Saturday, July 19, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1925



বর্ষণের সেই রাতে ❤️ পর্ব: ২৩

0

বর্ষণের সেই রাতে ❤️
পর্ব: ২৩
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

.
আবছা অন্ধকারে ঢেকে আছে ভোরের সকাল, আকাশে বিস্তৃত থাকা ঘন মেঘের জন্যে সদ্য উদিত সূর্যের সম্পূর্ণ আলো‌ পৃথিবীর বুকে পৌছতে পারছে না। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি শব্দহীনভাবে পরে চলেছে সেই কখন‌ থেকে। বর্ষাকাল প্রায় শেষের পথে, এইমুহূর্তের বৃষ্টি এমনি হয় তীব্র গতীর চেয়ে ধীর গতিতেই পরতে বেশি পছন্দ করে। ব্যালকনির রেলিং এ ভর দিয়ে এক দৃষ্টিতে সেই বৃষ্টির দিকে‌ তাকিয়ে আছে আদ্রিয়ান। বুকে এক অদ্ভুত ব্যাথা হচ্ছে ওর। কালকে রাতে অনিমাকে যেই অবস্থায় দেখেছে নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে ঐ‌ অবস্হায় দেখা সহজ ছিলোনা ওর কাছে। সারারাত ব্যালকনিতেই দাড়িয়ে ছিলো, কারণ এক মূহুর্তের জন্যেও নিজের দুচোখের পাতা এক করতে পারেনি ও। যতোবার চোখ বন্ধ করছে বারবার অনিমার ওই মুখটা চোখের সামনে ভেসে উঠছে, ওকে জরিয়ে ধরে যখন‌ কাদঁছিলো‌ মেয়েটা সেই কান্নার আওয়াজ ওর কানে এখোনো বাজছে। নিজেকে সামলানো কষ্টকর হয়ে দাড়াচ্ছে। কেউ যে ওর ফ্লাটে এসছিলো সেটাতো স্পষ্ট । আর ওর গালে ‌আঙ্গুলের ছাপ, ঠোঁটের কোণে রক্ত দেখেই আদ্রিয়ান‌ বুঝতে পেরেছে অনিমার সাথে কী হয়েছে। আর সেই দৃশ্যটা কল্পনা করার চেষ্টা করলেও‌ ওর রক্ত গরম হয়ে উঠছে। কিন্তু অনিমার মতো মেয়ের সাথে কেউ এরকম কেনো করবে? আর অনিমার ওপরেও রাগ হচ্ছে , কিচ্ছু বলছেনা ওকে। যদিও অনিমার চুপ থাকার কারণটা আদ্রিয়ান কিছুটা হলেও আন্দাজ করতে পারছে । অনিমার এমন‌ একটা মেয়ে যে চুপচাপ সব যন্ত্রণা সহ্য করে নেবে, নিজে কষ্টে থাকবে কিন্তু ওর জন্যে অন্য কারো জীবনে কোনো প্রকার ক্ষতি হতে দেবেনা। এরকমি ওর অনি। কিন্তু মেয়েটা কেনো বোঝেনা যে ওর সামান্য কষ্ট আদ্রিয়ানকে কতোটা পোড়ায়। সেদিন ওর হাতের ক্ষত আর‌ কাল রাতে ওর শরীরের আঘাতের চিন্হগুলো যে আদ্রিয়ানের বুকে কতোটা আঘাত করেছে সেটা কেনো বোঝেনা ও? অনিমা যে এমনি এমনি কিছু বলবেনা সেটা বেশ ভালোই বুঝতে পারছে আদ্রিয়ান। কিন্তু ওকে তো জানতেই হবে ,যেকরেই হোক। কফির মগে চমুক দিয়েই বৃষ্টি দেখতে দেখতে ভেবেই যাচ্ছে আদ্রিয়ান বিরবির করে নিজেই নিজেকে বলতে লাগল

— “অনিমার একজন জার্নালিস্ট তাই ওর শত্রু অনেক থাকতেই পারে তবে তারা হয় ওকে মেরে ফেলতে চাইবে নয় হুমকি দেবে। কিন্তু অনিমার ক্ষেত্রে ব্যাপারটা আলাদা। কিচ্ছু মাথায় আসছেনা কে বা কারা করছে এসব কেনো করছে? কী কারণ হতে পারে?
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
রেলিং এ অনেক জোরে একটা পাঞ্চ মারলো, সব কেমন জটিল হয়ে উঠছে। হঠাৎ করেই ঘুমের মধ্যে অনিমার বলা কথাগুলো মনে পরলো, সাথে সাথেই টনক নড়ল আদ্রিয়ানের। হাত দিয়ে কপালের চুলগুলো উল্টে ধরে বলল

— ” ইয়েস। আমার সব প্রশ্নের উত্তর অনিমার অতীতেই আছে। অনিমার বাবা মারা যাওয়ার আগে অবধি আমি সব জানি। এরপর কী হয়েছিলো ওর সাথে? আই এম ড্যাম সিউর যে এরপর যা হয়েছে সেটা কালকের ঘটনার সাথে কানেক্টেড। তাই সবার আগে আমাকে ওর পাস্ট জানতে হব।”

কিছু একটা ভেবে আদ্রিয়ান ফোন বের করে অনিমাকে কল করলো।

অনিমাও ব্যালকনির ফ্লোরে দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে শূণ্য দৃষ্টিতে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। আজ বাইরের বৃষ্টি দেখছনা ও, গভীর ভাবনায় মগ্ন হয়ে আছে। বাতাসে ওর এলোমলো চুলগুলো উড়ে উড়ে ওর মুখ পরছে, বিষন্ন মুখটাতেও জেনো এক আলাদা মায়া কাজ করছে। ফোনের আওয়াজ পেয়ে পাশে রাখা ফোনটার দিকে তাকালো অনিমা। ফেটে যাওয়া স্ক্রিণে আদ্রিয়ানের নামটা স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। কিন্তু অনিমা ফেটে যাওয়া স্ক্রিণটাই দেখছে, আর কালকের কথা ভাবছে, কালকের আছাড়ে ফোনটার তেমন কিছু না হলেও স্ক্রিণ ফেটে গেছে। ফোনটা কেটে দিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল অনিমা। কারণ তার একটু আগেই একটা মেসেজ এসছিলো ওর ফোনে। মেসেজটা ছিলো ‘ তোমার কাছে শুধুমাত্র এক সপ্তাহ আছে। তোমার কার্যকলাপি ঠিক করবে আদ্রিয়ানকে মেরে তোমায় আমার কাছে আনবো নাকি বাঁচিয়ে রাখব। তাই প্রতিটা কদম ফেলার আগে আদ্রিয়ানের প্রাণের কথা ভেবে ফেলো।” আবারো ফোন বেজে উঠল অনিমা এবারেও কেটে দিয়ে দেয়ালে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করলো। জীবণটা এমন কেনো হলো? এসব কিছু ওর সাথেই কেনো হলো? ওই কেনো? ওর জীবনটাও তো বাকি সবার মতো স্বাভাবিক হতে পারতো। যেখানে কোনো ভয় থাকবেনা, কারো কাছ থেকে পালাতে হবেনা, স্বাধীনভাবে বাঁচতে পারবে। এই হাওয়ার মতো ওও মতো নিজের ইচ্ছেমতো চলতে ইচ্ছে করে ওর, পাখির মতো মুক্ত হয়ে উড়তে ইচ্ছে করে। কিন্তু ওকে বন্দি হয়েই থাকতে হয় । কখনো অন্যের কাছে, কখনো নিজের ভয়ের কাছে, আবার কখনো নিজেরই কাছে। ওকেই কেনো এসব সহ্য করতে হচ্ছে। ফোন ক্রমাগত বেজেই চলেছে। অনিমা এবার ফোনটা ধরছেও না কাটছেও না। একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নামটার দিকে। এই ছেলেটাকে নিজের থেকে দূরে কীকরে সরাবে ও? খুব বেশি জরিয়ে ফেলেছে ওর সাথে। ওর সামনে নিজেকে কীকরে সামলে রাখবে? কীকরে মুখ ঘুরিয়ে চলে যাবে?
বারবার কল কেটে দেওয়ায় আদ্রিয়ানে রক্ত উঠে গেছে। কী পেয়েছে কী ও? কল কেটে দেবার মানে কী? তবুও নিজের রাগকে গুরত্ব না দিয়ে অনিমাকে মেসেজ করলো।
মোবাইলে মেসজের টোন বাজতেই অনিমা কেপে উঠলো, ও ভেবেছিলো রিকের মেসেজ। কিন্তু তাকিয়ে দেখলো আদ্রিয়ানের মেসেজ। তাতে লেখা আছে ‘ স্কুটি নিয়ে বেরিয়োনা, আমি পিক করবো তোমাকে।’ ফোনটা সাইডে রেখে অনিমা আবারো ওয়ালে হেলান দিলো। কীকরে আদ্রিয়ানকে ইগনোর করবে? কিন্তু ও না চাইতেও ওকে এটা করতেই হবে। আদ্রিয়ানের ভালোর জন্যেই ওকে করতে হবে। ও বাধ্য এসব করতে। ওর ভাগ্যটাই হয়তো এরকম ওকে সব বাধ্য হয়েই করতে হয়। এসব ভেবে একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিলো অনিমা আর তার সাথে চোখ দিয়ে এক ফোটা জল গড়িয়ে পরল
_______________

আদ্রিয়ান অনিমার গেইটের সামনে গাড়ি নিয়ে ওয়েট করছে। বারবার ঘরি দেখে চলেছে ও। আর গেইটের দিকে দেখছে। হঠাৎ আনিমাকে স্কুটি নিয়ে বেরোতে দেখে আদ্রিয়ান অবাক হয়ে গেলো। ওর মেসেজ কী অনিমা দেখেনি? আদ্রিয়ান গাড়ি থেকে নেমে বলল

— ” অনি? তুমি…”

কিন্তু আদ্রিয়ান কথা শেষ করার আগেই ‍অনিমা স্কুটি চালিয়ে চলে গেলো একবার অাদ্রিয়ানের দিকে তাকালোও না। আদ্রিয়ান দুবার ডাকল কিন্তু লাভ হলো না। আদ্রিয়ান আহম্মকের মতো তাকিয়ে রইলো অনিমার যাওয়ার দিকে। এই মেয়ের হঠাৎ কী হলো? এইরকম ব্যবহারের মানে কী? কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পরেই চোয়াল শক্ত হয়ে গেলো আদ্রিয়ানের। গাড়িরতে একটা লাথি মেরে, রাগে আগুন হয়ে গাড়িতে উঠে গাড়ি স্টার্ট করে চলে গেলো।
_______________

অনিমা অফিসে গিয়ে ডেস্কে বসতেই তীব্র আর অরুমিতা অবাক হয়ে তাকালো ওর দিকে। ওর হাতে ব্যান্ডেজ, ঠোট কোণায় কেমন দাগ হয়ে আছে। অরুমিতা একটানে অনিমার চেয়ার নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলল

— ” এই কী হয়েছে তোর? এগুলো কীকরে হলো?”

অনিমা নিচু গলায় বলল

— ” কিছুনা সামান্য লেগেছে।”

তীব্র উঠে এসে ওর সামনে দাড়িয়ে ভ্রু কুচকে বলল

— ” সামান্য নাকি মারাত্বক সেটা পরের কথা আগে বল কীকরে হলো।”

অনিমা কিছু না বলে চুপ করে মাথা চেপে ধরে বসে রইলো। অরুমিতা বিরক্ত হয়ে বলল

— ” কিছু জিজ্ঞেস করছি তোকে।”

অনিমা এবারেও চুপ করে আছে। তীব্র অরুমিতা এতো এতো প্রশ্ন ওর মধ্যে সামান্য বিরক্তির চিন্হও নেই। ভাবলেশহীনভাবে কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু তীব্র আর অরুমিতাও নাছোড়বান্দা ওরা প্রশ্ন করেই যাচ্ছে। অনিমা এবার হঠাৎ করে রেগে গিয়ে চিৎকার করে বলল

— ” রিক এসেছিলো কাল রাতে, বরাবরের মতো কালকেও আমার গায়ে হাত তুলেছে। শুনে নিয়েছিস? শান্তি হয়েছে এবার? ”

তীব্র আর অরুমিতা আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো আশপাশের ডেস্কের অনেকেই তাকিয়ে আছে ওদের দিকে, অনিমাও হাইপার হয়ে গেছে। অনিমা জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে। অনিমাকে এভাবে দেখে ওরা ভাবলো এখন ব্যাপারটা নিয়ে কথা না বলাই ভালো পরে এসব আলোচনা করা যাবে। তাই ওরা নিজেদের ডেস্কে কাজে বসে গেলো।
_______________

নিজের গাড়ির ব্যাক সিটে বসে আছে রিক, ড্রাইভার ড্রাইভ করছে। কাল সারারাত ক্লাবে পার্টি করে বাড়ি ফিরছে ও। অনেকদিন পর খুব খুশি ও, কারণ ও অনিমাকে পেয়ে গেছে। এতোদিনের অপেক্ষার অবসান হয়েছে। ফোন বেজে ওঠায় ভাবনা থেকে বেরিয়ে ফোনটা রিসিভ করে কানে নিয়ে বলল

— ” কী খবর ওখানকার?”

ওপাশ থেকে জবাব এলো

— ” ভাই। এডি ভাবীকে নিতে এসছিলো গাড়ি করে, কিন্তু ম্যাম নিজের স্কুটি করে চলে গেছে এডির সাথে কথা অবধি বলে নি।”

এটা শুনে বাঁকা হাসলো রিক। তারপর গম্ভীর কন্ঠে বলল

— ” ঠিক আছ নজর রাখতে থাক।”

— ” ঠিকাছে ভাই।”

ফোনটা রেখে সিটে হেলান দিয়ে হাসলো রিক। খুবি বুদ্ধিমানের মতো কাজ করেছে মেয়েটা। যদি আজ ও নিজে থেকে ঐ আদ্রিয়ানের ধারেকাছেও যেতো বা কথা বলতো, তাহলে আজ কী হতো সেটা কেউ কল্পনাও করতে পারছেনা। এই আদ্রিয়ানের জন্যেই আজ অনিমাকে কাছে আনতে আরো এক সপ্তাহ ওয়েট করতে হচ্ছে। ও তো কলকে রাতে আদ্রিয়ানকে মেরে অনিমাকে নিয়ে আসতেই যাচ্ছিলো কিন্তু তার আগেই ওর মামা আটকে নিলো।

আসলে কাল রিক অর্কর সাথে কথা বলে এসেই রুম থেকে গান নিয়ে বেরোতে নিচ্ছিলো।তখনি কবির শেখ এসে বলল

— ” আরে বাবাই কোথায় যাচ্ছো? ”

রিক রাগে গজগজ করে বলল

— ” পথ ছাড়ো মামা। আজ আগে ঐ রকস্টারকে শেষ করবো তারপর অনিমাকে আমার কাছে নিয়ে আসবো। ”

— ” পাগল হয়ে গেছো নাকি? এসো এখানে বসো।”

বলেই রিক কে নিয়ে সোফায় বসালেন কবির শেখ। রিক রেগে বলল

— ” মামা লেট মি গো।”

— ” আরে যাবেতো আগে আমার কথাটা শোন।”

রিক অস্হির হয়ে বলল

— ” মামা।”

— ” আরে শোনো। ওই রকস্টার আর অনিমার সম্পর্ক নিয়ে গোটা মিডিয়া জানে। এইমূহুর্তে যদি তুমি ওকে খুন করো আর তারপর যদি অনিমা কে তোমার সাথে তোমার ওয়াইফ হিসেবে দেখে তাহলে কী হবে বুঝতে পারছো? তখন তোমাকে বাচাঁনো অসম্ভব হয়ে যাবে। ওর ফ্যান ফ্লোয়িং তো জানো তাইনা? ব্যাপারটা বুঝতে পারছো?”

রিক কিছুক্ষণ ভাবলো তারপর গম্ভীর কন্ঠে বলল

— ” তাহলে? কী করতে বলছো?”

কবির শেখ হেসে বললেন

— ” অনিমা আর আদ্রিয়ানকে একে ওপরের থেকে দূরে সরিয়ে দেও, যাতে সবাই এটা মনে করে যে ওদের সম্পর্কে যা শুনেছে সব গুজব। এবার নিশ্চয়ই তোমাকে বলে দিতে হবনা যে কী করতে হবে?”

রিক ভ্রু কুচকে বলল

— ” কিন্তু আদ্রিয়ান? ওর কী করবো? ওকে ছেড়ে দেবোনা আমি। আর মিথ্যে প্রমিসও করতে পারবোনা। তুমি জানো আমি প্রমিস ভাঙ্গিনা।”

— ” আরে তোমাকে প্রমিস ভাঙতে কে বলছে? তুমি শুধু বলবে যে তুমি কোনো ক্ষতি করবে না। কিন্তু অন্যকেউ তো করতেই পারে? তাইনা?”

রিকের কয়েক সেকেন্ড লাগলো কথাটা বুঝতে আর বুঝতে পেরেই হেসে দিলো ও আর কবির শেখও একটা হাসে দিলেন।

সত্যিই ওর মামা ওর গরু, মানতে বিদ্ধ ও।এরকম নানকথা ভাবতে ভাবতে রিক বাড়িতে পৌছে গেলো। ড্রয়িং রুমে ঢুকতেই দেখলো কবির শেখ আর মিস্টার রঞ্জিত বসে আছে। মিস্টার রঞ্জিতের এসব নিয়ে হেলদোল নেই উনি একমনে কাজ করে চলছেন। কবির শেখ রিক কে দেখে উঠে এসে বলল

— ” কাজ হয়েছে?”

রিক ওর মামার কাধ জরিয়ে ধরে বলল

— ” তোমার প্লান ফ্লপ হয়েছে কখনো?”

— ” সাবাস! যাও এবার রেস্ট করো।”

— ” হ্যা এখন রেস্ট করে লাঞ্চ টাইমে ওর সাথে দেখা করতে যাবো।”

এটুকু বলে রিক হালকা হেসে উপরে চলে গেলো আর কবির শেখ রিকের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবলেন। ঠিকি বলেছে রিক। ওনার প্লান কোনোদিন ফ্লপ হয়না। আচ্ছা সবাই এতো বোকা নাকি উনিই বেশি চালাক সেটাই বুঝতে পারছেনা কবির শেখ। কেউ আজো ধরতে পারেনি ওনার আসল উদ্দেশ্য। আদ্রিয়ান, অনিমা, রিক ওরাতো ওনার খেলার একেকটা গুটি মাত্র। এরাতো শুধু কোট বদলাচ্ছে কিন্তু আসল খেলা তো খেলছেন উনি। এসব চিন্তা করেই উনি ওনার সেই শয়তানী হাসি দিলেন।
________________

লাঞ্চ টাইমে অনিমা কিছু খায়নি বললেই চলে। তীব্র আর অরুমিতা চেয়েও কিছু বলতে পারছেনা কারণ কিছু বললেই অনিমা হাইপার হয়ে যাচ্ছে। তবুও অরুমিতা বলল

— ” কীরে কিছুই তো খেলিনা।”

অনিমা সরল ভাবে জবাব দিলো

— ” খিদে নেই আমার।”

অরুমিতা আর কিছু বললোনা তবে একটা চাপা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো ভেতর থেকে। অরুমিতা আর তীব্র ফ্রেশ হয়ে ওপরে ডেস্কে চলে গেছে। অনিমা সবে যেতে নেবে ওমনি কেউ ওর হাত ধরে হ্যাচঁকা টান দিয়ে দেয়ালের সাথে চেপে ধরল। অনিমা প্রথমেই ভয় পেয়ে গেছিলো, আর লোকটার চেহারা দেখে আরো ভয় পেলো। কারণ রিক অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। অনিমা কিছু বলার আগেই রিক ওর গাল চেপে ধরে দাতে দাত চেপে বলল

— ” ভেবেছিলাম তোমার সাথে ভালোভাবে কথা বলবো কিন্তু তুমিতো তার যোগ্যই নও। ”

অনিমা ভীত আর অসহায় চোখে তাকিয়ে আছে রিকের দিকে। তবুও কোনোরকমে কান্নাভেজা কন্ঠে বলল

— ” কী করেছি আমি?”

রিক রাগী কন্ঠে বলল

— ” ওই রকস্টার এখানে কেনো এসছে?”

চমকে উঠলো অনিমা। আদ্রিয়ান এসছে? কিন্তু কেনো? রিকের দিকে তাকিয়ে বলল

— ” বিশ্বাস করুন আমি জানতাম না উনি এসছেন। আর আমি ওনার সাথে সব যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছি। আপনি যা বলেছেন তাই করেছি। প্লিজ ওনাকে কিছু…”

— ” আরে কুল কুল আমি জানি সব। আর এভাবেই ঠিক যা বলবো তাই করবে ঠিকাছে?”

অনিমা কিছু না বলে চুপ করে মাথা নিচু করে আছে। অনিমাকে চুপ থাকতে দেখে রিক ওর ব্যান্ডেজ করা হাত চাপ দিয়ে ধরে বলল

— ” কী হলো বলো?”

অনিমা ব্যাথায় চোখ খিচে বন্ধ করে ফেলল। তারপর হ্যা বোধক মাথা নাড়ল। রিক বাকা হেসে বলল

— ” গুড। এবার যাও ও হয়তো ও তোমার সাথে কথা বলবে। কী করতে হবে সেটতো জানো।”

রিক অনিমাকে ছেড়ে দিয়ে চলে গেলো। অনিমা চোখ মুছে নিজেকে স্বাভাবিক করে এগিয়ে যেতেই আদ্রিয়ানকে দেখতে পেলো। আজকেও আদ্রিয়ান ক্যাপ আর সানগ্লাস পরে আছে তাই কেউ চিনছেনা। তাহলে রিক কীকরে চিনলো? আর লাঞ্চ টাইম শেষ তাই ক্যান্টিন ও প্রায় ফাঁকা। অনিমা আদ্রিয়ানকে দেখে ইগনোর করে চলে যেতে চাইলেই আদ্রিয়ান দ্রুত পদে এসে ওর হাত ধরলো। ওকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আদ্রিয়ান ওকে ধরে টেনে একটা চেয়ারে বসিয়ে দিলো। তারপর পাশে বসে ওর হাত চেপে ধরলো যাতে উঠতে না পারে। তারপর রাগী কন্ঠে বলল

— ” সমস্যা কী তোমার?”

অনিমা মাথা নিচু করে বলল

— ” যেতে দিন আমাকে।”

— ” এতোটা অসহ্য হয়ে গেছি আমি এখন? যে দুমিনিট আমার পাশে বসতেও চাইছোনা? ”

অনিমা একবার আশেপাশে তাকিয়ে দেখে নিলো রিক আছে কী না। তারপর আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল

— ” আদ্রিয়ান প্লিজ। আপনি দূরে থাকুন আমার থেকে। ”

আদ্রিয়ান দাতে দাত চেপে বলল

— ” কেনো আমাকে আর ভালোলাগে না?”

অনিমা এবার আদ্রিয়ানের হাত ছাড়িয়ে উঠে দাড়িয়ে চিৎকার করে বলল

— ” নাহ লাগেনা ভালো আর আপনাকে। জাস্ট অসহ্য লাগে। কেনো পরে আছেন আমার পিছনে? আপনি তো এতো বড় একজন রকস্টার। আমার মতো একটা মেয়ের সাথে বন্ধুত্ব কেনো রাখবেন? তাই নেক্সট টাইম আমার সাথে কথা বলার চেষ্টাও করবেন না। দূরে থাকুন আমার থেকে। আপনি আপনার জীবণ নিয়ে ভালো থাকুন আমাকেও থাকতে দিন। প্লিজ।”

এটুকু বলে অনিমা দৌড়ে চলে গেলো। একবারের জন্যেও পেছনে ফিরে তাকায়নি। পেছনে তাকালে যে পিছুটান ছাড়া যায়না। আর আদ্রিয়ান রাগী চোখে তাকিয়ে আছে অনিমার যাওয়ার দিকে। হাতে ধরে রাখা গ্লাসটা চাপ দিয়ে ভেঙে ফেলল। যার ফলে হাত দিয়ে রক্ত ঝরছে। চোখ মুখ লাল হয়ে আছে আদ্রিয়ানের। কিছুতেই রাগ কমছেনা।
________________

এভাবে আরো ছয় দিন কেটে গেছে। অনিমা আদ্রিয়ানকে চরমভাবে ইগনোর করছে। আর রিক ফোনে কিংবা সামনে এসেই অনিমাকে নানাভাবে হুমকি দিয়েছে। উপর দিয়ে নিজেকে স্ট্রং দেখালেও ভেতর দিয়ে ভেঙে গুড়িয়ে যাচ্ছে অনিমা। এতো মানসিক চাপ নিতে পারছেনা ও। অার আদ্রিয়ানের অবস্হা ভয়াবহ। অনিমার ইগনরেন্স ওকে প্রচন্ড ডেসপারেট করে তুলেছে। কোনো কাজে মন বসছেনা ওর। এবার ওর মাথায় একটা কথাই চলছে, অনেক হয়েছে এবার মেয়েটার একটা ব্যবস্হা করতে হবে।

অনিমা অফিস থেকে ফ্লাটে ফিরছে স্কুটিতে। হঠাৎ ওর সামনে একটা গাড়ি থামলো। অনিমা দ্রুত ব্রেক করল। গাড়ি থেকে একটা লোক নামতেই অনিমা রেগে কিছু বলবে তার আগেই হেডলাইটের আলোতে ওর মুখটা দেখে চমকে উঠল। কারণ লোকটা আদ্রিয়ান। অনিমা অবাক হয়ে বলল

— ” আপনি?”

আর কিছু বলার আগেই আদ্রিয়ান এসে অনিমার দুইহাত ধরে পেছনে নিয়ে বেধে দিলো। অনিমা বারবার জিজ্ঞেস করেও কোনো উত্তর পাচ্ছেনা। আদ্রিয়ান ওকে কোলে নিয়ে গাড়িতে বসিয়ে দিয়ে সিটবেল্ট বেধে নিজে ড্রাইভিং সিটে বসল। অনিমা রেগে বলল

— ” ছাড়ুন আমাকে।”

— ” আমি আগেই বলেছি আমি কাউকে ছেড়ে দেইনা।”

— ” অাদ্রিয়ান আমি এবার চেচাবো কিন্তু।”

আদ্রিয়ান অনিমার দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল

— “মুখ খোলা রেখেছি ভালো লাগছে না? ”

অনিমা চুপ হয়ে গেলো। আদ্রিয়ান গাড়ি স্টার্ট দিতেই অনিমা বলল

— ” কোথায় যাচ্ছি আমরা?”

আদ্রিয়ান সামনে তাকিয়ে থেকেই স্বাভাবিকভাবে বলল

— ” কাজী অফিস।”
.
#চলবে…
.
( সবাইকে বলছি গল্পের ক্যারেক্টার গুলোকে জাজ্ করার আগে ক্যারেক্টার গুলোর পয়েন্ট অফ ভিউ দিয়ে ভাববেন, নিজের না। কারণ আপনি যেটা জানেন বা বুঝছেন ক্যারাক্টার গুলো তা জানেনা। আপনার কাছে সিটিউশনগুলো ক্লিয়ার কিন্তু ক্যারেক্টার গুলোর কাছে আকষ্মিক ঘটনা। আশা করি বুঝেছেন।
হ্যাপি রিডিং ?)

বর্ষণের সেই রাতে ❤ পর্ব- ২২

0

বর্ষণের সেই রাতে ❤
পর্ব- ২২
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

.
অনিমা চমকে তাকালো দরজার দিকে, রিক খুলে ফেলেছে দরজাটা, তারপর ও ফোনের দিকে তাকিয়ে ফোনটা ধরতে গেলো, কিন্তু ফোনটা হাতে নেওয়ার সাথে সাথেই অনিমার হাত ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে একটা থাপ্পড় মারলো। থাপ্পড়টায় অনিমা ছিটকে ফ্লোর‍ে পরে গেলো, আর হাত থেকে ছিট কে ফোনটাও একটু দূরে পরে গেলো। অনিমা তবুও মাথা তুলে ফোনটা ধরতে যাবে তার তখনই রিক ওর পা দিয়ে অনিমার হাত পিসে ধরল। অনিমা করুণ দৃষ্টিতে তাকালো রিকের দিকে তারপর ফোনের দিকে তাকালো। স্ক্রিণে আদ্রিয়ানের নামটি স্পষ্ট ফুটে উঠছে।
আর এদিকে আদ্রিয়ান চলতি গানটা শেষ করে ফোনটা বের করে অনিমার এতোগুলো কল দেখেই ও টেনশনে পরে গেলো। অনিমা এমনিতেই ওকে নিজে থেকে ফোন করতে লজ্জা পায়, আর করলেও খুব দরকার ছাড়া ফোন করেনা। সেই জায়গায় এতোগুলো কল দেখে ও সাথেসাথে ওখানেই শো এবোট করে দিয়ে অনিমাকে বারবার কল করছে কিন্তু অনিমা না ধরাতে ও আরো টেনশনে পরে গেলো। হন্তদন্ত হয়ে গাড়ি নিয়ে সোজা বেড়িয়ে পরলো অনিমার ফ্লাটের উদ্দেশ্যে। এক হাতে ড্রাইড করছে, আরেকহাতে বারবার কল করে যাচ্ছে কিন্তু ওপাশ থেকে রিসিভ করছে না। মেয়েটার কোনো বিপদ হলো না তো? ফোনটা কেনো ধরছেনা? সমস্যা কী ওর? যদি গিয়ে দেখে ইচ্চে করে ফোন ধরেনি ঠাটিয়ে একটা চর মারবে। কিন্তু যদি কোনো বিপদ হয় তাহলে? ও পারবেতো ঠিক সময় পৌছাতে? এসব ভেবে ঘাম বেরিয়ে যাচ্ছে আদ্রিয়ানের, টেনশনে মাথা ফেটে যাচ্ছে। বার বার বিরবির করে একটা কথাই বলছে
— ” পিক আপ দা ফোন ড্যাম ইট।”
রিক অনিমার হাত পা দিয়ে এতো জোরে পিসে ধরেছে যে ওর প্রাণ বেরিয়ে যাচ্ছে। রিক ওর হাত পা দিয়ে পিসে ধরেই হাটু ভেঙ্গে বসলো ওর সামনে। তারপর ফ্লোর থেকে ফোনটা তুলে স্ক্রিণে তাকিয়ে আদ্রিয়ানের নামটা দেখে দেখে রিকের রাগ কয়েকগুন বেড়ে গেলো, আর সেই রাগটা ঝারলো অনিমার হাতের ওপর। পা দিয়ে আরো জোরে পিসে ধরল। অনিমা চোখ খিচে মৃদু চিৎকার করে উঠল। রিক ফোনের স্ক্রিণে তাকিয়ে বলল
— ” বাহ বাহ কী প্রেম? একজন এখানে কাদছে ওখানে ! অস্হির হয়ে যাচ্ছে?”
অনিমার দৃষ্টি ফোনের স্ক্রিণের দিকে আদ্রিয়ান কনটিনিউয়াসলি ফোন করেই যাচ্ছে। অনিমা ঝোকের বসে ফোন করে ফেললেও এখন ও মনে মনে বলছে আদ্রিয়ান যেনো এগানে না চলে আছে। ওর সাথে যা তাতো হবেই আদ্রিয়ানও বিপদে পরবে। রিক রেগে ফোনটা জোরে ছুড়ে মারল আর ফোনটা খুলে এদিক ওদিক ছড়িয়ে গেলো।
আদ্রিয়ান এবার ফোন করে অনিমার ফোন বন্ধ পেলো, এতো ওর টেনশন আরো বেড়ে গেলো, এখন প্রতিটা সেকেন্ড ওর কাছে একেকটা যুগ মনে হচ্ছে। মুখের ঘামটা মুছে গাড়ির স্পিড আরো বাড়িয়ে দিলো ও।
এখানে অনিমা এবার হাত টান দিয়ে রিকের পায়ের তলা থেকে হাত সরিয়ে নিলো যার ফলে ওর হাতের উল্টপিঠ বাজেভাবে ছিলে গেলো, তবুও ও উঠে পালাতে চাইলে রিক সর্বোশক্তি দিয়ে অনিমার গালে চড় বসিয়ে দিলো, অনিমা আবারো ফ্লোরে পরে গেলো, গালে হাত দিয়ে মাথা নিচু করে কাদতে লাগল ও, ওর ঠোঁট কেটে রক্ত পরছে। অনিমার চুল এর মুঠি ধরে বলল
— ” কী ভেবেছিলে? দরজা বন্ধ করে রাখলে আমি তোমার কাছে আসতে পারবোনা? আর তোমার ঐ রকস্টার কে সবটা জানালেই ও তোমায় এসে বাঁচিয়ে নেবে? ”
অনিমার কিছু বলতে পারছেনা, শুধু কেদেই যাচ্ছে। রিক অনিমার চুলে আরো জোরে টান মেরে ধরল। অনিমা ‘আহ’ করে উঠল। রিক রাগে কটমট করে বলল
— ” কী হলো? কথা বলছোনা কেনো? খুব তো সাহস দেখাচ্ছিলে? এখন কাঁদছো কেনো?”
অনিমা অনেক কষ্টে কাঁদতে কাদঁতে বলল
— ” আমাকে ছেড়ে দিন প্লিজ। আমি যেতে চাইনা কোথাও। প্লিজ চলে যান।”
অনিমার এইসব কথায় রিকের মাথা রাগে ফেটে যাচ্ছে। ও চোখ বন্ধ করে নিজের রাগটা নিয়ন্ত্রণ করে মুখে হালকা হাসি ফুটিয়ে বলে
— ” বেইবি তোমাকে কে বলল আমি তোমাকে নিয়ে যেতে এসছি?”
অনিমা এতোক্ষণ কাদলেও এবার অবাক হয়ে রিকের দিকে। নিয়ে যেতে আসেনি মানে? তাহলে কেনো এসছে? অনিমাকে ওভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে রিক বলল
— ” কী ভাবছো? তোমায় নিয়ে যেতে না আসলে কেনো এসছি তাইতো? তুমি অন্য কোনো ছেলের এতো কাছে যাবে আর আমি সেই ছেলেকে ছেড়ে দেবো? আগে তোমার চোখের সামনে ওকে ওপরে পাঠাবো তারপর তোমাকে আমার কাছে অানবো।”
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন

রিকের কথা শুনে ভয়ে কেপে উঠলো অনিমা। ওর জন্যে আদ্রিয়ানকে মরতে হবে? কেনো গেলো ও আদ্রিয়ানের এতো কাছে? ও তো জানতো ওর জীবনের চরম সত্যিটা। অনিমা রিকের দিকে তাকিয়ে বলল
— ” প্লিজ ওনাকে কিছু করবেন না। উনি কিছু করেননি। ”
— ” ও আমার জিনিসে হাত দিয়েছে আর তুমি বলছো কিচ্ছু করেনি?”
— ” অ্ আপনি ভূল ভাবছেন। ওনার আর আমার মধ্যে তেমন কিছুই নেই।”
রিক অনিমার চুল আরো জোরে টেনে ধরে বলল
— ” তোমার সাথে এতো ভালো সম্পর্ক, বার্থ সেলিব্রেট করেছে, জরিয়ে ধরেছে সেগুলো এমনি এমনি?”
অনিমা কী বলবে বুজতে পারছেনা, ওর মাথায় শুধু একটা কথাই চলছে আদ্রিয়ানকে বাঁচাতে হবে এই লোকগুলোর কাছ থেকে। রিক অনিমাকে চুপ থাকতে দেখে বলল
— ” কী হলো? বলো? ওকে মরতে দেখার জন্যে তৈরী তুমি?”
অনিমা শিউরে উঠল রিকের দিকে তাকিয়ে হাত জোর করে বলল
— ” প্লিজ ওনাকে ওকে কিছু করবেন না।”
রিক আরো জোরে অনিমার চুল টেনে ধরে বলল
— ” এতো দরদ ওর জন্যে? হ্যা? একয়দিনেই কী এমন করলো যে এতো মায়া তৈরী হয়ে গেছে যেটা পাঁচ বছরেও আমার জন্যে তৈরী হয়নি? তাহলে তো ওকে এখন মরতেই হয় বলো? ”
অনিমা কাঁদতে কাঁদতে হিচকি উঠে গেছে, তবুও অনেক কষ্টে বলল
— ” বিশ্বাস করুন ওনার কোনো দোষ নেই, আমি নিজেই গেছিলাম। আমি নিজে থেকেই মিশেছি ওনার সাথে, যা করার আমি করেছি। প্লিজ ওনাকে কিছু করবেন নাহ, প্লিজ।
রিক এবার অনিমার চুলের মুঠি ছেড়ে বলল
— “ওহ তারমানে সব দোষ তোমার? যা দোষ করার তুমিই করেছো?”
— ” হ্যাঁ।”
রিক একটা বাকা হাসি দিয়ে বলল
— ” তারমানে পানিশমেন্ট তোমার পাওয়া উচিত?”
— ” আপনি যা বলবেন আমি শুনবো। কিন্তু প্লিজ ওনাকে কিচ্ছু করবে না প্লিজ!”
রিক উঠে দাড়িয়ে বেডের ওপর বসে বলল
— ” ঠিকাছে ওকে কিচ্ছু করবোনা যদি তুমি আমার কথা শোনো তো।”
অনিমা চোখ মুছে রিকের দিকে তাকিয়ে বলল
— ” ঠিকাছে ওকে কিচ্ছু করবোনা, যদি তুমি আমার কথা মতো কাজ করো তো।”
— ” বললাম তো আমি সব করব কিন্তু ওনাকে এসবে আনবেন না। প্লিজ।”
রিক একটু আলসেমি ঝেরে বলল
— ” তোমাকে ঐ রকস্টার,কী জেনো নাম? হ্যাঁ মনে পরেছে, আদ্রিয়ান। ওর সাথে তোমার সো কলড বন্ধুত্ব বা যাই থাক সেই সম্পর্ক ভাঙতে হবে।”
অনিমা স্হির দৃষ্টিতে তাকালো রিকের দিকে। রিক হেসে বলল
— ” আমি বলতে চাইছি তোমাকে ওর থেকে দূরে সরতে হবে আর ওকেও তোমার জীবণ থেকে বের করতে সবে ফরএভার।”
অনিমা ধীর কন্ঠে বল
— ” তাহলে আপনি সত্যিই ওর কোনো ক্ষতি করবেন না তার কী গ্যারান্টি আছে?”
— ” বাহবা কতো সাহস হয়েছে আমার কাছে গ্যারান্টি চাইছো? ওকে ফাইন,আমি প্রমিস করছি। আর তুমি জানো আমি যতোই খারাপ হই, কখনো প্রমিস ব্রেক করিনা।”
অনিমা ভাঙা গলায় বলল
— ” ঠিকাছে আমি তাই করবো। কিন্তু ওনার কোনো ক্ষতি যাতে না হয়।”
— “তুমি আমার কথা শুনে চললে ওর কিছুই হবেনা। কিন্তু মনে রেখো যদি না শোনো, তোমার চোখের সামনে এতো নৃশংস ভাবে মারবো যে কল্পনাও করতে পারবেনা।”
হঠাৎ করেই গাড়ির হর্ন শুনতে পাওয়া গেলো। রিক উঠে বেলকনিনে গিয়ে উকি দিয়ে দেখে হেসে ভেতরে ঢুকে বলল
— ” সত্যিই কী টান? ফোন না ধরায় সোজা বাসায় চলে এসছে?”
চমকে গেলো অনিমা, আদ্রিয়ান এসছে? কোনো ক্ষতি করে দেবেনাতো? ওর? অনিমা ভয়ে ভয়ে রিকের দিকে তাকালো, রিক অনিমার ব্যাপারটা বুঝতে পেরে ওর সামনে হাটু ভেঙে বসে বলল
— ” আরেহ ভয় পেয়োনা, আমি চলে যাচ্ছি। কিন্তু হ্যা এক সপ্তাহ সময় দিলাম এর মধ্যেই যেনো আমি শুনতে পাই তোমাদের মধ্যে কোনো সম্পর্ক বা যোগাযোগ নেই। নাহলে, কী করবো সেটা আবার নিশ্চই বলতে হবে না? মনে রেখো কিন্তু।”
এটুকু বলেই রিক উঠে চলে গেলো ওখান থেকে। অনিমা ওখানেই গুটিয়ে বসে হাটুতে মুখ গুজে কাঁদতে লাগল, চেয়েও কান্নাটা থামাতে পারছেনা ও। আদ্রিয়ান আসছে ও কাঁদলে চলবেনা। কিন্তু পারছেনা ওর কান্না থামাতে ও। হঠাৎই হন্তদন্ত হয়ে রুমে ঢুকলো আদ্রিয়ান। অনিমা ওভাবে ফ্লোরে বসে কাঁদতে দেখে অস্হির হয়ে উঠল ও। তাড়তাড়ি অনিমার সামনে গিয়ে বসে কাঁপা কন্ঠে বলল
— ” অনি।”
অনিমা আদ্রিয়ানের আওয়াজ শুনে মাথা তুলে তাকালো, অনিমার চেহারা দেখে আদ্রিয়ানের ভেতরে ছ্যাত করে উঠল। চোখ ফুলে আছে, বাম গালে কারো তিন আঙ্গুলের দাগ বোঝা যাচ্ছে, ঠোটের কোণা থেকে হালকা রক্ত বেরোচ্ছে, হাটুর ওপর রাখা হাতের দিকে তাকিয়ে দেখলে ডান হাতের উল্টো পিঠ বাজে ভাবে ছিলে গেছে। আদ্রিয়ান ভেতরটা ফেটে যাচ্ছে অনিমাকে এভাবে দেখে, ওর মনে হচ্ছে এসবের জন্যে ওই দায়ী কেনো আরো আগে আসতে পারলো না ও, চোখ দুটো ছলছল করে উঠল ওর । আস্তে করে অনিমার গালে হাত ছুইয়ে ঠান্ডা গলায় বলল
— ” এসব কীকরে হলো? ”
অনিমা আর নিজেকে সামলাতে পারলোনা আদ্রিয়ানকে জরিয়ে ধরে জোরে জোরে কাঁদতে লাগল। আদ্রিয়ানও শক্ত করে জরিয়ে ধরল ওকে। অনিমার এই কান্না ওর কাছে অসহনীয় লাগছে। রাগে ওর নিচের ঠোঁটটা প্রচন্ড রকম কাঁপছে। যে এই কাজটা করেছে তার সাথে সাথে ওর নিজের ওপরেও প্রচন্ড রাগ হচ্ছে, কেনো একটু আগে এসে পৌছলোনা কেনো? ফ্লোরে ওর ভাঙা ফোনটার দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলো কেনো ফোন বন্ধ ছিলো। অনিমা তো আদ্রিয়ানকে জরিয়ে ধরে কেদেই যাচ্ছে। অনিমার ওপরেও রাগ হচ্ছে আদ্রিয়ানের মেয়েটাকে, ঘটনাটাতো আর একদিনে শুরু হয়নি? কেনো কিছু বললোনা ওকে ও? কেনো? কিন্তু এখন ওকে বোকে লাভ নেই এমনিতেই বেশ ভয় পেয়ে আছে মেয়েটা। তাই আলতো করে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বলল
— ” কান্না থামাও, আমি এসে গেছিতো, দেখো।”
আদ্রিয়ানের গলার আওয়াজেই ওর রিকের বলা কথাগুলো মনে পরলো। নাহ ওকে আদ্রিয়ানকে নিজের থেকে দূরে রাখতেই হবে। হ্যা ওর কষ্ট হবে এতে, খুব কষ্ট হবে কিন্তু আদ্রিয়ানের ভালোর জন্যে ও সব করতে পারবে সব। ও একপ্রকার ধাক্কা দিয়েই নিজের থেকে সরিয়ে দিলো আদ্রিয়ানকে। আদ্রিয়ান জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো অনিমার দিকে, হঠাৎ এইরকম আচরণের কারণ বুঝতে পারলোনা ও। অনিমা চোখ মুছে শক্ত কন্ঠে বলল
— ” আপনি কেনো এসছেন এখানে?”
আদ্রিয়ান চোখ ছোট ছোট করে অনিমার দিকে তাকিয়ে বলল
— “তারআগে বলো এসব কী করে হলো? কে করেছে এসব? দরজা খোলা ছিলো কেনো? কে ঢুকেছিলো?”
অনিমার ইচ্ছে আদ্রিয়ানের সাথে কোনো রুড বিহেভ করতে। তাই নিজেকে সামলে বলল
— ” আপনি চলে যান।”
আদ্রিয়ান মেজাজ প্রচন্ড খারাপ হচ্ছে এখন, রগগুলো ফুলে উঠতে চাইছে। মেয়েটার গায়ে যদি আঘাতের চিন্হ না থাকতো নিশ্চিত কষে দুটো চড় মারতো ওর গালে। বাট অনিমার অবস্হা দেখে নিজের রাগ যথাসম্ভব নিয়ন্ত্রণে রেখে শক্ত গলায় বলল
— ” আগে বলো এসব কে করেছে?”
অনিমার এবার কান্না পাচ্ছে খুব। এই ছেলেটা কেনো বুঝতে চাইছেনা যে ও চায়না ওর সাথে রুড বিহেভ করতে। উল্টো ঘুরে ঠোঁট কামড়ে নিজের কান্না আটকে, একটা শ্বাস নিয়ে ঘুরে বলল
— ” এটা আমার ব্যাক্তিগত ব্যাপার। আপনাকে বলতে বাধ্য নই আমি। যান এখান থেকে!”
আদ্রিয়ানের ধৈর্যের বাধ এবার ভেঙ্গে গেলো। অনিমার হাত ধরে নিজের কাছে টেনে দাঁতে দাঁত চেপে বলল
— ” তাহলে এতোবার ফোন করেছিলে কেনো? তামাশা দেখাতে?”
— ” ভূল হয়ে গেছে আমার হাত জোর করে ক্ষমা চাইছি আপনার কাছে। নাউ জাস্ট লিভ।”
অাদ্রিয়ান তাকিয়ে আছে অনিমার দিকে ও বুঝতে পারছে অনিমা কিচ্ছু বলবেনা ওকে। তাই ঠান্ডা গলায় বলল
— “ফার্স্ট এইড বক্সটা কোথায়?”
অনিমা আদ্রিয়ানের দিকে করুণ চোখে একবার তাকালো ও চেয়েও কান্না থামাতে পারছেনা। ও কাদতে কাদতেই বলল
— ” প্লিজ চলে যান আপনি প্লিজ।”
অাদ্রিয়ান এবার প্রচন্ড জোরে ধমক দিয়ে বলল
— ” ফার্স্ট এইড বক্স কোথায়?”
অনিমা কেঁপে উঠলো। এইকয়দিনে আদ্রিয়ানের এই রূপ ও দেখেনি। রিকের ধমকও কোনোদিন এতোটা কম্পনসৃষ্টিকারী ছিলোনা যতোটা আদ্রিয়ানের ধমকে ছিলো। আদ্রিয়ানকে খুব ভয়ংকর লাগছে দেখতে। অনিমা ভয়ে একটু পিছিয়ে গেলো ও আর একটা শব্দ করারো সাহস পেলোনা, চুপচাপ আঙ্গুলের ইশারায় ওয়াডড্রপ এর ওপর দেখিয়ে দিলো। আদ্রিয়ান ফার্স্ট এইড বক্সটা এনে প্রথমে অনিমার হাতে আলতো করে ঔষধ লাগিয়ে দিতে লাগলো, অনিমা ভয়ে টু করছে না, ব্যাথা পেলে যে হালকা আহ করবে সেই সাহসটাও নেই ওর। আদ্রিয়ান
গম্ভীর কন্ঠে বলল
— ” ব্যাথা পেলে বলতে পারো আমি কিছু বলবোনা।”
অনিমা মাথা নিচু করে রইলো। আদ্রিয়ানের হঠাৎ এই রাগী রূপ দেখে ও ভয় পেয়ে গেছে। আদ্রিয়ান অনিমার হাতে ব্যান্ডেজ করে, ঠোঁটে আর গালেও ঔষধ লাগিয়ে দিলো। এরপর উঠে দরজাটা বাইরে থেকে লক করে কোথায় যেনো গেলো অনিমা বুঝছেনা গেলো কোথায়? আর হঠাৎ কী হলো ওর? গোবিন্দা থেকে শক্তি কাপুড় কীকরে হয়ে গেলো? এটা আদ্রিয়ানই তো? দরজাটাও লক করে গেছে। দশ মিনিটের মাথায় আদ্রিয়ান হাতে একটা থালা নিয়ে এলো তাতে পাস্তা আছে। আদ্রিয়ান অনিমার এক চামচ পাস্তা অনিমার দিকে বাড়িয়ে দিতেই অনিমা কিছু বলবে তার আগে আদ্রিয়ান এমন ভাবে তাকালো যে অনিমার মুখ অটোমেটিক্যালি হা হয়ে গেলো। আদ্রিয়ান পুরোটা পাস্তা অনিমাকে খাইয়ে দিলো। ভয়ে অনিমা একটা আওয়াজ ও করেনি। তারপর ওকে পানি খাইয়ে মুখ মুছে দিলো। অনিমা মাথা নিচু করে আছে আদ্রিয়ান অনিমার থুতনি ধরে মাথা উচু করে বলল
— ” আপাদত চলে যাচ্ছি। কিন্তু হ্যা শুধু আজকের জন্যেই যাচ্ছি। এখন থুমি সুস্হ নও তাই এখনকার ছেড়ে দিলাম। বাট, আমি কাউকে ছেড়ে দেইনা এটা মাথায় রেখো। দরজা লক করে শুয়ে পরবে। কাল দেখা হচ্ছে।”
বলেই উঠে হনহনিয়ে চলে গেলো। অনিমা হা করে তাকিয়ে আছে। ওর কাছে সব তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। এটা আদ্রিয়ান ছিলো? সিরিয়াসলি?
.
#চলবে…
.
( ব্যাস্ত আছি খুব। আপনারা ওয়েট করবেন তাই এটুকু লিখে দিলাম। আর রি-চেইক করার সময় পাইনি তাই ভূলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
হ্যাপি রিডিং ?)

বর্ষণের সেই রাতে ❤ পর্ব- ২১

0

বর্ষণের সেই রাতে ❤
পর্ব- ২১
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

.
গাড়িতে মাথা নিচু করে বসে আছে অনিমা। আর আদ্রিয়ান চুপ করে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে দেখে চলেছে ওকে। অনিমার ব্রেক টাইমে ওর অফিসে ঢুকে সবার সামনেই হাত ধরে টেনে নিয়ে এসছে ওকে। মেয়েটার চুপ থাকা সহ্য হচ্ছেনা ওর আর, আদ্রিয়ান এবার ধমকের সুরে বলল
— ” আমি অনেকক্ষণ যাবত তোমাকে কিছু জিজ্ঞেস করছি উত্তর দাও।”
অনিমা নিচু কন্ঠে বলল
— ” আমিতো বলেছি আমার কিচ্ছু হয়নি আমি ঠিক আছি।”
আদ্রিয়ান অনিমার হাত ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলল
— ” দেখো ডোন্ট ওয়ান্ট টু বি ওভার স্মার্ট ওকে? এ কয়দিনে খুব ভালোকরে চিনেছি আমি তোমাকে। কিছুতো হয়েছে সেটা আমি নিশ্চিত, কিন্তু সেটা কী? ”
অনিমা আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে একটু হাসার চেষ্টা করে বলল
— ” আপনি ভূল ভাবছেন। আসলে দুদিন ধরে আব্বুর কথা একটু মনে পরছে তাই আরকি।”
আদ্রিয়ান চোখ ছোট ছোট করে অনিমার দিকে তাকিয়ে বলল
— ” আই সেইড ডোন্ট ওয়ান্ট টু বি ওভার স্মার্ট।”
অনিমা এবার মাথা নিচু করে বসে আছে। আদ্রিয়ান একটা ছোট্ট শ্বাস ছেড়ে বলল
— ” শোনো আজ রাতে আমার শো আছে তাই ফোন সাইলেন্ট থাকবে, দরকার হলে একটা মিসডকল দিয়ে রেখো আমি ব্যাক করব।”
অনিমা মাথা নেড়ে গাড়ি থেকে নামতে গেলেই আদ্রিয়ান ওর হাত ধরে বলল
— “কিছু বললেনা খুব ভালো কথা। কিন্তু এরপর যদি তোমার কোনো ক্ষতি বা বিপদ হয়, আই উইল নট স্পেয়ার ইউ, মাইন্ড ইট।”
এটুকু বলে হাত ছেড়ে দিলো আদ্রিয়ান অনিমা নামতেই ও গাড়ি স্টার্ট করে চলে গেলো। আর অনিমা অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো ওর যাওয়ার দিকে। আর মনে মনে বলল আই এম সরি আদ্রিয়ান, কিন্তু আমাকে এটা করতেই হলো আপনার ভালোর জন্যে।
____________

এদিকে রিকের ফার্মহাউজে বসে ভাঙা হাত নিয়ে রিকের আসার অপেক্ষা করছে অর্ক। আসলে গতকাল সন্ধ্যায় কয়েকজন লোক এসে ওকে মেরে ওর ডান হাত ভেঙে দিয়ে গেছে আর একটা হুমকি চিঠিও ধরিয়ে দিয়ে গেছে। এখন ওর মনে একটা কথাই চলছে কার লোকেরা এসে ওর হাতটা ভেঙে দিয়ে গেলো, আর হুমকি চিঠি দিয়ে গেলো ? রিকের লোক? কিন্তু রিক তো কোলকাতা ছিলো একটু আগে বাংলাদেশে ল্যান্ড করল। অনিমার সাথে ও কেমন বিহেভ করে সেটাতে রিক জানেনা, তাহলে? এসব ভাবতে ভাবতেই রিক চলে এলো। রিককে দেখেই অর্ক দাড়িয়ে গেলো। রিক অর্কর ভাঙা হাতের দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলল
— ” তোমার হাতের এই অবস্হা কে করল?”
অর্ক বুঝতে পারলো যে রিক এসব করেনি তাহলে কে করল? তবুও সিউর হতে বলল
— ” আসলে পরে গেছিলাম বাথরুমে। আচ্ছা আপনি কী আমায় কোনো চিঠি দিয়েছেন?”
রিক বসে বিরক্ত হয়ে বলল
— ” ফোন, ম্যাসেজের এতো সিস্টেম থাকতে আমি চিঠি দেবো কোন দুঃখে, তাও তোমাকে?”
অর্ক এবার সিউর হলো যে রিক এসব করায়নি। রিক গম্ভীর কন্ঠে বলল
— ” কী বলতে এসছো সেটা বলো?”
— ” আপনাকে একটা খবর দেবার আছে, মানে অনিমার খবর পেয়ে গেছি।”
রিক হেসে দিলো অর্কর কথায়। রিকের হাসি দেখে অর্ক অবাক হলো। হাসি থামিয়ে রিক বলল
— ” অনিমার খোজ আরো পাঁচ দিন আগেই পেয়েছি। কী করছে, কোথায় করছে, কীভাবে করছে সব খবর আছে আমার কাছে। আর আজকেই আমি যাচ্ছি ওকে অানতে। নতুন কিছু বলার থাকলে বলো নইলে যাও।”
অর্ক একটু নিরাশ হলো, কোথায় ভাবলো যে এই খবর দিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতাবে সেটা আর হলোনা। রিক বুঝলো অর্ক আর কিছু বলবেনা তাই উঠে বেড়িয়ে গেলো।
অর্ক সেই চিঠিটা বের করে ভাবলো কে হতে পারে? রিকের চেয়েও ভয়ংকর আদোও কেউ আছে? যে এমন হাড় হিম করা হুমকি দিতে পারে? চিঠিতা খুলে আরেকবার পরলো অর্ক তাতে লেখা আছে
” ইচ্ছেতো করছে তোর গলা কেটে দেই। কিন্তু আমার জানতে পারা এটা তোর প্রথম ভূল তাই শুধু হাতটা ভাঙলাম। ওর হাতে যতোটা না লেগেছে তার থেকে একশগুন বেশি আমার বুকে লেগেছে। এরপর ওর গায়ে হাত দেওয়াতো দূর ওর দিকে তাকালে শুধু চোখ দুটো উপড়াবো তাইনা তোর শরীরের একটা রগও অক্ষত থাকবেনা, আই প্রমিস।”
লেখাটা পরে বড়সর একটা ঢোক গিলল অর্ক। আর ভাবতে লাগল কে এই অজ্ঞাত ভয়ংকর ব্যাক্তি?
_____________

অনিমা ডেস্কে গিয়ে বসতে না বসতেই তীব্র বলল
— ” কীরে কী হয়েছে? ভাইয়া তোকে এভাবে টেনে নিয়ে গেলো কেনো?”
অনিমা একটা শ্বাস নিয়ে বলল
— ” আমার কী হয়েছে সেটা জানতে।”
অরুমিতা হতাশ কন্ঠে বলল
— ” সেটাতো আমরাও জানতে চাইছি। কী হয়েছে তোর?”
হঠাৎই তীব্র কিছু একটা ভেবে বলল
— ” এই এক মিনিট? পেপারে তোর ছবি ছেপেছে, তারমানে রিক তোর খোজ পেয়ে যাবে বা গেছে! এইজন্যেই তুই এতো আপসেট? সিট আগে কেনো মাথায় আসেনি?”
অনিমা ছলছলে চোখে ওদের দিকে তাকিয়ে বলল
— ” কালকে অর্ক ভাইয়াও এসছিলো।”
অরুমিতা অবাক হয়ে অনিমার দিকে তাকিয়ে বলল
— “কী ওই জানোয়ারটা মানে তোর মামাতো ভাই এসছিলো? এইজন্যেই তোর চোখমুখ এমন ছিলো?”
তীব্র ডেস্কে একটা পাঞ্চ মেরে বলল
— ” এরা কী চায়টা কী? একটা মেয়ের জীবণকে নরক বানিয়ে রেখেছে।”
অরুমিতা অনিমার কাধে হাত রেখে বলল
— ” এডি কে বলেছিস কিছু?”
অনিমা মাথা নাড়ল। অরুমিতা রেগে গিয়ে বলল
— ” সমস্যা কী তোর বলতো? কী শুরু করেছিস তুই? ওনাকে সবটা বললেও তো উনি কিছু একটা করতে পারবেন, এভাবে চুপ করে থাকার মানে কী? কী পেয়েছিস কী তুই? কেনো করছিস এসব?”
অনিমা এবার চেচিয়ে বলে উঠল
— ” কারণ আমার খুজ সখ হয়েছে ঐ রিকের কাছে যাওয়ার, দিনরাত ওর টার্চার সহ্য করার। সেইজন্যেই করছি এসব। হয়েছে?”
বলেই কেদে দিলো অনিমা তীব্র উঠে গিয়ে ওকে একহাতে জরিয়ে ধরল। অনিমা কাদতে কাদতেই বলল
— ” হতে পারিনি আমি এতোটা স্বার্থপর। কারণ আমি চিনি আদ্রিয়ান কে। এসব শুনলে ও চুপ থাকবে না। রঞ্জিত চৌধুরী, রিক চৌধুরীর সাথে লড়তে নেমে যাবে। ঢাল হয়ে দাড়াবে আমার সামনে। কিন্তু আমিতো জানি ওই রঞ্জিত চৌধুরীরা কতো ভয়ংকর, কতোটা নৃশংস। আদ্রিয়ান ওদের মতো ক্রিমিনাল নয়, আর না এসব খুনখারাপিতে থাকে। তাহলে কীকরে লড়বে ওদের সাথে? যদি রিক আমাকে ধরেও নেয় তো আমি ওকে বুঝিয়ে দেবো যে আদ্রিয়ানের সাথে আমার তেমন কিছুই নেই, ওকে যাতে কিছু না করে, তার বিনিময়ে যদি আমায় সারাজীবণ রিকের কাছে থাকতে হয় থাকবো আমি, তাহলে রিক ঠিক শুনবে আমার কথা এটুকু জানি আমি। কিন্তু আদ্রিয়ান নিজে এসবে জরালে ওকে ছাড়বেনা ওরা। আমি নিজের চোখে আমার আব্বুর মৃত্যু দেখেছি, আদ্রিয়ানের মৃত্যু দেখতে পারবোনা। পারবোনা আমি।”
বলেই আরো জোরে কাদতে লাগল। এবার অরুমিতাও এসে জরিয়ে ধরল ওকে। এইরকম একটা মেয়েকে কেউ এতো কষ্ট কীকরে দিতে পারে সেটাই ভেবে পাচ্ছেনা অরুমিতা আর তীব্র
_____________

রাতে অনিমা ফ্লাটে এসে দরজা খুলতে গিয়ে দেখলো দরজাটা খোলা এতে বেশ অনেকটাই অবাক হলো ও। ওতো দরজাটা তালা লাগিয়ে গেছিলো খুললো কে? অনিমার আস্তে করে দরজাটা খুলে ভেতরে ঢুকলো, লাইট অফ তাই সব অন্ধকার, ভেতরে ঢোকার পর কয়েক কদম এগোতেই দরজাটা বাইরে থেকে বন্ধ হয়ে গেলো। অনিমা চমকে পেছনে তাকালো তাড়াতাড়ি দরজার কাছে গিয়ে দেখলো দরজাটা বন্ধ, ভয়ে ওর আত্না শুকিয়ে আসছে। কে? দরজাটা কে বন্ধ করলো? ও দরজা ধাক্কাতে ধাক্কাতে বলল
— ” হ্যালো? দরজাটা কে বন্ধ করলেন? দেখুন এটা ভালো হচ্ছেনা কিন্তু। খুলুন দরজা। আজব তো এসব কেমন মজা? দরজা খুলুন।”
কিন্তু কারো কোনো সারা না পেয়ে ভয় পেয়ে গেলো ও। কে এমন করল? হঠাৎ করেই রুমে লাইট জ্বলে উঠলো, অনিমা পেছনে ঘোরার আগেই কেউ বলে উঠল
— “কেমন আছো বেইবি?”
কন্ঠটা শোনার সাথে সাথেই অনিমা শিউরে উঠলো, ওর শরীরের রক্ত যেনো হিম হয়ে আসছে, পেছনে তাকিয়ে দেখার মতো সাহস হচ্ছেনা ওর। ও এসে গেছে? এখানে পৌছে গেছে ও? নাহ নিশ্চই কোনো স্বপ্ন দেখছে ও, এটা হতেই পারেনা। এক্ষুনি ওর স্বপ্ন ভেঙ্গে যাবে, কিন্তু এই স্বপ্ন ভাঙছে না কেনো? ও আর পারছেনা এই স্বপ্ন সহ্য করতে। এসব ভাবতে ভাবতেই পেছন থেকে আবার আওয়াজ এলো
— ” কী হলো আমার মুখটা কী এতোই বাজে যে পেছন ঘুরে দেখতেও চাইছোনা?”
অনিমা হালকা কেপে উঠল, তারপর ভয়ে ভয়ে পেছনে তাকালো। আর পেছনে তাকিয়েই অনিমা চমকে গেলো। কারণ রিক সিংগেল সোফায় পায়ের ওপর পা তুলে বসে আছে, ওর মুখে বাকা হাসি। অনিমার হাত পা কাপঁতে শুরু করল, ওর পুরো শরীর যেনো জমে গেছে, নরার সামান্য শক্তিও পাচ্ছেনি এইমুহুর্তে ওর। তিনবছর পর আবার এই লোকটার সম্মখিন হলো ও। রিক আস্তে করে উঠে এগোতে লাগল অনিমার দিকে, অনিমা নিজের অজান্তেই পিছিয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। রিক অনিমার দিকে এগোতে এগোতে বলল
— ” তুমি পিছিয়ে যাচ্ছো কেনো? কতোদিন পর দেখা হলো আমাদের কোথায় ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করবে তা না।”
রিকের এই ঠান্ডা গলাও অনিমার কাছে খুব ভয়ংকর লাগছে, ওর শ্বাস আটকে যাচ্ছে, মনে হচ্ছে কেউ ওর শ্বাসনালী কেটে দিয়েছে। ও কয়েক কদম পিছিয়েই ছুটে দরজার কাছে গিয়ে দরজা খোলার চেষ্টা করতে লাগল আর চেচাতে শুরু করলো। রিক হাত ভাজ করে দেখছে অনিমাকে, অনিমার এই প্যানিক হয়ে যাওয়াটা বেশ ইনজয় করছে ও। মেয়েটা এখনও একি রকম ভয় পায় ওকে। আর ওর এই ভয় পাওয়াটা রিক কে অদ্ভুত শান্তি দেয়। অনেক্ষণ দরজা ধাক্কিয়ে কারো কোনো সারা না পেয়ে অনিমা আস্তে আস্তে পেছনে তাকালো, রিককে ওর দিকে এগিয়ে আসতে দেখে ও ভয়ে দরজার সাথে লেগে দাড়িয়ে রইলো। রিক এসে অনিমার পাশ দিয়ে দরজায় হাত রেখে বলল
— ” বাইরে আমার লোক দাড়িয়ে আছে, আমি বলার আগে ওরা দরজা খুলবে না।” অনিমা অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো রিকের দিকে। গলা দিয়ে কোনো আওয়াজ বের হচ্ছে না এখন। রিক মুখে হাসি রেখেই বলল
— ” কী ভাবছো? কেনো তাইতো? আসলে তোমার সাথে অনেক কথা আছে আমার, কেও যাতে ডিসটার্ব করতে না পারে সেইজন্যেই এই অবস্হা। ”
অনিমা এখোনো ভীত চোখে তাকিয়ে আছে রিকের দিকে। রিকের এই শান্ত কন্ঠের সাথে পরিচিত ও, এর আগে রিক যতোবার ওর সাথে শান্ত কন্ঠে কথা বলেছে, ঠিক তার পরেই ওর ওপর দিয়ে ভয়ংকর কিছু গেছে। রিক অনিমাকে ধরতে গেলেই অনিমা রিককে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দৌড়ে ওর রুমের দিকে যেতে নিলো কিন্তু তার আগেই রিক ওর হাত ধরে ফেলল, তারপর নিজের দিকে টেনে ওর দুই বাহু ধরে বলল
— ” কী করছো বলোতো? আমি কোথায় তোমার সাথে ঠান্ডা মাথায় কথা বলতে চাইছি আর তুমি ছোটাছুটি করেই যাচ্ছো।”
অনিমা এবার ভয়ে কেদে দিলো, ভয়ে নিজেকে রিকের কাছ থেকে সরিয়ে নিতে চাইছে কিন্তু রিক ছাড়ছেনা। অনিমার কান্না দেখে রিক বলল
— ” আরে বাবা এভাবে ভয় কেনো পাচ্ছো? আমিকি মেরেছি তোমাকে? আর ভয় পাওয়ার নাটক কেনো করছো? তুমিতো এখন খুব সাহসী হয়ে গেছো তাইনা? আমাকে এখন আর তুমি ভয় পাও নাকি? আমার কাছ থেকে পালিয়েছো দেখো কী সুন্দর করে চোখে কাজল দিয়েছো, নিজের বার্থডে সেলিব্রেট করছো তাও অন্য ছেলের সাথে, তারওপর তাকে জরিয়ে ধরছো।”
এটুকু হাসি মুখে বললেও এরপরেই রিকের চোয়াল শক্ত হয়ে গেলো, চোখ লাল হয়ে উঠল, মুখে আবার সেই হিংস্রতা ফুটে উঠেছে। রিককে এভাবে দেখে অনিমা কেপে উঠলো। রিক দাঁতে দাঁত চেপে বলল
— “যদি সত্যিই আমাকে ভয় পেতে এসব করতে পারতে? বলো পারতে? ”
এটুকু বলে ওকে ধাক্কা দিয়ে সোফায় ফেলে দিলো। অনিমা সোফার কর্ণারে পেটে বারি খেয়ে সোফায় পরলো, যার ফলসরূপ পেটের সাইডে বেশ ব্যাথা পেলো ও। অনিমা পেট চেপে ধরে কান্নাজরিত চোখে রিকের দিকে তাকালো। কিন্তু রিকের একটুও মায়া হলোনা। রিক এসে অনিমার পাশ দিয়ে সোফার ওপর এক পা রেখে আরেক হাত দিয়ে ওর গাল চেপে ধরে বলল
— ” খুব সাহস হয়ে গেছে তাইনা? একবারো মাথায় আসেনি আমি জানতে পারলে কী করবো? কে দিলো এতো সাহস ঐ রকস্টার?”
অনিমা নিঃশব্দে চোখের পানি ফেলে যাচ্ছে, তবুও হিচকি উঠে গেছে ওর। রিক ওর গাল ছাড়তেই ও সোফার ওপর দু পা উঠিয়ে একটু গুটিয়ে বসে অস্ফুট স্বরে বলল
— ” প্লিজ ছেড়ে দিন আমাকে।”
রিক হেসে দিলো অনিমার কথায় তারপর অনিমার দিকে হালকা ঝুকে বলল
— “তোমাকে যদি ছাড়ারি হতো তাহলে পাঁচ বছর আগেই ছেড়ে দিতাম। আমার নজর একবার যেই জিনিসের ওপর পরে সেটা আমি নিজের করেই ছাড়ি।”
— ” আমি কোনো জিনিস নই।”
রিক ধমক দিয়ে বলল
— ” ওই একদম মুখে মুখে কথা না ওকে? বেশি কথা বললে কথা বলার অবস্হাতেই রাখবোনা তোমাকে।”
অনিমা বুঝতে পারছে রিকের হাত থেকে আজ ওর নিস্তার নেই। নাহ ও যাবেনা এই লোকটার সাথে, কিছুতেই না। ওকে যেভাবেই হোক বাঁচতেই হবে। অনিমা ওর শরীরের সব শক্তি দিয়ে রিককে ধাক্কা দিলো। রিক ভাবতেও পারেনি অনিমা এই মুহূর্তে এটা করবে, প্রস্তুতি একেবারেই না থাকায় এই ধাক্কায় নিচে পরে গেলো রিক। অনিমা দৌড়ে ওর রুমে গিয়ে দরজা লক করে দিলো। দরজার দিকে তাকিয়ে পেছাতে পেছাতে খাটে ধপ করে বসে পরল শব্দ করে কেদে দিলো ও। এদিকে রিক উঠেই দরজা জোরে ধাক্কানো শুরু করলো, রিকের মেজাজ অতিরিক্ত মাত্রায় খারাপ হয়ে আছে। এই মেয়ের এতো সাহস কীকরে হয়? ওকে ধাক্কা মারে তার ওপর দরজাও লক করে রেখেছে? রিক রাগে গজগজ করে বলল
— ” অনিমা দরজা খোলো। ভালো হচ্ছেনা কিন্তু খোলো দরজা। খোলো! নইলে তোমার কপালে কী আছে তুমি কল্পনাও করতে পারবেনা। ওপেন দা ডোর।”
রিকের কথা আর দরজায় বারি পরার আওয়াজে ভয়ে বারবার কেপে উঠছে অনিমা, বেডের ওপর গুটিসুটি মেরে বসে ফুপিয়ে কেদে চলেছে। কী করবে ও এখন? রিক ক্রমাগত দরজায় বাড়ি মেরেই যাচ্ছে আর নানারকম হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। অনিমার মাথা কাজ করছেনা, ভয়ে জমে যাচ্ছে, হঠাৎ করেই আদ্রিয়ান এর কথা মনে পরল, ওকে ফোন করবে? কিছু না ভেবেই কাধ থেকে ব্যাগটা নামিয়ে ফোনটা বের করল অনিমা। বারবার কল দেওয়ার পরেও আদ্রিয়ান ফোনটা রিসিভ করছেনা, এদিকে রিক দরজায় আঘাত করেই চলেছে। অনিমা ভাবছে আদ্রিয়ান ফোনটা ধরছেনা কেনো? এমনিতে তো কল করতে না করতেই ফোনটা রিসিভ করে ফেলে আজ কী হয়েছে? তারপর ওর মনে পরলো যে আদ্রিয়ান বলেছিলো আজ ওর শো আছে। এটা মনে পরতেই অনিমা ফোনটা খাটে ছুড়ে ফেলে ফ্লোরে বসে পরলো।
এদিকে আদ্রিয়ান স্টেজে দাড়িয়ে শো করছে। কিছুক্ষণ পরেই শো শেষ হবে, ওর পার্সোনাল ফোন ওর প্যান্টের পকেটে বারবার ভাইবারেট হচ্ছে কিন্তু স্টেজে চলতি গান ছেড়ে ও ফোন পিক করতে পারছেনা। কিন্তু ওর কেমন একটা ফিল হচ্ছে, ভেতরটা অস্হির লাগছে। বারবার মন বলছে ওর গানটা খুব তাড়াতাড়ি শেষ করা দরকার, খুব দরকার কিন্তু কেনো এমন মনে হচ্ছে আদ্রিয়ান জানেনা।
রিক দরজায় জোরে একটা বারি দিয়ে বলল
— ” অনিমা ফর লাস্ট টাইম বলছি ভালোয় ভালোয় দরজা খোলো, তোমার ফ্লাটের মেইনডোর খুলতে পেরেছি এটা খোলা বড় ব্যাপার হবেনা আমার কাছে, দরজা খোলো।”
অনিমা কাদতে কাদতে চিৎকার করে বলল
— ” প্লিজ চলে যান, প্লিজ! আমি যেতে চাইনা আপনার সাথে, দয়া করুন আমায়।”
এই কথাগুলো রিকের রাগ আরো বাড়িয়ে দিলো, রিক রেগে গিয়ে বলল
— ” এভাবে শুনবে না তুমি তাইনা? ঠিকাছে নাও জাস্ট ওয়েট। ”
কিছুক্ষণ পর একটু অন্যরকম শব্দ হতে লাগল দরজায় ভয়ে অনিমার পুরো শরীর কাপছে, ফ্লোরে হাটু গুটিয়ে বসে কেদে চলেছে ও। ওর মনে হলো আদ্রিয়ানকে একটা মেসেজ করা উচিত, ও উঠতে নেবে হঠাৎ ফোন বেজে উঠল, আদ্রিয়ান হ্যা নিশ্চই আদ্রিয়ানই ফোন করেছে, একটু আশার আলো দেখলো অনিমা, উঠে তাড়াতাড়ি ফোন ধরবে তার আগেই ধরাম করে দরজাটা খুলে গেলো।
.
#চলবে…
.
( জানি একটু ছোট হয়েছে বাট একটু এডজাস্ট করে নিন। আর গল্প সম্পর্কে নিজের মতামত অবশ্যই জানাবেন
হ্যাপি রিডিং ?)

বর্ষণের সেই রাতে ❤ পর্ব- ২০

0

বর্ষণের সেই রাতে ❤
পর্ব- ২০
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

.
অনিমার সামনে ওর মামাতো ভাই অর্ক দাড়িয়ে আছে। অর্ক শয়তানি হাসি দিয়ে তাকিয়ে আছে অনিমার দিকে। সেই হাসিটা অনিমার কাছে বিষের মতো লাগছে, ইচ্ছে করছে ঠাটিয়ে গালে দুটো চড় বসিয়ে দিতে। অর্ক অনিমার হাতটা এখোনো ধরে আছে। অনিমা চোয়াল শক্ত করে বলল
— ” তুমি এখানে কী করছো? আর এখানে কেনো এসছো।”
অর্ক অনিমার হাতে একটু টান দিয়ে এগিয়ে এনে বলল
— ” কেনো? আমি এসে পরায় তোর খুব সমস্যা হয়ে গেলো? খুব ফুর্তিতে আছিস দেখছি।”
অনিমা রেগে হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বলল
— “ভাইয়া হাতটা ছাড়ো।”
এটা শুনে অর্ক অনিমার হাত ধরে আরেকটু কাছে টেনে বলল
— ” কেনো অন্য ছেলেকে জরিয়ে ধরতে পারিস, রিকের সাথে রাত কাটাতে পারিস, আর আমি একটু হাত ধরলেই দোষ?”
অনিমার চোখ দুটো ছলছল করে উঠলো সাথে রাগ ও হচ্ছে প্রচুর, ও হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বলল
— ” একটুও বদলাও নি তুমি, এখোনো সেই একই রকম আছো।”
অর্ক অনিমার হাতে চাপ দিয়ে ধরে বলল
— ” ও আমি খারাপ আর তুই কোথাকার সতী সাবিত্রী রে? ”
অনিমা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো অর্কর দিকে যদিও ও হাতে ব্যাথা পাচ্ছে কিন্তু অর্ক কী বলতে চাইছে সেটাই বুঝতে পারছেনা ও। অনিমাকে তাকিয়ে থাকতে দেখে অর্ক বলল
— ” কী দেখছিস? ভূল কিছু বলছি? কদিনেই এতোবড় একটা রকস্টারকে পটিয়ে নিলি, আর মন্ত্রীর ছেলেতো তোর জন্যে পাগল, ওর সাথে তো রাত ও কাটিয়েছিস। তাহলে আমি কী দোষ করলাম হ্যা? ওদের মতো অতো টাকা না থাকলেও কম তো নেই? আর দেখতেও ওদের থেকে খুব বেশি খারাপ না তাহলে?”
অনিমার ঘৃণা হচ্ছে সামনে দাড়িয়ে থাকা এই লোকটাকে। একটা মানুষের চিন্তাধারা এতো নিচু হতে পারে? ছিহ। অনিমা অর্কের দিকে তাকিয়ে বলল
— ” এরকম নোংরা চিন্তাধারা শুধু তোমার মতো মানুষেরই আছে।”
অর্ক আরো জোরে চেপে ধরল অনিমার হাত, ব্যাথায় কুকিয়ে উঠলো ও, চোখ দিয়ে না চাইতেও পানি গড়িয়ে পরল। অর্ক দাঁতে দাঁত চেপে বলল
— ” ও তো তুই বলতে চাইছিস রিক তোর সাথে কিছুই করেনি? যতোবার রিক তোকে দেখতে আসতো রুমে গিয়ে দরজা লক করে দিতো, কেনো সেটা বুঝিনা আমরা? এতোটাই বোকা ভাবিস আমাকে?”
একেই হাতে ব্যাথা পাচ্ছে তারওপর অর্কর এসব কথা শুনে অনিমা নিজেকে সামলাতে পারছেনা তাই কেদে দিয়ে বলল
— ” তুমি নিজে যেমন সবাইকে ঠিক সেরকম ভাবো তাইনা?”
— ” ওও তো রিক খুব ভালো, ধোয়া তুলসি পাতা তাইনা?”
অনিমা নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বলল
— ” না উনি খারাপ, খুব খারাপ একজন মানুষ। কিন্তু এই দিক দিয়ে তোমার চেয়ে হাজারগুন ভালো। ঐ দুই বছরে উনি চাইলেই আমার সাথে যা খুশি করতে পারতেন, বাধা দেবার ক্ষমতা না আমার ছিলো না অন্য কারো। কিন্তু উনি এমন করেননি, কোনোদিন ঐরকম কোনো উদ্দেশ্যে আমাকে স্পর্শও করেননি। যতোবার আমাকে ছুয়েছেন শুধু মারার জন্যেই ছুয়েছেন। কিন্তু তুমি আমার সাথে কী করেছো সেটা নিশ্চই বলে দিতে হবেনা?”
অর্ক বাকা হেসে অনিমার হাতে আরো চাপ দিয়ে বলল
— “বাহ খুব বুলি ফুটেছে দেখছি? মনের সব ভয় চলে গেছে নাকি?”
অনিমার মনে হচ্ছে ওর হাত ভেঙ্গেই যাবে এতো জোরে চেপে ধরেছে কিন্তু অর্কর এসব কথায় ওর ব্যাথার চেয়ে এখন রাগ বেশি হচ্ছে। তাই ও রাগী কন্ঠে বলল
— ” তোমাকে ভয় পাইনা আমি, আগেও পেতাম না, আর না ভবিষ্যতে পাবো। আমি শুধু তোমাকে ঘৃণা করি।”
অর্ক এবার অনিমার হাত পেছনে নিয়ে মুচড়ে ধরে বলল
— ” তাইনা? তো রিককেও ভয় পাসনা?”
এটা শোনার সাথেসাথেই অনিমার রাগী চেহারায় হালকা ভয় মিশ্রিত হলো, বুকের ভেতর ধক করে উঠল। অনিমার ঐ ফেস রিয়াকশন দেখে অর্ক হেসে অনিমার হাতে আরেকটু মোচড় দিয়ে বলল
— ” কী ওর নাম শুনেই সব তেজ শেষ?”
অনিমা এবার কাদো কাদো গলায় বলল
— ” কেনো এভাবে আমার পেছনে পরে আছো তোমরা? তোমাদের তো আমার বাবার সব প্রপার্টি চাই, আমি তো দিয়েই এসছি সব, ওসবের দাবি নিয়ে তো যাইনি আমি, আর আমি কথা দিচ্ছি কোনোদিন যাবোও না। তবুও প্লিজ চলে যাও এখান থেকে, একটু শান্তি দাও আমায়।” অর্ক শব্দ করে হেসে দিলো অনিমার কথায়, তারপর অনিমার হাতে একটু টান দিয়ে আরো কাছে এনে বলল
— ” তোর খোজ যদি আমরা রিক কে দেই তার বিনিময়ে আমি কী পাবো জানিস? একটা মোটা অঙ্কের ক্যাস।”
অনিমা অবাক হয়ে তাকিয়ে বলল
— ” শুধু টাকার জন্যে তোমরা..?
— ” হ্যা শুধু টাকার জন্যেই। এবার শোন তোকে একটা সুযোগ দিচ্ছি, চুপচাপ আমার সাথে আমাদের বাড়িতে চল। তারপর আমি রিক কে বলবো যে তুই নিজের ভূল বুঝতে পেরে নিজেই ফিরে এসছিস। এতে হয়তো তোর শাস্তিটা কমে যাবে।”
অনিমা কাদতে কাদতে বললো
— ” তোমরা সত্যিই অমানুষ।”
অর্ক এবারো হেসে দিয়ে অনিমার হাতে আরো চাপ দিয়ে বলল
— ” সেটা তুই আজকে বুঝলি? শোন রিক ঠিক পেয়ে যাবে তোকে খুব তাড়তাড়ি, তাই নিজের ভালো চাইলে যেটা বলছি সেটাই কর। চল।”
এবার হাতের ব্যাথাটা অসহনীয় হয়ে উঠছে অনিমার, তাই হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বলল
— ” আমি যাবোনা।”
— ” ওকে ফাইন আমিও দেখছি তুই কীকরে থাকিস। ইচ্ছেতো করছে এখুনি তুলে নিয়ে যাই কিন্তু এটা পাবলিক প্লেস তাই সেটা করতে পারবোনা। তবে দেখে নেবো তোকে।”
এটুকু বলে অনিমার হাতটা ঝারা দিয়ে ছেড়ে দিয়ে ওখান থেকে চলে গেলো অর্ক। আর অনিমা হাত ধরে ওখানেই বসে কাদতে লাগল। হাতের দিকে তাকিয়ে দেখলো গভীর দাগ হয়ে আছে হাতে। কাদতে কাদতে হিচকি উঠে গেছে ওর। অনেক্ষণ কেদে তারপর উঠে নিজেকে স্বাভাবিক করে চোখে মুখে পানি দিয়ে চলে গেলো ওদের কাছে। তারপরেই তীব্রর গাড়িতেই বাড়ি চলে আসে ও।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন

ফোনের আওয়াজে নিজের কল্পনা থেকে বেড়িয়ে এলো অনিমা, কান্না থামিয়ে ফোনের স্ক্রিণে তাকিয়ে দেখে অরুমিতার ফোন, নিজেকে স্বাভাবিক করে ফোনটা রিসিভ করে কিছু বলবে তার আগেই অরুমিতা বলল
— ” অনি আজকের নিউস পেপার পড়েছিস?”
— ” নাহ রে সারাদিন তো তোদের সাথেই ছিলাম বার্থডের ঝামেলাতে পড়া হয়নি। কেনো?”
— ” পেপারে তোর আর এডির ছবি বেড়িয়েছে।”
অনিমা যেনো আকাশ থেকে পড়ল, অবাক হয়ে বলল
— ” হোয়াট?”
— ” হ্যা রে আমিও তো জানতাম না, সারাদিন তোর বার্থ ডে নিয়ে বিজি ছিলাম, তাই জানতে পারিনি। তুই দেখ।”
অনিমা কাপা কাপা গলায় বলল
— ” অ্ আচ্ছা রাখছি।”
ফোনটা রেখেই অনিমা তাড়াতাড়ি ল্যাপটপ অন করল তারপর নিউসটা দেখে অনিমা চমকে উঠল। ল্যাপটপের মনিটরের দিকে তাকিয়ে একহাতে মুখ চেপে ধরলো ও, কালকে এতোই খুশি ছিলো যে জার্নালিস্ট এসছে তার ফল কী হতে পারে ওর মাথাতেই আসেনি। ও তো আদ্রিয়ানকে নিয়ে ব্যাস্ত ছিলো, এসব মাথাতেও আসেনি ওর। ল্যাপটপটা অফ করে দুই হাতে মাথা চেপে ধরলো, কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে শব্দ করে কেদে দিলো, কাদতে কাদতে বলল
— ” এবার ও ঠিক পেয়ে যাবে আমাকে। নাহ আমি যাবো না, কোথাও যাবোনা আমি। আমি যেতে চাইনা ওখানে, প্লিজ।”
আচ্ছা ওখানে তো আদ্রিয়ানের ও ছবি আছে, আদ্রিয়ানের কোনো ক্ষতি করে দেবেনাতো রিক? ওর জন্যে আদ্রিয়ান বিপদে পরবে না তো? এসব ভেবেই ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদতে শুরু করলো। ওর মাথায় শুধু একটা চিন্তাই চলছে কী করবে ও? কোথায় যাবে? কার কাছে যাবে? কে বাঁচাবে ওকে?
এসব ভাবতে ভাবতেই আবারো ফোন বেজে উঠলো। পাশে রাখা ফোনটার স্ক্রিণে তাকিয়ে দেখলো আদ্রিয়ান ফোন করেছে। চোখ মুছে কয়েকটা শ্বাস নিয়ে স্বাভাবিক হয়ে ফোনটা রিসিভ করে বলল
— ” হ্যালো।”
— ” হাই। কী খবর আমাকে ভূলেই গেছো মনে হয়? সেইযে রেস্টুরেন্ট থেকে বেড়োলাম একটু খোজও নিলে না আর?”
অনিমা নিজের গলাটা যথেষ্ট স্বাভাবিক রেখে বলল
— ” নাহ আসলে এমনিই।”
আদ্রিয়ানের কেনো জানি মনে হচ্ছে অনিমা ঠিক নেই। তাই একটু চিন্তিত কন্ঠে বলল
— ” কী হয়েছে অনি? আর ইউ ওকে?”
অনিমার খুব কান্না পাচ্ছে। ওর এখন ইচ্ছে করছে আদ্রিয়ানকে জরিয়ে ধরে ইচ্ছে মতো কাদতে, ওকে বলতে ইচ্ছে করছে আ’ম নট ওকে আদ্রিয়ান, ভালো নেই আমি। পারছিনা আমি আর এসব সহ্য করতে। প্লিজ আমাকে এসবের দূরে কোথাও নিয়ে যান। কিন্তু অনিমা তার কিছুই করতে বা বলতে পারছেনা। অনেক কষ্টে নিজের কান্না আটকে বলল
— ” ইয়াহ আ’ম ওকে।”
আদ্রিয়ান সন্দেহ মিশ্রিত কন্ঠে বলল
— ” আর ইউ সিউর?”
— ” হ্যা।”
— ” কোনো কারণে তুমি ঐ নিউসটার জন্যে আপসেট নও তো? দেখো ওগুলো সিরিয়াসলি নিওনা কিচ্ছু হবে না।”
— “নাহ সেসব কিছু না।”
অনিমা বুঝতে পারছে যে এখন বেশিক্ষণ আদ্রিয়ানের সাথে কথা বললে ও ওর আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেনা তাই বলল
— ” আমার খুব ঘুম পাচ্ছে রাখছি হ্যা?”
আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে ফেলল, কিছুতো গন্ডগল আছে সেটা বুঝতে পারছে ও, তবুও বলল
— ” শোনো? ”
অনিমা ফোন রাখতেই নিচ্ছিলো আদ্রিয়ানের আওয়াজ পেয়ে ফোনটা আবার কানে তুলে বলল
— ” হুম?”
— ” কালকে আমি তোমার ফ্লাটের সামনে থেকে তোমাকে অফিসে ড্রপ করে দেবো।”
— ” না না তার দরকার নেই আমি যেতে পারবো।”
আদ্রিয়ান গম্ভীর মুখে বলল
— ” আমি জিজ্ঞেস করিনি তোমায়, জানিয়ে দিলাম।”
— ” কিন্তু..”
— ” কাল আমি আসছি তোমায় নিতে দ্যাটস ফাইনাল।”
অনিমা আর কিছু বলার আগেই আদ্রিয়ান ফোন কেটে দিলো। অনিমা খাটে হেলান দিয়ে ভাবছে, কী করবে এবার থেকে তো চাইলেই দুদিনে চলে যেতে পারবেনা? আর তাছাড়াও কতোদিনি বা পালাবে ও?
আর ওদিকে আদ্রিয়ান ভাবছে কিছু তো চলছে অনিমার মনে, ও ভালো নেই, কিছুতো আছে যেটা ও গোপন করছে, কিন্তু সেটা কী? ওকেই এবার দেখতে হবে ব্যাপারটা।
______________

মিস্টার রঞ্জিত আর কবির শেখ সবে বাসায় ফিরলো, হঠাৎই মিস্টার রঞ্জিতের মোবাইল বেজে উঠলো। ভ্রু কুচকে ফোনটা রিসিভ করে বলল
— ” হ্যা বলো।”
রিক গম্ভীর কন্ঠে বলল
— ” এখানকার সব কাজ শেষ কালকে আসতে পারবোতো আমি?”
মিস্টির রঞ্জিত ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বলল
— ” কাজ শেষ হয়ে গেলে আর থাকবে কেনো?”
— ” বাই।”
বলেই ফোনটা রেখে দিলো রিক। তারপর রাগে গজগজ করে বলল
— ” আমি আসছি কালকেই আসছি। বার্থডে সেলিব্রেট করার, অন্য ছেলেকে হাগ করার খুব শখ তাইনা? তোমার সব শখ এবার আমি মেটাবো। আর মিস্টার আদ্রিয়ান আবরার জুহায়ের, আমার জিনিসে হাত দেবার যেই দুঃসাহস তুমি করেছো তার দাম তোমাকে নিজের প্রাণ দিয়ে চোকাতে হবে। আমি নিজের হাতে মারবো তোমাকে, নিজের হাতে।”
এদিকে ফোন কেটে মিস্টার রঞ্জিত কবির শেখকে বললেন
— ” কালকে রিক আসছে।”
কবির শেখ চিন্তিত কন্ঠে বললেন
— ” জিজু ও এবার এসে কিন্তু একটা খুনখারাপি করবেই। আপনাকে একটু চোখ কান খোলা রাখতে হবে।”
মিস্টার রঞ্জিত হেসে বললেন
— ” সেই ব্যবস্হা আমি করে ফেলেছি। যদি রিক ঐ রকস্টার কে খুন করে তো কেউ লাশ ও খুজে পাবেনা।”
কবির শেখ ফোন চাপতে চাপতে বললেন
— ” আর আদ্রিয়ানকে কারা কারা মারতে চায় তার একটা লিস্ট ও আমি বানিয়েছি। কাউকে একটা ফাসিয়ে দেবো।”
মিস্টার রঞ্জিত আর কবির শেখ দুুজনেই দুজনের দিকে তাকিয়ে হাসলেন।
______________

অনিমা পাঁচ মিনিট ধরে নিচে দাড়িয়ে আছে আদ্রিয়ানের আসার জন্যে। কিন্তু ওর মনে কালকে ঘটা ঘটনাগুলোই মাথায় আসছে। এসব ভাবতেই ভাবতেই আদ্রিয়ান চলে এলো। আদ্রিয়ান নেমে গাড়ির দরজা খুলে দিলো অনিমা চুপচাপ উঠে বসল, আদ্রিয়ানও ড্রাইভিং সিটে বষে গাড়ি স্টার্ট করল। আদ্রিয়ান অনিমা দুজনেই চুপ করে আছে, আদ্রিয়ানের নিরবতা অনিমাকে একটু অবাক করছে। বেশ কিছুক্ষণ পর আদ্রিয়ান গাড়ি থামিয়ে দিলো। অনিমা অবাক হয়ে বলল
— “কী হলো এখানে থামালেন কেনো?”
আদ্রিয়ান অনিমার দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুচকে বলল
— ” তোমার কী হয়েছে সেটা বলো?”
অনিমা একটু ঘাবড়ে গেলো কোনোমতে নিজেকে সামলে বলল
— ” কী হবে? কিছুই হয়নি।”
— ” বাট তুমি..”
আর কিছু বলার আগেই আদ্রিয়ানের চোখ পরল অনিমার হাতের দিকে। আদ্রিয়ান অনিমার হাতটা সামনে এনে ভ্রু কুচকে বলল
— ” হাতে কী হয়েছে?”
অনিমা হাতের দিকে তাকিয়ে দেখলো দাগ হয়ে আছে, কালকে অর্ক এতোই জোরে চেপে ধরেছিলো যে এমন দাগ তৈরী হয়েছে, নখ ও গেধে গেছে দুটো। কিন্তু আদ্রিয়ানকে কীকরে বলবে এসব? অনিমাকে চুপ থাকতে দেখে আদ্রিয়ান বলল
— ” কীহলো বলো?”
অনিমা মাথা নিচু করে বলল
— ” ব্যাথা পেয়েছি।”
আদ্রিয়ান গম্ভীর কন্ঠে বলল
— ” কীভাবে?”
— ” নিজেও জানিনা কীভাবে হলো।”
আদ্রিয়ান অবাক হয়ে বলল
— ” মানে কী?”
অনিমা কী বলবে কীছুই বুঝতে পারছেনা তাই মাথা নিচু করে বলল
— ” অফিসে লেট হয়ে যাচ্ছে আমার।”
— ” কিন্তু..”
— ” প্লিজ।”
আদ্রিয়ান আর কিছু না বলে গাড়ি স্টার্ট করল। ও খুব ভালোই বুঝতে পেরেছে অনিমা কিছু আড়াল করছে কিন্তু এখন এসব জিজ্ঞেস করে লাভ হবেনা সেটাও বুঝতে পারছে। আদ্রিয়ান ভাবছে ওর অফিস শেষে নিরিবিলি কথা বলতে হবে ওর সাথে।
____________

অফিসে এসে অনিমা অরুমিতা বা তীব্রর সাথে কথা না বলেই ডেস্কে কাজে বসে পরলো। অরুমিতা আর তীব্র বেশ অবাক হলো, আজ জেনো আবার সেই অনিমাকে দেখছে ওরা। কিন্তু হঠাৎ কী হলো মেয়েটার? কালকে রেস্টুরেন্টে ওয়াসরুম যাবার আগে অবধিতো কত্তো খুশি ছিলো ও, আজ কী হলো? ওরা অনিমাকে কিছু বলবে তার আগেই অনিমার ডাক পরলো বসের কেবিন। অনিমা একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে উঠে চলে গেলো ওর বসের কেবিনের দিকে। অরুমিতা আর তীব্র ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। অনিমা কেবিনের দরজার সামনে গিয়ে বলল
— “মে আই কাম ইন স্যার?”
— “এসো?
অনিমা ভেতরে গিয়ে দাড়াতেই ওর বস আনোয়ার হোসেন বলল
— ” সিংগার এডি তোমার বার্থডে সেলিব্রেট করেছে?”
অনিমা ইতোস্তত করে বলল
— “জ্বী স্যার।”
অানোয়ার হোসেন বলল
— ” তারমানে উনি তোমার বয়ফ্রেন্ড?”
অনিমা অবাক হয়ে গেলো এই কথায়, অবাক হয়েই বলল
— ” সরি স্যার বাট একটা ছেলে একটা মেয়ের বার্থডে সেলিব্রেট করা মানেই তারা বয়ফ্রেন্ড গার্লফ্রেন্ড হবে তার কোনো মানে নেই। ওরা বন্ধুও হতে পারে।”
আনোয়ার হোসেন হেসে বললেন
— ” আমি জানি সেটা। কিন্তু ধরো যদি এটাকেই ব্রেকিং নিউস বানানো হয় যে তোমরা একে ওপরকে ডেট করছো এন্ড প্রমাণ হিসেবে তোমার সিকারক্তি থাকে নিউসটা কতো চলবে ভেবেছো?”
অনিমা অবাক হয়ে বলল
— ” মানে?”
— ” মানে তো বুঝেই গেছো। দেখো এই নিউসটার জন্যে টাকাও পাবে তুমি, তুমি নিজে আর্টিকেল লিখবে সেই টাকাও পাবে আর আমাদের কম্পানির ও লাভ তাইনা?”
অনিমার যেনো অবাকের শেষ পর্যায় চলে গেলো। সমাজটা এমন কেনো? মানুষরাই বা এমন কেনো? সবাই আমাদের মানুষ বলে কিন্তু মানবিকতা কোথায়? কীসের ভিত্তিতে আমরা মানুষ? যেখানে নিজের সার্থের জন্যে অন্য কারো চরম ক্ষতি করতেও দুবার ভাবছেনা। হিংস্র পশুল চেয়ে কোন দিক দিয়ে কম অামরা? একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে অনিমা বলল
— ” তো স্যার আমি জার্নালিস্ট নাকি বিজনেসম্যান?”
আনোয়ার হোসেন ভ্রু কুচকে বললেন
— ” হোয়াট ডু ইউ মিন?”
— ” মানে একটা খবরকে বেশি আকর্ষণীয় করতে আর সুস্বাদু করতে তাতে তেল, ঝাল, মশলা মিশিয়ে বাজারে বিক্রি কারাকে তো ব্যাবসাই বলে না স্যার? লাইক ইনভেসমেন্ট আর প্রফিট?”
আনোয়ার হোসেন ধমকে বললেন
— ” অনিমা?”
অনিমা ওর বসের চোখে চোখ রেখে বলল
— ” সরি স্যার। আপনি আমি আমরা দুজনেই জার্নালিস্ট। একজন জার্নালিস্টের কাজ সঠিক তথ্যগুলো সকলের মাঝে পৌছে দেওয়া, সকলকে সত্যের খোজ দেওয়া, মিথ্যা ফাস করে দেওয়া, সমাজের ভদ্র মুখোশ পরা নরপশুগুলোকে সবার সামনে তুলে ধরা। এগুলোই জার্নালিসম স্যার, সত্যের জন্যে লড়াই করাই আসল জার্নালিসম। কিন্তু আমরা কী করছি কোনো সেলিব্রিটির বাচ্চা জন্মানোর খবর, কোথায় কোন সেলিব্রিটি ডিনারে গেলো কার সাথে গেলো, হানিমুনে কোথায় গেলো, বার্থডে পার্টিতে কী হলো, এগুলো প্রচার করি যদি খবর রসালো না হয় নিজেরা একটু রস মাখিয়ে নেই। আর সমাজের মুখশধারী কিটগুলোকে তেল দিয়ে যাই যেনো তারা নিউস কম্পানির জন্যে মোটা অংক ডোনেট করে। এটা কী সত্যিই জার্নালিসম স্যার নাকি বিজনেস? আপনি যদি কোনো নিউসের ইনভেস্টের বিনিময়ে প্রফিটের জন্যে মিথ্যা, বা অর্ধ সত্যগুলোকে সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে চান, দেন আই এম ভেরি সরি টু সে স্যার আপনার একজন জার্নালিস্ট নয় বিজনেসম্যান হওয়া উচিত ছিলো।”
আনোয়ার হোসেন মাথা নিচু করে আছেন। অনিমা কিছু না বলে বেরিয়ে গেলো কেবিন থেকে। মাথায় আগুন জলছে ওর। কী পেয়েছে কী এরা জার্নালিসম কে ব্যাবসা বানিয়ে রেখেছে। এদের জন্যে জাস্ট এদের জন্যে অনেকেই খবরের কাগজে দেখানো নিউস বিশ্বাস করতে চায় না, জাস্ট এদের মতো জার্নালিস্টদের জন্যে।
.
#চলবে…
.
( আরে ইয়ার অনিমার অতীত জানাবো তবে সময় হলে। কোনো গল্প বা উপন্যাসে যেকোনো কিছু প্রকাশের নির্দিষ্ট সময় থাকে নাহলে গল্পের সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যায়। তাই একটু ধৈর্য ধরুন। যাই হোক
হ্যাপি রিডিং ?)

বর্ষণের সেই রাতে ❤ পর্ব- ১৯

0

বর্ষণের সেই রাতে ❤
পর্ব- ১৯
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

.
গান শেষ হওয়ার পর গিটারটা আশিসের হাতে দিয়ে অনিমার দিকে তাকিয়ে দেখলো অনিমা একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। আদ্রিয়ান মুচকি হেসে শিশ বাজাতে বাজাতে অনিমার সামনে গিয়ে চুলগুলো নেড়ে ঠিক করে বলল
— “আজকে আমাকে একটু বেশিই হ্যান্ডসাম লাগছে বুঝি?”
অনিমার কয়েক সেকেন্ড লাগল অাদ্রিয়ানের কথাটা বুঝতে, যখন বুঝতে পারলো যে ওভাবে তাকিয়ে আছে বলে আদ্রিয়ান এ কথা বলেছে ও সাথেসাথেই মাথা নিচু করে ফেলল, সেটা দেখে আদ্রিয়ান হেসে বলল
— ” ইউ নো তুমি আমার সামনে লজ্জা পেয়ে যখন মাথা নিচু করে ফেলোনা তখন খুব কিউট লাগে তোমাকে, গালগুলোতে লালচে ভাব আসে, চোখের এই ঘন পাপড়ি গুলো আরো সুন্দর লাগে, আই জাস্ট লাভ ইট।”
অনিমা অবাক হয়ে একপলক আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে দেখলো আদ্রিয়ান ওর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছে, সেটা দেখে ও হালকা লজ্জা পেয়ে চোখ সরিয়ে নিলো। আদ্রিয়ান হেসে আলতো করে অনিমার গালটা টিপে দিয়ে বলল
— “বাচ্চরা ডাকছে তোমাকে, গো এন্ড ইনজয়।”
অনিমা তাকাতেই আদ্রিয়ান চোখের ইশারায় ওকে যেতে বলল। অনিমা মাথা নেড়ে চলে গেলো বাচ্চাদের কাছে। অনিমা বাচ্চাদের কাছে যেতেই ওরা সবাই অনিমাকে একে একে গিফট দিলো। ওরা সবাই অনাথ আশ্রমের অনাথ বাচ্চা, টাকা দিয়ে গিফট কিনে দেবার মতো সামর্থ ওদের নেই, তাই ওরা কাগজ, কাঠ, বোর্ড, মাটি দিয়ে নিজেদের হাতে ছোট ছোট গিফট তৈরী করে দিয়েছে। কিন্তু এই ছোট ছোট উপহারগুলো পেয়ে অনিমার খুশি দেখে মনে হচ্ছে যেনো ওকে অনেক এক্সপেন্সিভ কিছু দেয়া হয়েছে। আদ্রিয়ান মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে অনিমার সেই হাসি দেখছে। সত্যিই মেয়েটা অদ্ভুত একটু বেশিই অদ্ভুত ছোট ছোট বিষয়ে কতো খুশি হয়ে যায়, কতো ছোট ছোট ওর চাওয়া, কতো সহজ ওকে খুশি করা। সেইজন্যেই তো ও কোনো দামী কমিউনিটি সেন্টার বা রেস্টুরেন্টে বুক না করে এই আশ্রমে এসছে। এতে দুটো লাভ হলো, অনিমাও খুশি হলো আর বাচ্চারাও।
কিছুক্ষণ পর অনিমা আদ্রিয়ানের দিকে তাকালো, এরপর বাচ্চাদের খেলতে বলে ও আদ্রিয়ানের কাছে এসে দাড়ালো, আদ্রিয়ান অনিমার দিকে তাকিয়ে বলল
— ” কিছু বলবে?”
অনিমা নিচের দিকে তাকিয়ে হাত কচলাতে কচলাতে ইতোস্তত করে বললো
— ” আসলে আমিতো জানতাম না এখানে আসার কথা, তাই বাচ্চাদের জন্যে কোনো কিছু আনতে পারিনি। কিন্তু..”
আদ্রিয়ান হেসে অনিমার দুই কাধে হাত রেখে বলল
— ” আমাকে তোমার এতোটাই ইরেস্পন্সিবল মনে হয়?”
অনিমা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাতেই আদ্রিয়ান অনিমার মাথায় টোকা দিয়ে বলল
— “আমি সব বাচ্চাদের জন্যে, আশ্রমের সবার জন্যেই গিফট এনেছি। যাওয়ার আগে সবাইকে দিয়ে দিও।”
অনিমা একটু অবাক হলেও মুচকি হেসে বলল
— ” হুম। ওদের কী খাওয়ানো যায় বলুনতো?”
— ” সেই ব্যাবস্হাও করেছি, বাট তার জন্যে তোমাকে একটু কষ্ট করতে হবে।”
— ” সেটা কী?”
— ” রান্না করতে হবে সবার জন্যে বিরিয়ানী, পারবে?”
অনিমা হেসে দিয়ে বলল
— ” অবশ্যই পারবো। বাট দু একজনের হেল্প লাগবে এতো মানুষের রান্না তো।”
— “ডোন্ট ওয়ারি দুই একজন থাকবে তোমার সাথে।”
— ” ওকে।”
অনিমা বিরিয়ানী রান্না করতে চলে গেলো, আদ্রিয়ান বাচ্চাদের সাথে খেলছে। আশিস অরুমিতাকে পেছন পেছন ঘুরছে আর বিরক্ত করছে, অরুমিতা বিরক্ত হওয়ার ভান করলেও মোটেও বিরক্ত হচ্ছে না বরং আশিসে আড়ালে মুচকি মুচকি হেসে যাচ্ছে। তীব্র আর স্নেহা দুজন দুদিকে বসে আছে তবে একে ওপরের আড়ালে একে ওপরকে দেখে যাচ্ছে, ভালোবাসাগুলো হয়তো এমনি হয় শত অভিমান থাকলেও একে ওপরের থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখা যায় না। আদিব আর রাইমাও আশ্রম সঞ্চালকদের সাথে কথা বলছে। আর জার্নালিস্টরা ওদের কাজ করেই যাচ্ছে।
__________
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
কোলকাতার ফ্লাটে ফ্লোরে বসে মোবাইল স্ক্রিণে অনিমার ছবির দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে ড্রিংক করছে রিক। বোতলে একটা চুমুক দিয়ে বলল
— ” হ্যাপি বার্থ ডে সুইটহার্ট! আজ যদি এখানে আসতে না হতো তাহলে তোমাকে নিয়ে তোমার বার্থডে সেলিব্রেট করতে পারতাম। কিন্তু সব ভেস্তে গেলো এই ড্যাডের জন্যে।”
এটুকু বলে ছবিটা সরিয়ে আরেকটা ছবি বার করল, সেই ছবিটার দিকে তাকিয়ে হাত দিয়ে ছুয়ে বলল
— ” আমার কাছে থাকা অবস্হায় তোমার লাস্ট বার্থ ডে তে তোমায় মেরেছিলাম আমি, একটু বেশিই মেরেছিলাম। কী করতাম? তোমার কলেজের বন্ধুরা কেক নিয়ে বার্থডে সেলিব্রেট করতে চলে এসছিলো ঐ বাড়িতে, সব মেয়ে বন্ধু হলেও মানা যেতে কিন্তু দুজন ছেলেও ছিলো, ছেলে কেনো থাকবে? হোয়াই? তাইতো রাগের মাথায় তোমাকে মেরেছি। ভূলটা কী করেছি? একবার জাস্ট একবার তোমাকে নিজের কাছে নিয়ে আসি তারপর তোমাকে কোথাও বেড়োতেই দেবোনা, দরকারে শিকল পরিয়ে রুমে আটকে রাখব তোমাকে কিন্তু কোথাও যেতে দেবোনা, কোথাও না।”
এটুকু বলে বাকা হেসে বোতলে চুমুক দিতে দিতে একপর্যায়ে ফ্লোরেই বসেই খাটে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পরল ও।
__________

সব বাচ্চারা, আশ্রমের সঞ্চালকগন, আদিব, আশিস, তীব্র, রাইমা, অরুমিতা, স্নেহা সবাই দুই সারিতে লাইন ধরে কলাপাতা সামনে নিয়ে বসে আছে। জার্নালিস্টদের আগেই বিদায় দিয়ে দিয়েছে আদ্রিয়ান। অনিমা আর আদ্রিয়ান সবাইকে খাবার সার্ভ করে দিচ্ছে। অনিমা সবাইকে বিরিয়ানী দিচ্ছে আর আদ্রিয়ান সবাইকে শসা, টমেটো আর লেবু দিচ্ছে। সবাই বারণ করেছিলো ওদের এসব করতে কিন্তু ওদের জেদ ওরাই সার্ভ করবে, তাই সবাইকে মানতে হলো। খাবার সার্ভ করতে গিয়ে একে ওপরকে দেখছে বারবার আড়চোখে। সবাইকে খাবার সার্ভ করে আদ্রিয়ান আর অনিমাও খেতে বসল। খাওয়া দাওয়া শেষে এবার যাওয়ার পালা। আদ্রিয়ান অনিমার হাতে গিফ্টটের প্যাকেটগুলো দিলো, অনিমাও সবাইকে গিফটগুলো দিয়ে, সব বাচ্চাদের আদর করে বিদায় নিলো। আদিব, রাইমা আর আশিস একগাড়িতে চলে গেলো, তিব্র অরু আর স্নেহাকে ড্রপ করে দেবে। অনিমাকে এস ইউসিয়াল আদ্রিয়ানই ড্রপ করবে। গাড়ি আপন গতিতে চলছে অনিমা আর আদ্রিয়ান দুজনেই চুপচাপ বসে আছে। নিরবতা ভেঙ্গে আদ্রিয়ান বলল
— “অনিমা এবার বলোতো তীব্র আর স্নেহার ব্যাপারটা কী? যতটুকু দেখে বুঝলাম দে লাভ ইচ আদার, তাহলে এভাবে দুজন দুজনকে ইগনোর কেনো করে?”
অনিমা সামনের দিকে তাকিয়েই মুচকি হেসে বলল
— ” আসলে ওদের সেই কলেজ লাইফ থেকেই প্রেম চলছে। কিন্তু স্টাডি কম্প্লিট হবার পর স্নেহার বাবা চেয়েছিলো যে ও ফ্যাশন ডিজাইনিং নিয়ে একটা কোর্স করুক এবরোট থেকে, আর বাবার জোরাজোরিতে রাজি হয়ে ও চলে গেছিলো এবরোট তীব্রকে না জানিয়েই।”
— ” এইজন্যেই রাগ করেছে?”
— ” আরে না ফোনে পরে বলেছে তীব্রকে, তীব্র একটু আলগা রাগ দেখালেও অতোটাও রাগ করেনি দুদিনেই ঠিক হয়ে যেতো সব।”
আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে অনিমার দিকে একবার তাকিয়ে আবার সামনে তাকিয়ে বলল
— ” তাহলে সমস্যা কী ছিলো?”
— ” তার কয়েকদিন পরেই স্নেহা বাবা ওর এনগেইজমেন্ট করিয়ে দেয় অন্য একটা ছেলের সাথে, সেন্হাও ওর বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে না করতে পারেনি। আর এটা শোনার পরেই তীব্র রেগে যায়।”
— ” সো ও এনগেইজড?”
— ” ছিলো বাট কোনো এক কারণে ছেলেটা এনগেইজমেন্ট ভেঙ্গে দিয়েছে, বেচারি তীব্রকে অনেকবার সরিও বলেছে কিন্তু তীব্রর অভিমান কমেনি।”
— ” হুম বুঝলাম।”
এরপর দুজনেই বেশ অনেক্ষণ চুপ করে ছিলো, কিন্তু অনিমা মুচকি হেসে বলল
— ” থ্যাংকস ”
আদ্রিয়ান একটু অবাক হয়ে বলল
— ” কেনো?”
— ” এতো সুন্দর করে বার্থডে টা সেলিব্রেট করার জন্যে। আজ ছয় বছর পরে এভাবে নিজের বার্থডে সেলিব্রেট করলো। এরঅাগে আব্বু করতো।”
— ” আমি জানি।”
অনিমা অবাক হয়ে বলল
— ” কী?”
আদ্রিয়ান অনিমার প্রশ্নে একটু মুচকি হাসলো তারপর ড্রাইভ করতে করতে বলল
— ” এস পার আই নো, বন্ধুত্বে থাংক্স, সরি শব্দগুলো মানায় না। বাট তবুও থ্যাংক বলছো, নট ফেয়ার। ”
— ” সরি আর বলবোনা।”
আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে তাকাতেই অনিমা বুঝতে পারলো ব্যাপারটা তাই মাথা চুলকে বলল
— ” আই মিন ঠিকাছে আর বলবোনা।”
আদ্রিয়ান হেসে দিলো আদ্রিয়ানের হাসি দেখে অনিমাও হেসে দিলো।
____________

সকালে চা খেতে খেতে সবে পেপারটা খুলেছেন মিস্টির রঞ্জিত, আর পাশেই বসে আছেন কবির শেখ ও। ফ্রন্ট পেজে নিউসটা দেখে ওনার চোখ আটকে গেলো, বড়বড় করে লেখা, “আদ্রিয়ান আবরার জুহায়েরের ইনকারেই ইকরার,কে এই তুরুণী?” অনিমা আদ্রিয়ান একে ওপরকে জরিয়ে ধরে আছে সেই ছবিও বড় করে ছাপা, তাড়াতাড়ি বিনোদন পেজে গিয়ে বিস্তারিত পড়ে অবাক হয়ে গেলেন, সেটা দেখে কবির শেখ বললেন
— ” কী হয়েছে জিজু?”
মিস্টার রঞ্জিত কিছু না বলে পেপারটা এগিয়ে দিলেন কবির শেখ এর কাছে। পেপারটা দেখে কবির শেখ চমকে গেলেন কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন
— ” মেয়েটার কী ভয় ডর সব উড়ে গেছে? একেই পালিয়েছে বলে বাবাই রেগে আছে তারওপর এখন এসব করে বেরাচ্ছে?”
— ” আরে আমি ভাবছি এই রকস্টারের কথা।”
কবির শেখ হেসে বললেন
— “সেই, এই ছেলের মরণ তো নিশ্চিত হয়ে গেলো, আর মেয়েটার কী হাল হবে রিক বাবাই ভালো জানে।”
মিস্টার রঞ্জিত রেগে বললেন
— ” তুমি এসব ভাবছো? আমি ভাবছি এতো বড় একজন রকস্টার খুন করলে সেটা ধামাচাপা দেবো কীকরে? ওর এতো ফ্যান, সবাই ক্ষেপে উঠবে।”
কবির শেখ হেসে বললেন
— ” টেনশন নিচ্ছেন কেনো জিজু? কিচ্ছু হবেনা। এমনিতেও একে তো অনেকেই মারতে চায়, কাউকে ফাসিয়ে দেবো। আর রিকের বিরুদ্ধে প্রমাণ তো তখন পাবে না যখন ঐ সিংগারের ডেড বডিটা কেউ খুজে পাবে।”
বলেই হেসে দিলো কবির শেখ, মিস্টার রঞ্জিত ও হাসলো। অন্তত ভয়ংকর সেই হাসি যেখানে না আছে দয়া আর না আছে কোনো সহানুভূতি আছে শুধু হিংস্রতা আর অমানবিকতা।
____________

একটা রেস্টুরেন্টে বসে আছে অনিমা, আদ্রিয়ান, আদিব, আশিস, রাইমা,তিব্র, অরুমিতা, স্নেহা। অনিমা বার্থডে উপলক্ষেই আদ্রিয়ান ওদের সবাইকে স্পেশাল ট্রিট দিচ্ছে। সবাই নানারকম কথা বলছে কিন্তু তীব্র আর স্নেহা মুখ গোমড়া করে বসে আছে। হঠাৎ আদ্রিয়ান
তীব্র স্নেহাকে উদ্দেশ্য করে বলল
— ” তীব্র, স্নেহা তোমাদের আমার কিছু বলার আছে।”
তীব্র আর স্নেহা তাকালো আদ্রিয়ানের দিকে, আদ্রিয়ান মুচকি হেসে বলল
— ” অনির কাছে তোমাদের সমস্যাটা অনেকটা শুনেছি, দেখো জীবণটা খেলা নয়, গোলাপের বিছানাও না যে সব আমাদের মন মতো ইচ্ছে মতো হবে। অনেক সময় অনেক কিছু হয় যেটা আমাদের হাতে থাকেনা, না চাইতেও অনেককিছু মেনে নিতে হয়। আর কাছের মানুষকে ইচ্ছে করে দূরে সরিয়ে রাখাটা বোকামী। আমি বলবোনা সব ভূলে এক হয়ে যাও, সেটা তোমাদের সিদ্ধান্ত, আমার কোনো উপদেশই কাজে লাগবেনা যদি তোমরা নিজে থেকে ব্যাপারটা না বোঝো। সো টেইক ইউর টাইম এন্ড থিংক। জীবণ একটাই সেটা নিজের মতো বাচো..”
হঠাৎই ওর ফোন এলোও রিসিভ করে কথা বলতে গেলো। এতোক্ষণ সবাই মুগ্ধ হয়ে আদ্রিয়ানের কথা শুনছিলো। তীব্র স্নেহা ও ভাবনায় পরে গেলো। অনিমা ভাবছে এই ছেলেটা সত্যিই অসাধারণ যার কোনো তুলনা হয়না। এরমধ্যেই আদ্রিয়ান এসে বলল
— ” গাইস আই হ্যাভ টু গো, কাজ পরে গেছে তোরা থাক। তীব্র অনিকে ড্রপ করে দিও।”
তীব্র মাথা নাড়লো, আদ্রিয়ান চলে গেলো। সবাই কথা বলছে তার কিছুক্ষণ পরেই অনিমার ওয়াসরুমে যাবার দরকার হলো তাই বলল
— ” তোরা বস আমি একটু আসছি।”
সবাই মাথা নাড়তেই অনিমা চলে গেলো ওয়াসরুমে চলে গেলো। বেশ অনেক্ষণ পর এলো অনিমা। সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ওর দিকে চোখ লাল হয়ে আছে, ফুলেও আছে খানিকটা, সারা মুখে বিন্দু বিন্দু পানি বোঝাই যাচ্ছে অনেক কেদেছে তারপর মুখে পানি দিয়েছে, অরুমিতা এসে ওকে ধরে বলল
— ” কি হয়েছে তোর।”
অনিমা উত্তর না দিয়ে তীব্রর দিকে তাকিয়ে ঠান্ডা গলায় বলল
— “আমাকে একটু বাড়িতে ড্রপ করে দে প্লিজ।”
সবাই বুঝতে পারলো অনিমা এখন কারো কথার উত্তর দেবেনা তাই এখন না জিজ্ঞেস করাই ভালো পরে জেনে নেবে এখন আপাদত ওকে বাড়ি পৌছে দিক।
____________

কাজ করে এসে ল্যাপটপে ইন্টারনেটে নিউস পেপার পড়ছে রিক। সবে গ্লাসে পানি খেতে নিয়েছিলো কিন্তু একটা নিউস দেখে ওর মাথা হ্যাং হয়ে গেলো, হেডলাইনটা যতোটা না পোড়াচ্ছে, তার চেয়ে বেশি পোড়াচ্ছে ছবিটা। রাগে চোখ লাল হয়ে উঠেছে ওর, শরীর থরথর করে কাপছে। হাতের চাপে গ্লাসটাও ভেঙ্গে গেলো, মুহুর্তেই ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেলো ওর হাত, টপটপ করে রক্ত পরতে লাগল। রাগে গজগজ করতে করতে দাঁতে দাঁত চেপে বলল
— “কাজটা তুমি ঠিক করোনি সুইটহার্ট। খুব বড় ভূল করে ফেলেছো। খুব সাহস হয়ে গেছে তোমার তাইনা? ডানা গজিয়ে গেছে, আমাকে আর ভয় পাওনা? সাজতে শিখেছো, অন্য ছেলেটা জরিয়ে ধরেছো? বুক কাপলোনা তোমার? কোনো ব্যাপারনা এবার কাপবে। তোমার ঐ আশিক কে তো তোমার চোখের সামনে ওপরে পাঠাবো, তোমাকে তো তারপর পরে দেখবো। এই কাজের অনেক বড় দাম দিতে হবে তোমায় বেইবি এমন দাম যে তুমি সারাজীবণ কেদেও কূল পাবেনা। জাস্ট ওয়েট।”
বলেই পাগলের মতো হাসতে শুরু ওও হাসতে হাসতেই একপর্যায়ে রাগে রুম কাঁপিয়ে গর্জন করে উঠল। রাগে ল্যাপটপটা ফ্লোরে আছাড় মেরে ভেঙ্গে ফেললো। বদ্ধ এক উন্মাদ লাগছে ওকে।
_____________

গরম লোহার রড কেউ ওর জামার ওপর দিয়েই পিঠে চেপে ধরেছে এমন সপ্ন দেখেই চিৎকার করে উঠে বসল অনিমা, সারা শরীর ঘেমে একাকার হয়ে গেছে। অনেকদিন এই দুঃস্বপ্ন থেকে মুক্ত ছিলো ও কিন্তু আজ আবার দেখলো। থরথর করে কাপছে ওর শরীর বাইরে বৃষ্টিও হচ্ছে। মাথা এতোটাই ব্যাথা করছে যে সহ্য করতে না পেরে ওয়াসরুমে শাওয়ার ছেড়ে নিচে বসে পরল অনিমা, চিৎকার করে কাদতে ইচ্ছে করছে কিন্তু কান্না জেনো সব গলায় আটকে আছে। একটা বাথরোব পরে ওয়াসরুম থেকে বেড়িয়ে আয়নার সামনে গিয়ে দাড়ালো ও তারপর উল্টো ঘুরে বাথরোবটা সরিয়ে নিজের পিঠের দিকে তাকালো দাগগুলো এখোনো পুরোপুরি যায়নি আবছা রয়ে গেছে। কিছু ওর মামীর দেয়া কিছু রিকের। এই দাগগুলোই ওর ওপর হওয়া প্রতিটা অন্যায়ের সাক্ষি। আস্তে করে ড্রেসিং টেবিলের সাথে হেলান দিয়ে ফুপিয়ে কেদে উঠল ওও। কেনো এমন হয় ওর সাথে, ও তো ভূলতে চায় সব কেনো পারছেনা? কেনো ওর অতীত ওর পিছু ছাড়েনা? কেনো? আচ্ছা দুপুরে ওয়াসরুমে ও যা বলে গেলো সেটাই হবে না তো? নাহ ও পারবেনা সহ্য করতে এসব আর পারবেনা, ও চায়না ওই নরকে আবার ফিরে যেতে। ও বাঁচতে চায় জীবন্ত লাশ হয়ে বাচতে পারবেনা ওও। এসব ভাবতে ভাবতে ওর কান্নার বেগ বেড়ে গেলো।
____________
আসলে তখন ও ওয়াসরুম থেকে বেড়িয়ে বেসিনে মুখ ধুতে যাবে, হঠাৎ ওর কোমরে কেউ খুব বাজে ভাবে টাচ করলো। অনিমা রেগে পেছন ঘুরে থাপ্পড় মারতে গেলেই লোকটা ওর হাত ধরে ফেলল। লোকটাকে দেখে চরম অবাক হলো অনিমা, রাগে চোয়াল শক্ত হয়ে গেলো অনিমার, এই লোকটাকে ও পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি ঘৃণা করে। রিক কেও এতোটা ঘৃণা করেনা ও যতটা এই লোকটাকে করে। এখনও সেই একি বাজে দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে যেভাবে আগে দেখতো, কিন্তু ও এখানে কীকরে এলো? এসব ভেবে অনিমা অবাক হয়ে বলল
— “ভাইয়া?”
.
#চলবে…
.
( শেষের এই ক্যারেক্টার না নতুন কোনো ক্যারেক্টার না। এই ক্যারেক্টার সম্পর্কে পর্ব-৪ থেকেই বলা হয়েছে। আজকে এন্ট্রি দিলাম আরকি। যাই হোক
হ্যাপি রিডিং?)

বর্ষণের সেই রাতে ❤ পর্ব- ১৮

0

বর্ষণের সেই রাতে ❤
পর্ব- ১৮
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

.
অনিমার কাশি থামার নামই নিচ্ছেনা সেটা দেখে আদ্রিয়ান হাসতে হাসতে বলল
— ” আরে আরে এবার থামো, নাহলে পাবলিক তোমাকে যক্ষা রোগী ভাববে।”
আদ্রিয়ানের কথা শুনে অনিমার কাশি আটোম্যাটিক্যালি থেমে গেলো। কাশি থামিয়ে একদম চুপ করে নিচের দিকে তাকিয়ে নখ দেখতে লাগল। সত্যিই জীবণে ও কারো কাছে এতোটা লজ্জা পায়নি যতটা এই ছেলেটার কাছে পেয়েছে, ছেলেটা সবসময় ওকে এতো লজ্জায় কেনো ফেলে? কী শান্তি পায় এরকম করে? সেটাই বুঝতে পারেনা ও। আদ্রিয়ান বুঝতে পারলো যে অনিমা লজ্জা পাচ্ছে তাই মুচকি হেসে বলল
— ” থাক আর লজ্জা পেতে হবেনা। আসছো তো?”
অনিমা নিজেকে সামলে নিয়ে বলল
— ” হ্যা আসবো তো।”
— “আমায় একটু আগে যেতে হবে তাই আমি তোমাকে পিক করতে আসতে পারবোনা। আমি তীব্রকে এড্রেস মেসেজ করে দিয়েছি ও তোমার ফ্লাটের সামনে থেকে তোমাকে পিক করে নেবে। এনি প্রবলেম?”
— ” না চলবে।”
— ” তো বিকেলে দেখা হচ্ছে।”
— ” হুম।”
— ” ওকে বাই ”
— ” বাই”
ফোনটা রাখতেই মুখে মুচকি হাসি ফুটে উঠলো অনিমার। তারপর মনে পরলো তীব্রর আর স্নেহার ব্যাপারটা। নাহ এই দুটোর কিছু করতে, এদের মান অভিমানের পালা এবার শেষ হওয়া উচিত। ফোনবুকে অনেকক্ষণ খুজে স্নেহার নাম্বারটা পেলো, অনেকদিন কথা হয়না মেয়েটার সাথে।
হঠাৎ ফোন বেজে উঠতেই স্ক্রিণে তাকিয়ে অনি নামটা দেখেই স্নেহা ফোনটা তুলে জিবে কামড় দিলো, তীব্র কথা না বলায় মনটা এতোটাই খারাপ ছিলো যে মেয়েটার কথা ভূলেই গেছিলো ও। তাড়াতাড়ি ফোনটা রিসিভ করে বলল
— “হ্যালো এতোক্ষণে ফোন করলি?”
— “তুই কোনসা এসেই দশবার ফোন করে ফেলেছিস?”
অনিমার এই কথার কোনো উত্তর পেলো স্নেহা, হঠাৎ যে অনিমা এভাবে বলে ফেলবে ও ভাবেই নি। স্নেহাকে চুপ থাকতে দেখে অনিমা বলল
— ” তো মিস লাইলি, মজনুর সাথে মান অভিমান এখোনো শেষ হয়নি তাইনা?”
স্নেহা মন খারাপ করে বলল
— “তোর বন্ধুতো কথাই বললোনা আমার সাথে।”
এটা শুনে অনিমা হেসে বললো আরে
— ” নো চাপ আমি আছিতো, কেস পুরো সালটে দেবো।”
স্নেহা তো বড়সর ঝটকা খেলো অনি এভাবে কথা বলছে? তবুও নিজেকে সামলে বলল
— ” কী করবি?”
— শোন তুই আমার ফ্লাটে চলে আয় বিকেলে একটা জায়গায় যাবো।”
— ” কোথায়?”
— ” আয় তারপর সব বলছি।”
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন

বিকেলে অনিমা খাটে পা ঝুলিয়ে আর স্নেহা আসাম করে অনিমার ফ্লাটে বসে আছে। স্নেহা হা করে তাকিয়ে আছে অনিমার দিকে। অনিমা স্নেহাকে ওভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ভ্রু নাচালো, স্নেহা তাড়তাড়ি নিজেকে সামলে বলল
— ” এডি তোর সাথে এসব করেছে? আর ও তোর এতো ভালো বন্ধু হয়ে গেছে?”
অনিমা চোখ ছোট ছোট করে কোমরে হাত দিয়ে বলল
— ” আমি কোথায় তোদের লাইলি মাজনুকে কীকরে মেলাবো সেই টেনশনে আছি আর তুই এসব ফাউল চিন্তা করছিস।”
স্নেহা মাথাটা একটু চুলকে বলল
— ” আসলে অনেক বড় ফ্যান তো তাই।”
— ” চুপ কর তো ভাবতে দে, তুই কিন্তু যাচ্ছিস আমাদের সাথে।”
স্নেহা চিন্তিত মুখ করে বলল
— ” তীব্র যদি আমাকে দেখে যেতে না চায়?”
অনিমা এস ইউসয়াল দাত দিয়ে নখ কাটছিলো। স্নেহার কথা শুনে বিরক্তির দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল
— ” ঐ তোর মুখ দিয়ে কী ভালো কথা বের হয়না? বি পসিটিভ ইয়ার এমন কিচ্ছু হবেনা।”
সেন্হা আরো একবার অবাক হলো অনিমার পসিটিভিটি দেখে। ও তো এমন ছিলোনা? এমন পসিটিভ ভাবনা ওর মধ্যে কীকরে এলো? একটু পরেই তীব্র মেসেজ করলো যে ও এসে গেছে। অনিমা স্নেহার দিকে তাকিয়ে বলল
— “তোমার মজনু এসে গেছে। চলো।”
স্নেহা অসহায়ভাবে তাকালো অনিমার দিকে। অনিমা বুঝতে পেরে ওর হাত ধরে বলল
— ” আরে টেনশন নট চল।”
এরপর দুজনেই নিচে নেমে গেলো, তীব্র গাড়ির ড্রাইভিং সিটে বসে আছে আর ওদের দেখে অরুমিতা ফ্রন্ট সিট থেকে নেমে পেছনে চলে গেলো। অনিমার সাথে স্নেহাকে দেখেই তীব্রর ভ্রু কুচকে গেলো, বিরক্তিকর কন্ঠে বলল
— ” ও এখানে কী করছে?”
স্নেহা মাথা নিচু করে আছে, অনিমা তীব্রর দিকে তাকিয়ে মেকি হাসি দিয়ে বলল
— “ওও যাচ্ছে আমাদের সাথে।”
তীব্র কিছু বলবে তার আগেই অনিমা ওকে থামিয়ে দিয়ে বলল
— ” দেখ তোরা যদি ভেবে থাকিস যে দুজন মুখ গোমড়া করে দুদিকে মুখ ঘুরিয়ে বসে থাকবি, আর আমি ব্যাকগ্রাউন্ডে ‘জান নিসার’ গান বাজাবো দেন ইউ গাইস আর রং। এতো সময় নেই আমার হাতে চুপচাপ চল নইলে আমি একদম ভেতরে গিয়ে গিয়ে দরজা লক করে রাখব কিন্তু, সেটা ভালো হবে?”
তীব্র আর কিছু না বলে চুপচাপ বসে রইলো। অনিমা স্নেহাকে চোখ মেরে সামনের সিটে বসতে বলল, স্নেহা অবাক হয়ে এই অনিমার সাথে দেড় বছর আগের অনিমাকে মেলানোর চেষ্টায় আছে, মেয়েটা এতোটা বদলে গেলো? কোথায় সেই শান্ত নম্র মেয়েটা? অনিমা খোচা মারতেই স্নেহা সামনে গিয়ে বসল, তারপর অনিমা ব্যাক সিটে অরুমিতার পাশে বসে ওকে থামবস আপ দেখালো অরুমিতাও মুচকি হাসি দিলো। সারারাস্তা তীব্র স্নেহা দুজনেই চুপ করে ছিলো তবে আড়চোখে দেখেছে দুজন দজনকে।
গাড়িটা একটা রেস্টুরেন্টের সামনে থামতেই অনিমারা ভেতরে গিয়ে দেখে আদ্রিয়ান ওরা বসে আছে। ওদের দেখে রাইমা এগিয়ে এলো। অনিমা রাইমাকে টাইট একটা হাগ করে বলল
— ” কনগ্রাচুলেশনস আপু”
— ” থ্যাংক ইউ সোনা।”
এরপর সবাই একে একে আদিব আর রাইমাকে কনগ্রাচুলেট করলো। অনিমা স্নেহার সাথে আদ্রিয়ানের পরিচয় করিয়ে দিয়ে বলল
— ” ও স্নেহা আমার আরেক বুন্ধু।”
আদ্রিয়ান মুচকি হেসে বলল
— “হাই স্নেহা।”
স্নেহা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে, অনিমা স্নেহাকে খোচা মারতেই ওর হুস এলো ওর, হকচকিয়ে বলল
— ” হ্যালো স্যার আই এম ইউর বিগেস্ট ফ্যান। দেড় বছর বিদেশে বসেও আপনার গান শুনেছি। আপনাকে কখোনো সামনাসামনি দেখবো ভাবতেও পারিনি।”
আদ্রিয়ান হেসে দিয়ে বলল
—- ” আচ্ছা হয়েছে আগে একটু শ্বাস নিয়ে নাও।”
অনিমা চোখ গরম করে তাকালো স্নেহার দিকে স্নেহাও বুঝতে পারল যে এক্সাইটমেন্টে বেশিই বকে ফেলেছে। আদ্রিয়ান মুচকি হেসে বলল
— ” তুমি অনি, অরুমিতা আর তীব্রর ফ্রেন্ড, মানে আমাদেরও তাই স্যার না ডেকে আদ্রিয়ান বা আদ্রিয়ান ভাইয়া বলে ডেকো।”
স্নেহা হেসে মাথা নাড়লো। সবাই মিলে হৈচৈ করে খাওয়া দাওয়া করে, বাইরে যে যার মতো আলাদা আলদা কথা বলছে, এক জায়গাতেই তবে একটু দূরে দূরে। আদ্রিয়ান আর অনিমা একটা সিড়ির ওপর বসে কথা বলছে। কথার মাঝে অনিমা এক্সাইটেড হয়ে বলল
— ” আমিতো ভাবতেই পারছিনা রাইমা আপু মা হবে, একটা ছোট্ট বেবি আসবে, ছোট ছোট হাত পা নিয়ে খেলবে, খিলখিলিয়ে হাসবে। ওয়াও।”
অাদ্রিয়ান গালে হাত রেখে বলল
— ” এমনভাবে বলছো যেনো তোমার নিজেরই বেবি আসছে।”
অনিমা হেসে দিয়ে বলল
— ” আসলে তো খুব ভালো হতো কিন্তু বিয়েটাই তো হলোনা।”
আদ্রিয়ান এবার অনিমার দিকে তাকিয়ে হেসে দিয়ে বলল
— ” নিজেই বাচ্চা সে আবার বাচ্চার মা হবে।”
অনিমা মুখ ফুলিয়ে আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল
— “আমি বাচ্চা? আপনি জানেন ঠিক সময় বিয়ে হলে আমার এখন হাফ ডজন বাচ্চা থাকতো?”
আদ্রিয়ান অবাক হয়ে তাকালো অনিমার দিকে, এই মেয়ে নিজেই লাগাম ছাড়া কথা বলে পরে নিজেই পরে লজ্জায় কুকড়ে যায়, হলোও তাই একটু পরেই অনিমা ব্যাপরটা বুঝতে পেরে মাথা নিচু করে ফেলল। আদ্রিয়ান বিড়বিড় করে বলল
— “আগে বিয়েটা হোক তারপর দেখবো কয়বছরে হাফ ডজন দিতে পারো।”
অনিমা ভ্রু কুচকে বলল
— ” কিছু বললেন?”
আদ্রিয়ান একটা মেকি হাসি দিয়ে বলল
— ” নাহ। বাই দা ওয়ে এই তীব্র আর স্নেহা মধ্যে কী হয়েছে? দুজনেই মুখটা গোমড়া করে রেখেছে সেই এসে থেকে কেসটা কী?”
অনিমা তীব্র আর স্নেহার দিকে তাকিয়ে বলল
— ” কেস জন্ডিস।”
— ” মানে।”
— ” অনেক ঘটনা বলবো পরে একদিন।”
এদিকে স্নেহা অরু একসাথে বসে কথা বলছে। হঠাৎ স্নেহা অরুকে বলল
— ” এডি আর অনির মধ্যে কিছু চলছে?”
— ” চলছে তো অনেককিছুই কিন্তু ওদের দুজনে কেউ কাউকে সরাসরি কিছুই বলেনি।”
স্নেহা অনিমা আর আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল
— ” কিন্তু অনির এতো পরিবর্তন কীভাবে? মানে দেড় বছর আগেতো অনিমা ঠিকমতো হাসতোও না আর এখন?”
অরু হেসে বলল
— “এক ম্যাজিশিয়ান এসে ওর জীবণে ম্যাজিক করে দিয়েছে।”
স্নেহা বুঝতে না পেরে বলল
— ” মানে?”
— ” সবেতো এলি কদিন থাক বুঝতে পারবি।”
স্নেহা ভাবছে কে এই ম্যাজিশিয়ান? আর কী এমন ম্যাজিক করেছে? যে এতো ভীতু নরম মেয়েটা এতোটা চঞল আর দুষ্ট হয়ে গেলো?
____________

আজকে রাতেও অনিমা ল্যাপটপে রঞ্জিত চৌধুরীর এগেইনস্টে আরো সামন্য কিছু প্রুভ এড করে, যেই বিছানায় শুতে যাবে ঠিক তখনি টুং করে ওর ফোনে ম্যাসেজ টোন বেজে উঠল। হাতে নিয়ে দেখে আদ্রিয়ানের মেসেজ। মেসেজটা ওপেন করে দেখলো ওখানে লেখা আছে, “যেভাবে আছো ওভাবেই নিচে চলে এসো ফাস্ট। এন্ড ইয়েস কোনো প্রশ্ন করবে না।” অনিমা একটা ছোট্ট নিশ্বাস ফেলল এই ছেলের আবার কী হলো? অনিমা একটা এস কালার হাফ হাতা টিশার্ট আর ব্লাক জিন্স পরে আছে আছে তাও টাকনুর অনেক ওপরে ফোল্ড করা। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো এগারোটা বিশ। এতোরাতে নিচে যাবে? কী আর করার কথা না শুনলে যে ঘরে এসে তুলে নিয়ে যাবে সেটাতো সিউর। তাই শুধু ফোনটা হাতে নিয়ে ফ্লাটে তালা দিয়ে নিচে গেলো। কিন্তু নিচে কাউকে দেখতে না পেয়ে বেশ ঘাবড়ে গেলো। এদিক ওদিক তাকিয়ে আদ্রিয়ান ফোন করবে তার আগেই কেউ ওর মুখ চেপে ধরল পেছন থেকে, ও কিছু বুঝে ওঠার আগেই ওর চোখ বেধে দিলো। মুখ চেপে ধরে আছে তাই কিছু বলতেও পারছেনা। লোকটা অনিমা পেট জরিয়ে নিজের পিঠের সাথে ঠেকিয়ে বলল
— “হুসসস, ডোন্ট শাউট।”
অনিমা ওর ছটফটানি থামিয়ে দিলো, কারণ কন্ঠটা চিনতে ওর একটুও দেরী হয়নি, এটা আদ্রিয়ান। অনিমা বলল
— ” কী হচ্ছে চোখ বেধেছেন কেনো?”
আদ্রিয়ান অনিমার কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিসিয়ে বলল
— ” সারপ্রাইজ। আর একটা কথাও বলবেনা এখন আর বললেও এনসার দেবো না। সো কিপ কোয়াইট। ”
এটুকু বলেই অনিমার হাতও পেছনে নিয়ে বেধে অনিমাকে গাড়ির ফ্রন্ট সিটে বসিয়ে নিজে ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট দিলো। অনিমা কিছুই বুঝছেনা, এভাবে বেধে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে? রাস্তায় অনেকবার অনি জিজ্ঞেস করেছে কী করছে? কোথায় নিয়ে যাচ্ছে? কিন্তু কোনো জবাব দেয়নি আদ্রিয়ান। একটা অনাথ আশ্রমের সামনে গিয়ে গাড়ি থামলো। অাদ্রিয়ান ঘড়ির দিকে তাকিয়ে তারপর কাউকে ফোন করে বলল
— “সব রেডি?”
ওপাশ থেকে কেউ কিছু বললো তার উত্তরে আদ্রিয়ান ওকে বলে অনিমাকে নিয়ে ভেতরে গেলো। তারপর ঐ আশ্রমের মাঠের মাঝখানে দাড় করিয়ে। কাউন্ড করা শুরু করলো আদ্রিয়ান আর ওর সাথে তাল মিলিয়ে আশপাশ থেকেও কাউন্টিং এর শব্দ শুনতে পাচ্ছে অনিমা।
— ” টেন, নাইন, এইট, সেভেন, সিক্স, ফাইভ, ফোর, থ্রি, টু, ওয়ান।”
কাউন্ট করতে করতে হাতের বাধন খুলছিলো, আর ওয়ান বলার সাথে সাথেই আদ্রিয়ান অনিমার চোখের বাধনও খুলে দিলো। আর চেচিয়ে সবাই বলে উঠল
— ” হ্যাপি বার্থ ডে।”
অনিমা হা করে সামনে তাকিয়ে আছে, অনেকগুলো বাচ্চা লাইন ধরে দাড়িয়ে আছে তাদের সবার হাতে একটা করে ওয়ার্ড, মানে ওরা একেকেটা ইংলিশ ওয়ার্ড হাতে নিয়ে দাড়িয়ে হ্যাপি বার্থে বানিয়েছে। সবাই স্মাইল ইমুজি মুখোশ পরে আছে। আর আশেপাশে অনেকগুলো বাচ্চা বেলুন নিয়ে দাড়িয়ে আছে, আশ্রমের সঞ্চালকরাও দাড়িয়ে হাততালি দিচ্ছে। সারা মাঠ বেলুন আর মোমবাতি দিয়ে সাজানো। ওর আজ বার্থডে সেটাতো ওর মনেই ছিলোনা। কীকরে থাকবে? ছয় বছর যাবত তো সেলিব্রেটই হয়না ওর বার্থডে, লাস্ট ওর আব্বুই সেলিব্রেট করেছে ওর বার্থ ডে এরপর কেউ না। যদিও তীব্র অরু অনেকবার জানতে চেয়েছে কিন্তু বলেনি ও।
কিন্তু অনিমার আব্বুই তো ওকে এই আশ্রমে নিয়ে এসে প্রতিবার বার্থডে সেলিব্রেট করতো। অনিমা অবাক হয়ে আদ্রিয়ানের দিকে ঘুরে তাকালো, আদ্রিয়ান মুচকি হেসে একটা ফুল অনিমার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল
— ” হ্যাপি বার্থডে ম্যাডাম।”
ফুলটা নিয়ে অনিমা অবাক হয়েই তাকিয়ে আছে আদ্রিয়ানের দিকে, সব হুবহু একরকম করে সাজানো, ফুল,বেলুন,মাস্ক সব একরকম। আদ্রিয়ান এসব জানলো কীকরে? এমনিই মিলে গেলো? দুটো মানুষের এতো মিল কীকরে হয়? সবিই কী কাকতালীয় নাকি.. আর কিছু ভাবার আগেই অরু,তীব্র, স্নেহা, আদিব, রাইমা, আশিস সবাই বেড়িয়ে এলো সবাই ওকে উইস করলো। অরুমিতা বললো
— ” শয়তান মেয়ে এডিকে বলতে পারলি আমাদের বলতে পারলিনা তোর বার্থ ডে কবে?”
অনিমা অবাক হয়ে তাকালো আদ্রিয়ানের দিকে ও ভাবছে ও তো বলেনি আদ্রিয়ানকে ওর বার্থডে তাহলে? অনিমা আদ্রিয়ানের সামনে গিয়ে ওকে কিছু বলবে তার আগেই আদ্রিয়ান ওকে সামনের দিকে তাকাতে ইশারা করল, অনিমা সামনে তাকিয়ে একটা মহিলাকে দেখে অবাক হয়ে গেলো, মুখে হাসি আর চোখের কোণে পানি চলে এলো ওর, একমুহূর্ত না দাড়িয়ে ছুটে গিয়ে জরিয়ে ধরল ওনাকে। মহিলাটিও হেসে জরিয়ে ধরে বলল
— ” হ্যাপি বার্থডে মাই চাইল্ড।”
— ” কেমন আছো মাদার?”
— ” খুব ভালো তুমি কেমন আছো?”
অনিমা মাদারকে ছেড়ে দিয়ে বলল
— ” ভালো, খুব মিস করি তোমাকে।”
— ” হ্যা তাইতো দেড় বছরেও মনে পরলোনা এই বুড়িকে।”
— ” তুমিতো জানো মাদার আমি কেনো আসতাম না।”
— ” আই নো, নাউ ইনজয় ইউর ডে।”
এরপর আদ্রিয়ান বাচ্চাদের দিকে তাকিয়ে ইশারা করতে সব বাচ্চারা একে একে এসে অনিমাকে ফুল আর বেলুন দিয়ে উইস করল আর অনিমাও এক এক করে সব বাচ্চাদের চুমু দিয়ে ওদের থেকে ফুল আর বেলুনস নিলো। এর মধ্যেই সাংবাদিকরাও এসে গেছে কারণ তারা জানতে পেরেছে আদ্রিয়ান আবরার জুহায়ের কোনো মেয়ে জার্নালিস্টের বার্থডে সেলিব্রেট করছে। আদ্রিয়ান প্রথমে এদের দেখে অবাক হলেও পরে পাত্তা দেয়নি। জার্নালিস্টরা এসে আদ্রিয়ানকে আর অনিমাকে নানারকম প্রশ্ন করতে লাগল, আদ্রিয়ান কেনো অনিমার বার্থডে সেলিব্রেট করছে? ওদের মধ্যে কী সম্পর্ক? ব্লা ব্লা। আদ্রিয়ান অরুমিতাকে ইশারা করলো অনিমাকে নিয়ে যেতে, অরুমিতা নিয়ে গেলো ওকে। তারপর আদ্রিয়ান জার্নালিস্টদের বলল
— ” দেখুন এখন এখানে একজনের বার্থডে সেলিব্রেট হচ্ছে আগে সেটা করি তারপর আপনাদের সব প্রশ্নের উত্তর দেবো। এক্সকিউস মি।”
বলে আদ্রিয়ান ওখান থেকে সরে অনিমা নিয়ে কেকে এর কাছে গেলো। অনিমা কেক কাটলো, প্রথম বাইট মাদারকে দিতে গেলে মাদার আদ্রিয়ানকে বলল অনিমা তাই করল , চারপাশে একবার তাকিয়ে অনিমা নিঃশব্দে কেদে দিলো। ওর আব্বু চলে যাওয়ার পর কেউ এভাবে ওর জন্মদিন সেলিব্রেট করেনি, খুব মিস করছে ওর আব্বুকে ও। অনিমাকে কাদতে দেখে আদ্রইয়ান এসে ওকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে ওর চোখ মুছে দিলো আর অনিমা নিজেকে আটকাতে না পেরে জরিয়ে ধরল আদ্রিয়ানকে। জার্নালিস্ট রাও প্রতি মুহূর্তের ছবি তুলে নিউস বানিয়ে যাচ্ছে।
স্নেহা এবার বুঝতে পারছে অনিমার বদলে যাওয়ার রহস্য, ও হেসে অরুমিতাকে বলল
— ” তুই ঠিকি বলেছিলি অনিমার জীবণে সত্যিই একজন ম্যাজিশিয়ান এসছে। উনি সত্যিই ম্যাজিক জানে।”
অরুমিতা শুধু মুচকি হাসলো। তীব্র, স্নেহা, অরু, আশিস,আদিব,রাইমা সবাই খুব খুশি কারণ ওদের সবার প্রাণ অনিমা আজ খুব খুশি, আদ্রিয়ানের কথা বিশেষ করে আর বলার দরকার নেই।
অনিমা বাচ্চাদের সাথে দুষ্টুমি করে খেলছে, বেলুন মাস্ক নিয়ে মজা করছে আর আদ্রিয়ান হাত ভাজ করে সেই দৃশ্য দেখছে এক অদ্ভুত শান্তি পাচ্ছে ও অনিমাকে এতো খুশি দেখে। হঠাৎ মাদার এসে আদ্রিয়ানের কাধে হাত রাখল, আদ্রিয়ান ঘুরে তাকাতেই বলল
— “গড ব্লেস ইউ মাই চাইল্ড। তুমি জানোনা তুমি কী করেছো। একসময় ওকে দেখে আমিতো ভেবেছিলাম এই মেয়টার জীবণ থেকে সব হাসি হারিয়ে গেছে, সেই দুষ্টুমিষ্টি হাসিখুশি মেয়েটা হারিয়ে গেছে, হয়তো কোনোদিন সেই অনিমাকে ফিরে পাবোনা। বাট আই ওয়াস রং। তুমি পেরেছো ওকে আগের মতো করতে, ওর অন্ধকার জীবণের আলো হতে, ওর রংহীন জীবণের রং হতে, একটা কথাই বলবো, এভাবেই সবসময় আগলে রেখো ওকে, এই অল্প বয়সেই জীবণে চরম সত্যিগুলোর মুখোমুখি হয়েছে ও, অনেক কষ্ট পেয়েছে, অনেক কেদেছে। ওকে আর কষ্ট পেতে দিওনা, সব কষ্ট থেকে দূরে সরিয়ে রেখো, আই নো তুমি পারবে ।”
আদ্রিয়ান মুচকি হাসলো, তারপর অনিমার দিকে তাকিয়ে ভাবলো পারতেতো আমাকে হবেই মাদার, আই এম কমিটেড টু সামওয়ান, কীকরে ভূলবো সেই ওয়াদা? আর এখন তো আমি ওকে ভালোবাসি নিজের সবটা দিয়ে ভালোবাসি।
হঠাৎই জার্নালিস্টরা বলে উঠল
— “স্যার কোনো সেলিব্রেশন হচ্ছে আর আপনার একটা গান হবেনা সেটা হয়? আমরা সবাই আপনার গান শুনতে চাই আর সেটা বার্থডে গালকে ডেডিকেট করে।”
আদ্রিয়ান একটু অবাক হয়ে বলল
— ” বাট..”
— ” প্লিজ স্যার।”
আদিব,আশিস, অরু,তীব্র সবাই সায় দিলো। আদ্রিয়ান অনিমার দিকে তাকিয়ে দেখলো অনিমাও তাকিয়ে আছে ওর দিকে। সবার অনেক জোরাজুরিতে আদ্রিয়ান বলল
— ” ওকে ফাইন আশিস গিটারটা নিয়ে আয় তো গাড়ি থেকে।”
সবাই হাতেতালি দিলো ও রাজী হওয়ায়। আশিস গিটার এনে দিলো আদ্রিয়ানের হাতে। অনিমা এখোনো তাকিয়ে আছে আদ্রিয়ানের দিকে আর ভাবছে কী গান গাইবে আদ্রিয়ান? যেটা শুধুই ওর জন্যে? কিছুক্ষণ গিটারে টোন বাজিয়ে আদ্রিয়ান অনিমার দিকে তাকিয়ে গাইতে শুরু করল
.
তুমতো দারয়াসাল খাবোকী বাত হোওও
চালতি মেরে খেয়ালো মে তুম সাথ সাথ হোও
মিলতি হ্যা জো আচানাক ও সোয়াগাত হো
তুমতো দারয়াসাল মিঠি সি পিয়াস হোওও
লাগতা হ্যা ইয়ে হামেসা কী তুম আসপাস হোও
ঠ্যাহরা হ্যা যো লাবো পে ও এহসাস হো
তেরে আদা আদা সে মারতি ম্যা
ওয়াফা ওয়াফা সি কারতি কিউ
হাদোসে হু, গুজারতা ম্যা
জারা জারা জারা
তুমতো ডারয়াসাল সাসোকি সাজ হোওও
দিলমে মেরে ছুপা যো ওহি রায রায হোও
কাল ভি মেরা তুমহি হো মেরা আজ হো
কালভি মেরা তুমহি হো মেরা আজ হো
.
বারিশ কা পানি হো তুম, কাগজ কি কাসতি হু ম্যা
তুঝম্যা কাহি ম্যা বেহ যাতা হু
হোওওও মিলনে হু তুমসে আতা, ওয়াপাস নেহি যা পাতা
থোরা ওহি ম্যা রেহ যাতা হুউউ
তুমতো দারয়াসাল এক ন্যায়া নূর হোওও
মুঝমে ভি হো জারা সি জারা দূর দূর হোও
যেইসি ভি হো হামেশা হি মানজুর হো
যেইসি ভি হামেশা হি মানজুর হো
.
হোতা হ্যা এইসা আকসার, ডিল ইয়ে কিসিকো দে কার
লাগতা হাসি সারা শেহের।
হোওওও আব দেখ তেরা হো কার, কেয়া আসার হ্যা মুঝ পার
হাসতা রাহু আটো পেহের
হোওও তুম তো দারয়াসা ইস্ক হো পেয়ার হোওও
আতি মেরি ফাসানো মে তুম বার বার হোও
ইনকার মে যো ছুপি হ্যা ও ইকরার হো
ইনকার মে যো ছুপি হ্যা ও ইকরার হো
ইনকার মে যো ছুপি হ্যা ও ইকরার হো
.
সকলেই হাততালি দিয়ে উঠলো, পুরোটা গান আদ্রিয়ান অনিমার দিকে তাকিয়ে ওর আশপাশ দিয়ে হেটেই গেয়েছে, যেনো এই গানের প্রত্যেকটা ওয়ার্ড ওর জন্যে ছিলো। আর অনিমা মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আদ্রিয়ানের দিকে, সামনাসামনি এই প্রথম আদ্রিয়ানের গান শুনলো ও। আচ্ছা সত্যিই এই গানটা আদ্রিয়ান ওর জন্যে গেয়েছে? এই কথাগুলো অনিমার প্রতি সত্যিই ফিল করে আদ্রিয়ান? সেটা যদি না হয় তাহলে এই গানটাই কেনো গাইলো।
.
#চলবে…

বর্ষণের সেই রাতে ❤ পর্ব- ১৭

0

বর্ষণের সেই রাতে ❤
পর্ব- ১৭
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

.
অনিমাকে চুপ থাকতে দেখে আদ্রিয়ান আবার জিজ্ঞেস করল
— “বিলটা দেবো ম্যাডাম?”
অনিমা অসহায়ভাবে আদ্রিয়ানের দিকে তাকালো তারপর মাথা নেড়ে হ্যা বলল। অনিমা হ্যা বলার সাথে সাথেই আদ্রিয়ান বিলটা পে করে দিলো। আদিব বলল
— ” অনেক্ষণ তো হলো এবার আমাদের যাওয়া উচিত।”
তীব্র ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল
— ” ইয়াহ যেতে হবে এখন। অরু তুই আমার সাথে যাবিতো?”
অরুমিতা তীব্রর দিকে তাকিয়ে বলল
— ” হ্যা বাড়িতেই যাবো ড্রপ করে দিস।”
আদিব আদ্রিয়ানকে উদ্দেশ্য করে বলল
— ” তুই তো অনিমাকে ড্রপ করে তারপর বাড়ি যাবি তাইনা?”
আদ্রিয়ান ফোন দেখছিলো আদিবের কথা শুনে মাথা তুলে অনিমার দিকে তাকিয়ে বলল
— “ম্যাডাম আপনি যাবেন আমার সাথে?”
অনিমা মুখ ফুলিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে হাত কচলে যাচ্ছে। খুব রাগ হচ্ছে এখন ওর, এরকম করার কী আছে? ও তো মজা করে বলেছে ওসব। অনিমাকে চুপ থাকতে দেখে আদ্রিয়ান আদিবকে বলল
— “ম্যাডাম আমার সাথে যাবেনা বোধ হয়, দেখছিস না চুপ করে আছে। তীব্র তুমিই ওনাকে ড্রপ করে দাও। শত হলেও ওনার অনুমতি ছাড়াতো আমি কিছুই করতে পারবোনা তাইনা?”
ওরা সবাই একবার আদ্রিয়ানকে দেখছে একবার অনিমাকে। অনিমা মুখ কাচুমাচু করে বলল
— ” আমি কখন বললাম যে আপনার সাথে যাবোনা?”
আদ্রিয়ান কিছু না বলে উঠে দাড়িয়ে হনহনিয়ে হেটে বাইরে চলে গেলো। অনিমা বোকার মতো তাকিয়ে রইলো ওর যাওয়ার। অরুমিতা ইশারা করতেই অনিমাও ব্যাগ কাধে নিয়ে দৌড় লাগালো আদ্রিয়ানের পেছনে। পার্কিং এরিয়ায় গিয়ে দেখে আদ্রিয়ান সবে গাড়িতে উঠছে, ও তাড়াতাড়ি দৌড়ে গাড়ির ফ্রন্ট সিটে বসে পরল। আদ্রিয়ান অনিমার দিকে একবার ভ্রু কুচকে তাকিয়ে তারপর সামনে তাকিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিলো। সারারাস্তা একটাও কথা বলেনি আদ্রিয়ান আর অনিমা শুধু আড় চোখে দেখেছে ওকে। অনিমার ফ্লাটের বিল্ডিং এর সামনে গাড়ি থামতেই অনিমা নামতে গিয়ে আদ্রিয়ানের দিকে তাকালো। প্রতিদিন কতো কিউট করে করে বাই বলে আর আজ কেমন গোমরা মুখ করে বসে আছে, অনিমা এবার আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে নিচু কন্ঠে বলল
— ” আই এম সরি, দুষ্টুমি করে হলেও আমার ওসব বলা উচিত হয়নি।”
আদ্রিয়ান চুপ করে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে, মুখে একরাশ গাম্ভীর্যতা। সেটা দেখে অনিমা কাদোকাদো মুখ করে বলল
— ” সরি তো, ভূল হয়ে গেছে আর করবোনা প্রমিস।”
আদ্রিয়ান এবার অনিমার দিকে তাকালো তারপর গম্ভীর কন্ঠে বলল
— “তাহলে মানছো যে ভূল করেছো?”
অনিমা মাথা নিচু করে বলল
— ” হুম।”
আদ্রিয়ান হালকা হাসলো কিন্তু সেটা অনিমার দৃষ্টির আড়ালে। হাসি থামিয়ে গম্ভীর মুখেই বলল
— ” সো ইউ ডিসার্ব আ পানিশমেন্ট রাইট?”
অনিমা অসহায় ভাবে আদ্রিয়ানের দিকে তাকালো তারপর আবারো মাথা নিচু করে ফেলল। আদ্রিয়ানের এখন হাসি চেপে রাখাটা কষ্টকর হয়ে দাড়িয়েছে, তবুও মুখটা যথেষ্ট সিরিয়াস রেখে বলল
— ” আন্সার মি।”
অনিমা নিচু কন্ঠে জবাব দিলো
— ” হুম। বাট সরি বলেছি তো”
— ” আমি সরি শব্দটায় বিশ্বাসী নই। ইউ নো যেকোনো ভূলকে শুধরানোর বেস্ট স্টার্টিং হচ্ছে পানিশমেন্ট। ভুলের জন্যে যদি উপযুক্ত পানিশমেন্ট দেওয়া হয় তাহলে এইট্টি পার্সেন্ট লোক সেই ভুল আর করেনা। সো ইউ শুড বি পানিশড।”
অনিমা ভাবছে লোকটা এমন অদ্ভুত কেনো? এমন একটা সিচিউশনেও কী চমৎকার একটা জ্ঞানের কথা বলে দিলো। আদ্রিয়ান গম্ভীর মুখে বলল
— ” শুডেন্ট ইউ?”
অনিমা করুন চোখে আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে আবারো চোখ নামিয়ে নিয়ে বলল
— ” হুম।”
আদ্রিয়ান এবার অনিমার দিকে ঝুকে স্লো ভয়েজে বলল
— ” আর ইউ রেডি ফর ইউর পানিসমেন্ট?”
অনিমা কাদোকাদো মুখ করে নিচের দিকে তাকিয়ে আর ভাবছে যে কী পানিসমেন্ট দেবে? মারবে না তো? অনিমার এই ভীতু মুখ দেখে আদ্রিয়ানের এবার একটা ঘোরের মধ্যে চলে যাচ্ছে, এক অদ্ভুত নেশা যেই নেশা থেকে বেড়োনো সম্ভব না। ও আলতো করে অনিমার কোমর ধরে কাছে টেনে নিলো। অনিমা চমকে তাকালো আদ্রিয়ানের দিকে, হঠাৎ এইরকম কিছুর জন্যে প্রস্তুত ছিলোনা ও, ওর মনে হচ্ছে পুরো শরীর যেনো জমে গেছে, কিছু বলার শক্তি নেই, শুধু চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে আদ্রিয়ানের দিকে, ওর হাত দুটো আদ্রিয়ানের বুকের ওপর। আদ্রিয়ান এক হাত দিয়ে অনিমার কোমর জরিয়ে ধরে আছে, ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অনিমার দিকে, আর অনিমা নিজেও সেই দৃষ্টিতে নিজেকে হারিয়ে ফেলছে নিজেকে। আদ্রিয়ান আরেক হাত দিয়ে আলতো হাতে অনিমার বাম গালে পরে থাকা চুলগুলো সরিয়ে দিলো। অনিমা সাথে সাথেই চোখ বন্ধ করে ফেলল, ও নিজেও জানেনা ও এটা কেনো করলো কিন্তু চোখ খোলা রাখার মতো শক্তি ওর ছিলোনা, ওর মনে হচ্ছে ওর সব শক্তি কেউ শুষে নিয়ে গেছে। অনিমাকে এভাবে চোখ বন্ধ রাখতে দেখে আদ্রিয়ান যেনো আরো ঘোরের মধ্যে চলে যাচ্ছে, নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলছে, ও অনিমার দিকে ঝুকে ওর বাম গালে বেশ সময় নিয়ে খুবই সফ্টলি একটা কিস করল। অনিমার অবস্হা পুরো ‘জোর কা ঝাটকা ধীরেসে লাগা’ এর মতো হয়েছে, মুহূর্তেই কয়েকটা হার্ডবিট মিস করলো ও, ঠিক তার পরেই তীব্র গতীতে বিট করতে লাগল। আদ্রিয়ানের নিশ্বাস ওর মুখের ওপর পরতেই ও পিটপিট করে চোখ খুললো, একদৃষ্টিতে আছে আদ্রিয়ানের দিকে ওর মানে একটা কথাই চলছে ‘ এটা কী ছিলো?’ আদ্রিয়ান হয়তো অনিমার মনের কথা পড়তে জানে তাই মুচকি হেসে অনিমার কপালে কপাল ঠেকিয়ে বলল
— ” এটা তোমার পানিশমেন্ট ছিলো।”
অনিমা আর কী বলবে? ওর তো জান যায় যায় অবস্হা, এই অনুভূতির সাথে পরিচিত নয় ও, আদ্রিয়ান অনিমা ছাড়তেই অনিমা গাড়ির দরজা খুলে বেড়িয়ে ছুটে ভেতরে চলে গেলো একবারো পেছন ফিরে তাকায়নি। আদ্রিয়ান অনিমার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে হাসতে লাগল। ও নিজেও জানেনা ও কী করেছে আর কেনো করেছে, ও তো শুধু ভয় দেখাতে চেয়েছিলো অনিমাকে কিন্তু পরে কী হলো নিজেই বুঝতে পারলোনা, অনিমাকে এতো কাছে টেনে আর কিছু মাথায় ছিলোনা ওর। তবে অনিমার ওই লজ্জামাখা মুখটা দেখতে বেশ লাগছিলো ওর, নিজেকে সামলাতেই পারছিলোনা এসব ভেবে মুচকি হেসে নিজের মাথা চুলকে গাড়ি স্টার্ট করে চলে গেলো
আর ওদিকে ফ্লাটে ঢুকেই দরজা বন্ধ করে দরজার সাথে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে অনিমা। ওর কাছে সবটা এখোনো কেমন সপ্ন মনে হচ্ছে, কিছুক্ষণ জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে আয়নার সামনে গিয়ে দাড়ালো। ওর হাত অটোমেটিক্যালি ওর গালে চলে গেলো? আয়নায় নিজের প্রতিবিম্বের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলল
— “হি কিসড মি? সিরিয়াসলি? বাট হাউ এন্ড হোয়াই?”
এসব বলে নিজেই চমকে গেলো আচ্ছা ওর তো এখন রাগ হওয়ার কথা কিন্তু ওর তো একটুও রাগ লাগছেনা, বরং অন্যরকম এক অনুভূতি হচ্ছে, বুকের ভেতরের ধুকপুকানী থামার নামই নিচ্ছে না, সারা শরীর কাপছে, এই অনুভূতির নাম কী?
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন

— “ভালোবাসা।”
— “হোয়াট?”
আশিসের কথা শুনে অবাকের শেষ পর্যায়ে পৌছে গেছে অরুমিতা, এই ছেলে কী সত্যিই পাগল? কী সব বলছে? আশিস মুচকি হেসে বলল
— ” ঠিকি তো বললাম। দেখো তোমার সাথে রোজ ফোনে কথা না বললে আমার ভালোলাগেনা, জানি একটু বিরক্ত হও আমার সেটাই ভালোলাগে, কিছু কিছু মানুষকে জ্বালিয়েও শান্তি পাওয়া যায়, এরওপর মনে হয় তোমার ঐ সুইট কন্ঠের কথা শুনে আজীবণ কাটিয়ে দেওয়া যাবে। এই সব অনুভূতির নাম কী ভালোবাসা না?”
আশিসের কথা শুনে মুচকি হাসলো অরুমিতা পরোক্ষণেই মুখটা সিরিয়াস করে বলল
— ” যা খুশি হোক সেটা আপনার ব্যাপার। আই জাস্ট ডোন্ট কেয়ার।”
আশিস হেসে দিয়ে বলল
— ” তুমি নিজেও খুব ভালো করে জানো ইউ ডু।”
অরুমিতা ভ্রু কুচকে বলল
— ” আপনি কী এসব আউল ফাউল কথা বলতে ফোন করেছেন?”
— ” আউল ফাউল না কিউটি। আচ্ছা তুমিই বলো আমাকে অন্য মেয়েদের সাথে কথা বলতে দেখলে, আমি সাথে কোনো মেয়ে নিয়ে আসলে তুমি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থাকো। দ্যাট নট মিনস তুমি জেলাস ফিল করো?”
অরুমিতা হকচকিয়ে গিয়ে বলল
— ক্ কই নাতো? আমি কেনো জেলাস ফিল করবো?”
আশিস মুচকি হেসে বলল
— ” তাহলে ওভাবে তাকিয়ে থাকো কেনো?”
— ” ভাবি যে একটা ছেলে কতোটা মেয়েবাজ হতে পারে।”
— ” আমি যাই হই তাতে তোমার কী? ইউ ডোন্ট কেয়ার রাইট?”
অরুমিতা বিরক্ত হয়ে বলল
— ” উফফ আপনার সাথে কথা বলাই বেকার। রাখছি আমি।”
— ” আরে শোনোতো…”
আর কিছু বলার আগেই ফোন কেটে দিলো অরুমিতা, আশিস হেসে দিলো, কেনো এই মেয়েটাকে ওর বাকি গার্লফ্রেন্ডদের নজরে দেখতে পারেনা ও? ওর প্রতি এখোনো খুব একটা সিরিয়াস না হলেও মেয়েটা ওর কাছে একটু বেশিই স্পেশাল। নাহ এখন একটু টাইমপাস করা দরকার এরপর কললিস্টে সবার আগে যেই গার্লফ্রেন্ডের নাম এলো তাকেই ফোন করে সে তার রিগুলার কাজে ব্যাস্ত হয়ে গেলো।
আর ওদিকে অরুমিতা মুচকি হাসলো ফোনের দিকে তাকিয়ে, ধীরে ধীরে কেমন যেনো উইক হয়ে পরছে এই আশিসের প্রতি, ফোন করলে বিরক্ত হয় আবার ফোন না করলেও ভালোলাগেনা। কিছু কিছু অনুভূতি অদ্ভুত একটু বেশিই অদ্ভুত।
___________

প্লেনে বসে আছে রিক। একটু পরেই প্লেন টেক অফ করবে। মেজাজ অত্যন্ত খারাপ হয়ে আছে ওর, এই সময়ই কাজ পরতে হলো? আজ যদি কলকাতা যেতে না হতো তাহলে অনিমা এখন ওর কাছে থাকতো। কিন্তু এই কাজের চক্করে আরো কয়েকটা দিন অপেক্ষা করতে হবে ওকে অসহ্য। কেনো যে ওর বাবা ওকে ওনার পলিটিকস এর সব জায়গায় জরায় কে জানে? উনি কেনো বোঝেন না তে ওর ভালোলাগেনা এসব। একটু পরেই প্লেন টেক অফ করলো আর রিক চলে গেলো কলকাতার উদ্দেশ্যে।
____________
অনিমা তীব্রকে সেই কখন থেকে ফোন করে যাচ্ছে কিন্তু ধরছেনা। এবার বিরক্ত হয়ে ও অরুমিতাকে ফোন করল। অরুমিতা ফোন রিসিভ করতেই অনিমা বলল
— ” তীব্রর কী হয়েছে বলতো ফোন ধরছে না?”
অরুমিতা নখ দেখতে দেখতে বলল
— ” ওর লাইলি এসছে আজ দেশে। ”
— ” হোয়াট? স্নেহা এসে গেছে।”
— ” হুমম এইজন্যেই তো মিস্টার মজনু থম মেরে আছে?”
অনিমা মুচকি হেসে বলল
— ” এখোনো রেগে আছে মেয়েটার ওপর?”
— “হ্যা ইয়ার, বেচারি গেছিলো তীব্রর কাছে কথাই বলেনি।”
অনিমা বিরক্ত হয়ে বলল
— ” ওই ডাফারকে ইচ্ছে করে এমাজনে ছেড়ে দিয়ে আসি এতো রাগের কী আছে।”
— “হুম এবার তুইই ভরসা।”
— ” হ্যা দেখছি।”
ফোন রেখে খাটে হেলান দিয়ে গালে হাত দিয়ে বসে আছে অনিমা, কালকের কথাটা মাথা থেকে ঝারতেই পারছেনা ও, বারবার আদ্রিয়ানের ওকে কিস করার দৃশ্যটা চোখের সামনে ভেসে উঠছে। আর ততোবারি লজ্জায় কুকড়ে যাচ্ছে ও, ভাগ্যিস আদ্রিয়ান কালকে আর ফোন করেনি তাহলে ও কথাই বলতে পারতোনা লজ্জায়, হয়তো আদ্রিয়ান ও ওর অবস্হাটা বুঝতে পেরেছে তাই কাল ফোন করেনি, হঠাৎ করেই অনিমার ফোনটা বেজে উঠলো স্ক্রিণে আদ্রিয়ানের নাম দেখেই ওর কেমন জেনো লাগতে শুরু করলো তবুও নিজেকে সামলে রিসিভ করে বলল
— ” হ্যালো।”
— ” কালকে থেকে একটা ফোনও করলেনা, কেনো?
অনিমা বিছানার চাদরে নখ ঘসতে ঘসতে বলল
— ” না আসলে..”
আদ্রিয়ান বুঝতে পারলো কালকের ব্যাপারটা ও এখোনো নরমালি নিতে পারেনি, পারার কথাও না ও তো আর জানেনা আদ্রিয়ানের মনের কথা, তাই ওকে নরমাল করতে আদ্রিয়ান হেসে বলল
— ” আচ্ছা এসব বাদ দাও আজ বিকেলে আদিব আমাদের সবাইকে ট্রিট দিচ্ছে, সো আসছো তো?”
অনিমা একটু অবাক হয়ে বলল
— ” ট্রিট? কিন্তু কেনো?”
— ” আদিবা বাবা হতে চলেছে।”
অনিমা যেনো আকাশ থেকে পরলো, ও অবাক হয়ে বলল
— ” কীহ? রাইমা আপু প্রেগনেন্ট?”
— ” ইয়াহ।”
অনিমা দাত দিয়ে নখ কাটতে কাটতে বলল
— ” এতো তাড়তাড়ি ওনাদের বিয়ের তো তিন মাস হলো তাইনা?
এটুকু বলেই জিবে কামড় দিলো অনিমা, ও সত্যিই একটা ডাফার। কার কাছে কী বললো ও? মিনিমাম কমনসেন্স নেই? দূর, লজ্জায় চুপ করে রইলো ও। অনিমার কথা শুনে আদ্রিয়ানও কিছুক্ষণ প্রথমে থ হয়ে রইলো, এই মেয়েযে কতোটা বাচ্চা তার প্রমাণ মিনিটে মিনিটে দিয়ে দেয়, এই মেয়েকে সামলাতে ওকে যে অনেক কাঠখর পোড়াতে হবে সেটা বেশ বুঝতে পারছে ও, পরক্ষণেই অনিমাকে অসস্তিতে ফেলতে দুষ্টু হেসে বলল
— ” তো ম্যাডাম আপনি বিয়ের কতোদিন পর বেবি চান?”
এটা শোনার সাথে সাথে অনিমার কাশি উঠে গেলো, সে কী কাশি, কাশতে কাশতে যেনো এক্ষুনি যক্ষা রোগীর সার্টিফিকেট হাতিয়ে নেবে। আর আদ্রিয়ান অনিমার এই অবস্হাতে আর নিজের হাসি আটকে রাখতে পারলো শব্দ করে হেসে দিলো।
.
#চলবে…

বর্ষণের সেই রাতে ❤ পর্ব: ১৬

0

বর্ষণের সেই রাতে ❤
পর্ব: ১৬
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

.
—- “এবার কোথায় পালাবে বেবি? তোমার হাইড এন্ড সিক খেলার সময় এবার শেষ। এবার এই রিক চৌধুরী তোমাকে বোঝাবে সে কতোটা ভয়ংকর। তোমার এমন হাল করবো যে রিক চৌধুরীর খাচা থেকে পালানোর চিন্তা করলেও তুমি কেপে উঠবে। বি রেডি সুইটহার্ট। আমি আসছি।”
___________

প্রায় দুইঘন্টা যাবত ল্যাপটপে মুখ গুজে বসে আছে অনিমা মাথাটা গরম হয়ে আসছে ওর। আরো কিছুক্ষণ ঘাটাঘাটি করে ঠাস করে ল্যাপটপটা বন্ধ করে প্রায় আছাড় মেরে রাখল খাটের ওপর, তারপর মাথাটা চেপে ধরল দুই হাত দিয়ে। মাথা ছিড়ে যাচ্ছে ওর, কিছুতেই কিছু মেলাতে পারছেনা। কিকরে কী করবে ও? প্রায় দেড় বছরের জার্নালিসম্ এ ও কতো মানুষকে ন্যায় দিয়েছে, নিজের প্রাণের ঝুকি নিয়ে সমাজের কতো কিটকে এক্সপোস করেছে অথচ নিজের বাবার খুনিকে এক্সপোস করতে পারছেনা ও? নিজের বাবাকে ন্যায় দিতে পারছেনা? সন্তান হিসেবে এর চেয়ে লজ্জার কী হতে পারে? সোজা হয়ে বসে নিজের নাকের পাশের ঘামটা মুছে কিচেনে চলে গেলো অনিমা। এইমুহূর্তে এক কাপ কফি খুব দরকার ওর। কফি করে নিয়ে ব্যালকনিতে গিয়ে রাতের মেঘাচ্ছন্ন স্তব্ধ আকাশের দিকে তাকিয়ে কফির মগে চুমুক দিতে দিতে ভাবছে ওর এই ব্যার্থতার কারণ কী? ওর ভয়? রিকের প্রতি ওর ভয়ই কী ওর সবচেয়ে বড় জড়তা? কিন্তু কী করবে ও? ও তো চেয়েও এই ভয় কাটিয়ে উঠতে পারছেনা। ওই লোকটার মুখটা মনে পরলেই ভয়ে শিউরে ওঠে ওর শরীর। হাত দিয়ে রেলিং এ একটা বাড়ি দিয়ে বলল
—- ” আব্বুকে খুব ভালো করে চিনি আমি, উনি এতো কাঁচা কাজ করবেন না। কিছুতো রেখে গেছেন উনি? কোনো ক্লু অবশ্যই থাকবে যেটা আমাকে সাহায্য করবে ঐ রঞ্জিত চৌধুরীর মুখস খুলতে, আমার আব্বু সুইসাইভ করেননি ওনাকে খুন করা হয়েছে সেটা প্রমাণ করতে, কিছু তো থাকবেই। কিন্তু সেটা কী? কোথায় পাবো? কোথায়?”
____________

মিস্টার রঞ্জিত গাড়িতে বসে ফোন টিপতে টিপতে ফ্রন্ট সিটে বসা কবির শেখ কে উদ্দেশ্য করে বললেন
—- ” কিছু বলেছে রিক? মেয়েটার খোজ পেয়েছে?”
কবির শেখ পেছনে ঘুরে বললেন
—- “বাড়ি ফেরেনিতো এখোনো বাড়ি ফিরলে জিজ্ঞেস করতে হবে।”
—- ” ওকে তো কালকেই কলকাতা যেতে হবে।”
কবির শেখ ভ্রু কুচকে বললেন
—- ” কেনো? কলকাতা কেনো?”
—- ” কাজ আছে, সামনে ইলেকশন অথচ কোনো হেলদোল নেই ছেলেটার। এমন করলে জিতবে কীকরে?”
কবির শেখ মনে মনে ভাবলেন, জিততে তো হবে জিজা জ্বি, নইলে আমার এতো কষ্টে সাজানো খেলাটা বিগরে যাবে যে। এসব ভাবনা থেকে বেড়িয়ে বললেন
—- ” কিন্তু মেয়েটাকে খোজার এতো তাড়া কীসের আপনার?”
মিস্টার রঞ্জিত ফোন থেকে চোখ উঠিয়ে বললেন
—- ” তাড়া আছে। আগেও বলেছি ওই মেয়েকে যতোটা ভীতু আর বোকা ভাবো তার এক অংশও ও না। রিক কে ভয় পেলেও আর কিচ্ছুকে ভয় পায়না ও। আর ও ওর বাবার অসম্পূর্ণ কাজ সম্পূর্ণ করার প্রাণপণ চেষ্টা করছে তাও সবার আড়ালে।”
কবির শেখ হেসে বললেন
—- ” বাবাই আছেতো ও সামলে নেবে ঐ মেয়েকে।”
মিস্টার রঞ্জিত চিন্তিত কন্ঠে বললেন
—- ” সেটা জানি, তবে মনে রেখো যেদিন রিককে ছাড়াও ওই মেয়ে অন্য কাউকে ভয় পেতে শুরু করবে সেদিন থেকেই আমাদের ধ্বংসের শিঙ্গা বেজে উঠবে।”
এটা শুনে কবির শেখ ও চিন্তায় পরে গেলেন। মেয়েটা রিককে ছাড়া আর কাউকে ভয় পেতে শুরু করলে সত্যিই সমস্যা হয়ে যাবে। কিন্তু সত্যিই কী এমন কেউ আসবে? নাকি এসে গেছে?
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন

কফিশপের সামনে দাড়িয়ে ওয়েট করছে অনিমা, অরুমিতা, তীব্র, আদিব আর আশিস। এইকয়দিনে বেশ ভালো বন্ধু হয়ে গেছে ওরা সকলে, একে ওপরের সাথে বেশ ফ্রি হয়ে গেছে, এখন অরুমিতারও আর আশিসকে আগের মতো বিরক্তিকর লাগেনা, তবে এদের টম এন্ড জেরি শো চলতে থাকে সারাক্ষণ। ওরা সবাই আদ্রিয়ানের জন্যেই ওয়েট করছে প্রায় পনেরো মিনিট যাবত কিন্তু আদ্রিয়ানের আসার কোনো নাম গন্ধও নেই। আদিব ভাইয়া হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললো
—- ” আরে ইয়ার এতো লেট কেনো করছে ও? এরকম তো করেনা।”
অরুমিতা রোডের দিকে তাকিয়ে বলল
—- ” আরে জ্যামে আটকে আছে হয়তো। আজকাল রোডের যা অবস্হা।”
আশিস অরুমিতাকে পিঞ্চ করে কিছু বলবে তার আগেই আদিব চোখ রাঙিয়ে চুপ করিয়ে দেয় ওকে। অনিমা দাঁত দিয়ে নখ কাটছিলো, ওদের কথা শুনে হাত নামিয়ে বললো
—- “এই রোডের জ্যামকে ইচ্ছে করে লাথি মেরে উগান্ডা পাঠিয়ে দেই।”
সবাই হেসে দিলো ওর কথা শুনে। আশিস অবাক হয়ে বলল
—- “এক লাথিতে এতোগুলো গাড়ি?”
অনিমা ভ্রু কুচকে আশিসের দিকে তাকিয়ে বলল
—- “আমি কখন বললাম যে গাড়িদের উগান্ডা পাঠাবো? আমিতো বলেছি জ্যামকে পাঠাবো, গাড়ি যতখুশি চলুক, চলতে চলতে ইঞ্জিনে আগুন ধরে যাক, টায়ার বাস্ট হয়ে যাক, তাতে আমার কী? শুধু জ্যাম না থাকলেই হয়।”
বলেই আবার রোডের দিকে উঁকি দিয়ে আদ্রিয়ান আসছে কী না চেক করে নিলো, আশিস বোকার মতো তাকিয়ে আছে অনিমার দিকে। অরুমিতা আর তীব্র মুখ টিপে হাসছে, কারণ ওরা অনিমার এরকম উদ্ভট কথাবার্তার সাথে পরিচিত হয়ে গেছে। আদিব হাসতে হাসতে বলল
—- ” প্রথম যখন দেখেছিলাম তোমায় তো মাটির পুতুল মনে হয়েছিলো, তুমি যে এতো কথা বলো বুঝতেই পারিনি।”
অনিমা আদিবের দিকে তাকিয়ে হেসে বলল
—- ” এটা তো ট্রেইলার, পিকচার এখোনো বাকি আছে আমার ভাই।”
আদিব ভ্রু উচু করে ঠোঁট বাকিয়ে বলল
—- ” আরিব্বাস! কী দিলে।”
অনিমা ওর লং শার্ট এর কলার ঠিক করে একটু স্টাইল নিলো। আশিস হা করে তাকিয়ে থেকে বলল
—- ” আরে এক অঙ্গে কতো রূপ। সো ট্যালেন্টেট।”
সেটা শুনে অরুমিতা ভ্রু কুচকে বলল
—- ” তো সবাই আপনার মতো গাধা হবে নাকি।”
আশিস চোখ ছোট ছোট করে অরুমিতার কাছে গিয়ে বলল
—- ” আমি গাধা?”
অাশিস কাছে আসাতে অরুমিতা একটু ইতোস্তত করে সরে দাড়িয়ে বলল
—- ” আপনার কোনো সন্দেহ আছে নাকি?”
আশিস কিছুক্ষণ ভ্রু কুচকে অরুমিতার দিকে তাকিয়ে থেকে একটা ফ্লার্টি হাসি দিয়ে বলল
—- ” সুন্দরীদের মুখে যেকোনো ডাক শুনতেই ভালো লাগে। হোকনা সেটা গাধা।”
আদিব ভাইয়া আশিসের পিঠে একটা চাপড় দিয়ে বলল
—- ” হ্যা তোর মতো গাধাদেরই ভালোলাগে।”
সকলেই হেসে দিলো। তীব্র একবার ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল
—- ” সিরিয়াসলি ভাইয়াতো এতো লেট করেনা। একটা ফোন করে করে দেখা উচিত এখন।”
আদিব ফোন বের করতে করতে বলল
—- ” হ্যা কল দিয়েই দেখি।”
আদিব কয়েকবার ফোন দেবার পরেও ফোন রিসিভ করলো না আদ্রিয়ান। আশিস বলল
—- ” আরে এরকম করার মানে হয়? সবাই টেনশন করতে পারে এটা ভাববে না?”
অনিমা বিরক্ত হয়ে ওখানে রেখে দেওয়া বাতিল একটা উচু টেবিলে উঠে বসে বলল
—- ” আপনারা মাঝে মাঝে একটু বকে ধমকে দিতে পারেননা ওনাকে?”
আদিব শব্দ হেসে দিয়ে বলল
—- ” ওর দেওয়া বকা আর ধমকি হজম করেই শেষ করতে পারিনা আবার আমরা বকবো?”
অনিমা ভ্রু কুচকে বলল
—- ” কেনো? কোথাকার কোন মহারাজ উনি যে ওনাকে এতো ভয় পেয়ে চলতে হবে?”
এটা শুনে অরুমিতা অনিমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে বলল
—- “এমনভাবে বলছিস যেনো তুই ভয় পাস না ওনাকে?”
অনিমা লাফ দিয়ে টেবিল থেকে নেমে একটু ভাব নিয়ে বলল
—- ” আমি? এই অনিমা ভয় পাবো ওনাকে? হাহ।”
তীব্র হাত ভাজ করে দেয়ালে হেলান দিয়ে বলল
—- ” সিরিয়ালসি? আমরা সবাই ভয় পাই আর তুই ভয় পাস না ওনাকে?
অনিমা হেসে দিয়ে বলল
—- “দূর। উনি আবার ভয় পাওয়ার মতো মানুষ নাকি?”
এরমধ্যেই আদ্রিয়ান এলো, অনিমা উল্টো ঘুরে আছে তাই দেখতে না পেলেও বাকিরা দেখতে পেলো। ওরা কিছু বলবে তার আগেই আদ্রিয়ান ইশারায় সবাইকে চুপ থাকতে বলল। সবাই চুপ করে রইল, সবাইকে চুপ করে থাকতে দেখে অনিমা ভ্রু কুচকে বলল
—- ” হোয়াট? ঠিকিতো বললাম ওনাকে ভয় পাওয়ার কী আছে? এমন রিয়াকশন দেও সবাই যেনো উনি বাঘ ভাল্লুক। যেই একটা মানুষ তাকে আবার এতো ভয় পায় হুহ।”
আদ্রিয়ান হাত ভাজ করে পিলারে হেলান দিয়ে শুনছে, অরুমিতা একটু মেকি হেসে বলল
—- ” হয়েছে বোন বুঝেছি তুই অনেক সাহসী এবার অফ যা।”
অনিমা বিরক্তিকর চোখে অরুমিতার দিকে তাকিয়ে বলল
—- ” হুরর। দেখলি? তুইও এমনভাবে ভয় পেয়ে আছিস যেনো উনি ঠিক এখানেই দাড়িয়ে আছে। আপনারা সবাই সত্যিই।”
আদিব একটু কেশে বলল
—- “আচ্ছা এসব কথা তো পরেও বলা যাবে।”
—- “নাহ আমাকে দেখুন, কতো সাহস আমার আমিতো ওনাকে ভয় পাই ই না বরং উনি আমাকে ভয় পান, আমার সব কথা শুনে চলেন। যা বলি ঠিক তাই করেন।”
আদ্রিয়ান এবার মুখটা সিরিয়াস করে পেছন থেকে বলে উঠলো
—- “তাই?”
—- ” সন্দেহ আছে?”
—- ” আপনার কথায় সন্দেহ করবো আমার ঘারে কটা মাথা বলুন?”
—- ” এইতো আপনি একমাত্র চিনেছেন আমা..”
এটুকু বলে পেছনে তাকিয়ে অনিমার আওয়াজ আটকে গেলো। আদ্রিয়ান গম্ভীর মুখে দাড়িয়ে আছে। সেটা দেখে ও একটা শুকনো ঢোক গিলল। তারপর কোনোরকমে হাসার চেষ্টা করে বলল
—- ” হাই। কখন এলেন?”
আদ্রিয়ান পকেটে হাত ঢুকিয়ে সোজা হয়ে দাড়িয়ে গম্ভীর মুখেই বলল
—- “যখন আপনি আমার প্রসংশা করছিলেন।”
এটা শুনে অনিমা মুখে হাসি রেখেই পেছন ঘুরে বাকিদের দিকে তাকিয়ে চোখ রাঙানি দিলো অর্থাৎ আগে কেনো বলোনি উনি শুনছেন? তারপর একটা কেবলাকান্ত হাসি দিয়ে সামনে আদ্রিয়ানের দিকে তাকালো। আর আদ্রিয়ান গম্ভীরভাবেই অনিমার দিকে তাকিয়ে বলল
—- “তো মহারাণী ভেতরে যাবো? না মানে আপনার কথা না শুনলে যদি গর্দান নিয়ে নেন? তাই আপনি অনুমতি দিলে ভেতরে যেতে পারি আরকি।”
অাদ্রিয়ানের কথাগুলো অনিমা বেচারির হাসি একটু একটু করে গায়েব করে দিচ্ছে। তবুও নিজেকে সামলে হাসার চেষ্টা করে বলল
—- ” হ্যা হ্যা সিউর চলুন। আপনারি তো অপেক্ষা কর…”
আর কিছু বলার আগেই আদ্রিয়ান ভেতরে চলে গেলো। বাকিরাও অনিমার দিকে একটা হতাশাজনক দৃষ্টি দিয়ে ভেতরে চলে গেলো। অনিমা মাথা হালকা চুলকে বিরবির করে নিজেই নিজেকে বলল
—- ” ইউ স্টুপিড কথা বলার সময় একটু ডানে বামে তাকিয়ে বলবিনা? এমনিতেও তোর আর কী দোষ বল? তুই কীকরে জানবি যে ঐ সিংহ তোর পেছনে দাড়িয়ে কথা শুনছে। আর উনিও বা কী? এভাবে লুকিয়ে কেউ কথা শোনে? সামান্য ম্যানার্স ও নেই। ”
এটুকু বলেই চমকে চারপাশে তাকিয়ে বুকে থু দিয়ে বলল
—- ” আবারো কী সব বলছিলাম ভাগ্যিস শোনেনি, আগে ওখানে গিয়ে দেখি কী হচ্ছে। আল্লাহ বাচিয়ে দিও প্লিজ।”
বুকে ফু দিয়ে ছুটে ভেতরে চলে গেলো অনিমা।
______________

রিক বাড়িতে ঢুকতেই মিসেস লিমা বললেন
—- ” তোর বাবা রুমে গিয়ে দেখা করতে বলেছেন।”
রিক ভ্রু কুচকে বলল
—- ” কেনো?”
মিসেস লিমা বিরক্ত হয়ে বললেন
—- ” আমি কী জানি? তোরা বাপ বেটা মামা মিলে কী কী করে বেড়াস আমাকে বলিস কিছু?”
রিক কিছু না বলে মিস্টার রঞ্জিত এর রুমে গিয়ে বলল
—- ” ডেকেছিলে?”
সোফায় বসে ফাইল দেখছিলেন মিস্টার রঞ্জিত আর কবির শেখ। ছেলের কন্ঠের আওয়াজ পেয়ে ফাইলের দিকে তাকিয়েই বললেন
—- ” মেয়েটার কোনো খোজ পেলে?”
রিক বিরক্তির দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল
—- ” সেটা জেনে তুমি কী করবে?”
—- ” যা জিজ্ঞেস করছি সেটার উত্তর দাও।”
—- ” পেয়েছি কালকে গিয়েই নিয়ে আসবো।”
মিস্টার রঞ্জিত চোখ তুলে তাকিয়ে বলল
—- ” কালকে তোমাকে কলকাতা যেতে হবে, আর্জেন্টলি। ”
রিক অবাক হয়ে বলল
—- ” হোয়াট? বাট ড্যাড…”
—- ” এটা জরুরি তাই যেতেই হবে। তুমি এড্রেস দিয়ে দাও মেয়েটার আমি লোক দিয়ে তুলে এনে আটকে রেখে দেবো তুমি আসা অবধি।”
—- ” সরি বাট আই কান্ট ট্রাস্ট ইউ, এসে হয়তো দেখবো তুমি ওকে মেরেই ফেলেছো। আমি যাচ্ছিনা কোথাও, জাহান্নামে যাক সব।”
বলেই রুম চলে গেলো রিক। রাগে গজগজ করছেন মিস্টার রঞ্জিত। কবির শেখ বলল
—- ” জিজু আমি বোঝাচ্ছি ওকে আপনি রাগবেন না।”
বলেই রিকের পিছে পিছে ওর রুমে এলো কবির শেখ। কবির শেখকে দেখে রিক বলল
—- ” মামা প্লিজ তুমি অন্তত যেতে বলোনা কোথাও।”
কবির শেখ হেসে বললেন
—- ” দেখো বাবাই মেয়েটা কী জানে তুমি ওকে পেয়েছো?”
রিক গম্ভীর ভাবে বললো
—- ” না।”
—- ” কতোদিন যাবত আছে ঐ জায়গায়?”
—- ” দেড় বছর।”
—- ” তাহলে তিন চার দিনে তো আর ঠিকানা বদলে নেবে না? তাই না?”
রিক অবাক হয়ে তাকালো, সত্যিই তো এভাবে তো ভাবেনি, কবির শেখ বললেন
—- ” দেখো কাজটাও তো জরুরি তাইনা? কাজটা সেরে তারপর ধীরে সুস্হে নিয়ে এসো মেয়েটাকে, সিম্পল।”
—- “হুম”
কবির শেখ হেসে বলল
—- ” এইতো বুঝেছো, তো সব প্যাকিং করে নাও। আমি গেলাম।”
কবির শেখ যেতেই রিক ভাবল, আরো তিন চার দিনের জন্যে বেচে গেলে তুমি। আরেকটু মুক্ত জীবণ ইনজয় করে নাও এই সময়ে। তারপরতো তোমাকে আসতেই হবে আমার কাছে।
___________

কফি শপে অসহায় মুখ করে বসে আছে অনিমা কারণ আদ্রিয়ান একটু নড়লেও ওর থেকে পারমিশন নিয়ে নিচ্ছে। যেমন চেয়ারে বসবে কী না? কফির মগে চুমুক দেবে কী না? মশা বসেছে মারবে কী না? ওয়াসরুম পেয়েছে যাবে কী না? অনিমা অনুমতি না দেওয়া পর্যন্ত কিছুতেই কিছু করছে না। সবাই মিটমিটিয়ে হাসছে, তবে জোরে হাসতে পারছেনা আদ্রিয়ানের ভয়ে। আর অনিমা মুখ কাচুমাচু করে বসে আছে, না হয় একটু দুষ্টুমি করেই ফেলেছে তাই বলে এমন করবে? কিন্তু ভয়ে কিছু বলতেই পারছেনা। ওয়েটার বিল নিতে আসতেই আদ্রিয়ান অনিমাকে বলল
—- ” ম্যাম বিল টা কী দেবো?”
ওয়েটার অবাক হয়ে একবার অনিমাকে দেখছে একবার আদ্রিয়ানকে। আদিব অরু ওরা মুখ টিপে হেসেই যাচ্ছে। আর অনিমার ছেড়ে দে মা কেঁদে বাচি অবস্হা। মনে মনে শতবার কান ধরে ফেলেছে যে জীবণেও আর এমন উল্টা পাল্টা বকবেনা। বকলেও আশেপাশে দেখে নেবে আদ্রিয়ান আসছে কী না। ওর অভিজ্ঞতা জানে এখন ব্যাপারটা ঠান্ডা ঠান্ডা গেলেও খুব শিঘ্রই সাইক্লোন যাবে ওর ওপর দিয়ে। তাই অনিমা মনে মনে বলছে আল্লাহ শুধু এবারের মতো এই অবোধ বাচ্চাটাকে বাঁচিয়ে দাও প্লিজ।
.
#চলবে…
.
( অনেকেরই এই টাইমটা নিয়ে সমস্যা হচ্ছে। সত্যি বলতে আমারও এই টাইমটায় বেশ সমস্যা তবে বাধ্য হয়ে দিতে হচ্ছে। তাই সবাইকে বলছি এতোদিন করেছেন কষ্ট করে আর দুই একটা দিন ম্যানেজ করে নিন, তারপর তাড়াতাড়ি দেবো। যাই হোক
হ্যাপি রিডিং ?)

বর্ষণের সেই রাতে ❤ পর্ব- ১৫

0

বর্ষণের সেই রাতে ❤
পর্ব- ১৫

#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

.
ফোনটা আবারো কানে নিলো আদ্রিয়ান। অনিমার নিঃশ্বাসপ্রশ্বাসের শব্দ শুনতে পাচ্ছে আদ্রিয়ান, কেমন একটা ঘোর কাজ করছে ওর মধ্যে ফোনটা রাখতে ইচ্ছে করছেনা। ব্যালকনির দেয়ালে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করলো ও, মন দিয়ে অনিমার প্রতিটা নিঃশ্বাসের প্রতিটা প্রশ্বাসের শব্দ শুনছে, অদ্ভুত এক প্রশান্তি হচ্ছে ওর। আদ্রিয়ান ঠিক করেই নিয়েছে আজ অনিমার নিশ্বাসের শব্দ শুনেই রাতটা কাটিয়ে দেবে। তাই কানে ফোন নিয়ে চোখ বন্ধ একমনে শুনেই চলেছে, কিন্তু মাঝরাতে অনিমার গলার স্বর পেয়েই চমকে চোখ খুললো। ভালোভাবে শোনার চেষ্টা করেই বুঝতে পারলো ঘুমের ঘোরেই কথা বলছে অনিমা। মেয়েটা ঘুমের মধ্যেও কথা বলে? আবারো হেসে দিলো আদ্রিয়ান, ও আসলেই একটা বাচ্চা। কী বলছে সেটা একটু মনোযোগ দিয়ে শোনার চেষ্টা করলো, ভালোভাবে কান পেতে থাকার পর কিছু কিছু কথা কানে গেলো ওর। আর সেই কথাগুলো শুনে অাদ্রিয়ান স্তব্ধ হয়ে গেলো। চোখ দুটো আবারো ছলছল করে উঠলো। হাত মুঠো করে ওয়ালে জোরে পাঞ্চ করলো। ও ভাবতেও পারছেনা মানুষ এতো নিচ কীকরে হয়? এতোটাই অত্যাচার করতো মেয়েটাকে যে ঘুমের মধ্যেও সেগুলো ওর পিছু ছাড়ে না। নিজের ওপর ভীষণ রাগ হচ্ছে ওর ওকে খুজে পেতে এতো দেরী কেনো করলো ও? কেনো?
__________

সকালে ঘুম থেকে উঠে সময় দেখতে ফোনটা হাতে নিয়েই চমকে গেলো অনিমা। আদ্রিয়ান লাইনে? সিট! ও কালকে কথার মাঝেই ঘুমিয়ে পরেছিলো । তাড়াতাড়ি আধশোয়া হয়ে ফোনটা কানে দিয়ে বলল
—- ” হ্যালো?”
অাদ্রিয়ান এখনো ব্যালকনির দেয়ালে হেলান দিয়েই বসে আছে। অনিমার গলার আওয়াজ পেয়েই খানিক চমকে উঠলো তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে বলল
—- “ওহ। মহারানীর ঘুম ভাঙলো?”
অনিমা অবাক হয়ে উঠে বসে মুখের সামনে থেকে চুল সরিয়ে বলল
—- ” আপনি সারারাত লাইনে ছিলেন?”
আদ্রিয়ান মুচকি হেসে বলল
—- ” কী করবো? তুমি কথা শেষ না করেই ঘুমিয়ে পরলে, আর কাউকে বাই না বলে ফোন কাটার মতো ব্যাড ম্যানার্স আমার নেই।”
—- “তাই বলে সারারাত জেগে থাকবেন?”
—- ” কী করব বাই বলা হয়নি তো।”
অনিমা হেসে দিয়ে খাটে হেলান দিয়ে বলল
—- ” পাগল আপনি? ”
আদ্রিয়ান উঠে দাড়িয়ে রুমে যেতে যেতে বলো
—- “তেরে ইস্কমে পাগাল হোনা তো কেয়া মারভি লুঙগি। ”
অনিমা ভ্রু কুচকে বললো
—- ” মানে?”
—- ” নাথিং। যাও ফ্রেশ হয়ে নাও। অফিস যাবে তো।”
অনিমা বাচ্চা কন্ঠে একটু টেনে বললো
—- ” আজ ফ্রাইডে।”
আদ্রিয়ান মাথা চুলকে বলল
—- ” ইয়ে আসলে ভূলে গেছিলাম।”
—- ” তো রাখি?”
আদ্রিয়ান কিছু একটা ভেবে বলল
—- ” আব্ বলছিলাম আজ বিকেলে বেড়োবে?”
অনিমা ঠোঁট কামড়ে হেসে বলল
—- “কেনো?”
—- ” এমনি, ফ্রি টাইমে ঘরে বসে বোর হওয়ার কী প্রয়োজন?”
অনিমাও আদ্রিয়ানের তালে তাল দিয়ে বলল
—- ” না কোনো প্রয়োজন নেই।”
অনিমার কথায় আদ্রিয়ান হেসে দিয়ে বললো
—- “ওকে দেন বিকেলে পিক করতে আসছি আমি?”
—- “হুম।”
—- ” ওকে নাও বাই, ব্যালেন্স যেকোনো মুহূর্তে শেষ হয়ে যাবে, সারারাত লাইনে ছিলাম।”
অনিমা মুচকি হেসে বলল
—- ” বাই।”
আদ্রিয়ান ফোনটা রাখতেই অনিমা হেসে দিলো। লোকটা অদ্ভুত হঠাৎ করেই ওর জীবণে এসে ওর জীবণের একটা অভিন্ন অংশ হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আদ্রিয়ানকে নিজের জীবণে ধরে রাখতে পারবেতো ওও? ওর সব কাছের মানুষগুলোই তো ওকে ছেড়ে চলে যায়, যদি আদ্রিয়ানও ওকে ছেড়ে চলে যায় তাহলে? আদ্রিয়ানের মায়ায় এভাবে নিজেকে জরিয়ে ঠিক করছে তো?
আর আদ্রিয়ান ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়েই মুচকি হেসে ভাবল। আমি জানি তোমার মনে কি চলছে, ভয় পেয়োনা অামি তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাবোনা, কোথাও না। ইন এভরি সিচিউশন, আই এম এন্ড আই উইল বি দেয়ার টু প্রটেক্ট ইউ জানপাখি।
আবারো ফোন বেজে উঠল আদ্রিয়ানের অভ্রর ফোন। রিসিভ করার পর অভ্র জানালো ওকে কয়েক মাসের জন্যে লন্ডন যেতে হবে এবং সেটা জরুরি। আদ্রিয়ান পারমিশন দিলেও ওর মুড অফ হয়ে গেলো, অভ্র ওর পিএ হলেও ওকে নিজের ভাইয়ের মতোই স্নেহ করে আদ্রিয়ান আর অভ্রও ওকে বড় ভাই হিসেবে শ্রদ্ধা করে।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন

অরু সবে ফ্রেশ হয়ে বেড়িয়েছে। এরমধ্যেই ফোন বেজে উঠলো, ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে প্রতিবারের মতো এবার আর বিরক্ত হলো না অরু, কারণ এই ফোন ওর অভ্যেস হয়ে গেছে। তবুও ফোনটা রিসিভ করে বিরক্তির কন্ঠে বলল
—- “কী সমস্যা বলুনতো আপনার?”
আসিশ হেসে দিলো অরুমিতার কথা শুনে। মেয়েটাকে জ্বালিয়ে খুব বেশিই মজা পায় ও। হাসি থামিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করে বলল
—- ” আমার আবার কী সমস্যা হবে? কোনো সমস্যা নেই তো। কিন্তু আমি কল করলে তোমার এতো সমস্যা কেনো হয় সেটাইতো বুঝতে পারছি না।”
—- ” উফফ আপনাকে কিছু বলাই বেকার।”
—- ” বলোনা। শুধু আমার কথাগুলো শুনতে থাকো তাহলেই হবে।”
অরুমিতা বেশ বিরক্ত হয়ে বললো
—- ” অসহ্য।”
আশিস হেসে বলল
—- ” যাক আমার জন্যে কিছুতো ফিল করো সেটা অসহ্যই হোক।”
অরুমিতার রাগে এখন নিজের চুল নিজেরই ছিড়তে ইচ্ছে করছে। তাই বিরক্ত হয়ে ফোনটা রেখে আশিসের চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করতে লাগল। কিন্তু ছেলেটা যেমনই হোক কথা বেশ ভালোই বলে, ভেবেই মুচকি হাসলো ও। পরোক্ষণেই নিজেকেই নিজে বকতে লাগল। কী ভাবছে ও? পাগল টাগল হয়ে গেলো নাকি ও? এসব চিন্তা বাদ দিয়ে নিজের কাজে মন দিলো ।
ওদিকে অরু ফোনটা কাটতেই হাসতে শুরু করো আশিস। হাসির মাঝেই ওর ফোন এলো ওর ফোনের স্ক্রিণে GF-32 লেখা। বুঝলো ওর বত্রিশ নম্বর গার্লফ্রেন্ড, কিন্তু ওর বত্রিশ নম্বর গার্লফ্রেন্ডের নামটাও তো ওর মনে নেই । কিছুক্ষণ ভেবে রিসিভ করলো ফোনটা। ওপাশ থেকে বলল
—- ” হ্যালো বেবি এতো লেইট করলে কেনো?”
উফফ শুরু হয়ে গেছে নেকিরানীদের নেকমী এসব ভেবে আশিস কন্ঠটা নরম করে বলল
—- ” সরি বেবি ওয়াসরুমে ছিলাম।”
মেয়েটা নেকা কন্ঠে বলল
—- ” তাই বলে ফোন ধরতে এত্তো লেট করবে?”
আশিসের মেজাজ বেশ খারাপ হলো, এতো নেকামো শুধু মেয়েদের পক্ষেই করা সম্ভব। নিজেকে সামলে বলল
—- ” আচ্ছা বেবি এরপর থেকে ওয়াসরুমেও ফোন নিয়ে যাবো ওকে?”
মেয়েটি খুশিতে গদগদ হয়ে বলল
—- ” ওয়াও হাউ সুইট ইউ আর।”
—- “বাই দা ওয়ে তুমি কোন বেবি জেনো?”
—- ” হোয়াট আশু? ভূলে গেলে আমি লোপা।”
লোপা? এটা আবার কে? উফফ এতোজনের নাম চেহারা মনে রাখা যায়? তবুও আশিস একটু হাসার চেষ্টা করে বলল
—- ” না না ভূলবো কেনো? অাসলে তোমার রিয়াকশন কেমন হয় সেটা জানার জন্যে মজা করছিলাম।”
—- ” অঅঅ হাউ কিউট।”
—- ” ইয়াপ।”
এগুলো আশিসের কাছে বিশেষ কিছু না এটা ওর রেগুলার রুটিন। তাই প্রতিদিনের মতো নিজের সো কলড গার্লফ্রেন্ডেসদের সাথে কথা বলতে ব্যাস্ত হয়ে পরল ও।
____________

সন্ধ্যা হয়ে গেছ, সূর্যমামা বেশ কিছুক্ষণ আগেই নিজের মুখ লুকিয়ে ফেলেছে। চারপাশ অন্ধকার হয়ে এসছে। তবে নিঃস্তব্দ নয় এই সন্ধ্যা। গ্রাম্য এলাকায় শান্ত, নিরব, আধারাস্ছন্ন মোহনীয় সন্ধ্যের দেখা পাওয়া গেলেও শহরের সন্ধ্যে হয় অন্যরকম, কোলাহল একটুও কমেনা, তবে শহরের অন্ধকারেও চারপাশের আলোকিত দোকানপাঠ আর অসংখ্য গাড়ির হেডলাইটের আলোতে চারপাশে আরেক রকমের সৌন্দর্য বিরাজ করে, সেটা যদি উচু কোনো বিল্ডিং এর ছাদ থেকে দেখা যায় তাহলেতো কোনো কথাই নেই, সেটা আজ অনিমা বেশ ভালোই বুঝতে পারছে, কারণ আদ্রিয়ান ওকে নিয়ে পনেরো তলা একটা বিল্ডিং এর ছাদের কর্ণারে বসে রাতের শহরটা দেখছে। দুজনেই বেশ অনেকক্ষণ যাবত চুপ করে আছে। হঠাৎ করেই আদ্রিয়ান বলল
—- ” কী ভাবছো?”
অনিমা চারপাশটা দেখতে দেখতে বললো
—- ” কখনো রাতের শহরটা এভাবে দেখা হয়নি।”
আদ্রিয়ান মুচকি হেসে বলল
—- ” তোমার ভালো লেগেছে?”
—- ” ভীষণ।”
—- ” তাহলেই হবে।”
অনিমা আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল
—- ” একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?”
আদ্রিয়ান মুখে হাসি রেখেই হালকা ভ্রু কুচকে বলল
—- “করে ফেলো।”
—- ” আপনি তো সেইরাতের পর আমার সাথে যোগাযোগ না করলেও পারতেন, হঠাৎ কী মনে করে আমার সাথে যোগাযোগ রাখার ইচ্ছে হলো?”
আদ্রিয়ান হালকা হেসে কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো আর অনিমা আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে উত্তরের আশায়। আদ্রিয়ান একটা শ্বাস নিয়ে বলল
—- ” ঐ যে বললাম তোমার মায়ায় জরিয়ে
গেছি, একটা অদ্ভুত মায়াজাল, যেই জাল থেকে বেড়োনো অসম্ভব, মিস করতে শুরু করেছিলাম তোমায়। নিজেকে চেয়েও আটকাতে পারিনি।”
অনিমা অবাক হয়ে বলল
—- ” এক রাতেই এতো টান।”
আদ্রিয়ান সামনে তাকিয়ে বলল
—- ” আমি নিজেও তো জানিনা কেনো? কিন্তু বর্ষণের সেই রাতটা যে আমি চাইলেও ভূলতে পারিনা আর না পারবো”
—- ” কখনো ভূলে যাবেন নাতো আমাকে?”
আদ্রিয়ান অনিমার হাত ধরে বলল
—- ” মানুষ নিজেকে ভূলে যেতে পারে কিন্তু নিজের অস্তিত্বকে না।”
অনিমা আদ্রিয়ানের কথা না বুঝলেও এক প্রশান্তি বয়ে গেলো ওর হৃদয়ে, আলতো করে আদ্রিয়ানের কাধে মাথা দিয়ে মনে মনে ভাবছে কীকরে থাকবে এই লোকটাকে ছাড়া ও? ও তো ভীষণভাবে জরিয়ে গেছে আদ্রিয়ানের সাথে, বর্ষণের সেই রাতে ওর জীবণের টার্নিং পয়েন্ট হয়ে এসেছিলো আদ্রিয়ান।
আর আদ্রিয়ান ভাবছে এতো খুজেও কোনো খোজ পাইনি তোমার। কিন্তু নিজের অজান্তেই পেয়ে গেছি তোমাকে, কীকরে ভূলবো ? তুমিতো আমার অস্তিত্ব,আমার আত্না, আমার হার্টের প্রতিটা বিট, আমার প্রতিটা নিশ্বাস। এগুলো ভূলে কোনো মানুষ বাচতে পারে?
____________

এভাবেই অনেকগুলো দিন কেটে গেলো। এরমধ্যে অনিমা সম্পূর্ণ আগের মতো হয়ে গেছে। চঞ্চলতা, দুষ্টুমি সব আবার ভর করেছে ওর ওপর। এর সম্পূর্ণ ক্রেডিট আদ্রিয়ানের ওই ওকে বিভিন্ন ভাবে খুশি রেখে, আনন্দে রেখে বদলে দিয়েছে একেবারে। তবে একবারো ওর অতীত জানতে চায়নি অনিমার কাছে, কারণ ও চায় অনিমা নিজে ওকে বলুক সব বলুক। আর অনিমাকে নিজের মনের অনুভূতির কথাও বলেনি। আর এদিকে অনিমাও ভালোবেসে ফেলেছে আদ্রিয়ানকে তবে বলতে পারেনি। কিন্তু ওদের মধ্যকার বন্ডিং এখন আরো গভীর হয়েছে, একে ওপরকে না দেখে একদিনো থাকতে পারেনা। আদ্রিয়ান অনিমাকে সবসময় বিভিন্নভাবে আনন্দে রাখে। রাতে লং ড্রাইডে নিয়ে গিয়ে, ছুটির দিনে ঘুরতে নিয়ে গিয়ে, ফুচকা আইসক্রীম খাইয়ে, প্রতিদিন চকলেট গিফ্ট করে, ছোট ছোট সারপ্রাইজেস, গিফটস দিয়ে। তীব্র আর অরুমিতা মুগ্ধ হয়ে দেখে এগুলো আর সৃষ্টিকর্তার কে বারবার শুকরিয়া জানায় আদ্রিয়ানকে অনিমার জীবণে পাঠানোর জন্যে। তবে অনিমার ভয় হয় ভীষণ ভয় হয় ওরতো সুখ নামক জিনিসটা সহ্য হয়না। আবার কোনো বিপদ ঘনিয়ে আসবেনা তো ওর জীবণে?
___________

নিজের ফার্মহাউজে বসে ড্রিংক করতে করতে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিল রিক। বন্ধুরা চলে যেতেই কালো পোশাক পরা একটা লোক এসে বলল
—- “ভাই, মেয়েটার খোজ পেয়ে গেছি। কী করে কোথায় আছে সব।”
রিক মুখ থেকে ড্রিংকের গ্লাস নামিয়ে একটা বাকা হাসি দিলো তারপর হাত বারাতেই একটা কাগজ দিলো লোকটা ওর হাতে। কাগজটা নিয়ে হাত দিয়ে ইশারা করতেই লোকটা বেরিয়ে গেলো। রিক কাগজটার দিকে তাকিয়ে হেসে দিলো, পরক্ষণেই মুখটা হিংস্র হয়ে গেলো, চোখ লাল হয়ে উঠল রাগে। দাতে দাত চেপে বলল
—- “এবার কোথায় পালাবে বেবি? তোমার হাইড এন্ড সিক খেলার সময় এবার শেষ। এবার এই রিক চৌধুরী তোমাকে বোঝাবে সে কতোটা ভয়ংকর। তোমার এমন হাল করবো যে রিক চৌধুরীর খাচা থেকে পালানোর চিন্তা করলেও তুমি কেপে উঠবে। বি রেডি সুইটহার্ট। আমি আসছি।”
.
#চলবে…
.
(আপনাদের কেমন লাগছে অবশ্যই জানাবেন আর দয়া করে গঠনমূলক মন্তব্য করবেন। আর আমাকে নিয়ে কোনো অভিযোগ থাকলে সেটাও বলে দিন? যাই হোক
হ্যাপি রিডিং?)

বর্ষণের সেই রাতে ❤ পর্ব- ১৪

0

বর্ষণের সেই রাতে ❤
পর্ব- ১৪
লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

.
সারারাত বৃষ্টির পর সকালের নতুন সূর্যের সিদ্ধ,নরম,সোনালী আলোয় চারপাশ উজ্জ্বল হয়ে আছে। বৃষ্টিতে ভেজা সবুজ গাছপালা, ঘাস এর ওপর নতুন সেই রোদের আলো পরায় সবুজ প্রকৃতির সবুজভাব আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্যালকনিতে বসে কফির মগে চুমুক দিয়ে বর্ষার এই মুগ্ধকর সকালটাকে উপভোগ করছে অনিমা তবে বেশিক্ষণ এই পকৃতি বিলাশ করার সময় নেই তার অফিস যেতে হবে। কফিটা শেষ করে রেডি হয়ে নেয় অনিমা। তারপর আয়নায় তাকাতেই আদ্রিয়ানের ওকে সাজিয়ে দেবার দৃশ্যটা চোখে ভেসে ওঠে, নিজের অজান্তেই ঠোটে হাসি ফুটে ওঠে ওর। কাজল হাতে নিয়ে চোখে হালকা করে লাগিয়ে নেয়। তারপর বেড়িয়ে পরে অফিসের উদ্দেশ্য।
____________

তীব্র অফিসে ঢুকে কম্পিউটার অন করতে না করতেই অরুমিতা এসে বসল। অফিস টাইম শুরু হতে এখোনো পনেরো মিনিট বাকি আছে। তীব্র অরুমিতার দিকে তাকিয়ে বলল
—- ” তুই অনিকে কিছুদিন যাবত লক্ষ করছিস?”
অরুমিতা কম্পিউটার থেকে চোখ সরিয়ে বলল
—- “হ্যা রে। ইদানিং কেমন বদলে যাচ্ছে। আগের মতো মনমরা হয়ে থাকেনা, মনের দিক থেকে খুশি লাগছে ওকে। আর এই খুশির কারণ কিন্তু এ.ডি।”
তীব্র মুচকি হেসে বলল
—- “হুম ওর লাইফে ম্যাজিশিয়ান মতো এসেছেন উনি, এসেই ম্যাজিক করে দিয়েছে। এখন শুধু এটাই চাওয়া উনি যাতে ওর এলোমেলো জীবনটাকে সুন্দরভাবে নিজের মতো করে সাজিয়ে নিতে পারে।”
অরুমিতা মুখে চিন্তার ছাপ এনে বলল
—- ” কিন্তু উনি এতো বড় একজন সেলিব্রিটি হয়ে হঠাৎ অনির পেছনে কেনো পরলো বলতো? আমরা যেটা ভাবছি সেটা যদি না হয়, যদি অনি এডির সাময়িক একটা মোহ হয় তো? মেয়েটা তো আবার কষ্ট পাবে। এমনিতেই জীবণে কম কষ্ট সহ্য করেনি ওও। যে বয়সে প্রতিটা মেয়ে মুক্ত পাখির মতো উড়ে জীবণটাকে উপভোগ করে সেই জায়গায় ওকে চার দেয়ালে বন্দি হয়ে এক জানোয়ারের অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছে ওকে। আর ওর মামা মামী তো আছেই, তারওপর ওর মামাতো ভাই তো ওকে…”
কথাটা শেষ করতে পারলোনা অরুমিতা, এসব ভাবলেও ওর হাড় হিম হয়ে আসে, ঐ মেয়েটা এসব কীভাবে সহ্য করে কে জানে? তীব্রও একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলল
—- “সেটা ঠিক কিন্তু আমার এডি কে দেখে মনে হয়নি উনি অনির মোহে পরেছে। ওনার চোখে অন্যরকম অনুভূতি দেখেছি আমি।”
—- ” সেটাই যেনো হয়। তবে…”
এরমধ্যেই অনিমা চলে এলো, অনিমাকে আসতে দেখে থেমে গেলো ওরা। অনিমা এসে বসতেই অরু অনির মুখের দিকে তাকিয়ে থমকে গেলো। আনিমা অরুর দিকে তাকিয়ে ওর দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুচকে বলল
—- ” কী হলো? এভাবে তাকিয়ে আছিস কেনো?”
অনিমার এই কথা শুনে তীব্রও অরুর দিকে তাকালো অরুকে ওভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে, অরুর দৃষ্টি অনুসরণ করে অনিমার মুখের দিকে তাকিয়ে তীব্রও থমকে গেলো। অনিমা ওদের দুজনের এই চাহনিতে বিরক্ত হয়ে বলল
—- “হোয়াট?”
অরু হা করে তাকিয়ে থেকেই বলল
—- “তুই চোখে কাজল দিয়েছিস?”
অনিমা এবার বুঝলো কেনো ওরা এভাবে তাকিয়ে আছে। ওদের রিয়াকশন দেখে এবার খুব হাসি পাচ্ছে অনিমার তবুও হাসিটা চেপে রেখে মুখে বিরক্তি নিয়ে বলল
—- ” হ্যা তো?”
তীব্র নিজেকে সামলে নিয়ে বলল
—- ” না মানে তোকেতো কখনো সাজতে দেখিনি?”
অনিমা ঠোঁট চেপে নিজের হাসিটাকে আটকে বলল
—- ” দেখিসনি এখন দেখে নে? এই সামান্য কারণে এভাবে তাকিয়ে থাকতে হবে? আমি তো মনে করেছি আমার পেছনে ডানা গজিয়েছে আর তাই তোরা হা করে তাকিয়ে আছিস। হুহ”
অরুমিতা আর তীব্র হা করে তাকিয়ে আছে। এই তিন বছরের অনিমাকে এভাবে কথা বলতে দেখেনি ওরা। অনিমা এবারেও ওদের অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলল
—- ” আবার কী হলো?”
অরুমিতা আর তীব্র পুরো শকে আছে। কিছুক্ষণ পর অরুমিতা উঠে গিয়ে অনিকে জরিয়ে ধরল, তীব্র পেছন থেকে দুজনকেই হাগ করলো। ওদের দুজেরই চোখের কোণেই পানি আছে, ওরাতো এভাবেই দেখতে চেয়েছিলো অনিমাকে। অনিমার নিজেরও চোখের কোণেও পানি চলে এসছে, কে বলেছে ওর কেউ নেই? এমন দুজন বন্ধু থাকতেও কেউ একা হতে পারে?
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন

আদ্রিয়ান ভেতরে গানের রেকর্ডিং করছে। আদিব আর আশিস বাইরে বসে কাচের গ্লাস এর ভেতর দিয়ে আদ্রিয়ানকে দেখছে আর ওর গান শুনছে। গান কম্প্লিট করে আদ্রিয়ান ডিরেক্টরের দিকে তাকিয়ে থামবস আপ দেখালো, সকলেই তালি দিলো ডিরেক্টর হেসে হেডফোন নামিয়ে আদ্রিয়ানকে বেরিয়ে আসতে ইশারা করল, আদ্রিয়ান বাইরে বেড়িয়ে আসতেই ডিরেক্টর আলতো করে হাগ করে বলল
—- “ফ্যানটাস্টিক ইয়ার।”
আদ্রিয়ান মুচকি হেসে বলল
—- “থ্যাংক ইউ।”
এরপর আদ্রিয়ানকে ছেড়ে বলল
—- ” লাঞ্চের ব্যবস্থা করেছি, খেয়ে যাবে কিন্তু।”
—- ” আরেহ বাট এসবের কী দরকার ছিলো?”
—- ” ছিলো ছিলো সবাই মিলে একসাথে লাঞ্চ করব সমস্যা কী?”
আদ্রিয়ান হেসে বলল
—- ” আচ্ছা।”
এরপর সবাই মিলে আদ্রিয়ানকে কনগ্রাচুলেট করল। আদ্রিয়ান গিয়ে আদিব আর আশিসের সামনে গিয়ে বসল। আদিব হেসে বলল
—- ” বাহ ভাই কী গাইলি? সিরিয়াসলি তোর গান শুনলে অন্য কোথায় হারিয়ে যাই।”
আশিস ও সায় দিয়ে বলল
—- ” হ্যা জাদু আছে তোর গলায়।”
আদ্রিয়ান ওদের দিকে তাকিয়ে বলল
—- ” হয়েছে, থাম এবার। ”
অাশিস বিরক্ত হয়ে বলল
—- “তুই এমন কেনো বলতো? লোকে প্রশংসা শুনতে ভালোবাসে আর তুই প্রশংসা শুনতেই চাসনা।”
—- ” আমি এমনি।”
অাদিব ভাইয়া ঠেস মেরে বলল
—- ” হুমম কিন্তু অনিমা প্রশংসা করলেতো ঠিকি ভালো লাগতো।”
আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে তাকালো। অাশিসও পিঞ্চ করে বলল
—- “হ্যা হ্যা সেই তো, অনিমার সামনে তুই তো পুরো একশো আশি ডিগ্রি এঙ্গেলে চেঞ্জ হয়ে যাস। জঙ্গলের শের শান্ত হয়ে যায়।”
আদ্রিয়ান মুচকি হেসে বলল
—- “সিংহ হিংস্র হয় শুধু শিকার ধরার সময়, এসব ছাড় তুই তোর কথা বল অরুমিতাকে ফোন করে বিরক্ত কেনো করিস?”
এটা শুনে আদিব চমকে তাকালো আশিসের দিকে। আশিস হকচকিয়ে গিয়ে বলল
—- ” ত্ তুই এসব জানলি কিকরে?”
আদিবও অবাক হয়ে বলল
—- “হ্যা আমি বুঝতে পারলাম না তুই বুঝলি কীকরে বলতো?”
আদ্রিয়ান বাকা হেসে বলল
—- ” এইটুকু ইনফরমেশন জোগাড় করার জন্যে আদ্রিয়ান আবরার জুহায়ের বা হাতও লাগেনা চোখের ইশারাই যথেষ্ট।”
আদিব আর আশিস হতাশাজনক একটা চাহনী দিলো নিজেদের ভূলের জন্যে, কাকে কী জিজ্ঞেস করছে? ওরা ভূলেই গেছিলো দিস ইজ আদ্রিয়ান আবরার জুহায়ের। কী মনে করে আশিস বলল
—- “ভালো কথা মনে করেছিস। এখনি ফোন দিচ্ছি।”
বলেই একটা চোখ টিপ মারলো। আদিব ভাইয়া ওর পিঠে চাপড় দিয়ে বলল
—- ” শালা মানুষ হলিনা তুই।”
আদ্রিয়ান এবার একটু সিরিয়াসুখ করে বলল
—- ” দেখ অরুমিতা মেয়েটা কিন্তু ভালো তোর ওই গার্লফ্রেন্ডদের মতো একদমি না, তাই যা করবি ভেবে করিস।”
আশিস মুচকি হেসে বলল
—- ” আরেহ ভাই ডোন্ট ওয়ারি। আমার বাকিসব গার্লফ্রেন্ডস আর ওও আমার কাছে আলাদা।”
—- ” হুম শুধু আলাদা ভাবলেই হবেনা। আলাদা ভাবে মূল্যও দিতে জানতে হবে।”
—- ” হুমম।”
বলে ওদের সামনেই অরুকে ফোন লাগালো।
হঠাৎই অরুমিতার ফোন বেজে উঠলো, অরুমিতা ফোনটা হাতে তুলেই ভ্রু কুচকে ফেলল, বিরক্ত হয়ে বলল
—- “উফফফ কোন ফাসিসের চক্করে ফাসলাম।”
এটা শুনে অনিমা আর তীব্র অবাক হয়ে একসাথে বলল
—- ” হু ইজ ফাসিস?”
অরুমিতা থতমত খেয়ে বললো
—– “অব্ ওই অাশিস আরকি।”
এটা শুনে অনিমা আর তিব্র একে ওপরের দিকে বোকার মতো কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকেই শব্দ করে হেসে দিলো। অরুমিতা বিরক্ত হয়ে বলল
—- “হাসিস না তো, জালিয়ে খেলো আমাকে।”
তীব্র হাসি থামিয়ে বলল
—- ” তোকে এখনো ফোন করে?”
অরুমিতা ভ্রু কুচকে মুখ ফুলিয়ে বসে আছে। অনিমা হাসতে হাসতেই বলল
—- ” ধর ফোনটা।”
অরুমিতা অসহায় চোখে একবার ওদের দুজনের দিকে তাকিয়ে মুখে একরাশ বিরক্তি নিয়ে ফোনটা রিসিভ করে অফিসের ব্যালকনিতে চলে গেলো। অনিমা মুচকি হেসে তীব্রর দিকে তাকিয়ে বলল
—- “কী বুঝলি? ”
তীব্র আঙ্গুল কপালে স্লাইড করে বলল
—- ” এটাই যে তোর আর এডির মধ্যে কিছু হবার আগে এদের মধ্যে কিছু একটা হয়ে যাবে।”
অনিমা চোখ ছোট ছোট করে তীব্রর দিকে তাকিয়ে বলল
—- ” আচ্ছা?”
তীব্র মিটমিটিয়ে হাসতে হাসতে বলল
—- ” হ্যা ঠিকি বললাম।”
অনিমা উঠে দাড়িয়ে স্লিভ হালকা গুটিয়ে বলল
—- ” বলাচ্ছি তোকে ঠিক।”
বলেই তীব্রকে মারতে শুরু করলো। আর তীব্র বেচাড়া নিজের ব্যাগ দিয়ে ডিফেন করার চেষ্টায় আছে।
______

রিক শাওয়ার নিয়ে চুল মুছতে মুছতে বেড়িয়ে এসে দেখে কবির শেখ বসে আছে। ও তাওয়াল টা রেখে খাটে বসে বলল
—- “হঠাৎ এইসময় কিছু বলবে?”
—- ” খোজ পেয়েছো মেয়েটার কোনো?”
রিক খাটে হেলান দিয়ে বলল
—- ” সবেতো লোক লাগিয়েছি, কয়েকটা দিন লাগবে তো”
—- ” হুমম। তো পেয়ে গেলে কী করবে ওর সাথে?”
—- ” আগেতো পাই।”
কবির শেখ হেসে বললেন
—- ” পাবেতো অবশ্যই পালিয়ে যাবে কোথায়?”
—- “এক্সাক্টলি। আমিও দেখতে চাই কতোদিন পালাতে পারে আমার হাত থেকে। আর এবার আমার হাতে পরলে ওর কপালে ভীষণ দুঃখ আছে।”
—- ” তো লাঞ্চ করবেনা?”
—- ” যাও আসছি।”
বলে রিক টিশার্ট পরতে পরতে ব্যালকনিতে চলে গেলো। সেদিকে তাকিয়ে বাকা হেসে কবির শেখ ভাবলেন, ছেলেটা ঠিক সেরোকমি তৈরী হয়েছে যেমন সে বানাতে চেয়েছিল। রিকই তো ওনার তুরুপের তাস। আর রিকের একমাত্র দুর্বলতা হচ্ছে ঐ মেয়ে আর সেইজন্যে ঐ মেয়েকে খুজে পাওয়াটা ওনারও খুব দরকার।
___________

অনিমার আজ কাজের প্রেশারটা একটু বেশিই ছিলো। ক্লান্ত হয়ে বেডে শুতে যাবে তখনি ফোন এলো। ভ্রু কুচকে নাম্বারটা দিকে তাকিয়ে ক্লান্ত ওর মুখেও হাসি ফুটে উঠলো। মুচকি হেসে ফোনটা রিসিভ করে বলল
—- “হ্যালো।”
অনিমার ক্লান্ত কন্ঠ যেনো আদ্রিয়ানকে আরেকবার ঘায়েল করল। কারো ক্লান্ত কন্ঠও এতোটা সুন্দর হতে পারে জানা ছিলোনা ওর। তবুও নিজেকে সামলে মুচকি হেসে বলল
—- ” কী ব্যাপার ম্যাডাম খুব টায়ার্ড মনে হচ্ছে?”
—- ” হুমম আজ একটু প্রেশার ছিলো।”
—- ” আচ্ছা তাহলে রেস্ট করো।”
—- ” না না আপনার কিছু বলার থাকলে বলুন।”
—- ” নাহ তেমন কিছু না। ডিনার করেছো?”
—- ” হুম”
—- ” কী খেলে? ”
অনিমা পরলো মহা ফেসাদে। এখন কীকরে আদ্রিয়ানকে বলবে ওও কী খেয়েছে। অনিমার উত্তর না পেয়ে আদ্রিয়ান বলল
—- ” কী হলো বলো?”
—- ” অব্ কফি আর বিস্কিট।”
আদ্রিয়ান অবাক তো হলোই সাথে রেগেও গেলো। রাগী গলায় বলল
—- “সারারাত শুধু এগুলো খেয়ে থাকবে?”
অনিমা ইতোস্তত করে বলল
—- ” ইয়ে আসলে রাতে রান্না করার মুড থাকেনা।”
—- ” ইউ আর রিয়েলি ইমপসিবল। ”
অনিমা কিছু বললোনা আদ্রিয়ান একটু থেমে বলল
— “আচ্ছা দেখছি কী করা যায়।”
অনিমা অবাক হয়ে বলল
— ” কী করবেন?”
—- ” সেটা তুমি না জানলেও হবে। আচ্ছা একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?
অনিমা একটু অবাক হয়ে বলল
—- ” হুম করুন?”
—- ” আঙ্কেল মানে তোমার বাবার নাম কী ছিলো?”
হঠাৎ এইরকম প্রশ্ন শুনে অনিমা বেশ অবাক হলো তবুও বলল
—- ” চিফ রিপোর্টার হাসান কোতয়াল।”
—- ” ওহ তোমার বাবাও রিপোর্টার ছিলেন, ওনাকে তো প্রায় অনেকেই চেনে, কিন্তু উনি মারা গেলো কীকরে?
অনিমা নিচু কন্ঠে বলল
—- ” খুন হয়েছে আমার আব্বু।”
—- ” হোয়াট? কিন্তু পাবলিক ইনফরমেশন তো বলছে উনি সুইসাইড করেছেন?”
অনিমা একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলল
—- ” সব শোনা কথা সত্যি হয়না।”
—- ” হুমম। কিন্তু তুমি বলেছিলে তুমি তোমার মামার বাড়িতে থাকতে, তাহলে চলে এলে কেনো ওখান থেকে? কী এমন হয়েছিলো?”
কিন্তু অনিমার কোনো উত্তর না পেয়ে আদ্রিয়ান বলল
—- ” অনি? অনি? ”
কিন্তু ডেকেও অনিমার কোনো সারা না পেয়ে বুঝলো ও ঘুমিয়ে গেছে। অনিমার এই বাচ্চামোতে হেসে দিলো আদ্রিয়ান, তারপর মনে মনে বলল
—- ” জানিনা কী এমন হয়েছিলো তোমার সাথে যে নিজের মামার বাড়ির চেয়েও ফুটপাত তোমার কাছে বেশি নিরাপদ মনে হয়েছিলো। আমি যদি আগেই তোমাকে পেয়ে যেতাম হয়তো তোমার সাথে এসব হতো না, তবে যাই হয়ে থাক, এখন যখন তোমাকে খুজে পেয়েছি আমি আমার দেয়া কথা রাখবো। নিজের সবটুকু দিয়ে তোমায় আগলে রাখবো।
একটু বলে ছলছল চোখে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল
—- ” আই প্রমিস।”
.
#চলবে…