ত্রিভুজ প্রেম পর্বঃ৩২

0
1004

ত্রিভুজ প্রেম
পর্বঃ৩২
জান্নাতুল ফেরদৌস সূচনা

সকালে রান্নাঘরে মিসেস মাহমুদাকে দেখে পুষ্প খুব অবাক হয়ে বললো,
– মা আপনি আজ রান্নাঘরে কি করছেন?
– কেন আমি কি রান্নাঘরে আসতে পারি না?
– না মানে.. এতোদিন তো আপনি…
– আমাকে আপনি আপনি বলছিস কেনো? তুই আমাকে এখনো শাশুড়ী ভাবিস?
মিসেস মাহমুদার এমন কথায় বেশ অবাক হয়ে যায় পুষ্প।
পুষ্পকে অবাক হতে দেখে মিসেস মাহমুদা আবার বললো,
– কি হলো? এতো অবাক হওয়ার মতো কোন কথা বলিনি আমি। এখন থেকে আমাকে তুমি করে বলবি, মনে থাকবে?
পুষ্প মুচকি হেসে বললো,
– আচ্ছা মা। এখন বলো কোথায় সাহায্য লাগবে আমার?
– কোনো সাহায্য লাগবে না। আমি আর বাসন্তী মিলে সব করে নিবো। এমনিতে সারাদিন রাইয়ানের সেবাযত্নে অনেক খাটুনি হয় তোর। কাল রাতেও তুই ভালো করে ঘুমতে পারিস নি। তুই যা, একটু বিশ্রাম নে।
– মা তা কি করে হয়? আমি কিছু..
– বললাম না রুমে যেতে। এখন কিন্তু আমি বড্ড রাগ করবো।
শাশুড়ীর কাছ থেকে এমন শাসন হয়তো সব বউয়েরাই আশা করে। আজ নিজেকে খুব ভাগ্যবতী মনে হচ্ছে পুষ্পর। মুচকি হেসে পুষ্প তার রুমে চলে যায়।

নাস্তার টেবিলে নাস্তা করতে বসছে সবাই। আজকের নাস্তা মিসেস মাহমুদা রান্না করেছে শুনে মি. রাশেদ খুবই অবাক হয়। তার ওপর থেকে পুষ্পর সাথে মিসেস মাহমুদাকে এত কথাবার্তা বলতে দেখে আরো বেশি অবাক হচ্ছে।
– আজ সূর্য কোনদিকে ওঠেছে বুজতে পারছি না, মাহমুদা। রাতারাতি তোমার এতো পরিবর্তন হলো কিভাবে?
মি. রাশেদ এমন কথা শুনে মিসেস মাহমুদা ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলে,
– কেনো, আমি আবার কি করেছি তোমায়?
– আমায় কিছু করো নি। কিন্তু আজ বউমার সাথে যেভাবে কথা বলছো এর আগে তো কখনো এমনভাবে কথা বলতে দেখিনি।
মিসেস মাহমুদা মুখে বাঁকা হাসি দিয়ে বললো,
– এখন থেকে সবসময় শুনবে। আমি আমার ভুল বুজতে পেরেছি। এখন পুষ্প আমার বউ না আমার মেয়ে।
মি. রাশেদ এ কথা শুনে খুশি হয়ে বললেন,
– তোমার মুখে এমন কথা শুনার অপেক্ষায় ছিলাম আমি। আমি জানতাম বউমা একদিন তোমার মন জিতবে। আজ খুব আনন্দের দিন আমার।
– হয়েছে আর আনন্দ করতে হবে না, এখন নাস্তা করো।
অনেকদিন পর পরিবারের সবাইকে এতো খুশি দেখে পুষ্প মনটাও ভরে ওঠলো। সে তার চেষ্টায় ধীরে ধীরে সফল হচ্ছে।

অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে অফিসের ভবনটাকে দেখছে পুষ্প। মুখে একটা হাসি নিয়ে অফিসে ভিতরে যেতেই কেউ একজন পুষ্পকে হেঁচকা টান দিয়ে একটা সাইডে নিয়ে যায়।
– পাপড়ি তুই এভাবে আমাকে টেনে আনলি কেন এইখানে?
– তুই অফিসে কেন এসেছিস? কোনো কাজ থাকলে আমাকে বল আমি করে দিচ্ছি।
– আমি অফিসের দেখাশুনা করতে এখানে এসেছি পাপড়ি, কোনো কাজে নয়।
পুষ্পর কথা শুনে পাপড়ি চমকে ওঠে বলে,
– রাইয়ানকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিয়েও তোর মন ভরে নি যে এখন আমার চাকরিটা কেড়ে নিতে এসেছিস?
– পাপড়ি, তুই আমাকে ভুল বুঝেছিস। আমি এখানে তোর চাকরির কোন ক্ষতি করতে আসিনি। কোম্পানিটা দিন দিন লোকসানের দিকে যাচ্ছে। নতুন যেই ডিলটা কোম্পানি পেয়েছে তার কাজগুলো ঠিকমতো হচ্ছে কিনা তার দেখাশুনা আমি করতে আমি এসেছি।
– তার জন্য আমি আছি। তোকে এতো চিন্তা করতে হবে না। তুই যা।
– তুই একা সব সামলাতে পারছিস না বলেই রাইয়ানের অনুমতি নিয়ে আমি এখানে এসেছি।
– তুই……

-পুষ্প তুমি কার সাথে কথা বলছো?
অফিস কলিগের সুমনার এমন কথা শুনে পাপড়ি চমকে ওঠে।
– ওমা, একি!  তোমরা কি জমজ বোন? তোমার যে একটা জমজ বোন আছে তা আগে তো বলোনি পুষ্প?
সুমনার এমন কথা শুনে অফিসের বাকি কলিগরাও চলে আসে পুষ্প-পাপড়িকে দেখতে।
পাপড়ি এবার হকচকিয়ে যায়। ঠিক এই ভয়টাই সে পেয়েছিলো। এখন কলিগদের কি বলবে সে বুঝতে পারছে না।
সুমনা আবার বললো,
– তা পুষ্প, তোমার জমজ বোনের নাম কি?
পাপড়ি কোন জবাব না দিয়ে চুপচাপ দাড়িয়ে আছে।
পুষ্প পাপড়ির এমন অবস্থা দেখে পেছন থেকে বললো,
– আমার নাম পাপড়ি। আমি আজ থেকে…
পুষ্পকে আর বলার সুযোগ না দিয়ে পাপড়ি বলে ওঠে,
– ওকে আমিই ডেকে এনেছি অফিসে। আসলে বস অফিসে না থাকায় আমি একা সব কাজ সামলাতে পারছি না। আর আপনারাও আপনাদের কাজে বিজি। তাই বস সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত আমার কাজের সহযোগিতার জন্য আপুকে এখানে এনেছি। আর এতে বসও আমাকে অনুমতি দিয়েছে।

পাপড়ির কথা শুনে পুষ্প সহ তার কলিগরাও অবাক হয়। সুমনা বললো,
– বস যেহেতু অনুমতি দিয়েই দিয়েছে তাহলে তো আর কিছু করার নেই। আচ্ছা চলো এখন সবাই সবার কাজে যায়।

সুমনার কথা শুনে অফিসের সবাই সবার কাজে চলে গেলো। সবাই চলে যেতেই পাপড়ি পুষ্পকে বললো,
– এসেই যখন পড়েছিস, তো এখন থেকে আমার কথামতোই কাজ করবি। ওকে?
পুষ্প আর কোন কথা না বলে মাথা নাড়িয়ে হ্যা বললো।

রাইয়ান একা একা বেডে বসে আছে। খুব বোরিং লাগছে তার।
– ধ্যাত এভাবে একা একা আর বসে থাকতে পারছি না। পুষ্প থাকলে ভালো হতো,তার সাথে তো একটু গল্প করা যেতো। খুব ক্ষিধাও পেয়েছে। কিন্তু কাকে ডাকবো কাউকেই তো দেখতেও পারছি না।
একটুপরই মিসেস মাহমুদা কিছু খাবার নিয়ে রাইয়ান কাছে আসে।
– রাইয়ান নে,  তোর জন্য খাবার নিয়ে এসেছি।
রাইয়ান অবাক হয়ে বললো,
– তুমি কিভাবে জানলে আমার ক্ষিধে পেয়েছে?
– পুষ্প আমাকে অফিসে যাওয়ার আগে সব বলে গেছে যে কখন কখন তো কি কি লাগবে।
– হুম। একা একা বসে থাকতে খুব বোরিং লাগছে মা।
– তো তুই একা একা বসে থাকিস কেন?
– তাহলে কি করবো?
– হাঁটাচড়া করবি, ব্যায়াম করবি।
– এসব করানোর জন্যও তো কেউ লাগবে।
– দেখ বাবা, কেউ তোকে ধরে ধরে হাটাবে, নাড়াচাড়া করাবে তাহলে তুই আগের মতো হয়ে যাবি, যদি এমন ভেবে থাকিস তাহলে তোর সুস্থ হতে অনেক সময় লাগবে। আর তুই যদি একা একা হাটাচড়ার ট্রাই করিস, একা একা ব্যায়াম করিস, তাহলেই তাড়াতাড়ি সুস্থ হবি।
– হুম।
– তুই আর কারো জন্য বসে থাকিস না। এখন থেকে সবকিছু একা একা করার চেষ্টা কর। আমার বিশ্বাস তুই তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবি।
– আচ্ছা মা। এখন থেকে আমি চেষ্টা করবো।

চলবে…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে