তুমি এসেছিলে বলে পর্ব-৪+৫+৬

0
283

#তুমি_এসেছিলে_বলে
পর্ব : ৪
#নাদিয়া_আক্তার_সিয়া

( ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে মেঘ মেহতাব এর দিকে তাকালো সে কালো টি-শার্ট এর সাথে ব্ল্যাক ট্রাউজার পরেছে। তার থেকে চাইলেও চোখ সরাতে পারছে না মেঘ । )

মেহতাব : ওজু করেছো আসো একসাথে দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করে নিই ।
মেঘ : আচ্ছা ।

( এরপর দুজনে দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করে নেয়। )

মেঘ : ধন্যবাদ আমাদের পরিবারের সম্মান বাচানোর জন্য আমি আপনার কাছে আজীবন ঋণী হয়ে থাকব।

মেহতাব : If I want something from you will you accpet it .( যদি আমি তোমার থেকে কিছু চাই তুমি কি তা রাখবে )

মেঘ : আমার দ্বারা যদি সম্ভব হয় তাহলে আমি অবশ্যই রাখব।

মেহতাব : Actully Megh , আমি আর কয়েক দিন পর লন্ডন শিফট হচ্ছি ওখানে 2 বছর থাকব তারপর আবার আসব বিডি তে ফিরে আসব । তুমি হয়ত জানো না আমি ওখানে সব কিছু সেটেল করে এসেছি । আমি অনেক বড় জব পেয়েছি ওখানের সব চেয়ে জনপ্রিয় এন্ড পপুলার কোম্পানির CEO এটা একটা বিগ চান্স ফর মি ইউ নো টু প্রুভ মাইসেল্ফ । তুমি ডেডিকে একটু ম্যানেজ করতে পারবে । তুমি হয়ত ভাবছো যে আমার বাবার এতো বড় কোম্পানি থাকতে আমি লন্ডন কেন যেতে চাচ্ছি । আমি চাই না আমার ভাইয়ের সাথে বাবার কোম্পানির CEO হওয়ার জন্য কোনোরকম নিজেদের সম্পর্ক নষ্ট করতে । আমি আমার পরিবারকে নিজের থেকেও বেশি ভালবাসি ।
মেঘ : কিন্তু বাবা কি আমি বললে রাজি হবেন । আমাদের বিয়ে টা আর পাচটা স্বাভাবিক বিয়ের মতো হয় নি। আপনি এখন চলে গেলে অনেকে অনেক কিছু ভাববে। ( মনে মনে বলল ,আমার কথা কি আপনার মনে পরবে না । পরিবারকে এত ভালোবাসেন আমার জায়গা কি তাতে একটুও নেই ) । আমি কি কোনো ভুল করেছি তাই চলে যাচ্ছেন । আমাকে একটু সময় দিন প্লিজ যাবেন না।

মেহতাব : It’s not for your mistake.
Pls don’t be sorry . I need time too . আমিও চাই সবকিছু স্বাভাবিক করতে কিন্তু আমদের বিয়ে টা সময় এর উপর নির্ভর করা টা বেটার হবে । আমি জানি না কোনোদিনও তোমাকে ভালবাসতে পারব কিনা তাই আমার উপর কোনো প্রত্যাশা রেখো না । আমি তারাতারি আসতে পারব কিনা তাও জানি না। আর তাই বলে তোমার প্রতি আমার দায়িত্ত অবহেলা করব না। I’m not that kind of person .
( মেঘ মনে মনে আফসোস এর সুরে বলল, আমি সবার দায়িত্তই রয়ে গেলাম করো মনে কোনো জায়গা তৈরি করতে পারিনি আর পারব কিনা তাও জানি না )।

মেহতাব : আচ্ছা । তুমি বিছানায় ঘুমিয়ে পরো। আমার পেন্ডিং কিছু কাজ আছে আমি পরে ঘুমাব।

মেঘ : আপনি কথায় ঘুমাবেন?
মেহতাব : আমি মাঝে কোলবালিশ দিয়ে শুয়ে পরব । তোমার কি প্রবলেম হবে?
মেঘ : না প্রবলেম হবে না । ( এই বলে মেঘ বিছানায় শুয়ে পরল কিন্তু তার চোখ মেহতাব কে দেখছে আর মেহতাব তার বাকি কাজ গুলো সোফায় বসে করে নিচ্ছে )
মেঘ : সে কি তাকে কোনোদিন ভালবাসবে না কাছে টেনে মিষ্টি মিষ্টি কথা দুষ্টুমি করবে না সে তো বেশি কিছু চায় না মেহতাব এর মনে একটু জায়গা করে নিতে পারলেই হবে হয়ত এটাই প্রবিত্ৰ বন্ধন । আরে মেঘ তুই কি তার প্রেমে পরলি নাকি নো নো ওয়েক আপ মেঘ এতো দুর্বল হলে চলবে না । জে আমাকে ভালোবাসে না তার কোনো ভালবাসার কোনো মূল্য নেই সে শুধু তোর দায়িত্ব পালন করছে ।(মনে মনে)

( হল্লা পার্টি মেহতাব আর মেঘ এর কথা সব কিছু দরজার আড়াল থেকে শুনছিলো )
সৌরভ : এগুলি তো মানা যায় না।

সিয়াম : দোস্ত মেহতাব কে আটকাতে হইব যেভাবে হোক । আমি তোগো আগেই কইছিলাম মেহতাব লন্ডনে যাইব গা যেই পোলা মাইয়া গো দিকে তাকাই না হেয় একদিনেই বৌ এর সাথে লুতুরপুতুড় করব ।

সিমরান : ব্রো মাইন্ড ইউর ল্যাঙ্গুয়েজ লুতুরপুতুড় কি ধরনের ওয়ার্ড ।

সৌরভ : তোরা ঝগড়া থামা এগুলা ঠান্ডা মাথায় ভাবোন লাগত ।

সামির : অর্থাৎ ,ঠান্ডা মাথা = পেটের শান্তি = খাবার

সৌরভ : বাহ! আমার শিষ্য ।

সৌম : সৌরভ ভাইয়া তুমি না অঙ্ক তে ডাব্বা মারছিলা।

রৌফ : ভাই ডাব্বা না আন্ডা পারছিল।

( রৌফ এর কথা শুনে এবার সবাই মুখ টিপে হাসা শুরু করে দিয়েছে ) ।

শাম্মি : ওই আন্ডা নিশ্চয়ই সামির ভাইয়া খাই ছিল তাই তো বলি কইদিন ধরে পচা ডিমের গন্ধ পাচ্ছি সামির ভাইয়ার মুখ থেকে ।

সৌরভ : এতো সামি নয় যেন আসামি ।

শাম্মি : নাম কেন বিবৃতি করছো ভালো লাগে না ।

সিমরান : ভাইয়া মিথিলা আপু কই আর মেহসান ওদের ছাড়া প্লান ফুলফিল কিভাবে হবে ।

সৌরভ : মেহসান ঘুমায় মনে হয় । আর মিথিলা কই আসলেই চলতো ওরে দেইখাই আর মেহতাব এর লন্ডন যাওয়া আটকানোর প্লান করি।

( মিথিলা ডাইনিং টেবিলে বসে খাচ্ছিল )

রৌফ : মিথিলা কেন খাচ্ছ তুমি গ্রগ্রাসে গিলিয়া।

( এবার সবাই সজোরে হেসে দিল ) ।

মিথিলা : মাথা করিতেছি ঠান্ডা ডিসটার্ব করিয়েন না পারেন গিয়া আন্ডা ।

সৌরভ : এই কাজ তো অর না এই কাজ তো আমার ওহে বালিকা ।

সিমরান : এখানে পাড়িয়েন না আন্ডা তাহলে দেবে দাদী আপনাকে ডান্ডা ।

সৌম : থামেন ভাইয়েরা বোনের আপনার চলিতেছেন কবিতার খাতা বুনিয়া ।

সামির : ছোটো বেলায় খেয়ে মায়ের হাতে গান্ডা খেয়েছিলাম আমি সৌরভের পারা আন্ডা ।

সিয়াম : কেন খাইতে গেলি আন্ডা তাই লজ্জার ভয়ে বলতে পারি না আমি পছন্দ করি পান্ডা ।

মেহসান : এই দোষে তোমরা দিলা আমার কাচা ঘুম টা ভাঙ্গিয়া তাই তো বলি আমি কেনো সপ্ন দেখছি জাগিয়া ।

( সবাই মেহসান এর কণ্ঠ শুনে চমকে গেল )

সিমরান : তুই কখন এলি ?

মেহসান : তোমাদের কবিতার ঠেলায় উঠতে হয়েছে । তোমরা সবাই কি করছো এখানে?

মিথিলা : বুদ্ধির জন্য খাচ্ছি সামির ভাইয়া বলেছিল। বুদ্ধি = খাবার ।

রৌফ : আরে বোইন তুই নাকি আবার সৌরভ এর আন্ডা খাইছোছ সামির এর মতো ।

এই কথা শুনে মিথিলা মুখের ভিতরে নলাটা ফেলে দিল ।

মিথিলা : ছিঃ এইসব কি কথা বলছো ব্রো খাওয়াটা নষ্ট করে দিলে ভালো লাগে না । ( নেকা কান্না করে )।

রৌফ : মাইন্ড করোছ কেন মজা করছি। ( হেসে দিয়ে )

সামির : মেহসান = অবসান, তুই সবসময় বলোছ তায় আজকে একটা প্রুভ দে ।

মেহসান : কি সমস্যা বলো ?

সৌরভ : একটা জব্বর আইডিয়া দে যাতে মেহতাবকে লন্ডনে যাওয়া থেকে আটকাইতে পারি।

মেহসান : মেহতাব ভাইয়া আমার ফিউচার ওয়াইফ ( মেঘ) কে ছেড়ে লন্ডন এ যাইতাছে নাকি । ( রাগ দেখিয়ে )

রৌফ : মেঘ ভাবি আবার তোর ফিউচার ওয়াইফ কেমনে হয় ?

মেহসান : বড় হইলে তক্ষণ ভাইয়া বুড়া হইয়া যাইব ভাবি রে দেখব কে?

সিয়াম : কেডা আবার মেহতাব ।

মেহসান : ভুল উত্তর তাই আমার আইডিয়া দিব না।

সিয়াম : না দিলে না দে লাগত না ।

মেহসান : আরে রাগ হোও কেন বলতাছি ।দেয়ালেরও কান আছে কাছে আসো সবাই। (ফিসফিস করে মেহসান সব প্লান বলে দিলো সবাইকে)
সবাই বলে উঠল , দারুন! প্লান, মিশন লন্ডন ভন্ডুল।

#তুমি_এসেছিলে_বলে
পর্ব : ৫
#নাদিয়া_আক্তার_সিয়া

মেহসান : ভুল উত্তর তাই আমার আইডিয়া দিব না।

সিয়াম : না দিলে না দে লাগত না ।

মেহসান : আরে রাগ হোও কেন বলতাছি ।দেয়ালেরও কান আছে কাছে আসো সবাই। (ফিসফিস করে মেহসান সব প্লান বলে দিলো সবাইকে)

সবাই বলে উঠল , দারুন! প্লান, মিশন লন্ডন হবে ভন্ডুল।

( আহতাব এর রুম এ )

আহতাব : I’m sorry অহনা । আমি জানতাম না যে তোমার নাম অহনা আমি মেহনূর কে কষ্ট দিতে চাই নি ।

অহনা : দেখুন আপনার ভাই যদি সময়মত না আসতো তাহলে আমার মেঘ এর উপর কলঙ্কের দাগ পরত । আপনাদের একটা ভুলের জন্য আরেকটু হলে আমার বোনের জীবন নষ্ট হয়ে যেত।

অহতাব : আমি মেহনূর এর কাছে ক্ষমা চাইব। এবার তো রাগ করো না আমাকে মাফ করে দেও প্লিজ এই দিন কিন্তু বার বার আসে না বলে দিলাম।

অহনা : আপনি তো অনেক খারাপ ।

আহতাব : খারাপের কি দেখলা এখনও তো দেখা বাকি ।

( এই বলে আহতাব অহনার কপলে কিস করলো । তারা একসাথে অনেক সুন্দর মুহুর্ত কাটলো অহনা বাধা দিলো না। অহনা বুঝেছিল অহতাবের এখানে কোনো দোষ ছিলো না সে তো বুঝতে পারে নিই ভালো তো সে অহনাকে বেশেছিলো শুধু মেঘ নাম ভেবে ভুল করেছে । আজকে সময়মত মেহতাব উপস্থিত না থাকলে ৩ টি জীবনে ঝর বয়ে যেত । তার অতি আদরের মেঘ কে কটু কথা শুনতে হতো সমাজের কাছ থেকে অহনার মা এর থেকে। মেঘ ও সুখ ডিসার্ব করে আর মেহতাব মেঘ কে অনেক ভালো রাখবে তা মেহতাব কে দেখলেই বুঝা যায়।)

সকালে উঠে মেঘ দেখলো মেহতাব ঘরের কোথাও নেই । তাই সে ঘড়ির দিকে তাকালো ঘড়িতে ৭ টা বাজে । তাও কেউ তাকে ডাকতে এলো না। সে উঠে ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এলো। সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামার সময় দেখলো কেউ উঠে নি শুধু তার শাশুড়ি মা কাজ করার স্টাফ দের সব বুঝিয়ে দিচ্ছে। মেঘ কে লক্ষ্য করলো মেঘ কে উদ্দেশ্য করে বললো ।

অরিন বেগম : মেহনূর তুমি উঠে পড়েছো আরেকটু ঘুমিয়ে নিতে অহনা কে একটু আগে ঘরে পাঠিয়ে দিয়েছি । তুমি ওর সাথে বরং গল্প করো। তোমার ননোদিনি রা তো এতো সকালে উঠবার নয় ।

মেঘ : না মা সমস্যা নেই আমি আপনাকে বরং হেল্প করি কোনো কাজ থাকলে আমাকে দিন ।

অরিন বেগম : কি বলছো এগুলো মা । তোমাকে কে কি আমি কাজ করাতে এনেছি । আমার তো কোনো মেয়ে নেই তুমি আর অহনা আজ থেকে আমার মেয়ে । তোমার কিছু লাগলে আমাকে বলতে পারো । এই ঘরকে নিজের ঘর মনে করবে আর আমাকে নিজের মা মনে করবে পারবে না আমার জন্য এইটুকু কাজ করতে ।

( অরিন বেগম এর কথা শুনে মেঘ অনেক অবাক হলো আর তার আগের দিন গুলোর কথা মনে পরে গেলো । মামির বাসায় মামি তাকে অনেক কথা শুনিয়েছে অনেক কাজ করিয়েছে কিন্তু মামি কোনো সময় তাকে মা বলে সম্মওধন করে নি বা কাছে ডেকে দুই একটা মিষ্টি কথা বলে নি। শুধু অপয়া বলে খোটা দিয়েছে । কিন্তু সে প্রতিবাদ করেনি নিজের আপনজন মনে করেছে এতে তাদের দোষ নেই দোষ তার ভাগ্যের এই কথা সে ছোটো বেলা থেকে বুঝে নিয়েছিলো । বিয়ের আগে শুনেছিলো এই বাড়ির সবাই অনেক ভালো তবে আজ তা প্রমান হয়ে গেল । আল্লাহ যেমন তার থেকে তার মাকে কেড়ে নিয়েছে তেমনি মায়ের মতো স্নেহময়ী শাশুড়িকে পাবার জন্য এই পরিবারে তাকে পাঠিয়েছেন খোদার কাছে সে চির ঋণী হয়ে থাকবে ) ।

অরিন বেগম : কি ভাবছিস এতো মেঘ মা?( অরিন বেগমের কথায় হুশ ফিরলো মেঘ এর ) ।

মেঘ : না মা কিছু না।

অরিন বেগম : আচ্ছা ঠিকাছে । তুই বরং এই কফি টা গিয়ে মেহতাব কে দিয়ে আয় তারপর নিচে আসবি নাস্তা সেরে নেবো আর তোর সাথে অনেক আলোচনা আছে তোদের রিসিপশন নিয়ে তোদের কি পছন্দ অপছন্দ জানতে হবে তো । এই অনুষ্ঠানটি অনেক বড় করে করবো । তোদের শাড়ি , গহনা সিলেক্ট করতে হবে কতো কাজ কিন্তু বাড়ির সবার কোনো খবরিই নেই । মাথাটাও ব্যথা করছে ।

মেঘ : মা আপনি শান্ত হোন । আপনি চিন্তা করবেন না আমাকে বুঝিয়ে দিয়েন আমি সব পারব আপনার বৌ হিসেবে না থাক মেয়ে হিসেবে তো একটু কাজ করতেই পারি আমি সব সামলে নিবো। আরেকটা কথা আমি কিন্তু অনেক ভালো আদা চা করতে পারি আপনার মাথা ব্যথা এক ঝটকায় সেরে যাবে ।

অরিন বেগম : তা বেশ খাওয়া আমাকে এক কাপ তোর হাতের স্পেশাল চা তার আগে মেহতাব কে কফি দিয়ে আয় তারপর তুই আর আমি দুজনে একসাথে খাবো আর গল্প করব।

মেঘ : ঠিকাছে মা। কিন্তু উনি কোথায়?

অরিন বেগম : আর কোথায় ছাদে হয়তো এক্সসারসাইজ করছে । আরেকটা কথা এই পেকেট টা নে এতে একটা হাল্কা গোলাপি রঙের শাড়ি আছে । মেহতাব হাল্কা গোলাপি রং খুব পছন্দ করে । এটা পরে ছাদে যাবি ।

মেঘ : ঠিকাছে । কিন্তু মা ?

অরিন বেগম : কোনো কিন্তু নয় যা একটু পর নিচে আসিস ।

অরিন বেগমের সাথে কথা শেষ করে মেঘ নিজের রুম এ গিয়ে শাড়িটা পরে ছাদের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।

ছাদে মেহতাব পুশ আপ করছিল । মেঘ কে সে দেখতে পায় নি। মেহতাব এর ঘাম কপাল থেকে গড়িয়ে নিচে পড়ছিল। সূর্যের আলোতে তার ঘামে ভেজা শরীর চক চক করছিল।

মেঘ মেহতাব কে দেখে যেন মুখ থেকে কথাই বের হচ্ছেনা।

মেঘ : উনি আমাকে মেরেই ফেলবেন কে বলেছিল এতো সুদর্শন হতে। ছেলেদের এতো সুন্দর হতে নেই হলেই এক জালা কুল মেঘ কুল ।

মেঘ কে দেখে তাকে উদ্দেশ্য করে মেহতাব বলল ” ওখানেই দাড়িয়ে থাকবে নাকি এখানে আসবে “।

মেহতাব এর ডাকে মেঘ এর হুশ ফিরল । একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে মেঘ বলল ” জ্বি আসলে আপনার কফি ” ।

তোয়ালে দিয়ে ঘাম মুছতে মুছতে মেঘ এর হাত কফির মগ টা হাতে নিয়ে বললো ” এতো সুন্দর করে সেজেছো কথাও যাচ্ছো নাকি “।

( এই কথা শুনে মেঘ রেগে যায় ) ।

মেঘ : একটু রোমান্টিক কিছু বলবে তা না কিসের জন্য সেজেছি তা জিগ্যেস করছে শালা আনরোমান্টিকের ডিব্বা । ( মনে মনে বিড়বিড় করে বলল )।

মেহতাব : কিছু বললে ?

মেঘ : না কি আর বলবো । মন টা চাচ্ছে কচু গাছের সাথে গলায় দড়ি দিয়ে উপরে চলে যাই । ( আস্তে করে বলল ) ।

মেহতাব : What?

মেঘ : কিছু না কাপ টা দিন।

এই বলে মেঘ কাপটা নিয়ে গেলো বলতে গেলে ছিনিয়ে নিয়ে গেলো ।

মেহতাব : আমার তো খাওয়া শেষ হয় নি ।

মেঘ : বাকিটা না হয় লন্ডনে যাওয়ার সময় পেক করে দিবো।

মেহতাব অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সে কি কোনো ভুল করছে নাকি ভুল কোনো কথা বলেছে।
তবুও সে একটু হলেও আন্দাজ করতে পেরেছে । তাই সে আরেকটু জ্বালানোর জন্য পিছন থেকে মেঘ কে ডাক দিয়ে বলল , ” এই শাড়িটা কিন্তু খুব সুন্দর ” ।

মেঘ : হুম জানি । ( রেগে গিয়ে বললো )

মেহতাব : কিন্তু শাড়িটা যে পড়েছে তার চেয়ে বেশি সুন্দর না । ( মুচকি হাসি দিয়ে )

এই কথা শুনে মেঘ নিজের আজন্তে হেসে দিলো ।

মেঘ : যতটা আনরোমান্টিক ভেবে ছিলাম ততোটাও না । ( মনে মনে )

এই ভেবে লজ্জা পেয়ে নিচে নামার সময় সিমরান, মিথিলা আর শাম্মির সাথে দেখা হয়ে যায় ।

সিমরান : ভাবি তোমার গাল দুটো লাল হয়ে আছে কেন ?

মিথিলা : তাই তো । কেউ কি কিছু বলেছে ?

শাম্মি : কিছু তো হয়েছে ।

এতো প্রশ্ন শুনে মেঘ ইতস্ত বোধ করলো তাই কথা এড়িয়ে বলল ,

মেঘ : ছাদে অনেক রোদ ছিলো হয়ত তাই এমন দেখাচ্ছে ।

সিমরান : ওহ , তাই হবে হয়ত ।

এই বলে মেঘ নিজের রুম এ চলে গেল।

মিথিলা : স্ট্রেঞ্জ। ছাদ কেনো গিয়েছিলো ভাবি?

শাম্মি : চলো ছাদে গিয়ে দেখে আসি।

সিমরান : হুম চল।

ছাদে গিয়ে দেখলো মেহতাব ব্যয়াম করছে ।

শাম্মি : ওহ এই তাহলে আর্টিস্ট ভাবির গাল লাল করার ।

মিথিলা : কিসব বলছিস ওসব কিছু না হয়ত ভাবিকে ভাইয়া কোনো লজ্জার কথা বলেছে।

সিমরান : তাই হবে । How romantic!

চলবে।

#তুমি_এসেছিলে_বলে
পর্ব : ৬
#নাদিয়া_আক্তার_সিয়া

সিমরান, শাম্মি আর মিথিলা ছাদে গিয়ে দেখলো মেহতাব ব্যয়াম করছে ।

শাম্মি : ওহ এই তাহলে আর্টিস্ট ভাবির গাল লাল করার ।

মিথিলা : কিসব বলছিস ওসব কিছু না হয়ত ভাবিকে ভাইয়া কোনো লজ্জার কথা বলেছে।

সিমরান : তাই হবে । How romantic!

মেহসান : কি করছো তোমরা ?

মেহসান এর গলা শুনে চমকে গেলো সবাই ।

মিথিলা : আরে তুই যতবার আসিস ভয় পায়িয়ে দিস।
মেহসান : আমি কোন ভয় দেখাই নি হুল্লোড় পার্টি তোমদের ৩ জনকে বৈঠক খানায় ডাকছে। ( আগেই বলে নি হুল্লোড় পার্টিদের একটা আলাদা জায়গা আছে যেখানে তারা সব আলোচনা করে।)

সিমরান : ঠিকাছে চল ।

( মেহতাব এর রুম এ )

মেঘ : উফফ মেঘ এতো লজ্জার কি আছে । ( জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে নিজেকে শান্ত করে )

মেহতাব রুম এ ডুকতে ডুকতে বললো ” এটুকু প্রশংসায় এই অবস্থা তাহলে রোম্যান্স করবে কিভাবে ? ( সয়তানি হাসি দিয়ে )

মেঘ : ওনার কি রোদের তাপে মাথা নষ্ট হয়ে গেছে। কাল অব্দি যে ভাজা মাছটা উল্টে খেতে পারত না। আজ সে রোম্যান্স এর কথা বলছে।( মনে মনে বিড় বিড় করে বলল)।

মেহতাব : ভেবো না যে আমি দুই বছরের শিশু যে রোম্যান্স কী বুঝি না। হয়ত আমাদের সেই পরিবেশে বিয়ে হয় নি কিন্তু তার প্রভাব আমি নিজের বিয়ে করা স্ত্রীর উপর পরতে দিবো না। আমি ২ দিন পর ফিরে যাচ্ছি নিজেকে সামলানোর জন্য একটা সুযোগ চাই আশা করি তুমি সেই সময়টুকু আমায় দিবে। আমি কবে আস্তে পারব তার কোনো ঠিক নেই । আশা করি এখানে তুমি সব কিছু ম্যানেজ করে থাকতে পারবে ।

এই কথা শুনে মেঘ এর বুক এর ভিতর ধক করে উঠলো যেন তার মনের ভিতরটাকে উথালপাথাল করে দিচ্ছে ।

মেঘ : তার যাওয়ার কথা শুনে আমার এতো কষ্ট হচ্ছে কেনো। মেঘ নিজেকে সামলা তার সামনে দুর্বল হওয়া যাবে না । ( মনে মনে বললো )

মেঘ : হুম , আমি পারবো আপনাকে অতো চিন্তা করতে হবে না । ( স্বাভাবিক কন্ঠে বললো )

মেহতাব : ok then . (মুখে স্বাভাবিক ভাবে বলল) কিন্তু মনে মনে তাচ্ছিলের সুরে বললো , “আমি ভেবেছিলাম হয়তো তুমি বলবে যেতে না থেকে যেতে । শুধু একটিবারের জন্য না করলে আমি থেকে যেতাম । But I’m wrong I don’t have any kind of importance to you . তুমি আমার জন্য কিছু ফিল করো না। আমি চলে গেলেই তুমি বেটার থাকবে । সো গুডবাই মেহনূর মেঘ ”

মেঘ আর মেহতাবের কথাগুলো দরজার আড়াল থেকে মেহসান,সিমরান,মিথিলা আর শাম্মি শুনছিলো ।

সিমরান : ভাবি যদি একবার বলতো যে , আপনাকে ছাড়া থাকতে পারবো না আপনাকে আমার প্রয়োজন তাহলেই হতো।

মিথিলা : তুই কিভাবে বুঝলি যে ভাবি এগুলো বললে ভাইয়া রাজি হয়ে যেত ?

মেহসান : আরে মিথু আপু ভাইয়ার চোখে ভাবির জন্য ভালবাসা , মায়া স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে ।

শাম্মি : হুম ঠিক। কিন্তু অনুভব করলেও বুঝতে পারছে না একে ভালবাসা বলে এটাই তাদের প্রবলেম ।

সিমরান : তাহলে আর দেড়ি কিসের । একটা প্লান করে ফেলি চলো সবাই বৈঠক রুম এ সিক্রেট মিশন ফুলফিল করতে ।

বৈঠক রুম এ মেহসান,সিমরান,মিথিলা আর শাম্মি সব কিছু খুলে বললো হুল্লোড় পার্টি কে ,

সৌরভ : বাহ ভালো খবর!

শাম্মি : ভাইয়া চলে যাচ্ছে আর তুমি বলছো ভালো খবর । ( রাগ দেখিয়ে )

রৌফ : আরে গাধা এটা দ্বারা কি বুঝাইছে বোঝো নাই ।

শাম্মি : গাধী হতে পারি গাধা নই । ( রাগ দেখিয়ে )

সিয়াম : আমিও বুঝি নাই আমারেও কেউ বুঝাও।

রৌফ : এই গাধা-গাধীরে কেউ বুঝা।

সামির : আমি আছি নো টেনশন।

সৌম : এক্সপ্লেইন করো আমিও গাধার দলে অন্তর্ভুক্ত হলাম।

রৌফ : তুই গাধার দলেই ছিলি গাধা কোথাকার।

সামির : রিল্যাক্স আমি আছি সো ব্যাপার টা হলো , দূরত্ব = ভালবাসা কারন দুরত্ব হইলে ওরা দুইজন দুইজনরে মিস করবো এডা বুঝবো যে , “সখী ভালবাসা কারে কয়” । ( সুর দিয়ে )

সিমরান : এই ফাস্ট টাইম কোনো ভালো কথা বলছো ।
সামির : ভালোমানুষের কদর নাই। ( তাচ্ছিলের শব্দ করে )

সৌম : ঠিকাছে কিন্তু তবুও যদি মুখফুইটা না বলে ।

রৌফ : তাইলে আবার কি আমরা মোক্ষম ঔষধ সরবরাহ করিবো তাহাদের মধ্যখানে ।

সৌরভ : তা বেশ তাহলে বৈঠক এখানেই সমাপ্তি ।

সকালের নাশতা শেষ করে সোফায় বসে অরিন বেগম , মেঘ, অহনা আর মেহতাব এর ৩ খালাতো বোন (সিমরান,শাম্মি,মিথিলা) রিসিপশন নিয়ে আলোচনা করছিলো।

অরিন বেগম : তো তোমরা কি পরতে চাও লেহেঙ্গা না শাড়ি?

সিমরান, মিথিলা আর শাম্মি বললো ” ভাবী তোমরা কি পরতে কমফরটেবল মনে করবে সেটাই ফাইনাল ” ।

অহনা : আমার ছোটো জা ( মেঘ ) কি চায় তাই আমি চাই অর চয়েস আমার চয়েস ।

এবার সবার দৃষ্টি মেঘ এর উপর পরে। মেঘ ইতস্তত করে বলে ,

মেঘ : মা আপনি যা বলবেন তাই ফাইনাল। এই সম্পর্কে আমার অতো ভালো ধারনা নেই। আপনি গুরুজন আপনি ঠিক করুন আপনার সিদ্ধান্ত পাকাপোক্ত হবে।

অরিন বেগম : ( কিছু একটা ভেবে ) ঠিকাছে । বিয়ের দিন মেঘকে লেহেঙ্গা সামলাতে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে তাই আমি চাই আজ ছোটো থেকে বড় সবাই শাড়ি পড়ুক।

সিমরান : ঠিকাছে । কিন্তু কোন কালার এর শাড়ি?

অরিন বেগম : মেয়েরা গোল্ডেন কাতান এর শাড়ি পরবে আর ছেলেরা নীল পঞ্জাবি তার উপর ডিজাইন করে গোল্ডেন কালারের কারুকাজ করা আর গোল্ডেন পায়জামা যার বাম পাশে সূক্ষ নীল কারুকাজ থাকবে ।

মিথিলা : পারফেক্ট খালামনি ।

অরিন বেগম : হয়েছে অনেক খালামনির প্রশংসা । গিয়ে রেডি হয়ে নেও সবাই । ( সৌজন্যের হাসি দিয়ে )

সবাই উঠে নিজেদের রুম এ চলে গেলো মেঘ বাদে।

মেঘ : কোথায় যাচ্ছি আমরা মা?

অরিন বেগম : তোমাদের নিয়ে শপিং এ তোমাদের গলায় পড়ার জন্যে স্বর্নের সেট কিনবো নীল পাথর যুক্ত আর শাড়ি, পঞ্জাবি আর ঐ টুকটাক।

মেঘ : কিন্তু মা আপনি তো আমাকে আর অহনা আপুকে স্বর্নের জুয়েলারির অনেক সেট দিয়েছেন। আমি আর কিছু চাই না।

অরিন বেগম : কোনো কিন্তু নয় । ওগুলো তোমাদের দাদী শাশুড়ির আমলের তোমাদের দাদী শাশুড়ি আমাকে দিয়ে ছিলেন আর আমি তোমাদের দিলাম তাই আমি আলাদা করে তোমাদের কিছু উপহার দিতে চাই ।

মেঘ : মা আমার লাগবে না সত্যি বলছি আপনি আর জোর করবেন না। তাহলে আমি যাবো না শপিং এ।

অরিন বেগম : আমার পাগলি মেয়ে । ঠিকাছে তাহলে যেকোনো ফুলের সেট কিনবো শাশুড়ি আর বৌমা মেচিং করে । এবার না করা যাবে না। ( মেঘকে জড়িয়ে ধরে )
মেঘ : হুম তাহলে ঠিকাছে । ( মুচকি হাসি দিয়ে )
এগুলো ২ তোলায় দাড়িয়ে মেহতাব আর সৌরভ শুনছিলো আর দেখছিলো ।

সৌরভ : বাহ ! তোর বৌ তো দেখছি খাটি সোনা । অন্য কেউ হইলে বলতো আপনার ইচ্ছা মা আপনি যা করবেন ভালোর জন্যই করবেন ।

মেহতাব এর প্রতিউত্তরে কিছু বললো না শুধু মুচকি একটা হাসি দিলো ।

চলবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে