Saturday, July 19, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1924



বর্ষণের সেই রাতে ❤ পর্ব- ৩৩

0

বর্ষণের সেই রাতে ❤
পর্ব- ৩৩
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

.
যতবার বাজ পরছে ততোবারি অনিমা ভয়ংকর ভাবে চিৎকার করে উঠছে। কাঁচের দেয়ালে হেলান দিয়ে চোখ মুখ খিচে কানে হাত দিয়ে গুটিয়ে বসে আছে ও। আরো একবার বাজ পরতেই অনিমা চিৎকার করে কেঁদে অস্ফুট স্বরে বলল,

— ” আদ্রিয়ান প্লিজ, আমায় ভেতরে নিয়ে যান, আমার…”

আর কিছু বলতে পারলোনা অনিমা আবারও বাজ পরলো, ও আবারও কাঁদতে লাগল। আদ্রিয়ান একদৃষ্টিতে শুধু তাকিয়ে আছে অনিমার দিকে । এভাবে কিছুক্ষণ সময় কেটে গেলো। অনিমা অনেক আকুতি মিনতি করেছে আদ্রিয়ানের কাছে কিন্তু আদ্রিয়ান কোনো রিয়াক্ট ই করেনি। হঠাৎই বজ্রপাতের পরিমাণ বেড়ে গেলো আর অনিমা এবার এতোটাই হাইপার হয়ে গেলো আর এমনভাবে চিৎকার করতে লাগল যে সেটা দেখলে যে কারো চোখে জল চলে আসবে, কিন্তু আদ্রিয়ান এখনও কোনো রিঅ‍্যাক্ট করছে না। কিছুক্ষণ পর অনিমার পাগলামী আরো বেড়ে গেলো। এতোক্ষণ অনেক চেষ্টা করলেও এবার আর নিজেকে আটকে রাখতে পারলোনা আদ্রিয়ান। ও দরজা খুলে অনিমার সামনে গিয়ে একটানে দাড় করালো অনিমাকে। অনিমা কিছু না ভেবেই আদ্রিয়ানকে জরিয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো। আদ্রিয়ান অনিমার বাহু ধরে একঝটকায় ওকে সরিয়ে নিলো। এরপর ওর বাহু ধরে ঝাকিয়ে বলল,

— ” কীহ? সমস্যা কী তোমার? কী হচ্ছে এখানে? একটু বাজ পরছে, একটু বৃষ্টি হচ্ছে এতে এমন কী হচ্ছে তোমার? মরে যাচ্ছো তুমি? বলো? বৃষ্টিতে কে মরে যায়? বাজ এখান থেকে অনেক দূরে দূরে পরছে তোমার ওপরে তো পরছেনা? এতো ভয়ের কী আছে হ্যাঁ?”

অনিমা কান্না আর ভয়ের জন্যে কথাও বলতে পারছেনা তবুও আদ্রিয়ানকে ধরে অস্ফুট স্বরে বলে উঠল,

— ” ওরাহ ওরাহ…”

আদ্রিয়ান অনিমার দুই কানের ওপর দিয়ে হাত দিয়ে বলল,

— ” ওরা কেউ নেই এখানে ভালো করে তাকিয়ে দেখো, আর যদি থাকেও তাহলে কেউ কিচ্ছু করতে পারবেনা।”

অনিমা চোখ খিচে বন্ধ করে আছে। বৃষ্টিতে আদ্রিয়ান আর অনিমা দুজনেই পুরো ভিজে গেছে। আদ্রিয়ান এর মুখ থেকে বিন্দু বিন্দু পানি গিয়ে অনিমার মুখে পরছে। আদ্রিয়ান আলতো গলায় বলল,

— ” জানপাখি?”

অনিমা আদ্রিয়ানের এই ডাক শুনে আস্তে আস্তে চোখ খুলে তাকালো আদ্রিয়ানের দিকে। আবারও বজ্রপাত হলো আর অনিমা আদ্রিয়ানকে জরিয়ে ধরে ফুঁপিয়ে কেঁদে দিলো। আদ্রিয়ান অনিমাকে সোজা করে দাঁড় করিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” প্রকৃতি কারো শত্রু হয়না অনি, আবার কারো বন্ধুও হয়না। সে নিজের নিয়মেই চলতে থাকে। আমি জানি তোমার সাথে যা হয়েছে খুব খারাপ হয়েছে। তোমার জীবনের ভয়ংকর মুহুর্তগুলো এই বর্ষণের রাত গুলতেই এসেছে। কিন্তু এর জন্যে দায়ী ঐ মানুষগুলো, ঐ পশুগুলো, এই বৃষ্টি আর বজ্রপাত নয়।”

অনিমা তাকিয়ে আছে আদ্রিয়ানের দিকে আর চোখ দিয়ে নিরব ধারায় পানি পরছে। দাঁড়িয়ে থাকতে পারছেনা ও ঢলে পরতে নিলেই আদ্রিয়ান অনিমাকে শক্ত করে ধরে দাঁড় করিয়ে বলল,

— ” আমি জানি বর্ষণের এক রাতে তুমি তোমার আব্বুকে হারিয়েছো, নানাভাবে অত্যাচারিত হয়েছো, এমনকি নিজের মামাতো ভাই তোমাকে রেপ করতে চেয়েছিলো, মলেস্টেড হয়েছিলে তুমি।”

অনিমা আবারো চোখ বন্ধ কেঁদে দিলো। আদ্রিয়ান অনিমার কপালে কপাল ঠেকিয়ে বলল,

— ” তবে একটা কথা বলোতো? বর্ষণের এই রাতে তুমি কী তুমি শুধুই সব হারিয়েছো? সবই কী অশুভ হয়েছে তোমার সাথে? ঐ দিন মাদার যদি ঠিক সময় না পৌছাতো কতটা ভয়ানক কিছু হতে পারতো বুঝতে পারছো সেটা? আর আমি? আমিতো তোমার জীবণে বর্ষণের এমন এক রাতেই এসছিলাম তাইনা? বর্ষণের সেই রাতেই তুমি আমাকে পেয়েছিলে আর আমি তোমাকে। তাহলে তুমি মনে করো যে আমিও তোমার জন্যে অশুভ?”

অনিমা অস্ফুট স্বরে ‘নাহ’ বলল। আদ্রিয়ান অনিমার কপাল থেকে মাথা তুলে অনিমার দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” তাহলে? কেনো ভয় পাচ্ছো? আমি আছিতো তোমার সাথে। টেইক ইট ইসি, মাটিতে হোচট খেয়ে পরে গেলে কেউ মাটিতে হাটা বন্ধ করে দেয় না, গাড়িতে কোনোকারণে এক্সিডেন্ট হলে কেউ গাড়িতে চড়া বন্ধ করে দেয়না। ঠিক সেইভাবেই বর্ষণকে ইগনোর করতে পারোনা তুমি, এটা প্রতি বছর আসবেই এন্ড তোমাকে সেটা ফেস করতে হবে। ”

অনিমা আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে অস্ফুট স্বরে বলল,

— ” আমি..”

আদ্রিয়ান অনিমার বাহু শক্ত করে ধরে বলল,

— ” পারবে। পারতে হবে তোমাকে। ইউ হ্যাভ টু বি স্ট্রং এন্ড ইউ আর স্ট্রং। অন্যকে বাচাঁতে সেচ্ছায় নিজে থেকে বিপদে জরানোটাও একপ্রকার স্ট্রং হবারই পরিচয়। কিন্তু তোমাকে বুঝতে হবে যে তুমি স্ট্রং, তোমাকে বিশ্বাস করতে হবে তুমি স্ট্রং। আর তাছাড়াও আমি আছি তো তোমার সাথে।”

এটুকু বলে আদ্রিয়ান অনিমাকে শক্ত করে জরিয়ে ধরল তারপর অনিমার কাধে নিজের থুতনি রেখে বলল,

— ” দেখো এই বৃষ্টি, এই ঝিরিঝিরি শব্দ, এই ঠান্ডা হাওয়া, সব কতো সুন্দর। আর এগুলোকে ভয় পাচ্ছো তুমি? ওরা হাসছে তোমাকে দেখে বলছে যে মেয়েটা ভীতুর ডিম।”

অনিমা নিজের অজান্তেই হালকা হেসে দিলো। কিন্তু ক্লান্তির জন্যে আর দাড়িয়ে থাকতে পারলোনা, আদ্রিয়ানের বুকেই অজ্ঞান হয়ে গেলো। আদ্রিয়ান খেয়াল করলো অনিমা শরীর ছেড়ে দিয়েছে। আদ্রিয়ান অবাক হলোনা, কারণ ও জানতো এমন কিছুই হবে। এটা একটা পসিটিভ সাইন। ও অনিমাকে কোলে তুলে ভেতরে নিয়ে গেলো। এরপর বিছানায় শুইয়ে দিয়ে ভাবলো যে চেঞ্জ করাতে হবে। ও সার্ভেন্ট ডেকে অনিমাকে ওর আরেকটা শার্ট পরিয়ে দিতে বলল। চেঞ্জ করা শেষে আদ্রিয়ান অনিমার সামনে বসে ওর মাথায় একটা চুমু দিয়ে দিয়ে শরীরে চাদর টেনে দিলো, আর দেখতে লাগলো ওকে, কতোটা নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছে, একটু আগেও কতোটা হাইপার ছিলো। আদ্রিয়ান জানে ওর কাজ অনেকটা হয়ে গেছে। অনিমার ভয়টা পুরোপুরি না কাটলেও প্রায় কেটে গেছে। আসলে অনিমা মানসিকভাবে সম্পূর্ণ সুস্হ না। টিনএইজ বয়স থেকে পরপর এতোগুলো ধাক্কার কারণে একপ্রকার ট্রমায় চলে গেছে ও। অনিমার ঐ অস্বাভাবিক ভয় পাওয়া দেখেই আদ্রিয়ানের খটকা লাগে আর ও একজন সাইক্রাটিস্ট এর সাথে কথা বলে আর ডক্টর ই ওকে এসব বলে, আর এটাও বলে যে ওর ভয়ের সম্মুখীন হলেই ও ওর ট্রমা কাটিয়ে উঠতে পারবে। আর তাই ওর কষ্ট হলেও অনিমার প্রতি আজ অনেকটাই রুড হয়েছে ও। অনেকটা কষ্ট দিয়ে ফেলেছে। কিন্তু যা করেছে পুরোটাই ওর ভালোর জন্যে। খুব বেশি ভালোবাসে এই মেয়েটাকে, কোনোকিছুর মূল্যেই ও হারাতে চায়না ওকে। এসব ভেবে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল আদ্রিয়ান।

____________________

রুমে বসে বেশ অস্হির হয়ে উঠছে তীব্র। স্নেহার সাথে কথা বলতে চাইছে, কিন্তু কোথায় একটা বাধছে। হয়তো ইগো বা হয়তো অপরাধবোধ। কিছু না জেনে না বুঝেই মেয়েটার সাথে ওরকম বিহেভ করা ঠিক হয়নি ওর। অনেকক্ষণ দ্বিধা দন্দ্ব কাটিয়ে উঠে ফোন করেই ফেললো স্নেহাকে। অনেকক্ষণ ফোন রিং হওয়ার পর ওপাশ থেকে ভাঙ্গা গলায় ‘হ্যালো’ শব্দটা শুনেই তীব্রর বুকের ভেতরে ধক করে উঠল। আওয়াজ শুনেই বুঝতে পারছে কেঁদে কেঁদে গলা খারাপ করে ফেলেছে মেয়েটা। তীব্র তবুও নিজেকে সামলে বলল,

— ” আমি তীব্র।”

স্নেহার চমকে গেলো তীব্রর গলা শুনে, নতুন সিমে তীব্রর নাম্বার ছিলোনা ওর কাছে। থাকবে কী করে? তীব্রতো কথাই বলতো না ওর সাথে। কিন্তু তীব্রর ভালোবাসি না কথাটা মনে পরতেই ওর মনে অভিমানের পাহাড় দাড়িয়ে গেলো। স্নেহা নিজেকে শক্ত করে নিয়ে বলল,

— ” কেনো ফোন করেছেন?”

তীব্র ভ্রু কুচকে নিয়ে বলল,

— ” আপনি?”

স্নেহা এবারেরও শক্ত গলায় বলল,

— ” তুমি করে বলার মতো সম্পর্কটা হয়তো আমাদের মধ্যে আর নেই।”

তীব্র বেশ রেগে গেলো স্নেহার কথায়। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

— ” এই কথাটা সামনে বলে দেখতি থাপ্পড় মেরে সবকটা দাঁত ফেলে দিতাম।”

স্নেহার বুকে যেনো এক ধাক্কা লাগলো। আজ দেড় বছর আবার তীব্র ওর সাথে এভাবে কথা বললো, সেই অধিকারবোধ দেখালো। কিন্তু তার সাথে মনে অভিমানটাও চাড়া দিলো। তাই অভিমানী গলায় বলল,

— ” কেনো হ্যাঁ? কোন অধিকারে?”

তীব্র এবার দৃঢ় কন্ঠে বলল,

— ” ভালোবাসার অধিকারে।”

স্নেহা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল,

— ” হাহ্ ভালোবাসা? সেদিন তো বেশ চমৎকারভাবে এনাউস করে দিলেন যে আপনি আমাকে আর ভালোই বাসেন না, তাহলে?”

তীব্র এবার নরম গলায় বলল,

— ” শুধু মুখের কথাটাই ধরবে?”

স্নেহা এবার কেঁদে দিয়ে বলল,

— ” কেনো? তুমি ধরোনি? বাইরে থেকে যেটা দেখেছো বা বুঝেছো সেটা নিয়েই পরে ছিলে। আমার কথাটা একটা বারের জন্যে ভাবোও নি। একবার জানতেও চাওনি কিছু? সেই বেলা?

তীব্র কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো কী বলবে স্নেহা তো ঠিকি বলছে। ও অনুতাপ মিশ্রিত গলায় বলল,

— “আমি জানি আমি যেটা করেছি সেটা ভুল। আমার তোমার সাথে কথা বলে সবটা জানা উচিত ছিলো। আসলে তোমার এনগেইজমেন্ট এর খবরটা শুনেই মাথা হ্যাং হয়ে গেছিলো আমার, মাথাটা কাজই করছিলো না। আই এম সরি।”

স্নেহা কিছু না বলে ফোন কেটে দিয়ে কাঁদতে লাগলো, এটা কষ্টের কান্না নয়, তীব্র নিজের ভূলটা বুঝে যে ওর সাথে আবার আগের মতো কথা বলেছে এতেই ও খুশি খুব খুশি। আর ওদিকে তীব্র ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। ও জানে স্নেহা আর রাগ করে নেই ওর ওপর, কাল সামনাসামনি গিয়ে একবার জরিয়ে ধরে সরি বললেই ও মাফ করে দেবে ওকে। মান অভিমান যাই থাক ভালোবাসার তো কমতি নেই। তাইতো দেড় বছর আলাদা থেকেও কেউ কাউকে ভোলেনি।

___________________

রিক আজকেও সকালবেলা আধমাতাল হয়ে টলতে টলতে বাড়ি এসছে। মিস্টার রঞ্জিত ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে রিকের দিকে আর কবির শেইখ পাশে বসে আছে। রিকের মেজাজ এমনিতেই খারাপ সকালে আদ্রিয়ান ফোন করেছে ওকে আর এমন কিছু কথা বলেছে যা ওকে ভাবনায় ফেলে দিয়েছে। কিচ্ছু চিন্তা করতে পারছেনা ও। ড্রয়িংরুমে গিয়ে রিক আর দাড়ানোর এনার্জি পেলোনা তাই সোফায় বসে পরলো। মিস্টার রঞ্জিত এবার রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে রেগে গিয়ে বলল,

— ” কী পেয়েছো কী তুমি রিক? সারা দিনরাত মদ,ক্লাব, বার বাকি সময়টা ঐ মেয়েটা এই তোমার জীবণ? কী করছোটা কী তুমি?”

রিক পিটপিট করে মিস্টার রঞ্জিতের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে বলল,

— ” যাই করি, নিরীহ মানুষ খুন করা, গরিবদের জমি দখল করা, সাধারণ মানুষকে দাবিয়ে রাখার নামে শুষে খাওয়ার চেয়ে তো বেটার তাইনা ড্যাড?”

মিস্টার রঞ্জিত তো অবাক হলেনই সাথে কবির শেখ তো ঝটকাই খেলেন এক প্রকার। চায়ে চুমুক দিতে গিয়েও মুখ সরিয়ে নিলেন উনি। মিস্টার রঞ্জিত নিজেকে সামলে নিয়ে বললেন,

— ” কী বলছো এসব?”

রিক একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে মাতাল কন্ঠে বলল,

— ” তুমি বুঝবে না। বাট ইউ নো হোয়াট? আই ওয়ান্ট অনি। ওকেহ? ওকে আমার যেকোনো মূল্যে চাই। সেটার জন্যে যদি আমাকে খুনও করতে হয় তো আমি করবো। ওই আদ্রিয়ান আবরার জুহায়ের কে আমি শেষ করে দেবো। আই উইল কিল হিম। ”

মিস্টার রঞ্জিত আরো রেগে গিয়ে বললেন,

— ” তোমার জন্যে জাস্ট তোমার জন্যে এতটা রিস্ক নিতে হচ্ছে। ঐ হাসান কোতয়াল এর মৃত্যু যেটা সবার কাছে এখনো রহস্য, ঐ মেয়ে সুযোগ বুঝে হাটে হাড়ি না ভেঙ্গে দেয়। তোমার কারণেই তো ওকে বাচিঁয়ে রাখতে হলো।”

রিক এবার টেবিলে একটা বাড়ি মেরে উঠে দাড়িয়ে বলল,

— ” এমন কাজ করো কেনো? যেটা ধামাচাপা দিতে হয়? এতো কীসের লোভ তোমার? এতো টাকা থাকা সত্যেও তোমাকে বেআইনি কাজ করতে হবে? সাথে আমাকেও…”

এটুকু বলেই থেমে গেলো রিক তারপর টলতে টলতে ভেতরে চলে গেলো। মিস্টার রঞ্জিত কতোক্ষণ হা করে তাকিয়ে থেকে নিজেও উঠে চলে গেলো। আর কবির শেখ বসে বস নিজে নিজেই বলল,

— ” নাহ ছেলেটা তো দেখছি নিজের ভেতরের রং একটু একটু করে খুজে পেতে শুরু করেছে, যেটা আমি এতোবছর কুমন্ত্রণা দিয়ে চাপা দিয়ে রেখেছিলাম, তাড়াতাড়ি ই কিছু করতে হবে। তবে ও যে আদ্রিয়ানে মারতে যাবে সেটাতো সিউর। এবার রিক আদ্রিয়ানকে মারে না আদ্রিয়ান রিক কে সেটাই দেখার। তবে যারই মৃত্যু হোক লাভ তো আমারই। তবে আমিতো চাই যে দুজনেই মরুক। একজনের প্রাণ কীকরে চাইবো? আমিকি এতই একচোখা নাকি? যে একজনকে ওপরে পাঠাতে চাইবো আরেকজন কে না। দুজনের জন্যেই সমান কিছুই চাই সেটা হলো মৃত্যু। একচোখামি করবো কীকরে? শত হলেও দুজনেই তো আমার আদরের ভাগ্নে।”
.
#চলবে…

বর্ষণের সেই রাতে ❤ পর্ব: ৩২

0

বর্ষণের সেই রাতে ❤
পর্ব: ৩২
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

.
অনিমা শাওয়ার নিয়ে একটা নীল ফুল হাতা গেঞ্জি আর কালো টাউজার পরে চুপচাপ খাটে হেলান দিয়ে বসে আছে। এই টাউজার আর গেঞ্জিটা খাটের কোণায় প্যাকেটে পেয়েছে ওহ। তবে ওর মন খুব অস্হির আছে। যতক্ষণ পর্যন্ত না আদ্রিয়ান ফিরে আসবে এই অস্হিরতা মোটেও কমবে না। এই ছেলেটা কী বোঝেনা যে ওর টেনশন হয়। আর রুমটাও লক করে দিয়ে গেছে, ব্যালকনির দরজাটাও লক করা। ভাগ্যিস ওয়াসরুমের দরজাটা লক করেনি। এসব ভাবতে ভাবতে রুমের দরজা খোলার আওয়াজ পেলো অনিমা। দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলো আদ্রিয়ান এসছে। অনিমা মুখ ঘুরিয়ে হাত ভাজ করে বসে রইলো। সেটা দেখে আদ্রিয়ান ঠোঁট কামড়ে হাসলো। তারপর অনিমার কাছে গিয়ে বসলো, অনিমা একবার আড়চোখে তাকিয়ে আবারো মুখ ফিরিয়ে নিলো। আদ্রিয়ান হেসে অনিমাকে একহাতে জরিয়ে ধরে বলল,

— ” রেগে আছো আমার ওপর?”

অনিমা অন্যদিকে মুখ করেই বসে আছে। আদ্রিয়ান চারপাশে তাকিয়ে বলল,

— ” আচ্ছা রুমটা কেমন হয়েছে বলোতো? আমি তো ঠিক করেই নিয়েছি বিয়ের পর আমরা এখানেই থাকবো।”

অনিমা অবাক আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” বিয়ে? কীসের বিয়ে? কার বিয়ে? ”

আদ্রিয়ান অনিমার গাল টেনে দিয়ে বলল,

— ” হ্যাঁ বিয়ে, আমাদের বিয়ে, মানে তোমার আর আমার বিয়ে।”

অনিমা নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে আবার হাত ভাজ করে বলল,

— ” বয়েই গেছে আপনাকে বিয়ে করতে আমার।”

আদ্রিয়ান খাটে হেলান দিয়ে বসে বলল,

— ” যাই বলোনা কেনো বিয়েতো তুমি আমাকেই করছো।”

অনিমা ভ্রু কুচকে তাকালো আদ্রিয়ানের দিকে। আদ্রিয়ান হেসে উঠে ওয়াসরুমে চলে যেতে নিলেই অনিমা বলল,

— ” শুনুন?”

আদ্রিয়ান জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো অনিমার দিকে। অনিমা নিচের দিকে তাকিয়ে হাত কচলাতে কচলাতে বলল,

— ” আপনার ওপর কী কোনো অ্যাটাক হয়েছিলো? মানে..”

আদ্রিয়ান এক ভ্রু উঁচু করে বলল,

— ” কেনো কারো অ্যাটাক করার কথা ছিলো?”

অনিমা কিছু না বলে চুপ করে আছে। আদ্রিয়ান মুচকি হেসে ওয়াসরুমে চলে গেলো। অনিমা একটু অবাক হলো। অনিমার কোনো কথা বা রিঅ্যাকশনেই আদ্রিয়ান পাল্টা কোনো প্রশ্ন করেনা, এরকম মনে হয় যেনো ও সবই জানে। কিন্তু রিক এখনো আদ্রিয়ানের কোনো ক্ষতি কেনো করলোনা? ও কী অনিমাকে খুজে পাওয়ার অপেক্ষায় করছে? ওকে খুজে পেয়ে গেলেই কী আদ্রিয়ানের ক্ষতি করে দেবে? এসব চিন্তা করেই অস্হির হয়ে উঠছে ও।
রাতে খাওয়াদাওয়া করে সবে বসেছে অনিমা এর মধ্যেই আদ্রিয়ান এসে আবার ওর হাত পা বেঁধে দিতে শুরু করলো। অনিমা অবাক হয়ে বলল,

— ” আরে কী করছেন?”

আদ্রিয়ান হাত পা বাধতে বাঁধতে বাঁধতে বলল,

— ” তোমাকে কোনো বিশ্বাস নেই। এটা ডুপ্লেক্স বাড়ি। তাই তোমার ঐ চাদর পেচানো টেকনকটা খুব কাজে লাগবে। সো আই কান্ট টেক এনি রিস্ক।”

অনিমা কাঁদোকাঁদো মুখ করে বলল,

— ” তাই বলে এভাবে বেঁধে রাখবেন আমাকে?”

আদ্রিয়ান বাধা কম্প্লিট করে অনিমার এলোমেলো চুলগুলো ঠিক করতে করতে বলল,

— ” আ’ম সরি সোনা। বাট তুমি যতক্ষণ পর্যন্ত পালানোর ভুত মাথা থেকে না নামাচ্ছো ততোক্ষণ আমাকে এটা করতেই হবে।”

বলেই অনিমাকে শুইয়ে দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,

— ” ব্রেনে এতো চাপ দিয়ো না। চিল এন্ড টেইক ইউর টাইম।”

এটুকু বলে আদ্রিয়ান সোফায় শুতে চলে গেলো। অনিমা কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” এই বাড়িতে আর কোনো বেডরুম নেই?”

আদ্রিয়ান সোজা হয়ে শুয়ে ছিলো, অনিমার প্রশ্ন শুনে ওর দিকে ঘুরে শুয়ে বলল,

— ” কটা লাগবে তোমার?”

অনিমা একটু ইতোস্তত করে বলল,

— ” তাহলেতো আমাকে অন্য কোনো রুমেও রাখতে পারেন। আপনার এভাবে সোফায় শুতে কষ্ট হয়না? ”

আদ্রিয়ান মুচকি হেসে বলল,

— ” হয় একটু কিন্তু তোমাকে কাছে থাকতে তার চেয়েও বেশি ভালোলাগে।”

বলেই আদ্রিয়ান ওর সেই হাসি দিলো। অনিমা সাথেসাথেই চোখ বন্ধ করে ফেললো। ঐ হাসির দিকে তাকিয়ে থাকার শক্তি নেই ওর মধ্যে। এই হাসি একটু বেশিই ভয়ংকর। এই হাসির দিকে তাকালেই ওর শ্বাস আটকে আসে, হৃদপিন্ড বিট করতে করতে বেড়িয়ে আসতে চায়। অনিমাকে এভাবে চোখ বন্ধ করে থাকতে দেখে আদ্রিয়ানও মুচকি হেসে চোখ বন্ধ করে ফেলল।

_____________________

খাটে হেলান দিয়ে বসে ল্যাপটপে আদ্রিয়ানের সব বায়োগ্রাফি, উইকপিডিয়া সার্চ করছে রিক। কিন্ত তেমন কিছুই পাচ্ছেনা যেটা দিয়ে ও আদ্রিয়ানের ব্যাপারে বিশেষ কোনো তথ্য পায়। এইখানের ইনফরমেশন অনুযায়ী আদ্রিয়ানের দুটো এপার্টমেন্ট আর একটা বাংলো আছে। কিন্তু ও ওসব জায়গায় খোজ চালিয়ে নিয়েছে কিন্তু আদ্রিয়ান ওকে রাখেনি ওখানে। তারমানে অন্যকোথাও রেখেছে। একটা রকস্টার? তার এতো ক্ষমতা যে একটা জলজ্যান্ত মেয়েকে এভাবে আড়াল করে রাখতে পারে। রিক এসব চিন্তা করতে করতেই কবির শেখ রিকের সামনে এসে বসে বলল,

— ” কী এতো ভাবছো বাবাই?”

রিক কপালে হাত রেখে একটা শ্বাস নিয়ে বলল,

— ” কোথায় এমন রেখেছে বলোতো? এমন কোন জায়গা হতে পারে?”

কবির শেইখ কিছুক্ষণ চুপ থেকে কিছু একটা ভেবে বললেন,

— ” কথা বলোনি আদ্রিয়ান এর সাথে?”

রিক সোজা হয়ে বসে গলা শক্ত করে বলল,

— ” বলেছিলাম। এটিটিউট দেখালো আমাকে, ইচ্ছে করছিলো ওখানেই শুট করে দেই কিন্তু যতক্ষণ অনিকে না পাওয়া যাচ্ছে ততোক্ষণ ওকে মারতে পারবোনা আমি।”

কবির শেখ কপাল ভাজ করে আবার কিছু ভাবতে শুরু করলেন। এরমধ্যেই রিক বলল,

— ” তবে একটা প্লাস পয়েন্ট আছে মামা।”

কবির শেখ কৌতুহলি হয়ে বললেন,

— ” সেটা কী?”

রিক বাঁকা হেসে বলল,

— ” এটিটিউট থাকলেও, গান বন্দুক এসবে অভ্যস্ত নয় ও।”

কবির শেখ হেসে দিয়ে বলল,

— ” তাহলে তো ভালোই, একটা কাজ করতে পারো?”

রিক জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে কবির শেখ এর দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” কী কাজ?”

কবির শেখ শয়তানী হেসে বললেন,

— ” ওকে তোমার লোক দিয়ে তুলে এনে ভয় দেখিয়ে কথা বেড় করতে পারো।”

রিক কিছু না বলে চুপ করে ভাবতে লাগলো। এটা করাই যায়। যেভাবে তখন বন্দুক দেখে পিছিয়ে গেলো তাতে কাজ হলেও হতে পারে।

____________________

আদ্রিয়ান একজন মিউসিক ডিরেক্টরের সাথে মিটিং সেরে একটা চেয়ারে বসে রেস্ট করছে, এরমধ্যেই ওর ফোনে ভিডিও কল এলো যাতে অরু আর তীব্র কানেক্টেড আছে। আদ্রিয়ান কলটা রিসিভ করার পরেই স্ক্রিণে তীব্র আর অরুমিতার মুখ ভেসে উঠল। অরুমিতা চিন্তিত গলায় বলল,

— ” ভাইয়া অনি কোথায়? কেমন আছে ও?”

আদ্রিয়ান একটা শ্বাস ফেলে বলল,

— ” কোথায় আছে বলতে পারব না কারণ তোমাদের ফোন ট্রাক করা হচ্ছে।”

অরুমিতা আর তীব্র পাল্টা কোনো প্রশ্ন করলোনা কারণ ওরা বেশ ভালো করে বুঝতে পারলো যে কে ফোন ট্রাক করছে আর কেনো? তাই দুজনেই মাথা নাড়লো। তীব্র নিচু গলায় বলল,

— ” এমনিতে ভালো আছেতো ও?”

আদ্রিয়ান মুচকি হাসলো তারপর বলল,

— ” চিন্তা করোনা আমি থাকতে ও কোনোদিন খারাপ থাকবে না। কিন্তু হাত পা বেধে রেখে এসছি কারণ ছাড়া রাখলেই পালাতে চাইছে।”

অরুমিতা বিরক্ত হয়ে বলল,

— ” এমন কেনো করছে ও? ওর সমস্যা কোথায়? ”

আদ্রিয়ান ওদের দিকে দেখে বলল,

— ” কিন্তু আমি জানি।”

তীব্র আর অরুমিতা দুজনেই অবাক হয়ে একসাথে বলল,

— ” কেনো?”

আদ্রিয়ান একটা শ্বাস নিয়ে বলল,

— ” বলবো পরে। আর টেনশন করোনা সি ইজ অলরাইট, আপাদত রাখছি হ্যাঁ?”

ওরা দুজনেই মাথা নাড়ল। আদ্রিয়ান কলটা কেটে দিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। ও এখন অন্যকিছু ভাবছে। নিজের মনকে শক্ত করার চেষ্টায় আছে ও। ও জানে এরপর ও যেটা করবে সেটা ওর জন্যে সহজ হবেনা কিন্তু ওকে করতেই হবে। এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ করেই ওর ফোন বেজে উঠল, আর ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়েই ওর ঠোঁটে বাকা হাসি ফুটে উঠল। ফোনটা রিসিভ করে হ্যালো বলতেই ওপর পাশ থেকে বলে উঠল,

— ” মিস্টার জুহায়ের খুব বড় ভুল করছো তুমি, আমার জিনিসে কেউ হাত দিলে আমি তাকে ছেড়ে দেই না। ”

আদ্রিয়ান একটু শক্ত গলায় বলল,

— ” মিস্টার রিক চৌধুরী। ফাস্ট অফ অল ও কোনো জিনিস নয়। আর সেকেন্ড অফ অল ও কার সেটা ডিসাইড করার সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ ওর অন্য কারো সেই অধিকার নেই।”

রিক রাগী কন্ঠে বলল,

— ” তো তুমি বলবেনা যে ও কোথায়?”

আদ্রিয়ান হেসে দিয়ে বলল,

— ” আপনি এতো ডুল হেডেট নাকি? আমি তো বলেই দিয়েছি ও আমার কাছেই আছে।”

রিক দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

— ” আমি জায়গাটা জানতে চেয়েছি।”

আদ্রিয়ান এবারেও মুচকি হেসে বলল,

— ” আদ্রিয়ানের বাড়ি।”

রিকের রাগ এবার সাত আসমানে উঠে গেলো, ও রাগে গজগজ করে বলল,

— ” আদ্রিয়ান তুমি কিন্তু আমার ট্রাক রেকর্ড জানো না। আমি কিন্তু গান নিয়ে খেলতে খুব ভালোবাসি।”

আদ্রিয়ান এবার সিরিয়াস মুখ করে কিছুক্ষণ চুপ থেকে এরপর ঠান্ডা গলায় বলল,

— ” আমার ট্রাক রেকর্ড ও আপনি জানেন না। আমি গান খেলতে আর খেলাতে দুটোই খুব ভালোবাসি।”

রিক ভ্রু কুচকে বলল,

— ” মানে?”

আদ্রিয়ান সাথেসাথেই হেসে দিয়ে বলল,

— ” আরে গানের কথা বলছি। সিঙ্গিং ইউ নো। রকস্টার তো..।”

রিক এবার রেগে সামনের টি-টেবিলে লাথি মেরে বলল।”

— ” আদ্রিয়ান?”

আদ্রিয়ান ঠোঁট চেপে একটু হাসলো। তারপর গলা ঝেড়ে বলল,

— ” রিক চৌধুরীকে একটা মেয়েকে খুজে পেতে আমার কাছে এতো আকুতি মিনতি করতে হচ্ছে? আমার বাড়িগুলো চেক করলেন, লোক দিয়ে ফলো করালেন, ফোন ট্রাক করলেন তবুও রেজাল্ট ইজ জিরো? সো স্যাড এন্ড সেইমফুল। ”

রিক চোখ বন্ধ করে একটা শ্বাস নিয়ে রাগ কন্ট্রোলের চেষ্টা করলো। আদ্রিয়ান আবার বলল,

— ” আপনাকে একটা ফ্রি এডভাইস দেই। আমাকে ফোন করে এসব ফালতু প্রশ্ন না করে তার চেয়ে বরং খোজায় কনসেনট্রেট করুন, পেলেও পেয়ে যেতে পারেন। বাই।”

এটুকু বলে রিকের উত্তরের আশা না করেই ফোন কেটে দিলো আদ্রিয়ান। আর তারপর নিজের মনেই হেসে বেড়িয়ে গেলো। ওখান থেকে নিজের একটা ফ্লাটে গিয়ে নিজের ফোনের সিম চেঞ্জ করলো, যেটা সম্পর্কে কয়েকজন ছাড়া তেমন কেউ জানেনা। এরপর ওখান থেকে বেড়িয়ে গাড়ি টা এমনভাবে ড্রাইভ করলো যাতে কেউ ওকে ফলো করলেও ওকে হারিয়ে ফেলবে। বাড়িতে পৌছে নিজের রুমে ঢুকে দরজা খুলে তাকিয়ে আদ্রিয়ান দেখলো যে অনিমা শব্দ করে কাঁদছে। আদ্রিয়ানের এবার অনিমার কান্না দেখে কষ্টের চেয়ে বেশি রাগ লাগল, এভাবে কাঁদার কী আছে? ও কী টর্চার করছে ওকে? ও কী এটা বোঝেনা যে ওর চোখের একেকটা ফোটা আদ্রিয়ানের হৃদয় থেকে কতোটা রক্ত ঝড়ায়? আদ্রিয়ান রেগে গিয়ে একটানে উঠিয়ে বসালো অনিমাকে। অনিমা কান্না থামিয়ে অবাক হয়ে তাকালো আদ্রিয়ানের দিকে। আদ্রিয়ান অনিমার হাত পায়ের বাধন খুলতে খুলতে বলল,

— ” মুক্তি চাও আমার কাছ থেকে? হ্যাঁ? খুব বেশি কষ্ট হচ্ছে আমার কাছে থাকতে? ঠিকাছে চলো, ছেড়ে দিলাম তোমাকে, যাও যেখানে ইচ্ছে। যাও!”

অনিমা কিছু না বলে আদ্রিয়ানকে জরিয়ে ধরে হিচকি দিয়ে কাঁদতে লাগল। আদ্রিয়ান ওকে সরিয়ে দিতে চাইলে ও আরো জোরে জরিয়ে ধরল আদ্রিয়ানকে। আদ্রিয়ানের রাগটা ধীরে ধীরে কমতে লাগলো। নিজেকে শান্ত করে ও অনিমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেই অনিমা কাঁদতে কাঁদতে বলল,

— ” প্লিজ আপনি আর বাইরে যাবেন না। খুব ভয় লাগে, শ্বাস আটকে আসে আমার। খালি মনে হয় যে রিক..”

এটুকু বলে অনিমা আর কিছু বলতে পারলোনা আবারও কাঁদতে লাগলো। অনিমার কথাকে সম্পূর্ণ করে আদ্রিয়ান বলল,

— ” যে রিক আমাকে মেরে ফেলবে রাইট?”

অনিমা অবাক হয়ে তাকালো আদ্রিয়ানের দিকে। আদ্রিয়ান অনিমার চোখ মুছে দিয়ে বলল,

— ” হ্যাঁ জানি, সবটা জানি। তোমার বাবার মার্ডার হওয়া থেকে শুরু করে মাদারের আশ্রমে তোমার আশ্রয় নেওয়া অবধি সব জানি আমি। আর এটাও জানি কেনো তুমি আমাকে দূরে সরিয়ে রাখছো।”

অনিমা অবাক হয়ে তাকিয়ে কাঁপা গলায় বলল,

— ” কীভাবে?”

আদ্রিয়ান শক্ত গলায় বলল,

— ” সেটা ইমপর্টেন্ট নয়। ইমপর্টেন্ট হলো এটাই যে তুমি যেই কারণে ভয় পাচ্ছো সেই ভয়ের কোনো কারণই নেই।”

অনিমা কাঁদোকাঁদো গলায় বলল,

— ” আদ্রিয়ান আপনি জানেনা আপনি কতোটা হিংস্র কতোটা ভয়ংকর ওরা। ওরা যা খুশি তাই করতে পারে। কাউকে মারতে ওদের হাত কাঁপেনা।”

আদ্রিয়ান অনিমার কপালে নিজের কপাল ঠেকিয়ে বলল,

— ” ভালোবাসা জগতের সবচেয়ে বড় শক্তি অনি। একবার ভালোবেসে দেখো তোমার ভালোবাসা আমার কবজ হয়ে যাবে। একবার কাছে টেনে দেখো তোমার স্পর্শে আমার চারপাশে সুরক্ষা বলয় তৈরী হয়ে যাবে। তুমিই তো আমার শক্তি। আর তুমি আমার সাথে থাকলে আল্লাহ ছাড়া জগতের কোনো শক্তি আমার কোনো ক্ষতি করতে পারবেনা। আমি তোমাকে ভালোবাসি। একবার সেই ভালোবাসায় বিশ্বাস করে দেখো সব সহজ হয়ে যাবে, সব।”

অনিমা চোখ খিচে বন্ধ করে আদ্রিয়ানের কপালে কপাল ঠেকিয়ে চোখের জল ফেলছে আর ওর বলা প্রতিটা শব্দকে শুনছে। ওর মনে হচ্ছে এই কথাগুলোর একটা শব্দও সত্যি না বরং চিরন্তন সত্যি।
আদ্রিয়ান আর কিছু না বলে খাবার আনিয়ে অনিমাকে খাইয়ে দিয়ে স্টুডিওতে যাওয়ার আগে অনিমার কাছে এসে বলল,

— ” তোমাকে আর বেধে রাখবোনা আমি। আমার ভালোবাসার প্রতি যদি তোমার এতোটুকু বিশ্বাস থাকে তাহলে তুমি কোথাও যাবেনা।”

এটুকু বলেই আদ্রিয়ান চলে গেলো ওখান থেকে আর অনিমা একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো ওর যাওয়ার দিকে।

_____________________

রাতে স্টুডিও থেকে ফিরে রুমে আদ্রিয়ান পুরো ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো। অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে সামনের দিকে কারণ অনিমা গায়ে একটা চাদর পেচিয়ে বসে আছে। আদ্রিয়ানকে দেখেই অনিমা বিরক্ত হয়ে তাকালো ওর দিকে। আদ্রিয়ান অনিমার কাছে গিয়ে ওর কপালে হাত দিয়ে বলল,

— ” জ্বর ও তো আসেনি এভাবে চাদর পেচিয়ে রেখেছো কেনো?”

অনিমা বিরক্ত হয়ে বলল,

— ” তো কী করবো? আপনি আমাকে এখানে তুলে নিয়ে এসছেন। অথচ আমার জন্যে যেসব পোশাক কিনেছেন সব ওই ফ্লাটেই রেখে এসছেন?”

আদ্রিয়ান আফসোস এর একটা শ্বাস নিয়ে বলল,

— ” শিট। ভুলেই গেছিলাম। কিছুই পরোনি?”

অনিমা ইতস্তত করে বলল,

— ” পরেছি।”

আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে বললো,

— ” কী?”

অনিমা কিছু না বলে মাথা নিচু করে আছে। সেটা দেখে আদ্রিয়ান নিজেই বলল,

— “এই রাতে শাওয়ার নিয়েছো কেনো?”

অনিমা মুখ ফুলিয়ে বলল,

— ” খুব অস্হির লাগছিলো তাই।”

আদ্রিয়ান এবার একটু রেগে গিয়ে বলল,

— ” তাই বলে এই রাতের বেলা শাওয়ার নেবে? চলো চুল শুকিয়ে দিচ্ছি।”

এটুকু বলে অনিমার হাত ধরতে গেলেই অনিমা চেঁচিয়ে বলে উঠল,

— ” নাহ।”

আদ্রিয়ান বিরক্ত হয়ে বলল,

— ” কী? চেচাচ্ছো কেনো?”

অনিমা চাদর টা ভালোভাবে গায়ে জরিয়ে বলল,

— ” আমি উঠতে পারবোনা।”

আদ্রিয়ান ধমকের সুরে বলল,

— ” মানে কী? এভাবে ভেজা চুলে থাকলে ঠান্ডা লাগবে ওঠো!”

বলে একটানে অনিমাকে দাড় করিয়ে দিলো যার ফলে চাদরটা গা থেকে পরে গেলো। আদ্রিয়ান অনিমার দিকে তাকিয়ে পুরো শকড হয়ে গেলো, এবার বুঝলো অনিমার রিঅ‍্যাক্ট করার কারণ। অনিমা আদ্রিয়ানের নেভি ব্লু রং এর একটা শার্ট পরে আছে। যেটা অনিমার হাটুর খানিকটা ওপরে পরছে। অনিমা মুখ কাচুমাচু করে দাঁড়িয়ে আছে। আদ্রিয়ান এবার হেসেই দিলো, ধীরে ধীরে সেই হাসি বৃদ্ধি পেতে লাগল, হাসতে হাসতে লুটোপটি খাওয়ার মতো অবস্হা। অনিমা মুখ ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আদ্রিয়ান কোনোমতে হাসি থামিয়ে বললো,

— ” এইজন্যেই ওভাবে প্যাকেট হয়ে ছিলে?”

অনিমা নিচের দিকে তাকিয়ে হাত কচলে যাচ্ছে আর মাঝেমাঝে শার্ট টা টানছে। আদ্রিয়ান হেসে বলল,

— ” ওভাবে টানলে ওটা বড় হবেনা। বাই দা ওয়ে, শার্ট টা তে কিন্তু তোমাকে অনেক হট লাগছে।”

অনিমা চোখ বড়বড় করে তাকালো আদ্রিয়ানের দিকে আর আদ্রিয়ান চোখ টিপ মারলো একটা। অনিমা সাথে সাথেই চোখ সরিয়ে নিয়ে বিড়বিড় করে বলল,

— ” অসভ্য একটা।”

আদ্রিয়ান আর কিছু না বলে অনিমাকে টুলে বসিয়ে চুল শুকিয়ে দিলো। এরপর খাবার এনে দুজনেই একসাথে ডিনার করলো। অনিমার বেশ অসস্হি হচ্ছে আদ্রিয়ানের সামনে এভাবে থাকতে বাট কিছুই করার নেই। তাই পুরোটা সময় ও একবারো আদ্রিয়ানের মুখের দিকে তাকায় নি লজ্জায়। আদ্রিয়ানও অনিমার এই লজ্জামাখা মুখটা বেশ ইনজয় করেছে আর বারবার ওকে লজ্জা দিতে নানা রকমের পিঞ্চ মারা কথা বলেছে। অনিমা বেচারী তো লজ্জায় পুরো কুকড়ে যাওয়ার অবস্হা।

গভীর রাতে বাইরে তীব্র বৃষ্টি আর বজ্রপাত হচ্ছে, আসলে বর্ষা প্রায় শেষের পথে তাই হয়তো প্রকৃতি ঢাকঢোল পিটিয়ে বর্ষাকে এইবছরের মতো বিদায় দেবার আয়জন করছে। বাজ পরার আওয়াজে চিৎকার করে উঠে বসল অনিমা প্রতিবারের মতো এবারেও হাইপার হয়ে গেছে ও। কান চেপে জোরে চিৎকার করে কাঁদছে। আদ্রিয়ান জেগেই ছিলো অনিমা এভাবে চিৎকার করতে দেখে প্রতিদিনের মতো উত্তেজিত হলোনা ও শান্তভাবেই অনিমার সামনে গিয়ে দাড়ালো। অনিমা আদ্রিয়ানকে দেখেই বসা অবস্হাতেই ওর পেট জরিয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে ওর সেইসব বকতে লাগল কিন্তু আদ্রিয়ান ওকে ধরলো পর্যন্ত না। অনিমা হিচকি দিয়ে কাদতে কাদতে বলল,

— ” আই নিড সিলিপিং পিলস। প্লিজ দিন ওটা আমি পারছিনা এসব নিতে। আমি মরে যাবো প্লিজ।”

এটা বলার সাথেসাথেই আদ্রিয়ান ওর হাত ধরে ওকে দাড় করালো এরপর টেনে রুম থেকে বার করে সিড়ি দিয়ে ছাদের ওখানে নিয়ে গেলো। এই বাড়ির ছাদে ঢোকার দরজার আগে কাঁচের ওয়াল আর দরজাটাও কাঁচের। বাইরে বিদ্যুৎ চমকানোর ঝলকানি সাথে বাজের আওয়াজ বেড়েই চলেছে,অনিমা আদ্রিয়ানকে আকড়ে ধরে বলল,

— ” প্লিজ এখান থেকে চলুন ভয় লাগছে আমার।”

আদ্রিয়ান দরজা খুলে ধাক্কা দিয়ে অনিমাকে ছাদে ঢেলে দিয়ে দরজা আবার বন্ধ করে দিলো। অনিমা দৌড়ে এসে দরজা ধাক্কাতে লাগলো, ভয়ের জন্য কথাও বলতে পারছেনা বেচারী। আদ্রিয়ান কাচের দরজা দিয়েই অনিমাকে দেখছে। অনিমা আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে কোনোমতে কাঁদতে কাঁদতে বলল,

— ” প্লিজ দরজাটা খুলুন প্লিজ। আমি মরে যাবো এখানে প্লিজ! আমার খুব ভয় করছে। আমি হাত জোর করছি প্লিজ ভেতরে নিয়ে যান আমাকে। আদ্রিয়ান প্লিজ!”

এটুকু বলে গ্লাস ধরেই ওখানে বসে পরলো অনিমা। আর আদ্রিয়ান গ্লাসের সাথে হেলান দিয়ে হাত ভাজ করে চোখ মুখ ভীষণ শক্ত করে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অনিমার দিকে, আর অনিমা পাগলের মতো চিৎকার করে যাচ্ছে।
.
#চলবে…
.
( কালকে পার্ট ডিলিট হয়ে গিয়েছিলো তাই দিতে পারিনি, আর একি কাহিনী আবার লিখতে খুবই বিরক্ত লাগছিলো। আজ যতোবার লিখতে বসেছি ততোবারি মেজাজ বিগড়ে গেছে। লিখতেই মন চাইছিলোনা তবুও ধৈর্য ধরে একটু একটু করে লিখেছি, দেরী হয়ে গেছে সেইজন্যেই। যাই হোক
হ্যাপি রিডিং ?)

বর্ষণের সেই রাতে ❤ পর্ব: ৩১

0

বর্ষণের সেই রাতে ❤
পর্ব: ৩১
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

.
আদ্রিয়ান সারা রুমে চোখ বুলিয়ে দেখলো অনিমা নেই। ও তো দরজাটা বাইরে থেকে লক করে দিয়েছিলো তাহলে? মেয়েটা গেলো কোথায়? বেশ ভয় পেয়ে গেলো ও। ওয়াসরুমের দিকে তাকিয়ে দেখলো দরজা খোলা আছে। তারমানে ওয়াসরুমেও যায়নি? তাহলে গেলো কোথায় আদ্রিয়ানের এবার কলিজা কেঁপে উঠতে শুরু করলো, সাথে ঘাম ও বেড়োতে শুরু করলো। হাত দিয়ে নাকের ঘাম মুছে একটা শ্বাস নিয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে বেডে তাকিয়ে দেখলো বেডে চাদরটা নেই, সেটা দেখে ভ্রু কুচকে গেলো আদ্রিয়ানের। হঠাৎ কিছু একটা ভেবে ও তাড়াহুড়ো করে ব্যালকনিতে চলে গেলো। আর সেখানে গিয়ে যা দেখলো তাতে ও হাসবে না কাঁদবে সেটাই বুঝতে পারছেনা। অনিমা বিছানার চাদরটা রেলিং এর সাথে বেধে, মুখ ফুলিয়ে একবার নিচের দিকে দেখছে আরেকবার চাদরটার দিকে। অনিমা পালাতে চাইছে তাতে ওর রাগ হচ্ছে ঠিকি কিন্তু পালানোর পদ্ধতিটা দেখে হাসিও পাচ্ছে। আদ্রিয়ান হাসিটা চেপে রাগটাকেই প্রাধান্য দিয়ে মুখটা সিরিয়াস করে বলল,

— ” ঐ চাদরে কিছুই হবেনা।”

অনিমা চমকে পেছনে তাকালো। পেছনে তাকিয়ে দেখলো আদ্রিয়ান রাগী মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু অনিমা আদ্রিয়ানকে দেখে ভয় পাওয়ার বদলে কেদেঁ দিলো। অনিমাকে কাঁদতে দেখে আদ্রিয়ান অবাক হয়ে ওর কাছে এসে ওর বাহুতে হাত রেখে বলল,

— ” কী হয়েছে কাঁদছো কেনো। আমি কিছু বলবোনা ডোন্ট ক্রাই।”

অনিমা কিছু না বলে আদ্রিয়ানকে জরিয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো। আদ্রিয়ান অবাক হয়ে গেছে অনিমার এমন ব্যবহারে। ও কিছু বলবে তার আগেই অনিমা বললো

— ” এমন কেনো আপনি? সকালে উঠে আপনাকে দেখতে না পেয়ে আমার কী অবস্হা হয়েছিলো জানেন আপনি? ফোনটাও ফেলে দিয়েছেন? আমার কতোটা টেনশন হচ্ছিলো জানেন আপনি?”

অনিমার কথা শুনে আদ্রিয়ান অবাকের শেষ পর্যায়ে চলে গেলো। হঠাৎ এরকম কথা কেনো বলছে? তবে ওকে নিয়ে অনিমা চিন্তা করছে এটা ভেবেই এক অদ্ভুত ভালোলাগা কাজ করছে ওর মধ্যে। ও অনিমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,

— ” আমিতো রোজই বেরোই এতো টেনশন করার কী আছে?”

অনিমা আরো শক্ত করে আদ্রিয়ানকে জরিয়ে ধরে বলল,

— ” আপনি বুঝতে পারছেন না আমি ভেবেছিলাম রিক আপন…”

এটুকু বলে থেমে গেলো অনিমা। আদ্রিয়ান অনিমাকে সরিয়ে নিজের সামনে দাড় করিয়ে ভ্রু কুচকে বলল,

— ” কী ভেবেছিলে রিক আমাকে কী?”

অনিমা নিজেকে সামলে ধাক্কা দিয়ে আদ্রিয়ানকে নিজের থেকে সরিয়ে দিয়ে বলল,

— ” কিছুনা। যেতে দিন আমাকে।”

আদ্রিয়ান অনিমার কাছে গিয়ে ওকে কোলে তুলে নিয়ে বলল,

— ” আমি আগেও বলেছি আর এখোনো বলছি আমার হাত থেকে ছাড়া পাওয়ার কথা ভূলে যাও।”

অনিমা নড়াচড়া করতে করতে বলল,

— ” আপনি আমাকে এভাবে আটকে রাখতে পারেন না।”

আদ্রিয়ান অনিমাকে কোলে নিয়ে রুমে যেতে যেতে বলল,

— ” আমি কী কী করতে পারি সেটা সম্পর্কে তোমার কোনো ধারণাই নেই।”

তারপর অনিমাকে বেডে নামিয়ে ওর দিকে বেশ অনেকটা ঝুকে বলল,

— ” আর সেটা যদি তুমি সম্পর্কিত হয়। তাহলে আমি সব করতে পারি। সব মানে সব। ”

অনিমা ছলছলে চোখে তাকিয়ে আছে আদ্রিয়ানের দিকে। আদ্রিয়ানের প্রতিটা শব্দ ওর হৃদয়ে গিয়ে লাগে। এরকম একটা মানুষকে নিজের করে পাওয়া ওর কাছে সৌভাগ্যের ব্যাপার। কিন্তু ওর আব্বুর মৃত্যুর সেই দিনটা ও আজও ভুলতে পারেনা যদি ওর আব্বুর মতো আদ্রিয়ানকেও যদি ওরা। ওসব ভাবলেও ওর আত্মা কেঁপে ওঠে। অনিমা আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে কাঁদো কাঁদো গলায় বলল,

— ” আপনি কথাটাই বুঝতেই চাইছেন না। আপনি জানেননা যে..”

আদ্রিয়ান অনিমার কথা শেষ করতে না দিয়ে ওর চুলগুলো কানে গুজে দিয়ে বলল,

— ” যেটুকু বোঝার বুঝে নিয়েছি। আর আমি শুধু এটুকুই জানি যে আমি তোমাকে ভালোবাসি, আর তুমি আমার কাছেই থাকবে আর আর কিছু জানার দরকার নেই আমার।”

অনিমা শুধু তাকিয়ে আছে আদ্রিয়ানের দিকে। ও কী বলবে? আদ্রিয়ানের কথাগুলোই যে ওকে এক অন্য জগতে নিয়ে যায়, যেখানে থেকে আর ফিরতেই ইচ্ছে করেনা ওর। আদ্রিয়ান অনিমাকে ছেড়ে ওর সামনে বসে হেসে দিয়ে বলল,

— ” বাই দা ওয়ে তুমি বিছানার চাদর ব্যালকনিতে বেধে পালাতে চাইছিলে? সিরিয়াসলি?”

বলে শব্দ করে হাসতে লাগল আদ্রিয়ান। অনিমা মুখ ফুলিয়ে বলল,

— ” হ্যা তো এতো হাসার কী আছে?”

আদ্রিয়ান কোনরকমে হাসি থামিয়ে বলল,

— ” সেভেন্ত ফ্লোর থেকে কেউ রেলিং এ চাদর বেধে নামবে। ওয়াও আমেজিং। একশন ফিল্মকেও হার মানাবে দেখছি। নিচে বা চারপাশে তাকিয়েও দেখোনি? ”

বলেই আবার হাসতে লাগল। অনিমা মাথা নিচু করে বলল,

— ” আসলে তাড়াহুড়ো করে করছিলাম তাই খেয়াল করিনি।”

আদ্রিয়ান একটা শ্বাস ফেলে হাসি মুখেই বলল,

— ” হুমম। তারপর ভালোভাবে খেয়াল করে দেখলে যে এখান থেকে নিচে পরলে নিচে নয় ডিরেক্ট ওপরে যাবে তাইতো?”

অনিমা বোকার মতো হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়লো। আদ্রিয়ান হেসে অনিমার চুল নেড়ে দিয়ে বলল,

— ” পাগলী।”

আদ্রিয়ান ভালোভাবে অনিমার চুলে হাত লাগিয়ে বলল

— ” চুল ভেজা? সাওয়ার নিয়েছো?”

অনিমা মাথা নাড়লো। আদ্রিয়ান কিছু একটা ভেবে বলল,

— ” যা পরা ছিলে সেটাই পরেছো তাইনা? আমার মাথাতেই ছিলোনা তোমার পোশাকের কথা। নো প্রবলেম আজকেই আনিয়ে নেবো।”

অনিমা কিছু বলবে তার আগেই আদ্রিয়ান টি টেবিলের দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” যা ভেবেছিলাম তাই, কিচ্ছু খাওনি এখোনো?”

অনিমা চুপ করে বসে আছে কিছু বলছেনা আদ্রিয়ান খাবারের প্লেটটা নিয়ে অনিমার মুখের সামনে ধরতেই অনিমা সরিয়ে দিয়ে বলল,

— ” আমি থাকতে চাইনা এখানে প্লিজ যেতে দিন আমাকে।”

আদ্রিয়ানের এবার রাগ উঠে গেলো। ও শব্দ করে প্লেটটা ট্রে তে রেখে অনিমার কাছে গিয়ে ওকে একটানে নিজের কাছে এনে বলল,

— ” একটা এক্সট্রা কথা বলবেনা এখন চুপচাপ খেয়ে নাও। একটা শব্দ করলে আমার চেয়ে খারাপ এই মুহূর্তে আর কেউ হবেনা।”

অনিমা কিছু না বলে ছলছলে চোখ নিয়েই মাথা নিচু করে ফেলল। আদ্রিয়ানের বেশ খারাপ লাগল, ওর অতীত জানার পর সামান্যতম কষ্টও দিতে চায়না ও ওকে। কিন্তু কিছু করার নেই ওর এই মুহূর্তে ওকে রুড হতেই হবে। আদ্রিয়ান অনিমাকে খাইয়ে দিয়ে। উঠে কোথাও একটা গেলো অনিমা ভাবছে যে রিক যদি আদ্রিয়ানের কোনো ক্ষতি করে দেয় তাহলে? না ও এখানে থাকতে পারেনা, রিক তাহলে আদ্রিয়ানকে মেরে ফেলবে। আদ্রিয়ান নেই এখন এই সুযোগেই ওকে পালাতে হবে। এসব ভেবে রুম থেকে বেড়িয়ে মেইন ডোরের কাছে গিয়ে দরজাটা খুলে বেড়িয়ে লিফ্টের বাটন প্রেস করতে যাবে তার আগেই কেউ ওর হাত ধরে ফেলল। ও পেছনে তাকিয়ে দেখে আদ্রিয়ান চোখ মুখ শক্ত করে দাড়িয়ে তাকিয়ে আছে ওর দিকে, আদ্রিয়ান এবার সত্যিই ভীষণ রেগে গেছে। অনিমা কাঁপাকাঁপা গলায় বলল,

— ” আদ্রিয়ান আমি…”

অনিমা আর কিছু বলার আগেই আদ্রিয়ান ওকে ভীষণ জোরে একটা ধমক দিলো। অনিমা হালকা কেঁপেও উঠলো ওর ধমকে। আর কোনো কথা বলার সাহসও পেলো না তাই মাথা নিচু করে ফোঁপাতে লাগল। আদ্রিয়ান অনিমার হাত ধরে টেনে ভেতরে নিয়ে গিয়ে খাটের ওপর একপ্রকার ছুড়ে মারলো। তারপর সেই দড়িগুলো নিয়ে আবারও ওর হাত পা বেধে দিলো। অাদ্রিয়ানের ওই ধমকের পর আর টু শব্দ করার সাহস পেলোনা অনিমা শুধু অসহায়ভাবে তাকিয়ে রইলো আদ্রিয়ানের দিকে। আদ্রিয়ান রাগী গলায় বলল,

— ” তুমি এটাই ডিজার্ব করো। যতোক্ষণ পর্যন্ত না তুমি এটা বুঝতে চাইছো যে তোমাকে আমার কাছেই থাকতে হবে ততোক্ষণ তুমি এভাবেই থাকবে।”

_____________________

রিক সমস্ত জায়গায় খোজ নিয়ে নিয়েছে কিন্তু কোথাও খুজে পাচ্ছেনা অনিমাকে। ঐ আদ্রিয়ান আবরার জুহায়ের কোথায় এমন লুকিয়ে রেখেছে যে ও, রিক চৌধুরী খুজে পাচ্ছেনা। এসব ভেবেই রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে রিকের। একটার পর একটা গ্লাস ফাকা করছে ও। রিকের একজন লোক এসে বলল,

— ” ভাই এডি কে বেরোতে দেখা গেছে।”

রিক গ্লাসে চুমুক দিয়ে শক্ত গলায় বলল,

— ” কোথায় আছে ওরা দুজন?”

লোকটা মাথা নিচু করে বলল,

— ” ফলো করতে চাইছিলাম কিন্তু লোকটা একটু বেশিই চালাক, এমনভাবে ড্রাইভ করলো যে কোথা থেকে কোথায় চলে গেলো কিছুই বুঝতে পারলাম না।”

রিক গ্লাসটা আছাড় মেরে ভেঙ্গে ফেললো আর রাগে গজগজ করে বলল,

— ” এতোগুলো গাধা মিলে ঐ একটা ছেলের বুদ্ধির সাথে পেরে উঠলি না?”

লোকটা কিছু না বলে মাথা নিচু করে আছে, রিক রাগী গলায় বলল,

— ” এখন চেহারা না দেখিয়ে যা এখান থেকে।”

লোকটা চলে যেতেই রিক রাগে গজগজ করতে লাগল। মাথায় রক্ত উঠে আছে ওর। কিছুক্ষণ চুপ থেকে ও চিন্তা করলো যে না এভাবে না ওকে এবার নিজেকেই কিছু করতে হবে। ও এবার নিজে কথা বলবে ঐ আদ্রিয়ান আবরার এর সাথে। মাথার সামনে বন্দুক ধরলে সব সুরসুর করে বলে দেবে।

_____________________

আস্তে আস্তে চোখ খুলে তাকিয়ে উঠে বসে অনিমা। বিকেলে খেয়ে ঘুমিয়ে পরেছিলো অনিমা কিন্তু এখন উঠে চারপাশে তাকিয়ে অনিমা নিজেকে এক সম্পূর্ণ আলাদা জায়গায় আবিস্কার করলো। উঠে দাড়িয়ে দেখলো রুমটা লক করা। পাশের দেয়ালটা যেটা দিয়ে ব্যালকনিতে যায় সেটা কাচের, রুমটাও অনেক সুন্দর সাজানো গোছানো। অনিমা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। রুমে আদ্রিয়ানের ছবি দেখে বুঝতে পারলো এটা আদ্রিয়ানেরই বাড়ি কিন্তু ও ভাবছে যে আবার কোথায় এসে পরলো?

_____________________

একটা কফিশপে মুখোমুখি বসে আছে আদ্রিয়ান আর রিক। আদিব আর আশিস আদ্রিয়ানের পেছনে দাড়িয়ে আছে আর রিকের পেছনে রিকের লোকেরা। সকলের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে নিরবতা ভেঙ্গে আদ্রিয়ান বলল,

— ” মিস্টার রঞ্জিত চৌধুরীর একমাত্র ছেলে রিক চৌধুরী হঠাৎ একজন রকস্টার কে কেনো ডাকল?”

রিক টেবিলে হাত রেখে শক্ত গলায় বলল,

— ” অনিমা কোথায়?”

আদ্রিয়ান এই প্রশ্নটাই আশা করছিলো রিকের কাছে। তবুও খানিকটা আলসেমী ঝেরে বলল,

— ” অনিমা কোথায়? হুমমম গভীর প্রশ্ন। কোথায় বলুনতো?”

রিক রেগে গিয়ে টেবিলে বাড়ি মেরে বলল,

— ” মজা করছেন আমার সাথে?”

আদ্রিয়ান হেসে দিয়ে বলল,

— ” আরে আরে রাগ করছেন কেনো? অনিমা কোথায় আছে সেটা দিয়ে আপনার কী কাজ?”

রিক আর ধৈর্য ধরে রাখতে পারলোনা। পেছন থেকে গানটা বের করে আদ্রিয়ানের দিকে গান তাক করে বলল,

— ” এবার নিশ্চই বলবে মিস্টার জুহায়ের?”

আদ্রিয়ান একটু পিছিয়ে গিয়ে বলল,

— ” আরে আরে আপনিতো সোজা গানে চলে এলেন? এটা দিয়ে কী হবে বলুন। হ্যাঁ অনিমা আমার কাছেই আছে।”

রিক হেসে দিয়ে বলল,

— ” গান দেখেই ভয় পেয়ে গেলে? বাহ।”

আদ্রিয়ান সোজা হয়ে বসে হালকা গলা ঝেড়ে বলল,

— ” দেখুন এসব গান টান দিয়ে আমাকে মেরে ফেললে পরে অনিমার খোজ পাবেন কীকরে? তারচেয়ে বরং খুজুন। আপনার তো খুব পাওয়ার।”

— ” তো তুমি বলবেনা ও কোথায় আছে?”

আদ্রিয়ান মেকি হেসে বলল,

— ” বললাম তো আমার কাছেই আছে খুজে নিন। কিন্তু গানটা নামিয়ে।”

রিক বাঁকা হেসে বলল,

— ” এই সাহস নিয়ে আমার সাথে লাগতে এসছো। তবে যাই হোক অনিমাকে তো আমি খুজে নেবোই।

আদ্রিয়ান গানটা হাত দিয়ে নামিয়ে দিয়ে হেসে বলল,

— ” বেস্ট অফ লাক।”

রিক রেগে উঠে চলে গেলো। আশিস আর আদিব আদ্রিয়ানের পাশে বসল। আশিস আদ্রিয়ানকে খোচা মেরে বলল,

— ” ভাই? বন্দুক দেখে ভয় পেয়ে গেছো?”

আদ্রিয়ান আশিসের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে তিনজন একসাথে শব্দ করে হেসে দিলো যেনো ওদের সামনে সবচেয়ে বড় জোক বলা হয়েছে। কিছুতেই হাসি থামাতে পারছেনা।
.
#চলবে…

বর্ষণের সেই রাতে ❤ পর্ব- ৩০

0

বর্ষণের সেই রাতে ❤
পর্ব- ৩০
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

.
সব সত্যিটা জানার পর ও ঠিক করে থাকবেনা এখানে আর ও। ও কিছুতেই ওর বাবার খুনির ছেলের সাথে থাকতে পারবেনা আর তারচেয়েও বড় কথা রিক খুব খারাপ ব্যবহার করে ওর সাথে। ওর কথার নড়চড় হলেই অমানুষের মতো মারে। একটু সাজার কারণে মুখে গরম জল ঢেলে দেওয়া, ছেলেদের সাথে কথা বলেছে বলে পিঠে গরম শিক চেপে ধরা, এসব সহ্য সীমার বাইরে চলে গেছিলো ওর কাছে। অনিমা সেদিন রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে প্রচুর কেঁদেছিলো। এটা ভেবে যে ওর নিজের মামা মামী ওর সাথে এরকম করেছে। সেদিন রাতে সবাই ঘুমিয়ে পরার পরেই ওই বাড়ি থেকে পালিয়ে যেতে চেয়েছিলো ও কিন্তু ও জানতোনা যে রিকের লোকেরা ওর ওপর নজর রাখছিলো। ও বেড়িয়ে যেতেই ঐ লোকেরা রিক কে খবরটা দেয়।

অনিমা রাস্তা দিয়ে একপ্রকার দৌড়চ্ছে, ও চায়না আর এই নরকে থাকতে । হঠাৎ ওর সামনে কালো একটা গাড়ি থামে। গাড়িটা দেখেই ওর আত্মা শুখিয়ে যায় কারণ গাড়িটা রিকের। রিক গাড়ি থেকে নেমে ওর সামনে এসে দাড়ায়। রিককে দেখে অনিমা শক্ত হয়ে দাড়িয়ে ভয়ে একদম সিটিয়ে আছে। রিকের চোখ মুখ লাল হয়ে আছে রাগে। রিক সর্বশক্তি দিয়ে একটা থাপ্পড় মারলো অনিমাকে। থাপ্পড়টা এতোই জোরে ছিলো যে ও নিচে পরে গেলো। রিক অনিমার হাত ধরে টেনে তুলে চুলের মুঠি ধরে বলল,

— ” খুব সাহস হয়ে গেছে তাইনা? পালাতে যাচ্ছিলে?”

অনিমা কাঁদতে কাঁদতে হাত জোড় বলল,

— ” প্লিজ যেতে দিন আমাকে। আমি হাত জোড় করছি, প্লিজ।”

অনিমার এই কথায় রিকের করুণা হওয়ার পরিবর্তে রিকের রাগ আরো বৃদ্ধি পেলো। ও অনিমার চুল আরো জোরে টেনে ধরে বলল,

— ” যাওয়াচ্ছি তোমাকে। চলো।”

বলে অনিমাকে টেনে গাড়িতে তুললো তারপর ওকে বাড়িতে এনে অনিমার রুমে নিয়ে ওর সামনে দাড় করিয়ে বলল,

— ” আমার হাত থেকে পালাতে চাও? আমার হাত থেকে।”

বলে আবারো চড় মারলো ওর গালে। ‘আমার অনুমতি ছাড়া আর বেড়োবে বাড়ি থেকে? বলো?’ এরকম নানা কথা বলতে বলতে একটার পর একটা চড় মারতে শুরু করলো। এদিকে অনিমার ঠোটের কোণ ফেটে রক্ত পরছে, গালে রক্ত জমাট বেধে গেছে সেই নিয়ে রিকের কোনো মাথাব্যাথা নেই। আর যতোক্ষণ ওর রাগ না কমেছে ততোক্ষণ মেরেছে মেয়েটাকে। আর রিক চলে যাওয়ার পর ওর মামীও মেরেছে ওকে। মানুষ কতোটা নির্মম হতে পারে তা অনিমা নিজের সাথে ঘটা ঘটনা দিয়েই বুঝতে পারছে।

এভাবেই দিন কাটছে। অনিমার ওনার্স ফাইনাল ইয়ারের এর ফাইনাল এক্সামও দিয়ে ফেলেছে। শুরুতে ও কয়েকবার পালানোর চেষ্টা করেছে কিন্তু ওর মামা মামীর জন্যে পারেনি, ওইদিনের পর রিক ওর মামা মামীকে হুমকির স্বরে বলে দিয়েছে যাতে পালাতে না পারে আর চেষ্টা করলেও যাতে ওকে জানানো হয়। অনিমা যতোবার পালানোর চেষ্টা করতো ওর মামা মামী ওকে আটকে রিককে বলে দিতো, আর রিক ততোবার এসে শাস্তির নাম করে অনিমার সাথে অমানুষের মতো ব্যবহার করতো। একপর্যায়ে অনিমা নিজেই সেই চেষ্টা থামিয়ে দিয়েছে কারণ তাতে কোণো লাভ হয়নি বরং ওকে আরো টর্চার সহ্য করতে হয়েছে। এদিকে অর্কের মাথায় অন্যকিছু চলছে। অনিমার অনার্স শেষ হয়ে গেছে এখন তো রিক ওকে নিয়ে যাবে। যেখানে অনিমা ওর হওয়ার কথা ছিলো সেখানে এখন ঐ রিককে দিতে হবে? টাকার লোভও সামলাতে পারেনি তাই রাজি হয়েছে। রিকের ভয়ে এই দুই বছর অনিমার সাথে আগের মতো অতোটা বাজে ব্যবহার করে নি। কিন্তু ওর তো অনিমাকে চাই সেটা এক রাতের জন্যেই হোক না কেনো? আর রিক থোরিই জানতে পারবে এসব? এগুলো চিন্তা করে সঠিক সুযোগের অপেক্ষা করতে লাগল ও। একদিন রাহেলা বেগমের বাড়ির এক অনুষ্ঠানে ওনারা সকলেই চলে গেলো। কিন্তু অনিমাকে নেয় নি, কখনো নেয়ও না ওকে, ও তো ছিলো ঐ বাড়ির ফেলনা বস্তু যেটাকে এক কোণে ফেলে রাখা হয়। রাতে অনিমা একা একাই নিজের রুমে গুটিসুটি মেরে বসে আছে? কারণ বাইরে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে আর বাজ পরছে যার ফলে কারেন্টও নেই, মোমবাতি জ্বালিয়ে রেখেছে। ওর আব্বুর খুন হওয়ার সেই রাতের পর থেকে বাজ পরলে খানিকটা ভয় লাগে ওর। মনে হয় এই বাজ পরা ওর জন্যে অশুভ বড্ড বেশিই অশুভ। হঠাৎ দরজা খোলার আওয়াজ শব্দে চমকে তাকালো অনিমা। উঠে দাড়িয়ে দেখে অর্ক রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করছে। অনিমা ঘাবড়ে গিয়ে বলল,

— ” ভাইয়া তুমি এখানে? তুমি যাও নি?”

অর্ক বাকা হেসে অনিমার দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” ভাবলাম তুই এখানে একা একা বোর হচ্ছিস তাই তোকে একটু কম্পাপি দেই।”

এটুকু বলে অনিমার দিকে বাকা হেসে এগোতে লাগল অনিমা বেশ ভালোই বুঝতে পেরেছে যে ওর মতলব টা কী, কিন্তু ও কী করবে সেটাই বুঝতে পারছেনা, শুধু পিছিয়ে যাচ্ছে। অর্ক ওর কাছে আসতেই ও ছিটকে দূরে গিয়ে বলল,

— ” ভাইয়া কী করছো এসব? প্লিজ এরকম করোনা?”

অর্ক অনিমার হাত ধরে নিজের কাছে এনে বলল,

— ” কেনো? রিক যদি করতে পারে তাহলে আমি কেনো পারবোনা?”

অনিমা নিজেকে ছাড়নোর চেষ্টা করতে করতে বলল,

— ” পাগল হয়ে গেছো তুমি? কীসব বলছো? ছাড়ো আমাকে।”

অর্ক একটা শয়তানী হাসি দিয়ে বলল,

— ” ছাড়ার জন্যে ধরেছি নাকি?”

অর্ক অনিমার কাছে আসতে নিলেই অনিমা ওকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দ‍ৌড়ে পালাতে চাইলো কিন্তু তার আগেই রিক ওর কুর্তির স্লিভ ধরে টান মারলো, ফলসরূপ ওর স্লিভ ছিড়ে গেলো আর তাল সামলাতে না পেরে ফ্লোরে পরে গেলো। অনিমা বসে বসেই হালকা পিছিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলল,

— ” ভাইয়া প্লিজ আমার কাছে এসোনা, যেতে দাও আমায়।”

অর্ক ওর কথা কানে না নিয়ে এগিয়ে আসতে নিলেই অনিমা অনেক কষ্টে উঠে আবারো পালাতে নিলে অর্ক ওর হাত ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে একটা থাপ্পড় মারলো আর অনিমা বেডের ওপর পরে গেলো।

___________________

মাদার একটা শ্বাস নিলেন কারণ ওনার গলা ধরে আসছে, উপস্থিত সকলের চোখ দিয়েই জল গড়িয়ে পরছে। মানুষ কতোটা নির্মম, নোংরা আর খারাপ হতে পারে সেটা অনিমার অতীত না জানলে বুঝতেই পারতোনা ওরা। ওরা ভাবতেও পারছেনা ঐ মেয়েটা এতোকিছু সহ্য করে বেঁচে ছিলো? কতোটা নির্মম এই পৃথিবী। প্রত্যেকেরই বুকের ভেতর ভার ভার হয়ে আসছে, চাপা কষ্ট হচ্ছে একটা। তবে একজনের চোখে তেমন জল নেই শুধু চোখ দুটো হালকা ছলছল করে উঠছে, তবে যেটা আছে সেটা হলো রাগ। তীব্র রাগে ফেটে পরছে ও, চোখ লালচে হয়ে আছে, সারাশরীর থরথর করে কাপছে , যেনো এক্ষুনি সব শেষ করে দেবে, আর সেটা হলো আদ্রিয়ান। আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে ওখানের সবাই চমকে উঠলো, সাথে ভয়ও পেয়ে গেলো। মাদার আদ্রিয়ানের কাধে হাত রেখে বলল,

— ” কুল ডাউন মাই চাইল্ড। শান্ত হও।”

আদ্রিয়ান চোখ বন্ধ করে কয়েকটা শ্বাস নিয়ে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করলো। রাইমা কাঁপা কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করলো,

— ” অর্ক কী সেদিন ওর সাথে…”

রাইমা নিজেও আর কিছু বলতে পারলোনা ওর গলা ধরে আসছে । আদ্রিয়ান হাত মুষ্টিবদ্ধ করে রেখেছে, এরপরে কী হয়েছিলো সেটা কল্পনাও করতে চাইছেনা উপস্থিত কেউ। মাদার একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,

— ” এরপর অর্ক..”

আদ্রিয়ান মাদারকে থামিয়ে দিয়ে কাঁপা গলায় বলল,

— ” আমি আর শুনতে চাইনা।”

আদ্রিয়ান নিচের দিকে তাকিয়েই বলল কথাটা, এখনো কাঁপছে ও, এরপরে কী হয়েছে সেটা শোনার সাহস ওর নেই। মাদার আদ্রিয়ানকে আশ্বস্ত করে বলল,

— ” রিল্যাক্স। সবসময় যে খারাপ কিছুই হবে সেটা ভাবাও ঠিক না তাইনা?”

আদ্রিয়ান ছলছলে চোখ নিয়ে তাকালো মাদারের দিকে। মাদার আদ্রিয়ানের মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,

— ” কিন্তু সেদিন অনিমা নিজেকে বাঁচিয়ে নিয়েছিলো। মেয়েদের সম্মান তাদের সবচেয়ে দুর্বল জায়গা আবার সবচেয়ে শক্তিশালী জায়গাও। যখন সেখানেই কেউ হাত দেয় তখন মেয়েদের মধ্যে এমনিতেই এক শক্তি চলে আসে। অনিমার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। অর্ক ওর কাছে আসার আগেই ও টি টেবিল থেকে ফ্লাওয়ার ভাস নিয়ে সর্বশক্তি দিয়ে আঘাত করেছিলো রিকের মাথায় , এতে অর্কর তেমন কিছু না হলেও কিছু সময়ের জন্যে ঘায়েল হয়ে গেছিলো। সেই সুযোগেই অনিমা দৌড়ে রুমটা বাইরে থেকে লক করে বাইরে বেরিয়ে যায়। ওর সমস্ত ধৈর্য আর সহ্যের সীমা পার হয়ে গেছিলো সেদিন। আর ও ঠিক করে নিয়েছিলো যে ও আর কখনো ফিরবেনা ওই নরকে তাতে যাই হোক না কেনো। ওই হয়তো প্রথম মেয়ে যে ঝড় বৃষ্টির রাতে বাড়ি থকে রাস্তায় বেরিয়েছিলো নিজেকে বাঁচানোর জন্যে। কিন্তু আমাদের সমাজ তো আর এতো সহজ নয়। একটু বেশিই নিষ্ঠুর। রাস্তাতেও কিছু মাতাল ছেলেদের পাল্লায় পরতে হয়েছে ওকে। ওদের কাছ থেকে পালাতে গিয়ে রাস্তাতেই অজ্ঞান হয়ে পরে যায় ও, এতো কিছু সহ্য করার ক্ষমতা হয়তো ওর মস্তিস্কের আর ছিলো না। কিন্তু সৌভাগ্যবসত সেদিন ঐ রাস্তা দিয়েই সিলেট থেকে ফিরছিলাম আমি, এটাই হয়তো জিজাসের ইচ্ছে ছিলো, যদি সময়মতো ঐ দিন আমি না পৌছাতাম তাহলে হয়তো..”

আদ্রিয়ানের চোখে থেকে ওর অজান্তেই এক ফোটা পানি গড়িয়ে পরলো, আজ খুব বেশিই কষ্ট হচ্ছে ওর। মাদার একটু থেমে বললেন,

— ” ওকে সেদিন আমি আমার কাছে নিয়ে আসি। হসপিটালে এডমিট করার একদিন পর জ্ঞান ফিরেছিলো ওর। আর একসপ্তাহ পর্যন্ত কোনো কথা বলেনি ও একটা শব্দও উচ্চারণ করেনি। যেনো ওর মধ্যে কোনো অনুভূতিই কাজ করছেনা। ওকে এভাবে দেখে বুক ফেটে যাচ্ছিলো আমার। যেই মেয়েটা সবসময় দুষ্টুমি খুনসুটি করে বেড়াতো তার এভাবে চুপ হয়ে যাওয়া দেখে সত্যিই অবাক হয়েছিলাম। আমিতো ভেবেছিলাম মামা বাড়িতে হয়তো ভালো আছে কিন্তু ভাবতেও পারিনি যে ও এইরকম ভালো থাকবে। এরপর ধীরে ধীরে ও সুস্হ হলো কিন্তু আগের মতো আর হলোনা একেবারে চুপচাপ, শান্ত হয়ে গেছিলো, অল্পেই ভয় পেয়ে যেতো, সবাইকে এড়িয়ে চলতো। আর ওর সবচেয়ে বড় ভয় ছিলো বজ্রপাত আর ঝড়। এগুলো দেখলেই ও ভয়ে সিটিয়ে যেতো, ঐ সময় ওর মনে হতো ওর সাথে আবার এসব হবে। ”

মাদার একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সবার দিকে তাকালেন সবার মুখই অন্ধকার আচ্ছন্ন। মাদার আবার বললেন,

— ” ওর সব সার্টিফিকেট আর বায়োডেটা গুলো জিডি করে তারপর ওকে ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি করে দেই মাস্টার্স কম্প্লিট করার জন্যে। ওখানেই তীব্র আর অরুমিতার সাথে আলাপ হয় ওর। এরপর এখানে থেকেই ওর স্টাডি কম্প্লিট করে জব জয়েন করে, তিনজন একই সাথে ইন্টারভিউ দিয়েছিলো আর তিনজনেরই হয়ে গেছে। আর জব পাওয়ার পর অনিমা আর আশ্রমে থাকেনি ওর মতে ও আমার ওপর বোঝা হয়ে থাকছে, সত্যি বলতে আমারও কষ্ট হচ্ছিলো কিন্তু ওতো আমার মেয়ের মতো, সেইজন্যে ওকে নিজের কাছে আগলে রেখেছি। কিন্তু ও তো ওই, ফ্লাট ভারা নিয়ে ওখানেই থাকতে শুরু করলো। কিন্তু একটা কথা বুঝলাম না স্টুডেন্ট লাইফে ওকে খুজে না পাওয়ার কারণ আছে কিন্তু জার্নালিস্ট হবার পরে তো ওকে খুজে পেয়ে যাওয়ার কথা যদি খুজে থাকে তো। না খুজলে পেতোনা কারণ এতো এতো জার্নালিস্টদের মধ্যে কজনকেই বা মন্ত্রী মিনিস্টাররা দেখে বা চেনে? কিন্তু না খোজার কারণ কী? হঠাৎ করেই বা কীকরে পেয়ে গেলো? সেটাই প্রশ্ন। ”

আদ্রিয়ান ঠান্ডা গলায় বলল,

— ” কেউ হয়তো অনিমাকে না খুজে নিজের স্বার্থ খুজছিলো।”

উপস্থিত কেউ ওর কথা বুঝলোনা, কী বলতে চাইলো আদ্রিয়ান? মাদার অবাক হয়ে বললেন,

— ” মানে?”

আদ্রিয়ান হালকা হেসে বললো,

— ” কিছুনা মাদার। থ্যাংকস আ লট। এভাবে হেল্প করার জন্যে। আমরা উঠছি তাহলে আজ।”

মাদার উঠে দাড়িয়ে বললেন,

— ” আরে এখনি চলে যাবে কিছু খেয়ে যাও।”

আদ্রিয়ান উঠে দাড়িয়ে বলল,

— ” না মাদার মেয়েটা একা আছে এপার্টমেন্টে। যদিও রুমে খাবার দিয়ে এসছি। কিন্তু যেয়ে হয়তো দেখবো কিছুই খায়নি।”

মাদার হেসে দিয়ে আদ্রিয়ানের মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,

— ” আমি জানিনা ঐ ভয়ংকর প্রাণীগুলোর সাথে লড়ার ক্ষমতা তোমার কতোটুকু আছে কিন্তু আমার কেনো জানিনা মনে হচ্ছে একমাত্র তুমিই পারবে অনিমাকে ওদের হাত থেকে বাঁচাতে।”

আদ্রিয়ান একটা শ্বাস ফেলে বলল,

— ” পারতেতো হবেই মাদার কথা দিয়েছি তো। যাই হোক আসছি।”

বলেই আদ্রিয়ান বেড়িয়ে গেলো আর মাদারকে বিদায় দিয়ে ওর পেছন পেছন বাকিরাও বেড়িয়ে গেলো। অনিমার অতীত সকলের মনেই একটা দাগ কেটে দিয়েছে আজকে। এইসব ঘটনা যেনো ওদের কল্পনারও উর্ধ্বে ছিলো। তীব্র আর অরুমিতা অনেককিছু আগে থেকে জানলেও আজ নতুন করে কষ্ট হচ্ছে ওদের। মাদার তো অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ওদের যাওয়ার পথে। আদ্রিয়ান ছেলেটার কথায় এতো রহস্য কেনো? কেনো জানি মনে হয় এমন অনেক কিছুই আছে যেটা সবার অজানা।

_____________________

তীব্র গাড়ি ড্রাইভ করছে। ফ্রন্ট সিটে স্নেহা আর ব্যাক সিটে অরুমিতা বসে আছে। অরুমিতার মনটা ভার হয়ে আছে, কারণ অনিমার সাথে ঘটা ঘটনাগুলো মনে পরছে বারবার আর আশিস আজকে ওকে পুরো এভোয়েট করেছে। আশিসের ঐ জ্বালাতনেই ও অভ্যস্ত হয়ে গেছে, এখন সেটা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সবকিছুই ওর কাছে ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। অরুমিতাকে নামিয়ে দিয়ে তীব্র ওর গাড়ি সোজা ট্যাক্সি স্টান্ডে নিয়ে থামালো। স্নেহা অবাক হয়ে কিছু জিজ্ঞেস করবে তার আগেই তীব্র বলল,

— ” এখান থেকে ট্যাক্সি ধরে বাড়ি চলে যাও।”

স্নেহা তো চরম অবাক হলো, কিছু বুঝতে না পেরে বলল,

— ” মানে?”

তীব্র সামনে তাকিয়ে হু কেয়ারস ভাব নিয়ে বলল,

— ” তোমাকে বাড়ি অবধি পৌছে দেবার মতো ফাল্তু টাইম নেই আমার কাছে। নিজে চলে যাও।”

স্নেহার চোখ এবার ছলছল করে উঠলো। দেড় বছর আগেও এই ছেলেটা ও একা কোথাও বেড়োলেও রাগ করতো। এতোটাই অপছন্দের হয়ে গেছে ও তীব্রর কাছে এখন? স্নেহা কেদে দিয়ে বলল,

— ” আমাকে তুমি আর একটুও ভালোবাসোনা তীব্র?”

তীব্রর রাগ আরো বেড়ে গেলো এই প্রশ্নে। ওর ভালোবাসা কী এতো সস্তা নাকি যে দুদিন পরেই উবে যাবে? সবাইকে নিজের মতো ভাবে নাকি ও? তীব্র তাই রাগে গজগজ করে বলল,

— ” নাহ ভালোবাসিনা। আর বাসার কোনো কারণও নেই।”

তীব্রর কথা স্নেহার বুকে গিয়ে লাগল। কতো সহজে বলে দিলো কথাটা? তাই নিজেকে সামলে বলল,

— ” ঠিকি বলেছো কোনো কারণ নেই। কিন্তু আমি বাসি এখনো ভালোবাসি। আর সেইজন্যেই ঐ ছেলেকে রিকোয়েস্ট করে এনগেইজমেন্ট ভেঙ্গে দিয়েছিলাম।”

তীব্র অবাক হয়ে তাকালো স্নেহার দিকে। স্নেহা চোখ মুছে বলল,

— ” আব্বুকে বললে আব্বু ঘরে আটকে রেখে দিতো তখন চেয়েও কিছু করতে পারতাম না। তাই বাধ্য হয়ে করেছিলাম এনগেইজমেন্ট। কিন্তু পরে ওই ছেলেকে বলে সেটা ভেঙ্গেও দিয়েছি। কিন্তু এসব তোমাকে কেনো বলছি? তুমিতো আমাকে আর ভালোই বাসোনা রাইট?”

এটুকু বলে স্নেহা গাড়ি থেকে নেমে দৌড়ে চলে গেলো, তীব্র আটকাতে গিয়েও থেমে গেলো। এখন নিজের ওপরই রাগ হচ্ছে ওর। এতোটা খারাপ ব্যাবহার করাও ঠিক হয়নি কিন্তু ওই বা কী করতো, স্নেহাকে অন্য কারোর সাথে যে ও সহ্য করতে পারেনা, সেখাতে এনগেইজমেন্ট এর কথা শুনে নিজেকে ঠিক কীকরে রাখতো?

___________________

আদ্রিয়ান কার ড্রাইভ করছে। চোখ মুখ সব লাল হয়ে আছে ওর। ওই সবগুলোকে জ্যান্ত জালিয়ে মারতে ইচ্ছে করছে ওর। আর নিজের ওপরেও রাগ হচ্ছে। কেনো আরো আগে খুজে পেলোনা অনিমাকে? মেয়েটাকে কী কী সহ্য করতে হয়েছে ভাবলেও ওর রক্ত গরম হয়ে আসছে। ইচ্ছে করছে সব ধ্বংস করে দিতে, সব। আর এখন সেদিন রাতে অনিমার অবস্হা, রিকের ফোন, অনিমার ভয় সব পরিষ্কার হচ্ছে ওর কাছে। এসব চিন্তা করতে করতে ওর এপার্টমেন্টে ঢুকে ওর রুমের যেখানে অনিমাকে রেখেছে তার লক খুলে ভেতরে তাকিয়ে যা দেখলো তাতে আদ্রিয়ানের বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠল।
.
#চলবে…

বর্ষণের সেই রাতে ❤ পর্ব- ২৯

0

বর্ষণের সেই রাতে ❤
পর্ব- ২৯
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

.
হঠাৎ করে কোনো অপ্রত্যাশিত কিছু দেখলে বা শুনলে কিছুসময়ের জন্যে মানুষের মস্তিষ্ক কী বলা উচিত বা করা উচিত সেটাই ভূলে যায়। আর সেরকমটাই হয়েছে এখন অনিমার সাথে। কিছুটা সময় ও সম্পূর্ণ অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলো ওর মামার দিকে। যখন অনিমা বুঝতে পারলো কী হচ্ছে তখন ও বিষ্ময়ভরা দৃষ্টিতে ওর মামা আশরাফ মৃধার দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” মামু কী বলছো তুমি এসব? আমি কখন তোমাদের বাড়িতে গেলাম?”

পাশ থেকে ওর মামী মিসেস রাহেলা এসে অনিমাকে আরো অবাক করে দিয়ে বললেন,

— ” কবে মানে? কাল সকালেই তো এলি। তোর কোচিং এর ছুটি পরেছে তাই?”

অনিমা যেনো কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে? অবাক দৃষ্টিতে দুজনের দিকেই তাকিয়ে আছে। এভাবেই মিথ্যে বলার কারণটা ওর সহজসরল মন ওর মস্তিষ্কে প‍ৌছে দিতে পারছেনা। অফিরসার বলল,

— ” কী হলো? আপনার মামা মামী তো বলছে আপনি বাড়িতে ছিলেনই না তাহলে?”

ও অফিসারের দিকে একবার আশরাফ মৃধার কাছে গিয়ে বলল,

— ” মামু? তুমি মিথ্যে কথা কেনো বলছো? তুমি জানোনা ওরা আব্বুকে কতোটা কষ্ট দিয়ে মেরেছে। মামু প্লিজ সত্যিটা বলো ওদের।”

আশরাফ মৃধা এবার অফিসারের দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” স্যার কিছু মনে করবেন না। আসলে বাবাকে খুব ভালোবাসতো তো, হঠাৎ করে ওর বাবার মৃত্যুটা মেনে নিতে পারেনি। তাই ম্যান্টালি একটু।”

এটুকু বলে অনিমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,

— ” দেখ মা পাগলামী করিসনা। কারো বাবা মা তো আর চিরকাল বেঁচে থাকে না। তাই বলে এভাবে ভেঙ্গে পরলে চলবে? আমি তোর মামী আছিতো। দুলাভাই যে কেনো এমন করলো কে জানে?”

অনিমা মামার হাত সরিয়ে দিয়ে অফিসারের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে বলল,

— ” আমার আব্বু সুইসাইড করেনি। আমার আব্বু কাওয়ার্ড ছিলোনা যে সুইসাইড করবে। প্লিজ স্যার আমার কথাটা বিশ্বাস করুন।”

অফিসার ভ্রু কুচকে বলল,

— ” কীকরে বিশ্বাস করবো? তুমি তোমার বক্তব্যের কোনো প্রমাণও দেখাতে পারছোনা। আর বলছো তোমাকে মারার জন্যে তুলে নিয়ে গেছিলো, তাহলে ছেড়ে দিলো কেনো? বলুন কেনো ছেড়ে দিলো?”

অনিমা কোনো উত্তর দিতে পারলোনা। কীকরে দেবে? উত্তরটাতো ওরও ওজানা। মিসেস রাহেলা এসে বললেন

মিস্টার রঞ্জিত এগিয়ে এসে বললেন,

— ” মামনী তুমি এরকম কেনো ভাবছো, তোমার আব্বু খুব ভালো মানুষ ছিলো। ওনাকে কেনো মারবো আমরা?”

কবির শেখও সম্মতি দিয়ে বললো,

— ” সেইতো? ওরকম একজন সৎ, ভালো মানুষকে কেউ মারার কথা ভাবতেও পারেনা।”

অনিমা এবার রেগে রঞ্জিত চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” একদম নাটক করবেননা। আপনি খুন করেছেন আমার আব্বুকে। আপনাকহ্ আপনাকে আমি…”

বলে একটা ইট তুলে নিয়ে রঞ্জিত চৌধুরীকে মারতে গেলেই অফিসার অনিমার হাত ধরে বলল,

— ” বিহেভ ইউর সেলফ। নাবালিকা তাই জেল না হলেও হোমে পাঠানোর ব্যবস্থা করতেই পারি। আর তোমার মামা ঠিকি বলেছে, ইউ নিড রেস্ট।”

বলেই অনিমার হাত থেকে ইটটা নিয়ে ফেলে দিলো। অনিমা আর কিছু না বলে হাসান কোতয়াল এর লাশের সামনে বসে পরলো। ও বুঝে গেছে ওর কথা কেউ শুনবে না। তাই চুপচাপ নিজের আব্বুর দিকে তাকিয়ে চোখের জল ফেলতে লাগল। অফিসার মিস্টার রঞ্জিত এর দিকে তাকিয়ে বাকা হাসলেন, উত্তরে মিস্টার রঞ্জিতও হাসি দিলেন। হ্যাঁ অনিমার মামা মামী আর অফিসার সবাইকেই মিস্টার রঞ্জিত টাকা দিয়ে কিনে নিয়েছে, এমনকি প্রেসের লোকদেরও টাকা খাইয়ে রেখেছে। নইলে অনিমার এসব কথা এভাবে উড়িয়ে দেওয়ার প্রশ্নেই ওঠেনা। পুলিশ অফিসাররা ডেডবডি নিয়ে যাওয়ার সময় আরেক বিপদ হলো। অনিমা কিছুতেই নিয়ে যেতে দেবেনা, কিন্তু পোস্টমর্ডেন এর জন্যেতো নিতেই হবে। অনিমাকে লেডি অফিসাররা জোর করে ওকে ধরে রেখেছে। বডিটা নিয়ে পুলিশরা যাওয়ার পরে বাকি সবাই চলে গেলো। অনিমা বসে বসে চিৎকার করে কাঁদছে। কিছুক্ষণ পর আশরাফ মৃধা এসে শক্ত গলায় বলল,

— ” কান্নাকাটি হয়ে গেলে এবার ভেতরে চল।”

অনিমা অবাক হয়ে তাকালো আশরাফ মৃধার দিকে। তারপর কিছু একটা ভেবে চোখ মুছে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,

— ” তোমরা মিথ্যে কেনো বললে হ্যাঁ? আমিতো তোমাদের বাড়িতে ছিলামই না, তাহলে? কেনো বললেনা সত্যিটা। উল্টে আমাকে মেন্টালি সিক বানিয়ে দিলে সবার সামনে? কেনো করলে এমন? কেনো?”

আশরাফ মৃধা কষিয়ে একটা থাপ্পড় মারলো অনিমার গালে। তাল সামলাতে না পেরে বসে পরলো অনিমা। গালে হাত দিয়ে ছলছলে চোখে আশরাফ মৃধার দিকে তাকাতেই উনি ধমকের সুরে বললেন,

— ” তো কী তোদের জন্যে আমরা মরবো নাকি? বেশি হিরোগিরি দেখাতে গিয়ে তোর বাপ মরলো, তোকে কেনো ছাড়লো সেটাই বুঝলাম না।”

মানুষ একটা ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার আগেই একটার পর একটা নতুন নতুন ধাক্কা পেলে তখন তার মধ্যে আর অবাক হওয়ার বা পতিক্রিয়া করার কোনো ক্ষমতা থাকে না। তাই অনিমাও আর কোনো প্রতিক্রিয়া করছেনা, গালে হাত দিয়ে মাথা নিচু করে চোখের জল ফেলে যাচ্ছে। ওর সত্যিই আর কিছুই বলার নেই। মিসেস রাহেলা আশরাফ মৃধাকে চোখ রাঙ্গিয়ে কিছু ইশারা করে অনিমার কাছে বসে বলল,

— ” দেখ মা মামার কথায় কিছু মনে করিসনা। উনিতো তোকে খুব ভালোবাসেন। আমরা যা করেছি তোর ভালোই জন্যেই করেছি।”

আশরাফ মৃধাও এসে বলল,

— ” হ্যাঁ মা। দেখ আমরা সত্যিটা বললেও কোনো লাভ হতোনা। বরং আরো বিপদ বারতো তাইনা?”

অনিমা কিছু না বলে চুপচাপ উঠে ওর রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে বালিশে মুখ গুজে কাঁদতে লাগল। ও কিছুটা হলেও আন্দাজ করতে পেরেছে যে ওর কান্নার দিন সবে শুরু হয়েছে। ও নিজের মনকে কিছুতেই মানাতে পারছেনা যে ওর আব্বু আর নেই। কাল অবধি যেই মানুষটা ওকে যত্ন করে নিজের বুকে আটকে রেখেছে সেই মানুষটা আর নেই। গতপরশু রাতেও ও ওর আব্বুর বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়েছিলো, আর আজ নেই ওর আব্বু। কেনো এরকম হলো?

___________________

সোফায় গম্ভীর মুখ করে বসে আছে রঞ্জিত চ‍ৌধুরী। রিকের আসার অপেক্ষায় করছে। মেয়েটাকে মারতে কেনো দিলোনা ও? ওনার ছেলের হঠাৎ ওরকম করার কারণটা বোধগম্য হয়নি তার। ছেলের এই কাজে খুশিও নন উনি। এরমধ্যেই রিক ঘড়ি ঠিক করতে করতে এসে রঞ্জিত চৌধুরীকে উদ্দেশ্য করে বলল,

— ” কিছু বলবে?”

রঞ্জিত চৌধুরী ভ্রু কুচকে রিকে দিকে তাকিয়ে বললেন,

— ” এসবের মানে কী রিক? মেয়েটাকে ছেড়ে দিলে কেনো তুমি? কতোটা ঝামেলা হতো বুঝতে পারছো? ফেসে যেতাম পুরো।”

রিক হু কেয়ার ভাব নিয়ে বলল,

— ” হয়নিতো কিছু এতো ভাবছো কেনো?”

মিস্টার রঞ্জিত রাগী কন্ঠে বললেন,

— ” হয়নি কারণ ওর মনে ঐ মামা মামীর মুখ টাকা দিয়ে বন্ধ করেছিলাম, আর ওই অফিসার আর প্রেসকেও টাকা দিতে হয়েছে। যদি রাজি না হতো তাহলে?”

রিক হালকা হেসে বলল,

— ” টাকার কাছে সবাই মাথা নামিয়ে নেয় ড্যাড।”

মিস্টার রঞ্জিত এবার বেশ বিরক্ত হয়ে বললেন,

— ” যদি তাই হতো তাহলে ওই হাসান কোতয়ালকে মারতে হতো না। যাই হোক মেয়েটাকে মারতে দিলেনা কেনো?”

রিক একটু আলসেমি ঝেড়ে সোফায় বসে বলল,

— ” তোমার একমাত্র বউমাকে নিজের হাতে মেরে ফেলবে? নট ডান!”

এটা শুনে কবির শেখও অবাক হয়ে তাকালো রিকের দিকে। মিস্টার রঞ্জিত তো আকাশ থেকেই টুপ করে মাটিতে পরলেন এমন অবস্হা। উনি অবাক হয়ে বললেন,

— ” কী সব বলছো? বউমা মানে?”

রিক সহজভাবে বলল,

— ” মানে খুব সিম্পল ড্যাড। আমি ওকেই বিয়ে করছি।”

মিস্টার রঞ্জিত য‍েনো অবাকের শেষ পর্যায়ে গেছে, উনি সোফা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,

— ” পাগল হয়ে গেছো? কী সব বলে চলেছো?”

রিক দৃঢ় কন্ঠে বলল,

— ” তুমি জানো আমি যা বলি ভেবে চিন্তেই বলি।”

মিস্টার রঞ্জিত খুব ভালো করে চেনেন তার ছেলেকে। একবার যেটা বলে সেটা যেকোনো মূল্যে করেই ছাড়ে। কারো কথা শোনার ছেলে ও নয়। তাই এখন ওনার ছেলেকে বিগড়ে দেওয়া মানে লাভের লাভ কিছুই হবেনা উল্টে ঘরে অশান্তি হবে। তাই ভ্রু কুচকে বললেন,

— ” কিন্তু কালকেতো তোমার ফ্লাইট। তুমি এখানে ছুটিতে এসছো সেটা কী ভূলে গেছো?”

রিক গ্লাসে পানি ঢালতে ঢালতে বলল,

— ” না ভূলিনি আর এটাও ভূলিনি যে দুই বছর পর আমি ফিরেও আসছি। ”

মিস্টার রঞ্জিত গম্ভীর মুখ করে বসে রইলেন। কবির শেখও চুপ করে আছে। কিছুক্ষণ নিরবতার পর রিক বলল,

— ” বাট দুই বছর পর এসে যাতে ওকে আমি সম্পূর্ণ সুরক্ষিত দেখতে পাই। আদারওয়াইস, ইউ নো বেটার।”

মিস্টার রঞ্জিত আর কবির শেইখ দুজনেই তাকালো রিকের দিকে। রিক সেদিকে পাত্তা না দিয়ে কিচেনের দিকে তাকিয়ে চেঁচিয়ে বলল,

— ” মম আমার কফিটা রুমে পাঠিয়ে দাও।”

বলেই ও উঠে চলে গেলো। মিস্টার রঞ্জিত গম্ভীর মুখ করে বসে আছে। কবির শেখ তার দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” চিন্তা করছেন কেনো জিজু? ঐ পুচকি মেয়ে কী বা করবে? রিক বাবা যদি ওকে নিয়ে খুশি থাকে তো থাক।”

মিস্টার রঞ্জিত চোখের ইশারায় সম্মতি জানালো। আর কবির শেখ আপন মনেই কিছু একটা আওরে নিয়ে বাকা হাসি দিলেন। যেই হাসি সত্যিই অনেক বড় রহস্য।

____________________

অনিমা ওর মামার বাসায় জানালার কাছে বসে মনমরা হয়ে বসে আছে। দুই দিন আগে হাসান কোতয়ালের লাশ দাফন করা হয়েছে। ও ওর আব্বুকে আর কখনো দেখতে পাবেনা এটা ভাবতেই ওর বুকের ভেতর ভার হয়ে আসছে, চোখ দিয়ে ধীর গতিতে জল গড়িয়ে পরছে। এদিকে আশরাফ মৃধা সোফায় বসে চা খেতে খেতে টিভি দেখছেন। মিসেস রাহেলা রাগে গজগজ করে এসে ওনার পাশে বসে বললেন,

— ” নিজের ভাগ্নিকে এখানে এনে রাখলে। ও বসিয়ে বসিয়ে খাওয়াবে কে? মহারাণী তো রুম থেকে বেরোনোর নামও নেয়না। শুধু পায়ের ওপর পা তুলে বসে খাচ্ছে।”

আশরাফ মৃধা ভ্রু কুচকে টিভির দিকে তাকিয়েই বললেন,

— ” ওকে সাধে রাখিনি এখানে আমি। তোমার মতো হাটুর নিচে বুদ্ধি নিয়ে ঘুরিনা আমি। খুব ভেবে চিন্তেই ওকে এখানে রেখেছি আমি। হাসানের সব প্রপার্টি, ব্যাংক ব্যালেন্স সব ওর নামে। এগুলো হাতছাড়া করে দেবো?

মিসেস রাহেলা একটু চিন্তিত কন্ঠে বলল,

— ” কিন্তু তোমার ভাগ্নি এসব দেবে আমাদের?”

আশরাফ মৃধা বাকা হেসে বললেন,

— ” দিতে হবেনা। এমনিতেই আমাদের হয়ে যাবে।”

মিসেস রাহেলা অবাক হয়ে বললেন,

— “কিন্তু কীকরে?”

আশরাফ মৃধা টিভি থেকে চোখ সরিয়ে স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে হেসে বললেন,

— ” যদি অর্কর সাথে ওর বিয়ে দেওয়া হয় তাহলে?”

মিসেস রাহেলা ব্যাপারটা বুঝতে পেরে মুচকি হাসলেন পরে কিছু একটা ভেবে বললেন,

— ” কিন্তু ও রাজী হব?”

আশরাফ মৃধা হেসে বললেন,

— ” ও হবেনা ওর ঘাড় রাজি হবে। আর শোনো কটা দিন যাক তারপর ওকে আর এতো তোষামোদ করার দরকার নেই। বয়স কম আছে এখন থেকেই দমিয়ে রাখতে হবে। কী বলছি বুঝতে পেরেছো?”

রাহেলা বেগম উঠে দাড়িয়ে বললেন,

— ” ও নিয়ে ভেবোনা। ওকে কীকরে টাইট দিয়ে রাখতে হয় সেটা খুব ভালো করেই জানি আমি।”

এটুকু বলে উনি কিচেনে চলে গেলেন নিজের কাজে।

___________________

এভাবে কয়েকটা দিন কেটে গেলো প্রথম কয়েকদিন কিছু না বললেও। এরপর থেকেই ধীরে ধীরে অনিমার ওপর অত্যাচার করা শুরু করলেন ওনারা। এক টা দুটু করে করে একপর্যায়ে বাড়ির সব কাজ ওকে দিয়ে করানো শুরু করলো ওর রাহেলা বেগম, প্রথমে বকাবকি করলেও পরে গায়ে হাত তোলাও শুলু করলো। প্রথম আঠারো বছরের একটা মেয়ে যে সদ্য বাবা হারা হয়েছে, এতোগুলো মানসিক আঘাত পেয়েছে তার পক্ষে নিজের হয়ে প্রতিবাদ করার মতো ক্ষমতা বা ইচ্ছা কোনোটাই ছিলোনা। আর কাজ করা নিয়ে ওর তেমন কোনো আপত্তি ছিলোনা, ওর মতে ওর মামীর কাজই তো করে দিচ্ছে সমস্যা কী? কিন্তু কারণে অকারণেই ওর মামী ওর গায়ে হাত তুলতো, আর মামা দেখেও না দেখার ভান করতো। আর তারচেয়েও বড় সমস্যা ছিলো ওর মামাতো ভাই অর্ক, কারণ সুযোগ পেলেই ও অনিমার সাথে বাজে ব্যাবহার করতো, খারাপভাবে ছোঁয়ার চেষ্টা করতো। প্রথমে চুপ থাকলেও একপর্যায়ে বাধ্য হয়ে মামা মামীর কাছে সবটা বলেছিলো ও কিন্তু তার উত্তরে ওর কপালে জুটেছিলো চড় আর নিজেরই চরিত্র নিয়ে বাজে কথা। সেদিনের পর আর কিচ্ছু বলেনি ও, ওর খারাপ লাগতো কিন্তু কিছুই করার ছিলোনা ওর, রাতের অন্ধকারে বালিশে মুখ চেপে কাদা ছাড়া।

একদিন অনিমা সকালে উঠে বই পরছিলো। হঠাৎ রুমে ওর মামী এসে বলল

— ” কী নবাবজাদি? এভাবে পায়ের ওপর পা তুলে বসে থাকলে চলবে? কিছু কাজও তো করতে পারিস? ওর বাপ ও বলি হারি নিজে মরে মেয়েটাকে আমাদের ঘারে জুটিয়ে দিয়ে গেছে।”

অনিমা মাথা নিচু করে নিচু কন্ঠে বলল,

— ” প্লিজ মামী আব্বুকে নিয়ে কিছু বলোনা। কী করতে হবে বলো আমি করে দিচ্ছি।”

মিসেস রাহেলা বেগম এসে ওর হাত মুচড়ে ধরে বলল,

— “আমার মুখে মুখে কথা বলিস? এতো সাহস তোর?”

অনিমা চোখ খিচে বন্ধ করে আছে ওর মামী ওর হাত ঝাড়া দিয়ে বলল,

— ” যা অর্ককে কফি করে দিয়ে আয়।”

অনিমা অসহায়ভাবে তাবে তাকালো ওর মামীর দিকে। ওই ছেলেটার রুমে যেতে হবে ভাবলেই গা সিউল ওঠে ওর, কিন্তু ও জানে ওর মামীকে এসব বলে লাভের লাভ এটাই হে যে গালে আরো দুটো থাপ্পড় পরবে। তাই চুপচাপ চলে গেলো কিচেনে। কফি করে মনের সাথে অনেকক্ষণ যুদ্ধ করে তারপর অর্কর রুমে ঢুকলো ও। অর্ক খাটে হেলান দিয়ে বসে আছে, অনিমাকে দেখেই একটা বাকা হাসি দিলো ও। অনিমা মাথা নিচু করে টি- টেবিলে কফি মগটা রেখে ফিরে আসতে নিলেই ওর হাত ধরল অর্ক। অনিমা ছাড়ানোর চেষ্টা করতেই গরম কফি মগের ওপর ওর হাতটা চেপে ধরলো অর্ক। জালায় চোখ বন্ধ করে মৃদু আর্তনাদ করে উঠল অনিমা। রিক আরো জোরে চেপে ধরে বলল,

— ” এতো ছটফট কেনো করিস? আমি ধরলেই গায়ে ফোসকা পরে তাইনা?”

অনিমা কাঁদোকাঁদো গলায় বলল,

— ” ভাইয়া লাগছে আমার।”

রিক অনিমার হাত কফি মগে চেপে ধরেই উঠে দাড়িয়ে বলল,

— ” লাগার জন্যেই দিচ্ছি। এতো তেজ কীসের হ্যাঁ? কদিন পরতো আমারি হবি। এতো নাটকের কী আছে। ”

এটুকু বলে ওপর হাত অনিমার কোমরে রাখতে যাবে তার আগেই আশরাফ মৃধা অর্ককে ডাকলো। বাবার ডাক শুনে অর্ক অনিমাকে ছেড়ে দিয়ে চলে গেলো। অনিমা চোখ মুছে কিচেনে চলে গেলো কারণ এগুলো ওর কাছে এখন স্বাভাবিক হয়ে গেছে। এভাবেই কেটে গেলো দুই বছর। এই দুই বছরে এগুলোই সহ্য করে চলতে হয়েছে অনিমাকে। কথায় কথায় ওকে থাকা খাওয়ার খোটা দিতো। অথচ হাসান কোতয়ালের ইন্সুরেনস, অফিস থেকে, ব্যাংক থেকে প্রতিমাসে যা আসে তাতে অনিমা কেনো ওই তিনজনেরও খাওয়ার খরচ হয়ে যায়। এগুলো বুঝতে পারে অনিমা কিন্তু কিছু বলেনা। যেমনি হোক ওর তো দুনিয়াতে এই মামা মামী ই আছে, এখান থেকে চলে গেলে ও একা একটা মেয়ে যাবে কোথায়? তবে পড়াশোনায় বাধা দেয়নি কিংবা বলা যায় দিতে পারেনি, অনিমা নিজের স্কলারশিপ এর টাকা দিয়েই পরতো। আর এরমধ্যে অর্কর সাথে ওর বিয়েও ঠিক করে ফেলেছে। না করার ক্ষমতা ছিলোনা ওর।এই দুই বছরে ও ভূলেই গেছে যে ওর নিজের জীবণের সিদ্ধান্ত ও নিতে পারে।

___________________

গতকাল দুই বছর পর দেশে ফিরেছে রিক। আজ অনিমার কাছে যাবে বলে ঠিক করেছে। দুই বছর ছোটখাটো খবরাখবর রেখেছে অনিমার সম্পর্কে। কোন ইউনিভার্সিটিতে পরে, কোথায় আছে সব। তবে ঘরের ভেতরের খবর তো ওর জানা নেই। ও কার ড্রাইভ করছে আর ভাবছে দুই বছর ধরে অপেক্ষা করেছি আজকের দিনটার। আজ থেকে তুমি শুধুই আমার। ইউ আর ওনলি মাইন।

এদিকে অনিমা ক্লাস শেষে সিড়ি দিয়ে নিচে নামবে তখন হোচট খেয়ে পরে যেতে নিলেই পাশ দিয়ে যেতে থাকা একটা ছেলে ওর হাত ধরে ফেলল। অনিমা সোজা হয়ে দাড়াতেই ছেলেটা বলল,

— ” আর ইউ ওকে?”

অনিমা মুচকি হেসে কিছু বলবে তার আগেই কেউ একজন অনিমাকে হাত ধরে ঘুরিয়ে জোরে একটা থাপ্পড় মারলো। অনিমা গালে হাত সামনে তাকিয়ে অপরিচিত একজনকে দেখে রেগে বলল,

— ” আপনার সাহস কীকরে হলো আমাকে..”

আর কিছু বলার আগেই আরো চড় পরলো ওর গালে এবার ও সিড়ির ওপরেই পরে গেলো। যেই ছেলেটা অনিমাকে ধরেছিলো কিছু লোক এসে ঐ ছেলেটাকে ধরে নিয়ে গেলো। অনিমা আহম্মকের মতো তাকিয়ে আছে কিছুই মাথায় ঢুকছেনা ওর যে ওর সাথে এসব কী হচ্ছে? ছেলেটা ওর সামনে বসে ওর গাল চেপে ধরে বলল,

— ” খুব শখ না ছেলেদের হাত ধরার।”

অনিমা গালে হাত দিয়ে অবাক হয়ে বলল,

— ” কে আপনি? আর আমার সাথে এরকম কেনো করছেন। আর ওকে কোথায় নিয়ে গেলো।”

রিক অনিমার হাত চেপে ধরে বলল,

— ” খুব দরদ উতলে উঠছে ওর জন্যে হ্যাঁ? ওকে এটা বোঝা তে নিয়ে গেছে যে রিক চৌধুরীর জিনিসে হাত দিলে তার কী পরিণাম হয়। এবার চলো তোমাকেও কিছু বোঝানোর আছে।”

বলেই টেনে নিয়ে যেতে লাগল অনিমাকে। অনিমা কিছুই বুঝতে পারছেনা যে কে এই রিক চৌধুরী? আর ওর সাথেই বা এমন কেনো করছে? রিক ওকে টেনে গাড়িতে তুলল তারপর গাড়ি স্টার্ট করে সোজা ওকে ওর নিজেরই মামা বাড়িতে নিয়ে এলো। তারপর ওকে টেনে নামিয়ে ভেতরে নিয়ে গেলো। অদ্ভুতভাবে ওর মামা মামী অর্ক কিছুই বলছেনা। যেনো তাড়া জানে যে এটাই হওয়ার। অনিমাকে নিয়ে ওরই রুমে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো রিক। তারপর বাইরে গিয়ে দরজা লক করে সোজা কিচেনে চলে গেলো, অনিমা সমানে দরজা ধাক্কিয়ে মামা মামীকে ডাকছে কিন্তু তারা সব শুনেও শুনছেন না। রিক ওখান থেকে একটা চটা নিয়ে গ্যাস অন করে ওটা পুরিয়ে উত্তপ্ত করে ওটা নিয়ে আবার অনিমার রুমের দিকে গেলো। আশরাফ মৃধা, মিসেস রাহলা, অর্ক সবাই নিরব দর্শক এর ভূমিকা পালন করছে। রিক দরজা বন্ধ করে অনিমার দিকে অনিমা ফ্লোরে বসে কাঁদছে। একটু বেশিই শকড হয়েছে মেয়েটা। রিকের হাতে ধোয়া ওঠা স্টিলের চটা দেখে অনিমা ভয়ে গুটিয়ে গেলো চিৎকার করে মামা মামীকে ডাকতে লাগল কিন্তু ওনারা তো ওনারাই। রিক ওর সামনে হাটু ভেঙ্গে বসে ওর হাত ধরে সামনে এনে দাঁতে দাঁত চেপে ধরে বলল,

— ” এই হাতটাই ধরেছিলো ওই ছেলেটা তাইনা?”

অনিমা অসহায়ভাবে তাকিয়ে আছে রিকের দিকে। হঠাৎ কোথা থেকে এলো এই ছেলে আর কেনো ওর সাথে এমন করছে সেটাই বুঝতে পারছেনা ও। হঠাৎ করেই ওর হাতের ওপর গরম চটাটা চেপে ধরলো রিক। জোরে চিৎকার করে উঠল অনিমা। প্রায় মিনিট খানেকের মতো অনিমার হাতে চটাটা চেপে ধরে রেখে ওকে ছেড়ে দিলো রিক। নিজের হাত ধরে ফুপিয়ে কাঁদতে লাগল অনিমা। রিক রাগে গজগজ করে বলল,

— ” নেক্সট টাইম যদি অন্যকোনো ছেলের ধারেকাছেও যেতে দেখিনা এমন অবস্হা করবো যে আয়নার সামনে দাড়ালে নিজেই নিজেকে চিনতে পারবেনা।”

এটুকু বলে ওখান থেকে চলে গেলো রিক। অনিমা হাত ধরে বসে কাঁদতে লাগল। আসলে রিক সকালে বাসাতেই এসছিলো কিন্তু অনিমাকে পায়নি পরে ওর মামা মামীর সাথে কথা বলে রিক। আর এটাও বুঝতে পারে যে ওনাদের অনিমার প্রপার্টি চাই। ও চাইলেই ওদের হুমকি দিয়ে এমনিতেই সব করতে পারতো কিন্তু ও ঝামেলা চায়না তাই ওনাদের বলেছে যে অনিমার সব প্রপার্টি ওনাদেরই থাকবে, শুধু তাইনা ও নিজেও প্রতিমাসে ওনাদের এক্সট্রা টাকা দেবে কিন্তু তার পরিবর্তে অনিমাকে ওর চাই। মানে আজ থেকে অনিমা ওর, অনিমা এই বাড়িতেই থাকবে কিন্তু অনিমার ওপর সবধরণের রাইট ওর থাকবে। আর অনিমার মামা মামীও টাকার লোভে পরে রাজী হয়ে যায়।এককথায় অনিমাকে রিকের কাছে বিক্রি করে দেয়। যদিও রিক চেয়েছিলো অনিমাকে এখনি নিয়ে যেতে কিন্তু কবির শেখ ওকে বলে যে আগে অনিমার ওনার্স শেষ হোক তারপর এসব ভাবতে। এরপর থেকেই রিকের নানারকম টর্চার সহ্য করতে হয়েছে অনিমাকে, কারণে অকারণে নানারকমভাবে টর্চার করতো ও অনিমাকে। একপর্যায়ে রিক অনিমার কাছে সবচেয়ে ভয়ের বস্তু হয়ে গেলো যাকে দেখলেই ওর রুহ কেপে উঠতো। কিন্তু ও বুঝতে পারতোনা কেনো এমন করে ওর সাথে আর মামা মামীই বা কেনো কিছু বলেনা। একদিন অনিমা ওর মামা মামীর কথা শুনে ফেলে আর সেদিন খুব ভেঙ্গে পরে ও। এতোদিন সব সহ্য করলেও এবার সবকিছু ওর সহ্যসীমার বাহিরে চলে যায়। এতোটা খারাপ মানুষ কীকরে হতে পারে? শুধুমাত্র টাকার জন্যে নিজের ভাগ্নেকে এমন একটা লোকের কাজে কেউ বিক্রি করে দিতে পারে? তাও সেই লোকটার ছেলে যেই লোকটা ওর বাবাকে খুন করেছে? সত্যিই টাকা কী এতোই শক্তিশালী? যার কাছে মনষ্যত্বের কোনো জায়গাই নেই?
.
#চলবে..
.
( জাস্ট একটুর জন্যে অতীত শেষ হলোনা। জানি আপনারা বোর হচ্ছেন কিন্তু কিছু করার নেই। তবে কালকে অতীত শেষ হয়ে যাবে পাক্কা। যাই হোক হ্যাপি রিডিং ? )

বর্ষণের সেই রাতে ❤ পর্ব- ২৮

0

বর্ষণের সেই রাতে ❤
পর্ব- ২৮
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

.
কিছুক্ষণ স্হির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকার পর অনিমার মস্তিষ্ক ওকে ধীরে ধীরে জানান দিলো যে ওর চোখের সামনে ওর বাবার মৃতদেহ ঝুলছে। তখনি ধীরে ধীরে নিশ্বাস ভারী হয়ে উঠল ওর। ” আব্বু’ জোরে চিৎকার করে উঠল অনিমা। অনিমার আওয়াজ শুনে মিস্টার রঞ্জিত পেছন ঘুরে তাকালো। অনিমার একদৃষ্টিতে ঝুলন্ত লাশটার দিকে তাকিয়ে আছে, ওর শরীর অসার হয়ে উঠছে। বাইরে জোরে বজ্রপাত হচ্ছে, আকাশে মেঘেদের মধ্যে তান্ডব চলছে আর অনিমার মনেও, ওর কিশোরী মন এতোবড় ধাক্কা নেওয়ার জন্যে মোটেই তৈরী ছিলোনা। মিস্টার রঞ্জিত এগিয়ে এসে বাঁকা হেসে বললেন

— ” এই তাহলে ওর মেয়ে?”

অনিমার হাত ধরে রাখা লোকটা বলল

— ” জ্বী স্যার, পালানোর চেষ্টা করছিলো ভাগ্যিস আমারা পেছনের দিনটায় ছিলাম।”

— ” পালিয়ে আর যেতো কোথায়? আমাদের কাছ থেকে পালানো এতো সহজ নয়।”

ওদের মধ্যে একজন বলে উঠল,

— ” স্যার মেরে দেই একে? ”

রঞ্জিত চৌধুরী দৃঢ় কন্ঠে বললেন,

— ” নাহ এখানে নাহ। তাহলে সবাই বুঝে যাবে এটা মার্ডার। এখান থেকে নিয়ে যেতে হবে ওকে।”

মার্ডার শব্দটা শুনেই অনিমার মাথায় আবারো ধাক্কা লাগলো। ওর মস্তিষ্ক আবারো ওকে বলছে ওর সামনে ওর আব্বুর লাশ ঝুলছে, ওর আব্বুর। ওর আব্বু আর নেই। ও উঠে ওর হাসান কোতয়ালের দিকে যেতে চাইলো কিন্তু ওই লোকটা ওর হাত ছাড়লোনা। অনিমা কাদঁতে কাঁদতে বললো,

— ” আব্বুহ! আব্বুর কষ্ট হচ্ছে, প্লিজ নামিয়ে দিন আব্বুকে, আব্বু মরে যাবে।”

মিস্টার রঞ্জিত অনিমার কাছে এসে বলল,

— ” তোমার আব্বুর কোনো কষ্ট হচ্ছেনা। আর মরেও যাবেনা কারণ তোমার আব্বু মরেই গেছে, দেখো ভালো করে।”

অনিমা হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বলল,

— ” মিথ্যে বলছেন আপনারা কিচ্ছু হয়নি আমার আব্বুর। আপনি মিথ্যে বলছেন। ছাড়ুন আমাকে প্লিজ।”

মিস্টার রঞ্জিত দুঃখ পাওয়ার ভান করে বলল,

— ” আহারে। খুব কষ্ট লাগে এই দৃশ্য দেখলে। কিন্তু আমরা কী করবো? এইসব লোকেরা বুঝতেই চায়না। এতোবার বললাম থেমে যান, থেমে যান। কিন্তু এরা শোনেই না। ওনার এই একরোখামী নিজের প্রাণটা তো দিলোই আর বাচ্চা মেয়েটাকেও এখন ভূগতে হবে।”

অনিমা এবার চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে বলল,

— ” প্লিজ আমাকে যেতে দিন আব্বুর কাছে, প্লিজ।”

মিস্টার রঞ্জিত অনিমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,

— ” চিন্তা করোনা মা। তোমাকে তোমার আব্বুর কাছে পাঠানোরই ব্যাবস্হা করছি আমরা, চলো।”

অনিমা চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে বলল,

— ” ছাড়ুন আমাকে, আব্বুহ।”

এবার রঞ্জিত চৌধুরীর ধমক দিয়ে বললেন,

— ” ঐ চুপ! ঘ্যান ঘ্যান করেই যাচ্ছে তখন থেকে। এই এটাকে নিয়ে বাইরে চল। আর দুজন এখানের ধস্তাধস্তি আর বাকি প্রমাণগুলো মিটিয়ে তারপর আয়।”

এরপর ঐ লোকগুলো অনিমাকে টেনে নিয়ে যেতে নিলেই অনিমা বলল,

— ” নাহ আমি আমার আব্বুকে ছেড়ে যাবোনা, আমাকে ছাড়ুন প্লিজ।”

কিন্তু অনিমার কোনো কথা না শুনেই ওকে নিয়ে বাইরে চলে এলো। বাইরে বৃষ্টি আর বজ্রপাত থামার নামই নিচ্ছেনা। অনিমা মাথায় এসব কোনো চিন্তা নেই যে ওর সাথে কী হতে চলেছে ওর মাথায় শুধু চলছে যে ওর আব্বুকে ও ভেতরে রেখে এসছে। আর সেইজন্যেই সমানে চিৎকার করে কেঁদে চলেছে ও মিস্টার রঞ্জিত এবার ওনার ছেলেগুলোকে উদ্দেশ্য করে বললেন,

— ” একে গোডাউনে নিয়ে যা, যা খুশি কর কিন্তু কাল সকালে যেনো ও বেঁচে না থাকে। অনেককিছু যেনে গেছে ও, তাই ওকে বাঁচিয়ে রাখা যাবে না।”

ওরা সম্মতি জানিয়ে অনিমাকে টেনে গাড়িতে তুললো। অনিমার কান্নাকাটি, আকুতিমিনতি কোনোকিছুই ওর ওপর এফেক্ট ফেললো না। বেশি চিৎকার চেচামেচি করছিলো বলে ওর হাত মুখ বেধে দিলো। অনিমা নিঃশব্দে চোখের জল ফেলছে। নিজের চোখের সামনে নিজের বাবার মৃত্যু দেখার পর সন্তানের মানসিক পরিস্হিতি ধারণা করাও অসম্ভব। এই মুহূর্তে ছটফট করার মতোও মানসিক শক্তি নেই অনিমার মধ্যে। ওকে গোডাউনে নিয়ে এক কর্ণারে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো। অনিমা একটু গুটিয়ে বসে অসহায়ভাবে তাকিয়ে রইলো লোকগুলোর দিকে। ও ভাবতেও পারছেনা এদের মনে কী চলছে। ওদের মধ্যে একজন বললো,

— ” বহুত দিন পর এরকম জিনিস পেলাম ভাই। এতো পুরো এটম বোম।”

আরেকজন সায় দিয়ে বলল,

— “সত্যি ভাই আজ রাতে ফুলটু মাস্তি হবে।”

এদের কথার ধরণ শুনেই অনিমা খুব ভালোকরেই বুঝতে পারছে ওর সাথে কী হ‍তে চলেছে কিন্তু ওর মধ্যে কোনো অনুভূতি কাজ করছেনা। ওর চোখের সামনে শুধু ওর আব্বুর মুখটাই ভেসে উঠছে। ওর আব্বু আর নেই এই কথাটাই ওর মস্তিষ্কে বারবার বাড়ি মারছে। ওর মস্তিষ্ক আর এই চাপ সহ্য করে উঠতে পারলোনা। ধীরে ধীরে নেতিয়ে পরতে শুরু করলো আর একপর্যায়ে অজ্ঞান হয়ে গেলো। অনিমাকে মাটিতে ঐভাবে লুটিয়ে পরতে দেখে ওদের মধ্যে একজন বলল,

— ” আরে এতো অজ্ঞান হয়ে গেলো।”

আরেকজন ভ্রু কুচকে অনিমাকে তুলে দেয়ালে হেলান দিয়ে শুইয়ে দিয়ে বলল,

— ” যা বাকেটে করে পানি নিয়ে আয়। দেখি কতোক্ষণ অজ্ঞান থাকে।”

লোকটা যেই পানি আনতে যাবে তার আগেই গাড়ির হর্নের আওয়াজ পেলো। ওরা অবাক হয়ে বলল,

— ” এখন আবার কে এলো?”

হঠাৎ ওদের মধ্যেই একজন এসে হাফাতে হাফাতে বলল,

— ” রিক স্যার এসছে।”

এটা শুনেই ওরা সবাই ছুটলো গেটের দিকে। গিয়ে দেখে রিক আসছে। ওদের একজন রিকের দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল,

— ” আরে স্যার আপনি এখানে?”

রিকের ওদের সবাইকে একজায়গায় দেখে ভ্রু কুচকে বলল,

— ” কী ব্যাপার? সব একজায়গায় যে? আজ আবার কোনো মেয়েকে তুলে নিয়ে এসছিস নাকি?”

লোকটা মাথা নিচু করে বলল,

— ” না আসলে রঞ্জিত স্যার একটা মেয়েকে মারতে বলেছে তাই..। স্যার মেয়েটা কিন্তু সেই আপনি চাইলে…”

রিক রাগী চোখে তাকাতেই লোকটা থেমে গেলো। রিক শক্ত গলায় বলল,

— ” আমার এসব ফালতু ইন্টারেস্ট নেই। হোয়াটএভার দুটো ড্রাগসের বস্তা বের করে রাখ সকালে ক্লাইন্ট আসবে।”

লোকটা ভীত হয়ে হকচকিয়ে বলল,

— ” জ্বী স্যার।”

বলেই ওরা বস্তা বার করতে চলে গেলো। রিক হেটে হেটে গোডাউনটা দেখতে লাগল। দেখতে দেখতে হঠাৎ অনিমাকে দেখলো, মেয়েটার পেছন সাইড দেখা যাচ্ছে। রিক বুঝলো এই সেই মেয়ে ও ইগনোর করে যেতে নিয়েও থেমে গেলো। কেনো জানিনা মেয়েটাকে পেছন থেকে দেখেই ওর মেয়েটার মুখ দেখার ইচ্ছে হলো। ও নিজের অজান্তেই ধীরপায়ে মেয়েটার দিকে এগিয়ে গেলো। মেয়েটার সামনে গিয়ে দেখে, মেয়েটার ভেজা চুলগুলো ওর মুখের ওপর পরে আছে। রিক এক হাটু ভেঙ্গে মেয়েটার সামনে বসে ওর মুখের চুলগুলো সরাতে গিয়েও থেমে গেলো। ও ভাবছে কী করছে ও এগুলো? কেনো করছে? পাগল টাগল হয়ে গেলো নাকি? এসব ভেবে উঠে যেতে নিয়েও আবার তাকালো মেয়েটার দিকে। মুখটাই তো দেখবে এতে ক্ষতি কী? এসব চিন্তা করে ও আলতো হাতে মেয়েটার মুখের ওপর থেকে চুলগুলো সরিয়ে দিলো। আর মেয়েটার মুখ দেখার সাথেসাথেই ওর চোখ স্হির হয়ে গেলো। একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অনিমার দিকে, অনিমার সারামুখে বিন্দু বিন্দু পান জমে আছে, ওর হালকা গোলাপি ভেজা ঠোটগুলো ঠান্ডায় কাপছে, বড় বড় চোখের পাপড়িতে পানি জমে আছে, চুল বেয়ে বেয়ে পানি পরছে, হালকা কেঁপে কেঁপে উঠছে ও। রিক মুগ্ধ দৃষ্টিতে দেখছে মেয়েটাকে, এতোটা মায়ামাখানো কোনো মুখ হতে পারে? ওর চোখ সরাতেই ইচ্ছে করছেনা। কিছুক্ষণ পর ওই লোকগুলোর মধ্যে দুইজন এসে এইদৃশ্য দেখে থেমে গেলো। দুজনে দুজনের মুখ চাওয়াচাওয়ি করে বলল,

— ” কীরে ভাই স্যার এর আবার কী হলো?”

আরেকজন দাঁত কেলিয়ে বলল,

— ” দেখ হয়তো আজ রাতের জন্যে নিয়ে যাওয়ার সখ হয়েছে।”

ওপর লোকটি ধমকির স্বরে বলল,

— “চুপ। স্যার শুনলে বারোটা বাজিয়ে দেবে। চল আয়।”

ওরা রিকের কাছে গিয়ে রিককে উদ্দেশ্য করে বলল,

— ” স্যার বস্তাগুলো নামিয়ে দিয়েছি।”

কিন্তু রিক একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অনিমার দিকে। একটু জোরে ডাকতেই রিকের হুস এলো, চমকে তাকিয়ে বলল,

— ” হ্ হ্যাঁ বল।”

লোকটা মাথা নিচু করে বলল,

— ” বস্তা নামিয়ে নিয়েছি।”

রিক নিজেকে সামলে একটু ইতস্তত করে বলল,

— ” অব্ হুম।”

ওরা যেতে নিলেই রিক থামিয়ে দিয়ে বলল,

— ” ঐ শোন।”

ওরা পেছন ঘুরে তাকালো, রিক অনিমার দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” মেয়েটাকে কোথা থেকে এনেছিস বললি?”

ওরা একটু অবাক হলেও বলল,

— ” রঞ্জিত স্যার এর সব জানেন এর ব্যাপারে।”

রিক অনিমার দিকে তাকিয়েই বলল,

— ” তোরা এখন সবাই চলে যা এখান থেকে। আজ কাউকে এখানে থাকতে হবেনা।”

ওদের একজন হকচকিয়ে বলল,

— ” কিন্তু স্যার রঞ্জিত স্যার তো বলেছেন ওকে…”

রিক শক্ত গলায় বলল,

— “আমি যেতে বলেছি তোদের।”

ওরা জানে এখন আর কথা বাড়ালে রিক ওদের এখানেই মেরে পুতে দেবে তাই কথা না বাড়িয়ে সবাই চলে গেলো। ওরা চলে যেতেই রিক ওর ফোন বের করে রঞ্জিত চৌধুরীকে কল করল, কল রিসিভ করতেই রিক বলল,

— ” আজকে যেই মেয়েটাকে গোডাউনে পাঠিয়েছো ও কে?”

মিস্টার রঞ্জিত চৌধুরী ভ্রু কুচকে বললেন,

— ” কেনো? সেটা দিয়ে তোমার কী কাজ?”

রিক বিরক্ত হয়ে বলল,

— ” উফ ড্যাড। যেটা জিজ্ঞেস করছি বলো।”

মিস্টার বুঝতে পারলেন ছেলে সিরিয়াস মুডে আছে তাই বললেন,

— ” ঐ যে হাসান কোতয়াল এর কথা বলেছিলাম না তার মেয়ে।”

রিক সোজাসাপ্টা ভাবে বলল,

— ” ওকে মারার প্লানটা ক্যান্সেল। আর ওকে আমি ছেড়ে দিচ্ছি।”

মিস্টার রঞ্জিত অবাক হয়ে বলল,

— ” কী বলছো কী তুমি? হাসানের খুনের ওই একমাত্র সাক্ষি। ওকে বাঁচিয়ে রাখা যাবে না।”

রিক শক্ত গলায় বলল,

— ” শধু সাক্ষী থাকলেই হয়না প্রমাণও থাকতে হয়।”

মিস্টার রঞ্জিত বুঝতে পারলেন যে তার ছেলে কী বলতে চাইছে তবুও বললেন,

— ” কিন্তু..”

রিক মিস্টার রঞ্জিতকে থামিয়ে দিয়ে বললেন,

— ” কোনো কিন্তু নয় ড্যাড। আমার যা বলার বলে দিয়েছি। বাকি খেলাটা তোমারা সাজাও।”

এটুকু বলে ফোন রেখে দিলো রিক। তারপর অনিমার দিকে তাকালো। তারপর বাকা হেসে বলল,

— ” সো স্যাড বেবি কী তুমি আমার নজরে পরে গেছো। এখন আমিও তোমাকে আমার হাত থেকে বাঁচাতে পারবো না।”

এদিকে ফোন রেখে রঞ্জিত চোধুরী কবির শেখকে সবটা খুলে বললেন। সবটা শুনে কবির শেখ কিছুক্ষণ ভাবলেন। তারপর ওনার সেই হাসি দিয়ে বললেন,

— ” আমার একটা পরিকল্পনা আছে জিজু।”

____________________

রোদের আলো চোখে লাগতেই ধীরে ধীরে চোখ খুলে তাকালো অনিমা। চোখ খুলে নিজেকে বন্ধ করে নিজেকে সেই গোডাউনে আবিস্কার করলো। মাথা চেপে ধরে উঠে বসতেই ওর কালকে রাতের সব কথা মনে পরলো। আর ওর আব্বুর কথা মনে পরতেই কেঁদে দিলো ও। ওকে এখানে তো মেরে ফেলতে এনেছিলো তাহলে ছেড়ে দিলো কেনো? আর ওরাই বা কোথায়? এসব ভাবার মানসিকতা নেই এখন অনিমার, হঠাৎ কিছু মনে হতেই ও দেয়াল ধরে উঠে দাড়ালো। তারপর অনেক কষ্টে বাইরে বেড়িয়ে রাস্তাটা খুব সহজেই চিন্তে পারলো কারণ এই রাস্তাটা দিয়েই ও কলেজ যেতো। শরীর খুব দুর্বল লাগছে ওর কিন্তু তবুও দৌড় লাগালো বাড়ির উদ্দেশ্যে ওর আব্বুর কাছে যে ওকে যেতেই হবে। ওর মন শুধু বলছে একটা জাস্ট একটা মিরাক্কেল হোক আর ও যাতে গিয়ে দেখে ওর বাবা একদম ঠিক আছে। দু তিনবার রাস্তায় হোচট খেয়ে পরেও গেছে তবুও দৌড়চ্ছে ও। পা কেটে রক্তও পরছে কিন্তু ওর হুস নেই। আধা ঘন্টারো বেশি সময় লেগেছে বাড়ি প‍ৌছতে। বাড়ির গেইটে ঢুকেই অনিমা চমকে গেলো কারণ বাড়িতে অনেক ভীর। প্রেস আর পুলিশ ও আছে। ওদের ঠেলে সরিয়ে ভেতরে গিয়ে অনিমা থমকে গেলো কারণ হাসান কোতয়ালের বডি নিচে শুইয়ে রাখা হয়েছে।অার তার পাশে ওর মামা, মামী আর অর্ক বসে আছে অনিমা তারচেয়েও বেশি অবাক হয়েছে রঞ্জিত চৌধুরীকে এখানে দেখে। তবুও ওর আব্বুর দিকে তাকিয়ে আছে। ওর মন এখোনো বলছে যে ওর আব্বু এক্ষুনি উঠে বলবে ‘মামনী সারারাত কোথায় ছিলে? জানো কতো টেনশন করেছি? এমন কেউ করে?” অনিমা ওর হাসান কোতয়াল এর সামনে বসে কাঁদতে কাঁদতে বলল,

— ” আব্বু? এই আব্বু? প্লিজ ওঠো! আমি না কাল রাত থেকে কিচ্ছু খাইনি জানো। তুমিতো জানো তুমি না খাইয়ে দিলে আমি খেতে পারিনা প্লিজ ওঠো, আমার খিদে পেয়েছে তো।”

এরকম নানা কথা বলার পরেও যখন উঠলোনা ইচ্ছেমতো ডাকতে লাগল ওর আব্বুকে, ওর মামা মামী ওকে বোঝাচ্ছে ওর আব্বু আর নেই, কিন্তু ও শুনছেই না। অনিমা পাগলের মতো চিৎকার করে কেঁদে যাচ্ছে। একপর্যায়ে ও নিজেই শান্ত হয়ে গেলো, একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো ডেডবডিটার দিকে। কিছুক্ষণ পর এক অফিসার বলল,

— ” ইট’স মাইট বি সুইসাইড।”

সুসাইড শব্দটা শুনেই অনিমা চোখ মছে উঠে দাড়লো তারপর ঐ অফিসারের কাছে গিয়ে বলল,

— ” এটা সুইসাইড নয় অফিসার আমার আব্বুকে মার্ডার করা হয়েছে।”

অফিসার অবাক হয়ে বললেন,

— ” হোয়াট? বাট কে করেছে?”

অনিমা রঞ্জিত চৌধুরীর দিকে ইশারা করে বললেন,

— ” উনি! উনি খুন করেছে আমার আব্বুকে।”

মিস্টার রঞ্জিত অবাক হওয়ার ভান করে অনিমার কাছে এসে বলল,

— ” কী বলছো কী মামনী? আমি কেনো তোমার আব্বুকে মারতে যাবো?”

অনিমা মিস্টার রঞ্জিতকে কিছু বলভে তার আগেই অফিসার বললেন,

— ” আপনি কীসের ভিত্তিতে একজন মিনিস্টিরের বিরুদ্ধে এতোবড় এলিগেশন আনছেন? আপনার কাছে কোনো প্রমাণ আছে?”

অনিমা চোখ মুছে বলল,

— ” আমি নিজেই আব্বুর মৃত্যু নিয়ে মিথ্যে বলবো? আরে আমি নিজের চোখে দেখেছি। ওরা তো আমাকেও মারার জন্যে তুলে নিয়ে গেছিলো।”

পেছন থেকে অনিমার মামা বলে উঠলেন,

— ” কী বলছিস কী তুই অনিমা? তুই কীকরে দেখবি? তুইতো কাল রাতে আমাদের বাড়িতে ছিলি। মাথা খারাপ হয়ে গেছে নাকি তোর?”

অনিমা অবাক হয়ে তাকালো ওর মামার দিকে। মামা এসব কী বলছে? কেনো বলছে? ও তো সারারাত গোডাউনেই পরে ছিলো, তাহলে মিথ্যে কেনো বলছে মামা? এদিকে মিস্টার রঞ্জিত আর কবির শেখ একে ওপরের দিকে তাকিয়ে রহস্যময় হাসি দিলো।
.
#চলবে…
.
(রি-চেইক করার সময় হয়নি। তাই টাইপিং মিস্টেক গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ভেবেছিলাম আজ অতীত শেষ করে দেবো বাট হলোনা তবে কালকের পার্টে হয়ে যাবে।
হ্যাপি রিডিং ?)

বর্ষণের সেই রাতে ❤ পর্ব- ২৭

0

বর্ষণের সেই রাতে ❤
পর্ব- ২৭
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

.
হাসান কোতয়াল ওনার কেবিনে গম্ভীর মুখ করে বসে আছে। আর তার সামনে তার টিমের চারজন বসে আছেন। হ্যাঁ চারজন, কারণ গতকাল সকালেই মিতার লাশ পাওয়া গেছে। গতপরশু ও রঞ্জিত চৌধুরীর এক গোডাউনে স্মাগলিং এর কিছু ছবি তুলতে গেছিলো কিন্তু আর ফিরে আসেনি। ফিরে এসছে কাল সকালে তাও লাশ হয়ে। প্রাথমিক পোস্টমডের্ন রিপোর্ট অনুযায়ী গ্যাং রেপ করে তারপর গলা কেটে মার্ডার করা হয়েছে। হাসান কোতায়াল চারজনের দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” মিতার মৃত্যুটা সত্যিই মর্মান্তিক আর দুঃখজনক ছিলো। মিতা ওখানে সিকরেটলি ছবি তুলতে যাচ্ছে সেটা শুধুমাত্র আমরা ছয়জন জানতাম। এটা ওদের জানার কথা ছিলোনা যদিনা ভেতরের কেউ ইনফরমেশন টা লিক করে থাকে।”

ইলিয়াস অবাক হয়ে বলল,

— ” কিন্তু স্যার আমাদের মধ্যেকেউ এরকমটা কেনো করবে?”

মুসফিক ও সায় দিয়ে বলল,

— ” হ্যাঁ স্যার আমরা কেনো নিউসটা লিক করবো?”

হাসান কোতয়াল একটা নিশ্বাস ফেলে বলল,

— ” করার অনেক কারণ থাকতে পারে। তবে একটা কথা মনে রেখো অর্থ আর ক্ষমতার লোভে মীরজাফর সিরাজউদ্দৌল্লাহর সাথে প্রতারণা করেছিলো। এতে সিরাজউদ্দৌল্লাহ মারা গেলেও মীরজাফরের অন্তিম পরিণামটাও জানো নিশ্চয়ই?”

সবাই চুপ করে আছে। হাসান কোতয়াল একটা শ্বাস ফেলে বললেন

— ” তবে যাই হোক। দেশের জন্যে সমাজের ভালোর জন্যে ও ওর প্রাণ দিয়েছে। আর তাই এবার আমরা আমাদের মিশন যেকোনো মূল্যেই কম্প্লিট করবো, মিতার ত্যাগ কে আমারা ছোট করে দেখতে পারিনা। রাইট গাইস?”

সম্পা চিন্তিত গলায় বলল,

— ” কিন্তু স্যার মিতা যেই ছবিগুলো তুলতে গিয়েছিলো ওগুলো ছাড়াতো আমাদের আর্টিকেলটা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।”

হাসান কোতয়াল গম্ভীরমুখে বললেন,

— ” সেটা আমি বুঝে নেবো বাট যাকে যা কাজ দিয়েছি কম্প্লিট করো। পরশু সকালে নিউসপেপারের ফ্রন্ট পেইজে রঞ্জিত চৌধুরীর আসল চেহারা সবাই দেখবে। ”

আতাউর অবাক হয়ে বলল,

— ” স্যার পরশুই?”

হাসান কোতয়াল সবার দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” যদি কারো ভয় থাকে তাহলে সে পিছিয়ে যেতেই পারো। মিতার মৃত্যুর পর আমি আর কাউকে জোর করে রাখবোনা। ”

সবাই একসাথে বলল,

— ” নো স্যার উই ওল আর রেডি?”

হাসান কোতয়াল হালকা হেসে বললেন,

— ” ভেরি গুড। গো টু ইউর ওয়ার্ক ওকে।”

— ” ইয়েস স্যার।”

বলেই সবাই চলে গেলো। হাসান কোতয়াল একটা শ্বাস নিলেন। মিতা মারা যাওয়ার আগেই ওনার ফোনে ছবিগুলো পাঠিয়ে দিয়েছে। কিন্তু এই চারজনের সামনে কিছু বলেন নি কারণ উনি বুঝতে পারছেন এই চারজনের মধ্যেই কেউ নিউস লিক করছে। মানুষ কতোটা স্বার্থপর। কিন্তু এই স্বার্থপর পৃথিবীতে ওনার মেয়েটাকে কীকরে একা ফেলে যাবেন সেটাই ভাবছেন উনি।

___________________

ক্লাবে লাউড মিউসিক চলছে সেই মিউসিকের তালে তালে একটা মেয়ের সাথে ডান্স করছে রিক চৌধুরীর। এটা ওর নিত্যদিনের কাজ। ডান্স করতে করতে একপর্যায়ে রিক মেয়েটার কোমর জরানো অবস্থায় বলল,

— ” ওয়েট সুইটহার্ট আমি আসছি একটু।”

মেয়েটা রিকের গলা জরিয়ে ধরে নেকা কন্ঠে বলল,

— ” সিউর বেইবি।”

রিক মেয়েটার গালে একটা কিস করে বাই বলে ছাড়িয়ে চলে গেলো ওর বন্ধুদের কাছে। বন্ধুদের কাছে গিয়ে একটা হাসি দিয়ে হাইফাইভ করলো একজনের সাথে। ওদের মধ্যে একজন বলল,

— “তোরই লাক ভাই। আমারা নিজে থেকে মেয়েদের কাছে গিয়েও লাইন পাইনা আর তুই ক্লাবে এসে দাঁড়ালে মেয়েরা লাইন দাঁড়ানোর জায়গাও পায়না।”

রিক বাঁকা হেসে ড্রিংকের গ্লাসে ওয়াইন ঢালতে ঢালতে বলল,

— ” সবাই রিক চৌধুরী হয়না।”

বা পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একজন বলল,

— ” তবে একদিন একটা মেয়ের কাছে গেলে দ্বিতীয়বার সেই মেয়ের ধারেপারেও যাসনা, এটা কোন থিউরি?”

রিক গ্লাসে চুমুক দিয়ে বলল

—” এসব সস্তা জিনিস একদিনের ব্যাবহারেরই যোগ্য। দেখছিস না স্কিনে ঘসা মারলে এক সেন্টিমিটার পর্যন্ত মেকাপই পাবি, আর হাত বাড়ানোর আগেই চলে আসে ধরা দিতে, এরা সস্তা ছাড়া আর কী? সাচ আ চিপ গার্ল। এদের নিয়ে আমি জাস্ট টাইমপাস করি নাথিং ইলস।”

ওর বন্ধু এবার হেসে দিয়ে বলল,

— ” আচ্ছা তাহলে বিয়ের পর কী করবি? বিয়ের পর তো একটা মেয়েকে নিয়েই সারাজীবন থাকতে হবে।”

রিক গ্লাসটা টেবলে রেখে বলল,

—” বিয়ে টিয়ে নিয়ে ভাবিনি বাট যদি কখনো করি এসব সস্তা জিনিসকে করবোনা।”

ওদের মধ্যে একজন অবাক হয়ে বলল,

— ” এতো হট হট দামী ড্রেসাপের মেয়েদের তোর সস্তা মনে হয়? তো মামু এক্সপেনসিভ মেয়ের ডেফিনেশনটা বলবে একটু?”

রিক টেবিলে উঠে বসে আলসেমি ঝেড়ে বলল,

— “যাকে দেখেই আমার চোখ আটকে যাবে। এসব মেকাপ সুন্দরী হবেনা। নেচরাল বিউটি থাকবে। নট অনলি দ্যাট সে এইসব মেয়েদের মতো এতো সহজেই আমার হাতে ধরা দিতে চাইবেনা। সি হ্যাস টু হ্যাস হার ওউন পালসোনালিটি। সবার থেকে আলাদা হবে।”

ওরা সবাই অবাক। কোনো মেয়েকে দেখে রিক চৌধুরীর চোখ আটকে যাবে? আবার রিক চৌধুরীকে ধরা দিতেও চাইবেনা? এও সম্ভব? সবাই একসাথে বলল,

— ” এমন জিনিস কোথায় পাবি ভাই?”

রিক হালকা হেসে গ্লাসে চুমুক দিয়ে বলল,

— ” কোথাও তো থাকা উচিত। কিন্তু হ্যা এট লাস্ট তাকে আমার হাতের পুতুল হয়েই থাকতে হবে। নাহলে রিক চৌধুরীর হিংস্রতার পরিচয় ও প্রতি মিনিটে মিনিটে পাবে।”

সবাই একে ওপরের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল অর্থাৎ এ বড় আজব বস্তু। আর ওর নজরে যদি সত্যিই ওরকম কোনো মেয়ে পরে যায় তাহলে সেই মেয়ের কপালে দুঃখ আছে কিন্তু আদোও কী এমন মেয়ে আছে কোথাও?

____________________

অনিমা অনাথ আশ্রমে বাচ্চাদের সাথে মজা করে খেলে যাচ্ছে। কোচিং ক্লাস শেষ করেই এখানে বাচ্চাদের সাথে সময় কাটাতে এসছে। খেলতে থাকা অবস্হায় ওকেও একটা বাচ্চা লাগছে।খেলার মাঝখানে হঠাৎ ওর কাধে কেউ হাত রাখল। অনিমা পেছনে তাকিয়ে দেখলো মাদার দাড়িয়ে আছে। মাদারকে দেখেই হেসে জরিয়ে ধরলো, মাদারও ওকে জরিয়ে ধরল, অনিমা মাদারকে ছেড়ে দিয়ে ওনার গাল টেনে বলল

— ” কেমন আছো আমার সুইট, কিউট, এভার গ্রিন বারবি ডল?”

মাদার অনিমার কান টেনে ধরল, অনিমা এক চোখে বুজে বলল,

— ” আহ মাদার, লাগছে তো আমার।”

মাদার অনিমার কান ছাড়তেই ও মুখ ফুলিয়ে কান ডলতে লাগল। মাদার ওর পিঠে একটা চাপড় মেরে বলল,

— ” ফাজিল মেয়ে, বেশি দুষ্টু হয়ে গেছো আজকাল।”

অনিমা হেসে ওর শার্টের কলার সেট করে বলল,

— ” হামতো এসাই হ্যা ভাইয়া… ও সরি সরি মাইয়া।”

মাদার হেসে দিলো অনিমার কথায় আর অনিমাও হেসে দিলো। এরপর আরো কিছুক্ষণ বাচ্চাদের সাথে খেলে আর মাদারের সাথে গল্প করে সন্ধ্যার দিকে ফিরে এলো ও। বাড়ি দেখলো হাসান কোতয়াল একমনে ল্যাপটপে কাজ করে চলেছে। অনিমা মুচকি হেসে পা টিপে টিপে হাসান কোতয়ালকে পেছনে গিয়ে ‘ভাউ’ বলল। হাসান কোতয়াল আগেই দেখে নিয়েছেন অনিমাকে তবুও মেয়েকে আনন্দ দিতে ভয় পাওয়ার ভান করে বললেন,

— ” বাপরে। মামনী তুমিতো ভয় পাইয়ে দিয়েছো আমাকে।”

অনিমা হেসে দিয়ে সোফায় বসে বলল,

— ” আমি জানি তুমি একটুও ভয় পাওনি। সাচ এ পোর এক্টর।”

হাসান কোতয়াল ল্যাপটপটা রেখে বলল,

— ” সেই। এক্টিং এ যদি ভালো হতাম তো এতোদিনে শাহ রুক খান হয়ে যেতাম। ”

অনিমা একটু এক্সাইটেড হয়ে বলল,

— ” এক্সাক্টলি। ইউ নো হোয়াট আব্বু তুমি না সেই হ্যান্ডসাম আছো। ক্লিন সেভে কী কিউট লাগে তোমাকে। এই বয়সে অনেকেই পেট মোটা হয়ে যায় কিন্তু তোমার হয়নি, নো রিংকেলস, যদিও দুই একটা চুল পেকে গেছে, ও ব্যপারনা। তুমি চাইলে তোমাকে আনমেরিড মেয়েরাও রাজি হয়ে যাবে।”

হাসান কোতয়াল হেসে দিয়ে বলল,

— ” তো কী বলো বিয়ে করে ফেলি?”

অনিমা সোজা হয়ে বসে বলল,

— ” নাহ বাবা থাক নইলে আমার আম্মুর ভূত এসে তোমার ঘাড় মটকে দেবে।”

হাসান কোতয়াল এবার শব্দ করে হেসে দিয়ে বললেন,

— ” যাও ফ্রেশ হয়ে এসো আমি স্নাকস আর চা করছি।”

— ” আমি করছি তুমি বসো।”

— ” নাহ মা তুমি ক্লান্ত হয়ে এসছো রেস্ট করো।”

অনিমা মুখ ফুলিয়ে বলল

— ” সে তো তুমিও এসছো।”

হাসান কোতয়াল হেসে মেয়েকে এক হাতে ঝ
জরিয়ে ধরে বললেন,

— ” আমি থাকতে আমার মেয়ে কেনো কষ্ট করবে?”

অনিমা মুখ তুলে হাসান কোতয়ালের দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” একি কথা তো আমিও বলতে পারি।”

হাসান কোতয়াল অনিমার নাক টেনে বলল,

— ” আমি বড় তাই।”

অনিমা উঠে দাঁড়িয়ে বলল,

— ” তোমার সাথে কথায় পারবোনা।”

বলে রুমে চলে গেলো ফ্রেশ হতে হাসান কোতয়াল ও চলে গেলেন কিচেনে।
রাতের বেলা হাসান কোতয়ালে সোফায় বসে কাজ করছেন হঠাৎ ফোন বেজে উঠল, কলটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে রঞ্জিত চৌধুরী বললেন,

— ” মিস্টার কোতয়াল। আমি শেষ বারের মতো আপনাকে বলছি থেমে যান।”

হাসান কোতয়াল বুঝতে পারলেন এটা রঞ্জিত চৌধুরী তাই একটা শ্বাস ফেলে বললেন,

— ” আমি থেমে যাওয়ার মানুষ নই, যেটা একবার করবো বলে ঠিক করি সেটা করেই ছাড়ি। মৃত্যু ছাড়া কোনোকিছুই আমাকে থামাতে পারবেনা।”

মিস্টার রঞ্জিত রাগে গজগজ করে বললেন,

— ” ঠিকাছে তাহলে মৃত্যুর জন্যে তৈরী হয়ে যান। একটা কথা মনে রাখবেন ঐ আর্টিকেল আমি পাবলিসড হতে দেবোনা।”

হাসান কোতয়াল শক্ত গলায় বললেন,

— ” আমি তৈরী আছি। প্রত্যেক মূহুর্ত, প্রত্যেক সেকেন্ড মৃত্যুর জন্যে তৈরী আছি আমি। আপনি যা পারেন করুন।”

মিস্টার রঞ্জিত টেবিলে বাড়ি মেরে বলল,

— ” ভূল করছো হাসান। নিজেতো মরবেই নিজের মেয়ের জীবণটাও শেষ করে দেবে তুমি। আমার রোষের স্বীকার কিন্তু তোমার মেয়েও হবে।”

হাসান কোতয়াল এর মনের ভেতর আশঙ্কা বাসা বাধলেও উনি নিজেকে শক্ত করে বলল,

— ” আমার মেয়ের সুরক্ষার ব্যবস্হা আমি করেই গেছি।”

— ” দেখো হাসান আমি চাইনা তোমার কোনো ক্ষতি করতে বাধ্য করোনা আমায়। মরবে কিন্তু।”

হাসান কোতয়াল মলিন হেসে বললেন,

— ” মরার জন্যে তৈরী আছি আমি, কিন্তু পিছিয়ে যাবোনা। ওল দা বেস্ট।”

এটুকু বলেই ফোন কেটে দিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো হাসান কোতয়াল। পেছনে তাকিয়েই চমকে গেলেন উনি কারণ অনিমা ছলছলে চোখে তাকিয়ে আছে। উনি কিছু বলবেন তার আগেই অনিমা দৌড়ে গিয়ে জরিয়ে ধরলো ওনাকে। ফুপিয়ে কাঁদতে লাগল। হাসান কোতয়াল অনিমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,

— ” কাঁদছো কেনো মামনী? কী হয়েছে?”

অনিমা নাক টেনে টেনে বলল

— ” আব্বু তুমি প্লিজ কোনো আর্টিকেল করোনা প্লিজ, এসবের কোনো দরকার নেই, ওরা মেরে ফেলবে তোমাকে, প্লিজ আব্বু।”

হাসান কোতয়াল অনিমাকে সোফায় বসিয়ে ওর পাশে বসে বললেন,

— ” মামনী তুমি আমার মেয়ে হয়ে এই ধরণের কথা বলছো?”

অনিমা আবারও হাসান কোতয়ালকে জরিয়ে ধরে বলল,

— ” না আব্বু প্লিজ, ওরা খুব খারাপ। তোমার কিছু হয়ে গেলে আমি মরে যাবো।”

হাসান কোতয়াল ওনার মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,

— ” আমি যদি কাজটা না করি তাহলে সবাইতো তোমার বাবাকে কাওয়ার্ড বলবে সেটা ভালো লাগবে?”

অনিমা কাদোকাদো গলায় বলল

— ” কিন্তু…”

অনিমাকে থামিয়ে দিয়ে হাসান কোতয়াল বললেন,

— ” চুপ আর কোনো কথা না অনেক রাত হয়েছে। আজ রুমে যেতে হবেনা আজ তুমি আমার সাথে ঘুমোবে। আজ আমি গল্প বলে ঘুম পারাবো তোমাকে।”

অনিমা হেসে বলল,

— ” আমিকি বাচ্চা নাকি?”

হাসান কোতয়াল অনিমার মাথায় টোকা মেরে বলল,

— ” আমার কাছেতো তুই বাচ্চাই তোর মনে আছে ছোটবেলায় রাজকুমারের গল্প বলে ঘুম পাড়াতাম?”

— “মনে আছে তো। এক রাক্ষস রাজা আর রাণীকে মেরে রাজকুমারীকে বন্দী করে রেখেছিলো। ওই রাক্ষসটা রাজকুমারীকে প্রচুর অত্যাচার করতো। একদিন এক শক্তিশালী রাজকুমার এসে সব দুষ্টু রাক্ষসগুলোকে মেরে রাজকুমারীকে বাঁচিয়ে নিয়েছিলো।”

— “তাহলে চলো আজকেও শোনাবো।”

বলে অনিমাকে নিয়ে গিয়ে একদম ছোটবেলার মতো করে গল্প বলে ঘুম পাড়িয়ে দিলো। আজ অনিমাও যেনো ফিরে গেছিলো ওর ছোটবেলাতে। অনিমা পুরো ছোটবেলার মতোই নানারকম প্রশ্ন করছে আর হাসান কোতয়াল ধৈর্যধরে উত্তর দিচ্ছেন। মেয়ের আড়ালেই নিজের চোখের কোণের জলটা মুছে নিলেন উনি।”

এদিকে রঞ্জিত চোধুরী ফোন রেখে কবির শেখের দিকে তাকিয়ে বললেন

— ” কী করবো এবার?”

কবির শেখ একটা শ্বাস নিয়ে বললেন,

— ” কী আর করার? ওপরে পাঠিয়ে দিতে হবে। আর সাথে মেয়েটাকেও।”

_____________________

বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে হালকা হালকা বাজও পরছে। অফিসের কাজ শেষ করে কার ড্রাইভ করে বাড়ি ফিরছেন হাসান কোতয়াল। হঠাৎই ওনার সামনে দুটো সাদা গাড়ি এসে থামলো, উনি তাড়াতাড়ি ব্রেক করতেই গাড়ি থেকে কিছু লোক নেমে এলো। উনি খুব বুদ্ধিমান আর বিচক্ষণ লোক ছিলেন তাই বুঝতে পারলেন এরা কারা আর কেনো এসছেন। কিন্তু ওনার মাথায় এখন নিজের প্রাণের চিন্তা নেই ওনার মেয়ের চিন্তা ঘুরছে। তাই উনি সাথেসাথেই গাড়ি ঘুরিয়ে শর্টকাট পথে চলে গেলেন ওই দুটো গাড়িও ওনার পেছন পেছন আসছে। উনি খুব দ্রুত ড্রাইভ করছে। ড্রাইভ করতে করতেই কাউকে একটা ফোন দিলেন উনি। ফোনটা রিসিভ করতেই উনি বললেন,

— ” আমার হাতে সময় নেই এটাই হয়তো আমার তোমাকে বলা শেষ কথা, আমার মেয়েটাকে দেখে রেখো ওকে এই পশুদের হাত থেকে বাঁচানোর দ্বায়িত্ব তোমাকে দিয়ে গেলাম। আমার বিশ্বাস তুমি তোমার কথা রাখবে। ভালো থেকো।”

ওপাশ থেকে লোকটা উত্তেজিত হয়ে অনেক কথা বলছে কিন্তু উনি ফোন কেটে আবার ড্রাইভিং এ মনোযোগ দিলেন। বাড়ি পোছেই উনি দৌড়ে ভেতরে ঢুকলেন। ঢুকে দেখলেন অনিমা সোফায় বসে পড়ছে। উনি তাড়াতাড়ি গিয়ে বললেন

— ” মামনী তুমি পালাও এখান থেকে।”

অনিমা অবাক হয়ে দাড়িয়ে বলল,

— ” আব্বু কী হয়েছে?”

মিস্টার রঞ্জিত একটা কাগজ বার করে অনিমার হাতে দিয়ে বললেন,

— ” এটা রাখো, তোমার মামা বাড়িতে চলে যাও। তারপরে এই নম্বরে যোগাযোগ করবে আর লোকটি যা বলবে ঠিক তাই করবে। এখন যাও পালাও।”

অনিমা ব্যাপারটা কিছুটা বুঝতে পেরে বলল,

— ” মানে কী? কী বলছো তুমি এসব? আমি যাবোনা তোমাকে একা রেখে।”

হাসান কোতয়াল জানেন ওনার মেয়ে কতো জেদি তাই বললেন,

— ” মামনী ধরে নাও এটাই তোমার কাছে আমার শেষ চাওয়া প্লিজ যাও।”

অনিমা কাঁদতে কাঁদতে বলল,

— ” আব্বু প্লিজ?”

কারো আওয়াজ পেয়ে হাসান কোতয়াল বলল,

— ” ওরা এসে গেছে তুমি পেছনের গেইট দিয়ে যাও।”

— ” কিন্তু আব্বু…”

হাসান কোতয়াল চেচিয়ে বলল,

— ” মামনী যাও।”

অনিমার ইচ্ছা না থাকলেও বাদ্ধ হয়ে পেছনের গেইট দিয়ে বেড়িতে গেলো। ওর কলিজা ফেটে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে ওর জীবণটাই ও ভেতরে রেখে এসছে। ভীষণ জোরে জোরে বজ্রপাত হচ্ছে। বৃষ্টিতে ভিজে চুপচুপে হয়ে গেছে ও। কিন্তু দুর্ভাগ্যবসত একটু এগোতেই ওর সামনে রঞ্জিতের লোকেরা চলে এলো। সবাই ওর সামনে ওকে ঘিরে দাড়িয়ে আছে। অনিমা অন্যদিকে দৌড়লো ওদের কাছ থেকে বাঁচার জন্যে কিন্তু রাস্তার ইটের সাথে আটকে পরে গেলো ও, উঠতে চেয়েও উঠতে পারলোনা পায়ের চোটের জন্যে। এসবের মধ্যে কাগজটাও পরে গেছে কোথাও। লোকগুলো ওর কাছে এসে ওকে ঘিরে ধরতেই ও হালকা পিছিয়ে ভয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলল,

— ” প্লিজ আমাদের ছেড়ে দিন। আমার আব্বুকে মারবেন না প্লিজ।”

ওর কথা শুনে ওরা সবাই অট্টহাসি দিলো, তারপর বলল,

— ” ওর বাপ যতোটা চালাক ও দেখছি ততোটাই বোকা! আরে খুকুমনি তোমাকে ছাড়ার হলে আমরা ধরবো কেনো? আর তোমার বাবার এতোক্ষণে ইহকাল সমাপ্ত হয়ে গেছে।”

অনিমা চমকে গেলো। চিৎকার করে উঠলো ও। কাদতে কাদতে বলল,

— ” প্লিজ আব্বুকে ছেড়ে দিন প্লিজ।”

লোকগুলো ওর কথায় পাত্তা না দিয়ে মিস্টার রঞ্জিতকে ফোন করে বলল,

— ” স্যার মেয়েটাকে পেয়ে গেছি, এখন কী করবো?”

ওপাশ থেকে কিছু বলতেই লোকটা আচ্ছা বলে ফোন রেখে দিলো। তারপর অনিমার হাত ধরে টেনে তুলে বাকিদের উদ্দেশ্যে বলল,

— ” নিয়ে যেতে বলেছে ওখানে।”

ওরা সবাই অনিমাকে টেনে নিয়ে ওদের বাড়িতে সোজা হাসান কোতয়ালের বেডরুমে নিয়ে গেলো। আর ওখানে গিয়ে সামনে তাকাতেই অনিমা স্তব্ধ হয়ে গেলো, ওর পৃথিবী ওখানেই থেমে গেলো, ওর মনে হচ্ছে ওর মাথায় কেউ ভারী কিছু দিয়ে আঘাত করেছে, একটা লোক ওর হাত ধরে আছে তবুও ফ্লোরে বসে পরলো ও দাড়িয়ে থাকার শক্তি নেই ওর। কারণ ওর সামনে সিলিং ফ্যানে ওর আব্বু অর্থাৎ হাসান কোতয়ালের লাশ ঝুলছে।
.
# চলবে…

বর্ষণের সেই রাতে ❤পর্ব- ২৬

0

বর্ষণের সেই রাতে ❤পর্ব- ২৬
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

.
একটা চৌকি টাইপ আসনে বসে আছেন মাদার, ওনার বৃদ্ধ চেহারায় কপালের রেখা আরো স্পষ্ট হয়ে উঠেছে আজ। আর নিচে ফ্লোরে আসাম করে বসে আছে আদ্রিয়ান, আদিব, আশিস, তীব্র, রাইমা, অরুমিতা আর স্নেহা। হ্যাঁ আদিব, আশিস, রাইমা আর স্নেহা কেও কল করে ডেকে নিয়েছে ওরা। সাতজনেই উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মাদারের দিকে। মাদার চিন্তিত কন্ঠে আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” অনিমা কোথায় এখন?”

আদ্রিয়ান একটা একটা শ্বাস ফেলে বলল,

— “আমার একটা এপার্টমেন্টেই আছে। আসার আগে দেখে এসছি ঘুমোচ্ছে, আসলে রাতে স্লিপিং পিলস দিয়েছিলাম তাই একটু বেশি সময় ঘুমোবে।”

মাদার কিছুক্ষণ চুপ করে কিছু একটা ভাবল তারপর সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলল,

— “অনিমার অতীত জেনে তোমাদের কী লাভ?”

আদ্রিয়ান মাদারের পায়ের কাছেই বসে আছে, ও মাদারের কোলের ওপর হাত রেখে বলল

— ” মাদার ওর অতীত ওর বর্তমানের ওপর প্রভাব ফেলছে। এন্ড আই থিংক ওর অতীত ওর বর্তমানে ফিরে এসছে। যার কারণে ও শান্তিতে নিশ্বাস ও নিতে পারছেনা।”

পাশ থেকে তীব্র বলে উঠল,

— ” আপনি ঠিকি ভাবছেন ওর পুরো অতীতটাই ওর বর্তমানে ফিরে এসছে। রিক, অর্ক ওরা সবাই।”

এটা শুনে মাদার চমকে গিয়ে বললেন,

— ” কী? রিক চৌধুরী অনিমাকে খুজে পেয়ে গেছে?”

আদ্রিয়ান মাদারের হাত ধরে বলল,

— ” এইজন্যেই আমি সবটা জানতে চাইছি। কালকে রাতেও ওকে পাগলের মতো ছটফট করতে দেখেছি আমি, ওকে ওই কষ্ট থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্যে ওর অতীতটা জানা খুব দরকার মাদার। তাই সবটা বলুন কী হয়েছিলো আঙ্কেল এর মৃত্যুর পর?”

মাদার এবার ওদের দিকে একবার তাকালেন তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন

— ” তোমরা সবাই অনিমার খুব ভালো বন্ধু। আমার বিশ্বাস যে যদি কেউ ওকে এই নরক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিতে পারে সেটা তোমরাই পারবে। আমি মোটামুটি সবটাই জানি। কারণ হাসান আমার ছেলের মতো ছিলো, অনিমাকে নিয়ে প্রায় আসতো এখানে। অনিমার বাচ্চা খুব প্রিয় ছিলো। জন্মের পর থেকে মায়ের স্নেহ পায়নি ও, হাসান ওকে খুব বেশি ভালোবেসে বড় করলেও ওকে তেমন একটা সময় দিতো পারতোনা। তাই হয়তো এই অনাথ বাচ্চাদের প্রতি ওর এতো টান ছিলো। আর এই আশ্রমের বাচ্চারাও ওকে খুব ভালোবাসতো। এভাবেই ওদের দিন ভালোই চলছিলো। কিন্তু জিজাস্ হয়তো অন্য কিছুই চাইছিলো। তাই হয়তো হাসান এর মাথায় রঞ্জিত চৌধুরীকে এক্সপোস করার ভূত চড়েছিলো। ”

রাইমা অবাক হয়ে বলল

— ” মিনিস্টার রঞ্জিত চৌধুরী?”

— ” হ্যা এমনিতেতো মিনিস্টার কিন্তু ওনার পাপের শেষ নেই। সবার সামনে ভালো মানুষের মুখোশ পরে থাকে। আর হাসান সেই মুখোশটাই খুলতে চেয়েছিলো। আর এটাই ওর কাল হলো।”

আশিস কৌতুহলি হয়ে বলল

— ” কিন্তু এসবের সাথে অনিমা কীকরে জরালো?”

সবাই জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মাদারের দিকে আর মাদার একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে ওদেরকে সবটা বলতে শুরু করলো।

__________________

সাত বছর আগে ___

নিজের কেবিনে বসেই ফাইল রেডি করছেন হাসান কোতয়াল। বেশ কয়েকদিন ধরেই একটা আর্টিকেল নিয়ে কাজ করছেন উনি। এবারের আর্টিকেল টা সিকরেটলি কম্প্লিট করছেন।ওনার কম্পানির পাঁচজন সাংবাদিক কে নিয়ে কাজ করছেন। একটু পর ওদেরকে নিয়ে মিটিং করতে হবে। ফাইলগুলো চেক করে একটা একটা শ্বাস ফেললেন হাসান কোতয়াল। জার্নালিসম ওনার কাছে শুধুমাত্র একটা পেশা নয় বরং এটা ওনার সাধনা। উনি ওনার লক্ষের খুব কাছেই, সব ঠিক থাকলে উনি শীঘ্রই সমাজের ভয়ংকর এক পশুকে সবার সামনে তুলে ধরতে পারবেন। অনেক অনেক নিরীহ মানুষ রক্ষা পাবে এই নরপশুর হাত থেকে। এরমধ্যেই বাকি পাঁচজন চলে এলেন ওনার কেবিনে। আতাউর , মুসফিক, মিতা, সম্পা, ইলিয়াস। আতাউরের বয়স পয়তাল্লিস, মুসফিকের তেত্রিশ, ইলিয়াস আর সম্পার ত্রিশ, মিতার আটাশ। ইলিয়াস দরজায় নক করে বলল

— ” মে উই কাম ইন স্যার।”

হাসান কোতয়াল ফাইল থেকে চোখ সরিয়ে বললেন

— ” এসো।”

পাঁচ জনেই এসে বসলো। হাসান কোতয়াল ওদের দিকে তাকিয়ে বলল

— ” যাকে যা যা তথ্য যোগার করতে বলেছিলাম রেডি হয়েছে।”

পাঁচজনেই একসুরে বলল

— ” ইয়েস স্যার ।”

— ” ভেরি গুড। আমরা আমাদের আর্টিকেল টা কম্প্লিট করার প্রায় শেষের পথে। আমাদের অনেকদিনের পরিশ্রমের ফল এটা। এই পর্যন্ত ব্যাপারটা সিকরেট ছিলো, কিন্তু কোনোভাবে রঞ্জিত চ‍ৌধুরীর কানে খবরটা পৌছে গেছে। উনি আমাকে প্রথমে মোটা অঙ্কের টাকা অফার করেছিলেন। না করে দেওয়াতে প্রাণে মারার হুমকিও দিয়েছেন বাট আমি কেয়ার করিনি। খবরটা কীকরে লিক হলো আমি জানিনা। আমার বিশ্বাস তোমাদের মধ্যে কেউ এরকম টা করে নি, তোমারা আমার খুব বিশ্বস্ত। তবে যাই হোক আমি পিছিয়ে যাবোনা, আমার বিশ্বাস তোমরাও তোমাদের কর্তব্য থেকে পিছিয়ে আসবেনা। আর আর্টিকেলটা আমাদের পেপারে ছাপার আগে, এন্ড নিউস চ্যানেলে প্রুভ গুলো দেখানোর আগ পর্যন্ত আমরা থামবো না, গট ইট?

সবাই একসাথে সম্মতি জানালো। এরপর ওনারা আর্টিকেলটার ব্যাপারে কিছুক্ষণ আলোচনা করার পর। মিটিং শেষ করে ওদের পাঁচজনকে বিদায় দিয়ে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসলেন হাসান কোতয়াল। উনি জানেন ওনার জীবণ কতোটা সংকোটে আছে। ওনার সেটা নিয়ে মাথা ব্যাথা নেই কিন্তু ওনার কিছু হয়ে গেলে ওনার মেয়ের কী হবে? মেয়েটার তো উনি ছাড়া কেউ নেই। এসব চিন্তা করে উনি বিড়বিড় করে বললেন

— ” নাহ আমাকে কথা বলতে হবে ওর সাথে। একমাত্র ওর কাছেই আমি আমার মেয়েকে নিরাপদে রেখে যেতে পারবো।”

এটুকুই বলেই উনি বেড়িয়ে পড়লেন সেই কাঙ্ক্ষিত লোকটার সাথে দেখা করার উদ্দেশ্যে।

___________________

এদিকে মিস্টার রঞ্জিত ওনার পার্টির অফিসের মিটিং শেষ করে সবে নিজের চেম্বারে বসে রেস্ট করছেন। হঠাৎ করেই ওনার পিএ এসে বলল কেউ একজন ওনার সাথে দেখা করতে চান। উনি অনুমতি দিতেই একজন লোক এসে কেবিনে ঢুকলো। লোকটাকে দেখেই বাকা হেসে মিস্টার রঞ্জিত বললেন,

— ” তো হাসান কোতয়াল ওনার আর্টিকেলের কাজ বন্ধ করে দিয়েছে তাইতো?”

লোকটা মাথা নিচু করে বলল,

— ” না স্যার উনি তো ওনার সিদ্ধান্ত থেকে এক চুলও নড়ে নি। উনি তো খুব তাড়াতাড়ি আর্টিকেলটা পাবলিসড করতে চাইছেন।”

এটা শোনার সাথেসাথেই রঞ্জিত চৌধুরীর চোয়াল শক্ত হয়ে গেলো। এতো হুমকি ধমকি দেওয়ার পরেও একটুও ভয় নেই। কীকরে থামাবে একে? লোকটা মাথা নিচু করে বলল,

— ” স্যার আমার টাকাটা?”

রঞ্জিত চোধুরী বিরক্ত হয়ে ড্রয়ার থেকে একটা টাকার বান্ডিল বের করে লোকটার দিকে দিয়ে বলল

— ” টাকা ঠিক মতো পেয়ে যাচ্ছো, খবরগুলোও জেনো আমি ঠিকমতো পেয়ে যাই।”

লোকটা টাকা নিয়ে হেসে দিয়ে বলল

— ” চিন্তা করবেন না স্যার সব খবর সময়মতো প‍ৌছে দেবো আপনার কাছে।”

— ” হ্যাঁ যাও এখন।”

লোকটা চলে যেতেই মিস্টার রঞ্জিত চিন্তায় মগ্ন হয়ে গেলেন। একটু পরেই কবির শেখ এসে বসলেন ওনার কেবিনে। কিন্তু মিস্টার রঞ্জিত এর এই বিষয়ে কোনো খেয়াল নেই উনি ওনার চিন্তায় মগ্ন। কবির শেখ একটা কাশি দিয়ে বললেন

— ” এতো কী ভাবছেন জিজু?”

মিস্টার রঞ্জিত কবির শেখ এর দিকে তাকিয়ে বললেন,

— ” ঐ জার্নালিস্ট তো মানতেই চাইছেনা। যদি ঐ আর্টিকেল আর প্রুভ যদি একবার পাবলিস্ট হয়তো বরবাদ হয়ে যাবো আমি। আমার এতোদিনের নাম, রেপুটেশন সব শেষ হয়ে যাবে। বুঝতে পারছো?”

কবির শেখ ভ্রু কুচকে বললেন

— ” থামিয়ে দিন ওটাকে?”

— ” কীকরে? টাকার লোভ দেখালাম লাভ হলো না। প্রাণের ভয় দেখিয়েছি তাতেও লাভ হয়নি। আর কী করব?”

কবির শেখ এবার হেসে দিয়ে বলল,

— ” কাম অন জিজু। একটু এগিয়ে ভাবুন। প্রত্যেকটা মানুষেরই একটা দূর্বল জায়গা থাকে। আর হাসান কোতয়ালেরও আছে। আমি সব খোজ খবর নিয়ে নিয়েছি।”

মিস্টার রঞ্জিত অবাক হয়ে বললেন,

— ” কী সেটা?”

কবির শেখ বাকা হাসি দিয়ে বললেন,

— ” ওনার একমাত্র মেয়ে অনিমা কোতয়াল। এবার এইচ এস সি দিয়ে ভার্সিটি এডমিশনের জন্যে প্রিপারেশন নিচ্ছে। একে মেয়ে, বয়স সতেরোর একটু ওপরে হবে। তো বুঝতেই পারছেন?”

এটা শুনে কবির শেখ এর দিকে তাকিয়ে হেসে দিলেন রঞ্জিত চৌধুরী। অর্থাৎ উনি বুঝে গেছেন ওনাকে কী করতে হবে। আর সেই হাসি দেখে কবির শেখ ও হেসে দিলেন।

___________________

রাতে হাসান কোতয়াল বাড়িতে এসে ড্রয়িংরুমে ঢুকে সোফার দিকে তাকিয়ে নিজের অজান্তেই হেসে দিলেন। কারণ ওনার মেয়ে অনিমা এলোমেলোভাবে সোফায় ঘুমিয়ে আছে। বুকের ওপর বই রাখা। উনি বুঝতেই পারছেন যে ওনার জন্যে অপেক্ষা করতে করতে সোফায় শুয়ে বই পড়ছিলো আর পরে ওভাবেই ঘুমিয়ে পরেছে। আস্তে করে বইটা সরিয়ে মেয়েটার কাছে বসে মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললেন

— ” মামনী ওঠো।”

অনিমা চোখ বুজেই ভ্রু কুচকে মোড়ামুড়ি দিলো। হাসান কোতয়াল আবারো ডাকল, কয়েকবার ডাকার পর চোখ ডলে উঠে বসলো অনিমা। তাকিয়ে নিজের আব্বুকে দেখেই মিষ্টি একটা হাসি দিলো । এই হাসিটাই ওনার সব ক্লান্তি দূর করে দেওয়ার জন্যে যথেষ্ট। উনি মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,

— ” তোমাকে না বলেছি মামনী যে আমার জন্যে রাত জেগে অপেক্ষা করবে না? খেয়ে শুয়ে পরবে?”

অনিমা একটা হাই তুলে ঘুমজরানো কন্ঠে বলল,

— ” তুমি খাইয়ে না দিলে খেতে ইচ্ছে করেনা তো।”

হাসান কোতয়াল হালকা হেসে বললেন,

— ” কিন্তু আমি যখন থাকবোনা তখন কী করবে? আমি তো আর সারাজীবন থাকবোনা তোমার সাথে।”

অনিমার ঘুম নিমেষেই উবে গেলো, রেগে গিয়ে বলল,

— ” আব্বু। তুমি সবসময় এরকম বলো। তুমি জানো আমার এসব শুনতে ভালোলাগেনা।”
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
বলেই সোফায় আসাম করে বসে মুখ ঘুরিয়ে রাখল অনিমা। হাসান কোতয়াল অনিমার পাশে বসে বললেন

— ” আমার মামনী রাগ করেছে আমার ওপর?

অনিমা ঘুরে হাসান কোতয়ালকে জরিয়ে ধরে কাদোকাদো বলল,

— ” তোমাকে ছাড়া আমি থাকতে পারবোনা আব্বু, আম্মুতো আমাকে পৃথিবীতে আনার কাজ সেড়েই আমাকে ফেলে চলে গেছে, তুমি যেওনা প্লিজ।”

হাসান কোতয়াল মনে মনে কষ্ট পেলেও মুখে হাসি টেনে বললেন,

— ” পাগলী মেয়ে। সবাইকী সারাজীবন বেঁচে থাকে নাকি? আর তাছাড়াও বিয়ের পরতো আর আমার সাথে থাকতে পারবেনা। তখন তো শশুর বাড়ি থাকতে হবে।”

অনিমা হাসান কোতয়ালকে ছেড়ে দিয়ে ভ্রু কুচকে বলল

— ” বিয়ে? আমি কোনো বিয়ে ঠিয়ে করছিনা।”

হাসান কোতয়াল অবাক হয়ে বললেন,

— ” এমা এটা কেমন কথা?”

অনিমা মুখ ফুলিয়ে বলল

— ” হ্যাঁ আমি বিয়ে করবোনা। কারণ আমি তোমাকে ছেড়ে থাকতে পারবোনা।”

হাসান কোতোয়াল চিন্তিত মুখ করে বললেন

— ” কিন্তু আমার তো অনেক দিনের সখ নিজের মেয়ে জামাই দেখার। সেই সখ পূরণ করবে না তুমি?”

অনিমা এটা শুনে দাঁত দিয়ে নখ কেটে কিছুক্ষণ ভাবলো তারপর মুখে হাসি টেনে বলল

— ” আইডিয়া। ঘর জামাই নিয়ে আসবে। তাহলেই প্রবলেম সলভব।”

মেয়ের কথা শুনে বিষম খেলেন হাসান কোতয়াল। শেষে কী না ঘর জামাই? তবুও নিজেকে সামলে বললেন

— ” ঘর জামাই?”

অনিমা হেসে বলল

— ” হ্যাঁ ঘর জামাই। যদি বিয়ে দিতে চাও তাহলে সেটাই করতে হবে, নইলে বিয়ে ক্যান্সেল, ব্যাস।”

হাসান কোতয়াল হেসে বললেন,

— “আচ্ছা ঠিকাছে এবার চলো খেতে হবে তো।”

এরপর খাবার বেড়ে হাসান কোতয়াল অনিমাকে খাইয়ে দিতে লাগলেন। খাওয়াতে খাওয়াতে উনি বললেন,

— ” খেয়ে চুপচাপ ঘুমিয়েপড়বে ওকে?”

অনিমা চিবোতে চিবোতে বলল,

— ” পড়া আছে তো আমার পড়বে হবে।”

— ” এখন আর না। অনেক রাত হয়েছে আবার কাল সকালে পড়ো।”

— ” আরে আমাকে আমার পিএডাবলিউ সাবজেক্ট টা পেতে হবে তো। যাতে তোমার মতো বেস্ট জার্নালিস্ট হতে পারি।”

— ” অবশ্যই পারবে বাট আগে সুস্হ থাকতে হবে রাইট?”

অনিমা মাথা নাড়ল। অনিমাকে খাইয়ে আর নিজে খেয়ে হাসান কোতয়াল অনিমার মাথায় হাত বুলিয়ে ওকে ঘুম পারিয়ে দিলো। হঠাৎ করেই ওনার ফোনে কল এলো ফোনটা নিয়ে ব্যালকনিতে গিয়ে রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে রঞ্জিত চৌধুরী বলল

— ” কেমন আছেন মিস্টার কোতয়াল।”

হাসান কোতয়াল গম্ভীর কন্ঠে বললেন,

— ” কেনো ফোন করেছেন?”

— ” তো কী ঠিক করলেন? আর্টিকেল টা ছাপবেনই?”

— ” আমি আমার সিদ্ধান্ত আগেই জানিয়ে দিয়েছি। টাকার লোভ, বা মারার হুমকি কোনোটাই কাজ করবেনা আমার ওপর।”

এবার মিস্টার রঞ্জিত বাকা হেসে বললেন,

— ” শুনলাম আপনার একটা মেয়ে আছে? এই সেতেরো আঠারো বয়সের?”

হাসান কোতয়াল হালকা চমকে উঠলেন তবুও শক্ত গলায় বললেন,

— ” কী বলতে চাইছেন?”

মিস্টার রঞ্জিত হেসে বললেন

— ” তেমন কিছুই না। আজকাল দিনকাল তো এমনিতেই খুব খারাপ যাচ্ছে এখন ধরুন যদি রাস্তায় বেরোলে মেয়েটার সাথে উল্টোপাল্টা কিছু হয়ে যায়। তখন আপনারি খবরের ফ্রন্ট পেইজে আপনারি মেয়ের খবর ছাপতে পারবেন তো?”

হাসান কোতয়াল এবার রেগে গিয়ে বললেন,

— ” মিস্টার চ‍ৌধুরী? ঝামেলাটা আপনার আমার মধ্যে। আমার মেয়ে আপনার কিচ্ছু করেনি তাই ওকে এর মধ্যে টানবেন না।”

— ” সে তো আমিও আপনার কিছু করিনি তাহলে? আপনি কেনো আমার পেছনে পরেছেন?”

— ” কারণ আপনাদের মতো কিটেরা এই দেশটাকে শেষ করে দিচ্ছে আর তাই..”

হাসান কোতয়ালকে বলতে না দিয়ে মিস্টার রঞ্জিত বললেন,

— ” রাখুন আপনার জ্ঞানের কথা। যদি নিজের মেয়েকে বাঁচাতে চান তো ঐ প্রমাণ গুলো আমাদের দিয়ে দিন আর আর্টিকেলের কথা ভূলে যান। নয়তো জাস্ট এক রাতের জন্যে যদি আমার ছেলেরা আপনার মেয়েকে তুলে নিয়ে আসেনা তাহলে পরের দিন সকালের ব্রেকিং নিউস হয়ে যাবে আপনার মেয়ে।”

হাসান কোতয়াল কঠোর গলায় বলল,

— ” এবার তো আর্টিকেল আমি অবশ্যই পাবলিস্ট করবো। আর আমার মেয়েকে কীকরে নিরাপদে রাখতে হবে আমি জানি সেটা।”

এটা শুনে মিস্টার রঞ্জিত রেগে গিয়ে বলল

— ” অনেক বড় ভুল করলে এই ভূলের মাসুল তোমার মেয়েকেই দিতে হবে কিন্তু।”

হাসান কোতয়াল আর কিছু না শুনে ফোনটা রেখে দিয়ে অনিমার কাছে গেলো। কতো নিষ্পাপ লাগছে। রঞ্জিত চৌধুরীকে যাই বলুক মনে মনে ওনারও ভয় হচ্ছে। ওনার জন্যে মেয়েটার বিপদ হবে না তো? মা হারা মেয়েটাকে অনেক কষ্টে বড় করেছেন উনি। উনি থাকতে না হয় বাঁচিয়ে নেবে এই পশুদের কাছ থেকে কিন্তু তারপর? নাহ ওর সাথে আবার কথা বলতে হবে কালকে, কিছু হয়ে যাওয়ার আগেই শেষবার ওর সাথে কথা বলতেই হবে। ওই পারবে ওনার মেয়েকে আগলে রাখতে।
.
#চলবে…
.
(অতীত আর এক পার্ট বা দুই পার্টেই শেষ হবে বেশি বাড়াবোনা। হ্যাপি রিডিং ?)

বর্ষণের সেই রাতে ❤পর্ব: ২৫

0

বর্ষণের সেই রাতে ❤পর্ব: ২৫
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

.
অনিমার ফেস রিয়াকশন দেখে আদ্রিয়ানের খুব হাসি পাচ্ছে। মেয়েটা ওর মজাও বোঝেনা। হাসিটা চেপে রেখে অনিমাকে বলল,

— ” কী হলো বলো? ভালো হবেনা?”

অনিমা বিরক্ত হয়ে বলল,

— ” মাথা খারাপ হয়ে গেছে আপনার। লিভ ইন রিলেশনসিপ এর মানে বোঝেন?”

অাদ্রিয়ান অনিমার আরেকটু কাছে গিয়ে বলল,

— ” না বোঝার কী আছে? দুজন পরস্পর বিপরীত লিঙ্গের মানুষ যদি বিয়ে না করেই স্বামী স্ত্রীর মতো লাইফ লিড করে তাহলেই তাকে লিভ ইন রিলেশনশিপ বলে, রাইট? তুমি যখন বিয়ে করবেই না তখন এটাই বেটার অপশন না?”

অনিমা বিরক্ত হয়ে চোখ সরিয়ে নিয়ে বলল,

— ” লোকে ঠিকি বলে সেলিব্রেটিদের ক্যারেক্টার এরোকমি হয়। সবগুলো অসভ্য।”

আদ্রিয়ান অনিমার একদম কাছে গিয়ে বলল,

— ” আমি কতোটা অসভ্য সেটা সময় এলে বুঝিয়ে দেবো। আপাদত কথাটা তুলে রাখলাম।”

অনিমার পেছানোর আর ন‍ূন্যতম জায়গাও নেই। তাই একটু ইতস্তত করে বলল

— ” একটু দূরে সরে বসুন প্লিজ।”

আদ্রিয়ান বুঝতে পেরেও অনিমাকে জ্বালাতে বলল,

— ” কেনো?”

— ” আমার আনইজি লাগছে।”

আদ্রিয়ান মুচকি হেসে সরে এলো অনিমার কাছ থেকে, তারপর ফোন স্ক্রল করতে লাগল। অনিমা মুখের ওপরে পরা চুলগুলো কানে গুজে একটু সংকোচ নিয়ে বলল

— ” ইয়ে.. এভাবে হাফ এডাম হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন কেনো?”

আদ্রিয়ান ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল

— ” আমার ইচ্ছে।”

অনিমা বিরক্ত হয়ে মুখ ঘুরিয়ে বসে রইলো। কিছু একটা মনে হতেই ও চমকে গিয়ে বলল

— “আচ্ছা এটা আপনার এপার্টমেন্ট?”

আদ্রিয়ান ফোন টিপতে টিপতেই বলল

— ” নাহ। এটার মালিক আমাকে ফ্রি সার্ভিস দিচ্ছে। ”

অনিমা একটা মুখ ভেংচি দিলো। কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল

— ” আমার স্কুটি কোথায়?”

— ” বিক্রি করে দিয়েছি। আসলে পকেটে টাকা নেই। ওটা বেচে যা পেয়েছি সেটা দিয়ে মাস খানেক চলে যাবে।”

অনিমা এবার খুব বিরক্ত হয়ে বলল

— ” আপনি কী সোজাভাবে কথা বলতে পারেন না?”

আদ্রিয়ান এবার মোবাইল থেকে চোখ সরিয়ে বলল

— ” আমার কী দোষ? তুমি প্রশ্নগুলোই এমন করো। এবার এসব আউলফাউল প্রশ্ন করা বন্ধ করে এক্সাক্টলি কী জানতে চাইছো বলো?”

অনিমা এবার মাথা নিচু করে হাত কচলাতে কচলাতে বলল,

— ” আচ্ছা কাল রাতে আপনি কোথায় ঘুমিয়েছেন?”

আদ্রিয়ান এবার ফোনটা রেখে হেসে বলল,
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
— ” ওহ তাহলে এটাই ম্যাডামের মূল প্রশ্ন?

অনিমা মাথা নিচু করে আছে আদ্রিয়ান হেসে দিয়ে বলল,

— ” আমি আমার বেড ছাড়া কোথায় ঘুমোবো?”

অনিমা একটা শুকনো ঢোক গিলে বলল,

— ” মানে আপনি আমার পাশে শুয়েছেন?”

আদ্রিয়ান ভ্রু কিঞ্চিত উচু করে মুচকি হেসে অনিমার দিকে তাকালো, অর্থাৎ হ্যাঁ তো? অনিমা চুপ করে আছে আসলে কী বলবে বুঝতে পারছেনা। অনিমার চেহারা দেখে আদ্রিয়ান হেসে দিয়ে বলল,

— ” আরে আমি সোফাতেই ঘুমিয়েছি, সো চিল।”

এটা শুনে অনিমা একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো। আদ্রিয়ান মুচকি হেসে আবার ফোনে মনোযোগ দিল। দুজনেই বেশ অনেকক্ষণ চুপ ছিলো। হঠাৎ করেই ওর রিকের কথা মনে পরলো। রিক তো বলেছিলো আজ ওকে নিয়ে যেতে আসবে। এরপর যদি এসে ওকে না পায়, আর যদি এটা জানতে পারে যে ও আদ্রিয়ানের কাছে আছে তাহলে? তাহলে তো ওরা আদ্রিয়ানকে মেরে ফেলবে। আর এসব জেনেও অনিমা এভাবে বসে আদ্রিয়ানের সাথে স্বাভাবিকভাবে কথা বলছে? আদ্রিয়ান জানেনা অনিমা আদ্রিয়ানের জন্যে কতো বড় বিপদ, কিন্তু অনিমা তো জানে। তাহলে ও কীকরে এই ভূলটা করছে? না আদ্রিয়ানকে বাঁচাতে ও সেচ্ছায় ঐ নরকে ফিরে যেতেও রাজী আছে। ওর যতোই কষ্ট হোক আদ্রিয়ান তো ভালো থাকবে।অনিমা উঠে দাঁড়িয়ে বলল

— ” আমি আমার ফ্লাটে যাবো। ”

আদ্রিয়ান ফোনে চোখ রেখেই স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বলল

— ” যতোদিন না তুমি আমাকে সবটা ক্লিয়ার করে বলছো আমি তোমাকে কোথাও যেতে দিচ্ছিনা। সবটা জেনে তারপর ঠিক করব যে যেতে দেবো নাকি নিজের কাছে আটকে রাখব।”

অনিমা একটা শ্বাস নিয়ে নিজেকে শক্ত করার চেষ্টা করল। আদ্রিয়ানের ভালোর জন্যেই এখন ওকে আদ্রিয়ানের সাথে রুড হতেই হবে। অনিমা আদ্রিয়ানের দিকে রেগে তাকিয়ে চেচিয়ে বলল

— ” কী পেয়েছেন কী আপনি হ্যাঁ? যা ইচ্ছে হবে তাই করবেন? কোন অধিকারে এতোটা জোর খাটাচ্ছেন আমার ওপর? কে হন আপনি আমার যে আপনাকে সবটা বলতে হবে? আমার যা ইচ্ছে হবে আমি করব, যেখানে ইচ্ছে হবে সেখানে যাবো। এসব নিয়ে কথা বলার আ..”

এটুকু বলে আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে আতকে উঠল অনিমা। আদ্রিয়ানের চোখ লালচে হয়ে গেছে, হাত মুষ্টিবদ্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে, হাতের রগগুলো ফুলে উঠেছে। অনিমা বেশ ভয় পেয়ে গেলেও সেই ভয়কে পাত্তা না দিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক রেখে বলল

— ” সো আমার বিষয়ে নাক গলানোটা বন্ধ করুন। আর নেক্সট টাইম আমার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টাও করবেননা, আপনার কোনো অধিকার নেই এসব করার।”

এটুকু বলে অনিমা চলে যেতে নিলেই আদ্রিয়ান একটানে ওকে নিজের কাছে নিয়ে এলো। এরপর দাঁতে দাঁতে চেপে বলল

— ” তাহলে কার অধিকার আছে ওই রিক চৌধুরীর?”

অনিমা চমকে গেলো আদ্রিয়ানের কথায়। কালকে তো শুধু অাদ্রিয়ান রিকের গলার আওয়াজ শুনেছে, অদ্ভূতভাবে কোনো প্রশ্নও করেনি ওকে। কিন্তু নাম কীকরে জানলো? অনিমাকে ওভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে আদ্রিয়ান বলল

— ” কী ভাবছো? আমি কীকরে জানলাম তাইতো?

অনিমা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অাদ্রিয়ানের দিকে, আদ্রিয়ান অনিমাকে আরেকটু নিজের দিকে টেনে নিয়ে বলল

— “আমার নজর থেকে কিচ্ছু এড়ায় না। সেদিন রাতে ও এসছিলো না তোমার ফ্লাটে?”

অনিমা নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। আদ্রিয়ান শক্ত কন্ঠে বলল

— ” কী সম্পর্ক ওর সাথে তোমার? ওসব কথা কেনো বলছিলো তোমাকে?”

অনিমা কিছু না বলে ছলছলে চোখে তাকিয়ে আছে আদ্রিয়ানের দিকে। আদ্রিয়ান ধমকি দিয়ে বলল

— ” বলো? কেনো আসে ও তোমার কাছে?”

অনিমা নিজেকে সামলে আদ্রিয়ানের চোখে চোখ রেখে চড়া গলায় বলল

— ” বললাম না এসব আমার পার্সোনাল ব্যাপার। আপনাকে বলতে বাদ্ধ নই আমি। আপনার সাথে আমার কোনো সম্পর্কই সম্ভব নয়। আমাদের দুজনের লাইফস্টাইল, স্টেটাস সব আলাদা। সো স্টে এওয়ে ফ্রম মি এন্ড লেট মি গো প্লিজ।”

অনিমার কথায় আদ্রিয়ানের রাগ আরো বেড়ে গেলো অনিমার দুই বাহু চেপে ধরে বলল

— ” তাহলে প্রথমেই কেনো দূরে সরিয়ে দেওনি? কেনো এসছিলে এতো কাছে? কেনো বন্ধুত্ব করছিলে আমার সাথে? তখন এসব মনে ছিলোনা?”

অনিমা নিজের চোখের জল আটকানোর চেষ্টা করে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বলল

— ” না ছিলোনা, কিছু সময়ের জন্যে আবেগে ভেসে গেছিলাম, বাস্তবতা বুঝতে পারিনি।”

আদ্রিয়ান রাগে আগুন হয়ে বলল

— ” ও তা এখন তোমাকে বাস্তবতা কে বোঝালো? রিক চ‍‍োধুরী?”

অনিমা আদ্রিয়ানকে নিজের থেকে সরিয়ে দিয়ে বলল

— ” হ্যাঁ ওনিই বুঝিয়েছেন। আমার আসল জায়গা কী সেটা উনিই দেখিয়ে দিয়েছেন আমাকে।”

এটুকু বলে অনিমা চলে যেতে নিলেই আদ্রিয়ান অনিমার হাত ধরে একটানে বেডে ফেলে দিলো। অনিমা আবাক হয়ে তাকাতেই আদ্রিয়ান অনিমার কাছে এসে ওর গালে হাত রেখে বলল

— ” এবার আমি তোমাকে তোমার আসল জায়গা দেখাবো।”

এটুকু বলে উঠে গিয়ে ড্রয়ার থেকে দড়ি বের করে নিয়ে এলো আদ্রিয়ান। অনিমা আদ্রিয়ানের চোখ মুখ দেখেই ভয়ে একটু পিছিয়ে গেলো। অাদ্রিয়ান অনিমার কাছে যেতেই অনিমা বলল

— ” আদ্রিয়ান আপ..”

আর কিছু বলার আগেই আদ্রিয়ান অনিমার হাত পা বেধে দিলো। অনিমা রেগে গিয়ে বলল

— ” কেনো করছেন এরকম? কী চান আপনি?”

আদ্রিয়ান কঠিন গলায় বলল

— ” তোমাকে উত্তর দিতে বাধ্য নই আমি। তোমার যেটা ইচ্ছে হয়েছে করেছো, এবার আমার যেটা ইচ্ছে হবে সেটাই করব।”

অনিমা এবার আর কান্নাটা আটকে রাখতে পারলোনা। অনিমা কেঁদে দিয়ে বলল

— ” প্লিজ আমার কথাটা শুনুন।”

আদ্রিয়ান অনিমার আর কোনো কথা না শুনে রুমাল দিয়ে ওর মুখও বেধে দিলো। অনিমা করুণ চোখে তাকিয়ে রইলো আদ্রিয়ানের দিকে। আদ্রিয়ানের ও খারাপ লাগছে অনিমাকে এভাবে দেখে কিন্তু সেদিকে পাত্তা না দিয়ে রুম লক করে হনহনিয়ে চলে গেলো ওখান থেকে। কী ভাবছে কী মেয়েটা? ও মুখে যা বলে সেটাই মেনে নেবে? আদ্রিয়ান তো অনিমার চোখ দেখেই ওর মনের কথা পরতে পারে। ও জানে অনিমা যা বলছে সব বাধ্য হয়ে বলছে। সবার ভালোর জন্যে আনিমা নিজে ঐ বিপদে নিজেকে জরাতে চাইলেও, আদ্রিয়ান অনিমাকে ওই বিপদে ছেড়ে দিতে পারবেনা। এতে যদি ওকে নিজের কাছে অাটকে রাখতে হয় তো ও সেটাই করবে। আর অনিমা ওভাবেই খাটে বসে চোখেল জল ফেলে যাচ্ছে। আদ্রিয়ান তো কিছুতেই বুঝতে চাইছেনা, কী করে আদ্রিয়ানকে বাঁচাবে ও? কীকরে?

________________

রিকের নিজের রুমে এসে সবকিছু ভাঙচূড় করে চলেছে। রাগে সব কিছু ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিতে ইচ্ছে করছে ওর। কালরাত থেকেই অনিমার ফোন বন্ধ পেয়ে এমনিতেই মাথা গরম ছিলো। তাই সকালেই চলে গেছিলো অনিমার ফ্লাটে ওখানে গিয়ে অনিমার ফ্লাটে তালা দেখে ওর রাগ আরো বেড়ে গেলো। শুক্রবার নিশ্চয়ই অফিসে যায় নি তাহলে? এরপর সারাদিন অনিমাকে সারা শহরে লোক লাগিয়ে খুজেছে কিন্তু কোনো খোজ পায় নি। মোবাইল ট্রেস করেও কোনো হদিস পায় নি। একটা লোক এসে ভয়ে ভয়ে বলল

— ” ভাই আসবো?”

রিক রাগে গজগজ করে বলল

— ” কাজের কথা বল।”

— ” ভাই এডিকে আজ সারাদিন কোথাও দেখা যায় নি।”

রিক হাতের ইশারায় যেতে বললেই লোকটা চলে গেলো। রিক রাগে আগুন হয়ে একটা শো পিছ আছাড় মেরে ভেঙে ফেলল। এতোক্ষণ সন্দেহ করলেও রিক এবার নিশ্চিত যে অনিমা আদ্রিয়ানের কাছেই আছে। রিক জোরে গর্জন করে উঠল, তারপর রাগে ফুসতে ফুসতে বলল

— ” কাজটা তুমি ঠিক করোনি বেইবি। আমার সাথে বিট্রে করার পরিণাম কতোটা ভয়ংকর সেটা এবার বুঝবে। আর আদ্রিয়ান আবরার জুহায়ের তুমি নিজেও জানোনা তুমি কার সাথে পাঙ্গা নিয়েছো। এবার মরার জন্যে তৈরী হও।”

এসব বলে আবার ভাঙচুর শুরু করলো রিক। কবির শেখ হন্তদন্ত হয়ে রিকের রুমে এসে রিক কে থামিয়ে বলল

— ” বাবাই কী করছো কী? মাথা ঠান্ডা করো।”

রিক কবির শেখকে ঝাড়া দিতে সরিয়ে বলল

— ” চুপ করো মামা। তোমার জন্যেই সব হলো সব তোমার জন্যে হয়েছে। যদি সেদিনি ঐ আদ্রিয়ানকে মেরে অনিমাকে আমার কাছে নিয়ে আসতাম তাহলে এসব হতোনা। আজ ঐ মেয়েটা আমার কাছেই থাকতো।”

কবির শেখ বিচলিত হয়ে বললেন

— ” বাবাই আমার কথা..”

— ” নাহ আমি আর কিচ্ছু শুনতে চাইনা। ওদেরকেতো আমি খুজে বের করবোই। খুব তাড়াতাড়ি তারপর আগে ঐ মেয়ের সামনেই আদ্রিয়ানকে খুন করবো তারপর ঐ মেয়েকে এমন শিক্ষা দেবো ও ভাবতেও পারছেনা।”

এটুকো বলে চলে গেলো রিক। কবির শেখ বাকা হেসে বলল

— ” বাহ বাহ এবার খেলা জমবে। কথায় বলেনা এক বনে দুই সিংহ থাকতে পারেনা। আর যদি থাকে তো শিকারীকে কষ্ট করে দুটো সিংহ মারতে হয়না। কারণ একটা সিংহকে মারার কাজ ওপর সিংহ করে দেয়। এবার এই দুই সিংহের মধ্যে কোন সিংহ মরবে সেটাতো আমার জানা নেই তবে যেই মরুক লাভ তো আমারি। তাই আমি এখন এই খেলায় হাত লাগাবো না, যেমন চলছে চলতে থাক। সময় এলে দেখা যাবে।”

__________________

সন্ধ্যায় আদ্রিয়ান রুমে এসে দেখলো অনিমা উপুর হয়ে ঘুমিয়ে আছে। বারোটার দিকে এসে খাইয়ে দিয়ে গেছিলো আর কিছুই খায় নি মেয়েটা এখোনো, অাদ্রিয়ান সার্ভেন্ট কে খাবার আনতে বলে অনিমার কাছে এসে বসল। উপুর হয়ে শুয়ে থাকায় চুলগুলো মুখের ওপর পরে আছে আদ্রিয়ান আলতো হাতে চুলগুলো সরিয়ে দিলো। কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পরেছে। আদ্রিয়ানের অনিমাকে এভাবে দেখতে ভালো লাগছে না, অনিমাকে কষ্ট দিতে চাইছেনা ও, কিন্তু ও নিরুপায়। খাবার আসতেই অনিমার মাথায় হাত বুলিয়ে আলতো গলায় ডাকল আদ্রিয়ান। আদ্রিয়ানের ডাকে চোখ খুলে তাকালো অনিমা। হাত পা মুখ সব বাধা তাই উঠে বসতে কষ্ট হচ্ছে। আদ্রিয়ান নিজেই বসিয়ে দিলো ওকে। অনিমা চুপচাপ নিচের দিকে তাকিয়ে আছে, আদ্রিয়ান অনিমার মুখ থেকে কাপড়টা নিচে নামিয়ে দিলো। তারপর খাবারটা ওর দিকে বারিয়ে দিলো। অনিমা কোনো টু শব্দ না করে চুপচাপ খেয়ে নিলো। অনিমার এই নিরবতাও আদ্রিয়ানের বুকে ছুড়ি আঘাত করছে। আদ্রিয়ান অনিমাকে খাইয়ে দিয়ে প্লেট রেখে এসে দেখে অনিমা উপর হয়ে শুয়ে আবার কাদছে। আদ্রিয়ান অনিমার পাশে বসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বলল

— ” এভাবে কেঁদোনা প্লিজ। প্রবলেম টা কোথায় বলবে তো?”

অনিমা কষ্ট করে উঠে বসে আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল

— ” আপনি কেনো বুঝছেন না আমায় যেতে হবে?”

আদ্রিয়ান অনিমার কাছে যেয়ে বলল

— ” কেনো? আমার কাছে থাকতে সমস্যা কোথায় তোমার?”

অনিমা চোখ বন্ধ করে একটা শ্বাস নিলো। কীকরে বলবে আদ্রিয়ানকে ও? আদ্রিয়ান তো কিছু বুঝতেই চাইছে না। অনিমাকে চুপ থাকতে দেখে আদ্রিয়ান ওকে নিজের সাথে মিশিয়ে ধরে বলল

— ” কীসের শাস্তি দিচ্ছো আমাকে? কেনো এমন করছো? কেনো? কেনো পোড়াচ্ছো এভাবে? আমার দোষটা কোথায়? ”

অনিমা এবার শব্দ কর কেঁদে দিলো, ওকে এভাবে কাঁদতে দেখে অাদ্রিয়ানের বুক ছ্যাত করে উঠল। ও কিছু বলবে তার আগেই অনিমা বলল

— ” প্লিজ বোঝার চেষ্টা করুন, প্লিজ।”

— ” বুঝতেই তো চাইছি বলো কী হয়েছে? ”

— ” আমি ঠিক নই আপনার জন্যে। ইনফ্যাক্ট আমি কারো জন্যেই ঠিক নই। কারণ আমি অশুভ, অভিশাপ আমি একটা। আমি যার জীবণে যাবো তার জীবণটাই শেষ হয়ে যাবে, অভিশপ্ত হয়ে যাবে। প্লিজ আমাকে ছেড়ে দিন। অনেক কিছু হারিয়েছি আমি আর হারানোর ক্ষমতা নেই আমার মধ্যে, প্লিজ।”

কথাটা শেষ করে আবারো কাঁদতে লাগল ও। আদ্রিয়ান আলতো হাতে অনিমা চোখ মুছে দিয়ে বলল

— ” তুমি যদি অশুভ, অভিশাপ হও তো শুভ আর আশির্বাদ বলে কোনো শব্দই নেই পৃথিবীতে। আর যদি হওও তাহলে তোমার কারণে সব অশুভ জিনিস ও আমার কাছে শুভ। তোমার কারণে পাওয়া সব অভিশাপকেও আশির্বাদে পরিণত করে নেবো আমি। কিন্তু তুমি না থাকলে তো সবকিছুই আমার কাছে অশুভ, সব দোয়াও অভিশাপ। তাই যেকোনো পরিস্হিতিতেই আই জাস্ট ওয়ান্ট ইউ ইয়ার।”

— “কেনো? কেনো চান আপনি আমাকে? কীসের এতো প্রয়োজন আমাকে?”

আদ্রিয়ান অনিমাকে একদম নিজের কাছে টেনে নিলো, ওদের মধ্যে কেবল এক ইঞ্চির দূরত্ব আছে। আদ্রিয়ান একটা শ্বাস নিয়ে বলল

— ” বিকজ আই লাভ ইউ। হ্যাঁ ভালোবাসি আমি তোমাকে। নিজের সবটা দিয়ে ভালোবাসি। আমার নিশ্বাস তুমি, আমার অস্তিত্ব, আমার হৃদস্পন্দন সব তুমিই। আর সেই ভালোবাসার জোরেই বলছি তোমাকে সব বিপদ থেকে রক্ষা করার দায়িত্ব আজ থেকে আমার। আর সেটা তুমি চাইলেও আর না চাইলেও। আর আমিই তোমার ভাগ্য, তোমার ইচ্ছে না থাকলেও সেই ভাগ্যকে তোমায় মেনে নিতে হবে, তোমাকে আমার সাথেই থাকতে হবে। কারণ আমি তোমাকে ভালোবাসি।”

অনিমা স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে আদ্রিয়ানের দিকে। এটা প্রপোজ ছিলো? ওর তো ভিলনদের থ্রেট মনে হলো। ফিল্মে,সিরিয়ালে,রিয়েল লাইফে কতোজনকে লাভ কনফেশন করতে দেখেছে কিন্তু এভাবে হাত পা বেধে হুমকির স্টাইলে কাউকে লাভ কনফেশন করতে এই প্রথম দেখলো। ওর জীবণটাই শুধু অদ্ভুত না, ওর জীবণে যেসব মানুষ আসে তারাও অদ্ভুত একটু বেশিই অদ্ভুত।
.
#চলবে…
.
( এক্সট্রেমলি সরি গাইস সকালে দিতে না পারার জন্যে। আসলে কারেন্ট নেটওয়ার্ক কোনোটাই ছিলোনা এখানে সকাল থেকে, তাই লেখা থাকলেও দিতে পারিনি। রাতে ছোট হলেও আরেকটা পর্ব দেবো। যাই হোক
হ্যাপি রিডিং ?)

বর্ষণের সেই রাতে ❤ পর্ব: ২৪

0

বর্ষণের সেই রাতে ❤
পর্ব: ২৪
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

.
আদ্রিয়ানের কথা শুনে চরম মাত্রায় অবাক হলো অনিমা। কাজী অফিস? কিন্তু কেনো? অনিমা অবাক হয়েই বলল
— “কিন্তু কেনো?”
এটা শুনে আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে অনিমার দিকে তাকিয়ে বলল
— ” কাজী অফিসে মানুষ কেনো যায়?”
অনিমা সরল ভাবে জবাব দিলো
—” বিয়ে করথে নয়তো বিয়ে দেখতে।”
— ” এক্সাক্টলি! আমরাও সেইজন্যেই যাচ্ছি।”
অনিমা ভ্রু কুচকে ফেলল, কার বিয়ে দেখতে নিয়ে যাচ্ছে ওকে? তাও এইভাবে বেধে? অনিমা চিন্তিত কন্ঠেই বলল
— ” কারা বিয়ে করছে কার বিয়ে দেখতে যাচ্ছি আমরা? আর আমাকেই কেনো নিয়ে যাচ্ছে?”
আদ্রিয়ান অনিমার কথায় বিরক্ত হয়ে বলল
— ” তোমাকে কে বলল যে আমরা কারো বিয়ে দেখতে যাচ্ছি?”
অনিমার এবার একটু ভয় লাগছে তাই তুতলিয়ে বলল
— ” তাহলে কেনো যাচ্ছি ?
আদ্রিয়ান সামনে তাকিয়ে ড্রাইভ করতে করতে বাকা হেসে স্পষ্টভাবে বলল
— ” আমাদের বিয়ে হবে।”
অনিমা বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে আদ্রিয়ানের কথা শুনে। কী বলছে কী আদ্রিয়ান? পাগল টাগল হয়ে গেলো না তো? এরকম মজার মানে কী? আদ্রিয়ান তো একমনে ড্রাইভ করেই চলেছে। অনিমা কিছুক্ষণ অবাক হয়ে আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল
— ” মানে?”
আদ্রিয়ান অনিমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল
— ” আমিতো যথেষ্ট স্পষ্ট ভাষায় বললাম। তবুও তুমি যেহেতু বুঝতে পারছোনা আরেকটু ক্লিয়ার করে বলি। তোমাকে আর আমার মানে আমাদের দুজনের বিয়ে হবে।”
এবার অনিমা পুরো হ্যাং হয়ে গেলো। আদ্রিয়ান হেসে ড্রাইভিং এ মনোযোগ দিলো। অনিমা আর কী বলবে আদ্রিয়ানের কথা শুনেই অনিমার মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। হঠাৎ এই ছেলের কী হলো? এসব উদ্ভট কথাবার্তার মানে কী? কিছুক্ষণ বোকার মতো বসে রইল। হঠাৎ রিকের বলা কথা মনে পরতেই অনিমা নিজেকে সামলে নিলো, তারপর রেগে গিয়ে বলল
— ” মজা করছেন আপনি আমার সাথে?”
আদ্রিয়ান অনিমার এরকম প্রশ্নে আরো বিরক্ত হয়ে বলল
— ” তোমার মনে হয় আমি মজা করার মুডে আছি?”
— ” একদমি না আমার মনে হচ্ছে আপনি পাগল হয়ে গেছেন।”
— ” রিয়েলি? এমন কী বলে ফেললাম?”
অনিমার এবার রাগ মাথায় চরে যাচ্ছে। এই ছেলেটা এতো কুল কীকরে? কী করতে চাইছে ও? অনিমা নিজের হতের বাধন ছড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বলল
— ” কী করেছন মানে?একেতো আমাকে বেধে রেখে দিয়েছেন তারওপর কীসব ভূলভাল বকেই যাচ্ছেন? সমস্যা কী আপনার?”
আদ্রিয়ান মুচকি হেসে বলল
— ” দোষটা তো তোমারই। তুমি যদি এভাবে এই ছয়টা আমাকে ইগনোর না করতে, আমার সাথে কথা বলতে তাহলে এসব করতাম না আমি।”
অনিমা কিছু বলবে তার আগেই ওর ফোন বেজে উঠল। অনিমার হাত বাধা আছে তাই ও ফোন রিসিভ করতে পারছেনা। আদ্রিয়ান গাড়িটা সাইড করে ব্রেক করল। অনিমা ভীত চোখে তাকিয়ে আছে আদ্রিয়ানের দিকে, কারণ যদি রিক ফোন করে থাকে তাহলে? অনিমা আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল
— ” আমার হাত খুলুন ফোন রিসিভ করব। অাদ্রিয়ান অনিমার কথায় কান না দিয়ে ব্যাগ থেকে ফোনটা বের করে বলল
— ” আমি থাকতে তুমি কষ্ট কেনো করবে?”
অনিমাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই অাদ্রিয়ান অনিমার ফোনটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে আওয়াজ এলো
— ” ফোন রিসিভ করতে এতোক্ষণ লাগে নাকি? যাই হোক খুব ভালো কাজ করেছো। ঠিক আমি যেভাবে বলেছি সেভাবেই। কালকে তৈরী থেকো আমি কালকেই তোমাকে আমার কাছে নিয়ে আসবো। আর হ্যাঁ কোনো চালাকি করার চেষ্টা করোনা বেবি। তুমি সেটা করলে আমি কী করবো ইউ নো এস ওয়েল।”
আদ্রিয়ান ফোনটা কানে ধরেই রাগী চোখে তাকালো অনিমার দিকে। অনিমা ভয় পেয়ে চোখ সরিয়ে নিলো। তারপর ফোনটা সুইচড অফ করে জানালা সোজা বাইরে ফেলে দিলো। সেটা দেখে অনিমা উত্তেজিত হয়ে বলল
— ” আরে? আমার ফোন ছিলো ওটা।”
আদ্রিয়ান গাড়ি স্টার্ট করে সামনে তাকিয়েই বলল
— ” ফাটা স্ক্রিনের ফোন ইউস করার কোনো দরকার নেই। তাই ফেলে দিলো।”
অনিমা এবার চেচিয়ে বলল
— ” দেখুন আপনি এরকম নিজের খেয়ালখুশি মতো কাজ করতে পারেন না।”
আদ্রিয়ান এবার জোরে ধমকে বলল
— ” চুপ। একদম চুপচাপ বসে থাকো নইলে কীকরে চুপ করাতে হয় আমি জানি।”
অনিমা মাথা নিচু করে চুপ করে বসে রইলো আর আদ্রিয়ান ড্রাইভ করার কনসেনট্রেট করলো। রাগে রগ ফুলে উঠেছে ওর, ইচ্ছে করছে সব ভেঙ্গে গুড়িয়ে ফেলতে।
আর ওদিকে কথা শেষ হবার আগেই ফোন কেটে দেওয়ায় রিকের রাগ মাথায় চড়ে আছে আর তারপর ট্রায় করে ফোনটা বন্ধ পেয়ে সেই রাগ কয়েকগুন বেড়ে গেছে। বিয়ারের বোতলটা আছাড় মেরে ফেলে বলল
— ” খুব সাহস হয়ে গেছে মেয়েটাল। ওয়েট, কালকে একবার নিয়ে আসি তোমাকে তারপর দেখে নেবো তোমাকে কতো সাহস।”
গাড়ি থামতেই মাথা তুলে তাকালো অনিমা, আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো এটা একটা বিশাল বিল্ডিং এর সামনে থেমেছে। আদ্রিয়ান অনিমাকে নামাতে গেলেই অনিমা অবাক হয়ে বলল
— ” আপনি তো বলেছিলেন কাজী অফিস যাবেন কিন্তু এখানে তো..”
আদ্রিয়ান দুষ্টু হেসে অনিমার দিকে ঝুকে বলল
— ” কেনো কাজী অফিসে গেলেই বেশি খুশি হতে বুঝি? তাহলে বলো আমি গাড়ি ঘোরাচ্ছি।”
অনিমা রেগে বলল
— ” আপনি নিয়ে গেলেও আমি বিয়ে করতাম না আপনাকে।”
আদ্রিয়ান হেসে অনিমাকে কোলে তুলে নিয়ে বলল
— ” আমি জানি তুমি সোজা কথার মেয়ে নও। তাই আগে তোমাকে সোজা করি তারপর বিয়ের কথা ভাবব।”
অনিমা ছটফট করতে করতে বলল
— ” আমাকে বাসায় যেতে দিন ।”
— ” বাসাতেই নিয়ে যাচ্ছি চলো।”
বলে অনিমাকে কোলে নিয়েই হাটতে শুরু করলো। অনিমা ছটফট করে চলছে নামার জন্যে কিন্তু অাদ্রিয়ান তো আদ্রিয়ানই। অনিমার ছটফটানিটা ও বেশ ইনজয় করছে। অনিমাকে নিয়ে ও বিল্ডিং এর সেভেনথ ফ্লোরের একটা এপার্টমেন্টে নিয়ে গেলো। অনিমা চিৎকার চেচামেচি করেই যাচ্ছে। আদ্রিয়ান অনিমাকে নিয়ে ওর বেডে বসিয়ে দিলো। তারপর হাতের বাধন খুলে দিয়ে বলল
— ” তুমি বসো আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি। আর হ্যা দরজা লক করা চাবি আমার কাছে। সো তোমার কোনো চেষ্টাই কাজে লাগবেনা।”
এটুকু বলেই আদ্রিয়ান ওয়াসরুমে চলে গেলো। অনিমা কিছুই বুঝতে পারছেনা যে ওর সাথে হচ্ছেটা কী? দরজা দিয়ে পালাতে চাওয়াটাও বোকামী হবে, একতো দরজা লক করা আর দুই ওর গার্ডরাও ওর পারমিশন ছাড়া অনিমাকে বেড়োতে দেবেনা। নিজে নিজেই বিরবির করে বলল
— “কী করতে চাইছে আদ্রিয়ান? উনি তো বুঝতেই পারছেনা ওর জন্যে কতো বড় বিপদ। আমার সাথে থাকলে ওরা ওনাকে ছেড়ে দেবে না। রিক যদি এটা জানতে পারে তাহলে তো আদ্রিয়ানকে মেরেই ফেলবে।”
— ” কে কাকে মেরে ফেলবে?”
কারো আওয়াজ শুনে চমকে তাকালো অনিমা আদ্রিয়ান মুচকি হেসে তাকিয়ে আছে অনিমার দিকে। অনিমা কিছু না বলে চোখ সরিয়ে নিলো। আদ্রিয়ান অনিমার সামনে বসে অনিমার দিকে তাকিয়ে বলল
— ” বাই এনি চান্স তুমি আমাকে মার্ডার করার প্লান করছোনা তো?”
অনিমা ভ্রু কুচকে তাকালো আদ্রিয়ানের দিকে। আদ্রিয়ান হেসে দিয়ে বলল
— ” জাস্ট কিডিং। খিদে পেয়েছে নিশ্চয়ই? কী খাবে বলো?”
— ” আমাকে যেতে দিন প্লিজ।”
এবার আদ্রিয়ান আর রাগটা কন্ট্রোল করতে পারলোনা। অনিমার হাত ধরে হ্যাচকা টানে ওকে দাড় করিয়ে দুই বাহু ধরে নিজের কাছে এনে বলল
— ” ছেড়ে দিন, যেতে দিন হোয়াটস ইউর প্রবলেম ড্যাম ইট। আমি আগেই বলেছি আমি কাউকে ছেড়ে দেইনা। তোমাকে তো নাই। তোমার সবচেয়ে বড় ভুল ছিলো আমাকে ইগনোর করার চেষ্টা করাটা। এবার তোমাকে আমার সাথেই থাকতে হবে, দেখি কতো ইগনোর করতে পারো।”
— ” আপনি বুঝতে পারছেন না..”
আদ্রিয়ান জোরে চেচিয়ে বলল
— ” আমি বুঝতে চাইও না ওকে? যদি সত্যি কিছু বলতে চাও তাহলে নিজের সমস্যাটা বলো নইলো জাস্ট কিপ ইউর মাউথ সাট।”
অনিমা এবার করুণ চোখে আদ্রিয়ানের দিকে। আদ্রিয়ান অনিমার উত্তরের অপেক্ষা না করেই, কাউকে ফোন করে মাটান পরোটা আনতে বলে দিলো। অনিমা মাথা নিচু করে বসে রইলো, এ ছাড়া আপাদত কিছুই করার নেই ওর। খাবার আসতেই আদ্রিয়ান অনিমার সামনে প্লেট নিয়ে বসে বলল
— ” হা করো।”
অনিমা মাথা তুলে তাকিয়ে দেখলো আদ্রিয়ান খাবারের লোকমা ওর দিকে এগিয়ে রেখেছে। অনিমা মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে বলল
— ” খিদে নেই আমার।”
আদ্রিয়ান জোর করেই এক লোকমা অনিমার মুখে পুরে দিয়ে বলল
— ” ঠিকভাবে খাবে নাকি এভাবে নাকে মুখে ভরিয়ে খাবে সেটা তোমার ব্যাপার। ”
অনিমা আর ঝামেলা না করে চুপচাপ খেয়ে নিলো। খাওয়ার শেষ করে যেই আদ্রিয়ান প্লেট রাখতে যাবে তখন অনিমা নিচু কন্ঠে বলল
— ” আপনি খেয়ছেন?”
আদ্রিয়ান পেছন ঘুরে হেসে দিয়ে বলল
— ” আমি আটটার মধ্যেই ডিনার কম্প্লিট করে ফেলি।”
বলে আদ্রিয়ান চলে গেলো। কিছুক্ষণ পর এসে দেখে অনিমা বেডে এলোমেলোভাবে পরে আছে। আদ্রিয়ান মুচকি হাসলো কারণ ও জানতো এরকম কিছুই হবে। কারণ পানিতে ঘুমেল ঔষধ ছিলো। নইলে আজ গোটা রাত জালিয়ে মারতো ওকে। আদ্রিয়ান অনিমাকে কোলে নিয়ে ঠিক ভাবে শুইয়ে দিলো, তারপর কপালের এলোমেলো চুলগুলোকে সরিয়ে দিয়ে অনিমার কপালে একটা কিস করল তারপর মুচকি হেসে বলল
— ” একবার সত্যিই মনে হয়েছিলো তোমাকে কালকেই বিয়ে করে নেবো। পরে ভেবে দেখলাম জোর করে কী বিয়ে হয়? কবুল কী শুধুই একটা শব্দ? যেটা জোর মুখ থেকে বের করে নিলেই বিয়ে হয়ে যাবে? এতে সমাজ হয়তো স্বীকৃতি দিয়ে দিতো কিন্তু মন কী স্বীকৃতি দিতো? আমি জানি তোমার মনেও আমার জন্যে অনুভূতি আছে। কিন্তু কোনো কারণে সেটা প্রকাশ করতে পারছোনা। আগে আমি সেই কারণটা জানবো তারপর কী করতে হবে সেটা ঠিক করব। আর ঐ কলটা কার ছিলো সেটাও ওকে জানতে হবে। অনিমার এই ব্যবহারের কারণ যে ঐ কলটাই সেটা আমি সিউর। কিন্তু অনিকে জিজ্ঞেস করলে ও বলবেনা তাই আমাকেই খুজে বার করতে হবে।”
এরপর আদ্রিয়ান সোফায় গিয়ে শুয়ে পরলো। কিন্তু ওর চোখে ঘুম নেই ও তো ওর ঘুমন্ত মায়াপরীকেই দেখে চলেছে একদৃষ্টিতে।
________________
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
মাথা খানিক ভার ভার অনুভব করে আস্তে চোখ খুলে তাকালো অনিমা। মাথা চেপে ধরে কোনোরকমে উঠে বসলো ও। আশেপাশে তাকিয়ে কোথায় আছে বোঝার চেষ্টা করতে লাগল। এরপর ধীরে ধীরে কালকে রাতের কথা মনে পরলো ওর। হঠাৎ এভাবে ঘুমিয়ে কেনো পরেছিলো সেটাই বুঝতে পারছেনা ওও। এসব ভেবে খাটে হেলান দিয়ে বসল। ওয়াসরুমের দরজা খোলার আওয়াজে চোখ খুলে তাকাতেই আদ্রিয়ানকে সাথে সাথে চোখ বন্ধ ফেলল অনিমা। কারণ আদ্রিয়ান জাস্ট নীল একটা হাফ প্যান্ট পরে কাধে টাওয়েল ঝুলিয়োএ চুল নাড়তে নাড়তে বেরিয়ে এসছে। অনিমা চোখ বন্ধ করেই রাগে গজগজ করে বলল
— ” সিট। এভাবে কেউ বেরোয়?”
আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে একবার অনিমার দিকে একবার নিজের দিকে তাকালো। অনিমার এই আচরণের কারণটা বুঝতে পেরে আদ্রিয়ান টাওয়েল টা রেখে অনিমা সামনে গিয়ে বসে বলল
— ” ইটস মাই বেডরুম। আর আমি যেভাবে ইচ্ছে থাকতে পারি। রাইট?”
অনিমা চোখ খুলে আদ্রিয়ানকে ওর সামনে দেখে একটু পিছিয়ে গেলো কিন্তু পেছনোর জায়গাই নেই। অনিমা লজ্জা পেয়ে চোখ নামিয়ে নিলো। কারণ আদ্রিয়ানের লোমহীণ বুকেও বিন্দু বিন্দু পানি জমে আছে, চুল দেকে পানি বেয়ে সারা গায়ে পরছে। এইভাবে আদ্রিয়ানকে দেখে ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে পারছেনা ও। তাই বিরবিল করে বলল
— ” অসভ্য লোক একটা।”
আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে বলল
— ” কিছু বললে?”
— ” আমাকে এখানে কেনো নিয়ে এসছেন। আর কাল এসব বিয়ে, কাজী অফিস কী সব বকছিলেন হ্যাঁ?”
অাদ্রিয়ান অনিমার পাশ দিয়ে হাত রেখে ওর দিকে একটু ঝুকলো অনিমা হকচকিয়ে একটু গুটিয়ে যেতেই আদ্রিয়ান হেসে বলল
— ” ভেবেছিলাম তো বিয়েই করবো পরে ভাবলাম ব্যাপারটা বোরিং হয়ে যাবে। আর তুমিও রাজী নও বিয়েতে তাই ভাবছি যতদিন তুমি রাজি না হবে। আমরা দুজন বিয়ে ছাড়াই একসাথে থাকবো। ”
অনিমা অবাক বলল
— ” মানে?”
আদ্রিয়ান অনিমার আরেকটু কাছে গিয়ে বলল
— ” মানে লিভ ইন রিলেশনসিপ ইউ নো। দারুণ হবেনা ব্যাপারটা? নতুন ইক্সপেরিয়েন্স হবে কী বলো?”
এটুকু বলেই আদ্রিয়ান চোখ টিপ মারলো। অনিমার চোখ দুটো বড়বড় হয়ে গেলো। হার্ট বিট করতে করতে বেরিয়ে আসার উপক্রম। ও বোকাল মত তাকিয়ে আছে আদ্রিয়ানের দিকে। লিভ ইন রিলেশনসিপ? লাইক সিরিয়াসলি?
.
#চলবে…
.
( রি- চেইক হয়নি। আর কালকে সকালে এক্সট্রা পার্ট পাবেন। হ্যাপি রিডিং?)