ত্রিভুজ প্রেম, পর্ব -১২

0
1189

ত্রিভুজ প্রেম
জান্নাতুল ফেরদৌস সূচনা
পর্বঃ১২

সকালে নাস্তার টেবিলে বসে নাস্তা খাচ্ছে পুষ্প। তার মা আর দাদীকে অনেকক্ষণ ধরে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে সে বললো
– এভাবে না তাকিয়ে কি বলতে চাও তোমরা তা বলো?
আফিয়া বেগম আমতা আমতা করে কথাটা বলার আগেই দাদী বললো
– তোর জন্য একটা ভালো বিয়ের সমন্ধ এসেছে। ছেলে অনেক বড় কোম্পানির মালিক, ভালো পরিবারের সন্তান। আর সবচেয়ে বড় কথা ছেলে তোকে পছন্দ করেছে। আজ বিকেলে ছেলের বাবা-মা তোকে দেখতে আসবে। আর এইবার তুই আর কোনো নাটক করবি না ছেলেপক্ষের সামনে। এমন সমন্ধ মোটেও হাতছাড়া করা যাবে না।
দাদীর কথা শেষ হতেই পুষ্প টেবিল থেকে ওঠে দাড়ায়। তারপর বলে
– তোমাদের কতো করে বলেছি আমি যে আমি কোন বিয়ে করবো না। তোমরা আমার কথা কেনো শুনো না। তোমাদের যখন এতোই  পছন্দ হয়েছে সমন্ধ তো পাপড়িকে বিয়ে দিয়ে দিলেই তো পারো। মাত্র ৫ মিনিটের ছোট আমার সে। আর এমন তো নয় যে এর আগে কোথাও কোন ছোট বোনের আগে বিয়ে হয়নি তাই না?
পুষ্পকে দাদী একটা ধমক দিয়ে বলে
– মেয়ে হয়ে যখন জন্মেছিস বিয়ে তো তোকে করতে হবে। আর আমাদের জন্যই তো তুই বিয়ে করতে চাস না? আমার কি আজ আছি তো কাল নেই। আর তোর মার দায়িত্ব  তুই বিয়ে করেও তো নিতে পারবি। বউমা তুমি কেনো কিছু বলছো না?
এবার আফিয়া বেগম তার মুখ খোলে
-তুই কি অন্য কাউকে পছন্দ করিস?
-না মা, তেমন কিছু না।
– তবে কেনো বিয়ে করতে চাস না। সব মায়েদের মতো আমারো আমার মেয়েদের বউ সাজতে দেখার স্বপ্ন আছে।
-মা তুমি বুজতে পারছো না। আমার বিয়ে হয়ে গেলে আমার ক্যাফে, তোমাদের কে দেখবে?
– তোর ক্যাফে আমি আর তোর ম্যানেজার বাবলু মিলে দেখে নিবো। আর এমন তো নয় যে তোকে অনেক দূরে পাঠিয়ে দিচ্ছি, বিয়ে দিয়ে একবারে পর করে দিচ্ছি নাতো তোকে। তোর জীবনটা সুখের হোক মা হিসেবে আমি তাই চাই।
– কিন্তু মা….
এবার আফিয়া বেগম পুষ্পের হাত নিয়ে নিজের মাথায় রেখে বলে
– তোকে আমার কসম। এবারের বিয়েতে যদি তুই কোন গন্ডগোল করিস তবে তুই আমার মরা মুখ দেখবি।
– মা…
কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবার পুষ্প বললো
– তবে বেশ তোমরা যা ভালো বুঝো তাই করো, আমি আর কোনো কিছুতে বাধা দিবো না।
বলেই চুপচাপ ঘর থেকে বের হয়ে যায়।
পুষ্পর এমন কথায় দাদীর মুখে একটু হাসি ফুটলো।

অফিসে গিয়েই পাপড়িকে না দেখতে পেয়ে রাইয়ান ম্যানেজারকে জিজ্ঞেস করলো
– ম্যানেজার, আজ পুষ্প আসে নি?
– স্যার, পুষ্প তো ছুটি নিয়েছে কা….
ম্যানেজারের সম্পূর্ণ কথা না শুনেই রাইয়ান বললো
– হয়েছে, আমি বুজতে পেরেছি। আপনি যান এখন।
নিজেই মনে মনে বলতে লাগলো রাইয়ান
– আজ তো বাবা-মা পুষ্পকে দেখতে যাবে। তাকে তো প্রস্তুতিও নিতে হবে তার জন্য। ছুটি তো তার লাগলেই।
এসব ভাবতে ভাবতেই মনটা কেমন নেচে ওঠে রাইয়ানের।

– কিরে ঠিকঠাক মতো পৌঁছে গেছিস বাসায়।
ফোন ওপাশ থেকে পুষ্পের কথার জবাব দিলো পাপড়ি,
– হ্যা, আমরা ঠিকঠাক পৌঁছে গেছি, আপু। তোরা সবাই কেমন আছিস??
– হুম ভালো। কিন্তু?
– কিন্তু কি?
– ঐ বিয়ে! মা আর দাদী মিলে আমাকে বিয়ে দিয়েই ছাড়বে।
– হা হা। ভালোই তো হবে। তুই গেলে বাসায় রাজত্ব করবো আমি। আমার আর কারো সাথে রুম শেয়ার করতে হবে না। মাও আমাকে বেশি বেশি আদর করবে। কতো মজা!
– কী! যা তোর সাথে আর কথাই বলবো না আমি।
পুষ্প রাগ করে ফোন কেটে দেয়।
আর ওপর পাশে পাপড়ি আর কিছু বলার আগেই ফোন কাট হয়ে যায়। পাপড়ি হাসতে হাসতে বললো
– যখন রাগ কমবে তখন নিজেই ফোন দিবি।
পাপড়িকে হাসতে দেখে নীল কাছে এসে বললো
– কিরে, একা একা হাসছিস যে?
– আরে, আপুর সাথে ফোনে কথা বলছিলাম। দাদী মনে আবার আপুর জন্য আবার কোন বিয়ের সমন্ধ এনেছে। তা নিয়ে একটু মজা করতেই রাগ করে ফোন কেটে দিয়েছে।
– ওহ, তাই বল। আচ্ছা, পাপড়ি তোর কেমন ছেলে পছন্দ?
-আমার তো একদম হিরো টাইপ ছেলে পছন্দ। যার মনটাও হিরোর মতো আর দেখতেও হিরোর মতো। যে আমাকে অনেক ভালোবাসবে। আর সবচেয়ে বড় কথা যে বিয়ের পরে আমাকে সহ আমার মা-দাদীর দায়িত্ব নিবে তাকেই বিয়ে করবো আমি।
– এমন ছেলে তোকে খুজতে হবে না। তোর আশেপাশেই এমন ছেলে দাড়িয়ে আছে।
একটু ভাব নিয়ে কথাটা বললো নীল।
– এ্যাহ, রামছাগলের মতো চেহেরা আর তাকে আমি বিয়ে করবো। আমার বয়েই গেছে।
পাপড়ির চুল ধরে একটা টান দিয়ে নীল বললো
– আমাকে রামছাগলের মতে দেখতে?
– আহ! লাগছে ছাড়।
বলতেই নীল চুল ছেড়ে দিতেই পাপড়ি বললো
– হ্যা তোকে রামছাগলের মতোই দেখতে বলেই দৌড় দিল পাপড়ি।
-কিহ! তবে রে…
বলেই নীল পেছনে দৌড় দিলো।
পাপড়ি দৌড়াতে দৌড়াতে হঠাৎ করে তার হাতে থাকা ফোনটা মেঝেতে পড়ে আছাঁড় লেগে দুখন্ড হয়ে যায়।
ফোন ভাঙ্গতে দেখে পাপড়ি ন্যাকা কান্না করে
– ভ্যা….. আমার ফোনটা শেষ হয়ে গেল।
ফোনের খন্ডগুলো হাতে নিয়ে নীলের কাছে গিয়ে বললো
– সব তোর জন্য হয়েছে। তোর জন্যই আমার ফোনটা ভাঙ্গছে।
– এ্যাহ! তোর ফোন মনে হয় আমি হাতে নিয়ে দৌড়াচ্ছিলাম যে আমার জন্য হয়েছে?
-তোর জন্যই তো আমি দৌড় দিয়েছিলাম।
– আমি কি তোকে দৌড় দিতে বলেছিলাম নাকি?
– এখন আমি বাসায় কথা বলবো কিভাবে, বসের সাথে কথা বলবো কিভাবে? ভ্যা….
-বাসায় আমার ফোন দিয়ে কথা বলতে পারিস। তবে বসের সাথে কথা বলতে পারবি না।
-বসের সাথে কথা বলতে পারবো না কেন?
– আমি ফোনে কোনো আননোন নাম্বার সেভ করি না। তোর বসের সাথে কথা বলার জন্য আমার ফোনে এতো টাকাও নেই।
বলেই চলে গেলো নীল। আর মনে মনে বলতে লাগলো
– সারাদিন শুধু বস আর বস। আমার বস এমন আমার বস ওমন। উফ! ওর মুখে ওর বসের কথা শুনলে আমার শরীরটা জ্বলে যায়। ওকি আমার ফিলিংসগুলো একদমই বুজে না। আমার আমিও ওর সামনে গেলে কিছু বলতে পারি না।

চলবে……

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে