Wednesday, July 16, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1915



অস্পষ্টতা – পর্ব : ২

0

#অস্পষ্টতা
পর্ব – ২

লেখা : শঙ্খিনী

তারিফের সঙ্গে প্রথম দেখার ছয় মাস পর আবার দেখা হয়। সেদিন খামারবাড়ির কোনো এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। বিশাল অডিটরিয়ামে বসে অনুষ্ঠান দেখছি। হঠাৎ চোখ পড়লো আমার দুই সিট পরে বসে থাকা ছেলেটার দিকে। সেই ছেলেটা ছিল আমার তারিফ।

ওকে দেখে উৎসাহিত কণ্ঠে বললাম, “ভালো আছেন?”
আমাকে দেখে সে চমকে উঠে বলল, “জি?”
“চিনতে পেরেছেন?”
তারিফ কিছুক্ষণ ভালোভাবে আমাকে লক্ষ্য করলো।
অবশেষে চিনতে পেরে বলল, “ওহ্ হ্যাঁ! কেমন আছেন?”
“এইতো ভালো। আপনি?”
“চলছে। চলুন বাইরে গিয়ে কথা বলি?”
“হ্যাঁ!”

তারিফের সঙ্গে চলে গেলাম অডিটরিয়ামে বাইরে।

তারিফ আমাকে বলল, “বেশ কাকতালীয়ভাবেই দেখা হয়ে গেল না?”
“হুঁ! আমার কাছে কিন্তু আপনার নাম্বার এখনো আছে। ফোন দিতে চেয়েছিলাম অনেকবার, কিন্তু দেইনি।”
সে অবাক হয়ে বলল, “কেন?”
“সাহস হয়নি। যদি কিছু মনে করেন!”
“কিচ্ছু মনে করবো না! আজকে অবশ্যই ফোন দিবেন। আমার কাছে আপনার নাম্বারটা নেই। তাই চাইলেও আমি ফোন করতে পারবো না।”
“নাম্বার না থাকলে, চাইতে তো পারেন।”
“চাইবো না।”
“কেন?”
“নাম্বার চাওয়াটা হবে অভদ্রতা। আমি অভদ্রতা পছন্দ করি না।”

খিলখিল করে হেসে উঠলাম। এমন কোনো হাসির কথা না হলেও কেন হেসেছিলাম কে জানে! হাসির মাঝেই খেয়াল করলাম, স্যার  একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে। তার তাকিয়ে থাকা দেখে আমার আরও হাসতে ইচ্ছে করলো।

রাতে বাড়ি ফিরে সবার আগে ফোন করেছিলাম তারিফকে।

মিষ্টি গলায় বললাম, “কি করছেন?”
তারিফ বলল, “কিছু না।”
“কিছু না আবার কি? মানুষ তো সবসময়ই কোনো না কোনো কাজ করে!”
“তাহলে আমি আপনার সাথে কথা বলছি! আপনি কি করছেন?”
আমি হেসে বললাম, “আপনি যার সঙ্গে কথা বলছেন, সেও নিশ্চই আপনার সঙ্গে কথা বলছে!”
“তাইতো! আচ্ছা চলেন না, কাল দেখা করি।”
“কাল? আচ্ছা ঠিক আছে? কোথায় দেখা করা যায়, বলুন তো!”
“এয়ারপোর্টের পিছনে খুব সুন্দর একটা পার্ক আছে। আমার যখন খুব মন খারাপ থাকে, আমি সেখানে চলে যাই। সেখানেই দেখা করি!”
“কালকে আপনার মন খারাপ থাকবে না-কি?”
“না, না মন খারাপ থাকবে না। বরং মনটা অনেক ভালো থাকার সম্ভাবনা আছে।”

পরদিন গেলাম স্যারের সঙ্গে দেখা করতে। সে এলো নীল রঙের পাঞ্জাবি পরে। আর আমি লাল রঙের শাড়িতে। সেদিনই প্রথম আমাদের লাল-নীল সংসারের একটা আভাস দেখতে পেয়েছিলাম।

এরপর কেটে গেল অনেকগুলো দিন। প্রতিদিন বিকেল পাঁচটায় একই জায়গায় দেখা করাটা আমাদের একপ্রকার অভ্যাস হয়ে দাঁড়ায়। তারিফ হয়ে উঠলো আমার এক দারুন বন্ধু। আমি নির্বিকার ভাবে আমার সমস্যার কথাগুলো বলতে পারতাম তাকে। জানতাম, পৃথিবীতে এই একটাই মানুষ আছে যার কাছে আমি জাজড হবো না।

একদিন ভয়ে ভয়ে তারিফকে বললাম, “একটা কথা জিজ্ঞেস করি?”
“করুন।”
“আমি কি আপনাকে প্রপোজ করতে পারি?”
ছেলেটা একটুও অবাক না হয়ে বলল, “না!”
“কেন?”
“কারন আমি ঠিক করে রেখেছি আমি আপনাকে আগে প্রপোজ করবো। আপনি চাইলেই আমার আগে প্রপোজ করতে পারেন না!”

এই পাগল ছেলেটার সঙ্গে প্রেম করবো কিভাবে, এই ভেবে জোরে হেসে উঠলাম আমি।

এই ঘটনার দুদিন পর, আমার তৎকালীন বাসার দরজার সামনে দেখি এক জোড়া কানের দুল, বেশ দামী কানের দুল। তার ঠিক পাশেই দেখতে পেলাম এক গাদা বেলি ফুল। বেলি ফুলের গন্ধ আমাকে মনে করিয়ে দিলো তারিফের কথা। এটাই তাহলে স্যারের প্রপোজ করার ধরন!

এরপর খুব সাবধানে কানের দুলের বাক্স থেকে এক চিরকুট উদ্ধার করলাম। চিরকুটে ছোট ছোট অক্ষরে লেখা –

তোমার আকাশের চাঁদ হতে চাই।
তোমার জানালার কাচ হতে চাই।
তোমার বৃষ্টির মেঘ হতে চাই।
তোমার চশমার ফ্রেম হতে চাই।
তোমার অন্ধকারের ছায়া হতে চাই।
হতে পারি?

কি পাগলই না ছিল ছেলেটা! জনাবের এই অদ্ভুত প্রপোজের মধ্যে দিয়ে শুরু হলো আমাদের প্রেমপর্ব। প্রতিদিন দেখা করা, হাত ধরা, একসাথে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকার মধ্যে খুঁজে পেলাম অসম্ভব সুন্দর এক সুখ।

এখনো মনে পরে প্রথম যেদিন ছেলেটার হাত ধরেছিলাম। ইচ্ছে করে হাতটা ধরলেও, দিয়েছিলাম ভুলের অজুহাত।

একদিন, দুজনে বসে আছি আমাদের প্রিয় জায়গাটায়।

কি যেন মনে করে আমি তারিফকে বললাম, “আচ্ছা বলো তো, আমাদের প্রেমের রঙ কি?”
তারিফ ভ্রু সামান্য কুঁচকে বলল, “প্রেমের আবার রঙ হয় না-কি?”
“হয় না-কি জানি না। তবে যেকোনো সম্পর্কের মধ্যে আমি একটা রঙ দেখি। এই যেমন ধরো, যাদের সম্পর্কটা ভালোবাসায় পরিপূর্ণ তাদের প্রেমের রঙ লাল। আবার যাদের সম্পর্কে একটা দূরত্ব তৈরি হয়ে আছে, তাদের প্রেমের রঙ বাদামী।”
“তা, আমাদের প্রেমের রঙ কি?”
“সবুজ।”
“প্রেমের রঙ সবুজ হওয়ার অর্থ?”
“আমাদের সম্পর্কটা চিরস্থায়ী। তাই প্রেমের রঙ সবুজ।”

ভালোবেসে ফেলেছিলাম তারিফকে, খুব। ততদিনে ও আমাকে ভালোবেসেছিলো কিনা জানি না। ভালোবাসা যে খুবই শক্তিশালী একটা অনুভূতি, প্রথম টের পেয়েছিলাম সেই সময়টায়।

এরপর আবার একদিন খুব শখ করে নিজ হাতে রান্না করে নিয়ে গেলাম স্যারের সাথে দেখা করতে।

আমার হাতে বড় একটা ব্যাগ দেখে তারিফ বলল, “তোমার হাতে কি?”
“আজকে তোমার জন্য রান্না করে এনেছি।”
“বাবা! রান্না করতে পারো না-কি?”
“পারতাম না। হঠাৎ কেন জানি ইচ্ছা হলো, তাই ইউটিউব দেখে দেখে শিখছে।”
তারিফ বলল, “হুঁ, বুঝি বুঝি।”
“কি?”
“কিসের যে ইচ্ছা ভালো করেই বুঝি।”
আমি ইতস্তত হয়ে বললাম, “মানে?
কিসের ইচ্ছা? কি বোঝো তুমি?”
“সেটা আবার তুমি বুঝবে না। এখন বেশি কথা না বলে কি এনেছো বের করো তো! ক্ষুধা লেগেছে।”

পুরনো কথাগুলো ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি কে জানে! কি অবাক কান্ড! ছেলেটা এখনো সারাদিন আমার ভাবনায় থাকে। আচ্ছা, আমিও কি সারাদিন তার ভাবনায় থাকি? নিশ্চয়ই না।

সকালে ঘুম থেকে উঠেই চলে গেলাম মায়ের কাছে।

শীতল গলায় বললাম, “মা শোনো, এক কাজ করি। আমাদের দুজনের কোভিড টেস্ট করিয়ে ফেলি। আমি অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে রেখেছি, কালকে স্যাম্পল কালেক্ট করতে আসবে।”
আমার এমন কথায় মা হতবাক হয়ে বলল, “কোভিড টেস্ট? কোভিড টেস্ট করাতে হবে কেন? আমাদের জ্বর না কাশি?”
“আরে, টিভিতে দেখো না কোভিড টেস্ট ছাড়া কোনো হসপিটালে ভর্তি নিচ্ছে না। যদি কোনো ইমারজেন্সি কেস হয়! তাই আগেভাগেই টেস্ট করিয়ে রাখি।”
“ওহ্ আচ্ছা! এই শোন, স্যাম্পল নেওয়ার সময় কি অনেক ব্যাথা করবে?”
“কিচ্ছু হবে না! আমি আছি না।”

পরদিন ঘটল এক উদ্ভট ঘটনা…

(চলবে)

ত্রিভুজ প্রেম পর্বঃ৪৩ (শেষ পর্ব)

0

ত্রিভুজ প্রেম
পর্বঃ৪৩ (শেষ পর্ব)
জান্নাতুল ফেরদৌস সূচনা

দরজায় ঠকঠক আওয়াজ শুনে  আফিয়া বেগম দরজা খুলে দেখলো রাইয়ান দরজার বাহির দাঁড়িয়ে আছে। রাইয়ানকে দেখে আফিয়া বেগম অবাক হয়ে বললো,
– বাবা, তুমি এখন এইখানে?
রাইয়ান আফিয়া বেগমের কথার কোন জবাব না দিয়ে বললো,
– মা, পুষ্প কোথায়?
– সে তো ছাঁদে কিন্তু…..
রাইয়ান আর কোনো কথা না শুনে ভিতরে ঢুকে ছাঁদে চলে যায়।

রাইয়ানের এখানে আসার কারণ আফিয়া বেগম বুঝতে পেরে আর কিছু না বলে মুচকি হেসে দরজার লাগিয়ে দেয়।

ছাঁদে একা একা দাঁড়িয়ে আকাশ দেখছে পুষ্প। নীল আকাশটার মতো আজ সেও একা হয়ে গেছে, আর এই একা একা হয়েই বাকি জীবনটা তাকে কাটাতে হবে। চোখের পানিও এখন তার সাথে নেই, শুকিয়ে গেছে। বুকের কষ্টটাকে চাপা দিতে তার অনেক কষ্ট হচ্ছে।

হঠাৎ রাইয়ান পেছন থেকে পুষ্পকে ডাক দেয়। রাইয়ানের কন্ঠ শুনে পুষ্প অবাক হয়ে পেছনে তাকিয়ে বললো,
– তুমি এখন এইখানে?
– হ্যাঁ পুষ্প। আমি বুঝতে অনেক লেট করে ফেলছি। কিন্তু এখন আমি বুঝে গেছি।
– কি বুঝতে গেছো?
রাইয়ান পুষ্পর কাছে এসে তার হাত ধরে বললো,
– আমি তোমাকে ভালোবাসি পুষ্প। অনেক বেশি ভালোবেসে ফেলেছি তোমাকে ।
পুষ্প রাইয়ানের কাছ থেকে ২ কদম পিছিয়ে বললো,
– কিন্তু তুমি তো পাপড়িকে….
– না পুষ্প, আমি পাপড়িকে কখনই ভালোবাসিনি। খানিকের দেখায় আমি তাকে পছন্দ করেছিলাম শুধু। ভালোবাসা তো তুমি আমায় শিখিয়েছো। তোমার কাছ থেকে একদিন দূরে থেকেই আমি বুঝতে পেরেছি আমি তোমাকে কতটা ভালোবাসি। তোমাকে কতটা প্রয়োজন আমার। আমার বাসা, আমার রুম সব কিছুই তুমি ছাড়া শূণ্য। তুমি ছাড়া আমি একদম ভালো থাকতে পারবো না,  পুষ্প।
এসব বলে রাইয়ান কাঁদতে কাঁদতে হাটু ভেঙে নিচে বসে পড়লো।
পুষ্প রাইয়ানের হাত ধরে তার সামনে বসে বললো,
– আমি তোমাকে অনেক আগেই ভালোবেসে ফেলেছি, শুধু মুখ ফোটে বলতে পারি নি।

রাইয়ান অবাক হয়ে পুষ্পর দিকে তাকিয়ে বললো,
– তুমি সত্যিই বলছো?
– হ্যাঁ। আমিও তোমাকে অনেক ভালোবাসি।
পুষ্প কথাটি বলতেই দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরলো।

কিছুক্ষণ পর রাইয়ান পুষ্পকে ছেড়ে বললো,
– চলো আমার সাথে।
– কোথায়?
– কোথায় আবার আমার বাসায়।
– না আমি যেতে পারবো না।
পুষ্পর কথা শুনে রাইয়ান চমকে ওঠে বললো,
– কেনো যেতে পারবে না? এখন তো সব ঠিক হয়ে গেছে?
– হ্যাঁ সব ঠিক হয়ে গেছে, কিন্তু তোমার বাড়িতে আমি কি অধিকারে যাবো? তুমি কি ভুলে গেছো আমাদের ডিভোর্স হয়ে গেছে?

রাইয়ান কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,
– ডিভোর্স হয়ে গেছে তো কি হয়েছে? আমি আবার তোমাকে বিয়ে করবো। আর এই চুপিচুপি বিয়ে নয়, ধুমধাম করে বিয়ে হবে আমাদের। পুরো মহল্লা দেখবে যে রাইয়ান চৌধুরী তার বউ নিতে এসেছে। কি করবে না বিয়ে আমায়?
পুষ্প একটু লজ্জা পেয়ে রাইয়ান বুকে মুখ লুকিয়ে বললো,
– করবো।
পুষ্পর কথা শুনে রাইয়ান পুষ্পকে পাজোঁকোলে নিয়ে বললো,
– ঠিক এইভাবে নিয়ে যাবো আমার বউকে।

হঠাৎ পেছন থেকে আফিয়া বেগম দৌড়ে ছাঁদে এসে পুষ্পকে ডাক দেয়।
আফিয়া বেগমকে দেখে রাইয়ান আর পুষ্প দুজনই অবাক হয়ে বললো,
– কি হয়েছে মা?
আফিয়া বেগম কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বললো,
– পাপড়ির এক্সিডেন্ট হয়েছে। তাড়াতাড়ি চল হসপিটালে।

– চিন্তা করবেন না মিস্ পাপড়ি এখন সেইফে আছে। ওনার ভাগ্য ভালো যে সঠিক সময়ে চালক গাড়ির ব্রেকটা দিয়েছিলো, নাহলে হয়তো ওনাকে বাঁচানো সম্ভব হতো না। কিছুক্ষণ পরই পেসেন্টের জ্ঞান ফিরবে, আপনারা অপেক্ষা করুন।
ডাক্তারের কথা শুনে আফিয়া বেগম, পুষ্প, রাইয়ান সবাই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো।

– আপু আমাকে মাফ করে দে, আমি তোর সাথে অনেক বড় অন্যায় করে ফেলেছি। তোকে অনেক কষ্ট দিয়েছি। প্লিজ আমাকে মাফ করে দে।
পাপড়ির কথা শুনে পুষ্প বললো,
– চুপ, একদম চুপ। তোকে তো আমি অনেক আগেই মাফ করে দিয়েছি। আর তুই এমন একটা কাজ কিভাবে করলি পাপড়ি?
– আমি যে ভুল করেছি তার জন্য তোর কাছে মাফ চাওয়ার শক্তি আমার ছিলো। তাই মরে গিয়ে সেই ভুলের প্রাশ্চিত্য করতে চেয়েছিলাম।

পাপড়ি কথা শুনে পুষ্প পাপড়িকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে বললো,
– আর কোনদিনো এমন কাজ করবি না। তোর কিছু হলে আমাদের কি হতো ভেবেছিস তুই।

পাপড়ি রাইয়ানের দিকে তাকিয়ে বললো,
– রাইয়ান তোমার সাথেও আমি অনেক অন্যায় করেছি। প্লিজ আমাকে মাফ করে দাও।
রাইয়ান বললো,
– তুমি তোমার ভুল বুজতে পেরেছো এটাই আমার কাছে অনেক। আমি তোমাকে আগেই মাফ করে দিয়েছি। আর হ্যাঁ এখন আমাকে একটু সম্মান দিয়ে কথা বলো। তোমার হবু দুলাভাই আমি এখন।
রাইয়ানের কথা শুনে সবাই হেসে ওঠে। পাপড়ি হেসে বললো,
– আচ্ছা।

৭ দিন পর ধুমধাম করে বিয়ের সম্পন্ন হলো পুষ্প আর রাইয়ানের। আজ সবার মুখে কষ্টর থেকে হাসি বেশি। মিসেস মাহমুদার ছেলের বিয়ে নিয়ে যতো আশা সব পূরণ হলো। বিদায় মূহুর্তে পুষ্পকে গাড়িতে ওঠিয়ে রাইয়ান যখন গাড়িতে ওঠতে যাবে তখন দূরে নীলকে দেখতে পায়। রাইয়ান নীলের কাছে এগিয়ে গিয়ে নীলকে জড়িয়ে ধরে আর কানের ফিসফিস করে বললো,
– পাপড়ির কাছে থেকো। এখন পাপড়ির তোমাকে বেশি প্রয়োজন।
বলে মুচকি হেসে রাইয়ান গাড়িতে ওঠে চলে যায়।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন

বিয়ে শেষে পাপড়ি যখন বাসার ভিতরে ঢুকতে যাবে তখনি পাপড়ি আর নীলের মুখোমুখি পড়ে যায়। নীলকে দেখে পাপড়ির চোখের কোণে পানি জমে যায়। পাপড়ির চোখের পানি নীলের চোখ এড়ায় না তবুও সে না দেখার ভান করে পাপড়ির পাশ কাটিয়ে চলে যেতে লাগলে পাপড়ি নীলকে পেছন থেকে ডাক দেয়।
পাপড়ি ডাক শুনে নীল দাঁড়িয়ে যায় কিন্তু পাপড়ির দিকে ফিরে না।
পাপড়ি কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বললো,
– তোকে বারবার এতো অপমান করেছি যে তোর কাছে মাফ চাওয়ার যোগ্যতাও আমার নেই। তবুও যদি পারিস আমাকে মাফ করে দিস। আমি আর এ মুখ তোকে কখনও দেখাবো না। ভালো থাকিস।
বলেই পাপড়ি চলে যেতে লাগল। তখনি নীল পেছন থেকে বললো,
– তোকে মাফ করতে পারি এক শর্তে।
পাপড়ি অবাক হয়ে বললো,
– কি শর্ত?
নীল মুচকি হেসে পাপড়ির কাছে তার চুল টেনে বললো,
– এভাবে সারাজীবন আমি তোকে জ্বালাতে চাই শাঁকচুন্নি, বিয়ে করবি আমায়?
নীলের কথা শুনে পাপড়ি কেঁদে ওঠে নীলকে জড়িয়ে ধরে বলে,
– হ্যাঁ আমার রামছাগল। সারাজীবন তোর শাঁকচুন্নি হয়ে থাকতে চায়।

—————সমাপ্ত——————–

ত্রিভুজ প্রেম পর্বঃ৪২

0

ত্রিভুজ প্রেম
পর্বঃ৪২
জান্নাতুল ফেরদৌস সূচনা

রাইয়ান একটা পার্কের সামনে তার গাড়ি থামায়। রাইয়ান পার্কের ভিতর গিয়ে দেখলো পাপড়ি একটা গোলাপ ফুলের তোরা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পার্পাল কালার শাড়ি সাথে সিম্পল সাজে পাপড়িকে দারুণ দেখাচ্ছে।

পাপড়িকে দেখে রাইয়ানের জায়গায় অন্য যে কেউ থাকলে প্রেমে পড়ে যেতো পাপড়ির। কিন্তু রাইয়ান মনে তেমন কোনো ফিলিংস নেই। চুপচাপ পাপড়ির সামনে গিয়ে দাড়ায়। রাইয়ানকে দেখে পাপড়ি ফুলের তোরাটা রাইয়ানের দিকে বাড়িয়ে দেয়। রাইয়ানের তোরাটা নেওয়ার কোনো ইচ্ছা না থাকা শর্তেও তোরাটা নিয়ে বিরক্তির স্বরে বললো,
– কেনো ডেকেছো?

পাপড়ি একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বললো,
– আজ থেকে ৩ মাস আগে আপনি আমায় ভালোবেসে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন। আর নানা রকম বাঁধা-বিপত্তি আর অনেকের ষড়যন্ত্রের কারণে আমাদের বিয়েটা হয়ে ওঠে নি। কিন্তু এখন আবার আগের মতো সবকিছু হয়ে গেছে। আপু আর আপনার ডিভোর্স হয়ে গেছে। এখন আর কোনো বাঁধা নেই। চলুন আমাদের মধ্যে যা কিছু হয়েছে সব ভুলে আমরা এক হয়ে যায়। রাইয়ান, উইল ইউ মেরি মি?

রাইয়ান ২ কদম পিছিয়ে বললো,
– না, এটা আর কখনোই সম্ভব না।
পাপড়ি অবাক হয়ে বললো,
– কেনো রাইয়ান? আপনি তো আমাকেই বিয়ে করতে চেয়েছিলেন? আমাকে ভালোবাসে ছিলেন? আর এখন তো আপনি আমাকে মাফও করে দিয়েছেন? ডিভোর্সও হয়ে গেছে। তবে এখন আর কি বাধাঁ দিচ্ছে আপনাকে? কেনো আমাকে এখন আর মেনে নিতে পারছেন না?

– কারণ আমি পুষ্পকে……
বলেই চুপ হয়ে যায় রাইয়ান।
পাপড়ি অবাক হয়ে বলে,
– কারণ কি??
রাইয়ান নিজের মাথায় হাত দিয়ে বললো,
– ও সিট! এই কথাটা বুঝতে আমি এতোটা দেরি করে ফেললাম।
পাপড়ি রাইয়ানের কথা শুনে অবাক হয়ে বললো,
– কি বুঝতে দেরি করছেন?

রাইয়ান কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,
– আমাদের আর কখনো কিছু হওয়া সম্ভব না। কারণ আমি পুষ্পকে ভালোবাসি।

রাইয়ানের কথা শুনে পাপড়ি অবাকের শেষ পর্যায়ে চলে যায়।
– এসব কি বলছেন আপনি? এটা কখনোই হতে পারে না। আপু আপনাকে ধোঁকা দিয়ে বিয়ে করেছে।
বলেই পাপড়ি রাইয়ানের হাত ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললো,
– আমি আপনাকে ভালোবাসি। আপনি শুধু আমার।
রাইয়ান নিজের হাত ছাড়িয়ে বললো,
– তাই নাকি? যদি সত্যিই আমাকে ভালোবেসে থাকো তো নিজের বুকের বা পাশে হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করো। দেখো তোমার মন কি বলে?
পাপড়ি অবাক হয়ে রাইয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে।
রাইয়ান বললো,
– কি হলো যা বলছি করো।
পাপড়ি নিজেকে শান্ত করে বুকের বা পাশে হাত দিয়ে তার চোখ বন্ধ করে।
এবার রাইয়ান বললো কাকে দেখতে পাচ্ছো চোখ বন্ধ করে?
পাপড়ি চোখ বন্ধ করতেই নীলের মুখটা ভেসে ওঠে তার চোখে। নীলকে দেখতে পেয়ে পাপড়ি তার চোখ খুলে ফেলে।
পাপড়িকে চোখ খুলতেই দেখে রাইয়ান বললো,
– কাকে দেখতে পেলে?
পাপড়ি মাথা নিচু করে আছে। রাইয়ানকে সে কি বলবে তা বুঝতে পারছে না।
রাইয়ান মুখে বাঁকা হাসি দিয়ে বললো,
– নিশ্চয়ই আমাকে দেখো নি? কারণ আমি জানি তুমি আমাকে ভালোবাসো না।তোমার চোখে আমি কখনো আমার জন্য ভালোবাসা দেখি নি। এমনকি এখনো দেখতে পারছি না। তুমি শুধু পুষ্পর সাথে হিংসা করে আমাকে পেতে চাও।
– না এটা সত্যি নয়।
– হ্যা এটাই সত্যি।  আর কার সাথে হিংসা করো?  পুষ্পর সাথে?  পুষ্পর সব সুখ কেনো কেড়ে নিতে চাও? পুষ্প তোমার জন্য কত কিছু করেছে তার পরও তুমি পুষ্পকে ঘৃণা করো?
পাপড়ি রেগে বললো,
– কি করেছে আপু? আমার সব সুখ তো সে কেড়ে নিলো?
– না তোমার কোনো কিছু কেড়ে নেয় নি পুষ্প। বরং পুষ্প তোমাকে শুধু দিয়েই গেছে। তুমি সব সত্যি না জেনেই পুষ্পকে শুধু ভুল বুজেই গেলে।
– সত্যিই আর কি সত্যি?
– তাহলে শুনো আমি বলছি।

– আর কতো কাঁদবি পুষ্প? কাল আসার পর থেকেই তো কেঁদেই যাচ্ছিস। যে বোনের জন্য তুই সব করেছিস সে তো তোকে ভুলই বুঝে গেছে। তোর কত কষ্ট হচ্ছে সেটা তো পাপড়ি একবারো দেখেনি? তো কার জন্য করলি এসব?
দাদীর কথা শুনে পুষ্প বললো,
– পাপড়ি আমাকে ভুল বুজলেও আমি তো তার খারাপ ভাবতে পারি না। পাপড়ি যেন সবসময় সুখে থাকে সেই জন্যই আমি সব করেছি। এর জন্য আমি যত কষ্টই পাই আমার দুঃখ নেই।
দাদী তুমি প্লিজ আমাকে একটু একা থাকতে দাও। নিজেকে সামলে নিতে আমার একটু সময় লাগবে।

রাইয়ানের কাছ থেকে সব সত্য শুনার পর পাপড়ি হতবাক হয়ে যায়।
-এ আমি কি করলাম। না জেনে আমি আমার বোনকে এতটা কষ্ট দিয়েছি। যে বোন সবসময়ই আমার কথা চিন্তা করেছে আর আমি তার ক্ষতি করার জন্য বারবার এগিয়ে এসেছি। এখন আমি কি করবো?
পাপড়িকে রাইয়ান বললো,
– আমি তোমাকে কখনোই ভালোবাসিনি। তোমাকে প্রথম দেখে পছন্দ করেছিলাম শুধু। পছন্দ করাকেই ভালোবাসা ভাবতাম আমি এতোদিন। কিন্তু পুষ্প আমাকে ভালাবাসাটা শিখিয়ে গেছে। তোমাকে কি করতে হবে এখন তুমি ভেবে নিও। তবে আমাকে এখন কি করতে হবে আমি ভেবে নিয়েছি। আর হ্যা, তোমাকে ধন্যবাদ, কারণ তোমার কারণেই আমি পুষ্পকে কতোটা ভালোবাসি তা বুজতে পেরেছি।
বলেই রাইয়ান গাড়ির দিকে ২ কদম বাড়িয়ে আবার ফিরে এসে বললো,
– আর হ্যা। পাপড়ি একটা কথা না বললেই নয়, নীল তোমাকে অনেক ভালোবাসে। তুমি নীলকে আর ভুল বুঝো না। যদি পারো তার কাছে ফিরে যাও।
বলেই রাইয়ান চলে গেলো।
রাইয়ানের কথাগুলো পাপড়ির কানে বাজছে।
– নীল আমাকে ভালোবাসে? আর আমি নীলকে এতোবার……
কিভাবে দাড়াবো আমি নীলের সামনে? এতকিছু করার পরও কি নীল আর আপু আমাকে মাফ করবে? তাদের এতো কষ্ট দিয়েছি যে এই ভুলের তো কোনো ক্ষমাও নেই। এর থেকে তো আমার মরে যাওয়া ভালো।

চলবে…….

ত্রিভুজ প্রেম পর্বঃ৪১

0

ত্রিভুজ প্রেম
পর্বঃ৪১
জান্নাতুল ফেরদৌস সূচনা

নীলিমার বিয়ে শেষ হওয়ার পর পুষ্প ও রাইয়ান তাদের বাসায় চলে যায়। বাসায় যাওয়ার পর রাইয়ান খেয়াল করলো পুষ্প এখনো তাকে এড়িয়ে চলছে, যা রাইয়ান মেনে নিতে পারছে না।

রাতে পুষ্প এক গ্লাস দুধ নিয়ে রুমে এসে দেখে রাইয়ান বিছানায় বসে ল্যাপটপে কাজ করছে। পুষ্প দুধের গ্লাসটা রাইয়ানকে দিয়ে পেছনে ফিরতে রাইয়ান বললো,
– এখন তো আর বিয়ে বাড়িতে নেই আমরা, তাহলে এখন আমাকে ইগনোর করার কারণ কি?
পুষ্প নিরাশ হয়ে রাইয়ান দিকে তাকিয়ে বলে,
– আমি শুধু তোমাকে নয় বাবা,মা, নুরী সবাইকেই এড়িয়ে চলছি।
রাইয়ান অবাক হয়ে বললো,
– কিন্তু কেন?
– তুমি কি ভুলে গেছো আর কিছুদিন পরই আমাদের ডিভোর্স হতে চলছে? আর মাত্র ৭ দিন থাকবো আমি এ বাড়িতে এরপরই আমাকে এ বাড়ি থেকে চলে যেতে হবে।

পুষ্পর কথা শুনে রাইয়ানের বুকটা ছ্যাত করে ওঠে। এ কদিন পুষ্পর সাথে থাকতে থাকতে  সময়টা কখন চলে গেলো রাইয়ান তা বুঝতেই পারে নি।

পুষ্প আবার বললো,
– এ বাড়ি আর বাড়ির মানুষদের মায়ায় আর জড়াতে চাই না আমি। তাই সবাইকে এড়িয়ে চলছি। এতে তোমার আমার দুজনেরই মঙ্গল। আর তোমাকেও বলছি যতটা পারো আমাকে এড়িয়ে চলো।

বলেই পুষ্প রুম থেকে বেরিয়ে যায়। রাইয়ান এতোক্ষণ নির্বাক হয়ে পুষ্পর কথা শুনচ্ছিলো। কিছুই বলার নেই তার। অবশ্য পুষ্পর কথায় তো ঠিক।
নিজের মনকে সান্ত্বনা দিয়ে আবার নিজের কাজে মনোযোগী হয়ে যায় সে।

দেখতে দেখতে ৭ দিন পেরিয়ে গেলো। আজ কোর্টে রাইয়ান আর পুষ্পর ডিভোর্স হবে।

সকাল থেকেই মিসেস মাহমুদা কান্না জুড়ে বসেছে। তিনি রাইয়ানকে বার বার বুঝাচ্ছে।
– রাইয়ান একদিন তোকে আমি বলেছিলাম পুষ্পকে ডিভোর্স দিতে আর আজ সেই আমিই বলছি পুষ্পকে তুই ডিভোর্স দিস না। পুষ্প ছাড়া আমার এই ঘরবাড়ি, সংসার সব অসম্পূর্ণ। তোর জীবনসঙ্গীনী হিসেবে পুষ্পর থেকে ভালো মেয়ে তুই কখনো খুজে পাবি না।

রাইয়ান তা মাকে বুঝানোর জন্য বললো,
– মা সেটা সম্ভব না। এ ৩ মাস আমরা একে অপরকে বন্ধু হিসেবেই দেখেছি। আমাদের মধ্যে বন্ধুত্ব ছাড়া আর কোনো সম্পর্ক গড়ে ওঠে নি।

মি. রাশেদ বললো,
– স্বামী-স্ত্রীর মাঝে তো বন্ধুর সম্পর্কই থাকে বাবা। তুই আবার একটু ভেবে নে।

– বাবা আমার ভাবাতেই তো বাস্তবতা পাল্টে যাবে না। ৩ মাস আগেও তো এটাই হওয়ার কথা ছিল। আর পুষ্পও তো ডিভোর্সটা চায়। আমাদের জন্য তো আর আমি পুষ্পকে আটকে রাখতে পারি না।

অন্যদিকে পুষ্প নিজের সব কাপড়-চোপড় গুছিয়ে নিয়েছে। রুমের সব কিছু গুছিয়ে রুমে চোখ বুলিয়ে চোখে ছলছল পানি নিয়ে ভাবছে,
– কাল থেকে এসব কিছুতে আর আমার কোনো অধিকার থাকবে না। কাল থেকে আমি এ বাড়ির আপন বলে কেউ হবো না।

চোখে ছলছল পানি নিয়ে নিজের কাপড়ের ব্যাগটা নিয়ে রুম থেকে বের হতেই নুরী এসে পুষ্পকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো।
– ভাবি, তুমি যেয়ো না প্লিজ। তুমি ছাড়া এ বাড়ি ফাঁকা হয়ে যাবে। তোমাকে ছাড়া তো আমার একদিনো চলে না। প্লিজ যেয়ো না তুমি।

পুষ্প নুরীকে সামলে বললো,
– একদিন না একদিন তো যেতেই হবে বলো। এ বাড়িতে ৩ মাসের সময় নিয়ে এসেছিলাম আর এ ৩ মাসে তোমরা আমাকে এতোটা আপন করে নিয়েছো এটাই আমার কাছে অনেক। এখন আমার সময় শেষ এখানে, আমাকে যে যেতেই হবে। তুমি নিজের খেয়াল রেখো।

বলেই পুষ্প ব্যাগ নিয়ে নিচে গিয়ে দেখলো রাইয়ান নিচে তার জন্য অপেক্ষা করছে।
পুষ্পকে দেখে মিসেস মাহমুদা এসে বললো,
– পুষ্প, তোকে তো আমার কিছু বলার অধিকারও নেই। তোর ওপর আমি অনেক অন্যায় করেছি, যদি পারিস আমাকে আমাকে মাফ করে দিস।
-না মা, কি বলছো এসব? আমি এ বাড়ি থেকে চলে যাচ্ছি, তোমাদের মন থেকে তো আর চলে যাচ্ছি না। তোমার যখনি আমার কথা মনে পড়বে আমাকে ফোন করে বলবে, আমি চলে আসবো। তুমি তোমার আর বাবার খেয়াল রেখো। এখন আমাকে বিদায় দাও।

বলেই পুষ্প রাইয়ানকে বললো,
– চলো।
রাইয়ানের পুষ্পকে কিছুই বলার নেই। তাই চুপচাপ গাড়িতে ওঠে বসে।

সকাল ১১ টা বাজে। পুষ্প আর রাইয়ান দুজনই জর্জের সামনে বসে আছে। জর্জ তাদের সামনে ডিভোর্স পেপার দিয়ে তাতে সই করতে বলে।

রাইয়ান কলম হাতে নিয়ে একবার পুষ্পর দিকে তাকায়৷ তার মনে হচ্ছে তার বুকে কেউ হাতুড়ি পেটা করছে। সই করতে একদম ইচ্ছা হচ্ছে না। তবুও পুষ্পর দিকে তাকিয়ে ডিভোর্স পেপারে সাইন করে দেয়।

পুষ্প কলমটা নেওয়ার শক্তিটুকুও তার হাতে পাচ্ছে না। হাত কাঁপছে তার। বুকের সব যন্ত্রণা ভেসে ওঠেছে। চোখে পানি ছলছল করছে। তবুও বোনের কথা ভেবে অনেক কষ্টে সাইনটা করে জর্জের দিকে এগিয়ে দেয় পেপারগুলো।

জর্জ ডিভোর্স পেপারগুলো দেখে বললো,
– আপনাদের ডিভোর্স কোর্ট গ্রহন করেছে। আজ থেকে আপনারা বিবাহ বন্ধনে আর আবদ্ধ নন।

কথাটা যেন পুষ্পর কানে বাঁজের মতো পড়লো। নিজের বুকে হাজারটা ছুড়ি চালাতে ইচ্ছে করছে তার। তবুও কিছু না বলে সেখান থেকে বের হতেই পুষ্প দেখলো বাহিরে আফিয়া বেগম দাঁড়িয়ে আছে।
– মা, তুমি এখানে?
আফিয়া বেগম কান্না জড়িত কন্ঠে বললো,
– ভেবেছিলাম এ ৩ মাসে তুই সব কিছু পাল্টে নিবি। আল্লাহর দেওয়া এ সুযোগটাকে কাজে লাগাবি। কিন্তু তুই…..
– মা সবকিছুই তো নিজের ইচ্ছামতো সবসময় হয় না। আমার ভাগ্যে এ ডিভোর্স ছিলো, তাই হয়েছে।

কিছুক্ষণ পর রাইয়ান ভিতর থেকে এসে বললো,
– চলো, আমি তোমাদের বাসায় দিয়ে আসি।
পুষ্প বললো,
– না। আমি মায়ের সাথে চলে যেতে পারবো, তুমি চলে যাও।

পুষ্পর সাথে আর কোনো কথা না বলে রাইয়ান গাড়ির দিকে এগুতে লাগলো। এগুতে এগুতে রাইয়ান একবার পিছনে ফিরে পুষ্পর দিকে তাকিয় দেখলো, পুষ্প চোখে ছলছল পানি নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে।
তার মনের সব কষ্ট তার চোখের পানি জানান দিচ্ছে রাইয়ানকে। পুষ্পকে এমনভাবে আর দেখতে পারছে না রাইয়ান, তাই তাড়াতাড়ি গাড়িতে ওঠে চলে যায়।

বাসায় এসে রাইয়ান সরাসরি নিজের রুমের ভিতর চলে যায়। কষ্টে তার বুকটা ফেটে যাচ্ছে।
– এতো কষ্ট হচ্ছে কেনো আমার? এটাই তো হওয়ার কথা ছিলো আর এটাই হয়েছে তবে কেন আমার মনে আছোড় দিচ্ছে? নিজের ওপর কেনো এতো রাগ হচ্ছে?

“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
কিছুক্ষণ চুপ করে বসে রাইয়ান বললো,
– এতোদিন পুষ্পর সাথে থাকার ফলে আমার পুষ্পের অভ্যাস হয়ে ওঠেছে। তাই হয়তো সে চলে যাওয়ায় এতো কষ্ট লাগছে। আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে।
নিজের মনকে সান্ত্বনা দেয় রাইয়ান।

সারাদিন রুম থেকে আর বের হয়নি রাইয়ান। রাতে মিসেস মাহমুদা রুমে রাইয়ানের খাবার নিয়ে আসে। খাবার প্লেট দেখে রাইয়ান বললো,
– তুমি খেয়েছো মা?
– সে কথা তোর না জানলেও হবে।
রাগে কথাটি বলে প্লেটটা রেখে রুম থেকে হনহনিয়ে চলে যায় মিসেস মাহমুদা।

সারারাত ঘুম হয়নি রাইয়ানের। মনের ভিতর কেমন একটা ফাঁকা ফাঁকা অনুভব করছে। পুষ্পকে দেখতে ইচ্ছে করছে তার। এসব ভাবতে ভাবতেই সকাল হয়ে যায়।

ঘড়ির দিকে রাইয়ান তাকিয়ে দেখলো ৮ টা বেজে গেছে। রাইয়ানের মনে হলো, এখন পুষ্প থাকলে ফোনের রিংটোন বাজিয়ে আমার কানের কাছে ধরতো আমাকে ঘুম থেকে তোলার জন্য।

আস্তে আস্তে ওঠে ওয়াসরুমে যায় রাইয়ান। রেডি হয়ে আলামারীতে নিজের অফিসের ফাইলগুলো না পেয়ে রাইয়ান বলে ওঠলো,
– পুষ্প আমার ফাইলগুলো কোথায় রেখেছো?
পরক্ষণেই তার মনে হলো পুষ্প তো নেই। হতাশ হয়ে রাইয়ান ফাইলটা খুজে বের করে গিয়ে নাস্তার টেবিলে বসে।
আজ নাস্তার টেবিলে গিয়ে রাইয়ান অবাক হয়। কারণ আজ কেউ নাস্তা করতে আসে নি। তার মনে হচ্ছে সেই বাড়িতে একা মানুষ একজন৷ তার জন্য নাস্তা রেডি করে টেবিলে রেখে দিয়েছে কেউ। রাইয়ান কোন আওয়াজ না করে নাস্তা খেতে শুরু করে। খেতে খেতে হঠাৎ রাইয়ান বলে ওঠে,
– পুষ্প আমার কফিটা দিলে না যে?

একটুপর কেউ তার পাশে একটা কফির মগ রাখে। রাইয়ান তাকিয়ে দেখলো পাশে মিসেস মাহমুদা দাঁড়িয়ে আছে।

রাইয়ান মিসেস মাহমুদার দিকে তাকাতেই তিনি বললেন,
– পুষ্পর মতো আমি এতো ভালো কফি বানাতে পারি না। যা পেরেছি বানিয়েছি আর তাই খেয়ে নিও।
বলেই মিসেস মাহমুদা হনহনিয়ে নিজের রুমে চলে যায়।

রাইয়ান মিসেস মাহমুদার রাগ বুঝতে পেরে ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলে আবার খেতে শুরু করে।

– কি হচ্ছে আমার সাথে? পুষ্পকে আমি কিছুতেই ভুলতে পারছি না। যতই ওকে ভোলার চেষ্টা ততই ওর জন্য মনটা কেঁদে ওঠে।
গাড়িতে বসে নিজেকে নিজেই বলছে রাইয়ান। এমন সময় তার ফোনটা বেজে ওঠে। রাইয়ান ফোনটা নিয়ে দেখলো পাপড়ির কল। পাপড়ির সাথে এখন কথা বলার কোনো ইচ্ছে নেই রাইয়ানের। তাই ফোনটা কেটে দেয়।
কিন্তু পাপড়ি বারবার কল দিয়েই যাচ্ছে। রাইয়ান বাধ্য হয়ে ফোন ধরে বললো,
– হ্যালো?
– হ্যালো রাইয়ান, কেমন আছেন?
রাইয়ান বিরক্ত হয়ে বললো,
– সেটা তোমার জানার দরকার নেই। কেনো কল দিয়েছো সেটা বলো?
– আপনি কি আমার সাথে দেখা করতে পারবেন? একটু জরুরি কথা ছিলো।
– না। আমি এখন কারো সাথে দেখা করতে চাই না।
– রাইয়ান প্লিজ, না করবেন না। আজকে একটিবার দেখা করেন, এরপর কখন আপনাকে কিছু বলবো না।
রাইয়ান কিছুটা ভেবেচিন্তে বললো,
– আচ্ছা, কোথায় আসতে হবে বলো?

চলবে…..

ত্রিভুজ প্রেম পর্বঃ৪০

0

ত্রিভুজ প্রেম
পর্বঃ৪০
জান্নাতুল ফেরদৌস সূচনা

পাপড়ি একটা বখাটে ছেলেকে কিছু টাকা দিয়ে ভাড়া করে নিয়েছে। এখন শুধু সুযোগের অপেক্ষা।

কিছুক্ষণ পর বরযাত্রী চলে আসায় সবাই বরযাত্রীর কাছে চলে যায়। রাইয়ানের এতো ভিড়াভিড়ি পছন্দ না তাই সে একা একা দূরে দাঁড়িয়ে আছে।
রাইয়ানকে একা একা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে পাপড়ি বললো,
– এখন সবাই বরযাত্রী নিয়ে বিজি আর রাইয়ানও একা একা দাঁড়িয়ে আছে। এটাই সুযোগ।

পাপড়ি ছেলেটাকে তার কাজ শুরু করতে বলে। ছেলেটাও পাপড়ির কথা মতো তাকে টিজ করা শুরু করলো।
কিন্তু পাপড়ি খেয়াল করলো রাইয়ান তার দিকে কোন খেয়ালই  করছে না। রাইয়ান যেন তার দিকে খেয়াল করে তার জন্য পাপড়ি জোরে জোরে আওয়াজ করতে লাগলো।

অন্যদিকে ঠিক এমন সময় বিয়েতে মিসেস মাহমুদা আর মি. রাশেদ বিয়েতে আসায় দূর থেকে রাইয়ান তাদের দেখতে পায়। চারপাশে এতো হট্টগোল থাকার কারণে রাইয়ান পাপড়ি আওয়াজ এতোটা শুনতে পায় নি। রাইয়ান মিসেস মাহমুদা আর মি. রাশেদকে দেখতে পেয়ে সেখান থেকে তাদের কাছে চলে যায়।

পাপড়ি ভেবেছিলো তাকে টিজ করতে দেখে রাইয়ান তাকে বাঁচাতে আসবে। কিন্তু রাইয়ানকে সেখান থেকে চলে যেতে দেখে পাপড়ি রেগে বললো,
– ধুর, সব প্লেন ভেসতে গেলো আমার।
তারপর ছেলেটাকে পাপড়ি বললো,
– হয়েছে, আর টিজ করতে হবে না। তোমার কাজ শেষ। এবার তুমি যেতে পারো।
বলেই পাপড়ি এগুতেই ছেলেটা তার ধরে ফেলে। পাপড়ি অবাক হয়ে বলে,
– ওফ! বলেছি তো আর টিজ করতে হবে না তোমাকে। যাও, তোমার কাজ শেষ।
ছেলেটি তবুও পাপড়ি হাত ছাড়ছে না। এবার রেগে বললো,
– কি হচ্ছেটা কি? আমার কথা কি তোমার কানে যাচ্ছে না?
এবার ছেলেটি বললো,
– না সোনা, আমার কানে যাচ্ছে না। তোমার মতো এতো সুন্দরী মেয়েকে হাতছাড়া করা যায় না। আসো আমার কাছে আসো।
ছেলেটির কথা শুনে পাপড়ি ভড়কে ওঠে বলে,
– দেখো তোমাকে আমি তোমার কাজের জন্য টাকা দিয়েছি। ছাড়ো আমাকে?
– টাকা দিয়েছো তাতে কি?  টাকার সাথে যদি আরো কিছু পাই তাতে সমস্যা নেই আমার।
– দেখো আমি কিন্তু এখন চিৎকার করবো?
ছেলেটি মুখে বাঁকা হাসি দিয়ে বললো,
– করো। সবাই এখন বরযাত্রী নিয়ে ব্যস্ত। এই হট্টগোলে এখান থেকে তোমার চিৎকার কেউ শুনবে না। হা হা হা।
বলেই ছেলেটি পাপড়ির সাথে জোরাজোরি শুরু করে দেয়।
হঠাৎ পেছন থেকে ছেলেটির কলার ধরে টেনে সরিয়ে ছেলেটিকে একটা ঘুষি মারে নীল। নীলকে দেখে পাপড়িও অবাক হয়ে যায়। নীল ছেলেটিকে মারতে শুরু করলো আর বললো,
– তোর সাহস কি করে হলো ওর গায়ে হাত দেওয়ার? তোর এই হাত আমি ভেঙেই ফেলবো।
নীলকে এতোটা রাগতে দেখে পাপড়িও ভয় পেয়ে যায়। এক পর্যায়ে ছেলেটি নীলকে ধাক্কা মেরে বললো,
– আমাকে কেন মারছেন? এই ম্যাডামই তো আমাকে টাকা দিয়েছে ইনাকে টিজ করার জন্য।
ছেলেটির কথা শুনে নীল অবাক হয়ে পাপড়ির দিকে তাকিয়ে বললো,
– পাপড়ি, ছেলেটিকে ঠিক বলছে?
পাপড়ি থতমত খেয়ে গেলো নীলের কথায়। সে কি বলবে বুজতে পারছে না। সে আমতা আমতা করে বললো,
– না মানে,  নীল…
ছেলেটি আবার বললো,
– ওনি কি বলবে? আমি বলছি।
ছেলেটি রাইয়ানকে দেখিয়ে বললো
– ওই ছেলেটার সামনে আমাকে এই ম্যাডাম তাকে টিজ করতে বলেছে। এই দেখেন আমাকে তার জন্য টাকাও দিয়েছে।
ছেলেটির কথা নীল একদমই বিশ্বাস হচ্ছে না।  অবাক হয়ে পাপড়ির দিকে তাকিয়ে আছে নীল।
আর অন্যদিকে ছেলেটি আর মার খাওয়ার ভয়ে এ সুযোগে পালিয়ে যায়।

– ছি! পাপড়ি  ছি! তুই এতোটা নিচে নেমে গেলি। আমার তো ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে যে এমন একটা জগন্য কাজ তুই করেছিস রাইয়ানের কাছে যাওয়ার জন্য।
নীলের এমন কথা শুনে পাপড়ি নীলকে কি বলবে কিছু বুঝতে পারছে না।
নীল আবার বললো,
– নিজের বোনের স্বামীকে পাওয়ার লোভ তোকে এতটাই পাগল করেছে যে তুই তোর নিজের ইজ্জতের কথাও চিন্তা করলি না। তুই কি সেই পাপড়ি, যে পুষ্পকে অনেক ভালোবাসতো? যাকে ছোট থেকে আমি দেখে আসছি? পুষ্প একটু ব্যাথা পেলে পুষ্পর থেকেই যে বেশি কাঁদতো সেই বোন আজ পুষ্পর শত্রু হয়ে দাঁড়িয়েছে।

“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
নীলের কথা শুনে পাপড়ির রাগ ওঠে যায়। সে রেগে বললো,
– থাক, আর বলতে হবে না। তোরা সবাই আপুর কষ্টটাই  দেখলি আর এদিকে আমি যে জ্বলে পুড়ে ছাই হচ্ছি সেটা কি? আমার কষ্টটা তো তোরা কেউ বুজলি না? আজ আপু যেখানে আছে, সে সুখ পাচ্ছে সেসব আমার পাওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু এসব কিছু আপু আমার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে। তার জন্য রাইয়ান আমাকে কতোবার অপমান করেছে হিসাব নেই। এসব কিছুর প্রতিশোধ আমি আপুর কাছ থেকে নিয়েই ছাড়বো। আর তার জন্য আমাকে যা করা লাগবে আমি তাই করবো।
-ছিঃ!  এতো হিংসা তোর ভিতর? এতোটা অহংকার? আরে পুষ্প যদি তোর সব সুখ কেড়ে নিতেই চাইতো তাহলে কেন রাইয়ানকে সে ডিভোর্স দিয়েছিলো। পুষ্প তো পারতোই ডিভোর্স না দিয়ে রাইয়ানের সাথে সুখে সংসার করতে।

পাপড়ি তাছিল্যের হাসি হেসে বললো,
– আপু নয় রাইয়ান আপুকে ডিভোর্সটা দিয়েছে কারন রাইয়ান আমাকে ভালোবাসে, আমাকে বিয়ে করতে চায়। এখন শুধু রাইয়ান আমার ওপর একটু রাগ করে আছে,তাই আমাকে এড়িয়ে চলছে। আর রাইয়ানের যেদিন রাগ ভাঙ্গবে সেদিন সে আমার কাছে ফিরে আসবে। আর তুই কেন বার বার আমার আর রাইয়ানের মাঝে চলে আসিস।

নীল অবাক হয়ে বললো,
– আমি!!

– হ্যাঁ তুই! আমি কি করছি আর কি করবো সেটার মধ্যে তুই নাক গলাতে আসবি না। আপুর সাফাই গেয়ে আমাকে আর বুজতে আসতে হবে না তোর। আমি কি করছি আমি ভালো করেই জানি। আর কখনো আমার কাজে বাঁধা হয়ে দাঁড়াবি না।
পাপড়ি রাগের মাথায় নীলকে তা ইচ্ছা তাই বলে দিলো।

পাপড়ি কথাগুলো শুনে নীলের চোখ ছলছল করছে।
ভালোবাসার মানুষটার কাছ থেকে তাকে এভাবে কথা শুনতে হবে সেটা নীল ভাবতেও পারে নি। নীল আর সেখানে দাঁড়িয়ে থাকতে পারলো না। চোখে ছলছল পানি নিয়ে সেখান থেকে চলে যায়।

নীল নিজের কান্না আটকে রাখতে পারছে না, তাই নিজের কান্না লুকানোর জন্য একটা রুমে  ঢুকে পড়ে।  রুমে ঢুকতেই নীল দেখলো পুষ্প রুমের ভিতর কাজ করছে।
পুষ্প নীলের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। নীলের চোখে পানি দেখে পুষ্প জিজ্ঞেস করলো,
– নীল তুই কাঁদছিস কেনো?
পুষ্পর কথা কোনো জবাব দেয় না নীল। চুপচাপ দাড়িয়ে আছে।
পুষ্প আবার জিজ্ঞেস করলো,
– কিরে? নীলিমার জন্য কি মন খারাপ তোর?
নীল চোখের পানি মুছে বললো,
– কিছু না পুষ্প!  চোখে কিছু একটা পড়েছে হয়তো। তাই আরকি!
বলেই নীল সেখান থেকে চলে যেতে চাইলে পুষ্প তার হাত ধরে বললো,
– পাপড়ি কি তোকে আবার কিছু বলেছে?

অন্যদিকে রাইয়ান পুষ্পকে খুজতে খুজতে রুমের সামনে এসে পুষ্পকে বাহির থেকে দেখতে পায়। তাই রাইয়ান রুমের কাছে যেতেই পুষ্প আর নীলের কথা শুনতে পেয়ে রুমের বাহিরেই দাঁড়িয়ে যায়।

নীল পুষ্পের দিকে অসহায় দৃষ্টি নিয়ে তাকায় আর একটা মলিন হাসি দিয়ে বলে,
– পাপড়ি কেনো আমায় কিছু বলতে যাবে। আমি তো এমনি….
– তোকে কিছু বলতে হবে না আমি বুঝে গেছি। তুই যে পাপড়িকে যে তুই কতটা ভালোবাসিস সেটা আমার থেকে ভালো কেউ জানে না।
নীল চোখে জল নিয়ে বললো,
– তাহলে পাপড়ি কেন বুজে না যে আমি ওকে কতটা ভালোবাসি? কেনে এভাবে আমাকে কষ্ট দেয়?

নীলের কথা শুনে বাহিরে দাড়িয়ে থাকা রাইয়ান মনে মনে বললো,
– নীল পাপড়িকে ভালোবাসে? তবে পাপড়ি কেন নীলকে এভাবে অবহেলা করে?

নীলের কথা শুনে পুষ্প বললো,
– পাপড়ি তো রাইয়ানকে ভালোবাসে তাই তোর ভালবাসাটা সে দেখতে পারে না। তাই আমাদের দুজনকেই রাইয়ান আর পাপড়ির মাঝ থেকে সরে আসা দরকার।
পুষ্পর কথা শুনে নীল অবাক হয়ে বললো,
– দুজন মানে? তুই রাইয়ানকে ভালোবাসিস না?
নীলের কথা শুনে পুষ্প মুখে মলিন একটা হাসি দিয়ে বললো,
– নাহ। রাইয়ান আর আমি শুধু ভালো বন্ধু। এছাড়া আমাদের মাঝে তেমন কোন সম্পর্কে নেই। এই তো আর কদিন, তারপর আমাদের ডিভোর্স হয়ে গেলে হয়তো আমাদের বন্ধুত্বটাও আর থাকবে না।

পুষ্প কথা শুনে বাহিরে থাকা রাইয়ানের মন খারাপ হয়ে যায়। সে তাদের আর কোন কথা না শুনে সেখান থেকে চুপচাপ চলে যায়।

পুষ্পর কথা শুনে নীল বললো,
– মিথ্যা কথা বলিস না। আমিও একজনকে ভালোবেসেছি। তাই আমি সব বুজতে পারি।
নীল পুষ্পকে তার দিকে ফিরিয়ে বললো,
– তুই রাইয়ানকে ভালোবাসিস সেটা তোর চোখ আমাকে বলে দিচ্ছে।
নীলের কথা শুনে পুষ্প অবাক হয়ে যায় আর অন্যদিকে ফিরে বললো,
– না, আমি ভালবাসি না। আর ভালোবাসলেই বা কি? রাইয়ান তো পাপড়িকে ভালোবাসে। আর ডিভোর্সটা হলেই রাইয়ান পাপড়িকে বিয়ে করবে।
– কিন্তু…
– আর কোনো কিন্তু নয় নীল। আমি আমার বোনের খুশি কিছুতেই কেরে নিতে পারি না। রাইয়ান আর পাপড়ির মাঝ থেকে আমাদের সরে আসা উচিত। তাই তুই এখন থেকে পাপড়ির কাছ থেকে দূরে থাকবি। আর এসব কথা কাউকে বলবি না।
নীল হতাশ হয়ে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলে।
পুষ্প নীলের চোখের পানি মুছে বললো,
– এখন নিজেকে ঠিক কর। একটু পর নীলিমার বিয়ে পড়ানো শুরু হবে৷ নীলিমাকেও সামলাতে হবে। তোকে কাঁদতে দেখলে নীলিমা আরো ভেঙে পড়বে।

নীল একটু হাসার চেষ্টা করে বললো,
– হুম চল।

চলবে…..

ত্রিভুজ প্রেম পর্বঃ৩৯

0

ত্রিভুজ প্রেম
পর্বঃ৩৯
জান্নাতুল ফেরদৌস সূচনা

গায়ে হলুদটা খুব ভালো ভাবেই কেটে গেলো। সে ঘটনার পর পুষ্প আর রাইয়ানের সাথে কথা বলেনি। রাইয়ানের কাছ থেকে একরকম পালিয়ে পালিয়েই পার করল দিনটা পুষ্প।

আজ নীলিমার বিয়ে। রাইয়ান খুব সুন্দর করে সেজে স্মার্ট হয়ে রুম থেকে বেরিয়ে এসেছে। রাইয়ানকে দেখার পর অনেক মেয়ে অবশ্য ক্রাশও খেয়ে ফেলেছে। কিন্তু রাইয়ানের সেসব নিয়ে কোন মাথাব্যথা নেই। রুম থেকে বেরিয়ে রাইয়ান পুষ্পকে খুজতে লাগল। কোথাও পাচ্ছে না পুষ্পকে রাইয়ান। নীলকে দেখতে পেয়ে রাইয়ান তাকে পুষ্পের কথা জিজ্ঞেস করার জন্য নীলের কাছে এগিয়ে যেতেই দেখতে পেলো পুষ্প-পাপড়ি সিড়ি দিয়ে নামছে। তাদের দুজনকে দেখেই রাইয়ান অবাক হয়ে আছে। কারণ পুষ্প-পাপড়ি দুজনই একই রকম শাড়ি পড়েছে। তাদের সাজগোজও একই রকম। এদের মধ্যে কে পুষ্প আর কে পাপড়ি তা চেনা রাইয়ানের পক্ষে মুশকিল হয়ে গেলো।

– এদের মধ্যে পুষ্প কে আর পাপড়ি কে সেটাই তো চিনতে পারছি না।
দ্বিধায় পড়ে কথাটা বললো রাইয়ান।

একই রকম শাড়ি পড়ার আইডিয়াটা পাপড়ি থাকলেও পুষ্পও এতে খুশি কারণ সে দুজনকে একরকম দেখালে রাইয়ানের কাছ থেকে তাকে পালিয়ে পালিয়ে বেড়াতে হবে না।
আর অন্যদিকে পাপড়ি এই আইডিয়া বের করেছে  রাইয়ানের কাছে থাকার জন্য।

রাইয়ান কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে তারপর পুষ্পকে ডাক দিলো।
রাইয়ানের ডাক শুনে একটু হেসে পাপড়ি রাইয়ানের দিকে তাকিয়ে রাইয়ানের দিকে যেতে শুরু করে।আর অন্যদিকে পুষ্প পাপড়িকে রাইয়ানের কাছে যেতে দেখে সে অন্যদিকে চলে যায়। 

রাইয়ান প্রথমে পাপড়িকে পুষ্প ভাবলেও যখন দেখলো পুষ্প অন্যদিকে চলে যাচ্ছে তখন রাইয়ানের আর বুঝার বাকি রইল না কে পাপড়ি আর কে পুষ্প। কারণ পুষ্প যে তাকে এড়িয়ে চলছে সেটা এ ২ দিনে রাইয়ান ভালো করেই বুঝতে পেরেছে। তাই সে পাপড়িকে পাশ কাটিয়ে যেয়ে পুষ্প সামনে দাঁড়িয়ে বললো,
– কি ভেবেছিলে, একই রকম সাজসজ্জা করলে তোমাকে আমি চিনতে পারবো না?
রাইয়ানের এমন কথা শুনে পুষ্প কিছুটা থতমত খেয়ে যায়।
পুষ্প আমতা আমতা করে বললো,
– আমার এমন কোনো চিন্তা ছিলো না। পাপড়ির মন রাখতে আমরা একই এরম শাড়ি পড়েছি।
– হুম তা তো দেখতেই পারছি। একটা কথা বলবো?
– কি?
– আজ তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে, একদম একদম বউ বউ লাগছে।
রাইয়ানের কথার কোনো রিএক্ট না দিয়ে পুষ্প বললো,
– হুম। আমাকে মা একটু ডাকছে, আমি আসছি।
বলেই পুষ্প চলে যায়।

অন্যদিকে রাইয়ানকে পুষ্পর কাছে যেতে দেখে পাপড়ির রাগ ওঠে যায়। মনে মনে বলে,
– কি ভেবেছিলাম আর কি হলো! আমাকে আর একটা প্লেন বের করতে হবে।

পুষ্পকে এভাবে চলে যেতে দেখে রাইয়ানের মনটা ভাড় হয়ে ওঠে। মুখটা কালো করে বললো,
– এতো প্রশংসা করলাম আর সে আমার সাথে ভালো করে কথাও বললো না। চারদিকের মেয়েরা আমার ওপর মেয়েরা ক্রাশ খাচ্ছে আর সে প্রশংসা তো দূর কথা আমার দিকে একবার তাকালো না।
বলে একটা ভেংচি কাটলো রাইয়ান।

পাপড়ি প্লেন করে সব ঠিকঠাক করে বসে আছে এখন শুধু রাইয়ানের এদিকে আশার অপেক্ষা। একটুপরই রাইয়ান পুষ্পকে খুজতে খুজতে পাপড়ির দিকে আসতে লাগলো। রাইয়ানকে দেখে পাপড়ি তাড়াতাড়ি একটা উচু  টুলে ওঠে ওপরে ফুল সাজানোর অভিনয় করে। রাইয়ান পাপড়ির দিকে আসতে আসতে হঠাৎ আফিয়া বেগমের সাথে পুষ্পকে দেখতে পেয়ে অন্যদিকে চলে যায়, যা পাপড়ি দেখলো না।

পাপড়ির প্লেন মোতাবেক একটুপর পাপড়ি টুল থেকে পড়ে যাওয়ার ভান করে পড়ে যায়। আর কেউ একজন তাকে ধরেও ফেলে। পাপড়ি চোখ মেলে দেখলো তাকে রাইয়ান নয় নীল ধরে আছে।
নীলকে দেখে পাপড়ির মনে আবার সেই অনুভুতি, বুকে সেই ধকধক শব্দ শুরু হয়।

নীল পাপড়িকে ছেড়ে দাড়ায় আর কিছু না বলেই অন্যদিকে চলে যায়।

– ওফ! এমন কেন হচ্ছে আমার সাথে? আমি যখনই রাইয়ানের কাছে যাওয়ার জন্য কিছু একটা করতে যায় তখনি নীল মাঝে চলে আসে। আর নীল আমার কাছে আসলে আমার এমন কেন লাগে? কেনো আমার বুকে ধকধক শব্দ করে? নীলকে দেখলে কেনো আমার মনটা ছটফট করে? কিচ্ছু বুজতে পারছি না।
পাপড়ি একা একা নিজেকে এসব কথা বলছে।
কিছুক্ষণ চুপ থেকে পাপড়ি আবার একা একা নিজেকে বললো,
– নাহ পাপড়ি, এভাবে চললে হবে না। নীলের কথা ভেবে তুই রাইয়ানকে হারাতে পারিস না। আমাকে দেওয়া সব কষ্টের হিসাব আমাকে আপুর কাছ থেকে নিতে হবে। যেখানে তোর থাকার কথা ছিলো সেই জায়গা আপু দখল করে আছে। তোর সব সুখ আপু নিচ্ছে আর সব দুঃখ তোকে দিচ্ছে। এসব কিছু তোর ভুলে গেলে চলবে না। এখন আমাকে এমন কিছু করতে হবে যাতে রাইয়ান একদম আমার কাছে এসে আসে। আর এবার নীলকে আমার কাজে বাঁধা হতে দিবো না আমি।

চলবে…..

ত্রিভুজ প্রেম পর্বঃ ৩৮

0

ত্রিভুজ প্রেম
পর্বঃ ৩৮
জান্নাতুল ফেরদৌস সূচনা

পুষ্পর এ করুণ দশা দেখে রাইয়ান হাসবে না দুঃখ পাবে সেটাই ভাবছে। কিন্তু পুষ্পর সামনে একবার হেসে সে পুষ্পর মন খারাপ করে দিয়েছে তাই আর হাসাও যাবে না। একটু ভেবেচিন্তে পুষ্পকে বললো,
– এখন কি এভাবেই বসে থাকবে সারাদিন এখানে?
পুষ্প অসহায় দৃষ্টি নিয়ে রাইয়ানের দিকে তাকিয়ে বললো,
– এই ছেড়া জামা নিয়ে আমি সবার সামনে যেতে পারবো না। আর আমার সাথে তো অন্য একটা ড্রেসও আনি নি যে চেঞ্জ করে ফেলবো। ড্রেসের জন্য নীলদের বাসা থেকে আমাদের বাসায় যেতে হবে।
-হুম। কিন্তু এখানে এভাবে কতক্ষণ বসে থাকবে? মানুষ দেখলেও তো হাসাহাসি করবে? তুমি একটা কাজ করো তোমার ওড়নাটা আগে শরীরে মুড়িয়ে নাও।
পুষ্প ওড়নাটা শরীরে মুড়িয়ে নিয়ে বললো,
– তবুও তো ছেঁড়াটা বুঝা যাচ্ছে! এখন কি করব?
রাইয়ান একটু ভেবেচিন্তে বললো,
– তুমি ওঠে দাড়াও আমি তোমার পেছন পেছন আছি।
– মানে? আমার পেছনে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকলে লোকজন কি বলবে?
– সেটা তোমার শুনতে হবে না, তুমি ওঠে দাড়াও।

রাইয়ানের কথায় পুষ্প ওঠে দাঁড়িয়ে হাটা শুরু করে আর রাইয়ান পুষ্পর পেছন পেছন হাঁটছে।
হঠাৎ তাদের সামনে নীলের মা এসে দাঁড়িয়ে বলে,
– পুষ্প তুই নীলিমাকে হলুদ দিস নি। আয় ওকে হলুদটা দিয়ে যা। আর জামাই বাবাজী আপনি পুষ্পর পেছনে কেন দাঁড়িয়ে আছেন?

পুষ্প করুণ দৃষ্টি নিয়ে রাইয়ানের দিকে তাকায় আর রাইয়ান কি বলবে তা ভাবছে। রাইয়ান আমতা আমতা করে বললো,
– ইয়ে, মানে আন্টি……
নীলের মা রাইয়ানের কথা না শুনে বললো,
– আচ্ছা এসব কথা থাক। পুষ্প তুই আগে হলুদটা দিয়ে যা, নীলিমাকে গোসলও তো করাতে হবে।
পুষ্প মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলে নীলিমার কাছে গেলো। আর পুষ্পর পেছনে রাইয়ান দাঁড়িয়ে আছে।
পুষ্পর পেছনে রাইয়ানকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে নীলিমা বললো,
– দুলাভাই আপনি আপুর পেছনে দাঁড়িয়ে আছেন কেন?
রাইয়ান নীলিমার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে চুপচাপ দাড়িয়ে আছে।
নীলিমা মজা করে বললো,
-দুলাভাই আপুর প্রেমে এতটাই পাগল হয়েছে যে আপুর পিছুই ছাড়ছে না।
বলতেই সেখানে বসে থাকা সবাই হেসে ওঠে। পুষ্প আর রাইয়ানও কিছুটা লজ্জা পেয়ে যায়। পুষ্প তাড়াতাড়ি নীলিমাকে হলুদ লাগিয়ে সেখান থেকে প্রস্থান করে আর পুষ্পর পেছন পেছন রাইয়ানও। রাইয়ানকে আবার পুষ্পর পেছন পেছন যেতে দেখে সবাই আবার হাসাহাসি শুরু করে।
সেখানে সবাই হাসাহাসি করলেও পাপড়ির মুখে হাসি নেই, সে উল্টো তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠে আর সেখান থেকে চলে যায়।

পুষ্প আর রাইয়ান দ্রুত হেঁটে একটা রুমের ভিতর ঢুকে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। পুষ্প একবার রুমটা ভালো করে দেখে বললো,
– আরে এটা তো নীলিমার রুম।
রাইয়ান বললো,
– তাতে কি? দেখো,এখানে বিছানার ওপর কতো শাড়ি পড়ে আছে, একটা পরে নাও।
– আমাকে যেন এসব শাড়ি পরতে না হয় তাইতো এই ড্রেসটা পড়েছিলাম। কিন্তু….
রাইয়ান এবার একটু রেগে বললো,
– দেখো তোমার জন্য আমি বাহিরে সবার সামনে হাসিরপাত্র হয়েছি আর তুমি এখন এসব বলছো? চুপচাপ এইখান থেকে একটা শাড়ি পড়ে নাও। আমি বাহিরে দাঁড়াচ্ছি।
বলেই রাইয়ান রুমের দরজা লাগিয়ে বাহিরে দাড়িয়ে থাকে।

অনেকক্ষণ হয়ে গেলো রাইয়ান রুমের বাহিরে দাড়িয়ে দাড়িয়ে পাহারা দিচ্ছে কিন্তু পুষ্প এখনো বের হচ্ছে না। এদিকে বাহিরে সবাই পুষ্পকে খোঁজাখোজি করছে। রাইয়ান মনে মনে বলছে,
– পুষ্প কি ভিতরে ঘুমিয়ে পড়লো নাকি?

রাইয়ান ২/৩ বার দরজায় টোকা দেয় কিন্তু ভিতর থেকে পুষ্প কোনো কথা বলছে না। পুষ্পর আওয়াজ না পেয়ে রাইয়ান সরাসরি রুমের ভিতরে ঢুকে পড়ে। রুমের ভিতর ঢুকে রাইয়ান পুষ্পকে দেখে চমকে ওঠে চোখ বন্ধ করে উল্টো দিকে ঘোরে যায়।
আর রাইয়ানকেও এভাবে আসতে দেখে পুষ্প  অবাক হয়ে যায়।
– রাইয়ান তুমি আমাকে না বলে ভিতরে আসলে কেন?(রেগে)
– আরে আমি তো দরজায় টোকা দিয়েছিলাম কিন্তু ভিতর থেকে তোমার কোনো সারা শব্দ না পেয়েই দেখতে আসলাম তোমাকে। আর এতোক্ষণ হয়ে গেলো তুমি এখনো শাড়ি পড়ো নি কেনো? বাহিরেও তোমাকে সবাই খোজাখোজি করছে।
– সেই কখন থেকে শাড়ির কুঁচি দেওয়ার ট্রাই করছি কিন্তু পারছিই না।
– কিহ! শাড়ি পড়তে পারছো না? তাহলে বাসায় কিভাবে শাড়ি পড়তে?
– আরে! সেইগুলো তো সুতির শাড়ি ছিলো। কোনোরকমে কুঁচি পেচিয়ে পড়ে নিতাম কিন্তু এখানে তো একটাও সুতির শাড়ি নেই।
পুষ্পর কথা শুনে একটু বিরক্তি বোধ করে রাইয়ান। নিজেকে একটু শান্ত করে রাইয়ান বলবো,
– আচ্ছা আমি হেল্প করে দিচ্ছি।
রাইয়ানের কথা শুনে পুষ্প চমকে ওঠে বললো,
– না না.. তুমি কিভাবে…
– আহ! আমি চোখ বন্ধ করেই থাকবো। আই প্রমিস।
পুষ্প আর কোন কথা বললো না। রাইয়ান চোখ বন্ধ করে পুষ্পর দিকে ফিরে পুষ্প শাড়ি ধরে কুঁচি করে দেয়। রাইয়ান শাড়ির কুঁচি করতে গিয়ে পুষ্প শরীরে তার হাতের টাচ লাগতেই পুষ্প শিউরে ওঠে। আর অন্যদিকে রাইয়ানও এই প্রথম কোনো মেয়ের শরীরে এভাবে টাচ লেগেছে। তবে এতে রাইয়ানের  মনে একটুও খারাপ লাগছে না।
রাইয়ানের প্রতি পুষ্পর মনে থাকা অনুভুতি গুলো আবার জেগে ওঠেছে।

“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
হঠাৎ পুষ্পর সব কথা মনে পড়ে যায়। পুষ্প মনে মনে বললো,
– পুষ্প এ তুই কি করছিস? তুই এভাবে রাইয়ানের কাছে কাছে থাকলে তুই আরো দুর্বল হয়ে যাবি। ওর মায়ায় আবার আবদ্ধ হয়ে যাবি। এমনটা হলে তুই রাইয়ানকে ছাড়তে পারবি না। তোকে যে করেই হোক রাইয়ানের কাছ থেকে দূরে থাকতে হবে।
এসব ভাবতে ভাবতে পুষ্পর চোখে জল চলে আসে।

রাইয়ান শাড়ি কুঁচি করা শেষ করতেই পুষ্প তাড়াতাড়ি শাড়ি কুঁচি কোমড়ে গুজে শাড়ি ঠিক করে নিয়ে রাইয়ানের চোখ খোলার আগেই সেখান থেকে বাহিরে চলে যায়।

কিছুক্ষণ পর রাইয়ান বললো,
– পুষ্প শাড়ি ঠিক করে পড়েছো?
পুষ্পর কোনো আওয়াজ না পেয়ে রাইয়ান চোখ খুলে দেখলো পুষ্প সেখানে নেই।
রাইয়ান অবাক হয়ে বললো,
– আমাকে একা ফেলেই চলে গেলো?

চলবে…..

ত্রিভুজ প্রেম পর্বঃ৩৭

0

ত্রিভুজ প্রেম
পর্বঃ৩৭
জান্নাতুল ফেরদৌস সূচনা

আজ নীলিমার গায়ে হলুদ। সকাল থেকে সবাই বিয়ের কাজে ব্যস্ত। রাইয়ান সকাল থেকে পুষ্পকে একবারো কাছে পায় নি। রাইয়ান যখনই পুষ্পর সাথে কথা বলার চেষ্টা করে তখনি পুষ্প কোনো না কোন কাজ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।

অন্যদিকে সকাল থেকে পাপড়ি রাইয়ানের কাছে যাওয়ার অনেক ফন্দী করেছে কিন্তু রাইয়ান পাপড়িকে বরাবরই এড়িয়ে চলেছে।

কিছুক্ষণ পর গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হবে। পুষ্প একটা লং ড্রেস পড়েছে। ড্রেসটা পুষ্পর থেকে একটু বেশি লং হওয়ায় পুষ্পর চলাফেরা করতে খুব প্রবলেম হচ্ছে। পুষ্প জামা ঠিক করতে করতে হাটছে হঠাৎ সামনে রাইয়ান এসে দাড়ায়।

রাইয়ান পুষ্পর দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। এই প্রথম পুষ্পকে সে এমন একটা ড্রেসে দেখছে। সিম্পল সাজে পুষ্পকে খুব সুন্দর লাগছে।
পুষ্প রাইয়ানকে হঠাৎ দেখে থতমত খেয়ে যায়।
রাইয়ান নিজেকে সামলে বললো,
– পুষ্প কাল থেকে তোমার সাথে কথা বলার ট্রাই করছি কিন্তু তুমি সবসময় আমাকে এড়িয়ে যাচ্ছো কেন?
পুষ্প রাইয়ানকে আমতা আমতা করে বললো,
– না মানে, বিয়ে বাড়ি তো এখানে অনেক কাজ তাই তোমার সাথে ভালো করে কথা বলার সুযোগ পাই নি।
– মানে কি! আমার সাথে কথা বলতেও তোমার সুযোগ লাগবে?
পুষ্প কি বলবে বুঝতে পারছে না। হঠাৎ অন্যদিক থেকে নীল পুষ্পকে ডাক দেয়। নীলের ডাক শুনে পুষ্প রাইয়ানকে বললো,
– নীল ডাকছে, আমি আসছি।
বলেই দ্রুত রাইয়ানের সামনে থেকে চলে যায়।

পাপড়ি অনেক সুন্দর করে সেজে এসেছে অনুষ্ঠানে। রাইয়ান যেন তাকে দেখে তার প্রশংসা করে সেজন্য পাপড়ি রাইয়ানের সামনে ঘুর ঘুর করে। কিন্তু রাইয়ান তার দিকে একবারো তাকায় নি। উল্টো রাইয়ান পুষ্পকে খুজে বেড়াচ্ছে। রাইয়ানকে তার দিকে না তাকাতে দেখে পাপড়ির রাগ ওঠে যায়। পাপড়ি মনে মনে বলতে লাগলো,
– এতো সুন্দর করে সেজে এসেছি, আর একবারো আমার দিকে তাকাচ্ছেও না রাইয়ান।

কিছুক্ষণ পর গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হয়। নীলিমাকে সবাই এক এক করে হলুদ লাগাচ্ছে। রাইয়ান এক কোণায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পুষ্পকে খোঁজচ্ছে। অন্যদিকে রাইয়ান যেন পুষ্পকে না দেখতে পায় সেইজন্য পুষ্প মানুষের ভিড়ে লুকিয়ে আছে।

পাপড়ি নীলিমাকে হলুদ লাগিয়ে একটু হলুদ হাতে নিয়ে রাইয়ানকে লাগানোর জন্য রাইয়ানের দিকে পা বাড়ায়।

ভিড়ের মাঝে পুষ্পকে দেখে নীল পুষ্পকে টেনে ভিড় থেকে বের করে নিয়ে এসে বলে,
– কিরে পুষ্প, আমরা সবাই এখানে নীলিমাকে হলুদ দিচ্ছি আর তুই ভিড়ের মধ্যে কেন বসে আছিস?
নীলের এমন প্রশ্নের কোন উত্তর খোঁজে পাচ্ছে না পুষ্প।  আমতা আমতা করে বলতে লাগলো,
– ইয়ে, না মানে…
– ও বুজেছি। কেউ যেন তোকে হলুদ না মাখিয়ে দেয় সেজন্য এ ভিড়ের মধ্যে লুকিয়ে ছিলি তাই না?  দাড়া তোকে এখনি আমি হলুদ দিচ্ছি।
– না না…  নীল ভাই আমার। হলুদ লাগাস না আমার চেহেরার সাথে আমার ড্রেসটাও নষ্ট হয়ে যাবে।
নীল একটা বাঁকা হাসি দিয়ে বললো,
– এতো ভালো সুযোগ কিভাবে হাতছাড়া করি  আমি পুষ্প?
নীল হলুদ নিতে পুষ্প দৌড় দিলো আর তার পেছনে নীলও।
পুষ্প লং ড্রেস নিয়ে ভালো করো দৌড়াতেও পারছে না আর দৌড়াতে দৌড়াতে আচমকা রাইয়ানকে সামনে দেখতে পেয়ে তাল সামলাতে না পেরে পুষ্প হোচট খেয়ে পড়ে যায় রাইয়ানের সামনে।
আর অন্য পাপড়ি রাইয়ানকে হলুদ লাগাতে এসে পুষ্প পেছনে দৌড়াতে থাকা নীলের সাথে থাক্কা খেয়ে দুজনেই পড়ে যায়। নীল নিচে আর তার ওপরে পাপড়ি।

পাপড়ি আর নীল দুজন দুজনের চোখে ডুবে যায়। পাপড়ির মনে আবার সেই অনুভুতিগুলো জেগে ওঠে। পাপড়ি খেয়াল করলো তার হার্টবিটও বেড়ে গেছে। ধকধক শব্দটা তার কান পর্যন্ত আসছে।
আর অন্যদিকে নীলের মনে তার চেপে রাখা ফিলিংসগুলো জেগে ওঠে। তার ইচ্ছে করছে পাপড়িকে এভাবেই জড়িয়ে ধরে আজীবন শুয়ে থাকতে। কিন্তু হঠাৎ সেদিনের অপমানের কথাগুলো মনে পড়তেই নীলের রাগ ওঠে যায়। পাপড়িকে থাক্কা দিয়ে নিজের ওপর থেকে সরিয়ে নীল ওঠে সেখান থেকে চলে যায়।

অন্যদিকে পুষ্প রাইয়ানের সামনে হোটচ খেয়ে পড়ে যাওয়ায় তা দেখে রাইয়ান ফিক হেসে ফেলে। পুষ্প একবার রাইয়ানের দিকে তাকিয়ে তাকে হাসতে দেখে আবার মাথা নিচু করে বসে থাকে।
পুষ্পকে এমন করতে দেখে রাইয়ান নিজের হাসি আটকে পুষ্পর দিকে তার হাতটা বাড়িয়ে দিয়ে বলে,
– ওঠে পড়ো, কেউ দেখেনি।
পুষ্প কোন কথা বলছে না চুপচাপ বসে আছে। পুষ্পকে এভাবে বসে থাকতে দেখে রাইয়ান তার কাছে বসে বললো,
– কি হয়েছে পুষ্প? ওঠছো না কেন? তুমি কি পায়ে ব্যাথা পেয়েছো?
পুষ্প তখনও কোনো কথা বলছে না।
রাইয়ান এবার বিরক্তি নিয়ে বললো,
– কি হয়েছে কি তোমার? কোনো কথা বলছো না কেন? কি সমস্যা তোমার?
পুষ্প এবার রাইয়ানকে কাছে ডেকে কানে কানে ফিসফিস করে বললো,
– আমার জামা ছিড়ে গেছে।
রাইয়ান এ কথা শুনে চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে বললো,
– কিহ! কিভাবে হলো এটা?
– পায়ে জামা পেচঁ লেগে হোচট খেয়ে পড়ে যাওয়ায় পিঠের দিক দিয়ে জামা ছিড়ে গেছে।

পুষ্পর কথা শুনে রাইয়ান একবার পুষ্পের পেছনে তাকিয়ে দেখলো পুষ্প পেছনে ছেড়া জায়গায় হাত দিয়ে বসে আছে।
পুষ্প রাইয়ানের দিকে অসহায় দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে বললো,
– এবার কি হবে? আমি এতো মানুষের মাঝে ছেড়া জামা নিয়ে কিভাবে যাবো?

চলবে…..

ত্রিভুজ প্রেম পর্বঃ৩৬

0

ত্রিভুজ প্রেম
পর্বঃ৩৬
জান্নাতুল ফেরদৌস সূচনা

সকালে রাইয়ান ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বের হতেই দেখলো রুমে কেউ তার জন্য নাস্তা রেখে গেছে। রাইয়ান চারপাশ চোখ বুলিয়ে দেখে মনে মনে বললো,
– রুমে তো কেউ নেই, নাস্তাটা রেখে গেলো কে?
তারপর মুচকি হেসে রাইয়ান বললো,
– পুষ্পই রেখে গেছে হয়তো। কিন্তু নাস্তার সাথে আমার কফিটা দিলো না যে?
রাইয়ান রুম থেকে বের হয়ে পুষ্পকে খুঁজতে লাগলো। রান্নাঘরের সামনে রাইয়ান পেছন থেকে পাপড়িকে পুষ্প মনে করে বললো,
– পুষ্প আমাকে আজ কফি বানিয়ে দিলে না যে? আমাকে এক কাপ কফি বানিয়ে দিয়ে যাও প্লিজ।
বলেই রাইয়ান আবার রুমে চলে যায়।
রাইয়ানের কথা শুনে পাপড়ি মনে মনে অনেক খুশি হয়।
– এটাই সুযোগ রাইয়ানের কাছে যাওয়ার।
পাপড়ি এক কাপ কফি বানিয়ে রুমে যায়।

চেহেরা এক হওয়ায় রাইয়ান প্রথমে পাপড়ির দিকে এতটা খেয়াল না করে কফিটা নিয়ে নেয়। রাইয়ান কফিতে চুমুক দিতেই তার বুঝতে বাকি রইলো না এটা পুষ্পর বানানো কফি না। কফি কাপটা সাইডে রেখে রাইয়ান বললো,
– পাপড়ি তুমি কেন আমার জন্য কফি বানিয়ে  এনেছো? আমি তো তোমাকে বলিনি কফি বানিয়ে আনতে?
রাইয়ানের এমন কথা শুনে পাপড়ি হকচকিয়ে  যায়। সে ভেবেছিলো রাইয়ান হয়তো তাকে চিনতে পারবে না।
– আসলে আপু একটু অন্য কাজে বিজি ছিলো, তাই আমি ভাবলাম….
রাইয়ান একটু বিরক্তি নিয়ে বললো,
– পুষ্প বিজি থাকলে সে ফ্রি হলে আমাকে কফি বানিয়ে দিতো, তুমি কেন কফিটা বানিয়ে আনলে?
– কেন রাইয়ান, কফিটা কি ভালো হয় নি?
– না তা নয়, আমি পুষ্পর বানানো কফি খেতে পছন্দ করি।
পাপড়ি এবার রাইয়ানের একটু কাছে গিয়ে বললো,
– আপনি কেন আমার সাথে এমন করছেন? এখন তো আপনি আমাকে মাফও করে দিয়েছেন, তো কেন এতো বিরক্তি আমার প্রতি?
পাপড়ি রাইয়ানের এতোটা কাছে আসতেই রাইয়ানের রাগ ওঠে যায়।
– তোমাকে বলেছি আমার থেকে দূরে থাকতে। তোমাকে মাফ করে দিয়েছি বলে আমাদের মধ্যে সবকিছু আগের মতো হয়ে যায় নি পাপড়ি।
– কেন রাইয়ান?  আপনি তো আমাকে মাফ করে দিয়েছেন তো এতো রাগ কিসের?
রাইয়ান পাপড়ির কাছ থেকে একটু দূরে যেতেই পাপড়ি আহ! করে ওঠে।
রাইয়ান খেয়াল করলো পাপড়ির চুল তার শার্টের বোতামে আটকে গেছে।
রাইয়ান পাপড়ির চুল বোতাম থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে কিন্তু পারছে না।

– আপনি ছাড়ুন আমি ছাড়িয়ে নিচ্ছি চুল।
বলেই পাপড়ি রাইয়ানের আরো কাছে এসে তার চুল ছাড়াতে থাকে। পাপড়ি মুখে বাঁকা একটা হাসি দিয়ে মনে মনে বললো,
– চুলটা আমি ইচ্ছে করেই আপনার শার্টের বোতামে লাগিয়েছি যেন আমি আপনার কাছে আসতে পারি।

ঠিক এমন সময় পুষ্প এক কাপ কফি নিয়ে রুমে ঢুকছিলো। কিন্তু রুমে ঢুকার আগেই এ দৃশ্য দেখতে পেয়ে সে আর রুমে ঢুকতে পারে নি। চুপচাপ সেখান থেকে চলে যায়।

– পুষ্প তুই নিজেকে শক্ত কর। এতোটা কষ্ট পেলে তোর চলবে না। এটাই নিয়তি। রাইয়ান আর পাপড়ির মাঝে সব আগের মতো হচ্ছে, তুই ওদের মধ্যে আর কাঁটা হয়ে থাকিস না। নিজেকে সামলে নে। কিন্তু রাইয়ান কাছে থাকলে আমি দুর্বল হয়ে যাবো। ওর মায়ায় পড়ে গেছি আমি। না.. না… এখন থেকে আমি রাইয়ানের কাছ থেকে দূরে দূরে থাকবো। ওর কাছে থাকলে আমি রাইয়ানকে কখনও ছাড়তে পারবো না। পুষ্প তোকে আরো শক্ত হতে হবে।
একা একা এসব বলে কাঁদতে লাগলো পুষ্প।

বোতাম থেকে পাপড়ি তার চুলটা ছাড়াতেই রাইয়ান পাপড়ির কাছ থেকে দূরে সরে যেয়ে বলে,
– শুনো পাপড়ি, তোমাকে একটা কথা বলে রাখি, আমাদের মধ্যে আগের মতো আর কিছুই কখনো হয়ে ওঠবে না। তাই তুমি আমার থেকে দূরে থাকবে। বুজেছো?
– হুম।
বলেই পাপড়ি রুম থেকে বের হয়ে যায়। যেতে যেতে পাপড়ি মনে মনে বললো,
– সরি রাইয়ান, আপনার এ কথা আমি কখনই মানতে পারবো না। আপনাকে পাওয়া এখন এটা আমার জেদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আপনাকে যে কোন মূল্যে আমি পেয়েই ছাড়বো।

– ধ্যাত! মোবাইলের গেমও আর ভালো লাগছে না। আর পুষ্পটাও কোথায় গেছে? সকাল থেকে তাকে একবারো দেখলাম না।
বলেই রাইয়ান রুম থেকে বাহির হতে দেখলো পুষ্প তার মা, দাদী আর নীলিমার সাথে আড্ডা দিচ্ছে।
রাইয়ান মনে মনে বললো,
– আমাকে রুমে একা ফেলে এখানে সে আড্ডা দিচ্ছে।
রাইয়ানকে পুষ্প দেখেও না দেখার ভান করে অন্যদিকে ফিরে কথা বলছে।
রাইয়ান পুষ্পর দিকে এগিয়ে যেতেই পুষ্প নীলিমাকে নিয়ে অন্যরুমে চলে যায়।
পুষ্পর এমন কান্ডে রাইয়ান বললো,
– কি হলো ব্যাপারটা? আমাকে তো পুষ্প দেখছেও না। বিয়ে বাড়িতে এসে তো আমাকে একদম ভুলেই গেছে পুষ্প। এতই যখন বিজি সবার সাথে তো আমাকে কেনো নিয়ে এসেছে তার সাথে।

রাতে পুষ্পকে বালিশ আর কাথা নিয়ে রুম থেকে  বের হতে দেখে রাইয়ান খুব অবাক হয়।
– কি হলো? তুমি বালিশ কাঁথা নিয়ে কোথায় যাচ্ছো পুষ্প?  এখানে শুবে না?
পুষ্প মুখটা গম্ভীর করে বললো,
– আসলে অনেক দিন হলো মায়ের সাথে শোয়া হয় না। তাই ভাবছি এ কদিন আমি মায়ের সাথেই শোবো।
– কিন্তু….
পুষ্প রাইয়ানের কোনো কথা না শুনেই রুম থেকে বের হয়ে গেলো।
পুষ্পকে চলে যেতে দেখে রাইয়ান বললো,
– ধূর, সারাদিন আমাদের সাথে কথা হয় নি। এখন ভেবেছিলাম যে রাতে দুজন মিলে গল্প করবো কিন্তু এখন সে মায়ের সাথে শুতে চলে গেছে। ( ভেংচি কেটে)

চলবে……

ত্রিভুজ প্রেম পর্বঃ৩৫

0

ত্রিভুজ প্রেম
পর্বঃ৩৫
জান্নাতুল ফেরদৌস সূচনা

কলিং বেলের আওয়াজ শুনতে পেয়ে পুষ্প দরজা খুলে। দরজায় আফিয়া বেগম, নীল আর নীলের মা কে দেখে খুব অবাক হয়ে যায় পুষ্প। তবে অনেকদিন পর পুষ্প নিজের মাকে দেখতে পেয়ে জড়িয়ে ধরলো আফিয়া বেগমকে।
আফিয়া বেগম বললো,
– কেমন আছিস তুই?
– আমি অনেক ভালো আছি মা। কাকিমা, নীল কেমন আছো তোমরা?
নীল জবাব দিলো,
– এইতো আল্লাহ রহমতে ভালো আছি।
-হঠাৎ তোমরা আজ এইখানে?
নীল বললো,
– বাহ রে! তোর জামাইয়ের বাড়িতে কি আমরা আসতে পারি না?
পুষ্প মুচকি হেসে বললো,
– আমি কি তা বলেছি? আসো, ভিতরে আসো তোমরা।
বাসায় মেহমান আসতে দেখে মিসেস মাহমুদা, মি. রাশেদ তাদের কাছে এগিয়ে এসে কুশল বিনিময় করলো।

পুষ্প আর মিসেস মাহমুদার মধ্যে এতো মিল দেখে আফিয়া বেগমের মনটা খুশিতে ভরে ওঠে।

– তোমরা আসবে আমাকে আগে বলে দিলেই তো পারতে। আমি খাবার-দাবার সব আয়োজন করে রাখতাম।
পুষ্পর কথা শুনে নীলের মা হেসে বললো,
– না রে মা। কোন কিছুর আয়োজন করতে হবে না। আমরা বেশিক্ষণ থাকতে আসি নি।

ব্যাগ থেকে একটা বিয়ের কার্ড বের করে তা পুষ্পর কাছে এগিয়ে দিলো নীলের মা। কার্ড দেখে পুষ্প বললো,
– কার বিয়ের কার্ড?
কার্ডটা হাতে নিয়ে অনেক উৎসাহ নিয়ে কার্ডের লেখাটা পড়ে খুশিতে আত্মাহারা হয়ে ওঠে।
– সে কি! আমাদের নীলিমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।
পুষ্পর কথা শুনে নীল বললো,
– হ্যা। ৪ দিন পর বিয়ে।
– কখন হলো এসব? আমাকে তো কেউ কিছু না জানালেই না?
মিসেস মাহমুদা ও মি. রাশেদ অবাক হয়ে তাদের কথা শুনছে। মি. রাশেদ বললো,
– আমি তো কিছু বুঝতে পারছি না।  নীলিমা কে?
– ওহ বাবা, তোমাদের তো বলতে ভুলেই গেছি। নীলিমা হচ্ছে নীলের বোন। এতোদিন পড়াশোনার জন্য ঢাকায় তার মামা বাড়িতে থাকতো। তাই আমার বিয়েতেও আসতে পারে নি।
– ওহ এবার বুজলাম। 
– হ্যা। আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছে না যে সেদিনের ছোট্ট নীলিমার ৪ দিন পর বিয়ে।
পুষ্পর কথা শুনে নীল বললো,
– তোরা বড় হয়ে গেছিস ও কি আজীবন ছোটই থাকবে নাকি। আর হ্যা আমি কিন্তু আগেই বলে রাখছি পুষ্প  তোকে আর তোর জামাইকে কিন্তু বিয়ে ৩ দিন আগেই যেতে হবে।
নীলের এমন কথা শুনে পুষ্প মিসেস মাহমুদা দিকে তাকিয়ে বললো,
– আমি কিভাবে….
নীল পুষ্পর মনের কথা বুজতে পেরে মিসেস মাহমুদাকে বললো,
– আন্টি আপনার কি এতে কোন আপত্তি আছে।
মিসেস মাহমুদা হেসে বললো,
– না বাবা, আমার কোন আপত্তি নেই। তবে রাইয়ান মতও থাকতে হবে?
– পুষ্প আন্টি তো মত দিয়ে দিয়েছে এবার তুই রাইয়ানকে রাজী করিয়ে কালকেই চলে আসবি। তোকে ছাড়া তো বিয়ে বাড়িতে কোন মজাই হবে না।
পুষ্প বললো,
– আচ্ছা। আমি রাইয়ানকে বলে দেখবো।

রাতে রাইয়ান বিছানায় বসে ল্যাপটপে কাজ করছে। পুষ্প রাইয়ানের কাছে বললো,
– একটা কথা বলার ছিলো।
– হ্যা বলো?
পুষ্প বিয়ের কার্ড রাইয়ানের হাতে দিয়ে বললো,
– নীলিমার বিয়ে।
রাইয়ান অবাক হয়ে বললো,
– নীলিমা কে?
– নীলের বোন নীলিমা। আজ মা, কাকিমা আর নীল এসে দাওয়াত দিয়ে গিয়েছে।  আর নীল বলেছে আমরা যেন কালই চলে যাই।
– হুম
বলেই রাইয়ান আবার নিজের কাজে মনোযোগ দেয়।
– তুমি কি কাল যেতে পারবে আমার সাথে?
রাইয়ান কোন কথা না বলে নিজের কাজ করছে। রাইয়ান কোন জবাব না দিয়ে কাজ করতে দেখে পুষ্প বললো,
– বুঝতে পেরেছি তুমি যেতে পারবে না। আমি নীলকে ফোন দিয়ে বলে দিচ্ছি যে আমরা কাল আসতে পারবো না।
বলেই পুষ্পটা ফোনটা হাতে নিতেই রাইয়ান বললো,
– আমি কি একবারো বলেছি যে যেতে পারবো না?
পুষ্প অবাক হয়ে বললো,
– তুমি কাল যাবে?
– হুম।
– সত্যিই যাবে?
– হ্যা সত্যিই যাবো।
রাইয়ানের শুনে খুশিতে আত্মাহারা হয়ে পুষ্প রাইয়ানকে জড়িয়ে ধরে। পুষ্পর এমন কান্ডে রাইয়ানও একটু চমকে ওঠে বললো,
– এটা কি হলো?
রাইয়ানের কথায় পুষ্প হুশ ফিরতেই পুষ্প রাইয়ানকে ছেড়ে দাড়িয়ে বলে,
– আসলে, আমি একটু বেশি খুশি হয়ে গিয়েছিলাম। সরি।
বলেই পুষ্প কিছুটা লজ্জা পেয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।
রাইয়ান মুচকি হেসে আবার কাজে মনোযোগ দেয়।
পরক্ষণেই রাইয়ানের মনে হলো সেখানে গেলে তো আমাকে পাপড়ির সামনে থাকতে হবে। সেদিনের পর পাপড়ি আর অফিসে আসে নি। কিন্তু এখন পাপড়ির সামনে কিভাবে যাবো আমি?

পরদিন সকালে পুষ্প আর রাইয়ান গাড়ি থেকে নামতেই তাদের আমন্ত্রণ জানাতে এগিয়ে আসলো আফিয়া বেগম আর দাদী।
সবার সাথে কুশল বিনিময় করে ঘরে ঢুকতেই রাইয়ানের সামনে পাপড়ি পড়ে যায়। রাইয়ান পাপড়ি দেখে কিছুটা অস্বস্তি বোধ করে তাই সে তার মুখটা ঘুরিয়ে নিয়ে ঘরের অন্য দিকে চলে যায়।
পাপড়ি রাইয়ানকে দেখে কিছু একটা বলতে চেয়েছিলো কিন্তু রাইয়ান চলে যাওয়ায় আর কিছু বলতে পারে নি সে।
তাদের এ দৃশ্য পুষ্পর নজর এড়ালো না।একটু দূরে দাঁড়িয়ে সব দেখছিলো পুষ্প।

পুষ্প রাইয়ানের কাছে গিয়ে বললো,
– তোমাকে যদি একটা কথা বলি, রাখবে তা?
রাইয়ান অবাক হয়ে বললো,
– কি কথা?
– তুমি পাপড়িকে মাফ করে দিয়ে তোমাদের মধ্যের সম্পর্কটা আগের মতো করতে পারবে?
– এসব কি বলছো তুমি? এটা সম্ভব না।
– কেনো সম্ভব না? তোমাকে তো আগেই সব সত্য আমি বলে দিয়েছি তাহলে পাপড়িকে কেনো তুমি মাফ করতে পারছো না?
পুষ্পর কথার কোন উত্তর নেই রাইয়ানের কাছে। তাই চুপচাপ সে দাঁড়িয়ে রইলো।
পুষ্প রাইয়ানের কাছে এসে তার হাত ধরে বললো,
– আমার জন্য হলেও তুমি পাপড়িকে মাফ করে দাও। কারণ আমি আমার বোনকে আর এভাবে দেখতে পারছি না। সবকিছুর মধ্যে ভুলটা আমার বেশি ছিলো, পাপড়ি মাফ করে দাও প্লিজ?
রাইয়ান আর কিছু না বলে মাথা নাড়িয়ে হ্যা বললো।
পুষ্প খুশি হয়ে বললো,
– সত্যি বলছো? তোমাদের সম্পর্কটা আগের মতো করতে তুমি রাজি?
রাইয়ান এবার বিরক্তি নিয়ে বললো,
– আমি পাপড়িকে মাফ করতে রাজি হয়েছি, আমাদের সম্পর্কটা আগের মতো করতে রাজি হই না। আমাদের মধ্যে আগের মতো সম্পর্ক হবে কিনা তা সময়ই বলে দিবে।
– তুমি পাপড়িকে মাফ করেছো এতেই আমি খুশি। তুমি দাঁড়াও এখানে, আমি এখনই আসছি।
বলেই পুষ্প পাপড়ির কাছে গিয়ে পাপড়ির হাত ধরে টেনে রাইয়ানের কাছে নিয়ে এসে বললো,
– পাপড়ি রাইয়ান তোকে মাফ করে দিয়েছে।
পুষ্পর কথা শুনে পাপড়ি খুব খুশি হয়ে বললো,
– সত্যিই কি আপনি আমাকে মাফ করে দিয়েছেন?
রাইয়ান গম্ভীর মুখ করে বললো,
– হ্যা। আর ওই দিন অফিসেও তোমাকে এতোটা অপমান করা ঠিক হয় নি। তার জন্য সরি। তুমি আবার অফিস জয়েন করতে পারো।
পাপড়ি খুশিতে আত্মাহারা হয়ে ওঠলো।
– আপনি আমাকে মাফ করে দিয়েছেন ওটাই আমার কাছে অনেক।
পুষ্প পাপড়ির কাছে এগিয়ে এসে বললো,
– এখন তো তুই আমার ওপর আর রাগ করে থাকবি না বল?
পাপড়ি পুষ্পকে জড়িয়ে ধরে বললো,
– নাহ, আর কোনো রাগ নেই তোর ওপর।
পুষ্প খুশি হয়ে বললো,
– আমি জানতাম একদিন তুই আমাকে ঠিকই বুঝবি। একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে।

অপরপাশে পাপড়ি মনে মনে বলতে লাগলো,
– আমাদের মধ্যে মিল করিয়ে দেওয়ার জন্য তোকে অসংখ্য ধন্যবাদ। কিন্তু আমাকে দেওয়া সব কষ্টের হিসাব তো তোকে দিতেই হবে আপু। আর রাইয়ানকে তোর কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়েই আমি সব কষ্টের প্রতিশোধ নিবো।

চলবে…..