Saturday, July 19, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1926



বর্ষণের সেই রাতে ❤পর্ব- ১৩

0

বর্ষণের সেই রাতে ❤পর্ব- ১৩
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

.
অনিমা কিছু না বলে আদ্রিয়ানের কাধে মাথা রেখে দিলো। আজ সে তার আবেগকে কিছুতেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেনা, খুব কান্না পাচ্ছে, তাই আদ্রিয়ানের কাধে মাথা রেখে নিরবে অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে সে। এই কান্না সুখের নাকি কষ্টের আ বলা মুসকিল, তবে কেদে নিজেকে হালকা করছে। অনিমা ওর কাধে মাথা রাখায় আদ্রিয়ান অদ্ভুত এক শান্তি অনুভব করছে, তবে কাদতে বারণ করছেনা কিছু সময় কাঁদা উচিত তাই নিজেও এক হাতে জরিয়ে নিলো ওর প্রাণভোমরাকে।
অনিমা অনেক্ষণ যাবত কেদেই চলেছে তবে নিঃশব্দে। আদ্রিয়ান এতোক্ষণ কিছু না বললেও এবার আর অনিমার কান্না সহ্য হচ্ছেনা ওর। অনেকক্ষণ ধরে কাদছে মেয়েটা নিরবে কাদলেও কেপে কেপে উঠছে বারবার। আদ্রিয়ান এবার অনিমার মাথাটা ওর কাধ থেকে সরিয়ে দিয়ে সোজা করিয়ে বসিয়ে ওর দিকে ঘুরিয়ে চোখের পানি ভালোভাবে মুছে দিয়ে বলল
— “ব্যাস অনেক হয়েছে নাও স্টপ ক্রাইং।”
অনিমা নাক টেনে একবার আদ্রিয়ানের দিকে একবার তাকালো। তারপরই ওর মনে পরলো ও এতোক্ষণ কী করছিলো, বুঝতে পেরেই তাড়তাড়ি আদ্রিয়ানের থেকে একটু দূরত্ব বজায় রেখে বসে চোখ নামিয়ে নিলো, আর মনে মনে নিজেই নিজেকে বকতে লাগল। কীভাবে আদ্রিয়ানের এতো কাছে গেলো ওও? আদ্রিয়ান নিশ্চই ওকে একটা গায়ে পরা মেয়ে ভাবছে। এসব ভাবতে ভাবতে নিচের দিকে তাকিয়ে হাত কচলাচ্ছে অনিমা। অনিমাকে অবাক করে দিয়ে আদ্রিয়ান নিজেই একটু এগিয়ে এসে অনিমার সাথে লেগে বসল। অনিমা একপলক আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে আবারো চোখ নামিয়ে নিলো। আদ্রিয়ান মুচকি হেসে বলল
— “তুমি আমার দিকে তাকাতে এতো লজ্জা পাও কেনো বলোতো?”
আদ্রিয়ানের এই কথাটায় অনিমা আরো বেশি লজ্জা পেলো। অনিমা যখনি আদ্রিয়ানের দিকে তাকায় তখনি আদ্রিয়ানকে ওর দিকে এমন অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে, আর সেই দৃষ্টি দেখে ও ভীষণ অসস্তিতে পরে যায়, সাথে লজ্জাও পায়। কিন্তু সে কথা মুখ ফুটে কীকরে বলবে আদ্রিয়ানকে। তাই মাথা নিচু করে আছে। আদ্রিয়ান অনিমার ব্যাপারটা বুঝতে পারলো তাই অনিমার দিকে সুক্ষ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ তারপর আবারো অনিমার হাত ধরল। এই স্পর্শটা অনিমাকে অনেকটা নাড়িয়ে দিলো, এরআগেও আদ্রিয়ান ওকে ছুয়েছে কিন্তু এই স্পর্শটায় অন্যকিছু ছিলো, এক অদ্ভুত অনুভূতি মিশ্রিত আছে যেটা অনিমার সারা শরীরে শিহরণ বইয়ে দিচ্ছে। আদ্রিয়ান অনিমার হাতের দিকে তাকিয়েই বলল
—- “প্রত্যেকটা সম্পর্ক মুজবুত হবার জন্যে সেই সম্পর্কের সাথে আরেকটা সম্পর্ক জুড়ে রাখতে হয় সেটা কী জানো?”
অনিমা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো আদ্রিয়ানের দিকে, আদ্রিয়ান অনিমার হাত আরেকটু শক্ত করে ধরে বলল
— “বন্ধুত্বের সম্পর্ক, যেকোনো সম্পর্কে যদি বন্ধুত্বের সম্পর্কটাও মিশে থাকেনা তাহলে সেই সম্পর্কটা খুব বেশিই দৃঢ় হয় সেটা বাবা-মা আর সন্তানের হোক, শিক্ষক ছাত্রের হোক, ভাই বোনের হোক, বয়ফ্রেন্ড গার্লফ্রেন্ডের হোক কিংবা স্বামী স্ত্রীর। এতে করে একে ওপরকে বোঝা যায়, একজন আরেকজনের সাথে সব শেয়ার করতে পারে, একে ওপরকে আগলে রাখতে পারে। তবে হ্যা বন্ধত্বের সম্পর্ক থাকলেও আসল সম্পর্কটা মাথায় রাখতে হবে যেমন বাবা মা বাবা মাই হয়, ভাই-বোন ভাই বোনই হয়, স্বামী স্ত্রী স্বামী স্ত্রীই হয়, এই সব সম্পর্কের কিছু আলাদা আলাদা সীমাবদ্ধতা থাকে তাই বন্ধুত্বের সম্পর্ক তৈরী করে সেই সীমা পেরোনো উচিত না, সেই সীমার মধ্যে থেকেই বন্ধু হওয়া উচিত। শুধু বন্ধু শুধু বন্ধুই হয় তারা সব সীমার উর্ধ্বে।”
অনিমা মুচকি হেসে বললো
— ” যে সম্পর্কের এতো ভালো ব্যাখ্যা দিতে পারে সব সম্পর্ককে এতো ভালো মূল্য জানে সে নিজেরই পরিবারের থেকে আলাদা আছে?”
আদ্রিয়ান মলিন হেসে বলল
— ” আমিতো ড্যাডের সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্কই করত চেয়েছিলাম কিন্তু ড্যাড হয়তো শুধু বাবা হয়ে থাকতেই বেশি পছন্দ করছিলেন।”
অনিমা কিছু বললো না। আদ্রিয়ানেও চুপ করে রইলো। অনিমা বুঝতে পরলো হয়তো আদ্রিয়ানের মন খারাপ হয়ে গেছে, হয়তো পরিবারের সবার কথা মনে পরেছে। আদ্রিয়ান কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল
— ” অনি ভবিষ্যতে আমাদের সম্পর্কটা কোন দিকে যাবে আমি জানিনা কিন্তু আমাদের মধ্যে যেকোনো সম্পর্ক শুরু হোক তার আগে আমি চাই আমাদের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক তৈরী হোক। তবে শুধু বন্ধু না আমাদের বন্ধুত্বেও কিছু সীমাবদ্ধতা থাকবে, কেনো সেটা আপাদত জিজ্ঞেস করোনা, সময় এলে নিজেই বলব। সো হবে আমার বন্ধু?”
অনিমা পুরো অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। আদ্রিয়ান আবরার জুহায়ের ওকে বন্ধু হতে বলছে? আর কোন সম্পর্ক শুরুর কথা বলছে আদ্রিয়ান? বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছাড়া আর কোন সম্পর্ক শুরু করতে চায় ও? অনিমা ওর অবাকের রেশ কাটিয়ে ওঠার আগেই আদ্রিয়ান বলল
— ” কী হলো হবেনা? ”
অনিমা কিছুক্ষণ চুপ থেকে নিজেকে সামলে আদ্রিয়ানের ওর যেই হাত ধরে আছে তার ওপর দিকে হাত রেখে মুচকি হেসে চোখ দিয়ে ইশারা করলো হ্যা হবে। আদ্রিয়ান হেসে দিয়ে হুট করেই জরিয়ে ধরল অনিমাকে, অনিমা তো পুরো জমে গেছে, হার্টবিট থেমে গেছে মনে হয়, নিশ্বাস ও ভারী হয়ে আসছে। আদ্রিয়ান শক্ত করে জরিয়ে ধরে আছে ওকে, কিছুক্ষণ অবাক হয়ে থাকার পর অনিমার মধ্যেও এক অনুভূতি কাজ করতে শুরু করলো, আদ্রিয়ান ওকে জরিয়ে ধরাতে বেশ শান্তি লাগতে শুরু করলো ওর, ভালোলাগতে শুরু করলো। ওও নিজের অজান্তেই মুচকি হেসে আদ্রিয়ানের পিঠে আলতো করে হাত রাখল।
________

আরো দুটো দিন কেটে গেছে এভাবেই, ঐ দিনের পর আদ্রিয়ানের সাথে অনেকটা নরমাল হয়ে গেছে অনিমা। এইদুইদিন আর দেখা করেনি ওরা তবে ফোনে কথা হয়েছে যদিও অনিমা এখনো নিজে থেকে ফোন করেনি, আদ্রিয়ানই করে। অনিমা অফিস থেকে ফিরেই তাড়াহুড়ো করে রেডি হচ্ছে, আদ্রিয়ান পাঁচ মিনিট যাবত নিচে ওয়েট করছে। অফিসে কাজ করছিলো হঠাৎ করেই আদ্রিয়ান মেসেজ করেছে অফিস থেকে ফিরে রেডি হয়ে থাকার জন্যে, কিন্তু কেনো? সেটা এতোবার জিজ্ঞেস করার পরেও বলেনি। বারণ করবে তার‍ও উপায় নেই, কারণ না গেলে তুলে নিয়ে যাবার হুমকি দেয়া হয়েছে তাকে, বেচারি আর কী করব? নীল কুর্তি আর কালো জিন্স পরে চুলটা সাইড সিথি করে আচড়ে নিলো। আয়নার সামনের থেকে সরে যেতে নিয়েও আদ্রিয়ান এর বলা কথাগুলো মনে পরতেই আরেকবার আয়নার দিকে তাকিয়ে ভাবলো সত্যিই কী একটু সাজলে ভালো লাগবে ওকে? কিছুক্ষণ ভেবে অরুমিতার গিফ্ট করা মেকাপ সেট থেকে কাজল টা নিতেই ওর রিকের করা টর্চার গুলোর কথা মনে পরলো, কী নির্মমভাবে মুখে গরম পানি ঢেলে দিয়েছিলো, সেই যন্ত্রণার কথা মনে পরলেও রুহ কেপে ওঠে ওর। নিজেকে সামলে কাজলটা রেখে চলে যেতে নিয়েও থেমে গেলো। আদ্রিয়ানতো ঠিকি বলেছে খারাপ কিছু অতীতের জন্যে নিজের বর্তমান কেনো নষ্ট করবে ও? জীবনটা ওর আর ওর জীবনটা ও নিজের মতো করেই বাচবে। এসব ভেবে নিজেকে সামলে কাজলটা নিয়ে ভাবতে লাগল। হঠাৎ পেছন থেকে আদ্রিয়ান বলে উঠলো
— “কী ভাবছো?”
অনিমা একটু চমকে পেছনে তাকিয়ে বলল
— ” আপনি? ”
— ” তোমার আসতে লেট হচ্ছিলো তাই দেখতে আসলাম কী করছো।”
— ” ওহ।”
আদ্রিয়ান অনিমাকে একবার স্কান করে বলল
— ” তুমিতো রেডিই আছো তাহলে চলো?”
— ” হুম।”
অনিমা কাজলটা রাখতেই আদ্রিয়ানের চোখ পড়ল সেদিকে, অনিমা ব্যাগটা কাধে নিয়ে বেড়তে গেলেই আদ্রিয়ান বলল
— “ওয়েট।”

“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
অনিমা থেমে গিয়ে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো আদ্রিয়ানের দিকে। আদ্রিয়ান কাজলটা হাতে নিয়ে ক্যাপ খুলে অনিমার সামনে গিয়ে দাড়ালো তারপর অনিমার গালে এক হাত রাখল, অনিমা তো পুরো শকড হয়ে তাকিয়ে আছে আদ্রিয়ানের দিকে আদ্রিয়ান আলতো হাতে অনিমার দু চোখেই হালকা করে কাজল পরিয়ে দিলো। অনিমা এখোনো অবাক হয়েই তাকিয়ে আছে আদ্রিয়ানের দিকে। আদ্রিয়ান মুচকি হেসে বক্স থেকে নুড কালার একটা লিপস্টিক নিয়ে অনিমার ঠোটে হালকা ছুইয়ে দিয়ে নিজের আঙ্গুল দিয়েই সুন্দরভাবে পুরো ঠোটে মিশিয়ে দিলো। অনিমার শরীরে জেনো কয়েকশ ভোল্টের শক লাগল আদ্রিয়ান ওর ঠোট স্পর্শ করাতে। আদ্রিয়ান অনিমাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে মুচকি হেসে ভ্রু নাচালো, এতে অনিমার ধ্যান ভাঙলো, সাথে সাথেই নিজেকে সামলে চোখ নামিয়ে নিলো, আদ্রিয়ান অনিমাকে ধরে আয়নার সামনে দাড় করিয়ে বলল
—- ” নিজেই নিজেকে দেখো এবার। ”
অনিমা আয়নার দিকে তাকালো আদ্রিয়ান ওর দুই বাহুতে হাত রেখে ওর পিঠ ঘেসে দাড়িয়ে আছে, অনিমা একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আদ্রিয়ানের দিকে, আদ্রিয়ান মুচকি হেসে বলল
— ” আমাকে দেখতে মিরোর লাগবেনা এমনিই দেখতে পাবে পালিয়ে যাচ্ছিনা, আপাদত নিজেকে দেখো।”
আদ্রিয়ানের কথায় অনিমা বেশ লজ্জা পেলো। লোকটা এমন কেনো? শুধু শুধুই একটা অসস্তিকর অবস্হায় ফেলে দেয় ওকে। অনিমা মাথা নিচু করে আছে আদ্রিয়ান অনিমার কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে বলল
— “দেখো নিজেকে।”
অনিমা আস্তে আস্তে আয়নায় নিজের প্রতিবিম্বের দিকে তাকালো। সত্যিই এটুকু সাজেই একটু অন্যরকম লাগছে ওকে, কিছুক্ষণ নিজের প্রতিবিম্বের দিকে তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিলো ওও। আদ্রিয়ান আয়নায় তাকিয়েই বলল
— “তুমি এতো শর্ট কেনো?”
অনিমা চোখ ছোট ছোট করে আদ্রিয়ানের প্রতিবিম্বের দিকে তাকিয়ে বলল
—- “আমি ৫’৩” ওকে?”
আদ্রিয়ান অনিমার প্রতিবিম্বের দিকে তাকিয়েই বলল
— “তাতে কী? দেখো তোমার মাথাটা আমার কাধের নিচে এসে পরে। তো তুমিতো শর্টই তাইনা?”
অনিমা একটা মুখ ভেংচি দিয়ে বলল
— ” হুহ আমার হাইট ঠিকিই আছে এভারেজের চেয়ে এক ইঞ্চি বেশি, বাট আপনার টাই ঠিক নেই এভারেজের চেয়ে অনেক বেশি।”
আদ্রিয়ান অনির বাহু ছেড়ে বলল
— “হ্যা এখন তো এসবই বলবে লিলিপুট একটা।”
অনিমা দুই কোমরে হাত দিয়ে বলল
— ” আম লিলিপুট?”
আদ্রিয়ান হাত ভাজ করে মিটমিটিয়ে হাসতে হাসতে বলল
— “লিলিপুটই তো।”
অনিমা রেগেমেগে বলল
— “অাপনি কী হ্যা? তালগাছ একটা।”
অাদ্রিয়ান অবাক হয়ে বলল
— ” তালগাছ?”
— “জ্বী। আমি যদি লিলিপুট হই তো আপনি তালগাছই।”
আদ্রিয়ান একটু অবাক হলো,এইকয়দিনে অনিমাকে কখন এতো চঞ্চলভাবে কথা বলতে দেখেনি। অনিমার এইরূপ দেখে ও খুশিও হলো যাক ও ওর কথা রাখতে পারছে, অনিমার মধ্যে লুকিয়ে থাকা চঞ্চল মেয়েটাকে বের করতে পারছে আসতে আসতে, এসব ভেবে আদ্রিয়ান হেসে দিয়ে বলল
— ” আচ্ছা মহারাণী চলুন এবার।”
— ” হুম।”
অনিমা নিজেও অবাক, কতোদিন পর কারো সাথে এভাবে কথা বলল ও নিজেই জানেনা। এরপর দুজনে মিলেই বেড়িয়ে পরলো। গাড়িতে উঠে আদ্রিয়ান গাড়ি স্টার্ট দিতেই অনিমা বলল
— ” যাচ্ছি কোথায়?”
আদ্রিয়ান সামনের দিকে তাকিয়েই গাড়ি চালাতে চালাতে বলল
— “জানিনা।”
অনিমা আবাক হয়ে বলল
— “মানে?”
আদ্রিয়ান মুচকি হেসে বলল
— ” লং ড্রাইভে যাচ্ছি, কোথায় যাচ্ছি জানা নেই। যেদিকে যেতে ইচ্ছে করবে সেদিকেই যাবো।”
আদ্রিয়ানের কথা শুনে অনিমা হেসে দিয়ে বলল
— ” আপনি সত্যিই একটা পাগল।”
— ” আই নো।”
অনিমা মনে মনে ভাবছে একসময় এমন পাগলামী তো ওও করতো। মাঝরাতে আব্বুকে জোর করে ঘুম থেকে তুলে লং ড্রাইভে যাওয়া আইসক্রিম খাওয়া। কিন্তু এখন নিজেকেও কেমন হারিয়ে ফেলেছে, ভেবেই একটা দীর্ঘশ্বাস নিলো। বেশ দুই ঘন্টা ড্রাইভ করার পর আদ্রিয়ান বলল
— ” আইসক্রীম খাবে?”
অনিমা ভাবছে লং ড্রাইভে এসে আইসক্রীম খাওয়াতো ওর অভ্যাস ছিলো, কিন্তু আদ্রিয়ানের মাথায় কীকরে এটা আসলো? শুধুই কাকতলীয়? অনিমার উত্তরের অপেক্ষা না করেই আদ্রিয়ান গাড়ি থামালো এক আইসক্রীম পার্লারের সামনে তারপর অনিমার হাত ধরে গাড়ি থেকে নামিয়ে ভেতরে নিয়ে গেলো। অবাক করা বিষয় গোটা পার্লারে ওরা ছাড়া আর কোনো কাস্টোমার নেই। আদ্রিয়ান যেতেই একটা লোক উঠে এসে খুশিতে গদগদ হয়ে বলল
— ” আরে স্যার আপনি? এসে গেছেন? আপনার কথামতো সব রেডি করে রেখেছি।”
আদ্রিয়ান মুচকি হেসে বলল
— “গুড। একটা চকলেট আইসক্রীম, আর একটা ভ্যানিলা।”
— ” ওকে স্যার।”
আদ্রিয়ান অনিমার হাত ধরেই ওকে নিয়ে একটা টেবিলে বসল। অনিমাতো কখন থেকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আদ্রিয়ানের দিকে দিকে। অনিমাকে ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে মুচকি হেসে বলল
— ” এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো?”
— ” এখানে আর কোনো কাস্টোমার নেই কেনো?”
আদ্রিয়ান দুইহাত এককরে এক হাতের আঙ্গুলের মধ্যে আরেক হাতের আঙ্গুল ঢুকিয়ে বলল
— ” আজ রাতের জন্যে পুরোটা বুক করেছি।”
অনিমা তো আরেকদফা অবাক হলো, এইটুকু সময়ের জন্যে গোটা রাত? তবুও নিজেকে সামলে বলল
— ” আপনি কীকরে জানলেন আমি চকলেট আইসক্রীম পছন্দ করি?”
আদ্রিয়ান হেসে দিয়ে বলল
— ” সিম্পল! তুমি চকলেট পছন্দ করো, আর যে চকলেট এতো পছন্দ করে সে চকলেট আইসক্রীম তো পছন্দ করবেই।”
অনিমা কিছু বলবে তার আগেই একজন লোক এসে আইসক্রীম দিলো টেবিলে তারপর আদ্রিয়ান এর দিকে তাকিয়ে বলল
— ” স্যার আমি আপনার সব গান শুনি, খুব বড় ভক্ত আমি আপনার, একটা সেলফি নিতে পারি প্লিজ?”
আদ্রিয়ান উঠে দাড়িয়ে হেসে বলল
— ” সিউর। ”
ছেলেটার সাথে সেলফি তুলার পর, দুজনে আইসক্রীম খেয়ে কিছুক্ষণ গাড়ি করে ঘুরলাম। ফ্লাটের সামনে গাড়ি থামানোর পর আমি নামতে গেলেই আদ্রিয়ান হাত ধরে বলল
— ” এইযে ম্যাডাম সাজতে বলেছি বলে যে সেজেগুজে স্টাইল করে ঘুরে বেরাবেন সেটা কিন্তু হবে না। আজ ঘুরতে যাচ্ছি তাই একটু লিপস্টিক দিতে দিয়েছি। রেগুলার সাজবে না কিন্তু, তবে হ্যা কাজলটা রেগুলার দিও, এরবেশি সাজার পারমিশন দেই নি আমি।”
অনিমা এতোক্ষণ হেবলার মতো তাকিয়ে আদ্রিয়ানের কথা শুনছিলো লাস্ট কথাটা শুনে ভ্রু কুচকে বলল
— ” পারমিশন?”
আদ্রিয়ান স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বলল
— ” ইয়েস পারমিশন।”
অনিমা চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বলল
— ” যদি না মানি?”
আদ্রিয়ান এবারের খুব স্বাভাবিক ভাবেই উত্তর দিলো
— ” কীকরে মানাতে হয় সেটা আমি জানি। এখন বাই।”
বলে অনিমার হাত ছেড়ে দিলো অনিমা নামতেই ওকে হাত নেড়ে চলে গেলো আদ্রিয়ান। অনিমা একটু অবাক হলো সাথে ভালোও লাগলো আদ্রিয়ানের ওর প্রতি এই অধিকারবোধ দেখে। অন্য একজনও তো ওর ওপর অধিকার খাটাতো, আদ্রিয়ানও খাটাচ্ছে কিন্তু দুজনের অধিকার খাটানোর পদ্ধতিটা কতোটা ভিন্ন। একজন ওকে নিজের সম্পত্তি মনে করে আরেকজন… আরেকজন কী? কী মনে করে আদ্রিয়ান আমাকে? ওও কী রিকের মতো ওকে নিজের সম্পত্তি মনে করবে? যার সাথে যা খুশি করা যায়। এসব ভাবতে ভাবতেই ফ্লাটে ঢুকলো অনিমা।
________

বারে বসে নিজের মতো করে আলাদা এক জায়গায় ড্রিংক করে চলেছে রিক। ওর বন্ধুরা একটু দূরেই গার্লফ্রেন্ডস বা অন্য মেয়েদের সাথে ডান্স করছে। বেশ কয়েকজন স্টাইলিস্ট মেয়ে এসে ডান্স করার ইচ্ছে প্রকাশ করেছে কিন্তু রিক ইগনোর করে গেছে, এসবের প্রতি এইমুহূর্তে কোনো ইন্টারেস্ট নেই ওর। হঠাৎ একটা মেয়ে এসে রিকের কাধে হাত রেখে বলল
— “হাই হানি? লেটস হ্যাভ আ ডান্স?”
রিক একটু বিরক্তি নিয়ে হাতটা সরিয়ে বলল
— ” নট ইন্টারেস্টেড।”
মেয়েটি নাছোড়বান্দা। ও রিকে সামনে এসে এক হাত কাধে আর আরেক হাত গালে দিয়ে বলল
— ” হোয়াই বেবি? কাম অন? লেটস ইনজয়।”
রিক ঝাড়া দিয়ে ছাড়িয়ে রাগী গলায় বলল
— ” আই সেইড নো। এন্ড ডোন্ট ডেয়ার টু টাচ মি এগেইন।”
কিন্তু মেয়েটি বেহায়ার মতো এটেনশন পেতে রিকের গালে কিস করে দিলো রিক সাথে সাথেই মেয়েটাকে সর্বশক্তি দিয়ে একটা চড় মেরে দিলো। এতো জোরে মেরেছে যে মেয়েটা ফ্লোরে পরে গেলো। সাথে সাথেই সব মিউসিক থেমে গেলো চারপাশ ঠান্ডা হয়ে গেলো। রিকের বন্ধুরা ছুটে এসে বলল
— ” কী হয়েছে?”
রিক দাত করমর তাকিয়ে চিৎকার করে বলল
— “এই ডাসবিনটাকে সরা আমার সামনে থেকে। এইসব চিপ মেয়েদের সাহস কীকরে হয় রিক চৌধুরীকে কিস করার?”
মেয়েটা উঠে জান বাচিয়ে পালালো। রিক এখোনো রাগে ফুসছে। একটা চেয়ারে বসে সরাসরি বোতলে চুমুক দিতে লাগল। ঐ মেয়েটার গলা কেটে দিতে ইচ্ছে করছিলো ওর। যেখানে দুই বছর অনিমাকে নিজের আয়ত্তে রেখেও ওকে ঐরকম উদ্দেশ্যে ছোয় পর্যন্ত নি সেখানে এই মেয়েটা এসব ভাবে কোন সাহসে। ওর বন্ধুরা ওকে শান্ত করার চেষ্টা করছে। ওরাও অবাক যে ছেলের তিন বছর আগেও প্রতিদিন আলাদা আলাদা মেয়ে লাগত এখন সে কোনো মেয়েকে সহ্যই করতে পারেনা? এটাও সম্ভব।
________

অন্ধকার একটা রুমে বসে দাবা কোট সামনে নিয়ে দুইহাত থুতনির নিচে রেখে একদৃষ্টিতে প্রতিটা গুটি দেখছে, আর খুব গভীরভাবে কিছু ভেবে চলেছে আদ্রিয়ান। কিছুক্ষণ পর একটা ছেলে এসে বলল
— “স্যার আসবো?”
আদ্রিয়ান দাবার গুটির দিকে তাকিয়েই বললেন
— “এসো অভ্র”
অভ্র হলো আদ্রিয়ানের পার্সোনাল এসিস্টেন, আদ্রিয়ানের ব্যাক্তিগত প্রফেশনাল সব কাজেই সাহায্য করে ও। অভ্র ভেতরে এসে বলল
— “স্যার ম্যামের সম্পর্কে যা যা ইনফরমেশন চেয়েছেন সব এনেছি।”
আদ্রিয়ান এবারেও গুটির দিকে তাকিয়ে বলল
—- “শুরু করো।”
—- ” স্যার ম্যাম লালবাগ থাকতেন ওনার বাবার সাথে, ওনার মা জন্মের পরেই মারা যান। ওনি যখন এইচ এস সি এক্সাম শেষ করেন তার কিছুমাস পরেই কোনো এক কারণে ওনার বাবা সুইসাইড করেন কিন্তু কারণটা আজও কেউ জানেনা।”
এটুকু বলে অভ্র থেমে যায় আদ্রিয়ান বলল
— “বলতে থাকো।”
— ” এরপর থেকে উনি ওনার মামা বাড়িতেই থাকতেন। কিন্তু চার বছর পর কোনো এক কারণে উনি ওখান থেকে পালিয়ে আসে। যদিও ওনার মামা মামি ছড়িয়েছেন যে উনি কারো সাথে পালিয়ে গেছেন।”
এটা শুনে আদ্রিয়ান একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিলো। যার অর্থ অভ্র বুঝলোনা। আদ্রিয়ান অভ্রর দিকে না তাকিয়েই জিজ্ঞেস করলো
— “ওর বাবার নাম কী?”
— ” হাসান কোতয়াল।”
আদ্রিয়ান চমকে গিয়ে তাকালো অভ্রর দিকে, অবাক হয়ে বলল
— ” চিফ রিপোর্টার হাসান কোতয়াল?
— ” জ্বী স্যার।”
আদ্রিয়ান আবারো জিজ্ঞেস করল
— ” আর ইউ সিউর?”
— ” ইয়েস স্যার।”
আদ্রিয়ান কিছুক্ষণ চুপ থেকে কাপা গলায় বলল
— ” অব্ ইউ ক্যান গো।”
অভ্র চলে গেলো আর আদ্রিয়ান মাথা নিচু হাত মুঠো করে বসে আছে। চোখ দুটো ছলছল করছে, তবে মুখে হালকা হাসি আছে। কোনোরকমে নিজেকে সামলে একটা শ্বাস নিয়ে বলল
— ” ইয়েস। আই ওয়াজ রাইট। আমার কোনো ভূল হয়নি। এটলাস্ট আই হ্যাভ ফাউন্ড ইউ।”
#চলবে…

বর্ষণের সেই রাতে ❤ পর্ব: ১২

0

বর্ষণের সেই রাতে ❤
পর্ব: ১২
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

.
মিস্টার রঞ্জিত কোনো উত্তর দিলেন না। তবে বুদ্ধিটা মন্দ লাগেনি তার। উনি জুস খেতে খেতে ভাবলেন,ঠিকি তো বিষধর সাপকে পিটিয়ে মেরে ফেললে মজা আছে নাকি? বিষধর সাপের বিষদাঁত ভেঙ্গে তাকে নিজের মতো করে নাচানোতেই তো আসল মজধা। কথাটা ভেবেই আপন মনে শয়তানী হাসি দিলেন মিস্টার রঞ্জিত।
_______

আজকে রাতে আবারো বর্ষণ শুরু হয়েছে, তবে ভারী বর্ষণ না, গুড়ি গুড়ি এর চেয়ে একটুখানি বেশি আর মধ্যমের চেয়ে একটুখানি কম । বাজ পরছে না এখোনো। । রাতের বৃষ্টির টুপুর টুপুর শব্দ, তারওপর বৃষ্টিভেজা ঠান্ডা বাতাসের সাথে হালকা হালকা বৃষ্টির ঝাপটা, বর্ষার রাতে এই মনমুগ্ধকর পরিবেশের প্রায়ই দেখা মেলে। এমন সময় কেউ পছন্দ করে কম্বল মুরি দিয়ে ঘুমাতে, আর কেউ পছন্দ করে জানালা সামনে বা ব্যালকনিতে দাড়িয়ে বর্ষণের সেই রাতকে উপভোগ করতে। অনিমা এই দুই কাতারের মধ্যেই পরে, যখনি বাজ পরে তখন সে কম্বল মুরি দিয়ে ঘুমাতেই ভালোবাসে আর যখন কমগতির হালকা বৃষ্টি থাকে তখন সে দ্বিতীয় কাজটাই করে। তাই এখন ব্যালকনিতে চেয়ার নিয়ে বসে কফি খেতে খেতে বৃষ্টি দেখছে আর নানা জল্পনা কল্পনা করে চলেছে।
আর অপরদিকে আদ্রিয়ানও ব্যালকনির রেলিং ধরে দাড়িয়ে বৃষ্টি দেখছে। আদ্রিয়ান কিন্তু দ্বিতীয় কাতারেই পরে, বাইরে বৃষ্টি হলে ঘুমিয়ে থাকার কথা ভাবতেই পারেনা সে। অনিমার চেহারাটা বারবার মনে পরছে তার। ভাগ্যিস সেদিন ঐ লোকগুলো এট্যাক করেছিলো আর ও কিছু না ভেবে ঐ ফ্লাটেই ঢুকেছিলো, তাইতো ও ওর প্রাণভোমরাটাকে পেয়েছে। ওর বাচার তো দুটোই কারণ ছিলো এক ওর গান দুই হলো… কিন্তু এই মেয়েটা এসে সবকিছু বদলে দিলো, ওকে বাচার নতুন এবং প্রধান একটা কারণ দিয়ে দিলো। আচ্ছা কী করছে এখন ওর জানপাখি? ঘুমিয়ে গেছে নাকি বৃষ্টি দেখছে? ফোন করবে একটা? এতক্ষণ যাবত নিজের মনে এসব আওরে নিয়ে ফোনটা হাতে নিলো আদ্রিয়ান। কিছুক্ষণ ভেবে কল করেই দিলো।
নিজের ভাবনায় মগ্ন অনিমা ফোনের আওয়াজ পেয়ে ব্যালকনি থেকে উঠে তাড়াতাড়ি ফোনটা নিয়ে দেখে আদ্রিয়ানের কল। একটু অবাক হলো ওও, তারপর ব্যালকনির চেয়ারে বসে ফোনটা রিসিভ করে কানে নিয়ে বলল
— “হ্যালো?” — “কেমন আছো?”
— ” ভালো, আপনি?”
— ” বেশ ভালো, কী করছো?”
— “এইতো ব্যালকনিতে বসে আছি।”
আদ্রিয়ান ছোট্ট করে বলল
— “ওহ।”
অনিমা কিছু না বলে চুপ করে রইলো। অাদ্রিয়ান নিজেই বলল
— ” আচ্ছা তুমি এতো রুড কেনো বলোতো? নিজে থেকেও তো মাঝে মাঝে একটা ফোন করতে পারো?”
অনিমা কী বলবে বুঝতে পারছেনা। এইরকম প্রশ্নের কী উত্তর দেওয়া যায় সেটাই ভেবে পাচ্ছেনা ও। তাই কিছু না বলে চুপ করে রইলো। আদ্রিয়ান হালকা হেসে দিয়ে বলল
— “উত্তর না থাকলে চুপ করে থাকাটা কী তোমাকে অভ্যাস?”
— “তো উত্তর না থাকলে আর কী করা যায়?”
— “ওই টপিকেই অন্য কিছু বলতেই পারতে।”
অনিমা একটু অবাক হলো, অন্য কী বলবে? তাই কৌতুহলি কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো
— ” লাইক?”
— ” লাইক আমার ঐ প্রশ্নের উত্তরে বলতে পারতে ‘ঠিকাছে এর পর থেকে ফোন করব’।”
অনিমা হেসে দিলো, সত্যিই ছেলেটা অদ্ভুত আর তার চেয়েও অদ্ভূত ওর কথাবার্তা। অনিমা কথার টপিক পালটে বলল
— “আপনি কী করছেন?”
— “আমিও ব্যালকনিতেই আছি তবে বসে না দাড়িয়ে।”
— ” ওহ”
— “তোমার সাথে আবার মিট করতে ইচ্ছে করছে।”
অনিমা চমকে গেলো সাথে একটু অবাক ও হলো। কী চাইছে টা কী এই ছেলে? কী চলছে আদ্রিয়ানের মনে? অনিমা যেটা ভাবছে সেটা কী সম্ভব আদোও? অনিমা এসব কথা ভাবতে ভাবতেই আদ্রিয়ান বলল
— “কীহলো? কী ভাবছো?”
অনিমা হকচকিয়ে বলল
— “নাহ ক্ কিছু না।”
আদ্রিয়ান অনিমার এমন কান্ডে হেসে দিলো। হাসতে হাসতেই বলল
— ” আচ্ছা ঠিকাছে, অফিস টাইম শেষ কখন তোমাদের?”
— ” এমনিতে রাত আট টায় শেষ হয় তবে কাজ থাকলে আরো রাত হয়। ”
কথাটা শুনে আদ্রিয়ানের মুড একটু অফ হয়ে গেলো, ও মনে মনে ভেবে রেখেছিলো কালকে দেখা করবে অনির সাথে কিন্তু রাত আটটায় পর অফিস শেষ হলেতো সেটা সম্ভব নয়। তাই একটু মন খারাপ নিয়ে নিচু কন্ঠে বলল
— “ওহ”
অনিমা একটু ইতস্তত করে বলল
— ” কিন্তু কালকে দুপুরের পরে আর কাজ নেই। সকালে শুধু একটা কলেজের যেতে হবে ছাত্ররা মানববন্ধন করেছে সেই নিউস এর জন্যে। ওটা করতে করতে দুপুর হয়ে যাবে তারপর ফ্রি আছি।”
কথাটা শুনে আদ্রিয়ানের মুখে হাসি ফুটে উঠল। যাক তাহলে কালকে তার প্রেয়সীকে কাছ থেকে দেখতে পাবে সে। তাই খুশি খুশি কন্ঠেই বলল
— ” অবব্ দেন ঐ কলেজের নাম আর এড্রেসটা মেজেস করে দাও। আমি ওখান থেকে তোমাকে পিক করে নেবো?”
অনিমা অবাক হয়ে বলল
— “পিক করবেন?”
আদ্রিয়ান স্বাভাবিক ভঙ্গিতে উত্তর দিলো
— ” হ্যা। ”
— ” বাট..”
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন

অনিমাকে কথাটা শেষ করতে না দিয়ে আদ্রিয়ান বলল
— “নো বাট নো কিন্তু। আমি কাল আসছি সো স্কুটি নিয়ে বেরিয়ো না তীব্রকে বলো তোমায় নিয়ে যেতে।”
অনিমা নিজেও চায় যে আদ্রিয়ান আসুক কিন্তু তবুও আদ্রিয়ানকে জ্বালানোর জন্যে একটু দুষ্টুমি করে বলল
— “আরে আপনি আসলেই তো হবেনা আমি যেতে চাই কী না সেটা শুনবেন না?”
আদ্রিয়ান এবার একটু ধমকের সুরে বলল
— “আমার যেটুকু শোনার দরকার শুনে নিয়েছি। আমি পারমিশন চাইনি তোমার, কালকে আমি আসছি। আর রইলো তুমি যেতে চাওয়া কী না সেই প্রশ্ন? যেতে না চাইলে তুলে নিয়ে আসবো গট ইট?”
বলেই ফোনটা কেটে দিলো আদ্রিয়ান। অনিমা বেশ অবাক হলো হঠাৎ এভাবে রেগে গেলো কেনো? আর কী বলছিলো যেতে না চাইলে তুলে নিয়ে যাবে? পাগল টাগল হয়ে গেলো নাকি? যা খুশি করুক, শুধুই ধমকালো ব্যাটা খবিশ। বলেই মুখ ফুলিয়ে এড্রেস মেসেজ করে গিয়ে শুয়ে পরল অনিমা।
এদিকে আদ্রিয়ান ফোন কাটার পর বড় বড় কয়েকটা শ্বাস নিয়ে নিজেকে শান্ত করে বিড়বিড় করে নিজেই নিজেকে বলল
— “কুল আদ্রিয়ান কুল। কী করছিস কী তুই? কন্ট্রল ইউর সেলফ, কন্ট্রল। তোর এই রূপ ওর জন্যে না একদমি না।”
লম্বা একটা শ্বাস নিয়ে নিজেকে ঠান্ডা করলো আদ্রিয়ান তারপর বলল
— “ও কী রাগ করেছে? সরি বলতে হবে।”
ফোনটা হাতে নিয়ে কল করতে গিয়েও থেমে গেলো তারপর আপন মনেই বলল
— ” থাক এখন আর ফোনটা করার দরকার নেই কালকে সরাসরি সরি বলে দেবো।”
ফোনটা রেখে রেলিং ধরে দাড়িয়ে বৃষ্টি দেখতে দেখতে ভাবল কদিন আগে অবধি মেয়েটাকে চিনতো না সে, কিন্তু এখন ওর সবটা জুরেই অনিমার বসবাস। সত্যিই নিয়তি খুব জটিল একটা ছোট্ট ঘটনা মুহূর্তেই সবকিছু বদলে দেয়। গিটার হাতে নিয়ে ব্যালকনিতে বসে টুংটাং সুর তুলতে তুলতে চোখ বন্ধ করে অনিমার কথা ভাবতে লাগল ও।
________

তীব্র গাড়ি নিয়ে অনিমার ফ্লাটের সামনে ওয়েট করছে। পাঁচ মিনিটের মাথায় অনিমা দ্রুতপদে এসে গাড়িতে উঠে বসে পরল। তীব্র গাড়ি স্টার্ড দিতে দিতে বলল
— “কী ব্যাপার বলতো? আজ আমাকে নিতে আসতে বললি?”
অনিমা সিটবেল্ট বাধতে বাধতে বলল
— ” আদ্রিয়ান আসবে আজকে।”
এটা শুনে তীব্র প্রথমে একটু অবাক হলো তারপর মুচকি হেসে বলল
— ” ওয়াহ ভাই। ভালোই তো চলছে তোদের। তা ভাইয়া থেকে জিজু কবে হচ্ছে?”
অনিমা বিরক্ত হয়ে তাকালো তীব্রর দিকে তারপর বিরক্তি নিয়ে বলল
— “তোরা কেনো এসব ফালতু মজা নিস বলতো?”
তীব্র হেসে গাড়ি চালাতে চালাতে বলল
— ” ফালতু না কী সেটাতো পরেই দেখা যাবে।”
অনিমা কিছু বললোনা কিছুক্ষণ পর কিছু একটা ভেবে বলল
— ” বাই দা ওয়ে অরু কোথায়?”
— ” ওর বাড়িতে পূজো আছে আজ তাই ছুটি নিয়েছে।”
অনিমা খানিকটা অবাক হয়ে বলল
— “প্রতিবারতো আমাদের নিয়ে যায়, এবার কী হলো?”
তীব্র হেসে দিয়ে বলল
— “কারণ এবার ওর দিদা এসছে।”
— ” হ্যা তো? ”
— ” আমরা মুসলিম এতে অরুর বাবা মায়ের প্রবলেম না থাকলেও ওর দিদার ব্যাপক প্রবলেম। এবার বুঝলি নাকি আরো কিছু বলতে হবে?”
— ” হুম বুঝলাম। আমরা গেলে বুড়ি ক্যাটক্যাট করবে তাই ডাকেনি, তাইতো?”
— “হুমম”।
এরপর দুজনেই হেসে দিলো।
________

সারারাত ক্লাবে বন্ধুদের সাথে পার্টি করে সকাল আটটায় বাড়িতে এলো রিক। মিস্টার রঞ্জিত সোফায় বসে কফি খেতে খেতে পেপার দেখছিলেন আর তার পাশেই কবির শেখ বসে কফি খাচ্ছেন। ছেলেকে দেখে মিস্টার রঞ্জিত একটা ছোট্ট শ্বাস নিলেন প্রায়ই সারারাত বাইরে কাটিয়ে আসে ওও। এসব দেখতে দেখতে এখন অভ্যস্ত উনি। রিক ভেতরে যেতে নিলেই মিস্টার রঞ্জিত গম্ভীর কন্ঠে বললেন
— “শুনে যাও।”
রিক ভ্রু কুচকে তাকালো, এখন ও পুরো মাতাল না হলেও নেশাটা পুরোপুরি কাটেনি। তাই চোখ ঝাপটা দিয়ে ভাঙা গলায় বলল
— “বলো।”
মিস্টার রঞ্জিত চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বললেন
— ” ঐ মেয়েটার একটা ছবি দিয়ে যেও।”
রিকে একটু অবাক হয়ে বলল
— ” ওর ছবি দিয়ে কী করবে?”
— ” ওকে খুজতে লোক লাগাবো।”
রিক একটু চুপ থেকে রাগী গলায় বলল
— ” তারমানে এতোদিন খোজো নি তুমি ওকে?”
মিস্টার রঞ্জিত হকচকিয়ে গেলেন। আমতা আমতা করে বললেন
— ” অব্ আসলে ”
রিক তার বাবাকে থামিয়ে দিয়ে বলল
— ” স্টপ ড্যাড, কোনো এক্সকিউস এর দরকার নেই। আমার ধারণাটাই সত্যি ছিলো, খোজইনি তুমি ওকে?
— ” এখন খুজবো তো।”
— “আর খোজার দরকার নেই তোমার আমি লোক লাগিয়ে দিয়েছি ওলরেডি। তুমি তোমার কাজ নিয়েই থাকো।”
এটুকু বলে ভেতরে যেতে নিয়েও থেমে গেলো তারপর চেচিয়ে বলল
— ” মম আমি এখন ঘুমোবো আমার খিদে পেলে নিজেই খাবার চাইবো। সো ডাকাডাকি করে কেউ যেনো আমাকে ডিসটার্ব না করে।”
বলেই হনহন করে চলে গেলো রিক। আর মিস্টার রঞ্জিত রাগান্বিত গলায় বলল
— “ছেলেটা দিন দিন বেশি বেপোরোয়া হয়ে যাচ্ছে। ”
মিসেস লিমা হাত মুছতে মুছতে এসে বললেন
— ” ছেলেতো তোমারই তাইনা? তুমি ওর চেয়ে কোন অংশে ভালো? ডক্টর বলেছে বলে মদ খাওয়াটা কমিয়ে দিয়েছো, এছাড়া আর পার্থক্য কী?”
মিস্টার রঞ্জিত দাতে দাত চেপে বললেন
— “বেশি কথা না বলে চুপচাপ ব্রেকফাস্ট সার্ভ করো।”
মিসেস লিমা চলে গেলেও মিস্টার রঞ্জিত গভীরভাবে ভাবছেন। সত্যিই ছেলের লাগামটা আরো আগেই ধরা উচিত ছিলো ওনার এখন আর কিছু করার নেই ছেলে যে টোটালি তার হাতের বাইরে চলে গেছে সেটা বুঝেছেন উনি।
________

নিউস সুট শেষ করে অনিমা কলেজ গেইটের সামনে দাড়িয়ে আছে। তীব্রর কাজ ছিলো তাই চলে গেছে। এরমধ্যেই আদ্রিয়ানের গাড়ি এসে থামলো ওর সামনে। প্রথমে হকচকিয়ে গেলেও পরে বুঝতে পারলো এটা আদ্রিয়ান। আদ্রিয়ান দরজা খুলে বাইরে বেড়িয়ে এলো, আজকেও ক্যাপ আর সানগ্লাস এর জন্যে সহজে ওকে কেউ চিনবেনা। আদ্রিয়ান দ্রুতপদে এসে অনিমার হাত ধরে বলল
— “তাড়াতাড়ি চলো কেউ চিনে ফেললে ফেসে যাবো। গার্ড আনিনি আমি”
বলেই অনিমার হাত ধরে গাড়ির ফ্রন্ট সিটে বসিয়ে দিয়ে নিজে ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট দিলো। দুজনেই চুপ করে আছে, তবে আড়চোখে দুজন দুজনকে দেখে চলেছে। আধ ঘন্টা পর একটা রেস্টুরেন্টের সামনে গাড়িটা থামালো আদ্রিয়ান, ওখানে ওর বুক করা প্রাইভেট রুমে নিয়ে গেলো অনিমাকে। তবে এই দীর্ঘ সময় দুজনেই চুপ ছিলো। আদ্রিয়ান অনিমার দিকে তাকিয়ে বলল
— ” কী খাবে?”
অনিমা নিচু কন্ঠে বললে
— ” আপনি যা ওর্ডার করেন।”
— “সিউর?”
— “ইয়াহ।”
আদ্রিয়ান খাবার ওর্ডার করে দিলো। অনিমা একধ্যানে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে কেনো জানি খুব আনইজি লাগছে তার, আর আদ্রিয়ান গালে হাত দিয়ে একধ্যানে দেখে চলেছে অনিমাকে, ঐ মুখের দিকে সারাজীবণ তাকিয়ে থাকলেও যেনো ক্লান্ত হবেনা সে।
________

রিক খাটে উপোর হয়ে এলোমেলোভাবে শুয়ে আছে তবে ঘুমোচ্ছেনা ঘুম ভেঙ্গে গেছে একটু আগেই এখন শুধু শুয়ে আছে। গভীরভাবে ভাবছে কিছু কী আছে ঐ একটা মেয়ের মধ্যে যে ওর না থাকা ওকে এতো পোড়াচ্ছে? পিঠে কেউ হাত রাখতেই পেছন ঘুরে তাকালো রিক। তাকিয়ে কবির শেখ কে দেখে উঠে বসে চোখ ডলে বলল
— “বসো।”
কবির শেখ টি- টেবিল থেকে খাবার রিকের দিকে বাড়িয়ে বলল
— “আগে এটা খেয়ে নাও।”
রিক বিরক্ত হয়ে বলল
— ” খিদে নেই আমার মামা।”
কবির শেখ রিকের কাধে হাত রেখে বললেন
— “লোক লাগিয়েছো তো পেয়ে যাবে ওকে। নিজের এমন অযত্ন করলে হবে?”
রিক এবার রাগী গলায় বলল
— “ড্যাড এটা কেনো করল মামা? কেনো খোজেনি ওকে? এটা জেনেও যে আই ডেসপারেটলি ওয়ান্ট হার।”
— ” আচ্ছা বাবাই এসব বাদ দাও আগে খেয়ে নাও। ”
রিক খাবারটা ঠেলে সরিয়ে বলল
— ” পারছিনা মামা পারছিনা বাদ দিতে। ওও কতোদিন ধরে নেই আমার কাছে। এতোদিনে ওকে যদি কেউ বিয়ে নেয়? কিংবা ও যদি কাউকে ভালোবেসে ফেলে?”
— ” তাতে কী যার কাছেই থাক তাকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিয়ে ওকে নিয়ে আসবে? সিম্পল!”
— ” নাহ মামা তুমি বুঝছোনা। আমি বারণ করার পরেও কলেজের অনুষ্ঠানে একদিন ও হালকা সেজে গেছিলো, আর ছেলেরাও ওকে দেখে ফিদা হচ্ছিল। তার শাস্তি হিসেবে আমি ওর মুখে গরম পানি ঢেলে দিয়েছিলাম, আমায় পায়ে ধরে অবধি ক্ষমা চেয়েছিলো তবুও মাফ করিনি আমি, দুই দিন অবধি মুখ লাল হয়ে ছিলো ওর জানো? আর সেই জায়গায় ওকে অন্যকেউ টাচ করবে মানতে পারবোনা আমি সেটা। কিছুতেই না। যদি কেউ সেটা করে তাহলে তার শেষ দিন ঘনিয়ে এসছে, আর ওই মেয়েকে কী করবো সেটা ভাবতেও পারবেনা কেউ।”
বলেই উঠে হনহন করে চলে গেলো ওয়াসরুমে আর কবির শেখ ওর যাবার দিকে তাকিয়ে খানিক হেসে বললেন
— ” কী আছে ঐ মেয়ের কপালে কে জানে? আর যদি প্রেমে পরে থাকে তাহলে সেই ছেলের অবস্হা তো…তবে যাই হোক তাতে আমার কী?
________

খাবার সামনে নিয়ে বসে আছে আদ্রিয়ান আর অনিমা। আদ্রিয়ান এবার অনিমার দিকে ইশারা করে বলল
— ” শুরু করো।”
অনিমা শুরু করার পর আদ্রিয়ানও শুরু করল। খাওয়ার সময়ও দুজন কোনো কথা বলেনি। খাওয়া শেষে আদ্রিয়ান টিস্যু দিয়ে হাত মুছতে মুছতে বলল
— ” চলো ”
— ” এখন কোথায়? ”
— ” ছাদে।”
অনিমা ভ্রু কুচকে তাকিয়ে রইলো আদ্রিয়ান এর দিকে আদ্রিয়ান সেদিকে পাত্তা না দিয়ে ওর হাত ধরে ওকে ছাদে নিয়ে গেলো। ছাদে গিয়ে অনিমা অবাক হয়ে গেলো সত্যিই খুব সুন্দর পরিবেশটা, এই ছাদ থেকে আশপাশটা দেখতে অসাধারণ লাগছে। আদ্রিয়ান পকেটে হাত ঢুকিয়ে সাইডে দাড়িয়ে বলল
— ” পছন্দ হয়েছে?”
অনিমা চারপাশটা দেখতে দেখতে বলল
— ” ভীষণ”
— ” চলো সাইডে গিয়ে বসি?”
— ” চলুন”
আদ্রিয়ান আর অনিমা ছাদের পাশে গিয়ে বসলো তবে পা ঝুলিয়ে বসে নি হাটু ভেঙ্গে বসেছে দুজন। বেশ কিছুক্ষণ দুজনেই চুপ থেকে পরিবেশটা ফিল করছে, হালকা বাতাসে অনিমার চুলগুলো হালকা উড়ছে। নিরবতা ভেঙ্গে আদ্রিয়ান বলল
— ” অনি? ”
অনিমা অন্য ধ্যানে মগ্ন ছিলো আদ্রিয়ানের ডাকে হুস আসায় হকচকিয়ে বলে
— ” হুম? ”
— ” কালকের জন্যে সরি, আসলে জানিনা কেনো একটু রেগে গেছিলাম। সো সরি ফর মাই বিহেভিয়ার।”
অনিমা দাত দিয়ে নখ কাটতে কাটতে অবাক হয়ে বলল
— ” আপনি কীসের কথা বলছেন?”
আদ্রিয়ান পুরো ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো, এরমধ্যেই ভূলে গেছে? যাক ভালোই হলো ব্যাপারটা ও ততোটাও মনে নেয়নি।
— ” কী হলো বলুন? ”
অনিমার ডাকে আদ্রিয়ানের হুস এলো নিজেকে সামলে বলল
— ” ন্ নাথিং ”
— ” ওহ”
বলে অনিমা আবারো চারপাশটা দেখায় ব্যাস্ত হয়ে গেলো। কিছুক্ষণ পর আদ্রিয়ান বলল
— “একটা কথা বলবো?”
অনিমা আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল
— ” বলুন?”
— ” তুমি সাজোনা কেনো?”
নিমেষেই অনির মুখটা কালো হয়ে গেলো মুখের হাসি গায়েব হয়ে গেলো। কিছুক্ষণ চুপ থেকে নিচু গলায় বলল
— “এমনি।”
অনিমা ছলছলে চোখে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে, পুরোনো কথা মনে খুব আঘাত করছে। আদ্রিয়ান খানিকক্ষণ চুপ থাকলো তারপর অনিমার হাত ধরে নিজর দুই হাতের মুঠোয় আনলো। অনিমা একটু অবাক হলেও তাকালো না । আদ্রিয়ান মুচকি হেসে বলল
— ” অনি? লুক এট মি?”
অনিমা তবুও মাথা নিচু করে আছে। আদ্রিয়ান অনিমার গালে হাত রেখে বলল
— ” তাকাও।”
অনিমা এবার আদ্রিয়ানের দিকে তাকালো সাথে সাথেই ওর চোখে জমে থাকা পানি গড়িয়ে পরল। আদ্রিয়ান অনিমার চোখের পানি আলতো হাতে মুছতে মুছতে বলল
— ” একজন মানুষের জীবনে খারাপ কিছুদিন আসতেই পারে তাই বলে সেটা ধরে সারাজীবণ বসে থাকাটা বোকামী। কারো জন্যে তুমি নিজের জীবণ কেনো বদলাবে? জীবণটা তোমার আর সেটাকে সুন্দর করে তোলার দায়িত্ব ও শুধুই তোমার। বুঝলে? ”
অনিমার চোখ দিয়ে আবারো অশ্রু গড়িয়ে পরল। আদ্রিয়ানের কথাগুলো আজ ওর আব্বুর কথা মনে করিয়ে দিলো। ওর আব্বুও ওকে এভাবেই বোঝাতো। আদ্রিয়ান আবারো বলল
— বেশি না চোখে হালকা কাজল পরে দেখো চোখগুলো আরো মায়াবী লাগবে।
অনিমা কিছু না বলে আদ্রিয়ানের কাধে মাথা রেখে দিলো। আজ সে তার আবেগকে কিছুতেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেনা, খুব কান্না পাচ্ছে, তাই আদ্রিয়ানের কাধে মাথা রেখে নিরবে অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে সে। এই কান্না সুখের নাকি কষ্টের সেটা বলা মুসকিল, তবে কেদে নিজেকে হালকা করছে। অনিমা ওর কাধে মাথা রাখায় আদ্রিয়ান অদ্ভুত এক শান্তি অনুভব করছে, তবে কাদতে বারণ করছেনা কিছু সময় কাঁদা উচিত তাই নিজেও এক হাতে জরিয়ে নিলো ওর প্রাণভোমরাকে।
#চলবে…
.
( দেরী হইলেও বড় করে দিয়েছি তাই কেউ কিছু বলবেন না?
Happy reading?)

বর্ষণের সেই রাতে ❤ পর্ব- ১১

0

বর্ষণের সেই রাতে ❤
পর্ব- ১১
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

.
— “তবে যাই হোক। তোমার অতীত যে খুব একটা সুখকর না সেটা আমি সেদিন রাতেই বুঝেছি। কিন্তু তোমার অতীত যাই হোক আর যতো খারাপই হোক আমি তোমাকে দূরে ঠেলে দেবোনা। বরং আজ এই মুহুর্ত থেকে তোমার জীবণ থেকে তোমার অতীতের কালো ছায়াগুলো সরানোর দায়িত্ব নিজের কাধে তুলে নিলাম। আমি জানি তোমার মধ্যে এক চঞ্চল হাসিখুশি অনি চাপা পরে আছে, তাকে অামি বের করে আনবো আই প্রমিস।”

সকালে ফুরফুরে এক মেজাজ নিয়ে ঘুম থেকে উঠল অনিমা। ও নিজেও জানেনা আজকে কেনো এতো হালকা লাগছে ওর। আজ একটু বেশিই তাড়তাড়ি উঠেছে ঘুম থেকে। লম্বা এক সাওয়ার নিয়ে। কিচেনে গেলো কফি করতে। আজ সবকিছুই কেনো জানি ভালো লাগছে ওর। আদ্রিয়ানের বলা প্রতিটা কথা ওর মনে এক অন্য অনুভূতির সৃষ্টি করেছে। সেই শব্দগুলো যেনো ওর কানে বাজছে। কিছু কিছু কথা মনে পরতেই মনে এক শীতল শিহরণ বয়ে যাচ্ছে ওর। এক অদ্ভুত ভালোলাগা। আর মজার ব্যাপার হলো এই ভালোলাগার কারণ ওর নিজেরও অজানা। কফি করে ব্যালকনিতে দাড়িয়ে মিষ্টি এই সকালটা দেখছে ও। আজকের সকালটা একটু বেশিই সুন্দর লাগছে ওর কাছে। আজকের সকালটাই এতো সুন্দর নাকি ওর কাছেই এতো সুন্দর লাগছে সেই প্রশ্ন অনিমার মনে উঠলেও সে পাত্তা দেয়নি নিজের মতো করে উপভোগ করছে কোমল রোদমিশ্রিত এই মিষ্টি সকালের মিষ্টতা। অফিসে বেরোনোর আগে আদ্রিয়ানের দেয়া কীরিং টায় চাবি সেট করে বারবিকিউটার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। তারপর ওটাকে হাতের মুঠোয় নিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে বলল
— ” আমি একজন মেয়ে তাই এটুকু বুঝতে পারছি যে আপনি আমার জন্যে কিছুতো ফিল করেন। কিন্তু সেটা কী? টান? মোহ? নাকি ভালোবাসা? ভালোবাসা? আপনার মতো একজন আমার মতো একটা মেয়েকে কেনো ভালোবাসবে? আপনার মনে কী আছে সেটাতো আমার জানা নেই কিন্তু আমার মনে কী চলছে আমিতো নিজেই বুঝতে পারছিনা। আপনি আমার ক্রাশ, আপনার গান আমার ভালো লাগে, সেটাতো শুধুই একটা ভালোলাগা। কিন্তু আপনার সংস্পর্শে এলেই আমার এমন কেনো ফিল হয়? আপনি যখন আমার হাত ধরেছিলেন তখন হার্টবিট প্রচুর বেড়ে গেছিলো, শরীর কাপছিলো, আপনার কথা শুনে একটা আজব অনুভূতি হচ্ছিলতো। এগুলো কী শুধুই ভালোলাগে বলে? ”
আপন মনেই কথাগুলো বলে একটা শ্বাস নিয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পরল অনিমা।

অফিসে এসেই অরু একটা কথাও না বলে মুখ ফুলিয়ে ডেস্কে বসে একমনে কাজে লেখে গেলো। তীব্র অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো অরুর দিকে কিন্তু কিছু বলতে গিয়েও বললোনা। অরু কিছু না বলে চুপচাপ কাজ করছে তীব্র কয়েকবার আড়চোখে দেখেছে ওকে কিন্তু কিছুই বলেনি, আসলে অনিমার আসার জন্যে অপেক্ষা করছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই অনিমা এসে হাজির হলো ডেস্কে বসে কম্পিউটার অন করে প্রথমে তীব্রর দিকে তাকালো তারপর অরুর দিকে তাকাতেই অনিমার ভ্রুজোরা কুচকে গেলো। তীব্রর দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচিয়ে ইশারা করে জিজ্ঞেস করল কী হয়েছে। তীব্র ঠোঁট উল্টে ঘার সংকোচিত করে বোঝালো যে ও নিজেও জানেনা। অনিমা আরেক দফা অরুর দিকে তাকালো অরু বেশ বিরক্ত সেটা বোঝাই যাচ্ছে। অনিমা তীব্রকে ইশারা করে বলল এখন চুপ থাকতে।
লাঞ্চ টাইমে ওরা তিনজনেই ক্যান্টিনে খেতে বসলো। অনিমা এবার অরুকে জিজ্ঞেস করল
— “কী ব্যাপার বলতো সকাল থেকে দেখছি মুখ ভার করে বসে আছিস? কেনো?”
এটা শুনে অরু মুখের থেকে চামচ নামিয়ে অনিমার দিকে তাকালো। তীব্রও উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। অরু আবার খাওয়ায় মনোযোগ দিয়ে বলল
— “কিছু না তো।”
অনিমা এবার বিরক্ত হয়ে বলল
— “এই ড্রামাকুইন। তোর পেটে কোনো কথা একদিনো ঠিকভাবে বসে থাকেনা আমরা সেটা ভালোকরেই জানি। একটু পর নিজেই সুরসুর করে বলতে শুরু করবি।”
তীব্রও অনিমার কথায় সায় দিয়ে বলল
– “কিন্তু তখন আমরা কাজে ব্যস্ত থাকবো আর তুই পকরপকর করে আমাদের ডিস্টার্ব করবি। তাই টাইম ওয়েস্ট না করে এখনি বলে ফেল ”
অরুমিতা এবার শব্দ করে চামচটা টেবিলে রেখে বলল
— ” ঐ আশিস না ফাসিস পেয়েছেটা কী হ্যা। যা খুশি করছে। কালকে জোর করে নাম্বার নিয়েছে। কাল সারারাত ফোন করে জ্বালিয়েছে জানিস? প্রথমে ভদ্রতার খাতির ভালো করে কথা বললেও পরে বিরক্ত হয়ে কটা শুনিয়ে দিয়েছি তবুও জ্বালিয়েছে ইডিয়েটটা। খালি ফ্লির্টি মার্কা কথা বলে। মাথা ব্যাথা বানিয়ে দিয়েছে।”
একনিশ্বাসে কথাটা শেষ করে অরু অনিমা আর তীব্রর দিকে তাকালো, দুজনেই হা করে তাকিয়ে আছে অরুর দিকে। সেটা দেখে অরু ভ্রু কুচকে ওদের দুজনের সামনে তুরি বাজিয়ে বলল
— “হ্যালো? কোথায় হারিয়ে গেলি?”
অনিমা কোনরকমে নিজেকে সামলে বলল
— “তুই কী আদ্রিয়ান এর বন্ধু আশিস ভাইয়ার কথা বলছিস?”
অরু বিরক্তিকর দৃষ্টিতে অনিমার দিকে তাকিয়ে বলল
— “না আমি আমার জামাইর কথা বলছি। অবশ্যই ওই বান্দরের কথাই বলছি।”
অনিমা কিছু বলবে তার আগেই তীব্র বলল
— “কিন্তু আশিস ভাই তোকে বিরক্ত কেনো করছে?”
অরুমিতা মুখ ফুলিয়ে বলল
— “আমি কি জানি? আমার হাসিতে নাকি সে খুন হয়ে গেছে, মুখ ভেংচি দেখে নাকি ওনার হার্টে ধাক্কা লেগেছে। এইসব রিডিউকিলাস কথাবার্তা বলে কান ঝালাপালা করে দিলো।”
অনিমা আর তীব্র কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে একসাথে শব্দ করে হেসে দিলো আর অরুমিতা মুখ ফুলিয়ে খেতে শুরু করল। অনিমা হাসি থামিয়ে বলল
— “আদ্রিয়ান তো বলেছে আশিস ভাইয়া একটু অন্যরকম তাই হয়তো..”
তীব্র অনিমাকে থামিয়ে দিয়ে এক ভ্রু উচু করে অনিমাকে উদ্দেশ্য করে বলল
— “এস পার আই নো আদ্রিয়ান,আদিব আর আশিস ভাইয়ের সেইম এজ। কিন্তু আদিব আর আশিস ভাইদের বেলায় ভাইয়া আর আদ্রিয়ান ভাই এর বেলায় শুধুই আদ্রিয়ান? কেস কী বলতো?
তীব্রর কথা শুনে অরুমিতাও খাওয়া ছেড়ে উৎসুক দৃষ্টিতে তাকালো অনিমার দিকে। অনিমাতো পরলো মহা অসস্তিতে। ঠিকই তো ও কেনো আদ্রিয়ানকে ভাই বলতে পারেনা? কেনো জানি আদ্রিয়ানের প্রতি ওর ভাই শব্দটা আসেইনা। তাই কোনো উত্তর দিতে না পেরে মাথা নিচু করে প্লেটে স্পুন ঘসতে লাগলো। অরুমিতা ঠেস মেরে বলল
— “শুধু কী তাই? রাত তিনটে বাজে ফোন করা, কফিশপে হাতের ওপর হাত রেখে বসা, লেকপার্কে আমাদের চোখে ফাকি দিয়ে আলাদা সময় কাটাতে চলে যাওয়া। আহা !আহা!”
তীব্রও ওর কথায় সায় দিয়ে বলল
— “হ্যা ইয়ার। একদিনের আলাপেই দেখা করতে ডেকে নিলো? তারপরে আসার সময়ও কানে ফিসফিস করে কী জেনো বলছিলো উনি। এদের কিচ্ছা দেখে আমার তো ঐ গানটা মনে পরছে।”
অরুমিতা কৌতুহলী হয়ে জানতে চাইলো
— “কোনটা রে?”
তীব্র খানিকা সুর দিয়ে বলল
— ” দো দিল মিল রাহে হ্যা, মাগার চুপকে চুপকে”
অনি বিরক্তিকর দৃষ্টিতে ওদের দিকে তাকিয়ে বলল
— “থামবি তোরা? কোথাকার কথা কোথায় নিয়ে যাচ্ছিস?”
অরুমিতা আর তীব্র হাসতে হাসতে একসাথেই বলল
— “হ্যা এখনতো আমরাই থামবো। চালিয়ে তো তোরা যাবি।”
অনিমা কিছু না বলে খাওয়ায় মন দিলো কারণ ও জানে এদের এখন যতোই বলুক ওরা থামবেনা। আর ওদের কথায় অনিমা অনেকটা লজ্জাও পাচ্ছে কিন্তু সেটা বহিপ্রকাশ করা যাবেনা তাহলে ওরা আরো পেয়ে বসবে।

“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন

আদ্রিয়ান আদিব আর আশিসের সাথে রেস্টুরেন্টে ঢুকছে। আদ্রিয়ানকে দেখেই হৈ হুল্লোর পরে গেছ সবার মধ্যে। সেলফি অটোগ্রাফ এর জন্যে হুমরি খেয়ে পরছে অনেকেই। আশিস বিরক্ত হয়ে বলল
— “এসে গেছে তিতি মুরগীর দল”
আদ্রিয়ান চোখ রাঙিয়ে তাকাতেই আশিস চুপ হয়ে গেলো। আদ্রিয়ান যতটা সম্ভব সামাল দিয়ে তারপর গার্ডসদের ইশারা করতেই তারা সবাইকে সরিয়ে জায়গা করে দিলো। এরপর ওরা সোজা ওদের বুক করা আলাদা রুমে গিয়ে বসল। আদ্রিয়ান বসেই আশিসকে উদ্দেশ্য করে বলল
— ” ওরা কোনো তিতি মুরগী না। ওরা আছে বলেই আজ আমি সেলিব্রিটি। সো এসব আর বলিসনা আমার পছন্দ না।”
আশিস বেচারা ভদ্র ছেলের মতো মাথা নাড়ল কারণ আদ্রিয়ান এইসব বিষয়ে খুব সেনসেটিভ। খাবার আসার পর ওরা খেতে শুরু করল। হঠাৎ আদিব বলল
— ” অনিমাকে নিয়ে কী ভাবলি?”
আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে বলল
— “মানে?”
— ” দেখ এখন এটা বলিসনা যে ওর প্রতি তোর কোনো ফিলিংস নেই। যেই ছেলে হুট করে অপরিচিত কোনো মেয়ের সাথে কফি খেতে বসতেও পছন্দ করে না সে ছেলে একটা অপরিচিত মেয়েকে নিজে ডেকে এনে তারসাথে সারাদিন কাটালো সেটা এমনি এমনি হতে পারেনা বস।”
আশিস তাল মিলিয়ে বলল
— ” তাও আবার আলাদা নিয়ে গিয়ে ঘোরা।”
আদ্রিয়ান কিছু বললোনা। আদিব এবার আস্তে করে জিজ্ঞেস করল
— “ভালোবাসিস ওকে? ”
আদ্রিয়ান প্লেটের দিকে তাকিয়েই বলল
— ” আই ডোন্ট নো ইয়ার। বাট ওর প্রতি একটা আলাদা টান তৈরী হয়ে গেছে। এরকম মনে হয় ওকে সবসময় আমার সামনেই রাখি। এতো অল্প সময়ে কারো প্রতি এতোটা টান তৈরী হতে পারে আগে জানতাম না। আমার ওকে চাই ইয়ার সারাজীবনের জন্যে, এনি হাউ।”
আদিব হালকা হেসে জিজ্ঞেস করল
— ” যদি ও তোর হতে না চায়?”
উত্তরে আদ্রিয়ান বাকা একটা হাসি দিলো আর আদিব আশিস দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে ছোট্ট নিশ্বাস নিলো। তারপর আশিস বলল
— “বুঝলাম”
আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে বলল
— “কী বুঝলি?”
আদিব আর ইশরাক একসাথে জোরে চেচিয়ে বলে উঠল
— “ইউ আর ইন লাভ”
আদ্রিয়ান তাড়াতাড়ি কানে আঙ্গুল দিয়ে বলল
— “আরেহ ইয়ার।”

চৌধুরীর মেনশনে ডাইনিং টেবিলে বসে আছেন মিস্টার রঞ্জিত ওনার স্ত্রী আর শালক কবির শেখ। মানে রিকের মামা, শকুনী মামাও বলা যেতে পারে কারণ ভাগ্নের সব কুকর্মে শুধুযে তার সমর্থন থাকে তাই না ভাগ্নেকে কুমন্ত্রণা দিতেও সে সমান পারদর্শী। মহাভারত সিরিয়ালের ডিরেক্টর রবি চোপড়া যদি রিক আর কবির শেখ কে আগে দেখতেন তাহলে নিশ্চই দুর্যোধন আর মামা শকুনীর ক্যারেক্টার এর অফার ওদেরকেই করতেন। মিস্টার রঞ্জিত ডায়নিং টেবিলে লাঞ্চ করতে বসে ছেলেকে দেখতে না পেয়ে ভ্রু কুচকে মিসেস লিমা চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বললেন
— “তোমার ছেলে কোথায়?”
মিসেস লিমা ইতোস্তত করে বললেন
— ” ডাকতে গেছিলাম কিন্তু দরজা খোলেনি এখনো ঘুমোচ্ছে মনে হয়।”
রঞ্জিত চৌধুরী ভ্রু কুচকে বললেন
— “হ্যা সেই। সারারাত মদ গিলবে তারপর সারাদিন মরার মতো বিছানায় পরে থাকবে।”
মিসেস লিমাও এবার বিরক্তি নিয়ে বললেন
— “মেয়েটাকে এনে দিচ্ছোনা কেনো বলোতো, তাহলে হয়তো..”
মিস্টার রঞ্জিত ধমকি দিয়ে বললেন
— “তাহলে কী? বলো? ঐ মেয়ে থাকতে তোমার ছেলে নেশা করতোনা? মাঝে মাঝেই নেশা করে গিয়ে অকারণেই কতো মারধোর করতো মেয়েটাকে ভূলে গেছো?”
মিসেস লিমা কান্নাজরিত কন্ঠে বললেন
— ” আমি কিছু জানিনা। আমার ছেলের এই অবস্হা আমি আর মানবোনা তুমি যেভাবেই হোক ঐ মেয়েকে খুজে আনো।”
— ” আচ্ছা দেখছি তুমি ভেতরে যাও।”
— ” কিন্তু?”
মিস্টার রঞ্জিত ধমক দিয়ে বললেন
— “যাও।”
মিসেস লিমা ভেতরে চলে গেলেন। এবার কবির শেখ মুখ খুললেন। একটা হাসি দিয়ে বললেন
— ” ঐ মেয়েটা যখন ছিলো তখন কিন্তু বাবাই এমন ছন্নছাড়াভাবে চলতো না তাইনা?”
রঞ্জিত চৌধুরী জুসের গ্লাসে চুমুক দিয়ে বললেন
— ” আমি জানি আর আমি ইচ্ছে করেই ঐ মেয়েকে খুজিনি এতোদিন। কারণ আমি চাইনা ও আমার বাড়িতে উঠুক। কারণ বিষধর সাপের বাচ্চা বিষধরই হয়। তোমার কী মনে হয় যার বাপ এতো ভয়ংকর সাহসী ছিলো তার মেয়ে এতো ভীতু?”
কবির খান অবাক হয়ে বললেন
— “মানে?”
— “মানে ওর বাবার অসম্পূর্ণ কাজটাকে সম্পূর্ণ করার জন্যে উঠে পরে লেগেছে ও। ওর জীবণের একটাই লক্ষ্য আমাকে এক্সপোস করে শেষ করে দেওয়া। আর সেই কাজটাই দিনরাত খেটে করছে ও। হ্যা ও ভয় পায় ঠিকি, কিন্তু সেটা শুধু এবং শুধুই রিক কে। কারণ রিক ওর ওপর যেই টর্চারগুলো করতো, সেটা কোনো শক্ত হৃদয়ের মানুষেরও গা হিম করে দেবে। কিন্তু ঐ মেয়ের কাছ থেকে বাচতে হলে ওর বাপের মতো ওকেও সরিয়ে দিতে হবে। এতোদিন আমি শুধু আমি রিক এর ওকে ভূলে যাওয়ার অপেক্ষা করছিলাম কিন্তু এই ছেলেতো যতো দিন যাচ্ছে ততই পাগল হচ্ছে ঐ মেয়ের জন্যে। কী দেখেছে ঐ মেয়ের মধ্যে কে জানে।”
কবির শেখ কিছুক্ষণ চুপ করে কিছু একটা ভেবে বললেন।
— “আমার কাছে একটা প্লান আছে জিজু। যাতে সাপও মরবে আর লাঠিও ভাঙবেনা।”
মিস্টার রঞ্জিত ভ্রু কুচকে বললেন
— ” কী প্লান?”
— ” দেখুন খুনাখুনি করে বাবাইর মনে ক্ষোভ তৈরীর দরকারটা কী? যেহেতু মেয়েটা বাবাইকে ভয় পায় আর বাবাইকে আমি যতদূর চিনি ও ঐ মেয়েকে খোলা রাখবেনা বন্দি করেই রাখবে। তাই ওই মেয়েও আপনাকে এক্সপোস করার প্রমাণ খুজতে বাইরেও যেতে পারবেনা। এতে দেখুন আপনিও নিরাপদ থাকবেন আর আমার বাবাইও খুশি হবে। তাই বলছি মেয়েটাকে খুজে বাবাই এর হাতে তুলে দিন বাকিটা বাবাই সামলে নেবে”
মিস্টার রঞ্জিত কোনো উত্তর দিলেন না। তবে বুদ্ধিটা মন্দ লাগেনি তার। উনি জুস খেতে খেতে ভাবলেন,ঠিকি তো বিষধর সাপকে পিটিয়ে মেরে ফেললে মজা আছে নাকি? বিষধর সাপের বিষদাঁত ভেঙ্গে তাকে নিজের মতো করে নাচানোতেই তো আসল মজা। কথাটা ভেবেই আপন মনে শয়তানী হাসি দিলেন মিস্টার রঞ্জিত।
#চলবে…

বর্ষণের সেই রাতে ❤ পর্ব- ১০

0

বর্ষণের সেই রাতে ❤
পর্ব- ১০
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

.
— “যতো খুশি উড়ে নাও বেইবি। কারণ আবারও খাচায় বন্দি হবার সময় এসে গেছে তোমার। আমি খুব শিঘ্রই তোমাকে বলব ‘ওয়েলকাম ব্যাক টু মাই হেল সুইটহার্ট’। এতো বড় বুকের পাটা এখনো কারো হয়নি যে আমার হাত থেকে তোমাকে বাচাবে। কারো হয়নি ! কারোর না।”
রিক এসব বলতে বলতেই হনহন করে রিকের রুমে ঢুকলেন রঞ্জিত চৌধুরী। ওনার মুখে বিরক্তির ছাপ পরিষ্কার। ভ্রু কুচকেই সারারুমে চোখ বুলালেন উনি, এটা নতুন না প্রায় ড্রিংক করে বাড়ি ফিরে এইধরণের পাগলামী করে রিক। কিন্তু এই মুহূর্তে মিস্টার রঞ্জিত একটু বেশিই বিরক্ত হচ্ছেন, ছেলের এইরকম ছেলেমানুষি মোটেও সহ্য হচ্ছেনা তার তাই রাগী গলাতেই বললেন
— “কী শুরু করেছো তুমি রিক। এভরিথিং হ্যাস আ লিমিট।”
রিক হাতে ধরে রাখা ভাঙা বোতলটা মেঝেতে আছাড় মেরে কোনো মতে টলতে টলতে উঠে দাড়িয়ে চেচিয়ে বলল
— “লিমিট মাই ফুট। এন্ড ইউ প্লিজ ডোন্ট টক টু মি ড্যাড। তুমি একজন মিনিস্টার, তোমার তো এত্তো পাওয়ার। কিন্তু তোমার এইসব পাওয়ার আমার কোন কাজে লাগছে হ্যা? জাস্ট টেল মি? ”
মিস্টার রঞ্জিত রাগান্বিত গলায় বললেন
— “কী বলতে চাইছো তুমি?”
— “তোমার এত্তো পাওয়ার এত্তো লোক দিয়েও একটা সামান্য জার্নালিস্টের মেয়েকে খুজে বের করতে পারছোনা।”
— “ওর বাবা কোনো সামান্য জার্নালিস্ট ছিলোনা। একটা গোটা নিউস কম্পানি চলতো ওর বাবার কথায়, আর যাকে তুমি সামন্য জার্নালিস্ট বলছো সেই সামান্য জার্নালিস্টই তোমার বাবাকে শেষ করে দেবার ক্ষমতা রেখেছিলো। এই যে মন্ত্রীর ছেলে বলে এতো গর্ব করো সেটাও থাকতোনা। আজীবণ জেলের ঘানি টানতে হতো আমাকে। সেই জন্যেই ওকে শেষ করতে হয়েছিলো আমার। বুঝলে?”
রিক টি-টেবিলে একটা লাথি মেরে বলল
— “না না আমি কিচ্ছু বুঝিনি আর আমি এতো কিছু বুঝতে চাইও না। আই জাস্ট ওয়ান্ট হার। আমার শুধু ওকে চাই ড্যাড। এট এনি কস্ট ওকে এনে দাও আমার কাছে। হোয়াই ডোন্ট ইউ আন্ডারস্টান্ড? হোয়াই?”
এটুকু বলেই খাটে বসে পরল রিক, মিস্টার রঞ্জিত এবার একটু বিরক্তি নিয়ে বললেন
— “একটা সামন্য মেয়ের জন্যে এতোটা হাইপার হওয়ার কী আছে আমিতো সেটাই বুঝতে পারছিনা? তুমি একটা ইশারা করলে তোমার জন্যে মেয়েদের লাইন পরে যাবে কেনো ঐ মেয়ের পেছনে পরে আছো?”
রিক ঝাড়া দিয়ে দাড়িয়ে চিৎকার করে বললো
— “কারণ আমার ওকেই চাই। আর আমি কোনো কিছু চেয়ে পাইনি এটা কখোনো হয়নি আর না হতে দেবো। তুমিতো ওকে মেরে ফেলতে চেয়েছিলে তাইনা? কাউকে লাগবেনা আমার। তোমাকেও না আমি একাই ওকে খুজে বার করতে পারবো। কাউকে লাগবে না।”
মিস্টার রঞ্জিত এবার একটু নরম গলায় বললেন
— “দেখো বেটা।”
— “লিভ মি এলোন।”
— “আমার কথাটা…”
রিক এবার চিৎকার করে বলল
— “আই সেইড লিভ মি এলোন”
মিস্টার রঞ্জিত বুঝে গেছেন এই ছেলে এখন আর তার কোনো কথাই শুনবে না। এই ছেলেকে তিনবছর ধরে বুঝিয়ে আসছে কিন্তু ছেলের মন কিছুতেই ঘোরাতে পারছেনা। যা করার ভেবে চিন্তে ঠান্ডা মাথায় করতে হবে। এসব ভেবে রুম থেকে চলে গেলেন উনি। রিক উঠে ধরাম করে দরজাটা লাগিয়ে দিলো তারপর দেয়ালে টানানো বিশাল এক ছবির দিকে তাকিয়ে বলল
— “আমার কাছ থেকে পালিয়ে তুমি একদমি ঠিক করোনি। তোমাকে এর অনেক বড় মূল্য দিতে হবে, অনেক বড়। আমার হিংস্রতার কিছুই তুমি দেখোনি তবে এবার দেখবে। এবার আর ড্যাডের আশায় বসে থাকবোনা আমি নিজে খুজবো তোমাকে নিজে। আই এম কামিং সুইটহার্ট।”
ছবিটার দিকে তাকিয়ে বাকা হেসে বিয়ারের বোতলে চুমুক দিলো রিক।

রাত ১২ টা ১৭, অনিমা ফোনটা সাইডে রেখে খাটে হেলান দিয়ে বসে কোলের ওপর ল্যাপটপ রেখে নিজের আর্টিকেল রেডি করছে। তবে বারবার আড়চোখে ফোনের দিকেও তাকাচ্ছে। নিজের অজান্তেই সে আদ্রিয়ানের ফোনের জন্যে অপেক্ষা করছে। কিন্তু এখনও ফোন আসছেনা বলে অনিমার মনটাও বেশ অনেকটাই খারাপ হয়ে আছে। বললোতো ফোন করবে সারে বারোটা বেজে গেছে এখোনো ফোন করলো না? হয়তো ভূলে গেছে, ওরতো আর কাজের অভাব নেই হয়তো কাজের চাপে মনে নেই ওর কথা এসব ভাবতে ভাবতে ফোনের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস নিলো অনি, তারপর আবারো কাজে মন দিলো। কিছুক্ষণ পরেই রিংটোনের আওয়াজে চমকে উঠল অনি। আদ্রিয়ানের চিন্তা বাদ দিয়ে কাজে মন দিয়েছিলো সে, তাই এই হঠাৎ আওয়াজে একটু কেপে উঠেছে। পাশের বালিশে মোবাইলের স্ক্রিণে চোখ পরতেই মুখে হাসি ফুটে উঠল ওর কারণ সেভ করা না থাকলেও নাম্বারটা চিনতে একটুও দেরী হয়নি। মুচকি হেসে ল্যাপটপটা অফ করে সাইডে রেখে ফোনটা রিসিভ করে বলল
— “হ্যালো”
— “এখোনো জেগে আছো? আমিতো ভেবেছিলাম ঘুমিয়ে পরেছো।”
— ” আপনার ফোনের জন্যেই জেগে ছিলাম।”
কথাটা বলার সাথে সাথেই জিবে কামড় দিলো অনিমা। আনমনে কী বলে ফেলল সেটা নিয়েই অফসোস হচ্ছে এখন ওর। আদ্রিয়ান নিশ্চই ওকে হ্যাংলা একটা মেয়ে ভাবছে। আসলে অনেক সময় এরকম হয় মানুষ যখন তার অনুভূতির চরম সীমায় পৌছে যায় তখন শব্দের ওপর নিয়ন্ত্রণ থাকে, উত্তেজনা এতো তীব্র পর্যায়ে চলে যায় যে নিজের বাক্যগুলোও তখন বড্ড অবাধ্য হয়ে যায়। এমনি অবস্হা হয়েছে অনিমার। আদ্রিয়ানও অনিমার কথা শুনে একটু অবাক হলো, পরোক্ষণেই ঠোটের কোণে হালকা হাসি ফুটে উঠল। আর অনিমা যে আনমনেই কথাটা বলে ফেলেছে সেটা বেশ ভালোই বুঝতে পারছে ও। অনিমাকে আরেকটু অসস্থিতে ফেলার জন্যে আদ্রিয়ান মুচকি হাসি দিয়ে বলল
—- “আমার ফোনের ওয়েট করছিলে?”
আদ্রিয়ান যে ওকে লজ্জায় ফেলতেই ঘুরিয়ে প্রশ্নটা করেছে সেটা অনিমা বেশ ভালোই বুঝতে পারছে। মনে মনে আদ্রিয়ানের ওপর একটু রাগও হচ্ছে, কিন্তু সেই রাগটা প্রকাশ করার কোনো উপায় নেই। এটা মানুষজাতির আরেকটা বিরম্বনা হঠাৎ পরিচিত, অল্প পরিচিত, সম্মানীয় এসব ব্যাক্তির ওপর বিরক্তি বা রাগের অনুভব হলেও সেটা প্রকাশ করা যায় না, যদি করা হয় তাহলে তাকে অশোভনীয় ব্যবহার বলা হয়। তাই অনি রেই রাগটা নিজের মধ্যে চেপে রেখে একটু ইতস্তত করে বলল
— ” আপনি বলেছিলেন তাই আরকি…”
— ” হুমম..ডিনার করেছো?”
— ” হ্যা অনেক আগেই। আপনি করেছেন?”
— “ডিনার করেই তোমাকে কল করলাম।”
— “এতো দেরীতে ডিনার করলেন?”
— “তোমাদের বাড়ি পাঠানোর পরেই স্টুডিওতে গিয়েছিলাম একটু আগে ফিরলিম।”
— “ওহ”
— “শুধুই কী আমার ফোনের জন্যে অপেক্ষা করছিলে নাকি অন্যকিছুও?”
— “নাহ মানে সময় কাটানোর জন্যে আর্টিকেল টাইপ করছিলাম।”
এরপর ওরা দুজনেই কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো, কেউ কিছুই বলছেনা কিন্তু একে ওপরের নিশ্বাসের শব্দ মন দিয়ে শুনছে, আর সেটাও দুজন দুজনের অজান্তেই। এই নিরবতায়ও এক অদ্ভুত শান্তি আছে, যেই শান্তিটা দুজনেই অনুভব করতে পারছে। নিরবতা ভেঙ্গে আদ্রিয়ান নিজেই বললো
— “আজকের দিনটা কেমন লাগল?”
অনি কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললো
— “সত্যি বলবো?”
— “আই হেইট লাইং।”
— “অনেকদিন পর মন খুলে হেসেছিলাম”
অনিমার উত্তরটা শুনে আদ্রিয়ান কেনো জানি মনের ভেতরে এক অদ্ভুত শান্তি অনুভব করলো। তাই ও হেসে দিয়ে বলল
— “যাক কারো হাসির কারণ তো হতে পারলাম।”
অনি কিছু না বলে কানে ফোন নিয়েই ধীরপায়ে হেটে ব্যালকনিতে চলে গেলো। অনিকে চুপ থাকতে দেখে আদ্রিয়ান বলল
— “কখন থেকে আমিই বকরবকর করে যাচ্ছি। কিছুতো বলো?”
— “কি বলবো?”
— “আচ্ছা তুমি এতো শান্ত কেনো বলোতো? একদম চুপচাপ। কিন্তু তোমাকে দেখে কিন্তু মনে হয়না যে তুমি এতো শান্ত। মনে হয় একটা চাঞ্চল্য আছে তোমার মধ্যে যেটা কোনো কিছুর নিচে চাপা পরে গেছে।”
খানিক চমকে উঠলো অনিমা। এটাতো সত্যিই যে ও এতো শান্ত ছিলোনা। পরিস্হিতি ওকে চুপ করিয়ে দিয়েছে। একসময় ওর চাঞ্চল্য আর দুষ্টুমী আশেপাশের মানুষকে অতিষ্ট করে তুলতো আর আজ? একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো অনিমার ভেতর থেকে। তারপর নিজেকে কোনোরকমে সামলে বলল
— “নাহ সেরকম কিছু না”
— ” আচ্ছা বাট অ..নি..মা.. কতো বড়ো নাম তোমার? আমি এতো বড় নামে ডাকতে পারবোনা তোমাকে।”
অনিমা তো চূড়ান্ত পর্যায়ে অবাক হলো। ‘অনিমা’ নামটা ওনার কাছে এতো বড় মনে হলো? অনিমা নিজের বিষ্ময় কাটিয়ে ওঠার আগেই আদ্রিয়ান বলল
— ” তাই তোমাকে আমি ইন শর্ট অনি বলে ডাকবো ওকে?”
অনিমা অবাক হলেও নিজেকে সামলে নিয়ে বলল
— “তীব্র অরু আমাকে এই নামেই ডাকে আপনিও ডাকতে পারেন সমস্যা নেই।”

“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
— “সমস্যা থাকলেও আমার কিছু করার নেই।”
অনিমা হাসলো। আদ্রিয়ান মুচকি হেসে বললো
— “তোমার ব্যাগ খুলেছিলে এসে?”
ভ্রু কুচকে গেলো অনিমার। অবাক হয়ে বললো
— “নাহ কেনো?”
— “এখোনো খোলনি? আচ্ছা ঠিকাছে এখন গিয়ে ব্যাগের মাঝের জিপটা খোলো।”
— “বাট হোয়াই?”
— “আরে খুলেই দেখো।”
— ” ওকেহ”
অনিমা রুমে ঢুকে ব্যাগ হাতে নিয়ে মাঝের জিপটা খুলল। তারপর আদ্রিয়ানকে জিজ্ঞেস করলো
— “এরপর?”
— “ভেতরে হাত ঢুকিয়ে দেখোতো কিছু পাও কী না?”
অনিমা প্রচন্ড কৌতুহল নিয়ে ব্যাগের ভেতরে হাত দিয়েই একটা প্যাকেট পেলো, সেটা দেখে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো
— ” এটা কী?”
— “খুলে দেখো।”
অনিমা প্যাকেটের ভেতরে হাত ঢুকিয়ে কিছু একটা পেলো সেটা বের করে এনে দেখলো একটা কিরিং তাও বিরবিকিউসহ। প্রচন্ড কিউট লাগছে দেখতে। বারবিকিউটা নীল রঙয়ের ড্রেস পরা আর পায়ের দিকের অংশটা নীল রং এর পালক দিয়ে ঘেরা। চুলগুলোও এক সুন্দর স্টাইলে ঝুটি করা। অনিমাতো নিজের ওপর নিয়ন্ত্রন হারিয়ে চুমু দিয়ে দিলো ওটার ওপর। তারপর এক্সাইটেড হয়ে আদ্রিয়ানকে জিজ্ঞেস করলো
— “এটা আমার?”
আদ্রিয়ান অনিমার কন্ঠে খুশির আমেজ স্পষ্ট অনুভব করলো তাই মুচকি হেসে বলল
— “তোমার ব্যাগে যখন পেয়েছো অবশ্যই তোমার। ব্যাগে আরো কিছু আছে দেখো?”
অনিমা আবারো ভ্রু কুচকে বলল
— “আবার কী?”
— “নিজেই দেখ নারে পাগলী।”
অনিমা কেপে উঠলো আদ্রিয়ানের এরকম আদুরে শব্দে। বুকের ভেতরের ধুকপুক শব্দটা বাইরে থেকেও জেনো শুনতে পাচ্ছে। একটা আজব অনুভূতি যেটা ব্যাখ্যা করার মতো শব্দ অনিমার ছানা নেই। বহু কষ্টে নিজের অনুভূতিকে দমিয়ে প্যাকেটে দ্বিতীয়বার হাত দিলো আর এবার বের হয়ে এলো একটা চকলেট বক্স। অনিমার খুশি দেখে কে। চকলেট ওর অন্যতম প্রিয় খাবার। ও এবার খুশিতে বাচ্চাদের মতো বলে উঠল
— “চকলেট?”
আদ্রিয়ান অনিমার এই উচ্ছাসিত বাচ্চা কন্ঠ শুনে হেসে দিলো, এই মেয়ে নিজেকে যতোই ম্যাচিউর দেখানোর চেষ্টা করুকনা কেনো মনের দিক থেকে এখোনো একটা বাচ্চা। এসব ভেবেই মুচকি হেসে বলল
— “হ্যা আর পুরোটাই তোমার।”
অনিমা কিছু একটা ভেবে নিজের খুশিটা দমিয়ে নিচু কন্ঠে বলল
— “এগুলো কখন করলেন?”
— “গল্প করার মাঝখানে ব্যাগে ঢুকিয়ে দিয়েছি।”
— “তখন সামনাসামনি দিলে কী হতো?”
— “এখন হঠাৎ করে পাওয়ায যেই খুশিটা পেলে, তখন দালে এটা পেতে?”
অনিমা কিছু না বলে চুপ করে রইলো। আদ্রিয়ান নিজেই বলল
— “আচ্ছা ঘুমিয়ে পরো এখন অনেক রাত হয়েছে। গুড নাইট।”
অনিমা মুচকি হেসে নিচু কন্ঠে বলল
— “গুড নাইট।”
ফোনটা রেখে ক্রিনে তাকিয়ে মুচকি হাসলো অনিমা তারপর কিরিং আর চকলেট বক্সটার দিকে তাকিয়ে নিজের অজান্তেই হেসে দিলো। তিনদিন আগে অবধি যেই মানুষটাকে শুধু টিভিতে আর ইউটিউব এই দেখে এসছে, যার সাথে দেখা হওয়াও ওর কাছে সপ্ন মনে হতো, তার সাথে একটা রাত কাটানো, একটা দিন ঘোরা, ফোনে কথা বলা, তারওপর তার কাছ থেকে গিফট পাওয়া ভাবতেই কেমন যেনো লাগছে অনিমার। সবকিছু সপ্নের মতো লাগছে। কিরিং এর বার্বিকিউ টাকে হাতে নিয়ে কয়েকবার চুমু খেলো অনিমা। দুহাত ছড়িয়ে রুম জুরে ঘুরতে ঘুরতে মুহুর্তটা উপভোগ করছে ও, আজ খুব বেশি ফুরফুরে লাগছে ওর নিজেকে যার কারণ ওর অজানা। কিছুসময়ের জন্যে ও ভূলেই গেছে ওর সেই লোমহর্ষক ভয়ংকর অতীতকে।

রিক চৌধুরী দেয়ালে টানানো অনিমার ছবিটির দিকে তাকিয়ে একটার পর একটা চুমুক দিয়ে যাচ্ছে বোতলে। বাজ পাখির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ছবিটার দিকে। একটা হিংস্র পশু তার শিকারকে ধরার প্রস্তুতির সময় শিকারের দিকে যেভাবে তাকায় সেভাবেই তাকিয়ে আছে যেনো এক্ষুনি ঝাপিয়ে পরবে নিজের শিকারের ওপর। হাত দিয়ে ঝরতে থাকা রক্তের দিকে নজর নেই তার। সে শুধু একটা কথাই বলছে
— “গেট রেডি ফর ব্যাক টু দ্যা হেল বেইবি।”

ফোন রাখার পর থেকেই মোবাইল স্ক্রিনে অনিমার ছবির দিকে তাকিয়ে আছে আদ্রিয়ান। অনিমার অগোচরেই তুলেছে ছবিটা যেটাতে অনিমা মুচকি হেসে কপালের চুলগুলো সরাচ্ছে। ছবিটার দিকে তাকিয়েই আদ্রিয়ান বলল
— “জানিনা কী এমন দেখেছি তোমার মধ্যে যেটা অন্য কারোর মধ্যে দেখিনি। তোমাকে ভালোবাসি কি না এখোনো জানিনা। জানতে চাইও না। কিন্তু আমার অস্তিত্বে মিশে গেছো তুমি, তাই তুমি আমার। যদি তোমার মনে জায়গা করতে পারি তো ধুমধাম করে আনন্দের সাথে নিজের কাছে আনবো তোমাকে আর যদি সেটা না পারি তো…”
বলেই হালকা হাসলো আদ্রিয়ান তারপর ছবিতে হাত বুলিয়ে বলল
— “তবে যাই হোক। তোমার অতীত যে খুব একটা সুখকর না সেটা আমি সেদিন রাতেই বুঝেছি। কিন্তু তোমার অতীত যাই হোক আর যতো খারাপই হোক আমি তোমাকে দূরে ঠেলে দেবোনা। বরং আজ এই মুহুর্ত থেকে তোমার জীবণ থেকে তোমার অতীতের কালো ছায়াগুলো সরানোর দায়িত্ব নিজের কাধে তুলে নিলাম। আমি জানি তোমার মধ্যে এক চঞ্চল হাসিখুশি অনি চাপা পরে আছে, তাকে অামি বের করে আনবো আই প্রমিস।”
#চলবে…
.
( দেরী হয়েছে বা ছোট হয়েছে বলে কেউ লজ্জা দেবেননা। আসলে আমি HSC candidate আর পরীক্ষার ডেট ফিক্সট না হলেও পড়তে হচ্ছে কারণ চাপা টেনশন কাজ করে একটা। আর ফ্যামিলি থেকেও চাপ দেয়। যাই হোক।
happy reading?)

বর্ষণের সেই রাতে ❤ পর্ব: ৯

0

বর্ষণের সেই রাতে ❤
পর্ব: ৯
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

.
আমি আর কিছু বললাম না। অনেক্ষণ ধরে দুজনেই চুপচাপ বসে আছি। আমি একহাতে কফি মগ চেপে ধরে আছি আর আরেকহাতের নখ টেবিলের সাথে ঘষছি। অার মাঝে ওনার দিকে তাকিয়ে সাথে সাথেই চোখ নামিয়ে নিচ্ছি কারণ উনি একদৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে এক অদ্ভুত ভঙ্গিতে কফি মগে চুমুক দিচ্ছেন। আমার খুব অসস্তি লাগছে, এভাবে তাকিয়ে থাকে কেউ, আর এভাবে মগে চুমুক দেবার মানে কী? অার বাকিরাও কোথায় আছে কে জানে? আরে কেউতো এসে বাঁচাও আমাকে, ভাল্লাগেনা। হঠাৎ করেই আমার টেবিলের ওপর রাখা হাতের ওপর উনি হাত রাখলেন। আমার সারা শরীরে যেনো বিদ্যুৎ খেলে গেলো। হার্ডবিট কয়েকটা মিস হবার পরেই তীব্র গতিতে ছুটতে লাগল। আমি অবাক হয়ে তাকালাম আদ্রিয়ানের দিকে। উনি আমার হাতটা আরেকটু ভালোভাবে ধরে বললেন
— জানো তোমার এতো দেরী দেখে আদিব আর আশিস বলছিলো তুমি আসবেনা কিন্তু আমার কেনো জানিনা মনে হচ্ছিলো তুমি আসবে, তাইতো বসে বসে ওয়েট করছিলাম।
উনি হাত ধরে রাখায় কেমন একটা ফিল হচ্ছে কাপুনি শুরু হয়ে গেছে আমার, তারওপর ওনার এসব কথা। আমি হালকা কাপা কাপা গলায় নিচু কন্ঠে বললাম
— য্ যদি না আসতাম।
উনি স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বললেন
— দুপুর পর্যন্ত ওয়েট করে তোমাকে কল দিতাম। যদি বলতে আসবেনা তো চলে যেতাম।
আমি কিছু না কফির মগের দিকে তাকিয়ে রইলাম, আদ্রিয়ান এখোনো আমার হাতের ওপর ওনার হাত রেখে দিয়েছেন, আমার কাপুনি ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে, শরীর ঘামছে হালকা। আমি চেয়েও হাতটা সরিয়ে নিতে পারছিনা। আমাকে চুপ থাকতে দেখে উনি নিজেই বললেন
— বাই দা ওয়ে এতো লেইট করলে কেনো? সাজতে যে সময় নেও নি সেটা তোমার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে।
— না আসলে…
— আসবে কী আসবে না সেটা নিয়ে দ্বিধাবোধ করছিলে, এম আই রাইট?
আমি এবারেরও নিচু কন্ঠে জবাব দিলাম
— হুম
আমার কাপুনি থামছেই না আজকে। আদ্রিয়ান এবার হাতের ওপর একটু চাপ দিয়ে ধরে বললেন
— আর ইউ ফিলিং নারভাস?
আমি মাথা তুলে ওনার দিকে একবার তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিলাম। উনি হালকা হেসে বললেন
— এভাবে কাপছো আর ঘামছো কেনো? দেখো তোমার হাতের ঘামে আমার হাতও ভিজে যাচ্ছে।
আমি হাতটা সরাতে চেয়েও পারলাম না কারণ উনি শক্ত হয়ে ধরে রাখলেন। আমি সংকোচবোধ খানিকটা কাটিয়ে উঠে নিচের দিকে তাকিয়েই ওনাকে প্রশ্ন করলাম
— কেনো ডেকেছেন আমাকে?
— সেটাই তো জানিনা।
ওনার এইরকম উত্তর শুনে আমি একটু অবাক হয়ে ওনার দিকে একপলক তাকিয়ে আবার চোখ নামিয়ে নিলাম। আদ্রিয়ান এখনো পর্যন্ত আমার হাতের ওপর ওনার হাতটা দিয়ে চেপে ধরে রেখেছে। আমার হাতের ঐ অংশটা ঘেমে গেছে বেশ বুঝতে পারছি, আমার এমন মনে হচ্ছে যেনো আমার হাতের ওপর কেউ বরফ রেখে দিয়েছে।
— এসেছোতো কিন্তু একটু পরে আবার যাই যাই করবে না তো?
আমি ভ্রু কুচকে ওনার দিকে তাকালাম। উনি মুচকি হেসে বললেন
— যেহেতু আজ তোমার আর কোনো কাজ নেই তো আজকে দিনটা তো আমাকে দেয়াই যায় তাই না?
আমি মাথা নিচু করে বললাম
— সারাদিন কী কফিশপে বসে থাকব নাকি?
আদ্রিয়ান হালকা হেসে একহাতে কফির মগে চুমুক দিয়ে বললেন
— তোমাকে সেটা নিয়ে ভাবতে হবেনা তুমি রাজি কী না বলো?
আমি ইতোস্তত করে বললাম
— কিন্তু অরু আর তীব্র?
— ওরাও থাকবে নো প্রবলেম।
— হুম
আদ্রিয়ান কফিতে আরেকটা চুমুক দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুচকে বললেন
— কফিটা খাচ্ছোনা কেনো ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে তো?
আমি এবার সংকোচ নিয়ে নিচু কন্ঠে বললাম
— আমার হাতটা তো ছাড়ুন ।
উনি আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললেন
— তোমার অসস্তি হচ্ছে?
— না মানে..
— না? তাহলে আর সমস্যা কী? তুমি কফি খাও।
কথাটা বলেই আবার কফি খাওয়ায় ব্যস্ত হয়ে গেলেন। আমি পুরো বোকার মতো তাকিয়ে আছি ওনার দিকে। এতো ভালো শেয়ানা। বাট হাত ধরে রেখে কী লাভ কে জানে? আদ্রিয়ানের দিকে তাকাতেই উনি চোখ দিয়ে ইশারা করে আমাকে কফি খেতে বললেন। আমি অসহায়ের মতো একহাত দিয়েই কফি খেতে শুরু করলাম। বেশ কিছুক্ষণ ধরেই দুজনে একেবারেই চুপ ছিলাম। হঠাৎ করেই উনি বললেন
— অনিমা?
ওনার এই হঠাৎ ডাক শুনে চমকে গেলাম। আমি হকচকিয়ে বলে উঠলাম
— জ্ জ্বী?
— আই ওন্না টেইল ইউ সামথিং..
ভ্রু অটোমেটিক্যালি কুচকে গেলো আমার, কী এমন বলতে চান উনি যে এভাবে জিজ্ঞেস করে নিচ্ছেন? জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে ওনার দিকে তাকিয়ে বললাম
— বলুন?
এরমধ্যেই অরু লম্বা লম্বা পা ফেলে এসে আমার পাশে মুখ ফুলিয়ে বসে পরল। আমি অার আদ্রিয়ান অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুচকে একে ওপরের দিকে তাকিয়ে আবারো ওর দিকে তাকালাম। আমরা কিছু বলার আগেই প্রায় ছুটতে ছুটতে আশিস ভাইয়া এসে আদ্রিয়ানের পাশে বসে জোরে জোরে শ্বাস নিলো। আমি আর আদ্রিয়ান কিছুই বুঝতে পারছিনা তাই বোকার মতো ওদের দিকে তাকিয়ে আছি। আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে আশিস ভাইয়াকে বলল
— কী ব্যাপার বলতো দুইজন দুই মুডে দুই স্টাইলে একই জায়গা থেকে এলি?
আশিস ভাইয়া হাফাতে হাফাতে বললেন
— বাপরে বাপরে জীবণে এতো মেয়ে সামলেছি কিন্তু এরকম জিনিস প্রথমবার দেখলাম।

“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
আদ্রিয়ান আশিসের মাথায় একটা চাটা মেরে বললেন
— ওই জিনিস কী হ্যা? ডু রেসপেক্ট।
আশিস ভাইয়া মাথায় হাত ঘষতে ঘষতে মুখ ফুলিয়ে বসে রইলেন। আদ্রিয়ান অরুর দিকে তাকিয়ে বললেন
— এই গাধাটা কী করেছে তোমার সাথে?
অরু মাথা নিচু করে বলল
— নাহ ভাইয়া কিছু করেনি।
— ওকে আমি খুব ভালোকরে চিনি। নিশ্চয়ই অনেক জালিয়েছে তোমাকে?
অরু আশিস ভাইয়ার দিকে বিরক্তিকর দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে মাথা নিচু করে ফেলল। আদ্রিয়ান কিছু বলবে তার আগেই তীব্র আর আদিব ভাইয়া এসে পরলেন। আদিব ভাইয়া বসতে বসতে বললেন
— সরি গাইস লেট হয়ে গেলো আস..
টেবিলের দিকে তাকিয়ে ওনার কথা থেমে গেলো। অবাক হয়ে তাকিয়ে আছেন টেবিলের দিকে। ওনার এইরকম দৃষ্টির মানে কেউ বুঝতে পারলোনা তাই সবাই ওনার দৃষ্টি অনুসরণ করে টেবিলে তাকালেন। সকলেই তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলো অরু তো চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। আমিও ওদের এইরকম দৃষ্টি দেখে ভ্রু কুচকে টেবিলের দিকে তাকাতেই এদের এইরকম চাহনীর রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারলাম। আসলে আদ্রিয়ান এখনো আমার হাতের ওপর ওনার হাত দিয়ে রেখেছেন। আদ্রিয়ান দিকে তাকিয়ে বুঝলাম উনি এতোক্ষণে খেয়াল করলেন ব্যাপারটা। আর খেয়াল করতেই হাত সরিয়ে নিলো। আমিও টেবিল থেকে হাত নামিয়ে মাথা নিচু করে ফেললাম। আমাদের কান্ড দেখে সবাই মিটমিটিয়ে হাসছে। আদিব ভাইয়া হাসি থামিয়ে বলল
— আরে আরে হাত সরালি কেনো? আমরা কেউ কিচ্ছু মনে করিনি এম আই রাইট গাইস?
সবগুলোতেই আমাদের পিঞ্চ করে একসাথে বলল
— ইয়াহ।
আমার বেশ লজ্জা লাগছে এই মুহূর্তে। সাথে খানিকটা রাগও লাগছে আদ্রিয়ানের ওপর, তখন বললাম হাতটা ছাড়তে কিন্তু ছাড়লেননা। তখন ছাড়লে এমন পরিস্হিতে পরতে হতো? আদ্রিয়ান এবার বিরক্তিকর দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন
— মজা নেওয়া শেষ? নাকি আরো চলবে?
সকলেই এবার চুপ হয়ে রইলো। আমি এবার সকলের দিকে তাকিয়ে বললাম
— বাট আপনারা কোথায় গিয়েছিলেন বলুনতো আমাদের একা রেখে?
আশিস ভাইয়া কফি মগ ঘোরাতে ঘোরাতে বললেন
— একা না রেখে গেলে একান্তে কথা হতো কীকরে?
এটা শুনে আমি অবাক হয়ে বললাম
— মানে?
আদ্রিয়ান কফির মগটা রেখে রাগী চোখে তাকালো আশিস ভাইয়ার দিকে। আদিব ভাইয়া বলল
— ওকে গাইস অনেক্ষণতো হলো কফিশপে এবার অন্যকোথাও যাই?
আশিস ভাইয়া ভ্রু কুচকে বললেন
— যাবো তো ভালো কথা কিন্তু এই রকস্টারকে নিয়ে পাবলিক প্লেসে বের হবো কীকরে?
এটা শুনে আদিব ভাইয়া একটা বাকা হাসি দিয়ে আদ্রিয়ান এর দিকে তাকালেন। আদ্রিয়ান মুচকি হেসে টিশার্ট থেকে সানগ্লাসটা চোখে পড়লেন আর কালো রং এর একটা ক্যাপ মাথায় পরে নিলেন। আমিতো হা করে তাকিয়ে আছি একেতো এখন চেনাই যাচ্ছেনা। এক্কেবারে গভীরভাবে লক্ষ্য না করলে কেউ বুঝতেই পারবেনা যে এটাই আদ্রিয়ান। আদিব ভাইয়া মুচকি হেসে আমাদের দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচালেন অর্থাৎ ‘কেমন দিলাম’? তীব্র আর অরু ইশারাতেই বললো ‘ওয়াহ ভাই ওয়াহ’। এরপর সবাই মিলে বেরিয়ে একটা লেকপার্কে ঢুকলাম। বিশাল বড় পার্ক এটা। বিশাল লেকের পাশ দিয়ে যাওয়া রাস্তা দিয়ে আমরা বিভিন্ন কথা বলতে বলতে হাটছি। হঠাৎ করেই আদ্রিয়ান আমার হাত ধরে আমাকে থামিয়ে দিলেন। আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই আমার ইশারা করে চুপ থাকতে বললেন। আর হাত ধরে টেনে অন্যদিকে নিয়ে গেলেন। একটা নিড়িবিলি সাইডে এনে আমাকে দাড় করাতেই আমি বেশ অবাক হয়ে ভ্রু কুচকে বললাম
— এটা কী হলো?
আদ্রিয়ান ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে ক্যাপ ঠিক করতে করতে বললেন
— কী হলো?
আমি হাত ভাজ করে বললাম
— ওদেরকে ছেড়ে আমরা এখানে কেনো এলাম?
— ওরা ওদের মতো গল্প করে করুকনা আমরা আমাদের মতো করে সময় কাটাই।
— মানে?
— আরেহ চলো তো।
বলে আমার হাত ধরে হাটা দিলো, আমার হাত ধরে লেকের পাশ দিয়ে চুপচাপ হেটে যাচ্ছেন উনি। উনার দৃষ্টি চারপাশের পরিবেশে আর আমার দৃষ্টি ওনার দিকে আর আমার সেই হাতটার দিকে যেটা উনি ধরে রেখেছেন। হালকা ফুরফুরে বাতাস বইছে চারপাশ দিয়ে। বেশ কিছুক্ষণ হাটার পর লেকের একপাশে সুন্দর করে বসার জায়গা বানানো হয়েছে সেদিকে ইশারা করে আদ্রিয়ান বললেন
— চলো ওখানে গিয়ে বসি।
আমি কিছু না বলে শুধু মাথা নাড়লাম। উনি আমার হাত ধরেই আমাকে নিয়ে লেকের পাশে বসলেন। দুজনের দৃষ্টিই লেকের পানির দিকে। বেশ কিছুক্ষণ সময় চুপচাপ বসে থাকার পর। হঠাৎ পেছন দিয়ে একটা লোক বুটভাজা বিক্রি করতে করতে যাচ্ছে। আদ্রিয়ান একবার পেছনে ঘুরে তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বললেন
— বুটভাজা খাবে?
আমি বেশ অবাক হয়ে বললাম
— আপনি খান এসব?
— কেনো? এগুলো কী মানুষ খায়না?
— না মানে…
আমাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে লোকটাকে উদ্দেশ্য করে বললেন
— চাচা?
লোকটা আমাদের দিকে এগিয়ে এসে বললেন
— জ্বে সাহেব?
— কী সাহেব, বাবু বলে ডাকো বলোতো? একটু বাবা, মানিক বলেও তো ডাকতে পারো?
আমি বেশ অবাক হয়ে তাকালাম আদ্রিয়ানের দিকে লোকটাও যে বেশ অবাক হয়েছে তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। আদ্রিয়ান সেদিকে পাত্তা না দিয়ে বললেন
— এক প্যাকেট বুড ভাজা দাওতো!
লোকটা বুড ভাজা রেডি করে কাগজে নিয়ে আদ্রিয়ানের হাতে দিতেই আদ্রিয়ান প্যাকেট টা আমার হাতে দিয়ে লোকটাকে জিজ্ঞেস করলেন
— কতো হয়েছে চাচা?
— দশ টেহা।
আদ্রিয়ান মানিব্যাগ বের করে সেটা থেকে পাচশ টাকার একটা নোট বের করে লোকটাকে দিলেন, লোকটা নোটটা দেখে বললেন
— এতো টেহা তো ভাঙতি নাই আমার কাছে।
— ভাঙতি তো আমার কাছেও নেই চাচা। কী আর করার তুমি পুরোটাই রেখে দাও।
— না বাবা এতো টেহা কেমনে নেই?
— দেখো আমি ফ্রিতে কিছু খাইনা। আর আমার কাছেও চেন্জ আই মিন ভাঙতি
নেই তাই ওটাই নিয়ে যাও।
আমি অবাক হয়েই আদ্রিয়ানকে দেখছি। অসাধারণের মধ্যেও যে এমন অনন্য সাধারণ সত্তা লুকিয়ে থাকতে পারে সেটা ওকে না দেখলে বুঝতাম না। আদ্রিয়ান লোকটাকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে টাকাটা দিয়ে পাঠিয়ে দিলো। আমি ততোক্ষণে প্যাকেট খুলে খাওয়া শুরু করে দিয়েছি। আদ্রিয়ানও প্যাকেট থেকে নিয়ে খাওয়া শুরু করলো। দুজনেই চুপচাপ বুটভাজা খাচ্ছি, এক অদ্ভুত নিরবতা কাজ করছে দুজনের মধ্যে। বেশ কিছুক্ষণ পর আমি নিজেই বললাম
— আপনি কিন্তু এখোনো বললেননা কেনো ডেকেছেন।
আদ্রিয়ান সামনের দিকে তাকিয়েই বুট চিবোতে চিবোতে বললেন
— বললাম তো নিজেও জানিনা। এক অদ্ভুত মায়া আছে তোমার মধ্যে। একরাতেই সেই মায়ায় জরিয়ে গেছি জানো? ঐরাতের পর থেকে শুধু তোমার কথাই মনে পরে। সেদিন রাত তিনটে বাজে তোমাকে শুধু ধন্যবাদ দিতে ফোন করিনি তোমার গলার আওয়াজ শোনার জন্যে ফোন করেছিলাম।
আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি ওনার দিকে উনি এবার আমার দিকে তাকিয়ে বললেন
— জানিনা কেনো তোমার ঐ ভীতু চেহারা, হটাৎ করেই হেসে দেওয়া, অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকা সব কিছুই খুব মনে পরছিলো। কিছু তো একটা আছে তোমার মধ্যে যেটা আমি ভূলতে পারছিনা। আই্ আই এম সার্টিং টু মিস ইউ ইয়ার।
আমি পুরো থ হয়ে তাকিয়ে আছি ওনার দিকে উনি আমাকে মিস করছিলেন? কিন্তু কেনো? কী চলছে ওনার মনে? উনি মুচকি হেসে ভ্রু নাচিয়ে বললেন
— কী ভাবছো?
আমি কোনোরকমে মাথা নাড়লাম অর্থাৎ কিছু না। কিন্তু ওনার বলা কথাগুলো শুনে যে আমার হার্টবিট কতোটা বেড়ে গেছে সেটা আমিই জানি, এখন ওনার পাশে বসতেও আনইজি লাগছে আমার। উনি হয়তো আমার অবস্হাটা বুঝতে পারলেন তাই বললেন
— যাওয়া যাক ওরা খুজছে নিশ্চই?
— হুম।
বলে দুজনেই ওদের কাছে চলে গেলাম। আমাদের দেখে ওরা পিঞ্চ মেরে কিছু কথাও বলল কিন্তু আমার মন নেই সেদিকে আমিতো শুধু আদ্রিয়ানের বলা কথাগুলো ভাবছি। এরপর ওখানেই সবাই মিলে দুপুরের লাঞ্চ সেরে ফিরে এলাম। আসার সময় আদ্রিয়ান শুধু কানের কাছে এসে ফিসফিসিয়ে বললেন
— রাতে ফোন করব ঘুমিয়ে পরো না ঠিকাছে?
সেটা শুনে আমি শুধু একপলক তাকিয়েছিলাম ওনার দিকে কিন্তু কিছু বলিনি। তবে বুকের ধুকপুকানি আরো তীব্র হয়েছিলো।

কলমে লাস্ট মার্ক টেনে ডাইরিটা বন্ধ করে একটা শ্বাস নিলো অনিমা। তিনদিন ধরে ডাইরী লেখা হয়নি কারণ আগের ডাইরিটা শেষ হয়ে গেছে নতুন ডাইরী আজকে কিনে এনেছে আদ্রিয়ানের সাথে দেখা করে আসার সময়। গত তিনদিনে ঘটা বিশেষ ঘটনাগুলো লিখে রাখল ডাইরীতে। এটা ওর অভ্যাস প্রতিদিনকার বিশেষ ঘটনাগুলো ও ডাইরীর পাতায় আটকে রাখে, এতেই এক অদ্ভুত শান্তি পায়, হালকা লাগে নিজেকে। ডাইরীটা টেবিলে রেখে মুচকি হেসে আদ্রিয়ানের ফোনের ওয়েট করতে লাগল অনিমা। কেনো করছে সেটা ও জানেনা তবে করছে, এক মধুর অপেক্ষা। যেই অপেক্ষায় বিরক্তি নেই, ক্লান্তি আছে শুধু শান্তি আর একরাশ ভালোলাগা।

প্রচুর নেশা করে রুমের সবকিছু ভেঙ্গে তচনছ করে ফেলছে রিক। তার মাথায় আগুন জ্বলছে। তীব্রতর আগুন। কিছুতেই সেই আগুনকে নেভাতে পারছেনা সে। তার ইশারায় এতো এতো বড় বড় মাথা চলে আর সেখানে একটা সামান্য মেয়েকে হাতের মুঠোয় আনতে পারছেনা সে? এটা মানার মতো নয় মানা যায় না এটা। ঐ মেয়েকে হাতে পেলে ও এমন শিক্ষা দেবে যে ওর কাছ থেকে পালানোর চিন্তা করলেও রুহু কেপে উঠবে মেয়েটার। এসব ভেবেই বিছানার সাথে হেলান দিয়ে বসে কাচের বোতলটা হাতের মুঠোয় নিয়ে চাপ দিয়ে ধরল রিক। গরগর করে পরতে থাকা রক্তের দিকে তাকিয়ে বলল
— যতো খুশি উড়ে নাও বেইবি। কারণ আবারও খাচায় বন্দি হবার সময় এসে গেছে তোমার। আমি খুব শিঘ্রই তোমাকে বলব ‘ওয়েলকাম ব্যাক টু মাই হেল সুইটহার্ট’। এতো বড় বুকের পাটা এখনো কারো হয়নি যে আমার হাত থেকে তোমাকে বাচাবে। কারো হয়নি ! কারোর না।
#চলবে…
( ব্যাস্ততার কারণে ইচ্ছে থাকলেও তাড়াতাড়ি দিতে পারিনা তবে পরবর্তীতে চেষ্টা করবো তাড়াতাড়ি দেবার।
Happy reading ?)

বর্ষণের সেই রাতে ❤ পর্ব: ৭

0

বর্ষণের সেই রাতে ❤
পর্ব: ৭
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

.
রাতে শুয়ে এপাশ ওপাশ করছি কখনো নিজের সেই ভয়ংকর অতীত মনে পরছে কখনো আদ্রিয়ানকে। ওর পাশে বসে গল্প করা ওকে জরিয়ে ধরা, ওর হটাৎ করেই কাছে এসে যাওয়া সব। কিন্তু ও হয়তো এতোক্ষণে ভূলেও গেছে আমাকে, ভূলে যাওয়াই স্বাভাবিক। মনে রাখার বিশেষ কোনো কারণ নেই। এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পরলাম। মাঝরাতে হটাৎ ফোন বাজার আওয়াজে ঘুম ভাঙলো। তাকিয়ে দেখি আননোন নাম্বার। এতো রাতে কার মনে পরলো? চোখ ডলতে রিসিভ করে কিছু বলবো তার আগেই ওপর পাশের ব্যক্তির গলার আওয়াজ পেয়ে চমকে গেলাম আমি। মনে শুধু একটা কথাই এলো এটাও সম্ভব? কারণ রিসিভ করতেই ওপর পাশ থেকে কেউ বলল
— হ্যালো ম্যাডাম? ডিসটার্ব করলাম?
আমিতো পুরো থ হয়ে আছি। ঘুম উড়ে গেছে। শোয়া থেকে লাফিয়ে উঠলাম। কারণ গলার স্বর শুনেই খুব ভালোভাবেই বুঝে গেছি যে এটা আদ্রিয়ান। নিজেও জানিনা কীকরে বুঝলাম কিন্তু কথার ধরণ শুনেই বুঝে গেছি। কিন্তু ও আমাকে ফোন করেছে? টেবিল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি তিনটা বেজে গেছে? এতো রাতে ও আমায় কেনো ফোন করল? আবার কোনো বিপদে পরেছে নাকি? এসব ভাবতে ভাবতেই আবারও ওর গলার আওয়াজ পেলাম
— কী হলো ঘুমিয়ে পরলে নাকি?
আমি বিস্মিত গলায় বললাম
— আপনি এখন?
— যাক গলার স্বরটা অন্তত মনে আছে তোমার,আমিতো ভেবেছি আমায় ভূলেই গেছো।
আমি তো ঝটকার ওপর ঝটকা খাচ্ছি কী বলছেন উনি এসব? ওনার কথা শুনেতো মনে হচ্ছেনা উনি কোনো বিপদে পরেছেন তারমানে এমনিই ফোন করেছে আমাকে? কিন্তু কেনো? আমি ইতস্তত গলায় বললাম
— নাহ মানে আপনি…
— ফোন করে একটা খবর তো নিতে পারতেন ম্যাডাম?
ওনার কথায় আবারও অবাক হলাম। আমি খোজ নেবো ফোন করে তাও ওনার? তবুও নিচু কন্ঠে বললাম
— নাম্বার দিয়ে গেছিলেন নাকি যে ফোন করব?
— কেনো? তুমি চেয়ে নিতে পারতে না?
আমি একহাতের নখ দেখতে দেখতে বললাম
— নাম্বার চাইলেতো হ্যাংলা ভাবতেন আমাকে।
— ওহ দ্যাট মিনস তুমিও আমাকে হ্যাংলা ভেবেছিলে?
আমি ভ্রু কুচকে বললাম
— আমি কেনো আপনাকে হ্যাংলা ভাবতে যাবো?
— কারণ আমিও তো তোমার কার্ডটা চেয়ে নিয়েছিলাম।
কি বলবো বলবো বুঝতে পারছি না তাই চুপ করে আছি। আদ্রিয়ান নিজেই বললেন
— ডিসটার্ব করলাম?
— না তা না কিন্তু…
— আসলে কাজ সেরে একটু আগে বাড়ি ফিরলাম, ফ্রেশ হয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই তোমার কথা মনে পড়লো। এটাও মনে পরলো যে তোমাকে ধন্যবাদ দেওয়া হয়নি, তাই কার্ডটা বের করে ফোন করলাম।
আমি মনে মনে একটু হাসলাম। ও শুধু ধন্যবাদ দিতেই ফোন করেছে আমাকে আমিও বোকার মতো কী সব ভাবছিলাম।
— যদিও অনেক রাত হয়ে গেছে ঘুমিয়ে পরেছিলে নিশ্চই? ডিসটার্বড হওনি তো?
— নাহ তা হইনি কিন্তু আপনিকি শুধু আমাকে ধন্যবাদ দিতেই ফোন করেছেন?
ও কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল
— রাত হয়েছে অনেক ঘুমিয়ে পরো। গুড নাইট।
বলেই ফোনটা কেটে দিলো। আমি একটু অবাক হলাম যা বাবা এভাবে কেটে দেবার কী হলো? শুধু ধন্যবাদ দিতে ফোন করেছিলো দেওয়া হয়ে গেছে তাই হয়তো কেটে দিয়েছে। গুড নাইট টাও বলতে দিলো না। খবিশ! তোর বউ মরবে। ধ্যাত!! কী সব বলছি। আসলেই পাগল হয়ে গেছি আমি। ও যে আমাকে ধন্যবাদ দিতে ফোন করেছে এটাই অনেক। কিন্তু আরেকটু কথা বললে কী হতো? আবার কী কোনোদিন কল করবে ও আমাকে? যা খুশি করুক আমার কী? এসব চিন্তা করেই গাল ফুলিয়ে শুয়ে পরলাম।

পরের দিন অফিসের ডেস্কে গিয়ে বসতেই তীব্র বলল
— কী ব্যাপার মিস হিরোয়িন কাল আবার কোনো স্টার এসছিলো নাকি?
আমি ভ্রু কুচকে ওর দিকে তাকিয়ে বললাম
— মানে?
তীব্র কিছু বলবে তার আগেই অরু বললো
— নাহ মানে পরশু তো এ.ডি এসছিলো কালকে আবার কেউ এসছিলো কিনা সেটাই জিজ্ঞেস করছিলাম আমরা।
আমি বিরক্ত হয়ে বললাম
— স্টারদের কী খেয়েদেয়ে আর কোনো কাজ নেই যে রোজ রাতে ওয়ান বাই ওয়ান আমার ফ্লাটে আসবে?
তীব্র এবার চেয়ার ঘুরিয়ে আমার দিকে ফিরে বলল
— বাই দা ওয়ে? এ.ডি তো তোর কার্ড নিয়েছিলো তাইনা ফোনটোন করেছিলো?
এটা শুনে অরুও উৎসুক দৃষ্টিতে তাকালো মানে ওও শুনতে চায়। আমি স্বাভাবিক ভঙ্গিতেই বললাম
— হ্যা কল করেছিলো কাল রাতে।
দুজনেই চমকে তাকালো আমার দিকে। কারণ ওরা এতোটাও আশা করেনি। ওদের আর কী বলবো আমি নিজেও তো ভাবতে পারিনি এমন যে আদ্রিয়ান নিজে আমাকে ফোন করবে। অরু এক্সাইটেড হয়ে বলল
— এই কী কী বললো?
আমি অরুর দিকে তাকিয়ে মেকি হাসি দিয়ে বললাম
— বললো যে বিয়ের জন্য মেয়ে খুজে পাচ্ছিনা তোমার কোনো বোন ঠোন বা বান্ধবী থাকলে বলো। আমি তোর কথা বললাম ছবি দেখালাম আর ও রাজী হয়ে গেলো।
অরু বিরক্তিকর দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল
— মিথ্যুক।
আমি সিরিয়াস ভঙ্গিতেই বললাম
— সত্যিই বলছি এটাই হয়েছে।
অরু হাত ভাজ করে ভ্রু কুচকে বলল
— এ.ডি বিয়ের জন্যে মেয়ে খুজে পাচ্ছেনা, তোকে মেয়ে খুজতে বলেছে, তুই ছবি দেখিয়েছিস ও রাজীও হয়েছে ? আমার মাথায় কী সিল দেওয়া আছে যে আমি গাধা যা বলবি তাই গিলবো?
আমি অবাক হওয়ার ভান করে বললাম
— আরে তোর কোথাও ভূল হচ্ছে।
অরু একটু অবাক হয়ে বলল
— কী ভূল হচ্ছে?
— আদ্রিয়ান মেয়ে খুজছে ঠিকই কিন্তু ওনার জন্যে না।
এবার তীব্রও কৌতুহলী কন্ঠে বলল
— তাহলে?
আমি দাঁত বের করে একটা হাসি দিয়ে বললাম
— ওনার ড্রাইভারের জন্যে খুজছে বেচারা নাকি বুড়ো হয়ে যাচ্ছে কিন্তু বউ জুটছেনা কপালে।
অরু সাথে সাথেই মুখটা ছোট করে ফেলল। আমি আর তীব্র মুখ টিপে হাসছি। অরু কিছুক্ষণ বোকার মতো আমাদের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল
— তোরা দুজন এতোক্ষণ আমাকে নিয়ে মজা করছিলি?
এটা শোনার সাথেসাথেই তীব্র আর আমি শব্দ করে হেসে দিলাম। তীব্র হাসতে হাসতেই বলল
— সেটা তুই এতোক্ষণে বুঝলি?
তীব্র কথাটা শেষ করতেই। আমি আর তীব্র হাসতে হাসতে হাইফাইভ করলাম। আর অরু মুখটা ফুলিয়ে বলল
— থাক তোরা দুজন একসাথে আমি কথাই বলবোনা তোদের সাথে।
বলেই ডেস্কের দিকে ঘুরে কাজ করতে লাগল। আমি অার তীব্রও মুচকি হেসে কাজে মন দিলাম। কিন্তু অনেকটা সময় পার হয়ে যাবার পরেও যখন অরু কোনো কথা বলছে না। তাই আমি চেয়ার ঘুরিয়ে বললাম
— এই পেত্নি মৌন ব্রত পালন করছিস নাকি?
কিন্তু ও চুপ করে আছে কোনো কথা বলছেনা। সেটা দেখে তীব্রও ওর দিকে ঘুরে বলল
— এইযে ড্রামাকুইন মুখে গ্লু লাগিয়ে রেখেছিস?
কিন্তু মহারাণী এবারেও এক্কেবারে চুপ করে অাছে। এবার আমি আর তীব্র দুজনেই দুজনের মুখের দিকে তাকালাম। তীব্র চোখ দিয়ে ইশারা করল আর আমিও ওর ইশারা বুঝতে পেরে মুচকি হেসে চোখ টিপ মারলাম। এরপর দুজনে একসাথেই ওকে সুরসুরি দিতে লাগলাম। এটা ওর রাগ ভাঙানোর নিঞ্জা টেকনিক, ওর যত রাগই থাক সুরসুরি দিলেই ও খিলখিলিয়ে হেসে দেয় আর ওর রাগও জল হয়ে যায়। আর এবারেও এর ব্যতিক্রম হলো না। কিছুক্ষণ হাসাহাসির পর অরুর অসহায় কন্ঠে বলল
— প্লিজ বলনা কী বলেছে।
আমি ছোট একটা নিশ্বাস নিয়ে ওদের দুজনের দিকে তাকালাম, দুজনেই শুনতে ইচ্ছুক। এরপর ওদেরকে সবটা বলার পর তীব্র আমার মাথায় একটা চাটা মারল। আমি মাথায় হাত দিয়ে মুখ ফুলিয়ে বললাম
— মারলি কেনো?
তীব্র ভ্রু কুচকে আমার দিকে তাকিয়ে বলল
— মারবো না তো কী করব? এতো মাথামোটা কেনোরে তুই?
অরুও বিরক্তিকর কন্ঠে বলল
— সেই ইয়ার। তোর কী মনে হয় শুধুমাত্র ধন্যবাদ দিতে কেউ রাত তিনটে বাজে ফোন করে?
— করতেই পারে কাজ ছিলো তাই সারাদিন সময় পায়নি তাই রাতে করেছে? ওর মতো একজন তো আর আমার সাথে প্রেমালাপ করতে ফোন করবেনা।
ওরা দুজনেই আমার দিকে এক হতাশ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ছোট নিশ্বাস ফেলে কাজে মন দিলো আমি কিছুই বুঝলাম না। তাই কিছুক্ষণ ওদের দিকে বোকার মতো তাকিয়ে থেকে নিজের কাজে মন দিলাম।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
লাঞ্চ টাইমের পর স্যার মিটিং ডাকলেন। মিটিং এর মধ্যে কেউ বারবার কল দিচ্ছে ফোন ভাইবারেট হচ্ছে বারবার। বেশ বিরক্ত লাখছে আমার। মিটিং শেষ হতেই অরু অার তীব্রকে বললাম
— তোরা ডেস্কে যা কেউ কল করছে বারবার অামি কথা বলে আসছি।
ওরা মাথা নেড়ে চলে গেলো, আমি অফিসের বিরাট ব্যালকনিতে গিয়ে ফোনের স্ক্রিনে চোখ দিতেই ভ্রু জোরা কুচকে গেলো। কারণ নাম্বারটা আননোন, একটা আননোন নাম্বার থেকে এতোবার কল এলো? আমি নাম্বারটায় ডায়াল করলাম রিং হওয়ার প্রায় সাথে সাথেই ফোন রিসিভ করল। আমি জিজ্ঞাসু কন্ঠে বললাম
— হ্যালো?
— কী ম্যাডাম ব্যস্ত ছিলেন মনে হয়?
আমি চমকে কান থেকে ফোন সরিয়ে নাম্বারটা দেখলাম, তখন ঘুমের মধ্যে রিসিভ করেছিলাম তাই নাম্বারটা খেয়াল ছিলোনা, কিন্তু ধন্যবাদ দেওয়া তো হয়ে গেছে তাহলে আবার কল কেনো করলো? এসব ভেবে আবারো ফোনটা কানে নিয়ে বললাম
— আপনি?
— নাম্বারটাও সেভ করোনি? হাউ রুড?
— নাহ মানে…
— আচ্ছা ছাড়ো কতোক্ষণ যাবত কল করছি ফোন ধরছিলেনা কেনো?
— আসলে মিটিং চলছিলো।
— কীসের মিটিং? নতুন করে আবার কাকে বাস দেবে সেই ব্যাপারে?
— আপনিও না..
ওপাশ থেকে ওনার হাসির শব্দ পেলাম সেই হাসির শব্দ শুনে আমিও হেসে দিলাম। উনি হাসি থামিয়ে বললেন
— আচ্ছা যে কারণে কল করলাম। কালকেতো ফ্রাইডে ফ্রি আছো নাকি কোনো কাজ আছে?
আমি একটু অবাক হলাম। হঠাৎ এই প্রশ্ন কেনো? তাই অবাক কন্ঠেই বললাম
— কেনো বলুনতো?
— ফ্রি আছো?
— হ্যা ফ্রি আছি বাট হোয়াই?
— দেন কালকে মিট করি?
এটা শোনার সাথে সাথেই আমি যেনো ফ্রিজ হয়ে গেলাম। উনি দেখা করতে চাইছেন আমার সাথে? কিন্তু কেনো? আমার সাথে ওনার কী দরকার? আমি নিচু কন্ঠে বললাম
— কিন্তু কেনো?
— দেখা করতে যে বিশেষ কোনো কারণ থাকতেই হবে এটা কোথায় লেখা আছে? ওনার কথায় আমি অবাকের ওপর অবাক হচ্ছি উত্তেজনায় ঘাম বেরোচ্ছে আমার। নাকের নিচের ঘামটা মুছে বললাম
— নাহ কিন্তু…
— তোমাকে ফোর্স করছিনা। আমি স্টারপ্লেজ কফিশপে তোমার জন্যে অপেক্ষা করবো কাল সকাল দশটায়। তুমি চাইলে তোমার ফ্রেন্ডদেরকেও নিয়ে আসতে পারো আমার সমস্যা নেই। আসবে কী না ইটস আপ টু ইউ।
— আমি আসলে..
কিন্তু আমাকে কথাটা শেষ করতে না দিয়ে উনি ধীরকন্ঠে বললেন
— বাই। এন্ড আই উইল ওয়েট পর ইউ।
বলেই আমায় কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ফোনটা কেটে দিলেন। ছেলেটা এমন কেনো? নিজের কথা শেষ হলেই ফোন রেখে দেয়? ওপর পাশের মানুষটার কথাও তো শুনতে হয় নাকি? আমি কান থেকে ফোন নামিয়ে ঠোট কামড়ে ধরে দাড়িয়ে রইলাম। কী করব এখন? ওকেতো না ও করতে পারলাম না আর না আমি যেতে পারব। আমিতো অফিস আর ফ্লাট ছাড়া কোথাও বেড়োই নাহ। কিন্তু ও যদি সত্যিই ওয়েট করে? এসব ভাবতে ভাবতেই চিন্তিত মুখ নিয়ে ডেস্কে গিয়ে বসলাম। আমার এমন চেহারা দেখে অরু বলল
— কী রে আবার কী হলো?
সেটা শুনে তীব্রও কম্পিউটার থেকে চোখ সরিয়ে বলল
— কে ফোন করেছিলো যে তোর চেহারার রং বদলে গেলো?
আমি অসহায় ভাবে ওদের দিকে তাকিয়ে বললাম
— আদ্রিয়ান ফোন করেছিলো।
সেটা শুনে দুজনেই চমকে গেলো, যেনো বড়সর ঝটকা খেয়েছে, কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর অরু প্রচন্ড উত্তেজিত হয়ে তীব্রকে বলল
— দেখলি আই টোল্ড ইউ না এ.ডি এর মনে কিছু চলছে?
আমি ভ্রু কুচকে বললাম
— মানে?
তীব্র আমার চেয়ারটা ওর দিকে ঘুরিয়ে বলল
— তোকে মানে বুঝতে হবেনা এবার বলতো কী বলল?
— কালকে মিট করতে চায় আমার সাথে।
অরু খুশি হয়ে বলল
— ওয়াও ফার্স্ট ডেট…হাউ কিউট।
আমি অরুকে ধমক দিয়ে বললাম
— তুই থামবি? ফার্স্ট ডেট! আকাশ কুসুম সপ্ন দেখা বন্ধ কর। আমি আছি আমার জ্বালায় আর তোরা…
তীব্র জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল
— সমস্যা কী?
— আমি যেতে পারবোনা।
সেটা শুনে দুজনেই একসাথে বলল
— কেনো?
— তোরা জানিস না কেনো? মামুর আর ভাইয়ার ক্ষমতা থাকলেও এতোটাও নেই যে আমাকে খুজে বের করবে। কিন্তু ও? ও ওর ক্ষমতা দিয়ে পাতাল থেকে হলেও আমাকে খুজে নেবে। তাই আমাকে সাবধান থাকতেই হবে।
অরু এবার আমার কাধে হাত রেখে বলল
— দেখ অনি এভাবে আর কতোদিন পালাবি তুই? আর তাছাড়া তুই তো জার্নালিস্ট, এমনিতেও তোকে খুজে পেয়ে যাবে। তাহলে এটাকে প্রফেশন কেনো করলি ছেড়ে দে এটা?
আমি ডেস্কে বারি মেরে বললাম
— সেটাইতো পারবোনা। আমার আব্বুর স্বপ্ন, ত্যাগ সবকিছু মিশে আছে এই প্রফেশনে কীকরে ছাড়বো আমি?
তীব্র আমার মাথায় হাত রেখে বলল
— এইজন্যেই বলছি এসব ভাবিস না। ঘরে মধ্যে লুকিয়ে কদিন থাকতে পারবি তুই?
অরুও তীব্রর কথায় সায় দিয়ে বলল
— আর দেখ ছেলেটা ওয়েট করবে তো, না গেলে খারাপ লাগবে ওর।
তীব্র এবার আমার কাধে হাত রেখে বলল
— আচ্ছা ভয় পাস না। আমরাও যাবো তোর সাথে ওকেহ?
আমি চোখ মুছে একটা শ্বাস নিয়ে বললাম
— আমি ভেবে দেখছি। বাট আমাকে ফোর্স করিসনা প্লিজ।
অরু আমাকে একহাতে জরিয়ে নিয়ে বলল
— যদি যাস তো আমাদের জানাস আমরা রেডি হয়ে থাকব ওকে?
তীব্রওু মুচকি হেসে বলল
— হ্যা এক ঘন্টা আগে জানালেই হবে।
— হুম।
ওরা দুজনেই একে ওপরের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে ডেস্কে চলে গেলো।

বাইরে ভীষণ জোরে বৃষ্টি আর বজ্রপাত হচ্ছে। আমাকে টেনে হিচড়ে অন্ধকার একটা রুমে এনে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো। আমি উঠে দাড়িয়ে দরজার কাছে যাওয়ার আগেই দরজা বাইরে থেকে বন্ধ করে দিলো। আমি দরজা ধাক্কাতে ধাক্কাতে চিৎকার করে বললাম
— মামু প্লিজ দরজাটা খোলো এমন করোনা আমার সাথে, প্লিজ খোলো দরজাটা আমার ভয় লাগছে এখানে। মামি প্লিজ তুমি অন্তত খুলে দাও, প্লিজ। যেতে দাও আমাকে।
কিন্তু কেউ আসছেনা, অন্ধকার রুমে বাইরের বজ্রপাতের প্রতিটা আওয়াজে কেপে উঠছি আমি।
— প্লিজ খোলো দরজাটা প্লিজ।
ক্লান্ত অস্ফুট স্বরে কথাটা বলে কাদতে কাদতে দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে বসে পরলাম আমি। অনেক্ষণ পর হঠাৎ কেউ এসে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলো তাকে দেখেই ভয়ে গুটিয়ে বসলাম আমি, লোকটা যতো এগিয়ে আসছে আমি ততোই গুটিয়ে যাচ্ছি, সে আমার সামনে এক হাটু ভেঙ্গে বসে বলল
— আজ আবার পালাতে চাইছিলে?
আমি মাথা নিচু করে কাদছি। লোকটা আমার চুলের মুঠি ধরে মাথাটা উচু করে ধরল। ব্যাথায় কুকিয়ে উঠলাম আমি, চোখ দিয়ে পানি পরছে অনবরত কিন্তু লোকটার সেদিকে পাত্তা নেই। সে আমার গাল চেপে ধরে দাতে দাত চেপে বলল
— খুব সখ না পালানোর? সেদিনের চড়গুলোর কথা ভূলে গেছো বেবি? কোনো ব্যাপার না আজকের ডোজটা সিউর মনে থাকবে।
বলেই ঝাড়া দিয়ে আমার গাল ছেড়ে উঠে দাড়িয়ে নিজের বেল্ট খুলতে শুরু করলো। আমি হালকা পিছিয়ে গিয়ে বললাম
— প্লিজ। আমার ভূল হয়ে গেছে আমি আর পালানোর চেস্টা করবোনা।
— পারবেও না। তোমার ঐ ইউসলেস মামা মামির ভরসায় তোমাকে আর ছেড়ে রাখব না আমি, আগে যেটা করেছো তার শাস্তি দিয়ে নি।
— না প্লিজ আজকে মারবেন না।
লোকটা বেল্ট হাতের মুঠোয় নিয়ে বলল
— সেটা তোমার এসব করার আগে ভাবা উচিত ছিলো। আজকের পর পালানোর আগে দশবার ভাববে।
বলেই লোকটা নির্মমভাবে বেল্ট দিয়ে মারতে শুরু করলো আমাকে। আমার চিৎকার বন্ধ রুমের দেয়ালে বারবার প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। কিন্তু সেই চিৎকারে মন একটুও গলছেনা লোকটার। সে নিষ্ঠুরভাবে আঘাত করে চলেছে আমাকে।

চিৎকার করে লাফ দিয়ে উঠে বসলাম আমি। সারাশরীর ঘামে ভিজে গেছে। জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছি। টি- টেবিলে রাখা গ্লাস থেকে ঢকঢক করে পানি খেয়ে নিলাম। আজকে সন্ধ্যায় সিলিপিং পিল খেতে ভুলে গেছি তাই এই অবস্হা। কারণ এটা নতুন না প্রায় আমাকে তাড়া করে এই ভয়ংকর দুঃসপ্ন, যেটা আমার অতীত, নিষ্ঠুর অতীত। যেটা থেকে আমি পালিয়ে বাচতে চাইছি কিন্তু সেই অতীত আমার পেছন ছাড়ছেনা। ঘড়ি বলছে ৪ টা ২০ বাজে একটা নিশ্বাস নিয়ে উঠে সাওয়ার নিতে চলে গেলাম। কারণ এখন হাজার চাইলেও আর ঘুমোতে পারবোনা। একঘন্টার লম্বা সাওয়ার নিয়ে কফি বানিয়ে বেলকনিতে দাড়িয়ে আবছা অন্ধকার আকাশটা দেখতে দেখতে খোয়া ওঠা কফির মগে চুমুক দিলাম। আদ্রিয়ানের সাথে মিট করতে যাবো কি না ঠিক করিনি এখোনো। আপাদত ভোর হওয়া দেখছি। সূর্য কী সুন্দরভাবে পৃথিবীর বুক থেকে রাতের আধার দূর করে নতুন আলো নিয়ে আসে। আমার জীবনেও কী এমন কোনো সূর্য আসবে নতুন আলো নিয়ে নাকি এই অন্ধকারেই চিরস্থায়ীভাবে থেকে যাবে আমার জীবন।
#চলবে..

( অনিমার অতীত কী ছিলো সেটা জানাবো তবে ধীরে ধীরে ততোদিন ধৈর্য ধরে পরুন। ধন্যবাদ)

বর্ষণের সেই রাতে ❤পর্ব- ৮

0

বর্ষণের সেই রাতে ❤পর্ব- ৮
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

.
একঘন্টার লম্বা সাওয়ার নিয়ে কফি বানিয়ে বেলকনিতে দাড়িয়ে আবছা অন্ধকার আকাশটা দেখতে দেখতে ধোয়া ওঠা কফির মগে চুমুক দিলাম। আদ্রিয়ানের সাথে মিট করতে যাবো কি না ঠিক করিনি এখোনো। আপাদত ভোর হওয়া দেখছি। সূর্য কী সুন্দরভাবে পৃথিবীর বুক থেকে রাতের আধার দূর করে নতুন আলো নিয়ে আসে। আমার জীবনেও কী এমন কোনো সূর্য আসবে নতুন আলো নিয়ে নাকি এই অন্ধকারেই চিরস্থায়ীভাবে থেকে যাবে আমার জীবন? মনে মনে নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করে মুচকি হেসে কফির মগে চুমুক দিলাম। জন্মের পর থেকেই একটু একটু করে যার জীবণ থেকে সব আলো ফুরিয়ে গেছে, তার জীবণে নতুন করে কেউ আলো নিয়ে আসবে সেটা ভাবাও বোকামি। একটু একটু করে সূর্য উঠে গোটা আকাশটাকে আলোকিত করছে সব অন্ধকার কেটে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বললাম
— বাবা মা তো কখনো স্বার্থপর হয়না তাইনা? তাহলে তোমরা কেনো হলে? কেনো স্বার্থপরের মতো আমাকে ফেলে চলে গেলে এভাবে? এই স্বার্থপর পৃথিবীতে আমাকে একা ছেড়ে চলে যাবার আগে একবারো ভাবলে না যে আমার কী হবে? মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে চলে যাই তোমাদের কাছে কিন্তু তোমার অপূর্ণ স্বপ্নগুলো পূরণ করার যে দায়িত্ব নিজের কাধে নিয়েছি সেই দায়িত্ব কীকরে এড়িয়ে যাই বলোতো?
এই মুহূর্তে চোখ দিয়ে জল বেড়োচ্ছেনা, বেড়োচ্ছে শুধু দীর্ঘশ্বাস, চোখের জল ও হয়তো ক্লান্ত হয়ে গেছে। কফিটা শেষ করে খাটে হেলান দিয়ে শুয়ে রইলাম। কী করবো সেটাই ভাবছি। আদ্রিয়ান কী সত্যিই ওয়েট করবে আমার জন্যে? যদি সেটা হয় আমি না গেলে সত্যিই খারাপ হবে। কিন্তু যদি ওই লোকটা কোনোভাবে আমাকে খুজে পেয়ে যায়? কিচ্ছু ভাবতে পারছিনা। কেনো দেখা করতে চায় ও আমার সাথে? আমিই বা কী করবো? যাবো নাকি না? নিজের চোখ দুটো বন্ধ করে জোরে জোরে কয়েটা শ্বাস নিলাম।

— আব্বু আব্বু।
বলেই পেছন থেকে চেয়ারে বসে পেপার পড়তে থাকা আব্বুর গলা জরিয়ে ধরলাম।
— কী ব্যাপার মামনী আজকে এতো সোহাগ? নিশ্চই কিছু চাই?
আমি মুখটা ফুলিয়ে আব্বুর গলা ছেড়ে সোফায় বসে বললাম
— তুমি আমাকে এভাবে বলতে পারলে? আমি শুধু কিছু দরকার হলেই তোমাকে আদর করি? যাও কথাই বলবোনা তোমার সাথে।
আব্বু পেপারটা রেখে আমার পাশে বসে বলল
— আরেহ আমিতো মজা করছিলাম মা। আমি হাত ভাজ করে উল্টো ঘুরে বসলাম। আব্বু মুচকি হেসে বলল
— যাহ মেয়তো রাগ করেছে আমার ওপর, কিন্তু একজনের টিউশন থেকে ফিরে আসার অপেক্ষায় যে আমি এখোনো না খেয়ে আছি সেটাকি কেউ জানে?
আমি এবার ভ্রু কুচকে আব্বুর দিকে তাকিয়ে অনেকটা রেগে বললাম
— তুমি এখোনো না খেয়ে আছো? আব্বু তুমি জানো তোমার সুগার ফল করে তবুও?
— আমার মামনীকে না খাইয়ে আমি কীকরে খাই?
— হয়েছে আর বলতে হবেনা।
আমি উঠে গিয়ে একপ্লেটেই আব্বু আর আমার খাবার আব্বুর হাতে এনে দিলাম। আব্বু ভ্রু কুচকে বলল
— এক প্লেটে কেনো?
আমি আব্বুর সামনে ফ্লোরে হাটু ভেঙ্গে বসে বললাম
— তুমি খাইয়ে দেবে আমাকে।
আব্বু হেসে দিয়ে রুটি ছিড়ে আমার মুখে দিয়ে বলল
— তা এবার বলোতো কী চাই তোমার?
— আমার এস এস সি তে প্লাস আসলে তোমার কিন্তু ট্রিট দেবার কথা ছিলো?
— হুম মনে আছে পেয়েছো যখন দেবো তো!
— কালকেতো ফ্রাইডে। কালকে আমরা বাইরে গিয়ে লাঞ্চ করবো।
আব্বু মুখটা ছোট্ট করে বলল
— সরি মামনী। কালকেতো একজনের সাথে আমায় মিট করতে হবে। ঐসময় ব্যাস্ত থাকব আমি।
আমি মুখ ফুলিয়ে রুটি চিবোতে চিবোতে বললাম
— ক্যান্সেল করে দাওনা? যেতে হবেনা কোথাও তুমি আমার সাথেই যাবে।
আব্বু আমার মুখে আরেক টুকরো রুটি দিতে দিতে বলল
— আচ্ছা একটা কথা বলো কেউ যদি তোমার জন্যে ওয়েট করে আর তুমি যদি না যাও সেটাকি ভালো দেখায়? ইস ইট গুড ম্যানার্স?
আমি না বোধক মাথা নাড়লাম। আব্বু হেসে দিয়ে বলল
— সেইজন্যেই আমার তো যাওয়া উচিত তাইতো?
— হুম।
বলে মন খারাপ করে খাবার চিবোতে থাকলাম। আব্বু কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল
— লাঞ্চ না হোক ডিনার তো করতেই পারি? কাল আমরা দুজন একসাথে ডিনারে যাবো হ্যাপি?
এটা শোনার সাথে সাথেই আমার সব মন খারাপ দূর হয়ে গেলো, খুশিতে লাফিয়ে উঠে বললাম
— সুপার হ্যাপি।
— হয়েছে আর নাচতে হবেনা এবার চুপচাপ খাও।
আমি ভদ্র মেয়ের মতো বসে পরলাম, আর আব্বু আমাকে খাইয়ে দিচ্ছে আর নিজে খাচ্ছে। হঠাৎ আব্বু বলল
— এইযে আমার হাতের খাওয়ার একটা বদঅভ্যাস বানাচ্ছো, যখন আমি থাকবোনা কে খাইয়ে থেবে শুনি?
এটা শোনার সাথে সাথেই আমার মুখের হাসি উড়ে গেলো, আমি কদোকাদো মুখ করে আব্বুর কোলে মাথা রেখে বললাম
— কেনো এসব বলো তুমি? তুমিতো জানো তুমি ছাড়া আমার কেউ নেই তাও তুমি আমাকে ছেড়ে যাবার কথা বলো?
আব্বু একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলল
— সব কিছুতো আমাদের হাতে থাকেনারে মা। না চাইতেও অনেকসময় চলে যেতে হয়।
আমি কিছু না বলে চুপচাপ আব্বুর কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে রইলাম। আর আব্বু আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো।

হটাৎ আব্বু বলে চোখ মেলে তাকালাম। চারপাশে তাকিয়ে বুঝতে পারলাম সপ্ন দেখছিলাম। ওসব ভাবতে ভাবতে কখন চোখ লেগে গেছে বুঝতেই পারিনি। ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি সাড়ে আটটা বেজে গেছে অলরেডি। দশটায় ওখানে থাকতে বলেছিলো আদ্রিয়ান। যাবো আমি? এসব রুমে পায়চারী করতে করতে এসবই ভাবছি। একবার মন বলছে যাই, আরেকবার মন বলছে যাওয়াটা ঠিক হবেনা। কিছুতেই স্হির কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছিনা। আরো একবার ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি নয়টা বেজে গেছে। খাটে বসে হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরলাম। মাঝেমাঝে এমন কিছু পরিস্হিতি আসে যখন না এদিকে যাওয়া যায় না ওদিকে। কী করবো তা নিজেরাই বুঝতে পারিনা। সিদ্ধান্ত নিতে নিতেই সময় পার হয়ে যায়। অনেকক্ষণ ভেবে সিদ্ধান্ত নিয়েই নিলাম। ফোনটা হাতে নিয়ে অরুকে কল করলাম। বাজার একটু পরেই অরু রিসিভ করে বলল
— শরতান্নি, বান্দরনী, পেন্তী, শাকচুন্নি, রাক্ষুসী..
আমি বিরক্ত হয়ে বললাম
— আরে আরে একটু শ্বাস নিয়ে নে বইন। আমি পালিয়ে যাচ্ছিনা।
— তোর এতোক্ষণে ফোন করার সময় হলো? আমি আর তীব্র কী পরিমাণে টেনশনে আছি জানিস? তীব্র আমাকে এই নিয়ে একশবার ফোন করে জিজ্ঞেস করেছে তুই কিছু জানিয়েছিস কী না।
আমি ভ্রু কুচকে বললাম
— তোদের এতো ইন্টারেস্ট কেনো সেটাইতো বুঝতে পারছিনা ভাই।
— তুই এসব বুঝবিনা এবার বলতো কী ঠিক করলি? অলরেডি নয়টা বিশ বাজে।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন

— অব্ ব রেডি হয়ে বের হ। আমি ফ্লাটের নিচের রোডে ওয়েট করছি। তীব্রকে ওর গাড়ি নিয়ে আসতে বলিস।
— ওকেহ ওকেহ তুই রাজি হয়েছিস এটাই অনেক। আমি আর তীব্র এক্ষুনি আসছি। থ্যাংকস ইয়ার।
ওর উত্তেজনা দেখে হেসে দিলাম আমি। হাসতে হাসতেই বললাম
— আচ্ছা রাখ।
— আর হ্যা শোন!
— আবার কী?
— আজকে অন্তত একটু সাজিস হ্যা?
— তুই ফোন রাখবি।
— আচ্ছা ঠিকাছে ঠিকাছে
ফোন কেটে আনমনেই হেসে দিলাম আমি। সত্যিই পাগলি। জীবনে সব না পাওয়ার আর হারানোর মধ্যে এই দুজনকে পেয়েছি। ওদের ভালোবাসা কেয়ারিং সবকিছুই আমাকে মুগ্ধ করে। সত্যিই এমন বন্ধু সবার ভাগ্যে জোটেনা এই দিক দিয়ে বলতে গেলে আমি খুব লাকি। আর এইজন্যে প্রত্যেকদিন আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায়ও করি।
একটা সাদা কুর্তি আর কালো জিন্স পরে নিলাম, চুলগুলোও ছেড়ে দিলাম সাইড সিথি করে। ব্যাগ নিয়ে বেড়নোর আগে আয়নার আরেকবার নিজেকে দেখলাম। সাজবো একটু? হটাৎ করেই মুখে গরম পানি ছুড়ে মারার দৃশ্যটা চোখের সামনে ভেসে উঠতেই কেপে উঠলাম আমি। চোখের কোণের পানিটা মুছে নিলাম। সবকিছু সবার জন্যে না ভেবে একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বাইরে গিয়ে কিছুক্ষণ ওয়েট করার পরেই তীব্র ওর গাড়ি নিয়ে চলে এলো। আমি গিয়ে ফ্রন্ট সিটে বসতেই পেছনের সিট থেকে অরু বলল
— কী রে তুই? তোকে বললাম সাজতে আর তুই একটুও সাজলিনা? কাজল আর লিপসটিক তো দিতেই পারতি?
আমি সিটবেল্ট বাধতে বাধতে বললাম
— কী দরকার বলতো?
অরু বিরক্ত হয়ে বলল
— সেটা তুই যদি বুঝতি তাহলেতো হয়েই যেতো। সাজগোজের সাথে তোর কোন জন্মের শত্রুতা বলবি?
তীব্র গাড়ি স্টার্ট করতে করতে বলল
— সাজার কী দরকার? ও এমনিতেই সুন্দর। এতই সুন্দর যে যে কেউ পাগল হয়ে যাবে ওর জন্যে..
এটুকু বলেই থেমে গেলো। অরু চোখ গরম করে তাকালো তীব্রর দিকে। তীব্র ইতোস্তত করে আমার দিকে তাকিয়ে বলল
— সরি ইয়ার ভূলে গেছিলাম।
আমি একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে মুচকি হেসে বললাম
— কোনো ব্যাপার না চল।
এরপর পোনে এগারোটায় আমরা পৌছে গেলাম আদ্রিয়ানের বলা কফিশপে। গাড়ি থেকে নামতেই বুকের ভেতর কেমন করতে লাগল। শহরের নামকরা কফিশপের মধ্যে একটা এটা। অরু আর তীব্র নেমে এলো। আমাকে দাড়িয়ে থাকতে তীব্র বলল
— কীরে কী হলো? চল ভেতরে?
অরুও ভীত কন্ঠে বলল
— দশটায় আসার কথা ছিলো পোনে এগারোটা বাজে। চলে গেছে কী না কে জানে?
আমি একটু বিরক্ত হয়ে বললাম
— গেলে যাক। এতো পেচাল পারিসনা তো।
তিনজনেই কফিশপের ভেতরে ঢুকলাম। এতোবড় যে কোন কোণায় ও আছে সেটা বুঝতে পারা মুসকিল। তীব্র এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে বলল
— একটা ফোন কর ওনাকে কোথায় আছে জিজ্ঞেস কর।
আমি ফোনটা বের করে কললিস্টে ওনার নাম্বারটা খুজে বের করে ফোন দিলাম। রিসিভ করার পর আমি কিছু বলবো তার আগেই উনি বললেন
— গেইটের কাছে দাড়িয়ে থাকো। আ’ম জাস্ট কামিং।
বলেই রেখে দিলো। আজব বুঝলো কীকরে যে এসছি? অরু আমাকে একটা খোচা মেরে বলল
— কীরে কী বলল?
— বলল গেইটের কাছে থাকতে উনি আসছেন।
তীব্র মুচকি হেসে বলল
— মানতে হবে লোকটা এমনিতে খুব ভালো।
আমি কিছু বলবো তার আগেই আদ্রিয়ানকে চোখে পরল। উনি দূর থেকেই হাত নাড়লেন আমাদের দেখে আমি কিছু না বলে মুচকি হাসলাম। আদ্রিয়ান হাসি মুখেই এগিয়ে আসছেন আমাদের দিকে। আজ একটা ব্লাকের মধ্যে হোয়াইট ডিজাইনের টিশার্ট, ব্লাক জিন্স পরেছে, হোয়াইট কেচ আর সানগ্লাসটা টিশার্টের গলায় ঝুলিয়ে রেখেছেন, সিল্কি চুলগুলো বেশ খানিকটা কপালে পরে আছে। অরু মিনমিনিয়ে বলল
— ইয়ার সামনাসামনি তো আরো হ্যান্ডসাম লাগে ওকে।
আমি মুখে হাসি রেখেই অরুকে একটা খোচা মেরে দাতে দাতে চেপে বললাম
— মুখটা বন্ধ কর নইলে থাপ্পড় খাবি।
আদ্রিয়ান আমাদের সামনে এসে মুচকি একটা হাসি দিয়ে বললেন
— হাই। এটলাস্ট এলে তুমি?
আমি মুচকি হাসলাম। আদ্রিয়ান অরু আর তীব্রর দিকে তাকিয়ে বললেন
— আমি জানতাম তুমি একা আসবেনা। পরিচয়তো করিয়ে দাও।
আমি হালকা হেসে অরুর দিকে ইশারা করে বললাম
— ও আমার ফ্রেন্ড অরুমিতা।
আদ্রিয়ান অরুর দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিয়ে হাত বাড়িয়ে বলল
— হায় অরুমিতা।
অরুতো অবাক তাকিয়ে আছে, আমি আদ্রিয়ানের আড়ালে ওকে চিমটি দিতেই ও তাড়াতাড়ি আদ্ররিয়ানের সাথে হ্যান্ডশেক করে বলল
— হাই।
এরপর আমি তীব্রর দিকে ইশারা করে বললাম
— আর ও আমার ফ্রেন্ড তীব্র।
তীব্র আদ্রিয়ানের দিকে হাত বাড়ালো কিন্তু আদ্রিয়ান হ্যান্ডশেক করলো না, উল্টে হাগ করলো ওর সাথে তীব্র প্রথমে একটু অবাক হলেও পরে হেসে দিলো। আদ্রিয়ান তীব্রকে ছেড়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলল
— তো ভেতরে যাওয়া যাক?
আমি হালকা হেসে মাথা নাড়লাম। ভেতরে গিয়ে একটা টেবিলে গিয়ে দেখি আরো দুইজন বসে আছে। আমরা যেতেই ঐ দুইজন দাড়িয়ে গেলো। আদ্রিয়ান রেড টিশার্ট পরা লোকটার দিকে ইশারা করে বললেন
— ও হলো আমার ফ্রেন্ড আদিব।
আদিব নামের লোকটা আমাদের তিনজনের সাথে হ্যান্ডশেক করে হায় বলল।
এরপর ব্লু শার্ট পড়া একটা লোককে ইশারা করে বললেন
— এ হলো আমার আরেক ফ্রেন্ড আশিস।
আমরা হাই বলতেই আদ্রিয়ান আমার আর অরুর দিকে তাকিয়ে বলল
— গার্লস এর থেকে সামলে থেকো হ্যা? পাক্কা প্লে বয় আছে।
আমরা হেসে দিলাম। আশিস ভ্রু কুচকে বলল
— এই আমার নামে সব জায়গায় কাটি না করলে তোর হয়না?
— না হয়না।
আদিব ভাইয়া বলল
— আচ্ছা হয়েছে ওদের দাড় করিয়ে রাখবি নাকি বসতে দে?
আদ্রিয়ান মুচকি হেসে আমাদের দিকে তাকিয়ে বলল
— প্লিজ টেক ইউর সিট।
আমরা তিনজন একপাশে বসলাম ওনারা তিনজন ওপর পাশে বসলেন। এরপর মেনু কার্ড দেখে আদ্রিয়ান যার যার পছন্দ মতো কফি ওর্ডার করলেন। কফি খেতে খেতে সবাই বিভিন্ন কথা বলছে, আদ্রিয়ান অরু আর তীব্রর সাথে এমনভাবে কথা বলছে যেনো খুব পরিচিত ওরা। আর আদিব আর আশিস ভাইয়াও বেশ মজা করছে। তীব্র ওনাদের সবাইকে তুমি করে বলার পারমিশন পেয়ে গেছে অলরেডি। আশিস ভাইয়া আমার আর অরুর সাথে ওনার ফ্লির্টি মার্কা কথা বলে বলে সবাইকে হাসাচ্ছে। তবে আশিস ভাইয়া কেনো জানিনা অরুর সাথেই দুষ্টুমি বেশি করছে। অরু এতে বিরক্ত হলেও কিছু বলতে পারছেনা। কথার মধ্যে মধ্যে আমি আদ্রিয়ানকে আড়চোখে দেখছি। আর অবাক করা বিষয় বারবার আমাদের চোখাচোখি হয়ে যাচ্ছে, আর আমরা সাথেসাথেই চোখ সরিয়ে নিচ্ছি।
হঠাৎ তীব্র আদিব ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বলল
— আমার সাথে একটু আসবে?
আদিব ভাইয়া কিছু একটা ভেবে সাথে সাথেই বললেন
— হ্যা হ্যা সিউর চলো।
বলে দুজনে হুরমুরিয়ে চলে গেলো আমি আর অরু হা করে তাকিয়ে আছি কারণ আমরা কিছুই বুঝলাম না। এবার হঠাৎ করেই আশিস ভাইয়া অরুকে বললেন
— এইযে মেডাম চলুন আমরা মিনি ডেট করে আসি?
অরু অবাক হয়ে ভ্রু কুচকে বলল
— মানে?
— মানে যেতে যেতে বোঝাচ্ছি চলো!
বলেই অরুর হাত ধরে একপ্রকার টেনে নিয়ে গেলো আশিস ভাইয়া। অরু বেচারি চেয়েও কিছু বলতে পারোনা। আমি বোকার মতো তাকিয়ে আছি। আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে দেখলাম উনি মিটমিটিয়ে হাসছেন আমি ভ্রু কুচকেই বললাম
— এটা কী হলো?
আদ্রিয়ান ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে কফিতে চুমুক দিয়ে বললেন
— আমি কী জানি? ওরা এলে জিজ্ঞেস।
আমি আর কিছু বললাম না। অনেক্ষণ ধরে দুজনেই চুপচাপ বসে আছি। আমি একহাতে কফি মগ চেপে ধরে আছি আর আরেকহাতের নখ টেবিলের সাথে ঘষছি। অার মাঝে ওনার দিকে তাকিয়ে সাথে সাথেই চোখ নামিয়ে নিচ্ছি কারণ উনি একদৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে এক অদ্ভুত ভঙ্গিতে কফি মগে চুমুক দিচ্ছেন। আমার খুব অসস্তি লাগছে, এভাবে তাকিয়ে থাকে কেউ, আর এভাবে মগে চুমুক দেবার মানে কী? অার বাকিরাও কোথায় আছে কে জানে? আরে কেউতো এসে বাঁচাও আমাকে, ভাল্লাগেনা। হঠাৎ করেই আমার টেবিলের ওপর রাখা হাতের ওপর উনি হাত রাখলেন। আমার সারা শরীরে যেনো বিদ্যুৎ খেলে গেলো। হার্ডবিট কয়েকটা মিস হবার পরেই তীব্র গতিতে ছুটতে লাগল। আমি অবাক হয়ে তাকালাম আদ্রিয়ানের দিকে।
#চলবে…

বর্ষণের সেই রাতে ❤পর্ব: ৬

0

বর্ষণের সেই রাতে ❤পর্ব: ৬
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

.
আমি বুঝতে পারলাম উনি কী চাইছেন আমি একটু অবাক হলেও আমার কার্ডটা নিয়ে ওনাকে দিলাম। উনি সেটা নিয়ে মুচকি হেসে গাড়িতে উঠলেন। গাড়ি স্টার্ট করতেই উনি হাত নাড়লেন আর আমিও হাত নেড়ে বিদায় দিলাম ওনাকে।
যতোক্ষণ গাড়িটা দেখা গেছে তাকিয়ে ছিলাম আমি। জানিনা আর দেখা হবে কী না। আকষ্মিক ভাবেই একটা গোটা একরাত একসাথে ছিলাম বর্ষণের সেই রাতে। যেই রাতটা আমার কাছে চিরস্মরনীয় হয়ে থাকবে। নিজের একা জীবণে একরাতের জন্যে হলেও একজন সঙ্গী পেয়েছিলাম। কিন্তু উনি কী মনে রাখবেন আমাকে? হয়তো হ্যা আবার হয়তো না। হয়তো অনেক মানুষের ভীরে আমি পরে থাকবো ওনার স্মৃতির কোনো এক তুচ্ছ কোণে। গাড়িটা চোখের আড়াল হতেই নিজের অজান্তেই একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো ভেতর থেকে। আমার মতো কারো জীবণে কেউ চিরস্হায়ীভাবে আসবে এটা ভাবাও বোকামী। একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে স্কুটিতে উঠে স্টার্ট দিয়ে চলে গেলাম অফিসে।

অফিসে গিয়ে গলায় আইডি কার্ড পরতে পরতে তাকিয়ে দেখি বান্দর আর বান্দরনী বসে আছে। মানে আমার দুজন বেস্ট ফ্রেন্ড অরুমিতা আর তীব্র। নিজের বলতে এরা দুজনই আছে আমার। ওরা না থাকলে হয়তো আমি বেচেই থাকতে পারতাম না। তবে সবসময় বিভিন্ন কথা বলে আমাকে ইরিটেড করার জন্যে উঠে পরে লাগে। আমি গিয়ে বসতেই ডান পাশের ডেস্ক অরু বলল
— কী ব্যাপার ম্যাডাম? আজ একটু লেট করলেন যে?
আমি কম্পিউটার অন করতে করতে মুচকি হাসি দিলাম কিন্তু কিছু বললাম না। সেটা দেখে পেছনের ডেস্ট থেকে চেয়ার ঘুরিয়ে তীব্র বলল
— মৌসম বহোত সুহানি সি লাগ রাহি হ্যা? ব্যাপার কী?
আমি এবারেও কিছু না তীব্রর দিকে তাকিয়ে হাসির রেখাটা বড় করে আবারও কম্পিউটারে চোখ দিলাম। সেটা দেখে দুজনেই ভ্রু কুচকে একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করল। দুজনেই আহাম্মকের মতো বসে আছে। আর আমি মিটমিটিয়ে হাসছি। আমি ইচ্ছ করেই ওদের কনফিউসড করছি। কারণ আমার মতে বন্ধুদেরকে কনফিউসড করে ইরিটেড করায় যে মজা আছে সেটা অন্য কিছুতে নেই। বন্ধুদের জ্বালানোর পর তাদের ওই কাচুমাচু মুখটা দেখলে কেমন যেনো শান্তি শান্তি লাগে। ওরা দুজনেই ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে আমার দিকে আর আমি একমনে কম্পিউটারে কাজ করছি। অরু এবার বিরক্ত হয়ে বলল
— ওই তুই কিছু বলবি? এভাবে হাসছিস কেনো?
তীব্রও এবার বিরক্ত হয়ে বললেন
— আরেহ ইয়ার কিছুতো বল? এভাবে হাসছিস কেনো? হয়েছেটা কী।
আমি কম্পিউটারে চোখ রেখেই মিটমিটিয়ে হাসতে হাসতে বললাম
— হয়েছেতো অনেক কিছুই।
অরু অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলল
— অনেক কিছু মানে? কী কী হয়েছে?
আমি এবারেও চুপ করে মিটমিটিয়ে হাসতে হাসতে কম্পিউটারে কাজ করতে লাগলাম। হঠাৎ তীব্র কিছু একটা ভেবে ঝট করে চেয়ার থেকে উঠে এসে আমার কপালে গলায় হাত দিয়ে বলল
— ওই কাল রাতেও তো বাজ পরেছিলো তুই ঠিক আছিস তো?
এটা শুনে অরু তাড়তাড়ি উঠে দাড়িয়ে বলল
— ওহ সিট আমিতো ভুলেই গেছিলাম।
আমি এবার মুখটা সিরিয়াস করে একবার অরুর দিকে আরেকবার তীব্রর দিকে তাকালাম তারপর ভ্রু কুচকে বললাম
— তোরা জানিসনা আমি কাজের সময় কোনো কথা বলিনা। যা বলার লাঞ্চ টাইমে বলবো এখন চুপচাপ কাজ কর।
অরু উত্তেজিত কন্ঠে বলল
— প্লিজ ইয়ার এখন বলনা নইলে মনের ভেতর কেমন ধুকপুক ধুকপুক করবে।
আমি ওর দিকে চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বললাম
— তুই আর তোর ওই ধুকপুক। ইরিটেটিং ইয়ার।
তীব্র অরুর দিকে হতাশ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল
— ওকে তেল দিয়ে তেল খরচ করার চেয়ে কারখানায় দান করে দিয়ে আসা ভালো। ও যখন একবার বলেছে যে লাঞ্চ চাইমে বলবে তখন তখনি বলবে।
এরপর দুজনেই ছোট্ট করে একটা নিশ্বাস নিয়ে ডেস্কে বসে কাজে লেগে পরলো। আমি মুচকি মুচকি হাসছি আর আড়চোখে ওদেরকে দেখছি। আমি চাইলেই ওদের এখনি বলতে পারতাম কিন্তু ওদেরকে টেনশনে রাখতে কেনো জানিনা ভীষণ মজা লাগে। দুজনেই যে এখন কী হয়েছে সেটা শোনার জন্যে ছটফট ছটফট করছে সেটা বেশ বুঝতে পারছি। আর ওদের এই ছটফটানিতে আমি এক অসাধরণ তৃপ্তি পাচ্ছি। অরু বাকা চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বলল
— হাসছে দেখ যেনো এভারেস্ট জয় করেছে।
তীব্র পেছন ঘুরে বলল
— হাসতে দে হাসতে দে আমাদেরও দিন আসবে।
আমি মনিটরে চোখ রেখেই মুচকি হাসতে হাসতে বললাম
— হ্যা সেই তোর দিন তো আসবেই। হিন্দিতে একটা প্রবাদ আছে না? “হার কুত্তেকা দিন আতা হ্যা”।
তীব্র ভ্রু কুচকে বলল
— ওই কী বললি আমি কুকুর?
আমি অবাক হওয়ার ভান করে ওর দিকে তাকিয়ে বললাম
— আমি কখন বললাম? তুই তো নিজেই বললি তুই কুকুর।
— তোকে আমি…
আমি এবার বিরক্ত হয়ে বললাম
— এই তোরা দুজনে চুপচাপ কাজ করতো, বললাম তো লান্চ টাইমে বলব। বসের ঝাড়ি খাওয়ার আগে কাজে মন দে।
ওরা দুজনেই একসাথে ‘হুহ’ বলে নিজেদের ডেস্কে কাজ করতে বসে গেলো। আমিও একটা মুচকি হাসি দিলাম। কিন্তু কাজে কিছুতেই পুরোপুরি মনোযোগ দিতে পারছিনা বারবার শুধু কালকে রাতের কথাগুলো মনে পরছে। আদ্রিয়ানের সাথে কাটানো প্রতিটা মুহূর্ত। সব কেনো জানিনা চোখের সামনে ভাসছে। এতোদিন শুধু যাকে টিভিতে দেখেছি আর কন্ঠ শুনেছি, আমার সেই ফার্স্ট এন্ড এভার ক্রাশের সাথে এতোটা সময় কাটাবো সেটা কখনো সপ্নেও ভাবিনি। সত্যিই আমাদের মানুষদের জীবণটা খুব অদ্ভুত আচমকাই আমাদের জীবণে এমন কিছু ঘটনা ঘটে যায় যা আমরা কখনো কল্পনাও করতে পারিনা।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
ক্যান্টিনে বসে বসে আমি মনের সুখে খেয়ে চলেছি আর ওরা দুজন ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। দুজনেই ভীষণ বিরক্ত আমার ওপর কারণ ওরা অনেক্ষণ ধরেই জানতে চাইছে কী হয়েছে কিন্তু আমি এটা ওটা বলে কথা ঘুরিয়ে ওদের এরিয়ে যাচ্ছি। তীব্র দাত কটমট করে বলল
— তুই কী বলবি?
আমি মুখের খাবার চিবোতে চিবোতে ভ্রু কুচকে বললাম
— দেখছিস না খাচ্ছি? বলতে বলতে যদি লান্চ টাইম ওভার হয়ে যায় তখন? আগে খেতে দে তো শান্তিতে।
অরু এবার বিরক্ত হয়ে বলল
– থাক মেরি মা। তোকে কিচ্ছু বলতে হবেনা তুই খা। জন্মের খাওয়া খা।
আমি এবার শব্দ করে হেসে দিলাম ওদের কথা শুনে। ওরা ভ্রু কুচকে মুখ ফুলিয়ে বসে আছে। আমার এবার একটু মায়া হলো ওদের চেহারা দেখে, ভাবলাম নাহ বেচারাদের আর জালানো ঠিক হবেনা তাই কোনো রকমে হাসি থামিয়ে বললাম
— আচ্ছা বলছি বলছি রাগছিস কেনো?
দুজনে একসাথেই বিরক্ত হয়ে বলল
— প্লিজ বলেন?
আমি নিচের দিকে তাকিয়ে চামচ দিয়ে খাবার নারতে নারতে বললাম
— কাল রাতে আমার ফ্লাটে আদ্রিয়ান এসছিলো।
তীব্র ভ্রু কুচকে আমার দিকে তাকিয়ে বলল
— কোন আদ্রিয়ান? তোর কোনো রিলেটিভ?
আমি মাথা তুলে ওদের দিকে তাকিয়ে বললাম
— সিংগার আদ্রিয়ান আবরার জুহায়ের।
ওরা দুজনেই একসাথে বলল
— ওহ আচ্ছা।
পরক্ষণেই দুজনে চমকে গিয়ে চেচিয়ে বলল
— কীহ?
আমি চামচ রেখে কানে হাত দিয়ে বললাম
— আরে আস্তে আস্তে কানের পর্দা ছিড়ে যাবেতো আমার।
অরু অবাক হয়ে বলল
— এ.ডি তোর ফ্লাটে এসেছিলো?
তীব্র ভ্রু কুচকে বলল
— তুই মজা করছিস তাইনা?
আমি চামচ থেকে খাবার টা খেতে খেতে বললাম
— তোদের অামাকে দেখে মনে হচ্ছে আমি মজা করছি?
ওরা অবাক হয়েই তাকিয়ে আছে আমার দিকে কারণ ওরা জানে আমি মিথ্যে বলবোনা আর এই ব্যাপারে মজাও করবোনা। তাই ওরা বুঝতে পারছে আদ্রিয়ান সত্যিই এসছিলো। ওদের দুজনকে এভাবে হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে আমি ভ্রু কুচকে ওদের দিকে তাকিয়ে বললাম
— মুখ বন্ধ কর মশা ঢুকবে।
ওরা দুজনেই সাথে সাথে মুখ বন্ধ করে ফেলল। তীব্র অবাক হয়ে বলল
— কিন্তু কেমনে কী?
অরুও তীব্রর সাথে তাল মিলিয়ে বলল
— সেইতো এটা কীভাবে সম্ভব।
এরপর ওদের কালকে রাতে ঘটনা ফাস্ট টু লাস্ট সব খুলে বললাম। সবটা শুনে ওরা কিছুক্ষণ থম মেরে বসে রইলো। তারপর দুজনেই শব্দ করে হেসে দিলো। যেনো এই মুহুর্তে ওদের সামনে বিশাল মজার কোনো ঘটনা ঘটে গেছে। আমি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছি। তীব্র কোনোমতে হাসি থামিয়ে বলল
— দা গ্রেট রকস্টার আদ্রিয়ান আবরার জুহায়েরের ও এরকম?
অরুও তীব্রর কথায় সায় দিয়ে বলল
— হ্যা ইয়ার ভাবা যায়?
— কেনো? সেলিব্রেটি বলে কী মানুষ না নাকি?
তীব্র এবার আমাকে একটু পিঞ্চ করে বললো
— হুমমম। কালকে তোমার মনে লাড্ডু ফুটেছিলো নিশ্চই?
আমি একটা ভেংচি কাটলাম। অরু ঢং করে বলল
— ইসস ইয়ার কী ভাগ্য তোর। রকস্টার এ.ডি তোকে কফি করে খাইয়েছে! কোলে নিয়েছে আর জরিয়েও ধরেছে ওয়াও?
— থামবি তুই?
— কেনো থামবো? আচ্ছা তুই নিজেকে কীকরে সামলেছিলি বলতো? আমি হলেতো অজ্ঞানই হয়ে যেতাম ইয়ার। হাউ ড্যাসিং হি ইজ।
আমি কিছু না বলে ওকে কুনুই দিয়ে খোচা মারলাম আর তীব্র হেসে দিলো। তিনজনে গল্প করতে করতে লাঞ্চ করে ডেস্কে বসে আছি হঠাৎ বসের পি এ সানন্দা দি এসে বলল
— অনিমা তোমাকে স্যার ডাকছে।
— ওকে আপনি যান আমি অাসছি।
তীব্র ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলল
— আবার কার কাছে পাঠাবে তোকে?
অরুও বিরক্ত হয়ে বলল
— লোকটা শান্তি দেয়না তোকে একটু।
আমি একটা ছোট্ট নিশ্বাস নিয়ে বললাম
— দেখি কী বলে।

বসের ডেস্কে গিয়ে বললাম
— মে আই কাম ইন স্যার?
— কাম ইন।
— স্যার ডেকেছিলেন?
— হ্যা কাল তোমাকে একজনের ইন্টারভিউ নিতে যেতে হবে।
— ওকে স্যার বাট কার?
— মিনিস্টার রঞ্জিত চৌধুরীর একমাত্র ছেলে রিক চৌধুরীর। এবার ইলেকশনে করছেন উনি তাই একটা ইন্টারভিউ নেবো।
নামটা শোনার সাথে সাথেই আমার হাত পা কাপতে শুরু করেছে, ঘাম বেড়োনো শুরু হয়েছে অলরেডি। সেটা দেখে বস বললেন
— এনি প্রবলেম অনিমা।
আমি কাপাকাপা গলায় বললাম
— স্যার অ্ আমি ওখানে য্ যেতে পারবোনা।
বস রেগে গিয়ে বললন
— তোমার কী মনে হয় আমি তোমাকে ওফার করছি? ওর্ডার করছি তোমাকে।
আমি কাদোকাদো গলায় বললাম
— স্যার প্লিজ আপনি আমাকে যেখানে খুশি পাঠান আমি যাবো কিন্তু ওখানে না। প্লিজ স্যার।
বস এবার নরম গলায় বললেন
— কী হয়েছে অনিমা? তুমিতো কোনোদিন না করোনা? ইনফ্যাক্ট অনেক রিস্ক নিয়েও কাজ করেছো তুমি। এবার কী হলো?
— আই নো স্যার বাট আমি ওখানে যেতে পারবোনা, আমি হাত জোর করছি…
— আরে আরে কী করছো? তুমি আমার মেয়ের মতো, আর এতো হাইপার হবার কী আছে। আচ্ছা তোমাকে যেতে হবেনা তুমি ডেস্কে যাও।
আমি চোখ মুছে ডেস্কে গিয়ে ধপ করে চেয়ারে বসে পরলাম। আমাকে কাদতে দেখে অরু আর তীব্র উঠে দাড়িয়ে বলল
— কী হয়েছে কাদছিস কেনো?
আমি কিছু না বলে কেদেই যাচ্ছি। সেটা দেখে তীব্র উত্তেজিত হয়ে বলল
— আরেহ বলবিতো কী হয়েছে বস কিছু বলেছে?
আমি ওদের সবটা বলতেই অরু জরিয়ে ধরলো আমাকে। তীব্র চেয়ারে বসে বলল
— এটাতো সেই ছেলেটাই না? যে তোকে…
আমি অরুকে জরিয়ে ধরেই কাদতে কাদতে বললাম
— এভাবে আর কতোদিন পালাবো আমি? মামুর কাছ থেকে পালিয়ে বাচতে পারলেও ওর কাছ থেকে পালাতে পারবোনা। আমি জানি ও আমাকে পাগলের মতো খুজছে আর ওর ক্ষমতা দিয়ে ঠিক পেয়ে যাবে আমাকে। আর ও যদি সত্যিই আমাকে খুজে পায় তো ওর হাতে পরার আগেই শেষ করে ফেলব আমি নিজেকে।
অরু রেগে বলল
— এক থাপ্পড় মারব তোকে স্টুপিড। কী সব বলছিস?
— আমি পারবোনা ওভাবে বাচতে। তুই জানিসনা ও কতোটা…
তীব্র এসে আমার সামনে বসে বলল
— আচ্ছা হয়েছে বাদ দে এসব আজকে অফিস শেষে তিনজন মিলে ফুচকা পার্টি করবো ওকেহ?
এভাবেই ওরা দুজন বিভিন্ন কথা বলে আমাকে শান্ত করল। ওদের সামনে স্বাভাবিক থাকলেও ভয়টা কাটিয়ে উঠতে পারিনি।

রাতে শুয়ে এপাশ ওপাশ করছি কখনো নিজের সেই ভয়ংকর অতীত মনে পরছে কখনো আদ্রিয়ানকে। ওর পাশে বসে গল্প করা ওকে জরিয়ে ধরা, ওর হটাৎ করেই কাছে এসে যাওয়া সব। কিন্তু ও হয়তো এতোক্ষণে ভূলেও গেছে আমাকে, ভূলে যাওয়াই স্বাভাবিক। মনে রাখার বিশেষ কোনো কারণ নেই। এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পরলাম। মাঝরাতে হটাৎ ফোন বাজার আওয়াজে ঘুম ভাঙলো। তাকিয়ে দেখি আননোন নাম্বার। এতো রাতে কার মনে পরলো? চোখ ডলতে রিসিভ করে কিছু বলবো তার আগেই ওপর পাশের ব্যক্তির গলার আওয়াজ পেয়ে চমকে গেলাম আমি। মনে শুধু একটা কথাই এলো এটাও সম্ভব?
#চলবে…

বর্ষণের সেই রাতে ❤পর্ব- ৫

0

বর্ষণের সেই রাতে ❤পর্ব- ৫
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

.
— আজ একটা রাত না ঘুমোলে আমার বিশেষ কোনো সমস্যা হবে না? তোমার কী খুব সমস্যা হবে?
আমি কিছু না বলে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি ওনার দিকে। সেটা দেখে উনি মুচকি হেসে বললেন
— কী হলো? বসো?
আমি অবাক হয়ে ওনার দিকে তাকিয়ে থেকেই ওনার পাশে বসে বললাম
— ঘুমোবেন না?
— আজ জেগে থাকি না? সমস্যা কী?
রাত জেগে থাকার অভ্যেস আমার নেই। কিন্তু কেনো জানি ওনাকে না করতে ইচ্ছে করছেনা। তাই চুপ করে রইলাম। উনিও চুপ করেই আছেন। বৃষ্টির বেগ আবারো বৃদ্ধি পেয়েছে, আকাশের দিকে তাকিয়ে মনে হচ্ছে বাজ পরাও শুরু হবে। আর সেই সাথে আমার ভেতরের ভয়টাও বাড়ছে, কারণ বাজ পরা বৃষ্টির রাতগুলো বারবার আমাকে সেই ভয়ংকর অতীতগুলো মনে করিয়ে দেয় কিছুতেই স্বাভাবিক থাকতে পারিনা আমি। অন্যান্য দিন তো সিলিপিং পিল খেয়ে কম্বলে মুরি দিয়ে কাদতে কাদতে ঘুমিয়ে পরি, আজ কী করবো? আদ্রিয়ানের সামনে নিজেকে শক্ত কীকরে রাখব? চুপচাপ বসে এগুলোই ভাবছিলাম। দীর্ঘসময়ের নিরবতা ভেঙ্গে আদ্রিয়ান বললেন
— জানো বৃষ্টির দিনগুলো আমার খুব পছন্দের। বাইরে পরতে থাকা বৃষ্টি দেখতে দেখতে ধোয়া ওঠানো কফির মগে চুমুক দেওয়া। আবার বৃষ্টি দেখতে দেখতে গিটার বাজানোটাও আমার খুব পছন্দের কাজ। এনিওয়ে তোমার বৃষ্টি ভালোলাগে?
আমি এতোক্ষণ আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। ওনার কথা শুনে আকাশের দিকে তাকিয়েই মুচকি হেসে বললাম
— একসময় খুব ভালোলাগতো। কিন্তু এখন ভয় লাগে, তবে আগের মতো ওতোটা ভয় না পেলেও ভয়টা পুরোপুরি কাটাতে পারিনি।
আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন
— বৃষ্টিকে ভয় পাও? স্ট্রেন্জ!
আমি ওনার দিকে তাকিয়ে মলিন হেসে বললাম
— আই নো।
— বাট বৃষ্টি কে ভয় পায়? ভয় পাওয়ার মতো কী আছে।
আমি কথাটা ঘোরানোর জন্যে হালকা হেসে বললাম
— আচ্ছা বাদ দিন এসব। আর কিছু লাগবে আপনার?
উনি হয়তো বুঝতে পারলেন আমি কথাটা এরিয়ে যেতে চাইছি। তাই কথা না বাড়িয়ে বললেন
— নাহ আপাদত অার কিছু চাইনা। তুমি আমাকে নিয়ে ব্যাস্ত না হয়ে একটু শান্ত হয়ে বসোতো। লিসেন! আমার আজ ঘুমোতে একদমি ইচ্ছে করছে না আর তুমিও যে আজ ঘুমোতে পারবেনা আমি জানি। কজ একা একটা ফ্লাটে একটা ছেলেকে রেখে ঘুম আসবেনা আনইজি লাগবে তোমার। যেহেতু দুজনেরই ঘুম আসবেনা সো গল্প করে রাতটা পার করে দেই সেটা ভালো হবে না?
— অাপনি দেখছি অাজ খুব গল্প করার মুডে আছেন?
আদ্রিয়ান এবার আমার দিকে তাকিয়ে বাকা হেসে হালকা ঝুকে বললেন
— এরকম সুন্দরী একটা মেয়ে পাশে থাকলে তো অনেক কিছুরই মুড হয় তাইনা?
আমি একটু দূরে সরে গিয়ে গলা ঝেরে বসলাম। সেটা দেখে উনি শব্দ করে হেসে দিয়ে বললেন
— এতো ভীতু কেনো তুমি? তোমার এখনো মনে হচ্ছে আমি তোমার সাথে উল্টোপাল্টা কিছু করবো?
আমি কানের পিঠে চুল গুজতে গুজতে ইতোস্তত করে বললাম
— নাহ বাট এভাবে বলে কেউ?
উনি ফ্লোরে একহাতের ভর নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচিয়ে বললেন
— তাহলে কীভাবে বলে?
অামি এবার ভ্রু কুচকে বিরক্তি নিয়ে ওনার দিকে তাকিয়ে বললাম
— লোকে ঠিকি বলে আপনারা সেলিব্রিটিরা সত্যিই অসভ্য।
— তাই?
— এনি ডাউট?
উনি এবার একটা বাকা হাসি দিলেন। তারপর ওনার এক হাত আমার উপর দিয়ে নিয়ে ফ্লোরে রেখে আমার দিকে বেশ অনেকটা ঝুকে গেলো। আমি একটা ঢোক গিলে কাপাকাপা গলায় বললাম
— ক্ কী করছেন?
— ভেবেতো ছিলাম কিছু করবোনা। কিন্তু কিছু না করে অসভ্য হবার চেয়ে কিছু করে অসভ্য হওয়াটা বেটার না?
বলেই মুখটা আরেকটু এগিয়ে আনতেই আমার প্রাণ যায় যায় অবস্থা। উনি কিছুই করবেনা সেটা জানি আমি কিন্তু ওনার এতো কাছে আসাতে তো আমার অবস্হা খারাপ হচ্ছে, কেমন অদ্ভুত এক অনুভূতি হচ্ছে। নিজেকে অনেক কষ্টে সামলে একটা মেকি হাসি দিয়ে বললাম
— এই দেখুন অাপনি আবার আমার কথাগুলোকে সিরিয়াসলি নিয়ে নিচ্ছেন আমি তো মজা করছিলাম।
আদ্রিয়ান মুচকি হেসে সরে গেলো। আমিও সোজা হয়ে বসে একটা শান্তির নিশ্বাস নিলাম আরেকটু হলেই দম অাটকে যেতো আমার বাপরে বাপ। আমি হাত দিয়ে চুলগুলো ঠিক করে ওনার দিকে তাকালাম। উনি আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে। সেটা দেখে আমি ভ্রু কুচকে বললাম
— হোয়াট?
— ইউ নো তুমি…
এটুকু বলতে না বলতেই প্রচন্ড জোরে চারপাশ কাপিয়ে বজ্রপাত হলো। অামি সাথে সাথেই দুই হাতে কান চেপে ধরে চোখ খিচে বন্ধ করে জোরে চিৎকার দিয়ে উঠলাম
— আব্বু…
চোখ খিচে বন্ধ করে কানে হাত দিয়ে কাপছি আমি। চোখ বন্ধ রাখা অবস্হাতেই বুঝতে পারলাম আদ্রিয়ান আমার দুই হাতের বাহু ধরে হালকা ঝাকিয়ে বললেন
— কী হয়েছে? অনিমা? জাস্ট বাজ পরেছে কিছু হয়নি তাকাও? এভরিথিং ইজ নরমাল। তাকাও?
ওনার কথাগুলো আমার কানে গেলেও আমি চোখ খোলার সাহস পাচ্ছিনা। ভয়ে হাত পা কাপছে আমার। বার বার সেই রাতগুলোর কথা মনে পরছে। সারা শরীর অসম্ভবরকম কাপছে। হঠাৎ গালে অাদ্রিয়ানের হাতের ছোয়া পেলাম। ও গাল হাত দিয়ে ঝাকিয়ে বললেন
— লুক এট মি? কিচ্ছু হয়নি দেখো।
অামি অাস্তে আস্তে চোখ খুলে তাকালাম ওনার দিকে ওনার চেহারায় চিন্তার ছাপ স্পষ্ট। আমি জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছি। উনি আমাকে একহাতে জরিয়ে নিয়ে বললেন
— বাজ পরেছিলো কিচ্ছু হয়নি দেখো?
কিন্তু আমার চোখের সামনে শুধু সেই নৃশংস ঘটনাগুলো ভাসছে আর কিছুই না। তাই শুধু বললাম
— আব্বু আহ্ আব্বু..
আদ্রিয়ান কিছু বলবে তার আগেই আবারো আওয়াজ করে বজ্রপাত হলো আর আমি সামনের ব্যাক্তিটিকে জরিয়ে ধরলাম। এইমুহুর্তে আমি কী করছি না করছি আমার কোনো খেয়াল নেই। এই মুহুর্তে আমার শুধু একটা অবলম্বন চাই যার দ্বারা আমি নিজেকে শান্ত করতে পারবো। উনিও শক্ত করে জরিয়ে ধরলেন আমাকে এই ঠান্ডা পরিবেশেও ঘামে ভিজে যাচ্ছি আমি দম বন্ধ হয়ে আসছে, ধীরে ধীরে সবকিছু অন্ধকার হয়ে আসছে। মনে হচ্ছে কোনো অতল সাগরে তলিয়ে যাচ্ছি আমি যেখান থেকে চেয়েও বেড়োতে পারছিনা।

আস্তে আস্তে চোখ খুললাম মাথাটা বেশ ভারী লাগছে। ভালোভাবে তাকিয়ে মোমের আবছা আলোতে বুঝতে পারলাম রুমের বেডে শুয়ে আছি। ধীরে ধীরে সবটা মনে পরলো। এই ভয়টাই পাচ্ছিলাম আমি। আমি জানতাম আমি নিজেকে সামলাতে পারবোনা। পাশে তাকিয়ে আদ্রিয়ানকে বসে থাকতে দেখে হুরমুরিয়ে উঠে বসলাম। আদ্রিয়ান শান্ত গলায় বললেন
— আস্তে এতো তাড়াহুড়োর কিছু হয়নি।
আমার বেশ লজ্জা লাগছে বেচারা আমার বাসায় অতিথি হয়ে এসে আমারি সেবা করছে। তার‍ওপর জরিয়ে ধরেছি আমি ওকে। ও কী ভাবলো? আর আমি ভেতরে কীকরে এলাম? নিশ্চই আদ্রিয়ান এনেছে? ওহ আল্লাহ আমি আসলেই একটা প্যানিক। আমার কাছে যে আসে সেই ঝামেলায় পরে। আমি ওনার দিকে তাকিয়ে ইতোস্তত করে বললাম
— আ’ম সরি আসলে…
— ডোন্ট বি সরি। এখন কেমন লাগছে?
— বেটার।

“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন

— বাট বাজ পরলে এতো ভয় পাও তুমি?
কিছু না বলে মাথা নিচু করে আছি কারণ এই মুহুর্তে কিছু বলার নেই আমার। কী বলবো? এই বাজ পরা বৃষ্টির রাতগুলোই তো আমার জীবণের কাল ছিলো। আমাকে চুপ থাকতে দেখে আদ্রিয়ান বলল
— ওকেহ ব্যালকনিতে চলো একটু ফ্রেশ লাগবে।
আমি একটু গুটিয়ে বসলাম। তারপর মাথা নাড়লাম। উনি ব্যাপারটা বুঝতে পেরে মুচকি হেসে বললেন
— বাইরে এখন অার বাজ পরছেনা। সি বিদ্যুৎ ও চমকাচ্ছে না। আমরা গিয়ে বসতে পারি।
ভালোভাবে খেয়াল করে দেখলাম সত্যিই সব থেমে গেছে এখন শুধু গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি আছে বাইরে। টেবিল ঘরির দিকে তাকিয়ে দেখি রাত সাড়ে তিনটে বাজে। আদ্রিয়ান আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললেন
— চলো?
আমি আদ্রিয়ানের দিকে খানিক্ষণ তাকিয়ে থেকে ইতোস্তত করে ওনার হাতটা ধরলাম। উনি হাত ধরে ব্যালকনিতে নিয়ে গেলেন। এরপর দুজনেই ফ্লোরে বসলাম। তবে কেউ কোনো কথা বলিনি দুজনেই বেশ অনেক্ষণ নিরব ছিলাম। নিরবতা ভেঙ্গে আমিই বললাম
— একটু বিরক্ত করে ফেললাম আপনাকে তাইনা?
উনি ভ্রু কুচকে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন
— কোন ব্যাপারে?
বুঝতে পারলাম বুঝেও না বোঝার ভান করছেন। তাই মুচকি হেসে বললাম
— নাহ মানে এতোক্ষণ সেন্সলেস ছিলাম আপনাকে এভাবে টেনশনে ফেলে দিলাম।
— সে দিক দিয়ে বলতে গেলে তো আমিও তোমাকে বিরক্ত করেছি।
আমি অার কিছু বললাম না আবারো কিছুক্ষণ পরিবেশটা নিরব রইলো। দুজনেই তাকিয়ে বাইরের গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি দেখছি। হঠাৎ উনি বললেন
— তোমার আব্বুকে খুব ভালোবাসো তাইনা?
আমি একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বললাম
— আমি যতোটা ভালোবাসি আব্বু আমাকে তার থেকেও অনেক বেশি ভালোবাসতেন।
— হুমম অজ্ঞান অবস্হাতেও আব্বু আব্বু করছিলে। বাই দা ওয়ে ওসব কী বলছিলে তুমি?
— কী বলছিলাম?
— জানিনা কোনো তালমিল পাচ্ছিলামনা তোমার কথার। তোমাকে কোলে নিয়ে রুমে এনে শুইয়ে দেবার পরেই কীসব বলছিলে। আব্বু বলে চেচাচ্ছিলে, ‘প্লিজ ছেড়ে দিন আমাকে, প্লিজ এটা করবেন না’ এসব বলছিলে আবার কখনো বলছিলে ‘ভাইয়া প্লিজ আমার কাছে এসোনা, যেতে দাও আমায়’ এই ভাইয়া কে? আর কী করেছিলো তোমার সাথে?
আমি কিছু না বলে মাথা নিচু করে রইলাম। অতীত গুলো খুব বেশি যন্ত্রণা দেয়। যেখানে নিজের লোকেরাই এমন করতে পারে তখন অন্যের কী দোষ? টাকা আর লোভ মানুষকে দিয়ে কী না করায়? বিশ্বাস করে যাদের কাছে আশ্রয় নিয়েছিলাম তাড়াই আমার সাথে..না চাইতেও চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পরল। সেটা দেখে আদ্রিয়ান আমার কাধে হাত রেখে বললেন
— আরেহ হোয়াই আর ইউ ক্রাইং? আচ্ছা আমি আর কিছু জিজ্ঞেস করবোনা চিল।
আমি আর কিছু বললাম না চুপ করে রইলাম। আদ্রিয়ান নিজেই আমার মাথাটা ওর কাধে নিয়ে গেলো। আমি বেশ অবাক হলাম, কিন্তু কিছু বললাম না হয়তো আমাকে কাদতে দেখেই এমন করছে, সান্তনা দিতে। আর আমারও এই মুহুর্তে এরকম একটা কাধের খুব দরকার ছিলো। তাই কিছু চিন্তা না করেই চোখ বন্ধ করে নিলাম।

রোদের আলো চোখে পরতেই জেগে গেলাম। চোখে হাত দিয়ে আলতো করে চোখ খুলে দেখি বেডে শুয়ে আছি। সিট! ঘুমিয়ে পরেছিলাম আর এবারেও নিশ্চিত আদ্রিয়ান ই রুমে এনেছে। চোখ ডলতে ডলতে উঠে বসে দেখি আদ্রিয়ান রুমে কোথাও নেই। তবেকী চলে গেছে ওও? আস্তে করে উঠে ব্যালকনিতে গেলাম। সারারাত বৃষ্টির পর আকাশ একেবারেই পরিস্কার হয়ে গেছে। ভেজা সিগ্ধ সকালের এই নরম রোদের আলোয় চারপাশটা ঝকঝক করছে। হঠাৎ পেছন থেকে কেউ বলে উঠল
— গুড মর্নিং ম্যাডাম।
আমি চমকে পেছনে তাকালাম। আদ্রিয়ান দুই হাতে দুটো কফির মগ নিয়ে দাড়িয়ে আছে। আমিতো অবাকের শেষ প্রান্তে গিয়ে পৌছেছি। হা করে তাকিয়ে আছি ওনার দিকে। উনি এসে আমার সামনে দাড়িয়ে বললেন
— কী হলো হা করে আছো কেনো?
আমি অবাক হয়েই তাকিয়ে থেকে বললাম
— আপনি কফি বানিয়ে এনেছেন?
— হ্যা এনি প্রবলেম? ( ভ্রু কুচকে )
— বাট কীভাবে?
উনি মুচকি হেসে বললেন
— একটু কষ্ট হয়েছে সব খুজে পেতে বাট পেরেছি। টেষ্ট ইট?
— কষ্ট করার কী দরকার ছিলো আমায় ডাকতেন?
— তুমি ঘুমোচ্ছিলে তাই জাগাতে ইচ্ছে করছিলোনা। আর তাছাড়া দুই মগ কফিই তো বানিয়েছি। এ আর এমন কী?
আমি মুচকি হেসে মগটা নিলাম। উনি মুখ ছোট করে বললেন
— খারাপ হলেও কিন্তু বলবেনা খারাপ হয়েছে ওকে?
আমি হেসে দিলাম ওনার কথায় সাথে উনিও হেসে দিলেন। এরপর দুজনেই রেলিং ধরে দাড়িয়ে কফি খেতে খেতে বাইরের সিগ্ধ পরিবেশটা। যেনো সারারাত কান্না আর গর্জনের পর এখন পরিবেশটা মন খুলে হাসছে। সেই হাসিতে চারপাশ ঝকঝক করছে। কিন্তু মানুষের জীবনটা তো এতো সহজ না। ভেবেই একটা দীর্ঘশ্বাস নিলাম। একটু পরেই কারেন্ট চলে এলো। সেটা দেখে অাদ্রিয়ান বলল
— থ্যাংক গড। তুমি তোমার ফোনটা একটু চার্জে দাও প্লিজ।
— হুম। চার্জ হতে হতে আমি ব্রেকফাস্ট করছি।
— ওকেহ।
আমি ফোন চার্জে দিয়ে কিচেনে চলে গেলাম পাস্তা বানাতে। পাস্তা বানিয়ে নিয়ে এসে দেখি আদ্রিয়ান আমার ফোন ঘাটছে। আমাকে দেখে উনি বললেন
— সামনের মেইন রোডে আমার ম্যানেজার গাড়ি নিয়ে ওয়েট করবে। ওই পর্যন্ত কীকরে যাবো? কেউ দেখে নিলে তো জেকে ধরবে।
আমি কিছু একটা ভেবে বললাম
— আমার স্কুটিতে করে আপনাকে ঐ জায়গায় নামিয়ে দিয়ে আমি অফিস যাবো।
— ওকেহ থ্যাংকস।
এরপর দুজনেই খেতে বসলাম। একটুপর উনি চলে যাবে আর হয়তো এভাবে দেখা হবেনা। মনটা খারাপ লাগছে কিন্তু ওনার মধ্যে মন খারাপের কোনো ছাপ নেই। থাকবেই বা কেনো? থাকার তো কোনো কারণ নেই।
খেয়ে আমি রেডি হয়ে নিলাম আর উনিও টিশার্ট জ্যাকেট পরে নিলেন। এরপর দুজনেই বেড়িয়ে পরলাম। হেলমেট পরে থাকায় ওনাকে কেউ চিনতে পারেনি। স্কুটি করে ওনাকে ওনার গাড়ির সামনে নামিয়ে দিয়ে নিজেও নামলাম। উনি বললেন
— বাই।
আমিও মুচকি হেসে বললাম
— বাই
উনি চলে যেতে নিয়েও পেছনে ফিরে বললেন
— ধরো আবার যদি কখনো বিপদে পরি আর তোমার হেল্পের দরকার হয়? সো?
আমি বুঝতে পারলাম উনি কী চাইছেন আমি একটু অবাক হলেও আমার কার্ডটা নিয়ে ওনাকে দিলাম। উনি সেটা নিয়ে মুচকি হেসে গাড়িতে উঠলেন। গাড়ি স্টার্ট করতেই উনি হাত নাড়লেন আর আমিও হাত নেড়ে বিদায় দিলাম ওনাকে।
যতোক্ষণ গাড়িটা দেখা গেছে তাকিয়ে ছিলাম আমি। জানিনা আর দেখা হবে কী না। আকষ্মিক ভাবেই একটা গোটা একরাত একসাথে ছিলাম বর্ষণের সেই রাতে। যেই রাতটা আমার কাছে চিরস্মরনীয় হয়ে থাকবে। নিজের একা জীবণে একরাতের জন্যে হলেও একজন সঙ্গী পেয়েছিলাম। কিন্তু উনি কী মনে রাখবেন আমাকে? হয়তো হ্যা আবার হয়তো না। হয়তো অনেক মানুষের ভীরে আমি পরে থাকবো ওনার স্মৃতির কোনো এক তুচ্ছ কোণে।
#চলবে…
( গল্পটা এই পার্টেই শেষ করবো ভেবেছিলাম। কিন্তু অধিকাংশে পাঠক পাঠিকা রাই অনিমার অতীত বিস্তারিত জানতে চেয়েছেন। অনেকে অাদ্রিয়ান অনিমার প্রেম ও দেখতে চেয়েছেন। তাই শেষ করলাম না। আপনারা চাইলেই পার্ট বাড়াবো নয়তো শেষ করে দেবো।তাই মতামত জানাবেন। ধন্যবাদ।)

বর্ষণের সেই রাতে ❤ পর্ব- ৪

0

বর্ষণের সেই রাতে ❤
পর্ব- ৪
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

.
— একেই বলে আকাশ থেকে পরে খেজুর গাছে আটকে যাওয়া।
ওনার এই কথাটা শুনে আমার বড্ড হাসি পাচ্ছে। কিন্তু এই মুহুর্তে হাসাটা একদমি ঠিক হবেনা। কারণ আমার ক্রাশের রিয়াকশনটা যখন এরকম হতাশ হতাশ তখন আমার রিয়াকশনে হাসি থাকাটা মোটেই শোভনীয় নয়। তাই নিজের এই হাসিটাকে দাবিয়ে রেখে চেহারায় একটুখানি সিরিয়াস ভাব আনার চেষ্টা করে ওনার দিকে তাকালাম। উনি চুপ করে বসে আছেন, এতোক্ষণ কতো কথা বলছিলেন আর এখন একেবারেই চুপ। কিছুক্ষণ নিরবতার পর আমি কিছু বলবো তার আগেই উনি বলে উঠলেন
— সো কালকের হেডলাইন কী হবে?
আমি ভ্রু কুচকে তাকালাম ওনার দিকে। উনি আমার দিকে তাকিয়ে বিরক্তি নিয়ে বললেন
— কী হলো বলো? কালকের হেডলাইন কী হবে? ‘দেখে নিন আদ্রিয়ান আবরার জুহায়েরের রাতের চেহারা’ ‘বর্ষণের রাতে এক মেয়ে জার্নালিস্টের ফ্লাটে রকস্টার আদ্রিয়ান আবরার জুহায়ের ‘ নাকি অন্য কিছু?
আমি এখোনো ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছি আদ্রিয়ানের দিকে। আজব! আমি একজন জার্নালিস্ট ব্যাস এটুকু শুনেই যা খুশি বলে যাচ্ছে? আমার কোনো কথা শোনার কোনো দরকারই মনে করছেনা? ডিসগাসটিং। খুব রাগ লাগছে। ইচ্ছে করছে আচ্ছা মতো কয়েকটা শুনিয়ে দেই। কিন্তু পরে মাথাটা ঠান্ডা করে ভাবলাম যে ওদের সাথে রিগুলারলি যা হয় স্পেশিয়াশি ওর সাথে তাতে ওর এই মুহূর্তে জার্নালিস্ট দেখলে এভাবে রিয়াক্ট করাটাই স্বাভাবিক। তাই মাথা গরম না করে ঠান্ডা মাথায় ব্যাপারটা হ্যান্ডেল করতে হবে। আমাকে এভাবে চুপ থাকতে দেখে উনি একটু জোরেই বললেন
— কী হলো বলো? হেডলাইন কী দেবে? মানে কী লিখলে তোমাদের খবরটা বেশি বিক্রি হবে?
কথাটা আমার গায়ে লাগলো। কারণ এই প্রফেশনটা আমার জন্যে কী সেটা আমিই জানি। কিন্তু ওনার দিক দিয়েও উনি ঠিক তাই সেটাকে গুরত্ব না দিয়ে আমি ওনার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললাম
— ‘খাদ্যসংকোটে অবশেষে এক জার্নালিস্টের ফ্লাটে নৈশভোজের আশায় গ্রেট রকস্টার আদ্রিয়ান আবরার জুহায়ের’
এটা শুনে উনি ভ্রু কুচকে তাকালেন আমার দিকে। আমি একটা মেকি হাসি দিয়ে বললাম
— এই হেডলাইনটা কিন্তু দাড়ুন হবে তাইনা? বেশ চলবে।
আদ্রিয়ান আমার দিকে অদ্ভুতভাবে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ফিক করে হেসে দিলেন আর ওনার হাসি দেখে আমিও হেসে দিলাম। উনি হাসতে হাসতেই বললেন
— তুমি সবসময় এমন চিল মুডে কীকরে থাকো বলোতো?
— আপনার মতো শর্ট টেমপার হলে এই প্রফেশনে টিকতে পারতাম না স্যার।
— আমি শর্ট টেমপার?
— এনি ডাউট? ম্যাক্সিমাম ইন্টারভিউতে তো আপনি রিপোর্টারদের ওপর রেগে বোম হয়ে যান।
— তো? তোমরা প্রশ্নগুলোই এমন করো যে মাথা ঠিক রাখাটা মুসকিল হয়ে যায়। প্রশ্ন করার নাম করে এট্যাক করে কথা বলো। দরকারী প্রশ্নের চেয়ে অদরকারী আর অপ্রয়োজনীয় প্রশ্নই বেশি করো।
আমি একটা ছোট্ট শ্বাস নিয়ে বললাম
— আচ্ছা কফিটা খেতে খেতে কথা বলি ঠান্ডা হয়ে যাবে।
উনি ভ্রু কুচকে কফির মগে চুমুক দিলেন, বুঝতে পারছি উনি আমার ওপর খুব বিরক্ত হয়ে আছেন। আমিও কিছু না বলে কফির মগে চুমুক দিয়ে বাইরে তাকালাম। গুড়িগুড়ি বৃষ্টি পরা শুরু হয়ে গেছে। হালকা হালকা বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। সবকিছু একদম শান্ত। আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে দেখি উনি ভ্রু কুচকে কফি খাচ্ছে, আমি বললাম
— আচ্ছা সব রিপোর্টারই কী একিরকম আজেবাজে প্রশ্ন করে?
আদ্রিয়ান মাথা বাকা করে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন
— নাহ ঠিক তা না? কেউ কেউ ভালো এবং কাজের প্রশ্নও করে।
— তাহলে? সবাইকে ব্লেম করা কী ঠিক হচ্ছে?
উনি ভ্রুটা কিঞ্চিত কুচকে বাইরে তাকিয়ে কফিতে চুমুক দিয়ে বললেন
— জানিনা। কিন্তু তোমাদের আই মিন জার্নালিস্ট দের সহ্য হয়না আমার। এরা পারেনা এমন কোনো কাজ আছে নাকি?
আমি মুচকি হেসে কফির মগটা পাশে রেখে ওনার দিকে তাকিয়ে বললাম
— হুমম। তো আপনার আর কী কী অভিযোগ আছে আমাদের মানে জার্নালিস্টদের নিয়ে।
উনিও কফির মগটা আওয়াজ করে পাশে রেখে বললেন
— ইরিটেটিং পিপল। কাজের কাজতো কিছু হয়না এদের দ্বারা সবি অকাজ। একট্রেস স্মৃতির সাথে একদিন একটা রেস্টুরেন্টে দেখা হয়েছে তাই একসাথে লাঞ্চ করেছি। সেটা নিয়ে পরেরদিন হেডলাইন হয়েছে উই আর ডেটিং ইচ আদার। ওয়াও! মানে কিছু বলার নেই।
আমি হেসে দিলাম। উনি বিরক্ত হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন
— তুমি হাসছো? হাসবেই তো তুমিওতো সেই দলেরি তাই না?
আমি কোনোরকমি হাসি থামিয়ে বললাম
— আচ্ছা হাসছিনা এরপর বলুন?
— এদের কীর্তি বলে শেষ করে যাবেনা। এমনকি টাকার জন্যে কাউকে যেমন উচুতে ওঠাতে পারে ঠিক সেইরকমভাবেই এক ধাক্কায় নিচে ফেলে দিতে পারে। রিডিউকিলাস। সেলিব্রেটিদের মধ্যে কার বাচ্চা কতোবার টয়লেটে যায় সেটাও তাদের প্রচার করতে হবে কিন্তু সত্যিই যেই নিউসটা সবাইকে জানানো দরকার সেটার দিকে তাদের কোনো পাত্তাই নেই?
আমি হাটুর ওপর দুই হাত রেখে বললাম
— ইউ আর রাইট। কিন্তু একটা কয়েন এর যেমন এপিঠ ওপিঠ আছে তেমনি সবকিছুরই এপিঠ ওপিঠ আছে।
— মানে?
— সাত বছর আগের কথা। একজন জার্নালিস্ট একজন মন্ত্রীর এগেইনস্টে খুব স্ট্রং একটা আর্টিকেল তৈরী করছিলো উইথ প্রুভ। কিন্তু ওই মিনিস্টার যখন জানতে পারে ওই জার্নালিস্টের কথা তখন উনি ওই জার্নালিস্টকে টাকার লোভ দেখায়, কিন্তু তাতেও যখন ওই জার্নালিস্ট মানতে চায়নি তখন তাকে হুমকি দিতে শুরু করে। তার একমাত্র মেয়েকে রেইপ করার, তাকে খুন করার আরো বিভিন্ন হুমকি দেয়া শুরু করে, কিন্তু উনি মানেননি। উনি অনেক কষ্টে ওনার মেয়ের সম্মান আর জীবণতো বাচিয়ে নিয়েছিলো কিন্তু নিজেকে বাচাতে পারেননি। প্রাণ দিতে হয়েছিলো তাকে।
এটুকু বলে আমি ওনার দৃষ্টির আড়ালেই নিজের চোখের পানিটা মুছে নিলাম আদ্রিয়ান অবাক হয়ে বলল
— উনি মারা যাবার পর ওনার মেয়ের কী হয়েছিলো?
— কারো জন্যে তো জীবণ থেমে থাকে না। তাই ওনার মেয়েও মরে যায়নি শ্বাস নিচ্ছে এখোনো।
আদ্রিয়ান কিছু না বলে চুপ করে রইলো। পরিবেশটা আবারো নিস্তব্ধ হয়ে গেলো। শুধু বৃষ্টির হালকা হালকা ফোটার আওয়াজ আর মেঘের হালকা গর্জন শোনা যাচ্ছে। বেশ অনেকক্ষণ পর আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বললাম
— এখোনো মনে হয় সব জার্নালিস্ট এক?
— সেটা কখনোই মনে হয়নি আমার তবে ম্যাক্সিমাম তো একই তাইনা?
— হ্যা সেটা ঠিক। আর আমি জানি আপনি আমার বিশ্বাস করে উঠতে পারছেননা। তবে আপনি একরাত বিপদে পরে আমার ফ্লাটে হেল্পের জন্যে এসছেন। এটাকে নিউস করার মতো বিশেষ কিছু আমার মনে হচ্ছেনা। আর আমি ওতোটাও চিপ রিপোর্টার না যে এসব বিষয় নিয়ে নিউস বানাবো। আপনি আমার হিস্ট্রি চেক করে দেখতে পারেন। আমি ঐ লেভের রিপোর্টার নই।
আদ্রিয়ান ইতোস্তত করে বলল
— অব্ আমি আসলে…

“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
— আমার কাছে এটা শুধুমাত্র একটা প্রফেশন নয় আদ্রিয়ান, আমার জীবণের বিরাট একটা অংশ আমার বেচে থাকার একমাত্র ভিত্তি বলতে পারেন।
আদ্রিয়ান আমার হাতটা ধরে ওর দুই হাতের মধ্যে নিয়ে নিলো। আমি ওর দিকে অবাক হয়ে তাকালাম, ও আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল
— আই এম সরি। আমার ওভাবে বলাটা ঠিক হয়নি। হঠাৎ করেই যখন জানলাম যে তুমি একজন জার্নালিস্ট তখন
— ইটস ওকেহ.. আপনার দিক দিয়ে আপনি একদমি ঠিক ছিলেন। সত্যি বলতে আজকাল বেশিরভাগ জার্নালিস্ট তো এটাই করে তাইনা?
— হুম বাট তবুও…
— বাদ দিন তো এসব। মগটা দিন সিনে রেখে আসি।
— হুম।
এরপর সিনে মগদুটো রেখে, চোখে মুখে পানির ছিটে দিয়ে জোরে জোরে কয়েকটা শ্বাস নিয়ে নিজেকে শান্ত করলাম। অন্যের সামনে কেদে আর নিজেকে দুর্বল প্রমাণ করতে চাইনা। এরপর মুখটা মুছে গিয়ে ওনার পাশে বসলাম উনি মুচকি হেসে সামনে তাকিয়েই বললেন
— তো আজকালকার দিনে একা একটা ফ্লাটে থাকার কারণ?
— কেউ না থাকলে তো একাই থাকতে হয় তাইনা?
আদ্রিয়ান অবাক হয়ে তাকিয়ে বলল
— তোমার বাবা মা?
আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে মলিন হেসে বললাম
— মা জন্মের পরেই মারা গেছেন আর বাবা ও কয়েকবছর আগে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেছেন।
— আ’ম… আ’ম সরি আমি জানতাম না।
আমি ওনার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললাম
— জানার কথাও না। সো ডোন্ট বি..
— তোমার আর কোনো রিলেটিভ নেই?
— বাবা মা না থাকলে দুনিয়াতে আর কেউ থাকেনা। মামুর বাসাতেই ছিলাম চার বছর কিন্তু…
— কিন্তু?
আমি একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললাম
— বাদ দিন এসব।
— ওকে। আমি হয়তো একটু বেশিই পার্সোনাল ইসুতে ঢুকে যাচ্ছি।
আমি মাথা নিচু করে বসে রইলাম আর মনে মনে বললাম; আ’ম সরি আদ্রিয়ান। আপনি আমার মাত্র এক রাতের অতিথি। তাই আপনাকে আমার জীবণের ভয়ংকর কালো সত্যগুলো বলতে চাইনা। বলতে চাইনা আপনি যার কাছে একরাতের জন্যে আশ্রয় চেয়েছেন সে নিজেই পালিয়ে বেড়াচ্ছে নিজেরই খুব কাছের মানুষদের কাছ থেকে। প্রতিটা মুহূর্তে ভয়ে থাকি ধরা পরে যাবার ভয়। এসব ভাবতে ভাবতেই উনি বললেন
— তোমার বয়ফ্রেন্ড নেই?
আমি ভ্রু কুচকে তাকালাম ওনার দিকে তারপর বললাম
— সেটা দিয়ে অাপনি কী করবেন?
উনি একটু রাগী গলায় বললেন
— আছে কী না বলো?
ওনার রাগী কন্ঠে একটু দমে গেলাম, কারণ ওনার রাগের সাথে খানিকটা পরিচিত আমি। তাই নিচু গলায় বললাম
— না নেই
উনি একটা শ্বাস নিয়ে বললেন
— যাক।
সেটা শুনে আমি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে কিছু বলতে যাবো তার আগেই উনি বললেন
— বাই দা ওয়ে তুমি রান্নাটা খুব ভালো করো। ভালোই হলো বিয়ের পর আর ওই স্টুপিড সেফদের ডিসগাস্টিং রান্না খেতে হবেনা
আমি বাইরে তাকিয়ে আনমনে বললাম
— হুমম।
পরক্ষণেই খেয়াল হলো কী বললেন উনি চমকে গিয়ে ভ্রু কুচকে ওনার দিকে তাকিয়ে বললাম
— বিয়ের পর মানে?
আদ্রিয়ান হকচকিয়ে গিয়ে বলল
— অব্ ব আই মিন। আমার বিয়ের পর আমার বউ যদি তোমার মতো রান্না জানে তাহলে আরকি।
কথাটা আমার কেমন যেনো লাগল তবুও ছোট করে বললাম
— ওহ।
উনি কিছু বললেন না। কিছুক্ষণ পর আমি বললাম
— ঘুম পাচ্ছে নিশ্চই। আপনি আমার বেডে শুয়ে পরুন আমি সোফার রুমে চলে যাচ্ছি।
বলে উঠে দাড়াতেই উনি আমার হাত ধরে ফেললেন। আমি একটু না অনেকটা অবাক হয়ে তাকালাম ওনার দিকে। উনার চোখে এক অদ্ভুত চাহনী আর ঠোটে ঝুলে আছে মুচকি এক হাসি। আমার কেমন একটা লাগছে, হার্টবিট দ্রুত গতিতে ছুটছে, নিশ্বাস না চাইতেও ভারী হচ্ছে। এই অনুভূতির কারণ আমার জানা নেই। বাইরে বৃষ্টির গতি হঠাৎ করেই বৃদ্ধি পেলো। যেনো বৃষ্টিও আজ কিছু জানাতে চাইছে। উনি স্লো ভয়েজে বললেন
— আজ একটা রাত না ঘুমোলে আমার বিশেষ কোনো সমস্যা হবে না? তোমার কী খুব সমস্যা হবে?
#চলবে…
.
দেরীতে দেবার জন্যে সত্যিই দুঃখিত। ভূলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন আর নিজেদের মতামত জানাবেন। ধন্যবাদ?