Friday, July 18, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1923



বর্ষণের সেই রাতে ❤ পর্ব- ৪৩

0

বর্ষণের সেই রাতে ❤
পর্ব- ৪৩
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

.
একটা আবছা অন্ধকার রুমে দুইটা চেয়ারে দুজন লোককে বেঁধে রাখা হতেছে। দুজনেই অত্যন্ত ভয়ের মধ্যে আছে। ওরা জানে যে আজ ওদের কী ভয়ংকর পরিণতি হতে পারে। ঐসময় এতোগুলো টাকা দেখে লোভ সামলাতে পারেনি কিন্তু এরপর ওদের সাথে কী হবে সেটাই মাথায় আসেনি ওদের। আর যখন বুঝতে পেরেছে যে কতোবড় ভুল করে ফেলেছে তখনি পালিয়ে এসছে ওখান থেকে। কিন্তু বেশিদূর পালাতে পারেনি তারআগেই ওদের ধরে ফেলেছে আর এখানে নিয়ে এসছে। ওদের চারপাশে অনেকগুলো লোক দাড়িয়ে আছে। হঠাৎ ঐ রুমের দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলো আদ্রিয়ান। অন্ধকার স্তব্ধ রুমে আদ্রিয়ানের পায়ের গম্ভীর আওয়াজ স্পষ্ট। আদ্রিয়ানের পায়ের আওয়াজে ঐ দুজনের বুকের ভেতরে আরো তীব্র কম্পন শুরু হলো। দুজনের ভেতরেই আফসোস হচ্ছে যে কেনো টাকার লোভে পরে এই চরম ভুলটা করলো? আদ্রিয়ান হালকা আওয়াজে সিটি বাজাতে বাজাতে ওদের দুজনের সামনে রাখা চেয়ারটায় বসলো। ওর পেছনে আদিব আর আশিস দাঁড়িয়ে আছে। সামনের দুজন ভয়ে ঠকঠক করে কাঁপছে। আদ্রিয়ান মুচকি হেসে পায়ের ওপর পা তুলে বসে ওদের দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” তোদের তো আমার বাড়ির গেইটের কাছে থাকার কথা ছিলো? হঠাৎ রেইলস্টেশনে কেনো গেলি বলতো? তাও বিনা নোটিশে?”

লোকদুটো ভীত চোখে তাকিয়ে আছে আদ্রিয়ানের দিকে। আদ্রিয়ান নিজের হাত এগিয়ে এনে নখ দেখতে দেখতে বলল,

— ” দেখ কাজে ফাকি দেওয়া আমি মোটেও পছন্দ করিনা সেটাতো জানিস? তো হঠাৎ উধাও কেনো হলি?”

ওরা আর কী বলবে? আদ্রিয়ানের এই ঠান্ডা গলা ওদের রক্তও ঠান্ডা করে দিয়েছে। আদ্রিয়ান ওদের চুপ থাকতে দেখে ভ্রু কুচকে তাকালো তারপর আবারো ঠান্ডা গলায় বলল,

— ” কতো টাকা দিয়েছিলো?”

লোকদুটো এবার ভয়ে কেঁদেই দিলো, একজন ভয়ে ভয়ে বলল,

— ” ভাই আমরা কিছু জানিনা, আমরা তো গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছিলাম। আপনি ছিলেন না তাই..”

আদ্রিয়ান বাঁকা হেসে সোজা হয়ে বসে বলল,

— ” তারজন্যে উইথ আউট এনি পার্মিশন তোরা পগার পার হয়ে গেলি তাইতো?”

লোকদুটো খুব ভালোভাবে বুঝে গেছে যে ওদের কোনো কথাতেই কোনো লাভ হবেনা। আদ্রিয়ান সবটাই জানে। আদ্রিয়ান পকেট থেকে গান বের করে কপালে স্লাইড করে স্হির দৃষ্টিতে ওদের দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” খাওয়ার থালায় ফুটো করলে নতুন থালা জোগাড় করা যায়। কিন্তু যেই ডালে বসে আছিস সেই ডালেই কুড়াল মারলে কী হয় জানিস? সোজা নিচে..আর তারওপর যদি নিচে লাভা থাকে, তাহলে?”

ওরা এবার খুব ভালোভাবেই বুঝে গেছে যে আজ ওদের কপালে ভয়ংকর রকম দুঃখ আছে। ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বলল,

— ” স্যার এবারের মতো মাফ করে দিন? এই ভুল আর কোনোদিন হবেনা।”

আদ্রিয়ান হেসে দিলো এবার। কিছুক্ষণ হাসার পর নিজেকে সামলে বলল,

— ” আরে আমি জানি সেটা। আর সুযোগ? হ্যাঁ এটা ঠিক যে আমি সবাইকেই একটা সুযোগ দেই। কিন্তু ততোক্ষণ, যতক্ষণ ব্যাপারটা শুধু আমার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। কিন্তু আফসোস তোরা যেই ভুলটা করেছিস সেটা এমন একজনকে ঘিরে যাকে নিয়ে কোনোপ্রকার কম্প্রমাইস করা সম্ভব নয় আমার পক্ষে, আর ক্ষমা তো একেবারেই না।”

বলেই ওরা উঠে দাড়িয়ে বলল,

— ” ভেবেছিলাম তোদের ওপরেই পাঠিয়ে দেবো। কিন্তু পরে ভাবলাম তাতে কী লাভ হবে? শান্তিতে ওপরে চলে যাবি। তারচেয়ে তোদের বাঁচাটাই দুর্বিষহ করে দেই? সেটাই বেটার হবে। আজ তোদের সাথে সেটাই করবো যাতে তোদের দিকে কেউ তাকালে সে তার নিজেরই মালিকের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করার কথা চিন্তাও করতেই কয়েকবার। আমার জানপাখিকে ওই লোকটার কাছে পৌছে দিতে দুই হাত পেতে টাকা নিয়েছিলি না?”

এটুকু বলেই ওর লোকেদের ডেকে বলল ওদের দুটোকে কেমিক্যাল রুমে নিয়ে গিয়ে এসিড দিয়ে ধীরে ধীরে সময় নিয়ে যাতে ওদের হাত দুটোকে গলিয়ে দেয়। ওরা দুজন আদ্রিয়ানের কাছে অনেক আকুতি মিনতি করেছে কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। ওদের অনুরোধকে উপেক্ষা করে বেড়িয়ে এসছে ওখান থেকে । আদ্রিয়ান অন্যকোনো ব্যাপার হলে এদের দ্বিতীয় সুযোগ ঠিকি দিতো কিন্তু ব্যাপারটা অনিমাকে নিয়ে তাই ও ক্ষমার কথা চিন্তাও করেনি। ও নিজেই করতো কাজটা কিন্তু ওর এখন অনিমাকে খুজে বের করতে হবে। প্রতিটা মুহূর্ত ওর কাছে খুব গুরত্বপূর্ণ।

____________________

সকালের সূর্যের আলো চোখে পরতেই অনিমা পিটপিট করে চোখ খুললো, মাথা ভীষণ ভার হয়ে আছে চিনচিন ব্যাথা করছে, খুব দুর্বল লাগছে ওর। দুবার উঠে বসতে গিয়েও পরে গেলো। অনেক কষ্টে বেড ধরে উঠে বসলো ও। খুব বেশিই খারাপ লাগছে ওর, মাথা চেপে ধরে চুপ করে বসে আছে। আস্তে আস্তে সব কিছুই মনে পরলো রিকের ওকে তুলে নিয়ে আসা, এরপর ওই ফার্মহাউজে ইনজেকশন দেওয়া এই অবধি মনে আছে ওর। কোনরকমে মাথা উঁচু করে চারপাশটা দেখলো। ওকে বড় একটা রুমে রাখা হয়েছে, পুরো রুমটাই হোয়াইট পেন্ট করা, সবকিছুই অন্যরকম, একটু বেশিই মর্ডান টাইপ। রিক ওকে আবার কোথায় নিয়ে এলো? এসব ভেবে মাথা ব্যাথা আরো বেড়ে যাচ্ছে ওর। আস্তে করে বেড থেকে নেমে ধীর পায়ে ব্যালকনিতে গিয়ে রেলিং ধরে চারপাশে তাকিয়ে দেখলো আশেপাশে শুধু পানি আর পানি, দেখে মনে হচ্ছে সমুদ্র আর এটা যে বঙ্গোপসাগর নয় সেটা খুব ভালোকরেই বুঝতে পারছে। এটা একটা দ্বীপ সেটাও বেশ বুঝতে পারছে। কাঁদার শক্তির নেই ওর মধ্যে, দাঁড়িয়ে থাকাটাই কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে ওর জন্যে। কোনোমতে দেয়াল ধরে ভেতরে গিয়ে সামনে তাকিয়ে দেখলো রিক দেয়ালে হেলাম দিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসছে। অনিমা ওকে দেখে দাঁড়িয়ে যেতেই রিক সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলল,

— ” দেখা শেষ যে কোথায় আছো? পছন্দ হয়েছে তো জায়গাটা? ”

অনিমা মাথা নিচু করে ফেললো, চোখ দুটো ছলছল করছে যেনো এক্ষুনি জল গড়িয়ে পরবে। রিক অনিমার দিকে এগিয়ে আসতে নিলেই অনিমা ভয় পেয়ে তাড়াহুড়ো করে পেছাতে গিয়ে পরে যেতে নিলো, রিক ধরতে যাবে তার আগেই ও নিজেকে টেবিল ধরে সামলে নিলো। রিক হেসে বলল,

— ” আরে এতো ভয় কেনো পাচ্ছো বলোতো? মারছি আমি তোমাকে?”

বলে অনিমাকে ধরল। অনিমা ছাড়ানোর চেষ্টা করতেই রিক ওকে ধমক দিয়ে বলল,

— ” ঐ একদম তেজ দেখাবেনা আমাকে। আমি তোমার কী হাল করতে পারি সেটা খুব ভালো করেই জানো তুমি।”

অনিমা কেঁদে দিয়ে বলল,

— ” যেতে দিন আমাকে। ”

অনিমার কথা শুনে রিক চোখ বন্ধ একটা শ্বাস ফেলে নিজেকে শান্ত করে বলল,

— ” দেখো এই মুহূর্তে তোমার গায়ে হাত তোলার ইচ্ছে আমার একদমি নেই। তাই বাধ্য করোনা আমাকে।”

অনিমাকে ধরে বেডে বসিয়ে বলল,

— ” লম্বা সময় ধরে কিছু খাওয়া হয়নি তোমার তাই এতো দুর্বল লাগছে। আমি খাবার আনাচ্ছি চুপচাপ খেয়ে নেবে।”

বলেই কাউকে কল করে খাবার আনতে বলল। অনিমা কিছু না বলে হাটু গুটিয়ে চুপচাপ বসে আছে, খুব জোরে কাঁদোতে ইচ্ছে করছে ওর কিন্তু রিকের ভয়ে কাঁদতেও পারছেনা। কিছুক্ষণ পর অনিমা রিকের দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” কোথায় আছি আমরা?”

রিক তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে অনিমার দিকে তাকিয়ে শক্ত গলায় বলল,

— ” সেটা তোমার জানার কোনো প্রয়োজন নেই। বেশি কথা বললে কথা বলার মতো অবস্হাতেই রাখবোনা। সো কোয়াইট।”

খাবার আসার পর রিক প্লেটটা অনিমার সামনে রেখে বলল,

— ” ফিনিস ইট।”

এই মুহূর্তে ভীষণ খিদে পেয়েছে অনিমার। কতোক্ষণ আগে কিছু খেয়েছে নিজেই জানেনা। কিন্তু তবুও এখন খাওয়ার ইচ্ছে নেই ওর। সবকিছুই বিষ মনে হচ্ছে ওর কাছে তাই নিচু কন্ঠে বলল,

— ” খিদে নেই আমার।”

রিক এবার অনিমার মুখ চেপে ধরে প্লেট থেকে খাবার নিয়ে ওর মুখে ঢুকিয়ে দিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

— ” একটা কথা জেনো দ্বিতীয়বার বলতে না হয় আমাকে। আমার প্রতিটা ওয়ার্ডকে ওর্ডার মনে করবে গট ইট?”

অনিমা মাথা নিচু করে ফুপিয়ে কান্না করছে। মুখের খাবারটা গেলার শক্তিও নেই ওর মধ্যে। বারবার আদ্রিয়ানের কথা মনে পরছে। ও খেতে না চাইলে আদ্রিয়ানও জোর করেই খাওয়াতো ওকে কিন্তু দুজনের জোর করার পদ্ধতি কতোটা ভিন্ন। রিক ধমক দিয়ে বলল,

— ” মুখের টা শেষ করো।”

রিকের ধমকে কেঁপে উঠলো অনিমা কান্না চেপে রেখে অনেক কষ্টে গিললো খাবারটা। রিক প্লেটটা হাতে নিয়ে দৃঢ় কন্ঠে বলল,

— ” পুরোটা শেষ করবে।”

অনিমাকে খাইয়ে রিক উঠে দাঁড়িয়ে বলল,

— ” একদম ভদ্র মেয়ের মতো চুপচাপ বসে থাকবে এখানে। ঐ আদ্রিয়ানকে মারার আগে পর্যন্ত এখানেই থাকবে তুমি।”

আদ্রিয়ানকে মারার কথা শুনে শান্ত চোখে রিকের দিকে তাকালো অনিমা। তারপর ধীর কন্ঠে বলল,

— ” আদ্রিয়ানকে মারা আপনার সাধ্যের মধ্যে নেই।”

রিক বেশ রেগে গেলো অনিমার কথায়, ও রেগে অনিমার হাত মুচড়ে ধরে রাগী কন্ঠে বলল,

— ” এতো বিশ্বাস? কদিন আগেও তো ওর প্রাণের জন্যে আমার কাছে হাত জোর করছিলে? আজ কী হলো?”

অনিমা হাতে বেশ ব্যাথা লাগছে ঠোট কামড়ে ধরে সেই ব্যাথা সহ্য করছে ও। কান্নাজরিত কন্ঠেই রিকের দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” যদি আপনার সত্যি ক্ষমতা থাকতো তো ওনার উপস্হিতিতেই আমাকে ওনার কাছ থেকে নিয়ে আসতেন। কিন্তু আপনি ওনার না থাকার সুযোগ নিয়ে মিথ্যে নাটক সাজিয়ে আমাকে নিয়ে এসছেন। আগে না বুঝলেও এখন বুঝতে পারছি যে ওনাকে মারা তো দূর সামান্য কোনো ক্ষতি করাও আপনার সাধ্যে নেই।”

রিক এবার মারাত্বক রেগে গেলো, রেগে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো অনিমাকে। খাটের কর্ণারে গিয়ে লাগার কারণে কপালের সাইড দিয়েও অনেকটা কেটে গেলো অনিমার । রিক সেদিকে খেয়াল করেনি ধাক্কা দিয়েই হনহন করে বেড়িয়ে গেছে রুম থেকে। অনিমার মাথা ধরে উঠে বসে হাটুতে মুখ গুজে ফুপিয়ে কাঁদতে লাগল। এমনিতেই মাথা ব্যাথা করছে ওর তারওপর ব্যাথা পাওয়ায় আরো কষ্ট হচ্ছে।

___________________

রাতে আদ্রিয়ান টেবিলে ল্যাপটপ রেখে ওটাতে কিছু ইনফরমেশন কালেক্ট করছে। হঠাৎ আদিব এলো। আদিবের উপস্থিতি টের পেয়ে আদ্রিয়ান ল্যাপটপে চোখ রেখেই বলল,

— ” কী খবর?”

আদিব চেয়ারে বসতে বসতে বললো,

— ” সবকটা এয়ারলাইন চেক করা হয়ে গেছে কিন্তু সবাই না করছে।”

আদ্রিয়ান একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল,

— ” টাকা দিয়ে মুখ বন্ধ করে দিয়েছে।”

আদিব অবাক হয়ে বলল,

— ” এখন কী করবো? এতোগুলো এয়ার লাইনের সবাইকে তো আর চাপ দেওয়া যাবে না?”

আদ্রিয়ান ল্যাপটপ টা বন্ধ করে বলল,

— ” আগে এটা জানতে হবে যে কোনো এয়ারপোর্ট থেকে ওরা গেছে তারপর বাকিটা বার করা আমার বা হাতের কাজ।”

আদিব একটু ভেবে বললো,

— ” আচ্ছা কবির শেখ এর নাম্বার ট্রাক করলে কেমন হয়?”

আদ্রিয়ান একটা শ্বাস ফেলে বলল,

— ” লাভ নেই। খুব চালাক মানুষ উনি। রিকের সাথে উনি ওনার ইউসিয়াল নাম্বার দিয়ে কথা বলবেন না। তুই চলে যা অনেক রাত হয়েছে।”

আদিব কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে থেকে আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” একটা কথা বলবো?”

অাদ্রিয়ান একটা হাই তুলে বললো,

— ” হুম?”

আদিব ইতস্তত কন্ঠে বলল,

— ” আজকে একটু ঘুমিয়ে নে ভাই। টানা দুদিন ধরে চোখের পাতা এক করিস নি।”

আদ্রিয়ান আদিবের দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” ঘুম আসবেনা এখন।”

আদিব ভ্রু কুচকে বলল,
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
— ” কাম অন আদ্রিয়ান। তোর বডিটাও হিউম্যান বডি। এরকম করলে অসুস্হ হয়ে পরবি। যদি সুস্হই না থাকিস তো অনিকে খুজবি কীকরে?”

আদ্রিয়ান মুচকি হেসে বলল,

— ” আচ্ছা চেষ্টা করবো। তুই যা এখন। রাইমা একা আছে। এইসময় ওকে সময় দেওয়া উচিত তোর।”

আদিব চলে যেতেই আদ্রিয়ান উঠে ব্যালকনিতে চলে গেলো। রেলিং ধরে কিছুক্ষণ আকাশের দিকে তাকিয়ে রইল। আর ওর ঐ শূণ্যদৃষ্টির চোখ থেকে এক ফোটা জল ধীর গতিতে গড়িয়ে পরলো। সবার সামনে স্ট্রং থাকলেও ভেতর দিয়ে ভেঙ্গে গুড়িয়ে যাচ্ছে ও। মেয়েটা কোথায় আছে, কীভাবে আছে, কী হচ্ছে ওর সাথে কিছুই বুঝতে পারছেনা ও। খুব বেশি মিস করছে ও ওর জানপাখিকে। আকাশের দিকে তাকিয়ে আদ্রিয়ান ভাঙা গলায় বলল,

— ” আ’ম সরি মিস্টার সিনিয়র। আমি জানি আমি তোমাকে দ্বিতীয়বার নিরাশ করেছি। তোমার মামনীকে ঠিকভাবে আগলে রাখতে পারিনি আমি। শুরুতে আমার একটা ভুলের কারণে চারটা বছর মেয়েটা কষ্ট পেয়েছে।আজ আরেকটা ছোট্ট ভুলের কারণে ওকে আবারও বিপদে পরতে হলো। তুমি ঠিক মানুষকে দায়িত্ব দিয়ে যেতে পারোনি। কিন্তু কথা যখন দিয়েছি তখন আমি ঠিক তোমার মেয়েকে সুরক্ষিত অবস্হায় নিয়ে আসবো। সাত বছর আগে ও শুধু আমার দায়িত্ব ছিলো, কিন্তু আজ ও আমার ভালোবাসাও। আমি তোমার মেয়ের কিচ্ছু হতে দেবোনা, কিচ্ছু না। ”

____________________

অনিমা খাটে মাথা চেপে ধরে বসে আছে। মাথা ভিষণ ব্যাথা করছে ওর, ভার হয়ে আসছে সকাল থেকেই। সবকিছু অসহ্য লাগছে ওর কাছে। সবকিছু ভেঙ্গে ফেলতে ইচ্ছে করছে ওর এই মুহূর্তে। রিক খাবার নিয়ে অনিমার রুমে এসে অনিমাকে ওভাবে মাথা চেপে ধরে ছটফট করতে দেখে। খাবারটা টি-টেবিলে রেখে ওর সামনে বসে ও মাথায় হাত রেখে বলল,

— ” এরকম করছো কেনো? মাথা ব্যাথা করছে?”

অনিমা হাত ঝারা দিয়ে সরিয়ে ঝাঝালো কন্ঠে বলল,

— ” জাস্ট লিভ মি এলোন।”

রিক অনেকটা অবাক হলো। যেই মেয়েটা ওর দিকে চোখ তুলে তাকাতেও ভয় পায় সেই মেয়েটার হঠাৎ এইভাবে কথা বলা সত্যিই স্বাভাবিক নয়। তাছাড়া এখন এমন কিছুই করেনি ও যার জন্যে এরকম করবে। হঠাৎ এই ওভার রিয়াক্ট করা দেখে রিকের মনে প্রশ্ন উঠলেও ব্যবহারটা ওর ইগোতে লাগলো। রিক ওর হাত ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলল,

— ” সাহস কীকরে হলো আমার সাথে এভাবে কথা বলার?”

অনিমা কিছু না বলে হাত সরিয়ে দিয়ে মুখ ঘুরিয়ে বসে রইলো। রিক ভ্রু কুচকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো অনিমার দিকে। তারপর প্লেট হাতে নিয়ে বলল,

— ” হা করো।”

অনিমা রিকের দিকে না তাকিয়েই বলল,

—” খাবোনা।”

রিক অনিমার মুখ নিজের দিকে ঘুরিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

— ” বেশি কথা না বলে চুপচাপ খেয়ে নাও।”

অনিমা এবার ধাক্কা দিয়ে প্লেট টাই ফেলে দিলো। এটুকুই যথেষ্ট ছিলো রিকের সেই ভয়ংকর রাগ ওঠানোর জন্যে। রিক রক্তবর্ণ চোখে অনিমার দিকে তাকালো অনিমা অন্যদিকে তাকিয়ে আছে। রিক ওর চুলের মুঠি ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে সর্বশক্তি দিয়ে একটা থাপ্পড় মারলো। অনিমা মুখ থুবড়ে বিছানায় পরে গেলো। ওর ঠোঁটের কোণ এমনিতেই কাটা ছিলো এই থাপ্পড়ে নতুন করে না কাটলেও পুরোনো ক্ষত থেকে রক্ত বেড়িয়ে গেলো। রিক ওর হাত ধরে টেনে তুলে গাল চেপে ধরে বলল,

— ” যতই ভাবি যে তোমার গায়ে হাত তুলবো না কিন্তু তুমি তো চড় থাপ্পড় ছাড়া শুধরাবার মেয়েই নও। কিছু না বললেই সাহস বেড়ে যায় তাইনা?”

অনিমা কান্নাজরিত চোখে তাকিয়ে আছে রিকের দিকে। রিক ওকে ধাক্কা দিয়ে বেডে ফেলে বলল,

— ” তৈরী খাবার সামনে পাচ্ছিলে বলে মাথায় চড়ে গেছো রাইট? এবার তুমি তখনি খাবার পাবে যখন অামার কাছে খাবার ভীক্ষা চাইবে। তার আগে খাবার তো ছাড়ো একফোটা পানিও পাবেনা তুমি।”

এটুকু বলে রুম থেকে বেড়িয়ে শব্দ করে দরজাটা বন্ধ করে চলে গেলো রিক। অনিমা বালিশে মুখ গুজে শব্দ করে কাঁদতে শুরু করলো। আশেপাশের বাতাসও ওর কাছে বিষাক্ত লাগছে । ও কী করছে নিজেই বুঝতে পারছেনা। মাথায় অসহ্য রকম যন্ত্রণা হচ্ছে। ও নিজেও জানেনা এই যন্ত্রণার শেষ কোথায়?

#চলবে…

বর্ষণের সেই রাতে ❤ পর্ব- ৪২

0

বর্ষণের সেই রাতে ❤
পর্ব- ৪২
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

.
আদ্রিয়ানের খুব বেশি অসস্তি হচ্ছে। কিছুতেই শান্তি পাচ্ছেনা। আজ ফিনালে বাট কন্টেসস্টেন্ডদের গানের প্রতি কনসেন্ট্রেট করতে পারছেনা ও। ওর মন বলছে অনিমা ভালো নেই বাট শো ছেড়ে ওঠাও সম্ভব না। পাশ থেকে অন্য একজন জাজ বেশ কয়েকবার আদ্রিয়ানকে জিজ্ঞেস করেছে ‘আর ইউ ওকে?’ উত্তরে আদ্রিয়ান শুধু জোরপূর্বক একটা মুচকি হাসি দিয়েছে। কিন্তু ওর টেনশনে অবস্হা এতোটাই খারাপ যে ঠিকভাবে বসতে অবধি পারছেনা। কোনোমতে শো টা কম্প্লিট করে আদ্রিয়ান সেট থেকে একপ্রকার দৌড়ে বেড়িয়ে গেলো, বাকিরা একটু অবাক হলেও ভাবলো যে আর্জেন্ট কিছু হয়তো। রুমে গিয়ে পকেট থেকে ফোনটা বের করে অনিমার নাম্বারে কল করল। কিন্তু অনেক্ষণ ফোন বাজার পরেও কেউ ফোনটা রিসিভ করলোনা। আদ্রিয়ান চারপাঁচ বার একটানা কল করার পরেও ফোন রিসিভ হলোনা ওপাশ থেকে। আদ্রিয়ান এবার ওর বাড়ির সার্ভেন্টকে কল করলো। ফোন বাজার কিছুক্ষণের মধ্যেই কল রিসিভ করলো। কল রিসিভ করতেই আদ্রিয়ান উত্তেজিত কন্ঠে বলল,

— ” তোমার ম্যাম কোথায়?”

মেয়েটি স্বাভাবিক ভাবেই বলল,

— ” স্যার সকালে ব্রেকফাস্ট দিয়ে আসার সময় তো দেখলাম ম্যাম রুমেই ছিলো। আর এখন লাঞ্চ ও নিয়ে যাচ্ছি।”

আদ্রিয়ান একটা শ্বাস ফেললো তবুও মানসিকভাবে শান্তি পেলোনা তাই বলল,

— ” রুমে গিয়ে ম্যামকে বলো আমার ফোনটা রিসিভ করতে আর খাবারে সাথে ঔষধগুলো ঠিকভাবে মনে করে মেশাচ্ছো তো?”

মেয়েটা নিচু কন্ঠে বলল,

— ” জ্বী স্যার।”

আদ্রিয়ান গম্ভীর কন্ঠে বলল,

— ” হুম যাও।”

ফোনটা রেখেই আদ্রিয়ান পায়চারী করতে লাগল কিছুক্ষণ পর ঐ সার্ভেন্ট আদ্রিয়ানকে আবার ফোন করলো। ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে মেয়েটি বলল,
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
— ” স্যার ম্যাম সারাবাড়িতে কোথাও নেই।”

আদ্রিয়ান অবাক হয়ে চড়া আওয়াজে বলে উঠলো,

— ” নেই মানে কী? ছাদ গার্ডেন এরিয়া সব চেইক করেছো?”

মেয়েটি কাঁদোকাঁদো গলায় বলল,

— ” স্যার আমরা সবাই মিলে সব জায়গায় খুজেছি কিন্তু ম্যাম নেই।”

আদ্রিয়ান চিৎকার করে বলল,

— ” নেই মানে কী ড্যাম ইট? তোমরা কী করছিলে? যদি ওর কিছু হয়না তাহলে একটাকেও বাঁচতে দেবোনা আমি মাইন্ড ইট।”

বলেই ফোনটা কেটে দিলো আদ্রিয়ান তারপর আরেকটা কল করলো। কলটা রিসিভ করতেই আদ্রিয়ান বললো,

— ” আপনাদের দুটো নাম্বার পাঠাচ্ছি রাইট নাও আমাকে নাম্বারগুলোর লোকেশন টা সেন্ট করুন।”

বলেই ফোনটা রেখে সোফায় বসে পরলো আদ্রিয়ান। কিছুক্ষণ পর আদ্রিয়ানের ফোনে মেসেজ এলো। মেসেজটা দেখেই আদ্রিয়ান অবাক হয়ে গেলো কারণ অনিমার লাস্ট লোকেশন আশ্রমের দিকেই ডেডিকেট করছে। আর রিকের নাম্বারের লোকেশনটা রিকের বাড়িতেই। আদ্রিয়ান দুইহাতে মুখ চেপে ধরে বলল,

— ” বারবার বলেছিলাম বাড়ি থেকে বেরিয়োনা কিন্তু মেয়েটা… কিন্তু ও তো আমার কথা অমান্য করার মেয়েনা? তাহলে কী এমন হয়েছিলো?”

কিছু একটা ভেবে আদ্রিয়ান আবার একটা কল করলো। তারপর বলল,

— ” রিক চৌধুরী কখন বেড়িয়েছে বাড়ি থেকে?”

ওপাশ থেকে একটা লোক বলে উঠলো,

— ” সকালে বেড়িয়েছেন আর তো ফেরেনি স্যার।”

আদ্রিয়ান আর কিছু না বলে ফোনটা কেটে সোফায় একটা পাঞ্চ মারলো। তারমানে রিক ওর ইউসিয়াল সিমটা বাড়িতেই রেখেছ যাতে আদ্রিয়ান ট্রাক করতে না পারে। আদ্রিয়ান আবার সেই প্রথম লোকটাকে ফোন করে বলল,

— ” প্রথম যেই নাম্বারটা দিয়েছি তার লাস্ট কার সাথে কথা হয়েছে কী কথা হয়েছে ইমিডিয়েটলি জানাও আমাকে।”

ফোনটা রেখে আদ্রিয়ান চড়া আওয়াজে ওর ট্যামপোরারি সেক্রেটারি কে ডাকল। লোকটা হন্তদন্ত হয়ে এসে বললো,

— ” ইয়েস স্যার।”

আদ্রিয়ান ব্যাগ গোছাতে গোছাতে বলল,

— ” আমি আজকেই ফিরছি। ইমারজেন্সি ফ্লাইটের ব্যাবস্হা করো, ফাস্ট!”

লোকটি ইতোস্তত করে বললো,

— ” কিন্তু স্যার রাতে পার্টি আছে।”

আদ্রিয়ান অগ্নিদৃষ্টি নিয়ে লোকটার দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে বললো,

— ” গো টু হেইল উইথ ইউর পার্টি স্টুপিড।”

লোকটা হকচকিয়ে গিয়ে বলল,

— ” ও্ ওকে স্যার আমি যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব এরেঞ্জমেন্ট করছি।”

বলেই একপ্রকার পালিয়ে গেলো। আদ্রিয়ান পাগলের মতো করছে একেকটা মুহূর্ত ওর কাছে বিষের মতো লাগছে। হোটেল রুমের সবকিছু ভাঙতে শুরু করলো ও। দুএক এসছিলো ওকে শান্ত করার চেষ্টায় কিন্তু ব্যর্থ হয়ে ফিরে গেছে। আদ্রিয়ানের এখন নিজের ওপর রাগ হচ্ছে যে কেনো এলো ও এখানে?

_____________________

একটা ফাঁকা রুমের ফ্লোরে বসে নিরবে কাঁদছে অনিমা। ওর হাত মুখ এখনো বাঁধা। ঘন্টাখানেক আগে রিক ওর ফার্ম হাউজের একটা রুমে বসিয়ে রেখে গেছে ওকে। কী হতে চলেছে ও নিজেও জানেনা। রিকের মাথায় কী চলছে ও সেটাও বুঝতে পারছেনা। আদ্রিয়ান ওকে বারবার বারণ করেছিলো না বেরোতে, কেনো শুনলোনা ও? ওই বা কী করতো যাকে নিজের মায়ের মতো ভালোবাসে সেই মানুষটার বিপদের কথা শোনার পর ওর মাথায় আর কিছুই ছিলোনা শুধু মাদারের কথাই মাথায় ঘুরছিলো ওর। আদ্রিয়ানকে কী ও আর দেখতে পাবে কোনোদিন? নাকি সারাজীবন ওকে এই নরকেই কাটিয়ে দিতে হবে? এসব চিন্তা করতে করতে দরজা খোলার আওয়াজে চমকে উঠলো ও। রিক এসে অনিমার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসলো। অনিমা চোখ নামিয়ে নিলো তারপর ওর সামনে হাটু ভেঙ্গে বসে বলল,

— ” তোমার বাবা খুব বুদ্ধিমানের মতো কাজ করে গেছেন তোমার পাসপোর্ট করে রেখে গিয়ে।”

অনিমা ভ্রু কুচকে তাকালো রিকের দিকে রিক হঠাৎ এই কথা কেনো বললো সেটাই বুঝতে পারছেনা ও। রিক অনিমার মুখের কাপড় টা নামিয়ে দিয়ে বলল,

— ” কিছু বলবে?”

অনিমা কিছু না বলে শুধু তাকিয়ে আছে রিকের দিকে চোখ দিয়ে ধীর গতিতে পানি পরছে ওর। রিক ওর চোখ থেকে পানি নিজের আঙ্গুলে নিয়ে বলল,

— ” এটা দেখতে যে আমার খুব বেশি ভালোলাগে তা কিন্তু না। কিন্তু কী করবো বলো? তুমি এমন সব আজ করো যে আমি নিজেকে ঠিক রাখতেই পারিনা, মাথা গরম করে দাও। এইযে এখন যেভাবে শান্ত হয়ে বসে আছো এভাবে থাকলে আমি তোমার গায়ে হাত তোলা তো দূরের কথা ধমক পর্যন্ত দেবোনা। প্রমিস!”

অনিমা মুখ ঘুরিয়ে নিলো। ওর কেমন জানিনা ইরেটেশন হচ্ছে। ভয়ের চেয়ে বেশি বিরক্ত লাগছে ওর। ওর মাথাটা কেমন যেনো ঝিম ধরে আছে, অদ্ভূত লাগছে। রিক অনিমার ফেস এক্সপ্রেশন দেখে ভ্রু কুচকে ফেললো। ব্যাপারটা কী হলো সেটাই বুঝলোনা ও, এরকম করার তো কথা না। তবুও রিক সেদিকে পাত্তা না দিয়ে ওর একজন লোককে ডাকতেই লোকটা একটা ইনজেকশনে সিরিঞ্জ হাতে নিয়ে এলো। অনিমা সেটা দেখে একটু ঘাবড়ে গেলেও কোনো রিয়াক্ট করলোনা কারণ ও জানে যে রিক যেটা করার সেটা করবেই। রিক ইনজেকশন পুশ করতে অনিমার হাতের খুলে হাতটা ধরে সামনে আনতেই অনিমা চোখ খিচে বন্ধ করে নিলো। রিক আরো একবার অবাক হলো অনিমার রিয়াকশন দেখে, ওর সবকিছু এতোটা ইজিলি মেনে নেওয়াটা ওর নরমাল লাগছেনা। ও অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো অনিমার দিকে। তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে কাঁপাকাঁপা হাতে খুব ধীরেই ইনজেকশনটা পুশ করলো অনিমার হাতে। অনিমার বন্ধ করে রাখা চোখ দিয়ে একফোটা জল গড়িয়ে পরলো। রিক শুধু দেখছে অনিমাকে কিছুতো গন্ডগোল আছে কিন্তু সেটা কী? রিক এসব ভাবতে ভাবতেই অনিমা ঢলে পরলো। রিক তাড়াতাড়ি ধরে ফেললো ওকে। ও জানতো এমন কিছুই হবে কারণ ইনজেকশনটা এইজন্যেই দিয়েছে। সবকিছু ওর মামার প্লান মতই হচ্ছে কিন্তু রিক শান্তি পাচ্ছেনা। অনিমার আজকের আচরণ বেশ ভাবাচ্ছে ওকে। এমন কিছু কী আছে যেটা ও জানেনা? হঠাৎ এতো শান্ত কেনো হয়ে গেলো মেয়েটা?

_____________________

রাতে বাংলাদেশে এসে ল্যান্ড করলো আদ্রিয়ান। ও আদিব, আশিস , তীব্র, অরু, স্নেহা সবাইকে বলে রেখেছে ওরা এয়ারপোর্টে বসে আছে গাড়ি নিয়ে। আদ্রিয়ান ওর সিকিউরিটি গার্ডদের অন্যগাড়িতে পাঠিয়ে দ্রুতপদে তীব্ররা যেই গাড়িতে আছে সেই গাড়ির কাছে আসতেই তীব্র ড্রাইভিং সিট ছেড়ে ফ্রন্ট সিটে বসে পরলো আর আদ্রিয়ান ড্রাইভিং সিটে বসে সাথে সাথেই গাড়ি স্টার্ট দিলো। আদ্রিয়ানের চোখ মুখ ভীষণ লাল হয়ে আছে, যে কেউ ওর মুখ দেখলে এখন ভয় পাবে ।অরু আর স্নেহা কেঁদেই যাচ্ছিলো কিন্তু আদ্রিয়ানের চেহারা দেখে ওদের কান্না বন্ধ হয়ে গেলো। আদ্রিয়ান গাড়িটা সবার আগে মাদারের আশ্রমে নিলো। আশ্রমের ভেতরে গিয়ে দেখলো ওখানে পুরো নিরব পরিবেশ, সবকিছুই থমথমে হয়ে আছে আদ্রিয়ান হনহনে পায়ে ভেতরে ঢুকলো পেছন পেছন ওরাও গেলো। ভেতরে গিয়ে দেখে মাদার ওনার চৌকিতে মাথা নিচু করে বসে আছে। আদ্রিয়ান সোজা ওনার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে চেচিয়ে বলল,

— ” মাদার শব্দের অর্থ মা হয় তাইনা? কোন মা এরকম করতে পারে? যে মেয়েটা আপনাকে মায়ের মতো ভালোবাসে তার সেই ভালোবাসার এরকম একটা সুযোগ কীকরে নিলেন?”

আদ্রিয়ানের কথায় মাদার স্হির দৃষ্টিতে তাকালো ওর দিকে তারপর কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলল,

— ” আমার কাছে আর কোনো উপায় ছিলোনা। আমি জানি আমি যা করেছি সেটা পাপ কিন্তু আর কোনো পথই খোলা ছিলোনা আমার কাছে।”

সকলেই জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো মাদারের দিকে। মাদার সবটা খুলে বলতেই আদ্রিয়ান ওখানের দেয়াল ধরে দাঁড়িয়ে জোরে একটা পাঞ্চ মারলো দেয়ালে। তারপর ঝাঝালো কন্ঠে বলল,

— ” সব দোষ আমার। আমি যদি ফোনটা না দিতাম ওকে তাহলে এসব হতোনা। আমার মাথায় কেনো এলোনা যে এরকম কিছু হতে পারে? এতোটা ডাফার আমি?”

আদিব আদ্রিয়ানকে থামিয়ে দিয়ে বললো,

— ” এখানে তোর কোনো দোষ নেই। সব কিছু সবসময় সবার মাথায় আসেনা। তুই তো ওকে বলেছিলি বাড়ি থেকে না বেড়োতে এমনকি গার্ডদেরও বলে গেছিলি ওকে যাতে বেড়োতে না দেয়। তুই তো সবরকম ব্যবস্হাই করে গেছিলি কিন্তু অনিমা যে বেড়িয়ে যাবে সেটা কীকরে জানবি তুই? তুই তো মানুষ রোবট নস যে সবকিছু পার্ফেক্ট হবে, ভূল হতেই পারে এটা অস্বাভাবিক কিছু না।”

মাদার কান্নাজরিত কন্ঠে বললেন,

— ” অনির দোষ নেই এখানে। ও ওর মাকে দেখেনি কিন্তু আমাকে দেখেছে। ও আমাকে ততোটাই ভালোবাসে যতোটা একজন তার মাকে ভালোবাসে। আমার কিছু হয়েছে এটা শোনার পরেও ও নিজের কথা কিংবা বসে বসে ঠিক ভুল বিবেচনা করবে এটা ভাবাও চরম বোকামী। কারণ ও স্বার্থপর নয়। নিজের মায়ের বিপদ এটা শুনে কোন সন্তান ভাবতে বসে বলোতো? যদিও আজকালকার স্বার্থপর সন্তানদের কাছে সবই সম্ভব কিন্তু অনিমা সেরকম নয়।”

তীব্র চিন্তিত মুখ করে বলল,

— ” কিন্তু ভাইয়া যদি গার্ডদের অনিমাকে বেরোতে দিতে বারণ করে থাকে তাহলে অনি বেরোলো কীকরে ওদের ওকে আটকে রাখার কথা তাইনা?”

আদ্রিয়ান এবার কিছু না বলে ওখান থেকে বেড়িয়ে গেলো। ওরাও আদ্রিয়ানের পেছন পেছন ছুটলো। আদ্রিয়ান গাড়িতে বসে ড্রাইভ করছে সাত আট জায়গায় ফোন করে সম্ভাব্য প্রত্যেকটা জায়গায় রিকের ফার্মহাউজ, ফ্লাট, গোডাউন ,বাড়ি সব জায়গায় টিম বাই টিম খোজ চালাতে ওর্ডার দিয়ে দিলো। আদিব,আশিস অবাক না হলেও তীব্র অরুমিতা আর স্নেহা বেশ অবাক হলো যে একজন রকস্টার এর এতো সোর্স আর কানেকশন কীকরে?

_______________________

গোটা রাত পার হয়ে গেলো আর ঐ একরাতের মধ্যেই শহর অলমোস্ট চিরুনী তল্লাশি হয়ে গেছে বাট অনিকে পাওয়া যায়নি। গোট দেশের সম্ভাবো জায়গাতেও আদ্রিয়ান লোক লাগিয়েছে আজকে সারাদিনের মধ্যে সেখান থেকেও খবর চলে আসবে। পাগল পাগল অবস্হা হয়ে গেছে আদ্রিয়ানের এখন যেই ওর দিকে তাকাবে সেই ভয় পেয়ে যাবে। অরুমিতা আর স্নেহাকে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে, তীব্র আদ্রিয়ানের সাথেই ছিলো কিন্তু একটু আগে ওকেও বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে। আদিব আর আশিস অন্যসব জায়গায় গেছে খুজতে। আদ্রিয়ান এবার ওর ঐ বাড়িতে এলো। সাথে সাথে আদিব আর আশিস এসেও ঢুকলো। ওকে বাড়িতে আসতে দেখে গার্ডরা সবাই চমকে উঠলো কারণ আদ্রিয়ানের আজ রাতে আসার কথা ছিলো। আদ্রিয়ান আদিব আর আশিসকে নিয়ে সোজা ওর সিকরেট রুমে গেলো, তারপর ল্যাপটপ অন করে কালকের পুরো সিসি টিভি ফুটেজটা দেখলো আর যা দেখলো তাতে ওর কপালের রগ ফুলে উঠলেও মুখে ফুটে উঠলো এক ভয়ংকর হাসি। এই হাসি যতোটা রহস্যময় তার চেয়েও বেশি হিংস্র। আশিস অবাক হয়ে বলল,

— ” কতোবড় বেইমান? চল দুটোকে গিয়ে ধরি আগে।”

আদ্রিয়ান স্হির কন্ঠে বলল,

— ” লাভ নেই। পালিয়ে গেছে ওরা।”

বলেই আদ্রিয়ান আবার কোথাও একটা ফোন করে বলল,

— ” দুটো লোকের ডিটেইলস পাঠাচ্ছি। আজ রাতে ওদের আমি আমার সিকরেট হাউসে চাই।”

বলে ফোন কেটে দিলো। আদিব আর আশিস একে ওপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করে একটা ঢোক গিললো কারণ ওরা জানে আজ ওই দুটোর কী ভয়ংকর পরিণতি হতে চলেছে।

_____________________

সন্ধ্যা হয়ে গেছে কিন্তু অনিমার কোনো খোজ পায়নি আদ্রিয়ান। এটুকু বুঝে গেছে যে অনিমা বাংলাদেশে নেই। ব্যাপারটা অনেকটাই জটিল হয়ে গেছে এবার। সোফায় বসে দুইহাতে মুখ চেঁপে ধরে বসে আছে ও। কী করবে কিচ্ছু বুঝতে পারছেনা। সবকিছু অসহ্য লাগছে। বারবার অনিমার মুখ ভেসে উঠছে। ওর ভীত চেহারা, মুখ ফুলিয়ে বসে থাকা, আবার ফিক করে হেসে দেওয়া, বাচ্চামো সব খুব বেশিই মনে পরছে। বরবার অনিমার বলা ‘ না গেলে হয়না?’ কথাটা কানে বাজছে। নিজের ওপরেই রাগ হচ্ছে ওর। চোখ দিয়ে নিরব ধারায় এক ফোটা জল গড়িয়ে পরলো। মুখ চেপে ধরেই অস্ফুট স্বরে বলে উঠলো,

— ” জানপাখি হয়ার আর ইউ?”

হঠাৎ কিছু মনে হতেই আদ্রিয়ান তাড়াতাড়ি সেই সাইকার্টিস্ট কে কল করলো যে অনিমার ট্রিটমেন্ট করছিলো। ফোন রিসিভ করতেই আদ্রিয়ান বলল,

— ” হ্যালো ডক্টর। আচ্ছা অনিমাকে যেই মেডিসিনগুলো দিয়েছিলেন যেগুলো খাবারের সাথে মিক্সট করে দেই আমি সেগুলো যদি হঠাৎ দেওয়া বন্ধ হয়ে যায় তো?”

ডক্টর অবাক হয়ে বললেন,

— ” হঠাৎ এই প্রশ্ন?”

আদ্রিয়ান বিরক্ত হয়ে শক্ত গলায় বলল,

— ” আনসার মি ডক্টর”

ডক্টর একটু গলা ঝেড়ে বললেন,

— ” দেখুন ওনি ভীষণভাবে ট্রমাটাইজড আর বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে উনি খুব স্কেয়ারড ও। যেই ঔষধ উনি নেওয়া শুরু করেছেন সেগুলো খুব পাওয়ারফুল তাই মাঝপথে সেটা একদিনের জন্যেও বন্ধ হয়ে গেলে ওনার মধ্যে চেঞ্জেস দেখা দেবে। উনি মেন্টলি অনেকটাই ডিসটার্বড হয়ে যাবেন, সমস্যাও দেখা দেবে অনেক। লাইক কখনো রিয়াক্ট করা বন্ধ করে দেবেন আবার কখনো ওভার রিয়াক্ট করবেন , কখনো শান্ত থাকবেন আবার কখনো ভাইলেন্ট হয়ে‍ যাবেন। ”

আদ্রিয়ান কিছু না বলে ফোন কেটে দিলো। মাথা টেনশনে ছিড়ে যাচ্ছে। কী করবে সেটাই বুঝতে পারছেনা। আদ্রিয়ান সামনের টি-টেবিলে জোরে একটা বাড়ি মেরে বলল,

— “রিক চৌধুরী তোমাকে অনেকবার সাবধান করেছিলাম আমি। তোমার লোকেরা আমাকে আঘাত করেছিলো কিচ্ছু বলিনি মুখে হাসি রেখেই শুধু একটু আহত করেছি, তুমি আমার দিকে শুট করেছিলে তবুও হাসতে হাসতেই তোমাকে সাবধান করেছিলাম। কিন্তু সেটাকে আমার দুর্বলতা ভেবে খুব বড় ভুল করে ফেলেছো তুমি। কারণ তুমি এটা জানোনা যে আদ্রিয়ানকে কেউ আঘাত করলে ও মুচকি হাসে কিন্তু সেই আঘাত যদি কেউ ওর জানপাখির ওপর করে তাহলে ও কতোটা ভয়ংকর হতে পারে। এবার আমার সেই রূপ দেখবে তুমি যেটা আমি কাউকে দেখাতে চাইনি।”

#চলবে…

বর্ষণের সেই রাতে ❤ পর্ব- ৪১

0

বর্ষণের সেই রাতে ❤
পর্ব- ৪১
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

.
আদ্রিয়ান সকাল বিভিন্নভাবে অনিমার মন ভালো করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। কারণ অনিমার মনটা কাল রাত থেকেই খুব খারাপ হয়ে আছে। আদ্রিয়ানের আজ সন্ধ্যায় ফ্লাইট সেই নিয়েই মন খারাপ অনিমার। আদ্রিয়ান আজ আর কোথাও বের হয়নি সারাদিন আজ অনিমার সাথে থাকবে তাই। কিন্তু অনিমা কিছু বলছেনা একদম চুপচাপ এককোনায় বসে আছে। আদ্রিয়ান গার্ডেন এরিয়াতে একটু কাজের জন্যে গেছিলো ফিরে এসে দেখে অনিমা রুমে নেই। আদ্রিয়ান একটা ছোট্ট নিশ্বাস ফেলে ছাদে চলে গেলো কারণ ও জানে যে অনিমা এখন ওখানেই আছে। ছাদে গিয়ে দেখলো যে ওর ধারণাই ঠিক অনিমা দোলনায় বসে আছে আর শূণ্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সামনের দিকে। আদ্রিয়ান মুচকি হেসে অনিমার পাশে গিয়ে বসলো। অনিমা আদ্রিয়ানের উপস্থিতি বুঝতে পেরেও বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। অাদ্রিয়ান অনিমার মুখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল,

— ” তুমি যদি এরকম মুখ করে রাখো তাহলে আমি কীকরে যাবো বলোতো?”

আদ্রিয়ানের কথায় অনিমা কোনো পতিক্রিয়া দেখালো না একই ভঙ্গিতে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে। আদ্রিয়ান এবার একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে কিছুক্ষণ চুপ থেকে নিজেকে স্বাভাবিক করে বলল,

— ” জানপাখি?”

অনিমা হালকা নড়ে উঠলো। আদ্রিয়ানে এই ডাক উপেক্ষা করার ক্ষমতা নেই ওর মধ্যে। ও ছলছলে চোখে তাকালো আদ্রিয়ানের দিকে। আদ্রিয়ান অনিমাকে এক হাতে জরিয়ে ধরে বলল,

— ” কাল রাত থেকে মুড অফ করে রেখে দিয়েছো। তোমাকে এভাবে দেখতে আমার ভালো লাগে বলোতো? এক সপ্তাহেরই তো ব্যাপার, তাছাড়া আমি যতোটুকু সময় ফ্রি থাকবো তোমাকে কল করবো, ভিডিও কলেও কথা বলবো। দেখবে একদম একা লাগবেনা।”

অনিমা আদ্রিয়ানকে আলতো হাতে জরিয়ে ধরে আবারও নিঃশব্দে কেঁদে দিলো। আদ্রিয়ান অনিমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,

— ” আবার কাঁদে! এভাবে কান্না করলে আমার খারাপ লাগে তো।”

অনিমা মাথা তুলে আদ্রিয়ানের হাতেল বাহু দুই হাতে জরিয়ে ধরে বলল,

— ” না গেলে হয়না?”

আদ্রিয়ান স্হির দৃষ্টিতে তাকালো অনিমার দিকে। ওর এমনিতেই অনিমাকে ছেড়ে যেতে মোটেও ইচ্ছে করছেনা তার ওপর মেয়েটার করুণ অনুরোধ যে ওর মনে আরো ঝড় তুলে দিচ্ছে কিন্তু ও তো নিরুপায়। ওকে যেতেই হবে। এমন নয় যে ও না গেলে কেউ ওকে জোর করে নিতে পারবে কথাটা হলো ও না গেলে প্রডিউসারের প্লাস চ্যানেলের অনেকটা লস হয়ে যাবে। মাত্র একসপ্তাহের জন্যে কারো এতো বড় ক্ষতি করতে চায়না ও। অনিমার চোখের জল মুছে দিতে দিতে মুচকি হেসে বলল,

— ” দেখো কনট্রাক্ট টা অনেক আগের সাইন করা, আমি চাইলেই এটা ক্যান্সেল করতে পারবোনা। হয়তো আমার তেমন কিছু করতে পারবে না ওনারা, কিন্তু ওনারা এডভারটাইস করে ফেলেছেন। এখন যদি আমি না যাই তো ওনাদের অনেক বড় লস হয়ে যাবে। তুমি কী চাও সেটা?”

অনিমা আদ্রিয়ানের কাধে মাথা এলিয়ে দিয়ে চুপচাপ বসে রইলো আদ্রিয়ানের অনিমাকে এভাবে মন খারাপ করতে দেখে খুব বেশিই খারাপ লাগছে তাই কিছুক্ষণ ভেবে আদ্রিয়ান বলল,

— ” আমার কাছে তোমার চেয়ে বেশি ইম্পর্টেন্ট কিচ্ছু না। তাই যদি তুমি না চাও আমি যাবোনা। আমি ক্যান্সেল করে দিচ্ছি।”

বলে ফোনটা হাতে নিতেই অনিমা ওকে আটকে দিয়ে বললো,

— ” নাহ প্লিজ। সাতটা দিন তো আমি ঠিক কাটিয়ে দেবো। কিন্তু শুধু শুধু কারো ক্ষতি হলে সেটা ভালো হবেনা।”

আদ্রিয়ান মুচকি হেসে অনিমার মাথায় একটা চুমু দিলো। অনিমা চুপচাপ আদ্রিয়ানের বুকে মাথা রেখে বসে রইলো।

বিকেল বেলা আদ্রিয়ান রেডি হচ্ছে আর অনিমা আদ্রিয়ানের লাগেজ চেক করছে। আদ্রিয়ান রেডি হয়ে এসে বললো,

— ” সব ঠিক আছে?”

আদ্রিয়ান মাথা নিচু করেই নিচু আওয়াজে বলল,

— ” হুম।”

আদ্রিয়ান মুচকি হেসে বলল,

— ” তাহলে চলো?”

আদ্রিয়ান আর অনিমা নিচে নেমে এলো। আদ্রিয়ান বাড়ির মেইন ডোর এর কাছে এসে অনিমার দিকে তাকিয়ে দেখলো অনিমা মুখ অন্ধকার করে দাড়িয়ে আছে। আদ্রিয়ান অনিমার দুই বাহু ধরে বলল,

— ” এখনো মন খারাপ করে থাকবে?”

অনিমা কিছু বলছেনা মাথা নিচু করে আছে চোখ ছলছল করছে ওর। আদ্রিয়ান অনিমার মুখটা তুলে উঁচু করে ধরল। আর সাথে সাথেই চোখ থেকে জল গড়িয়ে পরল। আদ্রিয়ান অনিমার চোখ মুছে দিতে দিতে বলল,

— ” যাওয়ার আগে তোমার এমন মুখ দেখে গেলে আমার জার্নিটাও খারাপ যাবে আর এই সাতটা দিনও। যাওয়ার আগে তোমার হাসি মুখটা দেখে যেতে দেবেনা আমাকে?”

অনিমা কোনোরকমে হাসার চেষ্টা করলো। আদ্রিয়ান মুচকি হেসে অনিমার কপালে বেশ সময় নিয়ে একটা চুমু দিয়ে বলল,

— ” বাই। সাবধানে থাকবে। আর বাড়ির বাইরে একদম বেড়োবেনা যা লাগবে সার্ভেন্টদের বলবে ওরা এনে দেবে, কিন্তু তুমি ভুলেও বাইরে যাবেনা। ”

অনিমা মাথা নেড়ে কাঁপা গলায় বাই বলল। আদ্রিয়ান অনিমাকে শক্ত করে নিজের সাথে জরিয়ে ধরে রেখে গালে আরেকটা চুমু দিয়ে বেড়িয়ে গেলো। অনিমা ফিরে সিড়ি পার করে দোতালায় উঠেও কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে আবার দৌড়ে নিচে নেমে ছুটে বাইরে চলে গেলো। গিয়ে দেখলো অাদ্রিয়ানের গাড়ি অলরেডি স্টার্ট হয়ে গেছে। অনিমা হতাশ ভাবে দাড়িয়ে রইলো। হঠাৎ আদ্রিয়ান গাড়ি থেকে মাথা বেড় করে হাত নেড়ে বাই বললো অনিমাকে। অনিমাও মুচকি হেসে হাত নেড়ে বিদায় নিলো ওকে ।

“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন

এভাবেই তিনটা দিন কেটে গেলো। আদ্রিয়ান আর অনিমা দুজনেই দুজনকে ভীষণ মিস করেছে। প্রতি সেকেন্ডে একে ওপরকে মনে পরেছে। খেতে, শুতে সব কাজেই একে ওপরকে ভীষণভাবে মিস করে। তবে ফোনে যোগাযোগ হয় ওদের। আর এরমধ্যে রিক আগেই খবর পেয়েছে আদ্রিয়ানের বিদেশ যাওয়ার কথা টানা দুদিন চেষ্টা করেও আদ্রিয়ানের ঐ বাড়ির খোজ পেলেও ওখানে ঢুকতে পারেনি ও। এতটাই কড়া সিকিউরিটি যে ওর পক্ষেও ঢোকা সম্ভব নয়। রিক গম্ভীর ভাবে বসে ভাবছিলো এটাই সুযোগ অনিকে নিজের কাছে আনার কিন্তু কীকরে? ও তো ঢুকতেই পারছেনা ঐ বাড়িতে। পাশ থেকে কবির শেখ বলে উঠলেন,

— ” অনিকে কীকরে তুলে আনবে সেটাই ভাবছো তো?”

রিক ওর মামার দিকে স্হির চোখে তাকালো অর্থাৎ হ্যাঁ। কবির শেখ বললেন,

— ” দেখো বাবাই আমরা ঐ বাড়িতে ঢুকতে পারবোনা ঠিকি কিন্তু ওকে তো বেড় করতেই পারি তাইনা?”

রিক একটা শ্বাস ফেলে বলল,

— ” সেটা সম্ভব না মামা অনেক গার্ড আছে। এতোগুলো গার্ডকে কেনা সম্ভব নয়।”

কবির শেখ বললেন,

— ” এতোজনের কী দরকার দুই একজন যথেষ্ট।”

রিক অবাক হয়ে বললো,

— ” কীভাবে? মানে কী করে বের করবো ওকে?”

কবির শেখ বাঁকা হেসে রিকের দিকে তাকালেন আর রিক জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো কবির শেখ এর দিকে। কবির শেখ রিককে এমন একটা প্লান বললেন যাতে রিকের মুখেও হাসি ফুটে উঠলো। এরপরেই ওনাদের প্লানমাফেকই কেটেছিলো আরো তিনটে দিন।

______________________

অনিমা খাটে হেলান দিয়ে কানে হেডফোন গুজে গান শুনছে আর ফোনে গেইম খেলছে। আদ্রিয়ানকে এই ছয়দিন ভীষণভাবে মিস করেছে ও এখনও করছে। তাই যতোটা সম্ভব ব্যাস্ত রাখার চেষ্টা করে থাকে নিজেকে। আদ্রিয়ানের সাথে একটু আগেই কথা হয়েছে ওর কিন্তু ফোন রাখার পর আরো বেশি মিস করছে তাই গেইম খেলে মন অন্যদিকে নিতে চাইছে। হঠাৎ করেই ওর ফোন বেজে উঠলো। ফোন হাতে নিয়ে আশ্রমের নাম্বার দেখে অনিমার ভ্রু কুচকে গেলো। হঠাৎ এই সময় মাদার কেনো ফোন করবে? কাল রাতেই তো কথা হলো? অনিমা ফোনটা রিসিভ করে হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে একটা বাচ্চা মেয়ের কন্ঠস্বর ভেসে এলো। মেয়েটা কাঁদতে কাঁদতে বলল,

— ” আপি!”

বলে আবারো শব্দ করে কাঁদতে শুরু করল মেয়েটি। অনিমা কন্ঠ শুনেই বুঝতে পারলো এটা তিন্নির কন্ঠ। তিন্নি ঐ আশ্রমেরই একজন মেয়ে। অনিমা যেই দেড় বছর ওখানে ছিলো তখন ওর সাথে বোনের মতোই সম্পর্ক হয়ে গেছে। অনিমা অবাক হয়ে বলল,

— ” তিন্নি কী হয়েছে সোনা? এভাবে কাঁদছিস কেনো?”

তিন্নি হিচকি দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলল,

— ” আপি মাদার.. মাদারের..”

অনিমা উত্তেজিত হয়ে বলল,

— ” মাদারের কী হয়েছে? মাদার ঠিক আছেতো? হ্যাঁ? এই তিন্নি?”

তিন্নি এবারেও কাঁদতে কাঁদতে কোনোরকমে বললো,

— ” মাদার অনেক অসুস্হ হয়ে পরেছে প্লিজ আপি তুমি তাড়াতাড়ি এসো প্লিজ।”

অনিমা অবাক হয়ে বলল,

— ” তোরা মাদারকে হসপিটালে কেনো নিচ্ছেস না? আশ্রমে কেউ নেই?”

অনিমার কথার কোনো উত্তর না দিয়েই তিন্নি বললো,

— ” আপি তুমি প্লিজ তাড়াতাড়ি এসো। প্লিজ।”

অনিমা বেশ ঘাবড়ে গেলো, তারপর নিজেকে কোনোমতে সামলে বলল,

— ” তুই কান্না করিস না। মাদারকে তোরা দেখে রাখ আমি এক্ষুনি আসছি।”
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
অনিমা ফোন কেটে দিয়ে যেভাবে আছে ওভাবেই শুধু পার্স আর ফোনটা নিয়ে দৌড়ে বেড়িয়ে গেলো। ঐমুহূর্তের জন্যে ও ভুলে গেলো আদ্রিয়ানের সতর্কবার্তা, রিকের কথা। ওর মাথায় এখন শুধু মাদারের কথাই চলছে। আজ ও বেঁচে আছে শুধু মাদারের জন্যেই সেদিন যদি মাদার ওকে রাস্তা থেকে তুলে নিজের কাছে না নিতো তাহলে সেদিন ওর সাথে কী হতো সেটা কল্পনা করলেও কেঁপে ওঠে ও। আর আজ সেই মাদারের বিপদে ও কীকরে বসে থাকবে? গেইটের কাছে যেতেই ঐ দুজন গার্ড বলল,

— ” ম্যাম কোথাও যাবেন?”

অবাক করা বিষয় অনিমা জায়গার নাম বলতেই তারা অনিমাকে আটকালো না বরং ওকে দাঁড়াতে বলে একজন ড্রাইভার ডেকে গাড়িতে উঠিয়ে দিলো। অনিমার মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। ও শুধু ভাবছে কতোক্ষণে আশ্রমে পৌছাবে। মাদারকে খুব বেশিই ভালোবাসে ও, ওনার কিছু হয়ে গেলে ও সেটা নিতে পারবে না। আশ্রমের সামনে গাড়ি থামতেই গাড়ি থেকে নেমে দৌড়ে ভেতরে চলে গেলো অনিমা। ভেতরে গিয়ে দেখে তিন্নি আর কিছু বাচ্চারা বসে বসে কাঁদছে। অনিমা দৌড়ে ওদের কাছে গিয়ে বলল,

— ” কী হয়েছে? মাদার কোথায় বল? মাদার ঠিক আছে তো?”

কিন্তু ওরা কেউ কিছু বলছেনা শুধু কেঁদে যাচ্ছে। সেটা দেখে অনিমা রেগে গিয়ে বলল,

— ” চুপ করে আছিস কেনো? মাদার কোথায়? বল?”

তিন্নি কাঁদতে কাঁদতে অনিমার দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” সরি আপি।”

অনিমা কিছুই বুঝলোনা যে কী হচ্ছে এখানে।টেনশনে অনিমা কেঁদেই দিয়েই। এরমধ্যেই মাদার ভেতর থেকে মাথা নিচু করে বেরিয়ে এলেন। মাদারকে দেখেই অনিমা চোখ মুছে উঠে দৌড়ে মাদারের কাছে গিয়ে ওনাকে ধরে বলল,

— ” মাদার তুমি ঠিক আছো তো? কি হয়েছিলো তোমার? ওরা কাঁদছে কেনো?”

মাদার মাথা নিচু করে আছে ওনার চোখ দিয়ে নিরবে জল পরছে। অনিমা অধৈর্য হয়ে বলল,

— ” তোমার সবাই চুপ করে কেনো আছো? প্লিজ কিছু বলো?”

হঠাৎ পেছন থেকে কেউ বলে উঠল,

— ” ওরা কিছু বলতে পারবেনা। আমাকে জিজ্ঞেস করো বেইবি সবটা বলছি।”

কন্ঠস্বর শুনেই অনিমা চমকে উঠলো। কন্ঠটা চিনতে ওর একটুও দেরী হয় নি। একরাশ ভয় নিয়ে পেছনে তাকিয়ে ওর রুহ কেঁপে উঠল কারণ রিক বাঁকা হাসি দিয়ে জিন্সের পকেটে হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছে। আর এখন সবটাই পরিষ্কার হয়ে গেলো ওর কাছে, ঐ ফোন, গার্ডদের না আটকানো সব কিছুই একটা প্লান ছিলো? অনিমা কান্নাভেজা চোখে করুণদৃষ্টিতে মাদারের দিকে তাকালো। যেই দৃষ্টি এটাই জিজ্ঞেস করছে যে কেনো করলে এটা? মাদার অনিমার দিকে তাকিয়ে হাত জোর করে বললেন,

— ” আমাকে ক্ষমা করে দে মা। আমি এটা না করলে ওরা এই বাচ্চাগুলোর ক্ষতি করে দিতো। দেখ প্রথমে রাজি হয়নি বলে বৃষ্টির হাতে গুলি করে দিয়েছে। হসপিটালেও নিতে দিচ্ছেনা।”

অনিমা চমকে তাকালো বৃষ্টির দিকে সাত বছরের বাচ্চা মেয়েটা যন্ত্রণায় ছটফট করছে। অনিমা রিকের দিকে তাকাতেই দেখলো রিক পকেটে হাত ঢুকিয়েই ওর দিকে এগিয়ে আসছে। অনিমা ভয়ে পেছাতে পেছাতে বলল,

— ” প্লিজ বৃষ্টিতে হসপিটালে নিয়ে যেতে দিন। অনেক রক্ত বেড়োচ্ছে, ও একটা বাচ্চা।”

রিক হালকা হাসলো অনিমার কথায় তারপর লোক দিয়ে ইশারা করতেই কিছু লোক বৃষ্টিকে নিয়ে চলে গেলো সাথে মাদারকেও নিতে গেলে মাদার রিকের দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” দয়া ওকে যেতে দাও। ওর সাথে কিছু করোনা।”

রিকের লোকগুলো আর কিছু বলতে না দিয়েই নিয়ে গেলো মাদারকে। রিক অনিমার দিকে এগিয়ে যেতে নিলেই অনিমা দৌড়ে পালাতে শুরু করল। রিক হেসে পেছন থেকে বলল,

— ” শুধু শুধু এনার্জি লস করছো সুইটহার্ট বেশিদূর যেতে পারবেনা তুমি।”

হলোও ঠিক তাই। বেশিদূর যেতে পারলোনা অনিমা তার আগেই রিকের লোকেরা ওর পথ আটকে ফেললো সবদিক দিয়ে। অনিমা তাড়াতাড়ি পার্স খুলে ফোনটা বের করতে নিলেই রিক এসে ওর হাত ধরে ফেললো। তারপর হাতে চাপ দিয়ে ধরে বলল,

— ” আজ আদ্রিয়ান কেনো? কেউ তোমাকে আমার হাত থেকে বাঁচাতে পারবেনা।”

বলে অনিমার হাত থেকে ফোন আর পার্স দুটোই ছুড়ে ফেলে দিলো। অনিমা হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে কান্না করছে। রিক অপর হাতে ওর চুলের মুঠি ধরে বলল,

— ” কী ভেবেছিলে? ঐ রকস্টারের সাথে থাকলেই আমার হাত থেকে বাঁচতে পারবে তুমি? হ্যাঁ?”

বলে আরো জোরে টান মারলো ওর চুলে ব্যাথায় কুকিয়ে উঠলো অনিমা। রিক হেসে বলল,

— ” লাগছে হুম? সবে শুরু করলাম বেইবি। দেখো তোমার সাথে আর কী কী হয়। চলো!”

অনিমা চমকে গিয়ে শব্দ করে কেঁদে দিয়ে বলল,

— ” নাহ প্লিজ ছেড়ে দিন আমাকে। আমি যাবোনা কোথাও।”

রিক বাঁকা একটা হাসি দিয়ে অনিমার চুল ধরে আরো কাছে এনে বললো,

— ” তোমাকে ছাড়ার জন্যে এতো কিছু করিনি আমি। তোমাকে আমার কাছে আনতে কতোটা কাঠ খর পোড়াতে হয়েছে আমাকে কোনো ধারণা আছে তোমার?”

অনিমা অসহায়ভাবে তাকিয়ে আছে রিকের দিকে। রিক সেদিকে পাত্তা না দিয়ে অনিমার হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগল। অনেকটা যেতেই অনিমা হাত ধরা অবস্হাতেই বসে পরে বললো,

— ” প্লিজ আমি যাবোনা।”

রিক ওকে টেনে তুলে জোরে একটা থাপ্পড় মারলো অনিমার গালে। রিকের থাপ্পড়টায় বরাবরের মতো এবারেও অনিমার ঠোঁট কেটে রক্ত বেড়িয়ে গেলো। কিন্তু রিক হাত ধরে রাখায় মাটিতে পরে যায়নি ও। রিক ওকে টেনে হিচড়ে আশ্রমের পেছনের বিশাল মাঠটায় নিয়ে গেলো। আর ওখানে গিয়েই চমকে উঠলো অনিমা। কারণ ওখানে একটা হেলিকপ্টার রাখা। অনিমা শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে গিয়ে বলল,

— ” নাহ প্লিজ।”

কিন্তু রিক অনিমাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই টেনে নিয়ে হেলিকপ্টারে তুললো। আর ওরা সবাই উঠতেই হেলিকপ্টার ওপরে উঠে গেলো। অনিমা চেচামেচি করছে বলে রিক ওর মুখ বেঁধে দিলো। আর ওর দুই হাত নিজের দুইহাতের মুঠোয় ধরে রেখেছে। অনিমা নিঃশব্দে কেঁদে যাচ্ছে কারণ চাইলেও শব্দ করতে পারছেনা ও। শুধু রিকে হাত থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্যে ছটফট করে যাচ্ছে। রিক বিরক্ত হয়ে আবারও থাপ্পড় মারলো অনিমাকে তারপর দড়ি দিয়ে হয় হাতটাও বেধে দিয়ে বলল,

— ” এবার তুমি খুব ভালোভাবে বুঝবে অামার হাত থেকে পালাতে চাওয়ার কতটা ভয়ানক হতে পারে। সারাজীবন আফসোস করবে এই কাজের জন্যে।”

অনিমা মাথা নিচু করে কেঁদে যাচ্ছে। রিকের বলা প্রত্যেকটা কথা ওর মনে তীব্র ভয়ের সৃষ্টি করছে। ও নিজেও আন্দাজ করতে পারছেনা যে এবার ঠিক কী হতে চলেছে ওর সাথে। শুধু আদ্রিয়ানের কথাই মনে পরছে বারবার।

#চলবে…

বর্ষণের সেই রাতে ❤ পর্ব- ৪০

0

বর্ষণের সেই রাতে ❤
পর্ব- ৪০
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

.
ভোর বেলা আদ্রিয়ান এর ঘুম ভাঙতেই ওর চোখ গেলো বেডের ওপর। এটা ওর প্রতিদিনের কাজ ঘুম থেকে ওঠার পরেই বেডের দিকে তাকায় অনিমাকে দেখার জন্যে। ঘুম ভাঙ্গা পিটপিটে চোখে বেডের দিকে তাকালো কিন্তু আজকে বেড ফাঁকা। সেটা দেখে আদ্রিয়ান এর ভ্রু কুচকে গেলো, ও চোখ হালকা কচলে নিয়ে ভালোভাবে চোখ বুলালো সারারুমে কিন্তু অনিমাকে দেখতে পেলো না। ও উঠে ব্যালকনিতে গিয়ে দেখে অনিমা একটা লাল রং এর শাল গায়ে জরিয়ে নিয়ে ব্যালকনির রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে চোখ বন্ধ করে সকালের এই ফুরফুরে হাওয়াটা উপভোগ করছে। বাতাসে হালকা হালকা উড়ছে ওর এলোমেলো চুুলগুলো। অদ্ভুতরকম সুন্দর লাগছে ওকে। আদ্রিয়ান আস্তে আস্তে এগিয়ে গেলো অনিমার দিকে, অনিমা চোখ বন্ধ করে আছে বলে আদ্রিয়ানের উপস্হিতি বুঝতে পারছেনা। আদ্রিয়ান অনিমার পেছন থেকে ওর দুই হাতের ওপর দিয়ে হাত রাখল। অনিমা চমকে গিয়ে পেছনে ঘুরতে চাইলে আদ্রিয়ান ওকে আটকে দিয়ে বলল,

— ” আরে আমি। এতো নড়াচড়া কেনো করো বলোতো?”

অনিমা পুরো স্হির হয়ে দাড়িয়ে আছে। আদ্রিয়ান ওর দুই হাতের ওপর হাত দিয়ে রেখেছে আর আদ্রিয়ানের গরম নিশ্বাস ওর ঘাড়ে পড়ছে। অনিমা পুরো জমে গেছে চোখ খিচে বন্ধ করে রেখেছে। আদ্রিয়ান অনিমার কাধে থুতনি রেখে বলল,

— ” ম্যাডামের আজ এতো তাড়াতাড়ি ঘুম ভেঙ্গে গেলো যে?”

অনিমা আর কী বলবে? আদ্রিয়ানের এই সামান্য ছোঁয়াতেই ওর অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে। ভীষণভাবে কাঁপছে ও। আদ্রিয়ান অনিমার কাঁপুনি ফিল করে ওর হাতটা আরেকটু শক্ত করে ধরল। কিন্তু তাতে অনিমার কাপুঁনি খুব একটা কমলোনা। আদ্রিয়ান বুঝতে পারলো অনিমা একটু অসস্তি বোধ করছে। তাই আদ্রিয়ান ওকে ছেড়ে দিয়ে বলল,

— ” এতো সকালে উঠে পরলে যে?”

— ” এমনিই..”

বলে অনিমা নিজের কপালের চুলগুলো সরাতে নিলেই আদ্রিয়ান অনিমার হাত ধরে আটকে নিলো তারপর ঐ হাত ধরে কাছে টেনে নিলো। অনিমা চমকে তাকালো আদ্রিয়ানের দিকে। আদ্রিয়ান একহাতে আদ্রিয়ানের কোমর ধরে রেখে ওপর হাতে কাপালের চুলগুলো সরিয়ে দিয়ে বলল,

— ” আমি যতক্ষণ তোমার কাছে থাকবো এই কাজটা আমার হুম?”

অনিমা চোখ নামিয়ে নিলো। আদ্রিয়ান অনিমার থুতনি ধরে মুখটা উঁচু করে ধরে বলল,

— ” জানো তোমার এই লজ্জামাখা চোখ নামিয়ে নেওয়া মুখটা কতোটা পছন্দের আমার।”

অনিমা নিজেকে ছাড়িয়ে চলে যেতে নিলেই আদ্রিয়ান ওর হাত ধরে ফেললো। অনিমা এতোটাই লজ্জা পেয়ে আছে যে পেছন দিকে তাকিয়ে অবধি দেখছেনা। আদ্রিয়ান অনিমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল,

— ” আজ যেহেতু দুজনের ঘুমটাই এতো সকালে ভেঙ্গে গেছে তো দুজনেই একটু সময় তো কাটাতেই পারি নিজেদের মতো করে।”

অনিমা কিছু বললো না। আদ্রিয়ান ওকে ঘুরিয়ে জরিয়ে ধরলো নিজের সাথে। অনিমা চুপ করে চোখ বন্ধ করে আদ্রিয়ানের বুকে মাথা দিয়ে শান্ত হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। মন দিয়ে ফিল করার চেষ্টা করছে আদ্রিয়ানের হার্টবিট। আদ্রিয়ান বলল,

— ” আজ একটা জায়গায় নিয়ে যাবো তোমাকে।”

অনিমা অবাক আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” কোথায়?”

আদ্রিয়ান অনিমার চুলগুলো ঠিক করতে করতে বলল,

— ” অনেকদিন ঘরে বন্দি অবস্হায় বোর লাগছে নিশ্চয়ই? তাই বাইরে থেকে একটু ঘুরিয়ে আনবো।”

অনিমা নিচু কন্ঠে বলল,

— ” কিন্তু রিক?”

আদ্রিয়ান হেসে অনিমার দুই বাহু ধরে রেখে বললো,

—- ” ভয় পেয়োনা আমি আছি তো। ব্রেকফাস্ট করে রেডি হয়ে নেবে হুম?”

অনিমা মাথা নাড়লো। আদ্রিয়ান মুচকি হেসে অনিমাকে নিয়ে ব্যালকনির ফ্লোরে বসল। অনিমা আদ্রিয়ানের কাধে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে রইলো। দুজনেই নিরবে উপভোগ করছে এই মিষ্টি সকাল।

“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন

রিক ওদের ফার্মহাউজে বসে কফির মগে চুমুক দিচ্ছে আর ফোনে একটার পর একটা ছবি বার করে দেখছে। একটা ছবিতে চোখ আটকে গেলো রিকের। ছবিটাতে অনিমা গালে হাত দিয়ে হাসছে গালের টোল আর তিলটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। রিক ছবিটার কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে হালকা হাসলো। অনিমাকে তো ও নিজের কাছে নিয়ে আসবেই সেটা যেকোনো কিছুর বিনিময়ে। কিন্তু আদ্রিয়ানের যেই রূপ ইতিমধ্যেই ও দেখেছে তাতে কাজটা সহজ হবেনা এটাও বেশ ভালো করেই বুঝতে পারছে। কবির শেখ এসে ওর পাশের চেয়ারে বসে বললেন,

— ” কিছু জানতে পেরেছো বাবাই?”

রিক ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়েই বলল,

— ” উমহুম। বাট এটুকু আমি সিউর যে আদ্রিয়ান কোনো সাধারণ রকস্টার নয়, হতেই পারেনা। ওর শুটিং স্কিল কতোটা পার্ফেক্ট তুমি ভাবতে পারবেনা মামা।”

কবির শেখ ভ্রু কুচকে রিকের দিকে তাকিয়ে বললেন,

— ” তাহলে খোজ লাগাও। ”

রিক বিরক্তির একটা শ্বাস ফেলে বলল,

— ” লাগিয়েছি মামা। কিন্তু কোনো ক্লু
পাচ্ছিনা। ওর অন্য কোনো পরিচয়ের কোনো চিন্হও পাচ্ছিনা কোথাও।”

দুই হাত একত্র করে থুতনির নিচে রেখে চিন্তিত কন্ঠে বললেন,

— ” খুব পাকা লেভেলের খেলোয়ার এই আদ্রিয়ান। ওকে প্রথমে যতোটা সহজ সরল ভেবেছিলাম সেরকম ও নয়। খুব সাবধানে পা ফেলতে হবে।”

রিক সামনের টি-টেবিলে একটা লাথি মেরে উঠে দাড়িয়ে চিৎকার করে বলল,

— ” আমি অতো কিছু জানিনা। জানতে চাই না। আমি ব্যাস এটুকুই জানি যে আমার ওকে চাই। যে ভাবেই হোক, যা কিছু করে হোক আই জাস্ট ওয়ান্ট হার।”

কবির শেখ রিকের হাত ধরে বসিয়ে বলল,

— ” কাম অন বাবাই শান্ত হও। মাথা গরম করে কিচ্ছু হবেনা যা করার ঠান্ডা মাথায় করতে হবে।”

রিক বিরক্ত হয়ে ওর মামার দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” কিন্তু করবোটা কী?”

কবির শেখ বাঁকা হেসে বললেন,

— ” সঠিক সময়ের অপেক্ষা।”

রিক জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো ওনার দিকে। উনি রিকের কাধে হাত রেখে বললেন,

— ” আপাদত চুপ থাকো। সঠিক সময় আর সুযোগ বুঝে আসল কাজটা করতে হবে।”

রিক কিছু না বলে চুপ করে রইলো ও বুঝতে পেরেছে ওর মামা কী বলতে চাইছে।

__________________

ফার্মহাউজ থেকে ফিরে রুমে গিয়ে চেঞ্জ করে রিক ঘড়ি পরতে পরতে সিড়ি দিয়ে নেমে বেড়িয়ে যেতে নেবে তখনি মিসেস লিমা ওকে থামিয়ে দিয়ে বললেন,

— ” রিক স্নিগ্ধাকে হসপিটালে ড্রপ করে দিয়ে আয়।”

রিক থেমে গিয়ে বিরক্ত হয়ে মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো?

— ” আমি কেনো?বাড়িতে গাড়ি আর ড্রাইভার এর অভাব পরেছে নাকি।”

স্নিগ্ধা একটু ঢং করে মিসেস লিমাকে বললেন,

— ” বাদ দাও মামনী। আমি একাই যেতে পারবো। আমার অসুবিধা হবেনা। তাছাড়া তোমার ছেলেও তো নিয়ে যাবেনা আমাকে।”

মিসেস লিমা রাগী গলায় বললেন,

— ” চুপ কর তো। ও বললেই হলো নাকি? রিক ওকে দিয়ে এসো যাও। আজকে মেয়েটা প্রথম এই রোড দিয়ে যাবে তুমি যখন ওদিক দিয়েই যাবে তো ড্রপ করে দাওনা।”

রিক স্নিগ্ধার দিকে একবার তাকিয়ে তারপর রেগে বলল,

— ” আমার ওতো ফালতু সময় নেই আমি পারবোনা।”

বলে রিক চলে গেলো। স্নিগ্ধা বেশ কষ্ট পেলো। কী এমন হতো ড্রপ করে দিলে? অনেক কষ্টে নিজের চোখের পানি আটকে রেখে বেড়িয়ে গেলো। মিসেস লিমা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন কী আর করবেন? ছেলেতো আর তার হাতে নেই।

বাইরে বেড়িয়ে স্নিগ্ধা দেখলো যে রিক গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। স্নিগ্ধা পাশ কাটিয়ে যেতে নিলেই রিক বলল,

— ” ওই ড্রামাকুইন গাড়িতে ওঠ।”

স্নিগ্ধা রেগে গিয়ে বললো,

— ” আমি এমনিতেই যেতে পারবো। ধন্যবাদ আপনার করুণার জন্যে।”

রিক হাত ভাজ করে বললো,

— ” মমকে বলে এতো ড্রামা তো আমার সাথে যাবি বলেই করলি। এখন আবার নতুন ড্রামা করছিস কেনো?”

স্নিগ্ধা ঘুরে রিকের সামনে গিয়ে হাত জোর করে বললো,

— ” ভূল হয়ে গেছে আমার। এবারের মতো ক্ষমা করে দাও। আর জীবণেও বলবোনা। ”

বলে স্নিগ্ধা চলে যেতে নিলেই রিক ওর হাত ধরে বললো,

— ” তুই নিজে উঠবি নাকি আমি টেনে তুলবো?”

স্নিগ্ধা জানে যে এখন ও নিজে থেকে না উঠলে সত্যিই রিক টেনেই তুলবে ওকে তাই চুপচাপ ফ্রন্ট সিটে গিয়ে বসে পরলো। রিকও গাড়িতে উঠে গাড়ি স্টার্ট দিলো। দুজনেই অনেক্ষণ চুপ ছিলো। নিরবতা ভেঙ্গে স্নিগ্ধা বলল,

— ” রিক দা তোমারও তো ডাক্তারি লাইসেন্স আছে অথচ তুমি জয়েন কেনো করোনা?”

রিক রাগী চোখে স্নিগ্ধার দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” নিজের চরকায় তেল দে আমাকে নিয়ে ভাবতে হবেনা।”

স্নিগ্ধা একটা ভেংচি কেটে সামনের দিকে তাকালো তারপর বিড়বিড় করে বললো,

— ” হুহ সাইকো একটা।”

রিক ভ্রু কুচকে ওর দিকে তাকিয়ে বললো,

— ” কিছু বললি? ”

স্নিগ্ধা দাঁত কেলিয়ে একটা কেবলাকান্ত হাসি দিয়ে বললো,

— ” ইয়ে বলছিলাম যে তুমি খুব বুদ্ধিমান একজন মানুষ নইলে কেউ ডাক্তারি পড়া কম্প্লিট করে লাইসেন্স থাকা সত্ত্বেও বেকার ঘুরে বেড়ায়?”

রিক চোখ কটমট করে স্নিগ্ধার দিকে তাকিয়ে বললো,

— ” আর একটা কথা বললে সোজা ধাক্কা দিয়ে গাড়ি থেকে ফেলে দেবো।”

স্নিগ্ধা হুহ বলে মুখ ঘুরিয়ে বসে রইলো আর রিক ও ড্রাইভিং এ মনোযোগ দিলো। আর কোনো কথা কেউ বলেনি।

____________________

এভবেই আরো কয়েকটা দিন চলে গেলো। রিক আর অনিমাকে খোজেনি শুধু অপেক্ষা করছে একটা সঠিক সময়ের ঠিক ওর মামা যেভাবে বলেছে। একয়েকদিনে অনেককিছুই বদলে গেছে তীব্র আর স্নেহার সম্পর্কটা আগের মতো হয়ে গেছে। অরু আর আশিস ও টম এন্ড জেরী থেকে মটু পাতলু জোরি হয়ে গেছে। আর স্নিগ্ধা রিক কে সারাক্ষণ নানাভাবে জ্বালিয়ে মারে আর রিক যথাসম্ভব ওকে ইগনোর করার চেষ্টা করে কিন্তু সবসময় পারেনা। ছোটবেলার বেস্ট ফ্রেন্ড এর প্রতি ওর মনে যেই টান আছে সেটা চাইলেও অস্বীকার করতে পারেনা ও। আর অনিমা এখন আদ্রিয়ানকে স্বাভাবিকভাবে নিতে শুরু করেছে। এখন আর আদ্রিয়ানকে এরিয়ে চলার চেষ্টা করেনা। তবে অনিমার মুখ থেকে ভালোবাসি কথাটা শোনার সৌভাগ্য আজও আদ্রিয়ানের হয়নি।

আকাশটা বেশ পরিস্কার এখন যার কারণে পূর্ণিমার রুপের থালার মতো গোল চাঁদটা আকাশে স্পষ্ট দৃশ্যমান। আদ্রিয়ানের বাড়ির ছাদের দোলনাতে আদ্রিয়ানের কাধে মাথা রেখে ওর বাহু দুইহাতে জরিয়ে বসে আছে অনিমা। দোলনাটা হালকা দুলছে। অনিমা অনেকক্ষণ ধরেই খেয়াল করছে যে আদ্রিয়ান বেশ চুপচাপ বসে আছে। অনিমা চোখ খুলে কাধ থেকে মাথা তুলে আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” কী হলো আজ এতো চুপচাপ যে?”

আদ্রিয়ান দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো,

— ” কিছুনা এমনিই।”

অনিমা আদ্রিয়ানের মুখের দিকে ভালোভাবে তাকিয়ে বললো,

— ” কিছুতো একটা হয়েছে। বলুননা কী হয়েছে?”

আদ্রিয়ান আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো,

— ” আজ মায়ের কথা খুব মনে পরছে।”

আদ্রিয়ানের কথা শুনে অনিমা কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো। তারপর একটা শ্বাস ফেলে আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বললো,

— ” একটা কথা বলবো?”

আদ্রিয়ান অনিমার দিকে তাকিয়ে চোখ দিয়ে বলার সম্মতি দিলো। অনিমা সম্মতি পেয়ে মুখে হাসি এনে বললো,

— ” আপনি তো আপনার বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান। জানি আঙ্কেল একটা ভূল করে ফেলেছে কিন্তু তার শাস্তিতো এতো বড় হতে পারেনা তাইনা? আমি সিউর আন্টির সাথে আঙ্কেল ও আপনাকে খুব মিস করছে। তাই আপনার উচিত ওনাদের কাছে ফিরে যাওয়া।”

আদ্রিয়ান চোখ বন্ধ করে একটা শ্বাস নিয়ে অনিমার দিকে তাকিয়ে বললো,

— ” ড্যাড আমার কথা ভাবেনা অনি ভাবলে…”

আদ্রিয়ানকে থামিয়ে দিয়ে অনিমা বললো,

— ” ভাবে। আর ভাবে বলেই আপনাকে ওনার চেয়ারে বসাতে চেয়েছিলেন নিজের বিজনেস দেখতে বলেছিলেন। আপনি যেটাকে নিজের প্রফেশন হিসেবে বেছে নিয়েছেন সেটাতেতো সবাই দাঁড়িয়ে যেতে পারেনা সেটাতে কোনো সিকিউরিটি নেই। কিন্তু আপনি পেরেছেন নিজের যোগ্যতায় এই প্রফেশনে দাঁড়াতে কিন্তু সেটাতো নাও হতে পারতো তাইনা? উনি তো আপনার ফিউচার সিকিউর করতেই চেয়েছিলেন। তবে হ্যাঁ ওনার ভুল ছিলো এটাই যে আপনাকে চেষ্টা করার একটা সুযোগ দিতে চায়নি উনি। কিন্তু একটা কথা বলুনতো আমরাও তো ছোটবেলাতে অনেক কারণে অনেক ভুল করি আর আমাদের বাবা মা ক্ষমা করে দেয় তাহলে আমরাও তো পারি আমাদের বাবা মায়ের দুই একটা ভুল ক্ষমা করে দিতে রাইট?”

আদ্রিয়ান চুপ করে আছে অনিমা একটা নিঃশ্বাস ফেলে বললো,

— ” যাদের বাবা মা থাকেনা তারাই বুঝতে পারে তারা না থাকার শূণ্যতা কতোটা। আপনার তো আছে তাদের দূরে সরিয়ে রাখবেন না। কারণ অনেকে আছে যারা চেয়েও নিজের বাবা মা কে কাছে পায়না।

কথাটা সময় অনিমার চোখ ছলছল করছিলো গলাটাও ধরে আসছিলো। আদ্রিয়ান আনিমাকে নিজের সাথে জরিয়ে ধরে মাথায় চুমু দিয়ে বললো,

— ” আচ্ছা ফিরে এসেই ওদের সাথে কথা বলবো আর তোমাকেও নিয়ে যাবো ওদের কাছে। হ্যাপি?”

অনিমা আদ্রিয়ানের দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বললো,

— ” ফিরে এসে মানে?”

আদ্রিয়ান একটু গলা ঝেড়ে বলল

— ” আসলে একটা রিয়ালিটি শো এর জাজিং এর জন্যে একটা এগ্রিমেন্ট সাইন করে রেখেছিলাম আরো আগেই। মাঝখানে একটা প্রবলেমের জন্যেই শুটিং বন্ধ ছিলো। তো এখন এক সপ্তাহের জন্যে সুইজারল্যান্ড যেতে হবে আমাকে।”

অনিমা কাঁপা গলায় বললো,

— ” কবে ফ্লাইট?”

আদ্রিয়ান কিছুক্ষণ চুপ থেকে তুতলানো আওয়াজে বলল,

— ” কালকে।”

অনিমা অবাক হয়ে বলল,

— ” আপনি আমাকে এখন বলছেন?”

আদ্রিয়ান ইতস্তত করে বললো,

— ” সরি বাট কীকরে বলবো বুঝতে পারছিলাম না তাই..”

অনিমা কিছু না বলে আদ্রিয়ানের বাহু জরিয়ে ধরলো। বেশ কিছুক্ষণ পর আদ্রিয়ান বুঝতে পারলো যে অনিমা কাঁদছে। আদ্রিয়ান মুচকি হেসে অনিমাকে বুকে নিয়ে বললো,

— ” আরে পাগলি কাঁদছো কেনো? এক সপ্তাহের ব্যাপার। দেখতে দেখতে কেটে যাবে।”

অনিমা কিছু বলছেনা আদ্রিয়ান ওর মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল,

— ” আর রিকের ভয় পেয়োনা। এই বাড়িতে এসে তোমাকে নিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা ওর নেই। কিন্তু হ্যাঁ যাই হয়ে যাক তুমি এই বাড়ি থেকে বেরোবেনা মনে থাকবে?”

অনিমা নিচু কন্ঠে বললো,

— ” হুম।”

আদ্রিয়ান হেসে অনিমার চোখ মুছে দিয়ে বলল,

— ” একটা জিনিস আছে তোমার জন্যে।”

অনিমা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাতেই আদ্রিয়ান পকেট থেকে একটা ফোন বের অনিমার হাতে দিয়ে বললো,

— ” এই ফোন দিয়েই কথা বলবো আমরা দুজন দুজনের সাথে ওকে? আর এখানে মাদার অরু তীব্র ওদের নাম্বার আছে। ওদের সাথে কথা বলে সময় কাটিও। আর ভয় একদম পাবেনা কারণ এই বাড়িতে রিক ঢুকতে পারবেনা, তাই এখানে তুমি একদম নিরাপদ।”

অনিমা আদ্রিয়ানের দিকে অসহায়ভাবে তাকিয়ে বলল,

— ” যাওয়াটা কী খুব জরুরী?”

আদ্রিয়ান অনিমার হাত মুঠোয় নিয়ে মাথা নাড়লো অর্থাৎ হ্যাঁ। অনিমা মাথা নিচু করতেই অাদ্রিয়ান অনিমার মাথা উঁচু করে ধরে বলল,

— ” সব কিছুরই একটা পরীক্ষা থাকে। ধরে নাও আমাদের এই দূরত্বটাও আমাদের ভালোবাসার একটা পরীক্ষা। যার দ্বারা আমারা আমাদের ভালোবাসার গভীরতা বুঝতে পারব?”

অনিমা কেঁদেই যাচ্ছে আদ্রিয়ান অনেক কষ্টে নিজেকে শক্ত রাখছে কারণ ওও যদি ইমোশনাল হয়ে পরে তাহলে অনিকে কে সামলাবে? তাই ও অনিমাকে শক্ত করে নিজের বুকে জরিয়ে ধরে বলল,

— ” আরে পাগলি আমি তো তোমার সাথেই থাকবো সবসময়। আমার শরীর দূরে থাকলেও মনটা তো তোমার কাছেই থাকবে। প্রতি মুহূর্তেই ফিল করতে পারবে তুমি আমাকে। আর মাত্র সাতটা দিনই তো।”

আদ্রিয়ানের কোনো কথাই অনিমার কান্না থামাতে পারছেনা ও নিরবে চোখের জর ফেলেই যাচ্ছে। এমন মনে হচ্ছে যেনো এই বিচ্ছেদ অনেক বেশিই দীর্ঘ হবে।

#চলবে…
.

( সরি গাইস। দিল বেচারা মুভিটা দেখতে গিয়ে লেখার কথা একদম ভূলেই গেছিলাম যার কারণে দিতে দেরী হয়ে গেলো। সো সরি..)

বর্ষণের সেই রাতে ❤ পর্ব- ৩৯.

0

বর্ষণের সেই রাতে ❤
পর্ব- ৩৯
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

.
আদ্রিয়ানের কথা শুনে চরম অবাক হলো আশরাফ মৃধা আর মিসেস রাহেলা। এমন ভয়ংকর ডিল কেউ করতে পারে তা জানা ছিলো না ওনাদের। নিজের ছেলের প্রাণের বিনিময়ে টাকা নেবে? কোনো বাবা মা এই কথা চিন্তাও করতে পারেনা। আশরাফ মৃধা এবার রাগী গলায় বললেন,

— ” কী বলছো কী তুমি হ্যাঁ? আমার ছেলের জীবনের থেকে টাকা বড় নাকি? আমাদের কিচ্ছু চাইনা শুধু আমার ছেলেকে ছেড়ে দাও।”

আদ্রিয়ান হালকা হেসে দিয়ে বলল,

— ” আরে কী বলছেন কী টাকার চেয়ে মূল্যবান কিছু আছে নাকি? সো আপনারা দেখুন আমি আমার কাজ করি।”

বলেই অর্কর শরীরে ছুড়ি দিয়ে আরেকটা টান মারতেই মিসেস রাহেলা চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে বললেন,

— ” এভাবে জানোয়ারের মতো আমার ছেলেটাকে মেরে যাচ্ছো। তার ওপর বাবা মায়ের সামনে সন্তানের প্রাণ নিয়ে ডিল করছো? তুমি কী মানুষ?”

এবার আদ্রিয়ান অর্ককে ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে ওদের সামনে গিয়ে বলল,

— ” বাহ। আজ খুব মনুষ্যত্ব জেগে উঠেছে দেখছি? আপনারা আমাকে আজ মনুষ্যত্ব শেখাচ্ছেন? কিন্তু টাকার কাছে তো মনুষ্যত্ব খুব সহজেই বিক্রি হয়ে যায় তাইনা। টাকার কাছে তো সবকিছুই মূল্যহীন। সেটা ছেলে হোক বা ভাগ্নী?”

এবার আশরাফ মৃধা আর মিসেস রাহেলা দুজনেই মাথা নিচু করে ফেললেন। আদ্রিয়ান একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল,

— ” এখন মাথা নিচু করে ফেলছেন কেনো? আচ্ছা এতো লোভ ছিলো আপনাদের? যেই মেয়েটা জন্ম থেকে মায়ের আদর পায়নি, সদ্য বাবা হারা হয়েছে সেই মেয়েটার ওপর একটুও সহানুভূতি হয়নি আপনাদের? অথচ নিজের ছেলের এই কষ্টটুকু দেখে আপনাদের বুক ফেটে যাচ্ছে। অথচ মেয়েটার ওপর ওরকম অত্যাচার করার সময় মনে পরেনি যে ওও কারো মেয়ে। মেয়েটার কান্না আপনাদের মনকে একটুও গলাতে পারেনি তাইনা? আপনাদের এই গুনধর ছেলের কষ্টে কাঁদার জন্যে আপনারা আছেন আর ওর তখন কেউ ছিলোনা বলে আপনারাও এতো নির্দয় হয়ে গেছিলেন? ওই সময়টাতে ওর সবচেয়ে বেশি দরকার ছিলো কারো সাপোর্ট কারো ভালোবাসা কিন্তু আপনারা?”

ওনারা দুজনেই মাথা নিচু করে চুপ করে আছেন। কী আর বলবেন? বলার মতো বাকি কী আছে আর? এতোদিন না বুঝলেও যেই মুহূর্তে আদ্রিয়ান ওনাদেরকে নিজের ছেলের বিনিময়ে টাকা অফার করেছে সেই মুহূর্তে ওনারা বুঝে গেছেন যে টাকার চেয়েও বড় অনেক কিছুই আছে, সম্পর্কের মূল্য টাকার চেয়েও বেশি। আদ্রিয়ান একটা শ্বাস ফেলে বলল,

— ” আপনারা যদি ওকে একবার বলতেন যে আপনাদের ওর প্রপার্টি চাই তাহলে ও কোনো প্রশ্ন না করে হাসি মুখেই আপনাদেরকে দিয়ে দিতো সব প্রপার্টি। কিন্তু আপনারা তো.. যাক ছাড়ুন এসব আপনারা বুঝবেন না। আমার কাজ আমি করে চলে যাচ্ছি। বলেই অর্কর গলায় ছুড়ি ধরলো। অর্ক অস্ফুট স্বরে বলল,

— ” ছেড়ে দাও আমায়।”

আদ্রিয়ান দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

— ” সেদিন শুধু তোর হাত ভেঙ্গেছিলাম কারণ আমার লোকরা বলেছিলো তুই অনির হাত ধরেছিলো। আর তারপরেই অনির হাতে ঐ অবস্হা দেখেছিলাম। কিন্তু যদি তোর অন্যসব কুকীর্তি তার আগে জানতে পারতাম তাহলে তোর শরীরের একটা হাড় ও আস্তো রাখতাম না।”

অর্কর আপাদত আর কিছু বলার শক্তি নেই। আশরাফ মৃধা কাঁদো কাঁদো গলায় বলল,

— ” আমাদেরকে ক্ষমা করে দাও। আমার ছেলে টাকে মেরোনা।”

আদ্রিয়ান অর্কর গলায় ছুড়ি রেখে বলল,

— ” আচ্ছা ছেড়ে দেবো যদি একটা পেপারে সাইন করে দেন তো।”

মিসেস রাহেলা উত্তেজিত হয়ে বললেন,

— ” তোমারা যা বলবে করবো তবুও আমার ছেলেটাকে ছেড়ে দাও।”

আদ্রিয়ান ইশার করতেই ওর লোকেরা আশরাফ মৃধার দিকে একটা উইল এগিয়ে দিলেন। আশরাফ মৃধা উইল এর দিকে তাকিয়ে দেখলেন ওখানে লেখা আছে যে ওনার সমস্ত প্রপার্টি উনি অনিমার নামে করে দিচ্ছেন। সেটা দেখে আশরাফ মৃধা অবাক হয়ে বললেন,

— ” এসব কী?”

আদ্রিয়ান একটা বাঁকা হাসি দিয়ে বলল,

— ” যদি নিজের ছেলেকে বাঁচাতে চান তো আমার এটুকু কথা তো মানতেই সবে। পেপার টাতে চুপচাপ সাইন করে দিন।”

মিসেস সাহেলাও কাগজটা নিয়ে পড়ে যা দেখলেন তাতে চিৎকার করে বলে উঠলেন,

— ” নাহ। আমরা এসব কাউকে দিতে পারবোনা। এগুলো আমাদের।”

আদ্রিয়ান অর্কর গলাত ছুড়িটা আরেকটু জোরে ধরল আর অর্কর গলার কোণ হালকা কেটে চুইয়ে চুইয়ে রক্ত পরতে লাগল। তারপর ওনাদের দুজনের দিকে তাকিয়ে বলল,

— “এবার আপনার ঠিক করুন যে আপনাদের কী চাই? নিজের ছেলের প্রাণ নাকি নিজেদের প্রপার্টি।”

কোনো উপায় না পেয়ে সাইন করে দিলেন আশরাফ মৃধা আর মিসেস রাহেলা কাঁদতে শুরু করলেন। আদ্রিয়ান পেপারটা নিজের হাতে নিয়ে তারপর ওর লোকদের মধ্যে একজনকে অর্ককে দেখিয়ে বলল,

— ” ওকে নিয়ে হসপিটালে এডমিট করে দে।”

বলায় সাথে সাথেই কয়েকজন লোক অর্ককে তুলে নিয়ে গেলো। আশরাফ মৃধা আর মিসেস রাহেলা বসে বসে কাঁদছেন। আদ্রিয়ান কিছুক্ষণ চুপ করে ওনাদের দিকে তাকিয়ে থেকে তারপর ওনাদের কাছে গিয়ে বলল,

— ” আপনারা যেমনি হন কিন্তু আমার থেকে বয়সে বড়। তবুও আপনাদের আমার সামনে নিজেদের হাত জোর করতে হয়েছে। ইনফ্যাক্ট আমি করতে বাধ্য করেছি। তারজন্যে আমি আপনাদের কাছে হাত জোর করে ক্ষমা চাইছি।”

এটুকু বলে আদ্রিয়ান নিজের হাত জোর করল ওনাদের সামনে। আশরাফ মৃধা আর মিসেস রাহেলা দুজনেই বেশ অবাক হলো। একটু আগের হিংস্র মানুষটার সাথে একে মেলাতে পারছেনা। আদ্রিয়ান একটা নিশ্বাস ফেলে বলল,

— ” কিন্তু কী বলুনতো? কর্মের ফল সবাইকেই ভোগ করতে হয়। তাই আপনাদেরও করতে হচ্ছে এবং হবে। মানুষ ভূল করে তবে আপনারা যেটা করেছেন সেটা ভূল না পাপ। ভূল যেমন সংশোধন করা যায় ঠিক সেই ভাবেই পাপের প্রাশচিত্যও হয়। আপনারাও চাইলে নিজেদের শুধরে নিতে পারবেন। সেই সময়টা দিলাম আমি আপনাদের। হয়তো সব ফেরত পেলেও পেতে পারেন। ”

আশরাফ মৃধা আর মিসেস রাহেলা আবারো মাথা নিচু করে ফেললো। আদ্রিয়ান আবারও বলল,

— ” অর্কর তেমন কিছুই হয়নি। ছুড়ির আঘাতে শুধু চামড়া গুলোই কেটেছি আমি। ওকে আঘাত করার উদ্দেশ্য শুধু আপনাদের ভয় দেখানো ছিলোনা। আপনারা হয়তো জানেনা ও অনিকে রেপ পর্যন্ত করতে চেয়েছিলো। যদি সেদিন অনি এই বাড়ি থেকে না পালাতে পারতো তো আপনার ছেলে ওর সাথে কী করতো সেটা নিশ্চয়ই বুঝতে পারত। ওর শাস্তি এর চেয়েও ভয়ানক হওয়া উচিত ছিলো কিন্তু শুধু আপনাদের কথা ভেবে ওকে ছেড়ে দিলাম আমি।”

ওনারা দুজনে এবারও অবাক হলেন ওনারা এটা জানতেন না। আদ্রিয়ান চলে যেতে নিয়েও থেমে গিয়ে বলল,

— ” আর শুনুন এই বাড়ি এখন আর আপনাদের নয় তাই এই বাড়িটা ফাকা করে ফেলুন এক্ষুনি। আমার একটা গাড়ি বাইরে ওয়েট করছে। আপনাদেরকে হসপিটালে ড্রপ করে দেবে। আমি জানি অর্কর চিকিৎসার টাকা এখন আর নেই আপনাদের কাছে। ওর চিকিৎসার সব খরচ সময়মতো হসপিটালে পৌছে যাবে। তবে হ্যাঁ শুধু চিকিৎসার টাকা টুকুই।”

বলে ওখান থেকে চলে গেলো আদ্রিয়ান। আর আশরাফ মৃধা আর মিসেস রাহেলাও ছুটলেন হসপিটালের উদ্দেশ্যে।

____________________

বেডে শুয়ে এপাশ ওপাশ করছে অনিমা আর বার বার দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে। আদ্রিয়ান কেনো এখোনো আসছেনা সেই চিন্তাই করে চলেছে ও। যদিও একজন সার্ভেন্ট এসে বলে গেছে যে আদ্রিয়ানের আসতে লেট হবে কিন্তু অনিমার মনে একটা চিন্তাই ঘুরপাক খাচ্ছে এতোরাত অবধি কোথায় আছে লোকটা কোনো বিপদ হয়নি তো? এসব নানারকম চিন্তা করতে করতে রুমের দরজা খোলার আওয়াজ পেয়েই উঠে বসল ও। তাকিয়ে দেখলো আদ্রিয়ান এসছে। অনিমার দিকে তাকিয়েই আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে বলল,

— ” কী ব্যাপার ঘুমাওনি এখনো?

অনিমা মাথা নাড়লো। আদ্রিয়ান টি টেবিলের দিকে তাকিয়ে দেখলো রাতের খাবারটা এখনো পরে আছে, খায়নি অনিমা। এবার একটু রাগী গলায় বলল,

— ” সমস্যা কী তোমার বলবে? এতো করে বলি যে টাইমলি খাওয়া আর ঘুমটা তোমার জন্যে কতোটা ইমপর্টেন্ট? তবুও তুমি একি কাজ করবে? এতো বাচ্চামো করলে চলে?”

অনিমা কিছু না বলে মাথা নিচু করে আছে। আদ্রিয়ান একটা শ্বাস ফেলে অনিমার দিকে তাকিয়ে তারপর ওয়াসরুমে চলে গেলো। এরমধ্যে একজন সার্ভেন্ট এসে আদ্রিয়ানের খাবারটাও দিয়ে গেলো। কিছুক্ষণ পর আদ্রিয়ান ভেজা চুল নাড়তে নাড়তে বাইরে এলো। অনিমা তাকিয়ে আছে আদ্রিয়ানের দিকে। আজকেও আদ্রিয়ানকে আফটার শাওয়ার লুকে বেশ সুন্দর লাগছে। আদ্রিয়ান একটু চুল নিয়ে ওদের সামনে বসে ওর দিকে খাবারের প্লেটটা নিয়ে পরোটা ছিড়ে অনিমার মুখের সামনে ধরতেই আদ্রিয়ান দেখলো অনিমা একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আদ্রিয়ানের দিকে। আদ্রিয়ান মুচকি হেসে একটা কাশি দিলো আর অনিমা চমকে উঠলো। অাদ্রিয়ান মুখে এক দুষ্ট হাসি রেখেই বলল,

— ” আমাকে দেখার জন্যে অনেক সময় পাবে আপাদত খেয়ে নাও।”

অনিমা সাথে সাথেই চোখ সরিয়ে নিলো আদ্রিয়ানের থেকে। ভীষণ লজ্জা পেলেও নিজেকে সামলে বলল,

— ” বয়েই গেছে আপনাকে দেখতে।”

আদ্রিয়ান হেসে দিয়ে বলল,

— ” আচ্ছা ঠিকাছে ম্যাডাম খেয়ে আমাকে উদ্ধার করুন।”

অনিমা আর কথা না বাড়িয়ে খেতে শুরু করলো। আদ্রিয়ান অনিমাকে খাইয়ে দিয়ে বলল,

— ” এবার আর একটা কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ শুয়ে পড়ো।”

অনিমা এক্কেবারে বাদ্ধ মেয়ের মতো চুপচাপ শুয়ে পরলো। আদ্রিয়ান ওর খাবারের প্লেটটা নিয়ে সোফায় চলে গেলো। কিন্তু অনিমা শুয়ে শুয়ে আদ্রিয়ানকেই দেখে চলেছে। আদ্রিয়ান সবে খাবারের এক লোকমা মুখে দিয়েছে অনিমাকে ওভাবে ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে চিবোতে চিবোতে বলল,

— ” কিছু বলবে?”

অনিমা নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে একটু চুপ থেকে তারপর বলল,

— ” আপনার আজ এতো লেইট হলো যে?”

আদ্রিয়ান স্বাভাবিকভাবেই খেতে খেতে জবাব দিলো,

— ” কাজ ছিলো একটু।”

অনিমা আর কিছু না বলে আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে রইলো সেটা দেখে আদ্রিয়ান লোকমা মুখে দিতে গিয়েও থেমে গিয়ে বলল,

— ” অনেক রাত হয়েছে চোখ বন্ধ করো।”

অনিমা চোখ বন্ধ করলো আদ্রিয়ানও খাওয়ায় মন দিলো। কিছুক্ষণ পর তাকিয়ে দেখলো অনিমা আবারও ওর দিকে তাকিয়ে আছে। আদ্রিয়ান চোখ রাঙিয়ে বলল,

— ” চোখ বন্ধ।”

অনিমা আবারো চোখ বন্ধ করে ফেললো। আদ্রিয়ান মুচকি হেসে খাওয়াটা শেষ করে সোফায় শুয়ে পরলো। অনিমা এখনো ঘুমায়নি সেটা আদ্রিয়ান ভালোই বুঝতে পারছে। কারণ অনিমা বারবার পিটপিটে চোখে দেখে চলেছে আদ্রিয়ানকে। আদ্রিয়ান সেটা খেয়াল করছে। অনিমাকে চমকে দিয়ে হঠাৎ করেই আদ্রিয়ান বলল,

— ” আমাকে আসতে হবে?”

অনিমা ভয় পেয়ে খিচে বন্ধ করে রাখলো আদ্রিয়ানও মিটমিটিয়ে হাসছে অনিমার বাচ্চামো গুলোকে দেখে। এভাবে নানারকম খুনশুটির মধ্যে দিয়েই রাত পার হয়ে গেলো।

___________________

স্নিগ্ধা কফির মগ নিয়ে রিকের দরজার কাছে গিয়ে দেখলো যে দরজাটা ভিরিয়ে রাখা। ভেতরে যাবে কী না ভাবতে লাগলো। তিন বছর আগে হলে এতো চিন্তা করতোনা হুট করেই ঢুকে যেতো। কিন্তু এখনতো রিক ওকে একপ্রকার সহ্যই করতে পারেনা। পরে নিজেই নিজেকে বললো,

— ” কাম অন স্নিগ্ধা। কী আর করবে? বড়জোর আবার অপমান করবে। ইউ ডোন্ট কেয়ার।”

নিজের মনে এসব আউল ফাউল বকে ভেতরে চলে গেলো আর ভেতর বেশ কয়েক কদম এগিয়ে সামনে তাকাতেই স্নিগ্ধা তো অবাক। কারণ রিক জাস্ট একটা টাওয়েল পরে ড্রেসিন টেবিলের সামনে দাড়িয়ে চুল আচড়াচ্ছে। সিগ্ধা চোখ বন্ধ করে হালকা চেঁচিয়ে বলল,

— ” ইইইহ। ড্যাম ইট।”

রিক পেছনে ঘুরে স্নিগ্ধাকে দেখে চমকে গিয়ে বলল,

— ” আব্বে, তুই? এখানে কী করছিস?”

স্নিগ্ধা চোখ খুলে তাকিয়ে রিকের অবস্হা মনে পড়তেই আবার চোখ বন্ধ করে বলল,

— ” রুমের দরজা লক না করে এভাবে থাকাটা কোন ধরণের ম্যানার্স?”

রিক হেয়ার ব্রাশটা রেখে স্নিগ্ধার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলল,

— ” কারো রুমে নক না করে ঢোকাটাও কোন ধরণের ম্যানার্স সেটা আমিও বুঝতে পারছিনা।”

স্নিগ্ধা চোখ বন্ধ করেই বিরক্তিকর কন্ঠে বলল,

— ” তাই বলে তুমি এভাবে থাকবে?”

রিক হাত ভাজ করে বলল,

— ” ওয়ে ড্রামাকুইন ড্রামা বন্ধ কর। তুই যে এতোটা লজ্জা পাওয়ার মতো জিনিস না সেটা আমি খুব ভালো করেই জানি।”

স্নিগ্ধা এবার চোখ খুলে বিরক্ত হয়ে বলল,

— ” তুমি কী জানো যে তুমি কতোটা ইরেটেটিং একটা মানুষ।”

রিক মুখ ঘুরিয়ে বলল,

— ” তোর চেয়ে অনেক কম। আর তোকেনা বলেছি আমার আশেপাশে আসবিনা।”

সিগ্ধা মুখ ফুলিয়ে কফিটা টি টেবিলে রেখে বলল,

— ” তোমার কফিটা দিয়ে গেলাম। যত্তোসব ফালতু লোক। অনিমা এসে কফি আনলে ঠিক খুশিতে গদগদ হয়ে নিতো। আমি আনলেই ফোসকা পরে।”

বলেই চলে যেতে নিলেই রিক হাত ধরে বলল,

— ” তুই কিন্তু বেশি কথা বলছিস আজকাল।”

স্নিগ্ধা মুখ ভেংচি কেটে বললো,

— ” আমার মুখ আমি যা খুশি তাই বলবো তোমার কী? তুমি তোমার অনিমাকে নিয়েই থাকো।”

রিক স্নিগ্ধাকে আরেকটু কাছে বলল,

— ” ওর সাথে নিজেকে কম্পেয়ার করছিস?”

স্নিগ্ধা মুচকি হেসে বলল,

— ” আমি জানি আমি তোমার অনিমার মতো অতো সুন্দরী বা পার্ফেক্ট নই। নতুন করে মনে করাতে হবে না।”

বলেই রিকের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে রুম চলে গেলো স্নিগ্ধা। রিক স্নিগ্ধার যাওয়ার দিকে তাকিয়েই বলল,

— ” তোকে কীকরে বলবো যে তোকে নিজের থেকে দূরে রাখার একটাই কারণ তোর আর ওর অদ্ভুত কিছু মিল। তোদের দুজনের মিলটাই তো আমাকে আরো জ্বালায়। তোর উপস্হিতি আমাকে ওর কথা আরো বেশি করে মনে করিয়ে দেয়। আই এম সরি সিগ্ধু।”

#চলবে…

( গতকাল পার্ট যথেষ্ট বড় দিয়েছি তবুও অনেকের কাছে ছোট মনে হয়েছে। তাদেরকে বলছি আ’ম সরি বাট এর চেয়ে বড় আপাদত আমার পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়। গল্প লেখা ছাড়াও বারতি অনেক কিছুই করতে হয় আমাকে। ধন্যবাদ এন্ড হ্যাপি রিডিং)

বর্ষণের সেই রাতে ❤ পর্ব- ৩৮

0

বর্ষণের সেই রাতে ❤
পর্ব- ৩৮
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

.
অনিমাকে ওভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে একটু ঘাবড়ে গেলেও আদ্রিয়ান একটু হাসার চেষ্টা করে করে বলল,

— ” তুমি ঘুমাও নি এখোনো।”

অনিমা কিছু না বলে অদ্ভুতভাবে তাকিয়ে আছে আদ্রিয়ানের দিকে তাতে আদ্রিয়িনের ভয় আরো বেড়ে গেলো। আদ্রিয়ান কিছু বলবে তার আগেই অনিমা ভ্রু কুচকে বলল,

— ” এতো রাতে কার সাথে কথা বলছিলেন? আর কাকে কীসের সময় দেওয়ার কথা বললেন?”

আদ্রিয়ান কী বলবে বুঝতে পারছেনা। কারণ অনিমা যেই রকম মেয়ে তাতে ওকে আটকানোর চেষ্টা করবেই। ও চাইবেনা ওর মামা মামীর কোনো ক্ষতি হোক, মেয়েটা যে এরকমি। আর ও এখন অনিমাকে নিজের ব্যাপারে কিচ্ছু বলতে চায় না। তাই আদ্রিয়ান কিছু একটা ভেবে বলল,

— ” অ্ আসলে একজন ডিরেক্টর তার একটা ফিল্মের গান এর জন্যে বলছিলো এমনিতেই আমার কতোগুলো কনট্রাক্ট সাইন করা তাই আমি একটু সময় দিতে বললাম এই আর কী।”

অনিমা আদ্রিয়ানের দিকে সন্দিহান আর অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,

— ” কিন্তু আপনিতো বললেন..”

অনিমাকে কিছু না বলতে দিয়ে আদ্রিয়ান বলল,

— ” ওসব ছাড়ো তুমি এখনো জেগে আছো কেনো? তুমি জানো তোমার শরীর ঠিক নেই। তোমার প্রপার ঘুমের প্রয়োজন। ”

অনিমা আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” হ্যাঁ কিন্তু…”

আদ্রিয়ান এবারো অনিমাকে থামিয়ে দিয়ে বলল,

— ” আবার কথা বলে। চলো ঘুমোবে।”

বলেই অনিমাকে টেনে ভেতরে নিয়ে গেলো রুমে। অনিমা বেশ অবাক হলো। ওর মনে হচ্ছে যে আদ্রিয়ান কিছু লুকোচ্ছে। কিন্তু এটাও বুঝতে পারছে যে আদ্রিয়ান ওকে কিছু বলতে চাইছেনা আর আদ্রিয়ান যখন বলতে চাইছেনা তাই ও আর কথা বাড়ালোনা। কারণ যেটা আদ্রিয়ান ওকে জানাতে চায় না সেটা ও শুনতেও চায়না। ও জানে আদ্রিয়ান ওকে কতোটা ভালোবাসে আর ও কিছু লুকিয়ে থাকলে তার পেছনে যথেষ্ট কারণ থাকবে। আদ্রিয়ান অনিমাকে শুইয়ে দিয়ে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে ওকে ঘুম পাড়িয়ে দিলো। অনিমার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে আদ্রিয়ান মনে মনে বলল। আ’ম সরি জানপাখি। তোমাকে মিথ্যে কথা বলতে চাইনি আমি কিন্তু আপাদত আমার কাছে সেকেন্ড কোনো অপশন ছিলোনা। তবে কথা দিচ্ছি সময় এলে সব সত্যিটা তোমাকে বলবো। এসব ভাবতে ভাবতে আদ্রিয়ান কিছুক্ষণ অনিমার দিকে তাকিয়ে থেকে সোফায় শুতে চলে গেলো।

___________________

একটা স্টুডিও থেকে গানের রেকর্ডিং কম্প্লিট করে সোফায় বসে আছে আর ওর দুই পাশে আদিব আর আশিস। এখানে ওদের স্নাক্স এর ব্যবস্থা করেছে ডিরেক্টর তাই ওদের একটু বসতে হচ্ছে। আপাদত কফি দেওয়া হয়েছে ওদের। কিছুক্ষণ তিনজনেই চুপ ছিলো। কফির মগে চুমুক দিতে দিতে আদ্রিয়ান আশিসকে বলল,

— ” অরুমিতার সাথে কী চলছে তোর?

আশিস কফির মগে চুমুক দিতে গিয়েও থেমে গেলো, আর আদিব তাকালো আশিসের দিকে। আশিস জানে যে আদ্রিয়ানকে মিথ্যে বলে কোনো লাভ নেই। ও সব জেনেই তবে কাউকে প্রশ্ন করে এটাই ওর স্বভাব । তাই গলাটা একটু ঝেড়ে নিয়ে বলল,

— ” একচুয়ালি উই আর ইন এ রিলেশনশিপ।”

আদিব বেশ অবাক হলো কিন্তু আদ্রিয়ান একটুও অবাক হলোনা কারণ ও আগে থেকেই সব জানতো আর জেনে শুনেই জিজ্ঞেস করেছে। আদ্রিয়ান কফির মগটা টেবিলে রেখে বলল,

— ” দেখ তোকে আমি আগেও বলেছি। অরুমিতা মেয়েটা অন্যরকম। ও তোর ঐসব গার্লফ্রেন্ডস দের মতো নয়। তাই বলছি হয় ওর প্রতি পুরোপুরি সিরিয়াস হ নয়তো সম্পর্কটা এখানেই শেষ কর। এন্ড আ’ম ভেরি সিরিয়াস হ্যাঁ?

আশিস হেসে বলল,

— ” হুম।”

আদিব ভ্রু কুচকে আশিসের দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” তুই আর সিরিয়াস? আদোও হতে পারবি তো ভাই?”

আশিস কিছু না বলে হাসলো খানিকটা। আদ্রিয়ান কিছু বলবে তার আগেই ওখানকার একজন এসে বললো,

— ” স্যার আপনার সাথে মিনিস্টার রঞ্জিত চৌধুরীর ছেলে রিক চৌধুরী এসছেন দেখা করতে। উনি ওয়েটিং রুমে আছেন। আসতে বলবো?”

আদ্রিয়ান এর ঠোঁটে বাঁকা হাসি ফুটে উঠলো। আদ্রিয়ান লোকটির দিকে তাকিয়ে বলল,
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
— ” নাহ। ওনাকে ওখানেই বসতে বলো আমি যাচ্ছি।”

লোকটি মাথা নেড়ে চলে গেলো ওখান থেকে। আদিব অবাক হয়ে বলল,

— ” তুই কেনো যাবি? ওকে এখানে আসতে বলতি।”

আদ্রিয়ান খানিকটা আলসেমি ঝেড়ে বললো,

— ” কী সব বলিস তোরা? এতো নামিদামী একজন এতোটা পথ পেরিয়ে আমার সাথে দেখা করতে এসছে, আমিতো এটুকু তো যেতেই পারি। ”

বলেই মুচকি হাসলো আদ্রিয়ান উত্তরে আশিস আর আদিব ও হেসে দিলো। আদ্রিয়ান উঠে চলে গেলো রিকের সাথে কথা বলার জন্যে। গিয়ে দেখলো রিক সোফায় পায়ের ওপর পা তুলে বসে। আদ্রিয়ানকে দেখে তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকালো। আদ্রিয়ান মুচকি হেসে গিয়ে রিকের সামনে বরাবর রাখা সোফায় পায়ের ওপর পা তুলে বসলো। রিক তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে ওর বসার ধরণটাও দেখলো। আদ্রিয়ান হাসি মুখেই বলল

— ” আজ হঠাৎ আমাকে আবার কেনো মনে পরলো রিক চৌধুরী?”

রিক চোখ মুখ শক্ত করেই বলল,

— “যেটা করছো সেটা কিন্তু মোটেও ভালো করছোনা। তুমি জানোনা আমি কতোটা ভয়ংকর হতে পারি। অনিকে দিয়ে দাও আমায়। এতে তোমারো ভালো হবে আর অনিরো!”

আদ্রিয়ান রিকের দিক থেকে চোখ সরিয়ে একটা তাচ্ছিল্যের বাঁকা হাসি দিলো তারপর আবারো রিকের দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” আচ্ছা? তাই নাকি? তা কীকরে ভালো রাখবেন ওকে? নিজের বেল্ট দিয়ে মেরে? নাকি স্টিলের গরম নাড়ানি ওর হাতে চেপে ধরে? নাকি গরম জল মুখে ঢেলে দিয়ে? হুম? এসব করে ভালো রাখবেন ওকে?”

রিক রেগে গিয়ে বলল,

— ” বেশি বেশি বলে ফেলছো কিন্তু।”

আদ্রিয়ানও হেসে দিয়েই বলল,

— ” একটা কথাও বেশি বলিনি আমি। যা করেছেন সেটাই শোনাচ্ছি আপনাকে।”

এরপর বেশ কিছুক্ষণ দুজনেই চুপ ছিলো। এরপর কিছু একটা ভেবে রিক আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” কী চাই তোমার?”

আদ্রিয়ান ঠোঁটে হাসি রেখেই কপালটা কুচকে বললো,

— ” মানে?”

রিক একটু হাসলো তারপর নিজের থুতনিতে হাতে দুটো আঙ্গুল স্লাইড করে বলল,

— ” টাকার লোভ কম বেশি সবার থাকে। চলো একটা ডিল করা যাক। তোমার যতো টাকা লাগবে আমি দেবো তোমাকে। শুধু একবার না যখন যতো লাগবে ততোই দেবো। তুমি চাইলে আমি এগ্রিমেনট ও সাইন করাতে পারি। কিন্তু তার বদলে তুমি আমাকে আমার অনিকে দেবে। কী বলো? ডিলটা ভালো না? ”

আদ্রিয়ান খানিকটা বাঁকা হেসে বলল,

— ” হুমমম। বেশ ভালো ডিল। আমিতো রাজি।”

আদ্রিয়ানের উত্তর শুনে রিকের মুখে হাসি ফুটে উঠল। রিক হেসে বলল,

— ” বলেছিলাম না? টাকার কাছে সবাই মাথা নামিয়ে নেয়? বলো কতো চাই?”

আদ্রিয়ান হেসে বলল,

— ” আরে দাঁড়ান এতো তাড়ার কী আছে? আমি এই ডিলটা মানবো যদি আপনিও আমার সাথে একটা ডিল করেন তো।”

রিক ভ্রু কুচকে বলল,

— ” কীসের ডিল?”

আদ্রিয়ান সোফায় হেলান দিয়ে আয়েশ করে বসে বলল,

— ” আপনার হৃদপিণ্ড টা আমায় দিয়ে দিন। আর তার বদলে আমি আমার সমস্ত কিছু, প্রপার্টি ব্যাংক ব্যালেন্স সব আপনার নামে করে দেবো। বলুন? রাজী?”

রিক রাগে গজগজ করে বলল,

— ” মজা করছে আমার সাথে? যদি আমার হৃদপিন্ডটাই দিয়ে দেই তাহলে এই প্রপার্টি দিয়ে কী করবো?”

আদ্রিয়ান মুচকি হেসে দিয়ে স্হির গলায় বলল,

— ” তাহলে আমি আমার হৃদপিণ্ডটা আপনাকে দিয়ে দিলে ঐ টাকা দিয়ে কী করবো? ও তো শুধু আমার হৃদপিণ্ড নয় আমার শরীরের অর্ধেক অংশ। পৃথিবীর কোনো কিছুর বিনিময়ে ওকে দিতে পারবোনা আমি । আর আপনি ওকে নিয়ে ডিল করছেন?”

এটুকু বলার পরেই আদ্রিয়ানের চোখে মুখে চরম রাগ ফুটে উঠলো আদ্রিয়ান রাগী কন্ঠে বলল,

— ” আমি আপনাকে আগেও বলে দিয়েছি যে ও কোনো জিনিস নয়। আমাকে ওর সেই মামা আর মামী পেয়েছেন নাকি কটা টাকার লোভ দেখাবেন আর আমি ওকে বেঁচে দেবো? তখন আপনি সেটা করতে পেরেছিলেন কারণ ওর পাশে কেউ ছিলোনা। কিন্তু এখন এসব চিন্তাও করবেন না কারণ ওর পাশে আমি আছি। ওর সব বিপদে ওর সামনে ঢাল হয়ে দাঁড়াবো আমি। তাই এখনও বলছি ওর কথা ভুলে যান।”

রিক কিছুক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে থেকে তারপর আদ্রিয়ানের কথাগুলো মাথায় যেতেই চরম মাত্রায় রেগে গিয়ে বলল,

— ” এভাবে মানবেনা তুমি তাইনা?”

বলেই উঠে নিজের পেছন থেকে গান বেড় করে আদ্রিয়ানের দিকে তাক করল কিন্তু আদ্রিয়ানের চোখে মুখে ভয়ের কোনো ছাপ নেই। রিক রেগে গিয়ে একটা হাওয়ায় একটা শুট করলো আদ্রিয়ানের পাশ দিয়েই। আদ্রিয়ান হুট করেই রিকের হাতে একটা লাথি মারলো। বন্দুকটা রিকের হাত ফসকে ওপরে উঠে যেতেই আদ্রিয়ান ওটা ক্যাচ করে রিকের চারপাশ দিয়ে পরপর বিরতিহীন পাঁচটা শুট করলো। সবগুলো গুলি রিকের পাশ ঘেসে ঘেসে চলে গেলো কিন্তু অবাক করা বিষয় হলো একটা গুলিও রিকের গায়ে লাগলোনা। রিক তাল সামলাতে না পেরে সোফায় পরে গেলো ও হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে আদ্রিয়ানের দিকে। আদ্রিয়ান রিকের কাছে গিয়ে ওর পাশে সোফার ওপর পা রেখে শক্ত কন্ঠে বলল,

— ” আমি এমনিতে খুব ভালো। কিন্তু যদি একবার খারাপ হয়ে যাই না তাহলে সামনে উপস্হিত ব্যাক্তিটির জন্যে সেটা ভীষণ ভারী হয়ে পরে। তাই বলছি এরপর আমার সাথে ভেবে চিন্তে কথা বলবেন আর কাজ করবেন।”

এটুকু বলে গানটা রিকের হাতে ধরিয়ে দিয়ে আদ্রিয়ান চলে গেলো ওখান থেকে। রিক বেশ অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো আদটরিয়ানের যাওয়ার দিকে আর বিড়বিড় করে বলল,

— ” ও শুধু একজন সিঙ্গার হতে পারেনা। ইম্পসিবল।”

আদ্রিয়ান ওখান থেকে আদিব আর আশিসের কাছে গিয়ে বসে কাউকে ফোন করে বলল,

— ” তোমার ম্যামকে ঠিকভাবে খাবারটা দিয়ে এসো আর ওকে বলো আমার আসতে লেট হবে, অপেক্ষা যাতে না করে। এক জায়গায় যাবো আমি।”

এটুকু বলে ফোনটা রাখতেই আদিব জিজ্ঞেস করলো,

— ” কোথায় যাবি?”

আদ্রিয়ান বাঁকা হেসে বলল,

— ” হিসেব মেটাতে। এখোনো অনেকের সাথে অনেক হিসেব মেটানো বাকি। কিছু অমানুষকে মানুষ করতে হবে।”

এটুকু বলে ও আবার আরেকজনকে ফোন করে বলল,

— ” ফোনে অর্ক মৃধা বলে একজনের ডিটেইলস পাঠাচ্ছি ও এখন কোথায় আছে আধা ঘন্টার মধ্যে জানান আমাকে।”

______________________

সোফায় বসে টিভি দেখছিলেন আফরাফ মৃধা। আর তার পাশে বসে ফোনে অনলাইনে শাড়ি দেখছেন মিসেস রাহেলা। আশরাফ মৃধা বহুত টেনশনে আছেন এতোটা টেনশনে আছেন যে টেনশনে চা ও ঠিকভাবে খেতে পালছেননা। উনি বিরক্ত হয়ে ওনার স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” আমি ওই হুমকি ফোনের টেনশনে বাঁচি না আর তুমি এসব ফালতু জিনিস দেখছো?”

মিসেস রাহেলা ফোনের দিকে তাকিয়েই ভ্রু কুচকে বললো,

— “তুমি এতো বেশি কেনো ভাবছো সেটাইতো বুঝতে পারছিনা? কাল রাত থেকেই জালিয়ে মারছো আমাকে। বললাম তো অসব ফাঁকা আওয়াজ। কিচ্ছু হবেনা।”

— ” আরে তুমি বুঝতে পারছোনা ও…”

আর কিছু বলবে তার আগেই হঠাৎ সামনে কিছু পড়ার শব্দে পেয়ে ওনারা চমকে তাকালেন আর তাকিয়ে যা দেখলেন তাতে ওনারা অবাক হয়ে গেলেন। কারণ ওনাদের সামনে ওনাদের ছেলে আহত অবস্হায় পরে আছেন। ওনারা কিছু বলবেন তার আগেই শিস বাজাতে বাজাতে এনট্রি নিলো আদ্রিয়ান । আদ্রিয়ানকে দেখে ওনারা আরো অবাক হয়ে গেলেন। মিসেস রাহেলা বিষ্মিত কন্ঠে বললেন,

— ” গায়ক? আদ্রিয়ান আবরার জুহায়ের?”

আদ্রিয়ান মুচকি হেসে পকেটে হাত ঢুকিয়ে বলল,

— ” বাহ চিনে ফেলেছেন দেখছি? তবে আমার আরেকটা পরিচয় হলো আপনাদের জামাই রাজা ওরফে যম।”

বলে ফ্লোরে পরে থাকা অর্কের ওপর নিজের পা রাখলেন। আশরাফ মৃধা চেঁচিয়ে বললেন,

— ” ওই ছাড়ো আমার ছেলেকে। তুমি ফোন করেছিলে না?”

আদ্রিয়ান অর্কর ওপর পা রেখেই বলল,

— ” আরে বাহ? আপনি খুব বুদ্ধিমান মামাবাবু কেমন ঝটাক করে ধরে ফেললেন।”

মিসেস রাহেলা এগিয়ে আসতে নিলেই হঠাৎ বেশ কিছু লোক ভেতর চলে আসলো আর ওরা আশরাফ মৃধা আর মিসেস রাহেলা কে আটকে রেখে দিলো। মিসেস চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে বলল,

— ” আমার ছেলের কষ্ট হচ্ছে ওকে ছেড়ে দিন প্লিজ!”

আসলেই অর্কর অবস্হা খুবই খারাপ দেখেই বোঝা যাচ্ছে ভীষণ মেরেছে ওকে। বেচারা ঠিক করে কথাও বলতে পারছেনা। আদ্রিয়ান হেসে দিয়ে বলল,

— ” আরে বাহ মামী শাশুড়ি, আপনার ছেলের কষ্টে আপনার কতো কষ্ট হচ্ছে। অথচ বাপ মা হারা একটা অসহায় মেয়েকে রোজ অমানুষের মতো মারার সময় মনে হয় নি যে ওর ও কষ্ট হচ্ছে? নাকি ওর হয়ে কেউ বলার ছিলোনা বলে আপনারা বুঝতেই পারেননি?”

অর্ক অস্ফুট স্বরে বলে উঠল,

— ” বাবাহ আমাকে বাঁচাও।”

আদ্রিয়ান এবার ইশারা করতেই কিচেন থেকে ওর এক লোক একটা মগে করে গরম পানি নিয়ে এলো। আদ্রিয়ান একহাটু ভেঙ্গে অর্কের সামনে বসে ওর হাত ধরে সেই মগের মধ্যে চুবিয়ে দিলো। জ্বালায় চিৎকার করে উঠল অর্ক, আদ্রিয়ান ওপর হাতে ওর চুলের মুঠি ধরে উঁচু করে বলল,

— ” খুব কষ্ট হচ্ছে বুঝি? অথচ এই কষ্টটাই অন্যকে দিতে খুব মজা লাগে তাইনা? আমারও লাগছে। ওয়েট, মজাটা আরো বাড়ানো যাক।”

বলেই আদ্রিয়ান পকেট থেকে একটা ছুড়ি বের করল। সেটা দেখে মামা মামী আর অর্ক তিনজনেরই আত্মা শুকিয়ে গেলো। আদ্রিয়ান ছুড়িটা অর্কর হাতে বসিয়ে জোরে একটা টান মারলো অর্ক চিৎকার করে উঠল সাথে আশরাফ মৃধা আর মিসেস রাহেলাও। কিন্তু লোকগুলো ঘিরে রেখেছে বলে ওনারা যেতে পারছেননা মিসেস রাহেলা কাঁদতে কাঁদতে বলল,

— ” দয়া আমার ছেলেটাকে ছেড়ে দাও। ও মরে যাবে।”

আদ্রিয়ান অর্কের পিঠে ছুরি দিয়ে একটা টান মারলো। এভাবে আশরাফ মৃধা আর মিসেস রাহেলাকে দেখিয়ে একটার পর একটা ছুরির আঘাত করতে লাগলো অর্কর শরীরে আদ্রিয়ান। অর্কর একেকেটা চিৎকারে বাড়ি কেঁপে উঠছে। ওনারা দুজন আর সহ্য করতে পারলেন না। নিজের সন্তানের এই অফস্হা কেউ সহ্য করতে পারেনা সে যেমন মানুষই হোক। কাদঁতে কাঁদতে বসে পরে আশরাফ মৃধা হাত জোর বললেন,

— ” তোমার যা চাই আমরা দিয়ে দেবো কিন্তু আমার ছেলেকে ছেড়ে দাও দয়া করে।”

আদ্রিয়ান এবার মুখটা একটু চিন্তিত করে বলল,

— ” কিন্তু আপনার ছেলের কলিজাটা তো আমার চাই মামাবাবু । যে কলিজা নিয়ে ও আমার জানপাখিকে ছোয়ায় সাহস দেখিয়েছে সেই কলিজাটাকে কেটে কুচিকুচি না করা অবধি যে আমার ঘুম হবে না। কী করি বলুনতো? আ’ম হেল্পলেস। তবে একটা কাজ করছি আমি। আপনাদের ছেলের কলিজাটা আমি নিয়ে নিচ্ছি তার বদলে আপনাদের আমি আপনাদের খুব পছন্দের একটা জিনিস দেবো। আপনাদের যতো টাকা লাগে দেবো। দরকার পরলে ব্লাঙ্ক চেইক ধরিয়ে দেবো। ভাবুন তো কতো টাকা পাবেন? বাকি জীবণটা বসে বসে টাকা উড়িয়ে উড়িয়ে খরচ করলেও শেষ হবেনা এতো টাকা দেবো আপনাদের। কিন্তু তার বিনিময়ে একটা সামান্য জিনিস চাই। আপনার ছেলের কলিজা। ডিলটা দারুণ না? বলুন রাজি তো?”

#চলবে…

বর্ষণের সেই রাতে ❤ পর্ব- ৩৭

0

#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

.
অনিমা আস্তে আস্তে চোখ খুলে তাকানোর পর ফিল করলো যে কেউ ওর হাত ধরে রেখেছে। হাতের দিকে তাকিয়ে দেখলো আদ্রিয়ান ফ্লোরে বসে ওর হাত ধরেই বেডে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পরেছে। অনিমা একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল যে আদ্রিয়ান ঠিক আছে। কিন্তু ওরা যদি আদ্রিয়ানকে তুলে নিয়ে গিয়ে থাকে তাহলে আদ্রিয়ান কীকরে ফিরে এলো? ওরা ওকে ছেড়ে দিলো কেনো? এসব নানারকমের কথা ভাবতে ভাবতে আদ্রিয়ানের দিকে তাকাতেই অনিমার চোখ আটকে গেলো। বেডের ওপর শুধু মাথাটা কাত করে শুয়ে আছে আদ্রিয়ান, সিল্কি চুলগুলো কপালে পরে আছে, বাচ্চা বাচ্চা লাগছে পুরো কিউটনেস উপচে পরছে একেবারে। অনিমার ঠোঁটের কোণে ওর অজান্তেই হাসি ফুটে উঠলো। আদ্রিয়ানের চুলগুলো নিজের হাত দিয়ে নেড়ে দিলো অনিমা, এরপর নিজের হাত আস্তে করে আদ্রিয়ানের হাত থেকে সরিয়ে একটু এগিয়ে গিয়ে আদ্রিয়ানের দিকে ঝুকে আদ্রিয়ানের চুলগুলো নাড়তে নাড়তে বলল

— ” এতোটা ভালো কেনো বাসেন আমাকে? সত্যিকি এতোটা ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য আমি? আপনি কী সত্যিই আমার ভাগ্যে আছেন? আমার ভাগ্য কি সত্যিই এতোটা ভালো হতে পারে?”

আদ্রিয়ান হঠাৎ করেই একটু নড়ে উঠলো। অনিমা সাথে সাথেই হাতটা সরিয়ে ফেললো। আদ্রিয়ান উঠে বসে চোখ পিটপিট করে অনিমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল,

— ” উঠে পরেছো তুমি।”

অনিমা কিছু না বলে চুপ করে রইলো। আদ্রিয়ান ফ্লোর থেকে উঠে বেডে বসে অনিমার দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” কী হয়েছে তোমার? তখন ওভাবে হাইপার হয়ে গেছিলে কেনো?”

অনিমা মাথা তুলে আদ্রিয়ানের দিকে ছলছলে চোখ তাকিয়ে বলল,

— ” আপনাকে ওরা..”

আদ্রিয়ান অনিমার দুই বাহুতে হাত রেখে বলল,

— ” কাম অন অনি। আমি তোমাকে বলেছিলাম না আমার কিচ্ছু হবেনা। তবুও তুমি?”

অনিমা মাথা নিচু করে চোখের জলটুকু ছেড়ে দিয়ে বলল,
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
— ” আসলে নিউসটা দেখে আমি ভয় পেয়ে গেছিলাম।”

অনিমাকে কাঁদতে দেখে আদ্রিয়ান আর কিছু না বলে ওকে আলতো করে জরিয়ে ধরে বলল,

— ” আচ্ছা ওকে ডোন্ট ক্রাই। যা হওয়ার হয়েছে। বাট আমি তো তোমাকে প্রমিস করেছি তাইনা? তবুও এতো ভয় কেনো পাচ্ছো? ইউ ট্রাস্ট মি না?”

অনিমা অস্ফুট স্বরে বলল,

— ” হুম”

আদ্রিয়ান অনিমাকে ছেড়ে উঠে দাড়িয়ে দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” আটটা বেজে গেছে। যাও হাত মুখ ধুয়ে এসো ডিনার করবো।”

অনিমা মাথা নেড়ে উঠে ওয়াসরুমে চলে গেলো। আদ্রিয়ান অনিমার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল,

— ” আমার ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্যতা তুমি ছাড়া আর কারোর নেই। ওই জায়গাটা শুধুই তোমার। অার ভাগ্য? কারো ভাগ্যে কী আছে সেটা কেউ না জানলেও আমি জানি‍ যে তুমি শুধু আমার আর আমারই থাকবে।”

____________________

নিজের রুমে বেডে বসে হিসেব মেলানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে রিক। কিছুই মেলাতে পারছেনা শুধু এটুকু বুঝতে পারছে যে আদ্রিয়ান সম্পর্কে এমন কিছু আছে যা ও জানে না। কিন্তু সেটা কী? যদি ধরেও নেই যে ও গান চালাতে জানে। তাই বলে এতোটা পার্ফেক্ট? যে ছয়জন মানুষকে একাই ধরাসাই করে দিলো, যেখানে সবার হাতেই গান ছিলো? এটা যে কারো পক্ষে করা সম্ভব না। এসব কথা ভাবতে ভাবতেই ওর ঘরে একটা মেয়ে এলো হাতে খাবারের ট্রে নিয়ে। দরজার কাছ থেকে বলল,

— ” আসবো রিক দা।”

রিক মেয়েটাকে দেখে বেশ অবাক হলো সাথে বিরক্ত ও হলো, ভ্রু কুচকে বলল,

— ” তুই কখন এসছিস?”

মেয়েটা মাথা নিচু করে নিচু কন্ঠে বলল,

— ” আজকেই এসছি সন্ধ্যায় ।”

রিক বিরক্ত হয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে স্ক্রল করতে করতে বলল,

— ” তো এখানে কী?”

মেয়েটি করুণ চোখে একবার তাকালো রিকের দিকে তারপর ইতোস্তত করে বলল,

— ” তোমার ডিনারটা নিয়ে এসছিলাম।”

রিক ফোন থেকে চোখ সরিয়ে ভ্রু কুচকে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” তো কী বাড়িতে মেড সার্ভেন্ট ছিলোনা তুই কেনো?”

মেয়েটা অসহায়ভাবে রিকের দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” তুমি আমার সাথে এভাবে কেনো কথা বলো?”

রিক এবার উঠে দাঁড়িয়ে রাগী গলায় বলল,

— ” দেখ সিগ্ধা আমি তোকে আগেও বলেছি আমার থেকে দূরে থাকবি। তবুও আমার পেছনে ঘুরঘুর কেনো করিস বলবি?

সিগ্ধা এবার নিজেও রেগে গেলো। রেগে গিয়ে খাবারের ট্রে টা টি টেবিলে শব্দ করে রেখে বলল,

— ” কী সমস্যা কী তোমার আমাকে নিয়ে বলোতো? কী করেছি আমি যে এখন আমাকে সহ্যই করতে পারোনা? আগেতো এমন করতে না? প্রপোজ করেছি বলে? সে তো আরো আগেই করেছিলাম। তখন না করে দিলেও এরকম ব্যবহার তো করতে না? এখন কেনো করো এরকম?”

রিক মুখ ঘুরিয়ে শক্ত গলায় বলল,

— “তোকে উত্তর দিতে বাধ্য নই আমি।”

সিগ্ধা গিয়ে রিকের কলার ধরে বলল,

— ” অবশ্যই বলতে হবে। কী দোষ করেছি আমি। আমার অপরাধটা কী?

রিক নিজের কলার ছাড়িয়ে সিগ্ধার দুই বাহু চেপে ধরে বলল,

— ” সবসময় মুখে মুখে কথা। একটুও ভয় পাস না আমাকে? হ্যাঁ? এতো সাহস কে দেয় তোকে? ”

সিগ্ধা ঝাড়া দিয়ে রিককে ছাড়িয়ে বলল,

— ” তোমাকে ভয় পাওয়ার কোনো কারণই নেই। কারণ আমি জানি যে তুমি মানুষটা বাইরে দিয়ে বদলে গেলেও মনের দিক দিয়ে তুমি ঠিক সেই ছোটবেলার রিকদাই আছো। আর আমি জানি তুমি আবার আগের মতো হয়ে যাবে। তোমাকে আগের মতো হতেই হবে।”

রিক হাত মুঠো করে চোখ বন্ধ করে একটা শ্বাস নিয়ে বলল,

— “গেট লস্ট।”

সিদ্ধা রিকের হাত ধরে করুণ স্বরে বলল,

— ” রিকদা।”

রিক সিদ্ধার হাত ধরে ওকে টেনে রুম থেকে বের করে দরজা বন্ধ করে দিলো। সিদ্ধা চোখের জল মুছে চলে গেলো ওখান থেকে। সিদ্ধা হলো রিক এর মায়ের বান্ধুবীর মেয়ে। ও ছোটবেলা থেকেই ভালোবাসে রিক কে। কিন্তু রিক এর মধ্যে তেমন কোনো অনুভূতি নেই। সিগ্ধা ওকে প্রোপজ করার পর ও সুন্দর ভাবেই না করে দিয়ছিলো তবে কখনো খারাপ ব্যবহার করেনি সিগ্ধার সাথে। কিন্তু অনিমা পালিয়ে যাবার পর থেকেই স্নিগ্ধাকে সহ্য করতে পারেনা ও। কারণ অনিমার সাথে সিগ্ধার চেহারার কোনো মিল না থাকলেও দুটো জিনিসের অদ্ভূত মিল আছে। ডান গালে পরা টোল আর বাম গালের তিল। যার কারণে হাসলে দুজনকে একি রকম লাগে। সেই হাসিটাই সহ্য করতে পারেনা রিক। তাই সবসময় ওর থেকে দূরে থাকতে বলে সিগ্ধাকে। কিন্তু সিগ্ধাও নাছড় বান্দা। যখনি এই বাড়িতে আসে সারাক্ষণ রিকের পেছনেই লেগে থাকে। কোনো বকা,ধমক এফেক্ট করেনা ওর ওপর। কারণ ও রিককে ভয়ই পায় না।

__________________

অনিমা বেডে শুয়ে আছে আর আদ্রিয়ান সোফায় শুয়ে ফোন টিপছে। কিছুক্ষণ পর আদ্রিয়ান তাকিয়ে দেখলো অনিমা ঘুমিয়ে পরেছে। অনিমার ঘুমিয়ে পরার অপেক্ষাই করছিলো আদ্রিয়ান। অনিমার কাছে গিয়ে বসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে ফোন নিয়ে সোজা ব্যালকনিতে চলে গেলো আদ্রিয়ান। তারপর অনিমার মামার নাম্বারটা বের করলো। ওর লোক দিয়ে ওর মামা মামীর সব ইনফরমেশন ই যোগার করে নিয়েছে, এড্রেস ফোন নাম্বার সব। কল লাগিয়ে মোবাইলটা কানে নিলো আদ্রিয়ান। কিছুক্ষণ পর ওপাশ থেকে আওয়াজ এলো,

— ” হ্যালো কে?”

আদ্রিয়ান মুচকি হেসে বলল,

— ” আসসালামু আলাইকুম মামা।”

ওপাশ থেকে আশরাফ মৃধা অবাক কন্ঠে বললেন,

— ” মামা? কে কার মামা? আমার একটাই বোন ছিলো আর সেই বোনের একটাই সন্তান তাও মেয়ে। আপনি কে?”

আদ্রিয়ান একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দেয়ে বলল,

— ” কাম অন মামা। আপনার কোনো ভাগ্নী টাগ্নী আছে নাকি?”

আশরাফ মৃধা বিরক্ত হয়ে বলল,

— ” আজব কথা? থাকবেনা কেনো? না থাকলে কী আমি এমনি এমনি বলছি নাকি?”

আদ্রিয়ান রেলিং এ ভর দিয়ে বলল,

— ” আচ্ছা বলুন তো আপনার ভাগ্নী বেঁচে আছে নাকি মরে গেছে?”

আশরাফ মৃধা চমকে গেলেন এরপর তুতলিয়ে বললেন,

— ” অব্ জ্ জানিনা আমি।”

আদ্রিয়ান এবার শব্দ করে হেসে দিলো হাসতে হাসতেই বলল,

— ” আরে বাহ। নিজের আপন একমাত্র ভাগ্নি বেঁচে আছে নাকি মরে গেছে আপনি সেটাই জানেনা। গ্রেট না?”

আশরাফ মৃধা রাগী গলায় বলল,

— ” ভাগ্নিটা আমার, আমার ব্যাপার। তুমি এসব বলার কে? কে তুমি?”

আদ্রিয়ানের চোখ মুখ এবার শক্ত হয়ে এলো। রেগে গিয়ে রেলিং এ একটা বারি মেরে চেঁচিয়ে বলল,

— ” লজ্জা করেনা আপনার? ভাগ্নি বলছেন ওকে? যে মুহূর্তে ওর আপনাদের সবচেয়ে বেশি দরকার ছিলো সেই মুহূর্তে পশুর মতো আচরণ করেছিলেন আপনারা ওর সাথে। মানসিক শারীরিক সবরকম ভাবে কষ্ট দিয়েছেন ওকে। আপনাদের সেই অন্যায়ের চিন্হ ওর শরীরে আজও আছে। এমনকি টাকার জন্যে ওকে বিক্রি করতেও আপাদের বিবেকে বাধেনি আর মামা বলে দাবী করছেন আপনি নিজেকে?”

আশরাফ মৃধা কাঁপা কাঁপা গলায় বলল,

— “কে আপনি?”

আদ্রিয়ান এবার রাগ ছেড়ে মুচকি হেসে বলল,

— ” আপনাদের জামাই রাজা। আর আমি খুব তাড়াতাড়ি আসছি। আসলে কি বলুনতো শশুর শাশুড়ি নেই আমার। জামাই আদর তো আপনারাই করবেন না? তৈরী হয়ে থাকুন এই জামাই খুব স্পেশাল আছে কিন্তু। ”

আদ্রিয়ানের কথা শুনে আশরাফ মৃধা একটা ঢোক গিলে বললেন,

— ” মানে?”

আদ্রিয়ান এবার খুব ঠান্ডা গলায় বলল,

— ” মানে হলো পালান। যেখানে পারেন পালান। আমি এসে পরার আগেই যদি পালাতে পারেন তো। কারণ অনির শরীরের প্রত্যেকটা আঘাতের চিন্হ গুনে নিয়েছি আমি, যেদিন আসবো সেদিন ঐ প্রত্যেকটা আঘাতের গুনে গুনে শোধ তুলবো। আর আপনার ছেলে যা করেছে তাতে ওকে জ্যান্ত অবস্হায় পিসপিস করে কাটলেও আমার শান্তি হবেনা। তাই নিজের বউ আর ছেলেকে নিয়ে পালিয়ে যান। তবে হ্যাঁ এমন জায়গায় পালাবেন যেখানে মাটি পানি বায়ু আর আকাশ নেই। কারণ এই চারটের মধ্যে যেখানেই পালাননা কেনো আমি খুজে নেবোই। আমি সবাইকেই সুযোগ দেই আপনাদেরকেও দিলাম, যদি পারেন তো বাঁচিয়ে নিন নিজেদের আমার হাত থেকে। এন্ড ইউর টাইম স্টার্ট নাও। টিকটিক টিকটিক টিকটিক।

বলেই আদ্রিয়ান সিটি বাজাতে বাজাতে ফোন কেটে দিলো। অপাশে আশরাফ মৃধার তো জান গেলো গেলো অবস্হা। আদ্রিয়ান এর কথাগুলোই ওনার হার্ট অ্যাটাক করানোর জন্যে যথেষ্ট ছিলো। ঘেমে একাকার হয়ে গেছেন উনি। আদ্রিয়ান ফোন কেটে পেছনে ঘুরতেই চমকে গেলো কারণ অনিমা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আদ্রিয়ান এর দিকে। আদ্রিয়ান এর মনে হালকা ভয় ঢুকে গেলো যে কিছু শোনেনিতো? আর শুনলেও কী আর কতোটা শুনেছে অনিমা?

#চলবে…

বর্ষণের সেই রাতে ❤ পর্ব: ৩৬

0

বর্ষণের সেই রাতে ❤
পর্ব: ৩৬
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

.
এদিকে নিউস চ্যানেলে বারবার করে ব্রেকিং নিউস হিসেবে টেলিকাস্ট হচ্ছে। ” রাস্তা থেকে রকস্টার আদ্রিয়ান আবরার জুহায়ের কিডন্যাপড” খবরটা ইতোমধ্যে শহরে তোলপাড় বাঁধিয়ে দিয়েছে। আসলে রাস্তায় ওকে যারা যারা তুলে নিয়ে যেতে দেখেছে তারাই খবরটা ছড়িয়েছে। কথায় আছেনা খারাপ খবরগুলো বাতাসের আগে ছড়িয়ে যায়, আর সেটা যদি হয় কোনো সেলিব্রিটির খবর তাহলেতো কথাই নেই। অনিমা জুস খেতে খেতে ড্রয়িং রুমের সোফায় বসে টিভি দেখছিলো হঠাৎ করেই নিউস চ্যানেলে এই খবরটা দেখার সাথে সাথে অনিমার হাত থেকে জুসের গ্লাসটা পরে গেলো। অনিমার হাত পা সব অসম্ভব রকম কাঁপতে শুরু করলো। ওর কানে রিকের বলা সেই কথাটাই বাজতে লাগল ” আমার জিনিসে হাত দিয়েছে, মরতে তো ওকে হবেই।” অনিমার শ্বাস আটকে আসার উপক্রম হয়েছে। সারাশরীর ইতিমধ্যেই ঘেমে একাকার হয়ে গেছে। আদ্রিয়ানকে ওরা তুলে নিয়ে গেছে এটা ভাবতেই ওর হৃদস্পন্দন থেমে যেতে চাইছে। ওর চোখের সামনে ওর আব্বুর ঝুলন্ত লাশটা ভেসে উঠছে, যদি আদ্রিয়ানকেও ওরা? এসব চিন্তা করতেই ওর শরীর পুরো অবস হয়ে যেতে লাগলো। গ্লাস ভাঙ্গার আওয়াজে সার্ভেন্টরা সব ছুটে এলো। অনিমা সেন্সলেস হয়ে পরে যেতে নিলেই সার্ভেন্টরা এসে ধরে ফেললো ওকে। ওকে ধরে আদ্রিয়ানের রুমে নিয়ে শুইয়ে দিয়ে আদ্রিয়ানের নাম্বারে ডায়াল করলো কিন্তু ফোনটা বন্ধ পেলো। একজন বলল,

— ” স্যারের ফোনটা তো বন্ধ। এখন কী করবো?”

আরেকজন বলল,

— ” ম্যামের অবস্হা তো ভালো না। ডক্টরকে কল করো নইলে স্যার এসে ভীষণ রাগ করবেন।”

প্রথমজন অনিমার দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” ঠিকি বলেছো।”

আদ্রিয়ানের পার্সোনালি যেই ডক্টরের সাথে এপোয়েন্ট করা তার নাম্বার সব সার্ভেন্ট দের কাছেই থাকে। ওরা তাড়াতাড়ি সেই ডক্টরকে ফোন করে আসতে বলল।

____________________

আদ্রিয়ান যেই চেয়ারটায় ওকে বেঁধে রেখেছিলো সেই চেয়ারটা টেনে পায়ের ওপর পা তুলে বসল। তারপর হাতের গানটা কপাল স্লাইড করে কিছু বলবে তারআগেই ওদের মধ্যে একজনের ফোন এলো। লোকটা ভয়ে ভয়ে আদ্রিয়ানের দিকে তাকাতেই আদ্রিয়ান উঠে গিয়ে হাত বাড়িয়ে ফোনটা দিতে ইশারা করল। লোকটা ফোন আদ্রিয়ানের দিকে এগিয়ে দিতেই আদ্রিয়ান স্ক্রিনে ভাই লেখা দেখেই বুঝে গেলো এটা রিকের ফোন। আদ্রিয়ান হেসে ফোনটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে রিক বলে উঠলো,

— ” শোন আমার আসতে আরো খানিকক্ষণ সময় লাগবে। ততোক্ষণ প্রাণে মারার ভয় দেখিয়ে ওর মুখ থেকে কথা বের করার চেষ্টা কর। আর যদি না বলতে চায় তো হাতে পায়ে দু একটা শুট করে দিবি, ঠিক বলে দেবে।”

কথাগুলো শুনে আদ্রিয়ান নিঃশব্দে হেসে লোকগুলোর দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচালো। লোকগুলো আবারো একটা ঢোক গিলল। আদ্রিয়ান কানে ফোন নিয়ে বলল,

— ” হাতে, পায়ে, হাটুতে কবজিতে শুট করা হয়ে গেছে আর কোথাও করতে হবে?”

আদ্রিয়ানের গলা শুনে রিক চমকে গেলো। কান থেকে ফোন সরিয়ে নাম্বারটা চেক করে দেখলো ঠিকি আছে। তারপর ফোনটা আবার কানে গিয়ে বলল,

— ” তুমি? এই ফোন তোমার হাতে কেনো? ওরা কোথায়?”

আদ্রিয়ান মুচকি হেসে বলল,

— ” আসলে এদের একেকজন একেকভাবে ঘায়েল হয়ে আছেন। আমি আবার মানুষের কষ্ট দেখলে দাঁড়িয়ে থাকতে পারিনা ছুটে হেল্প করতে চলে আসি। ওরা সবাই চরম আহত তাই আমিই ফোন টা ওদের হয়ে রিসিভ করলাম। এদের সবাইকে সিটি হসপিটালে সিফট করে দিচ্ছি ওখান থেকে কুড়িয়ে নিয়ে যাবেন।”

রিক তো অবাকের চরম পর্যায়ে পৌছে গেছে। কিছুই মেলাতে পারছেনা। ও শকের মধ্যে থেকেই বলল,

— ” আহত মানে কী করেছো তুমি ওদের সাথে?”

আদ্রিয়ান বাঁকা হাসি দিয়ে বলল,

— ” যেটা আপনি আমার সাথে করতে চেয়েছিলেন।”

রিক আদ্রিয়ানের কথার মানেটা বুঝতে পারলেও হজম করতে পারলোনা। তাই বিষ্মিত কন্ঠে বলল,

— ” মানে?”

আদ্রিয়ান এবার হতাশার একটা শ্বাস ফেলে বলল,

— ” কাম অন রিক চৌধুরী। আমি আপনাকে আগেও বলেছি আমাকে জিজ্ঞেস করে টাইম ওয়েস্ট না করে অনিকে খুজুন। তা না করে আপনি সেই আমার পেছনেই পরে আছেন। আমি কিন্তু বেশ এনজয় করছি। বাট সময়টা কিন্তু আপনারি নষ্ট হচ্ছে। বাই দা ওয়ে রাখছি হ্যাঁ? ওদের হসপিটাল থেকে নিয়ে যাবেন কিন্তু। হ্যাভ আ গুড ডে।”

বলেই ফোনটা কেটে দিলো। তারপর ওদের দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” কী রে ভাই, আমার ফোন কোথায়?”

ওদের মধ্যে একটা লোক বহুত কষ্টে পকেট থেকে আদ্রিয়ানের ফোনটা বের করে আদ্রিয়ানের দিকে দিলো। আদ্রিয়ান ফোনটা সুইচড অফ দেখে রাগী চোখে তাকালো ওদের দিকে। ওরা হকচকিয়ে গিয়ে একসাথে বলল,

— ” সরি ভাই।”

আদ্রিয়ানকে কিছু না বলে ফোনটা ওন করে অাদিবকে ফোন করে বলল,

— ” হ্যাঁ চলে আয়।”

বলার কিছুক্ষণের মধ্যেই আদিব আর আশিস চলে এলো। ওদের সাথে কিছু লোক এসে গুলি যেই পাঁচজনের লেগেছে তাদেরকে নিয়ে হসপিটালে নিয়ে গেলো। বাকি একজন ওদের সাথেই গেলো। আদিব ভ্রু কুচকে বলল,

— ” ওই একটাকে ছাড়লি কেনো?”

আদ্রিয়ান হেসে গানগুলো ফেলে দিয়ে বলল,

— ” ভয় পেয়ে গেছিলো। আর আমাকে কেউ ভয় পেলে আমি তার ওপর আঘাত করিনা।”

আদিব আশিস দুজনেই হাসলো। হঠাৎ করেই আদ্রিয়ান এর ফোনে ফোন এলো স্ক্রিনে অরুমিতার নাম্বার দেখে ভ্রু কুচকে গেলো ওর। এই সময় হঠাৎ অরুমিতা কেনো ফোন করবে? ফোনটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে অরুমিতা উত্তেজিত কন্ঠে বলল,

— ” ভাইয়া আপনি ঠিক আছেন?”

আদ্রিয়ান অবাক হলো একটু অরুমিতা কীকরে জানলো? তবুও নিজেকে সামলে বলল,

— ” কেনো কী হয়েছে?”

অরুমিতা জোরে জোরে শ্বাস নিতে নিতে বলল,

— ” আপনাকে নাকি কিডন্যাপ করা হয়েছে? সব চ্যানেলে নিউসটা দেখাচ্ছে। আমাদের টায় ও।”

অাদ্রিয়ান চোখ বন্ধ করে একটা শ্বাস নিয়ে বিরক্তিকর কন্ঠে বলল,

— ” উফফ দিস মিডিয়া।”

অরুমিতা এখনো জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে। আদ্রিয়ান নিজেকে শান্ত করে বলল,

— ” রিলাক্স! আমি একদম ঠিক আছি। আর তীব্রকেও বলে দিও এটা। চিন্তার কিচ্ছু নেই, রাখছি।”

ফোনটা রেখে আদ্রিয়ান আদিব আর আশিস দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” তোরা জানতিস না যে মিডিয়াতে আমার কিডন্যাপড হওয়ার নিউস লিক হয়েছে?”

আদিব বলল,

— ” আরে আমরা তো নিউস দেখিইনি। এসব কাজ নিয়ে ব্যাস্ত ছিলাম।”

হঠাৎ কিছু একটা ভেবে আদ্রিয়ান বলল,

— ” ওহ সিট। জ্ জানপাখি।”

বলেই আদ্রিয়ান একপ্রকার ছুটেই বেড়িয়ে গেলো ওখান থেকে। আশিস অবাক হয়ে আদিবের দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” কী পাখি? আর পাখি কোথাথেকে এলো?”

আদিব চোখ রাঙিয়ে তাকাতেই আশিস চুপ হয়ে গেলো। এরপর দুজনেই বেড়িয়ে পরল কারণ ওদের প্রেস সামলাতে হবে এখন।

____________________

আদ্রিয়ান হুড়মুড়িয়ে নিজের বাড়িতে ঢুকলো। তারপর সামনে একজন সার্ভেন্ট পরতেই জিজ্ঞেস করলো,

— ” হয়ার ইজ ইউর ম্যাম?”

মেয়েটি মাথা নিচু করে আছে। সেটা দেখে আদ্রিয়ান ধমকে বলল,

— ” আই আসকড হয়ার ইজ ইউর ম্যাম?”

মেয়েটি একটু কেঁপে উঠলো। আদ্রিয়ানের চিৎকারে আরো দুজন মেয়ে সার্ভেন্ট চলে এলো। মেয়েটি মাথা নিচু করেই বলল,

— ” স্যার ম্যাম আপনার কিডন্যাপ হওয়ার খবরটা শুনেই অজ্ঞান হয়ে গেছে।”

আদ্রিয়ান এবার চিৎকার করে বলল,

— ” আর সেটা তোমারা আমাকে এখন বলছো ডেম ইট।”

অপর একটা মেয়ে বলল,

— ” স্যার আসলে আমরা যোগাযোগ করার অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু আপনার ফোন বন্ধ ছিলো। আমরা ডক্টর কল করেছি। উনি এসে দেখে গেছেন ভয়ের কিছু নেই।”

আদ্রিয়ান চোখ বন্ধ করে একটা শ্বাস নিলো। কার রাগ কাদের ওপর দেখাচ্ছে ও? নিজেকে শান্ত করে ওদের দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” আ’ম সরি। মাথাটা একটু গরম ছিলো তাই।”

মেয়েগুলোর মধ্যে একজন মুচকি হেসে বলল,

— ” বুঝতে পেরেছি স্যার।”

আদ্রিয়ানও উত্তরে হেসে বলল,

— ” হুমম যাও তোমরা।”

ওরা চলে গেলো। আগে বাড়িতে একটাই মেয়ে মেট সার্ভেন্ট ছিলো কিন্তু অনিমাকে আনার পর আরো দুজন এপোয়েন্ট করেছে। আদ্রিয়ান রুমে গিয়ে দেখলো অনিমা ঘুমিয়ে আছে। আদ্রিয়ান বেডে বসে অনিমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। মেয়েটা মুখে স্বীকার না করলেও ওর প্রতিটা কাজে বুঝিয়ে দেয় ও আদ্রিয়ানকে কতো ভালোবাসে। ও চাইলেই আমাকে আকড়ে ধরে রিকের কাছ থেকে বাঁচার চেষ্টা করতে পারতো কিন্তু ও সেরকম কিছু করেনি। বরং আমাকে বাঁচাতে নিজে ওই নরকে যেতেও রাজী ছিলো। সব ভালোবাসা মুখে প্রকাশ করা জুরুরী নয়। ভালোবাসা তো প্রকাশ করার জিনিস নয়। ভালোবাসা অনুভব করার জিনিস। আল আদ্রিয়ান অনিমার ভালোবাসা প্রতি মুহূর্তে অনুভব করতে পারে।

__________________

রিক গম্ভীর মুখ করে বসে আছে সোফায়। একটু আগে হসপিটাল থেকে এসছে। আদ্রিয়ান যে এসব করেছে ও ভাবতেই পারছেনা। কবির শেখ ওর পাশেই বসে আছে কিন্তু আজ কিছু বলছে না। কিছুক্ষণ পর রিক নিজেই বলল,

— ” মামা ওকেতো একটা সাদাসিদে রকস্টার ভেবেছিলাম। কিন্তু আজ ও যা করে গেছে সেটা ওর পক্ষে করা কী করে সম্ভব হতে পারে?”

কবির শেখ নিজেও চিন্তিত উনি নিজেও ভাবছেন যে আদ্রিয়ান এরকম কীকরে হতে পারে? ওনার জানা মতে তো আদ্রিয়ান এসবের ধারে পারেও নেই। উনি চিন্তিত কন্ঠে রিককে বলল,

— ” তুমি সিউর ওগুলো আদ্রিয়ানই করেছে?”

রিক অস্হিরতার একটা শ্বাস নিয়ে বলল,

— ” ওরাতো সেটাই বলল।”

কবির শেখ আবার ভাবনায় মগ্ন হলেন আর রিক ভাবছে নাহ এবার নিজেই ওই আদ্রিয়ানের মুখোমুখি দাড়াবে। ও নিজেই দেখবে এবার ব্যাপারটা। অনিমাকে ও ছাড়বেনা যাই হয়ে যাক।

____________________

আদ্রিয়ান সোফায় বসে কাজ করছিলো হঠাৎ করেই অনিমা চিৎকার করে উঠে বসলো আর আদ্রিয়ান বলে ডাকতে লাগলো। অাদ্রিয়ান তাড়াতাড়ি উঠে অনিমার সামনে বসে বললো,

— ” কী হয়েছে? অনি?”

অনিমা হাফাতে হাফাতে বলল,

— ” ওরাহ আদ্রিয়ানকে মেরে ফেলবে, আব্বুর মতো ওকেও…”

আদ্রিয়ান অনিমার দুইগালে হাত রেখে ওর দিকে ঘুরিয়ে বলল,

— “এইতো আমি এখানে দেখো? কিচ্ছু হয়নি আমার কেউ কিচ্ছু করে নি। সি?

আদ্রিয়ান কথা শুনে অনিমা একটুও শান্ত হলোনা বরং আরো অশান্ত হয়ে উঠলো। ওর খেয়ালই নেই ওর সামনে আদ্রিয়ান আছে। অনিমা একি কথা বারবার বলে যাচ্ছে আর হাইপার হয়ে উঠছে। আদ্রিয়ান কিছুতেই ওকে শান্ত করতে পারছেনা। কিছুতেই ওকে সামলাতে না পেরে আদ্রিয়ান এবার ওকে জোরে ধমকে বলল,

— ” অনি?”

আদ্রিয়ান ধমকে অনিমা চুপ হয়ে গেলো, ছলছলে চোখে তাকালো আদ্রিয়ানের দিকে। যখন ও বুঝতে পারলো যে এটা আদ্রিয়ান তখন কেদে দিয়ে আদ্রিয়ানকে জরিয়ে ধরল। আর আদ্রিয়ানও ওকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে বলল,

— “আই এম সরি। এতো ভয় কেনো পাও তুমি। আমি বলেছি না আমার কিছুই হবে না?”

অনিমা কিছু না বলে কেঁদেই যাচ্ছে আদ্রিয়ানকে জরিয়ে ধরে। আদ্রিয়ান ও আর কিছু বললোনা। বেশ অনেক্ষণ সময় কাঁদতে কাঁদতে অনিমা আদ্রিয়ানের বুকেই ঘুমিয়ে পরলো শরীর ক্লান্ত ছিলো তাই । আদ্রিয়ান যখন বুঝতে পারলো যে অনিমা ঘুমিয়ে গেছে তখন ওকে বেডে শুইয়ে দিলো। কিন্তু একটু পর অনিমা ঘুমের ঘোরে উল্টো ঘুরে গেলো আর তখন আদ্রিয়ান খেয়াল করল যে অনিমার ড্রেসের জিপ টা খোলা অনেকটা। আদ্রিয়ান জিপটা লাগাতে গিয়েই অনিমার পিঠে একটা দাগ চোখে পরল। দাগটা দেখে আদ্রিয়ানের কেমন সন্দেহ হলো। কিন্তু জিপ খুলে দেখাটা ঠিক হবেনা ভেবে ও জিপটা লাগাতে গিয়েও থেমে গেলো নিজের কৌতুহলটা কিছুতেই দমাতে পারছেনা। তাই আস্তে করে জিপটা খুলে অনিমার পিঠ খানিকটা উন্মুক্ত করলো আর তারপর যেটা দেখলো তাতে আদ্রিয়ানের চোখ মুখ লাল হয়ে উঠল। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর আপনা আপনিই এক ফোটা জল গড়িয়ে পরল চোখ দিয়ে। অনিমার পিঠে অসংখ্য মারের দাগ আর একটা পোড়া দাগ এর চিন্হ এখোনো বোঝা যাচ্ছে। তাহলে আঘাতগুলো কতো গভীর ছিলো ভেবেই আদ্রিয়ানের রাগ আর কষ্ট দুটোই চরমে পৌছে যাচ্ছে। ও ড্রেসের জিপটা লাগিয়ে একটা শ্বাস নিয়ে বলল,

— ” এবার সময় এসে গেছে। ওদের প্রত্যেককে ওদের কর্মের ফল তো পেতেই হবে। আর তার সূচনা তোমার ওই সো কলড মামা,মামী আর অর্ক কে দিয়েই হবে। ”

তারপর বাঁকা হেসে বলল,

— “বি রেডি মামা এন্ড মামী আপনাদের জামাই আসছে।”

#চলবে…

( কেউ ছোট বলে লজ্জ্বা দেবেন না। আজকে এর চেয়ে বেশি প্রেশার মাথায় দিতে পারিনি, সরি।)

বর্ষণের সেই রাতে ❤ পর্ব: ৩৫

0

বর্ষণের সেই রাতে ❤
পর্ব: ৩৫
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

.
বর্ষাঋতুর বেশ চমৎকার একটা ব্যাপার হলো সারারাত বর্ষণ হলে পরের সকালটা বেশ সুন্দর হয়। চারপাশে রোদের উজ্জ্বল মৃদু আলো ঝকঝক করে, গাছপালার সবুজ ভাব আরো বৃদ্ধি পায়, ভেজা,সিগ্ধ মনোমুগ্ধকর পরিবেশ তৈরী হয়। । শহুরে অঞ্চলে সবুজ প্রকৃতির তেমন সাক্ষাৎ না পাওয়া গেলেও আদ্রিয়ানের এই বাড়ির ব্যালকনি দিয়ে খুব সুন্দর একটা পরিবেশ চোখে পরে। দূরে একটা মাঠ, সবুজ গাছপালা, একটা বিল খুব চৎকার একটা পরিবেশ। সকালে ঘুম থেকে উঠে আদ্রিয়ানকে দেখতে পায় নি অনিমা। কোথায় গেছে জানেনা ও। তাই ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আশেপাশের সৌন্দর্য দেখছে ও
। চোখ বন্ধ করে সকালের এই ফ্রেশ হাওয়া উপভোগ করছে। হঠাৎ পেছন থেকে কারো শব্দ পেয়ে অনিমা পেছন ঘুরে দেখলো আদ্রিয়ান দুহাতে দুটো কফির মগ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অাদ্রিয়ান অনিমার দিকে কফির মগটা এগিয়ে দিয়ে বলল,

— ” গুড মর্নিং।”

অনিমা কফির মগটা হাতে নিয়ে আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” মর্নিং। কোথায় গিয়েছিলেন আপনি?”

আদ্রিয়ান রেলিং এ হেলান দিয়ে কফিতে চুমুক দিয়ে বলল,

— ” গার্ডেন এরিয়ার ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ করছিলাম একটু। ওখান থেকে এসে জুস খেয়ে একটু রেস্ট করে কফি খেতে ইচ্ছে করলো ভাবলাম তোমার জন্যেও নিয়ে আসি।”

অনিমা কিছু বললোনা। কিছুক্ষণ দুজনেই নিরবে কফি খেতে লাগল। কিছুক্ষণ পর অনিমা বলল,

— ” আচ্ছা আমার তো অফিস যেতে হবে নাকি?”

আদ্রিয়ান কফির মগের দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” তোমার বসের সাথে কথা বলে রেখেছি আমি। উনি মেডিকেল গ্রাউন্ডে ছুটি দেখিয়ে দেবেন।”

অনিমা অবাক হয়ে বলল,

— ” কিন্তু কেনো?”

আদ্রিয়ান ঘুরে রেলিং এ ভর দিয়ে বাইরে তাকিয়ে বলল,

— ” তুমিতো জানো তোমার এখন একা বাইরে বেরোনোটা কতোটা আনসেফ। তবুও এসব বলছো? ”

অনিমা নিচু কন্ঠে বলল,

— ” রিস্ক তো আপনারো আছে!”

আদ্রিয়ান অনিমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল,

— ” ওরা আমার কিছু করতে পারবেনা।”

অনিমা ভ্রু কুচকে বলল,

— ” আপনি এতোটা সিউর কীকরে?”

আদ্রিয়ান মগটা ওখানকার টুলের ওপর রেখে অনিমার দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” ভরসা নেই আমার ওপর?”

অনিমা একটা শ্বাস নিয়ে মগটা রেখে বলল,

— ” আপনার ওপর থাকলেও ওদের ওপর নেই। একদমি নেই, দে ক্যান ডু এনিথিং।”

আদ্রিয়ান অনিমার দুই বাহু ধরে বলল,

— ” কিচ্ছু হবেনা আমার একটু ভরসা রাখো আমার ওপর। আই প্রমিস আমার কিছুই হবে না। বাট এই বাড়ি থেকে আমার পার্মিশন ছাড়া বেড়োবেনা । ওকেহ?”

অনিমা মাথা নাড়ল। আদ্রিয়ান হেসে অনিমাকে শক্ত করে জরিয়ে ধরল। আর অনিমাও আদ্রিয়ানের পিঠে আলতো করে হাত রেখে চোখ বন্ধ করে আদ্রিয়ানের হার্টবিট শুনতে লাগল।

____________________

কাল রাত থেকে রিক ওর মামার বলা কথাগুলোই ভেবেছে। কবির শেখ ঠিকি বলেছেন অনিমাকে পেতে হলে ওকে খারাপ তো হতেই হবে। ও অনিমাকে হারাতে পারবেনা। অনিমাকে পেতে ওকে যা করতে হয় ও করবে। যতো খারাপ হতে হয় হবে। কিছুক্ষণ ভাবনাচিন্তা করে ও পাশ থেকে ফোন তুলে ওর লোকদের ফোন করলো। ফোন রিসিভ করতেই বলল,

— ” আজ আদ্রিয়ান আবরার জুহায়েরকে কিডন্যাপ করে আমাদের ঐ সিকরেট গোডাউনে নিয়ে আয়।”

ওপাশ থেকে লোকটা বলল,

— ” ভাই মেরে দেবো?”

— ” আরে না। যা বলছি শোন।”

এরপর রিক লোকটাকে বুঝিয়ে দিলো কীভাবে কী করতে হবে। তারপর ফোনটা কেটে দিয়ে বলল,

— ” আদ্রিয়ান আবরার এবার তো তোমাকে অনিকে আমায় দিতেই হবে।”

_____________________

একটা রিয়ালিটি শো তে গেস্ট হয়ে গেছিলো আদ্রিয়ান । শো এর শুটিং কম্প্লিট করে সবে বেড়োতে যাবে তখনি বাইরে তাকিয়ে ও কিছু একটা ভাবলো। তারপর ওর গার্ড দের দিকে তাকিয়ে ওদের চলে যেতে বলল। ওর গার্ড রা একটু অবাক হলেও কিছু না বলে চলে গেলো। আদ্রিয়ান বাঁকা হেসে বেড়িয়ে গিয়ে ওর গাড়ির দরজা খুলতে নিলেই ওর পাশে একটা গাড়ি এসে থামলো আর সেই গাড়ি থেকে কিছু কালো পোশাক আর মাস্ক পরা লোক এসে ওকে ঘিরে ধরল চারপাশ দিয়ে। আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে তাকালো ওদের দিকে, সকলের হাতেই গান। আদ্রিয়ান সবাইকে একবার স্ক্যান করে বলল,

— ” কী চাই? অটোগ্রাফ নাকি সেলফি?”

আদ্রিয়ানের প্রশ্ন শুনে ওরা সবাই হাসলো। তারপর আদ্রিয়ানের মাথায় গান তাক করে বলল,

— ” আপনার জান।”

আদ্রিয়ান হালকা পিছিয়ে গানটার দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” সরি ভাই। সেটা আমার হাতে নেই ওপর ওয়ালার হাতে, ওনার কাছে চেয়ে নিন দিলেও দিতে পারেন।”

আদ্রিয়ানের এর দিকে গান তাক করে থাকা লোকটা শক্ত কন্ঠে বলল,

— ” বেশি কথা না বলে গাড়িতে ওঠুন।”

আদ্রিয়ান এবার মুচকি হেসে বলল,

— ” আরে ভাই আমার কাছে গাড়ি আছে তো আর গাড়িতে পেট্রোল যথেষ্ট পরিমাণ আছে। তবুও লিফট দিতে চাওয়ার জন্যে থ্যাংকস।”

পাশের লোকটা এবার হুংকার দিয়ে বলল,

— ” ওই। মজা করছো আমাদের সাথে? ভালোয় ভালোয় গাড়িতে ওঠো নইলে এখানেই শুট করে দেবো।”

আদ্রিয়ান সেই লোকটার দিকে তাকিয়ে গলা ঝেড়ে বলল,

— ” আরে উঠছি উঠছি এতো রেগে যাচ্ছেন কেনো? আর এই গান টা তো নামান আগে, লাগেতো।”

লোকটা আদ্রিয়ান এর মাথায় গান ঠেকিয়ে বলল,

— ” চলো ওঠো।”

আদ্রিয়ান চুপচাপ গাড়িতে উঠে বসল। সাথে সাথে লোকগুলোও গাড়িতে উঠে বসল। আদ্রিয়ানের দুপাশে দুজন। পেছনে তিনজন আর ফন্ট সিট আর ড্রাইভিং সিটে দুজন। আশেপাশের বেশ অনেকেই দেখলো আদ্রিয়ানের কিডন্যাপ হতে। গাড়ি স্টার্ট করতেই পাশের দুটো লোক আদ্রিয়ানের হাত বাঁধতে শুরু করলেই আদ্রিয়ান হকচকিয়ে বলল,

— ” আরে করছেন টা কী? আমাকে দেখে আপনাদের মেয়ে মনে হচ্ছে নাকি যে গাড়িতে তুলে হাত পা বেধে রেপ করবেন? বাই এনি চান্স আপনারা গে নয় তো? বাট এতোগুলো গে একসাথে? ট্রান্সজেন্ডারদের মতো গে রাও আজকাল এক জায়গায় থাকতে শুরু করেছে নাকি?”

ফন্ট সিটে বসা লোকটা আদ্রিয়ানের দিকে আবারও গান তাক করে বলল,

— ” খুব মজা পাচ্ছেন মনে হচ্ছে? কপাল বরাবর গুলি চালিয়ে দিলে পানি চাওয়ার সময়টাও পাবেন না।”

আদ্রিয়ান লোকটার দিকে তাকিয়ে হতাশাজনক একটা চাহনি দিয়ে বলল,

— ” কথায় কথায় এমনভাবে বন্দুক তাক করেন যে দেখে মনে হয় অলেম্পিক চ্যাম্পিয়ন।”

লোকগুলো কিছু না বলে আদ্রিয়ানের হাত বেধে দিলো। আদ্রিয়ান কিছু না বলে চুপ করে রইলো। এরপর একটা লোক বলল,

— ” আমিতো ভেবেছিলাম এর সাথে গার্ড থাকবে। কিন্তু এ তো পুরো একাই এসছে।”

অন্য একজন বলল,

— “ভালোই হয়েছে আমাদের আর কষ্ট করে মারাপিট খুনখারাপি করতে হলোনা।”

অনেকটা পথ যাবার পর হঠাৎ আদ্রিয়ানের চোখ বাধতে গেলেই আদ্রিয়ান বিরক্ত হয়ে বলল,

— ” আরে ভাই আবার চোখ কেনো?”

ফ্রন্ট সিটের লোকটা চোখ রাঙিয়ে তাকাতেই আদ্রিয়ান বিরক্তি নিয়ে বলল,

— ” আচ্ছা ঠিকাছে বাধুন, বাধুন।”

লোকগুলো ওর চোখ বেধে দিয়ে একটা গোলিতে ঢুকলো। সেখানকার এক গোডাউনের সামনে গাড়ি থামলো। লোকগুলো আদ্রিয়ানকে গাড়ি থেকে নামিয়ে ভেতরে নিয়ে গেলো। তারপর একটা চেয়ারে বসিয়ে হাত দুটো পেছন দিকে বেধে চোখ খুলে দিলো। চোখ খুলে দিতেই আদ্রিয়ান চোখ ঝাপটে বলল,

— ” বাপরে আরেকটু হলেই অন্ধ হয়ে যেতাম।”

তারপর চারপাশে তাকিয়ে বলল,

— ” বাই দা ওয়ে কোথায় আছি আমি?”

ওদের মধ্যে একটা লোক অাদ্রিয়ানের কাছে এসে বলল,

— ” ভাবী কোথায়?”

আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলল,

— ” ভাবী? সেটা কোন জায়গা? পৃথিবীর ভেতরে নাকি বাইরে?”

লোকটা রাগী কন্ঠে বলল,

— ” আমি জায়গা বলিনি। অনিমা ভাবীর কথা বলছি।”

আদ্রিয়ান মাথা নেড়ে বলল,

— ” ওহ আচ্ছা। বাট আমি আপনাদের কোন কালের ভাই বলুনতো? না মানে আমার জানা মতে আমার বাবার একটাই ছেলে আর সেটা আমি।”

লোকটা বুঝতে না পেরে বলল,

— ” কী সব পাকাচ্ছো?”

আদ্রিয়ান চিন্তিত ফেস করে বলল,

— ” না মানে অনি তো আমার বউ। তো ও যদি আপনাদের ভাবী হয়, লজিক্যালি আমি ভাই তাইনা?”

আদ্রিয়ানের এসব ইয়ারকি ওদের একটুও ভালো লাগছে না তাই ওদের মধ্যে আরেকজন রাগে গজগজ করে বলল,

— ” দেখো খুব বেশিই বাড়াবাড়ি করছো কিন্তু তুমি। রিক স্যার আসছেন আর উনার মাথা সবসময় গরম থাকে। খুব ভয়ংকর কিন্তু উনি। তাই নিজের ভালো চাইলে উনি আসার আগেই বলে দাও নইলে…”

— ” নইলে?”

লোকটা সোজা আদ্রিয়ানের মাথায় বন্দুক তাক করে বলল,

— ” সোজা ওপরে যেতে হবে।”

আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে লোকটার দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” এই কথায় কথায় এভাবেই বন্দুক তাক করার কী আছে হ্যাঁ? যদি হার্ট ফেইল টেইল করে মরে যাই তার দায় কী আপনি নেবেন?”

লোকগুলো হেসে দিলো আদ্রিয়ান কথায় তারপর গান সরিয়ে বলল,

— ” এই কলিজা নিয়ে রিক ভাই এর সাথে লড়তে এসছো। আমরা ওনার কথায় কাজ করি তাতেই এই বন্দুক আমাদের কাছে খেলনা। এবার রিক ভাই কী ভেবে দেখো?”

আদ্রিয়ান এক ভ্রু উঁচু করে বলল,

— ” বন্দুক আপনাদের কাছে খেলনা?”

লোকটা বিরক্ত হয়ে বলল,

— ” ওই এতো কথা না বলে তাড়াতাড়ি বলো ভাবী কোথায় আছে?”

আদ্রিয়ান কিছুক্ষণ চুপ করে ভাবার ভান করে তারপর বলল,

— ” কোথায় যেনো রেখেছিলাম, ভূলে গেছি।”

লোকটা আর নিজের রাগটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারলোনা আদ্রিয়ানের পায়ের কাছে একট শুট করে ফেলল। আদ্রিয়ান চমকে গেলো। লোকটা বলল,

— ” এবার বল নয়তো পরের শুটে গুলিটা তোর শরীরের ভেতর দিয়ে যাবে।”

আদ্রিয়ান অবাক হয়ে বলল,

— ” ও.এম.এ.. এটাকে শুট করা বলে?”

লোকটা শক্ত কন্ঠে বলল,

— ” তো তোর কী অন্যকিছু মনে হচ্ছে?”

আদ্রিয়ান হেসে হুট করেই পেছন থেকে হাত সামনে এনে পাশের লোকটার কাছ থেকে একঝটকায় বন্দুকটা নিয়ে নিলো আর সোজা সামনের লোকটার পায়ে শুট করলো। লোকটা চিৎকার করে পা ধরে বসে পরলো। সবাই শকড হয়ে তাকিয়ে আছে। আদ্রিয়ান বাঁকা হেসে উঠে ঐ লোকটার পাশে গিয়ে বসে বলল,

— ” একে বলে শুট করা। বন্দুক থেকে গুলি চললে কারো রক্তই যদি না বেড়োয় তাহলে ব্যাপারটা পানসে লাগে।”

পাশে থেকে একটা লোক আদ্রিয়ানের দিকে তেড়ে আসতে নিলে লোকটার দিকে না তাকিয়েই তার বাহুতে শুট করলো আদ্রিয়ান। লোকটার বন্দুক হাত ছিটকে ওপরে উঠে গেলো আদ্রিয়ান সেটা ক্যাচ করে সামনে বসা লোকটার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল,

— ” আর একে বলে টার্গেট।”

এটুকু বলে উঠে দাড়াতেই অন্য একটা লোক আদ্রিয়ানকে শুট করতে গেলে আদ্রিয়ান লোকটার হাতে শুট করলো। সবাই অবাকের ওপর অবাক হচ্ছে কারণ আদ্রিয়ান এমনভাবে গুলি চালাচ্ছে দেখে মনে হচ্ছে ও যেনো একজন ট্রেইনড শুটার। এবার দুপাশ থেকে দুটো লোক ওকে শুট করার জন্যে বন্দুক তাক করতেই আদ্রিয়ান দু হাত দিয়ে দুপাশের দুজনকে একসাথেই শুট করল একজনের হাটুতে আরেকজনের হাতের কবজিতে। আরেকজন লোক বন্দুক তাক করতেই আদ্রিয়ান তাকালো লোকটার দিকে। সেটা দেখেই লোকটা হকচকিয়ে বলল,

— ” ভাই! ভাই! ভাই!প্লিজ শুট করবেন না আমি তো এমনিই বন্দুক তুলেছি বিশ্বাস করুন। আমাকে মারবেন না। প্লিজ।”

কিন্তু আদ্রিয়ান শুট করে দিলো। আর লোকটা চোখ বন্ধ করে জোরে চিৎকার দিলো কিন্তু কিছুক্ষণ পরেও কোনো ব্যাথা অনুভব না করে আস্তে আস্তে তাকিয়ে দেখলো আদ্রিয়ান ওর হাতে নয় বরং বন্দুকে শুট করেছিলো। যার ফলে বন্দুকটা ওর হাত থেকে পরে গেছে। আদ্রিয়ান মুচকি হেসে প্রথম যাকে শুট করেছিলো তার দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” একে বলে বন্দুক নিয়ে খেলা। কী ভাবছিস হাত তো বেঁধে রেখেছিলি আমার, তাহলে হাত খুললো কীকরে তাইতো? আরে গাধা। আই এম আদ্রিয়ান আবরার জুহায়ের। তাবু গেরো, পাল গেরো, বড়শী গেরো, ফিশার ম্যানস গেরো এরকম আরো অনেক গেরো বাঁধতেও জানি, একঝটকায় খুলতেও জানি। আর তুই তোর ঐ মোটা মাথা দিয়ে আমায় আটকে রাখবি?”

লোকটা পা চেপে ধরেই হুংকার দিয়ে বলল,

— “ওই।”

আদ্রিয়ান এবার এমন জোরে ‘ওই’ বলে একটা ধমক দিলো যে উপস্হিত সবাই কেঁপে উঠলো। সাথে সামনের ব্যাক্তিটিও। আদ্রিয়ান দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

— ” বনের হায়নার হুংকারে শুধু হাতে গোনা কয়েকটা পশু পিছিয়ে যায়। আর সিংহের গর্জনে পুরো বন কেঁপে ওঠে।”

এরপর আদ্রিয়ান সবাইকে ইশারা করে একজায়গায় বসতে বলল। ইতিমধ্যে আদ্রিয়ানের যেই রুপ ওরা দেখেছে তার পর পাল্টা কিছু বলার সাহস আর নেই ওদের মধ্যে। তাই সবাই নিজের আঘাত স্হানগুলো চেপে ধরে কোনোমতে একজায়গায় এসে বসল। আদ্রিয়ান উঠে দাড়িয়ে হাতের গানটা ঘোরাতে ঘোরাতে ওদের দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” কী ভেবেছিলি? শান্ত, হাসিখুশি, নরম স্বভাবের একজন রকস্টারকে তুলে নিয়ে আসবি, গান তাক করে ভয় দেখাবি? আর সে ভয় পেয়ে সুরসুর করে সব বলে দেবে? লাইক সিরিয়াসলি?”

সবাই হতভম্বের মতো তাকিয়ে আছে আদ্রিয়ানের দিকে। আদ্রিয়ান হেসে বলল,

— ” যদিও তোদের কোনো দোষ নেই। আসলে আমার সাথে বরুণ ধাওয়ান এর ‘ম্যা তেরা হিরো’ ফিল্মের ঐ ডায়লগটার খুব মিল আছে। সবাই আমাকে শান্ত,নম্র,ভদ্র, মজার একটা মানুষ মনে করে। করবেই তো। ম্যা দিখতা হু সুইট লিটল সোয়ামি টাইপ কা না? কিন্তু এটা ভেবেই সবাই ভুলটা করে ফেলে ঠিক তোদের মতো। কারণ এটা খুব কম লোকেই জানে যে এক্চুয়ালি ম্যা হু বহত বারে হারামী টাইপ কা।”

লাস্ট লাইনটা বলার সময় আদ্রিয়ানের মুখে এক অদ্ভুত হিংস্রতা দেখা গেলো যেটা দেখে ওরা সকলেই একটা শুকনো ঢোক গিলল।

#চলবে…

বর্ষণের সেই রাতে ❤ পর্ব- ৩৪

0

বর্ষণের সেই রাতে ❤
পর্ব- ৩৪
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

.
স্বাভাবিকভাবেই সকাল বেলা ঘুম ভাঙলো আদ্রিয়ানের। ভোরবেলা রিকের সাথে কথা বলে এসে আবারও ছোট্ট একটা একটা ঘুম দিয়েছিলো ও। চোখ কচলে সোফায় বসে সোজা তাকালো বেডে শুয়ে থাকা অনিমার দিকে। মুচকি হেসে উঠে গিয়ে অনিমার সামনে গিয়ে হাটু ভেঙ্গে বসলো এরপর ওর মুখের ওপর পরে থাকা চুলগুলো সরিয়ে দিয়ে ওর গালের তিলটাতে আলতো হাতে ছুয়ে দিলো, অনিমা ঘুমের মধ্যেই হালকা কেঁপে উঠল, আদ্রিয়ান হেসে দিয়ে উঠে ওয়াসরুমে চলে গেলো ফ্রেশ হতে। ফ্রেশ হয়ে এসে অনিমার দিকে তাকিয়ে দেখে অনিমা হালকা ভ্রু কুচকে একটু নড়াচড়া করছে। আদ্রিয়ান পেছন ঘুরে দেখলো সকালের মৃদু রোদের আলো সম্পূর্ণ গিয়ে পরছে অনিমার মুখের ওপর, যার কারণে ওর ঘুমের একটু ডিস্টার্ব হচ্ছে, বারবার নিজের ভ্রু কুচকে সেই বিরক্তি প্রকাশ করছে অনিমা। আদ্রিয়ান হালকা হেসে একটু দূরে সরে অনিমার মুখের বরাবর দাড়ালো। মুখের ওপর ছায়া পরায় অনিমার ঘুমের ডিস্টার্ব হলো না কিন্তু একটুপর এমনিতেই ওর ঘুম ভেঙ্গে গেলো। আস্তে আস্তে চোখ খুলে ওর চোখ সোজা আদ্রিয়ানের দিকেই গেলো। আদ্রিয়ান মুচকি হাসলো অনিমার দিকে তাকিয়ে। অনিমা উঠে বসে একটা হাই তুলে ভালোভাবে তাকালো আদ্রিয়ানের দিকে, একটা চিকন স্লিভস এর ব্লু পাতলা গেঞ্জি আর কালো টাওজার পরে আছে, হালকা ভেজা এলোমেলো চুলগুলো মাথার সাথে কপাল ভর্তি হয়ে ছড়িয়ে আছে, সুঠাম দেহে হালকা ভেজা ভেজা ভাব এখোনো আছে। আজ আবার নতুন করে ক্রাশ খেলো আদ্রিয়ানের ওপর । আর তার সাথে নিজের ওপরেই নিজে বিরক্ত হলো। এই এক ছেলের ওপর কতোবার ক্রাশ খাবে ও? ছেলে মানুষদের এতো সুন্দর হতে হয়? কিন্তু আদ্রিয়ানের চেহারার সাথে রিকের চেহারার বেশ খানিকটা মিল খুজে পায় অনিমা, কিন্ত সেটাকে বকওয়াস ভাবনা ভেবে উড়িয়ে দেয়। কিন্তু আজ যেনো মিলটা একটু বেশিই লক্ষ্য করছে অনিমা। নিজের দিকে একবার তাকিয়ে দেখলো যে লাল একটা শার্ট পরা, শার্টের সাইজ দেখেই বুঝলো এটা আদ্রিয়ানের। তারপরেই অনিমার কালকের রাতের কথা মনে পরলো। আদ্রিয়ান অনিমার সামনে বসে মুচকি হেসে বলল,

— ” গুড মর্নিং।”

অনিমা আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল,

— ” মর্নিং।”

আদ্রিয়ান অনিমাকে একবার স্কান করে বলল,

— ” কী ব্যাপার? আমিতো ভেবেছিলাম তুমি ঘুম থেকে উঠেই একশোটা প্রশ্ন করবে। আমি এরকম কেনো করলাম? কে চেঞ্জ করিয়েছে? আমি উল্টোপাল্টা কিছু করেছি কী না? এক্সেক্ট্রা,এক্সেক্ট্রা।”

অনিমা খাটে হেলান দিয়ে হেসে বলল,

— ” আমি কখনো ইউসলেস প্রশ্ন করি না।”

আদ্রিয়ান মুখে হাসি রেখেই বলল,

— ” এগুলো ইউসলেস প্রশ্ন?”

অনিমা হাত ভাজ করে বলল,

— ” অফকোর্স। আপনি এরকম কেনো করেছেন সেটা আমি কালকে আপনার প্রতিটা কথাতেই বুঝেছি। আর পোশাক বদলানোর কথা যদি বলেন তো বাড়িতে এতো মেয়ে মেড সার্ভেন্ট থাকতে আপনি করবেন না সেটা আমি জানি । আর উল্টোপাল্টা করার কথা জিজ্ঞেস করে জোকস মারার শখ আমার নেই।”

আদ্রিয়ান অনিমার কথায় হেসে দিয়ে বলল,

— ” আরে ওয়াহ। সো ট্যালেন্টেড।”

অনিমা মেকি হেসে বলল,

— ” ছোটবেলা থেকেই। বাই দা ওয়ে আমার পোশাক কী এনেছেন নাকি আপনার এই শার্টস পরেই থাকতে হবে?”

অাদ্রিয়ান এবার দুষ্টু হেসে অনিমার দিকে অনেকটা ঝুকে বলল,

— ” চেঞ্জিং এর কী দরকার? তোমাকে এভাবেই খুব সুন্দর লাগছে। ইউ নো..!”

অনিমা হালকা গলা ঝেড়ে দূরে সরে গেলো আদ্রিয়ানের থেকে। তারপর কপালের চুলগুলো সরিয়ে নিয়ে ইতস্তত গলায় বলল,

— ” এনেছেন কী না সেটা বলুন?”

আদ্রিয়ান নিচের ঠোঁট কামড়ে একটু হাসলো, অনিমাকে লজ্জা পেতে দেখতে ওর অদ্ভূত রকম ভালোলাগে। তাই ইচ্ছে করেই মাঝে মাঝে লজ্জা দেয় ওকে। অনিমা আদ্রিয়ানকে অভাবে হাসতে দেখে আরো লজ্জায় পরে গেলো। মাথা নিচু করে হাত কচলাতে শুরু করলো। আদ্রিয়ান হেসে দিয়ে বলল,

— ” কাবার্ডে সব আছে যেটা ইচ্ছে পরে নাও।”

অনিমা কিছু না বলে উঠে দাড়ালো তাও চাদর গায়ে জরিয়ে। তারপর কাবার্ড খুলে দেখলো সব রকমের পোশাকই আছে। টি-শার্ট, টপস, কুর্তি সব। অনিমা একটু অবাক হলো এতোকিছুর কী দরকার ছিলো? তবুও কিছু না বলে একটা শর্ট কুর্তি আর টাওজার নিয়ে ওয়াসরুমে চলে গেলো। আদ্রিয়ান অনিমার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে একটা সস্হির নিশ্বাস ফেললো। অনিমা যে এখন ওর সাথে স্বাভাবিক আচরণ করছে এটাই অনেক। ঘন্টাখানেক পর অনিমা বেরিয়ে এলো ওয়াসরুম থেকে। আদ্রিয়ান সোফায় বসে ফোন টিপছিলো দরজা খোলার আওয়াজ পেয়ে একবার তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিয়ে আবারও তাকালো অনিমার দিকে। আজকে ওকে সেই প্রথম দিনের মতোই স্নিগ্ধ লাগছে। সেদিন মোমের আবছা আলোতে দেখেছে আর আজ দেখছে ভোরের নরম উজ্জ্বল আলোতে।অনিমার চুল দিয়ে ফোটা ফোটা পানি পরছে। অনিমা টাওয়েল দিয়ে চুল মুছতে মুছতে আসলো, আদ্রিয়ান মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অনিমার দিকে, একেই শাওয়ার নেওয়ায় এতো ফ্রেশ লাগছে তরওপর শার্ট কলারের পাতলা সাদা কুর্তি ওর সিদ্ধতা আরো বারিয়ে দিচ্ছে, কুর্তির সামনের দুটো বোতাম খুলে গলার দিকটা হালকা সরিয়ে রেখেছে, রোদের আলো চুলে পরায় চুলগুলো সোনালী আভা ধারণ করেছে। চুল থেকে টাওয়েল সরিয়ে সামনে থেকে সব চুলগুলো পেছনের দিকে ছুড়ে দিতেই অনিমার চুল থেকে পানির ছিটাগুলো সোজা আদ্রিয়ানের মুখে গিয়ে পরল যেটা অনিমা খেয়াল করেনি কিন্তু আদ্রিয়ান চোখ বন্ধ করে অনুভব করছে সেই অনুভূতি। অনিমা আলতো হাতে চুলগলো ঝেড়ে যাচ্ছে। আদ্রিয়ান উঠে দাড়িয়ে অনিমার কাছে গেলো, অনিমা চুল ঝাড়ায় ব্যাস্ত তাই খেয়াল করছে না। আদ্রিয়ান অনিমার চুলে হাত দিতেই অনিমা কেঁপে উঠলো, পেছনে ঘুরতে চাইলেই আদ্রিয়ান শক্ত গলায় বলল,

— ” নড়বেনা একদম চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকো।”

অাদ্রিয়ানের এমন শক্ত কন্ঠ শুনে আনিমা স্টাচু হয়ে দাঁড়িয়ে গেলো। আদ্রিয়ান বেশ অনেকখানি চুল হাতে নিয়ে সেই চুলে নিজের নিজের নাক ডুবিয়ে ঘ্রাণ নিতে লাগল। অনিমা তো পুরো জমে আছে, নড়বে যে সেই শক্তিও যেনো নেই ওর মধ্যে কুর্তি খামছে ধরে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আদ্রিয়ান চোখ বন্ধ করে নিজের মনমতো চুলের ঘ্রাণ নিয়ে অনিমার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল,

— ” তোমার ভাগ্য ভালো যে আমাদের বিয়ে হয়নি। যেই চোখ ধাধানো রুপ নিয়ে আমার সামনে এসে দাঁড়িয়েছো, যদি আমাদের বিয়ে হতো তো আজ তোমার কপালে ভীষণ দুঃখ ছিলো।”

আদ্রিয়ানের কথা শুনে অনিমার বন্ধ চোখজোড়া সাথে সাথে খুলে গেলো চোখ বড় বড় হয়ে গেলো ওর। বুকের ভেতরে ধকধক শব্দটা যেনো ও বাইরে থেকেও শুনতে পাচ্ছে। এই ছেলে সবসময় ওর হার্টবিট বারিয়ে দিয়ে যায়। অনিমার অবস্হাটা বুঝতে পেরে আদ্রিয়ান হেসে বলল,

— ” নিচে চলো ব্রেকফাস্ট করবো।”

আদ্রিয়ান যেতে নিলেই অনিমা বলল,

— ” শুনুন?”

আদ্রিয়ান ঘুরে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো। অনিমা নিচের দিকে তাকিয়ে ইতস্তত করে বলল,

— ” আমার ল্যাপটপটা আনার দরকার ছিলো।”

আদ্রিয়ান মুচকি হেসে অনিমার দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” ওয়াড্রপ এর ফার্স্ট ড্রয়ারে আছে।”

এটুকু বলে চলে গেলো আদ্রিয়ান। অনিমা একটু অবাক হলো যে কীভাবে আর কখন আনলো কিন্তু কিছু বললোনা আদ্রিয়ান পেছন পেছন চলে গেলো নিচে।

_____________________

খাটে হালকা হেলান দিয়ে শুয়ে এপাশ ওপাশ করছে রিক। কিচ্ছু ভালোলাগছে না ওর। সকালে আদ্রিয়ানের সাথে কথা বলার পর থেকেই মনটা অস্হির হয়ে আছে ওর।

আসলে সকালে সবে পার্টি শেষ করে রিক বেরোবে তখনি আদ্রিয়ানের ফোন এলো। কলটা আদ্রিয়ান ঐ বাংলো থেকে বেড়িয়ে বেশ অনেক দূরের একটা গ্রাউন্ডে গিয়ে, ওর কমন সিমটা ইনসার্ট করে তারপর করেছে । রিক স্ক্রিনে আদ্রিয়ানের নাম্বারটা দেখে বেশ অবাক হলো। কিছুক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে থেকে রিক ফোনটা রিসিভ করে বলল,

— ” আজ নিজেই ফোন করলে আমাকে? হার মেনে নিলে নাকি?”

আদ্রিয়ান বাঁকা হেসে বলল,

— ” হার বা জিত এখনো অনেক দূরের প্রশ্ন। তার আগে আপনি এটা বলুন যে অনিকে পেলেন?”

রিক দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

— “মজা নিচ্ছো?”

আদ্রিয়ান এবার একটু শব্দ করে হেসেই বলল,

— ” মজা? মজা কেনো করবো? আসলে কী জানেন তো আপনার জন্যে করুনা হয় আমার। সত্যিই বলছি।”

আদ্রিয়ানের কথায় রিক ভ্রু কুচকে বলল,

— ” কী বলতে চাইছো?”

আদ্রিয়ান এবার সিরিয়াস হয়ে বলল,

— ” আচ্ছা একটা কথা বলুনতো জীবণে কোন সিদ্ধান্তটা আপনি নিজে থেকে নিয়েছেন? এইযে রাজনীতি করেন সেটাতে কী আদোও আপনার কোনো ইন্টারেস্ট আছে? আপনার বাবার সব কাজে আপনি তাকে সাহায্য করলেও সেগুলোকে মন থেকে সত্যিই কী সাপোর্ট করেন।”

রিক খানিক চমকে উঠলো, ওর নিজের মনেও অনেকবার এই প্রশ্নগুলো উঠতে চাইলেও ও ধামাচাপা দিয়ে রেখেছে। কিন্তু আদ্রিয়ান এসব কেনো বলছে। রিক কে চুপ থাকতে থেকে আদ্রিয়ান বলল,

— ” কী হলো চুপ করে আছেন কেনো?”

রিক ইতস্তত গলায় বলল,

— ” অ্ আমি যা করি নিজের ইচ্ছেতেই করি আর সজ্ঞানেই করি। আপনার এডভাইস এর কোনো প্রয়োজন নেই আমার।”

আদ্রিয়ান একটা শ্বাস ফেলে বলল,

— ” আমি এডভাইস দেই নি। কিন্তু আমি কী বলতে চাইছি সেটা আপনি ততোক্ষণ বুঝতে পারবেন না যতোক্ষণ না বুঝতে চাইবেন।”

রিক আর কিছু না শুনেই ফোনটা কেটে দিলো। আর হনহন করে বেড়িয়ে এলো ওখান থেকে। আর তারপরেই বাড়ি ফিরে ঐসব কথা বলে রুমে চলে এসছে। অস্হিরতা কিছুতেই কমছেনা। কিছক্ষণ পর কবির শেখ এসে ওর পাশে বসে বললেন,

— ” কী ভাবছো বাবাই?”

নিজের মামার গলার আওয়াজ পেয়ে চোখ খুলে তাকালো রিক। তারপর উঠে বসে বলল,

— ” ভালো লাগছেনা কিছু। অস্হির লাগছে।”

কবির শেখ একটু অবাক হলেন। রিক এরকম ভাবে কথা বলছে? উনি অবাক হয়েই বললেন,

— ” কিছু কী হয়েছে?”

রিক অস্হির এক শ্বাস নিয়ে বলল,

— ” কিছুনা মামা একটু একা ছেড়ে দাও।”

কবির শেখ রিকের কাধে হাত রেখে বলল,

— ” দেখো বাবাই। জগৎ টাই এখন আমাদের না চাইতেও খারাপ হতে হয়। ওনেক সময় অনেক কিছু পেতে আমাদের একটু খারাপ হতেই হয়।”

রিক কবির শেখ এর দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” সবকিছু পাওয়া কী খুব জরুরি মামা?”

কবির শেখ একটু ভ্রু কুচকালেন। তারপর কিছু একটা ভেবে নিজেকে স্বাভাবিক করে হেসে বললেন,

— ” অনিমাকে ছাড়তে পারবে?”

রিক কবির শেখ এর দিকে তীক্ষ্ম চোখে তাকালো অর্থাৎ কখনো না। কবির শেখ হেসে বলল,

— ” ঠিক সেভাবেই আমাদের জীবনে এমন অনেক কিছু থাকে যা আমরা ছাড়তে পারিনা। সেটা পেতে আমাদের খারাপ হতেই হয় তাইনা?”

রিক মাথা নেড়ে উঠে ওয়াসরুমে চলে গেলো আর কবির শেখ বাঁকা হাসলেন। উনি জানেন অনিমাই রিকের একমাত্র দুর্বলতা আর সেটাকে কাজে লাগিয়েই উনি ওনার খেলাটা খেলে যাচ্ছেন। কবির শেখ হেসে নিজের মনেই বললেন,

— ” দাবা খেলায় খুব পটু আমি। আমার একেকটা অ্যাটাক সবাইকে কাঁপিয়ে রেখে দেয়। ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়ন আমি। আমাকে এই খেলায় হারানোর মতো দাবাড়ু এখোনো বাংলাদেশে জন্মায়নি।”

_____________________

এদিকে অরুমিতা দিন একেবারেই বাজে কাটছে। একে অনিমার টেনশন। আর দুই হলো আশিস আগের মতো ফোন করে আর জ্বালায়না ওকে। আগে ফোন করলে বিরক্ত হতো এখন করেনা বলে বিরক্ত হচ্ছে সত্যিই খুব অদ্ভুত। কিন্তু ওর এখন আর এসব সহ্য হচ্ছে না। এই কয়েকদিনে ও বেশ বুঝে গেছে ও আশিসের প্রতি যথেষ্ট দূর্বল, দূর্বল কী ভালোও বেসে ফেলেছে । অথচ এই ছেলে ভাব নিয়ে বসে আছে, তাই বিরক্ত হয়ে কল করেই ফেলল আশিস কে। বিছানায় হেলান দিয়ে গেম খেলছিলো আশিস ফোন বেজে উঠতেই স্ক্রিনে অরুমিতার নাম্বারটা দেখে বেশ অবাক হলো ও। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর মুখে হাসি ফুটে উঠল ওর। ও জানতো এটাই হবে। গলা ঝেড়ে একটু সিরিয়াস করে ফোনটা রিসিভ করে বলল,

— ” হ্যালো।”

অরুমিতা কিছু না বলে চুপ করে আছে। ওকে চুপ করে থাকতে দেখে আশিস বলল,

— ” কী হলো ফোন করে চুপ করে আছেন কেনো? আমিতো ডিসটার্ব করি আপনাকে। তো হঠাৎ করে আমাকে মনে করার কারণ?”

অরুমিতা নিচু কন্ঠে বলল,

— ” আই এম সরি।”

আশিস ভ্রু কুচকে বলল,

— ” সরি ফর হোয়াট?”

অরুমিতা কিছুক্ষণ চুপ থেকে নিজেকে সামলে বলল,

— ” সেদিনের ব্যবহারের জন্যে। আসলে একটু আপসেট ছিলাম তাই..”

আশিস অরুমিতাকে থামিয়ে দিয়ে বলল,

— ” ইটস ওকে। আর কিছু?”

অরুমিতা এবারেও নিচু গলায় বলল,

— ” আপনার কিছু বলার নেই?”

অাশিস মুচকি হাসলো তারপর বলল,

— ” আর কী বলার থাকবে?”

অরুমিতা গোমড়া মুখ করে বলল,

— ” কিচ্ছু বলার নেই?”

আশিস এবার একটা নিশ্বাস নিয়ে হেসে বলল,

— ” আই লাভ ইউ।”

অরুমিতা কিছু না বলে ফোনটা কেটে হেসে দিলো। কেমন এক অদ্ভূত অনুভূতি হচ্ছে ওর যেটা এর আগে ওর কখনোই হয়নি। একেই হয়তো ভালোবাসার অনুভূতি বলে। আশিস ও হাসলো কারণ আগে যখন এই কথাটা বলতো তখন একশ কথা শুনিয়ে দিতো অরুমিতা তবে আজ কিছু না বলে কেটে দেওয়াটাই অনেককিছু বলে দিয়েছে ওকে।

_____________________

রাতে খাটে পা ঝুলিয়ে বসে আছে অনিমা আর আদ্রিয়ান সোফায় বসে ল্যাপটপে কাজ করছে। কিন্তু এই মুহুর্তে অনিমার মাথায় একটা কথাই ঘুরছে সেটা হলো আদ্রিয়ান আর রিকের চেহারার মিল। খুব বেশি মিল নেই তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে বেশ মিল আছে। যেটা এতোদিন ওর মাথায় না আসলেও আজকে সকালে আদ্রিয়ানকে অতো গভীরভাবে দেখার পর হঠাৎ করেই মাথায় এলো। কেনো তা নিজেও জানেনা। কিছুক্ষণ পর অনিমা আদ্রিয়ানকে উদ্দেশ্য করে বলল,

— ” একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?”

আদ্রিয়ান ল্যাপটপের দিকে তাকিয়েই বলল,

— “একশটা করো জানপাখি।”

অনিমার একটু রাগ হলো কথায় কথায় জানপাখি ডাকার কী আছে? আদ্রিয়ান কী বোঝেনা এই নামটা শুনলে অনিমার বুকের মধ্যে গিয়ে ধাক্কা লাগে। তবুও ও নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,

— ” আচ্ছা আপনি দেখতে কার মতো হয়েছেন?”

এটা শুনে আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে ল্যাপটপ থেকে চোখ সরিয়ে অনিমার দিকে তাকিয়ে বলল,

— “এটা কেমন প্রশ্ন হলো? আমি দেখতে আমার মতোই হয়েছি।”

অনিমা একটা শ্বাস ফেলে বলল,

— ” না মানে আপনার ফ্যামিলিতে আপনার সাথে কার চেহারার মিল আছে?”

আদ্রিয়ান অবাক হয়ে বলল,

— ” হঠাৎ এই প্রশ্ন?”

— ” বলুন না?”

আদ্রিয়ান মুচকি হেসে বলল,

— ” আমার মায়ের সাথে। ওনার আর আমার চেহারা বেশ মিল। এমন মনে হয় উনি এই চেহারার ফিমেল ভার্সেন আর আমি মেল।”

বলেই হেসে দিলো ও সাথে অনিমাও হেসে দিলো। আর মনে মনে ভাবলো অযথাই ভাবছিলো ও। একজনের সাথে অন্যএকজন মানুষের চেহারা মিল থাকতেই পারে আর ওদের দুজনের তো এক্কেবারেই সামান্য মিল। অনিমা হেসে বলল,

— ” তারমানে আপনার মা অনেক সুন্দরী দেখতে।”

আদ্রিয়ান ও মুচকি হেসে বলল,

— ” হ্যাঁ তাইতো ড্যাড মমের প্রেমে পরেছিলো।”

অনিমা অবাক হয়ে বলল,

— ” লাভ ম্যারেজ?”

— ” হ্যাঁ। এবার শুয়ে পরো অনেক রাত হয়েছে।”

বলে আদ্রিয়ান আবার ল্যাপটপে চোখ দিলো আর অনিমাও শুয়ে পরল। কিছুক্ষণ ল্যাপটপ ঘাটাঘাটির পর মিস্টার রঞ্জিত এর একটা টিম ফটো ভেসে উঠলো স্ক্রিনে, ওনার পাশে কবির শেখ ও আছেন। কবির শেখ এর ছবির দিকে তাকিয়ে ছবিটা জুম করে নিয়ে আদ্রিয়ান বাঁকা হাসলো আর ভাবলো এতো বড় দাবাড়ু হয়েও দাবা খেলার ‘ট্রাক্সলার কাউন্টার অ্যাটাক’ টা সম্পর্কে জানেনা উনি? যেখানে ব্লাকের রুফ, নাইফ, বিষপ সব হোয়াইট ক্যাপচার করে ফেলে। হোয়াইট ভাবে সে জিতে যাচ্ছে কিন্তু ও জানেইনা যে ও ক্যাপচার করতে পারছে কারণ ব্লাক ওকে ক্যাপচার করতে দিচ্ছে। এখানেই তো আসর খেলা। জিতছি জিতছি ভেবেও শেষে গিয়ে হোয়াইট এর কপালে জোটে চেকমেট। ভেবে নিজের মনেই হাসলো আদ্রিয়ান।

#চলবে…

( এইকয়েকদিন চারদিন একটু অনিয়মিত গল্প দিয়েছি কারণ অনেকদিন পর সব কাজিনস রা একজায়গায় হয়েছিলাম তাই একটু ব্যাস্ত হয়ে পরেছিলাম ওদের নিয়ে। কাল থেকে নিয়মিত দেবো।
ধন্যবাদ।)