তুমি এসেছিলে বলে পর্ব-০১

0
380

#তুমি_এসেছিলে_বলে
পর্ব : ১
#নাদিয়া_আক্তার_সিয়া

বিয়ের আসরে বসে আছি বৌ সেজে দামি অলঙ্কার , দামি লেহেঙ্গা । যার সাথে বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো তার সাথে বিয়ে হয় নি । তার নিজের ছোটো ভাইয়ের সাথে বিয়ে হয়েছে । আর আমার নিজের বড় বোনের সাথে সেই লোকটি বিবাহ সম্পন্ন করেছে ।
আমি মেহনূর মেঘ। আমার মামা- মামি আমার এই বিয়ে ঠিক করেছে কিন্তু আমাকে জানানোর প্রয়োজন বোধ করে নি । তা সত্ত্বেও আমি এই বিয়ে করতে টু শব্দ পর্যন্ত করি নি। কারন আমার বাবা-মা নেই আমার বাবা-মা না হলেও তারা আমার কোনো অভাব রাখেনি । আমি তাদের মেয়ে না তা একবারটির জন্য মনে হয় নি । আমার মামি আমাকে পছন্দ করে না কিন্তু মামা আমাকে কখনো মা ছাড়া অন্য কোনো নামে ডাকেন নি। ওনার জন্য এই বিয়েতে আমি রাজি হয়েছি । তারা আমার ভালোর জন্য হয়ত এই বিয়ে ঠিক করেছেন ।
বিয়ে হওয়ার কিছুক্ষণ আগে আমি জানতে পেরেছি আমার বিয়ে হচ্ছে কিন্তু তার ছবি পর্যন্ত দেখি নি। কারন তাকে পছন্দ হলেও এই বিয়ে আমাকে করতে হবে না হলেও করতে হবে ।
বিয়ে শুরু হওয়ার সময় ছেলে পক্ষ আমার মামা-মামির কাছে কিছু একটা বলেছে তা দেখে মামা চিন্তিত হলেও মামির মুখে বিশ্বজয়ের হাসি ।
সামনে তাকাতেই দেখলাম আমার বড় মামাতো বোন অহনা আপু আমাকে ডাকছে । ছোটো বেলা থেকে তাকে দেখে আসছি আজ পর্যন্ত তাকে পর মনে হয় নি । কোনো সময় মন খারাপ করলে আমাকে হাসানোর ঔষূধ তার কাছে থাকতো । সে আমাকে নিজের আপন বোনের চেয়েও বেশি ভালোবাসে । কিন্তু আমার আরো দুটো মামাতো বোন আছে অন্নি আর তন্নি । তারা আমাকে দেখতে পারে না তা না আমাকে তারা যথেষ্ট ভালোবাসে । কিন্তু মামি তাদের আমার সাথে মিশতে দেয় না । তাতে আমার বিন্দু মাত্র কষ্ট নেই তাদের কাছে বড় হয়েছি তাদের নুন খেয়েছি তাদের নিন্দে করব এই ভাবে আমি বড় হই নি ।আমি নিতান্ত শান্ত স্বভাবের মেয়ে । বেশি কথা বলতে পছন্দ করি না ।

অহনা : এই মেঘ এদিকে আয় । তোর সাথে জরুরি কথা আছে।
আপুর ডাকে আমার হুশ ফিরল। আর বিয়ের আসর থেকে উঠে আপুর কাছে গেলাম।

মেঘ : আপু তুমি আমাকে এখানে ডাকলে কেন ওই জায়গায়ও তো বলতে পারতে।

অহনা : কেন আমার বোনের সাথে আমার আলাদা কোনো কথা থাকতে নেই ।

মেঘ : আমি কি তা বলছি আপু আচ্ছা বাদ দেও বলো কি বলবা ।

অহনা : আমি যা বলবো তা মন দিয়ে শুনবি কোনো প্রশ্ন করবি না ।

মেঘ : ঠিকাছে বলো।

অহনা : তুই কি এই বিয়েতে রাজি মন থেকে নাকি বাবা-মার জন্য রাজি হয়েছিস আমার কাছে কিছু লুকোবি না আমি জানি যাকে তুই চিনিস না জানিস না তাকে না দেখেই পছন্দ হয়ে গেল।

মেঘ : হুম , আমি এই বিয়েতে রাজি । দেখো শুনেছি তাদের অনেক টাকা আমার কোনো কষ্ট হতেই পারে না । আজকাল টাকাই সব টাকা ছাড়া সবাই পর।

অহনা : খোদার উপর ভরসা রাখ তিনি নিশ্চয়ই ভালো কিছু লিখেছেন।

তখনি ইমরান সাহেব সেখানে উপস্থিত হলেন আর একটু ইতস্তত বোধ করে বললেন ,

ইমরান সাহেব ( নায়িকার মামা ) : অহনা মা তোরা একটু এইদিকে শোন আমার কিছু বলার আছে। আর আমি যা বলবো তা তোদের রাখতে হবে আসলে মা বেপার টা হলো আসলে পাত্র পক্ষ অহনাকে বড় ছেলের বৌ হিসেবে গ্রহণ করতে চাচ্ছে । আর মেঘ এর সাথে তার ছোটো ছেলের জন্য নিতে চাইছে ।তোরা না করিস না মা এতে আমার সম্মান এর বিষয় রয়েছে ।

অহনা : বাবা এইসব কি বলছো তুমি মেঘ এর হবু বর এর সাথে আমার বিয়ে কেন দিতে চাইছো । আর মেঘ কেনো তার দেবর কে বিয়ে করবে । কি হয়েছে আমায় বলো ? ( রাগী স্বরে )

ইমরান সাহেব কিছুক্ষণের আগের ঘটনা বলতে শুরু করলেন ।

( একটু আগের ঘটনা )

ইমরান সাহেব : তো বিয়াই মশাই আমদের আয়োজন সব ঠিক ঠাক আছে তো কোনো কমতি নেই তো যদি কিছুর কমতি থাকে আপনি নিশঙ্কোচে বলতে পারেন। আমার মেহনূর এর বিয়ে বলে কথা ।

মিনহাজ চৌধুরি ( নায়কের বাবা ) : আসলে ইমরান সাহেব আমি আপনাকে কিছু জরুরি কথা বলতে চাই দয়া করে মনযোক দিয়ে শুনবেন। এবং বোঝার চেষ্টা করবেন ।

ইমরান সাহেব : আপনি আমাদের মতো গরিব ঘরের মেয়েকে পত্রুবধু করে নিয়ে যাচ্ছেন এটাই অনেক। কি বলতে চান বলুন কোনো সংকোচ ছাড়া ।

মিনহাজ চৌধুরি : আসলে আমার বড় ছেলে অহতাব আপনার মেয়ে অহনা কে পছন্দ করে ছিলো। কিন্তু সে অহনা মায়ের নাম মেহনূর
মেঘ হিসেবে জানত । কিন্তু চিন্তা করবেন না মেহনূর মাকে আমাদের অনেক পছন্দ হয়েছে। তাই আপনি যদি কিছু মনে না করেন আপনার ২ মেয়েকে আমার ২ ছেলের পুত্রবধূ হিসেবে গ্রহণ করতে চাই। তাদের আমি নিজের মেয়ের মতো করে রাখবো আপনি আমাকে ভরসা করে দেখতে পারেন।

ইমরান সাহেব : কিন্তু আমার মেয়েরা কি রাজি হবে ?

মিনহাজ চৌধুরি : আপনি বললে তারা অবশ্যই রাজি হবে । আমার বাড়িতে তাদের কোনো কষ্ট হতে দিব না ।

ইমরান সাহেব : আপনার ছোটো ছেলে কি এই বিয়েতে রাজি ?
মিনহাজ : আমার ছেলে কে আমি ভালো করে চিনি ও নিজের থেকেও নিজের ভাইকে বেশি ভালোবাসে ও কে আমরা রাজি করিয়ে নিবো।

” Are you mad ? আমি কিভাবে আমার ভাইয়ের হবু বৌ কে বিয়ে করব তোমার মাথা ঠিক আছে বাবা ” রাগী কন্ঠসরে বলল মেহতাব তার বাবা মিনহাজ চৌধুরি কে।

“মেহতাব আমার কথা টা বোঝার ট্রাই কর আমার মান-সম্মান এর বেপার আমার এত বড় বিজনেস এর নাম খারাপ হবে ” আকুতির স্বরে বললেন মিনহাজ সাহেব।

“It’s not possible I can’t do this” সিরিয়াস ভাবে মেহতাব বলল ।

“আমাদের কথা নাই ভাবলি নিজের মায়ের কথা ভাব সে এইসব শুনলে অসুস্থ্য হয়ে পরবে সে এমনিতেই হার্ট এর রোগী ” মিনহাজ সাহেব মেহতাব কে বললেন।

“Ok i have a condition . যদি তুমি মেনে নেও তাহলে আমি রাজি” মেহতাব বললো ।

মিনহাজ চৌধুরি : বিয়েটা হয়ে যাক তোর সব শর্ত মানব।
মেহতাব : Ok then .

চলবে ……..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে