পাষাণে বাঁধে যে হৃদয় পর্ব-০১

0
414

#পাষাণে_বাঁধে_যে_হৃদয়
#সূচনা_পর্ব
#Jhorna_Islam

নিজের স্ত্রী কে ছোট ভাইয়ের বউ হিসেবে দেখা একজন পুরুষের জন্য কি রকম পী’রা দায়ক এটা হয়তো খুব সহজে বোঝার উপায় নেই।

তিন মাস আগের মৃত ব্যক্তিকে হুট করে চোখের সামনে দেখে হতভম্ব আহিয়া। দরজা ধরে ঠকঠক করে কাঁপছে সে ভয়ে আতংকে।

সুপ্ত পায়ে জোর পাচ্ছে না। নিচে দারোয়ানের কাছে শুনেছে যে তার ছোট ভাই তার বউকে বিয়ে করে নিয়েছে। দুইজন সুখে শান্তিতে সংসার করছে।সুপ্ত ভেবেছে হয়তো তার সাথে মজা করছে দারোয়ান। দারোয়ানের আবার রসিকতা করার স্বভাব আছে।
সুপ্ত কথা গুলো সিরিয়াস না নিলেও কেন জানি কথাগুলো শুনে সুপ্তের বুকের ভেতর ব্যথা অনুভব হয়।দারোয়ান চাচা কথা গুলো সিরিয়াস ভঙ্গিতেই বলে সুপ্তকে। কিন্তু আহিয়া দরজা খোলার সাথে সাথে সুপ্তর ছোট ভাই রিপ্ত কইগো বউ কে এসেছে বলেই রুম থেকে ডাকতে থাকে বলে বুঝতে পারে যা শুনেছে সব সত্যি। একটা মিশন সব শেষ করে দিয়েছে তার। নিজের বউকে ভাইয়ের বউ বানিয়ে ফেলেছে। মাত্র তিন মাসের ব্যাবধানে জীবনের এরকম পরিবর্তন মেনে নেওয়া খুব কষ্টকর ব্যাপার।
মানুষ বছরের পর বছর চলে গেলেও একটা অর্থহীন ভবিষ্যৎহীন সম্পর্ক থেকে বের হতে পারে না। আর সুপ্তর পরিবার কতো সহজে সবকিছু ভুলে নিজের মতো করে জীবনে এগিয়ে গেছে।

কাকে দায়ী করবে সুপ্ত এসবের জন্য নিজের নিয়তি কে নাকি নিজের পরিবার বাবা মা ভাই আর নাকি নিজের সহধর্মিণীকে? ওহ এখন তো আর সে নিজের সহধর্মিণী নেই ছোট ভাইয়ের বউ হয়ে গেছে।
যাকে নিজের ভেবে নিজের দেখে মিশনে গেলো আজ তাকে আর নিজের বলার কোনো অধিকার তার নেই। নিয়তির এই নির্মম পরিহাস না চাইতেও তাকে মেনে নিতে হবে।

মাস তিনেক আগে একটা সিক্রেট মিশনের জন্য সুপ্ত নিজের জীবন বা’জি রাখে।মিশনে যাওয়ার সময় সে কি কান্না করেছিলো হিয়া তাকে জড়িয়ে ধরে। আর আজ ঐসব কান্না সুপ্তর কাছে নিছকই একটা নাটক মনে হচ্ছে।

মিশনে গুলিবিদ্ধ হয়ে ছিলো সুপ্ত। মিশনের জায়গায় বো’ম ব্লাস্ট হয়ে অনেকেই মা’রা যায় আর কয়েকজনের অবস্থা এতোটাই আশংকাজনক যে তারা এখনও হসপিটালে এডমিট। সুপ্ত গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর ঐ জায়গা থেকে তাকে একজন অফিসার সরিয়ে নেয় যার দরুন সে বেঁচে যায়। পরবর্তীতে সুপ্তের জামা কাপড় আনতে গিয়ে ঐ অফিসার তার জীবন দেয়
বো’ম ব্লাস্টে। সুপ্ত এতোটাই অসুস্থ ছিলো বাড়িতে খবর দেওয়ার মতো কোনো পরিস্থিতি তার ছিলো না। সকলে ভেবেছে সুপ্ত মা’রা গেছে। অবশ্য ভাবা দোষের বা ভুল কিছু না। কোনো খুঁজ খবর না থাকলে এটা ভাবাই স্বাভাবিক।

আহিয়া ও কোনো কথা বলছে না আর না বলছে সুপ্ত নিজে। এরমধ্যে সুপ্তর মা আহিয়া কে ডাকতে থাকে কি হলো বউমা কে এসেছে?
বলতে বলতে তিনি এগিয়ে এসে দরজার দিকে তাকিয়ে থমকে যায়। এক এক করে সকলেই এসে উপস্থিত হয় দেখার জন্য কি হয়েছে।

দরজার সামনে স্বয়ং সুপ্তকে দেখে সকলে ভূত দেখার মতো চমকায়। সকলে নিস্তব্ধ হয়ে থাকলেও সুপ্তর ছোট বোন চুপ করে থাকে না।
ভাইয়া বলে দৌড়ে এসে সুপ্ত কে ঝাপটে ধরে। শব্দ করে কাঁদতে কাঁদতে শিফা বলে তুই সত্যি এসেছিস ভাইয়া? আবার ফাঁকি দিয়ে হাওয়ায় মিলিয়ে যাবি না তো? বলনা ভাইয়া বল,,,বলেই সুপ্ত কে ঝাঁকাতে থাকে শিফা। বুকের বা পাশে শিফার মাথা যেটা বারবার বুকে বাড়ি খাচ্ছে। সেখানেই গুলি লেগেছিল ঘা টা এখনও শুকায়নি।শিফার চোখের পানি নাকি সুপ্তের ঘা থেকে রক্ত পরছে সেটা বুঝতে পারলো না সুপ্ত ।

এরমধ্যে সকলেরই হুঁশ আসে।সুপ্তর মা বাবা আর ভাই সকলে সুপ্ত কে দেখে আবেগ আপ্লুত হয়ে যায়। কান্না করে সুপ্ত কে জড়িয়ে ধরে সকলে। এরমধ্যে এখন ও আহিয়া নীরব দর্শক।

সুপ্তর মা সুপ্ত কে এনে সোফায় বসায়। সুপ্ত নির্বাক ভঙ্গিতে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখে কিছু একটার আয়োজন করা হয়েছে। কিসের আয়োজন বুঝলো না সুপ্ত।

আহিয়ার মা ও এখানে উপস্থিত। আহিয়ার মা আহিয়াকে ধরে দাঁড়িয়ে আছে।

“শিফা আমাকে এক গ্লাস পানি দে বোন বড্ড তেষ্টা পেয়েছে আমার।মনে হচ্ছে গলা শুকিয়ে মরুভূমি হয়ে গেছে। ” সুপ্তর কথায় শিফা, আমি এখনই এনে দিচ্ছি ভাইয়া বলেই এক দৌড় দেয় পানি আনার জন্য।

সুপ্তর মা আঁচল দিয়ে সুপ্তর মুখ মুছিয়ে দিতে দিতে চিল্লিয়ে বলে,,,তোর এতো সময় লাগে এক গ্লাস পানি আনতে?

শিফা যেই দৌড়ে গেছে ওমনি দৌড়ে পানি নিয়ে আসে।
সুপ্ত এক ঢুকে সব পানি শেষ করে ফেলে।
ছেলেকে এমন তৃষ্ণার্থ দেখে সুপ্তর মা আঁচলে মুখ গুঁজে কেঁদে দেয়।
আমার বাপ তোর কি খুব খিদে লেগেছে বাপ? তোর পছন্দের রান্না হয়েছে আজ আয় আমি খাইয়ে দেই কয়টা।

সুপ্ত ধরা গলায় বলে,,আমার খিদে নেই মা। আর মনে হয় না এই জনমে খিদে লাগবে।লাগলেও ভালো করে খাওয়া হবে কিনা সন্দেহ।

সুপ্তর বাবা ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে,, এসব কি কথা বাপ? তুই কি আমাদের উপর রেগে আছিস? বিশ্বাস কর আমরা তোর অনেক খুঁজ খবর নেওয়ার চেষ্টা করেছি কিন্তু ঐ একটাই খবর আসে বারবার। আমরা কি ই বা করতাম রে?

এরমধ্যে রিপ্ত বলে উঠে,, ভাই তুই বেঁচে আছিস কি করে? মরা মানুষ আবার পুনরায় জীবিত হয় জানতাম না তো।

রিপ্তর এহেম কথায় সকলেই চটে যায়। রিপ্তর মা গিয়ে ঠাস করে এক চড় লাগিয়ে দেয় রিপ্তর গালে।
“তোর সাহস কি করে হয় আমার ছেলে কে এমন করে বলার?”

রিপ্ত গালে হাত দিয়ে বলে,,মা আমাকে মারছো কেন? আমি ঐভাবে কথাটা বলতে চাইনি। আমি অন্য ভাবে আইমিন ইনি তো আমার ভাই না ও হতে পারে তাই না? তুমি বর্তমান যুগ সম্বন্ধে কতটুকুই বা জানো? কতো বড় বড় ফ্রড এরকম সেজে ধোঁকা দেয়।

সুপ্তর বাবা বলে,,তুই চুপ যা রিপ্ত আমরা আমাদের ছেলেকে চিনতে একদম ভুল করিনি। বাবা মা কখনো তার সন্তান কে চিনতে ভুল করে না।

*******
সুপ্ত কে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যাওয়া মানুষজন এখন আহিয়া কে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে আছে। কিছু সময় পূর্বেই সে মাথা ঘুরে ফ্লোরে পরে গেছে। সকলে ধরাধরি করে এনে আহিয়াকে সোফায় বসে পানি দিতে থাকে। আহিয়া পরে যাওয়ার দৃশ্য দেখে ও সুপ্ত উঠে দাঁড়ায় নি। তার পরিবার আহিয়া সম্পর্কে কিছু বলছেও না। কেন বলছে না এটা সুপ্ত বুঝতে পারছে না।

আহিয়ার মা এদিকে তুলকালাম কান্ড লাগিয়ে দিয়েছে। মেয়ের জ্ঞান হারানো নিয়ে হাজারটা কথা শুনাচ্ছে সুপ্তর পরিবারের লোক কে।

আহিয়া যখন চোখ খুলে তাকায় সকলে তখন স্বস্থির নিশ্বাস নেয়। শিফা সুপ্তর কাছ থেকে এক চুল ও সরেনি। ছোট বেলা যেভাবে সুপ্তর হাতের আঙ্গুল ধরে ঘুরে বড়াতো ঠিক সেভাবে।

সুপ্ত একবার ভাবলো শিফাকে জিজ্ঞেস করবে।কিন্তু পরমুহূর্তেই কি যেনো ভেবে চুপ হয়ে যায়। এসব কথা যতো দেরিতে শুনবে ততোই যেনো মঙ্গল। বাড়ির লোক সুপ্তকে ফিরে পাওয়ার আনন্দে প্রশ্ন করতেও ভুলে গেছেন এতোদিন কোথায় ছিলো কি করেছে।

সুপ্তর কেন জানি বাড়িতে দ’ম বন্ধ লাগছে।যতোটা উৎসাহ নিয়ে সে এসেছে তার ছিটেফোঁটা ও এখন তার মধ্যে বিদ্যমান নেই। হারিয়ে গেছে সব।

এদিকে ওদিকে তাকিয়ে স্বস্তি খোঁজার চেষ্টা করে সুপ্ত। কিন্তু তাতো মিলেনি কে জানতো তার জন্য আরো বড় ধামাকা অপেক্ষা করছে। টেবিলের উপর একটা সুন্দর ডিজাইন করা কেক রাখা। কেকের উপর লিখা দেখে তৎক্ষনাৎ সুপ্ত বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। এলোমেলো কদম ফেলে নিজের রুমে ঢুকে দরজা লাগায়।
চোখে তার ভাসছে,,,, ” Welcoming party for our new member ”

#চলবে,,,?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে