Friday, July 18, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1919



রঙ তুলির প্রেয়সী ২২.

0

রঙ তুলির প্রেয়সী
২২.

হেলাল আহমেদের ইচ্ছেতে উনার বাড়িতেই বিয়ের আয়োজন করা হলো। বিয়ের আর আছে মাত্র একদিন। আজকে গায়েহলুদ। সকাল থেকেই মেহমানদের আনাগোনা বেড়েই চলেছে। মুনতাহা, আদিয়া এদিক ওদিক ছুটাছুটি করে কাজ করছেন। একটু পর ফাহি দের বাড়ির সবাই চলে আসবে। মুনতাহার বোন মনিরাও উনার স্বামীসহ ইতোমধ্যে এসে পৌঁছেছেন। মনিরা এসেই বোনের হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করছেন। নাজিম হোসেন দাঁড়িয়ে আছেন হেলাল আহমেদের সাথে। এটা সেটা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে তাদের মাঝে। এমন সময় রিয়াদ এসে বললো, ‘বাবা, জাওয়াদ কোথায়? দরকার ছিলো ওকে।’

‘একটা কাজে পাঠিয়েছি। চলে আসবে।’ বলে হাসলেন হেলাল আহমেদ।

‘আচ্ছা তাহলে শোনো, আমি গাড়ি নিয়ে একটু বেরোচ্ছি।’

‘কোথায় যাবি তুই?’

‘নাহিদের বাইকটা মাঝপথে আটকে আছে। ওকে নিয়ে আসি। সাথে রাকিবকেও পিক করে নেবো। তুমি মা-কে বলোনা আমি গেছি। যাবো আর আসবো।’

‘তাড়াতাড়ি ফিরে আসিস।’

রিয়াদ বেরিয়ে যাওয়ার পর নাজিম হোসেন হেসে বললেন, ‘এক ছেলের জীবন তো গুছিয়ে দিলেন। এবার আরেকজনের জন্য কী প্লান?’

আবছা হাসলেন হেলাল আহমেদ। বললেন, ‘সেই প্লান ছেলের ওপরেই ছেড়ে দিলাম।’

‘যদি কিছু মনে না করেন… ইয়ে… মানে…’ আমতাআমতা করতে লাগলেন নাজিম হোসেন।

‘জ্বি, ভাই, বলুন।’ কৌতূহল নিয়ে জিজ্ঞেস করলেন হেলাল আহমেদ। নাজিম হোসেন কিছু একটা বলতে গিয়েও অস্বস্তিতে বলতে পারছেন না। এমন সময় পেছন থেকে মনিরা বেগম বলে উঠলেন, ‘আপনার সাথে বেয়াই পাতাবো এবার, দুলাভাই।’

হেলাল আহমেদ আর নাজিম হোসেন একসাথে পেছন ফিরে দেখলেন, মুনতাহা ও মনিরা দাঁড়িয়ে আছেন। মনিরা হেসে এগিয়ে এসে নাজিম হোসেন এর পাশে দাঁড়ালেন। নাজিম হোসেন যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলেন। হেলাল আহমেদ জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন, ‘বুঝলাম না।’

মনিরা বেগম বললেন, ‘ছেলেমেয়েরা কী কাণ্ড করছে সেটা কী খবর রাখেন?’

হেলাল আহমেদ মুনতাহার দিকে তাকালেন। মুনতাহা বললেন, ‘নুহা আর জাওয়াদ একে অপরকে ভালোবাসে।’

অবাক হলেন হেলাল আহমেদ। বললেন, ‘কী বলো! কবে থেকে? ওদেরতো কখনও কথা বলতেই দেখিনা।’

নাজিম হোসেন বললেন, ‘লজ্জায় সবার সামনে কথা বলে না। বুঝেনই তো।’

হেলাল আহমেদ চমকালেন খুব। তার ছেলেকে তিনি চেনেন। জাওয়াদের ব্যবহারের সাথে খুব পরিচিত তিনি। নুহার সাথে জাওয়াদের এরকম কিছু কল্পনাও তিনি করেন না। কখনও বোঝাও যায়নি এসব। মুনতাহা স্বামীর মন বুঝলেন হয়তো। তিনি নিজেও অবাক হয়েছেন এটা শোনার পর। তিনি কথা অন্যদিকে নেয়ার জন্য হেলাল আহমেদকে বললেন, ‘আচ্ছা আচ্ছা, সবাই চলে আসবে এক্ষুণি। তুমি একটু এদিকটায় থেকো। আমি যাই কিছু কাজ আছে।’ বলে তিনি চলে গেলেন। হেলাল আহমেদ মনিরা আর নাজিম হোসেন এর সাথে এটা সেটা নিয়ে গল্প করতে লাগলেন।
__________
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
নুহা দোতলায় ঘুরছিলো। খুব সুন্দর ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে বাড়িটা। সে ভাবছে, তার আর জাওয়াদের বিয়েতে এরথেকেও সুন্দর করে বাড়িটা সাজাবে। সবাই তাক লেগে যাবে বিস্ময়ে। এসব ভাবছিলো আর হাঁটছিলো নুহা। হঠাৎ চোখ পড়লো তিথির ঘরের দিকে। দরজা খোলা দেখে একবার ভেতরে উঁকি দিলো৷ কেউ নেই। বিছানার ওপর একটা মগ আর কাগজের মতো কিছু একটা রাখা। নুহা এগিয়ে গেল। আর্ট পেপার টা হাতে নিলো। দাঁতে দাঁত চেপে কিছুক্ষণ দেখলো। তিথির বৃষ্টি বিলাস এর ছবি, জাওয়াদের আঁকা। জাওয়াদের আঁকার সাথে নুহা পরিচিত। চোয়াল শক্ত করে এদিক ওদিক তাকালো নুহা। তারপর বিছানার ওপর রাখা মগটায় দেখলো, কফি রাখা। হাসলো নুহা। হাতের আর্ট পেপার টা খুব যত্ন করে বিছানার ওপর রাখলো। তারপর কফির মগটা হাতে নিয়ে আর্ট পেপারের ওপর মগের সব কফি ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলে দিলো। একেবারে নষ্ট হয়ে গেছে ছবিটা। হেসে বেরিয়ে গেল নুহা, তিথির ঘর থেকে।
_________

ফাহির ফ্যামিলির সবাই চলে এসেছে। গায়েহলুদ শুরু হওয়ার আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা বাকি। আসার পরই আদিয়া, নুহাসহ সবাই ফাহিকে নিয়ে পার্লারে চলে গেল। আদিয়া চেয়েছিলো তিথিকে সাথে নিতে, কিন্তু তিথি যায়নি। সে আজ জাওয়াদের মনমতো সাজবে। ছাঁদে দাঁড়িয়ে দেখছে তিথি, মেয়েদের নিয়ে একটা গাড়ি রওয়ানা হলো পার্লারের দিকে। আর জাওয়াদের গাড়ি এসে আটকালো গেটের সামনে। মুখে হাসি ফুটে উঠলো তার। কাপড়গুলো হাতে নিয়ে নিচে নেমে যেতে লাগলো। একটু পর ছাঁদে গায়ে হলুদের স্টেজ সাজানো হবে। তাই, যে কাপড়গুলো শুকোতে দিয়েছিলো সেগুলো নিতে এসেছিলো সে। নিচে নামতে নামতে তিথির মনে পড়লো, ফাহির সাথে দেখা হলোনা। থাক, পরে দেখা করে নেবে ক্ষণ। নিজের ঘরের দিকে যেতেই পেছন থেকে টুনির ডাক শুনতে পেলো তিথি। ঘুরে তাকালো সে। টুনি বললো, ‘খালাম্মা আপনেরে ডাকে। উনার ঘরে।’

তিথি হাতের কাপড়গুলো টুনির দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো, ‘তুমি একটু এগুলো আমার ঘরে রেখে এসো।’

টুনি বিনাবাক্যব্যয়ে কাপড়গুলো নিয়ে চলে গেল। তিথি এগোলো মুনতাহার ঘরের দিকে।
_________

‘আমার কাছে বিষয়টা ভালো ঠেকছেনা। আমি আমার ছেলেকে চিনি।’ চিন্তিত মুখে বললেন হেলাল আহমেদ।

আলমারি থেকে একটা বক্স বের করে বিছানায় এসে বসলেন মুনতাহা। তারপর স্বামীর দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘এখানে এতো চিন্তার কিছু নেই। নুহা ভালো মেয়ে।’

‘ভালো খারাপের কথা আমি বলছিনা। আমি জাওয়াদের কথা ভাবছি। তুমি ভালোকরেই তোমার ছেলেকে চেনো। সে নিজের ইচ্ছা ব্যাতিত অন্যের ইচ্ছায় চলেনা।’

‘আচ্ছা। বিয়েটা ভালোয় ভালোয় মিটতে দাও। পরে জাওয়াদের সাথে কথা বলা যাবে ক্ষণ।’

‘মুনতাহা। আমার মনটা কেন যেনো বড় কু ডাক ডাকছে।’ দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বললেন হেলাল আহমেদ।

মুনতাহা চাপা ধমকের স্বরে বললেন, ‘তুমি এখন এসব নিয়ে টেনশন করে শরীর খারাপ করো না তো। জাওয়াদ পছন্দ করলে ভালো, না করলে আমরা এগোবোনা। ব্যস।’

কথাটা বলে বক্সের ভেতরের জিনিসগুলো দেখতে লাগলেন মুনতাহা। স্বামীকে ধমকে চুপ করালেও, নিজের মনকে শান্ত করছে পারছেন না তিনি। ‘আমরা এগোবোনা’ কথাটা যতো সহজে বলেছেন, বাস্তবায়ন করাটা ততোটাই কঠিন।

‘মামণি, আমায় ডেকেছিলে?’

তিথির ডাকে ঘোর কাটে মুনতাহার। তিনি তিথির দিকে তাকালেন। হেলাল আহমেদ বললেন, ‘হ্যাঁ মা, ডেকেছেন। ঠিক আছে তোমরা থাকো। আমি যাই বাইরে।’ বলে বেরিয়ে গেলেন তিনি।

‘আয়। বস।’ বললেন মুনতাহা। তিথি এসে বসলো তাঁর পাশে। তিথি বক্স থেকে এক জোড়া স্বর্ণের ঝুমকো বের করলেন। ঝুমকো জোড়া বেশ বড় আর খুব সুন্দর। সেটা তিথির দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন, ‘তোর শাড়ির পাড় তো এই রঙের, তাইনা? এইটা পরবি আজকে।’

তিথি একবার তাকালো ঝুমকোর দিকে। তারপর বললো, ‘আমার এসবের দরকার ছিলোনা তো, মামণি। সেদিনই তো একগাদা গয়নাগাটি কিনে দিলে।’

‘ওগুলো তো এমনিই। আজ এইটা পরবি তুই।’

তিথি কিছু বলতে যাবে তখনই শুনলো কেউ একজন বলছে, ‘তিথিও আছো এখানে। ভালোই হলো।’

তিথি আর মুনতাহা একসাথে দরজার দিকে ফিরে তাকালেন। দেখলেন, জাওয়াদের বড় মামী মেহেরুন হাতে একটা ব্যাগ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। মুনতাহা বললেন, ‘ভাবি। এসো ভেতরে এসো।’

মেহেরুন হেসে ভেতরে এলেন। তিথি দাঁড়িয়ে গেল বসা থেকে। তারপর দেখলো জাওয়াদের ছোট মামীও এসে ঢুকলেন ঘরে। তিথি সালাম দিলো দুজনকেই। তারপর মুনতাহাকে বললো, ‘আমি এখন যাই মামণি।

‘না না, তুমি থাকো, তিথি।’ বললেন মেহেরুন।

তিথি চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। জাওয়াদের ছোট মামী আঞ্জুমান বললেন, ‘দাঁড়িয়ে আছো কেন, তিথি? বসো তুমি। আমি বসতে আসি নি। চলে যাবো।’

তারপর মুনতাহার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘আপা, কলিজার তরকারি আছে? সাহিল বায়না ধরেছে কলিজার তরকারি দিয়ে ভাত খাবে। এখনও তো রান্না হয়নি দেখলাম। আগের রান্না করা আছে?’

‘হ্যাঁ ফ্রিজে আছে দেখো। একটা সাদা বাটিতে। গরম করে দিয়ে দিও।’

‘আচ্ছা।’ বলে বেরিয়ে গেলেন আঞ্জুমান।

তিথি চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। মেহেরুন মুনতাহার দিকে তাকালেন। তারপর ব্যাগ থেকে একটা আকাশী রঙের কাতান শাড়ি বের করলেন। সেটার দিকে তাকিয়ে থেকে বলতে লাগলেন, ‘এই শাড়িটা মাহির। জাওয়াদ উপহার দিয়েছিলো। খুব পছন্দের ছিলো এটা মাহির। যখনই পরতো, সদ্য ফুটে ওঠা ফুলের মতো লাগতো আমার মেয়েটাকে। শাড়িটা যখন সে পরতো, চুল ছাড়া রাখতো সে। আমি আমার মেয়ের চুলের মতো লম্বা চুল আর একজনের দেখেছি।’ এতটুকু বলে তিথির দিকে তাকালেন তিনি। তারপর উঠে দাঁড়িয়ে তিথির সামনে গেলেন। তিথি একটু অবাক হলো। মেহেরুন বললেন, ‘শুধু চুলের দিক থেকে নয়। তোমাকে দেখলেই আমার মাহির কথা মনে হয়। মনেহয়… আমার মেয়েটা আমার সামনে দিয়ে ঘুরছে। এ-এই… তুমি এই এই শাড়িটা কালকে পরবে, তিথি? পরবে, মা? আমার খুব ভালো লাগবে।’

কথাগুলো বলা শেষ করতেই টুপ করে এক ফোটা জল গড়িয়ে পড়ে মেহেরুনের গাল বেয়ে। তিথির বুকটা মুচড়ে ওঠে। একজন মা এভাবে এসে তাকে বলছে… কান্না পেয়ে গেল তিথিরও। সে আস্তে আস্তে শাড়িটা মেহেরুনের হাত থেকে নিজের হাতে নিলো। তারপর বললো, ‘পরবো। অবশ্যই পরবো।’

মেহেরুন এগিয়ে গিয়ে তিথির কপালে একটা চুমু দিলেন। তারপর মুনতাহার দিকে তাকালেন। মুচকি হাসলেন মুনতাহা। বেরিয়ে গেলেন মেহেরুন। তিথিও শাড়িটা হাতে নিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই মুনতাহা ডাকলেন, ‘শাড়িটা আমার কাছে দিয়ে যা। কাল তোকে পরিয়ে দেবো আমি। আমার কাছে আসবি। পার্লারে যেতে হবে না তোকে কাল। আমি সাজিয়ে দেবো।’

তিথি কিছু না বলে শাড়িটি মুনতাহার হাতে দিলো। তারপর ঝুমকো জোড়া নিয়ে বেরিয়ে গেল। মুনতাহা কিছুক্ষণ শুন্যে তাকিয়ে রইলেন। তারপর হুট করে একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়ে বসলেন
____________

তিথি নিজের ঘরে গিয়ে দেখলো জাওয়াদ বসে আছে। হাতে ভাজ করে রাখা একটা কাগজ৷ দেখে মনে হচ্ছে আর্ট পেপার। তারপর মনে পড়লো তিথির, বিছানার ওপর জাওয়াদের আঁকা ছবিটা রেখেছিলো সে। জাওয়াদ দিতে চায়নি, জোর করে নিয়ে এসেছিলো। বিছানার দিকে তাকিয়ে দেখলো কফির মগ। কফির কথা ভুলেই গিয়েছিলো সে। তারপর খেয়াল করলো, বিছানার চাদরটা পাল্টানো। সে এগিয়ে এসে বললো, ‘আরে, সকালেই আমি চাদর বদলিয়েছি। আবার বদলালো কে?’

জাওয়াদ নিচের দিকে তাকিয়ে ছিলো। তিথির কথা শুনে মাথা তুলে তাকালো তার দিকে। তারপর হেসে বললো, ‘আমি বদলিয়েছি।’

‘কিন্তু কেন?’

‘হিসু করে দিয়েছিলাম তোমার বিছানায়।’ বলে হেসে দিলো জাওয়াদ।

‘ইশ, আপনি না…’ লজ্জা পেলো তিথি।

জাওয়াদ বললো, ‘প্রশ্নেরও ধরন থাকতে হয় পিচ্চি। ওটা ভালো লাগেনি তাই চেঞ্জ করিয়েছি।’

‘ও।’ বললো তিথি। তারপর একটু চুপ করে আবার বললো, ‘ছবিটা নিলেন কেন? দিন।’ বলে নিতে চাইলো ছবিটা তিথি। জাওয়াদ হাত পেছনে নিয়ে নিলো। তারপর বললো, ‘অনেক বড় ভুল করে ফেলেছি। সেটা ঠিক করবো। ছবিটা তোমাকে এখন দেয়া যাবেনা।’

‘কেন?’ গাল ফুলিয়ে বললো তিথি।

জাওয়াদ বললো, ‘তুমি বুঝবেনা।’ বলে নিজের পকেট থেকে একটা চকলেট বের করে তিথির দিকে এগিয়ে দিয়ে আবার বললো, ‘এটা দিতে এসেছি। নাও। খাও। কাজ আছে আমার, যাচ্ছি। আর তোমার কফিটা আমি খেয়ে ফেলেছি।’ বলে তিথির হাতে চকলেট দিয়ে হেসে বেরিয়ে গেল জাওয়াদ। তিথিও হেসে চকলেট খেতে লাগলো।
____________

নিজের রুমের দিকে যেতে যেতে ভাবছিলো জাওয়াদ, তিথি ছবিটার এই হাল দেখলে অনেক কষ্ট পেতো। বিছানার চাদরেও কিছুটা কফি পড়ে দাগ লেগে গিয়েছিলো। কোনোভাবেই যাতে কিছু না বুঝে তাই বিছানার চাদরটাও টুনিকে দিয়ে বদলিয়েছে সে। জাওয়াদ ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছে। কাজটা কার করা। দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো ভেতর থেকে। রাগ করতে করতেও ক্লান্ত সে। নিজের রুমে যেতেই কেউ একজনের চিৎকার শুনলো, ‘জাওয়াদ, এতোকিছু হয়ে গেল কিছুই বললিনা।’

জাওয়াদ তাকিয়ে দেখলো তার রুমে রিয়াদ, রাকিব, নাহিদ তিনজন বসে আছে। কথাটা রাকিব জিজ্ঞেস করেছে চিৎকার করে। জাওয়াদ বললো, ‘কী বলবো?’

‘ভাবি বানিয়ে ফেললি বেটা, বলিওনা না ট্রিটও দিলিনা।’

‘বিয়ে খাচ্ছিস, হচ্ছেনা?’ বলে বিছানায় এসে বসলো জাওয়াদ। নাহিদ বললো, ‘রিয়াদের বিয়ে। এমনভাবে বলছিস যেনো বিয়েটা তোর। আমার ছাত্রীর সাথে হিল্লে করলি অথচ আমিই জানলাম না।’

জাওয়াদ ওদের কথাকে পাত্তা না দিয়ে রিয়াদের পিঠে একটা থাপ্পড় দিয়ে বললো, ‘সময় বেশি নেই। আস্তে আস্তে তৈরি হ।’

রাকিব বললো, ‘ভাবিকে দেখবো কবে?’

জাওয়াদ হাসলো ঠোঁট কামড়ে। তারপর নিজের চুলে হাত চালাতে চালাতে বললো, ‘দেখবি। আজই দেখবি।’
_________

চলবে……..
#ফারজানা_আহমেদ
আর ২/৩ পর্বে শেষ।

রঙ তুলির প্রেয়সী ২১.

0

রঙ তুলির প্রেয়সী
২১.

‘মামণি… মামণি…’ জোরে জোরে ডাকতে ডাকতে নিচে নেমে এলো তিথি। মুনতাহা তখন পা বাড়িয়েছিলেন রুমে যাওয়ার জন্য। তিথিকে এভাবে চেঁচিয়ে আসতে দেখে তিনি উদ্ধিগ্ন হয়ে বললেন, ‘কী হয়েছে? ক-কী হলো?’

তিথি কিছু বলতে যাবে আর তখনই ধমকের স্বরে নুহা বললো, ‘কী ব্যাপার? এভাবে চেচামেচি করছো কেন রাত-বিরেতে? এটা ভদ্রলোকের বাড়ি।’

নুহার ধমকে তিথির কী যে হলো, হুট করে সে মিয়িয়ে গেল। আস্তে আস্তে বললো, ‘আ-আস-আসলে…’

‘নুহা… এভাবে ধমক দিস কেন? ও ছোট মানুষ… এই তিথি কী হয়েছে আমাকে বল।’ মুনতাহা তিথির পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে বললেন।

‘ছোট মানুষ?’ তাচ্ছিল্যের স্বরে বললো নুহা।

তিথি ঢোঁক গিলে বললো, ‘ম-মামণি… আমার ঘরে আমার কোনো জিনিসপত্র নেই।’

‘ওগুলো আমি টুনিকে দিয়ে পাশের রুমটায় রেখে দিয়েছি। তোমার কাপড়চোপড় সব টুনি গুছিয়ে রেখেছে। বারান্দা ওয়ালা ঘরে আমি থাকবো।’ অকপটে বললো নুহা।

তিথি আর কিছু বলতে পারলোনা। কান্না পাচ্ছে তার ভীষণ। সে উল্টো ঘুরে উপরে চলে যেতে লাগলো। ঐ ঘর থেকে জাওয়াদকে যেকোনো সময় ডাকা যেতো। যেকোনো সময় জাওয়াদের কাছেও যাওয়া যেতো, কেউ টের পেতো না। আর এখন… ঐ ঘরে তো বারান্দাও নেই। তিথির গাল বেয়ে এক ফোটা জল গড়ালো। গলায় কান্নারা দলা পাকাচ্ছে। অজানা ভয় কু ডাকছে বারংবার।

‘নুহা… মেয়েটা ঐ ঘরে থাকছে আসার পর থেকে। অভ্যাস বলেও তো একটা ব্যাপার আছে রে মা। তুই অন্য ঘরে থাকতে পারতি…’ তিথি যাওয়ার পর মুনতাহা বললেন।

‘মানে? তো তুমি আমাকে বলছো যে ঐ মেয়েটার জন্য আমি আমার ইচ্ছের জলাঞ্জলী দেবো? সিরিয়াসলি খালামণি?’ অবাক কণ্ঠে বললো নুহা।

মুনতাহা আদুরে গলায় বললেন, ‘আরে আমি এমনটা বলি নি তো। বলেছি মেয়েটার ঐ ঘরে হুট করে ঘুম নাও হতে পারে। আচ্ছা থাক, তুই-ই থাক। সমস্যা নেই।’ বলে নুহার মাথায় হাত বুলালেন মুনতাহা। তারপর আবার বললেন, ‘তোর মায়ের শরীর কেমন?’

‘ভালো। রিয়াদ আর খালুকে দেখছিনা। উনারা কই?’

‘সিলেটের বাইরে গেছেন। একটা কাজে। যা ঘুমা এবার। রাত হয়েছে।’

‘জাওয়াদ এখনও আসলোনা যে?’

‘কী একটা দরকারি জিনিস অফিসে ফেলে এসেছে। আমাদের সাথেই ছিলো। নামিয়ে দিয়ে আবার অফিসে গেছে। চলে আসবে।’

‘আচ্ছা। যাও ঘুমাও।’ বলে হাসলো নুহা। মুনতাহাও হেসে নিজের ঘরে চলে গেলেন। নুহা সিঁড়ি বেয়ে উপরে গিয়ে দেখলো তিথি নিজের ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে আছে অন্যমনস্ক হয়ে। নুহা পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সময় শীতল কণ্ঠে বললো, ‘জাওয়াদের সংস্পর্শে আমি কাউকে থাকতে দেইনি, দেবোওনা।’ বলেই এক মুহূর্তও না দাঁড়িয়ে নিজের ঘরে চলে গেল। চমকে উঠলো তিথি। দাঁড়িয়ে রইলো ওভাবেই। বুকটা কেমন খালি খালি লাগছে। সে আর থাকতে পারলোনা। রুমে গিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন

জাওয়াদের ফিরতে ফিরতে রাত প্রায় বারোটা বেজে গেল। ঘরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে তারপর কিচেনে গেল। নিজে নিজে ব্লাক কফি করে খেলো। তারপর রোজকার মতো তিথির কাছে যাওয়ার জন্য তিথির রুমের সামনে গিয়ে অবাক হলো। দরজার নিচে ফাঁক গলে লাইটের আলো আসছে। লাইট জ্বালানো এখনও? তিথি তো এভাবে লাইট জ্বালিয়ে রাখে না। দরজা খুলতে গিয়ে জাওয়াদ আরো একবার অবাক হলো। দরজা লক! তিথি দরজা খোলা রাখে ওর জন্য প্রতিদিন। জাওয়াদ দরজায় দুটো টোকা দিলো আস্তে আস্তে। কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই নুহা দরজা খুললো হাসি মুখে। নুহাকে দেখে জাওয়াদ যারপরনাই অবাক। মুহূর্তেই তার চোয়াল শক্ত হয়ে এলো। সে পিছু ফিরলো ফিরে যাওয়ার জন্য। নুহা আকুতির স্বরে বললো, ‘জাওয়াদ, প্লিজ শোন।’

জাওয়াদ ফিরে তাকিয়ে গমগমে গলায় জিজ্ঞেস করলো, ‘তিথি কোথায়?’

নুহার মুখটা নিমিষেই মলিন হয়ে গেল। সে ভেবেছিলো জাওয়াদ তার সাথে দেখা করার জন্য এসেছে। নুহার বুকটা চিনচিন করে উঠলো। সে কাঁপা কাঁপা গলায় বললো, ‘এতো রাতে ওকে খুঁজছিস কেন?’

‘সেটা তোর দেখার বিষয় না। তুই তিথির ঘরে কেন?’ দাঁতে দাঁত চেপে নিচু স্বরে বললো জাওয়াদ। প্রচুর রাগ হচ্ছে তার।

‘তিথির ঘর মানে? ওর নামে রেজিস্ট্রি করা নাকি?’ ব্যাঙ্গাত্মক স্বরে বললো নুহা।

ধক করে জ্বলে উঠলো জাওয়াদের দু’চোখ। সে কিছু বলতে যাবে আর তখনই খুট করে একটা আওয়াজ হলো। জাওয়াদ মাথা ঘুরিয়ে দেখলো পাশের রুমের দরজা খুলে তিথি উঁকি দিচ্ছে। জাওয়াদ আর এক মুহূর্তও দেরি না করে হনহন করে সেই রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো। নুহা হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। যেনো অনেক বড় ধাক্কা খেলো সে। দু’চোখ বাঁধ মানছেনা। দরজার লাগিয়ে বিছানায় গিয়ে বসলো নুহা। নিশ্বাস নিলো বারকয়েক। নাহ, হবেনা৷ মরেই যাবে নুহা। এতো বছর থেকে সে ভালোবাসে জাওয়াদকে। ওকে পাওয়ার জন্য এতোকিছু করলো। এভাবে উড়ে এসে একজন ছিনিয়ে নেবে? এতো সোজা? নুহা হাসলো। বাঁকা হাসি। মনস্থির করলো। জিততেই হবে তাকে। সে হারতে শেখেনি। ছোটবেলা থেকে যা চেয়েছে, পেয়েছে। ভালো বা মন্দ, যেটাই চেয়েছে তার বাবা সেটা হাতে এনে দিয়েছে। আর এবার সে পাবেনা? এবারও সে পাবে। যেকোন মূল্যে আদায় করে নেবে। এতে যদি তাকে মরতেও হয়, সে মরবে। দরকার পড়লে মারতেও হাত কাঁপবে না।
_________

জাওয়াদকে দু’হাতে আঁকড়ে ধরে জাওয়াদের বুকে মুখ গুঁজে একনাগাড়ে ফুঁপিয়েই যাচ্ছে তিথি। জাওয়াদ সময় দিলো তিথিকে স্বাভাবিক হওয়ার। প্রায় পাঁচ মিনিট কান্নাকাটির পর কিছুটা স্বাভাবিক হলো তিথি। তিথিকে বুকে নিয়েই হেঁটে হেঁটে বিছানায় গিয়ে বসলো জাওয়াদ, তিথিকে বসালো তার কোলে। তিথি উঠে সরতে চাইলে জাওয়াদ চাপা ধমক দিলো, ‘শসসস! চুপ করে বসে থাকো।’

তিথি মুখ তুলে জাওয়াদের দিকে তাকালো। তিথির চোখদুটো ফুলে আছে। নাকমুখ লাল হয়ে আছে। সে ঢোঁক গিলে জাওয়াদের গলা আঁকড়ে ধরলো দু’হাতে। তারপর ভাঙ্গা ভাঙ্গা গলায় বললো, ‘আপনি আমার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দেবেন? ছেড়ে চলে যাবেন?’

জাওয়াদ এক হাতে তিথির গাল ধরে বললো, ‘শসসস তিথি! এসব কে বলেছে তোমাকে?’

তিথি একবার নাক টানলো। তারপর বললো, ‘উফ, বলুন না! আমাকে ছেড়ে চলে যাবেন? অন্য মেয়ের কাছে?’

‘একদম না, তিথি। এসব উল্টাপাল্টা কথা ভাবছো কেন তুমি?’

‘আমার খুব ভয় হচ্ছে। বুকের ভেতর কু ডাকছে। আপনাকে অন্য কারো সাথে আমি সহ্য করতে পারবোনা। মরেই যাবো।’

‘একটা থাপ্পড় দেবো বললাম। কিসব পাগলামি কথাবার্তা বলছো তুমি?’ ধমকে উঠলো জাওয়াদ। তিথি কেঁদে দিলো আবার ফুঁপিয়ে। জাওয়াদ এক হাতে তিথির কোমর শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। আরেক হাত তিথির কানের নিজে চুলের মধ্যে রাখলো। তারপর তিথির চোখে চোখ রেখে হালকা কণ্ঠে ফিসফিস করে বললো,

‘আমার হৃদয় অনুনাদের একটাই কারণ-
তুমি, তুমি, তুমি।
আমার অশ্রু বিসর্জনের একটাই কারণ-
তুমি, তুমি, তুমি।
আমার অম্বর থমকে যাওয়ার একটাই কারণ-
তুমি, তুমি, তুমি।
ভীড়ের মাঝেও নিঃসঙ্গ লাগার একটাই কারণ-
তুমি, তুমি, তুমি।’

তারপর তিথির কপালে নিজের কপাল ঠেকালো জাওয়াদ। নাকে নাক ঘষে বললো, ‘আমি তোমাকে ভালোবাসি, তিথি। তুমি আমার নেশা, তুমি আমার মাদক। আমি হচ্ছি তুমি নামক মাদকাসক্ত। এই আসক্ততা কাটবেনা। রয়ে যাবে আমৃত্যু। আর আমি এই মাদকতাই চাই, আমার শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত।’

তিথি দু’হাতে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো জাওয়াদকে। জাওয়াদ তিথিকে কোলে নিয়ে দাঁড়ালো। তারপর হেঁটে দরজার কাছে যেতেই তিথি নড়াচড়া শুরু করলো। জাওয়াদ বিরক্তির স্বরে বললো, ‘কী?’

‘আপনি কোথায় যাচ্ছেন আমাকে এভাবে কোলে নিয়ে?’

‘বাইরে।’

‘এই না… কেউ দেখে ফেলবে। নামান, এক্ষুণি নামান।’ বলে নড়তে লাগলো তিথি।

‘একটা সারপ্রাইজ দেবো। দরজাটা খোলো। আমি তোমাকে কোলে নেয়া অবস্থায় খুলতে পারবোনা।’

‘আগে আমাকে নামান।’

‘শোনো, রাত দুটো বাজতে চললো। এখন আমাদেরকে দেখার জন্য কেউ জেগে থাকবেনা।’

তিথি আর কিছু না বলে দরজা খুললো। জাওয়াদ তিথিকে কোলে করে নিয়ে গেল তার রুমে। তারপর তিথিকে নামিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো। তিথি কৌতূহল নিয়ে জিজ্ঞেস করলো, ‘সারপ্রাইজ কই?’

জাওয়াদ হাসলো। তারপর বললো, ‘তুমি বারান্দায় যাও। আমি আসছি। আজকে চাঁদ খুব সুন্দর আলো দিচ্ছে।’

তিথি একগাল হেসে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো। জাওয়াদ আলমারি থেকে সেই ছবি দুটো বের করলো। যে ছবিতে সে রঙ তুলির সাথে নিজের ঢের আবেগ আর ভালোবাসা মিশিয়ে এঁকেছিলো তিথিকে। সেগুলো নিয়ে বারান্দায় গিয়ে সে তিথির পেছনে দাঁড়ালো। তিথি পেছন ফিরে জাওয়াদকে দেখে ভারি মিষ্টি করে হাসলো। হাসলো জাওয়াদও। তারপর দু’হাত পেছন থেকে সামনে এনে দু’হাতের ছবিগুলো মেলে ধরলো তিথির সামনে। হতভম্ব, বিস্ময়, অবাক তিথি যেন কথা বলতে ভুলে গেল। নিজের এতো নিখুঁত তৈলচিত্র দেখে বুকের ভেতর কাঁপন শুরু হলো। সে বারান্দার রেলিং পেছনথেকে দু’হাতে শক্ত করে ধরলো। তিথির এই অবাক করা চাহনি জাওয়াদের খুব ভালো লাগলো। সে ছবি দুটো হাতে নিয়ে হাঁটুগেড়ে বসলো। তারপর তিথির দিকে তাকালো। তিথি এক দৃষ্টিতে জাওয়াদের দিকে তাকিয়ে আছে। জাওয়াদ আস্তে আস্তে বলতে লাগলো,

‘জোৎস্না রাতে গ্রহণ লাগাও
হৃদপিণ্ডে কাঁপন জাগাও
তোমার অবাক চাহনি-
মারছে আমায় এখনই।
চিত্ত আমার ক্ষণে ক্ষণে-
থেকে থেকে বলছে তোমায়-
ভালোবাসি ভালোবাসি
রঙ তুলির প্রেয়সী।’

ঝিরঝির হাওয়ার দাপটে মৃদুভাবে উড়ছে তিথির কপালের উপরে পড়ে থাকা চুলগুলো। সেগুলো একহাতে সরালো তিথি। তারপর হাঁটুগেড়ে বসে ছবি দুটো নিজের হাতে নিলো। কয়েক মুহূর্ত ছবিদুটো দেখলো মন দিয়ে। তারপর একপাশে সরিয়ে রাখলো। তাকালো জাওয়াদের দিকে, হাসছে জাওয়াদ। কী মায়াময় সে হাসি! তিথি খানিক এগিয়ে গেল জাওয়াদের দিকে। তারপর দু’হাত আলতো করে রাখলো জাওয়াদের কাঁধের ওপর। জাওয়াদও এগিয়ে এসে তিথির কোমর জড়িয়ে ধরলো দু’হাতে। তখনও জাওয়াদ হাসছে। তিথি ফিসফিস করে বললো,

‘ওমন করে হেসো না,
মুগ্ধ প্রেমিক বেশে।
প্রমত্ততায় ডুবে গেলে-
ফাঁসবে তুমি শেষে।’

শব্দ করে হেসে দিলো জাওয়াদ। তারপর তিথির চোখের দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ফাঁসিয়ে দাও, আমি ফাঁসতে চাই। এমনভাবে ডুবিয়ে দাও যেনো আমার নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়। মাদক হয়ে আমাকে মাদকতায় ডুবিয়ে দাও। ওষ্ঠযুগলের শুষ্কতা কাটিয়ে দাও।’

তিথি চোখ বন্ধ করলো। শিহরণ ছুঁয়ে যাচ্ছে তার মন, শরীর জুড়ে। জাওয়াদ এগিয়ে এসে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো তিথিকে। তারপর… দুজনে মেতে ওঠে একে ওপরের উত্তপ্ত নিশ্বাসে। উন্মাদনায় কেটে যেতে থাকে অনেকগুলো মুহূর্ত।
_______

চলবে……
#ফারজানা_আহমেদ
অনেকেই শাড়ি পরতে খুব পছন্দ করেন। আর মনিপুরী শাড়ি তো সবারই পছন্দের। একটা পেজের লিংক দিচ্ছি, এই পেজে মনিপুরী শাড়ি পাওয়া যায়। সবাই একবার ঘুরে আসবেন। ১০০% ট্রাস্টেড অনলাইন শপ। আশা করি ভালো লাগবে❤
লিংক- https://www.facebook.com/adrijaaaa/

রঙ তুলির প্রেয়সী ২০.

0

রঙ তুলির প্রেয়সী
২০.

সময় বইতে থাকে তার গতিতে। চোখের পলকে কেটে গেল অনেকদিন। আদিয়া আর তিথি সিলেটের শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিলো। ঢাকায় ওরা দুজনের মধ্যে কেউই পরীক্ষা দেয়নি। কারণ তারা সিলেটেই থাকতে চায়। আল্লাহর রহমতে দুজনেই চান্স পেয়ে গেল। আদিয়া গণিত বিভাগে আর তিথি ইংরেজি বিভাগে। তিথির জীবন চলতে লাগলো সুন্দরভাবে। রেগুলার ক্লাস, বাসায় প্রাইভেট। যেদিন ক্লাস থাকেনা সেদিন আদিয়ার সাথে মিলে দুজনে একসাথে রান্না করে। ফ্রি টাইমে সবাই একসাথে বসে লুডু খেলে। আর রাত হলে যখন সবাই ঘুমিয়ে পড়ে, তখন প্রিয়তমর হাতে হাত রেখে রাত জাগা। বুকে মাথা রেখে চাঁদের আলোয় মুগ্ধ হওয়া। গুজুরগুজুর করে গল্প করা। বসে বসে ভাবছে তিথি, তার জীবনে এতো সুখ আসবে সে কি কোনোদিনও ভেবেছিলো? নাহ, ভাবেনি। কোনোদিন আশাও করেনি। বারান্দায় চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে চোখ বন্ধ করে এসব ভাবছিলো তিথি। তখনই কোথা থেকে আদিয়া এসে হইহই করে বললো, ‘তিথি, মা বলেছে রেডি হতে। শপিংএ যাবো। সময়তো হাতে নেই আর, একসপ্তাহ আছে।’

চোখ খুলে তাকালো তিথি। বলা ভালো, রিয়াদের বিয়ের সময় ঘনিয়ে এসেছে। আর এক সপ্তাহ পরেই ফাহির সাথে ওর বিয়ে। যেহেতু আত্মীয়র মধ্যেই বিয়ে হচ্ছে, সেহেতু দু’পক্ষেরই ইচ্ছে এক বাড়িতেই একসাথে মিলেমিশে বিয়েটা সম্পন্ন করার। তাই, দু’দিন ধরে খুব ব্যস্ত সময় যাচ্ছে। শপিং এখনও সারা হয়নি। তাই মুনতাহা আজই শপিংএ যাবেন ঠিক করেছেন। কিন্তু এই মুহূর্তে তিথির কোথাও যেতে ইচ্ছে হচ্ছেনা। সে ক্লান্ত কণ্ঠে বললো, ‘আদিয়া, আমার না ইচ্ছে করছেনা। আমি মামণিকে যেয়ে বলি আমি যাবোনা।’

আদিয়া চোখ রাঙিয়ে বললো, ‘ঢং পাইছো? ঢং? আমি একা যাবো? তাড়াতাড়ি রেডি হ তো। তাছাড়া গায়েহলুদে কী শাড়ি পরবি নিজে পছন্দ করে আনবি। তোকে কোন শাড়িতে বেশি সুন্দর লাগবে সেটা তুই না গেলে বোঝা যাবে না।’

‘শাড়ি’ শব্দটা শুনতেই তিথির চোখেমুখে একটা খুশির চিলিক দিলো। সে উঠে দাঁড়িয়ে বললো, ‘আচ্ছা যা। পাঁচ মিনিটে রেডি হয়ে আসছি।

আদিয়া খানিক অবাক হলো তিথির ভাব দেখে। সে কিছু না বলে বেরিয়ে গেল। তিথি কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকলো।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন

চোখ বন্ধ করে জানালার ধারে দাঁড়িয়ে আছে নুহা। দু’বছর আগে ঘটে যাওয়া ঘটনা নিয়ে ভাবছে সে। চোখ বন্ধ করতেই দৃশ্যটা ভেসে উঠলো স্বচ্ছ আয়নার মতো। সেদিন মাহি বাড়িতেই ছিলো। নুহা মাহির কাছে গিয়ে বললো, ‘মাহি, আজ আমার সাথে একটু বেরোবি?’

মাহি একটা রুমাল সেলাই করছিলো। সেদিকে তাকিয়ে থেকেই বললো, ‘কোথায়?’

‘অন্তুর বাসায়। আমার খুব ইমপোর্টেন্ট একটা কাজ আছে ওর সাথে। ওকেই আসতে বলতাম, কিন্তু ছেলেটার শরীর ভালো না।’

‘শরীর ভালো না? কী হয়েছে?’ চিন্তিত মুখে জিজ্ঞেস করলো মাহি।

‘ঐ একটু জ্বর আরকি। গেলে আমার কাজটাও হয়ে যাবে, আর ওরে দেখেও আসলাম।’

‘হুম আচ্ছা। আমিও যাই, দেখে আসি কী অবস্থা।’

হাসলো নুহা। মাহি রাজি হয়ে গেছে। প্লান মাফিক হলো সব। অন্তুকেও কষ্টে রাজি করিয়েছে এটা বলে যে, এমন করলে জাওয়াদ আর মাহির সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হবে। জাওয়াদ মাহিকে কোনোদিনও আপন করবেনা। এতে করে অন্তু সহজেই মাহিকে পাবে।

অন্তুর বেডরুমে বসে গল্প করছে ওরা তিনজন। বাসায় অন্তু একাই থাকে। ওর পরিবারের সবাই থাকে অন্য জায়গায়। সে নিজের কাজের জন্য এখানে আছে বছরখানেক হলো। কথা বলার এক পর্যায়ে নুহা বললো, ‘কীরে কিছু খাওয়াবিনা? এতো অভদ্র কেন বে তুই? বাসায় মেহমান আসলে কিছু খাওয়াতে হয়।’

অন্তু হেসে বললো, ‘আমি অসুস্থ মানুষ। কই তোরা আমার জন্য খাবার আনবি, তা না করে খুঁজছিস আমার কাছে!’

মাহি হেসে বললো, ‘আচ্ছা ঝগড়া ছাড়। আমিই যাচ্ছি কিছু করে আনি।’ বলে উঠতে যাবে আর তখনই নুহা তাড়াতাড়ি করে বললো, ‘ন-না না। আমি যাই। পানির তৃষ্ণা পেয়েছে। পানিও খাবো আর কিছু বানিয়ে নিয়ে আসবো। বোস তোরা।’ বলে আর অপেক্ষা না করে বেরিয়ে গেল নুহা। হাসলো মাহি।

‘তো প্রেম কেমন চলছে, মাহি?’ ঠাণ্ডা গলায় প্রশ্ন করলো অন্তু।

‘একেবারে রসে টইটুম্বুর।’ হেসে বললো মাহি।

‘তাই? জাওয়াদ লাকি। নাহলে এভাবে আমাকে ঘোল খাওয়ানোর সাধ্য কারোর নেই।’ বলে হাসলো অন্তু।

মাহির অস্বস্তি লাগলো। যখনই অন্তু এ ব্যাপারে কিছু বলে তখনই অস্বস্তি এসে ভর করে মাহির ওপর। সে বললো, ‘আচ্ছা বোস তুই। আমি দেখি নুহা একা একা কী করছে।’ বলে উঠে দাঁড়িয়ে পা বাড়ালো মাহি। খপ করে মাহির হাতটা ধরলো অন্তু। তারপর দাঁড়িয়ে বললো, ‘নুহা রাধুনি ভালো। যেতে হবেনা তোর।’

‘হাতটা ছাড়। দৈত্যের মতো ধরেছিস, আমার লাগছে।’

‘স্যরি স্যরি।’ বলে হেসে হাতের বাঁধন শিথিল করলো অন্তু, কিন্তু ছাড়লোনা। আবার বললো, ‘মাহি, চোখ বন্ধ কর। একটা জম্পেশ সারপ্রাইজ আছে তোর জন্য।’

‘তাই নাকি? কী সারপ্রাইজ?’ মাহির চোখে কৌতূহল।

‘সেটা চোখ বন্ধ করলেই তো ফিল করতে পারবি।’ শীতল কিন্তু কুচক্রী গলায় বললো অন্তু। বোকা মাহি বুঝলোনা, এই চোখ বন্ধ করলে যে তার জীবনের সবথেকে বড় দরজাটা বন্ধ হয়ে যাবে। সে চোখ বন্ধ করলো। তারপর… হুট করে নিজের হাতে হ্যাঁচকা টান অনুভব করলো। মুহূর্তেই ভয়ার্ত মাহি চোখ খুলে দেখলো সে অন্তুর বাহুডোরে বন্দি। তার দুহাত তার পেছনে মুচড়ে ধরেছে অন্তু। নড়তে পারছেনা। কিছু একটা বলার জন্য ঠোঁট নাড়াতে নিলো আর তখনই তার নিজের ঠোঁট দুটো বেদখল হয়ে গেল। ঘৃণায় মরে যেতে ইচ্ছে হচ্ছিলো তখন মাহির। চোখের সামনে জাওয়াদের মুখ ভাসছিলো। কিন্তু অসহায় ছিলো সে, অন্তুর অসুর শক্তির সাথে সে পেরে উঠেনি। অন্তু যখন মাহিকে ছেড়েছিলো, রাগে শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে থাপ্পড় মেরেছিলো মাহি অন্তুকে। তারপর বেরিয়ে গিয়েছিলো সেখান থেকে। সেই দৃশ্যের ছবি তখন লুকিয়ে নিজের ফোনে ক্যামেরাবন্দী করেছিলো নুহা। তারপর সেটা জাওয়াদকে পাঠিয়েছিলো।

জাওয়াদকে পাওয়ার জন্য এসব করেছে নুহা। এতোটা নিচে নেমেছে। আর এখন ঐ মেয়ে… ঐ মেয়ে হুট করে এসে জাওয়াদকে তার থেকে ছিনিয়ে নেবে? নুহা এটা কোনোদিনও হতে দেবে না। যে জাওয়াদকে পাওয়ার জন্য এতোকিছু করেছে, সে জাওয়াদকে সে অন্য কাউকে ছিনিয়ে নিতে দেবে না। চোখ খুলে তাকালো নুহা, চোখ ভিজে উঠেছে তার। চোখ মুছলো সে। তারপর বেরিয়ে গেল রুম থেকে।

নুহার মা মনিরা বেগম নিজের রুমে বসে কাপড় গুছাচ্ছিলেন। এমন সময় নুহাকে নিজের রুমে দেখে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কীরে? কোনো দরকার?’

‘হ্যাঁ। মা, আমি খালামণির বাসায় যাবো। রিয়াদের বিয়েতে আমি সবার আগে যেতে চাই।’

‘তো যাবি। কাল সকালেই যাবি। তোর বাবা আসুক, আমি কথা বলে কালকেই তোকে পাঠিয়ে দেবো।’

‘মা, আমি আজই যাবো।’

অবাক হলেন মনিরা। বললেন, ‘আজই? এখন তো আর একটু পরেই মাগরিবের আজান হয়ে যাবে। আর আজ তো মনেহয় ওরা এখনও শপিংএ।’

‘হোক। বাসায় টুনিতো থাকবে তাইনা। আমি আজই যাবো। তুমি বাবাকে বলবে। এখনই বলবে।’ জেদি গলায় বললো নুহা।

‘আ-আচ্ছা ঠিক আছে। যা রেডি হ। বলছি তোর বাবাকে।’ মনিরা বেগম আর কথা বাড়ালেন না। তার মেয়ে জেদি, তিনি জানেন। এই পরিমাণ জেদি যে এতোদিনে বিয়ের জন্যেও রাজি করাতে পারেন নি। দীর্ঘশ্বাস ফেললেন তিনি। একমাত্র মেয়েকে উনারা স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই চোখে হারান। নুহার পরে আরেকটা বাচ্চার জন্য অনেক চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু আল্লাহর হুকুম ছিলো না, তাই আর কোনো সন্তান পাননি উনারা। তাই নুহাই উনাদের চোখের মনি। ভাবতে ভাবতে স্বামী নাজিম হোসেন কে কল করলেন মনিরা।
__________

হুট করেই একটা দরকারি কাজ পড়ে যাওয়ায় রিয়াদ আর হেলাল আহমেদ সিলেটের বাইরে যাবেন। তাই মুনতাহাকে কল করে বললেন আব্দুলকে পাঠিয়ে দিতে। গাড়ি করেই যেতে চাইছেন। আব্দুল চলে যাওয়ার পরে জাওয়াদ অফিস থেকে সোজা শপিংমলে চলে এলো মুনতাহাদের নিতে। তখন রাত প্রায় ১০ টা বাজতে চললো। গাড়িতে উঠে বসতেই জাওয়াদের চোখে চোখ পড়ে তিথির। তিথি চোখ নামিয়ে নিলো। লজ্জা পাচ্ছে সে। তিথি একটা সবুজ জামদানী কিনেছে। রিয়াদের গায়েহলুদের দিন এটা পরবে। চুল খুলে ছড়িয়ে দেবে পিঠময়। মুখে কোনো প্রসাধনী ব্যবহার করবেনা। শুধু টকটকে লাল লিপস্টিকের ছোঁয়া দিবে ঠোঁটে। আচ্ছা, জাওয়াদ কি তখন ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকবে ওর দিকে? ভাবতেই লজ্জা পেলো আবার তিথি। মাথা ঘুরিয়ে জানালার বাইরে তাকালো। জাওয়াদ গাড়ি স্টার্ট দিয়েই মুনতাহাকে জিজ্ঞেস করলো, ‘মা, চলো আজ আর্কেডিয়াতে ডিনার করি।’

মুনতাহা কিছু বলার আগেই আদিয়া বললো, ‘মন্দ হবেনা। চলোনা বড় ভাইয়া, আমার পাস্তা খেতে ইচ্ছে হচ্ছে খুব।’

মুনতাহা হেসে তিথিকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুই কী খাবি?’

তিথি চমকে উঠে তাকালো। তারপর আমতাআমতা করে বললো, ‘সবাই যা খাবে তাই।’

জাওয়াদ হেসে উঠলো এটা শুনে। তিথি ভ্রু কুঁচকে তাকালো। জাওয়াদ লুকিং গ্লাসে তাকিয়ে বললো, ‘ বুঝলে মা, তিথি হচ্ছে সর্বভুক। সবাই যা খাবে সেও তাই খাবে। মানে আমরা তিনজন আলাদা আলাদা আইটেম খাবো, সেই তিনটা আইটেমই সে একা খাবে। ভাবতে পারো?’ বলে আবার হাসলো জাওয়াদ হো হো করে। তিথি গাল ফুলিয়ে জানালার দিকে মাথা ঘুরালো। মুনতাহা আর আদিয়া ভারি অবাক হলেন। জাওয়াদ ইদানীং খুব রসিকতা করে সবার সাথে। যেন সেই আগের জাওয়াদ। খুশিতে মুনতাহার চোখে পানি চলে আসতে চাইলো। আদিয়া হয়তো বুঝলো, তাই একহাতে মায়ের একটা হাত চেপে ধরলো সে। মুনতাহা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।

রেস্টুরেন্টে মুনতাহা আর আদিয়া পাশাপাশি বসলেন। আর তিথি বসতেই জাওয়াদ তিথির পাশে বসে গেল। খাবার আনার পর সবাই খাওয়া শুরু করলো আর এটা ওটা নিয়ে কথা বলতে লাগলো। তিথি চুপচাপ খাচ্ছিলো আর তাদের আলোচনা শুনছিলো মন দিয়ে। হঠাৎ অনুভব করলো তার ডান পায়ে কারো পায়ের ছোঁয়া। মুখে সবেমাত্র একটু খাবার নিয়েছিলো। সেগুলো আর গিলতে পারলোনা। সে ভালোই বুঝতে পারছে এগুলো জাওয়াদের কাজ। সে ডানদিকে মাথা ঘুরিয়ে দেখলো জাওয়াদ মন দিয়ে খাচ্ছে আর কথা বলছে মুনতাহার সাথে। যেন সে এসব কিছুই করছেনা। তিথি যখন জাওয়াদের দিকে তাকালো তখন অনুভব করলো পা টা তার পায়ের ঘণ্টা ছাড়িয়ে উপরে উঠছে। তিথির সারা শরীরে একটা কাঁপন দিলো। হাত নামিয়ে জাওয়াদের কোমরে একটা চিমটি বসালো তিথি। সাথেসাথে পা সরে গেল। হাফ ছেড়ে বাঁচলো তিথি। খাওয়া শেষে যখন বেরিয়ে যাচ্ছিলো ওরা তখন এক ফাঁকে জাওয়াদ তিথির কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বললো, ‘চিমটির যন্ত্রণা টা আদর দিয়েই মেটাতে হবে আজ তোমায়।’

তিথি কিছু বললোনা। একটা ভেংচি দিলো শুধু।
_________

বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থামালো জাওয়াদ। সবাই নেমে যাওয়ার পরে জাওয়াদ মুনতাহাকে বললো, ‘মা, অফিসে একটা ফাইল রেখে এসেছি। ওটা নিয়ে আসতে হবে। ইমপোর্টেন্ট। তোমরা যাও। আসছি আমি।’

বলে জাওয়াদ চলে গেল গাড়ি স্টার্ট দিয়ে। সবাই ভেতরে গেল। আদিয়া ক্লান্ত স্বরে বললো, ‘আমিতো এখন ধপাস করে বিছানায় শুবো আর সকালে উঠবো। আর কে পায় আমায়।’

ভেতরে গিয়েই মুনতাহা কণ্ঠে বিস্ময় ঝরিয়ে বললেন, ‘কীরে! কখন এলি তুই? বললিনা আসার আগে একবারও। খেয়েছিস তুই? হায় মাবুদ! আমাকে বলবিনা আসবি যে?’

আদিয়া গিয়ে নুহাকে জড়িয়ে ধরলো। নুহা বললো, ‘খেয়েছি। আর এসে চমকে দিতে চেয়েছি তাই বলিনি আগে।’ বলে একবার হাসলো নুহা। তারপর একটা ঠাণ্ডা দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো তিথির দিকে। তারপর একটা বাঁকা হাসি দিয়ে জিজ্ঞেস করলো, ‘ভালো আছো, তিথি?’

তিথি চমকে উঠলো। গলা শুকিয়ে গেল তার। এই প্রথমবার তার ভেতর কোনো একটা ভয় এসে জেঁকে বসলো। কিসের ভয় সেটা? তিথি ঢোঁক গিললো। আস্তে করে বললো, ‘ভালো।’
__________

চলবে……
#ফারজানা_আহমেদ

রঙ তুলির প্রেয়সী ১৯.

0

রঙ তুলির প্রেয়সী
১৯.

রাত বিরেতে পুকুরপাড়ে এসে বসে আছে টুনি। কিছুক্ষণ পরপর কিছু একটা বিড়বিড় করছে আর আপন মনেই মুখ ভেংচি দিচ্ছে। সিঁড়িতে এসে বসার আগে পুকুরপাড়ের লাইটটা নিভিয়ে দিয়ে এসেছিলো টুনি। চাঁদের আলোয় পুকুরের পানিগুলো চিকচিক করছে। আর সেদিকে তাকিয়ে আছে সে এক দৃষ্টিতে, তাই এখনও টের পায়নি তার পাশেই আব্দুল সেই কখন থেকে এসে বসে আছে। কিছুক্ষণ পর টুনি একটু নড়েচড়ে বসতে গিয়ে ডান পাশে তাকিয়ে ভয়ে আঁতকে উঠলো। পরক্ষণেই আবার মুখ ভেংচি দিয়ে সামনে তাকালো। আব্দুল বললো, ‘রাইত বিরাইতে এনে বইসা আছোস ক্যান?’

‘ভালা করছি। যাও এন থিকা।’, মুখ ঝামটি মেরে বললো টুনি। আব্দুল হেসে দিলো। টুনিকে ডাকলো দু’একবার নাম ধরে, কিন্তু টুনি পাত্তা দিলোনা। আব্দুল তখন হুট করেই সেই গানটা গাইতে লাগলো, যেই গান একটু আগে টুনি গেয়েছিলো খেলায়। গান শেষ হওয়ার আগেই খিলখিল করে হেসে উঠলো টুনি। হাসতে হাসতে বললো, ‘আর গাইওনা, কানের আঠারোটা বাইজা যাইবো।’

আব্দুল মাথা চুলকাতে চুলকাতে বললো, ‘হাসোস ক্যান ছ্যামড়ি? আমি গাড়ি চালাই। গানের ইশকুল চালাই নাকি?’

‘তাইলে আমিও তো ঘরের কাম করি। হারমুনি বাজাই নাকি যে রুনা লায়লার মতো গান গামু?’

টুনির বলার ধরনে আব্দুল হেসে দিলো। তারপরে বললো, ‘এনে আইসা বসলি যে, কেউ যদি খুঁজে তোরে তাইলে কী করবি?’

টুনি হাত নেড়ে বললো, ‘না খুঁজবোনা। আমি খালাম্মারে কইয়া আসছি যে ওজু করতে যামু। মটর নষ্ট না? পানিতো নাই হেগো উশরুমে।’
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
‘উশরুম কী? নয়া কিছু আছে নাকি এনে এই নামে?’, জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো আব্দুল।

‘আরে! এরলিগাই কই কিছু ইংরিজি বই পড়ো। উশরুম গোসলখানারে কয় ইংরিজিতে।’, বিজ্ঞের মতো বললো টুনি।

‘মুক্কুসুক্কু মানুষ আমি। তুই ইকটু শিখাই দিলেই পারিস।’

‘আইচ্ছা এহন থিকা শিখাই দিমু।’

‘যা এলা ঘরে যা। এনে রাইতে বিরাতে বই থাহিসনা। যা।’, তাগদা দিলো আব্দুল।

‘আইচ্ছা। ইট্টু পরে খাওন রেডি হইবো। ঘরেই থাইকো।’, বলে টুনি একটা হাসি দিয়ে ওজু করে চলে গেল।
___________

তিথির মাথা কিছুক্ষণ নিজের বুকে চেপে ধরে নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে রইলো জাওয়াদ। তারপর দীর্ঘ একটা নিশ্বাস নিয়ে বলতে লাগলো, ‘আমি, রিয়াদ, মাহি, অন্তু, নুহা… আমরা সবাই একসাথে লেখাপড়া করেছি। সমবয়সী আমরা। গ্রেজুয়েশন কমপ্লিট করার পরেও আমাদের বন্ধুত্ব আগের মতোই ছিলো। আড্ডা, হ্যাংআউট সব চলতো আগের মতোই। অন্তু মাহিকে পছন্দ করতো। কিন্তু আমার কারণে ভয় পেতো সে। তখন আমি আমার চারুকলার কিছু বন্ধুদের সাথে একটা উদ্দেশ্যে আউট ওব কান্ট্রি ছিলাম। একদিন হুট করে আমার ফোনে নুহার ম্যাসেজ আসে…’

এইটুকু বলে থামলো জাওয়াদ। গলাটা খানিক কেঁপে উঠলো শেষের কথাটা বলতে গিয়ে। ঢোঁক গিললো সে। তার বুক কাঁপছে মৃদুভাবে। হৃদপিণ্ডের কম্পন শুনতে পাচ্ছে তিথি। বুকটা কেমন হুহু করে উঠলো তিথির। সে আরো নিবিড়ভাবে মাথা চেপে ধরলো জাওয়াদের বুকে। আর তারপর… এতোক্ষণ যে কাজটা করতে সংকোচ বোধ করছিলো সেটা করে ফেললো। দু’হাত জাওয়াদের পেছনে নিয়ে পিঠের ওপর রাখলো। খুব সন্তর্পণে। জাওয়াদ হাসলো নিঃশব্দে। তারপর আবার বলতে লাগলো, ‘সেই ম্যাসেজে একটা ছবি ছিলো। সেই ছবিতে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিলো, অন্তু মাহিকে জড়িয়ে ধরে ঠোঁটে চুমু খাচ্ছে। আর জায়গাটা… জায়গাটা ছিলো অন্তুর বেডরুম।’

আবারও থামলো জাওয়াদ। এবার তিথি মাথা তুলে তাকালো ওর দিকে। চাঁদের আলোয় স্পষ্ট দেখতে পেলো তিথি, জাওয়াদের চোখে মুক্তর মতো চিকচিক করছে জল। ইশ! কতো কষ্ট হয়েছিলো তখন জাওয়াদের? আর এখনই বা কতো কষ্ট হচ্ছে? কান্না পেয়ে গেলো তিথির। সে নিজের চোখের পানি লুকানোর জন্য আবার জাওয়াদের বুকে মাথা রাখলো। জাওয়াদ নিশ্বাস নিলো লম্বা করে। তারপর বললো, ‘হুটহাট রেগে যাই আমি। হিতাহিতজ্ঞানশূন্য হয়ে যায়। সেদিন কল করে মাহিকে অনেক খারাপ খারাপ কথা বলেছি। স্ল্যাং ইউজ করেছি। কিন্তু মাহি আমাকে কিচ্ছু বলেনি, একটা টু শব্দও করেনি। তাতে আমার রাগ আরো বেড়ে যায়। আমি আমার মোবাইলটা ভেঙ্গে ফেলি। ব্যস, আর মাহির সাথে কথা বলাও বন্ধ করে দেই। বন্ধুর ফোন থেকে শুধু পরিবারের সাথে কথা বলতাম। কিন্তু ওদিকে বেদনায় কাতরাচ্ছিলো আমার মাহি। আমি বুঝতে পারিনি সে বেদনা। নিজের রাগ আর জেদ নিয়ে বসে ছিলাম।’

এটুকু বলে নিজের ঠোঁট কামড়ে ধরলো জাওয়াদ। বুকটা ব্যথায় চিনচিন করছে। ঢোঁক গিলে আবার বললো, ‘অথচ, আমার মাহি যে এমন করতেই পারেনা কোনোদিন সেটা একবারের জন্যও আমার মাথায় আসেনি। আমি ক্রোধে অন্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। দেশে আসার পরে জানতে পারলাম… জোর করে ওসব করেছে অন্তু মাহির সাথে। নুহাও জড়িত ছিলো। যে করেই হোক আমাদের আলাদা করতে চেয়েছে ওরা। কারণ? নুহা আমাকে পছন্দ করতো।’

তিথি মাথা তুলে তাকালো। জাওয়াদ হাসছে! হালকা শব্দ করে হাসছে। তিথির চোখের দিকে তাকিয়ে জাওয়াদ বললো, ‘জানো? অন্তুকে বেধম পিটিয়েছিলো রিয়াদ। আমাকে বলেনি, কিন্তু আমি জানি। তারপর থেকে আমি হয়ে গেলাম মুডি জাওয়াদ। কারো সাথে মিশিনা খুব একটা। সবসময় একা একা থাকতে ভালো লাগতো। মাহি যাওয়ার পরে আর কারো প্রতি আমি মনোযোগ দিতে পারি নি।’

থমলো জাওয়াদ। একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তিথি জাওয়াদের দিকে। জাওয়াদ দু’হাতে তিথির মুখটা ধরে উঁচু করলো। তারপর আচমকা ঠোঁট ছোঁয়ায় তিথির কপালে। আবেশে চোখ বন্ধ করে ফেললো তিথি। দু’গালে লাল রঙের আভা ছড়িয়ে পড়লো। হৃদপিণ্ডের চারপাশে ভালোবাসার পাখিরা কিচিরমিচির করতে লাগলো। নিশ্বাস পড়ছে দ্রুত। জাওয়াদ বললো প্রায় ফিসফিস করে, ‘তারপর একদিন এক এলোকেশীকে দেখলাম বৃষ্টি বিলাস করতে। তার মাঝে আমি আমার অস্তিত্ব খুঁজে পেলাম। সেদিনই হুট করে অনুভব করলাম, আরো একবারের জন্য আমার হৃদয় বেসামাল হয়ে পড়েছে। হৃদয় ধুকপুক করে জানান দিচ্ছিলো, প্রাণনাশী ভালোবাসার জানান দিচ্ছিলো। তুমি আমাকে ভালোবাসার বানে মেরেই ফেলেছো তিথি… আরো একবার…’

তিথি চোখ খুললো। বুকের ভেতর ঝড় উঠেছে যেন। কান থেকে ধোঁয়া বেরোচ্ছে। এসব সত্যি? জাওয়াদ এসব কী বললো? ভালোবাসা! টুপ করে তিথির গাল বেয়ে এক ফোটা জল গড়ালো। তিথি কিছু বলতে চাইছে, কিন্তু আশ্চর্য! গলায় সব কথা আটকে আছে। তিথি নিজেকে ছাড়ানোর জন্য জাওয়াদের হাত দুটো একটু ঠেলে দিতেই জাওয়াদ তিথির কপালের সাথে নিজের কপাল লাগালো। তিথির নিশ্বাস বন্ধ হয়ে গেল। ঠোঁট কামড়ে ধরেছে সে নিজের। জাওয়াদ এবার আস্তে আস্তে বললো,

‘আমার শুধু “তুমি” চাই।
”তোমার” চোখের দিকে তাকিয়ে-
বিভোর হয়ে,
”তোমাকে” নিয়ে শত শত কবিতা লিখে ফেলতে চাই।
হ্যাঁ, আমি ”তোমাকেই” চাই।’

তিথি কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে চোখ বন্ধ অবস্থায়ই বললো, ‘আমি, আ-আমি এক্ষুণি অজ্ঞান হয়ে যাবো… আমার সবকিছু স্বপ্ন লাগছে!’

তিথির কোমর ধরে তিথিকে উঁচু করে নিজের মুখোমুখি করলো জাওয়াদ। তিথি চোখ খুলে তাকালো। চাঁদের আলোয় ঐ চোখে তাকিয়ে জাওয়াদ অনুভব করলো, এই চোখে তাকিয়েই সে শান্তিতে জীবন কাটিয়ে দিতে পারবে। সে হাসলো। তারপর বললো, ‘আমার রঙ তুলির প্রেয়সী হবে তিথি? কথা দিচ্ছি, হারিয়ে যেতে দেবো না। হৃদয়ে তো রাণী হয়ে বসেই আছো, চলো তোমাকে আমার জীবনের রাণী বানাবো।’

কান্নারা অনেক যুদ্ধ করছে তিথির সাথে, বেরিয়ে আসবে বলে। কিন্তু তিথি নাছোড়বান্দা, চোখ দিয়ে দু’ফোটা জল গড়িয়ে পড়ার পরেও কান্নাদের আসতে বাধা দিচ্ছে। ঢোঁক গিলে কাঁদো কাঁদো গলায় সে বললো, ‘এভাবে কথা বলে আমাকে কাঁদানোর মানে কী, হ্যাঁ? আমার যে এখন মাথা ঘুরছে… মনে হচ্ছে এক্ষুণি অজ্ঞান হয়ে যাবো। আচ্ছা, অজ্ঞান হলে কি আপনি আমাকে কোলে তুলে নেবেন?’

জাওয়াদ হেসে দিলো। তিথিকে আবার বুকে জড়িয়ে ধরে অস্ফুট স্বরে বলে উঠলো, ‘পাগলি!’
____________

চলবে…….
#ফারজানা_আহমেদ
সবাই একটু এই গ্রুপে গিয়ে এই পোস্টে রিয়েক্ট করে আমার ভাইকে জিতিয়ে দিবেন। লিংক- https://m.facebook.com/groups/282291599350918?view=permalink&id=591227661790642

রঙ তুলির প্রেয়সী ১৮.

0

রঙ তুলির প্রেয়সী
১৮.

ঘরে আসতেই মুনতাহার মুখোমুখি হয়ে গেল ওরা তিনজন। মুনতাহা আর্তনাদ করে উঠলেন, ‘আরে তিথি, এ কী অবস্থা! এই মুখ এমন লাল কেন? চোখও লাল। ও আল্লাহ! কী হইছে রে মা?’

তিথি একটু হাসার চেষ্টা করে বললো, ‘আসলে পুকুরে গোসল করিনা তো কোনোদিন, ডুব দিতে গিয়ে একটু নাকেমুখে পানি ঢুকেছে। আমি ঠিক আছি মামণি।’

‘সাবধানের মার নেই। তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে জ্বর আসতে পারে। একটা নাপা খেয়ে নিও। এই ফাহি, আমার ঘরের লাকড়ির আলমারির ড্রয়ারে পাবি ঔষধের বক্সটা।’ চিন্তিত মুখে বললেন মেহেরুন।

‘আচ্ছা। মা, দাদু কোথায়?’ বললো ফাহি।

‘পাশের বাড়ি।’

‘ফুলতরি খালাদের?’

‘হ্যাঁ।’

‘আবার ঝগড়া লাগালো নাকি ঘরের বউ!’ জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো ফাহি। চাঁনতারা বেগমকে মুরব্বি হিসেবে গ্রামের মহিলারা অনেক সম্মান করে। তাই মহিলারা নিজেদের ঘরে কোনো ঝামেলা হলেই উনাকে এসে হাতে পায়ে ধরে নিয়ে যায় সমাধানের জন্য।

আদিয়া টুনিকে ডেকে বলে দিলো তিথির কাপড়গুলো ধুয়ে আনতে। তিথি আর আদিয়া সেখান থেকে প্রস্থান করলো। ফাহি এখনও দাঁড়িয়ে রইলো। একটু ইতস্তত করে সে মুনতাহার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো, ‘উম, ফুপি… সাহিল আসেনি এখনও?’

মুনতাহা মুচকি হাসলেন। বললেন, ‘আমার ছেলেটা অনেকদিন পরে ক্রিকেট খেলছে তো। মনে হয়না সন্ধ্যার আগে ওকে পাওয়া যাবে।’

ফাহি কথাটার কোনো ফিরতি জবাব না দিয়ে এক প্রকার দৌড়ে বেরিয়ে গেল সেখান থেকে। আল্লাহ! মুনতাহা বুঝে গেছেন সে রিয়াদকে খুঁজেছে। ইশ, কী লজ্জা! ফাহি বেরিয়ে যেতেই মুনতাহা ও মেহেরুন মুখ টিপে হাসলেন।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন

তিথিকে দেখে চমকে উঠলো নুহা। ঢোঁক গিললো। ভয়ে কথা বলতে পারছেনা সে। বিছানায় বসে হা হয়ে তাকিয়ে আছে তিথির দিকে। তিথি… কীভাবে উঠে এলো? বলে দিলো নাকি সব! ঢোঁক গিলে আদিয়ার দিকে তাকালো নুহা। আদিয়া স্বাভাবিক ভাবেই বিছানায় বসে মোবাইল দেখতে লাগলো। নুহা খানিক অবাক হলো। কিছু বলছেনা কেন তাকে? এমন সময় তিথি এসে নুহার সামনে দাঁড়ালো। বললো, ‘নুহাপু, একটু জায়গা দিবে? কিছুক্ষণ ঘুমাতাম। আসলে অনেক পানি নাকেমুখে গেছে তো, জ্বর আসতে পারে বলে এক্ষুনি নাপা খেলাম।’

‘হ-হ্যাঁ।’ বলে উঠে দাঁড়ালো নুহা। তিথি চুপচাপ শুয়ে পড়লো। নুহা যারপরনাই অবাক। কপাল কুঁচকে তাকালো তিথির দিকে। চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে তিথি। নুহা আদিয়ার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘আদিয়া, আমার না মাথাটা একটু ধরেছে। ছোট মামার ঘর থেকে একটু ভিকস টা এনে দিবি?’

তিথি চোখ বন্ধ করেই হাসলো। আদিয়াকে সরিয়ে দিচ্ছে নুহা। অবশ্যই এখন তিথির সাথে কথা বলবে। ঠিক তাই হলো আদিয়া যাওয়ার পর। নুহা বিছানায় বসেই তিথির দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলো, ‘এবার বলো তো। মতলব কী তোমার?’

‘কিসের মতলব?’ চোখ বন্ধ অবস্থায়ই বললো তিথি।

‘একদম ভং করো না তিথি। আমার সাথে ভং করে কেউ টেকে না।’

তিথির মেজাজ ক্ষণে ক্ষণে বিগড়ে যাচ্ছে। কিন্তু কষ্ট করে সামলিয়ে নিচ্ছে। চায়না এখন এখানে কোনো ঝামেলা হোক ওর জন্য। তিথি চোখ খুললো। শুয়া থেকে উঠে বসতে বসতে শীতল গলায় বললো, ‘প্রশ্নটা তো আমার ভাগের। তুমি করলে যে?’

‘মানে?’ কপাল কুঁচকালো নুহা।

‘মানে টানে বুঝতে হবেনা। শুনে রাখো, আমাকে যেমন শান্ত দেখছো আমি মোটেও এতো ভালো মেয়ে নই। ভবিষ্যতে আমার সাথে লাগার পরিণতি একটু বেশিই খারাপ হবে।’ একদম স্বাভাবিক কিন্তু তেজী গলায় বললো তিথি।

রাগ এবার চেহারায় ফুটে উঠলো নুহার। নিঃশ্বাস দ্রুত চলতে লাগলো তার। সে ফোঁস ফোঁস করে কিছু একটা বলতে গিয়েই দেখলো আদিয়া চলে এসেছে। তাই চুপ হয়ে গেল কিন্তু নিজেকে সামলাতে পারছেনা। আদিয়া অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো, ‘কী হয়েছে নুহাপু?’ বলে তিথির দিকে তাকিয়ে আবার বললো, ‘তুই উঠে বসলি কেন?’

‘এতোক্ষণ লাগে আনতে? আমি মরে যাবো ব্যথায়? যত্তসব!’ গজগজ করতে করতে বললো নুহা।

‘যাহ বাবা! খুঁজে আনবো তো নাকি?’ বললো আদিয়া।

নুহা আর কিছু না বলে ভিকস টা নিয়ে বেরিয়ে গেল। আদিয়া আনমনেই বলে উঠলো, ‘এর আবার কী হলো?’

তিথি আবার শুয়ে পড়লো। তারপর নিজের হাসিকে আটকে রাখার কঠিন চেষ্টা চালাতে চালাতে বললো, ‘বিচুটি পাতার ঘষা লেগেছে।’

‘কী? কী বললি? বিচুটি পাতা আসলো কোত্থেকে?’ কপাল কুঁচকালো আদিয়া।

‘উফ, চুপ করে বসতো। আমি ঘুমাবো।’ বলে পাশ ফিরে চোখ বন্ধ করলো তিথি। প্রচণ্ড হাসি পাচ্ছে তার।
_____________

জাওয়াদ দের নানাবাড়ির ঠিক ডানদিকে কিছু ঝোপঝাড় পেরিয়েই একটা টিনের ঘর আছে। যেখানে মাত্র একটাই রুম, অনেক বড়। সব কাজিনরা আসলে সেখানে গিয়ে সবাই মিলে আড্ডা বসায়। আজও তাই হয়েছে। জাওয়াদ, রিয়াদ, ফাহি, আদিয়া, নুহা, তিথি। সবাই মিলে ফ্লোরে শীতল পাটি বিছিয়ে আড্ডা জমিয়েছে কেবল। সাথে আছে গরম গরম আলুর চপ আর পিঁয়াজু। টুনি আর ড্রাইভার আবদুল কেও রাখা হয়েছে। একটু পরে লাফিয়ে লাফিয়ে সাহিলও এসেছে। সাহিলকে দেখেই রিয়াদ বললো, ‘এই, পড়া রেখে এখানে কী?’

সাহিল দাঁত কেলিয়ে হেসে বললো, ‘টিচারকে আসতে মানা করে দিয়েছি ফোন করে। বলেছি বাসায় মেহমান, বসার জায়গা নাই। হিহি!’ আবারও দাঁত কেলায় সাহিল।

‘ব্রিলিয়ান্ট, খালি শয়তানি বুদ্ধিতে।’ হেসে বললো জাওয়াদ। তারপর তাকালো ঠিক সামনাসামনি বসা তিথির দিকে। হেসে হেসে কথা বলছে ফাহি আর আদিয়ার সাথে। এতো গল্প করতে পারে মেয়েটা! হাসলো জাওয়াদ। জাওয়াদের হাসি দেখে শরীরে আগুন ধরে যাচ্ছে নুহার। জাওয়াদ হাসছে! তাও ঐ মেয়েটার দিকে তাকিয়ে। নুহা একবার ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো তিথির দিকে। কোনোরকমে নিজের রাগ সামলিয়ে হাসার চেষ্টা করতে লাগলো। কিন্তু চোখেমুখে রাগ তার স্পষ্ট।

‘আচ্ছা শোনো শোনো, এবার খেলা শুরু হবে।’ দু’হাত উঁচু করে সবাইকে থামিয়ে বললো আদিয়া।

‘কিসের খেলা?’ কপাল কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো জাওয়াদ।

ফাহি পাটির ওপর রাখা বাটি দেখিয়ে বললো, ‘এই বাটিতে অনেকগুলো কাগজ আছে। এখানে কিছু টাস্ক লেখা আছে, যার হাতে যেটা আসবে সেই টাস্ক তাকে পুরো করতে হবে।’

‘ড্যাম, তোদের এসব ফিল্মি খেলাধুলা। খেল তোরা আমি গেলাম।’ বলে উঠে যেতে নিলো জাওয়াদ। জাওয়াদ যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়াতেই নুহা বললো, ‘খেল না, মজা পাবি।’

কথাটা যেন কানেই গেলোনা জাওয়াদের। নুহার মুখটা ছোট হয়ে গেল। জাওয়াদ দরজার কাছে যেতেই তিথির গলা শুনলো। তিথি বলছে, ‘ছাড়ো না, সবাই আবার সবকিছু পারে না।’

জাওয়াদ থমকে গেল। ফিরে এসে আবার জায়গায় বসলো। তারপর তিথির দিকে তাকিয়ে অদ্ভুত ভাবে হেসে বললো, ‘আজ দেখাবো, কী কী পারি।’

এই হাসিটা দেখে একটা ধাক্কা খেলো তিথি। অস্পষ্ট ভাবে বিড়বিড় করলো, ‘এখনথেকে আর তোমাকে মোগ্যাম্বো বলবোনা। হ্যান্ডু বলবো। শোনো মিস্টার হ্যান্ডু, এতো হ্যান্ডসাম লাগা পাপ!’

নুহার মুখটা অপমানে থমথমে হয়ে গেল। জাওয়াদ তার কথাকে পাত্তা দিলো না। অথচ এই মেয়েটার একটা কথায় এসে বসে গেল! ভেতরের বন্য রূপটা যেন এক্ষুণি বেরিয়ে আসতে চাইলো। সে তাকিয়ে থাকলো জাওয়াদের দিকে।

‘অকে অকে এবার শুরু করো তো!’ বললো রিয়াদ।

‘আচ্ছা তাহলে সবার আগে কে কাগজ তুলবে?’ বলে এক এক করে সবার দিকে তাকালো আদিয়া।

‘আমি আমি, আমি তুলবো আমি।’ লাফিয়ে উঠে বললো সাহিল। তারপর একটা কাগজ তুলে আনলো। সেটাতে ছোট করে ‘নাচ’ লেখা। সাহিল ঠোঁট উল্টে বললো, ‘আমিতো এখনও ঐ নাচটা শিখিনি ভালোমতো।’

‘কোন নাচ?’ জিজ্ঞেস করলো ফাহি।

‘ঐযে, মেরে ব্রাদার কি দুলহান। তোমার আর রিয়াদ ভাইয়ার গায়ে হলুদে আমি এটাতে নাঁচবো আমার বন্ধুদের নিয়ে।’ হেসে হেসে বললো সাহিল।

লজ্জায় মাথা নিচু করে একেবারে গলার সাথে থুতনি লাগিয়ে ফেললো ফাহি। এমন কিছু সাহিল বলবে এটা সে আশাও করেনি। রিয়াদ হাসছে, হেসে দেখছে ফাহির লজ্জারাঙা মুখ। তার দারুণ লাগছে। নুহা বললো, ‘তুই এটাতে নাচবি কেন রে? তোর ভাইয়ের বিয়ে নাকি? বোনের বিয়ে।’

‘কেন ভাইয়ের বিয়ে হবেনা কেন? রিয়াদ ভাইয়া আমার ভাই না? তাছাড়া মিষ্টিপু আমাকে খালি বকাবকি করে। রিয়াদ ভাইয়াও লাগালাগি করে, তবে মিষ্টিপু থেকে কম। তাই আমি রিয়াদ ভাইয়ার পক্ষে।’ বিজ্ঞের মতো বললো সাহিল। এই কথা শুনে সবাই হেসে ফেললো। ফাহি লজ্জা পেয়ে লাল হয়ে গেল। এভাবে বিয়ের কথা উঠলে লজ্জায় তার মরে যেতে ইচ্ছে করে। জাওয়াদ বললো, ‘আমি আসছি। দেখিয়ে দিচ্ছি।’

বলে সাহিলের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। আদিয়া তার মোবাইলে গানটা ছেড়ে দিলো। জাওয়াদ খুব সুন্দর ভাবে অঙ্গভঙ্গি করে নাচলো। দু’একটা স্টেপ দেখালো সাহিলকে। জাওয়াদ যখন নাচছিলো তিথি তখন হা করে দেখছিলো। তার বুক কাঁপছিল অজানা কারণে। কাউকে এই একটু নাচতে দেখলেও এভাবে ভালো লাগে? তিথির এখন আফসোস হলো, ইশ! যদি একবার ডুয়েট ডান্স করার সুযোগ পেতো জাওয়াদের সাথে!

একে একে সবার টাস্ক সবাই পুরো করলো। টুনির টাস্ক ছিলো গান গাওয়ার। ভালো না গাইলেও খুব একটা খারাপ গায় নি সে। তবুও আব্দুল তাকে খ্যাপানোর জন্য বলেছিলো, ‘এতো বেসুরাই যহন গাস তাইলে গাইতে নিলি ক্যা? ইশরে বাবা, আমার কানে জ্বলতাছে।’

কথাটা শুনতেই টুনির রাগ হলো। সে আদিয়ার কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে চলে গেল সেখান থেকে। আব্দুল একটু কাচুমাচু করলো। জাওয়াদকে সে ভয় পায়। তাই রিয়াদকেই আস্তে আস্তে বললো, ‘ভাইজান, ইকটু যাইগা আমি? আপনেরা খেলেন।’

রিয়াদ হেসে বললো, ‘খুব খেয়ালে কিন্তু, আব্দুল। কেউ যাতে না বোঝে।’

আব্দুল সব দাঁত বের করে হেসে বললো, ‘আরে না না, এইগুলানে বহুত ইক্সপার্ট আছি।’

হাসলো রিয়াদ। আব্দুল চলে গেল। নুহা বললো, ‘এবার তাহলে জাওয়াদের পালা।’

জাওয়াদ বিরক্তি চোখে তাকালো নুহার দিকে। নির্লজ্জ মেয়েটাকে সহ্যই হচ্ছেনা তার। সে ছোট করে বললো, ‘রিয়াদ, যা কাগজ তোল।’

নুহা ঢোঁক গিয়ে তাকিয়ে থাকলো। এতোবার, এতোবার ক্ষমা চাওয়া পরেও কেন এই অবহেলা? কেন এই ব্যবহার?

কাগজে লেখা আসলো, একটা সিনেমার নাম একজনকে অভিনয় করে বুঝাতে হবে। এবার জাওয়াদ হইহই করে উঠলো। বললো, ‘আমি আমি, আমি নাম দেবো।’

রিয়াদ বললো, ‘ না তুই না। এইখানে লেখা নাই কিন্তু কেউ দিবে। আমি নিজেই যেকোনো একটা দেখিয়ে দেবো।’

‘না না, এটাই নিয়ম। আমি নাম দেবো, আর বলে দেবো কাকে বুঝাতে হবে।’

অনেক তর্কাতর্কি করার পর হার মেনে নিলো রিয়াদ। বললো, ‘অকে ফাইন। বল।’

জাওয়াদ কানেকানে সিনেমার নাম বলতেই হেসে দিলো রিয়াদ। জাওয়াদও হাসলো। নিজের জায়গায় গিয়ে বসতে বসতে জাওয়াদ বললো, ‘ফাহি, তোমাকে বুঝাবে। তুমি বুঝে নামটা বলবে।’

‘আচ্ছা।’ বলে মন দিয়ে তাকালো রিয়াদের দিকে ফাহি। রিয়াদ আর জাওয়াদ দুজনের মুখেই দুষ্টু হাসি। তিথি জাওয়াদের দিকে তাকিয়ে ব্যাপারটা খেয়াল করলো। কিন্তু কিছু বুঝলোনা। বুঝলো তখন, যখন দেখলো রিয়াদ অভিনয় করে ফাহিকে দেখাচ্ছে। দুই ভাইয়ের শয়তানি হাসির রহস্য এবার পরিষ্কার হলো। হেসে দিলো তিথিও। ফাহি ক্রমশই লজ্জায় লাল হচ্ছে। এই নামটা সে বলবে কী করে? ঢোঁক গিলছে বারবার। নিঃশ্বাস নিচ্ছে দ্রুত। এক পর্যায়ে হার মেনে নিলো। বললো, ‘আ-আমি… পারছিনা।’

এতোক্ষণ রিয়াদ খুব উপভোগ করেছে ফাহির লজ্জা পাওয়া। হার মেনে নেয়া পরেও সে ফাহির দিকে তাকিয়ে বললো, ‘এতো সহজ এটা পারলেনা! মুভির নাম… উফ ফাহি, আই লাভ ইউ!’

চমকে উঠলো ফাহি। অস্থির চোখে তাকালো রিয়াদের দিকে। শেষে বলা ‘আই লাভ ইউ’ কথাটায় অদ্ভুত কিছু একটা ছিলো। রিয়াদের কণ্ঠ ভীষণ শীতল ছিলো ওটা বলার সময়। বুকে একটা নীরব তাণ্ডব বয়ে যাচ্ছে যেন ফাহির। সবাই মিটিমিটি হাসছে দেখে আরো লজ্জা পেলো ফাহি। রিয়াদও ফাহির দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে জায়গায় এসে বসলো।

তিথির যেন কেমন কেমন লাগলো ঐ মুহূর্তে। সে এক ঝলক তাকালো জাওয়াদের দিকে। দেখলো জাওয়াদ তার দিকেই তাকিয়ে আছে। চোখ ফিরিয়ে নিলো তিথি। ছেলেটা যখন তখন এভাবে তাকায় কেন?

‘এইবার বড় ভাইয়া। জোশ কিছু একটা হবে এবার।’ উৎসাহ নিয়ে বললো আদিয়া।

জাওয়াদ কাগজ তুলতেই সেখানে লেখা পেলো, রোম্যান্টিক একটা গানে ডুয়েট ডান্স দিতে হবে। এটা শুনে নুহা যেন আশার আলো দেখলো। নড়েচড়ে বসলো সে। তার বুকে ক্ষীণ আশা, জাওয়াদ অবশ্যই তার সাথে ডুয়েট নাচবে? কিন্তু তাকে অবাক করে দিয়ে জাওয়াদ তিথির দিকে তাকিয়ে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে উঠলো, ‘বলছিলে কিছু পারিনা। এসো এবার, দেখি কে কী পারে।’

তিথি যেন অবাকের অষ্টম পর্যায়ে। এতো তাড়াতাড়ি তার উইশ পুরো হয়ে যাবে সে ভাবতেই পারেনি। নিচের দিকে তাকিয়ে হাসলো। তারপর হাত বাড়িয়ে জাওয়াদের বাড়িয়ে দেয়া হাতটা ধরলো। সাথেসাথে যেন একটা অদ্ভুত শিহরণ খেলে গেলো তার সর্বাঙ্গে। ঘোর লাগা চোখে উঠে দাঁড়ালো তিথি। তার শরীর মৃদু কাঁপছে। দুরুদুরু করছে বুক। জাওয়াদ এক টানে তাকে নিজের সাথে এনে লাগালো। তিথি যেন অসাড় হয়ে পড়লো। ইয়া আল্লাহ! এই উইশ কেন করতে গেল? জাওয়াদ মাথা ঘুরিয়ে রিয়াদের দিকে তাকিয়ে একবার হাসলো। তারপর সবার উদ্দেশ্যে বললো, ‘জনগণস, ইটস অ্যা রোম্যান্টিক ডান্স। সবাই মনে করো যে এটা টিভিতে দেখছো।’

‘টিভির ডান্স লাইভ দেখবো!’ চোখ বড়বড় করে বললো সাহিল।

জাওয়াদ কপাল কুঁচকে বললো, ‘এই পাকনা, চুপ করে বসতো। ডিস্টার্ব করবিনা।’

হেসে দিলো সবাই, একজন বাদে। রিয়াদ এবার হাসতে হাসতে তার ফোনে একটা ইংরেজি রোম্যান্টিক গান ছেড়ে দিলো। জাওয়াদ নাচতে লাগলো, তিথিকে নিয়ে। তিথির যেন শরীরের সব শক্তি গায়েব হয়ে গিয়েছে। জাওয়াদ তিথির কোমর ধরছে। অজ্ঞান হই হই অবস্থা তিথির। তিথির চুলগুলো খোঁপা করা ছিলো। জাওয়াদ তিথিকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে সেই চুল খুলে দিলো। তারপর তিথিকে পেছন থেকে ধরে চুলে নাক গুঁজে ঘ্রাণ নিলো। তারপর তিথির দু’হাত ধরে তার হাত সহ তিথির পেটের উপর রাখলো। গান শেষ হলো। তিথি তার সমস্ত ভর ছেড়ে দিলো জাওয়াদের ওপর। সে আর নড়তে পারছেনা। তার শরীর অবশ হয়ে আসছে। এভাবে না চাইতে এতোকিছু পেয়ে যাবে, কে জানতো? আচ্ছা, এতো সুখ সুখ কেন অনুভূত হচ্ছে তিথির? এটা কি দুঃখ আসার সিগনাল? মাথাটা ঘুরছে তিথির, সে কি জ্ঞান হারাচ্ছে? না না, এখন জ্ঞান হারালে চলবেনা, একদম না! ঘরে যাওয়ার পরে যা হয় হোক!

‘উফ, এক্সট্রিম লেভের রোম্যান্টিক ডান্স ছিলো।’ বলে হাত তালি দিলো রিয়াদ। সবাই হাত তালি দিলো। আদিয়া বললো, ‘বড় ভাইয়া বরাবরই ভালো নাচে। কিন্তু তিথিও এতো ভালো নাচে জানতাম না।’

তিথি চুপচাপ এসে বসলো জায়গায়। তার লজ্জা করছে খুব। চোখ তুলে তাকাতে পারছেনা। চোখ তুলে তাকালেই ঐ মানুষটার চোখে চোখ পড়বে। মরেই যাবে সে। শরীরে এখনও শিহরণ জাগছে। স্পর্শগুলো যেনো এখনও লেগে আছে। বারংবার কাঁপিয়ে তুলছে তিথিকে। তিথি চোখ বন্ধ করে ফেললো।

দুই কান দিয়ে যেনো গরম বাতাস বেরোচ্ছে নুহার। শরীরে আগুন ধরে গেছে যেনো। সে এখানে এক মুহূর্তও থাকতে চাইছেনা। কাউকে কিছু না বলেই উঠে হনহন করে চলে গেল। সবাই অবাক হলেও রিয়াদ আর জাওয়াদ অবাক হলো না। তারা একে অপরের দিকে তাকিয়ে হাসলো কেবল। হুট করে লাইট নিভে গেল রুমের। সাহিল চিৎকার দিয়ে উঠলো। রিয়াদ মোবাইলের ফ্লাশ লাইট জ্বালালো। তারপরে বললো, ‘কবুতরের জান তোর। ইলেক্ট্রিসিটি গেছে। এখানে রো আইপিএস নাইরে। সবাই উঠ, ঘরে যাই। আর ঘণ্টাখানেক পরেই ডিনারের জন্য ডাক আসবে।’

সবাই বেরিয়ে যেতে লাগলো। সবার শেষে তিথি দরজার কাছে যেতেই জাওয়াদ তিথির পেছন থেকে কোমর জড়িয়ে ধরে কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো, ‘একটু দাঁড়াও পাতলি কোমর ওয়ালি।’

কানের কাছে জাওয়াদের উত্তপ্ত গরম নিশ্বাস তিথিকে যেন এক্ষুণি ৪৪০ ভোল্টেজ এর শক দিলো। তিথি নিঃশব্দে জাওয়াদের হাত নিজের কোমর থেকে ছাড়াতে চাইলো। সবাই বেরিয়ে গেছে ততোক্ষণে। জাওয়াদ আরো শক্ত করে ধরলো, তারপর নিজের দিকে ফিরালো। তিথি বললো, ‘প্লিজ ছাড়ুন। কেউ দেখলে খারাপ বলবে।’

জাওয়াদ কোনো উত্তর না দিয়ে একহাতে তিথিকে নিজের সাথে লাগালো। তিথি কাঁপতে লাগলো, নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসলো তার। এভাবে জাওয়াদের সাথে লাগার কারণে তার শরীর যেন বরফ হয়ে গেল। সে আর শক্তি পাচ্ছেনা জাওয়াদকে ছাড়ানোর। নিচের দিকে তাকিয়ে থাকলো। জাওয়াদ মোবাইলের ফ্লাশ লাইট বন্ধ করে দিলো। চাঁদের আলো এসে ছুঁয়ে দিচ্ছে তিথির মায়াবী মুখ পরম যত্নে। সেই মুখের দিকে মুগ্ধ নয়নে চেয়ে রইলো জাওয়াদ। তিথি আবারও খানিক মোচড়ামুচড়ি করে বললো, ‘ছাড়ুন, এমন করছেন কেন? সবাই চলে গেছে।’

জাওয়াদ তিথিকে না ছেড়ে রিয়াদের নাম্বারে কল দিলো। তারপর রিয়াদকে বললো, ‘আই ডোন্ট নো হাও, বাট ওদিকটা তুই ম্যানেজ করবি। তিথি আমার সাথে। কেউ জিজ্ঞেস করলে কী বলতে হবে সেটা তুই ডিসাইড কর। রাখছি।’

তিথির মুখ একদম হা হয়ে গেল। সে এবার আরো জোরে নড়াচড়া করতে লাগলো। জাওয়াদ বিরক্ত নিয়ে বললো, ‘উফ! নড়োনা।’

‘আ-আপনি…’

‘শসসসস!’ তিথির ঠোঁটে আঙুল দিয়ে চুপ করালো জাওয়াদ। ঠোঁটে জাওয়াদের আঙুলের স্পর্শ পেতেই কেঁপে ওঠে তিথি। তিথির এই কেঁপে ওঠা যেন জাওয়াদের বুকেও কাঁপন ধরায়। সে আস্তে করে বলে, ‘আমার সাথে আজ মিথ্যে বললে কেন? আমি জানি নুহা তোমার সাথে কিছু একটা করেছে। তুমি মা কে বলেছো ডুব দিতে গিয়ে পানি খেয়েছো। আসলে এটা মিথ্যে। নুহা কী করেছে বলো। ধাক্কা দিয়ে পানিতে ফেলেছে?’

তিথি ডানে বামে মাথা নাড়ে। জাওয়াদ হাসে। আবার বলে, ‘সেদিন ডায়েরিটা তুমি পড়েছো আমি জানি।’

চমকে উঠলো তিথি। হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে এলো তার। এজন্যেই কি জাওয়াদ ওকে এভাবে আটকে রেখেছে? এখন কি ওকে শাস্তি দিবে? কী শাস্তি দিবে? তিথি ঢোঁক গিললো। তিথির মুখে স্পষ্ট ভয় খেলা করছে। তা দেখে জাওয়াদ হেসে দিলো। বললো, ‘তিথি, বেহুদা ভয় পাচ্ছো কেন? তুমি না খুব সাহসী? আমি এবার তোমাকে ডায়েরির পেছনের গল্পটা বলবো। শুনতে চাও?’

ফের চমকায় তিথি। চোখে তার কৌতূহল। জাওয়াদ কি এখন তাকে সেই গল্পটা বলবে? যার জন্য তার ভালোবাসা পূর্ণতা পায়নি?

জাওয়াদ তিথিকে টেনে তার মাথাটা নিজের বুকের সাথে চেপে ধরলো। পরম যত্নে, পরম মায়ায়। তিথির মনে হলো, পৃথিবীর সবথেকে শান্তির জায়গায় মাথা ঠেকিয়েছে সে। শান্তির নিশ্বাস নিলো তিথি। সে কিছু বলছেনা। তার কাছে এখন যেন সব স্বপ্ন। কিছু বলতে গেলে বা নড়তে গেলেই যেন স্বপ্নটা ভেঙ্গে যাবে সেই ভয় পাচ্ছে সে। তিথির মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে জাওয়াদ বললো, ‘শোনো, এবার তোমাকে আমি সেই ঘটনাটা বলবো। যা ডায়েরিতে লেখা নেই।’

চুপটি করে জাওয়াদের বুকে মাথা রেখে দাঁড়িয়ে আছে তিথি। সে শুনবে, খুব মনোযোগী শ্রোতা সে।
_____________

চলবে………
#ফারজানা_আহমেদ

ত্রিভুজ প্রেম পর্ব -৬

0

ত্রিভুজ প্রেম
জান্নাতুল ফেরদৌস সূচনা
পর্বঃ৬

জ্বর ও মাথা ব্যাথা নিয়ে বিছানা থেকে উঠতে পারছে না পাপড়ি। থার্মোমিটার দিয়ে জ্বর মাপছে আফিয়া বেগম।
– ১০৪° জ্বর। বার বার না করছি এমন অসময়ের বৃষ্টিতে ভিজিস না। আমার কথা তো তোর কানেই যাবে না। এখন বিছানায় পড়ে থাক। আজ আর অফিসে যেতে হবে না। একটুপর পুষ্প তোকে ডাক্তার দেখিয়ে নিয়ে আসবে।
– না মা। তা কি করে হয়। কালকেই জয়েন করেছি চাকরিতে আর আজকে না গেলে আমার চাকরিটা যে চলে যাবে। আমার কষ্ট হলেও আমাকে যেতে হবে।
– বিছানা থেকে তো উঠতে পারছিস না, আবার অফিসে যাবি কি করে এতো জ্বর নিয়ে।
– উঠতে পারবো। তুমি আমায় জ্বরের ঔষধগুলো দাও,খেয়ে দেখি কমে কিনা জ্বর।

– শাকচুন্নি, পাপড়ি শাকচুন্নি রেডি হইছিস?
ঘরের দরজা থেকে ডাক দিচ্ছে নীল।
ঘর থেকে পুষ্প বলে ওঠে
– ও আর আজকে যাবে না অফিসে। কালকে  বৃষ্টিতে ভিজে জ্বর ওঠিয়েছে। বিছানা থেকে এখন ওঠতে পারছে না। তুই চলে যা।
পাপড়ি কথা শুনে মনে একটু কষ্ট পেলো নীল, মুখটা একটু কালো করে পুষ্পর কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করে
– খুব জ্বর ওঠেছে, কোথায় ও?
পুষ্প তাদের রুমের দিকে ইশারা দিয়ে দেখায়
-ওকে, আমি একটু দেখে আসি।
কথাটা বলেই নীল পেছনে ঘুরতেই দেখে পাপড়ি রুম থেকে বের হয়ে আসছে। ওকে দেখে নীল বলে ওঠলো
– সেকি, তোর নাকি খুব জ্বর ওঠেছে। তুই রেডি হয়ে কোথায় যাস?
– অফিসে।
পাপড়ি কথা শুনে নীল পাপড়ির মাথায় হাত দিয়ে জ্বরটা দেখে বলে
– জ্বর তো কমে নি, কিভাবে যাবি অফিসে?
– ঔষধ খেয়েছি, একটুপরই জ্বর কমে যাবে।
আফিয়া বেগম বললো
-দেখ না বাবা, কতো করে বলছি যে আজ অফিসে না যেতে ও আমার কোন কথায় শুনছে না।
– না মা, তা হয় না। পরে আমার চাকরিটা আর থাকবে না। আমাকে যেতেই হবে। আর টেনসন করো না আমি ঠিক আছি। নীল চল।
– সত্যিই যেতে পারবি তো,  পরে আবার বেশি অসুস্থ হয়ে গেলে কে দেখবে তোকে অফিসে?
– হবো না। আমি সাথে ঔষধ নিয়ে নিছি। খারাপ লাগলে ঔষধ খেয়ে নিবো। এখন তুই চল, লেট হয়ে যাচ্ছে যে।
-হুম চল।

সকাল থেকে অনেক কাজ করে এখন আর নিজেকে ধরে রাখতে পারছে না পাপড়ি। মাথা ব্যাথায় মাথাটা এতোটা ভার হয়েছে যে সে মাথা উপরে তোলে কাজ করতে তার খুব কষ্ট হচ্ছে। জ্বরটাও মনে হয় বেড়েছে। ব্যাগ থেকে ঔষধ বের খেয়ে নিল। পাপড়িকে ঔষধ খেতে দেখে পাশের ডেস্কে বসে থাকা তার কলিগ বলে ওঠে
– কি হয়েছে পুষ্প? তুমি কি অসুস্থ?
– হ্যা কিছুটা। আসলে খুব মাথা ব্যাথা করছে, এখানে বসে থাকতে পারছি না।
– বেশি শরীর খারাপ হলে, বসকে বলে বাসায় চলে যাও।
– কিন্তু আজ আমার দ্বিতীয় দিন অফিসে, বস কি আমাকে এইভাবে ছুটি দিবে?
– তা তো জানি না। তবে একবার বলে দেখতে পারো।
-হুম।
কিছুক্ষণ বসে থাকার পর আর থাকতে পারছে না পাপড়ি। মাথা ব্যাথাটা ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে তার।তাই ওঠে বসের ক্যাবিনে দিকে যায়।
– মে আই কামিন, স্যার?
ল্যাপটপের স্ক্রিন থেকে নজর সরিয়ে দরজায় পাপড়ি দেখতে পেয়ে রাইয়ান হাসি মুখে বলে ওঠে
– কামিন।
আজ সকাল থেকে কাজে ব্যস্ত থাকায় পাপড়িকে একবারো দেখতে পায় নি। পাপড়িকে দেখলেই  রাইয়ানের মনটা ভালো হয়ে যায়।
-কিছু বলবে পুষ্প?
পাপড়ি তার অসুস্থের কথা কিভাবে বলবে তা বুজতে পারছে না। তাই চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।
রাইয়ান খেয়াল করলো কালকে পুষ্পকে যতটা প্রাণবন্ত লেগেছিলো, আজ আর তেমনটা নেই। তার মুখটা আজ ফ্যাকাশে লাগছে। দেখেই বুঝা যাচ্ছে সে অসুস্থ।
রাইয়ান আবার বলে ওঠে
– কি হয়েছে পুষ্প?  তুমি কি অসুস্থ?
অসুস্থের কথাটা শুনে পাপড়ি মুখ তুলে বললো
– আসলে স্যার, সকাল থেকে অনেক মাথা ব্যাথা করছে। কম্পিউটারের স্ক্রিনের দিকে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারছি না। আজ আমার দ্বিতীয় দিন অফিসে। এভাবে অসুস্থ হয়ে পরায় কাজগুলো ঠিকমতো করতে না পারার জন্য আমি দুঃখিত।  আপনি যদি আমাকে একটু সময়ের জন্য ছুটি দিতেন তাহলে আমি ডাক্তার দেখিয়ে আবার চলে আসবো অফিসে।
কথাগুলো একদমে বলে হাফ ছাড়ে পাপড়ি।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন

রাইয়ান মুখটাকে বিষন্ন করে বলে
– তুমি অসুস্থ তা আগে বলেই পারতে, শুধু শুধু এতোক্ষণ কষ্ট করে কাজ করছিলে কেনো? যাও, তোমাকে ছুটি দিলাম। একবারে সুস্থ হয়ে অফিসে আসবে।
– না স্যার, মানে এতোদিন লাগবে না। শুধু একটু সময়ের জন্য ছুটি দিলেই হবে।
রাইয়ান কিছুটা রাগী কন্ঠে বলে
-তোমাকে যা বলছি তা করো। বাসায় চলে যাও। তারপর ডাক্তার দেখাও।
– ওকে।
বলেই দু পা এগুতেই পাপড়ি অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায়। পাপড়িকে পড়ে যেতে দেখে রাইয়ানও চমকে উঠে। সে কি করবে বুজতে পারছে না। শরীরে হাত দিতেই দেখে পাপড়ির শরীর জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে। বাহিরে আশেপাশে কোনো স্টাফকেও দেখতে পারছে না। গ্লাস থেকে পানি নিয়ে পানির ছিটা দেয় পাপড়ি মুখে। কিন্তু পাপড়ির জ্ঞান ফিরছে না। কিছু না বুজতে পেরে তড়িঘড়ি করে রাইয়ান পাপড়িকে কোলে তুলে নিয়ে বাহিরের দিকে রওনা হয়। পাপড়িকে রাইয়ানের কোলে দেখে বাহিরে সবাই হা করে আছে। পাপড়িকে কোলে নেওয়াটা অনেক মেয়েরই সহ্য হচ্ছে না।রাইয়ান অফিসের অনেক মেয়ের ক্রাশ। অনেক মেয়েই তাকে পছন্দ করে। পাপড়িকে এভাবে দেখে মেয়েগুলো একদম জ্বলে যাচ্ছে। কেউ কেউ বলছে
– দুদিন হলো অফিসে এসেছে। আর এতেই বসের ওপর জাদু করে বসেছে মেয়েটা।
আবার কেউ কেউ বলছে
– এতোদিন ধরে কাজ করছি অফিসে, আমি কেনো অজ্ঞান হয়নি বসে সামনে।
অফিসের অন্যরাও এ নিয়ে আরো হাসি তামশা করছে।
এদিকে পাপড়িকে নিয়ে গাড়িতে বসিয়ে নিজেই ড্রাইভ করে হসপিটালে যায় রাইয়ান।

চলবে…

ত্রিভুজ প্রেম পর্ব -৫

0

ত্রিভুজ প্রেম
জান্নাতুল ফেরদৌস সূচনা
পর্বঃ৫

পাপড়ি পুষ্পর থেকে সবকিছু দিয়ে এগিয়ে থাকলেও পড়াশোনার দিক দিয়ে পাপড়ির থেকে পুষ্প একটু বেশিই মেধাবী ছিলো।  পুষ্প তার ক্যাফের বিজনেসটা নিয়েই খুশি ছিলো বিধায় তার চাকরির প্রতি কোন ইন্টারেস্ট ছিলো না। তাই তার সার্টিফিকেট গুলো পাপড়ি ব্যবহার করে চাকরি পাওয়ার জন্য। এতে পুষ্পরও কোনো সমস্যা ছিলো না। চেহেরা এক থাকায় পাপড়িকে কখনো কোনো সমস্যায়ও পড়তে হয় নি এ নিয়ে। তবে এ কথাটা শুধু তারা দুইবোনই জানতো। সার্টিফিকেটে নাম পুষ্প থাকায় পাপড়িকে বাহিরে নিজেকে পুষ্প হিসেবেই পরিচিতি দিতে হয়েছে।

অফিসে শেষে পাপড়ি অফিস থেকে বের হতেই সে নীলকে বাহিরে দাড়িয়ে থাকতে দেখলো। নীলকে এখন তার অফিসের বাহিরে দাড়িয়ে থাকতে দেখে পাপড়ি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো
– কিরে তুই এখানে এখন কি করছিস?
– তোর মেয়ে কলিগদের পটানোর জন্য দাড়িয়ে আছি দেখছিস নাহ?
-(ভেংচি কেটে) গার্লফ্রেন্ড বানাতে কোয়ালিটি লাগে। আর তা তোর মধ্যে ছিটেফোঁটাও নেই।
– মেয়ে পটানো আমার বাম হাতের খেলা বুজলি!
– ওহ! তাহলে তোর কয়টা গার্লফ্রেন্ড আছে শুনি?
– নাই। আমি বিয়ের পর প্রেম করবো, এখন না বুজলি। এখন চল।
-হুম।
দুজনই রাস্তায় চুপচাপ হাঁটছে। হঠাৎ পাপড়ি বলে ওঠে
– আমাকে অফিসে দিয়ে গেলি আবার নিতে এলি, তা আজ হঠাৎ এতো ভালো হয়ে গেলি কি করে?
-বাহ! ভুতের মুখে রাম রাম। শোনেন মিস্,  আপনাকে যেমন অফিসে দিয়ে গেছি, তেমন আপনাকে নিয়ে যাওয়াটাও আমার কর্তব্য। আর এখন থেকে আমি আমরা এক সাথেই যাওয়া-আসা করবো কেমন?
– হুম।

নীল আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো
– আকাশ কালো হয়ে এসেছে, বৃষ্টি আসবে আসবে বোধ হয়। একটা গাড়িও পাচ্ছি না যে বাসায় যাবো।
বলতে বলতেই বৃষ্টি চলে আসে। নীল আর পাপড়ি দৌড়ে গিয়ে একটি চায়ের দোকানে ঢুকে পড়ে।

-বাহিরে যা বৃষ্টি হচ্ছে, মেয়েটার অফিস ছুটির টাইম হয়ে গেছে। ছাতাও নিয়ে যায় নি। একা একা কিভাবে আসবে মেয়েটা কে জানে?
বাহিরে বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে কথাটা বলতে লাগলো আফিয়া বেগম।
পেছন থেকে পুষ্প বলে ওঠে
-চিন্তা করো না। আমি নীলকে ফোন করে বলে দিয়েছি আসার সময় যেন পাপড়িকে নিয়ে আসে। ওরা ঠিক চলে আসবে।
– নীল সাথে থাকলে আর চিন্তা নেই তোমার বউমা। তুমি বরং একটু পাকোড়া বানিয়ে দাও। এই বৃষ্টির দিনে একটু পাকোড়া না খেলে চলে।
দাদীর এমন কথায় পুষ্পও সম্মতি দিয়ে বলে
– হ্যা মা, পাকোড়া খাবো, প্লিজ বানিয়ে দাও। ওরা চলে আসবে।

টুলে বসে চায়ের কাপ হাতে নিয়ে তারা দুজন বৃষ্টি দেখছে।
– আমার না বৃষ্টিতে ভিজতে ইচ্ছে করছে। অনেকদিন হলো বৃষ্টি ভিজি না।
চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে কথাটি বললো পাপড়ি।
নীল পাপড়ির দিকে তাকিয়ে বললো
– এতো শখ যখন হয়েছে তো যা ভিজ।
– সত্যিই ভিজবো। তুইও চল।
– নাহ বাবা, আমার এতো ভিজার শখ নেই। তুই যা।
– যেতে তো তোকে হবেই।
বলেই নীলকে টানতে টানতে বৃষ্টি মাঝে যায়।
নীল পেছন থেকে বলে ওঠে
– আরে আরে, পড়ে যাবো তো, আস্তে আস্তে।

পাপড়ি আর নীল বৃষ্টিতে ভিজে একাকার।
বৃষ্টির পানি যেন পাপড়ির সৌন্দর্যটা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। আর নীল তা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে।
-কিরে, কি দেখছিস?
– কিছু না। অনেক তো ভিজেছি এবার চল, পরে ঠান্ডা লেগে যাবে তোর।
– আর কিছুক্ষণ থাকি না?
– নাহ, একদমই না।
হঠাৎ বাজ পড়ে। বাজের শব্দে ভয় পেয়ে পাপড়ি নীলকে জড়িয়ে ধরে। পাপড়ি জড়িয়ে ধরায় নীলও কেমন কেঁপে ওঠে। পাপড়ি এমন একটা কিছু করবে সেটা সে ভাবতেও পারিনি।

– হয়েছে ছাড়েন আমায়, আশেপাশে যদি আমার হবু বউ থাকে তাহলে সে দেখলে অনেক রাগ করবে।
মুচকি হাসতে হাসতে নীল কথাটা বলে।
পাপড়ি নিজেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে বলে
– (ভেংচি কেটে)তোর কতো বউ এখানে বৃষ্টির মধ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে তা তো দেখছিই আমি। আমি বাজ পড়ায় একটু ভয় পেয়ে গেছিলাম বলেই কিছু না বুজে জড়িয়ে ধরে ফেলেছি তোকে। নয়তো তোর মতো রামছাগলকে কে ধরতে যাবে।
– এই এতো ভেংচি কাটিস কেনো তুই। এই ভেংচি কাটতে কাটতে একদিন দেখিস তোর মুখটাই বেকে যাবে। হা হা হা।
– ধ্যাত, তোর সাথে থাকবোই না আমি। চললাম আমি।
বলেই হন হন করে বাড়ির দিকে রওনা হলো পাপড়ি। পিছন পিছন নীল চলতে শুরু করলো।

একটু পর দরজায় ঠকঠক আওয়াজ শুনে আফিয়া বেগম দৌড়ে গিয়ে দরজা খোলে
অবাক হয়ে বলে
– এমা, একি অবস্থা তোদের। একদম কাকভেজা ভিজে বাসায় আসতে কে বলছে?
পেছন থেকে নীল বলে ওঠে
-আমি কিন্তু বারণ করেছিলাম জেঠিমা। কিন্তু এই শাকচুন্নি আমার কোনো কথায় শুনলো না, নিজেও ভিজেছে আমাকেও ভিজিয়েছে।
নীলের এমন কথা শুনে পাপড়ি রাগী চোখে নীলের দিকে তাকায়।
পেছন থেকে পুষ্প বলে
– হ্যা, মজা করে ভিজবে। পরে জ্বর ওঠে মরবে। আমার তাকে নিয়ে টেনসনে মরবো আমরা।
-আহ! এখন এসব কথা থাক। ওদের ভিতরে নিয়ে যাও তো এখন বউমা। শরীর শুকিয়ে নিক নাহলে তো জ্বর ওঠে যাবে।
দাদী কথা শুনে পাপড়ি হনহন করে ঘরে চলে যাই।

চলবে….

রঙ তুলির প্রেয়সী ১৭.

0

রঙ তুলির প্রেয়সী
১৭.

‘সাহিল, বল দে। তাড়াতাড়ি দে বল, ও তো অলরেডি দুই রান নিয়ে নিছে। আরে ওই চুলকাইস পরে আগে বল দে বে।’

জোরে জোরে চিল্লাচ্ছে রিয়াদ। জাওয়াদ দের ছোট মামার ছেলে, সাত বছর বয়সি সাহিলের কানে এই চিৎকার পৌঁছাচ্ছেই না। সে মাঠে বসে বল হাতে নিয়ে উবু হয়ে পা চুলকাচ্ছে। একটা ছেলে গিয়ে বল চেয়েছিলো কিন্তু সে দেয়নি। ওর চুলকানো শেষ হলে পরে সে বলটা ইটা মেরে রিয়াদের কাছে দিবে। কিন্তু ওর তো চুলকানো ও শেষ হচ্ছেনা। কেউ জোর করে আনতেও পারছেনা। জোর করে আনতে গেলেই মাটিতে পড়ে গড়াগড়ি খেয়ে কাঁদবে। যতোক্ষণে ওর চুলকানো শেষ হলো ততোক্ষণে জাওয়াদ জিতে গিয়েছে দৌড়ে দৌড়ে ছয় রান নিয়ে। রিয়াদ কোমরে হাত দিয়ে রাগী চোখ নিয়ে তাকালো সাহিলের দিকে। সাহিল দুহাতে বল ধরে ঠোঁট উল্টে দাঁড়িয়ে থাকলো। জাওয়াদ হাসতে হাসতে সাহিলের কাছে গিয়ে ওর গালে একটা চুমু খেলো। সাহিল বললো, ‘আমি এক্ষুণি ইটা মেরে স্টাম্প ফেলে দিতাম। শুধু মশাটা কামড় দিয়ে বাগড়া দিলো।’

‘এখন রিয়াদ ব্যাটিংয়ে যাবে। ফেলে দিস ওর বেলা।’ বলে হাসলো জাওয়াদ।

রিয়াদ এগিয়ে এসে বললো, ‘এইজন্যেই আমি তোকে নেইনা খেলায়। দুধভাত বানাই। এমনভাবে চুলকানো শুরু করলি যেন তোর খুজলি হইছে।’

‘এমন করলে কিন্তু বল দেবোনা। এটা আমার বল। তখন কীভাবে খেলো দেখে নেবো।’ বলে একবার মুখ ভেংচি দিলো সাহিল।

রিয়াদ বড় বড় চোখ করে বললো, ‘কতো বড় ব্ল্যাকমেইলার বে তুই! একেতো স্কুল থেকে এসে ফ্রেশ না হয়েই খেলতে এসছিস তার ওপর হুমকি দিচ্ছিস? ছোট মামাকে বলে দেবো কি আমি যে গোসল করিসনি এসে?’

সাহিল কাঁদো কাঁদো হয়ে জাওয়াদের দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ভাইয়া দেখো রিয়াদ ভাইয়া কেমন করছে।’

জাওয়াদ রিয়াদকে একটা ধমক দিলো। সাহিল তা দেখে দাঁত কেলিয়ে হাসলো। জাওয়াদ রিয়াদের দিকে তাকিয়ে বললো, ‘শোন, এই কাদার মধ্যে আমি আর থাকতে পারবোনা। খেল তোরা। আমি গেলাম।’

‘বুঝি বুঝি, কেন যেতে চাচ্ছিস।’ চোখ টিপ দিলো রিয়াদ।

জাওয়াদ হাঁটতে হাঁটতে পিছু ফিরে তাকিয়ে বললো, ‘এক চামচ বেশি বোঝার অভ্যাস টা ছাড় রিয়াদ। এটা অপকারী।’

রিয়াদ হাসলো। তারপর সাহিলের মাথায় আস্তে করে একটা গাড্ডা দিয়ে বললো, ‘চল বলটা অভিক কে দে। আর চুপচাপ এইখানে দাঁড়িয়ে থাক। বল আসলে ধরিস।’

‘আচ্ছা।’ বলে দাঁড়িয়ে থাকলো সাহিল।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন

সিঁড়িতে বসে হাঁপাচ্ছে আর কাঁদছে তিথি। হা করে নিশ্বাস নিচ্ছে। নাকে অনেক পানি ঢুকেছে মনে হচ্ছে, জ্বলছে নাকে। অনেক পানি গিলেছেও। একটু পর পর কাশছে সে। কাঁদতে কাঁদতে উঠে দাঁড়ালো তিথি। তারপর কাপড় পাল্টাতে লাগলো। তার মনে হচ্ছে সে যেন এক্ষুণি মরার মুখ থেকে ফিরে এলো। পানিতে যখন মনে হচ্ছিলো যে এক্ষুণি সে ডুবে যাবে, কিন্তু এখনও কেউ আসছেনা, তখনই আল্লাহর নাম নিয়ে এলোমেলো ভাবে হাত নেড়ে নেড়ে কোনোমতে সামনে এগিয়ে এসেছে। এইভাবে এগিয়ে আসতে গিয়ে অনেক পানি নাকেমুখে ঢুকেছে তার। সিঁড়িতে এসে কোনোমতে পা ফেলে দাঁড়িয়ে মাথা উঁচু করে নিশ্বাস নিলো সে। একটু আগের কথা যতোবারই মনে হচ্ছে তিথির, ততোবারই তার কান্না বাড়ছে। ভেজা কাপড় পাল্টে আবার গিয়ে এজটা শুকনো সিঁড়িতে বসলো তিথি। কান্না থামছে না তার। নুহা এমন করলো কেন ভেবে পাচ্ছেনা তিথি। কাউকে নিয়ে এলো না কেন? তিথি যদি মরে যেতো? এসব ভাবতেই আরো বেশি কান্না পেলো তিথির। দু’হাতে মুখ ঢেকে কাঁদতে লাগলো সে এবার শব্দ করে।

পায়ে একটু একটু কাদা লেগে আছে জাওয়াদের, তাই সে বাড়িতে ঢোকার আগে পুকুরে আসলো পা ধুতে। কিন্তু এসে দেখলো কেউ একজন বসে বসে কাঁদছে শব্দ করে। মাথায় তোয়ালে পেছানো, পেছন থেকে বোঝা যাচ্ছেনা কে। জাওয়াদ জিজ্ঞেস করলো, ‘কে? কী হয়েছে?’

তিথি মাথা তুললো। কণ্ঠটা শোনার সাথেসাথেই চিনেছে সে। পেছন ফিরে তাকালো সে। তিথিকে দেখে অবাক হলো জাওয়াদ। সে তাড়াতাড়ি তিথির পাশে গিয়ে অবাক কণ্ঠে বললো, ‘তিথি! কী হয়েছে? কাঁদছো কেন তুমি?’

তিথি উঠে দাঁড়ালো। এক মুহূর্তও দেরি না করে দু’হাতে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো জাওয়াদকে। তারপর হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো। ঐ মুহূর্তে জাওয়াদের মনে হলো তার শরীরে কেউ বিদ্যুতের তার ছেড়ে দিয়ে চলে গেছে। বারংবার বিদ্যুৎ খেলছিলো তার সর্বাঙ্গে। কোনোরকমে কাঁপা কাঁপা হাত দুটো সে তিথির পিঠে রাখলো। জাওয়াদের শরীর অসাড় হয়ে যেতে চাইছে। কিন্তু সে নিজেকে কোনোমতে সামলালো। ঢোঁক গিললো। আস্তে করে জিজ্ঞেস করলো, ‘কী হয়েছে, তিথি? কাঁদছো কেন? আমাকে বলো।’

তিথি কিছু বলছে না। কেঁদেই যাচ্ছে। জাওয়াদ একটু ধাতস্থ হলো। তার মাথায় এলো, তিথি এখানে একা। তারপর খেয়াল হলো তিথির মাথায় তোয়ালে পেছানো, মানে সে গোসল করেছে। এক মিনিট, তিথি তো সাঁতার জানেনা! জাওয়াদ তিথিকে ছাড়িয়ে তার দু’কাঁধে হাত রেখে চোখের দিকে তাকালো। তিথি তখন কান্না বন্ধ করেছে। জোরে জোরে নিশ্বাস নিচ্ছে। তার চোখ মুখ অস্বাভাবিক রকমের লাল। জাওয়াদ জিজ্ঞেস করলো, ‘কী হয়েছে? এই অবস্থা কেন তোমার? নাক মুখ এমন কেন?’

তিথি কিছু বলতে নিলো আর তখনই পেছনে আদিয়ার গলা শোনা গেল, ‘তিথি! কী হয়েছে? বড় ভাইয়া, কী হয়েছে?’

উদ্ধিগ্ন হয়ে ছুটে এলো আদিয়া। তার পেছন পেছন ফাহি। তিথি তখন মোটামুটি স্বাভাবিক। সে নিচের দিকে তাকিয়ে নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে রইলো। জাওয়াদ বললো, ‘ওকে একা এখানে আসতে দিলি কেন? তোরা কেউ এলিনা কেন?’

‘আরে নুহাপু নিয়ে এসেছিলো তো। পরে নুহাপু চলে গেল ঘরে। জিজ্ঞেস করতেই বললো তিথি ওর সামনে গোসল করতে সংকোচ বোধ করছিলো আর বলেছিলো নাকি সে একা পারবে। তাই চলে গেছে।’ তিথির পাশে এসে দাঁড়িয়ে দু’হাতে তিথিকে ধরে বললো আদিয়া। ফাহিও একই কথা বললো। তিথি এই কথা শুনে যেন আকাশ থেকে পড়লো। সে এমন মোটেও বলেনি। আর নুহা এমন কথা বললো কেন? এভাবে ওকে এখানে ফেলে গিয়ে… নাহ, গড়মিল আছে কিছু একটা। কিন্তু সেটা কী?

‘হোয়াট! তোরা নুহার সাথে ওকে এখানে পাঠিয়েছিস?’ চেচিয়ে ওঠে জাওয়াদ। তিথি কেঁপে ওঠে জাওয়াদের চিৎকারে।

‘কেন কী হয়েছে? আমরা খেলছিলাম তাই…’ ভয়ে ভয়ে বললো আদিয়া। ফাহি একেবারেই নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে আছে মাথা নিচু করে। জাওয়াদ রাগে দাঁতে দাঁত ঘষে। মাটিতে পা দাপায় দু’বার। তারপর তিথির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, ‘কী হয়েছিলো তিথি? সত্যি করে বলো।’

‘কি-কিছুনা!’ ঢোঁক গিলে তিথি। জাওয়াদকে দেখে ভয় পাচ্ছে সে। সত্যিটা বলে দিলে যে এখন কিয়ামত হয়ে যাবে সেটা ভালোই টের পাচ্ছে সে। রাগে জাওয়াদের চোখ মুখ লাল হয়ে আছে।

‘কিছুনা তো এখানে বসে কাঁদছিলে কেন? আর নাক মুখ লাল কেন?’ চেচিয়ে উঠলো আবার জাওয়াদ।

তিথি আবার কেঁদে উঠলো। কাঁদতে কাঁদতে বললো, ‘মায়ের কথা মনে পড়ছিলো। মাও পুকুরে গোসল করতো।’

জাওয়াদ যেন একটু নরম হলো। সে বললো, ‘ঠিক আছে কেঁদোনা। যাও ভেতরে যাও।’

তিথি উবু হয়ে বসে নিজের কাপড় কাচতে লাগলো। জাওয়াদ বিরক্তি নিয়ে ফাহি আর আদিয়ার দিকে তাকালো। ফাহি তাড়াতাড়ি বললো, ‘এই তিথি, কাপড় কাচার মানুষ আছে। তুমি উঠে আসো তো।’

তিথি নিঃশব্দে উঠে গেলো। আদিয়া তিথির হাত ধরে বাড়ি নিয়ে যেতে লাগলো। যাওয়ার সময় পেছন ফিরে দেখলো তিথি। জাওয়াদ তাকিয়ে আছে। তিথির মনে পড়লো, একটু আগে সে জাওয়াদের আষ্টেপৃষ্টে ছিলো। তখন একদম লজ্জা লাগেনি। কিন্তু এখন যেনো সমস্ত লজ্জা এসে জড়ো হলো তিথির দু’গালে। তিথি মুখ ফিরিয়ে হেসে দিলো।

যাকে ভালোবাসা যায়, তার চোখের ভাষা নাকি পড়া যায়? সে মিথ্যা বললে নাকি চোখের দিকে তাকিয়ে বুঝে ফেলা যায়? তিথির চোখের দিকে তাকিয়ে জাওয়াদের মনে হয়েছিলো, তিথি মিথ্যা বলছে। কিছু একটা হয়েছিলো যা তিথি আড়াল করেছে। একইভাবে তিথিরও মনে হয়েছে, তার মা-কে মনে পড়ার যে মিথ্যা কথাটা সে বলেছে সেটা জাওয়াদ বিশ্বাস করে নি। একদম করে নি।
__________

চলবে……..
@ফারজানা আহমেদ

রঙ তুলির প্রেয়সী ১৬.

0

রঙ তুলির প্রেয়সী
১৬.

তিথি ভেবে রেখেছিলো মটর ঠিক হওয়ার পরে গোসল করে নেবে। কিন্তু আজ ঠিক করা যাবে না। যা গরম, গোসল না করলেও হবেনা। পুকুরেই গোসল করতে হবে। ইশ, আগে জানলে আদিয়ার সাথে গোসল করে নিতো। এখন একা একা করতে হবে। লাঞ্চেরও সময় হয়েছে, লাঞ্চ রেডি করা হচ্ছে। মনে মনে ঠিক করলো তিথি খাওয়াদাওয়া শেষে শান্তিতে গোসল করবে। বাথরুমে বালতিতে রাখা ছিলো কিছু পানি, সেগুলো দিয়ে হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলো সে। বাথরুম থেকে বেরোতেই আদিয়া বললো, ‘তিথি চল। খেতে ডাকছে।’

‘হুম।’ বলে আদিয়ার পিছু পিছু গেলো তিথি।
_____________

বড়মামার রুমটা হচ্ছে এখানে সবচেয়ে বড়। তাই এই রুমেই ফ্লোরে পাটি বিছিয়ে খাবারের আয়োজন করা হলো। টেবিলে সবার জায়গা হয়না। তাছাড়া হেলাল আহমেদ এখানে এলে এভাবেই খেতে পছন্দ করেন। উনার মতে, সবাই একসাথে খাওয়ার মাঝেই আনন্দ। তিথি দেখলো সবাই গোল হয়ে বসে অপেক্ষা করছে বাকিদের জন্য। আদিয়া আর তিথি আসার সাথেসাথেই নুহা আর ফাহিও এলো। জাওয়াদের বড় মামা আফতাব হোসেন ফাহিকে ডেকে বললেন, ‘আয় এদিকে আয় তোরা। এখানে জায়গা আছে।’

রিয়াদ একটু বামে চাপলো। মনে প্রাণে চাইলো তার পাশেই যেনো ফাহি বসে। আর তা-ই হলো। আস্তে আস্তে জড়সড় হয়ে বসলো ফাহি, রিয়াদের পাশে। সবার অগোচরে একবার চোখাচোখি হলো দুজনের। নিচের দিকে চোখ নামিয়ে নিলো ফাহি। আদিয়া এসে বসলো ফাহির পাশে আর একেবারে শেষে তিথি বসলো। জাওয়াদ রিয়াদের পাশেই বসে আছে। জাওয়াদের পাশে জায়গা খালি দেখে খুশিমনে নুহা এসে বসেছে ওখানে। জাওয়াদ খেয়াল করেনি নুহা তার পাশে বসে আছে। নুহাও কোনো টু শব্দটি করলোনা। মুনতাহা সবার প্লেটে খাবার তুলে দিচ্ছিলেন। জাওয়াদ জিজ্ঞেস করলো, ‘মা, ছোট মামাকে দেখছিনা যে?’

‘কী একটা জরুরি কাজের জন্য কল এসেছে। যেতে হয়েছে উনাকে।’ বললেন জাওয়াদের ছোট মামী আঞ্জুমান।

‘ওহ আচ্ছা, আর সাহিলের স্কুল যেনো ছুটি হয় কটায়?’

‘বিকেল চারটা।’

তিথি ফিসফিস করে আদিয়াকে জিজ্ঞেস করলো, ‘সাহিল কে?’

আদিয়াও ফিসফিস করে জবাব দিলো, ‘ছোট মামার ছেলে। ক্লাস থ্রি তে পড়ে।’

‘আলতাব কি এবার ভালোভাবে কাজে মন দিলো?’ আফতাব হোসেন এর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন হেলাল আহমেদ।

‘হ্যাঁ, করবেনা? ছেলে বড় হচ্ছে। দায়িত্ব বুঝে নিতে হবে তো।’ খেতে খেতে বললেন আলতাফ হোসেন।

জাওয়াদের বড় মামি মেহেরুন তরকারির বাটি নিয়ে তিথির পাশে গেলেন। তিথির প্লেটে তরকারি তুলে দিতে দিতে বললেন, ‘শোনো মেয়ে, একদম লজ্জা পাবে না। কী পাখির মতো কুটকুট করে খাচ্ছো? ঠিকমতো খাবে। শরীর বাড়াও। এতো স্লিম ফিগার করতে হবেনা। তোমরা আজকালকার মেয়েরা না!’

তিথি লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে হাসলো। কথাটা শুনে জাওয়াদ একবার মাথা বাকিয়ে দেখলো তিথিকে। তারপর নিজেই আনমনে হেসে দিলো। মনে পড়ে গেলো তিথির সেই গানের কথা। হাসতে হাসতে একবার বামদিকে তাকাতেই চমকে উঠলো সে। নুহা তার পাশে বসে বসে খাচ্ছে। কয়েক মুহূর্ত যেনো সামলে উঠতে পারলোনা জাওয়াদ। তারপর দাঁতে দাঁত ঘষে রাগ হজম করলো। একটা মেয়ে কতোটা নির্লজ্জ হতে পারে? লজ্জা থাকলে এভাবে তার পাশে এসে বসার সাহস হতো না। জাওয়াদের ইচ্ছে করছে খাবার ছেড়ে উঠে যেতে। কিন্তু সব বড়রা এখানে, এমন করতে পারবেনা সে। জাওয়াদ খাবারের প্লেট হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে গেল। নুহা ভয় ভয় চোখে তাকালো ওর দিকে। রিয়াদ জিজ্ঞেস করলো, ‘উঠলি কেন?’

‘গরম লাগছে এখানটায়। ঠিকমতো ফ্যানের বাতাস আসছেনা।’ গমগমে গলায় বললো জাওয়াদ।

‘কী বলিস? আমার তো ঠি…’ কথা বলতে গিয়ে রিয়াদের চোখ পড়লো নুহার দিকে। আসল ব্যাপারটা বুঝে গেল সে। কিছু বললোনা আর। জাওয়াদ হেটে গিয়ে তিথির পাশে বসে পড়লো। বসার সময় তিথির হাতের সাথে জাওয়াদের হাত ঘষা খেলো। তিথি সবে একটা লোকমা মুখে দিয়েছিলো। জাওয়াদের স্পর্শ পেয়ে যেয়ে সে সাথেসাথে বরফ হয়ে জমে গেল। মুখের খাবারটা সে গিলতে পারছেনা। হাতের যে জায়গায় হাওয়াদের ছোঁয়া লেগেছে সে জায়গাটার অস্তিত্ব টের পাচ্ছেনা তিথি। মনে হচ্ছে সেই জায়গাটা খুলে পড়ে গেছে। তিথি খাবার মুখে নিয়ে একবার জাওয়াদের দিকে তাকালো। দেখলো জাওয়াদ মন দিয়ে খাচ্ছে। তিথি আদিয়ার দিকে একটু চেপে বসে খেতে লাগলো। কিন্তু বারবার অস্বস্তি হচ্ছে তার। আদিয়া তিথিকে জিজ্ঞেস করলো, ‘তিথি, পাটপাতা চাটনী নিবি?’

তিথি আমতাআমতা করে বললো, ‘ন-না, ক-কাঠাল বিচি ভর্তা দে।’

‘আমাকে দে, আদিয়া। পাটপাতা চাটনী।’ জাওয়াদ বললো।

আদিয়া তিথিকে কাঠাল বিচি ভর্তা দিয়ে তারপরে জাওয়াদের দিকে চাটনীর বাটিটা এগিয়ে দিলো। জাওয়াদ নিজের প্লেটে চাটনী নিতে নিতে বললো, ‘এটা খাওয়া অনেক ভালো, তিথি। খেতেও সুস্বাদু।’

সাথেসাথে তিথি নাকমুখ কুঁচকে বলে উঠলো, ‘এইগুলা খায় কেমন করে, আল্লাহ! কেমন পিচ্ছিল পিচ্ছিল। ভাতে মাখানোর সময় হাতে যখন লাগে, তখন একদম বাচ্চাদের নাক থেকে ঝরে পরা ইয়ের মতো লাগে দেখতে।’

সবাই খাওয়া থামিয়ে বিস্ফোরিত চোখে তাকালো তিথির দিকে। পাটপাতা জাওয়াদের অনেক পছন্দের। তারথেকেও বড় কথা, জাওয়াদ এসব কথাবার্তা মোটেও পছন্দ করেনা। মুনতাহা আর জাওয়াদের মামীদের মনে আতঙ্ক ভর করলো, জাওয়াদ না আবার রেগে যায়। আদিয়া ফাহির দিকে তাকিয়ে করুন মুখে ফিসফিস করে বললো, ‘বড় ভাইয়া রেগে যাবে এবার! এই মেয়েটাকে নিয়ে পারিনা।’

সবাইকে অবাক করে দিয়ে হো হো করে হেসে উঠলো জাওয়াদ। রিয়াদ আর হেলাল আহমেদ অনেক কষ্টে হাসি আটকে রেখেছিলেন, এবার উগড়ে দিলেন। তাদের দেখাদেখি বাকিরাও হাসতে লাগলো। তিথি মুচকি মুচকি হাসে। জাওয়াদ হাসতে হাসতে বলে, ‘তিথি, তোমার কথায় মনে হচ্ছে তুমি বাচ্চাদের নাকের ইয়ে হাতে নিয়েছো।’

‘ছিঃ! কী খচ্চড়ের মতো কথাবার্তা। খাওয়ায় বসে এসব কী?’ রাগত্ব স্বরে বলে তিথি।

জাওয়াদ অবাক হয়ে বললো, ‘আইসসালা! শুরুটা করলে তুমি।’

‘একদম না, আমি নরমাল কথা বলেছি।’

‘তাহলে তো আমার টা দুধভাত।’

এইভাবে খাবার রেখে দুজনে তর্কাতর্কি করতে লাগলো। আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে, জাওয়াদ এর আগে কোনোদিন কারো সাথে একটার বেশি দুটো কথা বলেনি। সবাই যারপরনাই অবাক। আদিয়ার মুখে হাসি ফুটে ওঠে। সে একবার রিয়াদের দিকে তাকায়। দেখে রিয়াদ হাসছে। আদিয়া অনুভব করলো তার কেমন যেনো শান্তি শান্তি লাগছে। ভাইকে এতোদিন পর আগের মতো দেখতে পেয়ে হয়তো। আদিয়ার চোখ পড়লো তার মা বাবার দিকে। দুজনের মুখে তৃপ্তির হাসি।

মাথা নিচু করে খাবারের প্লেটের দিকে তাকিয়ে আছে নুহা। আঙুল নাড়ছে শুধু। টুপ করে গাল বেয়ে এক ফোটা জলের রূপ নিয়ে গড়িয়ে পড়লো জেদ, হিংসা, রাগ। খুব কথা বলা হচ্ছে না? খুব হাসি হচ্ছে? জাওয়াদের শরীর ঘেষে বসা হচ্ছে। নুহার ইচ্ছে হচ্ছে সব পুড়িয়ে দিক, আগুন লাগিয়ে দিক। পুড়িয়ে ছারখার করে দিক সব। তিথিকেও…
__________________

বিকেল চারটা। ফাহি আর আদিয়া SOS খেলছিলো। খাতার মধ্যে কুতকুত খেলার ঘরের মতো অনেকগুলো ছোট ছোট ঘর বানিয়ে, তার মধ্যে দুই পক্ষ S আর O এর মধ্যে যার যার ইচ্ছেমতো অক্ষর নিয়ে বসাতে থাকবে। যখন একজনের দানে এসে SOS মিলিত হয়ে যাবে তখনই গেইম হবে। এই খেলা টাকে SOS বলে। তিথি অনেকক্ষণ থেকে অপেক্ষা করছে হাতে কাপড় নিয়ে, পুকুরে গোসল করবে বলে। আদিয়াকে সাথে নিয়ে যাবে। কিন্তু খেলাই শেষ হচ্ছেনা। এমন সময় নুহা আসলো। আদিয়া নুহাকে বললো, ‘নুহাপু ফ্রি আছো?’

নুহা একবার তিথির দিকে তাকালো। তারপর আদিয়ার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘হ্যাঁ, কেন?’

‘তিথিকে নিয়ে একটু পুকুরে যাবে? গোসল করে নিক।’

নুহা প্রচুর বিরক্ত হলো। কিন্তু প্রকাশ করলোনা। বললো, ‘ঠিক আছে।’ তারপর তিথির দিকে তাকিয়ে বললো, ‘তুমি বাইরে যাও। আসছি আমি।’

তিথি হেসে বেরিয়ে গেল। নুহা ওয়াশরুমে গেল। তারপর ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে রুমের বাইরে যেতে নেবে তখনই আদিয়া বললো, ‘নুহাপু একটা মগ নিয়ে যাও প্লিজ। তিথি সাঁতার জানেনা। আর ওকে বলে দিও তিন নাম্বার সিড়িতে যেন না নামে। ওটাতো খুব পিচ্ছিল।’

নুহা খানিক চমকালো। তারপর তার মুখে হাসি ফুটলো। সে কিছু না বলে বেরিয়ে গেল।
_________________

পুকুরের দু’ধারে প্রচুর বনুয়া গাছপালা। তিথি সেগুলো মাথা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখছিলো। চুল খুলে রাখা তিথির, সেই চুল কোমর ছাড়িয়ে হাঁটুর একটু উপরে এসে ঠেকেছে। সেদিকে তাকিয়ে নুহার যেন কপালের রগ ফুলে উঠতে চাইছে। জাওয়াদের লম্বা চুল পছন্দ! লম্বা একটা শ্বাস নিয়ে নুহা তাড়া দিয়ে বললো, ‘তিথি, তাড়াতাড়ি করো। যাও দুটো ডুব দিয়ে তাড়াতাড়ি আসো।’

তিথি আস্তে করে বললো, ‘আমিতো সাঁতার জানিনা, আপু।’

‘ডুব দিতে সাঁতার জানতে হয়না। তাছাড়া পাঁচ ছয় সিঁড়ি পর্যন্ত আমার ঠাই হয়, তাহলে তোমারও হবে। এতো ভয় পেওনা।’ বলে হাসলো নুহা। তিথি পানিতে থাকা প্রথম সিঁড়িতে পা দিলো। তারপর নুহার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো, ‘সাপ টাপ নেইতো আপু? অবশ্য সাপ যতোটা না ভয় পাই তারথেকেও জোঁকে ভয় পাই।’
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
‘আরে না। এসব নেই। পানিতে খুব বেশি হইচই না করলে জোঁক আসেনা।’

‘আচ্ছা।’ বলে আরেক সিঁড়ি নামলো তিথি। ভেতরে কেমন একটা ভয় ভয় কাজ করছে। এভাবে একা একা কোনোদিন পুকুরে নামে নি সে। নুহার চোখ তিথির পায়ের দিকে। নুহা অপেক্ষা করছে কখন তিন নাম্বার সিঁড়ির ওপর পা ফেলবে তিথি। যখনই তিন নাম্বার সিঁড়িতে ডান পা রাখলো তিথি, তখনই নুহা আতঙ্কিত গলায় বললো, ‘আরে তিথি, তোমার পায়ে তো জোঁক!’

কথাটা শোনার পর তিথির মনে হলো কেউ যেন তার কানে আগুন ঢেলে দিয়েছে। ভয় পেয়ে চিৎকার দিয়ে তাড়াতাড়ি উঠে আসতে চাইলো তিথি। ফলাফল- ভারসাম্য হারিয়ে পিছলা খেয়ে পানিতে আছড়ে পড়লো সে। সাঁতার না জানা তিথি চিৎকার করে নুহাকে ডাকছিলো আর হাতপা ছুড়ছিলো পানিতে। তা দেখে নুহা পৈশাচিক আনন্দ পাচ্ছিলো। কিন্তু এই আনন্দ তো দেখানো যাবেনা। সে গলায় মেকি আতঙ্ক রেখে বললো, ‘আরে আরে, এ কী হলো, তুমি চিন্তা করো না তিথি। আমি কাউকে নিয়ে আসছি এক্ষুণি নিয়ে আসছি।’ বলেই ছুট লাগালো নুহা। মুখে তার তৃপ্তির হাসি। এইখান থেকে চিৎকার দিয়ে গলা ফাটিয়ে দিলেও কেউ শুনবেনা বাড়িতে, কেউ না।

ঘরে আসার পর আদিয়া বললো, ‘তিথিকে ফেলে এলে যে?’

নুহা হেসে বললো, ‘আরে আমার সামনে গোসল করতে লজ্জা পাচ্ছিলো। বললো সে পারবে, আমাকে চলে আসতে বললো।’

‘ও।’ বলে আবার খেলায় মনোযোগ দিলো আদিয়া।

নুহা হাসছে। মনে হচ্ছে বুকের ওপর থেকে একটা পাথর নেমে গেছে তার।
_____________
চলবে………
@ফারজানা আহমেদ

রঙ তুলির প্রেয়সী ১৫.

0

রঙ তুলির প্রেয়সী
১৫.

বাড়ির উঠোনে এসে গাড়ি আঁটকালো রিয়াদ। অনেক বড় উঠোন। একেবারে শেষ প্রান্তে গিয়ে গাড়িটা পার্ক করলো রিয়াদ। এইখানে আলাদা কোনো পার্কিং নেই। হেলাল আহমেদরা আগেই চলে এসেছেন দেখা যাচ্ছে। সবাই গাড়ি থেকে নেমে গেল জাওয়াদ ছাড়া। আদিয়া তিথিকে নিয়ে এগিয়ে গেল। ঘরের সাথে লাগোয়া বড় বড় তিনটা সিঁড়ি। ভেতরে যাওয়ার দরজা দুইটা। তিথি যেতে যেতে আদিয়াকে জিজ্ঞেস করলো, ‘দুইটা দরজা কেনরে?’

‘এইযে প্রথমটা হচ্ছে বড় মামার ঘরের। আর তার পরেরটা ছোট মামার।’

‘আলাদা থাকেন নাকি সবাই?’

‘আরে না। চুলা এক। কিন্তু ঘর আলাদা আরকি। এই দুইটা হচ্ছে দুইজনের ঘরের ফটিক।’

‘ফটিক?’ ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে তিথি।

‘আহ, মানে ড্রয়িং রুম।’

‘ও। কিন্তু আমরা ঢুকবো কোন ঘরে প্রথমে?’

আদিয়া হেসে বললো, ‘যেকোনো একটা দিয়ে ঢুকলেই হবে। শুধু এই দুইটা ঘরই এমন আলাদা। ঢোকার পরে ভেতরে যাওয়ার আরেকটা দরজা আছে।’ বলতে বলতে বড় মামার ঘরের দিকে গেল আদিয়া তিথিকে নিয়ে।
_______________
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
‘জাওয়াদ, কী হলো? নামছিস না কেন ভাই?’ রিয়াদ গাড়ির দরজা খুলে জাওয়াদের হাতে ধরে টান দিলো।

‘কেমন একটা আড়ষ্টতা কাজ করছে। ভালো লাগছেনা। ইচ্ছে হচ্ছে ফিরে যাই।’ উদাস গলায় বললো জাওয়াদ। বুকের ভেতরটা কেমন করছে তার।

‘বুঝতে পারছি। অনেকদিন পর তো। নেমে আয়।’ জাওয়াদকে টেনে নামালো রিয়াদ। তারপর বললো, ‘চল। নরমাল বিহেভ কর।’

‘ত-তুই চাবি দে। আমি যাই। তোরা থাক।’ অস্থির হয়ে বললো জাওয়াদ।

রিয়াদ বিরক্তির সাথে ‘চ’ কারান্ত শব্দ করলো। তারপর বললো, ‘মাহির স্মৃতি থেকে পালিয়ে বেড়াতে চাইছিস? অথচ নিজের ঘরেই একগাদা স্মৃতি নিয়ে পড়ে থাকিস সারাদিন। লিসেন ব্রো, তিথির কথা মাথায় রাখ।’

‘রিয়াদ। ঐ মেয়েটা এসেছে এখানে। আমার মাথায় রক্ত উঠে যায় ওরে দেখলে। গলা টিপে ধরতে ইচ্ছে করে।’

‘ইগনোর কর। আর নরমাল বিহেভ কর। তুই এমন করলে সবাই বুঝে যাবে।’

‘হুম।’ বলে বড় একটা নিশ্বাস নিলো জাওয়াদ। তারপর পা বাড়ালো ঘরের দিকে।
______________

তিথি জড়সড় হয়ে বসে আছে। এতোজন অচেনা মানুষের মাঝে সে কোনোদিন থাকেনি। এই মুহূর্তে তার খুব অস্বস্তি হচ্ছে। সবাই একের পর এক প্রশ্ন করেই যাচ্ছে। মিনমিন করে উত্তর দিচ্ছে সে। তবে বোঝাই যাচ্ছে আসলেই সবাই খুব মিশুক। হেলাল আহমেদ আর মুনতাহাকে কোথাও দেখা যাচ্ছেনা। অন্য কোনো ঘরে আছেন হয়তো। আদিয়াদের দুই মামীই খুব ভালো। খুব আদুরে গলায় কথা বলেছেন তিথির সাথে। মামারাও আদর করে কথা বলেছেন। যেন কতোদিনের চেনা! কিন্তু তিথিই সহজ হতে পারছেনা। কারণটা সে বুঝতে পারছেনা, সে তো খুব সহজেই সবার সাথে মিশে যায়। তাহলে? হুট করে কী হলো? হুট করে এতোজন অচেনা মানুষের সামনে এসে হয়তো মানিয়ে নিতে সময় লাগছে। এমনসময় তিথি দেখলো একজন বৃদ্ধা এসে ঢুকলেন রুমে। সাথে দুটো সুন্দরী মেয়ে। এদের মধ্যে একটা মেয়েকে খুব চেনা চেনা লাগলো তিথির। যেন কোথাও দেখেছে দেখেছে।

‘নানু!’ বলে একটা চিৎকার দিয়ে উঠে গিয়ে বৃদ্ধা মহিলাকে জড়িয়ে ধরলো আদিয়া। তিথি বুঝতে পারলো, ইনি ওদের নানু।

‘ভালো আছিস?’ হাসতে হাসতে আদিয়ার মাথায় হাত বুলালেন চাঁনতারা বেগম।

‘হ্যাঁ। তুমি?’

‘ভালো।’ বলে তিথির দিকে তাকালেন চাঁনতারা বেগম। তিথি উঠে দাঁড়িয়ে হেসে সালাম দিলো। চাঁনতারা বেগম এগিয়ে গিয়ে ওর সামনে দাঁড়ালেন। তারপর তিথির গালে, মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন, ‘ভালো আছিস বোন?’

তিথির প্রাণটা যেন জুড়িয়ে গেল। মনে হচ্ছিলো একদম যেন নিজের মায়ের মা’র সামনে সে দাঁড়িয়ে আছে। এতো আপন আপন মনে হচ্ছিলো! তিথি হেসে চাঁনতারা বেগমকে জড়িয়ে ধরলো। চাঁনতারা বেগম তিথির মাথায় হাত বুলালেন। তিথি জড়িয়ে ধরেই বললো, ‘আমি ভালো আছি নানু। আপনি কেমন আছেন?’

‘ভালো আছি। দেখি দেখি ছেড়ে সামনে দাঁড়া তো তোকে দেখি।’ বলে তিথিকে ছেড়ে সামনে দাঁড় করালেন। তারপর কণ্ঠে মুগ্ধতা ছড়িয়ে বললেন, ‘বাহ! কী সুন্দর হয়েছিস৷ একদম তোর মায়ের মতো। না, সুমেলির থেকেও সুন্দরী হয়েছিস। পুতুলের মতো!’

তিথি লজ্জা পেলো। নিচের দিকে তাকিয়ে রইলো। ফাহি নীরবতা ভেঙ্গে আস্তে করে আদিয়াকে বললো, ‘সত্যিই খুব সুন্দরী। ফুপির বান্ধবীর মেয়ে তাইনা? তোদের ওখানে থাকে?’

‘হ্যাঁ। খুব ভালো গো ও।’ বললো আদিয়া।

এতোক্ষণ থেকে নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে আছে নুহা। কোনো কথা বলছেনা কারো সাথে। শুধু আদিয়ার সাথে একটু কুশল বিনিময় করেছিলো। পরক্ষণেই তিথির দিকে চোখ পড়তেই হুট করে মনটা বিষিয়ে উঠলো যেন। চোখের সামনে একটা পরিচিত মুখ মনের অজান্তেই ভেসে উঠলো। সুন্দরী মেয়েরা সবসময় তার থেকে সুন্দরী মেয়েকে হিংসে করে। নুহার বেলায়ও তাই হলো। তিথি জাওয়াদের পাশাপাশি থাকে দিনরাত, এই কারণটাই নুহার মন বিষিয়ে যাওয়ার মূলে। অন্য মেয়েকে সে জাওয়াদের পাশাপাশি সহ্য করতে পারেনা। তারওপর এরকম একটা সুন্দরী… যতোবারই সে তিথির দিকে তাকাচ্ছে, ততোবারই মস্তিষ্কের ভেতর যেন বিষ ছলকে উঠতে লাগলো। সে একটা তাচ্ছিল্যের হাসি মুখে ফুটিয়ে আদিয়াকে উদ্দেশ্য করে বললো, ‘কীভাবে বুঝলি ভালো? এরকম অনাথ মেয়েরা কেমন থাকে সবারই জানা। ফুপি যে কীভাবে এরকম জোয়ান একটা মেয়েকে এনে রাখলো! জোয়ান দুটো ছেলে বাড়িতে। এসব মেয়ে ঝোপ বুঝে কোপ মারে।’

বিরক্তি নিয়ে তাকালো ফাহি আর আদিয়া। আদিয়া বললো, ‘নুহাপু, সবসময় নেগেটিভ ভেবো না। তিথি আসলেই ভালো।’ বলে তিথির দিকে এগিয়ে গেল আদিয়া। নুহা আর ফাহিও গেল। আদিয়া গিয়েই তিথিকে পরিচয় করিয়ে দিলো ফাহি আর নুহার সাথে, ‘এই তিথি। এই হচ্ছে ফাহি আপু। বড় ভাইয়ার ঘরে একটা ছবি দেখলিনা? উনার বোন। আমাদের বড় মামার মেয়ে। আর ইনি নুহা আপু। আমাদের খালাতো বোন।’

তিথি দুজনকেই সালাম দিলো। এবার বুঝতে পারলো কেন ফাহিকে তার চেনা চেনা লাগলো। ঐ ছবির মেয়েটার মতো লাগে দেখতে। নুহা আদিয়াকে জিজ্ঞেস করলো, ‘ঐ দুটো কই? জাওয়াদ রিয়াদ?’

কেউ কিছু বলার আগেই রিয়াদ আর জাওয়াদ এসে ঢুকলো। আদিয়া জিজ্ঞেস করলো, ‘ছিলে কোথায় তোমরা?’

রিয়াদ বললো, ‘উঠোনে গোবর ছিলো। জাওয়াদের পা গেড়ে গেছিলো। পুকুরে ছিলাম। এই নুহা, কোনো কাজ তো জীবনে করিসনা। আসার পরে গোবরগুলো পরিষ্কার করতে পারলিনা?’

নুহা রেগে গিয়ে বললো, ‘তোরে আমি লাথি দেবো।’

‘হ্যাঁ এটিই শুধু পারিস।’ বলে আড়চোখে একবার ফাহিকে দেখে নিলো রিয়াদ। কেমন একটা জড়তা এসে ভর করতে লাগলো তার মাঝে। ফাহিও লজ্জায় কেমন আড়ষ্ট হয়ে গেল। কদিন থেকে রিয়াদের সাথে তার বিয়ের কথাবার্তা চলছে। নুহার কাছে শুনেছে রিয়াদ নাকি তাকে পছন্দ করে। এটা মনে হতেই লজ্জায় লাল হয়ে যেতে লাগলো ফাহি। সে কাজের বাহানায় বেরিয়ে গেল সেখান থেকে। নুহার নজর পড়লো জাওয়াদের দিকে। আগের থেকে আরো বেশি হ্যান্ডসাম হয়েছে। আগের মতোই জাওয়াদকে দেখলে বুক ধুকপুক করে নুহার। কিন্তু আশ্চর্য! জাওয়াদ একটা বারের জন্যও তাকাচ্ছেনা নুহার দিকে। যেন সে নুহার উপস্থিতি টেরই পায়নি। নুহার ভেতরটা কেঁদে উঠলো।

‘নানু আমার লক্ষ্মী নানু। কেমন আছো?’ চাঁনতারা বেগমকে জড়িয়ে ধরলো জাওয়াদ। তখনই উনার পেছনে দাঁড়ানো তিথির দিকে চোখ পড়লো তার। হেসে দিলো জাওয়াদ তিথির দিকে তাকিয়ে। তিথিও নিচের দিকে তাকিয়ে হাসলো। এই জিনিসটা চোখ এড়ালোনা নুহার। তার বুকের ভেতরটা কেমন অজানা আশংকায় কেঁপে উঠলো। চাঁনতারা বেগম জাওয়াদকে ছেড়ে আলতো করে ওর গালে একটা থাপ্পড় দিয়ে বললো, ‘বুড়িটাকে এতোদিনে মনে পড়েছে?’

‘সবসময়ই পড়ে।’ জাওয়াদ উত্তর দিলো তিথির দিকে তাকিয়েই।

‘বুড়িটা তো আমাকে ভুলেই গেল।’ পাশে এসে দাঁড়িয়ে গোমড়া মুখে বললো রিয়াদ।

চাঁনতারা বেগম হেসে বললেন, ‘হয়েছে আর ঢং করা লাগবেনা। কী যে শান্তি লাগছে! এতোদিন পরে আমার ভাইদের দেখে।’ বলে দু’হাতে জাওয়াদ আর রিয়াদের মাথায় হাত বুলালেন উনি। তারপর আবার বললেন, ‘যা তোরা গোসল টোসল করার হলে করে নে। এতো দূর থেকে এসেছিস।’

রিয়াদ বললো, ‘হ্যাঁ, তার আগে মামা মামীদের সাথে দেখা করা লাগবে। আর মা বাবা কই, আদিয়া?’

‘বাবা শুয়ে রেস্ট নিচ্ছেন। আর মা মনেহয় পুকুরে গোসল করছেন।’

নুহা বললো, ‘জাওয়াদ তোরা গোসল করবি? পুকুরেই করতে হবে। আজকে মটরে কী যেন হয়েছে এখানে। পানি নেই। বিকেলের দিকে মিস্ত্রি আসবে।’ বলে জাওয়াদের দিকে তাকালো উত্তরের আশায়। কিন্তু জাওয়াদ ওর দিকে ফিরে পর্যন্ত তাকালো না। রিয়াদ বললো, ‘ভালোই হবে। ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা পানি আছে। আরাম লাগবে।’

জাওয়াদের এই অবহেলা সহ্য হচ্ছেনা নুহার। সে জাওয়াদের দৃষ্টি অনুসরণ করছে। জাওয়াদের দৃষ্টি বারবার একটা জায়গায়ই গিয়ে ঠেকছে। যা দেখে নুহার ভেতরটা বারংবার বিষিয়ে উঠছে। ভেতরের সেই পুরোনো সত্ত্বাটা জেগে উঠছে। সে নিঃশব্দে প্রস্থান করলো। নুহা যেতেই চাঁনতারা বেগমও বেরিয়ে গেলেন। আদিয়া তিথির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো, ‘তুই সাঁতার জানিস?’

তিথি ডানে বামে মাথা নাড়লো। আদিয়া বললো, ‘তাহলে তোর গোসল করতে হবেনা। হাত পা ধুয়ে নিবি। তারপর পানি এলে বাথরুমে গোসল করবি।’

‘আচ্ছা।’

‘দিন অনেক লম্বা হয়ে গেছে দেখি। সবেমাত্র সাড়ে বারোটা বাজলো। তিথি আয় তোকে বাড়ি ঘুরে দেখাই।’

‘একটু বোস। আমার কারে বসলে বমি পায়। অনেক কষ্টে বমি আঁটকে এসেছি। শেষের দিকে তো জানালা লাগিয়ে রেখেছিলি।’

‘ও! এজন্যেই এখনও কিছু খাসনাই তুই। আরে, আগে বলবিনা? খারাপ লাগছে? শুবি?’

‘না না, ঠিক আছি এখন।’ বলে একবার আড়চোখে জাওয়াদের দিকে তাকায় তিথি। দেখে এদিকেই তাকিয়ে আছে সে। আশ্চর্য! ছেলেটা এভাবে কেন দেখছে তাকে? আজ সারাদিন থেকে যতোবারই ওর দিকে চোখ পড়েছে ততোবারই দেখেছে তিথি, জাওয়াদ তার দিকে তাকিয়ে আছে। সেই চাহনি অদ্ভুত! কেমন বুক কাঁপে তিথির।

জাওয়াদ তাকিয়ে আছে তিথির দিকে। এ কেমন নেশায় বুদ হলো সে? বারবার যেনো তিথি তাকে টানছে। পায়ের ওপর পা তুলে নিজের খোঁচা খোঁচা দাড়িতে হাত বুলাতে বুলাতে এক দৃষ্টিতে দেখছে তিথিকে জাওয়াদ। রিয়াদ এতোক্ষণ মোবাইলে কিছু একটা দেখছিলো। শেষ করে মোবাইল পকেটে রেখে জাওয়াদকে তাড়া দিলো, ‘জাওয়াদ, চল চল। গরম লাগছে অনেক।’

‘হুম।’ বলে উঠলো জাওয়াদ। ওরা চলে যেতেই তিথি স্বস্তির নিঃশ্বাস নিলো। এতোক্ষণে অস্বস্তি যেন চেপে রেখেছিলো তাকে।
__________

চলবে………
@ফারজানা আহমেদ