Thursday, July 17, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1917



ত্রিভুজ প্রেম পর্বঃ২৪

0

ত্রিভুজ প্রেম
পর্বঃ২৪
জান্নাতুল ফেরদৌস সূচনা

রাইয়ান দৌড়ে তার দাদার রুমে যেতেই তার বাবা রাইয়ানকে এসে বলল,
-দেখ না রাইয়ান, তোর দাদাভাইয়ের কি হয়েছে? কোনো সাড়া শব্দ করছে না?
রাইয়ান বিষম্ভীত হয়ে দাদার কাছে গিয়ে দাদার হাতের পালস, হার্টবিট চেক করতে লাগল। সবকিছু চেক করে রাইয়ান ছলছল চোখে তার বাবার দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়িয়ে ইশারা দেয়।
মি. রাশেদ রাইয়ানের ইশারা বুজতে পেরে চিৎকার দিয়ে কান্না শুরু করে দেয়। মুহুর্তেই সারা বাড়িতে কান্না রোল পড়ে যায়।

সকালের সূর্যের আলোটা পুষ্পর মুখে পড়তেই পুষ্প ঘুম ভেঙে যায়। ওঠে দেখলো রাইয়ান তার রুমে নেই। বাহির থেকে আওয়াজ আসছে। রুমের দরজাটা লাগানো থাকায় পুষ্প ঘুমের মধ্যে বাহিরের শব্দটা এতোক্ষণ পাচ্ছিলো না। পুষ্প কৌতুহল নিয়ে দরজা খুলে বাহিরে যায়। সবাই কান্না করছে। কি হয়েছে তা এখনো পুষ্প বুঝে ওঠতে পারছে না। বাড়িতে অনেক লোকের ভিড়। পুষ্প ভিড় ঠেলে ভিতরে ঢুকতেই মি. রাশেদকে দেখতে পেয়ে তার কাছে যায়।
মি. রাশেদ পুষ্পকে দেখতে পেয়ে তিনি ঢুকরে কেঁদে ওঠে বলে,
– মা রে, বাবা যে আমাদের সবাইকে ছেড়ে চলে গেছে।
কথাটা শুনতেই পুষ্পর পায়ের নিচের মাটি সরে যায়। নিজের কানে সে কথাটা এখনো বিশ্বাস করতে পারছে না। পুষ্প ভিড় ঠেলে সামনে গিয়ে দাদার লাশটা দেখতে পায়। তার যেন এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না।
এইতো কাল রাতে তার সাথে কত কথা বলেছিল দাদা। আর এখন…
পুষ্প দৌড়ে লাশের কাছে গিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বললো,
-দাদাভাই, ও দাদাভাই? কথা বলছো না কেন? কি হয়েছে তোমার?  এই তো কাল রাতে এতো কথা বলেছিলে? আমার সাথে হাসি-ঠাট্টা করলে এখন কথা বলছো না কেন?
পুষ্পকে এভাবে কাঁদতে দেখে মিসেস মাহমুদা রেগে যায়। আর বলে,
– এসেছে এখন ন্যাকা কান্না করতে। বলি রাতে যখন সবাই কান্না করছিলো তখন তুমি কোথায় ছিলে? তখন তো নাক ডেকে ঘুমোচ্ছিলে। এখন এসে নাটক জুড়ে বসেছে। ওফ! অসহ্য। রাইয়ান এই মেয়েকে ডিভোর্স দেওয়ার পরেও এই মেয়ে এ বাড়িতে কি করছে? কালকেই কেন বললি না চলে যেতে?
মিসেস মাহমুদার এমন কথা শুনে মি. রাশেদ বললো,
– মাহমুদা এখন এসব কি বলছো তুমি?
– ঠিকই বলছি। এ মেয়েকে আর এক মুহূর্তও আমার সামনে দেখতে চাই না। রাইয়ান এখুনি একে এর বাসায় দিয়ে আয়। এই মেয়েকে একদম সহ্য হচ্ছে না আমার।
মায়ের এমন কথা শুনে রাইয়ান বাধ্য ছেলের মতো পুষ্পর কাছে গিয়ে বলে,
– চলুন।
কিন্তু পুষ্প এখনো স্থীর মূর্তির মতো দাড়িয়ে আছে। রাইয়ানের কথা তার কানেই যাচ্ছে না।
পুষ্পকে এভাবে দাড়িয়ে থাকতে দেখে মিসেস মাহমুদা রেগে বলল,
– এই মেয়ে সহজ কথা শুনার পাত্র নয়। একে টানতে টানতে নিয়ে এখান থেকে নিয়ে যা রাইয়ান। নাহলে এখন আমি কিছু একটা করে বসবো।

মায়ের এমন কথা শুনে রাইয়ান পুষ্পকে হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে যেতে থাকে তখনি পুষ্প বলে ওঠে,
-প্লিজ আমাকে এভাবে নিয়ে যাবেন না। আমাকে একটিবার দাদার মুখটুকু দেখতে দিন।
রাইয়ান পুষ্পর কোন কথা শুনছে না। সে পুষ্পকে টানতে টানতে নিয়ে যাচ্ছে। পুষ্প আবার বললো,
– প্লিজ, আমি আপনার পায়ে পড়ি, শেষবারের মতো আমাকে দাদার মুখটুকু দেখতে দিন। এরপর নিজেই চলে আসবো।
পুষ্পর এমন কথা শুনে রাইয়ান পুষ্পর হাতটা ছেড়ে দিল। পুষ্প দৌড়ে যায় দাদার লাশের কাছে গিয়ে মুখের ওপর থেকে কাপড় সরিয়ে প্রাণ ভরে দেখে নেই দাদাকে। দাদার হাসিমাখা মুখটা এখনো তার চোখে ভাসছে। এরপর সে আস্তে আস্তে দাদার পায়ের কাছে গিয়ে পা ধরে কেঁদে কেঁদে বলে,
– আমাকে মাফ করে দিও দাদাভাই। আমি তোমার শেষ কথাগুলো রাখতে পারলাম না। তোমার শেষ ইচ্ছাগুলো পূরণ করার অধিকার আমি হারিয়ে ফেলেছি। আমাকে তুমি মাফ করে দিও।
বলেই পুষ্প সেখান থেকে দৌড়ে বাহিরে চলে আসে। রাইয়ান গিয়ে গাড়ির দরজা খুলতেই পুষ্প গাড়িতে বসে পড়ে। রাইয়ান গাড়িতে বসে গাড়ি স্টাট দেয়।

নাস্তার টেবিলে বসে চুপচাপ নাস্তা করছে পাপড়ি। মা, দাদীর সাথে এখন খুব কমই কথা বলে। বলতে গেলে দরকার ছাড়া কথা বলে না। নাস্তা শেষ করে ফাইল আর ব্যাগগুলো নিয়ে অফিসের জন্য বাড়ি থেকে বের হয়ে যায় পাপড়ি। আফিয়া বেগম অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল পাপড়ির দিকে। আগে প্রতিবার অফিসে যাওয়ার আগে পাপড়ি তাকে এসে জড়িয়ে ধরে বাই বলে যেত। কিন্তু ইদানীং পাপড়ি এসব কিছুই করে না। আফিয়া বেগম  মন খারাপ করে রান্নাঘরে পা এগুতেই হঠাৎ গাড়ির শব্দ পায়।
গাড়ি থেকে পুষ্পকে নামতে দেখে আফিয়া বেগম দুই কদম দরজার দিকে পা বাড়ায়। আফিয়া বেগমকে দেখে পুষ্প দৌড়ে এসে তাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে। রাইয়ান আর গাড়ি থেকে নামে নি। সে গাড়ি ব্যাক করে নিজের বাড়িতে চলে যায়।

পুষ্পকে এভাবে কাঁদতে দেখে আফিয়া বেগম ভয় পেয়ে যায়। পুষ্পর কান্না শুনে রুম থেকে দাদীও বের হয়ে আসে। আফিয়া বেগম বিচলিত হয়ে পুষ্পকে জিজ্ঞেস করে,
– কি হয়েছে?  এভাবে কান্না করছিস কেন?
পুষ্প আফিয়া বেগমকে জড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতে বললো,
– মা,  দাদাভাই আর নেই। চলে গেছে এ পৃথিবী ছেড়ে।
পুষ্পর এমন কথা শুনে আফিয়া বেগম আর দাদী দুজনই হতাশ হয়ে যায়। দাদী এগিয়ে এসে পুষ্পর মাথায় হাত দিয়ে বলে,
– এ পৃথিবীতে কেউ স্থায়ী নয়। সবাইকে এ পৃথিবী ছেড়ে যেতে হবে একদিন। তুই এভাবে কাঁদিস না, এতে আরো ওনার আত্মা বেশি কষ্ট পাবে। তার চেয়ে বরং ওনার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া কর, আল্লাহ ওনাকে জান্নাত বাসী করুক।
– কিন্তু এমন অবস্থায় তুই এখানে এসেছিস কেনো? তোকে তো ঐখানে সবার সাথে থাকার দরকার ছিলো।
আফিয়া বেগমের এমন কথা পুষ্প চুপ করে রইল। কান্নাটা একটু চেপে পুষ্প বললো,
– ওরা আমাকে ফিরিয়ে দিয়ে গেছে।
-মানে?
-রাইয়ান আমাকে ডিভোর্স দিয়ে দিয়েছে মা।
-কিহ! এসব কি বলছিস তুই? আমাদের কিছু না জানিয়ে এসব…
-জেনেই বা কি করতে মা। আমাকে ঐ বাড়ির কেউ কখনো বউ হিসেবে মেনে নিবে না। রাইয়ান আমাকে কখনো ভালোবাসতে পারবে না। তাহলে এই মিথ্যে সম্পর্ক নিয়ে থাকার কোন মানে হয় না। তাই আমি ডিভোর্স পেপারে সই করে দিয়েছে।
-কিন্তু?
– আর কোন কথা নয় মা। আমি একটু একা থাকতে চাই।
বলেই পুষ্প কাঁদতে কাঁদতে নিজের রুমে চলে যায়।

-আজ সারাদিন কেটে গেলো অফিসে রাইয়ান আসে নি। অফিসের সব মিটিংও কেন্সেল করে দিয়েছে। ম্যানেজার সাহেবও নেই অফিসে। রাইয়ানের কোনো সমস্যা হয় নি তো?
চেয়ারে বসে বসে পাপড়ি এসব ভাবছে। হঠাৎ ম্যানেজারের কথায় তার হুশ ফিরে। ম্যানেজারকে দেখে পাপড়ি বিচলিত হয়ে জিজ্ঞেস করে,
– আজ বস অফিসে আসি নি কেন? আর আপনাকেও তো আজ সারাদিন অফিসে দেখে নি? কোনো প্রবলেম হয়েছে কি?
ম্যানেজার হতাশ হয়ে বললো,
– তুমি জানো না, বসের দাদা কাল রাতে মারা গিয়েছেন। তাই বস অফিসে আসে নি। আমি সারাদিন ঐখানেই ছিলাম। দাফনের কাজ শেষ করে এখানে আসলাম সবকিছু চেক করার জন্য।
-ও.. সো সেড। স্যার ঠিক আছেন তো?
– হুম।
– আপনি কোন চিন্তা করবেন না। আমি অফিসের সব কিছু সামলে নিয়েছি।
– ওহ! তাহলে তুমি এখন বাসায় চলে যাও।  অফিস তো ছুটিই হয়ে গেছে।
-ওকে।

“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন

সারাদিন পুষ্প কিছু না খাওয়ায় আফিয়া বেগম পুষ্পর সামনে খাবার নিয়ে তাকে খাওয়ানোর চেষ্টা করছে। এমন সময় পাপড়ির আগমন। বাসায় এসে পুষ্পকে দেখতে পেয়ে পাপড়ি মুখে একটা বাঁকা হাসি দিয়ে বললো,
– ডিভোর্সটা তোকে দিয়ে দিয়েছে রাইয়ান তাহলে?
তার এমন কথায় পুষ্প পাপড়ির দিকে উদাসীন নজর নিয়ে তাকায়।
পাপড়ি আবার বলে,
– যাক ভালোই হয়েছে, ঝামেলাটা শেষ হয়েছে। এখন রাইয়ান আমাকে বিয়ে করতে পারবে।
পাপড়ির এমন কথায় আফিয়া বেগম রেগে ধমকের সুরে বলে,
– এসব কি বলছিস তুই। বোন হয়ে বোনের সংসার..
– কিসের সংসার মা? ভুলে যেওনা আপুর জায়গাটা আমার ছিল। আর তাদের ডিভোর্সের পর আমি আমার জায়গা ফিরে পাবো। এতে ভুলের কি আছে?
হঠাৎ দরজায় ঠকঠক আওয়াজ পড়ে। আফিয়া বেগম দরজা খুলতেই দেখে নীল দাঁড়িয়ে আছে বাহিরে।
– নীল, তুই এখন?
– হ্যা জেঠিমা। শোনলাম পুষ্প এসেছে, ওর সাথে দেখা করতে আসলাম।
বলেই ভিতরে ঢুকে পাপড়িকে দেখতে পায়।
– কিরে পাপড়ি, এখন যে আমাকে ছাড়াই অফিসে যাওয়া-আসা করিস? আমার জন্য অপেক্ষা করিস না যে?
– আমাকে প্রতিদিন তোর সাথেই যেতে হবে এমন কোন কথা ছিলো নাকি? আমি কার সাথে যাবো কি যাবো না সেটাও কি তোরাই ঠিক করবি?
পাপড়ির এমন কথায় নীল কিছুটা অবাক হয়ে বললো,
– এভাবে কেনো বলছিস? এতোদিন আমরা একসাথে যাওয়া-আসা করেছি তাই আমি এমনি জিজ্ঞেস করলাম।
পাপড়ি পুষ্পর দিকে তাকিয়ে বললো,
-হুম। এতোদিন অন্যের কথায় চলে দেখলাম ই তো। আমার সুখ কেড়ে মানুষ নিজে সুখী হতে চেয়েছিলো। কিন্তু জানিস তো অন্যের সুখ কেড়ে নিজে সুখী কখনও হতে পারে।
পাপড়ির এমন কথায় নীল কিছুটা বিস্মিত হয়ে বললো,
– তুই পুষ্পর দিকে তাকিয়ে এসব বলছিস কেন?
-কেন, তুই কি কিছু জানিস নাহ?
– মানে কি জানবো?
– রাইয়ান আপুকে ডিভোর্স দিয়ে দিয়েছে।
– কিহ! ডিভোর্স!  কিন্তু কেন? রাইয়ান তো পুষ্পকে পছন্দ করে বিয়ে করেছিলো।
পাপড়ি মুখে বাঁকা হাসি দিয়ে বললো,
-রাইয়ান আপুকে নয় আমাকে পছন্দ করেছিলো। কারণ ও আমার অফিসের বস। আর এটা আপু ভালো করেই জানতো। তবুও আমাকে কিছু না জানতে দিয়ে সে রাইয়ানকে বিয়ে করে। রাইয়ান এখন সবটা জানতে পেরেছে তাই এখন ওকে ডিভোর্স দিয়ে দিয়েছে। আর কিছুদিন পরই রাইয়ান আমাকে বিয়ে করবে।
পাপড়ির কথা নীলের একদমই বিশ্বাস হচ্ছে না। সে বলল,
– এটা আমি কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছি না যে পুষ্প এমনটা করতে পারে। আমি পুষ্পকে যতটা চিনি পুষ্প কখনোই এমনটা করতে পারে না। নিশ্চয় কোনো ভুল বুঝাবুঝি হয়েছে। পুষ্প তুই বল, সত্যিটা কি?
পুষ্প কিছু বলছে না শুধুই কাঁদছে।
– ওকে কি জিজ্ঞেস করছিস। আমি যা বলেছি তাই সত্যি।
– না পাপড়ি, পুষ্প এটা কখনই করতে পারে না। তুই ওকে ভুল বুঝেছিস।
-হয়েছে, তুই ও সবার মতো ওর পক্ষই নিচ্ছিস। তবে আমার সাথে কেউ না থাকলেও ওপরে আল্লাহ আমার সাথে আছে। তাইতো দেখিস না রাইয়ান আপুকে ডিভোর্স দিয়েছে। কারণ সে আমাকে পছন্দ করে।
– আচ্ছা বুজলাম রাইয়ান তোকে পছন্দ করে। কিন্তু পাপড়ি তুই কি রাইয়ানকে পছন্দ করিস? ভালোবাসিস রাইয়ানকে?
নীল এমন কথায় পাপড়ি চুপ হয়ে যায়। নীলের এই প্রশ্নের কোন উত্তর নেই তার কাছে।
– কি হলো, কোন কথা বলছিস না যে? আমি জানি এর কোন উত্তর নেই তোর কাছে। তুই পুষ্পর সাথে রাগ, হিংসা করে রাইয়ানকে বিয়ে করতে চাচ্ছিস।
নীলের এসব কথায় পাপড়ি রেগে ওঠে বলে,
– হয়েছে আমাকে আর জ্ঞান দিতে হবে না। আমি জানি আমি কি করছি। আর তুই আমাকে এসব বলার কে?এটা আমাদের ফেমেলি মেটার, এটাতে তুই কোন কথা না বললেই ভালো।
বলে অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে নেই পাপড়ি।

পাপড়ি মুখে এমন কথা শুনে নীল অবাক হয়ে যায়। একি সেই পাপড়ি যাকে সে অনেক ভালোবাসে। এতোটা বদলে গেলো কিভাবে পাপড়ি।

পাপড়ি নীলকে এভাবে অপমান করতে দেখে এবার পুষ্প বললো,
– ঠিকি তো বলছে পাপড়ি। তুই কোন অধিকার রাখিস না আমাদের ফেমেলি মেটারে কথা বলার। এভাবে আর নিজেকে অপমান না করে চলে যা এখান থেকে।এটাই তো জন্য ভালো।
বলেই পুষ্প কাঁদতে কাঁদতে তার রুমে চলে যায়।
নীল পুষ্পের চোখে তার কষ্টগুলো দেখতে পেয়েছে। কতটা কষ্ট নিয়ে তাকে এই কথাটা বলছে পুষ্প তা সে বুজতে পেরেছে। নীল আর কিছুই বললো না। শুধু একবার পাপড়ির দিকে তাকিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে যায়।

চলবে…..

ত্রিভুজ প্রেম পর্বঃ২৩

0

ত্রিভুজ প্রেম
পর্বঃ২৩
জান্নাতুল ফেরদৌস সূচনা

বিয়ের পর আজ এক সপ্তাহ কেটে গেছে পুষ্পর এ বাসায়। এ ৭ দিনে পুষ্প দাদার খুব ভালোই সেবা-যত্ন করেছে। এতে দাদাও আগের থেকে কিছুটা সুস্থ হয়ে ওঠেছে। তবে পুষ্প এখনো নিজের শ্বশুরবাড়িতে মেহমানের মতোই আছে। তার এ বাড়িতে কোন অধিকার নেই। আর সেও কোনো কিছুতেই দাবি রাখছে না।

কেবিনে বসে বসে রাইয়ান তার দাদার ডক্টরের দেওয়া রিপোর্টগুলো দেখছে। আগের থেকে খুব ভালো ইমপ্রোভ করছে দেখে রাইয়ান খুব খুশি।

– আসতে পারি?
– আরে উকিল সাহেব, আসেন।

অফিসে উকিলকে রাইয়ানের কেবিনে ঢুকতে দেখে পাপড়ি অবাক হয়। তাই সে চুপিচুপি রাইয়ানের কেবিনের বাহিরে দাড়িয়ে ভিতরের কথা শোনার চেষ্টা করছে।
পাপড়ি সব কথা না শুনলেও রাইয়ান আর উকিল যে ডিভোর্স নিয়ে কথা বলছে তা ঠিকই বুঝতে পেরেছে।
পাপড়ি মনে মনে খুশি হয়। আপু আর রাইয়ানের ডিভোর্স হলেই সব ঝামেলা শেষ। এরপর রাইয়ান তাকে বিয়ে করবে। এসব ভেবে পাপড়ির মনটা আনন্দে ভরে ওঠে।

একটুপর উকিল রাইয়ানের কেবিন থেকে বেরিয়ে যেতেই পাপড়ি কেবিনে যায়।
– মে আই কামিন স্যার?
-হুম।
পাপড়ি ভিতরে ঢুকেই টেবিলের ওপর রাখা ডিভোর্স পেপারগুলো দেখতে পায়। ডিভোর্স পেপারগুলো দেখে পাপড়ি একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলে,
-স্যার, আপনি তাহলে আপুকে ডিভোর্সটা দিয়েই দিচ্ছেন?
রাইয়ান কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
-হ্যা। শুধু শুধু মিথ্যে সম্পর্ক নিয়ে আমি থাকতে পারবো না।
-এরপর কি করবেন আপনি?
রাইয়ান পাপড়ির দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসি দিয়ে বললো,
– এরপর আমার মা যেই মেয়েকে পছন্দ করবে তাকে বিয়ে করবো।
রাইয়ানের মুখে এমন কথা শুনে পাপড়ির মুখের হাসি উধাও হয়ে যায়। সে চমকে ওঠে বলে,
-কিন্তু আপনি তো আমাকে…..
-ভুলেও তা চিন্তা করো না। তোমাকে এখন আমার আর সহ্য হয় না। তোমার কারণে আমি এতোটা কষ্ট পেয়েছি। তোমাকে সহ্য করছি শুধু তোমার বোনের শর্তের কারণে৷ আর আমাদের ডিভোর্সের কথা শুনে এতো খুশি হওয়ার দরকার নেই কারণ এ ডিভোর্স হলে এ শর্তও শেষ হয়ে যাবে আর সাথে তোমার এই চাকরিটাও। এরপর তোমাকে আমার আর এই অফিসে দেখতে হবে না।
বলেই ডিভোর্স পেপারগুলো নিয়ে রাইয়ান কেবিন থেকে বের হয়ে যায়।

রাইয়ানের মুখে এমন কথা শুনে পাপড়ির মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। রাইয়ান কি তাকে আর ভালোবাসে না? রাইয়ানের মনে তাকে নিয়ে এতোটাই বিষাদ ভরে ওঠেছে যে রাইয়ান এখন তাকে সহ্য করতে পারে না। এসব ভাবতে ভাবতেই পাপড়ির চোখ থেকে দুফোটা পানি নিচে পড়ে যায়।

রাইয়ান বাসায় এসেই সরাসরি পুষ্পর কাছে গিয়েই তার সামনে ডিভোর্স পেপারগুলো ছুড়ে মারে। রাইয়ানের এমন আচরণ দেখে পুষ্প অবাক হয়ে তাকায় রাইয়ানের দিকে আর বলে,
– কি এগুলো?
– ডিভোর্স পেপার। আমার দাদাভাই এখন আগের থেকে অনেকটা সুস্থ হয়ে গেছে। এখন আর আপনার এখানে থাকার কোনো দরকার আছে বলে আমার মনে হয় না। ডিভোর্স পেপারে সাইন করে আপনি কালকেই চলে যেতে পারেন।
রাইয়ানের কথাগুলো পুষ্পর মনে কাটার মতো বিধে ওঠে। কিন্তু এতো কষ্ট পাচ্ছে কেন সে? এটাই তো হওয়ার কথা ছিলো।
কিছুক্ষণ চুপ থেকে পুষ্প বলে,
-আমি এ বাড়ি থেকে চলে গেলে কি আমার শর্তটাও শেষ হয়ে যাবে?
– হুম।
-তাহলে আমি ডিভোর্স পেপারে সাইন করবো না।
-মানে? কি বলতে চাচ্ছেন আপনি?
– আমি বলতে চাচ্ছি যে, আপনি আগের শর্তটা মানলেই আমি এ ডিভোর্স পেপারে সাইন করবো। আমার ভুলের কারণে আমার বোনের জীবনটা নষ্ট হয়ে যাক তা আমি চাই না। তাই আমি চাই আমি এ বাড়ি থেকে চলে গেলেও পাপড়িকে আপনি অফিস থেকে বের করে দিবেন না।
পুষ্পর এমন কথা শুনে রাইয়ান চিন্তায় পড়ে যায়। সে এসব কিছু থেকে নিজের পিছুটা ছাড়াতেই পারছে না।
রাইয়ানকে চুপচাপ দাড়িয়ে থাকতে দেখে পুষ্প আবার বললো,
– কি হলো কথা বলছে না যে?
-ওকে, আপনার শর্তে আমি রাজি। সাইন করুন।
পুষ্প ডিভোর্স পেপারগুলোতে সাইন করে দেয়। সাইন করার সময় পুষ্পর বুকে চিনচিন ব্যাথা করছে। এ ব্যথার কারনটা খুঁজে পাচ্ছে না পুষ্প।
– তিন দিন পর আমাদের দুজনকে কোর্টে যেতে হবে। ঐদিন আমাদের ডিভোর্স পেপারগুলো কোর্টে সাবমিট করবো। আর আশা করি ঐদিন আমাদের শেষ দেখা হবে।

বলেই ডিভোর্স পেপারগুলো নিয়ে রাইয়ান বাহিরের দিকে চলে যায়। বাহিরে যেতেই মিসেস মাহমুদার সাথে রাইয়ানের দেখা হয়।
– কি ব্যাপার রাইয়ান, এখন আবার কোথায় বের হচ্ছিস? আর হাতে কিসের পেপার এগুলো?
– ডিভোর্স পেপার। এগুলো নিয়ে উকিল সাহেবের কাছে যাচ্ছি।
ডিভোর্সের কথা শুনে মিসেস মাহমুদা খুশি হয়ে বলল,
-মেয়েটা সাইন করেছে পেপারে?
– হুম।
-যাক আপদ বিদায় হবে। এরপর তোকে আমি আমার পছন্দের মেয়ের সাথে খুব ধুমদাম করে বিয়ে দিবো।
রাইয়ান আর কোন কথা না বলে চুপচাপ বাহিরে চলে যায়।

রাতে দাদাকে খাবার খাওয়াচ্ছে পুষ্প আর মনে মনে ভাবছে,
-কাল থেকে এসব কিছু করার আর সুযোগ থাকবে না আমার। দাদার সাথেও হয়তো আর কোনদিন দেখা হবে না। এ বাড়িতে দাদাকে পেয়েই আমি নিজের কষ্টগুলো ভুলে থাকতে পেরেছি।
পুষ্পকে এমন আনমনা দেখে দাদা জিজ্ঞেস করলো,
-কিরে দাদুভাই এমন আনমনা হয়ে আছিস যে? কি হয়েছে?
-কই, কিছু না তো। নাও ঔষধগুলো খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ো। আমিও যাই।
ঔষধ গুলো খাওয়ায়ে পুষ্প পেছন ফিরতেই পেছন থেকে দাদা তাকে ডাক দেয়,
-শুন দাদুভাই?
– আবার কি হলো?
-বস আমার পাশে।
পুষ্প দাদার পাশে বসতেই দাদা ওর হাত ধরে বললো,
– তুই এ বাড়িতে আসায় এ বাড়িটা পরিপূর্ণ হয়ে ওঠেছে। তোকে একএক করে এ বাড়ির সব দায়িত্ব নিতে হবে। সবার খেয়াল রাখতে হবে। আমার নাতি রাইয়ানের দিকে খেয়াল রাখবি। ওকে অনেক ভালোবাসবি। ছোটবেলা থেকে মা-বাবার আদর খুব কম পেয়েছে ও। ওর কাছের মানুষ বলতে আমিই আছি। আর আমিও চলে গেলে ওকে আর একা হতে দিস না।
-চুপ করবে তুমি। এসব কি কথা বলছো তুমি?
-বলতে যে আমাকে হবেই। তোর শ্বাশুড়ি তোকে অনেক বকে তাই নাহ?
-কই নাহ তো।
-তুই না বললেও আমি জানি। তবে তোর শ্বাশুড়ি ওপরে ওপরে নিজেকে কঠোর দেখালেও কিন্তু ভিতর থেকে মনটা অনেক নরম। তোকে তোর শ্বাশুড়ির মনটাও জিততে হবে। আর আমার রাশেদের কথা আর কি বলবো। ও ওপরে সবাইকে নিজেকে হাসিখুশি দেখালেও ওর ভিতরে ভিতরে যে কতটা কষ্ট পায় সেটা আমি জানি। প্রতি রাতেই আমার পাশে বসে কাঁদে রাশেদ। সে ভাবে আমি ঘুমিয়ে থাকি কিন্তু আমি যে ওর বাবা ওর সব কষ্টই আমি বুঝি। আমি চলে গেলে সবাইকে সামলানোর দায়িত্ব তোর। তুই এসব দায়িত্বগুলো ঠিকমতো নিতে পারবি তো?
দাদা এসব কথায় পুষ্পর চোখের কোণে পানি জমে যায়। আর মনে মনে বলে,
– কাল থেকে যার এ বাড়িতে কোন অস্তিত্ব থাকবে না তাকে তুমি এসব দায়িত্ব দিতে চাচ্ছো দাদুভাই?
দাদা আবার বললো,
– কি হলো কিছু বলছিস না যে?
– আরে দাদাভাই তুমি এসব সেন্টি কথা বলো না তো। তুমি আরো অনেকদিন বাঁচবে। এসব কথা বলে আর নিজেকে ইমোশনাল করো না। ঘুমাও এখন।
দাদা একটু হাসি দিয়ে বলল,
– আমি জানি, তুই সব দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করবি। তুই ই এ বাড়ির যোগ্য বউ।

দাদাকে ঘুম পাড়িয়ে রুমে চলে আসে পুষ্প। এসে দেখে রাইয়ান বিছানায় শুয়ে আছে। পুষ্প কোনো কথা না বলে সে পাশের সোফায় শুয়ে পড়ে।

মাঝরাতে রাইয়ানের ঘুম ভেঙে যায়। তার মনটা কেমন খা খা করছে। সবকিছুই তো তার ইচ্ছে মতো হচ্ছে তবে কেনো এমন অস্বস্তি লাগছে তার। পাশ ফিরতেই সোফায় শুয়ে থাকা পুষ্পকে দেখতে পায়।
পুষ্প শীতে কুজো হয়ে শুয়ে আছে। তাই পাশ থেকে কাঁথাটা নিয়ে রাইয়ান পুষ্পর শরীরে মুড়িয়ে দেয়। পুষ্পর চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে। রাইয়ান তার চুলগুলো হাত দিয়ে সরিয়ে দেয়। জানালা দিয়ে চাঁদের আলো এসে পড়ছে পুষ্পর মুখে। ঘুমের মধ্যে পুষ্পর চেহারাটা মায়াবী হয়ে ওঠেছে। রাইয়ান অপলক ভাবে তাকিয়ে থাকে পুষ্পর দিকে।

“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
কিছুক্ষণ পরই রাইয়ান হুশ ফিরে। নিজেকে সামলে নিয়ে রুমের বাহিরে গিয়ে রাইয়ান বলে,
-এসব কি করছি আমি। আমি পুষ্পকে এমন নজরে কেন দেখলাম। আমার মনে তার জন্য কোন ফিলিংস নেই। এসব ভাবাও পাপ আমার জন্য।

রাতে কিছুতেই ঘুম আচ্ছে না মি. রাশেদের। তার মনটা খুব আশফাশ করছে।
-বারবার কেন বাবার মুখটা চোখে ভেসে ওঠছে। একটু আগেই তো বাবাকে দেখে এসেছি তবুও মনটা এমন ব্যাকুল হয়ে ওঠেছে কেন। কিছুতেই ঘুম আসছে না। নাহ! এভাবে আর থাকতে পারছি না, যাই বাবাকে একবার দেখে আসি।

রাইয়ান তার রুমে সামনে পায়চারি করে সব ভাবছে।
-যা করছি সব ঠিক করছি তো।  যাকে ভালোবাসি না তাকে নিয়ে সারাজীবন থাকাটাও ঠিক হবে না।
হঠাৎ মি. রাশেদের চিৎকার শুনতে পায় তার দাদার রুম থেকে। রাইয়ান দৌড়ে তার দাদার রুমে যায়।

চলবে…….

ত্রিভুজ প্রেম পর্বঃ২২

0

ত্রিভুজ প্রেম
পর্বঃ২২
জান্নাতুল ফেরদৌস সূচনা

পু্ষ্প রাইয়ানের সাথে বাসায় এসেই দাদার রুমে ঢুকে পড়ে। পুষ্পকে দেখে রাইয়ানের দাদা চোখের পানি ছেড়ে বলে,
– কোথায় গিয়েছিলি, দাদুভাই?
দাদার মুখে এমন কথা শুনে পুষ্প অবাক হয়ে ভাবে,
-এ বাড়িতে তাকে কেউ পছন্দ করে না অথচ দাদার এতো আপন হয়ে গেলাম কিভাবে? অবশ্য আমার বিয়ের সত্যিটা জানলে তিনিও হয়তো আর আমাকে আপন ভাববেন না।

– কিরে নাতবৌ কথা বলছিস না কেন?
দাদার কথায় হুশ ফিরে পুষ্প। দাদার দিকে ফিরে মলিন একটা হাসি দিয়ে বললো,
– কথা তো বলবোই না। তুমি খাবার খাচ্ছো না, ঔষধ খাচ্ছো না? আবার এখন কান্নাও করছো। তোমার মতো পঁচা দাদার সাথে কে কথা বলবে?
দাদা পুষ্প এমন কথায় হেসে বললো,
– কি করবো বল, সকাল থেকে তোর সাথে দেখা করতে চাচ্ছি অথচ কেউ তোর সাথে আমাকে দেখাই করতে দিচ্ছে না। তাই রাগ করে কিছু খাই নি।
– শোনো দাদার কথা। আমি না থাকলে কি তুমি এইভাবেই খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দিবে?
-হ্যা। কিছুই খাবো না।
-খবরদার, আবার যদি এমন কথা বলো তো এখন সত্যিই সত্যিই চলে যাবো।
– না…না, তোকে যেতে হবে না। আমি এখন সব খেতে রাজি।
– তো এখন লক্ষ্মি দাদুর মতো খাবার গুলো খাও। আমি তোমাকে খাইয়ে দিচ্ছি।

দাদার রুমের দরজার পাশে দাড়ীয়ে রাইয়ান এসব দেখে ভাবছে,
– একদিনে মেয়েটা এসেই দাদাভাইয়ের এতো আপন হয়ে ওঠলো। ওফ, আর পারা যায় না দাদাভাইকে নিয়ে।

বিছানায় শুয়ে শুয়ে পাপড়ি ভাবছে,
– স্যার তো আপুর শর্তে রাজি হয়েছে। আমি কি কাল অফিসে যাবো? স্যারের কাছে তো আমাকে ক্ষমাও চাইতে হবে। আপুর ভুলের জন্য তো আর আমি নিজের জীবনটা নষ্ট করতে পারি না। আমি কালকে গিয়েই আমার সব ভুলের জন্য ক্ষমা চেয়ে নিবো। আর স্যার ডাকছি কেন? তিনি তো আমায় পছন্দ করে তাকে তো আমি নাম ধরেই এখন ডাকতে পারি।
বলেই মুচকি হাসি দিল পাপড়ি।

পুষ্প দাদাকে খাইয়ে, ঘুম পাড়িয়ে রুম থেকে বের হয়ে এসেছে। কিন্তু এখন রাতে কোথায় থাকবে সেটাই চিন্তা করছে সে। এ বাড়িতে তো তার কোন অধিকারই নেয়।
সকাল থেকে এখনো কিছু খাইনি পুষ্প। শরীরটাও তার দুর্বল লাগছে। কাউকেই দেখছে না আশেপাশে।
কিছুক্ষণ চুপচাপ দাড়িয়ে পুষ্প রাইয়ানের রুমের দিকে দুকদম এগুতেই মাথা ঘুরিয়ে পড়ে যায় পুষ্প।

সকালে চোখ খুলতেই নিজেকে বিছানায় আবিস্কার করে পুষ্প। বিছানা থেকে ওঠে দেখে সে রাইয়ানের রুমে শুয়ে আছে। হঠাৎ পাশ থেকে কেউ চা আর নাস্তা এগিয়ে দেয় তার দিকে। পাশে তাকিয়ে দেখলো রাইয়ান দাড়িয়ে আছে।
– নাস্তাটা করে নিন। কাল হয়তো সারাদিন কিছু খান নি তাই হয়তো শরীর দুর্বল হয়ে গেছে আপনার।
-কিন্তু আমি এখানে..
– আমি এনেছি। আপনি আমার রুমের সামনে অজ্ঞান হয়ে পড়ে ছিলেন।
-আপনি আমাকে এই রুমে…
– হুম এনেছি বলে এটা ভাববেন না যে আমি আপনাকে মেনে নিয়েছি। আমি আপনাকে এই এখানে কেনো এনেছি এটা ভুলে যাবেন না। দাদাভাই একটু ভালো হলেই আমি আপনাকে ডিভোর্স দিয়ে দিবো। আর ততোদিন আপনি এ বাড়িতে মেহমানের মতো থাকবেন।
বলেই রাইয়ান অফিসের জন্য রওনা হলো।

“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
পাপড়ি আজ একটু সুন্দর করে সেজেছে। কপালে কালো টিপ, নীল শাড়ি সব মিলিয়ে দারুণ লাগছে তাকে। খুব সকাল সকাল বেরিয়ে পড়ে সে অফিসের জন্য। আজ নীলের জন্যও অপেক্ষা করে নি সে। অফিসে গিয়েই রাইয়ানের কেবিনে ঢুকে পড়লো পাপড়ি।
একটুপরই রাইয়ান আসে। মুখ ভার করে আছে। অন্যদিনের মতো আজ তাকে হ্যান্ডস্যাম দেখা যাচ্ছে না। অফিসে এসেই কারো সাথে কথা না বলে হনহনিয়ে নিজের কেবিনে ঢুকে পরলো। কেবিনে ঢুকেই পাপড়ি দেখেই তার মেজাজ বিগড়ে যায়। আর রাইয়ানকে দেখেই পাপড়িও বসা দেখে দাঁড়িয়ে ওঠে। রাইয়ান রাগে বললো,
-তুমি এইখানে?
পরক্ষণেই তার পুষ্পের শর্তের কথা মনে পড়ে যায়।
পাপড়ি এগিয়ে এসে বলে,
-প্লিজ স্যার, আমাকে মাফ করে দিন। আমি জানি আমার নিজের পরিচয়টা আপনার কাছে লুকানোটা আমার ভুল হয়েছে। কিন্তু এ বিয়েতে আমার কোন হাত ছিলো না। আমি তো জানতামই না যে আপুর বিয়ে আপনার সাথে হবে, জানলে আমি এ বিয়ে কখনোই হতে দিতাম না।
বলেই রাইয়ানের হাতটা ধরলো পাপড়ি  আর বললো,
– প্লিজ স্যার, আমাকে বিশ্বাস করুন। আমিই সত্যিই কিছু জানতাম না।

পাপড়ি রাইয়ানের হাত ধরায় রাইয়ান মনে পাপড়ির জন্য লুকানো অনুভুতি গুলো জেগে ওঠে। সে আর পাপড়ির ওপর আর রেগে থাকতে পারলো না। রাগটা একটু কন্ট্রোল করে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে বললো,
– তোমার বোনের শর্ত অনুযায়ী আমি তোমাকে এ চাকরিতে রেখেছি। তাই নিজের কাজের মনোযোগ দেওয়াটাই তোমার জন্য এখন ভালো। আর এখন তুমি আমার থেকে দূরত্ব বজায় রাখে চলবে। অযথা আমার কেবিনে আসবে না। যাও এখন এখান থেকে।
পাপড়ি আর কিছু না বলে মাথাটা নিচু করে যেতে লাগলো।
পেছন থেকে আবার রাইয়ান বললো,
– আর শোনো মিস্ পুষ…. ওহ সরি, কি যেন তোমার নাম? ওহ, হে.. পাপড়ি কালকে নিজের আসল সার্টিফিকেটগুলো নিয়ে আসবে।
পাপড়ি কিছু না বলে মাথাটা নাড়িয়ে হ্যা বলে কেবিন থেকে চলে গেলো।
চলতে চলতে পাপড়ি মনে মনে বলতে লাগলো,
– শুধুমাত্র আপুর জন্য আজ আমায় রাইয়ানের সামনে এতোটা ছোট হতে হয়েছে। তবে আমিও হাল ছাড়ছি না, যে করেই হোক আমাকে রাইয়ানের মনে জায়গা করে নিতেই হবে।

সকালের নাস্তাটা দাদাকে খাইয়ে রুম থেকে বেরিয়ে আসে পুষ্প। মা, দাদীর কথা খুব মনে পড়ছে তার। ফোনটা হাতে নিয়ে কল করে আফিয়া বেগমের কাছে পুষ্প।
রান্নাঘরে রান্না করছে আফিয়া বেগম। পুষ্পর কলটা আসতেই কল ধরলেন তিনি।
-হ্যালো পুষ্প?
– হ্যালো মা, কেমন আছো?
-আমি ভালো আছি। তুই কেমন আছিস মা?
-আমিও ভালো আছি। দাদী, পাপড়ি কেমন আছে?
– তোর দাদী ভালো আছে তবে এখনো কাঁদে তোর জন্য। তোর কথা না শুনে তোকে বিয়ে দিয়ে অনেক বড় ভুল করে ফেলেছি রে মা, আমাদের মাফ করে দিস।
– কি বলছো এসব মা। তোমরা কিছুই করো নি, সবি আমার ভাগ্যের লিখন। তাই হয়তো এসব হয়েছে। দাদীকে কাঁদতে মানা করবে। আমার জন্য যেন আর একফোঁটাও চোখের জল না ফেলে।
-হুম। ওখানের সবাই তোকে মেনে নিয়েছে?
– না।  আমাকে এখানে কেউ কখনো মেনে নিবে না। আমি শুধু দাদার জন্য এখানে এসেছি। পাপড়ি কোথায় মা?
– অফিসে গেছে। সকালে কিছু খেয়েও যায়নি। না জানি কি করছে মেয়েটা অফিসে।
-হুম। আচ্ছা রাখি এখন।
ফোনটা রেখেই পুষ্প পাশে তাকাতেই মি. রাশেদকে দেখতে পেলো। মি. রাশেদ তার দিকে তাকিয়ে আছে। মি. রাশেদ কিছু একটা বলতে যাবে তখনি তাদের মাঝে মিসেস মাহমুদা চলে আসে।
– এই মেয়ে, এখানে কি করছো?
– না মানে?
– তোমার সব ফন্দি আমি বুঝি বুঝেছো? তুমি সবাইকে বোকা বানাতে পারলেও আমাকে পারবে না। তোমাকে এখানে বাবার খেয়াল রাখার জন্য আনা হয়েছে তো সেই কাজ ছাড়া আর কিছু যেন তোমাকে করতে না দেখি। মেহমানের মতো এসেছো মেহমানের মতো থাকবে বুঝেছো। যাও তোমার রুমে গিয়ে বসে থাকো। অযথা বাহিরে ঘুরাঘুরি করবে না।
পুষ্প আর কিছু না বলেই রুমে চলে যাই।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন

কেবিনে বসে বসে রাইয়ান ভাবছে,
– পাপড়ি আমার সামনে থাকলে অফিসে আমি কোন কাজই করতে পারবো না। পাপড়িকে দেখলে পাপড়ি প্রতি আমার মনের অনুভুতি গুলো জেগে ওঠে। আর আগের কথাগুলো মনে পড়লে খুব কষ্ট হয় আমার। মনে হয় আমার হৃদয়টা কেউ ছিড়ে ফেলেছে। নিজের ইমোশন গুলো কন্ট্রোলে রাখতে পারি না আর।
কিন্তু কি করবে আমি? এছাড়া যে আর রাস্তা নেই আমার কাছে। দাদাভাইকে সুস্থ রাখতে হলে পুষ্পর শর্ত আমাকে মানতে হবে।

চলবে…..

ত্রিভুজ প্রেম পর্বঃ২১

0

ত্রিভুজ প্রেম
পর্বঃ২১
জান্নাতুল ফেরদৌস সূচনা

দরজা খুলতেই পাপড়ি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। দরজায় রাইয়ান আর পুষ্প দাড়িয়ে আছে।
পাপড়ি মনে মনে বলছে,
– যা ভেবেছিলাম তাই সত্যি হলো। আপুর বিয়ে আমার বসের সাথেই হয়েছে।
রাইয়ান পাপড়িকে দেখে মোটেও অবাক হয়নি। সে তাকে দেখে বললো,
– তোমার কাছ থেকে আমি এটা কখনো আশা করিনি। তুমি আমাকে এভাবে ধোকা দিতে পারলে। আরে তোমাকে যখন আমার পছন্দ হয়নি তো বলে দিলেই তো পারতে আমাকে, তোমার বোনের সাথে বিয়ে দিয়ে আমার জীবনটা কেন নষ্ট করলে তুমি?

রাইয়ান কোন কথায় পাপড়ি বুঝতে পারছে না। সে রাইয়ানকে কিছু বলার আগেই পেছন থেকে মিসেস মাহমুদা বলে ওঠে,
– আরে এই মেয়েকে আর কি বলছিস। ধনী ছেলেদের দেখলে এদের মাথা ঠিক থাকে না। তাই নিজের পছন্দ হয়নি বলে তো আর হাতছাড়া করা যাবে না। তাই এই সব গেম খেলেছে আমাদের সাথে।

রাইয়ান আর মিসেস মাহমুদার কথা শুনে আফিয়া বেগমের ঘুম ভেঙে যায়। তিনি রুম থেকে বেরিয়ে আসে আর সাথে দাদীও।
আফিয়া বেগম আর দাদীকে দেখে মিসেস মাহমুদা এগিয়ে গিয়ে বললো,
– লজ্জা করলো না আপনাদের আমাদের সাথে এমন একটা গেম খেলতে। কি ভেবেছিলেন আমরা কিছুই জানতে পারবো না।
আফিয়া বেগম ও দাদী একে অপরের দিকে তাকাচ্ছে। দাদী মিসেস মাহমুদাকে বলল,
– আপনারা কি বলছেন এসব, আমি তো কিছুই বুজতে পারছি না?
দাদীর এমন প্রশ্নে মিসেস মাহমুদা বলল,
– ন্যাকা, কিছু বুজছে না। এই বুড়িটাই সব কিছুর গুরু।
পুষ্প কাঁদতে কাঁদতে বলল,
– প্লিজ, দাদীকে কিছু বলবেন না। ওনারা এসব বিষয়ে কিছুই জানে না।
আফিয়া বেগম জিজ্ঞেসাসূচক চাহনি নিয়ে পুষ্পকে জিজ্ঞেসা করলো,
– কি হয়েছে পুষ্প? ওনারা এসব কি বলছে?
আফিয়া বেগমের কথা শুনে রাইয়ান বলল,
– ওনি কি বলবে, আমি বলছি। আমি যার জন্য বিয়ের প্রোপজাল পাঠিয়েছিলাম সে পুষ্প নয় পাপড়ি।
-কিন্তু তুমি তো পুষ্পর জন্য….
– নাহ। আমি পাপড়ির অফিসের বস। আর সেখানে তাকে দেখে আমি পছন্দ করেছিলাম। কিন্তু পাপড়ি অফিসে তার নাম পুষ্প বলেছে। তাই আমি পাপড়িকে পুষ্প বলেছিলাম।
এসব কথা শুনে আফিয়া বেগম ও দাদী দুজনই অবাক। দাদী বললো,
-কি বলছো এসব। পাপড়ি পুষ্পর নামে তোমার অফিসে কাজ করে। কিন্তু আমরা তো এ বিষয়ে কিছুই জানতাম না।
– আচ্ছা বুজলাম আপনারা জানতেন না এটা, কিন্তু বিয়ের আগে তারা দুজন যমজ বোন এটা কেন বলেন নি?
এবার দাদী আর আফিয়া বেগম আবার একে অপরকে দেখছে। দাদী বললো,
– আসলে, বিয়েটা এতো তাড়াতাড়ি হয়ে গেছে যে, এ কথাটা বলতে আমরা ভুলেই গেছিলাম।
মিসেস মাহমুদা বললো,
– ভুলে গেছিলেন নাকি, ইচ্ছে করেই বলেন নি? রাইয়ান তুই আর এদের কথা শুনিস না। তোকে এরা আবার জালে ফেলার চেষ্টা করছে। তুই চল এখান থেকে।
বলেই রাইয়ানকে মিসেস মাহমুদা টানতে টানতে নিয়ে যায়। মি. রাশেদও আর একটি কথাও বললো না। তিনিও চুপচাপ চলে গেলেন।

-ছিঃ আপু ছিঃ, তুই এতোটা লোভী! আমি ভাবতেও পারি নি।
পাপড়ির এমন কথায় পুষ্প, আফিয়া বেগম, দাদী সবাই তার দিকে অবাক হয়ে তাকায়। পুষ্প বললো,
– এসব কি বলছিস তুই?
– কি বলছি বুজছিস না? আমাদের নামের অদল বদলটা মা-দাদী জানতো না ঠিকই কিন্তু তুই তো জানতি। তুই কিভাবে পারলি এ বিয়ে করতে? রাইয়ান যে আমার বসের নাম এটাও তুই ভালো করেই জানতি তবুও এ বিয়ে করে ফেললি তুই? আমি ভাবতাম তুই আমাকে অনেক ভালোবাসিস, আমার জন্য সব কিছুই করতে পারিস। কিন্তু এখন তো তুই আমার সবকিছু কেড়ে নিলি? আমার ক্যারিয়ার, আমার চাকরি, রাইয়ানকেও কেড়ে নিলি।
– এসব কি বলছিস তুই? পাগল হয়ে গেছিস? আমি…
পুষ্প কিছু বলার আগেই পাপড়ি বললো,
– ও প্লিজ স্টপ আপু। আর সাফাই গাইতে হবে না তোর। এতোদিন এতো বিয়ের সমন্ধ আসছিলো তুই কোনটাতে রাজি হস নি। আর  রাইয়ান যখন সমন্ধ পাঠালো তখনি তুই বিয়ের জন্য রাজি হয়ে গেলি। আমায় ছাড়া যে তুই কেন জলদি বিয়েটা করেছিস সেসব আমি বুজে গেছি।
পাপড়ি কথা শুনে আফিয়া বেগম তাকে ধমক দিয়ে বললো,
– চুপ কর, কিছু না জেনে এভাবে তুই পুষ্পকে কথা শুনাতে পারিস না।
– মা, তুমিও আপুর পক্ষ নিচ্ছো? এ পরিবারে কেউ আমার আপন নয়।
বলেই কাঁদতে কাঁদতে পাপড়ি নিজের রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয়।
পুষ্প অবাক হয়ে পাপড়ির দিকে তাকিয়ে আছে।
দাদী কাঁদতে কাঁদতে পুষ্পকে বললো,
– আমাকে মাফ করে দে, আমার জন্যই সব কিছু  হয়েছে। এই সবকিছুর জন্য একমাত্র দায়ী আমি। তোর ভালো করতে গিয়ে তোর জীবনটাই আমি নষ্ট করে দিলাম।  আমার অনেক বড় ভুল হয়ে গেছে।
– না দাদী তুমি এভাবে বলো না।  সব দোষ আমার। ঐদিন যদি তোমার কাছ থেকে বরের সম্পর্কে সব জেনে নিতাম তাহলে এসব কিছুই হতো না।
আফিয়া বেগম কাঁদতে কাঁদতে বললো,
– সব দোষ আমার। ঐদিন যদি তোকে আমি আমার কসম না দিতাম,  তাহলে তো তুই এ বিয়েতে কখনোই রাজি হতি না।শুধু আমার জন্যই এ বিয়েটা করেছিস তুই। আমাকে মাফ করে দে।
বলেই পুষ্পকে আফিয়া বেগম জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে।

সকালের ঘটনার পর রাইয়ান নিজের রুম থেকে আর বের হয়নি। হঠাৎ মি. রাশেদ এসে রাইয়ানকে ডাক দেয়।
– রাইয়ান তোর দাদাভাইয়ের অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছে।
রাইয়ান চমকে ওঠে বলে,
– কি বলছো? ডক্টরকে আসতে বলেছো?
-ডক্টরকে বললে কি হবে, বাবা তো কোন ঔষধ খাচ্ছে। বারবার পুষ্পকে খোঁজছে বাবা। তুই একটু গিয়ে দেখ বাবাকে বুঝাতে পারিস কিনা।

রাইয়ান আর কোন কথা না বলে দৌড়ে তার দাদাভাইয়ের রুমে যায়। রাইয়ানকে তার দাদা দেখে বলতে লাগলো,
– আমার নাতবৌ কোথায় রাইয়ান?
রাইয়ান কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,
– তুমি ঔষধ খাচ্ছো না কেন? ঔষধ না খেলে তুমি আরো বেশি অসুস্থ হয়ে যাবে যে?
– না আমি কিছুই খাবো না। তুই আগে আমার কাছে আমার নাতবৌকে এনে দে।
– আচ্ছা সে আসবে, আগে তুমি ঔষধগুলো খাও?
– নাহ! যতক্ষণ না আমি আমার নাতবৌকে দেখছি ততক্ষণ আমি কিছু মুখে নিবো না।
দাদাকে আর বুঝাতে পারছে না রাইয়ান। এদিকে ঔষধ না খেয়ে অবস্থা আরো খারাপ হয়ে যাচ্ছে দাদার। বাধ্য হয়ে সে গাড়ি ওঠে  রওনা হয় পুষ্পকে আনার জন্য।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন

সারাদিন কিছু খাইনি কেউ। পাপড়ি এখনো নিজের রুমেই আছে। আফিয়া বেগম কাঁদতে কাঁদতে নিজের শরীরের অবস্থা খারাপ করে ফেলেছে। তাই আফিয়া বেগমকে কিছু খায়ানোর চেষ্টা করছে পুষ্প। হঠাৎ পুষ্পকে কেউ বাহির থেকে ডাক দেয়। পুষ্প বাহিরে গিয়ে দেখে রাইয়ান তাকে ডাকছে। রাইয়ান ডাক শুনে পাপড়িও নিজের রুম থেকে বেরিয়ে আসে। রাইয়ানকে দেখে পুষ্প বলে,
– আপনি? এখন আবার কেন এসেছেন?
– আপনাকে নিয়ে যেতে এসেছি।
-মানে?
– দেখেন, আপনি জানেন আমার দাদাভাই অসুস্থ। সে আপনাকে বারবার খুজছে। আপনাকে না পেয়ে তিনি ঔষধ-খাবার কিছু খাচ্ছে না। এতে ওনার অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। আপনি চলুন আমার সাথে।
পুষ্প একটু মুচকি হেসে বললো,
– আপনারা বড়লোকেরা পারেনও বটে। সেই তো একটু আগে আপনার বাসায় আমাকে যা তা বলে টানতে টানতে এখানে নিয়ে আসলেন।আর এখন আবার আমার প্রয়োজন তো আবার নিতে চলেও এসেছেন?
– দেখুন, শুধু দাদাভাইয়ের জন্য আপনাকে নিতে এসেছি নয়তো আপনাদের চেহেরাও দেখতে এখানে আসতাম না।
-হুম। যেতে পারি আপনার সাথে তবে এক শর্তে।
– কি শর্ত?
পুষ্প পাপড়ির দিকে তাকিয়ে বললো,
– পাপড়িকে তার চাকরিটা ফিরিয়ে দিতে হবে। আর অফিসে তাকে আগের মতোই সম্মান দিতে হবে?
রাইয়ান তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বললো,
– পরিস্থিতির ফায়দা কিভাবে তুলতে হয় তা আপনাদের থেকে ভালো কেউ জানে না। আপনার শর্তে আমি রাজি। চলুন।
পুষ্প রাইয়ানের সাথে গিয়ে গাড়িতে ওঠে বসে চলে যায়। আর পাপড়ি শুধু তাকিয়ে দেখেছে তাদের।

চলবে…..

ত্রিভুজ প্রেম পর্ব – ২০

0

ত্রিভুজ প্রেম
জান্নাতুল ফেরদৌস সূচনা
পর্বঃ২০

বরযাত্রী সবাই গাড়িতে ওঠে পড়েছে, শুধু পুষ্প বাকি। গাড়ির সামনে পুষ্প এক এক করে সবার কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছে। চারপাশে ভিড় জমে গেছে। পুষ্প আফিয়া বেগমের কাছে যেতেই মা মেয়ে কান্না শুরু করে দিলো। পুষ্প কাঁদতে কাঁদতে বলছে
– মা, পাপড়ির সাথে একবার দেখা করে যেতে পারলাম না।
হঠাৎ দাদী চিৎকার দিয়ে বলে ওঠলো
– পুষ্প, পাপড়ি চলে এসেছে।
পুষ্প কথাটা শুনতেই পাগলের মতো ভিড়ের মধ্যে পাপড়িকে খুজতে থাকে।

রিকশা থেকে এক লাফে নেমে পাপড়ি আর নীল চারপাশের ভিড় ঠেলে ভিতরে ঢুকছে। পাপড়িকে দেখে পুষ্প পাপড়িকে একদম জড়িয়ে ধরে দুবোন কাঁদতে লাগলো। পাপড়ি কাঁদতে কাঁদতে বললো,
-আপু, তুই চলে যাচ্ছিস? তোকে ছাড়া যে আমি একদম থাকতে পারবো না। তোর সাথে আমার অনেক কথা বলার এখনো বাকি আছে। তুই চলে গেলে আমাকে কে বকবে? কে শাসন করবে? কার সাথে আমি ঝগড়া করবো?
– আমি চলে গেলে তো ভালোই হবে তোর জন্য। কেউ তোকে বকবে না, ঝগড়া করবে না, শাসন করবে না। কারো সাথে রুমটা আর শেয়ার করতে হবে না। মা দাদী এখন তোকে বেশি আদর করবে।
– না আপু, আমার কিছু লাগবে না। তুই শুধু আমাকে ছেড়ে যাস নে।
– যেতে তো আমাকে হবেই। তুই মা দাদীর খেয়াল রাখিস।  দুজনে যেন ঔষধগুলো ঠিক মতো খায় সেসবের খেয়াল রাখিস। আমি সবকিছুর দায়িত্ব তোকে দিয়ে যাচ্ছি।

রাইয়ান গাড়ির গ্লাস নামিয়ে পাপড়িকে দেখার চেষ্টা করছে কিন্তু চারপাশের ভিড়ের জন্য পাপড়ির চেহেরাটা দেখতে পারছে না। শুধু পাপড়ির কন্ঠটা তার পরিচিত মনে হচ্ছে।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন

পুষ্প পাপড়িকে ছেড়ে এবার নীলকে জড়িয়ে ধরে বললো,
– নীল, আমার বোনটার দায়িত্ব আমি তোকে দিয়ে যাচ্ছি। ওর ঠিক মতো খেয়াল রাখিস।ওর সাথে কম ঝগড়া করিস।
পুষ্পের এসব কথার গভীরতা কেউ না বুজলেও নীল ঠিকই বুজেছে। কারণ পুষ্প তো নীলের পাপড়ির প্রতি তার অনুভূতি গুলোর খবর জানে। পাপড়িকে যে নীল কতটা ভালোবাসে সেটা আর কেউ না বুজলেও পুষ্প ঠিকই বুঝে গেছে অনেক আগে।
পুষ্পর কথা শুনে নীল বললো,
– তুই কোন চিন্তা করিস না। আমি সবার খেয়াল রাখবো। তোর এই ভাইটার ওপর ভরসা রাখিস চিরদিন।
বলেই পুষ্পকে নীল ধরে নিয়ে গাড়িতে বসিয়ে দেয়।
আর গাড়ির ড্রাইভার গাড়ি স্টাট দিয়ে চালাতে শুরু করে।

– কিভাবে পারলে তোমরা, আমাকে ছাড়া আপুর বিয়েটা এভাবে দিয়ে দিতে? আমাকে কি তোমরা এ পরিবারের কোন সদস্যই মনে করো নাহ?
পাপড়ি এমন কথা শুনে মা দাদী দুজনেই চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।
– কি হলো, কোনো কথা বলছো না কেন? আমি থাকলে কি বিয়ে ভেঙে দিতাম যে আমাকে ছাড়াই আপুর বিয়েটা এভাবে দিয়ে দিলে? আমার কথাটা একবার চিন্তা করলে না? মানলাম আপু বিয়ে করতে রাজি ছিলো না, তাই বলে ভালো সমন্ধ এসেছে আর তোমরা জটপট বিয়ে দিয়ে দিলে? ছেলের সম্পর্কে ভালো করে খোঁজখবর না নিয়েই বিয়ে দিয়ে দিলে? এতো কিসের তাড়াহুড়ো ছিলো তোমাদের আপুর বিয়ে নিয়ে যে আমার আসার অপেক্ষাও করলে নাহ?

পাপড়ির এসব প্রশ্নের উত্তর আফিয়া বেগম দিতে পারবে না, তাই নিরবে কান্না করতে করতে তার রুমে চলে গেলো। হঠাৎ দাদী বলল ওঠলো,
– আহ! এতো রাগ হচ্ছিস কেনো? কোন কারণ ছাড়া তো বিয়েটা এতো তাড়াতাড়ি দেই নি। একটু শান্ত হ। আমি তোকে সব খুলে বলছি।

বাড়ির ভিতর গাড়ি প্রবেশ করতেই গাড়ি থেকে জলদি নেমেই বাড়ির ভিতর যেতে লাগলো মিসেস মাহমুদা। পেছন থেকে তার হাতটি ধরে মি. রাশেদ বললো
– কোথায় যাচ্ছো? বউমাকে বরণ করবে নাহ?
– কিসের বউমা? আমি ঐ মেয়েকে কখনো বউ হিসেবে মেনে নিবো না। আর আমার ছেলের কথা রাখতে শুরু এ বিয়েতে এন্টেট করেছি তাই বলে ভেবে নিও না আমি আমার কথা ভুলে গেছি। আমি আর কোন কিছুতেই এন্টেট করছি না।(রেগে)
বলেই নিজের হাতটা ছাড়িয়ে হনহনিয়ে বাড়ির ভিতর চলে গেলো মিসেস মাহমুদা।

মি. রাশেদ মুখটা কালো করে গাড়ি থেকে নেমে তার মেয়ে নুরীকে বললো
-বউমাকে তুমি বরণ করবে নুরী। যাও সবকিছু রেডি করো।
– কিন্তু বাবা…
– যা বলেছি, তাই করো যাও।

শায়ন পুষ্প আর রাইয়ানকে গাড়ি থেকে নামিয়ে বাসার সামনে নিয়ে যাচ্ছে। নুরী তাদের বরণ করে বাড়ীর ভিতরে নিয়ে গেল। পুষ্প চারপাশ তাকিয়ে দেখলো বিশাল বড় তার শ্বশুরবাড়ি। সবকিছুই সাজানো গোছানো।
পুষ্পকে বাড়ির ভিতর প্রবেশ করিয়েই সবার আগে রাইয়ানের দাদা রুমে নিয়ে যায় মি. রাশেদ। রুমে নিয়ে পুষ্পকে রাইয়ানের দাদার সামনে বসিয়ে মি. রাশেদ বললো,
-দেখো বাবা, তোমার নাতবৌকে নিয়ে এসেছি।
রাইয়ান দাদাভাই পুষ্প তাকিয়ে হেসে ওঠে পুষ্পের মাথায় হাত রেখে বললো
– এ আমার নাতবৌ?
পুষ্প ওঠে দাদার পায়ে ধরে সালাম করে। পুষ্প দেখে দাদার চোখের কোনে পানি জমে যায় আর বলে
– আজ আমার আর কোন কষ্ট নেই। এখন আমি নিশ্চিন্তে আমার চোখ দুটো বন্ধ করতে পারবো।
রাইয়ান বললো,
– এসব কি বলছো দাদাভাই? তুমি আমাদের ছেড়ে কোথাও যাবে না।
রাইয়ান কথা শুনে দাদাভাই রাইয়ানকে কাছে ডেকে বললো,
– ওর দায়িত্বটা ঠিকমতো নিবি দাদাভাই। আমার নাতবৌকে কোন কষ্ট দিবি না। ওকে অনেক ভালোবাসবি।
-হ্যা বাবা, সে তো রাইয়ানকে নিতেই হবে। এখন সবাই নিজ নিজ রুমে যাও। বাবা তুমিও একটু বিশ্রাম নাও।

মি. রাশেদের কথা শুনে সেখানে উপস্থিত সবাই নিজ নিজ রুমে যেতে লাগলো।

দাদীর কাছ থেকে বরের সব বিরবণ শুনে পাপড়ি একদম অবাক হয়ে রইল। তার মনে একটা ভয় কাজ করতে শুরু করছে। মনে মনে বারবার বলতে লাগলো
– আমি যা ভাবছি তা যেন কোনদিনও না হয়। এমনটা হলে আমার সব শেষ হয়ে যাবে।
আপুর বরটাকে একবার দেখতে পারলে সবকিছু একবার ক্লেয়ার হয়ে যেতো।

রাইয়ানের রুমে খাটের মাঝে ঘোমটা টেনে চুপচাপ বসে আছে পুষ্প। এতোক্ষণ মেকাপ,গয়নাগাটি আর শাড়ির ভারে খুব অস্থির লাগছিলো তার। কিন্তু চেঞ্জ করে এখন খুব ভালো লাগছে পুষ্পর। খুব ক্লান্ত সে।
হঠাৎ দরজা খুলার আওয়াজ। রাইয়ান রুমে ভিতরে ডুকেছে। রাইয়ানকে দেখে মায়ের কথা মতো সালাম করতে এগিয়ে যায় পুষ্প। রাইয়ান পুষ্প বাধা দিয়ে বললো,
– সালামের দরকার নেই। আমি তোমার থেকে খুব একটা বয়সে বড় না।
রাইয়ান পুষ্পর কাছে গিয়ে বসে বললো,
-আসলে কিভাবে কথা শুরু করবো বুঝে পাচ্ছি না। অফিসে প্রথমদিন তোমাকে দেখেই আমার খুব ভালো লেগেছিলো। তোমার ব্যবহার-আচরণ সব কিছুতেই আমি মুগ্ধ হয়েছিলাম।
রাইয়ানের এসব কথা শুনে পুষ্প খুব আশ্চর্য হচ্ছে। মনে মনে বলছে,
– অফিসে কখন দেখলো আমায়? আমি তো এনাকে আজই প্রথম দেখছি? কার কথা বলছেন ওনি?
পুষ্পকে কিছু বলতে না দেখে রাইয়ান বললো,
– কি হলো কিছু বলছো না যে? আমি ভাবতাম হয়তো আমারি একটু লজ্জা বেশি। কিন্তু এখন তো দেখছি আমার থেকে তুমিই বেশি লজ্জা পাচ্ছো। অফিসে তো আগে কখনো এতটা লজ্জা পেতে দেখে নি তোমায়?

পুষ্প আর থাকতে না পেরে ঘোমটা ওঠিয়ে বললো,
– আপনি এসব কি বলছেন? আমি তো কিছুই বুজছি না। আমি আপনার অফিসে গেলাম কখন? আমি তো আজই প্রথম দেখছি আপনাকে। আপনার নামটাও তো আমি এখনো জানি না।
রাইয়ান আশ্চর্য হয়ে বললো,
-এসব কি বলছো? তুমি কি সব ভুলে গেলে নাকি? তুমি আমার পার্সোনাল এসিস্ট্যান্ট হিসেবে অফিসে কাজ করতে। আমি তোমার বস রাইয়ান চৌধুরী, চৌধুরী গ্রুপস অফ কোম্পানির মালিক।
রাইয়ান কথা শুনে এতোক্ষণে সব বুজতে পারলো পুষ্প। সব শুনে এখন ভয় পেতে লাগলো সে। আমতা আমতা করে বললো,
– আপনি যাকে অফিসে দেখেছেন সে আমি নই, সে আমার যমজ বোন পাপড়ি।
কথাটা শুনতেই রাইয়ানের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো। সে কিছুই বুজতে পারছে না সে।
– এসব কি বলছো তুমি পুষ্প? আমি তো কিছুই বুজতে পারছি না।
পুষ্প রাইয়ানকে সব খুলে বললো।

পুষ্প কাছ থেকে সব শুনে রাইয়ান নির্বাক হয়ে গেলো। কাছ থেকে পুষ্পকে দেখে চেহেরার পার্থক্যটা এখন বুঝতে পারছে সে।আর কিছু না বলেই সে রুম থেকে হনহনিয়ে চলে গেলো। পুষ্প রাইয়ানকে ডাক দিতে চেয়েও ডাক দিতে পারলো না। বসে বসে কাঁদতে লাগলো।

রাতে কিছুতেই ঘুম হচ্ছে না পাপড়ির। এক চিন্তায় তার মাথায় ঘুরছে। ওপরওয়ালার কাছে বারবার প্রার্থনা করছে যা সে ভাবছে তা যেন সত্যি না হয়।

সকাল হতেই বাড়ি ফিরে রাইয়ান। সারারাত বাহিরেই কাটিয়েছে সে। সকালে রাইয়ানকে বাহির থেকে আসতে দেখে মিসেস মাহমুদা সামনে দাঁড়িয়ে বললো,
– কি ব্যাপার রাইয়ান, এতো সকালে কোথায় থেকে আসছো? দেখে তো মনে হচ্ছে সারারাত বাহিরেই ছিলে। নিজের পছন্দে বিয়ে করার পর সারারাত বাহিরে থাকার কারনটা জানতে চাচ্ছি?
মায়ের প্রশ্নের কোনো উত্তর না দিয়ে সে বললো,
– মা সবাইকে ৫ মিনিটের মধ্যে নিচে আসতে বলো। সবার সাথে আমার কিছু কথা আছে।
বলেই রাইয়ান হনহনিয়ে নিজের রুমে চলে গেলো।

সারারাত পুষ্পও ঘুমায় নি। এখনো খাটের মাঝখানে বসে কাঁদছে সে। রাইয়ানকে আসতে দেখে চমকে ওঠে সে। রাইয়ান তার দিকে এগিয়ে এসেই তার হাত ধরে টানতে টানতে নিচে নিয়ে গেল। পুষ্পকে রাইয়ান এভাবে টানতে দেখে নিচের সবাই অবাক। মি. রাশেদ রেগে বললো,
– কি করছো কি তুমি? নতুন বউয়ের সাথে এমন আচরণ কেনো করেছো রাইয়ান?
রাইয়ান রেগে বললো,
– এই মেয়ে সেই মেয়ে নয় যাকে আমি বিয়ে করতে চেয়েছিলাম। এ তার যমজ বোন। আমাদের সাথে অনেক বড় ধোঁকা হয়েছে বাবা।
– এসব কি বলছো তুমি আমি তো কিছুই বুজতে পারছি না।
রাইয়ান সবাইকে সব খুলে বললো।

সারারাত ঘুম হয়নি পাপড়ির। চিন্তায় মাথাটাও তার ধরে ওঠেছে।
-আপুর বরকে একবার না দেখলে আমার মনে শান্তি আসবে না। অফিসেও যেতে হবে। ফ্রেশ হয়ে মাকে একটু দেখে নিই। তারপর আপুকে কল করব।

রাইয়ানের কাছ থেকে সব শুনার পর সবাই অবাক হয়ে যায়। মিসেস মাহমুদা বললো,
– আমি তো প্রথম থেকেই এদের ওপর সন্দেহ  হয়েছিলো। এসব মিডিলক্লাস ফেমেলিগুলো ধনী পরিবার পেলেই তাঁদের নিজেদের জালে আটকানোর প্লেন করে বসে।
মি. রাশেদের দিকে তাকিয়ে আবার মিসেস মাহমুদা বললো,
– হলো তো শান্তি এবার। তোমার জেদের কারণে আমার ছেলের জীবনটা নষ্ট হয়ে গেছে। রাইয়ান তুই এখুনি এই মেয়েকে ওদের বাসায় দিয়ে আয়। তোকে আমি আরো ভালো কোন মেয়ের সাথে বিয়ে দেবো। আর এই মেয়ের পরিবারকে আমি জেলে ভাত খাওয়াবো। আমাদেরকে ধোকা দেওয়া।
পুষ্প মিসেস মাহমুদার কথা শুনে কাঁদতে কাঁদতে হাতজোড় করে বললো,
-প্লিজ এমন করবেন না। আমার মা, দাদীর কোন দোষ নেই তারা এ সম্পর্কে কিছুই জানতো না। 
-এ্যাহ! এসব ন্যাকা কান্না দিয়ে আর আমাদের মন গলানোর চেষ্টা করো না। রাইয়ান তুই এখুনি এই মেয়েকে ফিরিয়ে দিয়ে আয়।
মায়ের কথামতো রাইয়ান পুষ্পকে টানতে টানতে গাড়িতে বসিয়ে গাড়ি স্টাট দেয়। তাদের পেছন পেছন গাড়িতে মি. রাশেদ ও মিসেস মাহমুদাও গেলো।

পাপড়ি ফ্রেশ হয়ে মায়ের রুমে যায়। আফিয়া বেগম এখনো ঘুমচ্ছে। তাকে ঘুমাতে দেখে পাপড়ি আর ডাক দিলো না।  আস্তে করে মায়ের ফোনটা নিয়ে বাহিরে চলে এসে পুষ্পকে কল দিতে যাবে এমন সময় দরজায় ঠকঠক আওয়াজ হয়।
পাপড়ি দরজা খুলেই অবাক হয়ে বললো,
-স্যার আপনি?

চলবে…..

ত্রিভুজ প্রেম পর্ব -১৯

0

ত্রিভুজ প্রেম
জান্নাতুল ফেরদৌস সূচনা
পর্বঃ১৯

আয়নার সামনে বসে বসে নিজেকে দেখে খুব অবাক হচ্ছে পুষ্প। নিজের এ রূপ আগে কখনো দেখেনি। সাজলে যে তাকে খুব সুন্দর লাগে তা সে আজ উপলব্ধি করলো। আগে কখনো নিজেকে গয়নাগাটি, সাজগোজ, শাড়ি পড়ে সাজায় নি। অবশ্য জীবনে কখনো বিয়ে করবে সেটাই বা কখন ভেবেছিলো সে।

বরযাত্রী সবাই বাহিরে বসে আছে। নীলের মা, দাদী, আফিয়া বেগম সবাইকে আপায়ন করছে। পাশের বাসার লোকজনরা দরজায় উকি দিচ্ছে বরযাত্রী দেখার জন্য। পুষ্পর বিয়ে শুনে অনেকেই অবাক হচ্ছে। পুষ্প যে জীবনে কখনো বিয়েও করবে তা অনেকের ধারণার বাহিরে ছিলো।

ট্রেনের জানালা দিয়ে বাহিরের দৃশ্য দেখছে পাপড়ি। হঠাৎ নীল এসে বললো,
– পাপড়ি ধর, জেঠিমা ফোন দিয়েছে।

-হ্যালো, মা?
-কোথায় তোরা? কতদূর আসলি? এখানে তো বরযাত্রী চলে এসেছে।
– এতো মা, মাঝামাঝি আছি। ২ ঘন্টার মতো লাগবে আরো।
– কিহ! এতো দেরি? এদিকে তো বরযাত্রী সব বিয়ে পড়ানোর কথা বলছে?
– কি করবো মা? আমার হাতে তো কিছু নেই। আমাকে ছাড়া বিয়ে ঠিক করে ফেলেছো তো বিয়েটাও আমাকে ছাড়াই দিয়ে দিতে পারো।(অভিমান করে)
– এসব কি বলছিস? তোকে ছাড়া তোর বোনকে বিয়ে দিয়ে দিবো?
– হুম। এ কথাটা বিয়ের দিন ঠিক করার আগে ভাবলে ভালো হতো।
বলেই পাপড়ি রাগ করে ফোনটা কেটে দেয়। খুব রাগ হচ্ছে তার মা,দাদীর ওপর। কীভাবে পারলো তাকে ছাড়া সব কিছু ঠিক করে ফেলতে।

কাজী সাহেব চলে এসেছে অনেকক্ষণ হলো। বিয়ে পড়ানোর কথা বলছে। কিন্তু আফিয়া বেগম পাপড়ি ছাড়া বিয়ে শুরু করতে নারাজ। পুষ্পর চোখ দুটোও পাপড়িকে খুজছে বারবার। দাদী এতোক্ষণ বিষয়টা সামলে নিলেও এখন আর দেরি করতে পারছে না। এদিকে বরযাত্রীকেও নারাজ করতে চাইছে না দাদী। আফিয়া বেগমকে অনেক বুঝিয়ে সুঝিয়ে রাজি করালো দাদী আর নীলের মা।

বিয়ে শুরু হলো। বর-কনে সামনা-সামনি বসে আছে। পুষ্প নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। চোখে পানি ছলছল করছে। সবকিছু ঝাপসা দেখছে সে। রাইয়ানের চেহেরাটাও এখনো দেখেনি সে।
অপরদিকে রাইয়ান পুষ্পের দিকে দু-তিনবার তাকিয়েছে। পুষ্প-পাপড়ি যমজ বোন হওয়ায় চেহেরাও এক। আর মেকাপের কারণে চেহেরার পার্থক্যটাও ধরতে পারেনি সে। আর লজ্জার কারণে মাথাটাও নিচু করে রেখেছে রাইয়ান।

রাইয়ান কবুল বলে দিয়ে সই করে দিয়েছে বিয়ের রেজিষ্ট্রার কাগজে কিন্তু পুষ্পকে যখন কবুল বলতে বললো পুষ্প চুপচাপ বসে আছে। কান্নাগুলোর সব গলায় এসে আটকে পড়ছে পুষ্পর। কথা বলতে পারছে না। অনেক কষ্টে কাগজে সইটা করেছে। কিন্তু এখনো কবুল বলা বাকি। পুষ্পকে কোন কথা বলতে না দেখে দাদী আফিয়া বেগমকে পুষ্পের কাছে নিয়ে বসায়। পুষ্প মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে কবুল বলেই আফিয়া বেগমকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে।

-আর মাত্র একটা স্টেশন পাপড়ি, এরপরই আমরা বাসা চলে যাবো আমরা।
নীলের কথায় নীলের দিকে চোখে ছলছল পানি নিয়ে তাকিয়ে পাপড়ি বললো
– আমরা আপুর দেখা পাবো তো?
– হ্যা, অবশ্যই পাবো। পুষ্প আমাদের সাথে দেখা না করেই কি চলে যাবে নাকি শ্বশুরবাড়ি। আর যদি চলেও যায় তাহলে এখান থেকে আমরা সরাসরি ওর শ্বশুরবাড়িই যাবো দেখিস।

“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
পুষ্প কাঁদতে কাঁদতে তার অবস্থা একদম খারাপ হয়ে গেছে। পুষ্পর এ অবস্থা দেখে মি. রাশেদ দাদীকে গিয়ে বললো
– বউয়ের যা অবস্থা দেখছি, বিদায়ের কাজটা শুরু করাই ভালো। নাহলে এভাবে কাঁদতে থাকলে ওর অবস্থা আরো খারাপ হয়ে যেতে পারে।
– কিন্তু বাবা, আমি তো তোমাকে বলেছিই ওর ছোট বোনটা এখনো আসেনি। ওর সাথে দেখা না করেই কিভাবে পুষ্পকে বিদায় দিবো?
– দেখেন, বউয়ের যা অবস্থা দেখছি এভাবে কাঁদতে থাকলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়ে যেতে পারে। আর তাছাড়া কাল তো বউমাকে আবার নিয়েই আসবো তখন না হয় দুবোন দেখা করে নিবে। আর যদি তাতেও না হয় পরে বউয়ের সাথে বউয়ের বোনকেও আমাদের বাসায় নিয়ে যাবো। আমাদের এখানে গিয়ে না হয় কয়েকদিন বেড়াবে আপনার ছোট নাতনী। আপনি আর না বলবেন না বিদায়ের কাজ শুরু করুন। তাছাড়া বেয়াইন সাহেবারও তো কাঁদতে কাঁদতে অবস্থা খারাপ করে ফেলেছে।

চলে এসেছি পাপড়ি আমরা। আর কিছুক্ষণ পরই আমরা বাসায় থাকবো।
পাপড়ি আর নীল ট্রেন থেকে নেমে রিকসায় ওঠেছে।

চলবে…..

ত্রিভুজ প্রেম পর্ব -১৮

0

ত্রিভুজ প্রেম
জান্নাতুল ফেরদৌস সূচনা
পর্বঃ১৮

আজ পুষ্পর বিয়ে। ব্যস্ততার মধ্য দিয়ে মাঝের একদিন কেটে গেলো। সকাল থেকে আফিয়া বেগম, দাদী আর নীলের মা বিয়ের আয়োজন নিয়ে ব্যস্ত।
পুষ্প এখনো নিজেকে বিয়ের জন্য প্রস্তুত করতে পারছে না। একটা অপরিচিত মানুষের সাথে তাকে সারাটা জীবন থাকতে হবে এটা ভাবলেই তার বুকটা কষ্টে ফেটে যায়। যেই মানুষটার সাথে তার বিয়ে হতে চলছে তাকে জানার সুযোগটাও দিলো না তাকে তার মা আর দাদী।

রূপা ও অবিনাশ বাবুর কাছে পাপড়ি সবকিছু বলে আজ সকালেই বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে যায় নীল আর পাপড়ি। স্টেশনে এসে ট্রেনের অপেক্ষা করছে তারা দুজন। পাপড়ির মনে পুষ্পর বিয়ে নিয়ে অনেক প্রশ্ন জেগে ওঠেছে আর সাথে পুষ্পর বিয়ে নিয়েও টেনশন চলছে। তাকে ছেড়েই এতো বড় ডিশিসন কীভাবে নিয়ে ফেললো মা আর দাদী।
রাতে যখন পাপড়ি পুষ্পকে ফোন দিয়েছিলো তখন ফোনে পুষ্প অনেক কান্না করছিলো। বোনের এভাবে কান্না কিছুতেই সহ্য হচ্ছে না পাপড়ির।
কিছুক্ষণ পরই ট্রেন চলে আসে। ট্রেনে ওঠে পড়েছে নীল আর পাপড়ি এখন শুধু বাসায় যাওয়ার অপেক্ষা।

সকাল থেকেই রাইয়ান তার মাকে তার বিয়েতে যাওয়ার জন্য রাজি করানোর অনেক চেষ্টা করেছে। কিন্তু মিসেস মাহমুদা কিছুতেই রাজি হচ্ছে না। মি. রাশেদও অনেকবার বলেছে তাকে কিন্তু কোন লাভ হয়নি।
অবশেষে রাইয়ান তার মাকে বললো
– তুমি যদি জীবনে আমাকে এতটুকু ভালোবেসে থাকো তো আমার বিয়েতে তুমি যাবে। আর যদি না যাও তো ভাববো তুমি আমাকে কখনো তোমার সন্তানই ভাবো নি।

ছেলের এমন কথা শুনে আর রাগ করে থাকতে পারলো না মিসেস মাহমুদা। শুধুমাত্র ছেলের খুশির জন্য বিয়েতে যেতে রাজি হলো  সে। মিসেস মাহমুদার এমন সিদ্ধান্তে সবাই খুশি হলো।

আফিয়া বেগম রুমে গিয়ে পুষ্পের মাথায় হাত রেখে বললো
– এখনো আমাদের ওপর অভিমান করে কাঁদছিস তুই?
মায়ের এমন কথায় পুষ্প আফিয়া বেগমের দিকে তাকালো আর বললো
– অভিমান!  সেটা তো আমার আপন যারা তাদের সাথে করা যায় আর তোমরা তো আমায় মুহূর্তেই পর করে দিলে। আমার ইচ্ছা-অনিচ্ছা কিছুই জানতে চাইলে না?
আফিয়া বেগম মুচকি হেসে বললো
– শুনো মেয়ের কথা, বিয়ে দিয়ে দিলেই কি মেয়ে পর হয়ে যায়? তোকে ৯ মাস পেটে ধরেছি আর সামান্য বিয়ে কি তোকে আমাদের থেকে আলাদা করে দিবে? তোর বাবা যদি আজ বেঁচে থাকতো তখনও কি তুই এভাবেই বলতি? হ্যা, তোর বিয়েটা তাড়াহুড়ো করে দিচ্ছি, তাই বলে এ নয় যে তোকে আমরা বোঝা ভাবি। তোকে সারা জীবন সুখে দেখতে চাই তাই এ বিয়ে দিচ্ছি।
আফিয়া বেগম পুষ্পের হাত ধরে বললো
– আমি ছেলেটার চোখে তোর জন্য অনেক ভালোবাসা দেখেছি তাই আমি এ বিয়েতে মত দিয়েছি। তুই ঐ বাসায় অনেক সুখি থাকবি।

মায়ের মুখে এতো খুশি দেখে পুষ্প আর কিছু বলতে পারলো না। মায়ের মুখের দিকে তাকিয়েই নিজেকে বিয়ের জন্য প্রস্তুত করে নেয় সে।

রাইয়ান লাল সেরোয়ানি পড়েছে। বুকে বা পাশে একটা সুন্দর ব্রোজ, মাথায় পাগড়ী, পছন্দের পারফিউম সব মিলিয়ে রাইয়ানকে খুব সুন্দর লাগছে। আর কিছুক্ষণ সময় এরপরই যাবার পালা। সিড়ি দিয়ে নামতেই সবাই এক নজরে রাইয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে। মি. রাশেদ মুখে হাসি নিয়ে রাইয়ানকে জড়িয়ে ধরে বললো
– আজ আমার ছেলেকে একদম রাজপুত্রের মতো লাগছে।
পেছন থেকে শায়ন বললো
– হ্যা, সে তো লাগবেই। সাজিয়ে কে দিয়েছে দেখতে হবে তো। আর সুন্দর না লাগলে রাজকুমারী যদি বিয়ে না করে তাহলে তো আমার বন্ধুর মনটাই ভেঙ্গে যাবে।
শায়নের এমন কথায় সবাই একসাথে হেসে ওঠলো। 

পুষ্পকে সাজানো হচ্ছে। পাশের বাসার কণা দিদি তাকে সাজিয়ে দিচ্ছে। পুষ্প মনে মনে বলছে,
– পাপড়ি থাকলে এই সাজানোর কাজটা পাপড়িই করতো। কতো ইচ্ছে ছিলো পাপড়ির তার বিয়ে নিয়ে। এখন হয়তো ট্রেনে বসে আমার কথাই ভাবছে।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন

পাপড়ির আর অপেক্ষা সহ্য হচ্ছে না। কখন যে বাসায় যাবে। আপুর কথা খুব মনে হচ্ছে তার। আপুর বিয়েতে সবসময় পাশে থাকার ইচ্ছাটা আর পূরণ হলো না।
নীল পাপড়িকে চুপচাপ থাকতে দেখে তাকে হাসানোর অনেক চেষ্টা করেছে। কিন্তু নীল ব্যর্থ, পাপড়ি তার কোনো কাজেই খুশি বা রাগ হচ্ছে না। ট্রেন সিটের এক কোনায় স্থির হয়ে বসে আছে পাপড়ি।

বরযাত্রী চলেছে কথাটা শুনতেই পুষ্প বুকে ধক করে ওঠল। মনের ভিতর আবার সেই অজানা ভয়টা কাজ করতে শুরু করেছে। এমনসময় পাপড়িকে পুষ্পর খুব প্রয়োজন।
– কোথায় পাপড়ি তুই, এখনো আছিস না কেন?

বরযাত্রী চলে আসতেই আফিয়া বেগম তাদের বরণ করে নেয়। হঠাৎ করে শায়ন মজা করে বলে ওঠলো,
– শোনেছি, হবু ভাবির একটি ছোট বোন আছে তো সে কোথায়? বিয়েতে তো শালীদের অনেক কাজ থাকে।
পাপড়ির কথা বলতেই আফিয়া বেগমের মনটা খারাপ হয়ে যায়। পাপড়ি ছাড়া এ বিয়ে কিছুতেই দিতে চাচ্ছিলো না আফিয়া বেগম, শুধু শাশুড়ীর কথা ফেলতে পারবে না বলে এখনো চুপচাপ আছে।
শায়নের এমন কথা শুনে দাদী বললো,
– আপনাদের তো বলেছিলাম যে আমার ছোট  নাতনী তার বান্ধবীর বিয়েতে গেছে। ট্রেনে আছে কিছুক্ষণ পরই চলে আসবে।

চলবে….

ত্রিভুজ প্রেম পর্ব – ১৭

0

ত্রিভুজ প্রেম
জান্নাতুল ফেরদৌস সূচনা
পর্বঃ১৭

নীল বিয়ে বাড়ি তন্নতন্ন করে খোঁজেও পাপড়িকে খুজে পাচ্ছে না।
– কি ব্যাপার, গেলো কই মেয়েটা?
অবশেষে পাপড়ি খুজে না পেয়ে রূপাকে গিয়ে পাপড়ির কথা জিজ্ঞেস করে। কিন্তু রূপাও জানে না পাপড়ি কোথায়। নীল মনে মনে বলছে
– ঐসময়ের ঐ ঘটনার জন্য পাপড়ি কি রাগ করে কোথাও চলে গেলো?
সব জায়গায় পাপড়িকে খুজে নীল যখন হতাশ হয়ে বাড়ির ভিতর যেতে লাগলো তখনি তার সাথে অবিনাশ বাবুর সাথে দেখা হয়। নীলেকে হতাশ দেখে তিনি জিজ্ঞেস করলো
– কি হয়েছে নীল, এমন হতাশ দেখাচ্ছে কেন?
– আংকেল, পাপড়িকে খুজে পাচ্ছি না।
– আমি পাপড়িকে অনেকক্ষণ আগে ঐ রুমটাই যেতে দেখেছিলাম, তুমি ঐ রুমটা একটু দেখে আসো।
– ওকে

নীল ঐ রুমে গিয়ে দেখলো পাপড়ি ঘুমাচ্ছে। পাপড়িকে ঘুমাতে দেখে নীলের খুব রাগ ওঠে।
– তাকে আমি সারা বাড়ি খুজতে খুজতে হয়রান আর সে ঘুমাচ্ছে।
বলেই নীল পাপড়িকে ডাক দেওয়ার জন্য কাছে যেতেই পাপড়ির ঘুমন্ত চেহেরা দেখে আর ডাক দিতে পারলো না।
একদম ছোট বাচ্চাদের মতো ঘুমচ্ছে পাপড়ি। তার গালে এখনো হলুদ লেগে আছে। চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে। চোখের সামনের চুলগুলো নীল আস্তে করে সরিয়ে কানের পেছনে সরিয়ে দেয়। নীলের ইচ্ছে করছে পাপড়ির কপালে একটা চুমো এঁকে দিতে, কিন্তু সে অধিকার সে এখনো পাইনি।
– সারাদিন অনেক খাটুনি খেটেছে পাপড়ি।  থাক এখন আর ডাক দিয়ে লাভ নেই। একটু ঘুমিয়ে নেক তারপর কথাটা বলবো।

সকাল হতেই আফিয়া বেগম আর দাদী  বিয়ের আয়োজনে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। ছোটখাটো বিয়ে হলেও তো অনেক কাজ করতে হবে তাদের। এসব ব্যস্ততার মধ্যে পাপড়িকে কথাটা জানানোর কথা ভুলেই গেছে আফিয়া বেগম।
অপরদিকে পুষ্প কেঁদেই চলেছে। নিজেকে এ বিয়ের জন্য কিছুতেই প্রস্তুত করতে পারছে না সে। বারবার মা,দাদী,পাপড়ি সবার মুখটা তার চোখের সামনে ভাসছে। যে ছেলেটার নাম জানে না, কখনো দেখেই নি তার সাথে কিভাবে থাকবে সে। পাপড়ির সাথে একবার কথা বললে হয়ত তার মনটা এখন হালকা হবে এই ভেবে সে নীলকে ফোন দেয়। কিন্তু নীল ফোন ধরছে না।

“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
আজ রূপার বিয়ে। রূপা কোন ভাইবোন না থাকায় বিয়ের সবকিছু দেখাশোনা করছে পাপড়ি আর নীল। নীল তার ফোন চার্জে দিয়ে  বাহিরে কাজ করছে। তাই পুষ্পর ফোনটাও সে দেখে নি। আর বিয়ের এসব ব্যস্ততায় নীলও আফিয়া বেগমের ফোনের কথা পাপড়িকে বলতে ভুলে গেছে। 

এদিকে রাইয়ানের মন খুশিতে নাচছে। আর মাত্র একদিনের অপেক্ষা তারপরই আমি পুষ্প কে নিজের করে পাবো। কিন্তু তার মনে একটাই কষ্ট রয়ে গেলো পুষ্প যে এ বিয়েতে রাজি তা একবার সে নিজের মুখে রাইয়ানকে বললে হয়তো তার মনে একটু শান্তি পেতো।

বড়যাত্রী চলে এসেছে। পাপড়ি বড়যাত্রীদের আমন্ত্রণে দাঁড়িয়ে আছে সরবত দিয়ে। খুব সুন্দর করে সেজেছে। লাল শাড়িতে একদম বউ বউ লাগছে পাপড়িকে। দূর থেকে নীল পাপড়িকে দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখছে।
হঠাৎ নীল লক্ষ করলো বরের সাথে আসা বরের বন্ধুগুলো পাপড়ি বাজে নজরে দেখছে যা নীলের একদম সহ্য হচ্ছে না। নীল সেখানে গিয়ে পাপড়িকে ধরে টানতে টানতে সেখান থেকে নিয়ে এলো।
-ছাড় আমাকে, ব্যাথা পাচ্ছি তো।
বলতে নীল পাপড়িকে ছেড়ে দিলো।
– তুই আমাকে ঐখান থেকে এভাবে টেনে এনেছিস কেনো?
-তুই ঐখানে যাবি না।
– কেনো?
– এতো প্রশ্নের উত্তর তোকে দিতে পারবো না। তোকে বলেছি যাবি না তো যাবি না। আর যদি যাস তো আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না। তুই গিয়ে রূপার সাথে বসে থাকবি আর সবসময় রূপার কাছেই থাকবি। মনে থাকবে?
(রাগী কন্ঠে)
নীলকে এতটা রাগে যেতে দেখে পাপড়িও ভয় পেয়ে যায় তাই চুপচাপ নীলের কথা মেনে নিয়ে রূপার কাছে চলে যায়।

সারাদিন কেটে যায়। রূপার বিয়ে প্রায় শেষ পর্যায়ে। নীল খেয়াল করলো পাপড়ির মুখটা শুকিয়ে গেছে।
– পাপড়ি কি সারাদিন কিছু খায়নি? আমার কথা মানতে গিয়ে হয়তো রাগ করে কিছুই খায়নি। এই মেয়েটাকে নিয়েও পারা যায় না আর।
নীল গিয়ে পাপড়িকে জিজ্ঞেস করলো
– খেয়েছিস?
পাপড়ি কিছু বলছে না।
-বুজেছি খাস নি। আমার সাথে রাগ করে না খেয়ে থাকবি?
পাপড়ি কিছুই বলছে না। পাপড়িকে চুপ থাকতে দেখে নীল এবার রাগ ওঠে যায়। থমক দিয়ে বলে
– কি বলছি শুনতে পারছিস না? খাস নি কেন?
-তুই তো বলেছিস রূপার সাথে যেন সবসময় থাকি, ওর কাছ থেকে যেন দূরে না যায়।
– তাই বলে তোকে আমি খেতে মানা করেছিলাম। তুই বস এখানে আমি খাবার নিয়ে আসছি।
নীল গিয়ে পাপড়ির জন্য খাবার নিয়ে আসে।
– নে, খেয়ে নে।
– না খাবো না।  আমার খিদে নেই।(রাগ করে)
নীল হাত ধুয়ে খাবার মাখিয়ে পাপড়ির সামনে ধরে বলে
– নে, আমি খাইয়ে দিচ্ছি।
পাপড়ি নীলের দিকে তাকিয়ে আছে। খাবার মুখ নিচ্ছে না। নীল আবার ধমক দিয়ে বললো
– খাবার মুখে নে।
পাপড়ি এবার  মুখে খাবার নেয়। নীল পাপড়িকে খাইয়ে দিতে দিতে আবার বলতে শুরু করে,
-তুই কেন বুজিস না, আমি যা বলসি তোর ভালোর জন্যই বলসি। বরের বন্ধুগুলো একদম ভালো না। তোকে অন্য নজরে দেখছিলো। তাই তোকে তখন ঐখান থেকে টেনে এনেছিলাম। আর তুই এতে আমার সাথে রাগ করে খাবার খাস নি।
নীলকে এভাবে দেখে পাপড়ির মনে আবার ঐ অনুভূতিটা জেগে ওঠলো। এমন কেন লাগছে তার। পাপড়ি নীলের দিকে এক নজরে তাকিয়ে আছে।
– দেখ এখানে আমার সাথে এসেছিস তুই।  তোর সকল দায়িত্ব জেঠিমা…
বলেই জিহ্বায় কামড় দিলো নীল। নীলকে এমন করতে দেখে পাপড়িরও ঘোর ভাঙ্গে। নীল পাপড়ির দিকে তাকিয়ে বলে
– তোকে তো একটা কথা বলতেই ভুলে গেছি।  কাল জেঠিমা আমার ফোনে কল দিয়েছিলো তোর সাথে কথা বলার জন্য।
– কি কথা?
– তা বলেনি। তবে মনে হচ্ছে কোন জরুরি কথায় বলতে চেয়েছিলো। ওহ! আমার ফোন তো চার্জেই ফেলে রেখছি। তুই গিয়ে ফোনটা নিয়ে জেঠিমাকে কল দে। আমি হাত ধুয়ে আসছি।

ফোনটা নিয়েই পাপড়ি দেখলো, পুষ্প ও আফিয়া বেগমের অনেকগুলো কল।
– এতো কল কেন দিয়েছে মা আর আপু। আর নীলটাও কি, ফোনটা নিজের সাথে রাখবে না।
বলেই কল দেয় আফিয়া বেগমকে।
-হ্যালো মা। কি ব্যাপার, কি হয়েছে? এতো কল কেনো দিয়েছো?
-ফোন রেখে কোথায় হারিয়ে গিয়েছিলি তোরা? সেই কখন থেকে ফোন দিচ্ছি?
– আরে মা, বিয়ে বাড়িতে কাজ নিয়ে বিজি হয়ে গিয়েছিলাম। কি হয়েছে, সেটা বলো?
– শোন, পুষ্পের বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।
– ওহ! এটা তো খুশির সংবাদ।
– হ্যা। আর কালকেই পুষ্পর বিয়ে।
– কিহ! কি বলছো এসব? কালকেই বিয়ে? এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে কেন মা? আর আমাকে ছাড়া তোমরা আপুর বিয়ে ঠিক করে ফেললে?
– এসব কথা, এখন ফোনে বলা সম্ভব না। তোরা তাড়াতাড়ি বাসায় চলে আয়।
– কিন্তু এখন তো অনেক রাত হয়ে গেছে। ট্রেন তো পাবো না আর বাসে এতো রাতে এতোটা পথ আসা রিক্সের ব্যাপার।
– আচ্ছা তাহলে তোরা ভোর সকালের ট্রেনেই রওনা হয়ে যা। আর শোন রূপার কাছে আমার পক্ষ থেকে ক্ষমা চেয়ে নিস। ওকে কথা দিয়েও আমরা ওর বিয়েতে আসতে পারিনি।
– হুম।
– রাখি এখন।

চলবে…..

ত্রিভুজ প্রেম পর্ব – ১৬

0

ত্রিভুজ প্রেম
জান্নাতুল ফেরদৌস সূচনা
পর্বঃ১৬

– শুনো বউমা, সব কিছুই তো জানলাম, আর ছেলেও আমাদের পছন্দ হয়েছে। তাহলে তোমার বিয়ে দিতে প্রবলেম কোথায়?
শাশুড়ীর মুখে এমন কথায় আফিয়া বেগম আশ্চর্য হয়ে বলেন
– মা আপনিও এই কথাই বলছেন।
– হ্যা বলছি, কারণ এতো ভালো সমন্ধ হাত ছাড়া করা যায় না। এছাড়া ছেলেও পুষ্পকে পছন্দ করেছে। তাদের সমস্যা বলেই তো তারা এতো তাড়াহুড়ো করছে, নয়তো তারা এমন করতো কি?
– কিন্তু মা  এটা কিভাবে সম্ভব? পাপড়ি বাড়িতে নেই। আর আমাদের রূপার বিয়েতে যেতে হবে? আর একদিনে সব কিভাবে হবে?
আর পুষ্পও কি এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে করতে রাজি হবে?
– দেখো বউ মা, তোমার চিন্তা আমি বুঝতে পারছি। তবে এখন যদি আমরা না করে দিই তাহলে হয়তো সমন্ধটা হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে। তুমি একটু বোঝার চেষ্টা করো? রূপাকে না হয় আমরা পরে বুঝিয়ে বলবো? আর রূপা বিয়ে কাল। কাল বিয়ের পর রাতের ট্রেনেই পাপড়ি এখানে চলে আসতে পারবে। আর তারা তো বলেছেই ছোট খাটো আয়োজনে বিয়েটা সম্পন্ন করতে চায়। আমরা যদি সবাই মিলে একসাথে কাজ করি তো একদিনে সব হয়ে যাবে আশা করি।
– কিন্তু মা, পুষ্প কি রাজি হবে?
– ও নিয়ে তুমি ভেবো না। ওকে তুমি কসম দিয়েছো, যা পুষ্প কখনোই ভাঙ্গবে না। তুমি আর আপত্তি করো না,  হ্যা বলে দাও।

এতো তাড়াতাড়ি বিয়েতে আফিয়া বেগমের আপত্তি থাকলেও শাশুড়ীর কথায় আর কিছু না বলে রাজি হয়ে গেলো।

মি. রাশেদ মাথায় চিন্তা নিয়ে সোফায় বসে আছে। হঠাৎ দাদী আর আফিয়া বেগমকে নিচে নামতে দেখে তাদের দিকে এগিয়ে যায়।
মি. রাশেদকে দেখে মুখে একরাশ হাসি নিয়ে দাদী বললো
– আমরা রাজি আপনার কথায়। এই শুক্রবারেই বিয়ে হবে।
কথাটা শুনা মাত্রই মি. রাশেদ খুশিতে আত্মহারা।
–  আমাকে বুঝার জন্য আপনাদের কিভাবে ধন্যবাদ জানাবো বুঝতে পারছি না।
– না না ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করবেন না আমাদের। আপনার কষ্টটা আমরা বুঝতে পেরেছি, কি বলো বউমা?
আফিয়া বেগমের মুখে হাসি নেই। শাশুড়ীর এমন কথায় তিনি শুধু মাথা নাড়িয়ে হ্যা বলে।
দাদী আবার বলে
– তাহলে এবার আসি, সবকিছুর প্রস্তুতি নিতে হবে তো আমাদের।
মি. রাশেদ তাদের বিদায় দিয়ে রাইয়ানকে জোরে জোরে ডাকে। মি. রাশেদের ডাক শুনে রাইয়ান ও বাসার অন্যরাও নিজ রুম থেকে বের হয়ে আসে।
রাইয়ান তার বাবার কাছে আসতেই মি. রাশেদ তাকে জড়িয়ে ধরে বলে
– প্রস্তুতি শুরু কর, আগামী শুক্রবার তোর বিয়ে।
বাবার মুখে এমন কথা শুনে অবাক হয়ে বললো
– কিন্তু পুষ্প কি এ বিয়েতে রাজি হয়েছে?
– হ্যা হ্যা সবাই রাজি।
মিসেস মাহমুদার দিকে তাকিয়ে বলল
– তোমার ঘরে বউ আসতে চলছে আজ থেকেই বিয়ের আয়োজন শুরু কর মাহমুদা
মি. রাশেদ এমন কথা শুনে মিসেস মাহমুদা রাগে গরগর করতে করতে বলল
– এ বিয়েতে যেহেতু আমার মতামত নেই সেহেতু এ বিয়ের কোন কাজেই আমি থাকবো না। এমনকি বিয়েতেও না।
বলেই রুমে গিয়ে ঠাস করে দরজা লাগিয়ে দেয় মিসেস মাহমুদা।
মিসেস মাহমুদার এমন আচরণ দেখে মি. রাশেদ ও রাইয়ান দুজনই খুব কষ্ট পায়।
তাদের কষ্ট পেতে দেখে তাদের মন ভালো করার জন্য শায়ন চিৎকার দিয়ে বলল
– ওহ! কি মজা। আমার মতো তুই বিয়ের জেলখানাতে আটাকাবি। পারশু মেরে ইয়ার কি সাদি হে, ও মেরে ইয়ার কি সাদি হে।
শায়নের এমন কথা শুনে মি. রাশেদ ও রাইয়ান দুজনই হেসে ওঠে।
– হ্যা, এখন তোরা তুই বন্ধু গল্প কর আমি একটু আসছি।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন

মি. রাশেদ সেখান থেকে যেতেই রাইয়ান শায়নকে জড়িয়ে ধরে বলে
– তুই ছিলি বলেই সব সম্ভব হয়েছে, নাহলে আমি তো এ কথাটা কখনোই বলতে পারতাম নাহ।
– আরে বন্ধু হয়ে বন্ধুর জন্য এইটুকু করতে না পারলে কিসের বন্ধু হলাম আর?
– কিন্তু শায়ন, পুষ্প যে আমার ফোন ধরছে না, অফিসেও আসছে না। ওর কি বিয়েতে মত আছে কি নেই সেটাই বুজছি নাহ?
– আরে, তোর সাথে ওর বিয়ে ঠিক হয়েছে, তাই হয়তো লজ্জায় তোর সামনে বা কথা বলতে পারছে না।
– হুম, তাই যেন হয়।

– কিহ! এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে করা আমার পক্ষে কিছুতেই সম্ভব না। তোমরা আমার মতামত না জেনেই সব ঠিকঠাক করে চলে আসলে?
পুষ্প এমন কথা শুনে দাদী বললো
– তো কি হয়েছে? তোকে তো বলেছিই যে ছেলের দাদা অসুস্থ তাই তারা তাড়াতাড়ি বিয়েটা করাতে চায়। আর বিয়ে পরশু হোক বা ১ মাস পর বিয়ে তো তোকে করতেই হবে তাই না?
– হ্যা, তাই বলে কি, এতো তাড়াতাড়িই আমাকে বিদায় করে দিবে? এতো বড় বোঝা
হয়ে গেছি তোমাদের কাছে আমি? আর মা তুমি কিছু কেনো বলছো না দাদীকে? কেনো চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছো?
– বউমা কি বলবে? আমি কি তোর মন্দ চাই? তোর ভালোর জন্য তোকে এ পরিবারে বিয়ে দিচ্ছি।  তুই সুখে থাকবি ওখানে।
– আচ্ছা বুজলাম, কিন্তু পাপড়ি ছাড়া তোমরা কিভাবে আমার বিয়ে দিতে পারবে? আমি পাপড়িকে ছাড়া কোনমতেই বিয়ে করবো না।
– কাল রূপার বিয়ে শেষ হলেই ওরা রাতের ট্রেনে ওঠলেই সকালে এখানে পৌছাতে পারবে। আর তুই ভুলে যাস না যে তোর মা তোকে কসম দিয়েছে। কসমের কথা মনে আছে তো তোর?
দাদী এই কথাটা শোনার পর আর কিছু বলতে পারলো না সে। চোখে পানি চলে আসে তার দৌড়ে সে রুমে চলে যায়।
– মা, পুষ্পকে এইভাবে জোর করে বিয়ে দেওয়াটা কি ঠিক হচ্ছে?
– বউমা কি বলছো? আমি ওর খারাপ চাই না। দেখবে বিয়ের পর সব ঠিক হয়ে যাবে।
তুমি বরং নীলেকে ফোন দিয়ে পাপড়িকে সব জানিয়ে দাও।

-হ্যালো, জেঠিমা কেমন আছো?
নীলের এমন প্রশ্নে ফোনের ওপাশ থেকে আফিয়া বেগম বললো
– হুম, ভালো আছি। তোরা কেমন আছিস?
-হ্যা আমরা ভালো আছি। তুমি কোথায় এখনো রওনা হও নি?
– না মানে কিছু কথা ছিলো? পাপড়ি কোথায়?
– কেন কিছু সমস্যা হয়েছে জেঠিমা?
– না, তুই পাপড়িকে একটু ফোনটা দে।
– পাপড়িকে তো খোঁজেই পাচ্ছি না আমি। পাপড়িকে খোজে আমি তোমাকে একটু পর ফোন দিচ্ছি কেমন?
– আচ্ছা

চলবে…..

ত্রিভুজ প্রেম পর্ব -১৫

0

ত্রিভুজ প্রেম
জান্নাতুল ফেরদৌস সূচনা
পর্বঃ১৫

– কিরে এখনো রেডি হস নি? কখন বলে গেছি রেডি হতে তোকে? একটু পরই তো পুষ্পর পরিবার চলে আসবে।
শায়নের এমন কথায় রাইয়ান বললো
-আরে একটু এদিকে আয় না? কি পরবো তাই তো বুজতে পারতেছি না। তুই একটা কিছু একটা সিলেক্ট করে দে প্লিজ?
শায়ন রাইয়ানের রুমের ভিতর ঢুকে একদম অবাক হয়ে গেল।
– কিরে, কি হাল করেছিস রুমের কাপড়-চোপড় দিয়ে?
– কি করবো, একটা জামাও পছন্দ হচ্ছে না। তুই একটা কিছু পছন্দ করে দে?
-হা হা হা। তুই তো দেখছি মেয়েদের থেকেও বেশি।
রাইয়ান একটু রেগে বললো
– তোর হাসি শেষ করে আমাকে একটু হেল্প কর, কোনটা পড়বো বল?
– আচ্ছা।
শায়ন অনেক খুঁজাখুঁজি করে একটা হলুদ পাঞ্জাবি বের করে বললো
– এটা পড়। এটাতে তোকে খুব ভালো মানাবে।

আজ রূপার গায়ে হলুদ। সবাই সবার কাজ নিয়ে ব্যস্ত। রূপাকে খুব সুন্দর করে সাজিয়ে বাহিরে নিয়ে এলো পাপড়ি। একটু পরই হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হবে।
নীল হা করে তাকিয়ে আছে পাপড়ির দিকে। খুব সুন্দর লাগছে। হলুদ শাড়িতে দারুণ লাগছে পাপড়িকে। নীলকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে পাপড়ি কাছে গিয়ে বললো
– জানি আমি সুন্দরী তাই বলে এভাবে তাকিয়ে থাকবি আমার দিকে?
পাপড়ির এমন কথা শুনে নীল তার নজর অন্যদিকে সরিয়ে নেয়। আর বলে
– কে বলেছে যে তোকে দেখছি। তোর মতো শাকচুন্নিকে কে দেখবে? এতো মেকাপ করেছিস যে এখন তোর চেহেরাটাই একদম বাজে লাগছে।
নীলের এ কথা শুনে পাপড়ি রাগী চোখে তাকায় নীলের দিকে। আর কোন কথা না বলে চলে যায় সেখান থেকে।

আফিয়া বেগম আর দাদী বাসায় আসতেই মি. রাশেদ তাদের সালাম দিয়ে ভিতরে আনে।
তাদের আসতে দেখে মিসেস মাহমুদা নিজের রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে বসে থাকে।
অনেকক্ষণ খোশগল্প করার পর দাদী একবার  জিজ্ঞেস করে ফেলে
– তা ছেলের মাকে তো দেখছি নাহ? তিনি কোথায়?
দাদীর মুখে এ কথা শুনে মি. রাশেদের মুখটা গম্ভীর করে বলে
– আসলে রাইয়ানের মায়ের শরীরটা ভালো নেই তাই রুমে বিশ্রাম করছে।
কথাটা শেষ করতেই শায়ন রাইয়ানকে নিয়ে আসে।
রাইয়ানকে দেখে দাদী বললো
– ছবির থেকে তোমায় বাস্তবে আরো সুন্দর লাগছে।
দাদীর এমন কথায় কিছুটা লজ্জা পেয়ে যায় রাইয়ান।
কিছুক্ষণ কথা বলার পর আফিয়া বেগম  রাইয়ানকে জিজ্ঞেস করলো
– তোমার কোম্পানিটার নামটা জানা হলো না?
– চৌধুরী গ্রুপস ওফ কোম্পানি।
রাইয়ানের মুখে কোম্পানিটার নামটা শুনেই নামটা খুব পরিচিত মনে হলো আফিয়া বেগমের। কিন্তু কোথায় শুনেছে তা মনে পড়েছে না।
রাইয়ানের একটা জরুরি কল আসায় রাইয়ান সেখান থেকে ওঠে চলে যেতেই মি. রাশেদ বলে ওঠে
– তা রাইয়ানকে তো আপনাদের পছন্দ হয়েছে, তাহলে বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক করে ফেলা যাক।
মি. রাশেদের এমন কথা শুনে দাদী খুশি হয়ে বললো
-হ্যা, তা তো করতেই পারি। তবে ছেলে মেয়েদের আলাদা একসাথে একটু কথা বলে নিলে তাদের জন্য ভালো হতো না?
– আর কথা বলে কি লাভ, আমার ছেলে তো আপনাদের মেয়েকে পছন্দ করছেই। তবে পুষ্পর কি রাইয়ানকে পছন্দ হয় নি?
– না তেমন কোন বিষয় না।
– তাহলে আর কোনো সমস্যা নেই। আমরা মেয়ে বিয়ে করে আনার জন্য একদম প্রস্তুত। আর আমি চাচ্ছি আগামী শুক্রবারেই বিয়ের দিন ঠিক করতে।
শুক্রবার শুনতেই আফিয়া বেগম ও দাদী দুজনেই চমকে ওঠে।  আফিয়া বেগম বলে
– শুক্রবার তো পরশুদিন। এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে তারিখ কেনো?
আফিয়া বেগমের সাথে সাথে দাদীও বলে ওঠে
-হ্যা, বউমা তো ঠিকি বলছে। বিয়েতে এতো তাড়াহুড়ো করা ঠিক হবে না। আমরা বরং একমাস পর বিয়ের তারিখটা রাখি।
তাদের কথা মি. রাশেদ মুখ গম্ভীর করে বললো
– আমি জানি আপনারা এ বিয়েতে এতো তাড়াহুড়ো করতে চান না। তবে আমি আপনাদের কিছু দেখাতে চাই আসুন আমার সাথে।

“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
আয়নার সামনে গিয়ে পাপড়ি নিজের চেহেরা ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে দেখছে
– সত্যিই কি বেশি মেকাপ করে ফেলছি? বেশি বাজে দেখা যাচ্ছে আমায়?
পেছন থেকে নীল এসে বললো
-হ্যা, অনেক বাজে দেখে যাচ্ছে তোকে।
বলেই দু হাত দিয়ে পাপড়ির মুখে অনেকগুলো হলুদ লাগিয়ে বললো
– এখন অনেক সুন্দর লাগছে।
নীল এমন কান্ডে পাপড়ি রেগে ফায়ার।
– রামছাগল, নীলের বাচ্চা এটা কি করলি তুই?
নীল হাসতে হাসতে বললো
– তোকে একটু মেকাপ করে দিলাম।
– তোকে আজ আমি হলুদ দিয়েই গোসল করাবো, দাড়া তুই।
– এ্যাহ, আমাকে ধরতে পারলে তো তুই।
পাপড়ি দুই হাতে হলুদ বাটা নিয়ে নীলকে দৌড়াচ্ছে। হঠাৎ নীলকে ধরতে পেরে পাপড়ি নীলকে জড়িয়ে ধরে দুই হাতে হলুদ লাগাতে থাকে।
এই মাখামাখিতে দুজনের খেয়ালই ছিলো না যে তারা একজন আরেকজনকে জড়িয়ে ধরে আছে। যখন খেয়াল হয় দুজনেই সরে দাড়ায়। দুজনের ভিতরের কেমন একটা অনুভূতি কাজ করছে। নীল তার অনুভূতিগুলোর কারণ জানতে পারলেও পাপড়ি তার অনুভুতির কারণ বুঝতে পারছে না। পাপড়ি মনে মনে বললো
– আগে তো কখনো নীলের কাছে গেলে এমন ফিল করিনি, তবে আজ কেন এমন ফিল করলাম।
অন্যদিকে নীল তো মহাখুশি। তাকে পাপড়ি এমনভাবে তাকে জড়িয়ে ধরেছে। সারাজীবন পাপড়িকে এভাবে জড়িয়ে ধরে থাকতে চায় সে।

মি. রাশেদ একটা রুমের সামনে গিয়ে দাড়িয়ে  দূর থেকে তার বাবাকে আফিয়া বেগম ও দাদীকে দেখিয়ে বলেন
– ইনি আমার বাবা। কিছুদিন আগে বেইনস্টোক করে এক পাশের ব্রেইন ডেমেজ হয়ে গেছে। ডাক্তার বলেছেন বাবার হাতে বেশি সময় নেই। যেকোন সময় বাবা আমাদের ছেড়ে চলে যেতে পারে, আমরা যেন ওনার কোন ইচ্ছা অপূর্ণ না রাখি।
কথাটা বলেই চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে মি. রাশেদ আবার বলে
-আমার বাবা আমার সন্তানদের মধ্যে রাইয়ানকে একটু বেশিই ভালোবাসে। তাই শেষ বেলাই তিনি রাইয়ানের বিয়েটা দেখে যেতে চান। যাওয়ার আগে নিজের নাত-বৌয়ের চেহেরাটুকু দেখে যেতে চান। এবার বলুন আমি কি খুব তাড়াহুড়ো করছি?

মি. রাশেদের মুখে এসব শুনে আফিয়া বেগম ও দাদীর মন খারাপ হয়ে যায়। তারা কি বলবে বুঝতে পারছে না। মি. রাশেদকে শান্তনা দেওয়ার মতো কোন ভাষাও নেই তাদের কাছে।
মি. রাশেদ আবার বললো
– যখন শুনেছি রাইয়ান পুষ্পকে পছন্দ করে তখন মনটা আমার খুশিতে ভরে গেছে। পুষ্পকেও আমার খুব পছন্দ হয়েছে। পুষ্প এ বাড়িতে এলে তাকে আমরা আমাদের মেয়ের মতোই রাখবো। এবার আপনারা বলেন আপনাদের কি মত?
মি. রাশেদ এর কথা শুনে আফিয়া বেগম বললো
– আমি আপনার মনের অবস্থা বুঝতে পারছি। কিন্তু এ শুক্রবার বিয়ে কিভাবে সম্ভব? এছাড়া পুষ্পর ছোটবোন পাপড়ি সেও বাড়িতে নেই। আর যৌতুক….
কথাটা শুনতেই মি. রাশেদ বললো
– ছি..ছি.. বোন এসব কি বলছেন? আল্লাহর রহমতে আমাদের টাকা-পয়সার কোন কমতি নেই। আমরা শুধু আপনার মেয়েকে চাই। আর আমি জানি সব বাবা-মা এরই তাদের মেয়েকে ধুমদাম করে বিয়ে দেওয়ার স্বপ্ন থাকে। কিন্তু এখন আপাতত আমরা ছোট করে বিয়েটা সম্পন্ন করি পরে না হয় বড় করে আয়োজন করবো। কথা দিচ্ছি আপনার মেয়ের আদর-যত্নে কোন কমতি রাখবো না।

মি. রাশেদের এমন কথা শুনে দাদী বললো
-আপনি যদি কিছু না মনে করেন আমি বৌমায়ের সাথে একান্তে কিছু কথা বলতে চাই?
– হ্যা হ্যা কেনো নয়, আপনারা কথা বলুন আমি নিচে যাচ্ছি।

চলবে….