মেহমানদের বিদায় দিয়ে দাদী রাইয়ানের একটা ছবি নিয়ে পুষ্পর কাছে যায়।
– নে দেখ? ছেলে পছন্দ হয় কিনা তোর?
পুষ্প রাগে ছবিটা নিয়ে একটানে ছিড়ে ফেলে দেয়।
– এটা কি করলি তুই?
– ঠিকই করেছি। এ বিয়েতে আমার একদম মত নেই শুধু মায়ের কসমের কারণেই আমি রাজি হয়েছি নয়তো কখনোই এ বিয়ে করতাম না। আর তুমি এসেছো আমাকে ছেলের ছবি দেখাতে?
দাদী একটু হেসে পুষ্পের মাথায় হাত রেখে বলে
– যখন তোর বিয়েটা হবে তখন তুই বিয়ের মর্যাদাটা বুজতে পারবি।
বলে দাদী চুপচাপ চলে যায়।
বাসায় গিয়ে মি. রাশেদ রুমে ঢুকতেই পেছন থেকে মিসেস মাহমুদা চিৎকার দিয়ে বলে ওঠে
– এ বিয়ে নিয়ে তোমার কি আমার মতামত নেওয়া একদমই প্রয়োজন মনে হয়নি?
-আহা! চিৎকার করছো কেন?
– চিৎকার করবো নাতো কি? ঐখানে গিয়ে তুমি বলে দিলে যে মেয়ে তোমার পছন্দ হয়েছে, আমার কি মেয়ে পছন্দ হয়েছে কি না সেটা জানতে চেয়েছো?
মি. রাশেদ একটু অবাক হয়ে বললো
– কেনো মেয়ে তোমার পছন্দ হয়নি?
– না। এই রকম একটা গাইয়ে ভুত মেয়েকে আমি আমার ছেলের জন্য পছন্দ করবো ভাবলে কি করে তুমি?
– এসব কি বলছো তুমি? আমাদের ছেলে মেয়েটাকে পছন্দ করছে বলেই তো আমরা মেয়েটাকে দেখতে গিয়েছিলাম।
– আমার ছেলের পছন্দ হলেই তো হবে না আমারো মেয়েকে পছন্দ হতে হবে। আর এই মেয়েকে আমার একদম পছন্দ হয়নি। এ মেয়ের সাথে আমি আমার ছেলের বিয়ে কখনোই দিবো না।
– তোমার কথাতে তো সব হবে না। তোমার যে কেমন মেয়ে পছন্দ তা তো আমার ভালো করেই জানা আছে। শুনে রাখো মাহমুদা, রাইয়ান পুষ্পকে পছন্দ করেছে আর তাই পুষ্পর সাথেই রাইয়ানের বিয়ে হবে। এতে তোমার মত থাকুক বা না থাকুক। আর এটাই আমার শেষ কথা।
রাইয়ান বাসায় এসে বাবা মায়ের এমন চিৎকার চেচামেচি শুনে তার মনটাই খারাপ হয়ে গেছে। মা যদি এ বিয়েটা ভেঙে দেয় তাহলে তো সব শেষ।
– পুষ্প কি আমায় বিয়ে করতে রাজী হয়েছে? একবার কি ফোন দিবো তাকে?
ভাবতে ভাবতে একটা কল দেয় রাইয়ান। কিন্তু ফোন বন্ধ বলছে। ফোন বন্ধের কারণ খুঁজে পাচ্ছে না।
– হঠাৎ করে ফোনটা বন্ধ করে রাখলো কেন পুষ্প?
পেছন থেকে রাইয়ানকে ডাক দেয় মি. রাশেদ। বাবার ডাক শুনে রাইয়ান তার কাছে গিয়ে বললো
– কিচ্ছু বলবে বাবা?
– হ্যা। পুষ্পকে আমার খুব পছন্দ হয়েছে। তোর পছন্দ আছে বলতে হবে।
রাইয়ান কিছুটা লজ্জা পেয়ে গেলো কথাটা শুনে। একটু হাসি দিয়ে জিজ্ঞেস করলো
– পুষ্প কি আমাকে পছন্দ করেছে?
– তা তো বলতে পারলাম না। তবে মেয়ের পরিবার তোকে খুব পছন্দ করেছে।
কথাটা শুনতেই রাইয়ানের মনটা নেচে ওঠে।
-হ্যা রে শোন, তোকে যেটার জন্য ডেকে ছিলাম, আগামী বুধবার তোকে পাত্রীপক্ষ দেখতে আসবে। ঐদিন কিন্তু অফিসে কোন মিটিং বা কাজ রাখিস না।
– কিহ! আমাকে দেখতে আসবে?
– তোর কাছে মেয়ে বিয়ে দিবে আর তোকে দেখতে আসবে না, এটা কোন কথা? তোর কি কোন সমস্যা আছে তাতে?
– না না, আমার কোন সমস্যা নেই। ঐদিন আমি অফিসেই যাবো না।
– আচ্ছা। তুই যা ভালো বুজিস। আমি একটু তোর দাদাভাই দেখা করে আসি।
-আচ্ছা।
– ছেলের বাবা রাশেদ সাহেবের ব্যবহার আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে। লোকটা একবারে মাটির মনের মানুষ।
দাদীর এমন কথা শুনে আফিয়া বেগম বললো
-হ্যা মা। আমারো তাই মনে হয়। তবে মিসেস মাহমুদা আচরণ আমার একদমই ভালো লাগে নি। কেমন যেন গুমরো মুখ করে ছিল। দেখে মনে হচ্ছিলো এ বিয়েতে তিনি একদমই রাজি নন।
– এমন কিছু না। তিনি প্রথম প্রথম আমাদের বাসায় এসেছে তো তাই হয়তো এমন হয়ে ছিল। তুমি শুধু শুধু চিন্তা করছো বউমা। আমাদের পুষ্পের এখানে বিয়ে হলে সে সুখেই থাকবে।
সকালে খুব ভালো একটা ঘুম দিয়ে ওঠেছে নীল। ফ্রেশ হয়ে নিচে যেতে দেখলো পাপড়ি চা বানিয়ে সবাইকে চা দিচ্ছে। নীল সোফায় গিয়ে বসেই বললো
– আমাকেও এক কাপ চা দে, খেয়ে দেখি কি রকম চা বানাস?
পাপড়ি মুচকি একটা হাসি দিয়ে কিচেন থেকে এক কাপ বানিয়ে আনলো।
– কি ব্যাপার, সবাইকে ট্রে থেকে চা বানিয়ে দিলি আর আমার বেলায় কিচেন থেকে বানিয়ে আনলি কেন?
– আসলে তুই তো এতোক্ষণ ছিলি না আমি শুধু রূপা, আংকেল আর আমার জন্য চা এনেছি। তাই তোর জন্য কিচেন থেকে চা বানিয়ে আনলাম।
-হুম। দে।
চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে নীল আ…. করে চিৎকার দিয়ে ওঠলো।
নীলের চিৎকার দেখে রূপা বললো
– কিরে, কি হয়েছে?
– আ… ঝাল ঝাল, পানি পানি।
নীলের এ অবস্হা দেখে পাপড়ি হাসতে হাসতে বললো
– এবার বুজেছিস আমাকে ফেলে দেওয়ার মজা। কেমন লাগছে এখন নীল মহাশয়?
নীল রূপা এনে দেওয়া পানি খেয়ে বললো
– তোর চুলগুলো যদি আজ না ছিড়েছি তবে বলিস।
– এতো সহজ নাকি?
বলেই পাপড়ি দৌড় দিলো আর তার পেছনে নীলও।
সকালে অফিসে এসে রাইয়ান পাপড়িকে দেখতে না পেয়ে খুব হতাশ হয়ে গেলো।
– আজও আসে নি পুষ্প। আজ তো সমস্যা নেই। নাকি আমার সামনে আসতে লজ্জা পাচ্ছে সে? একবার কল করে দেখি।
কল দিতেই ফোন বন্ধ।
– এখনো ফোন বন্ধ করে রেখেছে?
তবে কি পুষ্প আমায় বিয়ে করতে রাজি নয়? তার কি আমাকে পছন্দ হয় নি?
– ঊফ! আস্তে কাতুকুতু লাগছে তো। ওদিকে ধরো না। ওদিকে আমার কাতুকুতু বেশি।
– ইশ! পুষ্প, এমন করলে শাড়ি পড়াবো কি করে তোকে আমি?
– আরে কাকিমা, আমি কী করবো আমার যে কাতুকুতু লাগছে।
– কাতুকুতু লাগলেও চুপ করে দাড়িয়ে থাক। আমি তাড়াতাড়ি শাড়িটা পরিয়ে দেয়, ঐদিকে মেহমানদের আসার টাইম হয়ে গেছে।
-হুম।
– নে এবার হেটে দেখ কোনো সমস্যা হচ্ছে কিনা।
পুষ্প দুকদম হাটতেই হোঁচট খেয়ে পড়ে যায়।
– ওফ! এসব শাড়ি-টাড়ি পড়া আমার দ্বারা হবে না, আমি গিয়ে বরং সালোয়ার-কামিজ পড়ে নিই।
– নাহ! একদম না। তোর মা আর দাদী ব্যস্ত থাকায় তোকে শাড়ি পড়ানোর জন্যই ভাবি আমাকে বাসা থেকে ডেকে এনেছে, আর কড়া করে বলে দিয়েছে তোকে যেন শাড়িটা সুন্দর করে পড়িয়ে দেই। আর তুই যাচ্ছিস সালোয়ার-কামিজ পড়তে?
– উফ! মা আমাকে একটুও কি শান্তিতে থাকতে দিবে না।
– হুম হয়েছে, এখন আমি শাড়িটা ঠিক করে দিচ্ছি। এবার আর হাটতে সমস্যা হবে না তোর।
গাড়িটা বাসার সামনে থামতেই গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ায় মি. রাশেদ আর ঘটক। মিসেস মাহমুদা এখনো গাড়িতেই বসে আছে। তার একদম গাড়ি থেকে নামতে ইচ্ছা করছে না।শুধু স্বামীর কথা আর ছেলের পছন্দের কথা ভেবে সে এখানে এসেছে। নয়তো এসব জায়গায় পাও রাখে না মিসেস মাহমুদা।
– কি হলো? নামছো না কেন গাড়ি থেকে?
মি. রাশেদের কথার কোন জবাব না দিয়ে গাড়ির দরজাটা খুলে বের হলো মিসেস মাহমুদা। বের হয়ে চারপাশটায় নজর ঘুরিয়ে বললো
– উফ! কি গরম এখানে। এতো ছোট বাসায় মানুষ থাকে কীভাবে আমার তো মাথায় আসে না।
মিসেস মাহমুদার মুখে এমন কথা শুনে মি. রাশেদ মুচকি হেসে বললো
– সবাই তোমার মতো বিলাসবহুল জীবনযাপনে অভ্যস্ত নয়।
মি. রাশেদের এমন কথা শুনে একটা মুখ ভেংচি দিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে থাকে মিসেস মাহমুদা।
দরজায় ঠকঠক আওয়াজ শুনেই আফিয়া বেগম বুজতে পারে যে মেহমান চলে এসেছে। নিজের শাড়িটা ঠিক করতে করতে রান্না ঘর থেকে বের হয়ে দরজা খোলে তাদের স্বাগতম জানায়।
মি. রাশেদ আফিয়া বেগমকে সালাম দিয়ে ঘরের ভিতরে ঢুকে। মিসেস মাহমুদা এখনো বাহিরেই দাঁড়িয়ে আছে। ঘরের ভেতরে যাওয়ার ইচ্ছা তার নেই। ইচ্ছে করছে এখনি গাড়ি নিয়ে বাসায় চলে যেতে। কিন্তু একরকম বাধ্য হয়েও ঘরে ঢুকে মিসেস মাহমুদা।
মেহমানদের আসতে দেখে রুম থেকে দাদী আর নীলের মা বেরিয়ে আসে। তাদের সবাইকে সোফায় বসিয়ে খাবার এনে আপায়ন করছে আফিয়া বেগম। মি. রাশেদ এক কাপ চা নিলেও মিসেস মাহমুদা কোন খাবারেই হাত দিচ্ছে না। চুপচাপ সোফার এক কোনায় বসে আছে।
কিছুক্ষণ পর পুষ্পকে নিয়ে আসা হয় দেখানোর জন্য। পুষ্প চুপচাপ এসে চেয়ারে বসে। পুষ্পকে কোনো নাটক করতে না দেখে দাদী স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।
পুষ্পকে মি. রাশেদের খুব পছন্দ হয়েছে। নিজের ছেলের পছন্দের ওপর গর্ববোধ করছেন তিনি। অপরদিকে মিসেস মাহমুদার পুষ্পকে একদম পছন্দ হয়নি। মনে মনে বলছে
– এইরকম একটা গাইয়ে ভুত মেয়েকেই পছন্দ করলো রাইয়ান। দুনিয়াতে কি মেয়ের অভাব পড়েছিল যে এই মেয়ের জন্যই পাগল হয়েছে সে। ছেলেটা আমার একদম ওর বাবার ওপরই গিয়েছে। নাহলে এমন মেয়েকে নিজের জন্য কখনই পছন্দ করতো না।
রাইয়ান খুব টেনসনে আছে।
-পুষ্পকে কি মা-বাবার পছন্দ হবে? বাবার কাছ থেকে কিছুটা আশা থাকলেও মার কাছ থেকে আমার কোনো আশায় নেই। আর পুষ্পও কি আমাকে বিয়ে করতে রাজী হবে?
পুষ্পকে কি একবার ফোন দিবো? নাহ! এখন কিভাবে ধরবে ফোন সে। সে তো এখন হয়তো মা-বাবার সামনেই বসে আছে।
ধুর কি সব ভাবছি আমি, সব ভালো হবে।
এটা বলে নিজের মনকে শান্তনা দেয় রাইয়ান। “এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
রুপার বিয়ের বাড়ি সাজানোর দায়িত্বটা রূপা পাপড়ি আর নীলকে দিয়েছে। অনেকক্ষণ ধরে ফুল নিয়ে ছুটাছুটি করছে পাপড়ি। লোকদের বলে দিচ্ছে কোন ফুলটা কোন জায়গায় দিতে হবে। পাপড়ি কিছু ফুল নিয়ে উচু টুলে ওঠে ফুল লাগাতে থাকে। হঠাৎ পাপড়ি টুলে নিজের ব্যালেন্স না সামলাতে পেরে পড়ে যেতেই কেউ একজন তাকে ধরে ফেলে। পাপড়ি চোখ খুলতেই দেখে নীল তাকে কোলে নিয়ে দাড়িয়ে আছে। সকালের ফোন ভাঙ্গার রাগটা পাপড়ির এখনো আছে নীলের ওপর। তাই পাপড়ি রেগে বললো
– তুই আমাকে ধরলি কেন?
নীল আশ্চর্য হয়ে বললো
– তুই পড়ে যাচ্ছিলি তাই ধরেছি।
-পড়ে গেলে পড়ে যেতাম তবুও তুই আমাকে ধরলি কেন?
-ওকে তাহলে নে..
বলেই নীল পাপড়িকে ছেড়ে দেয়। পাপড়ি নীলের কোল থেকে ধপাস করে পড়ে যায়।
-ওমা! আমার কোমড়টা ভেঙ্গে ফেলেছে। এই রামছাগল, তুই আমাকে ছেড়ে দিলি কেনো?
– তুই তো বললি তোকে না ধরতে তাই ছেড়ে দিছি।
বলেই নীল গান গাইতে গাইতে চলে যায়।
– নীলের বাচ্চা,তোকে এর মজা দেখাবো আমি।
পুষ্পকে রুমে ভিতর পাঠিয়ে মি. রাশেদ বললো
-মেয়ে আমাদের পছন্দ হয়েছে।
মি. রাশেদের মুখে এমন কথা শুনে আফিয়া বেগম আর দাদীর মুখে হাসি ফুটে। তবে মিসেস মাহমুদা রাগে লাল হয়ে আছে। মনে মনে বলছে
-আমার মতামত না নিয়েই পছন্দ হয়েছে বলে দিলো। আমার মতামতের যখন প্রয়োজন ছিলোই না তো আমাকে কেনো এনেছে এখানে।
সামনে মানুষ থাকায় কিছু বলতেও পারছে না এখন মিসেস মাহমুদা।
দাদী হেসে বললো
– মেয়ে আপনাদের পছন্দ হয়েছে এটাই অনেক আমাদের কাছে।
– হ্যা। এখন আপনারা গিয়ে আমার ছেলেকে দেখে আসুন।
-ছেলেকে দেখার কি আছে, ছবিতে তো দেখছি আমরা।
-তবুও ভালো-মন্দের একটা বিচার আছে না, আপনারা আপনাদের মেয়েকে কোথায় পাঠাবেন তা তো দেখতে হবে আপনাদের। আপনারা দু-তিন দিনের মধ্যেই গিয়ে রাইয়ানকে দেখে আসুন।
মি. রাশেদ এমন কথা শুনে দাদী আর আফিয়া বেগম খুব খুশি হয়।
সকালে নাস্তার টেবিলে বসে নাস্তা খাচ্ছে পুষ্প। তার মা আর দাদীকে অনেকক্ষণ ধরে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে সে বললো
– এভাবে না তাকিয়ে কি বলতে চাও তোমরা তা বলো?
আফিয়া বেগম আমতা আমতা করে কথাটা বলার আগেই দাদী বললো
– তোর জন্য একটা ভালো বিয়ের সমন্ধ এসেছে। ছেলে অনেক বড় কোম্পানির মালিক, ভালো পরিবারের সন্তান। আর সবচেয়ে বড় কথা ছেলে তোকে পছন্দ করেছে। আজ বিকেলে ছেলের বাবা-মা তোকে দেখতে আসবে। আর এইবার তুই আর কোনো নাটক করবি না ছেলেপক্ষের সামনে। এমন সমন্ধ মোটেও হাতছাড়া করা যাবে না।
দাদীর কথা শেষ হতেই পুষ্প টেবিল থেকে ওঠে দাড়ায়। তারপর বলে
– তোমাদের কতো করে বলেছি আমি যে আমি কোন বিয়ে করবো না। তোমরা আমার কথা কেনো শুনো না। তোমাদের যখন এতোই পছন্দ হয়েছে সমন্ধ তো পাপড়িকে বিয়ে দিয়ে দিলেই তো পারো। মাত্র ৫ মিনিটের ছোট আমার সে। আর এমন তো নয় যে এর আগে কোথাও কোন ছোট বোনের আগে বিয়ে হয়নি তাই না?
পুষ্পকে দাদী একটা ধমক দিয়ে বলে
– মেয়ে হয়ে যখন জন্মেছিস বিয়ে তো তোকে করতে হবে। আর আমাদের জন্যই তো তুই বিয়ে করতে চাস না? আমার কি আজ আছি তো কাল নেই। আর তোর মার দায়িত্ব তুই বিয়ে করেও তো নিতে পারবি। বউমা তুমি কেনো কিছু বলছো না?
এবার আফিয়া বেগম তার মুখ খোলে
-তুই কি অন্য কাউকে পছন্দ করিস?
-না মা, তেমন কিছু না।
– তবে কেনো বিয়ে করতে চাস না। সব মায়েদের মতো আমারো আমার মেয়েদের বউ সাজতে দেখার স্বপ্ন আছে।
-মা তুমি বুজতে পারছো না। আমার বিয়ে হয়ে গেলে আমার ক্যাফে, তোমাদের কে দেখবে?
– তোর ক্যাফে আমি আর তোর ম্যানেজার বাবলু মিলে দেখে নিবো। আর এমন তো নয় যে তোকে অনেক দূরে পাঠিয়ে দিচ্ছি, বিয়ে দিয়ে একবারে পর করে দিচ্ছি নাতো তোকে। তোর জীবনটা সুখের হোক মা হিসেবে আমি তাই চাই।
– কিন্তু মা….
এবার আফিয়া বেগম পুষ্পের হাত নিয়ে নিজের মাথায় রেখে বলে
– তোকে আমার কসম। এবারের বিয়েতে যদি তুই কোন গন্ডগোল করিস তবে তুই আমার মরা মুখ দেখবি।
– মা…
কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবার পুষ্প বললো
– তবে বেশ তোমরা যা ভালো বুঝো তাই করো, আমি আর কোনো কিছুতে বাধা দিবো না।
বলেই চুপচাপ ঘর থেকে বের হয়ে যায়।
পুষ্পর এমন কথায় দাদীর মুখে একটু হাসি ফুটলো।
অফিসে গিয়েই পাপড়িকে না দেখতে পেয়ে রাইয়ান ম্যানেজারকে জিজ্ঞেস করলো
– ম্যানেজার, আজ পুষ্প আসে নি?
– স্যার, পুষ্প তো ছুটি নিয়েছে কা….
ম্যানেজারের সম্পূর্ণ কথা না শুনেই রাইয়ান বললো
– হয়েছে, আমি বুজতে পেরেছি। আপনি যান এখন।
নিজেই মনে মনে বলতে লাগলো রাইয়ান
– আজ তো বাবা-মা পুষ্পকে দেখতে যাবে। তাকে তো প্রস্তুতিও নিতে হবে তার জন্য। ছুটি তো তার লাগলেই।
এসব ভাবতে ভাবতেই মনটা কেমন নেচে ওঠে রাইয়ানের।
– কিরে ঠিকঠাক মতো পৌঁছে গেছিস বাসায়।
ফোন ওপাশ থেকে পুষ্পের কথার জবাব দিলো পাপড়ি,
– হ্যা, আমরা ঠিকঠাক পৌঁছে গেছি, আপু। তোরা সবাই কেমন আছিস??
– হুম ভালো। কিন্তু?
– কিন্তু কি?
– ঐ বিয়ে! মা আর দাদী মিলে আমাকে বিয়ে দিয়েই ছাড়বে।
– হা হা। ভালোই তো হবে। তুই গেলে বাসায় রাজত্ব করবো আমি। আমার আর কারো সাথে রুম শেয়ার করতে হবে না। মাও আমাকে বেশি বেশি আদর করবে। কতো মজা!
– কী! যা তোর সাথে আর কথাই বলবো না আমি।
পুষ্প রাগ করে ফোন কেটে দেয়।
আর ওপর পাশে পাপড়ি আর কিছু বলার আগেই ফোন কাট হয়ে যায়। পাপড়ি হাসতে হাসতে বললো
– যখন রাগ কমবে তখন নিজেই ফোন দিবি।
পাপড়িকে হাসতে দেখে নীল কাছে এসে বললো
– কিরে, একা একা হাসছিস যে?
– আরে, আপুর সাথে ফোনে কথা বলছিলাম। দাদী মনে আবার আপুর জন্য আবার কোন বিয়ের সমন্ধ এনেছে। তা নিয়ে একটু মজা করতেই রাগ করে ফোন কেটে দিয়েছে।
– ওহ, তাই বল। আচ্ছা, পাপড়ি তোর কেমন ছেলে পছন্দ?
-আমার তো একদম হিরো টাইপ ছেলে পছন্দ। যার মনটাও হিরোর মতো আর দেখতেও হিরোর মতো। যে আমাকে অনেক ভালোবাসবে। আর সবচেয়ে বড় কথা যে বিয়ের পরে আমাকে সহ আমার মা-দাদীর দায়িত্ব নিবে তাকেই বিয়ে করবো আমি।
– এমন ছেলে তোকে খুজতে হবে না। তোর আশেপাশেই এমন ছেলে দাড়িয়ে আছে।
একটু ভাব নিয়ে কথাটা বললো নীল।
– এ্যাহ, রামছাগলের মতো চেহেরা আর তাকে আমি বিয়ে করবো। আমার বয়েই গেছে।
পাপড়ির চুল ধরে একটা টান দিয়ে নীল বললো
– আমাকে রামছাগলের মতে দেখতে?
– আহ! লাগছে ছাড়।
বলতেই নীল চুল ছেড়ে দিতেই পাপড়ি বললো
– হ্যা তোকে রামছাগলের মতোই দেখতে বলেই দৌড় দিল পাপড়ি।
-কিহ! তবে রে…
বলেই নীল পেছনে দৌড় দিলো।
পাপড়ি দৌড়াতে দৌড়াতে হঠাৎ করে তার হাতে থাকা ফোনটা মেঝেতে পড়ে আছাঁড় লেগে দুখন্ড হয়ে যায়।
ফোন ভাঙ্গতে দেখে পাপড়ি ন্যাকা কান্না করে
– ভ্যা….. আমার ফোনটা শেষ হয়ে গেল।
ফোনের খন্ডগুলো হাতে নিয়ে নীলের কাছে গিয়ে বললো
– সব তোর জন্য হয়েছে। তোর জন্যই আমার ফোনটা ভাঙ্গছে।
– এ্যাহ! তোর ফোন মনে হয় আমি হাতে নিয়ে দৌড়াচ্ছিলাম যে আমার জন্য হয়েছে?
-তোর জন্যই তো আমি দৌড় দিয়েছিলাম।
– আমি কি তোকে দৌড় দিতে বলেছিলাম নাকি?
– এখন আমি বাসায় কথা বলবো কিভাবে, বসের সাথে কথা বলবো কিভাবে? ভ্যা….
-বাসায় আমার ফোন দিয়ে কথা বলতে পারিস। তবে বসের সাথে কথা বলতে পারবি না।
-বসের সাথে কথা বলতে পারবো না কেন?
– আমি ফোনে কোনো আননোন নাম্বার সেভ করি না। তোর বসের সাথে কথা বলার জন্য আমার ফোনে এতো টাকাও নেই।
বলেই চলে গেলো নীল। আর মনে মনে বলতে লাগলো
– সারাদিন শুধু বস আর বস। আমার বস এমন আমার বস ওমন। উফ! ওর মুখে ওর বসের কথা শুনলে আমার শরীরটা জ্বলে যায়। ওকি আমার ফিলিংসগুলো একদমই বুজে না। আমার আমিও ওর সামনে গেলে কিছু বলতে পারি না।
-ছোটবেলায় মা-বাবা যখন তাদের কর্মব্যস্ততার জন্য আমাকে দূরে ঠেলে দিয়েছিল, ঠিক তখন দাদাভাই আমাকে তাদের দুজনের ভালবাসা দিয়েছে। আমাকে বড় করার পেছনে আমার বাবা-মায়ের চেয়ে আমার দাদাভাইের ক্রেডিট বেশি। আর আজ দুনিয়া থেকে বিদায় নেওয়ার বেলায়ও তিনি আমার কথাই ভাবছেন। আর আমি তার নাতি হিসেবে আমার কর্তব্য দাদাভাইয়ের শেষ ইচ্ছাটুকু পূরণ করা।
রাইয়ান হাতে তিন-চারটা মেয়ের ছবি নিয়ে এই কথাগুলো ভাবছে। কিন্তু কোন মেয়েকেই তার পছন্দ হচ্ছে না।
আজ সকাল থেকেই রাইয়ানের বাবা, মা,বোন মিলে একগাদা মেয়ের ছবি নিয়ে রাইয়ানকে দেখাচ্ছে। রাইয়ানকে অফিসেও যেতে দিলো না আজ।
– হ্যালো আন্টি।
শায়ন আসতে দেখে রাইয়ান কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিলো।
শায়নকে দেখে রাইয়ানের মা মিসেস মাহমুদা মুখে হাসি নিয়ে বললো
– এসো বাবা, এসো। তোমার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম। এখন তুমি তোমার বন্ধুর জন্য মেয়ে পছন্দ করে দাও।
শায়ন কিছুটা মুচকি হেসে বললো
– এ কাজের জন্য ডেকেছো আমায়? তা আমার পছন্দের মেয়েকে কি আমার বন্ধুর পছন্দ হবে?
বলেই গিয়ে বসলো রাইয়ানের পাশে। রাইয়ানের চুপসে পড়া মুখ দেখেই শায়ন বুজতে পেরেছে যে রাইয়ানের মেয়ে পছন্দ হচ্ছে না। তাই আস্তে করে রাইয়ানকে বললো
– কিরে, কোন মেয়েই পছন্দ হচ্ছে না?
– কি করে হবে? আমি যে পুষ্পকে পছন্দ করি।
– উফ! এ পেয়ার… তা মেয়েটার তো বয়ফেন্ড আছে বললি তো এখন পছন্দ করে কি হবে?
– আরে না, কোন বয়ফেন্ড নেই। ঐদিন আমি একটু ভুল বুঝে ফেলিছিলাম। কালকেই ও আমাকে বলছে যে ওর বয়ফ্রেন্ড নেই।
– ওহ! এতো খুশির সংবাদ। তো প্রপোজটা করেছিস?
– না। আর কিছু বলার সুযোগ পাই নি।
– তোর দ্বারা কিচ্ছু হবে না।
– তুই একটু হেল্প কর প্লিজ?
– আচ্ছা। শোন তোর যা অবস্থা তুই মেয়েটাকে কখনই তোর মনের কথা বলতে পারবি না। তার চেয়ে বরং এখন সরাসরি বিয়ের সমন্ধটাই পাঠিয়ে দে। মেয়ে রাজী হলে তো বিয়ে করবিই নাহলে অন্য মেয়ে দেখবি। কেমন আইডিয়াটা?
– কিন্তু পুষ্পকে কোন কিছু না বলেই সরাসরি বিয়ের প্রপোজাল পাঠিয়ে দিবো? একটু তাড়াহুড়ো হয়ে যাচ্ছে না?
– আরে ধুর তোর তাড়াহুড়ো! এখন কিছু না করলে না মেয়েটাকে আর পাবি না বুজছিস?
-কিন্তু……
-কি কথা হচ্ছে চুপিচুপি দুই বন্ধুর মধ্যে?
রাইয়ান বাবা মি. রাশেদ প্রশ্নটা করলেন তাদের।
বাবার কথা শুনে রাইয়ান চুপ করে বসে পড়লো।
– তা আংকেল-আন্টি আপনারা তো শুধু শুধু এসব মেয়ের ছবি দেখে টাইম নষ্ট করছেন?
শায়নের এমন কথা শুনে ছবির থেকে নজর সরিয়ে সবাই নজর দিলো শায়নের দিকে। মিসেস মাহমুদা আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করলেন
– মানে! কি বলতে চাচ্ছো তুমি?
– রাইয়ানের তো আগে থেকেই মেয়ে পছন্দ করা আছে।
এই কথা শুনে যেন মিসেস মাহমুদার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো। তবে মি. রাশেদ তা শুনে খুশি হয়েছে।
রাইয়ানের বোন নুরি বললো
-তা ভাইয়াকে তো শুরুতেই জিজ্ঞেস করেছিলাম যে তার কোনো পছন্দ আছে কিনা? তখন তো কিছু বলেনি ভাইয়া?
– আরে তুই তোর ভাইয়াকে চিনিস না? মেয়েদের মতো লজ্জায় কথা বলতে পারে না। দেখিস না এই তার মেয়ে পছন্দের কথাটাও আমাকেই বলতে হয়েছে।
শায়নের এমন কথা শুনে মিসেস মাহমুদা চোখের চশমা ঠিক করে বললো
– তা মেয়ের নাম কি? কি করে? তার বংশ পরিচয় কি? তার বাবা কোথায় বিজনেস করে?
কথাটা শুনে রাইয়ানের গলার পানি শুকিয়ে গেছে, সে একটা ঢুক গেলে কিভাবে বলবে তা ভাবছে আর শায়নের দিকে অসহায় ভাবে তাকিয়ে আছে।
– এগুলোও আমাকেই বলতে হবে? কোনো কাজের হলি নাহ!
মনে মনে বলছে শায়ন রাইয়ানের দিকে তাকিয়ে।
– আন্টি আমি বলছি। মেয়ের নাম পুষ্প। রাইয়ানের পার্সোনাল এসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করে। আর বাবা…..
বলেই রাইয়ানের দিকে তাকালো শায়ন।
রাইয়ান আস্তে করে বললো
– তার বাবা নেই।
এসব শুনে মিসেস মাহমুদা বসা থেকে ওঠে দাড়িয়ে বললো
– অসম্ভব, এমন মেয়ের সাথে আমি আমার ছেলের বিয়ে কখনোই দিবো না। যার কোন বংশ পরিচয় নেই, বাবা নেই, এমনকি আমাদের অফিসেই চাকরি করে, এমন মেয়ে পছন্দ করতে পারলে কি করে তুমি রাইয়ান?
রাইয়ান চুপচাপ মাথা নিচু করে বসে আছে।
রাইয়ানের মার এমন কথা শুনে রাইয়ানের বাবা কড়া গলায় বলে ওঠলো
– তোমার পছন্দকে আমার ছেলে কখনোই বিয়ে করবে না। আমার ছেলে তাকেই বিয়ে করবে যাকে তার পছন্দ। তোমার এসব মান-মর্যাদা, বংশ পরিচয় দিয়ে কারো জীবন চলবে না। মেয়ে যদি ভালো হয় তবে তার সাথেই আমি রাইয়ানের বিয়ে দিবো। আর আমাদের হাতে এতো সময়ও নেই যে তুমি এতো সময় নিয়ে মেয়ে খুজবে? আর কান খুলে শোনে রাখো, আমার ছেলের পছন্দই আমার কাছে বড়। কারণ বিয়েটা তুমি করবে না রাইয়ান করবে। শায়ন তুমি আজই ঘটককে বলে দাও মেয়ের বাড়িতে যেন খবর পাঠায়। আমরা কালকেই দেখতে যাবো মেয়েকে।
মি. রাশেদের কথা শুনে মিসেস মাহমুদা রাগে হনহনিয়ে রুমে ভিতর চলে যায়।
বাবার কথা শুনে মনে কিছুটা শান্তি পায় রাইয়ান আর স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
সকাল থেকে পাপড়ি রাইয়ানের অপেক্ষা করছে। অনেকবার ফোনও দিয়েছে কিন্তু রাইয়ান কল ধরলো না। সারাদিন পার হয়ে যাওয়ায় যখন রাইয়ান অফিস না আসে তখন ম্যানেজারের কাছ থেকে ৭ দিন ছুটি নিয়ে বাসায় চলে যায় পাপড়ি । বিকেলে পাপড়ি,নীল,রূপা ও অবিনাশ বাবু ট্রেনে ওঠে রওনা হলো রূপাদের বাসায়।
সন্ধ্যায় ঘটকের আগমন হয় পুষ্পদের বাসায়।ঘটককে দেখলেই পুষ্পের রাগ ওঠে যায়। শুধু মা দাদীর সামনে কিছু বলতে পারে না। চুপচাপ রুমে চলে যায়।
ঘটক এসেই আগেই দাদীর সাথে ভাব জমিয়ে নেয়। কতক্ষণ খোশগল্প করে তারপর আসল কথাই আসে ঘটক
– এবার একটা ভালো বিয়ের সমন্ধ এনেছি চাচি।
পুষ্পের দাদী কিছুটা নিরাস হয়ে বললো
– সমন্ধ এনে কি লাভ? আমার নাতিনীর কীর্তি কলাপ দেখে পাত্রপক্ষ আগেই চলে যায়।
– কিন্তু এবারের সমন্ধটা যে অনেক ভালো। আর একটা কথা হলো ছেলে আপনার নাতিনীকে আগে থেকেই পছন্দ করে রেখেছে ছেলে। আর তারাই তো আমাকে পাঠিয়েছে এখানে।
– কিহ! কোন নাতনীকে?
– পুষ্প! পুষ্পই আপনার নাতনীর নাম নাহ?
দাদী খুশি হয়ে বললো
-হ্যা পুষ্প।
– হ্যা। এখন শোনুন, ছেলে অনেক বড় কোম্পানির মালিক, অনেক ভালো পরিবারের সন্তান। ছেলে আপনাদের মেয়েকে প্রথম দেখেই পছন্দ করে ফেলেছে। আর তাই আমাকে খোঁজ-খবর নিতে এখানে পাঠিয়েছে। এখন আপনারা কি বলেন?
– শোনে তো ভালই লাগছে। তুমি কি বলো বউমা?
– দেখেন চাচী, এটা খুব ভালো সমন্ধ। মেয়ের ভাগ্য ভালো যে এমন সমন্ধ এসেছে তার জন্য। তার ওপর থেকে ছেলেও মেয়েকে পছন্দ করেছে। এখানে আপনাদের মেয়ের বিয়ে হলে মেয়ে অনেক সুখে থাকবে। আপনারা যদি রাজি থাকেন তবে কালকেই ছেলের বাবা মা মেয়েকে দেখে যেতে চায়?
– কালকেই? বউমা তোমার কি মত, কিছু বলছো না যে?
– আমি কি বলবো মা, আপনি যা ভালো বুজেন।
কথাটি বললো আফিয়া বেগম।
– হুম, ভালো বুজলে তো হবে না তোমার মেয়ে তো আবার ছেলেপক্ষের সামনে গিয়ে নাটক শুরু করবে। তোমার মেয়েকেও তো বুজাতে হবে?
শাশুড়ীর কথা শুনে আফিয়া বেগম বললো
-আপনি চিন্তা করবেন না মা, আমি পুষ্পকে বুঝাবো।
দরজায় ঠকঠক আওয়াজ শুনে দরজা আফিয়া বেগম দরজা খুলতেই তাকে জড়িয়ে ধরে একটি মেয়ে বললো
– কেমন আছো, আন্টি?
আফিয়া বেগম মেয়েটির চেহেরা দেখে তাকে চিনার চেষ্টা করছে, কিন্তু চিনতে পারছে না।
আফিয়া বেগমকে এমন অপলক ভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে মেয়েটি বললো
– চিনতে পারছো না বুজি, আমায়?
– নাহ মানে, মনে করতে পারছি না।
– আমি তোমার সেই ছোট্ট রূপা। তোমার তৃতীয় মেয়ে।এখন চিনতে পেরেছো?
আফিয়া বেগম মুখে এক রাশ হাসি নিয়ে বললো
– রূপা। সেই আমার ছোট্ট রূপা এতো বড় হয়ে গেছে।
বলেই আবার জড়িয়ে ধরলো রূপাকে।
– কিন্তু তুমি আমায় চিনতে পারো নি, আন্টি। ভেরি বেড।
মুখটা গম্ভীর করে বললো রূপা।
– আরে চিনবোই বা কিভাবে, সেই কতো ছোট থাকতে দেখছিলাম তোকে।
– হ্যা, আর সেই রূপার এখন বিয়ে হতে চলেছে।
পেছন থেকে রূপার বাবা বললো কথাটা।
– আরে অবিনাশ দাদাও এসেছেন যে। সেই কতো বছর পর দেখা হলো আপনার সাথে।
আর বাহিরে কেনো আপনারা, ভিতরে আসুন। পাপড়ি দেখ কে এসেছে।
বলে ডাকতে লাগলো আফিয়া বেগম।
– কে এসেছে মা?
রূপাকে দেখিয়ে আফিয়া বেগম বললো
– দেখতো চিনতে পারিস কিনা?
পাপড়ি কিছুক্ষণ রূপাকে দেখে তারপর চিনতে পেরে দৌড়ে এসে রূপা জড়িয়ে ধরে বলে
– রূপা….
কতদিন বাদে তোকে দেখলাম। তুই এখান থেকে যাওয়ার পর তোকে খুব মিস করেছি আমি।
– আমিও রে পাপড়ি। পুষ্প কোথায়?
– সে কাজ থেকে এখানো বাসায় ফিরে নি। একটুপরই চলে আসবে।
– হুম আর নীল কই? তোর চুল ধরে যে টান দিতো?
– নীল!! ওরাতো এখন এ পাড়ার দক্ষিণ দিকের বাসায় ওঠেছে।
– সব কিছু কতো পাল্টে গেছে?
– হুম তুইও।
– হয়েছে হয়েছে দুই বান্ধবী মিলে পরে কথা বলিস, এখন মেয়েটাকে একটু বসতে দে। কতো দূর থেকে এসেছে তারা।
আফিয়া বেগমের এমন কথায় পাপড়ি আর রূপা দুজন দুজনকে ছেড়ে দাড়ায়।
গাড়ি থেকে নেমে দৌড়ে হসপিটালের ভিতরে যায় রাইয়ান। রাইয়ানকে দেখে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো রাইয়ানের বাবা। রাইয়ানেরও চোখ ছলছল করছে।
– হঠাৎ করে কি থেকে কি হয়ে গেলো, বাবা। আজ সকালেই তো দাদাভাই আমার সাথে কথা বলেছে। আমরা একসাথে হাসাহাসি করেছি।
– জানি না আমি। হঠাৎ করেই তোর দাদা অজ্ঞান হয়ে যায়। হসপিটালে আনার পর ডাক্তার বললো, ব্রেইন স্টোক করেছে। ব্রেইনের একপাশ ডেমেজ হয়ে গেছে। বাবার হাতে আর বেশি সময় নেই।
রাইয়ান তার বাবার মুখে এ কথা শুনে দুকদম পিছিয়ে যায়।
– না এ হতে পারে না। দাদাভাই এভাবে আমাকে ছেড়ে যেতে পারে না।
– ঐদিন রূপার মা মারা যাওয়ার পর আমার ছোট্ট রূপাকে যদি আপনি না সামলাতেন, তাহলে হয়তো আমার মেয়েটা আর বাঁচতোই না। এর জন্য আমি আপনার কাছে সারাজীবন ঋণী থাকবো।
রূপার বাবার মুখে এসব শুনে আফিয়া বেগম বললো
– ছি,ছি অবিনাশ দাদা, এসব কি বলছেন আপনি। রূপা তো আমার পুষ্প-পাপড়ির মতোই।
– আমাদের ধর্ম ভিন্ন থাকলেও আপনি রূপাকে যে আদর দিয়েছেন তা হয়তো আর কেউই করতে পারতো না।
– এসব বলে আপনি আমাকে লজ্জা দিচ্ছেন দাদা। আমি কখনই আমার আদরের মাঝে ধর্মকে আনি নি। রূপাকে আমি আমার মেয়ের মতোই আদর করেছি।
– হুম, এতো আদর দিয়ে কি হলো সেই পরে আমাদের ছেড়ে চলেই গেলেন আংকেল।
পেছন থেকে কথাটি বললো পুষ্প।
-পুষ্প চলে এসেছিস, তোর অপেক্ষাই ছিলাম আমি।
– তুমি আর কথা বলো না আংকেল, সেই যে চলে গেলে আমাদের ছেড়ে এরপর তো আর খোজখবরই নেই তোমাদের।
– কি করবো পুষ্প মা, চাকরির ট্রান্সফার না হলে কি তোমাদের ছেড়ে যেতাম? আর তোমাদের কোন ফোন নাম্বারও ছিলো না আমার কাছে যোগাযোগ করার জন্য।
-রূপা কোথায়?
– পাপড়ি আর রূপা তোদের রুমে আছে যা।
– ওকে মা। আমি একটু দেখা আসি ওর সাথে।
কথা শেষ করে পুষ্প রুমের ভেতরে যায়।
– কেমন আছো দাদাভাই?
কান্নাজড়িত কন্ঠে রাইয়ান কথাটা বললো।
রাইয়ান দাদা রাইয়ানের মুখে হাত রেখে বললো
– বেশিদিন থাকতে পারলাম না আর তোদের সাথে।
পেছন থেকে রাইয়ানের বাবা বললো
– এভাবে কেনো বলছো তুমি?
– যা সত্যি তাই বলছি। তোরা না বললেও আমি বুঝে গেছি আমার হাতে বেশি সময় নেই।
রাইয়ান তার দাদা কথা শুনে অবাক হয়ে তার বাবা দিকে তাকালো।
রাইয়ানের দাদা রাইয়ানের দিকে তাকিয়ে আবার বলতে লাগলো
– ভেবেছিলাম আমার নাতির জন্য একটা লাল টুকটুকে বউ এনে দেবো। কিন্তু বউ আনা তো দূরের কথা তাকে দেখাও বোধ হয় আমার ভাগ্যে জুটবে না।
– তুমি এভাবে বলো না বাবা, তোমার এ ইচ্ছা পূরণ হবে। আগমী ৩/৪ দিনের মধ্যে তোমাকে তোমার নাতি বউ এনে দিবো।
রাইয়ান তার বাবার কথা শুনে আর কিছু বললো না। চুপচাপ বসে রইলো।
– তা এতোদিন পর কিভাবে মনে পড়লো আমাদের অবিনাস বাবু?
পুষ্প দাদীর কথা শুনে অবিনাস বাবু হাসি দিয় একটা বিয়ের কার্ড বাড়িয়ে দিলো আফিয়া বেগমকে।
– রূপার বিয়ে কার্ড। আগমী ১০ তারিখ রূপার বিয়ের লগ্ন পড়েছে।
কথাটা শুনে আফিয়া বেগম মুখে হাসি ফুটিয়ে বললেন
– সেই আমার ছোট্ট রূপার আজ বিয়েও হতে চলছে।
পেছন থেকে রূপা বললো
-হ্যা। তাইতো সাতদিন আগেই তোমাদের নিতে চলে এসেছি।
রূপার মুখে এ কথা শুনে আফিয়া বেগম বললো
– মানে? এত তাড়াতাড়ি যেয়ে আমরা কি করবো?
রূপা একটু অভিমান করে বললো
-ছোট থেকে তোমাদের আদর পেয়ে বড় হয়েছি, তোমাদের ছাড়া আমি বিয়ে করবো না।
– শুনো মেয়ের কথা, আরে আমরা সবই চলে গেলে ঘরে কে থাকবে? আমরা না হয় বিয়ের আগের দিন চলে আসবো?
– আমি এতো কিছু জানি না, তুমি না যেতে পারলেও পাপড়ি-পুষ্পকে আমি নিয়েই যাবো আমার সাথে।
রূপার কথা শুনে পুষ্প বললো
– আরে আমি চলে গেলে আমার ক্যাফে কে দেখবে?আর তোদের বাড়ি তো কাছে না যে কোন সমস্যা হলেই এখানে চলে আসতে পারবো। এক রাত ট্রেনে থাকতে হবে। আমি বরং মায়েদের সাথেই যাবো।
রূপা মনটা খারাপ করে বললো
– তাহলে কি কেউই যাবে না আমার সাথে?
পুষ্প বললো
– যাবে তো, পাপড়ি যাবে।
-কিহ! আমার তো অফিস আছে?
– ছুটি নিয়ে নিবি, আর তুই তো বলিসই যে তোর বস নাকি খুব ভালো, সবসময়ই প্রশংসা করিস। আর এখন ৭ দিনের ছুটি নিতে পারবি নাহ?
পাপড়ি কিছুটা চিন্তার ছাপ মুখে নিয়ে বললো
– আচ্ছা দেখি কাল।
রূপা একটু ঘোমরা মুখ করে বললো
– নিতে এসেছি সবাইকে, আর এখন শুধু পাপড়ি যাবে। তাও সিওর না।
রূপার এমন কথায় পুষ্প বললো
– নীলকে কি দাওয়াত দিবি না?
-হ্যা দেবো তো, কিন্তু সেও যদি না যাই?
পুষ্প কিছুটা মুচকি হেসে বললো
– পাপড়ি গেলে নীলও যাবে। চিন্তা করিস না, আমি নীলকে ফোন করে বলে দিচ্ছি।
– পাপড়ি, ফুচকা খাবি?
– খাবো না মানে, তুই খাওয়াবি নীল?
– হুম।
– বাহ! কতো ভালো তুই।
– হয়েছে আর পাম দিতে হবে না। বোনাস পেয়েছি তাই বললাম। নাহলে তোর মতো শাকচুন্নিকে ফুচকা খাওয়াবে কে?
– এ্যাহ, যে ভাব ধরেছে মনে আমার কাছে ফুচকা খাওয়ার টাকা নাই।
– নাই তো, প্রমোশন যে পেলি একবারও ট্রিট দিছস? কিপটা একটা।
– কিহ! আমি কিপটা। চল আজকেই ট্রিট দিবো তোকে।
– নাহ! লাগবে না তোর ট্রিট।
– ট্রিট তো আমি তোকে আজ দিয়েই ছাড়বো। আমাকে কিপটে বলা।
বলেই পাপড়ি নীলের হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে গেলো।
দূর থেকে তাদের দেখছে রাইয়ান। তাদের এমন হাসাহাসি করতে রাইয়ান ভেবে নিয়েছে যে নীল পাপড়ির বিএফ। নিমিষেই মনটা খারাপ হয়ে গেলো তার। মনের সব আনন্দ দুঃখে পরিণত হয়ে গেলো। নিরাশ হয়ে গাড়িতে ওঠে চলে যায় বাসায় রাইয়ান।
আজও একটা বিয়ের সমন্ধকে তুই রিজেক্ট করেছিস। এমন করলে তোর তো বিয়েই দিতে পারবো না।
দাদী এমন কথায় মনে মনে খুশিই হচ্ছে পুষ্প।
– আমি তো তাই চাই দাদী। আমার বিয়ে না হোক।
– দেখেছো তোমার মেয়ের কথা বউমা, কি বলছে। একে কি তুমি বিয়ে-সাদি দিবে নাহ?
– দেবো মা। কিন্তু আজকের বিয়ের সমন্ধটা আমারো এতো ভালো লাগে নি।
– টেনটেনা…… অনেক হয়েছে বিয়ের আলাপ। এখন দেখো আমি কি নিয়ে এসেছি?
পাপড়ি এমন কথায় সবাই পাপড়ির দিকে তাকালো।
-মা এই নাও। এগুলো তাড়াতাড়ি সার্ব করো তো। আমি ফ্রেস আসছি।
– এগুলো আবার কী?
– আরে মা, বিরিয়ানী এনেছি গো বিরিয়ানী আর সাথে ফুচকা।
ফুচকার কথা শুনে দাদীর মুখে হাসি দিয়ে বললো
– কতদিন হলো ফুচকা খাই না।
– হুম, জানি তো আমার দাদীর ফুচকা পছন্দ তাই একটু বেশিই এনেছি।
– তা কোন খুশিতে এসব এনেছি?
পাপড়ি পুষ্পের দিকে তাকিয়ে বললো
– প্রমোশনের ট্রিট মনে করতে পারিস, আপু।
রাতে শুয়ে শুয়ে ভাবছে রাইয়ান
– অনেক লেট করে ফেলেছি। আর একটু আগে কিছু করতে পারলে হয়তো আজ অন্য কাহিনী হতো।
হঠাৎ শায়নের ফোন আসে
– হ্যালো
– কিরে বলেছিস?
মুখটা কালো করে রাইয়ান বললো
– নাহ! ওর বয়ফেন্ড আছে।
– হাই পোড়া কপাল তোর। আচ্ছা, কষ্ট পাস না। এমন অনেক মেয়ে পাবি জীবনে।
– হুম।
– আর ভাবিস না, ঘুমিয়ে পড়। রাখি।
অফিসে বসে বসে ফোন ঘাটছে রাইয়ান। খুব বোরিং লাগছে তার। প্রতিদিনের মতো আজ তার পাপড়ি চেহেরা দেখে মন ভালো হচ্ছে। পাপড়িকে ইচ্ছে করেই দূরে দূরে রাখছে নিজের কাছ থেকে।
পাপড়ির কাছেও রাইয়ানের বিহেভ অদ্ভুত লাগছে। অন্যদিনের মতো আজ তার সাথে ভালো করে কথা বলছে না, তার কথা ভালো করে শোনছে না। তাকে কেমন ইগনোর করে চলছে রাইয়ান।
দেখতে দেখতে অফিস ছুটির টাইম হয়ে এসেছে। ক্যাবিনের জানালা দিয়ে রাইয়ান লক্ষ্য করলো সেই ছেলেটি আজকেও অফিসের বাহিরে দাড়িয়ে আছে। মুখটা বিষম করে বললো
– পুষ্পের জন্যই অপেক্ষা করছে ছেলেটা।
-মে আই কামিন, স্যার
-ইয়েস পুষ্প।
– স্যার, একটা কথা বলবো?
– বলো?
– আপনার কি মন খারাপ?
পাপড়ির মুখে তাকিয়ে রাইয়ান আস্তে করে বললো
– নাহ।
-তাহলে হঠাৎ এতো চুপচাপ হয়ে আছেন যে?
রাইয়ান মনে মনে বলছে, উফ এতো প্রশ্ন করে কেনো মেয়েটা? মনটা তো ভেঙ্গে দিয়েছে এখন জানতে আসছে আমার মন খারাপ কিনা।
– কি হলো স্যার, কিছু বলছেন না যে?
– এমনি কথা বলছি না, তোমার কোনো সমস্যা তাতে?
একটু রাগী স্বরেই কথাটা বললো রাইয়ান।
– না মানে, সমস্যা নেই। আমি সব কাজ শেষ করে ফেলেছি, স্যার। আমি আসি তাহলে?
রাইয়ান একবার জানালার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলছে,
বিএফ এর সাথে দেখা করার জন্য কতো তাড়া মেয়েটার, দাড়াও দেখাচ্ছি মজা।
– শুনো পুষ্প, এক কাপ চা বানিয়ে আনো তো?
– স্যার, আমি চা বানাবো?
– হ্যা তুমি। তোমার কি কোনো সমস্যা হবে তাতে?
– না মানে, এখন তো অফিস ছুটি হয়ে গেছে। আপনি বাসায় গিয়ে না হয়….
– তোমাকে আমার পিএ কেনো বানিয়েছি? আমার সব কিছুর খেয়াল রাখার জন্য, নাকি আমাকে উপদেশ দেওয়ার জন্য। যাও, চা বানিয়ে নিয়ে এসো।
পাপড়ি হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে একবার, চা বানাতে গেল।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
অফিসের বাহিরে নীল দাড়িয়ে দাড়িয়ে পাপড়ির অপেক্ষা করতে লাগলো।
– উফ, এই মেয়েটা আসছে না কেনো? সবাইকেই তো দেখছি বের হচ্ছে শুধু পাপড়িকে দেখছি না। ভালো লাগে না আর এভাবে দাড়িয়ে থাকতে।
এদিকে পাপড়ি চা বানাতে গিয়ে দেখে চায়ের লিগার শেষ হয়ে গেছে।
-ধ্যাত, লিগারটাও এখনি শেষ হতে হলো? ঐদিকে নীল বাহিরে অপেক্ষা করছে। বেশি দেরি হলে পরে আমার রক্ত চুষে খাবে।
এসব বলতে বলতে চায়ের লিগার বানাছে।
কিছুক্ষণ পর চা বানিয়ে পাপড়ি ক্যাবিনে আসলো
– মে আই কামিন, স্যার?
– হুম আসো।
– স্যার, আপনার চা।
এমন সময় পাপড়ির ফোনে কল আসে। ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখলো নীল কল দিচ্ছে। তাড়াতাড়ি ফোনটা কাট করে দেয় সে।
বেচারা আমার জন্য অপেক্ষা করছে নিচে। স্যারের সামনে ফোনটাও ধরতে পারছি না।
মনে মনে বলছে পাপড়ি।
রাইয়ান চায়ের কাপ হাতে নিয়ে পাপড়িকে দেখছে।
– পুষ্প, আমার ঐ ডেস্কের ফাইলগুলো নিয়ে আসো তো?
– জ্বী স্যার।
পেছনে ফিরেই পাপড়ি মনে মনে বলছে আজকে স্যার কি আমায় বাসায় যেতে দিবে না? নীল হয়তো অনেক রেগে আছে। আমাকে কাঁচা চিবিয়ে চিবিয়ে খাবে আজ নীল।
– কি হলো, দাঁড়িয়ে আছো যে?
– হ্যা স্যার, যাচ্ছি।
এমন সময় আবার নীলের ফোন আসে। পাপড়ি আবার ফোন কাট করে দেয়।
ফাইলগুলো তাড়াতাড়ি নিয়ে দেয় রাইয়ানকে।
একটুপর আবার ফোন বাজে পাপড়ির। ফোনটা কাট করতেই রাইয়ান আড়চোখে একবার পাপড়ির দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে
– বারবার কি তোমার বয়ফেন্ড কল করছে?
বয়ফেন্ডের কথাটা শুনে পাপড়ি চমকে ওঠে।
– বয়ফেন্ড?
– অফিসের বাহিরে যে ছেলেটা দাড়িয়ে থাকে রোজ তোমার জন্য সেই তো কলটা করছে?
পাপড়ি কিছুটা অবাক হয়ে বলে
– সে আমার বয়ফেন্ড হতে যাবে কেনো,স্যার।
সে তো আমার কাজিন, নীল। আমাদের অফিস পাশাপাশি বলে আমরা একসাথে যাওয়া আসা করি।
কথাটা শুনে রাইয়ান মনটা আনন্দে নেচে ওঠে। চায়ের কাপটা হাত থেকে রেখে দাড়িয়ে ওঠে বলে,
– সত্যিই কি তাই?
রাইয়ানের এমন অবস্থা দেখে পাপড়ি কিছুটা অবাক হয়ে বলে
– হুম সত্যি।
রাইয়ান নিজের ইমোশনগুলো আর ধরে রাখতে পারবে না পাপড়ির সামনে তাই সে পাপড়িকে বলে,
– ওহ, তাহলে তুমি বাসায় যাও এখন। অনেক দেরি হয়ে যাচ্ছে।
– কিন্তু স্যার, এগুলো..
– এগুলো আমি করে নিবো। তুমি বাসায় চলে যাও।
একটু আগেই তো স্যার একদম চুপচাপ হয়ে ছিলেন, দেখে মনে হচ্ছিলো মুড ভালো না হঠাৎ স্যারের এমন মুড চেঞ্জ হলো কিভাবে কিছু বুজতে পারলাম না।
এই কথাগুলো ভাবতে পাপড়ি অফিস থেকে বের হয়।
দূর থেকে পাপড়ি আসতে দেখে নীল দৌড়ে পাপড়ির কাছে যায়
– কিরে, কোথায় ছিলি? বারবার কল কেটে দিচ্ছিলি কেনো?
কিছুটা রেগেই বললো নীল।
– সরি। আমার কাজ শেষ করতে করতে একটু লেট হয়ে গেছে। আর তুই যখন ফোন দিচ্ছিলি তখন আমি বসের সামনে ছিলাম, তাই কল কাট করচ্ছিলাম।
– ওহ! আচ্ছা এখন চল।
পাপড়ির কোন বয়ফেন্ড নেই জানতে পেরে রাইয়ান মহাখুশি। আনন্দে তার নাচতে ইচ্ছে করছে। কি করবে সে বুজতে পারছে না এখন। হঠাৎ তা
– দাড়াও,কোথায় যাচ্ছো পুষ্প?
রাইয়ানের এমন প্রশ্নের কোনো উত্তর খুজে পাচ্ছে না পাপড়ি। তাই চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল।
রাইয়ান আবার বললো
– আমার সাথে আসো।
রাইয়ান অফিসের ভিতর যেতেই সবাই চুপচাপ হয়ে যায়। রাইয়ান ঐ দুটো মেয়েকে কাছে ডেকে বললো
– তা এতোক্ষণ তো খুব ভালোই ভাষণ দিলেন দেখলাম। তো তখন কোথায় ছিলেন আপনারা যখন পুষ্প অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলো? আপনাদের যখন আমার জন্য এতোই কষ্ট হয়েছিল তো ঐদিন কেনো এসে পুষ্পকে ধরলেন না ? ঐদিন তো আপনারা আমাদের নিয়ে হাসি-তামশায় মেতে ছিলেন, কোথায় কেউ এসে আমাকে একটু সাহায্য করলেন না?
– না মানে স্যার!
– আর কি বললেন, থার্টক্লাস মেয়ে? ও যদি থার্টক্লাস মেয়ে হয় তো আপনারা কি? ধোয়া তুলসি পাতা? এই অফিসে কে কেমন তা আমার খুব ভালো করেই জানা আছে। পুষ্পর জায়গায় অন্য কেউ থাকলেও আমার কর্তব্য হিসেবে আমি তাই করতাম যা ঐদিন পুষ্পর সাথে করেছি। আর মনে রাখবেন, পুষ্প এখানে নিজের যোগ্যতায় এসেছে, কারো সুপারিশে নয় যে যার যা মনে হয় তাকে তাই বলতে পারবেন। সে নতুন জয়েন করছে বলে তাকে আপনারা এসব কথা শুনানোর কোন অধিকার পান না। আই ওর্য়ারিং ইউ এন্ড অল, নেক্সট টাইট থেকে কেউ যদি পুষ্পর সাথে এমন বাজে বিহেভ করেছে তো তার চাকরি চলে যাবে। আর পুষ্প তুমি তোমার কাজ করো, আর কেউ যদি তোমাকে কিছু বলে তো আমাকে বলবে।
বলেই হনহনিয়ে নিজের ক্যাবিনে ঢুকে পড়ে রাইয়ান।
রাইয়ানের কথা শুনে সবার মুখ কালো হয়ে গেছে। আর তা দেখে পাপড়ির মনে শান্তি আসে। তার প্রতি রাইয়ানের এমন সিনসিয়ারিটি দেখে পাপড়ি মুগ্ধ। তবে মনের ভিতর একটা খোট রেখেই গেলো যে সে এখানে নিজের যোগ্যতায় নয়, তার বোনের যোগ্যতায় এসেছে।
ক্যাবিনে গিয়ে চেয়ারে বসে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করছে রাইয়ান। এক গ্লাস পানি এক ঢুকে খেয়ে নিল সে।
পুষ্পর অপমান আর তার চোখের জল একবারেই সহ্য করার মতো ছিলো না তার কাছে। রাগের মাথায় যা এসেছে তাই বলে এসেছে বাহিরে। কিন্তু এমন কেনো হলো তার সাথে? ওর জায়গায় অন্য কোনো মেয়ে থাকলেও কি সে তাই করতো?
নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করছে রাইয়ান।
৩ মাস পার হয়ে যায়। পাপড়ির কঠোর পরিশ্রম দিয়ে কাজ করায় সে ৩ মাসেই প্রমোশন পেয়ে যায়। রাইয়ান তাকে তার পার্সোনাল এসিস্ট্যান্ট বানিয়েছে, যেন সবসময় পাপড়িকে চোখের সামনে দেখতে পারে। পাপড়িকে দেখলে রাইয়ানের মনটা ভালো থাকে।
এ ৩ মাসে পুষ্পর জন্য অনেক বিয়ের সমন্ধ নিয়ে এসেছে তার দাদী। তবে পুষ্প সব সমন্ধকেই কোন না কোনভাবেই ভেঙ্গেই দেয়।
পাত্রপক্ষের সামনে গিয়ে কখন ল্যাংরা হওয়ার অভিনয় করে পা খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাটা শুরু করে, কখনো পাগল সেজে সামনে যায় আর কখনো বা পাত্রপক্ষকে ভয় দেখিয়েই বিদায় করে দেয়। তার এসব আচরণের জন্য অনেক বকাও খেয়েছে মা আর দাদীর কাছে সে।
পুষ্প জীবনে তার পরিবারের দায়িত্ব ছাড়া আর কোনো দায়িত্ব কাধে নিতে চায় না। সে মা,দাদী,পাপড়িকে ছাড়া আর কোথাও যেতে চায় না।
তবে ঘটক আর দাদী পুষ্পর বিয়ে করিয়ে ছাড়বে বলেই পণ করে বসেছে।
রেস্টুরেন্টে বসে গল্প করছে রাইয়ান আর তার বন্ধু শায়ন। অনেকদিন পর তারা একসাথে আড্ডা দিচ্ছে।
– তো বিয়েটা করছিস কখন, রাইয়ান?
কথাটা শুনে রাইয়ান ভ্রু কুচকে তাকায় শায়নের দিকে।
– নিজের বিয়ে খেয়ে ইচ্ছা মিটে নি যে এখন আমার বিয়ের কথা বলছিস?
– আরে, বন্ধুর বিয়ে খাওয়ার মজাই আলাদা।
– আমি এখন বিয়ে টিয়ে করছি না।
– তো একটা প্রেম টেম কর, আর কতোদিন সিংগেল থাকবি? কোনো মেয়েকেই কি তোর পছন্দ হয় নি কখনও?
– পছন্দ হয় নি এমন না।
– তার মানে কাউকে পছন্দ করিস?
– হুম।
– কাকে? কোন মেয়ে? কি করে? কোথায় থাকে?
– শান্ত হ। বলছি। মেয়েটির নাম পুষ্প। আমার অফিসেই কাজ করে আমার পার্সোনাল এসিস্ট্যান্ট হিসেবে।
– বাহ! কতোদিন ধরে চলছে প্রেম? আমাকেও একটু পরিচয় করিয়ে দিস?
– আরে, আমি এখনো প্রোপজই করতে পারি নি সে আসছে প্রেম নিয়ে।
– তোর কাছে এটাই এসপেক্ট করছিলাম আমি। তোর মতো ভিতু আমি এর আগে দেখি নাই।
– এই আমি ভিতু না, বুজসিস। শুধু সঠিক সুযোগের অপেক্ষায় আছি।
– তা মহাশয়, সেই সুযোগটা কখন আসবে শুনি, মেয়েটা যখন অন্য ছেলের হাত ধরে চলে যাবে তখন?
– না মানে, আমি কিভাবে শুরু করবো তাই তো বুজতেসি না। তুই একটু হেল্প কর?
– তুই একটা কাজ কর। মেয়েটাকে ডিনারে নিয়ে যা। সেখানে সুযোগ বুঝে প্রোপজ করে ফেলিস।
– ওকে।
সকাল থেকে পাপড়ি জন্য অপেক্ষা করছে রাইয়ান। কিভাবে ডিনারের কথাটা বলবে তার বারবার প্রেকটিসও করছে। নিজেকে অনেকভাবে তৈরি করছে। কখন আসবে যে পুষ্প।
একটুপরই পাপড়ি চলে আসে অফিসে। সে এসেই নিজের কাজ শুরু করে দেয়। রাইয়ান পাপড়িকে ডাক দেয়।
কিভাবে কথাটা শুরু করবে বুজতে পারছে না সে।
– তোমাকে একটা কথা বলার ছিলো পুষ্প?
– জ্বি বলেন, স্যার?
মনে অনেকটা সাহস জুগিয়ে যেই কথাটা বলতে যাবে তখনি ক্লায়েন্টের ফোন আসে। রাইয়ান ফোনটা কেটে আবার বলতে যাবে,
আবার ফোন আসে।
বাধ্য হয়েই ফোনটা রিসিভ করে রাইয়ান। ফোনে কথা শেষ করে পেছনে ফিরতেই দেখে পাপড়ি অন্য কাজে বিজি হয়ে গেছে।
রাইয়ান আবার ডাক দিতে যাবে তখনি একজন স্টাফ পাপড়িকে ডেকে নিয়ে যায়।
– উফ! সুযোগই পাচ্ছি না একটু কথা বলার জন্য। আমি বরং অফিস ছুটির পরই পুষ্পকে বলবো তখন কেউ আর ডিস্টার্ব করতে আসবে না।
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে আছে রাইয়ান। কোন কাজেই তার মন বসছে না তার। কখন অফিস ছুটি হবে সে অপেক্ষায় আছে সে।
– এখনো দশ মিনিট বাকি। এই দশ মিনিট দশ ঘন্টা লাগছে আমার কাছে।
– মে আই কামিন, স্যার?
– হে, আসো পুষ্প।
– স্যার আমি সব কাজ শেষ করে ফেলেছি। আর কোনো কাজ থাকলে বলবেন।
– নাহ, আর কাজ নেই। আসলে, একটা কথা….
বলতেই শায়নের ফোন আসে।
– স্যার, আপনি ফোনে কথা বলেন আমি আসছি।
বলেই চলে যায় পাপড়ি।
-ইশ, এরও এখনি ফোন দিতে হলো।
হ্যালো।
– কিরে, বলেছিস?
– কিভাবে বলবো? বলতে যাবো তখনি তোর ফোন চলে আসলো।
– সেকি এখনো এখনি বলিস নি। তোর মতো মানুষ হয় না বটে।
– এখন কি ফোনটা রাখবি? নাহলে আর বলা হবে না আমার।
– আচ্ছা রাখি।
ফোনটা রেখেই রাইয়ান দেখলো অফিস ছুটি হয়ে গেছে। ক্যাবিন থেকে বের হয়ে দেখে সবাই অফিস থেকে বের হচ্ছে কিন্তু পুষ্প কোথায়?
বাহিরে তাকিয়ে দেখলো পাপড়ি বাহিরে চলে গেছে।
রাইয়ান দৌড়ে বাহিরে গিয়ে ডাক দিবে এমন সময় দেখতে পেল পাপড়ি একটা ছেলের কাছে গিয়ে দাড়ালো। তারা একসাথে কথা বলছে, হাসাহাসি করছে।
ত্রিভুজ প্রেম
জান্নাতুল ফেরদৌস সূচনা
পর্ব- ৭
অফিসে বসে বসে পাপড়ির কথা ভাবছে নীল। আমি যদি পাপড়িকে বৃষ্টিতে ভিজতে বারণ করতাম তাহলে হয়তো আজকে এতো জ্বর ওঠতো না ওর। না জানি কেমন আছে এখন মেয়েটা। যাওয়ার সময় মেয়েটাকে ডাক্তার দেখিয়ে নিয়ে যাবো বাসায়।
ডাক্তার পাপড়িকে একটা ইনজেকসন দিয়ে আর কিছু ঔষধ লিখে দিয়ে বললো
– চিন্তা করবেন না, একটু পরই জ্ঞান ফিরবে। জ্বরটা মাথায় চড়ে গেছিলো বিধায় এ অবস্থা হয়েছে। এই ঔষধগুলো খেতে বলবেন আশা করি একদিনের মধ্যেই সুস্থ হয়ে যাবে।
একটুপরই পাপড়ির জ্ঞান ফিরে। পাশে রাইয়ান আর নিজেকে হসপিটালে দেখে চমকে ওঠে বসতে চাইলে রাইয়ান বলে ওঠে
– কি করছো, ওঠো না। শুয়ে থাকো কিছুক্ষণ। ডাক্তার তোমাকে ইনজেকশন দিয়েছে। একটু রেস্ট নাও তারপর তোমাকে বাসায় দিয়ে আসবো।
– আমার কি হয়েছিলো স্যার?
– তুমি অজ্ঞান হয়ে পড়ে গিয়েছিলে। আর ডাক্তার বলছে এখন তুমি আগের থেকে বেটার আছো।
-হুম।
-কখন থেকে ফোন দিচ্ছি, শাকচুন্নি ফোনই ধরছে না। অফিস তো ছুটি হয়ে গেছে দেখছি কিন্তু পাপড়িকে তো কোথাও দেখছি না।
মাথায় চিন্তার ছাপ নিয়ে কথাগুলো বলছে নীল।
গাড়ি থেকে আস্তে আস্তে নামলো পাপড়ি।
-এখন বাসায় যেতে পারবে তো?
রাইয়ান প্রশ্ন করলো পাপড়িকে।
-হুম। পারবো। আপনিও বাসায় আসেন, একটু চা-নাস্তা করে যান?
-নাহ। আজ নয়, আজ অনেক দেরি হয়ে গেছে। অন্য একদিন না হয় আসবো।
রাইয়ানের এমন কথায় পাপড়ি মনে মনে খুশিই হয়েছে। কারণ বাসায় গেলে তার নামের রহস্যটা হয়তো রাইয়ান জেনে যেত।
-আর শোনো, একদম সুস্থ হয়ে অফিসে আসবে। আর ঔষুধ গুলো ঠিকমতো খেয়ে নিও কেমন?
– ওকে স্যার।
– তাহলে আমি আসি।
বলেই রাইয়ান চলে গেল। পাপড়িও বাসায় চলে যায়।
দরজায় ঠকঠক আওয়াজ।
– এই সন্ধ্যাবেলায়, কে আসলো আবার?
আফিয়া বেগম বলতে বলতে দরজা খুলে অবাক হয়ে বলে
– নীল!
– জেঠিমা, তোমার মেয়ে কই?
রাগী কন্ঠে কথাটা বলে নীল।
– কোন মেয়ে?
– আরে ঐ শাকচুন্নিটা কই?
– ওতো রুমে
নীল আর কিছু না বলে হনহনিয়ে পাপড়ির রুমে ঢুকে। নীলের পেছন পেছন আফিয়া বেগমও যায়।
নীলকে দেখেই পাপড়ি জিহ্বা কামড় দেয়।
– এই শাকচুন্নির বাচ্চা, তুই চলে এসেছিস এটা আমাকে ফোন করে বলিস নি কেনো? তোর ফোন কই? কতগুলো ফোন করছি দেখতো? আমার ফোনটা কি তোর একবারো ধরতে ইচ্ছা হয় নি? সেই বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তোর অফিসের বাহিরে দাড়িয়ে অপেক্ষা করেছি তোর জন্য। আর তুই বাসায় এসে পায়ের ওপর পা তুলে বিশ্রাম করছিস?
অনেকটা রাগ নিয়েই কথাটাগুলো বলেছে নীল।
পাপড়ি কিছুটা অনুনয়ের কন্ঠে বললো
– সরি, আমার তোর কথা একদম মনে ছিলো না। আর ফোনটা ব্যাগেই পড়ে আছে তোর কল দেখতে পারি নি। মাফ করে দে আমায়?
– এই কাজটা তুই মোটেও ঠিক করছিস নি পাপড়ি। ছেলেটা অনেকক্ষণ তোর জন্য অপেক্ষা করেছে আর তোর ওর কথা মনেই নেই?
মায়ের এমন কথাই পাপড়ি তার মাথাটা নিচু করে ফেলে।
– শুধু এটা নয়, ওকি এটা বলেছে যে ওর অফিসে আজ কি হয়েছে?
নীলের এমন কথায় সবাই অবাক হয়ে নীলের দিকে তাকায়
অবাক দৃষ্টি নিয়ে আফিয়া জিজ্ঞেস করলো
– কি হয়েছ?
– পাপড়ি আজ অফিসে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলো।
– কিহ!
– হ্যা জেঠিমা, অনেকক্ষণ দাড়িয়ে যখন ওকে না পেয়ে অফিসের গার্ডকে জিজ্ঞেস করি, তখন তিনি এই কথা বলেন।
– পাপড়ি নীল যা বলছে সব সত্যি?
মায়ের কথায় মাথা নেড়ে সম্মতি জানায় পাপড়ি।
পুষ্প বললো
– কিন্তু ওতো আমাদের বলেছে অফিস থেকে ছুটি নিয়ে ডাক্তার দেখিয়ে বাসায় চলে এসেছে।
– মিথ্যা বলেছে। আর ওকে না পেয়ে আমার প্রাণ যায় যায় অবস্থা হয়ে গিয়েছিলো।
– আমি যদি আমার অজ্ঞান হওয়ার কথা বলতাম তো মা আর আপু তোমরা দুজনেই আমাকে নিয়ে টেনশন করতে তাই বলিনি। আর আমি তো এখন ভালো আছি।আর ডাক্তারও দেখিয়েছি।
পাপড়ির এমন কথা শুনে পুষ্প বললো
– তবুও তোর কি এই কথাটা আমাদের জানানোর একবারো প্রয়োজন মনে করলি নাহ? এতোটা বড় হয়ে গেছিস তুই?
– সরি মা, সরি আপু। আর কখনো এমন হবে না। প্লিজ মাফ দাও?
– এখন আর মাফ চেয়ে কি হবে যা হবার তো হয়েই গেছে
বলেই আফিয়া বেগম রাগে রুম থেকে চলে যায়।
পাপড়ি নীলের দিকে তাকিয়ে বলে
– এখন কি তোর পা ধরে মাফ চাইলে, মাফ করবি?
– হ্যা, ঠিক আছে। আর মাফ চাইতে হবে না। নিজের খেয়াল রাখিস। আমি গেলাম। মা হয়তো টেনশন করছে আমাকে নিয়ে। “এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
দুদিন পর সম্পুর্ন সুস্থ হয়ে অফিসে যায় পাপড়ি। পাপড়িকে দেখে অফিসের সবাই হাসি-তামশা শুরু করে দিলো। পাপড়ি প্রথমে কিছুই বুজতে পারছিলো না, কারণ ঐদিন কি হয়েছিলো তার কিছুই মনে নেই। দুইটা মেয়ে তার দিকে এগিয়ে এসে একজন বললো
– তা, ঐদিন বসের কোলে ওঠে কেমন লাগলো তোমার?
পাপড়ি অবাক হয়ে তাকিয়ে রয়েছে।
– কি বলছেন এসব? আমি তো কিছুই বুজতে পারছি না?
– এ্যাহ! ন্যাকা। কিছুই বুজে না। ঐদিন তো ভালোই অজ্ঞান হওয়ার নাটক করে একবারে বসের কোলেই ওঠে পড়েছো আর এখন কিছুই বুজে না।
আরেকজন বলে ওঠে
– আরে, এসব থার্টক্লাস মেয়েদের প্লানই এটা থাকে। এসব করে বসেদের কাছে যাবে যেন খুব তাড়াতাড়ি প্রমোশন পেতে পারে। এসব মেয়েদের খুব ভালো করেই চিনা আছে আমার।
এসব কথা শোনার পর পাপড়ির চোখে পানি ছলছল করতে লাগলো। এতোটা অপমান আজ পর্যন্ত কেউ কখনো তাকে করে নি। আর এক মুহুর্তও এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে পারবে না সে। পাপড়ি ব্যাগটা হাতে নিয়ে মাথাটা নিচু করে অফিস থেকে বের হতে যাবে তখনি তাকিয়ে দেখে পেছনে রাইয়ান দাড়িয়ে আছে। সে এতোক্ষণ দাড়িয়ে দাড়িয়ে সব দেখছিলো পেছন থেকে।
সবকিছু শেষ হতে হতে রাত প্রায় আড়াইটা বেজে গেল। অনেকেই আগে আগে জায়গা জুড়ে শুয়ে পড়েছে। সব মেহমানদের জায়গা দিতে গিয়ে শেষে আদিয়া, তিথি, ফাহি তিনজনকেই নুহার সাথে নুহার ঘরে থাকতে হলো। নুহা, আদিয়া ও ফাহি তিনজনেই শুয়ে আছে বিছানায়। বিছানাটা অনেক বড়। পাঁচজন শুতে পারবে অনায়াসে। তিথি দরজার বাইরে পায়চারি করছে শুধু। একদম ইচ্ছে হচ্ছেনা ওর, নুহার ঘরে নুহার সাথে এক বিছানায় ঘুমুতে। তিথি একটা লম্বা শ্বাস নিলো। চারদিকে তাকালো, পুরো বাড়িটাই নিস্তব্ধ হয়ে আছে, ঘুমোচ্ছে সবাই। তিথি জাওয়াদের ঘরের দিকে তাকালো। দরজাটা খোলা। কিন্তু জাওয়াদ রিয়াদসহ তাদের বন্ধুরা সবাই এখনও ছাদে রয়ে গিয়েছে। এরা মনেহয় সারারাত ছাদেই থাকবে। দীর্ঘশ্বাস নিয়ে ঘুমোতে যাবে আর তখনই কিছু একটা মাথায় আসলো তিথির। একগাল হাসলো সে। তারপর আস্তে আস্তে চলে গেল জাওয়াদের ঘরে।
__________
ফাহি আর আদিয়া কিছু একটা নিয়ে গল্প করছে আর খিলখিল করে হাসছে। নুহা শুধু ঘাড় ঘুরিয়ে দরজার দিকে দেখছে আর নিশপিশ করছে। অনেকক্ষণ থেকে তিথির কোনো খোঁজ নেই। তিথি কোথায় হতে পারে এটা ভাবতেই তার মেজাজ আগুন হয়ে যাচ্ছে। নুহা জোরেসোরে একটা ধমক দিয়ে বললো, ‘এই তোরা ঘুমাস না কেন? এই ফাহি, ঘুমা। নাহলে কালকে পেত্নী লাগবে।’
‘ওহ হ্যাঁ, আমিতো ভুলেই গিয়েছিলাম। এই ভাবি ঘুমাও ঘুমাও।’, বলেই চট করে পাশ ফিরে চোখ বন্ধ করলো আদিয়া। ফাহি ঠোঁট টিপে হাসলো। আদিয়া তাকে ভাবি ডেকেছে। কেমন একটা অনুভূতি হচ্ছে তার। হৃদয়ে সুখের প্রজাপতিরা উড়ছে প্রাণপণে। শুয়ে আলগোছে চোখ বুজলো সে। কাল থেকে তার নতুন জীবনের শুরু হবে।
নুহা শুয়ে কিছুক্ষণ এপাশ ওপাশ করলো। নাহ, কিছুতেই ঘুম আসছেনা তার। বুকের ভেতরে একটা অদ্ভুত অশান্তি বিরাজ করছে।
‘তোদের বাসার মেয়েটা এখনো আসেনা কেন?’, দোনা মোনা করে জিজ্ঞেস করেই ফেললো নুহা।
‘এভাবে বলছো কেন? ওর একটা নাম আছে। নাম ধরে বলো।’, বললো ফাহি।
‘এতো সম্মানের কিছু নাই ওরে, বুঝছিস।’, নুহা হাত উঁচিয়ে বললো।
আদিয়া বিরক্তি নিয়ে ‘চ’ কারান্ত একটা শব্দ করলো। তারপর বললো, ‘ছাড়ো তো। যখন আসার আসবে। তুমি ঘুমাও।’
‘যখন আসার আসবে মানে? একটা বাইরের মেয়ে এভাবে বাড়িতে রাত বিরেতে ঘোরাঘুরি করবে?’
‘বাইরের মেয়ে হতে যাবে কেন?’
‘তো ও তোদের কোন সম্পর্কের আত্মীয়, শুনি?’
‘নুহাপু, বেশি বেশি করছো তুমি। তিথি আমাদের আপনজন।’
‘হাহ! মাই ফুট!’, বলে এদিক-ওদিক তাকালো নুহা। আদিয়া আবার কিছু বলতে চেয়েছিলো কিন্তু ফাহি তাকে চুপ করিয়ে দিলো। তারপর ফাহি আর আদিয়া দুজনেই নিশ্চুপ হয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করলো। কিন্তু নুহা ঘুমোতে পারছেনা। সে শান্তি পাচ্ছেনা। আস্তে আস্তে উঠে বেরিয়ে গেল রুম থেকে।
__________
‘রিয়াদ, ঘুমোতে যা। সকালে তাড়াতাড়ি উঠতে হবে।’, রিয়াদের পাশে এসে বসে বললো জাওয়াদ। ছাদে চিৎ হয়ে শুয়ে ছিলো ওরা চারজন। নাহিদ এখানে শুয়ে শুয়েই ঘুমিয়ে পড়েছে। আর রাকিব ঘুমে ঢুলছিলো।
‘আজকে আমরা সবাই আমার রুমে ঘুমোবো। এই তো শেষ, আর তো পারবোনা।’, বললো রিয়াদ।
‘আচ্ছা ঠিক আছে। এমনিতেই আর জায়গা নেই। আমার রুমটা সম্ভবত খালি আছে।’
‘থাকুক। তবুও আজ আমার সাথে ঘুমোবি।’
‘আচ্ছা ঠিক আছে।’, বলে হাসলো জাওয়াদ। তারপর নাহিদ আর রাকিবকে ডেকে তুললো জাওয়াদ। একসাথে সবাই ছাদ থেকে নেমে সোজা রিয়াদের ঘরেই চলে গেল। “এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
তিথি দাঁড়িয়ে আছে জাওয়াদের ঘরের বারান্দায়। কারো হাঁটার আওয়াজ পাচ্ছে সে। কপাল কুঁচকে গেল। ভালো করেই জানে, এটা জাওয়াদ না। পরমুহূর্তে মনে পড়তেই বাঁকা হাসলো। তখনই পেছনে শুনলো নুহার গলা,
‘তুমি এখানে কী করছো?’
তিথি মুচকি হাসছে। নুহার কথার কোনো উত্তর দিচ্ছেনা। ফিরেও তাকাচ্ছেনা নুহার দিকে। যেন সে নুহার অস্তিত্ব টেরই পায়নি। তিথির এমন দায়সারা ব্যবহার দেখে নুহা ফুঁসতে লাগলো। ক্যাটকেটে গলায় বললো, ‘শুনতে পাচ্ছো না?’
‘কী শুনবো?’, কপাল কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো তিথি।
‘কী জিজ্ঞেস করেছি?’
‘ওহ, দাঁড়িয়েছিলাম। প্রকৃতি দেখছি।’
‘এইটা তোমার প্রকৃতি দেখার জায়গা?’, ধমকে উঠলো নুহা।
‘একদম চেচাবেনা, নুহাপু।’, শীতল কণ্ঠে বললো তিথি। আবার বললো, ‘আমি কোথায় কী করবো সেটা দেখার বিষয় অবশ্যই তোমার নয়। অতিথি তুমি। বিয়ে খেতে এসেছো, সেদিকেই মন দাওনা। আমার পেছনে কেন পড়ে আছো?’
নুহা স্তব্ধ হয়ে গেল। গোল চোখ নিয়ে তাকালো। দাঁতে দাঁত চেপে বললো, ‘আমি কোনো অতিথি না। এটা আমার হবু শ্বশুর বাড়ি। আমার ফিয়ন্সের ঘরে তুমি প্রকৃতি দেখছো?’
‘তোমার ফিয়ন্সে? সেটা কে?’
‘জাওয়াদ।’
‘কোনদিন হলো তোমার ফিয়ন্সে?’, তাচ্ছিল্যের স্বরে বললো তিথি।
নুহা বাঁকা হাসলো। বললো, ‘আমাদের বিয়ের কথাবার্তা চলছে। শীঘ্রই বিয়ে করবো আমরা।’
‘কী বলো! প্রতিদিন আমার লিপস্টিক খায়। আমার কোলে মাথা রেখে আকাশ দেখে। প্রতি রাতে আমার শরীরের পশমে পশমে সে সুখ খোঁজে। আর এখন বিয়ে তোমাকে করবে? আমি এটা হতে দেব?’, অবাক হওয়ার ভান করলো তিথি।
নুহার ভাব এখন এমন যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়েছে তার মাথার উপর। কিছু বলতে পারছেনা সে। শুনতেও পারছেনা কিছু। বধির হয়ে গেছে যেন। কোনোমতে বললো, ‘যা তা বলবেনা। একদম বাড়ি থেকে বের করে দেবো।’
তিথি কপাল কুঁচকে বললো, ‘কিন্তু, জাওয়াদ কি আমাকে যেতে দেবে? আমাকে যেতে দিলে প্রতি রাতে কার সাথে…’
‘তিথি!’, চিৎকার করে উঠলো নুহা। জোরে জোরে নিশ্বাস নিচ্ছে সে। রাগে যেন সে পৃথিবী অন্ধকার দেখছে। তিথি খিলখিল করে হেসে উঠলো। হাসতে হাসতে বেরিয়ে গেল সেখান থেকে। নুহা ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো সেখানেই।
_________
বাড়িতেই ফাহি আর রিয়াদের আকদ হবে। বড়সড় অনুষ্ঠান হবে। জাওয়াদ দের বাড়ি অনেক বড়। ঘণ্টা দুয়েক আগে ফাহিকে নিয়ে সবাই পার্লারে গেছে। আসায় সময় হয়ে যাচ্ছে। সবকিছু মোটামুটি তৈরি। কাজিও চলে আসবে। চারিদিকে খুশির জোয়ার বইছে। কিন্তু হাহাকার করছে মনিরা বেগমের বুকটা। চাঁনতারা বেগমের কাছ থেকে জানতে পেরেছেন, তিথিকে জাওয়াদের বউ করা হবে। রিয়াদের বিয়েটা মিটে গেলেই তিথি আর জাওয়াদের বিয়ের সবকিছু ঠিকঠাক করা হবে। মনিরা বেগম ও চান, জাওয়াদ সুখী হোক। কিন্তু নিজের নাড়ী ছেড়া মেয়েটার জন্য বুক পুড়ছে খুব। ভয়ও হচ্ছে। মেয়েটা জেদি। যা চেয়েছে জীবনে সব পেয়েছে। হুট করে এই না পাওয়াটা মেনে নেবে কীভাবে সে। গত রাতে এসেছিলো সে উনাদের ঘরে। এসে অনেক কান্নাকাটি করেছে। বারবার একটা কথাই আওড়াচ্ছিলো সে, ‘আমি জাওয়াদকে ছাড়া বাঁচবো না। আমার জাওয়াদকে চাই!’। অসহায় মা আর বাবা শুধু মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়া ছাড়া কিছুই বলতে পারেন নি তখন। নাজিম হোসেন কাজের বাহানা দিয়ে চলে গেছেন তিথির সাথে জাওয়াদের বিয়ের খবরটা শোনার পরে। দীর্ঘশ্বাস ফেললেন মনিরা। একটু আগে দেখে এসেছেন আঞ্জুমান, মেহেরুন, আর মুনতাহা মিলে খুব যত্ন করে সাজাচ্ছিলেন তিথিকে। মাহির শাড়ি পরিয়েছেন। কী স্নিগ্ধ লাগছিলো মেয়েটাকে! একদম মাহির মতো। কান্না পাচ্ছে খুব মনিরা বেগমের। কোনোরকমে তিনি কান্না চেপে রাখলেন।
________
‘ভাইয়া ভাইয়া। তুমি বিয়ে করবা। তোমার বিয়েতে আমি নাচবো ব্রাদার কি দুলহান গানে।’
সবাই বসে ছিলো ড্রয়িংরুমে। পার্লার থেকে এখনও ওরা আসেনি, আসার অপেক্ষা করছে সবাই। হেলাল আহমেদ কাজির সাথে কথা বলছিলেন। জাওয়াদ রিয়াদের সাথে কিছু একটা নিয়ে কথা বলছিলো। তখনই সাহিল এসে কথাটা বললো। জাওয়াদ হেসে বললো, ‘আচ্ছা নাচবি।’
সাহিল খুশি হয়ে গেল। দৌড়ে চলে গেল সেখান থেকে খেলতে। জাওয়াদ হেসে হেসে সিঁড়ির দিকে তাকাতেই তার চোখ চিলিক দিয়ে উঠলো। তিথি আসছে। ভালোকরে তাকালো জাওয়াদ। তিথি সেই শাড়িটা পরে আছে, যেটা সে মাহিকে উপহার দিয়েছিলো। জাওয়াদের বুক কাঁপতে লাগলো। গলা শুকিয়ে আসতে লাগলো। আকাশী রঙে তিথিকে মনে হচ্ছে আকাশ থেকে নেমে আসা পরী। ঢোঁক গিললো জাওয়াদ। নিজেকে শান্ত করলো। জিহবা দিয়ে ঠোঁট ভেজালো। তিথি এসে এক কোণায় দাঁড়িয়ে আছে। চোখে চোখ পড়লো দুজনের। জাওয়াদ মুচকি হাসলো। ভাবতে লাগলো, কীভাবে একবার কাছে পাওয়া যায় তিথিকে।
পার্লার থেকে নিয়ে আসা হলো ফাহিকে। সোফায় রিয়াদের পাশে বসানো হলো তাকে। নুহা এসেই জাওয়াদের পাশে দাঁড়ালো। গলা খাঁকারি দিলো জাওয়াদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য। কিন্তু আশ্চর্য! জাওয়াদের মন যেন অন্য কোথাও। জাওয়াদের দৃষ্টি অনুসরণ করে তাকাতেই তিথিকে দেখতে পেলো নুহা। কয়েক সেকেন্ডের জন্য একটা ধাক্কা খেলো সে। তিথি মাহির শাড়ি পরেছে! মাহির! এসবের মানে কী? নুহার বুকটা দুরুদুরু কাঁপতে লাগলো। সে জাওয়াদকে ডাকলো, ‘জাওয়াদ…’
জাওয়াদ একবার নুহার দিকে তাকিয়ে আবার তিথির দিকে তাকিয়ে থাকলো। নুহা আবার জিজ্ঞেস করলো, ‘আমাকে কেমন লাগছে, জাওয়াদ?’
জাওয়াদ যেন কিছু শুনলো না। সে হেঁটে রিয়াদের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে কথা বলতে লাগলো। নুহার বুক ভেঙে কান্না আসতে চাইলো। কিন্তু না, সে কাঁদবেনা। এতো সহজে সে হার মানবেনা। আস্তে আস্তে হেঁটে তিথির পাশে গিয়ে দাঁড়ালো নুহা। ঠিক তখন আদিয়াও এসে দাঁড়ালো ওদের পাশে। নুহা বললো, ‘তোকে অনেক মিষ্টি লাগছে, আদিয়া।’
‘থ্যাঙ্কিউ, নুহাপু। তোমাকেও সুন্দর দেখাচ্ছে।’
নুহা হাসলো। বললো, ‘লাগার কথা। আমিতো আর কারো পুরনো কাপড় পরি নি। যা পরেছি সব ব্র্যান্ড নিউ।’, কথাটা বলার সময় তিথির দিকে তাকিয়ে ছিলো নুহা। আদিয়া আর তিথি ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছে যে কথাটা কেন বললো নুহা। তিথি একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললো, ‘এই আদিয়া, শাড়িটা দেখ। বড় মামানি দিয়েছেন। আমাকে নিজের হাতে বড় মামানি, ছোট মামানি আর মামণি মিলে সাজিয়েছেন। এই শাড়িটি পুরনো হলেও, ভালোবাসা অনেক বেশি আছে এতে।’
‘তোকে পরীর মতো লাগছে।’, বলে হাসলো আদিয়া। তিথিও হাসলো। নুহা আর এক মুহূর্তও দাঁড়ালো না সেখানে।
ভালোয় ভালোয় মিটে গেল ফাহি আর রিয়াদের বিয়ে। সোফায় একসাথে বসে আছে দুজন। ফাহি জড়সড় হয়ে বসে আছে। রিয়াদ দুষ্টুমি করে কয়েকবার নিজের শরীরের সাথে ফাহির শরীরের ঘষা লাগিয়েছে। একটা সময় ফাহি বলে উঠলো, ‘উফ ভাইয়া, এমন করো না।’
রিয়াদ তব্দা লেগে গেল। ভাইয়া! সে বললো, ‘রাতে বুঝাবো। ভাইয়া নাকি সাইয়া।’
লজ্জায় কুকড়ে গেল ফাহি। হেসে দিলো রিয়াদ। তাদের দুজনের ফটোশুট চলতে লাগলো অবিরাম।
_______
জাওয়াদের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে তিথি আর জাওয়াদ। জাওয়াদের বুকে মাথা রেখে শান্তির নিশ্বাস নিচ্ছে তিথি। জাওয়াদ আস্তে করে বললো, ‘শাড়িটা কে দিয়েছে?’
‘বড় মামানি।’
‘সুন্দর লাগছে তোমাকে।’
তিথি কিছু বললোনা। জাওয়াদকে ছেড়ে সোজা হয়ে দাঁড়ালো। তারপর জাওয়াদের চোখে চোখ রেখে বললো, ‘আমি জীবনে বাবার ভালোবাসা পেয়েছি কিনা জানিনা। মনে নেই। মায়ের ভালোবাসা পেয়েছি তবে মা’কে হারিয়েছি অবেলায়। তারপর এখানে এসে মামণি আর আঙ্কেলের ভালোবাসায় নতুন করে মা আর বাবার ভালোবাসার অনুভূতি পেয়েছি। আর এখন, জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটা মানুষ। যার সংস্পর্শে জীবন পূর্ণতা পায়। হ্যাঁ, আপনাকে পেয়েছি আমার ভালোবাসার মানুষ হিসেবে। আপনার সংস্পর্শে এসে আমার জীবন, মন, সবকিছু পূর্ণতা পেয়েছে। আমি আপনাকে হারাতে চাইনা। আপনাকে হারালে আমি নিজের অস্তিত্ব হারিয়ে বসবো।’
জাওয়াদ আজলা ভঙ্গিতে তুলে ধরলো তিথির মুখ। কপালে ভালোবাসার পরশ এঁকে দিলো। কিছুক্ষণ কাটলো নীরবে। নীরবতা ভেঙে জাওয়াদ বললো, ‘আমার তৃষ্ণা মেটাবো। কাছে এসো। প্রেমিক হিসেবে শেষ বারের মতো মেটাবো। তারপর মেটাবো স্বামী হয়ে।’
তিথি ইশারাটা বুঝলো। মুচকি হেসে কাছে গেল। তিথিকে নিজের আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে জাওয়াদ নিজের ওষ্ঠদ্বয়ের তৃষ্ণা মেটাতে লাগলো। এই দৃশ্যটা দেখছিলো নুহা। পাশের বারান্দা থেকে। চোখ থেকে তার পানি ঝরছিলো। আর ঠোঁটে ছিলো এক ভয়ঙ্কর হাসি। সেই হাসি নিয়েই সে বেরিয়ে গেল ঘর থেকে। সবার অগোচরে ছাদে গিয়ে উঠলো। দাঁড়ালো ঠিক জাওয়াদের রুমের ওপরে। তারপর রেলিঙের ওপর উঠে দাঁড়ালো। পাগলের মতো হাসলো, শব্দহীন হাসি। তারপর আবার কান্না করতে লাগলো। কুনকুনে শব্দে কাঁদলো। তারপর আবার হাসতে লাগলো। হাসতে হাসতে আকাশের দিকে তাকিয়ে আপনমনে বিড়বিড় করলো, ‘কীরে মাহি? নিজে পাসনি বলে আমাকেও পেতে দিবিনা? কী ভেবেছিস? না পাওয়ার যন্ত্রণা নিয়ে এখানে পড়ে থাকবো আমি? আসছি তোর কাছে। তোর সাথেই বোঝাপড়া করবো। আমাকে হারানো হ্যাঁ? আমাকে?’
কথাগুলো বলে দম নিলো নুহা। তারপর আবার কাঁদতে লাগলো। কাঁদতে কাঁদতে বললো, ‘মা, বাবা। কেন জীবনে কোনো চাওয়া অপূর্ণ রাখোনি? কেন ভালো মন্দ যা চেয়েছি দিয়েছো? কেন আমার কথামতো চলেছো? দেখোনা, আর এই না পাওয়ার যন্ত্রণা আমাকে থাকতে দিচ্ছেনা। আমার সহ্য হচ্ছেনা। কীভাবে হবে? না পাওয়ার যন্ত্রণাটা যে কোনোদিন অনুভব করি নি।’
আর তারপর… জগত সংসার ভুলে গিয়ে চোখ বন্ধ করে লাফ দিলো নুহা। লাফ দেয়ার সময়ও তার মনে একটাই কথা চলছিলো। জীবনে যা চেয়েছে পেয়েছে। আর এই জীবনের সবথেকে বড় চাওয়াটা সে পাবেনা। এই না পাওয়া নিয়ে সে দুনিয়াতে থাকতে পারবেনা।
ধুপ করে একটা শব্দ হতেই জাওয়াদ বারান্দায় রেলিঙ গলে নিচে তাকালো। তাকাতেই ‘নুহা’ বলে চিৎকার করে দৌড়ে বেরিয়ে গেল সেখান থেকে। তিথি কাঁপছে। খুব বেশি কাঁপছে, থরথর করে। সে দেখেছে, কেউ একজন লাফ দিয়েছে ছাদ থেকে। নুহা? আস্তে আস্তে রেলিঙের কাছে গিয়ে দাঁড়ালো সে। নিচের দিকে তাকাতেই একটা আর্তনাদ করে উঠলো তিথি। সবকিছু অন্ধকার দেখতে লাগলো। গড়গড় করে বমি করে সেখানেই অজ্ঞান হয়ে পড়লো সে। যখন জ্ঞান আসলো, দেখলো সে জাওয়াদের কোলে। জাওয়াদ তাকে নিয়ে যাচ্ছে কোথাও। পাশেই মুনতাহা বিলাপ করছিলেন, ‘তিথি, মা কিছু হবেনা তোর। কিছু হয়নি। তুই একদম নিজেকে দোষ দিবিনা।’
তিথির কানে কিছু যাচ্ছেনা। কান্না করতে ইচ্ছে হচ্ছে তার। সে জাওয়াদের গলা জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠলো হাউমাউ করে। সে দায়ী? নুহার এই অকাল মৃত্যুর জন্য সে দায়ী? নুহা কী তার ওপর রাগ করে এভাবে চলে গেল? কিছু ভাবতে পারছেনা তিথি। কাঁদছে চিৎকার করে।
পাঁচ মাস কেটে গেল। নুহার মৃত্যুর শোক সহ্য করতে না পেরে চাঁনতারা বেগম হার্ট অ্যাটাক করে মারা গেলেন। নুহার মা বাবা মেয়ের শোক ভুলতে বিদেশে থিতু হলেন। আর তিথি? নিজেকে বারবার নুহার মৃত্যুর জন্য দায়ী ভাবতে ভাবতে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে যাচ্ছিলো। তারপর মনিরা বেগম দেশ ছাড়ার আগে একদিন আসলেন তিথির কাছে। তারপর তিথিকে বুকে জড়িয়ে কাঁদলেন অনেকক্ষণ। তিথিও কাঁদলো সবকিছু চুরমার করে। তারপর থেকে বাড়ির সবার যত্নে আর জাওয়াদের ভালোবাসায় আস্তে আস্তে ঠিক হলো তিথি।
আজ জাওয়াদ আর তিথির বিয়েটা নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হলো। তিথি বাসর ঘরে অপেক্ষা করছে জাওয়াদের জন্য। আর বসে বসে মোবাইলে গেমস খেলছে। সাথে কানে ইয়ারফোন লাগিয়ে ফুল ভলিউমে গান শুনছে। মোবাইলে এতোটাই মগ্ন ছিলো তিথি যে কখন জাওয়াদ এসে পাশে বসেছে সেই খেয়ালে নেই সে। খেয়াল করলো তখন, যখন জাওয়াদ এক টানে মোবাইল থেকে ইয়ারফোনটা খুলে নিলো। তিথি বিরক্তির স্বরে বললো, ‘উফ, গান শুনছিলাম তো।’
‘সালাম করতে হয়।’, গম্ভীর কণ্ঠে বললো জাওয়াস।
‘ওহ আচ্ছা। আসসালামু আলাইকুম, সোয়ামী।’
তিথির বলার ভঙ্গিতে হেসে দিলো জাওয়াদ। হেসে হেসে বললো, ‘এবার?’
তিথি কপাল কুঁচকে তাকালো। বললো, ‘এবার কী?’
‘জানোনা?’
‘উহুম।’
‘কাছে আসো।’
মুচকি হেসে কাছে গেলো তিথি। জীবনের সমস্ত সুখ যেন ঐ রাতটায় এসে তার পায়ে লুটিয়ে পড়লো। প্রতিটা রন্ধ্র সুখের গান গাইছিলো। স্বর্গীয় অনুভূতিরা কড়া নাড়ছিলো হৃদয়ের মণিকোঠা তে। নতুন জীবনের শুরু হলো ভালোবাসার জালে। দুজনে ডুবে থাকলো ভালোবাসায়।
_______
২০ বছর পর……..
জাওয়াদ আর তিথির মেয়ে নাজিফা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্রী। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলেই থাকে। এখন বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছে, ভার্সিটির কেন্টিনে বসে। এমন সময় তার এক রুমমেট এসে বললো, ‘তুই এটা কী করলি? এভাবে নুমাইরার পাজামাতে গিট্টু দিয়ে রাখলি কেন? বেচারি ওয়াশরুমে গিয়ে কেঁদে দিছে। পাজামাতেই কাজ সেরে দিছে।’
‘রুমে যে করেনাই এটাই ভালো। নাহলে আবার আমি কেমনে থাকতাম। যাক, এখন আর আমার সাথে লাগার আগে একশো বার চিন্তা করবে।’
সবাই হো হো করে হেসে উঠলো নাজিফার কাণ্ডে। নাজিফাও হাসছিলো মিটিমিটি।
________
(সমাপ্ত)
আমার গ্রুপ লিংক- https://www.facebook.com/groups/831432960641690/?ref=share
সুন্দর করে গায়েহলুদের স্টেজ সাজানো হয়েছে ছাঁদে। ফাহি আর রিয়াদ বসে আছে। কিছুক্ষণ পর পর একে একে এসে ওদের পাশে বসছে, ফটো তুলছে, হলুদ দিয়ে যাচ্ছে। আদিয়া এদিক ওদিক হাঁটছে, এর ওর সাথে কথা বলছে। তার বুকের ভেতর ধুকপুক করছে। একটু দূরে জাওয়াদের সাথে দাঁড়িয়ে আছে নাহিদ আর রাকিব। কিছু একটা নিয়ে হাসাহাসি করছে তিনজন। কথার ফাঁকে ফাঁকে আদিয়ার দিকে বারবার তাকাচ্ছে নাহিদ। জাওয়াদের পাশে দাঁড়িয়ে কোন সাহসে এভাবে তাকায় ভেবে পায়না আদিয়া। ভয়ে তার হাতপা ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে। সবার অগোচরে একটা মুখ ভেংচি দিয়ে নিচে নেমে গেল সে। মুনতাহা বলেছেন তিথিকে নিয়ে আসতে। এতো মেহমানদের মাঝে হয়তো মেয়েটার অস্বস্তি হচ্ছে, তাই আসছেনা। নিচে নেমে তিথির ঘরে যেতে গিয়ে আদিয়া দেখলো, নুহা তার ঘর থেকে বেরিয়ে আসছে। আদিয়া এগিয়ে গিয়ে বললো, ‘এই নুহাপু। সবুজ পরার কথা ছিলো তো!’
‘কেন এটায় কী সমস্যা?’, ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো নুহা।
‘সমস্যা না, সুন্দর লাগছে তোমাকে খুব। তবে আমরা সবাই তো এক কালার পরার কথা ছিলো। আমি, তিথি, তুমি…’
হাত উঁচিয়ে আদিয়াকে চুপ করালো নুহা। তারপর হেসে বললো, ‘আদিয়া, তুই নিজের ক্লাস ভুলে গেলেও আমিতো ভুলতে পারবোনা। যদি শুধুই তোর সাথে মেলানোর হতো তাহলে অবশ্যই আমি সবুজ পরতাম। কিন্তু ফালতু কারো সাথে মেলানোর ইচ্ছা নেই।’
বলেই গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে প্রস্থান করলো নুহা। একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো আদিয়ার ভেতর থেকে। মেয়েটা কেমন উগ্র হয়ে গেছে। হবেই বা না কেন? ছোটবেলা থেকে এখন পর্যন্ত শাসন পায়নি। ভাবতে ভাবতে তিথির ঘরের দিকে গেল আদিয়া।
আয়নার সামনে বসে কানে ঝুমকো পরছিলো তিথি। আদিয়াকে আয়নায় দেখে পেছনে তাকালো। আদিয়া চোখ বড় বড় করে বললো, ‘এখনও রেডি হসনি?’
‘কই? হলাম তো।’
‘কই হলি? মেকাপ করিসনি এখনও।’
‘মেকাপ করবোনা।’
‘হ্যাঁ?’, কপাল কুঁচকে তাকালো আদিয়া।
‘মেকাপ করলে ব্রণ হয় আমার। লাল লিপস্টিক দেবো শুধু।’, বলে লিপস্টিক দিলো তিথি।
আদিয়া হেসে হেসে বললো, ‘তুই ধলা ডিম। মেকাপ ছাড়াও চোখে লাগে। আর এভাবে বুলবুলির পুটকি লাল করছো, এমনিতেই যে আজ মাথা ঘুরায় দিবি বুঝতেই পারছি।’
তিথি উঠে দাঁড়িয়ে বললো, ‘কার মাথা?’
‘আমি বলবো?’ আদিয়া ভ্রু কুঁচকে বললো।
তিথি হাসলো। তারপর বললো, ‘সুয়াইপ হয়ে গেল। তুই বেশরম হয়ে যাচ্ছিস, আর আমি শর্মিন্দা হয়ে যাচ্ছি।’
আদিয়া সেকথা কানে না নিয়ে বললো, ‘তোকে সুন্দর লাগছে তিথি। খুব বেশি। একটা অনুরোধ করি?’
‘কী?’
‘চুলগুলো ছেড়ে রাখ প্লিজ। বাঁধিস না।’
তিথি লজ্জামাখা হাসি দিয়ে বললো, ‘রাখবো, ভেবেই রেখেছি।’
টুনি এসে তিথির ঘরে উঁকি দিয়ে বললো, ‘আফা, আপনারে উপরে ডাকতেছে।’
‘আমারে?’ জিজ্ঞেস করলো আদিয়া।
‘দুইজনরেই।’
‘তাহলে শুধু আপনেরে বললি কেন? আপনাদের বলবি।’
টুনি মাথা নাড়ালো। তারপর তিথির দিকে তাকিয়ে বললো, ‘আপনেরে খুব গুর্জাস লাগতেছে আফা।’
‘কী? বুঝিনি, টুনি।’, জিজ্ঞেস করলো তিথি।
‘আরে আপা, গুর্জাস। মানে ঐযে, গুর্জাস।’
‘গর্জিয়াস।’, তিথির কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বললো আদিয়া। তিথি হেসে দিলো। তারপর টুনির দিকে তাকিয়ে বললো, ‘থ্যাঙ্কিউ, টুনি।’
‘ইউর অলকাম আফা।’, হেসে হেসে বললো টুনি।
‘ঠিক আছে চল চল।’, তাড়া দিলো আদিয়া।
________ “এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
নাজিম হোসেন আর মনিরা বেগম বসে আছেন কোনো এক দূরসম্পর্কের আত্মীয়ের সাথে। এটা সেটা নিয়ে গল্প করছিলেন। এমন সময় নুহা এসে দাঁড়ালো ওদের পাশে। তারপর বললো, ‘মা, বাবা। আমার কিছু কথা আছে তোমাদের সাথে।’
‘বল না।’ বললেন মনিরা।
নুহা নাজিম হোসেনের পাশে বসা পুরুষের দিকে তাকিয়ে বললো, ‘পারসোনাল।’
লোকটা হয়তো কিছুটা অস্বস্তি বোধ করলো, আর নয়তো অপমানিত। সে ‘আচ্ছা, আমি আসছি’ বলেই চলে গেল সেখান থেকে। নাজিম হোসেন নুহাকে তার পাশে বসিয়ে আদুরে গলায় বললেন, ‘এভাবে বলতে নেই, মা। উনি কী মনে করলেন বলো তো?’
‘হোয়াটএভার। যায় আসে না কিছুই।’
‘এটা কেমন ব্যবহার, নুহা…’ মনিরা বেগম কিছু বলতে নিতেই নাজিম হোসেন হাত উঁচিয়ে থামিয়ে দিলেন উনাকে। নুহা বললো, ‘আমার ব্যাপারটা কতটুকু দেখলে?’
নাজিম হোসেন আর মনিরা বেগম একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করলেন। মনিরা বেগম বললেন, ‘তার আগে বল তো, সত্যি তোদের মাঝে সম্পর্ক আছে?’
নুহা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, ‘না। তবে আমি ওকে পছন্দ করি।’
‘জাওয়াদ করে?’, জিজ্ঞেস করলেন নাজিম।
‘জানিনা। না করার কী আছে? তোমরা খালামণির সাথে কথা বলো।’, মাথা ঝাঁকিয়ে বললো নুহা।
‘আচ্ছা আচ্ছা। রিয়াদের বিয়েটা শেষ হতে দে।’, বললেন মনিরা।
চাঁনতারা বেগম পেছনে দাঁড়িয়ে শুনছিলেন সব। তিনি এগিয়ে গিয়ে মনিরাকে বললেন, ‘একটু আমার সাথে আয় তো। নিচে ঘরে দিয়ে আসবি আমাকে। শরীরটা ভালো লাগছেনা।’
‘কেন মা? কী হয়েছে?’, চিন্তিত হয়ে উঠে দাঁড়ালেন মনিরা। নাজিম হোসেন বললেন, ‘এসব লাইটিং, মিউজিক, এসবে হয়তো খারাপ লাগছে। যাও মাকে ঘরে নিয়ে যাও।’
মনিরা চাঁনতারা বেগমকে ধরে ধরে নিচে নিয়ে যাচ্ছিলেন।
সিঁড়ির কাছে যেতেই জাওয়াদের মুখোমুখি হয়ে গেলেন উনারা। জাওয়াদ চাঁনতারা বেগমের এক বাহুতে ধরে জিজ্ঞেস করলো, ‘কী ব্যাপার? কী হয়েছে?’
‘কিছু না। এসব এতো লাইটিং, মিউজিকে হয়তো সমস্যা হচ্ছে। তাই নিচে নিয়ে যাচ্ছি।’, বললেন মনিরা।
‘নিচে তো কেউ নেই। নানু একা ওখানে কী করবেন?’
‘আমি আছি। আমারও এখানে খুব একটা ভালো লাগছেনা।’
জাওয়াদ কিছু বলতে যাবে তখনই দেখলো আদিয়ার সাথে তিথি সিঁড়ি বেয়ে উঠে আসছে। গলার কথা যেনো গলাতেই আটকে গেল। সে ঢোঁক গিলে আস্তে আস্তে বললো, ‘আচ্ছা, যাও।’
কথাটা বলার সময় জাওয়াদের দৃষ্টি ছিলো তিথির দিকে। তিথি আদিয়ার সাথে গল্প করতে করতে আসছিলো। চাঁনতারা বেগম জাওয়াদের দৃষ্টি দেখে হয়তো বুঝে গিয়েছিলেন কিছু। তিনি হাসতে হাসতে মনিরার সাথে সিঁড়ি দিয়ে নামতে লাগলেন। তিথির কাছে যেতেই তিথিকে ধরে দাঁড় করালেন। তারপর কপালে চুমু খেয়ে বললেন, ‘মিষ্টি, মিষ্টি লাগছে তোকে।’
‘আর আমাকে?’, কোমরে হাত দিয়ে জিজ্ঞেস করলো আদিয়া।
‘তোকেও।’ বলে হাসলেন চাঁনতারা বেগম। তিথিও হাসলো, লজ্জারাঙা হাসি। মনিরা বেগম কিছু বললেন না। একটা রঙহীন হাসি দিয়ে চাঁনতারা বেগমকে নিয়ে নিচে চলে গেলেন।
ঘরে গিয়ে আস্তে আস্তে বিছানায় শুয়ে পড়লেন চাঁনতারা বেগম। তারপর মনিরা বেগমকে আস্তে করে ডাকলেন, ‘মনিরা।’
‘হ্যাঁ, মা।’
‘চোখের সামনে যা কিছু দেখছিস, সবই সত্যি। দ্বিধা রাখিসনা ভেতরে। দু’বছর পর আমি আবার জাওয়াদের মুখে সেই হাসিটা দেখেছি। আমি চাইনা এই হাসি আবার ফিকে হোক।’
মনিরা বেগম কিছু বললেন না। চুপ করে বসে থাকলেন। চাঁনতারা আবার বললেন, ‘ছেলেমেয়েদের ছোট থেকে শাসন করতে হয়। ভালো মন্দ বুঝাতে হয়। সবসময় যা চায়, তাই দিয়ে দিতে হয়না। অবান্তর কিছু চাইলে সেটা যে বেদরকারি, এটা বুঝাতে হয়। মেয়েটাকে আহ্লাদে বড় করেছিস। যা চেয়েছে তাই দিয়েছিস। ভেবে দেখেছিস একবারো? যদি কোনোদিন চাওয়ার জিনিসটা না পায়, তাহলে কী করবে? তোর মেয়েটা অনেক জেদি মনিরা। আমার নাতি নাতনিদের মাঝে আমার নুহাটা খুব বেশিই জেদি। তাকে বুঝিয়ে দিস। সবকিছু জোর করে পাওয়া গেলেও, ভালোবাসা জোর করে পাওয়া যায়না। ওটা ভাগ্যের ব্যাপার। ভাগ্যে থাকলে তবেই পাওয়া যায়।’
মনিরা বেগমের বুকের ভেতরটা কেঁপে উঠলো। মনে পড়ে গেল নুহার ছোটবেলার কথা। ছোটবেলায়, যখন নুহা ক্লাস ফাইভে পড়তো তখন জেদ ধরেছিলো, তার মোবাইল চাই। মনিরা বেগম ধমক দিয়েছিলেন। কিছুক্ষণ পর নুহার ঘর থেকে চিৎকারের শব্দ ভেসে এসেছিলো। দৌড়ে গিয়ে দেখলেন, নুহা দেয়ালে মাথা ঠুকছে আর জোরে জোরে চিৎকার করছে। একমাত্র মেয়ে, দু’চোখের মণিকে এই অবস্থায় দেখে পাগল হয়ে গিয়েছিলেন তিনি সেদিন। এরপর থেকে নুহা যা চায়, তাই দিতেন। নাজিম হোসেন তো মেয়ে বলতেই অজ্ঞান। দীর্ঘশ্বাস ফেললেন মনিরা। কী করবেন বুঝতে পারছেন না কিছুই।
_________
তিথি ফাহি আর রিয়াদকে হলুদ লাগিয়ে স্টেজ থেকে নেমে আসার সময় জাওয়াদের চোখে চোখ পড়লো। জাওয়াদের চাহনি দেখে লজ্জা পেয়ে নিচের দিকে মাথা নামিয়ে নিলো সে। জাওয়াদের পাশে রাকিব দাঁড়িয়ে ছিলো। সে তিথির দিকে তাকিয়ে থেকেই বললো, ‘তোর ভাগ্য ভালো। নাহলে এইবার আমি এই মেয়েটাকেই পটাতাম।’
ঝট করে রাকিবের দিকে শান্ত দৃষ্টি নিয়ে তাকালো জাওয়াদ। রাকিব মিনমিনিয়ে বললো, ‘রিল্যাক্স, পটাচ্ছিনা তো।’
জাওয়াদ কিছু বললোনা। রাকিব আবার বললো, ‘তোর এক্সের মতো দেখতে।’
‘মাহি আমার এক্স না। আমি মাহিকে ভালোবাসতাম, ভালোবাসি। আর ভবিষ্যতেও বাসবো।’, শীতল কণ্ঠে বললো জাওয়াদ।
রাকিব অবাক হলো। বললো, ‘হ্যাঁ? কী বলিস? তাহলে বলছিস যে তিথিকে…’
‘তিথিকেও বাসি।’
‘মানে?’
‘আমি দুজনকেই ভালোবাসি। দুজনেই আমার ভালোবাসা।’, বলেই সেখান থেকে হেঁটে চলে গেল জাওয়াদ। রাকিব হা হয়ে তাকিয়ে থাকলো।
জাওয়াদ হেঁটে এসে আঞ্জুমান আর মেহেরুনের পাশে দাঁড়ালো। তারপর জিজ্ঞেস করলো, ‘মামাদের দেখছিনা যে?’
‘তোর বাবার সাথে। কালকের জন্য সব ঠিক আছে কিনা দেখছেন।’, বললেন মেহেরুন।
‘ও, ছোট মামানি, সাহিল কোথায়? নাচবে বলেছিলো।’
‘জ্বর এসে গেছে ওর। ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে এসেছি। আর ওর কোন বন্ধুর আসার কথা ছিলো, আসেনি কী একটা সমস্যার কারণে।’, চিন্তিত মুখে বললেন আঞ্জুমান।
জাওয়াদ আফসোসের স্বরে বললো, ‘আহারে, কতো আশা করেছিলো নাচবে।’
মুনতাহা ব্যস্ত ভঙ্গিতে জাওয়াদের পাশে এসে দাঁড়িয়ে বললেন, ‘তুই আংটি এনেছিস না? নিয়ে আয়, এনে আমার কাছে দে তো।’
‘এখন কী করবে? ওটার দরকার তো কালকে।’
‘এখন এনে আমার কাছে দে তো। কাল যখন দরকার তখন তোকে পাবো কি না।’
‘উফ, মা! দিচ্ছি। আগে আমার ভাইটারে হলুদ লাগিয়ে আসি।’, বলে স্টেজের দিকে গেল জাওয়াদ। মুনতাহা গিয়ে আদিয়া আর তিথির পাশে দাঁড়িয়ে বললেন, ‘এই আদিয়া, যা তো টেবিলের ওপর থেকে হলুদের বড় বাটি টা সরিয়ে দে। নিচে রেখে আয়। গিজগিজ করছে টেবিলটা।’
‘তি-তিথি যাক? আমার এখানে থাকা দরকার। একটু পর পর ডাক পড়ে।’
‘যেকোনো একজন গেলেই হবে।’, বলে সেখান থেকে প্রস্থান করলেন মুনতাহা। তিথি আদিয়ার দিকে তাকিয়ে হেসে দিলো। আদিয়া মুখ ভেংচি দিলো। তিথি বললো, ‘আহারে…’
‘বেশি মজা লাগছে না? আমার অবস্থায় থাকলে বুঝতি। একটাবার কথা বলারও সুযোগ নাই চোখে চোখে চাওয়া ছাড়া।’
তিথি খিলখিল করে হেসে উঠলো। আদিয়া চোখ কটমট করে তাকালো।
জাওয়াদ স্টেজের সামনে গিয়ে রাকিব আর নাহিদকে ইশারা দিলো তার কাছে আসার জন্য। তারা দুজনে এসে রিয়াদ আর ফাহির সামনে দাঁড়িয়ে পড়লো যাতে কেউ কিছু না দেখে। ক্যামেরাম্যান কিছু বলতেই জাওয়াদ বললো, ‘পাঁচ মিনিট।’ তারপর রিয়াদের গালে একটু হলুদ ছুঁইয়ে বললো, ‘রিয়াদ একটু ডানদিকে সরে আয় তো।’
‘কেন?’
‘প্রশ্ন করতে বলেছি? আর ফাহি বা’দিকে সর।’
ফাহি একটু অস্বস্তি বোধ করছিলো। শুরু থেকেই লজ্জায় কুকড়ে যাচ্ছে সে। আস্তে আস্তে বা’দিকে সরলো। জাওয়াদ বিরক্তির স্বরে বললো, ‘এই এদের নিয়ে পারিনা। ধুর।’ বলেই রিয়াদ আর ফাহির মাথা ধরে হুট করে রিয়াদের গালের সাথে ফাহির গাল লাগিয়ে দিলো জাওয়াদ। রিয়াদের গাল থেকে হলুদ দিয়ে ফাহির গালে লাগলো। কিছুক্ষণের জন্য ফাহির মনে হলো সে বরফ হয়ে গেছে। লজ্জায় ঝাঁ ঝাঁ করে উঠলো কান। জাওয়াদ হেসে হেসে স্টেজ থেকে নামতে নামতে বললো, ‘জাওয়াদ স্টাইল হলুদ লাগিয়ে দিলাম।’
নাহিদ আর রাকবও হাসতে হাসতে নেমে গেল। রিয়াদ আড়চোখে একবার তাকালো ফাহির দিকে। তারপর ঠোঁট টিপে হাসলো। কোনোদিন তো খেয়াল করেনি, ফাহিকে লজ্জা পেলে দারুণ দেখায়।
_________
তিথি হলুদের বাটিটা নিয়ে রান্নাঘরের দিকে যাচ্ছিলো, রেখে আসার জন্য। জাওয়াদের ঘরের সামনে আসতে কেউ একজন তাকে হ্যাঁচকা টান দিয়ে ঘরের ভেতর নিয়ে নিলো। হাতের বাটিটা পড়ে যেতে গিয়েও পড়লোনা। ধাতস্থ হয়ে দেখলো তিথি, জাওয়াদ দাঁড়িয়ে আছে তার সামনে। দু’হাতে তার কোমর জড়িয়ে ধরেছে। তিথি বললো, ‘এভাবে কেউ টান দেয়?’
‘আমি দেই।’
‘ছাড়ুন। কেউ এসে পড়বে।’
‘আসলেই বা কী? দু’দিন পর তো বিয়েই করবো।’
তিথি লজ্জা পেলো। নিচের দিকে তাকালো। জাওয়াদ বললো, ‘দাওতো, হলুদ লাগিয়ে দাও একটু।’
তিথি হেসে জাওয়াদের গালের হলুদ লাগিয়ে দিলো। এতো হলুদ লাগালো যে জাওয়াদের ঠোঁটের মাঝেও লাগলো। জাওয়াদ হাসলো। বললো, ‘এবার? আমি দেবো?’
‘দিন।’
জাওয়াদ তিথির হাত থেকে হলুদের বাটি টা নিলো। তারপর সেটা টেবলের ওপর রেখে এলো। এসে তিথির দু’হাতের আঙুলের ভাঁজে নিজের আঙুল রাখলো। তারপর দু’হাত দেয়ালের ওপর দু’দিকে চেপে ধরলো। তিথির খুব কাছে গিয়ে দাঁড়ালো। তিথির হৃদপিণ্ড বন্ধ হওয়ার জোগাড়। সে থমকানো গলায় বললো, ‘ক-কী করছেন?’
‘হলুদ লাগাচ্ছি।’, বলে তিথির ডান গালে নিজের গাল লাগালো জাওয়াদ। তিথি শিউরে ওঠে। শক্ত করে জাওয়াদের হাত চেপে ধরে জোরে জোরে নিশ্বাস নেয়। জাওয়াদ তিথির গালের নিজের গাল ঘষে আস্তে আস্তে তিথির গলায়ও নিজের গাল ঘষে। তিথি কেঁপে ওঠে জাওয়াদকে সরিয়ে দিতে চাইলে জাওয়াদ বলে, ‘এখনও শেষ হয়নি।’
তিথি চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে নিশ্বাস নিয়ে বললো, ‘যেতে দিন, এসে পড়বে কেউ।’
জাওয়াদ শুনলোনা। সে তিথির ঠোঁটের ওপর নিজের ঠোঁট ঘষলো। তিথি আঁতকে ওঠে মুখ ফিরিয়ে নিলো। লজ্জায় চোখ খুলতে পারছনা সে। জাওয়াদ হেসে বললো, ‘লিপস্টিক লেগে গেছে।’, বলেই তিথির গলায় আবার নিজের ঠোঁট ঘষলো। তিথি আর্তনাদ করে বললো, ‘মরেই যাবো। এমন করবেন না প্লিজ।’
জাওয়াদ একটা হাসি দিয়ে হাতের বাঁধন শিথিল করলো। তিথি দু’হাতে জাপটে ধরলো জাওয়াদকে। জাওয়াদ নাক ডোবায় প্রেয়সীর দিঘল চুলে। প্রাণ ভরে নিঃশ্বাস নেয়। তারপর অস্পষ্ট গলায় বলে, ‘আমার প্রেয়সী। কলিজা কাঁপিয়ে দিয়েছো। এতো রূপসী কেন তুমি?’
তিথি কিছু বললোনা। আরেকটু নিবিড়ভাবে জড়িয়ে ধরলো জাওয়াদকে। এমন সময় জাওয়াদের ফোনে কল এলো। তিথিকে ছেড়ে ফোন হাতে নিয়ে দেখলো, মুনতাহা কল করছেন। জাওয়াদের মনে পড়লো, আংটি নিতে এসেছে। সে কলটা কেটে দিয়ে তিথিকে বললো, ‘কাজ করবো। কামলা বানিয়ে দিলো গো আমাকে।’
তিথি হাসলো একথা শুনে। জাওয়াদ আলমারি থেকে একটা ছোট ব্যাগ বের করে হেসে বেরিয়ে গেল। তিথিও হেসে হলুদের বাটি হাতে বেরোতেই নুহার সামনাসামনি হয়ে গেল। নুহার শাড়িতে কেক পড়ে যাওয়ায় পরিষ্কার করতে এসে দেখলো জাওয়াদ বেরিয়ে যাচ্ছে। তিথিকেও জাওয়াদের ঘর থেকে বেরিয়ে আসতে দেখে তার বুক ধক করে উঠলো। তিথি নুহাকে দেখে থতমত খেলো। ঢোঁক গিলে পাশ কাটিয়ে যেতে নিলেই নুহা বললো, ‘দাঁড়াও।’
তিথি দাঁড়ালো। তার বুক ধুকপুক করছে। নুহা তিথির সামনে এসে দাঁড়িয়ে পরখ করলো তিথিকে। তারপর বললো, ‘লিপস্টিক ছানা কেন এভাবে?’
তিথির হৃদপিণ্ড আরো জোরে ধুকপুক করতে লাগলো। সে আমতাআমতা করে বললো, ‘আস-আসলে… আসলে…’
‘এই ঘরে কী করছিলে?’
‘আ-আমি… এ-এক-এখানে…’
‘তোতলাচ্ছো কেন?’
তিথি চুপ হয়ে গেল। নুহা হাসলো, অদ্ভুত ভাবে হাসলো। তারপর তিথির হাতের বাটির দিকে তাকালো। সেখান থেকে এক মুঠো হলুদ নিলো। তিথির দিকে তাকিয়ে বললো, ‘একটু হলুদ মাখিয়ে দেই।’, বলেই তিথির পুরো মুখে বাজেভাবে হলুদ লাগালো নুহা। তারপর একমুহূর্তও দাঁড়ালোনা, চলে গেল। তিথি চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে থাকলো। ভাগ্যিস, চোখ বন্ধ ছিলো। নাহলে চোখের ভেতরে চলে যেতো। কোনোরকমে নিজের রুমে গিয়ে মুখ ধুয়ে নিলো তিথি। কেন যেনো খুব কান্না পেলো তিথির। বেসিনের সামনে দাঁড়িয়ে ডুকরে কেঁদে উঠলো সে।
_______
চলবে………
#ফারজানা_আহমেদ
একটা কারণে পেজের ম্যাসেজ অপশনটা বন্ধ করে রেখেছি। পেজে শুধুই গল্প ছাড়া আর কিছুই থাকবেনা। প্রিয় পাঠক, আপনারা গ্রুপে এড হয়ে নেবেন। আপনাদের কিছু জানার থাকলে অথবা আমার সাথে আড্ডা দেয়ার ইচ্ছা থাকলে গ্রুপে সচল থাকুন। আমি গ্রুপে আমার পাঠকদের সর্বোচ্চ রেসপন্স করি। ভালোবাসা নেবেন❤
গ্রুপ লিংক- https://www.facebook.com/groups/831432960641690/?ref=share