ত্রিভুজ প্রেম পর্বঃ৩০

0
1090

ত্রিভুজ প্রেম
পর্বঃ৩০
জান্নাতুল ফেরদৌস সূচনা

বেশ কয়েকদিন কেটে যায়। পুষ্পর অক্লান্ত ভাবে রাইয়ানের সেবাযত্ন করায় রাইয়ান এখন অনেকটাই সুস্থ। তবে অনেকদিন হাতে ব্যান্ডজ থাকায় রাইয়ান হাতে, পায়ে শক্তি কম পায়। এখনো সুস্থ হতে তার কিছুদিন সময় লাগবে।

পুষ্প রাইয়ানকে এভাবে সেবাযত্ন করতে দেখে এ কিছুদিনে মিসেস মাহমুদার মনটাও পাল্টেছে। এখন আর সবসময় তিনি পুষ্পকে বকাঝকা করে করেন না। তবে পুষ্প প্রতি মিসেস মাহমুদার রাগ কমলেও তিনি এখনো পুষ্পকে বউ হিসেবে মেনে নেন নি।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন

কলিং বেলের শব্দে পুষ্প দরজা খুলতেই দেখে হাতে ফুলের তোরা নিয়ে পাপড়ি দাঁড়িয়ে আছে। পাপড়িকে দেখে পুষ্পর মন আনন্দে ভরে ওঠে কারণ অনেকদিন পর সে পাপড়িকে দেখেছে। পুষ্প আনন্দে পাপড়ি জড়িয়ে ধরতে চাইলে পাপড়ি হাত তুলে তাকে বাঁধা দিয়ে বললো,
– হয়েছে আর নাটক করতে হবে না। আমি এখানে তোর জন্য আসিনি। আমি রাইয়ানের সাথে দেখা করতে এসেছি।
কথাটা শুনতেই পুষ্পর মনটা খারাপ হয়ে যায়। তারপর মলিন একটা হাসি দিয়ে বলে,
– কেমন আছিস তুই?
– হ্যা ভালো। রাইয়ান কোথায়?
– ও পাশের রুমে আছে।
পাপড়ি রুমটা দেখতে পেয়ে আর কোনো কথা না বলে রুমের দিকে চলে যায়।

-হ্যালো রাইয়ান?
পাপড়ি কন্ঠ চিনতে পেরে রাইয়ান অবাক হয়ে রুমের দরজার দিকে তাকায়। পাপড়ি আবার বললো,
– আমি কি ভিতরে আসতে পারি?
রাইয়ান মাথা নাড়িয়ে ইশারা দেয় আসার জন্য। পাপড়ি রাইয়ানের পাশে বসে রাইয়ানকে ফুলের তোরাটা দিয়ে বললো,
– আপনার জন্য। রাইয়ান, কেমন আছেন আপনি?
বার পাপড়িকে রাইয়ানের নাম ধরে ডাকতে দেখে রাইয়ান খুব অবাক হচ্ছে।
– আমার নাম ধরে ডাকার মানে?
পাপড়ি একটা বাঁকা হাসি দিয়ে বললো,
– অফিসের বাহিরে আমাদের সম্পর্কটা অন্য।  আমার বোনের স্বামী আপনি। সম্পর্কে এখন দুলাভাই ডাকতে হয়। কিন্তু কিছুদিন পর তো আপনাদের ডিভোর্স হবে তারপর আমাদের সম্পর্কটা অন্য কিছু হতে পারে তাই নাম ধরেই ডাকলাম।
পাপড়ির কথাগুলো রাইয়ানের মেজাজ খারাপ হয়ে গেলেও সে চুপ থাকে কারণ সে বাড়িতে কোন ঝামেলা করতে চায় না।
– তা হঠাৎ আজকে আমার বাসায় কেন এসেছো তুমি?
– আপনাকে দেখতে এসেছি। কতোদিন হলো আমাদের দেখা হয় না। যদিও আপনাকে ছাড়া অফিসের সব কাজ আমি একাই সামলে নিয়েছি তবুও আপনাকে ছাড়া অফিসে একদম ভালো লাগে না। আপনাকে ছাড়া অফিসে আমার মনই বসে না।
পাপড়ির কথা শুনে রাইয়ান মনে মনে বলে,
-অফিসে তুমি কাজ কিভাবে সামলাচ্ছো তার খবর তো আমিই জানি। সব কিছু তুমি ভালো সামলাতে পারলে আর কোম্পানিটা এখন লসের মুখে পড়তে চলতো না।
রাইয়ানকে এভাবে থাকতে দেখে পাপড়ি রাইয়ানের ডান হাতের ওপর নিজের হাতটা রেখে বললো,
– কি হলো কিছু বলছেন না যে?
পাপড়ির এভাবে তার হাত রাইয়ানের হাতের ওপর রাখতেই রাইয়ানের মেজাজ আরো বিগড়ে গেলো। কিন্তু ডান হাতে শক্তি পাচ্ছে না বিধায় রাইয়ান নিজের হাতটা সরাতে পারচ্ছে না।

অন্যদিকে পাপড়ির জন্য চা আর বিস্কুট নিয়ে পুষ্প রুমের সামনে আসতেই এ দৃশ্য তার চোখে পড়ে। রাইয়ানের হাতের পর পাপড়ির হাতটা দেখতে পেয়ে পুষ্প মনটা খারাপ হয়ে যায়।
এমন সময় তার রুমে যাওয়া ঠিক হবে না, এটা ভেবে পুষ্প আবার রান্নাঘর দিকে ফিরে যায়।

– কি হলো রাইয়ান, কোনো কথা বলছো না যে?
পাপড়ি কথা শুনে রাইয়ান রেগে বললো,
– হাত সরাও। আমাকে টাচ করতে তোমাকে না করেছি। তবু তোমার সাহস কি হলো আমাকে আবার টাচ করার?
পাপড়ি মুখটা ভাড় করে বললো,
– আপনি এখনো আমাকে মাফ করেন নি? আর কতোবার মাফ চাইবো আমি?
– দেখো আমি আমার বাসায় কোনো সিন ক্রিয়েট করতে চাচ্ছি না। দেখা করতে এসেছো, দেখা হয়েছে। এবার তুমি আসতে পারো। এমনিতেও আমার ঔষধ খাওয়ার টাইম হয়ে গেছে আর ঔষধ খাওয়ার পর আমি বিশ্রাম করবো।
– আচ্ছা তো আমি আপনাকে ঔষধ খাওয়ে দিচ্ছি। আমাকে বলুন কোন ঔষধগুলো খাবেন।
রাইয়ান এবার আরো রেগে গিয়ে বলে,
– তোমাকে আমি বলিনি আমাকে ঔষধ খাইয়ে দিতে। আমাকে পুষ্প ঔষধ খাওয়াবে। তোমাকে যেতে বলেছি যাও।
বলেই রাইয়ান পুষ্পকে ডাকতে শুরু করে।
রাইয়ানের এমন কথা শুনে পাপড়ি মনে অনেক কষ্ট পায়। সে আর সেখানে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না, চুপচাপ সেখান থেকে চলে যায়।

– তাদের এভাবে একসাথে দেখে আমার কেনো এতো কষ্ট হচ্ছে। কেনো মনটা পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে৷ তবে কি আমি রাইয়ানকে….
না…না…  তা হতে পারে না। পাপড়ি আর রাইয়ান একে অপরকে ভালোবাসে। আর আমি তাদের মাঝে কাটা হয়ে থাকতে পারি না।
রান্নাঘরে এসে পুষ্প একা একা কাঁদতে কাঁদতে এসব বলছে। হঠাৎ রুম থেকে রাইয়ানের ডাক শুনতে পেয়ে চোখ পানি মুছে রুমে যায় পুষ্প।
-কতোবার ডেকেছি? কোথায় ছিলে?
– এইতো রান্নাঘরে ছিলাম।
আস্তে করে জবাব দিলো পুষ্প।
পাপড়িকে রুমে দেখতে না পেয়ে পুষ্প বললো,
– পাপড়ি কোথায়?
রাইয়ান মুখটা ভাড় করে বললো,
– সে চলে গেছে।
পুষ্প মুখটা কালো করে বললো,
– আমার সাথে দেখা না করেই চলে গেলো।
– হুম। আমার এখনের ঔষধগুলো দাও, খেয়ে নিই।
– হুম।
পুষ্প ঔষধ নিয়ে রাইয়ানের হাতে দিতেই রাইয়ান পুষ্পর দিকে তাকিয়ে বললো,
– তোমার কি মন খারাপ?
– কই না তো।
– তোমার চেহেরাই কষ্টের ছাপ দেখতে পারছি আমি।
পুষ্প মুখে মলিন একটা হাসি দিয়ে বললো,
– ওসব কিছু না। ঔষধ খেয়ে নিয়েছো, এবার বিশ্রাম করো।

রাত ৮ টা বাজে। পুষ্প রান্নাঘরের কাজ শেষ করে যাওয়ার সময় বাহির থেকে গাড়ির আওয়াজ পায়। রান্নাঘরের জানালা দিয়ে পুষ্প দেখতে পেলো সেই গাড়িটি। তার মানে নুরীর বন্ধু রনি এসেছে। পুষ্প তার রুমে যাওয়ার সময় মিসেস মাহমুদা ও নুরীকে দেখতে পেলো।
বেশ সেজে গুজে আছে নুরী। পুষ্প দূর নুরী আর মিসেস মাহমুদার কথাকপন শুনতে পায়। নুরী মিসেস মাহমুদাকে বলছে,
– মা, আজ রনির বার্থডে। রনি তার বাসায় সেজন্য পার্টিও দিয়েছে। আমি একটু তার বাসায় যাচ্ছি।
– আচ্ছা যা, কিন্তু বেশি দেরি করিস না।
– আচ্ছা।

পুষ্প মনে মনে বললো,
– নুরীকে একা একা এত রাতে রনির সাথে যাওয়ার অনুমতিটা মার দেওয়া ঠিক হয় নি। কিন্তু আমি তো এ বিষয়ে মাকে কিছুই বলতে পারবো না।
খানিকটা হতাশ হয়ে পুষ্প রুমের দিকে যায়।

পুষ্প রুমে গিয়ে দেখলো রাইয়ান মাথায় হাত দিয়ে কি যেন একটা ভাবছে। রাইয়ান এভাবে চিন্তা করতে দেখে পুষ্প তার কাছে গিয়ে বললো,
– কি হয়েছে? এভাবে কি চিন্তা করছো?
– নাহ কিছু না।
– আমাকে তুমি বন্ধু মনে করো না?
রাইয়ান অবাক হয়ে পুষ্পর দিকে তাকিয়ে বললো,
– হ্যা।
– তাহলে তোমার মনের কথা আমার সাথে শেয়ার করছো না কেন?
রাইয়ান একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললো,
– কি বলবো তোমায়। আমাদের কোম্পানিটা দিন দিন লোকসানের দিকে যাচ্ছে। আমি অফিসে না যাওয়ায় অফিসের কোন কাজই ঠিকমতো হচ্ছে না। আজ সকালেই ম্যানেজার সাহেব ফোনে বলছিলো যে নতুন ডিলটার কাজ ঠিকমতো হচ্ছে না। এভাবে চললে এ ডিলটা হাতছাড়া হয়ে যাবে। আর আমায় দেখো, এখনো ঠিকমতো সুস্থ হয়ে ওঠতে পারছি না।
পুষ্প রাইয়ানকে সান্ত্বনা দিয়ে বললো,
– আপনি খুব শীগ্রই সুস্থ হয়ে যাবেন।
পুষ্প কিছুক্ষণ চুপ থেকে কি যেন একটা ভেবে আবার বললো,
– আমাকে একটা অনুমতি দিবে?
– কিসের?
– আপনি যতোদিন সম্পূর্ণ সুস্থ না হচ্ছেন ততোদিন যদি আমি অফিসের দেখাশুনা করি?
– না… না… তা কি করে হয়? তুমি অফিসে…
– আমার ওপর বিশ্বাস নেই তোমার?
– না তা নয়! তুমি ঘরে এতো কাজ করো তারপর অফিসে….
– চিন্তা করো না আমি সব সামলে নিবো। আর অফিসে পাপড়িও আছে, আমরা দুজন মিলে সব দেখাশুনা করবো। আর তারপরও যদি কোনো প্রবলেম হয়, তুমি তো আছোই। তোমার কাছ থেকে আমি জেনে নিবো। তুমি শুধু আমাকে অনুমতিটা দাও।
রাইয়ান মনে মনে ভাবলো,
– অফিসের যা অবস্থা, এই সময় একজন কাছের মানুষ দেখাশুনা করলে ভালো হয়। আর পাপড়ির ওপর তো আমার একদম ভরসা নেই, তার চেয়ে বরং আমি পুষ্পকে অনুমতিটা দিই।
পুষ্প বললো,
– কি হলো, কিছু বলছো না যে?
– ওকে তুমি যেতে পারো। কিন্তু কোনো সমস্যা হলে অফিসে আমাকে জানাবে।
– আচ্ছা।

চলবে…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে