তুমি এসেছিলে বলে পর্ব-২৮+২৯+৩০

0
257

#তুমি_এসেছিলে_বলে
পর্ব:২৮
#নাদিয়া_আক্তার_সিয়া

নতুন বছরের দিনগুলো প্রতিদিনের মতো ব্যাস্ততায় কেটেছে মেঘের। গভীর রাত প্রায় ৪ টা ছুঁই ছুঁই। মেঘ গভীর ঘুমে মগ্ন। জানালার পর্দার ফাঁকফোকর দিয়ে চাঁদের আলো ঘরে ঠাঁই পেয়েছে। হঠাৎ ঘাড়ে কারো গরম নিশ্বাস টের পাচ্ছে মেঘ। কারো বাহুডোরে আবদ্ধ সে। তড়িঘড়ি করে উঠে হনহনিয়ে বিছানা থেকে নামতে গিয়ে ধরাম করে নিচে পড়ে গেল মেঘ। মেঘের পড়ে যাওয়ার শব্দ পেয়ে লোকটি ঘুম মগ্ন অবস্থায় পিটপিট করে তাকালো। মেহতাবকে দেখে মেঘ চিৎকার করতে যাবে। মেহতাব এসে মুখ চেপে ধরলো।

— করছো কী? শাট আপ। এটা আমি মেহতাব কোনো ভূত নই।

মেঘ মুখ থেকে মেহতাবের হাত সরিয়ে কোমরে হাত দিয়ে উঠে দাড়াতে গিয়ে আবার ধপাশ করে পড়ে গেলো। মেহতাব মেঘকে হাত ধরে উঠিয়ে দিলো। মেঘ মেহতাবকে পা থেকে মাথা অব্দি স্ক্যান করলো। পাশের টেবিল ল্যাম্প জ্বালালো। টেবিল ল্যাম্পের আলোতে ঘরে আবছা আবছা দেখা যাচ্ছে সবকিছু। মেহতাবের দিকে দৃষ্টি যেতেই মেহতাবের গভীর দৃষ্টি আর মুখে শয়তানি হাসি দেখে বুঝতে বাকি রইল না সে অপ্রস্তুতকর পরিস্থিতিতে আছে। এপাশ ওপাশ না তাকিয়ে বিনাবাক্যে নিচে পড়া থাকা ওড়না নিয়ে দৌড় দিয়ে ওয়াশরুমে প্রবেশ করতে গিয়ে পড়তে পড়তে নিজেকে সামলে নিলো। মেহতাব স্মিত হেসে আবার শুয়ে পড়লো । একে তো জার্নি করে এসেছে আবার বউ তাকে ভুলে গেছে। মনে করাতে হবে একটু রোমান্টিকভাবে। এই ভেবে বিছানায় আধশোয়া অবস্থায় বসে পড়লো।

মেঘ ফ্রেশ হয়ে এসেছে। মেহতাব কে বসে থাকতে দেখে বলে উঠলো ,

— আপনি হঠাৎ না বলে হুট করে চলে এলেন?

— কেনো সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম, খুশি হও নি?

— না তেমন কিছু না, তাহলে রান্না করে রাখতাম।
আপনি কি খাবেন?

— এনিথিং ভালোবেসে যা বানিয়ে দিবে।

মেঘের বেশ সন্দেহ হচ্ছে মেহতাবের মধুর বাণী শুনে । এটা মেহতাব নাকি কোনো ভূত প্রেত । যাই হোক রোমান্টিক বটে!আপাদত এইসব মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে গাঁয়ে শাল জড়িয়ে নিচে কিচেনের উদ্দেশ্যে চলে গেলো।

কিচেনে রান্না করছে মেঘ। সামির ঘরের দরজা খোলা দেখে কিছু না ভেবে ঢুকে পড়লো। এমনিতেও আজকে সৌরভের সম্মন্ধ নিয়ে আসবে মিথিলার জন্য। তাই বাকিরা সৌরভের বাড়িতেই বর পক্ষ হিসেবে আসবে। এই বাড়িতেই মেয়ে দেখবে। একে তো সৌরভ তাদের সম্পর্ক গোপনে রেখেছে কিন্তু যাই হোক বিয়েতে খাবারের দিকের দায়িত্ত্ব সে নেবে সে বলে দিয়েছে। তাই সে কনের বাড়িতেই থাকবে। মুচকি হেসে মনে মনে বিড়বিড় করতে করতে বলে উঠলো ,

— খাবার মানে সামির। সামির মানে খাবার। খাদ্যসৃঙ্খল ভঙ্গ করা কার সাদ্ধি আমি খাবার খেয়ে তা রক্ষা করবে। দুনিয়া বিলুপ্ত হয়ে যাক, খাবার তুই আমার থাক।

এইসব ভাবতে ভাবতে কিচেনে তাকিয়ে থমকে যায় সে। অন্ধকারে ঠিক বোঝা যাচ্ছে না কে? সাদা চাদর টা শুধু চোখে পড়েছে। কিন্তু রাতে তো ডাইনি, পেত্নীরা সুন্দর ছেলেদের ধরে ব্রেকফাস্ট সাড়ে ।

— আমি তো একদম দেখতে নাদুস-নুদুস দুই বেলার জন্য পারফেক্ট।

নিজের কথার মানে নিজে বুঝতে পেরে, ওখানেই অজ্ঞান হয়ে ধপ করে মেঝেতে লুটিয়ে পড়লো সামির।

সকাল হয়ে গেছে। সবাই বাড়িতে বেশ হাসিখুশি মেহতাব ফিরে এসেছে তাই। অরিন বেগম আর বাকিরাও সকল ব্যাস্ততা ছেড়ে এক হয়েছে। শুধু অহনা আসতে পারেনি আহ্তাব অহনার কাছে গিয়েছে তার সাথে কয়েকদিন থাকার জন্য। ব্রেকফাস্ট টেবিলে সবাই একসাথে বসে নাস্তা করছে। মিনহাজ সাহেবের জরুরি কল আসায় বসা থেকে উঠে চলে গেলেন। সামির চুপচাপ নড়াচড়া বিহীন বসে আছে । টেবিলে এতো খাবার সাজানো সামিরের তার প্রতি কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। সবাই বেশ লক্ষ্য করেছে মিটিমিটি হাসছে।

— খাচ্ছ না কেন বাবা?

অরিন বেগমের স্নেহময়ী গলা শুনে সামির কথা না বাড়িয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে খাওয়া শুরু করলো। মেহসান তা দেখে বলে উঠলো,

— ভাইয়া তো সেই পেত্নীর সাথে আলাপ- সালাপ কেমন হলো? কবে খাবে তোমায়? কোনো ডট ফিক্সড করেছে?

মেহসানের কথা শুনে সবাই মুখ টিপে মিটিমিটি হাসলো। মেহসানের দিকে অরিন বেগম রাগী দৃষ্টিতে নিক্ষেপ করলেন। মেহসান আর কিছু বললো না। সবাই ব্রেকফাস্ট শেষে সোফায় বসে পড়লো। হঠাৎ কলিং বেল বেজে উঠলো। মেঘ গিয়ে দরজা খুলতেই মিথিলা , সিমরান , শাম্মী আর সিমু বেগম প্রবেশ করলেন সঙ্গে মেহতাবের মামী ইতি বেগম আর সৌমও এসেছে। ইতি বেগম আর শিমু বেগম মেঘকে জড়িয়ে ধরলেন। অরিন বেগম এগিয়ে এসে শিমু বেগম আর ইতি বেগম কে নিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করলেন। সিমরান,শাম্মী,মিথিলা মেঘের দিকে এগিয়ে এসে জড়িয়ে ধরলো একসাথে। সৌম হাই টেনে বলে উঠলো,

— সরো তোমরা। ভাবীকে আমার সাথে কথা বলার সুযোগ দেও। তিনজন এতো ফ্যাট রাখো কোথায়?

সৌমের দিকে রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ভিতরে প্রবেশ করে সবাই সোফায় বসে পড়লো। সবাই বসে বসে আলাপ আলোচনা করছে। মেহতাবের মুখোমুখি মেঘ বসেছে। মেঘের পাশে মিথিলারা আর মেহতাববের পাশে সামির প্লেট থেকে মিষ্টি খাচ্ছে। মেহতাব গালে হাত দিয়ে একদৃষ্টিতে মেঘের দিকে তাকিয়ে আছে মেঘের বেশ লজ্জা লাগছে। সিমরান আর বাকিরাও বেশ লক্ষ্য করেছে। হঠাৎ মেঘের ফোনে টুং করে আওয়াজ হলো। মেঘ ফোনের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেই মেহতাব এর মেসেজ দেখতে পেলো। সবার চোখের আড়ালে মেসেজ টা পড়ে নিল।

— উপরে এসো আ’ম ওয়েটিং।

মেঘ সামনে তাকাতেই দেখতে পেলো মেহতাব সিড়ি দিয়ে উপরে যাচ্ছে। মেঘের ভীষণ রাগ হলো। একেই তো বাড়িতে এতো মানুষ। তাদের চোখের আড়ালে কিভাবে যাবে? মেঘ হঠাৎ দাড়িয়ে বলে উঠলো,

— মা আমার ফোন টা ঘরে রেখে এসেছি। অহনা আপুকে জানিয়ে দিয়ে আসি বিকেলে এই জায়গায় চলে আসতে।

অরিন বেগম মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানিয়ে আবার গল্প করতে লাগলেন। মেঘ তড়িঘড়ি করে উপরে চলে গেলো। সিমরান, শাম্মী, মিথিলা, মেহসান আর সৌম এতক্ষন বেশ মনোযোগ দিয়ে মেঘকে পর্যবেক্ষণ করেছে। মেঘ এক নিশ্বাসে কথা গুলো বললো যেনো অনেক তাড়া। বেশ অদ্ভুত! অন্যদিকে সামির খেয়েই চলেছে যেনো কতো দিন না খেয়ে ছিলো। সামির কে পাত্তা না দিয়ে তারা মেঘের উপর গোয়েন্দা গিরি করতে উপরে চলে গেলো।

মেঘ ঘরে প্রবেশ করতেই মেহতাবকে দেখতে পেলো না। না কোথাও নেই? ভিতরে ঢুকতেই কেউ পিছন থেকে দরজা বন্ধ করে দিলো। দরজা আটকানোর শব্দ পেতেই মেঘ পিছনে ফিরে তাকালো। মেহতাব কে দেখে বলে উঠলো,

— কেনো ডেকেছেন?

— কেনো ডাকা বারণ?

— না আজকে মিথিলাকে দেখতে আসবে। কাজ তো কম নয় বলুন?

— হুম বেশী সময় নিবো না ,জাস্ট ফাইভ মিনিট।

এই বলে মেহতাব পিছন থেকে কিছু একটা বের করলো। মেঘ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।

— কি এটা?

— তোমার গিফট’স।

— আমার?

— না আমার আরো বউ আছে তাদের জন্য এনেছি।

মেহতাবের কথা শুনে মেঘ প্যাকেটটা বিছানায় রেখে দিলো। মুখটা শুঁকনো করে বলে উঠলো,

— তাহলে আমায় কেনো দিচ্ছেন?আমি গেলাম।

এই বলে মেঘ দরজা খুলতেই হুড়মুড় করে সবাই এক জনের উপর অন্যজন পড়ে গেলো।

মেহতাব ওদের উপর স্থির দৃষ্টি রেখে বলে উঠলো,

— তোরা?

সবাই একসাথে কিঞ্চিৎ হেসে বলে উঠলো,

— আমরা আমরাই তো।

পিছন থেকে সামির বলে উঠলো,

— আমি কী তাইলে গাঙের জল থেইকা ভাইসা আইছি।

সামিরের কথা শুনে মেহতাব আফসোসের সুরে বলে উঠলো,

— যে আসুক না আসুক। আমার প্রজন্ম আসার কোনো চান্স নেই।

মেঘ মেহতাবের কথার মানে বুঝতে পারলো না। সবাই আহাম্মকের মতো অদ্ভুত ভঙ্গিতে মেহতাববের মুখের পানে চেয়ে রইলো।

#তুমি_এসেছিলে_বলে
পর্ব:২৯
#নাদিয়া_আক্তার_সিয়া

বিকাল সাড়ে ৪ টা। সবার ভীষণ ব্যস্ততা। সৌরভ এসেছে স্বপরিবার নিয়ে মিথিলার হাত চাইতে। রান্নার দিকটা বড়রা সামলে নিয়েছে। সিমরান, শাম্মী, মেহসান আর সৌম আশেপাশে ঘুরঘুর করছে। ড্রয়িং রুমে সৌরভ লজ্জায় রাঙ্গা মুখখানা নিয়ে বসে আছে। মুখে নাজুক নাজুক ভাব। রৌফ, সিয়াম, সামির পিঞ্চ মারতে ছাড়েনি। মেহতাব আর আহতাব ওদের পাশে বসেই হাসছে। সৌরভের মা সুহা বেগম আর বাবা আনোয়ার সাহেব বসে আছেন পাশের সোফাতে। তারা এই সম্বন্ধে বেশ খুশি। আনোয়ার সাহেব আর মিনহাজ সাহেব পুরনো বন্ধু। এই বন্ধুত্ব গভীর সম্পর্কে রূপান্তর হবে তা ভেবে তারা খুব খুশি। মিনহাজ চৌধুরী তাদের সাথে আলাপ আলোচনায় মেতে উঠেছেন। বহু ব্যস্ততার মাঝে এতদিন পর দেখা। অরিন বেগম, ইতি বেগম আর শিমু বেগম ট্রেতে খাবার এগিয়ে দিলেন। সুহা বেগম শুধালেন,

— এতো আয়োজনের কী দরকার।

অরিন বেগম হেসে বলে উঠলেন,

— এইটুকু আয়োজনকে এতো বড় করে দেখবেন না আপা।

মিনহাজ চৌধুরী মেহতাবকে মিথিলাকে ডেকে আনতে ইশারা করলেন। মেহতাব সোফা থেকে উঠে সিঁড়ি দিয়ে উপরে চলে গেলো।

মিথিলার সাজগোজ শেষ আপাদত প্রশংসার পর্যায় চলছে। দরজায় করাঘাতের শব্দ পেতেই শাম্মী দরজা খুলে দিল। মেহতাব তাড়া দিয়ে বলে উঠলো,

— অল কমপ্লিট?

শাম্মী হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ালো।

— ঠিকাছে। মিথিলাকে নিয়ে আয়।

অহনা, শাম্মী, সিমরান মিথিলাকে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। মেঘ পা বাড়াতেই পিছন থেকে নিজের হাতে টান অনুভব করলো। সবাই মিটিমিটি হেসে দরজা ভিড়িয়ে চলে গেলো। মেঘ পিছনে ফিরে মেহতাবকে বলে উঠলো,

— ছাড়ুন যেতে হবে। সবাই কী ভাবছে?

— ভাবার কী আছে? আমরা তো প্রেমিক প্রেমিকা নই? আমরা হাসবেন্ড ,ওয়াইফ এন্ড ইট’স লিগাল।

এই বলে মেহতাব মেঘের ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে দিলো। মেঘ ঈষৎ কেঁপে উঠলো। মেহতাব মেঘকে নিজের বাহুডোরে আবদ্ধ করলো। মেঘ লজ্জায় কুঁকড়ে গেলো। লজ্জা ভীষণ ভাবে কাবু করলো তাকে। মুখ থেকে কথা বেরনোর জো নেই। মেহতাব স্মিত হেসে বলে উঠলো,

— এইটুকু ছোঁয়াতে এই অবস্থা! আর সবাই মিহির আসার হরতাল শুরু করে দিয়েছে। আমার উপর ১৪৪ ধারা জারি করেছে।

‘মিহি’ নামটা কর্নপাত হতেই মেঘের ভ্রু জোড়া কিঞ্চিৎ কুঁচকে গেলো। মেহতাব কে সরিয়ে বলে উঠলো,

— মিহি কে?

মেহতাব হাত পিছনে নিয়ে মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলে উঠলো,

— ফিউচারে বুঝে যাবে।

এই বলে মেহতাব মেঘের অনেক কাছে চলে এলো। মুখটা মেঘের কানের কাছে এনে ফিসফিসিয়ে বলে উঠলো,

— সন্ধ্যায় সারপ্রাইজ আছে। ওয়েট ফর’মি।

এই বলে এক সেকেন্ডও অপেক্ষা না করে মেহতাব রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। মেঘ স্থির দৃষ্টিতে মেহতাব বের যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো। পরক্ষনেই ওষ্ঠাধর প্রসারিত করে মুচকি হাসলো। রিনরিনিয়ে বলে উঠলো,

— মেহতাব কাছে আসলে দেহ শিউড়ে কেনো ওঠে?

নিজের কথার মানে নিজেই বুঝতে পেরে ম্লান হাসলো। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে পরখ করে নিলো। মুচকি হেসে শুধাল,

— ভালোবাসলে হয়ত এমনি হয়। যাকে মন থেকে চাই তার ছোঁয়াতে ভালোলাগা বিচরন করে, দেহ শিউড়ে ওঠে!

মাগরিবের আজান দিয়েছে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা। আকাশে কালো মেঘেরা ভির জমিয়েছে যেকোনো সময় বৃষ্টি হয়ে ধরণীতে নামবে। মেঘ মেহতাবের বলা শেষ কথাটা অর্থাৎ সারপ্রাইজের কথা ভাবছে। কিসের সারপ্রাইজের কথা বলেছে মেহতাব? মেঘ জানালা ধরে দাড়িয়ে আছে। দৃষ্টি বাইরে দূর আকাশে। মেহতাব বের আসার অপেক্ষা শুধু। এতো ধৈর্য্য সম্পন্ন মেয়েটার হৃদয়ও আজ ব্যাকুল হয়ে আছে। সময় যেনো আজ ফুরাতে চায় না।

বাড়িতে বেশ জমজমাট পরিবেশ। মিথিলা আর সৌরভের বিয়ের পাকাপাকিভাবে কথা হয়ে গেছে। সামনের শুক্রবার বিয়ে আর বৃহঃস্পতিবার গাঁয়ে হলুদ হবে সেই মোতাবেক বিয়েটা এগোবে।

বাড়ির ছেলেরা নামাজ পড়তে গেছে। আর বাড়ির মেয়েরা সবাই নামাজ শেষ করে দ্বিতীয় তোলার বৈঠকখানায় বসে আছে। অরিন বেগম , ইতি বেগম আর শিমু বেগম তাদের পুরনো দিনগুলোর কথা বলছেন। অহনা,মেঘ, মিথিলা,শাম্মী, সিমরান এতক্ষন কথাগুলো শুনছিল। মেঘকে ভাবুক দেখাচ্ছে! মিথিলা,সিমরান,শাম্মী মেঘের উপর কড়া নজরদারি চালু রেখেছে। হঠাৎ কলিংবেলের আওয়াজ ভেসে আসলো। মেঘ তড়িঘড়ি করে রুম থেকে বেরিয়ে সদর দরজা খুলতে দৌঁড় লাগালো। সিড়ি দিয়ে নামার সময় মেঘের নূপুরের রিনঝিন আওয়াজ শোনা গেলো মাত্র। মেঘ যেনো বিদ্যুতের গতিতে ছুট লাগালো। এতো তাড়া! বেশ অদ্ভুত লাগলো সবার। পরক্ষনেই সবার মুখের অদল হাসিতে রূপান্তর হলো। সবাই মিটিমিটি হাসছে। মেহতাবকে চোখে হারাচ্ছে মেঘ। সবাই এই নিয়ে ঠাট্টা-তামাশা করতে লাগলো। অরিন বেগম বুকে প্রশান্তি অনুভব করলেন। বুকের উপর থেকে ভারী কিছু সরে গেলো যেনো! মেহতাব আর মেঘ স্বাভাবিক স্বামী স্ত্রীর মতো জীবন কাটাচ্ছে। ভাবতেই আলাদা প্রশান্তি!

মেঘ তড়িঘড়ি করে সদর দরজা খুলে দিল। এক এক করে সবাই প্রবেশ করলো। মিনহাজ সাহেব মেঘের মাথায় হাত বুলিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলেন। আহতাব মুখে হাসি ঝুলিয়ে মেঘের দিকে তাকিয়ে এগিয়ে গেলো। সবাই ঢুকেছে এখন শুধু মেহতাব আর তার বন্ধুরা দাড়িয়ে আছে। রৌফ মুচকি হেসে বলে উঠলো,

— মেহতাবের জন্য অপেক্ষার প্রহর শেষ হলো অবশেষে।

সৌরভ হেসে বলে উঠলো,

— আমার জন্য মিথিলা নামক নারী কবে এইভাবে মনমরা হইয়া দরজার আড়ালে দাড়াইয়া থাকবো? ভাবতেই বুকটা ধুক করে কেঁপে ওঠে।

সিয়াম মুখ টা বাঁকিয়ে বলে উঠলো,

— বেশরম কথাবার্তা। নাউজুবিল্লাহ।

ওরা এইসব কথাবার্তা বলতে বলতে ভিতরে প্রবেশ করলো।মেহতাব মেঘের দিকে তাকিয়ে ম্লান হাসলো। সেও বুঝতে পেরেছে তার প্রেয়সী তার জন্যই অপেক্ষা করেছে। সবাই নিচে নেমে ড্রইংরুমে এসে বসে পড়লো। আজ বাড়িটা মানুষের সরাগমে বেশ মো!মো! করছে। বড়রা সবাই উপরের বৈঠকখানায় চলে গেলো। বাচ্চারা এতদিন পর এক হয়েছে একান্ত সময় কাটাক সবাই মিলে। মেহতাবের দাদীর ভিডিও কল এসেছে। উনি আসতে পারেন নি কিন্তু সৌরভ আর মিথিলার কথা শুনে তিনি খুব খুশি হয়েছেন।

আপাদত বাড়ির বাকি ছেলে মেয়েরা সবাই এক জায়গায় বসেছে। বাইরে বৃষ্টি‍র দাপাদাপির শব্দ ঘরেও শোনা যাচ্ছে। একাধারে বৃষ্টির শব্দ বেশ মনোমুগ্ধকর! শীতল শিরশিরে বাতাস বহমান, ঘরেও তার ঠাই বোঝাই যাচ্ছে। এই শিরশিরে ঠান্ডা বাতাস সবাইকে অদ্ভুত এক অনুভুতির জানান দিচ্ছে। কেউ দুলছে , কেউ খাচ্ছে কেউ বা চোখের ইশারায় কথা বলে যাচ্ছে। বেশ রোমান্টিক একটা পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। অহনার বিশ্রামের সময় হওয়ায় আহতাব তাকে নিয়ে নিজেদের রুমে চলে গেছে। মেহতাব চোখের ইশারায় বাকিদের কিছু বলতেই তারাও ঝটপট কেটে পড়লো। এখন শুধু তিনটি জিনিস বিদ্যমান। মেহতাব,মেঘ আর নিস্তব্ধতা। সবাই চলে যাওয়াতে মেঘ হতবিহ্বল হয়ে পড়লো। মেঘের অবস্থা দেখে মেহতাব ঠোঁট কামড়ে হাসছে। মেঘ হাসির কারণটা ধরতে পারছেনা। তবে অসস্তির থেকে লজ্জাটা বেশি লাগছে। লজ্জায় মুখখানায় লাল আভা ছড়িয়ে পড়েছে। মেহতাবের বেশ অদ্ভুত একটা ইচ্ছা জেগেছে! ভীষণভাবে ইচ্ছে করছে মেঘের লাল টুকটুকে গাল দুটো ছুঁয়ে দিতে। আপাদত ইচ্ছে টাকে পোষণ করে গভীর ভাবে দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে বলে উঠলো,

— ভালোবাসো আমায়?

হঠাৎ ভালোবাসা শব্দটা কর্ণ অবধি পৌঁছাতেই মস্তিষ্কের শাখা-প্রশাখা নাড়া দিয়ে উঠলো মেঘের। আমরা আমতা করলো কিছুক্ষণ। মেহতাব ওই একই গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে যেনো আকুল আর্জির জানান দিয়েছে। মেঘের একটা শব্দে যেনো দুনিয়া তোলপাড় করতেও থামবে না। মেঘ অস্পষ্ট স্বরে বলে উঠলো,

— হঠাৎ এই প্রশ্ন?

মেহতাবের সোজা উত্তর,

— না কি হ্যাঁ‍?

মেঘ মেহতাবের দৃষ্টিতে দৃষ্টি মেলাতে পারছেনা। তার বুকের ভিতর তোলপাড় চলছে। অদ্ভুত এক অনুভুতির সাগরে ডুবে যাচ্ছে! মেহতাবের দৃষ্টিতে কিছু একটা আছে ‍যা তাকে কিছু বলতে চায়। মেহতাব কী ভালোবাসে তাকে? মেহতাব অধৈ‍র্য হলো না সে একই ভাবে তাকিয়ে আছে। সে অপেক্ষা করছে মেঘের উত্তরের আশায়। মেঘ অস্পষ্ট স্বরে ওষ্ঠ প্রসারিত করে বলে উঠলো,

— হুমম।

হুমম বলে আর কিছু বলার সুযোগ পেলো না সঙ্গে সঙ্গে ঘরের সকল আলো চলে গেলো। মেঘ উঠে দাড়াতে যাবে হঠাৎ নিজেকে হাওয়ায় ভাসমান অনুভব করলো। মেহতাব তাকে কোলে তুলে নিয়েছে। হঠাৎ এই কাজে মেঘ ভয়ে মেহতাব বের শার্ট খামচে ধরেছে। বাইরে থেকে বজ্রপাতের শব্দ শোনা যাচ্ছে। সেই আলোতেই মাঝে মাঝে মেহতাবের মুখ দেখতে পাচ্ছে সে। মেহতাব যেনো চাঁদ হাতে পেয়ে গেছে মেঘের একটা উত্তরে মুখে তার তৃপ্তির হাসি। মেঘের ঘোর কাটিয়ে মেঘকে দার করিয়ে দিলো দরজার সামনে। মেঘ মেহতাবের মুখে তাকাতেই সে ইশারায় দরজা খুলতে বললো। মেঘ দরজা খুলতেই হতবাক। মোমবাতির নিভু নিভু আলোয় ঘরের অল্প অল্প দেখা যাচ্ছে। ফুল দিয়ে সাজানো ঘর তার প্রিয় ফুল সাদা গোলাপ। কখন করলো এইসব মেহতাব? অবাকের চরম পর্যায় অবস্থান করে সে ঘরে ঢুকে পড়লো। হঠাৎ ঘরে এক এক করে সবাই একটি করে মোমবাতি হাতে প্রবেশ করলো। মোমবাতির আলোয় সবার অবয়ব বোঝা যাচ্ছে। সব পরিচিত মুখ। হঠাৎ মেহতাব এগিয়ে এসে মেঘের সামনে হাঁটু ভাঁজ করে বসে পড়লো। একটি হীরের আংটির বক্স খুলে এগিয়ে দিলো। বক্স থেকে নীল আভা বের হচ্ছে হীরে টা জ্বলজ্বল করছে। মেহতাব মুচকি হেসে বলে উঠলো,

— আমি জানতাম তুমি আমায় ভালোবাসো। কিন্তু তোমার মুখ থেকে স্বীকার করাতে চাইছিলাম।

— আপনি জানতেন?

— হুমম।

— আমিও জানতাম আপনি আমায় ভালোবাসেন।

— সত্যি?

— হুমম। যাকে ভালোবাসি তার মনের কথা বুঝবোনা।

মেহতাব কিঞ্চিৎ হাসলো। মুখে হাসি ঝুলিয়ে রেখে শূধাল,

— জানতে বলোনি কেনো?

— আপনি নিজে এসে বলবেন সেই অপেক্ষায় ছিলাম।

— হুমম ভালোবাসি ভীষণ যা তুমি কল্পনাও করতে পারবেনা। যেই কাছে আসার গল্প বিয়ে নামক প্রবিত্র বন্ধন দিয়ে শুরু সেই সম্পর্কে ভালোবাসা নামক অনুভুতি দিয়ে আরেক ধাপ এগোনো যায় না। ভালোবাসি তোমায়, বাসবো, বেসে যাবো। ডোন্ট ইউ ওয়ান্ট টু বি মাই লাভ? মাই জান।

মেঘ স্মিত হেসে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো। মেহতাব আংটিটা মেঘের হাতে পড়িয়ে দিলো। মেঘ এগিয়ে এসে মেহতাবকে জড়িয়ে ধরলো। মেহতাব আরো শক্তপোক্তভাবে মেঘকে জড়িয়ে ধরলো।

সবাই সমস্বরে হেসে বলে উঠলো,

“আলহামদুলিল্লাহ”

#তুমি_এসেছিলে_বলে
পর্ব : ৩০
#নাদিয়া_আক্তার_সিয়া

বাড়িতে বিয়ে অথচ কারো কোনো হেলদোল নেই। গাঁয়ে হলুদের অনুষ্ঠান পালন করা হবে আজ। সবাই সোফায় বসে আছে দৃষ্টি মেঘের দিকে। মেঘকে কাজে সাহায্য করতে গেলে মেঘের কাজ আরো দ্বিগুণ বেড়ে যায়। তাই কেউ আর আগ বাড়িয়ে যায় নি। তবুও একা হাতে সব দিক সামলে নিচ্ছে মেঘ। অরিন বেগম এসে মেঘকে তাড়া দিয়ে বলে উঠলেন,

অরিন বেগম : রেডি হয়ে নে শপিংয়ে যেতে হবে?

মেঘ : মা ,আপনি একটু অপেক্ষা করুন অল্প কিছু কাজ বাকি আছে।

অরিন বেগম মেঘকে সরিয়ে বলে উঠলো,

অরিন বেগম : এতো ব্যস্ত থাকিস শরীরের যত্ন নিস না কেনো?তুই যা এইদিকের সবকিছু আমি সামলে নিবো।

মেঘ : কিন্তু মা আপনি যাবেন না?

অরিন : না, মেহতাবকে বলে দিয়েছি ও গাড়ি নিয়ে ওয়েট করছে। আর মিথিলা,সিমরান,শাম্মী ওরা তো আছেই। ওরা হেল্প করে দিবে। একটু ঠাণ্ডা বাতাস খেয়ে আয় ভালো লাগবে। মায়ের কথা ফেলবি না যেনো।

মেঘ : কিন্তু মা?

অরিন বেগম : কোনো কিন্তু নয় তুই যাবি ব্যাস। তোর পছন্দ সবার পছন্দ হবে আমার বিশ্বাস। আমার লক্ষ্মী মেয়ে যাও রেডি হয়ে নেও।

মেঘ ম্লান হেসে উপরের রেডি হতে চলে গেলো। সবার গুরুদায়িত্ব এখন তার উপর। এই পরিবার এখন তার সব। মেহতাবের মতো জীবনসঙ্গী পেয়েছে, স্নেহময়ী মায়ের মতো শাশুড়ি পেয়েছে, বাবা, বোন,ভাই সব কিছু পূরণ হয়ে গেছে। আর কীসের অভাব?

.

.

মেহতাব গাড়ির বোনাটের উপর বসে আছে। ধূসর রঙের শার্ট আর ব্ল্যাক জিন্স চোখে সানগ্লাস। দৃষ্টি তার সদর দরজায়, মেঘকে একদণ্ড শান্তিতে দেখার সুযোগ নেই। এতো ব্যস্ততা! যার জন্য সব কাজ ফেলে রেখে এসেছে তারই কোনো পাত্তা নেই। ভালোবাসা শব্দটা বলার পর থেকে যেনো আরো। সদর দরজা থেকে হুড়মুড় করে হুল্লোড় পার্টির সবাই দৌঁড়ে আসছে যেনো কম্পিটিশন চলছে। মেহতাবের মেজাজ যেনো আরো তুঙ্গে চড়ে গেলো। সিয়াম এসে গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো। বাকিরাও তাকে ফলো করে মেহতাবকে ঘিরে ধরলো। সবার দৃষ্টি মেহতাব এর দিকে যেনো কিছু বলতে চায়। মেহতাব সবার দিকে চোখ বুলিয়ে সানগ্লাসটা খুলে হাতে নিয়ে বলে উঠলো,

মেহতাব : তোদের সবার কী চাই?

সৌমের সোজা সাপ্টা উত্তর,

সৌম : ট্রিট।

মেহতাব : কিসের জন্য?

মেহসান : ভাবী আম্মা আর তোমার মিলনের।

মেহতাব স্মিত হাসলো তবে নাকোচ করলো না। প্রতিউত্তর বলে উঠলো,

মেহতাব : নো প্রব্লেম যা খেতে চাস খাবি। তবে এই গাড়িতে এক জন ও উঠবি না। আন্ডারস্ট্যান্ড?

শাম্মী : উই বেটার আন্ডারস্টুড।

মেহতাব শাম্মীর ঝুঁটি টেনে দিলো। সিমরান বলে উঠলো,

সিমরান : ভাইয়া তুমি কত রোমান্টিক! আমার বিয়ে বিয়ে ফিলিংস আসছে।

মিথিলা : বিয়ের ফিলিংস টাই আলাদা যদি সঠিক মানুষের সাথে হয়। তাই না ভাইয়া?

মেহতাব মুচকি হেসে তিন বোনকে জড়িয়ে ধরলো। সামির বলে উঠলো,

সামির : তোরে রোমান্টিক হওয়ার ট্রিপস দিলাম আমরা। অথচ ক্রেডিট ওদের!

মেহতাব বাঁকা হাসি হেসে বলে উঠলো,

মেহতাব : ওহ, মনে হয় সুইংমিং পুলের ঘটনা ভুলে গেছিস? মনে করাতে হবে নাকি?

রৌফ : না দোস্ত ওর মগজ অত খারাপ না। প্রত্যেকদিন দুধ আর বাদাম খায়। খাওয়া ছাড়া তো কিছুই মনে থাকে না।

সবাই রৌফের কথায় সামিরকে নিয়ে হাসাহাসি করলো। সৌম সবাইকে থামিয়ে বলে উঠলো,

সৌম : এবারের সংগ্রাম,,

সবাই সমস্বরে বলে উঠলো,

“মেহতাবকে ফতুর করার সংগ্রাম”

.

.

সবাই ভদ্র বাচ্চাদের মতো গাড়িতে বসে আছে। মেহতাব একইভাবে সামনের গাড়ির সামনে স্থির দৃষ্টিতে সদর দরজার দিকে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ মেঘের আগমন ঘটলো। হালকা গোলাপি রঙের থ্রিপিস পড়েছে। বেশ ভালো লাগে এই রঙে মেঘকে, ঝিলমিল করছে রোদের আলোতে যেন। আবেদনময়ী লাগছে তাকে!
মেহতাব এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার প্রিয়তমার দিকে। সবাই গাড়ির কাঁচ নামিয়ে “ওহহহহ” বলে চলছে, সিটি বাজাচ্ছে। মেহতাবের ধ্যান ভাঙ্গেনি তাতে। মেঘ সামনে এসে তুরি মারতেই মেহতাব দৃষ্টি সরিয়ে গাড়িতে উঠে পড়লো। মেঘের বেশ অভিমান হয়েছে তার পছন্দের কালারের থ্রিপিস পড়েছে। অথচ একটা প্রশংসাও করলো না। মেঘ গাড়িতে উঠে বসলো। মেহতাব গাড়ি ড্রাইভ করতে শুরু করলো। মেহতাব মিরর গ্লাস দিয়ে মেঘের মুখের অদল দেখে মনে মনে হাসলো। মেঘ কিছু একটা লক্ষ করে বলে উঠলো,

মেঘ : হাসছেন কেন?

মেহতাব থতমত খেয়ে গেল। গাড়ি সাইডে থামিয়ে বলে উঠলো,

মেহতাব : তুমি দেখলে কিভাবে?

মেঘের সোজা সাপ্টা উত্তর,

মেঘ : সিম্পল চোখ দিয়ে।

মেহতাব : হাউ ইজ ইট পসিবল?

মেঘ স্মিত হাসলো মেহতাব তার দিকেই তাকিয়ে ছিলো। মেঘ নিজের মুখ মেহতাবের কাছে এনে কানে ফিসফিস করে বলে উঠলো,

মেঘ : মনের চোখ দিয়ে।

মেঘের কথায় যেনো মেহতাবের অদ্ভুত এক ভালো লাগা বিচরন করলো। ঘোর লেগে গেল যেনো! তাকে কাটিয়া তোলা আপত্তিকর। মেহতাব মেঘকে এক টানে নিজের কোলে বসিয়ে দিলো। আর মেঘকে গভীর ভাবে ছুঁয়ে দিলো। মেঘ ও সায় দিলো তাতে। পবিত্র স্পর্শ তাতে আপত্তিকর কিছু নেই। পরিস্থিতি গভীর থেকে গভীরে যাচ্ছে। দুজনেই আরো বেসামাল হয়ে পরছে। মেঘ মেহতাব কে ঠেলে সরিয়ে নিজেকে ঠিক করে নিলো। মেহতাবের ভ্রু জোড়া কিঞ্চিৎ কুঁচকে গেল। তবে সে বুঝতে পেরেছে মেঘের অনুমতি না নেওয়ায় সে রেগে গেছে হয়তো। তাই সে বলে উঠলো,

মেহতাব : রাগ করেছো? সরি আমার অনুমতি নেওয়া উচিত ছিলো। আ’ম এক্সট্রিমলি সরি।

সত্যি মেঘের ভীষণ রাগ হচ্ছে সে লজ্জায় নুয়ে পড়লো বলে উঠলো,

মেঘ : সরি বলতে বলেছি নাকি। এটা পাবলিক প্লেস আপনার এইটুকু মাথায় রাখা উচিত ছিলো। বাসায় থাকার সময় পিড়িত কোথায় থাকে?

মেহতাব হতবাক হয়ে গেলো। সে হাসবে না কাঁদবে সেটা বুঝতে তার বেশ কাঠখড় পোহাতে হলো। মেঘ লজ্জায় লাল হয়ে গেছে পুরো! মেহতাব মুচকি হেসে বলে উঠলো,

মেহতাব : ভালোবাসি তোমায় তাই সুযোগ হাতছাড়া করতে পারি নি। এক কথায় কান্ট্রোল করতে পারিনি নিজেকে। তুমি জীবনে এসেছিলে বলে বুঝতে পেরেছি ভালোবাসা কী? আর ভালোবাসা যখন তখন পেতে পারে বলে কয়ে আসে নাকি?

শেষ কথাটা বলে মেহতাব গাড়ি আবার স্টার্ট করলো। মেঘ আর কিছু বললো না তবে তার মেহতাব বের কথাগুলো ভালো লেগেছে। গাড়ির কাঁচের গ্লাস দিয়ে বাইরে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো। মেহতাবের আড়ালে আনমনে মুচকি হাসলো। মেহতাবের চোখের আড়াল হলো না। সে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে স্মিত হেসে গাড়ির কাঁচ নামিয়ে দিলো। মেঘ তা দেখে খুশি হলো তবে ফিরে তাকালো না। গালে হাত রাখতেই অনুভব করলো গাল দুটো আগুনের মতো গরম হয়ে আছে।

গাড়ি শপিং মলের সামনে এসে দাড় করালো। সাইডে পার্ক করে দুজনেই নেমে পরলো। পুরো গাড়িতে তাদের আর কথা হয় নি। ছেলেরা দূরে এসে এক স্থানে দাড়ালো, সৌরভও এসেছে। বিয়ের দরুন তার মেহতাববের বাড়িতে আনাগোনা সম্ভব হচ্ছে না। সুযোগ পেয়েছে তাই মিথিলাকে দেখতে এসে পড়েছে। মেহসান তাদের দিকে এগিয়ে এসে মাথা চুলকে বলে উঠলো,

মেহসান : ভাইয়া ভাবীর সাথে তুই কী করেছিস?

মেহসানের কথার মানে কেউ বুঝতে পারলো না। সবাই মেঘের দিকে নজর দিলো। মেঘ একবারও মেহতাবের দিকে তাকাচ্ছে না। গাল দুটো এখনো রক্তিম বর্ন ধারন করেছে। মেহতাব আনমনে হেসে বলে উঠলো,

মেহতাব : তোর ভাবী মিথিলার জেরক্সকপি একদম।

কেউ তার মানে বুঝতে পাড়লো না। সবাই ইতস্ত হেসে উড়িয়ে দিলো।

মেঘ শপিং মলে ঢুকতে যাবে তখনি তার কয়েকটা লোকের উপর চোখ পড়লো। মেঘ হাতের ইশারায় মিথিলাদের লোকগুলো দেখালো,

মেঘ : ওই লোকগুলো না যারা প্রথম দিন মেয়েদের আজেবাজে নোংড়া কথা বলছিলো।

৫ টা ছেলে মেঘকে দেখে মুখ লুকিয়ে ফেললো। একটা ছেলে বলে উঠলো,

“আপা আপনার ভুল হইতাছে। আমরা খারাপ ছিলাম এহন আমরা গুড বয়। কোনো মেয়েদের দিকে ভুলেও তাকাই না। নাউজুবিল্লাহ, ভাই দেখলে জানে মাইরা ফেলবো”

আরেকটা ছেলে ওর মুখ ধরে থামিয়ে দিয়ে বলে উঠলো,

“আপা চানাচুর নিবেন? এখন আমরা হালাল উপায়ে ব্যাবসা করি। নো গালি, নো মারামারি, ওনলি হালাল পন্থা”

মেঘের বেশ ভালো লাগলো। সবাই একসাথে এসে পা ধরে ক্ষমা চাইতে নিলে। মেঘ ওদের সরিয়ে বলে উঠলো,

মেঘ : তোমরা তোমাদের ভুল বুঝতে পেরেছ এটাই অনেক।

চলবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে