Friday, July 18, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1921



রঙ তুলির প্রেয়সী ৪.

0

রঙ তুলির প্রেয়সী
৪.

‘শপিং টপিং তো শেষ। এবার?’ ড্রাইভ করতে করতে লুকিং গ্লাসে চোখ রেখে বললো রিয়াদ। পেছনে আদিয়া ও তিথি গল্পে মশগুল। রিয়াদের কথাটা ওদের কানেই গেলনা। হাসলো রিয়াদ। তারপর গাড়ি সাইড করে থামালো। গাড়ি থামাতেই হুঁশ হলো আদিয়া ও তিথির। আদিয়া জিজ্ঞেস করলো, ‘গাড়ি থামালে কেন?’

‘আমি কী জিজ্ঞেস করেছি শুনেছিস?’

‘ওহ না। কী?’

‘ফিরে যাবো?’

‘তো আর তো কিছু করার নাই।’ বলে হাই তুললো আদিয়া। সাথেসাথে তিথি লাফ দিয়ে বললো, ‘একদম না। ফুচকা খাবো ফুচকা। রিয়াদ ভাইয়া ফুচকা খাবো।’

আদিয়াও উৎসাহ দেখিয়ে বললো, ‘জোশ হবে। অনেকদিন খাইনা। ছোট ভাইয়া চলো। “হোয়াট দ্য ফুচকা” তে যাই।’

তিথি আদিয়ার দিকে তাকিয়ে ঝামটি মেরে বললো, ‘হোয়াট দ্য ফুচকা মানে? ফুচকা চিনিস না? এলিয়েন নাকি রে? মেয়েদের ইজ্জত মেরে দিলি।’

হো হো করে হেসে উঠে গাড়ি স্টার্ট দিলো রিয়াদ। আদিয়া হতাশ দৃষ্টিতে তাকালো তিথির দিকে। তিথি আবার বললো, ‘এভাবে তাকাচ্ছিস কেন?’

‘আমি এই “হোয়াট দ্য ফুচকা’ ছাড়াও যে আরো দু’তিন লাইন কথা বলেছি সেগুলো কি তোর কানে গেছে নাকি খালি এটাই শুনেছিস?’

তিথি কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলো তখনই রিয়াদ লুকিং গ্লাসে তিথির দিকে তাকিয়ে বললো, ‘হোয়াট দ্য ফুচকা হচ্ছে এখানকার একটা রেস্টুরেন্টের নাম, তিথি।’

‘অ্যাঁ?’ ভারি অবাক হলো তিথি। সে তাকালো আদিয়ার দিকে। তারপর মিনমিনে গলায় বললো, ‘স্যরি।’ আদিয়া ভেংচি কেটে বললো, ‘মন দিয়ে পুরো কথা না শুনে লাফালাফি করিস না।’

তিথি খুব সুন্দর করে বললো, ‘আচ্ছা।’
____________________________
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
‘আমি সুমেলিকে নিজের বোনের চোখে দেখি। ওর প্রতি আমি খুবই কৃতজ্ঞ। একমাত্র ওর কারণেই আমি তোমাকে নিজের করে পেয়েছি। আজ ওর মেয়ে আমার এখানে এসেছে, ওর মেয়ের জন্য কিছু করতে পারলে আমি সত্যিই অনেক শান্তি পাবো। আদিয়া আর তিথির মধ্যে কোনো ফারাক রাখবোনা।’ বললেন হেলাল খান।

মুনতাহা একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিলেন। তারপর বললেন, ‘মেয়েটা খুবই মিষ্টি। ওকে সারাজীবনের জন্য যদি নিজের ঘরে রেখে দেয়া যেতো!’

‘সেই সুযোগ আর কই? রিয়াদের তো সব ঠিকঠাক। আর জাওয়াদ…’

‘আচ্ছা ওসব বাদ দাও। তুমি আসবে কবে? শেষ হয়না কেন তোমার কাম কাজ এতোদিন থেকে?’ প্রসংগ পাল্টাতে কথা বদলালেন মুনতাহা। স্বামীকে এই মুহূর্তে মন খারাপ করতে দিতে চান না উনি।

‘এলামই তো মাত্র দু’দিন হলো। মাসখানেক তো লাগবেই।’

‘ও…’

মুনতাহা ভিডিও কলে কথা বলছিলেন স্বামী হেলাল আহমেদের সাথে। কথা বলার এক পর্যায়ে হেলাল আহমেদ বললেন, ‘রাতে ঘুমাও না? চোখের নিচে কালো কেন?’

‘ওমা! সবসময় টাইম টু টাইম বেড এ আসি।’

‘তাহলে চোখের নিচ কালো কেন? আর ব্রণও দেখছি।’

‘কীসব আজেবাজে বকছো? ব্রণ আসবে কোত্থেকে? এসব বয়সের ছাপ। বুড়ো হয়েছি, নাতি-নাতনী পাবার বয়স হয়েছে। চোখের নিচে কালী থাকবে নাতো কি সোনা থাকবে?’

‘কে বললো তুমি বুড়ো? এখনও সুচিত্রা সেনকে হার মানানোর মতো রূপ তোমার। আর আমাকে পাগল বানানোর মতোও।’

কথাটা শুনে ভারি লজ্জা পেলেন মুনতাহা। পেছন থেকে খিলখিল হাসির শব্দ শুনতে পেলেন। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলেন টুনি দাঁড়িয়ে আছে। মুনতাহা তাকাতেই টুনি বললো, ‘মাগো মা! খালুজান এখনও কত্তো রুমান্টি গো!’

‘কী বললি? রুমান্টি কী?’ কপাল কুঁচকে জিজ্ঞেস করলেন মুনতাহা। টুনি বিজ্ঞের মতো হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে বললো, ‘আরে ঐযে, রুমান্টি গো… ফিলিমে নায়ক নাইকারা রুমান্টি থাকে যে ঐডা।’

মুনতাহা বুঝলেন টুনি রোম্যান্টিক কে রুমান্টি বলছে। প্রচণ্ড হাসি পেলো তার। তিনি হাসি চেপে মুখে কঠোর ভাব এনে বললেন, ‘দেবো একটা কানের নিচে। যা রান্নাঘরে যা আমি আসছি।’ টুনি ধমক খেয়ে মুখ ভার করে চলে গেল। এতোক্ষণ এসব কথা শুনে নিঃশব্দে হাসছিলেন হেলাল আহমেদ। তিনি বললেন, ‘এজন্যেই বলি, ইয়ারফোন দিয়ে কথা বলো ভিডিও কল এর সময়। নাহলে আবার আমাদের এই বুড়ো বয়সে “রুমান্টি” কথাবার্তা বাচ্চারা শুনলে লজ্জার ব্যাপার না?’ বলেই হো হো করে হাসলেন হেলাল। মুনতাহা মুখে কঠোর ভাবটা বজায় রাখতে চেয়েও পারলেন না। হেসে দিলেন।
________________________________

রেস্টুরেন্টে কর্ণারের দিকে একটা টেবিলে বসলো ওরা তিনজন। রিয়াদ দু’প্লেট ফুচকার অর্ডার করলো। তিথি জিজ্ঞেস করলো, ‘সেকি দু’প্লেট কেন ভাইয়া? তুমি খাবেনা?’

‘ভালো জিনিস ওরা খায়না।’ রিয়াদ কিছু বলার আগেই আদিয়া বললো কথাটা। তিথি হাসলো ফিক করে। রিয়াদ বললো, ‘হ্যাঁ খুব ভালো জিনিস। এই ভালো জিনিসটা খেয়ে যদি পরে বুকে ব্যথা পেটে ব্যথা বলে চিল্লাইছিস তাহলে বুঝবি।’

ভেংচি দিলো আদিয়া। ওয়েটার দু’প্লেট ফুচকা নিয়ে এলো। খাওয়া শুরু করলো তিথি আর আদিয়া। রিয়াদ পকেট থেকে মোবাইল বের করে ফেইসবুকে স্ক্রল করছিলো। হঠাৎ আদিয়া চাপা স্বরে উচ্ছাস করে উঠলো, ‘ছোট ভাইয়া!’

রিয়াদ মাথা তুলে তাকিয়ে বললো, ‘কী?’

আদিয়া রিয়াদের পেছনে তাকিয়ে হাসছে। তিথি আদিয়ার দৃষ্টি অনুসরণ করে রিয়াদের পেছনে তাকালো। দেখলো রিয়াদের পেছনের টেবিলটায় তিনটা মেয়ে আর দুটো ছেলে বসে আছে। সেদিকে তাকিয়ে এতো উচ্ছাস করার কী আছে এটা মাথায় ঢুকলোনা তিথির। সে আদিয়ার দিকে তাকালো। আদিয়া তখনও তাকিয়ে আছে রিয়াদের পেছনে। রিয়াদ আদিয়াকে তার পেছনে ওভাবে তাকিয়ে হাসতে দেখে ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে তাকাতে যাবে তখনই আদিয়া বলে উঠলো, ‘আরে তাকাইওনা ওদিকে, মারা খাবা।’ বলে সে যথাসম্ভব নিজেকে ওদের থেকে আড়াল করতে চাইলো। তিথি কিছুই বুঝতে পারছেনা, শুধু তাকিয়ে আছে ড্যাবড্যাব করে। রিয়াদ আদিয়ার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাতেই আদিয়া মুখে দুষ্টু হাসি নিয়ে বললো, ‘স্বপ্না।’

‘লা-হাওলা ওয়ালা কুয়াতা ইল্লা বিল্লাহিল আ’লিউল আযিম!’ বলে মাথায় হাত দিয়ে দিলো রিয়াদ। তিথি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো, ‘কী হলো? তোমরা এমন করছো কেন?’

আদিয়া হেসে আস্তে আস্তে বললো, ‘ঐযে সবুজ ড্রেস পরা সুন্দরি মেয়েটা দেখছিস? ঐটা ছোট ভাইয়ার এক্স।’

‘ওমা তাই নাকি?’ চোখ বড় বড় করে বললো তিথি। তারপর আবার বললো, ‘এক্স যখন তাহলে এতো লুকানোর কী আছে?’

‘আরে ব্যাক আসতে চায়। আমাকেও জ্বালিয়ে খাচ্ছে খালি “তোমার ভাইয়ের সাথে কথা বলিয়ে দাও” এটা বলে বলে। আজকেই গিয়ে ব্লক করবো ওকে।’

‘আহারে। মেয়েটা মনে হয় ট্রু লাভ করে।’ আক্ষেপের স্বরে বললো তিথি। তিথির এক্সপ্রেশন দেখে হেসে দিলো আদিয়া ও রিয়াদ। রিয়াদ বললো, ‘আর ট্রু! ওটা কী ছিলো আমি নিজেও জানিনা। বাই দ্য ওয়ে, বেরোবো কীভাবে? আমি মোটেও ওর সামনে পড়তে চাইনা।’

এমন সময় আদিয়া আর তিথি দেখলো স্বপ্না মেয়েটা কানে ফোন চেপে বাইরে বেরিয়ে গেল। ওর সাথের সবাই জায়গায়ই আছে। আদিয়া বললো, ‘ছোট ভাইয়া ও বেরিয়ে গেছে। মনে হচ্ছে ফোন এসেছে। চলো বেরোই আসার আগেই।’

রিয়াদ নিজের ওয়ালেট টা তিথির দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো, ‘তুমি বিল দিয়ে আসো, আমরা গাড়িতে আছি।’ বলেই বেরিয়ে গেল ওরা। তিথি শুধু বিষ্ময়কর চাহনি নিয়ে ওদের বেরিয়ে যাওয়া দেখলো।
______________________________

গুরুত্বপূর্ণ ফাইলগুলোতে চোখ বুলিয়ে সেগুলো ম্যানেজারের হাতে তুলে দিয়ে বললো জাওয়াদ, ‘ঠিক আছে সব। কাজ শুরু করে দিন যতো দ্রুত সম্ভব। আমি বাবাকে বলবো সব। চিন্তা করবেন না।’

‘থ্যাঙ্ক ইউ।’ বলে বেরিয়ে গেলেন ম্যানেজার। কফির কাপে চুমুক দিয়ে ল্যাপটপের স্ক্রিনে চোখ রাখলো জাওয়াদ। টেবিলের ওপর রাখা জাওয়াদের ফোনটা ভাইব্রেট করে উঠলো। কে কল করেছে নাম না দেখেই রিসিভ করে ফোনটা কানে চেপে ধরলো জাওয়াদ। ওপাশ থেকে একটা নারীকণ্ঠ ভেসে এলো,

‘হৃদয়ে জমছে মেঘ, নয়নে বর্ষণ…
অপরিষ্ফুটিত মোর আঁখি,
খোঁজে তোমারই দর্শন।’

মুহূর্তেই মেজাজ খিঁচে গেল জাওয়াদের। ইচ্ছা করলো কড়া কয়েকটা কথা শুনিয়ে দিতে। রাগে দপদপ করে লাফাচ্ছে কপালের রগ। দাঁতে দাঁত চেপে রাগ সহ্য করে চুপ করে রইলো জাওয়াদ। ওপাশ থেকে নারীকণ্ঠ আবার বললো, ‘কথা বলবি না?’

‘নির্লজ্জতার একটা লিমিট আছে।’ কথাটা বলেই খট করে কেটে দিলো কলটা জাওয়াদ। টেবিলের ওপর থেকে একটা কাগজ নিয়ে সেটাকে দুমড়ে মুচড়ে মুষ্টিবদ্ধ করে রাখলো। তারপর ছুঁড়ে ফেললো। বার কয়েক জোরে জোরে নিশ্বাস নিলো। দাঁতে দাঁত চেপে চোখ বন্ধ করে বসে থাকলো কিছুক্ষণ। তারপর ল্যাপটপ বন্ধ করে উঠে বেরিয়ে গেল।
__________________________________

বাড়ি ফিরে লাঞ্চ সেরে ঘুমিয়ে পড়েছিলো তিথি। ঘুম ভাঙলো বিকেল পাঁচটায়। কিছুক্ষণ ওভাবেই শুয়ে থাকলো সে। তারপর উঠে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো। হালকা ঝিরিঝিরি বাতাস দিচ্ছে। অদূরে ছোট ছোট টিলা দেখা যাচ্ছে। টিলার ওপাশে সূর্যটা আগুনের মতো জ্বলজ্বল করছে। হাই তুললো তিথি। ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো পাশের বারান্দায়। দেখলো বারান্দায় রিয়াদ আর জাওয়াদ বসে আছে দুটো চেয়ারে। মাঝখানে একটা টেবিল। মনে হচ্ছে কিছু একটা খেলছে। তিথি গলা বাড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো, ‘তোমরা কী করছো?’

রিয়াদ ঘুরে তাকালো। তারপর হেসে বললো, ‘ঘুম শেষ? কেমন লাগছে এখন?’

‘ভালো লাগছে। ফ্রেশ ফ্রেশ লাগছে।’ বলে জাওয়াদের দিকে তাকালো তিথি। অদ্ভুত! একবারও মাথা তুলে তাকাচ্ছেনা ছেলেটা। এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে টেবিলের ওপর।

‘দাবা খেলছি। পারো? খেললে আসো।’ বলে নিজের চালটা দিলো রিয়াদ। সাথেসাথে জাওয়াদ নিজের চাল দিয়ে বলে উঠলো, ‘চেক, এন্ড মেট!’ বলেই হেসে পাশের বারান্দায় তিথির দিকে এক ঝলক তাকালো সে। তারপর আবার রিয়াদের দিকে তাকিয়ে হাসলো।

রিয়াদ এক হাতের তালুতে আরেক হাতে কিল বসিয়ে বললো, ‘শিট!’ তারপর তিথির দিকে তাকিয়ে বললো, ‘জীবনেও পারিনা ওকে হারাতে।’

তিথি খুব অহংকার নিয়েই বললো, ‘আরে আমার পক্ষে এসব বাম হাতের খেল! বুড়িমা তো তার কলেজে দাবার চ্যাম্পিয়ন ছিলো। আর আমি উনাকেই হারাতাম। ইনি আর এমন কী!’

জাওয়াদ হেসে দিলো কথাটা শুনে। রিয়াদের দিকে তাকিয়ে আস্তে করে বললো, ‘সো সিলি!’

‘বাচ্চা তো।’ আস্তে করে বললো রিয়াদ। তারপর তিথির দিকে তাকিয়ে বললো, ‘বাব্বাহ! তাই নাকি? তাহলে আসো। এক ম্যাচ হোক!’

দাবার বোর্ডে গুটি সাজাতে সাজাতে জাওয়াদ জোর গলায় বললো, ‘বুঝলি রিয়াদ? বাচ্চাদের মন ভোলাতে মাঝেমাঝে ইচ্ছা করেই হার মেনে নিতে হয়। সেটাকে এতো লাইটলি দেখার কিছু নেই।’ তারপর মুখে একটা দুষ্টু হাসি নিয়ে এদিক ওদিক চোখ বুলাতে লাগলো। ঠোঁট টিপে হাসতে লাগলো রিয়াদ।

জাওয়াদের কথায় তিথির চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেল। এটা কী বললো? ওকে মিন করেছে নাকি?

‘এ-এই এই কী বললেন? কী?’ কোমরে দু’হাত রেখে বললো তিথি।

প্রত্যুত্তরে জাওয়াদ রিয়াদের দিকে তাকিয়ে চোখ ছোট ছোট করে বললো, ‘কে যেন আমাকে হারাবে?’

‘ধুর!’ বলে হেসে দিলো রিয়াদ। হাসতে লাগলো জাওয়াদ ও। হাসি দেখে গা জ্বলে যাচ্ছিলো তিথির। একে তো এভাবে ড্যাম কেয়ার ভাব দেখাচ্ছে। সরাসরি তিথিকে না বলে রিয়াদকে বলছে। দেখে মেজাজ খিঁচে যাচ্ছে। কেন তিথির সাথে কথা বলা যায়না? এহ, না বলুক। না বললে মরে যাবে না তিথি। হেসে কী প্রমাণ করতে চাইছে? তিথি দাবা খেলা পারেনা? আরে ব্যাটা দেখ কীভাবে গো হারান হারাই। ভাবতে ভাবতে তিথি জোরে জোরে বললো, ‘এতো হাসার কিছু নেই। ঢাকায় আমাকে লুডুতেও কেউ হারাতে পারতোনা। এক্ষুণি আসছি।’

‘লুডু!’ বলে হাসলো জাওয়াদ।
___________________

চলবে…….
@ফারজানা আহমেদ

রঙ তুলির প্রেয়সী ৩.

0

রঙ তুলির প্রেয়সী
৩.

সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে বসে আছে নিজের রুমে তিথি। একটু আগে আদিয়া ডেকে গেছে, ব্রেকফাস্ট করার জন্য। ঘড়িতে সকাল আটটা বাজে। এমনিতে ফজরের নামায পড়ে আরেক দফা ঘুমিয়ে দশটার আগে ওঠেনা সে। কিন্তু এখানে তো পরের বাড়ি, এতো বেলা করে ঘুমানো টা ভালো দেখায় না। হাই দিতে দিতে বেরিয়ে গেল সে রুম থেকে। সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামার সময় হঠাৎ ডাইনিং টেবিলে একজনকে দেখে থমকে গেল সে। খুব চেনা চেনা লাগছে… ভ্রু কুঁচকে ভালোভাবে তাকালো তিথি। আরে হ্যাঁ, এটাতো কালকের সেই মোগ্যাম্বোটা যে ওর রুমে ঢুকে সব লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছিলো। যদিও কালকে মুখ দেখেনি, কিন্তু এই লাল রঙের টি-শার্ট টাই পরা ছিল। এহ, খাচ্ছে দেখোনা! এত আস্তে আস্তে কেউ খায়? একটু খেয়ে আবার ছয় ঘণ্টা পরে আরেকটু খাচ্ছে! উফ, স্টাইল দেখে বাঁচা যায়না! এতো প্রানবন্ত রিয়াদ ভাইয়া আর আদিয়া। এদের ভাই কী করে এতো মোগ্যাম্বো হলো ভেবে পায়না তিথি। মনেমনে ভেংচি দিলো সে। গতকাল রাতে নালিশ নিয়ে গিয়েছিলো সে মুনতাহার কাছে। সব শুনে মুনতাহা বলেছিলেন, ‘আসলে ঐ ঘরটায় ওর কিছু গুরুত্বপূর্ণ জিনিস রাখা ছিল রে মা। মনেহয় বেশিই গুরুত্বপূর্ণ কিছু যা রুমে খুঁজে না পেয়ে মাথা গরম হয়ে গিয়েছিলো। তাই এমন… তুই মন খারাপ করিসনা। আমি টুনিকে পাঠিয়ে দিচ্ছি, সে সব গুছিয়ে দিবে।’ তিথি মুনতাহাকে আর কিছু বলেনি। কিন্তু মনেমনে ঠিকই ঐ মগেম্বোটার গুষ্টি উদ্ধার করছিলো। মানে, এভাবে করতে হবে? অদ্ভুত! তাও কী ভাব বাবারে! পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখলোও না এখানে কোনো মানুষ আছে কি না! মনেমনে আবার ভেংচি দিলো তিথি। তারপর সেখানে দাঁড়িয়েই মাথা এদিক সেদিক নাড়িয়ে জাওয়াদের মুখটা দেখার চেষ্টা করছিলো। কিন্তু ও শুধু মুখের বাম সাইড দেখতে পাচ্ছে।

‘এই তিথি, দাঁড়িয়ে আছিস কী রে? আয় আয় নাস্তা করবি আয়।’ সিঁড়িতে তিথিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ডাকলেন মুনতাহা। আদিয়া আর রিয়াদও মুনতাহার দৃষ্টি অনুসরণ করে তাকালো তিথির দিকে। দুজনেই হাসলো।

‘হ-হ্যাঁ…’ বলে নিচে নেমে যেতে লাগলো তিথি। অদ্ভুত তো! মামণি ডাকার সাথেসাথে বাকিরা আমার দিকে ফিরে তাকালো। কিন্তু এ ব্যাটা খাবারের দিক থেকে মাথাই তুললোনা! জন্ম জন্মান্তরের ভুক্কা নাকি রে? এসব ভাবতে ভাবতে নিচে টেবিলে গিয়ে বসলো তিথি।

‘গুড মর্নিং তিথি। কী অবস্থা? ঘুম কেমন হলো?’ রিয়াদ জিজ্ঞেস করলো হেসে।

‘ভালোই।’ হাসলো তিথি।

‘এই তিথি, আজ একটু বেরোবো আমরা। ঠিক আছে? এগারোটার দিকে রেডি থাকবি।’ খেতে খেতে বললো আদিয়া।

‘কোথায়?’ জিজ্ঞেস করলো তিথি।

‘আর বলোনা, মেকাপ টেকাপ কিনবে আরকি। ওর আর কী? আর তোমার জন্য বই কিনবো। সেজন্যেই মূলত যাওয়া।’ বললো রিয়াদ।

‘ও!’ মনটাই খারাপ হয়ে গেল। খালি পড়া পড়া আর পড়া। পৃথিবীতে এটা ছাড়া আর কিছু নাই?

‘কিছু কাপড়চোপড় ও কিনিস মেয়েটার জন্য। এখানে এসেছে, এখনও কিছু দিতে পারিনি ওকে।’ বললেন মুনতাহা।

‘আরে আমার আছেতো মামণি…’ বলে তাকালো তিথি মুনতাহার দিকে। মুনতাহা একবার চোখ বড় করে তাকালেন ওর দিকে, চুপ হয়ে গেল তিথি। মুনতাহা আবার বললেন, ‘খাসনা কেন? এতোক্ষণ থেকে হাত গুটিয়ে বসে আছিস কেন?’

‘খাচ্ছি তো।’ বলে খেতে লাগলো তিথি।

কিছুক্ষণ কেটে যাওয়ার পর রিয়াদ বললো, ‘এই তিথি, আমাদের বড় সাহেবের সাথে পরিচিত হয়েছো? তুমিতো আগে দেখোনি ওকে। তুমি যখন এসেছিলে সে দেশে ছিলোনা। এইযে, আমাদের বড় সাহেব। জাওয়াদ!’ হাত তুলে জাওয়াদের দিকে ইশারা করলো রিয়াদ। এতোক্ষণে চোখ তুলে তাকালো জাওয়াদ। তারপর তিথির দিকে তাকিয়ে হেসে ভ্রু উঁচিয়ে বললো, ‘ভালো আছো?’

উইসসালা! এ তো হাসতেও জানে! এমন ভাব যেন মনে হচ্ছে এই প্রথম তিথির সামনাসামনি হলো। অবশ্য সামনাসামনি এই প্রথমই, কাল তো পিছ দিয়ে ছিল।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
‘ভালো, ভাইয়া৷ আপনি?’ বলে পরখ করতে লাগলো তিথি জাওয়াদকে। ফর্সা, খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি, চুলগুলো খাড়া খাড়া। রিয়াদ এর চেহারার সাথে অদ্ভুত মিল আছে। রিয়াদ শুধু একটু শুকনো, আর ওর রিয়াদ এর থেকে একটু হালকা মাংস বেশি, এই যা।

‘হুম।’ বলে আবার খাবারে মনোযোগ দিলো জাওয়াদ। মুনতাহা বললেন, ‘তোর তো দেখা হয়েছে তিথির সাথে।’

‘কখন?’ ভারি অবাক হলো জাওয়াদ।

‘কখন মানে? কাল তো ওর ঘরে গিয়ে সব এলোমেলো করে দিয়ে আসলি।’

হঠাৎ জাওয়াদের মনে পড়ে গেল গত রাতের কথা। তারপর হেসে বললো, ‘ওহ, খেয়াল নেই। বাট ওকে আমি দেখিনি।’ বলে পানির গ্লাসে চুমুক দিয়ে সেটা নামিয়ে টেবিলের ওপর ধরে রাখলো।

ব্যস? খেয়াল নেই? বললেই হলো? আরে ব্যাটা স্যরি তো বলবি নাকি? তোর জন্য আমার ঘুমের দুই ঘণ্টা লেইট হইছে। দেখো দেখো, ভাব দেখো, তাকাচ্ছেই না! এসব ভাবতে ভাবতে হাতের চামচটা প্লেটের ওপর নাড়াচ্ছিলো তিথি। হঠাৎ অসাবধানতায় সিদ্ধ ডিমের ওপর চামচটা এমনভাবে লাগলো যে সেটা উড়ে গিয়ে জাওয়াদের হাতের ওপর পড়লো, সে হাতে সে গ্লাসটা ধরে ছিল। আদিয়া, রিয়াদ ও মুনতাহা খাওয়া থামিয়ে ভয়ার্ত চোখে জাওয়াদকে দেখলেন। কেঁপে ওঠে হাত সরিয়ে বিরক্তি নিয়ে তাকায় জাওয়াদ। জাওয়াদকে তার দিকে তাকাতে দেখে তিথি ফোঁস করে বলে উঠলো, ‘এভাবে তাকানোর কী আছে? মুরগীর ডিমই তো পড়েছে। বিষ্ঠা তো আর পড়েনি!’

‘হোয়াট!’ বলে অবাক চোখে তাকালো জাওয়াদ। তার মুখে খেলা করছে অস্বস্তি, অপমান। সবাই নীরব। আদিয়া করুণ চোখে তাকালো মুনতাহার দিকে। মুনতাহার দৃষ্টি খাবারের প্লেটে নিবদ্ধ। তিথি আবার বললো, ‘বাংলা বোঝেন না?’

জাওয়াদ যেনো আরো অবাক হলো। এভাবে মুখেমুখে ওর সাথে কেউ কথা বলেনি একজন ছাড়া। এই মেয়ে কে? রাগ হতে লাগলো জাওয়াদের। সে মাথা ঘুরিয়ে তাকালো রিয়াদের দিকে। সাথেসাথে হো হো করে হেসে উঠলো রিয়াদ। আদিয়া ও হেসে দিলো। মুনতাহাও নিজেকে আঁটকাতে পারলেন না, হেসে দিলেন। রান্নাঘরের দরজায় টুনি দাঁড়িয়ে ছিলো। ফিক করে হেসে দিলো সেও। সাথেসাথে জাওয়াদ ঘুরে তাকালো সেদিকে। হাসি আঁটকে প্রাণ হাতে নিয়ে রান্নাঘরের ভেতরে চলে গেল টুনি। অবাক চোখে জাওয়াদ তাকালো মুনতাহার দিকে। মুনতাহা প্লেট হাতে উঠে গেলেন সেখান থেকে। জাওয়াদ চোখ কটমট করে তাকালো আদিয়ার দিকে, আদিয়া হাসি বন্ধ করে নিচের দিকে তাকিয়ে থাকলো। তারপর তিথির দিকে তাকালো জাওয়াদ, তিথি তাকিয়ে আছে তার চোখের দিকে। কী নির্লজ্জ মেয়ে! ভাবতেই রাগ যেনো বাড়তে লাগলো জাওয়াদের। রিয়াদ তখনও হেসেই চলেছে। ভীষণ বিরক্ত নিয়ে রিয়াদের দিকে তাকায় জাওয়াদ।

‘স্যরি ব্রো, স্যরি স্যরি।’ বলে হাসি আঁটনোর চেষ্টা করলো রিয়াদ। রাগ এবার তুঙ্গে জাওয়াদের। সে চেয়ার ছেড়ে উঠে হনহন করে চলে গেল।

‘হেই জাওয়াদ, হেই দাঁড়া, আরে স্যরি…’ বলতে বলতে পেছন পেছন গেল রিয়াদ। ভেংচি দিয়ে খেতে লাগলো তিথি। আদিয়া এবার নিজের হাসি উগড়ে দিলো। হাসতে হাসতে বললো, ‘তুই কী রে? এতো সাহস পাস কই?’

‘এখানে এতো সাহসের কী?’

‘আমি বলেছিলাম, আমরা বড় ভাইয়াকে রাগাই না।’

‘তো? রাগালে কী হয়?’

‘বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে চায়।’

‘তারপর? যায়না?’

‘না। ছোট ভাইয়া আঁটকায় সবসময়।’

‘এ আবার কেমন রাগ? আরে এসব হচ্ছে ভং বুঝলি? যাবে টাবে না। যাওয়ার হলে এমনিই যেতো। রিয়াদ ভাইয়া আঁটকাতে পারতোনা।’

‘উহু, ওরা ভাই কম, ফ্রেন্ডস বেশি।’

তিথির হঠাৎ মনে হলো এমন ভাব করে বললো, ‘হ্যারে, রিয়াদ ভাইয়া নাম ধরে ডাকে কেন? উনার বড় না?’

‘তোকে কে বললো বড়?’ হাসলো আদিয়া।

‘তুই-ই তো ছোট বড় বলে ডাকিস।’

‘ওরা টুইন। ছয় সেকেন্ডের ব্যবধান দুজনের জন্মে। আমার তো ডাকতেই হয় এভাবে।’

‘ওহ! এজন্যেই চেহারায় দুজনের মিল!’ বলে একবার দোতলার দিকে চোখ বুলালো তিথি। ছেলেটা যেনো কেমন!
____________________________________________________

একটু পর বেরোবে রিয়াদ আর আদিয়ার সাথে তিথি। তাই শাওয়ার করে নিবে চিন্তা করলো। কিন্তু তোয়ালে টা খুঁজে পাচ্ছেনা কেন? কোথায় রাখলো? এদিক ওদিক তাকিয়ে খুঁজতে খুঁজতে হঠাৎ মনে পড়লো, বারান্দায় মেলে দিয়েছিলো সকালে। নিজের কপালে নিজেই একটা চাপড় মেরে সেদিকে পা বাড়ালো সে। দরজার কাছে যেতেই পাশের বারান্দায় চোখ পড়তেই থমকে গেল তিথি। নিজেকে যথাসম্ভব দরজার আড়ালে রেখে দেখতে লাগলো সে। পাশের বারান্দায় মাত্র শাওয়ার করে এসে দাঁড়িয়ে তোয়ালে দিয়ে নিজের মাথা মুছছিলো জাওয়াদ। খালি গা, শুধু ট্রাউজার পরে আছে। শরীরে বিন্দু বিন্দু জল দেখা যাচ্ছিলো। বুকের ওপর লম্বা লোমগুলো লেপ্টে ছিলো। সুঠাম দেহের অধিকারী জাওয়াদকে দেখে চোখ কপালে উঠে গেল তিথির। সে ঢোঁক গিলে বিড়বিড় করে বললো, ‘মোগ্যাম্বো তোহ হট আছে মামা!’

জাওয়াদ তোয়ালে মেলে দিয়ে চলে গেল সেখান থেকে রুমে। তিথি সেভাবেই দাঁড়িয়ে রইলো সেখানে। ভুলেই গেল, সে যে নিজের তোয়ালে নিতে এসেছিলো।
___________________________________

চলবে……
@ফারজানা আহমেদ
সবাই এই পেজে একটা লাইক দিয়ে আসবেন। লিংক- https://www.facebook.com/Dear.DepressioNx/

রঙ তুলির প্রেয়সী ২.

0

রঙ তুলির প্রেয়সী
২.

‘বলছিলাম যে, তিথি তো চলে এসেছে আজ।’ জাওয়াদের প্লেটে খাবার তুলে দিয়ে বললেন মুনতাহা।

‘তিথি কে?’ জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায় জাওয়াদ।

‘ওমা! এরই মধ্যে ভুলে গেলি? বলেছিলাম না তোকে? সুমেলির মেয়ে। ও মারা যাওয়ার আগে আমাকে চিঠি লিখে গিয়েছিলো। তিথিতো দু’বছর আগে আরেকবার এসেছিলো তখন তুই ছিলিনা। আদিয়ার বয়সেরই। ভারি মিষ্টি…’

‘আচ্ছা। বুঝেছি।’ বলে খাবারে মন দিলো জাওয়াদ।

‘আজ দেরি করলি যে?’

‘দরকার ছিলো আজ অফিসে। বাবার সাথে স্কাইপে একটা মিটিং ছিলো।’

‘ও আচ্ছা।’ বলে উশখুশ করতে লাগলেন মুনতাহা। বিষয়টা নজরে এলো জাওয়াদের। সে বললো, ‘কিছু বলবে মা?’

‘হ-হ্যাঁ…’

‘কী?’ কপাল কুঁচকে তাকালো জাওয়াদ।

‘তিথিকে তোর পাশের ঘরটায় থাকতে দিয়েছি…’ নিচের দিকে তাকিয়ে বললেন মুনতাহা। একমুহূর্তের জন্য জাওয়াদের হাত থেমে গেল। সে চোখ তুলে তাকালো। মুনতাহা আবার বললেন, ‘তো-তোর জিনিসগুলো আমি তোর আলমারিতে…’
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
‘ঐ আলমারির ভেতর যা যা ছিলো সব বের করেছিলে?’ জাওয়াদের শীতল কণ্ঠ।

‘হ্যাঁ তা করেছি…’

‘কাজটা করার আগে আমাকে অন্তত বলা উচিত ছিলো।’ কথাটা বলে উঠে দাঁড়ায় জাওয়াদ। তারপর হাত ধুয়ে চলে যায় সেখান থেকে। নির্বিকার দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলেন কিছুক্ষণ সেদিকে মুনতাহা। তারপর হাঁক ছাড়লেন, ‘এই টুনি… এগুলো গুছিয়ে রাখ তো। আর ঢেকে রাখিস ভালো করে।’
________________________________________________

আদিয়ার মাথায় তেল দিয়ে দিচ্ছিলেন মুনতাহা। পাশেই উনার ঘাড়ে মাথা রেখে দুনিয়ার তাবত গল্প করেই যাচ্ছে তিথি। আদিয়ার মাথায় তেল দেয়া শেষ করে তিথিকে বললেন মুনতাহা, ‘উঠ তো, উঠে এখানে এসে বোস। তেল দিয়ে দেই। মাথা ঠাণ্ডা হবে, ঘুম ভালো হবে।’

‘যা বলেছো। একটা লম্বা ঘুম দরকার আছে আজ।’ বলতে বলতে ফ্লোরে বসে পড়লো তিথি। মুনতাহা তেল দিতে লাগলেন ওর মাথায়। এমন সময় টুনি এসে ঢুকে ঘরে।

‘খালাম্মা, বড় ভাইজানের কালা কফিডা এখন বানামু?’

‘কালা কফি?’ কপাল কুঁচকে আদিয়ার দিকে তাকায় তিথি। আদিয়া ফিক করে হাসে। টুনি বলে, ‘আরে আফা ঐযে কালা রঙের কফি আছেনা? আরে দুধ ছাড়া বানায় যেটা। ঐটা।’

‘ওহ ইউ মিন ব্ল্যাক কফি?’

‘হ হ বেলেক কফি। আপনেরে দিমু? বড় ভাইজান তো চিনি ছাড়া খায়। আপনেরে চিনি দিয়া দিমু?’

‘হাও সুইট! বাই দ্য ওয়ে আমি বেলেক কফি খাইনা।’ বলে খিলখিল করে হাসে তিথি। মুনতাহাও হাসেন। আদিয়া টুনির দিকে তাকিয়ে বললো, ‘তুই যা, আমি দিয়ে আসছি।’

‘আইচ্ছা।’ বলে বেরিয়ে গেল টুনি।

তেল দেয়া শেষ করে তিথির চুল শক্ত করে বেণি করে দিলেন মুনতাহা। তারপর বললেন, ‘যা এবার রুমে গিয়ে ঘুমা।’
________________________________________________

তন্নতন্ন করে আলমারির ভেতর খুঁজতে লাগলো জাওয়াদ। নাহ, নেই, কোথাও নেই। ‘কোথায় গেল? কোথায় গেল?’ বিড়বিড় করতে করতে আরেক দফা উল্টাপাল্টা করে ফেললো আলমারির ভেতর। দু’হাতে চুল টেনে ধরে ধুপ করে বসে পড়লো সে বিছানার ওপর। ওটা কি রয়ে গেল ওঘরে? আগপিছ চিন্তা না করে হনহন করে হেটে বেরিয়ে গেল নিজের রুম থেকে জাওয়াদ।

গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে লাগেজের কাপড়গুলো ভাঁজ করে আলমারিতে গুছিয়ে রাখছিলো তিথি। দরজাটা খোলাই রেখেছিলো, ঘুমানোর আগে বন্ধ করবে বলে। হাতের কাপড়টা আলমারিতে তুলে রাখার জন্য পেছন ঘুরতেই আঁতকে ওঠে তিথি। পরক্ষণেই আবার নিজেকে সামলে নিলো সে। চোয়াল শক্ত হয়ে ওঠে তার। আলমারির সামনে দাঁড়িয়ে একটা ছেলে মাত্র তার ভাঁজ করে রাখা কাপড়গুলো ফ্লোরে ছুঁড়ে ফেলছে। দেখেই মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। ধমকে উঠে বললো তিথি, ‘আরে কে আপনি? এসব কী? এভাবে ফেলছেন কেন আমার কাপড়? আরে এ.. আরে এস.. এই! কী হচ্ছে এসব?’

পাত্তাই দিচ্ছেনা জাওয়াদ। পাগলের মতো কিছু একটা খুঁজে যাচ্ছে সে। খুঁজতে গিয়ে পুরো আলমারি এলোমেলো করে দিচ্ছে। তিথি আবার বললো, ‘বিগত এক ঘণ্টা ধরে আমি এই কাপড়গুলো ভাঁজ করছি। এভাবে ছানাছানি করছেন কেন? পরে আবার কে এসব ভাঁজ করবে? আপনি?’

জাওয়াদের যেন কানেই যাচ্ছেনা কোনো কথা। সে এমন ভাব করছে যেন এই ঘরে তার নিজের ছাড়া আর কারো অস্তিত্বই নেই। পাগলের মতো এই ড্রয়ারে খুঁজছে তো আবার ঐ কাপড় ফেলছে। তিথির রাগ এবার তুঙ্গে। সে চেচিয়ে উঠলো, ‘কারো ঘরে আসার আগে নক করে আসতে হয়। এটা কেমন অভদ্রতা? আপনার সাহস তো কম না দেখছি! আর এভাবে… মামণি…’

‘ডোন্ট শাউট ড্যাম ইট!’ বলেই একটা শাড়ি পেছনের দিকে ছুঁড়ে ফেলে জাওয়াদ। সেটা গিয়ে পড়লো তিথির মুখের ওপর। শাড়িটি হাতে নিয়ে আর্তনাদ করে বললো তিথি, ‘পাঁচ মিনিট সময় নিয়ে এই শাড়িটি ভাঁজ করেছি। এখন আবার কে করবে!’

‘উফ!’ বলে ফ্লোরে একটা লাথি দিলো জাওয়াদ। তারপর আবার আলমারির ভেতর হাতড়াতে লাগলো। হঠাৎ তার হাত থেমে গেল। ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠলো। তার কাঙ্ক্ষিত জিনিসগুলো দেখতে পেলো সে। স্বস্তির নিঃশ্বাস নিলো জাওয়াদ। জিনিসগুলো হাতে নিয়ে কোনোদিকে না তাকিয়ে বেরিয়ে গেল সে রুম থেকে। একবার পেছন ফিরে তাকিয়েও দেখলোনা। হতভম্ব তিথি হা হয়ে তাকিয়ে থাকলো জাওয়াদের গমনপথে। কেউ একজন এসে এভাবে সবকিছু লণ্ডভণ্ড করে দিলো, তারপর আবার এমন ড্যাম কেয়ার ভাব দেখিয়ে চলেও গেল। ব্যাপারটা হজম হলোনা তার। নিজে নিজেই বললো, ‘এ কে রে! কত বড় খবিশ ছেলে!’ খানিকক্ষণ ফোঁস ফোঁস করলো তিথি। তারপর আবার বললো, ‘একবার স্যরিও বললোনা। এভাবে সবকিছু… দাঁড়া ব্যাটা!’ তারপর ফ্লোরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কাপড়গুলোর ওপর একবার চোখ বুলালো তিথি। ‘মামণি…’ বলে চেচাতে চেচাতে বেরিয়ে গেল রুম থেকে।
__________________________________________________

আদিয়া কফি নিয়ে এসে দেখলো জাওয়াদ রুমে নেই। সে কফির কাপটা টেবিলের ওপর রেখে পেছন ঘুরলো বেরিয়ে যাওয়ার জন্য। তখনই বারান্দা থেকে জাওয়াদের গলা কানে এলো, ‘কে?’

‘আমি, বড় ভাইয়া। তোমার কফি এনেছি।’ বলে বারান্দায় যেতে নিলেই দেখলো জাওয়াদ চলে এসেছে ভেতরে। আদিয়ার দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিলো। তারপর জিজ্ঞেস করলো, ‘কী খবর তোর পড়ালেখার? কেমন আগালি?’

‘ভালোই। তোমার কফিটা।’ বলে টেবিল থেকে কফির কাপটা নিয়ে জাওয়াদের হাতে তুলে দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো আদিয়া। বিছানায় বসে জাওয়াদ আনমনে চুমুক দিচ্ছিলো কফিতে। আদিয়া রুমের এদিক ওদিক চোখ বুলাচ্ছিলো। হঠাৎ দেয়ালে টানানো ছবি দুটোয় চোখ আঁটকে গেল। চাপা দির্ঘশ্বাস ফেললো আদিয়া। সময় কত নিষ্ঠুর! কী নিষ্ঠুরভাবে বদলে দিলো সবকিছু! কফি শেষ করে আদিয়ার দিকে কাপটা বাড়িয়ে দিলো জাওয়াদ। আদিয়ার সেদিকে খেয়াল নেই। সে তাকিয়ে আছে ছবি দুটোর দিকে। আদিয়ার দৃষ্টি অনুসরণ করে জাওয়াদও তাকালো ওদিকে। তারপর আবার আদিয়ার দিকে তাকিয়ে মুখ দিয়ে শিস দিলো। নড়েচড়ে দাঁড়ালো আদিয়া। জাওয়াদ জিজ্ঞেস করলো, ‘কী এতো চিন্তা করিস?’

‘ন-না ম-মানে, ভাবছিলাম… ভাবছিলাম এটা খাও কীভাবে!’ কাপটা হাতে নিতে নিতে আমতাআমতা করে বললো আদিয়া।

‘কোনটা?’ হেসে বললো জাওয়াদ।

‘এইযে এটা। চিনি ছাড়া, একদম তেতো!’ মুখ বিকৃত করে বললো আদিয়া।

‘খেয়ে দেখ একদিন। তুইও পারবি।’ বলে হাসলো জাওয়াদ।

‘আল্লাহ মাফ করুন। ছয় মাসের জন্য আমার জিহবা খাবারের মজা ভুলে যাবে। এতো তেতো বাবারে বাবা! অ্যাট লিস্ট চিনি দিয়ে তো খাওয়া যায়!’ বলতে বলতে বেরিয়ে গেলো আদিয়া। হাসতে লাগলো জাওয়াদ। তারপর পেছন ঘুরে তাকালো দেয়ালে টানানো ছবিগুলোর দিকে। হেটে ওগুলোর সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। তারপর একটা ছবির ওপর পরম আদরে হাত বুলিয়ে হেসে হেসে বলতে লাগলো, ‘দেখলি? এমন কফি খাওয়ানো শিখিয়ে গেলি যে লোকে আমাকে কথা শোনাচ্ছে। ভালো কিছু শেখাতে পারলিনা?’

হাসিমুখে দাঁড়িয়ে থাকলো জাওয়াদ ছবিগুলোর সামনে। ইশ, বুকের ভেতর চিনচিন ব্যথাটা আবার হচ্ছে। চট করে ঘুরে দাঁড়ায় সে। তারপর টেবিলের ওপর থেকে সিগারেটের প্যাকেট নিয়ে চলে যায় বারান্দায়। কষ্টগুলোকে ধোঁয়ায় রূপ দিতে!
________________________

চলবে….
@ফারজানা আহমেদ

রঙ তুলির প্রেয়সী ১

0

রঙ তুলির প্রেয়সী
১.

‘আচ্ছা মেয়েটা বাড়ি চিনবে তো? আসতে পারবে তো? আমার হয়েছে যতো জ্বালা! কাজের সময় আমি কাউকে পাইনা। দুই দুইটা ছেলে আমার, অথচ দেখো… কাজের সময় মনে হয় আমার যেনো ছেলেই নাই। কী যে করছে মেয়েটা…’ সদর দরজা খুলে তার সামনে পায়চারি করতে করতে দরজার দিকে খানিক পর পর উকি মারছিলেন আর কথাগুলো বিড়বিড় করছিলেন মুনতাহা বেগম। সোফায় বসে উনার অস্থিরতা দেখে ঠোঁট টিপে হাসছিলো আদিয়া। আড়চোখে আদিয়ার হাসি দেখেন মুনতাহা। তারপর মুখ দিয়ে ‘চ’ কারান্ত শব্দ করেন। তারপর আবার দরজায় উকি দেন। তারপর এসে সোফায় আদিয়ার পাশে বসে চোখ কটমট করে তাকান। আদিয়া চট করে পাশে রাখা হুমায়ুন আহমেদ এর ‘আজ হিমুর বিয়ে’ বইটা চোখের সামনে মেলে ধরে নিজের হাসিকে আড়াল করার ব্যার্থ চেষ্টা করে। সেদিকে তাকিয়ে ফুসলেন মুনতাহা। তারপর খ্যাঁকানো গলায় বললেন, ‘হয়েছে ভং করতে হবেনা। দিনকাল ভালো না, তুই কী বুঝবি এসবের? মেয়েটা এখানে নতুন। কীজানি বাবা ঠিকমতো আসতে পারবে কি না।’

‘মা, শুধুশুধু কেন এতো টেনশন করছো? একা আসছে নাকি? গাড়ি তো পাঠিয়ে দিয়েছো। আব্দুল ভাইয়ের সাথে ফটোও দিয়েছো। তারপরেও কেন এমন করছো?’ বইটা নামিয়ে রেখে বললো আদিয়া।

‘চিন্তা করবোনা? গাড়ি পাঠিয়ে দিলেই হয় নাকি হে? একটা দায়িত্ববোধ আছেনা? চিন্তা করবোনা?’

‘চিন্তা করলেই সেটা দায়িত্ববোধ? নাহলে দায়িত্ববোধ না?’ কপাল কুঁচকে প্রশ্ন করে আদিয়া। আগ্নিঝরা চোখ নিয়ে তাকালেন মুনতাহা। ঢোঁক গিলে মুখে হাসি এনে বললো আদিয়া, ‘মা, ও তো এসেছে আরো একবার। তুমি চিন্তা করো না। এইতো আর এসেই যাবে বেশিক্ষণ লাগবেনা।’

‘এসেছে সেই দুই বছর আগে। অতো কিছু মনে আছে নাকি মেয়েটার? উফ, রিয়াদ টাও যে কই গেল! ওকে সঙ্গে দিলেও এতো চিন্তা থাকতোনা।’ মাথায় হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করলেন মুনতাহা।

‘আচ্ছা মা, কোন ঘরটায় থাকবে ও?’
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
‘কেন ঐ দোতলার দু’নম্বর বারান্দাওয়ালা ঘরটায়। খোলামেলা আছে, মেয়েটার ভালো লাগবে।’

‘বড় ভাইয়ার পাশের ঘরটায়? যেটায় বড় ভাইয়ার…’

‘হ্যাঁ ওখানেই।’

‘কী বলছো মা?’ চোখ বড় বড় করে বললো আদিয়া।

‘কেন কী হয়েছে?’ মাথা থেকে হাত সরিয়ে আদিয়ার দিকে তাকালেন মুনতাহা।

‘বড় ভাইয়া জানে? মানবে ও?’

‘ম-মানবেনা ক্ব-কেন?’ চিন্তায় কপালে ভাঁজ পড়ে মুনতাহার। টুনিকে দিয়ে ঘরটা তো পরিষ্কার করিয়ে রেখেছেন ঠিকই। কিন্তু এই কথাটা উনার মাথায় আসেনি। আদিয়া আবার বললো, ‘মা, আরো তো ঘর খালি আছে। ওগুলো কোনো একটা ঠিকঠাক করে দেই টুনিকে দিয়ে?’

‘না। ঐ ঘরেই থাকবে তিথি।’

‘কিন্তু বড় ভাইয়া…’

‘আমি ঐ আলমারি থেকে সব জিনিসপত্র সরিয়ে রেখেছি।’

‘মা! তুমি ওগুলোতে হাত দিয়েছো? বড় ভাইয়া পই পই করে মানা করেছে মা…’

‘এই চুপ কর তো। আমি ভয় পাই নাকি ওকে? ও আমার পেটে জন্মেছে? নাকি আমি ওর পেটে জন্মেছি?’ বলে উঠে দাঁড়ালেন মুনতাহা। তারপর আবার বললেন, ‘ফোন করে দেখতো রহমানকে। কদ্দুর এলো। আমি দেখি খাবারদাবারের দিক। মেয়েটা এসে খাবে।’ বলে রান্নাঘরের দিকে পা বাড়ালেন উনি। আদিয়া মোবাইল হাতে নিয়ে ড্রাইভার রহমানের নাম্বার ডায়াল করলো।
_______________________________________________

‘খালাম্মা, ও খালাম্মা, খালাম্মাগো, দেহেন আফারে আনছি।’ হাতে একটা বড়সড় লাগেজ নিয়ে টানতে টানতে ঘরে ঢুকে চেচাতে লাগলো আব্দুল। তারপর ব্যাগটা রেখে বেরিয়ে গেলো বাইরে। আঁচলে হাত মুছতে মুছতে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এলেন মুনতাহা। পেছন পেছন আদিয়াও এলো। আদিয়া এসেই জোরেসোরে এক চিৎকার দিলো, ‘ও আল্লাহ, তিথি! এতো লম্বা চুল!’

পেছন ফিরে দাঁড়িয়ে ছিলো তিথি। আদিয়ার চিৎকার শুনে ফিরে তাকালো। তারপর আদিয়ার দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিয়েই বলে উঠলো, ‘স্ট্যাচু!’ সাথেসাথে আদিয়া স্ট্যাচু হয়ে যেমন ছিলো ওমনই দাঁড়িয়ে থাকলো, দুগালে হাত দিয়ে অবাক করা মুখ নিয়ে। তিথি দৌড়ে গিয়ে মুনতাহাকে জড়িয়ে ধরলো। মুনতাহা তিথিকে বুকে নিয়ে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন, ‘কেমন আছিস মা? কতো বছর পর দেখা! কতো করে বলেছি আয় আমার এখানে আয় মায়ের কাছে আয়। এলিনা।’

‘মামণি, আর আফসোস করো না। এবার একেবারেই চলে এসেছি হয়েছে?’ মুনতাহার বুক থেকে মাথা তুলে উনার দিকে তাকিয়ে বললো তিথি।

‘আচ্ছা ঠিক আছে। আর ওদিকে যাওয়াযাওয়ি চলবেনা আমি বলে দিলাম। এখানে ভালো একটা ভার্সিটিতে ভর্তি করিয়ে দেবো। এসব হোস্টেল টোস্লেল এ আর না।’

‘আসার সময় বুড়িমা খুব কাঁদছিলো জানো মামণি? আমারও যেনো বুকটা ফেটে যাচ্ছিলো। মা চলে যাওয়ার পর ঐ মানুষটাই তো আগলে রেখেছিলো আমায়…’ বলতে গিয়ে যেনো চোখ ঝাপসা হয়ে আসছিলো তিথির। মুনতাহা ধমকের স্বরে বললেন, ‘একটা থাপ্পড় দিবো! এসব কথা ভেবে আবার যদি মন খারাপ করবি। এই আমি তোর মা না? তোকে মামণি ডাকা এমনি এমনি শিখিয়েছি নাকি?’

‘শিখিয়েছিলে বলেই তো নিজের রক্ত আমাকে ছুঁড়ে ফেলার পরও একটা মাথা গুঁজার ঠাই পেয়েছি।’

‘আবার?’ চোখে কাঠিন্য এনে বললেন মুনতাহা।

‘ইচ চ্যলি!’ দুআঙ্গুলে আলতো করে একটা কানের লতি ধরে খিলখিল করে হেসে উঠলো তিথি।

‘আর পারছিনা, এতোক্ষণ স্ট্যাচু বানিয়ে রাখার কোনো নিয়ম নেই।’ পাশ থেকে নড়ে ওঠে বললো আদিয়া।

হাসতে লাগলো তিথি। মুনতাহা বললেন, ‘যা গোসল কর ফ্রেশ হো। আমি খাবার দিচ্ছি। খাসনি তো জানি রাস্তায় একদম। যা তো আদিয়া ওকে ঘরে নিয়ে যা।’ বলতে বলতে রান্নাঘরের দিকে ছুটলেন মুনতাহা।

‘তোদের বাড়িটা আগে যেমন ছিলো এখনও ঠিক তেমনই আছে। কোনো পরিবর্তন নেই।’ লাগেজ হাতে সিঁড়ি বেয়ে উঠতে উঠতে বললো তিথি।

‘হ্যাঁ আর পরিবর্তনও হবেনা। আচ্ছা তোর মোবাইল কই? কল দিয়ে দু’দিন থেকে পাইনা। মেসেঞ্জারেও এক্টিভ না তুই দু’দিন থেকে।’

‘আমার হচ্ছে ফাটা কপাল। মোবাইল চুরি হয়ে গেছে। বুড়িমাকে নিয়ে বেরিয়েছিলাম একটু দরকারি জিনিসপত্র কিনবো বলে। ওখানেই… হাতে নাই টাকা যে আবার মোবাইল কিনবো। তাছাড়া ভাবলাম চলেই যেহেতু আসছি মোবাইলের দরকার নাই। কে আছে আমার? খবরাখবর এক বুড়িমার নেয়া দরকার সেটা এখান থেকেই নেয়া যাবে।’ বলে হাসলো তিথি। সবসময় হাসি লেপ্টে থাকে মেয়েটার ঠোঁটে। আদিয়া ভাবে, একটা মানুষ ভেতরে এত চাপা কষ্ট নিয়ে কীভাবে মুখে এমন মিষ্টি হাসি নিয়ে থাকতে পারে?

দোতলায় সোজা ডানদিকের ঘরটায় ঢুকতে যাচ্ছিলো তিথি। ওকে হাত ধরে আঁটকে আদিয়া বললো, ‘আরে আরে ওদিকে কী? পাশেরটায় তো।’

‘কিন্তু আমিতো মামণিকে বলেছিলাম এটার কথা।’

‘এটা বড় ভাইয়ার ঘর।’

‘উনি দেশে?’

‘হুম, দু’বছর থেকে। চল চল, তাড়াতাড়ি গোসল করবি। তোর জন্য আমরাও না খেয়ে।’

‘ধুর বাবা, ওঘর থেকে কী সুন্দর সূর্যাস্ত আর সূর্যদ্বয় দেখা যেতো…’ ঠোঁট উল্টিয়ে নিজের রুমে ঢুকলো তিথি। আদিয়া মনে মনে বললো, ‘এই ঘরটায়-ই যে তোমারে দেয়া হইছে সেটা ভেবেই আমার ঘাম ছোটে আর তুমি ঐ ঘরে যাবা…’
________________________________________________

খাবার টেবিলে রিয়াদের সাথে দেখা হয়ে গেল তিথির। রিয়াদ টেবিলে বসতে বসতে বললো, ‘কী অবস্থা তোমার? ভালো আছো?’

‘ভালো আছি ভাইয়া। তুমি?’ হেসে বললো তিথি।

‘ভালো। তুমিতো দেখছি হুবহু ফটোর মতোই। আমি ভাবলাম কিছু চেঞ্জিং হবে। এভাবে সচরাচর ফটোর মতোই কোনো মেয়ে হয়না। অনেকে তো আবার ঘণ্টা লাগিয়ে এডিট করে ফেইসবুকে ফটো আপলোড দেয়।’ কথাটা বলার সময় আদিয়ার দিকে তাকালো রিয়াদ। আদিয়া সাথেসাথে চ্যাতে উঠে বললো, ‘দেখলে মা দেখলে? আমাকে পিঞ্চ করছে ছোট ভাইয়া। এইযে আমি একদম এডিট করিনা ফটো বুঝেছো? আমাকে তোমার ঐ গা…’ কথাটা পুরো করতে পারলোনা আদিয়া, তার আগেই রিয়াদের রাঙানো চোখ দেখে আঁটকে গেল সে।

‘লেগে গেলি তোরা? মেয়েটাকে শান্তিতে খেতে দিবিনা?’ ধমকে উঠলেন মুনতাহা। জোরে জোরে হেসে উঠলো তিথি। রিয়াদ বললো, ‘হেসোনা তিথি। এসেছো তো, এবার কালে কালে সব দেখবে তুমি।’

মুখ ভেংচি দিলো আদিয়া। তিথি জিজ্ঞেস করলো, ‘আঙ্কেল কোথায়?’

‘বাবা তো দেশের বাইরে। ফর বিজনেস।’ খেতে খেতে বললো রিয়াদ। তারপর তিথির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো, ‘তারপর বলো, ভার্সিটির এডমিশন টেস্টের প্রিপারেশন কেমন?’

‘আরে ধুর, ওসব এডমিশনের প্রিপারেশনে কী হবে? আমি চান্সই পাবোনা।’ বলেই আবার খিলখিল করে হাসলো তিথি। রিয়াদ অবাক চোখে বললো, ‘কী বলো এসব? এই একদম গফিলতি করবেনা। পড়ায় মন দাও। এই সময়টা খুব বেশিই গুরুত্বপূর্ণ। লাইফের টার্নিং পয়েন্ট।’

‘হ্যাঁ। এসেছিস তো এখন এখানে। আদিয়ার সাথেসাথে তোকেও কানমলা দিয়ে পড়াবো। পড়ায় কোনো হেরফের নেই।’ খেতে বসতে বসতে বললেন মুনতাহা।

‘সাস্টে এক্সাম দেয়ার প্লান আছেতো?’ জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো রিয়াদ তিথির দিকে। তিথি চোখ তুলে তাকালো। তার দৃষ্টিতে খানিকটা সংকোচ। সে আমতাআমতা করে বললো, ‘আসলে ভাইয়া… কোনো প্লান করিনি। আসলে… মন মেজাজ ভালো ছিলোনা তো তাই এসবে মন দেইনি। ন্যাশনালে যেকোনো একটায়…’

‘নো নো, এসব চলবেনা তিথি। তুমি কাল থেকেই আদিয়ার সাথে পড়তে শুরু করবে টিচারের কাছে। আমি বই এনে দেবো। আর আদিয়ার সাথেই ফর্ম পূরণ করবে তুমি। আদিয়াকে তো সিলেটে আর ঢাকায় এক্সাম দেয়াবো সাথে তুমিও দিবে। টার্গেট তোমার পাব্লিক থাকা চাই। গফিলতি চলবেনা।’ কথাগুলো বলে রিয়াদ একটা গম্ভীর দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো তিথির দিকে। ওর খাওয়া শেষ হয়ে গেছে। সে একটা হাসি দিয়ে আবার বললো, ‘থাকো তাহলে। আবার দেখা হবে।’ বলে চলে গেল সেখান থেকে।

‘লেখাপড়া নিয়ে এতো স্ট্রিক্ট!’ চোখ বড় বড় করে বললো তিথি।

‘তুমি বেঁচে গেলে বুঝলে? এসব কথা বড় ভাইয়ার সামনে বলিস নি তুই এটা তোর ভাগ্য।’ বললো আদিয়া।

‘হয়েছে হয়েছে। খাওয়া শেষ করে গল্পগুজব করো।’ তাড়া দিলেন মুনতাহা।
________________________________________________

ঘড়িতে যখন আটটা বাজলো তখনই তাড়াহুড়ো করে বই নিয়ে বসে পড়লো আদিয়া। তিথি অবাক হয়ে বললো, ‘কীরে? এতোক্ষণ গল্পে মশগুল ছিলি। আমাকে যেতে দিলিনা বলেছিলাম ঘুমাবো। আর এখন এতো শিক্ষিত হয়ে যাচ্ছিস যে?’

‘বড় ভাইয়া আসার সময় হয়ে গেছে।’ বই খুলতে খুলতে বললো আদিয়া।

‘বুঝলাম না। আসার পর থেকেই দেখতে পাচ্ছি এই “বড় ভাইয়া” শব্দ দুটো যেন তোর কাছে আতঙ্ক। উনি কি খুব রাগী? মানে সিনেমার ভিলেন টাইপ?’

‘আরে নাহ। ভাইয়া অনেক ভালো আর হাসিখুশি। আমাদের কেউই সিনেমার ভিলেন টাইপ না। তুই রিয়াদ ভাইয়াকে দেখিস না? আর বাবাকেও দেখলিনা?’

‘তাহলে এমন করিস কেন তুই?’

‘তুই বুঝবিনা তিথি। আমরা বড় ভাইয়াকে কখনও রাগাই না।’ কথাটা বলে বইয়ে মুখ গুঁজলো আদিয়া।

‘আচ্ছা পড়। যাই আমি একটু শুয়ে থাকি।’ বলে উঠে গেল তিথি।’
______________________

চলবে……
@ফারজানা আহমেদ
প্রথম পর্বেই বলে দিচ্ছি। প্রেমে প্রচণ্ড রকম এলার্জি আর রোম্যান্টিক সহ্য হয়না যাদের তারা গল্পটা ইগনোর করবেন।

বর্ষণের সেই রাতে ❤ শেষ_পর্ব

6

বর্ষণের সেই রাতে ❤
শেষ_পর্ব
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

.
আদ্রিয়ানের ভেতরে টিপটিপ করছে। কাল ওদের বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো। হ্যাঁ ছিলো ভাবছে কারণ আজ সবটা শোনার পর হয়তো অনিমা নিজেই সবটা শেষ করে দেবে। অনিমা যেরকম চিন্তাধারার মেয়ে তাতে এটা খুব বেশি অস্বাভাবিক হবেনা। সেটার চেয়েও বড় চিন্তা হচ্ছে অনিমার শারীরিক কন্ডিশন, এই সত্যিটা ও হজম করতে পারবে তো? এমনিতেই জীবণে অনেক আঘাত পেয়েছে মেয়েটা, আদ্রিয়ানের সত্যিটা ওর মনে নতুন করে কোনো আঘাত করবে না তো? ও ভেবেছিলো বিয়ের পর একসময় ঠান্ডা মাথায় অনিকে সবটা ক্লিয়ার করে বলবে। এতে অন্তত অনিকে হারানোর ভয় থাকতো না ওর । কিন্তু ওদের আজ বিকেলেই আসার ছিলো? দুটো দিন পরে এলে কী হতো? যদিও দোষটা ওদের না ওরাতো জানতো না যে অনিমা কিছুই জানেনা। এসব চিন্তা করেই আদ্রিয়ান বিকেলের ঘটনাটা ভাবতে লাগল-

________________________

পুরো বাড়িতে রমরমে পরিবেশ। কালকে বাড়ির দুই ছেলের বিয়ে, আর আজ রাতে গায়ে হলুদ। অনিমা আর স্নিগ্ধা দুজনেই দুপুরে স্নান করে লাল পাড়ের হলুদ শাড়ি পরেছে। সবাই গায়ে হলুদের বিভিন্ন আয়োজন করছে। অনিমা আর স্নিগ্ধা বড় সোফায় বসে আছে। আদ্রিয়ান সিঙ্গেল সোফায় বসে ফোন স্ক্রল করছে আর রিক আদ্রিয়ান যেই সোফায় বসেছে সেই সোফারই হেন্ডেলের ওপর বসে ফোন স্ক্রল করছে। আদিব, আশিস, তীব্র, অভ্র ওরা ডেকোরেশন এর বিভিন্ন কাজ দেখছে। অরুমিতা আর স্নেহা হলুদ,ফল, মেহেদী এসব কিছুর ব্যবস্হা করছে। হঠাৎ করেই কেউ দরজায় নক করতেই সবার দৃষ্টি দরজার দিকে গেলো। মধ্যবয়স্ক একজন পুরুষ আর মহিলা দাঁড়িয়ে আছে। ওখানে উপস্হিত আর কেউ না চিনলেও অনিমা, আদ্রিয়ান আর রিক খুব ভালো করেই চিন্তে পারলো ওনাদের কারণ ওনারা আর কেউ নয় অনিমার মামা আশরাফ মৃধা আর মামী রাহেলা বেগম দাঁড়িয়ে আছেন। ওদের দেখেই অনিমা অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে গেলো আর আদ্রিয়ানের বুকের মধ্যেও ধক করে উঠল। ও ভাবেও নি এরা এখনই আসবে। আর অনিমা ভাবছে হঠাৎ মামা মামী কেনো এলো এখানে? সবাই জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ওনাদের দিকে। মানিক আবরার ভ্রু কুচকে বলল,

— ” জ্বী? কাকে চাই?”

আদ্রিয়ান একটা শ্বাস ফেলে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,

— ” ওনারা অনির মামা মামী।”

আদ্রিয়ানের কথা শুনে উপস্থিত সবার মুখের হাসি মিলিয়ে গেলো। কারণ ওখানে উপস্থিত সবাই জানে অনিমার অতীত সম্পর্কে। আদ্রিয়ান আশরাফ মৃধা আর মিসেস রাহেলা এর দিকে তাকিয়ে বললেন,

— ” কেনো এসছেন আপনারা এখানে?”

অনিমা এখোনো নিচের দিকে তাকিয়ে আছে ছলছলে চোখে। আশরাফ মৃধা নিচু কন্ঠে বললেন,

— ” নিজেদের করা পাপের জন্যে ক্ষমা চাইতে এসছি।”

এটা শুনে অনিমা মাথা তুলে তাকালো ওনাদের দিকে। আদ্রিয়ান কিছু বলবে তার আগেই মানিক আবরার বললেন,

— ” আসুন ভেতরে এসে বসে কথা বলুন।”

অনিমা কিছু বলছেনা ওর চোখ দিয়ে ও না চাইতেও জল পরছে। বারবার সেই অতীত ওর চোখের সামনে ভেসে উঠছে। ওনারা ভেতরে আসার পর আশরাফ মৃধা বললেন,

— ” আমরা বসতে আসিনি। এই বাড়িতে বসার যোগ্যতা আমাদের নেই। শুধু এই মেয়েটার কাছে ক্ষমা চাইতে এসছি। ওর ক্ষমা না পেলে যে মরেও শান্তি পাবোনা।”

অনিমা নিচের দিকে তাকিয়ে আছে নিঃশব্দে কেঁদে চলেছে। আশরাফ মৃধা অনিমার সামনে এসে ওর সামনে হাত জোর করে বলল,

— ” আমরা জানি রে মা তোর সাথে অনেক অন্যায় করেছি আমরা। জেনে বুঝে অনেক কষ্ট দিয়েছি তোকে। মামা হিসেবে যেই সময় তোকে ভালোবাসা দিয়ে আগলে রাখার কথা ছিলো সেই সময় আমরা তোর সাথে পশুর মতো ব্যবহার করেছি অনেক কষ্ট দিয়েছি।”

মিসেস রাহেলাও বললেন,

— ” টাকা পয়সার লোভে অমানবিক আচরণ করেছি। কোনো কারণ ছাড়াই তোর গায়ে হাত তুলেছি। জানি আমরা যা করেছি তার ক্ষমা হয়না কিন্তু একবার আমাদের ক্ষমা করে দে?”

অনিমা কিছু বলছেনা শুধু একদৃষ্টিতে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। আশরাফ মৃধা আবার বললেন,

— ” সেদিন যদি আদ্রিয়ান এসে আমাদের ওভাবে না বোঝাতো তাহলে তো আমরা জানতেই পারতাম না যে টাকার চেয়েও বড় কিছু হয়। ”

এতোক্ষণ নিচের দিকে তাকিয়ে থাকলেও অনিমা এবার অবাক হয়ে ওনাদের দিকে একবার তাকালো আর একবার আদ্রিয়ানের দিকে। আদ্রিয়ান সাথে সাথেই চোখ সরিয়ে নিলো।

মিসেস রাহেলা বললেন,

— ” হ্যাঁ রে মা। তোর সাথে যে কতোবড় অন্যায় করেছি সেটা আদ্রিয়ানই বুঝিয়েছে আমাদের।”

অনিমা কিছু বলার আগেই অাদ্রিয়ান বলল,

— ” এসব কথা এখন থাক না?”

অনিমা আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” আপনি মামা মামীর কাছে গেছিলেন?”

আদ্রিয়ান কিছু না বলে চুপ করে আছে। আশরাফ মৃধা বললেন,

— ” ভাগ্যিস গেছিলো নইলে আমরা কোনোদিন মানুষ হতে পারতাম না।”

অনিমা ভ্রু কুচকে বলল,

— ” মানে?”

এরপর আশরাফ মৃধা আর মিসেস রাহেলা সেদিনের সব খুলে বললেন অনিমাকে। সবশুনে রিক,আদিব, আশিস আর অভ্র বাদে সবাই বেশ অবাক হলো। অনিমা তো অবাকের চরম সীমায় পৌছে গেছে যে আদ্রিয়ানও এমন করতে পারে সেটা ওর ভাবনারও বাইরে ছিলো। হঠাৎই মিসেস রাহেলা অনিমার হাত ধরে বললেন,

— ” কী রে মা ক্ষমা করবিনা আমাদের?”

আশরাফ মৃধাও বললেন,

— ” হ্যাঁ তুই আমাদের ক্ষমা করে দিলেই আমরা চল যাবো মা। আর কোনোদিন তোর সামনে আসবোনা।”

অনিমা ওনাদের দিকে না তাকিয়েই বলল,
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
— ” তোমাদের ওপর আমার কোনো অভিযোগ নেই। তোমরা তোমাদের কাজ করেছো। শুধু একটা কথাই বলবো তোমাদের যদি প্রপার্টির দরকার ছিলো, একবার বলে দেখতে আমাকে আমি এমনিই সব দিয়ে দিতাম। আমারতো প্রপার্টির দরকার ছিলোনা, ঐসময় আমার শুধু একটু ভালোবাসার দরকার ছিলো, তোমাদের কাছে এরচেয়ে বেশি কিছু চাওয়া ছিলোনা আমার। কিন্তু তোমরা তো আমাকে শুধু টাকার জন্য নিজের চরিত্রহীন ছেলের সাথে বিয়ে দিতে চেয়েছিলে, এরপর অন্য একজনের কাছে বিক্রি করে দিয়েছিলে শুধু টাকার জন্যে । যাই হোক এখন এসব পুরোনো আবর্জনা ঘাটলে শুধু দুর্গন্ধই বেরোবে। তোমরা ক্ষমা চাইছো তো? তবে প্লিজ আমার সামনে হাত জোড় করোনা আমার অসস্হি হয়। তোমরা যেমনি হও আমিতো আর তোমাদের কাতারে নামতে পারবোনা।”

আশরাফ মৃধা আর মিসেস রাহেলা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। অনিমাও যে এইভাবে কথা বলতে পারে তারা ভাবতে পারেনি। যেই মেয়েটা এতো টর্চার এর পরেও মুখ দিয়ে টু শব্দও করেনি তার মুখে এত করা কথা ভাবেওনি তারা। তবুও নিজেদের সামলে নিলো। আশরাফ মৃধা বলল,

— ” আরেকজনও এসছে তোর কাছে ক্ষমা চাইতে।”

অনিমা ভ্রু কুচকে তাকাতেই মাথা নিচু করে অর্ক এলো। অর্ককে দেখেই আদ্রিয়ান আর রিক দুজনেরই মাথা গরম হয়ে গেলো। রিক তেড়ে যেতে নিলেই স্নিগ্ধা ওর হাত ধরে আটকে নিলো। আদ্রিয়ান এগিয়ে গিয়ে বলল,

— ” ও এখানে কেনো এসছে? সেদিন জীবিত ছেড়েছি ভালো লাগেনি না? আজতো ওকে আমি..”

আদ্রিয়ান অর্কর দিকে এগোতে নিলেই অনিমার ‘আদ্রিয়ান’ বলে ডাকতেই অাদ্রিয়ান থেমে গেলো। নিজেকে বহু কষ্টে সামলে নিলো ও। অনিমা নিজেও অর্কর দিকে তাকাচ্ছেনা মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে রেখেছে। অর্ক অনিমার সামনে গিয়ে মাথা নিচু করে বলল,

— ” আমাকে ক্ষমা করে দে প্লিজ।”

অনিমা এতোক্ষণ অন্যদিকে তাকিয়ে থাকলেও এবার অর্কর দিকে তাকালো। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে কষিয়ে একটা থাপ্পড় মেরে দিলো অর্কর গালে। ঘটনার আকষ্মিক ঘটনায় সবাই অবাক হয়ে গেছে। অর্ক গালে হাত দিয়ে তাকিয়ে আছে অনিমার দিকে। অনিমা শক্ত গলায় বলল,

— ” আচ্ছা? ক্ষমা চাইছো? কীসের জন্যে? চারবছর ধরে আমার অসহায়ত্ত্বের সুযোগ নিয়ে সুযোগ পেলেই আমাকে বাজে ভাবে ছোঁয়ার জন্যে? নাকি বাড়িতে একা আমাকে রেপ করার চেষ্টায় করার জন্যে? বলো?”

অর্ক কিছু বলবে তার আগেই অনিমা একটা শ্বাস নিয়ে বলল,

— ” যদি সেদিন আমি তোমার হাত থেকে নিজেকে না বাঁচাতে পারতাম তাহলে? কীসের জন্যে ক্ষমা চাইতে আর কার কাছে ক্ষমা চাইতে বলো?”

অর্ক মাথা নিচু করে আছে । সত্যিই এই প্রশ্নের কোনো উত্তর নেই ওর কাছে। অনিমা চোখ মুছে বলল,

— ” রেপ করা আর রেপ করার চেষ্টা করা দুটোই সমান অপরাধ। আর দুটো অপরাধের কোনো ক্ষমা হয়না এক মার্ডার আর দুই রেইপ। ”

আদ্রিয়ান আস্তে আস্তে দুকদম পিছিয়ে গেলো অনিমার কথা শুনে। ওর ভেতরে এখন অন্য আশঙ্কা বাসা বাধছে। অনিমা বলল,

— ” তাই তোমাকে আমি ক্ষমা করতে পারবোনা। তবে নতুন করে আর কোনো শাস্তিও দেবোনা কারণ যেই শাস্তি তুমি পেয়েছো শুনলাম তারপর আর কোনো শাস্তি দেওয়ার প্রয়োজন নেই।”

কথাটা আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়েই বলল অনিমা। উপস্থিত কারো আর কিছুই বলার নেই। এরপর অনিমার মামা মামী আর অর্ক চলে গেলো। আদ্রিয়ান বলেছিলো অনুষ্ঠান পর্যন্ত থাকতে তবে ওনারা রাজী হননি। অনেক জোরাজোরিতে কালকে আসবে বলে ঠিক করেছে। ওনারা চলে যেতেই আস্তে আস্তে গোটা পরিবেশ স্বাভাবিক হয়ে গেলেও স্বাভাবিক হলোনা অনিমার মন। কয়েকটা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে ওর মনে অনেক সংশয় তৈরী হয়েছে। আর আদ্রিয়ানের মনের মধ্যে বাসা বেধেছে ভয় নিজের জানপাখিকে হারিয়ে ফেলার ভয়।

______________________

— ” কী হলো বলুন?”

অনিমার ডাকে হুস এলো আদ্রিয়ানের ও নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,

— ” অনি আমি জানি তুমি অন্যরকম মেন্টলিটির মেয়ে। তুমি কখনোই খুন খারাপি, মারামারি এসব মোটেও পছন্দ করোনা। এসব ঘৃণা করো তুমি। হয়তো আজকের পর আমাকেও ঘৃণা করবে। ভেবেছিলাম সঠিক সময় এলে সবটা ধীরে ধীরে বুঝিয়ে বলব, তবে আজ সবটা তোমাকে বলতেই হবে। আগে তোমার বাবার সাথে আমার কীসের সম্পর্ক ছিলো সেটি বলি। তোমার বাবা মারা যাবার সাত মাস আগে পাঁচদিনের জন্যে চট্টগ্রাম গিয়েছিলেন কিন্তু একসপ্তাহ পর ফিরেছিলেন মনে আছে?”

অনিমা হ্যাঁ বোধক মাথা নেড়ে বলল,

— ” হ্যাঁ সেখানে সেই ড্রাগ সেলারদের একটা গ্যাং কে এক্সপোস করেছিলেন উনি তবে ওখানে গুলি লাগে ওনার।”

আদ্রিয়ান একটা শ্বাস ফেলে বলল,

— ” এক্সাক্টলি। সেদিন তোমার বাবা গুলি লাগা অবস্হায় রোডে পরে ছিলো। আমিই ওনাকে ওখান থেকে হসপিটালে নিয়ে যাই। বাকি দুদিন উনি আমার কাছেই ছিলেন। ওই দুদিন আমি আমার বুক করা হোটেল রুমেই ওনাকে রেখেছিলাম। আমাদের মধ্যে খুব ভালো একটা বন্ডিং তৈরি হয়ে গেছিলো। এরপরে ওখান থেকে আমরা একসাথেই ফিরি। ওখান থেকে আসার পরেও আমাদের দুজনের যোগাযোগ হতো। মাঝেমাঝে দেখা করেও কথা বলতাম। উনি আমাকে জুনিয়র বলে ডাকতো কারণ উনি নাকি আমার মধ্যে নিজেকে দেখতে পেতেন। আর আমিও তাই ওনাকে মিস্টার সিনিয়র বলতাম। আর জানো আমাদের আলোচনা মূল বিষয়বস্তু ছিলে তুমি।”

অনিমা অবাক হয়ে তাকালো আদ্রিয়ানের দিকে, আদ্রিয়ান হালকা হেসে বলল,

— ” উনি সবসময় তোমার কথাই বলতো। তুমি কী করো? তুমি কী খেতে ভালোবাসো? কী করতে ভালোবাসো? প্রতিদিন রাতে ফোন করে আমার কাছে তোমার গল্প বলতো। তবে সেটা আমারই ইচ্ছেতেই। প্রথম দিন তোমার গল্প শুনার পর খুব ইনটারেস্টিং লেগেছিলো। তাই খুব মনোযোগ দিয়ে শুনতাম মাঝেমাঝে নিজেও যেচে তোমার ব্যাপারে জানতে চাইতাম। ভালোলাগতো। তবে তোমার কখনো তোমার নাম জিজ্ঞেস করিনি আর আঙ্কেল ও তোমাকে মামনী বলেই সম্বোধন করতো। অদ্ভুত শোনালেও এটাই সত্যি। ”

অনিমা অবাক কন্ঠে বলল,

— ” তারপর?”

আদ্রিয়ান কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবারও বলতে শুরু করল,

— ” একদিন মিস্টার সিনিয়র ফোন করে বলল যে উনি এমন একটা আর্টিকেল তৈরী করছেন যাতে ওনার প্রাণ সংশয় হতে পারে। উনি ছাড়া তোমার এই পৃথিবীতে কেউ নেই। ওনার কিছু হয়ে গেলে যাতে আমি তোমাকে দেখে রাখি। আমি কোনোকিছু না ভেবেই ওনাকে কথা দিয়েছিলাম যে আমি তোমাকে দেখে রাখব। কিন্তু তার দুদিন পর আমাকে ইউ কে যেতে হয়েছিল। একদিন আঙ্কেল কল করে বলল যে এটাই নাকি ওনার সাথে আমার শেষ কথা। আমি জেনো তোমাকে দেখে রাখি। আমি কিছু বলার আগেই ফোন কেটে গেছিলো তারপর অনেকবার ট্রায় করেও আমি পাইনি ফোনে।”

অনিমা কিছু একটা ভাবতে ভাবতে বলল,

— ” সেদিন রাতে আব্বু আমাকে একটা কাগজ দিয়েছিল যেটাতে হয়তো কারো নাম্বার ছিলো। তাহলে কী ওটা আপনারি..”

আদ্রিয়ান একটু হেসে বলল,

— ” হুমম হতে পারে। এরপর আমি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দেশে এসছিলাম কিন্তু তোমাদের বাড়ি গিয়ে তোমাদের পাওয়া যায়নি।তালাঝুলে ছিলো। নিউস দেখে জানতে পারলাম মিস্টার সিনিয়র নাকি সুইসাইড করেছে। এটা শুনে আমার পুরো জগৎ টাই যেনো অন্ধকার হয়ে গেছিলো। বুঝতে পেরেছিলাম যে ওরাই মেরে ফেলেছে। আমি প্রতিজ্ঞা করে নিয়েছিলাম ওদের কাউকে ছাড়বোনা কিন্তু তার আগে তোমাকে খুজতে হতো। কিন্তু অনেক খুজেও তোমাকে পাইনি। বেশি সমস্যা হয়েছিলো কারণ তোমার নামটাই জানতাম না আমি। অনেক খোজ চালিয়েছি তোমার কিন্তু পাইনি। এরপর দুই বছরের জন্যে ইউকে তে যেতে হয়েছিলো আমায় পড়াশোনার কাজেই। আমার লোক দিয়ে তবুও খোজ করেছি কিন্তু পাইনি, পাবো কীকরে নামটাই তো জানতাম না। নিজেকে খুব অপরাধী মনে হতো। মিস্টার সিনিয়রকে কথা দিয়েও তার দেওয়া কথা রাখতে পারিনি আমি। এভাবে কটা বছর চলে গেলো। একদিন একটা বিপদে পরে তোমার ফ্লাটেই এসে পরলাম আমি। একটা গোটা রাত তোমার সাথে কাটানোর পর আমার মনে খটকা লেগেছিলো কারণ মিস্টার সিনিয়রের বলা কথাগুলোর সাথে তোমার সবকিছু মিলে গেছিলো। আচার আচরণ, হাসি, কথার ধরণ, দুষ্টুমি সব। তাই সিউর হওয়ার জন্য লোক লাগিয়ে তোমার খোজ লাগিয়ে জানতে পারি যে তুমিই সেই মেয়ে যাকে আমি সাত বছর যাবত খুজছি।”

অনিমা অবাক হয়ে গেছে সব শুনে, ও অবাক হয়েই বলল,

— ” এইজন্যই আপনি আমার সব পছন্দ অপছন্দ জানতেন? আর এই ডাইরীতে আব্বুকে নিয়ে অনেক কথা এইজন্যই লেখা আছে? ”

আদ্রিয়ান একটু চুপ থেকে বলল,

— ” হ্যাঁ। তবে এটা ভেবোনা যে আমি তোমাকে নিজের দ্বায়িত্ব ভেবে বিয়ে করছি তোমার আসল পরিচয় জানার আগে থেকেই কিন্তু আমি তোমাকে ভালোবাসতে শুরু করেছি।”

অনিমা ভ্রু কুচকে বলল,

— ” তাহলে এটা কেনো বললেন সব শুনলে আমি আপনাকে ঘৃণা করবো? আর কী শোনা বাকি আছে?”

আদ্রিয়ান নিজেকে শক্ত করে অনিমার দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” কারণ আমি নিজেও একজন খুনি।”

অনিমা চমকে তাকালো আদ্রিয়ানের দিকে। সাথে সাথে দুকদম পিছিয়ে পরে রেলিং ধরে দাঁড়ালো। ও নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছেনা। ওর পা কাপছে কী বললো আদ্রিয়ান? ও ঠিক শুনছে তো? এসব সমীকরণ মেলাতে মেলাতেই আদ্রিয়ান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে তারপর বলল,

— ” হ্যাঁ আমি একজন খুনী। তুমি কী এরপরও কোনো এক্সপ্লেনেশন শুনতে চাও?”

অনিমা চুপ করে আছে। আদ্রিয়ানের বলা কথাটার ধাক্কা এখনো সামলাতে পারছেনা ও। কী বলবে, কী বলা উচিত সেটাই বুঝতে পারছে না। শুধু রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে, আর ওর চোখ দুটোও ছলছল করছে । কিছুসময় পরেও আদ্রিয়ান অনিমার কাছ থেকে কোনো উত্তর না পেয়ে একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিলো। এটাই হয়তো হওয়ার ছিলো। হয়তো আজকেই সব শেষ হয়ে যাবে। এসব ভেবে ও চলে যেতে নিলেই অনিমা বলে উঠল,

— ” না চাইনা কোনো এক্সপ্লেনেশন।”

আদ্রিয়ান থেমে গেলো। একটু হেসে পেছনে তাকিয়ে বলল,

— ” এরপর কোনো এক্সপ্লেনেশন শুনতে চাওয়ার কথাও না।”

অনিমা চোখ মুছে বলল,

— ” হ্যাঁ কারণ আমি জানি আমার আদ্রিয়ান কোনো ভুল করতেই পারেনা। আপনি যদি খুন করেও থাকেন সেটা আর যাই হোক ভুল হতে পারেনা।”

আদ্রিয়ানের চোখ দিয়ে ওর অজান্তেই একফোটা জ্বল গড়িয়ে পরল। না এটা কষ্টের জল নয় আনন্দের জল। ও গিয়ে অনিমাকে শক্ত করে জরিয়ে ধরলো অনিমাকে ।অনিমাও আদ্রিয়ানের পিঠ আকড়ে ধরল। কিছুসময় পর আদ্রিয়ান বলল,

— ” শুনবেনা বাকিটা?”

অনিমা আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” প্রয়োজন নেই আমার। আমার কাছেতো আপনিই সত্যি। শুধু আব্বু রিলেটেড বলে জিজ্ঞেস করেছিলাম। সেটাতো জেনেই গেছি। কিন্তু আপনার ইচ্ছে হলে বলতে পারেন।”

আদ্রিয়ান মুচকি হেসে বলল,

— ” এডিজে মাফিয়া গ্রুপ এর নাম শুনেছো?”

অনিমা একটু ভেবে বলল,

— ” হ্যাঁ শুনেছিতো। ঐ মাফিয়া গ্রুপ নিয়ে বেশ কয়েকটা আর্টিকেলও করেছিলাম। ওটা একটা সিকরেট টিম ওরা সিকরেটলি বেশ কয়েকটা ইলিগাল কম্পানি, গোডাউন এরকম অনেক টিম কে ধরিয়ে দিতো। তারমধ্যে বেশির ভাগ কম্পানির মালিকদের আর খুজে পাওয়া যায় না।”

আদ্রিয়ান হালকা হেসে বলল,

— ” ঐ টিমের লিডার কে জানো?”

অনিমা একটু বিরক্ত হয়ে বলল,

— ” আরেহ না। কতো খুজেছি বেটাকে। কতো চেষ্টা করেছিলাম ওই লোকটাকে খুজে নিউস করবো। বাট এতো চেষ্টা করেও পান্ডা শালাকে খুজেই পেলাম না। কোথায় ঘাপটি মেরে থাকে আল্লাহ জানে। ”

আদ্রিয়ান এটা শুনে শব্দ করে হাসল। হাসতে হাসতেই বলল,

— ” সেই মাফিয়া তোমার সামনেই দাঁড়িয়ে আছে। তবে সে তোমার শালা না বর।”

অনিমা অবাক হয়ে তাকালো তারপর বড়সর একটা ঢোক গিলে বলল,

— ” সিরিয়াসলি?”

আদ্রিয়ান একটু গলা ঝেড়ে বলল,

— ” জ্বী হ্যাঁ। আর আমি তাদেরকেই মারি পুলিশ যাদের কিচ্ছু করতে পারেনা। ”

অনিমা চোখ ছোট করে হাত ভাজ করে বলল,

— ” কবে থেকে চলছে এসব?”

আদ্রিয়ান একটু ইতস্তত করে বলল,

— ” আট বছর।”

অনিমা একটা হতাশ নিশ্বাস নিয়ে বলল,

— ” মানে স্টুডেন্ট লাইফ থেকেই? ”

আদ্রিয়ান মাথা চুলকে বলল,

— ” ঐ আরকি।”

অনিমা দুটো ক্লাব বাজিয়ে বলল,

— ” বাহ! আমার নিজের উড বি এতো বিশাল একজন আন্ডারওয়ার্ল্ড মাফিয়া অথচ আমি নিজেও জানি না? ওয়াও? এক মিনিট! আট বছর মানেতো আব্বুও জানতো? কিছুই বলেনি আপনাকে? ”

আদ্রিয়ান একটু হেসে বলল,

— ” তোমার বাবা তো।”

হঠাৎ রিক আসতে আসতে বলল,

— ” ঐ টিমে কিন্তু এখন আমিও আছি, নিউ মেম্বার আরকি।”

অনিমা তো অবাকের শেষ পর্যায়ে। ও হতাশভাবে দুজনের দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” একজন রকস্টার, একজন ডক্টর অথচ আন্ডারওয়ার্ল্ডে এরা দুজনেই মাফিয়া। আর কী লাগে? স্নিগ্ধা জানে এসব?”

— ” হ্যাঁ সবটাই জানে।”

বলতে বলতে স্নিগ্ধা এসেও হাজির। অনিমা এবার কোমরে হাত দিয়ে বলল,

— ” খুব ভালো। সবাই সব জানে অথচ আমিই কিচ্ছু জানতাম না। বাহ। ”

আদ্রিয়ান বলল,

— ” হ্যাঁ তাইতো পান্ডা শালা আরো কতো কি বানিয়ে দিচ্ছিলে। আদিব আশিস ওরাও কিন্তু এই টিমের ই সদস্য।”

অনিমা হাত ভাজ করে বলল,

— ” হুমম তাইতো বলি একজন রকস্টার হয়েও এতো কান্ড কীকরে ঘটায় এই ছেলে।”

স্নিগ্ধা হেসে বলল,

— ” যাই হোক অনি। আমাদের কিন্তু এখন একটু ভাব নিয়ে চলতে হবে বল? আফটার অল ওয়াইফ অফ মাফিয়া তাইনা?”

বলেই অনিমা আর স্নিগ্ধা একসাথে হেসে দিলো। আদ্রিয়ান আর রিক বোকার মতো কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ওরাও হেসে দিলো।

________________________

সেদিন রাতে খুব সুন্দরভাবে ওদের গায়ে হলুদের প্রোগ্রামটা শেষ হলো।

আজ ওদের বিয়ে। প্রথমে রিক স্নিগ্ধা আর পরে অনিমা আদ্রিয়ানের বিয়ে হলো।আশিস আর অরুমিতা একসাথে দাঁড়িয়ে আছে। ওদের বিয়ে দেখতে দেখতে আশিস বলল,

— ” কবে যে আমাদের বিয়েটা হবে।”

অরুমিতা মুখে হাসি রেখেই দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

— ” তার জন্যে আগে তোমার বাবাকে বলতে হবে তাইনা?”

আশিস মুচকি হেসে বলল,

— ” বলে দেবো। একটু সময় দাও।”

অরুমিতা একটা মেকি হাসি দিয়ে বলল,

— ” এক সপ্তাহ ধরে একি কথা বলছো, কাওয়ার্ড একটা।”

বলে অরুমিতা রেগে চলে গেলো আর আশিস ও পেছন পেছন ছুটলো ওকে মানাতে। হ্যাঁ ওদের সম্পর্কটাও ঠিক হয়ে গেছে এই কয়েকদিনে। সেদিন আশিস সত্যিই অরুমিতার সামনে কানে ধরে ওসব বলেছিলো আর অরুমিতার অভিমানটাও এরপর আস্তে আস্তে কেটে গেছে।

আর এদিকে তীব্র স্নেহাকে পেছন থেকে হালকা করে জরিয়ে ধরে বলল,

— ” নেক্সট মান্থে কিন্তু আমাদের পালা।”

স্নেহা একটা খোচা মেরে সরিয়ে বলল,

— ” কী করছো দেখছে সবাই।”

তীব্র হেসে বলল,

— ” দেখুক আমার বউকে আমি ধরেছি কার কী?”

স্নেহা বিরক্তি নিয়ে বলল,

— ” বউ হবো হইনি এখনো।”

বলে ওখান থেকে চলে গেলো আর তীব্রও মুখ ফুলিয়ে মাথা চুলকাতে চুলকাতে নিজের কাছে গেলো।

বিয়ের অনুষ্ঠান খুব সুন্দর করেই মিটে গেলো এবার বাসর ঘরে ঢোকার সময় হলো আরেক বিপদ। আদিব,আশিস,তীব্র,স্নেহা, অরু, রাইমা, অভ্র সবাই পথ আটকে আছে আদ্রিয়ান আর রিক দুজনেরই। দুজনের রুম পাশাপাশি তাই সুবিধা হয়েছে আটকাতে। করিডর এরিয়াতেই আটকেছে ওদের দুজনকে। টাকা না দিলে ওরা ছাড়বেনা। আদ্রিয়ান বিরক্ত হয়ে বলল,

— ” তোরা কী ছোট নাকি রে এসব উদ্ভট বায়না করছিস?”

কিন্তু ওদের কোনো বাহানাতেই কোনো লাভ হলোনা। ওদের একটাই কথা বউ পেতে হলে টাকা দিয়ে তবেই ঢুকতে হবে। আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে বলল,

— ” কতো চাই?”

তীব্র হেসে বলল,

— ” বেশিনা দুজনে পঞ্চাশ পঞ্চাশ করে একলাখ দাও।”

রিক ভ্রু কুচকে বলল,

— ” আব্বে বাসর ঘরে ঢোকার বকসিস নিচ্ছিস নাকি কিডনি বেঁচে দাম চাইছিস?”

স্নেহা হেসে বলল,

— ” কী বলো ভাইয়া? এইটুকু টাকা তো তোমাদের কাছে পানি ভাত দিয়ে দাও?”

আদ্রিয়ান বলল,

— ” এতো টাকা ক্যাস নিয়ে ঘুরি নাকি আমরা? কালকে পেয়ে যাবি।”

আশিক মাথা নেড়ে বলল,

— ” নাহ ভাই বাকির নামই ফাঁকি। তো নগত না পেলে ঢুকতে দেবোনা।”

রিক বিরক্ত হয়ে বলল,

— ” এখন পাবো কোথায়?”

অরুমিতা হেসে বলল,

— ” কার্ড দিয়ে দাও আর পিন বলে দাও।”

আদ্রিয়ান হাত ভাজ করে বলল,

— ” হ্যাঁ সেই। আর তোরা পরে আমাদের ভিখারী বানিয়ে দে আরকি।”

তীব্র বলল,

— ” তাহলে এখানেই থাকো। যেতে হবেনা ভেতরে।”

আদ্রিয়ান আর রিক একে ওপরের দিকে তাকিয়ে চোখে চোখে কিছু একটা ইশারা করে একসাথে বলল,

— ” রেডি, ওয়ান, টু, থ্রী..”

বলেই ওদের হাতের নিচ দিয়ে পার হয়ে একপ্রকার দৌড়ে নিজের নিজের রুমে গিয়ে ঢুকে দরজা ঠাস করে আটকে দিলো। ওরা সবাই অবাক হয়ে গেলো। অরুমিতা হা করে তাকিয়ে থেকে বলল,

— ” এটা কী হলো?”

আদিব একটা শ্বাস ফেলে বলল,

— ” জানতাম দুটোই হাই লেভেলের চালাক। ঠিক টপকে গেলো।”

কী আর করার সবাই মুখ ফুলিয়ে ওখান থেকে কেটে পরলো।

_________________________

রিক খাটে হেলান দিয়ে বসে আছে আর ওর বুকে মাথা দিয়ে শুয়ে আছে স্নিগ্ধা। স্নিগ্ধা মুচকি হেসে বলল,

— ” জানো কখনো ভাবিই নি যে তোমাকে নিজের করে পাবো। তুমিও কোনোদিন ভালোবাসি বলবে আমায়।”

রিক মুচকি হেসে বলল,

— ” আমিও ভাবিনি। যখন তোমার প্রপোজাল রিজেক্ট করেছিলাম। ভাবতেই পারিনি যে তুমিই আমার বউ হবে। আমি একদিন তোমাকে ভালোবাসবো।”

স্নিগ্ধা মাথা তুলে ভ্রু কুচকে বলল,

— ” হঠাৎ তুমি বলছো যে?”

রিক স্নিগ্ধার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,

— ” নিজের বউকে তুই করে বলবো নাকি?”

স্নিগ্ধা হেসে বলল,

— ” হ্যাঁ বলবে। সবার সামনে তুমি করে বলবে কিন্তু যখন একা থাকবো তখন তুই করেই বলবে তোমার মুখে তুই শুনতে খুব ভালোলাগে।”

রিক হেসে বলে দিয়ে বলল,

— ” আচ্ছা বলবো হ্যাপি?”

স্নিগ্ধা আবার রিকের বুকে মাথা রেখে বলল,

— ” হুমম। তো এটা বলো কখন বুঝলে যে তুমিও আমাকে ভালোবাসো?”

রিক একটা শ্বাস ফেলে বলল,

— ” যেদিন তোকে অন্যের সাথে দেখে জেলাস ফিল করতে শুরু করলাম সেদিন থেকে।”

স্নিগ্ধার মাথা তুলে বলল,

— ” বাবাহ বাবু জেলাস ও হয়?”

রিক কিছু না বলে স্নিগ্ধা থুতনি ধরে ঠোঁটের দিকে এগোতে গেলেই স্নিগ্ধা বাধা দিয়ে বলল,

— ” উমহুম একদম না।”

রিক ভ্রু কুচকে বলল,

— ” মানে কী কেনো?”

স্নিগ্ধা নিজেকে ছাড়িয়ে সোছা হয়ে বসে বলল,

— ” কয়েকবছর ধরে তোমার পেছনে ঘুরেছি পাত্তাও দাওনি সো একবছর তুমি আমায় টাচ করবেনা এটাই তোমার শাস্তি।”

রিক কিছুক্ষণ চোখ ছোট করে তাকিয়ে রইলো স্নিগ্ধার দিকে তারপর নিচের ঠোট কামড়ে একটু হেসে বলল,

— ” এক বছর? তাইনা? ওয়েট!”

স্নিগ্ধাকে ধরতে গেলেই ও উঠে দাঁড়িয়ে গেলো আর এদিকে ওদিক ছুটতে লাগল কিন্তু রিকের হাত থেকে ছুটে পালানো কী এতোই সোজা তাই স্নিগ্ধাও পারলোনা। রিক সোজা স্নিগ্ধাকে কোলে নিয়ে বলল,

— ” এবার যাতে একবছরের মধ্যেই একটা ছোট্ট স্নিগ্ধা চলে আসে সেই ব্যাবস্হা করবো সুইটহার্ট।”

_________________________

বাইরে ঝুম বৃষ্টি আর বজ্রপাত হচ্ছে। যদিও এখন বর্ষাকাল নয় কিন্তু তবুও বাংলাদেশে আজকিল আর ঋতুভেদে কিছুই হয়না। তবে এখন আর অনি ভয় পায়না। নিজের সব ভয়কেই কাটিয়ে উঠেছে ও আর সবটাই আদ্রিয়ানের জন্যে। ব্যালকনির দোলনায় আদ্রিয়ানের কাধে মাথা রেখে বসে আছে অনিমা। আদ্রিয়ানের গায়ে শেরওয়ানি নেই শুধু একটা সাদা চিকন স্লিভস এর গেঞ্জি। অনিমার চুলগুলো খোলা আদ্রিয়ানই এসে ওর চুল খুলে দিয়েছে। অনিমার খোলা চুলই আদ্রিয়ানের বেশি ভালো লাগে। দুজনেই চুপচাপ বৃষ্টি দেখছে। নিরবতা ভেঙ্গে আদ্রিয়ান বলল,

— ” কাল রাতে খুব ভয় পেয়ে গেছিলাম জানো? ভেবেছিলাম হয়তো আমার সত্যিটা জেনে চলে যাবে তুমি আমাকে ছেড়ে।”

অনিমা মুচকি হেসে আদ্রিয়ানকে জরিয়ে ধরে বলল,

— ” ছাড়তাম কীকরে? আপনিতো আমার অন্ধকার জীবণের আলো হয়ে এসেছেন। আমার জীবণের সব অন্ধকার দূর করে দিয়েছেন। আমার একা জীবণে সঙ্গী হয়ে এসছেন আপনি। আপনি না থাকলে হয়তো রিক ওর ভুল বুঝতে পারতো না। হয়তো চিরকাল ঐ রঞ্জিত চৌধুরী আর কবির শেখ এর খাচায় আটকে থাকতে হতো। নরক হয়ে যেতো আমার জীবনটা। যে আমার জীবণটাকে নিজের দ্বায়িত্বে এতো সুন্দর করে দিয়েছেন তাকে কীকরে ছাড়বো আমি? তবে একটা কথা রাখবেন?”

আদ্রিয়ান অনিমার মাথায় একটা চুমু দিয়ে বলল,

— ” বলো?”

অনিমা একটু ইতস্তত করে বলল,

— ” মামা মামীকে ওদের সব প্রপার্টি ফিরিয়ে দিন ওরাতো বুঝেছে নিজের ভুলটা।”

আদ্রিয়ান একটু হেসে বলল,

— ” দেবো। সঠিক সময় এলে ঠিক দেবো।”

অনিমা আর কিছু না বলে চুপচাপ বৃষ্টি দেখতে লাগল। কিছুক্ষণ পর আদ্রিয়ান বলল,

— ” কী ভাবছো?”

অনিমা বৃষ্টি দেখতে দেখতেই বললো,

— ” আজ আব্বু আম্মু থাকলে কতো খুশি হতেন তাইনা?”

আদ্রিয়ান একটু হেসে বলল,

— ” হুমম। আর ওনারা যেখানেই আছেন আমাদের দেখে খুব খুশি হয়েছেন আর আমাদের দোয়াও করছেন।”

অনিমা আবারও চুপ করে রইল। আদ্রিয়ান বুঝতে পারলো অনিমা কাঁদছে। আদ্রিয়ান অনিমার মাথা উচু করে ধরে চোখ মুছে দিয়ে কপালে একটা চুমু দিয়ে বলল,

— ” প্লিজ আজকে অন্তত কেঁদো না। নিজের কালো অতীতকে ভুলে যাও। আমার জীবণে পাওয়া সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ তুমি। আমার সৌভাগ্য আমার খুশি সব তুমিই। আর আমি কথা দিচ্ছি তোমার ভবিষ্যৎ যতোটা অন্ধকার তোমার ভবিষ্যৎকে ঠিক ততোটাই আলোকিত করে তুলবো আমি। আই প্রমিস।”

অনিমা কিছু না বলে আদ্রিয়ানকে জরিয়ে ধরল। অনিমাও আদ্রিয়াকে শক্ত করে জরিয়ে ধরল। আদ্রিয়ানও জাপটে ধরলো ওকে। কিছুক্ষণ এভাবে থাকার পর আদ্রিয়ান অনিমার কানের কাছে মুখ এনে কানে একটা কিস করে বলল,

— ” আজকে আমার ভালোবাসার রং সম্পূর্ণ রাঙিয়ে দিতে চাই তোমাকে। আমার প্রত্যেক অনুভূতির চরম সীমার সাথে পরিচয় করাতে চাই। তোমাকে সম্পূর্ণ নিজের করে নিতে চাই। সো জানপাখি, মে আই?”

অনিমা কিছু না বলে আদ্রিয়ানের গেঞ্জিটা খামচে ধরে ওর বুকে মুখ লুকালো। আদ্রিয়ান কিছু না বলে মুচকি হেসে ওকে কোলে তুলে নিলো ওকে। লজ্জায় অনিমা মাথা তুলে তাকাতে পারছেনা। আদ্রিয়ান ওকে কোলে নিয়ে রুমের দিকে হাটা দিলো।

আজ সমস্ত অন্ধকার কেটে গিয়ে নতুন আলোয় ভরে উঠলো ওদের জীবণ। সত্যিই বর্ষণ আশির্বাদ। হ্যাঁ বর্ষণে মাঝে মাঝে বজ্রপাত, তোলপার , চারপাশে ভয়ংকর পরিবেশের সৃষ্টি হতেই পারে। তবে তার পরের সকালটা ততোটাই সুন্দর, সচ্ছ, আলোকিত হয়। কে বলতে পারে ভয়ংকর বর্ষণের রাতে হয়তো কারো জীবণে এমন কিছু ঘটতে পারে যেটা তার জীবণের মোড়ই ঘুড়িয়ে দেবে? জীবণে নতুন আলো নিয়ে আসবে। প্রত্যেক অন্ধকার আর ভয়াবহতাই যে আলোকিত সুন্দর কিছু বয়ে আনতে পারে তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ হয়তো বর্ষণের রাতগুলোই হয়।

সমাপ্ত___

( অবশেষে শেষ হলো গল্পটি। জানি অনেকেই চেয়েছিলেন এটাকে আরো বাড়াই তবে সত্যি বলতে আমার কাছে এটাই শেষ করার উপযুক্ত সময় মনে হয়েছে তাই এখানেই ইতি টানলাম। গল্পটাতে আপনাদের অনেক অনেক ভালোবাসা পেয়েছি তারজন্যে অসংখ্য ধন্যবাদ। আশাকরি গল্পটা সবার ভালোলেগেছে আর তাই গল্পশেষে আপনাদের সকলেরই একটা করে সুন্দর রিভিউ আশা করছি। সকলেই ভালো থাকবেন। ধন্যবাদ।)

বর্ষণের সেই রাতে ❤ পর্ব- ৫৮

0

বর্ষণের সেই রাতে ❤
পর্ব- ৫৮
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

.
আদ্রিয়ান অনিমাকে সুপ খাইয়ে দিচ্ছে আর অনিমা মুখ ফুলিয়ে তাকিয়ে আছে আদ্রিয়ানের দিকে। আজকেও আদ্রিয়ান ওর সাথে কোনো কথা বলছে না। অনিমা এবার মনে মনে ভেবে নিয়েছে যে কিছু একটা করতেই হবে, এভাবে চলতে পারেনা। আদ্রিয়ান অনিমার দিকে সুপভর্তি চামচ এগিয়ে দিলো কিন্তু অনিমা হা করছে না, অন্যদিকে মুখ করে বসে আছে। অনিমাকে হা করতে না দেখে ওর দিকে ভ্রু কুচকে তাকালো আদ্রিয়ান। কিন্তু অনিমার সাথে তো কথা বলবেনা তাই ঠোঁটে ঠেকিয়ে ধরল কিন্তু অনিমা মুখ খুললো না। আদ্রিয়ান এবার সুপের বাটিটা টি-টেবিলে শব্দ করে রেখে ভ্রু কুচকে হাত ভাজ করে বসে আছে। অনিমা আড় চোখে একবার তাকিয়ে আবার মুখ ঘুরিয়ে নিলো। কিছুক্ষণ দুজনেই চুপ ছিলো। হঠাৎ করেই আদ্রিয়ান অনিমা মুখ ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিলো তারপর মুখে হালকা চাপ দিয়ে হা করিয়ে সুপটা খাইয়ে দিলো কিন্তু কিছু বললোনা। অনিমা মুখ ছোট করে বলল,

— ” এমন করছেন কেনো? সরি তো।”

আদ্রিয়ান কিছু না বলে অনিমাকে খাইয়ে দিতে লাগল। অনিমাও আর কিছু বললোনা কারণ ও জানে যে কোনো লাভ হবেনা। খাবার খাইয়ে মেডিসিন দিয়ে চলে গেলো আদ্রিয়ান। আর অনিমা অসহায়ভাবে তাকিয়ে রইলো আদ্রিয়ানের যাওয়ার দিকে। পাঁচদিন যাবত অনেকরকম ট্রিকস ইউস করে যাচ্ছে কিনতু কোনো লাভ হচ্ছেনা। কী করবে বা ওর কী করা উচিত সেটাই বুঝতে পারছেনা। এসব ভাবতে ভাবতে মুখ ফুলিয়ে দাঁত দিয়ে নখ কার্তটতে লাগলো। হঠাৎ করেই কেউ দরজায় নক করে বলল,

— ” আসবো ম্যাডাম?”

অনিমা দরজায় তাকিয়ে দেখলো যে স্নিগ্ধা দরজার সাথে হেলান দিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে। অনিমাও একটা হাসি দিয়ে বলল,

— ” আরে আয়না। আমার রুমে ঢুকতেও তোর পার্মিশন নেওয়া লাগে নাকি।”

স্নিগ্ধা দুষ্টু হেসে হেলেদুলে আসতে আসতে বলল,

— ” নাহ মানে আজকাল তো আর তোর রুমে তুই একাই থাকিস না অন্যকেউও থাকে।”

অনিমা হালকা লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে ফেলল। স্নিগ্ধা খাটের এক কর্ণারে বসে বলল,

— ” খাইয়ে দিচ্ছে, ঔষধ দিচ্ছে, না জানি আর কী কী করে। তাই একটু নক টক করেই আসতে হয়। শত হলেও একটু প্রাইভেসির দরকার আছেতো তাইনা?”

অনিমা এবার স্নিগ্ধার দিকে একটা বালিশটা ছুড়ে মেরে বলল,

— ” রাখ তোর প্রাইভেসি। মহারাজ তো আমার সাথে কোনো কথাই বলছে না।”
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
স্নিগ্ধা একটা শ্বাস ফেলে বেডে হেলান দিয়ে বলল,

— ” হুমম। মান অভিমান চলছে তাহলে?”

অনিমা মুখ ফুলিয়ে বলল,

— ” শুধু কী অভিমান? একটা কথাও বলছেনা আমার সাথে। ইচ্ছে করেই কষ্ট দিচ্ছে আমাকে। ভাল্লাগেনা কিছু।”

— ” ও কথা বলবেনা ওর ঘাড় বলবে।”

এটা শুনে অনিমা আর স্নিগ্ধা দুজনেই দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলো রিক দাঁড়িয়ে আছে। এই কয়েকদিনে অনিমা আর রিকের সম্পর্কটাও বদলে গেছে। রিক অনিমাকে বলেই দিয়েছে আগে ওদের মধ্যে কী ছিলো? কী হয়েছে? সব ভুলে গিয়ে যাতে এখন সম্পূর্ণ স্বাভাবিক ব্যবহার করে ওর সাথে, আদ্রিয়ানের ভাই হলে যেমন ব্যবহার করতো ঠিক সেরকম। প্রথম দুই একসদিন অনিমার একটু আনইজি লাগলেও আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হয়ে গেছে রিকের সাথে । এটা ঠিক যে রিক অনিমাকে এখনও ভালোবাসে হয়তো সারাজীবন বাসবে কিন্তু সেটার বহিঃপ্রকাশ রিক কোনদিন করে নাহ রিক ভেতরে এসে বেডে বসে অনিমার দিকে বলল,

— ” তো শরীর এখন কেমন আছে ম্যাম?”

অনিমা হাত ভাজ করে মুখে হেসে বলল,

— ” শরীর খারাপ কীকরে থাকবে বলো? আফটার অল ডক্টর রিক চৌধুরী আমার ট্রিটমেন্ট করছে।”

রিক হেসে দিলো আর স্নিগ্ধা মুখ বাঁকিয়ে বলল,

— ” হ্যাঁ সেই দুদিনের ডক্টর।”

রিক ভ্রু কুচকে বলল,

— ” ঐ দুই দিনের ডক্টর মানে কী হ্যাঁ? এক সপ্তাহে আমার কী ইমেজ তৈরী হয়েছে জানিস তুই? দুইবছর যাবত ডক্টরি করেও তো আমার ধারেকাছে আসতে পারিস নি?”

স্নিগ্ধা মুখ ফুলিয়ে বলল,

— ” আমারও কম ইমেজ নেই হ্যাঁ? জানো পেশেন্ট রা কতো প্রশংসা করে আমার?”

রিক হাসতে হাসতে বলল,

— ” পেশেন্টরা তোর চিকিৎসার না চেহারারই প্রশংসা করে।”

স্নিগ্ধা বিরক্তি নিয়ে রিকের দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” রিক দা তুমি কিন্তু আমাকে ইনসাল্ট করছো।”

অনিমা এবার দুজনকে থামিয়ে বিরক্ত হয়ে বলল,

— ” চুউউউউপ। তোমরা থামবে? কী শুরু করেছো বলোতো? কোথায় আমার ঝামেলা মেটানোর একটা আইডিয়া বলবে না নিজেদের মধ্যে ঝগড়া শুরু করে দিয়েছো।”

স্নিগ্ধা আর রিক দুজনেই চুপ হয়ে গেলো। স্নিগ্ধা আর রিক দুজনেই চুপ করে কিছুক্ষণ ভাবার পর রিক বলল,

— ” আমার কাছে একটা প্লান আছে।”

অনিমা এক্সাইটেড হয়ে বলল,

— ” কী সেটা?”

রিক কিছু ভাবতে ভাবতে বলল,

— ” আজ কতো তারিখ?”

স্নিগ্ধা ভ্রু কুচকে বলল,

— ” থার্টি ফার্স্ট আগস্ট। কেনো?”

স্নিগ্ধাও কৌতুহল নিয়ে তাকালো রিকের দিকে। রিক ওদের দুজনের দিকে তাকিয়ে একটা বাঁকা হাসি দিলো।

_________________________

আদ্রিয়ান বসে ল্যাপটপে কাজ করছে। আদিব পাশে বসে টুকটাক হেল্প করছে। কিন্তু আশিস মুখ কালো করে বসে আছে। আদ্রিয়ান পরপর দুবার আড়চোখে দেখেছে। আদ্রিয়ান কাজ করতে করতেই ভ্রু কুচকে আশিসের দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” এখন এভাবে বারবার মুখ কালো করে রেখে কী লাভ? তোকে বারবার বলেছিলাম আমি সাবধানও করেছিলাম কিন্তু আমার কথা শুনিসনি তুই।”

আশিস কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল,

— ” আমি জানি আমি অন্যায় করেছি। কিন্তু নিজের ভুলটা তো বুঝতেও পেরেছি তাইনা? কতোবার ক্ষমা চেয়েছি ওর কাছে। আমি জানি যে ও আমাকে এখনো ভালোবাসে, হয়তো ক্ষমাও করে দিয়েছে কিন্তু কাছে টানতে পারছেনা ।”

আদ্রিয়ান একটু হেসে বলল,

— ” তোর ওকে দিয়ে কী কাজ। এতো সুন্দর সুন্দর হট হট গার্লফ্রেন্ড আছে তোর ওদের দিয়ে চলেনা।”

আশিস বিরক্ত হয়ে বলল,

— ” প্লিজ ভাই.. আর কতো লজ্জা দিবি বলতো? এবার থাম দয়া করে। আর কোনো একটা উপায় তো বল?”

আদিব বিরক্ত হয়ে বলল,

— ” অকাজ কুকাজ তুমি করবে আর সামলাবো আমরা? নিজে ঝামেলা পাকিয়েছিস এবার নিজেই সমাধান কর যা ভাগ।”

অাশিস অসহায়ভাবে একবার আদ্রিয়ান একবার আশিসের দিকে তাকিয়ে রইল। অভ্র তিন বন্ধুর কান্ড দেখছে আর মিটমিটিয়ে হেসে যাচ্ছে। কিছু একটা ভেবে ও বলল,

— ” স্যার। আমি বলি কী? আশিস স্যার যখন এতোকরে বলছে তখন একটু হেল্প করে দিন?”

অভ্রর কথা শুনে আশিস অসহায় কন্ঠে বলল,

— ” দেখেছিস ওরও আমাকে দেখে মায়া হচ্ছে। আর তোরা আমার বন্ধু তবুও একটু মায়া হচ্ছে না?”

আদ্রিয়ান আর আদিব একে ওপরের দিকে ভ্রু তাকালো, কিছু ভাবার পর দুজনের মুখেই হাসি ফুটে উঠলো। আদ্রিয়ান আশিসের দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” আচ্ছা চল হেল্প করবো তোকে তবে সেটাও একটা শর্তে।”

আশিস হতাশার একটা শ্বাস ফেলে বলল,

— ” হয়ে গেলো! তোর দেওয়া শর্ত মানেতো আমার পুরোদমে বাশ এই আরকি।”

আদিব হেসে বলল,

— ” কিছু করার নেই ভাই। কেষ্ট পেতে গেলে একটুতো কষ্ট করতেই হবে।”

আশিস মুখ গোমড়া করে দুজনের দিকে তাকিয়ে একটা শ্বাস ফেলে বলল,

— ” আচ্ছা ঠিকাছে। বল কী করতে হবে?”

আদ্রিয়ান এবার ল্যাপটপ অফ করে আশিসের দিকে টার্ন নিয়ে বলল,

— ” কানে ধর।”

আশিস অবাক হয়ে বলল,

— ” হোয়াট? আমি পারবোনা।”

আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে আশিসের দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” আচ্চা ঠিকাছে তাহলে নিজের রাস্তা নিজেই দেখ।”

আশিস হকচকিয়ে বলল,

— ” ভাই ভাই ভাই। ধরছি তো রেগে যাচ্ছিস কেনো?”

আশিস দাঁড়িয়ে নিজের কান ধরলো। আদ্রিয়ান এবার গলা ঝেড়ে বলল,

— ” বল আমি প্রতিজ্ঞা করছি যে, অরুমিতা ছাড়া আর অন্যকোনো মেয়ের দিকে অন্য নজরে তাকাবো না। ওকে কখনো কষ্ট দেবোনা সবসময় ভালো রাখবো আর ও যা বলবে সব অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলবো।”

আশিস অবাক প্লাস বিরক্ত হয়ে বলল,

— ” জোক মারছিস? আমিকি এসএমবিলি তে দাঁড়িয়ে আছি নাকি?”

আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে বিরক্ত হয়ে বলল,

— ” তুই বলবি না আমি উঠবো?”

আশিস অসহায়তা মুখ করে তাকিয়ে বলল,

— ” আচ্ছা বলছি…আমি প্রতিজ্ঞা করছি যে, অরুমিতা ছাড়া আর অন্যকোনো মেয়ের দিকে অন্য নজরে তাকাবো না। ওকে কখনো কষ্ট দেবোনা সবসময় ভালো রাখবো আর ও যা বলবে সব অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলবো।”

আদ্রিয়ান হেসে বলল,

— ” গুড। এবার এই কথাটাই ঠিক এইভাবে কান ধরে অরুমিতার সামনে হাটু ভেঙ্গে বসে বলবি।”

আশিস মুখ ফুলিয়ে বলল,

— ” আর কোনো উপায় নেই?”

আদিব হাত ভাজ করে বলল,

— ” আচ্ছি তাহলে ভুলে যা অরুমিতাকে। সিম্পল।”

আশিস এবারেও মুখ ফুলিয়ে বলল,

— ” আচ্ছা বলব বলব হ্যাপি?”

আদ্রিয়ান, আদিব, অভ্র তিনজনেই শব্দ করে হেসে দিলো আর আশিস মুখ ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।

__________________________

রাত সাড়ে এগারোটায় বাড়িতে ফিরে অনিমার রুমে উকি দিয়ে ওকে দেখতে না নিজের রুমে ঢুকে গিটারটা রাখতে গিয়ে দেখলো যে টেবিলের ওপর একটা কাগজ রাখা। আদ্রিয়ান টেবিলের ওপর থেকে কাগজটা নিয়ে খুলে দেখলো তাতে লেখা আছে, ” ১১: ৫৫ তে ছাদে চলে আসবেন প্লিজ।” হ্যান্ডরাইটিং দেখেই আদ্রিয়ান বুঝে গেলো এটা অনিমার লেখা। গিটারটা রেখে রাগে গজগজ করতে করতে ছাদের দিকে যেতে নিলেও কিছু একটা ভেবে থেমে গেলো যেহেতু ১১:৫৫ তেই যেতে বলেছে তখন তার আগে যাওয়া ঠিক হবেনা। ফ্রেশ হয়ে বেডে বসলো ও। মেজাজ খুব খারাপ হয়ে গেছে ওর। এমনিতেই শরীর এখনো ঠিক হয়নি, রুম থেকে বেরোতে বারণ করার পরেও বেরিয়েছে। মোবাইল টাও বন্ধ চার্জ নেই। ফোন চার্জ দিয়ে আবারও বেডে বসল ও। ভাবছে যে কী জন্যে ডাকতে পারে এতো রাতে? ১১: ৫৫ বাজতেই ছাদে গিয়ে একদফা অবাক হলো আদ্রিয়ান কারণ পুরো ছাদ অন্ধকার। আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে চারপাশে চোখ বুলাতেই লাইট জ্বলে উঠল। আদ্রিয়ান অবাক গেলো কারণ সারা ছাদ বেলুন, আর মোমবাতি দিয়ে সাজানো সুন্দর করে সাজানো আছে। মাঝখানে একটা টেবিলও রাখা আছে। আদ্রিয়ান এগোতে নেবে তার তখনই একটা শব্দ হলো আর ওপরে বিষ্ফোরণের মতো করে হ্যাপি বার্থডে আদ্রিয়ান ইংলিশ ফন্টে লেখা উঠলো । আদ্রিয়ান তো অবাক ও ভুলেই গেছিলো আজ ওর বার্থডে ফোন অফ থাকায় আরও মনে নেই। কেউ ওকে পেছন থেকে জরিয়ে ধরে বলল,

— ” হ্যাপি বার্থডে।”

আদ্রিয়ানের ঠোঁটের কোণে হালকা হাসি ফুটে উঠলো। কিন্তু অনিমার করা কাজের কথা মনে পরতেই আদ্রিয়ান ছাড়াতে নিলেই অনিমা শক্ত করে ধরে বলল,

— ” আপনি আজ সরাতে চাইলেও আমি সরবোনা। এতোসুন্দর এরেঞ্জমেন্ট করলাম একটা থ্যাংকস তো বলুন?”

আদ্রিয়ান অনিমাকে ছাড়িয়ে নিজের দিকে ঘুরিয়ে শক্ত করে দুই বাহু ধরে বলল,

— ” কী ভেবেছো? হ্যাঁ? এসব করে আমাকে কথা বলাতে পারলেই আমার রাগ কমে যাবে?”

অনিমা মুখ ছোট করে নিচু কন্ঠে বলল,

— ” সরি বলেছিতো কতোবার।”

আদ্রিয়ান বিরক্ত হয়ে বলল,

— ” হ্যাঁ এখন সরি বলছো নেক্সট কোনোদিন এমন পরিস্থিতি এলে ঠিক একই কাজ করবে।”

অনিমা মাথা নিচু করে কাঁদোকাঁদো গলায় বলল,

— ” আমার জায়গায় থাকলে আপনি কী করতেন?”

আদ্রিয়ান রেগে বলল,

— ” তুমি ছাড়া বাঁচা আর না বাঁচা আমার কাছে সমান অনি।”

অনিমা মুখ ফুলিয়ে অভিমানী গলায় বলল,

— ” ও আর আমি আপনাকে ছাড়া কীকরে বাঁচতাম?”

আদ্রিয়ান কিছু না বলে চুপ করে রইলো এর উত্তর ওর নিজের কাছেও নেই। অনিমা আদ্রিয়ানকে জরিয়ে ধরে বলল,

— ” প্লিজ আমার ওপর এভাবে রাগ করে থাকবেন না। কষ্ট হয় আমার, সব সহ্য করতে পারলেও আপনার ইগনোরেন্স সহ্য করতে পারিনা আমি।”

আদ্রিয়ান ও অনিমাকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে বলল,

— ” কতোটা ভয় ফেয়ে গেছিলাম জানো? একমুহূর্তের জন্যে মনে হয়েছিলো তোমাকে চিরকালের মতো হারিয়ে ফেলবো আমি। কতোটা অসহায় লেগেছে নিজেকে জানো?”

অনিমা আদ্রিয়ানকে আরো শক্ত করে জরিয়ে ধরে বলল,

— ” আই লাভ ইউ।”

আদ্রিয়ান চমকে উঠলো। হ্যাঁ এটা ঠিক যে ও জানে যে আনিমাও ওকে খুব ভালোবাসে কিন্তু আজ অনিমার মুখ থেকে কথাটা শুনে আদ্রিয়ানের মনে খুশির শিহরণ বয়ে গেলো। ও অনিমার কাধে থুতনি রেখে কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিসিয়ে বলল,

— ” আবার বলো?”

অনিমার লজ্জামিশ্রিত কন্ঠে বলল,

— ” আই লাভ ইউ।”

আদ্রিয়ান অনিমাকে এতো শক্ত করে জরিয়ে ধরলো যেনো নিজের মধ্যে ঢুকিয়ে ফেলবে। এভাবে কতোক্ষণ ছিলো ওদের নিজেদেরই খেয়াল নেই। হঠাৎ করেই কারো কাশির আওয়াজে ওরা দুজন দুজনকে ছেড়ে দূরে সরে দাঁড়ালো। রিক আর স্নিগ্ধা ছাদের দরজার এক কোণে দাঁড়িয়ে মিটমিটিয়ে হাসছে। ওরা ভেতরে আসার পর রিক আদ্রিয়ান কে খোঁচা মেরে বলল?

— ” আরে ভাই রোমান্স এর জন্যে সারাজীবন পরে আছে আপাদত সেলিব্রেশন হোক? হ্যাপি বার্থডে।”

বলে রিক আদ্রিয়ানকে জরিয়ে ধরলো। স্নিগ্ধাও উইস করলো আদ্রিয়ান। এরপর মিসেস আবরার, মিস্টার আবরার, মিসেস লিমা এসে একে একে আদ্রিয়ানকে উইস করে কেক কেটে বিভিন্নভাবে মজা করে আপাদত ঘরোয়াভাবে সেলিব্রেট করল। তবে কালকে আদ্রিয়ানের বার্থডে উপলক্ষে পার্টি আছে আর ঐ পার্টিতেই আদ্রিয়ান আর অনিমার বিয়ের ডেট এনাউস হবে।

_______________________

স্নিগ্ধা একটু তাড়াতাড়িই নিজের হসপিটালের কাজ সেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে কারণ আজ বাড়িতে অনুষ্ঠান আছে তাই দ্রুত যেতে হবে। সব শেষ করে বেড়োতে নেবে হঠাৎ ওর কেবিনে ওর সেই ক্লাসমেট প্লাস কলিগ এসে বলল,

— ” স্নিগ্ধা ফ্রি আছিস।”

স্নিগ্ধা হেসে বলল,

— ” হ্যাঁ কাজ এমনিতে শেষ বাড়ি ফিরছিলাম কিছু বলবি?”

এদিকে রিক ওর কাজ শেষ করে স্নিগ্ধাকে ওর কেবিনে ডাকতে এসছিলো একসাথে যাবে বলে। কিন্তু ভেতরে এসে যা দেখলো তাতে ওর রক্ত গরম হয়ে গেলো। কারণ স্নিগ্ধাকে ঐ ছেলেটা ফুল দিয়ে প্রপোজ করছে। যদিও স্নিগ্ধা কিছু বলছেনা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। রিককে দেখে স্নিগ্ধা বলল,

— ” রিক দা তুমি?”

রিক দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

— ” ডিসটার্ব করলাম নাকি?”

ঐ ছেলেটা স্নিগ্ধার দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” স্নিগ্ধা আমি..”

স্নিগ্ধা শক্ত গলায় বলল,

— ” তুই এখন যা তোর সাথে পরে কথা বলবো।”

ছেলেটা কিছু বলতে চেয়েও বললনা চলে গেলো ওখান থেকে। রিক স্নিগ্ধার দিকে তাকিয়ে ঠান্ডা গলায় বলল,

— ” বাড়ি যাবি তো? চল”

রিকের এই ঠান্ডা গলাও স্নিগ্ধার স্বাভাবিক লাগলো না। তবুও কিছু না বলে চলে গেলো রিকের সাথে সারারাস্তা একটাও কথা বলেনি রিক স্নিগ্ধার সাথে। রিক যতো চুপ করে আছে স্নিগ্ধার মনের ভয় ততোই বাড়ছে।

সন্ধ্যায় খুব বড় করে আদ্রিয়ানের বার্থডে সেলিব্রেট হলো। সকল প্রেস মিডিয়ার সামনে আদ্রিয়ান আর অনিমার বিয়ের দিন পনেরো দিন পর ঠিক করা হলো। সব ঠিক ই ছিলো কিন্তু স্নিগ্ধা ঝটকা খেলো তখন যখন ঐ একই দিনে ওর আর রিকের বিয়ের এনাউসমেন্ট করলো মানিক আবরার আর তাও স্নিগ্ধার বাবা মায়ের সামনে। কারো চোখ মুখেই অবাক হওয়াল ছাপ নেই মানে সবাই সবটা জানে।স্নিগ্ধা অবাক হয়ে রিকের দিকে তাকাতেই রিক ওর দিকে তাকিয়ে একটা বাঁকা হাসি দিলো। স্নিগ্ধার খুশি হওয়ার কথা হলেও ও খুশি হতে পারছেনা কারণ ওর মাথায় অন্যকথা ঘুরছে।

______________________

রাতে রিক ওর রুমে বসে কাজ করছে হঠাৎ স্নিগ্ধা ওর রুমে এসে বলল,

— ” কেনো করলে এটা?”

রিক স্বাভাবিকভাবেই কাজ করতে করতে বলল,

— “কোনটা?”

স্নিগ্ধা বিরক্ত হয়ে বলল,

— ” রিকদা আমি বিয়ের কথা বলছি!”

রিক ভ্রু কুচকে স্নিগ্ধার দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” বিয়ে কেনো করে মানুষ?”

স্নিগ্ধা একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল,

— ” তুমিতো আমাকে ভালোবেসে বিয়ে করছোনা? করছো নিজের জেদ রাখতে। আমার ওপর অধিকার খাটাতে, আমি তুমি ছাড়া অন্য কোনো ছেলের কাছে যাই সেটা তোমার সহ্য হয়না জাস্ট সেইজন্যে করছো।”

রিক এবার রেগে স্নিগ্ধার দুই বাহু ধরে বলল,

— ” হ্যাঁ আমার সহ্য হয়না। অন্যকাউকে তোর সাথে দেখতে পারিনা আমি কারণ আমি ভালোবাসি তোকে। ইয়েস! আই লাভ ইউ। এতদিন বুঝতে পারলেও স্বীকার করতে চাইতাম না বাট আজ আমি বলতে বাধ্য যে আই লাভ ইউ।”

স্নিগ্ধা তো নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছেনা। সবকিছু সপ্ন মনে হচ্ছে। রিক নিজে ওকে বলছে এসব। রিক স্নিগ্ধার কপালে কপাল ঠেকিয়ে বলল,

— ” তুইতো ভালোবাসিস আমাকে তাইনা? এটা জেনেও যে আমি অনিকে ভালোবাসি। হ্যাঁ বাসি ওকে ভালো এখনও বাসি তবে সারাজীবন বাসবো। তবে সেটা আর পাওয়ার আশায় না। প্রথম ভালোবাসা কেউ ভুলতে পারেনা, আমিও পারবোনা ও আমার মনে থাকবে ওর নিজের জায়গায় কিন্তু তুই তোর নিজের জায়গা করে নিয়েছিস আমার মনে। আর তোর সাথেই আমি আমার বাকি জীবণটা কাটিয়ে দিতে চাই। দিবিনা আমাকে সেই সুযোগ?”

স্নিগ্ধা কিছু না বলে জরিয়ে ধরলো রিককে। রিকও নিজের সাথে জরিয়ে ধরলো স্নিগ্ধাকে। আজ আরেকটা নতুন ভালোবাসার সূচনা হলো, নতুন সম্পর্ক, নতুন অনুভূতি, বহু কাঙ্ক্ষিত মুহূর্ত।

______________________

এভাবেই পনেরো দিন কেটে গেলো। অনিমা আর আদ্রিয়ানের সম্পর্ক আরো গভীর হয়েছে এই কয়েকদইনে। রিকও নিজের অতীতকে পাশে রেখে শুধু স্নিগ্ধাকে নিয়েই নিজের জীবণ সাজানোর চেষ্টায় আছে আর পারছেও।

আজ অনিমা আদ্রিয়ান আর রিক স্নিগ্ধার গায়ে হুলুদ। সন্ধ্যা হয়ে গেছে। অনিমা একাই ব্যালকনির রেলিং ধরে শূন্য আকাশে তাকিয়ে আছে স্হির দৃষ্টিতে । পরোনে হলুদ শাড়ি, খোলা চুল, হাতেল লাল কাঁচের চুড়ি মুখে হালকা সাজ। কিন্তু মনে একটুও শান্তি নেই। বাতাসে উড়ছে ওর উন্মুক্ত চুল। আদ্রিয়ান ধীর পায়ে এসে দাঁড়ালো ওর পাশে। সব ঠিকই ছিলো কিন্তু বিকেলের ঘটনাটাই সব এলোমেলো করে দেওয়ার জন্যে যথেষ্ট। ভয় হচ্ছে আদ্রিয়ানের খুব বেশি ভয় হচ্ছে। সত্যিই কী সব এলোমেলো হয়ে যাবে? আদ্রিয়ান কাঁপা কাঁপা হাতে অনিমার কাধে হাত রাখতেই অনিমা হাতটা সরিয়ে আদ্রিয়ানের হাতে একটা ডাইরী ধরিয়ে দিলো। ডাইরীটা দেখে আদ্রিয়ান চমকে উঠলো। অনিমা আদ্রিয়ানের চোখে চোখ রেখে বলল,

— ” ভেবেছিলাম কোনোদিন জিজ্ঞেস করবোনা আপনাকে। বলার হলে আপনি নিজেই বলবেন। তবে আজ আমি জিজ্ঞেস করতে বাধ্য হচ্ছি। কে আপনি? আব্বুর সাথে আপনার কী সম্পর্ক ছিলো? আপনি কী শুধুই একজন রকস্টার? নাকি অন্যকিছু? আপনার আসল পরিচয় কী?”

আদ্রিয়ান চোখ বন্ধ করে একটা শ্বাস নিলো আর চাইলেও কিছু লুকানো সম্ভব না। বিকেলের ঘটনাটা তো আছেই তারওপর এই ডাইরী। আজ ওকে সব বলতেই হবে। তবে দেখার এটাই যে সব শুনে অনিমা কী করবে? কী হবে এরপর? সব শেষ হয়ে যাবে? নাকি নতুন করে সব শুরু হবে।

#চলবে…

( রি-চেইক হয়নি। ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)

বর্ষণের সেই রাতে ❤পর্ব- ৫৭

0

বর্ষণের সেই রাতে ❤পর্ব- ৫৭
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

আদ্রিয়ান এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অনিমার দিকে। সকলেই হতভম্ব হয়ে গেছে। এইরকম একটা ঘটনা ঘটে যাবে কেউ কল্পণাও করতে পারেনি। রিক ও ধপ করে বসে পরল অনিমার সামনে। স্নিগ্ধা ওরা সবাই দৌড়ে এলো। কবির শেখ বেশি ডেসপারেট হয়ে গেছে তার জন্যে পুলিশ আর সময় নষ্ট না করে তাড়াতাড়ি ওনাদের নিয়ে চলে গেলো। জার্নালিস্টরা কিছু পুলিশের পেছনে গেলো আর কিছু এইখানে অনিমাদের দিকে ক্যামেরা টার্ন করলো। স্নিগ্ধা চেচিয়ে বলল,

— ” তোমারা এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো? ওকে হসপিটালে নিতে হবে, প্রচুর ব্লিডিং হচ্ছে।”

স্নিগ্ধার আওয়াজে আদ্রিয়ান আর রিক দুজনেরই হুশ এলো। তীব্র দৌড়ে গাড়ি বার করতে চলে গেলো। আদ্রিয়ান অনিমার গালে হাত রেখে হালকা ঝাকিয়ে বলল,

— ” জানপাখি? এই জানপাখি? কেনো করলে এরকম? কে বলেছিলো সামনে আসতে ? হোয়াই ড্যাম ইট?”

রিক নিজেও স্তব্ধ হয়ে গেছে কিন্তু নিজেকে সামলে আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে হালকা কাঁপা গলায় বলল,

— “আদ্রিয়ান প্লিজ শান্ত হও। ওকে হসপিটালে নিতে হবে। ওঠাও ওকে।”

অভ্র ইতস্তত গলায় বলল,

— ” হ্যাঁ স্যার বেশি লেট হয়ে যাওয়ার আগে..”

আদ্রিয়ান ধমক দিয়ে বলল,

— ” ঐ? লেট হয়ে গেলে মানে কী? কিচ্ছু হবেনা ওর কিচ্ছু হবেনা।”

বলে আদ্রিয়ান অনিমাকে কোলে তুলে নিয়ে দ্রুত পদে বেরিয়ে গেলো ওর পেছন পেছন বাকিরাও গেলো। সাথে জার্নালিস্টরাও।

_______________________

ইমারজেন্সিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে অনিমাকে। বাকি সবাই বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। স্নিগ্ধা ডক্টর তাই ওও ভেতরে আছে। বাইরে সাংবাদিকরা ভীর করে আছে কিন্তু পুলিশ ওনাদের ভেতরে ঢুকতে দিচ্ছেন না। সকলের মুখেই টেনশনের ছাপ স্পষ্ট। আদিব ,আশিস, অভ্র, তীব্র গম্ভীর মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে। অরু আর স্নেহা বেঞ্চে বসে বসে কাঁদছে। আদ্রিয়ান হাটু গুটিয়ে ফ্লোরে বসে আছে। ওর শার্টে অনিমার শরীরের রক্ত লেগে আছে, চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে। রিক দেয়ালে হেলান দিয়ে হাত ভাজ করে দাঁড়িয়ে আছে ওর মানসিক অবস্হাও ভালো নেই। ওও তো খুব ভালোবাসে মেয়েটাকে। নিজের ভালোবাসার মানুষকে নিজেরই চোখের সামনে অলমোস্ট মৃত্যুর সাথে লড়াই করতে দেখাটা যে কতোটা যন্ত্রণার সেটা আদ্রিয়ান আর রিক দুজনেই খুব ভালোকরে বুঝতে পারছে। কিছু একটা ভেবে রিক গিয়ে আদ্রিয়ানের পাশে ফ্লোরে বসে ওর কাধে হাত রেখে বলল,

— ” নিজেকে সামলাও কিচ্ছু হবেনা ওর। তোমার জন্যে হলেও ফিরে আসতে হবে ওকে।”

আদ্রিয়ান শান্ত দৃষ্টিতে তাকালো রিকের দিকে। চোখ লাল হয়ে আছে আদ্রিয়ানের। রিক একহাতে জরিয়ে একটা শ্বাস ফেলে বলল,

— ” ওঠো। বেঞ্চে এসে বসো।”

আদ্রিয়ান কোনো রেসপন্স করলোনা তাই রিক নিজেই ওকে ধরে উঠিয়ে বেঞ্চে বসিয়ে দিলো। নিজেও ওর পাশে বসে মুখ চেপে ধরে বসে আছে। একটা দমবন্ধ হওয়ার মতো পরিবেশ তৈরী হয়েছে চারপাশে। অনিমার ওদের সকলের কলিজার টুকরো আর সেই মেয়েটার এরকম অবস্হা দেখে প্রত্যেকেই মানসিকভাবে ভেঙ্গে পরেছে।

এরমধ্যেই মিস্টার আর মিসেস আবরার দৌড়ে ভেতরে এলেন। ওনারা পুরোটা নিউসই দেখেছেন টিভিতে আর অনিমার গুলি লাগার নিউস শুনেই ওনারা ছুটে এসেছেন হসপিটালে। মিসেস আবরার আদ্রিয়ানের পাশে বসে বলল,

— ” কেমন আছে অনিমা? ডক্টর কী বলেছে?”

মানিক আবরারও বললেন,

— ” কোথায় আছে মামনী এখন?”

আদ্রিয়ান কিছু না বলে চুপচাপ বসে আছে। রিক নিজেই বলল,

— ” একটু আগে ইমারজেন্সিতে নেওয়া হয়েছে। এখনো ডক্টর বের হয়নি।”

মিস্টার আর মিসেস আবরার দুজনেই বেঞ্চে বসল। একটু পরেই স্নিগ্ধা আর একজন ডক্টর বেড়িয়ে এলেন। ওদের দেখে সবাই নড়েচড়ে দাঁড়ালো। আদ্রিয়ান আর রিক দুজনেই দ্রুতপদে গেলো ওদের সামনে। আদ্রিয়ান কাঁপা গলায় বলল,

— ” কী অবস্হা ওর?”

রিকও ওনাদের দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” বুলেট এর পজিশনটা কী? মানে রিস্ক নেই তো?”

স্নিগ্ধা আর মেল ডক্টর একে ওপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করলেন। আদ্রিয়ান অধৈর্য হয়ে স্নিগ্ধার দিকে তাকিয়ে চেচিয়ে বলল,

— ” তোমরা কিছু বলবে?”

রিক দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

— ” স্নিগ্ধু তুই বলবি নাকি আমি ভেতরে ঢুকবো?”

স্নিগ্ধা একটা শ্বাস ফেলে বলল,
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
— ” কেসটা খুব ক্রিটিকাল হয়ে গেছে রিক দা। সব ঠিকি ছিলো বুলেটের পজিশনটাই অবস্হাটা জটিল করে দিয়েছে।”

মেইল ডক্টর ও বললেন,

— ” হ্যাঁ বুলেটের পজিশনটার জন্যেই আমরা কোনো স্টেপের কথা ভাবতে পারছিনা। সার্জারিটা করার সাহসটাই পারছিনা। জীবণে গুলি লাগার কেস অনেক সামলেছি। কিন্তু এইরকম কেস পাইনি। যদি অপারেশন করাও হয় তাহলে অপারেশন টেবিলেই…আইমিন অপারেশন সাকসেসফুল হবার চান্স মাত্র টু পার্সেন্ট।”

আদ্রিয়ান রেগে ডক্টরের দিকে তেড়ে গিয়ে চেচিয়ে বলল,

— ” হোয়াট ডু ইউ মিন বাই টু পার্সেন্ট হ্যাঁ? কেমন ডক্টর আপনারা? ওর যদি কিছু হয়না এই হসপিটালটাই গুড়িয়ে দেবো আমি।”

রিক আর স্নিগ্ধা মিলে আদ্রিয়ানকে ধরে ওকে শান্ত করলো। রিক আদিব আশিসের দিকে তাকিয়ে ইশারা করতেই ওরা এসে আদ্রিয়ানকে ধরে বসিয়ে দিলো। রিক ডক্টরদের দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” আপনারা অপারেশন করবেন কী না?”

ডক্টর ইতোস্তত করে বলল,

— ” অপারেশন তো করতেই পারি বাট আমিতো বললামই যে চান্স মাত্র টু পার্সেন্ট। তাই একটা বন্ড সাইন করতে হবে।”

আদ্রিয়ান চেঁচিয়ে বলল,

— ” নাহ কোনো বন্ড সাইন হবেনা। ইউ হ্যাভ টু এসিউর যে ও ঠিক হয়ে যাবে।”

মানিক আবরার আদ্রিয়ানের পাশে বসে বলল,

— ” এতো হাইপার হওয়ো না ও ঠিক হয়ে যাবে।”

রিক নিজের ঠোঁট কামড়ে ধরে কিছুক্ষণ চুপচাপ কিছু একটা ভাবল। তারপর একটা শ্বাস ফেলে বলল,

— ” সার্জারি হবে বন্ড সাইন ছাড়াই হবে আর সেটা আমি করবো। ”

সকলেই অবাক হয়ে তাকালো রিকের দিকে । ডক্টর অবাক হয়ে বললেন,

— ” আপনি করবেন মানে?”

রিক শক্ত চোখে ডক্টরের দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” আমি বাংলাতেই বলছি। ”

ডক্টর ইতোস্তত গলায় বলল,

— ” নাহ স্যার আমরা জানি আপনার লাইসেন্স আছে কিন্তু প্রাকটিস ছাড়া..”

রিক ছোট্ট একটু বাঁকা হাসি দিয়ে বলল,

— ” মেডিকেল লাইফে আমার বিশেষত্ব কী ছিলো জানেন? আমি একবার যেটা শিখতাম সেটা আর দ্বিতীয়বার শেখাতে হতো না আমায়। টপার ছিলাম আর টপ বয় ও। রিক চৌধুরীর কোনো প্রাকটিসিং এর প্রয়োজন পরে না।”

স্নিগ্ধা তো অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে রিকের দিকে। এরমধ্যে এই খবর শুনে হসপিটাল ম্যানেজমেন্ট এর লোকও এসে গেছে। তাদের মধ্যে একজন বললেন,

— ” কিন্তু স্যার..”

রিক এতক্ষণ ঠান্ডা গলায় কথা বললেও এবার রেগে বলল,

— ” আমাকে যদি কেউ থামানোর চেষ্টাও করে তাহলে এই হসপিটাল টা কালকে আর থাকবেনা আই সোয়ার।”

রিকের এই কথা শুনে কেউ আর কোনো কথা বলার সাহস পেলোনা ওটি রেডি করতে চলে গেলো। স্নিগ্ধা তো খুশিতে কেঁদেই দিয়েছে। ও ভাবতেই পারেনি রিক আবার হোয়াইট এপ্রোন পরবে। ও দ্রুত একটা হোয়াইট এপ্রোন এনে রিকের হাতে দিলো। রিক এপ্রোনটা হাতে নিয়ে একবার হাত বুলালো ওটার ওপর কতোবছর পর হাতে নিলো এই এপ্রোন, এটা একসময় ওর প্যাশন ছিলো আর আজ এটা ওর প্রয়োজন। রিক এপ্রোনটা পরল সাথে সাথে ওর ভেতরে অদ্ভূত এক অনুভূতি কাজ করলো। তবে সেদিকে পাত্তা পা দিয়ে রিক আদ্রিয়ানের সামনে গিয়ে বসে বলল,

— ” আমার কাছে আমার মতামতই সবার আগে। কারো ধার ধারিনা আমি। কিন্তু এই ক্ষেত্রে আমার তোমার অনুমতি লাগবে। কারণ অনিমা তোমার। একটু ভরসা করো আমার ওপর। তোমার জানপাখিকে তোমার কাছে ফিরিয়ে দেবো আমি, আর সেটা না পারলে নিজেও চিরকালের মতো হারিয়ে যাবো। আই প্রমিস।”

আদ্রিয়ান একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রিকের দিকে। ও রিককে অবিশ্বাস করতে পারছেনা। ইনফ্যাক্ট রিকের চেয়ে বেশি ভরসা এইমুহূর্তে কাউকে করতে পারছেনা ও। ও শুধু রিকের হাত ধরে চোখের ইশারায় ওকে অনুমতি দিলো। রিক কথা না বাড়িয়ে ইমারজেন্সি তে ঢুকে গেলো বুলেটের পজিশনটা নিজে ভালোভাবে দেখে নিতে। সবাই এতোক্ষণ হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে ছিলো অনেকেই জানতো না রিক একজন ডক্টর। রিক সব দেখে বাইরে বেরিয়ে এলো।

ওটি রেডি হয়ে গেছে। স্নিগ্ধা রিককে এসিস্ট করবে । রিক ওটির জন্যে রেডি হয়ে, মিস্টার আর মিসেস আবরারের কাছে গিয়ে বললেন,

— ” মা এখানে নেই। আর বাবা তো দুনিয়াতে থেকেও নেই। আপাদত আপনারা আছেন। প্রফেশনালভাবে প্রথম সার্জারি এটা আমার। দোয়া করবেন যাতে নিজেকে প্রমাণ করতে পারি।”

মানিক আবরার ওর মাথায় হাত রেখে বললেন,

— ” আমি জানি তুমি পারবে।”

রিক মনে মনে বলল পারতেতো হবেই। নিজের প্রাণ কে না বাঁচাতে চায়? ও তো আমারও প্রাণ। ওনাদের কাছ থেকে দোয়া নিয়ে রিক আর স্নিগ্ধা ওটিতে ঢুকে গেলো। অটির লাইট জ্বলতেই আদ্রিয়ানের বুকের মধ্যে ঝড় শুরু হয়ে গেলো। মাত্র টু পার্সেন্ট এর ভরসাতেই আছে ওরা সবাই।

ওটিতে অনিমার ক্ষতের দিকে তাকাতেই রিক চোখ বন্ধ করে একটা শ্বাস নিলো। এই মেয়েটার শরীরে নিজ দ্বায়িত্যেই কত আঘাতের চিন্হ তৈরী করেছিলো ও অথচ আজ ওর নিজেরই এসব সহ্য হচ্ছেনা। ছুড়িটা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। চালানোর সাহস করে উঠতে পারছেনা, অন্যকেউ হলে এতো ভাবতো না কিন্তু অনিমা বলেই এতো ভয়। রিকের কাঁধে হাত রেখে স্নিগ্ধা ওকে আশ্বস্ত করতেই রিক নিজেকে শক্ত করে নিলো। চোখ বন্ধ করে কয়েকটা শ্বাস নিয়ে অপারেশন শুরু করলো।

সবাই চিন্তায় অস্থির হয়ে আছে। হঠাৎ করেই ওখানে রিকের মা মিসেস লিমা বেগম ছুটে এলেন। এসে বললেন,

— ” রিক কোথায়? ও ঠিক আছেতো?”

মিস্টার আর মিসেস আবরার দুজনেই উঠে দাঁড়ালেন মিসেস লিমাকে দেখে। মিসেস আবরার উঠে ওনার সামনে গিয়ে বললেন,

— ” লিমা তুই ঠিক আছিস তো?”

মিসেস লিমাও অবাক হয়ে বললেন,

— ” রিমা তুই..”

দুজনেই দুজনকে জরিয়ে ধরলো। মিসেস লিমা মিসেস আবরার এর দিকে তাকিয়ে বললেন,

— ” তুই এখানে কী করছিস? তুই তো..”

মিসেস আবরার একটা শ্বাস নিয়ে আদ্রিয়ানের দিকে ইশারা করে বললেন,

— ” আদ্রিয়ান আমার ছেলে। আর ভেতরে ওটি তে মানে ভাইয়া আজ যাকে গুলি করেছে সে আমার হবু বউমা।”

মিসেস লিমা কাঁদতে কাঁদতে বললেন,

— ” ভাই বলিসনা ওনাকে। লজ্জা করে আমার যে ওইরকম একটা লোক আমার ভাই। আদ্রিয়ান তোর ছেলে? তবুও ওরা ছিঃ।আমার তো কপালটাই খারাপ যে আমার স্বামী আর ভাই দুজনেই খুনি।”

ওনাদের কথপোকথন শুনে আদ্রিয়ান আর মানিক আবরার বাদে বাকি সবাই অবাক। কে কার ভাই আর কী বলছে কিছুই বুঝতে পারছেনা কেউ। মিসেস আবরার বললেন,

— ” ভাইয়া জানতো যে আদ্রিয়ান ওনার নিজের ভাগ্নে তবুও কীকরে পারলো ওর দিকে গুলি ছুড়তে?”

মিসেস লিমা ভাঙ্গা গলায় বললেন,

— ” ওনাদের দ্বারা সব সম্ভব।”

আদ্রিয়ান এসবে কানও দিচ্ছেনা ওর দৃষ্টিতে শুধু ওটির দরজার দিকে। মানিক আবরার এবার বললেন,

— ” আচ্ছা অনেক হয়েছে তোমারা একটু বসো।”

ওনারা দুজনে বসতেই মানিক আবরার সবার দিকে তাকিয়ে বললেন,

— ” তোমরা কিছুই বুঝতে পারছোনা তাইতো? আসলে রিমা আর লিমা ওরা জমজ বোন। চেহারা হুবহু না মিললেও নাইটি পার্সেন্ট এক। আর কবির শেখ হলেন ওনাদের একমাত্র বড় ভাই। আসলে আদ্রিয়ানের মা আর আমার লাভ ম্যারেজ ছিলো। কিন্তু ওদের পরিবারের কেউ আমাদের সম্পর্কটা মানে নি আর ওর বাবা ওর সাথে সব সম্পর্কই শেষ করে দিয়েছে। তাই আমি ওকে নিয়ে চলে আসি। এরপর শুরুর দিকে চেষ্টা করলেও ওনারা মানেননি। মুল কারণ ছিলো কবির শেখ। উনিই বিভিন্নভাবে ওর বাবাকে উস্কে রাখতো। একপর্যায়ে আমরাও যোগাযোগ বন্ধ করে দেই। এরমধ্যে ওর বাবা মারা যায় আর প্রপার্টি সব কবির শেখ নিজের নামে করে নেয়। আর এই দুই পরিবারের মধ্যে কোনো যোগাযোগ হয়নি। সেতো কিছুদিন আগে আদ্রিয়ান এসে আমাদের বলল যে মিনিস্টার রঞ্জিত চৌধুরীর ওয়াইফ তুমি আর ছেলেও আছে রিক। এইকারণেই রিক আমাদের বাড়িতে আসলে আমরা ওকে এতো আদর করতাম।”

সকলেই অবাক হলো এতো কাহিনীতো ওরা জানতোই না। মিসেস লিমা ভাঙ্গা গলায় বললেন,

— ” রিক কোথায় এখন।”

মিসেস আবরার একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,

— ” ওটিতে আছে। অনিমার সার্জারি ওই করছে।”

মিসেস লিমা অবাক তো হলেনই সাথে প্রচন্ডরকমের খুশিও হলেন। খুশিতে ওনার চোখেও পানি চলে এলো, উনি কাঁপা গলায় বললেন,

— ” আমার রিক ওটি তে ঢুকেছে? ওপারেশন করছে? ”

মিসেস আবরার বললেন,

— ” প্রার্থনা কর যাতে ও সফল হতে পারে।”

মিসেস লিমা মনে মনে আল্লাহকে অসংখ্য ধন্যবাদ দিলেন তার ছেলে আবার আগের মতো হয়ে যাবে এটা ভেবে আর অনিমা যাতে সুস্হ হয়ে যায় সেই প্রার্থনাও করলেন।

এদিকে অনিমার অবস্হা ক্রমশ খারাপের দিকে যাচ্ছে। স্নিগ্ধা বারবার মনিটর চেক করছে। বাকিরাও ভয় পাচ্ছে। রিকের তো ঘাম বেড়োচ্ছে কিন্তু তবুও নিজেকে শক্ত রেখে অপারেশন চালিয়ে যাচ্ছে। একপর্যায়ে অনিমার অবস্হা এতোটাই খারাপ হলো যে বাকিরা ধরেই নিলো পেশেন্ট বাঁচবে না। রিক একটু দূরে সরে দেয়াল ধরে দাঁড়িয়ে গেলো। স্নিগ্ধা রিকের কাছে গিয়ে বলল,

— ” শক্ত হও রিক দা। তোমাকে পারতে হবে। আর তুমি পারবেও। এটা অনিমার জীবণ এতো সহজে যেতে দিতে পারোনা তুমি। প্লিজ।”

সময় যতো বারছে সবার মধ্যকার অস্হিরতা ততো বারছে। একপর্যায়ে আদ্রিয়ানতো কেঁদেই দিলো। ওর ফোপানোর আওয়াজে মিসেস আবরার ওর কাছে গিয়ে ওকে জরিয়ে ধরলেন। সকলেই চমকে গেলো। মিসেস আবরার আদ্রিয়ানের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল,

— ” এমন কেনো করছিস তুই সব ঠিক হয়ে যাবে। ও একদম সুস্হ হয়ে যাবে দেখিস।”

আদ্রিয়ান মিসেস আবরার কে জরিয়ে ধরে ভাঙ্গা গলায় বলল,

— ” কেনো এরকম করলো ও? কেনো? ও কী করে ভাবলো হ্যাঁ নিজে মরে আমায় বাঁচিয়ে নেবে? আমার শরীরের আঘাত নিজের গায়ে নিয়ে নেবে? ও এটা কেনো বোঝেনা বলোতো ওর শরীরের একেকা আঘাত আমার কাছে দশগুন হয়ে ফেরত আসে? আমি পারবোনা ওকে ছাড়া থাকতে মা জাস্ট পারবোনা।”

মানিক আবরারও এবার আদ্রিয়ানের কাছে এসে বলল,

— ” আরে কিচ্ছু হবেনা ওর। দেখবি ও একদম সুস্হ হয়েছে বেরোবে রিক আর স্নিগ্ধা আছেতো ওখানে ওরা ঠিক পারবে।”

এরমধ্যেই ওটির লাইট অফ হয়ে গেলো আর তারপর রিক আর স্নিগ্ধা দুজনেই বেড়িয়ে এলো। দুজনের মুখ দেখে বোঝার উপায় নেই খবর ভালো না খারাপ। আদ্রিয়ান ওদের কাছে গিয়ে বলল,

— ” অনিমা কেমন আছে? কী হলো বলো? কেমন আছে অনিমা।”

মিসেস আবরার বললেন,

— ” ও ঠিক আছে তো বিপদ কেটে গেছে তো?”

রিক ওনাদের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল,

— ” আদ্রিয়ানকে কথা দিয়েছিলাম ওর জানপাখিকে ওর কাছে ফিরিয়ে দেবো। আমি পেরেছি আমার কথা রাখতে।”

স্নিগ্ধা মুচকি হেসে বলল,

— ” হ্যাঁ ও এখন একদম ঠিক আছে আর একটু পরে কেবিনে দেওয়া হবে। কালকে সকালের মধ্যেই জ্ঞান ফিরে আসবে।”

সবাই স্বস্তির একটা নিশ্বাস ফেলল, আদ্রিয়ান গিয়ে রিককে জরিয়ে ধরে বলল,

— ” থ্যাংক ইউ থ‍্যাংক ইউ সো..মাচ।”

রিক কিছু না বলে একটু হাসলো। ওর দৃষ্টি মিসেস লিমার দিকে যেতেই ও অবাক হয়ে বলল,

— ” আরে মা তুমি এখানে? তুমি এখানে? মানে তুমি ঠিক আছোতো? দেখো টিভির নিউজগুলো দেখে ভেঙ্গে পরোনা। আমিতো আছি তোমার কাছে।”

মিসেস লিমা হেসে রিকের দুই গালে হাত রেখে বললেন,

— ” একদিন বলেছিলাম না আমার লজ্জা হয় তোকে নিজের ছেলে বলতে? আজ আমি বলছি আমি গর্বিত যে তুই আমার ছেলে। আই এম প্রাউড অফ ইউ।”

বলে রিকের কপালে একটা চুমু খেলেন। এরপর রিক আর স্নিগ্ধা দুজনেই ফ্রেশ হতে চলে গেলো। ওরা ফ্রেশ হয়ে আসতেই আদ্রিয়ান রিককে বললো,

— ” অনির সাথে দেখা করা যাবে এখন।”

রিক আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল,

— ” টেনশন করোনা একদম ও ঠিক আছে। দুই ঘন্টা যাক এরপর দেখা করে এসো।”

রিক ওনাদের কাছে গিয়ে বসতেই মিসেস লিমা বললেন,

— ” রিক তোমার রিমা আন্টি কিন্তু তোমার নিজের খালামনি আর আদ্রিয়ান তোমার আপন খালাতো ভাই।”

রিক অবাক হয়ে তাকালো ওনার দিকে। এরপর উনি রিককে সককথা খুলে বললেন শুরু থেকে। সব শুনে রিক খুশি হওয়ার সাথে সাথে লজ্জিত হলো। নিজের ভাইকে মারতে চেয়েছিল ও একসময়? রিক উঠে আদ্রিয়ানের কাছে গিয়ে বলল,

— ” আই এম সরি ভাই। আমি আসলে..”

আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে বলল,

— ” গাঁধা আমি তোর মাত্র তিন মাসের বড় তাই এসব ভাই টাই বলার দরকার নেই। নাম ধরে ডাকবি আর তুই করে বলবি।”

দুজনেই দুজনকে জরিয়ে ধরলো। সবার মুখেই প্রশান্তির এক হাসি। অনেকদিন পর সমস্ত কালো আধার কেটে গিয়ে সুখের আলো এসেছে ওদের জীবণে।

_______________________

এক সপ্তাহ কেটে গেছে। অনিমাকে বাড়ি নিয়ে আসা হয়েছে। রিক হসপিটাল জয়েন করেছে। শুধু তাইনা মিসেস লিমা, রিক আর স্নিগ্ধা এখন আদ্রিয়ানকে বাড়িতেই থাকে। আসলে মিস্টার রঞ্জিত এর বাড়ি ঘর সরকার থেকে সিল করা হয়েছে কারণ সবই অবৈধ আর কালো টাকায় তৈরী যেটুকু পরে আছে সেগুলো রিক ছোবেও না বলে প্রতিজ্ঞা করেছে। রিক চেয়েছিলো আপাদত একটা ফ্লাট ভারা নিয়ে থাকবে পরে একটু গুছিয়ে বাড়ি কিনবে কিন্তু আদ্রিয়ান মানেনি জোর করেই এই বাড়িতে নিয়ে এসছে ওদের। স্নিগ্ধার যেহেতু হসপিটালের জন্যে এখানে থাকতে হয় তাই ওকেও এই বাড়িতেই রেখে দিয়েছে ওরা।

তবে বিপত্তি হলো এই এক সপ্তাহ ধরে অনিমার সাথে আদ্রিয়ান কোনো কথা বলেনি। তবে ওকে সময়মত খাইয়ে দেওয়া, মেডিসিন দেওয়া, যত্ন নেওয়া সব করে আদ্রিয়ান কিন্তু শুধু কথাটাই বলেনা। ওর অপরাধ ও কেনো বন্দুকের সামনে এসছিলো। অনিমা অনেকবার সরি বলার পরেও কাজ হয়নি। অনিমা ভাবছে এবার একটা প্লান করতে হবে যাতে বাবুসাহেবের রাগ ভাঙ্গে।

স্নিগ্ধা হসপিটাল থেকে এসে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে দেখে রিক ওর বেডে বসে বসে ফোন দেখছে। স্নিগ্ধা অবাক হয়ে বলল,

— ” তুমি এখানে? কী করছো?”

রিক ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়েই বলল,

— ” ব্রেকটাইমে তোর কেবিনে বসে যেই ছেলেটার সাথে আড্ডা দিচ্ছিলি। ছেলেটা কে ছিলো?”

স্নিগ্ধা ভ্রু কুচকে বলল,

— ” সেটা জেনে তুমি কী করবে? তুমি এসব কেনো জিজ্ঞেস করছো?”

রিক এবার রেগে আছাড় মারলো। স্নিগ্ধা ভয়ে কেঁপে উঠলো। রিক স্নিগ্ধার বাহু ধরে চেঁচিয়ে বলল,

— ” আমার কী সেটা তোর না জানলেও চলবে কিন্তু নেক্সট টাইম যদি কোনো ছেলের সাথে এতো ঢলাঢলি করতে দেখি তো। ঠ্যাং ভেঙ্গে ঘরে বসিয়ে রাখব।”

বলে স্নিগ্ধাকে ধাক্কা দিতেই ওর পা গিয়ে সোজা কাঁচের একটা টুকরোর ওপর পরল। স্নিগ্ধা আহ করে পা ধরে বসে পরল। রিক চলৈ যেতে নিচ্ছিলো স্নিগ্ধার আওয়াজে পেছনে তাকিয়ে এই অবস্থা দেখে দৌড়ে স্নিগ্ধার কাছে বসে ওর পা ধরে এগিয়ে এনে দেখলো কাঁচ ঢুকে গেছে। রিক করুণ চোখে একবার স্নিগ্ধার দিকে তাকালো স্নিগ্ধা রিকের দিকে তাকিয়ে আছে একদৃষ্টিতে। রিক কাঁচটা ধরে একটানে বের করলো কারণ ধীরে ধীরে করলে ব্যাথা বেশি পাবে। স্নিগ্ধা জোরে চেঁচিয়ে উঠে রিকের শার্ট খামচে ধরলো। রিক কাঁপা গলায় বলল,

— ” সরি। আসলে বুঝতে পারিনি আমি। খুব বেশি ব্যাথা করছে?”

স্নিগ্ধা কিছু বললনা শুধু মাথা নাড়ল। রিক ওকে কোলে নিয়ে বেডে বসিয়ে দিলো তারপর ফার্স্ট এইড বক্স এনে ওর পায়ে ঔষধ লাগিয়ে ব্যান্ডেজ করা শুরু করলো। স্নিগ্ধা শুধু একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রিকের দিকে। ওর চোখ দিয়ে খুশির একফোটা জল গড়িয়ে পরল কারণ আজ ও রিকের চোখে সেই অনুভূতি দেখেছে যা আগে কখোনো দেখেনি।

#চলবে..

বর্ষণের সেই রাতে ❤ পর্ব- ৫৬

0

বর্ষণের সেই রাতে ❤
পর্ব- ৫৬
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

.
কবির শেখ হকচকিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন,

— ” এসবের মানে কী হ্যাঁ?”

আদ্রিয়ানও মুচকি হেসে উঠে দাঁড়িয়ে অবাক হওয়ার ভান করে বলল,

— ” সে কী মামা? আপনি ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়ন হয়েও চেকমেট মানে জানেননা? কাম অন। তবুও যখন আপনি বুঝতে পারছেন না তখন বলেই দিচ্ছি। চেকমেট মানে হলো আপনার খেলা শেষ আর সাথে আপনার সমস্ত প্লান ও শেষ।

আদ্রিয়ানের কথা শুনে কবির শেখ বেশ ভালোই বুঝতে পারছেন যে ওনার বিরুদ্ধে কোনো না কোনো প্রুভ আদ্রিয়ান পুলিশের কাছে দিয়েছে তাইতো পুলিশ ওনাকে ঘিরে ধরেছেন। এসব ভেবে উনি রেগে আদ্রিয়ানের একদম কাছে গিয়ে ধীর কন্ঠে আস্তে আস্তে বললেন,

— ” আদ্রিয়ান? আমাকে এখনো পর্যন্ত চেনোনা তুমি। এদের আমায় যেতে দিতে বলো। এটা ভুলে যেওনা যে তোমার প্রাণভোমরা টা আমাদের হাতেই আছে। এখানে আমার সাথে কিছু হলে অনিমার সাথে কী হবে সেটা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছো?”

আদ্রিয়ান হাত ভাজ করে ভ্রু কুচকে তাকালো কবির শেখ এর দিকে। হঠাৎ করেই ওখানে রঞ্জিত চৌধুরী এসে বলল,

— ” কী ব্যাপার অফিসার। এখানে এভাবে আসার মানে কী?”

অফিসার একবার কবির শেখ আর একবার মিস্টার রঞ্জিতের দিকে তাকিয়ে শক্ত কন্ঠে বললেন,

— ” মিস্টার চৌধুরী এন্ড মিস্টার শেখ। ইউ বোথ আর আন্ডার অ‍্যারেস্ট।”

কবির শেখ একটু চেচিয়ে বলল,

— ” হোয়াট?”

মিস্টার রঞ্জিত ও অবাক হয়ে গেলেন। অফিসারের দিকে তাকিয়ে বললেন,

— ” ওয়েট অফিসার, আপনারা এখানে এসে হুট করে আমাদের হ্যারাস করতে পারেন না। আপনাদের সকলের জব শেষ করে দেবো আমি। আপনারা জানেন না আপনারা কাকে অ‍্যারেস্ট করতে এসছেন?”

অফিসার মিস্টার রঞ্জিতের দিকে তাকিয়ে বললেন,

— ” আমাদের কিছু করার নেই স্যার উপযুক্ত প্রমাণ থাকলে আমাদের অ‍্যারেস্ট করতেই হয়।”

মিস্টার রঞ্জিত একটু ঘাবড়ানো কন্ঠে বলল,

— ” ক্ কী প্রমাণ আছে আপনাদের কাছে?”

আদ্রিয়ান এতোক্ষণ চুপচাপ এনাদের কথা শুনছিলো এবার মুচকি হাসি দিয়ে বলল,

— ” আরে সবকিছুই জানতে পারেন একটুতো অপেক্ষা করুন।”

মিস্টার রঞ্জিত এবার খুব ভালোভাবেই বুঝতে পারলো যে বড়সর কোনো ব্যালান্ডার হয়ে গেছে। পুলিশ এসে ওনাদের ঘিরে ধরার সাহস এমনি এমনি করেনি। তাই এবার মুক্ষম চালটা চালতে হবে। তাই উনি ওনার ফোন থেকে কাউকে মেসেজ করতেই। রিক এলো ভেতরে তবে একা নয় সাথে অনিমাও আছে। রিক অনিমার গলায় ছুড়ি ধরে আছে। রিক অনিমাকে ধরে এনে বলল,

— ” ওদের সবাইকে সরতে বলো আদ্রিয়ান নইলে অনিমার গলা কাটতে আমার দু মিনিট লাগবেনা।”

আদ্রিয়ান একবার রিক আর একবার অনিমার দিকে তাকিয়ে বলল,
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
— ” রিক ওকে ছেড়ে দাও।”

রিক একটু হেসে বলল,

— ” ছাড়বোতো। আগে আমার বাবা আর মামাকে যেতে দাও।”

অনিমার মাথা নিচু করে কেঁদে যাচ্ছে। একটু নড়লেই ওর গলা কেটে যাবে। কবির শেখ আর রঞ্জিত চৌধুরী দুজনেই নিজেদের মধ্যে শয়তানী হাসি দিচ্ছেন। আদ্রিয়ান বিরক্তিকর দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,

—- ” কী করছো কী? তুমি জানোনা যে ওনারা কেমন? তবুও তুমি..”

রিক আদ্রিয়ানকে থামিয়ে দিয়ে বলল,

— ” হ্যাঁ তবুও কারণ ওরা আমার বাবা আর মামা। ওরা যেমনি হোক না কেনো আমি প্রটেক্ট করবোই। কী মামা এন্ড বাবা? এটাই তো ভাবছিলে তোমারা তাইনা?”

এটুকু বলে অনিমার গলা থেকে ছুড়িটা নামিয়ে নিলো। রিক ওনাদের দুজনের দিকেই তাকিয়ে বলল,

— ” এরকমি মনে হয়েছিলো তোমাদের আমাকে? তাইনা? সারাজীবন তোমারা আমাকে ইউস করে যাবে আর আমি বোকার মতো সবটা মেনে নেবো তাইতো? ”

আদ্রিয়ান বাঁকা হাসলো আর অনিমাও নিজের চোখ মুখে একটা শ্বাস নিলো। কবির শেখ অবাক হয়ে বললেন,

— ” বাবাই কী বলছো কী তুমি? আমা..”

কবির শেখকে কথাটা শেষ করতে না দিয়ে রিক চিৎকার করে বলল,

— ” শাট আপ। জাস্ট শাট আপ। বাবাই বলে ডেকোনা আমায় প্লিজ।”

মিস্টার রঞ্জিত রেগে বললেন,

— ” কী করছো কী তুমি রিক? ভুলে যেওনা যে আমি তোমার বাবা। নিজেরই বাবার সাথে এরকমটা করবে তুমি?”

রিক একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল,

— ” খারাপ লাগছে নাকি? আমারও লেগেছিল। এরচেয়েও বেশি খারাপ লেগেছিলো আর কষ্টও লেগেছিলো। বাই দা ওয়ে অফিসার অ‍্যারেস্ট দেম।”

অফিসার এগোতে আসলেই কবির শেখ রাগী কন্ঠে বললেন,

— ” দাঁড়ান। কীসের জন্যে এরেস্ট করছেন আপনারা আমাদের? আর তার কী প্রমাণ আছে আপনাদের কাছে?”

আদ্রিয়ান যেনো এই প্রশ্নটার জন্যেই অপেক্ষা করছিলো এতোক্ষণ যাবত। আদ্রিয়ান দরজার দিকে তাকিয়ে কাউকে ইশারা করতেই সাথেসাথে হুরমুর করে অনেক লোক ভেতরে ঢুকে গেলো। প্রত্যেকেই সাংবাদিক। ওনারা এসেই রঞ্জিত চৌধুরী আর কবির শেখকে ঘিরে ধরে নানারকম প্রশ্ন করতে লাগলেন। একজন সাংবাদিক রঞ্জিত চৌধুরীকে বললেন,

— ” স্যার সবাই আপনাকে এতোদিন একজন সৎ আর ভালো একজন জননেতা হিসেবেই জানতো। অথচ আজ আপনার যেই আসল চেহারা সারা দেশের সামনে এলো এটা নিয়ে আপনার কী মতামত?”

আরেকজন কবির শেখ কে উদ্দেশ্যে করে বললেন,

— ” স্যার আপনার স্মাগলিং এর বিজনেস সম্পর্কে আমরা যেটুকু তথ্য পেয়েছি তা কতোটা সত্যি?”

অন্য একজন বললেন,

—- ” আমরা এতোক্ষণ লাইভ যেই জিনিগুলো এবং কবিল শেখ এর স্বীকারোক্তি দেখলাম তারপর কী হাসান কোতয়াল এর মার্ডার নিয়ে আপনাদের কিছু বলার আছে?”

কবির শেখ আর মিস্টার রঞ্জিত কী বলবেন ওনারাতো হতভম্ব হয়ে বসে ভাবছেন যে ওনাদের সাথে ঠিক কী হচ্ছে। এরমধ্যে আদিব আশিস, অরুমিতা, তীব্র, স্নেহা, স্নিগ্ধা ওরা সবাই চলে এলো। আদ্রিয়ান পকেটে হাত ঢুকিয়ে ওনাদের সামনে দাঁড়িয়ে বললেন,

— ” কী কিছুই বুঝতে পারছেন না তাইতো?”

রিক ও একটু হেসে বলল,

— ” না বোঝারই কথা চলো ওনাদের একটু শুরু থেকেই এক্সপ্লেইন করা যাক। নইলে জেলে গিয়েও শান্তি পাবেনা বেচারারা রা।”

একটু থেকে রিক একটা লম্বা শ্বাস নিয়ে প্রেসের লোকেদের দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” আপনারাও সব ভালোকরে রেকর্ড করুন কারণ সব তো আপনাদেরও জানা উচিত তাইনা? সবটা রেকর্ড করুন।”

— “এটাই ভাবছো তো যে যেই ছেলেটা তোমাদের কথায় উঠতো বসতো তোমারা যা বোঝাতে তাই বুঝতো তাহলে হঠাৎ আজ কী হলো যে পাল্টি মেরে পুরো পুলিশের হাতে তুলে দিলো? তোমাদের আসল রুপটা তো আমি সুইডেনেই দেখে নিয়েছিলাম। মিস্টার রঞ্জিত চৌধুরীর পথের কাটা যদি তার নিজের ছেলে হয় তাহলে সেই কাটা উপড়ে ফেলতেও সে দুবার ভাব্বেনা তাইনা ড্যাড? ”

মিস্টার রঞ্জিত চৌধুরী অবাক হয়ে গেলেন। রিক একটা হাসি দিয়ে বলল,

— ” কী ভাবছো? আমি কীকরে জানলাম তাইতো? কারণ তোমারা যখন এসব কথা বলছিলে তখন আমি সুইডেনে বসে সেটার লাইভ শো দেখছিলাম। আর সেই কথা শুনে আমার প্রাণপ্রিয় মামার মুখের হাসিটাও দেখেছিলাম। এন্ড অল থ্যাংকস টু আদ্রিয়ান। ও না থাকলে আমি জানতেই পারতাম না আমার বাবা আর মামা আমায় এতোটা ভালোবাসে।”

আদ্রিয়ান নিচের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস নিলো আর সেদিনের কথা ভাবতে লাগল

____________________

আদ্রিয়ান ল্যাপটপ টা বের করে খুলে একটা সিডি ইনপুট করে ওটা চালু করে রিকের সামনে ধরলো। এতে রঞ্জিত চৌধুরী আর কবির শেখ বলা কথাগুলো দেখালো। রিক কিছু না বলে দুহাতে মুখ চেপে ধরল। আদ্রিয়ানও কিছু না বলে চুপ করে রইলো। কিছুক্ষণ পর দেখলো রিক হালকা কেঁপে কেঁপে উঠছে। আদ্রিয়ান রিকের কাধে হাত রেখে বলল,

— ” নিজেকে শক্ত করো। আমি জানি তোমার ভেতর দিয়ে কী যাচ্ছে বাট এটা ভেঙ্গে পরার সময় নয়।”

রিক একটা লম্বা শ্বাস টেনে সোজা হয়ে বসে বলল,

— ” আমায় কী করতে হবে?”

আদ্রিয়ান স্বাভাবিক ভাবেই বলল,

— ” একটু নাটক।”

রিক ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলল,

— ” মানে?”

আদ্রিয়ান উঠে দাঁড়িয়ে বলল,

— ” দেখো আমাদের কাছে যেটুকু প্রমাণ আছে তা যথেষ্ট নয়। সবচেয়ে বড় প্রমাণ হবে ওনাদের মুখের স্বীকারক্তি। আর সেটা তোমাকেই করাতে হবে।”

রিক ও উঠে দাঁড়িয়ে বলল,

— ” প্লানটা কী?”

— ” তোমাকে ওনাদের সামনে এমন বিহেভ করতে হবে যে তুমি ওনাদের সাথেই আছো। আর কথায় কথায় নিজেদের দোষ ওনারা স্বীকার করবেই আর তোমাকেও সেই কথাটাই রেকর্ড করতে হবে প্রমাণ হিসেবে। আর বাকিটা আমি বলে দেবো।”

রিক কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,

— ” আমাকে একটু ভাবতে দাও।”

বলে বেডে বসে দুহাতে আবার মুখ চেপে ধরল। আদ্রিয়ানও ওর পাশে বসে বলল,

— ” ওকে টেইক ইউর টাইম।”

_________________________

কবির শেখ আর মিস্টার রঞ্জিত তো অবাকের শেষ পর্যায়। আদ্রিয়ান বলল,

—- ” এরপরের দিনই রিক আমার কাছে এসে বলল যে ও রাজি এসব করতে কারণ যতই আপন হোক না কেনো এরকম মানুষদের শাস্তি পাওয়টা খুব জরুরী। আর এরপরে যা হয়েছে তা আপনাদের প্লান অনুযায়ী নয় আমাদের প্লান অনুযায়ী হয়েছে। আপনারা আমাদের নাচাচ্ছিলেন না বরং আমরা আপনাদের নাচাচ্ছিলাম। ”

কবির শেখ অবাক হয়ে বললেন,

— ” তারমানে সুইডেন থেকে এসে রিক সবকিছুই নাটক করছিলো?”

আদ্রিয়ান হেসে দিয়ে বলল,

— ” দাঁড়ান দাঁড়ান। আগেতো কিছু ঝলক আপনাদের দেখিয়ে নেই। লাইক ঝালাক দিক লাজা।”

বলে আদ্রিয়ান একটা অডিও সমস্ত মিডিয়া আর সমস্ত পুলিশ দের সামনে প্লে করলো।

( — ” ও তারমানে জার্নালিস্ট মিতাকে তোমরাই খুন করেছো?”

— ” আরে হ্যাঁ। ঐ মেয়েটা আমাদের গোডাউনের স্মাগলিং এর ছবি তুলেছিলো কাউকে যাতে দিতে না পারে সেইজন্যেই তো ওখান থেকে পালানোর আগেই আমাদের লোক দিয়ে খুন করিয়েছিলাম।”

— ” শুনেছিলাম ওনাকে নাকি রেইপ ও করা হয়েছিল।”

— ” হ্যাঁ ঐ জোয়ান ছেলেপেলে তো তাই..”

— ” হুমম। তারমানে সেটাও তোমাদের লোকই করেছে?”

— ” হুমম হঠাৎ এগুলো জ্ঞিজ্ঞেস করছো?”)

অডিও শুনে কবির শেখ আর রঞ্জিত চৌধুরী দুজনেরই ঘাম বেরোতে শুরু করলো। সেটা দেখে রিক হেসে দিয়ে বলল,

— ” এটুকু দেখেই ঘাবড়ালে হবে? ঝটকা খাওয়া এখনো তো অনেক বাকি। আদ্রিয়ান..”

আদ্রিয়ান ইশারা করতেই কিছু লোক আতাউর কে ধরে নিয়ে এলো। আতাউর কে দেখেই চমকে গেলো ওনারা দুজন। আতাউরকে জিজ্ঞাসা করতেই সব সত্যিটা বলে দিলো মিডিয়ার সামনে। রঞ্জিত চৌধুরী অবাক হয়ে বললেন,

— ” ক্ কিন্তু ওর খবর তোমরা কীকরে…”

রিক বাঁকা হেসে বলল,

— ” মনে আছে ড্যাড আমি তোমাদের জিজ্ঞেস করেছিলাম যে কে ইনফরমেশন দিতো তোমাদের?”

— ” হ্যাঁ সেটা তো সাবধান করতে তাইনা?”

রিক এবার শব্দ করে হেসে দিয়ে বলল,

— ” কাম অন ড্যাড? এখনো বোঝোনি? আসলে আমি খবর দিচ্ছিলাম না নিচ্ছিলাম যে এক্সাক্টলি কাজটা কে করেছে।”

ওনারা কিছু ফলফেন সেই ভাষাটাই নেই। সাংবাদিকরা সব কিছুই ভিডিও করছে আর লাইভ দেখানো হচ্ছে সব চ্যানেলে। এবার আদ্রিয়ান মিতার পাঠানো সেই স্মাগলিং এর ছবি আর সেই আর্টিকেলের খন্ডাংশ ও পুলিশের হাতে দিলো। সেটা দেখে কবির শেখ চমকে গিয়ে বললেন,

—- ” এটা কীকরে সম্ভব? এগুলোতো আমরা নিজের হাতেই পুরিয়েছি। রিক তো নিজেই আমাদের হাতে দিয়েছিলো এগুলো।”

আদ্রিয়ান কবির শেখের কথা শুনে একটু হেসে বলল,

— ” আরে মামা এতো ব্যাকডেটেড হলে হবে? কপি আর প্রিন্ট বলেও যে একটা ব্যাপার থাকে সেটা ভুলে যাচ্ছেন?”

বলেই আদ্রিয়ান আর রিক দুজনে হাইভাইব করলো। অনিমা হাত ভাজ করে মিটমিটিয়ে হাসছে। বাকি সকলের মুখেই হাসি। কবির শেখ চোখ বন্ধ করে একটা আপসোস এর শ্বাস নিলেন। রিক এবার একটু সিরিয়াস হয়ে কবির শেখ এর দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” বলেছিলাম না মামা আমি তোমার শিক্ষায় বড় হয়েছি, আর আমার শরীরে কবির শেখ এর রক্ত বইছে? আর সেই কারণেই পেছন থেকে ছুড়ি মারা আর কাছের মানুষদেরকে আঘাত করা দুটোই খুব ভালোভাবে শিখেছি। তাই তো সেটা তোমাদের ওপরেই এপ্লাই করলাম।”

কবির শেখ রেগে বললেন,

— ” বিশ্বাসঘাতক একটা।”

রিক একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল,

— ” ছোটবেলা থেকে নিজের বাবা মার থেকেও বেশি ভালোবাসতাম আমি তোমাকে। তোমার সব কথা শুনতাম। ঠিক ভুল বিচারও করিনি। কিন্তু তোমরা কী করেছো আমাকে শুধু ইউস করেছো নিজেদের স্বার্থে না তুমি কোনোদিন আমাকে ভালোবেসেছো আর না মুল্য দিয়েছো।”

কবির শেখ চোখ সরিয়ে নিলেন। রিক মিস্টার রঞ্জিত এর দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” আর আমার বাবা? তার কথা আর নাই বা বললাম। প্রয়োজনে আমাকে দুনিয়া থেকে সরাতেও তো সে দুবার ভাববে না।”

মিস্টার রঞ্জিত ও কিছু না বলে চুপ করে আছেন, মিডিয়ার সামনে তো আজ ওনার সব শেষ হয়েই গেছে কিছু বলা আর না বলা সমান। আদ্রিয়ান একটু গলা ঝেড়ে বলল,

— ” আর হ্যাঁ হাসান আঙ্কেল মানে অনিমার বাবাকে কীভাবে মেরেছেন কেনো মেরেছেন তার স্বীকারোক্তি লাইভ শো পুরো দেশ দেখেছে।”

মিস্টার রঞ্জিত হকচকিয়ে বললেন,

— ” মানে? কীভাবে? কীসব হচ্ছে এখানে?”

আদ্রিয়ান অনিমার দিকে তাকাতেই অনিমা ওর লং শার্টের বোতাম থেকে একটা ছোট্ট ক্যামেরা বের করে বলল,

— ” ঠিক এইভাবে।”

মিস্টার রঞ্জিত রাগে দাঁত করমর করে বললেন,

— ” তারমানে তখন তোমার ভয় পাওয়া কান্না করা পুরোটাই নাটক ছিলো?”

অনিমা একটু হেসে বলল,

— ” কেনো? আপনি করেন নি নাটক সাত বছর আগে? পুলিশ মিডিয়ার সামনে? আমিতো জাস্ট নাটকটা ফেরত দিলাম মাত্র।”

আদ্রিয়ান এবার মিস্টার রঞ্জিতের দিকে তাকিয়ে বললেন,

— ” তবে আপনি আপনার যেই শালক মহাশয়ের ওপর এতো ভরসা করেন। সেই আপনার পিঠে ছুড়ি মারার অপেক্ষায় ছিলো সেটাকি জানেন?”

কবির শেখ হকচকিয়ে গেলেন। মিস্টার রঞ্জিত অবাক হয়ে বললেন,

— ” মানে?”

আদ্রিয়ান কবির শেখ এর দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” ওনার প্লান ছিলো আপনারি হাতে আপনার ছেলেকে মারিয়ে আপনাকে ফাঁসিয়ে দিয়ে পার্টিতে আর আপনার সম্পত্তিতে দখল নেওয়া। এন্ড আমি মিথ্যে বলছিনা। জিজ্রঝেস করুন।”

কবির শেখ চেচিয়ে বললেন,

— হ্যাঁ হ্যাঁ আমি এটাই চেয়েছিলাম আমার এতোদিনের পরিশ্রমের একটাই উদ্দেশ্য ছিলো এই সব সম্পত্তি আর পার্টিতে নিজের অধিকার করা কিন্তু সব ভেস্তে গেলো। তবে ছাড়বোনা কাউকে কিছুতেই না। আমার দুই ভাগ্নে মিলেই আমায় শেষ করলো তো? আজ আমি ওদেরই শেষ করবো।”

দুই ভাগ্নে শুনে রিক বেশ অবাক হলো। কবির শেখ চেঁচিয়ে বললেন,

— ” ওর জন্যেই সব শুরু হয়েছে আগে ওকেই শেষ করবো।”

বলে কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই পেছন থেকে বন্দুক বের করে আদ্রিয়ান এর দিকে শুট করলো। মুহুর্তেই পরিবেশ স্তব্ধ হয়ে গেলো। ব্যাপারটা এতো দ্রুত ঘটলো যে কেউ কিছু বুঝেই উঠতে পারলো না। কিন্তু গুলিটা আদ্রিয়ানের গায়ে লাগেনি লেগেছে অনিমার গায়ে। কারণ অনিমা সাথে সাথেই আদ্রিয়ানকে ধাক্কা দিয়ে সরাতে গেছিলো আদ্রিয়ান বেঁচে গেলেও ওর গায়ে গুলি লেগে যায়। কবির শেখ আবার শুট করার আগেই রিক ওনার হাতে শুট করে দেয় আর বন্দুকটা পরে যায়। ওর ইচ্ছে করছিলো মাথায় করতে কিন্তু এত সহজ মৃত্যু ওনার পাওনা নয়। এরকম কিছু হবে উপস্হিত কেউ ভাবতেই পারেনি। অনিমা ঢলে পরতেই আদ্রিয়ান ওকে ধরে বসে পরলো। আদ্রিয়ান কিছু বলবে সেই শক্তিও পাচ্ছেনা হতভম্ভ হয়ে তাকিয়ে আছে অনিমার দিকে অনিমা কিছু বলতে চেয়েও পারলোনা শুধু চোখ দিয়ে একফোটা জল গড়িয়ে পরল আর আস্তে আস্তে হারিয়ে ফেলল।

#চলবে…

বর্ষণের সেই রাতে ❤ পর্ব- ৫৫

0

বর্ষণের সেই রাতে ❤
পর্ব- ৫৫
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

.
চোখ তীব্র আলো এসে পরায়
আস্তে আস্তে চোখ খুলে তাকালো অনিমা। ভালোভাবে তাকানোর পর নড়তে গিয়েই বুঝতে পারল যে অনিমার হাত চেয়ালের সাথে বাধা, আর এটাও বুঝতে পারলো যে ওর মুখও বাধা।ভালোকরে তাকিয়ে দেখলো যে ওর সামনে মিস্টার রঞ্জিত চৌধুরী দাঁড়িয়ে আছেন ওনার মুখে শয়তানী হাসি, যেই হাসি অনিমা আগেও দেখেছে। মিস্টার রঞ্জিত চৌধুরী অনিমার সামনের একটা চেয়ারে বসল। অনিমা ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে ওনার দিকে। রঞ্জিত চৌধুরী অনিমার সামনের একটা চেয়ারে বসে বলল,

— ” কেমন আছো মা। কতোদিন পর দেখা হলো আমাদের তাইনা? লাস্ট আমাদের কবে দেখা হয়েছে মনে আছে তোমার?”

অনিমার চোখের সামনে সেই রাতের প্রতিটা দৃশ্য ভেসে উঠলো। ওর বাবার সেই ঝুলন্ত লাশ, ওকে তুলে নিয়ে যাওয়া সব কিছুই। আর এসব মনে পরতেই ওদের চোখ দিয়ে এক ফোটা জল গড়িয়ে পরল। সেটা দেখে রঞ্জিত চৌধুরী হেসে দিলেন। তারপর বললেন,

— ” যাক মনে পরেছে তাহলে? ও তোমার মুখ তো বাধা উত্তর দেবে কীকরে? তাইনা? দাঁড়াও।”

বলে অনিমার মুখের কাপড়টা নামিয়ে দিলো। অনিমা চোখ নামিয়ে নিলো। অনিমাকে চুপ থাকতে দেখে রঞ্জিত চৌধুরী বললেন,

— ” তুমি ঠিক সেই ভুলটাই করলে যেই ভুলটা তোমার বাবা করেছিলো। আচ্ছা এই বাপ বেটি মিলে আমার পেছনেই কেনো পরলে বলোতো?”

অনিমা ওনার দিকে ঘৃণার দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,

— ” কারণ আপনার মতো শকুনদের নজর দেশের কিছু অসহায় মানুষদের ওপর থাকে। তাই আমার আব্বুর মতো কিছু সৎ মানুষদের অাপনার পেছনে পরে থাকতেই হয়।”

অনিমার কথায় মিস্টার রঞ্জিত চৌধুরী হসতে হাসতে বলল,

— ” একদম বাবার মতো হয়েছো দেখছি। তা কালকে আমাকে এক্সপোস করতে চাইছিলে নাকি?”

অনিমা শক্ত চোখে রঞ্জিত চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” সবটাই তো জানেন আর জানেন বলেই তো আমি এখন এখানে আছি তাইনা? তাহলে এসব ফালতু নাটকের মানে কী?”

মিস্টার রঞ্জিত অবাক হয়ে অনিমার দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” বাহ গলায় জোর খুব বেড়ে গেছে দেখছি। সাত বছর আগে এই বাচ্চা মেয়েটাই আমার একটা ধমকে ভেজা বেড়ালের মতো চুপসে গেছিলো ভাবা যায়?”

অনিমা কিছু না বলে চুপ করে রইলো। মিস্টার রঞ্জিত বললেন,

— ” এবার চুপচাপ বলে দাও যে আর্টিকেল টা কোথায় রেখেছো?”

এটা শুনে অনিমা রঞ্জিত চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল,

— ” একটু আগে বললেন না যে আমি আমার বাবার মতো হয়েছি। ভাবলেন কীকরে? হাসান কোতয়ালের মেয়ে হয়েও আমি নিজের প্রাণের ভয়ে আপনাকে আর্টিকেলটা কোথায় আছে বলে দেবো?”

মিস্টার রঞ্জিত এবার খানিকটা চিন্তায় পরে যাওয়ার ভান করে বলল,

— ” হুমম খুব চিন্তার বিষয় তাইনা? নিজের প্রাণের কথা না হয় না ভাবলে। কিন্তু আদ্রিয়ান? ওর প্রাণের কথাও ভাববে না? ”

অনিমা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো, রঞ্জিত চ‍ৌধুরী অনিমার সামনেও আদ্রিয়ান ওদের কাছে বন্দি আছে সেই ভিডিওটা প্লে করলো। ভিডিওটা দেখে পুরো হ্যাং হয়ে গেলো।

______________________

আদ্রিয়ান একটা চেয়ারে বসে আছে তবে বাধা নেই কারণ আদ্রিয়ানকে আর যাই হোক বেধে রাখা যায়না সেটা সবাই জানে। কবির শেখ ওর বরাবর বসে আছে আর মাঝখানে আছে একটা টেবিল। কবির শেখ আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” কী? কেমন লাগল আমার চাল?”

আদ্রিয়ান একটা হাই তুলে বলল,

— ” বোরিং। সেই পুরোনো স্ট্রাটেজি। নতুন কিছু ট্রায় করলে ভালো লাগত আরকি।”

কবির শেখ রেগে বললেন,

— ” আচ্ছা এতো কনফিডেন্স? দাবাতে ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়ন আমি। তোমার কী মনে হয় স্ট্রাটেজি তোমার কাছে শিখব আমি?”

আদ্রিয়ান মুচকি হেসে বলল,

— ” ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়ন নট ওয়ার্ল্ড সো এতো প্রাউড করার কিচ্ছু নেই।”

কবির শেখ ভ্রু উচু করে বললেন,

— ” আচ্ছা? তাই নাকি? এমনভাবে বলছো যে তুমি খুব এক্সপার্ট? তাহলে তো একটা দান খেলতেই হয় কী বলো? দেখি কতো ক্ষমতা তোমার হ্যাঁ যদি জিতে যাও তো আমি নিজে পুলিশের কাছে স্যারেন্ডার করবো।”

আদ্রিয়ান হেসে বলল,

— ” আপনি নিজেও জানেন আপনি তা করবেন না। তবুও যখন আপনি খেলতে চাইছেন তো চুলুন খেলা যাক।”

কবির শেখ ইশারা করতেই দাবার কোট আনা হলো। আদ্রিয়ান ব্লাক নিলো আর কবির শেখ হোয়াইট । ব্লাক আদ্রিয়ানের ফেবরেট তাই ওটাই নিয়েছে। আরেকটা কারণ হলো ব্লাক আগে আ‍্যাটাক করেনা ডিফেন্স দিয়ে শুরু করে আর পারলে কাউন্টার অ‍্যাটাক করে সেটাই ওর ভালোলাগে। কবির শেখ নিজের প্রথম চাল হোয়াইট পর্ন টাকে E4 কোটে চাললেন। আদ্রিয়ানও নিজের ব্লাক পর্নটাকে E5 কোটে চালল। কবির শেখ নিজে নাইটটাকে F6 কোটে চাললেন। আদ্রিয়ান ও কিছু চিন্তা না করে সাথে সাথে ওর নাইটটাকে C6 এ চেলে দিলো। কবির শেখ একটু ভেবে নিজের বিষপকে C4 এ চালল। আদ্রিয়ানও স্বাভাবিক ভাবেই নিজের নাইট টাকে F6 এ দিয়ে দিলো। কবির শেখ কিছু একটা ভেবে নিজের এগিয়ে আনা নাইট টাকে C5 কোটে চাললেন। চালটা চেলেই কবির শেখ এর মুখে বিজয়ের হাসি ফুটে উঠলো কারণ পরের চালটাতে ওনার নাইট টা সোজা আদ্রিয়ানের এরিয়ার F7 পর্ন কে ক্যাপচার করবে আর একিই সাথে কুইন আর রুফ দুটোকেই একসাথে অ্যাটাক করবে এতে আদ্রিয়ানের কুইন বা রুফ এর মধ্যে কোনো একটা গুটি যাবেই আর বিশাল লস হবে কারণ দুটো গুটিই ইম্পর্টেন্ট। আর কবির শেখ এর নাইট টাকেও আটকানোর কোনো উপায় নেই কারণ কবির শেখ তার বিষপ দিয়ে নাইটটাকে প্রকেক্ট দিয়ে রেখেছে। আদ্রিয়ান কিছু চিন্তা না করেই সোজা ওর বিষপ C5 কোটে চালল। কবির শেখ অবাক হয়ে আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে শব্দ করেই হেসে দিলেন। হাসতে হাসতে বললেন,

— ” এই স্কিল নিয়ে আমার সাথে দাবা খেলতে বসেছো? এটা দিয়ে কী হলো? ”
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন

আদ্রিয়ান ওনার দিকে তাকিয়েই একটু হেসে বলল,

— ” চাল চালুন।”

কবির শেখ ওনার নাইট আদ্রিয়ানে F7 কোটের পর্ণটাকে ক্যাপচার করলেন। এবার নিশ্চিত ভাবেই আদ্রিয়ান নিজের কুইন বা রুফ এর মধ্যে কোনো একটা গুটি হারাবে। আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে থুতনিতে হাত রেখে কোটের দিকে তাকালো আর কবির শেখের মুখে বিজয়ের বাঁকা হাসি ফুটে উঠল। আদ্রিয়ান ওর এগিয়ে রাখা বিষপটাকে কবির শেখের F2 কোট এর পর্ণ টাকে ক্যাপচার করল এবং তার ফলে কিং এর ওপর চেক পরল। কবির শেখ একটু ভাবনায় পরলেও কিছুক্ষণ ভেবে তারপর বাঁকা হাসি দিয়ে বললেন,

— ” সত্যিই তুমি খুব বোকা আদ্রিয়ান।”

কবির শেখ এর এই কথা বলার কারণ উনি ওনার কিং দিয়ে পর্নটাকে ক্যাপচার করতেই পারবেন আর তারপরের চালে আদ্রিয়ানের কুইন বা রুফ এর মধ্যে একটাতো যাবেই। আদ্রিয়ান কিছু না বলে চুপ করে রইলো আর প্লান অনুযায়ী। কবির শেখ ওনার কিং দিয়ে F2 কোর্টের পর্ন টা ক্যাপচার করে বললেন,

— ” আমার চালগুলো এরকমি হয় আদ্রিয়ান। শত্রু যখনি ভাবে যে সে আমায় কিস্তিমাত করে দেবে আমি ঠিক এইভাবেই সেই ভাবনাকে উপরে ফেলি। যেমন আজ ফেলেছি ”

আদ্রিয়ান কিছু বললনা শুধু ওর বাম পাশের নাইটটাকে E4 এ দিলো আর আবারো কিং এর ওপর চেক পরল। আদ্রিয়ান কবির শেখ এর দিকে তাকিয়ে বললেন,

— ” ভাবনা উপরে ফেলতে গেলে ভাবনাটা আগে বুঝতে হয় মামা। আর আমার ভাবনা বোঝাটা এতোটাই সহজ নয়।”

কবির শেখ একটু চিন্তায় পরলেন কখন আদ্রিয়ানের রুফ আর কুইনকে অ‍্যাটাক করে বসে আছে কিন্তু আদ্রিয়ান ক্যাপচার করার সময়টাই দিচ্ছে না ওনাকে। পরপর দুটো চেইক দিয়ে এদিক ব্যাস্ত রাখছে ওনাকে।

_____________________

অনিমা অবাক হয়ে কিছুক্ষণ ভিডিওটার দিকে তাকিয়ে কান্নাভেজা চোখে মিস্টার রঞ্জিতের দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” ওনাকে কেনো আটকে রেখেছেন আপনারা? প্লিজ ওনাকে ছেড়ে দিন।”

মিস্টার রঞ্জিত একটা শয়তানী হাসি দিয়ে বলল,

— ” কী আর করবো বলো? দোষটাতো তোমার! তুমিতো উল্টৌপাল্টা কাজ করো সবসময়। তুমি আমাদেরকে বলো আর্টিকেলটা কোথায় আছে নইলে আদ্রিয়ানের শেষ দিন আজকেই হবে।”

অনিমা কিছু না ভেবেই রঞ্জিত চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলল,

— ” আপনি যা বলবেন আমি করবো কিন্তু প্লিজ ওনার কোনো ক্ষতি করবেন না। প্লিজ।”

রঞ্জিত চৌধুরী শয়তানী হাসি দিয়ে বলল,

— ” ঠিক আছে তাহলে বলো তোমার আর্টিকেলটা কোথায় আছে?”

অনিমা কান্না থামিয়ে নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,

— ” আমার ল্যাপটপে আছে।”

রঞ্জিত চৌধুরী উঠে দাঁড়িয়ে বললেন,

—- ” হুমম ঠিকি ধরেছিলাম তাহলে? ”

মিস্টার রঞ্জিত অনিমার ব্যাগটা এনে ওখান থেকে ল্যাপটপ বের করে টেবিলে রেখে ওটা ওপেন করে বলল,

— ” পাসওয়ার্ড বলো?”

অনিমা চুপ করে আছে। মিস্টার রঞ্জিত রেগে গিয়ে বললেন,

— ” তুমি কী চাও আমি এখন সেই সাত বছর আগেল ঘটনার পুনরাবৃত্তি করি?”

অনিমা চোখ বন্ধ করে একটা শ্বাস নিয়ে তারপর পাসওয়ার্ড বলে দিলো আর ফাইলের নাম আর পাসওয়ার্ড টাও বলতে হলো। আপাদত এটা ছাড়া আর কিছুই করার নেই ওর।

_______________________

কিছুক্ষণ চিন্তা করার পর কবির শেখ তার কুইন F3 তে দিলো তাতে আদ্রিয়ানের নাইটটার ওপর অ‍্যাটাক হয়। এই চালটা দেখে আদ্রিয়ান বাঁকা হেসে ওর কুইন F6 এ দিলো। এতে ওর কুইনটা নাইট এর হাত থেকে বাঁচলো। কবির শেখ আবারো হাসলেন। আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বললেন,

— ” তুমি কী নতুন নতুন খেলা শিখেছো নাকি?”

আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকালো। কবির শেখ ওনার কিং দিয়ে আদ্রিয়ানের নাইটটাকে ক্যাপচার করলো আর হেসে বলল,

— ” এভাবেই আমি শত্রুর মেরুদন্ড ভাঙ্গী।”

আদ্রিয়ান উত্তর দিলোনা শুধু কিছক্ষণ ভেবে ওর একটা পর্ণ D5 কোটে চালল। কবির শেখ কোটের দিকে তাকিয়ে চিন্তা করে তার বিষপ কে D5 এ চেলে পর্ণটাকে ক্যাপচার করে ফেলল আর হেসে বলল,

— ” আর শত্রুর প্রত্যেক পরিকল্পনা এভাবেই ফ্লপ করি।”

আদ্রিয়ান থুতনিতে দুই হাত দিয়ে কিছুক্ষণ চিন্তা করে কুইন টু F4 এ চালল আর কিং কে চেক দিলো। কবির শেখ তার কিং D3 কোটে চালল। আদ্রিয়ান সঙ্গে সঙ্গেই ওর কুইন D4 কোটে দিয়ে কিংকে চেক দিয়ে দিলো। কবির শেখ চেক থেকে বাঁচে কুইন E2 তে চাললেন। আদ্রিয়ান একটু হেসে ওর কুইন দিয়ে কবির শেখ এর বিষপটাকে ক্যাপচার করে বলল,

— ” ধৈর্য্য ধরুন মামা। গেইম বাকি আছেতো এখনো।”

কবির শেখ একটু ভেবে এবার সোজা সেই নাইট দিয়ে প্রথম যেই অ্যাটাক টা করেছিলেন সেই অ্যাটাক প্লান অনুযায়ী আদ্রিয়ানের রুফ টাকেও ক্যাপচার করে শব্দ করে হাসতে লাগলেন। তারপর আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বললেন,

— ” বলেছিলাম না আমি যেইরাজ্যে হামলা করি সেই রাজ্য ধ্বংস করে দেই? দেখো ভালোকরে তোমার কাছে এখন কী আছে? নাইট, বিষপ, রুফ সব হারিয়ে একপ্রকার শেষ তুমি। অনিমার আর্টিকেলটা জিজু কে দিয়ে দিয়েছে। আর এখন শুধু বেঁচে আছে কিং আর কুইন। মানে তুমি আর অনিমা। আগে রিক অনিমাকে মারবে তারপর আমরা তোমাকে।”

বলে জোরে জোরে হাসতে লাগলো কবির শেখ আর আদ্রিয়ান গম্ভীর মুখ করে একদৃষ্টিতে কোটের দিকে তাকিয়ে আছে।

_______________________

রঞ্জিত চৌধুরী এক এক করে সব গুলো পেইজ ডিলিট করে দিয়ে অনিমার কাছে এসে ওর হাতের বাধন খুলতে খুলতে বলল,

— ” হুমম এবার সব শেষ। আমাকে এক্সপোস করার চিন্তাও আর প্রমাণও। আগেই বলেছিলাম আমার সাথে লেগোনা দেখলে কী হলো? এবার দেখো কী হয়।”

বলে অনিমাকে ধরে দাড় করাতেই অনিমা ঝাড়া দিয়ে হাত সরিয়ে নিয়ে বলল,

— ” আপনারা কী এটা ছাড়া কিচ্ছু পারেননা? আমার আব্বুকে আমার ক্ষতি করার ভয় দেখিয়ে থামানোর চেষ্টা করেছিলেন। আর আমাকে আদ্রিয়ানের প্রাণে মারার ভয় দেখিয়ে আমাকে থামানোর চেষ্টা করছেন। আবার নিজেদের ক্ষমতাবান বলে দাবী করেন? লজ্জা করেনা আপনাদের?”

মিস্টার রঞ্জিত ধমক দিয়ে বললেন,

— ” ওই একদম চুপ। হ্যাঁ তোমার বাবা আমার এগেইনস্টে একটা আর্টিকেল ছাপতে চেয়েছিলেন তাই প্রথমে ওনাকে টাকা অফার করেছি শোনেনি, প্রাণের ভয় দেখিয়েছি তবুও থামেনি, শেষে তোমার ক্ষতি করার ভয় দেখিয়েছি তাকে কিন্তু তোমার বাবা নাছোড়বান্দা ছিলেন তাই।”

অনিমা কাঁদতে কাঁদতে বলল,

— ” তাই আপনি আমার বাবাকে মেরে ফেললেন? আর সকলের সামনে এটাকে সুইসাইড বানিয়ে দিলেন তাইতো? ওই রিপোর্ট, পুলিশদের ইনকোয়ারি, জার্নালিস্ট দের আর্টিকেল সব ওদের টাকা খাইয়ে মিথ্যে বলে বানিয়েছেন রাইট?”

মিস্টার রঞ্জিত একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল,

— ” হ্যাঁ করেছি? তাতে কার কী? তুমি তখন চলে যাওয়ার পর আমরা এসে তোমার বাবাকে তোমারি বাবার রুমে নিয়ে গিয়ে ফাস দিয়ে খুন করেছি, ঐ একা একটা মানুষকে সামলাতে আমাদের বারোটা বেজে যাচ্ছিলো, কী গায়ের জোর রে বাবা। অনেক কষ্টে অনেকে মিলে কাবু করতে হয়ে। খুব ছটফট করছিলো। শেষে শুধু একটা কথাই বলেছিলো ‘ আমার মেয়েটাকে কিছু করোনা ও কিচ্ছু করেনি, দয়া করে ওর কোনো ক্ষতি করোনা।’ হাহ যত্তসব।”

অনিমার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পরছে এসব শুনে কতোটা কষ্ট দিয়ে মেরেছে ওরা ওর আব্বুকে। আর ও কিচ্ছু করতে পারেনি, কিচ্ছু না। আর মরার আগেও শুধু ওর কথাই চিন্তা করেছে। এসব কথা ভাবতে ভাবতে মিস্টার বললেন,

— ” এবার তুমিও মরবে একিই ভাবে। তবে তোমাকে আমি মারবোনা আমার ছেলে মারবে।”

অনিমা অবাক হয়ে তাকালো। মিস্টার রঞ্জিত হেসে বললেন,

— ”ওর খুব সখ আদ্রিয়ানের সামনে নিজের হাতে ও তোমাকে মারবে। আর তুমি মরলে তো আদ্রিয়ান এমনিতেই মরে যাবে, তোমার শোকে তাইনা ?”

হঠাৎ করেই রিক ওখানে এসে বলল,

— ” একদম তাই।”

অনিমা চমকে তাকিয়ে দেখলো রিক দাঁড়িয়ে আছে আর মুখে বাঁকা এক হাসি। অনিমা কান্নাজরিত চোখে একবার রিক আর একবার মিস্টার রঞ্জিতের দিকে তাকালো।

______________________

এদিকে আদ্রিয়ান বেশ গম্ভীরভাবে কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণ করার পর ওর ডান পাশের বিষপটাকে G4 কোটে চালল। ফলে আবারও চেক পরলো আদ্রিয়ানের। কবির শেখ হেসে বললেন,

— ” কী করছো আদ্রিয়ান বারবার চেক দিয়ে যাচ্ছো তো দিয়েই যাচ্ছো। কী হচ্ছে তাতে? আমিতো বলেছি আমি শত্রুর ভাবনা গুলোকেই গোড়া থেকে শেষ করে দেই আমার ভাবনা দিয়ে।”

আদ্রিয়ান এবারেও কিছু না বলে গম্ভীর মুখ করে বসে আছে আর গভীরভাবে ভাবছে। কবির শেখ ওনার কিং টাকে এককোট পিছিয়ে নিতেই আদ্রিয়ান একটা বাঁকা হাসি দিলো তারপর কবিল শেখ এর দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” ইউ নো হোয়াট মিস্টার শেখ ? আজ আপনার প্রত্যেকটা চাল আপনার বোকামীর পরিচয় ছিলো। আপনি আমার গুটিগুলো স্যাকরিফাইস করা দেখে ভাবছিলেন যে আমি খেলায় খুব কাঁচা আর এটা ভাবাই আপনার প্রথম ভুল ছিলো কারণ আমার গুটি স্যাকরিফাইস করা আমার অজ্ঞানতা ছিলো না আমার ট্রাপ ছিলো। আপনার দ্বিতীয় ভুল ছিলো এটাই যে অাপনি জিতে যাচ্ছেন বলে এতোটাই ওভার কনফিডেন্ট ছিলেন যে কিং এক কোট পেছানোর আগে এটা দেখেননি যে আমার এই ছোট্ট বিষপ টা আপনার কুইনকে ক্যাপচার করে ফেলবে। ”

বলেই ওর বিষপ দিয়ে কুইন টা ক্যাপচার করে ফেলল। কবির শেখ অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন আদ্রিয়ান একটা বাঁকা হাসি দিয়ে বলল,

— ” এই ভুলটা আপনি আজও করেছেন। নিজের বুদ্ধির ওপর এতোই ওভার কনফিডেন্ট ছিলেন যে আপনার প্লানটা যে পুরো ফ্লপ হতে পারে সেটা ভাবেনই নি। ভেবেছিলেন সবকিছু আপনার প্লান মাফিক হচ্ছে তাই চিল করা যাক? তাইতো? কিন্তু এটা ভাবেননি হার বাপকা এক বাপ হোতা হ্যা। আর আপনার ভাবনা দিয়ে আমার ভাবনাকে উপরে ফেলার তো কোনো চান্স ই নেই কারণ আপনার ভাবনা যেখানে শেখ হয় আমার ভাবনা শেখান থেকে শুরু হয়।”

কবির শেখ ভীত হয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বলল,

— ” ম্ মানে?”

আদ্রিয়ান একটু হেসে আলসেমি ঝেড়ে সোজা হয়ে বসতেই ঐ রুমে এ পুলিশ ফোর্স এসে সব লোকগুলোকে আটকে ফেলল আর কবির শেখ কেও ঘিরে ফেলল লোক গুলো। কবির শেখ অবাক হয়ে আদ্রিয়ানের দিকে তাকাতেই আদ্রিয়ান কোটের দিকে তাকিয়ে ওর কুইনটাকে সোজা কবির শেখ এর কিং এর বরাবর কোটে রেখে কবির শেখ এর দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিয়ে বলল,

— ” চেকমেইট মা…মা।”

#চলবে…

( রি-চেইক করা হয়নি তাই ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)

বর্ষণের সেই রাতে ❤ পর্ব- ৫৪

0

বর্ষণের সেই রাতে ❤
পর্ব- ৫৪
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

.
আদ্রিয়ান ওর রুমের সোফায় চুপচাপ বসে আছে। একটু আগে শাওয়ার নিয়ে এসছে। চুপচাপ বসে বসে গভীরভাবে কিছু একটভেবে চলেছে ও। অনিমা কফির মগ নিয়ে আদ্রিয়ানের রুমে এসে দেখে আদ্রিয়ান চুপচাপ সোফায় বসে কিছু একটা ভাবছে। অনিমা দরজায় টোকা মেরে বলল,

— ” আসবো?”

অনিমার ডাকে আদ্রিয়ান ভাবনা থেকে বেড়িয়ে দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে অনিমা দাঁড়িয়ে আছে। আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে অনিমার দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” আমার রুমে ঢুকতে তোমার পার্মিশন নেওয়ার কোনো দরকার নেই সেটা কতোবার বলতে হবে অনি?”

অনিমা ভেতরে ঢুকে মুচকি হাসি দিয়ে বলল,

— ” সরি আসলে অাপনি কিছু একটা ভাবছিলেন তাই আরকি..”

আদ্রিয়ান বিরক্ত হয়ে বলল,

— ” যাই হোক না কেনো আর কক্ষনো এমন করবেনা, আই ডোন্ট লাইক ইট।”

অনিম হালকা হেসে আদ্রিয়ানের পাশে বসতে বসতে বলল,

— ” আচ্ছা মিস্টার সরি বলেছিতো আর হবেনা।”

আদ্রিয়ান অনিমার দিকে তাকিয়ে নিজেও হেসে দিলো তারপর অনিমার হাত থেকে কফির মগটা নিয়ে ওকে একহাতে জরিয়ে নিয়ে বলল,

— ” হুমম সকাল সকাল বউয়ের সুইসসি হাতের সুইটসা কফি পেলে গোটা দিনটাই ভালো যায়।”

অনিমা একটা টেডিস্মাইল দিলো আদ্রিয়ানের কথায়, একটুপর কিছু একটা ভেবে বলল,

— ” আচ্ছা এতো গভীরভাবে কী ভাবছেন বলুন তো?”

আদ্রিয়ান অনিমার দিকে একপলক তাকিয়ে একটা শ্বাস ফেলে আবার সামনে তাকিয়ে বলল,

— ” রিক যেমনি হোক আর আগে যাই করে থাকুক না কেনো, এটা কিন্তু সত্যিই যে ও তোমাকে খুব ভালোবাসতো আর এখনো বাসে।”

কথাটা শুনে অনিমার মাথা নিচু করে ফেলল। কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল,

— ” জানি আমি সেটা। কিন্তু আমার কিছু করারই নেই। উনি নাকি আমাকে দেখেছিলেন যখন আমার আঠারো বছর বয়স। আমার আব্বুকে যেদিন খুন করা হয়েছিলো সেদিন। কিন্তু আমি দেখেছিলাম যখন আমার বিশ বছর বয়স তখন। উনি আমার লাইফে এন্ট্রিটাই এভাবে নিয়েছিলো যে ওনার প্রতি ভয় ছাড়া কোনো অনুভূতি আমার কাজই করতো না। কী আর করতাম আমি? আমার একেকটা কদম ফেলতেও ভয় লাগতো জানেন, যে কখন রিকের অপছন্দের কিছু করে ফেলবো আর কখন কী শাস্তির সম্মুখীন হতে হয়। আমার পরিস্থিতি ই তখন এমন ছিলো যে কিছু ভাবতেই পারিনি আমি। মামুর অকারণে বকাঝকা করা, মামীর কথায় কথায় গায়ে হাত তোলা। আর অর্ক ভাইয়া, এমন একটা মানুষের সাথে একি বাড়িতে থাকা যেই মানুষটা সুযোগ পেলেই আমাকে…। আর তারওপর রিকের ঐসব ব্যবহার। কিছু ভাবার মতো অবস্হাতেই ছিলাম না আমি। আমার মাথায় তখন শুধু এটাই ঘুরছিলো যে কীকরে এসবের থেকে মুক্তি পাবো, তখন শুধু সুস্হ স্বাভাবিক একটা জীবণ পাওয়ার জন্যে মরিয়া ছিলাম আমি। রিক আমাকে সত্যিই ভালোবাসে আমি সেটা সুইডেনে থাকা অবস্হাতেই একটু একটু করে বুঝতে পেরেছি। কিন্তু আমার তখন কিছু করার ছিলোনা কারণ তখন অলরেডি আমি অাপ.. মানে ওনার ভালোবাসা বুঝতে পারলেও ওনাকে ভালোবাসা আমার পক্ষে সম্ভব ছিলোনা তখন আর। আমি হেল্পলেস ছিলাম আদ্রিয়ান, তবে সেলফিস নই। অনেকেই হয়তো ভাবছে যে আমি শুধু নিজের স্বার্থটা দেখেছি, নিজের সুখের জন্যে অন্যকে কষ্ট দিয়েছি। কিন্তু সত্যিই তো এটাই যে আমার কাছে সেকেন্ড কোনো অপশনই ছিলোনা।”
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
বলতে বলতে কেঁদে দিয়েছে অনিমা। আদ্রিয়ান এতোক্ষণ চুপচাপ অনিমার কথা শুনছিলো। এবার ও অনিমার চোখ মুছে দিয়ে বলল,

— ” তোমার নিজেকে এক্সপ্লেইন করার কোনো দরকার নেই অনি। আমি জানি তুমি কী আর কেমন। যা হয়েছে তাতে তোমার কোনো দোষ নেই। তাই প্লিজ নিজেকে আর অপরাধি ভাববে না। দেখবে রিকের জন্যে নিশ্চয়ই ভালো কিছু অপেক্ষা করছে। আর ও একদিন খুব ভালো থাকবে।”

অনিমা নিজেকে সামলে হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়ল। আদ্রিয়ান অনিমাকে বুকে জরিয়ে ধরে চুপচাপ বসে রইলো। রিকের জন্যে ওর নিজেরও খারাপ লাগছে, রিকের কষ্টের পরিমাণ ও খুব ভালোভাবেই বুঝতে পারছে। কিন্তু এখন কিছুই করার নেই। শুধু এটুকু প্রার্থনা করতে পারে যে রিক তার জীবণে খুব ভালো একজনকে পাক যে ওকে খুব ভালোরাখবে।

____________________

রিক, রঞ্জিত চৌধুরী আর কবির শেক তিনজন বসে ব্রেকফাস্ট করছে। রঞ্জিত চৌধুরী রিকের দিকে তাকিয়ে বললেন,

— ” ওদিকের কী অবস্হা? আদ্রিয়ান নতুন করে কী প্লান করেছে?”

রিক খাবার খেতে খেতেই বলল,

— ” করলে তো বলতামই। তোমাদের যেটুকু বলার সেটুকু বলেছি, যা দেওয়ার তাতো দিয়েছি।”

কবির শেখ খাওয়া থামিয়ে রিকের দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” হ্যাঁ কিন্তু আপাদত কী করছে?”

রিক কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল,

— ” নিউসে তো দেখেছোই যে কালকে ওদের এনগেইজমেন্ট হয়েছে। সেসব নিয়েই বিজি ছিলো।”

কবির শেখ চামচ নাড়াতে নাড়াতে কিছুক্ষণ ভাবলেন তারপর রিকের দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” তুমি এসব মেনে নিচ্ছো?”

রিক বাঁকা হাসি দিয়ে বলল,

— ” মেনে কোথায় নিলাম মামা? সময় মতো আসল চালটা দেবো আমি। তবে হ্যাঁ অনিমাদের নিউস কম্পানির হেড এর সাথে যোগাযোগ রেখো। ওদের নিউস পেপার বা চ্যানেলেই কোনো নিউস পাবলিস্ট করতে পারে, বি কেয়ারফুল।”

রঞ্জিত চৌধুরী ভ্রু কুচকে বললেন,

— ” ওরা বলেছে?”

রিক বিরক্ত হয়ে বলল,

— ” তো কী এমনি এমনি বলছি নাকি আমি? এবার প্লিজ একটু খেতে দাও আমায়।”

বলে রিক খাওয়ায় মনোযোগ দিলো ওনারাও আর কথা না বলে খেতে শুরু করলেন।

___________________

আশিস বেশ কয়েকবার অরুমিতাকে কল করেই যাচ্ছে কিন্তু এস ইউসিয়াল অরুমিতা ফোন রিসিভ না করে কল কেটে দিচ্ছে। কিন্তু আজকে আশিসও নাছোড়বান্দা কনটিনিউয়াসলি ফোন করেই যাচ্ছে। অরুমিতা কল কাটতে কাটতে বিরক্ত হয়ে যাচ্ছে এবার সহ্য করতে না পেরে ফোন রিসিভ করে চড়া গলায় বলল,

— ” কী সমস্যা কী আপনার? কেনো এভাবে বিরক্ত করে যাচ্ছেন আমাকে? বলুন কেনো? নূন্যতম লজ্জাবোধ নেই না আপনার? এতো অপমান করি তবুও পেছনে পরে আছে?

আশিস অস্হির হয়ে বলল,

— ” অরু আমি…”

অরুমিতা ওকে থামিয়ে দিয়ে বলল,

— ” চুপ! একদম ঐ নামে ডাকবেন না আমাকে আর না বিরক্ত করবেন।”

আশিস একটা শ্বাস ফেলে নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,

— “অরুমিতা প্লিজ আমার কথাটা একটু শোনো?”

অরুমিতা বিরক্ত হয়ে বলল,

— ” বলার বা শোনার মতো আর কিছু আমাদের মধ্যে অবশিষ্ট নেই মিস্টার আশিস। আর এখন কী হয়েছে বলুনতো? আপনার ঐসব গার্লফ্রেন্ডরা কোথায়? ওদের সাথে ফ্লার্ট করে বোর হয়ে গেছেন বুঝি? তাই আবার আমার পেছনে পরেছেন? ফুর্তি করার জন্যে?”

আশিসের খুব খারাপ লাগলো অরুমিতার কথায় কিন্তু ওর এইসব কথা পাওনাই ছিলো এতে অরুমিতার দোষ নেই। তাই নরম কন্ঠে বলল,

— ” অরু আমি জানি যে আমি যেটা করেছি তার পরে তোমার এরকম ব্যবহার করা খুব স্বাভাবিক। আমি জানি আমি অন্যায় করেছি। আর নিজের ভুলটা বুঝতেও পেরেছি। প্লিজ ক্ষমা করে দাও আমায়।”

অরুমিতা একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল,

— ” ক্ষমা করার আমি কে বলুনতো? আপনার প্রতি আমার কোনো অভিযোগ বা ক্ষোভ কিছুই নেই। ইনফ্যাক্ট আমার লাইফে আপনি আর ম্যাটারই করেন না। সো প্লিজ নিজেকে এতোটাও গুরত্ব দেবেন না। রাখছি!”

বলে অরুমিতা ফোনটা রেখে দিলো। না চাইতেও কেঁদে দিলো ও। একয়দিনে আশিস ওর কাছে বারবার ক্ষমা চেয়েছে, অরুমিতা এখন বুঝেও গেছে আশিস সত্যিই অনুতপ্ত আর ও শুধরেও গেছে কিন্তু যতোবার ভাবে ওকে ক্ষমা করে সব মেনে নেবে ততোবার ঐদিনের সেই দৃশ্য আশিসের বলা কথা মনে পরে যায়, আর ও নিজেকে শক্ত করে পিছিয়ে আসে।
আর এদিকে আশিস নিজের দুইহাত দিয়ে মাথাটা চেপে ধরলো। না চাইতেও ওর চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পরল। এতোটা কষ্ট এর আগে কোনোদিন পায়নি ও। অরুমিতা যখন ওর ছিলো তখন ওর গুরুত্ব বুঝতে পারেনি। যখন ওর ভুলের জন্যেই ছেড়ে চলে গেছে তখন বুঝতে পারলো যে ওর জীবণে অরুমিতা ঠিক কী ছিলো।

_______________________

আনোয়ার হোসেন নিজের অফিস রুমে বসে কাজ করছে। হঠাৎ অনিমা এসে দরজায় নক করে বলল,

— ” মে আই কাম ইন স্যার?”

আনোয়ার হোসেন অনিমার দিকে তাকিয়ে হেসে বললেন,

— ” আরে অনিমা কাম ইন।”

অনিমা গিয়ে ওখানে দাঁড়াতেই আনোয়ার হোসেন বললেন,

— ” বসো। কিছু বলবে মনে হচ্ছে?”

অনিমা চেয়ারে বসে ওনার দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” স্যার আপনার সাথে কিছু গুরত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা করার আছে।”

আনোয়ার হোসেন ভ্রু কুচকে বললেন,

— ” হ্যাঁ বলো!”

অনিমা একটা শ্বাস ফেলে নিজেকে শক্ত করে বলল,

— ” স্যার আমি একটা আর্টিকেল প্রেসেন্ট করতে চাই। আর টপিকটাও খুবই স্ট্রং আর ইম্পর্টেন্ট।”

আনোয়ার হোসেন এবার একটু নড়েচড়ে বসে বললেন,

— ” কাকে নিয়ে?”

অনিমা একটু দৃঢ় কন্ঠে বললেন,

— ” মিনিস্টার রঞ্জিত চৌধুরীর এগেইনস্টে।”

আনোয়ার হোসেন এবার অবাক হয়ে বললেন,

— ” তুমি সুস্থ মস্তিষ্কে বলছোতো কথাটা?”

অনিমা হালকা হাসলো তারপর শক্ত কন্ঠে বলল,

— ” একদম স্যার।”

আনোয়ার হোসেন দুই হাতের আঙ্গুল একত্র করে বললেন,

— ” এর পরিণাম কী হতে পারে জানা আছে তোমার?”

অনিমা আনোয়ার হোসেনের কথায় একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল,

— ” আমার চেয়ে ভালো হয়তো অন্যকেউ জানেনা স্যার!”

আনোয়ার হোসেন অনিমার দিকে তাকিয়ে বললেন,

— ” কবে জমা দেবে আর্টিকেল টা?”

অনিমা কিছু একটা ভেবে বলল,

— ” কালকেই স্যার আপনি বললে আমি কালকেই জমা দিয়ে দেবো।”

আনোয়ার হোসেন মুচকি হেসে বললেন,

— ” ঠিকাছে ওটা যদি যুক্তিসঙ্গত হয় তো অবশ্যই এক্সেপ্ট করা হবে।”

অনিমা হেসে বলল,

— ” থ্যাংক ইউ। থ্যাংক ইউ সো মাচ স্যার। আসছি।”

বলে উঠে রুম থেকে সরে নিজের ডেস্কে চলে গেলো অনিমা। অনিমা চলে যেতেই আনোয়ার হোসেন কাউকে একটা কল করলেন। কল রিসিভ করতেই আনোয়ার হোসেন বললেন,

— ” আপনিই ঠিক ছিলেন স্যার। ওই মেয়েটা আপনার এগেইনস্টে কালকেই আর্টিকেল জমা দিতে চলেছে।”

রঞ্জিত চৌধুরী বাঁকা হেসে বললেন,

— ” রাখছি! আপনার টাকাটা পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে নিয়ে নেবেন।”

বলে ফোনটা রেখে একটা শ্বাস ফেলে রিক আর কবির শেখ এর দিকে তাকালেন উনি। তারপর বললেন,

— ” মেয়েটা কালকের মধ্যেই আর্টিকেল জমা দেওয়ার কথা ভাবছে। তাই যা করার আজ রাতের মধ্যেই করতে হবে।”

কবির শেখ কিছু চিন্তা করতে করতে বললেন,

— ” আদ্রিয়ান থাকতে অনিমার কোনো ক্ষতি করা কারো পক্ষেই সম্ভব হবেনা। তাই সরালে দুটোকেই সরাতে হবে তাও আজ রাতের মধ্যে।”

রিক একটু আলসেমি ঝেড়ে বাঁকা হেসে বলল,

— ” ইতিহাস তাহলে তার পুনরাবৃত্তি করতে চলেছে?”

রঞ্জিত চৌধুরী একটা শ্বাস ফেলে বললেন,

— ” হয়তো তাই। তোমার কী মত?”

রিক খানিকটা শব্দ করে হাসলো তারপর হাসি থামিয়ে বলল,

— ” আমার মত? সাত বছর আগে আমার মত নিয়েছিলে যে আজ নিচ্ছো? আমার কাজ ছিলো তোমাদেরকে সকল ইনফরমেশন দেওয়া আমি দিয়েছি। এখন তোমরা কী করবে সেটা তোমাদের ব্যাপার।”

কবির শেখ ভ্রু কুচকে বলল,

— ” অনিমাকে মেরে ফেললে তোমার কোনো আপত্তি নেই?”

রিক শক্ত কন্ঠে বলল,

— ” না নেই। কেনো থাকবে? কোনোদিনও আমার ভালোবাসা বোঝেনি ও। কখনো আমার কষ্ট টা ওর চোখে পরেনি। অন্যকে ভালোবেসেছে অন্যকে বিয়ে করছে। স্বার্থপরের মতো শুধু নিজের কথাই ভেবেছে। আর এটুকুও বুঝে গেছি যে ও আমার হবেনা তাই ওকে আমি অন্য কারো হতেই দেবোনা। তোমারা তো জানোই যেই জিনিসের ওপর আমার নজর পরে হয় আমি সেটাকে নিজের করে নেই আর তা না হলে সেটার অস্তিত্বই শেষ করে দেই যাতে অন্যকেউ সেটা না পায়। তাই অনিকেও মরতে হবে। আর ওকে তোমারা কেউ মারবেনা আমি নিজের হাতে মারবো। আর আমি চাই অনিমার মৃত্যু আদ্রিয়ান নিজের চোখে দেখুক। বাকি যা খুশি করো তোমারা আই ডোন্ট কেয়ার।”

বলে উঠে চলে গেলো রিক। কবির শেখ ওনার সেই বিখ্যাত হাসিটা দিলেন। উনি ঠিক যেটা চেয়েছিলেন আজ সেটাই হচ্ছে। পুরো খেলাটাই সেভাবে চলছে যেভাবে উনি চেয়েছিলেন। রঞ্জিত চৌধুরীর ডাকে ভাবনা থেকে বেড়িয়ে এলেন উনি। এরপরে দুজনে মিলেই ছক তৈরী করলেন যে আজ রাতে কীভাবে কী করবেন।

_____________________

রাত আট টায় অনিমা অফিস থেকে বেড়িয়ে তীব্র আর অরুমিতাকে বিদায় দিয়ে। নিজের স্কুটির কাছে এসে যেই স্কুটিতে উঠতে যাবে কেউ ওর কাধে হাত রাখলো। অনিমা পেছনে তাকাতেই দেখলো ওর চারপাশে মাস্ক পরা কিছু লোক দাঁড়িয়ে আছে। অনিমা প্রচন্ড ভয় পেলো তাদের দেখে, সাহায্যের জন্যে চিৎকার করবে তার আগেই একজন লোক কাপড় দিয়ে ওর মুখ চেপে ধরলো। অনিমা কয়েকসেকেন্ড ছটফট করার পর অজ্ঞান হয়ে গেলো। লোকগুলো ওকে ধরে ওদের গাড়িতে তুলে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে চলে গেলো।

আদ্রিয়ানও নিজের কাজ সেরে গাড়ি স্টার্ট করে বাড়ি ফিরছে। হঠাৎ ওর গাড়ির সামনে তিনটে বড় গাড়ি এসে থামলো। গাড়িগুলো দেখে বাঁকা হাসলো আদ্রিয়ান তারপর গাড়ি থেকে নেমে গেলো। আর ওই গাড়ি থেকেও কিছু লোক নেমে এলো তারমধ্যে রঞ্জিত চৌধুরী, কবির শেখ ও আছেন। রজ্ঞিত চৌধুরী বললেন,

— ” কী মিস্টার রকস্টার? সবসময় তো খুব এটিটিউট দেখাও। আর আজ এতো রাতে একা একাই চলাফেরা করছো? তোমার তো শত্রুর অভাব নেই। একটু সতর্ক থাকবে তো কে কখন অ্যাটাক করে বলা যায়?”

কবির শেখও হেসে বললেন,

— ” যেমন এখন আমরা করবো।”

আদ্রিয়ান পকেটে হাত দিয়ে সিটি বাজাতে বাজাতে ওনাদের সামনে গিয়ে বলল,

— ” বাহ বাহ। হিস্ট্রি রিপিটস ইট সেল্ফ! কথাটা শুনেছিলাম আজ নিজ চোখে দেখেও নিলাম। আজ থেকে সাত বছর আগে এরকমি এক রাতে একজনের রাস্তা এভাবেই আটকানো হয়েছিলো তাকে মারার জন্যে রাইট? তবে তিনটে পার্থক্য আছে। এক, সেদিন বৃষ্টি ছিলো আজ নেই। দুই, আমি নেমে আপনাদের মুখোমুখি হলেও, সেদিন উনি গাড়ি ইউটার্ন করে শর্টকাট নিয়েছিলেন কারণ ওনাকে ওনার মেয়েকে বাঁচাতে হতো। আর তিন, উনি ছিলেন জার্নালিস্ট আর আমি রকস্টার। আর কী যেনো বললেন? আমি একা? জাস্ট আ মিনিট।”

বলে আদ্রিয়ান কাউকে একটা মিসডকল দিতেই সাথে সাথে চারটে গাড়ি এসে থামলো আর সেখান থেকে লোক বেড়িয়ে এলো। আদ্রিয়ান বাঁকা হেসে বলল,

— ” আপনাদের এখনো মনে হয় আমি একা?”

কবিল শেখ আর মিস্টার রঞ্জিত দুজনেই হাসলেন। ওদের হাসি দেখে আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকালো, কারণ হাসির কারণটা ওর অজানা। কবির শেখ এগিয়ে এসে বললেন,

— ” আমাদের মারার কথা ভাবার আগে এটা দেখে নাও।”

বলে অাদ্রিয়ানের সামনে মোবাইলের স্ক্রিনটা তুলে ধরলো। স্ক্রিনে তাকিয়ে আদ্রিয়ান অবাক হয়ে গেলো কারণ একটা চেয়ারে অনিমা হাতমুখ বাঁধা অবস্হায় অজ্ঞান হয়ে আছে। রঞ্জিত চৌধুরী এগিয়ে এসে বাঁকা হেসে বললেন,

— ” এখন যদি এখানে আমাদের কিছু হয় তাহলে ওখানে তোমার অনিমা মরবে। কী সেটা চাও?”

আদ্রিয়ান রাগী চোখে ওনাদের দিকে তাকিয়ে শক্ত কন্ঠে বলল,

— ” ছেড়ে দিনওকে।”

কবির শেখ হেসে বললেন,

— ” আরে এতো তাড়া কীসের রকস্টার বাবু? একটু সবুর করো! যদি চাও যে অনিমা বেঁচে থাকুক তো কোনরকম টালবাহানা না করে আমাদের সাথে চলো।”

আদ্রিয়ান একটা শ্বাস ফেলে পেছনে তাকিয়ে ওর লোকদের চলে যেতে ইশারা করলো তারপর ওনাদের দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” যা বলবেন তাই করবো কিন্তু ওর গায়ে যদি একটা আচড় ও লাগে না তাহলে খুব বেশি পস্তাবেন আপনারা।”

কবির শেখ কিছু না বলে লোকগুলোকে ইশারা করতেই ওরা আদ্রিয়ানের হাত আর চোখ বেঁধে দিয়ে হাত ধরে নিয়ে গাড়িতে বসালো। তারপর রঞ্জিত চৌধুরী আর কবির শেখ গাড়িতে উঠতেই গাড়ি স্টার্ট দিলো ওরা। আদ্রিয়ানও কিছু না বলে চুপচাপ ওদের সাথে গেলো কারণ অনিমা ওদের কাছে আছে তাই ওকে সেটাই করতে হবে যেটা ওরা বলছে।”

#চলবে…