Friday, July 18, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1920



রঙ তুলির প্রেয়সী ১৪.

0

রঙ তুলির প্রেয়সী
১৪.

‘ফাহি, ও ফাহি, এদিকে আয় তাড়াতাড়ি আয়। হ্যারে এতোদিন পরে বুঝি আমার নাতিটার অভিমান ভাঙ্গলো রে! ও বড় বৌমা, আরে কই গেলে তোমরা?’ হাঁক ছাড়লেন চাঁনতারা বেগম। মুখ তাঁর উজ্জ্বল। চোখ চিকচিক করছে খুশির অশ্রুতে। যেনো এক্ষুণি টুপ করে পড়বে গাল বেয়ে। শাড়ির আঁচলে সাবধানে চোখ মুছে নিলেন।

‘নানু, এভাবে চিল্লাতে তোমাকে কতোবার মানা করেছি বলোতো! এমন করলে শরীরের ক্ষতি হবে।’ চায়ের কাপটা বিছানার পাশে টুলের ওপর রেখে বললো নুহা।

‘আরে আমার তো ইচ্ছে করছে লাফিয়ে লাফিয়ে নাচি। সেই শক্তি তো আর শরীরে নেই।’ উল্লাসে ফেটে পড়ে বললেন চাঁনতারা বেগম।

‘কী এমন হয়েছে শুনি? আর আমার মোবাইলটা কই রাখলা দাদু?’ রুমে ঢুকেই এদিক ওদিক নিজের মোবাইল খুঁজতে লাগলো ফাহি।

‘তোর মোবাইল নানুর হাতে।’ বললো নুহা। ফাহি চাঁনতারা বেগমের হাত থেকে মোবাইল নিয়ে জিজ্ঞেস করলো, ‘ব্যাপার কী?’

চাঁনতারা বেগম ফাহির দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘যা তো, বেশি করে তুঁতফল পেড়ে নিয়ে আসবি। কাঁচাগুলো ঝাল দিয়ে চাটনি করবি। ধনেপাতা দিবি। আদিয়া বলে দিয়েছে এমন করে রাখতে। আর পাকাগুলো আলাদা রাখবি। আমার জাওয়াদ খুব পছন্দ করে পাকা তুঁতফল।’

জাওয়াদের নাম শুনতেই চমকে উঠলো নুহা। সে জিজ্ঞেস করলো, ‘যাওয়ার সময় সাথে নিয়ে যাবে? তাহলে হালকা পাকা যেগুলো সেগুলো গাছেই থাকুক। ওরা তো থাকবে আজকে সবাই। যাওয়ার সময় পাড়া যাবে। তখন পেকেও যাবে।’

‘হ্যাঁ হ্যাঁ। নুহা আপু ঠিক বলেছে।’ হ্যাঁ তে হ্যাঁ মেলালো ফাহি।

‘বেশি কথা বলিস কেন? যাওয়ার সময় তো নিয়ে যাবেই। এখন এসে খাবে না? আমি সেজন্যেই পাড়তে বলেছি।’ বলে উঠে দাঁড়ালেন চাঁনতারা বেগম। তারপর টুলের ওপর থেকে চায়ের কাপ হাতে নিয়ে বললেন, ‘দুটোতে মিলে গল্পে লাগাইলি আমাকে। চা টা ঠাণ্ডা হয়ে গেল। যাই তো একটু রান্নাঘরে। চা ও গরম করে দিতে বলবো।’

‘কিন্তু দাদু জাওয়াদ ভাইয়া তো আ…’

ফাহিকে থামিয়ে দিয়ে চাঁনতারা বেগম হেসে বললেন, ‘আসবে আসবে। জাওয়াদ আসবে। এক্ষুণি আমাকে রিয়াদ বললো। যাই যাই, আমি গিয়ে বলি পাটপাতা চাটনি আর কাঠাল বিচির ভর্তা করে রাখতে। আমার জাওয়াদটা কতো পছন্দ করে!’ বলে বেরিয়ে গেলেন উনি। উনি বেরিয়ে যেতেই ফাহি বললো, ‘নুহাপু! শুনলে তুমি? জাওয়াদ ভাইয়া আসবে! কত্তোদিন পর আমরা সব কাজিনসরা একসাথে হবো!’

নুহা যেন খানিক স্তব্ধ হলো। তার কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছেনা জাওয়াদ আসবে। জাওয়াদ সত্যিই আসবে? সে একবার তাকালো ফাহির দিকে। ফাহি হাসছে। হেসে দিলো নুহাও। কেমন যেন কান্না পেয়ে যাচ্ছিলো তার। কতোদিন… কতো কতো দিন পর দেখতে পাবে সে জাওয়াদকে…
_________________________

একটা গাড়িতে টুনি, হেলাল আহমেদ আর মুনতাহা যাচ্ছেন। আরেকটা গাড়িতে জাওয়াদ, রিয়াদ, আদিয়া আর তিথি। গাড়ি চলছিলো। হেলাল আহমেদ ড্রাইভিং সিটের পাশের সিটে বসেছিলেন। পেছনে মুনতাহা আর টুনি। হেলাল আহমেদ ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে তাকিয়ে বললেন, ‘জাওয়াদকে কীভাবে রাজি করালে?’

মুনতাহা বললেন, ‘আমি কিছুই করিনি। আমি তো ভেবেছিলাম বরাবরের মতোই তোমার ছেলে আসছেনা। আমিতো একটু আগেই দেখলাম গাড়িতে উঠছে। যা করার রিয়াদই করেছে।’

‘তাই বলো। যাই হোক, অনেকদিন পরে সবাই একসাথে যাচ্ছি। ভালো লাগছে খুব।’
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
মুনতাহা কিছু বললেন না। সিটে হেলান দিয়ে বসলেন। পাশে বসা টুনি খানিকক্ষণ পরপর জানালার দিকে মুখ করে ওড়নায় মুখ চেপে হাসছে। তার কারণ হচ্ছে সামনে বসা ড্রাইভার আব্দুল লুকিং গ্লাসে তাকিয়ে চোখ টিপ দিয়েছে ওকে। টুনির এই বারবার হাসি নজর এড়ালোনা মুনতাহার। তিনি একবার ওর দিকে তাকিয়ে কপাল কুঁচকালেন। টুনি ঘাড় ঘুরাতেই দেখে মুনতাহা কপাল কুঁচকে দেখছেন তাকে। সে চট করে আবার জানালার দিকে তাকালো। তার বুকটা দুরুদুরু করছে।

তিথি ডানদিকে বাকা হয়ে বসে জানালার দিকে তাকিয়ে আছে। এক সেকেন্ডের জন্যও সে সোজা হয়ে বসতে পারছেনা। কারণ ড্রাইভিং সিটের পাশের সিটে জাওয়াদ বসে আছে। লুকিং গ্লাসটা একেবারে নিজের দিকে দিয়ে রেখেছে। সোজা হয়ে বসলেই লুকিং গ্লাসে জাওয়াদের মুখ দেখা যাচ্ছে। তিথি ডানদিকে বসার কারণে জাওয়াদের ডানদিকের সাইডও দেখা যাচ্ছে। জাওয়াদ একটু মাথা নাড়ালেই তিথির চোখে চোখ পড়ছে। মহা মুশকিল হয়েছে, এদিকে একসাইড হয়ে বসতে বসতে ডান হাতটায় চাপ লাগছে, কোমরেও খানিক ব্যথা করছে। হঠাৎ পাশ থেকে আদিয়া বলে উঠলো, ‘এই তিথি, এভাবে বসেছিস কেন? এদিকে ফিরে বস গল্প করি।’

আস্তে আস্তে সোজা হয়ে বসলো তিথি। বসতেই চোখ পড়লো সামনে আর সেই একই অবস্থা! দেখলো জাওয়াদকে। সমস্যা হচ্ছে জাওয়াদকে দেখলে চোখ ফেরাতে পারছেনা তিথি। হালকা নীল রঙের একটা টি-শার্ট পরেছে সে। এই একেবারে নরমাল ড্রেসআপেও চোখ ধাঁধিয়ে যাচ্ছে তিথির ওর দিকে তাকালেই। আরো বেশি লজ্জা লাগছে তিথির কারণ সেও একইরকম নীল রঙের টপস পরেছে। যদিও এখানে লজ্জা লাগার কিছু নেই তারপরেও তিথির খুব লজ্জা লাগছে। হঠাৎ করে তিথির কী হয়ে গেল, জাওয়াদের দিকে তাকালেই দুনিয়ার সব লজ্জা এসে তার ওপর ভর করে। এমন কেন হচ্ছে সে জানেনা। রিয়াদ ড্রাইভ করছিলো। সে বললো, ‘তিথি কিছু খাবে? চকলেট বা আইসক্রিম?’

‘ন-না ভাইয়া, লাগবেনা কিছু।’ মিনমিন করে বললো তিথি।

আদিয়া বললো, ‘এই আসার সময় না বললি আইসক্রিম খাবি?’

এটা শোনার সাথেসাথে পেছনে ফিরে তাকালো জাওয়াদ। তিথির চোখে চোখ পড়লো। তিথির যেন একটুর জন্য মনে হলো নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যাবে। সে চোখ ফিরিয়ে আদিয়াকে বললো, ‘না এখন লাগবেনা।’

‘একটু বনফুলেরর সামনে ব্রেক করিসতো রিয়াদ।’ জাওয়াদ রিয়াদের দিকে তাকিয়ে বললো। তারপর পেছনে ফিরে আদিয়াকে জিজ্ঞেস করলো, ‘কোন ফ্লেভার?’

আদিয়া খুশি হয়ে বললো, ‘চকলেট চকলেট।’

তিথি জানালার দিকে তাকিয়ে আছে। জাওয়াদ তিথির দিকে তাকিয়ে বললো, ‘তিথি তুমি কোন ফ্লেভার খাবে?’

এই প্রথম জাওয়াদের মুখে নিজের নাম শুনে চমকে উঠলো তিথি। মেরুদণ্ডে যেনো এক শীতল বাতাসের ঝাপটা লাগলো। কানের মাঝে বাজতে লাগলো জাওয়াদের বলা লাইনটা, ‘তিথি তুমি কোন ফ্লেভার খাবে? তিথি তুমি কোন ফ্লেভার খাবে? তিথি তুমি কোন ফ্লেভার খাবে?…’

‘তিথি…’ আবার ডাকলো জাওয়াদ। হুঁশ হলো তিথির। সে বললো, ‘হ-হ্যাঁ!’

জাওয়াদ বললো, ‘বললেনা কোন ফ্লেভার?’

‘চ-চকলেট…’

‘কুল।’

বনফুলের সামনে গাড়ি থামালো রিয়াদ। জাওয়াদ নেমে গিয়ে তিনটা আইসক্রিম কিনে আনলো। এসে গাড়িতে বসে পেছনে আদিয়ার হাতে দুইটা দিলো। আর একটা সে নিজের হাতে রাখলো। রিয়াদ গাড়ি স্টার্ট দিলো। তিথি আইসক্রিমটা হাতে নিয়ে বসে থাকলো। আস্তে আস্তে আঙ্গুল বুলালো। একটু আগে এই আইসক্রিমটা জাওয়াদের হাতে ছিলো। জাওয়াদের হাতের ছোঁয়া আছে এটাতে। আনমনে হাসলো তিথি। আইসক্রিম খেতে খেতে সামনে তাকাতেই দেখে জাওয়াদ লুকিং গ্লাসে তার দিকেই তাকিয়ে আছে। নিজে একটু আইসক্রিম খাচ্ছে, তারপর হাত বাড়িয়ে রিয়াদকে খাইয়ে দিচ্ছে। কিন্তু তাকিয়ে আছে লুকিং গ্লাসে তিথির দিকে। তিথির কেমন লাগলো। সে চোখ ফিরিয়ে নিয়ে জানালার বাইরে তাকালো। কিছুক্ষণ পর আইসক্রিম শেষ করে আবার সামনে তাকাতেই দেখে জাওয়াদ তাকিয়ে আছে। আশ্চর্য! এভাবে তাকাচ্ছে কেন? তিথির খুব অস্বস্তি হচ্ছে। সে নড়েচড়ে বসলো। এখনও জাওয়াদ তাকিয়ে আছে। নির্নিমেষ! তিথি একটু ভ্রু উঁচিয়ে ইশারা করলো, সাথেসাথে জাওয়াদ খুব অদ্ভুত ভাবে একটা হাসি দিলো চোখ ছোট ছোট করে। সেই হাসিতে কী ছিলো তিথি জানেনা। কিন্তু সেই হাসিটা দেখামাত্রই মনে হলো যেন তিথির বুকের ভেতরটা চিনচিন করে উঠলো। তিথি সিটে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করলো। পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত আর চোখ খুলবেনা সে… একদম না…
_________

চলবে……….
@ফারজানা আহমেদ

রঙ তুলির প্রেয়সী ১৩

0

রঙ তুলির প্রেয়সী
১৩.

দুই দিন থেকে জাওয়াদের চালচলন ভালো ঠেকছেনা তিথির কাছে। সারাদিন রুমে দরজা লাগিয়ে বসে থাকে। খাওয়ার সময় এসে কেমন অন্যমনস্ক হয়ে কোনোমতে কয়েক লোকমা খেয়েই চলে যায় আবার রুমে। এই দুই দিন জাওয়াদ অফিসেও যায়নি। কারো সাথে কথা বলেনা, কারো দিকে তাকায় ও না। এই দুই দিন তিথি জাওয়াদের সাথে একটু সময় কথা বলার জন্য অনেক উসখুস করেছে কিন্তু সুযোগ পায়নি। ভেবেছিলো জাওয়াদের রুমে গিয়ে একটু বসবে, কিন্তু দরজা সবসময় আঁটকানো থাকে বিধায় সেটাও করা যাচ্ছেনা। মুখ গোমড়া করে তিথি বসে আছে নিজের বারান্দায়। এমন সময় আদিয়া এলো।

‘কীরে, এতোক্ষণ থেকে খুঁজি আর তুই এখানে?’

তিথি আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো, ‘কেন খুঁজিস?’

‘আগে একটু সরে আমাকে বসতে দে তো।’

তিথি ফিরে তাকালো আদিয়ার দিকে। সরু চোখে তাকিয়ে বললো, ‘এইখানে তোর জায়গা হবে? তুই বসার সাথেসাথেই তো আমি ধুম করে পড়ে যাবো।’

‘তিথি একদম বেশি বেশি বলবিনা। নাহিদ সবসময় বলে আমাকে যে আমার কোমর একদম ফিটফাট।’ বলেই মুখ ভেংচি দিলো আদিয়া।

‘আচ্ছা? ওসব প্রেমিকরা একটু বাড়িয়ে তো বলবেই।’

‘উহুম, একদম বাড়িয়ে বলে না।’

‘বাড়িয়েই বলে। ও কীভাবে জানলো যে তোর কোমর ফিটফাট?’

‘ও জানবে নাতো কে জানবে? ও তো যখন আমাকে জড়িয়ে ধরে তখন তো আমার কোম…’ এইটুক বলেই তিথির দিকে তাকাতেই গলায় কথা আঁটকে গেলো আদিয়ার। তিথি হা হয়ে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। ইশ, কী বলতে কী বলে দিলো! লজ্জা লাগছে খুব আদিয়ার। মুখটা একদম লাল হয়ে গেছে। হঠাৎ করে তিথি হেসে উঠলো, একদম ডাকাতিয়া হাসি। আদিয়া আরো বেশি লজ্জা পেয়ে গেল। হাসতে হাসতে তিথি বললো, ‘পড়তে বসে এসব চলে, না?’
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
‘তিথি চুপ কর প্লিজ।’ দু’হাতে মুখ ঢেকে বললো আদিয়া। তিথি হাসলো আরো কিছুক্ষণ। তারপর সরে বসে জায়গা দিলো আদিয়াকে। আদিয়া এসে চেয়ারে তিথিকে এক হাতে জড়িয়ে ধরে বসলো। তিথি বললো, ‘খুঁজছিলি কেন?’

‘ওহ হ্যাঁ, শোন। কাল সকালে নানুবাড়ি যাবো সবাই। এটাই বলতে তোকে খুঁজছিলাম।’

‘সবাই মানে? আমিও?’

‘সবাই মানেতো ঘরের সবাই। আর ঘরের সবার মাঝে তুই আছিস সো তুইও।’

তিথি একটু নড়েচড়ে বসলো। তারপর বললো, ‘আমি কীভাবে যাবো… মানে, আমাকে কেউ চেনেও না।’

‘কুল! চেনেনা, চিনবে। আমাদের নানুবাড়ি সবাই অনেক মিশুক। তুই গিয়ে দেখিস, তোর মনেই হবেনা যে তুই প্রথমবার গেছিস।’

‘কিন্তু…’

‘আমি মাকে বলবো?’ চোখ রাঙালো আদিয়া।

‘ন-না।’

‘তাহলে বেশি কথা বলবিনা।’

তিথি আর কিছু বললোনা। আদিয়া বললো, ‘শোন, সেদিন যে আমরা একইরকম স্কার্ট কিনলাম না? সাথে একইরকম টপস? ঐটা পরবি বুঝলি। আমিও পরবো।’

‘আচ্ছা।’ বলে পাশের বারান্দায় দৃষ্টি নিবদ্ধ করলো তিথি। সেই লাঞ্চের সময় দেখেছিলো জাওয়াদকে। তারপর জাওয়াদ যে নিজের রুমে গিয়ে দরজা আঁটকালো, আর বেরোলোনা। আচ্ছা, কী এতো করে দরজা আঁটকিয়ে? কপাল কুঁচকে তাকিয়ে থাকলো তিথি জাওয়াদের বারান্দায়।
_______________

রিয়াদকে কল করে ঠাণ্ডা ড্রিংকস নিয়ে আসতে বললো জাওয়াদ। তারপর হেঁটে ছবি দুটোর সামনে গিয়ে দাঁড়ালো, যে ছবি দুটো সে দু’দিন দিন দুনিয়া ভুলে ঘরবন্দী হয়ে আঁকছিলো। দুটো ছবিই তিথির। তিথি বারান্দায় রেলিংএর দিকে পিছনদিকে হেলে দাঁড়িয়ে আছে চোখ বন্ধ করে। তিথির চুল পেছনদিকে রেলিংএর বাইরে ঝুলছে। বাতাসে নড়ছে। দু’হাত দু’দিকে প্রসারিত। ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হচ্ছে। ঠিক সেদিন যেভাবে তিথিকে দেখেছিলো, হুবহু সেভাবেই এঁকেছে জাওয়াদ। আরেকটা ছবিতে তিথি ঘুমোচ্ছে কাত হয়ে, গায়ে চাদর জড়ানো। সেদিন খুব কাছ থেকে দেখেছিলো জাওয়াদ তিথিকে। ঠিক সেভাবেই এঁকেছে। তিথির চোখ, নাক, ঠোঁট সবকিছু নিখুঁতভাবে এঁকেছে জাওয়াদ। এগিয়ে গিয়ে আলতো করে ছবিটায় হাত বুলালো জাওয়াদ। তারপর তিথির বৃষ্টিতে ভেজার ছবিটার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। তারপর মুচকি হেসে বললো, ‘তুমি আমার বৃষ্টি বিলাসী। জানো? সেদিন আমার আত্মায় কাঁপন ধরিয়ে দিয়েছিলে। বৃষ্টির সাথে তোমার সৌন্দর্য মিলে একাকার হয়ে আমার হৃদয়ে ছুরি চালিয়েছে। সেই ছুরি চালানো ক্ষতটা যে একদম শুকাচ্ছেনা, বরং আরো বিস্তৃত হচ্ছে। বলোতো বৃষ্টি বিলাসী, আমার হৃদয়ের ক্ষত স্থানটা ভরাট করা যায় কীভাবে?’

দরজায় করাঘাতের শব্দে ঘোর কাটে জাওয়াদের। দরজা খুলে দেখলো দুটো টাইগারে বোতল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে রিয়াদ। জাওয়াদ দরজা খুলতেই হেসে বললো, ‘শুভ সন্ধ্যা ব্রাদার!’

জাওয়াদ হেসে ফিরতি শুভেচ্ছা জানালো। তারপর বললো, ‘আয় ভেতরে আয়।’

ভেতরে এসেই থমকে দাঁড়ালো রিয়াদ। হাত থেকে টাইগারের বোতল দুটো পড়ে গেল। ত্রস্ত পায়ে ছবি দুটোর সামনে গিয়ে দাঁড়ালো রিয়াদ। জাওয়াদ টাইগারের বোতল দুটো তুলে টেবিলে রেখে রিয়াদের পেছনে গিয়ে দাঁড়ালো। কিছুক্ষণ ছবি দুটোর দিকে তাকিয়ে পেছন ফিরলো রিয়াদ। মুখে তার হাসি, চোখ চিকচিক করছে জলে। সে বললো, ‘তুই ছবি এঁকেছিস!’

জাওয়াদ নিচের দিকে তাকিয়ে হাসলো। রিয়াদ জাওয়াদের কাঁধে হাত রেখে বললো, ‘তিথির ছবি। তার মানে তুই দু’দিন এটাই করছিলি। আর আমি চিন্তায় ছিলাম হুট করে তোর কী হলো।’

জাওয়াদ মুখ তুলে তাকালো। তার ঠোঁটে হাসি লেগেই আছে। রিয়াদ আবার বললো, ‘ইউ… ইউ আর…’ রিয়াদের গলা কাঁপছে। সে কথা পুরো করতে পারছেনা।

‘আই অ্যাম ইন লাভ ব্রাদার। এগেইন!’ হেসে রিয়াদের কথাটা পুরো করে দিলো জাওয়াদ। হুট করেই রিয়াদ দু’হাতে জড়িয়ে ধরলো জাওয়াদকে। জাওয়াদও ধরলো। রিয়াদের ভেতরটা যেন ভরে উঠলো খুশিতে। সে কাঁপা কাঁপা গলায় বললো, ‘আমি কিচ্ছু জানিনা। আমি শুধু এটা জানি যে, দু’বছর পর এই মেয়েটা তোর হাতে রঙ তুলি তুলতে বাধ্য করেছে। আমি এটা জানি যে, মাহির শেষ ইচ্ছাটা পূরণ হয়েছে।’

জাওয়াদ রিয়াদকে ছেড়ে দিয়ে মুচকি হাসলো। তারপর তিথির ছবির দিকে তাকিয়ে বললো, ‘তুই কি তিথির চুল দেখেছিস জাওয়াদ?’

‘দেখেছি তো।’

‘উহুম না। খোলা চুল।’

‘উম, না। খুলতে তো দেখলাম না। তবে এই ছবিতে দেখে অবাক হয়েছি। একদম…’

‘একদম মাহির চুলের মতো।’ জাওয়াদ বললো রিয়াদের দিকে তাকিয়ে।

‘হ্যাঁ।’

‘তিথির ঠোঁটের নিচেও তিল আছে। মাহির মতো।’

রিয়াদ হাসলো। বললো, ‘এইবারে আমি মা কে বলবো। দুই ভাইয়ের একই দিনে বিয়ে হবে। উফ, আমিতো…’

রিয়াদকে আঁটকে দিয়ে জাওয়াদ বললো, ‘এতো আগাম ভাবিস কেন তুই?’

‘মানে কী? বলবোনা! উনার ছেলে যে প্রেমে পড়েছে উনার মামণির উপর সেটা বলবোনা?’ অবাক হয়ে বললো রিয়াদ।

‘না বলবিনা। এইটা কাউকে বলবিনা তুই। আমি… আমি ওর মনোভাব জানতে চাই।’ অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে বললো জাওয়াদ।

‘তাহলে তুই যে আবার ছবি আঁকলি এটাতো বলতে পারি?’ জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায় রিয়াদ।

‘এটা বলা যায়।’

রিয়াদ হেসে দিলো। তারপর বিছানায় বসে টাইগারে চুমুক দিয়ে বললো, ‘যাই হোক, পিচ্চিটা কিন্তু প্রচুর ডেঞ্জারাস।’

জাওয়াদ রিয়াদের পাশে এসে বসে। টাইগারের বোতল হাতে নিয়ে বলে, ‘জানি।’ দুই চুমুক দিয়ে আবার বললো, ‘বলেছিলাম ঠাণ্ডা আনার জন্য।’

‘আমি এটাই পেয়েছি।’

তারপর কিছুক্ষণ দুজনেই চুপ। রিয়াদ খাওয়া শেষ করে বললো, ‘এবার? প্লান কী?’

‘কিসের প্লান?’

‘প্রপোজ করবি কবে?’

‘পাগল?’ জাওয়াদের কণ্ঠে জোর। সে আবার বললো, ‘ওসব আমি পারবোনা।’

‘ছবি আঁকলি কেন তাইলে?’

‘ছবি আঁকলাম বলে প্রপোজ করতে হবে?’

‘প্রপোজ না করলে জানবে কেমনে?’

‘মেয়েরা নাকি ছেলেদের চোখে তাকিয়ে সব বুঝে যায়?’

হো হো করে হেসে উঠলো রিয়াদ। জাওয়াদ ভ্রু কুঁচকে তাকালো। বললো, ‘হাসিস কেন?’

‘তুই প্রেম নিয়ে তাকাস নাকি ওর দিকে? তুই তো চোখে একরাশ ঝগড়া নিয়ে তাকাস।’

‘কই? এই কদিন আমাকে ঝগড়া করতে দেখেছিস? সন্ধিচুক্তি হয়ে গেছে।’

‘কিসের সন্ধিচুক্তি?’

‘সেদিন এসে বলেছে, আর ঝগড়াঝাটি করবেনা।’

রিয়াদ আবার হাসলো জোরে জোরে। এবার হাসতেই থাকলো। জাওয়াদ বালিশ ছুড়ে মারলো রিয়াদের দিকে। রিয়াদ সেটা দুহাতে ধরে কোনোরকম হাসি আঁটকালো। তারপর জোরে জোরে শ্বাস নিলো। কিছুক্ষণ চুপ করে জিরিয়ে নিলো। তারপর বললো, ‘কাল নানুবাড়ি যাবো।’

‘বল শ্বশুরবাড়ি যাবো।’ হেসে বললো জাওয়াদ।

‘ধুর। সেটা তো হওয়ার পরে।’

‘কখন যাবি?’

‘কখন যাবি মানে? আমরা সবাই যাবো।’

‘সবাই? আমিও?’

‘তুইও।’

জাওয়াদ হেসে দিলো। বললো, ‘আমি যাবো এটা কে বললো তোকে?’

‘আমি বলেছি। যাবিনা?’

‘কেন যাবোনা তুই জানিস।’

রিয়াদ নড়েচড়ে বসলো। তারপর জাওয়াদের দিকে তাকিয়ে বললো, ‘একজনের জন্য তুই ঐ বাড়ির সবকটা মানুষের সাথে এমন করতে পারিসনা জাওয়াদ। দু’বছর থেকে যাসনা। প্রতিবার এইভাবে মানা করে দেস। তাছাড়া, প্রতিবার নানু আক্ষেপ করেন। এবার অন্তত আয় জাওয়াদ। ঐ বাড়িটা তোর ভাইর শ্বশুরবাড়ি হতে যাচ্ছে।’

‘নানুকে এবার আসার সময় জোর করে নিয়ে আসিস।’ দায়সারাভাবে বললো জাওয়াদ।

‘কাজ হবেনা। জানিসই তুই না গেলে নানু আর আসবেনা।’

‘রিয়াদ প্লিজ…’

‘তিথিও যাবে।’

থমকে গেল জাওয়াদ। ঢোঁক গিলে বললো, ‘এসব বলে আমাকে ওখানে নিতে চাইছিস তুই? আমি যাবোনা রিয়াদ। ঐ মেয়েটাকে দেখলে আমার মগজে রক্ত উঠেযায়।’

‘মেয়েটাকে দেখবিনা। তিথিকে দেখবি। চলে আয় জাওয়াদ!’

জাওয়াদ চুপ করে বসে থাকলো। রিয়াদ আবার বললো, ‘প্লিজ ভাই। নানু অনেক আফসোস করেছেন আজ ফোন করে। খুউউব কেঁদেছেন।’

‘ওকে ফাইন। যাবো। শুধুমাত্র নানুর জন্য।’

হাসলো রিয়াদ। একটু টেনে টেনে বললো, ‘নানুর জন্য?’

জাওয়াদ চোখ রাঙায়। রিয়াদ হেসে উঠে দাঁড়ায় বেরিয়ে যাওয়ার জন্য। দরজার কাছে যেতেই জাওয়াদ পিছু ডাকে। রিয়াদ ফিরে তাকায়। জাওয়াদ বলে, ‘সেদিন তুই-ই অন্তুকে বেধম পিটিয়েছিলি। তাইনা রিয়াদ?’

চমকে ওঠে রিয়াদ। জাওয়াদের দিকে তাকাতে পারেনা। নিচের দিকে তাকিয়ে বলে, ‘কিসের পেটানো? কী বলছিস?’

‘ভেরি বেড এক্টিং রিয়াদ। বাই দ্য ওয়ে, দরজা লাগিয়ে যাস।’

তাড়াতাড়ি দরজা লাগিয়ে বেরিয়ে গেল রিয়াদ। ওখানে দাঁড়িয়ে থাকতে অস্বস্তি লাগছিল তার। রিয়াদ বেরিয়ে যেতেই হেসে দিলো জাওয়াদ। তারপর তিথির ছবিগুলোর দিকে তাকালো। উঠে গিয়ে খুব সাবধানে সেগুলো আলমারিতে তুলে রাখলো। তারপর মাহির ছবির সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। ছবির দিকে তাকিয়ে বললো, ‘পা মাড়াচ্ছি আবারও। নতুন অনুভূতি নিয়ে, পুরোনো স্মৃতির সাথে নতুনের সংমিশ্রণ করতে।’
________________

খাবার টেবিলে বসেই হেলাল আহমেদ প্রশ্ন করলেন, ‘তিথি মা কোথায়? আর জাওয়াদও তো আসলোনা।’

মুনতাহা বললেন, ‘তোমার ছেলে দু’দিন পরপর কী শুরু করে। এখন তো সারাদিন দরজা লাগিয়ে থাকে। ছেলেটার কী যে হলো!’

‘উফ মা, এতো চিন্তা করছো কেন তুমি? জাওয়াদ ছবি আঁকায় ব্যস্ত ছিলো।’ বললো রিয়াদ।

‘মানে!’ আদিয়া একপ্রকার চিৎকার করে উঠলো। মুনতাহা এতোই অবাক হলেন যে কিছু বলতে পারলেন না। হেলাল আহমেদ ও অবাক হলেন। রিয়াদ আদিয়ার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘চিক্কুর দিস কেন? ছবি আঁকতেই পারে।’

হেলাল আহমেদ বললেন, ‘তুই সত্যি বলছিস?’ উনার গলা কাঁপছে। মুনতাহা তো কেঁদেই দিয়েছেন। রিয়াদ উঠে এসে মুনতাহার চোখের পানি মুছে দিয়ে মাথায় হাত রেখে বললো, ‘মা, এইটা শুরু। তোমার ছেলে আবার আগের মতো হয়ে যাবে তুমি দেখো। একটু সময় দাও।’

আদিয়া কিছু বলছেনা। সে হাসছে মিটিমিটি। সে হয়তো বুঝে গেছে কিছু। মুনতাহা চোখ মুছে হেলাল আহমেদ এর দিকে তাকালেন। হেলাল আহমেদ হাসলেন নিচের দিকে তাকিয়ে। মুনতাহা হাঁক ছাড়লেন, ‘টুনি, যা তো জাওয়াদকে বল খেতে আসতে। তিথিকেও বলিস।’
_______________

তিথি রুম থেকে বেরিয়েই দেখে টুনি জাওয়াদের ঘরের দিকে যাচ্ছে। সে টুনিকে ডাকলো। টুনি এসে তার সামনে দাঁড়াতেই জিজ্ঞেস করলো, ‘কোথায় যাচ্ছো?’

‘বড় ভাইজান রে খাওনের জন্য ডাকতে। আপনেরেও ডাকে, খাইতে আহেন।’

‘আচ্ছা আমি উনাকে ডাকছি। তুমি যাও।’

‘আইচ্ছা। জলদি আহেন। সবাই হোয়াইট করতেছে।’

‘হোয়াইট?’ ভ্রু কুঁচকায় তিথি।

টুনি মাথায় হাত দিয়ে বললো, ‘ইশ আফা, ইংরিজি বুঝেন না? অপেক্ষা অপেক্ষা।’

‘ওহ আচ্ছা।’ হেসে দিলো তিথি। ওয়েট কে হোয়াইট বানিয়ে দিয়েছে টুনি। সে হেসে বললো, ‘আসছি। যাও।’

টুনি চলে গেল। তিথি পা বাড়ালো জাওয়াদের ঘরের দিকে। জাওয়াদের ঘরে গিয়ে দেখলো একটা হলুদ ডিম লাইট জ্বলছে। চারিদিকে তাকিয়ে দেখলো জাওয়াদ নেই। কোথায় গেল? নিশ্চয়ই বারান্দাতে। তিথি বারান্দায় গিয়ে উঁকি দিতে নিলো, তখনই কেউ ওর হাত ধরে টান দিয়ে মুখ চেপে ধরলো। ধাতস্থ হতেই হলুদাভ আলোতে খেয়াল করলো সে জাওয়াদের বুকে। জাওয়াদের এক হাত তার কোমরে আর এক হাতে মুখ চেপে ধরে আছে। চোখ দুটো বড় হয়ে গেল তার। বুকের ভেতর হাতুড়ি পেটা শুরু হলো। নিশ্বাস যেন এক্ষুণি বন্ধ হয়ে যাবে এমন অবস্থা। হলুদাভ আলোয় জাওয়াদকে এতো কাছ থেকে দেখে যেনো শরীর অবশ হয়ে আসতে চাইলো তার। তিথি নড়ছেও না। রোবটের মতো দাঁড়িয়ে আছে। জাওয়াদ ফিসফিস করে বললো, ‘প্রথমত, ঘুরেএ দাঁড়িয়ে আমাকে দেখলেও ভয় পেয়ে সেদিনের মতো পড়ে যেতে নিতে। তাই এভাবে আগেই ধরে রাখলাম। দ্বিতীয়ত, হুট করে আমাকে দেখে চিৎকারও দিতে পারতে তুমি, তাই সেফটির জন্য মুখ চেপে ধরলাম। এবার বলো, আমার ঘরে কেন?’

তিথি মুর্তির মতো তাকিয়ে আছে জাওয়াদের দিকে। তার যেন শরীরে শক্তি নেই একদম। বরফ হয়ে জমে গেছে সে। যতবারই মনে হচ্ছে তার কোমরে জাওয়াদের হাত, ততবারই যেন শরীর ভেঙ্গে অবশ হয়ে পড়ছে। সে কোনোমতে কিছু একটা বললো, কিন্তু কথাটা চাপা পড়ে গেল। জাওয়াদ বুঝলোনা। পরক্ষণেই মনে হলো সে তো তিথির মুখ চেপে ধরেছে। ছেড়ে দিলো তিথির মুখ। ফোঁৎ করে নিশ্বাস ছাড়লো তিথি। তারপর দুর্বল শরীরে জাওয়াদের থেকে নিজেকে ছাড়ানোর জন্য খানিক শক্তি প্রয়োগ করে জাওয়াদকে সরানোর জন্য ধাক্কা দিল। কিন্তু জাওয়াদ তাকে ছাড়ার বদলে ভ্রু কুঁচকে তাকালো। হলুদাভ আলোয় সেই ভ্রু কুঁচকে তাকানোটা যেন তিথির বুকে গিয়ে লাগলো। হায় আল্লাহ! এভাবে মাথাটা ঘুরছে কেন!

‘আ-আপ-আপনাকে খেতে ডাক-ডাকছে।’

জাওয়াদ তিথিকে ছেড়ে দিয়ে বললো, ‘তাই বলো।’ বলেই হেটে চলে গেল। দরজার কাছে গিয়ে আবার দাঁড়িয়ে পড়লো। তারপর পেছন ফিরে বললো, ‘বাই দ্য ওয়ে। তোমার কোমর আসলেই পাতলা। ঠিকমতো খাবারদাবার খেও।’ বলেই বেরিয়ে গেল জাওয়াদ। তার ঠোঁটে অদ্ভুত হাসি। কথাটা কানে আসতেই ধুপ করে ফ্লোরে বসে পড়লো তিথি। তার পুরো শরীর তিরতির করে কাঁপছে। বুক করছে ধড়ফড়। সে দু’হাতে মুখ ঢেকে বসে রইলো। এতো কাছে এসে যেনো সবকিছু এলোমেলো লাগছে তার।
__________

চলবে…….
@ফারজানা আহমেদ
হয়েছে কী, আমি একটা বিশেষ কাজে খুব ব্যস্ত। একটা নতুন থিম নিয়ে রিসার্চ করছি, অনেক পড়াশোনাও করতে হচ্ছে। তাই এই কদিন অনিয়মিত হতে পারে। আপনারা প্লিজ আমার জন্য দোয়া করুন, যে উদ্দেশ্য নিয়ে এটা করছি সেটা যেন সফল হয়। শেষ হলেই আমি আবার নিয়মিত হবো।

রঙ তুলির প্রেয়সী ১২.

0

রঙ তুলির প্রেয়সী
১২.

৭ মার্চ ২০১৮
————————–
তোকে রিসিভ করার জন্য রিয়াদ যাবে আমি জানি। তাই, এটা রিয়াদের হাতে দিয়ে বলবো যেনো এয়ারপোর্টে দাঁড়িয়েই এটা তোর হাতে ধরিয়ে দেয়। এই ডায়েরিটা যখন তুই পাবি, মনে হয় তখন আমি থাকবোনা। তখন আমি দূরে থাকবো। অনেক দূর। তোর ধরা ছোঁয়ার বাইরে। আমি জানি, এটা শেষ করার পরে তুই ক্রোধে ফেটে পড়বি। কেন তোকে কিছু জানানো হয়নি এটা বলে পুরো পৃথিবী এক করে দিবি। ফুপি, ফুপা, আদিয়া, রিয়াদ, মা, বাবা, সবার সাথে রাগারাগি করবি। খবরদার! আর যাই কর, আপন মানুষদের সাথে একদম রাগারাগি করবিনা বলে দিলাম। যদি রাগারাগি করিস, এটা নিয়ে কোনোদিন কাউকে একটাও কথা বলিস তাহলে আমি ভাববো… হয়তো সত্যিই আমাদের মধ্যে ভালোবাসা বলতে কিছু ছিলো না। এটাকে যদি ভালোবাসার দোহাই দেয়া বলিস, তবে তা-ই। আমিই সবাইকে মানা করেছি যাতে তোকে কেউ কিচ্ছুটি না বলে। আমিতো জানি এই ট্রিপটা শুধুই তোর বন্ধুদের সাথে বেড়ানোর জন্য নয়। ওখানে তুই আরো একটা উদ্দেশ্য নিয়ে গিয়েছিস। ছবি আঁকা প্রতিযোগিতা। জিতলে তোর সলো এক্সিবিশন হবে। তোকে যদি ওরা এসব বলতো তাহলে সব ফেলে তুই চলে আসতি। কী ভেবেছিস? আমাকে না বললে আমি জানবোনা? আমি ঠিক ঠিক জেনে নিয়েছি। শুধু আফসোস থেকে গেল, নিজের চোখে তোর সাফল্য দেখে যেতে পারলাম না। অবশ্য, তোকে না বলার আরো একটা কারণ আছে। এটা তোর শাস্তি। কিসের শাস্তি? এইযে আজ পুরো নয় দিন কেটে গেছে, তুই আমার ফোন তুলছিস না। এইজন্য আমি তোকে শাস্তিটা দেবো। এসে যখন দেখবি আমি নেই, তখন পস্তাবি। কেন একবার আমার সাথে কথা বলিসনি সেজন্য খুব কাঁদবি। জানিস? বড্ড অভিমান জমেছে বুকে। পাহাড় সমান। না না, পাহাড় না, আকাশ সমান। অসীম। যেদিন তুই আমাকে ঐ কথাগুলো বললি সেদিন আমি কেঁদেছি। অনেক কেঁদেছি। এইযে এখন লিখছি, এখনও কেঁদেকেটে ডায়েরিটা ভরিয়ে দিচ্ছি। তবে সেদিনের কান্নাটা ছিলো আমার শুধুই বেদনার কান্না। আর আজকের কান্নাটা হচ্ছে অভিমান, আর সাথে শারিরীক কষ্টেরও। এইযে বসেছি, বসতে অনেক কষ্ট হচ্ছে তবুও বসেছি। কারণ লিখতে হবেই আমায়। কোমরে ব্যথা করছে খুব। তবুও দাঁতে দাঁত চেপে সেটা সহ্য করছি আমি। লেখার মাঝে কয়েকবার উঠে হাঁটছি। তবুও লিখছি। আচ্ছা জাওয়াদ, আমাকে এভাবে অবিশ্বাস করলি কেন? কীভাবে ভাবলি আমি এমন করবো? একবারও খুঁতিয়ে দেখলিনা কেন যে ও সত্য বলছে নাকি মিথ্যা? সেদিন তুই আমাকে ঐ কথা জিজ্ঞেস করার পর আমি তোকে ফিরতি কোনো উত্তর দেইনি বলে তুই রাগ করেছিস। কিন্তু আমি কেন উত্তর দেইনি সেটা কি ভেবেছিলি জাওয়াদ? সেদিন তুই আমাকে জিজ্ঞেস করেছিস আমি এরকম ‘কেন করেছি?’। মানে তুই ভেবেই নিয়েছিস আমি এমন করতে পারি। তুই যদি এই ‘কেন করেছিস?’ না জিজ্ঞেস করে এই ঘটনা সত্যি না মিথ্যা এটা জিজ্ঞেস করতি তাহলে হয়তো আজ সবকিছু অন্যরকম হতো। প্রেয়সীর ঠোঁট আর ঠোঁটের নিচের তিলে পরম আবেশে চুমু খেলেই ভালোবাসা হয়ে যায় না। প্রেয়সীর হাঁটু সমান চুলে নাক ডুবিয়ে ঘ্রাণ নিলেই ভালোবাসা হয়ে যায়না। প্রেয়সীর কপালে কপাল ঠেকিয়ে চোখে চোখ রেখে ঘণ্টার পর ঘণ্টা চেয়ে থাকলেই ভালোবাসা হয়না। ভালোবেসে প্রেয়সীকে বিশ্বাস করতে হয়। বিশ্বাসের আবরণই যদি না থকে, তাহলে কোনোকালেই সেটাকে ভালোবাসা বলে আখ্যায়িত করা যায়না। আমি জানি, তোর সামনে যে প্রমাণ রাখা হয়েছিলো সেটা ফেলে দেয়ার মতো না। আমি বলছিনা ফেলে দে। আমি শুধু বলছি, একবার কি আমাকে বিশ্বাস করা যেতো না? আমি সজ্ঞানে তোর ছোঁয়ানো ওষ্ঠদ্বয়ে অন্য কারো ছোঁয়া লাগতে দেবো সেটা তুই কীভাবে ভাবলি? থাক, কিছু বলবোনা। শুধু অনুরোধ করবো দেশে আসার পরে অন্তত আর কিছু না করলেও এটার সত্যতা যাচাই করে নিবি।

১০ মার্চ ২০১৮
—————————-
আজ ১২ দিন হয়ে গেল। তুই আমার ফোন তুলিসনা। কথা বলিসনা। আমার যে সময় ঘনিয়ে এসেছে সেটা যতই বুঝতে পারছি ততই কলিজাটা ছিঁড়ে যাচ্ছে। প্রিয়জনদের ছেড়ে দূরে যাওয়ার কষ্টটা খুব বেদনাদায়ক। কিন্তু চিরতরে পৃথিবী ছেড়ে চলে যাওয়ার আগাম বার্তা পাওয়ার পর সেই বেদনার আগুন শিখা হৃদয়কে দগ্ধ করে দেয়। আর যতোই দিন ঘনাতে থাকে ততোই হৃদয়টা ক্ষতবিক্ষত হতে থাকে। তোকে খুব মনে পড়ছে। আমি খেতে পারিনা, ঘুমাতে পারিনা… নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে আমার।বাবা প্রতিদিন আমার মাথার কাছে বসে থেকে কাঁদে। মা উদ্ভ্রান্তের মতো কাঁদে। ফাহি তো কিছুক্ষণ পরপর এসেই আমাকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে কাঁদে। ফুপি তোকে কল করে বলে দিতে চেয়েছিলেন, বলতে দেইনি। তুই প্লিজ এসে এদের কারো সাথে রাগ করিসনা। জানিসই তো, মৃত্যুপথযাত্রী ব্যক্তির ইচ্ছা পূরণ করতে হয়। এরাও আমার ইচ্ছাটাই পূরণ করছে। আমিই এদের মানা করেছি তোকে কিছু না বলতে। জানিস? রিয়াদও আমার জন্য কেঁদেছে। অবাক না? যে রিয়াদ আমাকে হিংসা করতো তুই ওর থেকে আমাকে বেশি ভালোবাসিস এটা বলে। সেই রিয়াদ আমার জন্য কেঁদেছে। ওকে যে আমি কীভাবে তোকে সব বলা থেকে আঁটকিয়েছি তুই ভাবতে পারবিনা! তবুও আমি চাই তুই প্রতিযোগিতা টা জিতে যা। আমাকে ভুল বুঝেছিস, জানি তোর সেই ভুলটা ভেঙ্গে যাবে। কিন্তু তোর সাথে আর কোনো মধুর সময় বানাতে পারলাম না বলে বড্ড আফসোস হচ্ছে!

১৪ মার্চ ২০১৮
—————————
কিছুই গুছিয়ে লিখতে পারছিনা। যতো সময় যাচ্ছে দুর্বল হচ্ছি। লিখতে গিয়ে অনেক কষ্ট হয়রে, হাত চলেনা। এখন শুয়ে শুয়ে লিখছি। হাতের লেখা খুবই বাজে হচ্ছে। আমি আর্তনাদ করছি জাওয়াদ। আমার আর্তনাদ কি তোর হৃদয় অবধি পৌঁছাতে পারছেনা? এতো কঠিন হচ্ছিস কীভাবে? আমার কষ্ট হচ্ছে জাওয়াদ। আর দু’দিন পর হয়তো আমার আর হুশই থাকবেনা। আজই ডায়েরিটার কার্যক্রম শেষ করতে হবে। এতো রাগ তোর! এতো রাগ! একটাবার ভাবছিস না তোর ভালোবাসা, তোর প্রেয়সী এমনটা করতে পারেনা! আমি সেদিন রাগ করে কল কেটে দিয়েছিলাম। তুই ওভাবে বলায় অনেক রাগ হয়েছিলো আমার। একটু রাগ দেখালাম বলে তুই আমাকে এভাবে রাগ দেখাবি? আমার জীবনের শেষ সময়টুকুতে তোকে আমি পাশে পাইনি… একটাবার তোর গলা শোনার জন্য চাতক পাখির মতো করে ছটফট করেছি এতোদিন। আমার গলা শুকিয়ে যাচ্ছে জাওয়াদ। আমি কিছু লিখতে পারছিনা। যা কিছু হয়েছে এতে তোর কোনো দোষ নেই। অনেকেই চেয়েছিলো আমরা আলাদা হয়ে যাই, তাদেরই চক্রান্তের ফাঁদে তুই পা দিয়েছিস। তোর ওপর আমার কোনো অভিযোগ নেই। আমি চাইলেই সব ঠিক করে দিতে পারি, নিমেষেই ভেঙ্গে দিতে পারি তোর ভুল। কিন্তু বিধাতার মনে হয়তো অন্যকিছুই ছিলো। উনি হয়তো আমাদের এক হওয়া কপালে রাখেন নি। তাই আমিও আর চেষ্টা করি নি। মরণব্যাধি হয়েছে, সব ঠিক করে আর মায়া বাড়িয়ে কী লাভ? তারচে বরং আমার ওপর রাগ করে থাক। তাহলে তোর কষ্টও হবেনা। খুব ইচ্ছা ছিলো… সবুজ জামদানী শাড়ি পরে, পিঠময় খোলা চুলগুলো ছড়িয়ে রেখে, কানে ফুল গুজে তোর সামনে এসে দাঁড়াই। তুই তো আমাকে এভাবেই দেখতে চেয়েছিলি তাইনা? কিন্তু দেখনা… আজ তুই ভুল বুঝে আমার থেকে দূরে। আমার সেই হাঁটু সমান চুলগুলোও ব্লাড ক্যান্সার নামক ব্যাধির ট্রিটমেন্ট এর জন্য পড়ে যাচ্ছে। তোর সবথেকে প্রিয় আমার ঠোঁটের নিচের তিল, সেখানটাও কেমন কালো হয়ে যাচ্ছে। জাওয়াদ… আমরা কোনোদিন কেউ কাউকে ‘ভালোবাসি’ শব্দটা বলি নি। আমরা দু’জনে বাসর রাতে একে অপরকে ‘ভালোবাসি’ বলতে চেয়েছিলাম। অথচ দেখ… বাসরটাই ভাগ্যে নেই। জাওয়াদ… আমি তোর রঙ তুলির প্রেয়সী তো হতে পেরেছি। কিন্তু তোর জীবনের প্রেয়সী হতে পারলাম না। বিধাতা হয়তো অন্য কাউকে সেই অধিকার দিয়ে রেখেছেন। যে একাধারে তোর রঙ তুলির প্রেয়সী হবে, সাথে হবে তোর জীবনের প্রেয়সী। জাওয়াদ শোন, একদম দেবদাসের মতো পড়ে থাকবিনা। আমার জন্য কষ্ট পাবিনা। নিজেকে দোষ দিবি না। আমি একদম তোর ওপর রাগ করে চলে যাচ্ছিনা। ভালোই হয়েছে তুই নেই, নাহলে তোর আকুলতা আমি সহ্য করতে পারতাম না। মরার আগেই মরে যেতাম। জাওয়াদ, ওরা সবাই আমার ইচ্ছা পূরণ করেছে। তোকে কিছু জানায় নি। এখন তুই আমার শেষ ইচ্ছাগুলো পূরণ করবি। বাড়ি এসে কারো সাথে রাগারাগি করবিনা। হ্যাঁ, তোর জন্য একটা উপহার রেখে গেলাম আমি। রঙ তুলি রেখে গেলাম। তোর জীবনের প্রেয়সীকে এই রঙ তুলি দিয়ে তোর রঙ তুলির প্রেয়সী বানাবি। এই রঙ তুলির ছোঁয়ায় প্রথমবারের জন্য তোর প্রেয়সীকে তুই আঁকবি। জাওয়াদ, তোকে খুব ইচ্ছে হচ্ছে একবার ভালোবাসি বলতে। তোকে খুব ভালোবাসি জাওয়াদ। খুব হিংসা হচ্ছে আমার তোর প্রেয়সীর ওপর। কারণ এই অল্প জীবনে তুই আমাকে কতটা ভালোবাসা দিলি, তাহলে তুই তোর প্রেয়সীকে কতোটা ভালোবাসা দিবি সারাজীবন? আফসোস হচ্ছে! আমার ভাগ্যে সেটা কেন আল্লাহ লিখে দিলেন না?
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
ডায়েরিটা যতোক্ষণ পড়ছিলো ততক্ষণ কেঁপে কেঁপে কাঁদছিলো জাওয়াদ। চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে তার। হা করে নিশ্বাস নিচ্ছে সে। ঠোঁট কামড়ে যতোই কান্না থামাতে চাইছে ততোই কান্না বেড়ে যাচ্ছে। শরীরের প্রতিটি লোমকূপ যেনো কাঁদছিলো তার। ডায়েরিটা হাত থেকে বিছানার ওপর রেখে দু’হাতে চুল খামচে ধরে কাঁদে জাওয়াদ। যেদিন ডায়েরিটা প্রথম পড়েছিলো সেদিনও কেঁদেছিলো জাওয়াদ। খুব কেঁদেছিলো। রিয়াদকে জড়িয়ে ধরে এই ফ্লোরেই বসে চিৎকার করে কেঁদেছিলো। যতদিনে যে বুঝেছে যে সে মাহিকে ভুল বুঝেছে ততদিনে মাহি ওপারে পাড়ি জমিয়ে ফেলেছিলো। হ্যাঁ, জাওয়াদ মাহির কথা রেখেছিলো। সে কারো সাথে রাগারাগি করে নি। সেদিনের পর থেকে হাসিখুশি, দুষ্টুমি করা জাওয়াদ হয়ে গিয়েছিলো গম্ভীর, চুপচাপ। সেদিনের পর থেকে জাওয়াদ ছবি আঁকা ছেড়ে দিয়েছিলো। প্রতিযোগিতা জিতেছিলো ঠিকই, কিন্তু পরে কেউ তাকে আর এক্সিবিশন এ পাঠাতে পারেনি।

চোখ মুছে জোরে জোরে কয়েকবার নিশ্বাস নিলো জাওয়াদ। উঠে আস্তে আস্তে হেটে মাহির ছবিটার সামনে গেল যেটা তার দেয়ালে টানানো। পরম মমতায় হাত বুলালো সেটার ওপর। ছবিটার দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো, ‘দেবদাস হয়ে বসে থাকছিনা। দু’বছর পর তোরই মতো একটা পাগলি আমাকে আবার রঙ তুলি হাতে নিতে বাধ্য করলো। হ্যাঁ, ওকে দেখলে আমার বুক কাঁপে একইভাবে। পৃথিবী থমকে যায়, প্রেমের আগুন শিখায় আমি দগ্ধ হই। হাত বাড়িয়ে আমার ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে করে। একইসাথে দুজনকে হৃদয়ে রাণী বানানো যায়? হ্যাঁ যায়৷ তুই আমার হৃদয়ের রাণী। আর ওকে আমার হৃদয়ের সাথেসাথে আমার জীবনের রাণী বানাবো। তোকে হারিয়েছি। ওকে হারাতে দেবোনা… দেবো না…’

বলে হেটে গিয়ে সেই ব্যাগটা হাতে নিলো জাওয়াদ, যে ব্যাগে মাহি ওর জন্য রঙ তুলি রেখেছিলো। তারপর সানসেট এর ওপর থেকে ইজেলটা বের করলো। সেটা মুছে ঠিক করে রাখলো। আলমারি থেকে খুঁজে আর্ট পেপার বের করলো। রঙ ঠিক করলো। তারপর… কাঁপা কাঁপা হাতে পেপারে আঁকতে লাগলো। রঙ তুলির প্রেয়সীকে…
___________

চলবে…….
@ফারজানা আহমেদ
একদিন গ্যাপ হলে আপনারা পেজে ম্যাসেজ দিয়ে জানতে চান কেন গল্প দেইনা। কিন্তু আমি কখন দেই না দেই আর না দিলে কেন দেইনা সব গ্রুপে বলে দেই। তাই, আপনারা চাইলে গ্রুপেও এড হয়ে নিন। গ্রুপ লিংক- https://www.facebook.com/groups/831432960641690/?ref=share

রঙ তুলির প্রেয়সী ১১.

0

রঙ তুলির প্রেয়সী
১১.

মাহির হাতে ছবিটা দেখে অবাক হয়ে তাকালো জাওয়াদ। তারপর হেসে দিলো। মাহি নাক ফুলিয়ে বললো, ‘হাসছিস কেন তুই? আমিতো তোর একটা ছবি এঁকেছি। তুই জীবনেও আমার এঁকেছিস?’

জাওয়াদ নিজের ছবি আঁকা চালাতে চালাতে বললো, ‘আমার কী ঠেকা লেগেছে? তোর ছবি আঁকার জন্য ছবি আঁকা শিখলাম?’ বলে ছবির ফিনিশিং দিলো জাওয়াদ। একটানা দু’দিন থেকে ছবিটা আঁকছিলো সে।

‘ওহ, তাই বল। আমি কে তুই আমার ছবি আঁকবি? থাক। এটা রাখ, আমার পক্ষ থেকে উপহার। অনেক যত্ন করে এঁকেছি।’ বলে হাতের ছবিটা চেয়ারের ওপর রেখে ঘুরে দাঁড়ায় মাহি। চোখ ছলছল করছে তার। পা বাড়ালো চলে যাওয়ার জন্য আর তখনই পেছন থেকে জাওয়াদ ওর একটা হাত চেপে ধরে। মাহি ফোঁস করে পেছনে না তাকিয়েই বলে, ‘ছাড় বলছি। ছাড়।’

‘কী বললি তুই? তুই কেউ না?’

ফিরে তাকায় মাহি। জাওয়াদের চোখে চোখ রেখে বলে, ‘কে হই আমি তোর?’

জাওয়াদ নিচের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট কামড়ে হাসে। আস্তে আস্তে টেনে মাহিকে নিজের কাছে এনে দাঁড় করায়। নিজের মুখোমুখি। তারপর ভ্রু উঁচিয়ে জিজ্ঞেস করে, ‘তুই কেউ না?’

মাহির স্থির দৃষ্টি তখনও জাওয়াদের চোখের ওপর। সে শীতল কণ্ঠে বললো, ‘কে?’

জাওয়াদ কিছু না বলে মাহির হাত ছেড়ে দেয়। তারপর মাহির পেছনে গিয়ে দাঁড়িয়ে মাহির দু’বাহু ধরে তাকে নিয়ে সেই ছবিটির সামনে দাঁড় করায় যেটা সে আঁকছিলো। মাহির ছবি, বাতাসে মাহির চুল উড়ছে আর সে হাসছে প্রাণখোলা হাসি। ছবিটির সামনে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো মাহি। ছলছল করা নোনা জল টুপ করে গাল বেয়ে পড়লো তার। সে ফিরে তাকায় জাওয়াদের দিকে। জাওয়াদ দু’হাতে মাহির মুখটা উঁচু করে চোখে চোখ রেখে বললো, ‘তুই আমার প্রেয়সী। আমার রঙ তুলির প্রেয়সী!’ বলে মাহির কপালে একটা নিবিড় চুমু দিলো জাওয়াদ। আবেশে চোখ বুজে এলো মাহির। দু’হাতে আঁকড়ে ধরলো সে জাওয়াদকে। কিছুক্ষণ ওভাবে কেটে যাওয়ার পর মাহি জাওয়াদকে ছেড়ে দিলো। তারপর নিজের দিকে তাকিয়ে বললো, ‘এটা কী করছিস? ছবি আঁকার সময় একদম গোসল করে ফেলিস রঙ দিয়ে। এখন আমার কাপড়চোপড় ও খারাপ করে দিলি!’

‘যাক বাবা! তুই-ই তো জড়িয়ে ধরলি। আমি ধরেছি?’ কপাল কুঁচকে বললো জাওয়াদ।

মাহি বললো, ‘তাও তো আমি ধরেছি। তুই তো ধরিসওনা।’

আবারও ঠোঁট কামড়ে হাসে জাওয়াদ। বলে, ‘ধরার কথা ভেবে বলছিস? আমি ধরলে শুধুই ধরার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবোনা। অনেক কিছু করেও ফেলতে পারি!’ বলে চোখ টিপ দিলো সে। মাহি লজ্জা পেলো। ঘুরে বেরিয়ে যেতে যেতে বললো, ‘ফ্রেশ হয়ে আসছি আমি। সবাই তো শুয়ে পড়েছে, ভেবেছিলাম শুয়ে পড়বো। এই রাত বিরেতে আমাকে গোসল করাচ্ছিস।’

জাওয়াদও হেসে ভেতরে গেলো ফ্রেশ হতে। চটপট শাওয়ার নিয়ে বারান্দায় এসে দাঁড়ালো। দেখলো পাশের বারান্দায় মাহি চুল থেকে তোয়ালে খুলে দড়িতে মেলে দিচ্ছে। হালকা আলোয় দেখলো জাওয়াদ, মাহি একটা টাইটস আর সাদা টি-শার্ট পরে আছে। হাত উচু করে তোয়ালে মেলে দেয়ার সময় তার টি-শার্ট উঁচু হয়ে ফর্সা পেট খানিক উন্মুক্ত হয়েগেলো। চেয়ে থাকতে পারেনা জাওয়াদ, চোখ ফিরিয়ে নিলো। বুকের ভেতর কেমন যেন হাহাকার করছে তার। দুইটা মাস দূরে থাকতে হবে ভাবতেই বুক পুড়ে, খুব পুড়ে! এমন সময় পেছনে মাহির উপস্থিতি টের পায় জাওয়াদ। আস্তে করে বলে, ‘এসেছিস!’

মাহি নিঃশব্দে এসে দাঁড়ায় জাওয়াদের পেছনে। তারপর হুট করে পেছন থেকে ওকে জড়িয়ে ধরে ওর পিঠে মাথা রাখে। মাহির স্পর্শে সর্বাঙ্গে বিদ্যুৎ খেলে জাওয়াদের। সে দুরুদুরু বুকে মাহিকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে। মাহি আরো জোরে আঁকড়ে ধরে। জাওয়াদ খেয়াল করে তার পিঠের ওপর শার্ট ভিজছে। মাহি কাঁদছে! চট করে পেছন ফিরে মাহির মুখ দুহাতে ধরে জাওয়াদ। ব্যস্ত হয়ে বলে, ‘এই কাঁদছিস কেন তুই? কিজন্য?’

‘আমাদের আর দেখা হবে জাওয়াদ?’ ভেজা চোখে বললো মাহি।

জাওয়াদ অবাক স্বরে বললো, ‘আশ্চর্য! দেখা কেন হবেনা? আমি একেবারে তো যাচ্ছিনা। মাত্র দুমাসের ট্রিপ রে পাগলি!’

‘কিন্তু আমার মনে হচ্ছে আমি আর এভাবে তোকে জড়িয়ে ধরতে পারবোনা।’ বলে জাওয়াদকে আঁকড়ে ধরে মাহি।

জাওয়াদ মাহিকে নিজের বুকে চেপে ধরে বলে, ‘পাগলামি কথাবার্তা ছাড়। এতো কান্না শিখলি কোত্থেকে?’

মাহি মাথা তুলে জাওয়াদের দিকে তাকায়। দু’হাতে ভালো করে চোখ মুছে। তারপর জাওয়াদের দু’পায়ের উপর উঠে দাঁড়ায়। জাওয়াদের খুব কাছে গিয়ে বলে, ‘আমাকে আদর করবি? হতে পারে এরপরে আর সুযোগ পাবিনা…’

জাওয়াদের বুকটা কেঁপে ওঠে। মাহিটাও না! এমন এক একটা কথা বলে। জাওয়াদ ঢোঁক গিলে ধরা গলায় বলে, ‘মাহি পাগলামির সীমা আছে। এসব কেমন কথা? আমি কী হারিয়ে যাচ্ছি?’

‘আমিতো হারিয়ে যেতে পারি জাওয়াদ…’ মাহির কন্ঠ খুব শীতল শোনালো। এতোটাই শীতল যে জাওয়াদের বুকটা খাঁ খাঁ করে উঠলো। জাওয়াদ ধমকের স্বরে কিছু বলতে যাবে তখনই মাহি একটা আঙ্গুল জাওয়াদের ঠোঁটের ওপর চেপে ধরে বললো, ‘একটা চুমু দিবি? অনেকক্ষণ ধরে? সত্যি বলছি, আর কিন্তু সুযোগ পাবিনা…’

জাওয়াদ মাহির ঠোঁটের নিচের সুন্দর তিলটায় হালকাভাবে নিজের ঠোঁট ছুঁইয়ে বলে, ‘মাহি এমন করে কেন বলছিস তুই?’

‘উফ জাওয়াদ! বড্ড কথা বলিস!’ বলে হুট করে নিজের ঠোঁট জাওয়াদের ঠোঁটে ছোঁয়ায় মাহি। হুট করে জাওয়াদ বুঝতে না পারলেও পরে নিবিড়ভাবে মাহিকে নিজের আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে চুমু দেয় জাওয়াদ, মাহির কথামতো… অনেকক্ষণ ধরে। তারপর আরো অনেক অনেক চুমু দিয়েছিলো জাওয়াদ তার প্রেয়সীর গালে, গলায়, ঘাড়ে। জড়িয়ে ধরে অনেকক্ষণ ভেজা চুলের মাতাল করা ঘ্রাণ নিয়েছিলো। সেদিনই সে পেয়েছিলো প্রেয়সীর শেষ ছোঁয়া। প্রেয়সীর ঠোঁটে শেষ বারের মতো ছোঁয়াতে পেরেছিলো নিজের ঠোঁট! শেষ বারের মতো জড়িয়ে ধরেছিলো বুকে…
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
দরজায় ঠকঠক আওয়াজে ঘোর কাটে জাওয়াদের। চোখ খুলে তাকায় সে। টের পায় তার চোখ বেয়ে এক ফোটা জল গড়িয়ে পড়েছে। হাসলো জাওয়াদ। অনেকদিন পর জল গড়ালো কিনা! আবার ঠকঠক আওয়াজ হলো দরজায়। সময় দেখে নিলো জাওয়াদ, রাত সাড়ে ন’টা বাজে। এতো সময় কেটে গেল! জাওয়াদ উঠে গিয়ে দরজা খুলে দেখলো তিথি দাঁড়িয়ে আছে দরজার ওপাশে। সাদা রঙের টপস আর নীল স্কার্ট পরা। চুলগুলো খোঁপা করা। গলায় নীল স্কার্ফ পেঁচানো। তিথির মুখের দিকে তাকাতেই বুকের ভেতরটা যেন তোলপাড় করতে লাগলো জাওয়াদের। কী হলো হঠাৎ করে ওর? এমন তো ও ছিলোনা! এই মেয়েটাকে দেখলে ওর এমন হচ্ছে কেন? কেন ইচ্ছে করছে ওকে…

‘কী ব্যাপার? শুনতে পাচ্ছেন না?’ তুড়ি বাজায় জাওয়াদের চোখের সামনে তিথি। জাওয়াদের হুঁশ আসে। তিথি কী ওকে কিছু বলছিলো?

‘হ-হ্যাঁ?’ তিথির ঠোঁটের নিচের তিলটা একবার দেখে জাওয়াদ। তারপর আবার তাকায় তিথির চোখের দিকে।

‘হ্যাঁ হ্যাঁ কী? খেতে যাবেন না? সবাই এতোবার ডেকে গেল!’

‘কখন?’ অবাক হয় জাওয়াদ।

‘ওমা! সেই কখন থেকে!’

‘আমি খাবোনা। বলে দিও, ক্ষিধে নেই।’ বলে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে তিথিকে দেখতে লাগলো জাওয়াদ। ইচ্ছে করছে মেয়েটাকে ঘরের ভেতরে এনে বসিয়ে রেখে দেখতে থাকুক।

‘কেন? মোটা হয়ে যাচ্ছেন নাকি? ডায়েট?’

জাওয়াদের যেন কানে যাচ্ছেনা কথা। সে দেখছে তিথিকে। মন দিয়ে। তিথির যেন কেমন লাগলো। অদ্ভুত এক চাহনি জাওয়াদের। তিথির বুকটা কেমন করে উঠলো। এভাবে কেন তাকিয়ে আছে? সে হুট করে বলে বসলো, ‘এভাবে তাকাচ্ছেন কেন আমার দিকে?’

তিথি কথাটা বলামাত্র জাওয়াদ চোখ বন্ধ করে ফেললো। আস্তে করে বিড়বিড় করলো, ‘আমার সামনে এসোনা… এসোনা…’

‘হ্যাঁ?’ তিথি বুঝতে পারলোনা জাওয়াদ কী বললো। ‘কী বলছেন?’ বলে হাত নাড়লো জাওয়াদের সামনে।

‘আমি খাবোনা। আমার ক্ষিধে নেই।’ বলেই তিথির মুখের ওপর দরজা লাগিয়ে দিলো জাওয়াদ। তিথি স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো। কী হলো? হুট করে এমন করলো কেন? তিথি ভেংচি দিলো। নিজে নিজেই জোরে জোরে বললো, ‘ভেবেছিলাম আর মোগ্যাম্বো বলবোনা। কিন্তু তুমি আসলেই মোগ্যাম্বো। এটা ছাড়া আর কিছুই যায়না তোমার সাথে। খাইওনা ভাত। একদিন না খেলে কিছু হবেনা, যেই বডি তোমার! হুহ!’ বলেই গটগট করে হেটে চলে গেল তিথি। দরজার সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো জাওয়াদ। তিথির বলা কথাগুলো শুনেছে সে। শব্দ করে হেসে দিলো জাওয়াদ। তারপর নিজের চুলে হাত বুলালো। ঠোঁট কামড়ে ধরে হাসলো। আচ্ছা, মাহির বলা কথাটাই কী সত্যি হলো? এই দু’বছর পর?
_________________

‘জাওয়াদ খাবেনা?’ টেবিলে বসতে বসতে বললো রিয়াদ।

মুনতাহা সবার প্লেটে খাবার তুলে দিতে দিতে বললেন, ‘ক্ষিধে নেই বললো। ডাকলাম শুনলোও না। পরে নাকি তিথিকে বলেছে খাবেনা।’

‘কী হলো হঠাৎ। আমি দেখে আসি।’ বলে উঠতে লাগলো রিয়াদ। হেলাল আহমেদ আঁটকে দিয়ে বললেন, ‘থাকুক। একা থাকতে দাও। ওর ক্ষিধে পেলে নিজেই এসে খেয়ে নেবে।’

আদিয়া বললো, ‘আজকে কফিও চায়নি।’

‘না চাক। খাও তোমরা। ওর সবকিছুই তো জানো।’ বললেন হেলাল আহমেদ। কেউ আর কোনো কথা বললোনা। তিথি চুপচাপ খাচ্ছে আর ভাবছে, কী অদ্ভুত ছেলেটা! এক এক সময় এক এক রকম!
______________

জাওয়াদ নিজেকে আঁটকে রাখতে পারছেনা। বারবার সময় দেখছে। ঘড়ির কাঁটা রাত দু’টো ছুঁইছুঁই। রুমের বাইরে যাওয়ার জন্য বারবার দরজার কাছে গিয়ে ফিরে আসছে জাওয়াদ। দরজা খোলা পাবে কি? অনেক দোনা মোনা করে দরজা খুলে বাইরে বেরোলো জাওয়াদ। তারপর ভালো করে চারিদিকে দেখলো। নাহ, কেউ নেই। ধীর পায়ে হেঁটে তিথির রুমের সামনে গেল সে। বুকটা কাঁপছে। কিন্তু নিজেকে সামলাতে কষ্ট হচ্ছে আজ তার। মরে যাচ্ছে যেন সে। কাঁপা কাঁপা হাতে দরজা খুলতে গেল জাওয়াদ। অবাক হলো, দরজা খোলা। এই মেয়ে পাগল নাকি? দরজা খুলে ঘুমায়! দরজা খুলে আরেক দফা অবাক হলো জাওয়াদ। লাইট জ্বালানো। লাইট জ্বালিয়ে কেউ ঘুমায়? হেসে দিলো জাওয়াদ। তাকিয়ে দেখলো দরজার দিকে মুখ করে কাত হয়ে শুয়ে আছে তিথি। গায়ে একটা চাদর জড়ানো। ঘুমোচ্ছে গভীরভাবে। আস্তে আস্তে এগিয়ে গিয়ে তিথির ঠিক সামনে হাঁটুগেড়ে বসলো জাওয়াদ। খুব কাছ থেকে দেখতে লাগলো তিথিকে সে। যতোই দেখছে অস্থিরতা বেড়ে যাচ্ছে। হাত বাড়িয়ে তর্জনী আঙ্গুল দিয়ে খুব সাবধানে একবার ছুঁয়ে দিলো সে তিথির ঠোঁটের নিচের তিলটাকে। খুব, খুব ইচ্ছে করছে এই কপালটায় একটা ভালোবাসার স্পর্শ একে দিতে। এতোদিন পরে কেনো এই মেয়েটার জন্য এমন করছে জাওয়াদ সে জানেনা। সবকিছু উল্টাপাল্টা হয়ে যাচ্ছে তার। কী হবে না হবে কিছু না ভেবেই খুব সাবধানে আলতো করে ঠোঁট ছোঁয়ায় সে তিথির কপালে। তিথির ঘুম তখনও ভাঙ্গেনি। হাসে জাওয়াদ। এতো গভীর ঘুম! কোলে করে তুলে নিয়ে গেলে কেমন হয়? পরক্ষণেই সে নিজের ভাবনার জন্য নিজেই বোকা বনে যায়। ইশ, সারারাত এভাবে এখানে বসে থেকে দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে। জাওয়াদ একবার নিজের বুকের ওপর শার্ট খামচে ধরে। এখানে থাকলে আরো অনেক নিষিদ্ধ ইচ্ছারা জাগবে। যত দ্রুত সম্ভব এখান থেকে যেতে হবে। কিন্তু সে যেতে পারছেনা, এখানে এই মেয়েটার কাছে থাকতে তার ভালো লাগছে। ওকে দেখতে তার ভালো লাগছে। মনের সাথে যুদ্ধ করে উঠে দাঁড়ায় জাওয়াদ। আরেকবার তিথিকে দেখে চোখের তৃষ্ণা মিটিয়ে ঘুরে বেরিয়ে গেল। সাবধানে দরজা লাগিয়ে পা বাড়ায় নিজের রুমের দিকে।

দরজা বন্ধ করার শব্দ শুনে লাফ দিয়ে উঠে বসলো তিথি। সারা শরীর কাঁপছে তার। একটু বেশিই কাপছে। হাসফাস করছে। শরীরের ওপর থেকে টেনে চাদরটা সরালো সে। উঠে গিয়ে এক গ্লাস ভর্তি জল ঢকঢক করে গিললো। তারপর ফ্লোরে বসেই হা করে নিশ্বাস নিতে লাগলো জোরে জোরে। ঢোঁক গিললো বার পাঁচেক। এটা সত্যি ছিলো? ও এসেছিলো? কপালে… চোখ দিয়ে জল গড়ায় তিথির। ভাগ্যিস ভুল করে লাইট জ্বালানো অবস্থায়ই ঘুমিয়ে গেছিলো। নয়তো অন্ধকারে না চিনে অনেক জোরে চিৎকার দিতো তিথি। দরজা খোলার শব্দ শুনেই ঘুম ভেঙ্গে যায় তার। জাওয়াদকে দেখে একেবারে রোবট হয়ে শুয়ে ঘুমের ভান করছিলো। তিথির বুক কাঁপতে থাকলো। কী করবে সে এখন? কী করলে এখন তার শান্তি লাগবে? বড্ড অশান্ত হয়ে আছে মনটা। কেন যেন মনে হচ্ছে এক্ষুণি সে জ্ঞান হারবে… পৃথিবীটা যেন ঘুরছে… কী চলছে জাওয়াদের মনে? তিথির মতোই কিছু কি সে ভাবছে?
___________________

আজ জাওয়াদ ঘুমোবেনা। আজ তার অনেক কাজ। অনেক বড় কাজ। আলমারি থেকে সেই জিনিসের ব্যাগটা বের করতে গিয়ে মাহির ডায়েরিটা চোখে পড়ে জাওয়াদের। ডায়েরিটা হাতে নিলো জাওয়াদ। তারপর ত্রস্ত পায়ে বিছানায় গিয়ে বসলো। আজ আবার পড়বে সে এই ডায়েরিটা। শেষ বারের জন্য। হয়তো কাঁদবেও এটা পড়ে, শেষ বারের জন্য।
__________

চলবে…….
@ফারজানা আহমেদ
গ্রুপ লিংক- https://www.facebook.com/groups/831432960641690/?ref=share

রঙ তুলির প্রেয়সী ১০.

0

রঙ তুলির প্রেয়সী
১০.

আজ সকাল থেকেই কেমন আবহাওয়া মেঘলা মেঘলা। সবাই একসাথে বসে আছেন মুনতাহাদের ঘরে শুধু জাওয়াদ ছাড়া। হেলাল আহমেদ এর ইচ্ছে হলো এই মেঘলা আবহাওয়াতে পাকোড়া খেতে খেতে জাওয়াদের সাথে দাবা খেলবেন। তিনি রিয়াদকে বললেন, ‘জাওয়াদ কোথায় রে? ঘরে আছে? এক ম্যাচ হয়ে যেতো তবে। এই মুনতাহা যাও পাকোড়া বানাও। অনেকদিন হলো খাইনা।’

‘আছে দেখলাম। কী বই পড়ছে বসে বসে।’ রিয়াদ বললো। আদিয়া পাশ থেকে হেসে বললো, ‘কৌতুকের বই পড়তে দেখলাম।’

‘এতো সিরিয়াস হয়ে কেউ কৌতুকের বই পড়ে!’ তিথি অবাক কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো। তিথির কথার ধরণে হেসে দিলো সবাই। তিথি আবার বললো, ‘মামণি সত্যি, তোমার এই ছেলে কী? মানে, আদিয়া আর রিয়াদ ভাইয়াকে দেখো সব কথায় হাসে। কিন্তু উনার মুখে হাসি খুব রেয়ার! উনাকে পালার জন্য এনেছো নাকি?’

তিথির কথায় আবারও হাসলো সবাই। মুনতাহা বললেন, ‘হয়েছে যাই আমি পাকোড়া বানাই। আর কেউ কিছু খাবে?’

‘সিঙ্গাড়া খেতে ইচ্ছে হচ্ছে মা।’ বললো রিয়াদ। আদিয়াও রিয়াদের সাথে হ্যাঁ তে হ্যাঁ মেলালো। মুনতাহা উঠে গেলেন। হেলাল আহমেদ বললেন, ‘যা তো রিয়াদ। জাওয়াদকে বল দাবার বোর্ড নিয়ে চলে আসতে। এখানেই খেলবো।’

কেউ কিছু বলার আগেই তিথি বললো,’আরে আঙ্কেল! লুডু খেলি চলেন। অনেক তো দাবা খেলেছেন। এসব দাবা দুজন ছাড়া খেলা যায়না। চলুন চারজনে লুডু খেলি।’

‘সেটাও খারাপ না। দাঁড়াও তাহলে আমি লুডুটা ইনস্টোল করে নেই মোবাইলে।’ বলে নিজের মোবাইল খুঁজতে লাগলেন হেলাল আহমেদ। তিথি খিলখিল করে হেসে বললো, ‘কীসব যে করেন না আপনারা! আরে রিয়েল লুডুর কথা বলেছি। এটাতে মজা আছে নাকি?’

‘রিয়েল লুডু এখন পাবো কই? মনেহয় গত দু’বছরেও খেলিনি।’ আদিয়া বললো।

‘কেন আমি সেবার এসে না খেললাম?’

‘ঐতো, দু’বছর। আচ্ছা চল খুঁজে দেখি পাই কি না।’ বলে আদিয়া উঠে দাঁড়ালো। হেলাল আহমেদ বললেন, ‘জাওয়াদকে আসতে বলিস।’

‘আচ্ছা।’ বলে তিথিকে নিয়ে বেরিয়ে গেল আদিয়া।
___________________

তিথি আদিয়াকে বলে নিজের রুমে খুঁজতে এলো টুনিকে নিয়ে। দু’একমিনিট খুঁজে সে টুনিকে বললো, ‘শোনো, তুমি এইখানে দেখো ভালো করে। আমি অন্য রুমে যাই।’

‘আর কই পাইবেন আফা? বড় ভাইজানের রুম আর ছোট ভাইজানের রুম ছাড়াতো এহানে আর কোনো রুম নাই।’

‘ঐ রুমগুলোতেই দেখবো।’

‘ছোট ভাইজানের রুমে হয়তো পারবেন। কিন্তু বড় ভাইজানের রুমে খুঁইজা হুদ্দাই সময় নষ্ট। উনি এইগুলান রাখেন নাকি। উনিতো চিস খেলায়।’

তিথি কপাল কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো, ‘কী খেলায়?’

টুনি বিজ্ঞের মতো হাত নাড়িয়ে বললো, ‘আরে আফা চিস চিস। মানে ইংরিজি কইলাম, দাবার।’

তিথি ফিক করে হেসে দিলো। চেস কে চিস বলছে টুনি। তিথি আর কথা না বাড়িয়ে বললো, ‘আচ্ছা না পেলে না পেলাম। খুঁজতে তো সমস্যা নেই। তুমি ভালো করে দেখো।’ বলে বেরিয়ে গেল তিথি।

জাওয়াদের রুমের সামনে এসে দেখলো তিথি যে জাওয়াদের রুমের দরজাটা খোলা। ভেতরে উকি দিলো, কেউ নেই। খানিকটা অবাক হলো তিথি। বিড়বিড় করে বললো, ‘গেল কই!’ বলতে বলতে ভেতরে ঢুকে বারান্দার দিকে এগোলো। জাওয়াদ একটু বাইরে গিয়েছিলো। রুমে এসে দেখে তিথি বারান্দার দরজায় দাঁড়িয়ে উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে বাইরে। আস্তে আস্তে গিয়ে তিথির একেবারে পেছনে দাঁড়ায় জাওয়াদ। তারপর বলে, ‘কী ব্যাপার?’

হুট করে এভাবে পেছন থেকে কেউ কথা বলায় ভয় পেয়ে পেছন ফিরতে গিয়ে স্লিপ খেয়ে পড়ে যেতে নেয় তিথি। জাওয়াদ তিথির ডান হাত ধরে হ্যাচকা টান দেয়। তিথি উড়ে এসে পড়ে জাওয়াদের বুকে। আকস্মিক ঘটনায় স্তব্ধ তিথি কথা বলতেই ভুলে গেল। জাওয়াদ কড়া ভাবে তিথির চোখে চোখ রেখে বললো, ‘এতোটা কেয়ারলেস কেন? এক্ষুনি তো পড়ে ঠ্যাং ভেঙ্গে ফেলতে।’

তিথি কিছু বলতে চেয়েও পারছেনা। গলায় শব্দ আঁটকে যাচ্ছে। নিশ্বাসও আসছে আঁটকে আঁটকে। তিথি এমন এক ধ্যানে জাওয়াদের দিকে তাকিয়ে আছে দেখে জাওয়াদের টনক নড়ে। তিথিকে ছেড়ে সরে দাঁড়ায় সে। তারপর বলে, ‘এখানে কী?’

তিথি কাঁপছে। নিচের দিকে তাকিয়ে আছে সে। এখনও ধাক্কাটা সামলে উঠতে পারছেনা। মনে হচ্ছে যেন তার দুনিয়া ঘুরছে। সে আমতাআমতা করে কিছু বলতে যাবে তখনই টুনির গলা শুনলো, ‘আফা খালুজান ডাকতেছেন আপনেগো।’

জাওয়াদ মাথা ঘুরিয়ে বললো, ‘আমাকেও?’

টুনি নিচের দিকে তাকিয়ে বললো, ‘হ। খালাম্মা পাকোড়া বানাইছেন, খাইতে ডাকে।’

তিথি জাওয়াদকে পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে গেল। টুনিও চলে গেল। জাওয়াদ ব্যস্ত হয়ে এসে নিজের বিছানায় বসলো। তার বুক ধড়ফড় করছে। গ্লাসে পানি ঢেলে ঢকঢক করে এক নিশ্বাসে গিলে ফেললো। তারপর জোরে জোরে নিশ্বাস নিলো। ঢোঁক গিলে বিড়বিড় করলো, ‘ওরও… ঠোঁটের নিচে… তিল!’
__________________

আদিয়ার রুমেই পাওয়া গেল লুডু। হইহই করে লুডু খেলা হচ্ছে। আদিয়া আর তিথি এক টিম। রিয়াদ আর হেলাল আহমেদ এক টিম। যেহেতু চারজনেই খেলতে হয় সেহেতু জাওয়াদ চুপচাপ বসে বসে পাকোড়া খাচ্ছে আর খেলা দেখছে। খেলা দেখছে বললে ভুল হবে, সে তিথিকে দেখছে। এই প্রথম, মন দিয়ে দেখছে সে তিথিকে। যতোই দেখছে ততোই বুকের কাঁপন বেড়ে যাচ্ছে তার। বারবার একটা পরিচিত মুখ ভেসে উঠছে ওর চোখের সামনে। অস্থির লাগতে লাগলো জাওয়াদের। তিথির ঠোঁট, ঠোঁটের নিচের তিল, ঘন পাপড়ির চোখ… সবকিছু… সবকিছু আজ মন দিয়ে দেখছে জাওয়াদ। সবকিছু তাকে বারবার একটা মুখই মনে করিয়ে দিচ্ছে। চোখ বুজে নিজেকে শান্ত করতে চাইলো জাওয়াদ। নাহ, পারছেনা। উঠে দাঁড়িয়ে হাঁটা ধরলো। হাঁটতে হাঁটতে শুনলো পেছনে তিথি বলছে, ‘রিয়াদ ভাইয়া এসব ঠিকনা কিন্তু তুমি খালি ঠকাচ্ছো। এই টুনি তুমিই বলো আমার ছক্কা এসেছে না? আমি খেয়েছি রিয়াদ ভাইয়ার গুটিটা।’

অস্থির বুকে হাসলো জাওয়াদ। পেছন ফিরে তাকালো একবার, তারপর নিজের রুমে চলে গেল।
________________

গুড়িগুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। একটু পরেই সন্ধ্যা নামবে পৃথিবীর বুকে। সন্ধ্যা নামার আগেই পৃথিবী যেন অন্ধকার। নিজের বারান্দার দরজার সামনে বিষন্ন মনে দাঁড়িয়ে আকাশের পানে তাকিয়ে আছে জাওয়াদ। আজ ভালো লাগছেনা কিছু। পুরোনো স্মৃতিরা তাড়া করে বেড়াচ্ছে। বুকের ভেতর একটা চাপা কষ্ট বারবার উঁকি দিচ্ছে। মাথা ঝাড়া দিয়ে বা’দিকে তাকাতেই যেন একটা ধাক্কা খেলো জাওয়াদ। ধক করে উঠলো তার বুক। সে চট করে নিজেকে আড়াল করে নিলো। তারপর দেখতে লাগলো। হাঁটুর একটু উপর সমান খোলা চুল নিয়ে বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে তিথি। তারপর রেলিংএ পিঠ ঠেকিয়ে মাথাটা পেছনদিক দিয়ে হেলিয়ে দিলো। হাত দু’টি মেলে ধরলো দু’দিকে একটা পাখির মতো। মাথা হেলিয়ে দেয়ায় চুলগুলো পিঠ বেয়ে কেমন ঝুলে আছে রেলিংএর বাইরে। বাতাসে নড়ছে। সেদিকে তাকিয়ে যেন একটা হার্টবিট মিস করলো জাওয়াদ। বুকের বা পাশে হাত চলে গেল আপনআপনি। অস্ফুট স্বরে মুখ থেকে বেরিয়ে এলো, ‘ওহ মাই গড!’ জাওয়াদের চোখে পড়লো, তিথি পেছনদিকে হেলে থাকার কারণে তার টপস টা খানিক উপরে উঠে নাভি বেরিয়ে এসেছে। চোখ বন্ধ করে ফেললো জাওয়াদ, সাথেসাথে আরেকটা দৃশ্য ভেসে ওঠে তার চোখের সামনে। জাওয়াদ আর সেখানে দাঁড়িয়ে থাকতে পারলোনা। ভেতরে চলে এলো। বিছানায় বসে হাসফাস করতে লাগলো। ধুপ করে চিত হয়ে শুয়ে পড়লো সে বিছানায়। চোখ বন্ধ করতেই ভেসে উঠলো চোখে দু’বছর আগের সেই মধুর সময়টা। শেষ বারের মতো নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে সে কাছে পেয়েছিলো। ছুঁতে পেরেছিলো, আদর করতে পেরেছিলো…

সেদিন জাওয়াদের বড় মামার ফ্যামিলি বেড়াতে এসেছিলো তাদের বাড়ি। পরদিনই জাওয়াদের ফ্লাইট ছিলো। বন্ধুদের সাথে তিন’মাসের ট্রিপ সিঙ্গাপুরএ। বড় মামার দুই মেয়ে, মাহি এবং ফাহি। মাহি জাওয়াদের সমবয়সী। ফাহি দু’বছরের ছোট। আর এই মাহির সাথে জাওয়াদ তার জীবনের সুন্দর মুহূর্ত গুলো কাটানোর স্বপ্ন দেখে। দুজনে মিলে টুনা টুনির সংসার পাতানোর স্বপ্ন দেখে। দুই পরিবারের ও সম্মতি আছে এই সম্পর্কে। কোনো বাধা না থাকায় দিন দুনিয়া ভুলে ভালোবাসায় মত্ত থাকতো দুজনে।

বারান্দায় দাঁড়িয়ে ইজেলে রঙ তুলিতে ছবি আঁকছিলো জাওয়াদ। এমন সময় মাহি এসে দাঁড়ায় দরজায়। মাহির উপস্থিতি টের পায় জাওয়াদ, কিন্তু ভাব ধরে যেন বুঝতে পারেনি। গলা খাঁকারি দিয়ে বলে মাহি, ‘আসতে পারি?’

জাওয়াদ ছবি আঁকতে আঁকতেই বলে, ‘এসেই তো গেলি। আর আসবি কী?’

‘তাহলে চলে যাবো?’

এবার তাকায় মাহির দিকে জাওয়াদ। একটা লাল রঙের এক কালার সেলোয়ার-কামিজ পরেছে মাহি। কোমর ছাড়িয়ে যাওয়া চুলগুলো সিথি করে খুলে সামনে এনে রেখেছে। জাওয়াদ নিচের দিকে তাকিয়ে একবার হাসে। তারপর মাহির দিকে তাকিয়ে শান্ত স্বরে বলে, ‘তুই বড্ড জ্বালাচ্ছিস। অ্যালকোহল আমি নেইনা। তুই নিজেই আস্ত একটা অ্যালকোহল হয়ে ভর করছিস আমার ওপর।’

মাহি হেসে ফেলে। বলে, ‘হয়েছে হয়েছে। কী আঁকছিস?’

‘যা-ই আঁকি। দেখাবোনা।’

‘দেখাইওনা। তোর জন্য এনেছিলাম একটা জিনিস।’ বলে পেছনে রাখা দু’হাত সামনে আনে মাহি। জাওয়াদের প্রাণখোলা হাসিমুখের একটা ছবি। রঙ তুলিতে এঁকেছে মাহি। ছোটবেলায় দু’জনেই একসাথে ছবি আঁকা শিখেছে। মাহির আঁকা সেই ছবিটা এখনও ঝুলছে জাওয়াদের ঘরের দেয়ালে।
____________

চলবে…….
@ফারজানা আহমেদ
চাইলে সবাই গ্রুপে এড হতে পারেন। লিংক- https://www.facebook.com/groups/831432960641690/?ref=share
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন

রঙ তুলির প্রেয়সী ৯.

0

রঙ তুলির প্রেয়সী
৯.

চুল খাড়া, গায়ের রঙ মোটামুটি ফর্সা মানে যাকে বলে উজ্জ্বল শ্যামলা। কালো রঙের টি-শার্ট পরে এসেছে। দেখতে হ্যান্ডসাম মাইরি। আদিয়ার মতো সুন্দরী আর জোয়ান একটা মেয়েকে এরকম হ্যান্ডসাম ছেলের কাছে কীভাবে পড়তে দেয়া হলো এটাই ভেবে পাচ্ছেনা তিথি। এই বাড়ির মানুষ কি জানেনা? আগুন আর ঘি পাশাপাশি রাখতে নেই? একটু পরপর দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে আদিয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে ছেলেটা। আদিয়া তাকালেই আবার সে নিচের দিকে চোখ নামিয়ে নেয়। আদিয়ার দিকে তাকিয়ে দেখলো আদিয়া একমনে অংক ঠিকই করে যাচ্ছে কিন্তু গালে তার লালচে আভা স্পষ্ট। বিষয়টা খটকা ঠেকলো তিথির কাছে। সে হাতে কলম ঘুরাতে ঘুরাতে পর্যবেক্ষণ করছিলো আদিয়া আর নাহিদকে। নাহিদ খেয়াল করলো তিথি তীক্ষ্ণ চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে। সে সাবধান হয়ে গেল। এক গাল হেসে বললো, ‘তোমার হয়েছে?’

‘সেটা দেখার আর সময় কই আপনার স্যার?’ একইভাবে তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে বললো তিথি।

চট করে ফিরে তাকালো আদিয়া। নাহিদ যেন খানিক ঘাবড়ালো। তারপর আবার হেসে বললো, ‘এই স্যার ডেকোনা প্লিজ। ভাইয়া বলেই ডাকো। আদিয়াও স্যার ডাকেনা।’

‘তাই নাকি? আদিয়া কী ডাকে?’

‘আমিও ভাইয়াই ডা…’ বলতে গিয়ে আঁটকে গেল আদিয়া। নাহিদের দিকে তাকালো। নাহিদও তাকিয়ে আছে ওর দিকে। তিথির এই মুহূর্তে খুব মজা লাগছে। সে ভালোকরেই বুঝতে পারছে হয় এদের দুজনের মধ্যে কিছু আছে আর নাহয় খুব তাড়াতাড়ি হওয়ার সম্ভাবনা।

ওদের আর বিভ্রান্তিতে ফেলতে চাইলোনা তিথি তাই হেসে বললো, ‘আচ্ছা ঠিক আছে আমি স্যার ডাকবোনা। ভাইয়া ডাকবো।’

‘গুড। আচ্ছা দেখি দাওতো কতোটা হলো।’ বলে পড়ানোতে মন দিলো নাহিদ। আদিয়া আর তিথিও পড়ায় মন দিলো। তিথি মনে মনে ভেবে নিলো যে কাহিনীটা আদিয়ার মুখ থেকেই উগড়াবে।
_____________________

জাওয়াদ বারান্দায় বসে সিগারেট খাচ্ছিলো। তার হাতে তার মোবাইল বাজছে অনবরত। স্ক্রিনের নামটা যতোবারই দেখছে ততবারই দপদপ করে উঠছে কপালের রগ। রাগ ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছে। দাঁতে দাঁত চেপে রিসিভ করে ফোন কানে লাগালো জাওয়াদ। ওপাশ থেকে নারীকণ্ঠ ভেসে এলো, ‘কেন এমন করছিস? আর কতো ক্ষমা চাইবো আমি?’

‘তুই সারাজীবন ক্ষমা চাইলেও আমি তোরে ক্ষমা করবোনা।’ খুব শীতল কণ্ঠে বললো জাওয়াদ। ওপাশের মেয়েটা কেঁদে দিলো এবার। জাওয়াদ বিরক্ত হয়ে বললো, ‘এই বন্ধ করতো! আমার কাছে এসে এমন কাঁদবিনা। তোর কান্না আমার কানে বিষাক্ত লাগে কোনো অনুভূতি হয়না।’

কান্নার মাত্রা বাড়িয়ে দিলো মেয়েটা। জাওয়াদ হাতের সিগারেটটা ছুঁড়ে ফেলে হিসহিসিয়ে বললো, ‘ছ্যাঁচড়ামির লিমিট আছে। আমাকে বিরক্ত করা বন্ধ কর তুই। নাহলে হঠাৎ একদিন দেখবি তোকে আমি বিভৎসভাবে খুন করে জ্বালা মিটিয়েছি।’

‘জাওয়াদ প্লিজ। একটাবার ক্ষমা করে আমাকে সুযোগ দে… প্লিজ… আমি তোর জীবন আবার গুছিয়ে দেবো। প্লিজ জাওয়াদ…’ কাঁদতে কাঁদতে বললো মেয়েটা।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
রাগে দপ করে আগুন জ্বলে উঠলো জাওয়াদের দু’চোখে। সে নিজেকে প্রাণপণে সামলানোর চেষ্টা করছে। ডান হাতে নিজের চুল খামচে ধরে জোরে জোরে বার কয়েক নিশ্বাস নিলো। ওপাশের মেয়েটা তখনও কেঁদে যাচ্ছে। জাওয়াদ বললো, ‘গুছিয়ে দিবি? তুই গুছিয়ে দিবি? তোরে সুযোগ দেবো? কীসের সুযোগ চাস তুই?’

‘জাওয়াদ আমি তোকে ভা…’

মেয়েটা কথা শেষ করার আগেই জাওয়াদ খুব শান্ত স্বরে বললো, ‘মুখ সেলাই করে দেবো তোর আমি। দ্বিতীয়বার এই কথা বলার সাহস করবি তো আমি খুন করে ফেলবো তোকে। আমাকে বিরক্ত করা বন্ধ কর।’

‘তুই যা বলবি আমি সব করবো শুধু আমাকে ক্ষমা করে দে।’

‘তাই নাকি? সব করবি? যা তাইলে তোর বাপ চাচাদের গিয়ে বল কী কুকর্ম করেছিলি তুই। যা।’

‘জাওয়াদ প্লিজ এমন করিসনা।’ বলে কাঁদতে থাকলো মেয়েটা। জাওয়াদ আর সহ্য করতে পারলোনা। কল কেটেই ফোন অফ করে দিলো। তারপর বসে বসে নিশ্বাস নিতে লাগলো জোরে জোরে।
_____________________

হেলাল আহমেদকে যাওয়ার আগে কিছু দরকারি জিনিসের কথা বলে দিয়েছিলেন মুনতাহা, সেগুলো মুনতাহার কাছে দিচ্ছিলেন উনি। মুনতাহা বললেন, ‘যাক, তোমার দেখি সবই মনে আছে যা যা বলেছিলাম।’

হেলাল আহমেদ বললেন, ‘হ্যাঁ। তিথি আর আদিয়াকে একটু ডাকো। দুজনের জন্যেই মোবাইল এনেছি। আদিয়ার মোবাইলটাও তো পুরনো অনেক।’

এমন সময় তিথি আর আদিয়া রুমে এলো। মুনতাহা বললেন, ‘ডাকা লাগেনি। এসেই গেছে। তোদের পড়া শেষ এতো তাড়াতাড়ি? নাহিদ তো কমপক্ষে দুই ঘণ্টা পড়ায়। আজ এতো কম?’

তিথি সরু চোখে তাকালো আদিয়ার দিকে। আদিয়া একটা ঢোঁক গিললো। তারপর মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো, ‘তিন বন্ধু আজ আড্ডা দিবে শুনলাম। তাই।’

‘ও আচ্ছা।’

হেলাল আহমেদ বললেন, ‘অনেকদিন পরে শুনলাম ওদের আড্ডা হবে। গানবাজনা হবে নাকি? ছেলেটার গান শুনিনা অনেকদিন।’

আদিয়া বললো, ‘দেখলাম তো স্পিকার আর গিটার টেনে নিচ্ছে ছাদে।’

চুপচাপ দাঁড়িয়ে শুনছিলো তিথি। গান? কার গানের কথা বলছে ওরা? জাওয়াদ নাকি রিয়াদ?
____________________

আদিয়ার একটা এক্সট্রা সিমকার্ড ছিলো, তিথি সেটাই তার নতুন মোবাইলে এক্টিভেট করলো। আদিয়া বললো, ‘আজকে তো কেউ বেরোবেনা। আব্দুল ভাইও চলে গেছে। কালকে লোড করায়ে দিবো সিমে।’

‘সেটা ঠিক আছে। কিন্তু এতোক্ষণ থেকে তো তোর মোবাইলটা বাজছে। রিসিভ কর?’

আদিয়া চমকে গেল। তিথি কীভাবে দেখলো? সে তো মোবাইলটা উল্টে রেখেছে। আর সাইলেন্টও আছে। ভাবতে ভাবতে বিছানার ওপর নিজের মোবাইলের দিকে তাকিয়ে হা হয়ে গেল। উল্টে রাখেনি! আদিয়া হাত বাড়িয়ে মোবাইলটা হাতে নেয়ার আগেই চট করে তিথি নিজের হাতে নিয়ে রিসিভ করে লাউড স্পিকারে দিলো। ওপাশ থেকে নাহিদের গলা ভেসে এলো, ‘মাই গড! আদিয়া, তোমার বোনটা এক চিজ কিন্তু। ভয় পেয়ে গেছিলাম আমি। এই কিছু বুঝেছে?’

আদিয়ার মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেল। সে ফ্যাকাসে মুখে তাকালো তিথির দিকে। তিথি খিলখিল করে হেসে দিলো। আদিয়া তিথির কাছ থেকে মোবাইলটা কেড়ে এনে কলটা কেটে দিলো। তিথি এবার বিছানায় শুয়ে হাসতে লাগলো। আদিয়া ও হেসে দিলো তিথির সাথে। কিছুক্ষণ দুজনেই হাসার পরে তিথি বললো, ‘আগেই বুঝেছি।’

‘হয়েছে এবার চুপ আমার লজ্জা লাগছে।’ আদিয়া দুহাতে মুখ ঢেকে বললো।

তিথি হেসে দিলো আবার। বললো, ‘যা আর লজ্জা দিবোনা। আচ্ছা ছাদে যাবি?’

আদিয়া বললো, ‘পাগল? এখন ওরা হুইস্কি টুইস্কি খাবে আড্ডা দেবে। আমরা মেয়েরা ওদের মাঝে যাবো৷ কেন?’

‘হুইস্কি খায়?’ চোখ বড় বড় করে বললো তিথি।

‘হ্যাঁ। ছাদে সফট আলোর লাইট জ্বালিয়ে গিটার দিয়ে গানও গায়। আর আমরা নিচ থেকে শুনি।’

‘প্লিজ প্লিজ আদিয়া চলনা। জাস্ট পরিবেশটা দেখবো দেখেই চলে আসবো।’ আকুতি করে বললো তিথি।

‘এই না বড় ভাইয়া দেখলে মেরে ফেলবে। আমি কোনোদিনই এভাবে যাইনি।’

তিথি গাল ফুলিয়ে বসে রইলো। আদিয়া বললো, ‘থাক আমি একটু ওয়াশরুম থেকে আসি।’ বলে উঠে গেল আদিয়া।
____________________

‘আচ্ছা তো প্লান কী জাওয়াদ? সুযোগ দিবি নাকি একটা?’ বলে চোখ টিপ দিয়ে হুইস্কির গ্লাসে চুমুক দিলো নাহিদ। জাওয়াদ ভ্রু উঁচিয়ে তাকালো। রিয়াদ হেসে দিলো শব্দ করে। তারপর বললো, ‘তোর পিঠ কী মার টানছে নাহিদ?’

নাহিদ অবাক হয়ে বললো, ‘আরে আমি খারাপ কী বললাম? দেখ ভুল মানুষের হতেই পারে। তাই বলে এমন করতে হবে? মেয়েটা কম ক্ষমা চায়নি।’

‘এটাকে তোর কাছে ভুল মনে হয় নাহিদ?’ জাওয়াদ বললো খুব ঠাণ্ডা গলায়। হুট করে যেন পুরো পরিবেশ শান্ত হয়ে গেল। নাহিদ ভড়কে গেল। ঢোঁক গিলে কিছু একটা বলতে চাইলো আর তখনই টপিক পাল্টানোর জন্য রিয়াদ বললো, ‘আরে ধুর এসব ফাউল টপিক বাদ দে। জাওয়াদ গান ধর। অনেকদিন শুনিনা।’

‘কালকেই দেখলাম হেডফোন লাগিয়ে ছাদে ঘুরছিস আর নাচছিস।’ হেসে বললো জাওয়াদ।

‘আরে তোর গান। নাহিদ একটু গিটারটা এগিয়ে দে আর স্পিকারটা ঠিক কর।’

‘হ্যাঁ।’ বলে জাওয়াদের হাতে গিটার দিয়ে স্পিকার ঠিক করে এসে বসলো নাহিদ।

জাওয়াদ গিটারে সুর তুলতে খানিকটা সময় টুংটাং করলো। ছাদের দরজায় দাঁড়িয়ে এই দৃশ্য মুগ্ধ নয়নে দেখছিলো তিথি। আদিয়া ওয়াশরুমে যাওয়ার পরে অনেক দোনা মোনা করে ছাদে ছলে এসেছে সে। নিজেকে যথেষ্ট লুকিয়ে রেখেছে যাতে ওরা কেউ না দেখে। হলুদাভ লাইটের আলোয় কপালে এলোমেলো ভাবে লেপ্টে থাকা চুলে জাওয়াদকে দেখতে কতোটা নেশাময় লেখছিলো! তিথির বুক কাঁপতে লাগলো। ছাদের দরজায় শক্ত করে ধরে দাঁড়িয়ে আছে সে। জাওয়াদ গান ধরলো,

“I used to believe
We were burnin’ on the edge of somethin’ beautiful
Somethin’ beautiful
Selling a dream
Smoke and mirrors keep us waitin’ on a miracle
On a miracle
Say, go through the darkest of days
Heaven’s a heartbreak away
Never let you go, never let me down
Oh, it’s been a hell of a ride
Driving the edge of a knife
Never let you go, never let me down
Don’t you give up, nah-nah-nah
I won’t give up, nah-nah-nah
Let me love you
Let me love you
Don’t you give up, nah-nah-nah
I won’t give up, nah-nah-nah
Let me love you
Let me love you”

একটা দমকা হাওয়া এসে যেনো সবকিছু লণ্ডভণ্ড করে দিয়ে গেল। চারিপাশে যেন উড়তে লাগলো ভালোবাসার রঙের এক একটা প্রজাপতি। গানের প্রতিটি লাইন যেনো বুকের ভেতরটাকে ধুকপুক করে কাঁপিয়ে তুলছিলো তিথির। যেনো এই গানটা জাওয়াদ তার জন্যে গাইছিলো। যতোই জাওয়াদকে এই হালকা আলোয় দেখছিলো তিথি, ততোই যেনো তার বুকের ভেতরটা অস্থিরতায় ভরে যাচ্ছিলো। তিথির পা টলতে লাগলো। সে কি এখন বেহুঁশ হয়ে যাবে? নাহ নাহ, এখানে থাকলে সেটাই হয়ে যাবে। এখানে আর থাকা যাবেনা। তিথি এলোমেলো পা ফেলে নিচে নেমে গেল। নামতে নামতে ভাবলো, ‘উনার সামনে গেলে আমার এমন কেন হয়?’
_______________

চলবে……….
@ফারজানা আহমেদ
নতুন কভারটা কেমন লাগছে?

রঙ তুলির প্রেয়সী ৮.

0

রঙ তুলির প্রেয়সী
৮.

ঠাস করে ডায়েরিটা বন্ধ করলো তিথি। অস্থির লাগছে ওর। খুব অস্থির লাগছে। চোখ জ্বলছে। নিশ্বাস পড়ছে থেকে থেকে। কান্নারা যেন বাঁধ মানছেই না। হাঁটুতে মুখ গুঁজে কাঁদতে লাগলো ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে তিথি। অনেকক্ষণ কাঁদার পরে জোরে জোরে বার কয়েক নিশ্বাস নিলো সে। তারপর উঠে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। চোখগুলো ফুলে গেছে কান্না করার কারণে। চোখ মুখ ভালো করে মুছে নিলো সে। নিজেকে খুঁতিয়ে দেখতে লাগলো তিথি। হালকা-পাতলা গড়ন, হ্যাঁ, তার গায়ের রঙ ও ফরসা। তিথি কয়েকবার চোখের পলক ফেললো, এইতো তার চোখের পাপড়িও ঘন। আরেকটু এগিয়ে গেল তিথি আয়নার দিকে। হাত বুলালো ঠোঁটের নিচের ডানদিকের তিল টার ওপর। খুলে দিলো নিজের চুলগুলোর খোঁপা। পিঠময় ছড়িয়ে পড়েছে তিথির চুলগুলো। কোমর ছাড়িয়ে হাঁটুর খানিকটা উপরে। এইতো, তার চুলও কোমরের নিচে… হাসলো তিথি। লজ্জারাঙা হয়ে গেল তার মুখটা। চোখে একটা অদ্ভুত খুশির জোয়ার। বুকে যেন প্রশান্তির ঢেউ। তিথি বিড়বিড় করলো, ‘সে কি একবারও আমাকে ঠিকমতো দেখেছে?’

বাইরে কারো চিৎকারে ঘোর কাটে তিথির। কিছু মুহূর্ত নীরব থেকে বোঝার চেষ্টা করলো কে চিৎকার করছে। তার কানে এলো জাওয়াদ চিৎকার করে বলছে, ‘আমার আলমারিতে কে হাত দিয়েছে? কে আমার ঘরে গিয়েছে?’

কয়েক মুহূর্তের জন্য যেন নিশ্বাস বুকে আঁটকে গেল তিথির। ঢোঁক গিলতে চেয়েও গিলতে পারছেনা, গলায় আঁটকে আছে। এবার কী হবে! এবার… ভয়ে আত্মা কাঁপতে লাগলো তিথির। সে দৌড়ে গিয়ে ডায়েরিটা হাতে নিলো। তারপর উপরের দিকে মাথা তুলে বললো, ‘আল্লাহ! পাঁচটা মিনিট সময় দিলানা? এক্ষুণি নিয়ে রেখে দিতাম। এবার আমি কী করবো?’

ভয়ে ভয়ে দরজাটা হালকা ফাঁক করলো তিথি। মাথা বের করে দেখলো জাওয়াদ কোথায়। দেখতে পেলো জাওয়াদ নিচে নামছে। তাড়াতাড়ি করে তিথি সাবধানে জাওয়াদের ঘরে গেল। দরজাটা খোলাই ছিলো, ঘরের অবস্থা করুণ। আলমারি খোলা, কাপড়চোপড় সব এদিক সেদিক ছড়িয়ে ছিঁটিয়ে আছে। তিথি একবার তাকালো ডায়েরিটার দিকে। এভাবে খুঁজছিলো! তিথি ডায়েরিটা আলমারিতে রাখার জন্য এগোলো। পরক্ষণেই চিন্তা করলো – নাহ, আলমারিতে রাখা যাবেনা। ওখানে খোঁজা শেষ। এদিক সেদিক তাকিয়ে হঠাৎ খাটের দিকে চোখ পড়তেই তিথির মাথায় বুদ্ধি এলো। সে ডায়েরিটা খাটের নিচে ছুঁড়ে দিলো। তারপর এক মুহূর্তও ওখানে না দাঁড়িয়ে বেরিয়ে গেল।
___________________

‘আদিয়া, আদিয়া…’ নিচে গিয়ে চিৎকার করে ডাকতে লাগলো জাওয়াদ আদিয়াকে। হুড়মুড় করে রুম থেকে বেরিয়ে এলো আদিয়া। মুনতাহাও বেরিয়ে এলেন। হেলাল আহমেদ এর ঘুম ভেঙ্গে গেল। তিনিও চোখ কচলে বেরিয়ে এলেন। মুনতাহা জিজ্ঞেস করলেন, ‘কী হয়েছে? এমন করছিস কেন?’

‘আমার রুমে কে গিয়েছে?’

‘কে যাবে? কেউই তো না।’

‘কেউ একজন গিয়েছিলো। আমার আলমারিতে কে হাত দিয়েছে?’

‘কীসব বলছিস জাওয়াদ? তোর আলমারি কে নাড়তে যাবে?’

হেলাল আহমেদ বললেন, ‘কী হয়েছে সেটা বলোতো?’

জাওয়াদ চিৎকার করে বললো, ‘মাহির ডায়েরি খুঁজে পাচ্ছিনা আমি। কোথায়?’

হেলাল আহমেদ বললেন, ‘ঘরেই কোথাও আছে হয়তো। খুঁজে দেখো ভালো করে।’

‘দেখেছি। নেই।’ বলেই দু’হাতে চুল খামচে ধরে সোফায় বসে পড়লো জাওয়াদ। মুনতাহা তাড়াতাড়ি গিয়ে ওর পাশে বসে বললেন, ‘শান্ত হ। কোথায় যাবে? ঘরেই আছে।’

‘আমি খুঁজছি।’ বলে জাওয়াদের ঘরের দিকে গেল আদিয়া। হেলাল আহমেদ বললেন, ‘জাওয়াদ। রুমেই আছে। আরেকদিন একইভাবে রুমে রেখেই তুমি এমন করেছো।’

‘আমি বলছি আমি খুঁ…’ মাথা তুলে কিছু বলতে গিয়ে জাওয়াদ দেখলো সোফার কাছে জড়োসড়ো হয়ে তিথি দাঁড়িয়ে আছে। জাওয়াদের মনে পড়লো সকালে তিথি তার আলমারি নেড়েছে। মাথায় রক্ত উঠে গেল জাওয়াদের। সে ফোঁস ফোঁস করতে করতে তিথির সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। হঠাৎ এভাবে জাওয়াদ এসে দাঁড়ানোতে তিথির অস্বস্তি লাগলো। চোখ তুলে জাওয়াদের চোখের দিকে তাকাতেই যেন আত্মা কেঁপে ওঠে তার। আগুন ঝরছে চোখ দিয়ে। জাওয়াদ দাঁতে দাঁত ঘষে তিথির চোখের দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ইউ! তুমি! ডায়েরি কোথায়?’

‘আ-আম-আমি জা-জা-জানিনা…’ বলেই কেঁদে দেয় তিথি। মুনতাহা উঠে গিয়ে তিথিকে জড়িয়ে ধরে জাওয়াদকে ধমকে উঠলেন, ‘কী করছিস? পাগল হয়ে গেছিস?’

‘এসব কী হচ্ছে জাওয়াদ? ও কীভাবে জানবে?’ হেলাল আহমেদও ধমকালেন।

জাওয়াদ জোরে জোরে নিশ্বাস নিয়ে বললো, ‘ও-ই জানে। ও-ই সকালে…’

‘বড় ভাইজান, আফামণি আপনেরে ডাকে। আপনের জিনিস আপনের খাটের তলায় পাওয়া গেছে।’ জাওয়াদের কথার মাঝখানে এসে ভয়েভয়ে কথাটা বললো টুনি। মুহূর্তেই যেন জাওয়াদের মাথা ঠাণ্ডা হয়ে গেল। সে একবার তাকালো তিথির দিকে। তারপর বাবা মার দিকে। হেলাল আহমেদ বললেন, ‘দেখলে তো!’

জাওয়াদ তিথির দিকে তাকিয়ে নিচু স্বরে ‘দুঃখিত’ বলেই চলে গেল হনহন করে। তিথি নাক টানতে লাগলো। মুনতাহা তিথিকে নিয়ে সোফায় বসিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে টুনিকে বললেন, ‘যা তো, এক গ্লাস পানি নিয়ে আয়।’

‘আইচ্ছা।’ বলে চলে গেল টুনি পানি আনতে।

হেলাল আহমেদ এসে তিথির পাশে বসে বললেন, ‘কিছু মনে করো না তিথি মা। ছেলেটা এমনই।’

তিথি চোখ মুছলো। লম্বা একটা শ্বাস নিলো। তারপর ভাবতে লাগলো… এই ছেলে এমন থাকবেনা আর।
_____________________

বিছানায় হেলান দিয়ে বসে বসে বই পড়ছিলো জাওয়াদ। হঠাৎ দরজার দিকে চোখ পড়তেই খানিকটা চমকে গেল। তিথি দাঁড়িয়ে আছে দরজার সামনে। জাওয়াদ বইটা রেখে সোজা হয়ে বসলো। পূর্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো তিথির ওপর। কেমন অস্বস্তি লাগলো তার। মনে পড়ে গেল কেমন দুর্ব্যবহার করেছিলো। লজ্জিত বোধ করলো সে।

‘আসতে পারি?’ ভ্রু উঁচিয়ে জিজ্ঞেস করলো তিথি।

‘হুম। এসো।’ আস্তে করে বললো জাওয়াদ। তিথি ভেতরে এসেই জাওয়াদের পায়ের কাছে বিছানায় বসে গেল। জাওয়াদের পা লম্বা করে রাখা ছিলো, তিথি এভাবে হুট করে এসে বসায় খানিকটা লেগে গিয়েছিলো তিথির হাতে জাওয়াদের পা। তাড়াতাড়ি করে পা সরিয়ে নিলো জাওয়াদ। এমনভাবে সরালো যে তিথির ভ্রু কুঁচকে গেল। মনেমনে বললো, ‘আমার শরীরে কী ইলেক্ট্রিসিটি আছে নাকি? শক লাগছে?’ মুখে বললো, ‘ব্যাথা টেথা পেলেন নাকি? কাঁটা খোঁচা দিলো? আহ দেখি দেখি…’ বলে মাথা এদিক সেদিক নাড়িয়ে জাওয়াদের পায়ের দিকে তাকালো তিথি। হেসে দিলো জাওয়াদ তিথির অবস্থায়। জাওয়াদের হাসি দেখে হাসলো তিথিও।

‘স্যরি পিচ্চি। আসলে তখন, মাথাটা ঠিক ছিলোনা তো…’ একটু অস্বস্তি নিয়ে বললো জাওয়াদ।

‘ইটস ওকে, বাট আমার বয়স আঠারো বছর দুই মাস। দেখতেও মোটামুটি বিয়ের লায়েক, আর বয়সেও। কোনদিক দিয়ে পিচ্চি লাগে আমাকে?’ কপাল কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো তিথি।

তিথির দিকে তাকিয়ে ঠোঁট প্রশস্ত করে হাসলো জাওয়াদ। মেয়েটা কী চটাং চটাং কথা বলে রে! সব কথার উত্তর ঝপাঝপ দিয়ে দেয় মাটিতে পড়ার আগেই।

তিথির আবার মাথা ঘুরতে লাগলো একটু একটু করে। এ কী হচ্ছে তার! এমন হওয়ার কথা ছিলোনা… এই হাসি দেখে কেমন যেন মাথা ফাঁকা হয়ে গেছে। বুক করছে ধুকপুক। ঘোরে চলে যাচ্ছে সে।

‘যতোই হোক, আমার তুলনায় অনেক পিচ্চি। নয় বছরের ছোট। আদিয়ার বয়সি মানেই আমার কাছে পিচ্চি।’ হাসি বজায় রেখেই বললো জাওয়াদ।

‘তার মানে আপনার বয়স সাতাশ। এতেই আমি পিচ্চি হয়ে গেলাম? এমন ভাব করছেন যেন মনে হচ্ছে বয়স সাতাশ না আপনার, সাতাশি।’

‘তুমি কি সবসময়ই ঝগড়া মুডে থাকো নাকি?’ কপাল কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো জাওয়াদ।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
‘আমি কই ঝগড়া করলাম রে বাবা! যুক্তিতে পারলেন না এখন হয়ে গেলাম আমি ঝগড়াটে? বাহ বাহ।’

জাওয়াদ হালকা শব্দ করে হাসলো। এই হাসি দেখে আবারও মাথা ঘুরালো তিথির। দুরুদুরু বুক নিয়ে তিথি তাকিয়ে থাকলো। জাওয়াদ বললো, ‘আমি পারবোনা, সত্যিই কথায় তোমার সাথে পারবোনা।’

তিথি হেসে বললো, ‘দুই দিনের দুনিয়া। এতো ঝগড়াঝাঁটি করে কী ফায়দা? যতদিন বেঁচে আছি মিলেমিশেই থাকি। ডায়েরিটাতে কী এমন ছিলো?’

জাওয়াদ একটু থমকালো। তারপর মুচকি হেসে আস্তে করে বললো, ‘আমার বেঁচে থাকার কারণ।’

কথাটা কেমন যেন বুকে গিয়ে লাগলো তিথির। মুচড়ে উঠলো যেন হৃদয়টা। সে আস্তে করে বললো, ‘ও।’

‘তিথি, স্যার এসেছেন। পড়তে বসবি না?’ আদিয়া এসে রুমে ঢুকেই স্বাভাবিকভাবেই তিথিকে বললো কথাটা। কিন্তু আদিয়ার আগমনে জাওয়াদ আর তিথি দুজনেই কেমন অস্বস্তি বোধ করলো। জাওয়াদ আদিয়ার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘নাহিদকে বলিস পড়ানো শেষ করে থাকতে।’

‘আচ্ছা।’ বললো আদিয়া। তারপর তিথির দিকে তাকিয়ে বললো, ‘গল্প পরে করিস। চল চল।’ বলে সে চলে গেল।

জাওয়াদ তিথির দিকে তাকিয়ে বললো, ‘যাও। মন দিয়ে পড়াশোনা করো।’

তিথি কোনো কথা না বলে উঠে গেল সেখান থেকে। মনেমনে আদিয়ার টিচারের গুষ্টি উদ্ধার করতে লাগলো। আর আসার সময় পেলো না!
_____________

চলবে……
@ফারজানা আহমেদ

রঙ তুলির প্রেয়সী ৭.

0

রঙ তুলির প্রেয়সী
৭.

‘উফ, মা। হয়েছে কী বলোতো? সাত-সকালে এতো চিৎকার চেচামেচি কীসের?’ চোখ কচলাতে কচলাতে ডাইনিং টেবিলের সামনে আসতেই চোখ বড় বড় হয়ে গেল আদিয়ার। জাওয়াদের সাথে বসে চা খাচ্ছেন হেলাল আহমেদ। আদিয়াকে দেখেই একগাল হেসে বললেন, ‘আটটা বাজে। এই উঠলি তুই? আয় এদিকে আয়।’ বলে হাত বাড়িয়ে দিলেন উনি। আদিয়া এখনও হতভম্ব। আস্তে আস্তে হেঁটে গেল সে। হেলাল আহমেদ মেয়েকে নিজের কোলে বসালেন। তারপর বললেন, ‘ব্রাশ করেছিস?’

না সূচক মাথা নাড়লো আদিয়া। জাওয়াদ বললো, ‘কতোদিন বলেছি ঘুম থেকে উঠেই ব্রাশ না করে রুম থেকে বেরোবিনা।’

হেলাল আহমেদ জাওয়াদকে থামিয়ে আদিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন, ‘আচ্ছা ঠিক আছে। যা ব্রাশ করে আয়। তোর মা আলুর পরটা বানাচ্ছেন। একসাথে খাবো। রিয়াদ উঠেছে?’

আদিয়া আবারও না সূচক মাথা নাড়লো। জাওয়াদ বললো, আমি ডেকে আনছি।’ তারপর চায়ে শেষ চুমুক দিয়ে উঠে গেল। আদিয়া রান্নাঘরের দরজায় গিয়ে দাঁড়িয়ে দেখলো মুনতাহা আলুর পরটা ভাঁজছেন। টুনি পেঁয়াজ কাটছে। সে এগিয়ে গিয়ে মুনতাহার পাশে দিয়ে দাঁড়িয়ে বললো, ‘আমিতো ভুত দেখার মতো কেঁপে উঠেছিলাম। হঠাৎ করে বাবা এসে গেল যে? কোনো সমস্যা হয়েছে মা?’

‘আরে না। সারপ্রাইজ দিবে নাকি। এভাবে কেউ আসে বল? রান্নাবান্না কিছুর ঠিকঠাক নেই এইযে সকাল সকাল এলো আগে বললে তো কিছু আইটেম রেঁধে রাখতাম।’

‘যাকগে। আমি অনেক মিস করছিলাম বাবাকে। ফ্রেশ হয়ে আসি বাবার হাতে খাবো।’ বলে হাসি দিয়ে চলে গেল আদিয়া। মুনতাহা টুনির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কীরে হয়েছে? একটু দেখতো আমার বাথরুমের কল ছাড়া কিনা। ভুলে গেছি।’

‘হইয়া গেছে আর একটু।’ বললো টুনি।
_______________

প্রায় পাঁচ মিনিট থেকে রিয়াদের দরজায় দাঁড়িয়ে ডেকেই যাচ্ছে জাওয়াদ। রিয়াদের কোনো সাড়াশব্দ নেই। রিয়াদ থাকে দোতলার একেবারে শেষ প্রান্তের ঘরটায়। তিথি ফ্রেশ হয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে একটু মাথা নেড়ে চারপাশে দেখছিলো। হঠাৎ খেয়াল করলো ডান’দিকে একেবারে শেষ প্রান্তে একটা ঘরের সামনে কোমরে দু’হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছে জাওয়াদ। কৌতূহল নিয়ে সেদিকে এগিয়ে গেল তিথি।

‘রিয়াদ ভাইয়ার দরজার সামনে চোরের মতো দাঁড়িয়ে আছেন কেন?’

তিথির কথা শুনে চট করে ফিরে তাকালো জাওয়াদ। চোখে মুখে তার চরম বিরক্ত। জাওয়াদ এভাবে হুট করে পেছন ফিরে তাকানোর কারণে তিথি খানিকটা পিছিয়ে গেল। তারপর দু-হাত উপরে তুলে সারেন্ডার করার ভঙ্গিতে বললো, ‘উউউ! এভাবে তাকাতে হয়না। কুচ কুচ হয়।’

‘হোয়াট!’ চোখ বড় বড় করে বললো জাওয়াদ।

‘কিছুনা। এভাবে তাকালে তো ভয়ে মরা একটা তেলাপোকাও জীবিত হয়ে উড়তে শুরু করবে, আর আমিতো…যাকগে। কী করেন এখানে?’

জাওয়াদ মাথা দু’দিকে নাড়িয়ে বললো, ‘রিডিকিউলাস!’ তারপর আবার ঘুরে দাঁড়িয়ে দুটো টোকা দিলো রিয়াদের দরজায়। তিথি একটা ভেংচি দিলো। মনেমনে বললো, ‘ভালো করে কথা বল ব্যাটা, আমি তো সুন্দর করেই কথা বলতেছি। এহ! ভাব দেখে মনে হচ্ছে আমি যেন মরেই যাচ্ছি!’ মনের কথা মনেই চেপে রেখে মুখে বললো, ‘বুঝলাম। রিয়াদ ভাইয়াকে ডাকা হচ্ছে। তবে মাথার ধূসর কোষগুলোতে হালকা কমন সেন্স থাকলে আমার মনেহয় ভালো হতো।’

এবার জাওয়াদ ঘুরে আগুন চোখে তাকিয়ে বললো, ‘পটরপটর করতে কেউ বলেছে? আর হোয়াট ডু ইউ মিন বাই কমন সেন্স হে? কী বলতে চাইছো?’

জাওয়াদের দৃষ্টিতে খানিকটা চুপসালো তিথি। তারপর আমতাআমতা করে বললো, ‘ন-না মানে, বলছিলাম যে… এ-একটা কল করলেই তো হয়। এতোক্ষণ থেকে দাঁড়িয়ে আছেন নিশ্চয়ই পায়ে ব্যাথা করছে? আমি মানবতার খাতিরে বললাম। আচ্ছা আমি যাই হে।’ বলেই আর এক মুহূর্তও না দাঁড়িয়ে চলে গেল তিথি হনহন করে। জাওয়াদ কয়েক মুহূর্ত তাকালো তিথির গমনপথে। তারপর হেসে দিলো হুট করে। তিথির চুপসানো মুখটা মনে করে ভারী মজা পেলো জাওয়াদ। তারপর হাসতে হাসতেই মোবাইল বের করে কল করলো রিয়াদকে।

সিঁড়ির কাছে এসে একবার পেছন ফিরে তাকালো তিথি। দেখলো জাওয়াদ ছাদে যাচ্ছে। তখনই তার মনে পড়লো আসার পর থেকে ছাদে যাওয়া হয়নি। একবার যেতে হবে।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন

‘আসসালামুয়ালাইকুম আঙ্কেল।’ হাসি হাসি মুখ করে হেলাল আহমেদের পেছনে এসে দাঁড়ায় তিথি।

‘আরে আরে তিথি মা যে। কতো বড় হয়ে গেছো তুমি! আসো আসো বসো।’ বলে নিজের ডানদিকের চেয়ারটা টেনে দিলেন তিনি। তিথি দেখলো ওপাশের চেয়ারে আদিয়া বসে আছে। আর হেলাল আহমেদ তাকে আলুর পরটা মুখে তুলে খাইয়ে দিচ্ছেন। তিথি হেসে এসে বসলো উনার পাশে। মুনতাহা বললেন, ‘তোকে ডাকতে পাঠিয়েছিলাম। মনেহয় বাথরুমে ছিলি, টুনি গিয়ে পায়নি। নে এবার খাবারটা খেয়ে নে। মুখটা কেমন শুকিয়ে গেছে তোর।’

তিথি হেসে বললো, ‘সে খাবো ক্ষণ। কিন্তু আঙ্কেল আসবেন বললেনা কেন কেউ? আমিও রিসিভ করতে যেতাম।’

মুনতাহা বললেন, ‘জানলে তো বলবো? হুট করে না বলে চলে এলেন।’

‘তোমাকে সারপ্রাইজ দেয়ার জন্য হয়তো। মিস করছিলে তো খুব, আসার পর থেকে মনমরা দেখেছি। তাইনা আঙ্কেল?’ তিথি হেসে তাকালো হেলাল আহমেদের দিকে। হেলাল আহমেদ হো হো করে হেসে উঠলেন। বললেন, ‘এইতো, আমার এখানকার সবাই হচ্ছে বুদ্ধু। আর এই আমার তিথি মা হচ্ছে বুদ্ধিমতী।’

‘আর কূটনী বুড়িও।’ ফোঁড়ন কাটলো আদিয়া।

‘আমি কোনো কূটনামি করিনি।’ ঠোঁট ফুলিয়ে বললো তিথি। হাসলেন হেলাল আহমেদ। মুনতাহা বললেন, ‘হয়েছে এবার খা। আর এই দুধের গ্লাসটা শেষ করবি। আজ কোনো কথা শুনবোনা, পুরোটা খাবি।’

‘মামণি, প্লিজ একটু কমাও।’ কাতর স্বরে বলে তিথি। হেলাল আহমেদ বললেন, ‘এমন করতে হয়না। বড়দের কথা শুনতে হয়।’

তিথি আর কিছু বললোনা। ঠোঁট উল্টে তাকিয়ে থাকলো দুধের গ্লাসটার দিকে। আচ্ছা, এসব খাওয়াদাওয়া কে বের করলো?

‘তোমার এক ছেলেকে ডাকতে আরেক ছেলে গেল। গিয়ে দুজনেই কোথায় গায়েব হলো? খাবারদাবার তো ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে। আমার একটু ঘুমোতে হবে। তার আগে রিয়াদের সাথে একটু দেখা করবো।’ আদিয়াকে খাওয়ানো শেষ করে বললেন হেলাল আহমেদ।

‘কিজানি। এদের মতিগতি আমি বুঝিনা। দুটোতে এক হলে খবর থাকেনা। কী করছে কে জানে।’ বললেন মুনতানা। আদিয়া পানির গ্লাসে চুমুক দিয়ে বললো, ‘বড় ভাইয়া তো ছোট ভাইয়াকে ডাকতে গেল। ডাকতে গিয়ে সে ঘুমিয়ে পড়লো নাকি?’

তিথি এবার চোখ তুলে তাকালো। তার মনে পড়লো সে দেখেছে জাওয়াদকে ছাদে যেতে। সে বললো, ‘উনাকে তো দেখলাম ছাদে যাচ্ছেন।’

‘বড় ভাইয়া?’ জিজ্ঞেস করলো আদিয়া।

‘হুম।’

মুনতাহা আদিয়াকে বললেন, ‘খাওয়া তো শেষ। যা তো দেখ কী করে ওরা। ডেকে নিয়ে আয়।’

‘এক মিনিট আমারও শেষ। আমিও যাবো।’ উঠে দাঁড়িয়ে বললো তিথি।
____________________

জাওয়াদ ছাদে এসে দেখলো রিয়াদ বুকডন দিচ্ছে। হেসে দিলো সে। এ ছেলের কোনোকিছুরই কোনো টাইম টেবিল নেই। রিয়াদের পেছনে গিয়ে দাঁড়ালো সে। তারপর বললো, ‘সকাল ন’টায় এক্সারসাইজ? ওয়াও ব্রো! ওয়াও!’

‘তবুও তো তোর মতো বডি বানাতে পারিনা। বেড লাক! আজ কয়টা দিলি?’

‘একটাও না। সময়ই পাইনি। আর তাছাড়া, এক্সারসাইজ করতে হয় ভোরবেলা।’ বলে হাসলো জাওয়াদ।

উঠে বসলো রিয়াদ। তারপর জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো, ‘সময় পাসনি মানে? ভোরবেলা কী কাজ ছিলো?’

‘বাবাকে রিসিভ করা।’

‘মানে? বুঝলাম না।’

‘মানে বাবা চলে এসেছেন। ডাকছেন তোকে। চল।’

‘কী বলিস! হঠাৎ? কোনো সমস্যা হলো নাকি?’ রিয়াদ খানিক চিন্তিত হয়ে বললো।’

‘সারপ্রাইজ, মায়ের জন্য।’ বলে হাসলো জাওয়াদ। হাসলো রিয়াদও। হেসে বললো, ‘স্টিল হি ইজ সো রোম্যান্টিক।’

‘হুম। চল এবার।’

‘দাঁড়া। বুকডন হয়ে যাক একবার? আজতো দিলিনা।’

জাওয়াদ চোখ ছোট করে ভাবার মতো করে বললো, ‘উম, নট অ্যা বেড আইডিয়া। দিয়েই যাই চল।’ বলেই টি-শার্ট এক টানে খুলে ফেললো জাওয়াদ। রিয়াদ ভ্রু উঁচিয়ে বললো, ‘ওয়াও ম্যান! দিনদিন তো হট হচ্ছিস। আমি ভাবছি আমার বিয়েতে সবাই আমাকে না তোকে দেখবে।’

হাসলো জাওয়াদ। দুজনেই ছাদে উপুড় হয়ে বুকডন দিতে লাগলো।

আদিয়া আর তিথি ততক্ষণে এসে ছাদের দরজায় দাঁড়িয়েছে। আদিয়া এগিয়ে গিয়েই বলতে লাগলো, ‘বাহ বাহ, বাবা ওদিকে অপেক্ষা করে আর এদিকে উনারা বডি বানাচ্ছেন। বাবা বসে আছেন তো।’

থামলো জাওয়াদ। উঠে দাঁড়ালো। রিয়াদ ছাদেই শুয়ে টি-শার্ট পরে নিলো। জাওয়াদ হেসে বললো, ‘এজন্যেই আমার সাথে দিতে মানা করি। আমি দিলাম এইটুক সময়ে ষোল। আর তুই সাত।’ বলে পাশে রাখা ছোট পানির বোতল থেকে পানি খেয়ে নিজের খালি গায়েও পানি ঢাললো সে বোতল থেকে।

দরজার সামনে দাঁড়িয়ে হা হয়ে তাকিয়ে আছে তিথি জাওয়াদের দিকে। জাওয়াদের বুকের পশমগুলো লেপ্টে আছে বুকের ওপর। বিন্দু বিন্দু জল বেয়ে পড়ছে বুক, পেট বেয়ে। কপালে, নাকে জমে আছে বিন্দু বিন্দু ঘাম। শরীরে প্রতিটি ভাঁজ… না না, এবস, নিশ্বাসের সাথে ওঠানামা করছে। হাসছে জাওয়াদ, সেই হাসিটা দেখতে কেমন যেন অদ্ভুত ভালো লাগছে তিথির। তিথির কেমন মাথা ঘুরছে, পা টলছে। ঘেমে যাচ্ছে তিথি। ঢোঁক গিললো সে। আবার তাকালো। বিড়বিড় করে বললো, ‘এমন লাগছে কেন? কেন দেখতে ইচ্ছা হচ্ছে বারবার?’ তিথি আরো একবার তাকালো। নাহ, মাথাটা ভনভন করছে ওর। তাড়াতাড়ি করে নেমে গেল সে। এখানে থাকলে নিশ্চিত অজ্ঞান হবে।
__________________

তিথি বসে আছে নিজের রুমের বারান্দায়। আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে আনমনে। পেছনে আদিয়া এসে দাঁড়িয়েছে সেটা খেয়ালই করেনি সে। ঘোর কাটে আদিয়ার ডাকে। আদিয়া বলে, ‘কীরে? ওভাবে না বলে চলে এলি যে। বললি ছাদে ঘুরবি।’

তিথি কী বলবে ভেবে পাচ্ছেনা। খানিক দোনামোনা করে হেসে বললো, ‘বাথরুম পেয়েছিলো। এখন ছাদে বসে তো করতে পারবোনা…’

হো হো করে হাসলো আদিয়া। তিথি একটা নিশ্বাস নিলো। আদিয়া বললো, ‘তুই ঠিক আছিস? কেমন লাগছে।’

‘না, মানে মাথাটা একটু ধরেছে।’

‘রেস্ট নে। একটু শুয়ে পড়। পরে আবার ছাদে যাবো।’

‘আচ্ছা।’

হেসে বেরিয়ে গেল আদিয়া। তিথি দরজা লাগিয়ে আলমারি থেকে জাওয়াদের ডায়েরিটা বের করলো। তারপর বিছানায় এসে বসলো ওটা নিয়ে। কেমন যেন বুক কাঁপছে তিথির। সাহস হচ্ছেনা খুলে দেখার। আচ্ছা, ডায়েরিটা কী রেখে দিয়ে আসবে? এভাবে পড়া ঠিক হবে? পরক্ষণেই আবার নিজেকে শুধালো। এনেছে যখন পড়েই নিক। তিথি গভীর চোখে তাকালো ডায়েরিটার দিকে। খুব একটা বড় না ডায়েরিটা। পাতলা। বেশিক্ষণ লাগবেনা শেষ করতে। তিথি একটা ঢোঁক গিললো। আস্তে আস্তে ডায়েরির প্রথম পাতা উল্টালো। সাথেসাথে দেখতে পেলো একটা ছবি লাগিয়ে রাখা। দুজন মানুষ একে অপরের দিকে তাকিয়ে হাসছে। দুটো মানুষের চেহারাই তার পরিচিত। কৌতূহল নিয়ে আরেক পাতা উল্টায় তিথি। দেখতে পেলো লেখা আছে অনেক কিছু। পড়তে শুরু করলো তিথি…….
_________

চলবে……..
@ফারজানা আহমেদ
সবাইকে ঈদ মোবারক ?

রঙ তুলির প্রেয়সী ৬.

0

রঙ তুলির প্রেয়সী
৬.

ভোর পাঁচটা। জাওয়াদের মোবাইল বাজছে। ঘুম ঘুম চোখে মোবাইলটা হাতে নিলো সে। একটা অচেনা নাম্বার থেকে কল এসেছে। চোখ কচলে উঠে বসে জাওয়াদ। রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে ভেসে এলো একটি পুরুষালী কণ্ঠ, ‘ভেরি বেড! ভে-রি বে-ড! ঘুমোচ্ছিস এখনো? মর্নিং ওয়াকএ যাসনি?’

চোখ থেকে ঘুম যেনো উবে গেল মুহূর্তেই। নড়েচড়ে উঠে বসলো জাওয়াদ। তারপর কান থেকে মোবাইলটা নামিয়ে চোখের সামনে ধরলো, হ্যাঁ! বাংলাদেশী নাম্বার। তার মানে… সে আবার মোবাইলটা কানে চেপে ধরলো। ওপাশ থেকে আবারও ভেসে এলো, ‘কীরে, ঘুমিয়ে গেলি নাকি?’

‘বাবা তুমি চলে এসেছো?’ অবাক কণ্ঠে বললো জাওয়াদ।

‘তোর বাপের আত্মা এসেছে।’

হেসে দিলো জাওয়াদ। তারপর হাই তুলে বললো, ‘এভাবে করলে কেন? আগে বললে গাড়ি পাঠিয়ে দিতাম অথবা আমি গাড়ি নিয়ে গিয়ে অপেক্ষা করতাম। আর তোমার না মাসখানেক পর আসার কথা?’

‘তোর মাকে সারপ্রাইজ দিবো বলে চলে এলাম না বলে। কোনোদিন মাসখানেকের জন্য গিয়েছি কোথাও?’

হাসলো জাওয়াদ শব্দ করে। হেলাল আহমেদ আবার বললেন, ‘আমি এয়ারপোর্টে বসে আছি। আয়তো তাড়াতাড়ি। শোন, কাউকে বলিস না এসেছি যে। রিয়াদকে এজন্যেই কল করিনি, ওটা হচ্ছে মায়ের ছেলে।’

‘আচ্ছা ঠিকাছে আমি আসছি ত্রিশ মিনিটের মধ্যেই।’ বলে কল কেটে ফ্রেশ হতে গেল জাওয়াদ। পাঁচ মিনিটেই ফ্রেশ হয়ে যেমন ড্রেসআপে ছিলো সেভাবেই গাড়ির চাবি হাতে বেরিয়ে গেল। একটা টি-শার্ট আর ফুল ব্লাক ট্রাউজার পরা।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
নামায পড়ে একবার রুমের বাইরে বেরোলো তিথি। আজ কেন যেন ঘুম লাগছেনা ওর। তাই ভাবলো এক কাপ চা বানিয়ে বারান্দায় এসে বসে আরামসে খাবে। সিঁড়ির কাছে যেতেই কারো সাথে ধাক্কা খেলো তিথি। জাওয়াদকে দেখেই তীক্ষ্ণ চোখে তাকালো। ‘স্যরি’ বলে পাশ কাটিয়ে চলে গেল জাওয়াদ। সেদিকে তাকিয়ে ভেংচি দিলো তিথি। তারপর ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে তাকালো। কী মনে করে জাওয়াদের রুমের দিকে যেতে লাগলো সে। রুমের সামনে এসে চোখ চিলিক দিয়ে উঠলো তিথির। ‘দরজা খোলা!’ বলে চাপা উল্লাসে ফেটে পড়লো যেন সে। তারপর তাড়াতাড়ি রুমে ঢুকে দরজা ভেজিয়ে দিলো। চোখ পড়লো আবার দেয়ালে টানানো ছবির দিকে। দুটো ছবি। এরমাঝে একটা ছবি খুব সুন্দর একটা মেয়ের। আর আরেকটা হচ্ছে মোগ্যাম্বো টার। দুটো ছবিই রঙ তুলির আঁকা। দুটো ছবিতেই দুজনে হাসছে। প্রাণখোলা হাসি। আসার পর থেকে তিথি একবারও এই ছেলেটাকে এভাবে হাসতে দেখেনি। না হাসুক, তার কী। তিথি আরেকবার তাকালো মেয়েটার ছবির দিকে। রঙ তুলির আঁকা ছবিতেই এতো সুন্দর লাগছে মেয়েটাকে। না জানি মেয়েটা বাস্তবে কতো সুন্দর! কে মেয়েটা? যেই হোক, সে এতো ভাবছে কেন? মাথা ঝাড়া দিয়ে এগিয়ে গেল তিথি জাওয়াদের আলমারির দিকে। দেখলো আলমারিতে চাবি ঝুলছে। একটা পৈশাচিক হাসি ফুটে ওঠে তিথির ঠোঁটে। সে চাবি ঘুরিয়ে আলমারি খুললো। তারপর জোরে জোরে বললো, ‘এবার আমিও এই সুন্দর করে ভাঁজ করে রাখা কাপড়গুলো ছড়িয়ে ছিঁটিয়ে ফেলবো! মুহাহাহা!’ বলেই প্রথমে জাওয়াদের একটা ভাঁজ করা শার্ট গান গাইতে গাইতে পেছনে ফেলল ছুঁড়ে। এভাবে একে একে প্রায় ৫/৬ টা কাপড় ছুঁড়ে ফেললো পেছনে। তারপর হাতে নিলো একটা ক্যাপ। সেটা প্রথমে মাথায় দিলো। দিয়ে আলমারির আয়নায় নিজেকে দেখলো। হঠাৎ বা’দিক থেকে কেউ একজন বলে উঠলো, ‘ভালো দেখাচ্ছে। বিউটিফুল। নিয়ে নাও এটা তুমি।’

গলা শুনে বুঝতে বাকি রইলো না তিথির যে এটা কে। কলিজা যেন শুঁকিয়ে আসতে লাগলো তার। মোগ্যাম্বো! আস্তে আস্তে ক্যাপটা মাথা থেকে সরিয়ে আলমারিতে জায়গামতো রাখলো তিথি। তারপর বা’দিকে ঘুরে দেখলো দরজা লাগিয়ে সেখানে হেলান দিয়ে বুকে দু’হাত গুটিয়ে দাঁড়িয়ে আছে জাওয়াদ। খুব গম্ভীর চাহনি। ঢোঁক গিললো তিথি। তারপর আস্তে আস্তে বললো, ‘আ-আমি যাবো।’

জাওয়াদ একবার হাতের ঘড়িতে সময় দেখে নিলো। বিশ মিনিট আছে হাতে। একটু স্পিডে ড্রাইভ করলেই এয়ারপোর্টে পৌঁছে যাবে দশ মিনিটেই। সে তাকালো তিথির দিকে। তিথি আবার বললো, ‘ঘ-ঘরে যাবো। মামণি…’

জাওয়াদ সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে তিথির দিকে একটু এগিয়ে এসে বললো, ‘অবশ্যই যাবে। তার আগে যেগুলো এইমাত্র ফেলে দিলে সেগুলো আগেরমতো জায়গায় ঠিক করে রাখো।’

‘হ্যা?’ অবাক হয়ে বললো তিথি। তিথিকে তার কাপড় ভাঁজ করতে বলছে?

‘শুনতে পাওনি?’

‘আমি পারবোনা।’ সোজাসাপটা উত্তর দিলো তিথি।

‘তাহলে আমি এক কাজ করি বরং। বাড়ির সবাইকে একত্রে জড়ো করে তোমার এই কাণ্ডটার কথা বলি।’

তিথির চোখদুটো বড় হয়ে গেল। ব্ল্যাকমেইল! এটা করলে যে তিথির মানসম্মান আর থাকবেনা সেটা ভালোই বুঝতে পারছে সে। তিথি আস্তে আস্তে বললো, ‘এইযে শুনুন, আমার সাথে লাগালাগি কিন্তু ভালো হচ্ছেনা। একবার আমার রুমমেট আমার সাথে লেগেছিলো। আমি ওর ঘুমের মধ্যে ওর পাজামার ফিতা এমনভাবে গিট্টু দিয়ে রেখেছিলাম যে বাথরুমে বড়টা করতে গিয়ে যখন খুলতে পারেনি তখন চিৎকার করে কান্না করেছে হুম।’

হাসি পেয়ে গেল জাওয়াদের। কিন্তু হাসলোনা সে। মুখে গম্ভীর্য রেখেই বললো, ‘সমস্যা নেই। আমি পাজামা পরিনা।’ বলে নিচে ছড়িয়ে থাকা কাপড়ের দিকে চোখ দিয়ে ইশারা করলো জাওয়াদ। তিথির কেমন যেন অসহায় লাগলো। সে আস্তে আস্তে ফ্লোরে পড়ে থাকা কাপড়গুলো তুলে ভাঁজ করে জায়গামতো রাখতে লাগলো। আল্লাহ বাঁচিয়েছেন, বেশি কাপড় ফেলেনি। চার-পাঁচটা হবে। নাহলে এতো কাপড় ভাঁজ করতে গেলে তো হয়ে গেছিলো!

দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে হাসি আঁটকানোর চেষ্টা করছে জাওয়াদ। তিথির এই অসহায় ভরা মুখটা দেখতে তার বেশ ভালো লাগছে। মোবাইলটা ফেলে রেখে গিয়েছিলো ভুলে, সেটাই নিতে এসেছিলো সে। এগিয়ে গিয়ে বিছানার ওপর থেকে মোবাইলটা নিয়ে পকেটে রাখলো সে। পেছন থেকে তিথি বললো, ‘নিন জনাব শেষ।’

‘গুড।’ বলে আলমারিটা তালা দিয়ে চাবিটা হাতে নিয়েই বেরিয়ে গেল জাওয়াদ। পেছন ফিরেও তাকালোনা। ফোঁস ফোঁস করতে করতে নিজের রুমে চলে গেল তিথি।
________________________

গাড়িতে উঠে বসে হাসতে লাগলো জাওয়াদ। খুব হাসছে সে। এতো পাগল মেয়েটা! একেবারেই একটা বাচ্চা। তিথির বলা রুমমেটের ঘটনাটা মনে পড়তেই জোরে শব্দ করে হাসলো জাওয়াদ। ‘বড়টা! গিট্টু!’ বলে আবার হাসলো শব্দ করে সে। তারপর হেসে মাথা নেড়ে গাড়ি স্টার্ট দিলো।
_________________________

বিছানায় বসে আছে তিথি। হাতে তার একটা নীল রঙের ডায়েরি। যেটা একটু আগে সে জাওয়াদের আলমারি থেকে নিয়ে এসেছে লুকিয়ে। জাওয়াদ যখন মোবাইল পকেটে নিচ্ছিলো উল্টো ঘুরে ঠিক তখনই নিজের টপসের নিচে লুকিয়ে রেখেছিলো ডায়েরিটা তিথি। ডায়েরিটা দেখেই চিনতে পেরে গিয়েছিলো তিথি। এটা সেই ডায়েরি, যেটা সেদিন জাওয়াদ তিথির ঘরে সব লণ্ডভণ্ড করে খুঁজছিল। ডায়েরিটার সাথে আরো কিছু একটা ছিলো সেদিন। সম্ভবত একটা ছোট ব্যাগ। সে যাই হোক, ডায়েরিটা দেখে দারুণ কৌতূহল হলো তিথির। তাই আগপিছ না ভেবে নিয়ে নিলো। কী এমন আছে এতে যে ওভাবে পাগলের মতো খুঁজছিলো? আজ দেখবে তিথি। এই ডায়েরিটা হাতে নিয়ে যেনো এভারেস্ট জয় করে ফেলেছে এমন অনুভূতি হচ্ছে তার। উঠে দাঁড়িয়ে আলমারির দিকে এগোতে এগোতে ভাবতে লাগলো, ডায়েরিটা অনেক লুকিয়ে রাখা ছিলো। মনে হয়না এটা বের করে কখনো আলমারি থেকে। তাই তিথি নিশ্চিন্তে পড়তে পারে। এভাবে কারো পারসোনাল ডায়েরি পড়তে নেই। কিন্তু ঐযে, নিষিদ্ধ জিনিস আকর্ষণ করে বেশি। নিজেকে দমাতে পারেনি তিথি। তারতো জানতেই হবে কী আছে এটায় যে ওভাবে তার কাপড়গুলো ফেলেছিলো। বাব্বাহ! কতোক্ষণ লাগলো পরে গোছাতে! ডায়েরিটা আলমারিতে রেখে দিলো তিথি। পরে শান্তিতে বসে বসে পড়বে। তাড়া নেই। যেহেতু এটা আগে তার রুমে ছিলো সেহেতু এটা কখনোই বের করেনা জাওয়াদ। বড় করে একটা নিশ্বাস নিয়ে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো তিথি।
_____________

চলবে……..
@ফারজানা আহমেদ

রঙ তুলির প্রেয়সী ৫.

0

রঙ তুলির প্রেয়সী
৫.

রুম থেকে বেরিয়েই আদিয়ার মুখোমুখি হলো তিথি। আদিয়া বললো, ‘কীরে? ঘুম হইছে? আস্তে আস্তে তৈরি হ, আজকে থেকে তো পড়তে বসবি আমার সাথে।’

‘আরে রাখ তোর পড়া। আমি এখন অনেক বড় মিশনে যাচ্ছি।’

‘মিশন? কিসের?’

‘তোদের মোগ্যাম্বো আমারে চ্যালেঞ্জ করছে। আমি নাকি ওকে দাবাতে হারাতে পারবোনা।’ দু’হাতে কোমর ধরে বললো তিথি।

আদিয়া হাঁটা থামিয়ে প্রথমে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো। তারপর চোখ ছোট ছোট করে জিজ্ঞেস করলো, ‘মোগ্যাম্বো?’

‘আরে তোদের বড়টা রে। হাঁটা থামালি কেন চল। পরে বলবে ভয় পেয়ে যাচ্ছিনা।’

হো হো করে হেসে উঠলো আদিয়া। হেসে হেসে জিজ্ঞেস করলো, ‘এটা কেমন নাম দিলি?’

‘তোর ভাইরে দেখার পরে এরথেকে ভালো নাম আমার ডিকশনারিতে পাই নি।’

‘শুধুশুধু চ্যালেঞ্জ এক্সেপ্ট করেছিস। হারবিই তুই।’ বলে হাঁটা শুরু করে আদিয়া। তিথি একটা মুখ ভেংচি দিয়ে বললো, ‘দেখা যাবে।’

জাওয়াদের রুমে ঢুকেই কোনোদিকে না তাকিয়ে সোজা বারান্দায় চলে গেল তিথি। আদিয়াও গেল পেছন পেছন। তিথিকে দেখেই রিয়াদ বললো, ‘এতোক্ষণে এলে?’

জাওয়াদ বললো, ‘আমিতো ভাবলাম দাবার ট্রেনিং নিতে গেলে নাকি আমাকে হারাবে বলে।’ কথাটা একদম তিথির চোখের দিকে তাকিয়ে বললো জাওয়াদ। এই প্রথম জাওয়াদ তিথির চোখে চোখ রেখে কথা বললো। তিথির যেন কেমন একটা করে উঠলো বুকের ভেতর। সে তড়িৎ চোখ সরিয়ে বললো, ‘আসার সময় এই আদিয়া গল্প জুড়ে দিয়েছিলো তাই একটু দেরি হয়েছে।’

‘এবার খেলা শুরু হোক। আই অ্যাম সো এক্সাইটেড!’ উৎসাহ নিয়ে বললো আদিয়া। রিয়াদ বললো, ‘হ্যাঁ হ্যাঁ। এইযে তিথি বসো এখানে তুমি। আমি আদিয়ার পাশে যাই।’ বলে আদিয়ার পাশের চেয়ারে গিয়ে বসলো সে।

খেলা শুরু হলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই একে একে তিথির সব সৈনিক মারতে লাগলো জাওয়াদ। তিথির চোখে হেরে যাওয়ার আতঙ্ক। জাওয়াদের ঠোঁটে বিজয়ের হাসি। একসময় ঠোঁটে মুচকি হাসি নিয়ে শেষ চাল চেলে বলে উঠলো জাওয়াদ, ‘উপ্স! চেক মেট!’
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
‘না হবেনা। আমি মানিনা!’ উঠে দাঁড়িয়ে কোমরে দু’হাত রাখলো তিথি। কপাল কুঁচকে তাকালো জাওয়াদ। আদিয়া আর রিয়াদ অবাক হলো। রিয়াদ বললো, ‘কী হলো তিথি?’

তিথি কথার উত্তর না দিয়ে জিজ্ঞেস করলো, ‘উনি সবসময় কি সাদা গুটিই নেয়?’

‘হ-হ্যাঁ, কিন্তু কেন বলোতো?’

‘এইতো! আগেই বুঝেছি। যতো জিতাজিতি সব এই গুটির জন্য। আমি সাদা গুটি নিবো। আরেক ম্যাচ হবে। এবার দেখবো!’ চেয়ারে বসে বললো তিথি। অবাক চোখে তাকালো জাওয়াদ। কিছুই বুঝতে পারছেনা সে। রিয়াদের দিকে তাকালো। রিয়াদ ইশারায় কিছু একটা বললো। তারপর তিথির দিকে তাকিয়ে বললো, ‘আচ্ছা ঠিক আছে তুমি সাদা গুটিই নাও।’

আবার খেলা শুরু হলো। এবার তিথি প্রথমেই জাওয়াদের একটা সৈনিক মেরে দিলো। তারপর খুশিতে বাক-বাকুম হয়ে রিয়াদ আর আদিয়ার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ইয়েস!’ হাসলো ওরা দুজনে। জাওয়াদ শুধু একটা অদ্ভুত চাহনি দিলো, কিছু বললোনা। আদিয়া হাসছে, খুব হাসছে। তবে সেটা অন্য কারণে। তার মাথায় ঘুরছে অনেক চিন্তা। সে তাকিয়ে আছে তিথির দিকে।

একইভাবে আগের মতোই হারিয়ে দিলো জাওয়াদ তিথিকে। তারপর মুখে একটা তাচ্ছিল্যের হাসি নিয়ে বললো, ‘এটা লুডু না। এটা দাবা।’

তিথি কথাটা কানে না নিয়ে দাবার বোর্ডটা হাতে তুলে এটার চারিদিকে কপাল কুঁচকে দেখতে লাগলো কিছু একটা। সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। আদিয়া বললো, ‘কী করছিস এগুলো?’

তিথি বোর্ডটা নাড়তে নাড়তে বললো, ‘দেখছি, তাবিজ টাবিজ কিছু লাগানো আছে নাকি। তাবিজ তো নেই, আমি শিওর পানি পড়া ছিঁটিয়ে রেখেছে।’

‘মানে?’ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো জাওয়াদ।

তিথি বললো, ‘মানে সবাইকে এভাবে বারবার হারাচ্ছেন। নিজে একবারও হারছেন না। ডালমে কুচতো কালা হে। নিশ্চয়ই তাবিজ টাবিজ বা পানি পড়া ছিঁটিয়েছেন বোর্ডে তাই এমন।’

বিষ্ময়ে বাকরূদ্ধ হয়ে গেল জাওয়াদ। কিছুই বলতে পারছেনা সে। মানে, সিরিয়াসলি? সামান্য দাবার জন্য সে তাবিজ করবে? পানি পড়া… চোয়াল শক্ত হয়ে এলো জাওয়াদের। সে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো রিয়াদ আর আদিয়ার দিকে। দেখলো ওরা দুজন মুখ চেপে হাসছে। এতো হাসি হাসছে যে ওদের শরীর কাঁপছে। জাওয়াদের রাগ বেড়ে গেল। সে একটা আগুন দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো তিথির দিকে। তারপর সেখান থেকে উঠে চলে গেল। তিথি মুখ ভেংচি দিয়ে বিড়বিড় করলো, ‘নামটা একেবারে পারফেক্ট! মোগ্যাম্বো!’

জাওয়াদ চলে যাওয়ার পর রিয়াদ আর আদিয়া মুখ থেকে হাত সরিয়ে জোরে জোরে হাসতে লাগলো। রিয়াদ হাসতে হাসতে হাসতে বললো, ‘আমি কিন্তু তোমার ফ্যান হয়ে যাচ্ছি তিথি।’

তিথি কিছু বললোনা। হাসলো। আদিয়া বললো, ‘জানো ছোট ভাইয়া, তিথি বড় ভাইয়ার নাম কি দিয়েছে? মোগ্যাম্বো!’ বলে আরেক দফা হাসতে লাগলো আদিয়া। হাসতে লাগলো রিয়াদ আর তিথি ও। এমন সময় রিয়াদের কাছে একটা কল এলো। কথা শেষ করে আদিয়াকে রিয়াদ বললো, ‘নাহিদ আসবেনা আজ।’

আদিয়া জিজ্ঞেস করলো, ‘কেন?’

‘কী একটা জরুরি কাজ।’

‘ও।’ আদিয়ার মুখটা কেমন ছোট হয়ে গেল। তিথি জিজ্ঞেস করলো, ‘নাহিদ কে?’

‘তোমাদের টিচার।’ বলে হেসে সেখান থেকে উঠে গেল রিয়াদ। আদিয়া তিথিকে বললো, ‘চল নিচে যাই।’

জাওয়াদের ঘর থেকে বেরোনোর সময় দেয়ালে একটা ছবি দেখে তিথি আদিয়াকে জিজ্ঞেস করলো, ‘এটা কার ছবি রে?’

‘কাজিন।’ বলে মুচকি হাসলো আদিয়া।

‘এখানে টানানো কেন? মনে হচ্ছে তো রঙ তুলির আঁকা।’

‘ঠিকই ধরেছিস। চল চল তাড়াতাড়ি।’ বলে যতো দ্রুত সম্ভব সেখান থেকে বেরিয়ে গেল আদিয়া। তিথি একবার ভালোকরে দেখলো ছবিটা। তারপর সেও বেরিয়ে গেল।
__________________________

ফোঁস ফোঁস করতে করতে রান্নাঘরে এসে ফ্রিজ খুলে ঢকঢক করে ঠাণ্ডা পানি গিলতে লাগলো জাওয়াদ। কপালের রগ দপদপ করছে। রিয়াদ একপাশে দাঁড়িয়ে ঠোঁট টিপে হাসছে। মুনতাহা জাওয়াদকে এমন করতে দেখে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কী হয়েছে?’

‘তোমার ছেলে সবসময় জিতবে বলে দাবার বোর্ডে পানি পড়া ছিঁটিয়ে রেখেছে মা।’ বলে হাসতে লাগলো রিয়াদ। কটমট করে তাকালো জাওয়াদ। বললো, ‘রিডিকিউলাস!’

‘ওহ স্যরি।’ বলে হাসি আটকানোর ব্যার্থ চেষ্টা করে রিয়াদ। মুনতাহা বললেন, ‘কীসব পাগলের মতো কথা বলিস?’

‘আমি বলি নি। তিথি বলেছে। জাওয়াদ এর কাছে হেরে গিয়ে।’

মুনতাহা একবার জাওয়াদের দিকে তাকালেন। উনার হাসি পাচ্ছে খুব। তবুও হাসি চেপে জাওয়াদের পাশে গিয়ে বললেন, ‘ও ছোট। আদিয়ার বয়েসি। মা বাবা কেউ নেই। পরিবারের সবাই তাড়িয়ে দিয়েছে দূরদূর করে। মেয়েটা খুব চঞ্চল আর প্রাণবন্ত। এমন একটা ফুলের মতো মেয়ের জীবনে এতো কষ্ট। ওর মা জানে ওর কোথাও জায়গা হবেনা। তাই আমাকে চিঠি লিখে গেছে। আর ওর মা অনেক কিছু করেছে আমার জন্য, যার ঋণ শোধ করার মতো না। ওর সাথে মিলেমিশে থাকতে পারবিনা?’

‘একদম। তিথি খুবই ইন্টারেস্টিং মেয়ে। তুই একটু ইজিলি ওর সবগুলো কথা নিস। এভাবে রাগিস না। রাগিস দেখেই রাগায়। বাচ্চা তো! ওর সাথে রাগারাগি তোকে মানায়?’ বললো রিয়াদ।

জাওয়াদ একটা বড় নিঃশ্বাস নিলো। তারপর হেসে বললো, ‘আচ্ছা ওকে ঠিক আছে। আমি এখনথেকে ইজিলি নেবো।’

স্বস্তির নিঃশ্বাস নিলেন মুনতাহা। হাসলো রিয়াদ।
______________________

হাতে একটা টাইগারের বোতল নিয়ে সেটাতে চুমুক দিতে দিতে সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠছিলো জাওয়াদ। দেখলো তিথি দাঁড়িয়ে আছে নিজের রুমের সামনে। হাতে একটা কলম। সেটা নাড়িয়ে নাড়িয়ে কিছু একটা বিড়বিড় করছে। আরকটু কাছে যেতেই শুনতে পেলো তিথি গান গাইছে, ‘মেরি পাতলি কামার মেরি…’ জাওয়াদকে দেখেই গান বন্ধ করে দিলো তিথি। সরু চোখে তাকালো ওর দিকে। জাওয়াদ এর কেন যেন হাসি পেলো। সে হেসে তিথিকে পার করে নিজের রুমের সামনে গেল। পরক্ষণেই আবার মাথায় দুষ্টুমি চাপলো জাওয়াদের। পেছন ফিরে তাকালো। দেখলো তিথি তাকিয়ে আছে তার দিকে। জাওয়াদ টাইগারের বোতলে একটা চুমুক দিলো। তারপর মাথা কাত করে তিথির পা থেকে মাথা অবধি তাকালো। তিথির কেমন অস্বস্তি লাগলো। সে একবার নিজের পরনের টপসটা টেনে ঠিক করে নিলো। জাওয়াদ একইভাবে মাথা কাত করে তিথির কোমরের দিকে তাকালো। তারপর মাথা নাড়িয়ে একটা তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে নিজের রুমে চলে গেল। তিথি যেন একটা চারশো চল্লিশ ভোল্টের শক খেলো। মোগ্যাম্বোটা এভাবে ওর কোমরের দিকে তাকিয়ে হেসে কী বোঝাতে চাইলো? মজা করলো? এতো জঘন্য মজা? মানে কী বোঝালো তিথি মোটা? রাগ চড়ে গেল তিথির। সে চিৎকার করে বললো, ‘এইযে এই শুনুন আপনি হাসলেন কেন?’ বলতে বলতে জাওয়াদের রুমের সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই জাওয়াদ তিথির মুখের ওপর ঠাস করে দরজা লাগিয়ে দিলো। হা হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো তিথি। তারপর জাওয়াদের রুমের দরজায় একটা লাথি দিয়ে হনহন করে হেঁটে চলে গেল সেখান থেকে।

বিছানায় বসে হাসতে লাগলো জাওয়াদ। হাসতে হাসতে নিজে নিজেই বললো, ‘মেয়েটা বড্ড পাগল আছে!’ তারপর একটু থামলো। তারপর আবার বললো, ‘বাচ্চা!’
_______________

চলবে……..
@ফারজানা আহমেদ