Saturday, July 12, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1842



ধোয়ার-নেশা পর্ব (১৭+১৮)

0

#ধোয়ার-নেশা

#রোকসানা-রাহমান

পর্ব (১৭+১৮)

অনিকশা কথা শেষ করার আগেই ওর বা গালে ঠাস জরে একটা চড় বসিয়ে দিয়েছে অরিদ। চোখ,মুখ লাল হয়ে গিয়েছে ওর। অনিকশাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে রুমের ভেতর ঢুকে চিৎকার করতে করতে বললো,

“” বাপের বাড়ি যাবি নাকি পালকের কাছে যাবি সেটা তোর ব্যাপার। দাড়া আমি তোকে হ্যাল্প করছি!””

অরিদ রুমের সবকিছু তছনছ করে দিচ্ছে। একটা লাগেজ বিছানায় ফেলে তাতে আশেপাশে যা পাচ্ছে সব ঢুকানো শুরু করে দিয়েছে!

অনিকশা গালে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে। অরিদকে দেখছে অপলকে। কে এটা? এটাই কি তার সেই ভোলাভালা স্বামী? যে কিনা রাগ দেখাতেও জানতোনা?

অনিকশা পালকের এমন রুপে এতোটাই বিস্মিত যে কেউ চড় মারলে তাকে কাঁদতে হবে এটাও ভুলে গিয়েছে। শুধু মনে মনে এটাই ভাবছে,এটা তার অরিদ হতে পারেনা। নিশ্চয় অরিদের রুপে অন্য কেউ,ভুত নয় তো???

অরিদ হাতের কাছে যা পাচ্ছে তাই লাগেজে ঢুকিয়ে নিচ্ছে। আলমারী খুলে নিয়ে সেখান থেকে যা পারলো ব্যাগে রেখে ভরে ফেলছে। চেইন লাগাতে না পারায় ঠাস করে একটা লাথি মারলো লাগেজে।

লাগেজ বিছানা থেকে নিচে পড়ার শব্দে অনিকশার হুশ এসে গেছে। তার চোখ দিয়ে টপটপ করা পানি নিয়ে অরিদের কাছে যাচ্ছে!

আকাশটা মেঘেরা ছেয়ে আছে। বৃষ্টি নামার কোনো নামগন্ধ নেই,বাইরের বাতাসে শীতলতার ছোয়া আছে,যা একটু পরপর অন্ত্রীশাকে ছুয়ে দিচ্ছে। বৃষ্টির পরে তার এই আবহাওয়াটাও ভিষন পছন্দের।

“” তুমি এখনো ওখানে দাড়িয়ে আছো যে? তোমাকে না বললাম আমরা বেরোবো?””

অন্ত্রীশা,পালকের দিকে না তাকিয়েই বললো,

“” ইচ্ছে করছেনা। আপনার বেলকনিটা খুব সুন্দর। দক্ষিন সাইডে হওয়ায় বাতাসেরা সারাক্ষনি লুকোচুড়ি খেলে।””

পালক নিজের শার্টের বোতামটা লাগাতে লাগাতে অন্ত্রীশার পেছনে এসে দাড়িয়েছে,

“” ইচ্ছে না করলেও যেতে হবে। সবসময় নিজের ইচ্ছে কে গুরুত্ব দিতে নেই।””

অন্ত্রীশা পেছনে ঘুরতেই পালকের মুখোমুখি হয়ে গেছে,দুরত্বটাও খুব বেশি যে তা নয়,আবার খুব কাছেও না। মেঘ কালারের শার্টটাতে পালককে মেঘের রাজপুত্রের মতো লাগছে। মাত্রই কি গোসল করে এসেছে? মুখটা এতো পবিত্র লাগছে যে। যেন সে এক গোসলেই তার ভেতরের সবটা অপবিত্র ধুয়ে এসেছে। বাতাসের ঝাপটাই সুন্দর স্মেল ভেসে আসছে অন্ত্রীশার নাকে। পারফিউম মেখেছে কি? কিন্তু উনি তো পারফিউম লাইক করেননা,তবে কি এটা তার পুরুষত্বের অধিকারে থাকা বিশেষ আহবানের সুবাস??

হঠাৎই বাতাসের দমকা ছোয়াই অন্ত্রীশার পেছনে ছেড়ে দেওয়া চুলগুলো সামনে চলে এসেছে। অন্ত্রীশার মুখ পুরো ঢেকে গিয়েছে,অনেকটা ছোটবেলায় মজা করে চুল দিয়ে ভুত সাজার মতো দেখাচ্ছে অন্ত্রীশাকে।

পালকের ইচ্ছে হচ্ছে অন্ত্রীশার মুখটাকে চুলের আড়াল থেকে বের করে নিয়ে আসতে। অমন মিস্টি মুখের অধিকারী নারীর মুখ চুল দিয়ে কেন ঢেকে থাকবে? এই চুলগুলোও এতো কেন বেহায়া হয়? যখন তখন নানানভাবে ছুয়ে দেয়। পালকের ডান হাতটা অজান্তেই অন্ত্রীশার মুখের কাছে চলে যাচ্ছে। কিন্তু হাতটাকে সামলিয়ে নিয়েই পালক শব্দ করে হেসে উঠলো,,,

অন্ত্রীশা দুহাত দিয়ে নিজের চুলগুলো ঠিক করে নিয়ে বললো,

“” আপনাকে বেশ উৎফুল্ল লাগছে। কারনটা কি?””

পালক ঠোটে হাসি রেখেই বা হাতের দুটো আংগুল দেখিয়ে বললো,

“”দুটো কারন!””
“” দুটো?””

পালক ডান হাত দিয়ে বা হাতের একটা আংগুল ভাজ করে নিয়ে বললো,

“” হুম।নাম্বার ওয়ান,অনিকশা আমার পত্রীকন্যা নয় তাই। নাম্বার টু,যেহেতু অনিকশা পত্রীকন্যা নই সেহেতু পত্রীকন্যা এখনো আমার।””
“” কিভাবে বুঝলেন পত্রীকন্যা এখনো আপনার? আপনাদের মধ্যে কিন্তু বিশাল গ্যাপ রয়েছে। এমনও তো হতে পারে,এতোদিনে ও বিয়ে করে,দুকন্যার বাপ সরি,মা হয়ে গিয়েছে।

অন্ত্রীশার কথায় পালক মুচকি হেসে নিয়ে ওর হাত চেপে ধরেছে। ওকে রুমের ভেতরে নিতে নিতে বললো,

“” এটা কখনোই সম্ভব না অন্ত্রীশা। আমার পত্রীকন্যা আমাকে রেখে অন্য কাউকে বিয়ে করতেই পারেনা। আর দুকন্যা কিভাবে আসবে?””
“” এতো আস্থা?””

পালক খাটের উপরে রাখা একটা শপিং ব্যাগ থেকে একটা শাড়ী বের করে অন্ত্রীশা হাতে দিয়ে বললো,

“” আমার প্রাণ ও। প্রাণের বিশ্বাস না রাখলে কিভাবে হবে বলো? এখন এতো কথা বাদ দিয়ে যাও এটা পড়ে আসো। উই আর লেইট!””

অন্ত্রীশা হাতের সাদার মধ্যে লাল পাড়ের সিল্কের শাড়ী দেখতে পাচ্ছে। এ রকম শাড়ীগুলো হিন্দুরা বেশি পড়ে থাকে। অবশ্য তারও মাঝে মাঝে পড়তে অনেক শখ হতো। কিন্তু সত্যি সত্যি পড়বে এটা কখনো ভাবেনি।

“” আমি বাইরে ওয়েট করছি,ইউ হেভ অনলি ৩০ মিনিটস।””

পালক চলে যেতে নিলেই অন্ত্রীশা পেছন থেকে বললো,

“” অন্যের জন্য কেনা শাড়ীটা আমাকে পড়তে দিচ্ছেন? কাগজ কলমের বউ হিসেবে এটলিস্ট একটা শাড়ীতো গিফট পেতেই পারি!””

অন্ত্রীশার এমন কথায় পালক দরজার কাছটাতে এসে থমকে গিয়েছে৷ পেছনে চট করে ঘুরতেই অন্ত্রীশাকে ওয়াশরুমে ঢুকে যেতে দেখতে পেলো। ও কিভাবে জানলো এটা ওর জন্য কেনা হয়নি? আমি তো ওকে এই ব্যাপারে কিছু বলিনি। হ্যা মানছি এটা আমি আমার পত্রীকন্যার জন্য কিনেছিলাম। মেয়েটার হাজারও শখের মধ্যে এটিও একটি। তার খুব শখ ছিলো পহেলা বৈশাখে এমন একটা সাদার মধ্যে লাল পাড়ের শাড়ী পড়ে খোপা করবে৷ খোপাতে ফুলও দিবে বলেছিলো,কিন্তু কি ফুল দিবে সেটা জানায়নি।

অনিকশার সাথে দেখা করার পর মনটা হালকা করতেই আতিশের বাসায় যাওয়া পালকের। ওখানে গিয়েই জানতে পারে আতিশের চাকরী হয়েছে। আর ও অফিসেই আছে। চাকরী পাওয়ার সাথে সাথে আন্টিকেও নিয়ে এসেছে। আন্টির সাথে বেশ কিছুক্ষন গল্পে গল্পে সময় কাটিয়ে উঠতেই আতিশের আগমন ঘটে। অনিকশার সাথে ঘটে যাওয়া সকল ঘটনা আতিশকে জানাতে জানাতে রাত হয়ে এসেছিলো। এতো রাতে শপিংমলে গিয়ে শাড়ী কেনা অসম্ভব তাও আবার একটা অজানা মেয়ের জন্য। যার ব্যাপারে এখন পর্যন্ত তেমন কিছু সে জানেনা। তার কোন কালার ভালো লাগে,কোন ডিজাইন ভালো লাগে,কি ধরনের শাড়ী পছন্দ করে,আদৌ শাড়ী পছন্দ করে নাকি তাও জানেনা। তাই এতো রিস্ক না নিয়েই পালক বাসায় চলে এসেছিলো। নিজে ড্রেস চেন্জ করে ফ্রেশ হওয়ার জন্য ওয়াড্রবটা মেলতেই এই শাড়ীটা চোখে পড়েছিলো। যার জন্য অনিকশানামক এক বিরহ থেকে বের হতে পেরেছে সে, তাকে এই শাড়ীটা পড়তে দিলে কি তার পত্রীকন্যা রাগ করবে? কখনোই না আমার পত্রীকন্যা এতো ছোট মনমানসিকতার হতেই পারেনা৷ সেরকম চিন্তাভাবনা করেই পালক অন্ত্রীশাকে এই শাড়ীটা দিয়েছিলো। তাই বলে এভাবে অপমান করে দিবে? ওকে শাড়ী কিনে দেওয়ার জন্য স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক তুলে আনার কি খুব প্রয়োজন ছিলো??

পালক কিছুটা মন খারাপ করেই বাইরে অন্ত্রীশার জন্য ওয়েট করছিলো। কিন্তু ত্রিশ মিনিটের জায়গায় এক ঘন্টা হতে চলাতেও যখন অন্ত্রীশার কোনো সাড়া পাচ্ছেনা তখন কিছুটা বিরক্তের ছাপ পড়েছে পালকের মুখে। টিভিটা অফ করে দিয়ে নিজের রুমের দরজায় নক করতেই ভেতর থেকে উত্তর এসেছে,,

“” পরপুরুষের মতো অভিনয় না করলেও হবে। ভেতরে আসুন।””

অন্ত্রীশার এমন তিক্ত কথায় পালক কিছুটা থতমত খেয়েই ভেতরে ঢুকে হা হয়ে দাড়িয়ে রইলো।

অন্ত্রীশা ব্লাউজ বিহিন শাড়ীটাকে পেচিয়ে গালে হাত দিয়ে বসে আছে। চুলগুলো এলোমেলোভাবে পেচিয়ে খোপা করে রাখায় কাধ আর গলার দিকটা বেশি নগ্ন লাগছে। আচ্ছা শুধু জামাকাপড়বিহীন হলেই মানুষকে নগ্ন বলা হয় নাকি বিশেষ বিশেষ জায়গায় কাপড় না থাকলেও নগ্ন বলা যায়??

অন্ত্রীশার এমন রুপ দেখে মনে হচ্ছে তার সামনে বসে রয়েছে সাদা আগুনের দেবী। যার দিকে তাকালেই সে ভস্ব হয়ে যাবে। সাদা আর লাল ভস্ব!

পালক অন্ত্রীশার দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে নিতে চাইলেও পারছেনা। মনে হচ্ছে সাদা আগুনের দেবী তার আগুনী যাদুতে তার চোর দুটোকে স্থির করে ফেলেছে। সে চাইলেও চোখের পাতা ফেলতে পারবেনা। চাইলেও চোখ সরিয়ে নিতে পারবেনা।

“” আপনি কি অমন হা করে দাড়িয়ে থাকার জন্য এসেছেন?””
“” হুম!””
“” কি?””
“” না মানে,আপনি এখনো রেডি হোননি কেন?””

অন্ত্রীশা যেন পালকের এই প্রশ্নের জন্যই এতক্ষন গালে হাত দিয়ে ওয়েট করছিলো। পালক যত দ্রুত সে তার প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছে তার থেকেও দ্বিগুন গতিতে তার দিকে তেড়ে এসে বললো,,,

“” আপনি যা দিয়েছেন তা দিয়ে তো রেডি হয়েছি,চলেন যাওয়া যাক।””

পালক চোখ দুটো চোখ বড় বড় করে বললো,

“” এভাবে?””
“” হুম, চলুন।””
“” আপনি কি সবাইকে ভস্ব করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন?””

অন্ত্রীশা ভ্রু কুচকে বললো,

“” মানে?””
“” আপনি আর কিছু পড়বেননা?””
“” আপনি কি আর কিছু দিয়েছেন?””
“” আমি দেইনি বলে পড়বেননা?””

অন্ত্রীশা উল্টোদিকে ঘুরে হাতদুটো একটা আরেকটার উপর রেখে পেট ও বুকের মাঝখানে ভাজ করে নিয়ে বললো,

“” না।””
পালক অন্ত্রীশার পিঠের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বললো,

“” একটা মেয়ের কতগুলো জায়গা নগ্ন হতে পারে?””
“” গুনে দেখতে চান?””

অন্ত্রীশার আকস্মিক কথায় পালকের গলা শুকিয়ে এসেছে। চোখের কাজটা ঠিকমতো করতে গিয়ে কি মুখের কাজটা ভুল করে ফেলেছি? নাহলে মনে মনে কথা ও কি করে শুনলো???

“” অন্ত্রীশা,আসলে হয়েছে কি আমিতো এতোকিছু ভেবে শাড়ী কিনিনি তাই আর…..”””
“” ব্লাউজ কেনা হয়নি তাইতো? কেন আপনার কি মনে হয়নি উইথআউট ব্লাউজ শাড়ী কিভাবে পড়বে?””
“” কি করে কিনবো,আমি তো পত্রীকন্যার….””
“” পত্রীকন্যার কি?””

পালকের আরো বেশি গলা শুকিয়ে এসেছে,তার পানি খাওয়া বড্ড প্রয়োজন। এভাবে আর কিছুক্ষন অন্ত্রীশার সামনে থাকলে সে সত্যি সত্যিই ভস্ব হয়ে যাবে।

“” কিছুনা। আচ্ছা আপনি অন্যকিছু পড়ে নিন। আপনার শাড়ী পড়া লাগবেনা।””

পালকের এ কথায় অন্ত্রীশা তেলেবেগুনে জ্বলে যাচ্ছে। পালকের একদম কাছটাতে এসে বললো,

“” কেন পড়বোনা? অবশ্যই পড়বো,এই শাড়ীটাই পড়বো,এইভাবেই পড়বো,আর আপনার সাথে বাইরেও যাবো।””

পালক চোখ বুঝে কিছুটা পেছনের দিকে ঝুকে আল্লাহ আল্লাহ ঝপতেছে৷ সে কি করে এভাবে ওকে বাইরে যেতে দিবে? সামান্য রেগে যাওয়ার ফলেই যে শাড়ীটা খুলে যাওয়ার উপক্রম সে শাড়ী পড়ে বাইরে যাওয়া অসম্ভব!

“” কি পাগলামী করছো অরিদ? কি হয়েছে বলবে তো?””

অরিদ ছলছল নয়নে অনিকশার দিকে তাকিয়ে বললো,

“” তুমি চেয়েছিলেনা আমি তোমাকে মুক্তি করে দেই? তাই করছি। তোমাকে আজ মুক্তো করে দিবো আমি,তুমি একদম মুক্তো!””

অনিকশা অরিদকে জড়িয়ে ধরে বললো,

“” এমন করে বলছো কেন? আমার খুব ভয় হচ্ছে। তোমাকে দেখে আমার খুব ভয় লাগছে,অরিদ! আর কিসের মুক্তির কথা বলছো? আমি কোনো মুক্তি চাইনা,আমিতো আমার অরিদের খাচায় বন্দী হতে চাই।””

অরিদ একটানে অনিকশাকে সরিয়ে নিয়ে বললো,

“”তুমি কি চাও না চাও সব আমি জানি,তোমার থেকে ভালো করে জানি। আমাকে কাছে টেনে না নেওয়াতেও এতোটা কষ্ট ছিলোনা যতটা লুকিয়ে তুমি অন্যকারো বুকে পড়েছিলে।””
“” অন্যকারো বুকে মানে?””

অরিদ অনিকশার দিকে এগিয়ে ধমকাতে ধমকাতে বললো,

“”তুমি মানা করতে পারবে,পালক তোমাকে জড়িয়ে নেইনি?””
“” পালক!””
“” হ্যা! হ্যা!! হ্যা!!! পালক। তোমার এক্স বয়ফ্রেন্ড,সরি এক্স কেন হবে? প্রেজেন্ট এন্ড ফিউচার!””

অরিদ কথা শেষ করতেই অনিকশা ওর গালে চড় বসিয়ে দিয়ে বললো,

“” তোমার কাছে আমি এটা কখনো আশা করিনি অরিদ,কখনোনা। এতোবছর তোমাকে আমি আমার হৃদয়ের সর্বোচ্চ জায়গায় যে সম্মান দিয়ে বসিয়েছিলাম আজ তুমি একটা আঘাতে শেষ করে দিলে। তোমাকে অনেক কিছু বলার ছিলো,কিন্তু এখন মনে হয়না আর কিছু বলা প্রয়োজন!””

অনিকশা চোখের পানি মুছতে মুছতে দরজা মেলে বেড়িয়ে গেলো। কষ্ট হচ্ছে তার খুব কষ্ট। যে ছেলেটা একফোটা ভালোবাসা না পেয়ে,এতো অবহেলার মধ্যেও এত ভালোবাসা দিতে পেরেছে,সে কিনা ছোট্ট একটা ভুল বুঝাবুঝি নিয়ে এমনটা করতে পারলো? একবার কি তার আমাকে জিজ্ঞেস করার প্রয়োজনবোধ হয়নি???

অনিকশা চলে যেতেই অরিদ হাউমাউ করে কান্না করতে থাকে। ঘরের সবকিছু তছনছ করে দিচ্ছে সে।

“” দুলাভাই,ঘরের এ অবস্থা কেন? আপনাকে এমন পাগল পাগল লাগছে কেন? আপু কোথায়? আমরাতো আপনাদের সারপ্রাইজ দিতে গিয়ে নিজেরাই সারপ্রাইজ হয়ে যাচ্ছি। কি ঘটেছে এখানে? কিছু বলছেননা কেন??””

অন্ত্রীশা নিজের হাতের কেকটা খাটের উপর রেখে দিয়েছে। আজ অনিকশা আর অরিদের পঞ্চম বিবাহ বার্ষিকী। পালক তাকে এখানেই নিয়ে আসার জন্য তাড়া দিচ্ছিলো। শুধু বিবাহ বার্ষিকির উইশ করার জন্যও পালক আসেনি। তার আরেকটা উদ্দেশ্য আছে। যে সম্পর্কটা তার আর অনিকশার একটা ভুল বুঝাবুঝির জন্য নড়বড়ে হয়ে আছে তা ঠিক করার জন্য। এই এক বছরে সে অনিকশাকে যতটুকু বুঝেছে তাতে এটা স্পষ্ট এতোদিনেও সে অরিদের কাছে কিছুই বলেনি। আর এই না বলার ব্যর্থতার জন্যই হয়তো তারা এতোটা কাছাকাছি থেকেও অনেকটা দুরে। এই দুরত্বটাকে সরিয়ে দিয়ে ওদের দুজনকে মিশিয়ে দেওয়াই মেইন উদ্দেশ্য পালকের। সেটা কোনো বিশেষ দিনে হলে মন্দ হয়না তাই পালক আজকেই এসেছে,অরিদের সাথে কথা বলবে বলে।

অন্ত্র্রীশা অরিদের দিকে এগুতেই ও বসা থেকে উঠে দাড়িয়ে গেছে। চোখের তীক্নদৃষ্টি পালকের দিকে।

অন্ত্রীশা অরিদের দিকে হাত বাড়াতেই ওকে ধাক্কা মেরে মেঝেতে ফেলে দিয়ে পালকের দিকে ঝাপিয়ে পড়ে। অরিদের এমন হঠাৎ আক্রমনে তাল সামলাতে না পেরে মেঝেতেই উল্টিয়ে পড়ে গিয়েছে পালক। সাথে অরিদও।

অন্ত্রীশা ভয়ে দৌড়ে এসে অরিদের হাত থেকে পালককে ছুটানোর চেষ্টা করছে,,

“” কি করছেন,দুলাভাই? পালককে কেন মারছেন? আপনি কি পাগল হয়ে গেছেন? ছাড়ুন! ব্যথা পাবেন তো!””

পালক নিজেকে সামলে নিয়ে অন্ত্রীশাকে উদ্দেশ্য করে বললো,,

“” অন্ত্রীশা তুমি ব্যথা পাবে সরে যাও। অরিদ ভাইয়ার এখন মাথা ঠিক নেই।””

অন্ত্রীশা পালকের কথা অগ্রাহ্য করেই অরিদের হাত ধরে টানতে থাকে। অরিদের দুটো হাতই পালকের গলা টিপে ধরে আছে।

পালক আবার চিৎকার করে বললো,

“” উনার পাগলামীর কারন হয়তো আমি বুঝতে পারছি,অন্ত্রীশা! উনাকে আমি সামলিয়ে নিচ্ছি। তুমি অনিকশাকে খুজো। দেরি হলে অনেক বড় কিছু ঘটে যেতে পারে। আমার কথাটা শুনো,প্লিজ অন্ত্রীশা!””

অন্ত্রীশা অরিদের কাছ থেকে সরে দরজার কাছে এগিয়ে আবার ওদের দুজনের দিকে তাকাতেই পালক চোখের ইশারায় বললো,

“” যাও!””

অন্ত্রীশা সেখানে আর এক মুহুর্তও দাড়ায়নি। পুরো ফ্লাটে অনিকশাকে খুজা শুরু করে দিয়েছে। কোথাও না পেয়ে ছাদের দিকে পা বাড়িয়েছে।

অরিদ রাগে নিজের চোখ বন্ধ করে ফেলেছে,চোখ,মুখ,নাক,গাল সব লালরং ধারন করে ফোলে উঠেছে। পালক অনেক কষ্টে নিজের গলা থেকে অরিদের একট হাত সরালেও সে থমকে যায়নি। ডান হাতটা মুঠো করে পালকের মুখের দিকে আনতেই পালক নিজের হাত দিয়ে আটকে বললো,

“” সেদিন যে কারনে আমাকে জড়িয়ে ধরেছিলেন আজ সেই একি কারনে আমার গলা টিপে ধরেছেন,তাইনা বড় ভাই???””

চলবে
#ধোয়ার-নেশা

#রোকসানা-রাহমান

পর্ব (১৮)

অরিদ রাগে নিজের চোখ বন্ধ করে ফেলেছে,চোখ,মুখ,নাক,গাল সব লালরং ধারন করে ফোলে উঠেছে। পালক অনেক কষ্টে নিজের গলা থেকে অরিদের একট হাত সরালেও সে থমকে যায়নি। ডান হাতটা মুঠো করে পালকের মুখের দিকে আনতেই পালক নিজের হাত দিয়ে আটকে বললো,

“” সেদিন যে কারনে আমাকে জড়িয়ে ধরেছিলেন আজ সেই একি কারনে আমার গলা টিপে ধরেছেন,তাইনা বড় ভাই???””

পালকের প্রশ্নে অরিদের শক্ত হাতটা নরম হয়ে এসেছে,বন্ধ চোখ খুলে গিয়ে পালকের চোখের দিকে চেয়ে আছে। তবে এই চাওয়ার মধ্যে কোনো রাগ নেই রয়েছে অবাকতার ছোয়া।

অরিদের এমন নরম হয়ে আসায় কিছুটা খুশির রেখা ফুটে এসেছে পালকের মুখে। অরিদের হাত ধরে ঘুরিয়ে নিয়ে ওর উপর, ঠিক বুকের উপর মাথা রেখে শুয়ে পড়েছে পালক। কিছুটা শক্ত করে জড়িয়ে নিয়ে অভিমানের সুরে বললো,,,

“” বড় ভাই ছোট ভাইকে মারতেই পারে,এতে আমার কোনো রাগ,ক্ষোভ কিছু নেই। কিন্তু ভুল বুঝে মারাটা কি ঠিক?””

পালককে ছাড়ানোর চেষ্টায় অরিদ বলে উঠলো,

“” পালক ছাড়ো আমাকে,আমি কারো বড় ভাইনা।””
“” যাব্বাবাহ! ওইদিন তো আপনিই আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন,আজ থেকে আপনি আমার বড় ভাই। আর আজ যখন আমি আপনাকে জড়িয়ে ধরে মেনে নিলাম আপনি আমার বড় ভাই,অমনিই আপনি রং পাল্টে নিলেন?””
“” পালক,আমি সরতে বলছি। আমার কিন্তু প্রচন্ড…””
“” আপনি জানতেন আমার আর অনিকশার মধ্যে রিলেশন চলছিলো,তাও কেন ওকে বিয়ে করেছিলেন? খুব ভালোবাসতেন তাইনা? ভালোবাসার মানুষটিকে সারাজীবনের জন্য নিজের খাচায় বন্দী করতে চেয়েছিলেন? কি ভেবেছিলেন,আজ যদি আপনি ওকে ফিরিয়ে দেন তাহলে হয়তো আপনি ওকে আর কোনোদিনও নিজের করে পাবেননা? ভয় পেয়েছিলেন সেদিন,খুব ভয় পেয়েছিলেন তাইনা বড় ভাই?””

অরিদ পালককে নিজের থেকে সরিয়ে নিয়ে উঠে বসে পড়েছে। পালকের দিকে রাগরাগ চেহারা নিয়ে বললো,

“” না,এসব কিছুনা। আমার বাসা থেকে বের হয়ে যাও। এখনি যাবে,নাহলে আমি তোমাকে কি করবো আমি নিজেও জানিনা।””

পালক অরিদের কাছেই পাদুটো ভাজ করে আরাম করে মেঝেতে বসে নিয়ে বললো,

“” যে ছেলেটা তিন বছর ধরে একটা মেয়েকে দেখার জন্য গেইটের সামনে ঘন্টার পর ঘন্টা দাড়িয়ে থাকতে পারে সে ছেলেটা যে ঐ মেয়ের চলনগতি জানেনা এটা কি অসম্ভব কিছু নয়?””

পালকের কথায় অরিদ ওর দিকে অনুনয় নিয়ে তাকাতেই পালক হেসে উঠে বললো,,,

“” আমি জানি আপনি আমাকে মারবেন কি আমাকে ধমক দিয়ে কথাও বলতে পারবেননা। আপনার ভেতরে কঠিনতা নেই,রয়েছে শুধু নরমতা। নাহলে এভাবে এতো বছর অনিকশাকে নিয়ে আপনি কিছুতেই থাকতে পারতেননা।””
“” কে বলেছে নাই,অবশ্যই আছে। নাহলে ওর গালে আমি কি করে আমার হাতের দাগ বসালাম? বাসা থেকে বের করলাম? মুক্তি দিয়ে দিয়েছি আমি ওকে।””

অরিদ ফুপিয়ে কাঁদছে।

“” এতো ভালোবাসেন অথচ ছোট্ট একটা ভুল বুঝাবুঝি নিয়ে এতো বড় কাহিনী করে ফেললেন? আমার সাথে ঘটা একটা ভুল নিয়ে মেয়েটা এতো কষ্ট নিয়ে এতোটা দিন পার করেছে। আর আজ যখন আমি সেই ভুল থেকে ওকে মুক্তি দিলাম তখনি আপনি আরেকটি ভুলের সূত্র নিয়ে ওকে কষ্ট দিচ্ছেন?””
“” ভুল?””
“” হুম,ভুল। আজকে আপনাকে দুটো ভুলের গল্প শুনাবো। তার আগে চোখের পানি মুছেন,একে তো ছেলে মানুষ তার উপর ছোট ভাইয়ের সামনে কাঁদছেন,আমার খুব লজ্জা লাগছে!””

অন্ত্রীশা সিড়ি বেয়ে উপরে উঠতেই বুকটা ধক করে উঠেছে। পুরো ছাদটা অন্ধকারে ছেয়ে আছে। আশেপাশে তেমন লাইট না থাকায় ছাদে আলোর রশ্মিও পড়েনি,তার উপর আকাশে মেঘের ঘনঘটার ফলে তারা এবং চাঁদের ও কোনো দেখা নাই। আপু এখানে আছে তো? নাকি আবার বাইরে বের হয়ে গেছে। মন তো বলছে এখানেই আছে! অন্ধকারের মধ্যেই অন্ত্রীশা ধীর পায়ে এগিয়ে চারপাশটায় চোখ বুলিয়ে নিচ্ছে। কিন্তু চারপাশটা কোথায়ও না পেয়ে নিচে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই কারো ফুপানির আওয়াজ কানে আসলো। অন্ত্রীশা চুপ করে দাড়িয়ে কান খাড়া করে শুনার চেষ্টা করছে কোথা থেকে আসছে শব্দটা। বেশ কয়েক সেকেন্ড যেতেই ছাদের উত্তর দিকে পা বাড়িয়েছে সে। মনে হচ্ছে ঐদিক থেকেই শব্দটা আসছে। কিছুদুর যেতেই শব্দটা স্পষ্ট হয়ে আসে অন্ত্রীশার কানে। সাথে সাথে দৌড়ে সামনে এগুতেই অন্ধকারে একটা কালো ছায়া দেখতে পাচ্ছে। এই কালো অন্ধকারেও এবার অন্ত্রীশা নিজের বোনকে চিনতে পারছে। হাটুর উপর মুখ লুকিয়ে কাঁদছে অনিকশা!

অন্ত্রীশা অনিকশার পাশে বসেই ডাক দিলো,,

“” আপু!””

অন্ত্রীশা কন্ঠ পেয়েই অনিকশা ওকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বললো,,

“” আমাকে তোর সাথে নিয়ে যা বোন,আমি আর এখানে থাকবোনা।””
“” আচ্ছা নিয়ে যাবো,কিন্তু কি হয়েছে সেটাতো আগে জানি। আর এভাবে কাঁদছো কেন? তোমার কান্না দেখেতো আমারও কান্না পাচ্ছে।””

অনিকশার মাথাটা তুলে নিয়ে চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো,,

“” অরিদ ভাইয়ার সাথে ঝগড়া করেছো?””
“” একটা থাপ্পড় খাবি,তোর কি মনে হয় আমি শুধু ওর সাথে ঝগড়া করি?””
“” তুমি করোনি? তাহলে কে করেছে?””
“” কে করেছে মানে? আমি ছাড়া ওখানে আরতো একজনই ছিলো। ওই করেছে।””
“” কে দুলাভাই?””
“” ওটা তোর দুলাভাই না।””

অন্ত্রীশা কপাল কুচকে বললো,,

“” দুলাভাই না মানে?””
“” মানে ওটা তোর দুলাভাই না। অন্য কেউ। তোর দুলাভাই আমার সাথে কখনোই ঝগড়া করতে পারেনা। আর এই টাতো আমাকে মেরেছে। দেখ আমার গালটা ফুলে গেছে।””

অন্ধকারে অন্ত্রীশা কিছুই দেখতে পারছেনা। তবুও মন খারাপ করে বললো,

“” কিন্তু কেন মারলো? পুরোটা খুলে বলো। নাহলে বুঝবো কিভাবে?””
“” আমার মনে হয় আজ সকালে পালক যে আমাকে জড়িয়ে ধরেছিলো তা অরিদ দেখে ফেলেছে।””

অন্ত্রীশার মন খারাপ মুছে গিয়ে মুখটা শক্ত করে বললো,

“” পালক তোমাকে জড়িয়ে ধরেছে মানে?””
“” উফ! পুরোটা না শুনে রেগে যাচ্ছিস কেন,অনতি? চুপ করে শোন।””

অন্ত্রীশার দিকে তাকিয়ে চোখ মুছতে মুছতে অনিকশা বলতে শুরু করেছে,,,

“” আজ সকালে পালককে আমি যখন সব খুলে বললাম,তখনি ও খুব কাঁদছিলো। ওর কান্না দেখে আমার অনেক মায়া হচ্ছিলো রে অনতি। আমি ওকে শান্ত্বনা দিয়ে যখন চলে আসবো তখনি ও আমার হাতটা আকড়ে ধরে,হালকা করে জড়িয়ে নিয়ে বললো,,অনিকশা দোষ তোমার ছিলোনা,সবটায় ভুল বুঝাবুঝির মধ্যে ছিলো। আর এই ভুল বুঝাবুঝিটা আমার দ্বারায় শুরু হয়েছে। সেদিন যদি আমি ভুল করে তোমাকে পত্রীকন্যা না ভাবতাম,তোমাকে প্রপোস না করতাম তাহলে আজ এতোকিছু হতোনা। তুমি তো না বুঝেই আবেগের বসে সব করেছিলে। কিন্তু আমি? আমি শুধু তোমাকেই না পত্রীকন্যাকেও কষ্ট দিয়েছি। ওর বিশ্বাসটাও ভেঙে ফেলেছি। আমার ভালোবাসার উপর ওর পুরোপুরি বিশ্বাস ছিলো। হয়তো সেদিন আমি তোমাকে প্রপোস না করলে আজ সবকিছুই অন্যরকম হতো। এমনও হতে পারতো আমার জায়গায় তুমি অরিদের সাথে প্রেম করছিলে আর তারপর বিয়ে।

যা হয়েছে সব ভুলে যেও। ক্ষমা তোমাকে না তোমার আমাকে করা উচিত। আমার জন্যই এসব কিছু হয়েছে! সরি অনিকশা! আই এম রেলি সরি!!””
“” এসব পালক বলেছে?””
“” হুম।”
“” কিন্তু তোদের এই ক্ষমাক্ষমির মধ্যে অরিদ ভাইয়া কি করে এলো? উনি কিভাবে জানলো তোরা তখন জড়াজড়ি করছিলি?””

অন্ত্রীশার কথায় অনিকশা কিছু বলতে চাইলেও তার আগে অরিদ বলে উঠলো,,,

“” অনতি জড়াজড়ি আবার কি কথা? শুনতে বিচ্ছিরি লাগছে।””

অরিদের কন্ঠ পেয়ে অনিকশার চোখ আবার ভিজে এসেছে। বসা থেকে উঠে চলে যেতে নিলেই অন্ত্রীশা আবার টেনে বসিয়ে দিলো।

“” সেটা আপনাকে না শুনলেও হবে তার আগে বলেন আপনি কিভাবে জানলেন?””
“” আমি তো ওখানে একটা সারপ্রাই পার্টির আয়োজন করতে গিয়েছিলাম,আমার আর অনিকশার বিবাহ বার্ষিকীর উপলক্ষে। ভেতরে ঢুকতেই দেখি পালক ওকে জড়িয়ে ধরে আছে।””

অন্ত্রীশা অনিকশার পাশ থেকে সরে এসে অরিদকে বললো,,,

“” আমি আপনাকে সরল মানুষ ভেবেছিলাম,কিন্তু আপনি তো জটিল মানুষ। সহজ জিনিসকে এতো বড় জটিল করে দিয়েছেন? আপনার জন্য আমাদের সারপ্রাইজটাও মিস।””
“” সরি,শালিকা।””
“” আপনার সরি আপনিই খান।””

অন্ত্রীশা অনিকশার হাত ধরে বললো,,

“” আপু তুই আমার সাথে আয়। এমন জটিল মানুষ কখনোই আমার দুলাভাই হতে পারেনা।””

অনিকশাও অন্ত্রীশার কথায় তাল মিলিয়ে উঠে চলে যেতে নিলে অরিদ বললো,,,

“” তুমি আর এক পা ও যদি বাড়িয়েছো,অনি। তাহলে আমি সত্যি সত্যি এই ছাদ থেকে লাফ দিবো। উফ! আমি আর এসব নিতে পারছিনা। আমার একটু শান্তি চাই।””

অনিকশা থমকে যেতেই পালক অন্ত্রীশার হাত থেকে অনিকশাকে ছাড়িয়ে দিয়েছে। অন্ত্রীশার কানে কানে বললো,,,

“” ওদেরকে ছেড়ে দাও। ওরা ওদের মতো করে নিজেদের গুছিয়ে নেক! আমরা নাহয় আমাদেরটা নিয়ে ভাবি??””

পালকের কথায় অন্ত্রীশা হা করে ওর দিকে তাকাতেই পালক আবার বললো,,

“” আমি বাসায় যাওয়ার কথা বলছি। কত রাত হয়েছে দেখেছো? আমার খুব ঘুম পাচ্ছে!””

পালকরা চলে যেতেই অরিদ দুহাত দিয়ে দুকান ধরে বললো,,

“” সরি অনি। তোমার বুঝি খুব লেগেছিলো??””

অনিকশার চোখ আবার ভিজে এসেছে তবে কষ্টে নয়,সুখে। এই তো এটাই তো তার অরিদ। যে শুধু ভালোবাসতে জানে,কষ্ট দিতে নয়। তার ভোলাভালা স্বামী,নরম মনের মানুষ,নরম সুরের পাগল মানুষ! এই মানুষটাকে সে আর কষ্ট দিবেনা। কখনোও না। শুধু ভালোবাসা দিবো। ভালোবাসা আর ভালোবাসা!

অনিকশা অরিদকে জড়িয়ে ধরে বললো,,,

“” হুম,খুব পচা তুমি। আমাকে একদিনেই এতোগুলা কষ্ট দিছো!””

অরিদ অনিকশাকে কোলে তুলে নিয়ে বললো,,

“” আজ সব কষ্ট মুছে দিয়ে ভালোবাসায় মেখে দিবো তোমায়! মাখবেতো আমার ভালোবাসার রেনুতে???””

অনিকশা লজ্জায় হাত দিয়ে মুখ ঢেকে বললো,,

“” হুম!””

আতিশ দুঘন্টাযাবত পালকদের বাড়ির পেছন সাইটে দাড়িয়ে আছে। চোখদুটো তাক করা পাপড়ির রুমের বেলকনিটায়। আজ চারদিন হতে চললো সে পাপড়িকে দেখেনা। ওকে দেখার জন্য বুকটা হাসফাস করছে আতিশের। কিন্তু বাড়ীর ভেতরে যাওয়ার সাহস পাচ্ছেনা। কোনো কারন ছাড়া সে কেন যাবে? তাই ভেবে পাচ্ছেনা। অথচ এতোদিন যখন তখন ঐ বাসায় ঢুকতেও কোনো প্রকার সংকোচবোধ হয়নি। তাহলে আজ কেন হচ্ছে?? এতো ভয়ই বা কেন পাচ্ছে সে? এখন পালককে তার কাছে বন্ধুর জায়গায় পাপড়ির ভাই হিসেবে মাথায় ঢুকে বেশি। ওকে দেখলেই বুকের ভেতরটা ভয় জায়গা করে নেয়। একেই হয়তো বলে ভালোবাসার ভয়!

দাড়িয়ে থাকতে থাকতে আতিশের পা ব্যথা হয়ে এসেছে। তবুও পাপড়ির একবারও দেখা মেলেনি। মেয়েটা কি এখনো ঘুমুচ্ছে? এতো ঘুম কিসের ওর? এইখানে যে আমি অফিস রেখে দাড়িয়ে দাড়িয়ে পা ব্যথা করে ফেলেছি সেটা কে দেখবে? দুদিন আগেও তো আমার ভালোবাসা পাওয়ার জন্য কেঁদে কেটে নাকের পানি,চোখের পানি এক করে ফেলেছিলো অথচ এখন আমাকে একটা কল দেওয়ারও প্রয়োজন মনে করেনা?? আবার আমার কল কেটে দেওয়া হয়,ইচ্ছে করছে ওকে তুলে নিয়ে একটা আছাড় মেরে দেখাতে,ঘুম কাকে বলে,কত প্রকার ও কী কী!!!

আতিশ পকেট থেকে নিজের ফোনটা বের করে পাপড়ির নাম্বারে কল দিলো। বেশ কয়েকবার রিং হতেই ওপাশ থেকে ঘুমঘুম কন্ঠে পাপড়ি হ্যালো বলেছে। তাতে যেন আতিশের মেজাজ আরো বেশি চটে যাচ্ছে,,

“” এতো ঘুম তুই কোথায় পাস? সারা দুনিয়ার মানুষের ঘুম কি তুই একাই ঘুমিয়ে দিস? রাতে কি ঘুম রেখে চুরি করে বেড়াস??””

আতিশের কন্ঠ পেতেই পাপড়ির ঘুম উধাও। শোয়া থেকে উঠে বসে বললো,,

“” জ্বী,আপনি চাইলে আপনারটাও ঘুমিয়ে দিবো!””
“” থাপড়িয়ে দাঁত ফেলে দিবো। পড়া রেখে শুধু ঘুমানো??””
“” আমার পড়া দিয়ে আপনার কি? আপনিতো আর এখন আমার টিউটর না আতিশ ভাইয়া। কেন কল করেছেন তাই বলেন!””

কেন কল করেছে সেটাও এখন ওকে বলতে হবে?? দুদিনেই এতো পরিবর্তন?

“” কি হলো বলছেন না যে?””
“” একটু নিচে আসবি?””
“” কেন?””
“” তোর জন্য কয়েকটা শীট বানিয়েছি। এগুলো পড়লেই পরীক্ষায় হুবহু কমন পাবি। তোর যে মাথা,পরীক্ষায়তো লাড্ডু ছাড়া আর কিছু পাবিনা।””
“” লাগবেনা,আমার নতুন টিউটরই আমাকে হাজারটা শীট বানিয়ে দিবে৷ শুধু শীট কেন আমি চাইলে উনি আমাকে আরো অনেককিছুও বানিয়ে দিবে।””
“” অনেক কিছু বানিয়ে দিবে মানে?””

আতিশের কথার উত্তর না দিয়েই পাপড়ি কলটা কেটে দিয়েছে। সাথে সাথে ফোনটাও অফ করে রেখেছে।

পালকের বন্ধু কাদিরের সামনে চা,বিস্কুট রাখতেই কাদির অবাক হয়ে বললো,,

“” অন্ত্রীশা তুমি?””
“” জ্বী,কেমন আছেন ভাইয়া?””
“” ভালো। কিন্তু তুমি এখানে? তারমানে পালকের সাথে তোমার বিয়ে হয়েছে? আই মিন তুমিই পালকের বউ??””
“” আপনার বন্ধুকেই জিজ্ঞেস করেন।””

অন্ত্রীশা সেখান থেকে প্রস্থান করতেই পালক বলে উঠলো,,

“” তুই ওকে চিনিস নাকি?””
“” আরে চিনি মানে,ওই তো আমার ক্রাস ছিলো।””
“” ক্রাস বলতে?””
“” আরে আমরা যখন থার্ড ইয়ারে ছিলাম তখন আমি তোকে আর আতিশকে নিয়ে একটা মেয়েকে প্রপোস করতে চেয়েছিলাম না? ঐ মেয়েটাতো অন্ত্রীশাই ছিলো।””

পালক কপাল কুচকে বললো,,

“” তুই সিউর ওটা অন্ত্রীশা ছিলো?””
“” সিউর হওয়ার কি আছে? আমি ওর পেছনে পুরো ১ বছর ঘুরে তারপর প্রপোস করেছিলাম।””

পালক কাদিরের দিকে ভালো করে পর্যবেক্ষন করে বললো,,

“” তারমানে তুই ওর প্রেমিক? কিন্তু তোরে কোনদিক দিয়ে আমার মতো লাগে সেটাই তো বুঝতে পারছিনা।””
“” আমি কেন ওর প্রমিক হতে যাবো? ও তো আমার প্রপোজাল এক্সেট করেনি। উল্টো ভাইয়া বানিয়ে দিয়েছিলো।””

পালক এবার একটু নড়েচড়ে বসে ভাবুক কন্ঠি বললো,,

“” কেন?””
“” তখন তো বলেছিলো ও নাকি অন্য কাউকে ভালোবাসে!””
“” কাকে?””
“” আমাকে জানায়নি””
“” কেন?””

কাদির বেশ বিরক্ত হয়ে বললো,,

“” আমি কিভাবে বলবো ও কেন আমাকে জানায়নি?””

কাদিরকে বিদায় করে পালক নিজের রুমের দিকে এগুচ্ছে। মাথায় নানান প্রশ্নরা ঘুরপাক খাচ্ছে। একটারও উত্তর খুজে পাচ্ছেনা। কাদিরের কথা যদি সত্যি হয় তাহলে অন্ত্রীশা আমাদের ভার্সিটির অন্তর্গত কলেজেই পড়াশোনা করেছে। এটা ও আমাকে কেন জানায়নি? তার উপর কাদিরতো এটাও বলেছে অন্ত্রীশা অন্য কাউকে ভালোবাসতো তাহলে ও কেন এতো সহজে আমাকে বিয়ে করতে রাজী হয়ে গিয়েছিলো?? তবে কি ওদের প্রেমটা ক্ষনস্থায়ী হয়েছিলো? নাকি অন্য কোনো কারন? এমন নয় তো কারো চাপে পড়ে আমাকে বিয়ে করতে হয়েছে?? যদি এমনটাই হয় তাহলে ও এতো স্বাভাবিক আচরন কিভাবে করছে? আমি তো পারিনা আমার পত্রীকন্যা জায়গায় অন্য কারো কথা ভাবতে। ও কিভাবে ভাবছে??

পালক রুমে ঢুকেই দেখলো অন্ত্রীশাকে বিছানায় বসে রয়েছে। কোলে একটা বালিশ নিয়ে তার উপর বা হাতের কনুই ভর করে থুতনি ধরে কিছু একটা ভাবনায় ব্যস্ত। ভাবনার সাথে সাথে ঠোটে এক অমায়িক হাসি লেগে আছে। পালক ওর কাছে চলে আসাতেও ওর কোনো নড়াচড়া নেই। কি এতো ভাবছে? আর এভাবে হাসছেই বা কেন??

“” প্রিয় মানুষটির কথা ভাবছো তো?””

পালকের কথায় অন্ত্রীশা কিছুটা নড়ে উঠে। অনেকটা ভুত দেখার মতো ভয় পেয়ে গিয়েছে ও।

পালক অন্ত্রীশার পাশে বসে বললো,,

“” আমার সব তো তুমি জেনে নিয়েছো,তাহলে তোমার কি উচিত নয় তার বিনিময়ে তোমার ও আমাকে কিছু বলা উচিত?””

অন্ত্রীশা পালকের দিকে হাসি হাসি মুখ নিয়ে বললো,,

“” কি শুনবেন?””
“” ভালোবাসো তাকে?””

অন্ত্রীশা নিজের হাতদুটো প্রসারিত করে বললো,,

“” হুম,অনেক। এই এতোটা!””
“” বাহ! এতোটা? তাহলে তাকে ছেড়ে আমার কাছে কেন এলে?””

“” আমিতো ছাড়িনি!””
“” তাহলে সে চলে গিয়েছে?””
“” না,সেও চলে যায়নি।””
“” তাহলে?””

অন্ত্রীশা নিজের কোল থেকে বালিশটা রাখতে রাখতে বললো,,,

“” ঐযে আপনার মতো ছোট্ট ভুল বুঝাবুঝিতে দুরত্ব সৃষ্টি হয়েছে।””
“” আমার মতো মানে? কি রকম ভুল বুঝাবুঝি?””

অন্ত্রীশা কিছু বলার আগেই পালকের ফোন বেজে উঠেছে। কল রিসিভ করে ওপাশ থেকে কিছু শুনেই সাথে সাথে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো। অন্ত্রীশা পিছু ডাকতে গিয়েও ডাকেনি।

আয়নার সামনে দাড়িয়ে অন্ত্রীশা নিজেকে ভালো করে পরখ করে দেখে নিচ্ছে। মিস্টি কালারের শাড়ী,আর ঠোটে হালকা গোলাপী কালারের লিপস্টিকে নিজেকে সাজিয়েছে। আজ আপনাকে সব বলবো আমি। যে কথা আমি ছাড়া আর কেউ জানেনা।

অন্ত্রীশা ঘড়িতে চোখ বুলিয়ে দেখে ১১ টা বেজে ৩৫। এখনো উনি এলেননা কেন? সেই যে কার কল পেয়ে গেলো আর বাসায় আসার নাম নেই। কখন আসবেন আপনি? আমার যে আর তর সইছেনা। উফ! কখন যে আপনাকে সব কথা বলে পেটটা হালকা করবো!

অন্ত্রীশা বেশ কিছুক্ষন অপেক্ষা করে নিজের ফোনটা হাতে নিয়েছে পালককে কল দেওয়ার জন্য। লক খুলে ডায়াললিস্টে যেতেই পালকের আগমন।

অন্ত্রীশা পালকের দিকে তাকাতেই ওকে জড়িয়ে ধরেছে পালক। অন্ত্রীশাকে জড়িয়ে নিয়েই বললো,,

“” আমি আমার পত্রীকন্যাকে পেয়ে গেছি,অন্ত্রীশা।””
“” পত্রীকন্যা?””
“” হুম,স্নিগ্ধা। স্নিগ্ধাই আমার পত্রীকন্যা।””
“” স্নিগ্ধা?””

পালক অন্ত্রীশাকে ছেড়ে খুশি খুশি কন্ঠে বললো,,

“” তোমাকে বলেছিলাম না আমার আর পত্রীকন্যার চিঠী আদান-প্রদান করতো বোরকা পড়া একটি মেয়ে? আসলে ও আর কেউ নয় ঐ আমার পত্রীকন্যা!””

চলবে

ধোয়ার-নেশা পর্ব (১৫+১৬)

0

#ধোয়ার-নেশা

#রোকসানা-রাহমান

পর্ব (১৫+১৬)

পালক ফ্রেশ হয়ে জামাকাপড় চেন্জ করে বারান্দার দিকে পা বাড়িয়েছে। অন্ত্রীশা পাশে এসে দাড়িয়েছে সে!

নিজের পাশে পালকের উপস্থিত পেয়ে অন্ত্রীশা রুমের দিকে পা বাড়াতেই ওর হাত আকড়ে ধরেছে পালক,

“” আর কিছুক্ষন থাকোনা,অন্ত্রীশা। তোমার সাথে গল্প করতে ইচ্ছে করছে। শুনবেনা আমার গল্প????

অন্ত্রীশা এই মুহুর্তে পালকের কোন কাজটাই সে রিয়েক্ট করবে বুঝতে পারছেনা। পালকের হাতে নিজের হাত বদ্ধ হওয়াতে,
ওর কথাতে নাকি ওর ওই আবদারীর চাহনিতে??? চোখের সামনে একের অধিক অপশন থাকলে মানুষ সবসময় ছোট্ট একটা ভাবনায় ডুব দিতে চাই। আর এই ছোট্ট ভাবনাটা একসময় বিশাল আকৃতির রুপে পরিনত হয়,আর তখনি সে কোন অপশন গ্রহন করবে সেটা গুলিয়ে ফেলে। এক পর্যায়ে তার সবগুলো অপশনই গ্রহন করতে ইচ্ছে করে। এখন অন্ত্রীশার ক্ষেত্রেও তাই ঘটছে। ইচ্ছে করছে সে পালকের সবকিছুকেই তার একদৃষ্টিতে দেখে নিক।

এই প্রথম পালকের ছোয়াতে অন্ত্রীশা ভালোবাসার কিছুটা উপস্থিত পাচ্ছে। তবে সেটা স্বামী হিসেবে বউকে দেওয়া ভালোবাসা নয়,অন্যকিছু।

“” এভাবে থমকে গেলে যে? শুনবেনা?””

পালকের কথায় অন্ত্রীশার হুশ ফিরে এসেছে। আবার আগের জায়গায় এসে দাড়িয়ে পড়েছে সে। তবে আগে সে একা দাড়িয়ে চাঁদের দিকে তাকিয়ে জোসনা আলো নিজের মধ্যে মাখতে চেয়েছিলো কিন্তু এখন জোসনার আলো ভাগ হয়ে যাচ্ছে। কিছুটা আলো পালককেও ছুয়ে দিচ্ছে।

অন্ত্রীশাকে নিজের পাশটাতে এসে দাড়াতে দেখে পালক নিজের হাতটা সরিয়ে নিয়েছে। দুজনেই হাজার তারার মাঝে উকি দেওয়া চাঁদের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। এমন একটা ভাব যেন কেউ কারো মুখ দেখলে দুজনের নামে মামলা হয়ে যাবে।

“” আতিশ বাদে এই প্রথম আমি কাউকে আমার ভেতরে গুপ্ত হয়ে থাকা কথাগুলো প্রকাশ করছি। কেন করছি জানিনা! শুধু জানি মন চাইছে আজ তোমাকে গল্প শুনাতে।

আমি খুব চাপা স্বভাবের মানুষ,হৈহুল্লোড়,আড্ডা,ঘুরাঘুরি কোনো কিছুতেই মন বসাতে পারতামনা। সবকিছুতেই বিরক্ত লাগতো। মনে হতো জীবনের এতো অল্প সময়টাকে এগুলোর মধ্যে ব্যয় করে কি লাভ?? কিন্তু এতো কিছুর মধ্যেও আমার আতিশের সাথে বন্ধুত্ব হয়। শুধু বন্ধুত্ব বললে ভুল হবে,বলতে পারো ওকে আমি খুব পছন্দ করি,ভালোওবাসি। মাঝে মাজেতো মজা করে ওকে বলিও ও মেয়ে হলে আমি ওকে বিয়ে করতাম।

আমার জীবনে সবথেকে বেশি ইম্পর্ট্যান্ট ছিলো পড়ালেখা,মেধা ভালো হওয়ায় ধীরে ধীরে অনেকটাই এগিয়ে যাচ্ছিলাম। পড়ালেখা করতে করতে যখনি বোর হয়ে যেতাম তখনি আতিশের কাছে চলে যেতাম। ওর সাথে গল্প করতে আমার খুব ভালোলাগতো। যদিও বা গল্প করার মতো আমি তেমন কথা পেতাম না তবুও এক কথা দুবার তিনবার বলেও ওর সাথে আড্ডা জমাতে চাইতাম। এতে আতিশ কখনোই বিরক্ত হতোনা। ও আরো বেশি উৎসাহী হয়ে আমার কথা শুনতো। কিন্তু হঠাৎ করে একজন নতুন কেউ আগমন ঘটে আমার জীবনে। এমন একজন, যার কাছে এক কথা দুবার তিনবার নয় হাজার হাজার বার বলেও আমি শান্তি পেতাম না,তৃপ্তি পেতাম না। ইচ্ছে করতো পৃথিবার সবার কথা আমি ওকে শুনাবো। ও হবে আমার কথা শুনার কথাপাখি! আজ আমি তোমাকে আমার এই কথা পাখির গল্পই শুনাবো ,অন্ত্রীশা। আমার পত্রীকন্যার গল্প!””

পত্রীকন্যা নামটা শুনেই অজান্তেই পালকের দিকে চোখ পড়েছে অন্ত্রীশার।

পালক হাসি হাসি মুখে বললো,

“” তুমি পাঁচ মিনিট ওয়েট করো,আমি তোমার জন্য কফি বানিয়ে আনছি।”””

পালক তাড়াহুড়ো করে পা বাড়াতেই অন্ত্রীশা পেছন থেকে বললো,

“” আপনি কফি বানাতে পারেন?””

জবাবে পালক মুচকি হেসে বললো,

“” হুম,তোমাকে আজ একটা স্পেশাল কফি খাওয়াবো। একটু ওয়েট!””

পাপড়ি বেড়িয়ে যেতেই আতিশ দরজার সিটকিনি লাগিয়ে নিজের বিছানায় শুয়ে পড়েছিলো। নিশ্বাসের গতি অনেকটাই কমে গিয়ে বুকে ব্যথা সৃষ্টি হচ্ছিলো। ফ্যানের পাওয়ারটা বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য হাত বাড়াতেই দরজায় নক হওয়ার শব্দ পায়। পাপড়ি এসেছে ভেবে বেশ রাগ নিয়েই দরজা খুলে সে। মনে মনে এটাও ভেবেছিলো এবার একটা না দুটো না তিনটে চড় মারবে সে। কিন্তু দরজায় একজন মাঝ বয়সী লোককে দেখে সে খুব চমকে গিয়েছিলো।

আতিশ হাতে নিজের চাকরীর জয়েনিং লেটারটা নিয়ে বসে আছে। তার চাকরী হয়েছে এটা ভেবেই তার খাওয়া দাওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছে৷ এতো খুশি সে জীবনে আর কখনো হয়নি। আতিশের মনে হচ্ছে এই চাকরীর পুরো ক্রেডিটটাই তার পাপড়িকে দেওয়া উচিত। ঘরে লক্ষীর পা পড়তে না পড়তেই সুখবর এসে দরজায় হাজির,ভাবা যায়? এই খবর পাপড়িকে দেওয়ার জন্য সে কতবার ফোন হাতে নিয়েছে হিসেব নেই। কিন্তু ঐদিনের ঘটনার পর ও কি আদৌ তার কল রিসিভ করবে? ভাবতেই বুকটা ছেদ করে উঠছে। যদি না ধরে এই টেনশনেই তার রাতের ঘুম উধাও। সাথে অসুস্থতাও!

এভাবে আর কতক্ষন সে ফোন হাতে নিয়ে বসে থাকবে? মাথাটা পেছনে কাত করে উপরের দিকে তাকিয়ে,বিসমিল্লাহ বলেই পাপড়ির নাম্বারে ডায়াল করেছে আতিশ। কিন্তু ওপাশ থেকে মেয়েলি কন্ঠে ব্যস্তার অজুহাত দেখিয়ে কেটে দেওয়াতে আতিশ পুনরায় ডায়াল করে পাপড়ির নাম্বার বন্ধ পেল। আতিশ চোখ দুটো বড় বড় করে,নিজের ফোনের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বললো,, আরে,এতো দেখছি আমার নাম্বার ব্লাকলিস্টে রেখে দিয়েছে!

আতিশ বিছানার চাদর উল্টিয়ে পাল্টিয়ে একটা সিম খুজে পেয়েছে। ওটা ফোনে ডুকিয়ে কল দিতেই ওপাশ থেকে রিসিভ করলো পাপড়ি। পাপড়ি হ্যালো বলার আগেই আতিশ চিল্লিয়ে উঠেছে,

“” তুই যে এতো অসভ্য,বেয়াদবী মেয়ে আমি তো আগে জানতাম না। পালকের মতো ভালো ছেলের বোন তুই কি করে হলি এটাই তো ভেবে পাচ্ছিনা,পাপড়ি!””
“” আপনাকে ভাবতে বলেছে কে?””
“” কেন আমার ভাবার জন্য কি এখন তোর কাছে পারমিশন নিতে হবে? তুই কি ভাবনারানী হয়ে গেছিস? তোর কাছে এপ্লিকেশন পাঠিয়ে অনুমোতি নিয়ে তারপর আমাকে ভাবতে হবে?””
“” কেন কল করেছেন,আতিশ ভাইয়া?””
“” কেন কল করেছি মানে? তোর মতো অসভ্য বেয়াদবী মেয়েকে আমি কেন কল দিবো? ফোন হাতে নিয়ে দেখি তোর মিসড কল উঠে রয়েছে। কল ব্যাক করে দেখি নাম্বার ব্লাকলিস্টে। নিজেই মিস কল দিবি আবার নিজেই ব্লাকলিস্টে রাখবি?””
“” আমি আপনাকে কল দেইনি। মিথ্যে বলছেন কেন?””
“” এখন তুই আমাকে মিথ্যেবাদীও বানাতে চাস? আর কি কি বানাতে চাস বল,দেখি তোর ভাবনা কতদুরে গিয়ে
জিরোয়!””
“” আমার ঘুম পাচ্ছে,আতিশ ভাইয়া। আপনার কি জরুরী কিছু বলার আছে?””
“” আমার ঘুমের বারোটা বাজিয়ে এখন নিজের ঘুম দেখানো হচ্ছে? তুই এতো বেড়ে গেছিস,পাপড়ি?”‘
“” আমি কখন আপনার ঘুমের ডিস্টার্ব করলাম?””
“” ঐযে ঘন্টায় ঘন্টায় হাজার হাজার কল দিয়ে ডিস্টার্ভ করিস। খাইতে গেলেও কল,পড়তে বসলেও কল,ঘুমুতে ঘেলেও কল,গোসল করতে গেলেও কল,আমার তো মনে হয় তুই আমার বাসর রাতেও কল দিয়ে আমাকে ডিস্টার্ব করবি। তুই কি ভেবেছিস তোর ছককাটা প্লেন আমি বুঝিনা? আমিও প্লেন করবো তোর থেকে বেশি বেশি ঘর কেটে ছক কাটবো। বউকে রুমে ঢুকিয়েই মোবাইল,টেলিফোন,টেলিগ্রাম,দরজা,জানালা,ফ্যান,পাখা,লাইট সব বন্ধ করে দিবো!””
“” ফ্যানও বন্ধ করে দিবেন?””
“” হুম!””
“” আপনার বউ তো গরমে মরে যাবে।””
“” আমার বউ মরবে কেন? ফ্যান অফ করলেই মরে যেতে হবে? আমি আছি কি করতে? আমি ফু দিয়ে দিয়ে বাঁচিয়ে তুলবো।””
“” ফু দিয়ে?””
“” দরকার হলে আরো অনেককিছুই করবো। যেমন ধর,আমি ওর ঠোটে নিজের ঠোট লাগিয়ে আমার নিশ্বাস ওকে দিয়ে দিবো।””

আতিশের বউকে নিয়ে গল্প পাপড়ি আর শুনতে পারছেনা। গলাটা বসে যাচ্ছে,

“” আমি রাখছি।””
“” রাখছি মানে? তোকে তো আসল কথাই বলা হলোনা,এতো তাড়া কিসের তোর?””
“” কি কথা?””
“” আমি আর তোকে পড়াতে পারবোনা। আমার চাকরী হয়ে গেছে। তুই অন্য মাস্টার খুজে নিস,বুঝলি? তোর মাথার যে অবস্থা আমি সহ্য করেছি বলে তো অন্যরাও সহ্য করবেনা। তাই বলি কি একটা শক্তশাক্ত মাস্টার খুজে…””
“” ওকে!””

আতিশের কথার মাঝখানেই পাপড়ি কলটা কেটে দিয়েছে।

“” দেখো তো কফিটা কেমন হয়েছে!””

অন্ত্রীশার সামনে কফিটা এগিয়ে ধরে আছে পালক। অন্ত্রীশা হাসি দেওয়ার চেষ্টায় কফিটা নিজের আয়ত্বে নিয়ে নিলো।

“” খেয়ে দেখবেনা কেমন হয়েছে?””

অন্ত্রীশা কফিটা ঠোটে ছুতেই চোখ চকচক করে উঠেছে। পালকের দিকে ফিরে বললো,

“” ধনেপাতা ফ্লেবার??””
“” হুম,এটা আমাকে পত্রীকন্যা শিখিয়েছে। খাওয়ার যোগ্য হয়েছে তো?এই প্রথম বানিয়েছি!””

অন্ত্রীশা আরেকটা চুমুক দিয়ে বললো,

“” দারুন! আপনারটা কোথায়?””
“” আমি কফি খাইনা।””
“” তাহলে কফি বানানো শিখলেন কেন?””
“” তাকে বানিয়ে খাওয়াবো বলে।””

অন্ত্রীশাকে ছোট্ট হাসি উপহার দিয়ে পালক গল্প শুরু করে দিয়েছে।

“” তখন আমি থার্ডইয়ারের স্টুডেন্ট। কিছুদিনের মধ্যেই ইনকোর্স পরীক্ষা। তুমি নিশ্চয় জানো ইনকোর্সের মার্কসটা কতটা ইম্পর্ট্যান্ট? হ্যা,ভালো ছাত্র হওয়ায় হয়তো ডিপার্টমেন্ট থেকে আমাকে ফুল নাম্বারটাই দিয়ে দিতো। কিন্তু এমনি এমনি দেওয়া আমার পছন্দ না। তার উপর আমার মনে হতো নিজের মেধাকে অপমান করা হচ্ছে। তাই আমি খুব মনোযোগী হয়েই স্টাডি নিয়ে বিজি। ঠিক তখনি এক অজানা মেয়ের একটা চিঠি পৌছুলো আমার কাছে। পড়াশোনার ব্যাপারে আমি এতোই সিরিয়াস ছিলাম যে মেয়েদের সাথে আমার কন্টাক্ট হয়ে উঠেনি। বলতে পারো আমি চাইনি এসবে জড়াতে। কিন্তু ঐ একটা চিঠি আমাকে পুরো নাড়িয়ে দিয়েছিলো। তুমি হয়তো বিশ্বাস করবেনা আমি ঐ চিঠিটা কম করে হলেও ১০০ বার পড়েছিলাম। তখনো কিন্তু আমি চিঠির মালিককে জানতাম না। নিজের পড়ালেখা,পরীক্ষা সব ভুলে গিয়ে চিঠির মালিককে খুজে বেড়াচ্ছিলাম। ঠিক তখনি তার দ্বিতীয় চিঠি। আর আমার প্রেমে পড়ার দ্বিতীয় ধাপ!””
“” চিঠীতে কি এমন ছিলো যে আপনি প্রেমে পড়ে গেলেন?””
“” আই ডোন্ট নো। ইনফেক্ট সেখানে প্রেম নিয়ে কোনো বক্তব্যও ছিলো না। কোনো প্রেম নিবেদনও ছিলোনা। তবুও আমি প্রেমে পড়ে ছিলাম। কেন পড়েছিলাম আমি জানিনা। তবে এতো দিনে এটা বুঝেছি,সত্যিকারের প্রেমে পড়ার মধ্যে কোনো কারন থাকেনা। যে প্রেমে পড়াই কারন থাকে সে প্রেম কখনোই সত্যি হতে পারেনা। এক কথায় ওটা প্রেম নয়,প্রেমের মুখোশ পড়া অভিনয়!””
“” তারপর?””
“” তারপর আমিও ওকে চিঠি লিখলাম। আমি ওর প্রতি এতোই দুর্বল হয়ে পড়েছিলাম যে আমি থার্ড ইয়ারে দু সাবজেক্টে ফেল! তুমি ভাবতে পারছো? যে ছেলে পুরো ভার্সিটির মধ্যে টপ ওয়ানে ছিলো সেই ছেলে দু সাবজেক্টে ফেল!””
“” সিরিয়াসলি?””

অন্ত্রীশার প্রশ্নে পালক শব্দ করে হেসে উঠলো,

“” হুম,তোমার মতো সবাই এমন অবাক হয়েছিলো। আমার প্রিনসিপাল অফিসরুমে,আমাকে পুরো দুঘন্টা দাড় করিয়ে নিজে পায়চারী করেছেন আর বলেছেন,এটা কি করে হতে পারে পালক? ওহ! মাইগড। উনাকে দেখে আমার অনেক মায়া হয়েছিলো কিন্তু আমি কি করবো বলো,আমি তো তখন পত্রীকন্যার রোগে ভুগছিলাম,যে রোগের ওষুধ একমাত্র আমার পত্রীকন্যাই দিতে পারে। আর সে তার নেক্সট চিঠিতে ওষুধ বানিয়েও ফেলেছিলো। ও জানিয়েছিলো যদি আমি এই ব্যর্থতা কাটিয়ে ফাইনাল ইয়ারে সব থেকে ভালো রেজাল্ট করতে পারি তবেই ও আমাকে দেখা দিবে।

এই এক বছরে আমি ওকে দেখার জন্য আকুল হয়ে পড়েছিলাম,আমার ওকে খুব ছুয়ে দিতে ইচ্ছে করতো,চোখের সামনে বসিয়ে দেখতে ইচ্ছে করতো,ও যখন চিঠি লিখে তখন ওকে কেমন দেখায়? যখন কথা বলে তখন কেমন দেখায়,যখন হাসে তখন কেমন দেখায়,উফ! সবকিছুতেই একটা ছটফটানিতে ভুগতাম। আর যখন ও বললো,ও আমার সামনে আসবে তখন মনে হয়েছিলো আমি আর পৃথিবীতে নাই,অন্য কোথাও চলে এসেছি যেখানে সুখ আর সুখ। আর এই সুখকে অর্জন করতেই আমি আবার দিনরাত এক করে পড়া শুরু করে দিলাম!
“” চিঠীতেই এ অবস্থা!””
“” হুম, ধুমচে পড়ার মাঝে মাঝেও আমি পত্রীকন্যার পত্রে হারিয়ে যেতাম। তখন ও সপ্তাহে ১ টা করে চিঠি লিখতো। আর এই একটা চিঠিই আমি সাতদিনে নাহলেও ৭০০ বার পড়তাম। প্রিপারেশন বেশ চাংগা করেই হলে বসি। একে পরীক্ষা এগুচ্ছে তো পত্রীকন্যাকে দেখার জন্য আমার হার্টবিটগুলোও গতি বাড়িয়ে দিচ্ছে। এভাবেই পরীক্ষা চলাকালীন আমি বেকে বসি। পরীক্ষা শেষ হওয়ার কম করে হলেও তিনমাস পর রেজাল্ট দিবে। আর এতদিন ওয়েট করার মতো অবস্থায় আমি ছিলাম না। তাই পত্রীকন্যাকে আমি চিঠি লিখলাম আমার লাস্ট এক্সাম,ভেলেন্টাইনস ডে তে আমার ওকে চাই। কিন্তু!””
“” কিন্তু?””
“” কিন্তু আমার চিঠির কোনো উত্তর আসেনি। আমি আবার ভেংগে পড়ছিলাম। আমি ভাবছিলাম হয়তো ও রেগে গিয়েছে,অভিমান করেছে তাই আর চিঠি লিখেনি। এদিকে আমার লাস্ট এক্সামও চলে আসছিলো। তার উপর ওর রাগ,চিঠি না পাওয়া সবকিছু নিয়ে আমি ডিপ্রেশনে ভুগছিলাম। তখনি মনে হলো ও যদি আমার কাছে আসতে না চাই আমি ওর কাছে যাবো। আমার হৃদয়ের সবটা ভালোবাসা দিয়ে ওর রাগ ভাংগাবো।

আতিশ আর কাদিরকে নিয়ে লেগে পড়ি পত্রীকন্যার খোজে। ও আমাকে এতো চিঠি লিখেছে কিন্তু কোথাও এমন কিছু লিখেনি যে ওকে খুজে পাওয়া যায়। আমরা সবাই যখন হাল ছেড়ে দিয়েছিলাম তখনি আতিশের মাথায় টুও করে একটা বুদ্ধী চলে আসলো। সেই বুদ্ধীর জোরেই জানতে পারলাম আমার পত্রীকন্যা আমার ক্লাসমেট। আরেকটু জোরালোভাবে বুঝার জন্য ভালো করে ঘাটতেই দেখলাম ওর ও মিস্টিকালার খুব পছন্দ যেটা আমার পত্রীকন্যারও ছিলো। ব্যস,ভেলেন্টসইনস ডে তে ওকে প্রপোস করে সারপ্রাইজ করে দিলাম। ও এতো বেশিই সারপ্রািজড হয়েছিলো যে আমার উপর যে রাগ করেছিলো ওটাও ভুলে গিয়েছিলো।””

পালক কথার ছলে অন্ত্রীশার দিকে তাকাতেই দেখলো ও পলকহীনভাবে পালকের দিকে তাকিয়ে আছে,

“” তুমি কি আমার কথা শুনছো অন্ত্রীশা?””
“” হুম! তারপর কি হলো? আপনার পত্রীকন্যার রোগ ভালো হয়েছিলো?””

পালকের মুখটা মেঘে ঢেকে গিয়েছে। অন্ত্রীশা আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখতে পাচ্ছে,আকাশেও মেঘ জমে গেছে।

“” কি হলো বলছেননা যে?””
“” না,ভালো হয়নি। আমি আজোও পত্রীকন্যার রোগে ভুগছি। আমার পত্রীকন্যা চিঠিতেই ভালো ছিলো,চিঠির পত্রীকন্যা আমাকে কখনো কষ্ট দেইনি। কিন্তু যখন ও চিঠি থেকে বাইরে চলে এলো তখনি ওর মধ্যে আমি অন্য কারো অপস্থিতি টের পেতাম। চিঠি পড়তে পড়তে আমার মনের চোখে যে পত্রীকন্যাকে একেছিলাম তার সাথে বাস্তবের কোনো মিল ছিলোনা। কিছুদিনের মধ্যেই আমার প্রতি ওর অবহেলা,বেখেয়ালি,অযত্ন তৈরী হতে থাকে। নানাভাবে আমাকে অপমান করতে থাকে। কিন্তু এতোকিছুর পরও ওকে হারানোর কথা আমি ভাবতে পারেনি,ওর মতো হয়ে চলার চেষ্টা করেছি,ওর মতো করে ওকে ভালোবাসার চেষ্টা করছিলাম,তাও আমি ব্যর্থ হয়েছি। খুব ছোট্ট একটা ঘটনাকে কেন্দ্র করে অন্য একজনকে বিয়ে করে ফেলে ও। সেদিন আমি কেঁদেছিলাম,অনেক কেঁদেছি,ইচ্ছে করছিলো পৃথিবীর সবকিছু ঙেংগেচুড়ে ফেলি। কিন্তু আমি কিছু করতে পারেনি,ওর মুখোমুখি হয়ে ছোট্ট একটা প্রশ্নও করতে পারেনি,কেন আমাকে ঠকালো?

কস্ট কখনোই নিজের মধ্যে চেপে রাখতে নেই,তাহলে ছোট্ট কষ্টটাও পাহাড় সমান হয়ে নিজের উপর ভেংগে পড়ে। আর আমি সেটাই করেছিলাম যার ফলে দিনে দিনে আমার অবস্থা খারাপ হতে থাকে। একটা বদ্ধঘরে নিজের জীবনকে আটকে ফেলেছিলাম,এমন অবস্থায় আব্বু আমাকে মাস্টার্স কমপ্লিট করার জন্য বাইরে পাঠিয়ে দিলো। সেখানে গিয়ে আমি নতুনকিছু অনুভব করলাম। আমার মনে হতে কাগলো পত্রীকন্যা চলে গিয়েছে বলে আমার কষ্ট হচ্ছিলোনা। কষ্ট হচ্ছিলো এইটা ভেবে, পত্রীকন্যা আমাকে কেন চিঠি লিখছেনা??

তারকিছুদিন পরই খবর আসে আব্বু রোড এক্সিডেন্টে মারা গিয়েছেন।

পালকের কন্ঠ চেন্জ হয়ে আসছে ভেবে অন্ত্রীশা প্রসঙ্গ পাল্টাতে বললো,

“” কফিটা অসাধারন ছিলো,রেসিপিটা একটু বলবেন,আমিও শিখেনিতাম,ধনেপাতার কফি!””

পালক অন্ত্রীশার দিকে ঘুরে বললো,

“” শিখাতে পারি,যদি তুমি আমার বন্ধু হও। তোমাকে বউয়ের মর্যাদায় হয়তো রাঙাতে পারিনি কিন্তু বন্ধুত্বের অমর্যাদা আমি করবোনা। বন্ধু হবে আমার?””

অন্ত্রীশা পালকের কথা উপেক্ষা করে চলে যেতে গিয়েও থেমে গিয়েছে। পালকের চোখে চোখ রেখে বললো,

“” আপু আপনার পত্রীকন্যা নয়। আপনার সাথে আপুর যা হয়েছে তার জন্য সে লজ্জীত,অনুতপ্ত। অনুতপ্তের আগুনে আপু নিজেকে জ্বালিয়ে শেষ করে দিচ্ছে। আপুকে এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিন!””

অন্ত্রীশার কথাই পালকের সবকিছু থমকে গিয়েছে। না সবকিছু থমকে যায়নি,শুধু সে থমকে গেছে,আর বাকিসব তাকে কেন্দ্র করে ঘুরছে,যদি অনিকশা তার পত্রীকন্যা না হয় তাহলে তার পত্রীকন্যা কে?

পালক রাগে ফুসতে ফুসতে অনিকশার নাম্বারে কল দিয়েছে,অপাশ থেকে রিসিভ হতেই পালক চিৎকার করে বললো,

“” আমি তোমাকে এই মুহুর্তে আমার চোখের সামনে দেখতে চাই। রাইট নাউ!

চলবে
#ধোয়ার-নেশা

#রোকসানা-রাহমান

পর্ব (১৬)

“” আপু আপনার পত্রীকন্যা নয়। আপনার সাথে আপুর যা হয়েছে তার জন্য সে লজ্জীত,অনুতপ্ত। অনুতপ্তের আগুনে আপু নিজেকে জ্বালিয়ে শেষ করে দিচ্ছে। আপুকে এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিন!””

অন্ত্রীশার কথাই পালকের সবকিছু থমকে গিয়েছে। না সবকিছু থমকে যায়নি,শুধু সে থমকে গেছে,আর বাকিসব তাকে কেন্দ্র করে ঘুরছে,যদি অনিকশা তার পত্রীকন্যা না হয় তাহলে তার পত্রীকন্যা কে?

পালক রাগে ফুসতে ফুসতে অনিকশার নাম্বারে কল দিয়েছে,অপাশ থেকে রিসিভ হতেই পালক চিৎকার করে বললো,

“” আমি তোমাকে এই মুহুর্তে আমার চোখের সামনে দেখতে চাই। রাইট নাউ!””

অনিকশা অরিদ্রাকে ঘুম পাড়িয়ে বেলকনিতে গিয়ে দাড়িয়েছিলো। অরিদের সাথে সবসময় বিরক্ত হয়ে কথা বললেও সে জানে মনে মনে কখনো চাইনি অরিদ তার থেকে দুরে থাক। এতো সরলসোজা মানুষটার ভেতরে অসীম ভালোবাসা অনিকশাকে খুব টানে। এই জন্যই হয়তো অরিদকে ছেড়ে যাওয়ার কথা কখনো ভাবতে পারেনি। নাহলে এমন নিরামিষ বিবাহিত জীবনে থেকে কি লাভ? মাঝে মাঝে খুব ইচ্ছে হয় ওর ভালোবাসার সমুদ্রে একটু গোসল করে নিতে। কিন্তু সে পারেনা।

অরিদের সাথে অনিকশার তিক্ত আচরনগুলো কতটা তিক্ততা বহন করে সেটাও জানে অনিকশা। হয়তো অরিদের জায়গায় অন্য কেউ হলে কবেই ওকে রেখে ছেড়ে অন্য কোনো নারীতে আসক্ত হয়ে যেতো। কিন্তু অরিদ? ও অনিকশাকে ছাড়া অন্য কোনো মেয়ের নাম জানে নাকি সেটাও সন্দেহ আছে অনিকশার।

আজ সারাদিনে একবারও কথা হয়নি অরিদের সাথে। কল দেয়নি তা নয়। অন্ত্রীশার সাথে কথা হওয়ার পর থেকে মনটা কেমন আনচান আনচান করছিলো তাই কল রিসিভ করেনি অনিকশা। নিশ্চয় ছেলেটা মন খারাপ করে বসে আছে,হয়তো চোখগুলোও ভিজিয়ে ফেলেছে। এই মাঝরাতে অরিদকে কল দিয়ে তাক লাগিয়ে দিলে ব্যাপারটা মন্দ হয়না।

অনিকশা ঠোটে হালকা হাসি নিয়েই রুমের দিকে পা বারিয়েছিলো,উদ্দেশ্য অরিদকে কল দেওয়া। কিন্তু রুমে পা ফেলতেই নিজের ফোন বেজে উঠে। অরিদের কল ভেবে ফোন হাতে নিতেই অনিকশা বেশ চমকিত,এত রাতে পালকের কল? কোনো প্রভলেম হয়নি তো? অন্ত্রীশা কোনো ঝামেলা করে বসেনি তো? নানা কুভাবনা অনিকশাকে ঘিরে নিতেই পালকের কলটা কেটে গিয়েছে। অন্ত্রীশা কল ব্যাক করবে নাকি দ্বিধায় ভুগতেই পালক পুনরায় কল দিয়ে বসে। অনিকশা সাথে সাথে কল রিসিভ করতেই পালক বলে উঠলো,

“” আমি তোমাকে এই মুহুর্তে আমার চোখের সামনে দেখতে চাই অনিকশা। রাইট নাউ!””

পালকের এমন উৎকন্ঠে অনিকশা কেঁপে উঠেছে। পালকের সাথে সে একটা বছর সময় কাটিয়েছে। এই একটা বছরে পালককে এমন কন্ঠে কথা বলতে দেখেনি অনিকশা। তবে কি সত্যি সত্যি অন্ত্রীশার সাথে পালকের কিছু হয়েছে? নাকি অন্যকিছু?

“” তুমি কি পাগল হয়ে গেছো পালক? এখন কয়টা বাজে খেয়াল আছে? এতো রাতে আমি তোমার কাছে কেন যাবো? তার উপর অরিদও বাসায় নেই। তুমি কি তোমার হিতাহিত বুদ্ধী খেয়ে ফেলেছো?””
“” কি খেয়েছি আর কি খাইনি সেটা তোমার না জানলেও হবে। তুমি আসবে নাকি তাই বলো।””
“” it’s not possible!””

পালকের মাথা কাজ করছেনা। মনে হচ্ছে মাথাটা খুলে নিয়ে আছার মেরে টুকরো টুকরো করে ফেলতে। এটা কি করে সম্ভব? অনিকশা যদি পত্রীকন্যা না হয় তাহলে পত্রীকন্যা কে? আজ এতো বছর ধরে যাকে পত্রীকন্যা ভেবে ভালোবেসে এসেছি অথচ এখন কিনা সে আমার পত্রীকন্যাই না? তারমানে এতোদিন আমি অন্য একটা মেয়েকে ভালোবেসে এসেছি? অন্য একটা মেয়েকে দেখে চোখ জুড়িয়েছি? অন্য একটা মেয়ের হাসিতে হাসি মিলিয়েছি? অন্য একটা মেয়ের আবদার রেখেছি? অন্য একটা মেয়ের পায়ে পা মিলিয়ে চলেছি? অন্য একটা মেয়ের সাথে সারারাত প্রেমালাপ করেছি? উফ! এতো বড় ভুল আমি কি করে করলাম? আমি আমার পত্রীকন্যার ভালবাসা অন্যকে দিয়েছি। এতো বড় অবিচার আমি কি করে করেছি? আমার পত্রীকন্যা কি আমাকে কখনো ক্ষমা করবে? না,কখনোই করবেনা। আর করা উচিতও নয়। ছি! ছি!!

পালক নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে ভাবছে,এই হাত দিয়ে আমি ওকে কতবার ছুয়েছি। ছি! আমি অপবিত্র করে ফেলেছি আমার পবিত্র ভালোবাসাকে। পালকের ইচ্ছে হচ্ছে,জোরে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে পত্রীকন্যাকে জানাতে,সে কলঙ্কিত হয়ে গেছে,ভুল করে একটা পরনারীকে সে ভালোবেসে কলঙ্কিত হয়ে গেছে। কিন্তু সেতো চাইনি এভাবে কলঙ্কিত হতে,সেতো চেয়েছিলো তার পত্রীকন্যার ভালোবাসায় কলঙ্কিত হতে!

পালক সারারাত বারান্দায় কাটিয়ে দিয়েছে। ফযরের আযানের ধ্বনি কানে আসতেই পালকের ঘুম ভেঙে গিয়েছে। একটু নাড়া দিয়ে উঠতেই নিজেকে বেলকনির মেঝেতে আবিষ্কার করে। তার জীবনের এতো গুলো নির্ঘুম রাতের মধ্যে এটি ছিলো সবচেয়ে নিকৃষ্ট নির্ঘুম রাত।

“” এভাবে বাইরে গেলে,মানুষ আপনাকে পাগল বলে ক্ষেপাবে,ইটের টুকরোও নিক্ষেপ করতে পারে। একটু পরিপাটি হয়ে যান।””

অন্ত্রীশার কথায় পালক পেছনে তাকাতেই অন্ত্রীশাকে জায়নামাজ ভাজ করতে দেখতে পাচ্ছে। অন্ত্রীশা জায়নামাজটা রেখে বিড়বিড় করতে করতে পালকের কাছে এসে দাড়িয়েছে। পালকের মাথার চুলগুলো হাত দিয়ে ঠিক করে দিয়ে বুকে তিনবার ফু দিয়ে দিয়েছে।

অন্ত্রীশা ঠোটে মিস্টি হাসি নিয়ে বললো,

“” আল্লাহ আপনাকে ধৈর্য্য দান করুক।””

পালক অন্ত্রীশার দিকে একবার তাকিয়ে আবার চলে যেতে নিলে অন্ত্রীশা ডেকে উঠে,

“” শুনুন!””
“” হুম।””
“” যে ব্যক্তি নিজের ভুলের জন্য অনুতপ্ত তাকে ক্ষমা করে দেওয়াই শ্রেয়। কেননা ১০০টা ভুলকারীর মধ্যে ১ জনকেই পাবেন যে নিজের ভুল বুঝতে পেরে,অনুতপ্ত হয়। আর বাকি ৯৯জনই শাস্তি ভোগ করলেও নিজের ভুল বুঝার ক্ষমতা রাখেনা। আমি মনে করি, একজন অনুতপ্তকারীকে ক্ষমা না করে শাস্তি দেওয়া মহাপাপ। আমি জানি আপনি সেই মহাপাপীর অংশীদারী হবেননা।””

পালক আর অনিকশা দুজন দুজনার মুখোমুখি বসে আছে। রেষ্টুরেন্টটা তাদের খুবই পরিচিত। এখানের চিলি স্যুপটা অনিকশার খুব পছন্দের হওয়ায় প্রায়ই তাদের এখানে আসা হতো। তার উপর ভার্সিটিরও খুব কাছে হওয়ায় ক্লাস শেষেই এখানে দুজন নানান গল্পে মেতে উঠতো। ভাবতেই পালকের গা গুলিয়ে উঠছে। ইচ্ছে করছে এখনি গলায় আঙুল ঢুকিয়ে পেটের ভেতর থেকে সব স্যুপ বের করে ফেলতে। ছি! একটা পরনারীর হাতে আমি স্যুপ খেয়েছি! চিলি স্যুপের জায়গায় ওটা বিষ স্যুপ কেন হয়ে যায়নি,তার পত্রীকন্যার হাত ছাড়া অন্য নারীর হাতে খাওয়াতো তার কাছে বিষের সমতুল্য। শুধু নিজে বমি করলে হবেনা অনিকশাকেও বমি করাতে হবে। ওর পেটের সবগুলে স্যুপ তো সে নিজেই আয়েশ করে খায়িয়ে দিয়েছে। আঙুল কি আমারটা ডুকাবো নাকি ওরটা। ছি!ছি!! আমি আমার আঙুল কেন ওর গলায় ঢুকাতে যাবো? ও নিজের আঙুলটাই ব্যবহার করুক।

অনিকশাকে দেখে পালক যতটা না রেগে যাচ্ছে তার থেকেও বেশি ঘেমে যাচ্ছে অনিকশা। কি এমন বলবে পালক সেই ভাবনায় সেও সারারাত চোখের পাতা এক করতে পারেনি। ওতো রাতে আসা সম্ভব না ভেবে সকালে দেখা করতে রাজি হয়েছিলো অনিকশা।

পালকের সাইলেন্ট মুডটা অনিকশাকে যেন আরো বেশি ঘামিয়ে তুলছে। কপালে জমে থাকা বিন্দু বিন্দু ঘাম চোখের কর্নারের পাশ ঘেষে,গাল বেয়ে গলার দিকে নেমে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে শরীরের ভেতরের থাকা সব পানি আজ ঘাম হয়ে বের হয়ে যাচ্ছে। গলাটাও শুকিয়ে আসছে,তাহলে কি তার হঠাৎ করে পানিশুন্যতা দেখা দিচ্ছে???

“” পানিটা খেয়ে নাও।””

পালকের এগিয়ে দেওয়া গ্লাসটা নিয়ে ঢকঢক করে পানি খেয়ে নিয়েছে অনিকশা। খালি পানির গ্লাসটা টেবিলে রাখতে গিয়ে কিছুটা শব্দ হয়েছে। সামান্য শব্দটাও অনিকশার কাছে বোমা মারার মতো শব্দ মনে হয়েছে। অতি টেনশনে কি সে পানির গ্লাসকে বোম বানিয়ে ফেলেছে???

পালক সাদা ঝকঝকে খালি কাচের গ্লাসটাই পুনরায় পানি ভর্তি করে অনিকশার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,

“” এখনো তো কিছু বললামই না,তাই এ অবস্থা? বলা শুরু করলে তো দেখছি তোমার পানির টাংকি শেষ করতেও এক মিনিট লাগবেনা।””

অনিকশা পানিভর্তি গ্লাসটা নিতে গিয়েও থেমে গিয়েছে। পালকের দিকে তাকাতেই ঘামগুলো ছোট ছোট বিন্দু থেকে বড় বড় বিন্দুতে রুপান্তর হতে শুরু করে দিয়েছে।

“” কি বলবে তুমি?””
“” পানিটা শেষ করো তারপর বলছি। নাহলে দেখা যাবে পানিশূন্যতায় তুৃমি অজ্ঞান!””

অনিকশা পানির গ্লাসের দিকে তাকিয়ে ক্ষীনস্বরে বললো,

“” আমি ঠিক আছি,পালক। তুমি বলো!””
“” তুমি কে?””
“” আমি কে মানে?””
“” তুমি কি আমার পত্রীকন্যা?””

পালকের মুখে পত্রীকন্যা নামটা শুনেই অনিকশার সবকিছু আউজাঝাউলা শুরু হয়ে যাচ্ছে। বুকের ভেতরে তুফানের তীব্র প্রবলতায় ভয়েরা সাড়া দিচ্ছে। এই প্রথম পালকের মুখে এ নামটা শুনছে তা নয়। অসংখ্যবার শুনেছে সে। কিন্তু কখনোই এমন প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়নি অনিকশার! তবে কি পালক সব জেনে গিয়েছে? কিন্তু কিভাবে? এ ব্যাপারটা তো আমি ছাড়া আর কারো জানার কথা না। তাহলে কি অন্ত্রীশা? সেটা কিভাবে সম্ভব? আমি ওকে যা বলেছি তার মধ্যেতো আমি একবারও পত্রীকন্যাকে নিয়ে কিছু বলিনি। তাহলে? তাহলে কি ও আমার মনের ভেতরে বয়ে যাওয়া ঝড়ের শব্দ পেয়েছিলো? কিভাবে? বোন হয় বলে তাই? হতেও পারে,বোন হয়ে যদি বোনের মনের কথা পড়তে না পারে তাহলে কিসের বোন?

পালক কিছুটা চিৎকার করে বললো,

“” কি হলো বলছোনা কেন?””

পালকের প্রশ্নে অনিকশা কেঁপে উঠলেও ভাবনা থেকে বেড়িয়ে আসতে পারেনি। নিয়তি আজ তাকে সত্যের মুখোমুখি এনেছে। আজ সে বলবে,সব সত্যি বলবে। আর কারো জন্য না হোক তার অরিদের জন্য বলবে। এই এক অনুতপ্ততার জন্য অরিদকে আমি আর দুরে ঠেলে রাখতে পারবোনা। কিছুতেই না। ও যে অপেক্ষায় আছে আমার বুকে ওর জন্য বয়ে যাওয়া ভালোবাসার ঢেউ দেখার আশায়!

অনিকশার এই চুপ করে থাকাটা পালক আর সহ্য করতে পারছেনা। রাগে পুরো শরীর ফেটে যাচ্ছে। পালক উঠে দাড়িয়ে চিৎকার করে বললো,

“” অনিকশা,তুমি কি কিছু বলবে নাকি আমি সব গুড়িয়ে ভেঙে ফেলবো!””

পালকের ঢিল মারা পানিভর্তি সাদা কাচের গ্লাসের টুকরো হয়ে যাওয়া শব্দে অনিকশা বাস্তবতায় ফিরে এসেছে।

অনিকশা আহত আর ভীত কন্ঠে বললো,

“” না,আমি তোমার পত্রীকন্যা নই!””

পালক দাড়িয়ে থেকেই অন্ত্রীশার দিকে ঝুকে এসে বললো,

“” তাহলে কে আমার পত্রীকন্যা??? কোথায় সে? I need her.””
“” আমি জানিনা,পালক। তোমার পত্রীকন্যা কে? কোথায় থাকে আমি কিছু জানিনা।””

পালক অনিকশার কাছ থেকে এমন উত্তর আশা করেনি। পুরো পাগলের মতো টেবিলে থাকা সবকিছু ফেলে দিয়েছে। নিজের চেয়ারটায় লাথি মেরে অনিকশার কাছে এসে বললো,

“” তুমি মিথ্যে বলছো অনিকশা। আমি জানি তুমি মিথ্যে বলছো। তুমি জানো আমার পত্রীকন্যা কোথায়!””

পালকের পাগলামী দেখে অনিকশা কেঁদে ফেলেছে। কান্নাজড়িত কন্ঠে বললো,

“” আমার মেয়ের কসম,আমি জানিনা। আমি সত্যিই জানিনা তোমার পত্রীকন্যা কে!””

পালক আর অনিকশার কান্ডে রেষ্টুরেন্টে উপস্থিত সকলেই হতভম্ব। সবাই নিজ নিজ জায়গায় বসেই উপভোগ করছে। এমন একটা ভাব যেন এ রকম ঘটনা প্রায়শই ঘটে। খুবই নরমাল ব্যাপার। কিন্তু সকলে উপভোগ করলেও বেশ বিরক্ত নিয়ে রেষ্টুরেন্টের ম্যানেজার এগিয়ে আসেন।

“” Any problem,sir?””

পালক অনিকশার কাছ থেকে সরে নিজের চেয়ারটাতে বসতে বসতে বললো,

“” No, আপনাদের ক্ষতিপুরনটা বিলের মধ্যে এড করে দিবেন,প্লিজ। And sorry for what happened! “”

ম্যানেজার এক আন্তরিকতার হাসি দিয়ে চলে গেলেই পালক অনিকশার দিকে তাকিয়েছে,

“” তাহলে তুমি আমার প্রপোজালে রাজী হয়েছিলে কেন?””

অনিকশা এতোটাই ভয় পেয়েছে যে তার কান্নার সাথে হিচকি উঠে গিয়েছে। পালকের দিকে তাকানোর সাহস পাচ্ছেনা। চোখ দিয়ে অনরবত পানি পড়ছে।

পালক ওয়েটারকে দিয়ে আরেকটা গ্লাস আনিয়ে নিয়েছে। গ্লাসে পানি ঢেলে দিয়ে অনিকশার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,

“” পানিটা খেয়ে স্বাভাবিক হও। আমি সবটা জানতে চাই। আর তোমাকে বলেই যেতে হবে।””

অনিকশা পানি দিয়ে গলাটা ভিজিয়ে বললো,

“” সেসময়টাই ভার্সিটির প্রত্যেকটা মেয়ে তোমার উপর ফিদা। আর এই ফিদা বয়টি আমাকে হুট করে তাও পুরো ভার্সিটির সকলের সামনে আমাকে প্রপোস করেছে দেখে আমি এতোটাই খুশি হয়েছিলাম যে কিছু না ভেবেই এক্সেপ্ট করে ফেলি।””
“” একটা ছেলে তোমাকে প্রপোস করলো আর তুমি সাথে সাথে এক্সেপ্ট করে নিলে? সে কেন প্রপোস করেছে এটা জানার প্রয়োজনবোধ করলে না?””
“” তখন মাথায় এগুলো কাজ করছিলোনা।””
“” ওকে ফাইন। মানলাম তখন তুমি খুশিতে আত্মহারা হয়ে সব গুলিয়ে খেয়ে ফেলেছো। কিন্তু তারপর যখন তুমি আমার সাথে মিশেছিলে তখনোও কি বুঝতে পারোনি আমি তোমাকে পত্রীকন্যা ভেবে ভালোবাসছি?””
“” হুম,কিন্তু তখন তোমার ভালোবাসা,কেয়ারিং,দায়িত্ববোধ,তোমার ছোটখাটো দুষ্টুমিগুলোকে আমি অনেক উপভোগ করছিলাম। আমার এগুলোর প্রতি লোভ জন্মে গিয়েছিলো তাই বুঝেও না বুঝার ভান করেছি।””

পালক এবার একটু উচ্চস্বরে বললো,

“” অনিকশা তখন তুমি টিন এজের বাচ্চা ছিলেনা। যথেষ্ট মেচিউরড।””
“” সেজন্য আরো বলতে পারিনি। কারন,তখন তুমি রাতদিন ২৪ ঘন্টা আমাতে পাগল। এই অবস্থায় আমি তোমাকে হার্ট করতেও পারছিলাম না। ইনফেক্ট,আমি এটাও সিউর ছিলাম,তখন যদি আমি বলতাম আমি তোমার পত্রীকন্যা না তাহলে তুমি সেটা হেসে উড়িয়ে দিতে। কিন্তু যখন বুঝলাম,এতো দিনেও আমি তোমার মনে কিঞ্চিৎ পরিমান জায়গা করে নিতে পারিনি। তোমার পত্রীকন্যার দেখা না পেয়েও তোমার সর্বস্ব জুরে সেই বাস করছে,তখন মনে মনে গিলটি ফিল করি। আর সেই গিলটি থেকেই তোমার সাথে আমার খারাপ আচরন শুরু হয়। আসতে আসতে দুরত্ব! আমার কাছে মনে হয়েছিলো আগে নিজেকে তোমার থেকে সরিয়ে তারপর তোমাকে জানাবো,তুমি যাকে ভালোবাসো আমি সে নই।””
“” নিজেকে তো সরিয়ে নিয়েছিলেই তাহলে কেন জানাওনি?””
“” চেয়েছিলাম। আমি আতিশের সাথে দেখাও করেছি,ওর কাছেই শুনতে পারি তুমি সবকিছু থেকে নিজেকে গুটিয়ে ফেলছো,একটা বদ্ধঘরে নিজেকে বন্দী করে ফেলেছো,এমতাবস্থায় যদি তোমাকে সত্যিটা বলি তাহলে তোমার রিয়েকশন কি আসবে আমি বুঝতে পারছিলাম না,ভেতরে ভেতরে ভয় পেয়ে যাই ঐ মুহুর্তে তোমাকে এই সব নিয়ে কিছু না বলাটাই ব্যাটার হবে মনে হয়েছিলো। ভেবেছিলাম,তুমি একটু স্বাভাবিক হলেই বলবো। তারকিছুদিন পরই জানতে পারি তুমি দেশের বাইরে।””
“” ওকে আমি তোমার সবকিছু মানলাম। ধরে নিলাম তুমি যা করেছো সব আমার জন্য কিন্তু যখন জানতে পারলে তোমার বোনকে আমি বিয়ে করতে যাচ্ছি,তখন কি তোমার মনে হয়নি, যে ছেলেটার মনে তুমি জায়গা করে নিতে পারোনি সেই ছেলেটার মনে অন্ত্রীশা কিভাবে জায়গা পাবে? তোমার কি এটাও মনে হয়নি আমি তোমার উপর জিদ ধরে অন্ত্রীশাকে বিয়ে করতে চাচ্ছি? ওর উপর কি অত্যাচার চলতে পারে? তখনো কি তোমার মনে হয়নি তোমার আমাকে সব জানানো উচিত?””
“” মনে হয়েছিলো।””
“” তাহলে কেন জানাওনি?””
“” অন্ত্রীশার জন্য!””
“” অন্ত্রীশা?””
“” হুম,ও তোমাকে বিয়ে করার জন্য পাগল হয়ে গিয়েছিলো। তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছিলো। তার উপর সবকিছু এতো দ্রুত হচ্ছিলো যে আমি কি করবো না করবো বুঝে উঠতে পারছিলাম না। তখন মনে হলো যা এতোদিন ধরে আড়ালেই ছিলো তা নাহয় আড়ালেই থাক। আমার বোনটার মন ভেঙে যাক এটা আমি চাইনি।””
“” অনিকশা তুমি কি বুঝতে পারছো তুমি কি বলছো? তোমার মনের সিদ্ধান্ত আমাদের চারটা জীবন আজ ধ্বংশের দিকে,চারজন নয়,পাঁচটা জীবন। আমার পত্রীকন্যাও এটার স্বীকার। আমি আজ বুঝতে পারছি,ও আমাকে আর কেন চিঠি লিখেনি। হয়তো ও আমার আড়াল ছিলো কিন্তু আমিতো ওর আড়ালে ছিলাম না। একটা মেয়ে হয়ে কি করে নিজের ভালেবাসার মানুষটির পাশে অন্য মেয়েকে সহ্য করবে? ও খুব কষ্ট পেয়েছে অনিকশা। আমার পত্রীকন্যা কষ্টের নদী নিয়ে অভিমান করে আছে আমার উপর। হয়তো ভেবেছে আমি ওকে ধোকা দিয়েছি!

পালক হুট করেই অনিকশার হাতদুটে আকড়ে ধরে ফেলেছে। হাতের উপর নিজের মাথা রেখে কান্নাজরিত কন্ঠে বললো,

“”তুমি এটা কি করলে অনিকশা? দুটো হৃদয় দিয়ে গড়ে উঠা,একটা আত্মাকে তুমি দুটুকরো করে ফেলেছো। এত বড় অন্যায়টা কেন করলে?””

অনিকশা শাওয়ার নিয়েই আয়নার সামনে দাড়িয়েছে। দুই হাতে দুটো শাড়ী,দুটোই জামদানী শাড়ী। কালার ভিন্ন,একটা টকটকে লাল কালার,এটা পড়েই অরিদকে বিয়ে করেছিলো সে,অপরটা বেগুনি কালার শাড়ী,যেটা অনেক পছন্দ করে অরিদ ওকে গিফট করেছিলো। এটা নিয়েই তো ওইদিন অরিদের সাথে ঝগড়া হয়েছিলো। মনে পড়তেই অনিকশা মুচকি হেসে উঠে।

কোনটা যে পড়বে বুঝতে পারছেনা। অনেক ভেবেচিন্তে লালটাই পড়ার কথা ভাবছে। নতুন জীবন শুরুটা নাহয় নতুনের মতোই হোক। যেটা পড়ে অরিদকে নিজের করে নিয়েছিলাম আজও নাহয় ওটা পরেই নিজের ভালোবাসায় রাঙাবো।গড়ে নিবো আমাদের লাল ভালোবাসা!

আয়নায় দাড়িয়ে কুচি গুজতে গিয়েই অনিকশার মনটা খারাপ হয়ে এসেছে। পেটটা অনেকটাই ফুলে আছে,শরীরের ফর্সা চামড়াগুলোও কেমন মরচে পড়ে গিয়েছে,আর মুখটা,ইশ! উজ্জ্বলতার কোনো আভাসও নেই। অরিদের কাছে নিজেকে সুন্দরী করতে এখন কত কি মাখতে হবে। এতোদিন নিজের অযত্নের ফল এখন পাচ্ছি। আজ যখন অরিদকে নিজের পুর্ন সৌন্দর্যটা দেখাতে চাচ্ছি,তখনি এমন ফ্যাকাসে হয়ে গেলো চেহারা? ধুর! অরিদ্রাটা যে কেন এত তাড়াতাড়ি এলো। আর কয়েক বছর পর এলে কি হতো? কেমন মুটিয়ে গিয়েছি আমি!

অনিকশা মন খারাপ নিয়েই নিজেকে সাজাচ্ছে। যদিও অরিদের সাতদিনের কাজ শেষ হয়নি। কিন্তু অনিকশা জানে আজ যতই কাজ থাকুকনা কেন আজ সে আসবেই। আর এসেই যখন দেখবে তার বউটা হুট করেই পাল্টে গেছে তখন ওর মুখটা কেমন হবে? আর আমি যখন ওকে ভালোবাসি বলবো তখন? তখন তো ও খুশিতে পাগলই হয়ে যাবে,ইশ! কখন যে আসবে!

অনিকশাকে অবাক করে দিয়েই দরজায় নক পড়েছে। নিজের চুলে চিরুনিটা চালিয়েই দৌড়ে দরজার কাছে চলে গিয়েছে অনিকশা। এটা অরিদ ছাড়া অন্য কেউ না খুব ভালো করেই জানে ও। নিজের খুশি খুশি মুখটাকে আড়াল করে কিছুটা বিরক্তের ছাপ নিয়ে এসেছে মুখে। এতো সহজেই সব প্রকাশ পেলে মজা নাই,আগে একটু ভাব ধরতে হবে। ওকে বুঝতে দেওয়াও যাবেনা যে আমি জানি ও আসবে!

অনিকশা দরজা খুলেই কিছুটা বিরক্তের চাহনি দিয়েছে অরিদের উপর। কপালের সাথে ব্রু দুটোও কুচকিয়ে বললো,

“” তুমি এতোরাতে? তোমার না পরশুদিন আসার কথা? কাজ ফেলে চলে এসেছো তো? দাড়াও আমিও এখন সব গুছিয়ে নিয়ে বাপের বাড়ি চলে….. “”

অনিকশা কথা শেষ করার আগেই ওর বা গালে ঠাস জরে একটা চড় বসিয়ে দিয়েছে অরিদ। চোখ,মুখ লাল হয়ে গিয়েছে ওর। অনিকশাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে রুমের ভেতর ঢুকে চিৎকার করতে করতে বললো,

“” বাপের বাড়ি যাবি নাকি পালকের কাছে যাবি সেটা তোর ব্যাপার। দাড়া আমি তোকে হ্যাল্প করছি!””

অরিদ রুমের সবকিছু তছনছ করে দিচ্ছে। একটা লাগেজ বিছানায় ফেলে তাতে আশেপাশে যা পাচ্ছে সব ঢুকানো শুরু করে দিয়েছে!

চলবে

ধোয়ার-নেশা পর্ব (১৩+১৪)

0

#ধোয়ার-নেশা

#রোকসানা-রাহমান

পর্ব (১৩+১৪)

অন্ত্রীশা পুনরায় প্রশ্ন করার জন্য ঠোট নাড়াতেই পালক ওর ঠোটে নিজের ঠোট ডুবিয়ে দিয়েছে। নিজের ধোয়াগুলো অন্ত্রীশার মধ্যে ছেড়ে দেওয়ার তাড়নায় থাকলেও আজ সে ব্যর্থ হলো। অন্ত্রীশা নিজের সর্বস্ব শক্তি দিয়ে পালককে ছাড়িয়ে ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে দিয়েছে। ওর ডান গালে!

অন্ত্রীশার এমন হুট করে হাইপার হয়ে যাওয়াটা হজম করতে পারছেনা পালক। একটু আগে তার সাথে কি হয়েছে বুঝার আগেই অন্ত্রীশা বলে উঠলো,

“” আপু,তুমি?””

পালকের সাথে সাথে অনিকশাও হতভম্ব। অন্ত্রীশার এমন কঠিন রুপ সে আগে কখনো দেখেনি। হঠাৎ কি এমন হলো যে সে পালককে চড় মেরে বসেছে? স্বামী তার বউকে চুমু খাবে এটাই স্বাভাবিক,এতে এতো রাগের কি আছে? তবে কি অন্ত্রীশাও বুঝতে পেরেছে পালক তাকে ভালোবাসেনা???

অনিকশা দরজার কাছটাতে দাড়িয়েই পালকের দিকে তাকিয়ে আছে। অন্ত্রীশার ছুরে দেওয়া প্রশ্নটা যেন তার কাছে পৌছোয়নি। অন্ত্রীশা দরজার কাছটাতে এগিয়ে গিয়ে বেশ স্বাভাবিক কন্ঠেই বললো,

“” আপু,তুমি কখন এলে?””

এতোকাছ থেকে অন্ত্রীশার ডাকে এবার অনিকশা অন্ত্রীশার দিকে তাকিয়েছে। কিছুটা আনমনা হয়েই বললো,

“” এইদিকে একটা কাজে এসেছিলাম তাই ভাবলাম তোর সাথে দেখা করে যাই।””
“” ওহ! আচ্ছা।””

কিছুক্ষন আগেও যে মেয়েটা রাগে ফেটে যাবার উপক্রমে ছিলো সেই মেয়েটার এতো ঠান্ডা মেজাজটা অনিকশার কাছে অস্বাভাবিক লাগছে। অন্ত্রীশার দিকে তাকিয়ে বললো,

“” তুই ঠিক আছিস তো,বোন?””
“” আপু,তুমি ড্রয়িং রুমে গিয়ে বসো আমি আসছি!””

অনিকশাকে রেখেই অন্ত্রীশা আবার জোরে জোরে কদম ফেলে নিজের রুমের দিকে ছুটছে। পালক এখনো বারান্দাতেই দাড়িয়ে আছে,হাতে জ্বলন্ত সিগরেট! যেটা আগুনের রেখা ফুটিয়ে নিজেকে বিসর্জন দিচ্ছে!

অন্ত্রীশা পালককে নিজের দিকে ঘুরিয়ে পুনরায় পরপর দুটো থাপ্পড় মেরে বসে পালকের গালে।

“”ইচ্ছে করছে আপনাকে আরো কয়েকটা থাপ্পড় মারি। পৃথিবীতে যতগুলো সিগারেট আছে ততগুলো থাপ্পড় মারি। লজ্জা করেনা অন্যের জন্য সিগারেট খেয়ে আমাকে বিষাক্ত করতে? আর কখনো যদি এই দুর্গন্ধ জিনিসটা ছুয়ে আমাকে ছুতে আসেন তাহলে এই সিগারেটের মতো আমিও আপনাকে জ্বালিয়ে শেষ করে দিবো!””

অন্ত্রীশা নিজের বক্তব্য পেশ করে হনহন করে বেড়িয়ে এলো।

একটা মেয়ের কাছ থেকে পরপর তিনটা থাপ্পড় খেয়েও এতোটা শান্ত কি করে আছে বুঝতে পারছেনা পালক। তার তো রাগ করা উচিত,এমন রাগ যে রাগে অন্ত্রীশা ভয়ে থরথর করে কাঁপতে থাকে। কিন্তু তার কেন রাগ হচ্ছে না? কেন সে অন্ত্রীশার হাতটা শক্ত করে ধরতে পারেনি? কেন সে অন্ত্রীশার চড়ের বিপরীতে সেও চড় মারতে পারেনি? তবে কি সে চাইছিলো অন্ত্রীশা তাকে মারুক? মারতে মারতে তাকে শেষ করে দিক? কিন্তু কেন?

“” পাপড়ি ছাড় আমাকে। ভালো হবেনা বলে দিচ্ছি। এমন গায়ে পড়া মেয়েগুলো আমার একদম পছন্দ না!””
“” না ছাড়বোনা। আপনি আমার কল রিসিভ করেননি কেন? এই তিনদিনে আমার কি অবস্থা হয়েছে জানেন? আমি মানসিক সিক হয়ে পড়েছি। কাউকে কিছু বলতেও পারছিলাম না।””

পাপড়ি তার অভিমানির কথার সুরের সাথে আতিশকে আরো বেশি করে জড়িয়ে নিচ্ছে। পারলে সে আতিশের মধ্যে ডুকে যায়।

পড়ালেখা আর চাকরীর টেনশনে আতিশের জীবনে কোনো মেয়ের আগমন ঘটেনি। যেহেতু কোনো মেয়েকে নিয়ে তার চিন্তার রাজ্যে চিন্তারা বিচরন করেনি সেহেতু কোনো মেয়েকে ছোয়াও তার দ্বারা সম্ভব হয়নি। আর এভাবে জড়িয়ে ধরাও সে কল্পনা করেনি। তাই এমন হুট করে পাপড়ির জড়িয়ে ধরাটা আতিশের ভেতরটা নাড়িয়ে দিচ্ছে। পাপড়ির ঘেমে যাওয়া শরীর থেকেও এক অদ্ভুত ভালো লাগার সুঘ্রান পাচ্ছে সে। ভেতরে ভেতরে অনেককিছুই ভালোমন্দ করার চিন্তাভাবনারাও জমা হচ্ছে। সে চাইলেই যে এই বদ্ধ ঘরে অনেক কিছুই করতে পারে এটাও খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে। এই মুহুর্তে পাপড়ির মধ্যে ভালোমন্দ আলাদা করার বোধশক্তি নেই। সে এখন আতিশের ভালোবাসা চাই। আতিশের ভালোবাসায় ডুব দিতে চাই।

নিজের জাগ্রত হওয়া পুরুষত্বকে বিসর্জন দিয়ে পাপড়িকে ছাড়িয়ে নিলো নিজের থেকে। আতিশ চাইনা এই ছোট্ট পবিত্র মেয়েটার শরীরে কোনো কলংকের দাগ বসাতে। ওকে ভালোবাসারই কোনো যোগ্যতা নাই নিজের মধ্যে তাহলে তাকে বিয়ে নামক পবিত্র বন্ধনে কিভাবে জড়াবে? আর পালক? পালক কি কখনো মানবে এটা? বন্ধু হওয়ার সুবাদে সেতো জানে আমি কেমন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে আজ এখানে এসে থেমেছি?? কোনো ভাই চাইনা তার বোনকে নুন আনতে পান্তা ফুরায় এমন পরিবারে বিয়ে দিতে। সব ভাই চাই তার বোনটাকে একটা রাজপ্রাসাদের রানী বানিয়ে দিতে। যেখানে সে সুখ দুখের গল্প করতে করতেই দিনরাত পার করে দিবে। আর পাপড়ি? দেখতেও তো কোনো রাজকুমারীদের চেয়ে কম নয়!

আতিশ বেশ ঝাঝালো কন্ঠে ধমকিয়ে উঠলো পাপড়িকে,

“” তোর লজ্জা করেনা আমাকে জরিয়ে ধরতে? তোর কি মনে হয় তোর মতো পিচ্ছি মেয়েকে আমি বিয়ে করবো? একরাত আদর করলে পরের রাতে খুজে পাওয়া যাবেনা। তোর মতো শুটকি মেয়ে কখনোই আমার বউ হতে পারেনা। আমার তো নাদুসনুদুস বউ চাই। আর তুই তো বয়সেও অনেক ছোটো। দেখা যাবে তোকে শিখাতে শিখাতে বাসর রাত শেষ হয়ে ভোর হয়ে গেছে। পরে তো আমার বাসর রাতও করা হবেনা। সব থেকে বড় কথা তুই পালকের বোন মানে আমারও বোন। এক্ষুনি বাসায় যাবি বাকি আমি পালককে তোর কীর্তিকলাপ দেখানোর জন্য ডেকে আনবো?””

আতিশের কথায় পাপড়ি ওর দিকে তাকিয়ে রয়েছে। চোখে পানি টলমল করছে। মনে হচ্ছে চোখের দুটো পাপড়ি এক হওয়ার সাথে সাথে পুরো পৃথিবী ডুবে যাবে।

“” এখনো দাড়িয়ে আছিস কেন? আমার কথা কি তোর কানে ঢুকেনি?””

পাপড়ি অসহায়ভঙ্গিতে আতিশের হাতটা চেপে ধরে বললো,

“” আমি আপনার বোননা বউ হতে চাই। আমি সব শিখে নিবো। আমি বেশি বেশি খেয়ে মোটা হবো। আপনি যা বলবেন তাই শুনবো তবুও আমাকে এভাবে ফিরিয়ে দিয়েননা প্লিজ! আমি এ অবস্থায় বাসায় যেতে পারবোনা। দেখুন আমি তো এখনি নিশ্বাস নিতে পারছিনা। আর আপনি না থাকলে নিশ্বাস কিভাবে নিবো? আমি আপনাকে ভালোবাসি আতিশ!””

পাপড়ির মুখে ভালোবাসি কথা শুনতেই ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে দিয়েছে আতিশ। কিছুটা উগ্র হয়ে বললো,

“” তুই যদি এক্ষুনি আমার সামনে থেকে না যাস,তুই আর কোনোদিনও আমার মুখ দেখতে পারবিনা। কোনোদিনও না।””

আতিশ উল্টোদিকে ঘুরে দাড়িয়ে জোরে জোরে নিশ্বাস ছাড়ছে। তারও যে এখন পাপড়ির মতো নিশ্বাস আটকে আটকে আসছে! তারও যে চোখ ভিজে আসছে। তারও যে বুকের ভেতরে জ্বলেপুরে যাচ্ছে। ইচ্ছে করছে সমুদ্রের অথৈ জলে ডুবে মরে থাকতে। আর কত সে নিজের ব্যর্থতা বয়ে বেড়াবে? ব্যর্থতার গ্লানি টানতে টানতে সে আজ নিশ্ব হয়ে গেছে। একেবারে নিশ্ব হয়ে গেছে। আজ তার আফসোস হচ্ছে খুব বেশিই আফসোস হচ্ছে,তার গরীব ঘরে জন্ম নেওয়ার জন্য।

“”তুমি কি কিছু বলবে? নাকি এভাবে হনুমানের মতো তাকিয়ে থাকবে? আমি কল কেটে দিলাম।””
“” এই না না,অনি। তুমি এখন কল কেটে দিলে আমি বিষ না খেয়েও মরে যাবো। পরে,দেখবে নিউজ পেপারে প্রথম পৃষ্ঠায় আমার ছবি দিয়ে শিরোনাম দিয়েছে,বউয়ের ভিডিও কল কেটে যাওয়ায় বিষপানহীন যুবক মৃত!””
“” এইসব ফালতু ফালতু কথা তুমি কই পাও অরিদ? শুনলেই মেজাজ খারাপ হয়ে যায়।””
“” আজ দুদিন পর তুমি আমাকে কল দিলে তাও ভিডিও কল,এই রাগ দেখানোর জন্য? আমিতো ভাবলাম তুমি আমাকে ছাড়া থাকতে না পেরে এতক্ষনে পাগল হয়ে গেছো। যেমনটা আমি।””
“” আবার?””
“” আচ্ছা সরি বউ। এতো রাগ করো কেন? আমি যে তোমাকে ঘন্টা ঘন্টায় কল দিচ্ছি,ভিডিও অডিও,মেসজ,কোনোটারই তো রিপলাই করোনা। আজ নিয়ে তিনদিন হলো তোমাকে ছেড়ে পঞ্চগড়ে পড়ে আছি। তিনদিনে মাত্র তিনবার কথা হয়েছে তোমার সাথে তাও পাঁচমিনিটের বেশি হবেনা। এতো ব্যস্ততা কি নিয়ে জানতে পারি?””
“” আমার কি এখন তোমার কাছে জবাবদিহি করতে হবে অরিদ?””
“” আরে,তুমি তো আবার রেগে যাচ্ছো। আচ্ছা এসব বাদ। একটা চুমু দাওনা লক্ষী বউ!””

অনিকশা অরিদের আবদারকে তোয়াক্কা করেই বললো,

“” তুমি আসবে কবে?””
“” তুমি বললে আমি এখনি চলে আসবো। আসবো অনি?””
“” তোমার কাজ শেষ?””
“” না। কিন্তু তোমাকে কষ্ট দিয়ে কাজ করতে মন চাইছেনা। অনি, আমি চাকরীটা ছেড়ে চলে আসি?””
“” আসো। আমিও সবকিছু গুছিয়ে অরিদ্রাকে নিয়ে বাপের বাড়ি চলে যাবো।””

অনিকশার এমন উত্তরে অরিদের মুখটা চুপসে গিয়েছে। মন খারাপ করে বললো,

“” আচ্ছা আসবোনা।””

অরিদের অমন মন খারাপ হওয়া মুখটা অনিকশার দেখতে ইচ্ছে করছেনা। কলটা কেটে দিবে ভেবেও কাটলোনা। প্রসঙ্গ পাল্টিয়ে বললো,

“” খেয়েছো?””
“” হুম! তুমি খেয়েছো বউ?””
“” সত্যি খেয়েছো?””
“” না।””
“” তাহলে মিথ্যে বললে কেন?””
“” নাহলে তুমি খাওয়ার বাহানা দিয়ে কল কেটে দিবে। তোমাকে তো আমি চিনি। সবসময় আমাকে দুরে রাখার কৌশলে ডুবে থাকো। এতদিন পর কল দিলে অথচ আমার দিকে একটু ভালো করে তাকালেওনা। তাকালে ঠিক বুঝতে পারতে,তোমার থেকে দুরে থেকে এই তিনদিনেই আমার কি হাল হয়েছে! আমার বোধহয় আর, এই জন্মে তোমার ভালোবাসা পাওয়া হবেনা,অনি!””

অরিদের কথাগুলো অনিকশার শরীরে কাটা হয়ে বিধছে। অসহ্য ব্যথা অনুভব হচ্ছে তার। কাটাগুলো কি শরীর ভেদ করে তার হৃদপিন্ডেও ঢুকে গেছে? হয় তো তাই হবে। নাহলে চামড়াই ব্যথা না হয়ে হৃদপিন্ডে ব্যথা অনুভব হচ্ছে কেন?

কে বলেছে সে অরিদকে দেখেনি? দেখেছে,খুব ভালো করে দেখেছে। এই যে ছেলেটা না খেয়ে,না ঘুমিয়ে চোখের নিচে গর্ত করে ফেলছে এটাও সে ভালো করে দেখেছে। তার ফর্সাগালগুলো যে রোদে পুরে কালচে হয়ে গেছে,এটাও সে দেখেছে,তার ঠোটগুলো যে শুকিয়ে বিবর্ন হয়ে গেছে এটাও সে দেখেছে। কিন্তু সে যে দেখেছে এটাই তো দেখেনি অরিদ। এখানেই তো ফারাক রয়ে গেলো। বুকের ভেতরটা হাহাকার করছে অনিকশার। তার ভেতরটাও যে অরিদের জন্য পুরে সেটা কি সে কখনো প্রকাশ করতে পারবেনা? কোনোদিনও না? আর কত মানুষটাকে এভাবে দুরে রাখবে???

“” কিগো,ক্যামেরা অফ করে রাখলে কেন? ভালোবাসা দিবেনা বলে একটু দেখতেও দিবেনা? এমন করলে কিন্তু সত্যি সত্যি আমি সব ছেড়েছুড়ে চলে আসবো। আমি আর এভাবে থাকতে পারছিনা। একটু দুরে এসেছি বলে তুমি বেশি বেড়ে গেছো না? শুনেছি ভালোবাসার গভীরতা বাড়াতে মাঝে মাঝে নাকি প্রিয় মানুষের কাছ থেকে দুরে আসতে হয়। আমিতো তাও করেছি এবারও কি তোমার ভালোবাসা পাওয়া থেকে ব্যর্থ হবো? অনি? ও অনি,বউ ক্যামেরাটা অন করোনা।””
“” সারাক্ষন ভালোবাসা ছাড়া তোমার কি আর কোনো কথা নাই? করবো না অন। তুমি এভাবেই থাকো।””
“” যার যেটার অভাব সেতো সেটার পিছনেই ছুটবে,অনি! এতো রাগ না? এবার এসে নেইনা। তোমার সব রাগ আমি বস্তায় ভরে রেললাইনে রেখে আসবো। রেলগাড়ী পিষে দিয়ে যাক, আমার অনির সব রাগ!””
“” আমি রাখলাম!””
“” অনি!””
“” হুম!””
“” আমি আর এভাবে তোমার অবহেলা নিয়ে থাকতে পারছিনা। তুমি কি করবে আমি জানিনা। কিন্তু আমার অনির ভালোবাসা আমার চাই। ফিরে এসে যেন আমি আমার অনিকশা,আমার বউকে পাই। যার মধ্যে গিজগিজ করবে অরিদের জন্য ভালোবাসার!””

অরিদ তার কথা শেষ করে টুপ করে লাইন কেটে দিয়েছে। সে জানে এখন লাইন না কাটলেও অনিকশা লাইন কেটে দিতো। সবসময় তার ইচ্ছে রাখবেনা সে। এখন থেকে আমার ইচ্ছাও তোমাকে রাখতে হবে অনি। রাখতেই হবে!

অনিকশাকে বিদায় দেওয়ার পর পালকের সাথে আর কোনো কথা হয়নি অন্ত্রীশার! সে চাইও না কথা বলতে! যেকোনো জিনিসেরই একটা লিমিট থাকে। কিন্তু পালক সেটারও অতিক্রম করে ফেলেছে। যে জিনিসটার ধারে কাছেও কখনো যাইনা অথচ তার ধোয়াই কিনা আমার পেটে দিবে? কেন আমি কি করেছি উনাকে? সবসময় আমার সাথে এমন কেন করবেন উনি? এমনি এমনি তো একটু কথাও বলতে আসেনা যখন আসবে তখন তাকে ধোয়া নিয়ে আসতে হবে? তাও আবার অন্যের সামনে? এমন হুটহাট চুমু খেয়ে বসে যে আপু দেখে ফেলে! আমি নাহয় জানতামনা উনি চুমু খাবেন কিন্তু উনিতো জানতেন? তাহলে দরজাটা লাগিয়ে আসলে কি হয়? উনার নাহয় লজ্জা বলতে কিছু নেই,কিন্তু আমার তো আছে? বড় আপু হয় আমার। আমার আপু মানে তো উনারও আপু তাইনা???

শুয়ে একমনে হাজারও ভাবনায় ডুবে থাকলেও এবার যেন তার টনক নড়ে উঠেছে। শুয়া থেকে উঠে বসে পড়লো অন্ত্রীশা। আবার বিড়বিড় করে বললো,আরে তাইতো,এই ব্যাপারটা তো আমার মাথায় কখনো আসেনি। উনি যখনই আমার কাছে তখনি আপু চলে আসে। এটা কি সত্যি এক্সিতেন্টলি ঘটে নাকি কারো ইচ্ছাকৃত সাজানো ঘটনা?

টেনশনে অন্ত্রীশা বসা থেকে দাড়িয়ে পড়েছে। পায়চারী করতে করতে তার সাথে ঘটে যাওয়া সব ঘটনাকে পরপর সাজিয়ে নিচ্ছে। খুটে খুটে সব বুঝার চেষ্টা করছে। অজান্তেই অন্ত্রীশার মুখ দিয়ে বের হয়ে আসলো,তবে কি আপুর সাথে পালকের??? ওহ মাই গড! এটা কি করে হতে পারে? না আমি আর কিছু ভাবতে পারছিনা!

পালক সোফাতে শুয়ে শুয়ে অন্ত্রীশার কর্মকান্ড দেখছিলো। একবার বসছে তো আরেকবার শুয়ে পড়ছে। আবার শুয়া থেকে উঠে পায়চারী করছে। তো আবার গিয়ে বসে পড়ছে। এক পর্যায়ে অন্ত্রীশা জামা কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকতেই পালক বেশ অবাক হলো। হয়েছেটা কি এর?

অন্ত্রীশা সারারাত ছটফট করে কাটিয়ে দিয়েছে। সারারাতে একটা মিনিটের জন্যও চোখ বন্ধ করতে পারেনি সে। নানান প্রশ্ন তাকে জর্জরিত করেছে । আর এই সব প্রশ্নের উত্তর খোজার জন্যই সকাল সকাল অনিকশার বাসার উদ্দশ্যে রওনা দিয়েছে অন্ত্রীশা!

“” অনতি,তুই?””
“” এমন চমকে গেলে যে, আপুর বাসায় কি বোন আসতে পারেনা?””

অনিকশা মুখে হাসি ফুটিয়ে অন্ত্রীশাকে ভেতরে এনে দরজা লাগাতে লাগাতে বললো,

“” তা না বিয়ের পর তো এই প্রথম আমাদের বাড়ি এলি,তাও না জানিয়ে,তাই একটু অবাক হয়েছি।””
“” অরিদ ভাইয়ার কি খবর? আর অরিদ্রাকে দেখতে পাচ্ছিনা যে?””

ফ্যানটা ছেড়ে দিয়ে অন্ত্রীশার পাশে এসে বসেছে অনিকশা। ঠোটে আগের হাসিটা এখনো লেগে আছে।

“” ওর দাদা দাদির সাথে হাটতে বেড়িয়েছে। তুই তো ঘেমে গোসল করে ফেলেছিস। একটু বোস আমি সরবত বানিয়ে আনছি।””

অনিকশা উঠতে নিলেই অন্ত্রীশা ওর হাত চেপে ধরে বললো,

“” আপু,তোমার সাথে আমার কথা আছে৷ অনেক ইম্পর্ট্যান্ট কথা। একটু বসবে প্লিজ?””

চলবে
#ধোয়ার-নেশা

#রোকসানা-রাহমান

পর্ব (১৪)

ফ্যানটা ছেড়ে দিয়ে অন্ত্রীশার পাশে এসে বসেছে অনিকশা। ঠোটে আগের হাসিটা এখনো লেগে আছে।

“” ওর দাদা দাদির সাথে হাটতে বেড়িয়েছে। তুই তো ঘেমে গোসল করে ফেলেছিস। একটু বোস আমি সরবত বানিয়ে আনছি।””

অনিকশা উঠতে নিলেই অন্ত্রীশা ওর হাত চেপে ধরে বললো,

“” আপু,তোমার সাথে আমার কথা আছে৷ অনেক ইম্পর্ট্যান্ট কথা। একটু বসবে প্লিজ?””

অনিকশা অন্ত্রীশার চেপে ধরা হাতটার দিকে তাকিয়ে আবার অন্ত্রীশার দিকে তাকিয়েছে। ওর চোখমুখটা দেখেই বোঝা যাচ্ছে রাতে ঠিকমতো ঘুম হয়নি। আর এতো সকালে উঠে এ বাসায় আসা তাও কিছু না জানিয়ে হুট করে চলে আসা স্বাভাবিক নয়। কিছুতো একটা হয়েছে। কিন্তু কি? আর কিই বা এমন ইম্পর্ট্যান্ট কথা বলবে ও? পালককে নিয়ে কিছু বলবে না তো?? পালকের কথা মনে পড়তেই অন্ত্রীশার ভেতরটা ছেদ করে উঠেছে। যা থেকে সে দুরে থাকতে চাই তাই কেন বার বার তার কাছে এসে ল্যাপ্টে পড়ে?

অন্ত্রীশা আপুকে টেনে নিজের পাশে বসিয়ে দিয়ে বললো,

“” ছোটবেলা থেকেই তুমি আর আমি একসাথেই বেড়ে উঠেছি। তুমি যে আমাকে অসম্ভব ভালোবাসতে তা কারো অজানা নয়। তোমার দিনে রাতের চব্বিশটা ঘন্টায় আমাকে নিয়ে কাটতো। কারোর উপর রাগ থাকলেও আমার কাছে এসে ঝাড়তে,আবার খুব খুশি হলেও আমাকে জড়িয়ে ধরেই দুটো চুমু খেয়ে বলতে,আমার সব খুশির ভাগ আমি তোকে দিতে চাই,অনতি! কিন্তু হঠাৎ করেই তুমি চেন্জ হতে লাগলে,আমার থেকে দুরে দুরে থাকার চেষ্টা করতে। যেখানে তুমি আর আমি সবসময় একি রুমে দুজন দুজনাকে জড়িয়ে ঘুমাতাম সেখানেও তুমি অন্য রুমে থাকার বায়না করা শুরু করে দিলে। শুধু রাত না দিনের বেলাও তোমার রুম বন্ধ! আসতে আসতে তুমি আমাদের থেকে দুরে যেতে লাগলে। কিন্তু এই দুরত্বটা আমাদের কাছে অসহনীয় লাগলেও তোমার মধ্যে ছিলো অনাবিল সুখ। তোমার চালচলন,আচার ব্যবহার সবকিছুতেই চেন্জ। নিত্যনতুন জামা কাপড় কেনার বাহানায় শপিংমল,সাজগোজের বাহানায় পার্লার এমন কি রাত করে বাসায় ফেরাও শুরু করলে। এই জিনিসগুলোতে আমরা যখন অভ্যস্ত হয়ে পড়লাম ঠিক তখনি তুমি অরিদ ভাইয়াকে নিয়ে হাজির! বাড়িতে তুমি বড় মেয়ে ছিলে,আদর ভালোবাসাটাও তেমনি ছিলো। আমাদের কোনো ভাই না থাকার সুবাদে তোমার লুকিয়ে বিয়েটাকেও মেনে নিয়েছিলাম আমরা। এতে যেন আমাদের থেকে তোমার দুরত্ব আরো বেশি বাড়তে লাগলো। ছোটখাটো জিনিস নিয়ে রাগারাগি,ঝগড়া বিবাদ,সারাক্ষন তিকতিক্ষে মেজাজ তোমার।””
“” তুই এগুলো বলার জন্য এখানে এসেছিস,অনতি?””

অন্ত্রীশা অনিকশার আরেকটু কাছে চেপে এসে বললো,

“” নাহ,আপু। কিন্তু আমি যা বলতে চাই তারসাথে এগুলো রিলেটেড! একটু চুপটি করে শুনো আপু!””

অনিকশাকে কিছু বলতে না দিয়েই অন্ত্রীশা আবার বলতে শুরু করে দিয়েছে,

“” অরিদ ভাইয়াকে তুমি নিজে বিয়ে করেছিলে। তারমানে উনি তোমার ভালোবাসার মানুষ ছিলো। কেন করেছিলে এটা আমরা একবারও জানতে চাইনি। আব্বু চাইনি এটা নিয়ে কোনো ঝামেলা হোক তাই। কিন্তু এক দু মাস যেতে বা যেতেই তুমি অরিদ ভাইয়ার সাথে রাগারাগি করে সবকিছু উল্টোপাল্টে করে দিচ্ছিলে। তোমার বোন হওয়ার সুবাদেও আমি অরিদ ভাইয়ার দলেই কারন উনি তোমাকে প্রচন্ড ভালোবাসেন। আর যে সংসারে স্বামী তার বউকে এতো ভালোবাসে সে সংসারে ঝগড়া কিভাবে লাগতে পারে? এমন তো নই যে তুমি তাকে ভালোবাসোনা। যদি ভালো নাই বাসতে তাহলে তো বিয়েটা তুমি করতে না!””

অন্ত্রীশা কথা বলতে বলতে এক সময় অনিকশার কাধে মাথা রেখে হালকা জড়িয়ে নিয়ে আদুরী গলায় বললো,

“” তুমি এতে বছর ধরে যে সত্যটাকে ভেতরে পুষে রেখেছো সেটা আজ মুক্ত করে দাও আপু। যে সত্যটা তোমাকে এভাবে কঠোর থেকেও কঠোরতার রুপে বন্দি করছে সেটাকেও মুক্ত করে দাও। আমি তোমাকে হেল্প করবো,আপু!””

অন্ত্রীশাকে নিজের কাধ থেকে সরিয়ে শক্ত কন্ঠ ধারন করলো অনিকশা,

“” কি বলতে চাস,তুই? সেটা সোজা করে বল এতো পেচাচ্ছিস কেন?””

অন্ত্রীশা এবার জোর করে তার আপুকে জড়িয়ে নিয়ে বললো,

“” তুমি আর আমি আব্বুর আদর্শে বড় হয়েছি,আপু! আমি জানি তুমি কোনো অন্যায় কাজ করতে পারোনা। হয়তো তুমি কোনো অন্যায় কাজের মুখোমুখি হয়েছিলে,যেটা তোমাকে তোমার আদর্শ থেকে নড়াতে পারেনি। আর এই অন্যায় কাজটা তুমি করতে পারোনি বলেই আজ তুমি অন্ধকারে ডুবে আছো সাথে আমাদেরকেও ডুবিয়ে রেখেছো!””
“” অনতি,তুই কিন্তু…””
“” পালক আর তোমার মধ্যকার সম্পর্কের কথা জানতে চাই!””

অন্ত্রীশার এই ছোট্টবাক্যটাই যেন অনিকশাকে থমকে দিয়েছে। অনেকটা কাচের মতো শক্ত হয়ে গেছে সে। যাকে এখন একটু আঘাত করলেই হাজারটা টুকরো হয়ে ভেংগে পড়বে।

“” পালককে কি তুমি আগে থেকে চিনতে?””

অনিকশা নরম ধাচের শক্ত আয়নার মূর্তি হয়ে বললো,

“” পালক এন্ড আই ওয়াজ ইন এ রিলেশনশীপ!””

অনিকশার উত্তরে অন্ত্রীশার যতটা না বিস্মিত হওয়ার কথা ছিলো তার ছিটেফোটা ছাপ প্রকাশ পাইনি তার চেহারায়। বরংচ আরো সহজ স্বাভাবিকভাবেই বললো,

“” আমি পুরোটা শুনতে চাই আপু। বিস্তারিতভাবে। যাতে আমার চোখের সামনে তোমাদের লাভ স্টোরিটা ভেসে উঠে।””

অন্ত্রীশার এমন আবদারে থতমত খেয়ে যাচ্ছে অনিকশা। নিজের স্বামীর লাভস্টোরী অন্য মেয়েকে নিয়ে তাও মেয়েটা অন্য কেউ নয় তারই বড় বোন,এইভাবে স্বাভাবিক শান্ত হয়ে কিভাবে শুনতে চাই? ও কি আদৌ হুশে আছে নাকি বেহুশ হয়ে হুশে থাকার অভিনয় করছে??

অনিকশার কাধে ঝাকি দিতেই অনিকশার চোখের পলক পড়ছে।

“” আপু বলোনা,প্লিজ। আমি ওয়েট করছি!””
“” সেদিন ছিলো ১৪ ফেব্রুয়ারী,ভেলেন্টাইনস ডে! যেহেতু এটা সরকারী ছুটি না সেহেতু এই দিনে ভার্সিটি অফ থাকার কথা না। তোকে কলেজে নামিয়ে দিয়েই আমি আমি আমার ক্লাসের দিকে এগুচ্ছিলাম। আমার ফাইনাল ইয়ারের লাস্ট এক্সাম ছিলো ওইদিন। এক্সাম শেষে বের হতেই রিতালী আমার চোখ ধরে ফেলে! আমাকে চুপ করিয়ে আমাদের ক্যাম্পাসের মাঠের ঠিক মাঝখানে দাড় করিয়ে আমার চোখ থেকে হাত সরিয়ে ফেললো। আমি রিতালীকে কিছু বলতে যাবো তার আগেই চোখের ইশারায় বললো নিচের দিকে তাকাতে। আমি নিচে তাকাতেই,,,””
“” পালককে হাটু গেড়ে বসে থাকতে দেখলে তাইনা আপু?”‘
“” হুম!””
“” তারপর? কটিনিউ করো!””
“” তারপর আর কি ও প্রপোস করলো আর আমি রাজী হয়ে গেলাম!””

অন্ত্রীশা এতক্ষন সোফাতে শুয়ে শুয়ে চোখ বন্ধ করে অনিকশার কথা শুনছিলো। শোয়া থেকে উঠে বসে বললো,

“” প্রপোস করলো আর তুমি রাজী হয়ে গেলে? তুমি কি আগে থেকেই পালককে ভালোবাসতে,আই মিন পছন্দ করতে?””
“” তা জানিনা। কিন্তু আমাদের ভার্সিটির প্রত্যেকটা মেয়ের ক্রাশ ছিলো ও। আমি এটা সিওর ছিলাম আমার জায়গায় অন্য মেয়ে থাকলে সেও আমার মতো একি কাজ করতো!””
“” তুমি আমার আপু হয়ে পালকের কাছে সাধারন হয়ে গেলে? এটলিস্ট নিজের সেল্ফ এটিটিউটটা বজায় রাখার জন্য পরে জানাবে এটাও তো বলতে পারতে। আচ্ছা তারপর কি হলো?””
“” তারপর আরকি,ওর গভীর ভালোবাসার সমুদ্রে ডুব দিতে থাকলাম। ডুবতে ডুবতে এতোটাই অতলে চলে যাচ্ছিলাম যে তোদের কাছ থেকে দুরে সরে যাচ্ছিলাম। অবশ্য আমার দোষটা কিসের বল ও মানুষটাই এমন। যে কাউকে নিজের প্রেমে ফেলে দিতে পারে,যেমনটা তোর ক্ষেত্রেও ঘটেছে। এক চুমুতেই তুই বশ হয়ে গেলি!””

অনিকশা কথার ছলে অন্ত্রীশার গাল টিপে দিতেই অন্ত্রীশা বলে উঠলো,

“” তাহলে তুমি অরিদ ভাইয়াকে কেন বিয়ে করলে? পালক তো এখনো তোমাকে ভালোবাসে। উনি তো তোমাকে ধোকা দেইনি আপু,তুমি কেন দিলে?””

অন্ত্রীশার এই প্রশ্নটাই বেশ ঘাবড়ে গিয়েছে অনিকশা। ওর কাছ থেকে কিছুটা সরে এসে আমতা আমতা করে বললো,

“” ওর সাথে আমার কোনোকিছুতেই মিলছিলোনা। যার সাথে একটা বছরও আমি মানিয়ে নিয়ে চলতে পারিনি তার সাথে সারাজীবন কিভাবে থাকতাম?””
“” তাহলে যাকে কখনো ভালোইবাসোনি তার সাথে সারাজীবন থাকার দলিলে কিভাবে সাইন করলে আপু?””

অনিকশা কিছুটা রাগ নিয়ে অন্ত্রীশাকে ধমকে বললো,

“” তোর যা জানার ছিলো বলে দিয়েছি,আমার আর অরিদের মাঝখানে আসবিনা। তাহলে কিন্তু আমি…””
“” আপু,আমি আসি!””
“” আসি মানে? মাত্রই তো এলি,এখনি চলে যাবি?””
“”হুম!””

অন্ত্রীশা সোফা থেকে পার্স আর মোবাইলটা নিয়ে দরজার কাছটাতে এগুতেই অনিকশা ডেকে উঠলো,

“” অনতি!””

অন্ত্রীশা উল্টো দিকে মুখ রেখেই বললো,

“” কিছু বলবে আপু?””
“” পালক একটা নিষ্পাপ ছেলে,কোনো কালো ছায়া ওর উপর পড়েনি। একটা বছরে ওর সাথে আমার হাজার স্মৃতি জড়িয়ে আছে কিন্তু কোনো ঘনিষ্ঠতার স্মৃতি নেই। আমরা এমন সিচিউশনেও ছিলাম যেখানে আমাদের মধ্যে অনেককিছুই হতে পারতো কিন্তু ও আমার হাতটা পর্যন্ত ধরেনি। একেবারেই ধরেনি এটা বলবোনা,ক্ষেত্রবিশেষে প্রয়োজনে ধরেছিলো যে ছোয়ায় কোনো ভালোবাসা বা কামুকতা ছিলোনা,ছিলো দায়িত্ববোধ!””
“” সত্যি?””
“” হুম! ওর ভেতরের ভালোবাসাটা ছিলো পবিত্রায় ঘেরায় যেটা আমি ভাংতে পারিনি।””
“” তুমি উনাকে এখনো ভালোবাসো তাইনা আপু?””

অনিকশা অন্ত্রীশার কপালে দুটো চুমু খেয়ে বললো,

“” নারে পাগলী,ওর প্রতি আমার কখনোই ভালোবাসা জন্মায়নি। ওর ভালোবাসা আমাকে অবাক করতো। কিন্তু কেন জানি আমার ওকে ভালোবাসতে ইচ্ছে করতোনা। যদি ইচ্ছেই করতো তাহলে আমি কখনোই অরিদকে বিয়ে করতাম না। আমি তো এটাও জানি আমি যদি এখনো ভালোবাসার দোহায় দিয়ে ওর কাছে ফিরতে চাই ও খুশি মনে আমাকে বরন করে নিবে। কিন্তু আমি কেন যাবো?””
“” তারমানে তুমি বলতে চাচ্ছে উনি যে তোমাকে জেলাস করানোর জন্য এতকিছু করতো তুমি একটুও জেলাস হওনি?””
“” একদম না। তুই যে জেলাসের কথা বলছিস সে জেলাস ফিল করিনি। করলে এতদিনে অনেককিছুই ঘটে যেতো। তবে হ্যা,একটু একটু মন খারাপ হয়েছে। যেমনটা তোর কোনো ফ্রেন্ড অন্য কোনো মেয়ের সাথে বন্ধুত্ব করলে তুই আমার কাছে এসে কাঁদতি,তেমনটা। একটা বছর একসাথে চলাফেরা করেছি। হুট করে অন্য কারো সাথে বন্ধুত্ব করে নিলেতো খারােপ লাগবেই তাইনা?'”

সকালে রোদের তীব্রতাকে মাথায় না নিলেও এখন নিতে হচ্ছে। যেমনটা চুপচুপা ঘাম নিয়ে অনিকশার বাসায় পৌছে ছিলো,অন্ত্রীশা। এখনও সে সেরকমই চুপচুপা ঘাম নিয়েই বাসে বসে আছে। তারাহুড়োয় ছাতা নিয়ে বের হয়নি সে। আজ যে তাকে মাথা ব্যথারা খুব করে চেপে ধরবে খুব বুঝতে পারছে সে। বাসের জানালা দিয়ে বাইরের প্রকৃতিতে ডুবে যেতে যেতে আবারও ভাবনায় ডুব দিচ্ছে অন্ত্রীশা!

অনিকশা যে তাকে সবকিছু খুলে বলেনি সেটা সে তখনি বুঝতে পেরেছে। অন্ত্রীশারও কেন জানি ইচ্ছে হয়নি সবটা জানতে। কেন হয়নি? আপু বলতে ইততস্ততায় ভুগতো তাই? নাকি অন্য কারনে??? অন্ত্রীশা চোখ বন্ধ করেই হালকা হেসে উঠে।

আচ্ছা সত্যিই কি পালক আপুর সাথে ঘনিষ্ঠতাই আবদ্ধ হয়নি? যেখানে বাসের পাশের সিটের পাঁচ মিনিটের জন্য একজন অপরিচিত মেয়েকে দেখলেও পুরুষজাতিগুলো কামুকতায় ছটফট করে। নানাভাবে তাকে ছুয়ার বাহানা বানায়। কেউ কেউ তো প্রকাশেই! তাহলে সেখানে একটা ছেলে আর একটা মেয়ে এতোটা কাছাকাছি,এতোটা নিরিবিলি জায়গায় এতোটা সময় একসাথে থাকলে ছেলেদের মনে একটু অন্যকিছু করার ইচ্ছে জাগবে এটাই স্বাভাবিক। বরংচ না জাগাটাই অ স্বাভাবিক! তবে কি আপু আমাকে মিথ্যে বলেছে? যদি আমার জায়গায় অন্য মেয়ে থাকতো তাহলেও কি এই কথাগুলো বলতো?

কন্টাক্টরের ডাকে অন্ত্রীশা চোখ মেলে। বাস থেকে নেমেই রিকসায় উঠে পড়েছে।

বাসায় আসতেই পালকের মুখোমুখি হয়েছে অন্ত্রীশা। দুজনের চোখে চোখ পড়তেই পালক চোখ সরিয়ে গাড়ী নিয়ে বের হয়ে গেলো। পালকের গালে এখনো লালচে আভা দেখা যাচ্ছে। অন্ত্রীশা নিজের ডান নাতটা চোখের সামনে ধরতেই মু্খ থেকে বেড়িয়ে এলো,তোর হাতে এতো শক্তি? এভাবে একটা পুরুষের গালকে কলংকিত করে দিলি.??

সারাদিন একা ঘরে বসে থাকতে থাকতে বোর হয়ে যাচ্ছিলো অন্ত্রীশা। তার মধ্যেতো যখন তখন নানা ভাবনায় মাথাটাকে পাগল করে দিচ্ছে। কিছুটা রিলাক্স হওয়ার আশায় পাপড়ির রুমের দিকে পা বাড়িয়েছে অন্ত্রীশা!

এ বাসায় আসার পর থেকে পাপড়িকে রুম থেকে তেমন একটা বের হতে দেখেনি অন্ত্রীশা। মেয়েটাকে দেখলে মোটেও শান্তশিষ্ট লাগেনা। চেহারায় একটা চনচলতার ভাব রয়েছে।

অন্ত্রীশা দরজায় পরপর দুবার নক করতেই পাপড়ি দরজা খুলে দিয়েছে।

“” কিছু বলবে ভাবী?””
“” তোমার রুমে ঢুকা নিষেধ?””
“” নাতো,কেন?””
“” এইভাবে আমাকে বাইরে রেখেই সবসময় কথা বলোতো তাই ভাবলাম।””

পাপড়ি রুমের লাইট জ্বালিয়ে অন্ত্রীশাকে ভেতরে এনে বসিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গিয়েছে। এটা যেন বেশ অস্বাভাবিক মনে হলো অন্ত্রীশার কাছে। এখনো তো তেমন রাত হয়নি যে ও ঘুমাবে তার উপর সামনে ওর পরীক্ষাও। তাহলে লাইট বন্ধ করে কি করছিলো?

পাপড়ি ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে টাওয়াল দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে অন্ত্রীশার পাশে বসতেই,অন্ত্রীশা বললো,

“” তোমার চোখ,মুখের এই অবস্থা কেন? কাঁদছিলে?””

অন্ত্রীশার এমন হুট করে করা প্রশ্নে বেশ ঘাবড়ে যায় পাপড়ি।

“” কেন কাঁদছিলে,পাপড়ি?””

পাপড়ি অন্ত্রীশার কাছ থেকে উঠে যেতে নিলেই ওকে জোর করে বসিয়ে দিয়ে অন্ত্রীশা বলে উঠলো,

“” এই বয়সে মেয়েরা দরজা বন্ধ করে কেন কাঁদে সেটা মুখ ফুটে বলতে লাগেনা। আমি কি তোমাকে দুটো কথা৷ বলবো? তুমি মন দিয়ে শুনবে?””

পাপড়ি মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁবোধক উত্তর দিলেও অন্ত্রীশা কিছু না বলেই বেড়িয়ে এলো। মেয়েটা আরেকটু কেঁদে হালকা হোক তারপর নাহয় বলা যাবে।

পালক অফিস থেকে বেশ রাত করেই ফিরেছে।অন্ত্রীশার মুখোমুখি হওয়ার ভয়ে। কিন্তু রুমে ঢুকেই খালি বিছানা পেয়ে সে হতাশ। তারমানে ও ঘুমোয়নি? তাহলে কোথায় গেলো? বারান্দার দিকটাই তাকাতেই চাঁদের আলোই অন্ত্রীশার ছায়া দেখতে পাচ্ছে। এতোরাতে ওখানে কি করছে? রাতে অমন ছটফট করে সকালে কোথায় বেড়িয়েছিলো? ওর মনে চলছেটা কি??

ভাবনাতুর চেহারায় ফ্রেশ হওয়ার জন্য ওয়াশরুমের দরজায় হাত পড়তেই একটা চিরকুট দেখতে পেলো পালক। ছোট্ট করে লিখা,

**সরি!!

ইতি
অন্ত্রীশা

যেটা টেপ দিয়ে দরজায় আটকানো। পালকের চিরকুটে চোখ পড়তেই চোখ,মুখ উজ্জ্বল হয়ে যাচ্ছে।

পালক ফ্রেশ হয়ে জামাকাপড় চেন্জ করে বারান্দার দিকে পা বাড়িয়েছে। অন্ত্রীশা পাশে এসে দাড়িয়েছে সে!

নিজের পাশে পালকের উপস্থিত পেয়ে অন্ত্রীশা রুমের দিকে পা বাড়াতেই ওর হাত আকড়ে ধরেছে পালক,

“” আর কিছুক্ষন থাকোনা,অন্ত্রীশা। তোমার সাথে গল্প করতে ইচ্ছে করছে। শুনবেনা আমার গল্প????

চলবে

ধোয়ার-নেশা পর্ব (১১ + ১২)

0

#ধোয়ার-নেশা

#রোকসানা-রাহমান

পর্ব (১১ + ১২)

পালক অন্ত্রীশার কথার উত্তর না দিয়েই নিজের ডান হাতটা ওর শাড়ীর কুচিটা খামচে ধরলো। অন্ত্রীশার চোখে চোখ রেখেই শাড়ীর কুচি টেনে খুলে ফেললো!

পালকের এমন আকস্মিক কান্ডে অন্ত্রীশা ভুত দেখার মতো চমকে গিয়েছে,চোখদুটো বড়বড় করে পালকের দিকে তাকিয়ে আছে,

পালক ছোট্ট হাসি নিয়ে বললো,

“” আমার কি আরো কিছু করতে হবে,অন্ত্রীশা?””
“” নাহ! আমাকে করতে হবে।””

পালক একটা ব্রু উচু করে গম্ভীর গলায় বললো,

“” তোমাকে করতে হবে মানে?””

অন্ত্রীশা নিজের শরীরের সবটুকু জোর দিয়ে পালককে ধাক্কা দিয়ে নিজের উপর থেকে সরিয়ে বিছানায় ফেলে দিলো। অন্ত্রীশার ধাক্কার জন্য পালক মোটেও প্রস্তুত ছিলোনা। বিছানায় হাল্কা গড়িয়ে গিয়ে কাত হয়ে পড়েছে। অন্ত্রীশা নিজের খোলা শাড়ীকে পেঁচিয়ে নিয়ে পালকের উপর উঠে,ঠিক ওর পেটের উপর বসে পড়লো।

“” অন্ত্রীশা কি করছো?””
“” আপনি কিছু করে দেখালেন তো আমারও কিছু করে দেখানো উচিত। নাহলে তো আপনাকে অপমান করা হবে,তাইনা?””

অন্ত্রীশা নিজের কথাটা শেষ করতেই পালককে একটা চোখ মেরে দিলো। তাতে পালক হা করে অন্ত্রীশার দিকে তাকিয়ে আছে। কিন্তু বেশিক্ষন হা করে থাকতে পারেনি। তার আগেই নিজের উপর অন্ত্রীশার হামলা এসে পড়েছে।

অন্ত্রীশা নিজের দুটো হাত দিয়ে পালকের শার্ট টেনে ছিড়ে ফেলতে শুরু করেছে। আমাকে আপনার কথা শুনাতে হবে তাইনা? আমাকে শাড়ী পড়তে দিবেননা? আমার উপর জোর দেখানো হচ্ছে? সামান্য একটা সম্পর্ক তৈরী করতে চেয়েছিলাম তার বিপরীতে ডিরেক্ট না করে দিয়েছেন! এতো ভাব আসে কোথা থেকে? সব কিছুতে নিজের কর্তৃত্ব ফুটানো? নিজে যা বলবেন তাই করতে হবে?

পালক অন্ত্রীশার পাগলামীকে আটকাতে চাচ্ছে। ওর দুটো হাত চেপে ধরে থাকলেও অন্ত্রীশাকে দমাতে পারছেনা। হঠাৎ করে এতো শক্তি ওর মধ্যে এলো কি করে?

অন্ত্রীশা এতক্ষন চোখ মেলে থাকলেও এবার চোখ বন্ধ করে নিলো। তার মনে হচ্ছে,চোখ মেলে থাকাই শক্তির ঠিকমতো ব্যবহার করতে পারছেনা। চোখ বন্ধ করলে আরেকটু বেশি শক্তি প্রয়োগ করতে পারবে। চোখ বন্ধ করেই পালকের শরীরে খামচিয়ে শার্টের অবস্থা বেহাল করে দিচ্ছে। বোতামগুলোও আলগা হয়ে এসে,খুলে যাচ্ছে।

“” আরে কি করতে চাচ্ছো কি তুমি? আমার শার্ট ছিড়ছো কেন?””

অন্ত্রীশা চোখ বন্ধ করেই উত্তর দিলো,

“” আপনাকে ধর্ষন করবো তাই!””
“” হেয়াট,কি উডভুক কথা বলছো? থামো বলছি,নাহলে কিন্তু খুব খারাপ হয়ে যাবে,অন্ত্রীশা!””
“” আমি তো চাই ই খারাপ হোক। দেখি আপনি কত খারাপ হতে পারেন।””

অন্ত্রীশার পাগলামী আর সহ্য হচ্ছেনা পালকের। বিরক্ত হচ্ছে,একি সাথে রাগও হচ্ছে। মেয়েটা কি হঠাৎ করে পাগল হয়ে গেলো? সত্যি সত্যিই ধর্ষনের মতো বাজে কাজটা ওকে দিয়ে সম্ভব? তার কি এটাও দেখা বাকি ছিলো? বউয়ের হাতে স্বামী ধর্ষন! আচ্ছা যদি সত্যি সত্যিই এমন হয় তাহলে কি হবে?

পালক আর কিছু ভাবতে পারছেনা। একটা মেয়ের কাছে সে কিছুতেই ধর্ষন হতে চায়না! পালক অন্ত্রীশার হাত ধরে ওকে সরানোর চেষ্টা করছে। দুজনের ছুটাছুটি,হাতাহাতিতে দুজনেই গড়িয়ে ধপ করে মেঝেতে পড়ে গেলো। তবুও দস্তাদস্তি থামেনি!

“”আম্মু,দেখো খালামনিলা মালামালি খেলছে। খালামনি তো পালছেনা,তুমি একতু হেলেপ কলো! নাহলে আংকেলটা জিতে যাবে!!””

অরিদ্রার কথায় অনিকশা, বিছানার অপর পাশে গিয়ে দাড়াতেই চোখ,মুখ কুচকে ফেললো!

দস্তাদস্তিতে পড়ে গিয়ে পালক অন্ত্রীশার উপরেই ছিলো। ওর হাতদুটো চেপে ধরে ওকে আটকিয়ে কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনি অরিদ্রার আগমন ঘটে। সাথে সাথে অনিকশার!

পালক দ্রুত অন্ত্রীশাকে ছেড়ে দাড়িয়ে পড়লো। শার্টের বোতাম লাগাতে লাগাতে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়িয়েছে। এই প্রথম সে অনিকশার সামনে লজ্জা পাচ্ছে। খুব বেশি বিব্রতিকর সিচুয়েশনে পড়ে গিয়েছে। কিন্তু কেন? আমি তো সবসময় চেয়েই ছিলাম ওর সামনে অন্ত্রীশাকে নিয়ে ঘনিষ্ঠতা দেখাতে। তাহলে আজ কেন এমন লাগছে? তবে কি এবারের ঘটনাটা কৃত্রিমভাবে তৈরী ছিলোনা তাই? ওয়াশরুমের আয়নার সামনে দাড়াতেই পালক হেসে উঠে,অন্ত্রীশা আমাকে ধর্ষন করতে সফল না হলেও আমার শার্টকে ঠিক ধর্ষন করে ফেলেছে!

অন্ত্রীশাও বেশ লজ্জিতভাবে নিজের শাড়ী গুটিয়ে ঠিক করার বাহানায় নিজেকে আড়াল করার চেষ্টা করছে। ছি! ছি!!ছি!!! আমার সব লজ্জিত ঘটনাগুলো এমন বাজেভাবে শেষ হয় কেন? সবসময় আপুর সামনেই পড়তে হয় কেন?

অনিকশা,অন্ত্রীশার কাছে এসে ওর শাড়ী নিজের হাতে নিয়ে বললো,

“” হয়েছে,আর লজ্জা পেতে হবেনা!””

এবার যেন অন্ত্রীশার চোখ,মুখ সব লাল হয়ে আসলো। তার আপুটা তাকে লজ্জা পেতে ও দেখে ফেলেছে।

“” এভাবে শুয়ে থাকলে তোর ইন্টারভিউ কে দিবে? আমি দিয়ে দিবো?””

আতিশ চোখ মেলেই পালককে হাতভর্তি ফলফলাদিসহ দাড়িয়ে থাকতে দেখলো।

আতিশের পাশে ওগুলো রেখে ওর পাশে নিজেও শুয়ে বললো,

“” জ্বর বাধালি কিভাবে?””
“” আমি গরমে হাপিয়ে উঠছি,পালক। আমাকে ছাড়!””
“” সামান্য জ্বরের জন্য তুই আমাকে দুরে ঠেলে দিচ্ছিস? এই তোর বন্ধুত্ব? ছি! আতিশ,তুই তো দেখি…””
“” হ্যা,আমি বন্ধু নামের কলংক। রাগে আমার গরম দ্বিগুন হারে বেড়ে যাচ্ছে। আজকে আমার কত ইম্পর্ট্যান্ট ইন্টারভিউ ছিলো জানিস? এই চাকরীটা আমার নিশ্চিত হতো! এই জ্বরের জন্য আমার চাকরীটা গেলো!””

পালক আতিশের পায়ের উপর নিজের বা পাটা উঠিয়ে কিছুটা আয়েশ করে শুয়েছে। জ্বরটা যে খুব জোরালোভাবেই ওকে চেপে ধরেছে তা ওর শরীরের তাপমাত্রায় বুঝা যাচ্ছে।

“” ডক্টর দেখিয়েছিস?””
“” না।””
“” কেন?””
“” এমনি!””

পালক আতিশের মুখটা নিজের দিকে ঘুরিয়ে বললো,

“” আমার অফিসে জয়েন করছিস না কেন? আর কতগুলো জয়েনিং লেটার পাঠাতে হবে? তোর কি মনে হয় তোকে লেটার পাঠানোই আমার প্রধান কাজ? আমি বসে বসে শুধু তোর লেটারই লেখে যাবো?””
“” তুই জানিস আমি কেন জয়েন হচ্ছিনা। তবুও কেন ঐ কথা বলছিস?””
“”বন্ধু হয়ে বন্ধুর অফিসে কাজ করলেই কি ছোট হয়ে যায়?””
“” অন্যদেরটা জানিনা,কিন্তু আমার কাছে হয়ে যায়।””
“” আরে বাবা,আমি তো তোকে এমনি এমনি চাকরী দিচ্ছিনা। তোর যথেষ্ট যোগ্যতা আছে,তোর মতো লোকের আমাদের অফিসে প্রয়োজন!””
“” আমার যোগ্যতা শুধু তোর চোখেই ধরা পড়লো? অন্যদের চোখে পড়ছেনা কেন? যদি তেমনি হতো তাহলে এখনো আমি বেকার পড়ে থাকতাম না!””
“” আতিশ,তুই কিন্তু…””
“” তুই যদি এটা বলার জন্যই এসে থাকিস,তাহলে এখন যেতে পারিস। আমি এ ব্যাপার নিয়ে কোনো কথা বলতে চাইনা।””

আতিশ রেগে যাচ্ছে বুঝতে পেরে পালক ওকে আরেকটু জড়িয়ে নিয়ে বললো,

“” তোর মতো বন্ধু সবার ভাগ্যে জোটেনা। আমি কত লাকিরে,আতিশ!””
“” আমি কি তোর বউ? এভাবে ঝাপটে ধরে আছিস কেন? নাকি বউয়ের ঘোর এখনো কাটেনি? দেখি ছাড় আমাকে!””
“” না,ছাড়বোনা। তোকে জড়িয়ে ধরলে আমি যে প্রশান্তি পাই তা বউকে জড়িয়ে ধরলেও পাবোনা।””
“” তুই যদি আমার সব প্রশান্তি নিয়ে নিস,আমার বউয়ের কি হবে? পরে তো আমার বউ প্রশান্তির অভাবে দুদিনেই ভেগে যাবে,পালক!””
“” তোর বিয়ে করা লাগবেনা। তোর এতো বিয়ের শখ থাকলে আমাকে করে নিতে পারিস!””

আতিশ,পালকের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললো,

“” পাগল নাকি? তোর নাহয় বউয়ের আদর লাগবেনা। কিন্তু আমার তো লাগবে। চাকরীটা পেলেই বউ নিয়ে চলে আসবো!””

পালক শুয়া থেকে উঠে বসে পড়ে। গলার কাছটাতে থাকা বোতামটা খুলে নিতে নিতে বললো,

“” এমনভাবে বলছিস যেন মেয়েরা তোকে বিয়ে করার জন্য এক পা নয় দুপা তুলে দাড়িয়ে আছে!””
“” হুম!””
“” হুম কি? তুই কি লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম করছিস?””

পালকের উত্তরে আতিশ ছোট একটা নিশ্বাস ছাড়লো। তার আবার প্রেম!

অন্ত্রীশাকে পালকদের বাসায় রেখেই পালক বেড়িয়ে পড়েছিলো। বেশ কিছুক্ষন শ্বাশুড়ির সাথে গল্প চালিয়েও যেন মনটা ভালো করতে পারছেনা অন্ত্রীশা! একেই তো নিজের বাড়ির সব ভালোবাসার মানুষগুলোকে ছেড়ে এসেছে। তার উপর নিজের বরটার ও বাসায় আসার নাম নেই। ও জানে বাসায় থাকলেও হয়তো নিজেদের মধ্যে তেমন কোনো কথা,তেমন কোনো স্পেশাল মুহুর্ত,কোনো দুষ্টুমী খেলায় তারা মেতে উঠতোনা। তবুও মানুষটা চোখের সামনে থাকলেও ভেতরে ভেতরে ভালো লাগা কাজ করে। আচ্ছা উনিকি এমনি থাকবেন? আমার সাথে এমন অবহেলাই করে যাবেন? নাকি অন্য কিছু হওয়ার সম্বাবনা আছে?? উনার জায়গায় যদি অন্য কেউ হতো তাহলে কি হতো? সে কি আমাকে কোনো ভালেবাসার রাজ্যে নিয়ে যেতো? নাকি আমি এখনকার মতো অন্য পুরুষের ভালোবাসার রাজ্যে যেতেও এমন ছটফট করতাম???

অন্ত্রীশা পালকের রুমের বারান্দায় দাড়িয়েই ভাবনায় ডুবে আছে। তবে এই বারান্দাটা তার রুমের বারান্দার মতো খোলা নয়। কালো গ্রিল দিয়ে আটকানো। নিচে দু চারটা টপে ফুলের গাছ আছে,ফুলও ফুটে আছে। সবগুলোই গোলাপফুল। কিন্তু প্রত্যেকটা গাছে ভিন্ন ভিন্ন কালারের ফুল ফুটে আছে। অন্ত্রীশার ইচ্ছে হলো সব কয়টা গাছ থেকে একটা করে ফুল ছিড়ে নিজেকে সাজাতে। ফুলে হাত দিয়েও ছিড়লোনা। সে কেন সাজবে? আর কার জন্যই বা সাজবে? তার সাজ দেখার জন্যতো উনার সময়,ইচ্ছে,রুচি কিছুই নেই।

“” তুমি আমাকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছিলে কেন?””

পালকের কন্ঠে অন্ত্রীশা পেছনে ঘুরে তাকালো। সাদা হাফ হাতার টি-শার্ট পড়ে আছে। চাঁদের আলোতে সাদা টি-শার্টটা আরো বেশি আলো দিচ্ছে। এমন একটা ভাব যেন চাঁদ তার সব জোসনা উনার টি-শার্টেই ঢেলে দিয়েছেন।

পালক তার পড়নের ট্রাউজারের পকেটে হাত ঢুকিয়েই অন্ত্রীশার পাশে এসে দাড়িয়ে বললো,

“” সেদিন তোমার সাথে যা ঘটেছিলো তা অন্য মেয়ের সাথে ঘটলে কখনোই বিয়েতে রাজি হতোনা। তুমি কেন রাজী হলে? তোমাদের ফ্যামিলি যথেষ্ট কনজার্টিভ,শিক্ষিত এবং মর্যাদাপুর্ন,আর সেই ফ্যামিলির মেয়ে হয়ে এমন ডিসিশন কিভাবে নিলে তাও এতো সহজ ও দ্রুততার সাথে?””
“” হঠাৎ এই প্রশ্ন?””
“” হঠাৎ নয়,বিষয়টা আমার মাথায় শুরু থেকেই ছিলো। কিন্তু প্রশ্ন করার মতো পরিবেশ সৃষ্টি হয়ে উঠেনি…””
“” আজ বুঝি সেই পরিবেশ সৃষ্টি হয়ে গেছে? তা কিভাবে হলো? আর আপনার সেই পরিবেশটা কেমন শুনি?””
“” তুমি কথা ঘুরাচ্ছো কেন? আমি আমার কৌতুহল থেকে প্রশ্নটা করেছি,ইচ্ছে হলে উত্তর দিবে নাহলে নাই!””

অন্ত্রীশা এতক্ষন আকাশের দিকে তাকিয়ে কথা বললেও এবার পালকের দিকে তাকিয়ে বললো,

“” আপনি দেখতে আমার প্রেমিকের মতো তো তাই ভাবলাম আপনাকে বিয়ে করে প্রেমিকের শোক কাটাবো!””

অন্ত্রীশা তার উত্তর দিয়ে সেখান থেকে পদত্যাগ করছে। পালক তখনো অন্ত্রীশাকে দেখেই যাচ্ছে। অন্ত্রীশার থেকে চোখ সরিয়ে সেও ভাবনায় ডুব দিলো। নিয়তি আমাদের কোথায় নিয়ে এসেছে,একজন প্রেমিকের শোক ভোলার জন্য আমাকে বিয়ে করেছে,আর আমি? আমি কেন ওকে বিয়ে করেছি? অনিকশাকে ভুলার জন্য নাকি ওর সামনে নিজের কষ্টটাকে দেখানোর জন্য নাকি ওকে হিংসে জ্বলতে দেখার জন্য??

পালকের ভাবনার ঘোর কাটলো,রুমের ভেতর থেকে আসা চিকন ক্যাচক্যাচ শব্দে! মনে হচ্ছে কেউ কোনো ভারী জিনিস হ্যাচড়িয়ে সরানোর চেষ্টা করছে। শব্দটা নিজের রুম থেকে আসছে বুঝতে পেরেই পালক রুমের দিকে পা বাড়িয়েছে।

ভেতরে ঢুকেই সে অন্ত্রীশাকে দেখতে পেলো। সে লম্বা সোফাটা বাইরে থেকে ভেতরে আনার চেষ্টা করছে। কিন্তু সোফার একটা কোনা দরজায় আটকে থাকায় সে কিছুতেই ভেতরে ঢুকাতে পারছেনা। ভেতরে ঢুকাবে কি নাড়াতেও পারছেনা।

গলার ওড়নাটা গলা থেকে খুলে কাঁধের দিক থেকে বাকা করে নিয়ে কোমড়ে বেধেছে,অন্ত্রীশা! সামনে থেকে দেখতে না পেলেও তার মনে হলো এটা কোনো বিবাহিত মেয়ে না,সদ্য যৌবনে পা দেওয়া যুবতী নারী।

পালক অন্ত্রীশার কাছে এগিয়ে বললো,

“” কি করছেন? ব্যথা পাবেন তো। এতো ভারী জিনিস টানাটানি করছেন কেন?””

অন্ত্রীশা বিরক্ত নিয়ে পালকের মুখোমুখি হয়ে দাড়ালো। জোরে জোরে নিশ্বাস ছাড়তে ছাড়তে চোখের সামনে পড়ে থাকা চুল গুলো সরিয়ে বললো,

“” আপনাকে টানাটানি করতে পারছিনা তাই!””
“” মানে?””
“” এতো প্রশ্ন করছেন কেন? আপনাকে উত্তর দিতে গিয়ে আমার সব শক্তি শেষ হয়ে যাচ্ছে।””
“” উত্তর দিলে শক্তি শেষ হয়ে যায়?””
“” উফ! আবার প্রশ্ন করছেন কেন? আমাকে একটু হেল্প তো করতে পারেন।””
“” কিন্তু এটা দিয়ে কি করবে?””
“” কাবাডী খেলবো।””
“” কাবাডী!””
“” জ্বী,আমার কি কাবাডী খেলাও নিধেষ?””

অন্ত্রীশার দিক থেকে মনোযোগ সরিয়ে সোফাতে হাত দিলো পালক। ওর নির্দেশানুযায়ী রুমের এক সাইডে রাখা হয়েছে সোফাটা।

অন্ত্রীশা বিছানা থেকে একটা বালিশ সোফাতে রাখতেই পালক বললো,

“” তুমি কি সোফাই ঘুমাবে?””
“” না,আপনি ঘুমাবেন। আমারতো আপনার বিছানাটাই বেশ পছন্দ হয়েছে।””
“” কিন্তু তুমিতো বলেছিলে কাবাডী খেলবে!””
“” খেলবোই তো সময় হলে ঠিক খেলবো। আপাতত আপনাকে ঘুমানোর জন্য ধার দিলাম!””

পালক সোফা থেকে বালিশটা নিয়ে মেঝেতে ফেলে বললো,

“” আমি ধার করা জিনিস পছন্দ করিনা। তোমার জিনিস তুমিই রাখো।””
“” আমার জিনিস কেউ ফেরত দিক এটাও আমার পছন্দ না।””
“” তুমি আবার ঝগড়া করতে চাচ্ছো?””
“” আপনি যদি চান আমি ঝগড়া করি তাহলে করতে পারি। আমি তো আপনার ক্রীতদাসী। আপনার হুকুম পালন করা আমার জন্য ফরজ!””

অন্ত্রীশাকে কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলো পালক। চুপচাপ সোফায় শুয়ে পড়ে।

আতিশের অসুস্থতার জন্য আজকে পড়াতে আসেনি পাপড়িকে। একেতো তাকে দেখতে পাইনি তার উপর অসুস্থ শুনে পাপড়ির ঘুম আসছেনা। ভেতরটা কেমন কেমন জানি তেতো হয়ে আসছে। যতক্ষননা আতিশের দেখা পাবে ততক্ষন কি তার ভেতরের তেতো ভাবটা যাবে? কখন দেখবে সে তার আতিশ ভাইকে? কাল যদি সুস্থ না হয় তাহলেতো কালও দেখা হবেনা। তাহলে কি কাল আমি উনাকে গিয়ে দেখে আসবো? কিন্তু উনি যদি রেগে যান? আমাকে দেখলেই তো উনার রাগ কড়কড় করে। পাপড়ি ছটফট করতে করতে বিছানা নষ্ট করে ফেলছে,তবুও চোখে ঘুম আসছেনা।

আতিশকে কল দেওয়ার চিন্তায় ফোনটা হাতে নিতেই দেখলো ২ টা বেজে ৪২। এতো রাতে কল দেওয়া ঠিক হবেনা ভেবে ফোনটা আবার আগের জায়গায় রেখে দিলো। আর ঠিক তখনি দরজায় নক পড়লো। এতো রাতে আবার কে? পুনরায় নক পড়তেই পাপড়ি উঠে দরজার কাছে এগুচ্ছে।

“” ভাবী তুমি? এতো রাতে? কোনো সমস্যা?””
“” তোমার কাছে কেচি হবে?””
“” কেচি?””
“” আরে সিজার। হবে?””
“” এতো রাতে সিজার দিয়ে কি করবে?””
“” থাকলে বলো নাহলে চলে যাই””

পাপড়ির কাছ থেকে কেচি নিয়েই অন্ত্রীশা নিজের রুমে ফেরত এসেছে। দরজা বন্ধ করে ধীর পায়ে পালকের উপর উঠে বসলো। পালক উপুত হয়ে শুয়ে থাকায় বেশ সুবিধাই হলো অন্ত্রীশার। বাম হাত দিয়ে আলতোভাবে টি-শার্টের কিনার ধরে ঠিক মাঝ বরাবর কেচি দিয়ে কাটা শুরু করে দিয়েছে!

চলবে

#ধোয়ার-নেশা

#রোকসানা-রাহমান

পর্ব (১২)

পাপড়ির কাছ থেকে কেচি নিয়েই অন্ত্রীশা নিজের রুমে ফেরত এসেছে। দরজা বন্ধ করে ধীর পায়ে পালকের উপর উঠে বসলো। পালক উপুত হয়ে শুয়ে থাকায় বেশ সুবিধাই হলো অন্ত্রীশার। বাম হাত দিয়ে আলতোভাবে টি-শার্টের কিনার ধরে ঠিক মাঝ বরাবর কেচি দিয়ে কাটা শুরু করে দিয়েছে!

কাটার পর্ব কিছুদুর এগুতেই পালক হালকা নড়ে উঠে। তাতে যেন অন্ত্রীশা বেশ মজাই পাচ্ছে। পালক আবার চুপ করে গেলে অন্ত্রীশাও তার কাজ চালিয়ে গেলো। কিছুক্ষনের মধ্যেই পালকের সাদা টি-শার্টটাকে দু টুকরো করে ফেলেছে অন্ত্রীশা। দুটো পার্টকে দুপাশে ঠেলে দিয়ে পালকের পিঠটাকে নগ্ন করে নিয়েছে। পিঠের দিকে বেশ কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে অন্ত্রীশা ছোট্ট করে হাসি দিলো। যে হাসির মধ্যে রয়েছে প্রাপ্তির ছায়া!

পালকের পিঠে আলতো করে দুটো চুমু খেয়ে নিয়েছে অন্ত্রীশা। তারপর নিজের দুহাত পালকের পিঠে দুপাশে মেলে দিয়ে নিজেও উপুত হয়ে শুয়ে পড়লো। আমাকে দুরে ঠেলে দিয়ে যে কষ্টগুলো দিচ্ছেননা? সবকিছুর শোধ আমি তুলবো কিন্তু ঘুমন্ত অবস্থায় নয় জাগ্রত অবস্থায়। আপনাকে আমার ভালোবাসার কাঠগড়ায় দাড় করিয়ে ফাসির রায় শুনাবো। যেখানে আমি নিজেই জজ,উকিল এমন কি আমি নিজেই মক্কেল। আপনাকে সেখান থেকে কেউ ছাড়িয়ে আনতে পারবেনা৷ কারো ছায়া সেখানে পড়তে দিবোনা,হুহ!

কারো গরম নিশ্বাসের শব্দ পালকের ঘুমটাকে হালকা করলেও কিছুটা মাতালতা জাগিয়ে দিচ্ছে। এক ভালোলাগা সুড়সুড়ির সাথে তার অবচেতন মনকেও জাগ্রত করে দিচ্ছে। সেই অবচেতনতার মধ্য দিয়েই পালক নড়ে উঠেছে। চোখ দুটো বন্ধ করে নিজের একটা হাত দিয়ে অন্ত্রীশার বা হাত,যেটা পালকের বুক স্পর্শ করে জড়িয়ে ছিলো,সেটা টেনে নিচ্ছে। ঠোটের কাছটাতে নিয়ে ভোরের ঘুমজড়িত বাসি ঠোটে চুমু খেয়ে বললো,

“” পত্রীকন্যা,এভাবে আমার কাছে আসতে এতো সময় কেন নিলে? জানো আমার কতটা কষ্ট হয়েছে তোমাকে ছাড়া প্রতিটা সেকেন্ড,মিনিট,ঘন্টা কাটাতে? আমি কতরাত ছটফট করেছি তোমাকে ছোয়ার জন্য? তোমার শরীরের উষ্ণ ছোয়া নিয়ে জড়িয়ে নেওয়ার জন্য?””

পালক অন্ত্রীশার হাতটা নিজের চেখগুলোতে ছুয়িয়ে বললো,

“” জানো এই চোখগুলো কতটা অসহায় হয়ে পড়েছে?””

পালকের ঠোটের ছোয়া পেতেই অন্ত্রীশার ঘুম উধাও হয়ে গিয়েছে। চুপ করে পালকের পিঠের উপর শুয়ে থেকে পালকের কথা শুনছিলো!

“” নাহ!””

পালক অভিমানের সুরে বললো,

“” তুমি আমাকে একটুও ভালোবাসোনি তাইনা? ভালোবাসলে এভাবে আমাকে কষ্ট দিতেনা। এভাবে আমাকে একা ছেড়ে যেতে পারতেনা।””

অন্ত্রীশা এবার পালককে আরেকটু গভীরভাবে জড়িয়ে ওর কানের কাছে মুখ নিয়েছে। ফিসফিস করে বললো,

“” আপনার পত্রীকন্যা চলে গিয়েছে তো কি হয়েছে আমিতো আছি? আমি আপনাকে ছেড়ে কোথাও যাবোনা,এই আপনার চোখ ছুয়ে প্রমিস করলাম! আপনি তাড়িয়ে দিলেও না।””

অন্ত্রীশার এমন কথায় পালকের হুশ ফিরলো। সাথে সাথে চোখ মেলে বললো,

“” অন্ত্রীশা তুমি? তুমি আমার উপরে কি করছো? সর বলছি। এখনি সরবে!””
“” কাবাডি খেলাতো এখনো শুরুই হয়নি!””

পালক অন্ত্রীশাকে নিজের থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলেও পারছেনা। সোফার স্পেসটা এতো বড়ও নয় যে অন্ত্রীশাকে পাশে সরিয়ে দিয়ে নিজে উঠে পড়বে। এখন পাশে সরানো মানে ওকে উপুত করে মেঝেতে ফেলে দেওয়া।

“” অন্ত্রীশা আমি কিন্তু সরতে বলেছি,আমার প্রচন্ড রাগ হচ্ছে। আমি চাচ্ছিনা তুমি ব্যথা পাও।””
“” আমিতো চাচ্ছি ব্যথা পেতে! নাহলে হাডুডু জমবে কিভাবে?””

পালক রেগে যাচ্ছে,খুব খারাপভাবেই রেগে যাচ্ছে,কিন্তু সে রাগ দেখাতে পারছেনা। কেন পারছেনা বুঝতে পারছেনা। এমন তো তার অনিকশার সাথে ঘটতো। রিলেশনে থাকার সময় প্রায় অনিকশার কান্ডে পালক রেগে যেতো কিন্তু কখনোই সে অনিকশাকে রাগ দেখাতে পারেনি। এতে অনিকশা যেন হতাশই বেশি হতো। ও তো মাঝে মাঝে বায়নাও ধরতো তার রাগ দেখার জন্য। কিন্তু সে কখনোই তার এই বায়নাটি পুরন করতে পারেনি। পারবে কিভাবে? ভালোবাসার মানুষটা তার ছেট কথাতে সামান্য কষ্ট পাক,এটাও সে কখনো ভাবেনি। কিন্তু অনিকশাতো তার ভালোবাসার মানুষ ছিলো তাই রাগ দেখাতে পারেনি,অন্ত্রীশাতো তার ভালোবাসার মানুষনা,আর কখনো হবেও না। তাহলে সে কেন রাগ দেখাতে পারছেনা? তাকে দেখাতেই হবে,অবশ্যই দেখাতে হবে।

পালক ভাবনায় ভাসতে ভাসতেই একপাশে কাত হয়েছে। সাথে সাথে অন্ত্রীশাও ডুপ করে নিচে পড়ে গিয়েছে।

পালক সোফা থেকে উঠে দাড়িয়ে তীক্ষকন্ঠে বললো

“” ইউ আর মাই ওয়াইফ,বাট নট মাই লাভ,ওকে?””
“” তাহলে আমাকে বিয়ে করেছিলেন কেন?””
“” আমি তোমাকে জোর করে বিয়ে করিনি,অন্ত্রীশা! তুমি নিজে থেকেই বিয়েতে রাজী হয়েছো।””

অন্ত্রীশা শ্বশুড়বাড়িতে চলে আসার পর অনিকশারাও চলে আসে নিজেদের বাড়িতে। অরিদের কোনো ভাইবোন না থাকার সুবাদে শ্বশুড় শ্বাশুড়ি নিজের মেয়ের মতোই আদর করে অনিকশাকে। অনিকশাও উনাদের ভালোবাসার প্রতিদান হিসেবে মেয়ের মতোই উনাদের সবকিছুতেই আগলে রাখে। অরিদের বউ হয়ে না উঠলেও শ্বাশুড়ির কাছে বেশ অল্পদিনেই অতি আদুরী বউমায়ের পদবীটা গ্রহন করে নিয়েছে। এতে অরিদের ভালোবাসা আরো দ্বিগুন হারে বাড়িয়ে দেয় অনিকশার প্রতি।

শ্বাশুড়ির মাথায় তেল দিয়ে রুমে ঢুকতেই অরিদকে বিছানার ঠিক মাঝখাটাতে বসে থাকতে দেখলো। দুগালে দুহাত দিয়ে বসে আছে। ঠোটদুটোও বাইরে বের করে বাচ্চাদের মতো বসে আছে৷ মনে হচ্ছে এক্ষুনি কেঁদে দিবে!

“” এভাবে বিছানার মাঝখানে বসে আছো কেন? আমি কি মেঝেতে ঘুমাবো?””

অনিকশার কন্ঠ শুনার অপেক্ষায় যেন বসে ছিলো অরিদ। বসা থেকে উঠে এসে অনিকশাকে ঝাপটে ধরে হাউমাউ করে কাঁদছে।

অরিদের এমন কান্ডে অনিকশা বিরক্ত হলেও সাথে সাথে ভয়ের আশঙ্কাও পাচ্ছে। চার বছরের সংসার জীবনে অরিদকে এভাবে কাঁদতে দেখেনি। কখনো কাঁদেনি তা নয়৷ কিন্তু সেটা আড়ালেই ছিলো। তবে আজ এমন করছে কেন? কোনো খারাপ সংবাদ নয় তো?

অনিকশা অরিদকে শান্তনার বাহানায় ভীতু কন্ঠে বললো,

“” কি হয়েছে,অরিদ? কোনো খারাপ নিউজ?””
“” হুম! পৃথিবীর সবথেকে খারাপ নিউজ,অনি। আমি কিছুতেই এটা মানতে পারছিনা!””

অরিদের কথায় অনিকশার ভয়ের আশঙ্কা আরো বেড়ে যাচ্ছে। তবে কি কারো মৃত্যু সংবাদ পেতে যাচ্ছে সে? মৃত্যুর সংবাদ ছাড়া পৃথিবীতে আর কি ভয়ংকর খারাপ নিউজ হতে পারে?

“” অরিদ,এভাবে বাচ্চাদের মতো কাঁদা বন্ধ করে বলবে কি হয়েছে?””

অরিদ অনিকে আরো জোরে জড়িয়ে নিয়ে বললো,

“”কাল থেকে আগামী সাতদিন আমি মৃত থাকবো,অনি!””
“” মানে?””
“” আমার অফহসের কাজের একটা প্রজেক্টের বাহানায় সাতদিনের জন্য পঞ্চগড় যেতে হবে,অনি।””
“” অহ! তাই বলো,আমি তো ভেবেছিলাম কিনা কি!””

অরিদ অনিকশাকে ছেড়ে দিয়ে ভ্যাবলার মতো তাকিয়ে বললো,

“” তোমার কাছে এটা অহ মনে হলো? এতো ভয়ংকর একটা নিউজ দিলাম কোথায় তুমি কেঁদে কেটে গোসল করে ফেলবে,তারপর আমি তোমাকে শান্ত্বনা দিবো তানা তুমি অহ! বলে সব শেষ করে দিচ্ছো?””

অনিকশা অরিদের কাছ থেকে সরে এসে বালিশ ঠিক করতে করতে বললো,

“” এটা মোটেও ভয়ংকর সংবাদ নয়,অরিদ!””
“” ভয়ংকর নয়তো কি? যেখানে আমি এতো বছরে তোমাকে ছাড়া একটা রাত কাটাইনি সেখানে সাতদিন,সাতরাত আমি কিভাবে কাটাবো? কাটাতে হলে তো আমাকে মৃত হয়েই কাটাতে হবে তাইনা,অনি?””
“” উল্টাপাল্টা কথা বন্ধ করে লাইট অফ করে শোও। আমার ঘুম পাচ্ছে!””

অরিদ্রাকে শুয়া থেকে উঠিয়ে কোলে নিতে নিতে অরিদ বললো,

“” আজ কোনো ঘুম হবেনা অনি,আজ আমরা শোকরাত পালন করবো। নাহলে আমি কাল চাকরী ছেড়ে তোমার কাছে বসে থাকবো!””
“” তুমি অরিদ্রাকে নিয়ে কোথায় যাচ্ছো?””
“” আম্মুর রুমে,তোমার মেয়ে যে দুষ্টু হয়েছে,দেখা যাবে আমাদের শোক রাতের মাঝখানে উঠে গিয়ে বারোটা বাজিয়ে দিবে।””

পরপর তিনদিন আতিশের দেখা না পেয়ে পাপড়িও অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তবে শারীরিক নয় মানসিক। মানসিক যন্ত্রনায় সে ছটফট করছে। তার উপর পাপড়ির কলও রিসিভ করছেনা আতিশ! এতে যেন পাপড়ির মানসিক যন্ত্রনা তরতর করে বেড়ে যাচ্ছে। এভাবে তিনটা দিন উনি কিভাবে থেকেছেন? উনার কি একটুও আমার কথা মনে পড়েনা? উনি নাহয় আমাকে ভালোবাসেননা আমি তো বাসি? আর আমি এটা খুব ভালো করে জানি,আপনিও জানেন আমার ভালোবাসার পরিধির কতটা

আতিশের বাসায় পাপড়ির কখনো আসা যাওয়া হয়নি। তবে মাঝে মাঝেই ওকে কলেজে নিয়ে যাবার সময় পালক এই বাসাটা থেকেই আতিশকেও নিয়ে যেতো। সে সুত্রেই আজ পাপড়ি আতিশের বাসার সামনে এসে দাড়িয়েছে। ভেতরে যাওয়ার সাহস পাচ্ছেনা। প্রচুর ভয় পাচ্ছে। যতটুকু জানে এ বাসায় আতিশ একাই থাকে। পড়ালেখা করতেই এখানে এসে থাকা। মা বাবা গ্রামে থাকেন।

ধীরে ধীরে বাসার ভেতরে ঢুকে গেলেও দরজায় টুকা দেওয়ার সাহস পাচ্ছেনা পাপড়ি। বুকের ভেতরে ধকধক ঘন্টি বেজে যাচ্ছে তার। একে তো কলেজ ফাকি দিয়ে এসেছে তার উপর আতিশের অনুমোতি ছাড়া তার বাসায় চলে এসেছে,উনি কি আমাকে ধমকাবেন? যদি মাইর দেন? খুব জোরে মারবেন কি? ভাবতেই পাপড়ি ঘেমে নেয়ে ফেলছে। পড়নের এস কালারের সাথে সাদা কম্বিনেশনের কলেজ ড্রেসটাও অধিকাংশই ঘেমে একাকার!

পাপড়ির ইচ্ছে হলো দৌড়ে বাসায় চলে যেতে। কিন্তু এতোদুর এসেও যদি তার আতিশ ভাইকে না দেখা হয় তাহলে যে তার এতো সাহসের সব বিফলে যাবে! পাপড়ি চোখ বন্ধ করে নিজের পড়নের ড্রেসটা হাত দিয়ে আকড়ে ধরে বড় বড় নিশ্বাস নিচ্ছে। কিছুটা সাহস সঞ্চয় করে দরজায় হাত দিতেই তা নড়ে উঠলো। দরজাটা খুলা পেয়েই পায়ে পায়ে ভেতরে এগুতেই আতিশের দেখা পেলো পাপড়ি।

মাথায় কারো হাতের আদুরী স্পর্শ পেয়ে আতিশের ঘুম ভেঙ্গে গিয়েছে,

“” পাপড়ি,তুমি? থুক্কু তুই? তুই এখানে কি করছিস?””

আতিশের কন্ঠে পাপড়ি ভড়কে গেলো। আতিশের মাথার কাছটাতেই বসে হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলো আতিশের মাথায়।

আতিশ শুয়া থেকে উঠে ধমকের কন্ঠে বললো,

“” কলেজে যাসনি তুই? আর এখানে কিভাবে এলি? তাও আবার আমার রুমে? এতো সাহস তুই কই পেলি?””
“” আপনাকে দেখতে!””
“” আমাকে দেখতে মানে? আমার কি দুটে পা গজিয়েছে নাকি দুটো নাক উঠেছে যে তোকে দেখতে আসতে হবে? আজ তোকে পিটিয়ে সোজা করে দিবো। ক্লাস ফাকি দিয়ে এগুলো করা?””

পাপড়ি যতটা না ভয় পাচ্ছে তার থেকে বেশি অভিমান নিয়ে বললো,

“” আপনি আমাকে তুই করে বলবেননা,প্লিজ! খুব বাজে লাগে।””
“” তোকে তুই বলবোনা তো কি বলবো? আপনি করে বলতে হবে? তুই কি রানী ভিক্টোরিয়া?””
“”এতকিছু জানিনা,আপনি তুই করে বলবেননা মানে বলবেননা ব্যস!””
“” মুখে মুখে তর্ক করছিস? তাও আবার রুমে এসে,আমার সামনে দাড়িয়ে? তুই জানিস আমি তোর থেকে কত বড়?””
“” না।””
“” ৮ বছরের বড়। এখন তুই ই বল ৮ বছরের ছোট মেয়েকে তুই ছাড়া অন্য কিছু বলা যায়?””

পাপড়ি আতিশকে হুট করেই জড়িয়ে ফুপিয়ে ফুপিয়ে বললো,

“”যায়। আমাকে আপনি তুমি করে বলবেন। আপনার তুমি বলাটাতে আমি ভালোবাসা খুজে পাই। নিজেকে আপনার বউ বলে মনে হয়!””

পাপড়ির এমন হুট করা কাজে স্তব্ধ হয়ে যায় আাতিশ। পাপড়ি তাকে কতটা ভালোবাসে তা অনেকআগেই সে বুঝে গিয়েছিলো। কিন্তু তার প্রকট যে এতো বেশি হয়ে গেছে বুঝতে পারেনি সে।

সেদিনের পালকের কথায় বেশ অভিমান হয়েছিলো অন্ত্রীশার। পালকের সাথে দুদিন ধরে কথা হয়নি তার। তার যে কথা বলতে ইচ্ছে করেনি তা না। কিন্তু কথা বলা হয়ে উঠেনি। হয়তো ভেতরে ভেতরে সংকোচবোধটা বেশি করে জেগে উঠেছে। আবার এমনও হতে পারে তার মনটা চাইছে পালক নিজে থেকে এসে তার সাথে কথা বলুক। কিন্তু পালক তার সাথে কথা বলবে কি তেমন দেখাও হয়না। অফিসের কাজে সকালে বের হয়ে, আসে মাঝরাতে। ইচ্ছে করেই দেরি করে আসে? নাকি সত্যি কাজের ব্যস্ততা। তা বুঝা হয়ে উঠেনি অন্ত্রীশার।

আজ হঠাৎ দুপুরের দিকে পালককে বাসায় চলে আসতে দেখে বেশ অবাকই হলো অন্ত্রীশা। খুশিও হয়েছে। আজ সে তার চুমুবাবুর রাগ ভাংগাবে।নিশ্চয় ভাংগাবে।

অন্ত্রীশা ওয়াড্রভ থেকে একটা শাড়ী বের করলো। গুনগুন করতে করতে গোসল ছেড়ে বের হতেই নাকে সিগরেটের উদ্গট গন্ধ এসে বারি খাচ্ছে। গন্ধের পথ ধরে বারান্দার যেতেই দেখলো পালক একহাত দিয়ে বেলকনির গ্রিলটা চেপে ধরে আছে। অন্যহাতে সিগরেট! এতোদিন পর পালকের হাতে সিগরেট দেখে অন্ত্রীশা বিস্মিত। পালকের কাছে গিয়ে বললো,

“” আপনার সিগরেট খাওয়ার কারনটা জানতে পারি?””

পালক মাথাঘুরে অন্ত্রীশার দিকে তাকাতেই অন্ত্রীশা ভয় পেয়ে গেলো এক কদম পিছিয়ে গিয়েছে। পালকের চোখদুটে লাল টকটক হয়ে আগুন ধরছে।

অন্ত্রীশা পুনরায় প্রশ্ন করার জন্য ঠোট নাড়াতেই পালক ওর ঠোটে নিজের ঠোট ডুবিয়ে দিয়েছে। নিজের ধোয়াগুলো অন্ত্রীশার মধ্যে ছেড়ে দেওয়ার তাড়নায় থাকলেও আজ সে ব্যর্থ হলো। অন্ত্রীশা নিজের সর্বস্ব শক্তি দিয়ে পালককে ছাড়িয়ে ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে দিয়েছে। ওর ডান গালে!

চলবে

ধোয়ার-নেশা পর্ব (৯+১০)

0

#ধোয়ার-নেশা

#রোকসানা-রাহমান

পর্ব (৯+১০)

অনিকশা বাইরে দাড়িয়েই অন্ত্রীশাকে খুজছে। রুমে তো দেখতে পাচ্ছিনা,এতোরাতে গেলো কোথায়? আমি কি ভেতরে যাবো? নাকি চলে যাবো? কিন্তু অরিদ্রা??

অনিকশা অরিদ্রার দিকে তাকাতেই পালকের চোখে চোখ পড়ে গেছে। এখন এভাবে চলে যাওয়াটা খারাপ দেখাবে ভেবেই অনিকশা ভেতরে ঢুকে পড়লো। অরিদ্রাকে কোলে নেওয়ার উদ্দশ্যে হাত বাড়াতেই পালক ওর হাতের কব্জীর অংশটা চেপে ধরে বললো,

“” কেমন আছো,পত্রী কন্যা?””

অনিকশা পালকের দিকে তাকাতে গিয়েও তাকালোনা। ভয় হচ্ছে তার ভীষন ভয়! ঐ চোখে তাকালেই যে তার ভেতরটা অপরাধবোধে ফেটে যায়! অনিকশা অরিদ্রার দিকে তাকিয়েই বললো,

“” হাত ছাড়ো পালক!””

পালক হাত ছাড়ার বদলে আরো শক্ত করে চেপে ধরলো। অনিকশার দিকে পলকহীনভাবে তাকিয়ে আছে। ঠোটের এককোনটা বাকিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি হেঁসে বললো,

“” আগেতো হাত না ধরার কারনে আমার সাথে অসংখ্য ঝগড়া করেছো। আর আজ হাত ধরাতেও রাগ দেখাচ্ছো? তোমরা মেয়ে জাতিরা এমন কেন বলোতো? আমার তো মনে হয় তোমরা কি চাও সেটা তোমরা নিজেরাও জানোনা!””

অনিকশা নিজের অন্যহাত দিয়ে পালকের হাত ছাড়ানোর চেষ্টায় বললো,

“” পালক আমার লাগছে,ছাড়ো। আমি তোমার তেতো কথা শুনার জন্য আসিনি। অরিদ্রাকে নিতে এসেছি। আর তুমি আসছো জানলে আমি আসতামও না।””
“” সত্যি আসতেনা?””
“” হুম!””
“” কিন্তু আমি যে চাই তুমি আসো!””

অনিকশা পালকের হাতের বাধন থেকে ছুটতে না পেরে পালকের দিকে অসহায়ভাবে তাকিয়ে বললো,

“” হাত ছাড়ো,প্লিজ! অন্ত্রীশা দেখলে ব্যাপারটা কত জগন্য হবে বুঝতে পারছো? অরিদও হয়তো এতক্ষনে এদিকে আসছে!””

অরিদ নাম শুনেই পালকের চোখমুখ শক্ত হয়ে এলো। অনিকশাকে টেনে নিজের কাছটাতে এনে বললো,

“”অরিদ তোমার কোন তৃষ্ণা মিটিয়েছিলো যে একদিনেই বিয়ে করে নিলো।””
“” পালক,ঠিকভাবে কথা বলো। ও আমার স্বামী!””

পালকের রাগ হচ্ছে! এতো বেশি রাগ হচ্ছে যে শরীরের প্রতিটা শিরাউপশিরা ফুলে ফেপে উঠছে। এই চার বছরের সবটা রাগ এখন ঢেলে ফেলতে ইচ্ছে হচ্ছে। আজ কোনো নিয়ন্ত্রণের বাধা তার মানতে ইচ্ছে করছেনা। কার ভালো হবে,কার খারাপ হবে,কে কি ভাববে তার কিছু ভাবতে ইচ্ছে করছেনা। নিজের রাগগুলোকে আর কত পুষে রাখবে? এবার কি তবে রাগ ঢেলে দেওয়ার সময় এসেছে??

“” পালক,আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছো? ছাড়ো বলছি। এতো রাতে এভাবে সিন ক্রিয়েট করোনা!””

অনিকশার কথা গায়ে মাখছেনা পালক। ওকে টানতে টানতে অন্ত্রীশার খোলা বারান্দায় নিয়ে এসেছে। যেখানে গ্রিল দিয়ে বন্দী করা হয়নি বেলকনির স্পেসটাকে। আশেপাশে তেমন গাছ না থাকায় এখান থেকে মেঘে ঢাকা পুরো আকাশটাকে দেখা যাচ্ছে। বৃষ্টির সাথে সাথে কালো মেঘেরাও আজ নিচে নেমে আসছে। পালকের ইচ্ছে হচ্ছে সেও আজ এই কালো মেঘের বৃষ্টির সাথে নিজের জমিয়ে রাখা সবটা রাগ ধুয়ে ফেলতে।

অনিকশাকে বেলকনির ঠিক কর্নারে দাড় করিয়ে ওর হাতটা ছেড়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো,

“” আমার আজ সব প্রশ্নের উত্তর চাই পত্রীকন্যা। ইচ্ছে তো করছে নিজের সবটা রাগ আর অভিমান দিয়ে তোমাকে জ্বালিয়ে ফেলি। কিন্তু বেহায়া মন যে তার পত্রীকন্যাকে কষ্ট দিতে নারাজ। কেন সেদিন তুমি আমাকে ফেলে চলে এলে? কেন সেদিন অন্য কারো দখলে চলে গেলে? কি দোষ ছিলো আমার? অনিকশা আমার সব উত্তর চাই!””

পালকের হাত থেকে ছাড় পেয়ে অনিকশা পালিয়ে আসতে গেলে ওর হাতটা চেপে ধরে ফেললো পালক,,

“” সেদিন যদি বুঝতে পারতাম এই যাওয়াই তোমার শেষ যাওয়া তাহলে কখনোই তোমাকে পালাতে দিতাম না! আজ আমি আমার উত্তর না নিয়ে তোমাকে ছাড়বোনা।””

বাতাসের সাথে বৃষ্টির ফোটাগুলো বাড়ি খেয়ে পালক আর অনিকশাকে ভিজিয়ে দিচ্ছে। দুজনেই বৃষ্টিতে ভিজে একাকার। অনিকশা যাতে পালাতে না পারে তার ঠিক সামনেই পালক দাড়িয়ে রয়েছে। কিছুটা দুরত্ব রেখেই দাড়িয়েছে সে। অন্যের দখলধারীকে সে কখনোই ছুতে চাইনা। যখন নিজের দখলে ছিলো তখনই সে ছুয়ার সাহস পায়নি,তাহলে আজ কিভাবে পাবে??

বৃষ্টির পানি মুখ চুয়ে চুয়ে নিচে পড়ছেপালকের। পালকের চোখের দিয়ে তাকিয়ে অনিকশার গলা শুকিয়ে এলো। চোখগুলো লাল রক্তবর্নের আকার ধারন করে আছে। ঐ চোখ দেখেই বুঝতে পারছে আজ সে পালকের প্রশ্ন এড়িয়ে যেতে পারবেনা৷ পালকের রাগ দেখার সৌভাগ্য তার কখনো হয়নি,আজ সেটাও হয়ে গেলো।

পালক বেশ তীক্ষকন্ঠে চিৎকার করে বললো,

“” কি হলো বলছোনা কেন? আমার কি দোষ ছিলো?””
“” এভাবে চিৎকার করছো কেন? আমি তোমার কোনো উত্তর দিতেই বাধ্য নই””

পালকের রাগ এবার আরো বেড়ে গেলো। অনিকশার দিকে রাগে ফুসতে ফুসতে এগুতেই অনিকশা বেলকনির অর্ধাংশ দেয়ালের সাথে ধাক্কা খেলো। কিছুটা বাহিরের দিকে বেকে গিয়ে,চোখ বন্ধ করে ফেললো,

“” পালক,তুমি ভুলে যেওনা অন্ত্রীশা আমার ছোট বোন।””
“” তুমিও ভুলে যেওনা তোমার বোন আমার বউ!””
“” মানে?””
“” আমার উত্তর চাই!””
“” তুমি অনতিকে কষ্ট দিতে পারোনা৷ এখানে ওর তো কোনো দেষ নেই। আমাদের মাঝখানে ওকে কেন আনছো?””
“” তুমিও তো আমাদের মাঝখানে অরিদকে এনেছো,কেন এনেছো?””
“” পালক তুমি এখন হুশে নেই,আমি রুমে যাবো। সরো এখান থেকে!””
“” তুমি কোথাও যাবেনা। আগে আমার উত্তর দিবে তারপর যাবে। নাহলে আজকে আমি সব ধ্বংস করে দিবো!””
“” আমি জানি তুমি এমন কিছু করবেনা।””
“” এতো কিছু জানো তাহলে এটা কেন জানলেনা তুমিহীনা আমি কিছুই না। বুকের ভেতরটা জ্বলেপুরে ছাড়খার হয়ে যাচ্ছে। আমি আর সহ্য করতে পারছিনা। আমাকে একটু বিষ এনে দাও আমি খেয়ে মরে যাই। মনটা তাও এটাভেবে শান্তি পাবে সে তার পত্রীকন্যার হাতে জীবন বলি দিয়েছে!””

পালকের কথায় অনিকশার কান্না পাচ্ছে,চোখ ঠিকরে পানি বেড়িয়ে আসতে চাচ্ছে,হয়তো বেড়িয়েও এসেছে যা বৃষ্টির সাদাপানির সাথে মিলেমিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে। আমি তো এমনটা চাইনি। এই পৃথিবীতে হয়তো আমিই সবচেয়ে পাপী যে দুটো মানুষকে কাঁদিয়ে এখনো বেঁচে আছে।

“” পালক,এমন ছেলেমানুষি কথা কেন বলছো? সব ঠিক হয়ে যাবে। অনতি আর তুমি অনেক সুখী হবে। অনতি অনেক লক্ষী একটা মেয়ে।””
“” আমার লক্ষী মেয়ে চাইনা। আমার পত্রীকন্যাকে চাই। যদি সে অলক্ষী হয় হোক। আমিও ওর সাথে মিশে অলক্ষী হয়ে যাবো।””
“” এটা কখনোই সম্ভব না পালক! জীবনের অনেকটা পথ পেড়িয়ে এসে পড়েছো। সবকিছু ভুলে গিয়ে আবার শুরু করো!””

পালক অসহায় সুরে বললো,

“” তাহলে তোমাকে ভুলে যাওয়ার ঔষধের নাম বলে দাও।””

অরিদ নিজের হাতে খায়িয়ে দিচ্ছিলো বলে অন্ত্রীশা মুখ বুঝে খেয়ে নিয়েছিলো। কিন্তু তা বেশিক্ষন পেটে রাখতে পারেনি। পালকের দেওয়া ধোয়ার বিষগুলো কুন্ডুলী পাকিয়ে অন্ত্রীশার পেটে ক্ষনে ক্ষনে হামলা করছিলো। এই হামলার ফল হিসেবে সে বমি করে যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটিয়েছে। পর পর দুবার বমি করাতে শরীরটা অনেকটাই নিস্তেজ হয়ে আসে অন্ত্রীশার। মাথাটাও ভারী হয়ে আসছিলো। শরীরটাকে ঠান্ডা করতেই অন্ত্রীশা দ্বিতীয়বারের মতো সাওয়ার নিয়ে ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়েছে। মাথায় টাওয়ালটা বেধেই বারান্দার দিকের দরজাটা আটকাতে এগুলো। বৃষ্টির ঝাপটাই আর বাতাসের ধাক্কায় দরজা একটু পরে পরে বাড়ি খাচ্ছে দেওয়ালের সাথে। অন্ত্রীশা দরজার কাছে দাড়িয়েই অবাক।

“” আরে কি করছেন,আপু তে পড়ে যাবে!””

হঠাৎ অন্ত্রীশার কন্ঠ পেয়ে পালক অনিকশার থেকে সরে এসে অন্ত্রীশার দিকে তাকিয়েছে। অনিকশাও সে ফাঁকে পালকের কাছ থেকে ছুটে এসে বললো,

“” তোর বরটা তো আমাকে ভয়ই পায়িয়ে দিয়েছিলো। পালক যে আসবে অরিদকে বলিশনি? তাহলে তো আর অরিদ্রাকে রেখে যেতোনা। তোর কি বুদ্ধীসুদ্ধী কিছু হবেনা? আর অরিদটাও হয়েছে মাথামোটা!””

অনিকশা কাপুনি আর ভীত কন্ঠে অন্ত্রীশাকে দুচারটে কথা শুনিয়ে চলে গেলো।

অন্ত্রীশা পালকের দিকে এগিয়ে এসে বললো,

“” আপনি না বলেছিলেন আসবেননা,তাহলে আবার এলেন যে? আমাকে মিস করছিলেন?””

পালক অন্ত্রীশাকে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে চাইলে ওর হাত চেপে ধরে ফেললো অন্ত্রীশা! দুজন দুদিকে মুখ করে দাড়িয়ে আছে।

“” ভিজেই তো গেছেন। থাকুননা কিছুক্ষন!””
“” আই হেইট রেইন।””
“” আপনাকে দেখে তা মনে হচ্ছেনা। আমার জন্য নাহয় অপছন্দ জিনিসটাকে একটু পছন্দ করলেন।””
“” অপছন্দ আর ঘৃণা দুটো শব্দ এক না অন্ত্রীশা! আমি চেন্জ করবো,হাত ছাড়ো।””

অন্ত্রীশা পালকের হাত ছেড়ে দিয়ে উল্টোদিকে ঘুরেই বললো,

“” আমরা কি বন্ধুও হতে পারিনা?””
“” না।””
“” কেন?””
“” সব কেন এর উত্তর হয়না।””

পালক সেখানে আর একদন্ডও দাড়ালোনা। রুমের দিকে পা বাড়ালো। অনিকশার কাছে থেকেও তার যতটা না অসস্থি হচ্ছিলো অন্ত্রীশার উপস্থিতিতে তা দ্বিগুন বেড়ে গিয়েছে। মেয়েটার কথার মধ্যে কিছুতো আছে যা পালকের সব কিছুকে থামিয়ে দিতে চাই।

অনিকশা অরিদ্রাকে বিছানাতে শুয়িয়ে দিতেই অরিদ চেচিয়ে উঠলো,

“” তোমরা মা,বেটি কি বৃষ্টিতে ভিজে এলে নাকি? আমাকে কেন নিলেনা অনি? ইশ! তোমার সাথে সে কবে বৃষ্টিতে ভিজেছিলাম!””

অনিকশা অরিদের কাছে এসে ঝাপটে জড়িয়ে নিলো। ধরে আসা গলায় বললো,

“” একটু ভালেবাসবে অরিদ? একটু না অনেকখানি ভালেবাসতে হবে। যে ভালোবাসায় মনে হবে আমি এই পৃথিবী ছেড়ে অন্য কোনো পৃথিবীতে চলে গিয়েছে। যেখানে অনুভূতি নামের কোনো শব্দ থাকবেনা।””

অনিকশা কথা শেষ করতেই অরিদ ওকে কোলে তুলে নিয়েছে। গুটিগুটি পায়ে বিছানায় শুয়িয়ে দিয়ে নিজের ভরটা ওর উপর ছেড়ে দিলো। কপালে অরিদের ঠোটের ছোঁয়া পেতেই অনিকশা আবেশে চোখ বন্ধ করে নিয়েছে।

অরিদ পলকহীনভাবে চেয়ে আছে। বৃষ্টির পানিগুলো এখনো বিন্দু বিন্দু জমে আছে অনিকশার মুখে। ঠোটজোড়াও ভিজে। চোখের পাপড়িগুলোও ভিজে একটা আরেকটার সাথে লেগে আছে। এরকম চেহারায় বেশ আবেদনময়ী লাগছে অনিকশাকে। যেকোনো ছেলেকেই কামুকতায় মাতিয়ে দিবে। তাকেও দিচ্ছে। তবে তারটা পবিত্র কামুকতা। কেননা সেতো তার বউ! তারা পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ!

অরিদ্রা আসার পর অনিকশাকে এতোটা কাছে পাওয়া হয়নি অরিদের। আজ তার খুব লোভ হচ্ছে অনিকশার মধ্যে নিজেকে ডুবে দেওয়ার তার ইচ্ছেপুরনের অন্য পৃথিবীতে নিয়ে যাওয়ার তবে সেটা অনুভূতিহীন নয়,অনুভূতির সাগরে ডুবে থাকা পৃথিবীতে। যে সাগরে শুধু তারা দুজন ডুবে ডুবে মিলিয়ে যাবে।

অনিকশার নাকে একটা চুমু খেয়ে অরিদ বললো,

“” কাউকে ভুলতে নয় আমার ভালেবাসার ক্ষুধা পাবে যেদিন সেদিনই তোমাকে ভালোবাসবো। আর সেদিন আসবে,খুব শিঘ্রই আসবে,আমিতো সেদিনের অপেক্ষায় আছি,অনি। আমি যে তোমায় বড্ড বেশি ভালোবাসি। আমার নিজের ভালেবাসার উপর সম্পুর্ন আস্থা আছে। জামাটা চেন্জ করে ঘুমিয়ে পড়ো। ঠান্ডা লেগে যাবে!””

অরিদ অনিকশার উপর থেকে সরে এসে অরিদ্রার পাশে শুয়ে পড়লো। এই প্রথম সে তার ভালেবাসার মানুষটার অবাধ্য হলো। বেশ অভিমানও হচ্ছে। তবে অনির উপর নয় নিজের উপর! এই অবাধ্যটা তার আরো আগে হওয়া উচিত ছিলো। তাহলে হয়তো আজ তাকে এভাবে নির্ঘুমে রাত কাটাতে হতোনা। লোভ আসলেই মানুষকে ধ্বংস করে দেয়। তাকেও দিয়েছে। ভালেবাসার মানুষটাকে কাছে পাওয়ার লোভে নিজের ভালোবাসাগুলে ধ্বংস করে ফেলেছে!

পালক চেন্জ করে এসেও অন্ত্রীশাকে রুমে দেখতে পায়নি। হয়তো বৃষ্টিতে ভিজছে। হয়তো তারও বৃষ্টি পছন্দ। পালক অন্ত্রীশাকে মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে বিছানায় শুয়ে পড়লো। অন্ত্রীশা আসলে নাহয় নিচে শুয়া যাবে! চোখ বুঝতেই পালক তার রঙিন অতীতে ডুবে যাচ্ছে।

পত্রীকন্যা তার তৃতীয় চিঠীও একটা বোরকা পরিহিত মেয়ের হাতে পাঠিয়েছে। সেই তাদের চিঠি আদান প্রদান করবে বলে চিঠীতে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে পুরো চিঠীতেই কড়া করে বলা হয়েছে তাকে খুজার কোনো চেষ্টা যেন না করে!

পত্রীকন্যা কড়া চিঠিতেও হাজার হাজার ভালোবাসার ঘ্রান পেলো পালক। সেই ঘ্রানে মাতাল হয়েই নিজেও চিঠি লিখতে বসে পড়লো।

***প্রিয় ডিস্টার্ভিং গার্ল,

এতো কেন ডিস্টার্ব করছেন আমাকে? আপনার জ্বালায় আমি ঘুমুতে পারছিনা,খেতে পারছিনা,পড়তে পারছিনা,গোসলও করতে পারছিনা। আমি আজ তিনদিন ধরে গোসল করছিনা। গোসল করতে গেলেই আপনি আমাকে ডিস্টার্ভ করছেন। আপনার নীল নকশা কি সিল মারা হয়েছে? আর কত সময় নিবেন সিল মারতে? আমি ঠিক করেছি আপনার সাথে আমিও আপনাকে কলংকিত করবো তারপর একসাথে দুজন গোসল করে সেই কলংকের দাগ ধুবো!

আপনি কি জানেন? এইবার আপনার হিংসে আমাকে এতোই প্রজ্বলিত করেছে যে আমি পরীক্ষায় সাদা খাতা জমা দিয়েছি। দুদিন পর নোটিশ বের্ডে টপ নোটিশ লেটারেই ফলা করে লিখে দিবে,প্রখর মেধাবী পালক প্রেমে কলংকিত হয়ে সবার মুখে ঝামা ঘসে দিয়েছে। সবাই কলংকিত পালকের থেকে দুরে থাকুন!

পত্রীকন্যা আমাকে আর ডিস্টার্ব করবেননা। এই ভয়াবহ ডিস্টার্বে আমি খারাপভাবে আহত হচ্ছি! আমার উপর মায়া না হোক প্রিন্সিপালের উপর একটু মায়া করবেন। উনার হাসি হাসি মুখটা চুপসে দিবেননা।

ইতি

পত্র পুরুষ

ঘন্টাখানিক পার হওয়াতেও যখন অন্ত্রীশার আগমনের কোনো লক্ষন দিলোনা পালকের কপালে চিন্তার ভাজ পড়লো। এতক্ষনে বৃষ্টিরবেগও তো কমে এসেছে। ও এখনো বারান্দায় কি করছে? ও যা খুশি তাই করুক,আমার কি? পালক আবার চেখ বন্ধ করে ফেললো। কিন্তু কপালের ভাজটা কমার বদলে আরো বেশি কুচকিয়ে যাচ্ছে। এভাবে বেশ কিছুক্ষন কাটানোর পর পালক উঠে বসলো। এই মেয়েটা করছে কি? এর জ্বালায় তো আমি অতীতে ডুবতেও পারছিনা। ধ্যেত!

পালক বিছানা ছেড়ে বিরক্ত নিয়েই বারান্দার দিকে এগুলো। দরজায় পা রাখতেই পালকের বুকটা কেঁপে উঠলো। অন্ত্রীশা ভেজা মেঝেতে পড়ে রয়েছে!

পালক দৌড়ে অন্ত্রীশার কাছে গেলো। এক অজানা ভয় তাকে গ্রাস করে ফেলেছে,,

“” অন্ত্রীশা,কি হয়েছে তেমার? তুমি ঠিক আছোতো?””

অন্ত্রীশার গালে হালকা করে থাপ্পড় দিতেই অন্ত্রীশা কিছুটা নড়ে উঠলো,অস্পষ্ট স্বরে বললো,

“” সব কেনএর উত্তর হয় চুমুবাবু! আপনি আমাকে ভুল বুঝাচ্ছেন!””

পালক অন্ত্রীশাকে কোলে তুলে নিলো। বিছানায় শুয়িয়ে দিয়ে হাতের তালু মালিশ করতে করতে বললো,

“” তোমার তো জ্বরে শরীর পুড়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় বৃষ্টিতে ভেজার কি দরকার ছিলে? উফ! হাতটা এতো ঠান্ডা হয়ে আছে কেন?””
“” আমাকে বন্ধুও বানাবেননা তাও এতো অস্থির হচ্ছেন? বন্ধু বানালে না জানি কত অস্থির হতেন। আর বউ ভাবলে কি করতেন?””
“” এসব আজেবাজে কথা বাদ দাওতো। তোমার তো কথা বলতেও কষ্ট হচ্ছে। নিশ্বাস নিতেও কি কষ্ট হচ্ছে?””

পালকের কথার জবাব দেওয়ার শক্তিটুকুও আর পাচ্ছেনা অন্ত্রীশা। কিন্তু তার যে খুব কথা বলতে ইচ্ছে করছে। এই প্রথম উনি তাকে প্রশ্ন করছেন,নিজের ইচ্ছেই কথা বলছেন।

পালক অন্ত্রাীশাকে ছেড়ে পায়চারী শুরু করে দিয়েছে। কি করবে সে? ওর বড় কিছু হয়নি তো? ও কি জ্ঞান হারিয়ে ফেলছে? কথা বলছেনা কেন? আমি কি কাউকে ডাকবো? কিন্তু কাকে ডাকবো?

অন্ত্রীশার সাদা জামাটা ভিজে চুপচুপে হয়ে আছে,শরীরের সাথে মিশে গেছে। মাথার চুলগুলোও ভিজে গলার সাথে অগোছালেভাবে ল্যাপ্টে আছে। এই জ্বরের মধ্যে এই অবস্থায় থাকলেতো শরীরের তাপমাত্রা হুড়হুড় করে বেরে যাবে। জামাটা চেন্জ করা দরকার! অন্ত্রীশাতো কথাই বলতে পারছেনা কিভাবে চেন্জ করবে? তাহলে কে করে দিবে? অনিকশাকে ডাকবো? না না ওকে ডাকা যাবেনা! ওর আম্মুকে ডাকবো? কিন্তু উনি যদি বুঝে যান আমাদের বিয়ের সম্পর্কটা অন্যদের মতো সাজানোনা। কষ্ট পেলে? উনাকে কেন কষ্ট দিতে যাবো? উফ! তাহলে কাকে ডাকবো? টেনশনে মাথা হ্যাং হয়ে যাচ্ছে পালকের।

যে মেয়েটাকে বউয়ের স্বীকৃতি দিতে পারবোনা সে মেয়েটার জামাতে হাত দেওয়া কি ঠিক হবে? পালক আর কিছু ভাবতে পারছেনা। সব ভাবনা দুরে ঠেলে অন্ত্রীশার গলায় পেচানো ভেজা ওড়নায় হাত দিলো!

চলবে

#ধোয়ার-নেশা

#রোকসানা-রাহমান

পর্ব (১০)

অন্ত্রীশার সাদা জামাটা ভিজে চুপচুপে হয়ে আছে,শরীরের সাথে মিশে গেছে। মাথার চুলগুলোও ভিজে গলার সাথে অগোছালেভাবে ল্যাপ্টে আছে। এই জ্বরের মধ্যে এই অবস্থায় থাকলেতো শরীরের তাপমাত্রা হুড়হুড় করে বেরে যাবে। জামাটা চেন্জ করা দরকার! অন্ত্রীশাতো কথাই বলতে পারছেনা কিভাবে চেন্জ করবে? তাহলে কে করে দিবে? অনিকশাকে ডাকবো? না না ওকে ডাকা যাবেনা! ওর আম্মুকে ডাকবো? কিন্তু উনি যদি বুঝে যান আমাদের বিয়ের সম্পর্কটা অন্যদের মতো সাজানোনা। কষ্ট পেলে? উনাকে কেন কষ্ট দিতে যাবো? উফ! তাহলে কাকে ডাকবো? টেনশনে মাথা হ্যাং হয়ে যাচ্ছে পালকের।

যে মেয়েটাকে বউয়ের স্বীকৃতি দিতে পারবোনা সে মেয়েটার জামাতে হাত দেওয়া কি ঠিক হবে? পালক আর কিছু ভাবতে পারছেনা। সব ভাবনা দুরে ঠেলে অন্ত্রীশার গলায় পেচানো ভেজা ওড়নায় হাত দিলো!

ওড়না চেপে ধরতে গিয়েও ধরতে পারছেনা পালক। এক অপরাধবোধ তাকে খুব করে পেচিয়ে ধরছে। এভাবে কখনো অন্য একটা মেয়ের গলা থেকে ওড়না খুলতে হনে সেটা কি সে কখনো ভেবেছিলো? না ভাবেনি। যার ওড়নায় হাত দিতে গিয়েই হাত কেঁপে উঠছে তার জামাটা সে কিভাবে খুলবে? এতো কেন বিবেক নাড়া দিয়ে উঠে আমার? ও তো আমার বউ হয় তবুও এতো কেন এতোটা অসস্থি আমাকে গ্রাস করে নিচ্ছে? তবে কি শুধু সম্পর্কের নামই সব কিছু নয়? সম্পর্কের টানটা ফুটে উঠতে দুজনের মধ্যে অনুভূতিটাও খুব জরুরী? আচ্ছা ওর জায়গায় যদি পত্রীকন্যা হতো? তাহলেও কি আমার ভেতরটা এমন হাজারও তুচ্ছ প্রশ্নের সম্মুখীন হতো? না হতো না,কখনোই না। ও তো আমার ভালোবাসার মানুষ হতো!

পালক চোখটা বন্ধ করে অন্ত্রীশার ওড়নাটা খুলার চেষ্টা করতেই ওর হাতটা চেপে ধরে অন্ত্রীশা!

“” আমি হুশে আছি,এখনো বেহুশ হয়নি!””

অন্ত্রীশার ঠোঁট কেঁপে উঠা কথায় পালক দ্রুত চোখ মেলে ফেললো। ওর চোখে চোখ পড়তেই অন্ত্রীশা আবার বলে উঠলো,

“” এমনভাবে ছুচ্ছেন যে,আপনার কাছে নিজেকে পঁচা নর্দমার কীট মনে হচ্ছে। আমার শরীরটাকি এতোটাই নগন্য? ছুলে আপনার হাত পঁচে যাবে? দুর্গন্ধ বের হবে?””

অন্ত্রীশার কথার পিঠে পালক কি বলবে বুঝতে পারছেনা। নিজেকে এতো ছোট করে বলছে কেন? আমি কি ওসব ভেবেছি? যাকে ভালোবাসিনা সে বউ হলেই কি সবকিছুর অধিকারীনী হয়ে যাবে? নাকি তার কাছে নিজের সবকিছুর অধিকার নিয়ে নিতে হবে? অন্যদের কাছে বিয়ে মানে কি আমি জানিনা। কিন্তু আমার কাছে বিয়ে মানেই শরীরকে ভোগ করা নয়। একজন নারীর শরীরের প্রতিটা অঙ্গে লুকিয়ে আছে হাজারও অনুভূতি। যা সম্পুর্নভাবে অনুভব করার জন্য প্রয়োজন দুপক্ষের অসীম ভালোবাসার সম্মতি!

“” আমাকে উঠতে একটু হেল্প করবেন প্লিজ? আমি নিজেই চেন্জ করতে পারবো। আমি চাইনা আমাকে ছুয়ে আপনি ভয়াবহ পঁচা রোগে আক্রান্ত হোন!””

কারো অনুরোধের পেছনেও যে এমন তাচ্ছিল্য থাকতে পারে তা পালকের জানা ছিলোনা। সে কোনটাকে গ্রহন করবে,অনুরোধ নাকি তাচ্ছিল্য?

“”তুমিতো ঠিকমতো কথাও বলতে পারছোনা। চেন্জ করবে কিভাবে?””
“” দুর্বলতা মেয়েদের প্রধান বৈশিষ্ট হলেও কঠিন মুহুর্তে তারা দুর্বলতাকে বশ করে, নিজেকে কঠিন হতে কঠিনতর রুপে সাজিয়ে বিজয় লাভ করে!””

অন্ত্রীশার এক একটা কথা পালকের পশম দাড় করিয়ে দিচ্ছে। ও কি ইচ্ছে করেই আমাকে অপমান করছে নাকি অন্য কিছু বুঝাতে চাচ্ছে?

“” প্লিজ!””

পালক অন্ত্রীশাকে উঠিয়ে বসিয়ে দিতেই ও বিছানা ছেড়ে দাড়িয়ে পড়লো। উঠতেই মাথাটা ঝাকি খাচ্ছে। মনে হচ্ছে মাথার উপরের ভাগ আর নিচের ভাগ দুভাগ হতে চাচ্ছে। চোখটা ঝাপসা হয়ে অন্ধকার হয়ে আসতেই অন্ত্রীশা আবার বিছানায় ধপ করে বসে পড়লো।

“” তুমি ঠিক আছো তো?””

অন্ত্রীশা ছলছল নয়নে পালকের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। চোখ দিয়েই পালককে বলতে চাচ্ছে, ঠিক নাই আমি,একটুও ঠিক নেই। আপনি কি সেটা বুঝতে পারেননা??

অন্ত্রীশা মনে সাহস নিয়ে আবার উঠে দাড়ালো। ওয়াড্রভ থেকে একটা সুতির জামা নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়িয়েছে। পুরো শরীরটা কেঁপে কেঁপে তাকে বুঝাচ্ছে সে কতটা দুর্বল। কিন্তু এই মুহুর্তে সে দুর্বল হতে চাইনা। আর এই মানুষটার সামনে তো নাই।

অন্ত্রীশা নিজের জামাটাকে আকড়ে ধরেই ধীর পায়ে এগুচ্ছে। নিশ্বাসগুলোর গরম তাপ নিজেই অনুভব করছে। কয়েক কদম এগুতেই অন্ত্রীশার পায়ের কাঁপনটা বেড়ে গেলো। চোখের সামনের সবকিছু আবার ঝাপসা গয়ে আসছে। অন্ত্রীশা মনে মনে নিজের দুর্বলতাটাকে প্রকাশ করতে না চাইলেও তার শরীরটা ঠিকই চাচ্ছে। অন্ত্রীশার মনের বিরুদ্ধে গিয়েই ঢলে পড়তে গেলেই পালক এসে জড়িয়ে ধরলো।

“” আমি বলছিলাম তুমি পারবেনা!””

পালক অন্ত্রীশার চোখে চোখ রেখে কথাটা বলতেই অন্ত্রীশার ভেতরটা তুফান বয়ে গেলো। এই মুহুর্তে পালককে খুব নিজের মনে হচ্ছে!

পালকের চোখে চোখ পড়তেই অন্ত্রীশা নিজের চোখদ্বয় বন্ধ করে নিয়েছে৷ ঐ চোখে সে কখনোই চোখ রাখবেনা। তাহলে যে তার ভেতরটা অনেককিছুই করতে চাইবে! অন্ত্রীশা চোখ বন্ধ করেই বললো,,

“” বলছি তো আমি পারবো। আপনি কি বুঝতে পারছেননা? ছাড়ুন আমাকে!””
“” জিদ করছো কেন? জিদ করলেই কি তুমি সব পারবে?””

অন্ত্রীশা নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টায় বললো,

“” হুম! আমাকে পাড়তে হবে। সব পারতে হবে। আপনি আমাকে এভাবে ধরে আছেন কেন? নর্দমার কীটকে এভাবে ধরে থাকলেতো আপনার শরীরে ভয়াবহ পঁচা রোগ দেখা দিবে!””

এ পর্যায়ে পালকের ভীষন রাগ হচ্ছে। এতো তেতো কথা এই মেয়েটা বলে কিভাবে? দেখতে এতো মিস্টি অথচ কথা? চেহারার সাথে কথাগুলো কিছুতেই মানাচ্ছে না।

অন্ত্রীশা জোর করে ছুটার চেষ্টা করতেই ওকে সোজা করে দাড় করিয়ে নিলো পালক। কিন্তু ওর হাতদুটো অন্ত্রীশার বাহুর দিকে চেপে ধরে আছে। চোখটা অন্ত্রীশার দিকে তাক করা!

অন্ত্রীশা মেঝের দিকে তাকিয়েই পুনরায় কাঁপাকাঁপা কন্ঠে বললো,

“” ছাড়ুন আমাকে। আমি পার….””

অন্ত্রীশার কথা শেষ হওয়ার আগেই পালক ওর জামার পেছনে থাকা চেইনটা টান দিয়ে খুলে চিৎকার করে উঠলো,

“” আমি যে বলছি,তুমি পারবেনা। সেটা শুনতে পারছোনা? খুব জেদ দেখাচ্ছো আমাকে? আর একটা কথা বললে, তোমাকে তুলে নিয়ে খোলা বারান্দা দিয়ে ঢিল মেরে নিচে ফেলে দিবো। চুপচাপ এখানে দাড়িয়ে থাকবে। নড়লেই মাইর খাবে!””

পালকের ঘুম ভাংতেই বিছানাটা শুন্য পেলো। ঘড়ির দিকে তাকাতেই দেখলো ৮ টা বেজে ১২ মিনিট। খুব বেশি সকাল তো হয়নি তাহলে ও উঠে গেলো কেন? ও কি সুস্থ হয়ে গেছে? কিন্তু কাল রাতেও তো ও বেশ ভালোই অসুস্থতাই ভুগেছে। শরীরের তাপমাত্রাটাও তো অত্যাধিক বেশি ছিলো। এতো তাড়াতাড়ি কিভাবে সুস্থ হলো?? ধুর! আমি কেন এতো ভাবছি ওকে নিয়ে? ওর মনে হয়েছে ও উঠে গেছে তাতে আমার কি?

পালক আড়মোড় ভেংগে উঠে দাড়াতেই বিছানায় নজর আটকে গেলো একটা চেইনের উপর। অন্ত্রীশা যে জায়গাটায় শুয়ে ছিলো সেখানে একটা ছেড়া চেইন পড়ে আছে। সূর্যের আলোতে চিকচিক করে বেশ বুঝিয়ে দিচ্ছে সে সোনার তৈরী!

“” আমার শালীকে এতো বেশি অত্যাচার করা কি ঠিক হচ্ছে,ছোট ভাই?””

পালক ছেলে কন্ঠ পেয়ে পেছনে ঘুরতেই অরিদকে দেখতে পেলো। ঠোটে সৌজন্যমুলক হাসি এনে বললো,

“” মানে?””
“” ভরটা একটু কম ছাড়ো। শালীতো আমার ঠিকভাবে কথাও বলতে পারছেনা।””

অরিদের কথার অর্থ পালক বুঝে উঠতে পারছেনা। কিসের অত্যাচার,আর কিসের ভরের কথা বলছেন উনি? আমি কখন ওকে অত্যাচার করলাম? ও কি সবাইকে এসবই বলে বেড়িয়েছে?

অরিদ পালকের কাছ ঘেষে এসে ওর কাধে হাত রেখে বললো,

“” মজা করছিলাম,ছোট ভাই! ব্রেকফাস্ট রেডি। যাও ফ্রেশ হয়ে নাও। আমি আবার বেশিক্ষন না খেয়ে থাকতে পারিনা!””

পালক আবার একটু হাসির চেষ্টা করে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ালো। এই লোকটাকে সে বিয়ের দিনই যে প্রথম দেখেছিলো তা নয়। কিন্তু তাদের মধ্যে সামনাসামনি কথা হলো এই প্রথম। নিজের মধ্যে জড়তা কাজ করছে। এই তো সে ব্যক্তি যার জন্য সে তার পত্রীকন্যাকে হারিয়ে ফেলেছে।

“” পালক!””

পালক ওয়াশরুমে ঢুকতে গিয়েও থেমে গেলো। অরিদের দিকে জিজ্ঞেসু দৃষ্টিতে তাকাতেই অরিদ আবার ওর কাছে চলে আসলো।

“” তোমাকে একটাবার জড়িয়ে ধরি?””

অরিদের এমন অদ্ভুত কথায় পালক ওর দিকে অদ্ভুতভাবেই তাকিয়েছে। পালকের উত্তরের অপেক্ষা না করেই অরিদ ওকে জড়িয়ে নিলো।

অরিদের এমন ব্যবহারে পালক বেশ বিব্রত হচ্ছে। কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছেনা। তারও কি অরিদকে জড়িয়ে নেওয়া উচিত? কিন্তু এমন হুট করে জড়িয়ে ধরার কারন কি? এমন ও ত নয় তাড়া দুজন খুব পরিচিত। হ্যা অনিকশার স্বামী হওয়ার সুবাধে পালক ওকে চিনে কিন্তু তাদের মাঝে কখনো কথা হয়নি। তাহলে কোন সম্পর্কের টানে জড়িয়ে ধরেছে? অরিদের তো আমাকে চেনারও কথা নয়৷

পালককে খুব শক্ত করে জড়িয়ে নিয়ে অরিদ ধরা গলায় বললো,

“” তুমি আমাকে ভাই বলেই ডেকো। দুলাভাইতো অনি ডাকেই। তুমি নাহয় ভাই বলে ডাকলে!””
“” জ্বী!””

পালককে ছেড়ে ওর দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো অরিদ। বেশ কিছুক্ষন কাটার পর ঠোটে হাসির রেখা টেনে বললো,

“” তোমার জন্য খাবার টেবিলে ওয়েট করছি। তাড়াতাড়ি চলে এসো!””

অরিদের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রয়েছে পালক। হাসি হাসি মুখটার জায়গায় একটা অভিমানের ছায়া দেখতে পাচ্ছিলো পালক। কিন্তু কিসের অভিমান? ঠোটে হাসি থাকলেও চোখদুটো যে নোনা পানিতে চিকচিক করছিলো সেটাও খুব ভালো করেই নজরে পড়েছে পালকের। পালকের চোখেও কিছুটা পানি জায়গা করে নিয়েছে। কিন্তু কেন? তারও কি অভিমান হচ্ছে? নাকি ভালো লাগছে? লোকটা জড়িয়ে ধরার পর থেকে একটা নতুন সম্পর্ক সুড়সুড়ি দিয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে সত্যিই অরিদকে সে বড় ভাই বানিয়ে ফেলেছে। কিন্তু তার তো রাগ উঠার কথা। এই লোকটিই তো তার পত্রী কন্যাকে তার থেকে কেড়ে নিয়েছে। তবুও কেন তার একটুও রাগ হয়নি?

“”মাথা ব্যথা কমেছে মামনি? খেতে হবেনা?””

লিয়াকত সাহেবের কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে অন্ত্রীশা। চোখটা বন্ধ করেই বললো,

“” তোমার আদর খেয়েই তো আমার পেট ঢোল হয়ে গেছে। আবার কি খাবো,আব্বু?””

অন্ত্রীশার কথায় অট্টহাসিতে ফেটে পড়লেন লিয়াকত সাহেব। বেশ কিছুক্ষন হাসির পর্ব শেষ করে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,

“” আল্লাহ কোন মানুষদেরকে বেশি পছন্দ করেন, তা কি তুমি জানো,মা?””
“” যে ঠিকমতো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে,আর ভালো কাজ করে।””

অন্ত্রীশার উত্তরে এবারও লিয়াকত সাহেব হেঁসে উঠলেন,তবে উচ্চস্বরে না।

“” তোমার উত্তর পুরোপুরি সঠিক হয়নি,মা। আল্লাহ ধৈর্যশীল মানুষকে সব থেকে বেশি পছন্দ করেন।””
“” সত্যি?””
“” হুম। আর আমি জানি আমার মেয়েও যথেষ্ট ধৈর্য্যশীল! তুমি তোমার ধৈর্য্য হারিয়োনা। দেখো আল্লাহ তোমার জন্য সব থেকে বেস্ট উপহারটা বেছে রেখেছেন। আর বেস্ট উপহারটা পেতে হলে তো তোমাকে অবশ্যই বেশি ধৈর্য্য ধরতে হবে। তুমি কি চাওনা বেস্ট উপহারটা নিতে?””

অন্ত্রীশা শোয়া থেকে উঠে বাবার দিকে তাকিয়ে রইলো। তার বাবারটা তার সবকিছু কিভাবে বুঝে ফেলে? বাবা,মা সম্পর্ক সৃষ্টির সময় কি তাদের মধ্যে আরেকটা ইন্দ্রীয় যোগ করে দেওয়া হয়? যার সাহায্যে উনারা সন্তানের না বলা কথাগুলো বুঝে ফেলে?

“” আমার আম্মাজান চুপ হয়ে গেলো যে?””

অন্ত্রীশা বাবাকে জড়িয়ে নিয়ে বললো,

“” আমি পৃথিবীর সবচেয়ে ধৈর্যশীল হয়ে দেখাবো,আব্বু। আল্লাহর দেওয়া সবচেয়ে বেস্ট উপহারটাতো আমার চাই ই চাই।””

লিয়াকত সাহেব ঠোটে হাসি রেখেই বললো,

“” মনে হচ্ছে,তোমার পেটে ক্ষুদারা আবার হাজির হয়েছে?””

অন্ত্রীশাও হাসি হাসি মুখে বললো,

“” ঠিক বলেছো। তবে আমি তোমার হাতে আয়েশ করে খাবো৷ তোমার রুমে,ঠিক এই জায়গাটাতে বসে।””

অরিদ আর পালক পাশাপাশিই খাবার টেবিলে বসে আছে। দুজনেই চুপচাপ। অনিকশা আর মিসেস মনিরা খন্দকার টেবিলে নাস্তা সাজাচ্ছেন। কিছুক্ষন পরেই লিয়াকত সাহেব চেয়ার টেনে বসে পড়লো।

অনিকশা, অরিদ আর পালকের সামনে নাস্তার প্লেট রেখে চলে যেতে নিলেই ওর হাত চেপে ধরে অরিদ।

“” কোথায় যাচ্ছো? এইখানটাই বসো।””

অরিদ চেয়ার ছেড়ে উঠে অনিকশাকে ওখানে বসিয়ে পাশের চেয়ারটাতে নিজে বসে পড়লো।

অরিদ এমন জোর করে অনিকশাকে বসিয়ে দিলো যে এখন উঠতেও পারছেনা। এক পাশে অরিদ তো অন্যপাশে পালক। এভাবে দুজনের মাঝখানে বসে অনিকশা ঘামতে শুরু করেছে।

“” খাচ্ছোনা কেন?””

অরিদের কথায় অনিকশা পরোটা ছিড়ে মুখে পুড়তেই পালক পাশ থেকে বললো,

“” তোমার পাশে বসে নাস্তাতো করছি,কিন্তু তোমাকে বউ বলে ডাকতে পারছিনা। চোখের সামনে নিজের পত্রীকন্যার হাত অন্যজন ধরে আছে। এটা দেখার পরও কি আমার গলা দিয়ে খাবার নামবে,পত্রীকন্যা?””

পালকের কথা শুনে অনিকশার খাবার মুখে আটকে গিয়েছে। বুকে জ্বালা ধরিয়ে কেঁশে উঠতেই পালক আর অরিদ একসাথে পানিভর্তি দুটো গ্লাস এগিয়ে ধরলো। কার গ্লাসটা সে নিবে? এমন পরিস্থিতে তাকে না পড়লেই কি হতোনা? অরিদের জোরকে পাশে রেখে কি সে উঠে যেতে পারতোনা??

অরিদ নিজের গ্লাসটা ফেরত নিয়ে নিজেই ঢকঢক করে পানি খেয়ে ফেললো। অনিকশা অরিদের এমন ব্যবহারে থ হয়ে গেলো।

অরিদ খালি গ্লাসটা টেবিলে রেখে অনিকশার দিকে চেয়ে নিচু স্বরে বললো,

“” তুমি বিব্রত হও এমন কোনো কাজই আমি করবোনা,অনি। পানিটা খেয়ে নাও!””

কিছুক্ষন পরেই শ্বশুড়বাড়ির উদ্দশ্যে পা বাড়াবে অন্ত্রীশা। আবার কবে আসবে কে জানে? ভাবতেই অন্ত্রীশার বুকে চাপা কষ্ট হচ্ছে। আব্বু,আম্মু,আপু,দুলাভাই সবাইকে খুব মিস করবে সে। খুব মিস করবে।

দুপুরের খাবার শেষ করে পালক বিছানায় নিজেকে মেলে দিয়েছিলো। হয়তো খুব টায়ার্ড ছিলো তাই চোখে ঘুম নেমে আসে। রাতেও তেমন একটা ঘুম হয়নি। নিজের রুম ছাড়া অন্য কোথাও সে ঘুমুতে পারেনা। তবে আতিশের সাথে সে মাঝে মাঝেই ঘুমিয়েছে। ওর বিছানাই এক অন্যরকম প্রশান্তি অনুভব করে পালক।

পালকের ঘুম ভাংগে চুড়ির রিনিঝিনি শব্দে। চোখ মেলে পাশ ফিরতেই অন্ত্রীশার দিকে চোখ আটকে গেলো। পাতলা মিস্টি কালারের জর্জেটের শাড়ী পড়েছে সে। দুহাত ভর্তি মিস্টি রঙের চুড়ি। চুড়ি হাতে দিয়ে মাথা আচড়ানোর ফলেই এতো শব্দ করছে। অন্ত্রীশার এমন সাজে বেশ অবাক হলো পালক। একটু পরেই তো এ বাড়ি ছেড়ে যাবে। কোথায় সে মন খারাপ করে বসে থাকবে তানা সাজুগুজুতে ব্যস্ত!

পালক অন্ত্রীশার থেকে চোখ সরাতে গিয়েও আবার থেমে গেলো। এবার চোখ আটকেছে অন্ত্রীশার শাড়ীর ভাজে লুকিয়ে থাকা পেটে!

“”বিয়ের পর তুমি যখন আমার সাথে রাগ করবে তখনি আমি টুপ করে শাড়ী পড়ে ফেলবো। পেট বের করে পড়বো। নাভীটাও বের করে পড়বো। আমি তো শুনেছি,মেয়েরা শরীর দেখিয়ে নাকি ছেলেদের যাদু করতে পারে। আমি নাহয় আমার মেদহীন পেটের মধ্যে থাকা গর্তহীন নাভী দেখিয়ে তোমার রাগ ভাংগাবো। কিগো তোমার রাগ ভাংবে তো? না ভাংলেও মিছেমিছি ভাংগাবে। নাহলে কিন্তু আমি ভ্যা ভ্যা করে কান্না করে দিবো।”” এমনি হাজারও দুষ্টুমিষ্টু কথা দিয়ে সাজিয়ে কত চিঠি লিখেছিলো তার পত্রীকন্যা। আমিতো আজো রাগ করে আছি তোমার উপর। তাহলে তুমি কেন আমার রাগ ভাংগাতে আসছোনা,পত্রীকন্যা?

অন্ত্রীশা আয়নায় পালকের চেয়ে থাকা দেখে বেশ আনন্দিত হচ্ছিলো। একটু দুষ্টুমীর বাহানা টুপ করে শাড়ীটা টেনে পেট ঢেকে ফেললো। এভাবে পেট ঢেকে ফেলায় পালকের ভাবনাও কেটে গিয়েছে। কিছুটা লজ্জাবোধ নিয়েই চোখটা সরিয়ে ফেললো।

অন্ত্রীশা ড্রেসিং টেবিলের সামনে থেকে উঠে হাটা ধরতেই পালক বলে উঠলো,,

“” তুমি আর কখনো শাড়ি পড়বেনা অন্ত্রীশা। যাও এখনি এটা চেন্জ করে আসো!””

পালকের এমন কথায় অন্ত্রীশা থেমে গেলো। বড় বড় পা ফেলে পালকের ধারে এসে দাড়িয়েছে। কিছুটা সামনের দিকে ঝুকে এসে পালকের চোখে চোখ রেখে বললো,

“” কেন পড়বোনা?””
“” আমি বলছি তাই!””

অন্ত্রীশা এবার তার ছোট ছোট চোখগুলো বড় বড় করে ফেললো। মুখে রাগ এনে পালকের দিকে আরেকটু ঝুকলো,,,

“” আপনি বললেই আমায় শুনতে হবে? কেন শুনবো আমি? কে হোন আপনি? আপনি কি আমার কিছু হোন? নাকি আমি আপনার কিছু হয় যে আপনার কথা আমায় পালন করতে হবে। আপনার হুকুম আমাকে মানতে হবে। আপনার সাথে বিয়ে হয়েছে বলে কি আমি আপনার ক্রীতদাসী হয়ে গেছি? না শুনলে আমাকে মারবেন? কি দিয়ে মারবেন? চাবুক দিয়ে??””

অন্ত্রীশার এমন রাগ ঝরানো কথায় পালককেও রাগিয়ে দিলো। অন্ত্রীশাকে টেনে বিছানায় ফেলে দিয়েছে। ওর উপর উঠে ওর বাহুজোড়া চেপে ধরে বললো,

“” আমার কথা তোমাকে শুনতেই হবে। তুমি শাড়ী পড়বেনা মানে পড়বেনা।””
“” ১০০ বার পড়বো,১০০০ বার পড়বো,১০০০০০ বার পড়বো। শুনবোনা আপনার কথা আমি,কি করবেন আপনি?””

অন্ত্রীশার আগুন ঝরানো চাহনি যেন পালককে পুড়িয়ে দিচ্ছে৷ পারছেনা সে চোখে চোখ রাখতে। তবুও জোর করে তাকিয়ে রইলো।

“” বলছেননা কেন? কি করবেন আপনার হুকুম না মানলে?””

পালক অন্ত্রীশার কথার উত্তর না দিয়েই নিজের ডান হাতটা ওর শাড়ীর কুচিটা খামচে ধরলো। অন্ত্রীশার চোখে চোখ রেখেই শাড়ীর কুচি টেনে খুলে ফেললো!

চলবে

ধোয়ার-নেশা পর্ব (৭+৮)

0

#ধোয়ার-নেশা

#রোকসানা-রাহমান

পর্ব (৭+৮)

কাগজের ভাজ খুলতেই পালক দেখতে পেলো

***I need a pad an emergency***

ইতি

অন্ত্রীশা

পালক এক লাইনের ইংলিশ লেখাটি দেখে যতটা না বিব্রত হয়েছে তার থেকেও বেশি অবাক হয়েছে নিচে ইতি লিখে নাম লিখার পুর্বে কিছু একটা লিখে কেটে দিয়ে আবার নামটা লিখা দেখে। বাচ্চাদের মতো কেটেকেটে কালো দলা পাকিয়ে রেখেছে। কেউ যে নিজের নাম লিখতে ভুল করে তা পালক এটা নিয়ে দুজনকে দেখলো। কাগজটি হাতে নিয়েই পালক নিজের অতীতে হারিয়ে যাচ্ছে।

পাঁচ বছরের আগের কথা। তখন পালক বিবিএ ৩য় বর্ষের ছাত্র। তুখোর মেধাবী হওয়ায় পুরো ভার্সিটিতে নামধাম বেশ কামিয়ে চলেছে। এদিকে জুনিয়র থেকে সিনিয়রসহ,শিক্ষকশিক্ষীকা ও প্রিনসিপালের মুখেও সারাক্ষন শুধু পালকের নাম উচ্চারিত হচ্ছে। শুধু মেধাবী দিয়ে এত প্রশংসনীয় পাওয়া সম্ভব না। সাথে আরো বেশ কিছু গুনগানও বিদ্যমান। যার মধ্যে,শান্ত,ভদ্র শিষ্টাচার,ডিসিপলিন,আচার ব্যবহারেও সবার থেকে এককদম এগিয়ে। এতকিছুকে নিয়ন্ত্রনে রাখতে গিয়ে মেয়েদের দিক থেকে বেশ পিছিয়ে সে। কিন্তু সেটাকে নিজের দুর্বলতা না ভেবে বেশ গর্ববোধই করতো পালক। ৩য় বর্ষের ছাত্র,এত হ্যন্ডসাম,এত সুন্দর অথচ খুবই সাধারনভাবে চলাচল যেন সবাইকে আরো বেশি ভাবাত। মেয়েদের থেকে দুরে দুরে থাকাটা যেন মেয়েরা সহ্যই করতে পারতোনা।

“” উফ! এত সকাল সকাল আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছিস,কাদির? আর এক সপ্তাহ পর ইনকোর্স। আমার এখনো কত কি পড়া বাকি জানিস?””

কাদির বাইকের স্পিড বাড়িয়ে বললো,

“” আজকে আমি আমার ক্রাসকে প্রপোস করতে যাচ্ছি। খুব নার্ভাস লাগছে রে পালক। তোরা পাশে থাকলে আমার নার্ভাসনেসটা কিছুটা কমবে!””
“” তোরা মানে? আর কে আছে? আমি তো কাউকে দেখতে পাচ্ছিনা।””
“” আতিশও আছে। ও ভার্সিটিতেই ওয়েট করছে।””

বাইক থেকে নামতে নামতে বেশ বিরক্ত নিয়েই পালক বললো,

“” এসব ফালতু কাজে তোরা আমাকে কেন টেনে আনলি? এইসব প্রেম ট্রেম দিয়ে কি হবে শুনি? একটা মেয়ের পেছনে শুধু শুধু সময় নষ্ট করা ছাড়া আরতো কিছু আমার চোখে পড়েনা।””
“” যখন পড়বে তখন তুই মরিচগাছে সরষে ফুল দেখবি!””

আতিশের কথায় এবার বেশ রেগে গেলো পালক। খানিকটা ওর কাছে এগিয়ে বললো,

“” ফাজলামি করিস আমার সাথে? মরিচ গাছে সরষে ফুল? এমন অযৌক্তিক কথা তোরা কিভাবে বলিস,বলতো?””

আতিশ আর কাদির একতালে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে। তাদের হাসি যেন পালকের রাগকে আরো দ্বিগুন বাড়িয়ে দিচ্ছে। পালক রাগে কটমট করে ওখান থেকে চলে আসার জন্য পা বাড়াতেই মেয়েলী কন্ঠ ভেসে এলো,

“” এখানে পালক ভাইয়া কোনটা?””

মেয়ে কন্ঠ পেয়ে আতিশ আর কাদির হাসি থামিয়ে দিয়ে সামনে বোরকা পরিহিত মেয়েটির দিকে তাকালো। কালো বোরকার সাথে মুখে নেকাব করাই দুটো চোখ ছাড়া কিছুই বুঝা যাচ্ছেনা। দুজনেই বুঝার চেষ্টা করছে এই মেয়ের পালককে দিয়ে কি কাজ?

পালক মেয়েটির দিকে এককদম এগিয়ে বললো,

“” কেন?””

মেয়েটি তার হাতে গচ্ছিত দুভাজ করা একটি কাগজ পালকের দিকে এগিয়ে বললো,

“” একটা আপু আপনাকে এটা দিতে বলছে। খুব আর্জেন্ট বলেছে। এটাতে নাকি উনার জীবনমরন প্রশ্ন লুকায়িত। আপনাকে উত্তর খুজে বের করতে বলেছে!””

মেয়েটির কথার আগামাথা কিছুই বুঝতে পারছেনা পালক। একটা কাগজের সাথে জীবন মরনের প্রশ্ন কি করে লুকায়িত হতে পারে??

পালককে অবাক করে দিয়ে মেয়েটি তার হাত ধরে ফেললো। পালক কিছু বলতে যাবে তার আগেই সে তার হাতে কাগজটি ধরিয়ে হনহন করে হেঁটে চলে গেলো।

কাদির পালকের দিকে এগিয়ে এসে কিছুটা বিদ্রুপের সুরে বললো,

“” এতোদিন তো পরীক্ষার প্রশ্নের উত্তর খুজতি এখন নাহয় একটা মেয়ের জীবন মরনের উত্তর খুজবি! তোর জন্য এগুলোই পারফেক্ট!””

কাদিরের কথার পিঠে কোনো কথা না বলেই পালক হাঁটা ধরলো। তার রাগ হচ্ছে,ভীষন রাগ। তার বন্ধু হয়ে ওরা কেন তার মতো হলোনা? ইচ্ছে হচ্ছে ওদের মাথাগুলো ফাটিয়ে দিতে৷ শুধু ফাটালে হবেনা,মগজ থেকে প্রেমের ভুতও উপরে ফেলে দিতে হবে।

বাসায় এসে পড়ার টেবিলে বসতেই পালকের সেই কাগজটির কথা মনে পড়লো। একটা কাগজে কি করে জীবন মরনের প্রশ্ন থাকতে পারে তা দেখার জন্য পকেট থেকে কাগজটা বের করলো। ভাজ খুলতেই গুটি কয়েক লাইন চোখে পড়ছে,

**এই যে উত্তম পুরুষ! শুনলাম আপনি নাকি পৃথিবীর সব পুরুষের গুনাগুন নিজে একাই বয়ে বেড়াচ্ছেন?? কেন আপনার কি আর কোনো কাজ নেই? মানুষের মগজ চিবিয়ে চিবিয়ে খাচ্ছেন কেন? সাথে আমারটাও খাচ্ছেন। ক্লাসে টিচাররা ঢুকেই আগে আপনার নামে যখন কতগুলো ফুলঝুড়ি ছাড়েনা তখন আমার কি করতে ইচ্ছে করে জানেন? আপনাকে ব্লেন্ডারে ঢুকিয়ে সরবত বানিয়ে খেয়ে ফেলতে।

আমার ফ্রেন্ডের কাছে শুনলাম আপনি নাকি শুদ্ধ পুরুষ? কোনো মেয়ের দিকে ঘুরেও তাকাননা? মেয়েদের দেখলেই নাকি আপনার শরীরে এলার্জি দেখা দেয়? আপনার এই এলার্জির ঔষধ আমি বানিয়ে ফেলেছি। খুব শীঘ্রই আপনার রোগ ভালো হতে চলেছে। আর আপনার এই শুদ্ধ পুরুষিয়োককে আমি কলংকিত করার নীলনকশাও করে ফেলেছি। আপনার শুদ্ধতার মধ্যে আমি কঠিন পদার্থ আর জড় পদার্থ একসাথে বিক্রিয়া করে জীবানু বানিয়ে,সেগুলো ঢেলে দিয়ে আপনাকে অশুদ্ধ বানিয়ে কলংকিত করে দিবো। এখন আপনি কতটা কলংকিত হতে চান সেটা ভাবুন। আপনার ভাবনার উপর বিবেচনা করেই নীলনকশার উপর সিলমারা হবে!

ইতি

পত্রীকন্যা

এমন ভয়ংকর চিঠি পড়ে পালকের মাথা ঘুরছে। মাথার উপরে যে ফ্যানটা ৩৬০ ডিগ্রি আংগেলে ঘুরছে তার তুলনায় পালকের মাথা যেন ৩০৬০ আংগেলে ঘুরছে বললেও ভুল হবে৷ পালকের শরীর ঘেমে উঠেছে। হাত,পা কাঁপাও শুরু করে দিয়েছে। পালক মাথা কয়েকবার ঝাকিয়ে নিয়ে চিঠিটার দিকে পুনরায় সুক্ষ নজরে তাকালো। লেখার স্টাইলে মনে হচ্ছে মেয়েটি খুব বেশি হলেও ইন্টারে পড়বে। কিন্তু কথার ধরন দেখে মনে হচ্ছে তার থেকে সিনিয়রও হতে পারে! ইতি লেখার ঠিক নিচে নাম লেখার জায়গাটা কালো কালি দিয়ে কেটেকুটে দলা পাকিয়েছে। সেতো নাম লিখতে গিয়েই ভুল করে কলংকিত হয়ে গেছে। ভাবতেই পালকের ঠোটে হাসি ফুটে এসেছে। কাটাকাটির পর্বের শেষে তার ঠিক নিচেই খুব সুন্দর করে পত্রী কন্যা লেখা দেখে পালকের মাথা ধরা ভালো হয়ে গেলো। এমন অদ্ভুত নামও যে হতে পারে পালকের জানা ছিলোনা৷ কেন জানি মনে হচ্ছে এটা ছদ্মনাম! কিন্তু ছদ্মনাম কেন ইউস করলো? আর তাকে কলংকিত করবে মানে? এখানে কলংকিত দিয়ে কি বুঝাতে চাইছে? চিঠি নিয়ে ভাবতে ভাবতেই পালক টেবিলেই ঘুমিয়ে পড়লো। সে রাতে তার আর পড়া হলোনা।

যে ছেলেটা প্রেমের বিপরীতে চারশো চুয়াল্লিশ ধারায় মামলা করে বেড়াতো,সেই ছেলেই একটা চিঠির চিন্তায় ঘেমে যাচ্ছে! কে দিলো তাকে এমন ভয়ংকর চিঠি? চিঠির প্রত্যেকটা লাইনের প্রত্যেকটা অক্ষরে সে ঝাঝালো ঝংকারের ছোয়া পাচ্ছে। মনে হচ্ছে সত্যি সত্যি তাকে ব্লেন্ডারে বসিয়ে একটু পর পর সুইচ টিপে দিচ্ছে!

পুরো এক সপ্তাহযাবত সে চিঠির মালকিনকে খুজে বেড়ালো৷ চিঠির মালকিন তো দুরের কথা যার হাত দিয়ে চিঠি পেয়েছিলো তাকেও সে খুজে পেলোনা। ভার্সিটির প্রত্যেকটা ইয়ারের রেজিস্টার খাতায় সে পত্রী নামের কোনো মেয়ে আছে কিনা খুজে খুজে সে মরিয়া হয়ে উঠেছে। তবুও কোনো ক্লু পেলোনা। পাবেইবা কি করে সে যে খুব চালাকির সাথে ছদ্মনাম ইউস করেছে!

পত্রী কন্যাকে খুজে না পেয়ে যখনি সে ঝিমিয়ে পড়ে পড়ায় মন বসাচ্ছিলো পালক, ঠিক তখনি আরেকটা চিঠি পেলো। তবে এবার কারো হাত দিয়ে নয়,সোজা কুরিয়ার হিসেবে বাসায় পাঠিয়েছে।

“” এতোরাতে তুই এখানে?””

কাধে আতিশের হাতের ছোয়া পেয়ে পালক অতীত থেকে বেড়িয়ে, ওকে ঝাপটে জড়িয়ে ধরলো।

“” আমার সাথে কেন এমনটা হলো বলতো! আমি তো এগুলো থেকে দুরেই ছিলাম। তাহলে সে কেন যেচে এসে আমাকে ফেলে চলে গেলো? আমার পত্রী কন্যা আমাকে সত্যি সত্যি কলংকিত করে দিয়েছে!””

পালককে এভাবে কাঁদতে দেখে আতিশের বুকটা ধক করে উঠলো। আজ অনেকদিন বাদে ওর মুখে পত্রীকন্যার নাম শুনছে। হঠাৎ কি এমন হলো যে ওকে আবার এতো রাতে ভার্সিটিতে টেনে আনলো? হ্যা এটা সেই জায়গা যেখানে তার পত্রী কন্যা তাকে প্রথম চিঠি দিয়েছিলো!

“” এভাবে বাচ্চাদের মতো কাঁদছিস কেন তুই? তোর সাথে কান্নাটা খুবই বেমানান লাগে। চল তোকে বাসায় দিয়ে আসি। আন্টিরা খুব টেনশন করছেন। আর এখন তো তুই একা না তোকে তো আরেকজনের সুখদুখের কথাও ভাবতে হবে। এসব পত্রীকন্যা রুপকথার মতোই হয়,বুঝলি?””

ইন্টারভিউতে থাকা অবস্থায় মিসেস তানিয়া বেগমের কল পায় আতিশ। নিজের ইন্টারভিউয়ের পর্ব শেষ করেই কল ব্যাক করে। ফোনের অপরপাশে মিসেস তানিয়ার উদ্বিগ্ন কন্ঠ শুনেই আতিশ বুঝতে পেরেছিলো পালক কোথায় থাকতে পারে। তাই সে সময় নষ্ট না করে সোজা এখানে ছুটে এসেছিলো।

পালককে নিয়ে কিছুদুর এগোতেই পালক আতিশকে বললো,

“” তুই খুব টায়ার্ড,আতিশ! তুই বাসায় যা। আমি এখন ঠিক আছি।””
“” আমি কোনো টায়ার্ড না। তোকে বাসায় রেখে এসেই…””
“” তোর মতো বন্ধুর জন্যই আজো হাজারও হৃদয়ভাংগা প্রেমিকগুলো বেঁচে আছে! তুই এতো ভালো কেন রে?””

আতিশ হালকা হাসি দিয়ে বললো,

“” তোর বন্ধু যে তাই!””

আতিশকে ওর বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে পালক নিজের বাসার উদ্দশ্যে গাড়ী স্টার্ট দিলো।

অন্ত্রীশা তার লাল জামদানী শাড়ীর আচল দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে চোখের কোনটা ছিলে ফেলেছে। এতক্ষন পালকের জন্য কান্না পেলেও এখন চোখের নিচে ছিলে যাওয়া ফলে যে জ্বলন হচ্ছে তার জন্য কান্না পাচ্ছে।

পালক রুমে ঢুকতেই অন্ত্রীশা উল্টোদিকে ঘুরে শুয়ে পড়লো। তার খুব অভিমান হচ্ছে। এতো বেশি কেন অভিমান হচ্ছে? ইচ্ছে হচ্ছে ছুটে গিয়ে পালকের কলারটা টেনে চিৎকার করে বলতে, কেমন স্বামী আপনি যে নিজের বউয়ের লজ্জাকে সামলাতে পারেননা? এতো গুরুত্বপূর্ণ একটা ব্যাপার আপনি ঝেড়ে ফেলে দিয়ে নিরুদ্দেশ হয়ে গেলেন? বউ হিসেবে না হোক একটা মেয়ে হিসেবেও তো তার লজ্জাটাকে ঢেকে রাখতে পারতেন!””

অন্ত্রীশার আবার চোখ ভরে এলো। তার চুমুবাবুটা সারাদিন পর বাসায় এলো তাকে সে দেখবেনা? একটু কথা বলবেনা? কিন্তু সে তো এখন রাগ করছে আর রাগ করলে কি কথা বলা যায়? তাহলে রাগের বৈশিষ্ট্যকে তো তার অপমান করা হবে।

পালক কাগজে মোড়ানো একটা প্যাকেট অন্ত্রীশার পাশে রেখে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়লো। দরজায় সিটকিনি লাগানোর শব্দ পেয়েই অন্ত্রীশা দ্রুত উঠে বসলো। প্যাকেটটা হাতে নিয়ে কাগজ খুলতেই অন্ত্রীশার মাথায় রক্ত উঠে গেলো। গরম ভাতের মারের মতো টগবগ করে ফুটছে।

পালক ফ্রেশ হয়ে দরজা খুলতেই অন্ত্রীশাকে কোমড়ে হাত দিয়ে দাড়িয়ে থাকতে দেখলো। শাড়ীর আচলটা কোমড়ের পেচিয়ে এনে একপাশে গুজে দিয়েছে। ওকে পাশ কেটে বের হতে গেলেই অন্ত্রীশা চেচিয়ে উঠলো,

“” আপনি কি সময়ের কাজ সময়ে করতে শিখবেননা? আর কবে শিখবেন?””

পালক থমকে যেতেই অন্ত্রীশা নিজের হাতের প্যাকেটটা ওর মুখের সামনে ধরে বললো,

“” এটা কি এনেছেন?””

পালক প্যাকেটের দিকে না তাকিয়েই বললো,

“” তুমি যা আনতে বলেছিলে!””

অন্ত্রীশা আরেকটু উচ্চস্বরে বললো,

“” আমি এটা আনতে বলেছিলাম?””

পালক এবার বিরক্ত হয়ে প্যাকেটটার দিকে তাকাতেই চোখ ছানাবড় হয়ে গেলো। এটাতো ময়দার প্যাকেট! কিন্তু কি করে হলো? ও তো লোকটাকে প্যাড দিতেই বলেছিলো!

“” কি হলো এখন কথা বলছেননা কেন?””
“” অন্ত্রীশা আমি উনাকে প্যাডের কথায় বলেছিলাম। হয়তো উনি ভুল করে…””
“” অন্যজন যা বলবে তাই আপনাকে বিশ্বাস করতে হবে? নিজে যাচাই করে দেখতে পারেননা আসলেই আপনি ঠিক জিনিসটা নিচ্ছেন নাকি? আর কত এমন একটার পরিবর্তে অন্যটা নিয়ে চলে আসবেন?””

অন্ত্রীশা ঝগড়ার মুডে থাকলেও তা দমে নিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো। তার আবার কান্না পাচ্ছে। আজ এতো কেন কান্না পাচ্ছে? আজ কে কি তার কান্না দিবস?

পালক অন্ত্রীশার দিকে তাকিয়ে রইলো। মেয়েটার কিছু কিছু কথা এমন একটা ভাব তুলে মনে হয় সে তাকে অনেক আগে থেকেই চিনে। শুধু তার দিক থেকে না মাঝে মাঝে তো নিজেরও মনে হয় ওকেও সে চিনে। কিন্তু এমনটা কখনোই হতে পারেনা। কেননা ওকে তো প্রথম পাত্রী দেখতে গিয়েই দেখেছে এর আগে কোথাও দেখেছে বলে মনে করতে পারছেনা পালক! বেশ! ভাবান্ত অবস্থায় পালক মেঝেতে শুয়ে পড়েছে।

অনিকশা আর আতাউর খন্দকার অনেক্ষনযাবতই মিসেস তানিয়া বেগমের সাথে গল্প করছেন। অন্ত্রীশাকে সাথে করে নিয়ে যাওয়ার বাহানায় এখানে আসা। এর মধ্যে অন্ত্রীশাও একবার এসে জড়িয়ে ধরে, কান্না করে আবার চলেও গেছে। কিন্তু এটা খুশির কান্না নাকি কষ্টের কান্না তা বুঝতে পারেনি অনিকশা। বুঝার সময়ও পাইনি। কিছু বুঝার আগেই চোখের পানি মুছে বাবার সাথে গল্পে মেতে উঠেছিলো অন্ত্রীশা। আতাউর খন্দকারের হাতে বেশি সময় না থাকা বিধায় তাকে গোছগাছ করার জন্যই পাঠানো হয়েছে।

মিসেস তানিয়া বেগমের দিকে একদন্ড তাকিয়ে অনিকশার ভালো লেগে গেছে। বেশ হাসিঝুশি আর প্রানবন্ত মানুষ। প্রতিটা কথার ফাঁকে ফাঁকে ছোটছোট হাসি উপহার দিচ্ছেন। বারবার মুখগোমড়া করে অভিযোগের সুরে বলছেন,

“”এতো কম সময় নিয়ে এলে মা? অন্তত দুপুরের খাবারটা তো খেয়ে যেতে পারতে। আমাদের বাসায় প্রথম এলে তোমরা,আপ্যায়নের সুযোগটাও পেলামনা!””
“” বিয়ের ঝামেলায় মা একটু অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তো,তাই একটু তাড়াতাড়ি যেতে পারলে ভালো হয়। আর আপনি এভাবে কেন বলছেন? আমরাতো দুদিন পরপরই বোনকে দেখতে চলে আসবো। তখন আপ্যায়ন করতে করতে বিরক্ত হয়ে যাবেন!””

অনিকশার এবারের কথাতেও মিসেস তানিয়াবেগম হেঁসে উঠলেন। তিনি এবার আতাউর খন্দকারের দিকে ঝুকতেই অনিকশা উঠে দাড়ালো। এতো কি গোছগাছ করছে অনতি? ঘন্টা তো পার হয়ে এলো। ভাবতে ভাবতেই অনিকশা সিড়ি বেয়ে উপরে উঠা শুরু করেছে।

অন্ত্রীশা শ্বাশুড়ির অনুমোতি নিয়ে নিজের রুমে চলে আসে নিজেকে গুছিয়ে নিতে। জামাটা চেন্জ করে একটা সুতির শাড়ী পড়ে নিলো। চুলে চিরুনি দিতেই পালক হন্তদন্ত হয়ে রুমে ঢুকলো। পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট বের করে একটা সিগারেট মুখে পুড়ে ম্যাচ খুজছে।

এই বাসায় সে দুদিনযাবত আছে কই কখনোতো উনাকে সিগারেট খেতে দেখেনি। তাহলে আজ হঠাৎ তাও মেহমান থাকা অবস্থায় সিগারেট খাচ্ছেন কেন? আয়নায় অন্ত্রীশা পালককে দেখে থমকে গেলো। হাত থেকে চিরুনি ফেলে রেখে পালকের কাছে ছুটে এলো।

বেশ অসহায়ভাবে বললো,

“” আমার বাবা এসেছেন,সাথে আপুও। আর আপনি এখন সিগারেট ফুকছেন? খুব বাজে লাগছে। প্লিজ ওটা ফেলে দিন!””

অন্ত্রীশার কথা কানে না নিয়েই পালক সিগারেটটা ধরিয়ে ফেললো। একটা টান দিতেই অন্ত্রীশা এবার উত্তেজিত হয়ে বললো,

“” আমার কথা কি আপনি বুঝতে পারছেননা? এখন যদি কেউ রুমে চলে আসসসসসস…””

অন্ত্রীশাকে তার কথা শেষ করতে না দিয়ে ওর ঠোটদুটো নিজের ঠোটের আয়ত্বে নিয়ে নিয়েছে পালক। ঘটনার আকস্মিকতাকে কাটিয়ে উঠতে না পেরে অন্ত্রীশা পালককে ছাড়ানোর চেষ্টা করতেই ওর কোমড় জড়িয়ে নিজের সাথে ল্যেপ্টে নিলো পালক। আজও যে নিজের মধ্যে বন্দী হয়ে থাকা ধোয়াগুলো অন্ত্রীশার মধ্যে ঢেলে দেওয়া তার মুখ্য কাজ হয়ে দাড়িয়েছে!

চলবে

#ধোয়ার-নেশা

#রোকসানা-রাহমান

পর্ব (৮)

অন্ত্রীশাকে তার কথা শেষ করতে না দিয়ে ওর ঠোটদুটো নিজের ঠোটের আয়ত্বে নিয়ে নিয়েছে পালক। ঘটনার আকস্মিকতাকে কাটিয়ে উঠতে না পেরে অন্ত্রীশা পালককে ছাড়ানোর চেষ্টা করতেই ওর কোমড় জড়িয়ে নিজের সাথে ল্যেপ্টে নিলো পালক। আজও যে নিজের মধ্যে বন্দী হয়ে থাকা ধোয়াগুলো অন্ত্রীশার মধ্যে ঢেলে দেওয়া তার মুখ্য কাজ হয়ে দাড়িয়েছে!

পালক অন্ত্রীশাকে ছেড়ে দিতেই অন্ত্রীশার কাশি শুরু হয়ে গেছে। কাশতে কাশতে চোখে পানি চলে এসেছে। অনিকশা হুড়মুড়িয়ে রুমে ঢুকেই অন্ত্রীশার সামনে পানির গ্লাস ধরে বললো,

“” মানা করেছিলাম না বিয়ে করতে? এই তোর স্বামীর ভালোবাসা? যে ভালোবাসার ছোয়াই তুই কেশে কেশে মরন দেশে চলে যাচ্ছিস?””

অন্ত্রীশা পানির গ্লাসটা নিয়ে ঢকঢক করে পানি খেয়ে বড় বড় নিশ্বাস নিতে নিতে বললো,

“” আপু,তুমি এখানে?””
“” এখানে মানে? ধোয়ার ঠেলায় কি সব গিলে খেয়ে ফেলেছিস? আমি এখানে আসছি ২ ঘন্টা পার হতে চললো।””

অন্ত্রীশা নিজের কাশি নিয়ন্ত্রে রাখার জন্য বিছানায় ধপ করে বসে পড়লো। মাথা কেমন ভনভন করছে। তার মাথায় কি মাছিরা বাসা বেধে নিয়েছে? এতো কেন ভনভন করছে,পেটের ভেতরটাও কেমন গুড়মুড় করছে। মাছিরা কি মাথা থেকে পেটের ভেতরেও চলে গেলো? উফ! কি অসহ্য অনুভূতি হচ্ছে!

অনিকশাও অন্ত্রীশার পাশে গিয়ে বসলো। অন্ত্রীশার মাথায় হাত রেখে স্বাভাবিকভাবেই বললো,

“” তুই ঠিক আছিস তো অনতি?””

পেটের ভেতর গুড়মুড়ের শব্দে গলার ভেতরটাও জ্বালা করছে। শব্দটাকে আটকাতে পেটে বাম হাত দিয়ে চেপে ধরেছে অন্ত্রীশা। বোনের দিকে তাকিয়ে ভাবছে,তবে কি আপু আজকেও উনাকে চুমু খেতে দেখে ফেলেছে? উনার সাথে আমার সব লজ্জার ঘটনাগুলো আপুর সামনেই কেন ঘটে?

“” হুম,ঠিক আছি। তুমি হঠাৎ আমার রুমে এলে যে কিছু লাগবে?””

অনতি মাথা নাড়িয়ে না বুঝিয়ে আবার বললো,

“” এই বিয়েটা তোর জন্য ঠিক হয়নি রে অনতি,আসলে বিয়ের কোনো সমস্যা না। সমস্যাটা তো পালকের। এখনো সময় আছে বোন,তুই চাইলে আমি সব কিছু ঠিক করে দিতে পারি। তোদের তো সেরকম ঘনিষ্ঠ সম্পর্কও হয়নি!””

অনিকশার কথায় অন্ত্রীশা বেশ বিরক্ত হলো। মুখে কিছুটা বিরক্তভাব ফুটিয়ে একটা কঠিন কথা বলতে ইচ্ছে করছে তার। কিন্তু তার আগেই মুখ ভর্তি করে বমি করে বসলো অনিকশার শরীরে!

“” আপনি সত্যি যাবেননা?””

অন্ত্রীশার কথায় পালক একবার ওর দিকে ঘুরে আবার খোলা আকাশে মনোনিবেশ করলো। আজকের সূর্যটা খুব বেশি প্রকট তাপ দিচ্ছে। গরমটাও ভালোই পড়েছে। ভাপসা গরমে পালকের শার্ট ভিজে চুপসে আছে নিজের শরীরের সাথে। কিন্তু সেদিকে কোনো খেয়াল নেই তার। মনে হচ্ছে তার ভেতরের প্রকট যন্ত্রনারশ্মির তাপের কাছে সূর্যের এই তাপ কিছুই না। তাই তো এই রোদেও সে ছাদের কিনার ঘেষে দাড়িয়ে আছে। বিষে যদি বিষের ক্ষয় হয় তাহলে আজ সে তার ভেতরের যন্ত্রনার তাপটাও রোদের তাপ দিয়ে ক্ষয়ে শেষ করে নিবে।

“” এমন কাঠফাটা রোদে দাড়িয়ে আছেন যে? মাথা ব্যথা করবে।””

আকাশের দিকে তাকিয়েই পালক বলে উঠলো,

“” আমাকে নিয়ে কেউ চিন্তা করুক এটা আমি পছন্দ করিনা। তেমার আব্বু তোমার জন্য ওয়েট করছে!””
“” আপনিও চলুননা আমার সাথে। বিয়ের পর একা বাপের বাড়ি গেলে মানুষ নানান কথা শুনাবে।””

পালক দুহাত পকেটে পুড়েই অন্ত্রীশার দিকে এগিয়ে এসে বললো,

“” প্রতিবেশিরা কথা শুনানোর জন্যই সম্পর্ক গড়ে তুলে! তুমি কি এখান থেকে যাবে নাকি আমিই চলে যাবো?””

পালকের এমন শক্ত কথায় অন্ত্রীশার মন খারাপ হয়ে এলো। গলাটাও ধরে এসেছে বোধহয়। তার মন খারাপের সাথে সঙ্গী হতেই হয়তো হালকা সবুজ শাড়ীটা গাড় সবুজ রঙে বদলে গিয়েছে। অন্ত্রীশা ধীর পায়ে নিচে নেমে যাচ্ছে। আপনি খুব পঁচা,আমি এতো সহজে আপনাকে কিছুতেই ক্ষমা করবোনা। আপনাকে আমি কঠিন শাস্তি দেবো। আমার মনের ভেতরে জমে থাকা ভালোবাসার আগুনে পুড়িয়ে আপনাকে শেষ করে দিবো!

**ওহে উত্তম পুরুষ,

শুনলাম আপনি নাকি তালাশ টিম নিয়ে আমাকে তালাশ করে বেড়াচ্ছেন? আমাকে খুজে পাওয়া আপনার কাম্য নয়। এসব গোয়েন্দাগিরি বন্ধ করুন। সবে তো আপনাকে কলংকিত করার জন্য নীল নকশায় কালো রং ঢেলেছি,ওগুলোকে শুকোতে দিন তারপর তো আপনাকে কলংকিত করবো৷ আপনি যে কলংকিত হওয়ার জন্য এতো উতলা হয়ে যাবেন তাতো আমি বুঝতে পারিনি!

জানেন,আপনাকে যখন চিঠি লিখতে বসি তখনি আকাশ ভেংগে বৃষ্টি পড়তে শুরু করে। তখন ইচ্ছে হয় বৃষ্টি মেখে দুজন কলংকের দাগে দাগিয়ে নিতে। এখনো বৃষ্টি হচ্ছে। আসবেন আমার কাছে? আমি নাহয় বৃষ্টি হয়ে আপনাকে ছুয়ে দিবো?

আপনি তালাশ টিম থেকে বেড়িয়ে এসে যদি আমাকে কিছু লিখতে চান তাহলে সে ব্যবস্থা আমি করে দিবো। তবে হ্যা,নজরদারী করা যাবেনা। তাহলে কিন্তু আমি বৃষ্টি না হয়ে বজ্রপাত হয়ে যাবো,তারপর আপনাকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে শেষ করে নিজেও বিলিন হয়ে যাবো।

ইতি

পত্রী কন্যা

চোখে বৃষ্টির ফোটা পড়তেই পালক আকাশের দিকে তাকালো। আকাশের দিকে মুখ করে দুহাত দুদিকে মেলে দিয়েছে। চোখটা আবার বন্ধ করে বৃষ্টির ফোটাকে বরন করে চিৎকার করে বললো,

“” তুমি কি আজও আমাকে চিঠি লিখছো পত্রী কন্যা? দেখো আকাশ ভেঙে বৃষ্টি পড়ছে। তোমার উত্তম পুরুষের গায়ে মেখে দেওয়া কলংকের দাগগুলো ধুয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমি তো চাইনা তোমার প্রেমের কলংক এভাবে বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে যাক। আমি তো চাই তুমি তোমার ভালোবাসার বৃষ্টিতে আমাকে ভিজিয়ে নাও৷ কেন চলে গেলে? যদি যাবারই ছিলো তাহলে কেন এসেছিলে? আমার যে তোমাকে বড্ড প্রয়োজন পত্রীকন্যা। আমার যে খুব ইচ্ছে তোমার সাথে তোমার ইচ্ছেতে প্রতিটা বৃষ্টির ফোটার সাথে অনুভূতির অতলে ডুবে যেতে। তুমি কি তোমার ইচ্ছেগুলো আমাকে আর জানাবেনা? বৃষ্টিতে হারিয়ে যেতে যেতে আমাকে চিঠি লিখবেনা? আজকের এই বৃষ্টিতে ভিজে আরেকটা চিঠি লিখবে পত্রীকন্যা? যে চিঠিতে থাকবে তোমাকে ভুলে যাওয়ার ঔষধ!

“” এমন ভুতের মতো সাজছিস কেন? আজকে কি তোর বিয়ে?””

হঠাৎ আতিশের কন্ঠ পেয়ে পাপড়ি লাফিয়ে উঠলো। আতিশ আসবে দেখেই সে আজ হালকা কাজের একটা সাদা আর লাল কম্বিনেশনের লেহেংগা পড়েছে। সেদিন বিয়েতে তো উনাকে সাজ দেখানোই হয়নি তাই চোখে কাজল আর ঠোটে লাল লিপস্টিক পড়ছিলো। চোখে কাজল দেওয়া হলেও ঠোটে লিপস্টিক দেওয়া শেষ হয়নি,উপরের ঠোটে শেষ করে সবেই নিচের ঠোটে লিপস্টিক ছুয়া দিতেই আতিশের কন্ঠ পেয়ে হাত থেকে লিপস্টিকটা পড়ে গিয়েছে।

আতিশ মাথার চুলের পানি ঝাড়তে ঝাড়তে পাপড়ির কাছে এগিয়ে এসে বললো,

“” কাক ভিজা ভিজে গেছি, তোর জন্যা আমাকে কত কষ্ট করে আসতে হলো। যদি ঠিকঠাক মতো না পড়িসনা তাহলে আজ একটা মারও মাটিতে পড়বেনা। যা বই নিয়ে আয়!””

পাপড়ির কানে আতিশের কথা পৌছালেও তা মাথায় প্রবেশ করেনি,সেতো এখন আতিশের চুল ঝাড়া দেখায় ব্যস্ত। ইশ! উনার মাথা ভর্তি এই চুলগুলোকে আমি কবে ছুয়ে দেখবো?

“” কি হলো এভাবে থ হয়ে দাড়িয়ে রইলি কেন? যা বই নিয়ে আয়।””

পাপড়ি বই আনার বদলে আতিশের দিকে নিজের তোয়ালেটা এগিয়ে দিয়ে বললো,

“” ভালো করে মুছে নিন,নাহলে সর্দি লেগে যাবে।””

আতিশ চুল ঝাড়া বন্ধ করে পাপড়ির দিকে তাকালো। পাপড়ির একদম কাছে এসে ওর ঠোটে নিজের বৃদ্ধ আংগুল ছুয়িয়ে দিচ্ছে। আতিশের স্পর্শ পেয়েই পাপড়ি চোখ বন্ধ করে ফেলেছে। ঠোটের সাইডে ছড়িয়ে থাকা লিপস্টিকটা মুছতে মুছতে বললো,

“”তুই তো দেখতে এমনি পেত্নীদের মতো, সাজলে তোকে পেত্নীদের থেকেও বেশি বিশ্রী লাগে। যা এখনি ধুয়ে আয়। এক্ষুনি!””

পাপড়ি লজ্জা পেলো ভীষন লজ্জা! যে লজ্জায় সে আনন্দ খুজে পেয়েছে। যে লজ্জা সে আতিশের ছোয়াতে পেয়েছে। আপনি এভাবে ছুয়ে দিয়ে আমাকে আরো খারাপ কিছু বললেও আমি মন খারাপ করবোনা,আতিশ ভাইয়া!

পাপড়ি ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়িয়েও আবার পেছনে ঘুরে দাড়ালো। আতিশকে উদ্দশ্য করে বললো,

“” আপনি আমাকে তুই করে বলছেন কেন?””
“” পালকও তো তোকে তুই করে বলে তাই।””
“” ভাইয়াতো বোনকে তুই করে বলতেই পারে। তাই বলে আপনিও বলবেন?””
“” হুম,ওর বোন মানে তো আমারও…. “””

আতিশের কথার মাঝখানেই পাপড়ি চিৎকার করে উঠলো,

“”ননননননননননননা””
“” কি না?””
“” আমি আজকে পড়বোনা। আপনি এখনি চলে যাবেন। এখন মানে এখনি।””

আতিশ বেশ আরাম করে পাপড়ির বিছানায় বসে পড়লো।

“” আমি কি তোর কেনা ক্রীতদাস? তুই বললেই আমি তোকে পড়াতে ছুটে আসবো,আবার তুই বললেই আমি বেড়িয়ে যাবো? আমাকে তোর এতো সস্তা মনে হয়? এখনি যদি বই নিয়ে না বসিস তাহলে আমি আর কোনোদিনও এ বাড়িতে পা রাখবোনা!””

পাপড়ির ইচ্ছে হলো নিজের চুল ছিড়ে ফেলতে। যাকে মন,প্রান উজার করে ভালোবাসার স্বপ্ন দেখছে সেকিনা এতোদিনে তাকে তুমি থেকে তুইতে চলে গিয়ে বোন বানাতে চাচ্ছে? এইটা দেখা বাকি ছিলো? তার অগোচরে ভালেবাসার এই প্রতিদান পাচ্ছে?

“” জানালা বন্ধ করে দিচ্ছো যে বৃষ্টির শব্দ ভালো লাগছেনা?””

জানালা লাগাতে লাগাতেই অন্ত্রীশা উত্তর দিলো,

“”শীত শীত লাগছেতো তাই। আর এখন তো ঘুমিয়েও পড়বো। জানালা খুলে ঘুমালে আমার সব বই ভিজে যাবে। অরিদ্রা কি ঘুমিয়ে পড়েছে,দুলাভাই?””
“” না,ওর আম্মুর কাছে বকুনি খেয়ে এখন ভাত খাচ্ছে। শুনলাম তুমি খাওনি? কি কারো সাথে অভিমান হয়েছে বুঝি?””
“” আমার আবার অভিমান? সেতো আমার কাছে ধরাই দেয়না! আপনি বসুননা। বাইরে দাড়িয়ে আছেন কেন?””

অরিদ ঠোটে দুষ্টুমীর হাসি নিয়ে ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে বললো,

“” এখন তো তুমি অন্য কারো দখলে হয়ে গেছো। তার অবর্তমানে তোমার রুমে ঢুকতে সাহস পাচ্ছিনা। যদি সে রাগ করে।””

অন্ত্রীশা বিছানা পরিষ্কার করে অরিদকে বসতে দিয়ে বললো,

“” রাগের আগে আরেকটা শব্দ সুপ্ত থাকে,জানেন তো?””

অরিদ অন্ত্রীশার দিকে একটা মিস্টি হাসি দিয়ে বললো,

“” তোমার ঐ সুপ্ত শব্দটার আগেও আরেকটা জিনিস সুপ্ত থাকে ঐটা জানো তো?””

অন্ত্রীশা নিজের প্রশ্নের পিঠে পাল্টা প্রশ্ন পেয়ে থতমত খেয়ে গেলো।

অরিদ অন্ত্রীশার আরেকটু পাশে এসে ওর নাক টিপে বললো,

“” ভালো লাগা আর ভালোবাসা দুটো ভিন্ন হলেও এটা মনে রেখ,ভালো লাগা থেকেই কিন্তু ভালোবাসার সৃষ্টি। যদি ভালোই না লাগে সেখানে ভালেবাসা কখনোই জন্ম হতে পারেনা। ভালোবাসাটা নাহয় পরেই চেয়ো আগে ভালে লাগাটা তৈরী করো। তার জন্য কিন্তু নিজের যত্নটা নেওয়াও জরুরী। তুমি চাইলে,আমি আমার ছোট বোনকে নিজের হাতে খায়িয়ে দেবো।””

অন্ত্রীশা অরিদের দিকে চেয়ে রইলো। কত ভালো মানুষটা অথচ আপু কেন উনাকে সহ্য করতে পারেনা? আমি এত দুর থেকেও উনার ভালোবাসার সুঘ্রান পাই আর ও উনার পাশে থেকেও পাইনা?

“” কি! তুমি কি চাও ভাই তার বোনকে খায়িয়ে দিক?””

অন্ত্রীশা হেসে উঠে মাথা নাড়াতেই অরিদ রান্নাঘরের দিকে ছুটলো।

“”অরিদ্রা কোথায় অরিদ? আমিতো ওকে এখানেই ঘুম পাড়িয়ে রেখেছিলাম!””

অরিদ বিছানা ঝাড়তে ঝাড়তে বললো,

“” অন্ত্রীশা একা একা ঘুমাবে দেখে অরিদ্রাকে ওর রুমে দিয়ে এসেছি। তাহলে ভয়টা কেটে যাবে।””
“” ভয় কেটে যাবে মানে? ও কি আজকেই প্রথম একা ঘুমাচ্ছে?””

অরিদ বিছানা ঝাড়ুটা রেখে অনিকশার কোমড়টা জড়িয়ে নিজের কাছে নিয়ে বললো,

“” বিয়ের পর তো একা ঘুমাচ্ছে! আমি যেমন তোমাকে ছাড়া একা থাকলে ভয় পাই অনতিও তেমন ভয় পাচ্ছে। এটাকে ভুতের ভয় বলেনা গো সখি! বিয়ের ভয় বলে””

অরিদ একটা চোখ টিপ দিতেই অনিকশা ওর হাতটা সরিয়ে বললো,

“” এসব ফালতু কথা বলতে নিষেধ করেছিনা?””
“” এটা মোটেও ফালতু কথা না অনি,ভালেবাসার কথা। আজকে মনটা ভালেবাসা দিয়ে ডুবে আছে। তুমি কি একটু ভালোবাসা ধার নিবে? নাহলেতো আমার তরী ডুবে আমি অক্কা পেয়ে যাবো!””

অরিদের দিকে রাগী লুক দিয়ে অন্ত্রীশা বেড়িয়ে যেতে নিলেই অরিদ পেছন থেকে ডেকে উঠলো,

“” কোথায় যাচ্ছো?””
“” অরিদ্রার সাথে আমিও আজকে অনতির কাছে শুবো। ওর বিয়ের ভয় আমি পাটা আর পুতা দিয়ে পিষে ছাড়বো।””

অনিকশা বিড়বিড় করতে করতে অন্ত্রীশার রুমের দিকে এগুচ্ছে। রুমের দরজা খুলতেই অনিকশা ভরকে গেলো। পালক অরিদ্রার কপালে চুমু খাচ্ছে। পালক কখন এলো? আমাকে তো কেউ কিছু বলেনি আর ও তো বলেছিলো আসবেনা। তাহলে এত রাতে এখানে কি করছে???

অনিকশা বাইরে দাড়িয়েই অন্ত্রীশাকে খুজছে। রুমে তো দেখতে পাচ্ছিনা,এতোরাতে গেলো কোথায়? আমি কি ভেতরে যাবো? নাকি চলে যাবো? কিন্তু অরিদ্রা??

অনিকশা অরিদ্রার দিকে তাকাতেই পালকের চোখে চোখ পড়ে গেছে। এখন এভাবে চলে যাওয়াটা খারাপ দেখাবে ভেবেই অনিকশা ভেতরে ঢুকে পড়লো। অরিদ্রাকে কোলে নেওয়ার উদ্দশ্যে হাত বাড়াতেই পালক ওর হাতের কব্জীর অংশটা চেপে ধরে বললো,

“” কেমন আছো,পত্রী কন্যা?””

চলবে

ধোয়ার-নেশা পর্ব (৫+৬)

0

#ধোয়ার-নেশা

#রোকসানা রাহমান

পর্ব (৫+৬)

অন্ত্রীশার হাজারও ভাবনার বিচ্ছেদ ঘটালো অনিকশার আগমনে। রুমে ঢুকেই দরজা আটকিয়ে দিলো। দ্রুত পদে অন্ত্রীশার কাছে এসে ওর হাত থেকে বেনারশীটা কেড়ে নিয়ে তীর্যক কন্ঠে বললো,

“” এই বিয়ে তুই কিছুতেই করতে পারিসনা,অনতি!””

অনিকশার কথায় অন্ত্রীশার চোখ বড় বড় হয়ে গেলো। বেশ অবাক হয়েই বললো,

“” কেন,আপু? কি হয়েছে?””

অনিকশার ভীষন রাগ হচ্ছে! কেন হচ্ছে সে বুঝতে পারছেনা,কার উপর রাগ হচ্ছে এটাও বুঝতে পারছেনা। কিন্তু রাগটা অন্ত্রীশার উপর ঢালতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু ওর উপর ঢালাটা কি ঠিক হবে?? একটুও ঠিক হবেনা! অনিকশা নিজের রাগগুলোকে বড় করে ঢুক গিলে খেয়ে ফেললো। চোখ বন্ধ করে রাগী লুকটাকে ঢেকে নিয়ে শান্ত হয়ে বললো,

“” এটা কোনো বেনারশী হলো,অনতি? এতো বড় ঘরের ছেলে অথচ তার পছন্দ দেখ,কি নিচু? দেখে তো মনে হচ্ছে হাজার টাকাও হবেনা। এমন নিচু মনের ছেলে আমার বোনের হাসবেন্ড হবে? কিছুতেই না। তুই তো আরো ভালো কিছু ডিজার্ভ করিস। হ্যা তোর গায়ের রংটা আমার তুলনায় একটু কালো,কিন্তু অন্য সব দিক দিয়ে আমার থেকে এগিয়ে!””

অন্ত্রীশা আপুর কথায় এবার বেশ বিরক্ত হলো। সামান্য শাড়ী দেখেই বুঝে ফেললো পালকের মন নিচু? শুধু কালার আর দাম দেখেই সব কিছু বুঝা যায়? সে যে এটা নিজ থেকে পছন্দ করেছে এটা দেখলোনা? এটাতে যে তার স্পর্শ আর ভালোবাসা মিশে আছে। ইশ! আপুটা যে কেন ভালোবাসাগুলো দেখতে পাইনা। না অরিদ ভাইয়ার ভালোবাসা দেখতে পায়, না পালক ভাইয়ার! ছি! ছি!!ছি!!! উনি কি আমার ভাই লাগে নাকি? অনলি পালক!

অন্ত্রীশা পালক নামটা উচ্চারন করাতে লজ্জায় ঠোটদুটো নড়ে উঠছে। অনিকশা কপালটা কুচকিয়ে বললো,

“”তুই হাসছিস কেন? এমন ব্লাউজ আর পেটিকোট পড়ে তোর হাসিটা কেমন লাগছে,জানিস?””
“” আপু ব্লাউজটা কেমন টাইট টাইট লাগছে! বোতাম খুলে যাবে নাতো?””
“” আমি তোকে একটা ইম্পর্ট্যান্ট কথা বলছি আর তুই কিনা বোতাম নিয়ে পড়ে আছিস? দেখি এগুলো সব খোল। অমন নিচু মনের মানুষের সাথে তোর বিয়ে হতে পারেনা৷ আমি বেঁচে থাকতে তো নাই।””

অনিকশা অন্ত্রীশার কাছে ঘেষে ব্লাউজে হাত দিতেই বললো,

“” আপু,তোমাকে খুব অশান্ত লাগছে। কি হয়েছে বলবে? তুমি কি আমাকে কিছু বলতে চাও?””

অন্ত্রীশার এমন কথায় অনিকশা ওর ব্লাউজ থেকে হাত সরিয়ে নিলো। কিছুক্ষন বোনের দিকে পলকহীনভাবে তাকিয়ে থেকে ওর বাহু চেপে ধরলো। ড্রেসিং টেবিলের কাছ থেকে টেনে নিয়ে অন্ত্রীশাকে ওর বিছানায় বসিয়ে দিয়ে নিজে মেঝেতে হাটু ঘেরে বসেছে। অন্ত্রীশার থুতনিতে হাত দিয়ে বললো,

“” এ বিয়েটা করিস না,বোন।””
“” কিন্তু কেন?””
“” কারন…. কার… পালক তোর থেকে বয়সে অনেকটা বড়!””
“” উফ! আপু মাত্র ৪ বছরের বড়।””
“” ৪ বছর তোর কাছে মাত্র মনে হচ্ছে? এটা অনেক বড়! এত বড় ছেলেকে তোর বিয়ে করতে হবেনা। আমি তোর জন্য ওর থেকেও ভালো ছেলে এনে দিবো।””
“” আপু,অরিদ ভাইয়াও তোমার থেকে ৪ বছরের বড়। তাহলে তুমি কেন অরিদ ভাইয়াকে বিয়ে করেছো? তুমি করতে পারলে আমি করতে পারবোনা?””
“” আমি আর তুই এক? আমিও তো তোর থেকে ৪ বছরের বড়। আমার থেকে তুই বেশি বুঝিস?””

অন্ত্রীশা এবার আপুর হাত দুটো নিজের হাতের মুঠোতে নিয়ে বললো,

“” এসব ছোটখাটো কারন দেখিয়ে তুমি আমাকে বিয়ে করার থেকে বিরত রাখতে পারবেনা। আমার আজকে তোমার কথা রাখতে ইচ্ছে করছে আপু,তুমি একটা বড় কারন দেখাও তাহলে আমি বিয়ে করবোনা,প্রমিস!””

অন্ত্রীশার কথায় অনিকশার মুখটা চুপসে গেলো। কি বলতে এসে কি বলছে সে? ভেতরের কথাগুলো আর কতদিন অন্ধকারে বন্দী করে রাখবে? এবারও কি সে মুক্তি দিতে পারবেনা??

অন্ত্রীশা বিছানা ছেড়ে উঠে আবার আয়নার সামনে দাড়ালো। ব্লাউজ আর পেটিকোটে নিজেকে কেমন দেখাচ্ছে তাই দেখার জন্য। কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে ভাবলো,খুবই বিচ্ছিরি লাগছে,কিন্তু মুভিতে নায়িকাদের তো এমন বিচ্ছিরী লাগেনা। তার ও তো ওদের মতো মেদহীন পেট!

“” তোর কি মনে হয় পালক তোকে পছন্দ করে?””

অনিকশার কথায় অন্ত্রীশা আয়না দিয়ে বোনের দিকে তাকিয়ে বললো,

“” অবশ্যই,নাহলে অমন পাগলামি করবেন কেন?””
“” উফ! তুই বুঝতে পারছিসনা। পালক ওগুলো তোকে ভালোবেসে নয়,অন্য কারনে করছে!””

অন্ত্রীশা বোনের কাছে এসে সামনে থেকে জড়িয়ে ধরলো। অনিকশার কাঁধে নিজের থুতনিটা ভর করে রেখে বললো,

“” আমি জানি,আপু! উনি এ রকম পাগলামী করার ছেলেই নয়। উনার আরেকটা রুপ আছে,যেটা আমার খুব পরিচিতি। ওটাকে কাছ থেকে দেখতে হলে যে উনাকে বিয়ে করা জরুরী!””

এসব কি বলছে অনতি? ও জানে মানে? কি জানে ও? আর কিসের সাথে পরিচিত বলছে? কি বুঝাতে চাচ্ছে ও? তাহলে কি পালককে ও আগে থেকে চিনে? ওর সাথে কি পালকের কোনো কানেক্ট আছে? কিন্তু এটা কি করে হতে পারে? সে রকম হলে তো আমার জানার কথা! অনিকশার মাথা ঝিম ধরে আসছে। এই মুহুর্তে ও কোনো ঝিমে ডুকতে চাইনা তাই পাল্টা প্রশ্নো করে বসলো,,,

“” তুই কি পালককে আগে থেকে চিনিস অনতি?””

অনিকশার প্রশ্নের উত্তরে অন্ত্রীশা ছোট্ট একটা হাসি উপহার দিতেই দরজায় কড়া নড়ে উঠে।

“” পার্লারের মেয়েরা এসে গেছে,আপু!””

অন্ত্রীশা দৌড়ে দরজা খুলে দিতেই ৫/৬জন মেয়ে রুমে ঢুকে গেলো। হাতে বড় বড় বক্স! হয়তো এগুলোর মধ্যে সাজসরন্জাম লুকায়িত!

অন্ত্রীশা বেশ উৎসাহে ড্রেসিং টেবিলের সামনে রাখা চেয়ারটাতে বসে পড়লো। এতক্ষনে পার্লারের মেয়েগুলোও অন্ত্রীশাকে নিয়ে বিজি হয়ে পড়েছে। অনিকশা বেশ কিছুক্ষনের বোনের দিকে তাকিয়ে থেকে চলে যেতে নিলেই অন্ত্রীশা বলে উঠলো,

“” আপু,বাবাকে একটু পাঠিয়ে দিবে প্লিজ? বলবে উনি আমার শাড়ীর কুচি ধরে না দিলে আমি কুচি খুলে রেখেই শাড়ী পড়বো। আর অমন খুলা কুচি নিয়েই বিয়ের পিড়িতে বসে পড়বো!””

লিয়াকত খন্দকার মেয়ের দিকে না তাকিয়েই মেঝেতে বসে পড়লেন। মেয়ের শাড়ীর কুচিতে হাত দিতেই অন্ত্রীশা বললো,

“” বাবা,আমার বিয়ে ঠিক হওয়ার পর থেকে তুমি একবারও আমার সাথে কথা বলোনি। রাতের বেলা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেও আসোনি। এখন দেখ,আমাকে দেখতে কেমন লাগছে সেটাও দেখলেনা,আমি কি দেখতে অনেক পচা হয়ে গেছি?””

লিয়াকত সাহেব অশ্রুসিক্ত নয়নে অন্ত্রীশার দিকে তাকিয়ে বললো,

“” কি করবো,বল! তোর দিকে তাকালেই শুধু চোখে পানি চলে আসছে। কি যে হলো! মনে হয় কঠিন ব্যমো হয়েছে। তোকে বিদেয় করেই চক্ষু হসপিটালে যেতে হবে!””

অন্ত্রীশা এতক্ষন দাড়িয়ে থাকলেও এবার বাবার কাছ ঘেষে বসে পড়লো।

“” দেখি চোখে কি হয়েছে?””

অন্ত্রীশা চোখে হাত দিতেই লিয়াকত সাহেব নিশব্দে কেঁদে উঠলেন।

“” তুমি কি চাচ্ছো আমার এতো সুন্দর সাজটা নষ্ট হয়ে যাক?””

লিয়াকত সাহেব চোখের পানি মুছে অন্ত্রীশার কপালে চুমু খেয়ে বললেন,

“” আমার ছোট্ট রাজকন্যাটাও তার নতুন রাজ্যে পাড়ি দিবে। সুখে থাকিস! নতুন রাজ্যের রানী হলেই চলবেনা,সেখানকার সবার সুখদুখের সাথী হবে কেমন? সব থেকে ভালোরানী হয়ে দেখাবে!””

অন্ত্রশা বাবাকে জড়িয়ে ধরে বললো,

“” তুমি আমার বেস্ট বাবা! আর বেস্ট বাবার মেয়ে অবশ্যই বেস্ট রানী হবে!””

বড় মেয়ের হুট করে বিয়ে হওয়ার কারনে তেমনভাবে বড় করে অনুষ্ঠান করা হয়নি লিয়াকত সাহপবের। তাই ছোট মেয়ের বিয়েতে কোনো কিছুর কমতি হোক সেটা উনি চাননা। নিজে এই বুড়ো বয়সেও দাড়িয়ে থেকে দুহাতে সব সামাল দিচ্ছে। এই মুহুর্তে ছেলের অভাব বুঝতে পারছেন লিয়াকত সাহেব। অরিদ যদিও জামাই হিসেবে একটা চমৎকার ছেলে। হাতে হাতে সব দিক দিয়েই সামলে দিচ্ছে। কিন্তু দুদিন পর তো সেও তার রাজ্যে পাড়ি দিবে। বাড়িটা একদম শুন্য হয়ে যাবে। এত বড় বাড়িতে দুজন বুড়াবুড়ি বন্দী হয়ে থাকাটা কতটা কষ্টকর হবে এখন বুঝতে পারছেন! চোখের কোনে জমে থাকা পানিটা মুছে নিজের অর্ধাঙ্গিনীর খোজে গেলেন।

বরপক্ষ চলে এসেছে শুনে অনিকশা অন্ত্রীশার পাশ থেকে উঠে এসেছে। পাশের রুমেই পালকদেরকে বসিয়ে রাখা হয়েছে। বিয়ের কাজটা শেষ করেই স্টেজে নেওয়া হবে। তারপর খাওয়া দাওয়া বাকি কাজ সারা হবে।

অনিকশা দুর থেকেই বরকে দেখতে লাগলো,সেও হালকা মিস্টি কালারের মধ্যে সেরওয়ানি পড়েছে। অনিকশার কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকেই শরীরটা রাগে রিরি করছে। এটা কি বিয়ে বাড়ি নাকি মিস্টির দোকান যে সবাই নিজেরাই মিস্টি সেজে বসে আছে? অনিকশার ইচ্ছে হলো বড় করে হা করে পালক আর অন্ত্রীশাকে টুপ করে খেয়ে নিতে। খেতে নিশ্চয় বিচ্ছিরী স্বাদ হবে। ভাবতেই অনিকশার বমি বমি পেলো।

“” অনি,চলোনা আমরাও দ্বিতীয়বারের মতো বিয়েটা সেরে ফেলি!””

অরিদের কন্ঠ পেয়ে অনিকশা পেছন ঘুরতেই ওর চোখ আটকে গেলো অরিদের দিকে! অরিদও মিস্টি কালারের পান্জাবী পড়ে আছে,দেখতে কোনো অংশে তামিলের নায়কের চেয়ে কম লাগছেনা! টিন এজের যে কোনো মেয়ে আজ অরিদকে দেখলে প্রেমে পড়ে যাবে। শতশতবার প্রেমে ডুবে ডুবে বলবে,তোমার প্রেমে আমি হাবুডুবু খেতে চায়,তুমি কি আমাকে পারমিশন দিবে,মিস্টি বালক??? তার তো টিন এজ না,তাহলে ওর ও কেন আজ অরিদের প্রেমে পড়তে ইচ্ছে করছে??

অরিদ অনিকশার চোখের সামনে হাতের আংগুলের সাহায্যে তুরি বাজাতেই ওর হুশ এলো।

“” কি মজা!কি মজা!পাপাই,মামনিকে বিয়ে কলবে! আমি আজ দুতো বিয়ে দেখবো!””

অরিদ্রার হাততালির আওয়াজে অনিকশার মন ভালো হয়ে উঠলেও পরক্ষনেই রেগে গেলো।

“” তোমরা বাপ বেটি আজ মিস্টি কালারে মাতিয়েছো কেন? কি কুৎসিত লাগছে। আমার মেয়েটার গায়ে যদি মশা বসে?””
“” কি করবো বলো! তুমিতো তোমার রঙে আমাকে রাঙাতে দাওনা। তাই ভাবলাম তোমার পছন্দের রঙে নিজেকে সাজিয়ে মনটাকে শান্তনা দেই।””

অনিকশা অরিদ্রাকে কোলে নিতে নিতে বললো,

“” বাড়িটাকে তোমরা সবাই মিলে মিস্টির দোকান বানিয়ে ফেলেছো! যত্তসব!””

পাপড়িকে দেখতেও আজ ভারী সুন্দর লাগছে। কিন্তু যার জন্য এত কষ্ট করে সাজলো সেই তো এলোনা। তাহলে কি লাভ এই সাজ রেখে? পাপড়ির ইচ্ছে হলো নিজের নামের মতো নিজের সাজগোজগুলোকে জড়িয়ে ফেলে দিতে! চোখের পানি দিয়ে সব ঘেটে দিতে। মানুষটা এত কেনো অবহেলা করে আমাকে? কিচ্ছু ভালো লাগছেনা আমার। কিচ্ছুনা!

ভাইয়ের পাশে মুখ গোমড়া করেই বসে রইলো পাপড়ী। আর ক্যামেরাম্যান তার সেই গোমড়ামুখের ছবি তোলাই ব্যস্ত!

বিয়ের রীতিনীতি শেষ করে অন্ত্রীশাকে নিয়ে বাড়ির উদ্দশ্যে বেড়িয়ে পড়লো বরপক্ষ!

বাড়ীর কাছে গাড়ী থামতেই সবাইকে ফেলে পাপড়ি নেমে আসলো। দৌড়ে ছাদে উঠে আতিশের নাম্বারে ডায়াল করলো। রিং বেজেই যাচ্ছে কিন্তু ওপাশ থেকে কোনো রেসপন্স আসছেনা। এদিকে পাপড়িও দমে যাচ্ছেনা। কলের পর কল তো মেসেজের পর মেসেজ দিয়ে যাচ্ছে। এক পর্যায়ে ওপাশ থেকে কল আসতেই পাপড়ি চট করে রিসিভ করে বললো,

“” আপনি আসেননি কেন?””
“” আমার ইন্টারভিউ ছিলো,পাপড়ি!””
“” আপনার সবসময় ইন্টারভিউ থাকে। পৃথিবীর সব ইন্টারভিউ কি আপনি একাই শেষ করবেন? ভাইয়া তো আপনার ছোটবেলার বন্ধু তাও আসলেননা? ভাইয়ার কত মন খারাপ হয়েছে জানেন?””
“” তোমার ভাইয়ার মন খারাপ হয়েছে আর জানাচ্ছো তুমি?””
“” ভাইয়াতো বিজি তাই আমি…””
“” এতগুলো কল কেন দিয়েছো? তোমাকে মানা করেছিনা আমাকে এত কল দিবেনা? আমি ডিস্টার্ব ফিল করি। কথা শুনোনা কেন? তোমার জন্য শান্তিমতে ঘুৃমাতেও পারলামনা। তুমি শুধু পালকের বোন বলে কিছু বলতে পারছিনা নাহলে থাপড়িয়ে সোজা করে দিতাম! সব কিছুতে বাড়াবাড়ি!””

আতিশের ধমক খেয়ে পাপড়ি ফুপাতে লাগলো। উনি কি জানেননা আমি কেন কল দেই? নাকি জেনেও না জানার ভান ধরে থাকেন???

“” অমনি শুরু করে দিলে? মানুষকে ডিস্টার্ভ করা আর ফুপানি ছাড়া আর কি কিছু শিখনি? পড়াও তো মাথায় ঢুকেনা। পালকের বোন বলে তোমাকে আমার এত কষ্ট করে পড়াতে হচ্ছে! নাহলে কবেই ছেড়ে দিতাম। এরকম গোবর মার্কা স্টুডেন্ট আতিশ কখনোই পড়ায়না!””

বেশ বিরক্ত আর তাচ্ছিল্যভাবেই কথাগুলো বলে আতিশ কলটা কেটে দিলো। আমি দিনে হাজারটা ইন্টারভিও দিয়েও এতোটা টায়ার্ড হয়না যতটা না তোমার ফুপানি শুনে হই। পৃথিবীতে সবচেয়ে কষ্টের জিনিস কি জানো পাপড়ি? ভালোবাসার মানুষের চোখের পানি! আর তুমি সেটাই বারবার করো,আমাকে কষ্ট দাও খুব কষ্ট!! তোমার চোখের পানি মুছার কোনো যোগ্যতাই আমার নেই। আমি চাইনা তোমার চোখের পানি মুছতে গিয়ে আমি আমার আর পালকের সম্পর্কটা নষ্ট করতে!

অন্ত্রীশা বেশ কিছুক্ষন পালকের রুমের বিছানার ঠিক মাঝখানটাই বসে ছিলো। বসে থাকতে থাকতে কোমড় ধরে এসেছে। দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলো ভিড়ানোই আছে। কেউ আসবেনা ভেবে পালকের রুমটা ঘুরে ঘুরে ছুয়ে ছুয়ে দেখছে। প্রতিটা জিনিসের গন্ধ নিতে নিতে ঘড়ির দিকে চোখ পড়লো। ৩ টা বেজে ২৫ মিনিট। এতো রাত হয়ে গেলো উনি এখনো এলেননা?? কখন আসবেন উনি?? হঠাৎ কারো পায়ের আওয়াজ পেয়ে অন্ত্রীশা দৌড়ে বিছানার মাঝে গিয়ে বসে পড়লো। বড় করে ঘোমটা দিয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো। বুকটা ঢিপঢিপ করছে! নিশ্বাসটা বন্ধ করে অন্ত্রীশা পায়ের আওয়াজ শুনতে লাগলো।

চলবে

#ধোয়ার-নেশা

#রোকসানা-রাহমান

পর্ব (৬)

অন্ত্রীশা বেশ কিছুক্ষন পালকের রুমের বিছানার ঠিক মাঝখানটাই বসে ছিলো। বসে থাকতে থাকতে কোমড় ধরে এসেছে। দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলো ভিড়ানোই আছে। কেউ আসবেনা ভেবে পালকের রুমটা ঘুরে ঘুরে ছুয়ে ছুয়ে দেখছে। প্রতিটা জিনিসের গন্ধ নিতে নিতে ঘড়ির দিকে চোখ পড়লো। ৩ টা বেজে ২৫ মিনিট। এতো রাত হয়ে গেলো উনি এখনো এলেননা?? কখন আসবেন উনি?? হঠাৎ কারো পায়ের আওয়াজ পেয়ে অন্ত্রীশা দৌড়ে বিছানার মাঝে গিয়ে বসে পড়লো। বড় করে ঘোমটা দিয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো। বুকটা ঢিপঢিপ করছে! নিশ্বাসটা বন্ধ করে অন্ত্রীশা পায়ের আওয়াজ শুনতে লাগলো। পুরো মনোযোগটাই দরজার দিকে। পায়ের আওয়াজটা আসতে আসতে জোরালো হতে লাগলো,আর তার সাথে তাল মিলিয়ে অন্ত্রীশার হৃদস্পন্দনরাও জোরালো হচ্ছে। অন্ত্রীশার চোখ দুটো আরো গভীরভাবে টিপ দিয়ে ধরে আছে,যার ফলে চোখের পাপড়ির সাথে সাথে,কপাল আর ব্রু দুটোও কুচকিয়ে আছে৷ হাতদুটো দিয়ে শাড়ীটা মুঠো করে ধরে আছে। নিশ্বাস আটকিয়ে রাখার চেষ্টা করলে তা আরো বেশি ঘন হয়ে আসছে। যেন সে এক কঠিন থেকেও কঠিনতর কাজ করে হাপিয়ে পড়েছে।

পালক অন্ত্রীশাকে বাড়িতে রেখেই সাথে সাথে গাড়ী ঘুরিয়ে ফেলেছিলো। সবাই নতুন বউকে নিয়ে এতো ব্যস্ত ছিলো যে পালকের দিকে কারো নজর পড়েনি। এত ব্যস্ততার মাঝে নিজেকে খুব অসহায় লাগবে ভেবেই পালক আতিশের বাড়িতে গিয়ে উঠলো। পালককে দেখে আতিশ কোনো রিয়েকশনই দেখালোনা। এমন একটা ভাব যেন সে জানতো পালক এখনি আসবে। আতিশের সাথে গল্প করতে করতে পালকের চোখ লেগে আসে। তখনি আতিশ ওকে ডেকে তুলে বললো,

“” বউকে রেখে আমার সাথে ঘুৃমাবি নাকি? বাসরটাও কি আমার সাথে সারবি ভেবেছিস?””

পালক দুষ্টুমী করে আতিশকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে বললো,

“” তুই মেয়ে হলি না কেন রে,আতিশ? তাহলে আমাকে এত পেরেশানিতে থাকতে হতোনা। আমি তোকেই বিয়ে করে নিতাম!””

আতিশও দুষ্টুমীর ছলে একটু ভাব নিয়ে বললো,

“” তোর কি মনে হয় না আমি মেয়ে হলে হাজারটা রাজকুমার আমার পিছে লাইন ধরে থাকতো? আমি ওমন হাজারটা রাজকুমার রেখে তোকে বিয়ে করতাম? আমার পছন্দ এতোটাও খারাপ না পালক!””

পালক আতিশকে ছেড়ে উঠে বসে পড়লো, আতিশের পেটের উপর উঠে বললো,

“” তুই কি বলতে চাচ্ছিস? আমি দেখতে কুৎসিত?””
“” কুৎসিত না কিন্তু রাজকুমারও না!””
“” তুই জানিস,আমি চাইলে প্রতিদিন ডজনখানেক প্রেম করতে পারতাম? শুধু একজনেতে আটকে গিয়েছিলাম দেখে!””
“” আমার পেছনে তো এখনো লাইন লেগে আছে। আর সে তোর থেকে কম সুন্দরী না!””
“” মানে? কে?””

আতিশ কথার প্রসঙ্গ পাল্টিয়ে বললো,

“” তোর বউ তোর জন্য ওয়েট করে আছে পালক! তাকে ভালোবাসবি কিনা সেটা তোর ব্যক্তিগত ব্যাপার কিন্তু তাকে কষ্ট দেওয়ার তোর কোনো অধিকার নেয়। সেতো ইচ্ছে করে তোর কাছে আসেনি বরং তুই জোর করে এনেছিস। তোর কি মনে হচ্ছে না তার মনে বুনা হাজারটা স্বপ্ন তুই চুরমার করে দিচ্ছিস??””

আতিশের কথায় পালকের হাসি হাসি মুখটা নিভে গেলো। ওর কাছ থেকে সরে এসে ফোনে হাত দিতেই দেখলো ২২ টা মিসড কল। নিজের কথা ভাবতে গিয়ে সে শুধু তার নববধুকে না তার মা,আর বোনকেও টেনশনে ফেলে দিয়েছে। কি করছি এসব আমি?

পালক মনের সাথে যুদ্ধ করতে করতেই আতিশের রুম থেকে বেড়িয়ে আসে। বাসায় ঢুকেই আম্মুর বকা খেয়ে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ায়। ফোনের লাইটটা অন করতেই দেখে ৩ টা বেজে ৩৩। এতক্ষনে অন্ত্রীশা হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছে ভেবে নিয়েছিলো পালক। কিন্তু রুমে ঢুকেই আড়াইহাত ঘোমটা টেনে বসে থাকা তার নববধুকে দেখতো পেলো। রীতিমত চমকে উঠে পালক। এখনো জেগে আছে? কোন আশায় জেগে আছে?? আমি তো তার কোনো আশাই বাসা বেধে দিতে পারবোনা।

পালকের নিজের উপর খুব রাগ হচ্ছে। যে মেয়েটাকে নিজের বউ হিসেবে কখনো স্বীকৃতি দিতে পারবেনা সে মেয়েটাকে কেন সে ঘরে তুললো?

পালক রুমের দরজা লাগিয়ে ভাবতে থাকে, আমার কি ওকে সরি বলা উচিত? যদি রেগে যায়? রাগলে রাগবে ভুল যখন করেছি সরি তো বলতেই হবে। যতই হোক ওর সময়ের সাথে খেলা করার আমার কোনো অধিকার নেই, বেচারী আমার অপেক্ষায় এখনো ঘুমাইনি!

পালক অন্ত্রীশার পাশে কিছুক্ষন দাড়িয়ে থেকেও মুখ থেকে একটা শব্দ বের করতে পারলোনা। মনে হলো সে কথা বলা ভুলে গেছে, ঠোটঁদুটোও পাথর হয়ে একটা আরেকটার উপর বসে আছে। কিন্তু মনে মনে হাজারটা সরি বলে মেঝেতে শুয়ে পড়লো।

অন্ত্রীশা অপেক্ষা করতে করতে বিরক্ত হয়ে গেলো,চোখ বন্ধ করে রাখতে রাখতে পাপড়ি ব্যথা হয়ে উঠলো,হাত দিয়ে শাড়ি খামচে রাখতে রাখতে আংগুলগুলো ফুলে গেলো। বিরক্তের জায়গায় এবার রাগ এসে জমাট বেধেছে। রাগে ফুসতে ফুসতে এক টানে ঘোমটা খুলে ফেললো অন্ত্রীশা । কিন্তু রুমে তো কাউকে দেখতে পাচ্ছেনা। কিন্তু সে স্পষ্ট কারো পায়ের আওয়াজ পেয়েছিলো,আর সে নিশ্চিত ওটা তার চুমুবাবুর পায়ের আওয়াজই হবে। তাহলে কি উনি আমার উপর রাগ করে চলে গেলেন? কিন্তু কোথায় গেলেন? অন্ত্রীশা মুখটা কালো করে বিছানা থেকে নামতে নিলেই চোখ আটকে গেলো, নিচে বালিশ ছাড়া গুটিশুটি মেরে শুয়ে থাকা পালকের উপর।

অন্ত্রীশার কালো মুখটা আরো কালো হয়ে আসলো। মনে হচ্ছে এখনি তুমুলধারায় বৃষ্টি নামবে।

বিছানায় শুয়ে থেকেই অন্ত্রীশা পালকের দিকে চেয়ে রইলো। ইচ্ছে করছে নিজে চাদর হয়ে উনাকে জড়িয়ে নিতে। এত কেন ইচ্ছে হয় আমার? যে মানুষটা আমার পাশে শুয়ার থেকে মেঝেকে বেছে নিতে পারে তার পাশে আমার কেন শুতে ইচ্ছে করবে?? এটাতো উনার অপছন্দীয় অন্যায় হয়ে যাবে! আর সেটা আমি কখনোই হতে দিতে পারিনা!

অন্ত্রীশা ভারী সাজগোজ,ভারী শাড়ী,ভারী গয়নাসহই শুয়ে রইলো। কিছুই চেন্জ করতে ইচ্ছে করছেনা তার। খুব আলসেমী লাগছে!

বেশ কিছুক্ষন চোখ বন্ধ করে থাকলেও অন্ত্রীশার চোখে ঘুম আসলোনা উল্টো পেটের ভেতর কুটকুট আওয়াজ হচ্ছে। মনে হচ্ছে পেটের মধ্যে থাকা ইদুরগুলো খুদার জ্বালায় অন্ত্রীশার পেটের নাড়ীভুরি সব কেটে খেয়ে ফেলছে। অন্ত্রীশা শুয়া থেকে উঠে পড়লো। উফ! এত ক্ষুধা নিয়ে ঘুৃমানো যায়? পালকের দিকে চোখ পড়তেই অন্ত্রীশার মায়া হলো,এভাবে বালিশ ছাড়া মানুষটা কিভাবে ঘুমাচ্ছে? দেখে তো মনে হচ্ছে বেঘুরে ঘুমাচ্ছে। আর আমি ক্ষুধার জ্বালায় মরছি।

কিছু একটা ভাবতেই অন্ত্রীশার ঠোটে হাসি ফুটে উঠলো। বিছানা থেকে নেমে এসে পালকের পাশে বসে পড়লো। চোখটা বন্ধ করে পালকের শেরওয়ানির পকেটে হাত ঢুকিয়ে দিলো। মনে মনে ভাবছে,যদি হিসাবনিকাশ সব ঠিক থাকে,ইনশাল্লাহ হাতে কিছু উঠে আসবে। অন্ত্রীশা পকেটে ভালো করে হাত ঢুকাতেই হাত ভর্তি চকলেট নিয়ে পকেট থেকে বের করলো। চকলেট দেখে অন্ত্রীশার চোখ চকচক করছে! আমি জানতাম আপনি ভুলবেননা!

সকালের মিস্টি আলোর ছোয়া চোখে পড়তেই অন্ত্রীশার ঘুম ভেংগে গেলো। ঘুম ঘুম চোখে পাপড়ি দুটো মেলতেই অন্ত্রীশা অবাক!

সাদা পান্জাবী,আর মাথায় সাদা টুপি পড়ে সিজদাহই আলিংগন করছে পালক।

পালক সালাম ফিরিয়ে মোনাজাত ধরলো। কি বলছে অন্ত্রীশা কিছু শুনতে পাচ্ছেনা। কেন জানি তার খুব শুনতে ইচ্ছে করছে। তাই কানদুটো আরেকটু খাড়া করে বিছানার কর্নারে চলে এলো।

পালক মোনাজাতে বসে একসময় নিশব্দে কেঁদে উঠে,চোখে বয়ে যাওয়া পানি নিয়ে অস্পষ্ট স্বরে বলছে,

“” আমি কি করছি,কেন করছি কিছু জানিনা। বিবেক বলছে অন্যায় করছি কিন্তু মন বলছে ঠিক করছি। বিবেক আর মনের দোটানার সাথে আমি পেরে উঠছিনা,আল্লাহ! তুমি আমাকে এই দোটানা থেকে মুক্তি দাও। আমি মুক্তি চাই,আল্লাহ,মুক্তি!””

পালক মোনাজাত শেষ করে জায়নামাজ ভাজ করতে নিলেই অন্ত্রীশা বলে উঠলো,

“” পুরুষের সৌন্দর্য পরিপুর্নভাবে ফুটে উঠে কখন জানেন?””

পালক ভাবতে পারেনি এতো সকালে অন্ত্রীশা জেগে যাবে। ওর কন্ঠ পেয়ে কিছুটা ভড়কে গিয়ে আড় চোখে পেছনে ঘুরে তাকালো।

অন্ত্রীশা শুয়া থেকে উঠে বললো,

“” সাফমনে মোনাজাতে বসা অবস্থায়। বিবেক আর মন সবসময় দুইরকম ফলাফল প্রদান করে। কেন জানেন?””

অন্ত্রীশার দ্বিতীয় প্রশ্নে পালক একটু ঘাবড়ে গেলো। তবে কি ও সব শুনে ফেলেছে??? অন্ত্রীশার ব্যাখ্যার অপেক্ষা না করেই পালক রুম ত্যাগ করলো। অন্ত্রীশা হা করে পালকের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো। এমন চোরের মতো পালালো কেন? আমি কি উনার চুরি করা দেখে ফেলেছি???

পাপড়ি ঘুম থেকে উঠেই আতিশের নাম্বারে কল দিলো। মানুষটার ভালোবাসা নাই পেলাম,বকাগুলো তো পাবো? উনার বকার মধ্যেই আমি ভালোবাসা খুজে নিবো। বেশ কয়েকবার রিং হলেও আতিশ পাপড়ির কল রিসিভ করলোনা। আতিশের এই অভ্যাসটা পাপড়ির খুব বিরক্ত লাগে। সে কখনোই প্রথমবার কলে আতিশকে পাইনা। কম করে হলেও পাঁচ,ছয়বার কল দেওয়ার পর পাবে তাও উনি কল ব্যাক করবেন। পাপড়ির কল কখনোই রিসিভ করতে পারেনা৷ পারবে কিভাবে? উনার মাথায়তো ইন্টারভিউয়ের বোঝা চাপানো। বোঝা নামাতে নামাতেই উনি ঘেমে একাকার! তার কল রিসিভ করার সময় কোথায়?

পাপড়ির ভাবনা বিচ্ছেদ ঘটে ফোনের রিংটোনে।

“” তোমাকে না মানা করেছি,আমাকে কল দিতে? আবার কেন কল দিছো? তুমি কি ঘুমের সাথে আমার বকা হজম করে ফেলো?””
“” হুহ!””
“” আবার হুহ! কি? কিছু বললে বলো না বললে কেটে দাও। তুমি যদি ভাবো শুধু হুহ! বলার জন্য কল দিয়ে আমাকে বিরক্ত করবে তাহলে আমি তোমার হুহ! কে…””
“” আজকে পড়াতে আসবেননা?””
“” পড়াতে আসবো মানে? বিয়ের রং কি একদিনেই কেটে গেলো? আর হঠাৎ করে মাথায় পড়ার ভুত ঢুকলো কিভাবে? এমনিতে তো পড়া গুলিয়ে খাওয়াই দিলেও গিলোনা। আজ হঠাৎ বিয়ের আমেজ না কাটতেই পড়ার কথা বলছো?””
“” সামনে আমার টেস্ট পরীক্ষা তো তাই!””
“” তোমার পরীক্ষাতো আমি কি করবো? তোমার পড়া আমি পড়ে দিবো? আমার কি জন্মই হয়েছে শুধু পরীক্ষার পড়ার জন্য? এখন চাকরীর পড়া বাদ দিয়ে তোমার পড়া পড়ে দিতে হবে?””
“” হুম!””
“” আবার হুম! বলা হচ্ছে? কাল আসতেছি! তবে পড়ানোর জন্য না তোমার হুমের বারোটা বাজানোর জন্য!””

আতিশ টুস করে ফোনটা কেটে দিলো। ফোনের দিকে তাকিয়ে পাপড়ি হেসে ফেললো। ফোনের স্ক্রিনে কয়েকটা চুমু খেয়ে বললো, আপনার কাছে পড়ার জন্য শুধু বিয়ে কেন,আমি তো আমার সব স্পেশাল ডে গুলোকেও ভুলে যেতে পারি। আমার কাছে আপনার সাথে কাটানো একএকটা সেকেন্ড এক একটা স্পেশাল ডে।

অন্ত্রীশাকে গোসল করিয়ে একটা লাল টকটকে জামদানী শাড়ী পড়ানো হয়েছে। হালকা মেকাপ আর সোনার গয়না পড়ানো হয়েছে। একটু পর পর নতুন বউ দেখার বাহানায় ওর উপর হামলে পড়ছে নতুন নতুন মেহমান। এদিকে সারাদিনে আর একবারও পালকের দেখা পাইনি সে। উনি কি আমার কোনো সাজই দেখবেননা???

মিসেস তানিয়া বেগম একটু পরপর এসে অন্ত্রীশার সাথে ফিসফিস করে নানান জনের সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন,আর ইশারায় সালাম করতে বলছেন। সালাম করতে করতে মনে হচ্ছে কোমড় ভেংগে যাবে। তবুও তার সালাম করা শেষ হবেনা। এখন তো দাড়াতেও ভয় লাগছে,মনের ভেতর খুতখুত লাগছে। অন্ত্রীশা মনে মনে গুনে গুনে দেখলো পিরিয়ডের ডেট আসতে এখনো দুদিন বাকি। তাহলে এখনি এমন লাগছে কেন? সবার সামনে আবার লজ্জা পেতে হবেনা তো?? অন্ত্রীশার নতুন মেহমানদেরকে দেওয়া কৃত্রীম হাসিটাও এখন আর আসছেনা। আশেপাশে তাকিয়ে শ্বশুড়বাড়ির কাউকে দেখতেও পাচ্ছেনা। কি যে হবে? ভাবতেই পালক রুমে ঢুকলো।

অন্ত্রীশার মেঘে ঢাকা মুখটা নিমিষেই রোদে উজ্জ্বল হয়ে গেলো। লজ্জাশরমের মাথা খেয়ে ভরা রুমেই ডেকে বসলো,

“” এই যে শুনছেন? একটু এদিকে আসবেন? আমার একটা ইয়ে লাগবে!””

অন্ত্রীশার কথায় শুধু পালক নয় রুমে উপস্থিত সকলেই হা করে তাকিয়ে রইলো। নানাজন নানা কথা বলতে বলতে রুম থেকে বেড়িয়ে যেতে লাগলো। তাতে যেন অন্ত্রীশা হাফ ছেড়ে বাচলো। বিছানা থেকে নেমে পালকের মুখোমুখি হয়ে বললো,

“” আমার একটা ইয়ে লাগবে।””

পালক বেশ বিচলিত হয়ে বললো,

“” ইয়ে মানে?””

পালকের পাল্টা প্রশ্নে অন্ত্রীশা থতমত খেয়ে গেলো। তাড়াহুড়ো আর টেনশনে সে এসব কি বলছে? তার কি লাগবে এখন সে কিভাবে বলবে?

পালক তখনো অন্ত্রীশার উত্তরের অপেক্ষায় রয়েছে দেখে অন্ত্রীশা আরো বেশি লজ্জা পাচ্ছে। কি বলবে,কিভাবে বলবে কিছুই বুঝে উঠতে পারছেনা। অন্ত্রীশা চোখ বন্ধ করে আল্লাহ আল্লাহ জপতে লাগলো। চোখ খুলতেই দেখলো পালক নেই। যাহ! উনি কই গেলো? এখন আমার কি হবে?

পালক বেড়িয়ে যাওয়ার জন্য গাড়ীর কাছে এগুতেই একটা বাচ্চা আংকেল বলে ডাক দিলো। পালক পেছনে ঘুরতেই বাচ্চাটা ওর হাতে একটা কাগজ দিয়ে দৌড়ে চলে গেলো।

কাগজের ভাজ খুলতেই পালক দেখতে পেলো

***I need a pad an emergency***

ইতি

অন্ত্রীশা

পালক এক লাইনের ইংলিশ লেখাটি দেখে যতটা না বিব্রত হয়েছে তার থেকেও বেশি অবাক হয়েছে নিচে ইতি লিখে নাম লিখার পুর্বে কিছু একটা লিখে কেটে দিয়ে আবার নামটা লিখা হয়েছে। বাচ্চাদের মতো কেটেকেটে কালো দলা পাকিয়ে রেখেছে। কেউ যে নিজের নাম লিখতে ভুল করে তা পালক এটা নিয়ে দুজনকে দেখলো। কাগজটি হাতে নিয়েই পালক নিজের অতীতে হারিয়ে গেলো।

চলবে

ধোয়ার-নেশা পর্ব (৩+৪)

0

#ধোয়ার-নেশা

#রোকসানা-রাহমান

পর্ব (৩+৪)

এমন কি ইম্পর্ট্যান্ট কথা যার জন্য দরজা আটকিয়ে নিতে হবে? অন্ত্রীশা কিছুটা বিরক্ত নিয়ে আপুকে টেনে বাইরে বের করে দরজা আটকিয়ে নিলো।

“” আটকিয়েছি বলুন!””

“” একটু লাইনে থাকো তো…””

যেখানে পালকের কন্ঠস্বর শুনার জন্য অন্ত্রীশা আকুল সেখানে ইম্পর্ট্যান্ট কথা মানে তো মহাআকুলতা। ফোনটা কানে নিয়েই বেশ মনোযোগী ভঙ্গিমায় বসে রয়েছে অন্ত্রীশা। এদিকে এক,দুই,তিন,পাঁচ,দশ,বিশ,চল্লিশ মিনিট পার হতে চলেছে কিন্তু ওপাশ থেকে কারো কন্ঠস্বর আর ভেসে আসছেনা। অন্ত্রীশা খুবি সুক্ষমনো সংযোগ করে বুঝার চেষ্টা করছে ফোনের ওপাশে আদৌ কেউ আছে নাকি নেই। কি এমন ইম্পর্ট্যান্ট কথা বলার ছিল যার জন্য তাকে খালি রুমে দরজা আটকে নিতে হলো অথচ যে বলবে সে লাইনে দাড় করিয়ে বেপাত্তা হয়ে গেছে।

লাইনে থাকতে থাকতে অন্ত্রীশার ঘুম ঘুম পাচ্ছে। বার বার ফোন চেক করে যাচ্ছে ওপাশ থেকে লাইনটাও কাটা হয়নি, এক এক করে সেকেন্ড বেড়ে গিয়ে মিনিটও বেড়ে যাচ্ছে। অন্ত্রীশা কিছুটা বিব্রত ভঙ্গিতেই বলে উঠলো,

“” আমি কি কলটা কেটে দিবো?””

কিন্তু ওপাশ থেকে কোনো উত্তর আসেনি দেখে অন্ত্রীশা এবার বেশ হতাশ হলো। আর মনে মনে আল্লাহর কাছে দোয়া চাইলো তার জীবনে যেন এমন লাইনে থাকা ইম্পর্ট্যান্ট মুহুর্ত আর কখনো না আসে!

অন্ত্রীশা কল কাটবে কি কাটবেনা ভেবেই পাচ্ছেনা। ফোনটা কানে নিয়ে বসা থেকে শুয়ে পড়লো। এক সময়ে তার চোখদুটো বন্ধও হয়ে আসলো।

“” তোমাকে বলেছিলাম লাইনে থাকতে,আমার জন্য তুমি সামান্য লাইনেও থাকতে পারোনা? কেমন মেয়ে তুমি? আবার আমাকে বিয়ে করার জন্য ধেই ধেই করে নাচছো? তোমাকে বিয়ে তো দুরে থাক তোমার সাথে কথা বলতেও আমার গা গুলাচ্ছে। ইডিয়েট কোথাকার! খবরদার কারো কাছ থেকে যদি আমার নাম্বার নিয়েছো আর আমাকে কল দিয়েছো! তাহলে ফোনের ভেতর থেকেই তোমাকে আমি গুলি করে মেরে ফেলবো! যত্তসব!””

অন্ত্রীশা লাফ দিয়ে শুয়া থেকে উঠে পড়লো। শরীর ঘেমে গেছে। ওড়না দিয়ে গলা মুছতে মুছতে ভাবলো,এ আমি কেমন স্বপ্ন দেখলাম??

অন্ত্রীশার পাশেই পড়ে থাকা ফোনটা হাতে নিতেই দরজায় অনর্গল নক করার শব্দ পেলো। দৌড়ে দরজা খুলতেই অনিকশা ঝাঝালো কন্ঠে বললো,

“”দু ঘন্টা যাবত কি এতো কথা বলছিস শুনি? যার জন্য আমাকে রুম থেকে বের করে দিলি??””
“” আমি তো ঘুমাচ্ছিলাম আপু,কথাতো হয়নি!””
“” কথা হয়নি মানে? তুই তো কানে ফোন লাগিয়েই আমাকে বের করে দিলি!””

অন্ত্রীশার উত্তরের অপেক্ষা না করেই ওর হাত থেকে নিজের ফোনটা ছিনিয়ে নিলো অনিকশা! ফোনের লাইটটা অন করেই দেখতো পেলো পালক এখনো কলে কানেক্ট আছে। নামের নিচটাতেই কল টাইমে ২ ঘন্টা ৩৩ মিনিট ৫ সেকেন্ড উঠে আছে। যদিও বা সেকেন্ডটা এখনো চলছে!

অনিকশা বেশ করুন নয়নেই অন্ত্রীশার দিকে তাকিয়ে বললো,

“” বিয়ে হওয়ার আগেই আপুকে মিথ্যে বলা শিখে গেলি?””
“” কি মিথ্যে বললাম?””

অন্ত্রীশার কথার উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন মনে করলোনা অনিকশা। পালকের কলটা কেটে দিয়ে ফোনটা অফ করে ফেললো৷ নিজের রুমে এসে ফোনটা ঢিল মেরে ফেলে দিতেই অরিদ বলে উঠলো,

“” আমার রাগ ফোনের উপর ঝাড়ছো কেন, অনি? তুমি চাইলে আমাকে বকতে পারো! এখন তো তোমার বকা না খেলে আমার পেটের ভাত হজমই হয়না। দেখো আজকের নাস্তাটা এখনো হজম হয়নি,পেটটা কেমন ফুলে আছে!””
“”সুঁই দিয়ে ফুটো করে ফেলো দেখবে পেটটা তরতর করে কমে যাচ্ছে,যত্তসব হেয়ালিপনা করার আর সময় পায়না।””

অরিদ নিজের ল্যাপটপটা ফেলে উঠে অনিকশার কাছে এগিয়ে আসে।

“” তোমার রাগের ক্ষেতের সবজি বুনা কবে শেষ করবে বলোতো? এতো সবজি বুনছো অথচ মাটির উর্বরতা কমার নামই নাই। কোন মাটি দিয়ে ক্ষেত বানিয়েছো বলোতো!””

অনিকশা রক্তরাঙা চোখ নিয়ে চলে যেতে নিলেই অরিদ ওর হাতটা আকড়ে ধরে।

“” আজকের এই দিনটাই তোমাকে প্রথম দেখেছিলাম অনি,বুকের ভেতরে প্রথম মোচড়টাও আজকেই দিয়েছিলো। আজকের দিনটা কি আমাকে দিবে? একটু তোমাকে মন ভরে দেখার জন্য? লাস্ট কবে তুমি আমার চোখে চোখ রেখে হাসি দিয়েছিলে তোমার কি মনে পড়ে?””

অরিদের হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টায় থাকলেও এখন আর ইচ্ছে করছেনা। অরিদ তাকে কতটা ভালোবাসে সেটা হয়তো সে অরিদের থেকেও ভালো করে জানে। যে ছেলে শুধু একপলক দেখার জন্য রোজ ভার্সিটির গেটে দাড়িয়ে থেকে তিনটা বছর পাড়ি দিয়ে দিয়েছে সে ছেলের হৃদয়ের অনিকশা কতটা জায়গা জুরে ছিলো তাও অনিকশার অজানা না। আর সেই জানা থেকেই হয়তো এতটুকু বুঝতে পেরেছিলো অরিদ তাকে ফিরাবেনা। আর সেই বিশ্বাসেই সে হুট করেই অরিদকে বিয়ের কথা বলে ফেলে। বিয়েটাও হয়ে যায়,কোনো সাজসজ্জা ছাড়াই!

অরিদ চাইলেই সেদিন অন্ত্রীশাকে ফিরিয়ে দিতে পারতো। যেখানে আজকালকার ছেলেরা চার/পাঁচ বছরের রিলেশনে গিয়েও বিয়ের কথায় পিছিয়ে যায় সেখানে তো অরিদের সাথে ভালোবাসার কোনো আদান-প্রদানও হয়নি,তবুও মানুষটা একটা টু শব্দ করেনি,একটাবার নিজের ফ্যামিলির কথা,ভবিষ্যতের কথা ভাবেনি। অনিকশার জাস্ট এক কথায় বিয়ে করে ফেললো। কতটা ভালোবাসলে এমন কাজ করতে পারে ভাবলেই অনিকশার বুকটা কেঁপে উঠে। অরিদের ভালোবাসার বিনিময়ে এই চারটা বছরে সে অরিদকে কি দিয়েছে? শুধু অবহেলা আর অবহেলা! কিন্তু কেন? কেন সে অরিদের বুক ভরা ভালোবাসায় নিজেকে রাঙাতে পারেনা?? অনিকশার লালচে চোখটা আরো লাল হয়ে আসলো তবে রাগে নয়,না পারার ব্যর্থতায়!

“”আমি মনে করতেও চাইনা। আজ অন্ত্রীশার গায়ে হলুদ,একটু পরেই মেহমানে বাড়িভর্তি হয়ে যাবে। আর এমন পরিস্থিতিতে তোমার এসব মাথায় আসে কি করে অরিদ?””
“” বেশি সময় নিবোনা,অনি। এক ঘন্টা দিলেও চলবে! তোমার তাতেও সমস্যা হলে ৩০ মিনিট দিও? তোমার সাথে এক রিকশায় ঘুরতে ইচ্ছে করছে খুব,প্লিজ অনি!””

অরিদের এই আবেগ মেশানো কথাগুলো অনিকশার বুকে তীরের মতো গিয়ে বিধে। এতো আবেগ মেশানো কথা এই মানুষটা কোথা থেকে পাই? শুনলেই চোখটা ভিজে আসে। আর নিজের প্রতি ঘৃনা আসে। কিন্তু কোনো মানুষি চায়না সে নিজেকে ঘৃনা করুক অনিকশাও তাই! তাইতো সে যতটা পারে অরিদের থেকে দুরত্ব বজায় রেখে থাকে। আর সামনাসামনি হলেই কোনো ইস্যু দেখিয়ে ঝগড়া শুরু করে দেয় তবুও যেন মানুষটা তার আবেগ থেকে কিছুটাও নিজেকে সরাতে পারেনা। এতো কেন ভালোবাসে সে আমাকে? আমি কি আসলেই এগুলো পাওয়ার যোগ্য??

অনিকশা জোর করে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে তির্যক কন্ঠে বললো,

“” আমি আমার একটা মিনিটও তোমার এইসব ফালতু কাজে ব্যবহার করতে চাইনা!””

অনিকশা দ্রুত পদে রুম ছেড়ে বেরিয়ে আসে। পেছনে ফিরে তাকানোর সাহস নেই। সে জানে তার এই কথাটাই কতটা কষ্ট পেয়েছে অরিদ। কষ্টে মুখটা মলিন হয়ে এসেছে যা সে দেখতে পারবেনা।

বাড়িভর্তি মেহমানের কদরে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে অনিকশা। এর মধ্যে বেশ কয়েকবার অরিদ ওর পিছু পিছু ঘুরঘুর করেছে কিন্তু সেদিক থেকে নিজেকে আড়াল করাটাই শ্রেয় মনে করলো অনিকশা। মানুষটাকে এতোটা কষ্ট দিয়ে ফেলবে জানলে সে কখনোই বিয়ে করতে চাইতোনা। সেদিনের সেই ছোট্ট ভুল আজ এত বড় ইস্যু হয়ে দাড়াবে কখনোই ভাবতে পারেনি সে।

অন্ত্রীশাকে হলুদ শাড়ীতে বেশ লাগছে। শুনেছে এই সবি নাকি পালক নিজে কিনেছে। সাথে ফুলের গয়নাগুলোও সে নিজের হাতে বানিয়েছে ভাবতেই মনের ভেতর আনন্দরা দোল খেয়ে যাচ্ছে অন্ত্রীশার! বার বার ফুলগুলোকে ছুয়ে দেখছে মাঝে মাঝেতো নাকে নিয়ে গন্ধও শুকছে। অন্ত্রীশার মনে হচ্ছে ফুলের মধ্যে সে পালকের গন্ধ পাচ্ছে,কি আবেগী সেই সুবাস।

অন্ত্রীশার এমন কান্ডে বেশ বিরক্ত হচ্ছে পার্লার থেকে আগত মেয়েগুলো। ঠিকমতো সাজাতেও পারছেনা। এতো নাড়াচাড়া করলেকি সাজানো যায়? কিন্তু মুখ ফুটে কিছু বলতেও পারছেনা!

“” উফ! আল কতক্ষন তোমাল সাজুগুজু দেখবো খালামনি? তুমি এমন কললে সাজানো কিভাবে শেষ হবে? বাল বাল ফুলগুলো খুলে নিয়ে নাকে শুকছো কেন? ফুলগুলোও তো নষ্ট কলে দিচ্ছো! আমি কখন সাজবো?””

অরিদ্রার কথায় হেসে ফেলে অন্ত্রীশা।

“” কি করবো মামনি? এইগুলোর গন্ধটা এতো বেশিই ভালো যে আমার তো নাক থেকে সরাতেই ইচ্ছে করছেনা। কি করি বলো তো?””

অন্ত্রীশার কথায় বেশ বিরক্ত হচ্ছে অরিদ্রা তা বুঝতে পারলো অন্ত্রীশা। অরিদ্রার গাল টিপে দিয়ে বললো,

“” আচ্ছা আর দুষ্টুমী করবোনা। এই যে চুপটি করে বসছি। তুমি উনাদের বলো আমাকে ঠিকঠাক মতো সাজিয়ে দিতে। এই আমি চোখ বন্ধ করে নিলাম।””

অনিকশা শাড়ীর কুচি ঠিক করায় ব্যস্ত! কিছুতেই কুচিটা মনের মতো হচ্ছেনা। বিয়ের এতো বছর পরও শাড়ী পড়া শিখতে না পারায় সেদিন আম্মু হালকা করে ঝেড়ে দিয়েছিলো। আর আজকেও একি ঝাড়ি খাওয়ার সাহস পেলোনা অনিকশা। তাই নিজে নিজেই শাড়ী পড়ার চেষ্টা করছে। যদিও বা কুচিগুলো তার হাতের অবাধ্য হচ্ছে। কিছুতেই সমান মাপে কুচি নিতে পারছেনা। হঠাৎই অরিদ এসে অনিকশার হাত থেকে কুচিগুলো কেড়ে নিয়ে বললো,

“” আমাকে ডাকলেও পারতে। তোমার কাছাকাছি থাকার একটা বাহানা তো পেতাম!””

অরিদ নিজের হাত দিয়ে ছোট ছোট করে কুচি আংগুলে গেথে নিচ্ছে। কুচি থেকে নজরটা অরিদের দিকে পড়তেই সাথে সাথে চোখ বুঝে ফেললো অনিকশা। মুখটা কেমন মলিন হয়ে আছে। একদিনেই এতো শুকিয়ে গেছে? সারাদিন কি কিছু খাইনি? নিজেকে কাজে ব্যস্ত রাখতে গিয়ে তো ওর খাবারের দিকে খেয়াল রাখাও হয়নি।

অরিদ কুচি গুছিয়ে অনিকশার কোমড়ে গুজে দিয়ে বললো,

“” তোমার চুলটা একটু বেনি করে দিবো?””
“” না,আমি খোপা করবো।””
“” অহ!””

অরিদের মলিন মুখ নিয়ে চলে যেতে নিলেই অনিকশা বলে উঠলো,

“” খোপা করলেতো ফুলও লাগাতে হবে। আমি তো ফুল কিনতেই ভুলে গেছি। বেনিই করে ফেলি,কি বলো অরিদ?””

অরিদ উৎসাহী কন্ঠে বললো,

“” আমি করে দেই?””
“” পারবে তো?””
“” আগেও তো করে দিয়েছিলাম,অনি!””

বেনি করা শেষে অনিকশাকে আয়নার সামনে দাড় করিয়ে অরিদ বললো,

“” তোমার এই বেনুনিটাই যথেষ্ট আমাকে ঘায়েল করার জন্য!””

অনিকশা কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনি নিজের ফোনটা বেজে উঠে। ফোনটা হাতে নিতেই বুঝতে পারে পালক কল করেছে।

“” হ্যালো?””
“” আপু,অন্ত্রীশার সাজ কি শেষ হয়েছে? সবার আগে ওকে আমি দেখতে চাই। আপনি কি ওর রুমে গিয়ে একটু ভিডিও কল দিবেন? আমি অপেক্ষায় আছি।””

পালকের মুখে আপু শব্দটা এতো বেনান লাগছে কেন?

“” আপু,কিছু বলছেন না যে?””
“” দিচ্ছি!””
“” ও যেন জানতে না পারে আমি ভিডিও কলে আছি। একটু খেয়াল রাখবেন!””

অনিকশা অন্ত্রীশার রুমে ঢুকে বেশ অবাক হলো। গায়ে হলুদ একজনের হলেও কনে দুজনকে দেখতে পাচ্ছে। হালকা মুচকি হেসে নিজের মেয়ের কাছে গিয়ে বললো,

“” আজকে কি আমার মা’টারও গায়ে হলুদ নাকি? খালামনির মতো সেজেছো যে?””
“” খালামনিল সাজটা আমাল খুব পছন্দ হলে আমাল কি দোষ?””

অনিকশা অরিদ্রাকে কোলে তুলে নিয়ে বললো,

“” না,আপনার তো দোষের কিছু নাই। সব দোষ আপনার খালামনির।””

অরিদ্রার গালে দুটো চুমু খেয়ে অন্ত্রীশাকে বললো,

“” দেখি এদিকে ঘুরে বস তো!””

অন্ত্রীশা ঘুরে বসতেই পালককে ভিডিও কল দিলো অনিকশা!

“” ওয়াও,ভাবীকে কি সুন্দর লাগছে রে,ভাইয়া। কিন্তু তুই ভাবীকে না দেখে জানালা দিয়ে কি দেখছিস?””

হঠাৎ পাপড়ির ডাকে জানালা থেকে সরে এসে পালক বললো,

“” কিছুনা। তুই এখানে কি করছিস?””
“” তুই তো গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান করতে দিলিনা। একটু হলুদ ও লাগাবিনা বলে দিয়েছিস। হলুদ ছাড়া বিয়েটা কেমন পানসে পানসে লাগছেনা? তাই তোর গালে একটু হলুদ লাগাতে আসলাম।””

বলেই পালকের গালে হলুদ লেপে দিলো পাপড়ি।

“” আরে কি করছিস? বলেছিনা হলুদে আমার এলার্জি?””
“” বিয়ের হলুদে এলার্জি হয়না ভাইয়া। হলেও কি সমস্যা? ভাবী এসে ভালো করে দিবে।””

পালকের গালে হলুদ লাগিয়ে পাপড়ি আবার ল্যাপটপে তাকিয়ে বললো,

“” ইশ! ভাবীরা কি মজা করছে। আর তুই? তোর গায়ে হলুদ নিয়ে আমার কত প্লেন ছিলো জানিস? তুই সব ভেস্তে দিলি। তুই না আসলেই একটা তুই।””

পালক টিস্যু দিয়ে গালটা মুছতে মুছতে বললো,

“” তোরটা তো পড়েই আছে। তোর বিয়েতে পুরো বাড়ি হলুদ দিয়ে সাজিয়ে নিবো। তখন তুই খুশিতে হাত-পা ছড়িয়ে নাচিস!””
“” ধ্যাত,নিজেরটাতে কি মজা করা যায় নাকি?””

গায়েহলুদের পালা শেষ করতে করতে মাঝরাত্রি হয়ে এসেছে প্রায়। অন্ত্রীশাকে গোসল করিয়ে ওর রুমের দিকেই এগুচ্ছে অনিকশা। এতক্ষনে বাড়িটা মনে হয় একটু শান্ত হলো। অন্ত্রীশাকে রুমে দিয়ে এসে নিজেও আরেকবার শাওয়ার নিবে ভাবতে ভাবতেই দরজা খুললো অনিকশা। রুমটা অন্ধকার দেখে একটু বিরক্তই হলো সে। এতো ব্যস্ততাই রুমের লাইটটাও দেওয়া হয়নি। সে দেইনি বলে কি অন্য কেউ দিতে পারলোনা? এই রুমে কি সন্ধ্যের আলোটাও জ্বালানো হয়নি? মা তো এমন ভুল করবেনা। যদি ভুল না করেই থাকে তাহলে লাইটটা বন্ধ করলো কে?

অনিকশা ভাবনায় ডুবে লাইট জ্বালাতেই ভেতর থেকে একটা কণ্ঠস্বর ভেসে এলো।

“” এতো লেট করলে কেন অন্ত্রীশা? তোমার অপেক্ষা করতে করতে তো আমি শুকিয়ে গেছি।””

ছেলে কন্ঠ পেয়ে অন্ত্রীশা আর অনিকশা দুজনেই অবাক। সামনে তাকাতেই দুজনের মুখ হা হয়ে গেলো। পালক বসে আছে সামনে,মেঝেতে পাগুলো ভাজ করে। আর পালকের সামনে তিন চারটে বোতল দেখা যাচ্ছে। দেখে তো মনে হচ্ছে মদের বোতল!

পালক বসা থেকে উঠে এসে অন্ত্রীশার হাত ধরে টেনে নিয়ে আগের জায়গায় বসে পড়লো। অন্ত্রীশাকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে পুনরায় হাতটা ধরে টেনে নিজের কোলে বসিয়ে নিয়েছে। বা হাতটা দিয়ে অন্ত্রীশার পেটের দিকটা জড়িয়ে নিয়ে অন্ত্রীশার কানের কাছে ফিসফিস করে বললো,

“” নেশা করেছো কখনো??””

চলবে

#ধোয়ার-নেশা

#রোকসানা রাহমান

পর্ব (৪)

পালক বসা থেকে উঠে এসে অন্ত্রীশার হাত ধরে টেনে নিয়ে আগের জায়গায় বসে পড়লো। অন্ত্রীশাকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে পুনরায় হাতটা ধরে টেনে নিজের কোলে বসিয়ে নিয়েছে। বা হাতটা দিয়ে অন্ত্রীশার পেটের দিকটা জড়িয়ে নিয়ে অন্ত্রীশার কানের কাছে ফিসফিস করে বললো,

“” নেশা করেছো কখনো??””

পালকের এমন আচরনে অন্ত্রীশা স্তব্ধ হয়ে গেলো। এভাবে হুট করে এতোটা কাছে টেনে নিবে সে তো ভাবতেও পারেনি। ভাববেই বা কিভাবে? এই মাঝরাতে তার রুমে পালকের উপস্থিতি পাবে সেটা তো কল্পনাও করেনি। পালকের নিশ্বাসের শব্দে অন্ত্রীশার জান যায় যায় অবস্থা। এর মধ্যে নেশার কথা শুনে মনে হচ্ছে এখনি টুপ করে জানটা বিদায় জানাবে! নেশায় তো সে কবেই ডুব দিয়েছে যার কাছে এই মদের নেশা অতি নগন্য!

পালকের ছোয়াতে অন্ত্রীশা ভালো লাগা খুজে পেলেও তা তো সে নিজের বোন তাও বড় বোনের সামনেই মাখাতে পারেনা। কিছুটা অস্থিরতা নিয়েই পালকের কোল থেক উঠে যেতে চাইলো। হালকা নড়ে উঠতেই পালক ওকে এবার দুহাতে ঝাপটে ধরে বললো,

“” এতো ছটফট করছো কেন? এখনো তো কিছুই করলাম না,ছটফটি! বললেনা তো নেশা করেছো নাকি?””

অন্ত্রীশার উত্তর শুনার অপেক্ষা বা করেই অনিকশার দিকে তাকালো পালক,

“” হবু বউয়ের সাথে ব্যাচলর পার্টি করার মনের মনি কোঠায় একটা ইচ্ছে জেগেছিলো। অনেক আগে থেকেই। তাই ভাবলাম ইচ্ছেটাকে মাটি চাপা না দিয়ে বরং পুরন করে নেই। আপু,আপনিও কি আমাদের সাথে জয়েন করবেন? যদিও বা আপনি বিবাহিত। আমার তরফ থেকে কোনো সমস্যা নাই। আপনি চাইলে জয়েন করতে পারেন!””

পালকের মুখে আপু ডাকটি সম্মানের নাকি তাচ্ছিল্যের বুঝে উঠতে পারছেনা অনিকশা। পালকের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে ঘুরে দাড়ায় সে। নিজের ছোটবোনের ঘনিষ্ঠ সময়ে সেখানে থাকাটা খুবই খারাপ দেখাচ্ছে। কেউ দেখাতে চাইলেই যে তাকেও দেখতে হবে এমন তো কথা নাই!

অনিকশা চলে যেতেই পালক মদের বোতলটায় হাত দেয়। গ্লাসে ঢেলে নিয়ে মুখের সামনে ধরতেই অন্ত্রীশা নিজের হাত দিয়ে আটকে বললো,

“” যেটাতে আপনি অভ্যস্ত নয় সেটা কেন করতে চাচ্ছেন? এই মাঝরাতে বমি করে আমার রুমটা নোংরা করতে চাচ্ছেন? আপনার দেওয়া শাড়িটা জড়িয়ে রাখতেই অনেক কষ্ট হচ্ছে তার উপর রুম পরিষ্কার করা আমার জন্য খুবই কষ্টের হবে!””

অন্ত্রীশার এমন কথায় ওর দিকে চোখ পড়ে পালকের। খুবই বিস্ময়ের চাহনি। মিসেস তানিয়া বেগম এ পর্যন্ত ডজন খানেক মেয়ের ছবি দেখিয়েছিলো পালককে। গুনে গুনে ইমোশনাল ব্লেকমেইল করে তাদের বাড়িতেও পালককে নিয়ে হাজির হয়েছিলো। কিন্তু প্রত্যেকবাড়িই পাত্রীদের সামনেই দাড়িয়ে উঠে সবার সামনে বলেছিলো পাত্রী তার পছন্দ হয়নি। আর যেখানে তার বিয়ে করার ইচ্ছেই ছিলোনা সেখানে মেয়ের ছবি দেখে কি লাভ আর মেয়েকে দেখেই কি লাভ? তাই অন্য সব মেয়েদের মতো অন্ত্রীশার ছবিটাও হয়তো তার রুমের কোনো এক কোনে পড়ে রয়েছে। অন্যদের মতো এবারও সে একি কাজ করবে ভেবেই অন্ত্রীশাদের বাড়িতে আসা হয়েছিলো। পাত্রী কে, কোন পাশে বসে ছিলো,কি পড়েছিলো কিছুই সে দেখেনি। কখনো দেখার প্রয়োজনও মনে করেনি!

অন্ত্রীশার নজর ড্রিংকস ভর্তি গ্লাসে থাকলেও পালকের নজর তার দিকে। লাইটের দিকে মুখ করে থাকায় অন্ত্রীশার মুখটা খুব ভালোভাবেই বুঝা যাচ্ছে। ছোট ছোট চোখের উপরে জোড়া ব্রু,দেখে মনে হচ্ছে দুটো কালো রংধনু একসাথে সুখ দুখের কথা বলছে। তার মাঝখান দিয়েই চিকন,সরু নাক। অতটা খারা না হলেও বোচাও বলা যাবেনা। নাকের সামনের দিকে বিন্দু বিন্দু ঘামের সমাবেশ। তার নিচেই গোলাপী আভার চিকন ঠোট,ঠোটের উপরের হালকা পশমও জন্মগ্রহন করে আছে,বয়স বোধহয় খুবই ছোট হবে যার কারনে তেমনভাবে ভেসে উঠেনি,এমনটা খুব কম মেয়েরই থাকে। অন্যদের দেখতে কেমন দেখায় পালক জানেনা কিন্তু তার হবু বউটাকে বেশ মানিয়েছে মনে হচ্ছে,নাকের মধ্যে ঘামের সমাবেশের কিছু সদস্য ঠোটের উপরে বসে আছে,মনে হয় নাকের জায়গায় তারা ঠাঁই পাইনি। গালগুলোর চোখের নিচ দিয়ে একটু ফোলা হলেও ঠোটের দিকে এসে মিশতে মিশতে চেপে এসেছে। ঠোটের নিচের থুতনিটা ধার বেয়ে এসে কিছুটা ভেতরে ঢুকে গর্ত সৃষ্টি করেছে,যার ফলে থুতনিটা অনেকটা লাভের উপরের শেপটার মতো দেখাচ্ছে! কপালের কাছটাতে বেবি হেয়ারগুলো কপালের সাথে ল্যাপ্টে আছে,হয়তো সবেই গোসল করে এসেছে তাই। সব মিলিয়ে অন্ত্রীশাকে সুন্দরী কন্যাদের কাতারেই ফেলা যায়। তবে এত সুন্দর মুখটার কোথাও তিলের দেখা না পেয়ে একটু মন খারাপ হলো পালকের। একটা তিল থাকলে হয়তো আরো বেশি ভালো লাগতো। পালক চোখটা বন্ধ করে অন্ত্রীশার মুখে কোনো এক জায়গায় তিল বসিয়ে নিলো। কিন্তু পরক্ষনেই চোখ খুলে বিড়বিড় করে বললো,

“” না,বেমানান দেখাচ্ছে!””
“” কিহ?””

অন্ত্রীশার মুখে কি শুনে পালক হুশে এলো। ওকে সরিয়ে দিয়ে নিজে উঠে দাড়ালো। যে পথ দিয়ে এসেছিলো সেই পথে এগিয়ে যেতে যেতে বললো,

“” গ্রিলছাড়া বেলকনি আমার একদম পছন্দ না। তোমার আব্বুকে বলে দিও।””

পালকের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে অন্ত্রীশা মুচকি হেসে মনে মনে বললো,

“” আমার তো এবার নেশায় গোসল হয়ে গেছে, চুমুবাবু!”

অনিকশা রুমে ঢুকেই দেখলো অরিদ্রার পাশেই অরিদ শুয়ে আথে,সোজা হয়ে শুয়ে হাতের কব্জীর অংশটা দিয়ে চোখটা ঢেকে আছে। লাইটের আলোতে ঘুমুতে পারেনা অরিদ! খুব করেই জানে অনিকশা। তবুও এমনভাবে শুয়ে আছে যেন সে গভীর ঘুমে মুগ্ন।

অনিকশা অরিদ্রার অন্যপাশে শুয়ে পরলো। উল্টো দিকে কাত হয়ে শুলেও পরক্ষনে ইচ্ছে করেই সোজা হয়ে শুয়ে পড়লো। তার কপালে চুমু না খাওয়া পর্যন্তও যে অরিদ ঘুমুবেনা এটা অজানা নয় অনিকশার। যতই সে ঘুমের বাহানা করুক। তার সাথে বাহানার দিক দিয়ে তো অনিকশা অনেকটাই এগিয়ে!

কয়েক মিনিট যেতেই অরিদের ঠোঁটের ছোয়া পেলো অনিকশা। চোখ বন্ধ করেই অনিকশা বললো,

“” সেদিন যদি আমি তোমার কাছে না যেতাম,তুমি কি আসতে আমার কাছে?””
“” তুমি এখনো ঘুমোওনি,অনি? কতরাত হয়েছে জানো? একটু পরেই তো ফজরের…””
“” আমি একটা প্রশ্ন করছি অরিদ!””
“” কি?””
“” সেদিন আমি তোমাকে বিয়ের কথা না বললে কি তুমি আমাকে বিয়ের কথা বলতে.””
“” এগুলো এখন কেন টেনে আনছো অনি?””

অনিকশা শুয়া থেকে উঠে বসে অরিদের মুখোমুখি হয়ে বললো,

“” আমি যা জানতে চাইলাম তার উত্তর দাও।””

অরিদ ঠোটদুটো প্রসস্থ করে অনির গালটা হাত দিয়ে ছুয়ে বললো,

“” আমি তোমাকে আমার সারাজীবনের সংগী হিসেবেই চেয়েছিলাম,অনি!””

অনিকশা রাগে অরিদের হাতটা সরিয়ে দিয়ে চিৎকার করে বললো,

“” না,তুমি মিথ্যে বলছো,যে তিন বছর পার করেও ভালোবাসি বলতে পারেনি সে বিয়ের কথা কিভাবে বলতো?””
“” অনি, অরিদ্রা উঠে যাবে,শান্তু হও প্লিজ! আমার লক্ষী বউ!””

অনিকশা বসা থেকে উঠে পড়ে। জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে নিতে বললো,

“” খবরদার,তুমি আমাকে বউ বলে ডাকবেনা। যে ছেলেটা আদৌ বিয়ের কথা বলতেই পারতোনা সে ছেলেটার বউ বলে ডাকার কোনো অধিকার নেই!””

অরিদ ও বিছানা থেকে নেমে অনিকশার সামনে এসে ওকে শান্ত করার চেষ্টা করছে,

“” ছুবেনা, তুমি আমাকে। যেখানে তুমি বিয়ের কথা বলতেই পারতেনা সেখানে আমার এক কথাই তুমি কেন বিয়ে করলে আমায়? সেই দিনের সেই ছোট্ট আবদার রাখতে গিয়ে আজ আমরা এখানে এসে থমকে গিয়েছি। তুমি কেন সেদিন আমাকে ফিরিয়ে দাওনি? বলো কেন দাওনি? সেদিন যদি আমাকে ফিরিয়ে দিতে তাহলে আজ হয়তো আমার জায়গায় তোমার জীবনে অন্য কেউ থাকতো,তোমার জীবনটা আরো সুন্দর হতে পারতো,আর অরিদ্রা! অরিদ্রার আম্মুও হয়তো অন্য…””

অনিকশাকে কথা শেষ করতে না দিয়েই নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে নিলো অরিদ। খুব যত্ন সহকারে আগলে ধরে বললো,

“” আমার খুব লোভ হয়েছিলো সেদিন। তোমাকে পাওয়ার লোভ,নিজের করে পাওয়ার! হয়তো সেদিন তোমাকে বিয়ে করার কোনো চিন্তাভাবনা আমার ছিলোনা,কিন্তু এতটুকু জোর দিয়ে বলতে পারবো,তোমার জায়গায় তুমি না থাকলে এ জায়গাটা শুন্যই পরে থাকতো। এখানে অন্য কারোর অস্তিত্বের আগমন কখনোই ঘটতোনা””
“” আমি বিশ্বাস করিনা,তুমি আমাকে ভুলানোর জন্য এসব মিথ্যে বলছো,অরিদ!””

অরিদ কিছু বলতে যাবে তার আগেই অরিদ্রা বলে উঠলো,,

“” পাপাই,মামনি,তোমলা আমাকে লেখেই আদল আদল খেলছো? আমি ঘুমিয়ে পললেই তোমাদেল আদল আদল খেলতে হয়? তোমলা এত দুষ্তু কেন? আমাকে কখনোই আদল আদল খেলায় নেওনা। তোমাদেল সাথে আলি!””

অরিদ্রার কন্ঠ পেয়ে অনিকশা নিজেকে সরিয়ে নিলো অরিদের বুক থেকে। অরিদ্রার দিকে তাকিয়ে বুঝলো,তাদের ঝগড়ার কারনেই হয়তো ওর ঘুম ভেংগে গেছে,উঠে বসে আছে,গালদুটো ফুলিয়ে অন্যদিকে মুখ করে আছে। অনিকশা আর অরিদের চোখাচোখি হতেই দুজনে একসাথে হেঁসে উঠলো!

অন্ত্রীশার বাসা থেকে বের হয়ে নিজের বাসায় যেতে ইচ্ছে হলোনা পালকের। তাই পথ ঘুরে বাল্যকালের বন্ধু আতিশের বাসার দিকে রওনা দিলো। ছোটবেলা থেকেই একসাথে হেসেখেলে বড় হয়ে উঠা। স্কুল,কলেজ ভার্সিটিও একসাথে। অন্ত্রীশার সাথে বিয়ে ঠিক হওয়ার পর থেকে ওর সাথে দেখা হয়নি পালকের। কালকে একটা নতুন সূচনার আগে আতিশের সাথে দেখা করারটা খুবই দরকার। এ কইদিনে মনের ভেতরে জমে থাকা হাজারও কথা সেগুলো তো ওর উপর ঢেলেই হজম করতে হবে। সেতো তার কথা হজম করার বন্ধু!

ফজরের আজানের সাথে সাথেই আতিশের বাসায় হাজির হলো পালক।

“” এতো ভোরে আমার বাসায়। কি হয়েছে? সবকিছু ঠিক তো?””

আতিশের বিছানায় শরীরটা মেলে দিয়ে হাসিমুখেই পালক বললো,

“” অনেকদিন দেখা হয়না,তাই ভাবলাম একটু দেখে যায়। তোর চাকরির কি হলো?””

পালকের পাশে আতিশও শুয়ে পড়লো,

“” নতুন কোনো খবর নেই। আজকেও একটা ইন্টারভিও আছে। চাকরীর বাজারের যে অবস্থা!””

দুজনে বেশ কিছুক্ষন সুখদুখের গল্প করার পর পকেটে হাত দিলো পালক। একটা সাদা খাম বের করে আতিশের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,

“” নে,এটা ধর!””

আতিশ খামটার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে পালকের হাত পিছিয়ে দিয়ে বললো,

“” আমি আর তোর বোনকে পড়াতে পারবোনা,পালক!””

পালক মুচকি হেসে আতিশের বালিশের নিচে খামটা রাখতে রাখতে বললো,

“” তোর সাথে কথা বলে আমি যেমন আমার মনের জ্বালায় মিটাই। তার বিনিময়ে তোর পেটের কিছুটা জ্বালা কমানো আমার জন্য ফরয। আর তাছাড়া এটাতো এমনি এমনি নিচ্ছিসনা,পাপড়িকে পড়ানোর জন্য তোর যে সময়টা ব্যয় হয় তার জন্য!””

আতিশ মনে মনে বললো,ছাই পড়াই। পাপড়ি পড়লেতো পড়াবো। সারাক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে থেকে থেকে কোন ভাবনায় হারায় আল্লাহই জানে!

“” কিছু বললি?””
“” না। আচ্ছা আমাকে একটা কথা বলবি?””
“” কি?””
“” যে কুপিটা নিভে যাচ্ছিলো হঠাৎ করে তাতে কেরোসিন কেন ঢালছিস? এতে যে তোর সাথে অন্যরাও জড়িয়ে পুরে যেতে পারে তা তুই বুঝতে পারছিস না?””

আতিশের কথার পিঠে পালক বড় করে একটা হামি দিয়ে আরাম করে শুয়ে বললো,

“” আমার খুব ঘুম পাচ্ছে,দোস্ত! আমাকে দু ঘন্টা পর জাগিয়ে দিস তো। নাহলে বিয়ে ভেংগে গেলে তোর পুরে যাওয়া পুরানী কন্যারা বিয়ের আগেই জ্বলে যাবে!””

পালকের দিকে তাকিয়ে আতিশ একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নিজেও শুয়ে পড়লো।

অন্ত্রীশা বিয়ের শাড়ী দেখে বেশ আশ্চর্যিত! মিস্টি কালার শাড়ীর মধ্যে সাদা মুক্তো পাথরের ভারী কাজ। এমন মিস্টি বেনারশী পড়ে বিয়ের কনে হয়তো সেই প্রথম সাজবে। কেমন লাগবে তাকে? মিস্টি কনের মতো মিস্টি লাগবে তো?

অন্ত্রীশার হাজারও ভাবনার বিচ্ছেদ ঘটালো অনিকশার আগমনে। রুমে ঢুকেই দরজা আটকিয়ে দিলো। দ্রুত পদে অন্ত্রীশার কাছে এসে ওর হাত থেকে বেনারশীটা কেড়ে নিয়ে তীর্যক কন্ঠে বললো,

“” এই বিয়ে তুই কিছুতেই করতে পারিসনা,অনতি!””

চলবে

ধোয়ার-নেশা পর্ব (১+২)

0

#ধোয়ার-নেশা
#রোকসানা রাহমান
পর্ব (১+২)

“”পাত্রী দেখতে এসে সিগরেট খাচ্ছেন? তাও পাত্রীর বেড রুমে দাড়িয়ে,আপনার লজ্জা করছেনা???””

অন্ত্রীশার তার তাচ্ছল্যমাখা প্রশ্ন ছুড়ে দিতেই পালক নিজের ঠোটদ্বয়ের সাহায্যে অন্ত্রীশার ঠোট চেপে ধরলো। অন্ত্রীশা ভয়ে ছটফট করতে করতে নিজের হাত দিয়ে পালকের মিস্টি কালারের শার্টটা খামচে ধরে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে। পালকের সে দিকে কোনো খেয়ালই নেই। নিজের সিগরেটের শেষ টানে নেওয়া মুখভর্তি ধোয়াগুলো যেন অন্ত্রীশার মুখে ছেড়ে দেওয়ায় তার মুখ্য কাজ হয়ে দাড়িয়েছে!

এই প্রথম অন্ত্রীশার মনে হলো হাতের বড় বড় নখ শুধু সৌন্দর্যই বহন করেনা সাথে সাথে নিজের সেফটি হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। নিজের মনের সেই রাক্ষসী আর জংলি চিন্তাভাবনার জন্য সে কখনোই হাতে নখ রাখেনি। অথচ আজ সেই নখের এক একটা আচড় হয় তো তার বাঁচার সঙ্গী হতে পারতো। অন্ত্রীশা নিজেকে ছাড়ানোর আর কোনো উপায় না দেখে পালকের গলার খালি দিকটায় হাতের ছোট ছোট নখ বসিয়ে দিলো। তাতে যেন পালকের ঠোটের শক্তি ক্রমশ কমে এসেছে। অন্ত্রীশা হাতের খামচিকা আরেকটু গভীর করতেই পালক ওকে ছেড়ে দিয়ে ঘুরে দাড়ালো। মুখে একটা চকলেট পুরে দিতেই পেছন থেকে শুনা গেলো,

“” খালামনি এই আংকেলটা তোমাকে পাপ্পি খেলো কেন? তুমি কি কান্না কলছিলে??””

পালক অন্ত্রীশাকে ছেড়ে দিতেই ও কাশতে থাকে। ওর মনে হলো ওর মুখে কেউ হাজার হাজার জ্বলন্ত সিগরেটের ধোয়া ঢেলে দিয়েছে। প্রতিটা কাশির সাথে যেন ধোয়াগুলো কুন্ডুলি পাকে বের হয়ে তাচ্ছিল্যভাবে বলছে,আমাকে ঘৃনা করিস তো দেখ এবার কেমন লাগে? একটা সিগরেটের প্রতিশোধ কেমন হতে পারে ভাবতে পারছিস? আর কখনো আমাকে দেখে নাকমুখ কুচকিয়ে আমার নামে নিন্দা করবি???

অন্ত্রীশার কাশির গতি যেন বেড়েই যাচ্ছে। কাশতে কাশতে একটু ঘুরতেই নিজেরই বড় বোন অনিকশার কোলে অতিআদরের ভাগনি অরিদ্রাকে দেখতে পেলো। অন্ত্রিশা হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে নিজের কাশি থামানোর চেষ্টা করছে আর ভাবছে তবে কি আপু সব দেখেছে???

পালক চকলেট চুষতে চুষতে ছোট্ট বাবুটার কাছে গিয়ে নাক টিপে বললো,

“” কান্না না করলে বুঝি পাপ্পি দেওয়া যায়না,মামনি?””
“” না। কই আমাল আব্বু তো আমাকে দেয়না। কিন্তু আম্মুকে দেয়!””

পালক অরিদ্রার গালে ছোট্ট করে একটা চুমু খেয়ে বললো,

“” নাও তোমাকেও দিয়ে দিলাম,এবার খুশিতো??””

পালক মুখে ছোট্ট হাসি নিয়ে ড্রয়িং রুমের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

নিজের মা আর ছোট বোনকে নিয়েই কিছুক্ষন আগেই পাত্রী দেখতে এসেছিলো পালক। হালকা কথার মাঝখানেই হুট করে বলে উঠে,সে পাত্রীর সাথে আলাদাভাবে কথা বলতে চায়। পালকের এমন কথায় মিসেস তানিয় বেগম বেশ ঘাবড়ে যায়। মুখে মেঘের ছায়া নিয়ে ভাবতে থাকে তাহলে কি এবারের সম্বন্ধটাও ভেসতে যাবে??? আমার এতো কষ্ট করে সাজানো প্লেনে এভাবে পানি ঢেলে দিবে,পালক?

পালক নিজের মায়ের দিকে তাকিয়ে হালকা মিস্টি হেসে বললো,

“” আম্মু বিয়ের ডেট ফিক্সট করো,পাত্রী আমার পছন্দ হয়েছে। আর এই সপ্তাহের মধ্যে ওকে আমি আমার ঘরে নিতে চাই।””

অনিকশা মেয়েকে কোল থেকে নামিয়ে বোনের কাছে গিয়ে বললো,

“” পানি খাবি,আমি কি পানি নিয়ে আসসস””

অনিকশার কথা শুনারও সময় পেলোনা অন্ত্রিশা। মুখ ভর্তি করে বমি করে দিলো অনিকশার শরীরে। নিজেরি ছোট বোনকে দেখতে আসবে দেখে হালকা বেগুনি কালারের মধ্যে একটা জামদানী শাড়ী পড়েছিলো সে। তার হাসবেন্ডেরই দেওয়া৷ যদিও তার হাসবেন্ডের কথানুযায়ী বেগুনী কালারে তাকে খুব সুন্দরী লাগে কিন্তু কেন জানি তার ভালো লাগেনা। স্বামীর কথা রাখতেই সে এ শাড়ীটা পড়েছিলো৷ এতো অপছন্দের শাড়ি হলেও কি যতই হোক স্বামীর ভালোবাসার উপহার। অনিকশা বেশ রেগেই বললো,

“” দিলি তো আমার শাড়ীটা খারাপ করে? তোর দুলাভাইকে এখন আমি কি জবাব দিবো? মানুষটা এত শখ করে আমার জন্য এটা কিনে এনেছিলো আর তুই কিনা…””

অন্ত্রীশা আবার একদলা বমি করে দিলো অনিকশার উপরে। পেছন থেকে অরিদ্রা হেসে কুটি কুটি হয়ে বললো,

“” আদল কললেও বুঝি বমি আসে খালামনি। কই আমাল তো আসেনা! আম্মু আজকেও আব্বুল কাছে বকুনি খাবে,কি মজা কি মজা। আজকে আব্বুল পাপ্পি পাবেনা।””

অনিকশার ইচ্ছে হলো নিজের এই পাকনা মেয়েটাকে ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে দিতে। ৩ বছরের বাচ্চা এতো বেশি পাকনা কিভাবে হতে পারে??কিন্তু এতে হিতে বিপরীত হয়ে যাবে ভেবে রাগে গজগজ করতে করতে অন্ত্রীশার রুম ত্যাগ করলো অনিকশা।

অন্ত্রীশা এই নিয়ে তিনবার বমি করলো। কুলি করতে করতে তার মুখ খসিয়ে ফেলছে। সাবান পানি দিয়েও কুলি করেছে, তবুও যেন মুখ থেকে সে সিগরেটের গন্ধ ছড়াতে পারছেনা। নিশ্বাস ছাড়লেই মনে হচ্ছে একদলা ধোয়া কুন্ডুলি পেকে তার দিকে তাকিয়ে হাসছে। অন্ত্রীশা রাগে ক্ষোভে ধীরে ধীরে ১ মিনিট পর পর একটা করে নিশ্বাস নিচ্ছে। তাতে যদি গন্দটা কম কম হয়।

“” তোমার পছন্দ না দেখে তার মধ্যে তুমি বমি লাগাবে? এ কেমন ধরনের আচরন অনিকশা? আমার পছন্দকে তুমি এভাবে হেলা করবে? তুমি জানো আমি কতবার পাক দিয়ে দিয়ে ঘুরে ঘুরে এই শাড়ীটা কিনেছি?””

অনিকশা এতক্ষন চুপচাপ অরিদ সাহেবের কথা শুনলেও আর সহ্য করতে পারলোনা। চোখমুখ লাল করে বিছানা ছেড়ে উঠে পড়লো। বারান্দায় নেড়ে দেওয়া শাড়ীটা নিয়ে এসে অরিদের সামনেই কুচিমুচি করে তাতে থুতু দিয়ে বললো,

“”তোমার পছন্দে আমি থুতু ফেলি। বিরক্তকর। লাইট অফ করবে নাকি আমি অন্য রুমে গিয়ে ঘুমুবো?””

অনিকশার এমন কান্ডে থতমত খেয়ে গেলো অরিদ সাহেব। মেয়ের দিকে এগিয়ে গিয়ে বললো,

“” মা,তোর বাপটা কি এতো পচা যে তোর মা এমন কষ্ট দেয়? তুই ও কি আমাকে এভাবে কষ্ট দিবি?””

অরিদ্রা নিজের আব্বুর কপালে চুমু খেয়ে বললো,

“” না,পাপাই। আমি তোমাকে সবসময় এমন আদল কলবো। তুমি আমাল ভালো পাপাই।””

অনিকশা শুয়ে শুয়ে বাপমেয়ের আদরের গল্প শুনতে পারলোনা। শুয়ে থেকে উঠে গিয়ে টুপ করে লাইটটা বন্ধ করে দিলো। পুনরায় বিছানায় আসতেই নিজের ফোনটা বেজে উঠলো। ফোনটা হাতে নিয়ে বেশ কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে পালক বলে উঠলো।

“” আপনার বোন বিয়েতে এত সহজে রাজি হবে আমি আশা করিনি। উনাকে আমার পক্ষ থেকে একটা ধন্যবাদ দিয়ে দিবেন।””

বলেই পালক লাইনটা কেটে দিলো। অনিকশা ফোনটা তখনো কানেই ধরে রইলো। যেন পালকের আরো কিছু বলার কথা কিন্তু সে না বলেই কেটে দিয়েছে।

“” তুই নাকি বিয়েতে রাজী হয়ে গেছিস?””

অন্ত্রীশা মুখে পানি নিয়ে বললো,

“” আপু,আমার আবার বমি বমি পাচ্ছে। তোমার সাথে কাল কথা বলি???””

অনিকশা বিড়বিড় করতে করতে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালো। যে ছেলে মেয়ে দেখতে এসেই এমন চুমু খেয়ে বসে তাকে বিয়ে করার জন্য এমন ধেই ধেই করার নাচার কি আছে? যার একটা চুমু খেয়েই তুই বমি করতে করতে কাহিল তার সাথে তুই সারাজীবন সংসার কিভাবে করবি?? তুই যে দিনে দিনে এমন ক্যারেক্টারলেন হয়ে যাবে তাতো কখনো ভাবিনি। শেষমেষ কিনা আমি ক্যারেক্টারলেস মেয়ের বোন হলাম? তাও বড় বোন,ছি!ছি!ছি!!!

রাতের বৃষ্টি পড়ার শব্দটা অন্ত্রীশার ভীষন পছন্দ। জানালার পাশে বসেই সে মন ভরে বৃষ্টির শব্দ শুনছে। ইচ্ছে করছে বৃষ্টির শব্দের সাথে তাল মিলিয়ে হালকা করে নেচে উঠতে,নিজের চুলগুলোতে বৃষ্টির পবিত্র পানি দিয়ে গোসল করাতে। কিন্তু মায়ের কড়া শাসন আজ যেন সে কোনোভাবেই বৃষ্টিতে না ভিজে। দুদিন পর বিয়ে এখন যদি সর্দিকাশি বানিয়ে ফেলে পড়ে দেখা যাবে,বিয়ের দিন কবুল বলতে গিয়ে বেহুশ!

অন্ত্রীশা বৃষ্টিতে নিজের হাতটা মেলে দিয়ে চোখটা বন্ধ করতেই পালকের মুখটা দেখতে পেলো। ঠোটে হালকা হাসি নিয়ে মনে মনে ভাবতে লাগলো,কেমন মানুষ আপনি? দেখতে এসেই, চুমু খেয়ে নিলেন অথচ আজ চারদিন হতে চললো একটা কল দিলেননা। সবার সাথে ফোনে কথা বলেন অথচ আমার সাথে বলেননা। যদি আমার সাথে কথাই না বলবেন তাহলে আমাকে বিয়ে করতে চাচ্ছেন কেন?

অন্ত্রীশা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে ভেজা হাতটা মুখে ছোয়াতেই মনে হলো এমনও তো হতে পারে উনি চাচ্ছেন আমি উনাকে কল দেই। ভাবতেই অন্ত্রীশা জানালা থেকে সরে এসে নিজের ফোনটা তুলে নিলো। ফোনের লক খুলতেই মনে পড়লো তার কাছে তো তার চুমুবাবুর নাম্বার নেই। তাহলে সে কিভাবে কল দিবে? আব্বুর কাছে চাইবে নাকি আম্মু? কিন্তু ওরা যদি আমাকে নির্লজ্জ মেয়ে মনে করে? এমনিই বলে আমার নাকি লজ্জা কম। আমি কি এখন নাম্বার চেয়ে সেটা প্রমান করে দিবো??? অন্ত্রীশার হাসি হাসি মুখটা নিমিষেই মিলিয়ে গেলো। ইশ! উনার নাম্বারটা যে কেন নাই!

অন্ত্রীশা মন খারাপ করতে করতে জানালাটা বন্ধ করে দিলো এই মুহুর্তে তার বৃষ্টির শব্দ শুনতে খুবই বিরক্ত লাগছে,খুব বেশিই বিরক্ত!

“” আমি কি একটু তোর রুমে ঘুমোতে পারি?””

অন্ত্রীশা পেছনে ঘুরতেই নিজের বোনকে দেখে বললো,

“” আবার ঝগড়া করেছো বুঝি? অমন সহজসরল দুলাভাইটাকে এতো কষ্ট দাও কেন আপু? উনি তোমাকে অনেক ভালোবাসে।””
“” থাক,তোর রুমে আসাটাই ভুল হয়েছে।””

অনিকশা চলে যেতে নিলেই অন্ত্রীশা দৌড়ে গিয়ে ওকে জড়িয়ে নিয়ে বললো,

“” তোমার এতো বেশি রাগ কেন আপু? আগে তো এমন ছিলেনা। তুমি গিয়ে শোও। আমি আম্মুর রুম থেকে কাথা নিয়ে আসছি। মনে হচ্ছে আজ একটু শীত বেশি পড়বে।””

অনিকশাকে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে অন্ত্রীশা নিজের মায়ের রুমের দিকে এগুলো। নিজের রুমের দরজাটা পার হতেই কেউ একজন তার মুখ চেপে ধরেছে। অন্ত্রীশাকে দেয়ালের দিকে সরিয়ে নিয়ে এসে বললো,

“” কোনো সাউন্ড হবেনা। আমি যা করতে চাই চুপচাপ তা করতে দাও””

চলবে

#ধোয়ার-নেশা

#রোকসানা-রাহমান

পর্ব (২)

অনিকশাকে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে অন্ত্রীশা নিজের মায়ের রুমের দিকে এগুলো। নিজের রুমের দরজাটা পার হতেই কেউ একজন তার মুখ চেপে ধরেছে। অন্ত্রীশাকে দেয়ালের দিকে সরিয়ে নিয়ে এসে বললো,

“” কোনো সাউন্ড হবেনা। আমি যা করতে চাই চুপচাপ তা করতে দাও””

অন্ত্রীশার রুমের দরজা খুলা থাকায় রুমে জ্বলে থাকা লাইটের আলো বাহিরে কিছুটা এসে পড়েছে। তার মাধ্যমেই মুখ চেপে ধরা লোকটার চেহারা দেখতে পেলো অন্ত্রীশা। কিছুটা ঝাপসা হলেও তার চুমুবাবুর মুখটা সে বেশ বুঝতে পারছে। চোখের চাহনি তার মধ্যে নেই এপাশ ওপাশ ঘুরপাক খাচ্ছে। কণ্ঠে অনুনয় ছিলো নাকি ধমকানি ছিলো তা নিয়ে বেশ কনফিউজড। কেন এসেছেন উনি? তাও এতো রাতে,এই বৃষ্টিতে ভিজে! মাথার মাঝারি সাইজের চুলগুলোও ভিজে কিছুটা ল্যাপ্টে রয়েছে কপালে। মনে হচ্ছে কপালে কিছুটা চিন্তার ভাজ নাহয় অস্থিরতার ভাজ রয়েছে। কিন্তু ল্যাপ্টে যাওয়া চুলগুলোর জন্য ঠিক বুঝে উঠতে পারছেনা!

অন্ত্রীশা খানিকটা ভয় পেয়েই হাতগুলো ঘুটিয়ে নিয়েছিলো নিজের জামার আড়ালে। হালকা আকাশী কালারের জামা পড়েছিলো সে। কিন্তু পালকের মুখটা দেখেই অন্ত্রীশার ভয় কেটে গেলো। কেন কেটে গিয়েছে সে জানেনা। কিন্তু এটা বুঝতে পারছে এই মানুষটাকে দেখে ভয় পাওয়ার কোনো মানেই হয়না!

পালক অন্ত্রীশার মুখ থেকে নিজের হাতটা সরিয়ে নিলো। চোখে চোখ পড়তেই চোখটাও সরিয়ে নিয়ে অন্ত্রীশার বা হাতটা টেনে ধরে বললো,

“” তোমার চোখে মুখে ভয়ের ছাপ আশা করেছিলাম!””

অন্ত্রীশা পালকের কথার পিঠে কি বলবে বুঝতে পারলোনা। তার যে কেন ভয় পাচ্ছেনা সেটা তো সে নিজেই বুঝতে পারছেনা।

পালক নিজের পকেট থেকে একটা মেহেদির কোন বের করে অন্ত্রীশার হাতে দিতে শুরু করেছে। অন্ত্রীশা তখনো পালকের দিকেই চেয়ে ছিলো। এতো ঝাপসা আলোতে চেহারাটা ভালো করে বুঝা যাচ্ছেনা বলে খুব রাগ হচ্ছে। তার যে এই মুখটার সবকিছুকে মন ভরে দেখে নিতে ইচ্ছে করছে। হাতে হঠাৎ ঠান্ডা কিছুর উপস্থিতি পেয়ে অন্ত্রীশা নিজের হাতের দিকে তাকালো। তাকিয়ে খিলখিলিয়ে হেসে দিলো।

পালক একটা ব্রু উচু করে বললো,

“” হাসছো কেন? মেহেদী দেওয়াটা কেমন হচ্ছে সেটা বড় কথা নয় কে দিয়ে দিচ্ছে সেটা বড় কথা,বুঝেছো? আর এমন বাচ্ছাদের মতো শব্দ করে হাসছো কেন? তুমি জানোনা শব্দ করে হাসতে নেই?””

পালকের কথাই অন্ত্রীশা হাসিটাকে আটকানোর চেষ্টা করছে৷ তার কি দোষ? এভাবে ল্যাপ্টে মেহেদী দিয়ে দিলেতো হাসি পাবেই। যেটা সে পারেনা সেটা তাকে কেন করতে হবে? এমন তো নয় যে আমি বায়না ধরেছি! বাচ্চামী করছেন আপনি অথচ বলছেন আমাকে!

অন্ত্রীশার ভাবনার বিচ্ছেদ ঘটাতেই হয়তো পালক হুট করে ওর জামাতে হাত দিয়েছে। কমড়ের সাইড দিয়ে কাটার দাড় ধরেই জামার সামনের পার্টটা উচু করতেই অন্ত্রীশা ঝট করে পালকের হাত চেপে ধরে বললো,

“” কি করছেন?””

পালক নিজের হাত থেকে অন্ত্রীশার হাতটা সরাতে সরাতে বললো,

“” আমি এক কথা দুবার বলতে পছন্দ করিনা অন্ত্রীশা। আমি যা করতে চাই তা করতে দাও!””

পালকের এবারের কথাতেও অনুনয় ছিলো নাকি ধকমের সুর ছিলো তা বুঝতে পারেনি অন্ত্রীশা। তবে এটা বুঝতে পেরেছে তার হাতদুটো অবশ হয়ে আছে আর সেই হাত কিছুতেই পালককে বাধা দিতে পারবেনা,কিছুতেই না৷ কিন্তু কেন??

পালক জামাটা কুচকিয়ে উচু করে ধরতেই অন্ত্রীশা চোখ বন্ধ করে ফেললো। মনের ভেতর এক অজানা অপরাধ ফিল হচ্ছে এখনো তো তাদের বিয়ে হয়নি! এসবে সম্মতি দেওয়া কি ঠিক হচ্ছে?? অন্ত্রীশার ভাবনাগুলো দ্রুত বয়ে যাচ্ছে তবে এই অপরাধের ফিলিংসটাকেও তার কেন এতো বেশি ভালো লাগছে???

অন্ত্রীশা পেটের সাইডের দিকে আবার ঠান্ডা কিছুর ছোয়া পেয়ে চোখ মেলে ফেললো। হালকা মুচকি হেসে মনে মনে বললো,ছি! আমি এসব কি ভাবছিলাম?

“” মেহেদি শুকানোর আগে জামাটা ছাড়বেনা। এভাবেই ধরে রেখো প্লিজ!””

পালক নিচের দিকে তাকিয়ে নিজের অনুনয়ের কথাটা শেষ করেই হেটে চলে গেলো। অন্ত্রীশা জামাই হাত রেখে ভাবনায় ডুব দিলো। এই বৃষ্টিতে এতো কষ্ট করে এসেছেন আমাকে মেহেদী পড়াতে?? জাস্ট মেহেদী পড়াতে? আমার সাথে দুটো কথাও তো বলেননি। একটাবার আমার মুখটার দিকেও তাকালেননা। আমার কেন মনে হচ্ছে হুট করে রাস্তায় দেখা হয়ে গেলে আপনি আমাকে চিনবেনও না। আর সেই অচেনা মেয়ের সাথেই আপনি এমন অদ্ভুত কাজ করে যাচ্ছেন। কিন্তু কেন?

অন্ত্রীশা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ঘুরতেই দরজায় অনিকশাকে দেখতে পেলো। এতো গভীর নয়নে সে কি দেখছে?? এবারও কি আপু সব দেখে ফেলেছে???

অন্ত্রীশা কিছুটা লজ্জা নিয়ে আবার নিজের রুমে ঢুকে যাচ্ছে। অনিকশার নজর অন্ত্রীশার পেটে। লাইটের আলোতে মেহেদীর কালচে রঙে পালক লেখাটা যেন জ্বলজ্বল করে যাচ্ছে!

“” এভাবে পেট বের করেই শুয়ে থাকবি? সামনে যে তোর বড় বোন দাড়িয়ে আছে তাতে কি তোর একটুও লজ্জাবোধ লাগছেনা? যা ধুয়ে আয়।””
“” উনিতো ধুতে বলেনি আপু!””
“” ধুতে বলেনি বলে ধুবিনা? এভাবে পেট বের করে হেটে বেড়াবি? সবাইকে দেখাবি তোর বর তোর পেটে বসে আছে?””

অন্ত্রীশা কিছুটা মন খারাপ নিয়েই ওয়াশরুমের দিকে এগিয়ে গেলো।

মেহেদী ধুয়ে পরিষ্কার করে আসতে আসতে অনিকশা ঘুমিয়ে পড়েছে। অনিকশার এই একটা অভ্যাস অন্ত্রীশাকে বেশ ভাবায়। একটা মানুষ বিছানায় শুতে শুতে কি করে ঘুমিয়ে পড়ে? সে তো পারেনা। কম করে হলেও তার ১ ঘন্টা চোখ বন্ধ করে ভুলভাল,আবিজাবি জিনিস ভাবতে ভাবতে এপাশওপাশ করতে হয় তারপর যদি ঘুমপুরুষ এসে হাজির হয়। তবে এখন তার হাবিজাবি জিনিসগুলো চুৃুমুবাবুকে ঘিরেই ঘুরপাক খায়।

অন্ত্রীশা আপুর পাশে শুতেই দরজায় নক করার শব্দ পেলো। এতো রাতে আবার কে এলো? অন্ত্রীশা কে বলে চিৎকার করতে গিয়েও থেমে গেলো। যদি পালক এসে থাকে? তাহলে তো আপুর সামনে আবার নির্লজ্জ হতে হবে।

অন্ত্রীশা নিশব্দে দরজার কাছে গিয়ে সিটকিনিতে হাত দেয়।

“” দুলাভাই,আপনি?””
“” অনি কি ঘুমিয়ে পড়েছে?””
“” হুম! ডেকে দিবো?””

অরিদ সাহেব উকি দিয়ে অনিকশাকে দেখতে দেখতে বললো,

“” না,থাক। ওর কাঁচা ঘুম ভেংগে গেলো খুব রাগ করবে।””
“” আপুকে এতো ভালোবাসেন তাহলে ঝগড়া করেন কেন?””

অন্ত্রীশার কথার উত্তর হিসেবে হালকা হেসে উঠলো অরিদ।

“” আসি,তুমি দরজাটা আটকে ঘুমিয়ে পড়ো।””

অরিদ চলে যাওয়ার জন্য ঘুরতেই অন্ত্রীশা বলে উঠলো,

“” আপুকে ছাড়া ঘুম আসবে তো?””
“” চেষ্টা করলে আসতেও পারে।””
“” আমার কাছে একটা প্রস্তাব আছে,আপনি চাইলে গ্রহন করতে পারেন।””

অরিদ বেশ বিস্ময় নিয়ে পেছনে ঘুরে দাড়ালো। এক কদম এগিয়ে এসে বললো,

“” আজকে আমার শালির মুখে কথার খই ফুটছে দেখি। কোনো বিশেষ কারন আছে নাকি?””

অন্ত্রীশা কিছুটা লজ্জা নিয়ে বললো,

“” না,তেমন কিছুনা।””
“” আচ্ছা লজ্জা পেতে হবেনা। মজা করছিলাম। তা বললেনা তো তোমার প্রস্তাবটা কি?””
“” আপনি চাইলে আমি অরিদ্রার সাথে ঘুমুতে পারি। আর আপনি..””
“” তুমি কি তোমার আপুকে দিয়ে আমাকে মার খাওয়াতে চাচ্ছো?””

অন্ত্রীশা নিজের রুম ছেড়ে বাইরে এসে দাড়িয়ে বললো,

“” ভালোবাসার মানুষের মারের মধ্যেও ভালোবাসা থাকে। আপনি এতো দিনেও বুঝেননি দুলাভাই?””
“” তুমিতো দেখছি চারদিনের মধ্যেই ভালোবাসার উপর পিএইচডি করে ফেলেছো অন্ত্রীশা। পালক কি তার পালকের যাদু করে গেলো আমার শালীর উপর?””

অন্ত্রীশা আবার লজ্জামাখা মুখে বললো,

“” অরিদ্রা একা আছে,আমি গেলাম!””
“” কিন্তু তোমার বোন যদি আমাকে বের করে দেয়?””

অন্ত্রীশা মুচকি হেসে বললো,

“” আপুকে এতো ভয় পান? আচ্ছা আপনি ভেতরে যান আমি ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।””
“” মানে?””

অরিদকে ভেতরে ঢুকিয়ে দিয়ে বললো,

“” মাঝে মাঝে ভালোবাসায় কিছুটা জোর প্রয়োগ করতে হয়,দুলাভাই। অধিকাংশ মেয়েগুলোই চায় তার ভালোবাসার মানুষটি তাকে জোর করে ভালোবাসুক,সে আশায় ইচ্ছে করেই মুখ ফুটে ভালোবাসা চায়না!””

অরিদ বিস্ময়ভরা চোখে অন্ত্রীশার দিকে চেয়ে রয়েছে। এই দুটো বোনকে সে কিছুতেই বুঝেনা। একজন তো রাগের ক্ষেত নিয়ে বসেছে যখন তখন যা তা সবজি লাগাতে থাকে তো আরেকজন অতিরিক্ত স্বল্পভাষী। প্রয়োজন ছাড়া নিজের কথার ঝুড়ি থেকে কথা বের করেনা!

অন্ত্রীশা পুনরায় একটা মিস্টি হাসি উপহার দিলো অরিদকে। আর সাথে সাথে দরজাটা বাহির থেকে সিটকিনি লাগিয়ে দিলো যাতে তার বোন চাইলেও দুলাভাইকে বের করতে না পারে!

অরিদ মনে মনে হাজার হাজার কোটি কোটি ধন্যবাদ দিলো অন্ত্রীশাকে! অনিকশা যতই তার থেকে দুরে থাকার চেষ্টা করুক কিন্তু সে যে একটা রাতও অনিকশাকে ছাড়া কাটানোর কথা চিন্তা করতে পারেনা। অরিদ অনিকশার পাশে নিশব্দে শুয়ে পড়লো। কপালে হালকা চুমু একে দিয়ে ভাবনায় ডুব দিলো।

অনার্স ১ম বর্ষের নবীনবরনেই প্রথম দেখেছিলো অনিকশাকে। যদিও তখন অরিদ লাস্ট ইয়ারের। কিন্তু একি ডিপার্টমেন্ট হওয়ায় ফ্রেন্ডের জোরাজুরিতে তাকেও যেতে হয়েছিলো। তবে সে ভার্সিটির বাইরে দাড়িয়েই ফ্রেন্ডের জন্য অপেক্ষা করছিলো আর ঠিক তখনি রিক্সা থেকে অফহোয়াইট কালারের খুবই হালকা কাজের জামা পড়া একটা মেয়েকে নামতে দেখে। চুলগুলো বেনি করে পেছনেই ছেড়ে রেখেছে,পুরোমুখটাতে মেকাপের কোনো ছিটেফুটাও নেই। নবীনবরনে সাদামাটাভাবে আসাতে অরিদ বেশ অবাকই হয়েছিলো। আর সেই অবাকই তাকে বার বার সেই মেয়েটির দিকে তাকাতে অস্থির করে তুলছিলো। তারপর থেকে টানা তিন বছর সে এই মেয়েটিকে দেখার জন্য রোজ ভার্সিটির এই গেইটের সামনে দাড়িয়ে থেকেছে। কিন্তু মুখ ফুটে কখনো বলতে পারেনি সে ভালোবাসার কথা। এই তিন বছরে অনেক পরিবর্তন এসেছিলো অনিকশার। কিন্তু পরিবর্তন আসেনি অরিদের ভালোবাসার। একদিন হুট করেই অনিকশা অরিদের সামনে এসে দাড়িয়ে বললো,

“” বিয়ে করবেন আমায়? এক্ষুনি করতে হবে!””

অনিকশার এমন কথা হজম করতে বেশ কষ্ট হয়েছিলো অরিদের। মুখ দিয়ে কোনো কথা আসেনি। মনে হয়েছিলো এই মেয়ে তার কন্ঠ দিয়ে অরিদের কন্ঠকে খেয়ে ফেলেছে। অরিদ শুধু মাথা দুলিয়ে উপর নিচু করে হ্যা বলেছিলো!

সেদিন,ঠিক তখনি অরিদ আর অনিকশার বিয়ে হয়ে গিয়েছিলো। তারপর দু পরিবার সামলিয়ে নিয়ে বেশ ভালোই চলছিলো অরিদ আর অনিকশার নতুন সংসারের। অনিকশা শুধু একটা কথাই বলতো,

“” আমাকে বেশি বেশি ভালোবাসোনা কেন? আমার যে বেশি বেশি ভালোবাসার খুব প্রয়োজন। আরেকটু বেশি ভালোবাসবে প্লিজ?””

অনিকশার এমন হুটহাট কথাই অরিদকে বেশ ভাবাতো। সে অনেকবার জানতে চেয়েছিলো হুট করে বিয়ে করার কারন কিন্তু সে সবসময় ব্যর্থ হয়েছে। দুমাস কাটতেই অনিকশা চেন্জ হতে থাকে। ছোটখাটো জিনিস নিয়ে রেগে যেতে থাকলো,সামান্য জিনিস নিয়ে তুমুল জগড়া বাধিয়ে ফেলতে থাকে। এর মধ্যেই জানতে পারে অনিকশার পেটে নতুন অতিথির আগমনের বার্তা। অরিদ ভেবেছিলো হয়তো এবার অনিকশা আবার আগের মতো অরিদের কাছে ভালোবাসা পাওয়ার আবদার করবে কিন্তু না অনিকশা দিন দিন তার থেকে দুরত্বই তৈরী করে যাচ্ছে।

অরিদের চোখ চিকচিক করছে। অনিকশাকে পেছন থেকে জড়িয়ে নিয়ে ফিসফিস করে বললো,

“” ভালোবাসি অনি,খুব বেশি ভালোবাসি!””

এক ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো অনিকশার চোখ থেকে। সেতো ঘুমুইনি তাহলে জাগবে কোন কারনে? আজ যে তার চোখে ঘুমরা নেমে আসেনি। অরিদের ফিস ফিস কথাটা অনিকশার বুকে গিয়ে লাগলো। ভালোবাসার কথা শুনেও কি কারো চোখে পানি আসে? তাহলে তার কেন আসলো? অনিকশার ইচ্ছে হলো সেও অরিদকে জড়িয়ে নিয়ে বলতে,আরেকটু ভালোবাসোনা আমাকে,আমার যে তোমার বেশি ভালোবাসার প্রয়োজন!

অন্ত্রীশার ঘুম ভাংলো আপুর ডাকে। ঘুমঘুম চোখেই তাকিয়ে রইলো অনিকশার দিকে!

“” তোর কল এসেছে,নে ধর!””
“” আমার কল তোমার ফোনে?””

অন্ত্রীশার হাতে ফোনটা গুজে দিয়ে মেয়ের দিকে এগুলো অনিকশা।

অন্ত্রীশা ফোনের দিকে তাকাতেই দেখতে পেলো স্ক্রিনে পালক নাম উঠে আছে। এতো সকালে উনি কল দিয়েছেন কেন? আমার সাথে কথা বলবেন বলে? কিন্তু এতো সকালে কি কথা বলবেন? অন্ত্রীশা চোখটা ভালো করে মুছে নিয়ে,কন্ঠটা স্বাভাবিক করে বললো,

“” হ্যালো?””
“” তোমার সাথে ইম্পর্ট্যান্ট কথা আছে। রুমে কেউ থাকলে তাকে বের করে দরজা আটকিয়ে আমাকে জানাও!””

এমন কি ইম্পর্ট্যান্ট কথা যার জন্য দরজা আটকিয়ে নিতে হবে? অন্ত্রীশা কিছুটা বিরক্ত নিয়ে আপুকে টেনে বাইরে বের করে দরজা আটকিয়ে নিলো।

“” আটকিয়েছি বলুন!””

চলবে

জন্মটা পতিতালয়ে Part 10 (last Part)

0

জন্মটা পতিতালয়ে
লেখকঃ Arian Sumon..
Part 10 (last part)
..
দেখতে পেল তিন চার জন লোক একজন কে ধরার চেষ্টা করছে। ধরেও ফেলেছে।
আকাশ দৌড়ে সেখানে যায়। এবং দেখে একজনের হাতে ছুড়ি এবং একজনের হাতে পিস্তল। অন্য দুজন লোকটিকে ধরে রেখেছে।
আকাশঃ এই এই কি করছেন

বলতে বলতে লোকটির দিকে খেয়াল করে দেখে সে আর কেউ নয় সামিয়া।

আকাশঃ ম্যাম আপনি?
সামিয়াঃ আকাশ তুমি এখান থেকে চলে যাও প্লিজ।
আকাশঃ নাহ যেতে পারব না। মরলে একসাথেই মরব।

এই বলে আকাশ সামিয়াকে ছুটাইতে যায়। একজনকে লাথি মেরে ফেলে দেয়।
অন্য জন ছুড়ি দিয়ে আকাশের হাতে আঘাত করে। রক্ত বেড়িয়ে পড়ে।।
অন্যজন সামিয়াকে তাক গুলি করে। আকাশ কোনোরকমে নিজের উপর গুলি টা নিয়ে নেয়।।

আকাশ অজ্ঞান হয়ে যায়। আর গুন্ডা গুলো পালিয়ে যায়।


অপারেশন থিয়েটারের সামনের সামিয়া সামিয়ার আব্বু আম্মু।ভিতরে আকাশের অপারেশন চলছে।

সামিয়া কেদেই চলেছে।।

সামিয়ার আব্বুঃ কাঁদিস না মা। ও ভালো হয়ে যাবে।
সামিয়া কেঁদেই চলেছে।

সামিয়ার আব্বুঃ আজ এই তোমার জন্য ছেলেটার অবস্থা। ছেলেটাকে অপছন্দ তোমার। তাই বলে এত বড় মিথ্যা কথা বলবা ওর নামে। ছিহ মমতা ছিহ। ঘৃণা লাগছে তোমার উপর।
সামিয়ার আম্মুঃ i am sorry…প্লিজ মাফ করে দাও। আমি অনুতপ্ত।
সামিয়ার আব্বুঃ মাফ আমার কাছে না চেয়ে যার সাথে অপরাধ করছ তার কাছে গিয়ে চাও।

অন্যদিকে সামিয়া ভাবছে। আমার মা এত নিকৃষ্ট কাজ কি করে করল। ভেবেছিলাম আজকে আকাশ কে আপন করে নিব। কিন্তু মা এই মিথ্যে বানোয়াট কথা গুলো বলে দিলো সব নষ্ট করে।

আসলে সামিয়া আকাশ কে খুজতেই বেড় হয়েছিল।
খুলেই বলি।

আকাশ বাড়ি থেকে বেড় হয়ে আসার পরে। সামিয়া নিজের রুমে চলে যায়।

সামিয়ার আম্মুও নিজের ঘরে যায়। ওনাকে অনেক খুশি দেখাচ্ছিল।

খাবার টেবিলে সামিয়া নেই।
সামিয়ার আব্বু আর আম্মু খাবার খাচ্ছিল। তখন সামিয়ার আব্বু সামিয়ার মাকে খুশি দেখে। জিগাসা করে

সামিয়ার আব্বুঃ কি ব্যাপার আজ এত খুশি কেন?
সামিয়ার আম্মুঃ তা জেনে কি করবা?
সামিয়ার আব্বুঃ না বললে নাই। তবে আকাশ কোথায় দেখছিনা যে।
সামিয়ার আম্মুঃ বেড় করে দিছি।
সামিয়ার আব্বুঃ মানে
সামিয়ার আম্মুঃ বলছিলাম না ওরে আমার সহ্য হয়না। তাই মিথ্যা নাটক সাজিয়ে ওরে বাড়ি থেকে বেড় করে দিছি। আর আমি বেড় করিনি। সামিয়া নিজেই ওরে বেড় করে দিছে।
সামিয়ার আব্বুঃ ছিহ তুমি নিচু মাইন্ডের। লজ্জা লাগছে তুমি নাকি আমার স্ত্রী
সামিয়ার আম্মুঃ ঠিকই আছে । আমি মা হয়ে কিভাবে মেয়ের জামাই হিসেবে একটা পতিতার বাচ্চাকে সহ্য করব।
সামিয়ার আব্বুঃ আমি এখনি গিয়ে সব সামিয়াকে বলব।
সামিয়ার আম্মুঃ বললে তুমি আমার মরা মুখ দেখবে

এমন সময়েই,,
সামিয়াঃ বাহ মা বাহ মা। সেই বলছ।
সামিয়ার আম্মুঃ সামিয়া তুই…. আমি
সামিয়াঃ থাক মা আর কিছু বলতে হবেনা আমি শুনেছি। ছিহ মা ছিহ আমার লজ্জা লাগছে তুমি নাকি আমার মা। একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী। তোমার এত সমস্যা কিসের আমি বুঝিনা। তোমার নজরে ঐ বড় লোকের বাজে লম্পট ছেলেটা আমার জামাই হতে পারে। কিন্তু আকাশ হতে পারেনা। কারন সে কি পতিতা নামক একটা নিকৃষ্ট নামের সাথে জড়িত বলে। আর তোমার ওই বড় লোকের ছেলে তো প্রতিদিনি এইসব পতিতার কাছেই যায়। সে আমার হাজবেন্ড হতে পারে। কিন্তু আকাশ হতে পারেনা। দুষ করলে করেছে আকাশ কে যে জন্ম দিয়েছে সে। কিন্তু ওই মহিলা তো এখন ঠিকই ভালো আছে শুধু ভালো নেই আকাশ। কারন সমাজ প্রতিনিয়ত তাকে পতিতার বাচ্চা বলে দূষে দিচ্ছে। লজ্জা লাগছে আমার খুব লজ্জা লাগছে।
এসব বলতে গিয়ে সামিয়া কেদে দিল
সামিয়ার আব্বুঃ আমার এই জীবনে অনেক ছেলে দেখেছি কিন্তু ওর মতো ভদ্র মার্জিত ছেলে একটাও দেখিনি। যদিও ও একটা খারাপ জগতে ছিল তবুও ও যথেষ্ট ভালো। আর ও সামিয়ার সান্নিধ্যে দিন দিন আরো বেশি ভালো হচ্ছিল। আর তুমি একজন মা হয়ে কি করে এত নিকৃষ্ট কাজ করতে পারলা।
সামিয়াঃ বাবা আমি আকাশ কে খুজতে যাচ্ছি। তারাতারি না করলে জানিনা ও আবার কোন খারাপ কাজে জড়িয়ে পড়বে।
সামিয়ার আব্বুঃ হ্যা মা যা। খুজ পাইলে সোজা বাড়িতে নিয়া আসবি।

এই ছিল কাহিনি। তারপর তো জানেনই।

এবার বাস্তবে ফিরি,,,,

বাহিরে সবাই আকাশের সুস্থতা কামনা করছে।

এমন সময় ডাক্তার বেড় হলো। সামিয়া এগিয়ে গেল।

সামিয়াঃ ডাক্তার ওর কি অবস্থা??
ডাক্তার সাহেবঃ আলহামদুলিল্লাহ। ওনি এখন সুস্থ্য। তবে জ্ঞান ফিরতে একটু দেড়ি হবে।
সামিয়ার আব্বুঃ আলহামদুলিল্লাহ। ধন্যবাদ ডাক্তার।
সামিয়াঃআমরা কি ভিতরে যেতে পারি
ডাক্তারঃ না এখন না একটু পর ওনাকে কেবিনে শিফট করা হবে। তখন দেখা কইরেন। তবে একজন মাত্র
সামিয়াঃ ওকে ডক্টর।

কিছুক্ষন পরেই আকাশকে কেবিনে শিফট করা হলো।

সামিয়া আকাশের পাশে বসে আছে। সামিয়ার কেঁদেই চলেছে।

কারন সে জানে রহমান চাচার কাছ থেকে শুনেছে যে আকাশ তাকে অনেক ভালোবাসে। যার যাচাই করার জন্যই বাড়িতে এসেছিল খুশি মনে। কিন্তু তারপর যা হলো।।

যাহোক পরদিন সকালে আকাশ চোখ মেলে। চোখ খুলেই দেখে সামিয়া ওর পাশে বসে আকাশের বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে।

আকাশ বিশ্বাস করতে পারছেনা কি হচ্ছে। সামিয়া তার বুকে মাথা রেখেছে। ভাবতেই আনন্দ লাগছে।
আকাশ সামিয়ার চোখের দিকে খেয়াল করে দেখে চোখ ফুলা ফুলা। বুঝতে বাকি রইল না যে সামিয়া কাল অনেক কেঁদেছে।
সামিয়া তার জন্য কেঁদেছে। ভাবতেই চোখে পানি চলে আসে।

আকাশ খেয়াল করে সামিয়ার মুখের সামনে কিছু চুল।
আকাশ হাত বাড়িয়ে দেয় চুল সড়াবে বলে। কিন্তু পরক্ষনেই আবার হাত সড়িয়ে আনে।

সামিয়াঃ কি হলো সড়িয়ে দাও
আকাশ অভাক হয়ে যায়।
আকাশঃ ম্যাম আপনি
সামিয়াঃ সড়িয়ে দাও আগে

আকাশ চুল গুলো সড়িয়ে দিল।

সামিয়াঃ কে বলেছিল আমার জন্য এসব করতে?
আকাশ ভাবল আজ আর কিছুই লুকাব না। যা সত্য তাই বলে দিব।
আকাশঃ যাকে ভালোবাসি তাকে কিভাবে মরতে দেখব বলেন
সামিয়াঃ ভালোবাসো কাকে??
আকাশঃ আপনাকে সেই প্রথমদিন থেকেই
সামিয়াঃ বলেছ কখনও?
আকাশঃ বলার মতো সাহস হয়নি।
সামিয়াঃ হুম ভিতুর ডিম। আমিও ভালোবাসি তোমাকে। কবে থেকে এই অনুভুতি নিজেও জানিনা। নিজেই অজান্তেই তোমার জন্য ছোট্ট মনে জায়গা হয়ে গেছে। ভালোবেসে ফেলছি তোমাকে।
আকাশঃ সত্যি??

সামিয়া আকাশ কে জড়িয়ে ধরে। আকাশ ও সামিয়াকে জড়িয়ে ধরে।

এর মধ্যেই সামিয়ার আব্বু আম্মু ভিতরে ডুকে যায়। সবাই বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে যায়।

যাহোক সবাই সামলে নিল।

সামিয়ার আম্মু এসে আকাশের পাশে বসল।

সামিয়ার আম্মুঃ বাবা আমি তোমার সাথে অনেক অন্যায় করেছি। সব কিছুর জন্য আমি অনুতপ্ত। প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও।
আকাশঃ আহ কি করছেন মা। সন্তানের কাছে মা কখনো ক্ষমা চায় নাকি। আপনার প্রতি আমার কোনো অভিযোগ নেই।

সামিয়ার মায়ের চোখ দিয়ে পানি বেড় হয়ে যায়। আকাশ হাত দিয়ে চোখের পানি মুছে দেয়।। সামিয়ার আম্মু আকাশের কপালে চুমু একে দেয়।



সামিয়া আর আকাশ বাসর ঘরে বসে আছে। হ্যা ঠিকই শুনেছেন। সামিয়ার আব্বু আম্মু আকাশ আর সামিয়াকে আবার বিয়ে দিয়েছে পারিবারিক ভাবে।

আকাশ বাসর ঘরে ডুকল। গিয়ে দেখে সামিয়া বসে আছে।

আকাশ গিয়ে বসল। তারপর সামিয়ার ঘুম টা উঠাল।
আকাশ বিশ্বাস করতে পারছেনা। তার স্বপ্ন রানীকে এখন থেকে সে নিয়মিত পাবে। আকাশ আস্তে করে সামিয়ার কপালে চুমু দিল।
সামিয়া লজ্জায় আকাশ কে জড়িয়ে ধরে।
আকাশঃ আচ্ছা আপনি ওইদিন এত রাতে বাহিরে কেন গিয়েছিলেন।
সামিয়াঃ আপনি?? আপনি করে কাকে বলছ?
আকাশঃ আপনাকে
সামিয়াঃ বউকে কেউ আপনি করে বলে??
আকাশঃ তাহলে??
সামিয়াঃ তুমি করে বলো গদ্দপ।
আকাশঃ ওহ আচ্ছা তুমি।
সামিয়াঃ ওইদিন তোমাকে খুজতেই গিয়েছিলাম।
আকাশঃ ওইলোক গুলো কারা জানো??
সামিয়াঃ কয়েকদিন আগে একটা গুন্ডাকে ধরেছিলাম। তার সাথের লোক।
আকাশঃ ওহ আচ্ছা।
সামিয়াঃ এখন কি আমরা এসব বলব নাকি কিছু করবা
আকাশঃ কি করব
সামিয়াঃ ন্যাকা কিচ্ছু জানেনা।
আকাশঃ জানি করব।

বাকিটা ইতিহাস।।।।

THE END..
সমাপ্ত