Friday, July 18, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1922



বর্ষণের সেই রাতে ❤ পর্ব- ৫৩

0

বর্ষণের সেই রাতে ❤
পর্ব- ৫৩

#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

.
আদ্রিয়ান, অনিমা, তীব্র স্নেহাদের বাড়ির ড্রয়িং রুমে বসে আছে। স্নেহার বাবা মা গম্ভীর মুখ করে বসে আছে। আর সেন্হা এক সাইডে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। তীব্র যদিও আসতে চায়নি কিন্তু অনিমা আর আদ্রিয়ান মিলে জোর করে নিয়ে এসছে ওকে। স্নেহার বাবা আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” আরে তোমারা কিছু নিচ্ছোনা কেনো?”

আদ্রিয়ান স্নেহার বাবার দিকে তাকিয়ে বলল,

— “এসব ছাড়ুন। আপনি তো জানতেন যে স্নেহা আর তীব্র একে ওপরকে ভালোবাসে। তবুও নিজের জেদটাকে টিকিয়ে রাখতে স্নেহার বিয়ে অন্যকারো সাথে দিতে চাইছেন সেটাকি ঠিক করছেন?”

আদ্রিয়ানের কথাটা শুনে ভ্রু কুচকালো স্নেহার বাবা, তারপর একটা শ্বাস নিয়ে বলল,

— ” মেয়েটা আমার। ওর কীসে ভালো হবে কীসে খারাপ হবে সেটা আমি খুব ভালো করেই জানি। আমি যেই ছেলে ঠিক করেছি যে যথেষ্ট ভালো।”

আদ্রিয়ান ওনার দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” আর তীব্র? ওকে কোন দিক দিয়ে খারাপ মনে হলো আপনার?”

স্নেহার বাবা গম্ভীর কন্ঠে বলল,

— ” ও শুধুমাত্র একজন জার্নালিস্ট।”

কথাটা শুনে তীব্র ওখান থেকে চলে যেতে নিচ্ছিলো কিন্তু আদ্রিয়ান ওর হাত ধরে আটকে নিয়ে স্নেহার বাবার দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” তো স্যার আপনার কী মপে হয় আপনার দেখা ছেলের সাথে স্নেহা ভালো থাকবে?”

স্নেহার বাবা একবার স্নেহা দিকে তাকিয়ে বললেন,

— ” অবশ্যই থাকবে। কী আছে তীব্রর শুধু একটা জব ছাড়া? আমি যেই ছেলেটা দেখেছি যে তার বাবার একমাত্র সন্তান। বাবার পর ওদের বিজনেস ওই সামলামে, কোনো রকমের অভাব নেই। কী নেই ওখানে?”

তীব্র কিছু বলবে তার আগেই আদ্রিয়ান বলল,

— ” ভালোবাসা আছে স্যার ? ওখানে কী স্নেহা ওর ভালোবাসা পাবে? স্যার ওরা একে ওপরকে ভালোবাসে এটাকী যথেষ্ট নয়? এমন তো নয় তীব্র বেকার! তীব্রর কাছে স্নেহার সমস্তরকম ভরনপোষণের ক্ষমতা আছে। তাহলে সমস্যা কোথায়? জানি ঐ ছেলেটার ফিউচার তীব্রর চেয়ে বেশি উন্নত। কিন্তু আপনার মেয়ে তীব্রর কাছেই বেশি ভালো থাকবে তার গ্যারান্টি আমি আপনাকে দিতে পারি।”

অনিমাও স্নেহার বাবার দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” হ্যাঁ আঙ্কেল। তীব্র আর স্নেহা একে ওপরের সাথে খুব ভালো থাকবে। আর ভালো থাকার জন্যে প্রচুর টাকা থাকার প্রয়োজন পরে না। শুধু ভালোবাসা থাকতে হয় যেটা ওদের দুজনের মধ্যে আছে। আঙ্কেল স্নেহাও আপনাকে খুব ভালোবাসে তাই আপনার কথা ভেবে, আপনার কথা অমান্য করবেনা বলে নিজে এতো কষ্ট পেয়েও আপনার পছন্দের ছেলেকেই বিয়ে করতে রাজি হয়ে গেছে। আপনারাও তো উচিত তাইনা স্নেহার ভালোর কথা ভাবা?”

আদ্রিয়ান আবারও বলল,

— ” তবে আঙ্কেল কোনোকিছু ভাবার আগে এটা মাথায় রাখবেন যে কোনটা আপনার কাছে বেশি ইম্পর্টেন্ট? নিজের জেদ নাকি নিজের মেয়ের খুশি?”

স্নেহার বাবা কিছুক্ষণ চুপ করে বসে ভাবলেন। তারপর স্নেহার মা এর দিকে তাকালেন। তারপর গলা ঝেড়ে বললেন,

— ” ঠিকাছে আমার মেয়ে যদি তীব্রর কাছেই ভালো থাকে তাহলে তাই হোক। ওর বিয়ে তীব্রর সাথেই হবে। আর হ্যাঁ আমি মন থেকেই বলছি কথাটা। ”

সকলের মুখেই হাসি ফুটে উঠল শুধু তীব্র বাদে, ও এখোনো গম্ভীর মুখেই দাঁড়িয়ে আছে। অনিমা উঠে গিয়ে স্নেহাকে জরিয়ে ধরল। স্নেহার বাবা তীব্রর কাছে গিয়ে বললেন,

— ” যা বলেছি তার জন্যে কীছু মনে করোনা বাবা। আসলে মেয়েকে আরামে রাখার আশা করে গিয়ে ভুলেই গেছিলাম যে মেয়ে কোথায় ভালো থাকবে, সুখে থাকবে।”

তীব্র মুখে হালকা হাসি ফুটিয়ে বলল,

— ” ইটস ওলরাইট আঙ্কেল আমি কিছু মনে করিনি।”

আদ্রিয়ান উঠে দাঁড়িয়ে মুচকি হেসে বলল,

— ” আঙ্কেল আপনি হয়তো জানেননা যে তীব্রর বাবাও একজন বিজনেসম্যান।”

স্নেহার বাবা আর মা দুজনেই চমকে গেলেন। স্নেহার বাবা অবাক হয়ে বললেন,

— ” তীব্রর বাবা বিজনেসম্যান? তাহলে ও জার্নালিস্ট মানে..”

আদ্রিয়ান মুখে হাসি রেখেই বলল,

— ” ইচ্ছে আঙ্কেল! জার্নালিসম ওর প্যাশন ছিলো। তাই ও এটাকেই প্রফেশন হিসেবে বেছে নিয়েছে। যেমন আমি মিউসিক কে। কারণ এগুলোতে আহামরি টাকা না পাওয়া গেলেও শান্তি পাওয়া যায়।”

স্নেহার বাবা বেশ লজ্জিত হলেন এসব শুনে। কী ভেবেছিলো তীব্রখে আর ও কী বেড়োলো।এরপর সবাই একসাথে গল্পগুজব করতে শুরু করলো। তীব্র ‘এক্সকিউজ মি’ বলে গার্ডেন এরিয়ার দিকে চলে গেলো। অনিমা ইশারা করতেই স্নেহাও পেছন পেছন গেলো। গিয়ে দেখে তীব্র পকেটে হাত ঢুকিয়ে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে পুলের পানির দিকে। স্নেহা মুচকি হাসি দিয়ে পেছন জরিয়ে ধরলো তীব্রকে। তীব্র বুঝতে পারলো এটা স্নেহা তাই ছাড়ানোর চেষ্টা করতেই স্নেহা বলল,

— ” আই এম সরি…”

তীব্র পাত্তা না দিয়ে দিয়ে ছাড়াতে নিলেই স্নেহা আবার বলল,

— ” এমন করোনা প্লিজ। সরি বলছি তো আমি। আর এমন করবোনা!”

তীব্র এবার বিরক্ত হয়ে বলল,

— ” এমন কী আর করার দরকার আছে?”

স্নেহা মুখ ফুলিয়ে বলল,

— ” সরি বললাম তো?”

তীব্র স্নেহাকে ছাড়িয়ে নিয়ে ঘুরে ওর দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” হ্যাঁ পারো তো সেটাই। যা খুশি তাই করে এরপর একটা সরি বললেই সব শেষ।”
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
স্নেহা এবার কিউট ফেস করে কান ধরে বলল,

— ” প্লিজ এবারের মতো ক্ষমা করে দাও। দেখো সব ঠিক হয়ে গেছে তো এখন। বাবা মা ও মেনে নিয়েছে। ইটস টাইমস টু সেলিব্রেট। প্লিজ রাগ করে থেকে মুমেন্ট টা নষ্ট করোনা প্লিজ!”

তীব্র কোমরে হাত দিয়ে নিচের ঠোঁট টা কামড়ে ধরে চোখ সরিয়ে বিড়বিড় করে বলল,

— ” সাচ আ ড্রামাকুইন।”

স্নেহা হেসে দিয়ে তীব্রকে শক্ত করে জরিয়ে ধরলো। তীব্রও আর নিজের রাগ ধরে রাখতে পারলোনা। ওও হেসে জরিয়ে ধরলো স্নেহাকে। এতবছরের ভালোবাসা আজ সার্থক হলো এখন আর ওদের মধ্যে কোনো বাধা নেই। আছে শুধু ভালোবাসা,অফুরন্ত ভালোবাসা।

অনেকক্ষণ কথাবার্তা বলে স্নেহাদের বাড়ি থেকে ফিরে আসার সময় স্নেহা আর তীব্র দুজনেই আদ্রিয়ান আর অনিমাকে হাগ করে ধন্যবাদ জানালো, কারণ এসবের পেছনে পুরো কৃতিত্ত্বই ওদের দুজনের। ওখান থেকে বেড়িয়ে তীব্র ওর গাড়ি করে নিজের বাড়ি চলে গেলো।অাদ্রিয়ান আর অনিমা ও বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হল। গাড়িতে অনেক্ষণ দুজনেই চুপচাপ ছিলো। কিছুক্ষণ পর অনিমা আদ্রিয়ানে দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল,

— ” থ্যাংকস্।”

আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে একবার অনিমার দিকে তাকিয়ে আবার সামনে তাকিয়ে ড্রাইভ করতে করতে বলল,

—- ” হঠাৎ থ্যাংকস কেনো?”

অনিমা সিটে হেলান দিয়ে আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” আপনার জন্যেই আজ সবটা সম্ভব হলো। আপনি স্নেহার বাবাকে ওভাবে না বোঝালে উনি বুঝতে পারতেন না। সো থ্যাংকস।”

আদ্রিয়ান হালকা হাসলো অনিমার কথায় তারপর বলল,

— ” আমাদের মধ্যে আমার বা তোমার বলে কোনো শব্দ নেই, সবটাই আমাদের। আমার সবকিছুই তোমার আর তোমার সবকিছুই আমার। ইনফ্যাক্ট তুমি আমার, আর আমি পুরোটাই তোমার।”

এটুকু বলে অনিমার দিকে তাকাতেই অনিমা সাথে সাথেই চোখ সরিয়ে নিলো। আদ্রিয়ানের কথাগুলো শুনে ওর হার্ট তীব্র গতিতে বিট করা শুরু করে দিয়েছে। তাই আর আদ্রিয়ানের দিকে তাকালো না ও বাইরে তাকিয়ে রইলো। আর আদ্রিয়ান মুচকি হেহে ড্রাইভিং এ মনোযোগ দিলো।

_____________________

আবরার মেনশন আজ খুব চমৎকার করে সাজানো হয়েছে। চারপাশটা বিভিন্ন রংয়ের লাইটিং এর আলোয় ঝকঝক করছে। খুব চমৎকার লাগছে দেখতে। বিভিন্ন অতীথি, ফিল্ম এন্ড মিউসিক ইন্ডাস্ট্রির মানুষ এসছে। আর তারসাথে মিডিয়ার লোকেরা তো আছেই, প্রায় সব নিউস কম্পানির রিপোর্টার রাই উপস্হিত এখানে। একজন এতোবড় সিঙ্গার এর এনগেইজমেন্ট বলে কথা। মিস্টার এন্ড মিসেস আবরারও খুব ব্যাস্ত আছে বিভিন্ন কাজে। আদিব,আশিস, তীব্র ওরা গেস্টদের ওয়েলকামিং করছে, সামলাচ্ছে। আশিস হাসি মুখে সব কাজ করলেও ওর মুখে বিষন্নতা স্পষ্ট, চোখের নিচে কালো দাগ পরে গেছে, মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেছে। সেই দুষ্টু স্বভাবের ছেলেটা যেনো পাল্টে। সবাই ব্যাপারটা বুঝতে পারলেও ইচ্ছে করেই কিছু বলছেনা কারণ ওর একটা শিক্ষা হওয়া দরকার আছে। আদ্রিয়ান আর রিক দুজনেই গেস্টদের সাথে কথা বলছে। আদ্রিয়ান আজকে পুরো ফরমাল ড্রেস পরেছে। ব্লাক কোট, ব্লাক প্যান্ট, হোয়াইট শার্ট আর রেড টাই। হঠাৎ করেই অনিমা আসার এনাউসমেন্ট করতেই সবার দৃষ্টি সিড়ির দিকে গেলো। আদ্রিয়ান আর রিক দুজনে একসাথেই সিড়ির দিকে তাকিয়ে দুজনের চোখই আটকে গেলো। অনিমা হোয়াইটের মধ্যে সিলভার স্টোনের সুন্দর একটা লেহেঙ্গা পরেছে, তেমন গর্জিয়াস কোনো সাজ না সাজলেও সিলভার স্টোনের হালকা কিছু ওর্নামেন্টস পরেছে ও। তাতেই অসাধারন লাগছে ওকে দেখতে। ওর এক পাশে স্নিগ্ধা আরেকপাশে অরুমিতা আর পেছনে স্নেহা দাঁড়িয়ে আছে। আদ্রিয়ানের তো হার্ট বেড়িয়ে আসার উপক্রম হয়েছে। আর রিকও একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অনিমার দিকে কিন্তু পরোক্ষণেই নিজেকে সামলে নিলো আর সরিয়ে নিলো। অনিমার দিকে ওভাবে তাকানোর অধিকার তো ওর নেই, সেই অধিকার শুধু আদ্রিয়ানের। এসব ভেবে নিজেকে শক্ত করার বৃথা চেষ্টা করতে লাগল ও। আদ্রিয়ান মুচকি হেসে সিড়ির কাছে গিয়ে অনিমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো, অনিমা কয়েক সেকেন্ড আদ্রিয়ানের হাতের দিকে তাকিয়ে থেকে মুচকি হেসে হাত ধরলো। সকলেই খুব জোরে হাততালি দিয়ে উঠলো। এরপর অনিমার হাত ধরেই অাদ্রিয়ান ওকে সেন্টারে নিয়ে গেলো। এখন রিং পরানো হবে তাই সবাই একজায়গায় ভীর করে দাঁড়ালো আদ্রিয়ান সকলের সামনেই অনিমার সামনে হাটু ভেঙ্গে বসল। সাথেসাথেই কলহলপূর্ণ পরিবেশটা শান্ত হয়ে গেলো। অনিমাও অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আদ্রিয়ানের দিকে। আদ্রিয়ান ওর দিকে রিং টা এগিয়ে দিয়ে বলল,

— ” প্রথম তোমাকে দেখেছিলাম মোমবাতির আবছা হলদে আলোতে। ভেজা চুল, মুখে জমা বিন্দু বিন্দু পানি, এক অদ্ভুত সৌন্দর্য বিরাজ করছিলো তোমার মধ্যে। কিন্তু প্রথম দেখাতেই ভালোবেসে ফেলেছি বলবোনা তবে মুগ্ধ হয়েছিলাম। এরপর তোমার ওনেস্টি, কাইন্ডনেস, এন্ড স্পেশিয়ালি তোমার ইনোসেন্সি আমাকে ধীরে ধীরে তোমার প্রতি দূর্বল করে দিচ্ছিল। আর এরপরেই ধীরে ধীরে বুঝতে পারি যে ভালোবাসি আমি তোমাকে। কিন্তু শুরুতে বলিনি, না ভয় বা সংকচের জন্যে নয়। ইচ্ছে করেই। ইচ্ছে করছিলো না বলতে। তবে এখন তুমি আমার জীবণের সেই অংশ হয়ে গেছো যাকে ছাড়া নিশ্বাস নেওয়ার কথাও ভাবতে পারিনা আমি। আমার হৃদপিন্ড তুমি আর আমার হৃদপিন্ডের প্রতিটা স্পন্দনও তুমি। বর্ষণের সেই রাতকে আমি কোনোদিন ভুলতে পারবোনা কারণ আমার জীবনের সেই রাতে তুমি এসছিলে। এন্ড থ্যাংক ইউ সো মাচ ফর কামিং ইন মাই লাইফ। খুব ভালোবাসি আমি তোমাকে আর তোমার সাথেই সারাটা জীবণ কাটাতে চাই আমি। তাই আজ আমার পরিবার, বন্ধু, মিডিয়া সকলের সামনে তোমার কাছে জানতে চাইছি, উইল ইউ ম্যারি মি জানপাখি?”

কারো মুখে কোনো কথা নেই সবাই নিরব দর্শক হয়ে তাকিয়ে আছে ওদের দিকে। অনিমার চোখ দিয়ে ওর অজান্তেই এক ফোটা জল গড়িয়ে পরল। কখনো ভাবেনি যে কেউ ওকে সত্যিই এতোটা ভালোবাসবে, এতোটা ভালোবাসাও ওর পাওনা ছিলো। অনিমা মুচকি হেসে আদ্রিয়ানের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল,

— ” ইয়েস আই উইল।”

আদ্রিয়ান ও হেসে ওকে রিং পরিয়ে ওর হাতে একটা কিস করে উঠে দাঁড়ালো। এরপর অনিমাও আদ্রিয়ানকে রিং টা পরিয়ে দিলো। আদ্রিয়ানকে যেই রিং টা পরানো হয়েছে সেটা অনিমা নিজের টাকা দিয়েই, নিজে পছন্দ করে কিনেছে। আদ্রিয়ান অনিমাকে শক্ত করে জরিয়ে ধরল। সকলেই জোরে হাততালি দিলো। রিক একদৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো ওদের দিকে আর অনিমাকে প্রথম দেখার সেই দিনটার কথা ভাবছিলো, হাততালির আওয়াজেই হুস এলো ওর। নিজেকে সামলে নিয়ে নিজেও হাততালি দিতে লাগল। ভালোয়ভালো ওদের এনগেইজমেন্ট হয়ে গেলো। এরপর প্রেস কনফারেন্স হলো। আদ্রিয়ানকে গান করতে হলো। আদ্রিয়ানেরই এক গানে অনিমা আর আদ্রিয়ান কাপল ডান্স করলো। রিক একদৃষ্টিতে তাকিয়েই আছে ওদের দিকে কিছুতেই নিজেকে সামলাতে পারছেনা এক অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছে ওর মধ্যে।রিকের এই অস্হিরতা কারো চোখে না পরলেও স্নিগ্ধার চোখে ঠিকিই পরেছে।

______________________

গভীর রাত রিক ওর বাড়ির ছাদে বসে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে। চারপাশের পরিবেশটা নিস্তব্ধ হয়ে আছে। এই পরিবেশেও কোথা থেকে একটা চাপা দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে আসে চাইছে কিন্তু কোথাও একটা চাপাও পরে যাচ্ছে। কিছু কিছু যন্ত্রণা থাকে যেটা খুব অসহ্যকর হয়, যা কারো কাছে প্রকাশ করা যায় না, কাউকে বলা যায় না, একা একাই গুমের মরতে হয় ভেতর থেকে, সেটাও গোপনে কারণ কারো সামনে সেই কষ্ট সেই যন্ত্রণা প্রকাশ করাটাও যে অন্যায়। স্নিগ্ধা ছাদে এসে দেখে যে রিক এক কর্ণারে বসে বসে আকাশ দেখছে। স্নিগ্ধার মনে হয়েছিল যে রিক ছাদেই থাকবে তাই এসছে। আস্তে আস্তে রিকের কাছে গিয়ে রিকের পাশে গিয়ে বসল। পাশে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে রিক তাকালো। তাকিয়ে স্নিগ্ধাকে দেখে কিছু না বলে আবার সামনে তাকিয়ে বলল,

— ” ঘুমোস নি এখনো?”

স্নিগ্ধাও সামনের দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” তুমিও তো ঘুমাও নি।”

রিক কিছু না বলে চুপ করে রইলো। রিককে চুপ থাকতে দেখে স্নিগ্ধা নিজেই বলল,

— ” আচ্ছা তুমি তো হসপিটাল জয়েন করতে পারো তাইনা? কেনো করছোনা? ডাক্তারি তো তোমার প্যাশন ছিলো? সার্জারি তে কতো পার্ফেক্ট ছিলে তুমি”

রিক আকাশের দিকে তাকিয়ে স্হির গলায় বলল,

— ” হুমম প্যাশন ছিলো। কিন্তু কিছু কিছু সময় পরিস্হিতি এমন হয়ে যায় যে শখ বা নেশা কোনোটাই পৃরণ করতে ইচ্ছে করেনা। আমারও আর ডাক্তারি করার কোনো ইচ্ছাই অবশিষ্ট নেই। ইনফ্যাক্ট কোনোকিছুর ইচ্ছেই আর নেই। তবে হ্যাঁ যদি কোনোদিন এমন কোনো পরিস্হিতি এসে পরে, আমার ও.টি তে ঢোকাটা যদি খুব বেশি প্রয়োজনীয় হয়ে পরে সেদিন আমি আবার ও.টি তে ঢুকবো আর সার্জারিও করবো।”

রিকের কথার কোনো উত্তর দিলোনা স্নিগ্ধা। এক শ্বাস ফেলে বলল,

— ” আদ্রিয়ান আর অনিমাকে একসাথে দেখলো তোমার খুব কষ্ট হয় তাইনা?”

রিক হালকা হেসে বলল,

— ” আজব! কষ্ট কেনো হবে? এখানে কষ্ট পাওয়ার কী আছে?”

স্নিগ্ধা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,

— ” তোমার এই রূপটার সাথে আমি নতুন করে পরিচিত হলাম। এতোটা কষ্ট চেপে রেখে মুখে এভাবে হাসি ফুটিয়ে রাখতে আমার রিক দা জানতো না।”

রিক এবার একটু শব্দ করে হাসলো তারপর স্নিগ্ধার দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” কীসব পাগলের মতো বকছিস বলতো? আমার কোনো কষ্ট নেই। ”

স্নিগ্ধা হালকা একটু হেসে বলল,

— ” তুমি সবার কাছে নিজের ইমোশনকে লুকোতে পারলেও আমার কাছে পারবে না এটা তুমিও জানো। আমি জানি তুমি ভেতরে ভেতরে কতোটা কষ্ট পাচ্ছো। খুব ভালোবাসা না ওকে?”

রিক একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,

— ” হুমম বাসি। সাত বছর। সাত বছরের ভালোবাসা ও আমার। হ্যাঁ এটা ঠিক যে ওর দুই হাত ধরে কখনো বলতে পারিনি যে ভালোবাসি আমি ওকে। বলতে চাই ই নি কখনো। ধরেই নিয়েছিলাম ও শুধু আমার। ও কী চায়? ওর জীবণে কী চলছে এসব নিয়ে মাথাই ঘামাই নি কোনোদিন। আমি সবসময় ওকে নিয়ে ইনসিকিউর ফিল করতাম। অন্য কোনো ছেলেকে ওর সাথে দেখলে, কাউকে ওর দিকে তাকাতে দেখলে ভীষণ ডেসপারেট হয়ে যেতাম, রাগ লাগতো আমার, ভয় করতো যে ও অন্যকারো হয়ে যাবে তাই সেই রাগ সেই ভয়ের বসে ওর গায়ে হাত তুলতাম। ও পালাতে চাইলেও ভয় লাগতো যদি সত্যিই চলে যায় তাহলে আমার কী হবে? তাই ওভাবে শাস্তি দিতাম যাতে ভয় পেয়ে হলেও আর না পালায়। কিন্তু তখন বুঝতেই পারিনি যে ভালোবাসা জোর করে নয় ভালোবেসেই আদায় করতে হয়, এটা তো আদ্রিয়ান আমাকে শিখিয়েছে। কিন্তু দুঃখ একটাই ভালোবেসেছিলাম ঠিকি কিন্তু ভালোবাসাকে ভালো রাখতে পারিনি। ভালোবাসার মানুষের প্রতি দ্বায়িত্বটা কী সেটাই বুঝতে পারিনি আর যখন বুঝতে পেরেছি ইটস টু লেইট। তবে বিশ্বাস কর স্নিগ্ধু আমি ওখে ভালো রাখতে না পারলেও আমার ভালোবাসাটা মিথ্যে ছিলোনা রে। সত্যিই ভালোবাসি আমি ওকে, খুব ভালোবাসি। আর ভালোবাসলেই যে পেতে হবে তার কোনো মানে নেই সেটাও বুঝতে শিখেছি আমি। আমি এতেই খুশি যে ও আদ্রিয়ানের সাথে ভালো আছে। আর ও ভালোআছে এটুকুই আমার ভালো থাকার জন্যে যথেষ্ট। ও আমার সাথে থাকবেনা ঠিকি কিন্তু আমার মনে সারাজীবন থাকবে। শুধু যন্ত্রণা হচ্ছে এটা ভেবে যে কোনোদিন ওকে বললাম না যে আমি ওকে ভালোবাসি আর যখন বলতে চাই তখন সেটা বলার কোনো অধিকার আমার নেই। ”

রিক অনেক চেষ্টা করেও চোখের কোণের জলটা আর আটকে রাখতে পারলোনা স্নিগ্ধা রিকের কাধে হাত রাখতেই রিক স্নিগ্ধাকে জরিয়ে ধরে ফুপিয়ে কেঁদে দিলো। রিক কে তো স্নিগ্ধা কাঁদতেই দেখেনা সেইজায়গায় এভাবে কাঁদতে দেখে স্নিগ্ধার কলিজা ছিড়ে যাচ্ছে। ওও কাঁদছে নিঃশব্দে। ভালোবাসার মানুষকে না পাওয়ার কষ্টটা ও তো জানে। আর তাকে অন্যকারো সাথে দেখাতো আরো বেশি কষ্টকর।সেই কষ্টের পরিমাপ করা ওই ব্যাক্তি ছাড়া কারো পক্ষে সম্ভব না।”

#চলবে…

বর্ষণের সেই রাতে ❤ পর্ব- ৫২

0

বর্ষণের সেই রাতে ❤
পর্ব- ৫২
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

.
অনিমা বেডে বসে মাথা নিচু করে মুড অফ করে আছে। যেটা আদ্রিয়ানে একটুও ভালো লাগছে না। কিন্তু কিছু বলছেওনা ওও চুপচাপ বসে আছে। কিছুক্ষণ পর আদ্রিয়ান অনিমার দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” অনি প্লিজ এভাবে মুড অফ করে বসে থেকোনা আমার ভালোলাগছে না।”

অনিমা কিছু না বলে জাস্ট একটু নড়ে বসলো তবে ওর মুখে বিষন্নতা এখনও স্পষ্ট। আদ্রিয়ান এবার এগিয়ে বসে অনিমার থুতনি ধরে ওর মুখ উচু করে ধরল তারপর কপালের চুলগুলো কানে গুজে দিয়ে বলল,

— ” অনি কে কী বলল না বলল তাতে আমাদের কিচ্ছু যায় আসেনা। তুমি নিজের কাছে ক্লিয়ার, আমি জানি তুমি কী আর কেমন। তাহলে অন্য একজনের কথায় তুমি কেনো কষ্ট পাচ্ছো?”

অনিমা মাথা নিচু করে ভাঙ্গা গলায় বলল,

— ” এখানে ফুপির কোনো দোষ নেই। আমার সাথে যা যা হয়েছে তাতে অন্যদের আমাকে নিয়ে এরকম ধারণা তৈরী হওয়াটাই স্বাভাবিক। ভাগ্যের জোরে কয়েকবার হয়তো বেঁচে গেছি, কিন্তু হতেই তো পারতো। তাই এসব ভাবা স্বাভাবিক।”

আদ্রিয়ান অনিমাকে ছেড়ে বলল,

— ” নাহ স্বাভাবিক না। কেনো মেয়েরা বাড়ির বাইরে একটা রাত কাটিয়ে আসলেই এটা মনে করা হয় যে মেয়েটা উল্টোপাল্টা কিছু করেছে বা ওর সাথে উল্টোপাল্টা কিছু হয়েছে। কেনো? মেয়েদের কী নিজের মতো চলাফেরা করার স্বাধীনতা নেই নাকি? আর যদি এমন কিছু হতোও দেন আই জাস্ট ডোন্ট কেয়ার। বিকজ আই ট্রাস্ট ইউ এন্ড আই লাভ ইউ।”

অনিমা কিছু একটা ভেবে আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” এত্তো ফ্রিডম দিচ্ছেন আমি যদি সত্যিই ভুলভাল কিছু করে বেড়াই তাহলে?”

আদ্রিয়ান মুচকি হেসে অনিমার মাথায় চাটা মেরে বলল,

— ” কী বলোতো জানপাখি? তোমার যদি এরকম কিছু করার ওয়ান পার্সেন্ট ও চান্স থাকতো তাহলে আমি তোমাকে ঘরে আটক করে রেখে দিতাম।”

অনিমা আদ্রিয়ান কাধে কুনুইয়ের ভর দিয়ে বলল,

— ” তবুও ছাড়তেন না আমায়?”

আদ্রিয়ান মুচকি হেসে অনিমাকে একহাতে জরিয়ে ধরে বলল,

— ” ভালোবাসলে ছেড়ে দেওয়া যায় না
জানপাখি। ভালোবাসার মানুষটার মধ্যের দোষগুলোকে ভালোবেসে ঠিক করে নিতে হয় বুঝলে?”

অনিমা মুচকি হাসলো। কিছু মনে পরতেই মাথা তুলে আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” একটা কথা বলার ছিলো আপনাকে।”

আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে বলল,

— ” সিরিয়াস কিছু?”

অনিমা হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়িয়ে তারপর একটু চুপ থেকে বলল,

— ” আসলে তীব্র স্নেহা, আশিস ভাইয়া অরুর মধ্যে অনেক প্রবলেম চলছে। সেদিন দেখলাম একে ওপরকে ইগনোর করল। দুদিন ধরেই খেয়াল করছি যে তীব্র আর অরুমিতারও মুড অফ। স্নেহার বাবা ওর বিয়ে ঠিক করছে, স্নেহা ওর বাবার মুখের ওপর কথা বলতে পারছে না, তীব্রকেও কথা বলতে দিচ্ছেনা তাই তীব্র রেগে আছে ওর ওপর। আর অরু..”

আদ্রিয়ান অনিমাকে থামিয়ে দিয়ে বলল,

— ” অরুমিতা আর আশিসের সমস্যাটা আমি জানি। দেখো ভুলটা আশিসের, নিজের ভুল বুঝতে হলে ওর নিজেকেই বুঝতে হবে। আশিস যতক্ষণ নিজে না রিয়ালাইস করছে ও যেটা করেছে সেটা ভুল আর ও সত্যিই অরুমিতাকে ভালোবাসে, আর এসব বুঝে ও নিজে থেকে অরুমিতার কাছে ক্ষমা না চাইবে ততোক্ষণ আমরা কিছু করতে পারিনা। এরপর অরুমিতা ওকে ক্ষমা করবে কী না সেটা অরুমিতার ব্যাপার। আর তীব্র আর স্নেহার ব্যাপারটা আমি দেখছি। এখন মিস্টা.. আই মিন আঙ্কেল এর কেসটা নিয়ে ব্যস্ত আছিতো একটু ফ্রি হলেই তীব্রর বাবার সাথে আমি নিজে কথা বলব। হ্যাপি?”

অনিমা মুচকি হেসে বলল,

— ” হুমম।”

আদ্রিয়ান হেসে অনিমার চুলগুলো নাড়তে নাড়তে বলল,

— ” রাত হয়েছে অনেক এবার শুয়ে পরো।”

অনিমা জানে আদ্রিয়ানের কথা না শুনে কোনো উপায় নেই। তাই লক্ষি মেয়ের মতো চুপচাপ শুয়ে পরলো। আদ্রিয়ান মুচকি হেসে অনিমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,

— ” চোখ বন্ধ!”

আদ্রিয়ানের কথা অনুযায়ী অনিমা চোখ বন্ধ করে ফেললো। আর আদ্রিয়ান ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগল। বেশ কিছুক্ষণ পর আদ্রিয়ান খেয়াল করলো অনিমা ঘুমিয়ে পরেছে। আদ্রিয়ান অনিমার ঘুমন্ত মুখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ওর গায়ে চাদর টেনে দিয়ে চলে গেলো নিজের রুমে।

______________________

পার্টির অফিস থেকে কাজ সেড়ে বলে বাড়ি ফিরছে রিক। হঠাৎ মনে হলো যে স্নিগ্ধার তো এখনি হসপিটাল থেকে ফেরার কথা। একি রাস্তা দিয়ে যখন যাচ্ছে তখন ওকে নিয়েই ফিরুক। এসব ভেবে স্নিগ্ধাদের হসপিটালের সামনে গাড়ি থামিয়ে গাড়িতে বসে স্নিগ্ধার বেড়োনোর অপেক্ষায় করতে লাগল। বেশ কিছুক্ষণ পর স্নিগ্ধাকে দেখতে পেলে রিক। তবে স্নিগ্ধার সাথে একটা ছেলেও আছে। দুজনে হাসাহাসি করতে করতে আসছে, আর দুজনে খুব কাছাকাছি অবস্হাতেই হাটছে। রিকের মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো এই দৃশ্য দেখে, এমন কেনো হলো ও নিজেই জানেনা, কিন্তু স্নিগ্ধাকে এভাবে দেখতে ওর মোটেও ভালোলাগছে না। রিক গাড়ি থেকে নেমে গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। গেইটের কাছে এসে ছেলেটা স্নিগ্ধাকে একহাতে হালকা করে হাগ করে বিদায় দিলো, এতে রিকের আরো রাগ হলো। গেইট থেকে বেড়িয়ে রিককে দেখে স্নিগ্ধা বেশ অবাক হয়ে গেলো সাথে খুশিও হলো। এগিয়ে গিয়ে বলল,

— ” আরে রিক দা তুমি এখানে ?”

রিক সানগ্লাসটা খুলে ইতস্তত কন্ঠে বলল,

— ” ঐ এই পথ দিয়েই ফিরছিলাম তোকে দেখতে পেয়ে গাড়ি থামালাম। চল গাড়িতে ওঠ।”

স্নিগ্ধা মুচকি হেসে মাথা নেড়ে গাড়িতে উঠে বসলো। রিক গাড়িতে উঠে গাড়ি স্টার্ট দিলো। বেশ অনেক্ষণ দুজনেই চুপ ছিলো। নিরবতা ভেঙ্গে হঠাৎ রিক বলে উঠলো,

— ” ছেলেটা কে ছিলো?”

স্নিগ্ধা অবাক হয়ে বলল,

— ” কোন ছেলেটা বলোতো?”

রিকের এবার গা জ্বলে যাচ্ছে রাগে, কোন ছেলেটা মানে কী? কটা ছেলের সাথে ঘোরে এই মেয়ে? তাই বিরক্ত হয়ে বলল,

— ” যেই ছেলেটার সাথে হাসতে হাসতে গেইট পর্যন্ত এলি, কে ও?”

স্নিগ্ধা হেসে বলল,

— ” ওহ আচ্ছা ওর কথা বলছো? ও তো আমার ক্লাসমেট!”

রিক ভ্রু কুচকে সামনে তাকিয়ে ড্রাইভ করতে করতে বলল,

— ” তো ক্লাসমেট এমন কী জোকস শোনালো যে হাসতে হাসতে গায়ে ঢলে পরছিলি?”

স্নিগ্ধা এবার নিজেও বিরক্ত হয়ে রিকের দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” আজব গায়ে ডলে পরবো কেনো হ্যাঁ? ওই ক্লাসে হওয়া একটা ঘটনা নিয়েই কথা বলছিলাম।”

রিক বিড়বিড় করে বলল,

— ” হ্যাঁ সে তো দেখতেই পাচ্ছিলাম।।”

স্নিগ্ধা এবার হাত ভাজ করে সিটে হেলান দিয়ে বলল,

— ” আচ্ছা তোমার তাতে কী বলোতো?”

স্নিগ্ধার প্রশ্নে রিক নিজেও চমকে গেলো। ঠিকিই তো। ওর কী সমস্যা এতে? ও কেনো এতো প্রশ্ন করছে? এতো রাগ করছে? স্নিগ্ধা যা খুশি করুক ও এসব নিয়ে ভাবছে কেনো? তবুও পরিস্হিতি সামাল দিতে বল,

— ” থাকিসতো আমাদের বাড়িতেই। উল্টোপাল্টা কিছু করলে দ্বায় তো সেই আমাদের ঘাড়েই পরবে তাইনা?”

স্নিগ্ধা কিছু বললনা জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে রইলো। রিক ও কিছু না বলে ভুলে ভ্রু কুচকে ড্রাইভিং এ মন দিলো।

_______________________

আজ অফ ডে তাই আদ্রিয়ান বা অনিমা কেউ অফিসে যায় নি। বিকেলে আদ্রিয়ান নিচে নেমে এসে দেখে মিস্টার এন্ড মিসেস আবরার সোফায় বসে আছে। আদ্রিয়ান হেসে সোফায় গিয়ে বসে বলল,

— ” কী ব্যাপার মিস্টার এন্ড মিসেস। কি নিয়ে এতো মিটিং চলছে শুনি?”

মানিক আবরার বললেন,

— ” এই যে রকস্টার বাবু খুব তো বউ নিয়ে চলে এলে এবার তো সত্যি সত্যি বিয়েটা করতে হবে নাকি?”

মিসেস আবরার ও সম্মতি জানিয়ে বললেন,

— ” দেখ তোর ফুপিমনি কীসব বলে গেলো। হ্যাঁ জানি যে কে কী বলল না বলল এতে তোর কিচ্ছু যায় আসেনা। ইন ফ্যাক্ট আমাদেরও যায় আসেনা। কিন্তু তোকে কেউ কিছু বলার সাহস না পেলেও অনিমাকে কেউ ছেড়ে দেবেনা। ওকে রোজ বাইরে বেড়োতে হয়। তুই তো জানিস আমাদের সমাজটা কেমন? আর ওকে কী কী শুনতে হতে পারে?”

আদ্রিয়ান এবার চুপচাপ কিছুক্ষণ ভাবলো তারপর ওনাদের দিকে বলল,

— ” ইউ আর রাইট বাট এখন যেই পরিস্হিতি তাতে বিয়ের মতো ঝামেলা করে সময় নষ্ট করা যাবেনা। এখন প্রতিটা সেকেন্ড খুব ইম্পর্টেন্ট আমাদের জন্যে। তোমাদের তো বলেছি তাইনা?”

মানিক আবরার বললেন,

— ” হুমম বুঝতে পেরেছি। বিয়েটা আপাদত নাই বা করলে বাট এনগেইজমেন্ট টা হয়ে যাওয়া ভালো না?”

আদ্রিয়ান মুচকি হেসে বলল,

— ” ফাইন। তোমারা চাইলে তাই হবে।”

মিসেস আবরার খুশি হয়ে বললেন,

— ” তাহলে ডেট ফিক্সড করে ফেলি?”

মানিক আবরার উপরের দিকে তাকিয়ে বললেন,

— ” হুমম কিন্তু যাকে নিয়ে এতো কথা সে কই? মামনী কোথায় আদ্রিয়ান?”

আদ্রিয়ানও একবার ওপরের দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” একটু ঘুমোচ্ছে। আসলে আমিই জোর করে ঘুম পারিয়ে দিয়েছি। দুপুর থেকেই অসুস্হ ছিলো!”

মিসেস আবরার উত্তেজিত হয়ে বললেন,

— ” কী বলছিস কী? কী হয়েছে?”

আদ্রিয়ান ওনাদের আশ্বস্ত করে বলল,

— ” আরে এতো হাইপার হওয়ার কারণ নেই। আসলে একটু মাথা ব্যাথা করছিলো আর শরীর গরম ছিলো হালকা। এমনিতেই সহজে ছুটি পায়না। মাঝখানে কয়েকদিন এতো প্রেশার গেছিলো ওর ওপর দিয়ে , তারওপর ওর হেল্থ কন্ডিশন ও ভালো নেই। জোর না করলে একটুও রেস্ট করতে চায়না।”

মিসেস আবরার উপরের দিকে একবার তাকিয়ে বললেন,

— ” থাক ঘুমোক। আজ ওকে আর নিচে নামতে দিস না। সন্ধ্যার পর কফি পাঠিয়ে দেবো ওপরে। ভালো একটা ঘুম দিয়ে কফি খেলে ভালো লাগবে ওর।”

আদ্রিয়ান কিছু না বলে ওর মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। ওর মাঝে মাঝে নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে হয় এটা ভেবে যে, একজন পুরুষের জীবণের সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ মানুষ হলো মা আর স্ত্রী, একজন জন্মদাত্রী, আরেকজন জীবনসঙ্গীনী, আর ওর জীবণের এই দুজন মানুষেরই কোনো তুলনা হয়না। এরা দুজনেই নিজের নিজের জায়গায় এক্কেবারে পার্ফেক্ট আর অসাধারণ। এরকম মা আর স্ত্রী পাওয়া যেকোনো পুরুষের জন্যেই ভাগ্যের ব্যাপার।

_______________________

মিস্টার রঞ্জিত ঘরে বসে ল্যাপটপে কাজ করছিলেন। রিক দরজার কাছে এসে বলল,

— ” ড্যাড আসবো?”

মিস্টার রঞ্জিত ল্যাপটপ থেকে চোখ সরিয়ে চশমা ঠিক করে রিকেল দিকে তাকিয়ে বললেন,

— ” হ্যাঁ এসো।”

রিক ভেতরে ঢুকে মিস্টার রঞ্জিতের বরাবর বেডে বসল। মিস্টার রঞ্জিত রিকের দিকের দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” কিছু বলবে?”

রিক একবার দরজার দিকে তাকিয়ে আবার মিস্টার রঞ্জিতের দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” মামাকে ডেকেছি মামা আসুক তারপরে বলছি।”

মিস্টার রঞ্জিত কিছু না বলে কাজে মন দিলো। কিছুক্ষণ পর কবির শেখ এসে বেডের অন্যসাইডে বসে বললেন,

— ” বাবাই কিছু বলবে বলছিলে?”

রিক এবার দুজনের দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” হাসান কোতয়ালের আর্টিকেলটাতে যেই পাঁচজন জার্নালিস্ট কাজ করতেন তার মধ্যে একজন তোমাদের হয়ে কাজ করতো। সে কে?”

মিস্টার রঞ্জিত ভ্রু কুচকে বলল,

— ” সেটা জেনে তুমি কী করবে?”

রিক এবার বিরক্ত হয়ে বলল,

— ” কারণ আদ্রিয়ান ঐ চারজনকে খুজছে। খুজে পেতে বেশি সময় লাগবেনা। আর পেট থেকে কথা বের করতে ও খুব ভালোকরেই জানে। তাই তোমাদের ভালোর জন্যেই বলছি।”

কবির শেখ একটু চিন্তিত কন্ঠে বলল,

— ” যদি ওকে খুজে পায় তো বড় একটা সমস্যা হয়ে যাবে। খুব গুরুত্বপূর্ণ একজন সাক্ষী ও।”

রিক কবির শেখ এর দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” এইজন্যেই তো বললাম সব তোমাদের। এবার দেখো কী করতে পারো।”

মিস্টার রঞ্জিত চৌধুরী বললেন,

— ” কবির আতাউর কোথায় আছে এখন। যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব ওকে দূরে পাঠিয়ে দাও।”

কবির শেখ থুতনির নিচে হাত দিয়ে কিছু একটা ভাবতে ভাবতে বললেন,

— ” উমহুম শুধু দূরে নয়। আতাউর কে দুনিয়া থেকেই সরিয়ে ফেলতে হবে নইলে ব্যাপারটা রিস্কি হয়ে যাবে।”

রিক ভ্রু কুচকে বললো,

— ” তারমানে জার্নালিস্ট আতাউর রহমান তোমাদের কাছে হাসান কোতয়ালের আর্টিকেলের ইনফরমেশন গুলো লিক করতো?”

কবির শেখ মাথা হালকা নেড়ে বললেন,

— ” হুমম ও আমাদের কাছে সমস্ত সিকরেট নিউস লিক করতো আর তার বদলে আমরা ওকে টাকা দিতাম।”

রিক এবার লম্বা একটা শ্বাস ফেলে ধীর কন্ঠে বলল,

— ” হুমমম বুঝলাম।”

কবির শেখ উঠে দাড়িয়ে রিকের দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” চোখ কান খোলা রেখে ওদের সাথে থেকো। আদ্রিয়ান আবরার জুহায়ের কিন্তু খুব চালাক, ওর নজর এরিয়ে কাজগুলো করা কিন্তু খুব কঠিন।”

রিক ও উঠে দাঁড়িয়ে হালকা হেসে বলল;

— ” আমি জানি সেটা।”

এটুকু বলে রিক চলে গেলো মিস্টার রঞ্জিতের রুম থেকে। মিস্টার রঞ্জিত আর কবির শেখ নিজেদের ভাবনায় ব্যস্ত হয়ে পরলেন।

_____________________

কারো আল্তো ডাকে অনিমা ঘুম ভেঙ্গে গেলো আস্তে আস্তে চোখ খুলে তাকিয়ে দেখে মিসেস আবরার মুচকি হেসে তাকিয়ে আছে ওর দিকে, আর আদ্রিয়ান পেছনে হাত ভাজ করে দাঁড়িয়ে আছে। অনিমা আস্তে করে উঠে বসে চুলগুলো হাত দিয়ে ঠিক করে বলল,

— ” কী হয়েছে মা? কিছু বলবে? আমাকে ডেকে নিতে?”

মিসেস আবরার অনিমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,

— ” কেমন লাগছে এখন?”

অনিমা মুচকি হেসে বলল,

— ” আমার আবার কী হবে? আ’ম সুপার ফিট।”

আদ্রিয়ান এবার এসে বেডে বসতে বসতে বলল,

— ” হ্যাঁ তাতো দেখাই যাচ্ছে কতো ফিট। ঠিক করে কথা বলতে পারছেনা একটা সেন্টেস কমপ্লিট করতে চারবার শ্বাস নিতে হচ্ছে সে আবার ফিট।”

অনিমা মুখ ফুলিয়ে আদ্রিয়ানের দিকে একবার তাকিয়ে তারপর মিসেস আবরারের দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” দেখেছো মা? তোমার ছেলে কীভাবে আমাকে টিজ করছে ?”

মিসেস আবরার আদ্রিয়ানের দিকে চোখ রাঙ্গিয়ে তাকিয়ে বলল,

— ” এই একদম আমার মেয়েকে টিজ করবি না।”

আদ্রিয়ান ওর হাতে রাখা আপেলটা মুখের সামনে ঘোরাতে ঘোরাতে বলল,

— ” হ্যাঁ সেই। বাড়ি তোমাদের, ঘর তোমাদের, আমার বউটাও তোমাদের। আমার আর কী আছে বলো? সবি তোমাদের। আমিতো মঙ্গলের গ্রহ থেকে এখানে পিকনিক করতে এসে এক্সিডেন্টলি তোমাদের ঘরে ডেলিভারড করে গেছি। কপাল কপাল। এইজন্যেই কে যেনো বলেছিলো বেশি মিষ্টি মেয়েদের বউ করে ঘরে আনতে নেই, তাতে ছেলেরা মিষ্টির বাক্স হয়ে যায়।”

বলেই আপেলে বাইট করলো। অনিমা আর মিসেস আবরার মিটমিটিয়ে হাসছে আদ্রিয়ানের কথায়। মিসেস আবরার টি-টেবিল থেকে কফির মগটা অনিমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন,

— ” এটা খেয়ে নে ভালো লাগবে।”

অনিমা কফি মগটার দিকে তাকিয়ে অসহায়ভাবে বলল,

— ” তুমি কেনো আনতে গেলে আমি তো পারতাম।”

মিসেস আবরার রাগী কন্ঠে বললেন,

— ” মারবো টেনে এক থাপ্পড় এই শরীর নিয়ে উনি রান্নাঘরে যাবেন শখ কতো! চুপচাপ কফিটা খা আমিও যাই তোর বাবাকে চা দিতে হবে।”

বলে মিসেস আবরার চলে গেলেন ওখান থেকে। অনিমা আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে দেখলো ও একমনে আপেল খাচ্ছে। অনিমা কিছু না বলে কফির মগটা নিয়ে ব্যালকনিতে চলে গেলো। ব্যালকনির রেলিং ধরে বাইরের দিকে তাকিয়ে নিজের কফির মগে চুমুক দিতে লাগল। কিছুক্ষণপর পেছন থেকে ওকে আলতো করে জরিয়ে ধরে কাধে থুতনি রাখল আদ্রিয়ান। অনিমা একটু অবাক হলো কারণ আদ্রিয়ান এমনিতে সবসময় ওর আশেপাশে থাকলেও এভাবে হুটহাট জরিয়ে ধরেনা। তবুও কিছু না বলে নিজের একহাত আদ্রিয়ানের হাতের ওপর দিয়ে রেখে চোখ বন্ধ করে ফেলল। আদ্রিয়ান স্লো ভয়েজে বলল,

— ” একটা গুড নিউস আছে তোমার জন্যে।”
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
অনিমা চোখ না খুলে মুখে হাসি রেখেই বলল,

— ” সেটা কী?”

আদ্রিয়ান অনিমার কানের কাছে মুখ এনে বলল,

— ” আগামী শুক্রবার আমাদের এনগেইজমেন্ট।”

অনিমা আদ্রিয়ানের দিকে ঘুরে অবাক হয়ে তাকালো। আদ্রিয়ান অনিমার চুলগুলো কানে গুজতে গুজতে বলল,

— ” ইয়েস জানপাখি। যদিও বাবা মা বিয়ের কথা বলছিলো বাট আমি না করেছি এখন অন্য কিছুতে টাইম বেশি ওয়েস্ট করা ঠিক হবেনা তাই।”

অনিমা আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” আচ্ছা এরপরের স্টেপ কী হবে?”

আদ্রিয়ান কিছু একটা ভেবে তারপর মুচকি হেসে বলল,

— ” তা জানিনা বাট যা হবে ভালো হবে। ভরসা রাখো আমার ওপর।”

অনিমা নিচু কন্ঠে বলল,

— ” হুম।”

বলে আবারো কফি খাওয়ায় মনোযোগ দিলো। কিছুদিন যাবত অন্যকিছু ভাবছে ও। আদ্রিয়ান এগুলো কীকরে করে? রিকের মতো একটা মানুষের সিকিউরিটি ক্রস করে সুইডেন এর একটা নির্জন দ্বীপে পৌছে যাওয়া, এতো প্রমাণ যোগার, ওকে সেভ রাখা, কবির শেখ, রঞ্জিত চৌধুরীর মতো পাওয়ারফুল মানুষদেরকেও তোয়াক্কা না করা। এসব কী শুধুমাত্র একজন রকস্টার এর পক্ষে সম্ভব? তবুও কিছু জিজ্ঞেস করেনা ও আদ্রিয়ানকে। হয়তো এই আশায় যে একদিন আদ্রিয়ান নিজেই ওকে সব বলবে।

#চলবে…

বর্ষণের সেই রাতে ❤ পর্ব- ৫১

0

বর্ষণের সেই রাতে ❤
পর্ব- ৫১
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

.
টেবিলে ফাইল আর প্যাকেটটা দেখে মিস্টার রঞ্জিত আর কবির শেখ রিকের দিকে তাকালেন। মিস্টার রঞ্জিত ভ্রু কুচকে বললেন,

— ” এগুলো কী?”

রিক ওনাদের বারবর চেয়ারে বসতে বসতে বলল,

— ” রাখাতো টেবিলেই আছে দেখে নাও।”

মিস্টার রঞ্জিত ফাইলটা হাতে নিলেন আর কবির শেখ ছবির প্যাকেটটা, সব ভালোভাবে দেখে দুজনেই অবাক হয়ে গেলেন।

কবির শেখ মিস্টার রঞ্জিতের দিকে তাকিয়ে বললেন,

— ” এগুলো তো সাত বছর আগের গোডাউনের ছবিগুলো।”

মিস্টার রঞ্জিত ও ফাইলটা পড়ে চমকে গিয়ে বললেন,

— ” আরে এটাও তো হাসান আমার এগেইন্সস্টে যেই আর্টিকেল টা করছিল তার কিছু অংশ।”

কবির শেখ রিকের দিকে তাকিয়ে বললেন,

— ” এগুলো তুমি কোথায় পেলে?”

রিক এতক্ষণ দুজনের কথা শুনছিলো কবির শেখ এর প্রশ্ন শুনে ওনাদের দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” যাক মনে পড়লো তাহলে? আমিতো ভাবতাম তোমরা খুব বুদ্ধিমান। অথচ তোমাদের বিরুদ্ধে এতো গুরত্বপূর্ণ দুটোএভিডেন্স বাইরে অন্যের হাতে পরে আছে তোমরা জানোই না? বাহ!”

মিস্টার রঞ্জিত অবাক হয়ে বললেন,

— ” কোথায় ছিলো এগুলো?”

রিক একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল,

— ” রাইট! এটাও জানোনা। অনিমা আর আদ্রিয়ান এর কাছে ছিলো।”

রিকের কথা শুনে দুজনেই চমকে গেলেন। কবির শেখ চিন্তিত গলায় বললেন,

— ” কিন্তু এটা কীকরে সম্ভব? এই ছবিগুলোতো মিতা তুলেছিলে আর এগুলো তুলে নিয়ে যাওয়ার আগেই তো মিতাকে আমারা মেরে ফেলেছিলাম।”

রিক আবারও হাসলো, তারপর কবির শেখ এর দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” ও তারমানে জার্নালিস্ট মিতাকে তোমরাই খুন করেছো?”

মিস্টার রঞ্জিত বিরক্ত হয়ে বলল,

“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন

– ” আরে হ্যাঁ। ঐ মেয়েটা আমাদের গোডাউনের স্মাগলিং এর ছবি তুলেছিলো কাউকে যাতে দিতে না পারে সেইজন্যেই তো ওখান থেকে পালানোর আগেই আমাদের লোক দিয়ে খুন করিয়েছি।”

রিক ওর বাবার দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” শুনেছিলাম ওনাকে নাকি রেইপ ও করা হয়েছিল।”

কবির শেখ হালকা কেশে গলা পরিষ্কার করে ইতস্তত করে বললেন,

— ” হ্যাঁ ঐ জোয়ান ছেলেপেলে তো তাই..”

রিক একটা মলিন হাসি দিয়ে বলল,

— ” হুমম। তারমানে সেটাও তোমাদের লোকই করেছে?”

রঞ্জিত চৌধুরী বললেন,

— ” হুমম হঠাৎ এগুলো জ্ঞিজ্ঞেস করছো?”

রিক এবার একটা চেয়ারে হেলান দিয়ে আয়েশ করে বসে ওনাদের দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” এবার বুঝতে পারছো আমি ওদের টিমে জয়েন না করলে কী হতো? আজ প্রমাণ গুলো সব ওদের হাতে থাকতো, ঠিক সময় পাবলিস্ট ও করতো, আর তোমরা থাকতে জেলে।”

কবির শেখ টেবিলে দুইহাত রেখে গম্ভীর কন্ঠে বলল,

— ” হুম এটা ঠিক। এখন আমারও মনে হচ্ছে যে রিকের ওদের সাথেই থাকা উচিত। সবে দুটো প্রমাণ উদ্ধার হয়েছে আর কী কী প্রমাণ ওদের হাতে আসে তার কোন ঠিক নেই।”

রিক হালকা হেসে দিয়ে বলল,

— ” এক্সাক্টলি! এইজন্যেই আগে ভালো সাজার নাটক করলাম এরপর ওদের বিশ্বাস অর্জন করলাম আর ওরাও আমাকে বিশ্বাস করে দিয়ে দিলো এগুলো রাখতে। এন্ড আ’ম ড্যাম সিউর এই ভুল ওরা বারবার করবে। আর ওরা যেদিন সবটা এক্সপোস করতে যাবে সেদিন আমি আসল বোমা ফাটাবো। এবার এগুলো নষ্ট করে ফেলো।”

কবির শেখ আর রঞ্জিত চৌধুরী ফাইল আর ছবিগুলো আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিলো। আর রিক বাঁকা হেসে জলন্ত আগুনের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।

______________________

দুটো দিন কেটে গেছে। অনিমাও নতুন করে অফিস জয়েন করেছে। আদ্রিয়ানের বাবা মায়ের স্নেহ যত্ন আর আদ্রিয়ানের ভালোবাসায় বেশ ভালোই দিন কাটছে অনিমার।

এরমধ্যে আদ্রিয়ানের বিয়ে ঠিক হচ্ছে আর মেয়ে আদ্রিয়ানের বাড়িতেই আছে শুনে আদ্রিয়ানের ফুপি চলে এলেন ওদের বাড়িতে বউ দেখতে। এসে অনিমাকে বাড়িতে না পেয়ে, মিসেস আবরারের কাছ থেকে ইনিয়ে বিনিয়ে অনিমা সম্পর্কে ছোটখাটো পি এইচ ডি ও করে নিলেন আরকি।অনিমা অফিস করে আদ্রিয়ানদের বাড়িতে আসতে আসতে প্রায় আটটা বেজে গেলো। এসে কলিং বেল চাপতেই মিসেস আবরার দরজা খুলে অনিমাকে দেখে মুচকি হেসে বলল,

— ” এসে গেছিস। আয় ভেতরে আয়।”

অনিমা হেসে ভেতরে ঢুকতেই সোফায় একজন মহিলাকে বসে থাকতে দেখে মিসেস আবরারের দিকে তাকালো, মিসেস আবরার বললেন,

— ” ইনি আমার বড় ননদ। আদ্রিয়ানের ফুপি।”

অনিমা মুখে হাসি ফুটিয়ে ওনাকে সালাম দিলো, উনি সালাম নিলেন তবে মুখভঙ্গি দেখে মনে হলো অনিমার ওপর খুব বিরক্ত। অনিমা বুঝতে পেরেও কিছু বললনা। মিসেস আবরার অনিমাকে বললেন,

— ” যা গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আয়। ক্লান্ত হয়ে এসছিস নিশ্চয়ই?”

অনিমা চুপচাপ ওপরে চলে গেলো ফ্রেশ হতে। ভ্যাপসা গরম পরেছে তাই এক্কেবারে সাওয়ার নিয়ে, চুল শুকিয়ে তারপরেই নিচে গেলো। নিচে গিয়ে দেখে মানিক আবরার, মিসেস আবরার, আর আদ্রিয়ানের ফুপি সোফায় বসে আছে। অনিমা গিয়ে দাঁড়াতেই মিসেস আবরার বললেন,

— ” আয় বস তোর জন্যে চা রেখে দিয়েছি। ঠান্ডা হয়ে যাবে খেয়ে নে।”

অনিমা বসতে নেবে তখনি ফুপি চড়া গলায় বললেন,

— ” এ কেমন মেয়ে সেটাই ভাবছি আমি। কোথায় সন্ধ্যায় সবাইকে চা করে খাওয়াবে তা নয় উল্টে হবু শাশুড়ি মায়ের করে দেওয়া চা টা পায়ের ওপর পা তুলে বসে খাবে।”

অনিমা আর বসলোনা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো। মানিক আবরার কিছু বলবে তার আগেই মিসেস আবরার বললেন,

— ” কী সব বলছো আপা? মেয়েটা এতো পরিশ্রম করে অফিস থেকে এসছে। আর আমি তো সারাদিন বাড়িতেই ছিলাম। একটু চা করে ওকে খাওয়ালে ক্ষতি কী?”

ফুপি বিরক্ত হয়ে বললেন,

— ” হুহ। বিয়ের আগেই এই মেয়েকে মাথায় তুলছিস তো? দেখবি একদিন তোরই মাথার ওপর ছুড়ি ঘোরাবে সেদিন বুঝবি।”

মানিক আবরার ও এবার বড় বোনের কথায় বিরক্ত হয়ে বললেন,

— ” ছুড়ি ঘোরালে আমাদের ওপর ঘোরাবে তোর এতো সমস্যা কী সেটাই তো বুঝতে পারছিনা।?”

অনিমা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। ফুপির ব্যবহারে সামান্য মন খারাপও হচ্ছে ওর। মিসেস আবরার ওকে বসতে বলবেন তার আগেই ফুপি বলে উঠলেন,

— ” আচ্ছা আমাদের আদ্রিয়ানের জন্যে কী মেয়ের অভাব পরেছিলো নাকি বলতো যে এরকম একটা মেয়েকে ওর বউ বানাচ্ছিস?”

মিসেস আবরার ভ্রু কুচকে বললেন,

— ” এরকম মানে কী? কী বলতে চাইছো তুমি?”

ফুপি মুখ বাকিয়ে বললেন,

— ” বুঝতে পারছিস না নাকি? বাপ মা নেই। তারওপর একা একটা ফ্লাটে থাকতো। এই যুগে যা সব হয় কীসব কুকীর্তি করে বেড়িয়েছে তা বলতে পারবি? আর দেখ রাত আট টা বাজে বাড়ি ফিরলো, বিয়ের পর কী এসবই করবে নাকি?”

এতোক্ষণ কিছু মনে না বললেও এবার অনিমার বেশ খারাপ লাগলো ব্যপারটা কারণ ওর এবার উনি ওর চরিত্র নিয়ে কথা বলছে। মানিক আবরার এবার রাগী গলায় বললেন,

— ” কী করেছিস বলতো আপা? মেয়েটার কেউ ছিলোনা বলেই তো একা থাকতে হয়েছে তাইনা? এতে ওর কী দোষ? আর ওর কাজ থাকলে দেরী তো হতেই পারে এতে সমস্যা কী?”

ফুপি ভ্রু কুচকে তাকালেন নিজের ভাইয়ের দিকে। অনিমা একদৃষ্টিতে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে চোখ দুটো ছলছল করছে ওর। মিস্টার মিসেস আবরারও বেশ বিরক্ত হচ্ছে এসব কথা শুনে। যথেষ্ট ভদ্রভাষায় থামানোর চেষ্টা করছে কিন্তু থামছে না। ফুপি অনিমার দিকে তাকিয়ে বললেন,

— ” আর এসব যদি বাদও দেই। ঐ মন্ত্রীর ছেলেটা ওকে তুলে নিয়ে গেছে, বিদেশে নিয়ে গিয়ে কয়েকটা দিন রেখেছিলো। একটা পরপুরুষের কাছে এতোদিন ছিলো, তোমাদের কী মনে হয় ছেলেটা ওকে নিয়ে বসিয়ে পুজো করছিলো? আমাদের দেখে কী মনে হয় ঘাসে মুখ দিয়ে চলি?”

অনিমা এবার চোখের জল আটকাতে পারলো না, নিজের সম্পর্কে এরকম কথা শুনতে কোনো মেয়েরই ভালো লাগে না। আর উনি রিতীমত ওকে চরম অপমান করছেন। অন্যকেউ হলে নিশ্চয়ই কটা শুনিয়ে দিতো কিন্তু আদ্রিয়ানের ফুপি আর সামনে বাবা মা আছে তাই চুপচাপ সহ্য করছে। মিসেস আবরার এবার উঠে দাঁড়িয়ে রেগে বললেন,

— ” আপা এবার কিন্তু বাড়াবাড়ি করছো।”

ফুপি পাত্তা না দিয়ে বললেন,

— ” ভুল কী বললাম? কী এমন যোগ্যতা আছে এই মেয়ের আদ্রিয়ানের বউ হওয়ার? কেনো ওকে আদ্রিয়ানের বউ বানাতে উঠে পরে লাগছো হ্যাঁ ? ”

— ” কারণ অাদ্রিয়ান নিজে ওকে ভালোবাসে। শুধু ভালোই বাসেনা সারাজীবন ওর সাথেই কাটাতে চায়।”

এই কথা শুনে সকলেই তাকিয়ে দেখলো আদ্রিয়ান পকেটে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। হ্যাঁ আদ্রিয়ান প্রথম থেকেই সব শুনছিলো কিন্তু কিছু বলেনি কারণ ও শুনতে চাইছিলো এই মহিলা আর কী কী বলতে পারে। যখন দেকলো মুখ খোলা জরুরী তখনই খুললো। ওনারাও কেউ খেয়াল করেনি ওকে। আদ্রিয়ান মুচকি হেসে ওর ফুপির দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” আমার তো মনে হয়না এর চেয়ে বড় কোনো কারণ থাকতে পারে বা থাকার দরকার আছে।”

ফুপি মুখ ঘুরিয়ে বসে রইলেন। উনি খুব ভালোকরেই জানেন আদ্রিয়ান কী বলতে পারে। মিস্টার আর মিসেস আবরার এবার একটু আয়েশ করে সোফায় বসল, ওনারাও জানেন এখন কী হবে তাই প্রস্তুতি নিয়ে বসল আরকি। অনিমা এখনো মাথা নিচু করেই দাঁড়িয়ে আছে। আদ্রিয়ান সিঙ্গেল সোফায় বসে ফুপির দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” কী যেনো বলছিলে ফুপিমনি? যে চা টা মাকে কেনো করতে হলো তাইতো? আচ্ছা এটা কোথায় লেখা আছে যে বাড়ির সব কাজ শুধু ঘরের বউরাই করবে?”

ফুপি ভ্রু কুচকে আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বললেন,

— ” তো তুই কী বলতে চাইছিস তোর মা হাত পুরিয়ে রান্না করবে আর তোর বউ বসে বসে খাবে?”

আদ্রিয়ান হেসে বলল,

— ” আমি সেটা কখন বললাম। এটা ডিপেন্ড করবে কে কতোটা ফ্রি এবং সুস্হ আছে তার ওপর। আজ অনিমা লেট করে ফিরেছে, মা ফ্রি ও ছিলো সুস্হ ও ছিলো তাই নিজেই চা করেছে। অনিমা ফ্রি থাকলে ও নিজেই সব করবে ওকে বলতে হবেনা, এটুকু চিনি আমি ওকে। ইনফ্যাক্ট ও যদি এসে দেখতো যে চা করা হয়নি তাহলে ও নিজেই যেতো করতে । কিন্তু আমার মা তো আর তোমার মতো না তাইনা যে পায়ের ওপর পা তুলে বসে ঘরের বউকে ওর্ডার করবে। কারণ উনি মা তোমার মতো সো কলড শাশুড়ি না।”

ফুপি মাথা নিচু করে আছে। আর অনিমা এবার মাথা তুলে তাকালো আদ্রিয়ানের দিকে। আদ্রিয়ান আবার বলল,

— ” আর কী বলছিলে? ও এতোদিন একা একটা ফ্লাটে থাকতো কোথায় কী কুকীর্তি করে বেড়িয়েছে তার ঠিক নেই। সেটা বললে তো আমিও এতোদিন একা একটা এপার্টমেন্টে ছিলাম তারওপর একজন সেলিব্রিটি, তো আমিও কোথায় কী কুকীর্তি করে বেড়িয়েছি তারও তো কোনো ঠিক নেই তাইনা?
ও রাত আটটায় এসেছে বলে তোমার প্রবলেম হচ্ছে , আর আমিতো রাত সাড়ে নটায় বাড়িতে এলাম, মাঝেমাঝে আরো রাত হয় তাহলেতো তোমার আমাকে নিয়েও সমস্যা থাকার কথা, রাইট?”

ফুপি এবার আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” তুই আর ও কী এক নাকি? তুই হলি ছেলেমানুষ। তোর সাথে ওর তুলনা হয়?”

আদ্রিয়ান একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল,

— ” কেনো পার্থক্য কোথায় আমাদের? আমার দুটো হাত, দুটো পা, দুটো চোখ আছে ওরও আছে। আমারে হার্ট বিট করে ওরটাও করে। আমাকে একটা একটা আঘাত করলে আমি যতটা ব্যাথা পাবো ওকে করলে ওও ততোটাই ব্যাথা পাবে। কেটে গেলো দুজনের শরীর থেকে রক্তই বেড়োবে। তাহলে? পার্থক্য কোথায়? আমার স্বাধীন ভাবে নিজের মতো করে বাঁচার অধিকার যতোটা আছে ততোটাই ওর আছে। তাহলে যেটা ভুল সেটা দুজনের জন্যেই ভুল। ছেলে বা মেয়ে হওয়াতে ভুলটা ঠিক আর ঠিকটা ভুল হয়ে যায় না। তোমাদের মতো এইরকম চিন্তা ধারার মানুষদের জন্যেই ছেলেরা এটা মনে করে যে ওরা যা খুশি তাই করতে পারে আর মেয়েরা ওদের ইচ্ছেমতো ওদের কাঠপুতুল হয়ে থাকবে।”

ফুপি এবার চুপ করে আছে, কী বলবে সেটাই জানেনা উনি। আর অনিমা একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অাদ্রিয়ানের দিকে। আদ্রিয়ান একটা শ্বাস ফেলে বলল,

— ” আর ও কোনো অন্য ছেলের কাছে এতদিন ছিলো এতে যদি আমার কোনো সমস্যা না হয় তাহলে তুমি বলার কে এখানে? ওর সাথে সংসার কী তুমি করবে? যাই হোক আমার হবু বউ দেখতে এসছিলে দেখা হয়ে গেছে। আশা করি কালকে সূর্য ওঠার পরেই নিজের বাড়ি চলে যাবে।”

ফুপি রেগে প্লাস অবাক হয়ে বললেন,

— ” আদ্রিয়ান এটা কিন্তু আমারও বাড়ি।”

আদ্রিয়ান ওনার দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” মোটেও না। দাদু মারা যাওয়ার পর তুমি তোমার পাওনা প্রপার্টির টাকা চেয়ে নিয়ে গেছো। সো এই বাড়ির ওপর তোমার কোনো অধিকার আইনত নেই। তবুও আত্মীয় হিসেবে যেটুকু সম্মান দেওয়া হয় নিজের দোষে নিজের সেই সম্মানটুকুও হারাচ্ছো। তোমার জন্যে অকারণে আমার বউয়ের চোখ দিয়ে জল বেড়োবে সেটা অন্তত আমি মেনে নেবোনা।”

ফুপি রাগী কন্ঠে বললেন,

— ” বউ হয়ে না আসতেই শাসন না করে এভাবে আল্লাদ দিচ্ছিস তো পরে বুঝবি। বউয়ের নিজের হাতে রাখতে পারিসনা কেমন পুরুষ মানুষ তুই?”

আদ্রিয়ান হেসে বলল,

— ” কে বলেছে শাসণ করিনা? খেতে না চাইলে ধমকে জোর করে খাওয়াই, অনিয়ম করলে বকি, নিজের অযন্ত করলেও বকাবকি করি। এছাড়া ও আর তেমন কিছু করেনা যার জন্যে শাসন করতে হবে। আর আল্লাদের কথা বলছো? আমারই তো বউ আমি আল্লাদ না দিলে কে দেবে? আর হ্যাঁ বউ কোনো প্রপার্টি বা গৃহপালিত পশু না যে ওকে হাতে রাখতে হবে, ও আমার লাইফ পার্টনার আমার সহধর্মিনী, ওকে হাতে না পাশে রাখাটাই সবচেয়ে জরুরি। আর ও সেটা সবসময় আছে। আর যারা নিজের বউয়ের পায়ে শিকল পরিয়ে নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখাকে পুরুষত্ব মনে করে তাদের চেয়ে বড় লুজার আর কাওয়ার্ড দুনিয়াতে দুটো নেই। এন্ড আ’ম নট আ লুজার ওর কাওয়ার্ড।”

বলে উঠে অনিমার হাত ধরে ওখান থেকে সিড়ি দিয়ে সোজা ওপরে নিয়ে গেলো। অনিমার সেদিকে ধ্যান নেই ও একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আদ্রিয়ানের দিকে। আজ আরেকবার নতুন করে প্রেমে পরে গেল ওর। এরকম করে কজন ছেলে চিন্তা করতে পারে। সত্যিই ও খুব লাকি যে ওর কাছে আদ্রিয়ান আছে, এরকম একজন মানুষ যার পাশে থাকে তার আর কিছু চাওয়ার থাকতেই পারেনা।”

#চলবে…

বর্ষণের সেই রাতে ❤ পর্ব- ৫০

0

বর্ষণের সেই রাতে ❤
পর্ব- ৫০
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

.
সকালে সোফায় বসে নিউস পেপার দেখতে দেখতে চা খাচ্ছেন মানিক আবরার । আর মিসেস আবারার ওনার পাশে বসে টিভি দেখছেন। হঠাৎ কলিং বেল বাজতেই ভ্রু কুচকে দরজার দিকে তাকালেন মানিক আবরার। মিসেস আবরার উঠে ওরনাটা ঠিক করে দরজা খুলতে গেলেন। দরজা খুলে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যাক্তিকে দেখে চমকে উঠলেন উনি। চোখ দুটো ছলছল করে উঠলো। ওনার সামনে ওনার ছেলে আদ্রিয়ান দাঁড়িয়ে আছে। আদ্রিয়ান হেসে মিসেস আবরারকে জরিয়ে ধরে বলল,

— ” কেমন আছো?”

মিসেস আবরার আদ্রিয়ানকে ছাড়িয়ে নিয়ে উল্টো ঘুরে অভিমানী কন্ঠে বলল,

— ” ছাড় আমায়। এতোদিন পর এসে এখন ঢং দেখাচ্ছে।”

আদ্রিয়ান ওর মাকে পেছন থেকে জরিয়ে ধরে বলল,

— ” এতোদিন পর এলাম তাও এভাবে কথা বলছো?”

মিসেস আবরার আবারো ওকে ঝাড়া দিয়ে ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,

— ” কে বলেছে আসতে? চলে যা।”

আদ্রিয়ান মুখ ফুলিয়ে বলল,

— ” সত্যি চলে যাবো?”

মিসেস লিমা এবার ঘুরে আদ্রিয়ানের গালে একটা থাপ্পড় মেরে দিয়ে বলল,

— ” বাদর ছেলে, নিজের বাড়ি নিজের ঘর ছেড়ে এতোগুলো বছর ধরে বাইরে পরে আছিস। কোথাও আমি রাগ করবো তা না উনি নিজেই রাগ করছে।”

আদ্রিয়ান হেসে ওনাকে জরিয়ে ধরে বলল,

— ” আই মিসড ইউ। ”

মিসেস আবরারও আদ্রিয়ানকে জরিয়ে ধরে বলল,

— ” হ্যাঁ তাইতো এতোদিন পর আসার ইচ্ছে হলো।”

আদ্রিয়ান মিসেস আবরারের দুই কাধে হাত রেখে বলল,

— ” ভেতরে যেতে দেবে না নাকি এখান থেকেই ফেরত পাঠিয়ে দেবে?”

মিসেস আবরার ওর কান টেনে ধরে বলল,

— ” মারবো এক থাপ্পড় চল ভেতরে চল।”

মিসেস আবরার ভেতরে যেতে যেতে বললেন,

— ” এইযে শুনছো দেখো কে এসছে।”

মানিক আবরার পেপার নামিয়ে ভ্রু কুচকে বলল,

— ” কে এসছে?””

মিসেস আবরার খুশি হয়ে বললেন,
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
— ” এদিকে দেখো?”

মানিক আবরার ঘুরে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলেন। অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে গেলো। আদ্রিয়ান মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। মানিক আবরার গলাটা হালকা ঝেড়ে গম্ভীর কন্ঠে বললেন,

— ” তো এতোদিনে আসতে ইচ্ছে হলো?”

আদ্রিয়ান মাথা নিচু করেই বলল,

— ” না এলে খুশি হতে মনে হয়।”

মানিক আবরার শক্ত কন্ঠে বলল,

— ” হ্যাঁ এটাই তো পারো, উল্টো বুঝতে। নিজের বাবার একটা থাপ্পড় এতোটা গায়ে লাগল তোমার।”

আদ্রিয়ান মানিক আবরারের দিকে তাকিয়ে বললেন,

— ” তোমার অধিকার আছে আমাকে থাপ্পড় মারার। কিন্তু আমাকে বোঝাটাও কী তোমার কর্তব্য ছিলো না?”

মানিক আবরার এবার মাথা নিচু করে একটা শ্বাস ফেলে বললেন,

— ” হুম আমার ভুল ছিলো। কিন্তু ভুলটা সুধরে নেওয়ার একটা সুযোগ তো দেবে? তা না করে সম্পূর্ণ যোগাযোগ করে দিয়েছিলে।”

আদ্রিয়ান এবার মুখ ছোট করে মাথা চুলকে বলল,

— ” আচ্ছা সরি।”

মানিক আবরার মুখে হাসি ফুটিয়ে আদ্রিয়ানকে এসে জরিয়ে ধরে বলল,

— ” আমিও সরি। আমার তোমার ইচ্ছেকে গুরত্ব দেওয়া উচিত ছিলো।”

মিসেস আবরার খুশি হয়ে বললেন,

— ” এবার কিন্তু আমি তোকে আর কোথাও যেতে দিচ্ছিনা।”

আদ্রিয়ান ওর মায়ের দিকে ভ্রু কুচকে তাখিয়ে বলল,

— ” আরে এসছি কী যাওয়ার জন্যে নাকি? আজকে থেকে এখানেই থাকছি আমি।”

আদ্রিয়ান এর কথা শুনে মিস্টার আর মিসেস চৌধুরী দুজনেই খুশি হলো। মানিক আবরার একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে বলল,

— ” এতোদিনে আমার বুকের ওপর থেকে একটা পাথর নামলো।”

আদ্রিয়ান মুচকি হেসে বলল,

— ” আমি কিন্তু একা আসিনি সাথে বোনাস গিফট ও নিয়ে এসছি।”

মিসেস আবরার ভ্রু কুচকে বললো,

— ” বিয়ে করে বউ নিয়ে আসিস নি তো?”

আদ্রিয়ান মুচকি হেসে বলল,

— ” অনেকটা কাছাকাছি আছো। বউই এনেছি তবে হবু বউ। মানে তোমাদের বউমা।”

মানিক আবরার অবাক হয়ে বললেন,

— ” কী বলছো? কোথায় সে?”

আদ্রিয়ান মুচকি হেসে বলল,

— ” আছে গাড়িতে। আমি ফোন করলে ভেতরে আসবে।”

মিসেস আবরার উত্তেজিত হয়ে বললেন,

— ” আরে ওকে ভেতরে নিয়ে আয়। দাঁড়া আমিই যাচ্ছি।”

বলে যেতে নিলেই আদ্রিয়ান থামিয়ে দিয়ে বলল,

— ” ওয়েট ওয়েট। ওর সাথে দেখা করানোর আগে তোমাদের কিছু বলার আছে।”

মানিক আবরার ভ্রু কুচকে বললেন,

— ” কী বলবে? ”

আদ্রিয়ান একটা শ্বাস ফেলে বলল,

— ” বসো বলছি।”

আদ্রিয়ান এবার ওনাদের দুজনকে অনিমার ব্যাপারে কিছু কথা বলল, সব শুনে মিস্টার আবরার বললেন,

— ” ওই তাহলে।”

আদ্রিয়ান মাথা নেড়ে বলল,

— ” হ্যাঁ। সবতো শুনলে। এখন বুঝতেই পারছো ওর কেমন পরিবেশ চাই।”

মিসেস আবরার অধৈর্য হয়ে বললেন,

— ” আরে কতোক্ষণ মেয়েটাকে বাইরে রাখবি? এবার নিয়ে আয় ভেতরে।”

আদ্রিয়ান ওনাদের দুজনের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে ফোন বের করে কাউকে কল করে বলল,

— ” ভেতরে এসো।”

ফোন রেখে আদ্রিয়ান বেড়িয়ে এগিয়ে আনতে গেলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই অনিমার হাত ধরে বাড়ির ভেতরে নিয়ে এলো আদ্রিয়ান। মানিক আবরার আর মিসেস আবরার দুজনেই অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। অনিমা ওনাদের দুজনকেই সালাম দিলো। মিসেস আবরার অনিমার সামনে এসে ওর থুতনি ধরে বলল,

— ” এরকম মিষ্টি একটা মেয়েকেই তো আমার আদ্রিয়ানের জন্যে চেয়েছিলাম আমি। একদম আমার মনের মতো।”

বলে অনিমার কপালে একটি চুমু দিয়ে বলল,

— ” সব ঠিক আছেতো মা? আমার ছেলেকে নিয়ে কোনো অভিযোগ নেই তো?”

মিসেস আবরারের এসব কথায় বেশ লজ্জা লাগছে অনিমার। তবুও নিচু কন্ঠে জবাব দিলো,

— ” না আন্টি।”

মিসেস আবরার ভ্রু কুচকে বলল,

— ” আন্টি কী হ্যাঁ? আদ্রিয়ানের মা মানেতো তোরও মা। তাই আজ থেকে আমাকে মা বলেই ডাকবি। আজ থেকে তো তুই আমারই মেয়ে।”

অনিমা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। কাউকে মা বলে ডাকার সৌভাগ্য এর আগে ওর হয়নি। বুকের ভেতরে কেমন ভার ভার হয়ে আসছে। মানিক আবরারও এগিয়ে এসে বললেন,

— ” শুধু ওকে মা বলে ডাকলেই চলবেনা কিন্তু, আমাকেও বাবা বলে ডাকতে হবে। বলবেতো মামনী?”

মামনী ডাকটা শুনে চমকে গেলো অনিমা। ওর আব্বুও তো ওকে মামনী বলেই ডাকতো। এতোবছর পর আবার সেই ডাকটা শুনে আর নিজেকে সামলে রাখতে পারলোনা কেঁদে দিলো অনিমা। অনিমা কাঁদতে দেখে আদ্রিয়ান কিছু বলবে তার আগেই মিসেস আবরার অনিমাকে ধরে সোফায় বসিয়ে আলতো করে জরিয়ে ধরে বললেন,

— ” কাঁদেনা মা। বাবা মা তো চিরকাল কারো বেঁচে থাকে না। হ্যাঁ এটা সত্যি যে তোর বাবার মৃত্যুটা স্বাভাবিক ছিলোনা। কিন্তু নিজেকে তো শক্ত রাখতে হবে।”

মানিক আবরার অনিমার আরেকপাশে বসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,

— ” আদ্রিয়ান সব বলেছে আমাদের। নিজেকে একদম একা ভাববি না। আমরা আছি তো তোর সাথে, আর সবসময় থাকবো।”

আদ্রিয়ান হাত ভাজ করে দাঁড়িয়ে দেখছে তিনজনকে। মনে মনে এক অদ্ভুত শান্তি পাচ্ছে। অনিমাকে একটা পরিবার দিতে পেরেছে এটা ভেবেই মনটা অনেক হালকা লাগছে ওর।

এরপর খেতে বসে হলো আরেক ঝামেলা। মানিক আবরার আর মিসেস আবরার দুজনেই অনিমাকে খাইয়ে দেবে। আদ্রিয়ান অসহায় দৃষ্টিতে একবার নিজের বাবার দিকে দেখছে আরেকবার নিজের মায়ের দিকে তারপর বাচ্চাদের মতো করে বলল,

— ” এটা কিন্তু ঠিক না। এতোদিন পর আমি বাড়িতে এলাম অথচ আমার দিকে একটু ঘুরেও দেখছোনা তোমারা। উল্টে নিজের বউমা কে নিয়ে পরে আছো। আমাকেও কেউ একটু খাইয়ে দাও।”

মিসেস অাবরার বিরক্তিকর কন্ঠে বললেন,

— ” এই এতো বড় হয়েছিস খাইয়ে দিতে হবে কেনো রে? চুপচাপ নিজের হাত খেয়ে নে।”

মানিক আবরার ও স্ত্রীর কথায় সহমত হয়ে বললেন,

— ” তাইতো। নিজের হাতে খাও।#

আদ্রিয়ান বোকার মতো কিছুক্ষণ দুজনের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল,

— ” বাহ বাহ। বিয়ের পর মেয়েরা পর হয়ে যায় শুনেছিলাম। কিন্তু হবু বউমা কে দেখার সাথে সাথে যে ছেলেরাও পর হয়ে যায় আজ দেখে নিলাম।”

অনিমা এতোক্ষণ বেশ ইনজয় করছিলো, আদ্রিয়ানের কথাটা শুনে ওও হেসে দিলো। আর মিস্টার এন্ড মিসেস আবরারও হেসে দিলো। মিসেস আবরার হাসতে হাসতেই বলল,

— ” ব্যাস অনেক হয়েছে। আয় তোকে আমি খাইয়ে দিচ্ছি।”

এরপর মানিক আবরার অনিমাকে আর মিসেস আবরার অাদ্রিয়ানকে খাইয়ে দিতে লাগলো। আজ ওইবাড়ি আনন্দে মেতে উঠেছে। এতোদিন পর ঘরের ছেলে বাড়িতে ঘরে ফিরে এসছে। সাথে ছেলের বউ। এরচেয়ে ভালো আর কী হতে পারে।

______________________

রিক নিজের রুমে বসে ফোন স্ক্রল করছিলো। দরজার কাছে স্নিগ্ধা এসে নক করে বলল,

— ” রিক দা আসবো?”

রিক ফোন থেকে চোখ সরিয়ে দরজার দিকে তাকিয়ে স্নিগ্ধাকে দেখে বলল;

— ” আয় ভেতরে আয়।”

স্নিগ্ধা ভেতরে এসে বসতেই রিক ফোনের চোখ রেখেই প্রশ্ন করলো,

— ” কিছু বলবি?”

স্নিগ্ধা কিছুক্ষণ চুপ থেকে তারপর ইতস্তত করে বলল,

— ” আসলে বাড়িতে বসে বোর হচ্ছিলাম। তাই বলছিলাম যে আমাকে একটু ঘুরিয়ে আনবে বাইরে থেকে। ”

রিক ফোন থেকে চোখ না সরিয়েই বলল,

— ” হঠাৎ ঘুরতে যাওয়ার শখ হলো?”

স্নিগ্ধা নিচু কন্ঠে বলল,

— ” ঐ যে বললাম বোর হচ্ছি বাড়িতে বসে তাই আর কী। তুমি যেতে না চাইলে সমস্যা নেই। আমি জোর করবো না।”

রিক কিছু না বলে নিজের মতো ফোন স্ক্রল করে যাচ্ছে। স্নিগ্ধা মন খারাপ করে উঠে চলে যেতে নিলেই রিক বলে উঠল,

— ” আধ ঘন্টার মধ্যে রেডি হয়ে নে। বেশি টাইম লাগালে আমি যাবোনা কিন্তু।”

স্নিগ্ধা তাড়াতাড়ি চলে গেলো রেডি হতে। এরপর দুজনে দুপুর পর্যন্ত বিভিন্ন জায়গাতে ঘুরেছে। আজ রিক স্নিগ্ধাকে সেই আগের মতোই ট্রিট করেছে।

______________________

বিকেল বেলা অনিমা আদ্রিয়ানদের বাড়ির যেই রুমে ওকে থাকতে দেওয়া হয়েছে তার ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে একমনে আকাশের দিকে তাকিয়ে কিছু ভাবছে। হঠাৎ মাথায় কেউ টোকা দিতেই অনিমা পেছন ঘুরে দেখলো আদ্রিয়ান। আদ্রিয়ান মুচকি হেসে বলল,

— ” কী ভাবছো?”

অনিমা কিছু না বলে হেসে দিয়ে আদ্রিয়ানকে জরিয়ে ধরে বলল,

— ” থ্যাংক ইউ, থ্যাংক ইউ সো মাচ। ”

আদ্রিয়ানও অনিমাকে দুইহাতে জরিয়ে নিয়ে বলল,

— ” কেনো?”

অনিমা মাথা তুলে বলল,

— ” আমার জীবণে আসার জন্যে। ”

আদ্রিয়ান অনিমার কপালে কপাল লাগিয়ে বলল,

— ” থ্যাংকস্ টু।”

অনিমা ভ্রু কুচকে বলল,

— ” কেনো?”

— ” আমার লাইফে আসার জন্যে।”

দুজনেই দুজনের দিকে তাকিয়ে হেসে দিলো। আদ্রিয়ান অনিমার চুল ঠিক করতে করতে বলল,

— ” হুম এবার তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও তো।”?

অনিমা অবাক হয়ে বলল,

— ” কেনো?”

আদ্রিয়ান অনিমার দিকে তাকিয়ে একটা গম্ভীর শ্বাস নিয়ে বলল,

— ” তোমার বাবার মতো একজন মানুষকে যারা এতোটা নির্মমভাবে খুন করেছে তারাতো এভাবে খোলা নিশ্চিন্তে ঘুরে বেড়াতে পারেনা তাইনা? এমনিতেই ওদের শাস্তি দেওয়া যেতো কিন্তু তুমি চাও আইন ওদের শাস্তি দেক তাহলে সেটাই হবে”

অনিমা কিছু একটা ভেবে বলল,

— ” হুম বাট কী করতে চলেছি আমারা।”

আদ্রিয়ান রেলিং ও ভর দিয়ে বলল,

— ” ওদের সবাইকে একজায়গায় ডেকেছি আমি। আমরা যদি একটা টিম হয়ে কাজটা করি তাহলে অনেক সহজ হবে। আর আমাদের এই টিমে রিক ও আছে।”

অনিমা অবাক হয়ে তাকিয়ে বলল,

— ” রিক?”

আদ্রিয়ান মুচকি হেসে বলল,

— ” হ্যাঁ এবার দেরী করোনা তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও। ওরা ওয়েট করবে।”

অনিমা কথা না বাড়িতে রেডি হতে চলে গেলো আর আদ্রিয়ান নিজেও রেডি হতে গেলো।

______________________

একটা টেবিলের চরপাশে বসে আছে আদ্রিয়ান, অনিমা, রিক, স্নিগ্ধা, আদিব, আশিস, তীব্র, অরুমিতা, স্নেহা সবাই। তীব্র স্নেহা আর আশিস অরুমিতা যে একে ওপরকে এভোয়েট করছে সেটা বুঝতে পারলো অনিমা তবে আপাদত কিছু বললোনা। আদ্রিয়ান আদিবের দিকে তাকিয়ে বললেন,

— ” হাসান স্যার যেই আর্টিকেল করতে চেয়েছিলেন সেই আর্টিকেলের ওপর যেসব জার্নালিস্ট রা কাজ করছিলো তাদের বর্তমান নাম, এড্রেস, নাম্বার কালেক্ট করা শেষ?”

আদিব একটা কাগজ আদ্রিয়ানের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,

— ” হ্যাঁ আতাউর, মুসফিক, মিতা,সম্পা, ইলিয়াস এই পঁচজন ছিলো। মিতা মেয়েটি এই কেসের একটা এভিডেন্স এর ছবি তুলতে গিয়ে খুন হয়। বাকিদেরটা দেওয়া আছে।”

আদ্রিয়ান কাগজটাতে চোখ বুলিয়ে বলল,

— ” আতাউর, মুসফিক, সম্পা আর ইলিয়াস। এই চাল জনের মধ্যে কেউ একজন নিউস লিক করতো। সবার আগে তাকেই ধরতে হবে। অনিমা আর্টিকেলের কিছু ডিটেইলস যেটা তোমার কাছে ছিলো সেই ফাইলটা বার করো।”

অনিমা সেই ফাইলটা বার করে আদ্রিয়ানের হাতে দিলো। আদ্রিয়ান নিজের পকেট থেকে একটা প্যাকেটে কিছু ছবি বের করে টেবিলে রেখে বলল,

— ” এই ছবিগুলো মিতা তুলেছিলো। ওরা মিতাকে মারতে পারলেও মরার আগে ছবিগুলো মিতা হাসান স্যারকে পাঠিয়েছিলেন।”

অনিমা অবাক হয়ে বলল,

— ” আপনি কোথায় পেলেন?”

আদ্রিয়ান অনিমার প্রশ্নকে এরিয়ে গিয়ে বলল,

— ” এই ফাইল আর ছবি এই কেসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এভিডেন্স। তাই এগুলোকে নিরাপদে রাখতে হবে। খুব সেভলি।”

এই কথাতে রিক বলে উঠলো,

— ” এগুলো আমি আমার কাছে রাখছি।”

সবাই রিকের দিকে তাকাতেই রিক ইতস্তত করে বলল,

— ” যদি তোমাদের কারো আমাকে বিশ্বাস করতে প্রবলেম না থাকে তো।”

আদ্রিয়ান মুচকি হেসে ফাইল আর ছবিগুলো রিকের হাতে দিয়ে বলল,

— ” তোমাকে অবিশ্বাস করার কারণ নেই। আই নো তুমি তোমার দ্বায়িত্য কী সেটা ভালোকরেই জানো।”

রিক ওগুলো নিয়ে আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিলো।

মিটিং শেষে যে যার যার বাড়িতে চলে গেলো। রঞ্জিত চৌধুরী আর কবির শেখ টেবিলে কাজ করছিলেন। রিক সোজা গিয়ে ঐ টেবিলের ওপর ঐ ফাইল আর ছবিগুলোর প্যাকেট দুটোই ঠাস করে রাখল। আওয়াজ পেয়ে দুজনেই তাকালেন টেবিলের দিকে।

#চলবে…

( রি-চেইক করা হয়নি। টাইপিং মিসটেকগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন)

বর্ষণের সেই রাতে ❤ পর্ব- ৪৯

1

বর্ষণের সেই রাতে ❤
পর্ব- ৪৯
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

.
মধ্যরাত, সুইডেনে তেমন বৃষ্টি হয়না, প্রতিবছর পাঁচশ থেকে আটশ মিলিলিটার এর মতো বৃষ্টি হয় । তবে এখন বাইরে গুড়িগুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। পরিবেশটা নিস্তব্ধ। হালকা ঠান্ডা বাতাসে কেমন একটা শীত শীত ভাব আসছে। প্রকৃতিও আজ বেশ গম্ভীর ভাব প্রকাশ করছে। বিছানায় বসে দুই হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে আছে রিক। আদ্রিয়ান পাশে বসে বলল,

— ” ঘুমোবেনা?”

রিক আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে একটা শ্বাস ফেলে আবার সামনে তাকিয়ে বলল,

— ” ঘুম আসবে না আজকে আর।”

আদ্রিয়ান কথাটা শুনে কিছু একটা ভেবে বলল,

— ” আচ্ছা চলো দুজনেই একসাথে জেগে থাকি। এমনিতেও তোমার সাথে তেমন কথা হয়নি। আজ একে ওপরকে ঠিক করে চিনেই নেওয়া যাবে।”

রিক মুচকি হাসলো। তারপর উঠে দাঁড়িয়ে বলল,

— ” আচ্ছা ঠিকাছে আমি কফি আনাচ্ছি তাহলে?”

আদ্রিয়ান সম্মতি জানিয়ে বলল,

— ” হুম কফি হলেতো ভালোই হয়। ঘুম ভাব যেটুকু আছে কেটে যাবে।”

রিক ফোন করে দুমগ কফি আনতে বলল। এরপর রিক আদ্রিয়ানের দিকে তাকাতেই আদ্রিয়ান রিকের কাধে হাত রেখে বলল,

— ” মনকে শক্ত করো। কিছু কিছু জিনিস থাকে যেটা মেনে নেওয়া কষ্টকর হয়। তবে যেটা সত্যি সেটা সত্যিই আর তোমাকে মানতে হবে।”

রিক আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে একটা মলিন হাসি দিলো যার অর্থ আমি নিজেকে সামলে নিয়েছি। আদ্রিয়ান ও সামনের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো আর ভাবতে লাগল যে মুখে হাসি ফুটিয়ে নিজেকে সামলে নিয়েছি বলাটা যতোটা সহজ, বাস্তবে নিজেকে সামলে নেওয়াটা ততোটাই কঠিন হয়।

এদিকে অনিমা আর স্নিগ্ধাও ঘুমোয় নি দুজনেই জেগে বসে আছে। দুজনেই বসে বসে চিপস খেতে খেতে গল্প করছে। আদ্রিয়ান আর অনিমার পরিচয় হওয়া, এরপর বন্ধুত্ব, আদ্রিয়ানের অনিমাকে জোর করে তুলে নিয়ে গিয়ে নিজের কাছে জোর করে আটকে রাখা। সব শুনে স্নিগ্ধা অবাক প্লাস এক্সাইটেড হয়ে বলল,

— ” ওয়াও! এটাতো পুরো ফিল্মি ফিল্মি ব্যাপার।”

স্নিগ্ধার কথা শুনে অনিমা হালকা হেসে বলল,

— ” হুমম। আমার লাইফটাও তো একটা ফিল্মের মতোই। জন্মের পরে আম্মু কে দেখিনি, অসময়ে আব্বুও চলে গেলো, এরপর আমার জীবণে এমন কিছু ঘটনা ঘটেছে যেটা কনো ফিল্মের চেয়ে কম নয়। লাইক ট্রাজিডি মুভি ইউ নো। তবে জীবণের ভালো কিছু পাওয়ার মধ্যে পেয়েছি কিছু বন্ধু আর আদ্রিয়ানকে। এমন একজন মানুষ যে আমাকে নিজের চেয়েও বেশি ভালোবাসে। ”

স্নিগ্ধা মুচকি হেসে বলল,

— ” আর তুই?”

অনিমা কিছু না বলে চোখ সরিয়ে নিয়ে মুচকি হাসলো। স্নিগ্ধা দুষ্টু এক হাসি দিয়ে বলল,

“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন

– ” হুমমম। মনে প্রেম মুখে লাজ তাই তো?”

অনিমা মাথা নিচু করে হাত কচলাতে কচলাতে বলল,

— ” সেরকম কিছু না..”

স্নিগ্ধা ভ্রু কুচকে বলল,

— ” সেরকম কিছু না মানে কী? ভালোবাসিস না তুই আদ্রিয়ানকে?”

অনিমা মাথা নিচু করে ইতস্তত করে বলল,

— ” নাহ মানে হ্যাঁ ।”

স্নিগ্ধা একটা শ্বাস ফেলে বলল,

— ” হুমম। তোর না মানে হ্যাঁ এর মানে খুব ভালোভাবে বুঝে গেছি আমি। বলেছিস ওনাকে এখনো? ”

অনিমা না বোধক মাথা নাড়ল। স্নিগ্ধা একটা হতাশাজনক চাহনী দিয়ে বলল,

— ” তুইও না। এক ছেলে তোকে এতো ভালোবাসে। ইনফ্যাক্ট তুইও ওকে এতো ভালোবাসিস অথচ বলতেই পারলি না।”

অনিমা কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে কিছু একটা ভেবে বলল,

— ” আমার টা ছাড় তোরটা বল। তুইও তো রিক কে ভালোবাসিস তাইনা?”

স্নিগ্ধা হালকা ব্লাস করার সাথে সাথে মুচকি হাসিও দিলো। তারপর অনিমার দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” ছোটবেলা থেকেই। কিন্তু তোর মতো আমার ভাগ্যটা এতো ভালো না। আমি ওকে খুব বেশি ভালোবাসলেও ও আমাকে ভালোবাসেনা। ও তো তোকে ভালোবাসে।”

অনিমা মাথা নিচু করে ফেলল। কী আর বলবে? একটু আনইজি ফিল হচ্ছে ওর। স্নিগ্ধা মুচকি হেসে বলল,

— ” তবে আমি এটুকুতেই খুশি যে রিক দার যদি কোনো বেস্ট ফ্রেন্ড থেকে থাকে সেটা আমি। ”

অনিমা স্নিগ্ধা দিকে তাকিয়ে ঠোঁটের কোণে হালকা হাসি ফুটিয়ে বলল,

— ” একজন বেস্ট ফ্রেন্ডই কিন্তু একজন বেস্ট লাইফ পার্টনার হতে পারে।”

স্নিগ্ধা একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল,

— ” ও কোনোদিন আমাকে ভালোবাসতে পারবেনা রে। ওর মনে শুধু তুই আছিস। ওকে আমি যতোদূর চিনি ও কোনোদিন তোকে ভুলতে পারবেনা। ”

অনিমা মুচকি হাসি দিয়ে বলল,

— ” কাউকে ভালোবাসা মানে এটা নয় যে নতুন করে কাউকে ভালোবাসা যাবে না। নতুন কাউকে ভালোবাসার জন্যে আগের ভালোবাসাকে ভোলার কোনো প্রয়োজন হয়না। পুরোনো ভালোবাসাকে মনের এককোণে রেখে দিয়েও নতুন কারো জন্যে জায়গা তৈরী করা যায়। আর তুই চাইলেই পারবি রিকের মনে জায়গা করে নিতে।”

স্নিগ্ধা হেসে অনিমাকে একটা হাগ করলো। অনিমাও স্নিগ্ধাকে জরিয়ে ধরে রেখে একটা শ্বাস ফেলল আর মনে মনে প্রার্থনা করলো যাতে রিক খুব তাড়াতাড়ি স্নিগ্ধাকে বুঝতে পারে। আর ওর সাথেই নতুন করে সব শুরু করতে পারে।

_____________________

তীব্র অফিসের কাজ সেরে সবে ঘুমিয়েছে, হঠাৎ করে ফোন বেজে ওঠাতে বিরক্ত হয়ে উঠে ফোন হাতে নিয়ে দেখলো স্নেহার ফোন। এইসময় হঠাৎ স্নেহার ফোন পেয়ে বেশ অবাক হলো তীব্র। তবুও রিসিভ করে দুষ্টুমি করে বলল,

— ” খুব মিস করছিলে বুঝি?”

স্নেহা অস্হির কন্ঠে বলল,

— ” বাবা আমার বিয়ে ঠিক করছে তীব্র।”

তীব্র একটু মজা নিয়ে বলল,

— ” ওয়াও। খূব তাড়াতাড়ি একটা দাওয়াত পাবো তাহলে?”

স্নেহা কান্নামিশ্রিত কন্ঠে বলল,

— ” মজা করা বন্ধ করো। আ’ম সিরিয়াস।”

তীব্র বুঝতে পারলো যে স্নেহা যথেষ্ট সিরিয়াস ও মোটেও মজা করছেনা। তাই ঠিক করে উঠে বসে সিরিয়াস কন্ঠে বলল,

— ” মানে?”

স্নেহা কাঁদতে কাঁদতে বলল,

— ” বাবা আমার জন্যে ছেলেও দেখে ফেলেছে। ওনার অফিস ক্লাইনটের ছেলে। খুব তাড়াতাড়ি বিয়ের ডেইট ও ফিক্সট করে ফেলতে চাইছে।”

এটুকু বলে স্নেহা আবার কেঁদে দিলো। তীব্র উত্তেজিত হয়ে বলল,

— ” প্লিজ স্নেহা কান্না বন্ধ করো। বিয়ে ঠিক হচ্ছে, বিয়ে হয়নি এখোনো। তুমি কী আমাদের ব্যাপারে আঙ্কেল কে কিছু বলেছো? তোমার ভয় করলে বলো আমি নিজে কথা বলছি ওনার সাথে। ”

স্নেহা অস্হির কন্ঠে বলল,

— ” আমি বলেছি তীব্র। উনি আমাদের সম্পর্কটা মানছে না। বাবা পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছি যে আমাকে ওনার দেখা ছেলেকেই বিয়ে করতে হবে।”

কথাটা শুনে তীব্র কিছুক্ষণ চুপ থেকে জিজ্ঞেস করলো,

— ” তুমি কী চাইছো এখন?”

স্নেহা নিচু কন্ঠে বলল,

— ” আমি আমার আব্বুর মতের বিরুদ্ধে কিছু করতে পারবোনা তীব্র।”

তীব্র ভ্রু কুচকে বলল,

— ” তারমানে তোমার বাবা বললে তুমি অন্য কাউকে বিয়ে করে নেবে?”

স্নেহা ইতস্তত কন্ঠে বলল,

— ” আমি বারবার বাবাকে বোঝানোর চেষ্টা করছি কিন্তু..”

তীব্র একটা শ্বাস ফেলে বলল,

— ” তাহলে আর কী? ওল দা বেস্ট ফর ইউর ফিউচার ম্যারিড লাইফ।”

— ” তীব্র আমার কথা..”

স্নেহাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ফোনটা কেটে দিলো তীব্র। মেজাজ প্রচন্ড খারাপ হয়ে আছে ওর। নিজেকে কিছুতেই শান্ত করতে পারছেনা। এখন ওর নিজের ওপরই রাগ হচ্ছে যে ভালোবাসা নামক এই প্যারায় কেনো ফেঁসে গেলো?

_____________________

আজ সকালেই বাংলাদেশের ল্যান্ড করেছে আদ্রিয়ান, অনিমা, রিক, স্নেহা, আদিব আর অভ্র। ওরা সবাই একসাথেই ফিরেছে আর এয়ারপোর্ট থেকেই যে যার যার গন্তব্যে চলে গেছে। রিক অনিমাকে বিশেষ কিছু বলেনি তবে আসার সময় শুধু হাতটা ধরে বলেছিলো ‘ভালো থেকো।’ অনিমার রিকের দিকে তাকাতেই খারাপ লাগছিলো কিন্তু ওর কিছুই করার ছিলোনা।

রাতে আদ্রিয়ানের বাড়ির ছাদে বড় দোলনার ওপরে হেলান আছে আদ্রিয়ান। আর অনিমা ওর বুকে মাথা দিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে। খুব বেশি মিস করছিলো একে ওপরকে একয়দিন তাই আজ একে ওপরকে এতো কাছে পেয়ে মুহূর্তটা মনের মতো করে উপভোগ করছে। অনিমা চোখ খুলে আদ্রিয়ানের মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” আপনি কিন্তু বলছিলেন যে ওখান থেকে ফিরে আপনার বাবা মার কাছে যাবেন আর সব ঠিক করে নেবেন।”

আদ্রিয়ান অনিমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,

— ” এসব কথা পরে বলি না।”

অনিমা জেদ ধরে বলল,

— ” নাহ আমি কোনো অজুহাত শুনবো না। ইউ প্রমিসড মি আদ্রিয়ান।”

আদ্রিয়ান মুচকি হেসে বলল,

— ” আচ্ছা ঠিকাছে। কালকেই যাবো আর ওনাদের হবু বউমাকেও ওনাদের দেখাতে হবে তাইনা?”

অনিমা আদ্রিয়ানের কথায় হালকা লজ্জা পেলো তাই চুপ করে মাথা নিচু রইলো। আদ্রিয়ান অনিমার চুলগুলো কানের পিঠে গুজতে গুজতে বলল,

— ” তুমি এতো লজ্জা কেনো পাও বলোতো? জানো তোমার এই লজ্জা পাওয়া মুখটা আমার বুকে গিয়ে লাগে? আর তুমি যদি আমাদের ফার্স্ট নাইটেও এরকমি লজ্জা পেতে থাকো তাহলেতো আমি তোমার এই মুখ দেখেই হার্টফেইল করবো।”

অনিমা উঠে চলে যেতে নিলেই আদ্রিয়ান ওর হাত ধরে টেনে নিজের কোলে বসিয়ে বলল,

— ” কাল আমার বাড়িতে গিয়ে কিন্তু আরেকটা জিনিসও ঠিক করবো।”

অনিমা ভ্রু কুচকে বলল,

— ” কী?”

আদ্রিয়ান অনিমার কানের কাছে ফিসফিসয়ে বলল,

— ” আমাদের বিয়ের ডেট।”

অনিমা কিছু না বলে মাথা নিচু করে আদ্রিয়ানের বুকে আঙ্গুল দিয়ে আঁকিবুকি করতে লাগল। আদ্রিয়ান অনিমার আলতো করে জরিয়ে ধরে বলল,

— ” আই লাভ ইউ।”

অনিমা কিছু না বলে চোখ বন্ধ করে ঐ ম্যাজিক্যাল তিনটে ওয়ার্ডকে উপভোগ করলো, কিন্তু আজকেও কোনো এক জড়তার কারণে বলতে পারলোনা না যে ‘ আই লাভ ইউ টু।’

_____________________

মিস্টার রঞ্জিত আর কবির শেখ মিস্টার রঞ্জিতের বেডরুমে বসে আছে। রিক দরজার কাছে দাঁড়িয়ে স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বলল,

— ” ডেকেছিলে?”

মিস্টার রঞ্জিত গম্ভীর কন্ঠে বললেন,

— ” ভেতরে এসো।”

রিক ভেতরে গিয়ে সোজা সোফায় গিয়ে বসলো। কবির শেখও গম্ভীরভাবে বসে আছে। মিস্টার রঞ্জিত রাগী কন্ঠে বললেন,

— ” কী শুরু করেছো কী তুমি?”

রিক আলসেমি ঝেড়ে অত্যন্ত নরমাল ভাবেই বলল,

— ” কী করেছি আমি সেটাতো বলবে?”

কবির শেখ এবার মুখ খুললেন। উনিও গম্বীর কন্ঠে বললেন,

— ” তুমি হাসান কোতয়ালের মেয়েকে ঐ আদ্রিয়ানের কাছে দিয়ে আসোনি?”

রিক এবারেও স্বাভাবিকভাবেই বলল,

— ” হ্যাঁ তো?”

মিস্টার রঞ্জিত ছেলের খাপছাড়া ভাব দেখে ভীষণ রেগে গিয়ে বললেন,

— ” ঐ মেয়েকে ছেড়ে দেওয়া মানে কী বুঝতে পারছো? ওর খোলা ঘুরে বেড়ানোটা আমার জন্যে কতোটা রিস্কি জানো না তুমি? ”

রিক ভ্রু কুচকে বিরক্তিকর কন্ঠে বলল,

— ” হ্যাঁ জানি।”

মিস্টার রঞ্জিত এবার আর বসে থাকতে পারলেন না, উঠে দাঁড়িয়ে রাগে ফুসতে ফুসতে বললেন,

— ” কী পেয়েছো কী তুমি হ্যাঁ? সবকিছু এতো নরমালি নিচ্ছো? অামাদের কথা চিন্তাও করছো না? আর তুমি নাকি ভালোবাসো ঐ মেয়েকে? তার কী হলো? উবে গেলো নাকি সব ভালোবাসা? আর আমার ছেলে হয়ে তুমি এতো সহজে হার মেনে নিলে?”

রিক এবার শব্দ করে হেসে দিলো। জোরে জোরে হাসছে ও। মিস্টার রঞ্জিত, কবির শেখ অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন। রিক কোনোরকমে হাসি থামিয়ে বলল,

— ” কাম অন ড্যাড। তোমার কী মনে হয়? আমি এতো সহছে হার মেনে নেবো? আমি তোমার আর মামার দেওয়া শিক্ষায় বড় হয়েছি ড্যাড! যা করি ঠান্ডা মাথায় প্লান করেই করি। দেখো অনিমাকে এমনিতেও আটকে রাখতে পারতাম না আমি। তাই প্লান করে ওদের টিম জয়েন করলাম। যাতে ওরা কী করছে কী প্লান করছে কী চাল চালছে সবটাই বুঝতে পারি আমি। ওদের টিমে থেকেই ওদের মাত দেওয়াটা খুব সহজ হবে তাইনা? ওরা মাত হলেই তো সবকিছু আমাদের। আদ্রিয়ানও মরবে, প্রমাণ ও লোপাট হবে আর অনিমাও আমার হবে। ওরা না হয় বোকা তাই আমার নাটকটা বুঝতে পারলোনা, বিশ্বাস করে নিলো আমায় । বাট এই ছোট্ট বিষয়টা তোমাদেরও মাথায় ঢুকলোনা?”

মিস্টার রঞ্জিত আর কবির শেখ অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন রিকের দিকে। এরপর দূজনেই হেসে দিলেন। মিস্টার রঞ্জিত হাসতে হাসতে বললেন,

— ” আমি তোমাকে বলেছিলাম না কবির ও আমার ছেলে। ওরকম বোকামি ও কোনোদিনও করবে না। দেখলেতো? ঠিক সেটাই হলো?”

কবির শেখ ও একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে বললেন,

— ” আরেহ আমি তাইতো বলি যে বাবাই এমন কেনো করবে? আমার আগেই বোঝা উচিত ছিলো যে এটা রিক চৌধুরী।”

রিক হেসে দিয়ে বলল,

— ” এক্সাক্টলি। তোমাদের আগেই বোঝা উচিত ছিলো আমি রিক চৌধুরী। রঞ্জিত চৌধুরীর রক্ত বইছে আমার শরীরে আর কবির শেখ এর শিক্ষা। কাউকে ছেড়ে দেই না আমি, কারো কাছে হার মানাতো দূরের কথা। আর এখনো তো অনেক হিসেব মেটানো বাকি।”

বলেই ওনাদের দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিলো রিক। মিস্টার রঞ্জিত আর কবির শেখ একই ভঙ্গিতে হাসলেন। যেটাকে বলা হয় বিজয়ের হাসি।

#চলবে…

বর্ষণের সেই রাতে ❤ পর্ব: ৪৮

0

বর্ষণের সেই রাতে ❤
পর্ব: ৪৮
.

#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

স্নিগ্ধা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে রিকের দিকে।হঠাৎ করেই লোকটা কতোটা বদলে গেলো। রিক কে কষ্ট পেতে দেখে ওরও কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু কিছু করার নেই। রিক ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” আমি একটু আসছি। আদিব আর অভ্র নিচে বসে আছে।”

বলে রিক চলে গেলো স্নিগ্ধা ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। তারপর ওও চলে গেলো কিচেনে কী রান্না হচ্ছে দেখতে।

অনিমা আদ্রিয়ানকে জরিয়ে ধরে এখনো কেঁদে যাচ্ছে। আদ্রিয়ান এবার অনিমাকে ছাড়িয়ে ওর চোখ মুছে দিয়ে বলল,

— ” অনি আমি কিন্তু কান্না থামাতে বলছি। প্লিজ থামো এবার।”

অনিমা আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে ভাঙ্গা গলায় বলশ,

— ” আমাকে নিয়ে চলুন এখান থেকে। প্লিজ।”

আদ্রিয়ান অনিমার দুই গালে হাত রেখে বলল,

— ” যাবেতো। এক্ষুনি নিয়ে যাবো তোমাকে। একটু সুস্হ হও।”

অনিমা অস্হির হয়ে বলল,

— ” আমি পুরো সুস্হ আছি প্লিজ আমাকে এক্ষুনি নিয়ে চলুন।”

আদ্রিয়ান কিছু একটা ভেবে বলল,

— ” আচ্ছা চলো।”
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
বলে অনিমাকে কোলে তুলে নিতে গেলেই রিক এসে বলল,

— ” কোথাও যাবে না তোমরা এখন।”

রিক কে দেখেই অনিমা বেশ ঘাবড়ে গেলো। আদ্রিয়ানের শার্ট খামচে ধরে ওর সাথে লেগে রইলো। আদ্রিয়ান অনিমার মাথায় হাত রেখে ওকে আশ্বস্ত করে, দাড়িয়ে রিকের সামনে গিয়ে বলল,

— ” কে আটকাবে আমাদের? তুমি?”

রিক আদ্রিয়ানের চোখে চোখ রেখে বলল,

— ” যদি বলি হ্যাঁ?”

আদ্রিয়ান চোখ সরিয়ে হালকা হেসে আবার রিকের দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” তোমার এখনো মনে হয় যে তোমার সেই ক্ষমতা আছে? ”

রিক গম্ভীর কন্ঠেই বলল,

— ” হুম আছে। শত্রু হিসেবে না হোক বন্ধু হিসেবে তো আটাকাতেই পারি তাইনা?”

বলে মুচকি হাসি দিলো রিক। আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে তাকালো আর ভাবতে শুরু করলো যে রিক অভিনয় করার মানুষ নয়। ও যা করে যেটুকু করে সেটুকু প্রকাশ্যেই করে। তবে হঠাৎ বদলের কারণ কী? অনিমাও রিকের শেষ কথাটুকু শুনে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। রিক হেসে বলল,

— ” কী ভবছো? হঠাৎ এভাবে বদলে গেলাম কীকরে তাইতো? হ্যাঁ দেরীতে হলেও বুঝেছি যে ও আমার ভাগ্যে নেই। ও তোমার সাথেই ভালো থাকবে আর ওর ভালোথাকাটাই সবচেয়ে বেশি ইমপর্টেন্ট। জানি আমাকে বিশ্বাস করা কষ্টকর কিন্তু একবার করেই দেখো, ঠকবেনা।”

আদ্রিয়ান মুখে হালকা হাসি ফুটিয়ে রিকের কাধে হাত রেখে বলল,

— ” ভুল সব মানুষই করে তবে সেটা সঠিক সময়ে বুজতে পারাটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আর তুমি যদি সত্যিই নিজের ভুলটা বুঝতে পেরে থাকো তাহলে তার চেয়ে ভালো আর কিছুই হতে পারেনা।”

রিক এবার অনিমার কাছে গেলো। রিক অনিমার সামনে বসতেই ও হালকা পিছিয়ে গেলো। সেটা দেখে রিক মলিন হেসে বলল,

— ” ক্ষমাটুকুও চাইতে দেবেনা?”

অনিমা কিছু না বলে চোখ সরিয়ে নিলো। রিকের অনিমাকে মুখ ঘুরিয়ে নেওয়াটা বুকে গিয়ে লাগল, কিন্তু এই ভেবে নিজেকে শান্তনা দিলো যে এটা ওর পাওয়নাই ছিলো। রিক এবার সোজা বেড থেকে নেমে অনিমার সামনের ফ্লোরে বসে হাত জোড় করে বলল,

— ” আমি জানি আমি সবচেয়ে বেশি অন্যায় তোমার সাথেই করেছি। যেইমুহূর্তে আমি তোমার লাইফে এসছিলাম আমি চাইলেই পারতাম তোমার জীবণটাকে সুন্দর করতে। কিন্তু আমি জানার চেষ্টাই করি নি যে তোমার লাইফে কোনো প্রবলেম আছে কী না। যখন তোমার মামা মামী কটা টাকা পেয়েই তোমাকে আমায় দিয়ে দিতে রাজী হয়ে গেছিলো আমার সেই মূহুর্তে বোঝা উচিত ছিলো যে তোমার সাথে ওখানে কী কী হয়। কিন্তু আমি সেটা বোঝার চেষ্টাও করিনি। জানি আমি যেটা করেছি তার ক্ষমা হয়না। কিন্তু যতক্ষণ তুমি আমাকে ক্ষমা না করবে শান্তি পাবোনা আমি। আমাকে ক্ষমা করা এতো সহজ নয় আই এগরি কিন্তু প্লিজ কষ্ট করে হলেও আমাকে ক্ষমা করে দাও। আইম রিয়েলি ভেরি সরি ফর এভরিথিং। প্লিজ। ”

রিকের চোখ হালকা ছলছল করছে। অনিমা অসহায় দৃষ্টিতে একবার রিকের জোড় করা হাতের দিকে দেখছে একবার রিকের দিকে, ওর কী করা উচিত ও সেটাই বুঝতে পারছে না। কেউ ওর সামনে হাটু ভেঙ্গে বসে হাত জোড় করে ক্ষমা চাইলে তাকে ক্ষমা না করাটা কী সত্যিই ঠিক? এরমধ্যে স্নিগ্ধাও চলে এলো আর এই দৃশ্য দেখে ও নিজেই অবাক হয়ে গেলো। অনিমার চোখ দিয়ে পানি পরছে, ও কী করবে কিছুই বুঝতে পারছেনা। অনিমাকে চুপ থাকতে দেখে রিক এবার অনিমার পা ধরলো। অনিমা চমকে গিয়ে সাথেসাথেই পা সরিয়ে নিয়ে বলল,

— ” প্লিজ, আপনি আমার বড়। এসব করবেন না।”

রিক মুচকি হেসে বলল,

— ” ক্ষমা চাওয়ার অধিকার প্রত্যেক অপরাধীর আছে। সেখানে বড় ছোট মেটার করেনা। প্লিজ ক্ষমা করে দাও।”

অনিমা আদ্রিয়ানের দিকে তাকাতেই আদ্রিয়ান চোখের ইশারায় বলল ক্ষমা করে দিতে। অনিমা রিকের দিকে তাকিয়ে নিচু কন্ঠে বলল,

— ” আপনি যদি নিজের ভুলটা বুঝতে পেরে থাকেন তাহলে ক্ষমা চাইতে হবেনা। আপনি বুঝতে পেরেছেন সেটাই অনেক।”

রিক এবার বাচ্চাদের মতো মুখ করে বলল,

— ” আজব! চাইলাম চকলেট তুমি লজেন্স দিয়ে ভাগিয়ে দিচ্ছো? এটা কিন্তু ঠিক না। আমি ওসব বোকা বাচ্চাদের দলে কিন্তু একদমি পরিনা যে চকলেটের বদলে লজেন্সে কাজ চালিয়ে নেবে ওকে?”

রিকের কথা শুনে অনিমা ফিক করে হেসে দিলো। আদ্রিয়ান আর স্নিগ্ধাও হাসলো তবে নিঃশব্দে। রিক মুখ ফুলিয়ে বলল,

— ” হাসতে বলেনি সরি এক্সেপ্ট করতে বলেছি।”

অনিমা হাসতে হাসতেই বলল,

— ” আচ্ছা করেছি ক্ষমা। আমি আবার কিপ্টে নই যে চকলেটের বদলে লজেন্স দিয়ে দেবো।”

রিক তো অনিমার হাসিটাই দেখছে আর ওর ভেতরের অপরাধবোধ আরো বেড়ে যাচ্ছে। এমন একটা দিন ছিলো যখন এই মিষ্টি হাসিটাকেই ওর মুখ থেকে কেড়ে নিয়েছিলো ও। তবে এটুকু ভেবে ভালোও লাগছে যে প্রথমবার হলেও অনিমার হাসির কারণ হতে পেরেছে ও। রিক নিজেকে সামলে নিয়ে অনিমাকে বলল,

— ” গার্লফ্রেন্ড তো হলেনা। সে ব্যাপারনা। বাট ফ্রেন্ড তো হতেই পারো তাইনা?”

অনিমা প্রায় অবাক হয়েই তাকিয়ে আছে রিকের দিকে। রিকের একেকটা আচরণে আজ আবাকের ওপর অবাক হচ্ছে অনিমা। তবে স্নিগ্ধা একটুও অবাক হচ্ছেনা কারণ রিকের এই রুপ ও আগেও দেখেছে। মাঝখানের কয়েক বছরের জন্যেই ও হারিয়ে ফেলেছিলো ও ওর রিক দা কে । কিন্তু আজ আবার সেই রূপ দেখতে পাচ্ছে। আর আদ্রিয়ান ও অবাক হয়নি কারণ ও জানতো যে এটা একদিন হওয়ার ছিলোই। রিক অনিমার সামনে চুটকি বাজিয়ে বলল,

— “হ্যালো? বন্ধু হবেনা আমার?”

অনিমা মুচকি হেসে বলল,

— ” হুম।”

রিক হালকা হাসল। আদ্রিয়ান এগিয়ে এসে বলল,

— ” এবার আমাদের বেড়োতে হবে। সন্ধ্যা হয়ে গেছে।”

রিক কিছু বলবে তার আগেই স্নিগ্ধা বলল,

— ” বেড়তে হবে মানে কী ভাইয়া? আজ আপনাদের কোথাও যাওয়া হচ্ছে না। ডিনারের ব্যাবস্হাও করা হচ্ছে। আদিব আর অভ্র ভাইয়াকেও বলা হয়ে গেছে, আপনি থাকলে ওনারাও থাকবেন।”

আদ্রিয়ান বলল,

— ” কিন্তু..”

রিক আদ্রিয়ানকে থামিয়ে দিয়ে বলল,

— ” কোনো কিন্তু না। দেখো এখানে থাকার কারণটা আর নেই। সো কালকেই ফিরে যাবো আমরা বাংলাদেশে । আর মনে হয় তোমরাও কালকেই ব্যাক করতে চাও। তো আজ রাতটা এখানে থেকে কাল একসাথেই বেড়হই না? সমস্যা কী?”

আদ্রিয়ান কিছু একটা ভেবে মুচকি হেসে বলল,

— ” আচ্ছা ঠিকাছে।”

স্নিগ্ধা খুশি হয়ে বলল,

— ” চলো তো আপাদত স্নাকস এর ব্যাবস্হা হয়ে গেছে। নিচে আদিব ভাইয়ারা ওয়েট করছে।”

আদ্রিয়ান স্নিগ্ধার দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” তোমরা দুজন যাও আমি অনিকে নিয়ে আসছি।”

রিক আর স্নিগ্ধা নিচে চলে গেলো। আদ্রিয়ান অনিমার কাছে বসে বলল,

— ” এটাই ভাবছো তো হঠাৎ রিক এতো বদলে গেলো কীকরে?”

অনিমা আদ্রিয়ানের দিকে তাকালো। আদ্রিয়ান অনিমাকে একহাতে জরিয়ে ধরে বলল,

— ” দেখো। ও একটু বখে গেছিলো ঠিকি। কিন্তু মনের দিক দিয়ে খুব একটা খারাপ নয়। আর এইসব মানুষদের নিজের ভুল সম্পর্কে বুঝতে খুব বেশি সময় লাগেটা। শুধু হঠাৎ কোনো এক ঘটনাই যথেষ্ট। বুঝেছো?”

অনিমা মাথা নাড়লো। আদ্রিয়ান অনিমার মাথায় একটা চুমু দিয়ে মনে মনে ভাবলো, তুমি ভাবলে কীকরে যে তোমাকে এতো কষ্ট দিয়েছে তাকে আমি ক্ষমা করে দেবো? ও শাস্তি পাচ্ছে আর ভবিষ্যতেও পাবে। তবে শারিরীক নয় মানসিক। পরপর কয়েকবার বড় কয়েকটা মানসিক ধাক্কার সম্মুখীন হবে ও। তাই ওকে আর বিশেষ কোনো শাস্তি দিলাম না। এসব ভেবে অনিমার দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” এই কয়েকটা দিন অনেক কষ্ট হয়েছে তাইনা? আমারি আরেকটু চোখ কান খোলা রাখা উচিত ছিলো। আ’ম সরি।”

— ” বাদ নিন এসব। এখন তো সব ঠিকই হয়ে গেছে।”

আদ্রিয়ান অনিমার মাথায় হাত বুলিয়ে কিছু একটা ভাবতে ভাবতে বলল,

— ” এখনো সব ঠিক হয়নি। মিস্টার সিনিয়রের সাথে এতো বড় অন্যায় যারা করেছে তাদের শাস্তি দেওয়া এখোনো বাকি আছে।”

অনিমা ভ্রু কুচকে বলল,

— ” মিস্টার সিনিয়র?”

আদ্রিয়ান অনিমাকে কোলে তুলে নিয়ে বলল,

— ” কিছুনা। এখন নিচে চলো ওরা ওয়েট করছে।”

অনিমা আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ওকে নিয়ে নিচে চলে গেলো আদ্রিয়ান।

_____________________

অরুমিতা, তীব্র আর স্নেহা অফিস করে বাইরে ফুচকা খাচ্ছে। আপাদত ওরা ফ্রেশ মাইন্ডে আছে। কারণ আদ্রিয়ান ওদের ফোন করে জানিয়ে দিয়েছে সব ঠিক আছে। তাই ওরা এখন ফ্রেশ মাইন্ডে এনজয় করছে। হঠাৎ করেই ওরা আশিস কে দেখতে পেলো। আশিস আর অরুমিতার মধ্যকার সমস্যাটা তীব্র আর স্নেহা জানেনা। স্নেহা আশিসকে দেখে বলল,

— ” আরে আশিস ভাইয়া?”

কারো ডাক শুনে ঘুরে তাকালো আশিস। আশিসকে দেখে অরুমিতার মুখের হাসিটুকু গায়েব হয়ে গেলো। আশিস ওদের দেখে এগিয়ে এলো। আশিস এসে অরুমিতা দিকে তাকাতেই অরুমিতা মুখ ঘুরিয়ে ফেলল। আশিস অরুমিতার দিকে একবার তাকিয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” ভালো আছো?”

তীব্র হেসে বলল,

— ” জ্বি ভাইয়া? আপনি?”

আশিস ও মুখে হাসি রেখেই বলল,

— ” হ্যাঁ ভালো আছি।”

আশিস ভেবেছিলো ওকে দেখে হয়তো অরুমিতা ওখান থেকে চলে যাবে বা মন খারাপ করবে। কিন্তু আশিসকে অবাক করে দিয়ে অরুমিতা ওদের সাথে নিজের মতো করে মজা করছে আর ফুচকা খাচ্ছে। জেনো আশিসের থাকা না থাকা ওর কাছে ম্যাটারই করে না। যেটা ওর কাছে খুবই খারাপ লাগছে। স্নিগ্ধা এক্সাইটেট হয়ে বলল,

— ” ভাইয়া ফুচকা খাবেন তো?”

আশিস নিজেকে সামলে নিয়ে মুচকি হেসে বলল,

— ” নাহ সময় নেই আসছি এখন।”

এটুকু বলে কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে চলে গেলো। তীব্র আর সিগ্ধা দুজনেই অবাক হলো। কিন্তু অরুমিতার কোনো ভাবান্তরই হলোনা ও ওর মতো ফুচকা খেয়ে যাচ্ছে।

_____________________

রিক ছাদের কিনারে চুপচাপ বসে আছে। সবকিছু মেনে নিলেও আদ্রিয়ান আর অনিমাকে একসাথে দেখলে বুকের ভেতরে এক অসহ্যকর যন্ত্রণা হয় ওর। কিন্তু ওর কিচ্ছু করার নেই। অনিমা ওর ভাগ্যে নেই সেটা ও মেনে নিয়েছে, কিন্তু কষ্টটাকে কিছুতেই কমাতে পারছেনা। আজকের মতো এরকম কষ্ট এর আগে ওর আর কোনোদিন হয়নি, চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে কিন্তু সেটাও করতে পারছেনা। বুকের ভেতর চেপে রাখা কষ্টটার যন্ত্রণা আরো বেশি হয়, সেটা বেশ বুঝতে পারছে। এরমধ্যেই ওর ফোন বেজে উঠলো, এইমুহূর্তে ফোন রিসিভ করার কোনো ইচ্ছেই নেই ওর কিন্তু মামার ফোন তাই রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে বলল,

— ” বাবাই ওদিকে সব ঠিক আছেতো?”

রিক একটা চাপা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,

— ” এতোদিন ছিলোনা এখন সব ঠিক আছে।”

কবির শেখ অবাক কন্ঠে বললেন,

— ” মানে?”

রিক মুখে মুচকি হাসি ফুটিয়ে বলল,

— ” অনিমাকে নিজের কাছে আটকে রাখার পাগলামো আমি আর করবোনা মামা। এতোদিন বুজতে না পারলেও আজকে বুঝতে পারছি যে ভালোবাসা জোর করে হয় না। ও যদি আদ্রিয়ানের সাথে ভালো থাকে তো থাকুক।”

কবির শেখ তো চরম অবাক হলো। নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,

— ” বাবাই কী সব বলছো তুমি? পাগল হয়ে গেছো নাকি? ”

রিক একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল,

— ” পাগলতো এতোদিন ছিলাম মামা। আজ সুস্হ মস্তিষ্কে বলছি।”

কবির শেখ উত্তেজিত কন্ঠে বললেন,

— ” কিন্তু তুমি না ওকে ভালোবাসো? হার মেনে নেবে? ছেড়ে দেবে ওকে?”

রিক মুচকি হেসে বলল,

— ” ভালোবাসায় হারতে দোষ কোথায় মামা? তাছাড়া আমি যদি সত্যি অনিকে ভালোবেসে থাকি তাহলে অনি ভালো থাকবে। এর চেয়ে বেশি ভালো আমার কাছে আর কী হতে পারে বলো?”

কবির শেখ অস্হির গলায় বলল,

— ” কিন্তু বাবাই…”

রিক কবির শেখ কে থামিয়ে দিয়ে বলল,

— ” কোনো কিন্তু না মামা। আমি জানি তুমি আমার কথা ভেবেই এসব বলছো কিন্তু আমিতো বলেই দিয়েছি যে আমার কোনো সমস্যা নেই। তাই প্লিজ এই বিষয়ে আর কিচ্ছু বলোনা।”

বলেই ফোন রেখে দিলো রিক। তারপর একদৃষ্টিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলো।স্নিগ্ধা ছাদে রিককে ডাকতে এসে দেখে রিক এক দৃষ্টিতে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। স্নিগ্ধা গিয়ে রিকের পাশে বসে বলল,

— ” আমি জানি রিক দা তোমার খুব কষ্ট হচ্ছে।”

রিক নিজেকে সামলে মুচকি হেসে স্নিগ্ধার দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” কী সব ফালতু বকছিস? কষ্ট হবে কেনো?”

স্নিগ্ধা সামনের দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” আমি তোমাকে চিনি রিক দা। এখন তুমি আমার সাথে কথা না বললেও একসময় কিন্তু আমি তোমার বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলাম।”

রিক কিছু না বলে চুপ করে রইলো। স্নিগ্ধা মুচকি হেসে বলল,

— ” রিক দা যদি আদ্রিয়ান অনিমা একে ওপরকে ভালো না বাসতো তাহলে আমি একটা চেষ্টা নিশ্চই করতাম। কিন্তু..”

রিক মলিন হেসে বলল,

— ” অনিমা আমাকে ভালোবাসেনা এতে ওর কোনো দোষ নেই। আদ্রিয়ান আসার অনেক আগেই ওর লাইফে এসেছিলাম আমি। কিন্তু ও আমাকে নয় আদ্রিয়ানকে ভালোবাসে। কারণতো আছেই তাইনা? আমিতো ওকে কোনো ভালোবাসার কারণই দিতে পারিনি। তবে আমাকে ভালো না বাসার যথেষ্ট কারণ দিয়েছি।”

স্নিগ্ধা কী বলবে সেটাই বুঝতে পারছেনা। কিছুক্ষণ চুপ থেকে রিক কে কিছু বলবে তার আগেই রিক উঠে বলল,

— ” চল। ওরা নিচে ওয়েট করছে নিশ্চয়ই।”

একুটু বলে রিক চলে গেলো আর পেছন পেছন স্নিগ্ধাও চলে গেলো।

সবাই মিলে ডিনার করছে। আর টুকটাক কথা বলছে। রিকের আচরণে কেউ বলবেই না যে এই ছেলেটার সকালেও ওদের শত্রু ছিলো। তারচেয়ে বেশি অবাক হয়েছে অনিমা কারণ এইমুহূর্তে এক নতুন রিক কে আবিষ্কার করছে ও। যে সম্পূর্ণটাই বিপরীত। খাওয়া দাওয়া শেষে রিক বলল,

— ” আদিব আর অভ্র তোমার আমার ডান সাইডের রুমটাতে থাকো, স্নিগ্ধা আর অনিমা একসাথে, আমি আর আদ্রিয়ান একসাথে। প্রবলেম আছে? ”

আদিব আর অভ্র সম্মতি জানালো, আদ্রিয়ান কিছু বলছেনা তাই রিক মুচকি হেসে বলল,

— ” আরে ভাই বিয়ের আগেই বউকে ছেড়ে থাকার কথা ভাবলেই যদি মুখটা এমন কালো হয়ে যায় তাহলে বিয়ের পর কী করবে? একটু তো ধৈর্য ধরো, এতো বউ পাগল হলে হবে?”

ওরা সবাই হেসে দিলো রিকের কথা শুনে আর অনিমা লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে আছে। আর স্নিগ্ধা একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রিকের দিকে। আজ রিকের এক নতুন রুপ দেখলো ও, কীকরে ভেতরের কষ্টটাকে চেপে রেখে মুখে হাসি ফুটিয়ে রেখে দিয়েছে। এটা করা সবার জন্যে সহজ নয়।

_____________________

আদ্রিয়ান আর রিক রিকের রুমে বসে আছে। নিজেদের মধ্যেই টুকিটাকি কিছু কথা বলছে ওরা। এরমধ্যে বেশ কয়েকবার রিক আদ্রিয়ানের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছে। হঠাৎ আদ্রিয়ান বলল,

— ” আচ্ছা তোমার মনে হয়না যে তোমার বাবা বা মামা যেসকল অন্যায়গুলো করেছে তার শাস্তি পাওয়া উচিত?”

আদ্রিয়ানের প্রশ্নে রিক কিছুক্ষণ চুপ থেকে একটা শ্বাস ফেলে বলল,

— ” হুমম মনে হয়। কিন্তু কী বলোতো ঐ মানুষ দুটোকে ছোটবেলা থেকেই খুব ভালোবাসি আমি। ছোটবেলায় বুঝতাম না তো, ওনারা যা বোঝাতো সেটাই বুজতাম, যা করাতো সেটাই করতাম। বড় তো হলাম কিন্তু সেই অভ্যেসগুলো ছাড়তে পারলাম। একপর্যায়ে গিয়ে বুজতে পারতাম যে এগুলো ভুল কিন্তু ঐ যে ছোটবেলা থেকে পাওয়া শিক্ষাটাই অভ্যেস হয়ে গেলো। সব বুঝেও না বুঝে থাকতে বাধ্য হতাম । শখ করে ডক্টরি পরেছিলাম কিন্তু ড্যাড এর রাজনৈতিক কাজকর্মে জোড় করে ইনভল্প করলো, বিরক্ত লাগতো আমার এসব তবুও থাকতে হতো, ড্যাডের প্রেশারে। তাই জেদ করে হসপিটালে জয়েনই করলাম না। ”

আদ্রিয়ান চুপচাপ শুনলো রিকের কথা। তারপর রিকের দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” তোমার বাবা এবং মামা দুজনেই খুনী। একজন মা হারা মেয়ের কাছ থেকে তার একমাত্র সম্বল তার বাবা কে কেড়ে নিয়েছে। এছাড়া আর কার কার খুন করেছে তাড়াই জানে। আর অন্যসব পাপের কথা তো ছেড়েই দাও। তবুও তুমি চাওনা ওনাদের শাস্তি হোক?”

রিক চোখ বন্ধ করে জোরে একটা শ্বাস ফেলে বলল,

— ” হ্যাঁ চাই। কিন্তু ওরা যতই খারাপ হোক আমার বাবা আমার মামা। ওরা খারাপ হলেও আমাকে খুব বেশি ভালোবাসে। ওদের সেই ভালোবাসার অসম্মান করতে পারবোনা আমি। তোমারা যদি পারো তো দাও ওনাদের শাস্তি। আমি তোমাদের বাধা দেবোনা। কিন্তু আমার কাছ থেকে কোনো সাহায্য চেয়ো না, প্লিজ। ”

আদ্রিয়ান একটা তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলল,

— ” তোমার কী মনে হয় ওরা তোমাকে ভালোবাসে?”

রিক ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলল,

— ” অফকোর্স বাসে। আমার বাবা আমার মামা আমাকে ভালোবাসবেনা?”

আদ্রিয়ান ওর ব্যাগ থেকে ল্যাপটপটা বার করে বলল,

— ” চলো তোমাকে কিছু দেখাই। তাতে হয়তো তোমার এই ধারণাটা ভেঙ্গে যাবে।”

________________________

মিস্টার রঞ্জিত ওনার রুমে বসে চা খাচ্ছেন আর ফাইল দেখছেন। এরমধ্যেই কবির শেখ হনহনে পায়ে ওনার কাছে বসে বলল,

— ” জিজু! আপনার ছেলে সব বরবাদ করে দেবে একদিন।”

মিস্টার রঞ্জিত কাপটা রেখে ভ্রু কুচকে বলল,

— ” আবার কী করেছে?”

কবির শেখ বিরক্তিকর কন্ঠে বললেন,

— ” মহান আশিক হয়ে গেছে ও। হাসান কোতয়ালের মেয়েকে ছেড়ে দিচ্ছে। ঐ মেয়েকে ছেড়ে দেওয়ার মানে বোঝেন আপনি? কী হবে আপনার?”

মিস্টার রঞ্জিত অবাক হয়ে বললেন,

— ” তুমি বোঝাও নি ওকে?”

কবির শেখ অস্হিরতা প্রকাশ করে বললেন,

— ” বোঝাই নি আবার? আপনার ছেলে শুনলে তো? আপনার কী হবে বুঝতে পারছেন? শেষ হয়ে যাবেন আপনি। তোমার রেপুটিশন ফিউচার সব শেষ হয়ে যাবে যদি ঐ মেয়ে খোলা থাকে। আর বাবাই যখন আমার কথা শোনেনি কারোর কথাই শুনবেনা।”

মিস্টার রঞ্জিত চায়ের কাপটা আছাড় মেরে ফেলে দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,

— ” রঞ্জিত চৌধুরী তার পথের কোনো কাটাকেই বাঁচিয়ে রাখে না। সেই কাটা যদি তার নিজের ছেলে হয়, তাহলে সেই কাটাকে উপড়ে ফেলতে দুবার ভাববো না।”

কথাটা কবির শেখ এর ভীষণ ভালো লাগলো। তাই নিজের মনেই হাসলেন উনি।

#চলবে…

( ভেবেছিলাম কালকে সারাদিনের প্যারার পর আজকে একটু রিল্যাক্স করবো। বাট আমার ফাটা কপাল আজ তিনগুন প্যারায় ছিলাম। তাই এক্সট্রা পার্ট হলোনা। বাট এক্সট্রা পার্ট না দিলেও এই পার্টটা বড় করে দিয়েছি আর একটু তাড়াতাড়িও দিয়েছি। তাই কেউ বকাটকা দিয়েন না। ?)

বর্ষণের_সেই_রাতে ❤ পর্ব- ৪৭

0

বর্ষণের_সেই_রাতে ❤
পর্ব- ৪৭
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

.
অনিমাকে ওভাবে দেখে সম্পূর্ণ স্তম্ভিত হয়ে গেছে অাদ্রিয়ান। আদ্রিয়ানকে দেখে রিক অনেকটা চমকে গেলেও সেদিকে পাত্তা না দিয়ে অনিকে ডাকতে লাগল। আদ্রিয়ান কিছুক্ষণ হতভম্ভ হয়ে তাকিয়ে ছিলো অনিমার দিকে। যখন ওর মস্তিষ্কে এই কথাটার ধাক্কা লাগল যে অনিমা ওভাবে অজ্ঞান হয়ে পরে আছে তখন আর একমুহূর্ত দেরী না করে দ্রত অনিমার কাছে হাটু ভেঙ্গে বসে রিকের কাছ থেকে ওকে নিজের কোলে নিয়ে বলল,

— ” জানপাখি? কী হয়েছে তোমার? দেখো চলে এসছি আমি। এক্ষুনি নিয়ে যাবো আমি তোমাকে। চোখ খোলোনা প্লিজ!”

এটুকু বলে অনিমাকে নিজের সাথে শক্ত করে জরিয়ে ধরলো। আদ্রিয়ান পাগলের মতো করছে। আশেপাশে কী হচ্ছে না হচ্ছে কিচ্ছু খেয়াল নেই ওর। ওর সামনে রিক আছে, স্নিগ্ধা আছে সেসব নিয়ে কোনো মাথা ব্যথা নেই ওর মধ্যে। রিক একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আদ্রিয়ানের দিকে। স্নিগ্ধা আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” ভাইয়া ওকে হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে। আমি এভাবে কিছুই বুঝতে পারছি না। প্লিজ তাড়াতাড়ি করুণ।”

আদ্রিয়ান নিজেকে সামলে নিয়ে অনিমাকে কোলে নিয়ে দ্রুত চলে বেড়িয়ে গেলো রুম থেকে। স্নিগ্ধাও পেছন পেছন দৌড়ে গেলো। রিক ওখানেই পাথরের মতো বসে আছে। কিছু একটা ভেবে নিজেকে সামলে নিয়ে উঠে বেড়িয়ে গেলো।
আদ্রিয়ান অনিমাকে নিয়ে সিড়ি দিয়ে নামতে গেলেই ওর সামনে একজন লোক এসে দাঁড়ালো। লোকটি বাঙালি। আদ্রিয়ান পাত্তা না দিয়ে নামতে গেলেই লোকটি বলল,
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
— ” রিক চৌধুরী বাড়িতে আছেন। আসলে একজন পেসেন্ট কে দেখতে আসতে বসেছিলেন।”

আদ্রিয়ান শেষের কথাটা শুনে থেমে গেলো। স্নিগ্ধা এসে বলল,

— ” হ্যাঁ। ভাইয়া ইনিই এখানকার বেস্ট সাইক্রাটিস্ট। ”

আদ্রিয়ান রাগী কন্ঠে বলল,

— ” আরে ওর নাক দিয়ে রক্ত পরছে। হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে ওকে।”

তখনি রিক এসে হাফানো কন্ঠে বলল,

— ” হসপিটালে নিয়ে যেতে সময় লাগবে অনেক। ওতো সময় নেওয়া ঠিক হবেনা। রক্ত পরা বন্ধ হয়ে গেছে তারমানে খুব বেশি মারাত্বক কিছু না। আমি ডক্টরকে ফোন করেছি উনি টিম নিয়ে আসছেন। ততোক্ষণ উনি দেখুক। ওকে নিয়ে রুমে এসো।”

আদ্রিয়ান কিছুক্ষণ রিকের দিকে তাকিয়ে থেকে স্হির কন্ঠে বলল,

— ” রুমটা দেখিয়ে দাও।”

রিক মাথা নামিয়ে নিয়ে বলল,

— ” আমার সাথে এসো।”

রিক এগিয়ে গেলো আর আদ্রিয়ান অনিমাকে কোলে নিয়ে ওর পেছনে গেলো, সাইক্রাটিস্ট ও ওদের পেছন পেছন গেলো। স্নিগ্ধা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে দুজনের জন্যে। এখন যেরকম পরিস্হিতি দুজনের মধ্যেতো মারামারি লেগে যাওয়ার কথা। কিন্তু এখন এদের দুজনের মূল ফোকাস শুধু অনির ওপর। আর কোনোকিছুরই খেয়াল নেই এদের মধ্যে। সত্যিকারের ভালোবাসা গুলো হয়তো এমনই হয়। এসব ভেবে মুচকি হাসলো স্নিগ্ধা তারপর ও ওদের কাছে গেলো।

ডক্টর অনিমাকে চেকআপ করছে। ওর হাতে সেলাইন লাগানো। আদ্রিয়ান অনিমার পাশে ওর হাত ধরে বসে আছে। রিক পায়ের দিকটায় মুখ হাত দিয়ে চেপে ধরে বসে আছে, চাইলে ও আর স্নিগ্ধাই চেকআপ করতে পারতো বাট কোনো মেশিন ছাড়া শুধু হাতের সাহায্যে সম্ভব ছিলোনা সেটা। আর স্নিগ্ধা ওপর পাশের কর্ণারে বসে ডক্টরকে হেল্প করছে চেকআপ করতে।আদিব আর অভ্রও চলেছে ওরা এতোক্ষণ বাইরেটাই সামাল দিচ্ছিল। প্রায় আধঘন্টা চেকআপ করার পর ডক্টর উঠে দাঁড়াতেই আদ্রিয়ান আর রিক দুজনেই একসাথে দাঁড়িয়ে বলে উঠলো,

— ” এনিথিং সিরিয়াস ডক্টর।”

ডক্টর অবাক হয়ে দুজনের দিকে তাকালো। তারপর একটা শ্বাস নিয়ে বলল,

— ” নো..বাট ইট কুড বি। ইজ শি হ্যাজ এনি মেন্টাল প্রেশার টু মাছ? ”

স্নিগ্ধা বলে উঠল,

— ” ইয়েস ডক্টর সি হ্যাজ। বাট হোয়াটস্ দ্যা মেটার?”

ডক্টর ওদের দিকে তাকিয়ে বললেন,

— ” একচুয়ালি সামহাউ শি হ্যাড সো মাচ প্রেসার ইন হার ব্রেইন। এন্ড দ্যাটস হোয়াইট শি হ্যাড এ স্মল হিট অন হার নার্ভ এন্ড স্টার্টেড ব্লেডিং। বাট নাও এভরিথিং ইজ ফাইন ডোন্ট ওয়ারী। আ’ম প্রেসক্রাইবিং সাম মেডিসিন। সি উইল বি অলরাইট।”

ওরা সবাই একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল। ডক্টর ওদের বিদায় দিয়ে চলে গেলো। এরপর সেই বাঙালি সাইক্রাটিস্ট ওদের উদ্দেশ্যে বললেন,

— “মিস্টার চৌধুরীর কাছে যেটুকু শুনেছি তাতে এটুকু বুঝতে পেরেছি যে উনি কোনো কারণে প্রচুরভাবে ট্রমাটাইজড আর উনি হাই পাওয়ার এর ঔষধ ও নিতেন হয়তো। ইউসিয়ালি সেই ঔষধ দেওয়া বন্ধ হয়ে গেলেই হঠাৎ এরকম প্রবলেম বেশি হয়।”

আদ্রিয়ান একটা শ্বাস ফেলে বললো,

— ” ইয়েস ডক্টর ঔষধ নিতো ও। আর কিছুদিন যাবত সেটা নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে ।”

বলেই কঠোর দৃষ্টিতে রিকের দিকে তাকালো।রিক বেশ অবাক হয়ে বলল,

— ” ঔষধ নিতো মানে? কী হয়েছিলো ওর।”

ডক্টর বললেন,

— ” হ্যাঁ। আমাকে প্লিজ শুরু থেকে সব বলুন নইলে আমি কিছূ বলতে পারছিনা।”

আদ্রিয়ান কিছুক্ষণ চুপ থেকে তারপর শূরু সবটাই খুলে বললো ডক্টরকে। সবটা শুনে রিক পুরো হতভম্ব হয়ে গেলো। বেড ধরে বসে পরলো ও। ডক্টর বললেন,

— ” এমনিতেই এরকম অবস্হা তারওপর ঔষধ বন্ধ করে দিয়েছেন? আবার এতোটা মেন্টাল প্রেশার দিয়েছেন। আপনাদের ভাগ্য ভালো মেয়েটা এখনো পাগল হয়ে যায়নি। যাই হোক ঔষধগুলো কনটিনিউ করুন আর একটু খেয়াল রাখুন তাতেই হবে।”

বলে উনিও চলে গেলেন। রিক নিজের মাথা চেপে ধরে ভাবতে শুরু করলো যে কী কী করেছে ও? যেখানে আগে থেকেই মেয়েটার লাইফ এতোটা কম্প্লিকেটেড হয়ে আছে সেখানে ও গিয়ে সেই জীবণটাকে আরো কম্প্লিকেটেড করে দিয়েছে। বারবার অনিমার গায়ে হাত তোলা ওকে কষ্ট দেওয়া সব চোখে ভেসে উঠছে। হঠাৎ অর্ক অনির সাথে এরকম কিছু করেছে মনে পরতেই ওর রক ফুলে উঠলো। উঠে দাঁড়িয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

— ” আজ ওর শেষ দিন।”

বলে বেড়োতে নিলেই আদ্রিয়ান ওর হাত ধরে আটখে ওকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বুকে জোরে একটা ধাক্কা মেরে বলল,

— ” ওকে শাস্তি দেবে তুমি? হ্যাঁ? আর তোমাকে? তোমাকে কে শাস্তি দেবে? ওদের চেয়ে কোন অংশে কম ছিল তুমি? হ্যাঁ বলো? ভালোবাসার নাম করে ওর ওপর কী কী ধরণের অত্যাচার করতে সেটা নিশ্চই ভুলে যাওনি তাইনা? ওর এই অবস্হার জন্যে যেসকল মানুষ দায়ী তার মধ্যে তুমি অন্যতম। আর এখন নাটক করছো। নাটক!”

রিক কিছু না বলে দেয়াল ঘেসে বসে পড়ল ওখানেই। আদ্রিয়ান পেছন থেকে গানটা বেড় করে বলল,

— ” ওর কপালে দাগ দেখে বোঝাই যাচ্ছে যে এখানে এনেও ওর গায়ে হাত তুলেছো? আজ তো আমি।”

আদ্রিয়ান শুট করতে গেলেই স্নিগ্ধা এসে আটকে দিয়ে বলল,

— ” প্লিজ ভাইয়া এখন এসব কিছু করোনা। অনি অসুস্হ। প্লিজ।”

আদ্রিয়ান অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে নিয়ে গানটা পকেটে ভরে নিলো। আর রিক একদৃষ্টিতে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। আজ ওর নিজেকেই নিজের কাছে সবচেয়ে বেশি নিকৃষ্ট মানুষ মনে হচ্ছে। আদ্রিয়ান অনিমার কাছে গিয়ে বসলো। রিক উঠে সোজা ওর রুমে চলে গেলো। স্নিগ্ধাও রিকের পেছন পেছন গেলো। স্নিগ্ধা রিকের রুমের গিয়ে দেখে রিক ফ্লোরে বসে খাটের সাথে হেলান দিয়ে একদৃষ্টিতে অনিমার ছবিটার দিকে তাকিয়ে আছে। বিয়ারের বোতলটা খুলে চুমুক দিতে যাবে তখনি স্নিগ্ধা এসে হাত ধরে আটকে দিলো। রিক স্নিগ্ধার দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” যা এখান থেকে এখন।”

স্নিগ্ধা একটা নিশ্বাস ফেলে বলল,

— ” এখন এতো কষ্ট পেয়ে কী হবে বলোতো? আমি তোমাকে আগেও বলেছিলাম নিজের রাগের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে শেখো। কিন্তু তুমি তো কোনোদিন সেটা পারলেই না।”

রিক কিছু না বলে একদৃষ্টিতে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে। স্নিগ্ধা আবার বলল,

— ” তুমি বলতেনা যে অনিমা কেনো এতো আদ্রিয়ান আদ্রিয়ান করে? ওনার মধ্যে এমন কী আছে যেটা তোমার মধ্যে নেই? জানো কী পার্থক্য তোমাদের? অনিমা যখন তোমাকে এভোয়েট করতো বা কথা শুনতো না তখন তুমি ওর গায়ে হাত তুলে জোর করে ওকে নিজের কথা শোনাতে বাধ্য করাতে। অথচ তোমার ভয়ে ও আদ্রিয়ান ভাইয়াক এভোয়েট করছিলো কথা শুনছিলো না। তখনও কিন্তু আদ্রিয়ান ভাইয়া জোর করেই ওকে দিয়ে নিজের কথা শুনিয়েছে। কিন্তু মারধোর করে নয়, নিজের ভালোবাসা দিয়ে। ভালোবেসেই জোর খাটাতো অনিমার ওপর। ওনার কাছে সবচেয়ে বেশি ইমপরটেন্ট ভালোবাসার মানুষের ভালো থাকা আর তোমার কাছে সবচেয়ে বেশি ইম্পরটেন্ট ওকে নিজের কাছে রেখে দেওয়া। এটাই পার্থক্য তোমাদের মধ্যে।”

রিক কিছু না ভেবেই স্নিগ্ধাকে জরিয়ে ধরল। স্নিগ্ধাতো পুরো শকড হয়ে আছে। কিছুক্ষণ পর ও বুঝতে পারলো যে রিক কাঁদছে। স্নিগ্ধা আরেকবার অবাক হলো। রিক এমনই একজন যে সহজে সবার সামনে নিজেকে দুর্বল দেখাতে চায়না, স্নিগ্ধাও এই প্রথম রিককে কাঁদতে দেখছে। ও কী করবে, কীভাবে রিক কে সামলাবে কিছুই জানে না ও। শুধু কাঁপা কাঁপা হাতে রিকেল পিঠে হাত রাখলো।

______________________

আশিস নানা ভাবে নিজেকে ব্যস্ত রাখছে। আদ্রিয়ানের না থাকায় ওর ওপর চাপটা খুব বেশি তারজন্যেই নিজেকে ব্যাস্ত রাখতে পারছে ও। তবে কিছুতেই মনকে স্হির করতে পারছেনা। আরুমিতার ওপরেরেই মাইন্ড পুরো সেট হয়ে আছে ওর। অরুমিতার বোকামো, ইনোসেন্ট ফেস, বাচ্চামো সবকিছুই বারবার মনে পরছে ওর আর তারচেয়েও বেশি মনে পরছে শেষে অরুমিতার বলা কথাগুলো। বুকের ভেতরে হটাৎ করেই এক অসহ্য যন্ত্রণা হয় ওর কিন্তু এরকম কেনো হচ্ছে এমন তো হওয়ার কথা ছিলোনা।

আর এদিকে অরুমিতা বাইরে দিয়ে স্ট্রং থাকলেও ভেতরে ভেতরে প্রতিনিয়ত গুমরে মরে। যতই হোক প্রথম ভালোবাসা ছিলো আশিস ওর। তবে ও ঠিক করে নিয়েছে ওর যতো কষ্টই হোক আশিসকে কোনোদিন ক্ষমা করবে না ও কোনোদিনও না।

______________________

অনিমা আস্তে আস্তে চোখ খুলে তাকালো। নাকের ভেতর জ্বালা করছে, মাথাটাও ব্যাথা করছে। ভালোভাবে চোখ খুলে তাকিয়ে দেখতে পেলো আদ্রিয়ান ওর হাত ধরে বসে আছে। অনিমা অবাক হয়ে গেলো। ওর মনে হচ্ছে ও স্বপ্ন দেখছে। উঠে বসার চেষ্টা করতেই আদ্রিয়ান ওকে ধরে উঠিয়ে বসালো। অনিমা এখোনো অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আদ্রিয়ানের দিকে। আদ্রিয়ান মুচকি হেসে ভ্রু নাচিয়ে বলল,

— ” কী ব্যাপার ম্যাডাম? আমাকে দেখতে কী ভুতের মতো লাগছে যে এভাবে তাকিয়ে আছো?”

এটা শোনার পর আস্তে আস্তে অনিমা বুঝতে পারলো যে সপ্ন দেখছে না সত্যিই আদ্রিয়ান ওর সামনে আছে। অনিমা ছলছলে চোখে আস্তে আস্তে অনিমার গালে হাত রাখলো। আদ্রিয়ান অনিমা হাতটা ধরে তাতে ছোট্ট করে একটা কিস করলো। অনিমা হুট করেই আদ্রিয়ান জরিয়ে ধরে ফুঁপিয়ে কেঁদে দিলো। আদিব আর অভ্র একে ওপরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো। অনিমা কেঁদেই যাচ্ছে একনাখারে। আদ্রিয়ান অনিমাকে শক্ত করে নিজের সাথে জরিয়ে ধরে বলল,

— ” জানপাখি? প্লিঠ স্টপ ক্রাইং তুমি জানো আমার এটা সহ্য হয়না তবুও তুমি কাঁদবে?”.

অনিমার কান্না থামার বদলে আরো বেড়ে গেলো। আদ্রিয়ান অনিমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,

— ” আচ্ছা এখনতো আমি এসে গেছি তাইনা? তবুও এভাবে কাঁদবে? আমার কষ্ট হচ্ছে তো।”

অনিমা ভাঙ্গা গলায় বলল,

— ” প্লিজ আপনি আমাকে ছেড়ে কথাও যাবেননা প্লিজ।”

আদ্রিয়ান মুচকি হেসে বলল,

— ” তোমাকে ছাড়ার জন্যে কী কষ্ট করে এতোদূর এসছি নাকি? বাঁচা ছাড়তে পারলেও তোমাকে ছাড়তে পারবোনা জানপাখি।”

ওদের দুজনকে দরজায় দাঁড়িয়ে একদৃষ্টিতে দেখছে রিক। তবে ওর আজ একটুও রাগ হচ্ছে না, তবে কষ্ট হচ্ছে এক অদ্ভুত কষ্ট হচ্ছে। ভেতরটা জ্বলে যাচ্ছে ওর। রিকের কাধ কেউ হাত রাখতেই রিক গুরে দাড়িয়ে দেখলো স্নিগ্ধা। স্নিগ্ধা বলল,

— ” কী ভাবছো?”

রিক অনিমা আর আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” ওদেরকে দেখছি, সত্যিই খুব ভালোবাসে একে ওপরকে। আমি ই এতোদিন ওদের লাভস্টোরির ভিলেন হয়ে ছিলাম। তবে আর সবো না। আজ থেকে ওদের জীবণের কোনো বাধা হয়ে থাকবোনা আমি। ওরা যেভাবে থাকতে চায় সেবাবে থাকুক।।

স্নিগ্ধা অবাক হলো রিকের কথায়। অবাক হয়েই বলল,

— ” ভেবে বলছো তো?”

রিক মুচকি হেসে চোখের কোণের হালকা জলটা মুছে বলল,

— ” প্রথমবার মন থেকে কোনো সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ভুল করবো না। আজ যখন অনির ওরকম অবস্হা হলো ঠিক তখনি বুঝতে পেরেছি ভালোবাসার মানুষটার ভালো থাকাই সবচেয়ে বেশি ইমপর্টেন্ট আর কিছু না। ও আদ্রিয়ানের সাথে ভালো থাকবে এটাই বড় কথা। আমি নাহয় ওয়ান সাইডার লাভার হয়েই জীবণটা কাটিয়ে দেবো। এতো বছর ধরে ভালোবেসেছি ঠিকি কিন্তু ভালোবাসার আসল মানেটা আজকে বুঝেছি। আর আমি চাই ও ভালো থাকুক। ও ভালো আছে এটুকু জেনেই নিজে ভালো থাকার চেষ্টা করবো। কী করবো সবকিছুতো সবার ভাগ্যে থাকেনা। আর আমিতো নিজের দোষেই নিজের ভাগ্যকে হারিয়ে ফেলেছি।

#চলবে…

( আজকে ২:৩০ ঘন্টার ক্লাস। চারটা এক্সাম তারওপর হোম প্রাকটিজ। এসবের পর টাইম ছিলোনা একটুও। ভেবেছিলাম দেবোনা, লেখার সময়টাই ছিলোনা।বাট আজকের পর্বটার জন্যে আপনারা সবাই ওয়েট করে আছেন তাই যতোটা সম্ভব আতোটাই লিখে দিলাম। রি-চেইক করার সময় হয়নি। ভুলগুরো নিজ দ্বায়িত্যে বুঝে নেবেন, প্লিজ।)

বর্ষণের সেই রাতে ❤ পর্ব- ৪৬

0

বর্ষণের সেই রাতে ❤
পর্ব- ৪৬
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

.
আদ্রিয়ান সকালের ব্রেকফাস্ট করে বেরোনোর জন্যে সবে প্রস্তুতি নিচ্ছে। এমন সময় কেউ পেছন থেকে বলে উঠল,

— ” স্যার।”

ডাকটা শুনে চমকে উঠলো আদ্রিয়ান। দ্রুত পেছনে ঘুরে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যাক্তিটিকে দেখে মুখে হালকা হাসি পুটে উঠলো ওর। বেশ খুশি হয়েই বলল,

— ” তুমি?”

অভ্র মুচকি হেসে বলল,

— ” কেনো স্যার? আশা করেননি তাইনা ?”

আদ্রিয়ান অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। আর অভ্র অভিমানী কন্ঠে বললো,

— ” এতোটা পর করে দিলেন স্যার? এরকম একটা সময়ও আমাকে একটু ডাকার প্রয়োজন মনে করলেন না?”

আদ্রিয়ান একটু শ্বাস নিয়ে বললো,

— ” নাহ আসলে তুমি তোমার ফ্যামিলি ম্যামবার দের কাছে ছিলে তাই ভেবেছিলাম..”

অভ্র আদ্রিয়ান দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” আপনি হয়তো আমাকে আপনার পিএ ছাড়া আর কিছু ভাবেন না কিন্ত আমি আপনাকে আমার বড় ভাই ভাবী। তাইতো খবরটা কানে যেতেই চলে এলাম।”

আদ্রিয়ান নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে কোমরে হাত দিয়ে বলল,

— ” বেশি কথা শিখে গেছো আজকাল।”

তারপর আদ্রিয়ান হেসে অভ্রর দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো। অভ্র সাথেসাথেই এসে জরিয়ে ধরলো আদ্রিয়ানকে। কিছুক্ষণ পর আদ্রিয়ান অভ্রকে ছেড়ে বলল,

— ” কিন্তু আমিতো আজ সুইডেন যাচ্ছি। তুমি..”

আর কিছু বলার আগেই অভ্র বলল,

— ” জানিতো, আমি সব ব্যবস্হা করে নিয়েছি স্যার। আমিও যাচ্ছি আপনার সাথে।”

আদ্রিয়ান অভ্রর কাধে হাত রেখে বলল,

— ” চালু আছিস খুব।”

অভ্র একটু ভাব নিয়ে বলল,

— ” সবই আপনার সাথে থাকার ফল।”

কিছুক্ষণ একেওপরের দিকে তাকিয়ে থেকে হেসে দিলো দুজনেই। এরপর আদ্রিয়ান, অভ্র আর আদিব রওনা দিলো সুইডেন এর উদ্দেশ্যে। আশিস দেশেই থেকে গেলো কারণ আদ্রিয়ানের এখানে কিছু কাজকর্ম সামলানোর দ্বায়িত্ব আদ্রিয়ান ওকেই দিয়ে গেছে।

“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন

অনিমা চুপচাপ জানালার কাছে বসে নিরবে চোখের জল ফেলছে। আদ্রিয়ানের কথা খুব বেশি মনে মরছে ওর। খুব বেশি মিস করছে ওকে। আদ্রিয়ানের শাসন, ভালোবাসা, খুনসুটি এসব কিছুই বারবার চোখের সামনে ভেসে উঠছে। ইচ্ছে করছে ছুটে চলে যেতে আদ্রিয়ানের কাছে। কিন্তু ওর কোনো উপায় নেই, ওর ইচ্ছে অনিচ্ছের ওপর কোনো কিছুই নির্ভর করছে না এই মুহূর্তে। ওর শব্দ করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে কিন্তু কোনো এক কারণে সেটা পারছেনা। হঠাৎ কেউ ওর কাধে হাত রাখতেই অনিমা ঘুরে তাকিয়ে দেখলো যে স্নিগ্ধা ওর পাশে এসে বসেছে। অনিমা স্নিগ্ধাকে জরিয়ে ধরে ফুঁপিয়ে কেঁদে দিলো। এই অল্প সময়েই বেশ ভালো বন্ডিং তৈরী হয়ে গেছে ওদের দুজনের । স্নিগ্ধা অনিমায পিঠে হাত বুলিয়ে বলল,

— ” কীরে? কাঁদছিস কেনো? আমি জানি তোর এখানে থাকতে ভালোলাগছেনা। আমি বলছি তো সব ঠিক হয়ে যাবে। একটু ধৈর্য ধর ”

অনিমা কাঁদতে কাঁদতে বললো,

— ” আদ্রিয়ান..”

এটুকু বলেই আবার কেঁদে দিলো ও। স্নিগ্ধা অবাক হয়ে গেলো। কার নাম বললো অনিমা? আর তার কথা ভেবে কাঁদছেই বা কেনো? অনিমাকে সোজা করে ওর দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” কে আদ্রিয়ান? কী হয়েছে এক্সাক্টলি বল তো?”

অনিমা প্রথমে কিছু না বললেও পরে স্নিগ্ধার জোরাজোরিতে সব খুলে বলল, স্নিগ্ধা কিছু না বলে অনিমাকে জরিয়ে ধরে বসে রইলো। আর মনে মনে ভাবতে লাগল,

— ” এটা তুমি কী করেছো রিক দা? আমি তো ভেবেছিলাম অনিমা তোমাকে ভালো না বাসলেও ওর মনে অন্য কেউ নেই। তাই আমি ভেবেছিলাম তোমাকে কোনোভাবে শুধরে নিয়ে অনিমাকে কন্ভেস করে নেবো। কিন্তু যেখানে ও অন্য একজনকে এতোটা ভালোবাসে সেখানে তুমি কীকরে এটা করতে পারো? তোমাকে ভালোবেসেও নিজের করে পাইনি আমি কিন্তু এই মেয়েটাকে ওর ভালোবাসার কাছ থেকে আলাদা হতে দেবোনা আমি। কিছুতেই না।”

অনিমার কান্না থেমে গেলেও শরীর কেঁপে কেঁপে উঠছে। স্নিগ্ধা ওকে সরিয়ে অনিমার চুলগুলো ঠিক করে দিতে দিতে বলল,

— ” চুপ। অনেক কান্নাকাটি হয়েছে। এবার চল তো একটু কিচেনে গিয়ে কোনো একটা স্নাকস করে দুজন মিলে খাবো হুম? আর এসব নিয়ে ভাবিস না। সব ঠিক হয়ে যাবে। আমি প্রমিস করছি ”

অনিমা চোখ মুছে মুচকি হেসে মাথা নাড়ল। তারপর স্নিগ্ধা ওকে নিয়ে কিচেনে চলে গেলো। স্নিগ্ধা এরকমি করে, বিভিন্ন কিছুর মাধ্যমে ব্যাস্ত রাখে অনিমাকে। কখনো ওকে নিয়ে রান্না করে, কখনো কিছু একটা খেলে, কখনো অনলাইনের বিভিন্ন ভিডিও দেখে। এরকম নানা রকম কিছু করে খুশি রাখার চেষ্টা করে অনিমাকে। দুজনের বাস্তবিক স্বভাব এক হওয়ার কারণেই ওদের বন্ডিং তৈরী হতে সময় লাগে নি। অনিমা আর সিগ্ধা মিলে চা আর পাকোরা বানাচ্ছে। হঠাৎ রিক কিচিনে এলো। রিক কে দেখে অনিমার মুখের হালকা হাসিটুকুও মিলিয়ে গেলো। গোমড়া মুখ করে পাকোরা ভাজায় মন দিলো। যেটা রিকের চোখে পরলো আর ওর খারাপ ও লাগলো। স্নিগ্ধা ভ্রু কুচকে বললে,

— ” কী হলো রিক দা? মেয়েদের এখানে তোমার কী কাজ? আমরা রান্না করছি সো ডোন্ট ডিস্টার্ব।”

রিক উকি দিয়ে কী রান্না হচ্ছে সেটা দেখে বলল,

— ” হুমম। তো আমি কী একটু ভাগ পাবো? নাকি তোরা দুই রাক্ষুসী মিলেই খাবি।”

রাক্ষুসী বলাতেও অনিমার মধ্যে কোনো ভাবান্তর হলো না বরং ও ওর মতো করে কাজ করে যাচ্ছে। স্নিগ্ধা রেগে বলল,

— ” কীহ? আমাদের রাক্ষুসী বলা হচ্ছে?”

রিক একটা শ্বাস ফেলে বলল,

— ” আচ্ছা বাবা সরি। এবার পাবোতো একটু?”

স্নিগ্ধা মুখ ঘুরিয়ে খানিকটা ভাব নিয়ে বললে,

— ” হ্যাঁ যাও যাও পেয়ে যাবে।”

রিক ভ্রু কুচকে বলল,

— ” সিউর তো?”

স্নিগ্ধা বিরক্ত হয়ে বলল,

— “আরে বাবা বললাম তো পেয়ে যাবে। যাও তো এখন। এমন খাদক জীবণে দেখিনি বাবা।”

রিক হেসে দিয়ে চলে গেলো ওখান থেকে। স্নিগ্ধা কিছু একটা ভেবে অনিমার দিকে তাকিয়ে একটি হাসি দিয়ে বলল,

— ” তুই দেখতে থাক আমি একটু আসছি।”

বলেই কিচেন থেকে বেরিয়ে গিয়ে সোজা রিকের কাছে গিয়ে স্নিগ্ধা বলল,

— ” রিক দা?”

রিক সোফায় বসে স্নিগ্ধার দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” কিছু বলবি?”

স্নিগ্ধা রিকের পাশে বসে বলল,

— ” সাইক্রাটিস্ট এর সাথে কথা বলেছো?”

রিক একটা শ্বাস ফেলে বলল,

— ” এখানকার বেস্ট যিনি তিনি নেই এখন। কদিন পর আসবেন। তখনি দেখাবো ওকে।”

স্নিগ্ধা আর কিছু না বলে উঠে চলে গেলো অনিমার কাছে। কী আর বলবে এখন নতুন করে। এখন শুধু ডক্টর আসার অপেক্ষা। আরো একটা কাজও করা বাকি আছে ওর। সেটাও খুব গুরত্বপূর্ণ।

_______________________

এইদিকে কিছুক্ষণ আগেই সুইডেনে ল্যান্ড করলো আদ্রিয়ানরা। এখন আপাদত এখানে আদ্রিয়ানের পরিচিত একজনের একটা বিল্ডিং আছে। সেই বিল্ডিং এরই একটা এপার্টমেন্টে উঠেছে ওরা। আজকে দিনটা বেড়বেনা ওরা আর। আজ আগে রুমে বসেই রিক কোথায় থাকতে পারে এরকম জায়গা গুলোকে মার্ক করবে । আদ্রিয়ান, আদিব, অভ্র সোফায় বসে কফি খাচ্ছে। অভ্র ল্যাপটপে কাজ করছে। আদ্রিয়ান কফি মগে চুমুক দিতে দিতে বলল,

— ” রেয়ার যেসব জায়গা গুলো। মানুষ যেখানে কম থাকে। সেইসব জায়গাগুলোতেই ওদের থাকার চান্স বেশি।”

অভ্র থুতনিতে হাত রেখে বলল,

— ” হুম এইদেশে এরকম জায়গা মানে হলো আইসল্যান্ড। এরকম জায়গা আইসল্যান্ডেই আছে। ”

আদিব ওদের দুজনের দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” তাহলে তো খুজে পাওয়াটা সহজ হবে।”

আদ্রিয়ান মগটা সাইডে রেখে বলল,

— ” এটা সুইডেন আদিব। এখানে দ্বীপের অভাব নেই।”

অভ্র আদ্রিয়ানের কথায় সম্মতি জানিয়ে বলল,

— “এক্সাক্টলি। সবগুলো খুজতে অনেকটা সময় লাগবে।”

আদ্রিয়ান সোফায় হেলান দিয়ে বলল,

— ” দ্বীপগুলোতে যাওয়ার জাহাজ আর এয়ারলাইন গুলোতে খোজ নিলেই পাওয়াটা সহজ হয়ে যাবে।”

ওরাও আদ্রিয়ানের কথা অনুযায়ী নিজেদের কাজে লেগে পড়লো আর আদ্রিয়ান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে কফির মগে চুমুক দিলো। যা করার খুব তাড়াতাড়ি করতে হবে ওকে।

_____________________

আরো দুইটা দিন পার হয়ে গেলো। এর মধ্যে রিক অনিমার সাথে কোনোরকম খারাপ ব্যবহার করেনি। আর স্নিগ্ধার সাথে অনিমার সম্পর্কটাও অনেক বেশি ভালো হয়ে গেছে। কিন্তু হঠাৎ করেই মুড চেঞ্জ হয়ে যাওয়ার সমস্যাটা এখোনো অনিমার মধ্যে আছে।

রিক ওর রুমে বসে একমনে ভেবে চলেছে যে স্নিগ্ধা আসার পর অনিমার মধ্যের পরিবর্তন গুলো। খুব বেশি না হলেও এখন মাঝেমাঝে হালকা হাসি ফোটে ওর মুখে। একটু হলেও ভালো থাকে। আচ্ছা সত্যিই কী তাহলে ওই ভুল? ও নিজেই ইচ্ছাকৃতভাবে অনিমার জীবণ থেকে ওর খুব খুশি কেড়ে নিচ্ছে? তবে যাই হোক ও মনে মনে ঠিক করেই নিয়েছে যে অনিমার সাথে কোনো খারাপ ব্যবহার ও আর করবেনা। এসব চিন্তা করতে করতেই ওর ফোন বেজে উঠলো। স্ক্রিনে একবার তাকিয়ে ফোনটা রিসিভ করে বলল,

— ” হ্যাঁ মামা বলো?”

কবির শেখ রাগী কন্ঠে বললেন,

— ” কী আর বলব? আমার কোনো কথা শোনো তুমি? নাকি শোনার প্রয়োজন মনে করো?”

রিক ভ্রু কুচকে বলল,

— ” কীসব বলছো মামা? ”

কবির শেখ ঝাঝালো কন্ঠে বললেন,

— ” ভুলটা কী বলেছি? তোমাকে বললাম কতোবার যে স্নিগ্ধাকে ওখানে নিয়ে যেও না। কিন্তু না তুমিতো ঐ মেয়ের প্রেমে অন্ধ হয়ে গেছো তাইনা? তাই ওর ভালোর জন্যে আমার বারণ সত্যেও স্নিগ্ধাকে নিয়ে গেলে।”

রিক বিরক্ত হয়ে বলল,

— ” হয়েছে কী বলবে?”

কবির শেখ হতাশার একটা নিঃশ্বাস ফেলে বললো,

— ” ঐ স্নিগ্ধা আদ্রিয়ানকে জানিয়ে দিয়েছে যে তোমারা কোন আইসল্যান্ডের কোথায় আছো?”

রিক অবাকের চরম সীমায় পৌছে বলল,

— ” হোয়াট?”

কবির শেখ বিরক্তি ঝেড়ে বললেন,

— ” এখন আর হোয়াট বলে কী হবে? যা করার তো করেই ফেলেছো। বারবার বলেছিলাম যে ঐ মেয়ের প্রেমে এতো গদগদ হয়ে যেওনা। এবার দেখলেতো আমার কথা না শুনে কী হলো? এখন পারলে আদ্রিয়ান আসার আগেই অনিমাকে ওখান থেকে সরাও। এবার অন্তত বুঝেছো তোমার খারাপের জন্যে বলিনা কিছু? তাই পারলে আমার কথাটাই শোনো।”

রিক রাগী স্হির কন্ঠে বলল,

— ” রাখছি।”

মানুষ ছোটবেলা থেকে যেরকম পরিবেশ আর পরিস্হিতে বেড়ে ওঠে স্বভাবত সে সেইরকমি তৈরী হয়, সাইকোলজি সেটাই বলে। আর কিছু ক্ষেত্রে ছোট বেলা থেকেই কিছু মানুষের দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার স্বভাব থেকে যায় অনেকের। যেমন কারো কাছে নিজের মায়ের কথাই চিরন্তন সত্য মনে হয়, আবার বাবার উপদেশই সবচেয়ে সঠিক মনে হয়, নিজে থেকে একবার বিবেচনা করার ইচ্ছেই জাগেনা। রিকের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা সেরকমি হয়েছে, ছোটবেলা থেকেই ওর মামার দ্বারা একটু বেশিই প্রভাবিত ও। যা চাইলেও হুট করে ছাড়া সম্ভব না। রিক হনহনে পায়ে অনিমার রুমে গিয়ে দেখে যে স্নিগ্ধা অনিমার সাথে বসে কথা বলছে। রিক সোজা গিয়ে স্নিগ্ধার হাত ধরে দাড় করিয়ে বলল,

— ” তুই আদ্রিয়ানকে জানিয়েছিস আমরা কোথায় আছি?”

স্নিগ্ধা অবাক হয়ে তাকালো রিকের দিকে। ও বুঝতে পেরে গেছে যে রিক সব জেনে গেছে আর এখন মিথ্যে বলে কোনো লাভ নেই। তাই কাঁপা কন্ঠে বলল,

— ” হ্যাঁ বলেছি।”

রিক স্নিগ্ধার গালে জোরে একটা থাপ্পড় মেরে দিলো। অনিমা চমকে গেলো পুরো। স্নিগ্ধা গালে হাত দিয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। রিক দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

— ” তোকে বিশ্বাস করাটাই আমার ভুল ছিলো।এতোবড় সাহস তোর। যাই হোক…”

বলে অনিমার কাছে যেতেই অনিমা পিছিয়ে গেলো। রিক ওর কাছে গিয়ে হাত ধরে বলল,

— ” চলো এখান থেকে।”

অনিমা শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে কাঁদোকাঁদো গলায় বলল,

— ” আমি কোথাও যাবোনা।”

রিক রাগে গজগজ করতে করতে বলল,

— ” দেখো এই মুহূর্তে মেজাজ খুব খারাপ আছে আমার। তাই আমাকে রাগীও না তোমার জন্যেই খারাপ হবে। চলো!”

অনিমা এবারেও জেদ ধরে বলল,

— ” অামি কোথাও যাবোনা। যদি পারেন তো আদ্রিয়ান আসার পর ওর সামনে দিয়ে নিয়ে যান। আমি জানি আদ্রিয়ান খুব তাড়াতাড়ি চলে আসবে।”

রিকের রাগ এবার সীমা পার হয়ে গেলো। রাগে অনিমার হাত মুচড়ে ধরে কাছে এনে চেঁচিয়ে বলল,

— ” আদ্রিয়ান, আদ্রিয়ান, আদ্রিয়ান। সারাক্ষণ শুধু ওর নাম যপতে থাকো তাইনা? হ্যা? কেনো বলো? কেনো? ”

অনিমা কাঁদতে কাঁদতে বলল,

— ” হ্যাঁ আর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত যপে যাবো। কারণ আমি ওকে ভালোবাসি খুব ভালোবাসি।”

রিক অনিমার ভালোবাসি কথায় আরো রেগে গেলো। ও ধাক্কা দিয়ে অনিমাকে ফেলে নিজের বেল্টে হাত দিতেই স্নিগ্ধা চেঁচিয়ে বলল,

— ” নাহ রিক দা। একদম না।”

রিক গিয়ে স্নিগ্ধার হাত ধরে টেনে রুমের বাইরে ধাক্কা দিয়ে পাঠিয়ে দরজা লক করে দিলো। স্নিগ্ধা দরজা ধাক্কাতে ধাক্কাতে বলল,

— ” রিক দা প্লিজ ওর কোনো দোষ নেই এখানে। প্লিজ মেরোনা ওকে।”

রিক বেল্ট খুলতে খুলতে অনিমার দিকে এগোতে এগোতে বলল,

— ” সারাদিন আদ্রিয়ান নাম যপবে তাইনা? আজকে আদ্রিয়ানের নামটাই ভুলিয়ে দেবো তোমাকে।”

অনিমা বসা অবস্হাতেই কাঁদতে কাঁদতে হালকা পিছিয়ে যেতে লাগল। কিছু বলবে সেই শক্তি নেই ওর মধ্যে। কেমন যেনো মাথা ঝিম ধরে আসছে ওর। সব ঝাপসা লাগছে। স্নিগ্ধা সমানে দরজা ধাক্কিয়ে যাচ্ছে। রিক বেল্ট দিয়ে আঘাত করতে যাবে তখনি খেয়াল করলো অনিমার নাক দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। সেটা দেখে রিকের হাতের বেল্ট পরে গেলো। রিক তাড়াতাড়ি অনিমার সামনে বসে ওকে ধরে বলল,

— ” এই অনি কী হয়েছে তোমার? দেখো ত্ তুমি ভয় পেয়োনা। মারবোনা আমি তোমাকে। আই সোয়ার।”

কিন্তু অনিমার নাক দিয়ে রক্ত বেড়িয়েই যাচ্ছে। আর শরীর ছেড়ে দিচ্ছে ও । রিক তাড়াতাড়ি উঠে দরজা খুলে স্নিগ্ধার দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” স্নিগ্ধু অনি..”

স্নিগ্ধাকে আজ এতোবছর পর রিক স্নিগ্ধু বলে ডেকেছে কিন্তু স্নিগ্ধার সেটা নিয়ে ভাবার সময় নেই। ও তাড়াতাড়ি ভেতর গিয়ে অনিমার অবস্হা দেখে চেচিয়ে বলল,

— ” কী করেছো তুমি ওর সাথে?”

রিক কাঁপাকাঁপা গলায় বলল,

— ” আমি জ্ জানিনা ও কীভাবে, কী হ্ হয়েছে ওর? ”

স্নিগ্ধা অনিমাকে চেক করছে এরমধ্যেই অনিমা আস্তে করে চোখ বন্ধ করে ফেলল। রিকের বুকের ভেতরে ধক করে উঠল সেটা দেখে । রিক দ্রুত গিয়ে অনিমার মাথাটা কোলে নিলো। নাক থেকে বের হওয়া রক্তে অনিমার মুখ রক্তাক্ত হয়ে গেছে, রিক অনিমার গালে হাত দিয়ে ঝাকিয়ে বলল,

— ” অনি? এই অনি? ত্ ত্তাকাও? দেখো বেল্ট কিন্তু এখানেই আছে আমি রেগে গেলে কিন্তু সত্যিই মারবো। ওঠো ড্যাম ইট? আচ্ছা ফাইন তুমি যা চাইবে তাই হবে। আমি আর আটকে রাখবোনা তোমাকে। যেখানে খুশি যেতে পারো তুমি। আই প্রমিস। তবুও তাকাও প্লিজ…।”

কিন্তু অনিমা কোনো রেসপন্স করছেনা। স্নিগ্ধাতো কেঁদেই দিয়েছে। আর এরমধ্যেই কেউ চিৎকার করে উঠল,

— ” অনি..”

চিৎকারটা শুনে রিক স্নিগ্ধা দুজনেই চমকে তাকালো পেছনের দিকে।

#চলবে…

বর্ষণের সেই রাতে ❤ পর্ব- ৪৫

0

বর্ষণের সেই রাতে ❤
পর্ব- ৪৫

#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

.
বর্ষা শেষ তবে বৃষ্টি এখনো হয় মঝেমাঝে। চারপাশে ভ্যাঁপসা গরম পরেছে, পরিবেশটা একটু বেশিই নিস্তব্ধ। রাতে আদ্রিয়ান সেই লেক পার্কের লেকের পাশে বসে একদৃষ্টিতে পানির দিকে তাকিয়ে আছে। প্রথম যেদিন অনিকে নিয়ে ঘুরতে বেড়িয়েছিলো সেদিন এখানেই এসছিলো। কতো কথা বলেছিলো ও অনিমাকে আর অনিমা একদৃষ্টিতে অবাক হয়ে ওর কথা শুনছিলো, কিছু কিছু কথায় ব্লাস ও করছিলো। সেইদিনের কথা খুব বেশি মনে পরছে ওর। লেকের পানির দিকে তাকিয়ে একমনে অনিমার সাথে কাটানো মুহূর্তগুলোকে মনে করছিলো। হঠাৎ করেই আদ্রিয়ান খেয়াল করলো ওর পেছনে কিছু লোক দাঁড়িয়ে আছে। আদ্রিয়ান একটা শ্বাস ফেলে পেছনের দিকে না তাকিয়ে বলল,

— ” এই মুহূর্তে তোদের সাথে কোনো খেলা খেলার ধৈর্য বা ইচ্ছা কোনোটাই আমার নেই। তাই চলে যা।”

লোকগুলো হেসে দিয়ে বলল,

— ” দেখ রকস্টার এখন দেবদাস হয়ে গেছে। ”

আদ্রিয়ান ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে ফোন হাতে নিয়ে স্ক্রল করতে করতে বলল,

— ” এখনো বলছি চলে যা। আমি এখন একদমি এসবের মুডে নেই।”

ওদের মধ্যে একজন বলল,

— ” ওই? তোর কী মনে হচ্ছে? আমরা এফ এম রেডিওতে পাবলিক ডিমান্ড শো চালাচ্ছি যে তোর মুড অনুযায়ী গান শোনাবো?”

আদ্রিয়ান কিছু না বলে চুপচাপ ফোন টিপতে লাগলো। ওদের মধ্যে একজন রেগে সোজা এসে আদ্রিয়ানের পিঠে হকিস্টিক দিয়ে একটা বাড়ি মারলো। আঘাতটা জোর‍ে হলেও, আদ্রিয়ানের সহ্যশক্তির মধ্যেই ছিলো। আদ্রিয়ান চোখ বন্ধ করে একটা শ্বাস নিয়ে ফোনটা পকেটে রেখে পাশে তাকালো। কতোগুলো সাড়ে তিন ফিট রড রাখা আছে হয়তো এখানকার কোনো কাজে লাগবে। আদ্রিয়ান উঠে দাড়িয়ে ওখান থেকে একটা রড হাতে নিলো। যেই লোকটা আদ্রিয়ানকে বাড়ি মারতে এসছে সেই লোকটা ওর দিকে দৌড়ে তেড়ে আসতে নিলে আদ্রিয়ান প্রথমে লোকটার হাতে বাড়ি মারলো যার ফলে হকিস্টিক টা পরে গেলো, পরে শরীরে এমন জোরে বাড়ি মারলো যে অার উঠতেই পারলোনা। আদ্রিয়ান এবার ওদের দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” আব্বে তোদের কী আমাকে দেখে মেলায় টানানো বেলুন মনে হচ্ছে যে ইচ্ছে মতো গুলি ছুড়ে এক এক করে ফাটাবি আর আমি ফেটে যাবো? তোদেরকে বললাম চলে যা কিন্তু শুনলি না। এখন যেটা হবে সেটার জন্যে আমি না তোরা দায়ী।”

ওরা পেছন থেকে গান বের করে বলল,

— ” তোকে তো এখানেই ঝাজরা করে দেবো।”

আদ্রিয়ান অপর হাতে নিজের থুতনি চুলকে বিড়বিড় করে বললো,
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
— ” এরা শুধরাবে না।”

ওদের একজন রাগী কন্ঠে বলল,

— ” কী বিড়বিড় করছিস হ্যাঁ ?”

ওদের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা দেখে বাঁকা হেসে বলল,

— ” পেছনে তাকা।”

ওরা সবাই বিরক্তি নিয়ে পেছেনে তাকিয়ে দেখে অনেকগুলো বন্দুকধারী লোক ওদের ঘিরে আছে তাও বন্দুক তাক করে। আদ্রিয়ান পকেটে হাত দিয়ে ওদের সামনে দাঁড়িয়ে বলল,

— ” তোদের ক্লাস টা আমিই নিতাম কিন্তু ঐ যে বললাম মুডে নেই, তাই যা করার ওরাই করুক। ওল দা বেস্ট। ”

বলে ইশারা করতেই আদ্রিয়ানের লোকগুলো ওদের নিয়ে চলে গেলো। আদ্রিয়ান ওখানকার বেঞ্চে পায়ের ওপর পা তুলে বসে নিজে নিজেই বলল,

— ” আপনি খুব চালাক মানুষ কবির শেখ কিন্তু আমার ব্যাপারে আপনি কিছুই জানেননা। দুদিনে দুবার শুট করানোর চেষ্টা করলেন। বন্দুক তাক করার আগেই তারা পালিয়েছে। এখন আবার মারতেও লোক পাঠালেন তারাও এখন…হুমহ। ওনেস্টলি কষ্ট হয় আপনার জন্যে খুব কষ্ট হয়।”

_____________________

স্নিগ্ধা এয়ারপোর্টে সামনে বসে আছে। রিকের বলা দেশেই এসছে ও। হঠাৎ ফোন বাজতেই স্নিগ্ধা রিসিভ বলল,

— ” হ্যাঁ এসে গেছি আমি। লেফ্ট সাইডের বেঞ্চের ওখানে আছি। তুমি কোথায়?”

রিক হাটতে হাটতে বলল,

— ” ওখানেই থাক আমি অাসছি। ”

বলে ফোন রেখে দেওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই রিক এসে দাঁড়ালো ওর সামনে। স্নিগ্ধা হেসে কিছু বলবে তার আগেই ওর হাত ধরে ওখান থেকে হাটা দিলো। স্নিগ্ধা তো অবাক। পেছন থেকে একটার পর একটা প্রশ্ন করেই যাচ্ছে কিন্তু কোনো উত্তর আসছে না, রিক একবার পেছন ঘুরে তাকাতেই রিকের চেহারা দেখে স্নিগ্ধা চুপ হয়ে গেলো। ভাবলো এই মুহুর্তে পাগল খেপিয়ে দিয়ে লাভ নেই। রিক স্নিগ্ধাকে একটা গাড়ির ফন্ট সিটে বসিয়ে দিয়ে নিজে ড্রাইভিং সিটে বসে একটা কাপড় দিয়ে স্নিগ্ধার চোখ বেধে দিলো। সিগ্ধা অবাক হয়ে বলল,

— ” আরেহ কী করছো কী এসব?”

রিক স্নিগ্ধার হাত বাধতে বাধতে ধমকি দিয়ে বলল,

— ” চুপ করে বসে থাক। ঠিক জায়গায় ঠিক সময় খুলে দেবো।”

সিগ্ধা আর কিছু না বলে চুপচাপ বসে রইলো। আর রিক গাড়ি স্টার্ট দিতে দিতে ভাবছে যে আদ্রিয়ানকে বিশ্বাস করা যায়না ও সব করতে পারে। রিক জানে যে আদ্রিয়ান আজ হোক কাল এই দেশের খবর পেয়ে যাবে। কিন্তু এই দেশের কোন জায়গায় রেখেছে ওকে সেটা যেনো আদ্রিয়ান সহজে জানতে না পারে সেই ব্যবস্হাই করছে ও। আর ওর মামাই বা কী করছে? এখোনো অবধি আদ্রিয়ানের মৃত্যুর সংবাদ পর্যন্ত দিতে পারছেনা ওকে। এসব চিন্তা করতে করতে স্নিগ্ধাকে নিয়ে নির্দিষ্ট গন্তব্যে রওনা দিলো রিক।

______________________

অরুমিতা আশিসের সাথে কথা বলার জন্যে এসছে। আশিসের হঠাৎ এরকম ইগনোরেন্স জাস্ট সহ্য হচ্ছেনা ওর। তাই এসেছিলো আশিসের সাথে এই ব্যাপারে ঠিকভাবে কথা বলতে। কিন্তু এসে যা দেখলো তাতে অরুমিতার থম মেরে দাঁড়িয়ে রইলো। আশিস অন্য একটা মেয়ের সাথে খুব ক্লোস হয়ে বসে আছে। দুজনেই কথা বলছে আর খুব বেশি হাসাহাসি করছে, একেবারে একে ওপরের গায়ের ওপর ঢলে পরছে এরকম অবস্হা। অরুমিতা প্রথমে ছলছলে চোখ নিয়ে কিছুক্ষণ ওদের দেখছিলো। তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে ওদের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো তারপর হাত ভাজ করে বলল,

— ” ওহ তো এইজন্যেই আমাকে দেওয়ার মতো সময় হচ্ছেনা আপনার?”

অরুমিতার গলার আওয়াজ পেয়ে আশিস চমকে গেলো। তাকিয়ে অরুমিতাকে দেখে আমতা আমতা গলায় বললো,

— ” তুমি? এখানে?”

অরুমিতা একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল,

— ” কেনো? আশা করেননি তাইনা? ভাগ্যিস এসছিলাম। নাহলে আপনার এই রুপটা দেখা হতোনা।”

পাশ থেকে মেয়েটা বলল,

— ” কে এ বেইবি?”

আশিস মেয়েটার দিকে তাকিয়ে শক্ত কন্ঠে বলল,

— ” তুমি এখন যাও এখান থেকে।”

মেয়েটা কথা না বাড়িয়ে চলে গেলো ওখান থেকে। আশিস অরুমিতার দিকে তাকিয়ে ইতস্তত কন্ঠে বলল,

— ” অরু..”

কিন্তু আশিসকে থামিয়ে দিয়ে অরু বলল,

— ” ডোন্ট কল মি অরু ওকে? ওই নামে ডাকার যোগ্যতা নেই আপনার। এই জন্যেই আমাকে ইগনোর করছিলেন? কারণ আমার সাথে প্রেম প্রেম নাটক করে মন ভরে গেছে আপনার? তাই এখন দূরে সরে যাচ্ছেন? এতোটা চিফ মেন্টালিটি আপনার? ”

আশিস এবার উঠে দাঁড়িয়ে চেচিয়ে বলল,

— ” এতো ওভার রিঅ‍্যাক্ট করার কী আছে হ্যাঁ? আমি কীরকম সেটা কী তুমি জানতে না? রিলেশন করলেই যে সেটা আজীবণ টিকিয়ে রাখতে হবে এমন কোনো কথা আছে নাকি? আমি বলেছিলাম তোমাকে এতো সিরিয়াস হতে? বলো? বলেছিলাম?”

অরুমিতা কান্নাজরিত কন্ঠে আশিসের দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” কী বলছেন আপনি?”

আশিস একটা শ্বাস ফেলে বলল,

— ” যা বলেছি একদম ঠিক বলেছি। দেখো এসব ন্যাকামো প্রেম আমার কাছ থেকে আশা করোনা। কারো জন্যে আমি নিজেকে বদলাতে পারবোনা।”

অরুমিতা কিছুক্ষণ আশিসের দিকে তাকিয়ে থেকে চোখ মুছে বলল,

— ” হবেনা আপনাকে বদলাতে। আমিই চলে যাচ্ছি আপনাকে ছেড়ে। আমাদের মধ্যে যা কিছু ছিলো সব এখানেই শেষ করে দিচ্ছি। আজ থেকে আপনিও মুক্ত আর আমিও। করুণ অাপনার যা খুশি তাই করুণ। কেউ বাধা দেবেনা আপনাকে।”

তারপর ওর হাতের রিংটা খুলে আশিসের দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” সরাসরি ভালোবাসার কথা বলে এটাই পড়িয়ে দিয়েছিলেন আমাকে তাইনা? আপনার ঐসব মিথ্যের কোনো চিহ্নই আমি আমার কাছে রাখবোনা।”

শক্ত কন্ঠে এসব বলে রিং আশিসের দিকে ছুড়ে মেরে ওখান থেকে নিরবে কাঁদতে কাঁদে চলে গেলো অরুমিতা। আশিসের ভেতরে এক অদ্ভুত কষ্ট হচ্ছে কিন্তু এরকম তো হওয়ার কথা না। ও তো কোনোকালেই সিরিয়াস ছিলোনা অরুমিতাকে নিয়ে তবুও এতো ফাঁকা কেনো লাগছে? সেই কারণটা অজানা ওর। আর অজানা কারণেই রিং টা তুলে নিজের পকেটে রেখে দিলো আশিস।

______________________

বেডে গুটিশুটি মেরে ঘুমিয়ে আছে অনিমার আর পাশে বসে স্নিগ্ধা ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। একদৃষ্টিতে অনিমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে স্নিগ্ধা। ঠোঁটে মুচকি হাসি।এতোদিন শুধু ভাবতো যে কী এমন আছে অনিমার মধ্যে যে রিক ওর জন্যে এতো পাগল? কিন্তু আজ সামনাসামনি দেখে বুঝতে পারছে যে কেনো রিক অনিমা বলতে পাগল। এতো সুন্দর এতো মায়া মাখানো একটা মুখ যে, যে কেউ ওর মায়ায় পরে যাবে। কিন্তু ওর কপালের হালকা কাটা দাগ, ঠোটের কোণ ফেটে যাওয়ার চিহ্ন দেখে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো স্নিগ্ধা। নিজে নিজেই বলল,

— ” অতিরিক্ত রাগ খুব ভয়ংকর জিনিস রিক দা। এটা কাছের মানুষগুলোকেও দূরে সরিয়ে দেয়। তুমি যদি রাগকে প্রায়োরিটি না দিয়ে শুধু ভেতরের আবেগ নিয়ে মেয়েটার দিকে একটু গভীরভাবে তাকাতে তাহলে ওর গায়ে হাত তুলতে পারতেনা তুমি।”

এসব নানা কথা ভাবতে ভাবতেই অনিমার মাথায় হাত বুলাচ্ছিলো স্নিগ্ধা। কিছুক্ষণ পর অনিমা আস্তে আস্তে চোখ খুলে তাকালো। আর ওর চোখ সরাসরি স্নিগ্ধার দিকেই গেলো। স্নিগ্ধা মুচকি হাসলো, স্নিগ্ধার দিকে পিটপিটে চোখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর অনিমা আস্তে আস্তে উঠে বসলো স্নিগ্ধাও হেল্প করলো ওকে বসতে। অনিমা বেশ অবাক হয়েই তাকিয়ে আছে স্নিগ্ধার দিকে। স্নিগ্ধা হাসি মুখেই বলল,

— ” চিন্তে পারছোনা তাইতো? আসলে আজকেই এসছি এখানে। আমাকে নিজের বন্ধু ভাবতে পারো। ”

অনিমা ভাঙ্গা গলায় বলল,

— ” আপনি?”

স্নিগ্ধা আসাম করে বসে বলল,

— ” আমি রিকে দার বন্ধু, স্নিগ্ধা । আর এসব অাপনি ঠাপনি কী বলছো হ্যাঁ ? রিক দার কাছে তোমার ডেট অফ বার্থ যা জেনেছি সে অনুযায়ী আমি তোমার থেকে অনলি দেড় বছরের বড়। সো প্রায় সমবয়সী। তাই এসব আপনি আগ্গে বাদ দেও।”

বলেই মিষ্টি একটা হাসি দিলো স্নিগ্ধা। অনিমা তাকিয়ে আছে স্নিগ্ধার দিকে আর ভাবছে কতো মিষ্টি করে কথা বলে মেয়েটা। বোঝাই যাচ্ছে খুব ভালো। ওরকম একটা রাক্ষসের এতো মিষ্টি একটা বন্ধু থাকতে পারে? কীভাবে সম্ভব? এসব ভাবতে ভাবতেই স্নিগ্ধা বলল,

— ” কী হলো করবেনা আমার সাথে বন্ধুত্ব?”

উত্তরে অনিমাও একটা মুচকি হাসি দিলো। স্নিগ্ধা বলল,

— ” ওকে দেন ফ্রেন্ডশিপে কিন্তু তুমি শব্দটাও মানানসই নয় তাইনা?”

অনিমা বেশ অবাক হলো। মেয়েটা যতোটা মিষ্টি ততোটাই মিশুক ও। কতো তাড়াতাড়ি সম্পর্কটাকে তুইতে নিয়ে গেলো। অনিমা হাসি মুখেই নিচু কন্ঠে বলল,

— ” হুম।”

এরপর দুজনেই কিছুক্ষণ চুপচাপ ছিলো। নিরবতা ভেঙ্গে স্নিগ্ধা নিজেই বলল,

— ” দেখ আমি জানি যে তোকে রিক দা এখানে জোর করেই আটকে রেখে দিয়েছে । আর আমি একা চাইলেও তোকে বের করতে পারবোনা। চারপাশে করা সিকিউরিটি। কিন্তু রিক দা লোকটা কিন্তু মনের দিক একেবারেই খারাপ না। শুধু একটু রাগী। তারওপর ঐ শুকুনী মামা তো আছেই। সারাক্ষণ কান ভাঙ্গানী দিয়ে রাখে ছেলেটার।”

অনিমা অবাক হয়ে বলল,

— ” শকুনী মামা কে?”

স্নিগ্ধা কিছু বলবে তার আগেই রিক ঢুকে পরলো রুমে। রিক কে দেখেই অনিমা একটু গুটিয়ে বসলো। রিক ওদের দুজনের দিকে একবার তাকিয়ে স্নিগ্ধাকে উদ্দেশ্য করে বলল,

— ” ওকে নিয়ে ডাইনিং এ আয়। খাবার সার্ভ করা হয়ে গেছে।”

এটুকু বলেই রিক চলে গেলো। অনিমা বেশ অবাক হলো। এই কয়দিন অনিমাকে রুমেই খাবার দিয়ে যেতো রিক। আজ হঠাৎ ডাইনিং এ? স্নিগ্ধা অনিমার দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” চল।”

অনিমা উঠে দাঁড়াতেই স্নিগ্ধা ওকে ধরে ধরে ডাইনিং এ নিয়ে গেলো। খাবার সময় কেউ কোনো কথা বলেনি। অনিমাও মাথা নিচু করে চুপচাপ যতোটা পেরেছে খেয়েছে। খাওয়া শেষে রিক অনিমার দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” তুমি এখন রুমে যাও।”

অনিমা স্নিগ্ধার দিকে তাকাতেই স্নিগ্ধা মুচকি হেসে বলল,

— ” তুই যা আমি আসছি।”

অনিমা কোনো কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ উঠে চলে গেলো। রিক হালকা হেসে বলল,

— ” বাহবা? একদিনেই তুই তে চলে গেছিস?”

স্নিগ্ধা ভাব নিয়ে বলল,

— ” দিস ইজ মাই ক্যালমা ওকে?”

রিক বিরক্তিকর এক দৃষ্টি দিয়ে বলল,

— ” ওয়ে ড্রামাকুইন। ড্রামা ছাড় আর আমার কথা শোন। অনিমার ব্যবহার গুলোর ব্যাপারে সবটাই বলেছি তোকে। যদিও আমি আমার মতো চেকআপ করেছি বাট মারাত্মক কোনো ফিজিক্যাল প্রবলেম আছে বলে মনে হয়নি, ব্যাপারটা সাইকোলজিক্যাল মনে হয়েছে। যদিও আমার অনেক দিন যাবত প্রাকটিজ নেই তাই ভুল হতেই পারে। তুই তো প্রাকটিসিং এ আছিস তোর কী মনে হলো?”

স্নিগ্ধা হেসে বলল,

— ” প্রাকটিজ না থাকলেও ভুলে যাওয়ার ছেলে তুমি নও। এন্ড ইউ আর রাইট ওর প্রবলেম টা মে বি সাইকোলজিক্যাল। আর আমার মনে হয় খুব তাড়াতাড়ি তোমার ওকে একজন সাইক্রাটিস্ট কে দেখানো উচিত।”

রিক টেবিলে দুই হাতের কুনুই রেখে মুখে হাত দিয়ে বলল,

— ” হুমম এস সুন এস পসিবল কথা বলছি আমি। যা তুই ওর কাছে যা।”

সিগ্ধা চলে গেলো আর রিক ভাবতে শুরু করলো যে কী এমন কারণ হতে পারে অনিমার এরকম একটা প্রবলেপ হওয়ার? কারণটা কী শুধু ও? নাকি অন্য আরো কিছু আছে?

“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন

আদ্রিয়ান নিজের লাগেজ গোছাচ্ছে। কারণ আজকেই সকালে জানতে পেরে গেছে যে কোন এয়ারপোর্ট থেকে অনিমাকে নিয়ে গেছে। পরে ওখানে গিয়ে ওদের চাপ দিতেই ওরা জানিয়ে দিয়েছে সব। রিক অনিমাকে নিয়ে সুইডেন গেছে। ভাগ্যক্রমে যে কয়েকটা দেশের সিটিজেনশিপ আদ্রিয়ানের পাওয়া আছে তার মধ্যে সুইডেন ও একটা তাই ওর যেতে খুব বেশি দেরী লাগবে না। কালকে সকালেই ওর ফ্লাইট। সুইডেনের কোথায় আছে সেটা যদিও আদ্রিয়ান এখোনো জানে না তবে ও ঠিক খুজে নেবে। যেভাবেই হোক ও ওর জনপাখিকে ঠিকই খুজে নেবে। এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎই ফোন বেজে উঠলো আদ্রিয়ানের। ফোনের স্ক্রিণে নাম্বারটা দেখে বাঁকা হাসলো আদ্রিয়ান। তারপর ফোনটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে কেউ বলে উঠলো,

— ” একজন রকস্টার হয়ে সামান্য একজন নেতাকে হুমকি চিঠি দেওয়াটা কী ঠিক জুহায়ের বাবু?”

আদ্রিয়ান ইনোসেন্ট কন্ঠে বলল,

— ” আমি কখন আপনাকে হুমকি চিঠি দিলাম মা…মা?”

আদ্রিয়ানের মুখে মামা ডাক শুনে কবির শেখ চমকে গেলেন। ঘাম বেড়োতে শুরু করলো ওনার। নাকের কাছের ঘামটা কোনোরকমে মুছে ত্ তোতলানো কন্ঠে বললেন,

— ” ম্ মামা মানে?”

আদ্রিয়ান এবার শব্দ করেই হেসে দিলো। হাসতে হাসতে বলল,

— ” আরে এতো ভয় কেনো পাচ্ছেন? দেখুন রিক চৌধুরী আমার ভাইয়ের মতোই। তো আপনি যদি ওর মামা হন তাহলে আমিও তো মামা বলতেই পারি। তাইনা মা.. মা? তবে এই প্রথম কাউকে মামা ডাক শুনে এতো ভয় পেতে দেখলাম।”

কবির শেখ কিছু বলছেননা, ওনার বুকে ভয় বাসা বাধছে। আদ্রিয়ান নিজেই বলল,

— ” কী জেনো বলছিলেন? হুমকি চিঠি? আমি আপনাকে কোনো হুমকি দেইনি মামা। শুধু একটু সতর্ক করেছি। এইযে লোক, প্রফেশনাল কিলার এসব পাঠিয়ে আমার মতো এক সুইট লিটল ভোলাভালা ভাগ্নেকে মারতে চাইছেন।তাতে কোনো লাভ তো হচ্ছেই না উল্টে আপনার পকেট ফাঁকা হচ্ছে। তাই বলছি এসব থামান। ”

কবির শেখ দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,

— ” খুব বেশি কনফিডেন্স তোমার?”

আদ্রিয়ান মুচকি হেসে বলল,

— ” কনফিডেন্স তো থাকা উচিত মামা। কিন্তু ওভার কনফিডেন্স না। এই ওভার কনফিডেন্সেই কেউ কেউ ভাবে যে তার কুকির্তী গুলো সে সবার আড়ালে করে যাবে, কাছের লোক হওয়ার নাম করে পিঠে ছুড়ি মারবে আর কেউ টেরও পাবেনা তাইনা মা…মা?”

আদ্রিয়ানের কথায় কবির শেখ অনেকটাই ঘাবড়ে গেলেন, কাঁপতে শুরু করলেন উনি। আদ্রিয়ান হেসে বলল,

— ” এখন একটু বিজি আছি মামা পরে কথা বলবো। বাই।”

বলে ফোন রেখে দিলো আদ্রিয়ান অার ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে হালকা হেসে বলল,

— ” ভয় পান আরো ভয় পান। একবার অনিকে খুজে আনি এরপর আপনাদের সবাইকে নিজেদের উপযুক্ত জায়গা দেখাবো আমি। আপনার পাপ তো ঘড়া ভর্তি হয়ে গেছে। এবার আপনার সময় শেষ হয়ে আসছে। কাউন্ট ডাউন শুরু করে দিন মা…মা।”

#চলবে…

বর্ষণের সেই রাতে ❤ পর্ব- ৪৪

0

বর্ষণের সেই রাতে ❤
পর্ব- ৪৪
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

.
রিকের মেজাজ খুব বেশিই চটে আছে। সাহস কী করে হয় ঐ মেয়েটার ওভাবে খাবার ফেলে দেওয়ার? এতো বাড়াবাড়ির কী আছে? ও যতবার মনে মনে ঠিক করে যে অনিমাকে কষ্ট দেবেনা ঠিক ততবার মেয়েটা এমন কিছু করে যে ও বাধ্য হয় অনিমার সাথে মিস বিহেভ করতে। ওর কাছে থাকতে সমস্যা কোথায় ? ওর ভালোবাসাটা কী চোখে পরেনা ওর? সারাদিন শুধু আদ্রিয়ান নাম জপতে থাকে। কী এমন আছে আদ্রিয়ানের মধ্যে? এসব ভাবতে ভাবতে বেডে হেলান দিয়ে বসে ড্রিংক করছে রিক। কিছুই ভালো লাগছেনা। এখন তো অনিমা ওর কাছে আছে কিন্তু মনের দিক থেকে শান্তি তো পাচ্ছেই না আরো অশান্ত হয়ে উঠছে ওর মন। মেয়েটাকে নিজেই কাঁদায় কিন্তু মেয়েটা যখন কাঁদে তখন ওর নিজেরই খারাপ লাগে। আর তাই ওর কাছ থেকে দূরে চলে আসে। ভাবনার মাঝে হঠাৎই ওর ফোনে কল এলো, রিক ফোন রিসিভ করে কানে নিয়ে বলল,

— ” হ্যাঁ মামা বলো। ”

কবির শেখ আমোদিত গলায় বললেন,

— ” ওদিক‍ে সব ঠিক আছে তো? মানে কোনো সমস্যা নেই তো?”

রিক গ্লাসটা রেখে একটা শ্বাস ফেলে বলল,

— ” না সব ঠিকই আছে। কিন্তু অনি একটু অদ্ভুত ব্যবহার করছে। খুব এবনরমাল।”

এটা শুনে কবির শেখ বাঁকা হাসলেন। তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে বললেন,

— ” আরে এতো ভেবোনা। আসলে হুট করেই এভাবে তুলে এনোছো তো তাই একটু হাইপার হয়ে গেছে। আর তোমাকে আগেই অনেক বার বলেছি যে ওর প্রতি প্রেমে গদগদ হয়ে যেওনা। তাহলেই হাতের বাইরে চলে যাবে। ও তোমাকে যেই ভয়টা পায় সেই ভয়টা বাঁচিয়ে রাখতে হবে। তাই প্রেম টা ভেতরেই চেপে রেখে রাফ হওয়ার চেষ্টা করো। জানি ব্যাপারটা তোমার জন্যে সহজ নয়। তবে যা বলছি তা তোমার ভালোর জন্যেই বলছি । বুঝছো তো?”

রিক নিচু কন্ঠে বলল,

— ” হুম।”

রিকের উত্তরে কবির শেখ একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেললেন । তারপর বললেন,

— ” তা দেশে কবে আসছো?”

রিক একটু গলা ঝেড়ে বলল,

— ” না মামা এখন না। আদ্রিয়ান ছেলেটা খুব চালাক। কোনো চান্স নিতে চাইনা আমি। আগে তুমি ওকে পৃথিবী থেকে সরানোর ব্যবস্হা করো ”

কবির শেখ বললেন,

— ” তা তো করছিই। অনিমা নেই তাই এই মুহুর্তে মানসিকভাবে স্টেবেল নয় এখন। এটাই সেরা সুযোগ। রাখছি তাহলে?”

রিক সম্মতি জানিয়ে ফোন রেখে দিয়ে চোখ বন্ধ করে আবারও হেলান দিলো। ও জানেনা কোনটা ঠিক কোনটা ভুল। ও আদোও যা করছে তা কতোটা ঠিক। ও শুধু এটুকুই জানে যে ওর অনিমাকে চাই সেটা যেকোনো কিছুর মূল্যে। তার জন্যে ওকে যা করতে হয় করবে।
আর রিকের সেই ভাবনার কারণেই হয়তো কবির শেখ এর মন্ত্রণা কতোটা ঠিক বা ভুল সেটা বিবেচনা করার ইচ্ছেটাও ওর মধ্যে নেই।

______________________

রাতে অনেক চেষ্টা করেও একটুও ঘুমোতে পারেনি আদ্রিয়ান। শেষ রাতের দিকে একটু ঘুমিয়েছে। সকাল সকাল উঠে বেড়িয়ে গেছে আবার অনিমার খোজে। আদিব আশিস তো আছেই তীব্র, অরুমিতা,স্নেহাও যার যার সাধ্যমতোই কাজ করছে। আদ্রিয়ান রিকের সব গাড়ির নাম্বার নিয়ে চেক পোস্টে চেকিং করছে যে কোথাকার রোডে দিয়ে গেছে ও। তাহলে আদ্রিয়ান এটা জানতে পারবে যে কোন এয়ারপোর্ট থেকে গেছে ওরা আর কোথায় গেছে। আদ্রিয়ান একহাতে ফোনে কথা বলছে আরেকহাতে ল্যাপটপে কাজ করছে। আশিস আর আদিব ওর দুপাশে বসে ফোনে কথা বলছে। হঠাৎ করেই তীব্র, স্নেহা আর অরুমিতা এলো। অরুমিতা আর আশিসের চোখাচোখি হলো একবার। দুদিন ধরেই আশিস অরুমিতাকে একটু ইগনোর করছে, অরুমিতার খারাপ লাগলেও এটা ভেবে নিজের মনকে বোঝাচ্ছে যে অনিমা কে খুজতে এতো ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে সেইজন্যেই হয়তো সময় কম দিতে পারছে। ওরা আদ্রিয়ান কে কাজ করতে দেখে দরজা থেকেই বলল,

— ” ভাইয়া আসবো?”

আদ্রিয়ান ল্যাপটপ থেকে চোখ সরিয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” হ্যাঁ এসো।”

বলে আবার ল্যাপটপের দিকে তাকালো। ওরা ভেতরে এসে টেবিলের কাছে দাড়ালো। আদ্রিয়ান ল্যাপটপের দিকে তাকিয়েই বলল,

— ” বসো।”

ওরা দুজন বসল। তীব্র বলল,

— ” ভাইয়া অনিমার কোনো খবর পান নি?”

আদ্রিয়ান ল্যাপটপে থেকে হাত সরিয়ে চেয়ারে হেলান দিয়ে বলল,

— ” এখনো না।”

অরুমিতা কাঁদোকাঁদো কন্ঠে বলল,

— ” ভাইয়া প্লিজ যতোটা তাড়াতাড়ি সম্ভব ওকে খুজে বার করুণ। আপনি তো শুনেছেন যে রিক কতোটা ভয়ংকর। ও মেয়েটাকে মেরেই ফেলবে। আপনি…”

আর কিছু বলার আগেই আদ্রিয়ান শক্ত কন্ঠে বলল,

— ” শাট আপ অরুমিতা। তোমার কী মনে হয়? ওর জন্যে আমার চিন্তা হচ্ছেনা? তিন দিন যাবত আমার মনের ওপর দিয়ে কী চলছে একমাত্র আমিই জানি। ও তোমাদের বন্ধু হতে পারে কিন্তু আমার জন্যে ও কী সেটা মুখে বলে তোমাদেরকে বোঝাতে পারবোনা আমি।”

অরুমিতা মাথা নিচু করে ফেলল। আর নিজের কাছে নিজেই লজ্জা পেলো। এতোটাই ইমোশনাল হয়ে গেছিলো ও যে কার কাছে কী বলছে সেটাই মাথায় ছিলোনা ওর। ও নিচু কন্ঠে বলল,

— ” সরি ভাইয়া আসলে..”

আদ্রিয়ান নিজেকে শান্ত করে একটা শ্বাস নিয়ে বলল,

— ” ইটস অলরাইট। আর চিন্তা করোনা খুব তাড়াতাড়ি খুজে পেয়ে যাবো ওকে।”

তীব্র অবাক হয়ে বলল,

— ” কিন্তু কীভাবে?”

আদ্রিয়ান এবার সবার দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” এইজন্যেই তোমাদের সবাইকে এক জায়গায় ডেকেছি। এবার আমি যেটা বলছি সেটা খুব ভালো করে শোনো।”

এরপর আদ্রিয়ান সবাইকে কী করতে হবে সব খুব ভালোভাবে বলে দিলো। সকলেই যার যার কাজ বুজে নিলো। ওদের বিদায় দিয়ে নিজের দুহাতে মুখ চেপেধরে একটা লম্বা শ্বাস নিলো আদ্রিয়ান। তিনদিন হয়ে গেছে। সামনে লাঞ্চ পরে আছে কিন্তু খাওয়ার মিনিমাম ইচ্ছেও নেই ওর। আনিমাকে খাইয়ে তারপরেই খেতো আদ্রিয়ান। এটা একটা অভ্যেসে পরিণত হয়ে গেছে ওর। কিন্তু এখন? মেয়েটা কিছু খেয়েছে কী না? আদোও সুস্হ আছে কী না? কিছুই বুঝতে পারছেনা ও। তাহলে কীকরে শান্তিতে গিলবে ও? তবুও জোর করেই খানিকটা খেয়ে নিলো ও। কারণ এই মুহূর্তে ওকে সুস্হ থাকতে হবে। ওকে ওর জানপাখিকে খুজে পেতেই হবে যেকোনো মূল্যে।

_____________________

গভীর রাত। অনিমা খাটে উপর হয়ে শুয়ে আছে। চোখ দিয়ে নিরব ধারায় জল পরছে। রিক তার কথাই রেখেছে কাল রাত থেকে খাবার তো দূর একফোটা পানিও দেয়নি ওকে। রুমের ওয়াসরুমের পানির লাইনটাও বন্ধ করা। ওয়াসরুমে যাওয়ার দরকার পরলে বাইরেরটায় নিয়ে গেছে ওকে। খিদে পেলেও তেমন খাওয়ার ইচ্ছে নেই, দীর্ঘসময় না খেয়েও হার ভাঙ্গা খাটুনি খাটার অভ্যেস ওর মামার বাড়ি থেকেই হয়ে গেছে, কিন্তু পানি পিপাসাতে গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে ওর, বেশ কষ্ট হচ্ছে। কিছুক্ষণ পর দরজা খুলে রিক ভেতরে ঢুকলো, অনিমা সেটা বুঝতে পেরেও কোনো প্রতিক্রিয়া করেনি যেভাবে ছিলো ওভাবেই চুপচাপ শুয়ে আছে। রিক এসে খাটে বসলো, অনিমার দিকে ভালোভাবে তাকিয়ে বুঝতে পারলো অনেক্ষণ যাবত কাঁদছে। রিক অনিমার মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে বলল,

—- ” কেনো জেদ করছো। জাস্ট একবার চাও আমার কাছে। আমি এক্ষুনি খাবার আনার ব্যবস্থা করছি।”

কিন্তু অনিমা কোনোরকম কোনো রিঅ‍্যাক্ট করলোনা। রিক বিরক্ত হয়ে বলল,

— ” দেখো বেশি করছো কিন্তু এবার ? এরকম করার মানে কী?”

অনিমা এবারেও কোনো রিঅ‍্যাক্ট না করে স্হির ভাবে ভাঙ্গা গলায় টেনে টেনে বলল,

— ” একটু একা থাকতে দিন আমাকে।”

রিক এবার রেগে গেলো। রাগী কন্ঠে বলল,

— ” আচ্ছা? এখনো তেজ দেখাবে? ফাইন। আমিও দেখি তুমি কতোক্ষণ এভাবে না খেয়ে থাকতে পারো।”

বলে উঠে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো রিক। রিকের মনে এখন অন্য চিন্তা বাসা বাধছে যে অনিমার এক্সাক্টলি হয়েছেটা কী? হঠাৎ করেই ওভার রিঅ্যাক্ট করছে আবার হঠাৎ করেই শান্ত হয়ে যাচ্ছে। এটা কী আদোও শুধু আমি ওকে জোর করে আটকে রেখেছি এই কারণে নাকি এর পেছনেও অন্যকোনো কাহিনী আছে? আর অনিমা নিরবে কাঁদতে কাঁদতে এক পর্যায়ে ওভাবেই ঘুমিয়ে পরেছে।

আর অপরদিকে আদ্রিয়ান ছাদের দেয়ালে হেলান দিয়ে আজকেও দুঃখ বিলাশ করছে। সারাদিন অনিমাকে খোজার কাছে নিজেকে ব্যাস্ত রাখলেও এই নিরব রাতে আর নিজেকে শক্ত করে রাখতে পারেনা ও। এই নিস্তব্ধ রাতে অনিমার কথা আরো বেশি করে মনে পরে ওর। খুব ইচ্ছে করছে সিগারেটের ধোয়ায় নিজের বুকের অসহ্যকর আগুন নেভানোর ব্যর্থ চেষ্টা করতে কিন্তু অনিমা একদিন বলেছিলো যে ও স্মোকিং আর স্মোকার দুটোর একটাকেও পছন্দ করে না। তাই আগে মাসে দুই এক টা খেলেও ঐ দিনের পর সেটাও ছেড়ে দিয়েছে ও। কিন্তু ওর ভেতরের যন্ত্রণা তো ও কিছুতেই কমছে না। কিছু দিয়েই না।

_______________________

সকালবেলা রিক ঘুম ভাঙ্গার পর ফ্রেশ হয়ে অনিমার রুমের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো। কারণ ঠিক করে নিয়েছে এখন যদি অনিমা খেতে নাও চায় তবুও জোর করেই খাওয়াবে। অনেক দেখে নিয়েছে, এই মেয়ের জেদ খুব বেশি। মরে গেলেও নিজে থেকে খাবার চাইবে না। ওরই ভুল ছিলো এরকম একটা শাস্তি দেওয়া ঠিক হয়নি। এসব চিন্তা করে অনিমার রুমে গিয়ে সামনে তাকিয়ে রিক অবাক হয়ে গেলো কারণ অনিমা ফ্লোরে পরে আছে। সেটা দেখে রিক দৌড়ে গেলো অনিমার কাছে। ওকে তুলে বেডে শুইয়ে বেশ কয়েকবার গালে হালকা করে চাপড় মারতে মারতে ডাকতে শুরু করলো ওকে। কিন্তু সারা না পেয়ে চেষ্টা ‍চিৎকার করে কাউকে পানি আনতে বলল, ওর চোখে মুখে পানির ছেটা দেওয়ার পর অাস্তে আস্তে ওর চোখ খুলে তাকালো। কিন্তু পুরোপুরি না। ও ঘোরের মধ্যেই ‘আদ্রিয়ান আদ্রিয়ান’ বলে ডাকতে শুরু করলো। রিক এবার চরম অবাক হলো। কতোটা ভালোবাসলে ঘোরের মধ্যেও একটা মানুষের নাম নেওয়া যায়। এটাই ভাবছে ও। আচ্ছা ও কোনো ভুল করছে না তো? এটা কী সত্যিই ঠিক হচ্ছে? না না কীসব উল্টাপাল্টা ভাবছে ও? অনিমা ওর আর কারোর না। এসব ভেবে নিজেকে সামলে খাবার অানিয়ে সবার আগে অনিমাকে পানি খাওয়ালো। তারপর খাবারটাও খাইয়ে দিলো। অনিমা জ্ঞানে নেই তাই কোনো ঝামেলা না করেই খেয়ে নিলো। রিক ওকে শুইয়ে দিয়ে নিচে চলে গেলো।

রিক নিচের থেকে ওর কাজকর্ম সেড়ে প্রায় এক ঘন্টা পর অনিমার রুমে আরেক দফা অবাক হলো। অনিমা রুমের সবকিছু ভাঙচুর করছে আর চিৎকার করছে। প্রচন্ড হাইপার হয়ে গেছে ও। রিক চিৎকার করে অনি বলে ডাকতেই অনিমা পেছনে ঘুরলো। রিক অনিমার দিকে এগোতে নিলো কিন্তু অনিমা থামিয়ে দিয়ে বলল,

—- ” একদম নাহ। একদম আমার কাছে আসার চেষ্টাও করবেন না। তাহলে সব শেষ করে দেবো আমি।”

বলেই একটা শো পিছ ভেঙ্গে ফেললো। রিক বলল,

— ” ওকে কুল। আমার কথাটা শোনো।’

বলে আবার এগোতে নিলে অনিমা আবারো চিৎকার করে বলল,

— ” বললাম না আমার থেকে দূরে থাকুন? জাস্ট গেট লস্ট।”

রিক স্তম্ভিত হয়ে তাকিয়ে আছে অনিমার দিকে। কী হলো কিছুই বুঝতে পারছেনা রিক। হঠাৎ এতো হাইপার কেনো হয়ে গেলো? রিক নরম গলায় বলল,

— ” ওকে আমি আসছিনা কাছে। তুমি একটু শান্ত হয়ে বসো?”

অনিমা এবারেও চেঁচিয়ে বলল,

— ” নাহ আপনি যান এখান থেকে। যান!”

বলেই আবার সবকিছু ভাঙ্গতে শুরু করলো। রিক ও কাছে যাওয়ার সাহস পাচ্ছেনা। অনিমা ওসব ভাঙ্গতে ভাঙ্গতেই জ্ঞান হারিয়ে পরে যেতে নিলেই রিক দৌড়ে গিয়ে ধরে ফেললো। ওকে কোনোমতে শুইয়ে দিয়ে লোক ডাকিয়ে রুমটা পরিষ্কার করালো। বেশ অবাক হয়েই দেখছে রিক অনিমাকে। অনিমার পাশে বসে ওর টুকটাক চেকআপ করলো। প্রেশার লো সেটা না মেপেই বোঝার ক্ষমতা আছে ওর। তবে একটু আগে যেটা হলো সাধারণ কোনো ঘটনা ছিলোনা।

_____________________

সোফায় বসে মুখে হয় হাত দিয়ে গভীর চিন্তায় মগ্ন রিক । এতোদিন ও সন্দেহ করতো কিন্তু আজ ও সিউর যে অনিমার সাইকোলজিক্যাল কোনো প্রবলেম আছে। আজকের আচরণে ও পুরো সিউর হয়ে গেছে সেটা। কিন্তু কী প্রবলেম সেটাই বুঝতে পারছেনা ও। মামা যাই বলুক ও অনিমাকে কালকেই একজন ভালো ডক্টরকে দেখাবে। এসব নানা কথা ভাবতে ভাবতে হঠাৎ ওর ফোন বেজে উঠলো। ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে আওয়াজ এলো,

— ” কেমন আছো রিক দা?”

রিকের ভ্রু জোরা কুচকে গেলো। অবাক হয়ে বলল,

— ” তুই? এই নাম্বার কোথায় পেলি?”

স্নিগ্ধা একটু হেসে বলল,

— ” মামা দিয়েছে। ফোন করে ডিস্টার্ব করলাম?”

রিক বিরক্ত হয়ে বলল,

— ” এই কাজের কথা বলবি? ফোন কেনো করেছিস?”

স্নিগ্ধা স্হির কন্ঠে বলল,

— ” অনিমা তোমার কাছে আছে তাইনা?”

রিক শক্ত গলায় বলল,

— ” হ্যাঁ তো?”

স্নিগ্ধা নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
— ” নাহ মানে একটা কথা বলবো?”

রিক এবারেও বিরক্তি ঝেড়ে বলল,

— ” ড্রামা না করে বলে ফেল।”

স্নিগ্ধা ইতস্তত কন্ঠে বলল,

— ” আসলে ওখানে তো কোনো মেয়ে নেই। মাত্র একজন মেয়ে সেইফ আছে। সেও বিজি থাকে। অনিমার ওখানে থাকতে কষ্ট হয় আবার আনইজি লাগে নিশ্চই? তো বলছিলাম কী আমাকে ওখানে নিয়ে চলো না। আমারও ঘোরা হবে মেয়েটারও একটা সঙ্গী হবে।”

রিক অবাক হয়ে বলল,

— ” পাগল হয়ে গেছিস নাকি? কীসব ভাট বকে যাচ্ছিস? তোকে এখানে আনবো কেনো?”

স্নিগ্ধা মিনতির সুরে বলল,

— ” বোঝার চেষ্টা করো রিক দা মেয়েটার একা ওখানে বেশ কষ্ট হচ্ছে । আমি গেলে ওর ভালো লাগবে। প্লিজ।”

রিকের এবার অনিমার সিচিউশন টা মাথায় এলো। মেয়েটার কনডিশন এমনিতেই ভালো না। স্নিগ্ধা এলে সত্যিই ভালোই হবে। কিছুক্ষণ এসব ভেবে রিক বলল,

— ” তোর হসপিটালে যেতে হবে না?”

স্নিগ্ধা তাড়াতাড়ি জবাব দিলো,

— ” না না সেটা নিয়ে ভেবোনা আমি ম্যানেজ করে নেবো।”

রিক কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল,

— ” আমি কানট্রি বললে এখানকার এয়ারপোর্ট পর্যন্ত একা আসতে পারবিনা?”

স্নিগ্ধা খুশি হয়ে বলল,

— ” হ্যাঁ পারব। তুমি বলে দাও জায়গাটা।”

রিক বলল,

— ” আমি টেক্সট করে দিচ্ছি। রাখ এখন।”

স্নিগ্ধা নিচু কন্ঠে বলল,

— ” ওকে।”

ফোনটা রেখে একটা শান্তির নিশ্বাস নিলো স্নিগ্ধা তারপর বলল,

— ” আমি তোমাকে খুব ভালো করে চিনি রিক দা। আর তোমার রাগকেও। আমি জানি মেয়েটা তোমার কাছে ওখানে একা থাকলে শেষই হয়ে যাবে। তুমি তোমার ভূলটা একদিন ঠিকি বূঝবে। কিন্তু বুঝতে যাতে খুব দেরী না হয়ে যায় তাই আমি ওখানে যাচ্ছি। আমি সাথে থাকলে মেয়েটা একটু হলেও ভালো থাকবে।”

#চলবে…

( আচ্ছা? পাঠকরা এতো অধৈর্য কেনো? যেখানে রিয়েল লাইফই কখনো কারো স্মুথভাবে এগোয় না হাজারটা বিপদ ঝামেলা লেগেই থাকে, সেখানে গল্পে কোনো ক্রাইসিস মুমেন্ট থাকবেনা সেটা কীভাবে আশা করেন আপনারা? অনিমাকে যাতে আদ্রিয়ান তাড়াতাড়ি পেয়ে যায় সেটা অনেকেরই দাবী। তবে গল্পে প্রত্যেকটা ঘটনা ঘটার একটা বিশেষ কারণ থাকে। এই ঘটনা টারও আছে। সেটা একটা নির্দিষ্ট সময় অবধি রাখা লাগে গল্পেরই স্বার্থে। অনিমাকে পেতে আরো দুটো পার্ট বেশি লাগলেও। অনিমাকে আদ্রিয়ান পেয়ে যাবে তার সাথে বোনাস হিসেবে আরো ভালো কিছুও আপনাদর জন্যে অপেক্ষা করতে পারে। তাই সবাই একটু ধৈর্য নিয়ে পড়ুন।)