Monday, June 23, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 283



তুমি এসেছিলে বলে পর্ব-১০+১১+১২

0

#তুমি_এসেছিলে_বলে
পর্ব : ১০
#নাদিয়া_আক্তার_সিয়া

মেঘকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে আয়নার দিকে তাকিয়ে মেহতাব মুচকি হেসে বললো,

মেহতাব : এখন গেট আপ কমপ্লিট হয়েছে । (মেঘের ঘাড়ে মাথা রেখে)

মেঘ নিজের দিকে তাকিয়ে দেখলো সত্বি ওই গলার নেকলেস আর বেলী ফুলের মালা খোপায় দেওয়ার পর তাকে আগের চেয়েও বেশি সুন্দর লাগছে । মেহতাব মেঘের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো ,

মেহতাব : তোমার কি নেকলেস টা পছন্দ হয় নি ?

মেহতাবের কথার প্রতিউত্তরে মেঘ বললো ,

মেঘ : না অনেক সুন্দর । কিন্তু এতো দামি নেকলেস কি আমার মতো মেয়েকে মানায় ? আপনি আমার থেকেও ভালো জীবনসঙ্গী পেতে পারতেন। আমি এই সুখ ডিসার্ব করি না।

মেহতাব : তোমাকে পৃথিবীর সবথেকে দামি নেকলেস এনে দিলেও সেটা তোমার থেকে তুচ্ছ । তুমি অনেক কিছু ডিসার্ব করো মেঘ । আমি তোমাকে আমার জীবন সঙ্গী পেয়ে নিজেকে অনেক ভাগ্যবান মনে করি । এই নিয়ে আর কোনো কথা যেনো ফিউচার এ না শুনি। আমি রেগে গেলে কিন্তু নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারি না। সো বুঝে শুনে কথা বলবে । ( রাগ দেখিয়ে বললো মেহতাব )

মেহতাবের কথা শুনে মেঘ মেহতাবের দিকে ফিরে তাকালো । কিছু বলতে যাবে তখনিই অরিন বেগম দরজা নক করে ডুকে পড়লেন । অরিন বেগম মেঘের দিকে তাকিয়ে বললেন ,

অরিন বেগম : বাহ ! আমার মেয়েটাকে তো বেশ লাগছে । কারো নজর না লাগে যেন । ( হাসি দিয়ে )

এই বলে মেঘের কপালে একটা চুমু দিলো। আর মেহতাবকে উদ্দেশ্য করে বললো,

অরিন বেগম : রেডি হোসনি কেন ? নিচে কতো গেস্ট এসেছে তাদের সাথে দেখা করতে হবে । আর তোর কিছু মেয়ে বন্ধু এসেছে যারা বিয়েতে আস্তে পারে নিই । তোদের খুজছে । রেডি হয়ে মেঘ মাকে নিয়ে আয় আমি ঐদিক সামলাচ্ছি । (তারাহুড়া দেখিয়ে)

মেহতাব : ঠিকাছে শান্ত হোও । আমার ফ্রেশ হয়ে রেডি হতে ৫ মিনিট লাগবে ।

অরিন বেগম : ঠিকাছে তুই রেডি হয়ে নে। আমি নিচে যাচ্ছি ।

এই বলে অরিন বেগম রুম থেকে চলে গেলেন ।
অরিন বেগম যাওয়ার সাথে সাথে মেহতাব মেঘের ঘাড়ে হাত রেখে বলে উঠে,

মেহতাব : Do you love me or not ? tell me honestly .

মেহতাবের এই কথার প্রতিউত্তরে মেঘ কি বলবে সে ভেবে পায় না। কারন সে নিজেই জানে না সে মেহতাব কে ভালোবাসে কি না ।

মেঘ কিছু বলতে যাবে তখনি অহনা রুম এ নক করে বলে উঠে ,

অহনা : আমি কি আসতে পারি ?

অহনার গলা শুনে মেঘ আর মেহতাব নিজেদের থেকে দূরে সরে যায় । মেহতাব লজ্জা পেয়ে ওয়াশরুম এ চলে যায় । আর মেঘ নিজেকে শান্ত করে বলে ,

মেঘ : হ্যাঁ। আসতে পারো আপু । অনুমতি নেওয়ার কি আছে ।

এই শুনে অহনা রুম এ প্রবেশ করে । সে মেঘকে দেখে মাথায় হাত রেখে বলে ,

অহনা : আমি খুব খুশি যে তোরা দুজন নিজেদের বিবাহিত জীবন গুছিয়ে নিতে শিখেছিস । আমার সেই পুচকে বোনটা কতো বড় হয়ে গেছে । নিজে সব কিছুর সাথে মানিয়ে নিতে শিখেছে । মেহতাবের মতো জীবন সঙ্গী পাওয়া ভাগ্যের ব্যপার । তুই খুব ভাগ্যবতী ।

এই বলে অহনা মেঘকে জড়িয়ে ধরে । মেঘও অহনা কে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয় ।

অহনা : কান্না করছিস কেনো পাগলী। চল নিচে যাই। মা- বাবা , অন্নি , তন্নি এসেছে দেখা করবি না।

অহনা মেঘের চোখের পানি মুছে দেয় আর দুজনে নিচে চলে যায় ।

নিচে অনেক গেস্ট এসেছে। আর হুল্লোড় পার্টি মেহতাব আর মেঘের জন্য প্লান আটছে ।

মিথিলা : কি বোরিং লাগছে । মেঘ ভাবী আর মেহতাব ভাইয়া কখন আসবে ? ( সোফায় বসে গালে হাত দিয়ে )

রৌফ : গালে হাত দিস না জামাই তাড়াতাড়ি মরবো ।

রৌফের কথা শুনে সৌরভ রাগ করে আর বলে উঠে ,

সৌরভ : ওর জামাই সম্পর্কে কটু কথা বললে খারাপ হয়ে যাবে কিন্তু রৌফের বাচ্চা ।

সৌরভের কথা শুনে সবাই সৌরভের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকায় । আর সৌম বলে উঠে ,

সৌম : ভাইয়া এটা তো মিথিলার ফিউচার হাসব্যেন্ড কে বলা হইছে তোমার গায়ে লাগতাছে কেন? ( মুচকি হেসে ) সিমরান : ডাল মে কুচ কালা হ্যা। ( মুচকি হেসে )
সৌরভ মিথিলার দিকে তাকায় মিথিলা যে সৌরোভের কথায় রেগে আছে তা বোঝা যাচ্ছে।

সৌরভ আমতা আমতা করে বললো ,

সৌরভ : এইখানে মেয়েদের মধ্যে সবার বড় মিথিলা আর ছেলেদের মধ্যে ধরতে গেলে আমি। আর সামির তো ভালো করে বুঝিয়ে বলতে পারে এইসব বিষয় । সামির দোস্ত বুঝিয়ে দেতো সব কয়টার চোখে আঙ্গুল দিয়ে। ( ভাব নিয়ে )

সামির সবার দিকে তাকায় সবার দৃষ্টি এখন তার দিকে। সেই একমাত্র জানে যে মিথিলা আর সৌরভ দুজন দুজনকে নিজের থেকেও অনেক ভালোবাসে দুজন দুজনের প্রাণ । সে একবার মিথিলা আর সৌরভকে পার্কে হাটতে দেখেছে হাত ধরে । তাকে সৌরভ আর মিথিলা অনেক করে বুঝিয়েছে বারণ করেছে কাউকে যেন না বলে তাদের সম্পর্কের কথা । সেও কাউকে বলে নিই ।

এইসব কথা সামির মনে করছিলো তখনি রৌফের ডাকে তার হুশ ফেরে।
রৌফ : ওই গাধা কি হইলো ?

সামির : না কিছু হয়নি আসলে বেপার টা বেশ জটিল । তো মেইন টপিক এ আসা যাক সবাই মনোযোগ দিয়ে শুনবা , ( গলা ঝেরে )
আমরা জানি , সৌরভ সবার বড় আর মিথিলা ও সবার বড় ।

শাম্মি : হুম তো ?

সিয়াম : কথা শেষ করতে দে সামির নার্ভাস হইতাছে দেখতাছোস না । ( হাসি দিয়ে )

সামির : চুপ থাক কইতে দে । সো ওরা বড় হওয়ার কারনে একজনের অপমান অন্যজন সয্য করতে পারে না । সুতরাং সৌরভের কথাটা গায় লাগছে ।

সামির এর কথা শেষ হওয়ার পর এই নিয়ে কেউ কথা বাড়ায় না । সবাই সোফায় বসে গল্প করতে লাগল । তখনি মেঘ আর অহনা নিচে নেমে এলো।
তা দেখে শাম্মি বললো ,

শাম্মি : আচ্ছা একটা কথা আমার মাথায় ঘুরপাক খাইতাছে । আসলে ঐদিন যে মেহতাব ভাইয়া বললো যে সে লন্ডন চলে যাবে। সেটা কি সত্বি ?

সিয়াম : বোইন আর কইছ না । তোর ভাই তো মেঘের প্রেমে হাবুডুবু খাইতাছে ।

সৌরভ : হুম । এতদিনে মেঘের প্রেমে তো পড়ছে কিন্তু বলতে পারতাছে না বা স্বীকার করতাছে না । ও চায় যে মেঘ আগে বলুক বা মেহতাব হয়ত জানে না মেঘ ওর জন্য সেম ফিল করে কিনা । ইগোর বেপার আর কি ।

সিমরান : হুম বুঝলাম । তো আমাদের তাদের হেল্প করা উচিত তাই না ।

রৌফ : একটা কথা বলি সিমরান রাগ করিছ না। আসলে তুই কি তোর সিম রিচার্জ করছোস । যে তোর মাথা কাজ করতাছে ।

রৌফের কথা পাশের কিছু ছেলেও শুনতে পায়। আর তারা না চাইতেও ফিক করে হেসে দেয় । এই দেখে সিমরানের অনেক রাগ হয় । কিন্তু প্রকাশ করে না গেস্টরা আছে বলে । কিন্তু প্রতিউত্তরে সিমরান বলে ,

সিমরান : হুম তোমার বিকাশ থেকে রিচার্জ করছি। ওই যে তোমার ডেইলি নিউ গার্লেফ্রন্ডদের প্রতিসপ্তাহে বলো , ” আমাকে কিছু সেন্ড মানি করবা জানু আসলে আজ না আমাদের বাসার সাবান , সেম্পু শেষ হয়ে গেছে আমি যদি সাবান , সেম্পু দিয়ে গোসল না করি তাহলে তো আমার গায়ের থেকে চুলের থেকে গন্ধ আসবে আর সবাই বলবে রিতার বয়ফ্রেন্ড এর গায়ে গন্ধ তোমার কি ভালো লাগবে “। এভাবেই তো টাকা গুলো নেও আর আমি রিচার্জ করি।

সিমরানের কথাগুলো অনেক জোরে বলাতে সবাই এখন ওদের দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে । অহনা আর মেঘেও ওদের দিকে আসছিলো ওদেরও কানে যায় । রৌফ ভীষণ লজ্জা পায় তাই সে টয়লেটের কথা বলে এক দৌরে উপরে চলে যায় । অহনা আর মেঘ কে দেখে সবাই টপিক চেঞ্জ করে বলে ,

সিমরান : ওয়াও মাই ডিয়ার ভাবীরা তোমাদের অনেক সুন্দর লাগছে ।

শাম্মি : হুম অনেক । আসো তোমাদের স্টেজ এ বসিয়ে দিই।

শাম্মি , সিমরান আর মিথিলা মেঘ আর অহনা কে স্টেজ এ বসিয়ে নিজেরা পাশে বসে পরে । তখনি আহতাব আর মেহতাব সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে আসে । মেহতাব আর আহতাব সেম ডিজাইন এর পাঞ্জাবি পড়েছে। আহতাবের গায়ের রঙ অতো ফর্সা না হলেও দেখতে সুন্দর আর মেহতাব কে প্রথম দেখায় যে কেউ প্রেমে পরে যাবে । তো আহতাব আর মেহতাব নিচে নামতে থাকে । নিচে নামার পরেই একটা মেয়ে শর্ট ড্রেস পড়া দেখতে বেশ সুন্দরী মেহতাবের কাছে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে । সিমরান , শাম্মি আর মিথিলা মেঘের রিয়েকশন দেখতে তার দিকে তাকায়। মেঘ প্রকাশ না করলেও সে যে মেয়েটার উপর ভীষণ রেগে আছে আর কাছে পেলে তাকে কাচা চিবিয়ে খেতো তা ঠিকি বুঝতে পারে তারা। তাই তারা মেঘকে বলে ,
সিমরান : ভাবী ওই মেয়েটা মেহতাব ভাইয়ার ফুপাতো বোন । তার নাম টিনা । সেও লন্ডন এ পড়াশোনা করেছে ।

শাম্মি : ভাবী জানো ওই মেয়েটা না ভাইয়ার সাথে কাঁঠালের আঠার মতো চিপকে থাকে । I think she like mehtab vaiya .

এতক্ষণ মেঘ সবগুলো কথা মনোযোগ দিয়ে শুনছিলো । সে যতই শান্ত স্বভাবের মেয়ে হোক না কেনো । নিজের স্বামিকে অন্য মেয়ে এসে হুট করে জড়িয়ে ধরবে এটা কোনো স্ত্রীই সয্য করবে না । মিথিলার ডাকে মেঘের হুশ ফিরলো,

মিথিলা : ভাবী অতো ভেবো না ওই মেয়েটাকে মেহতাব ভাইয়া পাত্তাও দেয় না । আর বাকি রইলো টিনার কথা কাঁঠালের আঠা কেও তেল দিয়ে সরানো যায় ওর মলম আমাদের কাছে আছে । Don’t worry .( এই বলে মিথিলা মেঘ কে জড়িয়ে ধরে )

মেঘ : চিন্তা করো না তোমার ভাইয়ার উপর আমার ভরসা বিশ্বাস দুটোই আছে । সেই ভরসা এতো ঠুনকো নয় । আমি কিছু মনে করি নি । ( স্নিগ্ধকর হাসি দিয়ে )

তারপর সিমরান, শাম্মি, মিথিলা সেখান থেকে মেহতাবের কাছে চলে গেলো ।

তখনি অন্নি আর তন্নি এসে দুজনকে দুদিক থেকে জড়িয়ে ধরে । মেঘ আর অহনা দুজনকে দেখে খুব খুশি হয় । অন্নি বলে উঠে ,

অন্নি : আমাদের তো ভুলেই গেছো এতো সুন্দর জামাই পেয়ে । ( অভিমান করে )

অহনা আর মেঘ অন্নির এমন আচরণে হেসে দেয়।

তন্নি : হাসছো কেন ? তোমরা এই বাড়িতে আসার পর একটা ফোন ও দেও নি। শুধু বাবা- মা কে ফোন দিয়ে বলেছো ওরা খেয়েছে ঘুমিয়েছে কিনা। আমাদের সাথে একটুও কথা বলো নি।
মেঘ : ঠিকাছে বাবা এই জন্য এতো অভিমান ।
এই বলে মেঘ দুজনকে জড়িয়ে ধরলো । তখনি ইমরান সাহেব আর মৌমিতা বেগম এসে তাদের পাশে বসলো । ইমরান সাহেব কে দেখে অহনা আর মেঘ দুজনিই জড়িয়ে ধরলো । তা দেখে মৌমিতা বেগম বলে উঠলো,

মৌমিতা : বাবা কে পেয়ে আমাকে তো ভুলেই গেছিস তোরা । ( কিছুক্ষণ পর আবার বলে উঠে ) মৌমিতা বেগম : আর একটা কথা ছিলো আমায় ক্ষমা করে দিবি মেঘ । আমি জানি আমার পাপের ক্ষমা হয় না । কিন্তু বিশ্বাস কর আমি তোকে কোনো সময় খারাপ চোখে দেখি নি। আমি ভাবতাম তোর জন্য তোর মা মারা গেছে। তোর মাকে আমি নিজের বোনের মতো দেখেছি । কিন্তু আমি বুঝতে পেরেছি এতে তোর কোনো দোষ নেই। আমায় একটিবারের জন্য মাফ করে দে । ( মেঘকে জড়িয়ে ধরে )

#তুমি_এসেছিলে_বলে
পর্ব : ১১
#নাদিয়া_আক্তার_সিয়া

মৌমিতা : বাবা কে পেয়ে আমাকে তো ভুলেই গেছিস তোরা । ( কিছুক্ষণ পর আবার বলে উঠে ) মৌমিতা বেগম : আর একটা কথা ছিলো আমায় ক্ষমা করে দিবি মেঘ । আমি জানি আমার পাপের ক্ষমা হয় না । কিন্তু বিশ্বাস কর আমি তোকে কোনো সময় খারাপ চোখে দেখি নি। আমি ভাবতাম তোর জন্য তোর মা মারা গেছে। তোর মাকে আমি নিজের বোনের মতো দেখেছি । কিন্তু আমি বুঝতে পেরেছি এতে তোর কোনো দোষ নেই। আমায় একটিবারের জন্য মাফ করে দে । ( মেঘকে জড়িয়ে ধরে )

মেঘ মৌমিতা বেগমের কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনছিলো । মেঘ মৌমিতা বেগম কে তার মায়ের চোখেই দেখে এসেছে আজ পর্যন্ত । সে নিজেও জানে মৌমিতা বেগম দুই একটা কটু কথা শুনালেও কখনই তার গায়ে হাত তোলে নিই বা অবহেলা করে নিই । সেও মেঘকেও নিজের মেয়েদের মতোই ভালবেসেছে কিন্তু প্রকাশ করে নিই । মেঘ কলেজে যাওয়ার সময়ও কোনো কাজ করার আগেই উঠে দেখতো সবকিছু আগে থেকেই করা হয়ে গেছে । অন্নি, তন্নি কে বলতে বারণ করলেও সে দেখেছে তার মামি তার জন্য টিফিন আর কিছু টাকা লুকিয়ে অন্নি, তন্নি কে বেগ এ রাখতে বলেছে । সেই মানুষটা তার সামনে নিজেকে খারাপ প্রকাশ করতে চেয়েছে কিন্তু ভিতর থেকে তাকে প্রচুর ভালোবেসেছে । তখনি অহনার ডাকে মেঘ ভাবনার জগৎ থেকে ফিরে এলো ,

অহনা : মাকে ক্ষমা করে দে মেঘ। সে তার ভুল বুঝতে পেরেছে । সে তোকে নিজের মেয়ের মতোই ভালোবেশেছে । হয়তো তোকে খারাপ লাগানোর জন্য কিছু কটূ কথা শুনিয়েছে । কিন্তু বিশ্বাস কর সে সবসময় বলতো তোর দিকে যেন খেয়াল রাখি ।

অহনার কথা শেষ হতেই মেঘ বললো মৌমিতা বেগমের উদ্দেশ্যে বললো ,
মেঘ : মামি বিশ্বাস করো আমি তোমাকে কখনি খারাপ চোখে দেখি নিই । তোমার মধ্যে নিজের মা কে খুজে পেয়েছি । তোমাকে আমার থেকে ক্ষমা চাইতে হবে না । আমি তোমার ঋণ কোনো দিনও শোধ করতে পারব না । এসব বলে আমার ঋণের বোঝা তুমি আরও বাড়িয়ে দিচ্ছ ।

এই বলে মেঘ মৌমিতা বেগমকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলো । মৌমিতা বেগমও তাকে পরম যত্নে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো ,

মৌমিতা বেগম : কান্না করছে কেনো আমার লক্ষী মেয়েটা । কোনো মেয়ে তার খুশির দিনে কান্না করলে কি কোনো মায়ের ভালো লাগে । কান্না থামাও নাহলে কিন্তু আমার বকা খাবে । ( হাসি দিয়ে )
ইমরান সাহেব : তোমাদের এভাবে দেখার ইচ্ছা আজ তাহলে পুরণ হলো । (মেঘ মাথায় হাত দিয়ে)
তাদের এভাবে দেখে অন্নি বলে উঠে ,

অন্নি : এক মেয়েকেই আদর করবে আমরা কি পর হয়ে গেছি নাকি । ( অভিমান করে )

এই কথা শুনে মেঘ , ইমরান সাহেব আর মৌমিতা বেগম হেসে দেয়। আর তার ৪ মেয়েকে একসাথে জড়িয়ে ধরে। তখনি অন্নি আবার বলে উঠে ,

অন্নি : এই খুশিতে একটা পিক তো তোলাই যায় ।

অন্নির মতামতে সবাই সম্মতি জানায় আর তারা একটা ফেমিলি ফটো তোলে ।

অন্নি : বাহ ! দারুন হয়েছে । এটা আমি ফ্রেম করে ঘরে টানিয়ে রাখবো ।

তখনি মৌমিতা বেগম আর ইমরান সাহেব অহনা আর মেঘকে বলে মিনহাজ সাহেব আর অরিন বেগমের সাথে দেখা করতে চলে যায় । সঙ্গে সঙ্গে হুল্লোড় পার্টির আগোমন ঘটে । তারা আসার পর সিয়াম বলে উঠে ,

সিয়াম : তো ভাবীরা আমাদের আপনার বোনদের সাথে একটু আলাপ করিয়া দেন । আমরাও একটু চিনি-জানি এই রমণীদের পরিচয় ।

সিয়ামের কথা শুনে অন্নি বলে উঠে ,

অন্নি : আমি থাকতে আমার বোন কেনো কষ্ট করবে বিয়াই সাহেব । চলুন আমরা সবাই একটা জায়গায় বসে পরিচয় হয়ে নিই ।

অন্নির কথা মতো সবাই অন্য দিকে চলে যায়। শুধু সিমরান আর মেহসান থেকে যায় । তাদের মেঘ আর অহনাদের কোনো সমস্যা হয় কিনা সেটা দেখার জন্য থেকে যেতে হয় ।

মেহসান কে দেখে মেঘ আর অহনা বলে উঠে , ” মেহসান তোমাকে সকাল থেকে দেখি নিই । কোথায় ছিলে ” ?

সিমরান : আসলে ওর বেশি চকলেট খাওয়ার জন্য পাতলা পায়খানা হয়েছে । সো ও সারাদিন রুম থেকে ওয়াশরুম এ ওয়াশরুম থেকে রুম এ আসছিলো আর যাচ্ছিলো । ( একটি মিথ্যে হাসি দিয়ে )

মেঘ : ওহ আমাকে তো কেউ বলো নিই ?

সিমরান : সিরিয়াস কিছু না। Don’t worry .

মেহসান : আসলে ভাবী শপিং মলে সিমরান আপু বলেছিলো যে আমার পাতলা পায়খানা হয়েছে ।
তাই তা এখন ভুগতে হচ্ছে । তাই বলে মিথ্যা কথা বলা মহাপাপ । এই যে আবার আরেকটা বললো এখন আমায় কষ্ট কাঠিন্যে ভুগতে হবে । ( নেকা কান্না করে )

মেহসানের কথা শেষ হতে না হতেই তার আবার টয়লেট পেয়ে গেলো আর সে একদৌড়ে উপরে চলে গেলো । তা দেখে সিমরান মেঘ আর অহনাকে উত্তেজিত হতে বারণ করে নিজেও মেহসানের পিছন পিছন দৌড় দিলো ।

তখনি আহতাব সেখানে উপস্থিত হলো। আর মেঘকে উদ্দেশ্য করে বললো ,

আহতাব : কেমন আছো শালিকা ? তোমার বর তো তোমাকে খুজে পুরো বেহাল ওই সামনে আমার আর মেহতাব এর স্টেজ করা হয়েছে তুমি ওখানে যাও আর আমি আর অহনা এই স্টেজ এ বসছি ।

আহতাবের কথা শুনে মেঘ খুশি হলো কিন্তু প্রকাশ করলো না। সে অহনাকে জড়িয়ে ধরে মেহতাবের স্টেজ এ রওনা হলো । তখনি আহতাব পিছন থেকে ধন্যবাদ দিলো । মেঘ পিছনে ফিরে তাকাতেই আহতাব আবার বলে উঠলো ,

আহতাব : আসলে আমি তোমাকে অন্য কারনে ধন্যবাদ দিচ্ছি যে তুমি মেহতাবের সাথে মানিয়ে নিয়েছো । তোমাদের মধ্যে কোনো ভুল বুঝাবুঝি নেই । আমি জানি আমার ভুলের ক্ষমা হয় না কিন্তু কি করবো বলো আমি অহনাকে নিজের জীবনের থেকেও বেশি ভালবাসি আর আমি এটাও চাই নি তোমার জীবন নষ্ট হোক । পারলে আমায় ক্ষমা করে দিও ।

আহতাবের কথা শুনে মেঘ একটা স্নিগ্ধকর হাসি দিয়ে বললো ,

মেঘ : জিজু আপনি কোনো ভুল করেন নি দয়া করে ক্ষমা চাইবেন না । আপনার জায়গায় আমি থাকলে একিই কাজ করতাম । তাই আমি চাই আপনি এই জন্য নিজেকে দায়ী মনে করবেন না প্লিজ । ( অনুরোধ করে )

মেঘের কথা শুনে আহতাব খুব খুশি হলো। সে প্রতিউত্তরে মেঘকে বললো ,

আহতাব : এই নাহলে আমার শালি । ঠিকাছে আমি তোমার কথা মানবো আমার একটা শর্ত আছে ।

মেঘ একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললো , ” ঠিকাছে জিজু বলুন কি শর্ত ?” ।

আহতাব বলে উঠলো ,

আহতাব : আমার তো নিজের আপন কোনো বোন নেই। সিমরান , শাম্মি , মিথিলা ওরা তো সবসময় থাকবে না খালামনির সাথে চলে যাবে । তাই আমি চাই আমার একটা বোন থাকুক । যে আমাকে ভাইয়া বলে ডাকবে । আমার কাছে আবদার করবে। আর কখনো কোনো কিছুর প্রয়োজন হলে নির্দিধায় বলবে । যদি না বলো আমি কিন্তু ভাববো তুমি আমাকে ভাই মনে করো না । ( সুন্দর একটা হাসি দিয়ে )

আহতাবের কথা শুনে মেঘ একটি মুচকি হাসি দিলো আর বললো ,

মেঘ : অবশ্যই বলবো ভাইয়া । আপনার বোন কিন্তু খুব আহ্লাদি সামলাতে পারবেন তো । ( মুচকি হাসি দিয়ে )

মেঘের কথা শুনে অহনা হেসে দিলো । আর আহতাব মেঘের মাথায় হাত রেখে মুচকি হাসি দিলো আর বললো ” আলবাত পারব ” । তারপর সে আহতাব আর অহনাকে বলে মেহতাবের কাছে চলে এলো । মেহতাব সেখানে বসে ফোন ঘাটছিলো । আর কিছু মেয়ে তার দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো । কিন্তু মেহতাবের সেদিকে খেয়াল নেই । মেহতাব ফোনের স্ক্রিন এর থেকে সামনে তাকাতেই মেঘ কে দেখতে পেলো । মেঘের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো ,

মেহতাব : তোমার আসতে এতো লেট কেনো হয়েছে ? ( রাগ দেখিয়ে )

মেঘ : আসলে ভাইয়ার সাথে কথা বলছিলাম ।

মেহতাব : ঠিকাছে বসো ।

এই বলে মেহতাব মেঘের হাত ধরে মেঘকে বসিয়ে দিলো । মেঘ বসে মেহতাবের উদ্দেশ্যে বললো ,

মেঘ : আপনার ফ্যান ক্লাব এর মেয়েরা আপনার দিকে তাকিয়ে আছে । তাদের সাথে কথা বলতে পারতেন । আমার জন্য কেনো অপেক্ষা করছিলেন ?

মেঘের কথা শুনে মেহতাব বাম দিকে তাকালো সত্তিই কিছু মেয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে । সে এই জিনিসটাও বুঝতে পারে যে মেঘের তা সয্য হচ্ছে না । তাই মেঘকে আরেকটু জ্বালাতে সে বললো ,

মেহতাব : আমি তো জানতাম না আমার ফ্যান ক্লাব এ এতো সুন্দরী মেয়েরা আছে । তাহলে বিয়েই করতাম না । ( দুষ্টু হাসি দিয়ে )

মেহতাবের কথা শুনে মেঘ অভিমান করে বললো ,

মেঘ : হুম। এখন তো ভালোই লাগবে । আমি তো আপনার কাছে পুরনো হয়ে গেছি । ( নিচু স্বরে )

মেঘের কথা শুনে মেহতাব মেঘের মাথা উচু করে চোখের সাথে চোখ মিলিয়ে মেঘের হাত তার বুকের বাম দিকে ধরে বললো ,

মেহতাব : তুমি কি জানো তুমি আমার জীবনে না এলে এই জীবনের মূল্য আমি কোনোদিনই বুঝতেই পারতাম না । রোজ সকালে তোমার সেই মায়া ভরা চেহারা না দেখলে আমার দিনই কাটতে চায় না । তোমার মুখের মায়া আমায় প্রতিদিন তোমার দিকে আকর্ষিত করে । তোমাকে নতুন করে পাওয়ার ইচ্ছে জাগ্রত করে । তুমি আমার জীবনের সাথে মিশে গেছো । তোমাকে ছাড়া একটা দিনও কল্পনা করতে পারি না । তুমি আমার আদুরে মায়াবিনী । ( মুচকি হাসি দিয়ে )

#তুমি_এসেছিলে_বলে
পর্ব : ১২
#নাদিয়া_আক্তার_সিয়া

মেঘের কথা শুনে মেহতাব মেঘের মাথা উচু করে চোখের সাথে চোখ মিলিয়ে মেঘের হাত তার বুকের বাম দিকে ধরে বললো ,

মেহতাব : তুমি কি জানো তুমি আমার জীবনে না এলে এই জীবনের মূল্য আমি কোনোদিনই বুঝতেই পারতাম না । রোজ সকালে তোমার সেই মায়া ভরা চেহারা না দেখলে আমার দিনই কাটতে চায় না । তোমার মুখের মায়া আমায় প্রতিদিন তোমার দিকে আকর্ষিত করে । তোমাকে নতুন করে পাওয়ার ইচ্ছে জাগ্রত করে । তুমি আমার জীবনের সাথে মিশে গেছো । তোমাকে ছাড়া একটা দিনও কল্পনা করতে পারি না । তুমি আমার আদুরে মায়াবিনী । ( মুচকি হাসি দিয়ে )

মেহতাবের এমন কথায় মেঘ কিছুটা ঘাবড়ে যায় । সেটা লক্ষ্য করে মেহতাব পরিস্থিতি সামাল দিতে আবার বলে উঠে ,

মেহতাব : রিল্যাক্স ঘাবড়ে যাবার কি হলো ? We are married and it’s normal . তোমার কি আমার কমপ্লিমেন্ট পছন্দ হয় নি ? ( ভ্রু কুচকে )

মেহতাবের কথা শুনে মেঘ বললো , “তেমন কিছু না এই প্রথমবার আপনার মুখে আমার প্রশংসা শুনেছি তাই হজম করতে একটু কষ্ট হয়ে গেলো ” (ইতস্ত করে)

“এটা জাস্ট ট্রেলার ছিলো এখনও অনেক কিছু বাকী । আমি তোমার মুখ থেকে ভালোবাসি কথাটা বলিয়ে ছাড়বো মিসেস মেহতাব চৌধুরি ” মনে মনে বললো মেহতাব ।

এতক্ষণ এই কথাগুলো সৌরভ আর মিথিলা লুকিয়ে লুকিয়ে শুনছিলো ।

“মিথু পাখি , এতো মেঘ না চাইতে তুফান” সৌরভ মিথিলা কে বললো ।

“সৌরভ তুমি ঠিক বলেছো । কিন্তু হঠাৎ কি এমন হলো মেহতাব ভাইয়া কাহিনি টা উল্টে দিলো । আই থিঙ্ক মেবি টিনা ওই মেহতাব ভাইয়া কে কিছু বলেছে ” মিথিলা বললো ।

“যাই বলুক না কেনো ভালোই হয়েছে, চলো যাই ।”

এই বলে সৌরভ মাইক নিয়ে মেহতাব , মেঘ আর আহতাব আর অহনা কে কাপল ডান্স এর জন্য স্টেজ এ ডাকলো ।

মেঘ যেতে না চাইলেও মেহতাবের মান রাখতে তাকে যেতে হয় । তখনি গান চালু করে দেয় সৌরভ । মেহতাবদের সাথে আরো কিছু কাপল যোগ দেয় । সুযোগ বুঝে মিথিলা আর সৌরভ ও ডান্স ফ্লর এ নেমে যায় । সবাই ইঞ্জয় করতে থাকে। গানের সাথে তাল মিলিয়ে।

ভালোবেসে এইবার আয় কাছে তুই ,
সব ভুলে একবার আয় তোকে ছুঁই
ভালোবেসে দুজনে ডুবেছি অতল ,
আয় তবে এইবার ভালোবাসি চল ।

কে আছে বল তোরি মতো এমন ,
কে বোঝে বল , বোঝে আমার এ মন ,,

ভালোবেসে এইবার আয় কাছে তুই ,
সব ভুলে একবার আয় তোকে ছুঁই
ভালোবেসে দুজনে ডুবেছি অতল ,
আয় তবে এইবার ভালোবাসি চল ।

( বাকীটুকু নিজ দায়িত্বে দেখে নেবেন )

মেহতাব মেঘের সাথে ডান্স করার পুরোটা সময় মেঘের দিকে তাকিয়ে ছিলো । এতে মেঘ অবশ্য লজ্জা পেয়েছে । কিন্তু তার ভালোবাসার মানুষটা তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে । এটি একটি আলাদা অনুভতি । এইসব যখন মেঘ ভাবছিলো তখন হঠাৎ মেহতাব বলে উঠলো ,

মেহতাব : লজ্জা পাচ্ছ নাকি? ( মুচকি হেসে )

মেহতাবের কথায় মেঘ লজ্জায় যেন কুকরে যায় । কিন্তু নিজেকে সামলে বলে উঠে ,

মেঘ : অনেক লোক তো তাই একটু প্রবলেম হচ্ছে।

মেহতাব : তোমার অসুবিধা হলে থেমে যাই ?

মেঘ : প্রথম একটু সমস্যা হয়েছিলো এখন ঠিক আছি ।

এই বলে মেহতাব আর মেঘ পুরো ডান্স শেষ করে।
তারপর সবাই মিলে কথা বার্তা বলে । মেহতাব আর আহতাব গেস্টদের সাথে মেঘ আর অহনাকে পরিচয় করিয়ে দেয় । সবাই মিলে আনন্দ ফুর্তি করে রিসিপশন পার্টি শেষ করে । তারপর সব গেস্টরা চলে যায় । মেঘ আর অহনাদের পরিবারও চলে যায় । অরিন বেগম আর মিনহাজ চৌধুরি তাদের অনেক জোর করেছিলো থাকার জন্য কিন্তু তারা থাকে না । সবাই চলে যাবার পর। যে যে যার যার রুমে ফ্রেশ হতে চলে যায় ।

মেহতাব রুম এ গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসেছে । কিন্তু মেঘের দেখা নেই । তাই সে মেঘকে ঘুজতে বের হতেই যাবে। তখনি টিনা হুট করে রুম এ ডুকে পরে । আর মেহতাব কে জড়িয়ে ধরে বলে ,

টিনা ( মেহতাবের ফুপাতো বোন ): আই মিস ইউ বেবি ।

টিনা কে এভাবে জড়িয়ে ধরতে দেখে মেহতাব ভীষণ রেগে যায় । সে এক ধাক্কায় টিনাকে দূরে সরিয়ে দেয় । টিনা তখনি একটা শয়তানি হাসি দিয়ে বলে ,

টিনা : আর কতো দূরে থাকবে আমার থেকে । সারাজীবন তো আমার সাথেই কাটাতে হবে । যেদিন ফার্স্ট তোমাকে লান্ডানে দেখে ছিলাম । তোমার প্রেমে পরে গিয়ে ছিলাম । Believe me baby i love you so much .

টিনার কথা শুনে মেহতাব নিজের রাগ কে কন্ট্রোল করে বলে ,

মেহতাব : টিনা আমি কি কোনোদিনও বলেছি আমিও সেম ফিল করি? তুমি আমার ফুপির মেয়ে তাই তোমাকে এতো দিন সয্য করেছি । কিন্তু তুমি সুধরাবার নোও ।

টিনা : এভাবে কেনো বলছো মেহতাব ওই মেয়েটার জন্য তাই না। ওই মেয়েটা তোমাকে ভুংভাং বুঝিয়েছে । I’ll kill her bloody bi*tch .

মেহতাব এবার আর নিজের রাগকে কন্ট্রোল করতে পারে না । আর টিনার গালে সজোরে একটা থাপ্পর বসিয়ে দেয় । আর টিনাকে উদ্দেশ্যে করে বলে ,

মেহতাব : নেক্সট টাইম বলার আগে সেকেন্ড বার ভাববে কার সম্পর্কে বলছো । আমি মেয়েদের গায়ে হাত তুলিনি কোনোদিন । বাট তোমার বুঝার মতো সেন্স নেই তুমি তো নির্বোধ । Get lost from here . ( রাগ দেখিয়ে )

মেহতাবের কথা শুনে টিনা বেরতেই যাবে তখনি তার মেঘের সাথে ধাক্কা লাগে । সে মেঘের দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে চলে যায় । কিন্তু মেঘের মাথাতেই ঢোকে না কি এমন করলো সে । সে রুম এ ডুকে মেহতাবকে রুমের কোথাও দেখতে পায় না । বারান্দায় গিয়ে দেখেতেই মেহতাবকে দোলনায় বসে থাকতে দেখতে পায় । তাই সেও মেহতাবের পাশে বসে পরে । আর বলে ওঠে ,

মেঘ : কিছু কি হয়েছে ?

মেঘের গলা শুনে সে পাশে মেঘকে বসে থাকতে দেখে মেঘকে জড়িয়ে ধরে । আর বলে উঠে ,

মেহতাব : একটা কথা বলবো ?

মেঘ : হুম বলুন ।

মেহতাব : তুমি কোনোদিনও আমায় ছেড়ে চলে যাবে না তো ?

মেহতাবের এমন প্রশ্নে মেঘ কিছুটা অবাক হয় । কিন্তু নিজেকে সামাল দিয়ে বলে ,

মেঘ : হঠাৎ এই প্রশ্ন ?

মেহতাব : আগে জবাব দেও । যাবেনা তো আমায় ছেড়ে ?

মেঘ : ঠিকাছে যাবো না ।

এবার মেহতাব একটা সস্তির নিশ্বাস ফেলে । মেঘকে ছেড়ে দিয়ে মেঘের কোলে হেলান দিয়ে পা দুটো দোলনায় তুলে আকাশের দিকে তাকায় ।

মেহতাব কে এমন করতে দেখে মেঘ একটা মুচকি হাসি দিয়ে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় । আর তারা দুজনেই কখন ঘুমের দেশে তলিয়ে যায় কেউ টেরও পায় না । ভোরের আলো চোখে পরতেই মেহতাব আর মেঘ দুজনেরিই ঘুম ভেঙে যায় । মেঘ ভাবে মেহতাব এখনও ঘুমাচ্ছে তাই সে মেহতাবের কপালে আলতো করে একটা চুমু এঁকে দেয় । মেহতাব টের পেলেও বুঝতে দেয় না । মেঘ মেহতাবকে ডাকতে যাবে । তখনি মেহতাব মেঘকে আরো আস্টেপৃস্টে জড়িয়ে ধরে । এবার দরজায় ঠোক ঠোক আওয়াজে দরজা খুলতে মেঘ উঠতেই যাবে । তখনি মেহতাব মেঘের হাত ধরে তাকে টেনে নিজের কোলে বসিয়ে দেয় । মেহতাবের এমন আচমকা টান দেওয়াতে মেঘ কিছুটা ভয় পেয়ে যায় ।
মেঘকে এমন ভয় পেতে দেখে মেহতাব মুচকি হেসে দেয় । এতে মেঘ আরো বেশি রেগে যায় । আর বলে ,

মেঘ : ছাড়ুন আমায় দরজা খুলতে হবে । ( রাগ করে )

মেহতাব : বাবা তুমি রাগ করতে পারো নাকি আমি তো ভেবেছিলাম তুমি শুধু লজ্জা পেতে পারো । ( দুষ্টু হাসি দিয়ে )

মেহতাবের এমন কথার প্রতিউত্তরে মেঘ বলে উঠে,

মেঘ : আপনি লজ্জায় ফেলে দেন তাই ।

মেহতাব : ওহ তাই বুঝি তাহলে আরেকটু ফেলি ।

এই বলে মেহতাব মেঘের কাছাকাছি আসতে থাকে । তখনি মেহতাবের ফোন আসে । এই সুযোগে মেঘ নিজেকে ছাড়িয়ে দৌড় দেয় । তা দেখে মেহতাব একটা মুচকি হাসি দিয়ে ফোন রিসিভ করে ।

নিচে সবাই বসে নাশতা করছিলো । মেঘ আর মেহতাব ও সেখানে উপস্থিত হয় । অরিন বেগম ওদের বসতে বলেন । কিন্তু মেঘ অরিন বেগমকে নিজের জায়গায় বসিয়ে দিয়ে নিজে আর অহনা মিলে সবাইকে সার্ভ করে দিতে থাকে । তা দেখে অরিন বেগম খুব খুশি হন । যে তারা নিজেদের সংসারের হাল ধরতে শিখেছে ।

সবাই নাশতা খেয়ে উঠতেই । মেহতাবের বন্ধুরা অরিন বেগম আর মিনহাজ চৌধুরি কে বলে ,

সৌরভ : আন্টি আজকেই আমরা ফিরা যামু । মেহতাবের বিয়ার সব অনুষ্ঠান ও শেষ । আর থাকা পসিবেল না ।

সৌরভের কথা শুনে অরিন বেগম বলে ,

অরিন বেগম : সে কি বাবা । না আজ না আরো দুই দিন থাকবে তারপর। তোমাদের ভালো করে দেখার সুযোগ পাই নি । আজ যেও না বাবা। মেহতাব ওদের থাকতে বল ।

মেহতাব অরিন বেগমের কথা শুনে সৌরভদের বলে ,

মেহতাব : তোদের তো কোনো কাজ নেই যে ছুটি নিয়ে প্রবলেম । সো ফিরে গিয়ে কি করবি আর কয়দিন থেকে যা আমি আর তোরা একসাথে লন্ডন এ ব্যাক করবো । ( সৌরভ এবং মেহতাব লন্ডনে বিজনেস হোল্ডারস আর বাকিরা ওই কোম্পানি তে উচ্চ পদে জব করে )

সৌরভ : ঠিকাছে আন্টি যেহুতু ভালো কইরা দেখেন নাই । তাই থাইকা গেলাম ।

সামির সৌরভের কথা শুনে কানে ফিসফিস করে বলে ,

সামির : সৌরভ যাচ্ছে না তার মিঠু পাখির টানে । প্রমান করা লাগবে না নিশ্চই সৌরভ ডার্লিং ।

এই কথা বলে সামির হেসে দেয় । সামিরের কথা শুনে সবাই না জেনেই মজা করে হেসে দেয় । কিন্তু সৌরভ আর সামির তা দেখে পরিস্থিতি সামাল দিতে আরো জোরে হেসে উড়িয়ে দেয়।

চলবে।

তুমি এসেছিলে বলে পর্ব-৭+৮+৯

0

#তুমি_এসেছিলে_বলে
পর্ব : ৭
#নাদিয়া_আক্তার_সিয়া

সৌরভ : বাহ ! তোর বৌ তো দেখছি খাটি সোনা । অন্য কেউ হইলে বলতো আপনার ইচ্ছা মা আপনি যা করবেন ভালোর জন্যই করবেন ।

মেহতাব এই কথার প্রতিউত্তরে কিছু বললো না শুধু মুচকি একটা হাসি দিলো ।

মেঘ ড্রেসিং টেবিল এর সামনে বসে রেডি হচ্ছিলো শপিং এর জন্য যাবে বলে । সে একটা নীল কালারের ৩ পিছ পরে নিয়ে চুল ঠিক করছিলো । মেহতাব রুমে ঢোকার সময় মেঘ কে রেডি হতে দেখে বললো।

মেহতাব : কোথায় যাচ্ছো নাকি?

মেঘ : হুম । আমাদের আর অহনা আপুদের রিসিপশন এর জন্য টুকটাক কিছু কেনা কাটা রয়েছে আর ড্রেস কিনতে হবে । তাই আমি মেহসান , অহনা আপু , সিমরান , মিথিলা , শাম্মি আর মা যাচ্ছি শপিং করতে।

মেহতাব : ঠিকাছে । আমি গাড়িতে গিয়ে বসছি তোমারা রেডি হয়ে নেও। ওখানে আমার একটু কাজ আছে যাওয়ার সময় তোমাদের নামিয়ে দিয়ে আসবো ।

মেঘ : আপনি রেডি হবেন না?

মেহতাব : আমার রেডি হতে জাস্ট ১ মিনিট লাগবে আর মেয়েরা ছেলেদের থেকে আগে কোনো সময়ই রেডি হতে পরে না বরং তিন গুন বেশি সময়ের দরকার পরে তাদের ।

মেঘ : এমন ভাবে লেকচার দিচ্ছে যেন আমি সারাদিন লাগিয়ে দিবো । ( মনে মনে বললো )

মেহতাব : মনে মনে এতো কথা বললে সারাদিন না সারারাতও লেগে যেতে পারে । Be quick .

এই বলে মেহতাব একটা তোয়ালে নিয়ে ওয়াশরুম এ ডুকে যায়।

মেঘ : এমন ভাবে কথা গুলো বললেন যেন আমি ওনার পা ধরেছি ওনাকে সাথে নিয়ে যাওয়ার জন্য। ( মনে মনে বললো )

নিচে সবাই রেডি হয়ে গাড়িতে গিয়ে বসে পড়েছে কিন্তু মেঘ আর মেহতাব এর কোনো পাত্তাই পাওয়া যাচ্ছে না।

( মেহতাব এর রুম এ )

মেহতাব : কি বলে ছিলাম মেয়েদের একটু সময় বেশি লাগে । It doesn’t matter .

এই কথা শুনে মেঘ পিছনে তাকালো মেহতাব কে সে যতবার দেখে যেনো চোখই সরাতে ইচ্ছে করে না আজও তার বিপরীত নয় । সে মেঘ এর সাথে মেচিং করে নীল শার্ট আর কালো জিন্স পড়েছে । যাকে বলে এক কথায় ফাটাফাটি লাগছে । বিবাহিত ১০ বাচ্চার বাবা হলেও তাকে বিয়ে করার জন্য মেয়েদের কমতি হবে না যেনো আরো লাইন লেগে যাবে ।

এই কথা ভাবতে ভাবতে মেঘ নিজের মাথায় একটা থাপ্পড় মারলো ।

মেঘ : ( নিজেকে শান্ত করে বললো ) মেঘ মেহতাবের সামনে নিজেকে দুর্বল প্রকাশ করা যাবে না ।

মেহতাব : এভাবে তাকিয়ে থাকলে আমি কিন্তু নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারব না তোমায় অ্যাডভান্স এ এলার্ট করে দিলাম । ( টি শার্ট এর হাতা ফোল্ড করতে করতে বললো )

মেঘ : আপনি দিন দিন অসভ্য হয়ে যাচ্ছেন।

মেহতাব : এখনো তো ট্রেলারই দেখলে না । না দেখেই আমাকে অসভ্য বলছো । আমি আবার আমার সম্পর্কে মিথ্যা অপবাদ টোলেরেট করতে পারি না । ( সয়তানি হাসি দিয়ে )

এই বলে মেহতাব মেঘের কাছে এসে একটানে মেঘ কে কাছে এনে মেঘের কোমড় জড়িয়ে ধরলো আরেক হাত দিয়ে মুখে পরে থাকা চুল গুলো পরম যত্নে আলতো হাতে সরিয়ে দিলো । মেহতাবের প্রতিটি স্পর্শে মেঘ কেপে কেপে উঠ ছিলো । এই দেখে মেহতাব মুচকি হেসে বললো , ” এতো কাপকাপির কি আছে আমি তো আর অন্য কেউ নই । নিজের বিয়ে করা বৌ কে ছুলে অসভ্যতা হয় বলে আমি মনে করি না । আর এটা কোনো ক্রাইমও নয় । সো ক্যান আই কিস ইউ ?

মেঘ অবাকের উচ্চসীমা থেকে পরলো মেহতাবের শেষের কথাটা শুনে । কিন্তু সে প্রতিউত্তরে কিছু বললো না ।

মেহতাব : আমি আমার অ্যানসার পেয়ে গেছি।

এই বলে মেহতাব মেঘের আরো কাছাকাছি চলে আসে ।
মেহসান : ভাইয়া তোমাদের নিচে ডাকছে এতো লেট কেনো করছো । ( মেহসান ফোনে গেম খেলছিলও তখন তাই সে ফোন এর স্ক্রিন এর দিকে তাকিয়ে ছিলো )

মেহসান এর আওয়াজ শুনে মেহতাব মেঘের থেকে বেশ খানিক টা দুরে গিয়ে দাড়ালো ।

মেহসান এবার ফোন এর স্ক্রিনের থেকে মাথা তুলে তাদের দুজনের দিকে তাকালো । মেহতাবকে দেখেই সে বুঝতে পরলো সে ভুল টাইমে এসে পড়েছে । মেহতাব মেহসানের দিকে অগ্নিদৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে আছে।।

মেহসান : ভাইয়া তুমি এভাবে তাকিয়ে আছো কেন আমি তো শুধু তোমাদের ডাকার জন্য এসেছি সবাই নিচে ওয়েট করছে চলো। আর মেহু ভাবী তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেনো ?

মেহসানের প্রশ্ন শুনে মেঘ ইতস্ত বোধ করে বললো ” না তেমন কিছু না চলো আমরা নিচে যাই “।

এই বলে মেঘ এক কথায় বলতে গেলে মেহসানের হাত ধরে তারাতারি রুম থেকে বের হয়ে গেলো ।
মেহতাব তা দেখে হেসে ফেললো।

নিচে সিমরান , মিথিলা , শাম্মি সেজেগুজে দাড়িয়ে আছে আর বাকিরা গাড়িতে গিয়ে বসেছে।

সিমরান : ভাইয়া আর ভাবী কেনো আসছে না ?

মিথিলা : আমারও সেম প্রশ্ন এতো দেরি হচ্ছে কেন?

শাম্মি : হয়তো আমি জানি ।(লজ্জা মাখা হাসি দিয়ে)

মিথিলা : হুম জানি কি বলবি । তোর সব উল্টোপাল্টা কথা মাথায় ঘুরপাক খায় ।

মেহসান আর মেঘ সিঁড়ি দিয়ে নামছিলো । আর মেহতাব তাদের পিছনে আস্তে আস্তে আসছিল আর ফোন এ কোনো কাজ করছিলো ।
তাদের দেখতে পেয়ে মেঘ আর মেহতাব কে উদ্দেশ্য করে মিথিলা , শাম্মি , সিমরান একসাথে বলে উঠলো, বাহ ! ভাবী তোমার থেকে তো চোখ সরানোই মুস্কিল। আর ভাইয়া কে তো পুড়াই আগুন লাগছে ।

মেহতাব : হয়েছে গাড়িতে গিয়ে বস। I’m coming .

মেহতাবের কথা শুনে সবাই চুপ চাপ গাড়িতে গিয়ে বসে পরলো । সবাই গাড়িতে বসেছে শুধু মেঘ আর মেহসান ছাড়া । গাড়িতে জায়গা থাক সত্তেও সিমরান বললো।

সিমরান : ভাবী তুমি ভাইয়ার গাড়িতে এসো এখানে আর জায়গা খালি নেই।

শাম্মি : সিমরান আপু এখানে তো অনেক জায়গা খালি ।

এই কথা শুনে সিমরান শাম্মির দিকে রাগী চোখে তাকায় । শাম্মি বুঝতে পেরে কথা ঘুরিয়ে ফেলে ।

শাম্মি : ওহ না আসলেই জায়গা নেই ।

মেহসান : তাহলে আমিও ভাইয়া ভাবীর সাথে যাই ।

মিথিলা : তোর মতো শিশুদের জায়গা এখানে আছে । ভাবী মেহতাব ভাইয়ার সাথে আসুক ।

এই কথা বলতে দেরি কিন্তু কাজ করতে দেরি নেই । তারা মেহসানের মাথায় চাটি মেরে গাড়িতে উঠিয়ে নেয় ।

মেহসান : আমাকে কি খেলনা পেয়েছো একবার এভাবে নয়তো ওভাবে কন্ট্রোল করছো ।

সিমরান : তুই নিজেকে তো সমস্যার অবসান মনে করিস তাহলে এই ব্যাপারটা বুঝতে এতো দেরি হলো কেনো ।

মেহসান : কোন ব্যাপার ? ওহ বুঝতে পেরেছি ।( মুচকি হেসে )

সিমরান : যাক এই গাধাটাকে বুঝানোর দরকার পরে নি ।( রাগ দেখিয়ে )

কিছুক্ষণ পর মেহতাব গাড়ির চাবি নিয়ে আর চোখে সানগ্লাস পরে বেরিয়ে আসলো।
মেহতাব কে দেখে মেঘ মনে মনে বললো ,

মেঘ : ওনাকে দেখলে বুকের ভিতরে দুপ দুপ আওয়াজটা বেড়ে যায় কেনো ? আমি কি ওনাকে ভালোবেসে ফেলেছি ?

মেহতাব : এই যে মিস কোথায় থমকে গেলে যাবে না নাকি ? কিভাবে যেতে চাও গাড়িতে নাকি নৌকা লাগবে ?

মেহতাবের কথা শুনে মেঘ মুচকি হেসে বললো ” চলুন ”

#তুমি_এসেছিলে_বলে
পর্ব : ৮
#নাদিয়া_আক্তার_সিয়া

কিছুক্ষণ পর মেহতাব গাড়ির চাবি নিয়ে আর চোখে সানগ্লাস পরে বেরিয়ে আসলো ।
মেহতাব কে দেখে মেঘ মনে মনে বললো ,

মেঘ : ওনাকে দেখলে বুকের ভিতরে দুপ দুপ আওয়াজটা বেড়ে যায় কেনো ? আমি কি ওনাকে ভালোবেসে ফেলেছি ?

মেহতাব : এই যে মিস কোথায় থমকে গেলে । যাবে না নাকি ? কিভাবে যেতে চাও গাড়িতে নাকি নৌকা লাগবে ?

মেহতাবের কথা শুনে মেঘ মুচকি হেসে বললো ” চলুন ”

এই বলে দুজনেই গাড়িতে উঠে পরে । গাড়ি ড্রাইভ করতে থাকে মেহতাব আর তার দিকে এক নজরে মেঘ তাকিয়ে আছে ।

মেঘ : আমি কি সত্তি তাকে ভালোবেসে ফেলেছি ? কিন্তু সে কি আমাকে কোনো সময় ভালবাসার দৃষ্টিতে দেখেছে বা কখনো দেখবে । আমাকে তো সে শুধু দায়িত্বের চোখে দেখে। হয়ত বিয়ের সময় সে না আসলে আজ তার ভাগ্যে আরও ভালো কিছু থাকতো । আমি তার জীবনে বোঝা হয়ে থাকতাম না । ( মনে মনে বললো )

মেহতাব গাড়ির লুকিং মিরোর দিয়ে দেখলো মেঘ তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে । সেটা খেয়াল করে বললো ,

মেহতাব : আমাকে কি ভালোবেসে ফেলেছো নাকি?

মেহতাবের কথায় মেঘের হুশ ফিরলো । তার দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবলো ,

মেঘ : সে কি মনের কথা পরতে পারে নাকি?

মেহতাব : কি হলো বলছো না কেনো?

মেঘ নিজেকে স্বাভাবিক করে মেহতাবের দিকে তাকিয়ে বললো,

মেঘ : ইয়ে মানে আপনার হঠাৎ এই কথা মনে হলো কেনো ?

মেহতাব : তুমি যেভাবে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলে তাই ভাবলাম যে হতে পারে । ( মুচকি হেসে )

মেঘ : যদি বলি ভালবাসি তাহলে ভালবেসে কছে টেনে নেবেন নাকি আমার থেকে আরও অনেক দুরে চলে যাবেন যেখানে আপনাকে ধরা ছোয়া তো দুরের কথা দেখতেও পারব না । ( মনে মনে বললো )

মেহতাব : কি হলো ? Are you okay ?

মেঘ এই কথার প্রতিউত্তরে কিছু বললো না। শুধু মাথা নাড়িয়ে বললো সে ঠিক আছে ।

গাড়িটি অনেক বড় একটি শপিং মলের সামনে এসে দড়ালো । মেঘ গাড়ি থেকে নেমে পরলো সে বাড়ি থেকে খুশি মনে বের হলেও এখন তার আর ভালো লাগছে না । মেহতাব গাড়ি থেকে নেমে মেঘ কে নিয়ে সিমরান , মেহসান আর বাকি সবার দিকে এগিয়ে গেলো। পাশেই ৫ টা ছেলে সিগারেট টান ছিলো । একটি ছেলে মেঘ কে দেখে বলে উঠলো , ” মামু ওই নীল পরীডারে দেখ সেই ফিগার কিন্তু ” এই কথা শুনে আরেকটা ছেলে বলে উঠলো , ” একদম খাটি কথা আর বাকি ৪ ডা মালও ফ্রি ”

এই কথা গুলো মেঘ , মেহতাব সহ বাকি সবাইদের কানে পৌছালো । মেহতাব কে শান্ত থাকতে দেখে মেঘ মনে মনে বললো ” এখন উনি কি ওদের মারবেন নাকি হিরোদের মতো ”

মেঘের চিন্তা ভাবনায় পানি ঢেলে দিয়ে মেহতাব বললো ” মা আমার একটা গুরুত্ত পুর্ণ কাজ আছে আমায় জরুরি যেতে হবে । Take care ”

এই বলে মেহতাব সেখান থেকে চলে গেলো । মেঘ, অহনা আর অরিন বেগম বুঝতে না পারলেও হুল্লোড় গ্যাং এর সদস্যরা আচ করতে পারলো মেহতাব কিছুতো একটা করবেই । তারা যানে মেহতাব নিজের ইমোশন সো করতে পছন্দ করে না । তার চুপ থাকাই ঝড়ের পূর্বাভাস ।

অরিন বেগম : চলো আমরা ভিতরে যাই।

এই বলে মেঘ , অহনা আর অরিন বেগম চলে গেলো কিন্তু মিথিলা, সিমরান, শাম্মি আর মেহসান সেখানে এক কোনায় লুকিয়ে পরলো।

মিথিলা : তোরা কি সিওর যে মেহতাব ভাইয়া আসবে ?

শাম্মি : আমি তো ৩০০০ টাকা বাজিও ধরতে পারব ।

মেহসান : সিওর মানে ভাইয়া আসবেই দেইখো মিথু আপু ।

সিমরান : ওই তো ভাইয়া টি শার্ট এর হাতা ফোল্ড করতাছে । আর ব্লাক ঘড়ি টা গাড়িতে রেখে দিয়া আসছে ।

মেহসান : এম্বুলেন্স কল করো।

শাম্মি : কেনো?

মেহসান : ওই পচা লোক গুলারে বাচাই তে হইব নাইলে ভাইয়া ওগো ওই জায়গায় পুইতা থুইবো। আহারে….

মেহসান এর কথা শুনে সবাই হেসে দিলো ।

মেহতাব লোকগুলোর দিকে এগিয়ে বলতে লাগল,
মেহতাব : আপনাদের মধ্যে কে যেন নীলপরীর প্রশংসা করছিলো।

একটা লোক বলে উঠলো ” আমি করছি কি করবি রে তুই ”

লোকটার কথা শেষ হওয়ার আগেই মেহতাব তার থুতনিতে জোরে একটা ঘুসি মারলো । আর লোকটা একটু দুরে নিচে পরে গিয়ে বেহুশ হয়ে পরলো ।

মেহসান : বাহ বাহ ! এক ঘুষিতে ১ উইকেট।

বাকি ৪ টা ছেলে এটা দেখে হাতে ছুরি নিয়ে মেহতাবের দিকে আসতে লাগলো । মেহতাব সব কয়টাকে গালে আর ঠিক জায়গা মতো হাত দিয়ে আবার পা দিয়ে মারতে লাগলো ।

মেহতাব : আমার পরিবারের মেয়েদের আর আমার বৌ কে তোরা কুনজর দিবি আর আমি কিছু বলবো না। It’s your big mistake . ( রাগী স্বরে বললো )
এই বলে ওদের মারতে মারতে আধমরা করে ফেললো। এরপর আবার বললো ,

মেহতাব : এখানে আমার বোন বা স্ত্রীর জায়গায় অন্য কোনো মেয়ে থাকলে আমি একি কাজ করতাম । সো নেক্সট টাইম এগুলো দেখেলে জানে মেরে ফেলবো । তোরা এই মেহতাব চৌধুরি কে চিনিস না মাইন্ড ইট ।

সব ছেলেগুলো মেহতাবের পায়ে ধরে ক্ষমা চাইলো ।

মেহতাব : Now go from here . আমি কাউন্ট ডাউন শুরু করছি 1 , 2 ..3 শোনার আগেই সবাই সেখান থেকে এক দৌড় দিয়ে পালিয়ে গেলো ।

মেহতাব কে দেখে সব মেয়েরা মুগ্ধ দৃষ্টি তে তাকিয়ে আছে। তার হ্যান্ডসামনেস তার কিলার এটিটিউড দেখে ।

এইসব দেখে হুল্লোড় গ্যাং বলে উঠলো ,

সিমরান : OMG!

শাম্মি : ভাই আমার ৩০০০ টাকা কে দিবা দেও?

মেহসান : আপু টাকার কথা বাদ দেও তো । এতো সুন্দর সিন কোনো ফিল্মেও দেখছো । জাস্ট অসাধারণ !

মিথিলা : ভাবী দেখলে ভাইয়ার উপর ক্রাশ খাইতো ।

শাম্মি : হুম ঠিক ।

এই বলে ওরা সবাই শপিং মলের ভিতর ডুকে পরলো ।

অরিন বেগম , অহনা আর মেঘ শাড়ি চুজ করছিলো । মেহসানদের দেখে অরিন বেগম বললো ” কি রে কোথায় ছিলি?”

সবাই সবার দিকে চাওয়া চাওয়ি করে সিমরান বলে উঠলো , ” মেহসানের ওয়াশরুম এ যাওয়ার দরকার ছিলো ওর সকাল থেকে পাতলা পায়খানা হচ্ছে তাই বার বার টয়লেটে আসছিলো আর যাচ্ছিলো ”

মেহসান : বাহ ! সিমু আপু এই ছোটো ভাইয়ের সম্মান টা শেষমেষ এই শপিং মলের লোকদের কাছে বিক্রি করে দিলে । ( অভিমান করে )

সিমরান মেহসানের ইমোশোনাল ব্ল্যাকমেল এর কাছে হার মেনে বললো ” চুপ থাক দুইটা আইসক্রিম কিনে দিবো আর আজকের দিনের জন্য আনলিমিটেড ফোন “।

এই কথা শুনে মেহসানের মুখে গোল্ড মেডেল পাওয়ার মতো একটা উজ্জল হাসি ফুটে উঠলো।

সবার কেনা কাটা করা শেষ এখন শুধু মেঘ আর অহনার বাসায় পড়ার জন্য শাড়ি চুজ করছিলো। মেঘ একটা গোলাপি কালারের শাড়ি নিজের শরীরের উপর দিয়ে দেখছিল কেমন লাগে । তখনি মেহতাব শপ এ ডুকছিলো আর মেঘ কে দেখে তার দৃষ্টি সেখানে যায় এবং সে এক দৃষ্টিতে সেখানে তাকিয়ে ছিলো। মেঘ শাড়ির দাম দেখে শাড়ি টা রেখে দিলো মেহতাব সব সেখানে দাড়িয়ে দেখছিলো ।

মেহতাব কে লক্ষ্য করে অরিন বেগম বলে উঠলো,

অরিন বেগম : মেহতাব তুই এখানে ?

মেহতাব : হ্যাঁ আমার কাজ শেষ । তোমাদের শপিং শেষ করা শেষ হয়েছে ?

অরিন বেগম : হ্যাঁ এখন শুধু মেঘ এর জন্য শাড়ি চুজ করছি সবার শেষ কিন্তু মেঘ কিছুতেই কোনো শাড়ি নিতে চাচ্ছে না। কি করি বলতো ?

চলবে…….

#তুমি_এসেছিলে_বলে
পর্ব : ৯
#নাদিয়া_আক্তার_সিয়া

মেহতাব কে লক্ষ্য করে অরিন বেগম বলে উঠলো,

অরিন বেগম : মেহতাব তুই এখানে ?

মেহতাব : হ্যাঁ আমার কাজ শেষ । তোমাদের শপিং শেষ করা শেষ হয়েছে ?

অরিন বেগম : হ্যাঁ এখন শুধু মেঘ এর জন্য শাড়ি চুজ করছি সবার শেষ কিন্তু মেঘ কিছুতেই কোনো শাড়ি নিতে চাচ্ছে না। কি করি বলতো ?

মেঘ : মা আমার এখন কিছু লাগবে না । যদি প্রয়োজন হয় আমি নিজে চেয়ে নিবো ।

অরিন বেগম : কিন্তু মা ?

মেঘ : কোনো কিন্তু নয় । চলো মেহসান।

এই কথা বলে মেহসান আর বাকি সবাই মেঘের সাথে চলে গেলো । অরিন বেগম আর মেহতাব সেখানেই রয়ে গেলো ।

মেহতাব : মা আমি ওর জন্য শাড়ি কিনে নিবো। তুমি গিয়ে গাড়িতে বসো ।

অরিন বেগম : তুই পারবি ?

মেহতাব : মেঘ যেহেতু আমার রেসপনসিবিলিটি তাহলে ওর ভালো খারাপ দুটিই দেখার দায়িত্ব আমার । Don’t worry I’ll manage .

অরিন বেগম : ঠিকাছে আমি যাচ্ছি। তারাতাড়ি আসবি ।

মেহতাব : Ok . যাও তুমি ।

এই বলে অরিন বেগম সেখান থেকে চলে গেলো । আর মেহতাব শাড়ি চুজ করতে লাগলো । মেহতাব দশটি রঙের শাড়ি চুজ করলো সেগুলো ভিন্ন ধরনের বেগুনি , নীল , আকাশি , সবুজ , হলুদ , কমলা, লাল , গোলাপি , কালো , সাদা এই দশটি কালার বেছে নিলো ।

শপ কিপার বলে উঠলো ” বাহ ! স্যার আপনার ড্রেসিং সেন্স তো খুব ভালো । যে আপনার ওয়াইফ হবে সে খুব লাকি ” ।

এই কথার প্রতিউত্তরে মেহতাব একটি মুচকি হাসি দিলো । আর পেমেন্ট করে চলে এলো।

মেহতাব কাউকে না জানিয়ে একটি হীরের নেকলেসও চুজ করে মেঘের জন্য কিনে নিলো । কারন সে এখন পর্যন্ত মেঘ কে কিছু উপহার দেয় নি । তাদের বিয়েটা স্বাভাবিক ভাবে হয় নি তাই দেওয়ার সুযোগও পায়নি ।

এই দিকে বাইরে সবাই মেহতাবের জন্য অপেক্ষা করছিলো ।

সিমরান : খালামনি ভাইয়া এতো লেট কেনো করছে ?

অরিন বেগম : এক্ষুণি এসে পরবে তোরা গাড়িতে উঠে পর ।

শাম্মি : কিন্তু ভাইয়া করছে টা কি ?
মিথিলা : ওই তো ভাইয়া ।

মিথিলার কথা শুনে সবাই সামনে তাকালো ।

মেহতাব শপিং মল থেকে বের হচ্ছিলো আর কিছু মেয়ে তাকে দেখে কানে কানে কিছু বলছিলো । আর কিছু মেয়েতো মেহতাব এর সামনে এসে মেহতাব কিছু একটা বললো । কিন্তু মেহতাব কিছু একটা বলতেই তারা মন খারাপ করে চলে গেলো ।
এটা দেখে মেঘ প্রকাশ না করলেও মনে মনে খুশি হলো ।

মেহতাব : তোমরা গাড়িতে উঠে পরো।

মেহতাবের কথা মতো সবাই গাড়িতে উঠে পরলো।
মেঘ মেহতাবের পিছু পিছু মেহতাবের গাড়িতে উঠে পরলো। কারন তাকে জানতে হবে মেহতাব কি এমন বললো ? যে মেয়েগুলোর মুখ কালো হয়ে গিয়েছিলো ।

মেহতাব : বাহ ! আমার কথা মতো উঠে পরলে কোনো তর্ক না করে।

মেঘ : আপনি কি আমাকে ঝগড়ুটে বলার ট্রাই করছেন ? ( রেগে গিয়ে )

মেহতাব : I’m sorry . Actully I didn’t mean it you understand it wrongly .

এই বলে মেহতাব গাড়ি চালানো শুরু করলো । মেঘ : একটা কথা বলবো ?

মেহতাব : হুম , বলতে পরো । এতো ফর্মালিটির কি আছে ।

মেঘ : ওই মেয়েগুলো আপনাকে কি বলছিলো ?

মেহতাব : কোন মেয়ের কথা বলছো?

মেঘ : ওই যে শপিং মলের বাইরে।

মেহতাব : ওহ । Actully They ask me for my number .

মেঘ : তারপর আপনি কি বলেছিলেন ?

মেহতাব : আমি বেশি কিছু বলিনি জাস্ট বলেছি , ” If my wife give me the permission then I can give it to you ” ( যদি আমার স্ত্রী আমাকে অনুমতি দেয় তাহলে আমি তোমাকে আমার নাম্বার( it ) দিতে পারব )

মেহতাবের কথা শুনে মেঘ মেহতাবের থেকে মুখ ঘুরিয়ে মুচকি একটি হাসি দিলো। কিন্তু মেহতাবের থেকে তা আড়াল হলো না সে ঠিকিই লক্ষ্য করেছে। তাই মেহতাব বলে উঠলো ,

মেহতাব : তোমার হাসিটা খুব সুন্দর , এন্ড ইউ লুক সো বিউটিফুল হোয়েন ইউ স্মাইল ।

মেহতাবের কথায় মেঘ থতমত খেলো আর একপ্রকার লজ্জাও পেলো । কিন্তু প্রকাশ করলো না । আর গাড়ির কাচ দিয়ে বাইরের দৃশ্য দেখতে লাগলো ।

বাড়িতে পৌছে সবাই দেখলো বাড়ি খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে । চারিদিক ফুলের গন্ধে মো মো করছে । এতো বড় রাজ প্রাসাদের মতো বাড়ি এতো তাড়াতাড়ি সাজানো হবে কেউ তা ভাবতে পারেনি। আর এইদিকে মেহতাবের দাদী সৌরভ , রৌফ , সিয়াম , সামির আর সৌমকে দিয়ে স্টাফদের কাজ করাচ্ছে আর স্টাফরা তাদের হেল্প করছে । সৌরভ বিশাল বড় প্রবেশ দারে ফুল লাগাচ্ছে আর কপাল চাপরাচ্ছে । রৌফ ঝারবাতি গুলো দেয়ালের সাথে লাগাচ্ছে । সিয়াম ফুলের মালা গুলো সিঁড়িতে না লাগিয়ে গলায় পেচিয়ে নিজে সুইসাইড করার বৃথা চেষ্টা চালাচ্ছে । সামির আর সৌম দাদীর পা আরেকজন ঘাড় টিপে দিচ্ছে । সবার বেহাল দশা ।

এই সব দেখে সবাই হাসবে না কানবে তাই ভাবতে পারছেনা । মেহতাব কিছু না বলে সোফায় বসে পরলো । অরিন বেগম মেঘ আর অহনা মুখ টিপে হেসে নিজেদের রুম এ চলে গেলো । পার্লার থেকে মেঘ আর অহনাকে সাজাতে এসেছে তাই তারা আর সেখানে থাকলো না । আর অরিন বেগম টুক টাক কিছু কাজ সেরে নিতে সেও চলে গেলো আর যাওয়ার সময় মেহতাবের দাদিকে সঙ্গে করে রুম এ দিয়ে আসার জন্য নিয়ে গেলো । দাদী যাওয়ার সাথে সাথে সিমরান একটি ছবি তুলে নিলো আর সৌরভদের উদ্দেশ্য করে পিঞ্চ মেরে বললো ,

সিমরান : এতো হাল নয় যেন বেহাল ।

এতে সিয়াম রাগ করে বললো,

সিয়াম : চুপ থাক সিমের বিচি ।

এই কথা শুনে সিমরান রেগে বললো ,

সিমরান : আমি যদি সিমের বিচি হই তাইলে তুমি পটাশিয়াম ।

রৌফ : বেড়ে বলেছিস তো । তোদের কথা শুনে আমার কবিতা পাচ্ছে ।

শাম্মি : ওয়াশ রুম এ যাও । এইখানে তোমার পচা কবিতার গন্ধ শুনতে কেউ ইন্টারএস্টেট নই।

রৌফ : শাম্মি ভালো হয়ে যা ভালো হইতে জামাই লাগে না ।

মেহতাব : তোরা থামবি । সবাই যার যার রুম এ যা। ( রেগে গিয়ে )

মেহতাবের কথায় সৌরভ আর সৌমিক ছাড়া সবাই চলে গেলো ।

সৌম : ভাইয়া । Can I ask something ?

মেহতাব : হুম বল । কি জানতে চাস ?

সৌম : এতো শপিং কি ভাবির জন্য তুমি করেছো?

সৌরভ : হ্যাঁ বলো বন্ধু আমি তোমার নেংটা কালের বন্ধু হয়ে জানতে উচ্ছুক হচ্ছি ।

মেহতাব এর প্রতিউত্তরে কিছু না বলে সব শপিং ব্যাগ নিয়ে উপরে চলে গেলো ।

সৌরভ : বেডায় আমার নেংটা কালরে অপমান করলো ।

সৌম : থাক আমার বাল্য কালের ভাই। আসো কোলাকোলি করি ।

( মেহতাব এর রুম এ )

মেঘের সাজা প্রায় শেষ। মেঘ আয়নার সামনে দাড়িয়ে নিজেকে দেখছিলো। সে গোল্ডেন কালারের একটি কাতানের শাড়ি পড়েছে নিল কারুকার্য করা পাড়ের দিকে , নিল কালারের গর্জীয়াস ব্লাউজ। চোখে ঘন কাজল , ঠোটে রেড কালারের লিপস্টিক , চুলগুলো খোপা করা। মেঘ বেশি গর্জিয়াস মেকআপ পছন্দ করে না। তাই সে পার্লারের লোকদের কাছে সাজেনি । কিছুক্ষণ পর মেহতাব ফোন স্ক্রল করতে করতে রুম এ ঢুকলো আর মেঘ কে একনজর দেখে আবার নিচে চলে গেলো । এতে মেঘের খুব অভিমান হলো । তারই কিছুক্ষন এর মধ্যে মেহতাব আবার রুম এ প্রবেশ করলো হাতে কিছু একটা নিয়ে । আর সেটা গহনার বক্স থেকে খুলে নিজ হাতে মেঘের গলায় পরিয়ে দিলো । একটি হীরের হার দেখতে বেশ সুন্দর । দেখেই বোঝা যাচ্ছে অনেক দাম হবে । আর একটা বেলী ফুলের মালা চুলের খোপাই পরম যত্নে পরিয়ে দিলো । তারপর মেঘকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে আয়নার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো,

মেহতাব : এখন গেট আপ কমপ্লিট হয়েছে । (মেঘের ঘাড়ে মাথা রেখে)

মেঘ নিজের দিকে তাকিয়ে দেখলো সত্বি ওই গলার নেকলেস আর বেলী ফুলের মালা খোপায় দেওয়ার পর তাকে আগের চেয়ে বেশি সুন্দর লাগছে ।

চলবে………

তুমি এসেছিলে বলে পর্ব-৪+৫+৬

0

#তুমি_এসেছিলে_বলে
পর্ব : ৪
#নাদিয়া_আক্তার_সিয়া

( ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে মেঘ মেহতাব এর দিকে তাকালো সে কালো টি-শার্ট এর সাথে ব্ল্যাক ট্রাউজার পরেছে। তার থেকে চাইলেও চোখ সরাতে পারছে না মেঘ । )

মেহতাব : ওজু করেছো আসো একসাথে দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করে নিই ।
মেঘ : আচ্ছা ।

( এরপর দুজনে দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করে নেয়। )

মেঘ : ধন্যবাদ আমাদের পরিবারের সম্মান বাচানোর জন্য আমি আপনার কাছে আজীবন ঋণী হয়ে থাকব।

মেহতাব : If I want something from you will you accpet it .( যদি আমি তোমার থেকে কিছু চাই তুমি কি তা রাখবে )

মেঘ : আমার দ্বারা যদি সম্ভব হয় তাহলে আমি অবশ্যই রাখব।

মেহতাব : Actully Megh , আমি আর কয়েক দিন পর লন্ডন শিফট হচ্ছি ওখানে 2 বছর থাকব তারপর আবার আসব বিডি তে ফিরে আসব । তুমি হয়ত জানো না আমি ওখানে সব কিছু সেটেল করে এসেছি । আমি অনেক বড় জব পেয়েছি ওখানের সব চেয়ে জনপ্রিয় এন্ড পপুলার কোম্পানির CEO এটা একটা বিগ চান্স ফর মি ইউ নো টু প্রুভ মাইসেল্ফ । তুমি ডেডিকে একটু ম্যানেজ করতে পারবে । তুমি হয়ত ভাবছো যে আমার বাবার এতো বড় কোম্পানি থাকতে আমি লন্ডন কেন যেতে চাচ্ছি । আমি চাই না আমার ভাইয়ের সাথে বাবার কোম্পানির CEO হওয়ার জন্য কোনোরকম নিজেদের সম্পর্ক নষ্ট করতে । আমি আমার পরিবারকে নিজের থেকেও বেশি ভালবাসি ।
মেঘ : কিন্তু বাবা কি আমি বললে রাজি হবেন । আমাদের বিয়ে টা আর পাচটা স্বাভাবিক বিয়ের মতো হয় নি। আপনি এখন চলে গেলে অনেকে অনেক কিছু ভাববে। ( মনে মনে বলল ,আমার কথা কি আপনার মনে পরবে না । পরিবারকে এত ভালোবাসেন আমার জায়গা কি তাতে একটুও নেই ) । আমি কি কোনো ভুল করেছি তাই চলে যাচ্ছেন । আমাকে একটু সময় দিন প্লিজ যাবেন না।

মেহতাব : It’s not for your mistake.
Pls don’t be sorry . I need time too . আমিও চাই সবকিছু স্বাভাবিক করতে কিন্তু আমদের বিয়ে টা সময় এর উপর নির্ভর করা টা বেটার হবে । আমি জানি না কোনোদিনও তোমাকে ভালবাসতে পারব কিনা তাই আমার উপর কোনো প্রত্যাশা রেখো না । আমি তারাতারি আসতে পারব কিনা তাও জানি না। আর তাই বলে তোমার প্রতি আমার দায়িত্ত অবহেলা করব না। I’m not that kind of person .
( মেঘ মনে মনে আফসোস এর সুরে বলল, আমি সবার দায়িত্তই রয়ে গেলাম করো মনে কোনো জায়গা তৈরি করতে পারিনি আর পারব কিনা তাও জানি না )।

মেহতাব : আচ্ছা । তুমি বিছানায় ঘুমিয়ে পরো। আমার পেন্ডিং কিছু কাজ আছে আমি পরে ঘুমাব।

মেঘ : আপনি কথায় ঘুমাবেন?
মেহতাব : আমি মাঝে কোলবালিশ দিয়ে শুয়ে পরব । তোমার কি প্রবলেম হবে?
মেঘ : না প্রবলেম হবে না । ( এই বলে মেঘ বিছানায় শুয়ে পরল কিন্তু তার চোখ মেহতাব কে দেখছে আর মেহতাব তার বাকি কাজ গুলো সোফায় বসে করে নিচ্ছে )
মেঘ : সে কি তাকে কোনোদিন ভালবাসবে না কাছে টেনে মিষ্টি মিষ্টি কথা দুষ্টুমি করবে না সে তো বেশি কিছু চায় না মেহতাব এর মনে একটু জায়গা করে নিতে পারলেই হবে হয়ত এটাই প্রবিত্ৰ বন্ধন । আরে মেঘ তুই কি তার প্রেমে পরলি নাকি নো নো ওয়েক আপ মেঘ এতো দুর্বল হলে চলবে না । জে আমাকে ভালোবাসে না তার কোনো ভালবাসার কোনো মূল্য নেই সে শুধু তোর দায়িত্ব পালন করছে ।(মনে মনে)

( হল্লা পার্টি মেহতাব আর মেঘ এর কথা সব কিছু দরজার আড়াল থেকে শুনছিলো )
সৌরভ : এগুলি তো মানা যায় না।

সিয়াম : দোস্ত মেহতাব কে আটকাতে হইব যেভাবে হোক । আমি তোগো আগেই কইছিলাম মেহতাব লন্ডনে যাইব গা যেই পোলা মাইয়া গো দিকে তাকাই না হেয় একদিনেই বৌ এর সাথে লুতুরপুতুড় করব ।

সিমরান : ব্রো মাইন্ড ইউর ল্যাঙ্গুয়েজ লুতুরপুতুড় কি ধরনের ওয়ার্ড ।

সৌরভ : তোরা ঝগড়া থামা এগুলা ঠান্ডা মাথায় ভাবোন লাগত ।

সামির : অর্থাৎ ,ঠান্ডা মাথা = পেটের শান্তি = খাবার

সৌরভ : বাহ! আমার শিষ্য ।

সৌম : সৌরভ ভাইয়া তুমি না অঙ্ক তে ডাব্বা মারছিলা।

রৌফ : ভাই ডাব্বা না আন্ডা পারছিল।

( রৌফ এর কথা শুনে এবার সবাই মুখ টিপে হাসা শুরু করে দিয়েছে ) ।

শাম্মি : ওই আন্ডা নিশ্চয়ই সামির ভাইয়া খাই ছিল তাই তো বলি কইদিন ধরে পচা ডিমের গন্ধ পাচ্ছি সামির ভাইয়ার মুখ থেকে ।

সৌরভ : এতো সামি নয় যেন আসামি ।

শাম্মি : নাম কেন বিবৃতি করছো ভালো লাগে না ।

সিমরান : ভাইয়া মিথিলা আপু কই আর মেহসান ওদের ছাড়া প্লান ফুলফিল কিভাবে হবে ।

সৌরভ : মেহসান ঘুমায় মনে হয় । আর মিথিলা কই আসলেই চলতো ওরে দেইখাই আর মেহতাব এর লন্ডন যাওয়া আটকানোর প্লান করি।

( মিথিলা ডাইনিং টেবিলে বসে খাচ্ছিল )

রৌফ : মিথিলা কেন খাচ্ছ তুমি গ্রগ্রাসে গিলিয়া।

( এবার সবাই সজোরে হেসে দিল ) ।

মিথিলা : মাথা করিতেছি ঠান্ডা ডিসটার্ব করিয়েন না পারেন গিয়া আন্ডা ।

সৌরভ : এই কাজ তো অর না এই কাজ তো আমার ওহে বালিকা ।

সিমরান : এখানে পাড়িয়েন না আন্ডা তাহলে দেবে দাদী আপনাকে ডান্ডা ।

সৌম : থামেন ভাইয়েরা বোনের আপনার চলিতেছেন কবিতার খাতা বুনিয়া ।

সামির : ছোটো বেলায় খেয়ে মায়ের হাতে গান্ডা খেয়েছিলাম আমি সৌরভের পারা আন্ডা ।

সিয়াম : কেন খাইতে গেলি আন্ডা তাই লজ্জার ভয়ে বলতে পারি না আমি পছন্দ করি পান্ডা ।

মেহসান : এই দোষে তোমরা দিলা আমার কাচা ঘুম টা ভাঙ্গিয়া তাই তো বলি আমি কেনো সপ্ন দেখছি জাগিয়া ।

( সবাই মেহসান এর কণ্ঠ শুনে চমকে গেল )

সিমরান : তুই কখন এলি ?

মেহসান : তোমাদের কবিতার ঠেলায় উঠতে হয়েছে । তোমরা সবাই কি করছো এখানে?

মিথিলা : বুদ্ধির জন্য খাচ্ছি সামির ভাইয়া বলেছিল। বুদ্ধি = খাবার ।

রৌফ : আরে বোইন তুই নাকি আবার সৌরভ এর আন্ডা খাইছোছ সামির এর মতো ।

এই কথা শুনে মিথিলা মুখের ভিতরে নলাটা ফেলে দিল ।

মিথিলা : ছিঃ এইসব কি কথা বলছো ব্রো খাওয়াটা নষ্ট করে দিলে ভালো লাগে না । ( নেকা কান্না করে )।

রৌফ : মাইন্ড করোছ কেন মজা করছি। ( হেসে দিয়ে )

সামির : মেহসান = অবসান, তুই সবসময় বলোছ তায় আজকে একটা প্রুভ দে ।

মেহসান : কি সমস্যা বলো ?

সৌরভ : একটা জব্বর আইডিয়া দে যাতে মেহতাবকে লন্ডনে যাওয়া থেকে আটকাইতে পারি।

মেহসান : মেহতাব ভাইয়া আমার ফিউচার ওয়াইফ ( মেঘ) কে ছেড়ে লন্ডন এ যাইতাছে নাকি । ( রাগ দেখিয়ে )

রৌফ : মেঘ ভাবি আবার তোর ফিউচার ওয়াইফ কেমনে হয় ?

মেহসান : বড় হইলে তক্ষণ ভাইয়া বুড়া হইয়া যাইব ভাবি রে দেখব কে?

সিয়াম : কেডা আবার মেহতাব ।

মেহসান : ভুল উত্তর তাই আমার আইডিয়া দিব না।

সিয়াম : না দিলে না দে লাগত না ।

মেহসান : আরে রাগ হোও কেন বলতাছি ।দেয়ালেরও কান আছে কাছে আসো সবাই। (ফিসফিস করে মেহসান সব প্লান বলে দিলো সবাইকে)
সবাই বলে উঠল , দারুন! প্লান, মিশন লন্ডন ভন্ডুল।

#তুমি_এসেছিলে_বলে
পর্ব : ৫
#নাদিয়া_আক্তার_সিয়া

মেহসান : ভুল উত্তর তাই আমার আইডিয়া দিব না।

সিয়াম : না দিলে না দে লাগত না ।

মেহসান : আরে রাগ হোও কেন বলতাছি ।দেয়ালেরও কান আছে কাছে আসো সবাই। (ফিসফিস করে মেহসান সব প্লান বলে দিলো সবাইকে)

সবাই বলে উঠল , দারুন! প্লান, মিশন লন্ডন হবে ভন্ডুল।

( আহতাব এর রুম এ )

আহতাব : I’m sorry অহনা । আমি জানতাম না যে তোমার নাম অহনা আমি মেহনূর কে কষ্ট দিতে চাই নি ।

অহনা : দেখুন আপনার ভাই যদি সময়মত না আসতো তাহলে আমার মেঘ এর উপর কলঙ্কের দাগ পরত । আপনাদের একটা ভুলের জন্য আরেকটু হলে আমার বোনের জীবন নষ্ট হয়ে যেত।

অহতাব : আমি মেহনূর এর কাছে ক্ষমা চাইব। এবার তো রাগ করো না আমাকে মাফ করে দেও প্লিজ এই দিন কিন্তু বার বার আসে না বলে দিলাম।

অহনা : আপনি তো অনেক খারাপ ।

আহতাব : খারাপের কি দেখলা এখনও তো দেখা বাকি ।

( এই বলে আহতাব অহনার কপলে কিস করলো । তারা একসাথে অনেক সুন্দর মুহুর্ত কাটলো অহনা বাধা দিলো না। অহনা বুঝেছিল অহতাবের এখানে কোনো দোষ ছিলো না সে তো বুঝতে পারে নিই ভালো তো সে অহনাকে বেশেছিলো শুধু মেঘ নাম ভেবে ভুল করেছে । আজকে সময়মত মেহতাব উপস্থিত না থাকলে ৩ টি জীবনে ঝর বয়ে যেত । তার অতি আদরের মেঘ কে কটু কথা শুনতে হতো সমাজের কাছ থেকে অহনার মা এর থেকে। মেঘ ও সুখ ডিসার্ব করে আর মেহতাব মেঘ কে অনেক ভালো রাখবে তা মেহতাব কে দেখলেই বুঝা যায়।)

সকালে উঠে মেঘ দেখলো মেহতাব ঘরের কোথাও নেই । তাই সে ঘড়ির দিকে তাকালো ঘড়িতে ৭ টা বাজে । তাও কেউ তাকে ডাকতে এলো না। সে উঠে ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এলো। সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামার সময় দেখলো কেউ উঠে নি শুধু তার শাশুড়ি মা কাজ করার স্টাফ দের সব বুঝিয়ে দিচ্ছে। মেঘ কে লক্ষ্য করলো মেঘ কে উদ্দেশ্য করে বললো ।

অরিন বেগম : মেহনূর তুমি উঠে পড়েছো আরেকটু ঘুমিয়ে নিতে অহনা কে একটু আগে ঘরে পাঠিয়ে দিয়েছি । তুমি ওর সাথে বরং গল্প করো। তোমার ননোদিনি রা তো এতো সকালে উঠবার নয় ।

মেঘ : না মা সমস্যা নেই আমি আপনাকে বরং হেল্প করি কোনো কাজ থাকলে আমাকে দিন ।

অরিন বেগম : কি বলছো এগুলো মা । তোমাকে কে কি আমি কাজ করাতে এনেছি । আমার তো কোনো মেয়ে নেই তুমি আর অহনা আজ থেকে আমার মেয়ে । তোমার কিছু লাগলে আমাকে বলতে পারো । এই ঘরকে নিজের ঘর মনে করবে আর আমাকে নিজের মা মনে করবে পারবে না আমার জন্য এইটুকু কাজ করতে ।

( অরিন বেগম এর কথা শুনে মেঘ অনেক অবাক হলো আর তার আগের দিন গুলোর কথা মনে পরে গেলো । মামির বাসায় মামি তাকে অনেক কথা শুনিয়েছে অনেক কাজ করিয়েছে কিন্তু মামি কোনো সময় তাকে মা বলে সম্মওধন করে নি বা কাছে ডেকে দুই একটা মিষ্টি কথা বলে নি। শুধু অপয়া বলে খোটা দিয়েছে । কিন্তু সে প্রতিবাদ করেনি নিজের আপনজন মনে করেছে এতে তাদের দোষ নেই দোষ তার ভাগ্যের এই কথা সে ছোটো বেলা থেকে বুঝে নিয়েছিলো । বিয়ের আগে শুনেছিলো এই বাড়ির সবাই অনেক ভালো তবে আজ তা প্রমান হয়ে গেল । আল্লাহ যেমন তার থেকে তার মাকে কেড়ে নিয়েছে তেমনি মায়ের মতো স্নেহময়ী শাশুড়িকে পাবার জন্য এই পরিবারে তাকে পাঠিয়েছেন খোদার কাছে সে চির ঋণী হয়ে থাকবে ) ।

অরিন বেগম : কি ভাবছিস এতো মেঘ মা?( অরিন বেগমের কথায় হুশ ফিরলো মেঘ এর ) ।

মেঘ : না মা কিছু না।

অরিন বেগম : আচ্ছা ঠিকাছে । তুই বরং এই কফি টা গিয়ে মেহতাব কে দিয়ে আয় তারপর নিচে আসবি নাস্তা সেরে নেবো আর তোর সাথে অনেক আলোচনা আছে তোদের রিসিপশন নিয়ে তোদের কি পছন্দ অপছন্দ জানতে হবে তো । এই অনুষ্ঠানটি অনেক বড় করে করবো । তোদের শাড়ি , গহনা সিলেক্ট করতে হবে কতো কাজ কিন্তু বাড়ির সবার কোনো খবরিই নেই । মাথাটাও ব্যথা করছে ।

মেঘ : মা আপনি শান্ত হোন । আপনি চিন্তা করবেন না আমাকে বুঝিয়ে দিয়েন আমি সব পারব আপনার বৌ হিসেবে না থাক মেয়ে হিসেবে তো একটু কাজ করতেই পারি আমি সব সামলে নিবো। আরেকটা কথা আমি কিন্তু অনেক ভালো আদা চা করতে পারি আপনার মাথা ব্যথা এক ঝটকায় সেরে যাবে ।

অরিন বেগম : তা বেশ খাওয়া আমাকে এক কাপ তোর হাতের স্পেশাল চা তার আগে মেহতাব কে কফি দিয়ে আয় তারপর তুই আর আমি দুজনে একসাথে খাবো আর গল্প করব।

মেঘ : ঠিকাছে মা। কিন্তু উনি কোথায়?

অরিন বেগম : আর কোথায় ছাদে হয়তো এক্সসারসাইজ করছে । আরেকটা কথা এই পেকেট টা নে এতে একটা হাল্কা গোলাপি রঙের শাড়ি আছে । মেহতাব হাল্কা গোলাপি রং খুব পছন্দ করে । এটা পরে ছাদে যাবি ।

মেঘ : ঠিকাছে । কিন্তু মা ?

অরিন বেগম : কোনো কিন্তু নয় যা একটু পর নিচে আসিস ।

অরিন বেগমের সাথে কথা শেষ করে মেঘ নিজের রুম এ গিয়ে শাড়িটা পরে ছাদের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।

ছাদে মেহতাব পুশ আপ করছিল । মেঘ কে সে দেখতে পায় নি। মেহতাব এর ঘাম কপাল থেকে গড়িয়ে নিচে পড়ছিল। সূর্যের আলোতে তার ঘামে ভেজা শরীর চক চক করছিল।

মেঘ মেহতাব কে দেখে যেন মুখ থেকে কথাই বের হচ্ছেনা।

মেঘ : উনি আমাকে মেরেই ফেলবেন কে বলেছিল এতো সুদর্শন হতে। ছেলেদের এতো সুন্দর হতে নেই হলেই এক জালা কুল মেঘ কুল ।

মেঘ কে দেখে তাকে উদ্দেশ্য করে মেহতাব বলল ” ওখানেই দাড়িয়ে থাকবে নাকি এখানে আসবে “।

মেহতাব এর ডাকে মেঘ এর হুশ ফিরল । একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে মেঘ বলল ” জ্বি আসলে আপনার কফি ” ।

তোয়ালে দিয়ে ঘাম মুছতে মুছতে মেঘ এর হাত কফির মগ টা হাতে নিয়ে বললো ” এতো সুন্দর করে সেজেছো কথাও যাচ্ছো নাকি “।

( এই কথা শুনে মেঘ রেগে যায় ) ।

মেঘ : একটু রোমান্টিক কিছু বলবে তা না কিসের জন্য সেজেছি তা জিগ্যেস করছে শালা আনরোমান্টিকের ডিব্বা । ( মনে মনে বিড়বিড় করে বলল )।

মেহতাব : কিছু বললে ?

মেঘ : না কি আর বলবো । মন টা চাচ্ছে কচু গাছের সাথে গলায় দড়ি দিয়ে উপরে চলে যাই । ( আস্তে করে বলল ) ।

মেহতাব : What?

মেঘ : কিছু না কাপ টা দিন।

এই বলে মেঘ কাপটা নিয়ে গেলো বলতে গেলে ছিনিয়ে নিয়ে গেলো ।

মেহতাব : আমার তো খাওয়া শেষ হয় নি ।

মেঘ : বাকিটা না হয় লন্ডনে যাওয়ার সময় পেক করে দিবো।

মেহতাব অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সে কি কোনো ভুল করছে নাকি ভুল কোনো কথা বলেছে।
তবুও সে একটু হলেও আন্দাজ করতে পেরেছে । তাই সে আরেকটু জ্বালানোর জন্য পিছন থেকে মেঘ কে ডাক দিয়ে বলল , ” এই শাড়িটা কিন্তু খুব সুন্দর ” ।

মেঘ : হুম জানি । ( রেগে গিয়ে বললো )

মেহতাব : কিন্তু শাড়িটা যে পড়েছে তার চেয়ে বেশি সুন্দর না । ( মুচকি হাসি দিয়ে )

এই কথা শুনে মেঘ নিজের আজন্তে হেসে দিলো ।

মেঘ : যতটা আনরোমান্টিক ভেবে ছিলাম ততোটাও না । ( মনে মনে )

এই ভেবে লজ্জা পেয়ে নিচে নামার সময় সিমরান, মিথিলা আর শাম্মির সাথে দেখা হয়ে যায় ।

সিমরান : ভাবি তোমার গাল দুটো লাল হয়ে আছে কেন ?

মিথিলা : তাই তো । কেউ কি কিছু বলেছে ?

শাম্মি : কিছু তো হয়েছে ।

এতো প্রশ্ন শুনে মেঘ ইতস্ত বোধ করলো তাই কথা এড়িয়ে বলল ,

মেঘ : ছাদে অনেক রোদ ছিলো হয়ত তাই এমন দেখাচ্ছে ।

সিমরান : ওহ , তাই হবে হয়ত ।

এই বলে মেঘ নিজের রুম এ চলে গেল।

মিথিলা : স্ট্রেঞ্জ। ছাদ কেনো গিয়েছিলো ভাবি?

শাম্মি : চলো ছাদে গিয়ে দেখে আসি।

সিমরান : হুম চল।

ছাদে গিয়ে দেখলো মেহতাব ব্যয়াম করছে ।

শাম্মি : ওহ এই তাহলে আর্টিস্ট ভাবির গাল লাল করার ।

মিথিলা : কিসব বলছিস ওসব কিছু না হয়ত ভাবিকে ভাইয়া কোনো লজ্জার কথা বলেছে।

সিমরান : তাই হবে । How romantic!

চলবে।

#তুমি_এসেছিলে_বলে
পর্ব : ৬
#নাদিয়া_আক্তার_সিয়া

সিমরান, শাম্মি আর মিথিলা ছাদে গিয়ে দেখলো মেহতাব ব্যয়াম করছে ।

শাম্মি : ওহ এই তাহলে আর্টিস্ট ভাবির গাল লাল করার ।

মিথিলা : কিসব বলছিস ওসব কিছু না হয়ত ভাবিকে ভাইয়া কোনো লজ্জার কথা বলেছে।

সিমরান : তাই হবে । How romantic!

মেহসান : কি করছো তোমরা ?

মেহসান এর গলা শুনে চমকে গেলো সবাই ।

মিথিলা : আরে তুই যতবার আসিস ভয় পায়িয়ে দিস।
মেহসান : আমি কোন ভয় দেখাই নি হুল্লোড় পার্টি তোমদের ৩ জনকে বৈঠক খানায় ডাকছে। ( আগেই বলে নি হুল্লোড় পার্টিদের একটা আলাদা জায়গা আছে যেখানে তারা সব আলোচনা করে।)

সিমরান : ঠিকাছে চল ।

( মেহতাব এর রুম এ )

মেঘ : উফফ মেঘ এতো লজ্জার কি আছে । ( জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে নিজেকে শান্ত করে )

মেহতাব রুম এ ডুকতে ডুকতে বললো ” এটুকু প্রশংসায় এই অবস্থা তাহলে রোম্যান্স করবে কিভাবে ? ( সয়তানি হাসি দিয়ে )

মেঘ : ওনার কি রোদের তাপে মাথা নষ্ট হয়ে গেছে। কাল অব্দি যে ভাজা মাছটা উল্টে খেতে পারত না। আজ সে রোম্যান্স এর কথা বলছে।( মনে মনে বিড় বিড় করে বলল)।

মেহতাব : ভেবো না যে আমি দুই বছরের শিশু যে রোম্যান্স কী বুঝি না। হয়ত আমাদের সেই পরিবেশে বিয়ে হয় নি কিন্তু তার প্রভাব আমি নিজের বিয়ে করা স্ত্রীর উপর পরতে দিবো না। আমি ২ দিন পর ফিরে যাচ্ছি নিজেকে সামলানোর জন্য একটা সুযোগ চাই আশা করি তুমি সেই সময়টুকু আমায় দিবে। আমি কবে আস্তে পারব তার কোনো ঠিক নেই । আশা করি এখানে তুমি সব কিছু ম্যানেজ করে থাকতে পারবে ।

এই কথা শুনে মেঘ এর বুক এর ভিতর ধক করে উঠলো যেন তার মনের ভিতরটাকে উথালপাথাল করে দিচ্ছে ।

মেঘ : তার যাওয়ার কথা শুনে আমার এতো কষ্ট হচ্ছে কেনো। মেঘ নিজেকে সামলা তার সামনে দুর্বল হওয়া যাবে না । ( মনে মনে বললো )

মেঘ : হুম , আমি পারবো আপনাকে অতো চিন্তা করতে হবে না । ( স্বাভাবিক কন্ঠে বললো )

মেহতাব : ok then . (মুখে স্বাভাবিক ভাবে বলল) কিন্তু মনে মনে তাচ্ছিলের সুরে বললো , “আমি ভেবেছিলাম হয়তো তুমি বলবে যেতে না থেকে যেতে । শুধু একটিবারের জন্য না করলে আমি থেকে যেতাম । But I’m wrong I don’t have any kind of importance to you . তুমি আমার জন্য কিছু ফিল করো না। আমি চলে গেলেই তুমি বেটার থাকবে । সো গুডবাই মেহনূর মেঘ ”

মেঘ আর মেহতাবের কথাগুলো দরজার আড়াল থেকে মেহসান,সিমরান,মিথিলা আর শাম্মি শুনছিলো ।

সিমরান : ভাবি যদি একবার বলতো যে , আপনাকে ছাড়া থাকতে পারবো না আপনাকে আমার প্রয়োজন তাহলেই হতো।

মিথিলা : তুই কিভাবে বুঝলি যে ভাবি এগুলো বললে ভাইয়া রাজি হয়ে যেত ?

মেহসান : আরে মিথু আপু ভাইয়ার চোখে ভাবির জন্য ভালবাসা , মায়া স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে ।

শাম্মি : হুম ঠিক। কিন্তু অনুভব করলেও বুঝতে পারছে না একে ভালবাসা বলে এটাই তাদের প্রবলেম ।

সিমরান : তাহলে আর দেড়ি কিসের । একটা প্লান করে ফেলি চলো সবাই বৈঠক রুম এ সিক্রেট মিশন ফুলফিল করতে ।

বৈঠক রুম এ মেহসান,সিমরান,মিথিলা আর শাম্মি সব কিছু খুলে বললো হুল্লোড় পার্টি কে ,

সৌরভ : বাহ ভালো খবর!

শাম্মি : ভাইয়া চলে যাচ্ছে আর তুমি বলছো ভালো খবর । ( রাগ দেখিয়ে )

রৌফ : আরে গাধা এটা দ্বারা কি বুঝাইছে বোঝো নাই ।

শাম্মি : গাধী হতে পারি গাধা নই । ( রাগ দেখিয়ে )

সিয়াম : আমিও বুঝি নাই আমারেও কেউ বুঝাও।

রৌফ : এই গাধা-গাধীরে কেউ বুঝা।

সামির : আমি আছি নো টেনশন।

সৌম : এক্সপ্লেইন করো আমিও গাধার দলে অন্তর্ভুক্ত হলাম।

রৌফ : তুই গাধার দলেই ছিলি গাধা কোথাকার।

সামির : রিল্যাক্স আমি আছি সো ব্যাপার টা হলো , দূরত্ব = ভালবাসা কারন দুরত্ব হইলে ওরা দুইজন দুইজনরে মিস করবো এডা বুঝবো যে , “সখী ভালবাসা কারে কয়” । ( সুর দিয়ে )

সিমরান : এই ফাস্ট টাইম কোনো ভালো কথা বলছো ।
সামির : ভালোমানুষের কদর নাই। ( তাচ্ছিলের শব্দ করে )

সৌম : ঠিকাছে কিন্তু তবুও যদি মুখফুইটা না বলে ।

রৌফ : তাইলে আবার কি আমরা মোক্ষম ঔষধ সরবরাহ করিবো তাহাদের মধ্যখানে ।

সৌরভ : তা বেশ তাহলে বৈঠক এখানেই সমাপ্তি ।

সকালের নাশতা শেষ করে সোফায় বসে অরিন বেগম , মেঘ, অহনা আর মেহতাব এর ৩ খালাতো বোন (সিমরান,শাম্মি,মিথিলা) রিসিপশন নিয়ে আলোচনা করছিলো।

অরিন বেগম : তো তোমরা কি পরতে চাও লেহেঙ্গা না শাড়ি?

সিমরান, মিথিলা আর শাম্মি বললো ” ভাবী তোমরা কি পরতে কমফরটেবল মনে করবে সেটাই ফাইনাল ” ।

অহনা : আমার ছোটো জা ( মেঘ ) কি চায় তাই আমি চাই অর চয়েস আমার চয়েস ।

এবার সবার দৃষ্টি মেঘ এর উপর পরে। মেঘ ইতস্তত করে বলে ,

মেঘ : মা আপনি যা বলবেন তাই ফাইনাল। এই সম্পর্কে আমার অতো ভালো ধারনা নেই। আপনি গুরুজন আপনি ঠিক করুন আপনার সিদ্ধান্ত পাকাপোক্ত হবে।

অরিন বেগম : ( কিছু একটা ভেবে ) ঠিকাছে । বিয়ের দিন মেঘকে লেহেঙ্গা সামলাতে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে তাই আমি চাই আজ ছোটো থেকে বড় সবাই শাড়ি পড়ুক।

সিমরান : ঠিকাছে । কিন্তু কোন কালার এর শাড়ি?

অরিন বেগম : মেয়েরা গোল্ডেন কাতান এর শাড়ি পরবে আর ছেলেরা নীল পঞ্জাবি তার উপর ডিজাইন করে গোল্ডেন কালারের কারুকাজ করা আর গোল্ডেন পায়জামা যার বাম পাশে সূক্ষ নীল কারুকাজ থাকবে ।

মিথিলা : পারফেক্ট খালামনি ।

অরিন বেগম : হয়েছে অনেক খালামনির প্রশংসা । গিয়ে রেডি হয়ে নেও সবাই । ( সৌজন্যের হাসি দিয়ে )

সবাই উঠে নিজেদের রুম এ চলে গেলো মেঘ বাদে।

মেঘ : কোথায় যাচ্ছি আমরা মা?

অরিন বেগম : তোমাদের নিয়ে শপিং এ তোমাদের গলায় পড়ার জন্যে স্বর্নের সেট কিনবো নীল পাথর যুক্ত আর শাড়ি, পঞ্জাবি আর ঐ টুকটাক।

মেঘ : কিন্তু মা আপনি তো আমাকে আর অহনা আপুকে স্বর্নের জুয়েলারির অনেক সেট দিয়েছেন। আমি আর কিছু চাই না।

অরিন বেগম : কোনো কিন্তু নয় । ওগুলো তোমাদের দাদী শাশুড়ির আমলের তোমাদের দাদী শাশুড়ি আমাকে দিয়ে ছিলেন আর আমি তোমাদের দিলাম তাই আমি আলাদা করে তোমাদের কিছু উপহার দিতে চাই ।

মেঘ : মা আমার লাগবে না সত্যি বলছি আপনি আর জোর করবেন না। তাহলে আমি যাবো না শপিং এ।

অরিন বেগম : আমার পাগলি মেয়ে । ঠিকাছে তাহলে যেকোনো ফুলের সেট কিনবো শাশুড়ি আর বৌমা মেচিং করে । এবার না করা যাবে না। ( মেঘকে জড়িয়ে ধরে )
মেঘ : হুম তাহলে ঠিকাছে । ( মুচকি হাসি দিয়ে )
এগুলো ২ তোলায় দাড়িয়ে মেহতাব আর সৌরভ শুনছিলো আর দেখছিলো ।

সৌরভ : বাহ ! তোর বৌ তো দেখছি খাটি সোনা । অন্য কেউ হইলে বলতো আপনার ইচ্ছা মা আপনি যা করবেন ভালোর জন্যই করবেন ।

মেহতাব এর প্রতিউত্তরে কিছু বললো না শুধু মুচকি একটা হাসি দিলো ।

চলবে।

তুমি এসেছিলে বলে পর্ব-২+৩

0

#তুমি_এসেছিলে_বলে
পর্ব:২
#নাদিয়া_আক্তার_সিয়া

মিনহাজ চৌধুরি : বিয়েটা হয়ে যাক তোর সব শর্ত মানব।
মেহতাব : Ok then .
মিনহাজ চৌধুরি : আলহামদুলিল্লাহ বিয়ে টা তাহলে সুষ্ঠ ভাবে সম্পন্ন হলো ।
(বিয়ের আসরে )
সব মেয়েদের চোখ এখন মেহতাব এর দিকে কিন্তু মেঘ এর একটাই চিন্তা মেহতাব কি তাকে মেনে নেবে তার ভাগ্যে সুখ সইবে। জন্মের পরে বাবা-মা ছেড়ে চলে গেছে। বিয়ের দিন হবু বড় তার বড় বোনের সাথে বিয়ে করেছে।

(অহনার দিকে তাকিয়ে)

মেঘ : আপু তুমি কি আমার উপর রাগ করেছো আমার জন্য আজ তোমার চাকরি করার সপ্ন ভেঙে গেছে। তারা কি তোমায় চাকরি করতে দেবে। আমি শুনেছি তারা খুব ভালো মানুষ । আমায় ক্ষমা করে দেও আমার জন্য তোমার সপ্ন পুরণ হলো না ।
অহনা : পাগলি এতে তোর দোস কোথায় আমি শুধু চাই তুই যেন সুখি থাকিস একটা ভুলবুঝাবুঝির জন্য আরেকটু হলে আমাদের সম্মান ধুলোয় মিশে যেত যদি না মেহতাব লন্ডন থেকে এই বিয়েতে না আসত ।
মেঘ : আমি খুশি এই বিয়ে নিয়ে তুমি এত চিন্তা করো না । যার সাথে বিয়ে হওযার কথা ছিল তাকে আমি চিনি না কিন্তু সে খুব ভালো মানুষ শুনেছি তোমাকে অনেক সুখি রাখবে । আমার বড় বোন আমার জা আমি তো অনেক খুশি তবুও অচেনা পরিবেশে চেনা কাওকে পাব।
অহনা : আমার কিছুই মাথায় আসছে না। আমি শুধু তোকে খুশি দেখতে চাই । ( কান্নার স্বরে )

মেঘ : তুমি সবসময় ধৈর্যশীল থাকতে বলো তাহলে কান্না কেন করছো আপু তোমার কান্না দেখলে আমার ও কান্না পায় তুমি কান্না থামাও না হলে আমিও কান্না করে দিব কিন্তু । তুমিই তো বলো আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন।

(বাসর ঘরে)

সৌরভ ( মেহতাব এর বন্ধু ) : শোন সবাই একটা টাকাও কম নিবি না। শালায় জীবনে একটা ছেড়া লুঙি পর্যন্ত দেয় নাই । বিদেশ এ গিয়া আমাগো ভুইলা চিনি দিয়া মিশাইয়া খাইছে। বৌ এর কাছে আমরা ওরে ফজর এর আজানের আগে যাইতে দিমু না।
সিমরান ( খালাতো বোন ) : না আর মানা যায় না । তুমি যেই গুছি ( GUCCI ) শার্ট পড়ছ ওই টা কি তোমার শশুর দিছে । মেহতাব ভাইয়া তোমার বার্থডেতে দিছে।

সৌরভ : ভাইয়ের বোইন চুপ থাক। আমি কি তা কইছি গাধা ।
সিমরান : আমি গাধী হতে পারি কিন্তু গাধা না। তাইলে কি বলছ ?
সৌরভ : সবি দিছে খালি কোনো ছিরা লুঙি দেয় নাই এইটা কইতে চাইছি । বৌ নাই একটা লুঙি বা কম্বল অন্তত দিত ।
(সৌরভ কথা শুনে সবাই হা হা করে হেসে মাটিতে গড়াগড়ি খাওয়ার অবস্থা)
রৌফ ( মেহতাব এর বন্ধু ) : সবি ঠিক আছে আগে ওগো মধ্যে ঝামেলা শেষ করতে হইব । মানে মেঘ আর মেহতাব অর মধ্যে ।

মিথিলা ( মেহতাব এর খালাতো বোন ) : আমি কিন্তু রৌফ ভাইয়ের সাথে সহমত ।
শাম্মি ( মেহতাব এর খালাতো বোন ) : হুম আমিও ।

সিয়াম ( মেহতাব এর বন্ধু ) : আমিও সহমত কিন্তু মেহতাব এত ইজি প্লেয়ার না ও মেয়েদের দিকে তাকাই না আবার প্রেম করব বৌ এর লগে মনে নাই তোগও কলেজে সব মেয়েরা অর জন্য পাগল ছিল ও তো পাত্তাই দিত না । দেখবি ও কয়দিন পর লন্ডন যাইবও গা ।
সৌম ( মেহতাব এর মামাতো ভাই ) : তাইলে কি করা যাই মাথা তো খালি ।
সামির ( মেহতাব এর বন্ধু) : তার জন্য দরকার বুদ্ধি আর বুদ্ধির জন্য দরকার খাবার আমি তো এই জায়গার সব চেয়ে বুদ্ধি বিশেষজ্ঞ ।

মিথিলা : ok then prove it . যে বুদ্ধি = খাবার ।
সামির : বুদ্ধি পাওয়ার জন্য দরকার ঠান্ডা মাথা ঠান্ডা মাথার জন্য দরকার পেটের শান্তি আর পেটের শান্তির জন্য দরকার খাবার।

তাই সামির বিশেষজ্ঞ প্রমান করছে যে,
বুদ্ধি = খাবার

L.H.S = R.H.S

সৌরভ : বাহ ! আমার চেলা আমার থেকে বিশেষজ্ঞতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।

সৌরভ এর কথা শুনে সবার পেট ফাটার অবস্থা ।

রৌফ : যেমন গুরু তার তেমন শিষ্য । একটা গাধা আরেকটা রাম গাধা।

সৌরভ : মুখ সামলা নাইলে দাত সহ খুইলা পরব ।
মেহসান ( মেহতাব এর ছোটো ভাই ) : হুল্লোড় পার্টি আমায় ছাড়া কি প্লান করছে ।
সিয়াম : ভাবতাছি কিভাবে মেহসান এর ১০ নম্বর গার্লফ্রেন্ড কে পটানো যায়।
মেহসান : I’M A PURE BOY . তোমরা এইসব কিভাবে ভাবতে পারলে । ( নকল কান্না করে )
সিমরান : না মেহসান এইসব কিছুই না আমরা মেহসান ভাইয়া আর মেঘ ভাবিকে একসাথে করতে চাইছি তাই নিয়ে আলোচনা।
মেহসান : নো টেনশন , মেহসান করে সকল সমস্যার অবসান । এখন বলো সমস্যা টা কি?
সামির : আমি বুঝায়,
মেহতাব = রাগী , মেঘ= মিষ্টি
রাগী = মিষ্টি
আর আমরা সবাই জানি, মেহতাব এর মিষ্টি তে এলার্জি ।
This is the problem.
সৌরভ : আমার ভাই থাম তুই তোর কি অঙ্ক তে মির্কি বেরাম ছিল।

মিথিলা : Bro they are coming . Be ready hullor party .

সবাই একসাথে দরজার প্রবেশ দারে দাড়িয়ে ।

মেহতাব : তোরা সব হুল্লোড় পার্টি একসাথে । Any problem ?

সবাই শাম্মিকে কানে কানে টাকা চাওয়ার জন্য বলছে ।

শাম্মি : Why me bro ?
সিমরান : আমি জানি ভাইয়া আমাদের ভালোবাসে কিন্তু আমি পারব না। অ্যাডভান্স এ বলে দিলাম।
মেহতাব : আচ্ছা শাম্মি তুই বল কি চাই । Hurry up I need to go to the wash room
এমনি অনেক ধকল গেছে তারাতারি বল । আমি কিছু বলবো না।
সামির : Actully dost ,
ফুলশয্যা রাত = গেট ধরা = টাকা = খাবার = অনাহার থেকে মুক্তি ( মায়াবি চেহারা করে )
মেহতাব : তা ক্লিয়ার করে বললেই তো হতো গাধা।
এই নে এতে হয়ে যাবে আশা করি 40000 টাকার একটা কার্ড দিয়ে ( আগেই বলে নিলাম তারা টপ বিজিনেসম্যান তারা অনেক বড়লোক ) আর সিমরান , শাম্মি , মিথিলা তোরা মেঘ কে নিয়ে আসিস আমি গাড়ি থেকে এসে পড়েছি। Go hurry up or they can say I’m not a responsible person .

চলবে……

#তুমি_এসেছিলে_বলে
পর্ব ৩
#নাদিয়া_আক্তার_সিয়া

বাড়ির সামনে দাড়িয়ে আছে মেঘ আর অহনা । তারা বুঝতে পারছেনা । এটা বাড়ি না রাজপ্রাসাদ । ছোট বেলায় দাদুমনির কাছে অনেক রাজা-রানীর রাজপ্রাসাধ এর কথা শুনেছে আজ তা দেখেও নিল ।
অহনা : মেঘ আমাদের মতো গরিব ঘরের মেয়েদের তারা কেনো নিজেদের বাড়ির বৌ করে এনেছে।
মেঘ : জানি না আপু । কিন্তু তাদের মন কি এই বাড়ির মতো সুন্দর হবে। নাকি আমদের অপমান করবে আমরা তো তাদের মতো এতো বড়লোক নই আমরা তো মধ্যবিত্ত শ্রেণীর।

“এই যে দুই ভাবি এতো কী ভাবছো বাড়িতে ঢুকবে না ” মিথিলা বলল।

মিথিলার ডাকে তাদের হুশ ফিরল ।
সিমরান : আসো ভিতরে চিন্তা নেই । DON’T WORRY .
শাম্মি : আরে আসো তো ( হাত ধরে ঢুকিয়ে দিয়ে )
অরিন সাহেবা ( মেহতাব এর মা ) : বাহ! আমার দুই ছেলের তো কপাল খুলে গেছে লাল টুকটুকে বৌ পেয়েছে ।

(এই কথা শুনে দুজেনে খুব লজ্জা পেয়েছে)।
শাম্মি : লজ্জা পেয়েও না আজকে রাতে অনেক লজ্জার কথা শুনতে হবে । তক্ষণ এর জন্য বরং তুলে রাখো ।

অরিন বেগম : সিমু তোর মেয়ে তো ভালোই পেকেছে ।
সিমু বেগম ( মেহতাব এর খালামনি ) : একদম ঠিক বলেছো আপা । এক এক টা বাদর এর হাড্ডি ।
মারজা বেগম ( মেহতাব এর দাদী ) : আমার নাতনির বৌ গো তো দেখলাম। এখন শুধু পুতি গো দেহনের পালা ।

(হুল্লা পার্টি নিচে নামতে নামতে)

সৌরভ : দাদী আপনি তো এহনো যৌবোন ধইরা রাখছেন আপনারে দেইখ্যা মনে হয় এহনো পাত্র খুজলে লাইন লাইগা যাইবো ।

মারজা বেগম : (সৌরভ এর কথা শুনে রেগে) দাড়া বান্দর ছেড়া তোর একদিন কী আমার একদিন । (লাঠি নিয়ে এগিয়ে )

সৌরভ : আরে থামো দাদী ভাবি গো সামনে ইজ্জত টা রাখলা না । ( লাঠির বারি থেকে বাচার জন্য দৌড় দিয়ে বলতে বলতে )

(সবাই তাদের কান্ড দেখে ইতিমধ্যে হাসি হাসি শুরু করে দিয়েছে । মেঘ আর অহনাও হাসছে )

মারজা বেগম : বদমাইশ পোলাপান তোগো লইগা
মইরাও শান্তি পামু না তায় আবার কবরে গিয়া কইবি দাদী উঠো তোমার লেইগা একটা পাত্র পাইছি বিয়া করবা না।

( দাদীর কথা শুনে এবার হাসির আওয়াজ আরো বেড়ে গেল )

অরিন বেগম : হুশ সবাই থাম । আজ সবার অনেক ধকল গেছে সবাই ঘুমাতে যা আর সিমরান , মিথিলা , শাম্মি তোরা মেঘ আর অরিন কি নিজেদের রুম দেখিয়ে দে। মেঘ কে মেহতাব এর রুম এ আর অহনা কে আহতাব এর রুম এ ।

তারা ৩ জন মেঘ আর অহনা কে নিজেদের রুম এ দিয়ে চলে গেল ।

মেঘ : বাহ! রুম টা তো অনেক সুন্দর। ছেলেদের রুম এতো পরিপাটি হয় নাকি। কিন্তু মেহতাব কোথায় ? ( এই সব ভাবতে ভাবতে পিছনে যেতেই কোনো এক দেহের সাথে পিঠ ঠেকলো পিছনে তাকাতেই সে রীতি মতো অবাক। মেহতাব কে ভালো করে এই প্রথম দেখলো কোনো কমতি নেই যেন নিজেকে তার সাথে মাপতে গেলে কোনো অংশেই মানানসই নয় । উচ্চতা হবে হয়ত ৬ ফুট, গায়ের রঙ ধবধবে সাদা, চুলগুলো সিল্কি যা বাদামি আর কালো কালারের মিক্স , চোখের পাপড়ি গুলো অনেক বড় , ঠোঁটটা হাল্কা গোলাপি সব মিলিয়ে যেকোনো মেয়েকে পাগল করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট । রাস্তায় হাটলেও যেকোনো মেয়ে তাকে দেখে উস্ঠা খেয়ে পরবে ।

মেহতাব : এই মেয়ে ।
( মেহতাব এর ডাকে মেঘ এর হুশ ফিরল )
মেঘ : জি বলুন ।
মেহতাব : যাও ফ্রেশ হয়ে নেও।
(মেহতাবের কথা শুনে মেঘ যেন আকাশ থেকে পরল সে ভেবেছিল তাকে মেহতাব অনেক কটু কথা শুনাবে কারন এই বিয়েটা হঠাৎ হয়েছে কেউই তার জন্য প্রস্তুত ছিলো না )
মেঘ : আপনার কিছু বলার থাকলে বলতে পারেন আমি কিছু মনে করব না।( মেহতাব এর দিকে তাকিয়ে )
মেহতাব : তুমি যদি ভেবে থাকো যে আমি তোমাকে অত্যা**চার করব কারন এই বিয়ে আমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে হয়েছে । তাহলে তুমি ভুল ভাবছো। আমি মেয়েদের গায়ে হাত তুলি না বা তাদের সম্মান কে অপমান এর চোখে দেখি না ।
মেঘ : আসলে আমি আপনার কাছে দুঃখিত আমার পরিবারের সম্মান বাচানোর জন্য আজ আপনাকে আমার মতো একটা অজানা অচেনা মেয়েকে বিয়ে করতে হলো।
মেহতাব : IT’S NOT YOUR FAULT . SO , DON’T BE SORRY . যাও ওয়াশরুম এ গিয়ে চেঞ্জ করে নেও নাকি এগুলো পরে ঘুমাবে।
মেঘ : হুম , যাচ্ছি।

(ওয়াশরুম এ আয়নায় নিজের দিকে তাকিয়ে)
মেঘ : কে বলেছে তুই সুন্দর না। মাসআল্লাহ করো নজর যেন না লাগে ।

(মেঘ মেহতাব এর থেকে অতো সুন্দর না হলেও কম যায় না। গায়ের রং ধবধবে ফর্সা না হলেও ফর্সা , চুলগুলো অনেক সিল্কি কোমর পর্যন্ত ছাড়িয়ে গেছে , গোলাপি ঠোট, ঠোঁটের বাম পাশে ছোট একটি তিল। যেকোনো পুরুষকে পাগল করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট)

চলবে…….

তুমি এসেছিলে বলে পর্ব-০১

0

#তুমি_এসেছিলে_বলে
পর্ব : ১
#নাদিয়া_আক্তার_সিয়া

বিয়ের আসরে বসে আছি বৌ সেজে দামি অলঙ্কার , দামি লেহেঙ্গা । যার সাথে বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো তার সাথে বিয়ে হয় নি । তার নিজের ছোটো ভাইয়ের সাথে বিয়ে হয়েছে । আর আমার নিজের বড় বোনের সাথে সেই লোকটি বিবাহ সম্পন্ন করেছে ।
আমি মেহনূর মেঘ। আমার মামা- মামি আমার এই বিয়ে ঠিক করেছে কিন্তু আমাকে জানানোর প্রয়োজন বোধ করে নি । তা সত্ত্বেও আমি এই বিয়ে করতে টু শব্দ পর্যন্ত করি নি। কারন আমার বাবা-মা নেই আমার বাবা-মা না হলেও তারা আমার কোনো অভাব রাখেনি । আমি তাদের মেয়ে না তা একবারটির জন্য মনে হয় নি । আমার মামি আমাকে পছন্দ করে না কিন্তু মামা আমাকে কখনো মা ছাড়া অন্য কোনো নামে ডাকেন নি। ওনার জন্য এই বিয়েতে আমি রাজি হয়েছি । তারা আমার ভালোর জন্য হয়ত এই বিয়ে ঠিক করেছেন ।
বিয়ে হওয়ার কিছুক্ষণ আগে আমি জানতে পেরেছি আমার বিয়ে হচ্ছে কিন্তু তার ছবি পর্যন্ত দেখি নি। কারন তাকে পছন্দ হলেও এই বিয়ে আমাকে করতে হবে না হলেও করতে হবে ।
বিয়ে শুরু হওয়ার সময় ছেলে পক্ষ আমার মামা-মামির কাছে কিছু একটা বলেছে তা দেখে মামা চিন্তিত হলেও মামির মুখে বিশ্বজয়ের হাসি ।
সামনে তাকাতেই দেখলাম আমার বড় মামাতো বোন অহনা আপু আমাকে ডাকছে । ছোটো বেলা থেকে তাকে দেখে আসছি আজ পর্যন্ত তাকে পর মনে হয় নি । কোনো সময় মন খারাপ করলে আমাকে হাসানোর ঔষূধ তার কাছে থাকতো । সে আমাকে নিজের আপন বোনের চেয়েও বেশি ভালোবাসে । কিন্তু আমার আরো দুটো মামাতো বোন আছে অন্নি আর তন্নি । তারা আমাকে দেখতে পারে না তা না আমাকে তারা যথেষ্ট ভালোবাসে । কিন্তু মামি তাদের আমার সাথে মিশতে দেয় না । তাতে আমার বিন্দু মাত্র কষ্ট নেই তাদের কাছে বড় হয়েছি তাদের নুন খেয়েছি তাদের নিন্দে করব এই ভাবে আমি বড় হই নি ।আমি নিতান্ত শান্ত স্বভাবের মেয়ে । বেশি কথা বলতে পছন্দ করি না ।

অহনা : এই মেঘ এদিকে আয় । তোর সাথে জরুরি কথা আছে।
আপুর ডাকে আমার হুশ ফিরল। আর বিয়ের আসর থেকে উঠে আপুর কাছে গেলাম।

মেঘ : আপু তুমি আমাকে এখানে ডাকলে কেন ওই জায়গায়ও তো বলতে পারতে।

অহনা : কেন আমার বোনের সাথে আমার আলাদা কোনো কথা থাকতে নেই ।

মেঘ : আমি কি তা বলছি আপু আচ্ছা বাদ দেও বলো কি বলবা ।

অহনা : আমি যা বলবো তা মন দিয়ে শুনবি কোনো প্রশ্ন করবি না ।

মেঘ : ঠিকাছে বলো।

অহনা : তুই কি এই বিয়েতে রাজি মন থেকে নাকি বাবা-মার জন্য রাজি হয়েছিস আমার কাছে কিছু লুকোবি না আমি জানি যাকে তুই চিনিস না জানিস না তাকে না দেখেই পছন্দ হয়ে গেল।

মেঘ : হুম , আমি এই বিয়েতে রাজি । দেখো শুনেছি তাদের অনেক টাকা আমার কোনো কষ্ট হতেই পারে না । আজকাল টাকাই সব টাকা ছাড়া সবাই পর।

অহনা : খোদার উপর ভরসা রাখ তিনি নিশ্চয়ই ভালো কিছু লিখেছেন।

তখনি ইমরান সাহেব সেখানে উপস্থিত হলেন আর একটু ইতস্তত বোধ করে বললেন ,

ইমরান সাহেব ( নায়িকার মামা ) : অহনা মা তোরা একটু এইদিকে শোন আমার কিছু বলার আছে। আর আমি যা বলবো তা তোদের রাখতে হবে আসলে মা বেপার টা হলো আসলে পাত্র পক্ষ অহনাকে বড় ছেলের বৌ হিসেবে গ্রহণ করতে চাচ্ছে । আর মেঘ এর সাথে তার ছোটো ছেলের জন্য নিতে চাইছে ।তোরা না করিস না মা এতে আমার সম্মান এর বিষয় রয়েছে ।

অহনা : বাবা এইসব কি বলছো তুমি মেঘ এর হবু বর এর সাথে আমার বিয়ে কেন দিতে চাইছো । আর মেঘ কেনো তার দেবর কে বিয়ে করবে । কি হয়েছে আমায় বলো ? ( রাগী স্বরে )

ইমরান সাহেব কিছুক্ষণের আগের ঘটনা বলতে শুরু করলেন ।

( একটু আগের ঘটনা )

ইমরান সাহেব : তো বিয়াই মশাই আমদের আয়োজন সব ঠিক ঠাক আছে তো কোনো কমতি নেই তো যদি কিছুর কমতি থাকে আপনি নিশঙ্কোচে বলতে পারেন। আমার মেহনূর এর বিয়ে বলে কথা ।

মিনহাজ চৌধুরি ( নায়কের বাবা ) : আসলে ইমরান সাহেব আমি আপনাকে কিছু জরুরি কথা বলতে চাই দয়া করে মনযোক দিয়ে শুনবেন। এবং বোঝার চেষ্টা করবেন ।

ইমরান সাহেব : আপনি আমাদের মতো গরিব ঘরের মেয়েকে পত্রুবধু করে নিয়ে যাচ্ছেন এটাই অনেক। কি বলতে চান বলুন কোনো সংকোচ ছাড়া ।

মিনহাজ চৌধুরি : আসলে আমার বড় ছেলে অহতাব আপনার মেয়ে অহনা কে পছন্দ করে ছিলো। কিন্তু সে অহনা মায়ের নাম মেহনূর
মেঘ হিসেবে জানত । কিন্তু চিন্তা করবেন না মেহনূর মাকে আমাদের অনেক পছন্দ হয়েছে। তাই আপনি যদি কিছু মনে না করেন আপনার ২ মেয়েকে আমার ২ ছেলের পুত্রবধূ হিসেবে গ্রহণ করতে চাই। তাদের আমি নিজের মেয়ের মতো করে রাখবো আপনি আমাকে ভরসা করে দেখতে পারেন।

ইমরান সাহেব : কিন্তু আমার মেয়েরা কি রাজি হবে ?

মিনহাজ চৌধুরি : আপনি বললে তারা অবশ্যই রাজি হবে । আমার বাড়িতে তাদের কোনো কষ্ট হতে দিব না ।

ইমরান সাহেব : আপনার ছোটো ছেলে কি এই বিয়েতে রাজি ?
মিনহাজ : আমার ছেলে কে আমি ভালো করে চিনি ও নিজের থেকেও নিজের ভাইকে বেশি ভালোবাসে ও কে আমরা রাজি করিয়ে নিবো।

” Are you mad ? আমি কিভাবে আমার ভাইয়ের হবু বৌ কে বিয়ে করব তোমার মাথা ঠিক আছে বাবা ” রাগী কন্ঠসরে বলল মেহতাব তার বাবা মিনহাজ চৌধুরি কে।

“মেহতাব আমার কথা টা বোঝার ট্রাই কর আমার মান-সম্মান এর বেপার আমার এত বড় বিজনেস এর নাম খারাপ হবে ” আকুতির স্বরে বললেন মিনহাজ সাহেব।

“It’s not possible I can’t do this” সিরিয়াস ভাবে মেহতাব বলল ।

“আমাদের কথা নাই ভাবলি নিজের মায়ের কথা ভাব সে এইসব শুনলে অসুস্থ্য হয়ে পরবে সে এমনিতেই হার্ট এর রোগী ” মিনহাজ সাহেব মেহতাব কে বললেন।

“Ok i have a condition . যদি তুমি মেনে নেও তাহলে আমি রাজি” মেহতাব বললো ।

মিনহাজ চৌধুরি : বিয়েটা হয়ে যাক তোর সব শর্ত মানব।
মেহতাব : Ok then .

চলবে ……..

তাহার উম্মাদনায় মত্ত পর্ব-৩৫ এবং শেষ পর্ব

0

#তাহার_উম্মাদনায়_মত্ত
#লাবিবা_আল_তাসফি

৩৫.(শেষ-প্রথম খন্ড)
শীতের চাদর চিড়ে এক খন্ড সূর্যের আলো এসে পড়েছে অন্তির রুমে। টেবিলে ধোঁয়া ওঠা কফির মগ। মাত্রই পারু এসে রেখে গেছে। অন্তি কফির মগে লম্বা চুমুক দিয়ে তৃপ্তির শ্বাস ফেলে। ফোন হাতে তুলে তন্নিকে কল করে। কল একবার বাজতেই ওপাশ থেকে তন্নি কল রিসিভ করে। কাঁদো গলায় বলে,

‘অভশেষে তোর আমায় মনে পড়লো! এমন কেমনে পাড়িশ? রাত থেকে না ঘুমিয়ে ফোন হাতে বসে আছি। চিন্তায় চুল পড়ে টাক হয়ে যাওয়ার জোগাড়। হয়তো জ্বর ও চলে এসেছে। আর তুই কিনা পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছিস?’

‘ঘুমের সাথে নো কম্প্রোমাইজ বেব। চিন্তা চিন্তার জায়গায় আর ঘুম ঘুমের। একের জন্য অন্যকে ছাড়তে পারবো না আমি।’

অন্তির কথার পিঠে তন্নি জবাব দিলো না। তার দুচোখ ভরা ঘুম। যখন তখন ঝড়ে ভেঙ্গে পড়া গাছের মতো ঢুলে পড়বে সে। তন্নি গা ঝাড়া দিয়ে সোজা হয়ে বসে। নিভু গলায় বলে,

‘আপডেট বল। শুনে ঘুম দিব। খারাপ সংবাদ হলে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘুমাবো আর ভালো হলে আগামীকাল দেখা হবে ইনশাআল্লাহ।’

অন্তি দারুন করে হাসে। হাসির তালে সাদা দাঁত গুলো সূর্যের আলোয় ঝিলিক দিয়ে ওঠে।

‘আজকের সকালটার মতো সতেজ সংবাদ। সামান্য বিষাদ ও রয়েছে। মা খুব রেগে আছে আমার উপর। তাছাড়া সব ঠিকঠাক। শাশুড়ি আম্মু সব ঠিক করে রেখে গেছেন।’

‘আলহামদুলিল্লাহ। কংগ্রাচুলেশন এবং টাটা।’

ফোন কাটলে অন্তি লম্বা হয়ে শুয়ে পড়ে। তার আবারো ঘুম পাচ্ছে খুব। মন ভালো থাকলে ঘুম ভালো‌হয়। অন্তি গলা উঁচু করে পারুকে ডাকে।

‘আমার ঘুম না ভাঙা পর্যন্ত এ রুমে আসা মানা। আজকের জন্য আমার রুমের সকল কাজ থেকে তোকে ছুটি দেওয়া হলো।’

অন্তি ঘুমিয়ে যাওয়ার আগে আরো একটা কাজ করলো। দিহানের নম্বরে ছোট করে একটা টেক্সট পাঠালো,

‘Congratulations! you’re gonna get me।’

________________

সময়টা ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি। হুট করেই ভিষণ শীত নেমেছে। অন্তির‌ রুমের বাতি অফ। কিন্তু তার চোখে ঘুম নেই। বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ করছে। আজ দিহানের সাথে ঝগড়া হয়েছে তার। ঝগড়া বলতে মন কষাকষি। লোকটাকে দুটো কড়া কথা শোনাতে পারলে দারুন হতো। কিন্তু সে তা পারেনি। কিছু বলতে নিলেই তার বুকে ভালোবাসার ঢেউ উথলে ওঠে। আর কিছু বলা হয়না। তবে সে সহ্য ও করতে পারছে না। এমন পাথুরে মানবের সাথে কিভাবে সংসার করবে সে? দুটো মিষ্টি কথা যার মুখ থেকে বের হয়না তাকে নিয়ে কোন সাগরে ভেসে যাওয়ার স্বপ্ন দেখবে সে? অন্তির মাথার মধ্যে রাগটা চড়া দিয়ে ওঠে। শোয়া থেকে উঠে বসে বড় করে শ্বাস ফেলে। বালিশের পাশ থেকে ফোন বের করে দিহানকে কল করতে। কিন্তু তার পূর্বেই দিহানের কল আসে। অন্তি কলের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকায়। হঠাৎ এই ব্যস্ত মানবের তার কথা মনে পড়লো কেন?

‘ছাদে আসো।’

‘এই মুহূর্তে……’

ছোট বাক্যটা শেষ হতেই টুট টুট করে কল কেটে গেলো। অন্তির জবাব শোনার অপেক্ষা করলো না সে। অন্তি চোখ বন্ধ করে বড় শ্বাস নেয়। আজ এই লোককে সে নিজ হাতে খু*ন করবে।
বাহিরে বেশ ঠান্ডা বাতাস। অন্তির শরীরে পাতলা জামা কেবল। রাগের আগুনে তার ঠান্ডা লাগছে না বোধহয়। দিহান দাঁড়িয়ে আছে রেলিংয়ের পাশ ঘেঁষে। তার নজর ছাদের লোহার দরজা থেকে উঠে আসা অন্তির দিকে। ভ্রু গুলো সামান্য কুঁচকে তাকিয়ে আছে। অন্তি কাছে এসে দাঁড়ালে দিহান তার জ্যাকেট খুলে অন্তির গায়ে জড়িয়ে দেয়। গম্ভীর গলায় বলে,

‘আমার উপরের রাগ নিজের শরীরের উপর কেন দেখাচ্ছো? এতটুকু শরীরে এত রাগ কোথায় থাকে?’

অন্তি পুরো কথাকে এড়িয়ে যেয়ে কাঠকাঠ গলায় বলে,

‘কেন এসেছেন?’

‘তোমায় দেখতে।’

এই অতি সামান্য কথায় অন্তির জমে থাকা রাগ গলে পানির ন্যায় তরল রূপ ধারণ করে। চোখ ছলছল করে ওঠে। অভিমান গুলো জল আকাড়ে ঝড়ে পড়তে নিলে দিহান তা আঙুলের ছোঁয়ায় মুছে দেয়।

‘আপনি আমায় একটু বেশি বেশি ভালোবাসতে পারেন না?’

‘কাঁদে না। এখন থেকে বাসবো।’

‘আপনি আমায় ভালোবাসতে ভুলে যান। শুধু ব্যস্ত থাকেন। দেখা করেন না। এমন করলে আমি আপনায় আর ভালোবাসবো না।’

কথাটা বলে অন্তি নাক টানে। দিহান অন্তির ঠোঁটে আঙুল ছুঁয়ে বাঁধা দেয়। নরম গলায় শাসন ভঙ্গিতে বলে,

‘এমনটা যেন কখনো না হয়। কিছু কাজে ব্যস্ত থাকছি আজকাল। কাজটা শেষ হলেই তোমায় অনেক সময় দিবো। তখন বিরক্ত হলে চলবে না। তবে তোমার কাজ এই আমাকে ভালবাসা কেবল। আমাকে ভালোবাসতে ভোলার মতো ভুল কখনো করবে না জান। এই ভুলের মাফ নেই যে!’

অন্তি গোল চোখে তাকিয়ে থাকে। আকাশে একখন্দ চাঁদ আলো ছড়াচ্ছে। সেই মিষ্টি আলোয় দিহানের মুখটা জ্বলজ্বল করছে। ঝিরিঝিরি বাতাসে কপালে ছড়িয়ে থাকা চুলগুলো দোল খাচ্ছে। অন্তিকে ছেড়ে দিহান বুকে দু হাত বেঁধে রেলিংয়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়েছে। পাশে অন্তি চুপটি করে দাঁড়িয়ে। কথা না হলেও পাশাপাশি নিরবে দাঁড়িয়ে থাকাটা খুব করে অনুভব করছে সে। দিহানের চোখ বন্ধ। অন্তি দূরত্ব ঘুচিয়ে কিছুটা কাছে দাঁড়ায়। নিচু গলায় বলে,

‘শুনুন?’

‘শুনছি।’

‘আপনার বুক থেতে হাত নামান প্লিজ।’

‘কেন?’

অন্তি এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে না। সে এখন কিভাবে বলবে যে সে একটু দিহানের বুকে মাথা রাখতে চায়? সে বোঝে না? এত অবুঝ কেন? অন্তির মন খারাপ হয়। মলিন হেসে বলে,

‘না কিছু না।’

অন্তি সরে দাঁড়াতে নিলে দিহান তার হাত টেনে ঘুড়িয়ে আঁকড়ে ধরে। হঠাৎ এমন হওয়ায় খানিক চমকে যায় অন্তি। নড়েচড়ে ওঠে অল্প। খানিক বাদে শান্ত হয়ে লেপ্টে থাকে। দিহানের শরীরের কড়া গন্ধ নাকে ধাক্কা খায়। অন্তি চোখ বুঝে সেই গন্ধ নেয়। দিহান ফিসফিস করে বলে,

‘এর থেকে বেশি আর কিছু চেওনা রূপ। আর কিছুদিন মাত্র।‌ সব ভালোবাসা তোমার মুঠোয় এনে দিবো। আমি তোমায় হালাল ভাবে ছুঁতে চাই।‌ বুঝেছ মেয়ে?’

___________

মার্চ মাসের প্রথম শুক্রবার। আকাশে একখন্ড আগুনের গোলার মতো জ্বলজ্বল করছে সূর্য। শীতের প্রোকোপ খানিক কমে এসেছে। হুটহাট করে গা কাঁপিয়ে ঠান্ডা নামে। কখনো বা সূর্যের তেজে গা গড়িয়ে ঘাম ঝড়ে। আর কিছুদিনের মাঝেই শীত বিদায় নিবে হয়তো। অন্তি বারান্দায় মেঝেতে গোল হয়ে বসে আছে। টুলে বসে সাবিনা অন্তির চুলে তেল লাগিয়ে দিচ্ছে।‌ অন্তি বারবার না করা সত্তেও সাবিনা চুপচুপে করে তেল লাগিয়ে দিচ্ছে। খসখসে কিন্তু মিহি গলায় বিলাপ করে বলছে,

‘তেল হচ্ছে চুলের পুষ্টি। তেল না দিতে দিতে চুলের কি সাংঘাতিক অবস্থা হইছে আল্লাহ! আমার ভাইয়ের বউটাও বলিহারি, মাইয়ার দিকে কোনো নজর নেই। একটা মাত্র মাইয়া তাই এই অবস্থা। আমাদের মতো চার পাঁচটা পোলাপান হইলে কেমনে মানুষ করতো?’

চুলের প্রসঙ্গ থেকে ভাইয়ের বউয়ের প্রসঙ্গে চলে যাওয়ার ব্যাপারটায় অন্তি খুব একটা অবাক হলো না। এটা সে ছোট থেকে দেখে আসছে। তারা কোনো ভুল করলে দোষটা সর্বদা মা চাচিদের উপর থেকে চলে যায়।
সাবিনার কথা হয়তো নাহারের কান পর্যন্ত পৌঁছেছে। দরজার সামনে থেকে উত্তর দেয়,

‘আমার মেয়েকে আমার আদর যত্নে বড় করতে হয়নি আপা। একা একাই এতবড়ো হয়েছে। আরো পাঁচ ছয়টা ছেলে মেয়ে থাকলেও এভাবেই বড়ো হয়ে যেত।’

এ কথা সাবিনার ভিষণ রকম গায়ে লাগলে তিনি অন্তিকে বলেন,

‘তোর মায়ের কথা শুনেছিস? কেমন মুখে মুখে জবাব দেয় দেখ। আমি যে বড় তার কোনো সম্মান দেয় সে? ভাইয়ের বাড়িতে দুটো দিন মন ভালো করতে এসে কেমন বেজ্জতি হতে হচ্ছে! এই দিন দেখার জন্যই আল্লাহ আমাকে বাঁচায়ে রাখছে। আজ আসুক সাহেদ। ওর বউকে ও শিক্ষা না দিলে আমি এক কাপড়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে যাব।’

নাহার মুখ বাঁকিয়ে রান্নাঘরে চলে যায়। আজ বাসায় অনেক মেহমান আসবে। একমাত্র মেয়ের আকদ বলে কথা। এই দিনে ঝগড়ায় জড়ানোটা ভালো হবেনা। তাই সাবিনাকে ছেড়ে দিলেন তিনি। নয়তো প্রতিটা কথার ভলো জবাব দিয়ে আসতেন।

অন্তির পাশে তন্নি গালে হাত দিয়ে বসে আছে। অন্তির বাসায় সে খুব সকাল সকাল চলে এসেছে। ব্রাশটাও সে এবাড়িতে এসে করেছে। এত বড় একটা দিনে সে আসতে লেট করবে এমনটা কখনোই হবে না। গালে হাত রেখে তন্নি ভিষণ ভাবুক চিত্তে বললো,

‘দোস্ত তোর বিয়ে হয়ে গেলে তো তুই অন্যের বউ হয়ে যাবি তাই না?’

‘হুহ।’

তন্নি গাল থেকে হাত নামিয়ে বিজ্ঞদের মতো মাথা নাড়ায়। যেন সে বিশাল কোনো ধাঁধার সমাধান করে ফেলেছে। অতঃপর নিজের মনের লুকায়িত কথাখানা প্রকাশ করে।

‘বলছিলাম দিহান ভাইকে বলনা নুহাশকে যেন একটু বিয়ের ব্যাপারে বুঝায়। তোর বিয়ে হয়ে গেলে আমি একা কুমারী হয়ে বসে থেকে কি করবো? তার থেকে দুজনই বউ হয়ে গেলে কিন্তু ব্যাপারটা দারুণ হয়। হয় না?’

অন্তি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে,

‘তোর হিটলার বাপকে ম্যানেজ করলেই তো পারিস।’

‘আমার বাপকে হিটলার বলবি না একদম। আমার বাপ হিটলারের থেকেও ভয়ানক।’

_____________

ঘরোয়া ভাবে বিয়ের আয়োজন করা হলেও লোক সংখ্যা মোটেও কম নয়। বাড়ি ভরতি লোক গমগম করছে। সাহেদ বাড়ির পেছনে বাবুর্চি আনিয়ে রান্নার ব্যবস্থা করেছে। বিয়েতে বাড়িতে কোনোরকম সাজসজ্জা হবেনা এমনটাই বলেছিল শাহিন। কিন্তু সকাল হতেই দেখা গেছে তিনি ডেকরেটের লোক আনিয়ে পুরো বাড়িতে মরিচবাতি সেট করেছেন। তাজা ফুল দিয়ে গেট সাজিয়েছেন। তা দেখে বাড়ির সকলে মিটি মিটি হাসছেন।
বাড়ির আনাচে কানাচে হাসির শব্দে ভরে উঠেছে। ছোট ছেলেমেয়েদের কান্না আর চিৎকারের শব্দ বাতাসে ধাক্কা খেয়ে প্রতিফলিত হচ্ছে। এত কিছুর মাঝে অন্তির মনে শান্তি নেই। চুলে দুইবার শ্যাম্পু করার পরও তার মনে হচ্ছে চুল থেকে তেল কাটেনি। রাগে দুঃখে তার কান্না পাচ্ছে। এই ফুপিটা তার সবসময় দু চার লাইন বেশি বুঝে।তার বিয়ের দিনে কিনা সে চুপচুপে তেল মাথায় ঘুরবে! এটা কোনো কথা? তার দুঃখের সঙ্গি হয়েছে তন্নি। অন্তির কষ্ট মানেই তার কষ্ট। তার প্রাণটার আজ বিয়ে আর এই বিয়েতে কিনা তার প্রাণটা মন খারাপ করে থাকবে। কিছুটা দুঃখ নিয়ে তন্নি বলে,

‘তোর ফুপি বোধহয় প্রতিশোধ নিয়েছে দোস্ত।’

‘কিসের?’

‘আন্টির উপরের প্রতিশোধটা তোর উপর থেকে নিয়েছে। সিরিয়ালে দেখিস না মায়ের উপরের প্রতিশোধ মেয়ের উপর নেয়? ওমন ঘটনা ঘটেছে।’

অন্তি কিছু বলার আগেই অন্তির কাজিনরা তার রুমে চলে আসে। এখন মেহেদী দেওয়া হবে। বিয়ের কনের হাত ফাঁকা মানায় না। যদিও এ ব্যাপারে অন্তির তেমন আগ্রহ ছিলো না। কিন্তু নাহার গরম গলায় বলেছেন,

‘বিয়ের দিন হাত ফাঁকা থাকবে এ কেমন কথা? অল্প করে হলেও মেহেদী লাগাও।’

অন্তি মায়ের কথা মেনে নিয়েছে। নাহার এই দু তিন মাস তার সাথে মেপে মেপে কথা বলে। বয়টা বিষণ কষ্টের। অন্তি অনেক চেষ্টা করেছে মায়ের রাগ ভাঙাতে কিন্তু ব্যর্থ হয়েছে প্রতিবার। অন্তি হাল ছেড়ে দিয়েছে। মায়ের দিকে অসহায়ের মতো তাকিয়ে থাকা ব্যতীত কিছুই বলেনা সে আজকাল।

চলবে…………

#তাহার_উম্মাদনায়_মত্ত
#লাবিবা_আল_তাসফি

শেষ খন্ড
অন্ধকারে আচ্ছন্ন এক বদ্ধ কামরায় হাত মুখ বাঁধা অবস্থায় পড়ে আছে পড়শ। শরীরের কোথাও আঘাতের চিহ্ন নেই। বোঝাই যাচ্ছে বেশ অক্ষত অবস্থায় রাখা হয়েছে তাকে। চোখ খোলা থাকলেও এই অন্ধকার হাতড়ে বোঝার উপায় নেই ঠিক কোন জায়গায় আছে সে। অন্ধকারে তার চেখগুলো আরো শিটিয়ে আসছে। অক্ষত থেকেও মনে হচ্ছে সে তার জীবনের শেষ সময় গুনছে। ঘড়ির কাটার প্রতিটা সেকেন্ড তার জীবনের সমাপ্তিকে এগিয়ে আনছে। এর থেকে যদি তার উপর জুলুম করা হতো তাহলে হয়তো একটু হলেও বাঁচার সম্ভাবনা থাকতো। কিন্তু এরা কেন তাকে আঘাত করছে না? কি চাচ্ছে দিহান? পড়শের বুক পর্যন্ত কেঁপে ওঠে। ভাবতে পারেনা বাকিটা। দিহান প্লান ছাড়া কাজ করেনা। নিশ্চই তার বড় কোনো প্লান রয়েছে। পরশের হৃদরোগ বাড়াতে সেখানে হাজির হলো দিহান।‌ পড়নে খয়েরী রঙের শেরওয়ানি। অন্যদিনের মতো এলোমেলো হয়ে কপালে ছড়িয়ে থাকা চুলগুলো আজ সুন্দর করে সেট করা। মুখে এটে আছে নিদারুণ কঠিনতা। দিহানের সাথে নুহাশকেও দেখা গেলো। তার মুখ হাসি হাসি। যেন ভিষণ আনন্দে আছে সে। দিহান এক পলক পরশকে দেখে পাশে ছেলেটাকে বলে,

‘ওকে উঠিয়ে বসা। চেয়ার কোথায়?’

‘জ্বি ভাই আনছি।’

দুটো ছেলে পরশকে চেয়ারে বসিয়ে বেঁধে ফেলে। দিহান ইশারা করলে মুখের বাঁধন খুলে দেয়। পরশের বুক ধুকপুক করছে। দিহানকে যে ছেলেগুলো মেরেছিলো সবার অবস্থা ভিষণ খারাপ। কেবল প্রাণটা বেঁধে আছে শরীরে। তার কি অবস্থা হতে পারে ভাবতেই ভেতর আত্মা কেঁপে উঠছে।
আসার পর থেকে দিহান কোনো কথা বলেনি। চেয়ারে পা তুলে বসে শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে পরশের দিকে। আশপাশের সকলে নিশ্চুপ। এই নিশ্চুপতা পরিবেশকে আরো গম্ভীর করে তুলেছে।

‘কিছু বলার আছে? আজ অতি গুরুত্বপূর্ণ একটা দিন। তবুও সব রেখে আমি তোর কথা শুনতে এসেছি। কিছু বলার থাকলে জলদি বল। আমার সময় কম।’

দিহান হাতের ঘড়ির দিকে তাক করে কথি গুলো বললো পরশকে। পরশ ভিষণ আকুতি নিয়ে বললো,

‘আমাকে বাঁচতে দে প্লিজ। আর কিছু না। শুধু বাঁচতে দিলেই হবে।’

‘আচ্ছা।’

‘সত্যি?’

‘অবশ্যই।’

কথাটা বলে দিহান বাকা হাসে। চেয়ার থেকে উঠে যাওয়ার পূর্বে পরশের হাতের দিকে অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে একটা ছেলেকে বলে,

‘ওর হাতের নক গুলো দেখতে বিদঘুটে। তুলে ফেল। খারাপ জিনিস না থাকা ভালো।’

‘জ্বি ভাই।’

দিহান আর অপেক্ষা করলো না। নুহাশের সাথে বেরিয়ে এলো পুরোনো গুদামঘর থেকে। গাড়িতে ওঠার পূর্ব মুহূর্তে শুনতে পেলো পরশের গগনবিদারী চিৎকার। দিহানের মুখ শক্ত হয়ে আসে। এটা তো কেবল শুরু। বাঁচিয়ে রেখে সে ওকে জাহান্নাম দেখিয়ে আনবে।

____________

অন্তির পরনে লাল বেনারসি। গহনা বলতে গলায় ছোট একটা হার, কানে দুল আর হাতে সোনার মোটা বালা। অল্প পরিসরে গালে মেকাপের প্রলেপ টানা হয়েছে। ঠোঁটে লাগানো হয়েছে টকটকে লাল রঙ। টানা চোখদুটো ভর্তি কালো কাজল। আর গাল? সেখানে রয়েছে লালচে আভার মিশ্রণ। এ যেন এক লাল টুকটুকে নববধূ। দরজা থেকে নাহার মেয়ের মুখের দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে। তার মেয়েটাকে কেমন বড় বড় লাগছে। কোই কখনো তো সে লক্ষ করেনি। হুট করেই মেয়েটা যেন একটু বেশিই বড় হয়ে গেছে। অভিমান করে মেয়ের সাথে দুটো কথা না বললেও তির ভেতরটি জ্বলে যাচ্ছে। নিজ ছায়ায় আগলে রাখা মেয়েটাকে ছেড়ে কিভাবে থাকবে সে? সকাল হলে যখন রুমটা ফাঁকা পড়ে থাকবে তখন সে কি করবে? তার ঘরটা যে একদম শান্ত হয়ে যাবে। অন্তি নামক পাখিটার কিচিরমিচির শব্দে বিরক্তি হতে হবে না। নাহারের চোখ ছলছল করে ওঠে। কিন্তু মেয়ের সামনে সে নরম হতে চায় না। ভারী অভীমান জমেছে তার। এত দ্রুত তার অভিমান ভাঙবে না।
বর এলো যখন তখন দুপুর। ঘোমটার আড়ালে থাকা মুখটি ক্রমশ লাল হয়ে ওঠে বর এসেছে, বর এসেছে ধ্বনিতে। বুকের কোনো এক অংশ কেঁপে ওঠে সহসা। নিঃশ্বাস ভারী হয়ে আসে। আর মাত্র কিছু মুহূর্ত, তারপর মানুষটা পুরোপুরি তার হয়ে যাবে! ভাবা যায়? অন্তি কিছু ভাবতে পারছে না। তার ভাবনার কোঠা শূন্য পড়ে আছে। মস্তিষ্ক শুধু একটা কথাই বলছে, “সে আমার হতে চলছে।”

চোখের পলকেই তিন কবুলের মাধ্যমে একে অন্যের পরিপূরক হিসেবে শপথ নিয়ে নিলো তারা। সামান্য তিন শব্দের এত জোর! অন্তির চোখ ভর্তি পানি। তার কোনো কষ্ট নেই। এটা তার সুখের জন্য। এই মানুষটাকে পাওয়ার জন্য কত কিছুই না সে করেছে। আজ সে তার। এইতো সে পরিপূর্ণ।

শহর জুড়ে সন্ধ্যা নেমেছে। বিয়ে বাড়ি যেন আঁধার নামা মাত্রই চঞ্চল হয়ে উঠেছে। ঝাঁক ঝাঁক লালা নীল মরিচবাতি জ্বলে উঠেছে। বাহির থেকে ঝলমলে মনে হলেও বাড়ির ভেতরের পরিবেশ থমকে আছে। সাহেদ, শাহিন গম্ভীর মুখ করে সোফায় বসে আছেন। পাশেই অসহায় মুখ করে রেজওয়ান মির্জা বসে। বারবার সে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ছেলেকে দেখছেন। দিহান অবশ্য এসবে থোরাই কেয়ার করছে। সে নিশ্চিন্ত মনে সোফায় গা এলিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে। বিয়ে করা ভিষণ কষ্টের কাজ। সে না করলে হয়তো কখনো বুঝতেই পারতো না। এখান থেকে বের হতে পারলেই কিছুটা স্বস্তি মিলবে।

‘বেয়াই। এমনটা তো কথা ছিলো না। আমার মেয়েটা ছোট। এত দ্রুত তুলে দিতে চাইনি আমরা। তাছাড়া কথা তো হয়েছিল বছর দুয়েক পরে তুলে নেওয়া হবে।’

সাহেদের কথায় কি উত্তর দিবে ভেবে পাচ্ছেনা রেজওয়ান। এসব কিছুই তার মনে আছে। কিন্তু ছেলের জন্য তো পারছেন না। এমন নির্লজ্জ একটা ছেলে তারই কেন হতে হলো? মান সম্মানের কিছু থাকছে না। রেজওয়ান দিহানের দিকে তাকিয়ে দাঁত কাটে। অভদ্রটা ঝামেলা পাকিয়ে এখন চোখ বন্ধ করে আছে। কোনো উপায় না পেয়ে তিনি বললেন,

‘ভাই বুঝতে পারছি। অন্থি না হয় এখানে প্রায়ই আসবে। দিহান কিংবা আমি দিয়ে যাব ওকে। আবার ওর মঞ চাইলে নিয়ে যাব।’

এ পর্যায়ে শাহিন গম্ভীর গলায় বলে,

‘আমরা এখন আমাদের মেয়েকে দিতে চাচ্ছি না। বিয়ে হয়েছে ঠিক আছে। আপনারা আসবেন যাবেন। কিন্তু মেয়ে আমাদের কাছেই থাকবে।’

রেজওয়ান মির্জা খুবই অস্বস্তি অনুভব করছে। কিছু বলার মতো পাচ্ছে না। দিহান এবার চোখ মেললো। সোজা হয়ে বসে বললো,

‘বিয়ের পর একটা মেয়ের দায়িত্ব পুরোপুরি ভাবে তার স্বামীর হাতে। সেটা হোক ধর্মীয় রীতি কিংবা সামাজিক রীতি। আমি চাচ্ছি আমার বউকে আমার সাথে নিয়ে যেতে, আশা করি এখানে দ্বিমত করার মতো কিছু নেই। আমার বউ কোথায় থাকবে কি থাকবেনা এটুকু সিদ্ধান্ত নেওয়ার যথেষ্ট অধিকার রয়েছে আমার।’

দিহানের কথার পিঠে কেউ কোনো উত্তর না করলেও সকলে যে ভয়ংকর রেগে গেছে এটা সে বুঝতে পেরেছে। শাহিনের মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছে না। তার এক কথায় এ বংশের সকলে ওঠে বসে। আজ কিনা তার কথাকে সামান্যতম মর্জাদা দেওয়া হলো না। এমন অসভ্য ছেলে তার বাড়ির জামাই ভাবতেই ভিষণ বুক ব্যাথা করছে। নাহার আগেই বুঝেছিলো এমন কিছু হবে। তাই সে খুব একটা অবাক হয়নি।

বিদায়বেলা নাহার নিজের অভিমান ধরে রাখতে ব্যর্থ হলো। অন্তিকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললো। এতদিন বাদে মায়ের স্নেহস্পর্শ পেয়ে আবেগী হয়ে ওঠে অন্তি। সে এক স্পর্শকাতর দৃশ্য। মা মেয়ের হৃদয় স্পর্শক পুনর্মিলনের পর বিদায়ের ঘন্টা বেজে ওঠে। গাড়িতে শক্ত করে দিহানের হাত আঁকড়ে ধরে হেঁচকি তুলে কাঁদতে থাকে অন্তি। দিহান ওকে বাঁধা দেয় না। কাঁদতে দেয় নিজের মতো। কাঁদলে মন শান্ত হয়। আজ সে মেয়েটাকে কাঁদতে দিচ্ছে তবে এরপর আর নয়। এটাই শেষ।
বেশ সময় নিয়ে শান্ত হয় অন্তি। গাড়ি তখনো ছুটে চলছে। অন্তিদের বাসা থেকে গাড়ি নিয়ে দিহানদের বাড়িতে পৌঁছাতে পাঁচ থেকে সাত মিনিট সময় দরকার হয়। সেখানে প্রায় আধঘন্টা হতে চললো। কান্নার জন্য এতক্ষণ ব্যাপারটা না বুঝলেও এখন মাথায় আসতেই সে মাথা ঘুরিয়ে দিহানের পানে তাকায়। গলায় কৌতুহল নামিয়ে বলে,

‘কোথায় যাচ্ছি আমরা?’

দিহান তার হাত দ্বারা অন্তির কোমর টেনে কাছে আনে। ছোট করে বলে,

‘সিলেট।’

‘ওখানে কেন?’

‘চা বাগানে হানিমুন করতে।’

অন্তি লজ্জা পায়। আর কিছু বলে না। আস্তে করে দিহানের শরীরে নিজের ভর ছেড়ে দেয়। মাথা এলিয়ে দেয় দিহানের বুকে। দিহানের কপাল কুঁচকে আসে। অন্তির মাথায় হাত রেখে বলে,

‘ঠিক আছো? শরীর খারাপ করছে?’

‘উহু।’

‘ক্ষুধা লেগেছে?’

‘উহু।’

‘তাহলে?’

‘অনেক দিন পর শান্তিতে ঘুম পাচ্ছে। একটু ঘুমাই?’

দিহান মুচকি হাসে। মাথা নামিয়ে অর্ধাঙ্গিনীর কপালে ঠোঁট ছোঁয়ায়। ভালোবাসায় ভরে ওঠে চোখ দুটো। এই ছোট মেয়েটা কতটা গভীর ভাবে ভালোবাসে তাকে ভাবতেই বুকটা প্রশান্তিতে ভরে ওঠে। দিহান অন্তির অনামিকা আঙ্গুলে ভিষণ যত্নে একটা আংটি পরিয়ে দেয়। পরপর আলতো ঠোঁট ছুঁয়ে দেয় হাতে। অন্তি কেঁপে ওঠে। তবে ঠোঁট ছুঁয়ে যায় মিষ্টি হাসি। গভীর হয় হাতের বন্ধন। দিহান নিচু গলায় বলে,

‘এভাবেই ঘুমাও। আমি মাথায় বিলি কেটে দিচ্ছি।’

______________

নুহাশ বসে আছে তন্নিদের বসার ঘরে। সামনেই তন্নির পিতা মহাশয় পায়ের উপর পা তুলে পেপার পড়ছেন। নুহাশ অস্বস্তি নিয়ে বসে আছে। ভদ্রলোক তাকে ডেকে পাঠিয়ে পেপার‌ পড়ছেন ব্যাপারটা ভিষণ অস্বস্তিকর। পেপার তো অন্যসময়ও পড়া যাবে। এখনই কেন? কিন্তু নুহাশ এসব প্রশ্ন ভদ্রলোককে করতে পারছে না। অত্যন্ত শান্ত ভঙ্গিতে বসে আছে সে। আরো কিছুটা সময় পার হলে তিনি পেপার থেকে মুখ তুলে তাকান। পরক্ষণে বাসার কাজের মেয়েটাকে ডেকে চা দিতে বলেন। চশমার উপর থেকে নুহাশকে দেখে প্রথমে যে প্রশ্নটা করেন তা হলো,

‘তুমিই সে যে রাস্তা থেকে আমার মেয়ের বারান্দায় উঁকি ঝুঁকি দাও?’

নুহাশ চট করে কিছু বুঝতে না পেরে বলে,

‘জ্বি।’

‘কেন?’

‘মানে?’

‘কেন উঁকি ঝুঁকি দেও?’

‘ইয়ে মানে….’

‘বাড়িতে কে কে আছেন?’

‘মা ,ছোট ভাই আর আমি।’

‘বাবা নেই?’

‘জ্বি না।’

‘তোমার মা কে একদিন আসতে বলো। তার সাথেই নাহয় বিস্তার আলাপ করবো।’

‘জ্বি আচ্ছা।’

‘বসো। চা খেয়ে যাও।’

‘জ্বি।’

‘চায়ে চিনি কেমন খাও?’

‘মিডিয়াম।’

‘চিনি খাবে না। কড়া চা উইদাউট সুগার। শরীরকে স্ট্রং রাখবে।’

‘আচ্ছা।’

‘আমি রুমে যাচ্ছি। চা দিয়ে গেলে খেয়ে তারপর উঠবে কেমন?’

‘জ্বি।’

ভদ্রলোক চলে গেলেন। নুহাশ দাঁত কামরে তার দিকে তাকিয়ে রইল। এই লোক তার শ্বশুর হবে ভাবতেই আত্মা শরীর ছেড়ে বের হয়ে যেতে চাইছে। কেবল তন্নির বাবা বলে সে চুপ করে আছে। নয়তো বুড়িগঙ্গা নদীর পানিতে গোসল করিয়ে আনতো‌।

_____________

অন্তি দিহানের সময় বেশ সুন্দর কাটছে। তারা এখনো সিলেটে রয়েছে। দিহানের নিজস্ব একটা ভিলা রয়েছে এখানে। এটার সম্পর্কে কেউ জানতো না। ছোট ভিলা হলেও আশপাশের সৌন্দর্য সবসময় তাদের মুগ্ধ করে রাখে। অন্তি আর দিহান বাদে দুজন কাজের লোক রয়েছে। অন্তি টুকটাক রান্না শিখেছে। মাঝে মাঝেই সে দিহানের জন্য রান্না করে। সে রান্না করেছে শুনলে দিহান খুব করে বকা দেয়। যদি হাত কেটে যেত? যদি হাত পুড়ে যেত? এসব মিষ্টি বকা অন্তির ভালো লাগে। ব্যাপারটা আরো ভালো লাগে যখন বকবকি শেষে দিহান তৃপ্তি করে তার রান্না খায়।
বিয়ের পর অন্তি‌ দিহানকে নতুন ভাবে আবিষ্কার করেছে। মানুষটা এত কথা বলতে পারে! অন্তিকে কখনো একা অনুভব করতে দেয় না মানুষটা। বিকেল হলেই ঘুরতে যাওয়া। রাত জেগে খোলা বারান্দায় গল্প করা আরো কত কি! অন্তি বারবার অবাক হয়। মানুষটা সত্যিই অন্যরকম। ভিষণ যত্নশীল। ভালোবাসায় মুড়িয়ে রাখার মতো। সে তার ভালোবাসার পরিধি আরো বিস্তার করবে। যা দিহান সাঁতরে পার হতে পারবে না। তার ভালোবাসার বিশাল সমুদ্রে তলিয়ে রাখবে মানুষটাকে। আর সে? সে তো মানুষটার উম্মাদনায় সেই কবেই মত্ত হয়ে আছে।

সমাপ্ত

(দীর্ঘ সময় নিয়ে শেষ করলাম গল্পটা। ভুল ত্রুটি সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।)

তাহার উম্মাদনায় মত্ত পর্ব-৩৪

0

#তাহার_উম্মাদনায়_মত্ত
#লাবিবা_আল_তাসফি

৩৪.
পড়ন্ত বিকেল। আকাশে রোদের সোনালী আলো লুটোপুটি খাচ্ছে। ভূমিতে দাঁড়িয়ে থাকা মাঝ বয়সী মেহগনি গাছটার সকল পাতা ঝড়ে পড়েছে। কয়েকটা লাল রঙের মুর্ষে পড়া পাতার অস্তিত্ব দেখা যাচ্ছে। হয়তো দিন দুয়েক যেতেই পতন ঘটবে তাদের। গাছের চিকন একটা ডালে বসে ভিষণ করুন সুরে কা কা করে ডেকে চলেছে একটা কাক। হয়তো হারিয়ে যাওয়া সঙ্গিকে খুঁজছে সে। আশপাশে থাকা জীবগুলো তার ডাকে অস্থির হচ্ছে তাতে তার মাথা ব্যাথা নেই। নিজের জীবন যেখানে ডুবিডুবি অন্যের কথা চিন্তা করে কি হবে? নুহাশ অবশ্য বিরক্ত হচ্ছে না। তার মায়ার শরীর। কাকটার জন্য তার হৃদয় হাহাকার করছে। সঙ্গীহীন জীবন সত্যিই ভয়ংকর। এই ভয়ংকর জীবন থেকে এই বোবা প্রাণিটাকে উদ্ধার করো মাবুত!

‘এভাবেই বসে থাকবেন? কিছু না বলার থাকলে আমি উঠি?’

নুহাশ এতক্ষণে কাকের চিন্তা থেকে বেরিয়ে এলো। তার পাশে বসা পরীর মতো মেয়েটা উঠে দাঁড়িয়েছে। চলে যেতে প্রস্তুত সে। হয়তো খানিক রেগেছেও। ফর্সা মুখটা কেমন লাল হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে নাক। সুন্দরী মেয়েদের রাগলে বেশি সুন্দর লাগে। কৃত্রিম ব্লাসের প্রয়োজন হয় না। কোথাও যেতে হলে রাগ করে সৌন্দর্য বাড়ালেই হয়। অযথা টাকা খরচ করে মেকআপ করার কি দরকার?
নুহাশের এখন মেকআপ নিয়ে চিন্তা করার সময় না। তার উচিত সুন্দরীর রাগ ভাঙানো। ভাগ্য করে এমন সুন্দরী একটা প্রমিকা পেয়েছে সে, রাগ ভাঙাতে না পারলে প্রেমিক হিসেবে জাতি তাকে তীব্র নিন্দা জানাবে যে!

‘আর কিছুক্ষণ বসো? বাদাম খাবে?’

তন্নি দাঁত চেপে উত্তর দেয়,

‘অলরেডি বাদাম, ঝালমুড়ি, ফুচকা সব খেয়ে ফেলেছি। আপনার মাথাটা বাকি কেবল।’

‘আমার আপত্তি নেই তুমি এটাও খেতে পারো।’

নুহাশের নিঃস্বার্থ এই ভালোবাসা তার প্রেমিকার হৃদয় ছুঁতে পারলো না। রমনী ভয়ংকর দৃষ্টি ছুঁড়ে হেঁটে চলে যেতে লাগলো। নুহাশ ঠাঁয় বসে রইল। আজকাল কোনো কিছুই তার মত অনুযায়ী চলেনা। তার এক ধমকে একশো হৃদয় কাপলেও এই রমনীর হৃদয়ে সামান্য দোল খেলে না। নুহাশ আরো একটা ভয়ংকর সত্য আবিস্কার করেছে। এই রমনীর সামনে সে খুব নার্ভাস হয়ে পড়ে। বাঘের মতো গর্জে উঠলেও মুখ থেকে আওয়াজ আসে ‘ম্যাও’।

_____________

দিহানের পরিবার থেকে লোক এসেছে অন্তির বাসায়। এই কথা শোনার পর থেকে অন্তি রুমের দরজা বন্ধ করে শক্ত হয়ে বসে আছে। রুমের বাতি সব বন্ধ। আনন্দ আর ভয় দুটো গাঢ় অনুভূতির দরুন চোখ থেকে টুপটাপ করে জল গড়াচ্ছে। বুকের ভেতরটা অস্বভাবিক হারে কাঁপছে। যেন তোলপাড় চলছে সেখানে। সমস্ত শরীর মৃদু কাঁপছে। হাত দুটো মুঠো করে রেখে একাধারে সৃষ্টিকর্তার নিকট প্রার্থনা করে চলছে। একবারের জন্য হলেও যেন তিনি তার দোয়া কবুল করেন।

নাহার বিরস মুখে আপ্যায়নের বন্দোবস্ত করছে। তার চেহারা‌ দেখে বোঝা যাচ্ছে দিহানের পরিবার আসায় সে মোটেও খুশি না। সাহেদের আচরণে তেমন কোনো কিছু প্রকাশ পাচ্ছে না। সে হাসি মুখে কথা বলছে রেজওয়ান মির্জার সাথে। কখনো হা হা হাসির ধ্বনিতে কেঁপে উঠছে ঘর। শাহিনকে খবর দেওয়া হয়েছে। অফিসের কাজে ব্যস্ত থাকলেও দিহানের পরিবার এসেছে শুনতেই জানালেন কিছুক্ষণের মাঝেই তিনি আসছেন। একবার যে ভুল হয়েছে দ্বিতীয়বার একই ভুলের পুনরাবৃত্তি করতে চাননা তিনি। পরিবারের মেয়েদের নিয়ে তিনি ভিষণ সিরিয়াস।

রেহানা বেশ কিছুক্ষণ ধরেই নাহারের সাথে কথা বলার সুযোগ খুঁজছিলো। ছেলের থেকে যতদূর শুনেছেন তিনি আর যা দেখছেন তাতে তিনি বেশ বুঝতে পারছেন তাদের আসায় নাহার খুশি হয়নি। এড়িয়ে চলছে খুব। নাহার মিষ্টির ট্রে হাতে বসার ঘরে আসতেই নাহার হেসে তার হাত ধরেন। হেসে বলেন,

‘বসুন না! আপনার সাথে একটু কথা বলি।’

নাহার অস্বস্তিতে পড়ে যায়। হাত ছাড়িয়ে চলে যাওয়ার মতো অভদ্র আচরণ তাকে মানায় না। আবার পাশে বসে আলাপ জুড়ে দেওয়ার মতো কাজেও মন টানছে না। সাহেদ চোখের ইশারায় স্ত্রীকে বসতে আদেশ করে। সাহেদের ইশারা পেতে নাহার বসে পড়ে। মুচকি হেসে বলে,

‘হ্যা বলুন। কেমন আছেন?’

স্ত্রীকে স্বাভাবিক আচরণ করতে দেখে সাহেদ কিছুটা স্বস্তি পায়। টুকটাক কথার মাঝেই শাহিন চলে আসে। শাহিন আসতেই রেজওয়ান মির্জা কৌশলে বলেন,

‘এবার তাহলে মূল আলোচনায় আসি, কি বলেন?’

শাহিন সম্মতি জানিয়ে বলে,

‘হ্যা হ্যা অবশ্যই।’

রেজওয়ান মির্জা আলতো হেসে বলেন,

‘সাহেদ সাহেব আপনার মেয়েটাকে আমি দেখিনি কিন্তু দিহানের মায়ের থেকে যতটুকু শুনেছি ভিষণ মিষ্টি একটা মেয়ে। আমার মেয়ে নেই। কেবল দুটো ছেলে। বড় ছেলেটাকে ঠিকঠাক মানুষ করতে পারলেও ছোটটার সাথে পেরে উঠিনি। কিন্তু আমার আশা ভরসা ওর উপর ছিলো সবথেকে বেশি। ছেলেটা আমার হুট করেই রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়লো। বড় মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরী হওয়া সত্ত্বেও তা ছেড়ে এর পেছনে পড়ে রইলো। সত্যি বলতে আমি বাবা হিসেবে যথেষ্ট চেষ্টা করেছি। কিন্তু ছেলের মত বদলাতে পারিনি। তবে আমি আমার ছেলের উপর অসন্তুষ্ট না। কারণ বাবা হিসেবে আমি এতটুকু গর্ব করে বলতে পারবো আমার ছেলেটা বেষ্ট। সেটা সে যে পর্যায়েই থাকুক না কেন।’

এ পর্যন্ত বলে থামেন রেজওয়ান মির্জা। বড় করে শ্বাস ফেলে স্ত্রীর দিকে তাকান। যেন চোখের ইশারায় বলছেন,’ শেষটা নাহয় তুমি করো।’

রেহানা স্বামীর চোখের ভাষা বুঝে আলতো হাতে নাহারের হাত আঁকড়ে ধরেন। বলেন,

‘আপা আপনারা আমার ছেলে সম্পর্কে কতটুকু জানেন তা আমি জানি না। তবে আপনার মেয়ের চোখে আমি আমার ছেলের প্রতি যে টান দেখেছি তাতে আমি বলতে পারি মেয়েটা ভেতর থেকে আমার ছেলেটাকে বুঝতে পেরেছে। খুব কি অন্যায় হয় যদি আপনারাও একটু ছেলেটাকে মেনে নেন? আমি ছেলের মা হয়ে অনুরোধ করছি তার মানে এমন না আমার ছেলে দুর্বল। আমি অনুরোধ করছি কারণ আপনার মেয়েটাকেই আমার চাই নিজের মেয়ের মতো করে।’

নাহার কি জবাব দিবে খুঁজে পেল না। শাহিন যেসব কথা গুছিয়ে রেখেছিলো তা প্রয়োগ করার মতো জায়গা খুঁজে পেল না। রেজওয়ান মির্জা আর রেহানার কথায় অত্যন্দ নম্রতা ছিলো যা সাহেদ কিংবা শাহিনকে কঠিন হতে রোধ করেছে।

অন্তি গাঢ়ো নীল রঙের একটা শাড়ি পড়েছে। শাড়িটা নাহার নিজ হাতেই পড়িয়ে দিয়েছে। শাড়ি পড়ার পুরো সময়টুকু অন্তি মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলো। মুখ পড়ার সামান্য চেষ্টা করেছিলো। কিন্তু নাহারে মুখোভাব দেখে সে কিছুই বুঝতে পারেনি। শাড়ি পড়া শেষে নাহার তার রুম থেকে একটা সাদা পাথরের নেকলেস এনে দেন। সাথে ম্যাচিং দুল।

‘এটা পড়ে নে। ভালো লাগবে। অল্প একটু সাজিস।’

‘আচ্ছা।’

‘তৈরি হয়ে আমায় ডাক দিস।’

নাহার চলে যেতে নিলে অন্তি পেছন থেকে ডাক দেয়।

‘মা?’

‘হুম।’

‘রেগে আছো আমার উপর?’

‘না।’

‘সত্যি?’

‘জানিনা।’

‘আমি স্যরি মা।’

‘ঠিক আছে।’

‘দিহান সত্যিই ভিষণ ভালো মা। আরাভের থেকে অনেক ভালো। তুমি নিজ চোখেই দেখে নিও। আমি সত্যি বলছি মা।’

‘আচ্ছা।’

‘তুমি রাগ কোরো না প্লিজ। আমি কষ্ট পাচ্ছি।’

‘তৈরি হয়ে নে। আমি মিলাকে পাঠিয়ে দিচ্ছি।’

অন্তির চোখ ভরে আসে। নাহার তার উপর রাগ করেছে। সে ঠিক বুঝেছে। সে তো মা কে কষ্ট দিতে চায়নি। সে ইচ্ছা করে কিচ্ছু করেনি। সে তো দিহানকে সহ সবাইকে চেয়েছে। এজন্য একটু অবাধ্য হয়েছে। খুব বেশি ভুল করেছে কি? মা কি তাকে একটু মাফ করে দিতে পারে না?

চলবে……

তাহার উম্মাদনায় মত্ত পর্ব-৩২+৩৩

0

#তাহার_উম্মাদনায়_মত্ত
#লাবিবা_আল_তাসফি

৩২.
দিহানের আজকাল ভিষণ মন খারাপ হয়। যদিও মন খারাপ হওয়াটা অত্যন্ত সাধারণ একটা ব্যাপার। মন খারাপের জন্য পর্যাপ্ত কারণের প্রয়োজন হয় না। তবে দিহানের মন খারাপের পেছনে শক্তপোক্ত কারণ রয়েছে। তার মনে হয় সে হয়তো খুব বেশিদিন বাঁচবে না। কেন বাঁচবেনা তা অজানা। এই যে তার সামনে কোমরে ওড়না গুঁজে, চুল হাত ক্ষোপা করে দাঁড়িয়ে কাপড় ভাঁজ করতে থাকা রমনীটাকে দেখলেই তার বুক ভারী হয়ে আসে। এই মেয়েটাকে নিজের করে পাওয়ার নিদারুণ লোভ তাকে কষ্ট দিচ্ছে খুব। কিন্তু তার কেন যেন মনে হচ্ছে এই মেয়েটাকে বউ রূপে দেখা হবেনা তার। তার আগেই ওপাড়ে ডাক পড়বে।
দিহান নিজের ভাবনার উপর বিরক্ত প্রকাশ করে। নাক চোখ কুঁচকে মাথা ঝাঁকায়। ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসতে চায়। এসব কল্পনা তাকে মানায় না। এসবের পেছনের দোষটা দিহান নির্দ্বিধায় অন্তিকে চাপিয়ে দেয়। যবে থেকে এই মেয়েটা তার জীবনে এসেছে সে ক্রমশ দুর্বল হয়ে চলছে। শুনেছে নারীর হাতে পুরষকে ধ্বংস করার ক্ষমতা থাকে। এতদিন বিশ্বাস না করলেও দিহান এখন এ কথায়
পুরোপুরি বিশ্বাসী। দিহান গভীর চোখে অন্তির পানে তাকায়। বাহির থেকে আসা মৃদু বাতাসে অন্তির কপালের সামনের চুলগুলো উড়ছে। পেছনে হাত খোঁপা করা চুলগুলো আলগা হয়ে আছে। যখন তখন খুলে পড়বে। দিহানের মন চাইলো অন্তিকে বলতে,’ এদিকে এসে বসো।’ অন্তি লক্ষি মেয়ের মতো পাশে বসলে সে আলতো হাতে খোঁপা শক্ত করে বেঁধে দিবে। তার বাগানে ফোটা টকটকে গোটাকয়েক ডায়ান্থাস ফুল এনে গেঁথে দিবে খোঁপায়। মেয়েটা কি তখন লজ্জা পেয়ে দুহাতে মুখ লুকাবে? নাকি ছলছল চোখে চেয়ে বলবে,’এত কেন ভালোবাসেন?’
কিন্তু বাস্তবে দিহান খোঁপা করতে পারে না। তার পক্ষে বাগান থেকে ফুল আনাও সম্ভব না। হাঁটতে মানা তার। বাথরুমেও তাকে অন্যের সাহায্যে যেতে হয়। ব্যাপারটা ভিষণ লজ্জাজনক। দিহান বড় করে শ্বাস ফেলে। বলে,

‘বাসায় কি বলে বের হয়েছ?’

অন্তি ঘাড় ফিরিয়ে তাকায়। তার হাতে কালো রঙের একটা টি শার্ট। এই টিশার্টটা প্রায়ই দিহানকে পড়তে দেখা যায়। অন্তি দিহানের কথার জবাব না দিয়ে বলে,

‘আপনি সবসময় সাদাকালো ড্রেস আপ করেন কেন?’

‘হয়তো আমার জীবনটা ওমন ছিলো তাই।’

‘এখন কেমন?’

অন্তির চোখে ভরপুর কৌতুহল। মেয়েটা এভাবে তার প্রতি দিহানের মনোভাব জানতে চাচ্ছে। দিহান অন্তির চোখে তাকিয়েই চট করে ব্যাপারটা বুঝে ফেলল। মনে আসা সুন্দর উত্তরটা দিতে মন চাইলো না আর। মেয়েটাকে একটু রাগালে কেমন হয়? ভাবনা মতোই দিহান মুচকি হেসে বললো,

‘আই থিংক এখন আমার কালো রংটাই পছন্দ। সাদাটাও মুছে গেছে।’

অন্তির মুখের রং বদলে গেল। চোখের চাহনি গাঢ় হলো। মনে মনে ভিষণ কয়েক গালি ছুঁড়ে গটগট পায়ে রুম ছাড়লো। এই চরম অসভ্য লোককে দেখতে কিনা সে বাড়ি থেকে চুরি করে এখানে এসেছে! ভাবা যায়? সে আসলেই প্রেমে অন্ধ হয়ে গেছে। নয়তো এমন অসভ্য লোককে দেখার জন্য এত কষ্ট কেন করবে?

অন্তি বাড়ি ফিরে গেছে। যাওয়ার আগে দিহানের সাথে দেখা করেনি। রেহানা অনেক করে দুপুরে খেয়ে যাওয়ার জন্য বলেছে। অন্তির জন্য এই অল্প সময়েই চার ধরণের রান্না করে ফেলেছে। কিন্তু মেয়েটা খেয়ে যেতে রাজি হয়নি। দেরী হয়ে গেছে, বাসায় ঝামেলা হবে এই ভয়ে বেশি জোর করতে পারেনি। অল্প সময়েই মেয়েটা কেমন বাড়িটাকে ভরপুর করে ফেলেছিলো। এখন আবারো পূর্বের ন্যায় শান্ত হয়ে পড়েছে। অন্তি যাওয়ার পরপরই রেহানা দিহানের রুমে যায়। দিহান তখন চোখ বন্ধ করে শুয়ে। রেহানা এসে সরাসরি দিহানকে প্রশ্ন করে,

‘মেয়েটার ঠিকানা দে। ওর বাড়িতে যাব। যত দ্রুত সম্ভব ওকে এবাড়িতে নিয়ে আসব।’

দিহান সহজ উত্তর দেয়,

‘আচ্ছা।’

দেহানা তাজ্জব বনে যায়। ছেলে এত সহজে রাজি হয়ে যাবে সে ভাবেনি। তাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে দিহান ভ্রু কুঁচকে বলে,

‘আর কি?’

‘তোর কোনো মতামত নেই।’

‘বললাম আচ্ছা। এটাই মতামত।’

‘আচ্ছা। তোর বাবার সাথে কথা বলে দেখি।’

‘হুম। ও কোথায়?’

রেহানা স্বাভাবিক উত্তর দেয়,

‘চলে গেছে।’

দিহানের কপাল কুঁচকে আসে। চলে গেছে মানে? তাকে না বলেই চলে গেছে? এই মেয়ের সাহস দিনদিন বেড়ে চলেছে। অতটুকু মেয়ের এত জেদ থাকে কোথায়? তার ধৈর্যের বাহিরে চলে যাচ্ছে অন্তির কাজকর্ম।
কিন্তু মায়ের সামনে সে কোনোরূপ কথা বলে না। অত্যন্ত স্বাভাবিক উত্তর দেয়,

‘ও।’
______________

তন্নি আজকাল নুহাশকে ভয় পাচ্ছেনা। ব্যাপারটা নুহাশকে খুব হতাশ করছে। মেয়েটাকে ধমক দিলে আগের মতো কেঁদে ফেলেনা এখন। উল্টো খট করে কল কেটে দেয়। যখন তখন কল করে বারান্দায় ডাকলে আসে না। তার মন চাইলে তবেই আসে। নুহাশের মন বলছে আজকাল উল্টো সে ভয় পাচ্ছে বোকা মেয়েটাকে। এই বুঝি রেগে যায়! নুহাশ বিতৃষ্ণা চিত্তে হাতের সিগারেটটা ফেলে দেয়। যখন মন মেজাজ খারাপ থাকে তখন সিগারেট ও অসহ্য লাগে। নুহাশ তার খিটখিটে মেজাজ নিয়েই তামিমকে বললো,

‘কড়া করে এক কাপ চা দে তো। একদম কড়া‌। মুখে দিলে যেন নিমের মতো তিতা লাগে। বুঝছোস?’

‘দিতাছি ভাই।’

দু মিনিটের মধ্যে তার কড়া চা চলে আসে। সত্যিই ভয়ংকর তিতা চা বানাইছে তামিম। জিভে লাগা মাত্র পেট থেকে সব বের হয়ে আসার উপক্রম। ভয়ংকর দুটো গালি দিয়ে চা ফেলে রেখে দোকান থেকে বের হয়ে পড়ে সে। তামিম বোকা চোখে চেয়ে থাকে। তার কি দোষ? আশ্চর্য!

দোকান থেকে বের হয়ে নুহাশ তন্নিকে কল করে। এতদিনে এই প্রথম কল ঢোকা মাত্রই কল রিসিভ হয়। নুহাশ বিক্ষিপ্ত মেজাজ নিয়ে বলে,

‘তোমার কি আমার সাথে দেখা করার ইচ্ছা আছে? থাকলে বলো নয়তো এখানেই সব শেষ করো। প্রতিদিন ঘ্যানঘ্যান প্যানপ্যান ভালো লাগে না।’

‘আপনি এভাবে কথা বলছেন কেন?’

‘কেন বলছি জানো না তুমি?’

‘জানলে আপনাকে বলতে বলতাম?’

‘আসবা কি না তাই বলো।’

তন্নি খানিক থেমে বলে,

‘আপনি কাল সারাদিন কল করেননি কেন?

‘তুমি কথা শোনো‌ না। খুব বেশি অবাধ্যতা করো তাই।’

‘আপনি রাগ করেছেন আমার উপর?’

‘খানিকটা।’

‘আচ্ছা। রাগ করিয়েন না। সুন্দর করে কথা বলেন।’

নুহাশের মুখ রাগে লাল হয়ে আসে। কিন্তু সে নিজেকে থামায়। যথাসম্ভয় রাগ কন্ট্রোল করে বলে,

‘দেখা করতে আসো প্লিজ।’

ওপাশ থেক তন্নির খিলখিল হাসি শুনতে পাওয়া যায়। সাথে রিনরিনে গলায় বলে ওঠে,

‘অপেক্ষা করুন। আসছি।’

নুহাশ বড় করে শ্বাস ফেলে। তার প্রচন্ড মাথা ব্যাথা করছে। আজ এই মেয়ে না করলে নিঃসন্দেহে সে এই মেয়েকে খু*ন করে ফেলতো। তাকে কষ্টে রেখে তার বোকা সুন্দরী শান্তিতে থাকবে তা কিভাবে হয়?
_____________

এতদিন বাদে আরাভকে নিজের বাসায় দেখে অবাক হয় অন্তি। সোফায় বসে ফোনে কথা বলছে। টেবিলে বিভিন্ন রকম নাস্তা রাখা। নাহার অন্তিকে দেখতেই ব্যস্ত গলায় বলে,

‘দ্রুত গোসল করে তৈরি হয়ে নে। ছেলেটা অতদূর থেকে তোকে নিতে এসেছে। সেই কখন থেকে বসে আছে। দ্রুত যা।’

ততক্ষণে আরাভ ও কথা শেষ করে কান থেকে ফোন নামিছে। অন্তিকে দেখে সরল হেসে বলে,

‘অনেকদিন পর দেখা হলো। কেমন আছেন?’

অন্তি খুব স্বাভাবিক ভাবে হেসে বলে,

‘ভালো। হঠাৎ আসলেন যে?’

অন্তির কথায় আরাভ উত্তর দেওয়ার পূর্বেই নাহার ধমক দিলো।

‘এ কেমন কথা? হাতে পায়ে বড় হয়েছে শুধু। বুদ্ধি বলতে কিচ্ছু নেই। যা রুমে যা। ফ্রেশ হয়ে নে। ওর কথা ধরো না তো তুমি।’

‘ইট’স ওকে আন্টি।’

অন্তি মুখ বাঁকিয়ে রুমে যায়। গোসলে যাওয়ার পূর্বে দিহানকে ছোট একটা ম্যাসেজ পাঠায়।

‘এই যে প্রেমিক! আমি হবু বরের সাথে লাঞ্চ ডেটে যাচ্ছি।’

ম্যাসেজটা সেন্ড হতেই অন্তি খুব আনন্দের সাথে কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। ঠোঁট নেড়ে বিরবির করে দু একলাইন গান গেয়ে চলছে। মন তার তৃপ্তিতে ভরপুর। বদ লোকটা এবার বুঝুক কেমন লাগে।

দিহানের উপর আক্রমণকারীদের মধ্য থেকে‌ দুটো ছেলেকে দিহানের ছেলেরা ধরে ফেলেছে। ওদের বর্তমানে গুদামঘরে বন্ধ করে রাখা হয়েছে। এই গুদামঘরটা অনেক পুরোনো। রেজওয়ান মির্জা তার ব্যাবসার প্রথমদিকে এটাকে ব্যাবহার করতো। পরবর্তীতে এটা বন্ধ করে ফেলে রাখা হয়। সেটাকেই দিহান তার ডেরা বানিয়েছে। ছেলেদুটোর হাত পেছন করে বাঁধা। মাথা সহ মুখ কালো কাপড়ে মোড়ানো। বুলু নামের কালো করে মোটা ছেলেটা দিহানকে ভিডিও কল করে। অন্যজনকে ইশারায় ছেলেদুটোর মুখের কাপড় সরাতে ইশারা করে। মুখের কাপড় সরালে দিহান বাঁকা হাসে। বলে,

‘ওদের সাথে যারা ছিলো তাদের সবার ইনফরমেশন বের কর ওদের মুখ থেকে। সর্বোচ্চ যন্ত্রণা দিয়ে হলেও ইনফরমেশন চাই। শুধু ওদের বাঁচিয়ে রাখলেই চলবে।’

বুলু নামের ছেলেটা সাথে সাথে মাথা নাড়িয়ে জবাব দেয়,

‘কাজ হয়ে যাবে ভাই। চিন্তা করবেন না।’

কল কাটার পরপরই দিহানের সামনে অন্তির ম্যাসেজটা আসে। ম্যাসেজটা দেখতেই দিহানের মাথায় আগুন জ্বলে ওঠে। দাঁতে দাঁত চেপে চোখ বন্ধ করে নেয়। চিৎকার করে রেহানাকে ডাকে। দিহানের চিল্লাপাল।লায় রেহানা সমেত রেওয়াজ ও এসে পৌঁছায়। তিনি মাত্রই ফিরেছেন। রেহানা এসে ছেলের পাশে বসে ব্যস্ত গলায় বলে,

‘কি হয়েছে? এভাবে চিৎকার করলি কেন?’

‘আজই রূপের বাসায় যাও। যেভাবে সম্ভব সেভাবে ওর পরিবারকে মানিয়ে আসবে।’

রেহানা কিছুটা শান্তচিত্তে জবাব দিলো,

‘আজ তোর বাবা ব্যস্ত থাকবে। এত তাড়াহুড়ো করার কিছু দেখছি না আমি। সময় সুযোগ বুঝে যাব।’

‘তেমনটা হলে নিশ্চয়ই আমি তোমাকে আজ যেতে বলতাম না। আবেগে ভেসে যাওয়ার বয়স নেই আমার। যেটা বলছি প্রয়োজন আছে বলেই বলছি।’

রেজওয়ান মির্জা ছেলের কথায় অধৈর্য হয়েছে বলেন,

‘তোমার প্রয়োজনটা আমাদের ও বলো। নয়তো বুঝব কিভাবে?’

দিহান ওর বাবার বিপরীতে শক্ত গলায় বলে,

‘সেসব আপনাদের না জানলেও চলবে। আপনারা কেবল আপনাদের দায়িত্ব টুকুই সঠিক ভাবে পালন করেন। আমার কাজ আমি বুঝে নিব।’

বাপ ছেলের মাঝে বাকযুদ্ধের আভাস পেয়ে রেহানা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বলে,

‘আচ্ছা দেখছি ব্যাপারটা। আজই যাব। তোর বাবা যেতে না পারুক আমি তোর মামাকে কল করে ডেকে নিব।’

চলবে………

#তাহার_উম্মাদনায়_মত্ত
#লাবিবা_আল_তাসফি

৩৩.
গ্রাম থেকে অন্তির ফুপি সাবিনা এসেছেন। একা মানুষ এলেও বিশাল দুটো ব্যাগ বয়ে এনেছে। যেন এখানেই ঘাঁটি স্থাপনের আশায় আছে। তিন ভাইয়ের বাড়িতে এক মাস করে না থাকলে বেরানোর মজা হয় নাকি? এসে সরাসরি বড় ভাইয়ের ঘরে উঠছে সে। সিরিয়াল অনুযায়ী বড় ভাইয়ের বাসায় কিছুদিন থাকার পর মেজভাই এর বাসায় তারপর ছোটভাই। সাবিনার আসার খবর পেতেই অন্তির ছোট চাচী দৌড়ে এসেছেন। তিনি প্রয়োজন ব্যাতীত খুব একটা অন্তিদের ঘরে আসেন না।

‘মেজভাবী শুনছেন আপা আসছে নাকি।’

নাহার খুব সাবলীল জবাব দিলো,

‘শুনলাম তো।’

‘এবার মনেহয় মাসছয়েক থাকার প্লান করে আসছে। ব্যাগ দুটো দেখছেন!’

‘থাকুক সমস্যা কোথায়? তুমি তো আপাকে ছাড়া কিছু বোঝো না। সারাদিন আপা আপা করে মাথা খেয়ে ফেল এখন সমস্যা কোথায়? করলা নাহয় আপার একটু সেবা যত্ন।’

রিপা চাচীর মুখ বন্ধ হয়ে যায়। চোর ধরা পড়ার মতো মুখ করে বেরিয়ে যেতে নিলেই সেখানে আগমন ঘটে সাবিনার। পান খেয়ে ঠোঁট জোড়া লাল টুকটুকে করে ফেলেছে। গায়ে টকটকে লাল রঙের একটা চাদর। হেলেদুলে এসে সোফায় বসে পান চিবুতে চিবুতে বলে,

‘আসলাম ঘন্টা পার হইছে একবার তো খোঁজ নিলা না। আমারই নামতে হইলো। এতদিন বাদে আসলাম তোমাদের আদর যত্ন কোই? আজকালকার মানুষেরা আদর যত্ন করার কথা ভুলছে। মানুষ আর মানুষ নাই।’

সাবিনার কন্ঠ হতাশা আর কষ্টে জর্জরিত। নাহার হাতের কাজ রেখে এগিয়ে আসে। ননদের কথা তার গায়ে লাগলেও আপাতত সে গায়ে লাগাতে চাচ্ছে না। ননদ জাতটাই এমন। যতদিন থাকবে উঠতে বসতে এমন কথা শুনতে হবে। উত্তর দিতে গেলে স্বামীর কাছে খারাপ হতে হবে। কি দরকার? ওসব গায়ে না নেওয়া ভালো। রিপা চাচী তার রূপ বদলে ফেলেছে। সাবিনার পাশে বসে একগাল হেসে বলে,

‘কি যে বলেন আপা! আপনার কাছেই যাচ্ছিলাম। মেজভাবীকে সাথে নিয়ে যেতে আসলাম। এর মাঝেই তো আপনি চলে এলেন। তা শরীর কেমন? শুকাইছেন মনে হচ্ছে!’

নাহার ভেবে পায়না এমন হাতির মতো শরীরের কোন অংশ শুকাইছে। এসব লো ক্লাস তেল তার ছোট জা-কে দিয়েই সম্ভব।

বিক্ষিপ্ত মেজাজ নিয়ে বাড়ি ফিরেছে অন্তি। এসে কারো সাথে কথা না বলেই নিজ রুমে ঢুকে শব্দ করে দরজা বন্ধ করে দেয়। নাহার চিন্তিত চিত্তে মেয়ের যাওয়ার দিকে তাকায়। গলা উঁচিয়ে দু একবার প্রশ্ন করে,

‘কি হয়েছে? এত দ্রুত ফিরলি কেন?’

অন্তি জবাব দেয়নি। নাহারের মোন কেমন খচখচ করছে। এভাবে একটা ছেলের সাথে মেয়েকে পাঠানো কি ঠিক হলো? ঝোঁকের বশে বিবেগ হারিয়েছে একদম সে। নিজের বিবেগের উপর ভিষণ রাগ হলো সাথে মেয়ের জন্য দুশ্চিন্তা ও। এদিকে সাবিনাকে দেখেও এড়িয়ে যাওয়ায় দারুন ক্ষেপেছে সাবিনা। তার এতবড় বেইজ্জতি সে কিভাবে মেনে নিবে!

‘ভাইয়ের বাসায় আসলাম ভাইয়ের বউ মুখ ফিরায় নিলো এখন কিনা ভাইঝি ও! এই দিন দেখা লাগলো আমার।’

নাহার নরম গলায় বলে,

‘আপা আপনি ভুল বুঝছেন। ও হয়তো কোনো ব্যাপারে রেগে আছে। আপনি খেতে আসুনতো। ও ছোট মানুষ, ওর কাজ ধরার মতো কিছুনা। আপনার জন্য বড় রুইমাছ রান্না করেছি।’

______________

সাহেদ বাড়ি ফেরার পর বেশ বড়সড় আকারে বৈঠক বসেছে। বৈঠকটা মূলত অন্তি আর আরাভকে নিয়ে। আজ অন্তিকে নিয়ে আরাভ জমকালো কোনো রেস্টুরেন্টে গিয়েছিলো। সেখানে তার গোটাকয়েক বন্ধুরাও ছিল। কিন্তু আরাভ সহ তার বন্ধুরা যেমন পরিবেশ গড়ে তুলেছিল তেমন পরিবেশে কোনো সভ্য পরিবারের মেয়ের পক্ষে থাকা সম্ভব না। অন্তির বড় চাচা সবটা জানির পর ভাইয়ের উপর ক্ষিপ্ত হয়েছেন। অন্য কোনো ছেলের ভরসায় কিভাবে সে বাড়ির মেয়েকে ছাড়তে পারে। সাবিনাও ভাইয়ের উপর হতাশা প্রকাশ করলেন। কড়া গলায় বললেন,

‘দরকার হলে মেয়ের বিয়ে দেব না তাও ঐ ছেলেকে জামাই হিসেবে চাইনা। কথাটা মাথায় ঢুকা সাহেদ। এই নিয়ে ফের যেন দুটো কথা আমার বলতে না হয়।’

সাহেদ মাথা নিচু করে বসে থাকেন। নিজের বিবেগের উপর ঘৃণা হচ্ছে তার। আজ যদি খারাপ কোনো কিছু ঘটে যেত? কি করতেন তিনি? কিভাবে মুখ দেখাতেন মেয়েকে? ভয়ে বুকটা মুচরে উঠছে ক্ষনে ক্ষনে।
নাহারের চোখ ভরা পানি। মেয়েটা তার যেতে চায়নি। সে জোর করে পাঠিয়েছে। এর সবটা দ্বায় তার। মেয়ের ভালো চাইতে চাইতে যে খারাপ করে ফেলছিলো সেটাই বুঝতে পারেনি সে।

শাহিন সাহেব আলোচনার ইতি টানতে বলেন,

‘যা হয়েছে সেটাতো বদলানো যাবে না। কিন্তু তোমরা সচেতন হও। তাছারা আমাদের মেয়ে এখনো ছোট। বিয়ে দেওয়ার সময় যথেষ্ট রয়েছে। ওকে ওর মতো করে সময় দাও। নিজ পায়ে দাঁড়াক।’

শাহিন কথা শেষ করে উঠে যাওয়ার পরপর সবাই সবার জায়গা থেকে উঠে যায়। এই বৈঠকে অন্তি অনুপস্থিত ছিলো। সে রুমের দরজা আটকে বসে আছে। বাবা মায়ের উপর তার অনেক অভিমান জমেছে। আরাভের মতো খারাপ একটা ছেলেকেই কেন তাদের এতো পছন্দ হতে হবে। দিহানকে কেন তাদের চোখে পড়ে না? দিহান তো ওমন না। সে আলাদা। অন্যসব গুন্ডা মাস্তানদের মতো না। তবুও মায়ের ভিষণ অপছন্দ। এখানেই অন্তির অভিমান আটকে আছে।

রাতে খেতে ডাকা হয়েছে অন্তিকে। কিন্তু সে দরজা খোলেনি। নাহার সাহেদের প্লেটে খাবার বেড়ে দিলে সাহেদ না খেয়েই উঠে যায়। নাহারের চোখ ভরে আসে। তার ও খাওয়া হয়না। খাবার গুছিয়ে ফ্রিজে তুলে রাখে। পারুকে ডেকে খেয়ে নিতে বলে। তার খাবার বেড়ে রাখা হয়েছে। বাড়ির এমন অবস্থায় পারুর মনটাও খারাপ। সে ও ভিষণ মন খারাপ নিয়ে বলে,

‘খাইবার মন চায়না খালা। আপারে ভাত না খাওয়াইয়া আমি কোনোদিন খাইছি বলেন? আপা খায়নায় আমি কেমনে খাই?’

নাহার ওর কথায় গুরুত্ব না দিয়ে বলে,

‘ভাত খেয়ে প্লেট ধুয়ে রাখিস। তরকারিটা বাইরে আছে ফ্রিজে রেখে দিবি মনে করে।’

_______________

দুদিন পার হয়ে যাওয়ার পরেও রেজওয়ান মির্জা সময় বের করতে পারছেন না ছেলের জন্য অন্তির হাত চাইতে যাওয়ার। এদিকে রেহানা আতঙ্কিত হয়ে আছে। দিহান না ঝামেলা করে। ছেলের উপর তার বিশ্বাস নেই যেমনটা ছেলের বাপের উপর নেই তার। দুজনের কেউই সোজা কথার মানুষ না।
রেজওয়ান মির্জা পেপার পড়া শেষ করে চায়ের কাপে চুমুক বসান। রেহানা বিরক্ত ভঙ্গিতে বলেন,

‘আপনার ভাবজ্ঞান কি? কি করতে চাচ্ছেন?’

রেজওয়ান মির্জা স্ত্রীর কথার মর্ম বুঝতে না পেরে বলেন,

‘কোন ব্যাপারে বলছো?’

রেহানা স্বামীর কথায় আশ্চর্য না হয়ে পারেন না। দুদিন যেতে না যেতে এত বড় একটা ব্যাপার ভুলে বসেছে মানুষটা। ছেলেকে সে চেনেনা? এ ব্যাপারে দিহান জানতে পারলে বাড়ি মাথায় তুলবে। নিজের রাগ চেপে রেহানা বলে,

‘আপনার আজ যত কাজ আছে ক্যান্সেল করুন। আমরা রূপন্তিদের ভাসায় যাচ্ছি আজ। এটাই ফাইনাল।’

রেজওয়ান চায়ের কাপ নামিয়ে রাখতে রাখতে বিতৃষ্ণ গলায় বলেন,

‘ছেলের সাথে সাথে তোমার মাথাও খারাপ হয়েছে রেহানা। ওর শরীরের অবস্থা কি? এই অবস্থায় বিয়ের ভূত চেপেছে মাথায়। তুমিও সেই ভুতকে দুধ কলা দিয়ে আপ্পায়ন করছো।’

রেহানা গলায় দ্বিগুণ তেজ নিয়ে জবাব দেন,

‘গেলেই তো বিয়ে হয়ে যাচ্ছে না। তাদের ও তো মতামত থাকবে। কথা বলতে সমস্যা কোথায়? কোনো কারণ ছাড়া তো ছেলে এত ব্যস্ত হয়নি। আপনি না চিনলেও আমার ছেলেকে আমি চিনি। সংসারের কোনো ব্যাপারে আপনি সিরিয়াস না। সব কিছুই আপনার কাছে ফালতু মনে হয়।’

‘এখানে সংসারের ব্যাপার কেন আসছে? আশ্চর্য!’

‘আশ্চর্যর কি দেখলে? আশ্চর্য হওয়ার মতো কিছুই বলিনি আমি। যা বলেছি সবটা সত্যি।’

এ পর্যায়ে রেজওয়ান মির্জা হার মেনে নেন। ক্লান্ত গলায় বলেন,

‘আচ্ছা আজ যাচ্ছি আমরা। সময় মতো তৈরি হয়ে নিও।’

চলবে…………

তাহার উম্মাদনায় মত্ত পর্ব-৩০+৩১

0

#তাহার_উম্মাদনায়_মত্ত
#লাবিবা_আল_তাসফি

৩০.
কোয়েন্সিডেন্স! রিয়েলিটি অবজারভ করলে এই কোয়েন্সিডেন্স এর ও দুটো ধরণ আছে। প্রথমত ইন্টেনশনাল কোয়েন্সিডেন্স এবং দ্বিতীয়ত কোয়েন্সিডেন্টাল কোয়েন্সিডেন্স। তন্নির সাথে যেটা ঘটেছে সেটা এই দুটোর ভেতরের ঠিক কোন পর্যায়ে পড়ে তা তার জানা‌ নেই। এই মুহূর্তে তারা রয়েছে পুরান ঢাকার স্বনামধন্য একটা কফিশপে। কেবল কফি খাওয়ার জন্য সুদূর মিরপুর থেকে পুরানঢাকা আসার রহস্যটা তন্নিকে খুব ভাবাচ্ছে। তবে আপাতত সে উক্ত বিষয় নিয়ে মাথা ঘামাতে চাচ্ছে না। তাদের সামনে ইতিমধ্যে ধোঁয়া ওঠা চার মগ কফি চলে এসেছে। তন্নির পাশে বসা তানিয়া সুন্দর করে কিছু ছবি ক্লিক করছে কফির। তাদের সামনে বসে আছে দুজন পুরুষ। একজন সম্পর্কে তন্নির হবু দুলাভাই। গোলগাল মুখের মোটামুটি সুদর্শন দেখতে লোকটার নাম নিবারস। তানিয়ার সাথে তিন বছরের প্রেমের সম্পর্ক তার। এই তিন বছরে তন্নি নিবারসের পরিবার সম্পর্কে অনেক কিছু শুনলেও তার যে একজন বড় ভাই রয়েছে এ ব্যাপারে পুরোপুরি ভাবে অজ্ঞত ছিলো সে। নিবারসের পাশে বসে থাকা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিধারি ব্যক্তিটাই নিবারসের একমাত্র বড় ভাই নুহাশ খন্দকর। নুহাশকে দেখার পর থেকেই তন্নি অন্যমনস্ক হয়ে আছে। তার বারবার কেন যেন মনে হচ্ছে নুহাশ জেনেশুনেই এখানে এসেছে। এটা কোনোভাবেই কোয়েন্সিডেন্স হতে পারে না।

‘তুই হঠাৎ এমন জমে গেলি কেন? কোনো সমস্যা?’

তানিয়াকে চিন্তিত দেখালো। তন্নি ক্ষুদ্র হাসার চেষ্টা করলো।

‘সমস্যা কেন হবে? আ’ম ওকে।’

‘তবে খাচ্ছিস না কেন? কফি ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছ।’

তন্নি আড় চোখে নুহাশকে পর্যবেক্ষণ করে পুনরায় হেসে জবাব দেয়,

‘ঠান্ডা হলেই খাবো। গরম খেলে জিভে লাগে।’

কথাটা পুরোপুরি ভাবে মিথ্যা। ধোঁয়া ওঠা গরম কফি ছাড়া সে কখনোই কফি খায় না। ঠান্ডা হলে কফির স্বাদ নষ্ট হয়ে যায়। ফু দিয়ে দিয়ে গরম কফি পান করার মতো স্বাদ কিছুতে নেই। কিন্তু তাকে মিথ্যা বলতে হচ্ছে। কেন এই মিথ্যা গুলো সে বলছে সেটা তার অজানা। নুহাশ নামক ব্যক্তিটাকে দেখে কিছুটা নার্ভাস সে। তার বডির নার্ভ সিস্টেমে কিছুটা মুর্ষে পড়েছে। এজন্যই হয়তো। কিন্তু নুহাশের মতো একটা মানুষের জন্য মিথ্যা বলে তার মনে অশান্তি হচ্ছে খুব। এমন ফালতু ধরনের মানুষের জন্য নিজের কাঁধে পাপ নেওয়াটা বাড়াবাড়ি ধরনের বোকামি হয়ে গেলো। কিন্তু এতটা বোকা তো তন্নি না!

পুরোন ঢাকার এক রোড সাইড হোটেল থেকে দুপুরে লাঞ্চ করা হবে। রোড সাইড হোটেল হলেও ওখানকার বিরিয়ানি লোভনীয়, এমনটাই শুনেছে তন্নি। লোকেশনে পৌঁছাতে রিকশায় বিশ মিনিটের পথ। হাইওয়ে ধরে গেলে আরো একটু দ্রুত পৌঁছানো যেতে। এই রুটে জ্যাম নেই। কিন্তু তানিয়ার মতে পুরোন ঢাকার অলিগলিতে রিকশা করে ঘোরাটা মজার। এজন্য দুটো রিকশা ঠিক করা হয়েছে। তন্নি এ ব্যাপারে নিজের মতামত প্রকাশ করতে চাইলেও তাকে পুরোপুরি ভাবে অগ্রাহ্য করা হলো। তানিয়া ও নিবারস এক রিকশায় গেলে তাকে যেতে হবে নুহাশের সাথে একত্রে। যেটা তন্নি কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না।

তানিয়াদের রিকশা এগিয়ে চলছে। যেতে যেতে তানিয়া রিকশা থেকে পেছনে উঁকি দিয়ে তন্নিকে হুঁশিয়ারি করে বলছে,

‘সাবধানে বসবি। কোনো সমস্যা হল ভাইয়াকে বলবি। ওকে?’

তন্নি ছোট মুখে মাথা নাড়ল কেবল। বাঘের মুখে ফেলে রেখে সাবধানে থাকতে বলাটা তার বোনকে দিয়েই হয়তো সম্ভব।
নুহাশ আগে উঠে বসেছে। তন্নির দিকে হাত বাড়িয়ে ছোট করে বলে,

‘উঠে এসো।’

তন্নি পুরোপুরি ভাবে নুহাশকে উপেক্ষা করে একাই উঠে বসে। নুহাশ মাথা চুলকে হাসে। এই বোকা রমনীর যে এত জেদ রয়েছে সেটা সে জানতো না।
রিকশা চলতে শুরু করেছে। পরিবেশের ঠান্ডা বাতাস এসে নাক মুখ ধাক্কা খাচ্ছে। তন্নির সাদা মুখ লাল হয়ে এসেছে। নুহাশ লক্ষ্য করে নিচু গলায় শুধায়,

‘হুড তুলে দিব?’

‘না।’

‘ঠান্ডা লাগছে তো!’

‘লাগুক! তবুও অপরিচিত কারো সাথে রিকশার হুড তুলে ঘোরার মুড নেই আমার।’

নুহাশ ঠিক তন্নির মতো করেই জবাব দেয়,

‘রিকশার হুড তুলে এক অসহায় মেয়ের সাথে রোম্যান্স করার মুডে নেই আমি। তুমি চাইলে অবশ্যই সেই মুডে ট্রান্সফার হবো। চাও?’

তন্নির মুখ রাগে আরো লাল হয়ে আসে। ক্ষিপ্ত গলায় বলে ওঠে,

‘আপনি ভিষণ অসভ্য।’

‘তাহলে অসভ্যতা করার পার্মিশন দিচ্ছ?’

নুহাশের হেঁয়ালি কথায় রাগ বাড়ে তন্নির। আরো খানিক চেপে বসতে গেলে নুহাশ তার বাহু ধরে কাছে টেনে আনে। ধমকের সুরে বলে,

‘আর একবার চেপে গেলে রাস্তায় নামিয়ে দিব। এভাবে বসো। বল্লাম তো যেসব ভাবছো সেসবের মুডে নেই আমি।’

তন্নি রাগি চোখে তাকায়। নুহাশ তাতে থোরাই কেয়ার করে। এক হাতে তন্নিকে নিজ বাহুতে আটকে রেখেই হুড তুলে দেয়। এতে বাতাস কম লাগলেও বসার জায়গা চেপে আসে। তন্নিকে না চাইতেও নুহাশের সাথে লেগে বসতে হয়। নুহাশের মুখ থেমে নেই। সে বিভিন্ন কথা বলে চলেছে। এই যেমন,

‘তোমার মনে হয়না আমার বয়সটা প্রেমের জন্য একটু বেশি হয়ে যাচ্ছে? আই মিন এখনি শেষ সময় প্রেম করার।’

তন্নি না চাইতেও অবাক গলায় শুধালো,

‘কেন? এরপর কি হবে?’

‘কিছুই হবেনা। তবে প্রেমের একটা বয়স আছে বুঝলে। সেই বয়সের লাস্ট স্টেজে আছি আমি। এখন আশপাশ থেকে সুন্দরী দেখে একটা মেয়ে পটিয়ে ফেলতে পারলেই হয়।’

‘ওহ! ওকে।’

‘কিসের ওকে?

তন্নি থতমত খেয়ে যায়। নিভু গলায় বলে,

‘আই মিন পটান!’

‘তুমি কেন পটছো না?’

‘আপনিকি আমাকে পটাতে চাইছেন?’

নুহাশ দু ভ্রুর মাঝে ভাঁজ ফেলে বলে,

‘সন্দেহ আছে?’

‘সন্দেহ নেই। তবে আপনার প্রেমে পড়ার মতো ইচ্ছাও নেই।’

‘তাহলে বিয়ে করো? প্রেমটা নাহয় বিয়ের পর হবে।’

‘আপুর আগে আমার বিয়ে অসম্ভব।’

‘চলো পালাই।’

‘আপনার সাথে?’

‘হুম।’

‘ইম্পসিবল।’

. . . . . . .
______________

‘আপা চা নেন। ‘

চা নিতে বললেও পারু চায়ের কাপটা বারান্দার রেলিংয়ের উপর রাখলো। অন্তি এখানে দাঁড়িয়ে শীতল পরিবেশ উপভোগ করছিল। এই সুন্দর সময়টা এক কাপ চা খেতে খেতে পার করলে মন্দ হয়না। এজন্যই পারুকে ডেকে চা আনালো। পারু কেবল তার জন্য চা এনেছে এমন নয়। সে নিজের জন্য ও এক কাপ চা এনেছে। সাথে দুটো বিস্কুট ওড়নার পাড়ে বেঁধে এনেছে। অন্তি তা দেখে মুচকি হাসে। চায়ের কাপ তুলতেই তার কপালে ভাঁজ পড়ে।

‘দুধ চা কেন? রং চা খাব বলেছিলাম।’

অন্তির কথায় পারু বিশেষজ্ঞদের মতো করে বললো,

‘আপনের রং চা খাওয়া চলবে না আপা। আপনের গায়ের রং চাপা। রং চা খাইলে গায়ের রং আরো ময়লা হবে। এহন থেইকে আমি নিজ দায়িত্বে আপনেরে দুধ চা বানায় দিব। দুধ চা খাবেন আর দুধের মতো টসটসে সাদা হবেন।’

‘তোমাকে এ কথা কে বললো?’

‘কেউ বলে নায় আপা। আমি বুজদার মানুষ ছোটসময় থেইকে। কার কি দরকার তা আমি বুঝবার পারি।’

‘আমার মনে হয় আমিও তোমাকে বুঝতে পারছি পারু।’

‘কি বুঝতাছেন আপা?’

‘এই যে তুমি মায়ের হাত থেকে বাঁচতে আমাকে জোর করে দুধ চা খাওয়াচ্ছ। মূলত তোমার দুধ চা পছন্দ।’

পারুর মুখটা ছোট হয়ে আসে। অন্তি যে সত্যিই বুঝে ফেলবে সে বোঝেনি। পারুকে নিভে যেতে দেখে অন্তি মুচকি হেসে বলে,

‘পরিবেশটা সুন্দর পারু। এমন পরিবেশে মন খারাপ করতে নেই। চিন্তা করো না, আমি মা কে বলবো না। তবে তুমি যাওয়ার আগে আমার বুক সেলফ টা ক্লিন করে দিও। বহুদিন ওটায় হাত লাগাও না।’

‘আরো কিছু থাকলে তাও করতে রাজি। আপনের মা নামক জল্লাদ মানুষটার থেইকে বাঁচাইছেন এরজন্য শুকরিয়া।’

অন্তি জবাব দেয় না কেবল হাসে। তার মায়ের সাথে পারুর বোনাবুনতি হয়না। সবসময় ঠোকাঠুকি লেগে থাকে। অথচ পারুল একদিনের জন্য কোথাও গেলে তার মায়ের চিন্তার শেষ থাকে না। পারুটা কোথায় গেল? কি করছে? কি খাচ্ছে?আবার কোথায় কোন অঘটন ঘটালো কিনা! দুনিয়ার চিন্তায় সে নিজের খাওয়ার কথাই ভুলে যায়।

দিহানের সাথে অন্তির দেখা হয়না আজ প্রায় সপ্তাহ হয়ে এসেছে। প্রতিদিন রাতে কথা হয় ওদের। ভিডিও কলে কথা বলার থেকে দুজনের চোখের কথা হয় বেশি। দিহানকে বাসায় সিফ্ট করা হয়েছে। বাদবাকি ট্রিটমেন্ট বাসায় থেকে নেওয়া হবে। দুদিন পরপর ডক্টর এসে চেক করে যাচ্ছে। খুব শীঘ্রই সুস্থতার পথে ফিরবে বলে আশাবাদী সবাই।

প্রতিদিন নিয়ম করে দিহানের সাথে ভিডিও কলে কথা হলেও সামনে থেকে দেখার তৃষ্ণা অন্তিকে পাগল করে দিচ্ছে। তার এই প্রাণ ধুকপুক করা বিষয়টা সমাধান করতে বিপজ্জনক একটা উপায় বের করেছে অন্তি। তার সাহস বরাবরই সহ্য সীমার বাইরে। এবারো সীমা অতিক্রম করে সে কাউকে না জানিয়ে দিহানের বাড়িতে হানা দিয়েছে। দিনের এই সময়টা রেজওয়ান মির্জা বাহিরে থাকেন। কথায় কথায় দিহানের থেকে সেটা জানতে পেরেছে অন্তি। তাই এই সময়টাকেই উপযুক্ত সময় হিসেবে বেছে নিয়েছে সে। মহিলাদের মন হয় নরম মাখনের মতো। চাইলেই গলানো যায়। কিন্তু পুরুষ মন পাথরের ন্যায়। এরা এতো সহজে গলে না। তাই অন্তি দিহানের মাকে নিজের টার্গেট করেছে। তার দক্ষতা দিয়ে দিহানের মাকে প্রথম দশ মিনিটের মধ্যে নিজের মা বানিয়ে ফেলা কোনো ব্যাপার না। বাবার ব্যাপারটা পরে হ্যান্ডেল করা যাবে।
_______________

‘এটা দিহান মির্জার বাড়ি না?’

একখন্ড সোনালী রোদের নিচে টুল পেতে ঘুমের মতো পড়েছিল দারোয়ান। এ বাড়িতে পরিচিত মানুষ ব্যতীত সচারচার কেউ আসে না। বড় সাহেব বাহিরে যাওয়ার পর পরিচিত মানুষ আসার সম্ভাবনাও কমে যায়। এই সময়টুকু বসে বসে নিদ্রার মাঝে কাটে তার। দারোয়ান নিভু নিভু চোখ চেয়ে জবাব দেয়,

‘হুম। কি চাই?’

‘কিছু চাই না। গেট খুলে দিলে ভেতরে যেতাম আরকি।’

দারোয়ান খানিক বিরক্ত হলো বোধহয়। বললো,

‘লেখিত কাগজ আছে? দেখান।’

অন্তি আকাশ থেকে টুপ করে পড়ার মতো করে বললো,

‘কি সাংঘাতিক ব্যাপার! বাড়িতে ঢুকতেও লেখিত দরকার বুঝি?’

‘এ বাড়িতে লাগে। এখানে বাহিরের লোক ঢোকা নিষেধ।’

‘আপনি কাকে বাহিরের লোক বলছেন? আপনার আইডিয়া আছে আমি কে?’

‘কে আপনি?’

অন্তি তৎক্ষণাৎ ফোন বের করে দিহানকে কল করলো। প্রম কলেই দিহান লিসিভ করলো। অন্তি কল লাউডে দিয়ে বললো,

‘দিহান বলুন তো আমি আপনার কি হই?’

হঠাৎ এমন কথায় দিহান খানিক ভরকালো বোধহয়। কিন্তু তাতে অন্তির আসে যায় না। সে পুনরায় বললো,

‘আমি আপনার প্রেমিকা এ কথা কি সত্যি?’

ওপাশ থেকে ছোট জবাব এলো,

‘হুম। সত্যি।’

‘আমি আপনার হবু বউ এ কথা সত্যি?’

‘হুম সত্যি।’

‘তাহলে আমি আপনার পরিবারের একজন সদস্য তাই না?’

‘হুম তাই।’

‘আচ্ছা রাখি এখন।’

‘কিন্তু……’

চলবে……….

#তাহার_উম্মাদনায়_মত্ত
#লাবিবা_আল_তাসফি

৩১.
দিহানের রুমের দক্ষিণ পাশ জুড়ে বিশাল এক খোলা বারান্দা রয়েছে। বারান্দা থেকে দিনের আলো রুমটাকে সর্বদা উজ্জ্বল করে রাখে। বারান্দার থাই খোলা। রেহানা খুলে রেখে গেছে। দু একখন্ড কোমল রোদ এসে পড়েছে বিছানায়। নরম রোদ শরীরে লাগায় বেশ আরাম অনুভব হচ্ছিলো দিহানের। কিন্তু এই আরামকে হারাম করে দিয়েছে অন্তির একটা ফোন কল। দিহান ভেবে পায়না মেয়ে মানুষ এত অশান্ত হয় কিভাবে। মেয়েরা হচ্ছে এক মুঠো কাদার দলার মতো। যেমন ভাবে রূপ দেওয়া হবে তেমন ভাবেই থাকবে সারাজীবন। কিন্তু এই মেয়ে হচ্ছে সকল কিছু ছাপিয়ে এক ভিন্ন জাতের। কোনো কিছুতে পরোয়া নেই তার। হুট করে তার বিপি কখনো হাই করে ফেলে কখনো বা ডাউন। এক দন্ড শান্তি নেই কোথাও। চিন্তায় কপালে ভাঁজ পড়েছে দিহানের। না জানি কোথায় কি অঘটন ঘটাচ্ছে তাকে নিয়ে! কলটাও রিসিভ করছে না। চিন্তিত ভঙিতে দিহান কল করলো নুহাশকে। কিন্তু তাকে অবাক করে দিয়ে নুহাশ কল রিসিভ করলে না। এমনটা সচরাচর হয় না। সচরাচর বলতে কখনই হয় না। দিহানের কুঁচকানো কপাল আরো খানিক কুঁচকে এলো। অন্তির খোঁজ নেওয়ার শেষ মাধ্যম হিসেবে দিহান পারুকে কল করলো। দু বার রিং হওয়ার পর পারু কল ধরলো। দিহানকে কিছু জিজ্ঞেস করতে হলো না। তার পূর্বেই পারু বলতে শুরু করলো,

‘আপা ঘুম ভাঙার পর থেইকেই কেমন অদ্ভুত আচরণ করতাছিল বুঝলেন ভাই? মনেহয় মনে রংটং লাগছে। বয়সটাতো বোঝেন। খালা….’

দিহান পারুকে কথা শেষ করতে দিলো না। মাঝ পথে থামিয়ে দিয়ে বললো,

‘ও কোথায় এখন?’

কথার মাঝে বাঁধা দেওয়ায় পারু কিছুটা বিরক্ত। ভালো অংকের টাকা দেয় দেখে এসব পারু সহ্য করে নেয়, নয়তো এসব মানুষের ধার ধারে না পারু। মুখের কথা গিলে ফেলে পারু জবাব দেয়,

‘ঘন্টাখানেক আগে বাইরে গেছে। কোতায় তা এই পারু জানে না। সেই খবর রাখার কতা আমার ছিলো না। পারুর কাজ পারু ঠিকঠাক করছে। পারু একবার যে কাজ হাতে….’

দিহান খট করে কল কেটে দিলো। প্রয়োজনের সময় কোনো কিছুই ঠিক থাকে না। এই মুহূর্তে অন্তি কোথায় আছে জানাটা দরকার ছিলো। দিহান ছোট করে শ্বাস ফেলে। বিয়ের পর এই মেয়েকে চব্বিশ ঘন্টা সে ঘরে আটকে রাখবে। নয়তো যে কোনো মুহূর্তে সে দমবন্ধ হয়ে মারা যাবে।
______________

মিণু সুপারির ছোলা ছুলছে মেঝেতে বসে। রেহানা বারবার তাকে মেঝেতে বসতে মানা করেছে। এই ঠান্ডায় মেঝেতে বসে থেকে ঠান্ডা বাঁধিয়ে পরে দিন রাত কাশতে থাকবে। এজন্য রেহানা তাকে বারবার বলেছে,

‘মিনু সোফায় বসে তোর যা কাজ করার কর। মেঝেতে যেন বসতে না দেখি।’

কিন্তু সে কথা তার মনে থাকে না। মেঝেতেই বসে পরে। তখন কিছু বললে মুখখানা আঁধার করে বলবে,

‘সোফায় বসার অভ্যাস নাই তো তাই বারবার ভুল হয়।’

রেহানাও তাই তাকে কিছু বলা ছেড়ে দিছে। আর যাই হোক প্রতিবেলায় মিনুকে সোফায় বসতে বলা তার পক্ষে সম্ভব না।

কলিং বেল বাজছে। রেহানা রান্নাঘরে স্যুপ রান্নার জন্য চিকেন ছোট ছোট পিস করছে। সে রান্নাঘর থেকেই গলা উঁচু করে মিনুকে ডাকে।

‘দরজা খোল। দেখ কে এলো।’

মিনুর কোনো শব্দ পাওয়া গেলো না। রেহানা নিজেই হাত ধুয়ে বের হয়ে এলো। দরজা খুলতেই হাসি উজ্জ্বল মুখের একটা মেয়েকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেলো। দু হাত ভর্তি তার বিভিন্ন ফল। তাকে দেখতেই মিষ্টি হেসে সালাম দিলো। হঠাৎ তার বাড়িতে একটা মেয়ের আগমনে রেহানা খানিকটা বিস্মিত হয়। রেহানা তাকে ভেতরে আসতে না বললেও অন্তি টুপ করে ঘরে ঢুকে পড়ে যেন এটা তার বাড়ি। ততক্ষণে মিনুও এসে দাঁড়িয়েছে কাছে। অন্তি ফলের ব্যাগ দুটো মিনুর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বেশ স্বাভাবিক ভাবে রেহানাকে বলে,

‘মা দিহান কি খেয়েছে?’

এত চমক হজম করতে না পেরে রেহানা বোবা বনে গেলো যেন। কে এই মেয়ে? কোথা থেকে এলো এসব প্রশ্ন ভাবার সময়টুকু ও পেলো না সে। সম্মোহিতর মতো মাথা নেড়ে না জানালো। অন্তি মুচকি হেসে গলার ওড়না সুন্দর করে কোমরে পেঁচিয়ে বললো,

‘রান্নাঘরটা কোন দিকে?’

মিনু হাতেল ইশারায় রান্নাঘর দেখিয়ে দিলো। অন্তি মিষ্টি করে হেসে ধন্যবাদ জানিয়ে সেদিকে চলে গেলো। তার পিছু পিছু রেহানাও যেয়ে রান্নাঘরের দরজায় দাঁড়ালো।

‘মা এই মাংস দিয়ে কি হবে?’

‘স্যুপের ভেতর দেওয়া হবে।’

‘স্যুপটা আমি রান্না করি?’

‘পারবে?’

‘খুউউব পারবো। আপনি শুধু বলে বলে দিবেন কখন কি করতে হবে।’

রেহানা হঠাৎ ফিক করে হেসে ফেলে। মেয়েটার চঞ্চলতা তার ভালো লেগেছে। চেনা নেই জানা নেই এমন একটা মেয়ে তাকে মা মা বলে ডেকে চলছে এই ব্যাপারটাও তার ভালো লাগছে। তবে মেয়েটার সাহস তাকে অবাক করেছে খুব। এই যে এসেই মা ডাকা শুরু করেছে কয়টা মেয়ে পারে এমন সাহস করতে?

‘তোমার নামটা তো বললে না মা।’

অন্তি জিভ কাটে। আলতো হেসে বলে,

‘ইসস! একদম ভুলে গিয়েছিলাম। আমি রূপন্তি নওয়াজ খান। বাবা সাহেদ নওয়াজ খান। আমি এবার দ্বাদশ শ্রেণিতে উঠবো।’

রেহানা বেশ উচ্ছ্বসিত গলায় বলে,

‘তাহলেতো তুমি বেশ ছোট!’

হঠাৎ করেই অন্তি মুখটা বাংলার পাঁচ বানিয়ে ফেলে। এমন পরিবর্তনে রেহানাও কিছুটা থতমত খেয়ে যায়। সে তো এমন কোনো কথা বলেনি যার জন্য মেয়েটার মুখে এমন আঁধার নামবে!

‘আপনার বাউন্ডুল ছেলেটা আমাকে ছোট ছোট করে মাসের পর মাস ঘুরিয়েছে জানেন মা? আপনিতো জানেন না। জানলে অবশ্যই আমাকে ছোট বলতেন না। আমি দেখতে ছোট হলেও আমার মন অনেক বড়।’

রেহানার মুখ থেকেও যেন মেঘ কেটে যায়। হাসি হাসি মুখে বলে,

‘তোমার সাথে আমার বাউন্ডুল ছেলেটার সম্পর্ক কি মা?’

অন্তি বেশ প্রফুল্ল চিত্তে জবাব দেয়,

‘আমি তার অফিসিয়াল প্রেমিকা। বিয়েটা হলেই বউ উপাধি পেয়ে যাব। আমাকে আপনার পুত্রবধূ হিসেবে কেমন লেগেছে মা?’

রেহানা হতবাক হয়ে অন্তির দিকে তাকিয়ে আছে। এইযে একের পর এক কথার চমক দিয়ে চলেছে মেয়েটা এতে যেন মেয়েটার মুখভাবের কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না। কত সহজ স্বাভাবিক ভাবে প্রতিটা জবাব দিচ্ছে। যেন রেহানার সাথে তার বহুদিনের পরিচয়। রেহানা একটু কেশে কথা ঘুরিয়ে নিতে চায়। ছেলেকে না জানিয়ে বউ পাকাপোক্ত করে ফেলাটা অন্যায় হবে। রেহানা একটা বাটি এনে অন্তির সামনে রাখে।

‘মা তুমি এবার এপাশ হয়ে দাঁড়াও। আমি স্যুপটা ঢেলে দিচ্ছি। অনেক গরম, তুমি এটা পারবে না।’
________________

অন্তিকে দিহানের রুম দেখিয়ে দিয়ে সেখানেই ঠাঁয় দাঁড়িয়ে রইল মিনু। সে কিছুতেই দিহানের রুমে একটা মেয়েকে একা রেখে যেতে পারবে না। এই মেয়ের যে রূপ দেখেছে সে তাতে এই মেয়ের পক্ষে দিহানকে নিয়ে পালিয়ে যাওয়া কোনো ব্যাপার না। মিনু থাকতে মির্জা পরিবারে এতবড় ঘটনা সে ঘটতে দিবে না। কিছুতেই না‌। তাছাড়া নিচে যেয়ে এ ব্যাপারে রেহানাকে তার আপডেট দিতে হবে।

দিহান বিছানায় আধবসা হয়ে ল্যাপটপে কাজ করছে। তার স্বভাবসুলভ ভ্রুদুটো সামান্য কুঁচকে আছে। দাঁত দিয়ে নিন্মাংশের ওষ্ঠদ্বয় কামড়ে ধরে আছে। যেন কোনো কিছু নিয়ে খুব ভাবনায় বিভোর সে। অন্তি আগাগোড়া দিহানকে পর্যবেক্ষণ করে খুব নিরবে স্যুপের ট্রেটা তার পাশের টেবিলে নামিয়ে রাখলো। দিহান রুমে কারো উপস্থিতি টের পেয়েছে। তবে তার রুমে এ সময়ে রেহানা ছাড়া অন্য কারো আসার কথা না। মিনু কখনোই তার রুমে আসে না। তাই স্বাভাবিক ভাবেই সে ধরে নিয়েছে রেহানা এসেছে। দিহান ল্যাপটপে নজর রেখেই বললো,

‘এক গ্লাস পানি দাও তো মা।’

অন্তি কোনো বাক্য ব্যায় না করেই পানি এগিয়ে দিলো। দিহানের কানের নিকট মুখ এগিয়ে ফিসফিস করে বললো,

‘পানিটা মা নয় বউ দিয়েছে। কল মি বউ।’

দিহান মাত্রই গালে পানি নিয়েছিলো। পানিটা তার গলা দিয়ে প্রবেশ করার সুযোগ পেলো না। তার পূর্বেই তীব্র গতিতে ছিটকে পড়লো। কাশি উঠে গেছে তার। অন্তি তৎক্ষণাৎ দ্রুত গতিতে দিহানের পিঠে চাপড় দিতে দিতে বলতে লাগলো,

‘এত কেয়ারলেস কেন? সামান্য পানিটাও ঠিক ভাবে খেতে পারেননা দেখছি।’

দিহানের চোখ মুখের অবস্থা করুণ। যেন তার ভেতর সত্তা বলতে চাইছে,’নিজের কেয়ার নিতে পারছি কোই? তোমার চমক আমার এই প্রাণ আর নিতে পারছে না। ক্ষমা দাও এবার।’

চলবে…….

তাহার উম্মাদনায় মত্ত পর্ব-২৭+২৮+২৯

0

#তাহার_উম্মাদনায়_মত্ত
#লাবিবা_আল_তাসফি

২৭.
পড়ন্ত বিকেল। আকাশে সোনালী রঙের মিষ্টি রোদ ভেসে বেড়াচ্ছে। বাহিরে ছোট ছেলেমেয়েদের ছোটাছুটি আর হকারদের চিৎকার শোনা যাচ্ছে। অন্তির রুমের জানালা খোলা। অন্তি খোলা জানালা থেকে বাহিরে চোখ রেখে বসে আছে। খুব মনোযোগ দিয়ে কিছু একটা ভাবছে সে। দীর্ঘসময় ধরে এক ভদ্রলোক তাকে ডেকে চলছে সেদিকে লক্ষ নেই তার। অধৈর্য হয়ে ভদ্রলোক স্কেল দিয়ে টেবিলে শব্দ করে আঘাত করতেই অন্তি চমকে তাকায়। ভদ্রলোকের মুখ থমথমে। সামনে খুলে রাখা বই বন্ধ করে দু হাত বুকে ভাঁজ করে বসেন তিনি। রয়ে সয়ে বলেন,

‘তোমার কোনো সমস্যা হচ্ছে? আমি যতটুকু জানি তুমি একজন ভালো স্টুডেন্ট। শুরুরদিকেও তোমার প্রতিভা দেখেছি আমি। এখন কি সমস্যা হচ্ছে? পড়াশোনায় মন নেই কেন?’

অন্তি মাথা নিচু করে চুপ করে থাকে। জবাব দেওয়ার মতো ভাষা নেই তার কাছে। অন্তিকে চুপ থাকতে দেখে ভদ্রলোক ভারী নিঃশ্বাস ফেলেন। পুনঃরায় বলেন,

‘কিছুদিন বাদে পরীক্ষা। তোমার পড়াশোনায় ফোকাস করা উচিত। আজেবাজে সকল চিন্তা থেকে বের হয়ে আসা উচিত। দরকার হলে খানিক ব্রেক নাও। কোথাও বেড়াতে যাও। তারপর পুরোদমে পড়াশোনা শুরু করো। আমি তোমার বাবাকে এ ব্যাপারে জানাবো।’

অন্তি তখনো চুপ করে নিচমিচ তাকিয়ে থাকে। সে কিভাবে স্যারকে বলবে যে, তার পরিবার তার জন্য সবকিছু আরো কঠিন করে ফেলছে। সাময়িক ব্রেক তার কোনো কিছুই পরিবর্তন করতে পারবে না।

টেবিলে খুলে রাখা চশমাটা চোখে পড়ে ভদ্রলোক চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ান। এক পলক অন্তিকে দেখে নিয়ে বলেন,

‘আমি তোমাকে এ সপ্তাহে পড়াতে আসবো না। এই সপ্তাহ কোথাও বেড়াতে যাও। মাইন্ড ফ্রেশ করে এসো। আজ আসি।’

অন্তি মাথা নাড়িয়ে কেবল সম্মতি জানায়। পরপর স্যারের পিছু পিছু দরজা অবদি যায়। স্যার চলে যেতে ছোট ছোট পায়ে রুমে এসে ফোন হাতে ছাদে উঠে যায়। ছাদের লোহার গেটটা ভেতর থেকে বন্ধ করে চেয়ার টেনে বসে। মিষ্টি রোদ তখন বিলিনের পথে। হালকা বাতাসে শীত শীত গন্ধ। মাথার উপর থেকে দু একটা কাক উড়ে যাচ্ছে। ছাদের রেলিংয়ে পাশের ছাদ থেকে উড়ে আসা দুটো পায়রা বসে। ধবধবে সাদা রঙের দুটো পায়রা। পাশাপাশি বসে ডানা নাড়ছে। ওরা কি প্রেমিকযুগল? সঙ্গীদের থেকে আলাদা হয়ে কিছুটা একান্ত সময় কাটাতেই এখানে এসেছে বোধহয়। অন্তি চট করে একটা ছবি ক্লিক করলো। এমন সুন্দর নিরব প্রেমিকযুগলকে ফ্রেমে বন্দী করতে মন চাইলো খুব। প্রেম সুন্দর! সেটা হোক অবলা কোনো প্রাণীর মাঝে!

আকাশের আলোটুকু ফুরিয়ে এসেছে। বিশাল আকাশ কালো চাদরে ঢেকে যাচ্ছে ক্ষণে ক্ষণে। শেষ আলোটুকু ফুরিয়ে যাওয়া অবদি অন্তি অসহায়ের ন্যায় চেয়ে রইল আকাশ পানে। কোনো কারণ ছাড়াই আকাশ পানে এমন করে চেয়ে থাকতে ভালো লাগে তার। মন খারাপের এই সময়টা তাকে সঙ্গ দেওয়ার জন্য এই আকাশটাই রয়েছে কেবল।
হুর হুর করে ছুটে আসা শীতল বাতাসে কেপে কেপে উঠছে শরীর। অন্তি গায়ের ওড়না দিয়ে ভালোভাবে শরীর পেঁচিয়ে নেয়। শরীর সাথে সাথে বুকের ভেতরটাও শীতলতায় ছেয়ে গেছে তার। হৃদয়টা বোধহয় বরফের ন্যায় জমে গেছে। উষ্ণতা দেওয়ার মানুষটা যে হারিয়ে গেছে! অন্তি খুব করে চায় মানুষটা ফিরে আসুক। সেদিনের মতো তাকে চমকে দিয়ে ছাদে আসুক। জড়িয়ে নিক উষ্ণ ভালোবাসায়।
ছটফটে হৃদয় নিয়ে দিহানের নম্বরে ডায়াল করে অন্তি। এই বুঝি কেটে যাবে কল, রিসিভ হবে না! ভাবনায় ঢিপঢিপ করতে থাকে ছোট্ট হৃদয়। অন্তির ছুটতে থাকা শ্বাসকে রোধ করে ওপাশ থেকে পুরুষালি রুষ্ট কন্ঠস্বরটা বলে উঠলো,

‘কে রূপ?’

অন্তির শ্বাস আটকে থাকলো কয়েক মুহূর্ত। চোখ থেকে ঝুম ধারে জল গড়ালেও মুখ থেকে একটা শব্দ বের হলো না। মস্তিষ্ক শূন্য হয়ে পড়েছে। এতদিন বাদে প্রিয় কন্ঠস্বরটা শোনার পরও কেন তার এমন শূন্য অনুভব হচ্ছে? মনে হচ্ছে এক রাশ দুঃখ তাকে আলিঙ্গন করেছে। এই কন্ঠটা এতশত দুঃখ বয়ে আনলো কেন? কেন মাদকতা নেই এই কন্ঠে? অন্তির নিরবে ফুঁপিয়ে ওঠার শব্দটা ওপাশের মানুষটা অনুভব করলো হয়তো। এজন্যই মানুষটার কন্ঠে চঞ্চলতা প্রকাশ পেলো।

‘রূপ! কাঁদে না। এই মেয়ে? না করেছি না? শুনতে পাচ্ছ আমায়? থামো। কান্না থামাও। কথা বলো আমার সাথে। এমন করলে কল কেটে দিব কিন্ত। চাও সেটা?’

লক্ষী বাচ্চার মতো চুপ করে যায় মেয়েটা। শান্ত হয় সময় নিয়ে। দিহান ধৈর্য নিয়ে অপেক্ষা করে তার প্রেয়সীর শান্ত হওয়ার। কান্নার আঁচ কমে এলে সে নরম গলায় বলে,

‘কাল আমি যখন সামনে আসবো তখন কাঁদবে। তুমি কাঁদবে আমি তোমায় দেখবো। কান্নাটা কালকের জন্য তুলে রাখ।’

দিহানের এমন হেঁয়ালি কথা অন্তির ভালো লাগে না। সে চাচ্ছিলো লোকটা তাকে স্যরি বলুক। এতদিনের জন্য অনুশোচনা করুক। কিন্তু তার মাঝে তেমন লক্ষণ নেই। যা অন্তিকে আহত করছে। খানখান করে দিচ্ছে হৃদয়। কতশত অদৃশ্য ছুড়িঘাতে রক্ত ঝড়ছে তার হৃদয় থেকে তা এখনো বুঝতে পারছে না লোকটা। অন্তির খুব দুঃখ হয়। অভিযোগ করতে নিলেও যেন শব্দরা আটকে যায়।
ওপাশ থেকে দিহান তার নিরবতায় ধৈর্য হারা হয়। প্রেয়সীর কোমল গলার স্বর শোনার জন্য ব্যস্ত হয় সত্তা। ধৈর্যের বাঁধ ভাঙলে দিহান গম্ভীর স্বরে বলে,

‘কথা বলছো না কেন? তোমার নিরবতা আমার পছন্দ না রূপ।’

‘আপনার অবহেলাটাও আমার পছন্দ না দিহান। তবুও কেন এত অবহেলা করেন আমায়?’

এমন অভিযোগে দিহানের কষ্ট হলো না। ঠোঁট কোণে হাসির দেখা মিললো। এই অভিযোগের আড়ালে লুকিয়ে থাকা যত্নটুকু সে খুব করে অনুভব করছে। তাইতো উত্তরে বলে,

‘তোমার ভালোবাসাকে খাটি করে নিতে। বুঝেছ মেয়ে?’

অন্তি ডানে বায়ে মাথা নাড়ায়। সে বোঝেনি। কিন্তু মুখে জবাব দেয় না। চোখ থেকে তখনো অনর্গল জল গড়াচ্ছে। মান অভিমানের পাঠ শেষ হলে অন্তি কান্না ভেজা গলায় আবদার করে বলে,

‘দিহান! দেখা করবো।’

‘উহু। কাল।’

অন্তি জেদ করে। একরুখে ভাবে বলে,

‘এখন। আমি এখন আপনাকে দেখতে চাই। আপনি না আসা অবদি আমি ছাদে অপেক্ষা করবো।’

‘মেয়ে! ভরসা করো না আমায়? কাল আসবো। সত্যি।’

‘আবার হারিয়ে যাবেন না তো?’

দিহান মলিন হাসে। সে তো কখনোই হারাতে চায়নি। সে বাধ্য হয়েছে। তার এ জীবনে পুরোপুরি ভাবে হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাটা তীব্র। তবুও সে চায় হারিয়ে যাওয়ার আগ অবদি এই ছোট্ট মেয়েটাকে আঁকড়ে ধরে রাখতে। নিজ থেকে প্রেম কুড়িয়ে আনা এই মেয়েটার হাত ছাড়তে খুব ভয় হয় তার। এজন্যই তো নিজের বিনাশ জেনেও স্বার্থপরের মত আঁকড়ে ধরার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
দিহান মুচকি হেসে মিথ্যা ভরসায় আবদ্ধ করে অন্তিকে।

‘এবার আঁকড়ে ধরার জন্য আসছি। হারিয়ে যাওয়ার অপশন নেই। তুমি কেবল আমার হতে নিজেকে প্রস্তুত করো।’

_______________

‘মাহবুব? মেয়েটার খোঁজ পেয়েছো?’

‘জ্বি না স্যার।’

‘দ্রুত খোঁজ নাও। বেশরম ছেলেটার একটা ব্যবস্থা না করলে সত্যিই শান্তি পাচ্ছি না।’

‘স্যার একটা কথা বলবো?’

‘হুম বলো।’

আপনার আর ছোট সাহেবের ভিতর অনেক মিল আছে।’

রেজওয়ান মির্জা কপাল থেকে হাত সরিয়ে ভ্রু বাঁকিয়ে বলে,

‘কেমন মিল?’

মাহবুব সাহেব সরল হেসে জবাব দেয়,

‘আপনারা দুজনেই খুব স্পষ্ট ভাষী। কথা বলতে কিছুর পরোয়া করেন না। যেমনটা ছোট সাহেব আজ বললেন। আমি হলে আমার বাপের সামনে লজ্জায় ওমন কথা তুলতে পারতাম না।’

‘বয়স কতো তোমার?’

মাহবুব সাহেব খানিক চমকায়। তার চাকরির এত বছর জীবনে কেউ তার বয়স জানতে চায়নি। এই বয়সের ব্যাপারটা তার কাছে ভিষণ অস্বস্তিকর বিষয়। তাছাড়া কারো কাছে তার বয়স জানতে চাওয়াটা ম্যানারসের বাহিরে। রেজওয়ান মির্জা এখন সেই ম্যানারলেস প্রশ্নটাই তাকে করেছে। মাহবুব সাহেব ভিষণ দ্বিধান্বিত স্বরে বললেন,

‘এইতো চল্লিশ পেরুলো বোধহয়।’

রেজওয়ান মির্জা ভিষণ অবাক হয়ে বললেন,

‘বিয়ে শাদি কবে করবে আর?’

মাহবুব সাহেব একটু লজ্জা পেলেন। নরম করে বললেন,

‘এইতো বাপজান বললেই করে ফেলবো।’

রেজওয়ান মির্জা বড়ো করে শ্বাস ফেলে বলেন,

‘আমার ছেলের নির্লজ্জতা এখন আমার কাছে গর্বের ঠেকছে। আমি গর্বিত যে আমি একটা নির্লজ্জ বাঘের বাচ্চা জন্ম দিয়েছি।’

নুহাশ বিষন্ন মনে ছুড়ি দিয়ে আপেল স্লাইস করছে। হাতের কাজের দিকে তার মনোযোগ নেই। পাশেই দিহান আড়চোখে তার কাজ পর্যবেক্ষণ করছে। যে কোনো মুহূর্তে দুর্ঘটনা বশত নুহাশের হাত কেটে যেতে পারে। এক পর্যায়ে দিহান চট করে তার হাত থেকে ছুড়ি কেড়ে নেয়। এক স্লাইস আপেল গালে দিয়ে চিবুতে চিবুতে বলে,

‘দেবদাসেন ভন নিছোস কেন? কি সমস্যা?’

নুহাশ তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো,

‘তুই শিওর রূপন্তিকে ছাড়ছিস না?’

দিহান খাওয়া থামিয়ে গভীর চোখে তাকায়। ভ্রু উঁচিয়ে বলে,

‘ধরা ছাড়ার কথা কেন আসছে?’

নুহাশ চেয়ার টেনে দিহানের কাছে আগায়ে আসে। দিহানের হাত থেকে আপেলের প্লেট টেনে নিয়ে পাশের টেবিলে রাখে। মুখভাব সিরিয়াস করে বলে,

‘সোজা পয়েন্টে আসি। আমাদের জীবনের নিশ্চয়তা নেই। তোর উপরের হামলা থেকে তো বুঝতেই পারছিস। যখন তখন লাশ হয়ে ফিরতে পারি। এমন জীবনে ওদের জড়ানো ঠিক হবে?’

দিহান সাবলীল জবাব দিলো,

‘পৃথিবীর কারো জীবনেরই নিশ্চয়তা নেই। জন্ম যখন নিয়েছি মরতে হবেই। তাই বলে ভয় পেয়ে সব ছেড়ে দেবদাস হওয়ার মতো থার্ডক্লাস লজিকে আমি বিশ্বাসী নই।’

দিহানের জবাব নুহাশকে হতাশ করলেও এক ফোঁটা আশার আলোয় জ্বল জ্বল করে ওঠে মুখ। নিঃসন্দেহে দিহানের কথায় লজিক আছে। না বুঝে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার মানুষ না দিহান। তারও উচিত তার জীবনের সবকিছুকে আঁকড়ে ধরা। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত অন্তত যা কিছু তার সেসব কিছু তার হওয়া চাই। নুহাশ হঠাৎ করেই উৎসাহ নিয়ে উঠে দাঁড়ায়। দিহান আড়চোখে তাকিয়ে প্রশ্ন করে,

‘কি সমস্যা?’

নুহাস হাসে। পকেট থেকে বাইকের চাবি বের করে আঙ্গুলে ঘোরাতে ঘোরাতে বলে,

‘কোনো উইস আছে তোর? কয়েক মুহূর্তের জন্য আমাকে জিনি ভাব। আমি তোর একটা উইস পুরোন করবো। ফর ইউর এক্সিলেন্ট ওয়ার্ডস।’

চলবে………….

#তাহার_উম্মাদনায়_মত্ত
#লাবিবা_আল_তাসফি

২৮.
‘দাঁড়িয়ে আছ তুমি আমার গানের ওপারে।
আমার সুরগুলি পায় চরণ,
আমি পাই নে তোমারে।
দাঁড়িয়ে আছ তুমি আমার গানের ওপারে।

বাতাস বহে মরি মরি,
আর বেঁধে রেখো না তরী।
বাতাস বহে মরি মরি,
আর বেঁধে রেখো না তরী।
এসো এসো পার হয়ে মোর
হৃদয় – মাঝারে।
দাঁড়িয়ে আছ তুমি আমার গানের ওপারে।’

পুরোনো রেডিওতে ক্যাসেটে ভাঙা স্বরে বেজে চলছে গানটা। সাহেদ প্রায় রাতেই এমন ভাবে গান শোনে। রবীন্দ্র সংগীতের প্রতি তার আলাদা রকম ঝোঁক রয়েছে। এই ঝোঁকটা কেন যেন হুটহাট করে রাতের বেলাতেই মাথা ঝাড়া দিয়ে ওঠে। মৃদু শব্দের এ গান ভোর হওয়া অবদি ক্লান্তহীন বাজতে থাকবে। পাশাপাশি রুম হওয়ায় অন্তির রুম থেকে খুব স্পষ্ট শোনা যায় গানের প্রতিটা চরণ। গানের এ মৃদু শব্দ অন্তির পছন্দ না হলেও সে রাতে তার ঘুম হয় ভালো। তবে আজ অন্তির চোখে ঘুম নেই। দিহানের সাথে কথা হওয়ার পর থেকেই কেমন অস্থিরতার মধ্য দিয়ে তার সময় যাচ্ছে। আশ্চর্য জনক ভাবে আজ বাবার রুম থেকে আসা মৃদু গানের শব্দটা তার বিরক্ত ঠেকছে না। বরং অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করছে।

অন্তির রুমে ছোট একটা বুক শেলফ আছে। হাতে গোনা কতেক বই তাতে। এই বইগুলো তার ষোলতম জন্মদিনের উপহার হিসেবে তখর বাবা দিয়েছিলো। কিন্তু কখনো পাতা উল্টে দু লাইন পড়া হয়নি তার। আজ এতদিন বাদে বুক সেলফ থেকে তার একটা বই পড়তে মন চাইলো। বইয়ের মলাটে এক আঙুল সমান ধুলা জমেছে। কতদিন সেলফ পরিস্কার করা হয়না তার ঠিক নেই। পারুটা শুধু কাজে ফাঁকি দেয়। ওর নামে বিচার ঠুকতে হবে। নাহার জানতে পারলে এক চুল ছাড় দেবে না।

অন্তি যে বইটা পড়তে নিয়েছে তার নামটা বড়ই অদ্ভুত। ‘মেঘ বলেছে যাব যাব’। কোথায় যাবে মেঘ? অন্তির উপন্যাস পড়া হলো না। এসবে তার আগ্রহ সবসময় শূন্যের কোঠায়। তবুও খুব সময় নিয়ে সে ভূমিকা পড়লো। বই বন্ধ করে যত্নে তুলে রাখলো পূর্বের ন্যায়। বিছানায় পড়ে থাকা ফোনটা হঠাৎ করেই জ্বলে উঠলো। টুং করে ম্যাসেজ আসার শব্দ হলে অন্তি এগিয়ে এসে ফোন হাতে তুলে নেয়। অপরিচিত এক নম্বর থেকে ছোট্ট একটা ম্যাসেজ এসেছে।

‘নিচে আসো। অপেক্ষা করছি।’

অন্তির এই ম্যাসেজের ব্যক্তিকে চিনতে দেরী হয়না। বুকটা হঠাৎ করেই ধুক করে ওঠে। দিহান এসেছে! আজ আসবেনা বলেও এসেছে। রোকটা নিজের কথা রাখতে পারেনা। কোনো কাজ করবে না বলেও করে ফেলে। আজ আসবেনা বলেও এসেছে। সে তো এটাও বলেছে আর হারিয়ে যাবেনা, সেই কথাটা কি রাখবে?

দিহান অপেক্ষা করছে যেনেও অন্তির মাঝে দ্রুত যাওয়ার কোনো লক্ষণ নেই। সে সময় নিয়ে একটা সুতির শাড়ি পড়েছে। এই শাড়িটা রাতে খাওয়া শেষে মায়ের রুম থেকে চুপি চুপি এনে রেখেছিল সে। কাল এটা পড়েই দিহানের সাথে দেখা করতে যাওয়ার চিন্তা করেছিল। কিন্তু মানুষটাতো আগেই এসে পড়েছে। তাই বলে তার প্লান চেঞ্জ করা যাবে না। ইতিমধ্যে সে বেশ কয়েকবার ইউটিউব দেখে দেখে শাড়ি পড়েছে। তাই খুব একটা সমস্যা হলো না। শাড়ির রঙটা টকটকে লাল। অন্তির পড়নের জামাটা ছিল সাদা। ব্লাউজ পড়ার ঝামেলার মধ্যে সে যায়নি। পড়নের জামার উপরেই পেঁচিয়ে নিয়েছে লাল রঙা শাড়িটা। লাল সাদার কম্বিনেশনটা সুন্দর। এঅটু বেশেই সুন্দর। খুব বেশি সাজের মধ্যে ও সে যায়নি। ঠোঁটে লাল টকটকে লিপস্টিক আর চোখ ভরা কাজল। লোকে বলে শ্যাম মেয়েদের গাড় লাল রঙে মানায়না। শ্যামদের পড়তে হয় হালকা রঙ। অন্তি ওসব কথায় বিশ্বাস করে না। তার চোখে যে রঙ ভালো লাগে সে সেটাই পড়ে। এইযে সে টকটকে লিপস্টিক পড়েছে, তাকে কি জংলি টাইপ লাগছে? লাগলে লাগুক। আজ সে এভাবেই দিহানের সামনে নিজেকে উপস্থাপন করবে।
ঘড়িতে তখন প্রায় একটা। অন্তি নিজের রুমের লাইট বন্ধ করে চুপি চুপি রুম থেকে বের হয়ে সবার আগে পারুর ঘরে উঁকি দেয়। সে এখন ভারী ঘুমে আছে। নাহার ঘুমের ওষুধ খেয়ে অনেক আগেই শুয়ে পড়েছে। সাহেদকে নিয়ে চিন্তা নেই। সে ঠিক এগারোটায় বিছানায় যায়। শোয়ার দু মিনিটেই ভুস ভুস শব্দ তুলতে শুরু করে।

গেটে দারোয়ান নেই। রাতের সময় তার কড়াভাবে বাড়ি পাহারা দেওয়ার কথা। কিন্তু সে সেটা না করে ছোট ঘরটায় পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে। এ বাড়িতে দারোয়ানের জন্য ও ছোট একটা ঘরের ব্যবস্থা আছে। দারোয়ান কাজে ফাঁকি দিচ্ছে জেনেও অন্তি এ ব্যাপারে কিছু করতে পারবে না। নিজের ফেঁসে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে তাতে। লোহার গেটটায় বড় একটা তালা ঝুলছে। এই তালার চাবি কেবল দারোয়ানের কাছে থাকার কথা। কিন্তু অন্তির কাছেও আছে। অতি গোপনে সে এই কাজটা করেছে।

অন্তি যখন বাহিরে আসে তখন আশপাশে একটা কুকুরের ও উপস্থিতি নেই। অত্যন্ত রকম শান্ত পরিবেশ। কনকনে ঠান্ডায় দাঁতে দাঁত লেগে যাওয়ার অবস্থা। এমন শীতের রাতে অচেনা নম্বর থেকে টেক্সট পেয়ে কাঁপতে কাঁপতে দেখা করতে চলে আসাটা বোকামির পর্যায়ে ফেলা যায়। অন্তি সেই বোকামিটাই করেছে। এখন তার চোখ ফেটে পানি আসার উপক্রম। তার নিজের সিদ্ধান্তের উপর কোনো অভিযোগ নেই। দিহান আসবেনা ভাবতেই তার কান্না পাচ্ছে। তার মন খুব করে চাইছে দিহান দিহানের কথা না রাখুক। সে সত্যিই আসুক দেখা করতে। অচেনা নম্বর থেকে আসা ম্যাসেজটা দিহানের হোক।

রাস্তার ধারের ল্যাম্পপোস্টটায় কিছুদিন যাবত সমস্যা দেখা দিয়েছে। মূলত সমস্যাটা ল্যাম্পপোস্টে নয় বাল্বে। আজ কালের মধ্যেই হয়তো ডেড হয়ে যাবে। কেমন জ্বলা নেভা করতে থাকে সারাক্ষণ। এমন আলোর নিচে দাঁড়িয়ে থাকতে মাথায় চক্কর দিচ্ছে অন্তির। তবুও সে দাঁড়িয়ে আছে। তার বিশ্বাস দিহান আশপাশে কোথাও আছে। লুকিয়ে তাকে দেখছে। হয়তো একটু পরীক্ষা করতে চাইছে। এই পরীক্ষায় সে একশ তে একশ পেতে চায়।

ফোনে পুনরায় ম্যাসেজ এলে অন্তি দ্রুত চেক করলে দেখতে পায় সেখানে বলা আছে,

‘সামনে আগাও। কালো রঙের গাড়িটার ঠিক পাশে যে বাড়িটা ওখানে আসো।’

অন্তির বুক ঢিপঢিপ করে ওঠে। এটা যদি দিহান না হয়? তার কি একবার কল করা উচিত? কিন্তু পরক্ষণে সে উক্ত চিন্তা ঝেড়ে ফেলে। সাহসী প্রেমিকাদের ভয় পেলে চলে না। প্রেমিককে চিনতে না পারলে সে কেমন প্রেমিকা?

বাড়ি থেকে কিছুটা দূরেই কালো রঙের বিশাল এক গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। পাশে এক তলা বিশিষ্ট একটা ভবন। যা বেশ কিছুদিন যাবত বন্ধ রয়েছে। বাড়ির মালিক পরিবার সহ বিদেশে পাড়ি দিয়েছেন। এতদিন বাদে সে বাড়ির গেট খোলা হয়েছে। তাও এত রাতে! অন্তির বুকের ভেতর অস্বাভাবিক হারে কাঁপছে। সে কি ভুল করছে? কিছু হয়ে গেলে সাহায্যের জন্য কাউকে পাওয়া অসম্ভব। অন্তির ভাবনার মাঝেই একটা শক্ত হাত তাকে টেনে নেয় গেটের ভেতরে। আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে নেয় বুকের ভেতর। হঠাৎ ঘটনায় চমকে গিয়ে নড়ে উঠতেই তীব্র ব্যাথায় কঁকিয়ে ওঠে দিহান। তার শরীরের যখম ঠিক হতে বহু দেরী। পায়ের ফ্রাকচারটার জন্য এখনো মাস খানেক লাগবে। হুইল চেয়ারে বসা অবস্থায় অন্তিকে টেনে নিতেও তার বেশ কষ্ট হয়েছে। অন্তি পুনরায় চমকে উঠে দ্রুত সোজা হয়ে দাঁড়াতে গেলে দিহান আবারো আঘাত পায়। পেটের কাছের ব্যান্ডেজটা ভিজতে শুরু করে। কিন্তু এবার সে মুখ থেকে কোনো আওয়াজ বের করে না। কেবল কাতর গলায় বলে,

‘বাসার ভেতরে চলো? সমস্যা হবে? এখানে ঠান্ডা অনেক।’

চলবে……..

#তাহার_উম্মাদনায়_মত্ত
#লাবিবা_আল_তাসফি

২৯.
নিভু নিভু হলুদ রঙের আলো জ্বলছে ঘরটায়। বেশ বড়সড় আকারের এই ঘরটার একপাশ জুড়ে সোফা। আশপাশের অন্যকোনো আসবাবপত্র বোঝা যাচ্ছে না। সবকিছুই সাদা কাপড়ে ঢেকে রাখা। যার উপর ধুলা জমে স্থুপ আকার ধারণ করেছে। বাকি ঘরগুলো বন্ধ। দেয়ালের অবস্থা শোচনীয়। রঙ খসে খসে পড়েছে। ঘরের দুটো জানালাই বন্ধ। এই ঠান্ডায় জানালা খোলা রাখার প্রশ্নই আসে না।

অন্তি জুবথুব হয়ে বসে আছে সোফার এক কোণে। তার সামনেই টেবিলে পা তুলে আধবসা হয়ে শুয়ে আছে দিহান। নুহাশ খুব সাবধানে দিহানের শার্ট খুলে ব্যান্ডেজ পরিবর্তন করে দিচ্ছে। এই তিনজন বাদেও ঘরে আরো একজন মানবীর উপস্থিতি রয়েছে।‌ এই মেয়েটাকে অন্তি চেনেনা। কখনো দেখেনি। দিহানদের বয়সের আশপাশে বয়স মেয়েটার। রুমের এক কোণে দাঁড়িয়ে ঘুমে ঢুলছে। নিশ্চই তাকে ঘুম থেকে তুলে আনা হয়েছে। কেন আনা হয়েছে সেটাও অন্তি জানেনা। আপাতত সে বিষয়ে তার মাথা কাজ করতে চাইছে না। মস্তিষ্ক আটকে আছে দিহানের উপর। লোকটার এমন অবস্থা কিভাবে হলো? অন্তির কষ্ট হচ্ছে ভিষণ। মন চাচ্ছে চিৎকার করে কাঁদতে। লাল হয়ে আসা সাদা ব্যান্ডেজগুলো অন্তির বুকে কাঁটার মতো বিঁধছে। অন্তি নিরবে চোখের জল ফেলছে। মুখ থেকে শব্দ বের হচ্ছে না। এর অবশ্য কারণ রয়েছে। দিহান ইতিমধ্যে দুবার ধমক দিয়েছে তাকে। শেষবার ধমকের সাথে বলেছে,

‘আর একবার যদি কান্নার শব্দ পাই, সোজা বাসায় পাঠিয়ে দিব।’

এমন একটা মুহূর্তেও মানুষটার রাগ কমেনি। সমানে ধমক দিয়ে চলছে। অন্তি দিহানকে জানে। মানুষটা ভিষণ নিষ্ঠুর। পাথুরে হৃদয়ের মানব সে। তাকে বাসায় পাঠিয়ে দিতে একবার ও ভাববে না।

দিহানের ব্যান্ডেজ ঠিক করা হয়েছে। অন্তি এখনো মাথা নিচু করে ফুঁপিয়ে চলছে। দিহান নিরবে বসে অন্তির কান্না দেখছে। দিহান কিছু বলছেনা দেখেই হয়তো মেয়েটা সাহস পায় খানিক। কান্নার শব্দটা বাড়ে। এ পর্যায়ে দিহান রাশভারী গলায় বলে ওঠে,

‘মেয়ে এদিকে আসো। কাছে এসো বসে তারপর কাঁদো।’

নুহাশ মুখ টিপে হাসে। একটু কেশে গলা পরিষ্কার করে দিহানকে বলে,

‘এখানে আমার আর দরকার আছে বলে মনে হচ্ছে না। আমি কি এখন যেতে পারি?’

দিহান তার কথায় দারুন অবাক হয়ে বলে,

‘তোকে ধরে রেখেছে কে?’

নুহাশ জবাব না দিয়েই উঠে দাঁড়ায়। রুম ছেড়ে যেতে যেতে বলে,

‘আশপাশেই আছি। দরকার হলে কল দিস।’

যদিও নুহাশ জানে দিহানের কখনোই তাকে দরকার হবে না। কলটা সে ভুলেও দিবে না। তাকে নিজেকেই খানিক পরপর এসে দেখে যেতে হবে কোনো কিছুর প্রয়োজন আছে কিনা। এতবছরের বন্ধুত্বে এতটুকু সে চিনতে পেরেছে দিহানকে। দাম্ভিকতায় ভরপুর দিহান কখনো নিজ থেকে কারো সাহায্য নিতে পছন্দ করেনা। হোক সেটা যত জটিল পরিস্থিতি। তবে আশ্চর্য জনক বিষয় আজ দিহান তার সাহায্য নিয়েছে। অন্তির সাথে দেখা করার জন্য। ভাবা যায় দিহান মির্জা তার দাম্ভিকতা লুকিয়ে একটা মেয়ের সাথে দেখা করতে নুহাশের সাহায্য নিয়েছে! নুহাশ মিটিমিটি হাসে। বন্ধু তার খুব ভালো ভাবেই ফেঁসেছে।

দিহানদের সাথে আসা মেয়েটার নাম নুহী। দিহানদের সাথে একসাথেই পড়ত মেয়েটা। বেশ ভালো বন্ধুত্ব ওদের। দিহানের এত ক্লোজ কোনো মেয়ে ফ্রেন্ড আছে জানা ছিল না অন্তির। দূরে বসে থাকার কারণে তখন ভালোভাবে না দেখতে পেলেও এখন স্পষ্ট ভাবে মেয়েটার মুখ দেখতে পাচ্ছে অন্তি। মেয়েটা ভিষণ সুন্দরী। কত সুন্দর করে হাসে! কিন্তু সে তো অত সুন্দর না। উহু ঐ মেয়েটার ধারে কাছেও না। দিহানের আশপাশে এত সুন্দর মেয়ে থাকতে দিহান কেন তাকে পছন্দ করলো? মুহূর্তে অন্তি কথাটাকে শুধরে নিলো। দিহান মোটেই তাকে পছন্দ করেনি।‌ সে দিহানকে বাধ্য করেছে।

‘তারপর বলো আমার বন্ধুকে কেমনে আটকালে? আমাদের ক্লাসের কত মেয়ে ওকে আঁচলে বাঁধার চেষ্টা করলো। কেউ পারলো না। তোমার মতো ছোট মিষ্টি মেয়েটা কেমনে পারলো ওকে আটকাতে? আমি সত্যিই ভিষণ কিউরিয়াস।’

নুহী নামের মেয়েটার চোখেমুখে সত্যিই কৌতুহলের ছড়াছড়ি। অন্তির এই কৌতূহল মোটেই ভালো লাগলো না। আর না ভালো লাগলো নুহী নামের এই মেয়েটাকে। ভালো না লাগার বিশেষ কোনো কারণ নেই। মেয়েটার মাঝে খারাপ লাগার মতো কোনো বৈশিষ্ট্য নেই। এই না থাকার জন্যই হয়তো অন্তি তাকে মেনে নিতে পারছে না। অন্তি উপলব্ধি করলো সে এই মেয়েটাকে হিংসা করছে খুব। এই যে মেয়েটার কথায় দিহান মিটিমিটি হাসছে তাতেও তার হিংসা হচ্ছে। এতটাই হিংসা হচ্ছে যে এই মুহূর্তে তার কাঁদতে মন চাচ্ছে।
অন্তিকে এমন পরিস্থিতিতে বাঁচাতে দিহান কথা বলে উঠলো।

‘অনেক রাত হয়েছে। তোর এখন যাওয়া উচিত। নুহাশ বাহিরে আছে। ও তোকে পৌঁছে দিয়ে আসবে।’

নুহী হাসিমুখে উঠে দাঁড়ালো। ফোনের স্ক্রিনে সময় দেখে ব্যস্ত গলায় বললো,

‘সত্যিই অনেক বেজে গেছে। আসি গো পিচ্চি ভাবী। অন্যকখনো গল্প হবে তোমার সাথে।’

অন্তিও মুচকি হাসে। ভদ্রতা বজায় রাখতেই বলে,

‘আবার কখনো দেখা হলে অনেক কথা হবে আপু। ভালো থাকবেন।’

নুহী চলে যাওয়ার পর পরিবেশ নিরব। দিহান কিছু না বলে কেমন গভীর দৃষ্টি ফেলে তাকিয়ে আছে। অন্তির অনেক কিছু বলার আছে। অনেক কিছু জানার আছে। এভাবে বসে থাকলে কিছুই জানা হবে না। অন্তি দিহানের কাছ ঘেঁষে বসে। আলতো হাতে দিহানের মাথার ব্যান্ডেজে হাত বুলায়। ভীতু স্বরে বলে,

‘অনেক ব্যাথা?’

দিহান ডানে বায়ে মাথা নাড়ায়। তবুও অন্তির চোখ ভরে আসে। চোখের পাপড়ি ভিজে ভারী হয়ে আসে। ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকাতে চায় মেয়েটা। দিহান হাত বাড়িয়ে চোখের জলটুকু মুছে দেয়। কোমল গলায় বলে,

‘টাইম আপ রূপ। এখন আর কাঁদা চলবে না। তুমি কাঁদলে আমি সুস্থ হবো কিভাবে?’

অন্তি নাক টানে। কান্না আটকাবার চেষ্টা করে। ইতিমধ্যে শ্যাম মুখখানি লাল বর্ণ ধারণ করেছে। দিহান হঠাৎ করেই হাঁসফাঁস করে ওঠে। অন্তির কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে বলে,

‘তোমাকে লোভনীয় লাগছে রূপ! তোমার এখন ফিরে যাওয়া উচিত। আমার ভেতরের দুষ্টু সত্তা তোমার লোভনীয় রূপ সহ্য করতে না পেরে বেরিয়ে আসতে চাইছে।’

কান্না ভেজা চোখ দুটো লজ্জায় নিভে আসে। কান গরম হয়ে ওঠে। নিমিষেই কান্না লজ্জায় রূপ নেয়। দিহান ঠোঁট কামড়ে হাসে। পাশ থেকে ফোন তুলে সময় দেখে চিন্তিত ভঙিতে নুহাশকে কল করে। নুহাশের ফিরতে পাঁচ মিনিটের মতো লাগবে।

‘এভাবে প্রতিদিন দেখা করবেন?’

অন্তির কথায় দিহান কিছুটা গম্ভীর জবাব দেয়,

‘এভাবে আর দেখা করা হবে না। দিনের বেলা সুযোগ করে দেখা করবো।’

অন্তি মন খারাপ করে মাথা নামিয়ে ফেলে। কিছু একটা ভেবে চট করে বলে,

‘চলুন বিয়ে করে ফেলি।’

‘করবো।’

‘আজই চলুন।’

‘আমার আরো কিছুটা সময় লাগবে রূপ। নিজেকে একটু গুছিয়ে নেই।’

অন্তির মন খারাপ হয়। দিহানের থেকে এমন উত্তর সে আশা করেনি। দরকার হলে তারা কুঁড়েঘর থাকবে। তবুও দিহানের উচিত ছিল রাজী হওয়া। অন্তির মনঃক্ষুণ্ণ হয় এতে।

‘বাবা আমার বিয়ে ঠিক করেছে।’

দিহান ছোট করে বলে,

‘জানি।’

এই উত্তরটা অন্তিকে আরো কষ্ট দেয়। দিহান জেনেও চুপ করে আছে। সে কি চায় অন্তির অন্যকারো সাথে বিয়ে হয়ে যাক? অন্তির চোখে অভিমানের জল আসে। গলায় একরাশ বেদনা নিয়ে সে বলে,

‘আপনি আমায় ভালোবাসেন না দিহান। একদম বাসেন না।’

‘কখনো বলেছি সেটা?’

‘ভালোবাসেন সেটাও বলেননি।’

দিহান থামে। সে বুঝেছে মেয়েটার মাঝে জেদ চেপেছে। কথায় সমাধান হবে না। দিহান অন্তির মুখ ঘুরিয়ে চোখে চোখ রেখে তাকায়। বলে,

‘আমি সুস্থ হলে বিয়ে করবো। মাত্র কিছুদিনের ব্যাপার। এই কটা দিন একটু মানিয়ে নাও?’

অন্তি দিহানের নরম গলার কথা ফেলতে পারে না। দিহানের এই রূপটা বরাবর তাকে কাবু করে ফেলে। এবারো হলো তাই। ইচ্ছে থাকতেও সে জোর গলায় বলতে পারলো না যে আমার খুব দ্রুত আপনাকে চাই। আপনাকে ছাড়া দমবন্ধ লাগে আমার।

_____________

তন্নির বড় বোনের নাম তানিয়া। সরকারি একটা কলেজে অনার্স করছে। স্বভাবে সে কিছুটা তন্নির মতোই। শান্ত সভ্য। কিন্তু এই স্বভাবটা কেবল পরিবারের মানুষের সামনে। বাস্তবিক ভাবে সে ভিষণ অশান্ত প্রকৃতির মানুষ। ভাঁজা মাছ উল্টে খেতে না পারা টাইপ রূপের আড়ালে যে রূপটা আছে সেটা কেবল তন্নি একা জানে। নরম মনের দয়ার মানুষ হওয়ায় বোনের রাজ জানা সত্ত্বেও মুখ ফুটে রা উচ্চারণ করা হয়নি কখনো। এইতো কিছুদিন পরপর দুবোন ঘুরতে যাবে বলে বের হয় তারা। এ ব্যাপারে তাদের বাবার উৎসাহ একটু বেশি। দুই মেয়ে মাঝে মধ্যে একসাথে ঘুরতে বের হবে এতে মাইন্ড ফ্রেশ হবে। আলাদা রকম একটা ব্যাপার স্যাপার আছে। খুশি হয়ে হাজার দুয়েক টাকা বড় মেয়ের হাতে গুঁজে দেন তিনি। কিন্তু এই টাকার শূন্য দশমিক পাঁচ শতাংশ ও ভাগে পায় না সে। বাদবাকি ঘুরতে যাওয়ার কাহিনী তো পুরোটাই যাচ্ছে তা। তন্নিকে নির্দিষ্ট একটা জায়গায় বসিয়ে রেখে প্রেমিকের সাথে পুরো দুনিয়া ঘুরে আসে সে। তন্নি কাঠের পুতুলের মতো পুরোটা সময় একই জায়গায় বসে থাকে। এজন্যই বোধহয় তার বোনটা তাকে একটু বেশিই পছন্দ করে।

আজ ও তন্নি তার বোনের সাথে ঘুরতে বের হয়েছে। তানিয়া বেছে বেছে তাকে গোলাপি রঙের একটা ওভারকোট পড়িয়েছে। সাথে হোয়াইট প্যান্ট। গলার মাফলার টাও সাদা রঙের। চুলগুলো উঁচু করে ঝুঁটি করা। তন্নি ভেবে পাচ্ছেনা বোনের ডেটে সে কেন এত সেজে যাচ্ছে।

‘কেন যেন মনে হচ্ছে ডেট টা তোমার না বরং আমার।’

তানিয়া তন্নির কানে ছোট স্টোনের দুল পরিয়ে দিতে দিতেই মুচকি হাসে। রহস্য করে বলে,

‘হতে কতক্ষণ!’

তন্নি ঠোঁট উল্টে তাকায়। না বোঝার মতো করে বলে,

‘মানে।’

‘মানে কিছুই না। ছোট মানুষের অত মানে টানে বুঝতে নেই। নিচে ওয়েট কর আমি রেডি হয়ে আসছি।’

তন্নিও বোনের কথা মেনে নেয়। তার সত্যিই অত মানে বোঝার দরকার নেই। এই পৃথিবীতে যে যত কম জানবে, কম বুঝবে সে হচ্ছে তত সুখী মানুষ। তন্নিও সুখী মানুষ হতে চায়। তাই তার জন্য কম জানা শ্রেয়।

চলবে……….