ওই ভাবেই নিচে কিছুক্ষণ বসে রইলাম। কিন্তু বসে থেকেই কি হবে কেউ কি আসবে দেখতে না তাই নিজেই কষ্ট করে উঠে দাড়ালাম ওইদিকে বাবার খাওয়া ও টাইম হয়ে যাচ্ছে। আদি কে আর দেখলাম না কোথায় ও কথা গুলো বলে বেরিয়ে গেছে। আমি ও আর কিছু ভাববো না অনেক ভেবেছি এ ই হয়তো সব ঠিক হয়ে যাবে না কিছু ঠিক হবে না আর হয় ও নি চার মাসের উপরে হয়ে গেছে আদির মধ্যে আমি কোন পরিবর্তন দেখি নি।
এই কয়েকদিন একটু বিশ্বাস ছিলো আমাকে ভালো বাসে কিন্তু তাও মিথ্যা হয়ে গেল। ভালোবাসলে ডিবোসের কথা বলতে পারতো না। বাড়ির সবার কথা অনেক মনে পরছে অনেক। একটা ফোন ও নেয় যে একটু কথা বলবো। বাথরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এলাম আয়নার সামনে দাড়িয়ে আছি কপালে কেটে গেছে। কিছু সময় দেখে বাদ দিলাম রান্না করতে গেলাম। রান্না শেষ করে বাবার রুমে খাবার নিয়ে গেলাম।
বাবা চোখ বুজে ছিলো আমার যাওয়ার সাথে সাথে চোখ খুলে তাকালো।
বাবা; কি রে সকালের পর আর এলি না জে?
আমি : আসলে
বাবা: এই তোর মাথা কি হয়েছে রে; দেখি এদিকে আয় তো!
আমি : ও কিছু না বাবা এমনি
বাবা: আমার থেকে কিছু লুকাবি না। আমি তোকে ছেলের বউ না মেয়ে ভাবি তাই বাবার কাছে বলবি না।
আমি : মিথ্যা কোথায় বললাম।
বাবা: তাহলে বল কি হয়েছে ব্যাথা পেলি কি ভাবে
আমি : ( কি করে সত্যি কথা বলবো না সত্যি টা বলা যাবে না) বেখেয়ালে পরে গিয়েছিলাম।
বাবা: একটু দেখে চলবি তো কি হয়েছে দেখেছিস। অনুটাও এমন ছিলো একটু ও সাবধানে চলাফেরা করতো না খালি
আর বলল না কিছু আমি চিন্তা পরে গেলাম আবার অনুটা কে বাবার দিকে তাকিয়ে দেখি চোখ দিয়ে পানি পরছে।
আমি : বাবা অনু কে
বাবা: বাদ দে ওইসব এদিকে এসে বস তো আমি ওষুধ লাগিয়ে দিচ্ছি
আমি : তুমি খেয়ে ঔষধ খাও তো আমি পরে লাগিয়ে নেব নি।
আমার কথা শুনলোই না জোর করে ঔষধ লাগিয়ে দিলো। নিজের আববুর মতো করে আদর করে কিন্তু অনু নাম টা মাথায় থেকে যাচ্ছে না কে এই অনু।
আর আদি বা এমন অদ্ভুত আচরণ করলো কেন ওই রুমে যাওয়াতে কি আছে। কেন জানা মনে হচ্ছে ওই রুমে গেলে আমি অনেক প্রশ্নের উওর পাবো। ওই রুমে আমাকে যেতেই হবে কথা গুলো রুমে বসে ভাবছিলাম।
কারো রুমে প্রবেশে বাস্তবে ফিরলাম,
তাকিয়ে দেখি আদি চোখ মুখ ফুলে আছে এসে একবার আমার দিকে তাকিয়ে বাথরুমে চলে গেল। আমি একবার তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিয়েছি। সব সময় খারাপ ব্যবহার করে আমি কথা বলি তবুও এবার আর না থাক তুই তোর মতো।
আনকেয়ার ভাব নিয়ে বসে আছি। আদি ফ্রেশ হয়ে এসে খাটের কোনায় বসল একবার আমার দিকে তাকায় তো একবার ফোনে দিকে তাকায়। অনেক ক্ষণ হয়ে গেল ওই ভাবেই বসে আছে আমিও কি করবো টপ করে শুয়ে পরলাম এটা হয়তো ভাবে নি আমি এখন শুয়ে পরবো। কারণ আদি খাওয়ার আগে এভাবেই বসে আমি খেতে ডাকলে ই খেতে যায় আজ আর ডাকছিনা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
আমি আর উঠি নি আদি ও ডাকে নি মাগরিবের আযান শুনে জাগানা পেলাম আসে পাশে তাকিয়ে আদিকে দেখতে পেলাম না।
পরদিন
আদি সকাল সকাল ঢাকা গেল। ওই অফিসে যেতে হবে কোন এক দরকারে আমি তো আর কথাই বলী নি।
এই সুযোগ ওই রুমে যাওয়ার দেখতে হবে কি আছে।
রুমে সামনে দাঁড়িয়ে আছি ব্যথতার চোখ নিয়ে কারণ সামনে তালা জুলানো সিউর আদির কাজ এটা। কি করা যায় এখন ঢুকবো কি করে। আবার রুমে এসে সব জায়গার চাবি খুজতে লাগলাম। না কোথাও নাই আদি সকালে যে র্শাট পরে ছিলো ওইটা সোফায় ছিলো কি মনে করে যে ওইটা হাতে নিলাম।পকেটে পেয়ে গেলাম চাবিটা খুশিতে আমার নাচতে মন চাইছে। এখন।
দ্রুত চাবি নিয়ে ওই রুমে ঢুকলাম। লাইট অন করে বাচ্চাদের রুমের মতো একদম পুরো রুমে পুতুল দিয়ে ভরা। আমি কি পাবো এখানে আর রুমটা কার এঘরে আসার জন্য আদি ঐতো রিয়েক্ট করলো কেন। কিছু মাথায় আসছে না। দেয়ালে একটা ছবির দেখে অবাক হলো একটা মেয়ের ছবি কে এই মেয়ে আমার মনে হচ্ছে চিনি কিন্তু কোথায় দেখেছি।
কিছুক্ষণ ভেবেই মনে পরে গেল এই মেয়ের ছবিই তো ভাইয়ার ফোনে দেখেছিলাম হুম নাম অনু বলেছিলো কিন্তু এখানে এই মেয়ের ছবি কেন আদির সাথে খি সম্পর্কে তার।
একটা ডাইরি চোখে পরলো কৌতুহূল হয়ে ডাইরি টা হাতে নিলাম। অনুর ডাইরি কিন্তু এটা এখন পরা যাবে না ডাইরি টা আমি নিয়ে যাই আবার পরে রেখে যাবো নি। হঠাৎ বইয়ের ভেতরে কয়েকটা পেজ দেখতে পেলাম। পেইজ গুলো বের করে হাতে নিলাম এটা তো এই ডাইরি পেজ এইখানে কেন। ছেরা হয়েছে মনে হচ্ছে। আমি ওই পেজ গুলো ও নিয়ে এলাম।
চলবে…….
#ধোঁকা
#Tanjina_Akter_Misti
#part 14
রান্না শেষ করে বাবার কাছে গেলাম এখন বাবা অনেক টা সুস্থ হাটা চলা করতে পারে। বাবাকে খাইয়ে দিয়ে এলাম তিনটার মতো বাজে আমি ও খেয়ে নিলাম। এখন রুমে বসে আছি একবার ডাইরি টা পরার কথা ভাবছি তো আরেকবার আদির কথা ভাবছি এই বুঝিএসে পরে। না আর বসে থাকতে ভালো লাগছে না। উঠে ডাইরি টা নিয়ে বসলাম।
এখানে তো আদির কথা ও আছে তার মানে অনু আদির ই বোন এতো দিনে সম্পর্ক ছিলো আমি জানতে ই পারি নি। ডাইরে পরে এটা বুঝতে পারলাম এই সেই মেয়ে যাকে ভাইয়া ভালোবাসতো কিন্তু সে কোথায় এখন। বিয়ের পর তো কখনো দেখি নি আর এখানে আসার পর ও না। ভাইয়া তো আর কিছু বলে নি অনেক ডেসপারেড হয়ে গেছিল সেই ঘটনা পর। এখানে তো আমাদের বাড়ি যাবে পযর্ন্ত আছে। তাহলে আদি কি এই ডাইরি পরে ই ভাইয়াকে ভুল বুঝছে। না আমাকে ওর ভুল ভাঙতে হবে কিন্তু কারণে টা তো আমার জানতে হবে। আর যদি অনুর সাথে একবার আমার দেখা হতো ওই তো বলতে পারতো ।
হঠাৎ ডাইরির ছেরা পেজের কথা মনে পরলাম হুম ওই খানে কিছু থাকতে পারে। ওই পেজ গুলো নিয়ে পরত লাগলাম,
অনু সাতটা পযর্ন্ত ওইখানে বসে রইল না মেঘের আসার নাম গন্ধ ও নেয়। রাগ হচ্ছে প্রচণ্ড বারবার কল করছি কল ও রিসিভ করছেনা এখন ফোনটা ও বন্ধ বলছে। কি করবো এখন রাত ও হয়ে গেছে বাড়িতে ও তো বলে এসেছি সামিয়াদের বাড়ি যাব কিন্তু এখানে থেকে আমাদের বাড়ি কাছে সামিয়াদের বাড়িই দূরে কিন্তু এখন বাড়ি যাওয়া যাবে না।
সামিয়াকে কল করে জানিয়ে দিলো ও আসছে সামিয়া অনেক কিছু জিগ্গেস করতে চেয়েছিল কিন্তু অনু বলেছে ও এসে সব বলবে। কল কেটে দিয়ে উল্টো দিকে যেতে লাগল। সামিয়াদের বাড়ি ওই দিকেই।
হঠাৎ পেছনে কারো পায়ে আওয়াজ পেলাম বারবার পেছনে তাকাসসি কিন্তু কাউকে দেখছি এখন আমার ভয় করছে কিন্তু কি করবো ভয় করলে ও এখন যত দ্রুত সম্ভব সামিয়াদের বাড়ি যেতে হবে।
রাস্তাটা পুরো জন শূন্য কোন মানুষের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে না যত এগিয়ে যাচ্ছি মানুষ ও কম দেখছি। আর একটু গেলে ই অটো ইসটান্ড ওই খানে যেতে পারলে আর চিন্তা নেই একেবারে সামিয়াদের বাড়ি।
ভয়ে ভয়ে এগিয়ে যাচ্ছি হঠাৎ কেউ পেছনে থেকে আমার মুখ চেপে ধরলো আমার চোখ মুখ বেধে দিলো আমি তো ছুটার জন্য ছটফট করছি কিন্তু ছুটতে পারছি । আমি কিছু দেখতে ঔ পারছি না কারণ আমার চোখ বাধা তারা আমাকে মনে হয় গাড়িতে উঠিয়েছে। কিছু ছেলেদের কণ্ঠ শুনলাম তারা বাজেকথা বলছে এখন আমি বুঝতে পারছি এরা খারাপ লোক আমার সাথে কি খারাপ কিছু করবে আমি নিজকে বাচাবো কি ভাবে। ভয় আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে নরা চরা করছি চিৎকার করতে চাইছি কিন্তু আমার হাত মুখ চোখ সব বাধা কি করবো।
শেষ রক্ষা আর করতে পারি নি নিজেকে আমি হেদিন ওই লোক গুলো আমার সব শেষ করে দিয়েছিল।
এইটুকু পরে আর পরার মতো অবস্থায় নেই মেঘনা চোখ দিয়ে অধরে পানি পরে যাচ্ছে এমন খারাপ কিছু আছে কল্পনা ও করে নি। আর পরে নি ডাইরি সামনে নিয়েই ভাবছে সেইদিন ভাইয়া কেন যায় নি।
সেদিন মেঘ খুশি মনে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় বাড়িতে সবাইকে সব জানিয়ে সবাই ফ্রি ছিলাম বলে ভাইয়া তার ভালোবাসার কথা জানিয়ে দেয়।
সেদিন আমি আর মা তো সেই খুশি ভাইয়া ও খুশি মনেই যায় কিন্তু আমার অপেক্ষা করতে করতে রাত দশটা বেজে যায় কিন্তু তার কোন খবর নেই ফোন ধালে ও ধরে না। সারারাত পার হয়ে যায় কোন খবর আসে পা সবাই চিন্তায় পরে যায় পাচঁটার দিকে একটা ফোন আসে সেটা ভাইয়ার নাম্বার দেখেই তো আমি মা আববু খুশি হয়ে ফোন রিসিভ করি সাথে রেগে ও যে সারারাত কেন যোগাযোগ করলো না।
কিন্তু এমন একটা খবর শুনে পায়ের নিচে থেকে আমাদের মাটি সরে যায় ভাইয়ার এক্মিডেন্ট হয়েছে। ভাইয়া অবস্থা অনেক খারাপ থাকে মাথায় আঘাত পাওয়াতে একমাস অসুস্থ থাকে যখন জ্ঞান ফিরে শুধু একটা নাম বারবার বলে অনু।
হঠাৎ কেউ আমাকে টেনে দার করিয়ে গালে সজোরে থাপ্পড় বসিয়ে দেয়। আমি ছিটকে নিচে পরে আগের ব্যাথা পাওয়া জায়গায় আবার ব্যাথা পেয়ে আহ করে উঠি। উপরে তাকিয়ে দেখি আদি অগ্নি দৃষ্টি তে তাকিয়ে আছে।
আদি চলে গেল। ওকে নিয়ে ভেবে আর কি করবো ওর কাছে তো এখন আমি কিছুই না। কষ্ট পেয়ে কোন লাভ নেয় এর কারণ জানতে হবে। কথা গুলো ভেবে রুমে এসে রেডি হয়ে নিলাম। আদির পর পর আমি বেরিয়ে পরলাম।
দুই ঘন্টা লাগল। বাড়ি এসে আমি তো অবাক কারণ দরজা ফাক করা। আমি তো দরজায় তালা দিয়ে গেছিলাম দরজা খুলল কে। ভাবতে ভাবতে ভিতরে ঢুকে দেখি আদি ডয়িংরুমে মাথা নিচু করে বসে আছে। কেমন জানি চিন্তিত দেখাচ্ছে পুরো ফর্সা মুখ লাল হয়ে আছে।
চিন্তায় পরে গেলাম আমি তারাতারি আদির পাশে গিয়ে দাড়ালাম।
– আদি কি হয়েছে তোমার এমন দেখাচ্ছে কেন! আর এই সময় তুমি বাড়িতে কেন অফিসে যাবে না?
– এতো সময় লাগে কারো?( আমার দিকে তাকিয়ে )
– (আমি তো ভয় পেয়ে গেলাম চোখ গুলো ও লাল দেখাচ্ছে) কি হয়েছে আদি তোমার?
– আববুর এক্মিডেন্ট হয়েছে?
বলেই বাচ্চাদের মতো পাগলামি করতে লাগল। এর জন্যই চলে এসেছে। আমি কি বলে সান্ত্বনা দেবো বুঝতে পারছি না আমি আদির পাশে বসলাম। আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই আদি আমার দিকে ঘুরে জরিয়ে ধরে বাচ্চাদের মতো কাদতে লাগল,
– আমার আববু ছাড়া আর কেউ নেই মেঘনা। আববুর যদি কিছু হয়ে যায় আমি বাচতে পারবো না। আববু কে কতো বলি এখানে চলে এসো সে রাজি হয় না। এখন আমি কি করবো আমার কিছু ভালো লাগছে না নিজেকে অনেক অসহায় লাগছে।
আদি নানা কথা বলে যাচ্ছে এমন কথা শুনে ও হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছি এখন ওর ওখানে যাওয়া উচিত কিন্তু ও বুঝছে না। আমি অনেক চেষ্টা করে ওকে নিজের থেকে ছারিয়ে দাড়ালাম। বাবা চট্টগ্রাম থাকে আমাদের এখন সেখানেই যাওয়া উচিত। সব কিছু গুছিয়ে আদি ও নিজেকে অনেকটা স্বাভাবিক করেছে দুজনে বেরিয়ে পরলাম।
হসপিটালে বসে আছি আধা ঘন্টা হলো এখানে এসেছি। আদি তো এটা ওটা এনে দিচ্ছে। বাবার অবস্থা একটু খারাপ বেশি বয়স মানুষ এজন্য প্রবলেম বেশি হয়েছে। অপারেশন করে ডাক্তার জানাল এখন ভালো কিন্তু ওতোটাও না।
দশটার দিকে আদি আমাকে একটা বাসায় নিয়ে এলো। আমরা সোজা হসপিটালে গিয়েছিলাম। রাতে অন্ধকারের কিছুই বুঝলাম না কোথায় আছি। ভিতরে ঢুকে হা করে তাকিয়ে আছি এতো সুন্দর সাজানো গুছানো বাড়িটা জাস্ট ওয়াও। চারপাশে তাকিয়ে দেখছি আদির পেছনে পেছনে একটা রুমে এলাম। ভিতরে আদির একটা ইয়া বড় ছবি দেখেই বুঝলাম এটা আদির রুম তাহলে এটা আদিদের বাড়ি।
আদি এসেই ফ্রেশ হয়ে নিলো আমি ও ওর পরে ফ্রেশ হলাম। এখন খিদে পেয়েছে সারাদিন আর কিছু খাওয়াহয় নি। আদিকে দেখলাম চোখ বুজে শুয়ে আছে ও তো কিছু খায় না নিশ্চয়ই খিদে লেগেছে।
আমি বেরিয়ে রান্না ঘর খুজতে লাগলাম আর পেয়ে ও গেলাম। কি রাধবো ভাবতে ভাবতে রুটি আর ডিম ভাজলাম তারাতারির জন্য। রুমে নিয়ে এলাম খাবার আদির মনে অবস্থা ভালো নেয়।
খাবার রুমে নিয়ে এলাম আদির চোখ তো বন্ধ ঘুমিয়ে পরশো নাকি।
– আদি
– নিশ্চুপ
– আদি উঠো খেয়ে নাও( শরীরে ধাক্কা দিয়ে)
আদি চোখ মেলে তাকালো কিন্তু খাবে না বলছে। আমি বারবার বলছি সে খাবে না। জোর করে উঠে বসালাম তারপর মুখে খাবার ডুকিয়ে দিলাম। অনেক জোরাজরি করতে হয়েছে আমাকে কিন্তু আমি হার মানি নি বেশি খাওয়াতে না পারলেও অল্প খেয়েছে।
আমি ও খেয়ে নিয়ে সবগুছিয়ে রাখলাম। আদি তো ওর পাশে আমাকে শুতে দেবে নাএখন শুবো কোথায়। আমি তো এখানে কিছু চিনি ও না। নিচে শুওয়ার জন্য বিছানা করতে লাগলাম। হঠাৎ আদি আমাকে আটকে বলল ওর সাথে শুতে কিছু বুঝলাম না কিন্তু মন থেকে অনেক খুশি হয়েছি।
চলবে…???
#ধোঁকা
#Tanjina_Akter_Misti
#part-12
আদি কি আমাকে মেনে নিচ্ছে তাহলে হয়তো। নয়লে ওর সাথে শুতে বলতে না দাড়িয়ে দাড়িয়ে কথা গুলো ভাবছিলাম। সব উঠিয়ে উপরে শুতে গেলাম আমার সব আশায় জল ঠেলে আদি মাঝে একটা কোল বালিশ রেখে অন্য দিকে ঘুরে শুয়ে পরল,,,
আমি আর কি করব আমি ও শুয়ে পরলাম। মাঝরাতে হঠাৎ মনে হচ্ছে কেউ আমার কপালে নরম কিছু দিচ্ছে কারো কান্নার আওয়াজ কিছু বলছে। আমার তো ভয় করছে ঘুমের রেশটা ভালো করে কমে এলো হুম এখন কথা ভালো করে বুঝতে পারছি। এটা তো আদির কণ্ঠ এতো রাতে আদি কি বলছে।
আদি অনেক কিছু বলছে ওর চোখের পানি আমার হাতে ও পরছে এতে না তাকিয়ে ও বুঝতে পারছি ও কান্না ও করছে এতো কিসে কষ্ট ওর।
আর বলছে আমাকে নাকি ভালোবাসে কিন্তু ভালোবাসলে আবার কিন্তু কেন কিছু গরবর আছে আমাকে সেটাই জানত হবে। কেন নিজের সাথে আমাকে কষ্ট দিচ্ছে কথা গুলো ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে পরেছি বুঝতে পারিনি।
সকালে
ঘুম থেকে উঠে নরতে পারছি না কেউ আমাকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেধে রেখেছে। কানে কারো হার্টবিটের শব্দ ও আসছে কিছু বুজতে পারছি না কি হচ্ছে। আস্তে আস্তে চোখ মেলে তাকালাম,,, এতো আদি আমাকে একদম নিজের সাথে জরিয়ে রেখেছে। বিয়ের প্রথম দিন আর আজ এভাবে ঘুম থেকে উঠে আদিকে এতো কাছে দেখে অনেক ভালো লাগছে। এখন আর আমার চিন্তা নেই আদি যে আমাকে ভালোবাসে সেটা আমি জেনে গেছি ও আমাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য শিকার করে না। কতো নিষ্পাপ লাগছে দেখতে একেবারে বাচ্চাদের মতো করে জরিয়ে আছে মনে হ য় ছেড়ে দিলেই পালিয়ে যাবো। আমি ওর মুখে হাত দিয়ে কাছ থেকে দেখছি কি মনে করে যেন ওর গালে একটা চুমু দিয়ে বসলাম ও জেগে গেলে বা আর কখনো সুযোগ পাবো নাকি তাই মনের ইচ্ছে পূরণ করে নিলাম।
হঠাৎ আদি নরে উঠল আমি সঙ্গে সঙ্গে চোখ বুজে ফেললাম,,,
ও হয়তো ভাবছে আমি ঘুমিয়ে আছি আমাকে সাবধানে নিজের থেকে সরিয়ে উঠে গেল আমি চোখ ফাঁক করে সব দেখেছি কিন্তু কিছু বলিনি আগে আমার জানতে হবে এমন করার কারণ তারপর সব।
এখানে এসেছি তিন দিন হলো আজ বাবাকে ও বাড়ি নিয়ে আসা হয়েছে। এখন অনেক টা সুস্থ আমাকে প্রথমে চিনে নেই পরে আদি সব বলেছে। অবাক কর্র বিষয় উনি একটু ঔ রাগ করে নি এতো দিন হলো তাকে না জানি বিয়ে করেছে সে কিছু বললো না। আমি তো ভেবেছি সে হয়তো সব জানে কিন্তু এখন বুঝলাম কিছু জানতো না। আদি বিয়ের আগে বলেছিল বাবাকে সব জানিয়েছে কিন্তু সেটা মিথ্যে ছিলো।
বাবাকে সকালের নাস্তা খাইয়ে বাড়িটা ঘুরে দেখতে ইচ্ছে হলো তিন দিন হলো এসেছি। বাড়িটা ঘুরে দেখা হয়নি হসপিটালে যেতে হয়েছে বাড়িতে সময় ই কাটায় নি। সবার আগে ছাদে চলে গেলাম ছাদটা অনেক সুন্দর নানা রকম ফুল দিয়ে ভরা একটা দোলনা ও আছে আমি গিয়ে দোলনায় বসলাম অনেক সুন্দর তো এগুলো করেছে কে। আদি কি ফুল পছন্দ করে নাকি বাগানেও ফুল ছাদে ও ফুল। আদির পছন্দ মনে হয় কিন্তু ও যে বলেছিল ওর ফুল বেশি পছন্দ না। তাহলে এতো ফুল গাছে কেন বুনে রেখেছে। চিন্তা য় পরে পরে গেলাম কিন্তু কিছুই মাথায় আসছে না।
ছাদে থেকে নেমে চোখ পরলো আদির পাশের রুমে এই রুমটায় একবার ও যাওয়া হয় নাই একবার ঘুরে আসি ঘরের দিকে যেতে লাগলাম দরজা খুলে ঢুকে গেলাম। অন্ধকার রুমটা লাইট অন করব এমন সময় ঝরের গতিতে কেউ হেচকা টান দিয়ে রুমের বাইরে নিয়ে এলো আমি তো কিছু ই বুঝতে পারলাম না কি হলো। আদি আমাকে রুমে এনে ঠাস করে মেঝেতে ফেলে দিলো পরে গিয়ে মাথায় একটু ব্যাথা ও পেলাম। অবাক হয়ে আদির দিকে তাকিয়ে আছি,,,
আদি: তোর সাহস কি করে হলো ওই রুমে ঢুকার?( রেগে)
আমি কিছু বুঝতে পারছি না এতো রাগার কি আছে সামান্য একটা রুমে গিয়েছি বলে।
আদি: কি হলো কথা বলছিস না কেন। আর যদি ওই রুমে যেতে দেখি সেই দিনই চলে যাবি বাড়ি ছেড়ে এমনিতে ও আর বেশিদিন থাকতে পারবিনা কারণ খুব শিগগিরই ডিবোস পেপার আমার হাতে চলে আসবে।
ডিবোসের কথা শুনে তো আমি আতকে উঠলাম, আদি আমাকে ডিবোস দিবে আদির আর কোন কথা আমার কানে যাচ্ছে না শুধু একটা কথায় কানে বাজছে ডিবোস এতো কিছু করে ও কি আমি আদির মন ঘুরাতে পারলাম না। কি করে বলতে পারলাম এই কথা টা আদি।
অনু লজ্জায় লাল হয়ে আছে। মেঘ পলকহীন তাকিয়ে আছে অনুর দিকে। মেঘ মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে কারণ আজ অনু তাকে অনেক বড় সারপ্রাইজ দিয়েছে নীল কালারের শাড়ি পরে এসেছে। অপূর্ব লাগছে কিছুতেই চোখ সরানো যাচ্ছে না।
মেঘ হাত উঠিয়ে অনুর খোলা চুল গুলো মুখের উপর থেকে কানে গুজে দিল।
– আজ কি আমাকে পাগল করতে এভাবে এসেছো।
– কিহ?
– তুমি তো বলেছিলে তোমার শাড়ি পছন্দ না। কখনো পরতে ও না তাহলে আজ পরলে যে!
– আমার পছন্দ না কিন্তু তোমার তো পছন্দ।
– হুম
– তোমার জন্য আমি ও পছন্দ পাল্টে ফেললাম;
– সত্যি !
– না মিথ্যা সব;
– ধুর।
মেঘ রাগ করে অন্য দিকে তাকাল। অনু বুঝেছে রাগ করেছে কি করে রাগ কমাবে ভাবছে। হঠাৎ করে অনু মেঘ কে জরিয়ে ধরলো। মেঘ তো অনুর জরিয়ে ধরায় শক হয়ে আছে।
– কি হলো এতো শক হওয়ার কি আছে তোমাকে কি জরিয়ে ও ধরতে পারবো না নাকি।
– তোমাকে আজ একটু বেশি রোমান্টিক লাগছে।
– তাই আর আমার কাছে তোমাকে হাবাগুবা মনে হচ্ছে?
– কি দাড়াও দেখাচ্ছি?
বলেই মেঘ অনুকে ধরবে কিন্তু তা কি আর সম্ভব অনু তো উঠে দাড়িয়ে দৌড়। মেঘ ও উঠে অনুর পেছনে দৌড়াতে লাগল ধরার জন্য।
সারাদিন অনু মেঘের সাথে সময় কাটায় । তিনটার দিকে বাড়ি ফিরে আসে।
দেখতে দেখতে ছয়মাস চলে গেল মেঘ আর অনুর রিলেশনের।
রাতে
মেঘ অনুর সাথে কথা বলছিলো হঠাৎ বাড়ি থেকে কল আসে। ওয়েটিং কল চালু থাকায় বুঝতে পারে রাত তখন বারোটার কাছাকাছি এতোরাতে বাড়িতে থেকে ফোন দেখে মেঘ প্রচণ্ড অবাক সাথেভয় ও পায়।
– অনু ফোন রাখ তো?
– কেন কি হয়েছে। তোমার কি আবার ঘুম পাচ্ছে ঘুম পেলেও আমি ফোন রাখবো না প্রতি দিন তুমি রাতে দশটা পযর্ন্ত কথা বলেই রেখে দাও আজ সারারাত কথা বলতে হবে।
– অনু বাড়ি থেকে কল আসছে। এতো রাতে হঠাৎ বাড়ি থেকে কেন কল এলো চিন্তা হচ্ছে।
– ওহ সরি আচ্ছা তুমি বাড়িতে কথা বলে দেখো আর আমাকে কিন্তু জানিয়ও। আমি ঘুম আসবো না তোমার ফোন না আসা পযর্ন্ত।
– আচ্ছা রাখি!
বাড়িতে
ফোন রিসিভ করেই অপর পাশে থেকে কান্না আওয়াজ শুনা গেল। মেঘনা কাদছে কান্না শুনে তো আর ও ভয় পেয়ে গেলাম।
– মেঘনা কি হয়েছে কাদছিস কেন বল আমাকে;
– ভাইয়া আববু
– কি হয়েছে আববুর বল?
হঠাৎ মায়ের কণ্ঠ পেলাম। মেঘনাকে বকছে
– হ্যালো মা কি হয়েছে;
– কিছু হয়নি বাবা তুই ফোন রাখ কাল কথা বলবো নি। আমরা ঘুম আসবো।
বলেই ফোন কেটে দিল মা কিন্তু আমি বিশ্বাস করতে পারছি না কিছু তো অবশ্যই হয়েছে নয়লে মেঘলা এতো রাতে ফোন দিত না। আর কান্না বা করলো কেন আম্মু এখন ও জেগে আছে কেন। চিন্তায় আর অনু কল করার কথা মনেই ছিলো ফোনের রিংটনে বাস্তবে ফিরলাম তাকিয়ে দেখি অনু কল করেছে।
– হ্যালো
– তোমাকে না বললাম আমি জেগে থাকবো কলের জন্য তুমি কল করলে না কেন।
– মনে ছিলো না!
– বাড়ির খি খবর কেন ফোন করেছিল জানো?
– না কিছু বলল না কিন্তু আমার বিশ্বাস কালো কিছু হয়েছে।
– এখন কি করতে চাও।
– কাল বাড়ি যাব।
– তোমার তো ক্লাস আছে?
– তবুও মিস দিয়েই যেতে হবে বাড়ির জন্য চিন্তা হচ্ছে। না গিয়ে জানা পযর্ন্ত আমি শান্তি পাবো না।
– আচ্ছা যা ভালো বুঝ করো আর এখন এতো চিন্তা করো না। ঘুমিয়ে পরো।
– আচ্ছা।
পরদিন
মেঘ বাড়ি এলো আর জানতে পারলো আববু হার্টএ্যাটাক হয়েছে। সবাইকে বকলো না জানানোর জন্য দুইদিন হয়েছে অথচ তাকে জানানো হয়নি । এখন একটু সুস্থ আছে একদন থেকে আবার চলে এলো মেঘ আর এও বলে এলো নেক্মট যেন কিছু না বলে করে।
ভালোই কাটছিল সবকিছু কিন্তু ভালোটা বেশি দিন গেল না।
একদিন
– মেঘ তোমাদের বাড়িতে আমাকে নিয়ে যাবে।
– মানে তুমি যাবে?
– হুম
– বউ করে একবারে নিয়ে যাবো চিন্তা করো না।
– না আমার এখনই যেতে ইচ্ছে হচ্ছে নিয়ে চলো না প্লিজ। তুমি কি আমাকে নিয়ে যেতে ভয় পাচ্ছো।
– কি বলছো ভয় পাবো কেন
– তাহলে নিয়ে যেতে চাইছো না কেন?
– তোমার জন্য !
– আমার জন্য ( অবাক হয়ে)
– হুম আমাদের বাড়িতে যেতে হলে তোমাকে থাকতে হবে কিন্তু তুমি তোমার বাড়িতে কি বলে যাবে।
– সেটা আমি ভেবেই রেখেছি তুমি নিয়ে যাবে নাকি তাই বলো।
– আটষাট বেধেঁই নেমেছো আচ্ছা কিন্তু আমার এক্মমের পর।
– আচ্ছা।
আজ মেঘের সাথে যাবে অনু সকাল থেকে গুছগাছ করছে। মেঘ ঢাকা থেকে নিতে আসবে ও এক সপ্তাহ আগে গিয়েছে বাড়ি আমার তখন বাড়িতে মানাতে পারি নি। আজ অনেক কষ্ট করে সামিয়াদের বাড়ির যাবে বলে রাজি করিয়েছি।
চারটা থেকে বসে আছে অনু অথচ এখন পযর্ন্ত মেঘ এসে পৌঁছায় নি। ওর ৪:৩০ এখানে উপস্থিত থাকার কথা ছিলো এখন পাচঁটা বাজে।
মেঘকে ফোন দিলাম।
– হ্যালো কই তুমি কখন থেকে বসে আছি তোমার জন্য।এখন এসে পৌঁছালে না কোথায় আছো?
– সরি আসলে রাস্তায় অনেক জাম গো তাই লেট হচ্ছে।
– যাও এখন ঝগড়া করবো না তারাতারি আসো তারপর।
চলবে,,,
#ধোঁকা
#Tanjina_Akter_Misti
#part_10
সৃতির পাতায় থেকে বাস্তবে ফিরলো আযানের শব্দে মেঘ। যতবার অতীত মনে করেছে সময় কখন চলে গেছে টেরই পায় নি। মেঘ চোখ মুছে উঠে গোসল করে নিলো তারপর নামাজ পরলো। আবার ভাবতে বসলো সেদিন তো আমি যেতে পারি নি অনুর কাছে কি ঘটেছিলো যে ও সুসাইড করলো।
এদিকে
মেঘনা রান্না করতেছে সকালে উঠে এখন রান্না টা ভালোই করে। ওতো ভালো হয়না খেতে কিন্তু খারাপ হয়না। হঠাৎ আদি আওয়াজ কানে এলো এই শুরু হয়েছে চিল্লাচিল্লি।
আদি এসে খাবার টেবিলে বসেছে আমার রান্না শেষই। খাবার নিয়ে ওর সামনে রাখলাম সব সময় যেমন মুখটা খারাপ করে আজ ও তাই করলো। বিশ্বের সব চেয়ে খারাপ রাধি আমি এটাই বুঝায়।
এতো যেহেতু খারাপ রাধি আসিস কেন খেতে বাইরে খেতে পারিস না। সব সময় এই খারাপ খাবারের জন্য চিল্লাচিল্লি করতেই থাকে। ( রেগে বিরবির করছি)
– যতই বিরবির করে বকো না কেন তোমাকে রান্না করতেই হবে। খারাপ হলেও তোমার রান্না অন্য সব কাজ করতে হবে? ( খেতে খেতে )
– করব না কি করবি? ( রাগের মাথায় কথাটা বলে ফেলেছি কিন্তু আদির দিকে তাকিয়ে আমি ভয়ে শেষ আগুন চোখে আমার দিকে তাকিয়েছে মনে হচ্ছে চুখ দিয়েই গিলে ফেলবে)
– কি বললে? ( রেগে)
– কই কিছু বলিনি তো ! আমি তো বললাম সব সময় রান্না করতেই থাকবো একদম রান্না ঘর থেকে বেরই হবো না( ভয়ে ভয়ে)
– তোমাকে আমি সারাদিনে রান্না করতে বলি নি। সব কাজই করতে হবে বাড়ির। মনে থাকে যেন।
আমি আর কিছু বললাম না চুপ করে র রইলাম। আদি খাবার খেয়ে চলে গেল আমাকে একবারের জন্য ও খেতে বললো না। শুধু আজ নয় কখনোই এই খুজ নেয় না আমি খেয়েছি কিনা। এতো টাই অবহেলা করে। অনেক সময় অভিমান করে না খেয়ে থাকি কিন্তু এতে লাভ নেয়।
যার সাথে অভিমান করি সেই তো বুঝে না বুঝার চেষ্টা ও করে না। আদির চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে চোখের জল ফেললাম এই জল আদির চোখে পরে না আর কখনো পরবে কিনা তাও জানি না। অভিমান বাদ দিয়ে খেয়ে নিলাম। সারাদিন এটা ওটা ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিলাম। রাত নয়টা বাজে আগে আটটার দিকেই চলে আসতো আদি ইদানিং অনেক দেরি করে আসে আমি প্রতিদিন ই ওর জন্য অপেক্ষা করতে থাকি সোফায় বসে মাঝে ঘুমিয়ে ও পরি কলিং বেলের শব্দে ধরফরিয়ে উঠি।
আজ ও এখন পযর্ন্ত আসে নি সারাটা দিন আমি বাড়িতে কি করি কি ভাবে, আছি জানার প্রয়োজন বোধ করে না। না ফোন আছে একটা ফোনের কথা বলেছিলাম বলে যেদিন বাড়িতে থেকে চলে যাবে সেদিন দেবো আমি আর কিছু বলি নি যত অত্যাচার করোক আমি যাবো না।
এগারো টার দিকে বাড়ি আসলো আদি দরজা খুলার সাথে সাথে রুমে চলে গেল। আমি পেছনে পেছনে আসলাম। খাবে নাকি জানার জন্য সে বলল খাবে না খেয়ে এসেছে। আমি যে প্রতিদিন না খেয়ে অপেক্ষা করি সেটা বুঝল ও না খেয়ে আসছে শুনে আর খেলাম না আমি ও খাবার ফিরিজে রেখে আমি শুয়ে পরলাম। আদি আর আমি আলাদা শুয়।
সারারাত চোখের জল ফেলে কাটিয়ে দিলাম। সকালে উঠে রান্না করে নিলাম। আদি খেয়ে অফিস যাবে তখন বললাম,
– আদি আমার একটু শপিং এ যাওয়ার লাগতো?
– কেন
– কিছু কেনার ছিলো। তুমি কি আজ একটু আগে আসতে পারবে!
– তোমার যাওয়া সাথে আমার আগে আসার কি সম্পর্ক;
– আমি আর তুমি যাবো তো আগে না আসলে যাবে কি ভাবে।
– আমি কোথায় যেতে পারবো না তোমার দরকার তুমি যাও।
বলেই কয়েক কদম এগিয়ে আবার ফিরে এসে টাকা দিয়ে চলে গেল।
– আববু, আম্মু, হাসেম কাকা কে কোথায় আছে। তারাতারি আস এদিকে আমি চোর ধরেছি,,
বলেই মেয়েটি আমার হাত জাপটে ধরলো। আমি বলছি চোর না অথচ মেয়েটি আমার কথা কানেই নিচ্ছে না চিল্লাচিল্লি করে ডেকেই চলেছে। নিরুপাই হ য়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছি। একটা মধ্য মহিলা এলো মনে হয় এর মা আর সাথে আরেক জন এনি হয়তো এর বাবা।
দৌড়ে আমাদের কাছে এসে দাঁড়ালো।
– কি হয়েছে অনু তুই এভাবে চিল্লাচিল্লি করছিস কেন আর এই লোকটা কে এভাবে ধরে রেখেছিস কেন?( মহিলাটি)
তার মানে মেয়েটার নাম অনু।
– আম্মু এনি চোর আমি ধরেছি। হাতে নাতে দেখ বাড়ির পেছনের দরজার দিকে যাচ্ছি কিন্তু আমি এখানে ছিলাম বলে যেতে পারেনি।
– আমি চোর না আর কতো বার বলব। ( মেঘ)
– চোরেরা কি স্বীকার করে যে আমি চোর।( অনু রাগীচোখে আমার দিকে তাকিয়ে)
– আচ্ছা ওকে দেখে তো চোর মনে হচ্ছে না। তোর হযতো ভুল হচ্ছে অনু।
– আববু আমার কেন ভুল হবে। সে ভালো পোশাক পরেছে বলে কি চোর হতে পারে না।
– আচ্ছা তোমার নাম কি বলো তো। ( অনুর আববু )
– জি মেঘ আমি আপনার বাসার এক সপ্তাহ থাকতে এসেছিলাম। আপনাকে কি ফোন করে বলে নি।
– ওহ হুম বলেছে কিছু ক্ষণ আগে তুমি সেই। অনু এনি কোন চোর না তোমার আনকেল পাঠিয়েছে। সরি বলো না জেনে এমন হেনস্তা করা উচিত হয়নি তোমার।
অনু আমার হাত ছেড়ে কিছু টা লজ্জা পাওয়ার মতো সরি বলল। তারপর দৌড়ে চলে গেল। কিছু বুঝলাম না এভাবে যাওয়ার কারণ।
– তুমি কিছু মনে করো না ওর ব্যবহার এ। আসলে কয়েকদিন আগে একজন চোর এসেছিল তোমার মতো ভালো পোশাক পরে আমি বাড়ি ছিলাম না সে এসে পরিচয় দিয়েছিল আমার পরিচিত। চুরি করতে গিয়েছিল কিন্তু আমার মেয়ের মাথায় সেই বুদ্ধি সে তাকে ধরে পুলিশ এর হাতে দিয়েছিল। আজও তোমাকে দেখে এমন বলেছে।
– না না ঠিক আছে আমি কিছু মনে করি নি।
– চলো ভিতরে।
তার সাথে বাড়ির ভিতরে গেলাম সে একটা রুমে নিয়ে এলো আমাকে।
– তুমি এই রুমেই থাকতে পার এটা আমার ছেলের রুম। বাড়ির তো ভাড়া দেয় না তাই গেসট রুম পরিস্কার করা নেই।
– কিন্তু তবুও আপনার ছেলে যদি কিছু মনে করে।
– নাহ সে তো বাড়ির নে এ বছর বিদেশে পাঠিয়েছি দুবছরের ওইখানে কোর্স শেষ করে আসবে।
– ওহ আচ্ছা।
ওনি চলে গেল। আমি ফ্রেশ হয়ে ঠাস করে খাটে শুয়ে পরলাম। কখন ঘুমিয়ে পরেছি টেরই পায় নি। কারো ডাকে জাগানা পেলাম তাকিয়ে দেখি অনু দাড়িয়ে আছে।
ধরফরি উঠলাম কখন যে ঘুমিয়ে পরেছিলাভ টের পাই নি। ফোন হাতে নিয়ে দেখলাম নয়টা বাজে 20+ call সব গুলো বাড়ি থেকে ফোন দিয়ে জানানোর কথা ও মনে ছিলো না।
– আমি আপনাকে ডাকছি আর আপনি উঠেই ফোন নিয়ে পরলেন। কেন ডাকছি জানতেও চাইলেন না। এটা কেমন অভদ্রতা। ( অনু একটু রেগে)
খেয়াল ই ছিলো না একজন আমার সামনে দাড়িয়ে আছে।
– ওহ সরি আসলে বাড়ির থেকে অনেক গুলো ফোন আসছে তো তাই।
– আপনাকে নিচে খাবার জন্য ডাকছে।
বলেই চলে গেল। মেয়েটা জানি কেমন একটা এই রাগ দেখায় আবার অভিমান করে। আমি বাড়িতে ফোন দিয়ে কথা বললাম।
সাথে বকা ও খেলাম ফোন না ধরার জন্য। তারপর নিচে গিয়ে খেয়ে এলাম।
রুমে এসে দেখলাম অনু মেয়েটা বসে আছে।
– আপনার নাম কি?
– ( ঢুকার সাথে সাথে জিগ্গেস করল) মেঘ।
– বাড়ি কোথায়?
– ঢাকা।
– কিসে পরেন?
– (এই মেয়েতো আমার মনে হচ্ছে আমার ইন্টারবিউ নিচ্ছে) মাস্টারসে।
তারপর আর কিছু না বলে চলে গেল আমি হাবলার মতো তার যাওয়া দিকে তাকিয়ে ভাবছি। এগুলো জিগ্গেস করলো কেন আর আমি উওরই বা দিলাম কেন?
পরদিন
চলবে…….
#ধোঁকা
#Tanjina_Akter_Misti
#Part-8
পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে বারান্দায় দাড়ালাম হঠাৎ নিচে চোখ গেল। অনু গাছে পানি দিচ্ছে খুব যত্ন সহকারে তাতে বুঝা যাচ্ছে ও গাছের অনেক যত্ন নেয়। হঠাৎ উপরে তাকালো আর আমাকে দেখেই কেমন যেন ভেংচি কাটলো আমি তো হতবাক এই মেয়ে আমার সাথে এমন করছে কেন।
সকালের নাস্তা করতে আন্টি ডাকতে এলে নিচে এলাম খাবার খেয়ে ভার্সিটিতে চলে এলাম। নতুন কিছু ফ্রেন্ড হলো ক্লাস গুলো ভালোই হয়েছে।
তিনটার দিকে বাড়ি আসলাম গেটের ভিতরে ঢুকতে মনে হলো কিছু ছুরে মারা হলো সামনে তাকিয়ে অবাক অনুর পুরো শরীর ভেজা আর কাদা ভরা মাটি ভেজা তার মানে বৃষ্টি হয়েছে কিন্তু অনুর অবস্থা দেখে আমি কেন যে কেউ বলবে এই মেয়ে বাচ্চা। নহলে এমন কাদায় গড়াগড়ি খেত। কাদা ছিটাচ্ছে যার ফলে আমার শরীর ও কাদা এসে লেগেছে। একটু রেগেই কাছে গেলাম
– এগুলো কি আমার শরীরের কি দিয়েছেন দেখেন!
অনু আমার দিকে তাকিয়া হিহি করে হেসে উঠলো। যাও একটু রেখে ছিলাম ওর ওই হাসি দেখে আমার সমস্ত রাগে উবে গেল কোথায় কে জানে। ওর হাসিতেই হারিয়ে গেলাম মুগ্ধ হয়ে ওর হাসি দেখছি অপূর্ব সুন্দর লাগছে।
আবার কিছু শরীরে ছিটে আসায় বাস্তবে ফিরলাম তাকিয়ে দেখি অনু আবার আমার শরীর কাদা দিচ্ছৃ এখন ইচ্ছে করে।
– এগুলো কি আপনি আমার শরীর কাদা দিচ্ছেন কেন?
– তো কি করবো একবার না দেখে দিয়েছি। কিন্তু এখন আপনি কোথায় হারিয়ে গেছিলেন তাই বাস্তবে আনতে দিলাম? ( বলেই হেসে উঠল) এতো কি ভাবেন আর ওমন করে কি দেখেন।
ওর কথায় একটু ভিষম খেলাম আসলেই তো আমার কি হয়েছে কেন ওর দিকে তাকালে নিজেকে ঠিক রাখতে পারি না। অন্য কোনো মেয়ের ক্ষেএে তো আমার এমন হয়নি কখনো তাহলে আর কিছু না বে দূত গতিতে চলে এলাম ওর সামনে থেকে।
রাতে রুমে শুয়ে আছি আর ভাবছি।
কি হলো আমার কেন খালি অনুর মুখটা ভেসে উঠে কি জন্য আমি কি ওকে ভালোবেসে ফেলেছি না না এটা কিছুতেই হতে পারে না আমি এখানে নিজের প্রয়োজনে তাদের সহায়তা আছি তাদের সাথে এটা করা ঠিক হবে না। আমি আর বেশি অনুর কাছে যাবো না।
দুইদিন যেদিকে অনু আছে সেদিকে কভ গিয়েছি কিন্তু অনুর সাথে কথা বলার ইচ্ছে কিছু তেই দমাতে পারি নি খুব করে চাই ওকে। তাদের বিশ্বাস ভাঙতে চাইনা বলে নিজেকে দূরে রাখতে চাই কিন্তু অনু একটু পরপর এটা ওটা বলেই থাকে।
পাচঁ দিনের দিন
ছাদে বসে বাড়িতে কথা বলছিলাম মনে হচ্ছে কেউ আমার পেছনে দাঁড়িয়ে আছে। কথা শেষ করে তাকিয়ে দেকি অনু আগুন চোখে তাকিয়ে আছে। কিছু বুঝতেছি না এভাবে রাগছে কেন হঠাৎ আমার কাছে এসে ঠাস করে ফোনটা নিয়ে ফেলে দিতে গেল আমি তারাতারি করে ফোনটা নিয়ে নিলাম।
– এসব কি অনু আপনি আমার ফোন ছুরে ভারতে যাচ্ছিলেন কেন?
– আপনি কার সাথে কথা বলতেছিলেন?
– কেন !
– বলুন
– যার সাথে ইচ্ছে তার সাথে বলেছি তা আপনাকে কেন বলবো।
হঠাৎ আমার কলার ধরে চিৎকার করে বলতে লাগল,, বলবেন বলতে বাধ্য আপনি কারণ আমি আপনাকে ভালোবাসি। অন্য কোনো মেয়েকে আপনি আই লাভ ইউ বলতে পারেন না।
অনু মুখে এই কথা গুলো শুনে এতোটাই শক হয়েছিলাম যে কতোক্ষণ কথা বলতে পারি নি নিজেও জানি না।
এখন আমি আমার ভাড়া করা বাসায় আছি।
এই কথা গুলো ভাবছিলাম হঠাৎ ফোনের শব্দ এলো কানে ফোন হাতে নিয়ে দেখি অনু কল করেছে। একমাস হয়েছে আমি অনুদের বাড়ি থেকে চলে এসেছি। এখন আমাদের রিলেশন চলছে। সেদিন অনু না বললে হ য়তো এটা সম্ভব হতো না।
– হ্যালো
– কি ব্যাপার কি সকাল থেকে তোমার কোন পাওআ নেয়।
– ভার্সিটিতে থেকে এসে একটা ঘুম দিয়েছিলাম তাই আর ফোন দেওয়া হয় নাই সরি।
এতো খিদে পেয়েছে যে আমি নরতে ও পারছি না। এমনিতেই আমি খিদে সহ্য করতে পারি না। আর আজ সারাদিন না খেয়ে আছি। কোন রকম উঠে বাইরে এলাম সিরি দিয়ে নামতে ও পারছি না এতো দূর্বল লাগছে মনে হচ্ছে এখনই পরে যাব। নিচে গিয়ে পুরা রুটি আর ডিম নিয়ে বসলাম। একটু ছিড়ে মুখে দিলাম।
ছিহ কি খারাপ হয়েছে খেতে এগুলো কি খাওয়া যায়।
তাও খিদে বেশি পেয়েছে বলে অনেক কষ্টে একটু খেলাম।
ফোন ও নেয় যে আদি কে কল করবো একা একা এখন খারাপ লাগছে ঘুমিয়ে ছিলাম বলে এতোক্ষন কোন রকম লাগে নি। এখন বুঝতে পারছি বাড়িটা কতোটা নিস্তব্ধ। দরজা খুলে বাইরে আসলাম দাড়োয়ান আছে একজন এ ছাড়া আর কেউ নেই বিকেল হয়েছে বলে সে বাগানে পানি দিচ্ছে। আমি এগিয়ে গেলাম তার সাথে একটু কথা বলার জন্য। আর তো কেউ নেই কথা বলার মতো। বাগান টা সুন্দর আদি করেছে মনে হয় সব ধরনের ফুল আছে। দাড়োয়ান কাকা আমাকে দেখে দৌড়ে এলো কিছু বুঝলাম না এমন দৌড়ে আসার কি আছে।
– কি হয়েছে কাকা আপনি দৌড়াদৌড়ি করছেন কেন?( অবাক হয়ে)
– আপনি এখানে কেন , কিছু কি হয়েছে কোন দরকার থাকলে আমি যেতাম আপনি কষ্ট করতে গেলেন কেন।
– এতো ব্যস্ত হওয়ার কিছু নেয়। আমি এমনি এসেছি। বাড়িতে কেউ নেয় তো তাই একা একা ভালো লাগছিল না তাই আপনার সাথে পরিচিতি হতে এলাম।
– ওহ আচ্ছা আর কখনো এভাবে বাইরে আইসেন না। আদি বাবা জানলে আমারে অনেক বকবো। এখন ভিতরে চলে যান।
– এতো ভয় পাচ্ছেন কেন। আর বকবে কেন আমি তো ঘুরতে এসেছি।
সে আর কিছু না বলে চলে গেল এতো ভয় পাওয়ার কি আছে। ঘুরতেই তো এসেছি দেখলাম সে গেটের কাছে গিয়ে তালা দিল ভালো করে তারপর আবার গাছে পানি দিতে লাগল। এখন বুঝলাম ভয়ের কারণ আদি নিশ্চয়ই বলে গেছে আমি যেন বাড়ি থেকে না বের হয়। তারমানে আদি ভেবেছে আমি পালিয়ে যাব।
সত্যি কতো বোকা আদি আমি নাকি পালিয়ে যাব। এটা তো কখনো হবে না শত কষ্ট দিক আমি তো এতো সহজে যাচ্ছি না। যাকে ভালোবাসি যার হাত ধরে বাড়ির সবাইকে ছেড়ে এসেছি। সে কেন আমার সাথে এমন করছে সব না জেনেই চলে যাব অসম্ভব।
কথা গুলো ভেবে ভিতরে চলে এলাম।
রাত আটটা বাজে এখন পযর্ন্ত আদি বাড়ি আসে নাই। এতো বড় একটা বাড়িতে আমি একা ভয়ে ভয়ে আছি কখন আসবে কে জানে ওর কি একটু চিন্তা হচ্ছে না আমি কিভাবে আছি কি করছি। এতো পাষাণ হয়েছে ও।
নয়টার দিকে আদি বাড়ি এলো। মনে হয় অনেক পরিশ্রম করেছে দেখে অনেক টায়ার্ড লাগছে। এসে বাথরুমে গিয়ে গোসল সেরে এলো। তারপর ডাস করে খাটে শুয়ে পরলো। আমি ওর মাথার কাছে গিয়ে বসলাম তারপর মাথা টিপে দিতে লাগলাম। ও আমার হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বিরবির করে কি যেন বলতে লাগল, তারপর হাতটা ওর বুকে চেপে ধরলো। আমি ওর কথা বুঝার জন্য কানটা ওর মুখের কাছে এগিয়ে নিলাম কিন্তু কিছুই বুঝতে পারছি না।
– আদি কি বলছো আমি তো কিছু বুঝছি না।
এখন আর কথা বলছে না মুখের দিকে তাকিয়ে দেখি ঘুমিয়ে গেছে। কি বলতেছিল আদি,,,শুধু ধোঁকা দিয়েছে কেন,,এটা বুঝেছি কে কাকে ধোঁকি দিয়েছে।
খেয়ে এসেছে নাকি কে জানে। নিচে এসে কি করা যায় ভাবছি পুরো কিচেন ঘুরে নুডলস পেলাম। আমার অনেক পছন্দ আম্মু যখন রান্না করতে আমি দাড়িয়ে থাকতাম আম্মুর পাশে। কারণে ভাইয়ার ও নুডলস পছন্দ খাওয়া নিয়ে ঝগড়া করতাম সবসময় দুজন।
আম্মুর রান্না মনে করে নুডলস রাধলাম। একটু খেয়ে দেখলাম ভালো হয়েছে খাওয়া যাবে। পিলেটে করে রুমে এসে দেখলাম এখন ও শুয়ে আছে আদি। আমি কাছে গিয়ে কয়েক বার ডাকলাম কোন সারা শব্দ নেয় হাত দিয়ে ধাক্কা দিলাম। একি শরীর এতো গরম ভালো করে মাথায় গাড়ে হাত দিয়ে দেখি প্রচণ্ড গরম তার মানে আদির জর এসেছে।
এতো জর এখন কি করব আমি তো কাউকে চিনি ও না এখান কার ডাক্তার পাবো কই। আমার জর আসলে আম্মু পানি ভিজিয়ে দিতো আমি ও তাই করি দেখি কাজ হয় নাকি অনেক ক্ষণ দিলাম কিন্তু কিছুই হচ্ছে না। আদির নাম্বার নিয়ে দাড়োয়ান কাকা কে ফোন দিলাম সে ও ফোন ধরছে না কয়েক বার দিয়ে রেখে দিলাম। মনে হয়ে ঘুমিয়ে পরেছে।
একটু পর কলিং বেল বাজানোর শব্দ পেলাম এতো রাতে আবার কে এলো দরজায় কাছে এসে বললাম,, কে
– ম্যডাম আমি শফিক আপনাদের দাড়োয়ান আমাকে ফোন দিয়েছিলো আদি বাবা।
– ওহ হ্যাঁ আপনি তো আমার ফোন রিসিভ করছিলে না ।
দরজা খুললাম
– কি হয়েছে ম্যডাম এতো রাতে ফোন দিয়েছিল কেন আদি বাবা।
– আদি না আমি দিয়েছিলাম।
– কেন কি হয়েছে?
– আদির অনেক জর এসেছে আমি কি করব ভেবে পাচ্ছি না। আপনি একটু ডাক্তার কে খবর দিতে পারবেন।
– হুম পারব আপনি এতো চিন্তা কইরেন না আমি আসছি।
একটু পর শফিক ডাক্তার নিয়ে আসে।
দুই দিন জর থাকে আদির এতো কষ্ট হচ্ছি লো আমার। উঠতে পারে নাই। আমাকে কিছু বলে ও নি এই দুইদিন আমি ওর সাথেই থেকেছি। দাড়োয়ান কাকা কে বলে বাইরে থেকে খাবার আনিয়ে খাওয়া হয়েছে।
এদিকে মেঘনার বাবা মা মেয়ের চিন্তায় শেষ।
– আমার মেয়েটা কোথায় চলে গেল। চার দিন হয়ে গেছে মেয়েটা নিখোঁজ। তুমি যদি মেনে নিতে ওই ছেলে কে তাহলে আজ মেয়েটা চলে যেত না। কোথায় আছে কি করছে কে জানে।( বলেই কান্না করতে লাগল রুমা বেগম -মেঘনার মা)
– ওই মেয়ের জন্য কেদেঁ কি হবে সে কি আমাদের কথা ভেবেছে। নিজের জন্য আমাদের কে পর করে অন্য একটা ছেলের হাত ধরে চলে গেছে ওই মেয়ের জন্য আর কাদবে না। ( রেগে কথা গুলো বলল মহিউদ্দিন – মেঘনার বাবা)
– তুমি বুঝবে না। মায়ের মন মেয়ে শত খারাপ হলে ও মা কখনো তাকে ভুলতে পারে না আমি ও পারবো না। তুমি আমার মেয়ে কে ফিরিয়ে দাও। ওর যার সাথে খুশি থাক মেনে নাও।
– দুই দিন তো কম খুজলাম না আর ওর নাম মুখে আনবে না।
বলেই উঠে চলে। রুমা বেগম মেয়ের জন্য কষ্ট পাচ্ছে মায়েরা এমন ই হয় সন্তান শত ভুল করলেও ক্ষমা করে দেয়।
মেঘ( মেঘনার ভাই) অফিস থেকে সোজা চলে গেছে বন্ধুদের সাথে আড্ডা খানা।
– কিরে মেঘ তুই এখানে কেন, বন্ধ ছাড়া তো আসিস না আজ একে বারে অফিস থেকে এখানে চলে এলি।( অনি)
কিছু না বলে মদের বোতল হাতে নিয়ে খেতে লাগল।
– এটা কি করছি আজ এলো খাছসিস কেন। বাড়ি যাবি না আন্টি তোকে এভাবে এখন দেখলে অনেক কষ্ট পাবে কিন্তু এমনিতেই মেঘনা কে খুজে পাওয়া যাচ্ছে না। ( দিহান)
– আমি পারছি না আর আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে এগুলো না খেলে আমি পাগল হয়ে যাবো।( মেঘ)
– তোর বাবা মার জন্য নিজকে শক্ত রাখা উচিত । ( অনি)
– হুম অনি ঠিক বলেছে ওই সব ভুলে বাড়ির সবার জন্য খুশি থাক ভাল থাক। মেঘনার কোন খুজ পেয়েছিস।( দিহান)
– নাহ রে পাই নি।
অনেক ক্ষণ থেকে বাড়ি ফিরে এলো মেঘ। আজকে খাওয়া টা বেশি হয়ে গেছে নিজেকে কন্টোল করা। কলিংবেল দেওয়ার সাথে দরজা খুলল, আম্মু আজ ও জেগে আছে।
– কি রে এলি কেন, তুই ও চলে আরেক জনের মতো আর আসতে হবে না। কাউকে দরকার নেই।
– মা হ
– তুই মদ খেয়েছিস?
– না মানে ( কি বলবো আমি বুঝতে পারছি না)
– কি হলো বলে। এগুলো খেবাড়ি আসার আগে আমার জন্য বিষ নিয়ে আসতে। তোদের জন্য কি কোন দিন শান্তি পাব না একজন চলে গেছে ভালোবেসে, আরেকজন দেবদাস হয়েছে।
বলে ই আম্মু কাদতে কাদতে চলে গেল। আমি নিজের রুমে চলে আসলাম। সত্যি কি অনেক খারাপ হয়ে গেছি কিন্তু কেন, ভালবেসে।
একটু আগেই তো খেলাম আবার খাবো কি বলছ! দশটায় খেয়েছি আর এখন মাএ এগারো টা বাজে। ( মেঘ বিরক্ত হয়ে কথাটা বলল,,, সে তার মাকে চেনে কোথাও যেতে গেলে সব সময় এমনি করে। )
তাই কি হয়েছে খেয়েছিস বলে একটু পর তো আবার খিদে পাবে। আমি খাবার টিফিন বক্মে বরে রেখেছি ওইটা নিয়ে যা রাস্তায় খেয়ে নিস! কেন যে দূরে গিয়ে পরতে হবে বুঝি না এখানে কি পরার জায়গা নেয় যে চট্টগ্রাম যেতে হবে? ( কথা গুলো বলেই কান্না কান্না ভাব করে উঠল আম্মু)
ওফ আম্মু তুমি আবার শুরু করলে। একবছরের ই তো ব্যাপার এতো কান্নার কি আছে আমি তো কিছুদিন পর পর আসব। এখন তুমি কান্না করলে আমি কি যেতে পারবো। ( মেঘ ইনোসেন্ট মুড নিয়ে )
আচ্ছা, নিজের খেয়াল রাখবি আর সময় মতো খাওয়া দাওয়া করবি। নিজের প্রতি তো একটু ঔ যত্ন নেস না। আর এই টিফিন বক্ম ব্যাগে বরে নে। আমি আরেক পিলেটে খাবার এনে তোকে খাইয়ে দেবো।( আম্মু)
আমি সত্যি এখন খেতে পারবো না তুমি টিফিন টা দাও নিয়ে যাচ্ছি। মেঘনা কই ওকে দেখছি না যে?
কই আর থাকবে রাগ করে বসে আছে ঘরে!
বোনের রাগ ভাঙাতে ঘরে গেলাম ওরে বাবা রেগে আমার দিকে তাকাচ্ছে ও না। আমি সামনে গিয়ে কানে ধরে,, সরি,, বললাম কাজ হলো না। মেঘনা আমাকে ছাড়া একটু থাকতে পারে না। ও যদি জানে চলে যাব তাহলে না খেয়ে থাকতো তাই ভেবেছিনা জানি জাব কিন্তু সকালে সব জেনে গেছে।
কি হলো কথা বলবি না আমার সাথে সরি বললাম তো এখন কি কান ধরে উঠ বস করতে হবে আমাকে। ( বলে উঠ বস করতে লাগলাম)
থাক আর ভাব দেখাতে হবে না। তুমি তো আমাকে একটু ও ভালোবাস না বাসলে কি না জানিয়ে যাওয়ার কথা ভাবতে পারতে।( রেগে)
তুই কষ্ট পাবি তাই আচ্ছা সরি আর কখনো এমন করবো না এখন আমাকে হাহি মুখে বিদায় দে নয়তো আমি যেতে পারবো না।
অনেক ক্ষণ ভরে মেঘনার রাগ ভাঙাতে সক্ষম হলাম তারপর সবার থেকে বিদায় নি রওনা হলাম চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে।
মাস্টাসে পরতে যাচ্ছি চট্টগ্রাম। বাড়ির সবাইকে ছেড়ে যেতে খারাপ লাগছে কিন্তু সরকারি ভাবে পরতে পারবো তাই চলে এলাম।
এখানে এসে আরেক বিপদ হলো। যে বাড়িতে ভাড়া থাকবো সে বলল,,, আজকে নাকি থাকতে পারবো না। কারণ যে রুমে আমি থাকবে তাতে যারা ছিলো তাদের আজ চলে যাওয়ার কথা ছিলো কিন্তু একটা প্রবলেম এর জন্য আর ও এক সপ্তাহ থাকতে সবে তাদের।
বাড়ির ওয়ালা,,, আমার জন্য তোমার কি বিপদ হলো বাবা এখন কি করি বলো তো এতো দিন ছিল তারা এখন তো আর বলা যায় না চলে যাও।
মেঘ,,, হুম, আনকেল কিন্তু আমি এখন কোথায় যাব আমি তো এখানে কাউকে চিনি ও না আর সাত দিন কোথায় থাকব। আমার কাল থেকে class করতে হবে।
বাড়িওয়ালা,,, আচ্ছা দাড়াও আমি একটা ব্যবস্তা করছি। তোমাকে অন্য এক জায়গায় থাকতে হবে আর বন্ধ হাবিবুর এর বাসায় ওটা ভাড়া দেয় না নিজেদের আমি ফোন করে বলে দিচ্ছি তুমি ওইখানে যাও। এক সপ্তাহ পর এখানে থেকো।
বাড়ির সামনে দাড়িয়ে আছি।
বাড়িটা অনেক বড় দুতালা গেটের বাইরে দারিয়ে আছি। অন্যের বাসায় যেতে ও কেমন জানি লাগছে। হঠাৎ দাড়োয়ান আমাকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে বেরিয়ে এলো।
– কাকে চাই এভাবে দাড়িয়ে আছেন কেন?
– এটা কি হাবিবুর রহমানের বাড়ি।
– হুম;
তার সাথে কথা বলে ভিতরে ঢুকলাম ঢুকলাম,, চার পাশে দেখছি অনেক সুন্দর বাড়ি টা। একদম সাজানো গুছানো সবকিছু দেখছিলাম হঠাৎ একটা মিষ্টি কণ্ঠের গান কানে এলো গানটা যেন হৃদয় ছুয়ে যাচ্ছে কে গাইছে এতো সুন্দর করে জানার খুব ইচ্ছে হলো বাড়ির ভিতরে না গিয়ে বাগানের দিকে যেতে লাগলাম ওই দিক থেকেই গানটা আসছে। এই দিকটা তো আরও সুন্দর নানা ফুলের গাছ চার পাশ ফুলের গন্ধে মম করছে মুগ্ধতার সাথে দেখছি আর এগিয়ে যাচ্ছি।
হঠাৎ দেখলাম একটা মেয়ে গান গাইছে আর নাচছে অন্য দিকে যার জন্য আমি মুখ দেখতে পারছি না। আমি দেখার চেষ্টা করছি কিন্তু অন্য দিকে ঘুরে আছে।
মেয়েটা একটা নীল রং এর ফোরক আর সাদা ওড়নাটা কোমরে বেধে রেখেছে। চুল গুলো বেনি করে রেখেছে। হঠাৎ নাচতে নাচতে আমার দিকে ঘুরলো আর সাথে সাথে চিৎকার করে উঠল, আমি কিছু বুঝলাম না মেয়েটার সাথে আমি ও চিৎকার করে উঠলাম।
মেয়েটি হঠাৎ চিৎকার থামিয়ে অবাক চোখে আমার দিকে তাকাল। আর আমি মেয়েটি চোখে হারিয়ে গেছি অসম্ভব সুন্দর দেখতে। মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছি মেয়েটির দিকে অন্য কোন দিক খেয়ালই নেয় হঠাৎ চেচামেচি তে বাস্তবে ফিরলাম।
– আমি তো আপনাকে দেখে চিৎকার করেছি। কিন্তু আপনার চিৎকারের কারণটা বুঝলাম না। আপনি কে আর এখানে কি করছেন ওয়েট ওয়েট আপনি কি চুরি করতে এসেছেন?
– এ্যা
– হুম ঠিক আমি শুনেছি এখন চুর রা ভালো পোশাক পরে আসে আমাদের কে বোকা বানানোর জন্য মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে তারপর সবকিছু নিয়ে চলে যায় কিন্তু আপনার আশা সফল হবে না আমি আপনাকে চিনে ফেলেছি। আববু আববু কোথায় তোমরা চুর ধরেছি।
এ কোন বিপদে পরলাম রে বাবা এই মেয়ে তো অনেক সাংগাতিক আমাকে চুর বানিয়ে দিল।
আমাকে খাইয়ে দিয়ে সোফায় শুয়ে পরল। আর আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি।
আমি – তুমি সোফায় শুলে কেন এখানে আস।
আদি – তোমার সাথে শুতে যাব আমি। চুপচাপ ঘুমিয়ে পর কাল থেকে অন্য রুমে শুবে।
আমি – কেন অন্য রুমে শুব আমি এখানে থেকে কোথাও যাব না। আর তুমি ও আমার সাথে ঘুমাবে।
বলে উঠে গিয়ে দাড়ালাম আদির সামনে,,, কি হলো আস। খাটে আস তুমি আমার হাজবেন্ট তোমাকে আমার সাথেই ঘুমাতে হবে। ভালো না বাসলে ও।
আদি আমার কথা কানে না নিয়ে চোখ বুজে শুয়ে পরলো। আমি নিরব ভাবে তাকিয়ে দেখছি কি করা যায়। বাথরুমে গিয়ে পানি এনে আদির শরীরের ঢেলে দিলাম। হঠাৎ এমন হওয়ায় চিৎকার করে উঠে দাড়াল। আমি তো হেসেই শেষ আমার হাসি দেখে রেগে তাকিয়ে।
আদি- এটা কি করলে তুমি, আমি এখন ঘুমাবো কোথায়। অন্য রুম ও অপরিষ্কার যে সেখানে যাব। তোমার জন্য এগুলো হয়েছে তুমি নিচে শুবে আর আমি খাটে।
কথাটা বলেই খাটে শুয়ে পরলো। আমি ও খাটের দিকে এগিয়ে গেলাম।
আদি- একদম খাটে আসবে না। নিচে অথবা ভেজা সোফায় শুয়ে পর। তুমি নষ্ট করেছো এখন তুমি কাজ করো।
আমি আদির কথা কানে না তুলে খাটে শুয়ে পরলাম।
আমাকে শুতে দেখে আদি উঠতে লাগল আমি ওর হাত টেনে ধরে রাখলাম।
আমি – প্লিজ আদি যেও না। আমার না খুব খারাপ লাগছে সত্যি অনেক খারাপ লাগছে। তুমি আমাকে ধোঁকা দেবো আমি এখন ও বিশ্বাস করি নি। এগুলো সব মিথ্যা তাই না বলো না সব মিথ্যে তুমি আমাকে ই ভালোবাস।
আদি- সব সত্যি মেঘনা। আমি সত্যি তোমাকে ভালবাসি না।
আমি – কখনো না তুমি আমাকে ঠকাতে পার না। আমি তোমার জন্য পরিবারের সবার বিরুদ্ধে গিয়েছি। কেন এমন করলে ভাল না বাসল কেন ঠকালে বলো প্লিজ।
আদি- বলব কিন্তু এখন না।
আমি – এখন বলো প্লিজ কি এমন কারণ যার জন্য আমার জীবন টা নষ্ট করে দিলে।
আদি- তোমাকে কথা দিতে হবে একটা।
আমি – কি কথা আমি সব দিতে রাজি তবুও বলো আমার কি অপরাধ যার জন্য আমাকে এভাবে ঠকালে।
আদি- এখন আমি কিছু বলব না মেঘনা। যেদিন তুমি সব জানবে সেদিন আমার লাইফ থেকে তোমাকে চিরদিনের জন্য চলে যেতে।
আমি – আদি, এমন একটা কথা তুমি বলতে পারলে আমি তোমাকে ছেড়ে চলে যাব। এটা কখনো না তোমাকে ছাড়া আমি থাকতে পারবো না প্লিজ অন্য কিছু বলো। আর আমি কোথায় যাব বলো বাড়িতে কেউ আমাকে উঠতে দেবে না। এখন তুমি ছাড়া আর কে আছে আমার।
আদি- তাহলে আমি কিছু বলতে ও পারবো না। যেদিন যেতে পারবে সেদিন শুনতে এসো।
কথাটা বলে উঠতে লাগল।
আমি – আমার খুব ঘুম পাচ্ছে আদি আমি একটু ঘুমাতে চাই। এতো শক আমি নিতে পারছি না। তোমার বুকে একটু ঘুমাতে চাই।
বলে আদির বুকে মাথা রাখলাম। প্রথমে উঠতে চাইলে ও পরে আর উঠে নি। আমি কখন ঘুমিয়ে গেছি জানি না।
সকালে
নিজেকে মনে হচ্ছে কেউ বেধে রেখেছে তাকিয়ে দেখি আদির বুকে আমি। আর সে আমাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জরিয়ে ধরে ঘুমাচ্ছে। এটা দেখে মুখে হাসি ফুটে উঠলো কাল তো আমার সাথে শুতেই চাইলো না আর এখন এভাবে ঘুমাচ্ছে।
মাথাটা উচু করে মুখের দিকে তাকালাম কত মায়াবী লাগছে দেখতে। আমি তো এটাই চাইছিলাম সকালে ঘুম থেকে আগে আদির মুখ দেখবো তা আমার পূরণ হয়েছে। কিন্তু কি কারণ আছে যার জন্য আমার সাথে আদি এমন করছে। আমাকে জানতেই হবে।
চলবে…….
#ধোঁকা
#Tanjina_Akter_Misti
part-4
কিছুক্ষণ আদির মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে ওর কপালে একটা কিস করলাম। সাথে সাথে মনে হলো ভূমিকম্প হলো আর আমি খাট থেকে নিচে পরে গেলাম। কি হলো কিছু বুঝতে পারলাম না। ওফ মাঝায় ব্যাথা পেয়েছি।
উপরে তাকিয়ে দেখি আদি আমার দিকে আগুন চোখে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ এতো রাগের কি হলো বুঝলাম না আমি অবাক নয়নে তাকিয়ে আছি আদির দিকে। রাগ মিশ্রিত চোখে তাকিয়ে আছে।
আমি – কি হয়েছে আদি তুমি আমাকে এভাবে ধাক্কা দিলে কেন।
আদি- তো ধাক্কা দেবো না আদর করবো নাকি কোলে বসিয়ে। তোমার সাহস কি করে হলো আমাকে টাচ করার।
আমি – মানে কি বলতে চাইছো তোমাকে আমি টাচ করতে পারবো না।( অবাক হয়ে)
আদি- না
আমি – কেন তুমি আমার স্বামী। আমার পুরো অধিকার আছে তোমাকে টাচ করার।
আদি- হুম আছে কিন্তু আমি তোমাকে সেই অধিকার দেয় নি। আর দেবো না আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি কিছুদিন পর তাকে বিয়ে করবো। তোমাকে শুধু কষ্ট দেওয়ার জন্য আমি বিয়ে করেছি। খুব তারাতারি তোমাকে ডির্বোস দিয়ে নিশি কে বিয়ে করবো। তাই আমার দেখে দূরে থাকবে।
কথাটা বলেই আদি ওয়াশ রুমে চলে গেল। আমার দিকে ফিরে ও তাকাল না এতোটাই ঘৃণা করে। আর কি বলল নিশি কে ভালোবাসে কে এই নিশি। সেদিন রাতে যাকে দেখিছিলাম সেই কি নিশি। এভাবে বলতে পারলো অন্য মেয়েকে ভালোবাসার কথা। আর কি বলল ডির্বোস দেবে আমাকে না এটা কিছুতেই হতে দেবো না আমি কখনো ডির্বোস দেবো না।
শত অপমান করুক কষ্ট দিক আমি আদিকে ছেড়ে কোথাও যাবো না। আমাকে খুজে বের করতে হবে কি কারণে এতো ঘৃণা আদি মনে আমার জন্য। বাড়ির কথা খুব মনে পরছে মা, বাবা ভাইয়া সবাই কেমন আছে। সবাই আমাকে হয়তো ঘৃণা করছে। আর ভালোবাসবে না কেউ সবাইকে পর করে চলে এসেছিলাম যার হাত ধরে বিশ্বাস করে সে ও তো আমাকে কষ্ট দিচ্ছে। আদি আমাকে বাড়ি থেকে তারিয়ে দিলে কোথায় যাব আমি বাড়িতে যাওয়ার মুখ নেয়। কারো সামনে যেতে পারবো না। খুব তারাতারি সব জানতে হবে।
পুরো শরীর ব্যাথা হয়ে গেছে উঠতে ও পারছি না। আগে আমি একটু ব্যাথা পেলে আদি পাগলের মতো হয়ে যেতো। আর এখন নিজেই ব্যাথা দিচ্ছে। কেন এতো বদলে গেলে তুমি আদি অাবার আগের মতো হয়ে যাও না।
আদি- কি হলো এখন ও সেখানেই বসে আছ কেন। যাও ফ্রেশ হয়ে রান্না করো আমি অফিসে যাব। আর একদম নেকা কান্না কাদবে না আমার অসহ্য লাগে এসব।
আমি – আমার কান্না তোমার কাছে অসহ্য লাগছে।
আদি- হ্যা
আমি – ভালো, আর কি যেন বললে রান্না করতে তুমি ভালো করে জান আমি রান্না করতে পারি না।
আদি- পারো না বললে হবে না। আমার এখন ক্ষিদে পেয়েছে যাও তারাতারি রান্না করো। দরকার পরলে অনলাইনে দেখে নাও তবুও তোমাকে ই রান্না করতে হবে।
আমি – আমার পুরো শরীর ব্যাথা করছে আদি। আমি রান্না করতে পারবো না। তুমি অন্য কাউকে বলো।
আদি- অন্য কাকে বলবো। এখানে আমি আর তুমি ছাড়া কেউ নেই। সো তোমাকেই রাধতে হবে।
আমি – কেউ নেয় মানে তাহলে কাজ করবে কে।
আদি- কেন তুমি করবো।
আমি – আমি করবো।
আদি- হুম তুমি তারাতারি যাও নয়লে আমি তো বাইরে গিয়ে খেতে পারবো কিন্তু তুমি কি খাবে। নিজের খিদে লাগলে রান্না করো।
বলেই আদি রেডি হতে লাগল। আমি কষ্ট করে উঠে বাথরুমে গেলাম গোসল করে পরলাম মহা বিপদে এখন কি পরবো আমার তো এখানে জামা কাপড় ও নেয়। শীত করছে কিন্তু বের হতে পারছি না আদি রুমে আছে।
আদি- কি হলো আজ কি আর বের হবে না নাকি। এতোক্ষন লাগে কারো আমি কিন্তু বসে আছি না খেয়ে যাবো না। তারাতারি আস রান্না তোমাকে করতেই হবে।
আমি – আমার ড্রেস গুলো আনিনি প্লিজ দেন না নয় বের হতে পারবো না।
আদি- কি মেয়ে তুমি কেউ ড্রেস ছাড়া গোসল করে।
আমি -প্লিজ দাও না আমার মনে ছিল না।
আদি- দরজা টা খুল
আমি – দরজা খুলবো কেন। আপনি না আমাকে বউ বলে মানেন না তাহলে এটা কিন্তু ঠিক
আদি- আহ আমার এতো তোমাকে দেখার ইচ্ছে নেই। তোমার ড্রেস নেওয়া জন্য দরজা খুলতে বলছি।
আমি – ওহ
দরজা খুলে একটু ফাক করে হাত বের করে জামা নিলাম।
কিছুক্ষণ পর
আদি- এতো সময় লাগে রান্না করতে। এতো অর্কমার ঢেকি তোমার আগে কাউকে দেখি নি।
আমি – নিজে রান্না করে খান তাহলে আমাকে দিয়েছেন কেন রাধতে।
অনেক কষ্ট রুটি আর ডিম বাজলাম জীবনে ফাস্ট রান্না করলাম। রুটিটা পুরে পুরে গেছে কিন্তু রান্না করেছি এই অনেক। হাতে ছ্যাকা ও খেয়েছি।
খাবার নিয়ে আদির সামনে রাখলাম। অনেক খুশি হয়েই গেলাম কিন্তু খুশি বেশিক্ষণ থাকলো না।
আদি- এগুলো কি সব তো পুরে গেছে এসব কি খাওয়া যায়।
বলেই সব ফেলে দিল। আমি ভেবেছিলাম আমার রান্না যেমনি হোক আদি মজা করে খাবে। কিন্তু আমার সমস্ত বিশ্বাস ভেঙে ফেলে দিল। তারপর চলে গেল।
আমি সব আবার উঠিয়ে পিলেটে রাখলাম। চোখের পানি বাধ মানছে না। এতো অবহেলা মেনে নেওয়া যায়। খিদে পেয়েছিল এখন আর খাওয়ার ইচ্ছে ও নেয়।
রুমে এসে শুয়ে পরলাম অনেক খারাপ লাগছে একটু ঘুমানো দরকার।
৩ বছর রিলেশন করে বিয়ে পর এমন একটা দৃশ্য চোখের সামনে দেখবো কল্পনাতে ও ভাবি নি। নিজের বর অন্য একটা মেয়ের সাথে এমন ঘনিষ্ঠ ভাবে দেখবো সত্যি ভাবি নি। নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে যাকে এতো ভালবেসে পরিবারের সবাই কে ছেড়ে চলে এসেছি সে আমাকে এভাবে ঠাকালো কিন্তু কেন। ও তো বলতো আমাকে অনেক ভালোবাসে যদি ভালোই বাসে তাহলে এগুলো কি।
সত্যি কি ভালোবাসতো নাকি সব অভিনয় না আর ভাবতে পারছি না। আর দাড়ালাম না নিচে নেমে এলাম।
কাল আমি আদি জন্য পরিবারের সবাইকে ছেড়ে চলে এসেছি। বাড়িতে সবাইকে আদির কথা বলেছিলাম কিন্তু কেউ আমাদের মেনে নেয় নি। আমাকে সবাই বলেছে আদি ভালো না ওকে যেন বিয়ে না করি। কিন্তু আমি ওকে এতোটাই ভালো বাসি যে সবার কথা না মেনে আদির মিথ্যা ভালোবাসায় অন্ধ হয়ে গেছিলাম তাই তো আদির এক কথায় সবাইকে ছেড়ে ওর হাত ধরে চলে আসি।
আজ আমরা বিয়ে করেছি কিন্তু রাতে আমার জন্য এমন একটা সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছি সত্যি ভাবতে পারি নি। সবার বিরোধীতা করে যার কাছে আসলাম সে আমাকে এভাবে ঠকালো।
কথা গুলো ভেবে নিজেকে শেষ করে দিতে মন চাইছে কেন আমি সবার বিরুদ্ধে গিয়ে ওকে বিশ্বাস করলাম। ভালোবাসার মানুষকে অন্য একটা মেয়ে সাথে দেখে বুকের ভেতরটা জলে পুরে ছারখার হয়ে যাচ্ছে।
আজকের এই রাত নিয়ে কতোই না সপ্ন দেখিয়েছিলে। শত সপ্ন কেন মাটি করে দিলো কি দোষ আমার কথা গুলো ভাবছি আর কান্না করছি হঠাৎ চোখ গেল খাটের ঘরে ময়লার ঝুরিতে মনে হচ্ছে গিফট।
আমি কাছে গিয়ে ঝুড়ি উপর করে দিলাম আর সঙ্গে সঙ্গে ভেতরে থেকে চিঠি আর গিফট প্যাকেট বের হলো যা দেখি আমার পায়ের নিচে থেকে মাটি সরে গেল। এগুলো তো আমারি দেওয়া কিছু দিন আগে যখন আমাদের রিলেশন এর তিন বছর হয়েছে তখন দিয়েছি দুইটা গিফট।
ও একটা গিফট ও খুলে দেখে নি সব তো আমি যেভাবে দিয়েছিলাম সেই ভাবেই আছে। যত গুলো চিঠি দিয়েছিলাম সব সেই ভাবেই ভাজ করা তার মানে এগুলো ও খুলে দেখি নি।
যত দেখছি তত মনে হচ্ছে আদি আমাকে একটু ভালোবাসে না যদি ভালোবাসতো তাহলে এগুলো এভাবে ফেলে রাখতে পারতো না। তাহলে কি আদি কোন দিন আমাকে ভালোবাসে নি। ভালো না বাসলে এতো দিন এতো ভালোবাসি বলতে সেগুলো কি ছিলো।
তিন বছর কি কম আমার তো কখনো মনে হয় নি ও আমাকে ভালোবাসে না। আমার কতো কেয়ার করতো ওই তো আমার পেছনে ঘুরতে আমি মেনে নিছিলামনা বলে সুসাইড ও করেতে গিয়েছি সব কি অভিনয় ছিলো।
ভালো না বাসলে বিয়ে কেন করলো ওই মেয়েটাকেই যদি ভালোবেসে থাকে ওকেই বিয়ে করতো আমায় কেন করলো।
বসে কান্না করতে লাগলাম এর উওর দিতেই হবে কেন আমার সাথে এমন করলো কেন। কি অপরাধ এর জন্য এমন করছে ওকে বলতেই হবে।
আমার ভালোবাসা নিয়ে ছিনিমিনি কেন খেললো।
হঠাৎ দরজা খুলে কেউ ভিতরে প্রবেশ করলো আমি চোখ মুছে পেছনে তাকালাম।
আদি এসেছে আমাকে এভাবে দেখে একটু অবাক হলো না স্বাভাবিক ভাবে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিল। কিছু না বলে বাথরুমে চলে গেল। আমি ভেবেছিলাম আমাকে এভাবে নিচে বসে কাদতে দেখলে হয়তো কিছু বলবে কিন্তু ওর স্বাভাবিক চাহনি দেখে মনে হচ্ছে ও এটাই চাইছিল।
এটা ভেবে আর ও কষ্ট লাগছে কেন এমন করছে। আমি উঠে দাড়ালাম আদি বাথরুমে থেকে ড্রেস চেজ্ঞ করে এসেছে এসে আমার দিকে না তাকিয়ে খাটের দিকে গেল।
ওকি শুতে যাচ্ছে মনে হয় আমার সাথে কোন কথা বলছে না আমি নিজেই ওর সামনে গিয়ে দাড়ালাম।
আমি – আদি তুমি কোথায় ছিলো এতোক্ষন।
আদি আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আমার হাত ধরে সামনে থেকে সরিয়ে দিলো। আমি আবার গিয়ে দাড়ালাম।
আমি -কি হলো বল। আমি তোমাকে কিছু জিগ্গেস করছি। কার সাথে ছিলে এতোক্ষন আমাকে এখানে একা রেখে। তুমি তো আমায় ভালোবাস তাহলে কেন এমন করছো। আর আমার দেওয়া চিঠি গিফট সব কিছু ফেলে দিছো কেন তুমি তো বলেছিল ওই গুলো যত্ন করে রেখেছো।
আদি- যা খুশি তাই করছি আর আমি তোমাকে থাক এখন প্রচণ্ড ঘুম পাচ্ছে সামনে থেকে সরো তো।
আমি – কি বললে তোমার ঘুম পাচ্ছে। আর আমি যে কষ্ট মরে যাচ্ছি কি হয়েছে তোমার বলো না প্লিজ তুমি তো আমাকে ভালোবাস তাই না তাহলে এসব কেন করছো। তোমার জন্য আমি আমার পরিবারের সবাইকে ছেড়ে চলে এসেছি।
আদি – তো আমি কি করবো। আমি কি তোমাকে জোর করেছি না।
আমি – জোর করবে কেন আমি তো তোমাকে ভালোবাসি তাই এসেছি। কিন্তু তুমি কি আমাকে ভালোবাস।
আমার কথায় আদি এমন কথা বলবে আমি সত্যি ভাবি নি। মুখের উপর এই কথাটা বলতে পারলো কিভাবে বললো তিন বছর রিলেশন করে যাকে বিশ্বাস করে এখানে এসেছি তার কাছে এমন কথা শুনে আর দাড়িয়ে থাকতে পারলাম না। ঠাস করে নিচে পরে গেলাম তার পর আর কিছু মনে নেয়।
চলবে,,,
#ধোঁকা
#Tanjina_Akter_Misti
part-2
জ্ঞান ফিরে নিজেকে অন্ধকার ঘরে পেলাম। ভালো করে বুঝার চেষ্টা করছি আমি কোথায় আছি। এটা তো সেই রুম যেখানে আদি নিয়ে এসেছে অন্ধকারের জন্য বুঝতে অসুবিধা হচ্ছিলো। চারপাশে আদি খুজছি কোথাও নেয় আমি তো আদির সাথে কথা বলতেছিলাম।
ঘর অন্ধকার আমাকে একা রেখে আবার কোথায় গেছে ও তো তখন বলছিলো আমায় ভালোবাসে না। ব ছিলো নাটক যা আমি সহ্য করতে না পেরে জ্ঞান হারায়। কিসের জন্য এই নাটক করলো কেন আমি কি এমন অপরাধ করেছি। কি করব কি করা উচিত কিছু বুঝতে পারছি না।
কেন এমন করছে আমার সাথে আবার আমাকে একা রেখে কোথাও চলে যায় নি। আদির মা নেয়, বাবা চট্টগ্রাম থাকে ওইখানে বিজনেস করে। ঢাকায় আদি একাই থাকে। আমরা বিয়ে করেছি সেটা সে জানে নাকি আমি জানি না।
আমি মেঘনা। আমরা মধ্যবিও পরিবারের বাবা মা আর ভাই। আমি ছোট্ট। বাবা একজন সরকারি চাকরি জীবি ছিলেন র্বতমানে অবসর আছেন। মা হাউজওয়াইফ ভাই পুলিশ অফিসার।
বাড়িতে সবাইকে যেদিন জানিয়েছিলাম।
সকাল থেকে আদির কোন কল আসেনি সারা দিন অনেক বার ট্রাই করেছি। প্রচুর চিন্তা হচ্ছে কেন ফোন দিচ্ছে না আর আমার ফোন কেন রিসিভ করছে না। এইসব চিন্তা করতেছি। রাতে ড্রয়িং রুমে বসে এইসব ভাবছি বাড়ির সবাই অবশ্য ভাবছে আমি এমন করছি কেন সারা দিন কিছু খায় ও নি।
মা অনেক বলেছে কি হয়েছে আমার আমি কিছু না বলেছি। ভাইয়া অফিস থেকে এসে আমাকে গুমড়া মুখ করে বসে থাকতে দেখে অনেক কিছু জিগ্গেস করেছে।
আমি কিছু বলিনি আর বলবো কি করে ভাইয়া জানলে অনেক বকবে আমি জানি।
চিন্তা করতে করতে রুমে এসে বসলাম। ওমনি ফোন বেজে উঠল আমি তো দ্রুত ফোন নিয়ে নিলাম হাতে। হুম এটা আদির কল রিসিভ করে তো কান্না করে দিলাম।
আমি – আদি তুমি আমাকে ভালোবাসনা তাই না। ভালোবাসলে কি আজ সারা দিন আমাকে ফোন না দিয়ে থাকতে পারতে।( বলেই আবার কাদতে লাগলাম)
আদি- ওফ মেঘনা তুমি এতো ছেলেমানুষি কেন বল তো। আর কখন বললাম তোমায় ভালোবাসি না।
আমি – আমি জানি ভালো বাসলে কি কথা না বলে থাকতে পারতে। আমার ফোন ও রিসিভ করো নি।
আদি- আমি অনেক বিজি ছিলাম। তাই তোমার ফোন রিসিভ করি নি। এতে ভাল না বাসা কি হলো।
আমি – তোমার জন্য আজ সারা দিন আমি না খেয়ে আছি। তুমি ফোন রিসিভ করো নি বলে খাই ও নি সবাই বুঝেছে আমার কিছু হয়েছে। তুমি আর কোন দিন এমন করো না কিন্তু।
আদি – আচ্ছা আর না খেয়ে থাকা টা উচিত না কিন্তু। যাও তারাতারি খেয়ে আস। পরে কথা বলবো।
আমি – না এখন খাবো না। আগে আই লাভ ইউ বল।
ওই পাশ থেকে কিছু শুনার আগেই কারো চিৎকার শুনলাম। ভয়ে আমার আত্মা শেষ এটা তো ভাইয়ার কন্ঠ হাত থেকে ফোন পরে গেছে পিছনে তাকিয়ে দেখি ভাইয়া আগুন চুখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
ভাইয়া কি শুনে ফেলেছে আববু আম্মু ও ভাইয়ার চিৎকার শুনে দৌড়ে আসে। ভাইয়া আমার কাছে এসে ঠাস করে গালে চর বসিয়ে দিল। আমি অবাক হয়ে ভাইয়া মুখের দিকে তাকিয়ে আছি। ভাইয়া এতো সহজে মারে না আমাকে খুব বড় কোন অন্যায় করলে এমন জোরে মারে।
তার মানে ভাইয়া সব শুনেছে। চর খেয়ে যে ব্যাথা পেয়েছি তার থেকে বেশি ভয় লাগছে ভাইয়া সব শুন ফেলেছে বলে।
ভাইয়া- কার সাথে কথা বলছিলি বল। তার জন্য না খেয়ে আছিস। কি হলো কথা বলছিস না কেন তোমাকে আদর দিয়ে বাদর তৈরি করা হয়েছে। নয়লে এইসব করতে পারতে না।
আমি চুপ করে চোখের জল ফেলছি আর ভাইয়া আমাকে কথা শুনিয়েই যাচ্ছে। আববু এসে জিগ্গেস করছে কেন এমন করছে।
ভাইয়া- তোমার মেয়ে কোন এক ছেলে কে আই লাভ ইউ বলছিল ফোন এ। আর তার জন্য নাকি না খেয়ে বসে আছে।
সবাই মিলে আমাকে এত গুলো কথা শুনিয়ে চলে গেল। যাওয়ার আগে ফোনটা ও নিয়ে গেল। এতো কথা গুলো শুনেও আমার খারাপ লাগে নি। কষ্ট লাগছিলো ফোন নিয়ে গিয়ে ছিলো বলে।
দুই দিন আদির সাথে যোগাযোগ করতে পারিনি। ফোন কোন ভাবে নিতে পারছিলাম না।
হঠাৎ কারো কথায় বাস্তবে ফিরলাম তাকিয়ে দেখি আদি সাথে একটা লোক মনে হচ্ছে ডাক্তার তাহলে আদি কি ডাক্তার আনতে গিয়েছিল। আমাকে যদি ভালো না বাসে তাহলে ডাক্তার আনতে কেন গিয়েছিল।
ডাক্তার আমাকে দেখে বলল না খেয়ে থাকার জন্য জ্ঞান হারিয়েছিলাম। তারপর ডাক্তার চলে গেল। আদি ও সাথে গেল। সকালে বাড়ি থেকে না খেয়ে বের হয়ে ছিলাম। এখানে আসার পর আদি আমাকে একবার খেতে বলেছিল আমি না করেছিলাম আর খাওয়া হয় নি।
একপর আদি হাতে খাবার নিয়ে এলো আমার সামনে খাবার রেখে খেতে বলল।
আমি – আমাকে ভালো না বাসলে বিয়ে কেন করলে। আবার এখন সেবা যত্ন কেন করছো। ওই মেয়ে কে যাকে নিয়ে তুমি ছাদে ছিলে আর সে গেল কোথায়।
আদি- তোমার কোন কথার উওর আমি দেবো না। শুধু এই টুকু জেনে রাখ আমি তোমায় ভালোবাসি না। আগে যা ছিলো সব নাটক আর সেই নাটক টা করেছি তোমাকে বিয়ে করে কষ্ট দেওয়ার জন্য।
আমি – আচ্ছা কষ্ট না দিয়ে খাওয়াচছ কেন। কষ্ট দাও আমি জানি তুমি আমাকে ভালোবাস কিন্তু কেন শিকার করছো না।
আদি-এটা তোমার ভুল ধারনা। তা খুব শিগগিরই বুঝবে আর খাওয়াচ্ছি কেন না খাওয়ালে তোমাকে শাস্তি দেবো কি ভাবে।
আতিশ পালককে কিছু বলতে যাবে তার আগেই পেছন থেকে পাপড়ির গলা শুনতে পেলো।
“” ভাইয়া দেখতো,কাল আমি কোন শাড়ীটা পড়ে বউ সাজবো?””
আতিশ পেছনে ঘুরতেই পাপড়ির হাতে লাল আর খয়েরী কালারের পাথর আর সুতোর ভারী কাজ করা শাড়ী দেখতে পাচ্ছে। মুখে তার সেই মনভোলানো চিকচিক হাসি। তবে কি পালক সত্যি কথাই বলেছে? পাপড়ি অন্য কারো জন্য বউ সাজবে? ভাবতেই আতিশের অন্তরআত্মা কেঁপে উঠছে!
পাপড়ি দরজার কাছটা থেকে সরে এসে পালক আর আতিশের মাঝখানে ঢুকে পড়েছে। পালকের মুখোমুখি হয়ে দাড়ানোর ফলে আতিশ পাপড়ির পেছন সাইড দেখতে পাচ্ছে। পাপড়ি আরো উৎসাহী ও আদুরী গলায় বললো,,
“” ভাইয়া দেখনা,উনি তো দুটো বেনারশী পাঠিয়েছে। এখন আমি কোনটা পড়বো বুঝতে পারছিনা। তুই বলে দেতো!””
পালক কিছুক্ষন দুটো শাড়ীর দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,,
“” আমি বুঝতে পারছিনা। দুটোতেই তোকে অনেক সুন্দর লাগবে। তুই বরং আতিশকে জিজ্ঞেস কর!””
“” আতিশ ভাইয়া,তুমি বলো তো কোনটাতে আমায় বেশি সুন্দর লাগবে?””
আতিশ ভেতরে ভেতরে রেগে ফেটে যাচ্ছে। ইচ্ছে করছে পাপড়িকে কষে দুটো চড় মারতে। এতো বড় সাহস আমার কাছে জিজ্ঞেস করে ও অন্যের জন্য কোন শাড়ী পড়ে বউ সাজবে? তোর বউ সাজা আমি ছুটাচ্ছি!
আতিশ অন্তরের রাগ অন্তরেই আটকে রেখে নরম সুরে বললো,,
“” পাপড়ি ভেতরে যাও। আমার পালকের সাথে কথা আছে!””
“” কিন্তু আমার শাড়ী!””
পেছন থেকে পালক বলে উঠলো,,,
“” যার জন্য বউ সাজবি তাকে গিয়ে জিজ্ঞেস করে নে।””
“” Good idea.””
পাপড়ি যেমন চিকচিক হাসি নিয়ে আতিশের সামনে এসেছিলো ঠিক তেমনি চিকচিক হাসি নিয়ে বেড়িয়ে যাচ্ছে,তবে এখনকার চিকচিকটার মধ্যে কিছুটা লাজুকতা মিশ্রিত!
পাপড়ি চলে যেতেই আতিশ পালককে উদ্দশ্যে করে বললো,,
“” আর ৯ দিন পর ওর এইচ.এস.সি পরীক্ষা আর তোরা এখন ওকে বিয়ের পিড়িতে বসিয়ে দিচ্ছিস? ওর কি বিয়ের বয়স হয়েছে?””
পালক বিছানায় ধপাস করে বসে পড়েছে,সাইড থেকে একটা বালিশ নিয়ে ওটাতে কাধটা ভর দিয়ে আতিশকে বললো,,
“” আমি কেন ওকে বিয়ে দিতে যাবো? ও তো নিজেই বিয়ের জন্য নাচ্ছিলো।””
“” নিজে নাচ্ছিলো মানে?””
পালক এবার কাধের ভরটা ছেড়ে দিয়ে আরাম করে শুয়ে বললো,,
“” আরে,ওর নতুন টিউটরটা আসার পর থেকেই দেখি বোন আমার তার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে। এমনি হাবুডুবু খাচ্ছে যে আমাকে স্ট্রেইট জানিয়ে দিলো,যদি এখনি ওদেরকে বিয়ে দিয়ে না দেই তাহলে নাকি পরীক্ষা দিবেনা। নাওয়া খাওয়াও বন্ধ। এখন তুই ই বল আমি একজন খাটি প্রেমিক হয়ে আমার বোনের প্রেমকে কি করে ফেলে দেই?””
আতিশ পালকের পাশে এসে বসে পড়েছে,কিছুটা অসস্থিরতা ও ধমকানির সুরে বললো,,
“” তাই বলে এখনি বিয়ে? পরীক্ষাটা শেষ হলে দেওয়া যেতোনা?””
“” আমার বোন আমার মতোই অধৈর্য্য রে আতিশ!””
“” ছেলে কি করে? কোথায় থাকে? নাম কি?””
“” আমার ঘুম পাচ্ছে,তুই পাপড়ির কাছ থেকে জেনে নে।””
আতিশের ইচ্ছে হচ্ছে শুধু পাপড়িকে না এই পালককেও কষে দুটো চড় মারতে। এইদিকে আমি অস্থিরতায় মরে যাচ্ছি আর ও ঘুম নিয়ে পড়ে আছে?? যাকে দেখার জন্য এতোটা আকুলতা নিয়ে আসলাম সেই কিনা বিয়ের জন্য টেই টেই করে নাচ্ছে??
আতিশকে অবাক করে দিয়ে পালক সাথে সাথে ঘুমিয়ে পড়েছে।
আতিশ পালকের রুম ছেড়ে পাপড়ির রুমের দিকে পা বাড়িয়েছে। দরজাটা মনে হচ্ছে ভেতর থেকে বন্ধ। দরজা বন্ধ করে কি করছে ও? নতুন টিউটরের সাথে ফুসুরফুসুুর? ফোনে কথা বলতে হলে কি দরজা বন্ধ করে নিতে হয়?? আতিশ দরজায় নক দিতে গিয়েও দিলোনা। একটা চাপা অভিমান কাজ করছে। এতোটা দিন ধরে যে মেয়েটা এতোটা ভালোবেসে এসেছে,সে একটা ঘটনাকে কেন্দ্র করে এতো পাল্টে গেলো কি করে?? তাহলে কি ওগুলো সত্যিই অল্প বয়সের আবেগ ছিলো? আমার কি বুঝতে ভুল হয়েছিলো?? হয় তো তাই হবে,নাহলে ও কিভাবে অন্য কারোর বউ সাজার কথা ভাবতে পারে? ওর চোখে মুখে নতুন কারোর উপস্থিতির যে আলো জ্বলজ্বল করছে তা স্পষ্ট করে বলে দিচ্ছে ঐ মানুষটাকে পেয়ে ও কতটা খুশি!
আতিশের ব্যথা হচ্ছে,বুকের ভেতরে। যে ব্যথা অন্য কাউকে দেখানো যায় না,অন্য কাউকে বলাও যায় না। এটা হলো না বলতে পারার কথাগুলোর ব্যথা! এই ব্যথাগুলো কখনোই প্রকাশ করা যায়না। প্রকাশ করা উচিতও না। কেননা,যাকে বলার প্রয়োজন তাকেই যদি না বলা হয়ে থাকে,তাহলে অন্য কাউকে কেন বলবে? এটা বুঝানোর জন্য যে সে কতটা ব্যর্থ??
আতিশ না চাইতেও চোখের কোনে পানি জমে যাচ্ছে। এই পানিগুলোকে এই কোনেই আটকে রাখতে হবে,বাহিরে আসতে দেওয়া যাবেনা। কখনোই না।
অন্ত্রীশার ডাকেই পালকের ঘুম ভেঙেছে,ঘুমঘুম চোখে অন্ত্রীশার দিকে তাকিয়ে আছে পালক।
জাম কালার সুতির শাড়ী পড়েছে ও। কানে সোনার দুল,হাতে চিকন সোনার চুড়ি আর নাকে নাকফুলে পুরো নতুন বউ। কিন্তু তার সাথে খালি গলাটা মানাচ্ছেনা। একটা সোনার চিকন চেইন হলে বেশ হতো!
অন্ত্রীশা পালকের পাশে বসে পড়েছে। উল্টো দিকে ঘুরেই ওর দিকে একটা চেইন এগিয়ে দিয়ে বললো,,
“” এটা পড়িয়ে দিনতো!””
পালক তখনো অন্ত্রীশার বউরুপে দেখায় মগ্ন। তার বউটা যে এতো সুন্দর তাতো আগে বুঝেনি। বউ তো সে অনেক আগে থেকেই কিন্তু তখন তো ওকে এমন বউ বউ লাগেনি,আজ কেন লাগছে?? ভালোবাসি বলে??
“” কি হলো? আপনি কি আবার ঘুমিয়ে পড়লেন?””
অন্ত্রীশার ডাকে পালক উঠে বসেছে। ওর হাত থেকে চেইনটা নিতেই বুঝতে পারলো এটাতে তারই দেওয়া সেই লকেটটাও ঝুলছে। ঠোটের কোনে হাসি নিয়ে অন্ত্রীশার চুলে হাত দিতেই ও বলে উঠলো,,
“” আমি আপনাকে চেইন পড়িয়ে দিতে বলেছি,আমাকে ছুতে নয়। আমার শরীরের কোনো অংশেই যেন আপনার টাচ না লাগে বুঝতে পেরেছেন?””
অন্ত্রীশা নিজের হাতে নিজের চুলগুলো উচু করে ধরে রাখতেই পালক খুব সাবধানে চেইনটা পড়িয়ে দিয়েছে।
অন্ত্রীশা বসা থেকে উঠে বললো,,
“” নো কথা,নো ছোয়া। অনলি কলঙ্কিত! ওকে?””
পালকের চুপসা মুখ দেখে অন্ত্রীশার খুব হাসি পাচ্ছে। সে তো নিজেও চেইনটা পড়তে পারতো,কিন্তু পালককে একটু জ্বলতে দেখার জন্যই ওর কাছাকাছি এসেছে। ভালোবাসায় একটু একটু না জ্বললে খাঁটি হবেটা কি করে???
এতো বছর পর নিজের পত্রীকন্যাকে এতো কাছে পেয়েও ছুয়ে দেখতে পারছেনা,একটু মনভরে ভালোবাসার কথা বলতে পারছেনা,একটু বুকে নিতে পারছেনা,এই কষ্ট পালক কোথায় রাখবে?? আজ সোফাটাকে মনে হচ্ছে সবচেয়ে কঠিন,শক্ত,ধারালো বস্তু যা একটু পরপর খুচিয়ে বলছে পত্রীকন্যার কাছে গিয়ে শুতে। ঘুম আসছে তার,মনটা কেমন আনচান আনচান করছে,শরীরের মধ্যে এক নতুন উত্তেজনা উকি দিতে চাচ্ছে।
পালক শোয়া থেকে উঠে অন্ত্রীশার কাছে এসে দাড়িয়েছে। টুপ করে মেঝেতে হাটু ভাজ করে বসেও পড়েছে। হাতদুটো খাটের ধারটাতে ভাজ করে তাতে থুতনি ঠেকিয়ে অন্ত্রীশার দিকে তাকিয়ে আছে। জাগ্রত অবস্থায় তো তোমার কাছেও ঘেষতে দাওনা। কিন্তু ঘুমন্ত অবস্থায় ঠিকই ঘেষবো। তোমাকে ছুতে না পারি,মন ভরে দেথতে তো পারবো?? আমার পত্রীকন্যাকে দেখে দেখেই আজ সারাটারাত পার করবো।
পালক অন্ত্রীশার ঘুমন্ত চেহারায় তাকিয়ে পলক ফেলতে ভুলে গিয়েছে। এ যেন কোনো রুপকথার ঘুমন্ত রাজকুমারী। কি মায়াবী আর নিষ্পাপ চেহারা! মনে মনে বিড়বিড় করতে থাকে,,,এতো অপেক্ষা,এতো রাগ,এতো অভিমান,এতো ভুল শেষে আজ যখন দুজনদুজনার হলাম তখনই তোমাকে এতো বড় শর্ত জুরে দিতে হলো পত্রীকন্যা?? আমি কিভাবে নিজেকে নিয়ন্ত্রনে রাখবো?? আমিতো তোমার প্রেমের আগুনে পুড়ে কবেই কলঙ্কিত হয়ে গিয়েছি তা তুমি বুঝতে পারছোনা?? আবার নতুন করে কিভাবে কলঙ্কিত হবো?? আমারতো মন,প্রান,শরীর,মাথা কিছুই কাজ করছেনা। সারাক্ষন তোমাকে একটু দেখার জন্য উফালপাথাল হয়ে যাচ্ছে,এমন অবস্থায় কলঙ্কিত কিভাবে হবো তা খুজেই পাচ্ছিনা। আমার সব বুদ্ধী আমি যে তোমার মাঝে হারিয়ে ফেলেছি!
অন্ত্রীশার ঘুম ভাঙতেই পালককে নিজের পাশে আবিষ্কার করেছে। হাতের উপর ভর দিয়ে ঘুমিয়ে আছে,মাথাটা এক সাইডে কাত হয়ে পড়ে আছে। অন্ত্রীশা ঠোটটিপে হেসে নিয়ে একটা বালিশ পালকের কাছটাতে রেখেছে। আলতো করে ওর মাথাটা উঠিয়ে বালিশটা নিচে গুজে দিয়ে বিছানা ছেড়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।
“” কিরে বাপ,তোর কি শরীর খারাপ? অপিসে যাবিনা?””
আতিশ চোখ না মেলেই শোয়াবস্থায় বললো,,
“” না।””
“” আজকে কি বন্ধ?””
“” জানিনা। আমার ঘুম পাচ্ছে ঘুমাতে দাওতো আম্মু!””
দিলরুবা বেগম ছেলের মাথার কাছটাতে বসে চুলে হাত বুলিয়ে বললেন,,
“” রাতে কিছু না খেয়েই ঘুমিয়েই পড়লি,এতোবেলা করে ঘুমাচ্ছিস,কিছু কি হয়েছে?””
“” না।””
“” তাহলে আমার সাথে পালকের বাসায় চল,আজতো পাপড়ির গায়ে হলুদ। ওখানে গেলেই মনটা ভালো হয়ে যাবে।””
“” আমি তো কোথায়ও যাবোনা আর তুমিও যাবোনা।””
“” ওমা কেন? পালক এতো বার করে বলে গেলো,না গেলে খারাপ দেখাবেনা??””
“” সে আমি দেখে নিবো। তুমি যাবা না মানে যাবা না। ক্ষুধা লাগছে যাও ভাত বারো।””
আতিশ টাওয়াল নিয়ে গোসল করতে চলে গেলো।
“” এসব কি শুনছি অনতি?””
অরিদ্রার হাতে মেহেদী পড়াতে পড়াতে অনিকশার কথার উত্তর দিচ্ছে অন্ত্রীশা,,,
“” কি আপু?””
“” তুই নাকি পালককে বলেছিস কলঙ্কিত পুরুষ হয়ে দেখাতে?””
“” হুম!””
অনিকশা এবার সিরিয়াসমুডে বললো,,
“” নিজের বরকে কেউ অন্য মেয়ের কাছে ছেড়ে দেয়?””
“” অন্য মেয়ের কাছে ছাড়তে যাবো কেন?””
“” অন্য মেয়েকে না ছুলে কলঙ্কিত হবে কিভাবে?””
অরিদ্রার হাত থেকে মনোযোগ সরিয়ে অনিকশার দিকে তাকিয়েছে অন্ত্রীশা।
“” শুধু অন্য মেয়েকে ছুলেই কলঙ্কিত হওয়া যায়? আর কোনোভাবে হওয়া যায় না?””
“” আর কিভাবে হবে?””
অনিকশার প্রশ্নের উত্তরে ছোট্ট করে হাসি উপহার দিয়েছে। ওর হাতটা টান দিয়ে নিজের কোলে রেখে অন্ত্রীশা বললো,,
“” তোমার হাতে মেহেদী পড়লে অনেক সুন্দর লাগবে আপু। অরিদ ভাইয়া কখন আসবে??””
পালক যতটা পারছে অন্ত্রীশার থেকে দুরে থাকার চেষ্টা করছে। ওর আশেপাশে থাকলেই কেমন জানি চুম্বকের মতো টান অনুভব হয়। আর সেই টান অগ্রাহ্য করা কতটা কঠিন সেটা একমাত্র ও ছাড়া আর কেউ উপলব্ধী করতে পারবে না। তার মধ্যে কলঙ্কিত হওয়ার উপায়টাও এখনো খুজে পাচ্ছেনা। আর কত সে নিজেকে আটকে রাখবে,উফ! এতো সমস্যা আমাকেই কেন ফেইস করতে হয়??
পালক ভাবনার তালে রুমে ঢুকতেই একটা ছেটখাটো হার্টঅ্যাটাক হয়ে গেলো। অন্ত্রীশা ব্লাউজ আর পেটিকোট পড়ে দাড়িয়ে আছে। এই মেয়েটা আমাকে জীবিত অবস্থায় মেরে ফেলবে,একবার ব্লাউজ ছাড়া শাড়ী পড়ছে তো আরেকবার শাড়ী ছাড়া ব্লাউজ পড়ছে। পালক চট করে ঘুরে বেড়িয়ে যেতে নিলেই পেছন থেকে ডাক পড়ে।
“” চলে যাচ্ছেন কেন? আমি তো আপনার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম। শাড়ী পড়ার আগেই মেহেদী পড়ে ফেলেছি। এখন শাড়ীটা কিভাবে পড়বো? ঐদিকে পাপড়িকে হলুদের স্টেজেও নিয়ে যেতে হবে আর মেহেদীও এখনো শুকায়নি। শাড়ীটা আপনি পড়িয়ে দিনতো!””
পালক যেমন চট করে ঘুরে গিয়েছিলো আবারও তেমন চট করেই অন্ত্রীশার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। এই মুহুর্তে সে সবচেয়ে অসহায় ব্যক্তি!
“” এমন করে তাকিয়ে আছেন কেন? আপনি শাড়ী পড়াবেন নাকি এভাবেই বেড়িয়ে যাবো?””
পালক বিছানা থেকে শাড়ীটা হাতে নিয়ে অন্ত্রীশার কোমড়ে গুজতে গিয়ে থমকে গিয়েছে। ধবধবে সাদা মেদহীন পেটটার মধ্যে গর্তহীন নাভী!
“”হাত দিয়ে ছুতে পারছেননা বলে চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছেন?””
অন্ত্রীশার ধমকানিতে পালকের হুশ এসেছে। পালক অসহায় দৃষ্টিতে অন্ত্রীশার দিকে তাকাতেই ও বললো,,
“” নো কথা,নো ছোয়া। অনলি কলঙ্কিত! ওকে???””
সারাদিন নিজের সাথে যুদ্ধ করে রুমের মধ্যে নিজেকে আটকে রেখেছিলো আতিশ। কিন্তু সন্ধ্যা নামতেই বুকের ভেতর হারানোর ঝড় উঠেছে। যে ঝড়ে সে লন্ডভন্ড হয়ে যাচ্ছে,কিন্তু কাউকে কিছু বলতেও পারছেনা। বারবার শুধু পাপড়ির একটা কথায় মাথায় আসছে,আপনি তুমি করে বললে নিজেকে আপনার বউ বউ লাগে!
যে মেয়েটা শুধু তুমিতেই নিজেকে আমার বউ ভাবতো সে কিভাবে এখন এতো রঙঢঙ সেজে অন্যকারো বউ হবে? কেন? ও শুধু আমার বউ হবে,শুধু আমার। ওর হলুদ মাখা আমি ছুটিয়ে ছাড়বো। শুধু হলুদ কেন? সাথে মরিচ,ধনিয়া,জিরা,আদা,রসুন সব মাখাবো!
আতিশ রাগে গজগজ করতে করতে পালকের বাড়ি এসে হাজির। চারপাশে মানুষের চিল্লাচিল্লি,রঙঢঙ,লাইটের আলো,ফুলের গন্ধ সবকিছুই যেন আতিশের রাগকে আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে। ইচ্ছে করছে সব ভেঙে চুড়মার করে দিয়ে চিৎকার করে বলতে,পাপড়ি আমার বউ হবে। ওকে কোনো হলুদ লাগাতে হবেনা। আমি নিজেই হলুদ হয়ে ওর মধ্যে মেখে যাবো।
আতিশ বড় বড় পা ফেলে স্টেজের সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। স্টেজে হলুদ শাড়ী আর ফুলের গয়নায় সেজে বসে আছে পাপড়ি। ঠোটে তার খুশি আর লাজুকতার হাসি।
অন্ত্রীশা আতিশকে টেনে পাপড়ির সামনে দাড় করিয়ে দিয়েছে। হাতে একদলা হলুদ নিয়ে পাপড়ির গালে মাখতে মাখতে ভাবছে,এমন হলদে পাখিটার দিকে তাকিয়ে যে রাগ করতে পারবে তাকে শুলে চড়ানো উচিত!
গায়ে হলুদের পার্ট চুকিয়ে সবকিছু সামাল দিয়ে রুমে ফিরতে ফিরতে প্রায় মাঝরাত হয়ে এসেছে। চোখে,মুখে হাজারও ক্লান্তির ভিড় অন্ত্রীশার। বিছানায় শরীরটা মেলে দিতে না পারলে হয়তো এখনি ঢুলে পড়ে যাবে। অন্ত্রীশা ধীর পায়ে রুমের কাছে এসে থেমেছে। দরজাটা লাগানো। ভেতর থেকে কেমন একটা বাজে গন্ধ আসছে। অন্ত্রীশা কপাল কুচকে দরজা খুলতেই কাঁশি উঠে গিয়েছে। রুমে ড্রিমলাইটের আলো। তাও ধোয়ায় ঢেকে রয়েছে। চারপাশে ধোয়ারা উড়ে বেড়াচ্ছে। সিগারেটের এমন তীব্র গন্ধ অন্ত্রীশা সহ্য করতে পারছেনা। শুধু কেঁশেই যাচ্ছে। চোখে জ্বলাও ধরেছে।চোখ খুলতে পারছেনা। তবুও মেলার চেষ্টা করে ভেতরে তাকাতেই মেঝেতে পালককে বসে থাকতে দেখলো।
“” এগুলো কি করেছেন আপনি? রুমের এ অবস্থা কেন? আমাকে মেরে ফেলতে চাইছেন?””
“” তুমি যে গেমটা শুরু করেছো সেটা আজ আমি শেষ করতে চলেছি!””
“” মানে?””
পালক বসা থেকে উঠতে উঠতে বললো,,
“”ভালোবাসার খেলায় দুজনেই পারটিসিপেট করেছি,তাহলে আমি একা কেন পারফর্ম করবো? তোমাকেও পারফর্ম করতে হবে,পত্রীকন্যা!””
পালক অন্ত্রীশার মুখোমুখি হয়ে দাড়িয়ে আছে। অন্ত্রীশার চোখে চোখ রেখে। ধোয়াগুলো তাদেরকে ঘিরে রেখেছে। আজ কেন জানি মনে হচ্ছে,এই ধোয়াগুলোতে এক মাতলতার সুবাস রয়েছে। যা দুজনকে হারিয়ে নিয়ে যেতে চাচ্ছে এক অদ্ভুত নেশায়। যে নেশাতে ধুকে ধুকে মরবেনা,এক ঝটকায় মরে যাবে।
পালক কি করছে আর কি বলতে চাচ্ছে অন্ত্রীশার মাথায় কিছুই ঢুকছেনা। বেশ বিস্ময় মিশ্রিত জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে পালকের চোখের দিকে। যেন এই চোখেই সে তার সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবে।
“” একজন কলঙ্কিত আর অন্যজন শুদ্ধিত মিলে কখনোই একটি পবিত্র ফুল ফুটাতে পারেনা। হয় দুজনকেই কলঙ্কিত হতে হবে নাহয় দুজনকেই সুদ্ধিত হতে হবে। আর তুমি যেহেতু চাচ্ছো আমি কলঙ্কিত হয় তারমানে তোমাকেও কলঙ্কিত হতে হবে!””
পালক নিজের কথা শেষ করতেই অন্ত্রীশার কোমড় জড়িয়ে ধরেছে। অন্ত্রীশা তখনো পালকের চোখের মায়ায় ডুবে আছে। যেইনা অন্ত্রীশাকে কোলে উঠিয়ে নিয়েছে অমনি অন্ত্রীশা চিৎকার করে উঠলো,,,
“” আরে কি করছেন? আপনি কিন্তু রুলস ভঙ্গ করছেন,এটা ঠিক হচ্ছেনা পালক!””
“” উহু পত্র পুরুষ! তোমার মুখে পালকটা মানায় না,পত্রী!””
পালকের প্রতিটি কথাতে অন্ত্রীশা হারিয়ে যাচ্ছে,প্রতিটা পদক্ষেপে হারিয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে ওর কথার বুলিতে আজ হারিয়ে যাওয়ার ছন্দ মেখে নিয়েছে। আজ কি তবে তার হারিয়ে যাওয়ার দিন???
অন্ত্রীশাকে বিছানায় শুয়িয়ে দিয়ে পালক ওর উপরে নিজের ভর ছেড়ে দিতেই অন্ত্রীশা আবার সম্ভিত ফিরে পেয়েছে,,,
“” ওমা গো,সরেন,কি হচ্ছেটা কি???””
“” বাসর!””
অন্ত্রীশা পালকের দুবাহু ধরে সরানোর চেষ্টা থামিয়ে চমকে বললো,,
“” কি!!!””
“” হুম,তোমার আমার কলঙ্কিত বাসর। তোমার আমার ধোয়াময় বাসর হবে আজকে। যে বাসরে আমিতো কলঙ্কিত হবোই সাথে তোমাকেও কলঙ্কিত করে দিবো। তবেই তো জন্ম নিবে একটি পবিত্র ফুল! শুনোনা,আমাদের ছেলর নাম হবে পবিত্র আর মেয়ের নাম হবে ফুল,,,তোমার আমার পবিত্র ফুল! কেমন বলেছি বলো??””
অন্ত্রীশা পালকের সাথে দস্তাদস্তি করতে করতে বললো,,
“” কোনো ফুল টুল হবেনা। আপনি রুলস ভঙ্গ করেছেন। আমি বলেছিলাম,নো কথা নো ছোয়া। অনলি কলঙ্কিত! কিন্তু আপনি…””
“” আমি আজ সব রুলস ভেঙে দিয়েছি। রুলস না ভাঙলে কলঙ্কিত কিভাবে হবো? তোমার ছোয়া না পেয়ে আমি মরিয়া হয়ে উঠেছি। সে কি মরিয়া গো পত্রী! মনে হয়,মৃত্যুদেশ থেকে মরতে মরতে ফিরে এলাম!””
পালক এসব কি বলছে! ও কি পাগল হয়ে গেলো??? কিন্তু এই পাগলামীটা আমাকে কেন মরিয়া বানিয়ে ফেলছে?? আমার ও কেন ইচ্ছে হচ্ছে ওর সাথে মিলেমিশে কলঙ্কিত হতে???
“” আপনি আমার সাথে এমনটা করতে পারেননা। একজন উত্তম পুরুষ হয়ে কিভাবে একটা মেয়ের উপর অত্যাচার চালাতে পারেন??””
পালক অন্ত্রীশার ঠোটে হাত বুলাতে বুলাতে বললো,,
“” অবশ্যই পারি। তুমি আমার বউ অন্য কোনো মেয়ে নও। আমরা কাগজে কলমে বিয়ে করেছি,চিঠিতে চিঠিতে বিয়ে করেছি,অপেক্ষায় অপেক্ষায় বিয়ে করেছি,অভিমানে অভিমানে বিয়ে করেছি,ধোয়ার চুমুতে চুমুতে বিয়ে করেছি,আর আজ ছোয়ায় ছোয়ায় বিয়ে করবো, নিশ্বাসে নিশ্বাসে বিয়ে করবো!
পালকের হাতের ছোয়া পড়তেই অন্ত্রীশা চোখ বন্ধ করে ফেলেছে। গলার স্বর মিলিয়ে গিয়েছে। বুকের ভেতরে ধুকপুক ধুকপুক করছে। অজানা শিহরনে কেঁপে উঠছে তার শরীরের প্রতিটি পশম!
অন্ত্রীশা কাঁপাকাঁপা কন্ঠে বললো,,,
“” ধোয়ার গন্ধে আমার নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, শুদ্ধ পুরুষ। আমার যে একটু শুদ্ধ নিশ্বাসের প্রয়োজন!””
পালক আর কথা না বাড়িয়ে অন্ত্রীশার ঠোটে নিজের ঠোট মিলিয়ে নিয়েছে। পৃথিবীতে বউয়ের জন্য তার স্বামীর নিশ্বাসের চেয়ে আর কোন নিশ্বাসটা শুদ্ধ হতে পারে???
আতিশ সেই ভোরবেলাই পাপড়িদের বাসায় হাজির। সারারাত ছটফট করতে করতে কাটিয়েছে। একরাতেই চোখের নিচে ফুলে উঠেছে, ফযরের আযান কানে আসতেই বিছানা ছেড়ে পাপড়িদের বাড়ির উদ্দেশ্যে বেড়িয়েছিলো। সে যতই চাইছে পাপড়ির কথা ভাববেনা,ততই ভেতরের সবকিছু দুমড়েমুচরে তাকে শেষ করে দিচ্ছে। বারবার শুধু একটা জিনিস ভেবেই দিশাহারা হয়ে যাচ্ছে পাপড়ি অন্য কারো বউ হবে। তাহলে তার বউ কে হবে?? তার ও তো বউ হিসেবে পাপড়িকেই চাই। কখনো মুখ ফুটে বলেনি বলে পাপড়িও বুঝার চেষ্টা করবেনা??? উফ! এই বাসাটাই আসলেই আমার সব অনুভূতিগুলো একসাথে আমার উপর ঝেকে বসে। আজ বুঝতে পারছি পালকের পাগলামীগুলো কতটা ভয়াবহ ছিলো!
একটু পরেই বর চলে আসবে অথচ পাপড়ির এখনো সাজগোজ শেষ হয়নি। ও কি আজকে সারাজীবনের সাজ একবারেই সেজে ফেলবে?? পালক পাপড়ির রুমের বাইরে অপেক্ষা করতে করতে নিজের চুল টেনে ছিড়ে ফেলার উপক্রম। আর কত ধৈর্য্য ধরে সে বাইরে অপেক্ষা করবে?? তার যে পাপড়ির সাথে অনেক কথা আছে,যে কথাগুলো আজকে না বলতে পারলে হয়তো আর কোনোদিন বলতে পারবেনা। না বলা কথাগুলো তাকে তিলে তিলে শেষ করে দিবে। আতিশ আর অপেক্ষা করতে পারছেনা। হুট করেই দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে গিয়েছে!
পাপড়ি লাল কালারের বেনারশী পড়ে আছে,পুরো শরীরভর্তি সোনার গয়না। চোখে মুখে ভারী মেকাপ। এতো ভারী সাজে সে কখনো পাপড়িকে দেখেনি। পাপড়ি যে সাজেনি তা নয়,কিন্তু ইচ্ছে করেই তার দেখা হয়নি,যদি নিজেকে সামলাতে না পারতো সে ভয়ে।
পালকের হুট করে উপস্থিতে সকলে চমকে গেলেও পাপড়ি চমকায়নি। নিচুস্বরে সবাইকে চলে যেতে বলে ও হাতে চুড়ি পড়া শুরু করেছে। হাতে কতগুলো চুড়ি নিয়েই আতিশের কাছে এগিয়ে এসে দাড়িয়েছে। পুরো মনোযোগ তার চুড়ি পড়ায়। চুড়ির দিকে তাকিয়েই বললো,,,
“” কিছু বলবেন? আর এখন থেকে আর কখনো এরকম হুট করে আমার রুমে ঢুকে পড়বেননা। এখন তো আমি শুধু আপনার বন্ধুর বোন নই,আরেকজনের বউ হতে যাচ্ছি। একটু পরেই অন্যকারো দখলিনী হয়ে যাবো।””
শেষ চুড়িটা পড়া শেষ করে আতিশের দিকে তাকিয়েছে পাপড়ি। তার চোখের চাহনিটা কঠিন হয়ে এসেছে। এতোটাই কঠিন যে এখন চাইলে সে পাপড়িকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে শেষ করে দিতে পারবে।
পাপড়ি আতিশের চাহনিকে অগ্রাহ্য করেই বললো,,,
“” বউ সাজে আমাকে কেমন লাগছে? উনার পছন্দ হবে তো?? উনার বুকে আমার মাথাটা চেপে ধরবে তো? উনার হাতদুটো আমার শরীরের সবটা জায়গায় বিচর…..””
পাপড়ি কথা শেষ করার আগেই ওর গালে কষে একটা চড় মেরে বসেছে আতিশ। আতিশ হুট করে এমন চড় মেরে বসবে ভাবতে পারেনি পাপড়ি। চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি বেড়িয়ে পড়েছে সাথে সাথে।
আতিশ পাপড়ির দুই চিবুক নিজের দুহাতে চেপে ধরে নিজের কাছে টেনে নিয়ে এসেছে। নিজের চোখের সাদা অংশটা লালরং ধারন করে ফেলেছে অনেক আগেই। কিন্তু সেই লাল রঙে এবার নোনাপানিও মিশে গিয়েছে। পাপড়ির চোখে চোখ রেখে বললো,,,
“” তুই,তুই শুধু…””
পাপড়ি ব্যথাতুর কন্ঠেই ক্ষীনস্বরে বললো,,
“” আমি কি?””
আতিশ তার পুরো কথাটা শেষ না করেই পাপড়িকে ঠেলে বিছানায় ফেলে দিয়ে বাইরে চলে যাচ্ছে। পাপড়ির রুম থেকে বেড়িয়েই নিজের শার্টের হাতা দিয়ে চোখ মুছে নিচ্ছে। চোখের পানিগুলোকে সে আর চোখের কোনে বন্দী করে রাখতে পারছেনা। সবগুলো অবাধ্য হয়ে গেছে। আজ শুধু পাপড়ি না সবাই তাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছে। এতো কষ্টগুলো আমি কোথায় রাখবো পাপড়ি? আমার জন্যে কি আরেকটু অপেক্ষা করতে পারলেনা? আর একটু অপেক্ষা করলে কি খুব বেশি ক্ষতি হয়ে যেতো?? এতোগুলো বছর তোমাকে চোখে চোখে রেখেছি,আর আজ দুইদিন চোখের আড়াল হতে না হতেই আমাকে ভুলে গেলে? আমার প্রতি তোমার ভালোবাসা সব শেষ হয়ে গেলো? কি করে পারলে আমার সামনে অন্য পুরুষের স্পর্শ নেওয়ার কথা বলতে? অন্য পুরুষের বুকে নিজের মাথা রাখার কথা বলতে? এটা আমাকে কতটা যন্ত্রণা দিয়েছে তোমাকে আমি কোনোদিনও বুঝাতে পারবোনা,কোনোদিনও না।
আতিশ সব ভিড় ঠেলে পাপড়িদের বাসার গেটে আসতেই পেছন থেকে নিজের শার্টে টান অনুভব করে। পেছনে ঘুরতেই পাপড়িকে দেখে বুকটা ছ্যাত করে উঠেছে। একটু আগেও যে মেয়েকে কোনো রাজকুমারীর চেয়ে কম সুন্দর লাগেনি সেই মেয়েটার চেহারা একি অবস্থা? চোখের কাজল ল্যাপ্টে চারপাশটা মেখে আছে,এতো ভারী মেকাপেও আতিশের হাতের আঙুলের ছাপ স্পষ্ট। থাপ্পড়টা কি খুব বেশি জোরে দিয়ে ফেলেছি? রাগের বশে এতোটুকু মেয়েকে এতো বড় থাপ্পড়টা আমি কিভাবে দিলাম??
আতিশ বিস্ময় নিয়ে পাপড়ির দিকে তাকিয়ে আছে,আমি কি অতি মনোঃকষ্টে কোনো ভ্রমে চলে এসেছি? আমার চেনা পাপড়িতো এমন হতে পারেনা। এই যে চোখটা এতো বড় বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে, এটা কখনোই পাপড়ির হতে পারেনা,আর রাগ? ওর তো রাগ থাকতেই পারেনা। ও তো ফুপিয়ে কাঁদতে পারে,ছেচ্কান্দুনি! আর থাপ্পড়??
আতিশকে আরো অবাক করতেই পাপড়ি ওর কলার টেনে বাড়ির ভেতরে নিয়ে যাচ্ছে। পুরোবাড়ি ভর্তি মানুষ ওদের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে,কেউ কেউ মুখ টিপে হাসছে তো,কেউ কেউ নানা মস্করাই মেতে উঠেছে। কাজীর সামনে গিয়ে আতিশকে ধাক্কা দিয়ে সোফাতে ফেলে দিয়েছে,,,
“” ভাইয়া কাজীকে বল এখনি বিয়ে পড়াতে!””
কাজীর পাশে পালককে দেখে বেশ হকচকিয়ে গিয়েছে আতিশ। নিজেকে সামলিয়ে পালককে কিছু বলতে যাবে তার আগেই অন্ত্রীশা পেছন থেকে হাসি হাসি মুখ নিয়ে বললো,,,
“” এমন সাজেই বিয়ে করবে আতিশ ভাইয়া? শেরওয়ানিটা পড়তে দিবেনা? তুমি বসো আমি নাহয় উনাকে রেডি করে আনি!””
“” কিছু পড়তে হবেনা উনাকে। উনি এমন সাজেই বিয়ে করবেন!””
আতিশ ভয়ে ভয়ে পাপড়ির দিকে তাকিয়ে রয়েছে। পালক আতিশকে উদ্দশ্য করে বললো,,
আতিশ পালকের কথায় তরতর করে ঘেমে যাচ্ছে। তাহলে কি পালকও সব জেনে গিয়েছে??
পালক আতিশের পাশে এসে ওর হাতটা ধরে বসলো।
“” তুই জানিসনা,এই পৃথিবীতে সব থেকে বিশ্বস্ত যদি কেউ থাকে সেটা তুই? আর এমন বিশ্বস্ত মানুষটার কাছে আমার বোনকে বিয়ে দিতে চাইবোনা কেন?? ভালবাসি তোকে আমি,আর যাকে আমি ভালোবাসি তাকে আমার বোন তো ভালোবাসবেই!””
“” তারমানে তুই সব…””
পালক আতিশের হাতটা ছেড়ে একটু ব্রু উচু করে বললো,,
“” তোর কি মনে হয়,তোর ব্যাপারে আমি কিছু জানিনা? তুই মনে মনে প্রেম করবি আর আমি জানবোনা? তাছাড়া তোর দিক নাহয় বাদই দিলাম বোনটাও তো আমার,আর ও কোন পুরুষের পাত্রে নিজের প্রেম নিবেদন করছে সেটার আমি খোজ রাখবোনা?? শুধু বন্ধর অধিকারেই তোকে আমার বোনের বেডরুমে ঢুকার পারমিশন দিবো???””
এই নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো আতিশের রুমে পায়ের ছোয়া ফেলেছে পাপড়ি। তবে এইবার আগের বারের মতো বউ হওয়ার আকুলতায় নয় সত্যি সত্যি বউ হয়েই এসেছে। আতিশের বিছানার ঠিক মাঝখানটাই ঘোমটা টেনে বসে আছে। আগেরবারের মতো এবারও সে ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে যাচ্ছে। ঘেমে নিজেকে নায়িয়ে ফেলেছে। ইশ! আমার তো সব সাজ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে উনি কখন আসবেন? আজও কি উনি আমার সাজটাকে ভালো করে দেখবেননা??
আতিশের কন্ঠ পেয়েই পাপড়ি বরফের মতো জমে যাচ্ছে। হাতদুটো শক্ত করে মুঠো করে নিশ্বাস আটকে রেখেছে। কন্ঠটা কেমন কেমন জানি লাগছে! আল্লাহ! আমি এই মানুষটাকেই থাপ্পড় মেরেছিলাম? আজকে আমার যে কি হবে আল্লাহই জানে! পাপড়ি মনে মনে সুরা পড়তে শুরু দিয়েছে!
আতিশ বেশ কিছু ক্ষন দাড়িয়ে থেকে পাপড়ি কি করছে বুঝার চেষ্টা করছে। হঠাৎ করেই গলার স্বরটা কঠিন করে বললো,,,
“” এভাবে বারোহাতি ঘোমটা দিয়ে বসে আছিস কেন? বাসর করবি বলে? তোর মতো বাচ্চার মেয়ের সাথে আমি বাসর করবো? পড়ে দেখা যাবে বাসরের দোহাই দিয়ে বিছানায় পড়ে আছিস!””
এবার একটু ধমকের সুরেই বললো,,
“” পড়া নাই? আর চারদিন পড় তোর পরীক্ষা,তাও ইংলিশ,তুই কি লাড্ডু কয়টা খাবি তা ভাবছিস? যা এইসব রঙঢঙ ফেলে পড়তে বোস!””
আতিশের কথায় পাপড়ি সাথে সাথে ঘোমটা খুলে ওর দিকে হা করে তাকিয়ে রইলো।
“” তোকে হা করে তাকিয়ে থাকতে বলিনি। তোর কি মনে হয় জোর করে বিয়ে করেছিস বলেই বিয়ে হয়ে গেলো? তুই আমার বউ হয়ে গেলি? আগে পরীক্ষায় পাশ হয়ে দেখা পড়ে ভাবা যাবে তোকে বউ বানাবো কি না!””
পাপড়ির সব ভয় কেটে গিয়ে রাগে ক্ষেপে যাচ্ছে। কিন্তু রাগের জায়গায় একরাশ অভিমানি সুরে বললো,,
“” আমি আপনাকে জোর করে বিয়ে করেছি?””
আতিশ বিছানায় বসতে বসতে বললো,,
“” হুম!””
“” আপনি আমাকে ভালোবেসে বিয়ে করেননি?””
“” আমি কি তোকে কখনো বলেছি আমি তোকে ভালোবাসি?””
“” আমি এখানে আর এক মুহুর্তও থাকবোনা। আমাকে এখনি বাড়ি দিয়ে আসেন।””
আতিশ এবার বসা থেকে শুয়ে পড়েছে। পাপড়ির দিকে না তাকিয়েই বললো,,
“” তোকে কি আমি আসতে বলেছি যে আমি দিয়ে আসবো? তুই নিজের ইচ্ছায় এসেছিস,এখন ইচ্ছে হলে নিজেই চলে যেতে পারিস। বিরক্ত করিসনা তো আমার ঘুম পাচ্ছে!””
“” আমি বিরক্ত করছি আপনাকে?””
“” হুম!””
পাপড়ি এবার ফুপাতে ফুপাতে বললো,,
“” একাই যাবো আমি,থাকবোনা আপনার কাছে। আপনি আমাকে শুধু কষ্টই দিলেন। আমি এক্ষুনি চলে যাবো।””
আতিশ কাথার ভাজ খুলে গায়ে জড়িয়ে নিতে নিতে বললো,,
“” ওকে,সাবধানে যাস। গুড নাইট!””
পাপড়ি তখনি রাগে ফুসতে ফুসতে হাটা ধরেছে। কিন্তু রুমের বাইরে পা ফেলার সাহস পাচ্ছেনা। এতো কষ্ট করে মানুষটার কাছে এলাম এভাবে চলে যাবো?? এমন কেন উনি? একটু ভালোবাসলে কি হয়? আমি কি এতোটাই অবহেলার যোগ্য??
বেশ কিছুক্ষন ভাবনায় ডুব দিয়েই চোখের পানি মুছতে মুছতে আবার ফিরে এসেছে আতিশের বিছানার কাছে। আতিশ কাথা গায়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে,উনি কি ঘুমিয়ে পড়েছেন? কোথায় শুবো আমি??
পাপড়ি চুপচাপ আতিশের অপরপাশে গিয়ে আলতোভাবে বিছানায় শুয়েছে। বিছানার একদম ধারটাতে। যে মানুষটা তাকে ভালোইবাসেনা তার কাছাকাছি সে শুবেনা!
পাপড়ি আবার ফুপিয়ে উঠতেই আতিশ নিজের কাথাসহ ওকে পেছন থেকে জড়িয়ে নিয়েছে। পেটে চাপ প্রয়োগে নিজের কাছে টেনে নিয়ে ওর কানে ফিসফিস করে বললো,,
“” তোমার এই ফুপানিটাকে বড্ড ভালোবাসি,বউ!””
পালক অন্ত্রীশার ঠোটে ঠোট ডুবিয়ে দিতেই অন্ত্রীশা সাথে সাথে ওকে ছাড়িয়ে নেয়। পালক অবাক হয়ে অন্ত্রীশার দিকে তাকাতেই ও বলে উঠলো,,
“” আমার ভেতর কোনো অনুভূতি কাজ করছেনা!””
“” মানে?””
“” কেমনজানি নিরামিষ চুমু মনে হচ্ছে!””
“” চুমুতেও নিরামিষ?””
“” হুম,আমার মনে হয় নেশা হয়ে গেছে!””
“” কিসের?””
“” ধোয়ার নেশা। আপনার ধোয়ামাখানো চুমুর নেশা। যানতো সিগারেট খেয়ে আসুন!””
অন্ত্রীয়ার কথায় পালক হা করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে!
অনিকশার ঘুমেরঘোরেই মনে হচ্ছে কেউ তার দিকে খুব গভীরভাবে চেয়ে আছে। কোনো ভুতটুত নয়তো? অনিকশা টিপটিপ করে চোখ মেলতেই অরিদ ওর কপালে চুমু খেয়ে বললো,,
“”টিকেট কাটা শেষ অনি,আমরা কালই হানিমুনে যাচ্ছি!””
অনি বিরক্ত নিয়ে বললো,,
“” এই নিয়ে উনিশবার বলেছো! তুমি ঘুমোওনি কেন অরিদ?””
“” আমার হানিমুনের উত্তেজনায় ঘুম আসছেনা,অনি!”‘
অন্ত্রীশা উপুত হয়ে নিজের বিছানায় শুয়ে আছে,বালিশের উপর থুতনি দিয়ে সামনের জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে। এ জানালাটা সে খুব একটা খুলেনা,শুধু খুব খুশির সময় নাহয় খুব মন খারাপ হলেই খোলে। এটাও দক্ষিন সাইডে থাকায় বৃষ্টিতে ভিজে উঠা শীতল মৃদু বাতাস ছুয়ে দিচ্ছে অন্ত্রীশাকে। বাতাসের সাথে সাথে বৃষ্টির গুড়িগুড়ি ফোটারাও অন্ত্রীশাকে ছুয়ে দিচ্ছে। বিছানার অনেকাংশই ভিজে উঠেছে। বৃষ্টির সাথে তাল মিলিয়ে নিজের চোখের পানিও ফেলছে।
“” পত্রীকন্যা!””
হঠাৎ কারো কন্ঠ পেয়ে অন্ত্রীশা ভয় পেয়ে পেছনে ঘুরতেই ভুত দেখার মতো চমকে উঠলো। মুখে দিয়ে শব্দ করে বেড়িয়ে যেতে চাইলো ‘আপনি’ সম্বোধনটা। কিন্তু না বের হয়নি।
পালক বৃষ্টিতে ভিজে চুপসে গেছে,মাথার চুলগুলো সুন্দর করে মাথার চারপাশে গোলাকারে ঘুমিয়ে পড়েছে মনে হচ্ছে। সামনের চুলগুলো ভিজে কপালের সাথে ল্যাপ্টে গিয়ে ব্রুগুলোকে ছুই ছুই অবস্থা। চুল থেকে এখনো পানি টপটপ করে পালকের নাকে এসে পড়ছে। জামাকাপড়ের অবস্থাও খুবই বাজে। গায়ের সাথে এমনভাবে মিশে আছে যেন,শরীর আর জামার সাথে দোস্তের সম্পর্ক! চোখের নিচের পাতার দিকে ভেতরের সাদা ধারের অংশটা অনেকটাই লাল হয়ে আসছে!
অন্ত্রীশা পালককে ভালো করে দেখে নিয়ে নিজের আগের অবস্থানে ফিরে শুয়ে পড়েছে। এমন একটা ভাব যেন শুধু শুধুই ভয় পেয়েছিলো!
অন্ত্রীশার এমন স্বাভাবিক আচরনে পালক আরো বেশি চমকিত। এখানে অন্ত্রীশার হয় তার কাছে ছুটে এসে বলা উচিত ছিলো,স্বামী তুমি এসেছো? আমি জানতাম তুমি আমাকে রেখে অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারবেনা। যেহেতু এটা বলেনি তাহলে অন্য কিছু করা উচিত ছিলো,যেমনঃ খুব রেগে গিয়ে বাড়িশুদ্ধ মানুষকে উথালপাথাল করে দেওয়া,কতগুলো আজেবাজে বকাবকি করা,থাপ্পড়ও দিতে পারতো। কিন্তু পালকের ভাবনাকৃত দুটো চরিত্রের সাথে একটাতেও সামিল হয়নি অন্ত্রীশা। কিন্তু কেন?? তাহলে কি ও বুঝতেই পারছেনা আমি সত্যিই এসেছি,আমাকে দেখতে পাচ্ছেনা?? নাকি অভিমানটা মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে বলে প্রকাশ করতে পারছেনা??
পালক এতোটাই ভিজে এসেছে যে,তার শরীর থেকে বেয়ে বেয়ে পড়া পানিগুলো তার দাড়ানরত জায়গাটাকে ভিজিয়ে আশেপাশে ঢেউয়ের মতো ছড়িয়ে পড়ছে। পালক ভেজা শরীরসহ পা’টা নিয়ে ধীরগতিতে অন্ত্রীশার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। চোখে তার এখনো বিস্ময় আর ভয় কাজ করছে। এটা ঝড়ের পুর্বে পরিবেশ নিয়িয়ে যাওয়া নয়তো??
অন্ত্রীশার কাছে এসে বিছানায় উঠে এসেছে পালক। চুপচাপ একপাশ থেকে অন্ত্রীশার পিঠের কাছটাতে নিজের মাথা রেখে ডান হাতটা দিয়ে অন্ত্রীশাকে জড়িয়ে নিয়ে বললো,,
“” তুমি কেন বলোনি,তুমি আমার পত্রীকন্যা?””
অন্ত্রীশা তখনো চুপচাপ,পালকের উপস্থিতি,পালকের ছোয়া,পালকের কথা কিছুই যেন তার কাছে পৌছায়নি। সে এখনো জানালার দিকে তাকিয়ে। বাইরের বৃষ্টির সাথে মিশে যাওয়া বাতাসের ধমকা হাওয়াকে উপভোগ করছে।
পালক অন্ত্রীশাকে আরেকটু গভীরভাবে জড়িয়ে ধরে বললো,,,
“” কিছু বলছো না কেন? রাগ করেছো? সরি তো!””
অন্ত্রীশা এতক্ষনে যেন সম্ভিত পেয়েছে। কিন্তু উত্তেজিত হয়নি,স্বাভাবিক ও যথেষ্ট নরম গলায় বললো,,
“” আপনি আমাকে এবং আমার বিছানাকে ভিজিয়ে ফেলছেন।””
“”আমি যে বৃষ্টিতে ভিজে আছি,সেটা তোমার চোখে পড়ছেনা? বিছানা ভিজা নিয়ে পড়ে আছো?””
“” সরুন!””
“” না,আমি সরবোনা। আগে বলো ক্ষমা করেছো আমায়।””
“” আমি সরতে বলছি।””
“” বলছিতো সরবোনা। আমি আমার পত্রীকন্যাকে কেন ছাড়বো? হুম? আমার এতো সাধনার ফল তুমি!””
অন্ত্রীশা আর নিজেকে শান্ত রাখতে পারছেনা। রাগে,ক্ষোভে কি করবে বুঝতে পারছেনা৷ মানুষ যত রেগে যায় তত চিৎকার করে কথা বলে,যদিও তার বিপরীত মানুষটা কাছেই থাকে,তাহলে কেন চিৎকার করে?? তখন কি তার এমন মনে হয় যে তার বিপরীত মানুষটা অনেক দুরে অবস্থান করছে?? চিৎকার করে না বললে শুনতে পারবেনা??? অন্ত্রীশাও এবার চিৎকার করে উঠলো,,,
“” তোরে সরতে বলছি তুই সরবি,এতো বেশি কথা বলিস কেন?? আর কে তোর পত্রীকন্যা? তোর পত্রীকন্যা মরে গেছে,আমি কোনো পত্রীফত্রী না। সর আমার কাছ থেকে!””
পালক অন্ত্রীশার এমন আচরনে এতোটাই হতাহতিতো যে অন্ত্রীশা হালকা করে ধাক্কা দিতেই পালক ধুপ করে মেঝেতে পড়ে গেলো।
অন্ত্রীশা শোয়া থেকে উঠে পড়েছে। পালকের দিকে তাকাতে পারছেনা। রাগের পরিমানটা এতোটাই বেড়ে যাচ্ছে যে,সে চুপটি করেও বসে থাকতে পারছেনা,জোরে জোরে স্বাস প্রস্বাসের সাথে সাথে হাত দুটো কচলানো শুরু করে দিয়েছে।
অন্ত্রীশাকে এমন রুপে দেখে পালকের দম যায় যায় অবস্থা। এতো ঠান্ডা মেজাজের মেয়ে এতো গরম কি করে হতে পারে?? এর তো ভাষাও চেন্জ,আপনি থেকে সরাসরি তুই????
পালক অন্ত্রীশার কাছে যেতেও ভয় পাচ্ছে,মনে হচ্ছে অন্ত্রীশার উপর কোনো খারাপ ভুতের ছায়া পড়েছে। এখন ওকে ছুতে গেলেই খারাপ ভুতটা জেগে যাবে,আর জেগে যাওয়া মানেই রেগে গিয়ে তার গলা টিপে ধরা।
পালক ঢুক গিলে শুকনো গলা ভেজানোর চেষ্টা করছে কিন্তু ভিজছেনা,ভিজবে কিভাবে? এখন তো শুধু তার গলাটাই শুকোয়নি,গলার সাথে সাথে তার শরীরের প্রত্যেকটা অঙ্গ শুকিয়ে কাঠ হয়ে আছে,এই যে একটু আগে ভিজে চুপচুপা হয়েছিলো সেই পানিও গায়েব!
অন্ত্রীশা চোখ বন্ধ করে নিজেকে শান্ত করার জন্য কয়েকটা সুরা পড়ে নিচ্ছে। বেশ কয়েকটা সুরা শেষ করে নিজের বুকে নিজেই কয়েকটা ফু দিয়ে,ঠান্ডা মেজাজে পালকের দিকে তাকিয়ে বললো,,,
“” কি বলতে চেয়েছিলেন বলুন!””
হঠাৎ করেই অন্ত্রীশার এমন ঠান্ডা কন্ঠটাও পালকের ভেতরের ভয়কে আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে। কিছু বলতে চেয়েও বলতে পারছেনা। খুবই ক্ষীনস্বরে বললো,,,
“” সরি,পত্রীকন্যা!””
“” কেন?””
“” আমি ভুল করে অন্য কাউকে পত্রীকন্যা ভেবেছিলাম,কিন্তু তুমিই যে আমার পত্রীকন্যা বুঝতে পারিনি,তাই সরি!””
পালক কথার তালে তালে অন্ত্রীশার দিকে এগুতেই অন্ত্রীশা কিছুটা উচ্চস্বরে বলে উঠলো,,,
“”নিজের অবস্থান থেকে এক ইঞ্চিও নড়াচড়া করলে কিন্তু খারাপ হয়ে যাবে। আপনার যা বলার আপনি ওখান থেকেই বলুন!””
পালক আগের মতো বসে বললো,,
“” একটু কাছে আসি,তোমাকে ছুবোনা প্রমিস!””
“” না,আপনি ওখানেই থাকবেন।””
পালক অনুনয় স্বরে বললো,,,
“” এমন করছো কেন? আমি তো নিজের ভুল সুদরিয়ে তোমার কাছেই এসেছি,তোমাকে খুজে বেরও করেছি। ক্ষমা করে দাওনা। তুমি তো লক্ষীপাখি!””
অন্ত্রীশা এবার পালকের কাছে এসেছে,খুব কাছে,পালকের মুখোমুখি হয়ে বসে,ওর চোখে চোখ রেখে বললো,,,
“” একটা ভুলের ক্ষমা হয়,দুটো ভুলেরও ক্ষমা হয়,কিন্তু তিনটা ভুলের নয়। আপনি পরপর তিনটা ভুল করেছেন!””
“” তিনটা! কই আমি তো দুজনকেই ভুল করে পত্রীকন্যা ভেবেছি,তিননাম্বারটা কিভাবে পাইলা?? বিয়েতো হয়নি!””
পালকের ডান হাতটা অন্ত্রীশা নিজের কোলের উপর রেখে বৃদ্ধ আর কেনি আঙুলটা হাতের ভেতর সাইডে ভাজ করে নিয়েছে। বাকি তিনটা আঙুল পালকের দিকে এগিয়ে দিয়ে একটা আঙুল ভাজ করে বললো,,
“” নাম্বার ওয়ান,,আপনি আমার আপুকে পত্রীকন্যা ভেবে ভালোবেসেছেন,এক বছর প্রেম করেছেন, এটা আপনার সব থেকে বড় ভুল ছিলো,কেননা এই ভুলের প্রেক্ষিতেই আপনাকে বাকি দুটো ভুল করতে হয়েছিলো।
নাম্বার টু,,এক ভুল শেষ হতে না হতেই আরেক ভুলে পা। আবার সেই অন্য একটা মেয়েকেই আপনি পত্রীকন্যা ভেবেছেন,এবার প্রেম নয় সরাসরি বিয়েতে চলে গিয়েছেন।
নাম্বার থ্রি,,,আপনি অন্ত্রীশার প্রেমে পড়েছেন,যেটাতে পড়া আপনার উচিত হয়নি!””
অন্ত্রীশা পালকের হাতের সবগুলো আঙুল ভাজ করে ফেলেছে,ভেতরের রাগগুলোও এখন ঘুমিয়ে পড়েছে,মনে হয় না তারা জাগবে,তবে অভিমান?? অভিমানরা কি ঘুৃমাবেনা? এদের কি ঘুম পায়না? এদেরও যে এখন বড্ড ঘুমানো উচিত।
অন্ত্রীশা পালকের কাছ থেকে উঠে যেতে নিলেই বলে উঠলো,,,
“” ভুল কি আমি একাই করেছি তুৃমি করোনি?””
অন্ত্রীশা পালকের দিকে ঘুরে বললো,,
“” হুম,করেছিলাম তো! আপনাকে ভালোবেসে,মনের কথা চিঠিতে প্রকাশ করে। যদি চিঠিতে না লিখতাম তাহলে হয়তো আমরা আজ জজ আর আসামীর কাঠগড়ায় দাড়াতাম না।””
পালক বসা থেকে উঠে অত্রীশার কাছে আসতেই অনতি কঠিন গলায় বললো,,,
“”চলে যান এখান থেকে। এখনি!””
“” পত্রীকন্যা,প্লিজ! এমন করে ফিরিয়ে দিওনা। আমি সইতে পারবোনা। “”
অন্ত্রীশা নিজের রুমের জানালা বন্ধ করতে করতে বললো,,
“” বাইরে বৃষ্টি পড়ছে,মনে হয় ঝড় হবে। আজ রাতটা এখানে থেকে,কাল সকালেই চলে যাবেন। আমি ঘুম থেকে উঠে আপনাকে যেন দেখতে না পাই।””
অন্ত্রীশা আর পালকের দিকে তাকাইনি,সোজা বিছানায় শুয়ে কাথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়েছে। কষ্ট হচ্ছে, না? কতটা কষ্ট হচ্ছে আপনার? আমার থেকেও বেশি?? ইশ! যদি কষ্ট মাপার একটা যন্ত্র থাকতো,তাহলে আজ মেপে দেখা যেতো কষ্টতে কে জিতেছে,পত্রীকন্যা নাকি পত্র পুরুষ!
অন্ত্রীশা কাথা দিয়ে পুরো মুখ ঢেকে শুয়েছে নাহলে তার অতৃপ্ত চোখটা বার বার যে তার পত্র পুরুষকে দেখতে চাইবে। নিশ্চয় মুখটাকে কালো মেঘে ঢেকে রেখেছে,হয়তো চোখে পানিও নিয়ে এসেছে,মনে মনে হাজারও রঙবেরঙের বকা দিয়ে যাচ্ছে নিজেকে,হয়তো জ্বলছে অনুতপ্ততার আগুনে। কিন্তু এতো কিছু সে কেন দেখবে? সেও তো ভোগেছে,আজ কত বছর ধরে ভুগে এসেছে,সেগুলোর কাছে উনারটা কিছুই নয়৷ কিছুইনা। আমি কিছু দেখবোনা। আমি তো আজকে আরাম করে ঘুমাবো,আজ তো আমি একা নয় আমার সাথে আরেকজনও কষ্টে বুক ভাসাচ্ছে!
সকালের ভোরের ফুটফুটে স্নিগ্ধ আলো এসে পড়েছে অন্ত্রীশার কাথার উপর। কিছুটা আলো কাথা ভেদ করে অন্ত্রীশার চোখে পড়েছে হয়তো। তাই রোদের মিস্টি গন্ধে নাকের ঘুম চলে গিয়ে চোখের ঘুমও ভেঙে গেছে। অন্ত্রীশা কাথাটা মেলে প্রথমেই চোখ মেলেনি। বুকের ভেতর ঢিপঢিপ শব্দ পাচ্ছে। ভালোবাসারমন বলছে চোখ খোলেই যেন তার পত্র পুরুষটাকে দেখতে পায় কিন্তু অভিমনি মন বলছে,না এই চোখে সে পত্রপুরুষকে দেখবেনা।
অন্ত্রীশা পিটপিট করে চোখ মেলতেই বুঝতে পারলো তার অভিমানি মনটাই জিতে গিয়েছে। পত্রপুরুষ নেই,চলে গিয়েছে।
অন্ত্রীশা উঠে বসতেই মুখটা ভার হয়ে এসেছে। লোকটা আমাকে বুঝলোইনা,সত্যি সত্যিই চলে গেলো??? অন্ত্রীশা কিছুক্ষন গাল হাত দিয়ে বসে থাকলো। বসা থেকে উঠতেই নিজের পড়ার টেবিলে একটা কাগজ দেখতে পাচ্ছে,কাগজটার উপরে একটা চেইন,সাথে লকেটও আছে। চেইনটা হাতে নিতেই বুঝতে পারছে এটা তার ব্যবহৃত সেই চেইনটা যেটা কিছুদিন আগে হারিয়ে গিয়েছিলো। কিন্তু এটা এখানে কি করে এলো???
অন্ত্রীশা চেইনটা পাশে রেখে দিয়ে কাগজটা খুলে পড়তে শুরু করেছে,,,
****আমার অপেক্ষার রানী পত্রীকন্যা,
কি ভেবেছো? তোমার কড়া কড়া দুটো কথাতেই আমি সব ভুলে তোমাকে ছেড়ে চলে যাবো? কখনোই না৷ যাকে কখনো পাবো কিনা তার গ্যারান্টিই ছিলো তবুও তাকে খুজে খুজে আমার অর্ধেক যৌবন ফুরিয়ে ফেলেছি। আমার সেই অর্ধেক যৌবন ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য হলেও তোমাকে আমার কাছে আসতে হবে। এতোদিন শব্দে রাঙা মেয়েটাকে পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করেছি কিন্তু এখন? এখন হাত,পা,চোখ,মুখ,নাক,ঠোট,মাথা,চুলসহ একটি পরিপুর্ন কিশোরী মেয়ের জন্য অপেক্ষা করবো। যার শরীরের আন্তিকে প্রতিটি শিরী উপশিরা,এক অঙ্গ থেকে আরেক অঙ্গে বহমান রক্তে, বাহ্যিকে প্রতিটি পশমে,নিশ্বাস-প্রশ্বাস এমন কি চুলের ঘ্রানেও রয়েছে আমার প্রতি ভালোবাসা। আমি তার অপেক্ষায় থাকবো,দরকার হলে আমি আমার বাকি অর্ধেকটা যৌবন তাকে পাওয়ার ভাবনায় দান করবো। তবুও আমার তাকেই চাই।
প্রথম আর দ্বিতীয় ভুলটা আমি স্বীকার করছি,কিন্তু তৃতীয় ভুলটা স্বীকার করবোনা। কারন ওটা ভুল ছিলোনা। কেননা পত্রীকন্যা আর অন্ত্রীশা শুধু নাম দুটোই ভিন্ন কিন্তু তাদের শরীর,আচার ব্যবহার,পাগলামী,কথাবার্তা,চালচলন সব তো একটাই তাইনা??? আমি তো তোমার নামের প্রেমে পড়িনি। চিঠিতে আমি আমার পত্রীকন্যার অনুভূতির প্রেমে পড়েছিলাম আর সেই অনুভূতিগুলো তো আমার বউ অন্ত্রীশার মধ্যেই বিচরন করছিলো। তাহলে আমি কি করে নিজেকে আটকে রাখতে পারতাম বলো??
তোমার কাছে পৌছানোর দায়িত্ব কি আমার একার ছিলো? তোমার ছিলোনা?? তুমি কি একবারও আমাকে খুজতে চেয়েচিলে? আমি জানি তুমি চাওনি,কেন চাওনি? ভালো তো তুমিও আমাকে বেসেছিলে তাহলে সেটা শুধু অভিমানেই কেন আটকে রাখলে?? কেন সেদিন আমার সামনা সামনি এসেও আমাকে বলোনি তুমি আমার পত্রীকন্যা,অনিকশা নয়। তার উপর তোমার লেখা যাতে বুঝতে না পারি তার জন্য তুমি চিঠিগুলোতে লেখার ধরন চেন্জ করেছিলে! কেন করেছিলে আমাকে কষ্টে থাকতে দেখতে?? লাস্ট চিঠিটা তুমি পত্রীকন্যা হয়ে লিখেছো,আমি এটা সিউর তুমি ইচ্ছে করে ওভাবে লেখনি,ভুল করে লিখে ফেলেছিলে। আর তোমার ভুলটা ও ধরতে আমার লেট হয়েছিলো। আমি তখন স্নিগ্ধাকে বিয়ে করার জন্য এতোটাই উত্তেজিত ছিলাম যে তোমার লেখার প্রতি আমার কোনো খেয়াল ছিলোনা। কিন্তু দেখো পরে তোমার এই ভুলটাই আমাকে তোমার কাছে এনেছে। সব ভুল খারাপের জন্য হয়না,কিছু কিছু ভুল ভালোর জন্যও হয়। আমার টা কেমন ভুল হয়েছে আমি জানিনা। কিন্তু আমি তোমাকে কাছে পাওয়ার জন্য ছটফট করছি। আমি জানি তুমি আমার এই ছটফট কমাতে আমার কাছে আসবে। আমি চাই তুমি আসো। সবসময় আমি কেন তোমার কাছে ছুটে যাবো। এবার নাহয় তুমি ছুটে এসে আমাদের অপেক্ষার ইতি টানলে!
ইতি
তোমার ছটফট পত্র পুরুষ
অন্ত্রীশা চিঠিটা রেখে চেইনটা আবার হাতে নিয়েছে। চেইনের মধ্যে থাকা লকেটটা খুলতেই সেখানে একপাশে পালকের হাসি হাসি মুখটা দেখতে পাচ্ছে আর অপর পাশটা এখনো খালি।
ভর দুপুরের মাথার উপরে উঠে যাওয়া সূর্যটার নিচে হাটুগেড়ে দাড়িয়ে আছে পালক। সুর্যের দিকে মুখ করে চোখটা বন্ধ করে রাখা। হাতদুটো পেছনে ভাজ করা। এমন একটা ভাব যেন তাকে কোনো সামরিকবাহিনীরা শাস্তি দিচ্ছে বর্ডার পার করে অন্যত্র সীমানায় যাওয়ার জন্য।
অন্য সবসময়ের মতো আজো সে সূর্যের তীব্র রশ্নিতে নিজের কষ্ট ধুয়ে নিবে। খুব বেশি কষ্ট,যেটাতে বুকের ভেতরের রগগুলো ছিড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়ে ব্যথা অনুভব হয়,সেই কষ্টে সুর্যের নিচে দাড়িয়ে থাকতে আরামবোধ করে পালক।
পত্রীকন্যাকে পেয়েও পাওয়া হলোনা,ছুয়েও ছুয়া হলোনা,দেখেও দেখা হলোনা এমন একটা রোগে ভুগছে পালক। কিছুই ভালো লাগছেনা তার। মনের অজান্তেই বিড়বিড় করছে সে,হ্যা পত্রীকন্যা তুমি ঠিক ধরেছো,আমি সত্যি সত্যিই আমার বউ অন্ত্রীশার প্রেমে পড়েছিলাম। আমি যখন কলম ফেলে উঠে গিয়েছিলাম তখন তোমার প্রেমে পড়েই উঠে গিয়েছিলাম। ঐ কলমটা আমাকে বুঝিয়ে দিয়েছিলো আমি আমার বউয়ের প্রেমে পড়ে গিয়েছি,আমি আমার অন্ত্রীশার প্রেমে পড়ে গিয়েছি। কিন্তু সেটা ঠিকঠাক উপলব্ধি করার আগেই পত্রীকন্যা মাথা চাড়া দিয়ে উঠে। আমি তোমার কাছে ছুটে গিয়েছিলাম শুধু পত্রীকন্যাকে পাওয়ার জন্য নয়,আমারতো অন্ত্রীশাকেও পাওয়ার ছিলো।
পালকের বিড়বিড় শেষ হওয়ার আগেই মুখে আঠালো জাতীয় কিছু এসে লাগে। পালক চোখ মেলতেই দেখে অন্ত্রীশা ওর মুখে টেপ লাগিয়ে পুরো মাথা ঘুরিয়ে আনছে। পালক অন্ত্রীশাকে আটকাতে নিলেই অন্ত্রীশা অগৃনিদৃষ্টি ছুড়ে দিয়েছে। তাতে পালক দমে গিয়ে চুপচাপ অন্ত্রীশাকে দেখে যাচ্ছে।
পালকের পাশে অন্ত্রীশাও হাটুগেড়ে বসে একটা সিগারেট নিজের মুখে পুড়ে নিয়েছে। ম্যাচ জ্বালিয়ে সিগারেটের মাথায় আগুন ধরিয়েছে।
চলবে
#ধোয়ার-নেশা
#রোকসানা-রাহমান
পর্ব (২২)
পালকের বিড়বিড় শেষ হওয়ার আগেই মুখে আঠালো জাতীয় কিছু এসে লাগে। পালক চোখ মেলতেই দেখে অন্ত্রীশা ওর মুখে টেপ লাগিয়ে পুরো মাথা ঘুরিয়ে আনছে। পালক অন্ত্রীশাকে আটকাতে নিলেই অন্ত্রীশা অগ্নিদৃষ্টি ছুড়ে দিয়েছে। তাতে পালক দমে গিয়ে চুপচাপ অন্ত্রীশাকে দেখে যাচ্ছে।
পালকের পাশে অন্ত্রীশাও হাটুগেড়ে বসে একটা সিগারেট নিজের মুখে পুড়ে নিয়েছে। ম্যাচ জ্বালিয়ে সিগারেটের মাথায় আগুন ধরিয়েছে। সিগারেট থেকে নিশ্বাস টেনে নিতেই অন্ত্রীশা কেঁশে উঠে। মুখ থেকে জ্বলন্ত সিগারেট নিচে পড়ে গিয়েছে। অন্ত্রীশার কাশি দেখে পালক নড়ে উঠতেই অন্ত্রীশা কঠিন স্বরে বললো,,
“” খবরদার নড়াচড়া করবেননা। আমার আপনাকে অনেক কিছু বলার আছে। আপনি তো আপনার প্রেমের গল্প বললেন আজ আমি আপনাকে আপনার পত্রীকন্যার প্রেমে পড়ার গল্প শুনাবো। যেটা আপনি জানেননা৷ আমি জানি,অন্ত্রীশা জানে!””
অন্ত্রীশা তখনো কেঁশেই যাচ্ছে। কাশির ঝাকুনিতে সে আর পালকের পাশে হাটু গেড়ে বসে থাকতে পারেনি। অন্ত্রীশা কাশতে কাশতেই আরেকটা সিগারেট মুখে পুড়েছে।
সুর্যের তীব্রতা কমতে থাকলেও পালকের আর অন্ত্রীশার উপর তীব্রতা বেড়ে যাচ্ছে। দুজনের চেহারায় লাবন্যতা অনেকটাই শুকিয়ে এসেছে। দেখা যাচ্ছে,ঘামের প্রকট আর লাল এবং কালো রঙের এক অন্যরকম লাবন্য। দুজনেই যেন আজ অন্যরকম নেশায় ডুবতে চাচ্ছে। একজন অনাকাঙ্ক্ষিত প্রাপ্তির অস্তিত্বের উপস্থিতে তো আরেকজন সিগারেটের ধোয়াকে নিজের বশে করতে! দুজনেই আজ নতুন জিনিসের ছোয়া নিতে চাচ্ছে,দুজনেরই আজ নতুত্বের নেশায় ডুবে যাওয়ার প্রবল ইচ্ছে। কিন্তু পালক তো সফলতার দিক দিয়ে এগিয়ে কিন্তু অন্ত্রীশা?? সেতো ধোয়াকে হজমই করতে পারছেনা।
অন্ত্রীশা চোখটা বন্ধ করে সিগারেট থেকে আবার একটা নিশ্বাস গ্রহন করেছে। এবারও কাশি উঠেছে কিন্তু আগেরবারের মতো নয়। অনেকটাই ঠুনকোর পর্যায়ে পড়ে।
“” তখন আমি ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে পড়ি। নতুন কলেজ,নতুন ক্লাস,নতুন জায়গা,নতুন ক্লাসমেট হওয়ায় তখনো সবকিছুর সাথে সখ্যতা হয়ে উঠেনি। আপু প্রথম দিকে আমাকে কলেজে দিয়ে আসলেও এক সময় আমি নিজেই মানা করি। তারপর থেকে আপুর যেদিন যেদিন ক্লাস থাকতো সেদিন সেদিন আমাকে সাথে করে নিয়ে যেতো। এমনি নতুত্বের মধ্যে একটা সোনালী মুহুর্ত আসে আমার জীবনে,সোনালী কেন বলছি? ভিজে মুহুর্ত হবে।সেদিন তো আকাশে সুর্য ছিলো না,না ছিলো সূর্যের সোনালী রোদ৷ সেদিন তো ছিলো আকাশের কালো মেঘের আবরন। যে আবরন ভেঙে বৃষ্টিতে ভিজিয়ে দিচ্ছিলো আমার সব নতুনত্বকে। ক্লাস শেষে কলেজ টিচারের কাছেই প্রাইভেট শেষ করে বাড়ি ফিরছিলাম। কয়েককদম এগুতেই আমাকে অবাক করে বৃষ্টি নেমে বসে। বৃষ্টি আমার খুবই পছন্দ। বৃষ্টির প্রতিটি ফোটাতে আমি আনন্দের অনুভূতি খুজে পাই। চোখ বন্ধ করে বৃষ্টির ফোটা উপভোগ করা এক অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করে। কিন্তু সেদিনটি আমি বৃষ্টিতে উপভোগ করতে পারছিলাম না। কেননা,তখন আমার পিরিয়ডের সেকেন্ড ডে ছিলো। এমন হুট করে বৃষ্টিতে আটকে পড়বো ভাবা হয়নি তাই ছাতাও সাথে ছিলোনা। তাই দৌড়ে পাশেই বন্ধরত একটি দোকানের ছাউনিতে গিয়ে অপেক্ষা করছিলাম। আমার সাথে যেমন কেউ ছিলোনা তেমন আশেপাশেও কেউ ছিলোনা। মনের ভেতর বিরক্ত,ভয়,অসহায়ত্ব,রাগ সব একসাথে কাজ করছিলো। ঠিক তখনি আপনি আর কাদির ভাই কোথা থেকে যেন দৌড়ে এলেন। আশেপাশে জনমানবহীন এমন মুহুর্তে পাশে দুটো ছেলেকে দেখে আমার ভেতরটা ধুকধুক করছিলো। মনের ভেতর নানা কুডাক,কুচিন্তাভাবনা আসছিলো,তখনো আমি ফোন ব্যবহার করে উঠতে পারিনি। কি করবো না করবো বুঝতে পারছিলাম না। বৃষ্টির বর্ষন ও কমার নাম গন্ধ নেই,আমি যতটা পারছিলাম নিজেকে আড়াল করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলাম। আমার পঞ্চম ইন্দ্রীয় তার সহোদর ষষ্ঠ ইন্দ্রীয়কে ডেকে নিয়ে আপনাদের দিকে মনোনিবেশ করছিলো। কাদির ভাই আপনার সাথে কথার ছলে বারবার আমার দিকে তাকাচ্ছিলো। আর আপনি? আপনি নিজের ভেজা হাত দিয়েই নিজের ভেজা জিনিসগুলোকে শুকানোর বৃথা চেষ্টা করছিলেন। এর মধ্যেই কাদির ভাই একটা জ্বলন্ট সিগারেট মুখে পুড়ে দিয়েছে। আর সাথে সাথে উনার গালে টাস করে একটা চড় মেরে বসলেন আপনি। আপনার বাক্যনুযায়ী আপনি সিগারেট খুবই অপছন্দ করেন আর কাদির ভাইকে অনেকবার ওয়ার্নিং দেওয়ার পরও উনি আপনার সামনেই সিগারেট ধরিয়েছে। আপনি প্রচন্ড রেগে ছিলেন তখন। কিন্তু বেশিক্ষন রাগ নিয়ে থাকতে পারলেননা। আপনার রাগ বমি আকারে বের হয়ে এসেছিলো।
বেশ কিছুক্ষন এভাবে কাটার পরই কাদির ভাই আপনাকে তাড়া দিচ্ছিলো চলে যাওয়ার জন্য। আপনি হয়তো কোনো জরুরী কাজে বেড়িয়েছিলেন। বারবার ঘড়ি দেখছিলেন,বাইরের চারপাশটা চোখ বুৃলাচ্ছিলেন আবার আকাশের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করছিলেন,হয়তো বৃষ্টিকে বকাবকি করছিলেন। প্রকাশ্যে বলছিলেন বৃষ্টিটা আরেকটু কমুক। আপনাদের দেখে আমার বুকে যে ধুকধুকটা হয়েছিলো সেটা ক্রমশই কমে যাচ্ছিলো। কেমন জানি একটা নিরাপত্তা অনুভব করছিলাম। আর ঠিক তখনি আপনি ছাউনি ছেড়ে বেড়িয়ে গেলেন। আমি আপনার দিকে তাকিয়ে থাকলেও বুঝতে পারছিলাম বুকের ধুকধুকটা বেড়ে যাচ্ছে৷ আপনি চোখের আড়ালে হতেই কাদির ভাই আমার দিকে অগ্রসর হচ্ছিলেন। ভয়ে আমার হাত পা ঠান্ডা হওয়ার উপক্রম,কাধের ব্যাগটা বারবার টেনে টেনে ঠিক করছিলাম,একবার জামা তো আরেকবার ওড়না ঠিক করছি। ঠিক তখনি হুট করে আপনি আবার আবির্ভুত হলেন!
ছাউনিতে না ঢুকেই আপনি বৃষ্টিতে থমকে গেলেন। বৃষ্টিতে ভেজা চোখ দিয়ে,আড়ভাবে একটা ভেজা চাহনি আমার দিকে ছুড়ে কাদির ভাইকে ডাকলেন। কোনো কথাবার্তা ছাড়াই কাদির ভাইকে টেনে নিয়ে আবার হাওয়া।
আপনার কান্ডে অবাক হবো নাকি এই জনমানবহীন সন্ধ্যায় বৃষ্টি থামার অপেক্ষা করবো বুঝতে পারছিলাম না। আকাশের অবস্থা আরো খারাপ। সন্ধ্যে তখনো নামেনি কিন্তু আকাশের কালো ছায়াগুলো জোর করে সন্ধ্যে নামিয়ে দিয়েছে। বৃষ্টির এতোটাই প্রবলতা ছিলো যে কোনো রিকশাও আসছিলোনা। একাকিত্ব আমাকে খেয়ে ফেলছিলো,ভয়েরা আরো বেশি করে জ্বলজ্বল করে উঠছিলো। একবার মনে হচ্ছিলো এই বৃষ্টিকে তুচ্ছ্য করে এক দৌড়ে বাড়ি চলে যায়। কিন্তু আমি নিরুপায় ছিলাম। বৃষ্টিরা এবার শুধু আকাশ ভেঙেই নয় আমার চোখ ভেঙেও পড়বে এমন ভাব ঠিক তখনি একটা রিকশা এসে হাজির।
লোকটার কথায় আমি যতটা না অবাক হয়েছিলাম তার থেকে দ্বিগুন আনন্দের সাথে রিকসায় চড়ে বসি। রিকসায় উঠতেই আমার বুঝতে বাকি রইলোনা যে কোন ভাইজান রিকসা পাঠিয়েছে। আসতে আসতে আপনার সব কান্ডগুলোর ব্যাখ্যা পেয়ে গেলাম। সাথে প্রথম প্রেমে পড়ার স্পর্শ!
সে রাতটা আমি নির্ঘুমে কাটালাম,বারবার আপনার সেই ভেজা চাহনিটা আমাকে আসক্ত করে তুলছিলো। এরপর থেকেই ঘটে প্রথম প্রেমের সুচনা। বৃষ্টি নামলেই আপনার কথা মনে পড়তো,রিকসা দেখলেও আপনার কথা মনে পড়তো,আর সিগারেট?? এই সিগারেটটা যে কেমন বস্তু এর গন্ধ কেমন তাতো আমার ধরাছোয়ার বাইরে ছিলো। কিন্তু সেদিন আপনাকে দেখার পর থেকেই যত অরুচি,যত বিরক্ত, যত তিক্ত,যত ঘৃনা সব এই সিগারেটের উপর গিয়ে পড়লো।
অল্প বয়সের প্রেমের ছোয়ায় তখন আমি উড়ছি,আপনাকে পাগলের মতো খুজছিলাম,বৃষ্টি হলেই সেই ছাউনিতে গিয়ে দাড়িয়ে থাকতাম যদি আপনার দেখা পাই এই আশায়। কিন্তু না,আপনার তো দেখার কোনো নাম নাই। বেশ কিছুদিন যেতেই দেখলাম আপনার সেই বন্ধু কাদির ভাই আমাকে ফলো করছেন। ইনিয়ে বিনিয়ে নানান জিনিস বুঝাতে চাচ্ছেন। উনাকে দেখে আমার যতটা না বিরক্ত লাগতো তার থেকেও বেশি হতাশ হতাম উনার সাথে আপনাকে না দেখে। মাঝে মাঝে আমার খুব ইচ্ছে হতো উনাকে গিয়ে বলতে,,আপনার সেই ভেজা বন্ধুটি কোথায়? উনি কি জানেননা উনার ভেজা চাহনির প্রেমে পড়ে একটি মেয়ে অতলে ভেসে যাচ্ছে???
তার বেশ কয়েক মাস পর হুট করেই আপনি আমাদের ক্লাসে এসে হাজির। হিসাববিজ্ঞানের স্যার আপনাকে নিয়ে এসেছেন,আমাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য। আপনার পরিচয় পাওয়ার পর বুঝতে পারলাম আপনিই তাহলে সেই পড়ুয়া বালক! অতি শুদ্ধ পুরুষ।
আপনার পরিচয় পাওয়ার পর আমার প্রেম ভেঙে যাওয়ার অবস্থা। এতোদিনে আপনার সম্পর্কে যা যা জেনেছি তার প্রক্ষাটে আপনার সাথে আমার প্রেম হওয়া অসম্ভব। শুধু আমি কেন আমার জায়গায় কোনো বিশ্বসুন্দরীও যদি আপনাকে প্রেমের প্রস্তাব দেয় তাহলেও আপনি সাথে সাথে অনিচ্ছুক প্রকাশ করবেন। আমার মন ভেঙে যায় যায় অবস্থা। মনের ভেতরে ফুটে উঠা প্রেমের অঙ্কুরগুলো ফুল হয়ে ফুটার আগেই শুকিয়ে যাচ্ছে। কি করবো না করবো বুঝতে পারছিলাম না, তখনি আমার মাথায় এই চিঠির ব্যাপারটা আসে।
অন্ত্রীশা পালকের মুখোমুখে হয়ে বসে পড়েছে। পালক গাটুগেড়ে বসার ফলে ওর মাথাটা অন্ত্রীশার মাথা থেকে একহাত উপরে। অন্ত্রীশা মাথাটা কিছুটা পেছনে ঝুকিয়ে পালকের দিকে তাকিয়ে বললো,,
পালক জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে অন্ত্রীশার দিকে তাকাতেই অন্ত্রীশা আবার বলতে শুরু করেছে,,
“” স্নিগ্ধা বরাবরই পরীক্ষায় আমার থেকে মার্কস কম পেতো। এতে ও খুবই অসন্তুষ্ট ছিলো। আর সেকারনেই জীবনের বড় পরীক্ষাটাতে ও চাইনি আমি ফুুল মার্কস পাই। আপনি যদি আমাকে খুজে না পেতেন তাহলে ও কখনোই আপনাকে আমার ব্যাপারে বলতোনা। এটা আমি ১০০% সিউর দিয়ে বলতে পারি। চাইলে আপনি এখনো ওকে কল দিয়ে জেনে নিতে পারেন। কিন্তু তারপরও এই চিঠি চদান-প্রদানের ব্যাপারটা আমি ওকে দিয়েই শুরু করেছিলাম।
আপনার ফাইনাল ইয়ারের পরীক্ষা শুরু হওয়ার পর আপনার একটা চিঠিও আমি পাইনি। কেন পাইনি তখন জানতাম না। আমি বারবার স্নিগ্ধার কাছে ছুটে গিয়েছিলাম আপনার চিঠির আশায়,কিন্তু প্রতিবারই আমি খালি হাতে ফেরত আসতাম। ও আমাকে কড়া করে জানিয়ে দিতো আপনি কোনো চিঠি দেননি। মাঝে মাঝে এমনও বলতো আপনি নাকি ইচ্ছে করেই চিঠি লিখেননা,আপনাকে মাঝে মাঝেই অন্যকারো সাথে দেখা যাচ্ছে।
সেদিন আমি ক্লাসে বসে সবার সাথে আড্ডায় ব্যস্ত। হঠাৎই বাইরে থেকে নানা গুনগুন শুনছিলাম। ক্লাসের সবাই এক এক করে দৌড়ে কোথাও একটা ছুটে যাচ্ছিলো ঠিক তখনি স্নিগ্ধা আমার কাছে এসে তাচ্ছিল্যভঙ্গিতে বললো,,বলেছিলাম না অন্য মেয়ের সাথে ঘুরঘুর করে? যা দেখে আয় তোর চিঠির প্রেমিক অন্য মেয়েকে প্রপোস করতেছে!
স্নিগ্ধার কথা আমি বিশ্বাসে না নিলেও ফেলে দিতে পারছিলাম না। অন্যদের মতো আমিও ছুটে গিয়েছিলাম। ভিড় ঠেলে যখন আপনার মুখটা দেখলাম তখন আপনার বুকে অন্যনারীর মুখ লুকানো!””
অন্ত্রীশার চোখ ভিজে এসেছে। গলাটাও ধরে এসেছে বুঝতে পেরে অন্ত্রীশা চোখ বন্ধ করে লম্বা করে কয়েকটা নিশ্বাস নিচ্ছে। রোদের তাপে অন্ত্রীশা ঘেমে উঠেছে। মুখটা মলিন হয়ে এসেছে তার মধ্যে এমন ছলছল হয়ে উঠা চোখটা দেখে পালক শান্ত হয়ে বসে থাকতে পারছেনা। ইচ্ছে করছে এখনি ওকে জড়িয়ে নিতে নিজের বুকের সাথে। একটু ভালোবাসার পরশে ওকে ঠান্ডা করে দিতে। দুএকটা আদরী কথার বুলিতে ওর মনটাকে রাঙিয়ে দিতে। পালক পেছন থেকে ডানহাতটা মুখে লাগানো টেপটা ধরতেই অন্ত্রীশা নরম সুরে বলে উঠলো,,,
“” আজকে শুধু আমি বলবো আর আপনি শুনবেন। আমার কথা এখনো শেষ হয়নি!””
পালক হাতটা আবার পেছনে নিয়ে নিয়েছে। আজ ইচ্ছে করছেনা অন্ত্রীশার কথার অবাধ্য হতে। ইচ্ছে করছেনা জোর করতে। আজ নাহয় একটু চুপ করে তার কথায়ই শোনা হোক। পালক আগের ন্যায় পেছনে হাত রেখে অন্ত্রীশার দিকে তাকাতেই ও আবার বলতে শুরু করেছে,,,
“” ঐদিন ছিলো আমার প্রথম প্রেমের প্রথম ধাক্কা। যে ধাক্কায় চুড়মার হয়ে যাচ্ছিলো আপনাকে নিয়ে বিশ্বাসেরা। জানেন তো,১৩-১৯ বছর বয়সকে টিন এজ বলা হয়? আর এই টিন এজের কিশোর কিশোরীর মনে বাস করে A magical kingdom of feelings. এই বয়সে একটা ছেলে একটা মেয়ের হাত ধরাতেও যে অনুভূতি ফিল করে,বুকের ভেতর অশান্তির ছটফটানি ফিল করে তার তুলনায় একজন প্রাপ্ত বয়সের দম্পত্তিরা মিলনেও সেরকম অনুভূতি ফিল করতে পারেনা। তাহলে ভাবুন তখনতো আমি টিন এজেই বাস করছিলাম তখন আমার মন ভাঙার ফলে আমি কেমন ভেঙে পড়েছিলাম??? আর সেই ভাঙা মন নিয়েই আমি একটি কঠিন প্রতিজ্ঞা নিয়ে আপনাকে চিঠি লিখলাম। প্রতিজ্ঞাটা এমন ছিলো আপনি যদি আমাকে না খুজে নেন আমি কখনোই আপনাকে ধরা দিবোনা!
ভাগ্যের কি পরিহাস! আমার সেই কঠিন প্রতিজ্ঞার চিঠিতো আপনার কাছে পৌছুলোইনা কিন্তু আমি ঠিকই এতোদিন তা বয়ে বেড়িয়েছি!
আমি আবার দ্বিতীয়বার আপনার প্রেমে পড়লাম,কখন জানেন? আপনার সেই প্রথম চুমুর যেটা আমাকে দেখতে এসে খেয়েছিলেন৷ আপনার সেই এক চুমু আমার সব বুলিয়ে দিয়ে নতুন করে আপনার প্রেমে ডুবিয়ে দিলো। আবার আমার মনের ভেতরে দ্বিতীয় প্রেমের অঙ্কুর ফুটছিলো। কিন্তু সেটাও শুকিয়ে গিয়েছিলো যখন জানতে পারলাম সেই চুমুটাও অন্য কারনে খেয়েছিলেন। তারপরও আপনার মধ্যে থাকা পত্রীকন্যার প্রতি এতো ভালোবাসা আমাকে মুগ্ধ করেছিলো। এতোটাই মুগ্ধ করেছিলো যে আমি আমার প্রতিজ্ঞা ভুলে গিয়ে আপনাকে সবটা জানানোর সিদ্ধান্ত নেই। তার পরিপাক্ষিকে আপনি কি করেছেন??
অন্ত্রীশার প্রশ্নটাকে পালকের কাছে বিষদাঁতের বানানো তীর মনে হলো। যেটা শরীরে লাগার সাথে সাথে পুরো শরীরে বিষ ছড়িয়ে পড়ছে৷ পালক অসহায়ভাবে অন্ত্রীশার দিকে তাকিয়ে আছে। অন্ত্রীশার হাতের জ্বলন্ত সিগারেটটা শেষ হয়ে এসেছে। এতক্ষন কথার ছলে সে ধোয়া কিভাবে ছাড়তে হয় তাই প্রেক্টিস করছিলো। বার বার ব্যর্থ হয়ে ধোয়া গলায় প্রবেশ করতেই কেঁশে উঠছিলো অন্ত্রীশা!
“” কাল রাতে আমি আবার আপনার প্রমে পড়েছি,আপনার সেই ভেজা উষ্ণতার! আর সেই প্রেমে পড়ার কারনবশত আমি আবার আপনার সামনে। কিন্তু প্রেম করার জন্য নয়।””
অন্ত্রীশা সিগারেট থেকে নিশ্বাস টেনে মুখ ভর্তি করে পালকের মুখের কাছে এসেছে। খুব কাছে এসে পালকের চোখে চোখ রেখেই মুখ ভর্তি ধোয়া পালকের পুরো মুখে ছড়িয়ে দিচ্ছে। পালক ধোয়ার গন্ধে নাক মুখ কুচকাতেই অন্ত্রীশা বললো,,
“” আপনাকে কঠিন হতে কঠিনতর শাস্তি দিতে!””
অন্ত্রীশার মুখে তারই বলে দেওয়া সেই বাক্য শুনতেই চোখদুটো ছানাবড় হয়ে গিয়েছে পালকের। অন্ত্রীশা পালকের মুখ থেকে টেপটা খুলতে খুলতে বললো,,
“” আপনার কঠিন হতে কঠিনতর শাস্তি হলো,,,আপনাকে কলংকিত পুরুষ হয়ে দেখাতে হবে। কিভাবে কলংক মাখবেন সেটা আপনার চিন্তা। কিন্তু তার আগে আমার সাথে আপনি কোনো কথা বলতে পারবেননা,আমাকে ছুতেও পারবেননা!””
অন্ত্রীশা পালকের হাতে সিগারেটের প্যাকেট,ম্যাচ আর টেপটা রেখে ধীর পায়ে ছাদের সিড়ির দিকে এগুচ্ছে। সে পেছনে তাকালে ঠিক দেখতে পারতো পালকের মুখটা এতো বড়ই হা হয়েছে যে সে চাইলে এখনি পালকের হা’য়ের মধ্যে টুপ করে ঢুকে পড়তে পারতো।
আতিশ অফিস থেকে বের হয়েই পালকের বাসার দিকে পা বাড়িয়েছে। পালকের জরুরী তলব। কিন্তু তার থেকেও জরুরী পাপড়িকে এক নজর দেখা। কাল দরজার বাইরে থেকেই তাকে ফেরত আসতে হয়েছে। এতোটা দিন পাপড়িকে দেখতে না পেয়ে পালকের মরি মরি অবস্থা। আজকে যেভাবেই হোক পাপড়িকে তার দেখতেই হবে৷ নাহলে সে পাপড়িকে দেখতে না পারার অপরাধে অন্ধ হয়ে যাবে!
বাসার ভেতরে ঢুকতেই আতিশের মুখটা আরো মলিন হয়ে এসেছে। এই বাসায় হঠাৎ এতো সাজসজ্জা কিসের? এমন লাইটিং আর ফুল দিয়েই কেন সাজানো হয়েছে? বাসায় তো মেহমানও ভর্তি। কি চলছে এই বাড়িতে??
আতিশ পা ফেলে যত ভেতরে ঢুকছে তার ভেতরটা তত খচখচ করছে। এক অদ্ভুত সন্দেহ কাজ করছে। পালকের রুমে পা ফেলতেই পেছন থেকে পালক আতিশকে জড়িয়ে ধরেছে।
“” আমি মনে হয় এবার মরেই যাবো রে,আতিশ!””
নিজেকে পালকের থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে ওর দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বললো,,
“” মানে?””
“” পত্রীকন্যা যে তার নামের মতো এতো কঠিন হবে তা জানলে আমি জীবনেও সেই চিঠির উত্তর দিতাম না!””
“” হেয়ালি না করে কি হয়েছে তাই খুলে বল। আর বাসায় কি কোনো প্রোগ্রাম নাকি? এতো সাজসজ্জা? আর এভাবে জরুরী তলবের কারন কি?””
আতিশ কথার ছলে আশেপাশে চোখ বুলিয়ে নিচ্ছে,এতো মানুষের ভিড়ে সে পাপড়িকে কিভাবে খুজবে? ও কি একটাবার রুম থেকে বের হতে পারছেনা??
“” কাল পাপড়ির বিয়ে!””
আতিশ অন্য জায়গা থেকে চোখ সরিয়ে তাৎক্ষনিক পালকের দিকে তাকিয়ে বললো,,
“” মজা করছিস?””
“” বোনের বিয়ে নিয়ে মজা করবো কেন,আতিশ? আর আমি কি এখন মজার মুডে আছি?””
আতিশ পালককে কিছু বলতে যাবে তার আগেই পেছন থেকে পাপড়ির গলা শুনতে পেলো।
“” ভাইয়া দেখতো,কাল আমি কোন শাড়ীটা পড়ে বউ সাজবো?””
আতিশ পেছনে ঘুরতেই পাপড়ির হাতে লাল আর খয়েরী কালারের পাথর আর সুতোর ভারী কাজ করা শাড়ী দেখতে পাচ্ছে। মুখে তার সেই মনভোলানো চিকচিক হাসি। তবে কি পালক সত্যি কথাই বলেছে? পাপড়ি অন্য কারো জন্য বউ সাজবে? ভাবতেই আতিশের অন্তরআত্মা কেঁপে উঠছে!
“” আমি আমার পত্রীকন্যাকে পেয়ে গেছি,অন্ত্রীশা।””
“” পত্রীকন্যা?””
“” হুম,স্নিগ্ধা। স্নিগ্ধাই আমার পত্রীকন্যা।””
“” স্নিগ্ধা?””
পালক অন্ত্রীশাকে ছেড়ে খুশি খুশি কন্ঠে বললো,,
“” তোমাকে বলেছিলাম না আমার আর পত্রীকন্যার চিঠী আদান-প্রদান করতো বোরকা পড়া একটি মেয়ে? আসলে ও আর কেউ নয় ঐ আমার পত্রীকন্যা!””
পালকের চকচক করে উঠা চোখের দিকে তাকিয়ে অন্ত্রীশার ভিজে উঠে চোখটা নিমিষেই শুকিয়ে গিয়েছে। থমথমে চাহনিতে চেয়ে রয়েছে অন্ত্রীশা। পালকের শুধু চোখ নয়,তার চোখের পাতার পলকে,ঠোটের হাসিতে,কথার ধ্বনিতে,নিশ্বাসের শব্দে মিশে রয়েছে খুশির আমেজ। যার বিপরীতে ঢাকা পড়ে যাচ্ছে অন্ত্রীশার মনের ভেতরের অন্ধকার কুটিরে জমে থাকা না বলা কথা আর তার শরীরের বাহ্যিকে অতি যত্ন আর আদরের মালিশে সাজসজ্জা!
“” অন্ত্রীশা আমার খুশিতে পাগল হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা৷ এতো দ্রুত আর হঠাৎ করেই এভাবে আমার পত্রীকন্যা আমার সামনে চলে আসবে,আমি তো ভাবিইনি। আমার তো এখনো মনে হচ্ছে আমি স্বপ্নে আছি। তুমি কি আমাকে একটু চিমটি কাটবে,অনতি?””
পালকের মুখে অনতি ডাকটাও আজ অসাধারন খুশি বয়ে বেড়াচ্ছে। এটাতো তার ডাকনাম। আর এই ডাকনামে তাকে তার খুব কাছের মানুষরাই ডাকে। পালকও কি তার কাছের মানুষ? না তো সে তো খুব দুরের মানুষ নাহলে সে কি করে তার বিয়ে করা বউয়ের সামনে অন্য একটা মেয়েকে নিয়ে এতোটা খুশি প্রকাশ করতে পারে??
“” কি হলো,চিমটি কাটোনা!””
অনতি নিজের ভাবনাগুলো সাইডে রেখে ঠোটে কৃত্রিম হাসি হেসে বললো,,
“” চিমটি কাটতে হবেনা। আপনি বাস্তবেই বিরাজ করছেন। যে বাস্তবটা আপনার আর আমার সম্পর্কের ইতি টানতে বলছে।””
“” মানে?””
“” কিছুনা। আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন। আমি আপনার জন্য খাবার বাড়ছি।””
“” আমিতো খেয়ে এসেছি। পত্রীকন্যা আমায় নিজের হাতের রান্না খায়িয়েছে। আমি তো ওর বাসা থেকেই এসেছি। কি রান্না করেছিলো শুনবে??””
না আমি কিছু শুনবোনা,কিছুনা। অন্য একটা মেয়ের রান্না খেয়ে এসে আমার সামনে গল্প করবেন? তার থেকে তো ভালো হতো যদি আপনি আমার ভেতরের সবকিছু খেয়ে নিয়ে গল্প করতেন তাও আমার এতো কষ্ট হতোনা। আপনার এই বেখেয়ালিপনা আর অন্ধ ভালোবাসার শাস্তি আপনি পাবেন,আল্লাহ না করুক সেটা যেন আমার হাতে না হয়। তাহলে আপনার কপালে কি শনি আছে আমি নিজেও জানিনা।
অন্ত্রীশা মনের কষ্ট মনেই গেথে রাখতে রাখতে নিজের শাড়ীর আচলে হাত দিয়েছে।
“” আরে তুমি আজ শাড়ী পড়েছো যে,কোথাও গিয়েছিলে নাকি?””
“” হুম,ভেবেছিলাম আমিও আপনার পত্রীকন্যার মতো আমার প্রেমিককে তুলে নিয়ে আসবো,কিন্তু আহম্মকটা আবার অন্য কারো গলায় ঝুলছে!””
পালক বেশ গম্ভীর ও চিন্তিত কন্ঠে বললো,,
“” সেকি,তোমার প্রেমিক তো তাহলে সুবিধার ছেলেনা। এমন ছেলের হাতে তুমি কি করে পড়লে? তোমার মতো এতো ভালো একটা মেয়ের কপালে এমন আহম্মক প্রেমিক??””
“” খবরদার আমার প্রেমিককে নিয়ে আপনি কিছু বলবেননা। আমার প্রেমিক আহম্মক হোক আর ডাহম্মক হোক তাকে শুধু আমি বলবো।””
“” এতো ভালেবাসা?””
“” হুম!””
দুজন দু জায়গায় শুয়ে পায়চারীর খেলায় মেতে আছে,একজন অপেক্ষাকে নিজের বশে করে তো আরেকজন অপেক্ষার ব্যর্থতায়। দুজনের মনেই এক অজানা অনুভূতিতে ছুয়ে আছে। একজন খুশিতে স্বপ্নের ঠিকানাগুলো সাজানো নিয়ে আরেকজন কষ্টে ভাঙা হৃদয়ের টুকরোগুলো কুড়িয়ে নেওয়ায়।
পালক হাজারো ভাবনা নিয়ে ঘুমিয়ে পরলেও ঘুম আসেনি অন্ত্রীশার চোখে। তার ভয় হচ্ছে,অভিমান হচ্ছে,রাগ হচ্ছে,কষ্ট হচ্ছে,কান্না পাচ্ছে আবার ভালোবাসাও পাচ্ছে। বার বার ইচ্ছেগুলো তাকে তাড়া দিচ্ছে পালকের কাছে ছুটে গিয়ে বলতে,,আপনি আর কারো হতে পারেননা,আর কোনো ভুলে পা বাড়াতে পারেননা,আপনি শুধু আমার,আপনার স্বপ্নের রাজ্য সাজানোর প্রত্যেকটি ইটের টুকরে আর সিমেন্টের কনায় শুধু আমি মিশে থাকতে চাই! কিন্তু এক চাপা অভিমান অন্ত্রীশাকে ছুটে যেতে দিচ্ছেনা৷ ভালোবাসাটা যখন লিমিট ক্রস করে অতিরিক্তে পা দেয় তখন আর নিজে থেকে কিছু করতে ইচ্ছে করেনা,একটুও জোর খাটাতে ইচ্ছে করেনা। মন তো শুধু চাই প্রিয় মানুষটি নিজে থেকেই সব বুঝে নিক,নিজে থেকে এসে অভিমান ভাঙিয়ে দিক। অন্ত্রীশা ক্ষেত্রেও তা হচ্ছে। তার অভিমানরা খুব করে চাইছে পালক নিজে থেকে সবটা বুঝোক। কিন্তু পালক কি আদৌ বুঝবে অন্ত্রীশার অভিমানকে???
অন্ত্রীশার ভেতরটা খুব চিৎকার করে কাঁদছে কিন্তু সেই চিৎকারটা সে আর তার আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো শুনার মতো ক্ষমতা আর কারো নেই। আসলেই ক্ষমতা নেই নাকি আগ্রহ নেই বুঝার???
সকালে মিসেস তানিয়া বেগমের চিৎকারে ঘুৃম ভেঙেছে অন্ত্রীশার। সারারাত কেঁদে কেটে কখন ঘুমিয়ে পড়েছিলো তা তার অজানা। কান্নার প্রবলতাটা হয়তো বেশিই পড়েছিলো যার ফলাফল হিসেবে,মাথা ভারী হয়ে কিছুটা ব্যথা অনুভব হচ্ছে,চোখগুলো ফুলে আছে সাথে গালটাও ভারী হয়ে এসেছে। অন্ত্রীশা নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে পা বাড়িয়েছে মিসেস তানিয়া বেগমের রুমে!
“” তোর পছন্দটাই সব হয়ে গেলো,পালক? আমার পছন্দের কোনো মূল্য নেই? এভাবে ছুড়ে ফেলে দিতে চাচ্ছিস?””
“” আম্মু,তুমি এভাবে কথা বলছো কেন? আর পছন্দেরই কি আছে? আমি আর অন্ত্রীশা কেউ কারোর কাছে মানিয়ে নিতে পারিনি। একটা সম্পর্ক এভাবে জোর করে এগিয়ে নেওয়া অসম্ভব। যে মেয়েটাকে আমি কখনোই স্ত্রীর মর্যাদা দিতে পারবোনা তাকে কেন সম্পর্কের দোহায় দিয়ে বেধে রাখবো? তারও তো একটা শখ আহ্লাদের ব্যাপার আছে,তারও তো হাজারটা স্বপ্ন রয়েছে!””
মিসেস তানিয়া বেগম এতক্ষন বসে থাকলেও এবার আর বসে থাকতে পারলেননা। বিছানা ছেড়ে পালকের মুখোমুখি হয়ে দাড়ালেন। চোখে তার রাগ আর তাচ্ছিল্যতা। এমন একটা ভাব যে পালক এমন কথা বলছে উনি তা মেনে নিতে পারছেননা। হাতটাও শক্ত হয়ে এসেছে হয়তো পালকের গালে চড়ও পড়তে পারে।
“” থাপড়িয়ে তোর দ্বিতীয় বিয়ের স্বাদ আমি ছুটিয়ে দিবো। তোর বাপ থাকলে তুই এমন গলা উচিয়ে কথা বলতে পারতি? আজ বাপ নাই বলে নিজেকে খুব বড় ভেবে ফেলেছিস?? আমার সাথে তর্ক করছিস???””
শ্বাশুড়ির মুখে পালকের দ্বিতীয় বিয়ের কথা শুনতেই অন্ত্রীশার মাথা পাক দিয়ে উঠেছে। হঠাৎ করেই শরীরের সব শক্তি কেউ কেড়ে নিয়েছে এমন মনে হলো। নিজের শরীরের ভরটাও যেন নিজে ধরে রাখতে পারছেনা। নিজেকে দাড়িয়ে রাখার জন্য দরজাটা আকড়ে ধরে,চোখ জোড়া বন্ধ করে ফেললো।
মা আর ভাইয়ের ঝগড়া দেখছে পাপড়ি। একবার মনে হচ্ছে মায়ের দলে যাবে তো আরেকবার মনে হচ্ছে ভাইয়ের দলে। কি করবে বুঝে উঠতে পারছেনা। আম্মুর দিক ভাবতে গেলেও আম্মুর কথাও ঠিক আছে,ঘরে বউ থাকতে আবার কিসের বিয়ে?? এটাতো ঘোর অন্যায়! আবার ভাইয়ের দিকে তাকালে মনে হচ্ছে ভাইয়ের দিক থেকেও সে ঠিক আছে,কেননা সেতো জানে ভালেবাসার মানুষটাকে নিজের করে পাওয়ার মধ্যে কত সুখ! সুখটা নাহয় সে বুঝতে পারেনি কিন্তু ভালোবাসার মানুষটাকে নিজের করে না পাওয়ায় কতটা কষ্ট এটা ঐদিন আতিশের ব্যবহারেই বুঝে গেছে। আর বোন হয়ে কি করে চাইবে তার ভাইটাও এমন কষ্টে ভুগোক??? তাই সে চুপচাপ দাড়িয়ে থাকাটাকে গ্রহনযোগ্য মনে করেছে।
পালক এবার মিসেস তানিয়া বেগমের হাতদুটো নিজের হাত দিয়ে চেপে ধরেছে। মেঝের দিকে তাকিয়ে অসহায়ভাবে বললো,,
“” আমি পত্রীকন্যাকে ছাড়া বাচবোনা,আম্মু! ও বলেছে কাল ওকে বিয়ে না করলে ও আমার থেকে আবার হারিয়ে যাবে। এতো বছর ধরে ওকে খুজতে খুজতে আমি ক্লান্ত! এবার পেয়েও যদি আবার হারিয়ে ফেলি তাহলে আমি বেচে থেকেও যে মরে যাবো! ও যে আমার প্রাণ আর প্রাণ ছাড়া শরীরটাকে আমি কি করে বয়ে বেড়াবো?””
ছেলের অসহায়ত্ব আর কষ্টে সব মায়ের মনই গলে যায়। মিসেস তানিয়া বেগমেরও তাই হয়েছে। কিছুক্ষন আগেও যে পালককে মেরে তক্তা বানিয়ে ফেলতো পারতো এখন সে শক্ত কন্ঠে দুটো কথাও বলতে পারছেনা। কন্ঠ নরম হয়ে এসেছে,,,
“” তাই বলে তুই অন্ত্রীশার কথা ভাববিনা? তোর ভালোবাসাকে গ্রহন করতে গিয়ে ওকে বর্জন করবি? এখানে ওর কি দোষ?””
পালক মায়ের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই অন্ত্রীশা বলে উঠলো,,
“” উনার দ্বিতীয় বিয়েতে আমার কোনো আপত্তি নেই,আম্মা। উনার মতো আমিও পরিবারের চাপেই কাগজে সই করেছিলাম। সামান্য একটা কাগজের সই কখনোই একটা সম্পর্ক ধরে রাখতে পারেনা। তার জন্য অসীম ভালোবাসার প্রয়োজন। আর সেটা আমাদের দ্বারা সম্ভব হয়নি। তাছাড়াও উনার মতো আমার ও একজন আছে,যাকে আমিও অনেক বেশি ভালোবাসি!””
অন্ত্রীশার কথাতে পুরো রুমে নিরবতায় ছেয়ে আছে। সবার চোখজোরা অন্ত্রীশার উপর। সবাই অপ্রস্তুত হয়ে আছে। কেউই যেন এমন একটা উক্তি আশা করেনি তাও অন্ত্রীশার কাছ থেকে। সবাইকে বিস্মিত করে অন্ত্রীশা পেছন ঘুরে হাটা শুরু করে দিয়েছে। তার যে আর কিছু বলার শক্তিতুটু নেই। ওখানে থাকা মানে আরো নানা প্রশ্নে সম্মুখীন হওয়া। এখন সে কোনো প্রশ্নের সম্মুখীন হতে চাইনা, তার যে কথা বলতেও ইচ্ছে করছেনা। মনটা খুব করে জানতে চাইছে,কেন এমনটা হচ্ছে????
অন্ত্রীশার ক্লান্ত চোখ আবার গিয়ে ঠেকেছে পালকের চোখে। সেই আগের মতোই চকচক করছে,এবারেরটা কি একটু বেশিই চকচক করছে??
ঐ চোখের চকচকটা তাকে জ্বালিয়ে নাশ করে দিচ্ছে। মনে হচ্ছে শরীরের এক ইঞ্চি গ্যাপ রেখে একটা করে ফোস্কা পড়ছে। না এক ইঞ্চি নয় আধা ইঞ্চি! অন্ত্রিশা পালকের দিকে আর তাকিয়ে থাকতে পারছেনা। বিছানা গুছাতে গুছাতে বললো,,
“” ওমা! আপত্তি কেন থাকবে?? আপত্তি থাকার মতো তেমন কিছু কি ঘটেছে আমাদের মাঝে?””
“” কিছু হয়নি ঠিক আছে,কিন্তু তারপরেও তুমি এতো সহজে মেনে নিবে ভাবতে পারিনি। মনে হচ্ছে অন্য কোনো কারন!””
“” প্রেমিক কারন!””
“” প্রেমিক কারন?””
“” হুম,কাল রাতে স্বপ্নে এসেছিলো। এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে ক্ষমা চাইলো। আর আমিও মাফ করে দিলাম।””
পালক বিছানায় ধপাস করে বসে পড়েছে,অন্ত্রীশাকে হেল্প করার বাহানায় ওর হাত থেকে কাথাটা নিয়ে নিজে ভাজ করতে করতে বললো,,
“” স্বপ্নে জড়িয়ে ধরতেই সব মাফ?””
“” হুম!””
“” এতো বড় অন্যায় এতো ছোট জিনিসে মাফ?””
“” কেন আপনি চান তাকে আরো কঠিনভাবে মাফ করতে?””
পালক কাথাটা বালিশের উপরে রেখে বললো,,
“” অবশ্যই,তোমার উনাকে কঠিন হতে কঠিনতর শাস্তি দেওয়া উচিত।””
“” সিউর?””
“” ১০০%””
“” ওকে। তাহলে সত্যি সত্যি যখন আমার কাছে মাফ চাইতে আসবে তখন কঠিন হতে কঠিনতর শাস্তি দিবো।””
স্বপ্ন পুরনের ধারটায় চলে এসেও যখন তা অপুর্নই থেকে যায় তখন বুকের একদম ভেতরে না ভেতরেরও ভেতর থেকে ছোট্ট একটা ব্যর্থতার নিশ্বাস বেড়িয়ে আসে। পেছনে ফেলে আসা হাজারও কষ্টগুলো তখন এতোটাই চেপে ধরে যে তার ঐ ব্যর্থটার নিশ্বাসটা ফেলতেও শক্তিটুকু থাকেনা। অন্ত্রীশারও আজ প্রত্যেকটা নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। মনে হচ্ছে নিশ্বাসগুলো বন্ধ করে একটা ছোট বাক্সে জমা করে রাখতে।
“” অন্ত্রীশা?””
অন্ত্রীশা বেলকনিতে দাড়িয়েই চাঁদের দিকে মুখ করে ছিলো। কিন্তু সে চাঁদ দেখছিলোনা। তার চোখ বন্ধ করে চাঁদকে অনুভব করার চেষ্টা করছিলো। হঠাৎ পালকের ডাকে চোখ মেলেছে,,,
“” ওখানে দাড়িয়ে কি করছো? এদিকে এসো,আমি পত্রীকন্যার জন্য কি কি কিনেছি দেখে যাও।””
পালকের হাতভর্তি শপিংব্যাগগুলোর উপর ও আজ অন্ত্রীশার রাগ হচ্ছে।
অন্ত্রীশার সামনে লাল বেনারশী মেলতেই অন্ত্রীশা বলে উঠলো,,
পালক হাত থেকে বেনারশী ফেলে অন্ত্রীশার দিকে তাকিয়ে বললো,,
“” তাইতো! এটাতো আমার মাথায়ই ছিলোনা। এখন কি হবে? এতোরাতে তো মার্কেট খোলাও পাবোনা। ধুর! কালকে আবার মার্কেটে যেতে হবে।!!””
সকালে ঘুম থেকে উঠতেই পালক অন্ত্রীশার বিছানায় একটি কাগজ দেখতে পেলো। কাগজটি সেই মিস্টি কালার বেনারশীতে রাখা যেটা অন্ত্রীশা বিয়ের দিন পড়েছিলো। পালক সোফা থেকে উঠে চিঠীটা হাতে নিয়ে পড়ছে,,,,
***মাঝরাতে আমার প্রেমিক স্বপ্নে এসেছিলো। সে বলেছে আমি যদি এখনি আমার প্রাক্তন স্বামীকে রেখে বাসায় না ফিরি তাহলে নাকি সে আমার কাছে সত্যি সত্যি ক্ষমা চাইতে আসবেনা। এখন আপনিই বলুন সে যদি ক্ষমা চাইতে না আসে তাহলে আমি কঠিন হতে কঠিনতর শাস্তিটা কিভাবে দিবো? তাই চট করে সব গুছিয়ে চলে যাচ্ছি!
আপনার বিয়েতে তো আমি কিছু দিতে পারলামনা। তাই আপনার পত্রীকন্যার পছন্দের রঙের বেনারশীটা দিয়ে গেলাম। ভুলেও তাকে বলবেননা যে এটা পুর্বে ভুল জায়গায় ব্যহার হয়েছে তাহলে কিন্তু ও পড়বেনা।
যাইহোক,আপনার বিয়ের শুভকামনা রইলো।
ইতি
অন্ত্রীশা
হুট করে বিয়ের সিদ্ধান্ত হওয়ায় ঘরোয়াভাবেই বিয়ের কার্যসম্পাদন হচ্ছে। সাক্ষী হিসেবে পালকের ফ্রেন্ড কাদির আর আতিশের আসার কথা ছিলো। কিন্তু আতিশ অফিসের দোহায় দিয়ে আসতে পারেনি তাই স্নিগ্ধা তার এক ভাইকে নিয়ে এসেছে। কাজী একটু পরই চলে আসবে।
মিসেস তানিয়া বেগম আর পাপড়িও তাদের সাথে যোগ দিয়েছেন।যতই হোক এ বাড়ির ছেলের বিয়ে,হোক না তা দ্বিতীয় বিয়ে,কিন্তু বিয়েতো!
“” এইটা কোনো বেনারশী হলো পালক? এমন ভুটকানো কালারে আমাকে কেমন বিদঘুটে লাগছে। তোমার মাথায় এটা আসলো কিভাবে?? তুমি কখনো দেখেছো মিস্টি কালারের বেনারশী পড়ে বিয়ে করতে??””
স্নিগ্ধা শাড়ীটা এমনভাবে ছুয়ে দেখছে যেন এতে মাছের আশটে লেগে আছে,ভালো করে হাত দিলেই হাতে লেগে গন্ধ বের হবে!
“” এতো রাগ করছো কেন,পত্রীকন্যা? এটাতো তোমার ফেবারিট কালার,তাই সারপ্রাইজ দিলাম!””
“” ফেবারিট? এইটা আমার ফেবারিট কালার? কে বলেছে তোমাকে?””
“” কেন,তুমিই তো চিঠিতে আমাকে জানিয়েছিলে,ভুলে গেলে?””
পালকের কথাই স্নিগ্ধা আমতা আমতা করে বললো,,
“” ওটাতো তখন ছিলো,এখন আমার এটা ভালো লাগেনা।””
পালক স্নিগ্ধার হাত ধরতে গিয়েও থেমে গিয়ে আদুরী কন্ঠে বললো,,
“” রাগ করেনা। আচ্ছা এর পর থেকে এমন ভুল আর কখনো হবেনা৷ এবারের মতো ক্ষমা করে দাও?””
স্নিগ্ধা বিরক্তি নিয়ে বললো,,
“” কাজী কখন আসবে? উফ! কখন যে এই শাড়ীটা চেন্জ করবো, কেমন পচা মাছের গন্ধ আসছে শরীর থেকে!””
সবার অপেক্ষার প্রহর শেষ করে কাদির কাজী নিয়ে হাজির হয়েছে। কাজী তার মতো কাজ শেষ করে স্নিগ্ধার দিকে কলম এগিয়ে দিলেন সাইন করার জন্য। স্নিগ্ধা ঝটপট সাইন করে দিতেই পালকের দিকে পেপার আর কলম এগিয়ে ধরলেন কাজী।পালক রেজিস্ট্রী পেপারটা নিজের দিকে নিতেই চোখ পড়েছে স্নিগ্ধা সিথি নামটার উপর। মিস্টি একটা হাসি নিয়ে নিজেও সাইন করার জন্য কলমটা আঙুল দিয়ে চেপে ধরেছে।
চলবে
#ধোয়ার-নেশা
#রোকসানা-রাহমান
পর্ব (২০)
সবার অপেক্ষার প্রহর শেষ করে কাদির কাজী নিয়ে হাজির হয়েছে। কাজী তার মতো কাজ শেষ করে স্নিগ্ধার দিকে কলম এগিয়ে দিলেন সাইন করার জন্য। স্নিগ্ধা ঝটপট সাইন করে দিতেই পালকের দিকে পেপার আর কলম এগিয়ে ধরলেন কাজী সাহেব।পালক রেজিস্ট্রী পেপারটা নিজের দিকে নিতেই চোখ পড়েছে স্নিগ্ধা সিথি নামটার উপর। মিস্টি একটা হাসি নিয়ে নিজেও সাইন করার জন্য কলমটা আঙুল দিয়ে চেপে ধরেছে।
কলম চেপে ধরেছে তো ধরেছেই তা থেকে আর কালি বের করতে পারছেনা। মনে হচ্ছে কলমটা আজ তার সাথে বিরহ করেছে সে তার ডাকে সারা দিয়ে কিছু লিখতে চাইছেনা,চাইছেনা কারো অধীনে গিয়ে নিজের ভেতরে জমে থাকা কালির বিসর্জন দিক।
পালকের হাতেও কাপুনি উঠেছে,তবে তা বাহ্যিক নয়,আন্তিক। বার বার অন্ত্রীশার কথা মনে পড়ছে। এমনি এক কাগজ কলমের সাইনের জোরেই তো সে অন্ত্রীশাকে এ বাড়িতে এনেছিলো। ঠিক এমনি আরেকটি সাইনের জোরে সে আজ অন্য একজনকে এ বাড়িতে বাধতে বসেছে। পার্থক্য এতটুকুই সেদিন তার নামের পাশের জায়গায় ছিলো অন্ত্রীশা আর আজ রয়েছে স্নিগ্ধা।
পালক হঠাৎ করেই কলম ফেলে দিয়ে উঠে পড়ে,,,
“” আমি সাইন করতে পারবোনা,আমি! আমি বিয়ে করতে পারবোনা,আমি! আমি কবুলও বলতে পারবোনা। উফ! আমি কিছু পারবোনা,কিচ্ছুনা!””
পালকের এমন আকস্মিক কান্ডে সকলেই হতভম্ব। সবার দৃষ্টি পালকের উপর।
স্নিগ্ধাও এতক্ষনে উঠে দাড়িয়েছে। পালকের কাছটাতে এসে অগ্নিদৃষ্টি ছুড়ে বলছে,
“” বিয়ে করবেনা মানে? কি বলছো এসব? তোমার মাথা টাথা সব ঠিক আছে তো পালক??””
পালক চোখ বন্ধ করে বললো,,
“” আমার কিছু সময়ের প্রয়োজন স্নিগ্ধা,না অনেক সময়ের প্রয়োজন। আমি এখন কিছু করতে পারবোনা। আমি! আমি মনে হয় লিখতে ভুলে গিয়েছি!””
স্নিগ্ধার রাগ ক্রমশই উর্ধ্বগতিতে উঠছে। এতোটা পথ এসে কিনা বলে আর হাঁটতে পারবেনা?? ইচ্ছে হচ্ছে পালককে ঠাটিয়ে দুটো চড় মেরে সাইন করাতে। কিন্তু পালকের মতিগতি ঠিক বুঝতে না পারায় রাগটাকে সংযত করে নিলো স্নিগ্ধা। ধূরগতিতে পালকের বুকে নিজের মাথাটা রেখে আদুরী আর কান্না মিশ্রিত সুরে বললো,,
“” এমন করছো কেন,পালক? তবে কি তোমার আমাকে পছন্দ হয়নি?? আমি কি দেখতে খুব খারাপ?? তোমার আমার চিঠিপ্রেমের কাছে আমার রুপটা মানাচ্ছেনা?? তাহলে কি প্রেম মানেই রুপ-সৌন্দর্য! আমাকে কি তুমি ফিরিয়ে দিতে চাচ্ছো?? আমাদের এতোবছরের চাওয়াপাওয়াকে পায়ের তলায় পিষে দিতে চাচ্ছো? সব মিথ্যে করে দিতে চাচ্ছো পালক??””
পালক স্নিগ্ধাকে কিছু বলতে গিয়েও থেমে গিয়েছে। স্নিগ্ধার থেকে মনোযোগ সরিয়ে রেজিস্ট্রি পেপারটা দ্রুততার সাথে নিয়ে চেক করছে। স্নিগ্ধা সিথি নামটার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে বললো,,
“” তুমি আমার পত্রীকন্যা নও।””
পালকের এমন কথায় হকচকিয়ে যায় স্নিগ্ধা। কিছুটা জড়োতা আর ভয়ার্ত নিয়েই পালকের কাছে এসে বললো,,,
পালক আর স্নিগ্ধার মাঝে এবার কাদিরও এগিয়ে আসে৷ পালকের কাধে হাত রেখে বললো,,
“” পালক,তুই এসব কি বলছিস? তুই ই তো বললি ও তোর পত্রীকন্যা,তোর কথাতেই আমরা তোকে সঙ্গ দিচ্ছি। আন্টি আর পাপড়িরা যেমন তোর সুখে থাকা নিয়ে চুপ করে নিয়েছে আমিও তোর ভালোবাসার প্রাপ্তিতে চুপ করে ছিলাম। কিন্তু এখন আর চুপ থাকতে পারছিনা। সবকিছু ঠিকঠাক,এখন বলছিস বিয়ে করবিনা,ও তোর পত্রীকন্যা নয়?? তুই আসলে কি চাস বলতো? সবকিছুতে ছেলেমানুষি?? এই পত্রীকন্যা তো তোকে অসুস্থ মানিয়ে দিচ্ছে!””
পালক অস্থিরতা নিয়ে রেজিস্ট্রী পেপারটা কাদিরের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,,,
“” এইটা আমার পত্রীকন্যার হাতের লেখা নয় রে,কাদির। এটা অন্যকারো লেখা। ও আমার পত্রীকন্যা হতে পারেনা।””
স্নিগ্ধা পালককে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বললো,,
“” তখন আমি ছোট ছিলাম,এখন বড় হয়েছি লেখাতো চেন্জ হবেই,তুমি একটা লেখা দেখে বুঝে গেলে আমি পত্রীকন্যা নই? একটা লেখার কাছে আমাকে নগন্য বানিয়ে দিচ্ছো,পালক??””
পালক স্নিগ্ধার থেকে মুখ ঘুরিয়ে আবার কাদিরের দিকে চেয়ে চিৎকার করে বললো,,
“” ও আমাকে বার বার পালক বলে ডাকছে কেন?? আমার পত্রীকন্যা তো আমাকে কখনোই পালক বলে ডাকেনি,সবসময় পত্র পুরুষ,কলংকিত পুরুষ,নাহয় শুদ্ধ পুরুষ বলে ডাকতো। ও আমার পত্রীকন্যা কিছুতেই হতে পারেনা। কিছুতেই না!””
পালক চিৎকার করতে করতে ধপাস করে চেয়ারে বসে পড়েছে,গরম লাগছে খুব,বুকের ভেতরে আবার শুন্যতা অনুভব করছে,আরেকবার ঠকে গেছে সে। পত্রীকন্যার বেলায় কেন তাকে এতো ঠকতে হয়? কেন?? কেন??? কেন বারবার ওর কাছে যেতে চেয়ে অন্য কারো কাছে চলে যাচ্ছি?? তবে কি আমি কখনোই আমার পত্রীকন্যার কাছে পৌছোবনা???
স্নিগ্ধা পালকের কপালের ঘাম মুছে দিতে দিতে বললো,,
“” তুমি অসুস্থ হয়ে যাচ্ছো,মাথায় বেশি চাপ পড়ে গিয়েছে তাই এমন আবোলতাবোল বকছো,আচ্ছা আমরা নাহয় একটু পড়ে বিয়ে করবো কেমন??””
স্নিগ্ধা পালকের দিকে ঝুকে থাকায় গলার চেইনের মধ্যে গেথে থাকা লাভ শেপের মধ্যে ছোটছোট মুক্তো দানায় ঘেরা লকেটটা শুন্যে ভাসছে।
এটাতো সেই লকেট যেটা সে পত্রীকন্যাকে ভালোবাসার চিহ্ন হিসেবে দিয়েছিলো। ও যদি পত্রীকন্যা নাহয় এই লকেটটাও ওর হওয়ার কথা না।
পালক ছোপ মেরে লকেটটা টান দিতেই স্নিগ্ধার গলায় চেইনটা ছিড়ে পালকের হাতে চলে গিয়েছে।
ওটা খুলতেই একপাশে ভেতরে পালকের ছোট্ট ছবি দেখা যাচ্ছে,আর অপরপাশটা খালি। পালক চেয়ার ছেড়ে উঠে স্নিগ্ধার দিকে রুক্ষকন্ঠে বললো,,
“” এইটাতে আমার পত্রীকন্যার ছবি নাই কেন? কেন দাওনি ওকে? বলো কেন দাওনি??? তুমি আমার পত্রীকন্যার সাথে বেইমানী করেছো আমার সাথেও বেইবানী করেছো। ও তোমাকে কতটা বিশ্বাস করে আমার কাছে পাঠিয়েছিলো আর তুমি সেই বিশ্বাসকে এভাবে দুমড়ে মুচড়ে ভেঙ্গে দিলে??? তোমাকে আমি….””
পালক যে নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যাচ্ছে বুঝতে পেরে কাদির ওকে আটকিয়ে ফেলে। এতক্ষনে তারও মনে হচ্ছে পালক সত্যি বলছে। পালককে পিছনে রেখে সামনের দিকে এসে দাড়িয়েছে কাদির। যা করার এখন তাকেই করতে হবে,নাহলে ঘটনা অন্যদিকে চলে যাবে।
কাদির স্নিগ্ধার উদ্দেশ্যে কিছুটা কঠিন গলায় বললো,,
“” তুমি যদি পত্রীকন্যা না হও তাহলে পত্রীকন্যা কে??””
“”……””
“” আর তুমিইবা কেন হঠাৎ করে পত্রীকন্যা সেজে ওকে বিয়ে করতে চাইছো? ওর চিঠি,লকেট তোমার কাছে কি করে এলো??? এগুলো তো পত্রীকন্যার কাছে থাকার কথা। এতো বড় মিথ্যের আশ্রয় নিয়ে তুমি কেন ওর কাছে এসেছো?? বলো কেন এসেছো?? আজ তুমি সত্যি কথা না বলে এখান থেকে এক পা ও নড়তে পারবেনা।””
কাদিরের প্রত্যেকটা ধমকানিতে স্নিগ্ধা কেপে কেপে উঠছে। ভয়ের চুড়ান্ত পর্যায়ে এসে ঠেকেছে সে। চোখের চাহনি এক জায়গায় স্থির করতে পারছেনা। কপালের ঘামগুলো গাল বেয়ে নিচে এসে পড়ছে। গলার স্বরটাও কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে।
স্নিগ্ধা কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো,,,
“” আমি পালককে ভালোবাসি!””
“” ভালোবাসো মানে? তুমি ওকে আগে থেকেই ভালোবাসতে??””
কাদিরের প্রশ্নে স্নিগ্ধা মাথা নাড়িয়ে না বুঝাতেই কাদির আবার পাল্টা প্রশ্ন করে,,,,
“” তাহলে?””
“” পানি খাবো!””
পাপড়ি গ্লাসে করে পানি এগিয়ে ধরেছে স্নিগ্ধার দিকে। পাপড়ির হাত থেকে পানির গ্লাসটা নিয়ে একঢোক পানি খেয়ে আবার বলতে শুরু করেছে স্নিগ্ধা,,,
“” উনি যখন আমার হাত দিয়ে চিঠি পাঠানো শুরু করেন তখন আমার খুব ইচ্ছে হতো এটার ভেতর উনি কি এমন লিখেছেন তা দেখার জন্য। প্রথম প্রথম ইচ্ছেটাকে প্রশ্রয় না দিলেও একদিন হুট করেই উনার চিঠিটা খুলে ফেলি। এতো সুন্দর,সহজ,সরল আর সাবলীল ভাষায় উনার ভালোবাসার কথা লিখেছিলো যে আমার তখনি মনটা আনন্দে ভরে গেলো। তারপর মাঝে মাঝেই উনার চিঠি খুলে পড়তে লাগলাম। মাঝে মাঝে উনার ছোটখাটো দুষ্টুমীর কথাগুলো আমাকে এতোটাই আকর্ষন করতে থাকে যে আমি উনার প্রতি মোহিত হতে লাগলাম। তার মধ্যে এটা,ওটা নানান নানান গিফট ও পাঠাতে লাগলেন,আমার তখন ওগুলোর প্রতি লোভ জন্মাতে থাকে,একসময় মনে হতে থাকে ইশ! কেন এগুলো আমার জন্য নয়,কেন উনি আমাকে চিঠি লিখেননি! আর তখনি উনি একটা চিঠিতে লিখেন উনি পত্রীকন্যার সাথে দেখা করতে চায়। ঐ সময় আমি উনার দিওয়ানা হয়ে গিয়েছি। আমি ঠিক করেছিলাম আমিই উনার পত্রীকন্যা হয়ে দেখা করবো তাই ঐ চিঠিটা আমার কাছেই রেখে দিয়েছিলাম,আর আমি যেহেতু পত্রীকন্যা নয় তাই আমি চিঠিও লিখতে পারছিলাম না,মনে ভয় ছিলো যদি ধরা পড়ে যায়। ভয়টা খুব বেশিই আকড়ে ধরেছিলো যে,উনার সাথে দেখা করার পরিকল্পনা বাদ দিয়ে দিলাম। আমি ভেবেছিলাম যার চিঠি তাকেই দিয়ে দিবো। কিন্তু আমি চিঠি পৌছোনোর আগেই উনি অন্য কাউকে প্রপোস করে বসে। অন্য কাউকে পত্রীকন্যা ভেবে ভালেবাসতে শুরু করেন।””
স্নিগ্ধা পানির গ্লাস থেকে পানি খেয়ে আরেকটু গলা ভিজিয়ে বললো,,,
“” তারপর উনার সাথে আমার আর দেখা হয়নি,কোনো চিঠিও আদান-প্রদান হয়নি। আমি সব ভুলেই যাচ্ছিলাম,এর মধ্যেই একদিন উনাকে রেষ্টুরেন্টে দেখতে পাই,আমি ঠিক উনার পেছনের টেবিলটাই বসে ছিলাম। ওখান থেকেই জানতে পারি উনি এখনো উনার পত্রীকন্যার দেখা পাননি,আর সাথে সাথে আমার মনটা আবার লোভী হয়ে পড়ে। উনার প্রতি আবার ভালো লাগা কাজ করে,উনার ভালোবাসাকে নিতে ইচ্ছে করছিলো তাই আমি আমার একটা ফ্রেন্ডকে দিয়েই সব প্লেন করে উনাকে আমাদের বাসায় আনি,আর প্রমান করার চেষ্টা করি আমি উনার পত্রীকন্যা। উনিও আমার ফাদে পা ফেলে। আমি জানতাম অভিনয় করে আমি বেশিদিন উনাকে আটকে রাখতে পারবোন,তাই বিয়ের কথা বলি!””
স্নিগ্ধার কথা সকলেই মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনছিলো। সবাইকে সম্ভিতিতে আনতেই কাদির প্রশ্ন করে বসলো,,,
“” তুমিও যদি পত্রীকন্যা না হও তাহলে পত্রীকন্যা কে? কোথায় আছে সে??””
“” আমি জানিনা।””
“” জানিনা মানে? পত্রীকন্যার চিঠিতো তুমিই নিয়ে এসে পালককে দিতে।””
কাদির আর স্নিগ্ধার কথোপকথনের মাঝখানেই পালক উঠে দাড়িয়েছে। হন্তদন্ত হয়ে নিজের রুমের দিকে ছুটছে। কাদির আর পাপড়িও পালকের পিছু নিয়েছে।
পালক অস্থিরতার সাথে নিজের বিছানা উল্টাপাল্টা করে কিছু খুজে যাচ্ছে। সবকিছু লন্ডভন্ড করে নিচে তাকাতেই একটা কাগজ কুড়িয়ে পেলো। ওটাতে ভালো করে চোখ বুলিয়ে নিয়েই নিজের সব জামাকাপড় বের করতে থাকে। শার্টের পকেটগুলো হাতড়াতে আরেকটা কাগজ খুজে পেয়েছে। কাগজ দুটোতে চুমু খেয়ে উজ্জলতরভাবে হেসে বললো,,
“” আমি পেয়েছি,আমার পত্রীকন্যাকে!””
কাদির ব্রু কুচকে বললো,,
“” মানে?””
পালক ঠোটের রেখা বড় করে বেড়িয়ে যেতে গিয়েও আবার থমকে যায়। ওয়াশরুমের দরজায় আটকে থাকা আরেকটা কাগজ নিয়ে নিলো।
“” পালক তুই আবার ভুল করছিস নাতো?””
পালক বের হতে হতে বললো,,
“” না,এবার আর কোনো ভুল করছিনা। ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করতে যাচ্ছি,আমার পত্রীকন্যার রাগ ভাঙাতে যাচ্ছি!””
অফিস শেষে বের হতেই বাইরের ঝমঝমা বৃষ্টি দেখতে পাচ্ছে আতিশ। ইশ! এখনি বৃষ্টির আসতে হলো? এই চাকরীর জ্বালায় তো আমি পাপড়িকে হারিয়ে ফেলছি। পালকের দ্বিতীয় বিয়েতেও যেতে পারলামনা,বিয়ে দেখি আর না দেখি পাপড়িকে তো দেখতে পেতাম। কতদিন হলো মেয়েটাকে দেখিনা,ওর অভিমানি,ওর ফুপিয়ে কান্নাগুলোকে এতো বেশি মিস করছি যে আর একমুহুর্তও ওকে ছাড়া থাকতে পারছিনা। পালক তার ভালোবাসার মানুষটাকে পেলে আমি কেন পাবোনা? আমারও চাই আমার ভালোবাসার ছোট্ট নারীটাকে,বাচ্চা নারীটাকে!
বৃষ্টির মধ্যেই আতিশ পাপড়িদের বাড়ির দিকে পা বাড়িয়েছে।
দরজায় নক পড়তেই ভেতর থেকে পাপড়ি চিল্লিয়ে বললো,,
“” কে?””
পাপড়ির কন্ঠ শুনেই আতিশের মনটা জুড়িয়ে যাচ্ছে। ঠোটের কোনে হাসিও ফুটে উঠেছে,মাঝে মাঝে প্রিয় মানুষটার সুন্দর কন্ঠিই যথেষ্ট মন ভালো করার জন্য,সকল ক্লান্তি দুর করার জন্য!
“” আমি!””
“” আমি কে?””
“” আমি কে মানে? তুই কি স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলেছিস? আমার কন্ঠ চিনতে পারছিস না? এখন কি তোকে আমার পুরো বায়োডাটা দিতে হবে?””
“” অবশ্যই,বায়োডাটা না নিয়ে দরজা খুলবো কেন?””
“” পাপড়ি,তুই কিন্তু মাইর খাবি আমার হাতে,আমার সাথে ফাজলামী শুরু করেছিস? দিনে দিনে এতো বেদামড়ি হচ্ছিস কিভাবে?””
“” কি চাই আপনার?””
“” তুই দরজা খুলবি নাকি আমি ভেঙে ফেলবো?””
“” অবশ্যই খুলবো,কেন খুলবোনা বলুন? আপনি বললেই তো হয় কাকে চায়? কেন এসেছেন?””
আতিশ নিজের রাগ কিছুতেই দমে রাখতে পারছেনা। কিন্তু এখন সে চায়না রাগ করতে,সে তো এসেছে পাপড়ির রাগ ভাঙাতে!
আতিশ নরম সুরেই বললো,,
“” পালকের বিয়ে দেখতে এসেছি!””
“” বিয়ে তো হয়নি!””
“” হয়নি মানে?””
“” হয়নি মানে হয়নি!””
“”তুই দরজা খোল আমি পালকের কাছে যাবো।””
“” ভাইয়া বাসায় নেই!””
“” তুই এভাবে দরজা বন্ধ করে কথা বলছিস কেন? খুললে কি সমস্যা?””
“” অনেক সমস্যা,বাসায় কেউ নাই। খালি বাসায় ছেলে মানুষ ঢুকানো যাবেনা।””
“” আমি ছেলে?””
“” তোহ কি মেয়ে?””
আতিশ রাগ সামলাতে গিয়ে এসব কি বলছে? গলা পরিষ্কারের বাহানায় গলা খাকিয়ে আবার বললো,,
“” খালি বাসায়ও তোকে আমি অসংখ্যবার পড়িয়ে গিয়েছি,পাপড়ি!””
“” তখন তো আপনি আমার টিউটর ছিলেন,এখন এক্স টিউটর হয়ে গেছেন,আর এক্স টিউটরের জন্য খালি বাসা বরাদ্দ নয়।””
“” এক্স টিউটর?””
“” হুম,বয়ফ্রেন্ড চেন্জ হলে যদি এক্স বয়ফ্রেন্ড হয় তাহলে টিউটর চেন্জ হলেও এক্স টিউটর হয়।””
“” তোকে এগুলো কে শিখিয়েছে?””
“” আমার নতুন টিউটর। আপনি যান তো আমি এখন বিজি!””
“” খালি বাসায় কি নিয়ে বিজি?””
“” আমার নতুন টিউটরকে নিয়ে বিজি। উনি আমায় আজকে নতুন জিনিস শিখাবেন!””
আতিশ রাগে দাত চিবিয়ে বললো,,
“” খালি বাসায় নতুন টিউটর কি করছে? দরজা খোল বলছি।”
“” না,এখন খোলা যাবেনা,আমরা এখন সিকরেট কাজে ব্যস্ত””
“” সিকরেট?””
“” হুম,টপ সিকরেট! আপনি যানতো,আমাকে উনি ডাকছেন,আর বিরক্ত করবেননা।””
বৃষ্টির শব্দগুলো অন্ত্রীশাকে ডাকছে,তারা খুব করে চাইছে তাদেরকে নিয়ে অন্ত্রীশা খেলুক। কিন্তু অন্ত্রীশা আজ খেলবেনা। সেতো বড্ড অভিমানে বালিশ ভেজানো কাজে ব্যস্ত। আজ তার কাছে আকাশ ভেঙে পড়া পানির ফোটা থেকেও চোখ ভেঙে আসা পানির ফোটা বেশি পছন্দ হচ্ছে। আজ সে কাদবে,মন ভরে কাদবে,কাদতে কাদতে চেখের পানি দিয়ে নিজেকে ভাসিয়ে ফেলবে,তবুও কাঁদবে,কষ্টকে যদি ফিল করতে না পারে তাহলে কষ্ট পেয়ে কি লাভ? সে কষ্টের মধ্যেও আনন্দ খুজে নিবে।
অন্ত্রীশা উপুত হয়ে নিজের বিছানায় শুয়ে আছে,বালিশের উপর থুতনি দিয়ে সামনের জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে। এ জানালাটা সে খুব একটা খুলেনা,শুধু খুব খুশির সময় নাহয় খুব মন খারাপ হলেই খোলে। এটাও দক্ষিন সাইডে থাকায় বৃষ্টিতে ভিজে উঠা শীতল মৃদু বাতাস ছুয়ে দিচ্ছে অন্ত্রীশাকে। বাতাসের সাথে সাথে বৃষ্টির গুড়িগুড়ি ফোটারাও অন্ত্রীশাকে ছুয়ে দিচ্ছে। বিছানার অনেকাংশই ভিজে উঠেছে। বৃষ্টির সাথে তাল মিলিয়ে নিজের চোখের পানিও ফেলছে।