Wednesday, July 16, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1916



ত্রিভুজ প্রেম পর্বঃ৩৪

0

ত্রিভুজ প্রেম
পর্বঃ৩৪
জান্নাতুল ফেরদৌস সূচনা

– তুমি এইখানে এভাবে……
পুষ্পর কথা শুনে রাইয়ান নিজের রাগটা একটু কন্ট্রোল করে বললো,
– এইখানে এসেছিলাম তোমাকে সারপ্রাইজ দিবো বলে কিন্তু এইখানে এসে তো আমি নিজেই সারপ্রাইজ হয়ে গেছি।
পুষ্প রাইয়ানের থেকে অন্যদিকে মুখটা ঘুরিয়ে নিয়ে বললো,
– তুমি যা ই বলো, কাজটা তোমার একদম ঠিক করো নি।
– ও রেইলি, তাহলে পাপড়ি যা করছিলো তা তোমার কাছে ঠিক ছিলো?
– তা আমি জানি না, কিন্তু এখন আমাকে পাপড়ির কাছে যাওয়া দরকার। এখন আমাকে তার প্রয়োজন আছে।
পুষ্পর কথা শুনে রাইয়ান আরো রেগে গিয়ে বললো,
– না, কোথাও যাবে না তুমি। তুমি এখন বাসায় যাবে। আমি ড্রাইভারকে বলে দিয়েছি, সে তোমায় বাসায় নিয়ে যাবে।
– কিন্তু আমি এখন….
– আমি যা বলছি তাই করো পুষ্প। বাসায় যাও।
রাইয়ানকে অনেক রেগে থাকতে দেখে পুষ্প আর কোন কথা বললো না। চুপচাপ তার কথা মেনে নিলো পুষ্প।

পুষ্প গাড়ির সামনে যেতেই পাপড়ি তার ধরে টান দিয়ে বললো,
– এবার খুশি তো তুই? এটাই তো চেয়েছিলি তুই?
-পাপড়ি এসব কি বলছিস তুই?  আমি এমনটা…
– রাইয়ানের চোখে আমায় নিচে নামিয়ে তোর আত্মার শান্তি মিলেছে? এটাই তো চাস তুই যে রাইয়ান আর আমার সম্পর্কটা কখনও ঠিক না হোক।
– পাপড়ি তুই আমাকে ভুল বুঝছিস। আমি জানতাম না যে রাইয়ান এখানে এভাবে চলে আসবে।
– আর কতো মিথ্যে বলবি তুই? আজ তুই যা করলি তার জন্য তোকে আমি কোন দিনও মাফ করবো না।
বলেই পাপড়ি সেখান থেকে কাঁদতে কাঁদতে চলে যায়।
পুষ্প আর কিছু বলতে পারে না পাপড়িকে। সে হতাশ হয়ে মনে মনে বললো,
– পাপড়ি, তুই আবার আমাকে ভুল বুজলি।

ডিনারের টেবিলে বসে আছে সবাই। হঠাৎ মি. রাশেদ বললো,
– আজ অনেকদিন পর আমরা সবাই মিলে একসাথে খাবার খাচ্ছি। খুব আনন্দ লাগছে আমার।
মি. রাশেদের কথায় সবাই খুশি হলেও পুষ্প আর রাইয়ানের মুখে কোনো হাসি নেই।  দুজনেই চুপচাপ বসে খাচ্ছে।
দুজনকে চুপচাপ বসে থাকতে দেখে মিসেস মাহমুদা বলে ওঠলো,
– কিরে, তোরা কোনো কথা বলছিস না যে? কি হয়েছে?
শাশুড়ীর কথা শুনে পুষ্প একবার রাইয়ানের দিকে তাকিয়ে বললো,
– কই কিছু না মা। আমার খাওয়া শেষ, আমি আসি।
বলেই টেবিল থেকে ওঠে চলে যায় পুষ্প।
একটুপর রাইয়ানও টেবিল ছেড়ে ওঠে যেতেই মিসেস মাহমুদা বললো,
– কিরে তুই কোথায় যাচ্ছিস? তুই তো কিছুই খাসনি?
– আসলে মা, আজ আমার মোটেও খিদে নেই। আমি আসি।
বলেই রাইয়ানও চলে যায়।
পুষ্প আর রাইয়ানকে এভাবে উঠে যেতে দেখে নুরী বললো,
– ভাইয়া-ভাবীর মধ্যে হয়তো ঝগড়া হয়েছে তাই কেউ ঠিকমতো ডিনার করেনি।

রাইয়ান রুমে যেতেই দেখলো পুষ্প ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আছে। রাইয়ান পুষ্পর পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। রাইয়ানকে পুষ্প অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নেয়।
দুজন চুপচাপ দাড়িয়ে থাকে ব্যালকনিতে। অনেকক্ষণ চুপচাপ দাড়িয়ে থাকার পর রাইয়ান নিরবতা কাটিয়ে বললো,
– এখনো কি আমার ওপর রাগ করে থাকবে?
– আমি তোমার ওপর রাগ না।
– তাহলে আমার সাথে কথা বলছো না কেন?
– এমনি আমার কথা বলতে ইচ্ছে নেই।

রাইয়ান কিছুটা বিরক্তি নিয়ে বললো,
– উফ! এইভাবে কথা না বলে কি থাকা যায়? আমার একদম ভালো লাগচ্ছে না।
– অফিসে তুমি যা করেছো সেটাও আমার একদম ভালো লাগেনি।
রাইয়ান এবার পুষ্পর হাতটা ধরে তার কাছে এসে বললো,
– এতো বোন বোন করো, বোনকে নিয়ে এতো ভাবো, কিন্তু তোমার বোন তোমার জন্য কয়বার ভাবে?
– তুমি এমনটা বলছো কারণ পাপড়িকে তুমি এখনো ঠিকমতো চিনো নি।
– এটা তোমার ভুল ধারণা। এতোদিনে পাপড়ি কেমন তা আমি চিনে গেছি। যে নিজের বোনকে হিংসে করে সে আর কতো ভালো হতে পারে তা আমার জানা আছে।
– না তুমি চিনতে পারো নি। আমার বোনকে আমার থেকে বেশি তুমি চিনতে পারো না। ও আমার সাথে এসব যা করেছে তা আমার ওপর রাগ করে করেছে।
– কিসের রাগ এতো তার? আমাদের বিয়ে নিয়ে? এতোদিনে সবাই যেটা বুঝে গেছে তার সেটা বুজতে এতো প্রবলেম কেনো?
– তার প্রবলেম কারণ পাপড়ি সবটা সত্য জানে না।
– মানে, কি বলতে চাচ্ছো তুমি পুষ্প?
– আমাদের বিয়েটা একটা ভুল বুঝাবুঝিতে হয়েছে। আর আমাদের বিয়েতে পুষ্প ছিলো না।
– হ্যা, এটা তো সবাই জানে। এতে নতুন কি?
– বলছি। আমি তোমাকে একরকম বাধ্য হয়েই বিয়ে করেছিলাম, কারণ মা আমাকে তার কসম দিয়েছিলো। মার কসম রাখতে গিয়েই তোমার সম্পর্কে না জেনে, তোমাকে না দেখে আমি এ বিয়েটা করেছিলাম।
পুষ্পর কথা শুনে রাইয়ান অবাক হয়ে বললো,
– মানে, কি বলছো তুমি?
– হ্যা। আর এসব কথা পাপড়ি জানে না। সে এটাই মনে করে যে আমি সব জেনে শুনে তোমাকে বিয়ে করেছি। এখন তুমিই বলো নিজের ভালোবাসার মানুষটিকে অন্য কারো সাথে কেই বা দেখতে পারবে? তারপর ওপর থেকে সেই অন্য মানুষটি যদি তার বোন হয় তাহলে কি সেই মানুষটি সহ্য করতে পারবে?  মোটেই না। তুমি একবার নিজেকে পাপড়ির  জায়গায় রেখে দেখো, তুমি দেখতে পারতে তোমার ভালোবাসার মানুষটিকে অন্য কারো সাথে? তোমার কি হিংসা হতো না? রাগ হতো না তোমার?
পুষ্পর কথা শুনে রাইয়ান একদম নির্বাক হয়ে যায়। কিছুই বলতে পারছে না।
পুষ্প আবার বললো,
– কি হলো, কোন কথা বলছো না যে? আমি জানি তোমার কাছে কোন উত্তর নেই।
রাইয়ান এবার বললো,
– কিন্তু তুমি এসব পাপড়িকে জানাও নি কেন? সব কিছু বলে দিলেই তো সব ভুল বোঝাবোঝি মিটে যায়।
– বিশ্বাস করো আমি পাপড়ি এই কথাগুলো অনেকবার বলতে চেয়েছি। কিন্তু পাপড়ি আমার ওপর এতোটাই রেগে আছে যে সে আমার কোন কথায় কখনো শুনেনি।
এখন বলো সব শুনার পরও কি তুমি পাপড়িকে ভুল বুঝবে?
পুষ্পর কথা রাইয়ান দোটানাই পড়ে গেল। মনে মনে বলতে লাগলো,
– পাপড়ির প্রতি কি আমি বেশি অন্যায় করে ফেলেছি? তাকে এতোটা খারাপ ভাবা আমার ঠিক হয় নি।

“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
পুষ্প আবার বললো,
– আমি জানি একদিন পাপড়ি সব সত্য জানলে আর এমন রাগ করে থাকতে পারবে না। তখন সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে। আমার বিশ্বাস কিছুদিন পর আমাদের ডিভোর্সটা হয়ে গেলেই সব ঠিক হয়ে যাবে।

রাইয়ান আর একটি কথাও বললো না। চুপচাপ গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো।

চলবে…..

ত্রিভুজ প্রেম পর্বঃ৩৩

0

ত্রিভুজ প্রেম
পর্বঃ৩৩
জান্নাতুল ফেরদৌস সূচনা

বেশ কয়েকদিন হলো পুষ্প অফিসে যাচ্ছে। শাশুড়ী সহযোগিতায় বাড়ি আর অফিস সব কিছুই একসাথে সামলাতে পুষ্পর বেশি কষ্টও হচ্ছে না।
তবে অফিসে প্রায় প্রতিদিনই পাপড়ি পুষ্পকে কোন না কোন কাজের জন্য অপমান করেই থাকে। পুষ্পকে অফিসে কিভাবে ছোট করবে সেই সুযোগের অপেক্ষায় থাকে পাপড়ি। কিন্তু পুষ্পর তার কোনো প্রতিবাদ করে না সব কিছু মুখ বুঝে সহ্য করে যায়। অফিসে বোনের কোন অসম্মান না হয় তা সবসময় খেয়াল রাখে পুষ্প।

– আজ এতোদিন হয়ে যাচ্ছে তবুও তোমার কোন উন্নতি দেখছি না। ডাক্তারের দেওয়া সময়ও তো পার হয়ে গেছে, এখন তো তোমার সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যাওয়ার কথা।
পুষ্পর কথা শুনে রাইয়ান মুচকি হেসে বললো,
– সুস্থ হয়ে যাবো, তোমার এতো চিন্তা করতে হবে না।
– কেনো চিন্তা করতে হবে না শুনি? অফিস থেকে এসে আমি তোমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবো। তুমি রেডি থেকো।
– হুম।
– আজ অনেক লেট হয়ে গেছে আসি আমি এখন।

পুষ্পকে বাসার বাহিরে যেতে দেখে মিসেস মাহমুদা বললো,
– পুষ্প, নাস্তা করবি না আজ?
– না মা, আজ লেট হয়ে গেছে। আমি পরে খেয়ে নিবো।
মিসেস মাহমুদা পুষ্পর হাত ধরে টেনে চেয়ারে বসিয়ে বললো,
– বস এখানে। পরে খেতে হবে না। আমি খাইয়ে দিচ্ছি, খেয়ে নে।
শাশুড়ী মুখে এমন কথা শুনে পুষ্পর চোখে জল চলে আছে। পুষ্পর চোখে পানি দেখে মিসেস মাহমুদা বললো,
– কি হলো, কাঁদছিস কেনো?
পুষ্প চোখের জল মুছে বললো,
– কিছু না মা। এটা খুশির কান্না।
– আচ্ছা। এবার খেয়ে নে।

দূর থেকে দাঁড়িয়ে মি. রাশেদ শাশুড়ী বউয়ের এ দৃশ্য দেখে মনে মনে বলছে,
– যে মাহমুদা একদিন পুষ্পকে দেখতেই পারতো না, আজ সেই পুষ্পকে সে মেয়ে বানিয়েছে। বাবা তুমি ঠিকই বলেছিলে, পুষ্পই এ বাড়ির যোগ্য বউ। এখন শুধু রাইয়ান পুষ্পকে বউ হিসেবে মেনে নিলেই হয়।

আজ অফিসে নতুন ডিলটার প্রেজেন্টেশন হবে ক্লায়েন্টের সামনে। পাপড়ি এ নিয়ে অনেক প্রস্তুতি নিয়েছে। অনেক নার্বাস ফিল করছে সে। একটু পরই ক্লায়েন্ট চলে আসে। পাপড়ির কথামতো পুষ্প সবকিছু ঠিকঠাক করে রেখেছে। সময় মতো প্রেজেন্টেশন শুরু করে পাপড়ি। কিন্তু প্রেজেন্টশন ঠিকঠাক না হওয়ায় ক্লায়েন্ট তা পছন্দ করে না। পাপড়ি ক্লায়েন্টকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করছে কিন্তু ক্লায়েন্ট ডিলটা নিতে একদমই নারাজ।
অফিসে সবার মুখেই টেনশনের ছাপ। পুষ্প পরিস্থিতি বুঝতে পেরে তার ফাইল থেকে কিছু কাগজ বের করে ক্লাইন্টের সামনে রাখে আর পুষ্প আবার নতুন করে আর একটা প্রেজেন্টশন দেয়। এবার ক্লাইন্ট পুষ্প প্রেজেন্টশন খুব পছন্দ করে আর ডিলটা নিয়ে নেয়।

ডিলটা ওকে হওয়ায় অফিসের সবাই অনেক খুশি হলেও পাপড়ি একদমই খুশি হয়নি।উল্টো আরো রেগে যায়। ক্লায়েন্টরা যেতেই পাপড়ি পুষ্প হাত ধরে টানতে টানতে সেখান থেকে তাকে বের করে নিয়ে এসে জিজ্ঞেস করলো,
– এ প্রেজেন্টশন কোথায় পেলি তুই?
পুষ্প একটু ভয় পেয়ে আমতা আমতা করে বললো,
– কিছুদিন আগে রাইয়ান আমাকে এই প্রেজেনটেশনটা তৈরি করে দিয়েছিল। আর আজ যখন তোর প্রেজেন্টশন ক্লায়েন্ট পছন্দ করেনি তাই ডিলটা বাঁচানোর জন্য আমি এই প্রেজেন্টশনটা ক্লায়েন্টের সামনে রাখি।
পাপড়ি রাগে বলে ওঠলো,
– কে বলেছিলো তোকে এই প্রেজেন্টশন ক্লায়েন্টের সামনে রাখতে? আমি কি তোকে অর্ডার দিয়েছিলাম?  বলেছিলাম না আমার অনুমতি ছাড়া কোন কাজ না করতে?
– তুই আমাকে ভুল বুঝেছিস, আমি এমনটা….
– ও প্লিজ, এখন আর নাটক করিস না। অফিসে যেন আমি সবার কাছে ছোট হয়ে যায় তাই তুই এমনটা করেছিস, তা কি আমি বুঝি না। আমার সবকিছুতেই তোর হিংসা হয়। আমার খুশি তুই দেখতে পারিস না।
পাপড়ি কথাগুলো পুষ্পকে অনেক কষ্ট দিচ্ছে, চোখে জল ছলছল করছে তার। কিন্তু পুষ্প খেয়াল করলো অফিসের সবাই তাদের দেখছে। তাই পুষ্প আর কিছু বললো না চুপচাপ দাড়িয়ে দাঁড়িয়ে পাপড়ি কথা শুনছিলো।
পাপড়িকে এমন চিৎকার করতে দেখে তার কলিগ সুমনা বললো,
– পুষ্প তুমি এতো রাগ করছো কেন? পাপড়ির প্রেজেন্টশনের জন্যই তো ক্লায়েন্ট ডিলটা নিতে রাজি হয়েছে।
– আপনি বুঝতে পারছেন না, এটা ওর প্লেন। নিজেকে এ অফিসে বড় প্রমাণ করতে চায়। এতোই যদি ভালো থাকতো ও তাহলে প্রেজেন্টশনটা আমাকে দিলো না কেন? আমি প্রেজেন্ট করতাম ক্লায়েন্টের সামনে। কিন্তু তা করেনি সে।

“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
– করবেই বা কেন? কি যোগ্যতা আছে তোমার যে তুমি ক্লায়েন্টের সামনে প্রেজেন্টশন দিবে?
পেছন থেকে হঠাৎ করে কেউ একজন এমন কথা বলাতে সবাই পেছনে তাকিয়ে দেখলো রাইয়ান দাড়িয়ে আছে।
রাইয়ানকে দেখে অফিসের সবাই হতবাক হয়ে যায়। রাইয়ান এগিয়ে গিয়ে পাপড়ির সামনে দাঁড়াতেই পাপড়ি বললো,
-স্যার, আপনি এখানে?
– হ্যা আমি। এখানে না আসলে তোমার এই রূপটা আমার দেখাই হতো না। কতোটা নিচু মন তোমার তা আমার জানা হতো না। তোমার ওপর আমার কোনো বিশ্বাস ছিলো না বলেই আমি পুষ্পকে কিছুদিন আগে এই ব্যাকআপ প্রেজেন্টেশনটা তৈরি করে দিয়েছিলাম।

পাপড়ি রাইয়ানকে বোঝানোর জন্য বললো,
– স্যার, আমি তো…..
– জাস্ট সাট আপ। আর কোন কথা বলবেই না। তোমার কোন অধিকার নেই আমার স্ত্রীর সাথে এভাবে কথা বলার।
রাইয়ানের এমন কথা শুনে অফিসের সবাই অবাক হয়ে যায়। পুষ্প রাইয়ানকে বলে,
– চুপ কর, এসব কেন বলছো তুমি?
পুষ্পর কথা শুনে রাইয়ান আরো রেগে গিয়ে ধমক দিয় বলে,
– তুমি চুপ থাকো। তুমি তোমার বোনের কথার প্রতিবাদ না করলেও আমাকে তুমি চুপ করিয়ে রাখতে পারবে না। অফিসের সবাই শুনে রাখুন, ইনি আমার বিবাহিত স্ত্রী। আর এনার নাম পাপড়ি নয় পুষ্প। আর এই যে এতোদিন যাকে আপনারা পুষ্প বলে চিনতেন সে হচ্ছে পাপড়ি। নিজের বোনের নাম আর যোগ্যতা নিয়ে এ অফিসে জয়েন করেছে। নাহলে পাপড়ি কোন যোগ্যতায় নেই এ অফিসে কাজ করার। যে বোন তোমার জন্য এতো ভাবে, এতো কিছু করে তাকে তুমি অফিসে সবার সামনে অপমান করার আগে একবারও ভাবলে না? ছিঃ! এমন বোন থাকার চেয়ে না থাকা বেশি ভালো।
রাইয়ান পাপড়ির সামনে আঙ্গুল তুলে বললো,
– নেক্সট টাইম আই ওয়ার্নিং ইউ, আমার স্ত্রীর  সাথে এমন বাজে ভিহেভ করলে আমার চেয়ে খারাপ কেউ হবে না। চলো পুষ্প।
বলেই রাইয়ান পুষ্পর হাত ধরে টানতে টানতে তার কেবিনে নিয়ে যায়।

রাইয়ান এসব কথা শুনে অফিসের সবাই অবাক হয়ে গেছে। পাপড়িও স্থীর হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রাইয়ানে কথাগুলো এখনো তার কানে বাজছে। পাপড়ি মনে মনে বলছে,
– কোন একদিন ঠিক এভাবেই আমার জন্য অফিসের কলিগদের ওয়ার্নিং দিয়ে শাসিয়ে ছিলে। আর আজ….  এতোটা চেঞ্জ কিভাবে হয়ে গেলে তুমি রাইয়ান?
পাপড়ি আর সেখানে দাঁড়িয়ে থাকতে পারলো না। কাঁদতে কাঁদতে দৌড়ে অফিসের বাহিরে চলে যায়।

চলবে…..

ত্রিভুজ প্রেম পর্বঃ৩২

0

ত্রিভুজ প্রেম
পর্বঃ৩২
জান্নাতুল ফেরদৌস সূচনা

সকালে রান্নাঘরে মিসেস মাহমুদাকে দেখে পুষ্প খুব অবাক হয়ে বললো,
– মা আপনি আজ রান্নাঘরে কি করছেন?
– কেন আমি কি রান্নাঘরে আসতে পারি না?
– না মানে.. এতোদিন তো আপনি…
– আমাকে আপনি আপনি বলছিস কেনো? তুই আমাকে এখনো শাশুড়ী ভাবিস?
মিসেস মাহমুদার এমন কথায় বেশ অবাক হয়ে যায় পুষ্প।
পুষ্পকে অবাক হতে দেখে মিসেস মাহমুদা আবার বললো,
– কি হলো? এতো অবাক হওয়ার মতো কোন কথা বলিনি আমি। এখন থেকে আমাকে তুমি করে বলবি, মনে থাকবে?
পুষ্প মুচকি হেসে বললো,
– আচ্ছা মা। এখন বলো কোথায় সাহায্য লাগবে আমার?
– কোনো সাহায্য লাগবে না। আমি আর বাসন্তী মিলে সব করে নিবো। এমনিতে সারাদিন রাইয়ানের সেবাযত্নে অনেক খাটুনি হয় তোর। কাল রাতেও তুই ভালো করে ঘুমতে পারিস নি। তুই যা, একটু বিশ্রাম নে।
– মা তা কি করে হয়? আমি কিছু..
– বললাম না রুমে যেতে। এখন কিন্তু আমি বড্ড রাগ করবো।
শাশুড়ীর কাছ থেকে এমন শাসন হয়তো সব বউয়েরাই আশা করে। আজ নিজেকে খুব ভাগ্যবতী মনে হচ্ছে পুষ্পর। মুচকি হেসে পুষ্প তার রুমে চলে যায়।

নাস্তার টেবিলে নাস্তা করতে বসছে সবাই। আজকের নাস্তা মিসেস মাহমুদা রান্না করেছে শুনে মি. রাশেদ খুবই অবাক হয়। তার ওপর থেকে পুষ্পর সাথে মিসেস মাহমুদাকে এত কথাবার্তা বলতে দেখে আরো বেশি অবাক হচ্ছে।
– আজ সূর্য কোনদিকে ওঠেছে বুজতে পারছি না, মাহমুদা। রাতারাতি তোমার এতো পরিবর্তন হলো কিভাবে?
মি. রাশেদ এমন কথা শুনে মিসেস মাহমুদা ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলে,
– কেনো, আমি আবার কি করেছি তোমায়?
– আমায় কিছু করো নি। কিন্তু আজ বউমার সাথে যেভাবে কথা বলছো এর আগে তো কখনো এমনভাবে কথা বলতে দেখিনি।
মিসেস মাহমুদা মুখে বাঁকা হাসি দিয়ে বললো,
– এখন থেকে সবসময় শুনবে। আমি আমার ভুল বুজতে পেরেছি। এখন পুষ্প আমার বউ না আমার মেয়ে।
মি. রাশেদ এ কথা শুনে খুশি হয়ে বললেন,
– তোমার মুখে এমন কথা শুনার অপেক্ষায় ছিলাম আমি। আমি জানতাম বউমা একদিন তোমার মন জিতবে। আজ খুব আনন্দের দিন আমার।
– হয়েছে আর আনন্দ করতে হবে না, এখন নাস্তা করো।
অনেকদিন পর পরিবারের সবাইকে এতো খুশি দেখে পুষ্প মনটাও ভরে ওঠলো। সে তার চেষ্টায় ধীরে ধীরে সফল হচ্ছে।

অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে অফিসের ভবনটাকে দেখছে পুষ্প। মুখে একটা হাসি নিয়ে অফিসে ভিতরে যেতেই কেউ একজন পুষ্পকে হেঁচকা টান দিয়ে একটা সাইডে নিয়ে যায়।
– পাপড়ি তুই এভাবে আমাকে টেনে আনলি কেন এইখানে?
– তুই অফিসে কেন এসেছিস? কোনো কাজ থাকলে আমাকে বল আমি করে দিচ্ছি।
– আমি অফিসের দেখাশুনা করতে এখানে এসেছি পাপড়ি, কোনো কাজে নয়।
পুষ্পর কথা শুনে পাপড়ি চমকে ওঠে বলে,
– রাইয়ানকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিয়েও তোর মন ভরে নি যে এখন আমার চাকরিটা কেড়ে নিতে এসেছিস?
– পাপড়ি, তুই আমাকে ভুল বুঝেছিস। আমি এখানে তোর চাকরির কোন ক্ষতি করতে আসিনি। কোম্পানিটা দিন দিন লোকসানের দিকে যাচ্ছে। নতুন যেই ডিলটা কোম্পানি পেয়েছে তার কাজগুলো ঠিকমতো হচ্ছে কিনা তার দেখাশুনা আমি করতে আমি এসেছি।
– তার জন্য আমি আছি। তোকে এতো চিন্তা করতে হবে না। তুই যা।
– তুই একা সব সামলাতে পারছিস না বলেই রাইয়ানের অনুমতি নিয়ে আমি এখানে এসেছি।
– তুই……

-পুষ্প তুমি কার সাথে কথা বলছো?
অফিস কলিগের সুমনার এমন কথা শুনে পাপড়ি চমকে ওঠে।
– ওমা, একি!  তোমরা কি জমজ বোন? তোমার যে একটা জমজ বোন আছে তা আগে তো বলোনি পুষ্প?
সুমনার এমন কথা শুনে অফিসের বাকি কলিগরাও চলে আসে পুষ্প-পাপড়িকে দেখতে।
পাপড়ি এবার হকচকিয়ে যায়। ঠিক এই ভয়টাই সে পেয়েছিলো। এখন কলিগদের কি বলবে সে বুঝতে পারছে না।
সুমনা আবার বললো,
– তা পুষ্প, তোমার জমজ বোনের নাম কি?
পাপড়ি কোন জবাব না দিয়ে চুপচাপ দাড়িয়ে আছে।
পুষ্প পাপড়ির এমন অবস্থা দেখে পেছন থেকে বললো,
– আমার নাম পাপড়ি। আমি আজ থেকে…
পুষ্পকে আর বলার সুযোগ না দিয়ে পাপড়ি বলে ওঠে,
– ওকে আমিই ডেকে এনেছি অফিসে। আসলে বস অফিসে না থাকায় আমি একা সব কাজ সামলাতে পারছি না। আর আপনারাও আপনাদের কাজে বিজি। তাই বস সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত আমার কাজের সহযোগিতার জন্য আপুকে এখানে এনেছি। আর এতে বসও আমাকে অনুমতি দিয়েছে।

পাপড়ির কথা শুনে পুষ্প সহ তার কলিগরাও অবাক হয়। সুমনা বললো,
– বস যেহেতু অনুমতি দিয়েই দিয়েছে তাহলে তো আর কিছু করার নেই। আচ্ছা চলো এখন সবাই সবার কাজে যায়।

সুমনার কথা শুনে অফিসের সবাই সবার কাজে চলে গেলো। সবাই চলে যেতেই পাপড়ি পুষ্পকে বললো,
– এসেই যখন পড়েছিস, তো এখন থেকে আমার কথামতোই কাজ করবি। ওকে?
পুষ্প আর কোন কথা না বলে মাথা নাড়িয়ে হ্যা বললো।

রাইয়ান একা একা বেডে বসে আছে। খুব বোরিং লাগছে তার।
– ধ্যাত এভাবে একা একা আর বসে থাকতে পারছি না। পুষ্প থাকলে ভালো হতো,তার সাথে তো একটু গল্প করা যেতো। খুব ক্ষিধাও পেয়েছে। কিন্তু কাকে ডাকবো কাউকেই তো দেখতেও পারছি না।
একটুপরই মিসেস মাহমুদা কিছু খাবার নিয়ে রাইয়ান কাছে আসে।
– রাইয়ান নে,  তোর জন্য খাবার নিয়ে এসেছি।
রাইয়ান অবাক হয়ে বললো,
– তুমি কিভাবে জানলে আমার ক্ষিধে পেয়েছে?
– পুষ্প আমাকে অফিসে যাওয়ার আগে সব বলে গেছে যে কখন কখন তো কি কি লাগবে।
– হুম। একা একা বসে থাকতে খুব বোরিং লাগছে মা।
– তো তুই একা একা বসে থাকিস কেন?
– তাহলে কি করবো?
– হাঁটাচড়া করবি, ব্যায়াম করবি।
– এসব করানোর জন্যও তো কেউ লাগবে।
– দেখ বাবা, কেউ তোকে ধরে ধরে হাটাবে, নাড়াচাড়া করাবে তাহলে তুই আগের মতো হয়ে যাবি, যদি এমন ভেবে থাকিস তাহলে তোর সুস্থ হতে অনেক সময় লাগবে। আর তুই যদি একা একা হাটাচড়ার ট্রাই করিস, একা একা ব্যায়াম করিস, তাহলেই তাড়াতাড়ি সুস্থ হবি।
– হুম।
– তুই আর কারো জন্য বসে থাকিস না। এখন থেকে সবকিছু একা একা করার চেষ্টা কর। আমার বিশ্বাস তুই তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবি।
– আচ্ছা মা। এখন থেকে আমি চেষ্টা করবো।

চলবে…..

ত্রিভুজ প্রেম পর্বঃ৩১

0

ত্রিভুজ প্রেম
পর্বঃ৩১
জান্নাতুল ফেরদৌস সূচনা

রাত ১১ টা বাজে। টেবিলে বসে পুষ্প তার   নিজের অনিশ্চিত জীবনের কথাগুলো ডাইরির পাতায় আবদ্ধ করছে। হঠাৎ রুমের দরজার কাছে শব্দ পেয়ে পুষ্প ওঠে গিয়ে দেখলো মিসেস মাহমুদা দরজার পাশে দাঁড়িয়ে আছে।
– মা, আপনি এখন এখানে? কোনো দরকার ছিলো?
– না। আমি রাইয়ানকে দেখতে এসেছিলাম।
– সে তো ঘুমিয়ে পড়েছে। আসুন ভিতরে আসুন।
– না আসবো না। অনেক রাত হয়েছে আর জেগে থেকো না শুয়ে পড়ো।
বলেই মিসেস মাহমুদা তার রুমের দিকে যেতে লাগলো। পেছন থেকে পুষ্প আবার মিসেস মাহমুদাকে ডেকে আস্তে করে বললো,
– মা, নুরী কি বাসায় চলে এসেছে?
পুষ্প মুখে এমন প্রশ্ন শুনে মিসেস মাহমুদা মুখটা গম্ভীর করে বললো,
– নাহ, এখনো আসেনি। কিন্তু সে আমায় কল করে বলেছে কিছুক্ষণ পর চলে আসবে।
পুষ্প  অবাক হয়ে বললো,
– এখনো আসেনি! এতো রাত হয়ে গেলো…
– আহ! এতো কথা বলছো কেন?  বলছি তো চলে আসবে। তুমি শুয়ে পড়ো যাও।
পুষ্প আর কোন কথা বললো না। চুপচাপ রুমে গিয়ে শুয়ে পড়ে।

অনেকক্ষণ হয়ে গেলো কিন্তু পুষ্পর কোনমতেই ঘুম আসছে না। মনটা কেমন আনচান করছে। তার মনে হচ্ছে কিছু একটা খারাপ হতে চলেছে।
– নাহ! আর শুয়ে থাকতে পারছি না। নুরীকে একবার না দেখলে মনে শান্তি আসবে না।
পুষ্প রুম থেকে বেরিয়ে নুরীর রুমের কাছে গিয়ে দেখে নুরী তার রুমে নেই।
– এখনো নুরী আসেনি। অনেকক্ষণ তো হয়ে গেলো। আসার পথে কোন সমস্যায় পড়ে নি তো আবার সে? আমি কি একবার ফোন দিয়ে দেখবো?
বলেই নুরীকে ফোন দেয় পুষ্প। কিন্তু নুরী ফোন ধরছে না।

– রনি, অনেক রাত গেছে, এখন আমাকে যেতে হবে বাসায়।
নুরীর কথা শুনে রনি বললো,
– সে কি আর একটু থাকো না?
– ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখো কয়টা বাজে। মা  বারবার ফোন দিচ্ছে আর আমাদের ফেন্ডরাও চলে গেছে বাসায়। এখন আমাকেও যেতে হবে।
– আর একটু থাকো না প্লিজ…
বলেই রনি নুরীর সাথে জোরাজোরি করতে লাগলো।

– ড্রাইভার ভাই, ড্রাইভার ভাই
এতোরাতে ড্রাইভার পুষ্পকে দেখে অবাক হয়ে বলে,
– ম্যাডাম, এতো রাতে আপনি এখানে?
– সরি, আপনাকে এতো রাতে ঘুম থেকে ওঠানোর জন্য।
– না, তা কিছু না। কিন্তু কেনো ডেকেছেন?
পুষ্প আমতা আমতা করে বললো,
– আপনি কি নুরীর বন্ধু রনির বাসা চিনেন?
– হ্যা.. একদিন আপামনিকে গাড়িতে করে ওনার বাসায় নিয়ে গিয়েছিলাম।
– এখন কি আমায় একটু নিয়ে পারবেন?
– হ্যা অবশ্যই। কিন্তু…
– কোন কিন্তু না চলুন প্লিজ।

– রনি প্লিজ, আমাকে ছেড়ে দাও, এসব কি করছো? তুমি না আমাকে ভালোবাসো?
নুরীর কথা শুনে শুনে রনি হেসে বললো,
– এতোদিন যা করেছি তা সবই নাটক ছিলো। তোর আগেও কতো মেয়ের সাথে এমন নাটক করেছি।
– রনি! তুমি এতোটা খারাপ, ছিঃ!
– এসব বলে কোন লাভ নেই জান। তোমার পেছনে অনেক সময় নষ্ট করেছি। আর আজ এতো সুন্দর সুযোগ কিভাবে হাতছাড়া করি আমি। আসো জান আমার কাছে আসো।
– না। ছেড়ে দাও আমায়। কে আছো, প্লিজ বাচাঁও আমায়।
নুরী চিৎকার করতে লাগলো।
– হা হা… কেউ নেই বাসায়। সবাই চলে গেছে। করো চিৎকার, কেউ শুনবে না।
নুরী এবার কাঁদতে কাঁদতে বললো,
– প্লিজ রনি, আমার এতোবড় সর্বনাশ করো না। আমাকে যেতে দাও।
– এতো সহজেই কিভাবে ছাড়ি তোমায় জান।
বলেই রনি নুরীর সাথে জোরাজোরি শুরু করে।
এক পর্যায়ে নুরী রনিকে ধাক্কা দিয়ে মেঝেতে ফেলে দেয়। আর সেখান থেকে দৌড়ে বাহিরে যেতেই পুষ্পর সাথে থাক্কা খায় নুরী।

ছেড়া জামা, ঠোঁটের এক পাশে রক্ত জমে আছে, শরীরে অনেক জায়গায় কেটে গেছে।
নুরীকে এমন অবস্থা দেখে পুষ্প একদম চমকে ওঠে।
পুষ্পকে দেখে নুরী দৌড়ে তাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে।
পেছন রনি এসে বললো,
– দৌড়ে পালাবি কোথায়?
রনিকে এ অবস্থায় দেখে পুষ্প আর কিছু বুঝার বাকি থাকলো না।
পুষ্পকে দেখে রনি বললো,
– বাহ! ননদকে বাঁচাতে ভাবি চলে এসেছে, কিন্তু ভাবিকে কে বাঁচাবে? হা…হা..
কথা শুনেই পুষ্পর রাগ মাথায় ওঠে যায়। নুরীকে পাশে দাড় করিয়ে নিজের শাড়ির আঁচলটা কোমড়ে ঘুজে রনির দিকে এগিয়ে যায় পুষ্প।  রনির সামনে গিয়ে পুষ্প রনির নাক বরাবর একটা ঘুষি মারতেই রনি পড়ে যায়। তারপর পুষ্প নিজের জুতো খোলে জুতাপেটা করে রনিকে।
পুষ্পর এমন চন্ডীরূপ দেখে নুরী একদম চমকে ওঠে। পুষ্প যে এতোটা রাগতে পারে তা নুরীর ধারণার বাহিরে ছিলো। এতোদিন পুষ্পকে একজন অসহায় মেয়ে মনে করতো নুরী।

অনেকক্ষণ রনিকে পেটানোর পর রনি আধমরা হয়ে যাওয়ায় পুষ্প তাকে ছেড়ে দেয়। পুষ্প নুরীর ওড়নাটা নিয়ে তার শরীরে মুড়িয়ে দিয়ে ঐখান থেকে বেরিয়ে যায়।

রাত ১ টায় গাড়ি বাসার সামনে এসে দাড়ায়। পুষ্প নুরীকে গাড়ি থেকে নামিয়ে বললো,
– নুরী, তুমি এইখানেই দাঁড়াও। আমি আগে ভেতরটা দেখে আসি। ভেতরে কেউ তোমাকে এ অবস্থায় দেখলে মনে খুব কষ্ট পাবে।
– হুম।

“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
পুষ্প ভেতরে গিয়ে সব ভালো করে দেখে কেউ না দেখতে পেয়ে আবার নুরীর কাছে এসে বললো,
– চলো। সবাই ঘুমিয়ে আছে।

পুষ্প আর নুরী নুরীর রুমে ঢুকতেই পেছন থেকে মিসেস মাহমুদা লাইট জ্বালিয়ে বললো,
– বাসায় আসতে এতো রাত হলো কেন নুরী?
মিসেস মাহমুদাকে নুরীর রুমে দেখতে পেয়ে নুরী আর পুষ্প দুজনেই চমকে ওঠে।
নুরী আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না, সে দৌড়ে মিসেস মাহমুদাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে। নুরী মিসেস মাহমুদাকে জড়িয়ে ধরায় হাত শরীর থেকে তার ওড়নাটা পড়ে যায়।
নুরীর ছেড়া জামা আর শরীরের হাল দেখে মিসেস মাহমুদা চমকে ওঠে বলে,
– নুরী, কি হয়েছে? তোর এ অবস্থা কি করে হলো?
নুরী কোন কথা বলছে না কেঁদেই চলেছে।
নুরীর কাছ থেকে কোন জবাব না পেয়ে মিসেস মাহমুদা পুষ্পকে জিজ্ঞেস করলো,
– পুষ্প, নুরীর কি হয়েছে?  ও এভাবে কাঁদছে কেন?
পুষ্প মিসেস মাহমুদাকে কি বলবে বুঝে পারছে না। সে আমতা আমতা করে কিছু বলতে যাবে তার আগেই নুরী বললো,
– মা, রনি আমার এ অবস্থা করছে। আজ যদি ভাবি ঠিক সময় না পৌঁছাতো তাহলে রনি আমার ইজ্জত নষ্ট করে ফেলতো। আমি ঐদিন ভাবির কথা না শুনে অনেক বড় ভুল করে ফেলেছি মা…
বলেই কাঁদতে লাগলো।
এ অবস্থায় মিসেস মাহমুদা কি বলবে কিছু বুঝতে পারছে। পুষ্পর সামনে লজ্জায় মাথা উঁচু করে দাড়াতে পারছে না মিসেস মাহমুদা।  নুরীকে ছেড়ে মিসেস মাহমুদা পুষ্পর সামনে হাতজোড় করে এসে দাড়িয়ে কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলে,
– তোমার কাছে ক্ষমা চাওয়ার যোগ্যতাটাও হারিয়ে ফেলেছি।  এতোদিন তোমাকে কত কথা শুনেয়েছি, তোমাকে ভুল বুঝে তোমার ওপর অনেক অন্যায় করেছি, যদি পারো আমাকে ক্ষমা দাও।
বলে মিসেস মাহমুদা পুষ্পর পা ধরতে যাবে তখনি পুষ্প তার হাত ধরে বলে,
– ছিঃ মা, এসব কি করছেন? আপনার হাত আমার পায়ে ধরার জন্য নয় আমাকে দোয়া করার জন্য। আমাকে এসব বলে আর ছোট করবেন না আর।
মিসেস মাহমুদা এবার পুষ্পকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো।
পেছন থেকে নুরী এসে বললো,
– ভাবি, আমাকেও ক্ষমা দাও। তোমার কথা না শুনে তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি।
পুষ্প মুচকি হেসে বললো,
– তুমি আমার ছোট বোনের মতো। তোমার কথায় কিসের কষ্ট পাবো।
মিসেস মাহমুদা পুষ্পর মাথায় হাত দিয়ে বললো,
– আজ থেকে তুমি এ বাড়ির শুধু বউ না আমার মেয়ে। আজ থেকে আমার দুই মেয়ে। পুষ্প আর নুরী।
নিজের শাশুড়ীর মুখে এমন কথা শুনে পুষ্প এবার কেঁদে মিসেস মাহমুদাকে জড়িয়ে ধরে। মিসেস মাহমুদাও নুরী আর পুষ্পকে একসঙ্গে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে।

চলবে….

ত্রিভুজ প্রেম পর্বঃ৩০

0

ত্রিভুজ প্রেম
পর্বঃ৩০
জান্নাতুল ফেরদৌস সূচনা

বেশ কয়েকদিন কেটে যায়। পুষ্পর অক্লান্ত ভাবে রাইয়ানের সেবাযত্ন করায় রাইয়ান এখন অনেকটাই সুস্থ। তবে অনেকদিন হাতে ব্যান্ডজ থাকায় রাইয়ান হাতে, পায়ে শক্তি কম পায়। এখনো সুস্থ হতে তার কিছুদিন সময় লাগবে।

পুষ্প রাইয়ানকে এভাবে সেবাযত্ন করতে দেখে এ কিছুদিনে মিসেস মাহমুদার মনটাও পাল্টেছে। এখন আর সবসময় তিনি পুষ্পকে বকাঝকা করে করেন না। তবে পুষ্প প্রতি মিসেস মাহমুদার রাগ কমলেও তিনি এখনো পুষ্পকে বউ হিসেবে মেনে নেন নি।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন

কলিং বেলের শব্দে পুষ্প দরজা খুলতেই দেখে হাতে ফুলের তোরা নিয়ে পাপড়ি দাঁড়িয়ে আছে। পাপড়িকে দেখে পুষ্পর মন আনন্দে ভরে ওঠে কারণ অনেকদিন পর সে পাপড়িকে দেখেছে। পুষ্প আনন্দে পাপড়ি জড়িয়ে ধরতে চাইলে পাপড়ি হাত তুলে তাকে বাঁধা দিয়ে বললো,
– হয়েছে আর নাটক করতে হবে না। আমি এখানে তোর জন্য আসিনি। আমি রাইয়ানের সাথে দেখা করতে এসেছি।
কথাটা শুনতেই পুষ্পর মনটা খারাপ হয়ে যায়। তারপর মলিন একটা হাসি দিয়ে বলে,
– কেমন আছিস তুই?
– হ্যা ভালো। রাইয়ান কোথায়?
– ও পাশের রুমে আছে।
পাপড়ি রুমটা দেখতে পেয়ে আর কোনো কথা না বলে রুমের দিকে চলে যায়।

-হ্যালো রাইয়ান?
পাপড়ি কন্ঠ চিনতে পেরে রাইয়ান অবাক হয়ে রুমের দরজার দিকে তাকায়। পাপড়ি আবার বললো,
– আমি কি ভিতরে আসতে পারি?
রাইয়ান মাথা নাড়িয়ে ইশারা দেয় আসার জন্য। পাপড়ি রাইয়ানের পাশে বসে রাইয়ানকে ফুলের তোরাটা দিয়ে বললো,
– আপনার জন্য। রাইয়ান, কেমন আছেন আপনি?
বার পাপড়িকে রাইয়ানের নাম ধরে ডাকতে দেখে রাইয়ান খুব অবাক হচ্ছে।
– আমার নাম ধরে ডাকার মানে?
পাপড়ি একটা বাঁকা হাসি দিয়ে বললো,
– অফিসের বাহিরে আমাদের সম্পর্কটা অন্য।  আমার বোনের স্বামী আপনি। সম্পর্কে এখন দুলাভাই ডাকতে হয়। কিন্তু কিছুদিন পর তো আপনাদের ডিভোর্স হবে তারপর আমাদের সম্পর্কটা অন্য কিছু হতে পারে তাই নাম ধরেই ডাকলাম।
পাপড়ির কথাগুলো রাইয়ানের মেজাজ খারাপ হয়ে গেলেও সে চুপ থাকে কারণ সে বাড়িতে কোন ঝামেলা করতে চায় না।
– তা হঠাৎ আজকে আমার বাসায় কেন এসেছো তুমি?
– আপনাকে দেখতে এসেছি। কতোদিন হলো আমাদের দেখা হয় না। যদিও আপনাকে ছাড়া অফিসের সব কাজ আমি একাই সামলে নিয়েছি তবুও আপনাকে ছাড়া অফিসে একদম ভালো লাগে না। আপনাকে ছাড়া অফিসে আমার মনই বসে না।
পাপড়ির কথা শুনে রাইয়ান মনে মনে বলে,
-অফিসে তুমি কাজ কিভাবে সামলাচ্ছো তার খবর তো আমিই জানি। সব কিছু তুমি ভালো সামলাতে পারলে আর কোম্পানিটা এখন লসের মুখে পড়তে চলতো না।
রাইয়ানকে এভাবে থাকতে দেখে পাপড়ি রাইয়ানের ডান হাতের ওপর নিজের হাতটা রেখে বললো,
– কি হলো কিছু বলছেন না যে?
পাপড়ির এভাবে তার হাত রাইয়ানের হাতের ওপর রাখতেই রাইয়ানের মেজাজ আরো বিগড়ে গেলো। কিন্তু ডান হাতে শক্তি পাচ্ছে না বিধায় রাইয়ান নিজের হাতটা সরাতে পারচ্ছে না।

অন্যদিকে পাপড়ির জন্য চা আর বিস্কুট নিয়ে পুষ্প রুমের সামনে আসতেই এ দৃশ্য তার চোখে পড়ে। রাইয়ানের হাতের পর পাপড়ির হাতটা দেখতে পেয়ে পুষ্প মনটা খারাপ হয়ে যায়।
এমন সময় তার রুমে যাওয়া ঠিক হবে না, এটা ভেবে পুষ্প আবার রান্নাঘর দিকে ফিরে যায়।

– কি হলো রাইয়ান, কোনো কথা বলছো না যে?
পাপড়ি কথা শুনে রাইয়ান রেগে বললো,
– হাত সরাও। আমাকে টাচ করতে তোমাকে না করেছি। তবু তোমার সাহস কি হলো আমাকে আবার টাচ করার?
পাপড়ি মুখটা ভাড় করে বললো,
– আপনি এখনো আমাকে মাফ করেন নি? আর কতোবার মাফ চাইবো আমি?
– দেখো আমি আমার বাসায় কোনো সিন ক্রিয়েট করতে চাচ্ছি না। দেখা করতে এসেছো, দেখা হয়েছে। এবার তুমি আসতে পারো। এমনিতেও আমার ঔষধ খাওয়ার টাইম হয়ে গেছে আর ঔষধ খাওয়ার পর আমি বিশ্রাম করবো।
– আচ্ছা তো আমি আপনাকে ঔষধ খাওয়ে দিচ্ছি। আমাকে বলুন কোন ঔষধগুলো খাবেন।
রাইয়ান এবার আরো রেগে গিয়ে বলে,
– তোমাকে আমি বলিনি আমাকে ঔষধ খাইয়ে দিতে। আমাকে পুষ্প ঔষধ খাওয়াবে। তোমাকে যেতে বলেছি যাও।
বলেই রাইয়ান পুষ্পকে ডাকতে শুরু করে।
রাইয়ানের এমন কথা শুনে পাপড়ি মনে অনেক কষ্ট পায়। সে আর সেখানে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না, চুপচাপ সেখান থেকে চলে যায়।

– তাদের এভাবে একসাথে দেখে আমার কেনো এতো কষ্ট হচ্ছে। কেনো মনটা পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে৷ তবে কি আমি রাইয়ানকে….
না…না…  তা হতে পারে না। পাপড়ি আর রাইয়ান একে অপরকে ভালোবাসে। আর আমি তাদের মাঝে কাটা হয়ে থাকতে পারি না।
রান্নাঘরে এসে পুষ্প একা একা কাঁদতে কাঁদতে এসব বলছে। হঠাৎ রুম থেকে রাইয়ানের ডাক শুনতে পেয়ে চোখ পানি মুছে রুমে যায় পুষ্প।
-কতোবার ডেকেছি? কোথায় ছিলে?
– এইতো রান্নাঘরে ছিলাম।
আস্তে করে জবাব দিলো পুষ্প।
পাপড়িকে রুমে দেখতে না পেয়ে পুষ্প বললো,
– পাপড়ি কোথায়?
রাইয়ান মুখটা ভাড় করে বললো,
– সে চলে গেছে।
পুষ্প মুখটা কালো করে বললো,
– আমার সাথে দেখা না করেই চলে গেলো।
– হুম। আমার এখনের ঔষধগুলো দাও, খেয়ে নিই।
– হুম।
পুষ্প ঔষধ নিয়ে রাইয়ানের হাতে দিতেই রাইয়ান পুষ্পর দিকে তাকিয়ে বললো,
– তোমার কি মন খারাপ?
– কই না তো।
– তোমার চেহেরাই কষ্টের ছাপ দেখতে পারছি আমি।
পুষ্প মুখে মলিন একটা হাসি দিয়ে বললো,
– ওসব কিছু না। ঔষধ খেয়ে নিয়েছো, এবার বিশ্রাম করো।

রাত ৮ টা বাজে। পুষ্প রান্নাঘরের কাজ শেষ করে যাওয়ার সময় বাহির থেকে গাড়ির আওয়াজ পায়। রান্নাঘরের জানালা দিয়ে পুষ্প দেখতে পেলো সেই গাড়িটি। তার মানে নুরীর বন্ধু রনি এসেছে। পুষ্প তার রুমে যাওয়ার সময় মিসেস মাহমুদা ও নুরীকে দেখতে পেলো।
বেশ সেজে গুজে আছে নুরী। পুষ্প দূর নুরী আর মিসেস মাহমুদার কথাকপন শুনতে পায়। নুরী মিসেস মাহমুদাকে বলছে,
– মা, আজ রনির বার্থডে। রনি তার বাসায় সেজন্য পার্টিও দিয়েছে। আমি একটু তার বাসায় যাচ্ছি।
– আচ্ছা যা, কিন্তু বেশি দেরি করিস না।
– আচ্ছা।

পুষ্প মনে মনে বললো,
– নুরীকে একা একা এত রাতে রনির সাথে যাওয়ার অনুমতিটা মার দেওয়া ঠিক হয় নি। কিন্তু আমি তো এ বিষয়ে মাকে কিছুই বলতে পারবো না।
খানিকটা হতাশ হয়ে পুষ্প রুমের দিকে যায়।

পুষ্প রুমে গিয়ে দেখলো রাইয়ান মাথায় হাত দিয়ে কি যেন একটা ভাবছে। রাইয়ান এভাবে চিন্তা করতে দেখে পুষ্প তার কাছে গিয়ে বললো,
– কি হয়েছে? এভাবে কি চিন্তা করছো?
– নাহ কিছু না।
– আমাকে তুমি বন্ধু মনে করো না?
রাইয়ান অবাক হয়ে পুষ্পর দিকে তাকিয়ে বললো,
– হ্যা।
– তাহলে তোমার মনের কথা আমার সাথে শেয়ার করছো না কেন?
রাইয়ান একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললো,
– কি বলবো তোমায়। আমাদের কোম্পানিটা দিন দিন লোকসানের দিকে যাচ্ছে। আমি অফিসে না যাওয়ায় অফিসের কোন কাজই ঠিকমতো হচ্ছে না। আজ সকালেই ম্যানেজার সাহেব ফোনে বলছিলো যে নতুন ডিলটার কাজ ঠিকমতো হচ্ছে না। এভাবে চললে এ ডিলটা হাতছাড়া হয়ে যাবে। আর আমায় দেখো, এখনো ঠিকমতো সুস্থ হয়ে ওঠতে পারছি না।
পুষ্প রাইয়ানকে সান্ত্বনা দিয়ে বললো,
– আপনি খুব শীগ্রই সুস্থ হয়ে যাবেন।
পুষ্প কিছুক্ষণ চুপ থেকে কি যেন একটা ভেবে আবার বললো,
– আমাকে একটা অনুমতি দিবে?
– কিসের?
– আপনি যতোদিন সম্পূর্ণ সুস্থ না হচ্ছেন ততোদিন যদি আমি অফিসের দেখাশুনা করি?
– না… না… তা কি করে হয়? তুমি অফিসে…
– আমার ওপর বিশ্বাস নেই তোমার?
– না তা নয়! তুমি ঘরে এতো কাজ করো তারপর অফিসে….
– চিন্তা করো না আমি সব সামলে নিবো। আর অফিসে পাপড়িও আছে, আমরা দুজন মিলে সব দেখাশুনা করবো। আর তারপরও যদি কোনো প্রবলেম হয়, তুমি তো আছোই। তোমার কাছ থেকে আমি জেনে নিবো। তুমি শুধু আমাকে অনুমতিটা দাও।
রাইয়ান মনে মনে ভাবলো,
– অফিসের যা অবস্থা, এই সময় একজন কাছের মানুষ দেখাশুনা করলে ভালো হয়। আর পাপড়ির ওপর তো আমার একদম ভরসা নেই, তার চেয়ে বরং আমি পুষ্পকে অনুমতিটা দিই।
পুষ্প বললো,
– কি হলো, কিছু বলছো না যে?
– ওকে তুমি যেতে পারো। কিন্তু কোনো সমস্যা হলে অফিসে আমাকে জানাবে।
– আচ্ছা।

চলবে…..

ত্রিভুজ প্রেম পর্বঃ২৯

0

ত্রিভুজ প্রেম
পর্বঃ২৯
জান্নাতুল ফেরদৌস সূচনা

এক্সিডেন্টে রাইয়ান খুব গুরুতর আহত হয়েছে। মাথায় আঘাত, ডান হাত ও দু পায়ের হাড় ভেঙে যাওয়ার মাথা, হাত ও পায়ে ব্যান্ডস করা হয়েছে। মিসেস মাহমুদা ও নুরী রাইয়ানকে দূর থেকে দেখে কান্না করছে। রাইয়ানের এখনো হুশ ফিরেনি। ডাক্তার বলে গেছে কিছুক্ষণ পরই তার হুশ ফিরবে।

কিছুক্ষণ পর সেখানে মি. রাশেদ আর পুষ্প হাজির হয়। মি. রাশেদকে সেখানে দেখে মিসেস মাহমুদা আর নুরী দুজনেই অবাক।

– তুমি এখানে এ অবস্থায় কেন এসেছো?
– তুমি কি চাও মাহমুদা আমার ছেলের এক্সিডেন্ট হয়ে হসপিটালে পড়ে আছে আর আমি ঐখানে শুয়ে শুয়ে বিশ্রাম করব?
– আমি, নুরী এখানে রাইয়ানের কাছে আছি। তুমি এখনো পুরাপুরি সুস্থ হয়ে ওঠো নি। তোমার বিশ্রামের দরকার এখন।
– আমার ছেলের এমন অবস্থা আর আমি বিশ্রাম করবো তা কখনই হতে পারে না।
পেছন থেকে পুষ্প বললো,
– বাবা, আপনি বেশি উত্তেজিত হবেন না৷ শান্ত হন।

পুষ্পর কথা শুনে মিসেস মাহমুদা বললো,
– হয়েছে আর ন্যাকামো করতে হবে না। তোমার যদি এতোই চিন্তা থাকতো তো রাইয়ানের বাবাকে রাইয়ানের ব্যাপারে এখন কিছুই বলতে না।
মি. রাশেদ রেগে বললো,
– বউমা আমাকে কিছুই বলতে চাইনি আমি জোর করায় সে আমায় বলছে। আর বলবেই বা না কেন? আমার ছেলের এ অবস্থার কথা আমি জানার অধিকার আছে। রাইয়ান কোথায়? আমি রাইয়ানের সাথে দেখা করবো।
বলেই মি. রাশেদ হসপিটালের কেবিনে ঢুকলেন। মি. রাশেদের পেছনে মিসেস মাহমুদা, নুরী ও পুষ্পও রুমের ভিতর ঢুকে।

সবাই রাইয়ানের কাছে গেলেও পুষ্প দূরে রুমের এক কোণায় দাঁড়িয়ে থাকে। রাইয়ানের কাছে যাওয়ার তার সাহস হয়ে ওঠে না।

মি. রাশেদ রাইয়ানের পাশে বসে রাইয়ানের হাতটা ধরতেই রাইয়ানের জ্ঞান ফিরে। মি. রাশেদ কাঁদো কাঁদো গলায় বললো,
– রাইয়ান বাবা আমার, কেমন আছিস তুই?
রাইয়ান চোখ মেলে তার বাবার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে তারপর আস্তে করে বলে,
– বাবা! তুমি সুস্থ আছো তো? তোমার হার্ট অ্যাটাকের কথা শুনে আমি তো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।
– আমি একদম ঠিক আছি। তুই আমার জন্য চিন্তা করিস না। নিজের এ কি হাল করেছিস তুই?
– আসলে বাবা এক্সিডেন্টটা কিভাবে হয়ে গেলো আমি বুজতে পারিনি।

পেছন থেকে মিসেস মাহমুদা কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বললো,
– হয়েছে আর কথা বলতে হবে না। চুপ করে শুয়ে থাক।

মিসেস মাহমুদাকে কাঁদতে দেখে রাইয়ান বললো,
– মা, তুমি কাঁদছো কেন? আমি একদম সুস্থ হয়ে যাবো দেখো।
রাইয়ান একবার চারপাশ চোখ ঘুরাতেই পুষ্পকে দেখতে পেয়ে বলে,
– পুষ্প তুমি এত দূরে দাঁড়িয়ে আছো কেন?
রাইয়ান কথা শুনে পুষ্প রাইয়ানের কাছে যাওয়ার জন্য এক কদম এগুতেই তার সামনে মিসেস মাহমুদা এসে দাঁড়িয়ে বলে,
– খবরদার, আমার ছেলের কাছে তুমি যাবে না।

মিসেস মাহমুদার এমন কথা শুনে সেখানের সবাই অবাক হয়ে যায়। মি. রাশেদ বললো,
– মাহমুদা এসব কি বলছো তুমি?
– হ্যা, ঠিক বলছি। এ মেয়ের আসার পর থেকে একটা না একটা অনিষ্ট হয়েই চলেছে। এমনকি এই মেয়ের জন্য তুমি আমার সাথেও ঝগড়া করেছো। এই মেয়েকে কিছুতেই আর আমার পরিবারের কারো কাছে যেতে দিবো না। আমার বাসায়ও এই মেয়ে আর এক কদমও রাখবে না।

– কি বলছো এসব তুমি মাহমুদা? পুষ্প আমাদের বাড়ির বউ।
– না, এই মেয়েকে তুমি বউ মানলেও আমি কখনো বউ মানি নি কখনো। আর এই মেয়েকে আমার ছেলের কাছে আমি কখনোই যেতে দিবো না।
মি. রাশেদ ধমকের সুরে বললেন,
– মাহমুদা এবার তুমি বেশি বলে ফেলছো? কোর্ট তাদের একসাথে ৩ মাস থাকার আদেশ দিয়েছে তা কি তুমি ভুলে ফেলেছো?

পুষ্প এবার কাঁদতে কাঁদতে বললো,
– প্লিজ বাবা, আপনি আর উত্তেজিত হবেন না? আমি চাই না আপনার আবার আমার জন্য কিছু হোক। মা তো ঠিকই বলেছেন, আমার জন্যই তো সব হয়েছে। আমি যদি নুরীকে ঐসব কথা না বলতাম তাহলে আজ এসব কিছুই হতো না।
মা আমাকে মাফ করে দিবেন। আপনি যা বলবেন তাই হবে।  আমি আর ও বাড়িতে যাবো না। আমি এখান থেকে মায়ের কাছে ফিরে যাবো।

মি. রাশেদ পুষ্পকে এক ধমক দিয়ে বললো,
– তুমি চুপ করো বউমা। এটা তোমারো বাড়ি। আর রাইয়ান শুধু মাহমুদার ছেলে নয় তোমারও স্বামী। আর যতদিন তোমাদের ডিভোর্স না হচ্ছে ততদিন তোমারই স্বামী থাকবে। আমি বেঁচে থাকতে কেউ তোমাকে আমার বাড়িতে বের করতে পারবে না। বুঝেছো?

এবার রাইয়ানও তার মাকে বললো,
– মা একটু বুঝার চেষ্টা করো, পুষ্পর এইখানে কোন দোষ নেই। 
রাইয়ানের এমন কথা মিসেস মাহমুদা বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে থাকে রাইয়ানের দিকে।

নুরী এগিয়ে গিয়ে বললো,
– মা, তুমি একটু আমার সাথে আসো।
বলেই মিসেস মাহমুদার হাত ধরে নুরী টেনে রুমের বাহিরে নিয়ে এসে বলে,
– মা, তুমি কেন শুধু শুধু ঝামেলা করছো?
নুরীর কথা শুনে মিসেস মাহমুদা বললো,
– তুই ও আমাকেই কথা শুনাচ্ছিস?
– না মা, আমি তোমাকে কথা শুনাতে যাবো কেন? আমি তোমাকে বুঝাচ্ছি। এখন তোমাকে ঠান্ডা মাথায় কাজ করতে হবে। এখন যদি এই মেয়েকে তুমি বাড়ি থেকে বের করে দাও তাহলে এ মেয়ে আবার কোন ফন্দী আটবে এ বাড়িতে আসার জন্য। আর যদি সে পুলিশের কাছে চলে যায় তাহলে হয়তো তিন মাস পরের ডিভোর্সটাও বাতিল হয়ে যেতে পারে। আর এখন তুমি যতই বাবাকে বোঝাও বাবা এ মেয়ের বিরুদ্ধে তোমার কোনো কথাও শুনবে না। উল্টো বাবা বেশি উত্তেজিত হলে প্রবলেম হয়ে যেতে পারে। তার চেয়ে বরং কিছুদিন এই মেয়েকে সহ্য করো। ভাইয়া একবার ডিভোর্সটা দিয়ে দিলে তো এ মেয়েকে এমনিতেই আমাদের বাসা ছেড়ে যেতেই হবে। কি বুঝেছো?

মিসেস মাহমুদা কিছুক্ষণ চুপ থেকে ভাবলো,
– নুরী হয়ত ঠিকই বলছে। এখন আমার কথা কেউ শুনবে না তার চেয়ে বরং আমার ডিভোর্সের অপেক্ষা করাই ভালো।

“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
অফিস শেষে বাড়ি ফিরছিলো পাপড়ি। হঠাৎ তার সামনে নীল পড়ে যায়। নীল আর পাপড়ি দুজন দুজনকে দেখে অবাক হয়ে দাড়িয়ে যায়। অনেকদিন পর দুজন দুজনকে দেখছে। সেদিনের ঘটনার পর নীল আর পাপড়ির সামনে আসে নি। এতোদিন পর পাপড়ি নীলকে দেখায় তার মনে লুকানো অজানা অনুভুতিগুলোও জেগে ওঠে। আর অন্যদিকে পাপড়িকে দেখে নীলের সেদিনের তাকে অপমানের স্মৃতিগুলো নীলের চোখে ভেসে ওঠে। পাপড়ি নীলকে কিছু একটা বলতে চেয়েছিলো। কিন্তু তার আগেই নীল পাপড়িকে পাশ কাটিয়ে চলে যায়।
পাপড়ি পেছন ফিরে নীলের দিকে তাকিয়ে রইল কিন্তু নীল একবারো পেছন ফিরে আর পাপড়িকে দেখেনি। নীলকে এভাবে চলে যেতে দেখে পাপড়ি তার মনে একটু ব্যাথা অনুভব করলো যার কারণ সে নিজেই জানে না।

– কিহ! এতো কিছু হয়ে গেছে আর তুই আমাকে মাত্র জানাচ্ছিস?
আফিয়া বেগমের এমন কথা শুনে পুষ্প বললো,
– মা, এতোক্ষণ তো হসপিটালেই ছিলাম। তোমাদের জানানোর সুযোগ হয়ে ওঠে নি।
– হুম। রাশেদ সাহেব কেমন আছেন এখন?
– বাবা আগের থেকে ভালো আছেন।
–  আর জামাই?
– সে তো এখন রেস্ট করছে। এক্সিডেন্টে অনেকটা ব্যাথা পেয়েছে সে। ডাক্তার বলেছে, এক মাস লাগবে তার সম্পূর্ণ সুস্থ হতে।
– জামাইয়ের ঠিকমতো খেয়াল রাখিস, মা। তার সেবাযত্নে কোন কমতি রাখিস না। তুই ভালো করে সেবাযত্ন করলে জামাই আরো তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠবে।
– হ্যা মা। তা তো আমার করতেই হবে। কারণ এসবের জন্য কোথাও না কোথাও আমিই দায়ী। আমাকে সবকিছুই আগের মতো করতে হবে।
– আমি দোয়া করি, সবকিছু যেন ঠিক হয়ে যায়।
– আচ্ছা রাখি, এখন।

চলবে…..

ত্রিভুজ প্রেম পর্বঃ২৮

0

ত্রিভুজ প্রেম
পর্বঃ২৮
জান্নাতুল ফেরদৌস সূচনা

ডাক্তারের কেবিনের বাহিরে এক পাশে মিসেস মাহমুদা বসে কান্না করছে। নুরী তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছে। আর অন্য পাশে পুষ্প দাড়িয়ে আছে।
মি. রাশেদ এখনো ডাক্তারের কেবিনেই আছে।

চোখে জল ছলছল করছে পুষ্পর। নিজের বাবাকে অনেক আগেই হারিয়েছে সে। বাবার ভালোবাসা কাকে বলে তা মি. রাশেদের কাছ থেকেই জেনেছে পুষ্প। মনে মনে নিজেকেই দোষারোপ করছে পুষ্প। তার জন্যই সব হয়েছে। সে যদি নুরীকে ঐসব না বলতো তাহলে হয়তো এসব কিছুই হতো না।

মিসেস মাহমুদা পুষ্পর দিকে তাকিয়ে বললো,
-আমার স্বামীর যদি কিছু হয় তো আমি তোমাকে ছাড়বো না বলে দিলাম। তোমার জন্য সবকিছু হয়েছে। এ বাড়িতে আসার পর থেকে আমার সুন্দর সংসারটাকে নষ্ট করে ফেলেছো। তোমার জন্য আমার স্বামী আমার সাথে ঝগড়া করছে। আর আজ……
নুরী রাইয়ানকে এখুনি ফোন দে। ও এসে দেখুক ওর বউয়ের কীর্তি।
পুষ্প চুপচাপ দাড়িয়ে দাড়িয়ে মিসেস মাহমুদার কথা শুনছে। কিছু বলার সাহস তার নেই।

মিটিং এ বসে আছে রাইয়ান। নুরীর বারবার কল আসায় সেখান থেকে একটু সাইড হয়ে কলটা রিসিভ করে। কলে নুরীর কাছ থেকে সব শুনতে পেয়েই সে কাউকে কিছু না বলেই মিটিং থেকে চলে আসে। মিটিং থেকে হঠাৎ করে রাইয়ান এভাবে চলে যাওয়ায় সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে রাইয়ানর দিকে।
রাইয়ানকে এভাবে চলে যেতে দেখে পাপড়ি পেছন থেকে তাকে কয়েকবার ডাকও দেয়। তবে রাইয়ানের সেদিকে কোনো খেয়াল নেই।  সে দৌড়ে গাড়িতে ওঠে গাড়ি স্টার্ট দেয়।

-দাদাকে হারানোর ব্যাথাটা এখনো ভুলতে পারিনি আর এখন বাবা….. হে আল্লাহ এতোটা নিষ্ঠুর হয়ে ওঠো না। আমার বাবাকে সুস্থ করে দাও।
গাড়ি চালাতে চালাতে রাইয়ান কথাগুলো বলছে। তার চোখে পানি এসে চোখ ঝাপসা করে তুলছে। গাড়ির গতি বাড়িয়ে দিয়েছে রাইয়ান। কিন্তু চোখ ঝাপসার কারণে সামনে সবকিছুই ঝাপসা দেখছে রাইয়ান।

কিছুক্ষণ পর ডাক্তার কেবিন থেকে বেরিয়ে আসে। ডাক্তারকে বের হতে দেখে মিসেস মাহমুদা ডাক্তার কাছে গিয়ে বলে,
– আমার স্বামী ঠিক আছে তো?
ডাক্তার মিসেস মাহমুদাকে সান্তনা দিয়ে বলল,
– হ্যা, ওনি ঠিক আছে। বেশি উত্তেজিত হওয়ার কারণে তিনি হার্ট অ্যাটাক করেছেন। তবে সাথে সাথে হসপিটালে নিয়ে আসার কারণে এ যাত্রায় বেঁচে গেছেন তিনি। তবে নেক্সট টাইম থেকে আপনাদের খেয়াল রাখতে হবে ওনি যেন বেশি উত্তেজিত না হয়। এমন হলে তিনি আবার হার্ট অ্যাটাক করতে পারে।
মি. রাশেদ এখন বিশ্রাম করছেন। কাল আপনারা তাকে বাসায় নিয়ে যেতে পারবেন।
ডাক্তারের কথা শুনে সবাই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।

ডাক্তারের কথা শুনে নিজের খুশি আর ধরে রাখতে পারে না পুষ্প। পরক্ষনেই তার মনে হয় রাইয়ানের কথা। রাইয়ান হয়তো বাবাকে নিয়ে টেনসনে আছে। তাকে বাবার সুস্থ হাওয়ার খবরটা জানানো দরকার। এ ভেবে পুষ্প রাইয়ানকে কল দেয়। কিন্তু রাইয়ান কল রিসিভ করছে না।
দু-তিনবার কল দেওয়ার পর কলটা রিসিভ হয়।
– হ্যালো রাইয়ান, তুমি আমার ফোন ধরছিলে না কেন?  বাবাকে নিয়ে আর চিন্তা করতে হবে না,ওনি সুস্থ আছেন।
– হ্যালো, আপনি কে বলছেন?
পুষ্প কলে অপরিচিত কারো কন্ঠ পেয়ে চমকে ওঠে বলে,
– আপনি কে বলছেন? আর রাইয়ানের ফোন আপনার কাছে কেন?
-দেখুন, এখানে একটা এক্সিডেন্ট হয়েছে। আমি গাড়ির ভিতরে থাকা ফোনে আপনার কল পেয়ে রিসিভ করেছি।
লোকটির কথা শুনে পুষ্প মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। লোকটির কথা সে বিশ্বাস করতে পারছিলো না। মুখ থেকে তার কথা বের হচ্ছে না। তার মনে হচ্ছে এখনি সে মাথা ঘুরে পড়ে যাবে।
– হ্যালো, আপনি শুনতে পারছেন। হ্যালো…
লোকটির কথায় পুষ্পর হোশ ফিরে। কান্না জড়িত কন্ঠে পুষ্প বললো,
-হ্যালো, রাইয়ান কেমন আছে? সে ঠিক আছে তো?
– ওনি অজ্ঞান হয়ে আছেন। ওনাকে অ্যাম্বুলেন্সে তোলা হয়েছে, আপনিও তাড়াতাড়ি হসপিটালে চলে আসুন।
বলেই লোকটি ফোন কেটে দেয়।
পুষ্প শরীর কাপছে। দাঁড়িয়ে থাকার শক্তিটুকুও শরীরে পাচ্ছে না। হঠাৎ নুরী তার সামনে দিয়ে যেতে দেখে তাকে ডাক দিয়ে বলে,
– নুরী, রাইয়ানের এক্সিডেন্ট হয়েছে।
নুরী কিছু বলার আগেই পেছন থেকে মিসেস মাহমুদা বলে ওঠে,
– কিহ! রাইয়ানের এক্সিডেন্ট হয়েছে।
পুষ্প পেছনে ফিরতেই মিসেস মাহমুদা তার কাছে এসে বলে,
– আমার ছেলের কি হয়েছে? রাইয়ান কোথায়?
পুষ্প কাঁদতে কাঁদতে বলে,
– মা, রাস্তায় রাইয়ানের গাড়ির এক্সিডেন্ট হয়েছে। তাকে অ্যাম্বুলেন্সে করে হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
মিসেস মাহমুদা এবার রেগে বললেন,
– এসব কিছু তোমার জন্য হয়েছে। তোমাকে আমি ছাড়বো না। তোমাকে তো আমি…
নুরী মিসেস মাহমুদাকে থামিয়ে বললো,
– মা, এখন এসব বলার টাইম না। আগে ভাইয়ার কাছে চলো।
-হ্যা, আমাকে রাইয়ানের কাছে যেতে হবে চল।
বলেই মিসেস মাহমুদা আর নুরী সেখান থেকে চলে যায়।

পুষ্প আর রাইয়ানের কাছে যাওয়ার সাহস করে ওঠতে পারলো না। সে কাঁদতে কাঁদতে মাটিতে বসে পড়ে। সে কি করবে বুজতে পারছে না।
-আজ  আমার একটু ভুলের জন্য এসব কিছু হয়ে গেছে। প্রথমে বাবা আর এখন রাইয়ানকে হারাতে বসেছি। রাইয়ানের কিছু হলে আমি নিজেকে কখনো ক্ষমা করতে পারবো না। হে আল্লাহ, তুমি আমার সাথে এমন কেন করছো?

“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
অনেকক্ষণ পর একজন নার্স এসে পুষ্পর কাছে এসে বললো,
– আপনার নাম কি পুষ্প?
পুষ্প অবাক হয়ে তাকিয়ে বলে,
– হ্যা। আমি পুষ্প।
– মি. রাশেদ আপনাকে ভিতরে যেতে বলেছে।
পুষ্প আস্তে আস্তে ওঠে মি. রাশেদের কাছে যায়। মি. রাশেদ পুষ্পকে দেখে মুচকি হেসে বললো,
– বউমা, এসেছো?
পুষ্প বেডে পাশে বসে বললো,
– এখন কেমন লাগছে, বাবা?
– আরে এতো চিন্তা করো না তো, আমি একদম ঠিক আছি। আমার কিছু হয় নি। রাইয়ান আসে নি?
রাইয়ানের কথা শুনতেই পুষ্প তার কান্নাটা আর চেপে রাখতে পারে না। সে ঢুকরে কেঁদে ওঠে। পুষ্পকে এভাবে কাঁদতে দেখে মি. রাশেদ বললো,
– কি হয়েছে বউমা, এভাবে কাঁদছো কেন?
পুষ্প প্রথমে বলতে না চাইলেও মি. রাশেদ তাকে জোর করায় সে সব বলে দেয়।
– কিহ! রাইয়ানের এক্সিডেন্ট হয়েছে। আমি এখনি রাইয়ানের কাছে যাবো।
– না বাবা, আপনি এখনো সুস্থ হন নি। মা আর নুরী রাইয়ানকে দেখতে গিয়েছে আপনি উত্তেজিত হবেন না।
– আমার ছেলের এক্সিডেন্ট হয়েছে আর তুমি আমাকে এখানে শুয়ে থাকতে বলছো? কিছুতেই না। আমি এখনি যাবো আর তুমিও চলো আমার সাথে।

চলবে…..

ত্রিভুজ প্রেম পর্বঃ২৭

0

ত্রিভুজ প্রেম
পর্বঃ২৭
জান্নাতুল ফেরদৌস সূচনা

খুব সকালেই ঘুম থেকে ওঠে যায় পুষ্প। আজ থেকে নতুন একটা শুরু করতে হবে। ফ্রেশ হয়েই সরাসরি রান্নাঘরে চলে যায় পুষ্প।  কিচেন স্টাফ বাসন্তীও এখনো আসেনি রান্নাঘরে। রান্নার শুরুটা আজ তাকেই করতে হবে। আফিয়া বেগমকে ফোন দিয়ে সবকিছু জেনে নেয় পুষ্প। আজ একটা ভুল করাও চলবে না তার। মায়ের কথামতো সব রান্না করতে থাকে।
কিছুক্ষণ পর বাসন্তী এসে পুষ্পকে রান্নাঘরে রান্না করতে দেখে অবাক হয়ে বলে,
– আমি তো ভেবে ছিলাম কালকের রান্নার পর আপনি আর রান্নাঘরেই আসবেন না।
পুষ্প মুচকি হেসে বলে,
– রান্নাঘরে না আসলে রান্না শিখবো কিভাবে?
পুষ্পর কথা শুনে বাসন্তী মুচকি হেসে পুষ্প কাজে সাহায্য করতে এগিয়ে যায়।
দুজনে মিলে খুব তাড়াতাড়ি রান্না শেষ করে ফেলে।
রাইয়ানের কথামতো এক মগ কফি বানিয়ে রুমে নিয়ে যায় পুষ্প। রাইয়ান এখনো ঘুমাচ্ছে। পুষ্প ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো ৮ টা বেজে গেছে।  কিন্তু রাইয়ান এখনো ঘুমাচ্ছে। কফির মগটা পাশে রেখে রাইয়ানকে কি ডাক দিবে কি দিবে না সেটা ভাবছে পুষ্প। এখন ডাক না দিলে অফিসে যেতে তার লেইট হয়ে যাবে। রাইয়ানকে ঘুম থেকে ডাক দিতেও তার কেমন লাগছে তার। কিছুক্ষণ ভেবে ফোনটা বের করে তাতে রিংটোন বাজিয়ে রাইয়ানের কানের পাশে ধরে রাখে। রিংটোন এর শব্দে রাইয়ান লাফ দিয়ে ঘুম থেকে ওঠে পুষ্পকে বললো,
– কি হচ্ছে টা কি? এভাবে কেউ কানের কাছে  ফোনের কাছে রিংটোন বাজায়?
রাইয়ানের কথা শুনে পুষ্প অবাক হয়ে বললো,
– আমি তো তোমাকে জাগানোর চেষ্টা করছিলাম।
-তো মুখে ডাক দিলে কি হতো, এভাবে ফোনের রিংটোন কানের কাছে বাজিয়ে ঘুম থেকে ওঠাতে হবে?
-একবার ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখো তো কয়টা বাজে?
রাইয়ান ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললো,
– ও, সিট। এতো লেট হয়ে গেছে। তুমি আমাকে আগের জাগাও নি কেন?
-বাহ! এখন আমার দোষ। নিজে পড়ে পড়ে ঘুমোচ্ছিলে সেটা কি?
– হয়েছে তোমার সাথে কথায় আমি পেরে ওঠবো না। সাইড হও, আমি ফ্রেশ হতে যাবো।
– কফিটা কে খাবে?
– কফিটা নিচে নাস্তার সাথে দিও এখন সরো।

খাবার টেবিলে বসে আছে সবাই। শ্বশুরের কথামতো পুষ্পও গিয়ে সবার সাথে খাবার টেবিলে বসে। পুষ্পকে বসতে দেখে মিসেস মাহমুদা কিছু বলতে চেয়েছিলো কিন্তু মি. রাশেদের ইশারার কারণে আর কিছু বলতে পারে নি। সবাইকে নাস্তা দেওয়া হয়েছে। পুষ্প নিজের খাবারের দিকে মনোযোগ নেই, তার সব মনোযোগ মিসেস মাহমুদার দিকে। পুষ্প মনে মনে বলছে,
– হে আল্লাহ, আজ যেন খাবারটা ভালো হয়।
মিসেস মাহমুদা খাবার মুখে নিতে দেখে আবার পুষ্প মনে মনে বলে,
– এই বুজি এখনি খাবারের ভুল ধরবে, নুন তো ঠিক মতো দিয়েছি আজ।
পুষ্প বিবর্ণ চেহেরা নিয়ে তাকিয়ে আছে মিসেস মাহমুদার দিকে। কিন্তু মিসেস মাহমুদাকে কিছু বলতে না দেখে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।
– বাহ! আজ নাস্তা খুব ভালো হয়েছে। দেখছো মাহমুদা তোমাকে আমি বলেছিলাম না বউমা ঠিক পেরে ওঠবে। প্রথমদিন সবার একটু ভুল হতেই পারে তাই বলে তো আর প্রতিদিন ভুল হবে না। আজ কি বলবে তুমি?
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন

মিসেস মাহমুদা কোন কথা বলছে না, চুপচাপ খেয়ে চলে যায়।
মি. রাশেদের মুখে নিজের রান্নার প্রশংসা শুনে যুদ্ধ জয় করার মতো একটা হাসি ফুটে পুষ্পর মুখে। খাবার শেষে সবাই চলে গেলেই পুষ্প আফিয়া বেগমকে ফোন দিয়ে সবকিছু বলে।
আফিয়া বেগম সব শুনে খুশি হয়ে বলে,
– মা, এইভাবেই চেষ্টা চালিয়ে যা। তুই একদিন নিশ্চয়ই সফল হবি।

রাইয়ান আজ ফুড়ফুড়ে মেজাজ নিয়েই অফিসে এসেছে। কিন্তু অফিসে এসে পাপড়িকে দেখেই তার মন খারাপ হয়ে যায়। পাপড়ি দেখলে তার অতীতের সব মনে পড়ে যায়। বিশেষ করে অফিসে যখন কেউ পাপড়িকে পুষ্প বলে ডাকে। মনের চেপে থাকা কষ্ট গুলো আবার জেগে ওঠে রাইয়ানের।

সময় নিজ গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। পুষ্প তার চেষ্টা চালিয়েই যাচ্ছে। বাড়িতে এখন তার অবস্থান আগের থেকে একটু ভালো হয়েছে তবে মিসেস মাহমুদার মনে এখন নিজের জন্য জায়গা করতে পারে নি পুষ্প। পুষ্পর একটু ভুল হলেই তাকে কথা শোনানোর সুযোগটা হাত ছাড়া করে না মিসেস মাহমুদা।
সকালে পুষ্প ফোনের রিংটোন বাজিয়ে রাইয়ান কানের কাছে ধরতেই রাইয়ান চিৎকার দিয়ে ওঠে বলে,
– তোমাকে না কতোবার বলেছি আমাকে এইভাবে জাগাবে না।
– মুখে ডেকে ঘুম থেকে ওঠানোর মানুষ তুমি না। তাই এভাবে জাগাই।
-কিহ! তবে রে…
বলেই পুষ্পকে দৌড়াতে শুরু করলো রাইয়ান।
পুষ্প হঠাৎ হোচোট খেয়ে পড়ে যেতেই পেছন থেকে রাইয়ান এসে তাকে ধরে ফেলে।
দুজনের নজর দুজনের চোখের ওপর পড়ে যায়। কিছুক্ষণ চোখাচোখির পর দুজনেরই হুশ ফিরতেই দুজন দুজনকে ছেড়ে দাড়ায়। পুষ্প রাইয়ানকে কিছু বলতে না পেরে লজ্জায় ব্যালকনিতে চলে যায়। রাইয়ানও এমন একটা কান্ড হওয়ায় ভ্যাবাচেকা খেয়ে চুপচাপ ফ্রেশ হতে যায়।

ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ আগে ঘটে যাওয়া কথা কল্পনা করে নিজে নিজে লজ্জা পাচ্ছে পুষ্প। হঠাৎ একটা গাড়িকে বাসার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে পুষ্প। গাড়িটা দেখে পুষ্প বললো,
– এই গাড়ি এ বাসায় এর আগে তো দেখেনি।
একটুপর নুরীকে দেখলো গাড়িটির কাছে গিয়ে দাড়াতে। নুরীকে দেখে একটা ছেলে গাড়ি থেকে নেমেই জড়িয়ে ধরে কথা বলে।
পুষ্প ওপর থেকে তাদের সবকিছু খেয়াল করছে।
ছেলেটা নুরীকে বাজে টাচ করছে যা পুষ্পর চোখ এড়ায় না। পুষ্প মনে মনে বলছে,
– ছেলেটা নুরীর সাথে এতো ঘেঁষাঘেঁষি করছে, বাজে ভাবে টাচ করছে অথচ নুরী তাকে কিছুই বলছে না। নুরী সাথে একবার কথা বলা দরকার।
কিছুক্ষণ পর নুরী ছেলেটির সাথে গাড়িতে ওঠে চলে যায়।

বিকেলে নুরী বাসায় এসে রুমে যাওয়ার সময় পুষ্প নুরীকে ডাক দেয়।
– নুরী তোমাকে একটা কথা বলার ছিলো।
– কি কথা?
– সকালে একটা ছেলে বাসার সামনে থেকে তোমাকে গাড়ি করে নিয়ে গিয়েছিল সে কি তোমার ফেন্ড?
– হ্যা।
– শুধু ফেন্ড?
– সেই কৈফিয়ত আমি তোমাকে দিতে যাবো কেন?
– আমি শুধু জানতে চাচ্ছি আর কিছু না।
– বলবো না কি করবে?
– কিছু না। শুধু এতোটুকু বলবো যে ছেলেটাকে আমার বেশি সুবিধার মনে হয় নি। তুমি ওর থেকে দূরত্ব বজায় রেখো।
নুরী এবার রেগে ওঠে বলে,
– হাউ ডেয়ার ইউ!  আমি কার সাথে মিশবো কি মিশবো না তাও তুমি আমায় বলে দিবে? তুমি কে হও এই কথা বলার?
নুরীর কথা শুনে রুম থেকে মিসেস মাহমুদা বের হয়ে এসে নুরী জিজ্ঞেস করে,
– কি হয়েছে, মামনি?
– দেখো না মা, এই মেয়েটা আমায় কি বলছে?
– কি বলেছে?
– তুমি তো আমার ফেন্ড রনিকে চিনো তাই না?
-হুম। খুব ভালো একটা ছেলে। কেনো কি হয়েছে?
– হ্যা খুব ভালো সে, কিন্তু এই মেয়েটা আমি রনির সাথে কেনো মিশি তার কৈফিয়ত চাইছে। রনির সাথে আমাকে মিশতে না বলছে।
নুরীর মুখে এসব কথা শুনে মিসেস মাহমুদারও রাগ ওঠে যায়।
– কিহ! এই মেয়ে তোকে এই কথা বলেছে।
পুষ্প মিসেস মাহমুদাকে বুঝানোর জন্য বললো,
– না মা, আসলে আমি…
– এই মেয়ে কয়েকদিন এ বাড়িতে থেকে নিজেকে এই মেয়ের মালিক ভাবা শুরু করে দিয়েছো? আমার মেয়ে কার সাথে মিশবে কি মিশবে না তাও তুমি বলে দিবে? বড্ড বাড় বেড়েছে তোমার। এতো সাহস হয় কি করে তোমার যে নুরীকে এইসব কথা বলো?
মিসেস মাহমুদার চেচামেচি শুনে মি. রাশেদ এসে বললো,
– আহ! এতো চেচামেচি করছো কেন কি হয়েছে?
– কি হয়েছে, তোমার আদরের বৌ আমার মেয়েকে বলে ওর ফেন্ডের সাথে না মিশতে?
নিজেকে এখন এ বাড়ির মালিক ভেবে নিয়েছে নাকি যে সে যা বলবে তাই করতে হবে?
পুষ্প আর অপমান সইতে না পেরে সেখান থেকে কাঁদতে কাঁদতে দৌড়ে রুমে চলে যায়।
-দেখেছো কত ঢং মেয়েটার?
মি. রাশেদ রেগে বলে,
– বউমা, যদি এমন কথা নুরীকে বলে থাকে তাহলে এর পিছে হয়তো কোনো কারণ আছে। নাহলে এমন কথা…
– তুমি এসবই বলবে। ঐ মেয়ে তো তোমাকে জাদু করে রেখেছে তাই কিছু দেখতে পাও না।
– এবার কিন্তু বেশি বলে ফেলছো মাহমুদা তুমি?
– কিহ! বেশি বলে ফেলেছি। দুদিন আগে আসা মেয়ের জন্য তুমি আমাকে শাসাচ্ছো? ঐ মেয়েকে আজ আমি আর ছাড়বো না।
বলেই মিসেস মাহমুদা ২ কদম এগুতেই পিছন থেকে মি. রাশেদ তার হাত ধরে বলে,
– কোথায় যাচ্ছো, তুমি বউমাকে কিছুই বলবে না।
– ছাড়ো তুমি,আজ ঐ মেয়েকে আমি দেখেই ছাড়বো।
– না তুমি কিছুই, আ….আ…
মি. রাশেদ বুকে হাত দিয়ে মাটিতে বসে পড়ে। মিসেস মাহমুদা মি. রাশেদের এ অবস্থা দেখে চিৎকার করে বলে,
– কি গো, কি হলো তোমার?
মি. রাশেদ কোন কথা বলছে না তিনি অজ্ঞান হয়ে যায়।
-নুরী হসপিটালে ফোন দে তোর বাবাকে এখুনি হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে।

চলবে…..

ত্রিভুজ প্রেম পর্বঃ২৬

0

ত্রিভুজ প্রেম
পর্বঃ২৬
জান্নাতুল ফেরদৌস সূচনা

– কংগ্রেস স্যার, আমরা নতুন ডিলটা পেয়ে গেছি।
ম্যানেজারের কথা শুনে রাইয়ান খুব খুশি হয়ে বলে,
– আপনাকেও কংগ্রেস।  আপনাদের জন্য এটা সম্ভব হয়েছে।
– হ্যা তবে এর জন্য বেশি ক্রেডিট পায় মিস্ পুষ্প।
ম্যানেজার পাপড়িকে দেখিয়ে বলে কথাটি বলে। ম্যানেজারের কথা শুনে রাইয়ান অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
– সে কেনো?
-স্যার অফিসে আপনার অনুপস্থিতিতে সবকিছু মিস্ পুষ্পই দেখাশুনা করেছেন। এমনকি আপনার অনুপস্থিতিতে সকল মিটিং গুলোও তিনিই সামলেছেন।
রাইয়ান পাপড়ি দিকে কিছুটা অবাক হয়ে তাকিয়ে তারপর আস্তে করে বলে,
– থ্যাংক ইউ।
পাপড়ি মুচকি হাসি দিয়ে বললো,
– মাই প্লেজার।
– এবার আপনারা আপনাদের নিজ নিজ কাজে যান। ডিলটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ এর জন্য অনেক কাজ করতে হবে।
রাইয়ানের কেবিন থেকে সবাই চলে গেলেও পাপড়ি এখানে কেবিনেই দাঁড়িয়ে আছে।
-তুমি এখনো দাঁড়িয়ে আছো কেন? যাও নিজের কাজ করো।
পাপড়ি রাইয়ানের কাছে এসে তার হাত ধরে বলল,
– এখনো কি রাগ করে আছেন আমার ওপর?এখনো কি মাফ করেন নি আমায়?
রাইয়ান নিজের হাতটা ছাড়িয়ে বলল,
– হাউ ডেয়ার ইউ! তোমার সাহস কি করে হয় আমাকে টাচ করার? একটা ডিল পাইয়ে দিয়েছো বলে এটা ভেবো না আমি সব ভুলে গেছি, তোমাকে মাফ করে দিয়েছি।
– আমি জানি আপনি আমাকে এখানো ভালোবাসেন। যদি ভালো না বাসতেন তবে আপুকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার পরই আপনি আমাকে এ চাকরি থেকে বরখাস্ত করতেন। কিন্তু আপনি করেন নি কারণ আপনি আমাকে ভালোবাসেন।
– ও জাস্ট স্যাট আপ। আমি তোমাকে এখনো বের করে দেই নি কারণ……
– কারণ আপনি এখনো আমার ওপর রেগে আছেন। আমি এমন কি করবো যেটাতে আপনি আমাকে মাফ করে দিবেন?
– আমি তোমাকে কখনও মাফ করবো না। তোমাকে দেখলে আমার বিরক্তি লাগে। আমি সবাইকে মাফ করে দিলেও তোমাকে করবো না কারণ তুমি তোমার পরিচয় টা না লুকালে এসব কিছুই হতো না। এন্ড আই ওয়ার্নিং ইউ নেক্সট টাইম থেকে যদি আমার সাথে এমন কিছু ভিহেব করেছো তো এর পরিণাম ভালো হবে না।
বলেই রাইয়ান  রেগে কেবিন থেকে বের হয়ে গেলো।
অন্যদিকে পাপড়ি কাঁদতে লাগলো।
-কি এমন ভুল করেছিলাম আমি নিজে পরিচয় লুকিয়ে যার শাস্তি এইভাবে পাচ্ছি। তবে আমিও হাল ছাড়ছি না আপুর কাছ থেকে আমি আপনাকে ছিনিয়ে আনবোই রাইয়ান।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন

রাইয়ান গাড়িতে ওঠে শায়নকে ফোন দেয়
– হ্যালো, কই তুই?
– এইতো কাজেই আছি।
– দেখা করতে পারবি?
– এখনি?
– হ্যা এখনি।
-ওকে আচ্ছি আমি।
– আমার অফিসে না আমাদের পুরনো জায়গায় আসিস।
– ওকে।

– বাবাকে তো বলে দিয়েছি যে দাদাভাই যা দায়িত্ব আমাকে নিতে বলেছে আমি সব দায়িত্ব নিবো। এ বাড়ির যোগ্য বউ হওয়ার চেষ্টা করবো কিন্তু যোগ্য বউ হতে গেলে তো ভালো রান্না করতে হবে। আর আমি তো রান্নাই করতে পারি না। আজ রান্নায় যা করেছি আবার এমন করলে বাবাই আমাকে রান্নাঘরে যেতে নিষেধ করবেন। আমি বরং মাকে ফোন দিয়ে সবকিছু জেনে নিই।
পুষ্প কথাটা বলেই আফিয়া বেগমকে ফোন দেয়।
-হ্যালো মা?
– হ্যালো। কেমন আছিস? ও বাড়িতে সবাই তোর সাথে ভালো আচরণ করছে তো?
মায়ের এমন কথা শুনে পুষ্পর মনটা একটু খারাপ হয়ে যায়।
– এতো তাড়াতাড়িই কি সব ঠিক হওয়া সম্ভব মা? তবে আমার শ্বশুর আমাকে আপন করে নিয়েছে।
– হ্যা। রাশেদ সাহেব মানুষটাই আলাদা। খুব ভালো মনের মানুষ।
-হ্যা। যেখানে এ বাড়িতে কেউ আমায় পছন্দই করে না সেখানে বাবা আমাকে নিজের মেয়ের মতো দেখেন।
– ওনার সব কথা তুই মেনে চলিস। কখনো  ওনার মনে কষ্ট দিস না।
-হুম। শুনো তোমাকে যেটার জন্য ফোন দিয়েছি, আমি ভালো রান্না কিভাবে করবো বলে দাও না মা?
– হা হা হা… কতো করে বলেছিলাম আগে যে রান্নাটা একটু শিখে নে বিয়ে পর কাজে আসবে। তখন আমার কথা শুনিস নি আর তোকে এখন আমি ফোনে ভালো রান্না করা শিখাবো কিভাবে?
– তা আমি জানি না। ভালো রান্না না করতে পারলে বাবার মন রক্ষা করতে পারবো না তুমিই বলো এখন আমি কি করবো?
– আচ্ছা এখন তো বলতে পারবো না। তুই যখন রান্না করতে যাবি তখন আমাকে ফোন দিস। আমি তোকে সব বলে দিবো।
-ওকে মা। এখন রাখি। তুমি নিজের আর বাসার সবার খেয়াল রেখো।
-আচ্ছা।

– এই কয়দিনে তোর জীবনে কতো কিছু হয়ে গেছে। আর আমি কিছুই জানলাম না। তোর জীবনের কাহিনী তো একদম ফিল্মের কাহিনির মতো হয়ে গেছে। দুই নায়িকা এক নায়ক। হা হা হা..
শায়নের মুখে এমন কথা শুনে রাইয়ান রেগে বললো,
– ফিল্মে তো নায়ক কোন এক নায়িকাকে তো চায় কিন্তু আমি কাউকেই চায় না। আমার জীবনটা কেমন যাচ্ছে সেটা আমি বুঝছি। তুই এখানে ফিল্ম নিয়ে আসছোস।
-সরি দোস্ত, আমি তোর মুড ভালো করার জন্য বললাম। তুই একটু শান্ত হ।
– হুম তুই বল তোর কি অবস্থা?
– আরে আর বলিস তোর ভাবি আমার জীবনটা তেজপাতা করে দিসে। তোর ভাবি থেকে যেন কিছু দূরে থাকতে পারি তাইতো লন্ডনে চলে গেছিলাম। একটু এস করার জন্য।
-তো এই কথাটা কি বলবো নাকি ভাবিকে।
-রাইয়ান তুই আমার বন্ধু হয়ে শত্রুর কাজ করিস না। তুই বরং খাবার অর্ডার দে।
– হা হা হা। ওকে।

-রাত ১১ টা বাজতে চলছে এখনি রাইয়ান আসেন নি। এর আগে তো দেখেছি সন্ধ্যার আগেই বাসায় চলে আসে। তবে আজ এতো দেরি করছে?
রুমে বসে বসে রাইয়ানের কথা ভাবছে পুষ্প।

অন্যদিকে কিছুক্ষণ পর রাইয়ান আসে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে ১১ টা বাজতে দেখে সে তার জিহ্বায় কামড় দিয়ে বলল,
– এতো দেরি হয়ে গেছে। শায়নের সাথে আড্ডা দিতে গিয়ে কখন টাইম চলে গেছে বুঝতেই পারি নি।
বাসায় ঢুকে সবাইকে ঘুমোতে দেখে বলল,
-যাক, সবাই ঘুমোচ্ছে। কিন্তু আমার মাথাটা ধরে আছে খুব। একটা কফি খেলে হয়তো ঠিক হয়ে যেতাম। কিন্তু সবাই ঘুমোচ্ছে কফিটা বানিয়ে দেবে কে?
কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে তারপর আবার বলল রাইয়ান,
– আমি নিজেই কফিটা বানিয়ে নেই।
তারপর সে রান্নাঘরে গিয়ে কফি বানিয়ে চেয়ারে বসে কফিতে চুমুক দিয়ে বলল,
– ধুর, এতো বাজে কফি বানিয়েছি আমি। কফি খাওয়ার মুডটাই নষ্ট হয়ে গেল।

হঠাৎ পেছন থেকে কেউ একজন একটা কফির মগ রাইয়ানের সামনে এগিয়ে দেয়। রাইয়ান পেছনে তাকিয়ে দেখলো পুষ্প কফির মগ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পুষ্পকে দেখে রাইয়ান অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
-আপনি এখনো ঘুমান নি?
– না, আমার ঘুম আসচ্ছিলো না। আপনাকে এখানে দেখে নিচে চলে আসলাম।
তারপর পুষ্প ইশারা দিয়ে রাইয়ানকে বললো কফিটা নিতে।
রাইয়ান কফিটা নিয়ে একটা চুমুক দিয়ে বলল,
-সকালে আপনার হাতের পায়েস টেস্ট করার পর আমি ভাবিনি আপনি এতো ভালো কফি বানাতে পারেন।
রাইয়ানের কথা শুনে পুষ্প মুচকি হেসে বলল,
-রান্নাটা আগে কখনো করিনি তাই পায়েসটা ভালো রান্না করতে পারিনি। তবে ক্যাফেতে অনেকদিন কাজ করায় কফি বানানোটা শিখে গিয়েছি।সত্যিই খুব ভালো হয়েছে কফিটা?
– হ্যা।
পুষ্প এবার আস্তে করে বললো,
-একটা কথা বলবো?
-জ্বি বলেন।
– আমরা কিন্তু বন্ধু হতে পারি?
– মানে?
-দেখুন, আমাদের মধ্যে কখনো স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক হয়ে ওঠবে না। আর আমিও কখনো আপনার কাছে স্ত্রীর অধিকার চাইতে আসবো না। আর এখন নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে  আমাদের ৩ মাস একসাথে থাকতে হবে। আর আমরা যেভাবে থাকছি সেভাবে বেশিদিন একসাথে থাকতে পারবো না। তার চেয়ে বরং আমরা না হয় বন্ধু হয়েই থাকি এই ৩ মাস।

পুষ্পর কথা শুনে রাইয়ান চুপচাপ বসে আছে। তাকে চুপচাপ বসে থাকতে দেখে পুষ্প মনটা খারাপ করে বললো,
– আমি বোধ হয় আপনার উত্তরটা পেয়ে গেছি। আমি আপনাকে জোর করবো না, এটা সম্পূর্ণ আপনার ইচ্ছা।
বলেই পুষ্প ২ কদম এগুতেই পেছন থেকে রাইয়ান বললো,
– বন্ধু হতে পারি তবে একটা শর্ত আছে আমার।
পুষ্প অবাক হয়ে পেছনে ফিরে বললো,
– কি শর্ত?
রাইয়ান মুচকি হেসে বললো,
– আমাকে রোজ সকালে এমন কফি বানিয়ে খাওয়াতে হবে।
পুষ্প রাইয়ানের কথা শুনে হেসে বলল,
-ওকে।
রাইয়ান কাছে এসে হাতটা বাড়িয়ে বললো,
-ফেন্ডস্?
-হুম ফেন্ডস। চলুন অনেক রাত হয়ে গেছে। ঘুমিয়ে পড়ুন কাল আপনাকে অফিসেও যেতে হবে।
-হ্যা চলুন।

রুমে গিয়েই রাইয়ান বললো,
– এখন তো আমরা বন্ধু হয়ে গেছি তো আজ থেকে আপনি বিছানায় শোবেন আর আমি সোফায়।
পুষ্প বললো,
– না তা কিরে হয়? রুম আপনার তাই আপনি বিছানায় শোবেন।
– নাহ! আপনি শোবেন।
– দেখুন আমি তো মাত্র ৩ মাস এ বাড়িতে থাকবো তো কেনো আর এ বিছানায় শুয়ে এর অভ্যাস বানাবো? আর এই কয়দিন সোফায় শুয়ে আমার অভ্যাস হয়ে গেছে। আপনি প্লিজ না করবেন না আর।
– হুম। আচ্ছা আমরা তো বন্ধু হয়ে গেছি তাই না?
– হুম।
– তাহলে আপনি আমায় আপনি আপনি করে বলছেন কেন?
রাইয়ানের কথা শুনে পুষ্প মুচকি হেসে বলল,
-তো আপনিও তো আমাকে আপনি আপনি করে বলছেন।
– এখন থেকে আর বলবো না। এখন থেকে আমরা তুমি করে কথা বলবো।
– ওকে। এবার ঘুমিয়ে পড়ুন।
– আবার আপনি?
– ওহ! ঘুমিয়ে পড়ো।

চলবে….

ত্রিভুজ প্রেম পর্বঃ২৫

0

ত্রিভুজ প্রেম
পর্বঃ২৫
জান্নাতুল ফেরদৌস সূচনা

আজ কোর্টে রাইয়ান আর পুষ্পর ডিভোর্সের পেপার সাবমিট করবে উকিল। কোর্টের এক পাশে পুষ্প,পাপড়ি,আফিয়া বেগম আর অপর পাশে রাইয়ান, মিসেস মাহমুদা আর মি. রাশেদ বসে আছে। কিছুক্ষণ পর জর্জ সাহেব আসার পর কেস শুরু করা হয়। রাইয়ানের উকিল জর্জ সাহেবকে সকল কাগজপত্র দেখায়। জর্জ সকল কাগজ পত্র দেখে আশ্চর্য হয়ে বলেন,
– আপনাদের বিয়ের এখনো ২০ দিনই হয় নি আর আপনারা এখনি ডিভোর্স চাচ্ছেন?
জর্জের এমন কথায় দুই পক্ষই চমকে ওঠেছে।  রাইয়ানের উকিল এগিয়ে গিয়ে জর্জ সাহেবকে বলে,
– আপনাকে তো আগেই সব বলা হয়েছে। একটা ভুল বুঝাবুঝিতে এ বিয়েটা হয়েছে। এখন সব কিছু পরিষ্কার হওয়ায় তারা দুজনেই ডিভোর্স চাচ্ছে।
-দেখুন বিয়ে আর ডিভোর্স দুইটা কোনো ছেলেখেলা নয় যে চাইলেই বিয়ে করবেন আর চাইলেই ডিভোর্স দিবেন। কোর্ট ২০ দিন পরই ডিভোর্স গ্রহণ করবে না।
উকিল সাহেব আবার বলল,
– কিন্তু দম্পতিরা তো একসাথে থাকতে পারবে না।
– আপনার কথায় তো সব হবে না। জর্জ আমি আর সঠিক রায়টাও আমিই দিবো। আর আমার রায় হলো,
মি. রাইয়ান আর মিসেস পুষ্প কে আগমী ৩ মাস একসাথে থাকতে হবে। ৩ মাস একসাথে থাকার পরও যদি তারা ডিভোর্স চায় তবেই এ ডিভোর্স কোর্ট গ্রহণযোগ্য হবে।

জর্জ সাহেব এমন রায় শুনে মিসেস মাহমুদার রাগ ওঠে যায়। পাপড়িও রাগের সাথে সাথে মনটাও খারাপ হয়ে যায়। অপরদিকে মি. রাশেদ আর আফিয়া বেগম খুব খুশি হয়।
কোর্ট থেকে বের হওয়ার সময় পাপড়ি পুষ্পর কাছে গিয়ে বলল,
– তোর ভাগ্য ভালো যে রাইয়ানের সাথে আরো ৩ মাস থাকার সুযোগ পেয়ে গেছিস। তবে এটা ভাবিস না যে সুযোগ পেয়ে গেছিস বলে রাইয়ানও তোর হয়ে যাবে। রাইয়ান এখনো আমাকেই ভালোবাসে। আর ৩ মাস পর তোকে ডিভোর্স দিয়ে আমাকেই বিয়ে করবে, তুই দেখে নিস।
বলেই হনহনিয়ে সেখান থেকে চলে যায় পাপড়ি।
পাপড়ির কথা শুনে পুষ্পর মনটা আরো খারাপ হয়ে যায়। আবার ভাবে, এটাই তো এখন হওয়ার কথা ছিল। রাইয়ানও পাপড়িকে ভালোবাসে। আমি শুধু শুধু  তাদের মাঝে কাটা হয়ে রয়ে গেলাম।
পেছন থেকে আফিয়া বেগম পুষ্পর কাঁধে হাতে দিয়ে বলে,
– তুই পাপড়ির কথায় মন খারাপ করছিস না। আল্লাহ তোকে দ্বিতীয় বার সুযোগ দিয়েছে এ বিয়েটা টিকিয়ে রাখার। সুযোগটা হাত ছাড়া করিস না। অন্যের জন্য ভেবে নিজের জীবনটা নষ্ট করিস না। তুই একবার চেষ্টা করে দেখ, আমার বিশ্বাস একদিন তোকে ও বাড়ির সবাই আপন করে নিবে।
-হুম।

কোর্ট থেকে আফিয়া বেগম আর পুষ্প বের হতেই পেছন মি. রাশেদ পুষ্পকে ডাক দিয়ে বলে,
– বউমা, তুমি  ঐ দিকে কোথায় যাচ্ছো?
মি. রাশেদের কথা শুনে মিসেস মাহমুদা এসে বলে,
– ঐদিকে যাবে না তো কোথায় যাবে?
-বউমা আমাদের সাথে আমাদের বাসায় যাবে।
– মানে?
– কেন, তুমি কি শুনতে পাও নি জর্জ সাহেব কি বলেছে? বউমা আর রাইয়ানকে ৩ মাস একসাথে থাকতে হবে।
-তাই বলে কি এখনি…
– হ্যা। বউমা এখনি আমাদের সাথে আমাদের বাসায় যাবে। চলো বউমা।

পুষ্প একবার রাইয়ানের দিকে তাকালো। রাইয়ান কিছু বলে গাড়িতে গিয়ে ওঠে বসলো।
-কি হলো বউমা? এখনো দাঁড়িয়ে আছো যে?
পুষ্প এখন আফিয়া বেগমের দিকে তাকালে তিনি চোখের পলক ফেলে ইশারা দিয়ে যেতে বলে পুষ্প।
মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে পুষ্প নিজের শ্বশুরবাড়ি চলে যায়।

রাতে রাইয়ান, পুষ্প কারো চোখেই ঘুম নেই। রাইয়ান বিছানায় শুয়ে শুয়ে নিজের অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা ভাবছে। জীবনের কোন কিছুই এখন তার ইচ্ছেমতো হচ্ছে না। যত চাচ্ছে এসব থেকে বের হতে ততই এসব কিছুর সাথে জড়িয়ে পড়চ্ছে সে।
অন্যদিকে পুষ্প সোফায় শুয়ে ভাবছে সে কিভাবে এখানে থাকবে ৩ মাস। তাকে বুঝার মতো কেউ নেই এখানে। তবে তার মায়ের কথাটাও মাথায় রেখেছে। একবার না হয় চেষ্টা করে দেখি, হয়তো সবকিছু ঠিক হয়ে যেতে পারে।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন

পরদিন খুব সকালেই ঘুম ভেঙে যায় পুষ্প। রাইয়ান এখনো ঘুমাচ্ছে। সে ফ্রেশ হয়ে নিচে এসে ভাবছে কি করবে সে। রান্নাঘরের দিকে তাকিয়ে কিচেন স্টাফ বাসন্তীকে দেখতে পেলো। তাকে রান্না করতে সাহায্য করার জন্য রান্নাঘরের দিকে পা বাড়ায় পুষ্প। রান্নাঘরে পা রাখার আগেই পিছন থেকে মিসেস মাহমুদার গলার আওয়াজ পেল পুষ্প।
– এই মেয়ে এই, এদিকে কোথায় যাচ্ছো?
পুষ্প আস্তে করে নিচু স্বরে জবাব দিলো
– না মানে, ওনাকে রান্নার কাজে একটু সাহায্য করতে যাচ্ছিলাম।
– কোনো দরকার নেই। এই রান্নাঘরে তুমি কখনও পা রাখার সাহস করবে না। তুমি এ বাড়িতে ৩ মাসের মেহমান মাত্র। এ বাড়িতে বৌয়ের অধিকার খাটাতে আসবে না।
কথাগুলো শুনে পুষ্প আর কিছু বলতে পারলো না চুপচাপ রুমে দিকে পা বাড়াতেই পেছন থেকে মি. রাশেদ তাকে ডাক দিলো।
– দাড়াও বৌমা। তুমি রান্নাঘরে যাবে।
মি. রাশেদ এমন কথা শুনে মিসেস মাহমুদা রেগে গিয়ে বলে,
– এসব কি বলছো তুমি? এ মেয়ে আমার রান্নাঘরে কিছুতেই যাবে না।
– তুমি চুপ করো। এ বাড়িতে বৌ হিসেবে তোমার যতটুকু অধিকার ঠিক ততটুকু অধিকার বৌমারও আছে বুজেছো?
– তুমি কি ভুলে গেলে নাকি যে ও এ বাড়িতে মাত্র ৩ মাসের জন্য এসেছে। ৩ মাস পর ওকে আমার ছেলে ডিভোর্স দিয়ে এ বাড়ি থেকে বিদায় করে দিবে।
– ৩ মাস পর কি হবে তা তখন দেখা যাবে। আর পুষ্প যতদিন এ বাড়িতে থাকবে ততদিন সে এ বাড়ির বৌ। আর ওর ঐসব অধিকার আছে যা এ বাড়ির বউ হিসেবে ওর পাওয়া দরকার।
-কিন্তু…
– আর কোন কিন্তু নয়। এটা আমার বাড়ি আর এখানে কে কোথায় যেতে পারবে কি পারবে না সেটা আমিই ঠিক করব।
-কাজটা তুমি ঠিক করলে না।
মিসেস মাহমুদা মি. রাশেদকে আর কিছু বলতে না পেরে সেখান থেকে চলে যায়।

এতোক্ষণ পুষ্প নিজের শ্বশুরকে তার জন্য এভাবে লড়াতে দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলো। পুষ্পকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে মি. রাশেদ জিজ্ঞেস করলো,
– কি হলো বউমা, এভাবে দাড়িয়ে আছো যে?
পুষ্প আর কিছু না বলে মি. রাশেদের কাছে এসে তাকে সালাম করলো।
– থাক বউমা।সালাম করতে হবে না। একটা ভুল বুঝাবুঝিতে বিয়েটা হলেও প্রথমদিন থেকে আমি তোমাকে বৌ হিসেবে মেনে নিয়েছিলাম। জানি এ বাড়িতে এ ৩ মাস থাকতে তোমার কষ্ট হবে তবু্ও আমার বিশ্বাস তুমি একদিন সবার মন জয় করে নিবে। আমার বাবার বলে যাওয়া শেষ কথাগুলো কি তুমি পালন করবে না?
পুষ্প অবাক হয়ে মি. রাশেদের দিকে তাকায়।
– ভাবছো, আমি সেটা কিভাবে জানি? ঐদিন যখন বাবা তোমাকে ঐ কথাগুলো বলেছিলো তখন দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে আমি সব শুনে নিয়ে ছিলাম। বাবার মতো আমিও চাই তুমি এসব দায়িত্ব নাও। আর ভেবো না তোমার এ বাড়িতে আপন বলতে কেউ নেই, আমি সবসময় তোমার পাশে আছি।
এবার যাও রান্নাঘরে। আজ তুমি প্রথম রান্না করবে। আমি চাই সকালে মিষ্টি কিছু রান্না করো আর মিষ্টির মধ্যে পায়েস রান্না করলে খুব ভালো হয়। কারণ পায়েস তোমার শ্বাশুড়ির খুব পছন্দ। হা হা।
-জ্বি, বাবা।
বলেই রান্না ঘরে যায় পুষ্প। রান্না গিয়ে পুষ্প চিন্তায় পড়ে যায় কারণ সে তো রান্না করতেই পারে না। তার ওপর থেকে পায়েস রান্না করতে বলা হয়েছে তাকে।হঠাৎ তার নিজের ফোনটার দিকে নজর যায়। ফোনটা দেখেই সে বুদ্ধি পেয়ে যায়।

সকালে শায়নের ফোনে রাইয়ানের ঘুম ভাঙ্গে।
– হ্যালো, রাইয়ান।
– হ্যালো। কেমন আছিস?
– একদম বিনদাস। তুই?
– হুম ভালো। এতো সকালে ফোন দিলি যে?
– আরে আজ সকালের ফ্লাইটেই দেশে ফিরেছি। দেশে ফিরেই প্রথম তোকেই ফোনটা দিলাম।
– হুম।
– কিরে এমন মনমড়া কন্ঠে কথা বলছিস কেন? ভাবি কি কম ভালোবাসে নাকি তোকে?
– ইয়ার্কি করছিস না। নিজে তো আমার বিয়ের দিনই লন্ডন চলে গেলি আর এদিকে আমার জীবনে যে কতো কিছু ঘটে গেছে তা তো তুই জানিস না।
– কি বলিস? কি হয়েছে?
– ফোনে বলা সম্ভব না এতোকিছু। অফিসের পর দেখা কর।
– ওকে।
ফোনটা কেটেই রাইয়ান ফ্রেশ হতে চলে যায়।

নেট থেকে ভিডিও দেখে অনেক কষ্টে পুষ্প পায়েসটা রান্না করেছে। খাবার টেবিলে সবাইকে আসতে দেখেই সে তাড়াতাড়ি পায়েসটা টেবিলে রেখে দূর সরে যায়। কারণ পায়েসটা সে রান্না করেছে জানলে হয়তো কেউ খেতে চাইবে না।
খাবার টেবিলে সবাই বসতেই কিচেন স্টাফ বাসন্তী  সবাইকে নাস্তা বেড়ে দেয়। পায়েসটা দেখে মিসেস মাহমুদা খুশি হয়ে যায়। তাই সে আগে পায়েসটাই খাওয়ার জন্য দিতে বলে ।
রান্নাঘর থেকে পুষ্প সব দেখছে। আর পায়েসটা যেন ভালো হয় মনে মনে সেটাই দোয়া করছে।
মিসেস মাহমুদা পায়েস নিয়ে মুখ নিতেই মুখটা বিবর্ণ করে ফেলে।
– থু থু। এটা কোন পায়েস? এ পায়েস কে বানিয়েছে?

মিসেস মাহমুদা মুখে এমন কথা শুনে রাইয়ান, নুরী, মি. রাশেদ সবাই অবাক হয়ে তাকায় তার দিকে।
মি. রাশেদ বললো,
– কি হয়েছে পায়েসে?
– মিষ্টির বদলে পায়েসটাকে লবণ দিয়ে বিষ বানিয়ে ফেলছে।

শাশুড়ীর মুখে কথা শুনে জিহ্বা কামড় দিয়ে পুষ্প বলল,
– চিনির বদলে কি নুন দিয়ে ফেলাম আমি?

মিসেস মাহমুদা বাসন্তীর দিকে তাকিয়ে বলল,
– কে বানিয়েছে পায়েস?
স্টাফ বাসন্তী ভয়ে চুপচাপ দাড়িয়ে আছে।
বাসন্তী কিছু না বলায় মিসেস মাহমুদা আড়চোখে রান্নাঘরের দিকে তাকিয়ে বলে,
– নিশ্চয়ই ঐ মেয়েটা রান্না করেছে তাই না। দেখো রাইয়ানের বাবা, খুব শখ করে পাঠিয়ে ছিলে না তোমার বৌমাকে রান্নাঘরে। এসব রান্না করেছে। বেশি লবণ খাইয়ে আমাকে মারার প্লেন করেছে।
-আহ! এমন কেনো বলছো? আজ বউমা প্রথম রান্না করেছে এখানে। তাই একটু ভুল হতেই পারে।  আর তুমি বউমাকে কি বলছো তুমি নিজে যখন প্রথম রান্না করেছিলে তখন মনে হয় খুব ভালো রান্না করেছিলে? পুড়া রুটি বানিয়ে খাওয়েছিলে সবাইকে ভুলে গেলে? তারপর কি তুমি ভালো রান্না করো নি?
মি. রাশেদের কথা শুনে লজ্জায় আর কিছু বলতে পারলো না মিসেস মাহমুদা। রাগে গরগর করতে খাবার টেবিলে থেকে ওঠে চলে যায়।
খাওয়া শেষে সবাই চলে গেলে মি. রাশেদ পুষ্পকে ডাক দিয়ে বলে,
– তুমি মন খারাপ করো না বউমা। একদিন রান্না খারাপ হতেই পারে, আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে। তুমি তোমার চেষ্টা চালিয়ে যাও।আমি সবসময় তোমার পাশে থাকবো। আর আমরা নাস্তা করার সময় তুমি কেনো আসনি টেবিলে নাস্তা করতে?
– না মানে, বাবা…
– এরপর থেকে যেন এমন না হয়। তুমি আমাদের সবার সাথে বসে খাবার খাবে মনে থাকবে?
– হুম।

চলবে…..