ত্রিভুজ প্রেম পর্বঃ৩১

0
1149

ত্রিভুজ প্রেম
পর্বঃ৩১
জান্নাতুল ফেরদৌস সূচনা

রাত ১১ টা বাজে। টেবিলে বসে পুষ্প তার   নিজের অনিশ্চিত জীবনের কথাগুলো ডাইরির পাতায় আবদ্ধ করছে। হঠাৎ রুমের দরজার কাছে শব্দ পেয়ে পুষ্প ওঠে গিয়ে দেখলো মিসেস মাহমুদা দরজার পাশে দাঁড়িয়ে আছে।
– মা, আপনি এখন এখানে? কোনো দরকার ছিলো?
– না। আমি রাইয়ানকে দেখতে এসেছিলাম।
– সে তো ঘুমিয়ে পড়েছে। আসুন ভিতরে আসুন।
– না আসবো না। অনেক রাত হয়েছে আর জেগে থেকো না শুয়ে পড়ো।
বলেই মিসেস মাহমুদা তার রুমের দিকে যেতে লাগলো। পেছন থেকে পুষ্প আবার মিসেস মাহমুদাকে ডেকে আস্তে করে বললো,
– মা, নুরী কি বাসায় চলে এসেছে?
পুষ্প মুখে এমন প্রশ্ন শুনে মিসেস মাহমুদা মুখটা গম্ভীর করে বললো,
– নাহ, এখনো আসেনি। কিন্তু সে আমায় কল করে বলেছে কিছুক্ষণ পর চলে আসবে।
পুষ্প  অবাক হয়ে বললো,
– এখনো আসেনি! এতো রাত হয়ে গেলো…
– আহ! এতো কথা বলছো কেন?  বলছি তো চলে আসবে। তুমি শুয়ে পড়ো যাও।
পুষ্প আর কোন কথা বললো না। চুপচাপ রুমে গিয়ে শুয়ে পড়ে।

অনেকক্ষণ হয়ে গেলো কিন্তু পুষ্পর কোনমতেই ঘুম আসছে না। মনটা কেমন আনচান করছে। তার মনে হচ্ছে কিছু একটা খারাপ হতে চলেছে।
– নাহ! আর শুয়ে থাকতে পারছি না। নুরীকে একবার না দেখলে মনে শান্তি আসবে না।
পুষ্প রুম থেকে বেরিয়ে নুরীর রুমের কাছে গিয়ে দেখে নুরী তার রুমে নেই।
– এখনো নুরী আসেনি। অনেকক্ষণ তো হয়ে গেলো। আসার পথে কোন সমস্যায় পড়ে নি তো আবার সে? আমি কি একবার ফোন দিয়ে দেখবো?
বলেই নুরীকে ফোন দেয় পুষ্প। কিন্তু নুরী ফোন ধরছে না।

– রনি, অনেক রাত গেছে, এখন আমাকে যেতে হবে বাসায়।
নুরীর কথা শুনে রনি বললো,
– সে কি আর একটু থাকো না?
– ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখো কয়টা বাজে। মা  বারবার ফোন দিচ্ছে আর আমাদের ফেন্ডরাও চলে গেছে বাসায়। এখন আমাকেও যেতে হবে।
– আর একটু থাকো না প্লিজ…
বলেই রনি নুরীর সাথে জোরাজোরি করতে লাগলো।

– ড্রাইভার ভাই, ড্রাইভার ভাই
এতোরাতে ড্রাইভার পুষ্পকে দেখে অবাক হয়ে বলে,
– ম্যাডাম, এতো রাতে আপনি এখানে?
– সরি, আপনাকে এতো রাতে ঘুম থেকে ওঠানোর জন্য।
– না, তা কিছু না। কিন্তু কেনো ডেকেছেন?
পুষ্প আমতা আমতা করে বললো,
– আপনি কি নুরীর বন্ধু রনির বাসা চিনেন?
– হ্যা.. একদিন আপামনিকে গাড়িতে করে ওনার বাসায় নিয়ে গিয়েছিলাম।
– এখন কি আমায় একটু নিয়ে পারবেন?
– হ্যা অবশ্যই। কিন্তু…
– কোন কিন্তু না চলুন প্লিজ।

– রনি প্লিজ, আমাকে ছেড়ে দাও, এসব কি করছো? তুমি না আমাকে ভালোবাসো?
নুরীর কথা শুনে শুনে রনি হেসে বললো,
– এতোদিন যা করেছি তা সবই নাটক ছিলো। তোর আগেও কতো মেয়ের সাথে এমন নাটক করেছি।
– রনি! তুমি এতোটা খারাপ, ছিঃ!
– এসব বলে কোন লাভ নেই জান। তোমার পেছনে অনেক সময় নষ্ট করেছি। আর আজ এতো সুন্দর সুযোগ কিভাবে হাতছাড়া করি আমি। আসো জান আমার কাছে আসো।
– না। ছেড়ে দাও আমায়। কে আছো, প্লিজ বাচাঁও আমায়।
নুরী চিৎকার করতে লাগলো।
– হা হা… কেউ নেই বাসায়। সবাই চলে গেছে। করো চিৎকার, কেউ শুনবে না।
নুরী এবার কাঁদতে কাঁদতে বললো,
– প্লিজ রনি, আমার এতোবড় সর্বনাশ করো না। আমাকে যেতে দাও।
– এতো সহজেই কিভাবে ছাড়ি তোমায় জান।
বলেই রনি নুরীর সাথে জোরাজোরি শুরু করে।
এক পর্যায়ে নুরী রনিকে ধাক্কা দিয়ে মেঝেতে ফেলে দেয়। আর সেখান থেকে দৌড়ে বাহিরে যেতেই পুষ্পর সাথে থাক্কা খায় নুরী।

ছেড়া জামা, ঠোঁটের এক পাশে রক্ত জমে আছে, শরীরে অনেক জায়গায় কেটে গেছে।
নুরীকে এমন অবস্থা দেখে পুষ্প একদম চমকে ওঠে।
পুষ্পকে দেখে নুরী দৌড়ে তাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে।
পেছন রনি এসে বললো,
– দৌড়ে পালাবি কোথায়?
রনিকে এ অবস্থায় দেখে পুষ্প আর কিছু বুঝার বাকি থাকলো না।
পুষ্পকে দেখে রনি বললো,
– বাহ! ননদকে বাঁচাতে ভাবি চলে এসেছে, কিন্তু ভাবিকে কে বাঁচাবে? হা…হা..
কথা শুনেই পুষ্পর রাগ মাথায় ওঠে যায়। নুরীকে পাশে দাড় করিয়ে নিজের শাড়ির আঁচলটা কোমড়ে ঘুজে রনির দিকে এগিয়ে যায় পুষ্প।  রনির সামনে গিয়ে পুষ্প রনির নাক বরাবর একটা ঘুষি মারতেই রনি পড়ে যায়। তারপর পুষ্প নিজের জুতো খোলে জুতাপেটা করে রনিকে।
পুষ্পর এমন চন্ডীরূপ দেখে নুরী একদম চমকে ওঠে। পুষ্প যে এতোটা রাগতে পারে তা নুরীর ধারণার বাহিরে ছিলো। এতোদিন পুষ্পকে একজন অসহায় মেয়ে মনে করতো নুরী।

অনেকক্ষণ রনিকে পেটানোর পর রনি আধমরা হয়ে যাওয়ায় পুষ্প তাকে ছেড়ে দেয়। পুষ্প নুরীর ওড়নাটা নিয়ে তার শরীরে মুড়িয়ে দিয়ে ঐখান থেকে বেরিয়ে যায়।

রাত ১ টায় গাড়ি বাসার সামনে এসে দাড়ায়। পুষ্প নুরীকে গাড়ি থেকে নামিয়ে বললো,
– নুরী, তুমি এইখানেই দাঁড়াও। আমি আগে ভেতরটা দেখে আসি। ভেতরে কেউ তোমাকে এ অবস্থায় দেখলে মনে খুব কষ্ট পাবে।
– হুম।

“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
পুষ্প ভেতরে গিয়ে সব ভালো করে দেখে কেউ না দেখতে পেয়ে আবার নুরীর কাছে এসে বললো,
– চলো। সবাই ঘুমিয়ে আছে।

পুষ্প আর নুরী নুরীর রুমে ঢুকতেই পেছন থেকে মিসেস মাহমুদা লাইট জ্বালিয়ে বললো,
– বাসায় আসতে এতো রাত হলো কেন নুরী?
মিসেস মাহমুদাকে নুরীর রুমে দেখতে পেয়ে নুরী আর পুষ্প দুজনেই চমকে ওঠে।
নুরী আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না, সে দৌড়ে মিসেস মাহমুদাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে। নুরী মিসেস মাহমুদাকে জড়িয়ে ধরায় হাত শরীর থেকে তার ওড়নাটা পড়ে যায়।
নুরীর ছেড়া জামা আর শরীরের হাল দেখে মিসেস মাহমুদা চমকে ওঠে বলে,
– নুরী, কি হয়েছে? তোর এ অবস্থা কি করে হলো?
নুরী কোন কথা বলছে না কেঁদেই চলেছে।
নুরীর কাছ থেকে কোন জবাব না পেয়ে মিসেস মাহমুদা পুষ্পকে জিজ্ঞেস করলো,
– পুষ্প, নুরীর কি হয়েছে?  ও এভাবে কাঁদছে কেন?
পুষ্প মিসেস মাহমুদাকে কি বলবে বুঝে পারছে না। সে আমতা আমতা করে কিছু বলতে যাবে তার আগেই নুরী বললো,
– মা, রনি আমার এ অবস্থা করছে। আজ যদি ভাবি ঠিক সময় না পৌঁছাতো তাহলে রনি আমার ইজ্জত নষ্ট করে ফেলতো। আমি ঐদিন ভাবির কথা না শুনে অনেক বড় ভুল করে ফেলেছি মা…
বলেই কাঁদতে লাগলো।
এ অবস্থায় মিসেস মাহমুদা কি বলবে কিছু বুঝতে পারছে। পুষ্পর সামনে লজ্জায় মাথা উঁচু করে দাড়াতে পারছে না মিসেস মাহমুদা।  নুরীকে ছেড়ে মিসেস মাহমুদা পুষ্পর সামনে হাতজোড় করে এসে দাড়িয়ে কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলে,
– তোমার কাছে ক্ষমা চাওয়ার যোগ্যতাটাও হারিয়ে ফেলেছি।  এতোদিন তোমাকে কত কথা শুনেয়েছি, তোমাকে ভুল বুঝে তোমার ওপর অনেক অন্যায় করেছি, যদি পারো আমাকে ক্ষমা দাও।
বলে মিসেস মাহমুদা পুষ্পর পা ধরতে যাবে তখনি পুষ্প তার হাত ধরে বলে,
– ছিঃ মা, এসব কি করছেন? আপনার হাত আমার পায়ে ধরার জন্য নয় আমাকে দোয়া করার জন্য। আমাকে এসব বলে আর ছোট করবেন না আর।
মিসেস মাহমুদা এবার পুষ্পকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো।
পেছন থেকে নুরী এসে বললো,
– ভাবি, আমাকেও ক্ষমা দাও। তোমার কথা না শুনে তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি।
পুষ্প মুচকি হেসে বললো,
– তুমি আমার ছোট বোনের মতো। তোমার কথায় কিসের কষ্ট পাবো।
মিসেস মাহমুদা পুষ্পর মাথায় হাত দিয়ে বললো,
– আজ থেকে তুমি এ বাড়ির শুধু বউ না আমার মেয়ে। আজ থেকে আমার দুই মেয়ে। পুষ্প আর নুরী।
নিজের শাশুড়ীর মুখে এমন কথা শুনে পুষ্প এবার কেঁদে মিসেস মাহমুদাকে জড়িয়ে ধরে। মিসেস মাহমুদাও নুরী আর পুষ্পকে একসঙ্গে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে।

চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে