Friday, July 11, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1844



তোমাকে আমার প্রয়োজন পর্ব-৩৪

0

#তোমাকে আমার প্রয়োজন ??
#মেঘ পরী??

??পর্ব-৩৪??
.
?
.

আজ তিথিরা বোটানিক গার্ডেন্সে ঘুরতে যাবে।এই পার্কটি সর্বপ্রথম UNESCO World Heritage মনোনয়নপত্র পার্ক। সিঙ্গাপুরের পুরোটা কংক্রিট জঙ্গল মনে হলেও এই পার্কটি এই ধারণাটা কে সম্পূর্ণ বদলে দেয়। এটি যেন ইট-পাথরের জঙ্গলের মাঝে এক টুকরো সত্তিকারের জঙ্গল।এই পার্কে সিঙ্গাপুরের বিভিন্ন প্রজাতির গাছ এবং পশু পাখি বাস করে। এখানে প্রায় সাত হাজার প্রজাতির গাছ এবং পশু পাখি রয়েছে। এই বোটানিক গার্ডেন বিভিন্ন অংশে বিভিন্ন প্রজাতি ভেদে বাগান রয়েছে।যেমন অর্কিড গার্ডেন,,রেইন ফরেস্ট,,,জিনজার গার্ডেন,, চিল্ড্রেন গার্ডেন্স ইত্যাদি।

এই জায়গাটা তিথির খুব পছন্দ হয়েছে। এখানে তারা অনেক গুলো ছবি তুললো,,,গ্ৰুপ ফোটো আর কাপেল ফটোও তুললো।

এরপর ওরা গেল এসপ্লান্ডে পার্কে।এই পার্কের খোলামেলা পরিবেশে যেকোন পর্যটককে আকর্ষণ করবে।এখানে আছে তান কিম সিঙ্গ ঝর্না অত্যন্ত সুন্দর।এখানে বিনোদন কেন্দ্রের শেষে তৈরি করা হয়েছে লিম বো সিঙ্গ মেমোরিয়াল।এখানে আরো একটি সুন্দর জিনিস দেখার আছে চমৎকার একটি কম্প্লেক্স যা নকশা করেছে ব্রিটিশ ড্রাফটসম্যান মাইকেল হুইল ফোর্ট। এই কমপ্লেক্সে খোলা আকাশের নিচে রয়েছে থিয়েটার,,প্রদশর্নী জায়গা,,পাঠাগার,, শপিং সেন্টার সব মিলিয়ে এটি যেন একটি মনোরম প্যাকেজ।

এরপর ঘুরতে গেল তারা গার্ডেনস বাই দা বে।এটি তিনটি অংশে বিভক্ত বে সেন্ট্রাল,,বে সাউথ এবং বে ইস্ট।এটি একটি বাগান যা ওয়াটারফ্রন্ট রোডের সাহায্যে বাকি দুটি অংশকে যুক্ত করেছে।এর মধ্যে বে সাউথ সবচেয়ে বড় যেখানে রয়েছে বিভিন্ন গ্রীষ্মমণ্ডলীয় গাছ এবং গাছ সদৃশ কিছু কাঠামো,,যেগুলো লম্বায় প্রায় 50 মিটাররাতের বেলায় এসব কাঠামো থেকে বিভিন্ন রং এর আলো বেরিয়ে এসে আশপাশের পরিবেশ ঝলমল করে তোলে,, দেখে মনে হয় বিরাট আলোকসজ্জা।

এতগুলো জায়গা ঘুরতে ঘুরতে তিথি দের অনেক দেরি হয়ে গেল,,তাই তারা হোটেলে ব্যাক করলো।তিথি প্রচুর টায়ার্ড তাই না খেয়ে শুয়ে পড়লো।

এইভাবে সিঙ্গাপুরে তাদের দিনগুলো বেশ ভালোই কাটে গেল।একে পাঁচটা দিন অতিবাহিত হয়ে গেল।এই পাঁচ দিনে তারা তিন শতাধিক প্রজাতি নিয়ে 69 একর জমি ওপর গঠিত সিঙ্গাপুর চিড়িয়াখানা(16% বিপন্ন প্রায় প্রজাতি যেগুলি রেড ডাটা বুক তালিকায় রয়েছে সেই সকল প্রজাতির প্রাণী এই চিড়িয়াখানায় দেখা যায়। যেমন-:: শ্বেত ভাল্লুক,,শ্বেত বাঘ,,কোয়ালা,, রেড পান্ডা ইত্যাদি ),,,, রিভার সাফারি,,, নাইট সফরি (এটির বৈশিষ্ট্য হলো এই সফরি শুধুমাত্র রাতের বেলায় জীবজন্তু দেখা যায় যা ট্রামে করে চড়ে পর্যটকদের দেখতে হয়),,, দক্ষিণ এশিয়ায় অন্যতম সেরা পান্ডা সো,, সিঙ্গাপুর ফ্লাইয়ার(এটি অবস্থিত মেরিনা বে তে)।

এই সিঙ্গাপুর ফ্লাইয়ার সবচেয়ে আকর্ষণীয় জিনিস হচ্ছে ফ্লাই হুইল বা নাগরদোলা।এটি 165 মিটার উচ্চতা। এটির মাধ্যমে পুরো সিঙ্গাপুর শহর কে দেখা যায়।এখানে উঠার সময় তিথি এবং নিশি প্রায় কান্না করে ফেলেছিল,,কারণ এত উঁচুতে উঠতে তাদের খুব ভয় করছিল। কিন্তু পরে ফ্লাই হুইল চলতে শুরু করার পরতাদের ভয়টা আস্তে আস্তে কেটে যায় এবং তারা সিঙ্গাপুর শহরের সৌন্দর্য থাকে খুব সুন্দরভাবে উপভোগ করতে লাগলো।ফ্লাইয়ারটি যেহেতু তিনটি স্তর নিয়ে গঠিত রেস্টুরেন্ট,, দোকান এবং অন্যান্য সেবা। তাই তারা এখানকার রেস্টুরেন্ট থেকে ডিনার সেরে নিয়েছিল।

এছাড়াও তারা মারলায়ন পার্ক ও পর্যবেক্ষন করেছে।মারলায়ন কে সিঙ্গাপুরের প্রতীক ধরা হয়।এটি পৃথিবীর সকল পর্যটকদের স্বাগতম জানাই। এখানকার সবচেয়ে অন্যতম বৈশিষ্ট্য মেরিনা বে মূর্তি। মারলিন বা সিংহ মৎস্য হচ্ছে সিঙ্গাপুরীদের গর্বের প্রতীক,,, বীরত্বের প্রতীক। কথিত আছে বহু বছর পূর্বে যখন সিঙ্গাপুর তেমাসেক বা সমুদ্র নগরী নামে পরিচিত ছিল তখন একবার প্রচন্ড এক সমুদ্রিক ঝড় ওঠে। এমত অবস্থায় যখন সিঙ্গাপুর বাঁশি নিজেদেরকে ভগবানের কাছে সপে দেয় ঠিক সেই মুহূর্তে সমুদ্রের বিশাল জলরাশি ভেদ করে সিংহ মৎস্য নামক এক জীব উঠে আসে এবং তাদের রক্ষা করে। সেখান থেকে তারা মারলায়ন নামক সিংহ মৎস্য সিঙ্গাপুরিদের বীরত্বের প্রতীক হয়ে ওঠে। রাতে এখানকার রেজার লাইট শো পৃথিবী বিখ্যাত।

এইসব কিছু দেখতে দেখতে পাঁচ দিন অতিক্রান্ত হয়ে যায়।হাতে মাত্র দুদিন তার মধ্যে একদিন মেরিনা বে স্যান্ডস দেখতে যাবে আর লাস্ট দিনে শপিং করবে বাড়ির জন্য।

এদিকে ভালোবাসা,,খুনশুটি এবং হাসিখুশির মধ্য দিয়ে তিথি আর নিলয়ের দিনগুলো খুব সুন্দরভাবেই অতিক্রান্ত হচ্ছে।এর মাঝে একবার আবির নিশিকে আপন করে নিতে চেয়েছিলো কিন্তু নিশির নিষেধাজ্ঞা এবং কিছু কড়া কথায় সেদিন আবিরকে খুব কষ্ট দিয়েছিল।তাই আবির সেদিনের পর থেকে নিশিকে যথাসম্ভব এড়িয়ে চলছে।প্রয়োজন ব্যাতীত কোনো কথাই তার সাথে বলছেনা,,,যা নিশি কে বড্ড পোড়াচ্ছে।

আজ ষষ্ঠতম দিন আজ তারা মেরিনা বে স্যান্ডস ঘুরতে যাবে।এটি সিঙ্গাপুরের সবচেয়ে আকর্ষণীয় এবং দর্শনীয় স্থান। এটি সিঙ্গাপুরের একটি অত্যাধুনিক রিসোর্ট কমপ্লেক্স।এই মেরিনা বে স্যান্ডস বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল কমপ্লেক্স এর মধ্যে একটি। এখানে রয়েছে একটি হোটেল বিভিন্ন ব্র্যান্ডের শোরুম,, আর্ট সায়েন্স মিউজিয়াম,, রেস্টুরেন্ট,, কনভেনশন সেন্টার,, থিয়েটার আর রয়েছে একটি শপিং মল যার মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে নদী আকারের একটা ছোট জলাশয়।এইগুলো ঘোরার পর তারা মেরিনা বে স্যান্ডস স্কাই পার্কে গেল।এটি একটি খুব উঁচু স্থান যার উপর থেকে পুরো সিঙ্গাপুর শহর দেখা যায়। সমস্ত সিঙ্গাপুর দেখার এই ডেক এবং ইনফিনিটি পুল অবস্থিত একটি জাহাজের মধ্যে। মেরিনা বে সেন্ডস স্কাই পার্ক দেখতে পুরো জাহাজের মতন। পুরো ডেকে জলে ভর্তি,,, এখানে পর্যটকরা সুইমিং করতে পারে।এবং এই জাহাজ আকৃতি সুইমিং পুলটি রিসোর্ট সমেত প্রচন্ড উঁচু স্থানে অবস্থিত। নিলয় এবং আবির এই পুলে সুইমিং করলো কিছুক্ষন যেহেতু সুইমিং কস্টিউম ছাড়া এই পুলে এলাও না তাই নিশি এবং তিথি কেউই এই পুলে নামলো না।

সেখান থেকে তারা রেস্টুরেন্টে গেল দুপুরে লাঞ্চ করতে তিথি নিজের জন্য এক প্লেট ওয়াইট রাইস,,এক প্লেট চিলি ক্র্যাব আর নিলয় লাকসা আর হ্যাকিং প্রণ মি অর্ডার করলো।নিশি এক প্লেট ফিশ হেড কারি উইথ প্লেন রাইস আর আবির তার জন্য ওয়েস্টার ওমলেট আর এক প্লেট কায়া টোস্ট অর্ডার করলো। তারপর তারা লাঞ্চ করে হোটেলে ফিরে গেল।এর মাঝে আবির একবারও নিশির সাথে কথা বলিনি।নিশি দু-একবার কথা বলার চেষ্টা করেছে কিন্তু আবির এড়িয়ে গেছে।

পরেরদিন তাদের সিঙ্গাপুরের লাস্ট দিন। তাই তারা একসাথে শপিং করতে বের হলো। ভিভো সিটি নামক শপিংমলে তারা শপিং করবে। সেখান থেকে তিথি তার এবং নিলয়ের পরিবারের জন্য কিছু শপিং করল আর নিশিও নিজের বাবা,মা আর শশুড়বাড়ির জন্য কিছু শপিং করে নিল।

পরেরদিন সকালে তাদের ফ্লাইট তাই তারা দেরি না করে তাড়াতাড়ি খেয়ে শুয়ে পরল।রাতে যে যার প্যাকিং করে নিল। পরের দিন সকালবেলা নটার সময় তারা বেরিয়ে গেল হোটেল থেকে আর এক ঘন্টার মধ্যে তারা তাদের এই স্বপ্নের শহর কে বিদায় জানিয়ে উড়ান দিল নিজেদের দেশের উদ্দেশ্যে।

.
.
.
.
[বাকিটা নেক্সট পর্বে]

তোমাকে আমার প্রয়োজন পর্ব-৩৩

0

#তোমাকে আমার প্রয়োজন??
#মেঘ পরী??

??পর্ব-৩৩??
.
?
.

যথারীতি বিকালবেলা তারা প্যাকিংয়ের কাজে ব্যাস্ত হয়ে পরলো।তিথিরা আজ তাদের বাসায় থেকে গেছে,,,কারন পরেরদিন সকালেই তাদের ফ্লাইট।সকাল ৭টার সময় ওরা বাড়ির সবাই দের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে পৌঁছে গেল,, সাড়ে আটটায় তাদের ফ্লাইট।তিথি এই প্রথম প্লেনে উঠবে তাই তার একটু নার্ভাস ফিল হচ্ছে।

কিছুক্ষণ পর তারা প্লেনে উঠে পড়লো। তিথি আর নিলয়ের সিট মাঝখান বরাবর।প্লেন যখন চলতে শুরু করে তিথি ভয়ে নিলয়ের হাত খিমচে ধরে,,,তা দেখে নিলয় মুচকি হেসে তিথিকে শক্ত করে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরে।

আবির আর নিশির শিট পড়েছে সামনের দিকে,,,নিলয় ইচ্ছে করে এমন ভাবে টিকিট বুকিং করেছে যাতে আগের এবং নিশি কিছুটা কোয়ালিটি টাইম স্পেন করতে পারে।নিশির প্রচুর ভয় লাগছে কারন সে ও প্রথম প্লেনে উঠছে কিন্তু তা মুখে প্রকাশ করছে না।আবির ব্যাপারটা বুঝতে পেরে নিশির হাত শক্ত করে চেপে ধরল,, নিশি তার হাত সরাতে চাইলেও আবির আর‌ও শক্ত করে তার হাত চেপে ধরে।নিশি আর কোনো আপত্তি করল না,,এমনিতেও সে ও প্রচুর ভয় পাচ্ছে।

দীর্ঘ 6 ঘণ্টা পর তাদের প্লেন ল্যান্ড করল সিঙ্গাপুরের স্যালেটার ইয়ারপোর্টে।সেখান থেকে হোটেল যাওয়ার জন্য নিলয় আগে থেকেই দুটো ক্যাব বুক করে রেখেছিল।একটাতে আবির আর নিশি আর অন্য টাতে নিলয় এবং তিথি উঠে পড়লো।কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা তাদের গন্তব্য “”Mandarin Orchard Singapore”” হোটেলে চলে এলো।হোটেল টা খুব সুন্দর এবং অনেক বড়,, পুরো হোটেলটা কাচ আর ফাইবার দিয়ে তৈরি।তারপর নিলয় আর আবির রিসেপশন থেকে নিজেদের রুমের চাবি কালেক্ট করে যে যার রুমে চলে গেল।

তিথি প্রচণ্ড টায়ার্ড ফিল করছিল,, তাই রুমেগিয়ে ফ্রেশ হয়ে বেডে শুয়ে পড়লো,,,নিলয় ও ফ্রেশ হয়ে তিথির পাশে গিয়ে শুয়ে পড়ল।আবির আর নিশি ও একটু রেস্ট নিয়ে নিল।

বিকাল ঘুম থেকে উঠে নিলয় তিথি কে নিয়ে রিসোর্টের ফুড সেকশনে চলে গেলো। সেখানে আবির আর নিশি তাদের জন্য অপেক্ষা করছিল। খাওয়া-দাওয়া র পর্ব মিটিয়ে আবার যে যার রুমে চলে গেল,,,আজ যেহেতু প্রথম দিন তাই আজ তারা বের হবে না।ওরা এখানে থাকবে সাতদিন।

পরেরদিন সকালে ব্রেকফাস্ট সেরে তারা সেন্টোসা আইল্যান্ডে।সমুদ্রের মাঝে ছোট একটা দ্বীপে গড়ে উঠেছে এই পর্যটন কেন্দ্রটি।এখানে ছোট ছোট পার্ক,, ক্লাব হাউস,,বিভিন্ন ধরনের আকর্ষণীয় রাইড ইত্যাদি অনেক কিছুই রয়েছে এখানে।এখানকার মূল আকর্ষণ হলো “”ইউনিভার্সাল স্টুডিও””। এছাড়াও এই দ্বীপে আছে “”অ্যামিউজমেন্ট পার্ক””,,””ওয়াটার পার্ক””,, আর বিনোদনের জন্য রয়েছে অসংখ্য গ্যালারি।আর সবচেয়ে জনপ্রিয় “”ইনডোর স্কাইড্রাইভ””ও এখানে রয়েছে।

তিথি আজ হোয়াইট কালারের শার্টের সাথে ব্লু জিন্স পরেছে,,,আর নীলয় পড়েছে ব্ল্যাক কালারের প্যান্ট আর স্কাই ব্লু কালারের শার্ট।নিশি লাল কালারের টপের কালচে ইয়েলো কালারের প্লাজু পড়েছে আর আবির অ্যাশ কালারের জিন্সের সাথে লেমন কালারের একটা টি-শার্ট পড়েছে।

সেন্ট্রাসা দ্বীপে এসে তিথি অবাক হয়ে চারপাশে তাকাচ্ছে,,,এ যেন এক কল্পনার রাজ্য ভ্রমণ করতে এসেছে। চারিদিকে খুব সুন্দর করে সাজানো,,আর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। এখানে বিভিন্ন সেকশন আছে যেমন “”জুরাসিক পার্ক””,, “”মাদাগাস্কার”” ইত্যাদি।একে একে এই স্থানগুলো দেখার পর,,তারা এখানকার আরও একটা বিখ্যাত জায়গায় গেল।

পানির নিচে এক অপার সৌন্দর্য গড়ে উঠেছে “”সি একুরিয়াম””এ।এখানে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ,,,সামুদ্রিক প্রাণী যেমন হাঙর,,ডলফিন,, সামুদ্রিক উদ্ভিদ ইত্যাদি। বিশাল বড় রুমে চারিদিক কাজ দ্বারা আবৃত এবং তার মাঝখান থেকে সরু একটা রাস্তা চলে যাচ্ছে আর কাচগুলোর ওপারে রয়েছে সেই সমস্ত “”সি অ্যানিম্যাল””,,””ফিস”।

তিথি অবাক হয়ে চারপাশে তাকাচ্ছে,,তার মনে হচ্ছে সে যেন সাগরতলে কোন এক রহস্যঘেরা জঙ্গলের মধ্যে চলে এসেছে।নিশি ও অবাক হয়ে‌ চারপাশে দেখছিল,, হঠাৎ তার নজর গেল সামনের দিকে একটা বিশাল বড় হাঙর দ্রুত গতিতে তার দিকে ধেয়ে আসছে। এইভাবে তার দিকে হাঙরটাকে আসতে দেখে নিশি বিরাট একটা চিৎকার দিয়ে পাশে থাকা আবিরকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল,,, আবিরের টিশার্ট খামচে ধরল। জোরে খামচে ধরায় আবিরের গলায় নিশির নখ লেগে কিছুটা ছিলে গেল। নিশির এমন আচরণে আবির সামনের দিকে তাকালো,,তারপর কারন অনুমান করতেই হু হা করে হেসে উঠলো।আবিরের হাসি দেখে নিশি তার দিকে তাকিতেই,,, আবির তাকে সামনের দিকে তাকাতে ইশারা করলো।

নিশি সামনের দিকে তাকাতে নিজেই নিজের কাজের জন্য লজ্জিত হয়ে পড়লো।হাঙরটা কাচের ওপর পাশে ডাগর ডাগর চোখে নিশির দিকে তাকিয়ে আছে,,হয়তো সে ও তার প্রতি নিশির এমন আচরণে হতভম্ব।নিশি লক্ষ করলো সে এখনও আবিরকে জড়িয়ে আছে,,তাই সঙ্গে সঙ্গে আবিরের কাছে থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিল। আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো এখনও অনেকেই তার দিকে তাকিয়ে আছে। আবার আবিরের দিকে তাকাতেই দেখলো আবির‌ও মুখটিপে টিপে হাসছে,,এটা দেখে নিশি রেগে নাক ফুলিয়ে সামনের দিকে হাঁটা দেয়।

তিথি নিলয়ের কাছে বায়না ধরেছে””ইনডোর স্কাই ড্রাইভিং”’এর।তাই নিলয় তাকে সেখানে নিয়ে গিয়েছে।তিথির সাথে নিলয়‌ ও ”’ইনডোর স্কাইডাইভিং”” করবে।নিলয়প্রথমে কাউন্টারে গিয়ে টিকিট কেটে নিল।তারপর ড্রেস চেঞ্জ করতে নিলয় তিথি কে ওম্যান কাউন্টারের সামনে এগিয়ে দিয়ে নিজে ও জেনারেল কাউন্টারে চলে গেল।

তিথি একটা রেড কালারের স্কাই ড্রাইভিং সুট পরেছে,,আর মাথায় হেলমেট।নিলয় ব্লু কালারের স্কাই ড্রাইভিং সুট পড়েছে সাথে হেলমেট।চোখে মোটা কাঁচের চশমা লাগানো দুজনের।ড্রেস পরা হয়ে গেলে দুজনে একটা টিউব বক্সের মধ্যে প্রবেশ করলো,,তাদেরকে হেল্প করার জন্য একজন গার্ড ও আছে সেখানে।তিথি ঝোঁকের বশে প্রথমে হ্যা বললেও এখন এবার তার ভয় লাগছে,,,নিলয়ের হাত শক্ত করে ধরে আছে সে।নিলয় তিথির দিকে তাকিয়ে তাকে শান্ত থাকতে বলল।

কিছুক্ষণ পর নিলয় এবং তিথি কে আলাদা করে রাখা হলো,, হঠাৎ তিথির মনে হচ্ছে তার ওজন ক্রমশ কমে যাচ্ছে,,, নিজেকে প্রচুর পরিমাণে হালকা মনে হচ্ছে। হঠাৎ করে দেখলো যে তার পা দুটো আস্তে আস্তে উপরে উঠছে। হঠাৎ গাইড তাকে উবুর করে শুইয়ে দিল,,এতে তিথি প্রচন্ড পরিমানে ভয় পেয়ে নিজের চোখ শক্ত করে খিচে বন্ধ করে নিল। কিছুক্ষণ পর অনুভব করল সে যেন হাওয়াইতে ভাসছে চোখ খুলে নিচে তাকাতেই হতবাক মেঝে থেকে বেশ খানিকটা উপরে উবু হয়ে সে আকাশে উড়ছে। প্রথমে ভয় পেলেও তিথি এবার খুব আনন্দের সাথে নিজের স্কাইড্রাইভ উপভোগ করছে। পাশে তাকিয়ে দেখল নিলয় ও খুব সুন্দর ব্যালেন্স করে স্কাইড্রাইভ করছে।

স্কাই ড্রাইভের পর তারা লাঞ্চ করতে একটা রিসোর্টে চলে গেল।নিলয় তার জন্য এক প্লেট ওয়ান্টন মি,, ফ্রয়েড ক্যারোট কেক,,,আর চিলি ক্রপস অর্ডার করলো।তিথি শুধু নিজের জন্য কায়া টোস্ট এন্ড সফ্ট বয়েল এগ ওডার করলো।নিশি এক প্লেট মিনসড মিট নুডলস ওডার করলো আর আবির ওয়েস্টার ওমলেট,,নেসি লিমাক আর স্যাটে ওডার করলো। এগুলো এখানকার স্পেশাল ডিস।

লাঞ্চ শেষে তারা “”জুরং বার্ডপার্ক””ঘুরতে গেল।এটি সিঙ্গাপুর এবং পুরো বিশ্বের অন্যতম বড় পার্ক। প্রায় 5 হাজারেরও বেশি প্রজাতির পাখি বাস করে এই পার্কে। একটা বিশাল বড়।এখান থেকে ঘুরে তারা হোটেল ব্যাক করলো এতটুকু ঘুরতেই তাদের সারাদিন কেটে গেল।

হোটেলে এসে তিথি ওয়ারড্রব থেকে নিজের জামা কাপড় নিয়ে সামনে ফিরতেই দেখে নিলয় তার দিকে তাকিয়ে আছে। নিলয় এমন ভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে তিথি তার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করল-;

-:কি হয়েছে??

-: কিছু না।(ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে)

-:তাহলে আমার সামনে এমন খাম্বার মতোন দাঁড়িয়ে আছেন কেন??সড়ে দাঁড়ান আমি ওয়াশরুমে যাব ফ্রেশ হতে।

-:আমি ও তো তার জন্য‌ই দাঁড়িয়ে আছি।(দাঁত বের করে)

-: মানে (অবাক হয়ে)

-: মানে হলো খুবই পরিষ্কার।আমরা দুজনে একসাথে শাওয়ার নেব আজ।

তিথি চোখ বড় বড় করে নীলয়ের দিকে তাকিয়ে একটা জোরে চিৎকার করে বলে উঠলো-;

-: ইম্পসিবল।

-:সব‌ই পসিবেল মরি জান।

-:নো নো..

-: ও ইয়েস ইয়েস..

-: নো নিলয় এরকম করবেন না।এই বলে যেই নিলয় কে পাশ কাটিয়ে যাবে অমনি নিলয় খপ করে তাকে ধরে,,কোলে করে তুলে ওয়াশরুমে চলে গেল।

এদিকে নিশি‌ ফ্রেশ হয়ে এসে বেডে শুয়ে আছে একটু পর আবির ও এসে নিশির পাশে শুয়ে পড়লো।এতক্ষন সে মায়ের সাথে কথা বলছিল।নিশি একবার আবিরের দিকে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিল,,এই রুমে বড়ো সোফা নেয়,,এমনি সিঙ্গেল সোফা আছে তাই তাকে বাধ্য হয়ে আবিরের সাথে বেড শেয়ার করতে হচ্ছে।এইসব চিন্তা করতে করতে একসময় নিশি ঘুমিয়ে গেল। নিশির ঘুমানোর পর আবির নিশির দিকে ঝুঁকে দেখলো যে সে ঘুমিয়ে পড়েছে কি না।।এতক্ষন সে জেগেছিল নিশির ঘুমানোর অপেক্ষা করছিল।

নিশির দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিশির কপালে ভালোবাসার পরশ এঁকে নিশি কে টেনে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নিল তারপর নিশি কে জড়িয়ে ঘুমের দেশে পাড়ি দিল।

যেহেতু সবাই অনেক টায়ার্ড তাই কেউ আর রাতে ডিনার করলো না। ব্যালকনিতে থাকা দোলনার উপর বসে তিথি নিলয়ের বুকে মাথা রেখে আকাশের তারা গুলোর দিকে তাকিয়ে আছে।কিছুক্ষণ আগের ঘটনা মনে করতেই তার ফর্সা মুখ রক্তিম বর্ণ ধারণ করল।আজ প্রায় 40 মিনিট ধরে সে আর নিলয় একসাথে শাওয়ার নিয়েছে। শাওয়ারের মাঝে নিলয়ের করা দুষ্টুমি গুলোর কথা মনে পড়তে তিথি নিলয়ের বুকে নিজের মুখ লুকালো।নিলয় ও মুচকি হেসে তিথিকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আকাশের দিকে তাকালো।আজ সে সত্যিই পরিপূর্ণ তিথি নিজের জীবনসঙ্গী হিসাবে পেয়ে।

সত্যিই মন থেকে কাউকে ভালোবাসলে পৃথিবীর কোনো বাধাই পারবে না ভালোবাসার মানুষ দুটিকে আলাদা করতে। কিন্তু সত্যিই কি তাই হয়!! তাহলে পরস্পর দুটো ভালোবাসার মানুষ একসঙ্গে থেকেও কেন আজ তারা এত দূরে পরস্পরে কাছ থেকে।কেন মেনে নিতে পারছে না নিশি আবিরকে?? এই প্রশ্নটা করা খুব সহজ হলেও এর উত্তরটা দেওয়া অতটাও সহজ নয়।হয়তো কোনোদিন সবকিছু ভুলে নিশি পারবে আবিরকে ক্ষমা করে দিয়ে নতুন ভাবে পথ চলার স্বপ্ন বুনতে,,,,আবার হয়তো বা না!!!
.
.
.
.
[বাকিটা নেক্সট পর্বে]

তোমাকে আমার প্রয়োজন পর্ব-৩২

0

#তোমাকে আমার প্রয়োজন ??
#মেঘ পরী??

??পর্ব-৩২??

নিশি ঘুম থেকে উঠে নিজেকে বিছানায় আবিষ্কার করলো কিন্তু তার স্পষ্ট মনে আছে যে সে মেঝেতে ঘুমিয়ে গিয়েছিল কাল।হঠাৎ ওয়াশরুমের দরজার আওয়াজে সেদিকে তাকিয়ে দেখলো আবির সদ্য শাওয়ার নিয়ে বের হচ্ছে,,,গায়ে শুধু ব্লেক কালারের ট্রাইজার আর গলায় একটা টাওয়াল জড়ানো।আবিরকে এমন অবস্থায় দেখে নিশি পলকহীন ভাবে তাকিয়ে আছে তার দিকে,,,এখনও তার বিশ্বাস হচ্ছে না যে এই লোকটা তার স্বামী।

নিশির খুব করে ইচ্ছা করছে লোকটাকে একবার জড়িয়ে ধরতে কিন্তু দীর্ঘ দিনের জমিয়ে রাখা অভিমানের কাছে কোথায় যেন এই সামান্য ইচ্ছাটুকুও পূরণ করতে বাধা পাচ্ছে সে।না এত সহজে সে কিছুতেই লোকটাকে ক্ষমা করবে না,,তাকে কষ্ট পেতে হবে যেমনটা এতদিন নিশি পেয়ে এসেছিল।

আবিরের ডাকে কল্পনার জগত থেকে বেরিয়ে এল।

-:কখন উঠলে??

নিশি আবিরের প্রশ্নের কোনো উত্তর দেবার প্রয়োজন বোধ করলো না।চুপচাপ বিছানা ছেড়ে উঠে আলমারি থেকে হলুদ রঙের একটা শাড়ি নিয়ে বাথরুমের চলে গেল।নিশি কে এমন নীরবে চলে যেতে দেখে আবির একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়লো।তারপর একটা ব্লু কালারের টিশার্ট পড়ে নিচে চলে গেল।
.
.
এইদিকে তিথি আর নিলয় ব্রেকফাস্ট সেরে নিল।আজকে তাদের রিসেপশন,,,তিথি আর নিশির রিসেপশন একসাথেই হবে তাই তারা ব্রেকফাস্টের পর তিথিদের বাড়িতে যাবে। রিসেপশন কমিউনিটি সেন্টারে আয়োজিত হবে। আবির অবশ্য তার আর নিশির রিসেপশন টা এখন করবে না বলেছিল কিন্তু নিলয়ের জেদের কাছে তাকে অবশেষে হার মানতে হলো। ব্রেকফাস্টের পর দুজনে বেরিয়ে পরলো ।

.
.

এদিকে অনেকক্ষণ হ‌য়ে যাবার পর‌ও নিশি কে নিচে আসতে না দেখে,,,আবিরের মা আবিরকে উপরে পাঠালো নিশিকে ডাকার জন্য। আবির গিয়ে নিশি কে ডাকার জন্য রুমে প্রবেশ করতেই হা হয়ে গেল।

নিশি অনেকক্ষণ ধরেই চেষ্টা করছিল শাড়ি পরার বাট কিছুতেই তা পারছিল না।গতকাল আবিরের মার কাছ থেকে শাড়ি পড়েছিল বাট এখন কিছুতেই পড়তে পারছেনা।তাই বাধ্য হয়ে শাড়িটা কোনোমতে নিজের শরীরের পেচিয়ে খাটের এক কোণে বসে ছিল।আর ঠিক সেই মূহূর্তে আবির ঘরে প্রবেশ করেছে।

আবিরকে দেখে নিশি নিজেকে ঢাকতে ব্যস্ত তখনই আবির হু হা করে হেসে উঠলো।আবিরকে এমন হাসতে দেখে আর নিজের শাড়ি পরার ব্যর্থতা দেখে নিশি তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলো,,, আবিরের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে উঠলো-;

-:লজ্জা করে না এইভাবে নক না করে কোনো মেয়ের ঘরে ঢুকতে।

আবির নিশির কথায় হাসা বন্ধ করে,,, নিশির দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলে উঠলো-;

-:ফর ইউর কাউন্ড ইনফরমেশন এটা আমার রুম আর তাছাড়াও এটা তুমি জানো না যে ঘরের মধ্যে ড্রেস চেঞ্জ করতে হলে সবার আগে দরজাটাকে বন্ধ করতে হয়।

-:শুনুন একে তো নিজে দোষ করেছেন তার উপর আবার নিজের দোষ স্বীকার না করে উল্টে আমার উপর নিজের দোষ চাপিয়ে দিচ্ছেন।

-:আচ্ছা আমি দোষ করেছি??তা কি দোষ করেছি।

এই বলে নিশির দিকে এক পা করে এগোতে এগোতে,,, আবিরের এমন এগোনো নিশি যেই পিছতে যাবে ওমনি তার পা লেগে কোনোমতে নিজের শরীরের পেচিয়ে রাখা শাড়িটা খুলে গেল।এমন হ‌ওয়াতে নিশি চোখ বড়বড় করে আবিরের দিকে তাকিয়ে আছে আর আবির চরম বিস্মিত ফেস নিয়ে একবার নিশির দিকে আর একবার ফ্লোরে পরে থাকা শাড়িটির দিকে তাকিয়ে উচ্চস্বরে হেসে উঠলো।হাসতে হাসতে খাটে শুয়ে পরলো।নিশি ফ্লোর থেকে শাড়িটা তুলে কোনোরকম গায়ে পেঁচিয়ে আবিরেরদিকে তাকিয়ে থাকলো।

আবিরের এমন হাসি আর নিজের এমন অপমান কিছুতেই সহ্য করতে না পেরে শব্দ করে কেঁদে উঠলো। নিশির এমন হঠাৎ কান্না দেখে আবির অবাক হয়ে নিশির দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো-;

-:এই তুমি কাঁদছো কেন??

-:আপনি হাসছেন কেন??(ঠোঁট উল্টে পাল্টা প্রশ্ন করে নিশি)

নিশির প্রশ্ন শুনে নিলয় মুচকি হেসে বলে উঠল-;

-: নিজের বৌয়ের অক্ষমতা দেখে।

আবিরের মুখে ব‌উ ঢাক শুনে নিশির বুক ধুক করে উঠলো,, আবিরের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলে উঠলো -;

-: নিজের বৌয়ের অক্ষমতা দেখে কি এমন হাসতে।আমাকে একটু সাহায্য ও তো করতে পারেন,,,তা না করে আমাকে দেখে হাসছেন।(মুখ গোমড়া করে)

-: তোমার বুঝি হেল্প লাগবে!!

নিশি আবিরের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো-;

-:হ্যা মাকে একটু ডেকেদিন না।

-:কেন??

-:বাহ্ রে!!আপনি দেখছেন না আমি শাড়ি পরতে পারছিনা। অনেকক্ষণ হয়ে গিয়েছে এখনও নিচে যাই নি সবাই হয়তো আমার জন্য ওয়েট করছে।

-:মা এখন আসতে পারবে না।

-:কেন??(আবিরের দিকে গোল গোল চোখে তাকিয়ে)

-:মা এখন বিজি আছে।কি হেল্প করতে হবে দাও আমি করে দিচ্ছি।

নিশি আবিরের দিকে একপলক তাকিয়ে বলে উঠলো-;

-:না থাক লাগবে না আপনার হেল্প।আমি বরং চুরিদার পরে নিচ্ছি,,,পরে মার কাছ থেকে শাড়ি পরে নিবনি।

এই বলে পিছনে ফিরতেই আবির বলে উঠলো-;

-:হ্যা পরো চুরিদার।তারপর লোকজন যখন বলবে ইস্ এদের বাড়ির ব‌উ বিয়ের পরেরদিন ই চুরিদার পরেছে তখন আর কি হবে?? আমার মার ই মাতা নিচু হয়ে যাবে,,,যাকে নিজের মেয়ে ভাবে সে যদি এমন করে আর কি করা যাবে??আচ্ছা আমি নিচে যাচ্ছি তুমি তাড়াতাড়ি নিচে চলে এসো ওকে।

এই বলে দরজার দিকে এগোতেই নিশি ডেকে উঠল।এতক্ষন সে আবিরের কথা শুনছিল,,, ঠিকই তো বলেছে আবির বিয়ের পরেরদিন সবাই তো শাড়ি পরে,,, তাহলে ও কেন পড়বেনা।

এদিকে নিশির ডাক শুনে আবির একটা ডেভিল মার্কা হাসি দিয়ে নিশির দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো-;

-:কি হয়েছে??

-:বলছি আমাকে একটু হেল্প করতে পারবেন??

-:আমি!!

-: হুম কেন আপনি পারেন না শাড়ি পরাতে??

-:হ্যা ট্রাই করে দেখতে পারি।

-:ওকে।

অবশেষে অনেক চেষ্টার পর আবির নিশি কে শাড়ি পরাতে সক্ষম হলো।তারপর দুজনে নিচে নেমে ব্রেকফাস্ট করে নিল। কিছুক্ষণ পর তিথি আর নিলয় ও চলে এলো।বেশ কিছুক্ষণ গল্প করে আবির আর নিলয় ডেকরশেন এর কাজ দেখতে চলে
.
.
.
.
বিকালে তিথি আর নিশিকে পার্লারে নিয়ে যাওয়া হলো,,, সেখান থেকে তাদের সাজিয়ে কমিউনিটি সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হলো।

তিথি আজ ব্ল্যাক কালারের লেহেঙ্গা পরেছে। অনেক ঘের লেহেঙ্গাটার পুরো লেহেঙ্গাটা ওয়াইট স্টোনের কাজ করা আর ওয়াইট কলারের হালকা স্টোনের কাজ করা ওড়না সামনের দিকে শাড়ির আঁচলের মতোন পড়িয়ে কোমর বন্ধ লাগানো।গলায় ভারি ডায়মন্ডের সেট,,, হাত ডায়মন্ডের ব্রেসলেট,,, মাথায় ক্রাউন।চোখ ভর্তি গাড়ো কাজল,,, ঠোঁটে রেড কালারের ম্যাট লিপস্টিক আর হালকা মেক‌ওভার।চুল গুলো বিনুনী করে একপাশে রেখে,,কিছু চুল সামনের দিকে কার্লি করে রাখা হয়েছে আর চুলের একপাশে বেলীফুল সুন্দর করে লাগানো আছে।ব্যাস এতেই তিথি কে আজ খুব সুন্দর লাগছে।

তিথির সাথে ম্যাচ করে নিলয় ও আজ ব্লাক কালারে নিজেকে সাজিয়েছে।ব্লাক শেড়‌ওয়ানী,,ব্লাক প্যান্ট আর তার সাথে ম্যাচ করে অ্যাশ কালারের ওড়না গলায় স্টাইলিশ ভাবে ঝোলানো।

‌‌
নিশি কে ও আজ ভয়ঙ্কর সুন্দর লাগছে দেখতে।বেবি পিঙ্ক কালারের উপর ওয়াইট স্টোনের সূক্ষ বুটিকের কাজ করা একটা ভারি লেহেঙ্গা পরেছে। গহনাগুলো তিথির মতোনই সেম পড়া,,,হালকা ওয়াট আর পিঙ্কের মিক্সড কালারের ডিপ পিঙ্ক কালারের স্টোনের লেস লাগানো ওড়না তিথির মতোন স্টাইল করে পড়ানো। চুলগুলো খোপা করা আর কিছু চুল সামনে কার্লি করে ছড়ানো। মাথার এক পাশে দুটো বড় বড় গোলাপ ফুল লাগনো।

আবির নিশির সাথে ম্যাচ করে পিঙ্ক কালারের শেড়‌ওয়ানী পড়েছে,,,তার সাথে ম্যাচ করে প্যান্ট আর ওড়না পড়েছে।

চারজনকেই আজ অসাধারণ দেখতে লাগছে।একদম মেড ওফ ইচ আদার জুটির মতোন। নিলয়ের মামা,, নিশির মা-বাবা সবাই এসেছিল রিসেপশনে।চারজনে অনেক গুলো কাপল ফটো আর গ্ৰুপ ফটো তুললো। অনুষ্ঠান খুব সুন্দর ভাবেই শেষ হলো। অনুষ্ঠান শেষে নিশি মা-বাবা তাকে নিয়ে যেতে চাইলে নাশি না করে দেয়।যেহেতু তিথিরা আবিরদের বাসায় যাবে তাই নিশি এখন তার মা-বাবার সাথে যাবেনা বলে দিল। তাছাড়াও নিজের বাবা-মার প্রতি কিছুটা চাপা অভিমানের জন্য ও নিশি তাদের সাথে যেতে নারাজ। নিশির বাবা-মা বুঝতে পেরে তাকে আর জোর করলো না।
.
.
.
.

পরেরদিন ব্রেকফাস্ট টেবিলে নিলয় জানালো যে তারা চারজনে একসাথে হানিমুনে সিঙ্গাপুর যাবে।নিশি এতে ঘোর আপত্তি জানিয়েছিল কিন্তু তিথির জন্য তাকে অবশেষে সন্মতি দিতেই হলো।
.
.
.
.
[বাকিটা নেক্সট পর্বে]

তোমাকে আমার প্রয়োজন পর্ব-৩১

0

#তোমাকে আমার প্রয়োজন ??
#মেঘ পরী??

??পর্ব-৩১??

.
?
.

তিথি ড্রেস চেঞ্জ করে সবুজ রঙের একটা পাতলা শাড়ি পরে ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে,,,,তিথি চুল আঁচড়াচ্ছিল।নিলয় খাবার আনতে নিচে গিয়েছিল,,কিছুক্ষন পর রুমে এসে তিথির পিছে দাঁড়ায়।নিলয়কে দেখে তিথি কিছু বলতে যাবে তখনই নীলয় বলে উঠলো-;

-:আগে খেয়ে নেও,,পরে কথা হবে।

তিথি মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলল।তারপর দুজনে একসাথে ডিনার করে নিল।ডিনার শেষে তিথি নিলয়কে বলল-;

-:চলুন না একটু ছাদ থেকে ঘুরে আসি।

-:এখন এই সময়??

-: হুম। আমার না খুব ইচ্ছে নিজের প্রিয়জনের কাঁধে মাথা রেখে একসাথে চন্দ্রবিলাস করার।

-:ওও তাই।

-: হুম।

-:তা ম্যাডামের প্রিয়জনের নাম টা কী জানতে পারি??

-:আছে কেউ একজন।এই আপনি নিয়ে যাবেন কিনা বলুন তো??ন‌ইলে আমি নিজেই চলে যেতে পারবো।

এইবলে‌ উঠে যেই যেতে যাবে ওমনি নিলয় ওকে কোলে তুলে নিয়ে বলে উঠলো-;

-:থাক আপনাকে আর কষ্ট করতে হবে‌ না। নিজের ব‌উয়ের সামান্য ইচ্ছাটুকু পূরণ করতে পারি আমি।

নিলয়ের কথায় তিথি মুচকি হেসে ,

– দুহাত দিয়ে নিলয়ের গলা জড়িয়ে ধরলো,,,তারপর নিলয় ওকে নিয়ে ছাদে আসে।ছাদের দোলনায় তিথি কে বসিয়ে দিয়ে নিজে তিথির কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ল। তিথি নিলয়ের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইল।দুজনে আজ একসাথে চন্দ্রবিলাস করতে ব্যাস্ত। কিছুক্ষণ পর তিথির নিলয়ের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলো-;

-:আচ্ছা নিশির বিয়েটা এমন হুট করে না হলেই পারতো। বেচারা খুব কষ্ট পেয়েছে।

তিথির কথা শুনে নীলয় তিথির দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো-;

-: নিজের ভালোবাসার মানুষকে সারাজীবন নিজের করে নেবার জন্য সবাই চাই।আর আবির ভাইয়া ও এর ব্যতিক্রম নয়।তিনি নিশি কে খুব ভালোবাসেন।

-: কিন্তু তাই বলে এমন হুট করে বিয়ে।

-:এই যে ম্যাডাম ভাইয়া একদম ঠিক কাজ করেছেন।

-:তাই বলে এমন জোর করে।

-:ম্যাডাম নিজের ভালোবাসার মানুষকে সারাজীবন নিজের কাছে পেতে সবাই চাই। ভাইয়া ও তার ব্যতিক্রম ন‌ই।

-: তারমানে আপনি সব জানতেন,,,আগে থেকে আমাকে বলেননি কেন??যান আপনার সাথে কোন কথা নেই।(কিছুটা রেগে বলে উঠলো)

নিলয় মুচকি হেসে বলে উঠল-;

-:সবকথা বাচ্চাদের জানতে নেই।

-:কি!!!আমি বাচ্চা!! তাহলে এই বাচ্চা কে বিয়ে করলেন কেন??(কিছুটা অভিমানী সুরে বলে উঠল তিথি)

নিলয় তিথিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে,,,তিথির পেটে মুখে গুঁজে বলে উঠলো-;

-:এ বিয়ে না করে যে আর উপায় নেই।এই বাচ্চাটাকে ছেড়ে যে আমি চলতে পারব না এক মূহুর্ত ও।কারণ এই বাচ্চা মেয়েটাকে যে অনেক দিন আগেই আমি আমার এই মন দিয়ে দিয়েছি।

নিলয়ের কথা শুনে তিথি অজান্তেই হেসে ফেললো। তিথি মনে এক অজানা ভাললাগা কাজ করতে লাগল,,পুনরায় সে নিলয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। কিছুক্ষণ পর নিলয় বলে উঠলো-;

-:তিথি!!

তিথি খুব অবাক হল নিজের নাম নিলয়ের মুখে শুনে সচরাচর নিলয় তাকে তিথি বলে ডাকে না যখন সে খুব রেগে থাকে কিংবা কোন সিরিয়াস বিষয় নিয়ে আলোচনা করে তখনই তাকে তিথি বলে ডাকে।নীল

নিলয় এবার তিথির দিকে তাকিয়ে বলে উঠল-;

-:তিথি!!

-:হ্যাঁ বলুন শুনছি।

-:আমি তোমার কাছ থেকে একটা সত্যি কথা লুকিয়েছি অনেকদিন ধরে লুকিয়ে আসছি তোমার কাছ থেকে।বলতে পারো কিছুটা তোমাকে হারানোর ভয় আর জড়তার মাঝে এতদিন আমি আটকা পড়েছিলাম কিন্তু আমি চাইছি আজকে তোমার কাছে এই বিষয়টা ক্লিয়ার করে নিতে কারণ আমি চাইনা আমাদের এই সম্পর্ক মিথ্যা কোনো কিছু দিয়ে শুরু হোক।

তিথি অবাক হয়ে নিলয়ের কথাগুলো শুনছিল।নিলয় কিছুটা থেমে আবার বলে উঠলো-;

-; আমি একজন বিজনেসম্যান এছাড়াও আমার একটা অন্য পরিচয় আছে।আমি একজন মাফিয়া। বিশ্বাস করো তোমাকে আমি অনেক আগেই কথাটা বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু তোমাকে হারানোর ভয় আমাকে বারবার বাধা দিয়েছে একথাটা তোমার কাছ থেকে লুকানোর জন্য কিন্তু আর আমি চাইনা তোমার কাছ থেকে লুকাতে।তিথু এই সত্যি জানার পর তুমি কি আমাকে ছেড়ে চলে যাবে??(ছলছল চোখে তাকিয়ে)

তিথি এখনো কিছুটা বিস্ময় নিয়ে নিলয় এর দিকে তাকিয়ে আছে কিন্তু পরক্ষনেই নিলয় কে অবাক করে তিথি হেসে উঠলো তারপর নিলয়ের হাত নিজের হাতের মুঠোয় এনে বলে উঠলো-;

-: আপনি কি ভেবেছেন এই সামান্য কথার জন্য আমি আপনাকে ছেড়ে চলে যাব।কখনোই না মিস্টার।আর আমি এটা আগে থেকেই জানতাম।

নীলয় অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করল-;

-: তুমি আগে থেকেই জানতে!!!কিন্তু কি করে

ভাইয়া আমাকে বলেছিল যেদিন আমি ভাইয়াকে আপনার বিষয় বলেছিলাম,,ওই দিন রাতেই ভাইয়া আপনার সম্পর্কে সব তথ্য জেনে আমাকে বলেছিল।

-:তুমি আমাকে আগে বলনি কেন??

-:আমি চেয়েছিলাম আপনার মুখ থেকে এই কথাগুলো শুনতে।

নিলয় এক ঝটকায় তিথির কোল থেকে উঠে তিথিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল।

-:আই লাভ ইউ পাখি তুমি জানো না আমি আজ কতটা খুশি।আই লাভ ইউ জান।

বেশ কিছুক্ষণ পর তিথি জিজ্ঞাসা করল-;
-:আজ ঘুমুবেননা।

নিলয় কিছুক্ষণ তিথির দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো-;

-: হুম চলো।

বলে তিথি কে পুনরায় কোলে তুলে নিচে নেমে গেল।
.
.
.

রাতে তিথি নিলয়ের বুকে মাথা রাখে শুয়ে আছে।রাত গভীর হচ্ছে এদিকে ঘন ঘন শ্বাস প্রশ্বাস বাড়ছে।নিলয় তিথির মুখটা কিছুটা উঁচু করে তিথির কপালে ভালোবাসার পরশ এঁকে দিয়ে,,, তিথির দিকে এক তাকিয়ে বলে উঠলো-;

-:পাখি আই লাভ ইউ।

তিথি মুচকি হেসে বলে উঠলো-;

-:আই লাভ ইউ টু মিস্টার।

-:এখনো তো বললে না তোমার প্রিয়জনের নাম কী??

তিথি নিলয়কে জড়িয়ে ধরে বলে উঠলো-;

-:আপনি ছাড়া প্রিয়জন বলতে কে বা আছে আমার জীবনে।

নিলয় ও তিথি কে গভীর ভাবে জড়িয়ে ধরে স্লো ভয়েসে বলে উঠলো-;

-:পাখীইইইইই!!

-:হুমমম।

-:মে আই..

তিথি নিলয়ের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়ল যার অর্থ হলো হ্যা।
.
.

রাত যত গভীর হচ্ছে তত ঘন ঘন শ্বাস প্রশ্বাস বাড়ছে।কারন আজ নিলয় তার ব‌উকে নিয়ে ভালবাসার সাগরে পাড়ি দিয়েছে।তিথির ঠোঁটজোড়া শুষে নিতে নিতে ওর শরীর থেকে শাড়ির আঁচলটা সরিয়ে দিল তারপর তিথির গলায় নিজের ঠোঁট রাখতেই তিথি কু্ঁকড়ে গিয়ে নিলয়ের বুকে মুখ লুকিয়ে ফেলল।

নিলয় আজ তার ভালোবাসার মানুষটিকে নিজের করে নেওয়ার নেশায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে অনেকটা বেশি।তাইতো তিথির লজ্জাকে উপেক্ষা করে তিথির গলায় চুমু দিতে থাকে নিলয়।ওর গলা ঘাড় ভরিয়ে দিচ্ছে ভারি ভারি চুমুতে।আজ আর কোন দূরত্ব নেই।সব দূরত্ব যেন ভালবাসা দিয়ে পরিপূর্ণ করে দিচ্ছে।

তিথিকে আপন করে নেয়ায় ব্যাস্ত নিলয়।আর তিথি!!তার শ্বাসপ্রশ্বাস ঘন থেকে আরো বেশি ঘন হচ্ছে।আর সেই সাথে পরিবেশটা ও নেশাময় হয়ে উঠেছে। দীর্ঘ রাতের অবসান ঘটিয়ে অবশেষে সূর্যের আলো পড়লো নিলয়ের বেডরুমে,,,চোখে আলো পড়াই তিথির ঘুম ভেঙে গেল,,, উঠে নিজেকে আর নিলয়কে এক‌ই চাদরের নিচে দেখতে পায়।

তিথি উঠে বসে চাদরটা ভালমতো গায়ে জড়াতেই দেখতে পেল নিলয় তার দিকে তাকিয়ে আছে। নিলয়েরর থেকে লজ্জায় চোখ সরিয়ে নেয় তিথি,,,,আজ তার ভাল লাগছে কারন সে পুরোপুরিভাবে নিলয়কে নিজের করে পেয়েছে।তবে খুব বেশি লজ্জা ও হচ্ছে।নিলয় তিথির আরও একটু কাছে এসে একটু ঝুঁকে বলল,
.
.
-:আই লাভ ইউ পাখি।

-:আই লাভ ইউ টু নিলয়।
.
তিথির কপালে চুমু দিয়ে নিলয় বলল,
.
.
-”ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নাও।”

.
.
.
.
[বাকিটা নেক্সট পর্বে]

তোমাকে আমার প্রয়োজন পর্ব-৩০

0

#তোমাকে আমার প্রয়োজন ??
#মেঘ পরীক্ষা??

??পর্ব-৩০??

ফুল দিয়ে সাজানো খাটে বসে আছে নিশি,,, এখনও সে চুপ করে বসে আছে,,,,ইতিমধ্যে যে তার জীবনে একটা নতুন পর্ব শুরু হয়ে গিয়েছে সেই বিষয়ে তার কোনো খেয়ালই নেই।হঠাৎ রুমের দরজা আওয়াজ হ‌ওয়ায় নিশি সেদিকে তাকিয়ে দেখলো আবির রুমে প্রবেশ করেছে।আবিরকে দেখে নিশি নিজের মুখ ঘুরিয়ে নিল। আবির রুমে প্রবেশ করে নিশির দিকে একবার তাকিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল।

কিছুক্ষণ পর ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে নিশির পাশে বসলো। আবিরের উপস্থিতি নিজের পাশে অনুভব করলেও নিশি কোনো কথা বলল না,,, চুপচাপ বসে থাকলো।নিশির কোনো সারাশব্দ না পেয়ে আবির নিশির কাঁধে হাত রাখল,,, কিন্তু এবারেও নিশি নিশ্চুপ।নিশির এরূপ আচরণে আবির যেন একটুও অবাক হলোও না,,,একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নিশি কে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলতে লাগলো-;

-:দেখো আমি মানছি হঠাৎ করে এইভাবে বিয়েটা হ‌ওয়ায় তুমি মন থেকে মেনে নিতে পারছো না। কিন্তু দেখো এমনিতেও আমার আর তোমার বিয়ে আগে থেকেই ঠিক ছিল আর…

আবিরকে আর কিছু বলতে না দিয়ে,,,নিশি বলে উঠলো-;

-: আপনার দেরি হয়ে যাচ্ছে।

-:মানে!!!!(কিছুটা অবাক হয়ে)

আবিরের দিকে তাকিয়ে-;;

-:মানেটা খুবই পরিষ্কার।আপনি তো আমাকে ভোগ করার জন্যে ই বিয়েটা করেছেন,,,নিন আসুন আমাকে ভোগ করুন।

বলেই নিজের গা থেকে শাড়ির আঁচলটা সরিয়ে দিল।

-:নিশি!!!(চিৎকার করে)

-: চিৎকার করছেন কেন???আমি তো কোনো ভুল কিছু বলিনি।আপনি তো আমাকে ভোগ করার জন্য ই এত তাড়াতাড়ি আমার মত ছাড়াই বিয়েটা করলেন।

আবির নিশির কাছে গিয়ে শাড়ির আঁচলটা পড়িয়ে দিয়ে,,,বলল-;

-:দেখো নিশি আমার কথা….

নিশি এবার আবিরের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলতে লাগলো-;

-:ব্যাস আমি অনেক দিন ধরে অনেক কথা শুনেছি আপনার।আজ আমি বলবো আর আপনি শুনবেন।কি ভেবেছেন আমাকে আপনি আপনার কেনা সম্পত্তি!!যখন লজ্জা ভয়ভয় ত্যাগ করে রাস্তা ভর্তি লোকের সামনে আমি আপনার কাছে আমার মনের কথা গুলো প্রকাশ করলাম।তখন আপনি কি করলেন??এক রাস্তা লোকের সামনে আমাকে চড় মেরে আমার নিজের যোগ্যতা দেখিয়ে দিলেন।

এর জন্য তো আমি আপনাকে কোনো প্রকার দোষারোপ করিনি।চলেই তো গিয়েছিলাম আপনাকে ছেড়ে সারা জীবনের মতো,,,,তাহলে কেনো আপনি আবার আমার জীবনে এলেন??কেনো আবার জোড় করে নিজের জীবনে সাথে
আমাকে বাধার জন্য এতটা মিরিয়া হয়ে গেলেন???আর আজ!!!বিয়েটা এমন হুট করেই করে নিলেন। একবারও কি আমার মতামত নেওয়া প্রয়োজন বোধ করেছিলেন?? একবারও কি আমার মনে কি আছে এটা বোঝার চেষ্টা করেছেন??

না আপনি তা করেননি।আপনি শুধু নিজের টাই ভেবে এসেছেন সেই প্রথম থেকেই,,,,আমি কি চাই না চাই এই নিয়ে সেই বিষয়ে ভাববার মতোন আপনার সময়‌ই নেই। কিন্তু শুনে রাখুন!!আমি আপনাকে ভালোবাসতাম এক সময় বিশ্বাস করুন নিজের থেকেও অনেক অনেক বেশি ভালোবাসতাম আমি আপনাকে কিন্তু এখন..এখন আমার মনে আপনার জন্য বিন্দুমাত্র ভালোবাসা নেই।যা আছে তা শুধু ঘ্রিনা।যতোই আপনি আমাকে বিয়ে করুন না কেন স্বামী হিসাবে আপনি শুধু আমার দেহ পাবেন কিন্তু মন কখন‌ই পাবেন না।।।

আবির এতক্ষন চুপ করে নিশির কথা শুনছিল,,,আজ সে একটা কথা বলেনি নিশিকে বলবেই বা কী!!সে তো সত্যিই নিশির সাথে চরম অন্যায় করেছে। এতদিন নিশির মতের কোনো পরোয়াই করেনি।নিজের সিদ্ধান্তকে নিশির উপর চাপিয়ে দিয়েছে একপ্রকার জোর করে।নাহ আর সে এই ভুল করবে না,,,তাই সে আজ নিশি কে বলতে দিয়েছে।আবির নিশির দিকে অসহায় নজরে একবার তাকিয়ে,,বলে উঠলো-;

-:নিশি ভালোবাসি বলেই এত তাড়াতাড়ি বিয়ে করেছি,,,তোমাকে ভোগ করবে বলে নয়।শুয়ে পড়ো অনেক রাত হয়েছে।

এই বলে আবির বাইরে চলে গেল।নিশি এতক্ষন‌ নিজের কান্না চেপে রাখলেও এবার আর পারলো না। আবির চলে যাবার সাথে সাথেই কেঁদে উঠলো হু হু করে।আবিরকে এইভাবে কথাগুলো বলতে চাইনি সে কিন্তু আর কতো সহ্য করবে!!মানুষটাকে ভালোবাসে বলেই তো এতদিন তার সবকিছুই সহ্য করেছে।কিন্তু এইভাবে হঠাৎ করে বিয়েটা কিছুতেই যেন মেনে নিতে পারছে না।তাই আজ সে রাগের বসে এই কথাগুলো বললো।সে মানুক আর না মানুক ভালো তো সে আবিরকেই বাসে।

এইসব কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই মেঝেতে বসেই ঘুমিয়ে পড়েছে।
.
.
.
.
[বাকিটা নেক্সট পর্বে]
.
.
.
.
“”ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমা করবেন।””

তোমাকে আমার প্রয়োজন পর্ব-২৯

0

#তোমাকে আমার প্রয়োজন??
#মেঘ পরী??

??পর্ব-২৯??

আজ তিথির বিয়ে তাই সকাল থেকে সবাই বিয়ের আয়োজনে ব্যস্ত।তিথি বারবার নিশিকে খেয়াল করছে,,কাল রাত থেকে খেয়াল করছে নিশা কি যেন নিয়ে খুব গভীর চিন্তায় মগ্ন কাল রাতের ওয়াশরুম থেকে আসার পর নিশি একদম চুপচাপ।নিশি কে এই নিয়ে বেশ কয়েকবার জিজ্ঞেস করলেও সে কোন‌ও জবাব দেইনি,, কথাটাকে বারবার এড়িয়ে গিয়েছে,,তাই তিথি আর কিছু বলেনি।

এইদিকে নিশির বাবা আর আবিরের বাবা সেই কখন থেকে একটা ঘরের মধ্যে দরজা বন্ধ করে কি যেন একটা বিষয় নিয়ে দুজন আলোচনা করছে।এখনও বেরোনো নাম গন্ধ ও নেই,,,তিথি বুঝতে পারছেনা হঠাৎ তাদের মধ্যে কি বিষয় নিয়ে এত কথা হচ্ছে।দুপুরবেলা সবাই বসে লাঞ্চ করছিল হঠাৎ নিশি আর আবিরের বাবা টেবিলে এসে বসলো।কিছুক্ষণ পর নিশির বাবা নিশিকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগল-;

-:আমরা তোমার জন্য একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

কথাটা শুনে নিশি তার বাবার দিকে অধীর আগ্রহে তাকিয়ে আছে,,তিথি ও আগ্রহী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

-:আমরা তোমার বিয়ে ঠিক করেছি আর সেটা আজই হবে,,তিথির বিয়ের সাথেই তোমার আর আবিরের বিয়ে দিয়ে দিতে চাচ্ছি আমরা।এতে কারোর কোনো আপত্তি নেই সবাই রাজি এই বিয়েতে।

-:এটা তুমি কি করে ঠিক করতে পারলে বাবা?? আমাকে কিছু না জানিয়ে এরকম হুট করে কি করে সিদ্ধান্ত নিতে পারলে তুমি!!

উঠে দাড়িয়ে চিৎকার করে বলে উঠলো নিশি।

-:আস্তে কথা বল।এখানে তোমার থেকে বড় অনেকে আছে সুতরাং ভদ্রতা বজায় রাখ।(গম্ভীর মুখে বললো)

নিশি নিজেকে সংযত করে চেয়ারে বসে পড়ল,,, এইদিকে তিথি হাঁ করে তাদের কথাগুলো শুনছে কি হচ্ছে কেন হচ্ছে কিছুই তার ছোট্ট মাথায় ঢুকছেনা।আর আবির!!আবির তো কোন কথাই বলছে না নিজের মত খেয়েই যাচ্ছে এমন ভাব করছে যেন সে আগে থেকে সবকিছু জানতে।

নিশির বাবা শান্ত কন্ঠে বলতে লাগলো-;

-: দেখো এমনিতেই তোমার আর আবিরের বিয়ে ঠিক ছিল আগে থেকেই ।তাই আমরা ভাবছি দেরি না করে দুজনের বিয়ে একসাথেই সেরে ফেলতে।কারণ এরপর আবির ব্যস্ত হয়ে পড়বে তখন কিছুতেই বিয়ে করা সম্ভব হয়ে উঠবে না,, তাই এখন একটা ভালো মুহূর্ত আছে আমরা এটাকে হারাতে চাইছি না।সবাই রাজি আছে এতে। আশা করি তুমি আর কোন সিনক্রিয়েট করবে না এই বিষয়ে।

এই বলে তিনি উঠে গেলেন এক এক করে সবাই উঠে গেল টেবিল থেকে নিশি চুপচাপ এক ধ্যানে বসে আছে আর তিথির মাথায় এখনও ঢুকছে এই বিষয়টা যে কি থেকে কি হয়ে গেল!!!

.
.
?
.
.

পার্লার থেকে সাজানোর লোক এসেছে।তিথি এবং নিশি কে একসাথে সাজানো হচ্ছে তিথি এটা দেখে অবাক হচ্ছে যে তার এবং নিশির বিয়ের সাজ হুবাহু এক,,,শুধু বিয়ের বেনারসির রং টা আলাদা।নিশি ও প্রথমে অবাক হয়েছিল তার এবং তিথির বিয়ের সাজ প্রায় এক হওয়ায়।

কিছুক্ষণ পর তারা নিশি এবং তিথিকে সাজিয়ে দিলো,,,দুজনকে খুব সুন্দর লাগছে দেখতে আজ।তিথি আজ লাল বেনারসি আর গা ভর্তি গয়নাই সেজেছে।আর নিশি নীল বেনারসী আর গা ভর্তি গহনা দিয়ে সেজেছে। নিশি কোন কথা বলছে না চুপচাপ বসে রয়েছে।

সাজানোর পর তাদের দুজনকে স্টেজে বসিয়ে দেওয়া হল।কিছুক্ষণ পর নিলয় এসে পৌছালো। নিলয় আজকে রেড কালারের শেরওয়ানি পড়ছে আর মাথায় পাগড়ী আর এইদিকে আবির আজ স্কাই কালারের শেরওয়ানি পড়েছে আর মাথায় পাগড়ী,,,এদের দুজনকে ও আজ খুব সুন্দর লাগছে।

কিছুক্ষণ পর বিয়ে পড়ানো শুরু হল প্রথমে তিথির বিয়ে পড়ানো শুরু হল।তিথিকে কবুল বলতে বললে তিথি বলে ফেললো এরপর নিলয়কে বলতে বললে নিলয় বলে দিল,,তারপর তাদের বিয়ে সম্পন্ন হলো।

এরপর আবির আর নিশির বিয়ে পড়ানো শুরু হল নিশিকে কবুল বলতে বললে সে কিছুটা সময় নিয়ে তারপর কবুল বল দিল আর আবিরের পালা এলে সে আর সময় নষ্ট না করে সে ও কবুল বলে ফেলল এইভাবে তাদের বিয়ে সম্পন্ন হল।
.
.
[বাকিটা নেক্সট পর্বে]

তোমাকে আমার প্রয়োজন পর্ব-২৮

0

#তোমাকে আমার প্রয়োজন??
#মেঘ পরী??

??পর্ব-২৮??
.
?
.

দেখতে দেখতে তিথির গায়ে হলুদের দিন এগিয়ে এলো। আবির ব্যাস্ত ডেকরেশনের কাজে সাহায্য করতে। গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান বাড়ির পাশের ছোট্ট বাগানটায় অনুষ্ঠিত হবে।বাগানটায় ফুল দিয়ে সুন্দর করে ডেকোরেশন করে সাজানো হয়েছে।তিথিকে হলুদ শাড়ি পড়ানো হয়েছে আজ এবং কাঁচা ফুলের গহনা দিয়ে সাজানো হয়েছে,,, চুলগুলো বেনী করে এক সাইডে ছারানো,,,দু হাতে সোনার দুটো মোটা বালা। খুব সুন্দর লাগছে আজ তিথিকে দেখতে,,, চোখ ফেরানো দায় হয়ে পড়েছে।বাড়ির সব মেয়েরাই হলুদ শাড়ি পরেছে শুধু তফাৎ নিশির এবং তিথি শাড়ির পাড়ের রং লাল আর বাকি সবার শাড়ির পাড়ের রং সবুজ।তিথিকে সুন্দর করে সাজিয়ে স্টেজে আনা হলো।

কিছুক্ষণের মধ্যেই গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হল,,,একে একে সবাই তিথিকে গায়ে হলুদ লাগিয়ে দিলো। আবির ও এসেছিল তিথিকে গায়ে হলুদ দেবার জন্য কিন্তু স্টেজ এর পাশে নিশির দিকে চোখ পড়তেই তার মুখ অটোমেটিকলি হাঁ হয়ে গেল,,,তিথির সাথে নিশিকে ও আজ অসম্ভব সুন্দর লাগছে।

হলুদ শাড়ি দুই হাতে চিকন চিকন চারটে সোনার বালা,,কানে ছোট দুল,,, আর চুলে হাত খোঁপা করে তাতে বেলিফুল লাগানো,, এই সামান্য সাজে নিশিকে ও আজ খুব সুন্দর লাগছে।সবার শেষে নিশি আর আবির এসে তিথিকে গায়ে হলুদ লাগিয়ে দিল।

নিশি আড়চোখে একবার আবিরের দিকে তাকালো,, আবিরকে রেড কালার সুতির পাঞ্জাবি,,আর সাদা চুরি প্যান্টে খুব সুন্দর লাগছে। পাঞ্জাবির হাতা গুলো কনুই পর্যন্ত গোটানো আর হাতে একটা রিস্ট ওয়াচ। সবমিলিয়ে আবিরকে ও আজ খুব সুন্দর লাগছে।তবুও নিজেকে কন্ট্রোল করে আরও একবার আড়চোখে তাকিয়ে নিজের চোখ নামিয়ে নিল।

তিথির পুরো গা হলুদময় হয়ে গিয়েছে,,, তিথি তাই ফ্রেশ হওয়ার জন্য স্টেজ ছেড়ে নিজের রুমের দিকে অগ্রসর হতে লাগলো। নিজের রুমে প্রবেশ করে দরজা লাগিয়ে সামনের দিকে তাকাতেই,,,তিথি অবাক হয়ে গেল,,,হাত দিয়ে একবার চোখ কোচলে আবার সামনের দিকে তাকালো সে। কিন্তু আবারও সেই একই প্রতিচ্ছবি দেখতে পারছে সে হ্যা তার সামনেই দাঁড়িয়ে আছে তার প্রিয় মানুষটা,, যে কিনা আজ রাতে পর তার স্বামী হবে। মানুষটি আর কেউ নয় নিলয়।কাঁচা হলুদ কালারের পাঞ্জাবি,,, সাদা চুরি প্যান্ট,,পাঞ্জাবির হাতা গুটানো,,আর এক হাতে রিস্ট ওয়াচ।নিলয় চুল এমনিতেই খুব সিল্কি সুতরাং সামান্য হওয়াতেই তার চুল কপালে এসে পড়ছে বারবার। তিথি চোখ ফেরাতে পারছে না আজ,,,,মানুষটার দিক থেকে।

তিথির এমন তাকানোতে,,নিলয় কিছুটা মুচকি হেসে,,তিথির দিকে এগোতে লাগল।আস্তে আস্তে সে তিথির অনেকটা কাছে এসে দাঁড়ালে।তিথি এবার হুশে এলো,, নিলয় থেকে দূরে যেতে চাইলেই নিলয় তার ‌দুই বাহু ধরে,, দরজার সাথে চেপে ধরলো।তারপর তিথিকে আপাদমস্তক পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো। কিছুক্ষণ পর তিথির চোখে চোখ রেখে,,,নিশাময় কন্ঠে বলে উঠল-;

-:এই মারাত্মক সাজে সাজতে আজ তোমায় কে বলেছে তিথু পাখি???

নিলয়ের এমন কোথায় তিথি কিছুটা কেঁপে উঠলো।তারপর নীলয়ের দিকে তাকিয়ে,,কাঁপা গলায় বলে উঠলো-;

-:আ..আপনি এ..এখানে কি..কি..কি করছেন?? আপনার তো..তো…

আর কিছু বলতে দিল না নিলয় তাকে,,,তার আগেই নিজের বৃদ্ধা আঙ্গুল দিয়ে তিথির ঠোঁটে হালকা করে স্লাইড করতে লাগলো।তারপর তিথির চোখের দিকে তাকিয়ে,, দুই হাতে তিথির কোমর শক্ত করে পেঁচিয়ে,,বলে উঠল-;

-:শিশশশ চুপ!!!এত কথা যদি তুমি বলো তাহলে আমি যে কাজে এসেছি,,,সেই কাজটাই তো করতে পারবোনা।

তিথি একটা ঢোক গিলে জিজ্ঞেস করল-;

-:ক..কি কাজ??

নিলয় মুচকি হেসে বলে উঠলো-;

-: খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজ। যে কাজটা না করলে,, আমার ভীষণ বিপদ।দেখো পাখি এমনিতেই এরকম সাজ সেজে আমার মাথা তুমি অলরেডি খারাপ করেই দিয়েছো,,,তার ওপরেআমি নিজের বাড়ি অতি কষ্টে পালিয়ে আবার তোমাদের বাড়ির সবার চোখে ফাঁকি দিয়ে তোমার রুমে প্রবেশ করেছি,,,কোথায় একটু নিজের হবু স্বামীকে আদর যত্ন করবে,,তা নয় তাকে হাজারটা প্রশ্ন করতে শুরু করেছে।

-:না মানে,,আপনি এসময় এখানে,,তাই…

-:আরে বউ আমার,,এখানে থাকবে না তো কোথায় থাকব আমি!!! এইজন্য লোকেরা একদম ঠিক‌ই বলে বাচ্চা মেয়েকে কোনদিনও বিয়ে করতে নেই।

-: তাহলে আমাকে বিয়ে করছেন কেন,,বিয়ে না করলেই পারতেন।

কিছুটা অভিমানী শুরে বলে উঠলো তিথি।

-: আরে বৌ রাগ করছো কেন??আরে বাবা দেখতে হবে না আমার বউকে গায়ে হলুদের সাজে কেমন লাগছে। তাই জন্য তো তোমাকে দেখতে এসেছি আর এমনিতেও একবার দেখো আমাকে ভালো করে।আমি এখন আমার গায়ে হলুদ‌ ই দিইনি।

নিলয়ের কথা শুনে তিথি একবার নিলয় দিকে তাকিয়ে দেখল সত্যিই তার গায়ে হলুদের ছিটেফোঁটাও নেই। তিথি অবাক হয়ে নীলার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করল-;

-: একি!! আপনার এখনো হলুদ লাগানো হয়নি।

-: হুম তো।

-: কিন্তু কেন??

-: তোমার থেকে সবার প্রথম হলুদ লাগাবো বলে কাউকে আমি হলুদ লাগাতে দিইনি।

-:মা.. মানে

-:মানেটা খুবই পরিষ্কার।

এই বলে নিলয় তিথিকে নিজের সাথে সম্পূর্ণ মিশিয়ে নিল,,তারপর তিথির দিকে ঝুঁকে পড়ল কিছুটা।নিলয়কে এমন ঝুঁকে পড়তে দেখে তিথি নিজের মাথাটা সরানোর চেষ্টা করলো,,,কিন্তু পারলো না।নিলয় তাকে দেওয়ালের সাথে শক্ত করে চেপে ধরায়,,,সে কিছুতেই নিজেকে নিলয়ের থেকে ছাড়াতে পারছে না।

-: বৃথা চেষ্টা করো না পাখি।আমি যতক্ষণ না তোমায় ছাড়বোনা ততক্ষণ তুমি চাইলেও আমার কাছ থেকে ছাড়া পাবে না।

এই বলে নিলয় নিজের গাল তিথির গালের সাথে লাগিয়ে দিল,,তারপর তিথির গাল থেকে নিজের গালে হলুদ লাগিয়ে নিল।নিলয়ের এমন আচরণে তিথি পুরো শরীর অবশ হয়ে হয়ে উঠলো।নিলয় ক্লিন শেভিং করলেও নিলয়ের গালের ছোট ছোট দাড়ির খোঁচায় তিথি নরম গালে কিছুটা ব্যথার অনুভূতি হল।নিলয় তিথির দিকে তাকিয়ে বলল-;

-:এখন তোমার কাছ থেকে প্রথম হলুদ মেখে নিলাম।এবার আর এখানে বেশিক্ষণ থাকা যাবে না,,,নইলে আমি আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারবো না।ভালো থেকো পাখি আর শুধু আজকের রাতটা!!ব্যস এরপর তোমাকে আমি আমার ছোট্ট নীড়ের রাজরানী করে নিয়ে যাব। যেখানে আমরা ছোট্ট একটা টোনাটুনির সংসার সাজাবে।

এই বলে তিথির কপালে একটা গভীর চুমু এঁকে,,,ব্যালকনি থেকে নিচে নেমে গেল।নিলয় চলে যাওয়ার পর,,তিথি কপালে হাত দিয়ে আনমনে হেসে উঠলো।
.
.
?
.
.

এদিকে আবির বেশ কিছুদিন ধরে খেয়াল করছে,,নিশি তাকে এড়িয়ে চলছে।এই ব্যাপারটা আবিরের কিছুতেই ভালো লাগছেনা।যখনই সে নিশির কাছে আসে,,,তখনই কিছু না কিছু একটা অজুহাতে দিয়ে সে তার থেকে দূরে চলে যাই।

আবির আনমনেই ভাবছিলো কথাগুলো। হঠাৎ দেখল নিশি তার সামনে দিয়ে যাচ্ছে।নিশিকে দেখে আবির তাকে ডাকলো নিজের কাছে আসার জন্য।আবিরের ডাকে নিশি একবার তার দিকে তাকিয়ে,,,সঙ্গে সঙ্গে নিজের চোখ সরিয়ে নিল।

তারপর ধীরে পায়ে তার দিকে এগিয়ে গিয়ে,, জিজ্ঞাসা করল-;

-:বলুন কি হয়েছে??

-:আমাকে এক গ্লাস পানি দে তো।

নিশি আবিরের কথার উওর না দিয়ে,,,রান্না ঘরে চলে গেল।কিছুক্ষণ পর এক গ্লাস পানি এনে আবিরের হাতে ধরিয়ে দিল।আবির কিছু বলতে যাবে তার আগে নিশি সেখান থেকে চলে গেল। আবির নিশি যাওয়ার পানে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।তারপর পানি খেয়ে নিজের কাজে চলে গেল।
.
.
?
.
.
হুট করেই নিশির লেহেঙ্গার আচঁল টেনে খুলে নিলো আবির।নিশি বিস্মিত চোখে নিলয়ের দিকে তাকিয়ে আছে।

কিছুক্ষণ আগের কথা,,,নিচে মেহেন্দির অনুষ্ঠান হচ্ছিল।সবাই নিজেদের হাতে নিজেদের মনের মত মেহেন্দি লাগাতে ব্যস্ত।মেহেন্দির জন্য মেহেন্দি আর্টিস্ট ভাড়া করে আনা হয়েছে,, তাই বড়-ছোট কেউই বাদ যাচ্ছে না নিজেদের হাতে মেহেন্দি লাগাতে।

তিথি হালকা সবুজ রঙের লেহেঙ্গা,,দু হাত ভর্তি চুরি,, গলায় সুন্দর নেকলেস,, দু পায়ে নুপুর,,,কোমড়ে কোমর বন্ধনী,, চোখে গাঢ় করে কাজল,,, ঠোটের লাল কালারের লিপস্টিক আর মুখে হালকা মেকআপ,, ব্যাস এতেই তিথিকে খুব সুন্দর লাগছে।

নিশিকেও খুব সুন্দর লাগছে দেখতে,,,গোলাপি কালারের লেহেঙ্গা,, সাথে ম্যাচিং করে চুরি পরেছে দুই হাতে,, ঠোঁটে মিষ্টি কালার লিপস্টিক,,চোখে আইলাইনার মোটা করে পড়ানো,, গলায় শুধু একটা চেন পরেছে। নিশি কোমর বন্ধনী পরেনি পায়ে শুধু নূপুর পরেছে।

নিশি তিথির পাশেই বসেছিল প্রথম থেকে।তিথির মেহেন্দি পড়ানো প্রায় শেষ,,এরপর তার পালা মেহেন্দি পড়ার।অনেকক্ষণ ধরে একভাবে তিথির পাশে বসে থাকার জন্য কিছুটা আনইজি ফিল করছিল তাই একটু ফ্রেশ হওয়ার জন্য ওয়াশরুমে যায়।

ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হতেই এই পরিস্থতির স্বীকার হলো সে।আবির যে এমন কাজ করতে পারে তা নিশির ধারনার বাইরে ছিলো।আবিরের এতদিনের ব্যবহার মুখ বুজে সহ্য করতে পারলেও আজ তার এমন কাজের পর নিজেকে শান্ত রাখতে পারলো না সে।চোখে রাগের আগুন জ্বলে উঠলো,,, আবিরের গালে একটা প্রচন্ড জোরে চড় বসিয়ে দিলো।

নিশি যে এমন কিছু করতে পারে তা আবিরের জানা ছিলো না,,,আগে থেকেই রেগে ছিলো আবির,,,এবার আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারলো না।দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো নিশিকে।নিজেকে ছাড়ানোর সর্বাত্মক চেষ্টা করে,,,এবার চেচাঁতে লাগলো নিশি,,,সাথে গড়িয়ে পড়ছে চোখের জল,,,

-:ছাড়ুন,,,ছাড়ুন আমায়।।।।এটা কোন ধরনের অভদ্রতা (চেঁচিয়ে টলটলে চোখে)

-:ওহহ্ এখন অভদ্রতা??নিজে যখন ছেলেদের সাথে ঢলাঢলি করো,, তখন ওইটাকে বুঝি খুবই ভদ্রতা বলে?(আরো জোড়ে চেপে ধরে)

‌ নিশি কিছুক্ষন আবিরের দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে,,,বলে উঠলো-;

-:মাইন্ড ইউর ল্যাংগুয়েজ মিস্টার আবির আহমেদ।আমি কিছু বলছি না তারমানে এই নয় যে আপনি আমাকে যা তা বলবেন।আমি এতদিন চুপ করে থাকলেও আর চুপ করে থাকবো না।(রাগী চোখে)

-:ও রিয়েলি?? তো কি করবে আমায় শুনি?? যাদের সাথে ঢলাঢলি করছিলে তারা নিশ্চয় খুব ভালো তাই না??তো কোথায় কোথায় টাচ করেছে শুনি??খুব ভালো লেগেছে বুঝি???(দাঁতে দাতঁ চেপে)

আবিরের ভাষা শুনে নিশি হতবাক। এই মানুষটা তাকে এতটা ভুল বুঝবে সে বুঝতে পারেনি।

আসলে তিথির কয়েকজন কাজিন নিশি সাথে কথা বলছিল।যেহেতু তারা নিজের ইচ্ছায় তার সাথে কথা বলছিল,,তাই সে না করতে পারে নি।তো নিশি ও তাদের সাথে হেসে হেসে কথা বলছিল। তাদের মধ্যে একজন ছেলে নিশির বেশ গা ঘেঁষে কথা বলছিল।নিশি প্রথমে বুঝতে না‌ পারলেও পরে বুঝতে পেরে সেখান থেকে সরে আসে।আর আবির ঠিক সেই সময় টা দেখেছে যখন ছেলেটা নিশির গা ঘেঁষে কথা বলছিল আর নিশি হাসছিল।এইটা দেখেই তার মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছিল।

এবার নিশি আর চুপচাপ দাড়িয়ে থাকতে পারলো না,,ডানহাতটা হেচঁকা টানে ছাড়িয়ে নিজের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে আবিরের গালে চড় বসালো।রাগের মাথায় কাজটা করলেও আবিরের চোখের দিকে তাকিয়ে থমকে গেলো,,,রক্তলাল চোখগুলোতে নিশি যেনো তার ধ্বংসই দেখতে পাচ্ছে।

কিছু বুঝে উঠার আগেই নিশির ঠোঁটগুলি নিজের আয়াত্তে নিয়ে নিলো আবির।নিজের রাগগুলোকে নিশির ঠোঁটের উপর ঝাড়তে ব্যস্ত সে।অসহ্য যন্ত্রনায় নিজেকে ছাড়াতে ব্যর্থ হয়ে,, চোখ খিঁচে পাথরের মুর্তির ন্যায় দাড়িয়ে আছে নিশি।আবির কেনো এমন করছে কিছুই বুঝতে পারছে না নিশি। আবির তো এমন ছিলো না,,,,তাহল আজ কেন এমন করছে সে????আবিরের কামড়গুলো এখন ভালোবাসার পরশে পরিনত হয়েছে,,,নিশির ঠোঁটে পাগলের মতো কিস করে চলেছে সে,,,আর হাত দিয়ে কোমরে ধীরে ধীরে স্লাইড করছে।আবির যেনো নিশিতে ডুব দিতে চাইছে,,,গভীর রূপ নিচ্ছে তার ভালোবাসার পরশগুলো।নিশির শরীর কেঁপে কেঁপে উঠছে।।এবার আর সহ্য করতে না পেড়ে নিজের সর্ব্বোচ্চ শক্তি দিয়ে ধাক্কা দিলো আবিরকে,,,,,ধাক্কায় তাল সামলাতে না পেড়ে দু’পা পিছিয়ে গেলো সে।ফ্লোরে ধপ করে বসে পড়ে,, দুই হাতে মুখ চেপে ফুফিয়ে ফুফিয়ে কাদঁতে শুরু করলো নিশি………….
.
.
.
.
[বাকিটা নেক্সট পর্ব]

তোমাকে আমার প্রয়োজন পর্ব-২৭

0

#তোমাকে আমার প্রয়োজন??
#মেঘ পরী??

??পর্ব-২৭??
.
?
.

নিশীর বাসার সামনে নিলয় গাড়ি থামালো। তারপর গাড়ি থেকে নেমে নিশির হাত ধরে বাসার ভিতরে প্রবেশ করলো।নিশির বাবা সোফায় বসে তখন টিভিতে খবর দেখছিলেন হঠাৎ আবির এবং নিশির এমন আগমনে তিনি চমকে উঠলেন,,,,কিছু বলতে যাবে তার আগেই নিলয় বলে উঠল-;

-:আঙ্কেল আপনি কি আপনার মেয়ে আজকাল রাস্তায় ছেলেদের হাত একটু বেশিই ধরছিস তাও আবার অচেনা ছেলেদের হাত।

আবিরের কথায় নিশির বাবা প্রচন্ড অবাক হলেন কারণ তিনি জানেন তার মেয়ে কখনোই এমন কাজ করতে পারে না। তারপর নিশির দিকে তাকাতেই তিনি আরো এক ধাপ অবাক হলেন,,, কারণ নিশির ঠোঁট ফেটে রক্ত বেরোচ্ছে,,,আর দুটো গাল অসম্ভব রকম লাল হয়ে আছে। একমাত্র মেয়ে এমন অবস্থা দেখে,,,নিশির বাবা চিৎকার করে বলে উঠলেন-;

-:এ কি অবস্থা হয়েছে তোর মা??

নিশির বাবা চিৎকারে নিশির মা রান্নাঘর থেকে ছুটে এলেন,,,মেয়েকে দেখে তিনিও চিন্তিত গলায় বলে উঠলেন-;

-:কিরে কি করে হলো এইসব??

নিশি কিছু বলতে যাবে,,,তার আগেই আবির বলে উঠলো-;

-: আঙ্কেল আন্টি আমি করেছি ওর এই অবস্থা।

নিশির বাবা আর মা আবিরের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছেন আর নিশি নীচের দিকে তাকিয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে যাচ্ছে।

-:কিন্তু কেন??(নিশির বাবা)

-:আপনার মেয়ে রাস্তা ভর্তি লোকের সামনে,,, একটা ছেলের হাত ধরে তাকে বলে যে সে নাকি তার সাথে রিলেশন শুরু করতে চাই।তাও আবার ছেলেটা যে সে নয় একটা গুন্ডা মাস্তান টাইপ ছেলে।

-:সেকি!!(নিশির মা)

-:জ্বি আন্টি শুধু তাই নয় আমি আবার তাকে এসব পড়তে মানা করেছি বলে আপনার মেয়ে রাস্তা ভর্তি লোকের সামনে আমার দিকে আঙ্গুল তুলে বলেছে,,,আমি নাকি একজন মিডিল ক্লাস ফ্যামিলির ছেলে,,,আমার নাকি ক্ষমতা নেই আঙ্কেলের পায়ের জুতো হওয়ার‌ও।

-:কি??(অবাক হয়ে)

-:জ্বি হ্যাঁ।।ক্ষমা করবেন কিন্তু ওর গায়ে হাত না তুলে আমি থাকতে পারলাম না।

-:ঠিক করেছ বাবা একদম উচিত কাজ করেছো। নিশি তোর সাহস দেখে দিনদিন আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি,,,হ্যাঁ রে আমি কি তোকে এতই বাজে শিক্ষা দিয়েছি যে তুই মানুষের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় সেই জ্ঞানটুকুও হারিয়েছিস।আরে তোর বাবা যে টাকা ইনকাম করে,,,ভুলে যাস না এই টাকা দেওয়ার মালিক,,,তিথির হবু স্বামী।আর তাছাড়াও তোকে সাহস কে দিয়েছে আবিরের সাথে এমন আচরণ করার।

-: কিন্তু না উনি যা বলছে সব মিথ্যে কথা বলছেন??? ছেলেটা….

ব্যস আর কিছু না বলতে দিয়েই নিশির মা নিশিকে তার দিকে ঘুরিয়ে প্রচন্ড জোরে একটা থাপ্পর মারলেন।নিশির মা এমনিতে খুব ভালো মানুষ হলেও রেগে গেলে,,,তিনি ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেন,,,,তখন নিশির বাবা ও ভিজে বিড়াল হয়ে থাকেন তার সামনে।

এদিকে আবিরের হাত থেকে পরপর দুটো চড় খাওয়ার পর,,,আবার নিজের মার হাতে আরও একটা চড় খেয়ে,,,নিশি এবার আর নিজেকে আটকাতে পারল না ভ্যা ভ্যা করে কেঁদেই ফেলল।আবির বুঝতে পারিনি যে নিশির মা এমন কিছু করবো।

-:কি হচ্ছেটা কি???মেয়েটা বড় হয়েছে তাকে এরকম ভাবে মারে আছে নাকি??

-:তুমি চুপ করে থাকবে একদম।আজ তোমার জন্য‌ই মেয়েটার এত অধঃপতন হয়েছে।

-:আমি আবার কি করলাম।(অসহায় ভাবে)

-:তুমি যদি ওর সব আবদার পূরণ না করতে,,, তাহলে আজ এই মেয়ে এতোটা মাথায় চড়ার সাহস পেত না।ওর এত সাহস কে দিয়েছে,,,যে ও রাস্তাঘাটে ছেলেদের সাথে প্রেম করে বেড়াচ্ছে।। তুমি এক্ষুনি ওর জন্য একটা ছেলে দেখো,,,,তিথির বিয়ের পরেই এই মেয়েকে আমি বিদায় করব।

তিনি আরোও অনেক কথা শুনিয়ে দিলেন নিশিকে,,,আর নিশি বেচারি চুপচাপ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে আর দুই হাতে নিজের চোখের জল মুছে যাচ্ছে।

এর মধ্যে হঠাৎ আবির বলে উঠলো-;

-:আন্টি আপনাদের সাথে আমার কিছু কথা আছে।

-:কি বাবা??

-:আসলে আমি চাইছি,,,মানে আমার বাবাকে আনলে ঠিক হতো এই বিষয়ে কথা বলতে কিন্তু যেহেতু বাবা এখন ব্যাস্ত আছে বিয়ের ঝামেলা নিয়ে,,,,তাই আমি বলছি তিথির ঝামেলা মিটে গেলেই যত শীঘ্রই সম্ভব এই কাজটা সেরে ফেলতে চাইছি আমি,,,,তাই আর কোনরকম রিক্স নিতে চাইছি না।

নিশির মা এবং বাবা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে আবিরের দিকে তাকালেন,,,আবির আবার বলতে লাগলো-;

-:আসলে আমি চাইছি নিশিকে আমার বউ করতে,,,,কারণ আমি চাইনা ও অন্য কোন বাজে ছেলের চক্করে পড়ে নিজের জীবনটা নষ্ট করুক,,,আর এমনিতেই এর আগে কয়েকটা ছেলের সাথে ওকে আমি ঘুরতে দেখেছি।।

আবিরের এমন কথায় নিশি চোখ বড় বড় করে তার দিকে তাকালো,,,তারপর মনে মনে বলছে বলতে লাগলো-;

-:বাহ বেশ ভালো নিজে আমাকে দুটো চড় দিলো তারপর মাকে দিও চর খাওয়ালো,,,,এখন আবার আমাকে নিয়ে বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যা কথা বলছে।আসলে সাহস নেই তো বাবা মাকে বিয়ের কথা বলার,,,তাই এমন মিথ্যা কথা বলছে,,, হুম।।।

কথাগুলো ভাবতে ভাবতে আবিরের দিকে তাকিয়ে একটা মুখ ভেংচি কাটলো।

এদিকে আবিরের এমন কথায় নিশির মা যেন হাতে আকাশেরর চাঁদ পেয়েছেন।এমনিতেই তিনি আবিরকে আগে থেকেই অনেক পছন্দ করতেন,,,,তার ওপর তার এই হাদা মেয়ের জন্য এতো ভালো একটা জামাই পাবে,,,,,এটা ভেবেই তিনি সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলেন-;

-:তোমার প্রস্তাবে আমরা রাজি,,,, কোন একদিন তুমি তোমার বাবা মাকে নিয়ে আসতে পারো আমাদের বাড়ি।

-:কিন্তু আমি এত তাড়াতাড়ি নিশিকে বিয়ে দিতে চাচ্ছি না।

-:তুমি চুপ করবে একেই তো তোমার মেয়ে উল্টোপাল্টা কাজ করে বেড়াচ্ছে তার ওপর এত ভাল একটা ছেলে বাসায় এসে যেচে প্রস্তাব দিচ্ছে,,,আর তুমি তাকে পায়ে ঠেলছো,,,বলি হারি তোমায় মেয়ের সাথে কি তোমারও বুদ্ধি লোপ পেয়েছে এই বুড়ো বয়সে।।

-:না আসলে…

-:আমি আর কোনো কথা বলতে চাই না।আবির বাবা আমরা রাজি।

নিশি মার কথা শুনে আবির মুচকি একটু হাসলে,,,তারপর নিশির দিকে তাকিয়ে বলতে লাগল-;

-:জানতাম আন্টি আপনারা রাজি হবেন,, আমার প্রস্তাব।আর তিথির বিয়ের ঝামেলা মিটলেই আমি চাইছি ছোট্ট করে একটা অনুষ্ঠান করে বিয়েটা সেরে নিতে।বাবা-মা সবাই জানে এই ব্যাপারে শুধু আপনাদের কেই বলা জানানো হয়নি।আচ্ছা আন্টি তাহলে এখন আমরা আসি।

এই বলে নিশির হাত ধরে যেতে নিলেই,,, নিশির বাবা বলে উঠলেন-;

-:বাবা তুমি কি ওকে নিয়ে যাবে তোমার সাথে???

-:হ্যাঁ আঙ্কেল কেন??কোন প্রবলেম আছে??বিয়ে তো আর মাত্র দুদিন বাকি,,,,তাহলে ও এইখানে একা থেকে কি করবে??

-:না নিয়ে যেও তোমার সাথে কিন্তু বাসায় গিয়ে ও গালে একটু ওষুধ লাগিয়ে দিল,,,গালে অনেকটা কেটে গেছে।

নিশি তার বাবার এমন আদর মাখা কণ্ঠ শুনে,,, আবারও কেঁদে উঠলো তারপর বাবার দিকে তাকিয়ে বলে উঠল-;

-:আমি যাব না বাবা এনার সাথে।আমি এখানেই থাকবো।

নিশিকে আর কিছু বলতে না দিয়ে আবির,,, বলে উঠলো-;

-:ঠিক আছে আংকেল আমি ওকে ওষুধ লাগিয়ে দেবো সময় মতোন,,,এখন আমরা আসছি তাহলে।

এই বলে নিশির হাত ধরে নিয়ে চলে গেল।
.
.
?
.
.
নিশি চুপচাপ খাটের এক কোণে বসে আছে আর আবির আস্তে আস্তে ডেটল দিয়ে ঠোঁটের কাটা অংশগুলো ধুয়ে ,,,ওষুধ লাগিয়ে দিল। তারপর নিশির দিকে তাকিয়ে হাত দিয়ে নিশির চোখের জল মুছিয়ে দিল।নিশি অবাক হয়ে আবিরের দিকে তাকাতেই আবির মুচকি হেসে বলে উঠল-;

– বলেছিলাম না সময় হলে জানতে পারবি,,,,আমি তোর কে??? এখন বুঝতে পারছিস আমি তোর কে হয় ???আর কখনো এমন ভুল যেন দ্বিতীয়বার না হয়।।তাহলে তোর অবস্থায় এর থেকেও খারাপ হবে,,,মনে থাকে যেন কথাটা।

নিশি ছল ছল চোখে আবিরের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো-;

-:আপনি একটা পচা লোক,,,,আপনি ইচ্ছা করে মাকে দিয়ে আমাকে মার খাওয়ালেন।আপনার সাথে আমি আর কোনদিন‌ও কথা বলবো না।

-:শিহ্ চুপ একদম চুপ কোন কথা ন‌ই আর।

নিশির ঠোটে আঙুল রেখে,,,তারপর কানের কাছে মুখ এনে মুচকি বললো-;

-:টিট ফর ট্যাট।

তোমাকে আমার প্রয়োজন পর্ব-২৬

0

#তোমাকে আমার প্রয়োজন??
#মেঘ পরী??

??পর্ব-২৬??
.
?
.

নিলয় এবং তিথি অনেকক্ষণ ধরে শপিং করছে।আর এইদিকে নিশি অত্যন্ত বিরক্তি ভাবে গাড়িতে বসে আছে,,যদি সে জানতো এমন একটা পরিস্থিতি সম্মুখীন হবে সে,,,তাহলে কখনোই আসতো না আবিরের সাথে।

আবির এবং নিলয়ের গাড়ি একসাথেই যাচ্ছিল হঠাৎ একটা মোড়ের সামনে এসে,,আবির গাড়ি ঘুরিয়ে নিল।এরকম হঠাৎ গাড়ি ঘুরিয়ে নেওয়ায় নিশি প্রথমে খুবই অবাক হয়েছিল।অনেকক্ষণ ধরে আবিরকে জিজ্ঞাসা করেও কোন উত্তর পাইনি যে তারা কোথায় যাচ্ছে,,,তাই আর কিছু না জিজ্ঞাসা করে,,,চুপচাপ জানালার বাইরে তাকিয়ে আছে।অনেকক্ষণ গাড়ি চালানোর পর আবির একটা নদীর পাড়ের সামনে,,,গাড়ি থামাল।তারপর গাড়ি থেকে নেমে,,,নিশিকে নামতে বলল।

নিশি গাড়ি থেকে নেমে সামনে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেল।জায়গাটা অপরূপ সুন্দর এক সাইড দিয়ে নদী বয়ে যাচ্ছে এবং তার ঠিক পাশেই সবুজ ঘাসে ঘেরা সুন্দর একটা পটভূমি।চারিদিক গাছগাছালিতে ভর্তি সুন্দর একটা জায়গা।মৃদু বহমান বাতাসে নিশির মন ছুঁয়ে যাচ্ছে,,নিশি আপন মনে প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে ব্যস্ত,,,আর আবির ব্যস্ত নিশির সৌন্দর্য উপভোগ করতে,,,নিশি চোখ বন্ধ করে দুহাত ছাড়িয়ে প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করছিল,,,হাওয়ার তালে তাল মিলিয়ে নিশি ঢেউ খেলানো সুন্দর চুলগুলোও ওলট পালট হয়ে যাচ্ছে।

আবির নিশির একদম কাছে চলে এল তারপর নিশির চুলগুলো আস্তে করে সরিয়ে,,, কানের পিছনে গুজে দিল।আবিরের ছোঁয়ায় নিশি কেঁপে উঠলো,,,চোখ খুলে তাকিয়ে দেখলো আবির তার একদম সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আবিরকে নিজের এতটা সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে নিশি কিছুটা দূরে সরে গেল,,তারপর তার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল-;

-:আমরা এখানে কি করছি??

নিশির কোথার কোন জবাব দিল না আবির,,,সে এক দৃষ্টিতে নিশির দিকে তাকিয়ে আছে,,,নিশি এবার কিছুটা অস্বস্তি ফিল করল আবিরের এমন চাহনিতে,,,তারপর নিজেকে সামলে জিজ্ঞাসা করে উঠলো-;

-:আ..আমরা এ..এখানে কেন এসেছি??আমরা তো শপিং করতে এসেছিলাম,,,তাহলে আপনি এখানে কেন নিয়ে এলে আমাকে??কি হলো ভাইয়া চুপ করে আছেন কেন??কিছু বলুন।।

এতক্ষণ আবির চুপ করে থাকলেও নিশির মুখ থেকে ভাইয়া ডাক শুনে খুবই বিরক্ত হলো,,,তাই নিশির হাত ধরে ঝটকা টানে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে বলে উঠলো-;

-:আগে তো পেটে ঘুষি মারলে ও ভাইয়া ডাক বের হতো না তোর মুখ থেকে।তাহলে এখন কেন কথায় কথায় ভাইয়া বলে ডাকিস আমায়।(দাঁতে দাঁত চেপে)

নিশি নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বলে উঠলো-;

-:কি হচ্ছে কি ভাইয়া ছাড়ুন আমাকে।

-:কেন আমার কাছে আসতে খুব বিরক্ত লাগে তাই নারে,,,কিন্তু রাফিনের সাথে কথা বলতে তো তোর কখনো বিরক্ত লাগে না।তখন তোর বিরক্ত কোথায় থাকে রে??

নিশিকে আরও শক্ত করে নিজের সাথে চেপে কথাগুলো বলল।আবিরের কথায় নিশি অনেকটা অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে বলে উঠল-;

-:মনে হয় আপনার মাথাটা গিয়েছে???ছাড়ুন আমাকে,,,এখানে রাফিন ভাইয়া আসছে কোথা থেকে??

-:চুপ একদম বেশি কথা বলবি না।আমি যেন তোকে আর রাফিনের সাথে কথা বলতে না দেখি,,, তাহলে কিন্তু আমার চেয়ে খারাপ আর কেউ হবে না।

নিশি এবার বেশ রেগে আবিরকে বলতে লাগল-;

-:কেন রাফিন ভাইয়ের সাথে আমি কথা বলব না কেন???এক বার নয় একশো বার কথা বলবো আমি তার সাথে,,,দিস ইজ মাই পার্সোনাল ম্যাটার।আপনি কে আমাকে মানা করার??আপনি কেউই নয়,,,বাইরের লোক বাইরের লোকের মত‌ই থাকুন।

নিশির এমন কথায় আবিরের প্রচন্ড মাথা গরম হয়ে গেল,,,নিশির দুবাহু শক্ত করে চেপে ধরে,,,,রক্ত লাল চোখে নিশির দিকে তাকিয়ে বলে উঠল-;

-:আমি কে তা সময় হলে,,,ঠিকই বুঝতে পারবি।

-:আহ্ লাগছে ভাইয়া ছাড়ুন আমাকে?

-:চুপ আর একবার ভাইয়া বলে ডাকলে তোর অবস্থা কি হবে তা আমি নিজেও জানিনা। (প্রচন্ড জোরে চিল্লিয়ে)আর হ্যা লাগার জন্যই ধরা,,,শোন আমি তোকে কিছু কথা বলব,,,কান খুলে শুনে রাখ আমার কথাগুলো কারণ এক কথা বারবার বলতে পছন্দ করিনা আমি,,,বুঝতে পেরেছিস তুই।

আবিরের ধমকে নিশি প্রচন্ড ভয় পেয়ে গিয়েছিল তাই কিছু না বলে চুপচাপ মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলল।

-:দেখ অন্যদের মতো কিভাবে ভালোবাসা প্রকাশ করতে হয়,,,তা আমি জানিনা,,ভালোবাসা কি,, কাকে বলে এসব কিছুই আমি জানিনা?? আর জানতে চাইও নি কোনদিন,,,আর সত্যি কথা বলতে কাউকে আমি ভালোবাসতেও চাইনি কোনোকালেই।

কিন্তু তুই ই প্রথম মেয়ে যে আমার মনে ভালোবাসার ফুল ফুটিয়েছি,,,আমাকে ভালবাসতে শিখিয়েছিস।ফিলিংস কি তা তুই আমাকে প্রথম বুঝিয়েছিস,,,হয়তো সেটা তোর নিজের অজান্তেই।কিন্তু একবার যখন তুই আমাকে মায়াজালে আটকেই দিয়েছিস নিজের মায়া দিয়ে,,,তখন তুই চাইলেও আমার কাছ থেকে আলাদা হতে পারবি না।সুতরাং যে করেই হোক তোকে আমার চাই,,, বুঝেছিস তুই।

আবিরের কথা শুনে নিশি ৪৪০ ভোল্টের একটা শক খেলো,,,,তারপরে নিজেকে সামলে আবিরের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিল। আবিরের দিকে স্তির চাহনি নিক্ষেপ করে,,,শান্ত গলায় বলে উঠলো-;

-:আপনি কি আমাকে এই কথাগুলোই সবার সামনে বলতে পারবেন।মানে অনেকগুলো লোকের সামনে বলতে পারবেন কি??তাহলে আমি মেনে নেব আপনি আমাকে সত্যি সত্যি ভালোবাসেন।

নিশির কথায় আবির কিছুটা অবাক হলো,,, তারপর নিজেকে সামলে বলে উঠলো-;

-:বেশ তাহলে শপিংমলে কাছে চলো,,,ওখানে অনেক জন আছে আর সেই সাথে নিলয় এবং তিথি কেও সেখানে পাবে।

নিশি কোন কিছু না ভেবেই বলে উঠলো-;

-:ঠিক আছে চলুন।

.
.
?
.
.

এক মল লোকের সামনে আবির হাঁটু গেড়ে বসে নিশিকে প্রপোজ করল-;

-: জানি না কাউকে প্রপোজ কিভাবে করতে হয়,,, শুধু আমি আমার মনের কথাগুলোই তোমাকে বলতে চাই জানিনা কবে তোমার মায়াজালে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেছি কিন্তু সত্যি কথা বলছি এখন চাইলেও সেই মায়াজাল থেকে নিজেকে ছাড়াতে পারছিনা অক্ষম আমি তোমাকে ঘোষণা প্রশ্ন করছি তুমি কি আমার সারা জীবনের পথ চলার সঙ্গী হতে চাও??? আমার হাতে হাত রেখে সারা জীবন সমস্ত সুখ দুঃখের সঙ্গী হতে চাও??আমাকে একটুক্ষনি ভালোবাসা দিতে পারবে,, বিশ্বাস করো তোমাকে সারাজীবন আগলে রাখবো সমস্ত বিপদ থেকে,,, আমি জীবিত থাকতে তোমার বাড়ির কেউ কোনদিন একটা আঁচড় কাটতে পারবে না হবে কি আমার জীবন সঙ্গিনী বাঁধবে কি ঘর আমার সাথে,, হবে কি..

আর কিছু বলতে না দিয়েই খুব জোরে আবিরের গালে নিশি একটা চড় মারল।এতক্ষন মলের বেশিরভাগ মানুষ তাদের দিকে তাকিয়ে ছিল,,,তিথি এবং নিলয় ও ছিল সেখানে।তিথি তো খুবই খুশি তার ভাইয়ার এমন প্রপোজে।আর তিথি,,, নিলয়ের ঠিক পাশেই রাফিন নিজের কদবেলের মতো মুখ নিয়ে দাঁড়িয়েছিল।

আসলে সে তিথি দের বাসায় গিয়েছিল,,,, তিথির সাথে দেখা করার অজুহাতে নিশিকে দেখতে।কিন্তু সেখানে গিয়ে সে জানতে পারল নিশিরা সবাই শপিংমলে গিয়েছে,,,,বিয়ের কেনাকাটা করতে,,,,তাই আর সময় নষ্ট না করেই সে শপিংমলে উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিল কিন্তু সেখানে গিয়ে সে শুধু তিথি এবং নিলয় কেই পেল,,,পরে তাদের কাছ থেকে জানতে পারল নিশি এবং আবির কোথায় যেন গিয়েছে,,,,এইটা শুনেই রাফিনের মন খারাপ হয়ে গেল,,,,পরে সে তাদের সাথে শপিংয়ে যোগ দিল,,,,হঠাৎ কোথা থেকে আবির এবং নিশি শপিংমলে সামনে এসে হাজির হলো,,,তারপর আবির হুট করেই সবার সমনে নিশিকে প্রপোজ করলো,,,,এটা দেখে রাফিনের খুবই মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল কিন্তু পরক্ষনে নিশি আবিরের গালে চড় দেওয়া দেখে মুহূর্তেই তার মন খারাপ আকাশে উড়ে গেল। নিলয় তিথি প্রচন্ড অবাক হয়ে নিশির দিকে তাকিয়ে আছে।

আর এই দিকে আবির দুই হাত মুঠো মেরে,,,মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। আবিরকে চুপ করে থাকতে দেখে নিশি এবার বলতে শুরু করলো-;

-:কী যোগ্যতা আছে আপনার???আমাকে বিয়ে করা???জানেন আমার বাবা মাসে কত টাকা ইনকাম করে??আপনি সামান্য একজন ডাক্তার হয়ে কতইবা টাকা ইনকাম করেন যে আমাকে বিয়ের প্রপোজাল দিচ্ছেন???আপনার মত মিডিল ক্লাস লোকের সাহস দেখে আমি খুবই অবাক হয়ে যাচ্ছি!!!লজ্জা করে না এতগুলো লোকের সামনে নিজের মানতো খোয়ালেন‌ই তার সাথে আমার স্ট্যাটাসের‌ও ফেলুদা বানিয়ে ছাড়লেন।আর কখনোই আপনার এই মুখ নিয়ে আমার সামনে দাঁড়াবেন না,,,ইজ দা ক্লিয়ার।।

তারপর আবিরের সামনে গিয়ে,,,,আবিরের কানের কাছে মুখ এনে বলতে লাগলো-;

-:ঠিক এমনই অনুভূতি কিছু মাস আগে আমারও হয়েছিল মিস্টার আবির??সো টিট ফর ট্যাট।।

নিশির এমন ব্যবহারে তিথি অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে।হঠাৎ কোথা থেকে রাফিন হুট করে নিশির সামনে গিয়ে,,,,নিশির হাত ধরে বলে উঠলো-;

-:নিশি আমার অনেক বড় বিজনেস আছে।। নিলয়ের মতন অত বড় না হলেও খুব একটা ছোট ও না।আর সত্যি কথা বলতে তোমাকে প্রথম যেদিন দেখেছিলাম সেদিনই আমার তোমাকে ভালো লেগে গিয়েছিল।আর নিজের অজান্তেই তোমাকে আমি ভালোবেসে ফেলেছি। আই রিয়েলি লাভ ইউ,,,তুমি কি আমাকে বিয়ে করবে।বিশ্বাস করো তোমাকে সুখী রাখার মত যথেষ্ট টাকা আমার আছে।

রাফিনের কোথায় নিশি আবিরের দিকে তাকিয়ে,,,,রাফিনের হাত শক্ত করে ধরে বলে উঠলো-;

-:অবশ্যই আমি এমনই একজন কে খুজছিলাম,,, যে আমার যোগ্য হবে।যার স্ট্যাটাস আমার স্ট্যাটাসের সমান হবে।ওকে রাফিন আমরা রিলেশন স্টার্ট করতে পারি।

এতক্ষণ আবির চুপ করে থাকলেও,,, নিশির মুখ থেকে রিলেশন স্টার্ট করার কথা শুনে আর চুপ করে থাকতে পারল না।নিশিকে নিজের দিকে ঘুরিয়েই পরপর খুব জোরে দুটো চড় বসিয়ে দিল নিশির গালে।চরটা এতটাই জোরে ছিল যে নিশির ঠোঁট ফেটে রক্ত বেরিয়ে গিয়েছে।গালে হাত দিয়ে নিশি ছল ছল চোখে আবিরের দিকে তাকিয়ে আছে।

আবিরের এমন দিয়ে বিহেবিয়ারে রাফিনের প্রচুর মাথা গরম হয়ে যায়,,,,তাই সে আবিরের সামনে গিয়ে,,,,তার কলার ধরে বলে উঠলো-;

-:হাউ ডেয়ার ইউ???আমার হবু বউয়ের গায়ে হাত তোলার সাহস তোকে কে দিয়েছে??ইউ মিডিল ক্লাস…

ব্যাস রাফিন বেচারা জানতোই না যে সে কাকে কি বলে ফেলেছে।একেতো নিশিকে নিজের হবু বউ বলে দাবি করা তার ওপর কলার ধরে কথা বলা,,,আবির আর কিছুতেই সহ্য করতে পারল না,,,,নিশিকে ছেড়ে রাফিনের দিকে একবার তাকালো,,,,তারপর আর কোন কিছু না ভেবেই রাফিন কে মারতে লাগলো।মারতে মারতে তার অবস্থা অনেকটাই খারাপ হয়ে গিয়েছে,,,, বেচারার মুখ ফেটে রক্ত বের হচ্ছে,,,তখনই নিলয় দৌড়ে এসে আবিরকে রাফিনের থেকে দূরে নিয়ে গেল।

আবির রাফিনের দিকে তাকিয়ে চেঁচিয়ে বলে উঠলো-;

-:আজকে এই অবস্থার কথাটা মনে থাকলে,,, কখনোই আর ওকে নিজের হবু বউ বলে দাবি করবিনা।এক্ষুনি আমার চোখের সামনে থেকে চলে যা,,,,গেট আউট!!

রাফিন আস্তে করে উঠে দাঁড়ালো তারপর নিলয়ের দিকে তাকিয়ে,,,কাঁদো কণ্ঠে বলে উঠলো-;

-:দোস্ত তোর সামনে তোর হবু শালা আমাকে কাপড় কাচার মতো ধুয়ে দিল,,,আর তুই কিছুই বললি না।শালা বউ পেয়ে নিজের দোস্তকে ভুলে গেলি??এই তোর বন্ধুত্ব।

নিলয় রাফিনের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো-;

-:ভাই তুই আমার বন্ধু বলেই,,,তোকে একটা ভালো এডভাইস দিচ্ছি ভুল তো করেই ফেলেছিস অন্যের জিনিসের হাত দিয়ে।তাই বলছি ভাই আর ঝামেলা না পাকিয়ে,,,এখান থেকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কেটে পড়।নইলে আমার শালা তোর অবস্থা আরও টাইট করে ছেড়ে দেবো।

রাফিন আর কিছু না বলে আস্তে আস্তে নিজের গাড়ির দিকে হাঁটতে শুরু করলো,,,আর নিজের মনেই বলে উঠল-;

-:শালা আগে যদি জানতাম পাবলিক প্লেসে প্রপোজ করলে এমন ক্যালানি খেতে হবে,,,তাহলে কোনদিনও কাউকে প্রপোজ করতাম না এমন ভাবে।হুম হিরো সাজতে গিয়ে বাঁদর সেজে ঘরে যেতে হচ্ছে কি দিন পড়েছে আমার।

আর এদিকে নিশি আবিরের কাছ থেকে পরপর দুটো চড় খেয়ে তিথির পিছনে লুকিয়ে আছে,,, আর ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে।সে কল্পনাতেও ভাবতে পারেনি আবির এমন রিয়াক্ট করব তার সাথে।এখন তার খুব ভয় লাগছে আবিরকে।

আবির আর কিছু না বলে নিলয় এর কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে,,,,নিশির কাছে গেল।নিশি তিথির জামা এক হাতে শক্ত করে চেপে ধরে আছে আর এক হাতে নিজের চোখের জল মুছছে।আবির আর কোন কথা না বলে নিশির হাত শক্ত করে চেপে ধরে ধরল,,,আর এক হাত দিয়ে নিশির হাত তিথির জামা থেকে ছাড়িয়ে নিল।তারপর নিশিকে টানতে টানতে গাড়ির ভেতরে ঢুকিয়ে,,,নিজে গাড়ির মধ্যে বসে পরলো। তারপর গাড়ি স্টার্ট দিয়ে চলে গেল।তিথি তো হা করে তাকিয়ে আছে তাদের যাওয়ার পথে,,,কি থেকে কি হয়ে গেল সে কিছুই বুঝতে পারছে না।
.
.
.
.
[বাকিটা নেক্সট পর্বে]

তোমাকে আমার প্রয়োজন পর্ব-২৫

0

#তোমাকে আমার প্রয়োজন??
#মেঘ পরী??

??পর্ব-২৫??
.
?
.
এইভাবে হাসিখুশি মধ্য দিয়ে দিনগুলো অতিক্রান্ত হতে লাগলো আস্তে আস্তে নিশি প্রায় সুস্থ হয়ে উঠলো এখন সে নিজে নিজেই হাঁটতে পারে তিথির বিয়ে আর আট দিন বাকি,,,তাই সবাই খুবই ব্যস্ত বিয়ে নিয়ে,,,আবির তো দম ফেলারও টাইম পাচ্ছেনা,,একমাত্র বোনের বিয়ে বলে কথা।আজ তিথিদের পরিবার নিশিদের বাড়ি যাবে,,তাদের দাওয়াত দিতে তিথির বিয়ের।একই সঙ্গে তিথি ঠিক করেছে নিশিকে ও তার সাথে নিয়ে আসবে এই কদিন নিশি তার কাছে থাকবে,, আর এমনিতেও এখনো বিয়ের শপিং করা বাকি আছে তাই সে নিশি তার সাথে রাখবে বলে ঠিক করেছে।

দুপুরে তারা নিশিদের বাসায় গেল,,,নিশির বাবা মার সাথে দেখা করে তিথি নিশির রুমে চলে গেল,,,গিয়ে দেখল নিশি ফোনের দিকে খুবই বিরক্তিকর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।তিথি নিশির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করে উঠলো-;

-:কিরে কি ব্যাপার??এমন পেত্নী মার্কা মুখ করে বসে আছিস কেন তুই??

নিশি চমকে উঠলো কিছুটা তারপর তিথিকে দেখে স্বাভাবিক হয়ে বলে উঠলো-;

-:দেখ না একটা আনননাম্বার থেকে আমাকে কন্টিনিউয়াসলি ডিস্টার্ব করে যাচ্ছে।

-:কই দেখি।

এই বলে নিশি হাত থেকে ফোনটা নিয়ে দেখতে লাগলো,,,নিশির ফোনের কল লিস্ট চেক করে দেখল একটা আননোন নাম্বার থেকে প্রায় আশি প্লাস মিসড কল,,,,তিথি অবাক হয়ে নিশির দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো-;

-:এতবার তোকে ফোন কে করতে পারে??

নিশি অসহায় চোখে তাকিয়ে বলে উঠলো-;

-:জানি না।

-: কবে থেকে তোকে এমন ফোন করে ডিস্টার্ব করছে??

-:গত তিন দিন ধরে এই নাম্বার থেকে প্রচুর ফোন আসছে আমার কাছে,,,যেই ফোন রিসিভ করছি অমনি কেটে দিচ্ছে।কাল রাতেও ফোন করেছিল,,,রিসিভ করতেই হঠাৎ একটা ছেলে বলে উঠলো””আই লাভ ইউ,,আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই।””

তিথি চোখ বড় বড় করে নিশির দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো-;

-:কি!!

-:হুম।(করুণ চোখে তাকিয়ে)জানি না কি হবে তবে আমার খুব টেনশন হচ্ছে রে।।

-:ওকে তুই চিন্তা করিস না।এমনিতেই এখন থেকে বিয়ে পর্যন্ত তুই আমার সাথে থাকবি সো মে হু না,,,সব হ্যান্ডেল করে নেব,,তুই কোন টেনশন করিস না।

তিথির কথা শুনে নিশি আকাশ থেকে পড়লো অবাক হয়ে বলে উঠলো-;

-:পাগল হয়ে গেছিস নাকি তোর বিয়ে সাত থেকে আট দিন পর হবে।আমি এত তাড়াতাড়ি তোদের বাসায় গিয়ে কী ঘাস ছিড়বো??

-:সে তুই কী করবি তুই জানিস কিন্তু আমি আঙ্কেল আন্টির সাথে কথা বলে নিয়েছি তারা রাজি তোকে আমাদের সাথে ছাড়তে।নিচে মামা মামি আর ভাইয়া এসেছে তারা তাদের সাথে গল্প করছে।

তিথির মুখে ভাইয়া নাম টা শুনে নিশির বুক ধুক করে উঠলো,,,তারপর নিজেকে সামলে বলে উঠলো-;

-:আমাকে মাফ করিস তিথি আমার পক্ষে এতদিন তোদের বাসায় থাকা সম্ভব নয়।

-:শোন আমি জানি তুই কেন থাকতে চাইছিস না। তবে তোকে একটা বলে রাখি সমস্যা থেকে ভয় পেয়ে যদি সবসময় পালাতে থাকিস তাহলে কখনই সেই সমস্যা সমাধান করতে পারবি না তুই,,,যতক্ষণ না তুই নিজে সে সমস্যার সামনে রুখে দাঁড়াবি ততক্ষণ পর্যন্ত সেই সমস্যার সমাধান কিছুতেই হবে না,,বুঝতে পেরেছি আমার কথা।

-:কিন্তু….

‌ নিশিকে থামিয়ে দিয়ে বলে উঠলো-;

-:কোন কিন্তু ফিন্তু আমি শুনতে চাই না,,,তুই আমাদের সাথে আজ যাচ্ছিস আর এটাই ফাইনাল।আর তুই যদি না যাস তাহলে তোর সাথে আমি কোনদিনও কথা বলবো না।(কিছুটা মন খারাপ করে)এখন নে তাড়াতাড়ি নিজের জামা কাপড় প্যাকিং করে নে আমি তোকে হেল্প করছি।

নিশি আর কিছু বলল না জানে এখন আর কিছু বলে লাভ হবেনা।সত্যিই তো আর কতদিনই বা আবিরের কাছ থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখবে। তাই আর কিছু না ভেবে তিথির সাথে হাত লাগিয়ে নিজের জামাকাপড় প্যাকিং করে নিল। দুপুরের খাওয়া-দাওয়া সেরে বিকালের দিকে নিশিকে নিয়ে তিথিরা বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।তিথির মামা মামীরা অন্য একটি গাড়ি করে গিয়েছে আর আবিরের গাড়িতে নিশি এবং তিথি গিয়েছে,,,পুরো রাস্তায় নিশি একটাও কথা বলেনি।আবির বেশ অনেকবার লুকিং গ্লাসে নিশির দিকে তাকিয়ে ছিল।
.
.
?
.
.

আজ দুইদিন হয়েছে নিশি তিথিদের বাসায় আছে।একদিন রাতে আবার সেই আননন নাম্বার থেকে নিশির কাছে ফোন আসলো,,নাম্বারটা দেখে নিশি কিছুটা বিরক্তিকর ফেস নিয়ে ফোনটা রিসিভ করল।রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে কেউ একজন বলে উঠলো-;

-:এতক্ষণ লাগে ফোনটা রিসিভ করতে?? কোথায় ছিলে তুমি??

নিশি একেই বেশ বিরক্ত ছিল তার উপর অজানা লোকটার এমন কথাই প্রচুর রেগে গেল। তাই কিছুটা জোরে বলে উঠলো-;

-:সমস্যা কি আপনার??কেন বারবার এরকম ডিস্টার্ব করছেন আমাকে??

-: ভালোবাসি তাই।

নিশি এবার প্রচুর রেগে গেল আরেকটু জোরে চেঁচিয়ে বলে উঠলো-;

-:এই বাড়িতে মা বোন নেই??আর একবার ফোন করে ডিস্টার্ব করলে না আপনার অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে একদম এই আমি বলে রাখলাম।

-: আমি তোমাকে ভালোবাসি কিন্তু এটা বুঝতে পারছিনা এর মধ্যে থেকে মা বোনের ফ্যাক্টরটা সকতা দেখি আসছে কোথা থেকে??(কিছুটা কনফিউজড হয়ে)আর তাছাড়াও বাড়িতে মা বোনের কথা ভেবে যদি চুপচাপ বসে থাকি তাহলে এই জীবনে আমার আর বিয়ে করা হবে না।।(মজা করি)

-: তাই নাকি তো জান না যাকে ইচ্ছা তাকে আপনি বিয়ে করুন আমার তাতে কোন প্রবলেম নেই কিন্তু দয়া করে আমার পিছু ছাড়ুনি।

-:উহু তোমার পিছু কি করে ছাড়িয়ে আমি তোমাকে যে বউ বানাবো আমি আমার এটা তুমি অনেকদিন ধরেই ভেবে রেখেছি।

-:এই,,এই অসভ্য লুচু পোলা একটা তুই একবার সামনে আয় আমার তোকে মেরে যদি না বাঁদর বানিয়ে রেখেছি আমার আমিও মেয়ে নয়।

-:ও তাই নাকি তাহলে তুমি এতক্ষণ ভাবছিলে আমি তোমাকে ছেলে ভেবেছি।

এই বলে অজানা ছেলেটা হাসতে শুরু করল নিশি এবার বুঝতে পারল যে সে কি বলে ফেলেছে।তবুও নিজেকে সামলে বলে উঠলো-;

-:তা…তাই নয় তো কি আমি কি আপনাকে আমার নিজের নাম বলতাম না কি??হুম নিজেকে খুব চালাক ভাবেন না ভেবেছিলেন আমি আমার নামটা আপনাকে বলে দেবো খুব সহজে,,,হুম কিন্তু আপনার সেই গুড়ে আমি এক বস্তা বালি ঢেলে দিয়েছি।(কিছুটা ভাব নিয়ে)

-:তাই নাকি!!

-:হ্যা তাই।(রেগে বলে উঠলো)

-:ওরে বাবা আমার পিচ্চিটা তো দেখছি রাগ‌ও করতে।

-:এই এই হাউ ডিয়ার ইউ আমাকে পিচ্চি বলার সাহস আপনাকে দিয়েছে।আপনাকে যদি আমি সামনে পেতাম না তাহলে আপনাকে যে কি করতাম তা আপনার ধারণার বাহিরে।(প্রচন্ড রেগে)

-:আসবো পিচ্চি আসবো খুব তাড়াতাড়িই তোমার সামনে আসব,,,তোমাকে সারা জীবনের জন্য আমার করে নিতে।কারণ আমার এক ঘেয়ে জীবনে সর্বপ্রথম তুমিই তোমার বসন্তের রং ছুইয়ে দিয়ে আমার জীবন টাকে রঙিন করে তুলেছে। তাই আমার জীবন টাকে সুন্দরভাবে গোছাতে এবং ভালোবাসাময় করে তুলতে #তোমাকে আমার প্রয়োজন,,,বড্ড প্রয়োজন।খুব তাড়াতাড়ি তোমার সামনে এসে হাজির হবো।ততদিন পর্যন্ত না হয় নিজের খেয়াল রেখো,,,আর মাঝেমাঝে ডিস্টার্ব তো করেই থাকবো তোমাকে আমি,,,ওকে বাই এখন রাখছি।

-:হ্যালো কে আপনি???কি চাই আপনার???হ্যালো….হ্যালো…

আর কিছু বলতে পারল না ফোনের ওপাশে থাকো ব্যক্তিটি ফোন কেটে দিলে।নিশি বেশ চিন্তিত হয়ে আছে এইটা ভেবে যে কে তাকে ফোন করতে পারে,,,,এই একটা কথা তাকে বেশ ভাবাচ্ছে।এমন সময় তিথি রুমে প্রবেশ করল,,, এতক্ষণ সে নিলয়ের সাথে ফোনে কথা বলছিল।। রুমে প্রবেশ করে নিশিকে এমন বিষন্ন মনে বসে থাকতে দেখে,,,,তিথি জিজ্ঞাসা করল-;

-:কিরে তোর আবার কি হলো??

নিশি তিথির দিকে তাকিয়ে মুখ গোমড়া করে বলে উঠলো-;

-:আবার সেই লোকটা ফোন করেছিল আমাকে।।

-:কি,,,কখন???

-:তুই যখন নিলয় ভাইয়ের সাথে ফোনে প্রেমালাপ করছিলিস তখন।

নিশির কথায় তিথি কিছুটা লজ্জা পেল,,, তারপর বলে উঠলো-;

-:তোকে কে এরকম ডিস্টার্ব করছে বল দেখি??

-:সেটা তো আমিও বুঝতে পারছি না।

তিথি আর নিশি নিজেদের মধ্যে কথা বলছিল,,,,ঠিক তখনই আবির তাদের রুমে প্রবেশ করলো,,,,নিশির দিকে এক পলক তাকিয়ে তিথিকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো-;

-:তোদেরকে মা নিচে ডাকছে ডিনার করার জন্য।

আর কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনই নিশির ফোন আবার বেজে উঠলো।নিশি ভেবেছে আবার হয়তো সেই নাম্বার থেকে ফোন এসেছে তাই না দেখেই ফোনটা কেটে দিলো।নিশির এমন করে ফোন কেটে দেওয়া আবির ভ্রু কুঁচকে নিশির দিকে তাকাল,,,তারপর আবারও কিছু বলতে যাবে,,কি তখনই নিশির ফোন আবার বেজে উঠলো।নিশি ফোনটা রিসিভ করতেই অপর পাশ থেকে একজন বলে উঠল-;

-:হ্যালো নিশি??

কন্ঠটা শুনতে অন্যরকম লাগায় নিশি কিছুটা অবাক হয়ে ফোনের নাম্বারটা চেক করে দেখলে যে এটা সেই নাম্বার নয় এটা অন্য আননোন নাম্বার।তাই কিছুটা অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলো-;

-:জি হ্যাঁ আমিই নিশি কিন্তু আপনি কে??

-:আমি রাফিন,, নিলয়ের বন্ধু চিনতে পেরেছো আমাকে।তোমার মনে আছে সেই নিলয়ের এনগেজমেন্টের অনুষ্ঠানে তোমার সাথে আমি ডান্স করতে চেয়েছিলাম।

-:ও রাফিন ভাইয়া বলুন কি বলবেন?

এতক্ষণ আবির দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নিশির কাণ্ডকারখানা দেখছিল হঠাৎ নিশির মুখে রাফিন নামটা শুনে,,,,মুহুর্তেই তার মাথা গরম হয়ে উঠলো।তারপর নিজেকে কন্ট্রোল করে,,,নিশির হাত থেকে ফোনটা ছিনিয়ে নিল।নিশি অবাক হয়ে আবিরের দিকে তাকাতেই,,,আবির দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলো-;

-:খেতে ডাকছে নিচে যা সবাই।

-:আরে ভাইয়া আমার ফোনটা তো দিন।রাফিন ভাইয়া ফোন ধরে আছে।

নিশির কথায় আবির ‌আরো রেগে যায় তারপর ফোনটা নিজের কানে রেখে বলে উঠলো-;

-:আপনি এখন ফোনটা রাখতে পারেন,,,আমরা এখন ডিনার করতে যাব।আর হ্যাঁ এত রাতে কোনদিন কোন মেয়েকে ফোন দেবেন না কেমন??

এই বলে ফোনটা রেখে দিল,,,,আবিরের এমন কাণ্ডে নিশি রেগে যায়,,,আবিরের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো-;

-:এটা কি ধরনের ব্যবহার ভাইয়া??উনি আমার কাছে ফোন করেছিলেন,,,হয়তো কোন দরকার ছিল।আর আপনি ওনার সাথে ওমন রুড বিহেভিয়ার করে ফোনটা কেটে দিলেন,,,কেন??

আবির নিশির কোথায় কোন উত্তর না দিয়ে নাক ফুলিয়ে নিশির দিকে তাকিয়ে,,,,ফোনটা হাতে দিয়ে চলে গেল।আবির চলে যাবার পর নিশি তিথির দিকে তাকিয়ে অসহায় গলায় বলে উঠলো-;

-:দেখলি তোর খারুশ ভাইয়ের কান্ড!!

তিথি এতক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বেশ মজা নিচ্ছিল,,, নিশির এমন কথায় নিজের মুখটা দুঃখী দুঃখী করে বলে উঠলো-;

-:হুম কি আর বলবি বল,,,,কিছু বলে লাভ নেই। তার চেয়ে বরং চল আমরা নিচে গিয়ে ডিনারটা সেরে আসি।

নিশিকে আর কিছু বলতে না দিয়ে তার হাত ধরে তিথি নিচে নেমে গেল,,,তারপর সবাই ডিনার সেরে যে যার রুমে চলে গেল।কাল তিথিরা বিয়ের শপিং করতে বেরোবে,,,,তাই সবাই তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পরল।

.
.
?
.
.

পরের দিন বেলা 11 টার সময় তিথি এবং নিশি রেডি হয়ে নিল।তিথি,,নিশি,,,আবির আর নিলয় এরা চারজন যাবে শপিং করতে।নিশি আর তিথি রেডি হয়ে নিচে অপেক্ষা করতে লাগলো নিলয়ের জন্য,,,,কারণ নিলয় তাদের সাথে বাসার সামনে মিট করবে বলেছে,,,,তারপর সেখান থেকে চারজনে একসাথে শপিং করতে বেড়বে।কিছুক্ষণ পর নীলয় এসে হাজির হলো।তিথি তাড়াতাড়ি গাড়িতে উঠে ড্রাইভিং সিটে নিলয়ের পাশে বসে পরল।নিশি যেই গাড়িতে উঠতে যাবে,,,অমনি তিথি বলে উঠল-;

-:আরে আরে কি করছিস!!

নিশি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তিথির দিকে তাকাতেই,,,তিথি দাঁত বের করে হেসে বলে উঠলো-;

-:আরে আমার বিয়ে বলে কথা শপিং তো করবো এত এত।

-:তো!!(ভ্রু কুঁচকে)

-: আরে ডাফর এতগুলো শপিং করলে গাড়ি পিছন পুরো ভরে যাবে না,,,তাহলে তুই বসবি কোথায়???তারচেয়ে বরং তুই ভাইয়ার সাথে ভাইয়ের গাড়িতে করে আয়।

-:হোয়াট কি যা তা বলছিস???আমি ঠিক ম্যানেজ করে নিতে পারব।

এই বলে যেই নিশি বসতে হবে,,,অমনি নিলয় বলে উঠল-;

-:এইযে বনু তিথি ঠিকই বলেছে তুমি বরং পিছনে শালা বাবুর গাড়িতে করে আসো,,,, তোমার পিছনে বোসতে কষ্ট হবে।

-:কিন্তু ভাইয়া…

-:আরে বনু তোমার ভালোর জন্যই বলছি,,,যাও।

নিশি একবার তিথি এবং নিলয়ের দিকে তাকিয়ে মুখ গোমরা করে পিছনে আবিরের গাড়ির কাছে চলে গাড়ি গেল।নিশিকে নিজের গাড়ির সামনে আসতে দেখে আবির কিছুটা বাঁকা হাসলো তারপর একটু ভাব নিয়ে নিজের গাড়িতে উঠে পড়লো।নিশি আবিরের দিকে একবার তাকিয়ে যেই পিছনের সিটে বসে উঠতে হবে অমনি আবির বলে উঠল-;

-:এক্সকিউজ মি!!??

-:কেয়া হে!!??

-: আমি কি তোর ড্রাইভার????

-: কেন আপনি আমার ড্রাইভার হতে যাবেন কেন???

-: তাহলে তুই পিছনের সিটে উঠছিস কেন,,, চুপচাপ সামনে এসে বস।(দাঁতে দাঁত চেপে)

নিশি আর কিছু না বলে আবিরকে একটা ভেংচি দিয়ে,,,আবিরের পাশে বসে পরল।আবির নিজের সানগ্লাসটা পড়ে,,, বাঁকা হেসে গাড়ি স্টার্ট দিলো।
.
.
.
.
[বাকিটা নেক্সট পর্বে]