ত্রিভুজ প্রেম পর্ব -১৯

0
1127

ত্রিভুজ প্রেম
জান্নাতুল ফেরদৌস সূচনা
পর্বঃ১৯

আয়নার সামনে বসে বসে নিজেকে দেখে খুব অবাক হচ্ছে পুষ্প। নিজের এ রূপ আগে কখনো দেখেনি। সাজলে যে তাকে খুব সুন্দর লাগে তা সে আজ উপলব্ধি করলো। আগে কখনো নিজেকে গয়নাগাটি, সাজগোজ, শাড়ি পড়ে সাজায় নি। অবশ্য জীবনে কখনো বিয়ে করবে সেটাই বা কখন ভেবেছিলো সে।

বরযাত্রী সবাই বাহিরে বসে আছে। নীলের মা, দাদী, আফিয়া বেগম সবাইকে আপায়ন করছে। পাশের বাসার লোকজনরা দরজায় উকি দিচ্ছে বরযাত্রী দেখার জন্য। পুষ্পর বিয়ে শুনে অনেকেই অবাক হচ্ছে। পুষ্প যে জীবনে কখনো বিয়েও করবে তা অনেকের ধারণার বাহিরে ছিলো।

ট্রেনের জানালা দিয়ে বাহিরের দৃশ্য দেখছে পাপড়ি। হঠাৎ নীল এসে বললো,
– পাপড়ি ধর, জেঠিমা ফোন দিয়েছে।

-হ্যালো, মা?
-কোথায় তোরা? কতদূর আসলি? এখানে তো বরযাত্রী চলে এসেছে।
– এতো মা, মাঝামাঝি আছি। ২ ঘন্টার মতো লাগবে আরো।
– কিহ! এতো দেরি? এদিকে তো বরযাত্রী সব বিয়ে পড়ানোর কথা বলছে?
– কি করবো মা? আমার হাতে তো কিছু নেই। আমাকে ছাড়া বিয়ে ঠিক করে ফেলেছো তো বিয়েটাও আমাকে ছাড়াই দিয়ে দিতে পারো।(অভিমান করে)
– এসব কি বলছিস? তোকে ছাড়া তোর বোনকে বিয়ে দিয়ে দিবো?
– হুম। এ কথাটা বিয়ের দিন ঠিক করার আগে ভাবলে ভালো হতো।
বলেই পাপড়ি রাগ করে ফোনটা কেটে দেয়। খুব রাগ হচ্ছে তার মা,দাদীর ওপর। কীভাবে পারলো তাকে ছাড়া সব কিছু ঠিক করে ফেলতে।

কাজী সাহেব চলে এসেছে অনেকক্ষণ হলো। বিয়ে পড়ানোর কথা বলছে। কিন্তু আফিয়া বেগম পাপড়ি ছাড়া বিয়ে শুরু করতে নারাজ। পুষ্পর চোখ দুটোও পাপড়িকে খুজছে বারবার। দাদী এতোক্ষণ বিষয়টা সামলে নিলেও এখন আর দেরি করতে পারছে না। এদিকে বরযাত্রীকেও নারাজ করতে চাইছে না দাদী। আফিয়া বেগমকে অনেক বুঝিয়ে সুঝিয়ে রাজি করালো দাদী আর নীলের মা।

বিয়ে শুরু হলো। বর-কনে সামনা-সামনি বসে আছে। পুষ্প নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। চোখে পানি ছলছল করছে। সবকিছু ঝাপসা দেখছে সে। রাইয়ানের চেহেরাটাও এখনো দেখেনি সে।
অপরদিকে রাইয়ান পুষ্পের দিকে দু-তিনবার তাকিয়েছে। পুষ্প-পাপড়ি যমজ বোন হওয়ায় চেহেরাও এক। আর মেকাপের কারণে চেহেরার পার্থক্যটাও ধরতে পারেনি সে। আর লজ্জার কারণে মাথাটাও নিচু করে রেখেছে রাইয়ান।

রাইয়ান কবুল বলে দিয়ে সই করে দিয়েছে বিয়ের রেজিষ্ট্রার কাগজে কিন্তু পুষ্পকে যখন কবুল বলতে বললো পুষ্প চুপচাপ বসে আছে। কান্নাগুলোর সব গলায় এসে আটকে পড়ছে পুষ্পর। কথা বলতে পারছে না। অনেক কষ্টে কাগজে সইটা করেছে। কিন্তু এখনো কবুল বলা বাকি। পুষ্পকে কোন কথা বলতে না দেখে দাদী আফিয়া বেগমকে পুষ্পের কাছে নিয়ে বসায়। পুষ্প মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে কবুল বলেই আফিয়া বেগমকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে।

-আর মাত্র একটা স্টেশন পাপড়ি, এরপরই আমরা বাসা চলে যাবো আমরা।
নীলের কথায় নীলের দিকে চোখে ছলছল পানি নিয়ে তাকিয়ে পাপড়ি বললো
– আমরা আপুর দেখা পাবো তো?
– হ্যা, অবশ্যই পাবো। পুষ্প আমাদের সাথে দেখা না করেই কি চলে যাবে নাকি শ্বশুরবাড়ি। আর যদি চলেও যায় তাহলে এখান থেকে আমরা সরাসরি ওর শ্বশুরবাড়িই যাবো দেখিস।

“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
পুষ্প কাঁদতে কাঁদতে তার অবস্থা একদম খারাপ হয়ে গেছে। পুষ্পর এ অবস্থা দেখে মি. রাশেদ দাদীকে গিয়ে বললো
– বউয়ের যা অবস্থা দেখছি, বিদায়ের কাজটা শুরু করাই ভালো। নাহলে এভাবে কাঁদতে থাকলে ওর অবস্থা আরো খারাপ হয়ে যেতে পারে।
– কিন্তু বাবা, আমি তো তোমাকে বলেছিই ওর ছোট বোনটা এখনো আসেনি। ওর সাথে দেখা না করেই কিভাবে পুষ্পকে বিদায় দিবো?
– দেখেন, বউয়ের যা অবস্থা দেখছি এভাবে কাঁদতে থাকলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়ে যেতে পারে। আর তাছাড়া কাল তো বউমাকে আবার নিয়েই আসবো তখন না হয় দুবোন দেখা করে নিবে। আর যদি তাতেও না হয় পরে বউয়ের সাথে বউয়ের বোনকেও আমাদের বাসায় নিয়ে যাবো। আমাদের এখানে গিয়ে না হয় কয়েকদিন বেড়াবে আপনার ছোট নাতনী। আপনি আর না বলবেন না বিদায়ের কাজ শুরু করুন। তাছাড়া বেয়াইন সাহেবারও তো কাঁদতে কাঁদতে অবস্থা খারাপ করে ফেলেছে।

চলে এসেছি পাপড়ি আমরা। আর কিছুক্ষণ পরই আমরা বাসায় থাকবো।
পাপড়ি আর নীল ট্রেন থেকে নেমে রিকসায় ওঠেছে।

চলবে…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে