমের লাইট গুলো অফ হয়ে গেলো। চিত্রা ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে মাথার ওড়না টা ঠিক করছিলো। রুম অন্ধকার হয়ে যাওয়ায় কিছুটা বিস্মিত হলো। বাহিরের কৃত্রিম আলোয় রুম কিছুটা আলোকিত হলো। বিছানা থেকে ফোন টা নেওয়ার জন্য পিছু ঘুরতেই কিছুর সাথে ধাক্কা খায়। পড়ে যেতে গেলে শক্ত দুটো হাত আগলে ধরে। চিরচেনা পারফিউমের ঘ্রাণ নাকে আসতেই চিত্রার আর বুঝতে বাকি নেই শক্ত দুটো হাতের মালিক টা কে। চিত্রা নিজেকে সামলিয়ে সোজা হয়ে দাড়িয়ে সতর্কতার সাথে ওড়না দিয়ে ঢাকতে গেলেই সামনে থাকা পুরুষ টা চট করে ফোনের টর্চ জ্বালিয়ে মুখের সামনে ধরে। খপ করে চিত্রার হাত থেকে ওড়না টা ছাড়িয়ে নেয়। ফোনের আলো চিত্রার মুখের উপড়ে পড়ছে যার ফলে ভালোমতো তাকাতেও পারছে না। হাতের উল্টো পাশ চোখের সামনে রাখে। তুষার বিরক্ত হলো। এখন শুধু ঠোঁট আর নাক দেখা যাচ্ছে। ডান হাত টা দিয়ে চিত্রার হাত সরিয়ে দেয়। চিত্রা তাকাতে গিয়েও পারলো না। চোখ মুখ খিঁচে দাঁতে দাঁত চেপে বলে-
-“ কি শুরু করছেন এটা। আপনার ফোনের লাইট বন্ধ করুন। আমি তাকাতে পারছি না।
তুষার লাইট বন্ধ করলো না। এক ধ্যানে তাকিয়ে রইলো চিত্রার মুখের দিকে। চিত্রা এবার কিছুটা সরে দাঁড়ালো। তুষার গিয়ে সুইচ টিপে রুমের বাতি জ্বালালো। চিত্রা এখন বুঝলো মহাশয় বাতু নিভিয়ে দিয়েছিল। তুষার ফের চিত্রার সামনে দাঁড়াতেই চিত্রা বলে উঠে –
-“ আপনি এসেছেন কেনো?
-“ তার কৈফিয়ত কি তোমায় দিতে হবে নাকি?
-“ অবশ্যই।
-“ দিবো না।
-“ আপনি যে এসেছেন কেউ দেখেছে?
-“ তোমার কি মনে হয় তুষার চোরের মতো আসবে তার বউকে দেখতে?
-“ ত্যাড়া ত্যাড়া কথা বলছেন কেনো?
-“ তুমি আমার কথা শুনোনি কেনো?
-“ কোন কথা শুনি নি?
-“ তখন যে তোমায় দেখতে চাইলাম দেখতে দিলে না কেনো?
-“ এতো দেখাদেখির কি আছে? আপনি কি দেখেন নি কখনও আমায়?
-“ আগের দেখা আর আজকে দেখতে চাওয়া এক নয়। চুপচাপ বসে থাকবা আমি তোমায় দেখবো।
এরমাঝে রিয়া আসে চিত্রা কে ডাকতে। দরজার কাছে এসে তুষারকে চিত্রার সাথে দেখে দাঁড়িয়ে যায়। গলা ঝেড়ে বলে-
-“ ভাইয়া আপনি আর চিত্রা আসুন হলুদের সময় হচ্ছে তো।
তুষার আসছি বলে। রিয়া চলে যায়। চিত্রা তুষারের দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ বাই এনি চান্স আপনার আর আমার হলুদ কি এক সাথে হবে?
তুষার চিত্রার গাল টেনে বলে-
-“ ইন্টেলিজেন্ট বউ আমার চলো।
স্টেজে পাশাপাশি বসে আছে চিত্রা তুষার। এক এক করে সবাই তাদের হলুদ লাগাচ্ছে। রাতুল এসে চিত্রার গালে হলুদ ছোঁয়াতে নিলে তুষার রাতুলের হাত টেনে নিজের গালে লাগিয়ে নেয়। স্মিত হেঁসে বলে-
-“ হলুদ টা আমাকেই লাগান, হৃদপিণ্ডে সবাই হাত লাগাতে দেয় না। আর হ্যাঁ চোখের নজর টাকে একটু সুধরে নিবেন। পরের বউয়ের প্রতি এমন নজর মানায় না। শিক্ষিত ছেলে আপনি বুঝে ফেলেছন,দ্বিতীয় বার কিন্তু এভবে বুঝাবো না আমি।
রাতুল চোখ নামিয়ে সাইডে সরে যায়৷ রাফি তুষারের সামনে থাকা হলুদের বাটি থেকে একটু হলুদ নিতেই তুষার বলে উঠে –
-“ হলুদ নিয়ে কি করবি?
রাফি তার দাঁত গুলো মেলে বলে-
-“ তোমার বোনের মুখে ছোঁয়াবো । সবাই হয়তো ভুলে গেছে কাল আমাদের কাবিন কিন্তু আমি তো ভুলি নি।
-“ আমার হলুদেও তোর ভাগ বসাতে হবে?
হলুদ নিয়ে যেতে যেতে বলে-
-“ কিচ্ছু করার নেই।
তৃষ্ণা চেয়ারে বসে ছিলো। শরীরে তার হলুদ শাড়ি। হঠাৎ গালে ঠান্ডা কিছু অনুভব করতে মাথা উঁচু করে দেখে রাফির হাতে হলুদ। মুখে হাত দিয়ে বুঝলো তার প্রেমিক পুরুষ তার গালে হলুদ লাগিয়েছে।
-“ হলুদ না লাগালে কি চলছিলো না?
রাফি তৃষ্ণার পাশে থাকা চেয়ারটায় বসে।
-“ না চলছিলো না।
-“ পাগল আপনি।
-“ হু তোমার প্রেমে পাগল আমি।
-“ আমি না হয় আপনার প্রেমে পড়েছিলাম বাট আপনি কবে পড়লেন?
-“ যেদিন ষোড়শীর মেয়েটার চোখে আমার জন্য আকাশসম ভালোবাসা দেখলাম সেদিন থেকে।
-“ তার মানে আগেই?
-“ হু।
-“ কই বুঝতে তো পারলাম না।
-“ বুঝতে দিলে তো বুঝবে।
-“ কষ্ট দিয়েছেন খুব।
-” সব টা সুধে আসলে ফেরত দিয়ো বাসর ঘরে।
-“ হ্যাঁ দিবোই তো জাস্ট অপেক্ষা করুন না।
-“ উফ অপেক্ষা টাই তো করতে পারছি না। আমার বাসর এতো লেট কেনো।
———————-
মেহেদী রাঙা হাত মেলে হাতের দিকে তাকিয়ে আছে চিত্রা। বা হাতের তালুতে জ্বলজ্বল করছে তুষার নাম টা। গতকাল রাতে তুষার চিত্রার হাতে তার নাম না দেখে নিজেই লিখে দিয়েছে। এবং সর্বশেষ যাওয়ার আগে কপালে ভালোবাসার পরশ এঁকে দিয়ে বলে গেছে-
-“ কাল আসবো তোমায় আমার একান্তই আমার ব্যাক্তিগত করে নিতে। নিজেকে সেভাবে সজ্জিত করে রাখবে সাথে প্রস্তুত ও। তুষার মোটেও তোমায় সময় দিবে না।
শেষের কথা শুনে চিত্রার চোখ মুখ জুড়ে হানা দিয়েছিলো লজ্জারা। চিত্রা কে এই প্রথম বার লজ্জা পেতে দেখলো তুষার। মুহুর্ত টা মন্দ লাগলো না তুষারের। বিয়ের পর রোজ বউকে নতুনত্ব ভাবে লজ্জায় ফেলে বউয়ের এই লজ্জা মাখা মুখ দেখবে।
চিত্রা কথা বলতে পারলো না। তুষারের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিজের রুমে চলে এসেছিল।
চয়নিকা বেগম তাড়া দিলেন মেয়েকে গোসল করে নিতে। একটু পর পার্লারের মেয়েরা আসবে তাকে সাজাতে। চিত্রা বসা থেকে উঠে ওয়াশরুমে গিয়ে গোসল সেরে বের হয়ে এসে দেখে পার্লারের মেয়েরা এসে বসে আছে। চিত্রা আসতেই তারা চিত্রা কে সাজাতে থাকে। সাজার শেষে চিত্রা ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখে। ব্লাক কালারের লেহেঙ্গাতে সুন্দর ই লাগছে। চিত্রার দাদি সানজিদা বেগম লাঠি ঠকঠক করতে করতে নাতনির রুমে আসে। চিত্রার মুখে হাত দিয়ে বলে-
-“ মাশাআল্লাহ দিদি তোমারে একদম রাণীর মতো লাগতাছে। আমার নাতি আজ টাস্কি খাইয়া পইড়া যাইবো।
চিত্রা মুচকি হাসে।
-“ কি বলো দাদি এসব।
-“ ঠিকই তো কইলাম। হুন আমি এই বয়স পার কইরা আইছি । আমারও এমন রূপ আছিলো। এখন সে না বয়সের জন্য চামড়া কুঁচকে গেছে। তর দাদা ও আমার এই রূপ দেইখা পাগল হইছিলো।
-“ আমার দাদা তোমায় এখনও সেই আগের মতোই ভালোবাসে দাদি তাই না?
-“ হ মানুষ টা এহনো আমারে সেই আগের মতোই ভালোবাসে। দেখোস না সহজে আমারে কোত্থাও যাইতে দেয় না।
রিক্তা বেগম এসে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বলে-
-“ মা পরে কথা বইলেন তুষার রা চলে আসছে। চিত্রা কে নিচে নিয়া আসেন।
সানজিদা বেগম চিত্রা কে নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামে। চিত্রা পাশ ঘুরে আড় চোখে তাকায় তুষারের দিকে। তার শরীরে ব্লাক কালারের শেরওয়ানী। নজর তার এদিকটায়। তুষার বসা থেকে উঠে দাড়ায়। এগিয়ে এসে চিত্রার সামনে তার হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে-
-“ নানু আপনাকে আর কষ্ট করতে হবে না। নানা জান আপনাকে চোখে হারাচ্ছে। আমার বউ এখন আমি নিয়ে যেতে পারবো।
সানজিদা বেগম চিত্রার ধরে রাখা হাত টা তুষারের হাতে তুলে দেয়। তুষার চিত্রা কে নিয়ে বসে পড়ে তাদের নির্ধারিত জায়গায়। তুষার সবার অগোচরে চিত্রার বা হাতে চুমু খায়। ফিসফিস করে বলে-
-“ মে’রে ফেলার প্ল্যান করেছো আজ। ট্রাস্ট মি অনর্থক হয়ে গেলে তার দায়ভার কিন্তু আমার নয়।
চিত্রা ভ্রু কুঁচকালো।
-“ কিসের অনর্থক হবে?
-“ অনর্থক টা কি দেখবে?
চিত্রা বোকার মতো বলে ফেলে-
-“ হুম।
-“ জাস্ট আর কয়েকটা প্রহর অপেক্ষা করো তার পর প্র্যাক্টিক্যালি করে দেখাবো।
চিত্রা তুষারের থেকে মুখ ঘুরালো। মনে মনে কয়েকশো বকা দিলো।
কাজি আসতেই তুষার নড়েচড়ে বসলো। তুষারকে কবুল বলার জন্য বলতেই তুষার গড়গড় করে কবুল বলে দেয়। রাফি তুষারের দিকে পানির গ্লাস এগিয়ে দিয়ে বলে-
-“ ব্রো চটপট পানি খাও শ্বাস আটকে আছে মনে হয় তোমার।
তুষার আশেপাশে তাকালো। সবাই ঠোঁট চেপে হাসছে। চিত্রাকে কবুল বলার জন্য বলা হলো। চিত্রা একটু সময় নিলো। তুষার চিত্রার হাত টা ধরলো। ভরসা দিলো। চিত্রা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে কবুল বলে দিলো। সবাই আলহামদুলিল্লাহ বলে উঠলো।
রাফি এবার পেছন থেকে তৃষ্ণা কে টেনে আনলো। কাজির সামনে দাঁড়িয়ে বলল-
-“ এবার নিশ্চয়ই আমাদের পালা।
রাসেল আহমেদের ইচ্ছে করলো ছেলেকে ধরে নর্দমায় চুবিয়ে আনতে। এভাবে বলে কেউ। ওদের পর তো তোদেরই পালা। তানিয়া বেগম ভাইপো কে যেতে চেয়ারে বসিয়ে দেয়। চোখ মুখ কুঁচকে বলে-
-“ মানসম্মান আর রাখবি না তোরা। বস বিয়ে করে শান্ত হ।
পাশে চেয়ার টেনে তৃষ্ণা কেও বসানো হয়। কাজি কবুল বলতে বললে দুজনে সময় না নিয়েই কবুল বলে ফেলে। রাফি প্রশান্তির একটা নিঃশ্বাস ফেলে। যাক এবার সে নিশ্চিন্ত ফিউচার নিয়ে।
বিদায় বেলায় চিত্রা মা বাবা কে জড়িয়ে ধরে কেঁদেছিল। সাহেল আহমেদ মেয়ের হাত খানা তুষারের হাতে দিয়ে বলেন-
-“ ভরসা আছে চিত্রা কে তুমি সুখী করবে। তাই চিন্তামুক্ত আমি।
তুষার চিত্রার হাত শক্ত করে ধরে বলে-
-“ আপনার এই ভরসার অমর্যাদা কখনও হতে দিবে না তুষার।
সাহেল আহমেদ তৃপ্ত পান। রাফি তার ফুপির পাশে দাঁড়িয়ে বলে-
-“ ফুপি তোমার মেয়েকে কি নিয়ে যাবে?
তানিয়া বেগম আড়চোখে একবার তাকিয়ে বললো-
-“ কেনো আমার মেয়েকে কি তুই রেখে দিতে চাচ্ছিস?
-“ হ্যাঁ তেমন টাই চাচ্ছিলাম। রেখে দেই?
-“ আমার মেয়ে তো রাখতে পারবো না কিন্তু তোকে নিয়ে যেতে পারবো আমাদের বাড়ি।
মুখ চুপসে গেলো রাফির।
-“ ধুরু ফুপি কি বলো। তোমাদের বাড়ি এখন গেলে বিষয় টা কেমন দেখায় না?
-“ কেমন দেখায়?
-“ এই যে বিয়ে হতে না হতেই মেয়ের জামাই তার শ্বশুর বাড়ি।
-“ হইছে তুই এতো বিষয় নিয়ে কবে থেকে ভাবা শুরু করলি?
-“ আচ্ছা বাদ দাও আমি যাই তাহলে তোমাদের বাসায়।
———————–
ফুল দিয়ে সাজানো রুমে বসে আছে চিত্রা। পড়নের লেহেঙ্গা টায় এখন অস্বস্তি হচ্ছে। কিছুক্ষণ আগেই সব আচার-আচরণ পালন করে তানিয়া বেগম চিত্রা কে বসিয়ে দিয়ে গেছে। চিত্রা তুষারের আসার কোনো নাম গন্ধ পেলো না। রাগ নিয়েই বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। আলমারির কাছে গিয়ে লেমন কালারের একটা সুতি কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।
এদিকে তুষার মুখে হাসি ঝুলিয়ে রুমে ঢুকে বিছানায় তাকিয়ে চিত্রা কে দেখতে না পেয়ে মুখের হাসি গায়েব হয়ে যায়। পুরো রুমে চোখ বুলিয়ে দেখে চিত্রা নেই। হঠাৎ ওয়াশরুম থেকে পানি পড়ার শব্দ কানে আসতেই বুঝে বউ তার ওয়াশরুমে। তুষার বিছানায় বসে অপেক্ষা করে। এতোদিন শুনে এসেছে বউ বরের জন্য অপেক্ষা করে আর এদিকে তুষার তার বউয়ের জন্য অপেক্ষা করছে।
ওয়াশরুমের দরজা খুলার আওয়াজ কানে আসতেই সেদিকে তাকাতেই তুষারের মনে বইতে থাকা রোমান্টিক ভাবটা ফানুসের মতো উড়ে যায়।
বউ তার বিয়ের সাজসজ্জা মুছে ফেলছে। তুষার ভেবেছিল বউয়ের মুখে ইয়া বড় ঘোমটা থাকবে আর সে সেটা তুলে বউয়ের মুখ দেখে কিছুটা প্রেমকাব্য শুনাবে।আর মেন দুঃখ তাদের মাঝে কিছুই হলো না অথচ বউ তার এই রাতে গোসল সেরে ফেললো।
চিত্রা তুষার কে দেখে টাওয়াল দিয়ে চুল মুছতে মুছতে বলে-
-“ আমার বড্ড অস্বস্তি হচ্ছিল ঐ ভারী ড্রেসে আর আপনার ও আসতে দেরি হচ্ছিল তাই আর কি পাল্টে ফেলছি।
-“ আমি আসার পর না হয় পাল্টাতে আমার সামনে।
চিত্রা ভ্রু কুঁচকে তাকালো। হাতের টাওয়াল টা তুষারের দিকে ছুঁড়ে মারে। ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে চুল ঠিক করে বলে-
-“ মনে আছে একদিন এই ঘর থেকে আমায় বের করে দিয়েছিলেন।
-“ তো সেটার জন্য আজ এভাবে বাসরের মুড টাকে তেরো টা বাজিয়ে রিভেঞ্জ নিলে?
চিত্রা তুষারের সামনে দাঁড়ালো। কোমড়ে হাত দিয়ে বলে-
-“ ঐ কাল থেকে দেখছি হুটহাট ত্যাড়া ত্যাড়া কথা বলছেন হুয়াইইইইই। সমস্যা কি বলেন খুলে।
-“ বউ আমার মনের ভাষা বুঝে না এটাই সমস্যা। সে নিব্বি হলে মনকে বুঝাতাম বাট সে তো ফিটার খাওয়া বাচ্চা নয়।
চিত্রা নৈঃশব্দ্যে হাসলো। তুষারের হাত ধরে বলে-
-“ উঠুন। আপনি জানেন আপনার রুমের বেলকনি টা আমার ভীষণ পছন্দ।
-“ আর বেলকনির মালিক কে?
-“ বেলকনির মালিক কে মারাত্মক লেভেলের পছন্দ।
তুষার চিত্রা কে নিয়ে তার বেলকনি তে আসে। কুয়াশাজড়ানো চারিপাশ। চিত্রা কেঁপে উঠলো। শীতকালে বিয়ে করেও শান্তি নেই। বউ নিয়ে যে একটু চন্দ্র বিলাস করবে সে চন্দ্র নিজেই কুয়াশার ভেতর জমে বরফ হয়ে আছে৷
-“ বেলকনিতে এসে কি হলো? এই কুয়াশা দেখে কি হবে? উল্টো শীতে কাঁপা-কাঁপি করা লাগবে।
-“ ইশ এমন ভাবে বলছেন কেনো। মুহুর্ত টা ফিল করুন।
-” ঠান্ডায় জমে বরফ হওয়ার মতো মুহূর্ত ফিল করতে চাই না। এর চেয়ে বরং তুমি আমি স্পেশাল দিনে স্পেশাল কিছুর ফিল নেই।
তুষারের কথা শুনে চুপ হয়ে গেলো চিত্রা। লজ্জায় গাল দুটো লাল হয়ে গেলো। তুষার মুচকি হাসে চিত্রা কে নিজের কাছে টেনে আনে। চিত্রার ভেজা চুলে ব্লাউজ টা লেপ্টে আছে শরীরে। তুষারের নেশা লেগে যাওয়ার উপক্রম হয়। চিত্রার শুষ্ক ঠোঁটে হালকা করে নিজের ঠোঁট ছোঁয়ায়। কেঁপে উঠে চিত্রা, দু হাত দিয়ে শাড়ির আঁচল খামচে ধরে। চোখ বন্ধ। তুষার ঠোঁট ছেড়ে এবার চিত্রার সারা মুখে অসংখ্য চুমু দেয়। কানের কাছে ফিসফিস করে বলে-
-“ তখন না বলেছিলে অনর্থক দেখবে। এটা জাস্ট ট্রেইলার ছিলো বাকিটা রুমে নিয়ে গিয়ে দিবো।
কথাটা বলে চিত্রা কে পাঁজা কোলে তুলে নেয় তুষার। চিত্রা লজ্জায় মুখ লুকায় তুষারের বুকে। তুষার চিত্রার লজ্জা পাওয়া মুখ দেখে বলে-
-“ তোমার লজ্জা পাওয়া মুখ আমার বড্ড প্রিয়।
চিত্রা বুকে মুখ গুজেই বলে-
-“ এর জন্যই বুঝি লজ্জায় ফেলেন।
তুষার চিত্রা কে বিছানায় শুইয়ে দেয়। রুমের লাইট গুলো অফ করে এসে নিজেও চিত্রার পাশে শুয়ে পড়ে চিত্রা কে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে৷ চিত্রা ভেবেছিল তাদের মাঝে কিছু হবে কিন্তু না৷ তুষার বুঝলো হয়তো চিত্রার মনের কথা। তাই চিত্রার গলায় মুখ গুজে আস্তে করে কামড় বসিয়ে বলে-
-“ মনে যেটা আসছে সেটা আজ হয় নি তাই বলে ভেবো না যে কাল ও হবে না। নেহাৎ আজ গোসল করছো বলে ছেড়ে দিলাম৷ এবার চুপচাপ ঘুমাও।
চিত্রা তুষারের দিকে ঘুরলো। তুষারের মুখে নিজের হাত রেখে বললো-
-“ আপনাকে একটা কথা বলি,?
তুষার অকপটে বলে –
-“ হুম বলো।
-” ভালোবাসি খুব আপনাকে।
-“ তো?
চিত্রা তুষারের গাল থেকে নিজের হাত সরায়। ভ্রু কুঁচকে বলে-
-“ তো মানে?
-“ তো মানে তো ই।
-“ আমি আপনাকে ভালোবাসি এটা বললাম আর আপনি এটার বিপরীতে কিছু বলবেন না?
-“ তো বললামই তো।
চিত্রা কিছু বললো না। রাগান্বিত হয়ে ওপাশ হয়ে শুয়ে পড়লো। এটাকে বাসর বলে নাকি অন্য কিছু বলে জানা নেই। তুষার ফের চিত্রা কে জড়িয়ে ধরতে নিলে চিত্রা তুষারের হাত সরিয়ে দেয়। তুষার চিত্রা কে জোর করে নিজের দিকে ঘুরায়। চিত্রা ছুটাছুটি করলে তুষার এবার চিত্রার ঠোঁট দখল করে নেয়। অবেক্ষণ পর ছেড়ে দিতেই চিত্রা জোরে জোরে শ্বাস নেয়। তুষার চিত্রা কে ফের জড়িয়ে ধরে বলে-
-“ কন্ট্রোলে থাকতে দাও জান। আমি আজ রাতেই তেমন কিছু করতে চাচ্ছি না। অনেক ধকল গেছে তোমার ঘুমাও।
চিত্রা নিজের ঠোঁটে হাত দিয়ে বলে-
-“ এটা মুখে বললেই তো হতো এভাবে ঠোঁটে অত্যাচার করার কি দরকার ছিলো।
-“ জাস্ট শাট আপ। এটাকে অত্যাচার বলে না। ইট’স লাভ।
চিত্রা কিছু বলতে নিবে ওমনি তুষার থামিয়ে দিয়ে বলে-
-“ নো মোর ওয়ার্ড।
কথাটা বলে চিত্রার কপালে চুমু দিয়ে চোখ বুজে ফেলে। চিত্রা স্মিত হেঁসে তুষারের বুকে মুখ গুঁজে জড়িয়ে ধরে। আজ থেকে তার একটা একান্ত মানুষ হয়েছে। রাত হলে যার বুকে মাথা রেখে নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারবে। ক্লান্ত হলে যার কাঁধে মাথা রেখে রিলিভ পাবে।
শীতের মধ্যে ছাঁদে দাঁড়িয়ে আছে তৃষ্ণা আর রাফি। তৃষ্ণা ঘুমে চোখে দেখছে না। অথচ এই ছেলের আব্দার রাখার জন্য তার ঘুমকে এক সাইডে রেখে চাদর গায়ে জড়িয়ে এত রাতে ছাঁদে আসতে হয়েছে। রাফি পকেট থেকে একটা রিং বের করলো। তৃষ্ণার বা হাতের অনামিকা আঙুলে পড়িয়ে দেয়। হাতের উল্টো পিঠে চুমু খেয়ে বলে-
-“ ধন্যবাদ চাতক আমার জীবনের এই জরাজীর্ণ শহরে তোমায় আসার জন্য। ভালোবাসি তোমায়।
তৃষ্ণা আংটিটায় একবার চোখ বুলিয়ে রাফিকে জড়িয়ে ধরে।
-“ আপনার চাতক আপনায় ভীষণ ভালোবাসে। আপনাকে ধন্যবাদ।
রাফি তৃষ্ণার কপালে চুমু খায়। চাদরটা গায়ে ভালো করে জড়িয়ে হাত মুঠোয় নিয়ে বলে-
-“ চলো যাওয়া যাক। আমাদের এখনও পারমিশন আসে নি একসাথে থাকার একই রুমে। কষ্টে বুক ফেটে যাচ্ছে। তবে সিজন টু তে এই কষ্টের সমাধি আমি আগেই ঘটাবো দেখে নিয়ো।
রাফির এমন কথা শুনে হেসে উঠে তৃষ্ণা। এই ছেলেটাকে বুঝ আসার পর থেকেই মনে প্রানে ভালোবেসে এসেছে। ভালোবাসতে কোনো কারন লাগে না। হয়ে যায় এমনিতেই। ভালোবাসা বয়স,সময়,কাল ভেদ এসব কিচ্ছু বুঝে না। ভালোবাসার মানুষকে নিজের জীবনসঙ্গী হিসেবে পেলে বেঁচে থাকার ইচ্ছে টা দ্বিগুণ বেড়ে যায়। যে পায় সে ভাগ্যবতী আর যে না পায় সে পৃথিবীর সবচাইতে অভাগা।
( এন্ডিং টা হয়তো মন মতো হয় নি আপনাদের। আমি এই ফাস্ট সিজনে তেমন আহামরি কিছু তুলে ধরতে চাই নি। তাই এন্ডিং টা এমন হলো। আর অধরা জাস্ট একটা ক্যারেক্টার ছিলো। তাকে গল্পে হাইলাইটস করলেও তাকে জাস্ট আমি একটা মাধ্যম হিসেবে এনেছি। যে এসেছিল তারমতো আবার চলেও গেছে তার মতো। অতঃপর বলবো এটার সিজন টু আসবে কয়েক দিনের মধ্যে। সবাই আজ গল্পটা নিয়ে মতামত করবেন। প্রথম থেকে লাস্ট অব্দি। কোনো জায়গায় এসে কি মনে হয়েছে লেখিকা এই জায়গায় এসে গোলমেলে পাকিয়ে ফেলছে বা এটা এমন না হলেও পারতো বা অস্বাভাবিক কিছু। মন্তব্য করবেন সবাই সম্পূর্ণ গল্পটাকে নিয়ে। আল্লাহ হাফেজ।)
দিনে দিনে সুস্থ হয়ে উঠছে সুপ্ত।তার সব ক্রেডিটই তাহিয়ার।তার অক্লান্ত পরিশ্রমে সুপ্ত ধীরে ধীরে তার মধ্যে ফিরে আসছে। বাড়ির সকলেই এতে অনেক খুশি। বাড়ির একজন সদস্য আগের মতো হয়ে যাচ্ছে খুশি হওয়ারই কথা।এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি খুশি সুপ্তর মা। উনিতো এখন তাহিয়া বলতে অজ্ঞান। তাহিয়া কে ছাড়া এক বেলা ও খান না। নিজের হাতে খাইয়ে দিবে মাথায় তেল দিয়ে চুল বেঁধে দিবে। মাঝে মাঝে শিফা বলে,,হ্যা ওটাই তোমার মেয়ে আমরা কেউ না। সব যত্ন তাহিয়া আপুর জন্য আমি আর আহিয়া আপু তো বানের জলে ভেসে এসেছি তাই না।
এরকম কথা শুনে তাহিয়া খিলখিলিয়ে হেসে উঠে। আহিয়া পরে যায় লজ্জায়। মেয়েটা তার মাকে বলবে ঠিক আছে কিন্তু এরমধ্যে ওকে কেন জড়ায়?
বাড়িতে এখন সবাই ই খুনশুটি,হাসি,আনন্দ করে কাঁটায়। মাঝে মাঝে এসে সুপ্ত ও ওদের সাথে এসে জয়েন হয় তবে গম্ভীর মুখে বসে থাকে। কিন্তু শিফা এমন এমন কথা বলে সুপ্ত না হেসে পারে না শেষ পর্যন্ত হেসে দেয়।
প্রথমে সুপ্ত কে সামলানো টা খুব কঠিন হয়ে গিয়েছিল তাহিয়ার জন্য। কারণ সুপ্ত ভাবতো তাহিয়া ই সুপ্তর আহিয়া। তখন কি পাগলামি করতো হুটহাট জড়িয়ে ধরা,তাহিয়ার হাতে খেতে চাওয়া তাহিয়ার কোলে ঘুমাতে চাওয়া। তাহিয়া প্রথমে ইতস্তত বোধ করলেও পরে ধীরে ধীরে ভালো লাগা কাজ করতে থাকে। সুপ্তর পাগলামোতে অভ্যস্ত হয়ে যায়। ধীরে ধীরে বিষয়ে গুলো উপভোগ করতে থাকে। কিন্তু দিন যতো যায় সুপ্ত যেনো বুঝে যায় এটা তার আহিয়া না এটা আহিয়ার বোন তাহিয়া। কারণ সুপ্ত তাহিয়া সম্পর্কে সবকিছুই জানে আহিয়া সব বলেছে।মাঝে মাঝে তো দুষ্টুমি করে বলতো তোমার কোনো টেনশন নেই সুপ্ত।একটা গেলে আরেকটা পাবা।আমি যখন থাকবো না আমাকে মিস ও করতে হবে না কারণ আমার কার্বণকপি আছে। ওরে নিয়ে জীবন শুরু করবা বলে খিলখিলিয়ে হাসতো আর এসব কথা শুনে সুপ্ত খুব রেগে যেতো।
কিন্তু হায় সেই মেয়েটাই নেই। সুপ্ত আজ মাসখানেক হলো সুস্থ হয়েছে। সুস্থ হয়েই গম্ভীর হয়ে গেছে। মেনে নিয়েছে তার আহিয়া আর নেই। দীর্ঘ ছয় মাস তাহিয়ার অক্লান্ত পরিশ্রমের ফল আজ সুপ্ত একদম সুস্থ। সুপ্ত এখন তার কাজে জয়েন হতে চায় আবার। মেডিকেল থেকে সুপ্তর সুস্থতার রিপোর্ট ও দিয়েছে। কয়েকদিন হলো তাহিয়া সুপ্তদের বাড়ি থেকে নিজের বাড়িতে চলে গেছে।
সুপ্তর চিকিৎসা করতে করতে কখন জানি সুপ্তর প্রতি দূর্বল হয়ে গেছে। না চাইতেও লোকটাকে ভালোবেসে ফেলেছে তাহিয়া। কিন্তু সুপ্তর হাভ ভাব দেখে তাহিয়ার মনে হয় তার খুব অস্বস্তি হয় তাহিয়ার সামনে। আর হয়তো আহিয়া কেও মনে পরে যায়।
তাহিয়া একদিন এরমধ্যে শুনেছে ও সুপ্তর মা যখন আলাদা করে সুপ্ত কে ডেকে নিয়ে তাহিয়া কে তার জীবন সঙ্গী হিসেবে গ্রহন করার জন্য। সুপ্ত ঐদিন সুস্থ হওয়ার পর মায়ের সাথে প্রথম রুড বিহেভ করে। সে কখনোই আহিয়ার বোন তাহিয়া কে তার জীবন সঙ্গী হিসেবে গ্রহণ করতে পারবে না। তাহিয়া কে কেনো কাউকেই আর তার সাথে জড়াতে চায় না। বাকিটা জীবন আহিয়ার স্মৃতি নিয়েই পাড় করে দিতে চায়।
সুপ্ত এটাও বলে তাহিয়া কে যেনো যতো দ্রুত সম্ভব এই বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার ব্যবস্থা করে। তাহিয়া কে দেখলে সুপ্তর খুব অস্বস্তি হয়।
সুপ্তর আর সুপ্তর মায়ের কথা সব তাহিয়া শুনে ফেলে।না চাইতেও ঐদিন তাহিয়া খুব করে কাঁদে। পরেরদিন নিজেই কাজের ব্যস্ততা দেখিয়ে সুপ্তদের বাড়ি থেকে চলে আসে। কেউ আটকাতে পারেনি তাহিয়া কে। সুপ্তর মা কান্না করতে করতে সুপ্ত কে বলে তাহিয়া কে আটকানোর জন্য। সুপ্তর কথা তাহিয়া শুনবে কিন্তু সুপ্ত একদম চুপ ছিলো।এমন ভাব ধরে ছিলো যেনো তাহিয়া থাকায় আর না থাকায় সুপ্তর কিছুই যায় আসে না । তাহিয়া ও সুপ্তর দিকে তাকিয়ে মনে মনে চাচ্ছিলো যেনো তাকে আটকায় সুপ্ত কারণ সুপ্তর সাথে সাথে এই পরিবারের সকলকেই তাহিয়া নিজের আপন করে নিয়েছিলো।
তাহিয়া চলে যাওয়ার পর মনে হচ্ছে বাড়িটা কেমন নির্জীব হয়ে গেছে। কেউ ভালো মতো কথা বলে না এখন আর হাসি তামশা ও হয় না। সুপ্তর সাথে ও কেউ ভালো করে কথা বলে না। সুপ্তর মা তো ঘর বন্দি করে রেখেছে নিজেকে।
এরমধ্যে সুপ্ত একটা কাজে বের হয়। সুপ্তর ফোনে কল আসে। কল দিয়েছে শিফা কল ধরতেই কান্না করতে করতে শিফা জানায় মা হাসপাতালে আছে তারাতাড়ি যেনো সেখানে যায় সুপ্ত।
সুপ্ত তড়িঘড়ি করে হাসপাতালে পৌঁছায় সুপ্ত। রিপ্ত দৌড়াদৌড়ি করছে মায়ের রিপোর্ট নিয়ে। সব চেক করে ডাক্তার জানায় নিজের উপর অতিরিক্ত প্রেশার দিয়ে ফেলেছে। সারাক্ষণ টেনশন করে। খাওয়া দাওয়া ঠিক মতো কিছুই করে না এরকম করে চলতে থাকলে উনার উপর মারাত্মক প্রভাব পরবে। উনাকে যেনো চিন্তা মুক্ত রাখা হয়। সুপ্ত মায়ের কাছে গিয়ে মাকে ডাকে কিন্তু তার মা কোনো সাড়া ও দেয় না। ঘুরে একবার সুপ্তর দিকে তাকায় ও না।
সুপ্ত মায়ের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বেরিয়ে যায় হাসপাতাল থেকে।
তাহিয়া মন ভালো করার জন্য তার বান্ধবীর সাথে একটা রেস্টুরেন্টে এসে বসেছে।এরমধ্যে হুট করে কেউ একজন তাহিয়ার হাত ধরে বলে,,অনেক চিল করেছো এবার চলো আমার সাথে।
তাহিয়া তাকিয়ে দেখে সুপ্ত।
সুপ্ত আপনি?
— হ্যা আমি।
— এখানে যে কিছু বলবেন?
— বলবো না সাথে অনেক কিছু করবোও। তোমার সিংগেল লাইফের দুঃখ ঘোচাতে এসেছি। চলো।
মা-মানে? তাহিয়ার কথার উত্তর না দিয়ে সুপ্ত তাহিয়া কে টেনে নিয়ে যেতে থাকে।
সুপ্ত হাসপাতালে তাহিয়া কে নিয়ে এসে মায়ের সামনে দাঁড় করিয়ে বলে,,মা এই নাও তোমার বড় বউমা। যা করার সিম্পল ভাবে তারাতাড়ি করো। এসব আর ভালো লাগছে না আমার।
সুপ্তর কথা শুনে সুপ্তর মায়ের চোখ খুশিতে চিকচিক করে উঠে। সকলেই বেশ খুশি হয়। তাহিয়া বড় বড় চোখ করে সুপ্তর দিকে তাকায়।
সুপ্ত অন্য দিকে তাকিয়ে বলে,, এভাবে তাকানোর কিছু নেই তোমার বোনের শখ ছিলো তার বোনকে যেনো বিয়ে করি।আর তুমিও যে মনে মনে এটাই চাও আই নো।
সুপ্তর কথায় তাহিয়া লজ্জা পেয়ে যায়। আহিয়া এসে তাহিয়ার কাঁধে হাত রাখতেই তাহিয়া মুচকি হাসে। সকলেই আনন্দ করে তাদের বিয়ের আয়োজন করতে থাকে।
সুপ্ত দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কিন্তু সুপ্তর মা বুঝতে পারলো না মেয়ে টা কে। তিনি তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,,,,কে তুমি? কাউকে খুঁজছো নাকি? দরকার হলে বসার রুমে বসো। তুমি হুট করে রুমে ঢুকে গেছো এটা তো ঠিক না মা।
সুপ্ত মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে,, আহ্ মা কাকে তুমি কি বলছো? তোমার ছেলে যাকে এতো মরিয়া হয়ে খুঁজতে যাচ্ছিলো সে নিজেই চোখের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। তুমি কি করে আমার বাড়ি চিনলে আহিয়া?
সেসব কথা পরে আগে বলো তুমি আমার কল তুলছিলেনা কেনো? জানো আমি পা’গল হয়ে যাচ্ছিলাম। তোমার কোনো ধারণা আছে আমি কি ফিল করছিলাম?
সুপ্তর মা গলা নিচু করে আমতা আমতা করে বলে,,আ-আহিয়া?
নো আন্টি মিস্টেক। তারপর সুপ্তর দিকে তাকিয়ে বলে আমি আহিয়া না তাহিয়া। আহিয়া তো ও বলেই পিছনে হাত দিয়ে দেখায়। তখন এসে রিপ্তর বউ আহিয়া শুকনো মুখে ভিতরে প্রবেশ করে।
সুপ্ত কিছু বুঝতে পারছে না। কোথায় যেনো সে তলিয়ে যাচ্ছে। হাত পায়ের জোর হারিয়ে ফেলছে।চেয়েও চোখ খুলে রাখতে পারছে না। সামনের সব ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে। সুপ্তর এতোদিন ভেবে আসা আহিয়া আর এখন হুট করে সামনে আসা তার নিজের আহিয়া। কিছু ভাবতে পারছে না সে। ধীরে ধীরে সে অতলগহ্বরে তলিয়ে যাচ্ছে।
সকলের কনফিউশনের মধ্যেই সুপ্ত হুট করে মেঝেতে শব্দ করে পরে যায়। ঝাপসা চোখে শুধু এটা দেখতে পায় তার আহিয়া আসছে তার কাছে। চোখে মুখে চিন্তা স্পষ্ট। আস্তে আস্তে সুপ্ত চোখ বন্ধ করে নেয়। আর তার শক্তি নেই চোখ খোলা রাখার জন্য।
সকলেই ব্যস্ত হয়ে যায় সুপ্ত কে নিয়ে। সুপ্তর মা তো কান্না জুড়ে দেয় কারণ সুপ্ত খুব সহজে এমন ভাবে জ্ঞান হারায়নি কখনো এতো অসুস্থ হয়ে ও।
তাহিয়া নামের মেয়েটা সুপ্তর মাকে শান্ত হতে বলে। কিছু হয়নি সব ঠিক হয়ে যাবে বলে শান্তনা দেয়।
মায়ের মন কি শান্ত হয়? উনি উনার মতো সুপ্তর জন্য বিলাপ করে কান্না করছে। আহিয়া দ্রুত গিয়ে রিপ্তকে ডেকে আনে।কারণ তাদের পক্ষে সুপ্ত কে তোলা কিছুতেই সম্ভব নয়।
রিপ্ত মাত্রই তৈরি হয়েছে অফিস যাওয়ার জন্য। এরমধ্যে আহিয়ার ডাকে দ্রুত ছুটে যায়। রিপ্ত সুপ্ত কে ধরে বিছানায় শুইয়ে দেয় অনেক কষ্টে।
তাহিয়া সুপ্ত কে চেক-আপ করে টেনশন করতে বারণ করে। তারপর সুপ্ত কে একটা ইনজেকশন পুশ করে দেয়। তারপর তাহিয়া আহিয়া কে নিয়ে আলাদা কথা বলার জন্য নিয়ে যায় কারণ আহিয়ার সব কিছু খোলসা করার আছে। অনেক কিছু মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে মনে হচ্ছে তাহিয়া তার রহস্যের সমাধান পাবে এখানে।
কি-কি হলো তাহিয়া আমাকে এখানে নিয়ে এসেছিস কেন? আহিয়ার হুট করেই কেন জানি ভয় হতে লাগে।
তোকে আমি আগে কি বলতাম তোর মনে আছে আহিয়া? জানতে চায় তাহিয়া।
আহিয়া আমতা আমতা করে বলে,, কি-কি?
আমার সাথে আর আমার বোনের সাথে তোর চেহারার কিছুটা মিল।আমার চেহারার সাথে ও তোর অনেকটাই মিল আছে। আর আমার একটা বোন ছিলো তোর মনে আছে? আমি বলেছিলাম কোনো একদিন তোকে একটা সারপ্রাইজ দিবো।
হ্যা কিন্তু এখন এসব কথা বলছিস কেন তুই তাহিয়া?
কারণ আমার কাছে সবকিছু পানির মতো এখন পরিষ্কার লাগছে। তুই আমাকে একটা কথা বল আহিয়া তুই কি তোর বাসুরের আহিয়া কে কখনো দেখেছিস?
না। এমনকি কেউ নাকি দেখেনি। মা বাবা জানতে চাইলে দেখতে চাইলে নাকি বলতো সারপ্রাইজ। সারপ্রাইজ দিবো করে করে আর কাউকে দেখায়নি।
তাহিয়া মুচকি হেসে তার ফোন নিয়ে কিছু একটা খুঁজতে থাকে। তারপর পেয়ে গিয়ে আহিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে,,,তোকে সব সময় আমিও বলতাম তোর জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে নে দেখ বলেই একটা ছবি দেখায় ফোনে।
আহিয়া ফোনের দিকে তাকাতেই তার চোখ বড় বড় হয়ে যায়। বিষ্ময়কর দৃষ্টিতে তাহিয়ার দিকে তাকায়।
তাহিয়া মুচকি হেসে বলে,, কি বুঝলি?
তু-তুই দুইটা কি করে ইডিট করেছিস নাকি?
নাহ্ ওটা আমার বোন আহিয়া।(তাহিয়া)
তোর বোন আহিয়া মানে?
হ্যা আমরা জমজ আর আমার বোনের নাম ছিলো আহিয়া আর আমার নাম তাহিয়া। তোকে এটাই সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম দুইজনের নামই আহিয়া।কিন্তু তার আগেই বলতে বলতে তাহিয়ার চোখ দিয়ে পানি এসে যায়। দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে চোখ দুটো মুছে কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,, আমার বোন আহিয়াই সুপ্তর আহিয়া। আমি দেশের বাইরে চলে যাই পড়াশোনার জন্য আর আমার বোন আর্মিতে জয়েন হয়। জানিস আহিয়া আমার বোন ফোন দিয়ে সারাক্ষণ শুধু সুপ্তর কথা বলতো।কি যে পাগলামি করতো। সুপ্তর এখনকার অবস্থা দেখলে আমার বোন নিজেই পাগল হয়ে যেতো। বেচারি মরে গিয়ে তার ভালোবাসার মানুষকে পাগল করে দিয়ে গেলো।
তুই যখন আমাকে ফোন দিয়ে সব কাহিনী বললি তারপর নাম বললি তখন আমি নিশ্চিত হয়ে যাই এটা আর কেউ নয় আমার বোনেরই ভালোবাসা। আমার বোন যাকে ভালো থাকার জন্য রেখে গেছে সে আসলে আমার বোন কে ছাড়া ভালো নেই। আমাকেই উনাকে সুস্থ আর স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে হবে।
আহিয়া সবকিছু শুনে নিজের ভাষা হারিয়ে ফেলে। তারপর কিছু একটা ভেবে বলে,,কিন্তু তুই কি করবিরে? সুপ্ত ভাই তো এখন তোকেই তার আহিয়া ভাবছে।
তাহিয়া এবার একটু চিন্তায় পরে যায়। সবই তো ঠিক আছে কিন্তু সুপ্ত তো তাহিয়া কে আহিয়া ভেবে পাগলামি শুরু করবে।তখন কি করে সব সামলাবে তাহিয়া। মনের মধ্যে হাজার খানেক দ্বিধা দ্বন্দ্ব থাকলেও কিছু করার নাই এখন তাহিয়া যে করেই হোক সুপ্ত কে আগের মতো সুস্থ করে তুলবে বলে মনে মনে পণ করে নেয়।
আজ থেকে এই বাড়িতে থেকেই সুপ্তর চিকিৎসা করবে তাহিয়া। আহিয়া গিয়ে বাড়িতে সবাই কে সব জানায়। সকলেই সবকিছু শুনে বেশ অবাক হয়। এটা ভেবে স্বস্তি ও পায় এবার মনে হয় সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। তবে সকলের মধ্যে এক ভাবনা থাকলেও সুপ্তর মা সবকিছু শুনে মনে মনে অন্য কিছু পরিকল্পনা করে রাখে কাউকে অবশ্য উনার করতে রাখা পরিকল্পনা জানায় না। মনের টা মনেই রেখে দেয় সঠিক সময়ে সকলেই জানতে পারবে।
সুপ্তর ঘুম ভাঙে অনেক বেলা করে। সুপ্তর মা তখন মাথার পাশেই বসে ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিল আর নানান ধরনের ভাবনা ভাবছিল। সুপ্ত কে উঠতে দেখে উনি তড়িঘড়ি করে টেবিল থেকে পানির গ্লাসে পানি ঢেলে সুপ্তর সামনে ধরে।
সুপ্ত আস্তে আস্তে জানতে চায় আহিয়া কোথায় মা?
সুপ্তর মা বলে,,একটু পানি খা তুই বাবা ভালো লাগবে।
আহিয়া কই? ওরে ডেকে দাও।
একটু পানি খা না বাপ।
আহ্ মা আমি বলছিনা তুমি আহিয়া কে ডেকে দাও। তুমি কি শুনতে পাচ্ছো না আমার কথা? কি এক কথা লাগিয়ে রেখেছো পানি খা পানি খা। খাবো না আমি পানি জোরে কথা গুলো বলে গ্লাস ফেলে দেয় ধাক্কা দিয়ে।
তাহিয়া তখন নিজের জামা কাপড় গুছিয়ে রাখছিল গেস্ট হাউজের আলমারিতে। এখানে যে অনেক দিন থাকতে হবে সেটা ভালো করেই জানে। এরমধ্যে চেঁচামেচি আর গ্লাস ভাঙার শব্দে রুম থেকে বেরিয়ে সুপ্তর রুমে যায়।
দরজার সামনে দাঁড়াতেই দেখতে পায় সুপ্ত শুধু একটা কথাই বলছে আমার আহিয়া কোথায়? তোমরা কি তাকে তাড়িয়ে দিয়েছো?
তাহিয়া দরজায় নক করতেই সুপ্তর চোখ তার উপর পরে। সুপ্ত দৌড়ে এসে ঝাপটে ধরে তাহিয়া কে। তাহিয়া স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রয়।
সুপ্ত কে ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়ানো হয়েছে। এখন পুরো বাড়িতে থমথমে পরিবেশ বিরাজমান। কোনো সারা শব্দ নেই। দেখে মনেই হচ্ছে না বাড়িতে কেউ আছে এতোটাই নিরব পরিবেশ। অনেক সময় হয়ে গেছে সুপ্ত ঘুমিয়েছে। যেকোনো মুহূর্তে উঠে যেতে পারে। নির্দিষ্ট সময় থেকে আজ একটু বেশিই ঘুমিয়েছে সুপ্ত। রাত এখন দশটা প্রায়।
আহিয়া? এইই আহিয়া আমার খুব কষ্ট হচ্ছে জানো? বুকটা ফেটে যাচ্ছে কষ্টে। এতো কষ্ট হচ্ছে আমি শ্বাস নিতে পারছি না। এরকম কষ্ট আমার জীবনে হয়নি আহিয়া। আমাকে একটু অক্সিজেন দিবে আহিয়া? আমাকে তোমার বুকে খুব খুব খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরবে? ধরোনা গো একটু। আগের মতো একটু ধরো।
তুমি এমন কেন করছো সুপ্ত? তুমি এমন করলে আমার কতো কষ্ট হয় তুমি জানো?এইতো আমি তোমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছি দেখো।
সুপ্ত চোখ খুলে দেখার চেষ্টা করে। কিন্তু একি তার আহিয়া কোথাও নেই মনে হচ্ছে হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে।
সুপ্ত ঘুমু ঘুমু চোখে এদিক ওদিক খুঁজে বেড়ায় তার আহিয়া কে কিন্তু খুঁজে পায় না। খুব পানি তেষ্টা পেয়েছে সুপ্তর। পাশের টেবিলে হাত দিয়ে গ্লাস নিতে গিয়ে দেখে গ্লাস নেই। পাশে পানির জগ টা ও নেই। সুপ্ত ব্রু কোচকে ভাবে আজ তার মা পানি দিতে কি করে ভুলে গেলো? সুপ্তর এটা মনে নেই কয়েক ঘন্টা আগে সে কি তান্ডব চালিয়েছে তার রুমে। এখন যে কেউ দেখলে মনে করবে সুপ্ত একদম সুস্থ স্বাভাবিক। তাকে দেখে মনেই হচ্ছে না সে একজন মানসিক রোগী।
সুপ্ত গুটি গুটি পায়ে রুম থেকে বের হয় পানি আনার উদ্দেশ্যে। তার রুম এখন পরিষ্কার তাই ঘুমানোর আগে কি ঝড় তুলেছিল সেটা তার মাথায় নেই।
রিপ্ত প্রতি রাতে উঠে পানি খায়। তার পানি না হলে চলে না। আর আহিয়ার আজ মনে ছিলো না পানি নিয়ে রাখতে রুমে। তাই খালি জগ নিয়ে রুম থেকে বের হয়েছে পানি নেওয়ার জন্য। আজ সকলেই একটু আগে আগে শুয়ে আছে। অনেক ধকল গেছে সারাদিন। সুপ্তর মা উনার রুমে গেছে সুপ্তর বাবা কে ঔষধ খাওয়ানোর জন্য । উনি সুপ্তর সাথেই ঘুমাবেন কে জানে কখন হয়তো পাগলামি শুরু করে দিবে।
আহিয়া জানে না এই সময় সুপ্ত রুম থেকে বের হবে। তাহলে সে এই ভুল জীবনেও করতো না। সুপ্ত এখন তাকে দেখলে সুনামি শুরু হবে আবার। দুইজনই খাবার টেবিলের উদ্দেশ্যে হাঁটছে। সুপ্ত হাঁটছে কম আর কি যেনো ভাবছে। সুপ্ত আস্তে ধীরে নিজের কদম ফেলছে শরীরটা খুব দূর্বল মনে হচ্ছে চলছেই না। আহিয়া টেবিল থেকে পানি নিয়ে জগে ভরছে। সুপ্ত হাঁটতে হাঁটতে বেখেয়াল বসত তার হাত থেকে জগ টা পরে যায়। আহিয়া পিছনে ঘুরে দেখার আগেই সবকিছু অন্ধকার হয়ে যায়।
সুপ্তর খুব অস্বস্তি হতে থাকে অন্ধকারে। কিছুই দেখতে পাচ্ছে না সে। ফোনটা ও সাথে আনেনি। সুপ্ত চিল্লিয়ে মা কে ডাকতে থাকে।
মা? মা কোথায় তুমি? মা? শিফা আলো জ্বালা বোন।কারেন্ট চলে গেছে নাকিরে। এতো অন্ধকার কেন মা?
সুপ্তর মা চিল্লানি শুনে রুম থেকে বের হয়ে আসে। হাতে মোবাইল টর্চ জ্বালিয়ে তারাতাড়ি সুপ্তর সামনে এসে দাঁড়ায়।
‘ তুই উঠে গেছিস বাবা? কখন উঠলি? আর রুম থেকে বের হতে গেলি কেন? আমি এখনই তোর খাবার নিয়ে যাচ্ছিলাম রুমে। ‘
আমিতো এখনই উঠলাম ঘুম থেকে মা। পানি রাখোনি রুমে খুব তেষ্টা পেয়েছিল আমার।
+-‘ওহ ভুলে গিয়েছি বাবা। নিয়েছিস পানি?
— নাহ্ তার আগেই তো কারেন্ট চলে গেলো।সুপ্ত কথাটা বলতে বলতেই কারেন্ট চলে আসে।
সুপ্তর মা পানি আর খাবার নিয়ে রুমে যাচ্ছে বলে সুপ্ত কে রুমে পাঠিয়ে দেন।
সুপ্ত রুমে চলে যেতেই সুপ্তর মা স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়েন।ছেলেটা কে এখন কতো স্বাভাবিক মনে হচ্ছে অথচ কোন সময় যেনো আবার পাগলামো শুরু করে দেয়।
সবকিছু সাইডে রেখে সুপ্তর জন্য তিনি খাবার আর পানি নিয়ে রুমের দিকে হাঁটা দেন।
অন্য দিকে আহিয়া এতো সময় ধরে আহাম্মকের মতো দাঁড়িয়ে আছে। শিফা তাকে অন্ধকারে এখানে এনে দাঁড় করিয়েছে। দাঁড় করিয়ে কোথায় যেনো গেলো।
কয়েক মিনিট পর শিফা এসে বলে,,তুমি কি পাগল হয়ে গেছো ভাবি? তুমি আবার তান্ডবের সূচনা করতে যাচ্ছিলে।
আহিয়া বুঝতে না পেরে জিজ্ঞেস করে মানে?
আশেপাশে দেখে কাজ করবে না? তোমার পিছনে সুপ্ত ভাইয়া ছিলো। যদি তোমাকে দেখতে পেতো ভাবতে পারছো কি হতো?
ক-কই আমি তো খেয়ালই করিনি। (আহিয়া)
ভাগ্যিস আমি ঠিক সময়ে সেখানে উপস্থিত হতে পেরেছি।তাইতো তারাতাড়ি গিয়ে মেইন সুইচ অফ করে তোমাকে সেখান থেকে সরিয়ে আনতে পারলাম।
আহিয়া ও যেনো স্বস্তি পায়। আজ এমনিতেই সকলের অবস্থা করুন। এখন আবার সুপ্ত দেখলে পাগলামি করতো।
শিফা চলে যাওয়ার পর আহিয়া পানি নিয়ে রুমে ফিরে আসে। নানান ধরনের ভাবনা ভাবতে ভাবতে তার ফ্রেন্ড কে মেসেজ পাঠায়,,,, কাল শিউর আসবিতো?
অপর পাশ থেকে রিপ্লাই আসে,,,, ” হ্যা কাল আমি আসছি টেনশন নিস না।”
আহিয়া মেসেজ দেখে মনে মনে দোয়া পরতে থাকে এবার যেনো সবকিছু ঠিক হয়ে যায়।সুপ্ত যেনো স্বাভাবিক হয়ে যায়।
*********
সকালে উঠে সুপ্ত পাইচারি করছে আর কি যেনো বিরবির করছে। মনে হচ্ছে কিছু তার থেকে হারিয়ে গেছে। সুপ্তর মা কিছু সময় সুপ্ত কে লক্ষ করে। আমতা আমতা করে জানতে চায়,,,, কি হয়েছে আব্বা? দেখে মনে হচ্ছে খুব টেনশন করছিস।
“– টেনশন করবো না মা? দেখো তোমার বৌমা আমার কল রিসিভ করছে না। আর না আমাকে কল দিচ্ছে। ”
সুপ্তর মা বুঝতে পারে সুপ্ত তার ঐ আহিয়া নামের মেয়েটার কথা বলছে। সুপ্ত প্রায়ই আহিয়া কে নিয়ে গল্প করতো এটা ওটা বলতো উনার কাছে। আর সব সময় বলতো মা তোমার বৌমা। উনি এটা জানেন না যে সুপ্ত তার আহিয়াকে বিয়ে ও করেছিলো।
রিপ্তর আহিয়া কে নিয়ে বর্তমানে পাগলামি কমেছে। এখন সে আহিয়া কল ধরছে বা দিচ্ছে না কেনো এটা নিয়ে পরে আছে। আপাতত এই আহিয়ার দিকে তার নজর নেই।
সুপ্ত কল দিচ্ছে আর আস্তে আস্তে আবার পাগলের মতো আচরণ করা শুরু করছে। কিছু সময় কল দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার পথ ধরে তাকে আহিয়ার কাছে যেতে হবে। সুপ্তর মা কোনোভাবেই সুপ্ত কে আটকাতে পারছেন না। তিনি নানা ধরনের বাহানা দিচ্ছে আহিয়া হয়তো ব্যস্ত এসে পরবে খুব তারাতাড়ি। কিন্তু সুপ্ত সেই এক কথা তার আহিয়ার হয়তো কোনো বিপদ হয়েছে। নয়তো আহিয়া তো এরকম করার মেয়ে না।
“সুপ্ত রেডি হতে হতে বলে,,মা আমাকে যেতে দাও।আটকিও না।”
সুপ্ত আমার কথাটা শোন কোথায় যাচ্ছিস তুই বাবা? তোর শরীর বেশি ভালো না। মায়ের কথা শোন বাবা।
আমার কিছু হবে না মা বলেই সুপ্ত তার জোতার ফিতা বাঁধতে থাকে।
“কোথায় যাওয়া হচ্ছে শুনি?”
এরমধ্যে কারো কন্ঠ স্বর শুনে মা ছেলে দরজার দিকে তাকায়। সুপ্ত সোজা হয়ে সামনের দিকে তাকায়।তার রুমের দরজার সামনে হাসি মুখে এক রমনি দাঁড়িয়ে আছে।
রিপ্ত যখন রুমে এসে সব কাপড় চোপড় গুছাতে ব্যস্ত আহিয়া তখন চুপটি করে কি যেনো ভাবছে। রিপ্ত কাপড় গুছাতে গুছাতে বলে,,কি হলো তৈরি হচ্ছো না কেন আহিয়া? আমি কিন্তু সিরিয়াস যেতে চাই। এইবার আর কারো কথা শুনতে চাই না।
আহিয়া কিছু সময় নীরব থেকে বলে,,আমরা কোথাও যাচ্ছি না রিপ্ত।
রিপ্ত কাপড় গোছানো রেখে বলে,,,মানে? আমি কিছু বুঝতে পারছি না।
আমি সহজ ভাবেই বলছি আমি কোথাও যাচ্ছি না।
–মানে টা কি?
— তুমি স্বার্থপরের মতো কথা বলতে পারো না রিপ্ত। উনি তোমার বড় ভাই। নিজের রক্ত। লোকটা ভালো নেই। ভালোবাসা হারানোর যন্ত্রনায় লোকটা পাগল প্রায়। একটা মানুষ কতোটা ভালোবাসলে নিজের ভালোবাসার নামটা মিল দেখে কিরকম পাগলামো করছে।তুমি কি করে বুঝবে কাউকে কখনো এমন করে ভালোবেসেছো?
রিপ্ত মাথায় হাত দিয়ে মনে মনে বলে,, এই গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে ও মেয়েদের খোঁচা মারা স্বভাব গেলো না।
আহিয়া আবার বলে,,আর তাছাড়া আমি তখন বেশ অবাক হয়েছি তুমি জানো ওটা সুপ্ত ভাই তাহলেও কেন ওরকম ভাবে বললে যে ছদ্মবেশ ধারণ করে এসেছে তিনি।
আরে ধূর তোমরা খালি এটা ওটা নিয়ে পেচ ধরো। ওটা আমি বলেছি দেখছিলাম হাসপাতালে গিয়ে আবার আগের স্মৃতি ভুলে গেছে কিনা। কিন্তু মা কি করলো হুদাই গালে মেরে দিলো।
আহিয়া রিপ্তর গালের দিকে তাকিয়ে দেখে এখনো দাগ বসে আছে গালে। কিন্তু কি করার মায়ের তো এমনিতেই মাথা ঠিক নেই বড় ছেলে কে নিয়ে। তারউপর রিপ্তর এমন কথায় রাগ সামলাতে পারছে না। আহিয়া এসব কথা বাদ দিয়ে এখন চিন্তায় আছে কি করে কি করা যায়। কি করে সুপ্ত কে সুস্থ স্বাভাবিক করে তোলা যায়।
কিছুতেই কিছু করা যাচ্ছে না। এর পূর্বে অনেক মানসিক ডাক্তার দেখানো হয়েছে সুপ্ত কে তবে কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। দিন দিন আহিয়া কে নিয়ে পাগলামো টা বেড়েই চলেছে সুপ্তর। কি মানুষ কি হয়ে গেলো ভালোবাসা কে নিজের চোখের সামনে মরতে দেখে। আজ সুপ্তর আহিয়া বেঁচে থাকলে হয়তো কতো সুখে শান্তিতে সংসার করতো তারা।
রিপ্ত ও চুপটি করে ভাবলো ঝোঁকের বসে কি করতে যাচ্ছিলো সে।তার ভাই তো অসুস্থ। আগের স্মৃতি চোখে ভেসে ওঠে মুহূর্তের মধ্যে। দুই ভাই কতো মিল ছিলো। কতো হাসি খুনসুটিতে মেতে থাকতো দুইজন। কিন্তু জবের কারণে কিছু টা দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছিল। তাই বলে নিজের ভাই কে এভাবে ফেলে যেতে পারে না সে।
এরমধ্যে হুট করেই আহিয়ার মাথায় একটা বুদ্ধি আসে।তার একটা ফ্রেন্ড কতোদিন আগে দেশের বাইরে থেকে পড়াশোনা শেষ করে এসেছে। সে এসব মানসিক রোগীদেরই ট্রিটমেন্ট করে। তার সাথে কথা বলতে হবে। মোবাইল টা হাতে তুলে নেয় কল করার জন্য।
কিন্তু নাম্বার বের করে ডায়াল করার আগেই শ্বাশুড়ি মায়ের কান্না কাটি আর চিৎকার ভেসে আসে সাথে শিফাও ডাকছে বড় ভাইয়া বলে।
আহিয়া আর রিপ্ত একে অপরের দিকে তাকিয়ে দুইজনই ছোটে।
রিপ্ত গিয়ে জানতে চায় কি হয়েছে মা?
তোরা চলে যা সবাই চলে যা।আমার ছেলেটা এইদিকে এখনও দরজা খুলছে না সেটা তোদের ভাবতে হবে না। সবাই নিজেদের কথাটা শুধু ভাবিস আমার ছেলের কথা তোদের ভাবতে হবে না।
রিপ্ত কয়েকবার ডাকে কিন্তু কোনো সারা পায় না। এবার সিধান্ত নেয় দরজা ভাঙার। কিন্তু আহিয়া বাঁধা দিয়ে বলে,, আমাকে একবার দেখতে দাও তোমরা।
সু-সুপ্ত ভা,, বলতে গিয়েও বলে না। শুধু সুপ্ত বলে কয়েকবার ডাকার পর খট করে দরজা খুলে যায়। দরজা খুলতে দেখে সকলের দেহে প্রাণ ফিরে আসে।
সকলেই রুমের দিকে উঁকি দিয়ে দেখে সুপ্ত দরজা খুলে দিয়ে বিছানার পাশে মেঝেতে বসে বিছানায় মাথা হেলিয়ে মাথায় হাত দিয়ে চুপটি করে বসে আছে।
সুপ্তর মা দৌড়ে ছেলের কাছে যায়। সুপ্তর চেহারা দেখে মনে হচ্ছে অনেক কান্না করেছে। চোখের কোণ ভিজা। চোখ মুখ কেমন লাল হয়ে আছে। সুপ্তর মা নিজের আঁচল দিয়ে মুখ মুছিয়ে দেয়।
সবই ঠিক ছিলো কিন্তু হুট করেই সুপ্ত কেমন হিংস্র হয়ে উঠে। মাকে নিজের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। চোখ মুখে রাগ ফুটিয়ে বলে,, তোমরা আমার কেউ না। সবাই তোমরা স্বার্থপর। তোমরা আমার আপন কেউ না। হলে আমার ভালোবাসা কে কেঁড়ে নিয়ে আমার ছোট ভাই কে খুশি করতে পারতে না। তোমরা কি করে পারলে? কি করে পারলে আমার আহিয়া কে রিপ্তর সাথে বিয়ে দিতে? জাস্ট তিন মাসের ব্যবধানে তোমরা আমাকে ভুলে গেলে? আর কয়েকটা দিন তোমাদের সহ্য হলো না?
এ-এইই এইই এইই একটা সত্যি কথা বলোতো তোমরা কি আমার আহিয়া কে জোর করে বিয়ে দিয়েছো রিপ্তর সাথে? ন-না না জোর করবে কেন? আমার আহিয়া কে তো মতের বিরুদ্ধে জোর করা যায় না। ওকে তো আমি স্ট্রং করে গড়ে তুলেছিলাম।
ওরও মত ছিলো। ওর ও মত ছিলো বলেই বিরবির করতে থাকে। তারপর হুট করে রুমে থাকা জিনিসপত্র ভাংচুর করতে থাকে। সব কিছু আবার ছুঁড়ে ফেলতে থাকে। কোনো ভাবেই সুপ্ত কে আটকানো যাচ্ছে না। রিপ্ত তারাতাড়ি গিয়ে সুপ্ত কে ইনজেকশন পুশ করে দেয়। সুপ্ত আস্তে আস্তে শান্ত হতে থাকে। এক পর্যায়ে ঘুমে তলিয়ে যায়। রিপ্ত সুন্দর করে সুপ্ত কে শুইয়ে দিয়ে সেখানেই বসে থাকে।
সকলেই খুব ক্লান্ত হয়ে যায়। কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না। ছেলেটার পাগলামি দিন দিন বেড়েই চলেছে। সুপ্তর চিন্তায় সুপ্তর মা ও শুকিয়ে গেছে অনেকটা। হাসি খুশি পরিবারে কে জানে কার নজর লাগলো।
আহিয়া সকলকে তার ফ্রেন্ডের কথা বলে। সকলেই শুনে সুপ্তর মা বলে,,কি হবে আর ডাক্তার দেখিয়ে? কতো ডাক্তার তো দেখালাম কিছুতেই কিছু হয়নি।এবার কি হবে।
আহিয়া বলে,,একবার চেষ্টা করে দেখি না মা যদি সে কিছু করতে পারে। এমনও তো হতে পারে ভাইয়া ওর জন্য সুস্থ হয়ে গেলো। একবার চেষ্টা করলে ক্ষতি কি? অনেক তো ডাক্তার দেখালেন এবার ও দেখাই না।
যা ভালো মনে হয় করো মা। আমার ছেলেটা ভালো হলেই হলো। আবার আগের মতো হয়ে গেলেই হলো বলেই উনি নিজের রুমের দিকে চলে যায়। রিপ্ত ও বলে,,আহিয়া কে তার ফ্রেন্ড কে সুপ্ত কে দেখার কথা বলে। আহিয়া মাথা নাড়িয়ে চলে যায় কথা বলার জন্য। সুপ্ত এখন অনেক সময় টানা ঘুমাবে। তাই সকলে নিশ্চিন্তে নিজেদের রুমে চলে যায়। দেখা যাক কি আছে কপালে।
আহিয়ার ফ্রেন্ড পারে কি না অসাধ্য সাধন করতে।
সুপ্ত একজন আর্মি অফিসার। কাজের ব্যাপারে সে খুবই দায়িত্বশীল লোক। নিজের দায়িত্ব খুবই নিষ্টার সাথে সে পালন করতো।এজন্য বড় বড় অফিসারদের খুবই প্রিয় একজন ছিলো সুপ্ত। সুপ্তর যখন কাজে বছর তিন পেরুলো এরমধ্যে কয়েকজন মেয়ে সিলেক্ট করে আনা হয় ট্রেনিংয়ের জন্য। তারমধ্য একজন ছিলো আহিয়া।
সুপ্ত কে আরো কয়েকজন কে দায়িত্ব দেওয়া হয় ওদের ট্রেনিংয়ের। ট্রেনিংয়ের মধ্যে সবচেয়ে ভিতু আর নরম স্বভাবের মেয়ে ছিলো আহিয়া। যেকোনো টাস্ক দিলেই খুব ভয় পেতো। সুপ্ত সব লক্ষ করে আহিয়া কে আলাদা করে ডেকে সিধান্ত নেয় মেয়েটার সম্পর্কে জানবে।যখন এতোই ভয় পায় তাহলে এই পেশায় আসার মানে কি। আহিয়ার সাথে আলাদা করে দেখা করার আর কথা বলার সুযোগ খুব তারাতাড়িই পেয়ে যায় সুপ্ত।
মেয়েটা সুপ্তর সামনে দাঁড়িয়ে হাত কচলাচ্ছে আর মৃদু কাঁপছে সেটা সুপ্ত বুঝতে পারে।
” রিলেক্স আমি বাঘ ও না ভাল্লুক ও না সো এভাবে কাঁপা কাপি বন্ধ করো।আমি তোমাকে এখানে শাস্তি দিতে আসিনি। তোমার সাথে কিছু কথা আছে, আশা করি ঠিক ঠাক উত্তর দিবে?”
আহিয়া মাথা নেড়ে বোঝায় উত্তর দিবে।
গুড। বলেই সুপ্ত খুব শান্ত গলায় বলে,, তুমি কি নিজের ইচ্ছে তে এই প্রফেশনে এসেছো হিয়া?
আহিয়া সুপ্তর মুখে হিয়া নাম শুনে যতটা না চমকায় তার চেয়ে বেশি চমকায় সুপ্তের প্রশ্ন শুনে।
সুপ্ত এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আহিয়ার কার্যগুলো লক্ষ করছে। আহিয়া হকচকিয়ে আছে প্রশ্ন শুনে। বার বার ঢুক গিলছে। নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সবকিছুই সুপ্তর চোখে ধরা পরে।আহিয়ার কান্ডে সুপ্ত মুচকি হেসে বলে,, তুমি আমার কাছ থেকে কিছুই লুকোতে পারবে না সো বেটার হবে ভালোয় ভালোয় বলে দাও।আমাকে কঠোর হতে বাধ্য করো না।
আহিয়া তবুও চুপ করে থাকে।
সুপ্ত এবার একটু কঠোর হয়ে বলে,,তোমার এই অবাধ্যতার জন্য তোমার ধারণা নেই হিয়া আমি কি করতে পারি।তোমার জব পর্যন্ত,,,,
সুপ্তর আর কিছু বলতে হয়নি। আহিয়া এবার ভিতু স্বরে বলে,,ন-না স্যার এরকম কিছু প্লিজ করবেন না।আমার জব চলে গেলে আমায় মে’রেই ফেলবে আমার বাবা প্লিজ স্যার।অনেক কষ্টে আমি জব টা পেয়েছি স্যার কথাগুলো বলেই কেঁদে দেয় আহিয়া।
তুমি তোমার বাবার চাপে পরে এখানে এসেছো? দেশকে ভালোবেসে দেশের সেবা করার জন্য না?
এরকম ভাবে বলছেন কেন স্যার? আমিও আমার দেশকে যথেষ্ট ভালোবাসি।তবে আমি একটু ভিতু টাইপ মানুষ খুব ভয় আমার। আমি চেয়েছিলাম টিচার হবো কিন্তু বাবার সেই এক কথা আমাকে সেনাবাহিনী তে কাজ করতে হবে। বাবার কথার উপর দিয়ে যাওয়ার সাধ্য আমার নেই। তাই যথেষ্ট শ্রম দিয়ে আমি এই পর্যন্ত এসেছি।তবে আমার ভয় এখনও কাটেনি।যদিও আমি যথেষ্ট চেষ্টা করি কেউ না বুঝুক আমি যে ভয় পাই তবুও আপনি যেনো কি করে বুঝে গেলেন। আমি চেষ্টা করছি স্যার ভয় দূর করার জন্য। এখন আমিও এই জবটা কে ভালোবেসে ফেলেছি।
সুপ্ত কিছু সময় চুপ থেকে বলে,,,তোমার শেষের কথা টা আমার ভালো লেগেছে। তুমি এগিয়ে যাও কোনো সমস্যা হলে আমাকে বলবে।সব সময় আমাকে পাশে পাবে বলেই সুপ্ত সেখান থেকে চলে যায়। আহিয়া সুপ্তের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে নিজেও নিজের কাজে চলে যায়।
সময় যতো চায় আহিয়া ততো ভালো করে ট্রেনিং নিতে থাকে।নিজের ভয় কে ধীরে ধীরে কাটিয়ে তুলছে সুপ্তর সাহায্যে।সুপ্ত আহিয়াকে যথেষ্ট সাহায্য করে। ওদের মধ্যে এখন খুব ভালো একটা সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। ওদের দেখলে এখন মনেই হয় না ওরা জুনিয়র সিনিয়র। মনে হবে ওরা একটা কাপল কতো মিল ওদের।দেখে মনে হবে কতো বছরের জানা শুনা।সকলেই ওদের মিলামিশা নিয়ে কানাঘুষা করে ওদের আড়ালে। মাঝে মাঝে ওদের কানেও সে সব এসে পৌঁছায়। কিন্তু দুইজনেই কিছু বলে না চুপ করে থাকে। কেজানে কি আছে ওদের মনে।
কিন্তু কয়েক মাস পেরুতেই আহিয়া আর সুপ্ত নিজে সকলকে অফিসিয়ালি জানায় তাদের সম্পর্কের কথা। কেউই এতে অবশ্য বেশি অবাক হয় নি। ওদের মধ্যে দিন দিন ভালোবাসা বেড়েই চলেছে কোনো কমতি নেই।এমনকি ওরা নিজেরা বিয়ে ও করে। দিন যতো যায় একজন আরেকজনের প্রতি আরো বেশি করে আসক্তি হয়ে পরে। সবকিছুর মধ্যেও দুইজনের দেশ সেবায় কোনো কমতি নেই। জান প্রাণ দিয়ে দেশের সেবা করে।
এমনি এক গুরুত্বপূর্ণ মিশনে সুপ্তর সাথে আহিয়ারও যাওয়ার আদেশ আসে।সকলেই নিজেদের ভালো মতো তৈরি করে নেয়। কে জানতো এই এক মিশন সবকিছু বদলে দিবে।জীবন কেড়ে নিয়ে নিশ্ব করে দিবে। আহিয়া তার জীবন দেয় মিশনে। তার ভালোবাসার মানুষকে বাঁচাতে গিয়ে নিজের বুকে গুলি খেয়ে নিজের ভালোবাসা কে বাঁচাতে চেয়েছিল কিন্তু আহিয়া জানতো না তার ভালোবাসা কে বাঁচাতে গিয়ে বেঁচে থেকেও মরার মতো করে দিবে। সুপ্তকে ধাক্কা দিয়ে নিজে গুলি খেয়েও বাঁচাতে পারেনি গুলি থেকে। সুপ্তর বুকেও এসে লাগে তবে সুপ্ত বেঁচে গেলেও আহিয়া কে বাঁচানো যায়নি। সে সেখানেই সুপ্তর সামনে নিজের জীবন হারায়।সুপ্ত চোখের সামনে ভালোবাসাকে শেষ হতে দেখেও কিছু করতে পারে না। সে সেখানেই লুটিয়ে পরে।আরেকজন অফিসার সুপ্ত কে সেখান থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যায়। সুপ্ত কে নিয়ে যাওয়ার সময় শুধু এক পলক চোখ খুলে সেই অফিসার কে দেখতে পায়।
এতোবড় ধাক্কা সুপ্ত নিতে পারে নি।নিজের হিয়াকে হারিয়ে পাগল প্রায় অবস্থা। সুপ্তর জীবনে এতো ভয়াবহ ঘটনা ঘটে যাওয়ার বছর পেরুলেও সুপ্তের মনে হয় মাস তিনেক হয়েছে। আর তার ছোট ভাই রিপ্তর বউয়ের নাম ও আহিয়া।
আহিয়া নাম টাই যেনো তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন সুপ্ত রিপ্তর বউ আহিয়াকেই সুপ্ত তার আহিয়া মনে করে। এমনকি সে নাকি তার বউ এটাও মনে করে। আগের আহিয়ার সাথে এই আহিয়ার যে কোনো মিল নেই সেটাও সুপ্তর মাথাতে কাজ করে না। ওর নাম আহিয়া মানে সুপ্তর আহিয়া তার আদরের বউ এটাই তার ধারণা। সে হাসপাতাল থেকে পালিয়ে এসে মনে করছে এতোদিন মিশনে ছিলো। আর আহিয়া তার সাথে ছিলো না বিয়ে করে রেখে গেছে।
সুপ্তর বুকের গুলিটা এখনও পুরোপুরি শুকোয়নি।কারণ সুপ্ত একি জায়গায় নানা ভাবে আঘাত করে যার ফলে গুলি লাগার স্থানে এখনও একটু আঘাত লাগলে রক্ত পরে।এটার জন্যই কয়েকদিন আগে সুপ্ত কে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। কিন্তু সুপ্ত হাসপাতাল থেকে পালিয়ে আসে। আজ সুপ্তর মামা ছিলো তার সাথে হাসপাতাল তার চোখে ধূলো দিয়ে পালিয়ে আসে।
বাড়ির গেটের সামনে দারোয়ান ফোনে তার এক পরিচিত লোককে তাদের গ্রামের এক ভাইয়ের কথা বলছিল,, উনার কিরকম ভাই যেনো হয় এক্সিডেন্টে মা’রা যায়। তার দুইটা ছেলে মেয়েও আছে। সব কিছু বিবেচনা করে ঐ ভাইয়ের ছোট ভাই বিয়ে করে নেয়। এই কথাটা সুপ্ত ভালোভাবে না শুনে ভেবেছে সুপ্তর বউ কে তার ছোট ভাই বিয়ে করে নিয়েছে। এমনিতেই সুপ্তর মাথা বেশি কাজ করে না তাই তার মাথায় যতোটুকু ঢুকেছে ততোটুকুই সে বুঝেছে।
সুপ্ত বাড়িতে আহিয়া কে নিয়ে খুব ঝামেলা করে। আহিয়া প্রেগনেন্ট।সুপ্তর জন্য আহিয়ার নাজেহাল অবস্থা তাই এই সুযোগে আহিয়া কে একটু খুশি করার জন্য আয়োজন করা হয়েছিল কিন্তু কে জানতো শেষ পর্যন্ত এসব ঘটবে?
আহিয়া খুবই বিপাকে আছে। সুপ্ত কে প্রথমে সকলেই বলেছিলো মারা গেছে কারণ কয়েকদিন তারা কোনো খোঁজ খবর পায়নি। ওদের বিয়েটা হুট করেই হয় তাই আহিয়া জানতো সুপ্ত মৃত। পরে যখন খোঁজ খবর পেয়ে সুপ্ত কে বাড়ি আনা হলো তারপর থেকে রিপ্তর বউ আহিয়া কে নিয়ে তার পাগলামি শুরু। নিজেকে এখন আহিয়ার মানসিক রোগী মনে হয়। এমনিতেই প্রেগ্ন্যাসির কতো কমপ্লিকেশন তার উপর মাঝে মাঝে আহিয়ার মাথা থেকে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলো মুছে যায়। এটা ছোট বেলা থেকেই তার সমস্যা। মাথায় ছোট বেলা আঘাত পাওয়ার ফলে এরকম হয়েছে। তাই হুট করে দরজা খুলে সুপ্ত কে দেখে সবকিছু মাথা থেকে বের হয়ে যায়।শুধু ঐসময় এটা কাজ করছিল যে সুপ্ত মারা গেছে।
সুপ্ত ঘরে গিয়ে দরজা দিয়ে বসে আছে। সুপ্তর মা,বাবা,বোন সকলে দরজা ধাক্কা দিচ্ছে আর ডাকছে কিন্তু সে দরজা খুলছেও না আর না কোনো রেসপন্স করছে।শিফা আর সুপ্তর মা ভয়ে কাঁদতে থাকে। সুপ্ত দরজা খুলছে না দেখে সকলেরই অবস্থা বেগতিক। সুপ্তর মা কিছু একটা ভেবে দৌড়ে চলে যায় রুমের সামনে থেকে। শিফা আর তার বাবা শিফার মায়ের দিকে এক পলক তাকিয়ে আবার ডাকতে থাকে সুপ্ত কে।
আহিয়ার মাথা মনে হচ্ছে ছিড়ে যাচ্ছে ব্যাথায়।কেন জানি শতো চেষ্টা করেও চোখ থেকে এক ফোঁটা পানি বের করতে পারছে না সে। মনে হচ্ছে আগেই কান্না করে চোখের পানি সব শেষ করে ফেলেছে।বিছানায় বসে হাঁটুর উপর মাথা দিয়ে বসে আছে। আহিয়ার মা পাশেই মেয়ের দিকে তাকিয়ে আছে। এরমধ্যে হুট করে সুপ্তর মা আহিয়ার শ্বাশুড়ি রুমে ঢুকে। আওয়াজ পেয়ে আহিয়ার মা তাকালেও আহিয়া একই ভাবে বসে আছে।
সুপ্তর মা এসে চহিয়ার হাত ধরে টেনে বসা থেকে উঠায়।আহিয়া পরতে গিয়ে ও নিজেকে সামলে নেয়।
–আম্মা?
— কোনো কথা নয় চলো আমার সাথে, বলেই হাঁটা দেয় আহিয়া কে নিয়ে তিনি।
পিছন থেকে আহিয়ার মা বলে,,বিয়াইন কি হয়েছে? এমন করছেন কেন? ওরে একটু সময় দেন।
সুপ্তর মা আহিয়ার মায়ের কথায় পাত্তা দেয় না। এদিকে রিপ্ত আসতে গিয়ে দেখে মা আহিয়া কে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। রিপ্ত ও মা কে ডেকে জিগ্যেস করে এভাবে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে। একটু সময় দিতে সবাই কে। কিন্তু তিনি কারো কথায়ই পাত্তা দেয় না।
আহিয়া এসব কিছুতে অসুস্থ হয়ে পরে। আর পারছে না সে এসব কিছু নিতে। সবকিছুরই একটা লিমিট আছে। আর কতো সহ্য করা যায়। এই ফ্যামিলিতে বিয়ে হয়ে মনে হচ্ছে জীবনটাই তার ধ্বংস হয়ে গেছে।
আহিয়ার শ্বাশুড়ি আহিয়াকে দরজার সামনে এনে দাঁড় করায়। সকলেই সেখানে উপস্থিত হয়। তিনি আহিয়া কে বলে সুপ্ত কে ডাক দেওয়ার জন্য।
আহিয়া সকলের দিকে একবার ভালো করে তাকায়। কেউই কিছু বলছে না। আহিয়ার এখন ইচ্ছে করছে এই বাড়ি ছেড়ে ছুটে পালিয়ে যেতে।
ভিতরে সুপ্ত মাথায় এক হাত আরেক হাত বুকে দিয়ে চেপে ধরে রেখেছে। কি অসহ্য যন্ত্রণা।কাউকে বোঝাতে পারছে না নিজের কষ্ট টা।পরিবার মানুষ কেন এই কাজ করলো? তাকে কেন বুঝলোনা সেটার উত্তর খুঁজে পায় না সুপ্ত। আচ্ছা এরা কি আসলেই তার পরিবার? মাঝে মাঝে এদের এমন অদ্ভুত ব্যবহার দেখে তার মনে প্রশ্ন জাগে। নিজের পরিবার কি এমন জঘন্যতম কাজ কখনো করতে পারতো? পরোক্ষনে নিজের মনই প্রশ্নের উত্তর দেয় উহুু কখনো না।নিজের আপনজন হলে কখনো এইরকম নিম্নমানের কাজ করতে পারতো না।
অনেক ভেবে চিন্তে সুপ্ত একটা নয় দুইটা ডিসিশন নেয়।হয় সুইসাইড নয়তো তার আহিয়াকে নিয়ে অনেক দূরে চলে যাবে।থাকবেনা সে এসব লোকের কাছে যাদের কাছে তার কোনো রকম মূল্য নেই।
সুপ্ত পকেটে হাত দিয়ে তার ফোন খোঁজার চেষ্টা করে। কিন্তু একি ফোন খুঁজে পায় না।
মাথায় সুপ্তর আকাশ ভেঙে পরে।এদিক ওদিক ফোন খুঁজতে থাকে। কোথাও না পেয়ে রুমের জিনিসপত্র ভাঙতে থাকে।সবকিছু অগোছালো করতে থাকে। এখন সুপ্ত কে দেখলে মনে হবে সে বদ্ধউন্মাদ হয়ে গেছে।
এসবকিছুর মাঝে একেবারে ক্লান্ত হয়ে যায় সুপ্ত। এমনিতেই তার শরীরে কোনো শক্তি নেই। তার উপর এতোটা হয়রান হয়েছে। নিজেকে সামলে মেঝেতে বসে হাত পা ছড়িয়ে মাথাটা মেঝেতেই হেলিয়ে দেয়।
সুপ্তর মায়ের কথায় আহিয়া কোনো রেসপন্স করে না। একি ভাবে দাঁড়িয়ে আছে। সুপ্তর মা এতে রেগে যায়।চিল্লিয়ে বলে,,, যা বলছি তাই করো নয়তো আমার চেয়ে খারাপ আর কেউ হবে না বউমা।
আমি অনেক করেছি মা এবার আর পারবো না। আহিয়া সাফ সাফ উত্তর দেয়। এতে সুপ্তর মা রেগে যায়। বউমা বলেই হাত উঁচিয়ে চড় লাগাতে যায়। সুপ্তর মায়ের আচরণে সকলেই হতভম্ব হয়ে যায়। সুপ্তর বাবা সুপ্তর মা বলে ধমক লাগায়।
” তুমি কি পাগল হয়ে গেছো সুপ্তর মা? তুমি বউমার গায়ে হাত উঠাতে চাচ্ছো? ও কি আসলেই এসব কিছু ডিজার্ভ করে? ” সুপ্তর বাবা বলে।
আমি আমার ছেলের ভালোর জন্য সব করতে পারি সুপ্তর বাবা সব।আপনি দেখতে পাচ্ছেন না আমার ছেলের অবস্থা? আপনি বাবা হয়ে কি করে চুপ করে আছেন? আপনার কি একটুও কষ্ট হচ্ছে না?
ঐটা আমার বড় ছেলে সুপ্তর মা।আমার কি কম কষ্ট হচ্ছে? সবই পরিস্থিতির স্বীকার। তোমাকে বুঝতে হবে। আমরা অন্যায় করতে পারি না।
আপনি চুপ করে বসে থাকেন কোনো অন্যায় আমরা করছি না।যতো অন্যায় হওয়ার আমার সুপ্তর সাথে হয়ে গেছে। বলেই তিনি ছলছল চোখে আহিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে,, বউমা কিছু করো।আমার ছেলেকে তুমি বাঁচাও দোহাই লাগে তোমার। এই মায়ের আকুতি তুমি ফেলো না বউ মা। তুমিও তো কয়দিন পরে মা হবে। আমার ছেলেটার কষ্ট টা একটু লাঘব করো।ওরে একটু ভালো থাকতে দাও বউ মা।
আহিয়া শ্বাশুড়ির দিকে ছলছল চোখে তাকায়।খুবই ইমোশনাল সে।নিজেকে সামলে রাজি হয়ে যায় সুপ্ত কে ডাক দিতে। শুকনো ঢুক গিলে গলাটা ভেজানোর চেষ্টা করে যেই না দরজায় টোকা দিয়ে সুপ্ত কে ডাকতে যাবে ওমনি আহিয়ার হাতটা ধরে ফেলে কেউ একজন।
আহিয়া তাকিয়ে দেখে রিপ্ত।
রিপ্ত কি করছিস? ছেড়ে দে বউমার হাত।ডাকতে দে আমার সুপ্ত কে নয়তো অঘটন ঘটে যাবে। সুপ্তর মা।
কিছুই হবে না মা।অনেক হয়েছে তামশা আর না। তোমার ঐ পাগল ছেলের জন্য আমি আর আমার বউ আর কতো সাফার করবো? আর পারছি না বিশ্বাস করো আর পারছি না মা। দরকার পরলে আহিয়া কে নিয়ে আমি দূরে কোথাও চলে যাবো। ওর কথাটা ও ভাবতে হবে এখন। আহিয়া আর এখন একা নেই। সবসময় তোমার বড় ছেলের কথা ভাবো তুমি। তোমার ছোট ছেলে আর তার বউয়ের কথা একটু ভেবে দেখেছো? তুমি আসলে খুব স্বার্থপর মা। তুমি থাকো তোমার ঐ পাগল ছেলেকে নিয়ে।
রিপ্তর বলতে দেড়ি তার গালে হাত তুলতে দেড়ি না।
রিপ্ত গালে হাত দিয়ে মায়ের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে যেনো সে জানতো চড় টা সে খাবে।
সেইতো মা সবসময় এইকাজ টা করে তুমি আমাকে থামাতে চাও। ভালো খুব ভালো। আহিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে,, আহিয়া যাও লাগেজ গোছাও।তোমার এই নামের জন্য অনেক কিছু সহ্য করেছো আর করতে হবে না। একজন পাগলের পাল্লা থেকে আজ তোমাকে আমি মুক্ত করবো।এবার তুমি স্বাধীন ভাবে বাঁচতে পারবে।
আহিয়া রিপ্তর দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে চায় তাতে রিপ্ত বাঁধা দিয়ে বলে,,আর কিছু বলতে হবে না আমাকে।অনেক করেছো এবার নিজের কথাটা একটু ভাবো।বলে নিজেই টেনে নিয়ে যেতে থাকে আহিয়া কে।
সুপ্তর মা থমকে যায় যেনো। রিপ্ত চলে যাওয়ার পর হুঁশ আসে। সুপ্তর বাবা কে বলে,,আপনি কিছু বলেন কি হচ্ছে এসব? আমার ছেলেটা অসুস্থ বলে,,আপনারা এমন করবেন?
এবার আমরা সকলেই পাগল হয়ে যাবো। এইদিন দেখার আগে আমার মরন হলো না কেন? আল্লাহ আমার ভালো শান্ত বুঝদার ছেলেটার একি হাল হলো? কিছু কিছু মেয়েরা যেমন পাগল কে সুস্থ করতে পারে,,আবার সুস্থ মানুষকে ও পাগল করতে পারে। মেয়েটা মরে গিয়ে উনার ছেলেকে বাচিয়ে ও মেরে গেছেন।বলতে বলতে তিনি নিজের রুমে চলে যায়।
শিফা আর সুপ্তর মা সুপ্তর দরজার সামনে বসে পরে। আহিয়া নামক মেয়েটা কেন তার ছেলের জীবনে এসেছিলো? আর কেনই বা তাকে মিশনে গিয়ে জীবন দিয়ে উনার ছেলের এই পরিণতি করে যেতে হলো?
নিজের স্ত্রী কে ছোট ভাইয়ের বউ হিসেবে দেখা একজন পুরুষের জন্য কি রকম পী’রা দায়ক এটা হয়তো খুব সহজে বোঝার উপায় নেই।
তিন মাস আগের মৃত ব্যক্তিকে হুট করে চোখের সামনে দেখে হতভম্ব আহিয়া। দরজা ধরে ঠকঠক করে কাঁপছে সে ভয়ে আতংকে।
সুপ্ত পায়ে জোর পাচ্ছে না। নিচে দারোয়ানের কাছে শুনেছে যে তার ছোট ভাই তার বউকে বিয়ে করে নিয়েছে। দুইজন সুখে শান্তিতে সংসার করছে।সুপ্ত ভেবেছে হয়তো তার সাথে মজা করছে দারোয়ান। দারোয়ানের আবার রসিকতা করার স্বভাব আছে।
সুপ্ত কথা গুলো সিরিয়াস না নিলেও কেন জানি কথাগুলো শুনে সুপ্তের বুকের ভেতর ব্যথা অনুভব হয়।দারোয়ান চাচা কথা গুলো সিরিয়াস ভঙ্গিতেই বলে সুপ্তকে। কিন্তু আহিয়া দরজা খোলার সাথে সাথে সুপ্তর ছোট ভাই রিপ্ত কইগো বউ কে এসেছে বলেই রুম থেকে ডাকতে থাকে বলে বুঝতে পারে যা শুনেছে সব সত্যি। একটা মিশন সব শেষ করে দিয়েছে তার। নিজের বউকে ভাইয়ের বউ বানিয়ে ফেলেছে। মাত্র তিন মাসের ব্যাবধানে জীবনের এরকম পরিবর্তন মেনে নেওয়া খুব কষ্টকর ব্যাপার।
মানুষ বছরের পর বছর চলে গেলেও একটা অর্থহীন ভবিষ্যৎহীন সম্পর্ক থেকে বের হতে পারে না। আর সুপ্তর পরিবার কতো সহজে সবকিছু ভুলে নিজের মতো করে জীবনে এগিয়ে গেছে।
কাকে দায়ী করবে সুপ্ত এসবের জন্য নিজের নিয়তি কে নাকি নিজের পরিবার বাবা মা ভাই আর নাকি নিজের সহধর্মিণীকে? ওহ এখন তো আর সে নিজের সহধর্মিণী নেই ছোট ভাইয়ের বউ হয়ে গেছে।
যাকে নিজের ভেবে নিজের দেখে মিশনে গেলো আজ তাকে আর নিজের বলার কোনো অধিকার তার নেই। নিয়তির এই নির্মম পরিহাস না চাইতেও তাকে মেনে নিতে হবে।
মাস তিনেক আগে একটা সিক্রেট মিশনের জন্য সুপ্ত নিজের জীবন বা’জি রাখে।মিশনে যাওয়ার সময় সে কি কান্না করেছিলো হিয়া তাকে জড়িয়ে ধরে। আর আজ ঐসব কান্না সুপ্তর কাছে নিছকই একটা নাটক মনে হচ্ছে।
মিশনে গুলিবিদ্ধ হয়ে ছিলো সুপ্ত। মিশনের জায়গায় বো’ম ব্লাস্ট হয়ে অনেকেই মা’রা যায় আর কয়েকজনের অবস্থা এতোটাই আশংকাজনক যে তারা এখনও হসপিটালে এডমিট। সুপ্ত গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর ঐ জায়গা থেকে তাকে একজন অফিসার সরিয়ে নেয় যার দরুন সে বেঁচে যায়। পরবর্তীতে সুপ্তের জামা কাপড় আনতে গিয়ে ঐ অফিসার তার জীবন দেয়
বো’ম ব্লাস্টে। সুপ্ত এতোটাই অসুস্থ ছিলো বাড়িতে খবর দেওয়ার মতো কোনো পরিস্থিতি তার ছিলো না। সকলে ভেবেছে সুপ্ত মা’রা গেছে। অবশ্য ভাবা দোষের বা ভুল কিছু না। কোনো খুঁজ খবর না থাকলে এটা ভাবাই স্বাভাবিক।
আহিয়া ও কোনো কথা বলছে না আর না বলছে সুপ্ত নিজে। এরমধ্যে সুপ্তর মা আহিয়া কে ডাকতে থাকে কি হলো বউমা কে এসেছে?
বলতে বলতে তিনি এগিয়ে এসে দরজার দিকে তাকিয়ে থমকে যায়। এক এক করে সকলেই এসে উপস্থিত হয় দেখার জন্য কি হয়েছে।
দরজার সামনে স্বয়ং সুপ্তকে দেখে সকলে ভূত দেখার মতো চমকায়। সকলে নিস্তব্ধ হয়ে থাকলেও সুপ্তর ছোট বোন চুপ করে থাকে না।
ভাইয়া বলে দৌড়ে এসে সুপ্ত কে ঝাপটে ধরে। শব্দ করে কাঁদতে কাঁদতে শিফা বলে তুই সত্যি এসেছিস ভাইয়া? আবার ফাঁকি দিয়ে হাওয়ায় মিলিয়ে যাবি না তো? বলনা ভাইয়া বল,,,বলেই সুপ্ত কে ঝাঁকাতে থাকে শিফা। বুকের বা পাশে শিফার মাথা যেটা বারবার বুকে বাড়ি খাচ্ছে। সেখানেই গুলি লেগেছিল ঘা টা এখনও শুকায়নি।শিফার চোখের পানি নাকি সুপ্তের ঘা থেকে রক্ত পরছে সেটা বুঝতে পারলো না সুপ্ত ।
এরমধ্যে সকলেরই হুঁশ আসে।সুপ্তর মা বাবা আর ভাই সকলে সুপ্ত কে দেখে আবেগ আপ্লুত হয়ে যায়। কান্না করে সুপ্ত কে জড়িয়ে ধরে সকলে। এরমধ্যে এখন ও আহিয়া নীরব দর্শক।
সুপ্তর মা সুপ্ত কে এনে সোফায় বসায়। সুপ্ত নির্বাক ভঙ্গিতে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখে কিছু একটার আয়োজন করা হয়েছে। কিসের আয়োজন বুঝলো না সুপ্ত।
আহিয়ার মা ও এখানে উপস্থিত। আহিয়ার মা আহিয়াকে ধরে দাঁড়িয়ে আছে।
“শিফা আমাকে এক গ্লাস পানি দে বোন বড্ড তেষ্টা পেয়েছে আমার।মনে হচ্ছে গলা শুকিয়ে মরুভূমি হয়ে গেছে। ” সুপ্তর কথায় শিফা, আমি এখনই এনে দিচ্ছি ভাইয়া বলেই এক দৌড় দেয় পানি আনার জন্য।
সুপ্তর মা আঁচল দিয়ে সুপ্তর মুখ মুছিয়ে দিতে দিতে চিল্লিয়ে বলে,,,তোর এতো সময় লাগে এক গ্লাস পানি আনতে?
শিফা যেই দৌড়ে গেছে ওমনি দৌড়ে পানি নিয়ে আসে।
সুপ্ত এক ঢুকে সব পানি শেষ করে ফেলে।
ছেলেকে এমন তৃষ্ণার্থ দেখে সুপ্তর মা আঁচলে মুখ গুঁজে কেঁদে দেয়।
আমার বাপ তোর কি খুব খিদে লেগেছে বাপ? তোর পছন্দের রান্না হয়েছে আজ আয় আমি খাইয়ে দেই কয়টা।
সুপ্ত ধরা গলায় বলে,,আমার খিদে নেই মা। আর মনে হয় না এই জনমে খিদে লাগবে।লাগলেও ভালো করে খাওয়া হবে কিনা সন্দেহ।
সুপ্তর বাবা ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে,, এসব কি কথা বাপ? তুই কি আমাদের উপর রেগে আছিস? বিশ্বাস কর আমরা তোর অনেক খুঁজ খবর নেওয়ার চেষ্টা করেছি কিন্তু ঐ একটাই খবর আসে বারবার। আমরা কি ই বা করতাম রে?
এরমধ্যে রিপ্ত বলে উঠে,, ভাই তুই বেঁচে আছিস কি করে? মরা মানুষ আবার পুনরায় জীবিত হয় জানতাম না তো।
রিপ্তর এহেম কথায় সকলেই চটে যায়। রিপ্তর মা গিয়ে ঠাস করে এক চড় লাগিয়ে দেয় রিপ্তর গালে।
“তোর সাহস কি করে হয় আমার ছেলে কে এমন করে বলার?”
রিপ্ত গালে হাত দিয়ে বলে,,মা আমাকে মারছো কেন? আমি ঐভাবে কথাটা বলতে চাইনি। আমি অন্য ভাবে আইমিন ইনি তো আমার ভাই না ও হতে পারে তাই না? তুমি বর্তমান যুগ সম্বন্ধে কতটুকুই বা জানো? কতো বড় বড় ফ্রড এরকম সেজে ধোঁকা দেয়।
সুপ্তর বাবা বলে,,তুই চুপ যা রিপ্ত আমরা আমাদের ছেলেকে চিনতে একদম ভুল করিনি। বাবা মা কখনো তার সন্তান কে চিনতে ভুল করে না।
*******
সুপ্ত কে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যাওয়া মানুষজন এখন আহিয়া কে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে আছে। কিছু সময় পূর্বেই সে মাথা ঘুরে ফ্লোরে পরে গেছে। সকলে ধরাধরি করে এনে আহিয়াকে সোফায় বসে পানি দিতে থাকে। আহিয়া পরে যাওয়ার দৃশ্য দেখে ও সুপ্ত উঠে দাঁড়ায় নি। তার পরিবার আহিয়া সম্পর্কে কিছু বলছেও না। কেন বলছে না এটা সুপ্ত বুঝতে পারছে না।
আহিয়ার মা এদিকে তুলকালাম কান্ড লাগিয়ে দিয়েছে। মেয়ের জ্ঞান হারানো নিয়ে হাজারটা কথা শুনাচ্ছে সুপ্তর পরিবারের লোক কে।
আহিয়া যখন চোখ খুলে তাকায় সকলে তখন স্বস্থির নিশ্বাস নেয়। শিফা সুপ্তর কাছ থেকে এক চুল ও সরেনি। ছোট বেলা যেভাবে সুপ্তর হাতের আঙ্গুল ধরে ঘুরে বড়াতো ঠিক সেভাবে।
সুপ্ত একবার ভাবলো শিফাকে জিজ্ঞেস করবে।কিন্তু পরমুহূর্তেই কি যেনো ভেবে চুপ হয়ে যায়। এসব কথা যতো দেরিতে শুনবে ততোই যেনো মঙ্গল। বাড়ির লোক সুপ্তকে ফিরে পাওয়ার আনন্দে প্রশ্ন করতেও ভুলে গেছেন এতোদিন কোথায় ছিলো কি করেছে।
সুপ্তর কেন জানি বাড়িতে দ’ম বন্ধ লাগছে।যতোটা উৎসাহ নিয়ে সে এসেছে তার ছিটেফোঁটা ও এখন তার মধ্যে বিদ্যমান নেই। হারিয়ে গেছে সব।
এদিকে ওদিকে তাকিয়ে স্বস্তি খোঁজার চেষ্টা করে সুপ্ত। কিন্তু তাতো মিলেনি কে জানতো তার জন্য আরো বড় ধামাকা অপেক্ষা করছে। টেবিলের উপর একটা সুন্দর ডিজাইন করা কেক রাখা। কেকের উপর লিখা দেখে তৎক্ষনাৎ সুপ্ত বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। এলোমেলো কদম ফেলে নিজের রুমে ঢুকে দরজা লাগায়।
চোখে তার ভাসছে,,,, ” Welcoming party for our new member ”