ত্রিভুজ প্রেম পর্ব -৪

0
1986

ত্রিভুজ প্রেম
জান্নাতুল ফেরদৌস সূচনা
পর্বঃ৪

-মা আমার তোয়ালেটা কই? গরম পানিটা কি করেছো? এতো সকালে ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করতে পারব না বলে দিলাম। তাড়াতাড়ি একটু গরম পানি করে দাও না মা? নাহলে অফিসে যেতে লেট হয়ে যাবে।

পাপড়ির এসব কথায় আফিয়া বেগম এখন বিরক্তি বোধ করছে।
-উফ! এই মেয়েটাকে নিয়ে পারা গেলো না। কোনো কাজে যাওয়ার আগে আমাকে পাগল করে ছাড়বে।
বলতে বলতে গরম পানি নিয়ে পাপড়িকে দিলো।

খাবার টেবিলে বসে খাবারের জন্য অপেক্ষা করছে পুষ্প।
– কি ব্যাপার মা, আজ কি সকালে নাস্তা পাবো না। সকাল থেকে তো দেখছি তোমার ঐ মেয়েকেই নিয়ে পড়ে আছো। বলি, ও ছাড়া কি আর কেউ অফিসে যাই না নাকি? আমাকেও তো ক্যাফেতে যেতে হবে তাই না?
গরম নাস্তা নিয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে আফিয়া বেগম এসে বললো
– এইতো মা, নে তোর নাস্তা।
সকাল থেকে কাজ করতে করতে আফিয়া বেগম কেমন হাফিয়ে ওঠেছে। আফিয়া বেগমকে দেখে পুষ্প বলে ওঠলো
– শুনো মা, তুমি খেয়েছো?
– নাহ! তোরা খেলেই আমি খেয়ে নিবো।
– এদিকে আসো তো, বসো এদিকে।
আফিয়া বেগমকে টেনে চেয়ারে বসালো পুষ্প। তারপর একটু খাবার নিয়ে আফিয়া বেগমকে খাইয়ে দিয়ে বললো
– সকাল থেকে অনেক কাজ তো করলে এবার একটু জিরিয়ে নাও।
– জিরালে কি চলবে, কাজ আছে নাহ।
– বসো তো, কাজ পরে করবে। আর শুনো আমার আজ একটু কাজ আছে, আসতে একটু লেট হবে। এখন যাই।
-সেকি, তুই এখনি চলে যাবি। পাপড়ি তো বলছিলো ওকে নাকি অফিসে তুই দিয়ে আসবি?
– আমি! আমি তো যেতে পারবো না। আমার একটু তাড়া আছে যে।

-কোন সমস্যা নেই আমি দিয়ে আসবো তোমার মেয়েকে জেঠিমা।
নীলের এমন কথায় পুষ্প ও আফিয়া বেগম নীলের দিকে তাকায়।
নীলকে দেখে পুষ্প বললো
– সেকি রে আজ এতো সকালে তুই এখানে।
– হুম, ভাবলাম শাকচুন্নিকে একটু অল দ্যা বেষ্ট বলে যাই।
– আবার তুই আমাকে শাকচুন্নি বললি।
রাগান্বিত স্বরে পাপড়ি কথাটা বলে ওঠলো।
পাপড়ি দিকে তাকিয়েই নীল স্বম্ভিত হয়ে গেলো। অনেক সুন্দর লাগছে পাপড়িকে। হালকা বেগুনি রংয়ের শাড়ী, হাতে কালো ফিতের ঘড়ি, চুলগুলো অর্ধেক খোলা পেছনে ক্লিপ দিয়ে আটকানো, চোখে কাজল, ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক। এতেই মায়াবী লাগছে পাপড়িকে।
নীল অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে পাপড়ির দিকে। হঠাৎ পাপড়ির তুরি বাজানোর শব্দে হুস ফিরে তার।
-কি হলো কি দেখছিস?
-দেখছি শাকচুন্নিকে সাজলে কেমন পেত্নির মতো দেখা যায়। হা হা।
-দেখছো মা, এই রাগছাগলের কথা।  সবসময় আমার সাথে এমন  করে।
পুষ্প বলে ওঠে
– উফ! আবার শুরু। এই দুটোকে নিয়ে আর পারা গেলো না। এই পাপড়ি শোন আমি তোর সাথে যেতে পারবো না অফিসে। আমার একটু তাড়া আছে। নীল যাবে তোর সাথে।
– কিহ! এই রামছাগলের সাথে আমি যাবো না। আমি একাই যেতে পারবো।
পুষ্প রাগী চোখে তাকিয়ে ধমক দিয়ে বললো
– তুই নীলের সাথেই যাবি। বুজছিস।
মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো পাপড়ি। দূরে দাঁড়িয়ে নীল হাসছে তা দেখে।
পুষ্প চলে গেলো। পাপড়ি নাস্তা করে নীলের সামনে গিয়ে বললো
-চল।
নীল হাসি দিয়ে বললো
-চলেন শাকচুন্নি।

রাস্তায় যেতে যেতে হঠাৎ নীল বলে ওঠে
– এতো সেজেগুজে অফিসে যাওয়া লাগে?
কথাটা শুনে পাপড়ি অবাক নীলের দিকে তাকায় আর বলে
– এতো সাজলাম কই? একটু কাজল আর লিপস্টিক তো দিলাম।
নীল পাপড়ির দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে মনে মনে ভাবতে লাগলো
– যদিও চুলগুলো খুললে আর একটু ভালো লাগতো তোকে। তবুও এতেই তো আমাকে পাগল করে ফেলেছিস।হৃদয়ের মাঝে সব কিছু ভাঙচুর চলছে। পলক ফেরাতে পারছি না তোর থেকে। তুই কি এসব কিছুই বুজিস না?

পাপড়ির কথায় বাস্তবে ফিরে আসে নীল
– কিরে কোথায় হারিয়ে গেলি?
– কিছু না, ভাবছিলাম তোর এই পেত্নি সাঁজ দেখে অফিসের সবাই অজ্ঞান না হয়ে গেলেই হয়।
– কিহ! তবে রে…
বলেই চড় দেওয়া শুরু করলো নীলের পিঠে।
– কি করছিস টা কি? রাস্তায় আছি আমরা।
নীলের কথা শুনে পাপড়ি থেমে বললো
– তুই যদি আমার কাকুর ছেলে না হতি না তো দেখতি কি করতাম তোর সাথে।
– এ্যাহ! কচু করতি। কিছুই করতে পারতি না। হা হা। নে এবার গাড়িতে ওঠ।

“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
কিছুক্ষণ পর অফিসে পৌছালো পাপড়ি। নীল তাকে অফিসে পৌঁছে দিয়ে নিজের অফিসে চলে যায়। ম্যানেজারের কাছ থেকে জানতে পারলো এখানের বসের সাথে কথা বলার পরই সে কাজ শুরু করতে পারবে। তাই বসে বসে অপেক্ষা করছে বস আসার।

একটু পরই একটা কালো গাড়ি এসে থামে অফিসের সামনে। একটা সাদা শার্ট আর ওপরে কালো কোর্ট, কালো সার্নগ্লাস পরা লোকটিকে দেখে পাপড়ি আইডিয়া করে এটাই হয়তো এখানে বস। তার দিকে এগিয়ে আসছে। লোকটি তার সামনে দিয়ে যাওয়ার সময়ই হঠাৎ থেমে বললো
– পুষ্প?
পাপড়ি কিছুটা চমকে ওঠে লোকটির দিকে তাকায়। লোকটি আবার বলে
– আর ইউ পুষ্প, রাইট?
– হুম।
– হ্যালো। আমি এ কোম্পানির বস্ রাইয়ান চৌধুরী।
-হ্যালো।
– কোম্পানীতে নতুন জয়েন করেছো?
– জ্বি।
-ওকে কিছুক্ষণ পর আমার কেবিনে আসো।
-ওকে স্যার।

কিছুক্ষণ পর পাপড়ি কেবিনে গেলো
– মে আই কামিন, স্যার?
– ওহ, পুষ্প। সিউর, কাম ইন। সিট ডাউন।
পাপড়ি গিয়ে চেয়ারে বসে।
-তো মিস্ পুষ্প, আশা করি ম্যানেজারের কাছ থেকে আপনি সব কাজ জেনে নিয়েছেন?
আবার কিছুটা চমকে ওঠে পাপড়ি বলে
– জ্বি স্যার।
– আপনার মার্কস আর কোয়ালিফিকেশন ভালো বিধায় এই চাকরিতে আমরা আপনাকে এলাও করেছি। আশা করি আপনি মনোযোগ দিয়ে কাজ গুলো করবেন।
– ইয়েস স্যার।
– ওকে এবার আসুন।
যেতে যেতে পাপড়ি বিড়বিড় করে নিজেকে বলছে
– পাপড়ি এখন থেকে তোকে পুষ্প নামের অভ্যাস করতেই হবে। বার বার এভাবে চমকালে মানুষ সন্দেহ করতে পারে। আর এখন থেকে সব কাজ ঠিকমতো করে অফিসে নিজেকে প্রুফ করতে হবে বুজলি। তো লেগে পর কাজে।
পেছন থেকে রাইয়ান বলে ওঠে
– মিস্ পুষ্প,  আমায় কিছু বললেন?
– নো স্যার, আসি আমি।
বলেই বিদায় নিলো পাপড়ি।

-এ মেয়েকে দেখলে অদ্ভুত এক ভালো লাগা কাজ করে আমার ভিতর। ঐদিনও যখন পুষ্পকে ইন্টারভিউ দিতে দেখেছিলাম প্রথম দেখাতেই মনে ভিতর কেমন আসপাস শুরু করেছিল। আজও তাই হচ্ছে। এমন কেনো হচ্ছে?
নিজেকে নিজেই জিজ্ঞেসা করতে লাগলো রাইয়ান।

চলবে…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে