জন্মটা পতিতালয়ে
লেখকঃ Arian Sumon..
Part 09
..
সামিয়াঃ কি তাকিয়ে থাকলেই চলবে নাকি? কিছু করতে ইচ্ছে করছেনা??
আকাশঃ হুম আদর করতে ইচ্ছে করছে।
সামিয়াঃ তো করো।
আকাশ সামিয়ার কোমড়ে হাত দিয়ে কাছে টেনে নিল। তারপর ঠোটে ঠোট মিলিয়ে দিল।
আকাশঃ নাহ কিছুনা।
সামিয়াঃ এখন শুয়ে পড়ো।
আকাশঃ হুম।
সামিয়া খাটে উঠে শুয়ে পড়ল।
কিন্তু আকাশ কোথায় শুবে। ভাবছে। খাটে শুইলে সামিয়া কি বলে।
সামিয়াও বিষয় টা খেয়াল করল।
সামিয়াঃ শুইতেছ না কেন?
আকাশঃ ইয়ে মানে কোথায় শুইতাম আমি?
সামিয়াঃ কোথায় আবার সোফায় শুয়ে পড়ো।
আকাশঃ হুম। ওকে।
আকাশ সোফায় শুয়ে পড়ল। সামিয়া লাইট অফ করে দিল।
আকাশ ভাবছে বিয়ে তো হয়ে গেল। প্রথম দিন নাকি বাসর রাত। অথচ আমরা আলাদা আলাদা শুইছি। হায়রে কপাল
আকাশ খেয়াল করল বাহির থেকে চাঁদের আলো এসে সামিয়ার মুখে পড়তেছিল। আকাশ সামিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। আর ভাবছে কি মায়াবি চেহাড়া টা। যদি একটু স্পর্শ করার সুযোগ পাইতাম। তাহলে অন্তত মন টা শান্তি পাইত।
আকাশ খেয়াল করল সামিয়ার মুখের উপর কয়েক টা চুল পড়ে আছে। ইচ্ছে করছে শুয়ে দিতে।
দিব দিব না করতে করতে। আকাশ সামিয়ার পাশে চলে যায়।
আকাশ আস্তে আস্তে চুলগুলো সড়াইতেই সামিয়ার ঘুম ভেঙে যায়।
আকাশ ভয়ে পেয়ে দূরে সড়ে যায়।
সামিয়াঃ কি করতেছিলে তুমি
আকাশঃ সরি সরি ম্যাম আমি আসলে চুল
সামিয়াঃ চুল চুলে কি হইছে
আকাশ একটা তেলাপোকা দেখল
আকাশঃ ম্যাম তেলাপোকা
সামিয়াঃ ও মারে
বলেই সামিয়া উঠে এসে আকাশ কে জড়িয়ে ধরল।
আকাশ তো মহাখুশি। অনেক টা চাঁদ হাতে পাওয়ার মতো আকাশের মনে হলো।
সামিয়াঃ আকাশ ওটাকে সড়াও। প্লিজ প্লিজ প্লিজ
আকাশঃ চলে গেছে ম্যাম।
সামিয়া আকাশ কে ছেড়ে দিল।।
সামিয়া লজ্জা পেলো। সোজা ওয়াশরুমে চলে গেল।
আকাশ খুশি মনে রুম থেকে বেড়িয়ে গেল।
”
”
আকাশ বাগানে পানি দিচ্ছিল।
এমন সময় সামিয়ার আব্বু আসল,,,
সামিয়ার আব্বুঃ এ কি বাবা তুমি এসব করছ
আকাশঃ এগুলোই তো আমার কাজ আংকেল
সামিয়ার আব্বুঃ তুমি এখন এ বাড়ির জামাই। তুমি আর এ কাজ করবানা
আকাশঃ তো আমি কি করব আংকেল।
সামিয়ার আব্বুঃ আপাদত কিছু করা লাগব না।
আকাশঃ আংকেল এ বাড়ির জামাই তো কি হইছে। এই সামান্য কাজ তো করতেই পারি।
সামিয়ার আব্বুঃ তা পারো তবে আমাকে আংকেল ডাকতে পারোনা।
আকাশঃ তো কি ডাকব
সামিয়ার আব্বুঃ আমি তোমার শশুড় হই। so আব্বু বলে ডাকবা
আকাশঃ এ কি করে হয়
সামিয়ার আব্বুঃ এটাই হয়। যা বলছি তাই করবা। এখন থেকে আব্বু বলে ডাকবা।
আকাশঃ আচ্ছা আংকেল চেষ্টা করব।
সামিয়ার আব্বুঃ আবার আংকেল বলে।
আকাশঃ না মানে আব্বু। যাহোক
সামিয়ার আব্বুঃ এখন চলো
আকাশঃ কোথায়?
সামিয়ার আব্বুঃ নাস্তা করবা আমাদের সাথে
আকাশঃ এ কি বলছেন। আপনাদের সাথে। না এটা সম্ভব না আংকেল। না মানে আব্বু
সামিয়ার আব্বুঃ বেশি কথা বলো কেন। চলো আমার সাথে।
সামিয়ার আব্বু আকাশের হাত ধরল। তারপর টেনে নিয়ে গেল।
আকাশ ভাবতেও পারছেনা এগুলো কি হচ্ছে। যে আমাকে ভালো বানালো। যাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখা শুরু করলাম। সেই আমার বউ হয়ে গেল। ভাবলাম বাড়ির লোক মানবেনা। এখন দেখি সব উল্টা।।
ভাবতে ভাবতে আকাশের চোখ দিয়ে পানি চলে আসল।
আকাশ গিয়ে দেখে সামিয়া আর সামিয়ার আম্মু টেবিলে বসে আছে।
সামিয়াঃ কোথায় ছিলে তুমি
সামিয়ার আব্বুঃ কোথায় আবার বাগানে পানি দিচ্ছিল।
সামিয়াঃ এখন থেকে তুমি আর এ কাজ করবানা।
আকাশঃ ম্যাম আপনিও
সামিয়াঃ হ্যা। এখন খেতে বসো।
আকাশ বসল। ঠিক তখনি,,
সামিয়ার আম্মুঃ এখন কি এ ফকিন্নির বাচ্চার সাথে আমার খেতে হবে
সামিয়ার আব্বুঃ কি হচ্ছে কি মমতা ও এ বাড়ির জামাই। একটু সম্মান তো দাও
সামিয়ার আম্মুঃ ধুর জামাই। ওর এ বাড়ির জামাই হবার কি যোগ্যতা আছে?কোনো যোগ্যতাই নেই। ধ্যাত খাবই না।
সামিয়ার আম্মু উঠে চলে গেল।
আকাশ কি করবে ভেবে পাচ্ছেনা।
সবাই চুপ। একটু পর সামিয়ার আব্বুও উঠে চলে গেল।
সামিয়া আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।
আকাশ মাথা নিচু করে আছে। বুকে একটা চাপা কষ্ট।আমি কি চাইছিলাম নাকি এখানে আসতে। শুধু শুধু আমাকে এনে সবার খাওয়াটাই নষ্ট হলো।
একটু পর সামিয়াও উঠে চলে গেল।
”
”
”
তিন দিন পর,,
আকাশ বাহিরে গেছে প্রয়োজনীয় কিছু জিনিসপত্র আনতে।
সামিয়া বাসায় আসে। সামিয়া বাসায় আসতেই। ওর আম্মু এসে দাড়ালো।
সামিয়াঃ কিছু বলবা??
সামিয়ার আম্মুঃ হুম আয় আমার সাথে
সামিয়ার আম্মু সামিয়ার হাত ধরে আকাশ প্রথম যেই রুম টায় থাকত। সেই রুম টায় নিয়া গেল।
সামিয়া গিয়ে অভাক হয়ে যায়। অনেক গুলো মদের বোতল। কিছু বোতল খালি আবার কিছু বোতল এখনও ভাঙেনি।
সামিয়াঃ এগুলো এখানে কেন? কে আনছে??
সামিয়ার আম্মুঃ কে আর আনবে ঐ বেশ্যার পোলাই নিশ্চিত আনছে। ওরে তো প্রায়ই দেখতাম এ রুমে আসত। অনেক ক্ষন পর বেড় হত। কে জানত এখানে ও এই কাজ করে।
সামিয়াঃ মা তুমি সিউর??
সামিয়ার আম্মুঃ আমি একদম সিউর
সামিয়ার মাথা গরম হয়ে যায়। সামিয়া বিশ্বাস করতে পারছেনা আকাশ এসব করবে। আবার এ বাড়িতে এমন কেউও নাই যে এসব আনবে। একমাত্র আকাশই এসব খেত। সামিয়া ভাবতেও পারছেনা আকাশ এসব খায়।
”
”
কিছুক্ষন পর আকাশ আসে। এসেই দেখে টেবিলে কতগুলো মদের বোতল সাজানো। আর সামিয়া আর সামিয়ার আম্মু বসে আছে। সামিয়া কেমন যেন রেগে আছে।
সামিয়া আকাশ কে দেখেই। সোজা এসে ঠাসসস করে আকাশকে থাপ্পড় মারে।
আকাশঃ মারলেন কেন?
সামিয়াঃ কি ভাবিস নিজেকে তুই আমার সামনে নিজেকে ভালোভাবে রাখিস দেইখা আমি কিছু ধরতে পারব না??
আকাশঃ কি করেছি আমি??
সামিয়াঃ ওগুলো কি??
আকাশঃ মদের বোতল।
সামিয়াঃ এগুলো এ বাড়িতে কি করে?? কে আনছে
আকাশঃ আমি কি করে বলব
সামিয়াঃ একদম মিথ্যা কথা বলবিনা। এ বাড়িতে তুই ছাড়া কেউ এসব খায়না। একমাত্র তুই এসব খাইতি।
আকাশঃ বিশ্বাস করুন ম্যাম আমি এসব খাইনা এখন।
সামিয়াঃ বিশ্বাস করেই তো সব করেছিলাম। তুকে বিয়েও করেছি। কিন্তু আর না। তুই এখনি এ বাড়ি ছেড়ে চলে যাবি।
আকাশ সামিয়ার মার দিকে তাকাল। বুঝতে পারল আসল কাহিনি।
আকাশঃ ওকে ম্যাম আপনি যা বলছেন তাই হবে। আমি চলে যাব।( মাথা নিচু করে)
সামিয়াঃ হ্যা এখনই আমার সামনে থেকে চলে যাহ। আর কিছুদিন পর আমি ডাকলে এসে ডিভোর্স পেপারে সাইন করে যাইছ।
আকাশ কিছু বলল না। যেভাবে ছিল ওভাবেই বাড়ি থেকে বেড়িয়ে পড়ল।
”
”
রাত্র একটা বাজে,,,
আকাশ ফুটপাতে বসে আছে।
ভাবছে আসলেই আমার মতো ছেলেরা কখনই ভালো হতে পারবেনা। কারন সমাজের উচু মানুষ গুলোর মনই অনেক ছোট। এরা ছোটদের দেখতে পারেনা। আপন করে নিতে পারেনা।
এমন সময়েই আকাশের চোখ যায় একটু দূরে।
দেখতে পেল তিন চার জন লোক একজন কে ধরার চেষ্টা করছে। ধরেও ফেলেছে।
আকাশ দৌড়ে সেখানে যায়। এবং দেখে একজনের হাতে ছুড়ি এবং একজনের হাতে পিস্তল। অন্য দুজন লোকটিকে ধরে রেখেছে।
আকাশ…..??????
জন্মটা পতিতালয়ে
লেখকঃ Arian Sumon
Part – 08
..
আকাশ গাড়িতে উঠল। গাড়িটা একটা কাজি অফিসের সামনে থামাল।
তারপর সবাই গাড়ি থেকে নেমে কাজি অফিসের ভিতর ডুকল।।
”
”
”
”
কাজী সাহেবঃ আলহামদুলিল্লাহ এখন থেকে আপনারা স্বামী স্ত্রী। দোয়া করি আপনারা সুখি হোন।
”
”
কাজী অফিস থেকে বেড়িয়ে আসল আকাশ আর সামিয়া।
আকাশঃ ম্যাম এটা কি করলেন আপনি?
সামিয়াঃ যা করেছি ঠিক করেছি। চুপ করে এখন বাসায় চলো।
আকাশঃ ম্যাম আমার ভালো লাগছেনা। আপনার বাবা মা যে কি করবে
সামিয়াঃ আজব তো তুমি এত ভয় পাচ্ছ কেন? আমি তোমার স্ত্রী এটা বুক ফুলিয়ে বলতে পারবা না??
আকাশঃ সেটা তো ব্যাপার না কিন্তু আপনার আর আমার অবস্থান টা দেখেছেন।
সামিয়াঃ গুল্লি মারো তোমার অবস্থান এখন চলো।
আকাশ আর সামিয়া গাড়িতে উঠল।
কি ভাবছিলেন সামিয়া তার এক্স বয়ফ্রেন্ড কে বিয়ে করেছে। আসলে তা না।
তাহলে ঘটনা টা খুলেই বলি।
ওরা কাজী অফিসে ডুকার পরে।
সামিয়াঃ কাজী সাহেব আমাদের বিয়ের ব্যবস্থা করুন।।
আকাশঃ ম্যাম আরেকবার ভেবে দেখুন।
সামিয়াঃ ভাবাভাবির সময় নাই আমি সিরিয়াস। আমি সুমন কেই বিয়ে করব।
সুমনঃ আমি করব না।
সুমনের মুখে এ কথা শুনে সামিয়া চমকে যায়।
সামিয়াঃ কি বলছ সুমন?
সুমনঃ হ্যা ঠিকই বলছি। আমি তোমাকে বিয়ে করব না।
সামিয়াঃ সুমন এমন করছ কেন। হাতে সময় কম এরকম করোনা।
সুমনঃ যাই হোক না কেন। আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলছি আমি তুকে বিয়ে করব না। মনে পড়ে ভার্সিটি লাইফের কথা গুলো? তুই আমাকে কিভাবে ছেড়ে দিছিলি? তারপর একবারও কি আমার খবর নিয়েছিলি?
সামিয়াঃ সুমন আমি
সুমনঃ আর কথাই বলিস না। তুর মতো বাজে মেয়েকে বিয়ে করব আমি? একবার কষ্ট দিছিস। সেটাই অনেক চেষ্টার পর ভূলেছি। আর চাই না। ভালো থাক।
এই বলে সুমন কাজী অফিস থেকে বেড়িয়ে চলে যায়।
সামিয়া দাঁড়ানো থেকে বসে পড়ে। সুমন এমন করবে ভাবতেও পারেনি সামিয়া। সেই ব্রেক আপের পরেও ও আমার পিছু পড়ে ছিল। ভালোবাসি ভালোবাসি বলে জ্বালিয়ে মারত। আর এখন সুযোগ দিলাম এখন আমাকে ছেড়েই দিল। অবশ্য ও ঠিক। আমিও তো কষ্ট কম দেইনি।
আকাশ মনে মনে খুশিই হলো। অন্তত সামিয়ার আজকে বিয়ে হয়নি। কিন্তু কপাল আমিও করতে পারব না। সামিয়া আমার আয়ত্তের বাহিরে।
আকাশঃ ম্যম চলুন
সামিয়াঃ নাহ। চলে যেহেতু এসেছি বিয়ে করেই যাব।
আকাশঃ ছেলে পাবেন কোথায়?
সামিয়াঃ তুমি
আকাশঃ আমি??
সামিয়াঃ হ্যা তুমিই। কাজী সাহেব আমাদের বিয়ের ব্যবস্থা করুন।
”
”
আকাশ তো অনেক খুশি। নিজের ভালোবাসার মানুষকে আপন করে পেয়েছে। যদিও পরে কি হবে তা তার জানা নেই।
আকাশ আর সামিয়া বাসায় পৌছাল।
ভিতরে ডুকল।।
সামিয়া আব্বু আম্মুকে ডাকতে লাগল।
ওনারা আসলেন।
সামিয়াঃ তোমাদের সাথে আমার কথা আছে
সামিয়ার আম্মুঃ দুইদিন পর তুর বিয়ে এখনও তুই এত ঘুরাঘুরি করিস।
সামিয়াঃ উফফস কিসের বিয়ে। ওটা ভেঙে দাও। আমি বিবাহিত
সামিয়ার আব্বু আম্মু দুজনেই অভাক হয়ে গেল। কি বলছে মেয়ে।
সামিয়ার আম্মুঃ কি বলছিস তুই? এটা বিয়ে ফাজলামি না
সামিয়াঃ আমি ফাজলামি করছিনা। আমি আর আকাশ স্বামী স্ত্রী।
সামিয়ার আম্মুঃ আল্লাহ এ কথাটি শুনার আগে আমার মরন হলো না কেন? ঐ হারামজাদি কি করছিস তুই? ও কোন দিক দিয়ে তুর সাথে যায়
সামিয়াঃ আমি তো বলেছিলাম যার সাথে আমার বিয়ে ঠিক করেছ ছেলেটা ভালোনা। তোমরা আমার কথা শুনোনি। তাই আমার এই পথ বেছে নিতে হলো। আর হ্যা আমরা দুজন দুজনকে ভালোবাসি।
সামিয়ার আম্মুঃ তুমি কিছু বলছ না কেন। ও নাকি এই বেশ্যার পোলারে বিয়ে করেছে। তোমার মেয়ের অধঃপতন কোথায় চলে গেছে দেখেছ।
সামিয়ার আব্বুঃ আমি কি বলব। তোমরা যা খুশি করো।
সামিয়ার আম্মুঃ হ মেয়ে তো আমার একার।
সামিয়ার আব্বু উপড়ে চলে যায়।
সামিয়াঃ দেখো আম্মু শুধু শুধু ঝামেলা না করে আকাশ কে জামাই হিসেবে মেনে নাও।
ঠাসসসস ঠাসসসস ঠাসসস
সামিয়ার আম্মু সামিয়াকে তিন টা থাপ্পড় মারল।
সামিয়ার আম্মুঃ তুর সব কিছু মেনে নিয়েছি বলে এটাও মেনে নিব ভাবলি কি করে। এই পতিতার বাচ্চাকে বিয়ে করার আগে একবার তো আমাদের কথা ভাবতি। আমাদের স্ট্যাটাস এর কথা ভাবতি।
সামিয়াঃ তোমাদের আমি বুঝিয়েছি বুঝোনি। আমার কিছু করার নেই।
সামিয়ার আম্মুঃ তাই বলে তুইএই পতিতার বাচ্চাকে বিয়ে করবি
সামিয়াঃ আম্মু বেশি হয়ে যাচ্ছে। বারবার তুমি পতিতার বাচ্চা কাকে বলছ। ও আমার হাজবেন্ড। মেনে নিলে নাও না নিলে নাই। অপমান করবা না একদম।
ঠাসসসস
সামিয়ার আম্মু সামিয়াকে আবার ঠাসসস করে থাপ্পড় দিল।।
সামিয়া কিছু না বলেই উপড়ে উঠে গেল।
সামিয়ার আম্মু আকাশের দিকে এগিয়ে গেল।
সামিয়ার আম্মুঃ কি ভেবেছিস কি ওরে বিয়ে করলেই এ বাড়ির মালিক হয়ে যাবি।
আকাশঃ আপনি আমাকে ভূল বুঝছেন
সামিয়ার আম্মুঃ আমি যা বুঝাত বুঝে গেছি। তুদের মতো ছেলেদের আমার খুব ভালো করে জানা আছে। বেশ্যার বাচ্চা।
এই বলে সামিয়ার মা ও উপড়ে উঠে গেল।
আকাশ নিজের রুমে চলে যায়।
আকাশের চোখ দিয়ে পানি বেড় হয়ে গেল। যেই শব্দ টা আকাশ একদম পছন্দ করেনা। আজকে বারবার সেটাই শুনতে হলো।সামনে যে আরো কত কিছু পরে আছে।
কিছুক্ষন পর সামিয়া আসল,,,
সামিয়াঃ আকাশ
আকাশ চোখের পানি মুছল। তারপর সামিয়ার দিকে তাকাল।
সামিয়া বুঝতে পারল আকাশ কেঁদেছে।
সামিয়াঃ আমি খুব খুব খুব দুঃখিত। আজকে আমার জন্য তোমাকে অনেক অপমান হতে হলো।
আকাশঃ নাহ ঠিক আছে ম্যাম। এরকম কিছু হবে এটা ভেবেই রেখেছিলাম।
সামিয়াঃ আচ্ছা এখন চলো।
আকাশঃ কোথায়
সামিয়াঃ আমার রুমে
আকাশঃ আপনার রুমে কেন
সামিয়াঃ আরে গদ্দপ বুঝনা। আমরা তো স্বামী স্ত্রী। আলাদা আলাদা থাকলে মানুষ কি ভাববে।
আকাশঃ কিন্তু
সামিয়াঃ কোনো কিন্তু নয়। জামা কাপড় গুছিয়ে নাও। চলো আমার সাথে।
আকাশের মনে লাড্ডু ফুটতে লাগল। মানে কি সামিয়া আমার কাছে ধরা দিতে চাচ্ছে।
আকাশ সব কিছু গুছিয়ে নিল।
তারপর সামিয়ার রুমে চলে গেল।
আকাশ কল্পনাও করতে পারছেনা সে সামিয়ার সাথে রুম শেয়ার করবে।
সামিয়াঃ কাপড়গুলো এদিকে দাও। আলমারিতে রেখে দিচ্ছি।
আকাশঃ না লাগবেনা। এভাবেই থাকুক
সামিয়াঃ দিতে বলছিনা
জন্ম টা পতিতালয়ে
লেখকঃ Arian Sumon..
Part- 07
..
সামিয়া এসে সবার সামনে বসল। সারাক্ষন আকাশ তার দিকে তাকিয়ে থাকল।।
সব শেষে পাত্রপক্ষ সামিয়াকে পছন্দ করল। সামিয়াও পাত্রকে পছন্দ করল।
সবাই অনেক খুশি। সবার খুশির মাজে শুধু আকাশই অখুশি।
রাতে আকাশ রুমে শুয়ে আছে।
সামিয়ার সাথে কাটানো প্রতিটা মুহুর্ত একের পর এক মনে পড়তে লাগল।
আর চোখ বেয়ে পানি বেড় হতে লাগল।
পরদিন আকাশ ফুল গাছে পানি দিচ্ছিল এমন সময়,,,
সামিয়াঃ কি আকাশ কেমন আছ?
আকাশঃ জ্বী ম্যাম ভালোই।
সামিয়াঃ কাল সারাদিনের ব্যস্থতার মাজে তোমার খবর নেওয়াই হয়নি। যাহোক সাইফুল কে তোমার কেমন লাগল??
আকাশঃ সাইফুল কে ম্যাম??
সামিয়াঃ আরে কাল যে আমাকে দেখতে আসছিল
আকাশঃ ওহ। ওনার নাম সাইফুল?
সামিয়াঃ কেন তুমি।জানতে না
আকাশঃ না।।
সামিয়াঃ ওহ আচ্ছা। এখন বলো ওরে তোমার কেমন লেগেছে??
আকাশ মনে মনে ভাবল। কপালে যা থাকে হবে। এইটাই সুযোগ কিছু বদনাম কইরা দেই। যদি এই অছিলায় ওনি বিয়ে টা ভেঙে দেয়।
আকাশঃ কি আর বলব ম্যাম। আপনারা বড়লোক আপনাদের নিয়া কথা বলার আমাদের কি আর অধিকার আছে।
সামিয়াঃ এভাবে বলছ কেন? তুমি বলো তোমার কাছে সাইফুল কে কেমন লাগছে
আকাশঃ সত্যি বলব ম্যাম রাগ করবেন না তো?
সামিয়াঃ নাহ তুমি বলো।
আকাশঃ আসলে ম্যাম স্যার কে আমি কয়েকবার নষ্ট পল্লিতে দেখেছি। ( মাথা নিচু করে)
সামিয়াঃ কিহহহ কি বলছ ভেবে বলছ তো
আকাশঃ জ্বী ম্যাম। বেশ কয়েকবার দেখেছি। বড় লোকের ছেলে বাড়েও যায়। একেকদিন একেক মেয়ের সাথে রাত কাটাতো। আরো তো জুয়া থেকে শুরু করে সব খেলেই।
সামিয়াঃ যা বলতেছ তুমি। এগুলোর কোনো প্রুভ আছে তোমার কাছে?
আকাশঃ আমার কাছে তো স্মার্ট ফোন নাই। আর আমরা আমাদের খদ্দেরদের ছবি তুলতাম ও না।তাই আমার কাছে কোনো প্রুভ নেই। তবে আপনি রহমান চাচাকে জিগাসা করতে পারেন।
সামিয়াঃ ওকে।
সামিয়া চলে গেল।
আকাশ মাথায় হাত দিল। এ কি করলাম। একটু বেশিই তো বলে ফেলছি। আল্লাহ আমারে রক্ষা করো। আমি তো জানিওনা ঐ সাইফুল না কি ওইটা কই থাকে। রহমান চাচারও তো কথা বললাম। এখন কি হবে। নিশ্চয়ই ম্যাম সবার থেকে খোজখবর নিবে।
তিন দিন পর,,
এই তিন সামিয়া ম্যাম আমার সাথে একটাও কথা বলেনি। কি হলো। ওনি কি বুঝে গেলেন নাকি যে আমি মিথ্যা বলে ওনার বিয়ে ভাঙতে চাইছি।
এমন সময়
সামিয়ার আব্বুঃ ২৩ তারিখ এর পর তুর কাজ আরো বেড়ে যাবে রে। মানসিক ভাবে রেডি হয়ে যাইছ
আকাশঃ কেন আংকেল? ২৩ তারিখের পর কি এমন হবে
সামিয়ার আব্বুঃ জানিস না???
আকাশঃ কি জানব?
সামিয়ার আব্বুঃ ২৫ তারিখ সামিয়ার বিয়ে।
আকাশঃ ওহ। আচ্ছা আমি রেডি আছি আংকেল।
আংকেল চলে গেলেন।।
তার দুদিন পর,,,
এখনও সামিয়া ম্যাম আমার সাথে কথা বলেনি। আজ পাচ দিন হয়ে গেল। তার মানে কি ওনি জেনে গেলেন সব? আমি মিথ্যা বলেছি। রহমান চাচাও তো নিশ্চিত চিনেনা বলেছেন। কি করব ম্যাম কে সরি বলে ক্ষমা চেয়ে নিব।
আকাশ সিদ্ধান্ত নিল ক্ষমা চেয়ে নিবে।
তাই সোজা সামিয়ার রুমের কাছে চলে যাগ। দরজায় আওয়াজ দিয়ে,,,
সামিয়াঃ কি জন্য এসেছ??
আকাশঃ আসলে ম্যাম আমি দুঃখিত
সামিয়াঃ কেন
আকাশঃ আমি আপনার আর সাইফুল স্যারের..
শেষ করতে না দিয়েই সামিয়া উঠে দাঁড়িয়ে বলল
সামিয়াঃ আকাশ তোমাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
আকাশ চমকে যায়। বলছে কি। কোথায় আমাকে থাপরাইবে। নিজের হবু জামাইর সমন্ধে খারাপ কথা বলছি। অথচ ওনি আমাকেই ধন্যবাদ দিচ্ছে।
সামিয়াঃ তুমি না থাকলে হয়ত আমি জানতেই পারতাম না। যে সাইফুল অনেক বড় লম্পট মেয়েবাজ। ও আগেও বিয়ে করেছিল
এ যেন মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি। বলছে কি। আমি তো সব মিথ্যা বলছিলাম। এখন ম্যাম এসব কি বলছে। কিছুই মাথায় ডুকছেনা। যাহোক ম্যাম কে বুঝতে দেওয়া যাবেনা যে আমি মিথ্যা বলছিলাম
আকাশঃ কি বলছেন ম্যাম কি করে জানলেন?
সামিয়াঃ তোমার মুখ থেকে ওইদিন সব শুনার পর আমি সাইফুলের পেছনে পুলিশ লাগিয়ে দিয়েছিলাম। ওর বিষয়ে পুরো খবর নিয়েছিলাম। তোমার আংকেল ও বলল ও নাকি তোমাদের ইয়ের নিয়মিত কাষ্টমার।
ম্যামের কথাগুলো আমার কাছে মুক্ত ঝড়ার মতো কানে আসছিল। কি করে বলব মিথ্যা কথাও সত্য হয়ে যায় কখনও কখনও।
আকাশঃ যাক ম্যাম। তারমানে বিয়ে ভেঙে দিয়েছেন?
সামিয়াঃ নাহ
আকাশঃকি বলছেন লুচ্চা লম্পট জেনেও ওনাকেই বিয়ে করবেন?
সামিয়াঃ আমি আব্বু আম্মুকে সব বলেছি। কিন্তু ওনারা কিছুতেই বিশ্বাস করছেনা। আম্মু বলছেন এই বয়ষে এমন সামান্য থাকতেই পারে। এতে এত রিয়েক্ট করার কিছুই নাই।ওনারা কিছুতেই বিয়ে ভাঙবেনা বলছেন।
মুহুর্তেই আকাশের মুখ থেকে হাসি উড়ে যায়।
আকাশঃ আপনার আব্বু?
সামিয়াঃ তিনিও কিছু বলছেন না। আম্মুর কথাই শেষ কথা। কিন্তু
আকাশঃ কিন্তু কি?
সামিয়াঃ আমি এ বিয়ে করতে চাইনা
আকাশঃ তো ম্যাম এখন কি করবেন?
সামিয়াঃ জানিনা কি করব। পুলিশ অফিসার তাই এলাকা ছেড়ে পালাতেও পারব না। কারন ডিউটি রয়েছে।
আকাশঃ ওহ।
সামিয়াঃ আচ্ছা তুমি কিছু একটা বুদ্ধি দাও তো কিভাবে বিয়ে ভাঙা যায়
আকাশঃ আমি আর কি দিব? আমি মুর্খ মানুষ আমার কি আর ওত জ্ঞ্যান বুদ্ধি আছে।
সামিয়াঃ ধুর তুমি কোনো কাজেরই না। যাও এখন যাও একা একা ভাবতে দাও
আকাশঃ ওকে ম্যাম। কিছু লাগলে বলবেন।
আকাশ চলে আসে।
আকাশও চিন্তায় পড়ে গেল কি করা যায়। কোনোরকম মিথ্যা বলে যাই একটা করছিলাম তাও আবার ওর মায়ের জন্য সফল হচ্ছেনা।
পরদিন,,,,
আকাশ কাজ করতেছে। এমন সময়
সামিয়াঃ আকাশ ও আকাশ
আকাশঃ জ্বী ম্যাম বলুন
সামিয়াঃ চলো??
আকাশঃ কোথায় ম্যাম
সামিয়াঃ আমার এক্স বয়ফ্রেন্ডের কাছে যাব।। আমি জানি সে এখনও আমাকে ভালোবাসে। তাই যাই তার কাছে।
আকাশঃ ওহ আচ্ছা চলুন।।
আকাশ সামিয়ার সাথে চলে যায়।
সামিয়া সোজা ওর এক্স বয়ফ্রেন্ড এর বাড়িতে চলে যায়।
সেখানে সামিয়া আর ওর বয়ফ্রেন্ড কি যেন কথা বলল আকাশ কিছুই শুনতে পারল না।
কিছুক্ষন পর তারা বেড়িয়ে আসল খুশি মনে।
সামিয়াঃ আকাশ চলো
আকাশঃ কোথায় যাবেন এখন ম্যাম
সামিয়াঃ কাজি অফিস যাচ্ছি
আকাশঃ কেন??
সামিয়াঃ আমরা বিয়ে করব আজকে এখনই
আকাশের মাথায় বাজ পড়ার মতো মনে হলো।
আকাশঃ কি বলছেন ম্যাম
সামিয়াঃ হ্যা ঠিকই বলছি। এছাড়া বিয়ে এটকানোর উপায় নাই।
আকাশঃ আপনার বাবা মা?
সামিয়াঃ ধুর তারা যেহেতু আমার কথা শুনেনি। আমি কেন শুনব। আর এমন ও নয় যে সে আমাকে ভালো জায়গায় বিয়ে দিচ্ছে। গাড়িতে উঠো।
এই বলে সামিয়া ওর বয়ফ্রেন্ডের সাথে গাড়িতে উঠে গেল।
আকাশের চোখ দিয়ে পানি বেড় হয়ে গেল। কি হচ্ছে কিছুই মাথায় আসছেনা। ভাঙতে গিয়ে এ তো আরো যলদি বিয়ে করে ফেলছে। আসলেই গরীবের কপালে কিছুই না।। গরীব হয়ে অনেক বেশি আশা করে ফেলছিলাম বুঝতেই পারিনি এটা চাঁদ ধরার মতো। যা ধরার সামর্থ্য আমার নেই।
এমন সময়েই সামিয়া ডাক দিয়ে আবার বলল গাড়িতে উঠতে।
আকাশ গাড়িতে উঠল। গাড়িটা একটা কাজি অফিসের সামনে থামাল।
তারপর সবাই গাড়ি থেকে নেমে কাজি অফিসের ভিতর ডুকল।।
”
”
”
”
কাজী সাহেবঃ আলহামদুলিল্লাহ এখন থেকে আপনারা স্বামী স্ত্রী। দোয়া করি আপনারা সুখি হোন।
”
”
”
”
TO BE CONTINUE
জন্মটা পতিতালয়ে
লেখকঃ Arian Sumon
Part-06
..
আকাশঃ ম্যাম আপনি পাগল হয়ে গেছেন নাকি
সামিয়াঃ হ্যা আমি পাগল হইয়া গেছি তোমার প্রেমে।
আকাশঃ ম্যাম কোথায় আপনি আর কোথায় আমি। কিসব বলছেন এসব।
সামিয়াঃ তুমি একসেপ্ট করবে কিনা বলো
আকাশঃ এটা হয়না।
সামিয়াঃ না বললে আমি সোজা ছাদ থেকে লাফ দিব।
আকাশঃ সরি ম্যাম এটা সম্ভব না।
এটা শুনার সাথে সাথেই সামিয়া দৌড় দিয়ে ছাদের কিনাড়ায় চলে যায়। আকাশ সামিয়ার হাত ধরে ফেলে। হাত ধরে টান দিতেই,,,
=> উফস আকাশ কি করছ
ঠাসসস
সাথে সাথেই আকাশের ঘুম ভেঙে যায়। চোখ খুলে দেখে সামিয়া ওর সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে।
আকাশ ব্যাপারটা বুঝতে একটুও দেড়ি করল না। ঘুমের মাজেই কিছু করেছে সে।
আকাশঃ সরি সরি সরি ম্যাম।আর হবেনা
সামিয়া বুঝতে পারল যে আকাশ স্বপ্ন দেখতেছিল। তাই হয়ত ভূলে করে ফেলছে।
সামিয়াঃ it’s okay…
আকাশঃ ধন্যবাদ মেডাম।কিন্তু আপনি এখানে??
সামিয়াঃ আমি এসেছিলাম তোমাকে জাগাইতে।
আকাশঃ কেন ম্যাম কোনো কাজ আছে কি?
সামিয়াঃ হুম। আব্বু জগিং করতে যাবে। তুমিও তার সাথে যাও।
আকাশঃ ওহ আচ্ছা ম্যাম। স্যার কই?
সামিয়াঃ রেডি হচ্ছে। তুমিও রেডি হয়ে নাও।
আকাশঃ ঠিক আছে।
সামিয়া চলে গেল।
আকাশ ভাবতে লাগল। কি ভূলটাই না করতে ছিলাম। স্বপ্নে দেখতে দেখতে কখন যে ম্যাম কে ধরে ফেলছি বুঝলাম ও না।
যাহোক আকাশ উঠে গেল। তারপর ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নিল।
তারপর আকাশ সামিয়ার আব্বুর সাথে জগিং করতে বেড় হলো।
জগিং করতে একটা পার্কে চলে আসল।
জগিং করতে ক্লান্ত হয়ে সামিয়ার আব্বু একটু বসল।
আকাশঃ আচ্ছা স্যার আপনি কি প্রতিদিনি জগিং করেন নাকি?
সামিয়ার আব্বুঃ কিসব স্যার ট্যার বলো। আমাকে আংকেল বলে ডাকবা বুঝছ।
আকাশঃ না এটা কি করে হয়।
সামিয়ার আব্বুঃ যা বলছি তাই করবা।
আকাশঃ জ্বী স্যার
সামিয়ার আব্বুঃ আবার স্যার বলে।
আকাশঃ না মানে আংকেল।
আংকেলঃ তো কি যেন জিগাসা করলা
আকাশঃ আপনি কি প্রতিদিনি সকালে জগিং করেন?
আংকেলঃ আগে করতাম। অনেকদিন পর আজকে তোমার সাথে বেড় হলাম।
আকাশঃ ওহ। চলেন আরেক রাউন্ড দেই।
আংকেলঃ নাহ আজ আর পারব না। বাসায় চলো।
আকাশঃ ওকে আংকেল। আপনি বসুন আমি রিকশা ডেকে আনছি।
আংকেলঃ ওকে।
আকাশ গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে। হঠাৎ একটা গাড়ি এসে হর্ণ দিতে লাগল। আকাশ দেখল গাড়িটা এ বাড়ির নয়। তাই গেইট না খুলে এগিয়ে গেল
আকাশঃ হর্ণ দিচ্ছেন কেন?
এমন সময় গাড়ির ভেতর থেকে,,
=> এই দাড়োয়ানের বাচ্চা গেইট খুল।
আকাশঃ কিন্তু আপনারা কারা?
=> আমি এ বাড়ির মালিক।
আকাশঃ এ বাড়ির মালিক তো সামিয়া মেডাম।আর ওনার আব্বু। আপনি কে
=> আমি মিসেস চৌধুরী
এমন সময়েই সামিয়ার আব্বু উপস্থিত।
আংকেলঃ এই আকাশ কি করছ ভিতরে আসতে দাও। এটা আমার স্ত্রী মানে তোমার আন্টি।
আকাশ ভরকে গেল। বলছে কি এসব।
আকাশঃ ওহ সরি সরি সরি আন্টি।ভূল হয়ে গেছে। এবারের মতো মাফ করে দিবেন।
এই বলে আকাশ গেইট খুলে দিল।
ড্রাইভার গাড়ি ভিতরে নিয়া গেল।
তারপর আকাশ ও এগিয়ে গেল। লাগেজ গুলো ভিতরে নিয়া যায় আকাশ।
সামিয়ার আম্মুঃ কে এই অসভ্য টা
সামিয়ার আব্বুঃ তুমি রাগ করো না। ছেলেটা অনেক ভালো।
সামিয়ার আম্মুঃ ভালো না ছাই আমি দেখেছি।এরে চাকরি দিছে কে
সামিয়ার আব্বুঃ তোমাকে বলছিলাম না আকাশ নামের একটা ছেলের কথা। এই সে। সামিয়া নিজে এরে এ কাজে রেখেছে।
সামিয়ার আম্মুঃ ওহ ওই পতিতার বাচ্চা টা।
এমন সময়েই আকাশ ভিতর থেকে বেড় হলো। আকাশের কানে কথা টা কানে গেল। পিন ফুটার মতো শব্দ টা ওর কলিজায় লাগল।
আকাশ কিছু না বলেই সামনে দিয়ে চলে গেল।
সামিয়ার আব্বুঃ তুমি না কোনোদিন ও ভালো হবেনা। চলো এখন ভিতরে চলো।
সামিয়ার আম্মুঃ আমার ভালো হওয়া লাগব না।
অন্যদিকে আকাশের চোখ দিয়ে পানি বেড় হয়ে গেল। এই একটাই শব্দ আকাশ একদম সহ্য করতে পারেনা। আমি কি ইচ্ছে করে হয়েছি নাকি। আমাকে জন্ম দেওয়া হয়েছে। সে যে খারাপ তা আমি কি করে বুঝব। তবুও এই অপবাদ টা আমাকেই কেন দেওয়া হয়।। হে আল্লাহ তুমি জানোই তো এটা আমি সহ্য করতে পারিনা।
”
”
রাতে আকাশ নিজের রুমে শুয়ে আছে। এমন সময়েই সামিয়া ভিতরে আসল। আকাশ উঠে বসল।।
আকাশঃ ম্যাম কিছু বলবেন??
সামিয়াঃ হুম। আমার।মায়ের পক্ষ থেকে সরি
আকাশঃ নাহ আপনি সরি বলছেন কেন। ওসব আমি কিছুই মনে করিনি।।
সামিয়াঃ তবুও সরি। আসলে ওনি এইরকমই। কিছু মনে করোনা
আকাশঃ নাহ ম্যাম ঠিক আছে।
সামিয়াঃ ধন্যবাদ
সামিয়া চলে গেল।
আকাশ ভাবতে লাগল।
মেডাম আপনি এত ভালো কেন? বার বার আপনার প্রতি আমাকে দুর্বল বানিয়ে দিচ্ছেন কেন?
”
”
পরদিন সকালে,,,
জগিং করতে গেল। কিছুক্ষন পরেই,,
সামিয়ার আব্বুঃ আজকে আর নয়। তারাতারি বাড়িতে যেতে হবে
আকাশঃ কেন আংকেল
সামিয়ার আব্বুঃ তুমি জানোনা?
আকাশঃ নাহ তো
সামিয়ার আব্বুঃ আজকে সামিয়াকে পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে।
আকাশঃ ওহ ম্যাম কে দেখতে আসবে।
সামিয়ার আব্বুঃ হুম।
আকাশঃ তাহলে চলুন। আমি রিকশা নিয়া আসছি।
আকাশ রিকশা নিয়া আসল। তারপর বাসায় চলে আসল।
বাসায় এসে আকাশ রুমে বসে পড়ল।
মনে কষ্ট হলেও কিছুই করার নেই। আমার কোনো ক্ষমতাই নেই সামিয়াকে বিয়ে করার। জানিনা কেন যে আমি ওরে ভালোবেসে ফেলছিলাম।
এমন সময়েই সামিয়ার আম্মু আসল,,
সামিয়ার আম্মুঃ এই যে
আকাশঃ জ্বী আন্টি বলুন
সামিয়ার আম্মুঃ কিসের আন্টি আমি তুর আন্টি নই। মেডাম বলে ডাকবি
আকাশঃ জ্বী মেডাম।
সামিয়ার আম্মুঃ এই নাও বাজার থেকে এই জিনিস গুলো নিয়ে এসো ( একটা কাগজ আর কিছু টাকা এগিয়ে)
আকাশঃ ওকে মেডাম।
আকাশ ওগুলো হাতে নিল। তারপর বেড় হয়ে গেল বাজারের উদ্দেশ্যে।
সারাটা দিন কোনো রকমে পাড় হলো।
সন্ধ্যায় পাত্রপক্ষ আসল। আকাশ সব কিছু তাদের খেদমতে কাজে লেগে গেল।
কিছুক্ষন পর সামিয়া নিচে নামল সেজে গুজে নেমেছে। একটা নীল শাড়ি পড়ে। আকাশ সামিয়াকে দেখে চোখ সড়াতেই পারল না। এক নজরে সামিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।
সামিয়া এসে সবার সামনে বসল। সারাক্ষন আকাশ তার দিকে তাকিয়ে থাকল।।
সব শেষে পাত্রপক্ষ সামিয়াকে পছন্দ করল। সামিয়াও পাত্রকে পছন্দ করল।
সবাই অনেক খুশি। সবার খুশির মাজে শুধু আকাশই অখুশি।
রাতে আকাশ রুমে শুয়ে আছে।
সামিয়ার সাথে কাটানো প্রতিটা মুহুর্ত একের পর এক মনে পড়তে লাগল।
আর চোখ বেয়ে পানি বেড় হতে লাগল।
”
”
”
TO BE CONTINUE
সামিয়াঃ ওকে তুমি এখন যাও কালকে সকালে চলে এসো।
আকাশঃ আচ্ছা ম্যাম একটা প্রশ্ন করব??
সামিয়াঃ হুম করো
আকাশঃ রহমান চাচা সহ ওনারা সবাই কেমন আছে??
সামিয়াঃ তা জেনে তুমি কি করবে??
আকাশঃ না মানে
সামিয়াঃ তাদের কোর্টে ট্রান্সফার করে দিছি। বাকিটা কোর্ট জানে
আকাশঃ তাদের কে আমার মতো কি একটা সুযোগ দেওয়া যাবেনা?
সামিয়াঃ না যাবেনা। সবাইকে সব দেওয়া যায় না।
আকাশঃ ওহ। আচ্ছা আমি আসি
সামিয়াঃ হ্যা আসো।
আকাশ বাড়ি থেকে বেড়িয়ে আসল।
যাক অবশেষে ভালো হবার মতো একটা সুযোগ পেলাম। আল্লাহ হুম্মা আমিন।
আবার আকাশের মনে লাড্ডুও ফুটতেছিল। কারন সামিয়া কে সে সব সময় দেখতে পারবে। ভাবতেও পারছেনা যে সামিয়াই তাকে এইরকম একটা সুযোগ করে দিবে।
যাহোক আকাশ বস্তিতে নিজের বাসায় চলে গেল।
রাতে শুয়ে আছে,,,
আকাশের খুব ইচ্ছে করছে একটু মদ পান করতে। কিন্তু সামিয়ার কথা ভেবে করতেও পারছেনা।
বলা হয়না যার যেটা অভ্যাস সেটা সহজে ছাড়তে পারেনা। আকাশের ও তাই হলো। সহ্য করতে না পেরে মদ্যপান করল।
”
”
”
সকালে ঘুম ভাঙার পর আকাশ দেখে ১১ টা বেজে গেছে।
আকাশের কপালে হাত। মেডাম আমাকে ভোর ভোর চলে যেতে বলেছিল। এ কি করলাম আমি।
আকাশের মনে পড়ে গেল। গতকাল রাতে না সে মদ খেয়েছিল। ইশ ভালো করে ফ্রেশ হওয়া উচিত ছিল।
আকাশঃ আসলে মেডাম ইয়ে
সামিয়াঃ বুঝতে পারছি। আসো ভিতরে আসো।
সামিয়া আকাশ কে নিয়ে ভিতরে বসাল।
সামিয়াঃ শুনো তুমি আজ থেকে এখানেই থাকবা
আকাশঃ আমি??
সামিয়াঃ তা নয়তো কে
আকাশঃ না মানে
সামিয়াঃ কোনো মানে টানে নেই আমি যা বলছি তাই। এই নাও তোমার রুমের চাবি। সিড়ির ধাড়ের রুমে তুমি থাকবা।
আকাশঃ আপনার এ ঋণ যে আমি কিভাবে শোধ করব নিজেও জানিনা। আমার মতো একটা অমানুষ কে এত আপন করে নিবেন জীবনেও ভাবতেও পারিনি।
সামিয়াঃ আরে ধুর। অমানুষ কি বলছ। তুমি খারাপ জগতে থেকেও আমাদের থেকে যথেষ্ট ভালো।
আকাশঃ মেডাম এসব আমার ক্ষেত্রে যায় না।
সামিয়াঃ আচ্ছা এখন রুমে গিয়ে ফ্রেশ হও। আমার থানায় যাব।
আকাশঃ আচ্ছা ম্যাম
সামিয়া উপড়ে উঠে যাচ্ছে। এতক্ষন আকাশ একবারো সামিয়ার দিকে ভালো করে নজর দেয়নি। এতক্ষনে সে খেয়াল করল সামিয়া একটা সবুজ শাড়ি পড়েছে। দেখতে সেই লাগতেছে। দেখলে শুধু দেখতেই মনে চায়।
যাহোক আকাশ নিজের রুমে গেল। রুমে গিয়ে চমকে গেল। রুম টা কত সুন্দর। ভাবতেও পারছেনা আকাশ এত সুন্দর একটা রুমে ঘুমাবে থাকবে। কি যে হচ্ছে বিশ্বাস হচ্ছেনা।
”
”
বিকালে আকাশ বাগানের টবে পানি দিচ্ছিল।
হঠাৎ সামিয়া,,,
সামিয়াঃ কি করছ আকাশ?
আকাশ চমকে গিয়ে পিছনে তাকিয়ে দেখে সামিয়া।
আকাশঃ ওহ ম্যাম। এই তো পানি দিচ্ছিলাম গাছগুলোতে।
সামিয়াঃ ওহ আচ্ছা এখন আর দিতে হবেনা। রুমে গিয়ে রেডি হও
আকাশঃ কেন ম্যাম?
সামিয়াঃ তোমাকে নিয়ে বেড় হব
আকাশঃ কেন?
সামিয়াঃ আরে ধুর এত কেন কেন করতেছ কেন? যা বলছি করো। যাও রেডি হয়ে নাও।
আকাশঃ ওকে ম্যাম।
আকাশ নিজের রুমে চলে যায়। গিয়ে ফ্রেশ হয়।
তারপর সামিয়ার সাথে গাড়িতে উঠে। সামিয়া গাড়ি চালাচ্ছে।
আকাশ প্রতিনিয়ত সামিয়ার রুপে।মুগ্ধ হচ্ছে। সামিয়ার চোখ কান নাক সবই তার নয়নের দৃষ্টি কাড়ছে। আকাশ মনে মনে ভাবে। যদি এখন আমরা স্বামী স্ত্রী হতাম তাহলে কত ভালো হতো। এখন হয়ত আমরা,,
সামিয়াঃ এই নামো
সামিয়ার কথায় আকাশের ভাবনার দেয়াল ছেদ করে কানে পৌছালে তার হুশ ফিরে।
আকাশঃ ওহ হ্যা ম্যাম নামছি।
আকাশ নেমে দেখে গাড়ি একটা মলের সামনে দাড় করানো।।
আকাশঃ ওহ ম্যাম আপনি শপিং করবেন?
সামিয়াঃ হুম চলো ভিতরে।
আকাশ নিজের দিকে তাকালো। কোনো ভাবেই সামিয়ার সাথে তার যাচ্ছেনা। পরনে একটা ফুটপাতের প্যান্ট আর শার্ট। এগুলো পড়ে ম্যামের সাথে হাটব। ম্যামের মান ইজ্জত কিছুই থাকবেনা। না আমি এসব দেখতে পারব না।।
আকাশঃ আপনি ভিতরে যান ম্যাম। আমি যাবোনা।
সামিয়া ও বিষয় টা বুঝতে পারল আকাশ কেন যাইতে চাচ্ছেনা।।
সামিয়াঃ ধুর পাগল তুমি যা ভাবছ তার কিছুই হবেনা।
আকাশঃ না ম্যাম আপনি যান
সামিয়াঃ ধুর
সামিয়া আকাশের হাত ধরে ফেলে। তারপর টানতে টানতে ভিতরে নিয়া যায়।
আকাশ কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। সামিয়া এমন করবে ভাবনাতেও আসেনি।
যাহোক ভিতরে গিয়ে আকাশ সামিয়ার পিছু পিছু হাটছে। আকাশ আশেপাশের মানুষের দিকে তাকাচ্ছে। কেউই তাদের দিকে ভালো নজরে দেখছেনা।
যাহোক সামিয়া শপিং শেষ করল।
তারপর আকাশ কে নিয়ে গেল শার্ট প্যান্ট এর দোকানে।।
আকাশ কিনতে চাচ্ছিল না। সামিয়া জোড় করে আকাশ কে প্যান্ট শার্ট কিনে দিল।।
তারপর দুজন বাসায় চলে আসে।
”
”
”
আকাশ বাগানে পানি দিচ্ছিল। এমন সময়
সামিয়াঃ আকাশ শুনো তোমার সাথে আমার কথা আছে।
আকাশঃ জ্বী ম্যাম বলুন
সামিয়াঃ ছাদে যাও আমি আসতেছি।
আকাশঃ কেন ম্যাম ছাদের গাছে পানি দিতে হবে নাকি? একটু আগে তো দিয়ে এসেছি।
সামিয়াঃ এত কথা বলো কেন যেতে বলছি যাও।
আকাশ আর কিছু না বলে সোজা ছাদে চলে গেল। গিয়ে গাছ গুলো কে দেখতে লাগল। নাহ সব তো ঠিক আছে। তাহলে ম্যাম ডাকল কেন? নাকি আমার দ্বারা কোনো ভূল হয়েছে।
কিছুক্ষন পর সামিয়া একগুচ্ছ গোলাপ ফুল নিয়ে উপরে আসল,,,
সামিয়াঃ আকাশ
আকাশঃ জ্বী ম্যাম বলুন
সামিয়াঃ I LOVE YOU ( ফুল গুলো দিয়ে)
আকাশ তো বিশ্বাস করতে পারছেনা এসব হচ্ছে টা কি।
আকাশঃঃ কিহহহ ম্যাম কি বলছেন
সামিয়াঃ যা বলছি ঠিকই বলছি I LOVE YOU I LOVE YOU SO MUCH
আকাশঃ ম্যাম আপনি পাগল হয়ে গেছেন নাকি
সামিয়াঃ হ্যা আমি পাগল হইয়া গেছি তোমার প্রেমে।
আকাশঃ ম্যাম কোথায় আপনি আর কোথায় আমি। কিসব বলছেন এসব।
সামিয়াঃ তুমি একসেপ্ট করবে কিনা বলো
আকাশঃ এটা হয়না।
সামিয়াঃ না বললে আমি সোজা ছাদ থেকে লাফ দিব।
আকাশঃ সরি ম্যাম এটা সম্ভব না।
এটা শুনার সাথে সাথেই সামিয়া দৌড় দিয়ে ছাদের কিনাড়ায় চলে যায়। আকাশ সামিয়ার হাত ধরে ফেলে। হাত ধরে টান দিতেই,,,
জন্মটা পতিতালয়ে
লেখকঃ Arian Sumon..
Part- 04
..
আকাশ আস্তে আস্তে রুম থেকে বেড় হচ্ছে। বারবার পিছু ঘুরে সামিয়াকে দেখছে। আর কোনোদিন দেখতে পারব কিনা জানিনা। তবে মেয়ে তোমাকে আমার সারাজীবন মনে থাকবে।।
”
আকাশ পুলিশ ষ্টেশন থেকে বেড়িয়ে সোজা বস্তিতে চলে গেল।
বস্তির একটা দোকানে চা খেতে বসল
এমন সময়,,
একজনঃ কিরে তুরে নাকি পুলিশে ধরছে ছাড়া পাইলি কেমনে?
আকাশঃ….. চুপ করে আছে
=> কথা বলছিস না যে? করিস তো মাইয়াগো ধান্দা। পুলিশ ধরেও ছেড়ে দিল। দেখছ মিয়ারা দেশের কি অবস্থা আমাদের উন্নতি হবেই কেমনে
=> হ ভাই। এসব আইরা জাউরা পোলাপাইন গো পুলিশ কিছুই কইব না। খালি আমরা রিকশা চালক রা একটু কিছু করলেই হলো শুরু হয়ে যত সরকারের উল্টা পাল্টা কাহিনি।
=> হুম ঠিক বলছেন। এসব পতিতার বাচ্চারা দেশ টা খাইয়া ফেলতেছে। এদের উচিত ফাঁসিতে লটকাইয়া মাইরা ফেলা।
আকাশ আর চুপ থাকতে পারল না। রাগ মাথায় চড়ে বসল।
আকাশ উঠে সোজা ঐ লোকটির কলার চেপে ধরল। সবাই ভয়ে পেয়ে গেল।
কিন্তু পরক্ষনেই আকাশ শান্ত হয়ে যায়। কারন লোকটি ছিল বৃদ্ধ।
কিছু না বলেই ছেড়ে দিয়ে আকাশ দোকান থেকে বেড়িয়ে আসে।
সোজা নিজের ঘরে চলে আসে। এসে শুয়ে শুয়ে ভাবতে থাকে,,,
আসলেই তো আমি যা করছি তা একদম ঠিক নয়। দেশ ও জাতির জন্য অনেক খারাপ। অনেকের অনেক ক্ষতি করেছি। কত মেয়েকে তুলে নিয়ে এসেছি হিসাব নেই। অনেকেই অনেক উপদেশ দিয়েছে কারো উপদেশ মাথায় নেই নি। কিন্তু আজ সামিয়া আমাকে কথা গুলো বলার পর এমন লাগছে কেন। ভালো হতে ইচ্ছে করছে কেন??
নাহ আমার ভালো হতেই হবে। আজ থেকে আর কোনো খারাপ কাজ করব না।এখন থেকে ন্যায় পথে চলব। কাল থেকেই কাজ খুজব।
”
”
”
পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই আকাশ কাজ খুজতে বেড় হয়।
অফিসে অফিসে কাজের জন্য দৌড়ে বেড়ায়। কিন্তু কোথাও কাজ পেল না।
হতাশ হয়ে একটা গলির রাস্তায় হাটছে।
চিন্তা করছে এখন সে কি করবে। মানুষ তো বুঝতে চায় না।
হঠাৎ একজন তার কাধে হাত রাখল।। আকাশ চমকে গিয়ে পিছনে তাকাতেই অভাক হয়ে যায়।
কারন হাত টি ছিল সামিয়ার।
আকাশ ভয় পেয়ে গেল।
আকাশঃ আপনি?? আমি কিছুই করিনি বিশ্বাস করুন। আমি কাজ খুজার জন্য ঘুরতেছি। প্লিজ আমাকে এরেস্ট করবেন না
সামিয়াঃ আরে থামো থামো। আমি তোমাকে এরেস্ট করতে আসিনি।
আকাশ শান্ত হলো। ভয় পুরো না কাটলেও হালকা হালকা আছে।
সামিয়াঃ তুমি এখানে কি করো??
আকাশঃ এই তো ম্যাম একটা ছোট্ট কাজের জন্য ঘুরছি কিন্তু কেউই চাকরি দিল না।
সামিয়াঃ তা তুমি কি কাজ পারো??
আকাশ মাথা নিচু করে ফেলল।কারন আকাশ কোনোদিন ঐসব কাজ ছাড়া অন্য কোনো কাজই করেনি। আকাশ খদ্দের এনে দিত। রহমান চাচা তার ৪০% তাকে দিয়ে দিত। এটাই করত।
সামিয়া ব্যাপার টা বুঝতে পারল।
সামিয়াঃ তার মানে কোনো কাজই জানোনা।
আকাশঃ আসলে
সামিয়াঃ আর বলতে হবেনা। দাড়োয়ানের চাকরি করতে পারবা?
আকাশঃ হ্যা হ্যা পারব তো।
সামিয়াঃ ওকে তাহলে কাল সকাল ১১ টায় থানায় এসে আমার সাথে দেখা করিও।
আকাশঃ ওকে ম্যাম।
সামিয়াঃ তাহলে আমি এখন আসি।
আকাশঃ ওকে।
সামিয়া চলে গেল। আকাশ তার চলে যাওয়া দেখল।
আকাশ খুশি মনে বস্তিতে চলে গেল।
কেন জানিনা আকাশের মনে ফুর্তি জাগতেছিল। আকাশ ভাবতেও পারছেনা যে সামিয়া তার চাকরির ব্যবস্থা করতেছে।
যাহোক পরদিন সকালে,,,,,
আকাশ সুন্দর করে পরিপাটি হয়ে থানায় চলে গেল।
থানায় প্রবেশ করার সময় একটা কন্সেটেবল তাকে আটকালো।
কন্সেটেবলঃ ঐ পতিতার বাচ্চা ভিতরে কোথায় যাচ্ছিস??ম্যাম তো দয়া করে তুকে ছেড়ে দিয়েছিল। আবার কি পুলিশ ষ্টেশনে।
আকাশের রাগ উঠে গেল। এই একটা মাত্র শব্দ আকাশ একদম পছন্দ করে। কেউ তাকে পতিতার বাচ্চা বা এ জাতীয় গালি দিলে তার খুব রাগ উঠে যায়।
আকাশঃ দেখুন স্যার আর যাই বলুন পতিতার বাচ্চা বলবেন না।
কন্সেটেবলঃ ওরে বাবারে চুরের মুখে আল্লাহ আল্লাহ শুনা যাচ্ছে। পতিতার বাচ্চা কে পতিতার বাচ্চা বলব না তো কি বলব???
আকাশঃ দেখুন আপনি কিন্তু বেশি করে ফেলতেছেন
কন্সেটেবলঃ কিহ তুই আমাকে ধমকাচ্ছিস তুর এত বড় সাহস।
সামিয়া নিজের রুম থেকে বেড়িয়ে দেখে কন্সেটেবল আর আকাশের মধ্যে কথা কাটাকাটি হচ্ছে।সামিয়া বিষয় টা লক্ষ করে
দুজনকেই থানার ভিতরে ডাকল,,,,
সামিয়াঃ কি ব্যাপার টা কি এটা কি থানা নাকি অন্য কিছু??
আকাশ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
কন্সেটেবলঃ দেখুন না ম্যাম ও আমাকে শাসাচ্ছিল
সামিয়াঃ কি আকাশ তুমি ওনাকে শাসাচ্ছিলে কেন?
আকাশঃ ম্যাম ওনি আমাকে বারবার পতিতার বাচ্চা বলে গালি দিচ্ছিল তাই মাথা ঠিক ছিল না। তাই
সামিয়াঃ আর বলতে হবেনা। কি ব্যপার নিজে কি খুব বড় হয়ে গেছেন নাকি? মানষ কে মানুষ ভাবতে শিখুন। নাহলে চাকরি থেকে অব্যাহতি দিয়ে দিব।
কন্সেটেবলঃ সরি ম্যাম
সামিয়াঃ আমাকে না ওনাকে সরি বলুন
কন্সেটেবল আকাশ কে সরি বলে বেড়িয়ে গেল।
সামিয়াঃ বসো তুমি
আকাশ বসল।
সামিয়াঃ তো কি খাবা? চা না কফি
আকাশঃ আমি কিছুই খাবোনা। খালি একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দিলেই হবে।
সামিয়াঃ তার ব্যবস্থা করে ফেলছি।
আকাশঃ সত্যি??
সামিয়াঃ হুম। আচ্ছা খাবা না যেহেতু চলো
সামিয়া আকাশ কে নিয়ে রওনা হলো।
কিছুক্ষন পর একটা বড় বাড়ির কাছে এসে গাড়ি থামল।
দুজনেই নামল।।
তার সামিয়া আকাশ কে নিয়ে বাড়ির ভিতর ডুকল,,,
সামিয়াঃ তুমি এখানে বসো আমি আসছি।
আকাশ বসল।
সামিয়া উপরে উঠে গেল।
আকাশের মাথায় কিছুই ডুকছেনা। কি হচ্ছে এসব। এ কার বাড়িতে নিয়া আসল। আবার ম্যাম বাসার ভিতরে ডুকে গেল।।
এমন সময়েই একজন বৃদ্ধ,,,
=> তুমিই তাহলে আকাশ
আকাশ দাঁড়িয়ে গেল
আকাশঃ জ্বী আসসালামু আলাইকু
=> বসো বসো দাড়ালে কেন। আমি হলাম সামিয়ার আব্বু।
আকাশ বসল।
সামিয়ার আব্বুঃ তোমার কথা মেয়েটি আমাকে কালকেই বলছে। আসলেই তুমি অনেক সহজ সরল। খালি ভাগ্যটা খারাপ ছিল।
এমন সময়েই সামিয়া হাজির। হাতে বিস্কুট শরবত ইত্যাদি।
সামিয়া একটা লাল ড্রেস পড়েছে। আকাশ দেখেই হা করে তাকিয়ে আছে। চোখ সড়াতেই পারছেনা।
সামিয়াঃ কি কথা হচ্ছে বাবা
সামিয়ার বাবাঃ কিছু না রে। ওরে আমার পছন্দ হইছে ওরেই রেখে দে।
সামিয়াঃ ওকে।
সামিয়ার বাবা চলে গেল।
সামিয়াঃ তোমাকে এই বাড়ির দাড়োয়ান হিসেবে থাকতে হবে।তুমি রাজি আছ?
আকাশঃ জ্বী ম্যাম এটা কি আপনার বাড়ি?
সামিয়াঃ হায়রে হাদারাম। আমার বাবা এতক্ষন তোমার সাথে কথা বলল। এখনও বুঝনি এটা আমার বাড়ি? ( হেসে হেসে)
আকাশঃ না মানে
সামিয়াঃ থাক এখন এগুলো খাও।
আকাশঃ আমি এখন কিছুই খেতে পারব না। যা খেয়েছি তাই হজম হচ্ছেনা।
সামিয়াঃ কখন কি খেলে??
আকাশ মনে মনে ভাবছে
(আপনাকে ম্যাম যা লাগছে বলে বুঝাতে পারব না। আপনাকে দেখার পর আমার সব ক্ষুদাই শেষ হয়ে গেছে। আপনি যদি আমার পাশে থাকেন তাহলে মনে হয় সারাজীবন না খেয়েই থাকতে পারব।)
সামিয়াঃ কি হলো চুপ হইয়া গেলে কেন
আকাশের ধ্যান ভাঙল।
আকাশঃ আসলে ম্যম সকালে খাইছি তো এখন ক্ষুদা নেই।
সামিয়াঃ বললেই হলো তুমি এখানে দুপুরের লাঞ্চ করেই যাবে।
আকাশঃ না ম্যাম তা পারব না।
সামিয়াঃ আমি বলছ মানে করতেই হবে।
জোড়াজোড়ি তে আকাশ রাজি হলো।
দুপুরে খাওয়া ধাওয়া শেষে আকাশ যখন চলে আসবে,,,
সামিয়াঃ তাহলে কবে থেকে জয়েন করছ??
আকাশঃ আপনি বললে আজকেই জয়েন করব
সামিয়াঃ না তা লাগবে না। তুমি বরং আগামীকাল থেকে জয়েন করো।
আকাশঃ ওকে মেডাম।
সামিয়াঃ ওকে তুমি এখন যাও কালকে সকালে চলে এসো।
আকাশঃ আচ্ছা ম্যাম একটা প্রশ্ন করব??
সামিয়াঃ হুম করো
আকাশঃ..???????????
জন্মটা পতিতালয়ে
লেখকঃ Arian Sumon..
Part- 03
..
কত ভালো লাগছে বলে বুঝাতে পারব না। এত দিন এত মেয়ের সাথে ঘুরাফেরা করেছি কাউকে ভালো লাগেনি। কিন্তু জান্নাতের সাথে হাটতে এত ভালো লাগছে। ওর প্রতিটা কাজ আমাকে প্রতিনিয়ত মুগ্ধ করছে।
”
”
”
সারাদিন ঘুরাফেরা করে সন্ধ্যায় রহমান চাচার ওখানে যায়। গিয়ে তো আকাশ পুরো অভাক হয়ে যায়। এটা কি করে হলো ভাবতেও পারছেনা।
জায়গাটা পুরো পুলিশে ঘেরা। ভিতরে ডুকে দেখে রহমান চাচা সহ সবাইকে গ্রেপ্তার করেছে।
আকাশ পিছনে তাকিয়ে দেখে সামিয়া নেই। কি করবে ভেবে পাচ্ছেনা। এখন এ মেয়েটা আবার কোথায় গেল। এমনিতেই যেকোনো সময় আমি গ্রেপ্তার হতে পারি। এখন আবার এই মেয়েটা গেল কোথায়।
হঠাৎ একজন পুলিশ এসে আকাশের কলার চেপে ধরে,,,
আকাশঃ কি করছেন কলার ধরেছেন কেন?
পুলিশঃ মাগীবাজি করো তাই না। চলো শশুর বাড়ি। দেখাব মজা।
আকাশঃ দেখুন স্যার আপনি ভূল ভাবছেন। আমি এসব করিনা। আমি তো একজন কে খুজতেছি। একটা মেয়ে এতক্ষন আমার সাথেই ছিল হঠাৎ দেখি পিছনে নাই।
পুলিশঃ ওহ তাই। এসব থানায় গিয়া বলিস।
আকাশের হাতে হাতকড়া লাগিয়ে দিল।
তারপর একে একে আকাশ রহমান চাচা সবাইকে গাড়িতে উঠাল।
এত কিছুর মাজেও আকাশের মাথায় ঘুরতে সামিয়ার কথা ঘুরতেছে। মেয়েটা গেল কোথায়। হঠাৎ উধাও হয়ে গেল কোথায়। আকাশের চিন্তা হতে লাগল। মেয়েটা তো এখান কার কিছুই চিনেনা। আল্লাহ জানে তার কপালে কি আছে।
এমন সময়েই
রহমান চাচাঃ তুর জন্য আজকে আমাদের জেল খাটতে হচ্ছে
আকাশঃ মানে আমি কি করলাম??
রহমান চাচাঃ ভালো সাজা হচ্ছে? পুলিশ কে খবর দিয়েছিস কেন
আকাশঃ পাগল হইছ নাকি?? কি বলছ আমার মাথায় কিছুই ডুকছেনা। আর আমিই বা কেন পুলিশ কে খবর দিতে যাব?
রহমান চাচাঃ তুর সাথের মেয়েটা কই?
আকাশঃ জানিনা। পুলিশের ঝামেলার পর আর দেখতে পাইনি
রহমান চাচাঃ দেখবি কেমনে ঐ মেয়েটি তো পুলিশ
আকাশঃ কিইইইই
রহমান চাচাঃ হুম
আকাশঃ ধুর কি বলো মেয়ে তো ভালো মতো কথাই বলতে জানেনা ও আবার ইন্সপেক্টর হবে।
রহমান চাচাঃ আমি নিজের চোখে দেখেছি।
আকাশঃ কোথায় কিভাবে??
রহমান চাচাঃ আমাদের যখন পুলিশের গাড়িতে উঠাচ্ছিল তখন ঐ মেয়েকে আমি পুলিশের ড্রেসে দেখেছি
আকাশঃ কি যে বলো কাকে না কাকে দেখছ
রহমান চাচাঃ যা দেখছি একদম ক্লিয়ার দেখছি।
আকাশের মাথায় ঘোড়প্যাচ খেয়ে গেল। চাচা বলে কি? ঐ মেয়ে যদি পুলিশ হয়। তাহলে আমার বারোটা বাজাইয়াই ছাড়বে। মেয়ে তো আমার ঘর পর্যন্ত চিনে। আল্লাহ আমাকে বাচাও।
কিছুক্ষন পর একটা পুলিশ এসে আকাশ বেড় করল। তারপর একটা রুমে নিয়া গেল। সেখানে দুটো চেয়ার ও একটা টেবিল রয়েছে। আমি ভয়ে ঘামছি। শুনেছি এসব মামলায় নাকি অনেক কড়া শাস্তি হয়। না জানি আমার কপালে কি আছে।
পুলিশঃ এখানে বস ম্যাডাম আসছে।
আকাশঃ জ্বী ( ভয়ে ভয়ে)
বসলাম চেয়ারে। বসে আছি।
কিছুক্ষন পর একজন ভিতরে আসল। আকাশ দেখেই সোজা দাঁড়িয়ে গেলাম। এ আর কেউ নয় সেই মেয়েটি। বুকের ব্যাচের দিকে তাকাইল নাম সামিয়া। তার মানে আমাকে আসল নামই বলেছিল।
আকাশঃ আ আ আপনি
সামিয়াঃ হ্যা আমি এই থানার নতুন ওসি। বসুন বসুন
সামনে পানি ছিল। ভয়ে পুরো গ্লাসের পানি খেয়ে ফেলল আকাশ।
সামিয়াঃ আরে এত ঘামছেন কেন বসুন বসুন। আমি
আকাশ বসল।
এখন তার কাছে পুরো বিষয় টা ক্লিয়ার। এ মেয়ে আমাকে ফাঁসিয়েছে। আমাকে ফাঁসিয়ে আমাদের ব্যবসার জায়গা চিনেছে।
সামিয়াঃ তো কি খাবেন চা না কফি?
আকাশ তো অভাক শুনেছি থানায় আসলে পুলিশের মাইর ছাড়া কথা নাই। আর ইনি আমাকে জিগাসা করছে কি খাব।
সামিয়াঃ আরে বলুন ভয় পাচ্ছেন কেন? কই কাল থেকে আজ সারাদিন পর্যন্ত একবার ও তো দেখিনি আপনাকে ভয় পেতে
আকাশঃ আমি ভয় পাচ্ছিনা
সামিয়াঃ তাহলে ঘামছেন কেন?
আকাশঃ গরম লাগছে তাই
সামিয়াঃ ওহ আইচ্ছা। কিছুই যখন খাবেন না। তাহলে শুরু করি।
আকাশঃ…
সামিয়াঃ তো আপনার বাবা মা কোথায়??
আকাশঃ জানিনা
সামিয়াঃ জানিনা মানে কি?
আকাশঃ আমার বাবা মা কে আমি জানিনা।
সামিয়াঃ তার মানে..
আকাশঃ তার মানে আপনি যা ভেবেছেন তাই। আমার জন্মই পতিতালয়ে কে আমার বাবা কে আমার মা কিছুই জানিনা। আর এই সমাজে আমাদের মতো মানুষের কোনো জায়গা নেই। তাই নিজের পেট চালানোর জন্য আমাকে এই কাজ করতে হচ্ছে।( চোখ দিয়ে পানি বেড় হয়ে গেল)
সামিয়াঃ তার মানে আপনি জন্মের পর থেকেই
আকাশঃ হুম জন্মের পর থেকেই। ঐ যে রহমান চাচা ওনার কাছে ছিলাম। তারপরে ওনার সাথেই এভাবে এই কাজ করে দিন পাড় করেছি
সামিয়াঃ আচ্ছা আপনি আসুন আমার সাথে।
আকাশঃহুম
আকাশ সামিয়ার পিছু পিছু গেল। তারপর তাকে একটা আলাদা সেলে রাখা হলো।
আকাশ কি ভাবছিলাম কি হয়ে গেল। ভাবলাম মেয়েটিকে নিয়ে সংসার করব। এখন এই মেয়েই আমাকে শশুর বাড়ি নিয়ে এসে শাস্তির ব্যবস্থা করতেছে। কি করতে যে সেদিন এই মেয়েটির পাল্লায় পড়ছিলাম।
পরদিন সকালে,,,,
আকাশ ঘুমিয়ে আছে। একজন কন্সেটেবল এসে আকাশের ঘুম ভাঙাল।।
আকাশঃ ঘুম ভাঙালেন কেন
কন্সেটেবলঃ চল আমার সাথে
আকাশঃ কোথায়?
কন্সেটেবলঃ ঐ পতিতার বাচ্চা তুকে বলতে কোথায়? তুরে বলছি আসতে আমার পিছু পিছু আয়।
আকাশের রাগ উঠে গেল। কিন্তু কোনো রকমে নিজেকে সামলায়।
কিছুক্ষন পর সামিয়া রুমে প্রবেশ করে দেখতে পেল আকাশ দাঁড়িয়ে রয়েছে।
সামিয়াঃ দাঁড়িয়ে আছেন কেন বসুন
আকাশ পিছু ফিরে দেখে সামিয়া।
সামিয়া গিয়ে নিজের চেয়ারে বসে।
আকাশ বসে।
একটা খাতা বেড় করল সামিয়া।তারপর
সামিয়াঃ এখানে একটা সাইন করুন
আকাশঃ কি এইটা?? কিসের সাইন
সামিয়াঃ আহা করুন না।
আকাশঃ না করব না। আমি জানি আপনারা পুলিশ সমাজ অনেক খারাপ। একজন ভালো মানুষকেও মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেন।
সামিয়াঃ সেরকম কিছুই না। এটা আপনার ছাড়পত্র
আকাশঃ মানে?
সামিয়াঃ মানে হলো আমরা আপনাকে ছেড়ে দিচ্ছি
আকাশঃ কিহহহ সত্যি??
সামিয়াঃ হুম।
আকাশঃ তার মানে রহমা চাচা সহ বাকিরাও ছাড়া পাবে
সামিয়াঃ নাহ। ওনারা জগন্যতম অপরাধ করেছেন। ওনাদের শাস্তি দিয়েই ছাড়ব।
আকাশঃ তো আমিও করেছি
সামিয়াঃ হুম আপনি করেছেন তবে না বুঝে। কাল সারাদিন আপনার সাথে থাকার পর যা বুঝছি আপনার মধ্যে খারাপ কিছুই নেই। just একটু ভূল পথে আছেন। এ নিয়ে আমি উপর মহলের সবার সাথে কথা বলছি। তারপর আবাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি আপনাকে একটা সুযোগ দিব।
আকাশঃ বাহ্ একদিনেই এত কিছু
সামিয়াঃ হুম। এখন কি কথাই বলবেন নাকি সাইন ও করবেন??
আকাশঃ ইয়ে মানে আসলে আমি তো পড়ালেখা জানিনা। তাই সাইন করতেও পারিনা
সামিয়াঃ সমস্যা নেই। টিপ সই নিয়ে নিচ্ছি।
সব শেষে।
সামিয়াঃ এখান আপনি মুক্ত।
আকাশঃ আপনাকে যে কি বলে ধন্যবাদ দিব।
সামিয়াঃ ধন্যবাদ লাগবে না। এখন থেকে ভালো কাজ করবেন। সব ধরনের অন্যায় পথ থেকে নিজেকে বিরত রাখবেন।
আকাশঃ জ্বী
সামিয়াঃ ওকে। এখন আপনি আসুন
আকাশঃ ওকে।
আকাশ আস্তে আস্তে রুম থেকে বেড় হচ্ছে। বারবার পিছু ঘুরে সামিয়াকে দেখছে। আর কোনোদিন দেখতে পারব কিনা জানিনা। তবে মেয়ে তোমাকে আমার সারাজীবন মনে থাকবে।।
”
”
”
”
TO BE CONTINUE
জন্মটা পতিতালয়ে
লেখকঃ Arian Sumon..
Part -02
..
কাজের ব্যবস্থা করে দিব নে।
মেয়েটিঃ না না। সম্ভব না। আপনাকে চিনিনা জানিনা আপনার সাথে যাব কেন? তার উপর আপনাকে আমার ভালো লাগছেনা। আপনার হাতে মদ। ছিহ
আকাশঃ আমি আপনাকে সাহাজ্য করতে চাইছি। এর বেশি কিছুইনা। আসলে আসেন না আসলে নাই। good bye..
আকাশ হাটা ধরল। পিছনে তাকাল না। কিছুক্ষন পর দেখে কিছু একটা ছায়া তাকে ফলো করতেছে।
পিছনে ঘুরতেই আকাশ মেয়েটি তাকে ফলো করতেছে।
আকাশ থামল।
আকাশঃ কি ব্যাপার পিছু নিচ্ছেন কেন?
আকাশ আরো দেখল যে বেশকিছু লোক মেয়েটিকে ফলো করতেছে। আকাশ বুঝতে পারল অবস্থা খারাপ। মেয়েটির খারাপ কিছু হয়েও যেতে পারে।
মেয়েটিঃ দেখুন আমি এই শহরে নতুন। কাউকে চিনিনা জানিওনা। শুনেছি এই শহরে অনেক আজে বাজে লোক ঘুরাঘুরি করে। ( অসহায় ভাবে)
আকাশঃ হুম বুঝতে পারছি। আর কিছু বলতে হবেনা। চলুন আমার সাথে।
আকাশ হাটা ধরল। মেয়েটিও তাকে ফলো করতে লাগল।
আকাশের মনে মেয়েটির জনহ মায়া জন্ম নিয়েছে। কেন জানিনা মেয়েটাকে ভালোও লাগে। ইচ্ছে করে মেয়েটির চোখের দিকে তাকিয়ে সারাজীবন কাটিয়ে দিতে। কিন্তু আপসোস আমার জগৎ আর ওর জগৎ এক নয়।
এসব ভাবতে ভাবতে হাসতে লাগল। রাস্তা পেড়িয়ে বস্তিতে ডুকে গেল।
এমন সময়েই
মেয়েটিঃ কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে
আকাশঃ আমার বাসায় কেন?
মেয়েটিঃ না মানে এটা তো বস্তি
আকাশঃ হুম আমি ওতটা বড়লোক নই যে বড় বড় বাড়িতে থাকব। আমি সামান্য একজন মানুষ।
মেয়েটি আর কিছু বলল না।
আকাশ বাসার সামনে গিয়ে দরজা খুলল,,
আকাশঃ আসুন ভিতরে আসুন
মেয়েটি ভিতরে ডুকল।
আকাশঃ এটাই আমার একমাত্র সম্বল। গরীবের রাজপ্রাসাদ আপনি এখানে শুয়ে পড়ুন।
মেয়েটিঃ আর আপনি??
আকাশঃ আমি বাহিরে চলে যাচ্ছি।
মেয়েটিঃ কোথায় যাবেন?
আকাশঃ আমাদের মতো দু টাকার ছেলেদের জন্য কোনো কিছুই স্থায়ি না। যেখানে জায়গা হয় সেখানেই শুইতে হয়। আমাদের রুটিন টাই অন্যরকম।
মেয়েটিঃ আপনি এখানেই থাকুন।
আকাশঃ কিন্তু আপনি?
মেয়েটিঃ আজকে রাত টা নাহয় গল্প করেই কাটিয়ে দেই।
আকাশ একটা হাসি দিল।
আকাশঃ আমাদের জীবন টাই একটা গল্প। এই জীবনে গল্প করার মতো কিছুই নাই। আচ্ছা আপনি খেয়েছেন??
মেয়েটিঃ হুম। ষ্টেশনে খেয়েছিলাম।
আকাশঃ তাহলে শুয়ে পড়ুন
মেয়েটিঃ আচ্ছা আপনার বাবা মা কোথায়?? আপনি যে এসব খান কিছু বলে না আপনাকে??
আকাশ কি বলবে ভেবে পাচ্ছেনা। কে না চায় তার বাবা মা তার সাথে থাকুক। কে না চায় বাবাকে বাবা মাকে মা বলে ডাকতে। কিন্তু আমার কপালে যে বাবা মা নামের কেউ ছিলই না। কি করে আপনাকে বলব আমার জন্ম টাই পতিতালয়ে।
মেয়েটিঃ কি হলো??
আকাশের ভাবনার দেয়াল ছেদ হলো।
আকাশঃ নাহ কিছুনা। আচ্ছা আপনার নাম টাই তো জানা হলো না
মেয়েটিঃ আমি সামিয়া। আপনার নাম কি?
আকাশঃ আমি আকাশ। আচ্ছা এখন ঘুমিয়ে পড়ুন।
সামিয়াঃ আপনি কিন্তু আমার কথা এড়িয়ে গেলেন। আপনার বাবা মার সমন্ধে কিছুই বললেন না।
আকাশঃ তারা নেই। মারা গেছে।
সামিয়াঃ ওহ সরি সরি আমি দুঃখিত।
আকাশঃ না ঠিক আছে। আপনি এখন শুয়ে পড়ুন। দেখি কালকে আপনার জন্য কোনো কাজ যোগাড় করে দিতে পারি কিনা।
সামিয়াঃ আমি আপনার জন্য অনেক সমস্যা করে ফেললাম। সরি।
আকাশঃ নাহ কোনো সমস্যা নেই।
”
”
”
পরদিন সকালে,,,,
আকাশ সারারাত একটুও ঘুমাতে পারেনি। সারারাত মেয়েটির তাকিয়ে ছিল। এই প্রথম কোনো মেয়ে কে তার আপন করে পেতে মন চাচ্ছে। যদিও সে দেহ ব্যবসার সাথে জড়িত। কিন্তু তবুও আজ অবদি কোনো মেয়ের সাথে ওসবে জড়ায় নি। নিজেকে যথেষ্ট আটকে রেখেছে।
সামিয়া এখনও ঘুমিয়ে আছে। আকাশ তার দিকে তাকিয়ে আছে। কি বলে ডাক দিবে ভেবেই পাচ্ছেনা।
ভাবতে ভাবতেই সামিয়ার ঘুম ভেঙে যায়।
আকাশঃ অবশেষে ঘুম ভাঙল। এবার ফ্রেশ হয়ে আমার সাথে চলুন। দেখি আপনার জন্য কি করতে পারি।
সামিয়াঃ আচ্ছা। বাথরুম কোথায়?
আকাশ দেখিয়ে দিল।
”
”
”
ফ্রেশ হয়ে সামিয়াকে নিয়ে রহমান চাচার ওখানে চলে যায়।
রহমান চাচা তো মেয়েটিকে দেখেই খুশি হয়ে গেল। খুশিতে আকাশ কে দুটো চুম্মাও খেল।
রহমান চাচাঃ বাহ বাহ আকাশ এইবার কামের মতো কাম করছিস। এবার আমাকে আর পায় কে
আকাশঃ চাচা চুপ করো।
বলেই হাত রহমান চাচার মুখ বন্ধ করল।
তারপর,,,
আকাশঃ আপনি একটু বসুন আমরা একটু আসতেছি।
সামিয়াঃ হুম।
আকাশ রহমান চাচাকে নিয়ে একটা রুমে ডুকে গেল। দরজা আটকে দিল,,,,
রহমান চাচাঃ কি হলো এভাবে এখানে এনেছিস কেন?? যাইহোক মালটা কিন্তু খাসা। এরে দিয়ে যদি কাজ করাই তাহলে আমরা ডবল টাকা কামাইতে পারব।
আকাশঃ তোমার বুদ্ধিশুদ্ধি কি লোপ পেয়েছে নাকি?
রহমান চাচাঃ কেন কি করলাম?
আকাশঃ আমি ঐ মেয়েটিকে এ কাজের জন্য এখানে আনিনি
রহমান চাচাঃ মানে কি বলতে চাচ্ছিস
আকাশঃ মেয়েটি গ্রাম থেকে শহরে এসেছে একেবারে সাধারন। আমি চাই না মেয়েটি এ কাজ করুক। এর জন্য অন্য কোনো কাজ ঠিক করে দাও।
রহমান চাচাঃ আরে বেটা তুই তো দেখছি আমার ব্যবসার লাল বাতি জ্বালিয়ে দিবি। এই মাল টাকে দিয়ে আমরা কত টাকা কামাইতে পারব ভেবে দেখেছিস?
আকাশঃ ভাবা ভাবির কাম আমি করিনা। আমি যা বলছি তাই করি।( একটু রেগে)
রহমান চাচাঃ আরে রাগ করছিস কেন তুই যা চাচ্ছিস তাই হবে
আকাশঃ হলেই ভালো। ওর জন্য একটু ভালো কাজ যোগাড় করে দাও।
রহমান চাচাঃ হুম দিব। আচ্ছা ব্যাপার টা কি? মেয়েটাকে পছন্দ নাকি?
আমিঃ আরে তুমিও না চাচা
এই বলে আকাশ রুম থেকে বেড়িয়ে আসল।
আকাশ এসে সামিয়ার পাশে বসল
আকাশঃ আপনার কাজের ব্যবস্থা হয়ে যাবে।
এর মধ্যেই রহমান চাচা আসল।
রহমান চাচাঃ মা তুমি চিন্তা করোনা। আজকে সন্ধ্যার মধ্যেই তোমার জন্য একটা চাকড়ি যোগাড় করে দিব।
সামিয়াঃ ধন্যবাদ আংকেল।
আকাশঃ দেখছেন আমি বলছিলাম না কিছু একটা ব্যবস্থা করে দিব করেই দিলাম।
রহমান চাচাঃ আচ্ছা আমার কাজ আছে তুরা সন্ধ্যায় আসিস। দেখি কি ব্যবস্থা করা যায়।
আকাশঃ ওকে চাচা
ওনি চলে গেলেন,,,
আকাশঃ তো এখন কোথায় যাবেন?
সামিয়াঃ আমার তো যাওয়ার মতো জায়গা নেই। এখানেই বসে থাকি সন্ধ্যা পর্যন্ত। আপনি চলে যান
আকাশঃ তা কি করে হয়। আচ্ছা চলুন আজকে না হয় আপনাকে পুরো শহর ঘুড়িয়ে দেখাই।
সামিয়াঃ আপনার কাজ নাই?
আকাশঃ আমার কাজ সন্ধ্যার পরে।
সামিয়াঃ তাইলে চলুন।
তারপর আকাশ সামিয়া কে নিয়ে সারাদিন ঘুরে বেড়াল।
কত ভালো লাগছে বলে বুঝাতে পারব না। এত দিন এত মেয়ের সাথে ঘুরাফেরা করেছি কাউকে ভালো লাগেনি। কিন্তু সামিয়ার সাথে হাটতে এত ভালো লাগছে। ওর প্রতিটা কাজ আমাকে প্রতিনিয়ত মুগ্ধ করছে।
”
”
”
সারাদিন ঘুরাফেরা করে সন্ধ্যায় রহমান চাচার ওখানে যায়। গিয়ে তো আকাশ পুরো অভাক হয়ে যায়। এটা কি করে হলো ভাবতেও পারছেনা,,,,
লেখকঃ Arian Sumon..
Part 01
.
আকাশঃ চাচা দেখো তো মাল টা কেমন??
রহমান চাচাঃ জব্বর তো। কোথাই পাইলি??
আকাশঃ আর বইল না একটু আগে যেই খদ্দের টা নিয়া আসলাম। তাকে সেট করতে গিয়ে এরে একটা দোকানে দেখেছি। তাই ছবি তুলে নিয়া আসলাম।
রহমান চাচাঃ তো শুধু ছবি তুললেই হবে নাকি? কাজ কে করবে?
আকাশঃ সে করব এখন আমার পাওনা দাও
রহমান চাচাঃ এই নে ৫০০০ টাকা।
আকাশঃ এটা ঠিক না চাচা বাকি ১০ হাজার কবে দিবা।
রহমান চাচাঃ দিব তো। চিন্তা করিস না। আমি তো আর পালিয়ে যাচ্ছিনা।
আকাশঃ প্রতিদিন তো ভালোই মালপানি কামাও আর আমার টাকা দেওয়ার বেলাই যত কথা।
রহমান চাচাঃ আরে বাবা এই নে আরো ৫০০০ টাকা। হইছে এখন? বাকিটা আরেকদিন দিন দিব
আকাশঃ বাকি টাকা টাও দাও আজকেই। আমার লাগবে
রহমান চাচাঃ কিসে লাগবে তুর টাকা।
আকাশঃআমার লাগবে বলছি লাগবে তুমি টাকা দিবা কিনা বলো
রহমান চাচাঃ কি তুই আমাকে শাসাচ্ছিস। শালা মাগির বাচ্চা। ভূলে যাছ তুর জন্ম পরিচয়? পতিতার বাচ্চা। আমি না থাকলে তুই বাচতি কি করে
আকাশঃ বেশি করতেছ কইলাম। আমার টাকা আমাকে দাও।
রহমান চাচাঃ দিব না টাকা তুকে। কি করবি পতিতার বাচ্চা।
আকাশের রাগ মাথায় চড়ে বসল।আকাশ সোজা রহমান চাচার কলার ধরে বসল।
আকাশঃ চুপ মাগির পোলা। আমি না থাকলে তুর এই ব্যবসা চলত নাকি?
এমন সময়েই আরো কয়েকজন এসে আকাশকে কে ছাড়িয়ে নেয়।
একজনঃ কি করছিস আকাশ
আকাশঃ আজকের মতো তুকে ছেড়ে দিলাম। আর কোনোদিন যদি আমাকে পতিতার বাচ্চা বলিস তুকে সহ তুর এই দান্দার বারোটা বাজিয়ে দিব মনে রাখিস।
তারপর আকাশ চলে আসল। এতক্ষন কি হলো হয়ত আপনারা কেউ বুঝছেন আবার বুঝেন নি। আমি বুঝিয়ে দিচ্ছি।
আকাশ একজন দালাল। বলতে মেয়েদের দালাল। আর রহমান চাচা হলো দেহ ব্যবসায়ীর দালাল। আকাশ খদ্দের নিয়ে আসে ওদের পতিতালয়ে।বিনিময়ে কিছু টাকা পায়। সুমন জানেনা ওর বাবা মা কে?? ও যখন বুঝতে শিখেছে তখন থেকেই ও এই রহমান চাচার কাছে।। অবশ্য আকাশ রহমান চাচাকে কয়কবার জিজ্ঞেস করেছিল ওর বাবা মায়ের কথা। রহমান চাচা বলেছিল তুর জন্ম এখানেই হয়েছে। তুর মা ছিল মা******
তারপর থেকে আকাশ আর নিজের জন্ম পরিচয় জানার চেষ্টাও করেনি।।
যাহোক গল্পে ফিরি।
আকাশ রহমান চাচার সাথে কথা বলা শেষে সোজা বস্তিতে চলে আসে।।
আসার সময় মদ নিয়া আসে।
তারপর মদ খেয়ে মাতলামি করতে করতে ঘুমিয়ে যায়। আসলে আকাশ জীবনের সব কষ্ট ভুলার জন্য মদ খায় বেশি বেশি।
যাহোক পরদিন,,,
রহমান চাচাঃ আকাশ কই তুই?
আকাশঃ কি দরকার??
রহমান চাচাঃ যলদি আমার এখানে আয়। মাল সাপ্লাই করতে হবে।
আকাশঃ পারব না আমি
রহমান চাচাঃ আচ্ছা কাল রাতের আমি ক্ষমা চাচ্ছি। আর রেগে থাকিস না। চলে আয়। তুর টাকা আজকেই দিয়ে দিব।
আকাশঃ তাইলে আমি আসতেছি টাকা রেডি রাখো।
রহমান চাচাঃ আয় বাবা যলদি।
আকাশ সব ভূলে ফ্রেশ হয়ে রহমান চাচার বাসায় দিকে রওনা দেয়।
কিছুক্ষন পর পৌছে যায়।
রহমান চাচাঃ এই নে টাকা।
আমিঃ ধন্যবাদ। এখন থেকে বাকি রাখবা না।প্রতিদিনের টা প্রতিদিন দিয়ে দিবা।
রহমান চাচাঃ ওকে। এখন এই চম্পাকে নিয়ে এই ঠিকানায় চলে যা। ( একটা ঠিকানা দিয়ে)
আকাশঃ চল মাগী চল। তুর বাতারের কাছে দিয়া আসি।
রহমান চাচাঃ সাবধানে যাইছ পুলিশের পাল্লায় আবার পড়িস না।
আকাশঃ এই আকাশ কে আটকানোর মতো পুলিশ এখনও এই পৃথিবীতে জন্ম নেয় নি।
রহমান চাচাঃ হইছে এখন যা
আকাশঃ স্যার এই নিন ডেলিভারি
স্যারঃ বাহ মাল টা বেশ খাসা কি বলিস তুরা।
আরো কয়েকজন ঃ হ্যা রে আজকে মজা হবে
আকাশঃ স্যার আমাদের পাওনা টা দিন এখন।
স্যারঃ ওহ হ্যা wait a minuite
কিছুক্ষন পর এসে একটা বান্ডেল আকাশের হাতে ধরিয়ে দেয়। আকাশ টাকা নিয়ে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে আসে।।
বাড়ি থেকে বেড় হতেই দেখে কিছু ছোট ছোট ছেলেমেয়ে স্কুলে যাচ্ছে। তার বাবা মায়ের সাথে।
আকাশ বসে পড়ল। যদি আমারও বাবা মা থাকত। তাহলে হয়তো আমার আজ এই অবস্থা থাকত না। বাবা মায়ের সাথেই অনেক আনন্দে থাকতে পারতাম। জানিনা কোন পাপের জন্য আল্লাহ আমাকে এভাবে পাঠিয়েছে।
আকাশের দিকে তাকিয়ে একটা বড় নিঃশাষ নিয়ে উঠে দাঁড়ায়।
তারপর হাটা ধরে।
”
”
”
সন্ধ্যা বেলায় আকাশ খদ্দের মানে পতিতালয়ের কাষ্টমার এর জন্য বাস ষ্টেশনে বসে আছে। বসে বসে লোক দেখতেছে।
হঠাৎ চোখ পড়ে একটা মেয়ের উপর। মেয়েটির টানা টানা চোখ। খোলা চুল। দেখতেও মাশাল্লাহ। হয়ত পরীও এর রুপের কাছে ফেইল মারবে। দেখে বুঝাই যাচ্ছে গ্রাম থেকে এসেছে।
আকাশ ভাবতে লাগল। এই মেয়েটিকেই কিডনাপ করতে হবে। একে বিক্রি করতে পারলে অনেক টাকা পাব নিশ্চিত।
আকাশ বসতেই মেয়েটি তার পাশে রাখা ব্যাগটি হাতে নিয়ে নিল।
আকাশ মনে মনে হেসে ফেলল। যাহোক সে,,,
আকাশঃ এই যে ঢাকায় নতুন নাকি?
মেয়েটি কথা বলছেনা।
আকাশঃ কি হলো কথা বলছেন না কেন
তারপরেও কোনো শব্দ নাই।
আকাশঃ ভয় পাচ্ছেন নাকি? আমাকে ভয় পাওয়ার কিছু নাই বলুন। আপনাকে দেখে তো নতুন মনে হচ্ছে। কোথায় যাবেন?
এবার মেয়েটিঃ জানিনা কোথায় যাব
আকাশঃ জানেন না মানে তাহলে ঢাকায় আসছেন কেন?
মেয়েটিঃ আসছি একটা চাকরির জন্য।
আকাশঃ ওহ আচ্ছা। আপনার বাবা মা?
মেয়েটিঃ নেই অনেক আগেই মারা গেছে। চাচা চাচির কাছে ছিলাম তারা আমাকে তারিয়ে দিয়েছে।
আকাশঃ ওহ।
আকাশ মেয়েটির সরল কথা বার্তা শুনে গলে যায়। মেয়েটিকে বিক্রি করার চিন্তা বাদ দিয়ে দেয়।
আকাশঃ তো এখন কোথায় যাবেন??
মেয়েটিঃ জানিনা।
এমন সময়েই রহমান চাচা কল দেয়। আকাশ মেয়েটির থেকে দূরে গিয়ে কল ধরল,,,
আকাশঃ হ্যা চাচা বলো
রহমান চাচাঃ কোথায় তুই?? সন্ধ্যা থেকে কাউকেই তো নিয়া আসলি না
আকাশঃ আজকে একজনও পাইনি চাচা। পাইলে নিয়া আসব।
এমন সময়েই একজন আকাশের কাধে হাত রাখল।আকাশ পিছে ঘুরে দেখে দুজন। তাদের দিকে তাকাতেই আকাশ বুঝে যায় এরা কি রকম।
আকাশঃ চাচা দুজন পাইছি আমি আসছি মাল রেডি রাখো
এই বলে ফোন কেটে দেয়।
তারপর ঐ দুজনের সাথে ডিল করে তাদেরকে নিয়ে রহমান চাচার কাছে চলে যায়।
”
”
রাত বারোটা,,,
আকাশ মদ নিয়ে বস্তিতে ফিরতেছিল। হঠাৎ দেখে একটা মেয়ে ফুটপাতে বসে আছে।
আকাশ এগিয়ে যায় মেয়েটির দিকে।
কাছে গিয়ে দেখে ষ্টেশনের সেই মেয়েটা। ভূলেই গিয়েছিলাম মেয়েটির কথা।।
আকাশ মেয়েটির কাছে গিয়ে,,,
আকাশঃ আপনি এখানে?? এত রাতে
মেয়েটি চুপ করে আছে।
আকাশঃ ওহ বুঝছি আশ্রয় পাননি। কি করবেন বলেন তাই তো এটা ঢাকা শহর। এখানে কেউ কাউকে জিগায় না। কিছু মনে না করলে আমি একটা কথা বলব??
মেয়েটিঃ জী
আকাশঃ আমার সাথে আমার বাসায় চলুন। আজকে রাত টা আমার বাসায় কাটিয়ে দিন। কালকে কিছু একটা কাজের ব্যবস্থা করে দিব নে।
মেয়েটিঃ না না। সম্ভব না। আপনাকে চিনিনা জানিনা আপনার সাথে যাব কেন? তার উপর আপনাকে আমার ভালো লাগছেনা। আপনার হাতে মদ। ছিহ
আকাশঃ আমি আপনাকে সাহাজ্য করতে চাইছি। এর বেশি কিছুইনা। আসলে আসেন না আসলে নাই। good bye..
আকাশ হাটা ধরল। পিছনে তাকাল না। কিছুক্ষন পর দেখে কিছু একটা ছায়া তাকে ফলো করতেছে।
পিছনে ঘুরতেই আকাশ…?????????
প্রায় আধঘন্টা হলো তিথিরা নিজেদের দেশে ল্যান্ড করেছে।তিথি প্রথমে নিজের বাসায় যাবে তারপর সেখান থেকে ওদের বাসায় যাবে। সন্ধে ছটায় সবাই বাসায় পৌঁছালো। বাসায় প্রবেশ করতেই দেখল বাসার পরিবেশটা কিরকম থমথমে হয়ে আছে। মামা সোফার উপর বসে মাথায় হাত দিয়ে কিছু একটা নিয়ে গভীর চিন্তায় মগ্ন আর তার ঠিক পাশে মামি বসা।তিথিরা যে এসেছে সেই বিষয়ে তাদের কোন খেয়ালই নেই।
-:মামা,,মামি কি হয়েছে তোমাদের??ওমন করে বসে আছো কেন??
তিথির কোথায় তাদের ধ্যান ভাঙল। তিথীকে দেখে যেন ভূত দেখার মতো চমকে উঠল দুজনে,, হয়তো এই সময় তারা তিথি কি আশা করেনি। এই বিষয়টা তিথির কাছে খুব অদ্ভুত লাগল। তাই সেই মামার সামনে গিয়ে আবার জিজ্ঞাসা করল-;
-:কি হয়েছে মামা তোমার??
-:না না কই কিছু হয়নি তো আমাদের।(হকচকিয়ে বলে উঠলেন)
মামার কথা শুনে তিথি বুঝতে পারলো কোন কিছু তিনি তার কাছ থেকে গোপন করার চেষ্টা করছেন। আবির অনেক বার জিজ্ঞাসা করেছি কিন্তু কেউ কোন কথার উত্তর দিচ্ছে না তাই দেখে তিথির খুব রাগ হল।সে মামার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে ওনার এক হাত নিজের মাথার উপর রেখে বলে উঠলো-;
-:মামা আমার কসম বলো কি হয়েছে তোমাদের??
তিথির কথায় যেন নজরুল সাহেবের অনেক কষ্ট করে লুকিয়ে রাখা অশ্রু গুলো টপ টপ করে পড়তে লাগলো। বাসায় উপস্থিত প্রত্যেকে নজরুল সাহেবের দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে এমনকি তিথি নিজেও বিস্ময় চোখ নিয়ে তার মামার দিকে তাকিয়ে আছে।পাশে তাকিয়ে দেখল তার মামীর চোখ দিয়েও সমান গতিতে অশ্রুধারা নিঃসরণ হচ্ছে। নজরুল সাহেব কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পর বলতে আরম্ভ করলেন-;
-:পরশুদিন রাতে একজন আমাকে ফোন করে ফোনটা রিসিভ করতে সে জানায় যে সে থাইল্যান্ড থেকে বলছে।অত রাতে থাইল্যান্ড থেকে আমাকে ফোন করছে এই জিনিসটা ভেবে প্রথমে আমি অবাক হয়েছিলাম কিন্তু তার পরবর্তী কথাগুলো শুনে আমি নিজের কানকেও বিশ্বাস করতে পারছিলাম।তিনি জানান যে আতিফ পুলিশের গুলিত নিহত হয়েছে।
তিথি এতক্ষন নজরুল সাহেবের কথাগুলো খুব মনোযোগ সহকারে শুনছিল কিন্তু ওনার লাস্টের কথাটা শুনে তার মনে হচ্ছে যেন পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেল।আবিরও নজরুল সাহেবের কথায় অবাক এর চূড়ান্ত পৌঁছে গিয়েছে। সে জড়িয়ে চেঁচিয়ে বলে উঠলো-;
-: কিন্তু বাবা এটা কি করে সম্ভব??আর তুমি আমাদের এগুলো আগে কেন বলনি ফোন করে??
-: আমি জানাতে চেয়েছিলাম।কিন্তু তোদের দুদিন পরেই এখানে চলে আসার কথা ছিল তাই আমি আর তোদেরকে জানায়নি।
-: কিন্তু এগুলো কি করে হলো বাবা!!ফুপা তো দেশের মধ্যেই ছিল তাহলে উনি বাইরেই বা গেলেন কখন। আর কি করেই বা উনি পুলিশের কাছে ধরা পড়লেন??
নিলয় আর নিশি এতক্ষন চুপচাপ দাঁড়িয়ে কেবল শুনছিল,, কিন্তু কি বিষয় নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল তা তাদের দুজনেরই বোধগম্য হচ্ছিল না। কিন্তু আবিরের বলা ফুপা শব্দ টি শুনে দুজনের কারণে বুঝতে বাকি রইলো না যে আতিফ বলে ভদ্রলোকটি আর কেউ না তিথির বাবা।নিলয় তিথির দিকে তাকিয়ে দেখল তিথি এখনো তার মামার দিকে স্থির চাহনিতে চেয়ে আছে শুধু তফাৎ এখন তার চোখ দুটো অশ্রুসিক্ত যেকোনো মুহূর্তে গড়িয়ে পড়বে তার গাল বেয়ে।
নজরুল সাহেব আবার বলতে শুরু করলেন-;
-: আমরা তিথিকে এখানে আনার তিন বছরের মাথায় সে এই দেশ ছেড়ে ছিল তার দ্বিতীয় স্ত্রীর সাথে।নিজের কালো দুনিয়ায় কালো কারবার আর দ্বিতীয় স্ত্রী সংসার এই দুই নিয়ে বেশ ভালই সুখের দিন কাটাচ্ছিল।কিন্তু কিছু বছরের মধ্যেই ব্যবসায় লোকসান শুরু হয়,,নিজের দ্বিতীয় স্ত্রীর একাউন্ট একসময় অনেক টাকা জমিয়ে রেখেছিলেন। তাই তখন তার স্ত্রীর কাছে সেই টাকার দাবি করে কিন্তু তিনি তা দিতে অস্বীকার করে।
আতিফ তাকে মারার হুমকি দিলে সে আতিফের নামে পুলিশে কেস করে। কিছুদিনের মধ্যেই আতিফ নিজের কালো ব্যবসা,,প্রথম স্ত্রীর খুনের এবং দ্বিতীয় স্ত্রী কে মারার চেষ্টার দায়ে আতিফকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। কিন্তু সেই মহিলাটি এটা বলিনি যে সেও আতিফ এর সাথে মিলে আমার বোনকে হত্যা করেছিল। আদালতে বিচার হলে তাকে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয়।
সাত বছর পর জেল থেকে বেরিয়ে সে তার দ্বিতীয় স্ত্রী সন্ধান করতে থাকে। পরে জানতে পারে তার স্ত্রী তার প্রপার্টি বিক্রি করে সুখে শান্তিতে জীবন কাটাচ্ছে,, এটা আতিফ কিছুতেই মেনে নিতে পারিনি।তাই সে নিজের দ্বিতীয় স্ত্রীকে খুন করার পরিকল্পনা করে। সব প্লান সে ঠিক করে করলেও খুন করার দিন তাকে খুন করতে বাড়ির চাকর দেখে ফেলে এবং পুলিশকে ফোন করে জানিয়ে দেয়। পুলিশ সেখানে এসে আতিফকে ধরার চেষ্টা করলে সে পুলিশের কাছ থেকে পালানোর চেষ্টা করে তাই পুলিশ বাধ্য হয়ে তাকে এনকাউন্টার করে।
মরে যাওয়ার কিছু মুহূর্ত আগে সে তার সমস্ত দোষ স্বীকার করে এবং তিথিকে একটিবার দেখার অনুরোধ করে কিন্তু সময় খুব কম থাকায় তা পূরণ করা সম্ভব নয় তাই জন্য সে সেখানকার পুলিশের কাছে অনুরোধ করে যে তার মৃত্যুর খবর অন্তত দেশে তার পরিবারের কাছে জানাতে।মরে যাবার পর থাইল্যান্ডের পুলিশ আতিফকে দাফান করে দিয়ে আমাদের ইনফর্ম করে।
এইটুকুনি বলে নজরুল সাহেব একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়লেন।এতক্ষন তিথি তার মামার কথাগুলো একধ্যানে শুনছিল,,এবার সে উঠে দাঁড়ালো এবং আস্তে আস্তে করে উপরে নিজের রুমের দিকে চলে গেল।রুমে ঢুকে নিজের দরজাটা বন্ধ করে দিল।নিলয় যেতে নিলে আবির তাকে থামিয়ে বলে ওঠে-;
-:ওকে কিছুক্ষন একা থাকতে দাও।
তিথি সারা সন্ধ্যে দরজা খুলল না,,, সেই রাত দশটায় তিথি তার রুমের দরজা খুলল।নিলয় সবে ভাবছিল এবার সে তিথিকে ডাকতে যাবে কিন্তু তার আগেই তিথি দরজা খুলে নিচে নেমে এলো।সবাই এতক্ষন নিচের সোফায় বসে ছিল,, তিথিকে দেখে সবাই দাঁড়িয়ে পরল। কিন্তু তিথি সবাইকে অবাক করে দিয়ে ডাইনিংয়ে গিয়ে বসে পড়লো এবং মামি কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠল-;
-: মামি আমার খুব খিদে পেয়েছে তাড়াতাড়ি খেতে দাও দেখি। তোমার হাতের রান্না আমি অনেকদিন মিস করেছি।
তিথি এমন স্বাভাবিক কথাবার্তা বলতে দেখে সবাই অনেক অবাক হলো।তিথি সবার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো-;
-: কি হলো তোমাদের কি ব্যান্ডপার্টি ভাড়া করে ডাকতে হবে?? তাড়াতাড়ি সবাই এসো তো আমার খুব খিদে পেয়েছে।।
তিথিকে এমন স্বাভাবিক দেখে সবাই একটু নিশ্চিন্ত হল। সবাই দের সাথে বেশ স্বাভাবিক ভাবেই কথাবাত্রা বলেই নিজের খাওয়া কমপ্লিট করল তিথি।
রাত দুটো নিজের পাশে তিথি কে না পেয়ে নিলয় কিছুটা চিন্তিত হয়ে পড়লো। হঠাৎ তার নজরে গেল ব্যালকনির দরজা খোলা। বিছানা ছেড়ে উঠে সেখানে গিয়ে দেখল তিথি এক ধ্যানে দূরের আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।
নিজের কাঁধে কারোর গরম নিঃশ্বাস এবং কোমরে কারোর হাতের স্পর্শ পেয়ে তিথির বুঝতে অসুবিধা হল না যে মানুষটি কে!!
-:পাখি!!
নিলয়ের মায়াভরা আওয়াজে তিথি কেপে উঠলো। নিলয় আবার বলতে শুরু করল-;
-: তুমি যত অন্যদের কাছ থেকে নিজের কষ্ট লুকিয়ে থাকো না কেন আমার কাছ থেকে তা পারবে না??
ব্যাস নিলয়ের একটা কথাই যেন তিথির মনের বরফ গলানোর জন্য যথেষ্ট।তিথি হুট করে সামনে ফিরে নিলয়কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলো। তিথিকে এমন কান্না করতে দেখে নিলয় তিথি কে নিজের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।তারপর তিথির মাথায় হাত বুলাতে লাগলো।বেশ কিছুক্ষণ পরে তিথি কান্না থামিয়ে নিলয়ের বুকে চুপটি করে মাথা রেখে দাঁড়িয়ে থাকালো।নিলয় তিথিকে চুপ করে থাকতে দেখে বলে উঠলো-;
-:বাবার জন্যে কষ্ট হচ্ছে??
তিথি মাথা নাড়িয়ে না বলল। নিলয় এতে কিছুটা অবাক হলো,, তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে জিজ্ঞাসা করল-;
-:তাহলে??
তিথি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে উঠলো-;
-:তোমাকে এটা বলবো না যে বাবার মৃত্যুসংবাদ শুনে আমি খুব কষ্ট পেয়েছি আবার এটাও বলব না যে খুব খুশিও হয়েছি।যতই হোক তিনি আমার বাবা ছিলেন,,,যখন মামার কাছ থেকে বাবার মৃত্যুসংবাদটা শুনি তখন প্রথমে খুব কষ্ট হয়েছিল যা বলার বাহিরে। কিন্তু যখন শুনি যে তিনিই আমার মার উনি তখন সেই কষ্টটা তীব্রতা অনেক কমে গেল।জানো ছোটবেলায় মামার মুখে শুনেছিলাম আমার মার খুনের পিছনে কোন না কোনভাবে আমার বাবা জরিত,,, মামার কথায় পুরোপুরি আমার বিশ্বাস ছিল।কারন পরিবার বলতে বলো আর বাবা-মা বলতেই বলো আমি আমার মামা মামিকেই বুঝেছি।তারাই আমার সব তারাই আমার পৃথিবী। আর নিজের আপন ভাইয়া ও মনে হয় আমাকে এতোটা ভালোবাসা দিত না যতটা আমাকে আমার আবির ভাইয়া দিয়েছে।
তাই যে মানুষটা কোনদিনই আমার সাথে যোগাযোগ রাখেনি তার চেয়ে আমি আমার মামীকে বিশ্বাস করব এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কোথাও যেন মনের এক কোনে বাবার প্রতি সামান্য বিশ্বাস জমানো ছিল।কিন্তু আজকের পর থেকে সেই বিশ্বাস ও আমার সারা জীবনের মতো মাটিতে মিশে গেল। আমি কাঁদছি বাবার জন্য না আমি কাঁদছি আমার মার জন্যে। কত কষ্ট পেতে হয়েছে আমার মার,,, নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসে ওই বাজে লোকটাকে।কিন্তু উনি কি করলেন প্রপার্টির জন্য আমার মাকে মেরে ফেললেন।ওনাকে আমার বাবা ভাবতেও ঘৃণা করছে।
কথাগুলো বলতে বলতে তিথি আবার কেঁদে উঠলো। তারপর নিজের কান্না তো আমি নিলয়ের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো-;
-: তুমি আমায় কথা তুমি শুধু এবার থেকে তোমার বিজনেস ছাড়া কোন দিকে তাকাবো না। তুমি কোন কাল দুনিয়ার সাথে নিজের সম্পর্কে জড়াবে না।অসহায় মানুষের সাহায্য করতে চাইলে একজন বিজনেসম্যান হিসেবে সাহায্য করো মাফিয়া হিসাবে নয়। আমি চাইনা তোমাকে হারাতে নিলয়।
এই বলে আবার ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো। নিলয় তিথি কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো-;
-:শশশশশ্ চুপ আর নয়।আর কাঁদবে না তুমি।আজ আমি তোমাকে স্পর্শ করে কথা দিচ্ছি যে আমি কালো দুনিয়া থেকে নিজেকে সম্পূর্ণ সরিয়ে নেব। এই আমি তোমাকে কথা দিলাম।এবার চলো অনেক রাত হয়ে গিয়েছে।
এই বলে নিলয় তিথি কে নিয়ে রুমে চলে গেল। পরের দিন সকাল সকাল তিথিকে সাথে নিয়ে নিলয় নিজের বাসায় চলে এলো।
.
.
?
.
.
দেখতে দেখতে চার মাস কেটে গেল।এই চার মাসে তিথি এবং নিলয়ের মধ্যেকার ভালোবাসা আরও গাঢ় হয়েছে। তিথিকে দেওয়া কথা অনুযায়ী নিলয় কালো দুনিয়া থেকে নিজের নাম চিরতরে মুছে ফেলেছে। আর একজন বিজনেসম্যান এর পরিচয় সে গরিব মানুষদের সাহায্য করে।দিনগুলো বেশ ভালভাবেই কেটে যাচ্ছিল।কিন্তু আবির এবং নিশি সম্পর্কের তিক্ততা যেন ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছিল। অনেক ভেবেচিন্তে আবির ডিসাইড করল যে সে কি করবে।
এদিকে তিথির শরীর বেশ কিছুদিন ধরে খারাপ যাচ্ছে।ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করতে পারছে না,,, জোর করে কিছু খেলেই বমি করে দিচ্ছে।নিলয় খুব চিন্তিত তিথি কে নিয়ে।আবিরকে ফোন করলো তাদের বাসায় আসার জন্য আর সাথে নিশিকে ও আনতে বলল।
দুপুরে আবির নিশিকে নিয়ে নিলয়দের বাসায় চলে এলো।দুপুরের খাওয়া দাওয়া পর্ব মিটিয়ে তারা সবাই মিলে কিছুক্ষণ গল্প করলো। বিকালে আবির তিথিকে চেকআপ করলো। নিলয় অধীর আগ্রহে আবিরের দিকে তাকিয়ে আছে। আমি কিছুক্ষণ চুপ থেকে নিলয়ের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো-;
-:এই যে তাড়াতাড়ি এক বালতি মিষ্টি নিয়ে আসুন।
নিলয় অবাক হয়ে আবিরের দিকে তাকিয়ে। নিলয়ের এমন তাকানো দেখে আবির ফিক করে হেসে দিয়ে বলে উঠলো-;
-:আরে মশাই আমি মামা হতে যাচ্ছি!!আর তুমি আমাকে মিষ্টি খাওয়াবে না।
আবিরের কথা শুনে নিশি চিল্লিয়ে তিথিকে জড়িয়ে ধরল।নিলয় কি বলবে বুঝতেই পারছে না তার এখনও বিশ্বাস হতেই কষ্ট হচ্ছে।
আবিরের বাবা-মা ও ভিষন খুশি বাসায় নতুন মেহেমান আসার কথা শুনে।
রাতে নিলয় তিথি কে জরিয়ে ধরে বলে উঠলো-;
-: থ্যাঙ্ক ইউ থ্যাঙ্ক ইউ থ্যাংক ইউ সো মাচ তিথু পাখি আমাকে এত বড়ো একটা উপহার দেওয়ার জন্য।
তিথিও নিলয়কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে উঠলো-;
-:তোমাকে ও অনেক অনেক ধন্যবাদ আমাকে মা হওয়ার অনুভুতি উপলব্দি করানোর জন্য।
-:হুম।আই লাভ ইউ পাখি।
-:আই লাভ ইউ টু নিলয়।
রাতে নিশি শুয়ে আছে চুপ করে। কিছুক্ষণ পর আবির নিশির পাশে এসে শুলো।আবিরের উপস্থিতি টের পেয়ে নিশি চুপ করে নিজের চোখ বন্ধ করে নিল।কারণ সে জানে প্রতিদিন তার ঘুমানোর পর আবির তাকে তার বুকের মাঝে নিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ঘুমায় আর তার ঘুম ভাঙ্গার আগে আবার আগের মতোন শুইয়ে দেয়।
কিন্তু আজ প্রায় এক ঘন্টা হয়ে গেল ও আবিরের কোনো পাত্তা না পেয়ে ঘুরে তাকাতেই দেখলো যে আবির ঘুমিয়ে পড়েছে। এটা দেখে নিশি খুব কষ্ট পেল অজান্তেই চোখ দিয়ে এক ফোটা জল গড়িয়ে পরলো। মনে মনে ঠিক করল আর নয় অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছে সে আবিরকে এবার তাকে কালকেই তার মনের কথা খুলে বলবে।
পরের দিন ঘুম থেকে উঠে নিশি আবিরকে তার পাশে না পেয়ে কিছুটা অবাক হয়ে যায়। কারণ এত তাড়াতাড়ি আবির হসপিটালে যাই না। পরে ভাবলো হয়তো কোনো ইম্পরট্যান্ট কাজ থাকায় তাকে যেতে হয়েছে। তাই সে ফ্রেশ হয়ে নিচে চলে গেল।
সারাদিন পার হয়ে সন্ধ্যে হয়ে গেলো তবুও আবিরের কোন পাত্তাই নেই।এবার নিশির খুব চিন্তা হতে লাগলো আবিরকে নিয়ে। রাত ঠিক এগারোটায় আবির ঘরে এলো। আবির কে দেখে নিশি তার কাছে গিয়ে প্রচন্ড রেগে বলতে লাগল-;
-: কোথায় ছিলেন এতক্ষণ?? কতবার ফোন করেছি ফোন ধরছিলেন না কেন??
-: বিজি ছিলাম।
-: কিসের ব্যস্ত ছিলেন আপনি এতো??? যে আমার ফোন ধরার প্রয়োজন বোধ করেননি??
-: একটা কাজে আটকে পড়েছিলাম।
-: কি কাজে??
আবির তার ব্যাট থেকে একটা কাগজ বের করে নিশিকে দিয়ে বলল-;
-:এ নাও ধরো।
-:কি আছে এতে??(অবাক হয়ে প্রশ্ন করল)
-: খুলে দেখো।
আবিরের কথা শুনে নিশি পেপার টা খুলতেই অবাক হয়ে গেল অজান্তেই তার চোখ দিয়ে পানি পড়তে লাগলো টপটপ করে।এটা সে ঠিক দেখছে?? নাকি.. নিশির ভাবনায় ছেদ ফেলে আবির বলে উঠলো-;
-: ডিভোর্স পেপারে আমি সাইন করে দিয়েছি এবার তুমি সাইন করলে হয়ে যাবে।
-: মানে কি??(কম্পিত গলায় নিশি বলে উঠলো)
-: মানে খুবই সিম্পল। জোর করে কখনোই কোনো সম্পর্ক তৈরি করা যায় না। সেটা আমি আগে না বুঝলেও এখন বুঝতে পেরেছি। তোমার মতের বিরুদ্ধে গিয়ে তোমাকে জোর করে বিয়ে করেছি,,, এটা আমার করা উচিত ছিল না।তোমাকে আর কষ্ট দিতে চাইনা তাই মিথ্যা সম্পর্ক থেকে তোমাকে চিরজীবনের মতো মুক্তি দিতে চাই।
আবিরের কথা শেষ হতে না হতে নিশি ঠাস করে আবিরের গালে চড় মারলো। আবির অবাক হয়ে নিশির দিকে তাকাতেই অটোমেটিকলি সে ভয় পেয়ে গেল। নিশি রাগের থর থর করে কাঁপছে। আবির কিছু বলতে যাবে তার আগেই নিশি আবিরের কলার ধরে বলে উঠলো-;
-: কি ভেবেছেন টা কি আমাকে?? আপনার হাতের পুতুল!! এসব কথা আমাকে বিয়ে করার আগে আপনার মনে হয়নি?? বিয়ে করার পর আপনার এসব কথা মাথায় আসছে?? ও বুঝতে পেরেছি অন্য কোন মেয়েকে আপনার মনে ধরেছে তাই আমাকে আর ভালো লাগছে না কি তাইনা??(দাঁতে দাঁত চেপে)
-: এসব কি ধরনের কথা কি বলছো তুমি কিছুই বুঝতে পারছিনা আমি??
-: এখন তো বুঝতে পারবেন না আপনি?? সব সময় আমাকে আপনি কষ্ট দিয়ে এসেছেন। আমার কষ্টের কোন মূল্য আপনার কাছে নেই। ঠিক আছে থাকবো না আমি চলে যাব আপনাকে ছেড়ে।
এই বলে নিশি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে শুরু করলো। নিশি কে এমন হঠাৎ কাঁদতে দেখে আবির ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল। নিশির কাছে এগিয়ে আসতে নিশি বলে উঠলো-;
-:এই এই দূরে থাকুন। একদম আসবেন না আমার ধারে কাছে। আমি আজ এক্ষুনি আপনার বাড়ি ছেড়ে চলে যাব।
এই বলে নিশি যেই যেতে নেব অমনি হবে নিশিকে টান মেরে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নিল।
-: ছাড়ুন আমাকে একদম স্পর্শ করবেন না আমায়। আপনি একটা খুব খারাপ মানুষ।
-: বললেই হলো নাকি আমি আমার বউকে ছুঁয়েছি এতে কার কী??
-: আমি আপনার বৌ না?? আমি যদি আপনার বউ হতাম তাহলে আপনি কখনোই আমাকে ডিভোর্স পেপার টা দিতেন না।
-: বললেই হলো তোমাকে আমি ডিভোর্স দিব।।
নিশি অবাক হয়ে আবিরের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো-;
-: আমি নিজের চোখে দেখেছি ওটা ডিভোর্স পেপার।
-: হ্যাঁ ওটা ডিভোর্স পেপার ই বাট ওইটা নকল। তোমার রিঅ্যাকশন দেখার জন্য নকল পেপার টা আমি এনেছিলাম।
-:কি!! এত বড় প্রতারণা আমার সাথে!! আপনি খুব খারাপ খুব পচা একটা লোক।
এই বলে নিশি আবিরকে মারতে লাগলো। আবির নিশির হাত ধরে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো,,,নিশি ছটফট করত লাগলো তা দেখে আবির বলে উঠলো-;
-: খুব ভালোবাসি তোমাকে আমি। প্লিজ ক্ষমা করে দাও।একটা শেষ সুযোগ দিয়ে দেখো। তোমাকে খুব ভালোবাসবো,, নিজের জীবনের থেকে বেশি।মৃত্যুর…
আবিরের মুখে হাত দিয়ে থামিয়ে,,নিশি ছল ছল চোখে বলে উঠল-;
-: এই ধরনের কথা প্লিজ মুখে আনবেন না।খুব ভালোবাসি আমি আপনাকে। কিন্তু সবকিছু এইভাবে হয়ে যাওয়ায় মানতে পারছিলাম না,, তাই আপনাকে অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছি।ক্ষমা করে দিন।
নিশির কথা শুনে আবির নিশিকে জড়িয়ে ধরল শক্ত করে-;
-: আই লাভ ইউ সো মাচ নিশি।আমার এই জীবনে তোমাকে আমার বড্ড প্রয়োজন।
-: আই লাভ ইউ টু।
-:নিশি!!
-: হুম
-:মে আই…
আবিরের কথা বুঝতে পেরে নিশি লজ্জায় লাল হয়ে আবিরকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। নিশির অনুমতি পেয়ে আবির মুচকি হেসে নিশিকে কোলে তুলে নিল তারপর…..
তারপর কিছুই হয়নি তবে রাত বাড়ার সাথে সাথে আরও একটা ভালোবাসা পূর্ণতা পেল।
.
.
?
.
.
চার বছর পর…..
আজ নিলয়দের বাসায় বিরাট আয়োজন কারণ আজ নিলয় আর তিথির একমাত্র ছেলে আকাশের তিন বছরের জন্মদিন।তাই সকাল থেকে সবাই ব্যস্ত আয়োজনে।কিছুক্ষণ পর আবির নিশি তাদের দুই বছরের মেয়ে নিধি কে নিয়ে চলে এলো।নিধি কে দেখে আকাশ দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরলো।
-:উফ্ ভাইয়া ছালো আমাকে,,আগছে আমাল।
আকাশ নিধি কে ছেড়ে দিয়ে বলে উঠলো-;
-:চল আমাল বন্ধুদেল সাথে তোল পলিচয় কলিয়ে দি।
-:চল।
আবিরের বাবা-মা ও অনেক আগে চলে এসেছে।একটু পর কেক কাটার অনুষ্ঠান হয়। অনুষ্ঠান শেষে আকাশ জেদ ধরেছে যে সে নানুবাড়ি যাবে। তাই আবির তাকে নিয়ে গিয়েছে তাদের সাথে।নিলয়ের কিছু কাজ পড়ে যাওয়ায় আজ যেতে পারিনি তাই তারা পরের দিন যাবে।