Tuesday, July 15, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1913



psycho_is_back? part_8

0

psycho_is_back?
part_8
#apis_indica❤
তখনি কায়নাত বলে ডাকে,,
আমি মুখ উপরে তুলে দেখি একটি সুদর্শন পুরুষ আমার সামনে দাড়িয়ে আছেন।।আমার কেন যানি তাকে খুব চিনাচিনা লাগছে।।বাট মনে করতে পারছি না কই দেখেছি।।আমি আমার শরীরের কাপর ঝাড়ছি আর আড়চোখ তাকে দেখে যাচ্ছি।।নাহ্ আমার অবস্থা এখন এমন হচ্ছে পেট আছে কিন্তু মুখে নাই।।তখনি লোকটি বললে উঠে,,
—-কায়নাত! কেমন আছো? আমাকে চিন্তে পাড়ছো না?? আমি রিয়ান।।ওই যে সেদিন পার্ক আমাদের দেখা হলো।।
—-ও হে! মনে পরেছে।।আপনাকে কিভাবে ভুলতে পাড়ি।।অাপনার জন্য পুর ৩ ঘন্টা হাত ধুইতে হইসে,,শেষের কথাটি বিড়বিড় করে বললাম।।আর কথা গুলো মুখে মেকি হাসি দিয়ে বললাম।।
—-তা এখানে কেন?
—-ভার্সিটিতে মানুষ কেন আসে? এক ভ্রু উচু করে বলাম।।
তিনি মুচকি হেসে বললেন,,,
—-না না আমি বলতে চাইছি তুমি এখানে ভর্তির হয়েছে?
—-জ্বী
—-কোন ইয়ার?
—-ফার্স্ট ইয়ার।।
—-কোন সাবজেক্ট??
বিরক্ত লাগছে তার প্রশ্ন গুলো।।তাও মুখে হাসির রেশ টেনে বললাম,,
—–সাইকোলজি.. আছা আমি আসি।।
বলে পা বাড়ালাম।।
তখনি পিছন থেকে বলে উঠেন তিনি,,
—–ওহো।। আচ্ছা শুনো।।কোনো প্রব হলে আমাকে বলো আমি এখানেই পড়ি ফাইনাল ইয়ারে।।
আমি মনে মনে বললাম,,
—–তোরে কেন কমু? আমি নিজেই একাই ১০০ হুহহহহ।। কিন্তু মুখে হাসি রেখি তাহাকে বলিলাম,,
জ্বী আচ্ছা বলবো।।আসি বলে চলে গেলাম আমার ক্লাস উদ্দেশে।।

প্রথম ক্লাস নেই।।
সেমিনার হবে।।তাই হলে বসে বসে ফোন চাপ ছিলাম।।তখনি হুড়মুড় করে এসে কেউ আমাকে জড়িয়ে ধরে।। প্রথমে ভয় পেলেও।।জড়িয়ে ধরা ব্যাক্তিটিকে দেখে আমি চিৎকার দিয়ে উঠলাম।।সাথে সে ও।।
এ যে আমার প্রাণ প্রিয় #ক্রাইম_পার্টনার? লিজা।।আমি ওকে জড়িয়ে ধরে বলে উঠি,,
—তুই এখানে? এত বড় সারপ্রাইজ!!
—-হুম হুম হুম।।তুমি যেখানে, আমি আমি সেখানে সে কি জানো না! বাধা দুজনে, একই বাঁধনে, সে কি মানো না।। সুর টেনে টেনে বলতে লাগে লিজা।।
—-আমি লিজাকে টাইউলি হাগ করে বলি।।আমি যানি পাখি।।তখনি চোখ পরে লিজার সাথে থাকা মেয়েটির দিক।।মেয়েটি আমাদের দেখে হাসচ্ছে।।তখনি লিজ আমার চাহনি অনুসরণ করে তাকিয়ে হেসে দিল, আর বলতে লাগে,,
—-ও হচ্ছে তাথৈ।।আমার কাজিন।।ওদের বাসাতেই উঠেছি।। আর ওই আমাদের সাথে এই ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছে।।
—-ওহো ভালই হয়েছে।।হাই আমি কুহু।।হাত বারিয়ে বলতে লাগলাম।।
তাথৈ হাত না বারিয়ে না দিয়ে জড়ায়ে ধরল আর বলতে লাগলো,,,
—–আমি ফ্রেন্ডস ক্লাসমেটদের সাথে ফর্মালিটি পছন্দ করি না তাই তুমি টুমি বলতে পারবো না।।তাই সোজাসুজি তুই বলবো।। তোকেও বলতে হবে।।
আমি কিছুক্ষণের জন্য থ মেরে রইলাম।।আর লিজের দিক তাকালাম।।লিজ হেসে দিল।।আর বলতে লাগে,,
—–ওই এ রকমি!!
হাসতে লাগলাম সবাই।।
তারপর ক্লাস করে যে যার বাসায় চলে আসলাম ভার্সিটি থেকে।।ড্রাইভার চাচা নিয়ে এসেছেন।।ভালই কেটেছে দিনটি।।

রুমে এসে সটান করে শুয়ে পড়লাম।। আজ ক্লান্ত লাগছে খুব।। তখনি বেডের সাইডে টেবিলের উপর একটি গিফট বক্স দেখতে পেলাম।।গিফট কে দিল ভাবতে ভাবতে বক্সটি কাছে নিয়ে আসলাম।। বক্সটি খুলে তো আমি পুরাই থ হয়ে গেলাম।। একটি নিউ ব্র্যান্ডের আইফোন।। তার সাথে একটি লেটার।। ফোনটি রেখে।।লেটার টা খুললাম।।অবাক লাগছে,, এই ইন্টারনেটর যুগে লেটার আমায় কে দিল।।তার সাথে এই ফোন! তাও এত দামি।।লেটার টা খুললাম।।লেটার টা খুলতে ১৮০ বোল্ডের শকট খেলাম,, চোখ গুলো বড় বড় করে এক দফা চিঠির উপর নিচ দেখে নিলাম।।এ যে মিস্টার সাইকোর চিঠি।।উনি আমাকে চিঠি লিখেছেন বিশ্বাসী হচ্ছেনা।।
চিঠি পরে তো ভয়ে আত্মা বেরিয়ে যাওয়ার উপক্রম।। শালা সাইকো চিঠির মাঝেও সাইকোগিরি করছে।।ভাবা যায়!!!
চিঠিতে লিখা,,,!!

“”দেখ এই প্রিয় টিয়ো দিয়ে আমার পক্ষে চিঠি লিখা সম্ভব না।।তাই প্রিয় ক্যানসেল।। এখন হয়তো ভাববি চিঠি কেন লিখছি।।দেখ তোর সাথে বিগত কদিন যাবত খুব রুট ছিলাম, যানি অনেকটা কষ্টও দিয়ে ফেলেছি তোকে।।তার জন্য সরি।।আমি কাউকে কখনো সরি বলি না তুই ফাস্ট।। তাই বলে নাচতে শুরু করিস না।।আর ভার্সিটিতে গিয়েছিস বলে পেখম তুলে নাচতে হবে না।। আকাশে উঠতে হবে না।। মাটিতেই থাকিস।।আর হে ছেলেদের থেকে ১০ হাত দূরে থাকবি।।নয় তো তোর জন্য সেটা ভাল হবে না বুঝলি।। আর হে খাবার দাবার সময় মতো করবি।।সারাদিন এখানে-সেখানে ধেই ধেই করে ঘুরে বেড়াবি না।।আমি নেই বলে যা ইচ্ছে তা করবি এটা ভাবিস না আমার নজর 24/ 7 আওয়ার তোর দিকে থাকবে।। তাই বলে ভ্যাবলার মতো সিসিটিভি ফুটেজ খুঁজতে যাসনে।।আমি এতটাও চিপ মাইন্ডেড নই।। যে তোর নামে ক্যামেরা ফিট করবো।। তাই বলে এতটা ভালো নই,তো সাবধানে থাকিস।।আমার কথা বরখেলাফ হলে তোর জন্য ভাল হবে না,,যেদিন বাংলাদেশে ফিরবো তাহলে সে দিন তোর জন্য কাল হয়ে দাড়াবে।।সো বি কেয়ারফুল।।ভাল থাকিস বায়।।খুব শিগ্রই ফিরব।। “”

উনার লেটার পড়ে আমি স্তব্ধ।। এটা লেটার ছিল না ছোট খাটো হুমকি।। ?
;আল্লাহ প্লিজ সেভ মি।।
তার মানে সাইকো বাসায় নেই কিন্তু গেল কই???
জাহান্নামের চৌরাস্তায় যাক আমার কি ?।।
বাট ফোনটা সুন্দর।।ফোনটা ওন করলাম।।ক্যামেরা সেটিং দেখলাম।। বাহ স্লোমো আছে।।এখন আমার টিকটক আরো সুন্দর করতে পারবো ইয়া হু।।।
না চাইতো সাইকো তোরে ধন্যবাদ।।।
ফোনটা চার্জ দিয়ে নিচে নেমে আসলাম।।
নিচে এসে জান্তে পারলাম,বিজনেসের কারণে আব্রড গেছে তাও ২ মাসের মতো নাকি সময় লাগবে আসতে।।মামাও নাকি গেছেন সাথে।।আমার যে কি খুশি লাগছে কি বলবো।।নাচতে ইচ্ছা করছে যাই হোক।।দু মাস শান্তি পাবো তো।।

পরের দিন ভার্সিটিতে গেলাম।।
আজ ভার্সিটিতে তেমন ক্লাস ছিল না তাই, লিজ, আমি, তাথৈ মিলে পার্ক চলে আসলাম।।
কতক্ষণ ঘুরলাম তারপর ফুচকা খেতে গেলাম।। ;ফুচকা খাওয়া শেষে একটা লেকে ধারে হাটতে লাগলাম তিনজনে।। এর মাঝে লক্ষ করলাম,,দুটি ছেলে আমাদের কখন থেকে পিছু নিয়েছে।। প্রথমে মনের ভুল ধারণা ভেবে এগুলোর করলাম।। কিন্তু পরবর্তীতে দেখি আমরা যেখানে দেখে তারাও সেখানে সেখানে।। এবার ডাউট হলো।। তাথৈ আর লিজকে সব বললাম।। তারাও খেয়াল করলো।।তারপর আরো কনফার্ম হওয়ার জন্য তাথৈ বলে উঠলো,,,
—-এক কাজ করি আমরা সামনে গিয়ে ওই গাছটা লুকিয়ে পরি।।যদি তারা আমাদের খুজে তাহলে আমরা কনফার্ম হয়ে যাব তা আমাদের ফলো করছিল।।
যা ভাবা তাই কাজ।।আমরা সামনে গিয়ে লুকিয়ে পড়লাম।।লুকিয়ে দেখতে লাগলাম।।তখনি বুঝতে পারলাম আমাদের ফোলো করছে।।তখনি আমাদের ছেলে গুলো না পেয়ে কাউকে কল করলো।।
তারপর তারা সেখান থেকে চলে গেল।।
আমরা যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলাম।। মজাও লাগছিল তাদের আমরা মজাটা দেখালাম।। তারপর আমরা হাসিহাসি করতে করতে চলে গেলাম।।

এভাবে কেটে যায় কিছুদিন।। হাসি ঠাট্টা তামাশা করে দিন পার করলাম আমরা।।এরি মাঝে কিছু নিউ ফ্রেন্ডস হইসে।।আর রিযানের সাথে ভাল ফ্রেন্ডশিপ হয়েগেছে।।তিনি ভার্সিটিতে অনেক হেল্প করেন আমাদের।।

রাতে পড়তে বসেছি।।নতুন বই সব কিছু ঘেটে ঘেটে দেখছি।। তখনি টুংটাং করে আমার ফোন বেজে উঠলো।। ফোনটা রিসিভ করতেই।।ফোনের ওই পারের ব্যাক্তিটির ভয়েস শুনে জমে গেলাম ভয়।।ব্যক্তিটি রীতিমতো ধমকানি শুরু করেছে।। আমি সাথে সাথে ফোন কেটে দিলাম।।আর তখনি একটি মেসেজ আসলো ফোনো।।কাঁপাকাঁপা হাতে ফোনটি তুলে স্ক্রিনে মেসেজটি দেখে আরো ভয় লাগতে লাগলো।। আবার কল আসলো।। ফোন রিসিভ করতেই,,,,

চলবে,,,?
((আমি জানি আমি খুব পচা?।। প্রতিদিন স্টোরি দি না।।আসলে সমস্যাটা হচ্ছে আমার গল্পের থিম সাজাতে সময় লাগে।।হুট হাট মাথায় আসেনা।।চিন্তা করে লিখতে হয়।।আবার ভুল হলে কাটতে হয়।।এভাবে আমার পরে লিখতে ইচ্ছা করে না।। তাই লেট হয়।।তার জন্য সরি মন থেকে।।কিন্তু প্রতিদিন দিতে না পারলেও একদিন পর পর দিবো ইনশাআল্লাহ❤।।কেমন হচ্ছে জানাবেন? ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।।আর নেক্সট পার্ট পরশু পাবেন।। ভালো থাকবেন।। সবাইকে মাহে রমজানের শুভেচ্ছা ?))

Psycho_is_back? part_7

1

Psycho_is_back?
part_7
#apis_indica❤
এভাবেই চলে গেল এক সপ্তাহ।।
সাইকো আমাদের তার সাথে তাদের বাসায় নিয়ে আসে একেবারের জন্য।।আমার এতটুকু পরিমাণ ইচ্ছে ছিলনা তার বাসায় আসার।।কেনই বা থাকবে? উনি আমার সাথে ওই দিন কি কাজটা করলেন??এখনো কামড়ের দাগটি রইয়েই গেছে।।যত দিন এই দাগটি থাকবে ততদিন আমি ওই কথা চাইলেও ভুলতে পারবো না।।
ওই দিনের পর থেকে আমি তার সাথে কথা বলি না।।ইগনোর করি তাকে।।যেখানে তিনি সেখানে আমি আমার ছায়া ফেলি না।।কিন্তু তিনি আমার সাথে এ কদিনে অনেক বার কথা বলার ট্রাই করেছেন।।কিন্তু পারে নি।।
এদিকে আমার ভর্তির সময়ও চলে আসে।।মামা আমাকে একটি প্রাইভেট ভার্সিটিতে ভর্তি করিয়ে দেন।।কাল থেকে আমাদের ক্লাস শুরু।।তাই আর এসব বাদ দিয়ে এখন আমি আমার লাইফে ফোকাস করি।।

দুপুরবেলা ?

খাবার টেবিল বসে আছি।।আন্টি মা খাবার দিচ্ছেন।।নানুমার শরীরটা ইদানীং ভাল না তাই তিনি রুমেই খেয়ে নিয়েছেন।।আর মামা অফিসে।।
খাবার টেবিলে আমি আর আন্টি মা খাচ্ছি।।আর নানা রকম গল্প করছি।।তখনি হুড়মুড় করে বাসায় ঢুকে ইউসুফ ভাইয়া।।আমাদের দিকে একবার তাকিয়ে উপরে চলে গেলেন তিনি।।আন্টি আর আমি তো থ পুরাই।।মনে হচ্ছে অনেক রাগ করে আছেন।।তাতে আমার কি!
আমাদের খাবার শেষে উঠতে যাবো তখনি আন্টি মা বলতে লাগলেন,,
—-আম্মু একটু কষ্ট করে তোমার ভাইকে নিচে খেতে আসতে বলে আসো।।
আমি কি বলব ভাবচ্ছি! আন্টিকেতো মানাও করতে পারবো না।।
তাই মুচকে হেসে মাথা নাড়াইলাম।।

সাইকোর রুমের সামনে দাড়িয়ে আছি!
কি করবো ভাবচ্ছি? ঢুকবো কি ঢুকবো না?
তখনি ভিতর থেকে ইউসুফ গম্ভীর কণ্ঠে বলে ওঠে,,
—-ওখানে দাঁড়িয়ে কি করছিস? কিছু বলবি?
—-ইয়ে মানে! আন্টি খাবারের জন্য নিচে যাইতে বলছে আপনাকে! বলেই চলে যেতে নেই ওমনেই হাতে হেচকা টান মেরে একদম তার কাছে নিয়ে আসে।।আমি ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলছি।।আর তার সাথে কাপাকাপি ফ্রী।।আমি ভয়ে চোখ বন্ধ করে আছি।।উনি তখন আমার দু বাহুতে চেপে ধরে বলতে লাগে,,,
—-খুব সাহস বেরেছে তাই না তো??আমাকে ইগনোর করছিস।।হুমমমম!! বার বার কেন আমাকে রাগাস বলতো।।
—–আমি কি করেছি আআআপনাকে?? ছাড়েন আমাকে প্লিজ।।ব্যথা পাচ্ছি হাতে।। কান্না করতে করতে বললাম।।
—–আমাকে ইগনোর করার আগে মনে ছিল না!! দাঁতে দাঁত চেপে বললেন।।
তখনি আমার রাগ উঠে গেলে,, তাকে ধাক্কানোর পর যখন তাকে সরাতে পারছিলাম না,, তখনি চিৎকার করে বলতে লাগলাম,,,
—–কি পেয়েছেন? হে আমাকে! আপনি আমাকে ছাড়ুন নয়তো আন্টিকে আমি সব বলে দেব।।হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বললাম।।
তখনি তিনি আরো জোরে ধরলেন হাত আর সাথে আমাকে তার আরো কাছে নিয়ে আসলেন।।আর আরেক হাত দিয়ে কোমরে চেপে ধরলেন জোরে।মনে হচ্ছে তার নখ আমার জামার উপর দিয়েই গিথে যাচ্ছে শরীরে।। আমি আরো জোরে কেঁদে দিলাম।।আর কাঁদতে কাঁদতে বলে উঠলাম,,,
—–আমি আন্টি মাকে সব বলে দিব।।আপনি একটা অসভ্য।।
তখনি তিনি আমার হাত ছেড়ে দিলেন।।আমি হাত ছাড়া পেয়ে তাকে ধাক্কা দিতে লাগলাম।।কিন্তু ব্যর্থ হচ্ছি।।উনি আমার কোমরে একি ভাবে ধরে আছেন।।আমার কথা গুলো শুনে তিনি এক পাশে হেসে অন্য হাত দিয়ে আমার গালে হাত রাখলেন।।উনার এমন কাজে ভয় আরো বারতে লাগে।।কি করতে যাচ্ছেন বুঝতেসি না।।আমার কান্না তখন াআপনিতেই বন্ধ হয়ে গেছে।।কিন্তু চোখ দিয়ে পানি পড়ছেই।।তিনি ধীরে ধীরে আমার গালে তার হাত দিয়ে স্লাইড করতে করতে নিচে আমার ঘাড়ের পিছনে নিয়ে গেলেন।।আর ধীরে ধীরে আমার ঘাড়ের উপর থেকে চুলের কাছে নিয়ে আসলেন।।উনার এই কাজে আমার কাতুকুতু লাগছে অনেক।।অন্য সময় হলে হয়তো হেসে দিতাম।।কিন্তু এখন বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছি তার দিকে।।তখনি চুলে টান অনুভব করি।। কারণ উনি আমার কিছু চুল তার হাতের মুঠে নিয়ে আমাকে তার আরো কাছে নিয়ে আসে।।আর আমি আমার চুল ছাড়াতে ব্যস্ত হয়ে পড়ি।। ব্যথায় আমার জান বের হয়ে যাচ্ছে।। তখনি তিনি আমার কোমর থেকে হাত সরিয়ে আমার নিচের ঠোঁটে তার হাত দিয়ে জোড়ে চেঁপে ধরে বলতে লাগেন,,,
—–বাহহহ। তাই নাকি কি বলবি? তা মমকে কি বলবি?? কি অসভ্যতা করেছি তোর সাথে??তোর এই গোলাপী ঠোঁটে কিস করেছি?? নাহ তো গলায় লাভ বাইট দিয়েছি।?? নাকি তোর বুকে…..??
আমি উনার আমার ঠোঁটের উপর থেকে সরিয়ে নিজের সব শক্তি দিয়ে ধাক্কা মারলাম।।তাতে উনি আমার থেকে কিছুটা দূরে সরে গেলেন।।আর আমি সাথে সাথে দৌড় দিতে লাগলাম।।কিন্তু ব্যর্থ হলাম।।উনি আমার চুলের ধরে টান দিলেন জোড়ে।।। আর আমি তার কাছাকাছি এসে পরি।।আর উনি আমার চুল ছেড়ে আমার হাত ধরে টেনে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে ফিসফিস করে বলতে লাগলেন,,,
—–আমি তো তোর সাথে অসভ্যতামি করেছি তাই না? তুই জানিস অসভ্যতামি কি?? এখন যদি তোর ঠোঁটে চুমু খাই! তোর গায়ে জায়গায় জায়গায় টাচ করি তাহলে হবে অসভ্যতামি।।এখন বল! করবো??
—–না না।।ভাইয়া প্লিজ আমাকে ছেড়ে দেন।। আমি কিছু বলব না কাউকে।। প্লিজ।। জোড়ে জোড়ে কেঁদে দিলাম এবার।।
তখন তিনি ধীরে ধীরে বলতে লাগেন,,
—– এক শর্তে!
তিনি আমার সামনের চুল গুলো কানের পিছনে গুজে দিতে দিতে বললেন।।
আমি কাপা কাপা কন্ঠে বলতে লাগি,,,
—-কি??
তখনি তিনি বলতে লাগেন আমার চোখে পানি মুছে দিতে দিতে,,,
—-আজকের পর থেকে আমি যা বলব সব শুনতে হবে।।উঠতে বললে উঠবি।। বসতে বললে বসবি।।বাঁকা হেসে বলতে লাগেন তিনি।।
আমি মাথা ঝাঁকালাম।।তখনি তিনি ছেড়ে দিলেন।।আমি দৌড়ে আমার রুমে চলে আসি।।
আর বালিশে মুখ গুজে কাঁদতে লাগি।।
কেন এমন করেন উনি আমার সাথে।।
আমি থাকবো না এ বাসায়।।আমি বাসায় যাবো।।
আম্মু আমি থাকবো না।।তোমার কাছে নিয়ে যাও প্লিজ ?।।

আজ ভার্সিটিতে যাচ্ছি।।
সাইকো সাথে করে নিয়ে যাচ্ছে।।উনি ড্রাইভ করছেন আর আমি তার পাশে বসে, বাহিরে তাকিয়ে আছি।।মামার আজকে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল।।বাট মামার কাজ পরে যাওয়াতে সাইকোটাই নিয়ে যাচ্ছে।।তিনি আমার সাথে নানান কথা বলে যাচ্ছেন।।আমি শুধু হু হা আর মাথা নাড়িয় উওর দিচ্ছি।।কালকে উনি আমার সাথে যা করেছেন তার জন্য আমি তাকে কখনো ক্ষমা করবো না।।কিন্তু তাই বলে আর রিস্ক নিতে চাই না।।তাই যা জিগাসা করেন উওর দিচ্ছি।।
উনি আমাকে নানান রকম উপদেশ দিয়ে যাচ্ছেন যা আমি এক কান দিয়ে ঢুকাচ্ছি তোনআরেক কান দিয়ে বের করছি।।

ভার্সিটির গেটের সামনে এসে গাড়ি থামালেন।।
আমি নেমে যেতে নিলেই তিনি বলতে লাগেন,,,
—–অল দ্যা বেস্ট।।
আমি মুচকি হাসি দিলাম।।
উনি চলে গেলেন।।আমি গেট দিয়ে ঢুকতেই।।
কিছু একটার সাথে বেজে ধাড়াম করে নিচে পরে গেলাম।।
তখনি,,,,,

চলবে,,,
(ভুল ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন)

অস্পষ্টতা – শেষ পর্ব

0

#অস্পষ্টতা
শেষ পর্ব

লেখা : শঙ্খিনী

তারিফ বলল, “আশফা? তোমার মনে কখনো প্রশ্ন জাগেনি, নিজের বাড়ি, নিজের কোম্পানি, নিজের মাকে ফেলে আমি এখানে চলে এসেছি কেন? কেন এসেছিলাম জানো? তোমার থেকে দূরে থাকার জন্য। তোমাকে ভালোবাসে, তোমার থেকে অল্প দূরত্বে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না। তাই দূরত্বটা কয়েক শ গুন বাড়িয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু দেখো, তুমি নিজেই আবার সেই দূরত্ব কমিয়ে দিয়ে আমার কাছে চলে এলে।”
আমি হতভম্ব হয়ে বললাম, “ভালোবেসে?”
“ভালোবেসে। মনে আছে ডিভোর্সের সময় তোমাকে কি বলেছিলাম? বলেছিলাম আমি একটু শান্তিতে বাঁচতে চাই, ভালোভাবে বাঁচতে চাই। সত্যিটা কি ছিলো জানো? আমি চেয়েছিলাম তোমাকে ভালোভাবে বাঁচার সুযোগ করে দিতে। ভেবেছিলাম আমি এক বিরক্তির বিষয় তোমার কাছে। আমি আশেপাশে থাকলে তুমি অশান্তিতে থাকো। তোমাকে শান্তি দিতেই ডিভোর্সের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আমি। সেদিন বলছিলে না, দেশের মাটি ছেড়ে বেশিদিন দূরে থাকলে তোমার অস্বস্তি লাগে। অস্বস্তি কিন্তু আমারও লাগে আশফা। কিন্তু একটা বছর ধরে, তুমি শান্তিতে আছো ভেবে আমিও আমেরিকায় ভালো ছিলাম।”

আমি নিস্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে আছি তারিফের দিকে। জীবনের সকল অস্পষ্টতা এক নিমিষেই দূর করে দিলো ছেলেটা!

তারিফ আবার বলতে লাগলো, “খেয়াল করেছ? এখানে আসার পর থেকে একবারও তোমাকে জিজ্ঞেস করিনি, যে তুমি কেমন আছো? আমি জানি তুমি ভালো নেই আশফা। জানো কবে বুঝতে পেরেছিলাম, তুমি ভালো নেই? যেদিন বাংলাদেশে বসে আমার সঙ্গে ফোনে কথা বলেছিলে তুমি। মুখে বলোনি, কিন্তু বুঝতে পেরেছিলাম।”
আমি বেশ অনেকক্ষণ চুপ করে থেকে অবাক গলায় বললাম, “কিভাবে? থট রিডার তুমি?”
“না আমি থট রিডার না। কিন্তু তোমার মন পড়ার ক্ষমতা কিন্তু এখনো আমার আছে।”

এই কথাটা শুনে আবার আমার চোখ বেয়ে অঝরে জল পরছে।

তারিফ বলল, “প্রথম যেদিন জানতে পারলাম আমি কোভিড পজিটিভ, জানো তেমন কোনো প্রতিক্রিয়াই কাজ করেনি আমার মধ্যে। মনে হয়েছিল, বাঁচলে বাঁচবো মরলে মরবো। এ আর এমন কি? কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, আমাকে বাঁচতেই হবে। মরে যাওয়া যাবে না। এই ঝরের দিন সমস্ত বাধা উপক্রম করে যে মানুষটা আমার পাশে এসে দাড়িয়েছে, তার জন্যে হলেও বাঁচতে হবে। আশফা জানি না, কোনোদিনও এই দরজার বাইরে বেরিয়ে মুক্ত আকাশের নিচে দাড়াতে পারবো কিনা। যদি পারি, তবে তোমার হাতদুটো ধরেই দাড়াবো। তুমি আমাকে গ্রহণ করো বা না-ই করো। আমি সারাটাজীবন তোমার হয়েই থাকবো। তোমার ভালোবাসা, তোমার যত্ন, তোমার শাসন ছাড়া আমার যে কোনো অস্তিত্বই নেই।”
আমি আবার অনেক্ষণ চুপ করে থেকে কাঁদতে কাঁদতে বললাম, “একটু বেশি জ্বর এসেছে বলে এতগুলো ইমোশনাল কথা বলতে হয় কেন তোমার?”

এই কথাটা শুনে তারিফ হেসে দিলো। আমি কাচের দরজাটার ওপর হাত রাখলাম। ওপাশ থেকে সেও দরজার ঠিক একই জায়গায় হাত রাখলো। এই দরজাটাই এখন এখন আমাদের মধ্যকার একমাত্র দূরত্ব। এ দূরত্বকে কেটে যেতেই হবে।

এই ঘটনার পর দুদিন কেটে গেল। তারিফের জ্বরটা একেবারে সেরে গেল।

আজ খুব ভোরে আমার ঘুমটা ভেঙে গেল। এত ভোরে তারিফের সঙ্গে দেখা করতে গেলে কোনো লাভ হবে না। স্যার নিশ্চয়ই এখনো ঘুমাচ্ছেন। তাই চলে গেলাম বাগানের ফুল গাছ গুলোতে পানি দিতে। আমার মায়ের নিজ হাতে লাগানো গাছ। গাছগুলোর সঙ্গে নিশ্চয়ই তার ভালোবাসা জড়িয়ে আছে।

ফোনটা ঘরেই ফেলে এসেছিলাম।

সুইটি ভেতর থেকে চিৎকার করে আমাকে বলল, “আপা! আপনার ফোন বাজে!”

আমি দৌড়ে গেলাম ফোনের কাছে। আমার এই নম্বরে এই সময়ে একটা মানুষই ফোন করতে পারে, সে হলো তারিফ। তারিফের নাম দেখে আমি সঙ্গে সঙ্গে ফোন তুললাম।

ব্যস্ত গলায় বললাম, “হ্যাঁ তারিফ, বলো!”
তারিফ শুকনো গলায় বলল, “একটা খারাপ খবর আছে।”
“খারাপ খবর? কি?”
“দ্বিতীয়বার টেস্ট করলাম না?”
“হ্যাঁ!”
“রেজাল্ট এসেছে এইমাত্র!”
আমি চিন্তায় অস্থির হয়ে বললাম, “সব ঠিক আছে তো তারিফ?”
“বুঝতে পারছি না।”
“কি এসেছে রেজাল্ট?”
“নেগেটিভ।”
আমি আনন্দে আত্নহারা হয়ে হাসতে হাসতে বললাম, “এই ছেলে, এটা খারাপ খবর?”
“আমার জন্য তো খারাপ খবর!”
“কেন?”
“এখন আর তোমার আদর যত্ন পাবো না।”
“খুব জেনে বসে আছো না? কোথায় তুমি এখন?”
“আপাতত বাসায়। তোমাকে একটা অ্যাড্রেস পাঠাচ্ছি। এক ঘণ্টার মধ্যে সেখানে চলে যাও!”

তারিফ যে জায়গাটার ঠিকানা পাঠিয়েছে, সেটা আসলেই অনেক সুন্দর। লেকের পাড়ে গাছপালায় ঘেরা এক পার্ক। জনমানবশূন্য এই পার্কে আমি একা দাঁড়িয়ে আছি। অপেক্ষা করছি স্যারের জন্য। ঢাকা থেকে একটাই মাত্র শাড়ি নিয়ে এসেছিলাম। সেই লাল শাড়িটাই পরেছি আজ।

অপেক্ষা করতে করতে হঠাৎ দেখতে পেলাম তাকে। সেই চিরচেনা হাসি ঠোঁটে নিয়ে এগিয়ে আসছে আমার দিকে। আমি স্তম্ভিত হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। বিগত একটা বছর ধরে শুধুমাত্র এই মুহূর্তটার অপেক্ষায় ছিলাম আমি। কিন্তু এভাবে দাঁড়িয়ে থাকলে চলবে না-কি? কিছু একটা তো করা উচিত।

এরই মধ্যে হাঁটতে হাঁটতে এসে আমার মুখোমুখি দাড়ালো।

আমি থেমে থেমে বললাম, “তোমাকে জড়িয়ে ধরতে পারি তারিফ?”

কথাটা বলার পর আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই তারিফ আমাকে জড়িয়ে ধরলো। আমি আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম তাকে।
প্রাণশক্তি ফিরে পেলাম যেন। নতুন করে বেঁচে থাকার শক্তি এলো আমার প্রাণে। তারিফ আমার কাছে এক ভয়ঙ্কর আসক্তি। যে আসক্তি থেকে কখনো নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখতে ইচ্ছে করে না।

অনেকটা সময় এভাবে থাকার পর তারিফ কান্নাজড়িত কণ্ঠে আমাকে বলল, “আশফা? আমাকে দেশে নিয়ে চলো।”
আমি সঙ্গে সঙ্গে বললাম, “হুঁ!”
“মায়ের কাছে নিয়ে চলো।”
“হুঁ!”
“তোমার কাছে নিয়ে চলো।”
“তারিফ? আমাকে ক্ষমা করতে পারবে আমায়?”
“ক্ষমা করার মতো কোনো অপরাধ কি তুমি করেছো?”
“করিনি?”
“না তো!”
“তাহলে করিনি। এখন একটা কথা জিজ্ঞেস করি?”
“হুঁ!”
“উইল ইউ ম্যারি মি অ্যাগাইন?”
তারিফ সঙ্গে সঙ্গে বলল, “না!”
আমি মন খারাপ করে বললাম, “না?”
“না মানে, অফকোর্স আই উইল ম্যারি ইউ। কিন্তু তোমার প্রপোজাল একসেপ্ট করতে পারবো না। আগেও আমি প্রথমে প্রপোজ করেছিলাম এবারো আমি প্রথমে করবো।”

আমরা দুজনেই হেসে উঠলাম।

আজকের দিনটা আমাদের দুজনের জীবনেরই শ্রেষ্ঠ দিন। স্বপ্নেরও কখনো ভাবতে পারিনি আমার ভালোবাসাকে আবার ফিরে পাবো। আমাদের মধ্যে যতই মান অভিমান, যতই ভুল বোঝা বোঝি থাকুক না কেন দিন শেষে পরস্পরকে অসম্ভব ভালোবাসি। জগতের সকল সত্য মিথ্যা প্রমানিত হলেও, এই ভালোবাসার সত্যতা কখনো হারিয়ে যাবে না। এই দুর্যোগকালীন সময়টা আমাদের ভালোবাসার সাক্ষী হয়ে থাকবে আজীবন।

আজকে সারাদিন খোলা আকাশের নিচে প্রাণ খুলে নিশ্বাস নিবো, তারিফের হাত ধরে ঘুরে বেড়াবো এই স্বপ্নের শহরে। আর সবশেষে, মনে এক রাশ ভালোবাসা নিয়ে ফিরে যাবো আমাদের সেই পুরনো নীড়ে, জীবনের নতুন এক অধ্যায় লিখতে।

(সমাপ্ত)

অস্পষ্টতা – পর্ব : ১৪

0

#অস্পষ্টতা
পর্ব – ১৪

লেখা : শঙ্খিনী

একটা মানুষ যখন কঠিন কোনো রোগ থেকে সেরে ওঠে, তখন চারপাশের সকল কিছুই তাকে মুগ্ধ করে। আমিও এক কঠিন রোগ থেকে সেরে উঠেছি, মনের রোগ। শরীরের রোগের মতো, মনের রোগটাও কিন্তু বড় এক রোগ। তারিফের সঙ্গে কথা না বলতে পারা, চাইলেই ওকে দেখতে না পারা আমার কাছে এক বিশাল রোগ। তবে এখন সেই রোগ থেকে আমি মুক্ত। তাই নিউইয়র্ক সিটির রাস্তা দিয়ে হাঁটছি আর মুগ্ধ হচ্ছি।

হেঁটে হেঁটে তারিফের জন্য খাবার নিয়ে ওর বাসায় যাচ্ছি। ওর বাসার সামনে গিয়ে খানিকটা চমকে উঠলাম। এক আমেরিকান ভদ্রলোক দরজার সামনে দাঁড়িয়ে তারিফের সঙ্গে।

আমি অনিশ্চিত মুখে ছোট ছোট পা ফেলে সেদিকে এগিয়ে গেলাম।

আমাকে দেখে তারিফ হাসিমুখে লোকটাকে বলল, “এন্ড্রু মিট মাই ওয়াইফ, আশফা।”

আমি একটা মুহূর্তের জন্য নিস্তব্ধ হয়ে গেলাম। তারিফ কি বলল? ওয়াইফ! আমাকে এখনো নিজের স্ত্রী মনে করে তারিফ! আনন্দে আমার চোখে জল চলে আসার উপক্রম।

লোকটা আমাকে বলল, “নাইস টু মিট ইউ!”
আমি নিজেকে সামলে নিয়ে হাসি মুখে বললাম, “নাইস মিটিং ইউ টু!”
লোকটা এবার তারিফকে বলল, “ইউ বেটার টক টু ইউর ওয়াইফ, তারিফ। এই উইল সি অনাদার ডে। টেক কেয়ার।”
তারিফ বলল, “থ্যাংক ইউ, সি ইউ লেটার।”

লোকটা যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমি ব্যস্ত ভঙ্গিমায় বললাম, “এই তুমি তখন কি বললে?”
“সি ইউ লেটার!”
“না, না তার আগে। আমার পরিচয় করিয়ে দেওয়ার সময়। আমি তোমার কে হই?”
“ওহ্, আচ্ছা। কেন ওয়াইফ বলে পরিচয় দিয়েছি বলে মাইন্ড করেছো না-কি?”
আমি ইতস্তত হয়ে বললাম, “মাইন্ড করবো কেন? আসলে… আচ্ছা বাদ দাও! লোকটা কে ছিলো?”
“এন্ড্রু। আমার কলিগ। বেচারার আপন বলতে কেউ নেই। তার বাবার সঙ্গে থাকে, কিন্তু বাবা পক্ষাঘাতগ্রস্ত।”
“পক্ষা হোয়াট?”
“পক্ষাঘাতগ্রস্ত।”
“সেটা আবার কী?”
“প্যারালাইজড।”
“ওহ্! কি আজব! এত কমন একটা শব্দের বাংলা অর্থই জানতাম না এতদিন। কি করলাম জীবনে!”
“করোনাটা আসাতে এক দিক দিয়ে ভালোই হলো। মানুষ নিজের জন্যে সময় পাচ্ছে, পৃথিবীর জন্য সময় পাচ্ছে, চারপাশের পরিবেশের জন্য সময় পাচ্ছে। কালকে সারারাত বসে, ডিকশনারি ঘেটে ঘেটে এ ধরনের শব্দগুলো বের করেছি। করোনা না হলে আমার মতো মানুষ ডিকশনারি হাতে বসে আছে, দৃশ্যটা দুর্লভ।”
আমি মৃদু হেসে বললাম, “তোমার সেকেন্ড টেস্ট করতে কবে আসবে?”
“আসবে। দুই সপ্তাহ হয়নি তো এখনো।”
“ও হয়নি? আচ্ছা, মা তোমাকে ফোন করেছিল আজকে?”
“হুঁ।”
“খুব টেনশন করে না?”
“করত। তুমি এখানে আসার পর থেকে আর করে না। বলে, আমার মেয়ে এখন ওখানে আছে, দেখবি ঠিকই তোকে সুস্থ করে তুলবে!”
আমি হাসতে হাসতে বললাম, “এখানে কিভাবে যে এতদিন ধরে আছো কে জানে! নিজের দেশ ছেড়ে অন্য কোথাও থাকতে ভালো লাগে?”
“কেন তোমার ভালো লাগছে না?”
“নাহ্, অল্প কিছুদিন হলো এখানে এসেছি। এরমধ্যেই অস্বস্তি লাগছে। দেশের মাটিতেই আলাদা একটা ব্যাপার আছে। এখানকার মাটিতে সেটা নেই।”
“কারন এখানে মাটিই নেই, সব কংক্রিট। আসলে…”
আমি হঠাৎ তারিফকে থামিয়ে দিয়ে বললাম, “এক সেকেন্ড!”
“কি?”
“কালকে সারা রাত তুমি ডিকশনারি নিয়ে বসে ছিলে?”
“হ্যাঁ।”
“তার মানে সারা রাত ঘুমাওনি?”
তারিফ ইতস্তত হয়ে বলল, “না, না। আসলে হয়েছে কি…”
“আচ্ছা, তোমার এই ফালতু অভ্যাসটা কবে যাবে একটু বলো তো? আমি শুধুমাত্র একটাই রিকুয়েস্ট করেছিলাম, প্লিজ নিয়ম গুলো ফলো করে! কিন্তু না, রাত না জাগলে স্যারের চলবে কিভাবে?”
তারিফ অসহায় গলায় বলল, “আচ্ছা আমাকে বকাঝকা না করলে কি তোমার দিনটা ভালো কাটে না?”

আমি রাগী দৃষ্টিতে তাকালাম ওর দিকে। কিন্তু রাগটা ধরে রাখতে পারলাম না। খিলখিল করে হেসে উঠলাম।

আমি আবার বললাম, “আচ্ছা এই ফুলের টবগুলো কি তোমার পছন্দ করা?”
“হুঁ।”
“তোমার চয়েজ খুবই খারাপ।”
“তুমিও কিন্তু আমার চয়েজ ছিলে?”
“আমি কি খুব ভালো ছিলাম?”

আমরা দুজন আবার হেসে উঠলাম। ছোট ছোট ব্যাপার নিয়ে ঠাট্টা করা আমাদের বন্ধুকালীন অভ্যাস।

আমাদের দিনগুলো এভাবেই কেটে গেল। তারিফের ভালোবাসা কোনোদিন ফিরে পাবো কিনা জানি না, তবে এর মধ্যে আমার হারিয়ে যাওয়া বন্ধুকে খুঁজে পেয়েছি। বন্ধুত্ব হলো অসাধারন একটা সম্পর্ক। আমার আর তারিফের মধ্যে এই অসাধারন সম্পর্কটা ছিল।

এয়ারপোর্টের পিছনের পার্কে দেখা করা, গল্প করা, হাত ধরা, কাধে মাথা রাখার দিনগুলোর একটা আভাস পেতে শুরু করেছি।

আজ খুব ভোরে ঘুম ভেঙে গেল। কি যেন মনে করে তারিফকে এমএমস পাঠালাম, “আজকে কেমন লাগছে?”
কিছুক্ষণের মধ্যেই স্যারের রিপ্লাই এলো, “জানি না।”

আমি চিন্তায় অস্থির হয়ে সঙ্গে সঙ্গে ওকে ফোন করলাম।

তারিফ ফোন তুলতেই আমি ব্যস্ত গলায় বললাম, “তারিফ? ঠিক আছে তুমি?”
“ঠিকই আছি, হালকা জ্বর জ্বর লাগছে।”
“আমি এখনি আসছি।”
“এত ব্যস্ত হতে হবে না আশফা…”

তারিফ কথা বাড়ানোর আগেই আমি ফোন রেখে দিলাম। তারিফের একটা বাজে স্বভাব হলো, নিজে হাজার কষ্ট পেলেও মুখে বলবে “তেমন কিছু হয়নি।”

আমি প্রায় ছুটে গেলাম ওর বাড়িতে। কলিংবেল চাপতেই দরজার সামনে এসে দাঁড়ালো তারিফ। তবে আজ তাকে খুব অন্যরকম লাগছে। অনেক বিপর্যস্ত বলে মনে হচ্ছে।

আমি ব্যস্ত গলায় বললাম, “জ্বর কি অনেক বেশি? জ্বর মেপেছো তুমি? এখনি থার্মোমিটার নিয়ে আসো!”
“আশফা, আশফা শান্ত হও। মেপেছি।”
“কত? কত জ্বর?”
তারিফ অস্পষ্ট গলায় বলল,“এক’শ দুই।”
“হায় আল্লা!”
“তেমন কিছু না, এখনি ঠিক হয়ে যাবে।”
“তুমি চুপ করো তো! পালস্ চেক করছো? পালস্ কত?”
“পালস্ ঠিক আছে।”
“কত?”
“ছিয়ানব্বই।”
“এই তুমি ঘরে গিয়ে রেস্ট নাও তো! আর ওই ওষুধটা তো শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। কালকেই শেষ হয়ে গিয়েছিল না? তুমি আমাকে বলোনি কেন?”
“ওষুধ আছে আশফা। তুমি একটু শান্ত হবে?”
আমি কাঁদতে কাঁদতে বললাম, “কিভাবে শান্ত হবো আমি? কিভাবে হবো? বলতে পারো? এখনো দাঁড়িয়ে আছো কেন? যাও রেস্ট নাও!”
তারিফ অসহায় গলায় বলল,“আশফা, শান্ত হয়ে আমার একটা কথা শুনবে প্লিজ?”
“কী কথা?”

(চলবে)

অস্পষ্টতা – পর্ব : ১৩

0

#অস্পষ্টতা
পর্ব – ১৩

লেখা : শঙ্খিনী

সন্ধ্যার দিকে হঠাৎ দেখি ফোনটা বেজে উঠলো আমার। ‘এ সময়ে আবার কে ফোন করলো’ ভেবে খানিকটা চমকে গেলাম। আরও বেশি চমকে গেলাম, যখন দেখতে পেলাম ফোনটা করা হয়েছে আমেরিকান নম্বর থেকে।

আমি ভয়ে ভয়ে ফোনটা তুললাম।

কাঁপা গলায় বললাম, “হ্যালো? হু’স স্পিকিং?”

শুনতে পেলাম আমার অতি পরিচিত এক কণ্ঠ। আমার তারিফের কণ্ঠ।

“থ্যাংক ইউ।”
আমি চমকে উঠে বললাম, “তারিফ? এই নম্বর তুমি কোথায় পেলে?”
“ভুলে যেও না, এখন কিন্তু আমি তোমার প্রতিবেশী। নম্বর জোগাড় করাটা কোনো ব্যাপার না।”
“মা দিয়েছে না?”
“হুঁ।”
“আমি মানা করলাম তোমাকে বলতে, কিন্তু কোনো কথাই শুনলো না!”
“কেন? মানা করেছিলে কেন?”
আমি অস্পট গলায় বললাম, “না, মানে… আচ্ছা এসব বাদ দাও! তুমি কেমন আছো?”
“কোভিড নাইনটিন পজিটিভ, ভালো থাকি কিভাবে?”
“শরীর যে ভালো নেই সেটা কিন্তু আমিও জানি। আমি জিজ্ঞেস করছি মনের কথা। মন কেমন আছে?”
বেশ অনেক্ষণ চুপ করে থেকে শুকনো গলায় তারিফ বলল, “আমি জানি না আশফা।”

আমি আবার চমকে উঠলাম। আজ অনেকদিন পর আমাদের স্বাভাবিক ভাবে কথা হচ্ছে। এক মুহূর্তের জন্যে মনে হলো, আবার বুঝি আগের জীবনে ফিরে এসেছি।

কথা ঘোরানোর জন্যে আমি বললাম, “তোমার সিমটমস কেমন?”
“তেমন একটা সিমটমস নেই। সারাদিন অল্প কাশি-টাশি থাকে, রাতের দিকে আবার জ্বর আসে। তাও আবার আলতু ফালতু টাইপের জ্বর। নিরানব্বই এক’শর মধ্যেই থাকে।”
“তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠো তারিফ। মিস্টার উনস্টপেবেলকে যেন এই ভাইরাস থামাতে না পারে। আমি রাতে খাবার দিয়ে যাবো।
তারিফ আবার অনেকক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, “দূর থেকে একটু দেখা করে যেও প্লিজ।”
আমি ঠোঁটের কোণে সামান্য হাসি নিয়ে বললাম, “যাবো।”

কী পরিমান আনন্দ যে হচ্ছে, ব্যাখ্যা করে বোঝাতে পারবো না। আজ আবার বন্ধুর মতো কথা বলল ছেলেটা আমার সঙ্গে। তারিফ যে আমাকে ভুলে যায়নি, আমার নামটা মনে রেখেছে, ভেবেই ধন্য মনে হচ্ছে নিজেকে।

রাতে খুব ভয়ে ভয়ে আবার গিয়ে দাঁড়ালাম তারিফের বাড়ির দরজার সামনে। আমি চিন্তায় অস্থির হয়ে আছি। ওর মুখোমুখি দাঁড়ানোর জন্য, খুব কষ্ট করে নিজের ভেতরে সাহস সঞ্চয় করেছি।

একটা লম্বা দীর্ঘশ্বাস ফেলে কলিংবেল চাপলাম।

বাড়ির দরজাটা কাচের। তাই বাইরে কেউ দাড়িয়ে থাকলে ভেতর থেকে খুব সহজেই দেখা যায়।

আমার হাত পা শক্ত হয়ে এসেছে, পা দুটো ঝিমঝিম করছে, নিশ্বাস ভারী হয়ে আসছে। আর একটু হলেই জ্ঞান হারাবো আমি।

চোখ দুটো বন্ধ করে দাড়িয়ে আছি। একটু পরে চোখ খুলে দেখতে পেলাম, দরজার ওপাশে দাঁড়িয়ে আছে তারিফ।

আমার চোখ থেকে অনবরত জল পরছে। অনেক চেষ্টা করছিলাম চোখের জল ধরে রাখতে, পারলাম না।

তারিফ আমাকে দিকে অপলক তাকিয়ে আছে।

বেশ অনেক ক্ষণ পর নীরবতা ভঙ্গ করে তারিফ বলল, “একটুও বদলাওনি তুমি।”
আমি চোখের জল মুছতে মুছতে গলার স্বর যথাসম্ভব স্বাভাবিক রেখে বললাম, “তুমিও।”
“চলে আসলে তাহলে আমার জন্য।”
আমি ইতস্তত হয়ে বললাম, “তোমার জন্য আসিনি তো। এখানে একটা জরুরী কাজ ছিল, তাই এসেছি।”
তারিফ হেসে বলল, “আশফা, তুমি মিথ্যা বলতে পারো না। চেষ্টাও কেন করো বলো তো!”
“আচ্ছা, ওসব বাদ দাও। তুমি ঠিক আছো? জ্বর টর আসেনি তো?”
“বুঝতে পারছি না।”
“বুঝতে পারছি না মানে? জ্বর মাপোনি?”
“না।”
“থার্মোমিটার নিয়ে আসো!”
“হুঁ?”
“থার্মোমিটার নিয়ে আসো, এখনি জ্বর মাপতে হবে।”
“আমি পরে মেপে নিবো…”
“তোমার কোনো কথা আমি শুনবো না, এখনি নিয়ে আসো!”

তারিফ অসহায়ের মতো থার্মোমিটার আনতে চলে গেল।

মিনিট কয়েকের থার্মোমিটার মুখে নিয়ে ফিরে এলো। জ্বর মাপা শেষ হলে যেই তারিফ মুখ থেকে থার্মোমিটার বের করলো,

আমি ব্যস্ত ভঙ্গিমায় বললাম, “এই, আগে আমাকে দেখাও!”

তারিফ বাধ্য ছেলের মতো থার্মোমিটার আমার দিকে ঘুরিয়ে ধরলো।

তারিফ বলল, “কত জ্বর?”
আমি ভালো করে খেয়াল করে বললাম, “আটানব্বই পয়েন্ট… না, না! নিরানব্বই পয়েন্ট তিন।”
“দেখলে, বলেছিলাম না আলতু ফালতু টাইপের জ্বর আসে।”
“আলতু ফালতু বলো আর যাই বলো, ঠিকমতো নিজের যত্ন নিবে কিন্তু। নিয়ম গুলো প্লিজ একটু ফলো কোরো। আর ভিটামিন সি বেশি করে খাবে। ভিটামিন সি কিন্তু শরীরে জমা থাকে না, তাই বারবার খেতে হবে। আমি লেমনেড নিয়ে এসেছি, পুরোটা খাবে!”
তারিফ তাচ্ছিল্যের ভঙ্গিতে বলল, “এতকিছু করে লাভ কি? মরেই তো যাবো!”
“বাজে কথা বলা বন্ধ করো তারিফ। কোভিড পজিটিভ হওয়া মানেই মরে যাওয়া না।”
“কি আজব একটা রোগ না! একটা মানুষকে শারীরিক মানসিক দুভাবেই নিঃসঙ্গ করে দেয়।”
“আর নিজেকে নিঃসঙ্গ ভাবতে হবে না! আমি চলে এসেছি, এখন প্রতিদিন দু তিন বার করে এসে তোমাকে বিরক্ত করবো।”

আমার যে আজ কতটা আনন্দ হচ্ছে ব্যাখ্যা করে বোঝাতে পারবো না। অনেক দিন পর আজ রাতে শান্তির একটা ঘুম হবে। তারিফকে দেখে, ওর সঙ্গে কথা বলে – সত্যিই প্রাণশক্তি ফিরে পেলাম আমি।

পরদিন বিকেলে, হঠাৎ মনে পড়লো বিকেলে কফি খাওয়ার অভ্যাস ছিল তারিফের। এখনো আছে কিনা কে জানে! ছেলেটার জন্য কফি বানিয়ে নিয়ে গেলে কেমন হয়?

ভাবনা অনুযায়ী তারিফের প্রিয় এসপ্রেসো বানিয়ে নিয়ে গেলাম। শুধু তার একার জন্যেই নয়, আমার জন্যেও এক কাপ বানিয়েছি। অনেক দিন পর তারিফের সঙ্গে বসে কফি খাওয়ার একটা সুযোগ হতে যাচ্ছে।

আমি ওর বাড়ির দরজার সামনে কফি রেখে, কলিংবেল চেপে বেশ অনেকটা দূরে সরে গেলাম। কলিংবেলের আওয়াজে দরজার ওপারে এলো তারিফ। আমাকে এত দূরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে প্রশ্ন সূচক দৃষ্টিতে তাকালো।

আমি কিছুটা চিৎকার করে বললাম, “কফি! দরজার সামনে!”

তারিফ দরজা খুলে বেরিয়ে কফি নিয়ে আবার ঘরের ভেতরে চলে গেল।

আমি এবার ওর দরজার সামনে গিয়ে বললাম, “বসলাম!”

ওর উত্তর দেওয়ার আগেই দরজার সামনে মাটিতে বসে পরলাম। আমার দেখাদেখি স্যারও দরজার ওপাশে ঘরের মেঝেতে বসলো।

কিছুটা অবাক হয়ে বলল, “কফি? বাব্বাহ! আচ্ছা, তুমি কি বাই এনি চান্স, আমার সাথে আবার প্রেম ট্রেম করার চেষ্টা করছো?”
আমি হাসলাম।
তারিফ সামান্য ভ্রু কুঁচকে বলল,“হাসলে কেন?”
“হাসি পেল তাই!”
“হাসি পেল কেন?”
“উফ তারিফ, তোমার কথা পেঁচানোর অভ্যাসটা আর গেলোনা!”
“ওর আচ্ছা, কথা আমি পেচাতাম না?”
“আবার? কফিটা ভালো হয়েছে না?”
“হুঁ, একদম আগের মতো।”
“আগের থেকেও ভালো হয়েছে।”
“শোনো,তোমার সব কিছুই আগের মতো আছে। যখন আমার ছিলে, তখনকার মত।”
“আমি এখন অন্য কারোর না তারিফ।”
“আমারও তো না।”
একটা ছোট্ট দীর্ঘশ্বাস গোপন করে, কথা ঘোরাতে বললাম, “নিউইয়র্ক সিটি কতো সুন্দর! ভালোভাবে ঘুরে দেখার সুযোগই পেলাম না।”
“ঘুরে নাও আশফা, ঘুরে নাও। জীবনটা অনেক ছোট বুঝছো। দেখতে দেখতে শেষ হয়ে যায়!”

তারিফের এই কথাটা শুনে বেশ অনেক ক্ষণ চুপ করে থাকলাম। চোখের কোণে কখন যে দু এক ফোঁটা জল জমে গেলো, খেয়ালই করিনি।

অস্পষ্ট গলায় বললাম, “সেই ছোট জীবনে তুমি এলে কেন তারিফ? আমার জীবন তো এখন দেখতে দেখতে শেষ হবে না।”
তারিফ চুপ করে রইলো।
আমি আবার বললাম, “প্রতিটা মানুষের পাশে সারাজীবন একটা নির্দিষ্ট মানুষের হাত প্রয়োজন। যে হাতটা ক্লান্ত দিনে কাধেঁর ওপর থাকবে, দুঃখের দিনে চোখের জল মুছে দিবে, চলার পথে হোচট খেয়ে পড়ে গেলে টেনে তুলবে। আমি তোমার জীবনে সেই হাতটা হতে চেয়েছিলাম।‌ কিন্তু কখনো বুঝতেই পারিনি যে, সেই হাতটা হওয়ার যোগ্যতা আমার নেই।”
“কে বলেছে নেই? যোগ্যতা আছে বলেই তো এই ঝরের দিনে আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছো। এই বাড়িটাতে বন্দী থেকেও, শুধুমাত্র তোমার জন্যে আমি একটা নই।”
“নিজেকে বন্দী ভেবোনা তারিফ। আজ তুমি অসুস্থ, বন্দী। কিন্তু কাল তো তুমি আবার সুস্থ হয়ে যাবে, আবার সারা শহর দাপিয়ে বেড়াবে।”
“আর যদি সেই সুযোগ না পাই? যদি কাল, আমার মধ্যে থাকা এই বিদেশি পরজীবী, আমাকে সেই সুযোগ না দেয়?”
“তাহলে কিন্তু প্রকৃতির কাছ থেকে আরও একটা মানুষ নিশ্বাস নেওয়ার সুযোগ হারাবে।”

(চলবে)

অস্পষ্টতা – পর্ব : ১২

0

#অস্পষ্টতা
পর্ব – ১২

লেখা : শঙ্খিনী

দুদিন দেখতে দেখতে কেটে গেল। ঘনিয়ে এলো আমার ফ্লাইটের দিন। মায়ের কাছ থেকে আগেভাগেই তারিফের ঠিকানা নিয়ে রেখেছিলাম।

যাওয়ার আগে মাকে বললাম, “মা শোনো, ফ্লাইটে কিন্তু আমার ফোন বন্ধ থাকবে। তুমি একটু পর পর তারিফের খোঁজ নিও।”
মা বলল, “তুই কোনো চিন্তা করিস না তো। সাবধানে পৌঁছে আমাকে জানাবি।”
“জানাবো। আর মা নিজের খেয়াল রেখো।”
“রাখবো। তুইও কিন্তু নিজের খেয়াল রাখবি!”

এয়ারপোর্টে গিয়ে মনে হলো যেন কোনো এক ভুতুড়ে বাড়িতে এসেছি। আলোয় জাকজমক, লোকে লোকরণ্য এয়ারপোর্ট এখন নিষ্প্রাণ। এয়ারপোর্টের বেশির ভাগ আলোই নেভানো, ফ্লাইটের কয়েকজন যাত্রী ছাড়া আর কেউ নেই।

লোক বেশি না থাকায় ইমিগ্রেশনের ফর্মালিটি শেষ করতে বেশি একটা সময় লাগলো না।

প্লেন ছাড়লো রাত বারোটার দিকে। একটু একটু করে তারিফের কাছাকাছি যাচ্ছি আমি। ভাবতেই কেমন যেন লাগছে। বুঝতে পারছি, এই আকাশপথেই আমার জীবনের তৃতীয় অধ্যায়টা শুরু হয়ে গেছে।

বাইশ ঘন্টা বিমান যাত্রার পর অবশেষে পা রাখলাম নিউইয়র্কের মাটিতে। এখানে এখন ভোর বেলা, সূর্য মাত্র ঘুম থেকে উঠেছে। এই শহরে এর আগে একবারই এসেছিলাম। চার বছর আগে, মামার সাথে।

তখন আমার প্রকৃত মা মৃত্যুর দিন গুনছিলেন। মৃত্যু তার দ্বারে এসে গিয়েছিল। হাসপাতালে খুব করুন অবস্থায় ভর্তি। মৃত্যুর আগে ইচ্ছে হলো শেষে বারের মতো দুই মেয়েকে নিজ চোখে দেখবেন। সেই ইচ্ছা পুরন করতেই মামা আমাদের দুই বোনকে নিয়ে এখানে এসেছিলেন।

কি অদ্ভুত ব্যাপার না? এর আগের বারও বুকে চাপা কষ্ট নিয়ে নিউইয়র্কের মাটিতে পা রেখেছিলাম, এবারও তাই করছি। কিন্তু গতবার এক করুন শোক নিয়ে দেশে ফিরতে হয়েছিল। এবারো কি…?

না, না। কি সব ভাবছি আমি! আমার তারিফের কিচ্ছু হবে না।

ইমিগ্রেশন শেষে এয়ারপোর্টের বাইরে এসেই দেখতে পেলাম সুইটির হাস্যোজ্বল মুখটা।

সুইটি, আমার প্রকৃত মায়ের বিশ্বস্ত সহচর। সহজ ভাষায় বলতে গেলে তার অ্যাসিসটেন্ট। বয়স কম হলেও এক পুত্র সন্তানের জননী সে। সুইটি ছিল বাল্যবিবাহের শিকার। তার গর্ভে সন্তান আসা মাত্রই তাকে এদেশে পাচার করে দেওয়া হয়। মায়ের সঙ্গে তার পরিচয় এখানেই। তাকে মা আমাদের থেকেও বেশি ভালোবাসতো। তাই তো তার সম্পত্তির অর্ধেক মালিক সুইটি। মালিক হলেও এক ফোঁটা অহংকার নেই তার মধ্যে।

সুইটি দৌঁড়ে এসে আমার হাত থেকে সুটকেস নিলো।

হাসি মুখে বলল, “আপা আসতে কোনো সমস্যা হয় নাই তো?”
আমি বললাম, “না, না। তোমাকে কতদিন পর দেখলাম বলোতো!”
“আপনাকেও তো কতদিন পর দেখলাম। আমাদের কাছে তো আসেনই না!”
“কই, আসলাম তো!”
“এতদিন পর আসলে চলে?”
“আচ্ছা এসব বাদ দাও। তোমাকে যে বাড়ির অ্যাড্রেস পাঠিয়েছিলাম, খুঁজে বের করেছো তো?”
“ও আল্লা, কি বলেন আপা। খুঁজে বের করার কি আছে? ওই বাড়িটা তো আমাদের বাসা থেকে অল্প একটু দূরে। পাঁচ মিনিট হাঁটলেই যাওয়া যায়।”
“ও তাই নাকি? তাহলে তো ভালোই হলো।”
“ওই বাড়িতে কে থাকে আপা?”
আমি খানিকটা অনিশ্চিত গলায় বললাম, “আমার বন্ধু।”

বন্ধু বললাম কেন কে জানে! তারিফ কি এখনো আমার বন্ধু?

নিউইর্য়ক শহরে আমার মায়ের এক বিশাল বাংলো বাড়ি রয়েছে। কোনো এক অজ্ঞাত কারনে মৃত্যুর আগে মা পুরো বাড়ীটা আমার নামে লিখে দিয়ে গেছেন। এই বাড়িতে সুইটি তার ছেলেকে নিয়ে থাকে।

বাড়িতে পৌঁছে সুইটি আমাকে বলল, “আপা তাহলে ফ্রেশ হয়ে আসেন। আমি খাবার দেই। সারা রাত বসে আপনার জন্য রান্না করছি।”
“এত ব্যস্ত হতে হবে না। আমি আগে একটু মাকে দেখে আসি।”
“এখনি যাবেন? একটু রেস্ট নিয়ে তারপর গেলে ভালো হতো না?”
আমি কিছুক্ষণ ভেবে বললাম, “নাহ্, এখনি যাই!”

আমি দাড়িয়ে আছি আমার জন্মদাতা মায়ের কবরের সামনে। এ বাড়ির বিশাল এক বাগানে চির নিদ্রায় শায়িত তিনি।

কি অদ্ভুত ব্যাপার! মায়ের কবরের সামনে দাঁড়িয়ে আছি, অথচ কোনো খারাপ লাগা কাজ করছে না। আমি কখনো আমার মাকে ভালোবাসতে পারিনি। পারলে বোধ হয় এভাবে হারিয়ে যেতে দিতাম না। কিন্তু ভালোবাসবো কি করে? ভালোবাসার কোনো সুযোগই তিনি আমাকে দেননি।

ফ্রেশ হয়ে, খেয়ে দেয়ে আমি আমার ঘরে শুয়ে আছি। এবাড়ির সবথেকে বড় ঘরটা আমার।
আমি এতবছর আসিনি বলে ঘরটাকে অযত্নে রাখা হয়নি।

সাধারনত লম্বা বিমান যাত্রার পর জেট ল্যাগের ধাক্কায় দু তিন দিন ঘুমিয়েই কাটিয়ে দেয় সবাই। কিন্তু আমার ঘুম আসছে না। একটাই মাত্র চিন্তা কাজ করছে – তারিফের চিন্তা। ছেলেটা কী করছে, কেমন আছে কিছুই জানি না।

সূর্যের আলো কিছুটা প্রখর হলে, আমি বিছানা ছেড়ে উঠে পরলাম। আর বিশ্রাম নিয়ে কাজ নেই। ঘর থেকে বের হয়ে সোজা রান্না ঘরে চলে গেলাম।

দুপুরের আগেই তারিফের সব পছন্দের খাবারগুলো রান্না করে ফেললাম। এগুলো এখনো ওর পছন্দের তালিকায় আছে কিনা জানি না। তবে এক সময় তো পছন্দ ছিল!

ইমিউনিটি স্ট্রং করার ওষুধ, জ্বরের ওষুধ সব আগেই সুইটিকে আনিয়ে রাখতে বলেছিলাম।

আমার রান্না করা খাবারগুলো আর ওষুধগুলো খুব সুন্দর একটা গিফট ব্যাগে ভরে ফেললাম। সাথে একটা টু ডু লিস্ট। কখন কি করতে হবে সব লেখা আছে সেখানে। এবং সবশেষে একটা চিরকুট।

চিরকুটটা আমার লেখা। গোটা গোটা করে লিখেছি, “অনেক দিন পর তোমার জন্য রান্না করলাম। জানি না আগের মতো হয়েছে কিনা। চকলেট মুজ নিশ্চই এখনো তোমার প্রিয়, অনেক কষ্ট করে বানিয়েছি কিন্তু! আর একটা লিস্ট দেওয়া আছে। নিয়ম গুলো ঠিকমতো ফলো করো। গেট ওয়েল সুন তারিফ।”

চিরকুট লেখার কারন একটাই। যাতে তারিফ বুঝতে পারে, তার চেনা কেউ তার জন্য এগুলো পাঠিয়েছে। অচেনা কেউ নয়।

ব্যাগটা নিয়ে সুইটির সঙ্গে বেরিয়ে পরলাম। আমরা হাঁটছি তারিফের বাড়ির উদ্দেশ্যে। এক পা এক পা আগাচ্ছি, আর একটু একটু করে আমার হৃদসপন্দন বেড়ে যাচ্ছে। আমার থেকে কতটা দূরে চলে এসেছিল তারিফ। কিন্তু আমার ঠিকই ওর কাছে চলে এলাম! একটু একটু করে ওর দিকেই এগিয়ে যাচ্ছি।

হঠাৎ সুইটি এক বাড়ির সামনে থেকে বলল, “আপা, এটাই সেই বাড়ি।”
আমি কিছুক্ষণ বাড়িটার দিকে তাকিয়ে থেকে বললাম, “তুমি সিওর তো? দেখো, ভুল হলে কিন্তু বিরাট ঝামেলা হয়ে যাবে।”
“ভুল হওয়ার কোনো চান্স নাই আপা।”

আমার সারা শরীর কাঁপছে, নিশ্বাস ভারী হয়ে আসতে। আমি একটু একটু এগিয়ে যাচ্ছি বাড়ির দরজার দিকে।

দরজার সমানে বেশ সুন্দর একটা বেঞ্চ। সেই বেঞ্চে ব্যাগটা রাখলাম। একটা লম্বা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বাড়ির কলিং বেল চাপলাম।

কলিং বেল চেপে দিলাম এক দৌড়।

দৌড়ের মধ্যেই সুইটিকে বললাম, “এই সুইটি তাড়াতাড়ি বাসায় চলো।”
সুইটি অবাক গলায় বলল, “আপা আপনার বন্ধুর সাথে দেখা করবেন না?”
“তুমি আসো তো!”

তারিফ কোভিড পজিটিভ বলে পালাইনি কিন্তু। ওর মুখোমুখি হওয়ার সাহস আমার নেই।

সারা দিনটা আমার ভীষণ অস্থির ভাবে কাটল। মাথায় একটাই চিন্তা বারবার ঘুরপাক খাচ্ছে। আমি যে তারিফকে নিয়ে ভাবছি, ওর জন্য রান্না করছি, ওর যত্ন নেওয়ার চেষ্টা করছি – এই ব্যাপারগুলোকে সে কিভাবে গ্রহণ করবে? আদৌ কি গ্রহণ করবে?

(চলবে)

psycho_is_back?part_5

0

psycho_is_back?part_5
#apis_indica

চোখ মেলে দেখি,
একটি ছায়ামূর্তি।। যা আমার পাশে বসে!মুহূর্তেই চোখ বন্ধ করে ফেললাম ভয়ে।গলা দিয়ে আওয়াজ আসছে না আমার।। ঘামতে শুরু করেছি রীতিমতো।। আবার মিটমিট করে চোখ খুলে দেখি।। আমার পাশে কেউ নেই।। সাথে সাথে পাশে থাকা টেবিল ল্যাম্প জ্বালিয়ে দেখি, আসলেই কেউ নেই।। ভয় করতে লাগলো জিন, টিন নয়তো।। আশেপাশে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করলাম, না কেউ নেই? হয়তো মনের ভুল তাই চোখ বন্ধ করে চাদর নাকে মুখে দিয়ে শুয়ে পরলাম দোয়া ইউনুস পড়তে লাগলাম।।কিন্তু মনের মাঝে সংশয় রয়ে গেল! আমি স্পষ্ট কারো নিঃশ্বাস আমার ঘাড়ে পেয়েছি।। তাহলে সে গেল কই? আর ওই ছায়ামূর্তি টাই কই গেল?? আচ্ছা এ বাসায় ভূত নাই তো??
ভয়ে গলা শুকিয়ে কাঠ আমার।।এই সাইকো থাকতেও আবার ভূতের উপদ্রব,, বাচাও আল্লাহ।।এসব বিড়বিড় করতে করতে ঘুমিয়ে গেলাম একপর্যায়ে।।

আর এদিকে তখন ইউসুফ দরজার আড়াল থেকে এসব শুনে হাসতে লাগলো।।তখন ইউসুফ এসেছিল তার ঘরে।।এটি কুহু আসার পর থেকে রোজ এর কাজ।। কুহু ঘুমিয়ে যাওয়ার পর ওর রুমে এসে, ওর পাশে বসে থাকা।।আর তার মুখখানি বসে বসে দেখা।।এই মুখখানিতে যে কত মায়া কেউ গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ না করলে বুঝতেই পারবে না।।কখন কখন ওর অজান্তেই অনেক বার চুমুও খেয়েছে ইউসুফ।। কিন্তু বেচারি এতই ঘুম কাতুরী যে কিচ্ছু বুঝতে পারে না।।
ইউসুফ এসব ভেবে হেসে দিল।।
—-পাগলী মেয়ে!! বলে মুচকি হাসলো।।তারপর নিজের রুমের দিক পা বাড়ালো।।

সকাল বেলা,
আজ খুব সকালে ঘুম ভাঙলো।। তাই নামাজ পড়ে নিলাম।। আজ আমার রেজাল্ট পাবলিস্ট হবে।। ভয় লাগছে খুব।।দোয়া করছি যেন 4.সামথিং পাই।।তাহলে পাবলিক ভার্সিটিতে এপ্লাই করতে পারবো।। তার সাথে আনন্দও যে এইখান থেকে আজ চলে যাবো।।
ইয়াহু!!!! ??
তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে ব্যাগ পত্র নিয়ে নিচে নেমে আসলাম।।
—–নানু মা কই চল? এখন না বের হলে ২ টার আগে পৌঁছাতে পারবো না!!
—-হে বুড়ি আসচ্ছি।।

আন্টি মার কাছে আর মামার কাছে বিদায় নিয়ে গাড়িতে উঠে বসলাম।।আসার সময় সাইকো কে দেখলাম না।।হয়ত ঘুমুচ্ছে।।আমার জন্য ভালই হইসে।।ভাল হয়েছে বেঁচে গেছি।।মনে মনে খুব খুশি হয়েছি।।এবার কাকে জালাবি সাইকো হি হি।।

এদিকে ইউসুফ মাত্রই বাসায় ঢুকে জানতে পারে তার দাদু চলে গেছে।।সাথে সাথে তার মেজাজ খারাপ হয়ে গেল।।তারপর কিছু একটা ভেবে তার মার ঘরে পা বাড়ালো।।
—-মম আসতে পারি?
—-আরে এসে ইউসুফ।। ইউসুফের বাবা বললেন।।
—আ..পাপা আমি কিছু বলতে চাই?
—-হুম বল?
—-আচ্ছা আমরা যেহেতু বিদেশে ছিলাম তাই হয়তো দাদু আমাদের সাথে থাকেন না,বা কুহুর জন্য যেতে চান নি।।তো এখন আমরা বিডিতে আছি।।উনি কেন আলাদা থাকছে??
—-আমিও কাল মাকে এ কথা অনেক বুঝিয়েছি।।তিনি কুহুর পড়াশুনার জন্য আসতে চাইছেন না।।
—-তো এখন কুহুর এক্সাম শেষ।। ওই এখানে ভার্সিটিতে ভর্তি করে দিবোনি আমরা তাহলেই তো হয়।।
—-হুম তাও ঠিক।।আচ্ছা আমি মার সাথে কথা বলছি।।
—-পাপা তোমার বলতে হবে না।।তুমি বললে হয়তো না করে দিবে।। যা করার আমি করছি।।

ময়মনসিংহে ঢুকে গেছ অনেকক্ষণ।। কিন্তু জ্যামের কারণে আটকে গেছি ব্রিজের মোড়ে।।এই জায়গায় সব সময় জ্যাম থেকাই।হুহ!!!

কলেজে এসে গেছি।।নানুমা আমাকে কলেজে নামিয়ে বাসায় চলে গেছে।।গেটের সামনে যেতেই আমার ফ্রেন্ডসরা দাড়িয়ে ছিল।। আমাকে দেখে দৌড়ে সবাই কাছে এলো আর আমরা গ্রপ হাগ করলাম।।রেজাল্ট যেনে বাসায় চলে আসলাম।।সাথে লিজাকে নিয়ে আসলাম পার্টি করব আজ তাই।।

—–ওমা এতো ডেঞ্জারাস সাইকো তোর ভাই!!আমার তো দেখতে ইচ্ছা করছে তোর ভাইকে!!
লিজাকে সাইকোর কথা সব বললাম শুনার পর এসব বলতে লাগলো।আমি বললাম,,
—-হে দেখলে অবশ্য ক্রাশ খেয়ে যাবি গ্যারান্টিসহ।।যাই হোক আজ আমি মুক্ত।। আর খুব ভালোও লাগছে।।
বলে গান ধরলাম,,
আজ মে উপার
আসমা নিচে
আজ মে আগে
জামানা হে পিছে।।
আমার গান শুনে খিল খিল করে হাসতে লাগলো।।সাথে আমিও।।তখনি কলিংবেল বেজে উঠলো।।
—-তুই বস হয়তো নানু মা আসচ্ছে।। বাজারে গিয়েছিল তখন কি জানি আনতে।।
—-আচ্ছা যা।
আমি লাফাতে লাফাতে গেট খুললাম আর বলতে লাগলাম,,
—-নানু মা তোমার ওত দেড়ি,,,,,বাকি কথা আর বলতে পারলাম না সামনের ব্যাক্তিটির দিকে তাকাবার পর গলায় কথা আটকে গেছে।। তবদা লেগে গেলাম।।
আমি ভুত দেখার মতো তাকিয়ে আছি তার দিক।।
আর উনি এক রহস্য ময় হাসি ঠোটে লাগিয়ে বলতে লাগে,,,
—-কিরে কুহু ভয় পেয়েছিস বুঝি??
আমি এক ঢোক গিলে বলতে লাগলাম,,,
— আপনি? কাপা কাপা কন্ঠে।।
তিনি এবার বিরক্তিভাব নিয়ে আমাকে ধাক্কা দিয়ে বললেন ভিতরে ঢুকতে ঢুকতে বললেন,,
—-সর সামনে থেকে ঢুকতে দে।।
আমি এখন তার দিকে তাকিয়ে আছি।।আর ভাবছি উনি এখানে কিন্তু কেন??
মাথা ভন ভন ভন করে ঘুরছে।।
যার কাছ থেকে পালালাম সে এসে হাজির।। এখন কি হবে???
আমাকে এভাবে দেখে তিনি ধমক দিয়ে বললেন,,
—-দাঁড়িয়ে আছিস কেন?? যা পানি নিয়ে আয়।।
আমি মাথা নাড়িয়ে পানি আনতে চলে গেলাম।।
পানি এনে তার হাতে দিতেই তিনি উঠে দাড়ালেন।। আর বলতে লাগলেন,,
—-দাদু কই গেছে?
—-বাজারে।।
—-কি ব্যাপার! আমাকে দেখে তোর চেহারার বারোটা বেজে গেছে কেন।।
আমার কানের কাছে ফিসফিসে বলতে লাগলেন,,
—-আমাকে দেখে বুঝি খুশি হোসনি।।
উনি আমার এত কাছে আসাতে কেমন জানি ফিল হতে লাগলো।।কিন্তু ভাল লাগছিল সেই ফিলিংসটা।।টিভিতে দেখেছি,, যখন নায়ক তার নায়িকার কাছে আসে।। তখন নায়িকা কেমন ব্লেসিং করে।। আমারো তেমন হচ্ছে।। তার সাথে কান যেন গরম হয়ে যাচ্ছে।।তখনি তিনি ঝাঁঝালো কন্ঠে বলে উঠে,,,
—-এই তুই এমন করছিস কেন?
উনার কথা শুনে আমার সব ভাললাগার ফিলিংস ফুস হয়ে গেল।।আসলেই সাইকো শালা এইটা।।আমি চেঁচিয়ে বললাম,,
—-আমার ইচ্ছা আপনার কি হে?? এত দিন আপনার বাসায় ছিলাম তাই আপনাকে কিছু বলি নি বুঝলেন??এটা আমার বাসা।।এ বাসার গুন্ডি বুঝলেন।।আর হে যে কদিন এখানে আছেন আমার ধারে কাছে আসবেন না।। নয়ত আপনার খবর আছে বুঝলেন।।হুহহহহ।।
ভাব নিয়ে চলে আসলাম আমার রুমে।।
এদিকে কুহুর কথা শুনে ইউসুফ ভ্যাবলা কান্তের মত তাকিয়ে আছে কুহুর যাওয়ার দিক।।কিছুক্ষণ পর যখন বুঝতে পারল,, কুহু তাকে দাপট দেখিয়ে চলে গেছে।। মেজাজ বিগ রে গেল তার।।
—-কি সাহস এই মেয়ে গুন গুনে ৭ বছর বড় তার আমি।।আর আমাকে এত ডায়লগ দিয়ে গেল।। তাউ আবার আমার দাদু বাড়ি দাড়িয়ে।।সে কি ভুলে গেছে তার থেকে আমার এই বাড়িতে অধিকার বেশী।।খুব ঝাঁজ না তোর।।দাড়া বের করবো তোর ঝাঁজ।।
রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে সোফায় বসে পড়লো ইউসুফ।। তখনি তার দাদু আসে।।দাদুকে আগেই কল করেছিল সে।।তার দাদু তাকে রুমে দিয়ে মাগরিবের সালাত আদায় করতে যায়।।
আর ওই দিকে লিজা কুহু আর ইউসুফের কথা শুনে হাসতে হাসতে শেষ।।সন্ধ্যে হয়ে আসছে দেখে সেও বেরিয়ে যায়।।

মধ্য রাতে,,
ঘুমের মধ্যে মনে হলো আমি হাওয়ায় ভাসছি।। পিটপিট করে চোখ মেলে দেখি।। আমার মাথার উপর খোলা আকাশ।। আর আমি কারো কোলে।।ভাল করে তাকিয়ে দেখি আমি সাইকোর কোলে।।আর আমরা এই মধ্যরাতে ছাদে।।কিছু বলব তার আগেই ধড়াম করে ফেলে দিল আমাকে।।
—-আহ্্্! অসভ্য লোক এমন করলেন কেন? আর আমাকে এখানে কেন আনচ্ছেন এত রাতে??
উনি আমার কথা শুনে দাত কেলিয়ে বলতে লাগলেন।।তোর শরীরে অনেক ঝাঁজ তো তাই দূর করতে আনছি।।
আমি কিছুই বুঝলাম না তার কথা তিনি উঠে চলে যেতে লাগলেন।।তখন আমি উঠে তাকে বললাম,,
—-এসবের মানে কি? ফাজলামো করেন??
তিনি কিছু না বলে সোজা ছাদের দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ান।। আর আমার দিকে ফিরে বাঁকা হেসে দরজা লাগিয়ে দিলেন।।আমি দৌড়ে দরজার কাছে গিয়ে দরজা ধাক্কাতে লাগলাম।।আর চিল্লিয়ে বলতে লাগলাম,,
—-শালা সাইকো তোরে পাইলো তোর চুল ছিড়মু।। হারামি আমার জানডা কয়লা কইরা ফেলাইতেসোস।।খোল তুই।।নানু মা নানু মা।।
তখনি সাইকো বলে উঠে,,
—-তুই তো ভারী বেয়াদব।। ভেবেছিলাম তোকে একটু শিক্ষা দিয়ে ছেড়ে দিব এখন দেখি চলবে না সকাল পর্যন্ত আটকে রাখব।। আর এখন তুই এখানে বসে বসে মশার কামড় খা।।তাহলে তোর শরীরে ঝাঁজ টা কমবে।।বলেই চলে গেল সাইকোটা।।
আর আমি এদিকে কেঁদে শেষ।।সত্যই মশা আমারে কামড়ে ফালা ফালা করে দিচ্ছে।।এইটা আসলেই সাইকো????।।আর হাত,, পা কামড়ে দিচ্ছে মশা।।
—-আমি তোকে ছাড়াবো না সাইকো????।।
চলবে,,
(ভুল ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন।।)

psycho_is_back? part_4

0

psycho_is_back?
part_4
#apis_indica❤
কি করব? না করব? ভাবছি তখনই মেসেঞ্জারে কল আসে! কল টি কে দিয়েছে দেখার জন্য ফোনটি হাতে নিতেই মনটা ভালো হয়ে গেল, আমার বেস্টি কল করেছে! ফোনটা রিসিভ করুন।
—দোস্ত কেমন আছিস?
—-ভালো নেই রে! খুব খারাপ! তোর কথা বল?
—-আমি ভালো আছি। কেন তোর আবার কি হইছে??
—-হইছে কিছু তুই বল?
—-আচ্ছা শুন যে জন্য তোকে কল করেছি! কাল আমাদের রেজাল্ট সে খেয়াল কি আছে আপনার??
—-কিককক!!
আমি তো সত্যই ভুলে গেছি।।কালকে আমার রেজাল্ট।।
( মনে মনে বলতে লাগলাম
—ভাল হয়েছে!আমি একটা সুযোগ পেয়ে গেলাম)
—-ওমা! কি বলিস আমার তো একদমই মনে ছিল না ?।।
—-তা তো থাকবেই না! আর কাল স্যার সবাইকে উপস্থিত থাকতে বলে দিয়েছে! তুই তো ঢাকায় আসবি নাকি??
—-স্যার বলেছে আর আমি আসবো না তা কি হয়?? অবশ্যই আসবো! এবার তো আসতেই হবে!!
—-কি হয়েছে তোর এত আনন্দ তোকে তো কখনো হতে দেখিনি কলেজের কথা বললে?
—-কাল দেখা হওয়ার পর সব বলবো! এখন রাখছি। জরুরী কাজ আছে বাই জানু অনেক অনেক ধন্যবাদ পাখি।।তুই জানিস না তুই আমার কত বড় উপকার করেছিস।।


কল কাটার পর নানুমার ঘরে চলে আসলাম।।
নানুমা নামাজ পড়েছিল সালাম ফিরিয়ে আমাকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,
—-কিরে বুড়ি! কিছু বলবি?
;আমি আমার হাত মোচরাতে লাগলাম।।
তখনই নানুমা আবার বলে উঠলো,,,
—-কি হলো বুড়ি এত মুচরামুচরি করছিস কেন?
—-ইয়ে মানে,, নানু মা কাল আমার রেজাল্ট !!
—-সে তো ভালো কথা বুড়ি!
—-হে তা ঠিক।।কাল আমাকে কলেজে যেতে হবে!
—-সেকি কাল! এত তাড়াতড়ি কিভাবে?
—-নানুমা আমাদের তো যেতেই হতো! তাইনা? তাই কাল সকালেই রওনা করি তাহলে কালকে কলেজেও যেতে পারবো আর ভার্সিটি ভর্তির জন্য তো অনেক কাজ করতে হবে! প্লিজ নানু মা না করো না।। একদম সব বলে দিলাম।।
নানু মা কিছু একটা চিন্তা করতে লাগলেন আর বলতে লাগলেন,,,
—- ঠিক আছে যেহেতু ফিরতেই হবে তাহলে কালকে চলে যাব।আমি বৌমার সাথে কথা বলি নিচ্ছি তুই যা সব গুছিয়ে নে!
—-হুম।।
মনে মনে অনেক খুশি হয়েছি।।এই সাইকোর হাত থেকে বাঁচার জন্য যে এটি বেষ্ট!!নানু মা আন্টি মার সাথে কথা বলতে চলে গেলেন।।
আর আমি নাচতে নাচতে রুমে চলে এলাম!
আর গাইতে লাগলাম,,
“আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে ”

কত মজা এই সাইকোর হাত থেকে বেঁচে যাবো কাল।।এ কটা দিনে যে ভয়ানক রূপ আমি দেখেছি,, আল্লাহ গো আর দেখতে চাই না।। তখনি আজ সকালের কথা মনে পরে গেল,,
—-সকালে ঘুম থেকে উঠে বাগানের দিক হাঁটতে যাচ্ছিলাম।।তখনি বাসার বাউন্ডারি ওপার থেকে কিছু বাচ্চার খিলখিল করে হাসার শব্দ পেলাম।।গেটের কাছে এসে সেদিকে উকি দিয়ে দেখি ছোট একটা পার্ক! কিছু বাচ্চা খেলছে সেখানে।। অনেকেই এক্সারসাইজ করছে।।বুড়ো জোয়ান সবাই হাঁটছে কেউ কেউ দৌড়চ্ছে।।বাচ্চারা যেখানে খেলছে সেখানেই অনেক দোলনাও আছে।।ছোট থেকেই দোলনার উপর বরাবারই অ্যাট্রাকশন বেশী।।আমি আর কোনো দিক না তাকিয়ে ছুট ্লাগালাম সেদিকে।।যেই দোলনায় বসে দোল খেতে লাগলাম।।তখনি একটি ৫/৬ বছরে বাচ্চা এসে আমার সামনে হাজির!! তাও আবার দুই হাত কোমরে দিয়ে আমার দিকে ভয়ানক দৃষ্টিতে মেলা তাকিয়ে আছে তাই আমি তার গাল একটু টেনে বললাম,,
—-কি হয়েছে রে পিচ্চি! এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন যেন আমি তোর খেলনা চুরি করে পালিয়েছি?
পিচ্চি সেই একি রকম ভাবে থেকেই বলতে লাগে,,,
—-তার থেকেও বেশী করেছো তুমি?
আমি বিস্ময় হয়ে গেলাম এর কথা শুনে,,চোখ ছোট ছোট পিচ্চির নাক টান দিয়ে বললাম,,
—-কি বলিস রে পিচ্চি!!
পিচ্চি এবার আঙ্গুল তুলে আমাকে শাশিয়ে বলতে লাগে,,
—-এটা আমার দোলনা তুমি কেন বসেছো উঠো??
আমিও পিচ্চিকে দুষ্টুমি করে বলতে লাগলাম,,
—-কই তোর নাম কি লিখা আছে রে পিচ্চি।।
তখনি পিচ্চি চিল্লিয়ে কাউকে ডাকতে লাগে,,
—-চাচ্চু!!!!!!!
তখনি কেউ আমার পিছনে এসে দারায়।।
পিচ্চিটি তখন বলতে লাগে,,
—-চাচ্চু আমার দোলনা!!ছাড়তে বলো!! বলে হাউ মাউ করে কেঁদে দিল।।
আমি ভয় পেলাম কিছুটা তখনি পিছন থেকে একটি ছেলে এসে মেয়েটির কান্না থামাতে লাগে,,
মেয়েটির কান্না দেখে মনে হচ্ছে কেউ বা আমি তাকে মেরেছি।।আমি দাড়িয়ে গেলাম ভয়ে।।পিচ্চিটি সাথে সাথে কান্না থামিয়ে দোলনায় চড়ে বসে।।
আমি তো অবাক কি সাংঘাতিক এই পিচ্চি।।আমি পিচ্চির দিক তাকিয়ে আছি ড্যাব ড্যাব করে।।পিচ্চিটি আমাকে সাথে সাথে চোখ টিপ মারে।।
আল্লাহ গো আল্লাহ!!!
আমি পিচ্চির কর্মকাণ্ড দেখে হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম।। তখনিনওই ছেলেটি আমার দিকে ফিরে বলতে লাগে,,
—-কিছু মনে করবেন না! স্নেহা একটু দুষ্ট।। যা চাই তা হাসিল করে নেয়।।যেভাবেই হোক!! একদম আমার মতো।।হা হা!! হাসতে লাগলো!
আমি তো তাদের কান্ড দেখে বেক্কেল বনে গেলাম।।ভ্যাবলার মতো তাকিয়ে আছে তাদের দুজনের দিকে।। তখনি ছেলেটি আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়,,
—-হাই! হাই আই এম রিয়ান!!হাত বাড়িয়ে দিয়ে।।
উনার কথায় আমার হুশ ফিরে।।এত খন তাদের কান্ডে বেহুশ ছিলাম।।
আমিও তার সাথে হ্যান্ডশেক করে বলে উঠলাম,,
—-হ্যালো আমি কায়নাত কুহু।।
—-ওহো নাইস নেম।।বাট ইফ ইউ ডোন্ট মাইন্ড, ক্যান আই কল কায়নাত?
—–হে কেন নয়!!
রিয়ানের সাথে যখন কথা বলছি তখনি রিয়ানের পিছন তাকিয়ে দেখি ইউসুফ ভাইয়া,,..
দু হাত বুকের মাঝে গুজে লাল লাল চোখ দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।।এখন আমার হাত পা কাঁপছে রীতিমত।। কারণ যত দিন এই বেটার এমন লুক আমি দেখেছি ততদিন আমার কপালে বাঁশ থাকে।।

..
এতখন এখানে কি হচ্ছিল ইউসুফ উপর থেকে দাড়িয়ে সব দেখছিল,,কফি খেতে খেতে।। যখনি কুহুকে সে দেখে অন্য কারও সাথে কথা বলছে।।তখনি নিচে নেমে পার্কে চলে আসে।।আর তার উপর যখন দেখলো কুহু হাত মিলাচ্ছে সামনের ছেলেটির সাথে তখন যেন তার মাথায় রক্ত চড়ে বসে।। ইউসুফ ধীরে ধীরে রিয়ানকে ক্রস করে কুহুর পাশে দাঁড়ায়।। তখনি রিয়ান বলে উঠে,,
—-হাই ইউসুফ ভাইয়া কেমন আছেন?
—-হুম ভাল! তুমি? (গম্ভীর ভাবে বলল)
—-হ্যাঁ আলহামদুলিল্লাহ ভালো।। আন্টি আঙ্কেল কেমন আছেন? শুনলাম আপনারা নাকি চলে এসেছেন একেবারে।।
—-হ্যাঁ ভালো আছে! তোমার আব্বু আম্মু কেমন আছে? বাসায় এসো সময় করে?
—-জি আলহামদুলিল্লাহ সবাই ভালো আছে! আসবো একদিন সময় করে!।
—-আচ্ছা তাহলে থাকো আমরা যাই? কুহুর হাত ধরে বলতে লাগে।।
তখনি রিয়ান বলতে লাগে,,
—-কায়নাতকে চিনেন আপনি?
—–হে ও আমার ফুফাতো বোন।।
—-ওহো আচ্ছা।।
ইউসুফ ভাইয়া আর কিছু না বলে টানতে টানতে আমাকে নিয়ে যেতে লাগলেন।।আর তা দেখে রিয়ান হা হয়ে দাঁড়িয়ে রইল।।

আর আমি বলতে লাগলাম,,,
—-কি হয়েছে ভাইয়া?এভাবে টানচ্ছেন কেন ব্যাথা পাচ্ছি তো।।
উনি আমার কথা শুনে শুধু তার ভয়ানক দৃষ্টি আমার দিক নিক্ষেপ করলেন।। সাথে সাথে আমি চুপসে গেলাম।। আর এদিকে আমার হাতে বারটা ;বাজিয়ে দিচ্ছেন।। কিছু বলতেও পারছিনা।। বুঝতেই পারছিনা কি এমন করলাম! যার জন্য উনি এমন করে যাচ্ছেন।।
উনি আমাকে টেনে হিচরে বাগানের সাইডে নিয়ে আসলেন।।যেই সাইডে উনি সেদিন ফায়ারিং করছিলেন।।ভয়ে আমার গলা শুকিয়ে গেছে।।না জানি সত্যই আজ আমাকে গুলি করে দেন??

উনি আমার হাত ছেড়ে সেখানে বিছানা সোফা সেট বসলেন।।আর আমি এদিকে আমার হাতে হাত বুলাচ্ছি।।হাতটা লাল হয়ে আঙ্গুলের ছাপ বসে গেছে।।তখনি তিনি হুংকার দিয়ে রূপালীকে ডাকতে লাগলেন,,
তার এমন হুংকার আমিও কেঁপে উঠলাম।।
রুপালি দৌড়ে আসতেই তিনি বলতে লাগলেন,,
—-আমার রুম থেকে আমার রিভলবারটা নিয়ে আয়।।আর হ্যান্ডওয়াশ নিয়ে আসবি সাথে এক বালতি পানি।।রুপালি মাথা নাড়ি আবার দৌড়ে উপরে চলে গেল।
এদিকে রিভলভারের কথা শুনে আমার হাত পা কাঁপতে লাগলো ভয়ে গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেল।।
তিনি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে।।এই বুঝি গিলে ফেলবে আমাকে।। আমি ভয়ে কিছু জিগাসাও করতে পাড়ছি না।।তখনি রুপালি সবকিছু নিয়ে হাজির।।
তিনি রিভলবার তার হাতে নিয়ে রুপালি কে বলে,, বালতি হ্যান্ডওয়াশ আমার দিকে দিতে।।
আমি তো কিছু বুঝতেই পারছি না।।
রুপালিকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলেন,,
—-এগুলো ওর সামনে রাখ।।আর ভিতরে যা।।আমার ফোনটা নিয়ে আয়।।
রূপালী চলে যেতেই আমাকে বললেন,,
—-শুরু করো।।খুব শান্ত ভাবে রিভলভার দেখতে দেখতে বললেন।।
আমি ভয়ে ভয়ে বলতে লাগলাম,,
—-ক,,ক,,কি শুরু করবো??
তিনি এবার বলতে লাগেন,,
—-আমি যতক্ষণ না বলল তখক্ষন এই হ্যান্ড ওয়াশ দিয়ে হাত ধৌত করতে থাকবি।। আর একটা কথা যদি তুই জিজ্ঞেস করিস তাহলে রিভলভার দেখিয়ে,,সুট করে দেব।।
আমি কি করবো বুঝতে পারছি না।।
আমাকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে তিনি আমার বাম সাইডে গুলি করলেন।।আমি সাথে সাথে মাটিতে বসে হাত ধুতে লাগলাম। আর কাঁদতে লাগলাম।।আমি পাক্কা ৩ ঘন্টা হাত ধুয়ে ছিলাম।।তারপরও তিনি আমাকে থামতে বলেন নি।।না আন্টি আর নানু মা বলে তাকে থামাতে পেরেছে।।লাস্ট মামা এসে থামিয়ে ছিলেন।।
তখন তিনি আমার কাছে এসে ফিসফিসে বললেন,,
—-আর কখনো যাতে কারো সাথে হ্যান্ডশেক করতে না দেখি।। বলেই চলে গেলেন।।
আর আমি ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছি তার যাওয়ার দিক।।
..

আল্লাহ কি ভয়ঙ্কর অনুভূতি।। এটাতো গেল আজকের কথা।।সেদিন তো আমাকে কত বাঁকা না দিলেন,,।
সেদিন,,
টিকটক করছিলাম,,
নতুন ভাইরাল হওয়া সংয়ে।।
বড় লোকের বেটি লো লম্বা লম্বা চুল।।
এই টাতেই যেই না জ্যাকলিনের মতো কোমর দুলানো স্টেপ দিতে নিসি।।ওমনি আমার গালে “ঠাসসস” করে চর পরল।।চরটা খুব জোড়েই দিয়েছে, চোখে জল এসে গেছে।।
সামনে তাকিয়ে জোরে চিল্লিয়ে বললাম “ইউসুফ ভাইয়া”তখনি আবার পড়ল একটা থাপর।।আমি এবার দু গালে হাত দিয়ে তার দিক তাকিয়ে।।
ফর্সা মুখখানা টমেটোর মতো লাল হয়ে আছে।।চোখ গুলোও লাল।। এবার কয়েকটা শুখনো ঢোক গিললাম।।তখনি তিনি চেচিয়ে বলতে লাগে,,,
—আমার বাসায় এসব ফষ্টিনষ্টি চলবে না।।তোর তো অনেক সাহস তুই কেমনে এ কাজ করলি।।আর এসব শাড়ি টারি কেন পড়েছিস সব খুল যা সব খুল।। নয়তো এই রাতে তোকে কবর স্থানে ফেলে রেখে আসবো বদ কোথাকার।।
বলে চলে গেলেন।।এদিকে আমার হাওয়া টাট।।কি দোষটা করেছিলাম শুনি।।একটু টিকটকিতো করছিলাম শালা সাইকো আমার গালের বারটা বাজিয়ে চলে গেল।।হুহ!কত কষ্ট করে এত সুন্দর করে সেজেছি আর উনি সব নষ্ট করে চলে গেল।।?ওদিকে আমার সব বান্ধবীরা এইটা করা অল রেডি শেষ।।এখন কি করবো।।কেন যে নানু আমারে এখানে পাঠালো বুঝলাম না।।
ভাবতে ভাবতে আয়নার সামনে দাড়ালো কুহু।।তারপর মেকাপ তুলতে তুলতে ইউসুফের চৌদ গুষ্টিকে বকে উধার করতে লাগলাম।।

এসবের পরেও কি এই সাইকোর এখানে থাকা যায়!!!” থাকবো না হুহু।।কাল সকালেই চলে যাবো।।এসব ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে গেছি মনে নাই।। ঘুমার মাঝে হঠাৎ অনুভব করলাম কেউ আমাকে খুব কাছে থেকে পর্যবেক্ষণ করছে।।কিছুক্ষন পর আমার ঘাড়ে কারো গভীর নিঃশ্বাস অনুভব করলাম।। সাথে চোখ মেলে তাকিয়ে দেখি……!!!

চলবে
(ভুল ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন। আজকে বড় করে দিছি।।কমেন্ট গুলো একটু বড় বড় দিয়েন কিপ্টামি কেন করেন ??।।)

অস্পষ্টতা – পর্ব : ১১

0

#অস্পষ্টতা
পর্ব – ১১

লেখা : শঙ্খিনী

মাস খানেকের মধ্যেই হয়ে গেল আমাদের ডিভোর্স। চোখের সামনে আমার গোছানো জীবনটা তছনছ হয়ে যাচ্ছিল।  যা ঘটছিল, তা একদমই বাস্তব মনে হচ্ছিল না। মনে হচ্ছিল এটা কোনো এক দুঃস্বপ্ন, একটু পরেই ঘুম ভেঙে যাবে।

ডিভোর্স হয়ে যাওয়ার পর, ডিভোর্স লয়াড়ের অফিসে বসেই
মা কঠিন গলায় তারিফকে বলে দেয়, “আশফা ছিল এতদিন আমার ছেলের বউ। কিন্তু আজকে থেকে সে আমার মেয়ে। আমার মেয়ে আমার সঙ্গেই থাকবে। তোর যদি ইচ্ছে হয় তাহলে ওখানে থাকতে পারিস, আর না হলে এখন যেখানে আছিস সেখানেই থাকবি।”

কথাটার কোনো উত্তর না দিয়ে তারিফ চলে গেলো।

বিষন্নতা যে কি জিনিস আমি তখন বুঝতে পেরেছিলাম। আমার কাছে তারিফকে ছাড়া বেঁচে থাকাটাই একটা বিষন্নতা। পৃথিবীর কোনো কিছুই আর ভালো লাগছিল না। বারবার শুধু মনে হচ্ছিল, আমার সাথেই কেন এমন হলো?

এভাবেই কেটে গেল মাসখানেক। এরই মধ্যে হঠাৎ একদিন আমাদের বাসায় এলো তারিফ।
ওকে একঝলক দেখে যেন হারানো প্রাণশক্তি ফিরে পেলাম আমি।

তারিফ বসার ঘরে বসল। মাকে কি যেন জরুরী কথা বলতে এসেছে। আমি আড়াল থেকে শুরু ওকে দেখছিলাম।

তারিফ শুকনো গলায় মাকে বলল, “মা আমি নিউইয়র্কে যাচ্ছি।”
মা বলল, “ও! কতদিনের জন্য?”
“সবসময়ের জন্য।”
“কি?”
“ওখানকার এক কোম্পানি থেকে জব অফার পেয়েছি। এত বড় একটা সুযোগ হাতছাড়া করবো না।”
মা অবাক হয়ে বলল, “অফারটা কবে পেলি?”
“এইতো কিছুদিন আগে।”
“কবে যাচ্ছিস?”
“আগামী মাসের তিন তারিখে।”
“যেতেই হবে?”
তারিফ বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, “হ্যাঁ।”

আমার কান গরম হয়ে এলো কথাটা শুনে। চারপাশের সবকিছু যেন ঘূর্ণিঝড়ের মতো ঘুরছিল। তারিফ আমার কাছ থেকে এতটা দূরে চলে যাবে!

আমি যে আড়াল থেকে ওর কথা শুনছিলাম, এটা বুঝতে পেরে যায় তারিফ। হঠাৎ উঠে আমার কাছে আসে।

স্বাভাবিক গলায় আমাকে বলে, “মায়ের খেয়াল রেখো।”

দায়িত্বটা খুব ভারি না হলেও আজ পর্যন্ত মন দিয়ে পালন আরে আসছি।

তারিফ আমেরিকায় চলে যাওয়ার পর অফিসে ওর জায়গাটা আমি নিই। ওর হয়ে দায়িত্ব পালন করছি।

মানুষের মস্তিক কত অদ্ভুত তাই না? আমরা যে স্মৃতিগুলো মনে রাখতে চাই, মস্তিস্ক সেগুলো মনে করিয়ে দেয় না। অথচ যে স্মৃতিগুলো ভুলে যেতে চাই, সেগুলোই বারবার মনে করিয়ে দেয়। আমাদের এই স্মৃতিগুলো আমি কখনোই ভুলতে চাই না। আবার বারবার মনেও করতে চাই না।

আজ প্রায় এক বছর পর তারিফের সঙ্গে কথা হলো, তাই এ স্মৃতি গুলো মনে পড়ে গেল।
আজ যখন ওর সঙ্গে ফোনে কথা বলছিলাম, তখন চিৎকার করে ওকে বলতে ইচ্ছা করছিল “আমি ভালো নেই তারিফ! আমি ভালো নেই।”

আমাদের এই স্মৃতিগুলো মনে আছে বলেই আমি বেঁচে আছি। কিন্তু ভয় হয়, যদি কোনো দিন এগুলো ভুলে যাই? নতুন স্মৃতি তৈরি হওয়ার কোনো সুযোগই যে আর নেই।

এসব ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে পরলাম। সকালে উঠে দেখি মায়ের মুখটা শুকনো হয়ে আছে। কোনো একটা বিষয় নিয়ে হয়তো ভীষন চিন্তিত সে।

আমি মায়ের কাছে গিয়ে বললাম, “কী হয়েছে মা?”
“কিছু না।”
“কিছু একটা তো হয়েছে। বলো তো কী হয়েছে!”
“না থাক, বললে আবার তুই মন খারাপ করবি।”
“আমি মন খারাপ করতে পারি, এমন কোনো বিষয় থেকে থাকলে তো আমার সবার আগে জানা উচিত। এখন বলো তো কী হয়েছে!”
“শোন না, তারিফ ফোন করেছিল আজকে সকালে। ওর না-কি শরীর খারাপ লাগছে।”
আমি চমকে উঠে বললাম, “বলো কি? বাইরে-টাইরে যাইনি তো?”
“বলে তো না। কিন্তু ভাবে মনে হলো গিয়েছে।”
“মা ও কোভিড টেস্ট করছে?”
“না মনে হয়।”
“তুমি এখনো তারিফকে ফোন করো তো। ফোন করে বলো আজকেই টেস্ট করাতে!”
“করোনা-টরোনা কিছু হয়নি তো?”
“না, না! কী আর হবে? মনের শান্তির জন্য টেস্ট করানো আর কি। তুমি ফোন করো তো!”

মা সঙ্গে সঙ্গে ফোন করলো তারিফকে। কোভিড টেস্ট করানোর ব্যাপারে তারিফ প্রথমে কিছুটা আপত্তি করলেও শেষে ক্ষীণ গলায় বলে, “ঠিক আছে, করাবো টেস্ট!”

এরপর কেটে গেল তিন দিন। আজ অনেক দিন পর আগে আগে ঘুম আসছিল। তাই ঘুমিয়ে পরি। কিন্তু সে ঘুম বেশি দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। মাঝ রাতেই মায়ের ডাক শুনতে পেয়ে ঘুম ভেঙে গেল।

মা আমাকে ধীরে ধীরে ধাক্কা দিয়ে বলছেন, “আশফা, এই আশফা! মা একটু ওঠ না!”
আমি লাফ দিয়ে উঠে বলি, “কি হয়েছে মা? কয়টা বাজে?”
“একটা।”
“তুমি কাঁদছো কেন মা?”
“তারিফ…”
আমি ব্যস্ত হয়ে বলি, “কী হয়েছে তারিফের?”
মা থেমে থেমে বলল, “করোনা।”
আমি চমকে গিয়ে বললাম, “কি?”
“একটু আগে রেজাল্ট দিয়েছে। তারিফ করোনা পজিটিভ।”

আমার সারা শরীর থরথর করে কাঁপছে। চারপাশের সবকিছু এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।

আমি তাড়াহুড়ো করে উঠে দাঁড়ালাম।

বিপর্যস্ত গলায় মাকে বললাম, “মা আমার ফোনটা একটু দাও তো!”

মা খাটের পাশে থাকা টেবিল থেকে ফোনটা আমার দিকে এগিয়ে দিল। আমি দ্রুত তার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে শিমুল ভাইকে ফোন করলাম। শিমুল ভাই আমার এক আত্মীয়, পেশায় একজন ট্রাভেল এজেন্স।

এবার রিং হওয়াতেই তিনি ফোন তুললেন।

আমি ব্যস্ত গলায় তাকে বললাম, “শিমুল আমার ঢাকা টু নিউইয়র্ক ফ্লাইটের টিকিট লাগবে। খুব ইমারজেন্সি।”
তিনি বললেন, “আশফা তুমি শান্ত হও। টিকিট তো এখন পাওয়া যাবে না। সব ফ্লাইট তো বন্ধ।”
“কোনো ইমার্জেন্সি ফ্লাইটও নাই?”
“ইমার্জেন্সি ফ্লাইট দু একটা থাকলেও থাকতে পারে। তোমার আমেরিকান ভিসা আছে?”
“হ্যাঁ আছে।”
“ভিসা থাকলে সহজেই ইমার্জেন্সি অ্যাপ্লাই করা যায়।”
“কিভাবে অ্যাপ্লাই করবো?”
“তোমার পাসপোর্ট আর ভিসার ডিটেইলস আমাকে মেইল করে পাঠিয়ে দেও, আমি ব্যাবস্থা করছি। আর তোমার কবের টিকিট লাগবে?”
“যত দ্রুত সম্ভব।”

ফোন রেখে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মা হতভম্ব হয়ে আমাকে বলল, “এই সময়ে ফ্লাইটের টিকিট দিয়ে কি করবি।”
আমি কাঁদতে কাঁদতে বললাম, “আমি তারিফের কাছে যাবো মা! মা ওর কিছু হবে না তো না? ওর কিছু হলে আমি কী করবো? আমার কিচ্ছু ভালো লাগছে না!”
“তুই শান্ত হ। কিচ্ছু হবে না তারিফের। আবার আগের মতো ভালো হয়ে যাবে।”

মা আর আমি দুজনেই সারা রাত জেগে রইলাম। ঘুম আসবেনা, তাই ঘুমানোর চেষ্টাও করলাম না।

ভোর রাতে মা ক্লান্ত গলায় আমাকে বলল, “এত কিছু হয়ে ঘটে যাওয়ার পরও তারিফকে নিয়ে এত চিন্তা করছিস কেন?”
আমি ছোট্ট এক দীর্ঘশ্বাস গোপন করে বললাম, “ওইযে, ফালতু একটা জিনিস, ভালোবাসা। সেটার কারনে। আমি তারিফকে প্রচন্ড ভালোবাসি মা।”
“এখনো?”
“সত্যিকারের ভালোবাসা বাড়তে কমতে পারে, কিন্তু কখনো ধ্বংস হতে পারে না।”

দিনটা খুবই এলোমেলো ভাবে কাটল আমাদের। সন্ধ্যার দিকে হঠাৎ শিমুল ভাইয়ের ফোন! আমি ব্যস্ত হয়ে ফোন তুলতেই শুনতে। পেলাম তার উৎফুল্ল গলা।

শিমুল ভাই বলল, “কাজ হয়ে গেছে আশফা!”
আমি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বললাম, “পারমিশন পেয়ে গেছেন?”
“হ্যাঁ। পরশু রাতে তোমার ফ্লাইট।”
“শিমুল ভাই, আপনার এই উপকার আমি কোনো দিন ভুলতে পারবো না। থ্যাংক ইউ সো মাচ।”
“থ্যাংক ইউ বলার কিছু নাই, এটা তো আমার দায়িত্ব। আচ্ছা এত তাড়াহুড়ো করে নিউইর্য়ক যেতে হচ্ছে কেন বলোতো!”
“আমার অনেক আপন একজন অসুস্থ। তাকে সুস্থ করে তুলতে যাচ্ছি।”

(চলবে)

psycho_is_back? part_3

0

psycho_is_back?
part_3
#apis_indica

—-ভাইয়া গাড়ি আস্তে চালান!কি করছেন দেখেন সামনে!!ভয়ে লাগচ্ছে আমার খুব প্লিজ ভাইয়া।।তখনি সামনে থেকে একটি ট্রাক খুব স্প্রিডে এগিয়ে আসতে লাগলো আমাদের গাড়ির দিকে।।কিন্তু সাইকোর যেন কোনো হেলদুল নেই।।তিনি সোজা তাকিয়েই সেই ট্রাকের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে।।আর আমি চিৎকার করে যাচ্ছি,,,

—–ভাইয়া প্লিজ গাড়ি থামান।।ট্রাকটি আমাদের গাড়ি ছুই ছুই করছে সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে ফেললাম দুহাত দিয়ে।।আজ বুঝি আমার শেষ দিন।।কান্না দুগুণ বেরে গেল আমার চোখ বন্ধ করেই কেঁদে যাচ্ছি।।তখনি ভাইয়া গাড়িটি আগ মুহুর্তে অন্য সাইডে নিলেন।।আর বাঁকা হেসে আমার দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলেন,,,
—-এই টুকুতেই এই অবস্থা।।

উনার কথা শুনে উনার দিক তাকিয়ে দেখি উনি বাঁকা ঠোঁটে হাসচ্ছে।।কিন্তু চোখ মুখে শক্ত করে আছে।। পরে সামনে তাকিয়ে দেখি ট্রাকটি সাইড কেটে চলে এসেছে।।তখনি চিল্লিয়ে বলতে লাগি তাকে,,

—-আর ইউ ম্যাড! কয়টা তার ছিড়া মাথার আপনার? এমন কেন করছেন! আর একটুর জন্য হলে তো…! আপনি পুরাই সাইকো…! আপনার সাথে আর এক মুহুর্ত থাকতে আমি পারবো না।।গাড়ি থামান আমি বাসায় যাবো।।কি হলো কথা শুনচ্ছেন না কেন।।
উনি যেন আমার কথা কানেই তুললেন না।। না পেরে চিল্লিয়ে বসে উঠলাম,,

—-আপনি গাড়ি থামাবেন নাকি আমি গাড়ি থেকে লাফ দেব??

সাথে ব্রেক কষলেন ভাইয়া।।
আমি কিছুটা সামনের দিক হেলে পড়ি।।
ভাইয়ার দিক তাকিয়ে দেখি উনি গাড়ির স্টিয়ারিং উপর মাথা নত করে আছে।।সেই সুযোগে গাড়ি থেকে নেমে যাই আমি আর দৌড় লাগাই।। কিন্তু বেশী দূর জাওয়ার আগেই আমার হাত টান পরে,,।।পিছনে ফিরতেই দেখি সাইকো।।আমি কিছু বলার আগেই উনি আমাকে টেনে গাড়ির ড্যাশবোর্ড এর উপর ফেললেন।। আমি উঠতে নিলাম তখনি আমাকে চেপে ধরলেন ড্যাশবোর্ডের উপরেই।।আমি কিছু বলতে নিবো তার আগেই তিনি তার রিভলবার বের করেই আমার কন্ঠনালী উপর চেপে ধরলেন।।আমি তো অবাক।। তার সাথে ভয়ে কাপচ্ছি।।উনার দিকে তাকাচ্ছি একবার আর উনার বন্দুকের দিক।।উনি আমার দিকে লাল লাল চোখে তাকিয়ে।।এই বুঝি রক্ত বের হবে তার চোখ থেকে।।এদিকে আমি ব্যাথা পাচ্ছি।।

—-ভাইয়া কী করছেন ছাড়েন ব্যাথা পাচ্ছি! থেমে থেমে কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলে উঠলাম আমি।।
তিনি আরো জোরে আমার কণ্ঠনালীতে চেপে ধরলেন বন্দুক দিয়ে।। আমি আর কিছু বলতেই পারছিনা।। সারা শরীর থর থর করে কাঁপছে।। বুকের ভিতর ধুক ধুক ধুক ধুক করে শব্দ করছে।।কেন জানি মনে হচ্ছে আজ আমার শেষ দিন।। তিনি আর একটু জোরে চেপে ধরায় আমি “আহ” করে উঠলাম।। সাথে সাথে চোখ দুটি বন্ধ করে ফেললাম।। বন্ধ চোখদুটি থেকে জল গড়িয়ে পড়তে লাগে।।

তখনই তার কন্ঠ শুনতে পাই,,
—-ছেলেটিকে ছিল?? গম্ভীর কণ্ঠে বললেন তিনি!
আমি কি উত্তর দিব বুঝতে পারছিলাম না।।
—- কিছু জিজ্ঞাসা করছি? দাঁতে দাঁত চেপে বললেন।
—-কোন ছেলে? কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলাম তাকে !
—-বাহ ভুলে গেলি কিছুক্ষন আগে ওই রেস্টুরেন্টের কথা?? দাঁতে দাঁত চেপে বললেন আবার।।
আমার তো এত কিছুর মাঝে তখনের কথা মনেই ছিল না।।কি থেকে কি হয়ে গেল?
তিনি আবার ধমক দিলেন,আমি সাথে সাথে বললাম
—-এহসান ভাইয়া!
—-কি হয় তোর! ওর সাথে এমন লেপ্টে ছিলি কেন?
—-ভাই হয় আমার।।কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললাম।।

তিনি বন্দুকটা আমার কন্ঠনালী থেকে সরিয়ে আমার কপালে মধ্যভাগ বরাবর ধরলেন আর বলতে লাগলেন,,
—-আর কখন যাতে না দেখি কারো সাথে এভাবে লেপ্টে আছিস! হক তোর ভাই!
বন্দুক দেখিয়ে,,
—-আদারোয়াইজ ই উইল শুট ইউ!
আমি ওনার কথায় পুরাই অবাক।।
আচ্ছা! তার কি? আমি যার সাথে ইচ্ছা তার সাথে লেপ্টে থাকি..হুহহহহ!!
এটুকুর জন্য আমাকে এই সাইকো টা এমন হেনস্ত করল।। আমি এবার কিছু বলতে নিব তার আগেই তিনি আমার কপাল থেকে বন্দুক সরিয়ে মুখের ভিতর ঢুকিয়ে দিল।। আমি চোখ বড় বড় করে তার দিকে তাকিয়ে আছি।। তিনি আমার দিকে তাকিয়ে অন্য হাত দিয়ে আমার কপালে পড়ে থাকা ছোট ছোট চুল গুলো সরিয়ে দিতে লাগলো।। আর বলতে লাগলো,,
—নো মোর এ ওয়াডস!!
তারপর ছেড়ে দিলেন আমাকে।।আমি এখনো তাকিয়ে আছি তার দিকে।। তিনি আমার থেকে তিন কদম এগিয়ে যেতেই আমি চেঁচিয়ে বলে উঠলাম,,,
—-আপনি একটা সাইকো বুঝলেন!
সাথে সাথে উনি পিছনে ফিরে, তার বন্দুক আমার দিকে তাক করে।। পায়ের কিছুটা কাছে গুলি চালিয়ে দেন।। আমি সাথে সাথে লাফ দিয়ে উঠে সরে যাই সেখান থেকে।। তিনি তার কিলার মার্কার লোক নিয়ে বলতে লাগেন,,,
—-আরো কিছু বলার আছে??
আমি আর কি বলব? আমার কিছু বলার সাহস হয়নি।।
তিনি আমাকে ইশারা করলেন গাড়িতে বসতে, আমি আর কথা বাড়ালাম না চুপচাপ গাড়িতে বসে পরলাম।। আর সাইকোটা আমার পাশে বসে গাড়ী ড্রাইভ করতে লাগলো।। গাড়িতে দুইজনে পিনপতন নীরবতা পালন করলাম।। এমনিতেও আমার আর কিছু বলার ভাষা নেই।। দেখা যাবে আবার কিছু বলি আবার গুলি করে দেয়? তাই চুপ রইলাম।।

.
সেদিনের মতো বাসায় এসে নিজের ঘরে চুপটি করে বসে রইলাম।।নানু মা, আন্টি মা অনেক কিছু জিজ্ঞাসা করলেন কিছু বললাম না।।একসময় তারা চলে যান আর আমিও ঘুমিয়ে পড়ি।। আর আজ ঘুম থেকে উঠে ছাদে গিয়ে ছিলাম কাল রাতের কথা ভুলতে।।প্রাকৃতিক হাওয়া লাগিয়ে মনের মাঝের ভয়, মন খারাপ দূর করতে? বাট ওই খানেও তারা শুরু করল সাইকো টা আইসা।।
হুহহহহ!!!
থাকমু না আর এই বাসায় যামু গা নিজের বাসায়।।এইখানে থাকলে না জানি আর কি সহ্য করতে হয়! সাইকোর যে রূপ আমি দেখেছি।।আল্লাহ আর দেখবার চাই না।।?

চলবে,,
?ভুল ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন ?