তুমি এসেছিলে বলে পর্ব-১০+১১+১২

0
271

#তুমি_এসেছিলে_বলে
পর্ব : ১০
#নাদিয়া_আক্তার_সিয়া

মেঘকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে আয়নার দিকে তাকিয়ে মেহতাব মুচকি হেসে বললো,

মেহতাব : এখন গেট আপ কমপ্লিট হয়েছে । (মেঘের ঘাড়ে মাথা রেখে)

মেঘ নিজের দিকে তাকিয়ে দেখলো সত্বি ওই গলার নেকলেস আর বেলী ফুলের মালা খোপায় দেওয়ার পর তাকে আগের চেয়েও বেশি সুন্দর লাগছে । মেহতাব মেঘের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো ,

মেহতাব : তোমার কি নেকলেস টা পছন্দ হয় নি ?

মেহতাবের কথার প্রতিউত্তরে মেঘ বললো ,

মেঘ : না অনেক সুন্দর । কিন্তু এতো দামি নেকলেস কি আমার মতো মেয়েকে মানায় ? আপনি আমার থেকেও ভালো জীবনসঙ্গী পেতে পারতেন। আমি এই সুখ ডিসার্ব করি না।

মেহতাব : তোমাকে পৃথিবীর সবথেকে দামি নেকলেস এনে দিলেও সেটা তোমার থেকে তুচ্ছ । তুমি অনেক কিছু ডিসার্ব করো মেঘ । আমি তোমাকে আমার জীবন সঙ্গী পেয়ে নিজেকে অনেক ভাগ্যবান মনে করি । এই নিয়ে আর কোনো কথা যেনো ফিউচার এ না শুনি। আমি রেগে গেলে কিন্তু নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারি না। সো বুঝে শুনে কথা বলবে । ( রাগ দেখিয়ে বললো মেহতাব )

মেহতাবের কথা শুনে মেঘ মেহতাবের দিকে ফিরে তাকালো । কিছু বলতে যাবে তখনিই অরিন বেগম দরজা নক করে ডুকে পড়লেন । অরিন বেগম মেঘের দিকে তাকিয়ে বললেন ,

অরিন বেগম : বাহ ! আমার মেয়েটাকে তো বেশ লাগছে । কারো নজর না লাগে যেন । ( হাসি দিয়ে )

এই বলে মেঘের কপালে একটা চুমু দিলো। আর মেহতাবকে উদ্দেশ্য করে বললো,

অরিন বেগম : রেডি হোসনি কেন ? নিচে কতো গেস্ট এসেছে তাদের সাথে দেখা করতে হবে । আর তোর কিছু মেয়ে বন্ধু এসেছে যারা বিয়েতে আস্তে পারে নিই । তোদের খুজছে । রেডি হয়ে মেঘ মাকে নিয়ে আয় আমি ঐদিক সামলাচ্ছি । (তারাহুড়া দেখিয়ে)

মেহতাব : ঠিকাছে শান্ত হোও । আমার ফ্রেশ হয়ে রেডি হতে ৫ মিনিট লাগবে ।

অরিন বেগম : ঠিকাছে তুই রেডি হয়ে নে। আমি নিচে যাচ্ছি ।

এই বলে অরিন বেগম রুম থেকে চলে গেলেন ।
অরিন বেগম যাওয়ার সাথে সাথে মেহতাব মেঘের ঘাড়ে হাত রেখে বলে উঠে,

মেহতাব : Do you love me or not ? tell me honestly .

মেহতাবের এই কথার প্রতিউত্তরে মেঘ কি বলবে সে ভেবে পায় না। কারন সে নিজেই জানে না সে মেহতাব কে ভালোবাসে কি না ।

মেঘ কিছু বলতে যাবে তখনি অহনা রুম এ নক করে বলে উঠে ,

অহনা : আমি কি আসতে পারি ?

অহনার গলা শুনে মেঘ আর মেহতাব নিজেদের থেকে দূরে সরে যায় । মেহতাব লজ্জা পেয়ে ওয়াশরুম এ চলে যায় । আর মেঘ নিজেকে শান্ত করে বলে ,

মেঘ : হ্যাঁ। আসতে পারো আপু । অনুমতি নেওয়ার কি আছে ।

এই শুনে অহনা রুম এ প্রবেশ করে । সে মেঘকে দেখে মাথায় হাত রেখে বলে ,

অহনা : আমি খুব খুশি যে তোরা দুজন নিজেদের বিবাহিত জীবন গুছিয়ে নিতে শিখেছিস । আমার সেই পুচকে বোনটা কতো বড় হয়ে গেছে । নিজে সব কিছুর সাথে মানিয়ে নিতে শিখেছে । মেহতাবের মতো জীবন সঙ্গী পাওয়া ভাগ্যের ব্যপার । তুই খুব ভাগ্যবতী ।

এই বলে অহনা মেঘকে জড়িয়ে ধরে । মেঘও অহনা কে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয় ।

অহনা : কান্না করছিস কেনো পাগলী। চল নিচে যাই। মা- বাবা , অন্নি , তন্নি এসেছে দেখা করবি না।

অহনা মেঘের চোখের পানি মুছে দেয় আর দুজনে নিচে চলে যায় ।

নিচে অনেক গেস্ট এসেছে। আর হুল্লোড় পার্টি মেহতাব আর মেঘের জন্য প্লান আটছে ।

মিথিলা : কি বোরিং লাগছে । মেঘ ভাবী আর মেহতাব ভাইয়া কখন আসবে ? ( সোফায় বসে গালে হাত দিয়ে )

রৌফ : গালে হাত দিস না জামাই তাড়াতাড়ি মরবো ।

রৌফের কথা শুনে সৌরভ রাগ করে আর বলে উঠে ,

সৌরভ : ওর জামাই সম্পর্কে কটু কথা বললে খারাপ হয়ে যাবে কিন্তু রৌফের বাচ্চা ।

সৌরভের কথা শুনে সবাই সৌরভের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকায় । আর সৌম বলে উঠে ,

সৌম : ভাইয়া এটা তো মিথিলার ফিউচার হাসব্যেন্ড কে বলা হইছে তোমার গায়ে লাগতাছে কেন? ( মুচকি হেসে ) সিমরান : ডাল মে কুচ কালা হ্যা। ( মুচকি হেসে )
সৌরভ মিথিলার দিকে তাকায় মিথিলা যে সৌরোভের কথায় রেগে আছে তা বোঝা যাচ্ছে।

সৌরভ আমতা আমতা করে বললো ,

সৌরভ : এইখানে মেয়েদের মধ্যে সবার বড় মিথিলা আর ছেলেদের মধ্যে ধরতে গেলে আমি। আর সামির তো ভালো করে বুঝিয়ে বলতে পারে এইসব বিষয় । সামির দোস্ত বুঝিয়ে দেতো সব কয়টার চোখে আঙ্গুল দিয়ে। ( ভাব নিয়ে )

সামির সবার দিকে তাকায় সবার দৃষ্টি এখন তার দিকে। সেই একমাত্র জানে যে মিথিলা আর সৌরভ দুজন দুজনকে নিজের থেকেও অনেক ভালোবাসে দুজন দুজনের প্রাণ । সে একবার মিথিলা আর সৌরভকে পার্কে হাটতে দেখেছে হাত ধরে । তাকে সৌরভ আর মিথিলা অনেক করে বুঝিয়েছে বারণ করেছে কাউকে যেন না বলে তাদের সম্পর্কের কথা । সেও কাউকে বলে নিই ।

এইসব কথা সামির মনে করছিলো তখনি রৌফের ডাকে তার হুশ ফেরে।
রৌফ : ওই গাধা কি হইলো ?

সামির : না কিছু হয়নি আসলে বেপার টা বেশ জটিল । তো মেইন টপিক এ আসা যাক সবাই মনোযোগ দিয়ে শুনবা , ( গলা ঝেরে )
আমরা জানি , সৌরভ সবার বড় আর মিথিলা ও সবার বড় ।

শাম্মি : হুম তো ?

সিয়াম : কথা শেষ করতে দে সামির নার্ভাস হইতাছে দেখতাছোস না । ( হাসি দিয়ে )

সামির : চুপ থাক কইতে দে । সো ওরা বড় হওয়ার কারনে একজনের অপমান অন্যজন সয্য করতে পারে না । সুতরাং সৌরভের কথাটা গায় লাগছে ।

সামির এর কথা শেষ হওয়ার পর এই নিয়ে কেউ কথা বাড়ায় না । সবাই সোফায় বসে গল্প করতে লাগল । তখনি মেঘ আর অহনা নিচে নেমে এলো।
তা দেখে শাম্মি বললো ,

শাম্মি : আচ্ছা একটা কথা আমার মাথায় ঘুরপাক খাইতাছে । আসলে ঐদিন যে মেহতাব ভাইয়া বললো যে সে লন্ডন চলে যাবে। সেটা কি সত্বি ?

সিয়াম : বোইন আর কইছ না । তোর ভাই তো মেঘের প্রেমে হাবুডুবু খাইতাছে ।

সৌরভ : হুম । এতদিনে মেঘের প্রেমে তো পড়ছে কিন্তু বলতে পারতাছে না বা স্বীকার করতাছে না । ও চায় যে মেঘ আগে বলুক বা মেহতাব হয়ত জানে না মেঘ ওর জন্য সেম ফিল করে কিনা । ইগোর বেপার আর কি ।

সিমরান : হুম বুঝলাম । তো আমাদের তাদের হেল্প করা উচিত তাই না ।

রৌফ : একটা কথা বলি সিমরান রাগ করিছ না। আসলে তুই কি তোর সিম রিচার্জ করছোস । যে তোর মাথা কাজ করতাছে ।

রৌফের কথা পাশের কিছু ছেলেও শুনতে পায়। আর তারা না চাইতেও ফিক করে হেসে দেয় । এই দেখে সিমরানের অনেক রাগ হয় । কিন্তু প্রকাশ করে না গেস্টরা আছে বলে । কিন্তু প্রতিউত্তরে সিমরান বলে ,

সিমরান : হুম তোমার বিকাশ থেকে রিচার্জ করছি। ওই যে তোমার ডেইলি নিউ গার্লেফ্রন্ডদের প্রতিসপ্তাহে বলো , ” আমাকে কিছু সেন্ড মানি করবা জানু আসলে আজ না আমাদের বাসার সাবান , সেম্পু শেষ হয়ে গেছে আমি যদি সাবান , সেম্পু দিয়ে গোসল না করি তাহলে তো আমার গায়ের থেকে চুলের থেকে গন্ধ আসবে আর সবাই বলবে রিতার বয়ফ্রেন্ড এর গায়ে গন্ধ তোমার কি ভালো লাগবে “। এভাবেই তো টাকা গুলো নেও আর আমি রিচার্জ করি।

সিমরানের কথাগুলো অনেক জোরে বলাতে সবাই এখন ওদের দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে । অহনা আর মেঘেও ওদের দিকে আসছিলো ওদেরও কানে যায় । রৌফ ভীষণ লজ্জা পায় তাই সে টয়লেটের কথা বলে এক দৌরে উপরে চলে যায় । অহনা আর মেঘ কে দেখে সবাই টপিক চেঞ্জ করে বলে ,

সিমরান : ওয়াও মাই ডিয়ার ভাবীরা তোমাদের অনেক সুন্দর লাগছে ।

শাম্মি : হুম অনেক । আসো তোমাদের স্টেজ এ বসিয়ে দিই।

শাম্মি , সিমরান আর মিথিলা মেঘ আর অহনা কে স্টেজ এ বসিয়ে নিজেরা পাশে বসে পরে । তখনি আহতাব আর মেহতাব সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে আসে । মেহতাব আর আহতাব সেম ডিজাইন এর পাঞ্জাবি পড়েছে। আহতাবের গায়ের রঙ অতো ফর্সা না হলেও দেখতে সুন্দর আর মেহতাব কে প্রথম দেখায় যে কেউ প্রেমে পরে যাবে । তো আহতাব আর মেহতাব নিচে নামতে থাকে । নিচে নামার পরেই একটা মেয়ে শর্ট ড্রেস পড়া দেখতে বেশ সুন্দরী মেহতাবের কাছে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে । সিমরান , শাম্মি আর মিথিলা মেঘের রিয়েকশন দেখতে তার দিকে তাকায়। মেঘ প্রকাশ না করলেও সে যে মেয়েটার উপর ভীষণ রেগে আছে আর কাছে পেলে তাকে কাচা চিবিয়ে খেতো তা ঠিকি বুঝতে পারে তারা। তাই তারা মেঘকে বলে ,
সিমরান : ভাবী ওই মেয়েটা মেহতাব ভাইয়ার ফুপাতো বোন । তার নাম টিনা । সেও লন্ডন এ পড়াশোনা করেছে ।

শাম্মি : ভাবী জানো ওই মেয়েটা না ভাইয়ার সাথে কাঁঠালের আঠার মতো চিপকে থাকে । I think she like mehtab vaiya .

এতক্ষণ মেঘ সবগুলো কথা মনোযোগ দিয়ে শুনছিলো । সে যতই শান্ত স্বভাবের মেয়ে হোক না কেনো । নিজের স্বামিকে অন্য মেয়ে এসে হুট করে জড়িয়ে ধরবে এটা কোনো স্ত্রীই সয্য করবে না । মিথিলার ডাকে মেঘের হুশ ফিরলো,

মিথিলা : ভাবী অতো ভেবো না ওই মেয়েটাকে মেহতাব ভাইয়া পাত্তাও দেয় না । আর বাকি রইলো টিনার কথা কাঁঠালের আঠা কেও তেল দিয়ে সরানো যায় ওর মলম আমাদের কাছে আছে । Don’t worry .( এই বলে মিথিলা মেঘ কে জড়িয়ে ধরে )

মেঘ : চিন্তা করো না তোমার ভাইয়ার উপর আমার ভরসা বিশ্বাস দুটোই আছে । সেই ভরসা এতো ঠুনকো নয় । আমি কিছু মনে করি নি । ( স্নিগ্ধকর হাসি দিয়ে )

তারপর সিমরান, শাম্মি, মিথিলা সেখান থেকে মেহতাবের কাছে চলে গেলো ।

তখনি অন্নি আর তন্নি এসে দুজনকে দুদিক থেকে জড়িয়ে ধরে । মেঘ আর অহনা দুজনকে দেখে খুব খুশি হয় । অন্নি বলে উঠে ,

অন্নি : আমাদের তো ভুলেই গেছো এতো সুন্দর জামাই পেয়ে । ( অভিমান করে )

অহনা আর মেঘ অন্নির এমন আচরণে হেসে দেয়।

তন্নি : হাসছো কেন ? তোমরা এই বাড়িতে আসার পর একটা ফোন ও দেও নি। শুধু বাবা- মা কে ফোন দিয়ে বলেছো ওরা খেয়েছে ঘুমিয়েছে কিনা। আমাদের সাথে একটুও কথা বলো নি।
মেঘ : ঠিকাছে বাবা এই জন্য এতো অভিমান ।
এই বলে মেঘ দুজনকে জড়িয়ে ধরলো । তখনি ইমরান সাহেব আর মৌমিতা বেগম এসে তাদের পাশে বসলো । ইমরান সাহেব কে দেখে অহনা আর মেঘ দুজনিই জড়িয়ে ধরলো । তা দেখে মৌমিতা বেগম বলে উঠলো,

মৌমিতা : বাবা কে পেয়ে আমাকে তো ভুলেই গেছিস তোরা । ( কিছুক্ষণ পর আবার বলে উঠে ) মৌমিতা বেগম : আর একটা কথা ছিলো আমায় ক্ষমা করে দিবি মেঘ । আমি জানি আমার পাপের ক্ষমা হয় না । কিন্তু বিশ্বাস কর আমি তোকে কোনো সময় খারাপ চোখে দেখি নি। আমি ভাবতাম তোর জন্য তোর মা মারা গেছে। তোর মাকে আমি নিজের বোনের মতো দেখেছি । কিন্তু আমি বুঝতে পেরেছি এতে তোর কোনো দোষ নেই। আমায় একটিবারের জন্য মাফ করে দে । ( মেঘকে জড়িয়ে ধরে )

#তুমি_এসেছিলে_বলে
পর্ব : ১১
#নাদিয়া_আক্তার_সিয়া

মৌমিতা : বাবা কে পেয়ে আমাকে তো ভুলেই গেছিস তোরা । ( কিছুক্ষণ পর আবার বলে উঠে ) মৌমিতা বেগম : আর একটা কথা ছিলো আমায় ক্ষমা করে দিবি মেঘ । আমি জানি আমার পাপের ক্ষমা হয় না । কিন্তু বিশ্বাস কর আমি তোকে কোনো সময় খারাপ চোখে দেখি নি। আমি ভাবতাম তোর জন্য তোর মা মারা গেছে। তোর মাকে আমি নিজের বোনের মতো দেখেছি । কিন্তু আমি বুঝতে পেরেছি এতে তোর কোনো দোষ নেই। আমায় একটিবারের জন্য মাফ করে দে । ( মেঘকে জড়িয়ে ধরে )

মেঘ মৌমিতা বেগমের কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনছিলো । মেঘ মৌমিতা বেগম কে তার মায়ের চোখেই দেখে এসেছে আজ পর্যন্ত । সে নিজেও জানে মৌমিতা বেগম দুই একটা কটু কথা শুনালেও কখনই তার গায়ে হাত তোলে নিই বা অবহেলা করে নিই । সেও মেঘকেও নিজের মেয়েদের মতোই ভালবেসেছে কিন্তু প্রকাশ করে নিই । মেঘ কলেজে যাওয়ার সময়ও কোনো কাজ করার আগেই উঠে দেখতো সবকিছু আগে থেকেই করা হয়ে গেছে । অন্নি, তন্নি কে বলতে বারণ করলেও সে দেখেছে তার মামি তার জন্য টিফিন আর কিছু টাকা লুকিয়ে অন্নি, তন্নি কে বেগ এ রাখতে বলেছে । সেই মানুষটা তার সামনে নিজেকে খারাপ প্রকাশ করতে চেয়েছে কিন্তু ভিতর থেকে তাকে প্রচুর ভালোবেসেছে । তখনি অহনার ডাকে মেঘ ভাবনার জগৎ থেকে ফিরে এলো ,

অহনা : মাকে ক্ষমা করে দে মেঘ। সে তার ভুল বুঝতে পেরেছে । সে তোকে নিজের মেয়ের মতোই ভালোবেশেছে । হয়তো তোকে খারাপ লাগানোর জন্য কিছু কটূ কথা শুনিয়েছে । কিন্তু বিশ্বাস কর সে সবসময় বলতো তোর দিকে যেন খেয়াল রাখি ।

অহনার কথা শেষ হতেই মেঘ বললো মৌমিতা বেগমের উদ্দেশ্যে বললো ,
মেঘ : মামি বিশ্বাস করো আমি তোমাকে কখনি খারাপ চোখে দেখি নিই । তোমার মধ্যে নিজের মা কে খুজে পেয়েছি । তোমাকে আমার থেকে ক্ষমা চাইতে হবে না । আমি তোমার ঋণ কোনো দিনও শোধ করতে পারব না । এসব বলে আমার ঋণের বোঝা তুমি আরও বাড়িয়ে দিচ্ছ ।

এই বলে মেঘ মৌমিতা বেগমকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলো । মৌমিতা বেগমও তাকে পরম যত্নে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো ,

মৌমিতা বেগম : কান্না করছে কেনো আমার লক্ষী মেয়েটা । কোনো মেয়ে তার খুশির দিনে কান্না করলে কি কোনো মায়ের ভালো লাগে । কান্না থামাও নাহলে কিন্তু আমার বকা খাবে । ( হাসি দিয়ে )
ইমরান সাহেব : তোমাদের এভাবে দেখার ইচ্ছা আজ তাহলে পুরণ হলো । (মেঘ মাথায় হাত দিয়ে)
তাদের এভাবে দেখে অন্নি বলে উঠে ,

অন্নি : এক মেয়েকেই আদর করবে আমরা কি পর হয়ে গেছি নাকি । ( অভিমান করে )

এই কথা শুনে মেঘ , ইমরান সাহেব আর মৌমিতা বেগম হেসে দেয়। আর তার ৪ মেয়েকে একসাথে জড়িয়ে ধরে। তখনি অন্নি আবার বলে উঠে ,

অন্নি : এই খুশিতে একটা পিক তো তোলাই যায় ।

অন্নির মতামতে সবাই সম্মতি জানায় আর তারা একটা ফেমিলি ফটো তোলে ।

অন্নি : বাহ ! দারুন হয়েছে । এটা আমি ফ্রেম করে ঘরে টানিয়ে রাখবো ।

তখনি মৌমিতা বেগম আর ইমরান সাহেব অহনা আর মেঘকে বলে মিনহাজ সাহেব আর অরিন বেগমের সাথে দেখা করতে চলে যায় । সঙ্গে সঙ্গে হুল্লোড় পার্টির আগোমন ঘটে । তারা আসার পর সিয়াম বলে উঠে ,

সিয়াম : তো ভাবীরা আমাদের আপনার বোনদের সাথে একটু আলাপ করিয়া দেন । আমরাও একটু চিনি-জানি এই রমণীদের পরিচয় ।

সিয়ামের কথা শুনে অন্নি বলে উঠে ,

অন্নি : আমি থাকতে আমার বোন কেনো কষ্ট করবে বিয়াই সাহেব । চলুন আমরা সবাই একটা জায়গায় বসে পরিচয় হয়ে নিই ।

অন্নির কথা মতো সবাই অন্য দিকে চলে যায়। শুধু সিমরান আর মেহসান থেকে যায় । তাদের মেঘ আর অহনাদের কোনো সমস্যা হয় কিনা সেটা দেখার জন্য থেকে যেতে হয় ।

মেহসান কে দেখে মেঘ আর অহনা বলে উঠে , ” মেহসান তোমাকে সকাল থেকে দেখি নিই । কোথায় ছিলে ” ?

সিমরান : আসলে ওর বেশি চকলেট খাওয়ার জন্য পাতলা পায়খানা হয়েছে । সো ও সারাদিন রুম থেকে ওয়াশরুম এ ওয়াশরুম থেকে রুম এ আসছিলো আর যাচ্ছিলো । ( একটি মিথ্যে হাসি দিয়ে )

মেঘ : ওহ আমাকে তো কেউ বলো নিই ?

সিমরান : সিরিয়াস কিছু না। Don’t worry .

মেহসান : আসলে ভাবী শপিং মলে সিমরান আপু বলেছিলো যে আমার পাতলা পায়খানা হয়েছে ।
তাই তা এখন ভুগতে হচ্ছে । তাই বলে মিথ্যা কথা বলা মহাপাপ । এই যে আবার আরেকটা বললো এখন আমায় কষ্ট কাঠিন্যে ভুগতে হবে । ( নেকা কান্না করে )

মেহসানের কথা শেষ হতে না হতেই তার আবার টয়লেট পেয়ে গেলো আর সে একদৌড়ে উপরে চলে গেলো । তা দেখে সিমরান মেঘ আর অহনাকে উত্তেজিত হতে বারণ করে নিজেও মেহসানের পিছন পিছন দৌড় দিলো ।

তখনি আহতাব সেখানে উপস্থিত হলো। আর মেঘকে উদ্দেশ্য করে বললো ,

আহতাব : কেমন আছো শালিকা ? তোমার বর তো তোমাকে খুজে পুরো বেহাল ওই সামনে আমার আর মেহতাব এর স্টেজ করা হয়েছে তুমি ওখানে যাও আর আমি আর অহনা এই স্টেজ এ বসছি ।

আহতাবের কথা শুনে মেঘ খুশি হলো কিন্তু প্রকাশ করলো না। সে অহনাকে জড়িয়ে ধরে মেহতাবের স্টেজ এ রওনা হলো । তখনি আহতাব পিছন থেকে ধন্যবাদ দিলো । মেঘ পিছনে ফিরে তাকাতেই আহতাব আবার বলে উঠলো ,

আহতাব : আসলে আমি তোমাকে অন্য কারনে ধন্যবাদ দিচ্ছি যে তুমি মেহতাবের সাথে মানিয়ে নিয়েছো । তোমাদের মধ্যে কোনো ভুল বুঝাবুঝি নেই । আমি জানি আমার ভুলের ক্ষমা হয় না কিন্তু কি করবো বলো আমি অহনাকে নিজের জীবনের থেকেও বেশি ভালবাসি আর আমি এটাও চাই নি তোমার জীবন নষ্ট হোক । পারলে আমায় ক্ষমা করে দিও ।

আহতাবের কথা শুনে মেঘ একটা স্নিগ্ধকর হাসি দিয়ে বললো ,

মেঘ : জিজু আপনি কোনো ভুল করেন নি দয়া করে ক্ষমা চাইবেন না । আপনার জায়গায় আমি থাকলে একিই কাজ করতাম । তাই আমি চাই আপনি এই জন্য নিজেকে দায়ী মনে করবেন না প্লিজ । ( অনুরোধ করে )

মেঘের কথা শুনে আহতাব খুব খুশি হলো। সে প্রতিউত্তরে মেঘকে বললো ,

আহতাব : এই নাহলে আমার শালি । ঠিকাছে আমি তোমার কথা মানবো আমার একটা শর্ত আছে ।

মেঘ একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললো , ” ঠিকাছে জিজু বলুন কি শর্ত ?” ।

আহতাব বলে উঠলো ,

আহতাব : আমার তো নিজের আপন কোনো বোন নেই। সিমরান , শাম্মি , মিথিলা ওরা তো সবসময় থাকবে না খালামনির সাথে চলে যাবে । তাই আমি চাই আমার একটা বোন থাকুক । যে আমাকে ভাইয়া বলে ডাকবে । আমার কাছে আবদার করবে। আর কখনো কোনো কিছুর প্রয়োজন হলে নির্দিধায় বলবে । যদি না বলো আমি কিন্তু ভাববো তুমি আমাকে ভাই মনে করো না । ( সুন্দর একটা হাসি দিয়ে )

আহতাবের কথা শুনে মেঘ একটি মুচকি হাসি দিলো আর বললো ,

মেঘ : অবশ্যই বলবো ভাইয়া । আপনার বোন কিন্তু খুব আহ্লাদি সামলাতে পারবেন তো । ( মুচকি হাসি দিয়ে )

মেঘের কথা শুনে অহনা হেসে দিলো । আর আহতাব মেঘের মাথায় হাত রেখে মুচকি হাসি দিলো আর বললো ” আলবাত পারব ” । তারপর সে আহতাব আর অহনাকে বলে মেহতাবের কাছে চলে এলো । মেহতাব সেখানে বসে ফোন ঘাটছিলো । আর কিছু মেয়ে তার দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো । কিন্তু মেহতাবের সেদিকে খেয়াল নেই । মেহতাব ফোনের স্ক্রিন এর থেকে সামনে তাকাতেই মেঘ কে দেখতে পেলো । মেঘের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো ,

মেহতাব : তোমার আসতে এতো লেট কেনো হয়েছে ? ( রাগ দেখিয়ে )

মেঘ : আসলে ভাইয়ার সাথে কথা বলছিলাম ।

মেহতাব : ঠিকাছে বসো ।

এই বলে মেহতাব মেঘের হাত ধরে মেঘকে বসিয়ে দিলো । মেঘ বসে মেহতাবের উদ্দেশ্যে বললো ,

মেঘ : আপনার ফ্যান ক্লাব এর মেয়েরা আপনার দিকে তাকিয়ে আছে । তাদের সাথে কথা বলতে পারতেন । আমার জন্য কেনো অপেক্ষা করছিলেন ?

মেঘের কথা শুনে মেহতাব বাম দিকে তাকালো সত্তিই কিছু মেয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে । সে এই জিনিসটাও বুঝতে পারে যে মেঘের তা সয্য হচ্ছে না । তাই মেঘকে আরেকটু জ্বালাতে সে বললো ,

মেহতাব : আমি তো জানতাম না আমার ফ্যান ক্লাব এ এতো সুন্দরী মেয়েরা আছে । তাহলে বিয়েই করতাম না । ( দুষ্টু হাসি দিয়ে )

মেহতাবের কথা শুনে মেঘ অভিমান করে বললো ,

মেঘ : হুম। এখন তো ভালোই লাগবে । আমি তো আপনার কাছে পুরনো হয়ে গেছি । ( নিচু স্বরে )

মেঘের কথা শুনে মেহতাব মেঘের মাথা উচু করে চোখের সাথে চোখ মিলিয়ে মেঘের হাত তার বুকের বাম দিকে ধরে বললো ,

মেহতাব : তুমি কি জানো তুমি আমার জীবনে না এলে এই জীবনের মূল্য আমি কোনোদিনই বুঝতেই পারতাম না । রোজ সকালে তোমার সেই মায়া ভরা চেহারা না দেখলে আমার দিনই কাটতে চায় না । তোমার মুখের মায়া আমায় প্রতিদিন তোমার দিকে আকর্ষিত করে । তোমাকে নতুন করে পাওয়ার ইচ্ছে জাগ্রত করে । তুমি আমার জীবনের সাথে মিশে গেছো । তোমাকে ছাড়া একটা দিনও কল্পনা করতে পারি না । তুমি আমার আদুরে মায়াবিনী । ( মুচকি হাসি দিয়ে )

#তুমি_এসেছিলে_বলে
পর্ব : ১২
#নাদিয়া_আক্তার_সিয়া

মেঘের কথা শুনে মেহতাব মেঘের মাথা উচু করে চোখের সাথে চোখ মিলিয়ে মেঘের হাত তার বুকের বাম দিকে ধরে বললো ,

মেহতাব : তুমি কি জানো তুমি আমার জীবনে না এলে এই জীবনের মূল্য আমি কোনোদিনই বুঝতেই পারতাম না । রোজ সকালে তোমার সেই মায়া ভরা চেহারা না দেখলে আমার দিনই কাটতে চায় না । তোমার মুখের মায়া আমায় প্রতিদিন তোমার দিকে আকর্ষিত করে । তোমাকে নতুন করে পাওয়ার ইচ্ছে জাগ্রত করে । তুমি আমার জীবনের সাথে মিশে গেছো । তোমাকে ছাড়া একটা দিনও কল্পনা করতে পারি না । তুমি আমার আদুরে মায়াবিনী । ( মুচকি হাসি দিয়ে )

মেহতাবের এমন কথায় মেঘ কিছুটা ঘাবড়ে যায় । সেটা লক্ষ্য করে মেহতাব পরিস্থিতি সামাল দিতে আবার বলে উঠে ,

মেহতাব : রিল্যাক্স ঘাবড়ে যাবার কি হলো ? We are married and it’s normal . তোমার কি আমার কমপ্লিমেন্ট পছন্দ হয় নি ? ( ভ্রু কুচকে )

মেহতাবের কথা শুনে মেঘ বললো , “তেমন কিছু না এই প্রথমবার আপনার মুখে আমার প্রশংসা শুনেছি তাই হজম করতে একটু কষ্ট হয়ে গেলো ” (ইতস্ত করে)

“এটা জাস্ট ট্রেলার ছিলো এখনও অনেক কিছু বাকী । আমি তোমার মুখ থেকে ভালোবাসি কথাটা বলিয়ে ছাড়বো মিসেস মেহতাব চৌধুরি ” মনে মনে বললো মেহতাব ।

এতক্ষণ এই কথাগুলো সৌরভ আর মিথিলা লুকিয়ে লুকিয়ে শুনছিলো ।

“মিথু পাখি , এতো মেঘ না চাইতে তুফান” সৌরভ মিথিলা কে বললো ।

“সৌরভ তুমি ঠিক বলেছো । কিন্তু হঠাৎ কি এমন হলো মেহতাব ভাইয়া কাহিনি টা উল্টে দিলো । আই থিঙ্ক মেবি টিনা ওই মেহতাব ভাইয়া কে কিছু বলেছে ” মিথিলা বললো ।

“যাই বলুক না কেনো ভালোই হয়েছে, চলো যাই ।”

এই বলে সৌরভ মাইক নিয়ে মেহতাব , মেঘ আর আহতাব আর অহনা কে কাপল ডান্স এর জন্য স্টেজ এ ডাকলো ।

মেঘ যেতে না চাইলেও মেহতাবের মান রাখতে তাকে যেতে হয় । তখনি গান চালু করে দেয় সৌরভ । মেহতাবদের সাথে আরো কিছু কাপল যোগ দেয় । সুযোগ বুঝে মিথিলা আর সৌরভ ও ডান্স ফ্লর এ নেমে যায় । সবাই ইঞ্জয় করতে থাকে। গানের সাথে তাল মিলিয়ে।

ভালোবেসে এইবার আয় কাছে তুই ,
সব ভুলে একবার আয় তোকে ছুঁই
ভালোবেসে দুজনে ডুবেছি অতল ,
আয় তবে এইবার ভালোবাসি চল ।

কে আছে বল তোরি মতো এমন ,
কে বোঝে বল , বোঝে আমার এ মন ,,

ভালোবেসে এইবার আয় কাছে তুই ,
সব ভুলে একবার আয় তোকে ছুঁই
ভালোবেসে দুজনে ডুবেছি অতল ,
আয় তবে এইবার ভালোবাসি চল ।

( বাকীটুকু নিজ দায়িত্বে দেখে নেবেন )

মেহতাব মেঘের সাথে ডান্স করার পুরোটা সময় মেঘের দিকে তাকিয়ে ছিলো । এতে মেঘ অবশ্য লজ্জা পেয়েছে । কিন্তু তার ভালোবাসার মানুষটা তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে । এটি একটি আলাদা অনুভতি । এইসব যখন মেঘ ভাবছিলো তখন হঠাৎ মেহতাব বলে উঠলো ,

মেহতাব : লজ্জা পাচ্ছ নাকি? ( মুচকি হেসে )

মেহতাবের কথায় মেঘ লজ্জায় যেন কুকরে যায় । কিন্তু নিজেকে সামলে বলে উঠে ,

মেঘ : অনেক লোক তো তাই একটু প্রবলেম হচ্ছে।

মেহতাব : তোমার অসুবিধা হলে থেমে যাই ?

মেঘ : প্রথম একটু সমস্যা হয়েছিলো এখন ঠিক আছি ।

এই বলে মেহতাব আর মেঘ পুরো ডান্স শেষ করে।
তারপর সবাই মিলে কথা বার্তা বলে । মেহতাব আর আহতাব গেস্টদের সাথে মেঘ আর অহনাকে পরিচয় করিয়ে দেয় । সবাই মিলে আনন্দ ফুর্তি করে রিসিপশন পার্টি শেষ করে । তারপর সব গেস্টরা চলে যায় । মেঘ আর অহনাদের পরিবারও চলে যায় । অরিন বেগম আর মিনহাজ চৌধুরি তাদের অনেক জোর করেছিলো থাকার জন্য কিন্তু তারা থাকে না । সবাই চলে যাবার পর। যে যে যার যার রুমে ফ্রেশ হতে চলে যায় ।

মেহতাব রুম এ গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসেছে । কিন্তু মেঘের দেখা নেই । তাই সে মেঘকে ঘুজতে বের হতেই যাবে। তখনি টিনা হুট করে রুম এ ডুকে পরে । আর মেহতাব কে জড়িয়ে ধরে বলে ,

টিনা ( মেহতাবের ফুপাতো বোন ): আই মিস ইউ বেবি ।

টিনা কে এভাবে জড়িয়ে ধরতে দেখে মেহতাব ভীষণ রেগে যায় । সে এক ধাক্কায় টিনাকে দূরে সরিয়ে দেয় । টিনা তখনি একটা শয়তানি হাসি দিয়ে বলে ,

টিনা : আর কতো দূরে থাকবে আমার থেকে । সারাজীবন তো আমার সাথেই কাটাতে হবে । যেদিন ফার্স্ট তোমাকে লান্ডানে দেখে ছিলাম । তোমার প্রেমে পরে গিয়ে ছিলাম । Believe me baby i love you so much .

টিনার কথা শুনে মেহতাব নিজের রাগ কে কন্ট্রোল করে বলে ,

মেহতাব : টিনা আমি কি কোনোদিনও বলেছি আমিও সেম ফিল করি? তুমি আমার ফুপির মেয়ে তাই তোমাকে এতো দিন সয্য করেছি । কিন্তু তুমি সুধরাবার নোও ।

টিনা : এভাবে কেনো বলছো মেহতাব ওই মেয়েটার জন্য তাই না। ওই মেয়েটা তোমাকে ভুংভাং বুঝিয়েছে । I’ll kill her bloody bi*tch .

মেহতাব এবার আর নিজের রাগকে কন্ট্রোল করতে পারে না । আর টিনার গালে সজোরে একটা থাপ্পর বসিয়ে দেয় । আর টিনাকে উদ্দেশ্যে করে বলে ,

মেহতাব : নেক্সট টাইম বলার আগে সেকেন্ড বার ভাববে কার সম্পর্কে বলছো । আমি মেয়েদের গায়ে হাত তুলিনি কোনোদিন । বাট তোমার বুঝার মতো সেন্স নেই তুমি তো নির্বোধ । Get lost from here . ( রাগ দেখিয়ে )

মেহতাবের কথা শুনে টিনা বেরতেই যাবে তখনি তার মেঘের সাথে ধাক্কা লাগে । সে মেঘের দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে চলে যায় । কিন্তু মেঘের মাথাতেই ঢোকে না কি এমন করলো সে । সে রুম এ ডুকে মেহতাবকে রুমের কোথাও দেখতে পায় না । বারান্দায় গিয়ে দেখেতেই মেহতাবকে দোলনায় বসে থাকতে দেখতে পায় । তাই সেও মেহতাবের পাশে বসে পরে । আর বলে ওঠে ,

মেঘ : কিছু কি হয়েছে ?

মেঘের গলা শুনে সে পাশে মেঘকে বসে থাকতে দেখে মেঘকে জড়িয়ে ধরে । আর বলে উঠে ,

মেহতাব : একটা কথা বলবো ?

মেঘ : হুম বলুন ।

মেহতাব : তুমি কোনোদিনও আমায় ছেড়ে চলে যাবে না তো ?

মেহতাবের এমন প্রশ্নে মেঘ কিছুটা অবাক হয় । কিন্তু নিজেকে সামাল দিয়ে বলে ,

মেঘ : হঠাৎ এই প্রশ্ন ?

মেহতাব : আগে জবাব দেও । যাবেনা তো আমায় ছেড়ে ?

মেঘ : ঠিকাছে যাবো না ।

এবার মেহতাব একটা সস্তির নিশ্বাস ফেলে । মেঘকে ছেড়ে দিয়ে মেঘের কোলে হেলান দিয়ে পা দুটো দোলনায় তুলে আকাশের দিকে তাকায় ।

মেহতাব কে এমন করতে দেখে মেঘ একটা মুচকি হাসি দিয়ে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় । আর তারা দুজনেই কখন ঘুমের দেশে তলিয়ে যায় কেউ টেরও পায় না । ভোরের আলো চোখে পরতেই মেহতাব আর মেঘ দুজনেরিই ঘুম ভেঙে যায় । মেঘ ভাবে মেহতাব এখনও ঘুমাচ্ছে তাই সে মেহতাবের কপালে আলতো করে একটা চুমু এঁকে দেয় । মেহতাব টের পেলেও বুঝতে দেয় না । মেঘ মেহতাবকে ডাকতে যাবে । তখনি মেহতাব মেঘকে আরো আস্টেপৃস্টে জড়িয়ে ধরে । এবার দরজায় ঠোক ঠোক আওয়াজে দরজা খুলতে মেঘ উঠতেই যাবে । তখনি মেহতাব মেঘের হাত ধরে তাকে টেনে নিজের কোলে বসিয়ে দেয় । মেহতাবের এমন আচমকা টান দেওয়াতে মেঘ কিছুটা ভয় পেয়ে যায় ।
মেঘকে এমন ভয় পেতে দেখে মেহতাব মুচকি হেসে দেয় । এতে মেঘ আরো বেশি রেগে যায় । আর বলে ,

মেঘ : ছাড়ুন আমায় দরজা খুলতে হবে । ( রাগ করে )

মেহতাব : বাবা তুমি রাগ করতে পারো নাকি আমি তো ভেবেছিলাম তুমি শুধু লজ্জা পেতে পারো । ( দুষ্টু হাসি দিয়ে )

মেহতাবের এমন কথার প্রতিউত্তরে মেঘ বলে উঠে,

মেঘ : আপনি লজ্জায় ফেলে দেন তাই ।

মেহতাব : ওহ তাই বুঝি তাহলে আরেকটু ফেলি ।

এই বলে মেহতাব মেঘের কাছাকাছি আসতে থাকে । তখনি মেহতাবের ফোন আসে । এই সুযোগে মেঘ নিজেকে ছাড়িয়ে দৌড় দেয় । তা দেখে মেহতাব একটা মুচকি হাসি দিয়ে ফোন রিসিভ করে ।

নিচে সবাই বসে নাশতা করছিলো । মেঘ আর মেহতাব ও সেখানে উপস্থিত হয় । অরিন বেগম ওদের বসতে বলেন । কিন্তু মেঘ অরিন বেগমকে নিজের জায়গায় বসিয়ে দিয়ে নিজে আর অহনা মিলে সবাইকে সার্ভ করে দিতে থাকে । তা দেখে অরিন বেগম খুব খুশি হন । যে তারা নিজেদের সংসারের হাল ধরতে শিখেছে ।

সবাই নাশতা খেয়ে উঠতেই । মেহতাবের বন্ধুরা অরিন বেগম আর মিনহাজ চৌধুরি কে বলে ,

সৌরভ : আন্টি আজকেই আমরা ফিরা যামু । মেহতাবের বিয়ার সব অনুষ্ঠান ও শেষ । আর থাকা পসিবেল না ।

সৌরভের কথা শুনে অরিন বেগম বলে ,

অরিন বেগম : সে কি বাবা । না আজ না আরো দুই দিন থাকবে তারপর। তোমাদের ভালো করে দেখার সুযোগ পাই নি । আজ যেও না বাবা। মেহতাব ওদের থাকতে বল ।

মেহতাব অরিন বেগমের কথা শুনে সৌরভদের বলে ,

মেহতাব : তোদের তো কোনো কাজ নেই যে ছুটি নিয়ে প্রবলেম । সো ফিরে গিয়ে কি করবি আর কয়দিন থেকে যা আমি আর তোরা একসাথে লন্ডন এ ব্যাক করবো । ( সৌরভ এবং মেহতাব লন্ডনে বিজনেস হোল্ডারস আর বাকিরা ওই কোম্পানি তে উচ্চ পদে জব করে )

সৌরভ : ঠিকাছে আন্টি যেহুতু ভালো কইরা দেখেন নাই । তাই থাইকা গেলাম ।

সামির সৌরভের কথা শুনে কানে ফিসফিস করে বলে ,

সামির : সৌরভ যাচ্ছে না তার মিঠু পাখির টানে । প্রমান করা লাগবে না নিশ্চই সৌরভ ডার্লিং ।

এই কথা বলে সামির হেসে দেয় । সামিরের কথা শুনে সবাই না জেনেই মজা করে হেসে দেয় । কিন্তু সৌরভ আর সামির তা দেখে পরিস্থিতি সামাল দিতে আরো জোরে হেসে উড়িয়ে দেয়।

চলবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে