Saturday, July 19, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1927



বর্ষণের সেই রাতে ❤ পর্ব- ৩

1

বর্ষণের সেই রাতে ❤
পর্ব- ৩
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

.
এসব বলেই এলোপাথাড়ি নাচতে শুরু করলাম। পাগলের মতো লাফিয়ে লাফিয়ে নাচছি। যেনো হাতে চাদ পেয়েছি। আশেপাশে কোনোকিছুর খেয়াল নেই আমার, নাচতে নাচতে পেছন ঘুরে আমি পুরো চমকে গেলাম, নাচ অটোমেটিক বন্ধ হয়ে গেলো আমার। কারণ আদ্রিয়ান হাত ভাজ করে দেয়ালে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে। শুনে ফেলল না তো কিছু? যদি শুনে থাকে যে উনি আমার ক্রাশ, আর ওনাকে আমি এতো পছন্দ করি, তাহলেতো ভাব একশগুন বেড়ে যাবে। বহুত কষ্টে নিজের ইমোশনকে চেপে রেখে একটা ইমেজ ক্রিয়েট করেছি সেটা নষ্ট হয়ে যাবে?
— বাহ। ডান্সটাতো খুব ভালো করো তুমি।
ওনার কন্ঠস্বর শুনে আমার ধ্যান ভাঙলো। তাকিয়ে দেখি আদ্রিয়ান ডানহাত থুতনিতে রেখে মুচকি মুচকি হাসছে। ও কতোটা শুনেছেন বা কতোটা দেখেছেন সেটাইতো জানিনা। তাই ইতোস্তত করে বললাম
— না মানে আমি আসলে..
আদ্রিয়ান ওনার জিন্সের পকেটে হাত ঢুকিয়ে আমার সামনে এসে দাড়িয়ে বললেন
— নাচছিলে ভালো কথা। কিন্তু কিচেনে ঢুকে এমন কী হলো যে ঘর কাপিয়ে নাচতে শুরু করলে?
আমি মনে মনে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম যাক কিছু শুনতে পায় নি। নিজেকে সামলে কপালের সামনের চুলগুলো কানে গুজতে গুজতে বললাম
— না মানে…
— না, মানে, আসলে এইগুলো শুনে নিয়েছি। এরপরতো কিছু বলো?
আমি কিছু একটা ভেবে, নিজেকে সামলে ওনার দিকে বিরক্তিকর চাহনী দিয়ে বললাম
— আমার ফ্লাট, আমার কিচেন আমি যা খুশি তাই করবো। নাচবো,লাফাবো,গাইবো, আপনাকে তার কৈফিয়ত কেনো দেবো?
আদ্রিয়ান মুচকি হেসে মাথা দুলিয়ে বলল
— কারেক্ট আছে। তুমি নাচতে নাচতে ফ্লোর ভেঙ্গে ফেলো ইস মে মেরা কুছ নেহি যাতা। যেটা বলতে এসছিলাম। নুডুলসে ঝালটা একটু বেশি করে দিও।
এটুকু বলে যেতে নিয়েও আবার পেছনে ফিরে মুচকি হেসে বললেন
— আর হ্যা নাচার জন্যে সারারাত পরে আছে। আপাদত আমার ভীষণ খিদে পেয়েছে তাই খাবারটা আগে আনলে ধন্য হতাম আরকি।
এটা বলে উনি সিটি বাজাতে বাজাতে চলে গেলেন। আর আমি অাহাম্মকের মতো তাকিয়ে আছি ওনার যাওয়ার দিকে। এমন বিহেভ করছে যেনো আমি ওনার খুব পরিচিত কেউ। একটা অপরিচিত মেয়ের ফ্লাটে এসেছে, তাও এভাবে হুট করে সঙ্কোচ তো অনেক দূরের কথা এ তো এমন বিহেভ করছে যাতে ও আমার ফ্যামেলি মেমবার হুহ। বাট যাই হোক আজ রাতটা ও এখানে থাকবে এটাই আমার কাছে অনেক। এসব ভেবে গুনগুনিয়ে গান গাইতে গাইতে নুডুলস রান্না শুরু করলাম। রান্নার ফাকে ফাকে উকি দিয়ে ওনাকে দেখার চেষ্টা করে যাচ্ছি। নুডুলস রান্না কম্প্লিট করে দুটো প্লেটে সার্ভ করে নিয়ে গেলাম। গিয়ে দেখি সাহেব খাটের এক কোণে আসাম করে বসে চারপাশ দেখছে। আমাকে দেখেই উনি একটা হাসি দিলেন, উত্তরে আমিও একটা হাসি দিলাম। আমি প্লেটটা ওনার দিকে বাড়িয়ে দিতেই উনি প্লেটটা হতে নিয়ে বললেন?
— ওয়াও? স্মেলটাই এতো ভালো আসছে। খেতে না জানি কতো ভালো হবে।
আমি হেসে দিয়ে বললাম
— টেষ্ট করে দেখুন।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন

উনি হেসে খানিকটা খেয়ে বললেন
— হুমমম। টু গুড।
— খারাপ হলেও কী বলবেন নাকি?
— নাহ সত্যি ভালো হয়েছে, তুমি টেস্ট করে দেখো।
ওনায় কথায় হেসে দিয়ে নিজের প্লেট থেকে খেতে শুরু করলাম। আমার কাছে বিশেষ কোনো টেষ্ট লাগেনি কারণ রোজকার স্বাদ এটা। উনি খেতে খেতেই বললেন
— তুমি এই ফ্লাটে একাই থাকো?
— হুমম। আমি শুনেছি আপনিও নাকি আলাদা থাকেন?
— হ্যা।
— কারণ?
উনি একটু অন্যরকমভাবে তাকালেন আমার দিকে। তারপর প্লেটটা নামিয়ে রেখে বলল
— বাহবাহ এতো ইন্টারেস্ট?
আমি হকচকিয়ে গিয়ে বললাম
— নাহ মানে আমি এমনিই জিজ্ঞেস করলাম পারসোনাল ইসু হলে বলতে হবে না।
উনি হেসে দিয়ে বললেন
— ওতোটাও পার্সোনাল না যে তোমাকে বলা যাবেনা।
আমি ভ্রু কুচকে তাকালাম উনি মুখে হাসি রেখেই বললেন
— আই মিন একটা রাত তোমার হেল্প নিয়েছি। সো এটুকু বলতেই পারি তোমাকে।
— ওহ।
— তবে আগে খেয়ে নি? তারপর কফি খেতে খেতে বলবো ওকে?
— হুমম।
উনি একমনে খাচ্ছেন আর আমি একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি ওনার দিকে আর খাচ্ছি। সত্যিই আমরা মনে করি মিডিয়া জগতের এসব লোকেদের লাইফস্টাইল কতোইনা ভিন্ন। তবে তাদের ওই চাকচিক্যপূর্ণ জীবণযাপনের মধ্যেও কিছু ছোট ছোট সাধারণ বৈশিষ্ঠ্য থাকে যেটা ক্যামেরায় ধরা পরেনা। ওনাদের এই অসাধরণ সত্তার মধ্যেই কোথাও না কোথাও একটা অতি সাধারণ সত্তাও লুকিয়ে থাকে যেটা শুধুমাত্র ওনার সংস্পর্শে আসা মানুষগুলোই বুঝতে পারে। সেটা আজ ওনাকে দেখে বেশ বুঝতে পারছি। হঠাৎ উনি খাওয়া ছেড়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন
— হ্যালো মিস? ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। আগে ওটা খাও। তারপর আমায় নিয়ে গবেষণা করো।
ওনার কথায় ধ্যান ভাঙলো আমার। আমি তাড়াতাড়ি নিজেকে সামলে খাওয়ায় মন দিলাম ভেতরে ভেতরে লজ্জা পেলেও সেটা বাইরে প্রকাশ করিনি। উনিও হালকা হেসে খাওয়ায় মন দিলেন। নুডুলস খাওয়ার পর বললেন
— ক্যান্ডেলটা শেষ হয়ে যাচ্ছে আরেকটা জ্বালাবো?
আমি ভ্রু কুচকে মুচকি হেসে বললাম
— যে ফ্লাটে ঢোকার আগে পারমিশন নেয়নি সে মোম জ্বালাতে পারমিশন চাইছে?
— পিঞ্চ মারছো?
— যেটা মনে করেন।
আদ্রিয়ান হেসে দিয়ে বললেন
— বাহ আমার ডায়লগ আমাকেই শোনাচ্ছো?
আমি ভ্রু কুচকে বললাম
— ডায়লগের ওপর কী নাম লেখা ছিলো?
— নাহ তা ছিলোনা।
— দেন?
— ওকে ফাইন.. ইউ ওউন আই লুজ। এবার কী ক্যান্ডেল জ্বালাতে পারি ম্যাডাম ?
— আমিই জ্বালাচ্ছি আপনি বসুন।
— না তুমি বরং কফিটা করে আনো আমি ক্যান্ডেল জ্বালাচ্ছি।
আমি মুচকি হেসে টেবিল লাইট নিয়ে চলে গেলাম কিচেনে কফি করতে। কফি করে নিয়ে গিয়ে দেখি উনি রুমে নেই। বুঝলাম ব্যালকনিতে আছে। বৃষ্টি এখন আর তেমন নেই, হালকা ছিটে ছিটে ফোটা পরছে। তবে আকাশটা পরিষ্কার না। খানিক পরে আবারো ঝরঝর করে বৃষ্টি পরবে বোঝাই যাচ্ছে। চারপাশে একরকম নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে। তবে তার মধ্যে তাই ব্যালকনিতে গিয়ে দেখি উনি নিচে বসে আছেন। আমি অবাক হয়ে বললাম
— নিচে বসে আছেন কেনো?
উনি আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে বললেন
— নিচেই ভালোলাগছে। এই ঠান্ডা ঠান্ডা পরিবেশ হালকা বৃষ্টির ছিটে।
আমি কিছু না বলে কফি মগটা ওনার দিকে এগিয়ে দিলাম। উনি মুখে সেই কিউট হাসিটা রেখেই মগটা হাতে নিয়ে আরেক হাতে ওনার পাশে ইশারা করে বললেন
— বসো।
আমি বেশ অবাক হলাম ওনার কথায় ইতোস্তত করে বললাম
— আমি বসবো? আপনার পাশে?
উনি ভ্রু কুচকে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন
— সমস্যা হবে তোমার ?
— নাহ তা না কিন্তু…
উনি আমার হাত ধরে বসিয়ে দিলেন ওনার ঠিক পাশে। আমি বেশ অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি ওনার দিকে। আমাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে উনি মুচকি হেসে বললেন
— তুমি বাস জার্নি করেছো?
আমি হেসে দিয়ে বললাম
— আমাদের মতো মানুষদের কাছে একটু দূরের জার্নি মানেই বাস জার্নি।
— তার মানে অনেকের পাশে বসে জার্নি করেছো?
— হ্যা তাতো করেছি।
আদ্রিয়ান এবার আমার দিকে হালকা ঘুরে বলল
— তাহলে আমি কী দোষ করলাম ম্যাডাম?
— ওটা আলাদা ব্যাপার। বাসে যাদের পাশে বসি তাড়াতো আমাদেরই ক্লাসের মানুষ। আর আপনিতো…
আদ্রিয়ান এবার শব্দ করেই হেসে দিলো। ওর হাসি দেখে আমি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে রইলাম। এমন মনে হচ্ছে যেনো মিরাক্কেলে অপূর্ব রয় জোক বলছে। আজব? আমি কিছু বলবো তার আগেই আদ্রিয়ান হাসি থামিয়ে বললেন
— মানুষের আবার ক্লাস? আচ্ছা সেটা কোথায় লেখা আছে?
আমি বুঝতে পারলাম উনি কী মিন করতে চাইছেন তাই মুচকি হেসে বললাম
— ব্যাংক ব্যালেন্সে, বড় বড় গাড়িতে, বিশাল বাংলোতে, ফেমে আরো অনেক কিছুতে।
আদ্রিয়ান মুচকি হসে কফিতে চুমুক দিয়ে বললেন
— হুমমম। কিন্তু সেই ক্লাস সেট কে করেছে?
— আমরা মানে মানুষেরা।
— এক্সাক্টলি। সব তো আমাদের মধ্যেই তাইনা? যদি তুমি নিজেই পারফরমার হও আর নিজেই জজ হও তাহলে জাজমেন্ট কী কেউ মেনে নেবে?
— উমহুম।
—- তাহলে তোমরা কেনো মানো? দেখো ব্যাংক ব্যালেন্স, গাড়ি, বাড়ি, ফেম এগুলো দিয়ে একটা মানুষ কতোটা ধনী বা কতোটা সাকসেসফুল সেটা বলা যায় কিন্তু কোনো মানুষের ক্লাস শুধুমাত্র তার পারসোনালিটি আর ক্যারেক্টার এর ওপর ডিপেন্ট করে। আমি গান করে টাকা ইনকাম করি, আমার গান সকলের ভালোলাগে তাই সবাই আমাকে ভালোবাসে, আর তাই গানের ওফার বেশি আসে আর টাকাও। কিন্তু এতে শুধুমাত্র আমার সফলতা প্রকাশ পাচ্ছে আমি কোন লেভেলের মানুষ সেটা না। মানুষের ক্লাস শুধুমাত্র মানবিকতা দিয়েই বিচার করা যায় টাকা দিয়ে নয়।
আমি এতোক্ষণ ওর কথা মনোযোগ দিয়ে শুনলাম তারপর কফিতে চুমুক দিয়ে বললাম
— কিন্তু সেটা মানে কজন?
— রাজা যদি নিজেই নিজেকে রাজা না মানে তাহলে অন্যকেউ কেনো মানবে?
ওর কথার মানে বুঝতে পারলাম। সত্যিই ঠিকিতো বলেছে। আমরা নিজেরাই যদি নিজেদের মিডেলক্লাস ভাবি তাহলে বাকিদের কী দোষ? তবে আদ্রিয়ানের চিন্তাধারা খুব ভালো লাগলো। পুরো মন ছুয়ে গেছে ওর কথাগুলো। সত্যিই সেলিব্রিটি মানেই যে খারাপ, মুডি, অহংকারী হবে তা নয়। তার প্রমাণ আজ আদ্রিয়ানকে দেখেই পেলাম। যদিও বিভিন্ন ইন্টারভিউ তে দেখেছি ওর পজিটিভিটি কিন্তু সেগুলো শো অফ মনে হয়েছিলো আমার। এসব ভেবেই ওর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলাম। একটুপর কিছু একটা ভেবে ওকে বললাম
— বললেন না তো ফুল ফ্যামিলি থাকতেও আপনি কেনো একা থাকেন?
উনি কিছুক্ষণ চুপ থেকে সামনের দিকে তাকিয়ে কফি মগে চুমুক দিয়ে বললেন
— প্রবলেমটা হলো ড্যাড। উনি কোনোদিনি এসব গান মিডিয়া জগৎ পছন্দ করতেন না। তার ইচ্ছে আমি তার কম্পানির দায়িত্ব নেই। কিন্তু আমি কোনোকালেই এইসব পছন্দ করতাম না। এসব বিজনেস ক্লাইন্ট এগুলো আমার মাথায় ঢুকতোই না। ছোট বেলা থেকেই গানের প্রতি একটা আসক্তি ছিলো আর সময়ের সাথে সেই আসক্তি আরো তীব্রতর হয়েছে। স্কুল কলেজের বিভিন্ন ফাংশনে গান গাইতাম। তবে আমার এই খাপছাড়া ভাবটাই ড্যাডের সহ্য হচ্ছিলো না। কলেজের এক ফাংশনেই এক মিউসিক ডিরেক্টরের আমার গলা ভালো লাগে আর সেখান থেকেই এই জগতে জার্নি শুরু। ড্যাডের যদিও পছন্দ ছিলোনা কিন্তু কিছু বলেনি। কিন্তু পড়াশোনা শেষ হবার পরেও যখন ওনার কম্পানির দায়িত্ব নিতে চাইনি তখন আমার ওপর প্রেশার ক্রিয়েট করা শুরু করলেন। কিন্তু আমি কিছুতেই রাজি হচ্ছিলাম না তখন একপ্রকার জোর করা শুরু করল। মমও ড্যাডের মুখের ওপর কিছু বলতে পারছিলোনা। একদিন এই নিয়ে ড্যাডের সাথে তর্ক হয় আর সেই তর্কাতর্কির মধ্যেই ড্যাড আমার গায়ে হাত তোলে। যেটা আমি মানতে পারছিলাম না তাই সেইদিন সেইমুহূর্তেই চলে এসছিলাম ঐ বাড়ি থেকে।
এতোক্ষণ চুপচাপ শুনছিলাম ওর কথা। ওর কথা শেষ হতেই আমি বললাম
— হ্যা কিন্তু আপনি আপনার বাবার একমাত্র ছেলে। উনিতো এটাই চাইবে যে ওনার কম্পানির দায়িত্ব আপনি নিন?
আদ্রিয়ান সামনের দিকে তাকিয়েই বলল
— আই নো বাট বাবা হিসেবে ওনার আমার স্বপ্নটাকেও গুরত্ব দেওয়া উচিত ছিলো তাইনা? যদি উনি বলতেন যে আমি গান করে সময় পেলে অফিসে বসতে পারি তাহলে আমি রাজি হয়ে যেতাম। কিন্তু উনিতো আমাকে আমার গানটাই ছাড়তে বলছিলেন।
আমি কিছু না বলে কফির মগে চুমুক দিলাম। বিদ্যুৎ চমকানোর আলোয় হঠাৎ করে আলোকিত হওয়া আকাশটা দেখছি আর মেঘের হালকা শব্দে গুরুম গরুম আওয়াজ শুনছি। ভেতরটা ভার ভার লাগছে খুব। বুকের ভেতরে এক অদ্ভুত বিষাদ গ্রাস করছে। খুব মনে পরছে আব্বুর কথা। কী অবাক করা ব্যাপার তাইনা। কারো স্বপ্ন পূরণের জন্যে তার বাবাই বাধা হয়ে দাড়ায়। আর কেউ নিজের বাবার দেখা সপ্নকেই আকড়ে ধরে এখোনো শ্বাস নিচ্ছে। সত্যিই জীবণটা খুব অদ্ভুত। এখানে যেমন আলাদা আলাদা মানুষ আছে, সেই সাথে তাদের আলাদা আলাদা সমস্যা, কষ্ট, যন্ত্রণা আছে। কারো কিছু থাকার যন্ত্রণা কারো কিছু না থাকার যন্ত্রণা। কিছু আছে বলে কেউ কষ্ট পাচ্ছে, আবার কিছু হারিয়ে ফেলেছে বলে অন্যকেউ কষ্ট পাচ্ছে। কিন্তু ব্যাস্ততম এই শহরে আমরা সবাই শুধু নিজেকে নিয়েই ব্যাস্ত। কারো দুঃখে একটু আক্ষেপ আর দীর্ঘশ্বাস দেওয়ার সময় থাকলেও পাশে থেকে সান্তনা দেবার মতো সময়ের বড্ড অভাব আমাদের। হঠাৎ করে অাদ্রিয়ান আমার সামনে তুরি বাজিয়ে বললেন
— কী ভাবছো?
ওনার ডাকে ধ্যান ভাঙলো। নিজেকে সামলে বললাম
— অবব্ কিছু না।
— অামার সম্পর্কেতো অনেক কিছু জানো। আর অনেকটা এখন জানলে বাট তোমার সম্পর্কে কিছু জানা হলো না। এতক্ষণ হয়ে গেলো নামটা পর্যন্ত জানা হয়নি।
— অনিমা। অনিমা কোতয়াল।
— ওয়াও কিউট নেইম। বাই দা ওয়ে এতো লেইট করে ফিরলে? দেখে মনে হলো অফিস থেকে এসছো? কী করো তুমি? আই মিন প্রফেশন কী?
এ যদি এখন আমার প্রফেশন জানে, না জানি হার্টএট্যাক করে বসে। বলবো? কিন্তু মিথ্যে বলাটাও তো ঠিক হবেনা। তবে আমার জব জানলে এ সিউর কয়েকশ ভোল্টের ঝটকা খাবে। ভূল ভাববে না তো আমায়? এটা মনে করবেনা তো আমি নিজের স্বার্থে ওকে এখানে থাকতে দিয়েছি? এতো ভালো ব্যবহার করছি শুধুমাত্র নিজেরই ফায়দার জন্যে? চলে যাবেনা তো এখান থেকে? বাট যা খুশিই হোক আমি মিথ্যে বলতে পারবোনা। এসব ভাবতে ভাবতেই উনি আবার আমার সামনে তুরি বাজিয়ে বললেন
— এই যে ম্যাডাম? কোথায় হারিয়ে যান বলুনতো?
— নাহ মানেহ।
উনি মুচকি হেসে বললেন
— কীসে জব করো তুমি?
আমি চুপ করে আছি। সেটা দেখে উনি ভ্রু কুচকে ফেললেন তারপর বললেন
— হোয়াট হ্যাপেন? বলো?
আমি এবার সাহস জুগিয়ে বলেই ফেললাম
— আমি একজন জার্নালিস্ট।
বেচারা সবে কফিতে চুমুক দিয়েছিলো। এটা শুনে সাথে সাথে বিষম খেয়ে গেলো। কাশতে কাশতেই খারাপ অবস্হা আমি ধরতে গিয়েও থেমে গেলাম। উনি নিজেকে সামলে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন
— সিরিয়াসলি?
আমি হ্যা বোধক মাথা নাড়তেই, উনি ফ্লোরে একটা পাঞ্চ করে হতাশ দৃষ্টিতে সামনে তাকিয়ে বললেন
— একেই বলে আকাশ থেকে পরে খেজুর গাছে আটকে যাওয়া।
#চলবে…
.
( গল্পটা কেমন লাগছে অবশ্যই জানাবেন। আর কমেন্টে যত নাইস নেক্সট দেখি লাইফে এতো চকলেটস ও খাইনি ভাই।? নাইস নেক্সট এসব কমেন্ট না করে গল্পের বিষয়বস্তু সম্পর্কিত কমেন্ট করুন, যাতে নিজেকে ইমপ্রুভ করতে পারি। ধন্যবাদ)

বর্ষণের_সেই_রাতে ❤ পর্ব- ২

0

বর্ষণের_সেই_রাতে ❤
পর্ব- ২
#লেখিকা: অনিমা

.
আমি একটা বড়সর ঢোক গিললাম। উনি একটু একটু করে এগিয়ে আসছেন আমার দিকে, আর আমি নিজের অজান্তেই পিছিয়ে যাচ্ছি। পেছাতে পেছাতে দেয়ালে লেগে গেলাম। মনে মনে প্রচুর ভয় হচ্ছে। শুনেছি এইসব সেলিব্রিটিদের ক্যারেকটার একেবারেই খারাপ হয়। যদি সত্যিই উল্টোপাল্টা কিছু করে? কেউ তো আমার কথা বিশ্বাস ও করবেনা যে দ্যা রকস্টার এডি আমার বাড়িতে এসে আমার সাথে এসব করেছেন। এমন কী কারণ থাকতে পারে ওনার এখানে আসার? এসব ভাবতে ভাবতে উনি একদম আমার কাছে এসে দেয়ালে হাত রাখল। ভয়ে আত্মা শুকিয়ে যাচ্ছে আমার। উনি একটু ঝুকতেই আমি খিচে চোখ বন্ধ করে নিলাম। লোকটার নিশ্বাস আমার মুখে পড়তেই আমি নিজেকে আরো গুটিয়ে নিলাম। হৃদস্পন্দন তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে, নিশ্বাস ভারী হয়ে আসছে। হঠাৎ করেই ফিক করে হেসে দেবার শব্দ পেলাম। আস্তে আস্তে চোখ খুলে তাকিয়ে দেখি হাসছেন উনি। উনি হাসতে হাসতে খাটে গিয়ে বসলেন। আমি ভ্রু কুচকে তাকালাম ওনার দিকে। উনি হাসি থামিয়ে বলল
— সরি! সরি! আই ওয়াজ জাস্ট কিডিং। বাট আপনিতো ভয়ে পুরো জমে গেছেন।
বলেই আবারো হেসে দিলেন। আমি চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে আছি ওনার দিকে। এরকম মজার কোনো মানে হয়? আমাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে হাসি থামিয়ে বললেন
— আচ্ছা সরি বললাম তো! মজা টা একটু বেশি হয়ে গেছে বুঝতে পারছি।
আমি এবার হাত দুটো ভাজ করে দেয়ালে হেলান দিয়ে বললাম
— রকস্টার এডির এখানে এসে টপকানোর কারণটা কী?
এটা শুনে আদ্রিয়ান এক ভ্রু উচু করে তাকালো আমার দিকে। তারপর বাকা হেসে বলল
— আরেহ বাহ। ভয়েজ টোনে এতো পরিবর্তন? একটু আগে তো আমার চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলতে পারছিলেন না। কেনো বলতে গিয়ে ক তেই আটকে যাচ্ছিলেন। কী এমন হলো যে ভয়েজে এতো জোর?
— ভোকাল কর্ডের চার্জ শেষ হয়ে গেছিলো রিচার্জ করে নিয়েছি, এখানে কেনো এসছেন সেটা আগে বলুন।
আদ্রিয়ান একটা মেকি হাসি দিয়ে বলল
— খিদে পেয়েছে।
আমি ভ্রু কুচকে তাকালাম ওনার দিকে। ইয়ারকি পেয়েছে নাকি? মানে কী এসবের? বিরক্তিকর কন্ঠে বললাম
— আপনি আমার ফ্লাটে খেতে এসছেন?
— হ্যা বাড়িতে আজ খাবার ছিলোনা তাই আরকি।
বলেই মিটমিটিয়ে হাসতে লাগল। আমি কিছু না বলে মুখ ফুলিয়ে খাটে গিয়ে বসে ওনার দিকে হতাশ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম। ওনার সব ইন্টারভিউ তে দেখেছি যে উনি ভীষণ মজার মানুষ। রিপোর্টারদের সাথেও বেশ মজা করে। পাবলিক ইনফরমেশন অনুযায়ী উনি যতটা ফানি, মাঝে মাঝে ততোটাই এগ্রেসিভ। বেশ কয়েকটা ইন্টারভিউতে ক্যামেরার সামনেই রিপোর্টারের ওপর রেগে যেতে দেখা গেছে তাকে উল্টোপাল্টা প্রশ্ন করার জন্যে। বাট পার্সোনালিও যে উনি ঠিক একইরকম সেটা বেশ বুঝতে পারছি। কিন্তু এই মুহূর্তে এতো কৌতুহল আর উত্তেজনার মধ্যে ওনার এই রসিকতা আমার বেশ বিরক্ত লাগছে। আমার এই হতাশ দৃষ্টি দেখে উনি হাসি মুখেই বললেন
— ওকে ফাইন। বলছি সব। বাট তার আগে আপনার সেল ফোনটা দিন তো একটু আমাকে।
— কেনো আমারটা দিয়ে কী কাজ? আপনার টা নেই নাকি?
উনি এবার রাগান্বিত কন্ঠে বললেন
— আপনার কী মনে হয়? আমার ফোন আমার সাথে থাকলে আমি এখানে অন্ধকারে বসে বসে মশা মারতাম এতোক্ষণ?
আমি এবার বিরক্তির চরম পর্যায়ে গিয়ে বললাম।
— আপনার কী মনে হয়? আমার সেলফোনে চার্জ থাকলে আমি একটা অপরিচিত লোককে রুমে দেখে ফোন করে লোক জরো না করে ওখানে ঠ্যাটার মতো দাড়িয়ে থাকতাম? চার্জ নেই ফোনে।
উনি বেডের ওপর একটা ঘুষি মেরে বললেন
— সিট! এখনতো কারেন্ট ও নেই।
— আমার ফোনে না হয় চার্জ নেই। আপনার ফোনটা কী হাওয়া খেতে গেছে?
উনি রেগে তাকালো আমার দিকে। আমি একটু ভয় পেয়ে গেলাম। তাই হালকা গলা ঝেড়ে ওনার থেকে একটু দূরে সরে বসলাম। দুজনেই কিছুক্ষণ নিরবতা পালন করার পর আমিই বললাম
— বললেন না তো কী এমন হলো যে এতোবড় একজন সেলিব্রিটি, যার সাথে একটা সেলফি তোলার জন্যে ফ্যানসরা হুমরি খেয়ে পরে সে একটা সাধারণ মেয়ের ফ্লাটে চোরের মতো ঢুকলো?
আদ্রিয়ান অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বলল
— হোয়াট আমি চোর?
আমিও অবাক হওয়ার ভান করে বললাম
— সেটা কখন বললাম?
— দেন হোয়াট ডু ইউ মিন বাই চোরের মতো ঢুকলেন?
— নাহ মানে আপনি যেভাবে ঢুকেছেন পুরো চোরের মতোই লাগছিলো আরকি।
বলেই মিটমিটিয়ে হাসছি। উনি এবার চোখ ছোট ছোট করে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন
— তাই না?
আমি হাসি থামিয়ে সিরিয়াস মুখ করে বললাম
— হুম তাই তো!
উনি রাগান্বিত হয়ে আমার দিকে একটু ঝুকতেই আমি মাথাটা একটু পিছিয়ে নিলাম, উনি শান্ত কন্ঠে বললেন
— কী যেনো বলছিলেন? কীসের মতো লেগেছে আমাকে?
আমিও একটা ঢোক গিলে বললাম
— অব্ আমিতো মজা করছিলাম, আপনি এতো সিরিয়াসি কেনো নিচ্ছেন? আপনাকে একটুও চোরের লাগছিলো না বিশ্বাস করুন আপনাকে ড্ ডা হ্যা ডাকাতের মতো লাগছিলো।
— হোয়াট?
নিজেই চমকে গেলাম। কী সব বলছি? দিলামতো আগুনে ঘি ঢেলে। আমার এই এক সমস্যা ভয় পেয়ে গেলে কি বলি না বলি নিজেই বুঝতে পারিনা। উনি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে আমার দিকে, সেটা দেখে আমি একটু মেকি হেসে বললাম
— ন্ না মানে আপনাকে আপনাকেতো হ্যা মনে পড়েছে, আপনাকে পুরো..
কিন্তু কথাটা শেষ করার আগেই উনি আমাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন
— থাক। আপনাকে আর কিছু মনে করতে হবেনা। চোর ডাকাত অবধি হজম করে নিয়েছি, এরপর কিছু হজম করতে গেলে বদহজম হয়ে যাবে ম্যাডাম।
এটুকু বলেই সোজা হয়ে বসলেন। আর সাথে আমি একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে সোজা হয়ে নিজেকে ঠিকঠাক করে নিলাম। উনি এবার ভ্রু কুচকে নিজের ঘরির দিকে তাকালো। সেটা দেখে আমিও টেবিল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি 11.30 বাজে। আমি একটু ইতোস্তত করে বললাম
— আপনি কিন্তু এখোনো বললেন না এখানে কেনো এসছেন?
উনি হালকা হেসে বললেন
— আরেহ বলছি বলছি এতো অধৈর্য কেনো আপনি?
আমি একবস্তা বিরক্তি নিয়ে তাকালাম লোকটার দিকে। আমার এখন প্রচুর রাগ লাগছে এরকম সাসপেন্স ক্রিয়েট করার কোনো মানে হয়? উনি আমার মুখের দিকে তাকিয়ে শব্দ করে হেসে দিলেন। আমি ভ্রু কুচকে তাকালাম ওনার দিকে। উনি হাসি থামিয়ে বললেন
– আচ্ছা বলছি, রেগে যাচ্ছেন কেনো? আসলে দুপুরে একটা কাজ ছিলো সেটা সারতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে যায়, কাজটা সারার পর লংড্রাইভ এ যেতে ইচ্ছে করছিলো। এটা আমার অভ্যাস, স্ট্রেস দূর করতে মাঝে মাঝেই লং ড্রাইভে বেড়িয়ে যাই। আর সেটাও কমপ্লিটলি একা এবং নিড়িবিলি। তাই ড্রাইভার গার্ডস সবাইকে পাঠিয়ে দিয়ে নিজেই ড্রাইভ করছিলাম। প্রায় ঘন্টা তিন ড্রাইভ করার পর এখানকার একটা রোডে এসে পৌছাই। কারণ এলাকাটা নিড়িবিলি ভালো লেগেছে আমার। আর তখনি খেয়াল করি যে কিছু লোক ফলো করছে আমাকে, কারণ অনেকক্ষণ ধরেই তাদের আমার পেছনে আসতে দেখছিলাম।
আমার কাছে বেশ ইন্টারেস্টিং লাগল ব্যাপারটা তাই গালে হাত দিয়ে বললাম
— তারপর?
— তারপর আমি গাড়িটা সাইডে রেখে আমার ম্যানেজারকে কল দিতে যাবো তার আগেই আমার গাড়ির কাচ ভেদ করে একটা গুলি আসে। আমি ঝুকে গেছিলাম তাই গুলিটা একটুর জন্যে আমার মাথায় লাগেনি। আমার হাত থেকে ফোনটা পরে যায়, আর তারপর চার্জ শেষ হয়েছে না কী হয়েছে জানিনা ফোনটাও আর অন হয়নি।
— এরপরে কী করলেন?
— যেহেতু ফোনটা অন হচ্ছিলো না। আর আমি কম্প্লিটলি একাই বেড়িয়েছি তাই আমি গাড়ি স্টার্ট করে বিভিন্ন ভাবে গাড়ি চালিয়ে ওদেরকে ডিসট্রাক করি, তার
ওপর এই বৃষ্টি। আমি ওদের কে একটু পিছে ফেলে ওদের আড়াল হয়ে গাড়ি থেকেই নেমে যাই কারণ ওদের কাছে গান ছিলো, আর গাড়ির সংখ্যা দেখে বুঝলাম লোক ও অনেক ছিলো, তাই আমি একা নিজেকে সেভ করতে পারতাম না। তাই ওখানে গাড়িটা রেখেই ওখান থেকে বেশ অনেকটা দূরে চলে যাই। এসবের মধ্যে ফোনটা আনতেই ভুলে গেছি, ফোনটা বন্ধ ছিলো তাই এনেও আহামরি কোনো লাভ লাভ হতোনা। কারো সাথে যোগাযোগ করতে পারছিলাম না আর না কাউকে ডাকতে, সো এইরকম বৃষ্টি তারপর ওরা যেকোনো সময় এসে যাবে, রাস্তায় থাকা রিস্কি হয়ে যেতো। তাই কারো বাড়িতে আশ্রয় নিতেই হতো।
— বাট আপনি ঢুকলেন কীকরে ভেতরে?
— ব্যালকনি দিয়ে।
— হোয়াট?
— হুম। বাইরের আলোতে যেটুকু দেখেছি তাতে এই ফ্লাটেরই ব্যালকনির দরজা খোলা ছিলো। তাই এই ফ্লাটেই উঠলাম।
— আমি ব্যালকনির দরজা খোলা রেখে গেছিলাম?
— আমিও সেটাই ভাবছিলাম। যখন ভেতরে ঢুকে বাড়িটা ফাকা পেলাম। যে এতোটা ইরেস্পন্সিবল কেউ কীকরে হয়। এখন আপনাকে দেখে বুঝতে পারছি কীকরে হয়। বুঝতে পারছি কীকরে হয়।
আমি ওনার দিকে তাকিয়ে একটু মুখ ভেংচি দিলাম। উনি হেসে দিলেন। কিছুক্ষণ চুপ থেকে আমি বললাম
— কিন্তু আপনাকে কারা মারতে চায়? আর কেনো?
— মারতে তো অনেকেই চায়, আর কারণেরও অভাব নেই। কিন্তু এট্যাক টা কারা করেছে সেটা কালকের মধ্যেই জানতে পারবো, একবার বেরোই। এগুলো খুব ক্রিটিকাল ব্যাপার তুমি এসব বুঝবেনা।
ওনার শেষ কথাটায় হালকা হাসলাম তবে সেটা ওনার দৃষ্টির আড়ালে।
— সো এইজন্যেই আজ এখানে থাকতে হবে আমাকে। আর আপনি আমাকে চোর ডাকাত কী সব বানিয়ে দিলেন।
বলেই উনি হেসে দিলেন আর আমিও হেসে দিলাম। উনি হাসি মুখেই বললেন
— আপনি আমার বেশ ছোট দেখেই বোঝা যাচ্ছে। আর এমনিও আমি বেশিক্ষণ কাউকে আপনি বলতে পারিনা। সো অামি তোমাকে তুমি করেই বলছি। ওকেহ?
— আপনি পারমিশন চাইলেন নাকি জানিয়ে দিলেন?
— যেটা মনে করো।
আমি মুচকি হাসলাম।
— কারেন্ট কখন আসবে?
আমি শব্দ করে হেসে দিয়ে বললাম
— আজ কারেন্টের কথা ভূলে যান। সকালের আগে আসবেনা।
— ড্যাম!

“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
আমি হেসে দিলাম। বাইরে এখোনো অবিরাম ধারায় বৃষ্টি পরে চলেছে। সেইসাথে চারপাশটা আরো সিগ্ধ লাগছে। বাতাসে কেপে কেপে ওঠা মোমের হলদে আলোয় আড় চোখে দেখছি ওনাকে। উনি খাটে দুইহাটু গুটিয়ে হাটুর ওপর দুই হাত রেখে বসে আছে। কিন্তু উনি অাড়চোখে না সরাসরিই তাকিয়ে আছে আমার দিকে একদৃষ্টিতে বেশ কিছুক্ষণ ধরে। সেটা দেখে আমি ভ্রু নাচালাম। এতে ওনার ধ্যান ভাঙলো বোধ হয়। উনি মুচকি হেসে মাথা নাড়লেন। তারপর সামনে তাকিয়ে বললেন
— ভয় ছিলাম এখানে ঢোকার সময় কার না কার বাড়িতে গিয়ে পরি আমাদের তিল কে তাল বানিয়ে প্রচার করতে তো মিডিয়া দুবার ভাবেনা। এই জার্নালিস্টরাও না, এদের খালি মাসলাদার খবর তৈরী করতে হবে যাতে বেশি ইনকাম হয়। কিন্তু ওনাদের এসব ভূলভাল খবরের জন্যে যে আমরা যে বিপদে পরি সেটা তাদের দেখার বিষয় না।
— সব জার্নালিস্ট কিন্তু এক না? আই মিন সবাই টাকার জন্যে এসব করে না, কেউ কেউ প্যাশন হিসেবেও নেয় পেশাটাকে।
— হয়তো। কিন্তু আমি এখোনো এমন কাউকে পাইনি। ইমোশন বোঝেনা যা খুশি প্রশ্ন করে দেয়। আরে ভাই আমরাও তো মানুষ নাকি? যতোগুলো জার্নালিস্ট দেখেছি আমার ক্যারিয়ারে সেই মোতাবেক আই জাস্ট হেইট দেম।
আমি এবারেও মুচকি হাসলাম। হঠাৎ উনি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন
– খিদে পেয়েছে। খাওয়ার কিছু আছে নাকি? আসলে দুপুরে বেরিয়েছি এখোনো পেটে কিছু পরেনি, বাড়ি ফিরবো তার আগেই এই ঘটনা।
আমি বেশ অবাক হলাম, আদ্রিয়ান আবরার জুহায়ের আমার ফ্লাটে এসে আমার কাছে ডিনার করতে চাইছে? সিরিয়াসলি? এই দিনটাও দেখার ছিলো আমার? কিন্তু ওনাকে কীকরে বলবো যে আমিতো ম্যাক্সিমাম রাত কফি আর বিস্কুট খেয়েই কাটিয়ে দেই। এতো রাত করে ফিরে রান্না করার এনার্জি থাকে না। ব্রেকফাস্ট ও নুডুলস বা পাস্তা করে খেয়ে নি। লান্চটা সবসময় বাইরেই করি। তাই ঘরে রান্না করার মতো নডুলস, পাস্তা ছাড়া কিছুই নেই। কিন্তু ওনাকে এসব কীকরে দেবো? তাই একটু ইতোস্তত করে তাকালাম ওনার দিকে। উনি আমার তাকানো দেখে কী বুঝলেন জানিনা শুধু মুচকি হেসে বললেন
— খেতে চেয়েছি বলে পোলাও বিরিয়ানী আনতে হবে তার কোনো মানে নেই। জাস্ট খেয়ে পানি খাওয়ার মতো কিছু দিলেই হবে।
আমি মুখ ছোট করে ওনার দিকে তাকিয়ে হাত কচলাতে কচলাতে বললাম
— লডুলস, পাস্তা আর বিস্কুট ছাড়া কিছুই নেই।
উনি এবারেও হেসে দিয়ে বললেন
— আর কী চাই? নুডুলস রান্না করে নিয়ে এসো তাতেই হবে।
— ওকেহ
বলে উঠতে নিলেই উনি বললেন
— কফি আছে তো?
আমি হেসে দিয়ে বললাম
— হ্যা সেটা আছে ওটাও করছি ওয়েট।
উত্তরে উনি শুধু মুচকি হাসলেন। আমি গুটিগুটি পায়ে কিচেনে ঢুকে গিয়ে দাড়ালাম। কিছুক্ষণ চুপচাপ দাড়িয়ে থেকে আমি মুচকি হেসে পেছন ঝুকে উকি দিয়ে দেখলাম উনি আসছে নাকি। কিন্তু যখন দেখলাম আসছে না তখনি খুশিতে লাফিয়ে উঠলাম। এতোক্ষণ বহু কষ্টে নিজের ইমোশনটা চেপে রেখেছিলাম
— ইইইইই। আই কান্ট বিলিভ। আমার আদ্রিয়ান আমার ফ্লাটে এসছে? আমার সাথে আজ রাত থাকবে? আমার ক্রাশ? আমার জান? যাকে নিয়ে শুধু কল্পনাই করতাম। সে আজ এই বর্ষণের রাতে আমার কাছে আছে? ওর সাথে কথা বলেছি আমি? ওর জন্যে ডিনার বানাচ্ছি? ওয়াও! আমি জাস্ট ভাবতে পারছিনা।
এসব বলেই এলোপাথাড়ি নাচতে শুরু করলাম। পাগলের মতো লাফিয়ে লাফিয়ে নাচছি। যেনো হাতে চাদ পেয়েছি। আশেপাশে কোনোকিছুর খেয়াল নেই আমার, নাচতে নাচতে পেছন ঘুরে আমি পুরো চমকে গেলাম, নাচ অটোমেটিক বন্ধ হয়ে গেলো আমার।
#চলবে…

বর্ষণের সেই রাতে ❤ পর্ব ১

0

লোকটা আমার কোমর ছাড়তেই আমি তাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দৌড়ে সোফার রুমে এসে মেইন ডোর খুলতে যাবো তার আগেই লোকটা আমার হাত ধরে হ্যাচকা টানে তার দিকে ঘুরিয়ে আমার গা থেকে একটানে ওরনাটা নিয়ে নিলো। তারপর টেনে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে রাগী কন্ঠে বলল
— বলেছিলাম না উল্টোপাল্টা কিছু করোনা খুব খারাপ হয়ে যাবে?
— ক্ কে আপনি? আর ক্ কেন অ্ আমার সাথে এমন করছেন?
বলতে বলতে কেদেই দিয়েছি আমি। লোকটি সেদিকে পাত্তা না দিয়ে জোর করে আমার ওই ওরনাটা দিয়েই আমার হাত বেধে দিলো আর কিছু একটা পকেট থেকে বের করে মুখও বেধে দিলো, অন্ধকার তাই শুধু অবয়ব দেখা যাচ্ছে লোকটার। হঠাৎ আমার সাথে ঘটা এই আকষ্মিক ঘটনায় বেশ ঘাবড়ে গেছি। কাজ সেরে বাসায় ফেরার পর এমন কিছু হবে আশা করিনি আমি।
বর্ষার রাত। বাইরে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। বিরতিহীনভাবে ঝরেই চলেছে, সে আজ থামতে একেবারেই নারাজ। একটা ইম্পর্টেন্ট আর্টিকেল নিয়ে কাজ করতে করতে বাড়িতে ফিরতে রাত হয়ে গেলো। নিজের স্কুটিতে এসেছি তাই ভিজেও গেছি। তিন রুমের একটা ফ্লাটে একাই থাকি আমি। ফ্লাটে ঢুকে শরীরের পানি ঝাড়তে ঝাড়তে বেডরুমে ঢুকেই চমকে গেলাম। বিদ্যুৎ নেই রুমটা অন্ধকার। সেটা বড় কথা না কারণ এইরকম বিদ্যুৎ চমকানো বর্ষণের দিনে এইসব এলাকার নিচের বিদ্যুৎও ওপরের বিদ্যুতের সাথে সাক্ষাৎ করতে চলে যায়, যেনো এই সাক্ষাত অনিবার্জ। কিন্তু আমার চমকানোর কারণ হলো আমারি বেডরুমে আমারি বেডে কেউ বসে আছে। অন্ধকারে তাকে দেখা না গেলেও তার অবয়ব স্পষ্ট, অবয়ব অনুসারে একটা ছেলে। আমি একবার চোখ ঝাপটা দিয়ে নিলাম। হেলুসিনেট করছি নাতো? কিন্তু পরক্ষণেই বুঝতে পারলাম যে এটা সত্যিই। ভয় পেয়ে গেলাম আমি। লোকটি এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। আগেই বলেছি ফ্লাটে আমি একা থাকি, এইমুহূর্তে এখানে আসার মতো কোনো আত্মীয় বা পরিচিত কেউ আমার পেই। আর তাছাড়া দরজাতো লক করা ছিলো। তাই কেউ কীকরে আসবে ভেতরে? চোর নাকি? যদি চোর হয় তো লোকটার জন্যে একড্রাম আফসোস কারণ সে টেকোর কাছে চিরুনী খুজতে এসছে। কিন্তু চোর হলে চুরি না করে এভাবে খাটে বসে আছে কেনো? আমি কী করবো বুঝতে পারছিনা। ডাকবো লোকটাকে নাকি চেচাবো? না বাইরে গিয়ে পাশের ফ্লাটের লোকেদের ডেকে আনি সেটাই ভালো। এসব ভাবতে ভাবতেই লোকটির আমার দিকে ঘুরলো, আমাকে দেখেই দ্রুত দাড়িয়ে গেলো আমি প্রচন্ড ভয় পেয়ে গেলাম। লোকটি আমার দিকে এগোতে লাগল। অন্ধকারে আবছাভাবে লোকটিকে আমার দিকে এগিয়ে আসতে দেখে জোরে চিৎকার দিতে যাবো তার আগেই লোকটি আমার মুখ চেপে ধরল। এতে আরো অবাক হলাম। আমি ছাড়া পাওয়ার জন্যে নড়তে গেলেই লোকটি আরেক হাতে আমার কোমর চেপে ধরল যাতে নড়াচড়া করতে না পারি। আমার সাথে ঘটে যাওয়া আকষ্মিক এই ঘটনায় আমি পুরো হতভম্ব হয়ে গেছি। একা একটা ফ্লাটে একটা মেয়ের সাথে এরকম কিছু হলে সেই মেয়েটার মনের পরিস্হিতি আন্দাজ করা কঠিন। চির পরিচিত আশঙ্কায় বুক কেপে উঠলো আমার। লোকটা উত্তেজিত কষ্টে বলল
— হেই মিস। প্লিজ ডোন্ট সাউট। আমি কোনো খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে আসিনি। একটু থামুন লেট মি এক্সপ্লেইন।
কিন্তু লোকটার কথা যেনো আমার কানে গিয়েও গেলোনা। আমি নিজেকে ছাড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি আর ভাবছি লোকটা চাইছে টা কী? চোর? নাকি অন্যকিছু? লোকটার এইভাবে আমাকে ধরে রাখাতে আমার আরো ভয় করছে। উল্টোপাল্টা কিছু হবেনা তো আমার সাথে? রোজ এরকম কতো ঘটনার আর্টিকেল নিজের হাতে লিখি। লেখার সময় বেশ আক্ষেপ ও হয় মেয়েগুলোর জন্যে। আজ কী আমার সাথেও এমন কিছু হবে? কালকে কেউ আমারও আর্টিকেল বানাবে? সেইসাথে মন থেকে বেড়িয়ে আসবে আক্ষেপ আর দীর্ঘশ্বাস। এসব ভেবে আরো মোচড়াতে মোচড়াতে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে শুরু করলাম। লোকটার এবার বিরক্তির কন্ঠে বলল
— আরে এমনভাবে লাফাচ্ছেন কেনো? আমাকে বলতে তো দিন? আসলে নিচে..
কিন্তু আমি এবারেও কথাটা শেষ করতে না দিয়ে উমম শব্দ করতে করতে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছি। একে বলতে দিলেই বিপদ আগে এর থেকে ছাড়া পেয়ে আমায় লোক জরো করতে হবে। কিন্তু যদি পালিয়ে যায়? অন্ধকারেতো লোকটার মুখও দেখতে পারছিনা। লোকটা এবার একটু রাগী গলাতে বলল
— স্যাল আই ফিনিস? একটু বলি? তারপর না হয় অাপনি আপনার পেংগুইন ডান্স দেখাবেন? সারারাতই আছি এখানে নিরবিলি বসে দেখবো।
সারারাত থাকবে শুনেই বুকটা ধক কর উঠলো তবেকি যা ভাবছি তাই হতে চলেছে। এবার আমার ছটফটানি আরো বেড়ে গেলো। রীতিমতো লাফানোর চেষ্টা করছি আমি। আর মুখ দিয়ে উমম টাইপ শব্দতো আছেই। যেটা আমার নিজেরই বিরক্ত লাগছে লোকটার কেমন লাগছে কে জানে? লোকটা এবার ভীষণ জোরে ধমক দিলো আমাকে। ধমকটা এতোই জোরে ছিলো যে আমি একেবারে খরগোশ ছানার মতো করে শান্ত হয়ে রইলাম। লোকটা এবার একটা শ্বাস নিয়ে বলল
— এটলাস্ট। মুখ ছাড়ছি আমি। ছাড়ার পর যদি একটুও চিৎকার চেচামিচি বা উল্টোপাল্টা কিছু করেন। তাহলে খুব খারাপ হবে। মনে থাকবে?
আমি ভদ্রমেয়ের মতো হ্যা বোধক মাথা নাড়লাম কারণ ভয় পেয়ে গেছি লোকটার ধমকে। কিন্তু মনে মনে বলছি একবার শুধু ছেড়ে দেখনা তোকে যদি গনধোলাই না খাওয়াই তাহলে আমি এক সপ্তাহ চকলেটা খাবোনা হুহ। এরপর লোকটা আমার কোমর আর মুখ ছেড়ে দিতেই এই ঘটনা ঘটল।
বাইরে ঝমঝম শব্দে বৃষ্টি হচ্ছে। আমি হাত মুখ বাধা অবস্হায় গুটিশুটি মেরে সোফায় বসে আছি। আর লোকটা সামনের সিঙ্গেল সোফায় বসল। অন্ধকার হলেও বাইরে থেকে আসা আলোয় সবকিছুই দেখা যাচ্ছে কিন্তু পরিস্কার না অবয়ব আকারে। লোকটার ঠান্ডা গলায় বলল
— আই এম সরি ফর মাই বিহেভিয়ার, তুমি করে বলার জন্যেও সরি। কিন্তু আমার কাছে কোনো সেকেন্ড অপশন ছিলো না। আপনি তৈরী ছিলেননা কিছু শোনার জন্যে,নিজের মতো করে লাফিয়ে যাচ্ছিলেন। অযথাই ভয় পাচ্ছেন আপনি আমাকে।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন

আমি কিছু বলতে পারছিনা কারণ আমার মুখ বাধা কিন্তু লোকটার ওপর রাগ হচ্ছে। এভাবে একটা মেয়ের ঘরে ঢুকে বসে থাকলে মেয়েটা চেচাবে না তো নাকি মৌনব্রত পালন করবে? আর বলে কী না অযথাই ভয় পাচ্ছি। ডিসগাসটিং। কিন্তু এই ব্যাটার মতলব টা কী? লোকটা বলল
— টেবিল লাইট বা মোমবাতি নেই?
আমার এবার নিজের চুল নিজেরই ছিড়তে ইচ্ছে করছে। মুখ বেধে রেখে প্রশ্ন করছে। লোকটা নিজে জোকার নাকি আমাকে দেখে তার জোকার মনে হচ্ছে সেটা নিয়ে আমি যথেষ্ঠ সন্দিহান? লোকটি নিজেই বলল
— সরি আই ফরগট। বাট প্লিজ চেচাবেন না। বাইরে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে আর ফ্লাটের দরজাও বন্ধ আপনার চিৎকার কেউ শুনবেনা। আমি জাস্ট আমার নিজের কানের প্রটেক্শনের জন্য বলছি।
একথা বলতে বলতে আমার মুখের বাধন খুলল। আমি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছি। কী চাই কী এর? খারাপ কোনো উদ্দেশ্য থাকলে এতোক্ষণে তো করার কথা ছিলো, তবুও এদের বিশ্বাস নেই। না জানি কী ফন্দি আটছে। অত্যন্ত বিরক্তি নিয়ে বললাম
— আপনাকে না দেখতে খুব ইচ্ছে করছে আমার।
— কেনো?
— এক্চুয়ালি আমার এলিয়েন দেখা হয়নি এখোনো অবধি। সুযোগ যখন পেয়েছি মিস করবো কেনো?
লোকটি হেসে দিলো। অন্ধকার তাই হাসিটা দেখতে না পেলেও হাসির আওয়াজ টা শুনেই বুকের ভেতর কেমন করে উঠলো। লোকটা হাসিমিশ্রিয় কন্ঠেই বলল
— ক্যান্ডেল বা টেবিল লাইট কোথায় আছে বলুন? আমি নিয়ে আসছি।
— হাত খুলুন আমি এনে দিচ্ছি।
— সরি ম্যাম আই কান্ট ট্রাস্ট ইউ। আপনি আবারো যে অলিম্পিক এর রেস লাগাবেন না, তার কোনো গ্যারান্টি নেই।
আমি এবার বেশ বিরক্ত হলাম। রাগ লাগছে ভীষণ। কী পেয়েছে কী লোকটা? কাঠের পুতুলের মতো নাচিয়ে যাচ্ছে আমাকে। তাই রাগে গজগজ করে বললাম
— লিসেন ইউ আর ক্রসিং ইউর লিমিট।
— আই নো! বাট আমি হেল্পলেস। আপনাকে আগে সবটা বলি। তারপর আপনি যা খুশি করুন। কিন্তু আপনাকে সবটা ক্লিয়ার করে বলার জন্যে আমার মুখটা দেখতে হবে সো আই নিড লাইট।
— কেনো আপনার মুখ হোয়াইট বোর্ড নাকি? যে ওখানে না তাকালে অংক মাথায় ঢুকবেনা?
— উফফ দিস গার্ল। সেটা আমার মুখ দেখলেই বুঝতে পারবেন। এবার বলুন।
— টেবিল লাইট আপনি খুজে পাবেন না। ঐ ওয়ার্ডড্রপ এর ওপর ক্যান্ডেলস আর লাইটার আছে।
লোকটা উঠে কিছুক্ষণ খুজে একটা ক্যান্ডেল আর লাইটার নিয়ে এলো। টি- টেবিলের ওপর মোমবাতি রেগে লাইটার দিয়ে জালানোর কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই পুরো রুম আবছা হলদে আলোয় আলোকিত হয়ে গেলো। আমি এতোক্ষণ বিরক্তি নিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে ছিলাম। কিন্তু রুম আলোকিত হবায় লোকটির দিকে তাকিয়ে আমিতো বড়সর ঝটকা খেলাম। নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিনা। এও সম্ভব? এটা হতে পারে? আমি কি সপ্ন দেখছি? তাই দুবার চোখ ঝাপটাও দিলাম। কিন্তু সেই একি দৃশ্য। আরো অবাক করা বিষয় লোকটা একদৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো আমার দিকে যেনো তার দৃষ্টি আমার ওপরেই স্হির হয়ে গেছে। কিন্তু আমার অবাক দৃষ্টি দেখে নিজেকে সামলে নিয়ে মুচকি হেসে ভ্রু নাচালো। আমি অবাক হয়ে লোকটির দিকে তাকিয়ে বললাম
— অ্ আদ্রিয়ান?
লোকটি বাকা হেসে বলল “হ্যা”। আমি এবারেও অবাক হয়ে তাকিয়ে থেকে অবিশ্বাসের সুরে বললাম
— আদ্রিয়ান আবরার জুহায়ের?
— এস পার আই নো।
বলেই ওনার সেই ভূবন ভোলানো হাসিটা দিলো। আমার এখন চোখের সাথে নিজের কানকেও বিশ্বাস হচ্ছে না। আবারো অবাক হয়ে বললাম
— ইউ মিন দ্যা গ্রেট সিঙ্গার? রকস্টার এডি?
এবারেও সেই হাসি দিয়ে বলল
— লোকেতো তাই বলে। বাট থ্যাংক গড যে আপনি আমাকে চিনতে পেরেছেন।
আমি নিজের হাতেই নিজে একটা চিমটি দিলাম যে এটা সপ্ন কী না? কিন্তু চিমটি টায় ব্যথাও পেলাম। সেটা এডি এর চোখে পড়ল, আর চোখে পরতেই উনি আবারো হেসে দিলো। এতোক্ষণে মোটামুটি সিউর হলাম যে এটা স্বপ্ন নয় সত্যিই। উনি আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে। আমি দাড়িয়ে আটকে যাওয়া কন্ঠে বললাম
— আপনি? এখানে? আমার ফ্লাটে? কীভাবে ম্ মানে?
— আই নিড ইউর হেল্প। আজ রাতটা আমি থাকবো আপনার ফ্লাটে।
আমিতো অবাকের চরম পর্যায়ে পৌছে গেছি থাকবে মানে কী? আর কেনো? বিষ্মিত হয়ে জিজ্ঞেস করলাম
— মানে?
— মানে আজ রাতটা আমার এখানেই কাটাতে হবে।
আজব? এমনভাবে বলছে যেনো নিজেরই ফ্লাট। ইচ্ছে হলেই থাকবে। মামা বাড়ির আবদার আমি ভ্রু কুচকে বললাম
— যদি থাকতে না দেই?
উনি মুচকি হেসে পকেটে হাত ঢুকিয়ে বললেন
— আপনি বাধ্য। কারণ যদি আবারো ভূলভাল কিছু করেন তো ওভাবেই হাত মুখ বেধে রেখে দেবো। আপনি চান সেটা?
আমি ভয়ে মাথা নাড়লাম। কারণ যদি সত্যিই আবার ওভাবে বেধে রেখে দেয়? উনি বাকা হেসে বলল
— গুড গার্ল।
— কিন্তু আমার ফ্লাটেই কেনো?
— একটু বিপদে পরে গেছি। তাই এখানে এসে আশ্রয় নিয়ে হলো।
আমি উত্তেজিত হয়ে বললাম
— বিপদ?
উনি এবারেও হেসে দিয়ে বলল
— আরেহ কুল। পালিয়ে যাচ্ছিনা আমি। বলবো সব। আগে আপনি গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিন পুরো ভিজে আছেন তো।
আমি নিজের দিকে তাকালাম। এসবের চক্করে ভূলেই গেছিলাম যে আমি ভিজে আছি। এবার ইতোস্তত করে ওনার দিকে তাকালাম। উনিও হালকা ভিজে আছেন। মোমবাতির আবছা হলদেটে আলোয় চম্যৎকার সুন্দর লাগছে তাকে। হালকা ভিজে চুল যা এলোমেলো হয়ে কপাল ভর্তি হয়ে আছে। ছয় ফুটের ওপরে লম্বা, ফর্সা গায়ের রং, একেবারে হালকা গোলাপি ঠোট, এক অসম্ভব সুন্দর দুটো চোখ। যেনো ওই চোখ দিয়েই সবাইকে হিপনোটাইজ করার ক্ষমতা সে রাখে। একটা ব্লাক টিশার্ট, নেভিব্লু জ্যাকেট, ব্লু জিন্স, হাতে ব্রান্ডের ঘড়ি, পায়ে কেচ। একজন স্টার বলে কথা। এখোনো আমার বিশ্বাস হচ্ছে না যে এতো বড় একজন রকস্টার আমার ফ্লাটে এসছে। আমি এখোনো অবাক হয়ে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। আদ্রিয়ান আমার সামনে তুরি বাজিয়ে বললেন
— হ্যালো মিস?
ওর আওয়াজে আমার ধ্যান ভাঙতেই নিজেকে কোনোরকমে সামলে বললাম
— জ্বী?
উনি ভ্রু কুচকে তাকালেন আমার দিকে। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললেন
— গিয়ে চেন্জ করে নিন। আর পারলে আমাকেও মোছার জন্যে একটা টাওয়াল জাতীয় কিছু একটা দিয়ে যান। মুছে নিতাম আরকি।
আমি কিছু না বলে একটা টাওয়াল এনে ওনার হাতে দিলাম। এরপর তাড়তাড়ি ওয়াসরুমে ঢুকে কুর্তি আর জিন্স চেন্জ করে একটা টপস আর প্লাজো পরে নিলাম। বুক কেমন যেনো ধুকপুক ধুকপুক করছে। আমিকি হেলুসিনেট করছি? কিন্তু এটা কীকরে হলো? এসব ভাবতে ভাবতে বাইরে এলাম। বাইরে বেরিয়ে দেখি উনি বেডরুমে মোমবাতি নিয়ে এসছে আর খাটে বসে আছে গায়ে শুধু জিন্স আর একটা কালো চিকন স্লিভস এর গেন্জি। ভীষণ রকমে কাপছি আমি। উনি উঠে আমার সামনে এসে আমাকে এভাবে কাপতে দেখে বলল
— এখোনো ভয় পাচ্ছেন আমাকে?
— নাহ ম্ মানে সেরকম ক্ কিছু না।
প্রচুর নার্ভাস আর আনইজি লাগছে। আদ্রিয়ান বাকা হেসে বলল
— কেনো? এতোক্ষণ তো ভয় পাচ্ছিলেন? পরিচয় জানার পর ভয় লাগছেনা?
আমি কী বলবো কী করবো কিছুই বুঝতে পারছিনা। সবকিছুই সপ্নের মতো লাগছে। কী বলা উচিত আমার এখন।
— পাবলিক ফিগার আমি। দ্যাট নট মিনস কী আমার ক্যারেক্টার ভালো হবে তাইনা?
আমি একটা বড়সর ঢোক গিললাম। উনি একটু একটু করে এগিয়ে আসছেন আমার দিকে, আর আমি নিজের অজান্তেই পিছিয়ে যাচ্ছি। পেছাতে পেছাতে দেয়ালে লেগে গেলাম। মনে মনে প্রচুর ভয় হচ্ছে। শুনেছি এইসব সেলিব্রিটিদের ক্যারেকটার একেবারেই খারাপ হয়। যদি সত্যিই উল্টোপাল্টা কিছু করে? কেউ তো আমার কথা বিশ্বাস ও করবেনা যে দ্যা রকস্টার এডি আমার বাড়িতে এসে আমার সাথে এসব করেছেন। এমন কী কারণ থাকতে পারে ওনার এখানে আসার? এসব ভাবতে ভাবতে উনি একদম আমার কাছে এসে দেয়ালে হাত রাখল। ভয়ে আত্মা শুকিয়ে যাচ্ছে আমার। উনি একটু ঝুকতেই আমি খিচে চোখ বন্ধ করে নিলাম।
#চলবে..
বর্ষণের সেই রাতে ❤
পর্ব ১
#লেখিকা: অনিমা

ত্রিভুজ প্রেম পর্ব -৪

0

ত্রিভুজ প্রেম
জান্নাতুল ফেরদৌস সূচনা
পর্বঃ৪

-মা আমার তোয়ালেটা কই? গরম পানিটা কি করেছো? এতো সকালে ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করতে পারব না বলে দিলাম। তাড়াতাড়ি একটু গরম পানি করে দাও না মা? নাহলে অফিসে যেতে লেট হয়ে যাবে।

পাপড়ির এসব কথায় আফিয়া বেগম এখন বিরক্তি বোধ করছে।
-উফ! এই মেয়েটাকে নিয়ে পারা গেলো না। কোনো কাজে যাওয়ার আগে আমাকে পাগল করে ছাড়বে।
বলতে বলতে গরম পানি নিয়ে পাপড়িকে দিলো।

খাবার টেবিলে বসে খাবারের জন্য অপেক্ষা করছে পুষ্প।
– কি ব্যাপার মা, আজ কি সকালে নাস্তা পাবো না। সকাল থেকে তো দেখছি তোমার ঐ মেয়েকেই নিয়ে পড়ে আছো। বলি, ও ছাড়া কি আর কেউ অফিসে যাই না নাকি? আমাকেও তো ক্যাফেতে যেতে হবে তাই না?
গরম নাস্তা নিয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে আফিয়া বেগম এসে বললো
– এইতো মা, নে তোর নাস্তা।
সকাল থেকে কাজ করতে করতে আফিয়া বেগম কেমন হাফিয়ে ওঠেছে। আফিয়া বেগমকে দেখে পুষ্প বলে ওঠলো
– শুনো মা, তুমি খেয়েছো?
– নাহ! তোরা খেলেই আমি খেয়ে নিবো।
– এদিকে আসো তো, বসো এদিকে।
আফিয়া বেগমকে টেনে চেয়ারে বসালো পুষ্প। তারপর একটু খাবার নিয়ে আফিয়া বেগমকে খাইয়ে দিয়ে বললো
– সকাল থেকে অনেক কাজ তো করলে এবার একটু জিরিয়ে নাও।
– জিরালে কি চলবে, কাজ আছে নাহ।
– বসো তো, কাজ পরে করবে। আর শুনো আমার আজ একটু কাজ আছে, আসতে একটু লেট হবে। এখন যাই।
-সেকি, তুই এখনি চলে যাবি। পাপড়ি তো বলছিলো ওকে নাকি অফিসে তুই দিয়ে আসবি?
– আমি! আমি তো যেতে পারবো না। আমার একটু তাড়া আছে যে।

-কোন সমস্যা নেই আমি দিয়ে আসবো তোমার মেয়েকে জেঠিমা।
নীলের এমন কথায় পুষ্প ও আফিয়া বেগম নীলের দিকে তাকায়।
নীলকে দেখে পুষ্প বললো
– সেকি রে আজ এতো সকালে তুই এখানে।
– হুম, ভাবলাম শাকচুন্নিকে একটু অল দ্যা বেষ্ট বলে যাই।
– আবার তুই আমাকে শাকচুন্নি বললি।
রাগান্বিত স্বরে পাপড়ি কথাটা বলে ওঠলো।
পাপড়ি দিকে তাকিয়েই নীল স্বম্ভিত হয়ে গেলো। অনেক সুন্দর লাগছে পাপড়িকে। হালকা বেগুনি রংয়ের শাড়ী, হাতে কালো ফিতের ঘড়ি, চুলগুলো অর্ধেক খোলা পেছনে ক্লিপ দিয়ে আটকানো, চোখে কাজল, ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক। এতেই মায়াবী লাগছে পাপড়িকে।
নীল অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে পাপড়ির দিকে। হঠাৎ পাপড়ির তুরি বাজানোর শব্দে হুস ফিরে তার।
-কি হলো কি দেখছিস?
-দেখছি শাকচুন্নিকে সাজলে কেমন পেত্নির মতো দেখা যায়। হা হা।
-দেখছো মা, এই রাগছাগলের কথা।  সবসময় আমার সাথে এমন  করে।
পুষ্প বলে ওঠে
– উফ! আবার শুরু। এই দুটোকে নিয়ে আর পারা গেলো না। এই পাপড়ি শোন আমি তোর সাথে যেতে পারবো না অফিসে। আমার একটু তাড়া আছে। নীল যাবে তোর সাথে।
– কিহ! এই রামছাগলের সাথে আমি যাবো না। আমি একাই যেতে পারবো।
পুষ্প রাগী চোখে তাকিয়ে ধমক দিয়ে বললো
– তুই নীলের সাথেই যাবি। বুজছিস।
মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো পাপড়ি। দূরে দাঁড়িয়ে নীল হাসছে তা দেখে।
পুষ্প চলে গেলো। পাপড়ি নাস্তা করে নীলের সামনে গিয়ে বললো
-চল।
নীল হাসি দিয়ে বললো
-চলেন শাকচুন্নি।

রাস্তায় যেতে যেতে হঠাৎ নীল বলে ওঠে
– এতো সেজেগুজে অফিসে যাওয়া লাগে?
কথাটা শুনে পাপড়ি অবাক নীলের দিকে তাকায় আর বলে
– এতো সাজলাম কই? একটু কাজল আর লিপস্টিক তো দিলাম।
নীল পাপড়ির দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে মনে মনে ভাবতে লাগলো
– যদিও চুলগুলো খুললে আর একটু ভালো লাগতো তোকে। তবুও এতেই তো আমাকে পাগল করে ফেলেছিস।হৃদয়ের মাঝে সব কিছু ভাঙচুর চলছে। পলক ফেরাতে পারছি না তোর থেকে। তুই কি এসব কিছুই বুজিস না?

পাপড়ির কথায় বাস্তবে ফিরে আসে নীল
– কিরে কোথায় হারিয়ে গেলি?
– কিছু না, ভাবছিলাম তোর এই পেত্নি সাঁজ দেখে অফিসের সবাই অজ্ঞান না হয়ে গেলেই হয়।
– কিহ! তবে রে…
বলেই চড় দেওয়া শুরু করলো নীলের পিঠে।
– কি করছিস টা কি? রাস্তায় আছি আমরা।
নীলের কথা শুনে পাপড়ি থেমে বললো
– তুই যদি আমার কাকুর ছেলে না হতি না তো দেখতি কি করতাম তোর সাথে।
– এ্যাহ! কচু করতি। কিছুই করতে পারতি না। হা হা। নে এবার গাড়িতে ওঠ।

“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
কিছুক্ষণ পর অফিসে পৌছালো পাপড়ি। নীল তাকে অফিসে পৌঁছে দিয়ে নিজের অফিসে চলে যায়। ম্যানেজারের কাছ থেকে জানতে পারলো এখানের বসের সাথে কথা বলার পরই সে কাজ শুরু করতে পারবে। তাই বসে বসে অপেক্ষা করছে বস আসার।

একটু পরই একটা কালো গাড়ি এসে থামে অফিসের সামনে। একটা সাদা শার্ট আর ওপরে কালো কোর্ট, কালো সার্নগ্লাস পরা লোকটিকে দেখে পাপড়ি আইডিয়া করে এটাই হয়তো এখানে বস। তার দিকে এগিয়ে আসছে। লোকটি তার সামনে দিয়ে যাওয়ার সময়ই হঠাৎ থেমে বললো
– পুষ্প?
পাপড়ি কিছুটা চমকে ওঠে লোকটির দিকে তাকায়। লোকটি আবার বলে
– আর ইউ পুষ্প, রাইট?
– হুম।
– হ্যালো। আমি এ কোম্পানির বস্ রাইয়ান চৌধুরী।
-হ্যালো।
– কোম্পানীতে নতুন জয়েন করেছো?
– জ্বি।
-ওকে কিছুক্ষণ পর আমার কেবিনে আসো।
-ওকে স্যার।

কিছুক্ষণ পর পাপড়ি কেবিনে গেলো
– মে আই কামিন, স্যার?
– ওহ, পুষ্প। সিউর, কাম ইন। সিট ডাউন।
পাপড়ি গিয়ে চেয়ারে বসে।
-তো মিস্ পুষ্প, আশা করি ম্যানেজারের কাছ থেকে আপনি সব কাজ জেনে নিয়েছেন?
আবার কিছুটা চমকে ওঠে পাপড়ি বলে
– জ্বি স্যার।
– আপনার মার্কস আর কোয়ালিফিকেশন ভালো বিধায় এই চাকরিতে আমরা আপনাকে এলাও করেছি। আশা করি আপনি মনোযোগ দিয়ে কাজ গুলো করবেন।
– ইয়েস স্যার।
– ওকে এবার আসুন।
যেতে যেতে পাপড়ি বিড়বিড় করে নিজেকে বলছে
– পাপড়ি এখন থেকে তোকে পুষ্প নামের অভ্যাস করতেই হবে। বার বার এভাবে চমকালে মানুষ সন্দেহ করতে পারে। আর এখন থেকে সব কাজ ঠিকমতো করে অফিসে নিজেকে প্রুফ করতে হবে বুজলি। তো লেগে পর কাজে।
পেছন থেকে রাইয়ান বলে ওঠে
– মিস্ পুষ্প,  আমায় কিছু বললেন?
– নো স্যার, আসি আমি।
বলেই বিদায় নিলো পাপড়ি।

-এ মেয়েকে দেখলে অদ্ভুত এক ভালো লাগা কাজ করে আমার ভিতর। ঐদিনও যখন পুষ্পকে ইন্টারভিউ দিতে দেখেছিলাম প্রথম দেখাতেই মনে ভিতর কেমন আসপাস শুরু করেছিল। আজও তাই হচ্ছে। এমন কেনো হচ্ছে?
নিজেকে নিজেই জিজ্ঞেসা করতে লাগলো রাইয়ান।

চলবে…..

ত্রিভুজ প্রেম, পর্ব -৩

0

ত্রিভুজ প্রেম
জান্নাতুল ফেরদৌস সূচনা
পর্বঃ৩

সকালে ঘুম ওঠেই ফোন চেক করার পরই চিৎকার দিয়ে ওঠে পাপড়ি। তার চিৎকার শুনে পাশ থেকে পুষ্প ঘুম থেকে লাফ দিয়ে ওঠে।  হঠাৎ পাপড়ির চিৎকার শুনে বাহিরে থেকে তার মা ও দাদীও দৌড়ে আসে। সবাই অবাক হয়ে পাপড়ির দিকে তাকিয়ে আছে। কেউ কিছু বুঝতে পারছে না। এদিকে পাপড়ি একা একাই হাসছে। হঠাৎ পুষ্প বলে ওঠে
– কি হলো টা কি তোর? সাঁজ-সকালে এমন চিৎকার দিয়ে এখন পেত্নির মতো হাসছিস? ভুতে-টুতে ধরলো নাকি?

পাপড়ি কিছু না বলেই দৌড়ে দরজায় দাড়িয়ে থাকা তার মাকে জড়িয়ে ধরে বললো
– মা আমি চাকরি পেয়ে গেছি। দেখো চাকরির কর্নফার্মেশন মেসেজ এসেছে।
তার কথা শোনে সবার মুখে হাসি ফুটলো।
পুষ্প বললো
– যাক, চাকরিটা পেলি শেষমেষ। আমি ভাবছিলাম তুই চাকরি খুজতে খুজতে বুড়ি হয়ে যাবি।
পাপড়ি ভ্যাংচি কেটে বললো
– এ্যাহ, বুড়ি হতে আমার বয়েই গেছে।
দাদী বলে ওঠে
– এতো খুশির সংবাদ। এই সংবাদে মিষ্টি মুখ না করলে হয়। বৌমা একটু পায়েস যদি হয়ে যেত আজ?
– হ্যা কেনো নয় মা। আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছে না যে তুই চাকরিটা পেয়ে গেছিস।
– হ্যা মা, সত্যিই পেয়ে গেছি। কালকেই জয়েন করতে বলছে। আর দাদী এখন হয়তো তোমার বড় নাতীনির বিয়ে করতে কোনো সমস্যা নেই বলো?
পুষ্প কথাটা শুনেই রেগে গেলো।  রাগান্বিত স্বরে বললো
– কিহ! এই তোর চাকরি পাওয়ার মধ্যে আমার বিয়ের দেওয়ার কি সম্পর্ক রে?
পাপড়ি ভেংচি কেটে বললো
– এতোদিন বলছিস যে আমি মা-দাদীর খেয়াল রাখতে পারবো না। এখন তো আমি চাকরি পেয়ে গেছি এখন কি বলবি?
– তোর এতো বিয়ে শখ যখন তুই ই করে নে না। চাকরি তো পেয়ে গেলি এখন বিয়েটাও করে নে।
– কেনো তুই আমার থেকে ৫ মিনিটের বড় ভুলে গেছিস নাকি।
– তো কোথায় লিখা আছে সবসময় বড়দেরই আগে বিয়ে করতে হবে?
এবার আফিয়া বেগম বলে ওঠলো
– আহ! এবার থাম না তোরা, অনেক হয়েছে। পুষ্প তুই গিয়ে বাজার থেকে মিষ্টি নিয়ে আয় তো। সত্যিই মেয়েগুলোকে নিয়ে পারা যায় না।
এই বলে মা-দাদী বিদায় নিলো।
পুষ্পও ভেংচি কেটে বাজারের উদ্দেশ্যে রওনা হলো।

দরজায় ঠকঠক আওয়াজ শুনে দরজা খুললো নীল। বাহিরে পুষ্প আর পাপড়িকে মিষ্টি আর পায়েস হাতে দেখতে পেয়ে অবাক হয়ে বললো
– কি ব্যাপার এতো সকালে তোরা মিষ্টি-পায়েস নিয়ে আমার বাসায় এসেছিস। আমার জন্য বিয়ের সমন্ধ এনেছিস বুজি?
পাপড়ি মুখটা একটু ভেংচি কেটে বললো
– তোর মতো রামছাগলকে কে বিয়ে করবে?
– কেনো তুই শাকচুন্নি করবি।
– এ্যাহ, তোর মতো রামছাগলকে বিয়ে করতে আমার বয়েই গেছে।

-অাহ, তোরা দুজন চুপ করবি? যেই কাজের জন্য এসেছি সেটা আগে শেষ করি।
পুষ্প এমন কথায় নীল অবাক হয়ে বললো
– কি কাজ?
– একটা খুশির সংবাদ আছে। আগে তুই সরে দাড়া। কাকিমা কোথায়, কাকিমা?
বলতে বলতে ঘরের ভিতরে চলে গেলো পুষ্প।
পুষ্প ডাক শুনে ঘরের ভিতর থেকে ছুটে এলো নীলের মা।
– কিরে পুষ্প যে, কতোদিন পরে এলি।
– এই যে ধরো, মিষ্টি আর পায়েস।
– ওমা, এগুলো কেনো রে।
– পাপড়ি চাকরি পেয়ে গেছে গো, সেই খুশিতে।
– (মুখে হাসি নিয়ে) ওমা তাই নাকি। তো পাপড়ি কই?

পাপড়ি ঘরে ঢুকে নীলে মায়ে কাছে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই পেছন থেকে নীল পাপড়ির বেনুনিটা টান দিয়ে বললো,
-এই শাকচুন্নি শোন?
-ওমাহ!!
পাপড়ি রাগান্বিত স্বরে বললো
– এই রামছাগল, বাদর, ছুছোন্দর। তুই আবার আমাকে শাকচুন্নি বলছিস।
-হে, তোর মতো শেওড়া গাছের পেত্নিকে আর কি বলবো?
সামনে নীলের মাকে আসতে দেখে পাপড়ি দৌড়ে গিয়ে বলে
– দেখেছো কাকিমা, তোমার ছেলে আমাকে আবার শাকচুন্নি বলেছে আর বেনুনি ধরেও টান দিয়েছে।
– আর আমাকে কি কি বলেছিস বলিস না কেনো মাকে?
পুষ্প  বলে ওঠে
-এদের ঝগড়া আর শেষ হবে না।
বলেই হেসে দিলো পুষ্প আর নীলের মা।
-বলি চাকরি তো পেয়ে গেলি এখন বড় হবি কখন তুই?
পুষ্পর কথা শুনে নীল বলে ওঠে
-ও! চাকরি পেয়ে গেছিস। তোর মতো পেত্নীকে চাকরিটা দিলো কে শুনি?
-দেখেছো কাকিমা আবার পেত্নি বলেছে।
এবার নীলের মা বলে ওঠলো
-আহ নীল! আর খেপাস নাহ! কতোদিন বাদে এসেছে মেয়েগুলো। এক পাড়াতেই তো থাকি তো মাঝে মাঝে আসতেও তো পারিস তোরা। তোদের দেখে তোদের কাকুও খুশি হয়।
– কি করবো কাকিমা। সময়ই তো পাই না। ক্যাফেটা সামলাতে সামলাতে দিন চলে যায়।
পুষ্পর কথা শুনে নীল বললো
– পুষ্পরটা তো বুজলাম। তা পাপড়ি কেনো আসিস না?
পাপড়ি ভেংচি কেটে বললো
– তোর মতো রামছাগলের জন্যই আসি না। আসলেই তো আমাকে খোঁচানো শুরু করে দিস।
-এ্যাহ! আমার আর অফিস নেই। সারাদিন তাকে খোঁচানোর জন্য বাসায় বসে থাকবো।

-উহ! তোদের ঝগড়াটা আর থামানো গেলো না। আচ্ছা কাকিমা আমরা যাই তাহলে।
পুষ্পর এমন কথাই নীল মা বললো
– সেকি! মাত্রই তো আসলি। আর কিছুক্ষণ থাক?
-নাহ, কাকিমা। ক্যাফেতে যেতে হবে।
পাপড়িও বললো
– হে, আমারও কাজ আছে বাসায়। অন্য কোনোদিন আসবো আমরা।
-আচ্ছা যা তাহলে। সাবধানে যাস দুজন।
যাওয়ার সময় পাপড়ি মুখ ভেংচি কেটে বিদায় নিলো।

চলবে…..

ত্রিভুজ প্রেম, পর্ব -২

0

ত্রিভুজ প্রেম
জান্নাতুল ফেরদৌস সূচনা
পর্বঃ২

পাপড়ি আর পুষ্প দুই যমজ বোন। চেহেরা  একি হলেও পার্সোনালিটিতে কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে। পুষ্প নিজেকে ছেলেদের মতো গড়ে তুলছে। তাদের বাবা মারা যাওয়ার পর তাদের মা তাদেরকে কতো কষ্টে লালন পালন করেছে সেটা তারা খুব ছোট থেকেই দেখে এসেছে। তাদের পরিবারে ছেলের অভাবটা যেন কখনো না বুজতে হয় তাই পুষ্প নিজেকে ছেলেদের মতো গড়ে তোলেছে। পুষ্পোর পোশাক-আশাকও ছেলেদের মতোই। দূর থেকে কেউ তাকে দেখলে কেউ মেয়ে ভাবতেই পারবে না।

অপর দিকে পাপড়ি পুষ্প থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। পাপড়ি রূপে গুনে সম্পুর্ন লাবণ্যময়ী নারী। তার শখ, তার ইচ্ছা সবকিছুই পুষ্পোর থেকে আলাদা।
পুষ্প একটা ছোটখাটো ক্যাফে চালিয়ে নিজেদের সংসার চালাচ্ছে। আর অন্যদিকে পাপড়ি চাকরি পাওয়ার আশায় অনেক জায়গায় চাকরির ইন্টারভিউ দিয়ে চলেছে। আজও ইন্টারভিউ দিয়ে বাসায় আসার সময়ই এ পরিস্থিতির স্বীকার হয় সে।

দরজায় ঠকঠক শব্দ শুনে আফিয়া বেগম দৌড়ে দরজা খোলে পুষ্প পাপড়ি দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। কিছুটা রাগী সুরে পাপড়ির দিকে তাকিয়ে বললো
– এতো দেরি কেন বাসায় ফিরতে? জানিস না সন্ধ্যার আগেই বাসায় ফিরতে হবে? তোর জন্য টেনশনে আমি মরে যাচ্ছি।
মায়ের এমন কথা শুনে পাপড়ি আফিয়া বেগমকে জড়িয়ে ধরলো। আর অজান্তেই পাপড়ির চোখে পানি চলে আসলো। হঠাৎ করে পাপড়ির এমন কান্ডতে অফিয়া বেগম কিছুটা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো
– কিরে, কি হয়েছে? এমনভাবে জড়িয়ে ধরলি যে?
পুষ্প বেপারটা বুজতে পেরে বলে ওঠলো
– আরে মা, ওসব কিছু না। তোমার রাগ ভাঙ্গানোর জন্য এমন করেছে। আচ্ছা করে বোকা দাও যেন আর লেট না হয়।
– হয়েছে এবার,  ঘরে গিয়ে ফ্রেশ হও। আর পুষ্প তোকে তোর দাদি ডাকছে। দেখা করে আয়।
– ওকে মা।

পুষ্প দাদীর ঘরেই যেয়ে দেখলো দাদী কিছু ছবি নিয়ে খুব মনোযোগ দিয়ে দেখছে। কিন্তু কার ছবি দেখছে বুজতে পারছে না।
– আসবো দাদী?
– আয় এদিকে।
– কার ছবি দেখছো? দাদুর নাকি?
– তোর দাদু তো কোনদিনই ছেড়ে চলে গেছে। ওই বুড়া বেটার ছবি দেখে কি করবো আমি?
– তো কার ছবি দেখছিলে?
– এই নে, ধর।
কতগুলো ছেলের ছবি দেখিয়ে বলল
– দেখ তো দি-ভাই কোন ছেলেটাকে পছন্দ হয়?
পুষ্প কিছুটা অবাক হয়ে দাদী দিকে তাকিয়ে বলল
– ছেলের ছবি দেখে আমি কি করবো?
– দেখ দি-ভাই, বয়স তো তোর অনেক হলো, বিয়ে-সাদি তো দিতে হবে তোকে তাই না?
– কি বলছো এসব, আমি তোমাদের আগেই না করে দিছি যে আমি কোনো বিয়ে টিয়ে করছি না। তবে কেনো তুমি বুঝো না দাদী?
– কেনো বিয়ে করতে তোমার সমস্যা কই শুনি?
-আমার বিয়ে গেলে তোমাদের দেখবে কে?  তোমাকে এই বৃদ্ধ বয়সে আর আমার অসহায় মাকে কে দেখবে বলো?
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন

পেছন থেকে পাপড়ি বলে ওঠে
– হে, আমি তো মরেই গেছি তাই না।
পুষ্প কিছুটা অবাক হয়ে পেছন তাঁকায়
পুষ্পের দিকে তাকিয়ে পাপড়ি আবার বলা শুরু করলো
– আমি মনে হয় মা,দাদীর দেখাশোনা করি না। তুই একাই করিস নাহ!
– নাহ! আমি কি তা বলেছি? আর তাছাড়া আমার ক্যাফের দেখাশোনা করবে কে?
-এসব নিয়ে তোকে চিন্তা করতে হবে না। আমি সবকিছুর দেখাশোনা করে নিবো তুই শুধু বিয়েতে মত দে।
– নাহ, বিয়ে আমি করছি না। তার চেয়ে বরং তুই বিয়েটা করে নে। এমনিতেও তুই চাকরির ইন্টারভিউ দিতে দিতে বুড়ি হয়ে যাচ্ছিস, তোর আর চাকরি হবে না। হা হা!
– দেখেছো দাদী, কি বলছে? একদিন একটা ভালো চাকরি পেয়ে তোকে আমি দেখিয়ে দিবো দেখিস।
– হে জানি তো কিভাবে, চাকরি ইন্টারভিউতে তোর আমার….
পাপড়ি ইশারা দেওয়ায় কথাটা আর শেষ করেনি পুষ্প।
এতোক্ষণ দাদী তাদের ঝগড়া শুনচ্ছিল। এখন তিনি বললো
– পাপড়ির সিরিয়াল ও আসবে আগে তোর বিয়েটা দিয়ে নেই। শত হলেও তুই ওর থেকে ৫মিনিটের বড়। সেটা তো ভুললে চলবে না?
পুষ্প একটু রাগী কন্ঠে বলে ওঠলো
– মাত্র ৫ মিনিট। এতে কি মহাভারত অশুদ্ধ করে ফেলেছি আমি। আমি কোন বিয়ে টিয়ে করছি না ব্যাস। আর এটাই আমার শেষ কথা।

হঠাৎ পেছন থেকে আফিয়া বেগম বলে ওঠলো
– হয়েছে হয়েছে এবার থাম। ভাত বেড়ে রেখে এসেছি খেতে আসেন সবাই।

চলবে…

ত্রিভুজ প্রেম পর্ব -১

0

ত্রিভুজ প্রেম
জান্নাতুল ফেরদৌস সূচনা
পর্বঃ১

রাস্তা দিয়ে ভয়ে ভয়ে পা এগুছে পাপড়ি। বাসায় ফিরতে আজ তার সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে।যে রাস্তা দিয়ে বাসায় যাচ্ছে সে রাস্তাটা খুব একটা ভালো বলাও চলে না। দিনের বেলায় যখন বাসায় ফিরে তখনি তাকে এই রাস্তায় ছেলেরা ইভটিজং করে আর আজ তো সন্ধ্যা হয়ে গেছে। মনে মনে আল্লাহকে ডাকতে ডাকতে পা এগুচ্ছে পাপড়ি। এখনো কিছুটা দূরে আছে তার বাড়ি।

একটা চায়ের দোকানের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় হঠাৎ একটা সিটির শব্দ পাপড়ির কানে বেজে ওঠে। পাপড়ি শব্দটা শুনেও না শুনার ভান করে এগুতে লাগলো। আবার পেছন থেকে কেউ একজন বলে ওঠলো
– কোথায় যাচ্ছো সুন্দরী?
কথাটা শুনে পাপড়ি কেঁপে ওঠে। মনে মনে আল্লাহকে ডাকছে। মনে মনে ভাবছে এখন আর হাটা যাবে না। একটা দৌড় তাকে দিতেই হবে। দৌড় দিতেই যাবে সে এমন সময় একটা ছেলে তাকে ঘিরে ফেলে সামনে থেকে।

চেহেরাটা অপরিচিত নয় পাপড়ির। এই ছেলেটাই রোজ তাকে এ পথে যাওয়ার সময় ইভটিজিং করে। পথে আর কেনো লোকজন দেখতে পারছে না সে। জায়গাটা নিরব হয়ে আছে একদম। পাপড়ির মুখে ভয়ের ছাপ। সে ভয়ে ভয়ে তাদের জিজ্ঞেস করলো
– কি হলো, এভাবে আমার পথ আটকে দাড়িয়ে আছেন কেনো?
একজন বলে ওঠলো,
– সুন্দরী, কয়েকদিন ধরে তোমাকে দেখছি। মনে ধরেছে তোমায়। এভাবে একা একা চলাফেরা না করে আমাদের সঙ্গী করে নিয়ে নিলেও তে পারো কি বলো?

কথাটা শুনে পাপড়ি ধমকে যায়। মনে ভিতর ভয়টা আরো ঝাপটে ধরে। পাপড়ি খুব করে চাইছে কেউ একজন তাকে সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসুক। কিন্তু কাউকেই সে দেখতে পাচ্ছে না। তার চোখে পানি চলে এসেছে। সে ভয়ে ভয়ে বললো
– দেখুন, আমাকে যেতে দিন। আমি আপনাকে চিনি না। কেনো পথ আটকে আছেন। প্লিজ, আমি আপনার ছোট বোনের মতো।
তার কথা শুনে ছেলেটা হেসে ওঠলো।
– এতো সহজেই কি ছাড়া যায় পাখি। এতো সুন্দর সুযোগ কি হাত ছাড়া যায়।
বলেই পাপড়ির হাত টা চেপে ধরলো। হাত ধরায় পাপড়ি চিৎকার করা শুরু করলো।
-প্লিজ, ছেড়ে দিন আমায়। প্লিজ, আপনার পায়ে পড়ি।
ছেলেটা পাপড়িকে ঘিরে দাড়ালো।ছেলেটা যেই না পাপড়ির শরীরে হাতে দিতে যাবে অমনি পেছন থেকে কেউ একজন থাক্কা মারলো ছেলেটিকে। ছেলেটা ঘুরে দাড়ালেই বেদম পিটানো শুরু। চড়, লাথি, ঘুষি সব খাওয়ার পর ছেলেটা কোনো এক রকমে বেঁচে পালালো।

“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
পাপড়ি এতোক্ষণ তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছিলো এসব দৃশ্য। পরিচিত মুখ ও তার খুব আপন একজন তাকে এই পরিস্থিতি থেকে বাঁচিয়েছে যা সে অবাক হয়ে দেখছে। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর পরিচিত মানুষটি বলে ওঠে
– কিরে, এখনো হা করে কি দেখছিছ?
পাপড়ি কাপা কাপা কন্ঠে বললো
– তুই কি করে করলি এসব পুষ্প আপু?
একটু মুচকি হেসে পুষ্প বললো
– তোর মতো ভিতু নাকি আমি যে এই সামান্য পুছকে ছেলেদের ভয় পাবো। একটু সাহসী হও এবার আমার মতো। দেখলি না আমার ২টা চড় থাপ্পড় খেয়েই কিভাবে লেজ গুটিয়ে পালালো। তোর মতো ভিতু মেয়েদের জন্য আজ আমাদের সমাজের মেয়েদের এই অবস্থা। আমার থেকে ফাইটিং এর ট্রেনিং টা নিয়ে নিস। পরের বার কাজে আসবে।
বলেই হেসে দিলো পুষ্প।
– আপু তুই কোথায় থেকে এলি? আর তোর এমন চন্ডীরূপও আছে আজ না দেখলে জানতেই পারতাম না।
– তোর আসতে দেরি হওয়াতে তোকে খুজতে খুজতে এদিক দিয়ে আসছিলাম তখনি তোর চিৎকার শুনে ছুটে আসি এইখানে। এখন আর কথা বাড়াস না চল বাসায়, মা তোর জন্য চিন্তা করছে। আর শোন এসবের কথা বাসায় গিয়ে মাকে বলিস না। বুজসিস?
– ওকে। চল এখন।

চলবে…

অতন্দ্রিলার রোদ, শেষ পর্ব (রোদের অতন্দ্রিলা)

1

অতন্দ্রিলার রোদ
শেষ পর্ব – (রোদের অতন্দ্রিলা)
লেখা : শঙ্খিনী

দেশের মানুষ, দেশের রাস্তাঘাট, দেশের যানজট সবকিছুই অসাধারন লাগছে রোদের কাছে। রিকশায় ঘুরে বেড়ানোর মধ্যেও যেন খুঁজে পাচ্ছে আপার আনন্দ।
রিকশায় রোদের পাশে বসে থাকা অতন্দ্রিলাও আনন্দ পাচ্ছে। তবে তার আনন্দের কারনটা একটু হয়তো ভিন্ন।

     রোদ অন্যরকম গলায় বলল, “একটা ভাবের কথা শুনবে?”
      অতন্দ্রিলা ক্ষীণ গলায় বলল, “নাহ্!”
       “না কেন?”
       “আমি ভাবের কথা পছন্দ করি না।”
       “আমারটা শুনে দেখো, পছন্দ হতেও পারে।”
       অতন্দ্রিলা অসহায় গলায় বলল, “বলো।”
       “সময় এবং পরিস্থিতি মানুষকে ভালোবাসতে বাধ্য করে।”
        “তুমি কাকে ভালোবাসতে বাধ্য হয়েছো? আমাকে?”
         “এমন কেন মনে হলো তোমার? আমি কি অন্য কারো প্রেমে পরতে পারি না?”
         “না। তোমার ভাবভঙ্গি দেখে তো মনে হচ্ছে না।”
  
রোদ চুপ করে বসে রইল।

          অতন্দ্রিলা বলল, “ভালো কথা! তোমাকে একটা জিনিস দেওয়ার আছে।”
           “কি?”
          
অতন্দ্রিলা হ্যান্ডব্যাগ খুলে একটা খাম বের করে রোদের হাতে ধরিয়ে দিল।
        
       রোদ কৌতুহলী হয়ে বলল, “কী এটা?”
        “তোমার ফ্লাইটের টিকিট। আগামী মাসে তুমি লন্ডনে ফিরে যাচ্ছ না? সেটার টিকিট এসেছে আজ সকালে।”
         “তো এটা হ্যান্ডব্যাগে নিয়ে ঘুরছো কেন?”
          “এটা হাতে পাওয়ার পর, এই পরিস্থিতিতে তুমি কি করবে সেটা দেখার জন্যে।”
          
রোদ খাম থেকে টিকিটটা বের করে কুটিকুটি করে ছিড়ে ফেলল। অতন্দ্রিলা চমকে গেল, বেশ চমকে গেল। কিন্তু চমকে উঠে এক ন্যানো সেকেন্ডের মধ্যে নিজেকে সামলে নেওয়া অতন্দ্রিলার পুরনো অভ্যেস। এবারো তাই করলো।

        রোদ গম্ভীর গলায় বলল, “দেখলে কি করলাম?”
         অতন্দ্রিলা অস্পষ্ট গলায় বলল, “হুঁ।”
          “অবাক হলে না?”
          “না।”
          “কেন?”
          “কারন আমি জানতাম তুমি এমন কিছুই করবে।”
          “জানতে?”
          “হুঁ! আমার ধারনা প্রকৃতির সঙ্গে আমার মনের একটা নিবিড় যোগাযোগ আছে। তাই প্রকৃতি কি করবে আমি আগে থেকেই টের পাই। জানো, আমাদের বিয়ের সময় আমার পরিবারের অনেকেই তোমাকে বিয়ে করতে নিষেধ করেছিল। কিন্তু আমি জানতাম প্রকৃতি ঠিক করে রেখেছে, আমরা বাকি জীবন একসঙ্গে থাকবো।”
         “তাহলে নিশ্চয়ই এটাও জানতে, আমার এতো ফুটফুটে একটা মেয়েকে রেখে আমি কখনই লন্ডনে ফিরে যাবো না!”
           “হুঁ।”
           “তোমার যুক্তি কিন্তু এবার হেরে গেলো। তুমি চেয়েছিলে আমি যাতে আমার স্বপ্ন পূরণে মনোযোগী হই। কিন্তু তোমার মাথায় এ বিষয়টা ছিলো না যে রাত্রির কথা একদিন না একদিন আমি জানতে পারবোই। জানতে পেরে আমি কখনোই ওকে ফেলে রেখে যাবো না।”
           “ভুল করেছি, আমি তো স্বীকার করেছি যে ভুল করেছি।”
           “ভালো, ভুল স্বীকার করে নেওয়াটা ভালো।”
            অতন্দ্রিলা বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, “মনে আছে আমরা যেবার কক্সবাজারে বেড়াতে গিয়েছিলাম, আমি তোমাকে একটা প্রশ্ন করেছিলাম। বন্ধু হতে পারি কিনা। আজ সে ধরনের আরেকটা প্রশ্ন করতে চাচ্ছি।”
            “করো?”
            অতন্দ্রিলা স্বাভাবিক গলায় বলল,  “এখনকার সময় এবং পরিস্থিতি তোমাকে ভালোবাসতে বাধ্য করেছে। কিন্তু আমাদের বিয়ের আগেকার পরিস্থিতি আমাকে ভালোবাসতে বাধ্য করেছিল। আমি কি তোমার হতে পারি, রোদ?”

রোদ চুপ করে বসে আছে। চিন্তা করছে এই প্রশ্নের জবাবে কি বলা যায়। এই প্রশ্নের সুন্দর একটা উত্তর দেওয়া দরকার।

পরিশিষ্ট –

রাত্রির বয়স এখন সাড়ে চার। এবছর তাকে ভর্তি করানো হয়েছে ইরাবতীর ইশকুলে।

আজ সকালে ক্লাসে আসার পর থেকেই তার মনটা খারাপ, বেশ খারাপ। সবথেকে প্রিয় বন্ধুদেরও কেন যেন আজ বিরক্ত লাগছে।

টিফিন ব্রেকে ছোট ছোট পা ফেলে রাত্রি গেল প্রিন্সিপালের অফিসে, মায়ের কাছে।
     
       অস্পষ্ট গলায় বলল, “বাবা কোথায় মা?”
       অতন্দ্রিলা নিচু গলায় বলল, “যেখানে থাকার কথা সেখানে।”
        “কোথায় থাকার কথা?”
         অতন্দ্রিলা ছোট্ট দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “অফিসে। কেন? তোর বাবাকে দিয়ে এখন কী কাজ?”
         “বাবা বলেছিল আজকে স্কুলের পর শপিংয়ে নিয়ে যাবে।”
        “তো যাবে। এখন কী?”
        “বাবা তো আজকে, আমি ঘুম থেকে ওঠার আগেই চলে গেল। তুমি বাবাকে ফোন দাও, আমি কথা বলি!”
         “রাত্রি! একদম ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করবি না তো। তুই ক্লাসে যা আমি দেখছি।”

রাত্রির বয়সে ছোট হলেও খুব ভালো করে জানে, তার মায়ের সঙ্গে তর্ক করে কোনো লাভ হবে না। তাই অসহায় মুখ করে ক্লাসে চলে গেল।

রাত্রি যাওয়ার পরপরই অতন্দ্রিলা টেলিফোন করল রোদকে।
           ক্ষীণ গলায় বলল, “এই তোমার মেয়েকে কী সব উল্টা পাল্টা প্রমিজ করো বলোতো? সে তো ক্লাস না করে শপিংয়ের টেনশন করছে!”
           রোদ শান্ত গলায় বলল, “উল্টা পাল্টা কেন হতে যাবে? অফিস থেকে এসে নিয়ে যাবো তো শপিংয়ে!”
            “তুমি সকাল সকাল চলে গেছো দেখো তোমার মেয়ে ভাবছে, তুমি তাকে নিয়ে যাবে না।”
           “আমার সকালে একটা কনফারেন্স ছিল তাই আগে আগে বেরিয়ে গেছিলাম। এখন তুমি একটু ওকে ম্যানেজ করবে?”
           “উহু, মোটেও না! তোমাদের বাবা মেয়ের ঝামেলার মধ্যে আমি আর নেই।”
           “তন্দ্রি,প্লিজ!”
           অতন্দ্রিলা বিরক্ত গলায় বলল, “আচ্ছা বলো। কি করতে হবে?”
           “স্কুল ছুটি হলে তুমি রাত্রিকে নিয়ে শপিং মলে চলে যেও। আমিও তিনটার মধ্যে সেখানে পৌঁছে যাবো!”
            “তিনটা। মনে থাকে যেন।”
            “অবশ্যই থাকবে ম্যাডাম!”
অতন্দ্রিলা মুচকি হেসে টেলিফোন রেখে দিল।

বেলা তিনটা আটচল্লিশ মিনিট। অতন্দ্রিলা মেয়েকে নিয়ে শপিং মলে পৌঁছেছে অনেক্ষণ হলো। রোদের কোনো নামগন্ধ নেই।
             
        আরও কিছুক্ষণ পর রোদ দৌড়ে এসে রাত্রিকে কোলে তুলে নিয়ে বলল, “স্যরি মা। অনেক দেরি হয়ে গেছে, আমি বুঝতেই পারিনি। আই অ্যাম সো স্যরি।”
       রাত্রি অস্পষ্ট গলায় বলল,“আমি তোমার স্যরি নিব না বাবা!”
        “কেন?”
        “যে প্রমিজ রাখতে পারে না, তার স্যরি নিতে হয় না।”

রাত্রির এ কথা শুনে অতন্দ্রিলা ও রোদ ফিক করে হেসে দিলো।
          রোদ বলল, “তোমার মেয়ে একদম তোমার মতো হয়েছে।”
          “আমি তো আগে থেকেই জানতাম যে ও আমার মতো হবে।”
          “কিভাবে জানতে? তোমার প্রকৃতি বলেছিল?”
           “অবশ্যই।”

শপিং করতে করতে রাত্রি বাবার কোলেই ঘুমিয়ে পড়েছে বলে, ওরা বাসায় চলে আসলো।
রাত্রিকে খাটে শুইয়ে দিয়ে অতন্দ্রিলা এসে বসে বাগানের দোলনায়।
কিছুক্ষণ পর রোদ এসে অতন্দ্রিলার পাশে বসে তার ডান হাতটা ধরল।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন

      অতন্দ্রিলা স্বাভাবিক গলায় বলল, “হাত ধরাধরি করতে যেও না, আশেপাশে কিন্তু তোমার মা আছে।”
       “থাকুক। উনার তো কিছু মনে করার কথা না। তুমিই তো বলে, মা আমাদের সবার থেকে অনেক বেশি আধুনিক!”
       “ওহ্ হ্যাঁ তাইতো! তাহলে ধরে থাকো।”

রোদ আরও শক্ত করে অতন্দ্রিলার হাতটা চেপে ধরল।
 
        বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে রোদ আগ্রহ নিয়ে বলল, “এই তন্দ্রি তোমার আছে, কিভাবে আমাদের বাসর রাতে তিনটা পর্যন্ত জেগে তুমি বই পড়েছিলে?”
        অতন্দ্রিলা ইতস্তত বোধ করে বলল, “ওসব মনে করিয়ে দিও না তো। তখন বাচ্চা ছিলাম, কোন পরিস্থিতিতে কি করতে হয় তা জানতাম না।”
        “এখন খুব জানো, না?”
        “এখন মোটামুটি জানি।”
        “আসো তোমাকে বিভ্রান্ত করি!”
        “আমাকে বিভ্রান্ত করে লাভ কি?”
        “মানুষকে বিভ্রান্ত করে আমি মজা পাই। এটা এক ধরনের খেলা বলতে পারো।”
        অতন্দ্রিলা অসহায় গলায় বলল,    “ঠিকাছে, করো বিভ্রান্ত।”
         “বলোতো, ২+২-২+২ কত হয়?”
        “এই বাচ্চাদের প্রশ্নটা আমাকে করছো কেন?”
        “একটু আগে কিন্তু তুমি নিজেই বললে, তুমি বাচ্চা।”
         “সেটা তো আগে ছিলাম!”
         “এখনো আছো! এখন তর্ক না করে প্রশ্ন তার উত্তর দাও।”
         অতন্দ্রিলা একটু ভেবে বলল, “চার?”
         “হয়নি, উত্তর হবে শূন্য।”
         “কিভাবে?”
         “স্কুলে বদমাস নিয়ম শিখেছিলে না? সেই নিয়মে রাশিটা (২+২)-(২+২) – এরকম। এভাবে করে দেখো।”
         “ওহ্ হ্যাঁ, তাইতো!”
         “এটা মানুষকে বিভ্রান্ত করার একটা ধরন। এখন যদি তুমি শূন্য বলতে তাহলে আমি বলতাম চার।”
          “জানো আমি আগে ভাবতাম, ভালোবাসা হলো পৃথিবীর সবচেয়ে বিভ্রান্তিমূলক অনুভূতি হলো ভালোবাসা।”
            “আর এখন কি ভাবো?”
             অতন্দ্রিলা রোদের কাঁধে মাথা রেখে বলল, “এখন মনে হয়, ভালোবাসা হলো পৃথিবীর সবচেয়ে সুখময় অনুভূতি।”
              রোদ মুখভর্তি হাসি নিয়ে বলল, “আমি জীবনে নিশ্চয়ই কোনো মহাপুন্য করেছিলাম। তাই প্রকৃতি তোমাকে উপহার হিসেবে পাঠিয়েছে।”
       
(সমাপ্ত)

অতন্দ্রিলার রোদ পর্ব – ১৩ ও ১৪

0

অতন্দ্রিলার রোদ
পর্ব – ১৩ ও ১৪

পর্ব : ১৩ – (গোপন সত্য)

চোখের পলকেই কেটে গেল দেড়টা বছর। দেড় বছর, সময়টা খুব অল্প না। আবার খুব যে দীর্ঘ তাও না।

এই দেড় বছরে রোদদের বাড়ির তেমন একটা পরিবর্তন হয়নি। ফিরোজার বৃক্ষপ্রেমের পরিবর্তন হয়নি, অতন্দ্রিলার ঠোঁটকাটা স্বভাবেরও পরিবর্তন হয়নি।
তবে একেবারেই যে পরিবর্তন হয়নি তা নয়।
তাদের জীবনে একটা বিষয়ে পরিবর্তন এসেছে, অনেক বড় পরিবর্তন।

রোদের জীবনেও এসেছে পরিবর্তন। ম্যাথমেটিক্সের টপলজি ব্রাঞ্চে লেকচারার হিসেবে সুখ্যাতি অর্জন করেছে সে। তার এই সুখ্যাতি নিয়ে বাংলাদেশের পত্র-পত্রিকায় বেশ লেখালেখিও হয়েছে।
অতন্দ্রিলাও, ‘বাংলাদেশকে গর্বিত করা ১০ প্রবাসী’ শিরোনামের এক প্রতিবেদনে রোদের কথা উল্লেখ করেছে।
রোদকে নিয়ে তার গর্বের সীমা নেই।

রোদের সঙ্গে অতন্দ্রিলার সুনিবিড় যোগাযোগ।
তবুও একটা ব্যাপারে যেন সূক্ষ্ম এক দূরত্ব।

ইরাবতীর ইশকুলের বিল্ডিং তোলার কাজ শুরু হয়েছে কয়েক মাস হলো। বিল্ডিং তোলার কাজ দেখার কিছু নেই। তবুও অতন্দ্রিলা সময়-সুযোগ পেলেই চলে যায় কাজটা নিজ চোখে দেখতে।
আজও এসেছে।

অতন্দ্রিলার টেলিফোন বেজে উঠল। হ্যান্ডব্যাগ থেকে টেলিফোন বের করে দেখে, রোদের টেলিফোন।
        অতন্দ্রিলা টেলিফোন তুলে বলল, “হুঁ, বলো।”
        রোদ উৎসাহিত গলায় বলল, “একটা খারাপ খবর আছে এবং একটা ভালো খবর আছে। কোনটা আগে শুনবে?”
         “আগে খারাপটা বলে দাও।”
         “তোমার বাবা এবং দুলাভাই এই সপ্তাহে তৃতীয়বারের মতো গান রেকর্ড করে পাঠিয়েছেন।”
          “সে কি! এবার কোন গান?”
          “আমরা করবো জয়।”
          “উনাদের গানগুলো শুনতে যথেষ্ট কুৎসিত হলেও তুমি অনেক প্রশংসা করো। তাই না?”
           “বুঝলে কিভাবে?”
           “তুমি যদি প্রশংসা না করতে, তাহলে তারা এত আগ্রহ এবং উৎসাহ নিয়ে গান গাইতেন না।”
           “তন্দ্রি, তোমার না আসলেই অনেক বুদ্ধি।”
            “জানি। এখন তোমার ভালো খবরটা বলো।”
            “অবশেষে ১৫-২০ দিনের জন্য ছুটি পেলাম, দেশে আসছি।”
             অতন্দ্রিলা উৎফুল্ল কণ্ঠে বলল, “সত্যি? কবে?”
             “এ মাসে, আঠারো তারিখে।”
             “তোমার মাকে বলেছো?”
             “এখনো বলিনি।”
             “প্লিজ বোলো না, আমি বলবো। উনাকে চমকে দিবো। উনাকে চমকে দেওয়া আমার অসম্ভব পছন্দের।

মানুষটা এত দিন পর দেশে আসবে, বাড়ির ভাত খাবে। অতন্দ্রিলার ইচ্ছা ছিল সাদামাটা আয়োজন করার।
বাড়িটা মোমবাতি দিয়ে সুন্দর করে সাজানো হবে। হালকা ধরনের রবীন্দ্রসঙ্গীত বাজতে পারে। সঙ্গে থাকবে রোদের পছন্দের সব খাবার।

কিন্তু অতন্দ্রিলার সেই ইচ্ছায় রীতিমতো পানি ঢেলে দেওয়া হলো।
রোদ আসবে জানতে পেরেই হামিদ সাহেব সপরিবারে চলে আসেন তাদের বাড়িতে। রোদ আসা পর্যন্ত এখানেই থাকবেন।
থাকবেন ভালো কথা, থাকতেই পারেন। কিন্তু রোদের আগমন উপলক্ষে উদ্ভট সব আয়োজনের পরিকল্পনা করছেন তিনি। ফিরোজাও তাতে সায় দিয়ে যাচ্ছেন।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন

      আজ দুপুরে হামিদ সাহেব হাসি মুখে ফিরোজকে বললেন, “আপা লিস্ট তো করেই ফেললাম! সব মিলিয়ে ৩৮ জন আসবে।”
       ফিরোজা কিছু বলতে যাবে তার আগেই অতন্দ্রিলা থমথমে গলায় বলল, “৩৮ জন? বাবা এটা কি বিয়ে বাড়ি নাকি জন্মদিনের উৎসব যে এত গুলো মানুষকে বলতে হবে?”
        “যেটা বুঝিস না, সেটা নিয়ে কথা বলবি না। সব বিষয়ে তোর জ্ঞান দেওয়াটা না, আমার অসহ্য লাগে। এই ৩৮ জন হলো রোদের সবথেকে কাছের আত্মীয়। এত গুলো দিন তারা ছেলেটাকে দেখেনি!”
         “বাবা আমার কথাটা কিন্তু একটু মাথায় রেখো প্লিজ! তুমি বুঝতে পারছো তো, আমাকে কি কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যেতে হবে।”
         “তুই কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাবি নিজের দোষে। তুই সব বিষয়ে বেশি বুঝিস, এটাই তোর দোষ।”
          ফিরোজা শান্ত গলায় বললেন, “আহ্ থাক না ভাই। আর মা অত, তোমার বাবা যা করতে চাইছে করতে দাও। রোদ তো উনারও ছেলে। ভাই আপনি বলুন তো আর কী কী করতে চান!”
            হামিদ সাহেব আনন্দিত গলায় বললেন, “আপা গরু জবাই দিতে হবে ২ টা আর ছাগল ৪ টা। এগুলো রান্না হবে বাড়িতে! বাইরে থেকে আসবে বিরিয়ানি এবং রোস্ট। বাড়ির সদর দরজার সামনে রঙিন কাপড় দিয়ে গেট করা হবে। গেটের ওপরে বড় বড় করে লেখা থাকবে ওয়েলকাম হোম।”
           অতন্দ্রিলা বিরক্ত গলায় বলল, “গেট করা হবে মানে কি বাবা? সে কী মন্ত্রী না মিনিস্টার?”
           “তুই আবার কথা বলছিস?”
           “ঠিকাছে, আমি কিছু বলবো না। তুমি বলে যাও।”
            “ব্যান্ডপার্টি ডাকা হবে। তাদের কাজ হবে বাদ্যবাজনা বাজানো।”
            অতন্দ্রিলা দাঁতে দাঁত চেপে বলল, “বাবা এক কাজ করো, ঘোড়ার ব্যাবস্থা করো।
এয়ারপোর্ট থেকে তাকে আনা হবে ঘোড়ার পিঠে চড়িয়ে।”
           
পরের দিন সকালে অতন্দ্রিলা ঘুম থেকে উঠে দেখে, হামিদ সাহেব সত্যি সত্যিই ঘোড়া নিয়ে হাজির। দুটো বিশাল সাইজের ঘোড়া দাড়িয়ে আছে বাগানে। তাদের সামনে দাড়িয়ে হামিদ সাহেব এবং জাভেদ।

         অতন্দ্রিলা হকচকিয়ে গিয়ে বলল, “এসব কি বাবা?”
           “দেখ তো কোন ঘোড়াটা পছন্দ হয়। কাল তোর আইডিয়াটা আমার দারুন পছন্দ হয়েছে।”
           “বাবা তোমরা কি পাগল হয়ে গেছো?”
           “পাগল হতে যাবো কেন? এই দুটোর মধ্যে যেকোনো একটাকে সুন্দর করে সাজিয়ে এয়ারপোর্টে নিয়ে যাবো।”
            “তুমি এটা করবে না।”
            “অবশ্যই করবো।”
            “বাবা এই পর্যন্ত আমার কোনো কথাই তো শুনলে না। অন্তত এই কথাটা শুনো। তুমি এই কান্ড করলে আমার মান সম্মানের কি হবে?”
           জাভেদ ব্যস্ত ভঙ্গিমায় বলল, “ঘোড়ার পিঠে চড়িয়ে আনলে কি তোমার মানহানি হবে? মানহানি হবে তোমার?”
            “আপনি দয়া করে চুপ করুন তো!”

অবশেষে অনেক জোরাজুরির পর হামিদ সাহেব ঘোড়ার পিঠে চড়িয়ে বরণ করার পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করলেন।

পুরো বাড়িটাকে মরিচ বাতি দিয়ে সাজানো হচ্ছে। অসাবধানতার কারনে এক এক করে সবাই মরিচ বাতি থেকে, ছোটখাটো ইলেকট্রিক শক খাচ্ছে।
মেহমানরা যাতে একসঙ্গে বসে খেতে পারে, সে জন্যে বড়সড় এক টেবিল অনানো হয়েছে। বর্তমানে সেই টেবিলে ভেলভেটের কাপড় লাগানো হচ্ছে।

মিথ্যা বলার জন্যে আগে থেকে কথা গুছিয়ে রাখতে হয়। কিন্তু সত্য বলতে কোনো পূর্বপরিকল্পনার প্রয়োজন হয় না।
অতন্দ্রিলা রোদকে একটা সত্য কথাই বলবে, তবুও সে নিজের অজান্তে কথা গোছাচ্ছে।

অতন্দ্রিলা হাঁটতে হাঁটতে চলে এলো ইরার ছবির সামনে।
       বিনয়ী গলায় বলল, “বুবু! কাল তো সে আসছে। আমাকে একটু দোয়া করো হ্যাঁ?।
আর, কোন শাড়িটা পরা যায় বলোতো? তোমার একটা শাড়ি পরলে কেমন হয়?”

অতন্দ্রিলার ঘরে এক আলমারিতে ইরার শাড়ি এবং অন্যান্য ব্যাবহৃত বস্তু যত্ন করে তুলে রাখা। আলমারিটা সবসময় খোলাই থাকে।
অতন্দ্রিলা প্রায়ই আলমারি খুলে ইরার শাড়িগুলো দেখে। এগুলোর মধ্যেই যেন খুঁজে পায় তার বুবুকে।
অনেক ঘাটাঘাটির পর একটা নীল রঙের শাড়ি পাওয়া গেল। অতন্দ্রিলা কাল এ শাড়ীটাই পরবে।

রোদ বাংলাদেশে ল্যান্ড করবে সকাল দশটায়। ইমিগ্রেশন শেষ হতে হতে বারোটা বেজেই যাবে, বাড়িতে পৌঁছাতে পৌঁছাতে একটা। ঢাকার যানজটের যে অবস্থা, দুটো-তিনটাও বাজতে পারে।

এর মধ্যে ঘটল এক মজার ঘটনা। বাড়ির ইলেক্ট্রিসিটি চলে গেছে, মেইন সুইচ নষ্ট। সন্ধ্যার আগে ঠিক হবে না। অতন্দ্রিলা পুরনো স্মৃতি মনে করে খিলখিল করে হেসে উঠলো। প্রকৃতি ঘটনার পুনরাবৃত্তি করতে পছন্দ করে। তাই হয়তো বিয়ের দিনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি করে, আবার মনে করিয়ে দিল তাকে।

এবার অবশ্য তেমন একটা অসুবিধা হয়নি। দিনের বেলা, সূর্যের আলোয় ঘর আলোকিত।

হামিদ সাহেব, জাভেদ এবং আরও কিছু মামা চাচা টাইপের লোকজন ফুল দিয়ে সাজানো মাইক্রোবাস নিয়ে গেছেন রোদকে আনতে।

বাড়িতে রান্নাবান্না হচ্ছে, হাসিঠাট্টা হচ্ছে, গানবাজনা হচ্ছে।

ছোট ছোট বাচ্চারা হইচই করছে অতন্দ্রিলার ঘরে। অতন্দ্রিলা বড়দের সামনে যতটা কঠিন, ছোটদের সামনে ততটাই কোমল। একদল বাচ্চাকাচ্চা মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে, আরেক দল বাচ্চাকাচ্চা অতন্দ্রিলার গাল ধরে টানাটানি করে। নয়-দশ মাস বয়সী একটা বাচ্চা অতন্দ্রিলার বিছানাতেই ঘুমিয়ে পরেছিল।
বাচ্চাটা ঘুম থেকে উঠেই শুধু বলছে, “ভাভা, ভাভা!” বাচ্চাটাকে তার বাবার কাছে রেখে আসা দরকার। কিন্তু ‘ভাভা’ বলতে সে বাবা বুঝিয়েছে নাকি অন্য কিছু তাও জানতে হবে।

নিচ থেকে অনেক কোলাহলের শব্দ আসছে। রোদ হয়তো এসে গেছে। অতন্দ্রিলা ঘর থেকে বের হলো। দোতলা থেকে দেখল, আসলেই রোদ এসে গেছে। কিন্তু তাকে দেখতে পাচ্ছে না অতন্দ্রিলা। বেচারাকে চারদিক থেকে ঘিরে রেখেছে সকলে।

এখন নিচে গেলে কোনো লাভ হবে না। তাই অতন্দ্রিলা বাচ্চাগুলোকে নিয়ে ছাদে চলে গেল। রোদ অতন্দ্রিলার খোঁজ করতে করতে নিশ্চয়ই ছাদে যাবে।
অতন্দ্রিলার ধারনা ছিল, ছাদে কেউ নেই। বাচ্চারা নির্দ্বিধায় ছোটাছুটি করতে পারবে। কিন্তু সে ধারনা সঠিক হলো না। ছাদে গিয়ে সবগুলো বাচ্চা অতন্দ্রিলাকে ঘেঁষে দাঁড়িয়ে রইল। ‘ভাভা’ করা বাচ্চাটা তো কেঁদেই উঠলো।

কিছুক্ষণ পর ছাদে দেখা মিলল রোদের। অতন্দ্রিলা প্রয়োজন ছাড়া তেমন একটা হাসতে পছন্দ করে না। কিন্তু রোদকে দেখে নিজের অজান্তেই তার ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠলো।

রোদ একটুও বদলায়নি। আগের মতোই চুলের কাট, আগের মতোই দাঁড়ির ধরন, আগের মতোই হাসি।

রোদ অতন্দ্রিলার কাছে এসে দাঁড়ালো।
          অতন্দ্রিলা আনন্দিত গলায় বলল, “আসলেন তাহলে!”
          রোদ বিস্মিত গলায় বলল, “আপনি ডাকো নাকি আমাকে?”
            “ওহ্ স্যরি! কেমন আছো?”
            “দেখে কি মনে হচ্ছে?”
            “মনে হচ্ছে ভালোই।”
            “তাহলে ভালোই আছি।”
            অতন্দ্রিলা বলল, “তোমাকে দেখতে কিন্তু অনেক ভালো লাগছে।”
             “তোমাকেও অন্যরকম ভালো লাগছে। ”
             “আমার বন্ধুগুলো কত বড় হয়ে গেছে দেখো।”
            “কোথায় বড় হয়েছে? আগের মতোই তো আছে। তুমিও কিন্তু বদলাওনি।”
            “বদলেছি, কিছু দিন যাক বুঝতে পারবে। এখনো এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন? আমার সঙ্গে কথা বলার অনেক সময় পাবে। এখন নিচে চলো, তোমার প্রিয়জনেরা অপেক্ষা করছে।”

দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়েছে। মেহমানরা এক এক করে বিদায় নিচ্ছেন আর অতন্দ্রিলার হৃদস্পন্দন একটু একটু করে বাড়ছে।

সবাই  চলে গেলে ফিরোজা ছেলেকে ডেকে নিজের ঘরে নিয়ে যান।
           ফিরোজা কাঁপা গলায় বললেন, “বাবা রোদ, তোর সঙ্গে কিছু কথা আছে।”
           “হুঁ, মা বলো!”
           “আগে তুই বোস।”
রোদ ফিরোজার পাশে বসল।
          “বসলাম। এখন বলো কি বলবে।”
          “দেখ বাবা, তুই একটু মাথা ঠান্ডা করে আমার কথাগুলো শোন।”
          “বললে তো শুনবো মা।”
          “বলছি। বাবা তুই যখন অতকে রেখে চলে গেলি, তখন শুধু ওকে রেখে যাসনি।”

ফিরোজা এই দেড় বছরে ঘটে যাওয়া সেই বিরাট পরিবর্তনের বর্ণনা দিলেন।

অতন্দ্রিলার গুছিয়ে রাখা কথাগুলো বারবার এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। ঠিক এই মুহূর্তে কথাগুলোর এলোমেলো হওয়ার কোনো অর্থ হয় না।
অতন্দ্রিলা বাগানের দোলনায় এসে বসল। কেন জানি খুব অস্থির লাগছে তার। ভুলে জর্দা দিয়ে পান খেলে যেমন লাগে তেমন লাগছে। অনেক বড় একটা ভুল হয়ে গেছে। এই ভুল শোধরানোর আর উপায় নেই।

অতন্দ্রিলার কোলে ‘ভাভা’ করতে থাকা সেই বাচ্চাটি হা করে ঘুমাচ্ছে। তার নাম রাত্রি, দেখতে অবিকল অতন্দ্রিলার মতো। অতন্দ্রিলার ধারনা রাত্রি তার ঠোঁটকাটা স্বভাবটি পাবে, অবশ্যই পাবে।

কিছুক্ষণ পর রোদ এসে দোলনায়, অতন্দ্রিলার পাশে বসল।
       বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে আহত গলায় বলল, “আমার মেয়ের কথা আমাকে না জানানোর কারন কি?”
      অতন্দ্রিলা অস্পষ্ট গলায় বলল, “আছে, অনেক কারন আছে।”
        “কি সেই কারণ? আমাকে কি তুমি কখনো আপন বলে মনে করোনি নাকি আমার মেয়ের ওপর কোনো অধিকার আমার নেই?”
        “কি বলছো এসব? তোমার অধিকার আছে, সবথেকে বেশি আছে।”
         “তাহলে এতদিন ওকে আমার কাছ থেকে গোপন করলে কেন?”
        “আমি যেদিন জানতে পারলাম আমি কনসিভ করেছি, সেদিনই তোমাকে বলতে যাচ্ছিলাম। কিন্তু সেদিন তুমি আমাকে বললে যে তুমি লন্ডনে চলে যাচ্ছ। তাই তোমাকে বলতে পারিনি।”
          “আমার লন্ডনে যাওয়ার সাথে তোমার বলতে না পারার সম্পর্ক কী?”
           “বাচ্চার টোপ দেখিয়ে তোমাকে আটকে রাখতে চাইনি। সবসময় তোমাকে সফল হতে দেখতে চেয়েছি, তোমার স্বপ্নগুলো পূরণ হতে দেখতে চেয়েছি। আমি বা আমরা, কেউই তোমার পিছুটান হতে চাইনি।” 
          “এই চিনেছিলে তুমি আমাকে? একবারের জন্যেও কি তোমার মনে হয়নি যে একদিন না একদিন সত্যিটা আমি জানতেই পারবো? ”
         অতন্দ্রিলা বলল, “বিশ্বাস করো, আজকে রাতে আমি শান্তিতে ঘুমাতে পারবো। অপরাধবোধের বোঝা আমার মাথার ওপর থেকে নেমে গেল। আমি জানি আমি ভুল করেছি, অনেক বড় ভুল। কিন্তু যা করেছি শুধুমাত্র তোমার জন্যে করেছি।”
          রোদ ছোট্ট দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “কেন?”
         
অতন্দ্রিলা কিছু একটা বলতে গিয়েও বলল না।
        বেশ কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল, “নাও তো এবার তোমার মেয়েকে। এতদিন আমাকে অনেক জ্বালিয়েছে। এখন তুমি জ্বলো!”

অতন্দ্রিলা রাত্রিকে রোদের কোলে তুলে দিল।

রোদ উজ্জ্বল চোখে তাকিয়ে আছে রাত্রির দিকে। রোদ বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ করল, তার চোখ দিয়ে পানি পরছে। আহারে! এত সুন্দর একটা মেয়ে আছে তার, কেউ তাকে আগে জানালো না কেন? জানালে স্বর্গসম সুখ ত্যাগ করে চলে আসতে দ্বিধা বোধ করতো না রোদ।

পর্ব : ১৪ – (রাত্রির জন্ম)

শারীরিক অবস্থার অবনতির থেকে মানসিক অবস্থা অবনতির ভয়াবহতা বেশি। আর এই দুই অবস্থার অবনতি যদি একসঙ্গে ঘটে তাহলে একটা মানুষ যে কতটা বিপর্যস্ত হয়ে যায়, তা অতন্দ্রিলা জানে।

রোদ যেদিন উৎফুল্ল গলায় তাকে বলল, “আমি লন্ডনের এক ইউনিভার্সিটিতে লেকচারার হিসেবে জয়েন করছি” – সেদিন সকালেই অতন্দ্রিলা জানতে পারে সে কনসিভ করেছে।
ব্যাপারটা আনন্দের, যথেষ্ট আনন্দের। কিন্তু রোদের ওই কথা শোনার পর আনন্দটা তার সঙ্গে ভাগাভাগির করার ইচ্ছে হয়নি।

গণিত বরাবরই রোদের অতি আগ্রহের বিষয়। কিন্তু মায়ের কথা রাখতে অনেকগুলো বছর সে গণিতকে ঘিরে নিজের ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ পায়নি, এবার পেয়েছে।
এত বড় সুযোগ রোদের হাতছাড়া হয়ে যাক, এমনটা কখনোই চায়নি অতন্দ্রিলা।
তাই নিজের প্রেগন্যান্সির খবরটা গোপন রাখে সে।

রোদ যেদিন চলে যাচ্ছিল, সেদিন অতন্দ্রিলার খুব ইচ্ছে করছিল তাকে ডেকে কথাটা বলতে। কিন্তু বলতে পারেনি।
রোদ চলে যাওয়ার পরও টেলিফোনে অনেকবার কথাটা বলার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু সাহস করে ওঠেনি।

অতন্দ্রিলা তার প্রেগন্যান্সির কথা সর্বপ্রথম জানায় শায়লাকে।
       শায়লা শুনে হতভম্ব গলায় বলেন, “এই তুই কি পাগল? এত খুশির একটা খবর তুই রোদকে জানলি না?”
       অতন্দ্রিলা অসহায় গলায় বলে, “মা তুমি তো বুঝতেই পারছো কেন বলিনি। ওনাকে কোনোভাবে আটকে রাখতে চাইনি।”
        “বলা মানেই কি আটকে রাখা? তুই আজই ওকে ফোন করে বলবি! এক্ষনি বলবি!”
         “আমি পারবো না মা।”
         “ঠিক আছে, তুই না জানালে আমরা জানাবো।”
          “মা প্লিজ। তোমরা তাকে কিচ্ছু বলবে না। তার স্বপ্ন তাকে পূরণ করতে দাও।”
          “আর তোর স্বপ্ন? তোর স্বপ্নের কী হবে?”
           “উনার স্বপ্নগুলোর মধ্যেই আমার স্বপ্ন লুকিয়ে আছে মা।”
            “তোর যা ইচ্ছা, তাই কর!”

রোদকে প্রেগন্যান্সির খবরটা জানানোর জন্যে  অতন্দ্রিলাকে বহুভাবে জোরাজুরি করা হয়। কিন্তু সে কিছুতেই জানাবে না।
ফিরোজা বেশ কয়েকবার গোপনে রোদকে টেলিফোন করে বিষয়টা জানাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু প্রত্যেকবারই অতন্দ্রিলার কাছে ধরা পরেন।

একদিন সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর থেকেই এক ধরনের অস্বস্তি হতে লাগল অতন্দ্রিলার।
সমস্ত শরীরে ঝিম ধরে আছে, চোখ কটকট করছে।
অতন্দ্রিলা ঘুম থেকে উঠে বিছানাতেই শুয়ে আছে।
       ফিরোজা তার ঘরে এসে ব্যস্ত ভঙ্গিমায় বলেন, “নাস্তা করতে আসলে না মা?”
        অতন্দ্রিলা ক্লান্ত গলায় বলে, “আমি উঠেতে পারবো না। আপনি আমাকে খাইয়ে দিন।”
         ফিরোজা অতন্দ্রিলার কপালে হাত রেখে বলেন, “কেন মা? শরীর খারাপ লাগছে নাকি?”
         “বুঝতে পারছি না।”

ফিরোজা লক্ষ করলেন অতন্দ্রিলা ঘামছে।  
       তিনি ভয়ে ভয়ে বলেন, “অত?”
       “হুঁ?”
       “রোদকে একটা ফোন দেই?”
       “না।”
       “ঠিকাছে। তুমি শুয়ে থাকো আমি নাস্তা আনছি।”

নাস্তা করার পর কিছুটা ভালো লাগে অতন্দ্রিলার।

বিকেলের দিকে ফিরোজা যান তার ভাইয়ের বাড়িতে। বাড়িতে আছে রোবটের সমতুল্য বেশ কয়েকজন কাজের লোক। কিন্তু তাদের দিয়ে কোনো কাজ হবে না। অতন্দ্রিলার এখন দরকার মানসিক সান্ত্বনা।

অস্থিরতা ক্রমেই বাড়তে শুরু করলো। অতন্দ্রিলা চুপ করে শুয়ে আছে।

       তখনি জরিনা ব্যস্ত ভঙ্গিমায় তার ঘরে ঢুকে বলে, “আফা! ঝড় আসতেছে তো। বৃষ্টি দেখবেন না?”
        “না জরিনা, আমার কেমন জানি খারাপ লাগছে। একটু আমার কাছে এসে বসো তো।”
         জরিনা অতন্দ্রিলার পাশে বসতে বসতে বলে, “আফা, আফনের চুল টাইনা দেই?”
          “দাও।”

বাইরে তুমুল ঝড় হচ্ছে। জানলার কাঁচ ভেঙে পরছে।
        জরিনা আতঙ্কিত গলায় বলে, “আফা, জানলার কাঁচ ভাঙতেছে মনে হয়!”

অতন্দ্রিলা উঠে বসল। তলপেটে একটা তীব্র এবং তীক্ষ্ম যন্ত্রণা অনুভব করল। এই যন্ত্রণা তো আগে কোনদিনও অনুভূত হয়নি!
ব্যাথার ধাক্কা সামলাতে বিছানা আকরে ধরে বসল সে।
        জরিনা বলে, “কি হইছে আফা?”
        “মরে যাচ্ছি জরিনা!”

জরিনা কি করবে ভেবে পাচ্ছে না, তার সমস্ত শরীর কাঁপছে। দ্রুত গিয়ে টেলিফোন করলো ফিরোজকে।

অতন্দ্রিলা জ্ঞান হারাচ্ছে। তবু চিন্তা করছে এই মুহূর্তে কি করা যায়। রোদকে টেলিফোন করতে খুব ইচ্ছে করছে। কিন্তু রোদকে টেলিফোন করে কি হবে? রোদ তো আর আসতে পারবে না! কিংবা হয়তো চলেও আসবে।

অতন্দ্রিলাকে হাসপাতালে নেওয়া হলো রাত নয়টায়। অপারেশন থিয়েটারের বাইরে থরথর করে কাঁপছেন ফিরোজা। এই অনুভূতিটা তার খুবই চেনা। জীবনে আরও একবার অপারেশন থিয়েটারের সামনে দাড়িয়ে এভাবে কেপেছিলেন তিনি, ইরার অপারেশনের সময়ে। ফিরোজা বিড়বিড় করে দোয়া ইউনুস পড়লেন।

      নয়টা একত্রিশ মিনিটে একজন ডক্টর বাইরে এসে বললেন, “কংগ্রাচুলেশনস! আপনার নাতনি হয়েছে।”
       ফিরোজা চোখভর্তি জল নিয়ে বললেন, “আলহামদুলিল্লাহ! বৌমা? বৌমা কেমন আছে?”
        “মা-মেয়ে দুজনেরই সুস্থ আছে।”

পরেরদিন সকালে অতন্দ্রিলার ঘুম ভাঙলো। তার কোলে ফুটফুটে একটা বাচ্চা। বাচ্চাটা নাকি তার! অতন্দ্রিলা উজ্জ্বল চোখে তাকিয়ে আছে তার দিকে।
অতন্দ্রিলার সামনে বসা তার পরিবারের লোকজন। তারা কি কি যেন বলাবলি করছে। সেসব কিছুই অতন্দ্রিলার কানে আসছে না।
অতন্দ্রিলার ভাবতেই অবাক লাগছে, সে নাকি এখন একজন মা!
ইশ! রোদকে যদি তার মেয়েটার কথা বলতে পারতো! রোদ নিঃসন্দেহে বোকাদের মতো কেঁদে ফেলতো।

ফুটফুটে বাচ্চাটা তার মুঠোয় অতন্দ্রিলার হাতের একটা আঙ্গুল চেপে রেখেছে।
       শায়লা আনন্দিত গলায় বলেন, “কী নাম রাখবি, কিছু ঠিক করেছিস?”
        অতন্দ্রিলা পরিষ্কার গলায় বলে, “রাত্রি।”
        “বাহ্! চমৎকার! আগে থেকে ঠিক করে রেখেছিলি দেখছি।”
        “আমি ঠিক করিনি মা। একজন ওর নাম রেখেছে।”
         “কে সে?”
         “আমার অনেক কাছের এক বন্ধু, তুমি তাকে চিনবে না। মা একটা কথা বলি?”
          “বল!”
          “থ্যাংক ইউ।”
          “থ্যাংক ইউ কেন?”
          “তুমি যে আমাকে পৃথিবীতে আনার জন্যে কতটা কষ্ট করেছ, সেটা আজ বুঝলাম।”
         “মাকে থ্যাংক ইউ বললে যে তার কতটা রাগ হয় এটাও তুই একদিন বুঝবি!”
         
অতন্দ্রিলা ফিক করে হেসে দিল।

বাড়িতে ফিরেই রাত্রিকে নিয়ে ইরার ছবির সামনে দাঁড়িয়ে
       ‌ অতন্দ্রিলা বলে, “বুবু দেখো! তোমার রাত্রি। বিশ্বাস হয়? আমার তো হচ্ছে না।
মনে হচ্ছে স্বপ্ন দেখছি। জানো, আমি না মাঝে মাঝে তোমাকে স্বপ্নে দেখি। দেখি তুমি হাসছো, আমার সঙ্গে গল্প করছো, আমার চুলে বেণী করে দিচ্ছ। এটাও কি স্বপ্ন বুবু? আমার না খুব আনন্দ হচ্ছে। এত আনন্দ, এত সুখ আমি সহ্য করতে পারছি না।”
      
রাত্রির জন্মের পর শুরু হলো নতুন সমস্যা। ফিরোজা সকাল-সন্ধ্যা নিয়ম করে বিনয়ী গলায় শুধু একটাই কথা বলে অতন্দ্রিলাকে। সেটা হলো, “মা এবার রোদকে দিদিভাইয়ের কথাটা বলো।”
প্রতিবারই অতন্দ্রিলা ক্ষীণ গলায় জবাব দিয়ে বলে, “না।”

রাত্রির জন্মের পর রোদ অতন্দ্রিলাকে টেলিফোন করেছে ততবারই তার গলা ফাটিয়ে বলতে ইচ্ছা করেছে, “তোমার জন্যে এক টুকরো ভালোবাসা যত্ন করে রেখেছি। প্লিজ এসে গ্রহন করো!”
কিন্তু বলতে পারেনি।

অতন্দ্রিলা তার মেয়েকে যতই দেখে ততই মায়ার জালে আটকা পরে যায়। এই জাল থেকে কোনো দিনও বের পারবে না সে, অবশ্য  অতন্দ্রিলা বের হতেও চায় না।

গরম পানির সঙ্গে ঠান্ডা পানি মেশানো যে পৃথিবীর জটিলতম কাজগুলোর মধ্যে একটা, এটা অতন্দ্রিলার আগে জানা ছিল না। রাত্রিকে গোসল করানো হয় ঠিক বেলা দশটায়। গোসলের পরপরই ফিরোজা নাতনি কোলে নিয়ে বাগানে বসে থাকেন। দৃশ্যটা দেখার মতো। ইশ! রোদ যদি দৃশ্যটা দেখতে পেতো, তাহলে নিশ্চয়ই ছবি এঁকে রাখতো।

টুকটুক করে বড় হচ্ছে রাত্রি। ফিরোজা অনেক কষ্ট বসতে শিখেছেন তাকে। অতন্দ্রিলা ঘোষনা দিয়েছে, “রাত্রিকে হাঁটতে শেখাবো আমি!”
প্রতিদিন সকালে রাত্রির দু হাত ধরে বাগানে হাঁটতে নিয়ে যায় অতন্দ্রিলা। রাত্রি মায়ের হাত ধরে ছোট ছোট পা ফেলে হাঁটে। কিন্তু অতন্দ্রিলা হাত ছেড়ে দিলেই সে পরে যায়।
অতন্দ্রিলা চিন্তা করে, জীবনে অন্যান্য ক্ষেত্রেও কি সে হাত ছেড়ে দিলে রাত্রি পরে যাবে? তাহলে তো কখনো মেয়ের হাত ছাড়া যাবে না।

রাত্রির বয়স এখন সাত মাস। এই বয়সে বাচ্চারা মা, বাবা, দাদা ইত্যাদি টুকটাক কথা বলতে পারে।
কিন্তু রাত্রি শুধু বলতে পারে একটি শব্দ – ভাভা। যাই দেখে উচ্ছসিত হয়ে হাত নেড়ে নেড়ে বলে ভাভা।

অতন্দ্রিলা রাত্রিকে নিয়ে সোফায় বসল।
      পরিষ্কার গলায় বলল, “মা বলতো, বা-বা।”
       রাত্রি তার দুটি দাঁত বের করে ফিক করে হেসে বলল, “ভাভা।”
        “উহুঁ, হলো না মা। বল বা-বা।”
        “ভাভা!”
        “আচ্ছা, এখন বলতো মা! মা”
        “ভাভা!”
        “এই ভাভা আবার কি?
রাত্রি আবার হেসে দিলো।

“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
যেদিন রাত্রি অতন্দ্রিলাকে ‘মা’ বলে ডাকবে, সেদিন নিঃসন্ধেহে তার আনন্দের সীমা থাকবে না। মা শব্দটা এত অদ্ভুত কেন?
        
একদিন সকালে অনেক সাহস করে অতন্দ্রিলা ঠিক করল, এবার রোদকে তার মেয়ের কথা তাকে জানাতে হবে।

অতন্দ্রিলা রোদকে টেলিফোন করতে যাবে, তখনি রোদ অতন্দ্রিলাকে টেলিফোন করে।
       উৎফুল্ল কণ্ঠে বলে, “তন্দ্রি! আমি ইউনিভার্সিটির লেকচারার অফ দ্য ইয়ারের অ্যাওয়ার্ড পেয়েছি।”

মানুষটা এতটাই খুশি ছিলো, যে এবারো অতন্দ্রিলা তাকে রাত্রির কথা বলতে পারলো না। রোদ এতদিন যেটার স্বপ্ন দেখেছিল, এখনো সেটা তার হাতের মুঠোয়।
এমন সময় তাকে বাচ্চার কথা বলে ফিরিয়ে আনার কোনো অর্থ নেই।

মেয়েকে বাবার কাছ থেকে লুকিয়ে রাখা এবং বাবাকে মেয়ের কাছ থেকে লুকিয়ে রাখা যে গুরুতর অপরাধ, সেটা অতন্দ্রিলা বুঝতে পারছে। সে অনুতপ্ত।

(চলবে)

অতন্দ্রিলার রোদ পর্ব – ১১ ও ১২

0

অতন্দ্রিলার রোদ
পর্ব – ১১ ও ১২
লেখা : শঙ্খিনী

পর্ব : ১১ – (অমঙ্গলজনক)

সিঙ্গাপুর থেকে পাথরের মূর্তি অনানো হয়েছে। বাগানে গাছপালার ফাঁকে ফাঁকে সেগুলো বসানো হবে। অতন্দ্রিলা বলে, বাগানটাতে নাকি কোনো সৌন্দর্য নেই। তাই সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে ফিরোজার এই আয়োজন।

বাগানের দোলনায় বসে কাজের তদারকি করছেন তিনি। তার পাশে গুটিশুটি মেরে বসে আছে রোদ।
          ফিরোজা ক্ষীণ গলায় বললেন, “কি যেন নাম বললি ইউনিভার্সিটির?”
         “মরহেড স্টেট ইউনিভার্সিটি।”
         “লন্ডনের কোন জায়গায় সেটা?”
         “মরহেডে।”
          “এত বড় একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলি, বৌমা জানে?”
           “না, জানাইনি। তোমার অনুমতি পেলে জানাবো।”
            “আমার অনুমতির কি আছে? তুই এত বড় একটা সুযোগ পেয়েছিস, অবশ্যই যাবি। কিন্তু তার আগে ব্যাপারটা বৌমাকে জানাতে হবে। সে কিন্তু আমাদের পরিবারের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। তাকে না জানিয়ে কোনো কাজ করবি না।”

অতন্দ্রিলা রান্না করছে, চিংড়ি মাছের মালাইকারি। এই খাবারটি আমাদের সংস্কৃতিতে এসেছে মালয়েশিয়ান সংস্কৃতি থেকে। মালয়েশিয়ান মালাইকারির বিশেষত্ব হলো নারকেলের দুধ এবং চিনি।
বেশ উৎফুল্ল লাগছে অতন্দ্রিলাকে।

রান্না শেষ করে ঘরে গিয়ে দেখে রোদ বসে আছে।
      অতন্দ্রিলা উৎসাহিত গলায় বলল,“আপনাকে একটা জরুরী কথা বলার আছে।”
      রোদ গম্ভীর গলায় বলল, “আমার একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে তোমার সাথে।”
      “তাহলে আগে আপনি বলুন।”
      “তন্দ্রি, আমি লন্ডনের একটা ইউনিভার্সিটিতে লেকচারার হিসেবে জয়েন করার অফার পেয়েছি। এত বছর আমি মায়ের কথা মত ব্যাবসাটাকে সামলে রেখেছি, এত দূর পর্যন্ত নিয়ে এসেছি। কিন্তু এখন আমি চাই আমার স্বপ্ন পূরন করতে, নিজের পছন্দের কাজ করতে।”

অতন্দ্রিলা চমকে উঠল। তার চোখমুখ রক্তশূন্য হয়ে যাবার উপক্রম। চমকে ওঠার কোনো কারন নেই, রোদের প্রতি তো তার প্রেম নেই। কিংবা থাকতেও পারে। এক ন্যানো সেকেন্ডের মধ্যে নিজেকে সামলে নিল অতন্দ্রিলা।
        স্বাভাবিক গলায় বলল, “কবে যাবেন?”
         “আগামী মাসে।”
         “আবার আসবেন কবে?”
         “আমি ওখানে পার্মানেন্টলি থাকবো, গ্রিন কার্ডের জন্যে অ্যাপ্লাই করবো। মাঝে মাঝে যখন ছুটি থাকবে, তখন আসবো।
অতন্দ্রিলা চুপ করে রইল।
         রোদ বলল, “তুমি কিন্তু চাইলে আমার সঙ্গে যেতে পারো।”
         “আমি যাবো কেন? আমি তো আর ইউনিভার্সিটি থেকে কোনো অফার পাইনি! আর পেলেও যেতাম না। দেশ থেকে দূরে  কোথাও বেশি দিন থাকতে পারি না আমি।
      
রোদ লন্ডনে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। শীতের কাপড় কেনা হয়েছে। যদিও এসব কাপড়ে সেখানকার শীত মানবে না, সেখান থেকে আবার কিনতে হবে।
অতন্দ্রিলা চিন্তা করছে, এটা যদি নব্বইয়ের দশক হতো তাহলে কি ফিরোজা ছেলের জন্যে সোয়েটার বুনতে বসতেন? নাহ্, ফিরোজা যথেষ্ট আধুনিক।
এক নিমেষেই যেন একটা মাস কেটে গেল।

আজ রাতে রোদের ফ্লাইট। দুপুরের খাবারে করা হয়েছে এলাহি আয়োজন। কোরমা, পোলাও, আস্ত মুরগির রোস্ট। সবকিছু নিজের হাতে রান্না করেছে অতন্দ্রিলা।

ফ্লাইট রাত দশটায়। কিন্তু বোর্ডিং হবে সাড়ে আটটায়। সে অনুযায়ী আগে আগেই বের হতে হবে রোদকে।
দুটো বিশাল আকারের সুটকেস তোলা হয়েছে গাড়িতে। ফিরোজা রোদের সঙ্গে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত যাবেন। রোদের কিছু দুরসম্পর্কের চাচা মামা জাতীয় লোকও এসেছেন তাকে বিদায় দিতে। তারাও যাবে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত।
কিন্তু অতন্দ্রিলা যাবে না। চুপ করে সদর দরজা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে সে।
 
      রোদ অতন্দ্রিলার কাছে এসে নিচু গলায় বলল, “এয়ারপোর্ট পর্যন্ত আসলেই পারতে।”
       “এয়ারপোর্ট পর্যন্ত যাওয়ার কোনো অর্থ হয় না। এতে কষ্ট আরও বাড়ে।”
        “তার মানে তোমার কষ্ট হচ্ছে?”
        “ঠিক কষ্ট হচ্ছে না, খারাপ লাগছে। আমার সবথেকে কাছের বন্ধু যে দূরে সরে যাচ্ছে।”
         “দূরে কোথায় সরে যাচ্ছি। এই যুগে কেউ কি আর বিচ্ছিন্ন দ্বীপের বাসিন্দা? ফোনে তো কথা হবেই, দেখাও হবে।”
          “তাও ঠিক। আচ্ছা আপনি দাঁড়িয়ে আছেন কেন এখনো? সাতটা বেজে গেছে। এখন রওনা না দিলে কিন্তু দেরি হয়ে যাবে।”
         “ওহ্,‌ হ্যাঁ তাইতো। তাহলে এখন আসি। ভালো থেকো।”
         “আপনিও ভালো থাকবেন।”

রোদ যাওয়ার সময় একবার তার তন্দ্রির দিকে ফিরে তাকালো। স্বাভাবিক ভঙ্গিতেই দাঁড়িয়ে আছে মেয়েটা।

রোদ চলে যাওয়ার পর অতন্দ্রিলা লক্ষ করল, তার চোখে জল। সর্বনাশ!এরমধ্যে রোদের প্রতি এতটাই আসক্ত হয়ে গেছে সে?
আচ্ছা রোদ তো এখন বেশি দূর যেতে পারেনি। ফিরিয়ে এনে কি তাকে কথাটা বলবে?
না থাক! যাত্রাপথে পেছন থেকে ডাকা নাকি অমঙ্গলজনক। 

পর্ব : ১২ – (আজ তোমারে দেখতে এলেম অনেক দিনের পরে)

রোদ লন্ডনে চলে গেছে এক সপ্তাহ হলো। অতন্দ্রিলা এসেছে তার বাবা মায়ের বাড়িতে। ফিরোজাকে একা রেখে আসেনি, তাকেও সঙ্গে করে নিয়ে এসেছে।

অতন্দ্রিলার ধারনা ছিল তার বাবা মা আগের মতো সারাদিন পাড় করছেন ঝগড়া করে। কিন্তু তার সেই ধারনা ছিল ভুল।
হামিদ সাহেব এবং শয়লার মধ্যকার সম্পর্ক এখন মধুর, অত্যন্ত মধুর। এতটাই মধুর যে তাদেরকে একসঙ্গে দেখে মনে হচ্ছে নববিবাহিত দম্পতি ।

প্রতিদিন বিকেলে হামিদ সাহেব, শায়লা এবং ফিরোজা চায়ের কাপ নিয়ে আড্ডায় বসেন। মাঝে মাঝে সন্ধ্যা তাদের সঙ্গে যোগ দিলেও, অতন্দ্রিলা এসবের মধ্যে নেই।

আজ বিকেলে সন্ধ্যা এলো অতন্দ্রিলার ঘরে।
        ব্যস্ত ভঙ্গিমায় বলল, “কিরে মন খারাপ?”
         অতন্দ্রিলা বলল, “মন খারাপ হতে যাবে কেন?”
         “শোন, জীবন তো আর কারও জন্যে থেমে থাকবে না। রোদের জীবন তোর জন্যে থেমে গেছে? যায়নি তো! তুই কেন খামোখা এভাবে মন খারাপ করে বসে আছিস? নিজের মতো কাজ শুরু করে দে। তোর জীবন ওর জন্যে থেমে থাকবে কেন?”
         “আপা, জীবন কারও জন্যে থেমে
থাকে না, এটা আমিও জানি। আমার জীবনও কারো জন্যে থেমে নেই।”
         “তাহলে মন খারাপ করে বসে আছিস কেন?”
          “আছে একটা কারণ, বলা যাবে না।”
          “অতন্দ্রিলা আশরাফ কথা গোপন করছে দেখি? তুই রোদের কথা ভেবে মন খারাপ করছিস, কিন্তু বলতে পারছিস না। দেখলি তো, বিয়ে একটা মেয়েকে কতটা বদলে দেয়!”
         অতন্দ্রিলা হাই তুলতে তুলতে বলল,    “দেখেছি। দেখে আমার মন ভরে গেছে।”

সন্ধ্যা সাতটায় রোদের টেলিফোন এলো।
এরমধ্যে একটা মজার ব্যাপার ঘটেছে। অতন্দ্রিলা এখন আর রোদকে ‘আপনি’ বলে সম্বোধন করে না।
অতন্দ্রিলার কথা, “এখন সে যেখানে থাকে সেখানে আপনি-তুই বলে কিছু নেই, সবাই তুমি। আমি কেন অযথা তাকে আপনি বলে ডাকতে যাবো?”
  
      অতন্দ্রিলা টেলিফোন তুলে বিনয়ী গলায় বলল, “কি খবর?”
       “এইতো ভালো। তোমার খবর কি?”
       “ভালো খবর।”
       “কি করছিলে?”
       “তেমন কিছু না। তুমি?”
       “এইতো মাত্র লাঞ্চ সারলাম।”
        অতন্দ্রিলা উৎসাহিত গলায় বলল, “কয়টা বাজে জানি ওখানে?”
         “২ টা।”
         “ওখানে কি অনেক শীত?”
         “হুঁ, মোটামুটি ভালোই শীত।”
         “বৃষ্টি হয়?”
         “বৃষ্টি এখন পর্যন্ত দেখিনি, তবে স্নোফল হয়। বাড়ির সকলে কেমন আছে?”
          “ভালো আছে, আনন্দে আছে। গতকাল আপা জাভেদ ভাইকে নিয়ে বেড়াতে এসেছে।”
          “তুমি ভালো আছো তো তন্দ্রি?”
          “হঠাৎ এ প্রশ্ন?”
          “জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে হলো।”
          অতন্দ্রিলা অস্পষ্ট গলায় বলল, “ভালো আছি, অবশ্যই ভালো আছি। তোমাকে আর জিজ্ঞেস করলাম না। কারন আমি জানি তুমিও ভালো আছো।”
           
আজকাল এগারটার আগে বিছানা থেকে উঠতে অসহ্য লাগে অতন্দ্রিলার। মনে হয়, সর্বশক্তি দিয়ে কেউ যেন তাকে আটকে রেখেছে।
কিন্তু আজ সকাল আটটার দিকেই ঘুম ভেঙে গেল, ছাদ থেকে আসা চেঁচামেচির শব্দে। কেউ অবশ্য ঝগড়া করছে না। অনেকগুলো মানুষ একসঙ্গে জড়ো হয়ে কথা বললে, খানিকটা চেঁচামেচির মতোই শব্দ হয়।

ট্রাকভর্তি গাছপালা এসেছে। দুজন মালি, একজন রাজমিস্ত্রীও এসেছে। অতন্দ্রিলাদের ছাদে বাগান করা হবে।

অতন্দ্রিলা ছাদে গিয়ে দেখল ফিরোজা অতি যত্ন সহকারে গাছ লাগাচ্ছেন। আর মালিদের অযথা তারা দিচ্ছে জাভেদ।

জাভেদ, সন্ধ্যার স্বামী। মুখ লম্বাটে, গাত্রবর্ণ শ্যামলা, হাসিটা বিশ্রী। জাভেদের ভয়ংকর বাজে স্বভাব হলো প্রতিটা বাক্য দুবার বলা।
এই স্বভাবের কারণেই তিনি অতন্দ্রিলার অপছন্দের ব্যাক্তিদের মধ্যে একজন।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন

      অতন্দ্রিলাকে ছাদে আসতে দেখে জাভেদ ব্যস্ত ভঙ্গিমায় বলল, “আরে অতন্দ্রিলা আসো। আসো অতন্দ্রিলা। দেখো কি সুন্দর বাগান হচ্ছে! কি সুন্দর বাগান হচ্ছে!”
      অতন্দ্রিলা হতাশ গলায় বলল, “জাভেদ ভাই, আপনাকে দেখলেই আমার অস্বস্তি লাগে!”
       “কেন আমি আবার কি করলাম? কি করলাম আমি?”
      “এইযে প্রতিটা কথা দুবার করে বলেন।”
      “ঠিকাছে, আর বলবো না। বলবো না আর।”
      “এসব কি হচ্ছে একটি সংক্ষেপে বলবেন?”
       “বাগান হচ্ছে, বাগান। হরেক রকমের গাছ লাগানো হচ্ছে। হরেক রকমের গাছ। সবই সবজির গাছ। সবগুলো সবজির গাছ।”

এনার সঙ্গে কথা বলে কোনো লাভ নেই। তাই অতন্দ্রিলা ছোট্ট দীর্ঘশ্বাস ফেলে সেখান থেকে চলে যায়।
       
      নিচে এসে অতন্দ্রিলা গম্ভীর গলায় বলল, “মা ছাদে এসব কি হচ্ছে?”
      শায়লা হাসিমুখে বললেন, “ফিরোজা আপার কান্ড! আমাদের বাড়িতে বলে গাছের বংশও নেই। এজন্যে নিজ হাতে বাগান করছেন।”
        “বাগান করছেন ভালো কথা কিন্তু এতগুলো গাছের পরিচর্যা করবে কে? আমার চলে যাওয়ার পর তো গাছগুলো মরে মরে ভূত হয়ে যাবে!”
         “ভূত হলে হবে! সেই চিন্তা তোকে করতে হবে না।”

        দুপুরে খাওয়ার টেবিলে জাভেদ উজ্জ্বল চোখে বলল, “অতন্দ্রিলা শোনো একটা দারুন পরিকল্পনা করেছি। দারুন পরিকল্পনা করেছি একটা।”
       অতন্দ্রিলা থমথমে গলায় বলল, “শুনতে পারি তবে এক শর্তে। আপনি একটা কথা দুবার বলতে পারবেন না।”
      জাভেদ কিছু বলতে যাবে তার আগেই  হামিদ সাহেব বললেন, “ও একটা কথা দুবার করে না বললে কথা বলতে পারে না। আমি বলছি শোন। রোদকে একটা ভিডিও বার্তা পাঠানো হবে।”
        অতন্দ্রিলা বলল, “কি পাঠানো হবে?”
         “ভিডিও বার্তা। সেই ভিডিওতে থাকবো আমরা সবাই। আমরা সবাই সারিবদ্ধ হয়ে বসে গান গাইবো। সেই গানটাই ওকে পাঠানো হবে।”
         “গান গেয়ে সেটা আবার ভিডিও করে পাঠাতে হবে কেন?”
         “পাঠাতে হবে। এতে রোদের মনোবল বাড়বে। জানবে যে ও একা নয়। আমরা ওর সাথে আছি।”
          “বাবা তার যথেষ্ট মনোবল আছে। গান গেয়ে তার মনোবল বাড়ানোটা অর্থহীন। তাছাড়া তোমাদের সকেলর গানের গলা তো তেমন একটা ভালো না।”
          “তোকে গাইতে হবে না। আসলে তোকে বলাটাই ভুল হয়েছে।”
          “বলা ভুল হয়নি বাবা। তোমাদের আমার সাহায্য লাগবে। তোমরা গান গাইবে আর আমি ভিডিও রেকর্ড করে দেবো।”

               মুক্ত করো ভয়,
               আপনা মাঝে শক্তি ধরো,
               নিজেরে করো জয়।

হামিদ সাহেব, শায়লা, ফিরোজা, সন্ধ্যা, জাভেদ – সকলে সারিবদ্ধ ভাবে বসে গান গাইছে। এমনকি জরিনাকে দেখা যাচ্ছে সারিতে। তবে সে গানটা গাইতে পারে না, তাই শুধু হাতে তালি দিচ্ছে।

অতন্দ্রিলা ভিডিও রেকর্ড করতে করতে চিন্তা করছে, ভিডিওতে সে একা থাকলে কোন গানটা গাইত।

           আজ তোমারে দেখতে এলেম
           অনেক দিনের পরে।
           ভয় কোরো না, সুখে থাকো,   
           বেশিক্ষণ থাকব নাকো      
           এসেছি দণ্ড-দুয়ের তরে॥

হ্যাঁ, এই গানটাই গাইত।

(চলবে)