Tuesday, July 15, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1914



অস্পষ্টতা – পর্ব : ১০

0

#অস্পষ্টতা
পর্ব – ১০

লেখা : শঙ্খিনী

দুটো দিন কেটে গেল। ওই দুটো রাতে আমার চোখ থেকে ঘুম চলে গেল। আমি যে কত বড় ভুল করেছি তা উপলব্ধি করতে এই দুটো দিনেই যথেষ্ট। সৎসঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎসঙ্গে সর্বনাশ কথাটা আমার ক্ষেত্রেই ফলে। মালা ভাবীর কতগুলো অযৌক্তিক অ্যাসাম্পেশনসকে সত্যি মনে করে যে কতটা দুঃখ দিয়েছি আমার তারিফকে, এটা ভেবেই আমার চোখ মুখ রক্তশূন্য হয়ে উঠলো।

ঠিক করলাম, ক্ষমা চাইতেই হবে তারিফের কাছে। না হলে কোনোদিনও শান্তি পাবো না আমি।

গুলশানে আমাদের দুটো ফ্ল্যাট আছে। তার একটাতে তখন থাকছিল তারিফ। সেদিন সকালে উঠেই অমি সেখানে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে শুরু করি।

নিজ হাতে তারিফের পছন্দের সব খাবারগুলো রান্না করি। তারিফের পছন্দের নীল শাড়িটা পরে ওর মনের মতো করে সাজি।

আমি যখন তৈরি হচ্ছিলাম, তখন মা আমার ঘরে আসে।

আমি বললাম, “কিছু বলবে মা?”
“হুঁ। তোর নামে একটা পার্সেল এসেছে।”
“আমার নামে? কি পার্সেল।”
“জানিনা। তবে একটা খাম।”
“খামটা কোথায়?”
মা খামটা আমার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল, “এই নে।”

আমি মায়ের হাত থেকে খামটা নিই। খামটা খুলে যা দেখি, তা দেখার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না আমি।

খামের ভেতরে থাকা কাগজে বড় বড় করে লেখা, ‘স্বামী কর্তৃক তালাকের হলফনামা’। আমার পুরো পৃথিবীটা এক মুহূর্তের মধ্যে এলোমেলো হয়ে গেল। এমন একটা আকস্মিক ঝরের জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না আমি।

আমি সোজা চলে গেলাম তারিফের কাছে।

ওর মুখোমুখি হয়ে ওকে জিজ্ঞেস করলাম, “তারিফ? আমার আর তোমার মধ্যে কি এমন হয়েছে যার আমাকে ডির্ভোস লেটার পাঠাতে বাধ্য হয়েছ তুমি?”
তারিফ স্বাভাবিক গলায় বলল, “কেন ডিভোর্স নেওয়ার মতো সিচুয়েশন কি আমার মধ্যে তৈরি হয়নি?”
“না হয়নি।”
“ঠিক আছে, মেনে নিলাম হয়নি। আমি সজ্ঞানে, স্বইচ্ছায় তোমাকে ডির্ভোস দিতে চাই।”
আমি স্তম্ভিত হয়ে বললাম, “কেন?”
“কারন আমি শান্তিতে বাঁচতে চাই। আমার স্বাধীনতায় কেউ হস্তক্ষেপ করুক এটা আমি চাই না।”
“আমি যদি তোমার কাছে ক্ষমা চাই?”
“আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। প্লিজ, আমাকে মুক্তি দাও!”

আমার চোখ বেঁয়ে অনবরত জল পরছে। কোনো কিছুর বলার মতো ভাষা আমি হারিয়ে ফেলেছিলাম।

বহু কষ্টে নিজেকে সামলে বললাম, “শুধুমাত্র তোমার বন্ধুদের ইনসাল্ট করেছি বলে আমাকে এত বড় শাস্তি দিবে?”
“শুধুমাত্র আমার বন্ধুদের ইনসাল্ট করোনি তো। আমাকে ইনসাল্ট করেছ, আমার লাইফস্টাইলকে ইনসাল্ট করেছ। সবকিছুরই তো একটা সীমা আছে। আমার সহ্যের সীমাটা না ছাড়িয়ে গেছে। আমি আর তোমাকে নিতে পারবো না। আই অ্যাম স্যরি।”
“তারিফ বিশ্বাস করো, আমি নিজের ইচ্ছায় কোনো কিছু করিনি। আমাকে আসলে…”
আমাকে থামিয়ে দিয়ে তারিফ বলল, “এখানে তোমার কোনো দোষ নেই। সব দোষ আমার, বললাম তো! আমি নিজের ইচ্ছায় তোমাকে ডিভোর্স দিচ্ছি।”

ভারাক্রান্ত মন নিয়ে বাসায় ফিরে এলাম। এসেই মায়ের কাছে সবকিছু বলতে শুরু করলাম। আমাদের মধ্যকার মন অভিমান; দূরত্ব, তারিফকে নিয়ে করা আমার অহেতুক সন্দেহ; তার সহ্যক্ষমতা, আজকে সকলের ডিভোর্স লেটার; তারিফের কথা – সব।

সবকিছু শুনে মা সামান্য ভ্রু কুঁচকে বলল, “তুই তো বিয়ের পর থেকেই ওর বন্ধুদের চিনিস, জানিস ওরা কেমন মানুষ। তাহলে কেন অযথা সন্দেহ করতে গেলি?”
আমি কাঁদতে কাঁদতে বললাম, “আমি জানি না মা। আমার সত্যিই মাথা কাজ করছিল না। তবে বিশ্বাস করো, এসব কোনো কিছুই আমার মাথায় আগে আসেনি। মালা ভাবী, মালা ভাবী আমাকে এগুলো শিখিয়ে দিয়েছে।”
“মালা? আশফা, তোকে কতবার মানা করেছি মালার সঙ্গে না মিশতে। শুনলি না তো আমার কথা! মনে আছে বলেছিলাম, মালার সঙ্গে একটা বিষয় নিয়ে আমার মান অভিমান ছিল। বিষয়টা তোকে কখনো বলিনি। ভেবেছিলাম, বললে তুই মন খারাপ করবি। কিন্তু এখন তো মনে হচ্ছে আগে বলে দিলেই ভালো হতো।”
“তাহলে এখন বলো!”
“মালা বিয়ের পর থেকেই ঠিক করে রেখেছিল ওর আপন ছোট বোনের সঙ্গে তারিফের বিয়ে দিবে। আমার তাতে কোনো আপত্তি ছিল না। কিন্তু, হঠাৎ করে তারিফের সঙ্গে তোর বিয়ে হওয়ায় মালা খুব ক্ষেপে যায়।
আমাকে চ্যালেঞ্জ করেছিল যে তারিফ কখনো তোর সঙ্গে সুখী হতে পারবে না।”
আমি স্তম্ভিত হয়ে বলি, “দোষটা তো আমারই ছিলো মা। তারিফের নামে একজন যাতা বাজে কথা বলেছে আর সেগুলো আমি সত্যি বলে মনে করেছি।”
“তুই শান্ত হ। কোনো ভুল সিদ্ধান্ত আমি নিতে দেব না তারিফকে।”

সেদিন সারারাত আমি ঘুমাতে পারিনি। ডিভোর্স লেটারটা দুহাতে ধরে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত লেখা অক্ষরগুলো অনবরত পড়তে থাকি।

পরদিন বিকেলে মা তারিফকে বাসায় ডাকল।

মা আর তারিফ ডাইনিং টেবিলে মুখোমুখি বসে ছিল। আর আমি দাঁড়িয়ে ছিলাম কিছুটা দূরে।

তারিফ ক্লান্ত গলায় বলল, “মা কেন ডেকেছ বলো।”
মা গম্ভীর গলায় বলল, “তোর নিজের বাসায় তোকে ডাকতে হয় কেন?”
“কি বলবে বলো তো!”
“ডিভোর্স মানে কি ছেলেখেলা না-কি? আশফা না হয় রাগের মাথায় তোকে কয়েকটা কড়া কথা বলেছে। তুই তাই বলে সাথে সাথে ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে দিবি?”
“কিছুক্ষণের জন্য মনে করো আশফা আমাকে কোনো কড়া কথা বলেনি। তারপরও আমি ওকে ডিভোর্স দিচ্ছি।”
“কেন?”
“প্রতিটা সম্পর্কের ফাউন্ডেশন হলো বিশ্বাস, ট্রাস্ট। যে মানুষটা আমাকে বিশ্বাসই করতে পারে না, তার সঙ্গে সারা জীবন কী করে কাটাবো আমি?”
“তুই ভুল বুঝছিস। আশফা নিজের ইচ্ছায় ওসব করে নেই। ওর ব্রেইনওয়াশ করা হয়েছে। তুই আমার কথাটা শোন…”
মাকে থামিয়ে দিয়ে তারিফ বলল, “কিচ্ছু শুনতে ইচ্ছা করছে না মা আমার। আমি তো বলেই দিয়েছি সব দোষ আমার, ওর কোনো দোষ নেই। নিজের স্বাধীনতা, শান্তি ধ্বংস করে বেঁচে থাকার কোনো মানে হয় না।”
মা কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল, কিন্তু তার আগেই আমি শুকনো গলায় বললাম, “থাক মা। তারিফ ঠিকই বলেছে। ওর সুখ শান্তি নষ্ট করে একসাথে থেকেও ভালো থাকতে পারবো না আমি।”

জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো নেওয়ার দায়িত্ব নিজের মন নয়, মস্তিষ্কের উপর ছেড়ে দিতে হয়। এই সিদ্ধান্তটা জানানোর আগ পর্যন্ত আমার মন চাইছিলো, সব ভুলে তারিফের কাছে ছুটে যেতে। কিন্তু মস্তিষ্কের তাতে সায় ছিল না। মস্তিষ্ক চাইছিল তারিফকে ছেড়ে দিতে। আমাকে ছেড়ে যদি ও ভালো থাকতে পারে, তাহলে ওর ভালো থাকাটাই হবে আমার ভালো থাকা। আমি শেষমেষ আমার মস্তিষ্কের কথাই শুনেছি।

আমি তারিফের জীবনটাকে স্বর্গরাজ্য করে তুলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু কখন যে ওর জীবনটাকে নরকে পরিণত করলাম, বুঝতেই পারিনি। তারিফ একদম ঠিক কাজ করেছে। আর আমি, আমি যা ডিজার্ভ করি তাই পেয়েছি।

(চলবে)

psycho_is_back part_2

0

psycho_is_back
part_2
#apis_indica( সুরাইয়া সাত্তার ঊর্মি)

—-কি করছিস ছাদে তুই?

—-হাওয়া খাচ্ছি!হালকা হেসে বললাম।।

—-কেন ঘরে ফ্যান নেই হওয়া খাওয়ার জন্য??নাকি নষ্ট হয়েগেছে??দাঁত কিড়মিড় করে বলে উঠলো ইউসুফ।।

—-আছে তো ভাইয়া আমি ঠান্ডা হাওয়া খাওয়ার জন্য আসচ্ছি।।আমতা আমতা করে বলতে লাগলাম।।

এবার উনি দাঁতে দাঁত চেপে বলতে লাগেন,,
—-ঘরে কি এসি নষ্ট হয়ে গেছে??

এবার ভয় লাগতে লাগলো আমার,আসচ্ছি পর থেকে আমার পিছে লেগে আছে।।আমি ভয়ে ভয়ে বললাম,,
—-আছে তো ভাইয়া।।আমি প্রাকৃতিক হওয়া খাইতে আসচ্ছিলাম আর কি।।এদিক ওদিক তাকিয়ে বলতে লাগলাম।।কারণ এই খাটাশ বেটা আমার দিক অগ্নিদৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে আছে।।এদিকে রিতিমতো আমার কাপাকাপি শুরু হয়ে গেছে।।

আমার কথা শুনে রাগী কন্ঠে উনি বললেন,,
—-দাঁড়া খাওয়াচ্ছি তোর হাওয়া!! বলে এদিক ওদিক কিজানি খুঁজতে লাগলেন!

আমি উঁকি দিয়ে দেখতেই আমার চোখ কপালে উনি লাঠি হাতে নিয়ে আসচ্ছেন।।আমি আর এক মুহুর্ত সময় নষ্ট না করে দৌড়ে রুমে চলে গেলাম।। দরজা লাগিয়ে দিলাম।। আল্লাহ বাঁচাইছে নাহলে আমার কপালে শনি ছিল।। বুঝি না এই বেটার কটা তার ছিড়া মাথার আল্লাহ গো আল্লাহ।।সেদিন প্রথম তাকে দেখার পর আমি ক্রাশের উর ক্রাশ খাইছিলাম।।কথায় বলে না ক্রাশ মানে বাশ শেই অবস্থা।।সেদিন যখন আমি নিচে বসে ছিলাম।। তখন আন্টিমা আসেন আর বলেন,,

—আম্মু কিছু মনে করো না ইউসুফ রাগ কন্টোল করতে পারে না।। তাই এটা ওটা ছুড়াছুড়ি করে।।
আমি হেসে মাথা নাড়ালাম।।

তখনি নানু মা চলে আসলেন।।আমরা নানা রকমের কথা বলছি।।তখনি একটি ছেলে এসে নানুমা সালাম করে কথা বলতে লাগে।।
ছেলেটিকে দেখে এক দফা ক্রাশ খেয়ে বসি।।তিনি নানুমার সাথে কথা বলে যাচ্ছেন আর আমি এদিকে তাকে গিলে খাচ্ছি।।সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ করছিল উনার ঠোঁটের উপর লাল তিল।। তার সাথে উনার চোখ কি বলবো,,বিড়ালের চোখের মনির মতো উনার চোখের মনি।।আমি পুরা ফিদা হয়ে যাচ্ছি।।তখনি তার সাথে আমার চোখাচোখি হয়ে যায়।।আর উনি হেসে দেন।।আর আমাকে উদ্দেশ করে বলতে লাগেন,,

—-দাদু এইটা কুহু না?

—-হে রে দাদু ভাই।।এবার ইন্টার দিল।।

—-বাহ ভালই বড় হয়ে গেছিস।।এখনতো বিয়ে দিতে হবে তোকে।।রহস্যময় হাসি দিয়ে।।

আমি উনার কথা শুনে অবাক হয়ে গেলাম।।এইটা কেমন কথা।।উনি আমাকে আজ প্রথম দেখলেন।।আর ভাল মন্দ না জিগাসা করে সোজা আমার বিয়ের কথা নিয়ে বসলেন।।এই লোকের নির্ঘাত সমস্যা আছে মাথায়।। আমি কিছু বললাম না মাথা নত করে রাখলাম।।
তার সাথে কথা বলার মুড নাই হুহ।।

এদিকে ইউসুফ যখন নিচে নামছিল।।তখনি একটি পিচ্চি মেয়েকে দেখে চোখ আটকে যায় সেখানে।বুকের বাপাশে ধক ধক শব্দ করতে লাগলো।।নিজেকে সামলে নিচে এসে তার দাদুর সাথে কথা বলতে লাগে।। আর আড়চোখে বার বার মেয়েটিকে দেখতে লাগে।।মেয়েটি যে তার দিকেই তাকিয়ে আছে বুঝতেই পারছে।।

সেদিনের মতো দিনটি শেষ হয়ে যায়।।

সকালে,,?
—-ঠাসস ঠাসস ঠাসস
বাহিরে গুলির আওয়াজে ধড়ফড়িয়ে উঠে বসি।।
ছোট থেকেই জোরে কোন আওয়াজ হলে আমি সহ্য করতে পারিনা।। দৌড়ে নিচে গিয়ে দেখি।।ইউসুফ ভাইয়া হওয়ায় ফায়ারিং করছেন।।আর তার সামনে কতো গুলো কালো পোশাক পরিহিত লোক দাড়িয়ে আছে।।তাদের মাঝে কিছু লেডিস ও আছে।।সব কটাকে বিদেশি মনে হচ্ছে।।আমি সেদিকে যেতে নিতেই আন্টি মা এসে আমাকে বাঁধা দেন আর বলতে লাগেন,,
—-আম্মু ওদিক যাস না ভাইয়া কাজ করছে।।
আমি কৌতুহলী হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম,,,
—-আন্টিমা ভাইয়া গুলি কেন করছেন??
আন্টি কিছু না বলে বলতে লাগেন,,
—-যাও আম্মু রেডি হয়ে নেও।।আমরা আজ ঘুড়তে যাবো।।
আমি বুঝতে পারলাম আন্টিমা আমাকে বলতে ইচ্ছুক না।।তাই আর কিছু জিগাসা করলাম না।।

?
রেডি হয়ে বসে আছি।।
আন্টি মার আর্জেন্ট কাজ পরে যাওয়া তিনি বাহিরে চলে গেলেন।।আর বলে গেলেন ভাইয়া নিয়ে যাবে।।ভাইয়া রেডি হচ্ছেন তাই বসে আছি।।নানুমাও নাকি যাবেন না।।বাট আমার ঘুড়ার খুব শখ।।ভাইয়াও নিচে নেমে আসেন।।তাকে দেখে আজকেউ আবার ক্রাশ খাইলাম।।এতো পুরাই কিউটের ডিব্বা।।ডিব্বা বললে ভুল হবে পুরাই ক্রাশের বালতি।।হিহি।।ব্লেক শার্ট ব্লু জিন্স আর চোখে সান গ্লাস।।চুল গুলো পাভ করে উপরে তোলা।।সব মিলিয়ে কিলার লুকিং।।আমি হা করে তাকিয়ে আছি।। আর উনি আমার সামনে এসে বলতে লাগলেন,,
—-হা করে আছিস কেন? চল।।
কথাটা শুনে অন্য দিকে তাকালাম।।লোকটি এমন কেন বুঝি না।।২ দিনের পরিচয় এমন করে কথা বলে যেন সে আমার কত জম্মের পরিচিত।।

বেড়িয়ে পরলাম ঘুরতে আজ তিনি আমাকে অনেক জায়গায় ঘুড়ালেন।।ঘুড়া শেষে একটি রেস্টুরেন্টে খেতে আসলাম।। উনি আমাকে বসতে বলে ওয়াশরুমে গেলেন।।আমি এদিকে সেলফি তুলছি।।২ দিন জাবৎ ফেসবুকে পিক আপলোড করি না।। তাই পিক তুলছি।।তখনি পরিচত একটি কন্ঠ শুনে সামনে তাকাই।।
—-কিরে কড়কড়ি??তুই এখানে?
আমি সামনে তাকিয়ে দেখি এহসান ভাইয়া,,
—-ভাইয়া তুমি এখানে! বলে ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরলাম।।
—-হুম এখানে আমরা ফার্মগেট শিফট করেছি আজ ১ মাস হলো।।তুই একা নাকি?
—-না ভাইয়া আমি ইউসুফ ভাইয়ার সাথে আসচ্চি।।
—-ওহো! তখনি ভাইয়ার ফোন বেজে উঠে,
—আচ্ছা থাক তাহলে পরে কল করবো কাজ পরেগেছে যেতে হচ্ছে।।ওকে বায়।।বলে আবার আমাকে হালকা জড়িয়ে ধরে চলে গেলেন।।
তখনি আসে ইউসুফ ভাইয়া আসেন আমার হাত ধরে টানতে টানতে রেস্টুরেন্ট থেকে নিচে নেমে আসলেন।।আমি তাকে জিগাসা করেই যাচ্ছি,,
—-কি হইছে ভাইয়া।। এমন করছেন কেন?? হাত ছাড়ুন!হাতে ব্যাথা পাচ্ছি।।
কিন্তু উনি যেন কোনো কথা কানে নিচ্ছেন না আমার।।আমাকে ধাক্কাদিয়ে গাড়িতে বসিয়ে দিলেন।।আর নিজেও পাশে বসে ড্রাইভ করতে লাগলেন।।তাও ফুল স্পিডে গাড়ি চালাতে লাগলেন।। এদিকে ভয়ে আমার গলা শুকিয়ে যাচ্ছে।।কি হচ্ছে উনি এমন কেন করছেন কিছু বুঝতে পারছি না।।আর জিগাসা করলেও কিছু বলছে না।।

চলবে,
(ভুল এুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।।আর আমি না চাইতেও অনেক ভুল হয়ে যায় লিখায়।।আমার ফোনে কিবোর্ড টা ভালো না একটা চাপলে আরেকটা আসে তাই ভুল হয় অনেক তার জন্য আমি সরি।। আর কিছু কথা।।আমার নাম সুরাইয়া সাত্তার ঊর্মি।।apis_indica..এইটা আমার ছদ্মনাম।। দয়া করে আর আমার নাম নিয়ে মন্তব্য না করে আমার স্টোরি সম্পর্ক কিছু বলুন।।)

অস্পষ্টতা – পর্ব : ৯

0

 

#অস্পষ্টতা
পর্ব – ৯

লেখা : শঙ্খিনী

তারিফ যে ঘরে থাকবে বলে ঠিক করেছিল, আমি সেই ঘরে গিয়ে হাজির হই।

নিচু গলায় ওকে বলি, “তারিফ নিজের ঘরে চলো।”
তারিফ তাচ্ছিল্যের ভঙ্গিতে বলল, “আমি নিজের ঘরেই আছি।”
“এটা তো তোমার ঘর না।”
“তাহলে কোনটা আমার ঘর?”
“উফ, তুমি যাবে কিনা বলো!”
“কেন যাবো? তুমিই আমাকে ওই ঘরে থাকতে মানা করেছিলে। মনে নেই?”
“মনে আছে। এখন আমি তোমাকে আবার যেতে বলছি।”
“আমি যাবো না।”
“তুমি না গেলে কিন্তু আমি অন্য ব্যবস্থা নিবো।”
“তোমার যা খুশি তাই করো!”

আমি কোনো কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ গিয়ে তারিফের পাশে শুয়ে পড়লাম। এতে অবশ্য স্যার কোনো আপত্তি করলেন না। সেও অন্য পাশ ফিরে শুয়ে পরলো।

ঘড়িতে তখন রাত বারোটা। আমি জানি তারিফ তখনো ঘুমায়নি। চুপ করে শুয়ে আছে।

তখন আমি তারিফকে জড়িয়ে ধরে বললাম, “আই অ্যাম স্যরি।”
তারিফ কিছুটা হাসি নিয়ে বলল, “কি বললে? শুনতে পাইনি!”
“আবার ঠাট্টা করছো না?”
“সত্যি শুনতে পাইনি। সবসময় তোমার চিৎকার শুনে অভ্যস্ত তো, এত ধীরে বললে শুনতে পেলাম না।”
“আই অ্যাম স্যরি। আই অ্যাম ভেরি স্যরি।।আমি তোমাকে খুব যন্ত্রণা দেই। আমি অনেক খারাপ, অনেক!”
“ইটস ওকে!”
“তোমার ছোট ছোট ভুলগুলোকে বড় করে দেখতে গিয়ে আমি ভুলেই গিয়েছিলাম যে আমি তোমাকে কতটা ভালোবাসি।”
“এখন তো মনে পড়েছে। এতটুকুই যথেষ্ট।”

একটু একটু করে আমাদের মধ্যকার দূরত্ব কমে আসছিল। সম্পর্কে আবার আগের মাধুর্য দেখতে শুরু করলাম আমরা। জীবনটা ঠিক এই জায়গায় থেকে গেলেও হতো। কিন্তু জীবন যে চলমান, তাকে তো চলতেই হবে নিজ গতিতে।

এরই মধ্যে একদিন আমাদের বাসায় আবার এলেন মালা ভাবী। কিন্তু বাসায় প্রবেশের পর থেকেই তার মুখটা গম্ভীর।

আমি শান্ত গলায় তাকে বললাম, “আপনার কিছু হয়েছে ভাবী? মন খারাপ?”
তিনি গম্ভীর গলায় বললেন, “না, মন খারাপ না। মেজাজ খারাপ।”
“মেজাজ খারাপ? কার উপর?”
“তোমার উপর!”
“আমি আবার কি করলাম?”
“কালকে ফেইসবুকে দেখলাম, তারিফ ওর বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছে। ওই বন্ধুদের তুমি চেনো?”
“চিনি। হাসান আর আবেদ ভাই”
“আবার ভাই বাঁধিয়েছ?”
“বাঁধবো না কেন? ওনারা তো তারিফের ছোট বেলার বন্ধু।”
“ওরা দুজনেই যে আনম্যারিড এটা জানো?”
“জানবো না কেন? জানি।”
“এটা জেনেও যে তুমি তারিফকে ওদের সাথে মিশতে দাও, এটা দেখে আমার মেজাজ খারাপ।”
“ওমা, মিশতে না দেওয়ার কি আছে? তাছাড়া তারা তো তারিফের খুব ভালো বন্ধু। কত বছরের বন্ধুত্ব তাদের।”
“তাতে কি? তুমি জানো এসব ছেলেরা নেশা-টেশা করে? দেখবা কোন দিন, তারিফকেও ওই লাইনে নিয়ে যাবে।”
“না না ভাবী, তারা সিগারেট পর্যন্ত খায় না। তারিফই তো বরং মাঝে মাঝে সিগারেট খায়।”
“আচ্ছা, মানলাম ওরা নেশা করে না। কিন্তু মনে রেখো, ওই দুইজন কিন্তু সংসারী না। উশৃঙ্খল জীবন যাপন করলেই করতে পারে।”
“মানে?”
“এইসব ছেলেদের ওইসব জায়গায় আশা যাওয়া থাকে। বুঝছো তো, বুঝছো না?”
আমি হতভম্ব হয়ে বললাম, “জি।”
“সৎসঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎসঙ্গে সর্বনাশ। কথাটা মনে রেখো। এই সঙ্গদোষই যথেষ্ট একটা ছেলেকে নষ্ট করার জন্যে।”
“তাহলে আমি এখন কী করবো?”
“মিশতে দিবা না ওদের সাথে!”
“তারিফ তো আমার কথা শুনবে না।”
“শুনবে না মানে? শুনতে হবে!”

এর কিছুদিন পর, তারিফ অফিসে যাচ্ছিল। আমি রান্নাঘরে কাজ করছিলাম।

যাওয়ার আগে সে রান্নাঘরে এসে আমাকে বলল, “আশফা গেলাম। আর আজকে কিন্তু ফিরতে দেরি হবে।”
আমি শীতল গলায় বললাম, “কেন? অফিসের পর কোথাও যাবে?”
“হুঁ, হাসানরা আসবে। ওদের সাথে দেখা করতে যাবো।”
“তারিফ শোনো!”
“কি?”
“তুমি তোমার বন্ধুদের সাথে আর দেখা করবে না।”
“ইউ মাস্ট বি কিডিং!”
“নো, আই অ্যাম নট। তুমি আড্ডায় নামে কোথায় কোথায় যাও বলোতো!”
“সকাল সকাল কি পাগলামি শুরু করলে তুমি? তুমি খুব ভালো করে জানো আমি ওদের সাথে কোথায় কোথায় বসে আড্ডা দেই।”
“তাহলে যেটা জানি না সেটা বলো! আমিও ভাবি, অফিসে চাকরি দেওয়ার জন্য এত সুন্দরী সুন্দরী মেয়েদের খোঁজ তুমি কোথা থেকে পাও! এখন বুঝলাম। তোমার ওই বন্ধুগুলো ওদের খোঁজ দেয় তোমাকে।”
“আচ্ছা এই ফালতু কথাগুলো কি কেউ তোমাকে শিখিয়ে দেয় না-কি তুমি নিজেই নিজের মনে এগুলোকে বানাও একটু বলবে?”
“তোমার সঙ্গে ঠাট্টা করার মুডে আমি নেই। আমি বলে দিয়েছিলাম তুমি যাবে না মানে যাবে না।”

তারিফ বেশ কিছু সময় চুপ করে রইলো। তীব্র রাগ দেখতে পাচ্ছিলাম ওর চোখে মুখে।

এক পর্যায়ে নীরবতা ভঙ্গ করে কঠিন গলায় বলল, “লিসেন টু মি ভেরি কেয়ারফুলি আশফা, ইউ হ্যাভ নো রাইটস টু কন্ট্রোল ম্যাই লাইফ।”
আমিও রাগী গলায় বললাম, “আই হ্যাভ হান্ড্রেড পার্সেন্ট রাইটস টু কন্ট্রোল ইউ অ্যান্ড ইয়োর লাইফ!”
“আমি তোমাকে অনেক সহ্য করেছি, আমার পক্ষে আর তোমাকে সহ্য করা সম্ভব না।”
“ও তাই না? তুমি আমাকে সহ্য করেছ না আমি তোমাকে সহ্য করেছি? আমার কোন কথাটা শুনেছ তুমি? আমি বিজনেস ট্রিপে যেতে মানা করেছি কিন্তু তুমি তো ঠিকই গিয়েছ। আমি সিগারেট খেতে মানা করেছি কিন্তু তুমি সিগারেট খেয়েই যাচ্ছ!”
“তোমার কোনো কথাই যখন শুনিনি তখন আজকেও শুনবো না।”
“তুমি তাহলে তোমার লম্পট বন্ধুদের সাথে দেখা করবেই?”
“কি বললে তুমি? না, না কি বললে? আরেকবার বলো তো!”
“আমি কিছুই বলছি না। যাও, তোমার লম্পট বন্ধুদের কাছে আর নিজেও লম্পট হয়ে ফেরো।”
“আজকের দিনটা তুমি সারা জীবন মনে রাখবে আশফা!”

বলেই হনহন করে হেঁটে চলে গেল তারিফ। আমার সারাটা দিন খুবই অস্থির ভাবে কাটলো। কোনো কিছুই ভালো লাগছিলো না সেদিন।

রাত তখন প্রায় এগারটা। তারিফ সাধারনত সাতটার মধ্যে বাসায় চলে আসে। বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করলে কমপক্ষে নয়টা। কিন্তু সেদিন ওকে দেরি করতে আমার মেজাজ করো খারাপ হয়ে গেল।

আমি অনবরত তাকে ফোন করছি, কিন্তু বারবারই কেটে দিচ্ছে। শেষ পর্যন্ত আমি মায়ের ঘরে গেলাম।

মা চিন্তায় অস্থির হয়ে আমাকে বলল, “তারিফ এসেছে?”
“না। আমার ফোনও কেটে দিচ্ছে।”
“এখন কি করি বল তো!”
“তুমি ওকে একটা ফোন দাও। স্পিকার দিয়ে ফোন দাও! আমি নিজ কানে শুনতে চাই, কাজের নামে ও কী কী করে বেড়াচ্ছে।”

মা আমার কথাটা মতো স্পিকারে রেখে ওকে ফোন করলো। একবারেই সে মায়ের ফোন ধরলো।

মা কাঁপা গলায় বলল, “হ্যালো বাবা তারিফ, কোথায় তুই? বাসায় আসছিস না কেন এখনো?”
তারিফ ওপাশ থেকে শীতল গলায় বলল, “আমি আর বাসায় ফিরবো না মা।”
“ফিরবি না মানে? কোথায় তুই?”
“আমাদের গুলশানের বাসায়।”
“ওখানে গিয়েছিস কেন?”
“কারন আমি একটু শান্তি চাই, ভালোভাবে বাঁচতে চাই। এখন রাখলাম, পড়ে কথা হবে।”

তারিফের কথাগুলো শুনে আমার কান টান গরম হয়ে গেল।

চিৎকার করে বললাম, “দেখলে মা, দেখলে তোমার ছেলের কান্ড! আমার সঙ্গে থাকলে নাকি তার শান্তি ভঙ্গ হয়। ও থাক! ও ওখানেই থাক! ও কি ভেবেছে আমি ওকে আনতে যাবো? কোনোদিনও না!”

(চলবে)

অস্পষ্টতা – পর্ব : ৮

0

#অস্পষ্টতা
পর্ব – ৮

লেখা : শঙ্খিনী

এমন একটা সময়ে আমার জীবনে এলো মালা ভাবী। তিনি তারিফের কোনো এক চাচাতো ভাইয়ের স্ত্রী। আমাদের বিয়ের পরপরই পারিবারিক কোনো এক বিষয় নিয়ে মায়ের সঙ্গে ছিল মান অভিমান। কিন্তু তখন আর সেটা ছিলো না।

মালা ভাবী প্রায় প্রতিদিনই আমাদের বাসায় আসতেন। অল্প সময়ের মধ্যেই তার সঙ্গে আমার ভাব জমে যায়। খুব ভালো বন্ধু মনে করেছিলাম তাকে।

সেদিন তিনি আমাদের বাসায় এসে, আমার ঘরে গিয়ে বসলেন। আমি চা বানিয়ে নিয়ে গেলাম তার জন্যে।

চায়ের কাপ বাড়িয়ে দিয়ে বললাম, “ভাবী আপনার চা।”
তিনি চায়ের কাপ আমার হাত থেকে নিতে নিতে বললেন, “থ্যাংক ইউ।”
“ইউ আর ওয়েলকাম।”
“জামাই কই তোমার?”
“আর কোথায় থাকবে? অফিসে।”
“তোমার আসিফ ভাই গতকাল গিয়েছিল, তারিফের অফিসে।”
“তাই?”
“হুঁ।‌ তারিফকে দেখে আসলো, তার নতুন পিয়েসকেও দেখলো।”
“ও, নতুন পিয়েস পেয়েও গেছে? আমি গত সপ্তাহে শুনছিলাম যে, ওর পিয়েস চাকরি ছেড়ে দিয়েছে।”
“আশফা? তারিফের অফিসে যে নতুন পিয়েস জয়েন করেছে, এটা তুমি আমার মুখ থেকে প্রথম শুনলা?”
“হুঁ!”
“এতটা কেয়ারলেস হলে কি করে হয় বলো তো? তোমাদের বিয়ের তো প্রায় দেড় হতে চলল। এখন এইসব বিষয় নিয়ে একটু সতর্ক না থাকলে কি চলে?”
“কোন বিষয়ে ভাবী?”
“তোমার হাসবেন্ডের অফিসে একজন সুন্দরী তরুণী জয়েন করেছে, তাও আবার তার পিয়েস হিসেবে। ব্যাপারটা কিন্তু সহজভাবে নেওয়ার মতো না।”
“কেন? আপনার এমনটা মনে হয় কেন?”
“তুমিই দেখো, এতদিন ওর পিয়েস ছিল একটা ছেলে। এখন হয়তো তারিফের কাছে তুমি পুরোনো হয়ে গেছো, তাই হয়তো বা তারিফ ওই ছেলেটাকে চাকরি থেকে বাদ দিয়ে একটা মেয়েকে অ্যাপ্রোচ করেছে।”
আমি চুপ করে রইলাম।
“তুমি আজকেই তারিফের সাথে এই বিষয়টা নিয়ে কথা বলবা। দরকার পরলে ওই মেয়ের ফোন নাম্বার নিবা। বুঝছো?”
“কিন্তু ভাবী, এটা কি ঠিক? আপনার কথা গুলো তো শুধুই অ্যাসাম্পশনস। সত্যি নাও হতে পারে। এই বিষয়টা নিয়ে তারিফের সঙ্গে কথা বলা মানে ওকে হ্যারাস করা না?”
“হ্যারাসমেন্ট হলে হবে। তোমার সংসার সবার আগে। সংসারটাকে তো আগে বাঁচাতে হবে না-কি।”

মালা ভাবীর কথা দ্বারা আমি এতটাই প্রভাবিত হয়ে গেয়েছিলাম যে সত্যি সত্যিই এই বিষয় নিয়ে তারিফের সঙ্গে কথা বলতে গিয়েছি। তারিফ তখন বসার ঘরে বসে ল্যাপটপে কাজ করছিল।

আমি ওর পাশে বসে বললাম, “তোমার অফিসে নতুন পিয়েস জয়েন করেছে?”
“হুঁ।”
“আমাকে কিছু বলোনি তো!”
“অফিসে প্রতি মাসেই নতুন কোনো না কোনো স্টাফ জয়েন করে। সবার কথা কি তোমাকে বলি?”
“না সবার কথা আমাকে বলো না, কিন্তু তোমার এই নতুন পিয়েসের কথা আমাকে বলা উচিত ছিল। আচ্ছা আমি কি এতটাই পুরনো হয়ে গেছি যে তোমাকে এখন সুন্দরী মেয়েদের অফিসে চাকরি দিতে হয়!”
“আশফা? কি যাতা বলছো এসব? পুরনো হওয়ার সাথে পিয়েসের সম্পর্ক কি? তাছাড়া মানুষ কি কখনো পুরনো হয় না-কি?”
“আমি যদি পুরনো না-ই হয়ে থাকি, তাহলে তোমাকে সুন্দরী মেয়েদের চাকরি দিতে হয় কেন?”
“তোমার মত একজন ফেমিনিস্ট মনের মানুষ এই কথা বলছে? ছেলে মেয়ে অনেকেই ইন্টারভিউ দিয়েছে। যার ইন্টারভিউ ভালো হয়েছে তাকেই চাকরি দেওয়া হয়েছে। আর কোনো কারন নেই।”
“আমাকে ভুল-ভাল বুঝিয়ে কোনো লাভ নেই। আমি খুব ভালো করেই বুঝি তোমার আসল উদ্দেশ্য।”
“তোমার যা মনে আসে তাই বুঝে বসে থাকো!”

ক্রমেই বদলে যাচ্ছিলাম। আগের ‘আমি’কে যতই ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছিলাম, পারছিলাম না। তারিফের কাছে হয়ে উঠেছিলাম এক অসহনীয় ব্যাক্তি। আমিও বোধ হয় ওই সময়টাতে এটাই চেয়েছিলাম।

মাঝে মাঝে সিগারেট খাওয়ার অভ্যাস ছিল তারিফের। বিয়ের প্রথম বছরটায় এ নিয়ে আমার কোনো সমস্যা না থাকলেও ওই সময়ে খুব বেশি সমস্যা হতে শুরু করলো।

আমি তারিফের কাছে গিয়ে বললাম, “তারিফ!”
“কি?”
“তুমি আজকে থেকে বাসায় সিগারেট খাবে না।”
“মানে? কেন?”
“কেন, সেটা তোমাকে বলতে হবে?”
“অবশ্যই বলতে হবে।”
“আমার সিগারেটের গন্ধ সহ্য হয় না।”
“তাহলে এতদিন সহ্য হতো কিভাবে?”
“সহ্য করে নিয়েছি এতদিন। কিন্তু এখন আর পারবো না। আমার একটাই কথা, তুমি এখন থেকে আর বাসায় সিগারেট খেতে পারবে না!”

তারিফকে বাসায় সিগারেট খেতে নিষেধ করার পেছনে তেমন কোনো যুক্তিযুক্ত কারন ছিল না আমার। তবুও সে সিগারেট খাওয়া বন্ধ করে দেয়, বাসার শান্তি রক্ষায়। তারিফ বাসার শান্তি রক্ষার চেষ্টা করলেও আমি করিনি।

এই ঘটনার পরদিন, তারিফ অফিসের জন্য তৈরি হচ্ছিল।

আমি ওর কাছে গিয়ে বললাম, “তারিফ শোনো!”
“বলো।”
“তুমি এই কালো শার্টটা পরে অফিসে যাবে না!”
“কি? আশফা তুমি যে দিন দিন পাগল হয়ে যাচ্ছ, এটা কি বুঝতে পারছো?”
“এই, আমাকে মোটেও পাগল বানানোর চেষ্টা করবে না। আমি খুব ভালো করেই জানি এত সেজেগুজে তোমার অফিসে যাওয়ার উদ্দেশ্য কি।”
“আমি নিজেই জানি না, আর উনি জেনে বসে আছেন। আশফা একটা কথা মন দিয়ে শুনে রাখো, তোমার এসব উদ্ভট আদেশ পালন করার মধ্যে আমি নাই। গেলাম আমি!”

একটু একটু করে নরকে পরিণত করছিলাম তারিফের জীবনটাকে। ওর ভালোবাসার মূল্য ভুলে যাচ্ছিলাম আমি। উন্মাদ হয়ে যাচ্ছিলাম।শুধু আমার কাছ থেকে কেন, পৃথিবীর করো কাছ থেকেই অমন খারাপ আচরন ডিজার্ভ করে না তারিফ। এটা তখন বুঝতেই পারিনি, এখন পারছি।

এই অশান্তির মধ্যেই তারিফের এক বিজনেস ট্রিপ ঠিক হলো, কক্সবাজারে। এই বিজনেস ট্রিপ নিয়েও শুরু করি আমি অশান্তি।

তারিফকে কঠিন গলায় বলি, “তারিফ শোনো, তুমি এই বিজনেস ট্রিপে যেতে পারবে না।”
“আজকাল তোমার কথাগুলো প্রায় বিষের সমতুল্য।”
“ঠাট্টা করবে না! আমার ঠাট্টা একদমই পছন্দ না।”
“তোমার কি মনে হয়, আমার অনেক ঠাট্টা পছন্দ? আমারও ঠাট্টা পছন্দ না। এইযে তুমি এইমাত্র বললে আমি ট্রিপে যেতে পারবো না, এটা ঠাট্টা ছাড়া আর কী?”
“আই অ্যাম সিরিয়াস, তুমি যাবে না।”
“আমার প্রত্যেকটা কাজেই তো তোমার আপত্তি থাকে, তা এই কাজে আপত্তি কেন?”
“তুমি ওখানে গিয়ে কাজের নামে কী কী করবে খুব ভালো করে জানা আছে আমার!”
“আচ্ছা, আগে আমি কখনো ট্রিপে যাইনি? কই তখন তো তোমার এসব আবোল তাবোল জানা ছিল না!”
“কারন তখন আমি বোকা ছিলাম।”
তারিফ হাসতে হাসতে বলল, “তখন তুমি বোকা ছিলে না আশফা, এখন তুমি বোকা।”
“আমাকে জ্ঞান দিবে না! খবরদার আমাকে জ্ঞান দিবে না তুমি!”
“ঠিক আছে, জ্ঞান দিচ্ছি না। কিন্তু একদিন তোমার নিজেরই জ্ঞান হবে। আর ট্রিপে কিন্তু আমি যাবোই। তোমার যা খুশি করতে পারো।”
“তাহলে তো আমি যা খুশি তা-ই করবো। তুমি যদি সত্যি সত্যিই যাও তাহলে ফিরে এসে আমার রুমে তুমি থাকতে পারবে না!”
“তোমার রুমে থাকার কোনো ইচ্ছাও আমার নেই। এবাড়িতে অনেক রুম আছে, সেগুলোর একটাকেই না হয় আমার ঘর বানিয়ে নিবো।”

তারিফ বিজনেস ট্রিপে গেলো এবং ফিরে এসে সত্যি সত্যিই অন্য ঘরে থাকতে শুরু করলো। ব্যাপারটা আমার মোটেও সহ্য হলো না। রাগের মাথায় একটা কথা বলেছি বলে কি সত্যি সত্যি তা করতে হবে না-কি?

(চলবে)

অস্পষ্টতা – পর্ব : ৭

0

#অস্পষ্টতা
পর্ব – ৭

লেখা : শঙ্খিনী

আমার জীবনের প্রথম অধ্যায়ের কথা বলছিলাম না! জীবনের প্রথম অধ্যায়টা যেমন সুখময় তেমনি বিপন্ন, বিষন্ন, বিষাদময় ছিল আমার জীবনের দ্বিতীয় অধ্যায়টা। সেই অধ্যায় শুরু হয় দুই বছর আগে।

আমি সেদিন নিজ হাতে রান্না করে নিয়ে গেছি তারিফের জন্য, তার অফিসে।

অফিসে পৌঁছে রিসেপশনে জিজ্ঞেস করলাম, “তারিফ কোথায়?”
রিসেপশনিস্ট বলল, “স্যার তো মিটিংয়ে।”
“মিটিং কি ওর কেবিনেই হচ্ছে?
“জি। আমি কি স্যারকে বলবো আপনি এসেছেন?”
“না, না বলতে হবে না। আমি ওয়েট করছি।”

আমি গিয়ে বসলাম রিসেপশনের এক চেয়ারে। আমার চেয়ার থেকে কিছুটা দূরেই দাঁড়িয়ে ছিল মাথায় টাক পরা এক লোক। সম্ভবত হবে আমার মামার বয়সী। লোকটার পরনে পাঞ্জাবি, চোখে সোনালী চশমা। এ ধরনের লোকদের পোশাক-আশাকই বলে দেয়, যে এরা ধনী।

লোকটা আমার দিকে এগিয়ে এসে আহ্লাদী কণ্ঠে বলল, “এক্সকিউজ মী মিস!”

একটা মেয়ে পুরুষ মানুষের কথা বলার ভঙ্গিতেই তার উদ্দেশ্য টের পেয়ে যায়। আমিও টের পেলাম, লোকটার উদ্দেশ্য মোটেও সুবিধার নয়।

তাই কঠিন গলায় বললাম, “জি?”
“ইফ ইউ ডোন্ট মাইন্ড, আমি কি আপনার পরিচয় জানতে পারি?”
আমি কণ্ঠস্বর আরেকটু কঠিন করে বললাম, “আমি এই কোম্পানির মালিক। আপনার কোনো সমস্যা?”
“ও, আপনি তাহলে মিসেস চৌধুরী!”
“জি না। আমি মিসেস তারিফ চৌধুরী।”
“আপনাদের দুজনের মধ্যকার সম্পর্ক কেমন? ভালো?”
“এক্সকিউজ মি!”
“না মানে, তারিফ সাহেবের মেজাজ সম্পর্কে খুব ভালো করেই জানি আমি। আপনি নিশ্চয়ই অনেক নিঃসঙ্গ। একা একা দিন কিভাবে কাটে আপনার?”
এই কথা শুনে আমি রাগে চিৎকার করে বললাম, “সাহস কি করে হয় আপনার এই প্রশ্ন করার? কি ভাবেন নিজেকে?”
“আমি আসলে সেটা বোঝাতে চাইনি…”
“শাট উইর মাউথ অফ! গেট আউট, গেট আউট অফ হিয়ার। আই শেইড, গেট আউট!”

রাগে গজগজ করতে করতে হেঁটে চলে যায় সে। কথাগুলো বোধ হয় লোকটার গায়ে লাগে। গায়ে লাগুগ অথবা টাক পরা মাথায় লাগুক, তাতে আমার কি!

আমি রেগে গেলে সাধারনত চুপ করে থাকি। কিন্তু সাংঘাতিক রেগে গেলে চেচামেচি শুরু করে দেই। লোকটা আমাকে সাংঘাতিক রাগিয়ে দিয়েছে।

তারিফের মিটিং শেষ হলো আরও মিনিট দশেক বাদে। এই সময়ের মধ্যে নিজেকে সামলে নিলাম। আমার রাগের প্রভাব ছেলেটার ওপর কিছুতেই পরা যাবে না।

স্যার তো আমাকে তার কেবিনে দেখে মহাখুশি।

তারিফ আনন্দিত গলায় বলল, “তুমি? এইসময়?”
“কেন, ডিস্টার্ব করলাম না-কি?”
“কি যে বলো না! কখন আসলে?”
“এইতো, কিছুক্ষণ হলো।”
“তাই? আমাকে কেউ বলেনি কেন?”
“আমিই মানা করেছি। তুমি মিটিংয়ে ছিলে না! আচ্ছা শোনো, আজকে তোমার জন্য নিজ হাতে রান্না করে এনেছি। খেয়ে বলবে কিন্তু!”
“ইশ! তুমি না থাকলে যে আমার কি হতো!”
“সেই চিন্তা করতে হবে না। আমি তো আর কোথাও পালিয়ে যাচ্ছি না! আচ্ছা, এখন আমি গেলাম। মা বাসায় একা।”
“মাত্র বললে কোথাও পালিয়ে যাচ্ছি না। আর নিজেই যাওয়ার কথা বলছো!”
আমি হেসে বললাম, “পাগলামি করো না তো তারিফ! ফোন দিও আর তাড়াতাড়ি ফিরবে কিন্তু!”
“যথাআজ্ঞা ম্যাডাম।”

অফিস থেকে বাসায় ফিরে এলাম কিন্তু তারিফের ফোন আসলো না। নিশ্চয়ই চার্জ শেষ হয়ে গেছে।

সন্ধ্যায় সময়মতোই বাসায় ফিরে এলো তারিফ। তাকে দেখে বেশ ক্লান্ত মনে হচ্ছিল। যেন বড়সর এক ঝড় বয়ে গেছে তার ওপর দিয়ে।

আমি দরজা খুলতে খুলতে বললাম, “কি ব্যাপার তারিফ? তোমার ফোন বন্ধ ছিল কেন?”
তারিফ হতাশভঙ্গীতে বলল, “এমনি।”
“এমনি? তোমার ফোন তো কখনো এমনি এমনি বন্ধ থাকে না।”
“আজ ছিল।”
“কি হয়েছে তোমার বলো তো! টায়ার্ড?”
“তাহলে?”
“কিছু না।”
“আচ্ছা, ফ্রেশ হয়ে আসো। খুব ক্ষুধা লেগেছে!”
“আমি খেয়ে এসেছি।”

তারিফ আমাকে অভয়েড করে ঘুমাতে চলে গেলো। আজ দুপুরেও যে মানুষটাকে এত হাশিখুশি দেখলাম, তার হঠাৎ কি হলো!

সকালে ঘুম থেকে উঠেও দেখি একই অবস্থা। তারিফের মন খারাপ না মেজাজ খারাপ ঠিক বোঝা যাচ্ছিল না। নাস্তা করে সে সোজা চলে গেল ঘরে। আমিও কিছুক্ষণ পর ঘরে গিয়ে দেখি তারিফ ল্যাপটপ নিয়ে বসেছে।

আমি পরিষ্কার গলায় বললাম, “অফিসে  যাবেনা?”
“না।”
“কেন?”
“যেতে ইচ্ছা করছে না।”
“তারিফ তোমার কি হয়েছে বলো তো! আমি কালকে থেকে লক্ষ করছি তুমি অন্যরকম বিহেভ করছো! কি হয়েছে।”
“কিছু হয়নি, হলে জানতেই পারতে।”
“জানতে পারিনি বলেই তো জানতে চাচ্ছি!”

দুদিন এভাবেই কেটে গেলো। ওই দুদিনে তারিফ প্রয়োজন ছাড়া আমার সঙ্গে একটা কথাও বলেনি। কোনো কারন ছাড়া আমার তারিফ কেন এমন করবে!

সেদিন দুপুরে তারিফ ডাইনিং টেবিলের একটা চেয়ারে বসে ছিল। আমাকে গিয়ে ওর মুখোমুখি থাকা চেয়ারটায় বসলাম। আমাকে বসতে দেখে তারিফ উঠে চলে যাচ্ছিল।

আমি গম্ভীর গলায় বললাম, “তারিফ উঠবে না! বসো।”
তারিফ সাথে সাথে বাধ্য ছেলের মতো বসে পরলো।
আমি আবার বললাম, “কি হয়েছে তোমার? এরকম কেন করছো? অফিসে কোনো সমস্যা হয়েছে?”
“তুমি খুব ভালো করেই জানো কি হয়েছে।”
“না আমি জানি না।”
“তুমি জানো না?”
“না, বললাম তো!”
“সেদিন আমার অফিসে কি করেছিলে তুমি?”
“তুমি জানো আমি কি করেছিলাম।”
“তাহলে যেটা জানি না সেটা বলো!”
“তারিফ কথা প্যাচাচ্ছো কেন? কি বলবে পরিষ্কার করে বলো প্লিজ।”
“পরিষ্কার করেই বলছি! আমার তখন মিটিং চলছিল, তুমি বাইরে আমার জন্য অপেক্ষা করছিলে। তখন একটা লোকের সঙ্গে তোমার কথা হয়। মনে আছে?”
“মাথায় টাক পরা লোকটা?”
“হ্যাঁ।”
আমি নির্বিকার ভঙ্গিতে বললাম, “মনে আছে। এও মনে আছে যে লোকটার সঙ্গে আমি স্বাভাবিক গলায় কোনো কথা বলিনি, চিৎকার করে কথা বলেছি।”
“লোকটা কে তুমি জানো?”
“জানি না, কিন্তু এখন জানতে চাচ্ছি।”
“লোকটা আমাদের কোম্পানি ক্লাইন্ট।”
“সে যেই হোক না কেন, আমার সাথে খারাপ ইন্টেনশন নিয়ে কথা বলতে এসেছিল। তাই আমি তার সঙ্গে চেঁচামেচি করেছি।”
“খারাপ ইন্টেনশন? আপনার সাথে আপনার হাসবেন্ডের সম্পর্ক কেমন – এটা জিজ্ঞেস করা কি খুব খারাপ ইন্টেনশনের লক্ষণ?”
“তুমি সবসময় কথার পরিণাম নিয়ে ভাবো, অথচ এটুকু বুঝতে পারছো না যে এই প্রশ্নটা করার অর্থ কি?”
“না পারছি না। বুঝিয়ে বলো!”
“আমি কিচ্ছু বুঝিয়ে বলতে চাই না তোমাকে! একটা লোক তোমার ওয়াইফের সাথে ফ্লার্ট করার চেষ্টা করেছে, আর তুমি সেই লোকটার পক্ষ নিয়ে কথা বলছো? আই ক্যান্ট বিলিভ দিস!”
“আই অলসো ক্যান্ট বিলিভ যে এত ছোট একটা বিষয় নিয়ে আমরা তর্ক করছি!”
“তর্ক করার মতো পরিস্থিতি তুমিই তৈরি করেছ তারিফ!”
“তৈরি করবো না কেন? তুমি জানো, লোকটার সাথে এবছরের সবথেকে বড় ডিল হয়েছিল আমাদের। তোমার কারনে, শুধুমাত্র তোমার কারনে সেটা ক্যানসেল হয়ে গেল।”
“আই অ্যাম স্যরি, আমি যদি তোমার বিজনেসে কোনো ক্ষতি করে থাকি। কিন্তু আমার সাথে বাজে ইন্টেনশন নিয়ে কথা বলতে আসলে, আমি কিন্তু কখনোই ছেড়ে দিবো না।”
“প্রতিটা ক্ষেত্রে নিজের ভেতরে থাকা ফেমিনিস্টকে বাইরে আনতে হয় কেন তোমার?”
“কারন, আমার ভেতরে থাকা ফেমিনিস্টকে বাইরে না আনা পর্যন্ত কোনো ক্ষেত্র থেকে যথাযথ সম্মান আমি পাই না!”

এই ঘটনায় ঠিক কে ছিল আর ভুল কে ছিল? মাঝে মাঝে মনে হয় আমি ভুল ছিলাম। আবার মনে হয় হয়তো তারিফই ভুল ছিলো।  প্রকৃতপক্ষে কিন্তু আমরা দুজনেই নিজ নিজ পয়েন্ট অফ ভিউ থেকে ঠিক ছিলাম।

এই ঘটনা ভুলতে আমাদের সপ্তাহখানেক সময় লাগলো। সপ্তাহখানেক পর সবকিছু আগের মতো হলেও আমাদের মাঝে তৈরি হলো এক সূক্ষ্ম দূরত্ব। সেই দূরত্ব দেখা যায় না, অনুভব করা যায়।

(চলবে)

অস্পষ্টতা – পর্ব : ৬

0

#অস্পষ্টতা
পর্ব – ৬

লেখা : শঙ্খিনী

মা বাসায় নেই, বেড়াতে গেছে গ্রামের বাড়িতে। সম্ভবত আমাদের আরেকটু বেশি সময় একা থাকার সুযোগ করে দিতে চেয়েছিল।

তারিফ তো বাসায় এসেই ঘুমিয়ে পরলো। খুব ক্লান্ত হয়ে পরেছিল বেচারা।

সেদিন সন্ধ্যার পর বাইরে হচ্ছিল ঝুম বৃষ্টি। বৃষ্টি হলেই আমার ঘরে থাকতে ইচ্ছে করে না। ইচ্ছে করে বৃষ্টিতে ভিজতে। কিন্তু একা একা ভিজে কোনো মজা আছে না-কি? ঠিক করলাম, তারিফকে সাথে নিয়ে বৃষ্টিতে ভিজবো। বুঝতে পারছিলাম, ওকে সাথে নিয়ে বৃষ্টিতে ভিজবো ঠিক করলেই করা সম্ভব নয়। তারিফ তখন বসে ছিলো বসার ঘরে।

আমি ছোট ছোট পা ফেলে ওর কাছে গিয়ে বললাম, “একটা কথা বলি?”
তারিফ বলল, “বলো।”
“দেখো না, বাইরে কি সুন্দর বৃষ্টি হচ্ছে!”
“দেখেছি।”
“আমার না খুব বৃষ্টিতে ভিজতে ইচ্ছা করছে। তুমিও আমার সাথে ভিজবে প্লিজ!”
“পাগল হয়ে গেলে না-কি তুমি?”
“পাগল হতে যাবো কেন?”
“না, তোমার কথাবার্তা শুনে তো তাই মনে হচ্ছে। এই ডেঙ্গুর সিজনে কেউ বৃষ্টিতে ভিজে না-কি? আমি তো ভিজবোই না, তুমিও ভিজবে না খবরদার!”
“পাগল আমি না পাগল তুমি? বৃষ্টিতে ভেজার সাথে ডেঙ্গুর কি সম্পর্ক? ডেঙ্গু তো হয় এসিড মশা কামড়ালে!”
“ম্যাডাম আশফা, মনে আছে বলেছিলাম – একটা কথা বলার আগে সেটা বলার পরিণাম কি হবে ভাবা উচিত!”
“মনে আছে। খুব ভালো মনে আছে।”
“তেমনি, একটা কাজ করার আগেও সেটা করার পরিণাম নিয়ে ভাবতে হয়। এখন যদি তুমি বৃষ্টিতে ভিজে অসুস্থ হয়ে যাও, একশ পাঁচ জ্বর আসে তাহলে কি হবে? কোন হসপিটালে নিয়ে যাবো তোমাকে? সব হসপিটাল ডেঙ্গু রোগীতে ভরা! কেউ তোমাকে ভর্তি নিবে না।”
আমি কঠিন গলায় বললাম, “তোমার সাথে কথা বলতে আসাটাই আমার ভুল ছিল। গেলাম আমি!”
“ঠিকাছে যাও। বৃষ্টিতে ভিজবে না কিন্তু।”

তারিফের নিষেধে কর্ণপাত করার প্রশ্নই ওঠে না। আমি সোজা চলে গেলাম ছাদে। মন খুলে বৃষ্টিতে ভিজলাম। ছোটবেলায় আমি বৃষ্টিতে ভিজতাম আমার আপার সঙ্গে। আপা বলত, “বৃষ্টির জল মনকেও শুদ্ধ করে দেয়।”

হঠাৎ কিছুক্ষণ পর ছাদের দরজার সামনে তারিফ এসে দাঁড়াল।

তারিফ রাগী গলায় বলল, “আশফা!”
আমি চুপ করে রইলাম।
তারিফ আবার বলল, “এই আশফা!”
“কি?”
“আমার কথা তাহলে শুনলে না তাহলে! বারবার করে মানা করে দিলাম। কিন্তু না, আমার কথার তো কোনো দামই নেই।”
“যুক্তিযুক্ত কথা হলে ঠিকই দাম থাকতো!”
“যুক্তিযুক্ত কথাই ছিল। এখন তুমি ভিতরে আসো!”
“মোটেও না!”
“আশফা আসো!”
“বললাম তো না।”

ছেলেটা অমনি ছাদে এসে আমাকে কোলে তুলে ভিতরে নিয়ে গেলো। একটু শান্তিতে বৃষ্টিতে ভিজতেও দিবে না। পাগল একটা ছেলে!

পাগল হলেও তারিফের কথাই ঠিক হলো। রাতে আমার মাথা ভার হয়ে এলো, প্রচন্ড মাথাব্যাথা। মাথাব্যাথা এতটাই তীব্র যে ঘুমাতেও পারছিলাম না, এপাশ ওপাশ করছিলাম।

তারিফ হঠাৎ বলল, “ঘুমাওনি আশফা।”
আমি ইতস্তত করে বললাম, “এইতো, ঘুমাচ্ছি!”
“ঘুম আসছে না?”
“আসছে।”
“তাহলে ঘুমাচ্ছো না কেন?”

এর কোনো উত্তর আমার কাছে নেই। মাথাব্যথার কথাটা তারিফকে বলা যাবে। বললেই বকা খাবো।

তারিফ আবার বলল, “তুমি ঠিক আছো তো আশফা?”
আমি কাঁপা গলায় বললাম, “হ্যাঁ, হ্যাঁ আমি ঠিক আছি।”
তারিফ আমার কপালে হাত রেখে বলল, “জ্বর এসেছে তো! তোমাকে না মানা করলাম বৃষ্টিতে ভিজতে। আমার কোনো কথাই পাত্তা দাও না!”

যেটার ভয় পেয়েছিলাম সেটাই হলো! তারিফ বিছানা থেকে উঠে গিয়ে কি যেন খুঁজতে লাগলো।

আমি বললাম, “আমি খুঁজছো তারিফ?”
“থার্মোমিটার।”
“আরে থার্মোমিটার লাগবে না! তুমি আসো তো। একটু পরেই জ্বর কমে যাবে।”
তারিফ কঠিন গলায় বলল,“তুমি আর কথা বলো না তো!”

তারিফ থার্মোমিটার এনে আমার মুখে দিল। কিছুক্ষণ পর সেটা মুখ থেকে বের করল কত জ্বর তা দেখার জন্য।

আমি বললাম, “জ্বর কত?”
“তোমাকে জানতে হবে না!”
“একশ পাঁচ না তো?”
“আরে না!”
“একশ চার?”
“উফ, তুমি নিজেই দেখে নাও।”

তারিফ আমার হাতে থার্মোমিটার ধরিয়ে দিয়ে উঠে দাঁড়াল। একশ এক জ্বর! এতক্ষণে যে বকা খেতে খেতে আমি ক্লান্ত হয়নি, এইতো অনেক!

স্যার প্রথমে আমাকে ওষুধ খাওয়ালেন। এরপর একটা আইস ব্যাগ এনে আমার কপালে রাখলেন।

তারিফ শান্ত গলায় বলল, “একটু ভালো লাগছে না?”
“হুঁ।”
“দেখলে তো, আমার কথা না শুনলে কি হয়।”
“হুঁ।”

তারিফ একটার পর একটা কথা বলেই যাচ্ছিল। আমি “হুঁ, হুঁ” করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে পরলাম, কে জানে!

সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি আমি তারিফের কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে ছিলাম। আর বেচারা হেলান দিয়ে বসে ঘুমিয়ে পড়েছে।

আমি উঠে গিয়ে জানালার সামনে দাঁড়ালাম। মাথাটা এখন অনেক হালকা লাগছে। জ্বর সেরে যাওয়ার পর যে অনুভূতিটা হয়, সেটা খুবই অদ্ভুত। ভালো লাগে না, আবার খারাপও লাগে না।

হঠাৎ তারিফ এসে পেছন থেকে আমাকে জড়িয়ে ধরলো।

আমি বললাম, “সারারাত একটুও ঘুমাওনি না?”
“তোমার জ্বর কমেছে ভোর বেলায়। ঘুমাই কিভাবে?”
“জ্বর এসেছিল আমার, তোমাকে সারারাত জেগে থাকতে হবে কেন?”
“তোমাকে ওভাবে ফেলে রেখে আমার খুব ঘুম আসতো না?”
“তুমি এমন কেন তারিফ?”
“তোমার জন্য।”
“আমি কি এতটাই স্পেশাল?”
“আমার কাছে তো তুমি পৃথিবীর সবথেকে স্পেশাল মানুষ।”

এই ছিলো আমার জীবনের প্রথম অধ্যায়। আনন্দময়, সুখময় আর পাগলামিতে ঘেরা।
বিয়ের একটা বছর এই আনন্দ-সুখের মধ্য দিয়েই পাড় করে দেই আমরা। এসব ভাবলে এখনো চোখে জল চলে আসে কেন কে জানে!

আমি আর মা কিছুক্ষণ ছাদে থেকে বিকেলের মধ্যেই ঘরে চলে আসি।

ঘরে এসেই অফিসের কাজ নিয়ে বসে পরি। ওয়ার্ক ফ্রম হোম একটা বিশ্রী জিনিস। অফিসের কাজ অফিসে আর বাসার কাজ বাসায় – এটাই আমার নীতি। কিন্তু অফিস আর বাসা দুটোকে মিলিয়ে দিলে ব্যাপারটা মোটেই সহ্যকর হয় না।

রাত প্রায় নয়টার দিকে মা ফোন হাতে নিয়ে ছুটতে ছুটতে এলো আমার ঘরে।

আমি কিছুটা অবাক হয়ে বললাম, “কি হয়েছে মা?”
মা থেমে থেমে বলল, “আশফা মা, তারিফ তোর সাথে কথা বলবে।”
“কি? তারিফ? আমার সাথে কথা বলবে?”
“হ্যাঁ।”

মা আমার হাতে ফোন ধরিয়ে দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। ফোনটা হাতে নিয়ে আমার হাত কাপছে। আমি সাহস করে ফোনটা কানে নিলাম।

কাঁপা স্বরে বললাম, “হ্যালো?”
ওপাশ থেকে আমার খুব পরিচিত গলাটা বলে উঠলো, “হ্যালো, আশফা?”

তারিফের কণ্ঠস্বর এখনো আগের মতোই আছে। প্রথম যেদিন ছেলেটার সাথে ফোনে কথা বলেছিলাম, সেদিনের মতো আজও মনে হচ্ছে এত সুন্দর পুরুষকণ্ঠ পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি নেই।

আমি বললাম, “কেমন আছো তারিফ?”
“হুঁ, ঠিক আছি। আচ্ছা শোনো, তোমরা বাইরে যাও না তো?”
“না।”
“মাকে বাইরে যেতে দিও না। খুব বেশি প্রয়োজন হলে যেন মাস্ক পরে যায়।”
“আচ্ছা।”
“প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো আনতে বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন নেই, অনলাইনে অর্ডার করবা। আর বাসার ভিতরে আনার আগে সানেটাইজ করে নিও।”
“ঠিক আছে।”
“রাখলাম তাহলে।”

তারিফের কথা বলতে খুব কষ্ট হচ্ছিল। কান্নায় গলা জড়িয়ে এসেছিল, তাই ছোট ছোট উত্তর দিয়েছি।

যে তারিফ পৃথিবীর সকল কষ্ট সহ্য করে ফেলতো শুধুমাত্র আমার জন্য, আর যে আমি তারিফের আশেপাশে না থাকলে প্রাণশক্তি হারিয়ে ফেলতাম – সেই আমরা এতটা বদলে গেলাম কেন?

(চলবে)

Psycho_is_back part_1

0

Psycho_is_back
part_1
#apis_indica
বসে বসে চোখ বড় বড় করে টিভি দেখছি আর চিপস খাচ্ছি।।টাইটানিক মুভির কিস করার সিন দেখাচ্ছে।।তখনি কারও আসার শব্দে সাথে সাথে টিভি ওফ করে দি।।নানুমা আসচ্ছে।।
—বুড়ি কি করিস।।এই নে হালুয়া খা।।
আমার মুখের রং পাল্টে গেছে আর মনে মনে ভাবচ্ছি,,,
—নানু মা আর আসার সময় পাই নাই।।
এক চামুচ মুখে নিলাম।। আকুপাকু করছি কখন নানু মা যাবে আর দেখব।।যদি শেষ হয়ে যায়।।তখনই নানু বলল,,
—কিরে বুড়ি কেমন হলো বললি না।।
—ভাল হয়েছে।।
—এভাবে কেন বলছিস।। তার মানে ভাল হয়নি??
এবার আদুরী গলায় নানু মাকে জড়িয়ে বলে উঠি নারে আমার ইয়াং লেডী অনেক মজা হইসে।।
—সত্যি বলে মাথা আর থুতনিতে হাত বুলিয়ে চুমু খায়।।
চলে যায় নানু মা।।
সাথে সাথে টিভি ওন করি।। কিন্তু সিনটি শেষ।।মন খারাপ হলো খু।।টিভি ওফ করে বসে রইলাম।।মন খারাপ করে।। তখনি ফোন আসলো বান্ধবী লিজার।।
—হে বল।।
—মুখ ভার কেন? দেখেছিল??
—দেখবো সেই মুহুর্তে নানু মার আগমন।।পাইলাম আর কই??
—আহ কি মিস টা না করলি।।তোর নানু আর আসার সময় পাইলো না।।
—হুম থাক বাদ দে।।যখন প্রেম করমু তখন চুটিয়ে চুমু খাবো আমার বয়ফ্রেন্ডকে।।হি হি।।
ওই পাশ থেকে কুহুর কথায় লুটু পুটু খাচ্ছে লিজা।।
—এখনো তো একটাকেউ জুটাতে পারলি না আর চুমু।।বলে আবার হাসতে লাগে।।

রাগে রেখে দিলাম ফোন।।আজ পর্যন্ত চুমু কেমনে খায় তাই জানতে পারলাম না।।বালিশে মিখ গুঁজে শুয়ে পরে।।

???

সকাল বেলা,,
—এই বুড়ি উঠতাড়াতড়ি।। আর কত ঘুমাবি।। আমাদের যেতে হবে তো?? নানুমা ঘুম থেকে ডেকে তুলছে আর রুমের মাঝে ঘুড়ে ঘুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কাপড়, বই,বালিশ তুলছে আর বলছে,,
—বুঝি না বুড়ি প্রতিদিন তুই কি এম যুদ্ধ করিস।। রুমের ১২ টা বাজিয়ে রাখিস কেন যে তুই।। হালকা ধাক্কাতে ধা্ক্কতে,,
–বলি কি এবার তোর বিয়ে দিয়ে দেই।।আরমসে বরের ঘরে ঘুমাস।।
বিয়ের কথা শুনে লাফ মেরে উঠে বসি আর খুশিতে গদ গদ করে বলি,,
—সত্যি ইয়াং লেডী।।
নানু মাথায় গাট্টা মেরে বলে,,
—উমম।।দেখ ছেমড়ির শখ কত! বিয়ের কথা শুনেই লাফিয়ে উঠে।।
মন খারাপের ভান করে বলতে লাগে,,
—এমন করলা যাও কথা নাই তোমার সাথে হুহ।।
বলে ওয়াশরুমের দিক পা বাড়ায়।।তখনি নানু মা এসে পিছন দিক বালিস দিয়ে বাড়ি মেরে বলতে লাগে,,
—যা তাড়াতড়ি নটাংকি।। আমাদের দেড়ি হচ্ছে।।
চোখ ছোট ছোট করে বলি,
—কই যামু??
—কই আবার! ঢাকা।। তোর মামা গাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে।।
কিছুটা ভাবার ভঙ্গি করে বলতে লাগি,,
—নামু মা তারা তো দেশে নাই তাইলে আমরা কেন যামু???
—ওহো তকে বলতে ভুলে গেছি।।তোর ছোট মামারা কাল দেশে ফিরেছে।।আর আমাকে কল করে বলছে আমরা যেন তাদের এখানে চলে যাই সকাল সকাল।।
—ওহো আচ্ছা।। বুঝচ্চি।।মামার বাড়ি মধুর হাড়ি খাইতে যামু হি হি।।

চট করে রেডি হতে চলে গেলাম।
রেডিয়ে বের হতেই ফোনটা হাতে নিলাম।যেহেতু খুব সুন্দর লাগছে তাই কত গুলো সেলফি তুলে নিলাম।।তার পর দেখতে লাগলাম।।
—বাহ আমাকে তো খুব সুন্দর লাগচ্ছে,,এই ড্রেসে তো টিক টক করি নি।।তার পর টিকটক অ্যাপস এ ডুকে।।নিউ কোন সং টা ভাইরাল হচ্ছে দেখেতে লালো।।পেয়েও গেলাম।।
“সুন মেরি শেহজাদে
মেহু তেরা শাহজাদা ”
টিক টক করেতেই এডিট করে আপলোড করে দিলাম।।তখনি নানুর ডাক।।তাড়াতাড়ি ব্যাগ পএ নিলাম যা নানুমা গুছিয়ে রেখে গেছে।।নিয়ে দৌড়ে গাড়ির কাছে গেলাম।।
তারপর নানুমা পুরো বাড়ি তালা দিয়ে,,পাশের ফ্লাটের আন্টিকে বলতে চলে গেলেন বাসা দেখার জন্য।।আমি গাড়ির সামনে দাড়িয়ে থাকতে এফবিতে পিক আফ দিতে লাগলাম।।
খুব ভাল লাগছে।।আমার জম্মের আগেই নাকি তারা চলে গেছিলেন।।ফোনে কথা হয়েছে অনেক কখনো দেখা হয়নি আজ দেখবো তাদের ভাবতেই অনেক ভাল লাগা কাজ করছে।।
নানুমা আর আসতে এত দেড়ি হচ্ছে কেন বুঝতে পারছি না।।বোরিং লাগছে।।ফোন টা অন করে টিকটকে ডুকলাম।।।
ওমা আমার নিউ ভিডিও তে এতো লাইকস।। পুরো 2k ক্রস করেছে কিযে খুশিলাগচ্ছে।।সঙ্গে সঙ্গে ssনিলাম একটা আর মাই ডেতে দিয়ে দিলাম।।এখন আমার ফ্রেন্ডস রা দেখবে আর লুচির মতো ফুলবে।।মনের আন্নদে হাসতে লাগলাম।।তখনি নানুমা পিছন থেকে বলতে লাগে,
—কি রে বুড়ি? একা একা হাসচ্ছিস কেন পাগল টাগল হলি নাকি রে?
—না গো নানু মা।।আজ একটু খুশি লাগছে তাই।।
—আচ্ছা চল চল! অনেক দেড়ি হচ্ছে বউ মা অল রেডি ২ বার কল করেছে।।
—হুম চল।।

গাড়িতে উঠে বসলাম।।গাড়ি চলছে আপন গতিতে।।বাহিরের বাতাসে মন টাও ভাল গাছে।।ময়মেনসিংহ থেকে ঢাকা মোহাম্মদপুর যেতে প্রায় ৩ ঘন্টা লাগবে।।ভেবেই অস্থির লাগছে।।তারপর ভাল গাছে।।আমি কখন ঢাকা যাই নি।।ময়মেনসিংহ পুড়োটা টই টই ঘুরে বেড়িয়েছি।।ভার্সিটিতে আর পার্ক এগুলায় যেতে যেতে ফেড আপ হয়েগেছি।।ওহো,,,,! আমি তো আপনাদের পরিচয় দিতে ভুলে গিয়েছি।।আমি কায়নাত কুহু।।এই কলেজের গণ্ডি পার করেছি।।এখনো রেজাল্ট হয়নি।।১০/১৫ দিনে হয়তো দিয়ে দিবে।।আর আমার পাশে বসে এই ইয়াং লেডী হচ্ছে আমার নানু মা।।উনি আমার হাসি খুশির সাথী।।মা মারা যাওয়ার পর বাবা আমাকে আর রাখেনি তকর কাছে।।নতুন বিয়ে করে পাড়ি জমায় তার নতুন ঠিকানায়।।যেখানে আমি নামতে কেউ নেই।।মাঝে কষ্ট লাগে খুব না বাবার আদর পেলাম না মার।।নানু মার কাছে শুনি,,মেয়ারা বিয়ের পর জামাই নাকি অনেক আদর করে।।তাই আমার বিয়ের খুব সখ।।কিন্তু জামাইতো দূর থাক একটা বয়ফ্রেন্ড জুটাতে পারলাম না।।হুহ।।।

?

দীর্ঘ চার ঘন্টার জার্নি করার পর এসে পৌছালাম একটি বাংলোর সামনে।।বাংলো দেখে আমি পুরাই ক্রাশ।। ক্রাশ খাওয়া টা অবশ্য আমার অভ্যেস।। যেখানে সেখানে খেয়ে ফেলি।।
বাড়ির ভিতরে ডুকতেই এক মধ্য বয়সি আন্টি দৌড়ে আসলো।।পরনে তার কুর্তি আর জিন্স।। গলায় স্কার্ফ পেচানো।। দেখতে ইয়ং ইয়ং লাগে।। উনি এসেই নানুমাকে সালাম করতে লাগলেন।।নানুমা বলতে লাগেন,,
—বেঁচে থাক মা।।ফয়েজ কই??
—মা উনি একটু বাহিরে গেছেন।।
উনার চোখ আমার উপর পরতেই একটা মুচকি হাসি দিলাম।।উনিও একটি মিষ্ট হাসি দিয়ে আমার থুতনিতে ধরে বলতে লাগেন,,
—মা এটা আমাদের কুহু না।।মাশাল্লাহ অনেক আর সুন্দর হয়ে গেছে।।
আমিও মিষ্টি হেসে বলতে লাগলাম,,
—আন্টি আপনিও অনেক সুন্দর।।
—থ্যাঙ্কস আম্মু।। আমার গাল ধরে স্নেহের সহিত বললেন।।আমার অনেক মায়া লাগছে।।না চাইতেও আমুর কথা মনে পরে গেল।।টুপ করে জল গড়িয়ে পরলো।।তখনি আন্টি বলতে লাগে,,
—কি হয়েছে আম্মু কাঁদচ্ছো কেন??
—আম্মুর কথা মনে পড়ে গেছিল।।চোখ মুছতে মুছতে বললাম।।
তখনি আন্টি আমার কপালে চুমু দিয়ে বলতে লাগেন,,
—তাহলে আমাকে মা ডেকো কেমন??
আমিও মিস্টি হসে উওর দিলাম,,
—আন্টি মা।।
আন্টি মাও হেসে দিলেন।।

হল রুমে বসে আছি।।আন্টি আমার বয়সি একটি মেয়েকে ডেকে বলছে হালকা খাবার দিতে।।আমারও ক্ষিদে পেয়েছে খুব।।মেয়েটি খাবার দিয়ে চলে গেল।।আর আন্টি আমার পাশে বসে তার হাত দিয়ে খাওয়াতে লাগলো।।আজ খুব ভাল লাগচ্ছে।।আজ যেন মনে হচ্ছে আমি সত্যিই মা পেয়েছি।।আন্টি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে খাইয়ে দিচাছে।।আর আমার চোখের পানি মুছে দিচ্ছেন।।ওই দিকে নানু মা নামাজ আদায় করতে চলে গেছেন।।আন্ট আমাকে খাইয়া প্লেট নিয়ে কিচেনের দিক গেলেন।।
তখনি উপর থেকে একটি ফুলদানি ঠাস করে আমার পায়ের সামনে এসে পড়ে,,আর আমি ২ কদম পিছিয়ে যাই।।আন্টি দৌড়ে কিচন থেকে।।আমার সামনে ফুলদানি দেখে আমাকে বলতে লাগে ভয় পেয়না কুহু আমি আসচ্চি বলে আন্টি সিড়ি দিয়ে উপরে চলে গেলেন।।তখনি উপর থেকে কারো গর্জনের আওয়াজ আসলো।। সেই ব্যক্তিটি চিল্লিয়ে বলতে লাগলো,,
—-How dare you mess with me. I’ll see you?
এবার তোমাকে আমার সামনে ফেলে তোমার ঘাড়ে আর মাথা থাকবেনা।।

তখনি আন্টি বলতে লাগে,,
—-ইউসুফ কি হচ্ছে এসব?? তুমি এমন কেন করছো? বাসায় তোমার দাদু আর তোমার বোন আসচ্ছে! কি ভাববে তারা?
ইউসুফ অপরাধী সুরে বলতে লাগে,,
—আম সরি মম।। রাগ মাথায় চোরে বসেছিল।। তাই কন্ট্রোল করতে পারিনি।।
আন্টি বলতে লাগেন,,
—-নেক্সট টাইম খেয়াল রেখো।। নিচের মেয়েটা ভয় পেয়ে গেছে।। আরেকটি বলে ওর শরীরে লাগতো।।
ইউসুফ বিরক্তি নিয়ে বলে উঠে,,
—-সরি বলেছি তো মম।।আর কি চাউ পায় ধরি?? তাহলে তাই করি??
—-তুমি দিন দিন কেম বেয়াদবি শিক্ষে যাচ্ছো ইউসুফ।।কন্ট্রোল লেস হয়ে যাচ্ছো।।সামালাও নিজেকে।।আর ফ্রেস হয়ে নিচে আসো।।
—হুম আসচ্ছি।।

?
উনি হচ্ছে মিস্টার সাইকো।।যিনি সোজা জিনিস বুঝে কম।।তার ফুরো নাম হচ্ছে আল_সিনান_ইউসুফ।। বলতে গেল জাতির ক্রাশ।।উঁচু ৬ ফিট।।জিম অলা বডি।। মার মতো দেখতে সুন্দর।।আর সুদর্শন।। এক কথায় চোখ ফিরানোর মতো না।।মাইয়া মানুষ গুলান হেতিরে দেখলে হুমরি খাইয়া পড়ে।।উনি খুব রাগী তার খিরা মানুষ।।আগে আগে আরো অনেক কিছু জানবেন।।একদিনে কি সব কমু নাকি ?।।
?
চলবে,,

অস্পষ্টতা – পর্ব : ৫

0

#অস্পষ্টতা
পর্ব – ৫

লেখা : শঙ্খিনী

সত্যিই, আমাদের বিয়ের দিনটা পাগলামিতে ভরা ছিল। দিনটার কথা মনে করে এখনো হাসি। ইশ! আবার যদি সেই দিনগুলোতে ফিরে যেতে পারতাম।

মানুষের জীবন বড়ই অদ্ভুত। আমি কি কখনো ভেবেছিলাম আমার জীবন এমন হবে? একটা সময় আমার জীবন ছিল শুধু তারিফকে ঘিরে। আর এখন, শুধুমাত্র আমাদের স্মৃতিগুলোকে আকড়ে ধরে বেঁচে আছি। সেই স্মৃতিগুলোই আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছে।

আমার ভাবনায় ছেদ পড়ল। মা তাড়াহুড়ো করে আমার ঘরে ঢুকলেন।

আমি বললাম, “কি হয়েছে মা? কিছু বলবে?”
মা থেমে থেমে বলল, “না, রে।”
“তাহলে? এমন অস্থির দেখাচ্ছে কেন তোমাকে?”
“আমরা কোভিড টেস্ট করলাম না?”
“হ্যাঁ।”
“রেজাল্ট এসেছে?”
“জানিনা। মোবাইলে ম্যাসেজ আসবে।”
“একটু চেক কর না!”

আমি মোবাইল বের করে টেস্টের রিপোর্ট খুঁজতে লাগলাম।

মা বলল, “এসেছে?”
“হুঁ।”
“রেজাল্ট কী?”
“নেগেটিভ! আমাদের পজিটিভ হতে যাবে কেন?”
“যাক বাবা, বাঁচলাম!”
“টেনশনে ছিলে না-কি?”
“একটু টেনশন তো করতেই হয়। নেগেটিভ যখন এসেছেই, এবার তো একটু বাইরে যেতেই পারি।”
“মা কোভিড টেস্ট নেগেটিভ আসা মানেই কিন্তু তুমি সেফ না। এই নেগেটিভ যেকোনো সময়ে পজিটিভ হয়ে যেতে পারে।”
“তাই বলে এভাবে ঘরের মধ্যে বন্দী থাকা যায় না-কি? কতদিন বাইরে যাই না! তুই তো বাগানেও যেতে দিস না!”
“মা, আমি কতবার বলেছি মালিটাকে আসতে মানা করে দাও তাহলেই আমি তোমাকে বাগানে যেতে দিবো।”
“মালিকে আসতে মানা করলে এতগুলো গাছ সামলাবে কে?”
“তাও ঠিক! আচ্ছা, আমাদের ছাদে কি কেউ যায়?”
“মৌসুমী প্রতিদিন যায়, কাপড় মেলতে।”
“মৌসুমী বাদে আর কেউ যায়?”
“না।
“ঠিক আছে। তাহলে আজ বিকেলে তোমাকে ছাদে ঘুরতে নিয়ে যাবো।”
“সত্যি?”
“সত্যি!”

কথা রাখতে মাকে নিয়ে বিকেল বেলা গেলাম ছাদে। কতদিন বর ঘর থেকে বের হলাম! চেনা ছাদটাও অচেনা লাগছে আজ।

মা আমাকে বিরক্ত গলায় বলল, “এখানে তো কেউ নেই। মাস্ক পরে থাকতে হবে কেন?”
“কারন আমি বলেছি!”
“তুই বললেই হলো?”
“হুঁ হলো! এখন বলো, এখানে এসে ভালো লাগছে না?”
“হ্যাঁ! অনেক ভালো লাগছে।”

বেশ অনেকটা সময় আমরা চুপ করে রইলাম।

শেষে মা নীরবতা ভঙ্গ করে বলল, “তোর সেই টার্কিশ মিষ্টির কথা মনে আছে?”
আমি কিছুটা অবাক হয়ে বললাম, “হঠাৎ এ কথা জিজ্ঞেস করছো কেন?”
“এমনিই, মনে পড়ে গেল। তাই জিজ্ঞেস করলাম তোর মনে আছে কিনা?”
“কিছু স্মৃতি সূর্যের আলোর মতো। দিনের অনেকটা সময় তাকে দেখতে বা অনুভব করতে না পারলেও তার চিরস্থায়ীত্বতা কখনো শেষ হয়ে যায় না।”
“দেখলি, দিলাম তো তোর মনটা খারাপ করে!”
আমি নিচু গলায় বললাম, “মন খারাপ হওয়ার কিছু নেই মা, মনটাই তো নেই।”

টার্কিশ মিষ্টি, আমার একসময়ের খুব প্রিয় এক খাদ্যবস্তু। বিয়ের পর অফিস থেকে বাসায় ফেরার সময় প্রতিদিন তারিফ আমার জন্যে এটা আমার জন্য নিয়ে আসতো।

আমাদের বিয়ের তখন প্রায় এক মাস হয়েছে।সেদিন তারিফ বাসায় ফিরলো আগে আগে।

আমি দরজা খুলে বললাম, “বাহ্, আজ এত তাড়াতাড়ি।”
তারিফ ক্লান্ত গলায় বলল, “কি করবো বলো, বাসায় অনেক দামী একটা জিনিস রেখে যাই তো। সারাটাদিন খুব টেনশনে থাকি।”
“দামী জিনিস? কী?”
“তুমি দেখতে চাও?”
“হ্যাঁ, চাই।”
“তাহলে এক কাজ করো, আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে পরো। দেখতে পাবে।”
আমি হেসে বললাম, “তারিফ তুমিও না!”
তারিফ আমার হাতে একটা প্যাকেট ধরিয়ে দিয়ে বলল, “নাও!”
“আবার সেই টার্কিশ মিষ্টি? তারিফ প্রতিদিন এগুলো আনার কি দরকার বলো তো? পুরো ফ্রিজ মিষ্টিতে ভর্তি! অন্য কিছু রাখার জায়গা পর্যন্ত নেই।”
“দরকার পড়লে আরেকটা ফ্রিজ কিনবো। তবুও আমি প্রতিদিন এই টার্কিশ মিষ্টি নিয়ে আসবো।”
“কেন?”
“একটা জিনিস নিয়ম করে কেনার মধ্যে যে কি শান্তি লুকিয়ে আছে তুমি জানো?”
“তাই না? তাহলে এখন আপনি ফ্রশ হয়ে এসে আমাকেও শান্তি দেন প্লিজ।”

তারিফ কিছু না বলে, হুট করে আমাকে জড়িয়ে ধরলো।

আমি চমকে উঠে বললাম, “কি হলো আবার?”
“এই, আমার না অফিসে একদম ভালো লাগে না। তোমাকে ছাড়া কোথাও ভাল্লাগে না।”
“তাই না?”
“হুঁ! তুমি আমার সাথে অফিসে যাবে?”
“আমি তোমার সাথে অফিসে যাবো?”
“হ্যাঁ!”
“মোটেও না! আমি বাসায় আছি, আরামে আছি, ভালো আছি। এখন প্লিজ ফ্রেশ হয়ে আসো, প্রচন্ড ক্ষুধা লেগেছে।”
তারিফ কিছুটা মন খারাপ করে বলল, “যাচ্ছি।”

রাতে খাওয়ার পর তারিফ সেই যে নেটফ্লিক্স নিয়ে বসতো আর উঠতো রাত দুটো তিনটার দিকে। এত রাত জেগে সকালে উঠে অফিসে কিভাবে যায় কে জানে! তবে স্যার ভদ্র আছেন। ঘরে বসে টিভি দেখলে আমার ঘুমাতে অসুবিধা হয় বলে বসার ঘরের টিভি দেখে। আমার দায়িত্ব হলো, খাওয়ার পর স্যারকে কফি বানিয়ে দেওয়া।

আমি দায়িত্ব অনুযায়ী কফি বানিয়ে তারিফের কাছে গেলাম।

কফি মগ তার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললাম, “স্যার, আপনার কফি!”
“থ্যাংক ইউ ম্যাডাম।”
“ইউ আর ওয়েলকাম।”
“তুমি আমার সাথে এই সিরিজটা দেখো না কেন?”
“কী নাম সিরিজের?”
“মানি হাইস্ট।”
“নাহ্, আমার এসব ভালো লাগে না।”

এরমধ্যে মা আসলো বসার ঘরে।

তীক্ষ্ম গলায় বলল, “কিরে তোরা এখনো জেগে আছিস? ঘুমাবি কখন আর উঠবিই বা কখন?”
আমি সঙ্গে সঙ্গে বললাম, “আমি ঘুমাতেই যাচ্ছিলাম মা, কিন্তু তোমার ছেলে এখন ঘুমাবে না। এখন ঘুমালে উনার ফানি হাইস্ট কে দেখবে?”
তারিফ বলল, “ফানি হাইস্ট না মানি হাইস্ট।”
“একই কথা!”
“মোটেই না!”
মা ধমক দিয়ে বলল, “আহ্ তোরা থামবি? আমি যেটা বলতে এসেছি, শোন। বিয়ের পর তো তোরা কোথাও ঘুরতে গেলি না। আমি বলছিলাম যে, এবার কোথাও গিয়ে ঘুরে আয়।”
তারিফ অবাক হয়ে বলল, “ঘুরতে যাইনি মানে? গত পরশুই তো শপিংয়ে গেলাম!”
“আরে সেই ঘুরতে যাওয়া না। আমি বলেছি, ঢাকার বাইরে কোথাও গিয়ে ঘুরে আসতে।”
“ঢাকার বাইরে আবার কোথায় যাবো?”
“সেটা তোরা ঠিক করবি। আমি বাবা এখন ঘুমাতে যাই। আর পাঁচ মিনিট জেগে থাকলেই প্রেসার বেড়ে যাবে। তোরা থাক।”

এই বলেই মা উঠে চলে গেল।

তারিফ আমার দিকে তাকিয়ে সামান্য ভ্রু কুঁচকে বলল, “আচ্ছা, মা কি আমাদের ইন্ডায়রেক্টলি হানিমুনে যেতে বলল?”
আমি বললাম, “অবশ্যই। নিজেকে এত বুদ্ধিমান দাবি করো, আর এতটুকু বুঝতে পারলা না?”
“হয়েছে আমাকে পচানো? এখন কাজের কোথায় আসি! ঠিক করো কোথায় যাওয়া যায়!”
“আমি হুট করে ডিসিশন নিতে পারি না, তুমি বলো।”
“কক্সবাজার?”
“নাহ্! কক্সবাজারে অনেক গিয়েছি।”
“কিন্তু তোমার তো সমুদ্র পছন্দ!”
“সমুদ্র পছন্দ বলেই কক্সবাজারে যেতে হবে না-কি?”
“তাহলে কুয়াকাটা?”
“সেই একই তো কথা হলো! দেখো, আমি জীবনে যতবারই ঘুরতে গিয়েছি, প্রত্যেকবারই গিয়েছি সমুদ্র দেখতে। এবার আর সমুদ্রের কাছে যেতে ইচ্ছা করছে না।”
তারিফ কিছুক্ষণ ভেবে বলল, “বান্দরবানে গিয়েছ কখনো?”
“না।”
“জায়গাটা অনেক সুন্দর, যাবে?”
“হুঁ!”

এক সপ্তাহ পর আমরা চলে গেলাম বান্দরবানে। নামটা অদ্ভুত হলেও জায়গাটা বেশ সুন্দর। এত সবুজ একসঙ্গে আমি কোনো দিনও দেখিনি। আমাদের রিসোর্টটা তার থেকেও সুন্দর।

প্রথমদিন আমরা আর কোথাও বের হলাম না, এতদূর বাস জার্নি করে খুব টায়ার্ড ছিলাম। রাতে বেশ শান্তির একটা ঘুম হলো। কিন্তু সেই শান্তি দীর্ঘস্থায়ী হলো না। আমি ঘুমাচ্ছিলাম,

তখনি তারিফ আমাকে ধীরে ধীরে ধাক্কা দিয়ে বলল, “এই আশফা! আশফা!”
আমি বিরক্ত গলায় বললাম, “কি?”
“উঠো!”
“উঠো মানে?”
“উঠো মানে উঠো!”
“উঠবো কেন?”
“মানুষ কি বেড়াতে এসে ঘুমিয়ে থাকে না-কি?”
“উফ! কয়টা বাজে?”
“পাঁচটা।”
“কি?”
“পাঁচটা!”
“এত সকালে উঠবো কেন?”
“সূর্যোদয় দেখবো!”
“কি?”
“এত কি কি করো কেন? যাও না, তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে আসো প্লিজ।”
“উফ তোমার এই নাছোড়বান্দা স্বভাব কবে যাবে বলোতো?”
“নাছোড়বান্দা আবার কি? আমি হলাম মিস্টার উনস্টপেবেল। আমাকে বা আমার সিদ্ধান্তকে কেউ থামিয়ে রাখতে পারবে না। এখন উঠো তো!”

তারিফের সঙ্গে তর্ক করে কোনোই লাভ নেই। সে একবার যা বলবে, তা-ই হবে। আমি বাধ্য হয়ে উঠে গেলাম ফ্রেশ হতে।

হাতমুখ ধুয়ে এসে দেখি স্যার রিসোর্টের লনে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় দেখছেন। আমি তার পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম।

কিছুটা কঠিন গলায় বললাম, “তোমার কান্ডকারখানা আমি কিছুই বুঝি না। সূর্যোদয় দেখবে, ভালো কথা। আমাকে সাথে নিয়ে দেখতে হবে কেন? কেউ কখনো বউকে ঘুমের মাঝ থেকে তুলে এনে সূর্যোদয় দেখে না-কি?”
“কেউ দেখে না, শুধু আমি দেখি। অন্য কেউ কিভাবে দেখবে? আমার তো আর আমার মতো সুন্দরী বউ নেই।”
“তোমার তো শুধু আমাকে অকেশনালি সুন্দর লাগে।”
“ভুল বললে। আমার তো তোমাকে একেক অকেশনে একেক রকম সুন্দর লাগে।
তুমি হাসলে এক রকম সুন্দর, কাঁদলে আরেক রকম সুন্দর, রাগলে আবার আরেক রকম সুন্দর আর ঘুমিয়ে থাকলে আরেক রকম।”

আমি খানিকটা লজ্জা পেয়ে মুচকি হাসলাম। খেয়াল করলাম, তারিফ একদৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

আমি বললাম, “এভাবে কি দেখছ?”
“তোমাকে।”
“আমাকে আবার দেখার কি হলো, রোজই তো দেখো!”
তারিফ আমার হাত দুটো ধরে বলল, “তোমাকে এতটা ভালোবাসি কেন আশফা?”
“জানি না। তবে এটা জানি, যে আমি তোমাকে সবথেকে বেশি ভালোবাসি। আমার মতো করে তোমাকে কেউ ভালোবাসতে পারবে না। তুমিও না।”
“একদিন যদি এই ভালোবাসা শেষ হয়ে যায়?”
“কোনোদিনও না। তোমার ভালোবাসা শেষ হয়ে যেতে পারে কিন্তু আমার ভালোবাসা কখনো শেষ হবে না।”
“আমার ভালোবাসাও শেষ হবে না।”
“আচ্ছা, দেখে নিবো!”
“দেখে নিও। আশফা?”
“হুঁ?”
“আমাকে কখনো ছেড়ে যেও না প্লিজ।”
“আমি তোমাকে ছেড়ে যেতে পারবো না তারিফ। প্রকৃতি আমাকে সেই ক্ষমতা দেয়নি।”
“আর যদি দিয়ে দিতো?”
“দিলেও সেই ক্ষমতার কোনো মূল্য থাকতো না।

বান্দরবানে তথাকথিত হানিমুন, খুব ভালো কাটলো আমাদের। নিভৃতে, নির্জনে শুধু আমরা দু’জন। জীবনটা যদি বান্দরবানের সবুজের মাঝে থেকে থাকতো, কতই না ভালো হতো।

ঘোরাঘুরি শেষ করে ছয় দিন পর ঢাকায় ফিরে এলাম। বাসায় এসে দেখি আরেক কান্ড!

(চলবে)

অস্পষ্টতা – পর্ব : ৪

0

#অস্পষ্টতা
পর্ব – ৪

লেখা : শঙ্খিনী

বাগান ঘেরা বিশাল এক বাংলাে বাড়ি। প্রথমবারের মতো বাড়িটা দেখে কয়েক সেকেন্ডের জন্যে থ বনে চলে গিয়েছিলাম।

কলিংবেল চাপতেই দরজা খুলে দিলেন তারিফের মা। ‘মা’ বলে বর্তমানে যে মানুষটাকে আমি চিনি, তার সঙ্গে এই আমার প্রথম সাক্ষাৎ।

তারিফ ওর মাকে বলল, “মা, ওর নাম আশফা। আমার বন্ধু।”
আমি সঙ্গে সঙ্গে ভদ্রভাবে বললাম, “আসসালামওয়ালাইকুম।”
মা বলল, “ওয়ালাইকুমসালাম। তা তারিফ, তোর যে এত সুন্দর একটা বন্ধু আছে আমাকে আগে বলিসনি কেন? মনে আছে? ছোটবেলায় তোর নতুন কোনো বন্ধু হলেই সাথে সাথে বাসায় নিয়ে আসতি।”
তারিফ থেমে থেমে বলল, “মনে আছে। মা আমি, মানে আমরা একটা অন্যায় করে ফেলেছি!”
“অন্যায়? কিসের অন্যায়?”
“মা আমরা… মা আমরা বিয়ে করে ফেলেছি।”

ছেলেটা বলে কি! আমাদের বিয়ে তো আজ সন্ধ্যায়। বিয়ে করে ফেলেছি মানে কি? আমার কান দিয়ে কোনো কথা ঢুকছিল না। মুহূর্তের মধ্যে মাথাটা গরম হয়ে গেল।

মা বেশ অনেকক্ষন চুপ করে থেকে বলল, “কতদিনের পরিচয়?”
তারিফ বলল, “ছয় বছরের।”
“কি?”
“না মানে, ছয় মাসের।”
“বিয়েটা হয়েছে কবে?”
“আজকেই।”
“এত দিনের পরিচয়, আর আমাকে জানানোর কোনো প্রয়োজনই বোধ করলি না? বিয়েও করে ফেললি আমাকে না জানিয়ে? কেন? জানালে কি আমি বাঁধা দিতাম”
“মা বলতে চেয়েছিলাম, কিন্তু…”
“তুই আমার সঙ্গে কোনো কথা বলবি না। তোর সঙ্গে কথা বলার কোনো ইচ্ছে আমার নেই!”

মা এবার আমার দিকে তাকিয়ে বলল, “তোমার নাম যেন কি মা?”
আমি ভয়ে ভয়ে বললাম, “আশফা। আশফা আরিয়ানা।”
“বিয়ের কথা তোমার বাবা মা জানে?”
“আমার বাবা মা নেই।”
“আত্মীয়-স্বজন, অভিভাবক – তারা জানে?”
আমি কিছু বলতে যাবো, তার আগেই তারিফ বলল, “ওর আত্মীয় স্বজনেরা ঢাকায় থাকে না মা, নারায়ণগঞ্জে থাকে। বিয়ের আগে তাদের ফোন করে জানানো হয়েছে।”
“আমাকে জানালে কি হতো? আমাকে কি এতটাই খারাপ মনে হয় তোর?”
“সাহস হয়ে ওঠেনি।”
মা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “যা হওয়ার তা তো হয়েই গেছে! এখন আর কথা বাড়িতে লাভ নেই। মা আশফা, তুমি আমার সঙ্গে এসো।”

আমি গেলাম মায়ের ঘরে। বাড়ির বসার ঘরটা যেমন সুন্দর, ভেতরের ঘরগুলোও তেমনি সুন্দর।

একটা গয়নার বাক্স মা আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল, “এটা আমাদের পারিবারিক অলংকার। বিয়ের সময় আমার শাশুড়ি এটা আমাকে দিয়েছিল। আজ আমি তোমাকে দিচ্ছি।”

আমি নিবো কি নিবো না এই নিয়ে দ্বিধায় ভুগছিলাম। আমাদের বিয়েই তো এখনো হয়নি! কিসের গয়না আর কিসের কি!

মা আবার বলল, “ইতস্তত বোধ করার কিছু নেই। এই গয়না তোমার জন্যেই তোলা ছিল। এসো তো, আমি তোমাকে পরিয়ে দিচ্ছি। ওহ্ ভালো কথা। আমি আমার ছেলের বউয়ের জন্যে অনেক আগে একটা শাড়ি কিনেছিলাম, যত্ন করে রেখে দিয়েছি। দাঁড়াও বের করে আনছি। শাড়িটা পরে ফেলো। নতুন বউ শাড়ি পরে ঘুরবে, দেখতেও তো শান্তি লাগে।”

এই বলেই মা আলমারি ঘাটাঘাটি করে লাল রঙের একটা শাড়ি বের করে আমার হাতে দিলো। শাড়িটা দেখতে খানিকটা বিয়ের শাড়ির মতো।

মায়ের কথা মতো শাড়ি গয়না পরে নিলাম। নতুন বউয়ের মতো লাগছিল আমাকে সেদিন। আমার মধ্যে আনন্দ এবং রাগ দুটো একসঙ্গে কাজ করছিল।

আমি তৈরি হয়ে বসার ঘরে গেলাম। মা আর তারিফ সেখানেই বসে ছিলে। লক্ষ করলাম, তারিফ আমার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। সে প্রাণপন চেষ্টা করে চোখদুটো অন্য দিকে সরাতে, কিন্তু পারছে না।

আমাকে দেখে মা বলল, “বাহ্! খুব সুন্দর লাগছে। এই তারিফ, তুই যা ডেকোরেটরের কাছে গিয়ে বড় টেবিলের অর্ডার দিয়ে আয়। ছাদে টেবিল পাতা হবে। এদিকে আমি রান্নাবান্নার ব্যাবস্থা করি। আজকে রাতে আমাদের সব আত্মীয় স্বজনদের খবর দেওয়া হবে।”
তারিফ অসহায় গলায় বলল, “আজকেই?”
“আজকে না তো কালকে? আমার ছেলের আজকে বিয়ে হয়েছে, আজই সব আয়োজন হবে!”
“তাহলে মা, আমি আশফাকেও সাথে নিয়ে যাই?”
“ওকে নিয়ে যেতে হবে কেন? বেচারিকে অন্তত একটু রেস্ট নিতে দে!”
“মা ও তো এতদিন বান্ধবীদের সাথে ফ্ল্যাটে থাকে। সেখানেই ওর বই খাতাসহ সব জিনিসপত্র। আমার সাথে গিয়ে এখন সেগুলো নিয়ে আসতো।”
“ওহ্, তাহলে নিয়ে যা। তোমার কোনো আপত্তি নেই তো মা?”
আমি বললাম, “জি না।”

আমরা বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলাম।

বাড়ির সামনে দাঁড়িয়েই কঠিন গলায় আমি তারিফকে বললাম, “এই ছেলে! তোমার জীবন তো পুরোই মিথ্যায় ঘেরা! ও আল্লা, আমি কার সাথে সংসার করবো!”
তারিফ বাঁকা হাসি হেসে বলল, “আমার জীবন মিথ্যায় ঘেরা না ম্যাডাম, আমার জীবন বুদ্ধিমত্তায় ঘেরা।”
“হুহ! চোরের মায়ের আবার বড় গলা।”
“তুমি ভুল করছো। চোরের মায়ের বড় গলা হয় না, ওটা হবে জিরাফের মায়ের বড় গলা!”
“তা আমার বুদ্ধিওয়ালা! নিজের মাকে মিথ্যা বলাটা খুব বুদ্ধিমানের কাজ না? আমাদের বিয়ে হয়ে গেছে? আমার আত্মীয় স্বজন ঢাকায় থাকে না? আমি বান্ধবীদের সাথে ফ্ল্যাটে থাকি?”
“তোমার মামা মামী তো এক সপ্তাহের মধ্যেই ঢাকার বাইরে চলে যাবে, আমি না হয় একটু আগেই পাঠিয়ে দিলাম। আর আমাদের বিয়ে হতে আর মাত্র তিন ঘণ্টা বাকি। আমি মিথ্যা বললেও, মিথ্যাগুলো কিন্তু কিছু সময়ের মধ্যে সত্যি হয়ে যাবে?”
“লাভটা কি হলো?লাভটা কি হলো এতগুলো মিথ্যা কথা বলে? আমরা না হয় বিয়ের পরেই আসতাম এখানে।”
“ওইযে বললাম না, একটা কথা বলার আগে সেটা বলার পরিণাম কি হবে এই নিয়ে ভাবতে হয়। এইযে মা তোমাকে এত সুন্দর করে বউ সাজিয়ে দিলো, এটাই আমার লাভ। তুমি কি সালোয়ার কামিজ টামিজ পড়ে বিয়ে করতে না-কি?”
“শাড়ি গয়না, এসব না আমাদের বাসায়ও আছে। এর জন্য এত বড় একটা মিথ্যা বলবে?”
“শুধু এটা না, আরও একটা কারন ছিল অবশ্য।”
“কি সেই কারন?”
“আমার মায়ের মনটা একটু উৎসবমুখর। কথায় কথায় আত্মীয় স্বজনদের দাওয়াত দিয়ে খাওয়ানোর বাতিক আছে। শুনলে না, আজকেই না-কি ছাদে কি কি করবে।”
“হ্যাঁ তো?”
“আমার বিয়ে নিয়ে মায়ের অনেক ইচ্ছা ছিল। মা চেয়েছিল আমার বিয়ে হবে কক্সবাজারের কোনো এক বীচের পাড়ে। সব আত্মীয় স্বজনদের সেখানে নিয়ে যাওয়া হবে নিজ খরচে। এখন যদি আমার মা শুনতো, সীমিত পরিসরে আমাদের বিয়ে হবে নির্ঘাত স্ট্রোক করতো।”
“বলো কি?”
“ঠিকই বলছি।”
“তাহলে তো ভালোই করেছ।”
“বললাম না, আমার জীবনটা বুদ্ধিমত্তায় ঘেরা।”
আমি হেসে বললাম, “হয়েছে, আর নিজের বড়াই করতে হবে না। মনে আছে? মামা কিন্তু আমাদের পাঠিয়েছিল তোমার বন্ধু বান্ধবদের নিয়ে যেতে।”
“চিন্তা করো না। আমি ওদের ফোন করে জানিয়ে দিয়েছি। তোমার বান্ধবী শিলাকেও জানিয়েছি। ওরা তোমাদের বাসায় সামনে স্ট্যান্ড বাই থাকবে। ভালো কথা, ডেকোরেটরের লোকদের সাথেও তো কথা বলতে হবে!”

ছেলেটা যে কি পরিমান পাগল ছিলো, সেটা শুধুমাত্র আমি জানি।

বাসার সামনে রিকশা থামতেই দেখি সত্যি সত্যি তারিফের বন্ধুরা দাঁড়িয়ে আছে, আমার বান্ধবী শীলাকেও দেখতে পেলাম। বাড়ির ভেতরে ঢুকে দেখি আরেক কান্ড। বিশাল রান্নাবান্নার ব্যাবস্থা করা হয়েছে। ছোট মামা মামীকেও খবর দেওয়া হয়েছে।

কাজী সাহেবকে ডেকে আনা হলো ঠিক সাড়ে সাতটায়। আমি লক্ষ করলাম, ঠিক ষোলো মিনিট লাগলো বিয়ের কাজ সম্পূর্ণ হতে।
আমার পাশে বসে তারিফ এখন আমার, অফিসিয়ালি আমার। আমি ভাবতেই পারিনি আমার জীবনটা এক দিনের মধ্যে বদলে যাবে।

বিবাহ সম্পন্ন হওয়ার প্রায় দুই ঘণ্টা পর আমরা ফিরে গেলাম তারিফদের বাসায়। অথবা, আমার নতুন বাসায়।

সেখানে গিয়ে দেখি আরেক কান্ড! রাজ্যের সব আত্মীয় স্বজন বাড়ির ছাদে। সবাইকে সালাম দিতে দিতে আমার কোমর ব্যাথা হয়ে গেল। এরপর শুরু হলো ছবি তোলার পর্ব। একজন একজন করে আসছে আর নতুন বউয়ের সঙ্গে ছবি তুলছে। সে এক অসম্ভব বিরক্তিকর ব্যাপার।

এরপর শুরু হলো খাওয়া দাওয়ার পর্ব। রান্নার ব্যাবস্থা দেখে মনে হলো, সত্যিই এটা বিয়ে বাড়ি। এত কম সময়ের মধ্যে এরা এত আয়োজন কিভাবে করলো কে জানে!

আমি ফিসফিস করে তারিফের কানে বললাম, “এই তারিফ!”
“কি?”
“এইমাত্র তো আমাদের বাসা থেকে কত কিছু খেয়ে আসলাম! এখন আমার এতকিছু খাবো কিভাবে?”
“আরে খাও তো! জীবনে একটাই মাত্র বিয়ে করলে। আজকে খাবা না তো কবে খাবা?”
“একটাই মাত্র বিয়ে মানে? আর কয়টা বিয়ে করতে চাও তুমি?”
“আরও দুই তিনটা বিয়ে হলে ভালো হতো না?”
আমি রাগী গলায় বললাম, “কি বললা?”
তারিফ হেসে বলল, “তুমি আসলেই বোকা! এখন খাও তো। এত কথা বলতে দেখলে সবাই আমাদের অসভ্য ভাববে।”

শুনলাম বাসর হবে তারিফের ঘরে। সবার আকর্ষন এখন বাসর ঘর সাজানোর দিকে।

মোটামুটি রাত বারোটার দিকে তারিফের। কয়েকটা কাজিন আমাকে বাসর ঘরে রেখে গেল। ‘বাসর ঘর’ – এত ভারী একটা শব্দ এই ঘরটার সঙ্গে ঠিক যাচ্ছে না। ঘরের সাজসজ্জা টিপিকাল বাঙালি বাসর ঘরগুলোর মতো। গাঁদা আর গোলাপের ছড়াছড়ি সারা ঘরে। আমাকে বললেই হতো, ঘরটা ক্লাসিকভাবে সাজিয়ে দিতাম। নিজের বাসর ঘর নিজে সাজানো কি দোষের কিছু? কে জানে!

আমি বাসর ঘরের বিছানায় বসে আছি প্রায় বিশ মিনিট ধরে, অথচ স্যারের আসার কোনো নাম নেই! আর অপেক্ষা করার অর্থ নেই। আমি বিছানা থেকে নামলাম। ফ্রেশ হতে হবে। প্রচণ্ড টায়ার্ড ছিলাম সেদিন।

ফ্রেশ হয়ে বিছানায় শুয়ে পড়তেই শুনতে পেলাম দরজার শব্দ। এতক্ষণে স্যারের আসার সময় হলো। আমি ভাব ধরলাম, ঘুমিয়ে পড়েছি।

তারিফ আমার কাছে এসে বলল, “আশফা?”
আমি ইচ্ছে করেই ঘুমজড়ানো কণ্ঠে বলল, “হুঁ!”
“এই আশফা?”
“বলো!”
“ঘুমিয়ে পড়েছো?”
“হুঁ।”
“তাহলে কথা বলছো কিভাবে?”
“উফ, বলো তো কি বলবা।”
“ঘুমিয়ে না পরলে, উঠো।”
“উঠবো কেন?”
“আরে, বাসররাতে কেউ ঘুমায় না-কি?”
“তো কি করে?”
তারিফ অনিশ্চিত গলায় বলল, “গল্প করে!”
আমি উঠে বসতে বসতে বলল, “বলো!”
“কি বলবো?”
“তোমার গল্প বলো।”
“ও আমি আগে বলবো?”
“হুঁ।”
“শোনো তাহলে, একদেশে এক রাজকন্যা ছিলো। রাজকন্যার নাম আশফাকুমারী।”
“আশফাকুমারী? বাহ্ সুন্দর নাম তো!”
“হুঁ! সে ইংলিশ গান খুব ভালো গাইতো, বিশেষ করে লেডি গাগার গান।”
“লেডি গাগা?”
“হ্যাঁ, আর এখন সে আমাকে লেডি গাগার গান শোনাবে।”
আমি হাসতে হাসতে বললাম, “লাভ নাই।”
তারিফ কিঞ্চিৎ মন খারাপ করে বলল, “লাভ নাই মানে?”
“লাভ নাই মানে লাভ নাই। কোনো লাভ নাই। তোমার আশফাকুমারী এখন ঘুমাবে। তুমি বরং এক কাজ করো, তোমার বেয়াদপ কাজিনগুলোর কাছে যাও। তারা নিশ্চয়ই এখনো ছাদে বসে আড্ডা দিচ্ছে। তাদের কাছে গিয়ে তুমি বানিয়ে বানিয়ে, যুক্তি খাটিয়ে মিথ্যা কথা বলো। গুড নাইট!”

(চলবে)

অস্পষ্টতা – পর্ব : ৩

0

 

#অস্পষ্টতা
পর্ব – ৩

লেখা : শঙ্খিনী

আমাদের স্যাম্পল নিতে এলো। স্যাম্পল দেওয়ার সময় আমার মা তো ভয়ে অস্থির! যতই বলছিলাম, “মা চোখ বন্ধ করে থাকো!” ততই চোখদুটো খুলে ফেলছিল সে।

তারিফ আবার এতটা ভীতু না। সে সাহসী, যথেষ্ট সাহসী। তার সাহসিকতার পরিচয় আমি পেয়েছিলাম তিন বছর আগে, আগস্ট মাসের ২৯ তারিখে।

রোজকার দেখা করার স্থানে চিন্তিত হয়ে পায়চারি করছিলাম আমি। তারিফ তখনো এসে পৌঁছায়নি। আমি দুশ্চিন্তায় অস্থির হয়ে আছি, চোখ মুখ আমার রক্তশূন্য।
তারিফ এসে আমাকে এই অবস্থায় দেখে আমার কপালে হাত রেখে বলল, “কি ব্যাপার? এরকম দেখাচ্ছে কেন তোমাকে?”
আমি কিছুটা চমকে উঠে বললাম, “একটা ঝামেলা হয়ে গেছে?”
“কি ঝামেলা?”
“আমার মামা মামী এখানকার ফ্ল্যাটটা বিক্রি করে দিয়ে নারায়নগঞ্জে চলে যাচ্ছে। সেখানে আমার নানার বাড়ি আছে, এখন থেকে সেখানেই থাকবে।”
“তো?”
আমি বেশ রেগে গিয়ে বললাম, “তো মানে? তারা এখান থেকে চলে গেলে আমি থাকবো কোথায়? আমার কাছে একটাই মাত্র অপশন। সেটা হলো তাদের সঙ্গে নারায়ণগঞ্জের বাড়িতে চলে যাওয়া। কিন্তু আমি তো যাবো না। এখানে আমার ক্যারিয়ার পরে আছে, আমাদের ভবিষ্যত পরে আছে। সবকিছু ছেড়ে আমি চলে যাবো?”

আমার কথাগুলো শোনার পর তারিফ বেশ অনেকটা সময় চুপ করে রইলো, গভীর মনোযোগ দিয়ে কিছু একটা ভাবছিল।

অবশেষে মুখ খুলে বলল, “চলো এক কাজ করি!”
“কি?”
“আমরা বিয়ে করে ফেলি!”
আমি চমকে উঠে বললাম,“হ্যাঁ?”
“হ্যাঁ কী?”
“মানে, কি বলছো তুমি?”
“ঠিকই বলছি। তুমি চিন্তা করে দেখো, এছাড়া আমাদের আর কোনো উপায় আছে?”
“উপায় নেই, তাই বলে বিয়ের মত একটা ডিসিশন এভাবে হুট করে নিয়ে নেব?”
“এই পরিস্থিতিতে ডিসিশন হুট করেই নিতে হবে।”
“আচ্ছা, নিলাম ডিসিশন। আমার মামা মামীকে কি বলবো? তোমার মাকেই বা কি বলবো?”
“তোমার মামা মামীকে সত্যি কথা বলবো, আমার মাকেও সত্যি কথা বলবো। এখানে ভনিতা করার তো কিছু নেই!”
“ওহ্ আচ্ছা! তুমি তাদের সামনে অনর্গল সত্য কথা বলে যাবে আর তারা খুব সহজে মেনে নেবে না?”
“না মানার কি আছে? তুমি তো আনাড়ি মেয়ে কোনো নও। আর আমিও দিশেহারা বেকার যুবক না যে তারা মেনে নিবে না? এটা বাংলা সিনেমা না যে মানামানি করতে হবে!”
আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম, “আচ্ছা ঠিকাছে। ধরলাম তারা মেনে নিলো। কিন্তু তাতেও তো কোনো লাভ হবে না! আমার মামা মামী আগামী সপ্তাহে চলে যাচ্ছেন। এই অল্প সময়ের মধ্যে এত বড় আয়োজন কি সম্ভব না-কি?”
“আয়োজন?”
আমি বললাম,“হুঁ!”
“আয়োজনের আবার কি আছে? কাজী অফিসে যাবো। কবুল, কবুল, কবুল – তিন কবুল বলতে সর্বোচ্চ তিন সেকেন্ড সময় লাগবে। তোমার তিন সেকেন্ড আমার তিন সেকেন্ড, ছয় সেকেন্ডের মামলা!”
“ছয় সেকেন্ড না?”
“হ্যাঁ!”
“তোমার সাথে না আমার আর কথা বলতে ভালো লাগছে না। আমি গেলাম!”
“কোথায় যাচ্ছ?”
“বাসায়।”
“দাঁড়াও, আমিও তোমার সাথে যাবো!”
“মানে? কেন?”
“তোমার মামা মামীর সাথে বিয়ের কথা বলতে!”
“তারিফ দেখো, অনেক্ষণ যাবৎ তোমার ছেলেমানুষী সহ্য করছি। আর পারবোনা। প্লিজ ছেলেমানুষীটা বন্ধ করো।”
“এটাকে তুমি ছেলেমানুষী বললে ছেলেমানুষী, প্রাক্টিক্যালিটি বললে প্রাক্টিক্যালিটি। এখন চলো। আচ্ছা, বিয়েটা সেরে যাবা নাকি তাদের সাথে দেখা করার পর বিয়ে করবা?”
আমি রাগী দৃষ্টিতে তারিফের দিক তাকালাম।
তারিফ মুখে হাসির আভাস নিয়ে বলল, “ঠিকাছে চলো, আগে দেখাই করি।”

অনেক ভয়ে ভয়ে তারিফকে নিয়ে হাজির হলাম আমার মামার কাছে। ধরেই নিয়ে ছিলাম, আজ আমি শেষ! কিন্তু সেখানে পৌঁছে দেখি ভিন্ন চিত্র। যে ছেলেটা একটু আগে আমার সাথে তর্ক করছিল, সে এখন কি মিষ্টি করে কথা বলছে। মাত্র সাড়ে চার মিনিটের মধ্যে পটিয়ে ফেলল আমার মামাকে।

মামা আর তারিফ বসার ঘরে বসে গল্প করছে। আর আমি রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে তাদের কথা শুনছি।

গল্পের এক পর্যায়ে মামা চোখ দুটো উজ্জ্বল করে বলল, “তোমার বাবা আরিফুল চৌধুরী?”
তারিফ শান্ত গলায় বলল, “জি।”
“চৌধুরী গ্রুপস এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ তাহলে তোমাদের?”
“জি।”
“বলে কি? তোমার বাবা বেঁচে থাকতে তোমাদের কোম্পানির সাথে কতগুলো ডিল করেছিলাম!”
“তাই না-কি? আপনার কোম্পানীর নাম কি?”
“আমার কোম্পানির নাম টাম নাই! ডিল হতো সব আমার নামে। তোমার বাবা আরিফুল সাহেব ছিলেন বিশিষ্ট ভদ্রলোক। তুমি পেয়েছো বাবার সভ্বাব।”

এদিকে রান্নাঘরে মামী চায়ের কাপে চামচ নাড়তে নাড়তে আমাকে বলল, “ছেলেটা কে রে?”
আমি রাগী কণ্ঠে বললাম, “এতক্ষণ যাবৎ নিজের গুণগান গাইছে, শোননি?”
“শুনেছি। কিন্তু তোর কি হয়?”
“আমার বেয়াই হয়।”
“কি যাতা বলছিস!”
“জানি না মামী, আমার মাথা কাজ করছে না। একটু চা দাও তো!”
“বাড়িতে মেহমান। আগে তাকে চা না দিয়ে তোকে দিবো, তা হয় না-কি?”
“আরে ও চা খেয়ে কি করবে? তুমি আমাকে দাও তো!”

মামী আমার হাতে চায়ের কাপ ধরিয়ে দিয়ে, তাদের জন্যে চা নাস্তা নিয়ে বসার ঘরের দিকে পা বাড়ালো।
মামী ঢুকতেই তারিফ বলে উঠলো, “আমি আসলে আপনার কাছে এসেছি একটা পারমিশন নিতে!”
মামা কিছুটা অবাক হয়ে বলল, “পারমিশন? আমাদের কাছে? আমাদের কাছে কিসের পারমিশন?”
তারিফ থেমে থেমে বলল, “আমরা দু’জন, মানে আমি আর আশফা একে অপরকে অনেক পছন্দ করি। আশফা আপনাদের আগেই বলতে চেয়েছিল, কিন্তু সাহস করে উঠতে পারেনি।”
“আশফার মাথায় আসলেই কিছু নেই! সাহস করে উঠতে না পারার কি হলো? আমরা কি বাঘ না ভাল্লুক, যে পছন্দের কথা বললেই খেয়ে ফেলবো!”
“সেটাই! আমি তো কতবার বলেছি, আমার কথা শুনলে তো! এখন, আপনারা যখন নারায়নগঞ্জে শিফট করার ডিসিশন নিলেন তখন তো বেচারি ভীষন টেনশনে পরে গেছে। আমাকে ছেড়ে না-কি কোথাও যেতে পারবে না। বলেন তো কি একটা ব্যাপার! এমনকি এখানে আসার আগেও কাজী অফিস হয়ে আসতে চেয়েছিল।‌ তখন আমিই বললাম, বিয়ে যখন করবো অভিভাবকদের জানিয়েই করবো।”

ছেলেটা বলে কি! ওর কথা শুনে আমার মাথা গরম হয়ে গেল। বিয়ে করার জন্যে উঠেপড়ে লেগেছে তারিফ আর দোষ দিচ্ছে আমাকে! এটা মেনে নেওয়া যাচ্ছিল না। তাই আমি গিয়ে দাড়ালাম বসার ঘরের সামনে।

মামা আমাকে বললেন, “কিরে আশফা! আমাদের এতটাই পর মনে হয়? তারিফ নিজে থেকে না বললে তো আমরা কখনো জানতেই পারতাম না!”
আমি ইতস্তত হয়ে বললাম, “আসলে মামা হয়েছে কি…”
“থাক, আর বলতে হবে না! বিয়ে করবি খুবই ভালো কথা। তাই বলে লুকোছাপা করে বিয়ে! আমি তোর ছোট মামা মামীকে ফোন করছি। আজ সন্ধ্যায়ই তোদের বিয়ে হবে।”
তারিফ টেরা হাসি হেসে বলল, “থ্যাংক য়্যু আঙ্কেল। আমি ভাবতেই পারিনি আপনি সবকিছুকে এত সহজ ভাবে দেখবেন।”
মামা বলল, “সহজ ভাবে না দেখার কি আছে? আমার ভাগ্নিটাই তো গাঁধা! বাবা তুমি খুব ভালো কাজ করছো। আর আজ বিয়ে নিয়ে তোমার কোনো আপত্তি নেই তো?”
“না, না। কি যে বলেন, আমার আপত্তি থাকবে কেন?”
“ভালো কথা, তোমার পরিবার জানে তো সবকিছু? তাদেরও খবর দাও!”
“আঙ্কেল আমার পরিবার বলতে আপনার মা। সে এখন গেছে চট্টগ্রামে বেড়াতে। আমি মাকে ফোন করে সব বলে দিয়েছি। আজকে বিয়ে হলে তার কোনো আপত্তি থাকার কথা না।”
“তাহলে তো হয়েই গেল! তুমি এক কাজ করো এখন, তোমার বন্ধু বান্ধবদের খবর দাও।”
“আমি বরং নিজে গিয়েই তাদের নিয়ে আসি।”
“তা-ই করো। এই আশফা, তুইও ওর সঙ্গে যা! তোর বান্ধবীদের নিয়ে আয়। শীলা না মিলা কি যেন নাম তোর ওই বদ বান্ধবীটার! ওটাকেও নিয়ে আসিস।”
আমি ভাঙা গলায় বললাম, “জি মামা।”

আমাদের বাসা থেকে তারিফ আমাকে নিয়ে বেরিয়ে এলো। আমরা চেপে উঠলাম একটা রিকশায়।

তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে বললাম, “এসব কি ছিল তারিফ?”
তারিফ অনিশ্চিত কণ্ঠে বলল, “কোনসব?”
“আমি তোমাকে বিয়ে করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছি না? আমি চেয়েছিলাম কাজী অফিস হয়ে বাসায় যেতে?”
“না, আমি চেয়েছিলাম।”
“তাহলে মিথ্যা বললে কেন? কতগুলো কথা শুনতে হলো তোমার জন্য।”
“আশফা, একটা কথা বলে দিলেই হয় না। কথাটা বলার আগে, সেটা বলার পরিণাম কি হবে – এই নিয়ে চিন্তা করতে হয়।”
“তো তুমি কোন পরিণামের কথা চিন্তা করে কথাটা বললে?”
“দেখো, যদি আমি তোমার মামার সামনে দাঁড়িয়ে বাংলা সিনেমার নায়কদের মতো করে বলতাম, ‘চৌধুরী সাহেব আমি আপনার ভাগ্নিকে ছাড়া বাঁচবো না! আমি আশফাকেই বিয়ে করবো, আমি যা পারেন করেন।’ তাহলে কি উনি এত সহজভাবে আমাদের সম্পর্কটা মেনে নিতেন? নিশ্চই না।”
“কেন না?”
“কারন তাহলে উনি ভাবতেন, আমি একজন খারাপ ছেলে। আর খারাপ ছেলের সঙ্গে ঘরের মেয়ের বিয়ে? প্রশ্নই ওঠে না।”
“খারাপ ছেলে ভাবতে যাবে কেন?”
“একটা ছেলে একটা মেয়েকে পছন্দ করলেই সে খারাপ ছেলে, এটাই বাঙালি পরিবারগুলোর স্ট্রেটিজি। কিন্তু যদি তাদের মেয়েই ছেলেটাকে পছন্দ করে বসে থাকে? তখন তো আর তাদের কিছু করার নেই।
বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললাম, “বুঝলাম। তা, এখন আমরা কোথায় যাচ্ছি?”
“আমার বাসায়। তোমার মামাকে তো আমাদের ব্যাপারে জানিয়ে আসলাম। এখন আমার মাকে জানাতে যাচ্ছি।”
“তুমি না বললে তোমার মা চট্টগ্রামে! ফোন করে সব জানিয়ে দিয়েছো!”
“আমার মা ঢাকাতেই আছেন এবং আমাদের ব্যাপারে কিচ্ছু জানেন না।”
আমি আবার তীক্ষ্ম গলায় বললাম, “তোমার এই মিথ্যাটা বলার পরিণাম কি হবে?”
“সেটা একটু পরেই জানতে পারবে। আর
শোনো, তোমার মামার সামনে যেমন চুপ করে ছিলে আমার মায়ের সামনেও চুপ করে থাকবে। কেবল আমার হ্যাঁ-তে হ্যাঁ মেলাবে আর না-তে না। বুঝছো?”
“জানি না। আমার মাথা একদমই কাজ করছে না।”
“কবুল বলার আগ পর্যন্ত মাথা কাজ না করলেও চলবে।”
“কি?”
“কিছু না। আপাতত তুমি মাথায় ঘোমটা টেনে বসে থাকো?”
“ঘোমটা টেনে বসে থাকো মানে? ঘোমটা দিবো কেন? আমি কি নতুন বউ না-কি?”
“আহ্, যা বলছি করো না!”

তারিফের কথামতো ওড়না দিয়ে মাথায় ঘোমটা দিলাম। মিনিট দশেকের মধ্যে পৌঁছে গেলাম তারিফদের বাড়ির সামনে। ওদের বাড়িটা দেখে আমি তো অবাক!

(চলবে)