Friday, July 11, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1845



তোমাকে আমার প্রয়োজন পর্ব-২৪

0

#তোমাকে আমার প্রয়োজন??
#মেঘ পরী??

??পর্ব-২৪??
.
?
.

এনগেজমেন্ট শেষ হলে,,,রাফিন,,নিলয়ের বন্ধু মাইক নিয়ে অ্যানাউন্স করতে শুরু করলো-;

-:হ্যালো গুড ইভিনিং এভরি বডি।আজ আমার দোস্ত নিলয়ের এনগেজমেন্টের অনুষ্ঠান,,,সুতরাং কিছুতো ডিফারেন্স হবেই।

রাফিনের কথায় সবাই আগ্রহ দৃষ্টিতে রাফানের দিকে তাকালো,,,তা দেখে রাফিন আবার বলে উঠলো-;

-:আজ একটা ডিফারেন্স কাপাল ডান্স হবে। মানে নরমাল কাপল ডান্স থেকে আলাদা,,এই কাপল ডান্সটা।কারন ডান্স টা হবে একটা পেপার সিটের ওপর।গান চলবে এবং গানের তালে এখানে উপস্থিত কাপলদের ডান্স করতে হবে।যে কাপল গান চলাকালীন পেপারের থেকে বাইরে বেরিয়ে যাবে,,,তারা এই খেলা থেকে ডিসকোয়ালিফাই।সো সবার প্রথমে আমাদের নিউলি কাপেল কে ওয়েলকাম করছি এখানে আসার জন্য।

উপস্থিত সবাই হাততালি দিতে লাগলো।নিলয় তিথির হাত ধরে স্টেজে নিয়ে এল,,, এরপর আরো কয়েকজন কাপল খেলাতে যোগদান করল।সবাই যে যার জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে,,,হঠাৎ রাফিনের নজর নিশির দিকে গেল। নিশি এক সাইডে চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিল।রাফিন নিশির কাছে গিয়ে বলল-;

-:হাই বিউটিফুল!!তুমি কে হও??আই মিন মেয়ের পক্ষের কে হও তুমি??কারণ তুমি ছেলেপক্ষ তো ন‌ও।

নিশি রাফিনের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো-;

-:জি আমি তিথির বান্ধবী।

-:ও তার মানে তো আপনি অনেক স্পেশাল।

-:মানে??(ভ্রু কুঁচকে)

-:না মানে আপনি ভাবির বান্ধবী,, তাহলে তো আপনি ভাবির জন্য খুব স্পেশাল একজন।

নিশি কিছু না বলে মুচকি একটু হাসলো।

-: আপনার হাসিটা খুব সুন্দর।

-:জি!!

-:না মানে আপনি কি একা!!

-:মানে??

কিছুটা অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করল নিশি।

-:মানে আমি বলতে চাইছি আপনি কী সিঙ্গেল?? আসলে আপনার কোন পার্টনার নেই তো তাই বলছি আপনি চাইলে আমার সাথে ডান্স করতে পারেন।কারণ ওখানে একটা পেপার শিট এখনও খালি পড়ে রয়েছে।

-:ধন্যবাদ কিন্তু আমি ডান্স করব না।

-:প্লিজ সুইটি না করো না।তুমি খুব কিউট দেখতে,,,প্লিজ ওয়ান চান্স।

নিশি কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না,,,এতক্ষন আবির এক সাইডে চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিল,,,নিশি আর রাফিনের কথাবার্তাও তার চোখ এড়ায়নি।এতক্ষণ চুপ করে থাকলেও এবার আর চুপ করতে পারলো না।সোজা গিয়ে নিশির হাতটা ধরে,,,অনেক কষ্টে নিজের রাগটা কে সামলিয়ে রাফিনের দিকে তাকিয়ে,,,বলে উঠলো-;

-: ওর ডান্স পার্টনার আমি,,আপনাকে নিয়ে চিন্তা করতে হবে না।ওখানে একটা সিট খালি আছে তো,,,ডোন্ট ওয়ারি আমি আর ও আপনার এই গেমে অংশগ্রহণ করছি,,,,যেহেতু আপনি এই গেমটা হোস্ট করছেন সুতরাং আপনার এই গেমে এটেন্ড না করাই ভালো।

এই বলে নিশির হাত শক্ত করে ধরে টেনে নিয়ে পেপার শিট টার উপর দাঁড়ালো।আবির এমন কান্ডে রাফিন এবং নিশি দুজনেই খুব অবাক হল।আর এই দিকে তিথি মুচকি মুচকি হাসতে লাগল।তিথিকে হাসতে দেখে নিলয় বলে উঠলো-;

-:কি ব্যাপার এত হাসার কি আছে??

-:আপনি একটা বলদ।

-:কি আমি বলদ?(কপট রাগ দেখিয়ে)

-:তা নয় তো কি!!বুঝতে পারলেন না আপনি ওখানে কি হলো??

-:ওখানে আবার কি হলো??(কিছুটা অবাক হয়ে)

-:আরে বোকারাম দেখলেন না ভাইয়া কি রকম জেলাস ফিল করল রাফিন ভাইয়া নিশির সাথে ডান্স করবে বলেছে বলে।

-:ওও!!

এই বলে নিলয় তিথি কোমরে হাত দিয়ে আলতো করে চাপ দিয়ে তিথিকে নিজের কাছে নিয়ে এলো,,,তারপর কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলে উঠলো-;

-:অন্যের প্রেম ঠিকই চোখে পড়ছে,,,কিন্তু এদিকে যে আরও একজনের অবস্থা যে খারাপ হয়ে পড়ছে,,,,সেদিকে কি আপনার খেয়াল আছে ম্যাডাম??

তিথি অবাক চোখে নিলয়ের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলো-;

-:কার অবস্থা??

নিলয় তিথির কমর আরেকটু চেপে নিজের সাথে মিশিয়ে নিল,,,,নিলয়ের এমন কাজে তিথি কিছুটা কেঁপে উঠল তারপর বলে উঠলো-;

-:কি করছেন ছাড়ুন,,সবাই দেখছে।

-:সসস চুপ বেশি কথা বলো না।। যে দেখছে দেখুক আই ডোন্ট কেয়ার।আর আমিতো আমার বউকে ধরেছি কে কি বলবে এতে।

-:আমি কিন্তু এখনও আপনার বউ হইনি।

-:তাই নাকি!!

-:জি (মাথা নাড়িয়ে)

-:তো চলো আজ বিয়ে করে ফেলি,,,তোমাকে আমার যে আর তর সইছে না।তোমাকে খুব কাছে পেতে ইচ্ছা করছে,,,তোমাকে মন ভরে আদর…

কিছু বলতে না দিয়ে নিলয়ের মুখে চেপে ধরল তারপর ফিসফিসিয়ে বলে উঠলো-;

-:আপনার লজ্জা শরম দিনে দিনে ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে,,,,এতগুলো লোকের সামনে কি যা তা বলছেন।

মুখ থেকে তিথির হাত সরিয়ে নিলয় বলে উঠলো-;

-:এই যে ম্যাডাম ছেলেরা যদি লজ্জা পেতে শুরু করে,,,তাহলে আর আপনাদের মা হতে হবে না।

-:ছিঃ আপনি না একটা অসভ্য লোক।

তিথির কথা শুনে নিলয় হেসে ফেললো। ওদিকে নিশি আবির কাছ থেকে নিজেকে ছাড়ানোর বৃথা চেষ্টা করছে।আবির শক্ত করে তার হাত ধরে রেখেছে,,,তা দেখে নিশি বলে উঠলো-;

-:আরে ভাইয়া কি করছেন??ছাড়ুন আমার হাত আমি পার্টিসিপেট করতে চাই না।

নিলয় দাঁতে দাঁত চেপে নিশির দিকে তাকে বলে উঠলো-;

-:তা পারবি কেন?? আমার সাথে নাচ করতে তোর ভালো লাগেনা,,,কিন্তু ওই ছেলেটার সাথে তো নাচ করতে যাচ্ছিলিস।

নিশি কিছুটা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল-;

-:মানে!!

-:তুই কি ভাবিস আমি কিছু বুঝিনা,,,যেই ওই ছেলেটা তোকে ডান্সের প্রস্তাব দিল অমনি তুই ঢং ঢং করে তার সাথে নাচতে যেতে রাজি হয়ে গেলি।

আবিরের এমন কথায় নিশি রেগে গেলে,,, তারপর আবিরের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো-;

-:বেশ করব যাব,,,তাতে আপনার কি??কে হন আপনি আমার???আমি যার সাথে ইচ্ছা যাব,, যার ইচ্ছা হয় তার হাত ধরবো,,,সেটা সম্পূর্ণ আমার ইচ্ছা,,এতে আপনার কথা বললার কোন অধিকার নেই।মাইন্ড ইট আর আমি আপনার সাথে ডান্স করতে চাইনা।

এই বলে যে চলে আসতে নেবে অমনি আবির তার হাত ধরে এক ঝটকায় নিজের সাথে মিশিয়ে মিলে,তারপর নিশির কোমর শক্ত করে ধরে,,,বলে উঠলো-;

-:খবরদার এখান থেকে,,,এক পা ও নড়ার চেষ্টা করবি না।যদি করিস তাহলে তোর অবস্থা কি হবে তা তুই কল্পনাও করতে পারবি না।

আবির এমন স্পর্শ নিশি কেঁপে উঠলো,,,কারণ এই প্রথম আবির নিশির এতটা কাছে।

কিছুক্ষণের মধ্যেই ডান্স শুরু হয়ে গেল।গান চলার মাঝে একজন কাপল পেপার সিটের বাইরে বেরিয়ে যাওয়ার,,,,তারা ডিসকোয়ালিফাই হয়ে গেল।এই করতে করতে প্রায় অনেকেই ডিসকোয়ালিফাই হয়ে গেল।এখন শুধু আবির-নিশি এবং নিলয়-তিথি বাকি আছে। পেপারটা অনেকটা ফোল্ড হয়ে গেছে,,,সবাই জুতো খুলে ডান্স করছে,,,যাতে কেউ ডিস ব্যালেন্স না হয়।

তিথি নিলয়ের পায়ের উপর পা তুলে,,,দুহাত দিয়ে নিলয়ের গলা জড়িয়ে ধরে স্লো মোশন গানের তালে তালে নিজের কোমর দোলাচ্ছে,,,আর নিলয় তিথির কোমর নিজের দুই হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে তিথির সাথে তাল মিলিয়ে নাচছে।

ওদিকে আবির নিশিকে একদম নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়েছে,,,,এক হাত নিশির কোমরকে সম্পূর্ণ জড়িয়ে ধরেছে আর একটা হাতে নিশির পিঠে স্লাইড করছে,,,,নিশির দুহাত আবিরের বুকের ওপর রেখেছে,,,দুজনে এতটাই কাছে এসেছে যে আবিরের নাকের সাথে নিশির ডাক নাক বারবার ঠেকে যাচ্ছে।এই প্রথম নিশি আবিরের এতটা কাছে,,,নিশির হার্টবিট খুব দ্রুত বিট করছে।আর এদিকে আবির একদৃষ্টিতে নিশির দিকে তাকিয়ে আছে।সেও এই প্রথম নিশিকে এতটা কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করছে।

এবার পেপারের ফোল্ডার পালা,,,এই ফোল্ডারের উপর যে কাপেল ডান্স কমপ্লিট করতে পারবেনা,,,,সেই উইনার হবে।পেপারটা ফল্ড করে নিলয় তার উপরে দাঁড়িয়ে তিথির কোমর ধরে উঁচু করে তুলল,,,তিথি প্রথমে ভয় পেয়ে গিয়েছিল তারপর নিজেকে সামলিয়ে নিলয় গলা শক্ত করে জড়িয়ে ধরে নিলয়ের কপালে নিজের কপাল ঠেকালো,,,,তিথির পা দুটো অনেকটা উঁচুতে ঝুলছে,,,এই অবস্থায় নিলয় স্লো মোশনে নাচতে লাগলো।

ওদিকে আবির নিশিকে কোলে তুলে নিল,,, আচমকা কোলে তুলে নেওয়ায় নিশি এক হাত আবিরের গলা পেঁচিয়ে ধরে আর আরেক হাতে আবিরের শার্ট খিমচে ধরে আবিরকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল।ওরকম পজিশনেই আবির স্লো মোশনে নাচতে ভিডিও লাগলো।

5 মিনিট হয়ে যাবার পরেও কেউ ডিসকোয়ালিফাই হলো না তাই দেখে তাদের দুই কাপলকেই উনার ঘোষণা করা হলো।এইভাবে অনুষ্ঠানটা হাসিখুশির মধ্য দিয়ে শেষ হলো।
.
.
.
.
[বাকিটা নেক্সট পর্বে]

তোমাকে আমার প্রয়োজন পর্ব-২৩

0

#তোমাকে আমার প্রয়োজন??
#মেঘ পরী??

??পর্ব-২৩??
.
?
.
আজ তিথি এবং নিলয় এনগেজমেন্টের শপিং করতে বের হবে।অন্যান্য শপিং সব হয়ে গিয়েছে,,,আর ডেকোরেশনের সমস্ত কিছু আবির নিজের হাতে সামলে নিয়েছে,,একমাত্র বোনের এনগেজমেন্ট এর অনুষ্ঠান বলে কথা।কমিউনিটি সেন্টারে তিথির এনগেজমেন্টের অনুষ্ঠান হবে। এইদিকে নিলয়ের দিক থেকে ও সমস্ত আয়োজন হয়ে গিয়েছে।শুধু তিথি এবং নিলয়ের এনগেজমেন্টের দিনে পড়ার জন্য ড্রেস কেনা হয়নি এবং কিছু শপিং বাকি আছে,,,তাই তারা বেরিয়েছে।

নিলয় তিথিকে নিয়ে প্রথমে শপিংমলে ঢুকলো,,তারপর সেখান থেকে ওম্যান সেকশনে গিয়ে তিথির জন্য একটা হোয়াইট কালারের বারবি গাউন কিনল,,,খুব সুন্দর দেখতে গাউন টা,,অনেকটা ফোলানো এবং ঘেরওয়ালা।এরপর সেখান থেকে বেরিয়ে জেনারেল কাউন্টারে গিয়ে,, তিথি নিলয়ের জন্য একটা কমপ্লিট ব্লাক সুট চয়েজ করলো।নিলয় আবির,,নিশি এবং মামা-মামীর জন্য‌ও ড্রেস কিনলো নিজে পছন্দ করে।

এরপর সেখান থেকে বেরিয়ে নিলয় তিথিকে নিয়ে জুয়েলারি সেকশনে গেল এবং সেখান থেকে তিথির জন্য একটা ডায়মন্ড পেন্ডেন্ট কিনলো ইউথ গোল্ড চেন,,একটা ডায়মন্ড ব্রেসলেট,,ছোট ডায়মন্ডের টপ ইয়ার রিং এবং একটা নোস পিন ও কিনলো।আংটি কিনতে চেয়েছিল কিন্তু তিথি বারণ করে দেয়,,কারন সে একেবারে এনগেজমেন্টের দিনেই নিলয়ের কাছ থেকে আংটি পড়বে,,, তার আগে নয়।

আর যেহেতু দুই পরিবারের তরফ থেকে আগে থেকেই আংটি কেনা হয়ে গিয়েছে,,,তাই নিলয় আর আংটি কিনল না।এরপর সেখান থেকে বেরিয়ে তিথির জন্য কিছু মেকআপ মেটেরিয়ালস কিনে,,,তারা ফুড সেকশনে চলে গেল,,,তারপর কিছু খেয়ে তিথিকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে,, নিলয় অফিসে চলে গেল।
.
.
?
.
.
দেখতে দেখতে এক সপ্তাহ কেটে গেল।আজ তিথির এনগেজমেন্ট তাই সকাল থেকে আবির খুবই ব্যস্ত,,,দম নেওয়ার ও টাইম নেই তার।তিথি আগের দিন নিশিদের বাড়িতে গিয়ে নিশিকে জোর করে নিয়ে এসেছে,,প্রথমে নিশি আসতে চাইছিল না কিন্তু তিথী জোরের কাছে,,তাকে শেষমেষ হার মানতেই হলো।নিশির বাবা-মাকেও তিথি আনতে চেয়েছিল কিন্তু নিশির বাবার একটা কাজ থাকায় তারা আসতে পারেনি,,,তাই তারা বিকালে আসবে।

প্রায় সব মেহমানরা চলে এসেছে।যেহেতু অনুষ্ঠানটা কমিউনিটি সেন্টারে হবে সুতরাং অনেকেই সকালের খাবার খেয়ে,,,সেখানে চলে গিয়েছে।সকাল ন’টায় নিশির ডাকে তিথির ঘুম ভাঙলো,,,চরম বিরক্তিকর ফেস নিয়ে নিশির দিকে তাকিয়ে,,,জিজ্ঞাসা করল-;

-:কি হয়েছে??এত সকাল সকাল ডাকছিস কেন আমাকে??ঘুম পাচ্ছে খুব,, ঘুমাতে দে।

এই বলে যেই শুতে যাবে,,,অমনি নিশি তিথির হাত ধরে টেনে তুলল,,,তারপর তিথির দিকে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে বলে উঠলো-;

-:কটা বাজে জানিস??নটা!!ভুলে গেছিস আজকে কি??

তিথি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে নিশির দিকে তাকাতেই,,নিশি বলে উঠলো-;

-:লাইক সিরিয়াসলি তিথু!!তুই জানিস না আজকে কি??আজ তোর এঙ্গেজমেন্ট তাও আবার নিলয় ভাইয়ের সাথে।আর তুই পড়ে পড়ে ঘুমোচ্ছিস,,,কুম্ভকর্ণ একটা।

নিশির কথা শুনে তিথি কিছুটা অবাক হয়ে গেল,,,কারণ সে সত্যিই ভুলে গিয়েছিল আজ তার এনগেজমেন্ট।তারপর নিশির দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো-;

-:লজ্জা করে না তোর,,,আজ আমার এনগেজমেন্ট,,,আর তুই!!তুই আমাকে এত দেরিতে ডাকছিস।এই সত্যি করে বলতো,,,তুই আমার বেস্টু নাকি অন্য কিছু??

সন্দেহের দৃষ্টিতে নিশির দিকে তাকিয়ে।তিথির কথা শুনে নিশি অসহায় নজরে তার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো-;

-:বাহ ভালো করতে নেই দেখছি মানুষের।।ভালোর জন্যই তোকে আমি ডাকলাম আর তুই!!তুই কিনা আমাকে কথা শোনাচ্ছিস।জানিস এক ঘন্টা ধরে তোকে ডাকছি আমি,, কিন্তু তুই কুম্ভকর্ণের মত ঘুমিয়ে যাচ্ছিস।এতে আমার কি দোষ বল??আচ্ছা এবার তাড়াতাড়ি ওঠে,,,ফ্রেশ হয়ে নিচে চল,,,আন্টি অনেকক্ষণ ধরে ডাকছে,, ব্রেকফাস্ট করার জন্য।তোর জন্য আমিও এখনো ব্রেকফাস্ট করিনি,,খুব খিদে পাচ্ছে তাড়াতাড়ি ওঠ।

নিশির কথা শুনে তিথির কিছুটা কষ্ট হল,,, সত্যিই তো নিশি অসুস্থ শরীর নিয়ে না খেয়ে আছে আর সে পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে।নিশি মোটামুটি হাঁটতে পারলেও,,,এখনো পুরোপুরি সুস্থ হয়নি।হাতের ব্যাথাটা বেশ ভালোই আছে আর মাথার চোট টা অনেকটা শুকিয়ে গিলেও,,একটু ব্যাথা আছে।অনেক কড়া কড়া ওষুধ খেতে হয় তাকে,,, আর এখন নটা বাজে,,,এখনো সে ব্রেকফাস্ট করিনি,,,এটা ভাবতেই তিথির মনটা খারাপ হয়ে গেল।তিথিকে চুপচাপ থাকতে দেখে,,,নিশি তিথিকে এক ধাক্কা দিল,,তারপর জিজ্ঞাসা করল-;

-:কিরে কোথায় হারিয়ে গেলি?বুঝি বুঝি,,,সব বুঝি।এখন তোমার মন যে নিলয় ভাইয়ের কাছে।

ঠাট্টার ছলে নিশি বলল কিন্তু নিশির কথায় তিথি কোন উত্তর না দিয়ে,,,তার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো-;

-:সরি রে,,,একেই তোকে কতগুলো ওষুধ খেতে হয়।তার ওপর তুই এখনো না খেয়ে আছিস,,তাও আবার আমার জন্য।তোর খুব কষ্ট হচ্ছে না রে,,,দাঁড়া আমি এক্ষুনি ফ্রেশ হয়ে আসছি।

তিথির কথা শুনে নিশি তিথির মাথায় ছোট্ট একটা চাটি মেরে বলে উঠলো-;

-:তুই একটু বেশিই বুঝে যাচ্ছিস আজ-কাল।। আমার যদি খিদে পেত না তাহলে তোর জন্য আমি অপেক্ষা করতাম না বুঝলি,,,আমি নিজেই নিচে নেমে খেয়ে নিতাম।

নিশির কথা শুনে তিথি একটু হাসলো,,,কারণ সে জানে আর যাই হোক তিথি এবং নিশি যখন এক জায়গায় থাকলে,,,কখন‌ই কেউ কাউকে ছাড়া একা একা খাইনি।সত্যি এই দুনিয়ায় নিশির মতন বন্ধু পাওয়া অনেক ভাগ্যের ব্যাপার,,,তার মতো সহজ সরল মেয়ে খুব কমই আছে দুনিয়াতে,,,কেন যে ভাইয়া তাকে বুঝল না।

আর কিছু না ভেবে বিছানা ছেড়ে উঠে পরল কারণ নিশির এখনও খাওয়া হয়নি।তারপর ফ্রেশ হয়ে নিচে নেমে গেল দুজনে।ডাইনিং টেবিলে তিথি এবং নিশি বসে আছে।বাড়ির প্রায় সবাই দের খাওয়া হয়ে গিয়েছে,,মামি তিথি এবং নিশির প্লেটে খাবার বেড়ে দিল।তারপর তারা ব্রেকফাস্ট সেরে নিল।
.
.
?
.
.
বিকালে নিশি এবং তিথি পার্লারে চলে গেল,,,তিথির কিছু কাজিন ও তিথির সাথে যেতে চেয়েছিল,,,কিন্তু অনেক দেরি হয়ে যাওয়ায় তারা একেবারে সেন্টারে চলে গিয়েছে।প্রায় দেড় ঘন্টা ধরে পার্লারের লোকেরা তিথি কে সাজালো।সাজানোর পর তিথি পিছনে ঘুরতেই,,,নিশি হাঁ হয়ে গেল,,,এতক্ষন সে সোফায় বসে ম্যাগাজিন পড়ছিল আর তিথিকে অপজিট সাইডে পার্লারের লোকেরা সাজাচ্ছিল।তাই এতক্ষণ সে তিথিকে লক্ষ্য করেনি।

হোয়াইট কালারের বার্বি গাউন অসম্ভব সুন্দর লাগছে তিথিকে দেখতে আজ।গাউনটা মাটির নিচ পর্যন্ত,,,পুরো গাউনটা ফোলানো।চুলটা খোপা করে বাধা এবং খোপার মাঝখানে হোয়াইট কালারের ছোট ছোট স্টোন দিয়ে সাজানো,,,আর মাথায় একটা ছোট্ট হোয়াইট স্টনের ক্রাউন,, ক্রাউনটা বেশ উজ্জ্বল দেখতে অনেকটা ডায়মন্ডের মতন।তিথি আজ নিলয়ের দেওয়া জুয়েলারিতে সেজেছে,,,দুই হাতে দুটো ব্রেসলেট,,কানে ছোট্ট টপ,,গলায় পেনডেট গোল্ড চেনের সাথে আর নাকে নোস পিন।চোখে গারো কাজল,,ঠোঁটে লাল লিপস্টিক আর হালকা মেকওভারে তিথিকে আজ পরীর মতন দেখতে লাগছে।নিশি হাঁ করে তিথির দিকে তাকিয়ে আছে,,নিশিকে অমন তাকিয়ে থাকতে দেখে,,তিথি জিজ্ঞাসা করল-;

-:মুখ বন্ধ কর,,ন‌ইতো মশা ঢুকে যাবে।।

তিথির কথায় নিশি নিজেকে সামলে বলে উঠলো-;

-:সত্যি তিথি আজ সিওর নিলয় ভাইয়া তোকে দেখে জ্ঞান হারাবো।।বিশ্বাস কর আমি যদি ছেলে হতাম তাহলে তোকে এক্ষুনি বিয়ে করে নিতাম,,, কিন্তু আমার ভাগ্য কি নির্মম দেখ আমি ছেলে না মেয়ে হলাম।

কাঁদো কাঁদো সুরে বলে উঠলো।নিশির কথা শুনে তিথি শব্দ করে হেসে উঠলো,,বলে উঠলো-;

-:থাক থাক এত পাম দিতে হবে না আর।

তারপর তিথি পার্লারে লোকেদের উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো-;

-:আমার এই বান্ধবীটা কে পরীর মতন সাজিয়ে দিন তো।

তিথির কথা শুনে নিশি অবাক হয়ে বলল-;

-:মানে কি??পাগল হয়ে গেছিস নাকি আমি এতেই ঠিক আছি,,,আমার আর কিছু লাগবে না।

-:তুই একদম কথা বলবি না,,,লজ্জা করে না বান্ধবীর বিয়েতে এরকম বিধবা মার্কা সেজে থাকতে।চুপচাপ থাকবি ওরা সাজাবে তোকে তাই সাজতে হবে আমার কসম।

নিশি আর কিছু বলল না কারণ সে জানে তিথিকে বলে কিছু লাভ হবে না।তারপর পার্লারে লোকেরা নিশিকে ও সাজিয়ে দিলো।নিলয় নিশির জন্য যে ড্রেসটা কিনেছিল,,,নিশি সেটাই পড়েছে। হালকা স্কাই ব্লু কালার গাউন খুব সুন্দর গাউনটা,,,তিথির মতন অতটা ফোলানো না হলেও বেশ ফোলানো,,চুলগুলো স্টেটনার দিয়ে কারলি করে এক সাইডে রাখা আর কানের পিছনে চুলের ভাঁজে আর্টিফিশিয়াল বেলি ফুল দিয়ে সাজানো,,, চোখে গারো করে আইলাইনার পড়ানো যেহেতু নিশি কাজল পরতে খুব একটা পছন্দ করে না তাই আইলাইনার দিয়েছে,,,আর ঠোঁটে পিয়াজি কালার লিপস্টিক।দুই হাতে দুটো করে সরু চুরি,,, কানে দুটো ছোট্ট ইয়ার রিং আর গলায় সরু একটা সোনার চেন যা সে সবসময় পড়ে থাকে।তিথির মতই হালকা মেকওভার করা হয়েছে,,ব্যাস এইটুকু সাজেই নিশি কেও আজ পরীর মত দেখতে লাগছে।সত্যি আজ দুই বান্ধবীর দিক থেকে চোখ সরানো ও দায় হয়ে পড়েছে।এরপর তারা পার্লারের বিল পেমেন্ট করে কমিউনিটি সেন্টারে চলে গেল।
.
.
?
.
.
কমিউনিটি সেন্টারে প্রবেশ করতে সবার তিথি এবং নিশির দিকে হাঁ হয়ে থাকি আছে তাকিয়ে আছে।তিথির বারবার চারিদিকে তাকাচ্ছে,,, তিথি এমন কাণ্ডে নিশি তিথি কানে ফিশ ফিশ করে বলে উঠলো-;

-: এই যে মিস একটু সবুর করুন,, আপনার মিয়া আপনার জন্য স্টেজে অপেক্ষা করছেন,,ওই দেখুন।

নিশির কথায় তিথি কিছুটা লজ্জা পেল,, তারপর স্টেজের দিকে তাকিয়ে দেখল,,নিলয় বসে আছে স্টেজের উপর।।নিলয়কে দেখতে আজ চরম সুন্দর লাগছে,,যে তাকাবে সে আজ তার দিক থেকে চোখ ফেরাতে পারবে না।কমপ্লিট ব্ল্যাক কালার এর স্যুট পড়েছে আজ নিলয়,,, ভিতরে হোয়াইট কালারের শার্ট,,,প্যান্টটাও ব্ল্যাক কালারের,,,পায়ে ব্ল্যাক শু।চুলগুলো সিল্কি হ‌ওয়ায় বারবার তার কপাল ছুঁয়ে যাচ্ছে।তিথি নিলয় এর দিক থেকে চোখ সরাতে পারছে না,,এতটাই সুন্দর লাগছে আজ তাকে দেখতে।আর এইদিকে নিলয়!! সে তো হা করে তিথির দিকে তাকিয়ে আছে। আর মনে মনে ভাবছে-;

-:এই মেয়েটা তো আমার মাথা একদমই খারাপ করে দেবে দেখছি,,,এত সুন্দর করে কে সাজতে বলেছে তাকে।।উফ!!নিজেকে কন্ট্রোল করা দায় হয়ে পড়েছে।

নিশি তিথিকে স্টেজে নিয়ে গিয়ে নিলয় এর পাশে বসিয়ে দিল,,,হঠাৎ নিশির নজর যায় স্টেজের সামনে থাকা আবির এর উপর।আবির আজ স্কাই কালারের শার্ট পড়েছে তার ওপর হোয়াইট কালারের ব্লেজার এবং হোয়াইট কালারের কোট,,প্যান্টটাও হোয়াইট কালারের আর পায়ে ব্ল্যাক কালার শু,,,জেল দিয়ে চুলগুলো সেট করা,,,আবিরকে ও আজ দারুন লাগছে। আবির আড়চোখে বারবার নিশির দিকে তাকাচ্ছে যেটা নিশির নজর এড়ায়নি।

কিছুক্ষন পর এনগেজমেন্ট এর অনুষ্ঠান শুরু হল,,, নিলয় এবং তিথিকে স্টেজে সামনাসামনি দাঁড় করালো।প্রথমে নিলয় তিথির হাতে আংটি পরিয়ে দিল এবং পরে তিথি নিলয়ের হাতে আংটি পরিয়ে দিল,,এইভাবে তাদের এনগেজমেন্ট হয়ে গেল।কিছুক্ষণ পর আবির….
.
.
.
.
[বাকিটা নেক্সট পর্বে]

তোমাকে আমার প্রয়োজন পর্ব-২২

0

#তোমাকে আমার প্রয়োজন??
#মেঘ পরী??

??পর্ব-২২??
.
?
.
নিশি নিজের দুহাত ভাঁজ করে,,অন্যদিকে মুখ করে বসে আছে।আর আবির মাথা নিচু করে বসে আছে।কিছুক্ষণ নিরবতা পালনের পর,, আবির নিশির দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো-;

-:আ’ম সরি!!

আবিরের মুখ থেকে আচমকা সরি শুনে নিশি কিছুক্ষণের জন্য স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল,,হাঁ করে আবিরের দিকে তাকিয়ে আছে।নিশির এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না যে আবির তাকে সরি বলেছে।আবিরের ডাকে নিশি কল্পনা জগৎ থেকে বেরিয়ে এলো,,,তারপর নিজেকে সামলিয়ে নিল।

-:তুমি ঠিক আছো তো??(আবির)

-:হুম।।

-:আসলে আমি খুবই দুঃখিত সেদিনের ঘটনার জন্য।আসলে আমি…

আবিরকে থামিয়ে নিশি বলে উঠলো-;

-:এতে সরি বলার কী আছে??আর তাছাড়া আমার ভুলের কারণেই সেদিন একসিডেন্ট টা হয়েছিল।এতে আপনার কোনো দোষ নেই ভাইয়া।

নিশির সামনের দিকে তাকিয়ে এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলল।

-:নিশি আ…আসলে আমার উচিত হয়নি তোমাকে সবার সামনে ওভাবে অপমান করার।আসলে আমি বুঝতে পারিনি।

-:ভাইয়া প্লিজ আমার কাছে ক্ষমা চেয়ে আমাকে ছোট করবেন না।এতে আপনার কোনো দোষ নেই।আসলে আমিই ভুল করেছিলাম,,,আপনার মতন একজন উচ্চ মানের ব্যক্তিকে আমার পাশে কল্পনা করার মতন দুঃসাহস দেখিয়ে।অথচ দেখুন একবারও নিজের যোগ্যতা আমি বিচার করেই দেখিনি।আর আপনার কাছে আমি সত্যিই অনেক কৃতজ্ঞ কারণ আপনি না থাকলে আমি কোনদিনও জানতেই পারতাম না যে আমার সেই যোগ্যতাই নেই যে আপনার মতন একজন মানুষকে ডিসার্ভ করার,,আর সেই জায়গায় তো আমি আপনাকে আমার…

বলেই একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।আর মনে মনে ভাবল সত্যিই তো তার কী যোগ্যতা আছে আবিরের বউ হওয়ার??আবির একজন শিক্ষিত নামকরা ডাক্তার আর সে!!সে তো একজন কোনমতে টেনেটুনে পাশ করা একজন সাধারন স্টুডেন্ট,,,যে নিজের বাবার টাকায় চলে,,,যার নেই কোনো ভবিষ্যৎ চিন্তা।রাগের মাথায় হলেও আবির সেই দিন যা বলেছে একদম ঠিক বলেছে।তার বউ হওয়ার কোন যোগ্যতায় নিশির মতন একজন সাধারণ মেয়ের নেই।আবিরের বউ তো তার মতোই একজন শিক্ষিত মেয়ের হওয়া উচিত।

একটু দেরিতে হলেও বুঝতে পেরেছে সে আবিরের কথাগুলোর তাৎপর্য।তাই তো সে ঠিক করে ফেলেছে আবিরের লাইফের সাথে সে আর নিজেকে জড়াবে না,মুছে ফেলবে তার মনের কোনে জমানো আবির নামক অনুভূতি টাকে।সেই জন্যই তো সে চাইনি আবির তাকে চেকাপ করুক।সে তো আবিরের মুখোমুখি হতে চাই না আর।প্রথমে হয়তো একটু কষ্ট হবে কিন্তু পরে সব ঠিক হয়ে যাবে।আবিরের সুখের জন্য না হয় নিজের ভালোবাসাকে দাফান‌ ই করলো সে,,,তার এই ত্যাগের জন্য আবিরতো সুখে থাকবে,,এটাই তার কাছে অনেক।সবাই তো আর এই মহান কাজটা করতে পারেনা,,নিজের ভালোবাসার মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে ক’জনই বা পারে।

আর সব ভালোবাসাই তো আর পূর্ণতা পায় না।এমন অনেক ক্ষেত্রেই হয় যে দুটো মানুষ পরস্পরকে তীব্রভাবে ভালোবাসে,,,চাই নিজের জীবন সঙ্গির হাত শক্ত করে ধরে দূরে কেনো এক অজানা দেশে পাড়ি জমাতে,,,চাই বৃদ্ধ বয়সে একে অপরের নির্ভশীল হতে।নিজের কাছের মানুষটাকে নিজের মন পিঞ্জরাই বন্দি করে রাখতে।এগুলো চাই তো অনেকেই কিন্তু পারে কয়জনই বা??

কেউ সমাজে নিজের অবস্থান টিকিয়ে রাখতে,,কেউ আবার নিজের পরিবারের মানুষদের মুখে হাসি ফোটাতে আবার কারোর বা অর্থের অভাবে ত্যাগ করতে হয় তাদের ভালোবাসার মানুষদের।হয়তো তারা সারা জীবনের সুখকে বিসর্জন দিয়ে এক মুহূর্তের সুখটাকেই আপন‌ করে নেই।কিন্তু সুখী কি হতে পারে কেউ???

আর সেই জায়গায় নিশির ভালোবাসা তো এক তরফা।পৃথিবীতে একতরফা ভালোবাসাগুলোর পরিণতি যে বরোই নির্মম।অনেকেই আছে নিজের ভালোবাসার মানুষটির কাছে নিজের অনুভূতি কে প্রকাশ করতে পারে না,,,আবার অনেকে নিশির মতন ও আছে যে নিজের অনুভূতিকে প্রকাশ করতে পারলেও সেই ভালোবাসার মানুষটিকে অর্জন করতে পারে না।আর এর পরিণতি!!হ্যা এর পরিণতি হয় খুবই ভয়াবহ।কারণ নিজের মনে সঞ্চিত আবেগ গুলোকে একপ্রকার দাফন দিয়েই,,ভবিষ্যৎ জীবনে এগিয়ে যেতে হয় তাদেরকে।আবার অনেকে তা পারেও না তাই বেছে নেই আত্মহত্যার মতোন,,,এক চরম পাপ কাজ।কিন্তু না!!নিশি সেই পদ্ধতি অবলম্বন করবে না।কি হয়েছে সে তার ভালোবাসার মানুষটিকে নিজের কাছে পাইনি বলে??না হয় ভাঙা মন‌ নিয়েই এগিয়ে যাবে তার অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে।

এই কথাগুলো ভাবতেই নিশি মন চিরে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসছে।

আর এদিকে নিশির মুখে এমন কথা শুনে আবির সত্যি‌ই আজ স্তব্ধিত।আসলেই সে নিজের অজান্তেই নিশির ছোট্ট মনে এক গভীর ক্ষতের সৃষ্টি করেছে,,,নয়তো নিশির মতন একজন সহজ সরল মেয়ের মুখে এমন কঠিন কথা কখনোই আসতো না।তার মনে যেই ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে,, সেটাকে সারানো আবিরের মতন একজন ডাক্তারের ও কাম্য নয়।

এই প্রথম নিশির মুখে ভাইয়া ডাক শুনে আবিরের কেমন যেন ভালো লাগলো না,,কিন্তু কেন??নিশি তো তাকে ভাইয়া বলেই ডাকতো সবসময়,,তাহলে আজ!!আজ কেন তার এতটা খারাপ লাগছে নিশির মুখে ভাইয়া ডাক শুনে।না এর উত্তর আবিরের কাছে নেই।থাকবেই বা কি করে সে তো নিজেই উত্তর আশার পথটাকে বন্ধ করে দিয়েছে।তবে কী সে কোনো ভুল করে ফেলল।

দুজনেই নিজেদের ভাবনার জগতে ডুবে রয়েছে,,,তবে দুজনার ভাবনা সম্পূর্ণ আলাদা।দরজার আওয়াজে তাদের দুজনারই হুশ ফিরল।সামনে তাকিয়ে দেখলো নিশির মা এক ট্রে খাবার নিয়ে রুমে ঢুকছেন।নিশির মাকে দেখে আবির নিজেকে ঠিক করে নিল।নিশির মা আবিরের সামনে যেই প্লেট টা রাখবে ওমনি আবির বলে উঠলো-;

-:আন্টি আজ আমার একটু তাড়া আছে।তাই আমাকে বেড় হতে হবে।

-:সে কী বলো??তোমার না ক্ষিদে পেয়ছে। চুপচাপ বসে আগে খাওয়া কমপ্লিট করবে,, তারপর উঠবে।

-:আন্টি প্লিজ আজ নয় অন্য একদিন খাবো।আজ তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরতে হবে।ও আপনাদের তো বলাই হয়নি তিথির বিয়ে ঠিক হয়েছে।

তিথির বিয়ের খবর শুনে নিশি অবাক হয়ে আবিরের দিকে তাকালো।

-:সে কী কবে ঠিক হলো??আর ছেলে কি করে??তুমি আমাকে সবে বলছো এই কথা,,,এতই পর হয়ে গেছি আমরা তোমাদের।

কিছুটা অভিমানী শুরে নিশির মা বলে উঠলো।

-: আসলে সরি আন্টি হুট করে সব ঠিক হয়ে গেল।কিন্তু বিয়ে এখন হবে না,,,এখন শুধু এনগেজমেন্ট করিয়ে রাখবে তারপর নিশি পুরোপুরি সুস্থ হলে আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে পড়ানো হবে।

-:ও তা বেশ ভালো।তা ছেলে কী করে??

-:ছেলেকে আপনারা চেনেন।

-:কি বলো!!ছেলের নাম কি??

-:নিলয় চৌধুরী।

-:নিলয় চৌধুরী!!মানে নিশির আব্বুর অফিসের মালিক নিলয় চৌধুরী।

-:জি আন্টি।

-:বাহ খুব ভালো।ছেলে মাশাল্লাহ দেখতে খুব সুন্দর,,তিথি মামুনির সাথে খুব ভালো মানাবে।

-:হ্যাঁ।

তিথির বিয়ের কথা শুনে নিশি প্রথমে অবাক হলেও,,পরমুহূর্তে তিথির বিয়ে নিলয়ের সাথে হবে এটা জেনে প্রচন্ড খুশি হল।যাক সে নিজের মনের মানুষ টাকে পাইনি তো কি হয়েছে,, তার বেস্টু তো পাবে তার মনের মানুষকে নিজের করে।এটা ভেবেই নিশির মন খারাপ মুহূর্তেই দূর হয়ে গেল।আরো কিছুক্ষণ নিশির মার সাথে গল্প করে এবং নিশিকে চেক আপ করে আবির বাসায় চলে এলো।
.
.
.
.
[বাকিটা নেক্সট পর্বে]

তোমাকে আমার প্রয়োজন পর্ব-২১

0

#তোমাকে আমার প্রয়োজন??
#মেঘ পরী??

??পর্ব-২১??
.
?
.

নিচে নেমে নিলয় দেখল তিথি তার দিকে করুণ চোখে তাকিয়ে আছে,,দেখেই বোঝা যাচ্ছে তিথি প্রচন্ড টেনশন এ আছে।আবির সোফায় বসে,,রিয়াদ হোসেন এর উদ্দেশ্যে বলতে লাগলেন-;

-:আঙ্কেল আমাদের কোনো আপত্তি নেই,,এই বিয়েতে।।

আবিরের এই কথাটি শুনে তিথির টেনশন যেন মুহূর্তেই খাওয়া হয়ে গিয়ে,,চোখেমুখে এক আনন্দের ঝিলিক ফুটে উঠল।আবির আবার বলে উঠলো-;

-:কিন্তু আমরা চাচ্ছি বিয়েটা অনুষ্ঠানিকভাবে কিছুদিন পর করতে।কারণটা আপনাদের আমরা আগেই বলেছি।

-:ঠিক আছে,,,,আমাদের তাতে কোন আপত্তি নেই।তবে আমরা চাই কিছুদিনের মধ্যেই অন্তত এনগেজমেন্ট টা করিয়ে রাখতে,,,যদি আপনাদের মত থাকে তবেই আমরা এগোবো এই বিষয়ে।

নজরুল সাহেব বলে উঠলেন-;

-:না না এতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই।

-:তাহলে আমরা পরের সপ্তাহে ই তিথি এবং নিলয়ের এনগেজমেন্টের অনুষ্ঠানটা আয়োজিত করবো।

-:ঠিক আছে।

তারপর আরো কিছুক্ষন গল্প করে,,,দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পর নিলয় এবং রিয়াদ হোসেন বাড়ি ফিরে গেলেন।
.
.
?
.
.

রাতে নিলয় তিথি কে ফোন দিল,,,তিথি ফোন রিসিভ করতেই,,ওপাশ থেকে নিলয় বলে উঠলো-;

-:পাখি কি করো??

-:তেমন কিছু না।

-:আচ্ছা তখন মুখটা অমন করে রেখেছিলে কেন??

-:আসলে আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম তখন,,, ভেবেছিলাম ভাইয়া হয়তো আপনাকে উল্টোপাল্টা কোনো কথা বলেছে।

-:ও তাই বুঝি।।তা ম্যাডামের কবে থেকে আমার জন্য চিন্তা হচ্ছে??

-:ও তার মানে আপনি বলতে চাইছেন আপনার জন্য আমার কোন চিন্তাই হয় না,,,কী তাইতো।।

কিছুটা অভিমানী সুরে বলে উঠলো তিথি,,,

-:আরে পাখি আমি কি তাই বলেছি নাকি।।আচ্ছা বলতো ডিনার করেছো তুমি??

-:হ্যাঁ।(কিছুটা মন খারাপ করে)

-:পাখি প্লিজ মন খারাপ করো না,, দেখো আমি তোমাকে এতগুলো কিসি দিচ্ছি ফোনের এপার থেকে,,, তবুও মন খারাপ করে থেকো না প্লিসসস।

এই বলে নিলয় শব্দ করে দু তিনটে চুমু খেলো ফোনের ওপর,,,নিলয়ের এমন কান্ডে তিথি হেসে ফেললো,,,তারপর বলল-;

-:মন খারাপও করতে দেবেন না আপনি আমাকে তাই না??

-:উহু,,না!!

-:কেন??

-:কেন মন খারাপ হতে দেবো তোমাকে শুনি?? নিজের কলিজাকে কী কেউ কোনোদিন কষ্ট পেতে দেয়।

-:আই লাভ ইউ নিলয়।

হুট করে তিথি বলে উঠলো।।তিথির মুখে এমন কথা শুনে নিলয় অনেকটাই অবাক হলো,,,কারণ এই প্রথম তিথি তাকে সরাসরি আই লাভ ইউ বলেছে।। কিছুক্ষণ চুপ থেকে মুচকি হেসে বলে উঠলো-;

-:আই লাভ ইউ টু পাখি।।

-:হুম।

-:আচ্ছা নিশি কেমন আছে এখন??

-:এখন মোটামুটি সুস্থ আছে,,তবে হাঁটতে পারে না খুব একটা ভালো করে।

-:ও ডোন্ট ওয়ারি,,,সব ঠিক হয়ে যাবে।।নিশি অনুষ্ঠানের দিন আসবে তো।

-:হ্যাঁ আসবে কালকে ভাইয়া যাবে ওদের বাসায়।

-:ও ভেরি গুড।পাখি জানো আমার বিশ্বাসই হচ্ছে না যে এত সহজে আমি তোমাকে পেয়ে যাব।।

-:হ্যাঁ আমারও তাই,,আমি তো ভেবেছিলাম ভাইয়া কখনোই মেনে নেবে না।কিন্তু দেখুন সবার আগে ভাইয়া ই মেনে নিল আমাদের সম্পর্কটা।

-:হুম।

আরো কিছুক্ষণ কথা বলার পর নিলয় ফোনটা রেখে দিলে।
.
.
?
.
.

সকলে তিথি ডাইনিং টেবিলে বসে পরোটা আর ভাজি খাচ্ছিল,,ঠিক এমন সময় আবির রেডি হয়ে নিচে নামল।আবির কে দেখে তিথি জিজ্ঞাসা করল-;

-:কিরে ভাইয়া এত সকাল বেলায় তুই কোথায় যাচ্ছিস??আর তাছাড়া আজকে তো তোর ছুটি।

যদি ও তিথি জানে বিষয়টা তবুও আবিরের মুখ থেকে শোনার জন্য জিজ্ঞাসা করল।

-:নিশিদের বাসায় যাব একবার।

-:তুই আর নিশি দের বাসায়!!বাট হোয়াই??

কিছুটা অবাক হ‌ওয়ার ভঙ্গিতে জিজ্ঞাসা করলো,,,

-:আরে তোর মনে নেই,,,নিশিকে চেকআপ করতে যাওয়ার কথা আমার।

-:হ্যাঁ কিন্তু আগের সপ্তাহে তো অন্য একজন মহিলা ডাক্তার গেছিল,,নিশিকে চেকআপ করতে।তাহলে সে আজ‌ও নিশিকে চেক‌আপ করবে নিশ্চয়ই,,,,তাহলে তুই কেন যাচ্ছিস??আর এমনি তে ও নিশি তো তার কাছেই নিজের চেকআপ করাবে বলেছে।।

-:আমি আঙ্কেলকে কালকে ফোন করে বলেছি,,যে ওর চেকআপ আমিই করব,,আর ওই মহিলা ডাক্তার কে আসতেও বারণ করে দিয়েছি।

-:নিশি জানে এই কথাটা।

-:আই ডোন্ট কেয়ার।।এমনিতেই ও আগের সপ্তাহে জেদ করে নিজের চেকআপ অন্য একটা ডাক্তারের কাছে করিয়েছি আর আমাকে বলার প্রয়োজন বোধ‌ও করেনি।যদি না আংকেল ফোন করে আমাকে বলতো তাহলে তো আমি জানতেই পারতাম না।

তিথি কিছুটা খোঁচা মেরে আবিরকে বলল-;

-:তাতে কি হয়েছে ভাইয়া??তোর তো ভালোই হলো কষ্ট করে আর তোকে ওদের বাসায় যেতে হবে না,,,আর নিশিকে ও সহ্য করতে হবে না।।

-:তিথি আবারো।।

কিছুটা করুণ দৃষ্টিতে তিথির দিকে তাকিয়ে,,, তিথি বুঝতে পারলো আবির কষ্ট পেয়েছে তার কথায়।কারণ আবির তখনই তাকে তিথি বলে ডাকে যখন সে রেগে থাকে তিথির উপর আর ন হয় খুব কষ্ট পায় তিথির ব্যবহারে।।তিথি কিছু বলতে যাবে তখনই নজরুল সাহেব নীচে নামলেন,,,আর আবিরকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলেন-;

-: কোথায় যাচ্ছিস এখন??

-:এইতো বাবা নিশিদের বাসায় ওর চেকআপ করতে।

-:ও আচ্ছা ঠিক আছে।তিথির এনগেজমেন্ট হবে তার আয়োজন করতে হবে তো,,,এখনও কিছুই শপিং করা হয়নি।।

-:বাবা আমার সব মনে আছে তুমি এসব কিচ্ছু চিন্তা করোনা,,আল্লাহর রহমতে এনগেজমেন্ট এর অনুষ্ঠান ভালো ভাবেই হবে।

-:আচ্ছা ঠিক আছে তুই বরং আগে নিশিদের বাসায় যা।

-:হুম।।

এই বলে আবির চলে গেল।।।
.
.
?
.
.

নিশি খাটে হেলান দিয়ে বসে আছে আর তার ঠিক পাশেই,,,চেয়ারের উপর বসে আবির তাকে চেকাপ করছে।নিশিকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে সে প্রচন্ড পরিমাণে বিরক্ত আবিরের উপর।কিন্তু আবির সেটা বুঝেও কিছু বলছে না,,,চুপচাপ চেকআপ করে যাচ্ছে তাকে,,,,আবিরের ঠিক পাশেই নিশির বাবা এবং মা দাঁড়িয়ে আছে।।

আবির নিশির বাবাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো-;

-:আঙ্কেল দেখেছেন ডাক্তার টা পায়ের ব্যান্ডেজ গুলোও ভালো করে করেনি,,,এমনকি ওষুধ ও দেয়নি ঠিক মতোন।।

-:তাই নাকি বাবা!!এই..এইজন্যই আমি চাইছিলাম না অন্য কেউ ওকে দেখুক,,,কিন্তু এত জেদ করে আজকাল যে আমাদের কিছু বলতেই দেয়না।

-:আপনারাও বা ওর জেদ পূরণ করেন কেন??বেশি জেদ করলে হাত পা বেধে,,,না খাইয়ে ঘরে বসিয়ে রাখবেন,,,দুদিন না খেয়ে থাকলেই তখন দেখবেন সব জেদ ফুস হয়ে গেছে।

নিশির পায়ে ব্যান্ডেজ করতে করতে,,,আড়চোখে নিশির দিকে তাকিয়ে আবির বললো কথাটা।আবিরের কথা শুনে নিশি তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠলো,,তারপর তার বাবার দিকে তাকিয়ে বলতে লাগল-;

-:কই বাবা ব্যান্ডেজ তো ঠিকঠাক‌ই করা ছিল,,,আমি তো কোন ভুল‌ই দেখতে পাইনি,,,এবার কেউ যদি ইচ্ছা করে ডাক্তারের ভুল ধরে নিজেকে ফেমাস করতে চাই তাহলে কিছু করার নেই।

-:আহ নিশি কি হচ্ছে কি এসব!!আবির এত কষ্ট করে এখানে এসে তোকে চেকআপ করে যাচ্ছে,,, যাতে তোর কোন ক্ষতি না হয়,,,আর তুই…তুই কিনা ওকে উল্টোপাল্টা কথা শুনেছিস।

-:মা আমি তো…

-:চুপ একদম চুপ।।।বড় বেয়াদব হয়ে উঠছিস আজকাল তুই।

মায়ের এমন ধমকে নিশী খুব কষ্ট পেল,,,ঠোঁট উল্টে কাঁদো কাঁদো ফেস নিয়ে বসে আছে,,,নিশির ওমন ফেস দেখে আবির মুচকি মুচকি হেঁসে,,বলে উঠলো-;

-:থাক আন্টি ওকে বকতে হবে না,,বাচ্চা মানুষ না বুঝে বলে ফেলেছে।

-:না বাবা আজকাল ও বড় বদমাইশি করছে,,,কেউ উপকার করতে আসলে যে তাকে ধন্যবাদ দিতে হয় সেই জ্ঞানটুকুও নেই ওর।(রাগী চোখে নিশির দিকে তাকিয়ে)

মায়ের ওমন শক্ত শক্ত কথা আর আবিরের এমন হাসিমাখা মুখ দেখে,,নিশির রাগ আরো বেড়ে গেল,, মনে মনে ভাবছে-;

-:আহা দরদ একেবারে উপচে পড়ছে,,মেয়ের হয়ে সাফাই গাওয়ার বদলে মেয়ের অতীত ক্রাশ আর ভবিষ্যতে বাঁশের উপরে ডবল ক্রাশ খেয়ে তার প্রশংসায় পাগল হয়ে যাচ্ছে,,,আরে মাই মাদার পিংপং তুমি কী এটা জানো যে এই সেই কালপ্রিট যে তোমার মেয়ের হাফ মৃত্যুর জন্য দায়ী,,,হুম জানো না তুমি তাইতো।কেউ বললে তো জানবে।

আর এই যে ক্যাবলাকান্ত আপনার হাসি যে একেবারে থামছেই না,,,খুব হাসি পাচ্ছে আমাকে দেখে তাই না,,,হাহাহাহা আমার মা তো আর জানে না যে তার এই সুইটু মেয়ের অ্যাক্সিডেন্টের পিছনে তুমি আছো,,,যদি জানতো না তাহলে তোমাকে ঝাঁটা পিটাই করে বের করতো আগে বাসা থেকে।

আবিরের কথায় নিশির ভাবনার ছেদ পরল,,

-:আসলে আমি যদি আমাকে ফেমাস করতে চাইতাম তাহলে এখানে আসতাম না।

নিশির দিকে তাকিয়ে কথাটা বলল,,, আবিরের কথাটা শুনে নিশি তার দিকে তাকিয়ে মুখ ভেংচি দিল,,তারপর অন্য দিকে ঘুরে গেল। নিশির এমন কাণ্ডে আবির হেসে ফেলল।

-:আচ্ছা বাবা তুমি বস আমি তোমার জন্য খাবার নিয়ে আসছি।

-:আচ্ছা আন্টি।

-:মা তুমি বসো না এখানে আমার পাশে খাবার আনার কি দরকার আছে এখন,,,উনি নিশ্চয়ই খেয়ে এসেছেন বাড়ি থেকে।

-: নিশি এসব কি বলছিস তুই পাগল হয়ে গেলি নাকি।বাবা তুমি ওর কথায় কিছু মনে করো না।।

-: না না আন্টি আমি বাচ্চাদের কথায় কিছু মনে করি না।

-:আমি মোটেও বাচ্চা নই।(মুখ ফুলিয়ে নিশি বলে উঠলো)

-:না না তুই একটা তালগাছ,,,নেই হয়েছে এবার,,, আন্টি আপনি যান আমার জন্য খাবার নিয়ে আসুন আমি আসলেই আমি বাড়ি থেকে কিছু খেয়ে আসিনি।।

-:আনছি,,,,তুমি একটু বোসো।।

এই বলে নিশির মা চলে গেলো,,,যদিও আবিরের খাওয়ার ইচ্ছা নেই তবুও নিশি সাথে কথা বলার জন্যই সে খাওয়ার কথাটা বলল।এদিকে নিশির বাবাও অফিস থেকে জরুরি কল আসায়,,বাইরে গিয়েছে কথা বলতে।নিশির তো প্রচুর বিরক্ত লাগছে,,,আবার সাথে একটু ভয়ও লাগছে,,,এইজন্যই সে তার মাকে তার পাশে বসতে বলেছিল।নিশিকে চুপ করে থাকতে দেখে আবির বলে উঠলো-;
.
.
.
.
[বাকিটা নেক্সট পর্বে]

তোমাকে আমার প্রয়োজন পর্ব-২০

0

#তোমাকে আমার প্রয়োজন??
#মেঘ পরী??

??পর্ব-২০??
.
?
.

ছাদের রেলিং এ হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আবির,,,আর তার ঠিক পাশেই নিলয় দাঁড়িয়ে আছে।নিলয় আবিরকে চুপ করে থাকতে দেখে বলে উঠল-;

-:ভাইয়া কিছু বলবেন??

নিলয়ের মুখে ভাইয়া ডাক শুনে,,,আবির অবাক হয়ে কিছুক্ষণ নিলয়ের দিকে তাকিয়ে থাকলো,,,তারপর হালকা হেঁসে সামনের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো-;

-:তো মিস্টার মাফিয়া কিং নিলয় চৌধুরী আজ হঠাৎ আমাকে ভাইয়া বলে ডাকছে যে??

আবিরের এমন প্রশ্নে নিলয় ৪৪০ ভোল্টের এক বড়োসড়ো ধাক্কা খেল,,,নিলয় হাঁ করে তাকিয়ে আছে আবিরের দিকে।নিলয়কে চুপ করে থাকতে দেখে আবির বলে উঠলো-;

-:কী ভেবেছিলে আমি আমার একমাত্র বোনের বিয়ে এমনিই দিয়ে দেব,,,তার সাথে যার বিয়ে ঠিক হয়েছে তার সম্পর্কে কোনো খোঁজ খবর না নিয়েই।

আবিরের কথায় নিলয়ের মনে এক অজানা ভয় কাজ করছে,,,তিথিকে হারানোর ভয়।তাহলে কি আবির তিথির সাথে নিলয়ের বিয়ে হোক সেটা সে চাই না।না না এ হতে পারে না,,,তাহলে বাঁচবে কী করে নিলয়,,,সে তো…না আর কিছুই ভাবতে পারছে না নিলয়।যাই হয়ে যাক না কেন সে তার তিথু পাখিকে ছাড়া বাঁচবেই না।নিলয়ের ভাবনাকে ছেদ করে দিয়ে আবির বলে উঠলো-;

-:এতো অবাক হ‌ওয়ার কিছুই নেই,,,আমি তোমার ব্যাপারে সবকিছুই জানি??? আর এটাও জানি তুমি বুড়ি কে ভুল করে অন্য মেয়ে ভেবে কিডন্যাপ করেছিল,,,আর এক সপ্তাহ নিজের বাড়িতে আমার বোনকে আটকিয়েও রেখেছিলে।।কী ঠিক বলছি তো আমি??আচ্ছা একটা কথা বলতো তুমি আমাকে বোনকে বিয়ে করতে চাও কেন??কী উদ্দেশ্যে আছে তোমার তিথি কে বিয়ে করার পেছনে??

এতক্ষণ চুপ করে থাকলেও এবার নিলয় আর চুপ করে থাকতে পারলো না,,,আবিরের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো-;

-:প্রথমত আমি আপনাকে ভাইয়া বলে ডাকছি তার কারণ হলো আপনি আমার থেকে দুই বছরের বড়।আর র‌ইলো বাকী উদ্দেশ্য??হ্যাঁ ঠিক বলেছেন আপনি।তিথি কে বিয়ে করার পিছনে খুব বড়ো একটা উদ্দেশ্যে আছে আমার।

নিলয়ের কথায় আবির কিছুটা অবাক হয়ে গেল,,,তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে নিলয়ের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে জিজ্ঞেসা করলো-;

-:কী বলতে চাইছো তুমি??তিথি কে বিয়ে করার পিছনে তোমার কী উদ্দেশ্যে আছে??

নিলয় কিছুটা হেঁসে,,জবাব দিল-;

-:নিজের ভালোবাসা দিয়ে তিথি কে সারাজীবন আমার মনের গহীনে ভালোবাসার শিকল দিয়ে বন্ধীনি করে রাখতে চাই এটা আমার প্রথম উদ্দেশ্য।আমার দ্বিতীয় উদ্দেশ্যে হলো তাকে দুনিয়ার সকল বদ নজর থেকে রক্ষা করা,,,কেউ তার বিন্দুমাত্র ক্ষতি করতে এলে তাকে শেষ করে দেওয়া।আর আমার শেষ উদ্দেশ্যটা হলো আমার মায়াপরীর কাছ থেকে একটুখানি ভালোবাসা পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা,,,যেটা মেটানোর জন্য যে আমার তাকে খুবই প্রয়োজন,,,অবশ্য এটা নিজের সার্থের জন্যেই বলতে পারেন।

ভাইয়া জানেন ভালোবাসা কি তা আমি কোনদিন জানতামই না??বলতে পারেন কোনদিন উপলব্ধি করার চেষ্টাই করিনি??ছোটবেলায় বাবা মাকে হারানোর পর ভালবাসার প্রতি একটা তিক্ততা জন্ম নিয়েছিল আমার মনে।কিন্তু বিশ্বাস করুন আমি কোনদিন জানতামই না যে আমার মনের এই তিক্ততা দূর করতে কেউ একজন আসবে আমার জীবনে,,,,যার ছোঁয়ায় এবং ভালোবাসায় আমার মনে জন্ম নেবে ভালোবাসার কোন এক নতুন অধ্যায়।

হ্যাঁ ভাইয়া তিথি কে আমি ভুল করে তুলে নিয়ে গিয়েছিলাম ঠিক‌ই কিন্তু আমি সত্যিই তিথির কোন ক্ষতি করিনি।আর তখন আমি জানতামও না যে এই মেয়েটাই আমার মনে জায়গা করে নিবে,,,তাও আবার নিজের দুষ্টুমি,,,মন ভোলানো কথা দিয়ে।

এইটুকুনি বলেই নিলয় কিছুটা হাঁসলো তারপর আবার বলতে লাগলো-;

-:তার ছোটখাটো দুষ্টুমি গুলোকে কখন যে আমি ভালোবেসে ফেলেছিলাম তা আমি নিজেই জানিনা।কিন্তু যখন আমি তা বুঝতে পারলাম তখন তার আমার কাছ থেকে চলে যাওয়া সময় হয়ে এসেছিল।কি করবো কিছুই বুঝতে পারছিলাম না তখন,,,মনে হচ্ছিল আমার শ্বাস কে যেন বন্ধ করে রেখেছে,,,নিঃশ্বাস নিতে প্রচন্ড কষ্ট হতো আমার।তাই আর কিছু না ভেবে,,,বলেই দিলাম আমার মনের গহীনে তার জন্য সঞ্চিত সুপ্ত অনুভূতি টার কথা।কিন্তু সেই অবুঝ মেয়েটা বুঝলোই না আমার ভালোবাসাকে,,,দূরে ঠেলে দিলে আমাকে সাথে আমার ভাঙ্গা মনটাকে‌ও।

প্রচন্ড পরিমানে ভালবেসে ফেলেছিলাম যে তাকে।।আমার খুব কষ্ট হয়েছিল তখন,,যখন সে আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছিল।তবুও তাকে জোর করিনি আমাকে ভালবাসতে,,কারণ আমি তো চাই সে আমাকে নিজের মন থেকে ভালবাসুক,,,জোর করে চাপিয়ে দেওয়া ভালোবাসা তো আমি কখন‌ই নিতে চাইনা তার কাছ থেকে।আমি যে ভালোবাসার বড্ড কাঙাল।তাই জন্যই তো তাকে রেখে আমি চলে গিয়েছিলাম,,,তার জীবন থেকে অনেক দূরে।

কিন্তু আমার পাখিটা আমার ভালোবাসাটা কে বুঝে,,আমার কাছে আবার ফিরে আসবে তা আমি কখনো স্বপ্নেও ভাবি নি।আচ্ছা আপনিই বলুন তো ভাইয়া ভালোবাসা কি অপরাধ??নাকি আমি একজন মাফিয়া বলে আমার অন্য কাউকে ভালবাসার অধিকার‌ই নেই??আচ্ছা কেউ তো কখনোই এটা জানতে চাইনি যে আমি কেন এই পথটা বেছে নিয়েছি বিজনেসম্যান হওয়া সত্বেও??সবাই কেন আমার কাছ থেকে দূরে সরে যায়,,শুধুই কি আমি একজন মাফিয়া বলে??যাকে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চায় সেই আমার কাছ থেকে চলে যায়,,,কেন বলতে পারেন??প্রথমে মা বাবা আমায় ছেড়ে চলে গেল।তারপর যেই তিথি কে আঁকড়ে বাঁচতে চাইছি,,,তখন আবার..

একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে,, আবারও বলতে লাগলো-;

-:ভাইয়া আমি যে আমার পাখিটাকে বড্ড বেশি ভালোবেসে ফেলেছি,,তাকে ছাড়া যে এক মুহুর্ত‌ও বেঁচে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব নয়,,আপনিই বলুন না আমি কি করবো??একবার বিশ্বাস করে দেখুন‌ই আমাকে,,কথা দিচ্ছি ভালোবাসা দিয়ে আগলে রাখব সারা জীবন তাকে,,,আমার জন্য কখনোই তার চোখ থেকে এক ফোঁটা অশ্রু বিসর্জন হবে না।একবার কি বিশ্বাস করা যায় না আমাকে?

কথাগুলো বলার সময় নিলয়ের গলা বারবার কেঁপে উঠছিল।আর আবির!!সে তো নিলয়ের প্রতিটি কথায় মগ্ধ হয়ে উঠেছে,,এক ধ্যানে তার দিকে তাকিয়ে আছে।নিলয়ের মতন একজন বড় বিজনেসম্যান এবং মাফিয়ার মনে যে তার ছোট্ট বোনটার জন্য যে এতটা ভালোবাসা লুকিয়ে রাখা ছিল তা সে জানতো না।

নিলয় যখন বলেছিল তার উদ্দেশ্য আছে তিথিকে বিয়ে করার পিছনে তখন সে অনেকটাই অবাক হয়ে গিয়েছিল কিন্তু নিলয়ের উত্তর শুনে সত্যিই সে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছে।এখন তার তিথির উপর সত্যিই এখন অনেক গর্ব হচ্ছে,,,যে তার বোন সত্যিই একজন সঠিক ব্যক্তি কে নির্বাচন করেছে তার জীবনসঙ্গী রুপে।আর কিছু না ভেবে আবির নিলয়কে জড়িয়ে ধরল,,,শক্ত করে। তারপর বলতে লাগলো-;

-:তোমার কাছে আমি আমার বোনকে দেব না তো কার কাছে দেবো?তোমাকে না পেয়ে যে আমার বোনটা মরেই যাবে।তোমার মতোন একজন মানুষকে ছেড়ে যদি আমি আমার বুড়ির হাত অন্য কারোর হাতে দিই,,,তাহলে তো আমি পৃথিবীর নিকৃষ্ট জীবে পরিণত হব,,,জান্নাতে‌ও ঠাই হবে না আমার।আমি যে আমার বোনটাকে বড্ড বেশি ভালোবাসি তার চোখের জল সহ্য করার ক্ষমতা আমার নেই তাই আমি তোমাকে পরীক্ষা করে দেখছিলাম যে তুমি সত্যিই আমার বোনটাকে ভালবাসে কি না।কিন্তু তুমি যে এই পরীক্ষায় এত ভালোভাবে উত্তীর্ণ হতে পারবে তা আমি ভাবতেই পারিনি।

আবিরের কথায় নিলয় খুশিতে কেঁদেই ফেলল,,,যাক অবশেষে তার পাখি তার‌ই হবে। আবির নিলয়কে ছেড়ে,,তার হাত দুটো ধরে বলতে লাগলো-;

-:আমার বোনটা ছোটবেলা থেকে অনেক কষ্ট সহ্য করেছে।যখন তার মাত্র তিন বছর তখন ফুপি তাকে একা করে দিয়ে,,,আমাদের সবাইকে ছেড়ে চলে গিয়েছে।ফুপি সুইসাইড করেছিল অবশ্যই বাবা ফুপির মৃত্যুকে সাধারণ সুইসাইড হিসেবে মেনে নেয়নি,,,তাই ফুপার বিরুদ্ধে কেস ও করেছিল,,কিন্তু কেসে বাবা হেরে যায়,, তিথিকে নিজের কাছে রাখতে চাইলে ফুপা পরিষ্কার না জানিয়ে দেয়।ফুপির মৃত্যুর এক মাসের মধ্যেই ফুপা আরও একটা বিয়ে করে।অবশ্যই আমরা তখন এই বিষয়ে কিছুই জানতাম না।

একদিন বাবা তিথির সাথে দেখা করতে,,ফুপার বাসায় যায়।বাসায় গিয়ে দেখে তিথি মেঝেতে পড়ে গড়াগড়ি খাচ্ছে আর কাঁদছে,,,মাথা ফেঁটে গিয়ে রক্ত বের হচ্ছে অনেকখানি।আর ফুফা আর তার সো কল্ড ওয়াইফ ডাইনিং টেবিলে বসে খাচ্ছে আর গল্প করছে,,,এমন ঘটনা দেখে বাবা প্রচন্ড রেগে যায়,,, তারপর তিথিকে নিয়ে হসপিটালে ভর্তি করিয়ে দেয়।তিথি সুস্থ হয়ে যাওয়ার পর অনেক কষ্টে,,, অনেক ঝামেলা করে বাবা তিথিকে আমাদের বাসায় নিয়ে আসে।ফুফা তিথিকে কিছুতেই ছাড়তে চাইছিল না,,,কিন্তু বাবা পুলিশের ভয় দেখিয়ে তিথিকে তাদের কাছ থেকে নিয়ে আসে।

বুড়ি যখন আমাদের বাসায় আসে তখন সে খুবই ছোট,,,সেখান থেকে বুড়ি আমাদের সাথে আছে।কোনদিনের জন্যে ও তাকে আমরা বুঝতে দিইনি যে তার এই পৃথিবীতে কেউ নেই।তাকে আমরা ভালোবাসা দিয়ে আগলে রেখেছি,,, সারাক্ষণ।এক ফোঁটা পানিও পড়তে দিই নি তার চোখ থেকে,,,যখন যা চেয়েছে তাই পূর্ণ করেছি,, আমরা হাঁসি মুখে।বাবা মা সবসময় তাকে নিজের মেয়ের মতো ভালোবেসে এসেছে,,,আর আমি তাকে নিজের ছোট বোন।

তাই আমি চেয়েছিলাম আমার বোনের হাত এমন একজনের হাতে তুলে দিতে যে আমার বোনকে নিজের সবটুকু দিয়ে ভালোবাসবে।আর আমি পেয়েছি,,,এমন একজন লোককে যার কাছে আমি আমার বোনকে দিয়ে চিন্তা মুক্ত হতে পারবো কারণ আমি জানি সে থাকতে কোনদিনও আমার বোনের ক্ষতি কেউ করতে পারবেনা।আর সেটা আর অন্য কেউ নয় তুমি।কথা দাও তুমি আমার বোনকে আগলে রাখব সমস্ত বিপদ থেকে।

তিথির বাবার বর্বরতা কাহিনী শুনে নিলয়ের প্রচন্ড রাগ ধরল তিথির বাবার উপর।আবার তিথির উপর মায়াও জন্মালো।নিলয় আবিরের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগল-;

-:নিজের রক্তের শেষ বিন্দু পর্যন্ত আমি তাকে আগলে রাখব।আল্লাহ ব্যতীত কেউ তাকে আমার কাছ থেকে আলাদা করতে পারবে না,,,কথা দিলাম।

-:থ্যাঙ্ক ইউ,, থ্যাংক ইউ সো মাচ,,, এবার চলো নিচে যায়,,সবাই হয়তো চিন্তা করছে এতক্ষন।।।।

তারপর তার নিচে নেমে গেল।নিচে নেমে নিলয় দেখল তিথি তার দিকে তাকিয়ে আছে,, তিথিকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে সে প্রচন্ড ভয় পেয়ে আছে।
.
.
.
.
[বাকিটা নেক্সট পর্বে]

তোমাকে আমার প্রয়োজন পর্ব-১৯

0

#তোমাকে আমার প্রয়োজন??
#মেঘ পরী??

??পর্ব-১৯??
.
?
.

খাটের এক কোণে তিথি গুটিসুটি মেরে চুপচাপ বসে আছে।আর তার ঠিক পাশেই নিলয় তার দিকে রক্ত লাল তাকিয়ে আছে।তিথি এখন নিজের উপরই প্রচন্ড পরিমানে বিরক্ত,,কেন সে নিলয়ের ফোনটা রিসিভ করলো না,,যদি সে তার ফোনটা রিসিভ করতো তাহলে আজ তাকে এই পরিস্থিতিতে পরতে হতো না।বেশ খানিকক্ষন নিরবতা পালনের পর,,নিলয় শান্ত কন্ঠে বলে উঠল-;

-:কোথায় ছিলে আজ সারাদিন।

নিলয়ের এমন কন্ঠ শুনে তিথির কলিজা কেঁপে উঠলো,,কারণ এত শান্তভাবে কথা নিলয় তখনই বলে যখন সে ভয়ঙ্কর রেগে থাকে।তিথি কি বলবে কিছু ভেবে পাচ্ছেনা এই মূহুর্তে,,উফফফফ এই বুদ্ধি গুলো না প্রয়োজনের সময়‌ই জানালা দিয়ে পালায়।

তিথিকে চুপ থাকতে দেখে নিলয় আবার বলে উঠলো-;

-:কি হলো শুনতে পাওনা??কিছু জিজ্ঞাসা করছি,,,উত্তর দিচ্ছ না কেন,,,কোথায় ছিলে আজ সারাদিন??(দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলো নিলয়)

-:বা…বাসায়।(কিছুটা কেঁপে)

-:ও আজ সারাদিন তাহলে তুমি বাসায় ছিলে,,কি তাইতো।

নিলয়ের কথা শুনে তিথি উপর নিচে মাথা দোলালো যার অর্থ হলো হ্যাঁ সে আজ সারাদিন বাড়িতেই ছিল।

-:বাহহ খুব ভালো কথা।আচ্ছা তোমার ফোনটা একটু দাও তো।

ব্যাস এইবার তিথির পরান যায় যায় অবস্থা,,,কারন নিলয়ের হাতে ফোন দেওয়া মানেই আজ তার বাঁচার চান্স,,, পুরো ০%।তিথির বারবার চুপ করা দেখে নিলয় ধমক দিয়ে উঠল-;

-:কি হল শুনতে পাচ্ছ না,,,কি বলছি আমি?? কোথায় তোমার ফোন??

নিলয়ের এমন ধমকে তিথি কেঁপে উঠলো,, তারপর মনে কিছুটা সাহস সঞ্চয় করে বললো-;

-:আ..আসলে ফো..ফোনটা কো..থা…কথায় রেখে..রেখছি,,,আমার না ঠি…ঠিক মন..মনে পড়ছে না।

-:বাহ সারাদিন বাসায় আছো অথচ তোমার ফোন তুমি কোথায় রেখেছো তা তুমি জানোই না,,আমাকে কি ক্লাস টু তে পড়া বাচ্চা ছেলে মনে হয় তোমার।(দাঁতে দাঁত চেপে বললো)

-:আ..আসলে..

-:চুপ চুপ একদম চুপ!!!চুপচাপ ফোনটা আমাকে দাও।আর একটাও বাড়তি কথা শুনতে চাই না তোমার কাছ থেকে।আর মিথ্যা কথা বলার চেষ্টা করলে তোমার অবস্থা কি হবে তা তুমি নিজেও জানো না।(ধমক দিয়ে উঠল নিলয়)

নিলয়ের এমন কথায়,,তিথি প্রচুর ভয় পেয়ে গেল,,তাই আর সময় নষ্ট না করে,,বালিশের নিচ থেকে ফোনটা নিয়ে নিলয়ের হাতে দিয়ে দিল।নীলয় তিথির কাছ থেকে ফোনটা নিয়ে,,,একবার চেক করে,,,খাটের ওপর ছুড়ে মারল।তারপর তিথির হাত টেনে,,,নিজের সাথে মিশিয়ে নিল,,তারপর বলতে লাগলো-;

-:কতবার ফোন করেছি আমি,,হ্যাঁ কতবার।।একবারও কি ধরার প্রয়োজন বোধ করো নি।জানো কতটা টেনশনে ছিলাম আমি,,ফোন না ধরায়,,,সে খবর কি তুমি রাখো।

নিলয়ের এমন কথায়,,,তিথির মনে আবারও অভিমানের কালো মেঘ ছেয়ে গেল,,,নিলয় কাছ থেকে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে,,নিলয় দিকে তাকিয়ে অভিমানী কণ্ঠে বলতে লাগলো-;

-:কেন ফোন ধরবো আপনার আমি,,,ধরবো না তো,,, কোনদিনও ধরবো না।আপনি কি আমাকে জানানোর প্রয়োজন বোধ করেছিলেন যে আজ আপনি আমাদের বাসায় আসবেন।তাহলে আমি কেন কথা বলব আপনার সাথে।এই আপনি আমাকে ভালোবাসেন,,,কোনো কথা নেই আপনার সাথে।

এই বলে তিথি অন্যদিকে নিজের মুখ ফিরিয়ে নিল,,,এমন অভিমান পূর্ণ কথা নিজের প্রিয়সির মুখে শুনে,,,নিলয় বুঝতে পারল যে তার বাচ্চাটা তার উপর প্রচন্ড অভিমান করেছে।।তাই নিজের রাগকে সাইডে রেখে,,,,নিজের অভিমানীর অভিমান ভাঙাতে লেগে পরলো নিলয়।

তিথির হাত ধরে টেনে নিজের কোলে বসিয়ে,,,তিথির গালে নিজের দুই হাতে রেখে বলতে লাগলো-;

-:ও তাহলে আমার বাচ্চাটার রাগ হয়েছে আমার উপর??কি তাইত??

-:হ্যাঁ হয়েছে তো খুব খুব খুব রাগ হয়েছে।। আপনার সাথে আর কোন কথা নেই,,আজ থেকে আড়ি আপনার সাথে আমার।

এই বলে তিথি নিজের কোড়া আঙ্গুল দিয়ে নিলয়ের কোড়া আঙুল ছুইয়ে দিল।তিথির এমন বাচ্চামো দেখে,,,নিলয় হেসে ফেললো,,তারপর বলে উঠলো-;

-:তাই বুঝি আমার বাচ্চাটার রাগ হয়েছে আমার উপরে।সরি বাচ্চা আমি ভেবেছিলাম তোমাকে সারপ্রাইজ দিবো,,,কিন্তু বুঝতে পারিনি যে তুমি কষ্ট পাবে আমার সারপ্রাইজে।যদি বুঝতাম তাহলে কখনোই তোমাকে এমন সারপ্রাইজ দিতাম না।

নিলয়ের কথা শুনেও তিথি কোন কথা বলল না চুপচাপ মাথা নিচু করে বসে আছে,,তিথিকে এমন চুপ করে বসে থাকতে দেখে,,,নিলয় আবারো বলে উঠলো-;

-:সরি তো আর ওমন ভুল কক্ষনো হবেনা,,,এই তোমাকে প্রমিস করলাম।এবার তো ক্ষমা করে দাও,,,আর রাগ করে থেকো না প্লিজ।এবার কি কান ধরে মুরগি হতে হবে আমাকে।যদি তুমি বলো,,তাহলে আমি সেটাও করতে রাজি,,, কিন্তু প্লিজ আমার উপর রাগ করে থেকো না।।

নিলয়ের ওমন কিউট মার্কা ফেইস রিঅ্যাকশন দেখে তিথি ফিক করে হেঁসে ফেললো।নিজের প্রিয়সিকে হাসতে দেখে নিলয় মনে মনে কিছুটা স্বস্তি পেল।তারপর তিথিকে শক্ত করে নিজের বাহুর মধ্যে আবদ্ধ করে,,, বলতে লাগলো-;

-:তাহলে আমার পাখিটার অভিমান কমেছে,,,কি তাইতো???

-: হুম।

এই বলে নিলয়ের বুকে মাথা রাখলো।।বেশ কিছুক্ষন সময় পর তিথি বলে উঠলো-;

-:আচ্ছা ভাইয়া যদি আমাদের সম্পর্কটা না মানে,,,তখন কি করবেন আপনি??

নীলয় এতক্ষন চোখ বুঝে নিজের প্রিয়সির স্পর্শ অনুভব করছিল।কিন্তু তিথির কথায় নিজের অজান্তেই নিলয়ের মনে ছাৎ করে উঠলো।সত্যিই তো এতক্ষণ তো সে ভাবেই নি এই বিষয়টা।যদি সেই প্রেম বিরোধী নেতা তাদের সম্পর্কটা না মেনে নেয় তাহলে,,,তাহলে কি করবে সে??সে তো মরেই যাবে এই বাচ্চাটাকে ছাড়া।।পৃথিবীতে নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য যে তাকে এই বাচ্চাটাকে প্রয়োজন,,, খুব বেশিই যে প্রয়োজন তাকে।।

নিলয় কে এমন চিন্তা করতে দেখে,,,তিথির প্রচন্ড হাসি পাচ্ছিল,,,তবুও নিজের হাসিটাকে চেপে রেখে বলে উঠলো-;

-:এইযে কিছু বলছি তো আমি,,,শুনতে পাচ্ছেন না আমার কথা??

-:হুম।(অন্যমনস্ক ভাবে)

-:বলছি যে ভাইয়া আমাদের সম্পর্কটা যদি না মেনে নেয় তাহলে কি হবে।

নিলয় কিছু বলতে হবে তার আগেই,,,তিথি বলে উঠলো-;

-:আমি বাপু আগে থেকে বলে রাখছি ভাইয়া যা সিদ্ধান্ত নেবে,,,সেই সিদ্ধান্তটাকেই আমি মাথা পেতে নিব।কারন আমি আমার ভাইয়াকে খুব ভালোবাসি।আমার ভাই যদি আপনাকে না মেনে নেয়,,,তাহলে আমিও আপনাকে মেনে নিতে পারবো না।আর আমার ভাই যার সাথে আমার বিয়ে দেবে,,,আমি তার সাথেই বিয়ে করব,,,বুঝতে পেরেছেন,,,,দরকার পরলে আপনি না হয় অন্য জনকে দেখে নিন।।

তিথির এমন কথা শুনে মুহূর্তেই নিলয় রেগে গেল,,,নিজের এক হাত দিয়ে তিথির গালটা শক্ত করে চেপে,,,বলে উঠলো-;

-:বেশি কথা বলতে শিখে গেছিস তুই তাই নারে।। তুই আর তোর ভাই আমাকে কি পেয়েছিস হ্যাঁ বল কি পেয়েছিস???

-:আহহহ লাগছে ছাড়ুন আমায়।(ব্যথায় কুঁকড়ে উঠল)

-:লাগুক লাগার জন্য‌ই ধরা।এই বলনা রে আমার ভালোবাসাটা কে তোরা কি ভেবেছিস,,,খেলনা।।আর অন্য কাউকে দেখে নেব মানে,,,আমি কি চাকরির ইন্টারভিউ দিতে গিয়েছি যে তোর ভাইয়ের আমাকে ভালো লাগলো না বলে তুই আমাকে ছেড়ে দিবি আর আমিও ঢং ঢং করে অন্য কোনো অফিসে ইন্টারভিউ দিতে চলে যাবো।তোর ওই লো মেন্টালিটির ভাই যদি এসব ভেবে থাকে তাহলে ভুল ভেবেছে সে।আর তুই যদি বেশি নটাংকি করেছিস,,তাহলে তোকে আর তোর ভাইকে দড়ি দিয়ে বেঁধে ঝুলিয়ে রাখবো।আর দরকার পরল তোকে তুলে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করবো,,বুঝতে পেরেছিস তুই।।

এই বলে তিথিকে ছেড়ে দিলো নিলয়।প্রচন্ড জোড়ে গালটা চেপে ধরায়,,অনেক ব্যথা পেয়েছে তিথি,,,নিলয়ের দিকে ছল ছল চোখে তাকিয়ে বলে উঠলো-;

-:পচা বাজে লোক একটা শুধু আমাকে বকে,,কষ্ট দেয়।আপনি একটা পাষান লোক আপনার সাথে আর আমার কোন কথা নেই,,,,বেরিয়ে যান আমাদের বাড়ি থেকে।আর আমার ভাই এতটাও বাজে না,,, বুঝেছেন আপনি।আপনি সবাইকে আপনার মতন ভাবেন,,,আমি আপনাকে বলবো ভেবেছিলাম যে ভাই আর বাড়ির লোক সবাই এই বিয়েতে রাজি হয়েছে কিন্তু আর আপনাকে কিছু বলবোনা,,,আমি কালকে সকালেই ভাইয়াকে বলে দেবো করতে চাই না আপনাকে আমি বিয়ে।।। আপনার মত পচা লোকের সাথে বিয়ে করবো না আমি কিছুতেই।।

তিথির কথায় নিলয় মনে মনে প্রচুর লজ্জিত হল নিজের ব্যবহারের।তিথির দুই হাত নিজের দুই হাতের মধ্যে রেখে,,বলে উঠলো-;

-:ও পাখি সরি,,আমি বুঝতে পারিনি যে তুমি আমার সাথে মজা করছিলে।।আসলে আমার খুব রাগ হয়েছিল,,,তোমার ওই সব কথা শুনে তাই আমি একটু বেশি রিয়াক্ট করে ফেলেছি।।

তিথি নিজের হাত সরাতে সরাতে বলে উঠলো-;

-:ছারুন বলছি আমার হাত,, আপনার সাথে আর কোন কথা নেই আমার।আপনি একটা অত্যন্ত অসভ্য বাজে লোক।

নিলয় তিথিকে নিজের সাথে শক্ত করে জরিয়ে ধরে বলে উঠল-;

-:ও আমার তিথু পাখি সরি সরি সরি,,, আমি আর কোনদিনও তোমার ভাইয়ার সম্পর্কে কোন বাজে কথা বলব না,,,এবারের মত ক্ষমা করে দাও আমায়।তুমি তো জানো বলো আমি রেগে গেলে,,,আমার মাথা ঠিক থাকেনা।এই পাখি ক্ষমা করে দাও না।পাখি তুমি রেগে গেলে যে তোমার নাক ফুলে বেলুন হয়ে যায়,,তা তো আগে জানতাম আমি।

নিলয়ের কথা শুনে তিথি সঙ্গে সঙ্গে নিলয় এর কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে,,,নাকে হাত দিয়ে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো,,,তারপর বলতে লাগলো-;

-:কই আমি তো কিছু বুঝতে পারছিনা।???

তিথির এমন রিয়াকশন নিলয় হেসে ফেললো,,,তারপর বললো-;

-:তুমি দেখতে পাবা না,,,এসো আমার কাছে আমি তোমাকে দেখিয়ে দিচ্ছি।

নিলয়ের কথা শুনে তিথি টুকুর টুকুর চোখে নীলয়ের দিকে তাকালো,,নিলয় আর কিছু না বলে তিথির হাত ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নিল,, তারপরে বলল-;

-:বললাম না আমার কাছে আসতে,,আমি দেখিয়ে দিচ্ছি।

এই বলে তিথির চুল নিজের এক হাত ঢুকিয়ে দিয়ে নিজের একদম কাছে নিয়ে এলো আর অপর হাতেতিথির কোমর পেঁচিয়ে ধরল,,,এতে তিথি কিছুটা কেঁপে উঠলো,,,তারপর কাঁপা কাঁপা গলায় বলে উঠলো-;

-:কি করছেন ছা..ছাড়ুন আমায়।

-:শিইইই চুপ একদম চুপ বললাম না আমি দেখিয়ে দিচ্ছি।

-:দ…দরকার নেই।আপনাকে কিছু দেখাতে হবে না,,ছা..ছাড়ুন।

-:তা বললে কি করে হয় পাখী।

কথা বলতে বলতে নিলয় তিথির অনেক টা কাছে চলে এসেছে,,,তিথি নিলয়ের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতেই নিলয় আরও গভীর ভাবে তিথি কে নিজের সাথে মিশিয়ে নিল,,,তারপর তিথি কে আর কিছু বলতে না দিয়ে তিথির কোমল গোলাপি ঠোঁটগুলোকে নিজের ঠোঁট দিয়ে চেপে ধরল,,,তারপর পরম আবেশে শুষে নিতে থাকলো,,,তিথি ঠোঁট গুলো কে তিথি প্রথমে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলেও,,,পরে সেও তাল মিলাতে লাগলো নিলয় এর সাথে।

প্রায় ১০মিনিট পর তিথি কে ছেড়ে,,,তিথির কপালের সাথে নিজের কপাল ঠেকিয়ে স্লো ভয়েসে বলতে লাগল-;

-:পাখিইইইই।।

নিলয়ের এমন ডাকে তিথি কিছুটা কেঁপে উঠলো,,,তারপর আস্তে করে নিজের চোখ খুললো।। এতক্ষণ সে চোখ বুজে ছিল,,,নীলয়ের দিকে তাকাতেই,,,নিলয় বলে উঠলো-;

-:আজ আপাতত এইটুকুই থাক,,,বাকিটা আমাদের বিয়ের পর হবে।

এই বলে তিথির কপালে একটা ভালোবাসার পরশে এঁকে দিল।নিলয়ের এমন কথায় তিথি লজ্জায় লাল হয়ে উঠলো।আরো কিছুক্ষন তিথির সাথে গল্প করে নিলয় নিজের বাসায় চলে গেল।
.
.
?
.
.
নিলয় এবং রিয়াদ হোসেন সোফায় বসে আছে আর তার ঠিক পাশের সোফায় আবির এবং নজরুল সাহেব বসে আছেন।তারা নিজেদের মধ্যে কথা বলছিল,,,ঠিক সেই সময় তিথি চায়ের ট্রে নিয়ে তাদের সামনে এসে দাড়ালো।তিথির দিকে তাকাতেই নিলয়ের মুখ অটোমেটিকলি হা হয়ে গেল,,অসম্ভব সুন্দর দেখতে লাগছে আজ তার পরী টাকে,,,শাড়িতে আরো যেন বড় বড় লাগছে আজ তার বাচ্চাটাকে।অরেঞ্জ কালারের সিম্পল কাজ করা একটা শাড়ি পরেছে তিথি,,,হাত ভর্তি অরেঞ্জ কালারের কাচের চুড়ি,,, চোখ ভর্তি গারো কাজল আর ঠোঁটে মিষ্টি কালারের লিপস্টিক।ব্যাস এই টুকু সাজেই তার পাখিকে,,,জান্নাতের পরীর মত লাগছে আজ।চুলগুলো খোলা রেখেছে,,তা পিঠ পর্যন্ত ছাড়িয়ে গিয়েছে।চোখ ফেরানো যাচ্ছে না তার উপর থেকে।

রিয়াদ হোসেন তিথীকে দেখে তার পাশে এনে বসালেন তারপরে তিথির মাথায় হাত বুলিয়ে,,,নজরুল সাহেব কে উদ্দেশ্য করে ,বলতে লাগলেন-;

-: আমি আর দেরী করতে চাই না,,,খুব তাড়াতাড়ি আমি আমার এই মেয়েকে আমাদের ঘরে নিয়ে যেতে চাই।

-:হ্যাঁ সে ঠিক আছে আমাদের তাতে কোন আপত্তি নেই।(নজরুল সহেব)

-:তাহলে আমি পরের মাসেই তিথি মামনিকে নিলয়ের বউ করে নিয়ে যেতে চায়,,, আপনাদের কোন আপত্তি নেই তো।

-: না তেমন কোনো আপত্তি নেই কিন্তু তিথির বেস্ট ফ্রেন্ড নিশি কিছুদিন আগেই এক্সিডেন্ট করেছে,,,এখন খুব একটা চলাফেরা করতে পারে না।আর তিথি ও বলছিল তাকে ছাড়া সে বিয়ে করবে না।আসলে আমরাও তাই চাই,,,যতই হোক নিশি আমাদের মেয়েরই মতন।আর তাছাড়াও তিথি আমাদের বাড়ির একমাত্র মেয়ে সুতরাং একটু টাইম দিল ভালো হতো,,, আমি ওর বিয়েটা ধুমধাম করে করতে চাই।(নজরুল সাহেব)

-:ও সেটা তো খুব খারাপ সংবাদ যতই হোক বেস্ট ফ্রেন্ড বলে কথা।কিন্তু এটাও ঠিক যে তিথি মামনি কে আমরা খুব তাড়াতাড়ি নিজের বাড়িতে নিজে যেতে চায়।তাই..

রিয়াদ হোসেনকে মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে নিলয় বলে উঠলো-;

-: আমাদের কোন প্রবলেম নেই নিশি পুরোপুরি সুস্থ হলেই,,, আমাদের বিয়ে হবে।।

-: আচ্ছা নিলয় বলছে যখন তাই নয় হবে।।কিন্তু আমি চাই পরের মাসে অন্তত এদের অকদ টা করিয়ে রাখতে,,,কি বলেন এতে তো কোন আপত্তি নেই।।

-: না না এতে আমাদের কোন আপত্তি নেই।

-:ব্যাশ তাহলে ঠিক হয়ে গেল সামনের মাসেই তিথি এবং নিলয়ের অকদ।

-: যদি কিছু মনে না করতেন নিলয়ের সাথে আমার কিছু জরুরী কথা ছিল।

আবির বলে উঠলো। আবিরের এমন কথায় নিলয় মনে মনে ভাবলো-;

-: কি জ্বালাতন এই শালা বাবু দেখছি আমার পিছন কিছুতেই ছাড়বে না।আবার কি বলবে আমাকে জানে???

-: হ্যাঁ অবশ্যই বলতে পারো,,,যাও নিলয় আবিরের সাথে।(রিয়াদ হোসেন)

-:জি মামা।।
দেখা শোনায় গেলে পাত্র এবং পাত্রীকে আলাদা কথা বলতে পাঠায়,,এটা শুনেছি।কিন্তু এটা কোনদিনও শুনিনি যে পাত্রকে পাত্রীর ভাইয়ের সাথে কথা বলার জন্য আলাদা করে পাঠানো হয়।(মনে মনে)

তারপর নিলয় এবং আবির বাড়ির ছাদে চলে গেল……
.
.
.
.
[বাকিটা নেক্সট পর্বে]
?

তোমাকে আমার প্রয়োজন পর্ব-১৮

0

#তোমাকে আমার প্রয়োজন??
#মেঘ পরী??

??পর্ব-১৮??
.
?
.

রিয়াদ হোসেনের কথা শুনে আবির উঠে‌ দাঁড়িয়ে বলতে লাগলো-;

-:ক্ষমা করবেন আংকেল এটা সম্ভব নয়।

-: কিন্তু কেন বাবা।(রিয়াদ)

-:এই একজন প্রেম বিরধী পাবলিক এলেন।শালা নিজে তো অত সুন্দর একটা কিউটিপাই কে রিজেক্ট করে নিজের পায়ে কুড়ুল মেরে‌ইছিস,, এবার এসছিস আমাদের মাঝে চায়না ওয়াল তৈরি করতে,,তোর নিশির সাথেই বিয়ে করতে হবে দেখে নিস,,,যত্তসব।(নিলয় মনে মনে কথাগুলো বলেই,,আস্তে করে আবিরের দিকে তাকিয়ে একটা ভেংচি মারলো সবার আড়ালে)

-:আসলে তিথি সবেমাত্র এইচএসসি পরীক্ষা দিল।আর তাছাড়া ও এখন খুবই বাচ্চা,,ওর বিয়ে নিয়ে আমরা এখন ভাবিও নি।তাই…

আবিরকে থামিয়ে দিয়ে রিয়াদ হোসেন বলে উঠলেন-;

-:দেখো বাবা,,আমি জেনেশুনেই এখানে এসেছি।আমি জানি তিথি মামনি সবেমাত্র এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছে,,,আর তাছাড়াও বিয়ের পর তিথি মামনি যত ইচ্ছা পড়াশুনা করতে পারি এতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই।

-:কিন্তু আঙ্কেল তিথি যদি বিয়েতে রাজি না হয়,, তাহলে আমরা ওর এই বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারবো না।

আবিরের কথা শুনি রিয়াদ মুচকি হেসে বলল-;

-:বাবা কোন কিছু না যাচাই করে আমি কোথাও যাই না,,,আসলে নিলয় এবং তিথি মামনি একে অপরকে ভালবাসে অনেকদিন ধরেই।আর তাই আমি এই প্রস্তাবটা নিয়ে এসেছি,,তোমাদের কাছে।তিথি মামনিকেও আমার বেশ পছন্দ হয়েছে।

রিয়াদ হোসেনের এমন কথায় বাড়ির সবাই ৪৪০ ভোল্টের শক খেয়ে হাঁ হয়ে তাকিয়ে আছে।এদিকে তিথির মামার তো হার্ট অ্যাটাকেই চলে এসেছিল,, একটুর জন্য বেঁচে গেছে এই যাত্রায়।বেচারা বুকে হাত দিয়ে নির্বাক শ্রোতার মতোন রিয়াদ হোসেনের দিকে তাকিয়ে আছেন।

আর তিথি!!তিথির তো মনে মনে ভাবছে সে যদি স্পাইডারম্যানের হতো তাহলে এক্ষুনি এক লাফে তাদের বাড়ি থেকে নিশিদের বাড়ি চলে যেতে পারতো।নিলয় তার মামাকে নিয়ে এসে যে এই ভাবে তাকে ফাঁসাবে,, বেচারী বুঝেই উঠতে পারেনি।নিলয় বসে বসে বেশ ভালোই উপভোগ করছিল তিথির ফ্যামিলি প্রত্যেকের রিয়্যাকশনগুলোকে।আবির তিথির দিকে তাকাতেই তিথি মাথা নিচু করে ফেলল।আবির কিছুক্ষণ ভেবে নিয়ে বলল-;

-:আঙ্কেল আমাদের কিছু সময় দরকার,,বুঝতেই পারছেন আমাদের ঘরের একটা মাত্র পিচ্চি মেয়ে।সুতরাং ভাবার কিছু সময় দরকার।

-:ওকে ইউ টেক ইউর টাইম,,বাট একটু তাড়াতাড়ি তোমরা তোমাদের ডিসিশনটা,,,
আমাদের জানিও কেমন।কারণ আমি চাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তিথি মামনি কে আমাদের বাড়িতে নিয়ে যেতে,, নিলয়ের ব‌উ করে।

-:জি

-:আচ্ছা তাহলে আমরা আজ উঠি।

-:সে কি কথা!!এই প্রথম আমাদের বাড়িতে এলেন আর কিছু মুখে না দিয়ে চলে যাবেন।(মামি)

-:আজ নয় আপা যেদিন বিয়ের পাকা কথা বলতে আসবো,,সেই দিন একাবারে কবজি ডুবিয়ে খাওয়া-দাওয়া করে যাব ক্ষন,,,আজ তাহলে আসি।

-:আচ্ছা ঠিক আছে ভাইজান।(মামি)

তিথির মামী তিথির মামাকে কনুই দিয়ে গুতা দিয়ে রাগী চোখে তাকাতেই,,তিনি সঙ্গে সঙ্গে উঠে বলতে লাগলেন-;

-: হ্যাঁ হ্যাঁ আবার আসবেন কিন্তু আপনারা আমাদের বাসায়।

যেন অতি অনিচ্ছাসত্বেও তিনি কথাগুলো বলছিলেন নিলয়দের।যাবার সময় নিলয় তিথির দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেঁসে এক চোখ মেরে গেল,,তিথি সেই মুহুর্তে নিলয়কে তুলে আছাড় মারতে ইচ্ছা করছিল।
.
.
?
.
.

তিথির ফোন বেজেই চলেছে একনাগারে।নিলয় তাকে বারবার ফোন করছে,, কিন্তু তিথি কিছুতেই ফোনটা রিসিভ করছে না।

কেন ধরবে সে তার ফোন,,,কি করে পারল সে তার কাছ থেকে এত বড় একটা কথা লুকাতে। খুব রেগে আছে তিথী তার উপর আজ।একবার বললে কি এমন হতো,,,ধরবে না তিথি তার ফোন,,,দেখি কত বার করে করতে পারে সে।

এসব কথা তিথি নিজের মনে মনে ভাবছিল,,এমন সময় তিথির রুমে আবির প্রবেশ করল।ভাইয়াকে এই সময় তার রুমে দেখে তিথি কিছুটা অবাক হল।তারপর নিজেকে স্বাভাবিক করে বলে উঠলো-;

-:কিছু বলবি ভাইয়া।

আবির কিছুটা গম্ভীর গলায় তিথির দিকে তাকিয়ে বলল উঠলো-;

-:কবে থেকে চলছে এসব??

-:আসলে….

আবিরের কথা শুনে তিথি ভালভাবেই বুঝতে পেরেছে,,,কেন সে তার রুমে এসেছে।কিন্তু কি জবাব দিবে সে কিছুই বুঝতে পারছেনা।

-:কি হলো উত্তর দিচ্ছিস না কেন??

কিছুটা কাচুমাচু হয়ে ধীর গলায় উত্তর দিল-;

-:আসলে ভাইয়া এবারে যখন নিশির সাথে ঘুরতে গেলাম,,সে…সেইবার…

আর কিছু বলতেন না দিয়ে আবির বলে উঠলো-:

-:ও তারমানে এতদিন ধরে এইসব চলছে,,,অথচ আমি কিছুই জানি না।।তুই আমার কাছেও কথা লুকাতে শিখে গেছিস বুড়ি।

-:সরি ভাইয়া আসলে আমি…

-:থাক তোকে আর কিছু বলতে হবেনা যা বোঝার আমি বুঝে নিয়েছি।আমাকে বললে কি এমন হতো তোর।

– আসলে ভাইয়া আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।(কাঁদো কাঁদো গলায় বলল তিথি)আমার ভুল হয়ে গেছে,,,প্লিজ রাগ করে থাকিস না আমার উপর।

তিথির কথা শুনে আবির আরো গম্ভীর গলায় বলে উঠলো-;

-:ভুল যখন করেই ফেলেছিস সেটাকে তো আর শুধরানো যাবে না,,,কিন্তু তুই এটুকু বুঝে রাখ নিলয়ের সাথে তোর বিয়ে হবে না,,কোনমতেই না।

ভাইয়ার এমন কথায় তিথির চোখ মুহূর্তেই অশ্রুতে পরিপূর্ণ হয়ে গেল।আবির বোনের এমন চেহারা দেখে মুচকি হাসলো,,তারপর নিজের দুই হাত দিয়ে বোনের গাল ধরে উচু করলো,,তারপর বলতে লাগলো-;

-:খুব ভালবাসিস তাই নারে।

তিথি ছলছল চোখে মাথা নাড়ালো যার অর্থ হলো হ্যা সে ভালোবাসে তার সেই রাগী বদমেজাজি মানুষটাকে,,বাঁচবে না সে তাকে ছাড়া এক মুহুর্ত‌ও।প্রচন্ড পরিমানে ভালোবেসে ফেলেছে যে তাকে।আবির আর কিছু না বলে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো তিথিকে,, তারপর বলল-;

-:আমার বুড়ি আমার কাছে কিছু চেয়েছে আর আমি তাকে দিই নি,,এমনকি কোনদিন হয়েছে সুতরাং আজও তা হবেনা।আমি তো এমনি বললাম,,তোর ওমন রিয়াকশন দেখার জন্য।নিলয়ের সাথেই তোর বিয়ে হবে।কিন্তু তুই আমার কাছে কেন লুকালি এত বড় কথা,,বুড়ি আমাকে সবকিছু খুলে বলতে পারতিস।এই বাড়িতে একমাত্র তুই আছিস যাকে আমি সব থেকে বেশি ভালবাসি,,বিশ্বাস করি।

-:আসলে আমি ভেবেছি তুই রাগ করবি ভাইয়া। সরি তোকে হার্ট করার জন্য।

-:দূর পাগলী আমি জানি আমার বোন আমাকে খুব ভালোবাসে।সে আমাকে কোনদিন কষ্ট দিতেই পারেনা আর এটাও জানি তুই নিশির ব্যাপারটা নিয়ে আমার উপর রেগে আছিস কিন্তু আমার বিশ্বাস তুই ঠিকই তোর ভাইয়াটাকে ক্ষমা করে দিতে পারবি,,তার এই ভুলের জন্য।কি পারবি না তোর ভাইয়াকে ক্ষমা করতে??

তিথির দিকে অনেক আগ্রহ নিয়ে আবির তাকিয়ে আছে,,,তার উত্তর শোনার জন্য।তিথি মুচকি হেসে মাথা নাড়ালো।আবির তা দেখে মনে মনে কিছুটা হলেও শান্তি পেলো যে তার বুড়িটা অন্তত তাকে ক্ষমা করতে পেরেছে।তিথি আবার আবিরের দিকে তাকিয়ে,,কান্না মিশ্রিত গলায় বলে উঠলো-;

-:কিন্তু ভাইয়া নিশি সত্যিই তোমাকে খুব ভালোবাসে।তুমি তাকে অমনভাবে কষ্ট না দিলেও পারতে।

এবার আবির আর কিছু না বলে তিথি মাথায় হাত বুলিয়ে চলে গেল,,,হয়তো সেও মনে মনে অনুতপ্ত তার ভুলের জন্য।আবিরের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে তিথি মনে মনে বলে উঠল-;

-:আমি পেয়ে গেছি আমার উত্তর ভাইয়া,,,তোমার নিস্তব্ধতায় আমাকে আমার উত্তর দিয়ে দিয়েছে।। আমি আর আমার নিশুমনি কে কষ্ট পেতে দেবো না,,,আমি এইটুকুনি বুঝতে পেরেছি যে তুমি তোমার ভুলের জন্য অনুতপ্ত।এবার তুমি দেখবে কি করে আমি তোমাকে নিশির প্রেমে হাবুডুবু খাওয়ায়,,,যদি না খাওয়াতে পারি তো আমার নাম‌ও তিথি নয়। [আপনাদের ও কি এক‌ই মত???]
.
.
?
.
.

রাতে খাবার টেবিলে মামা,,,মামির উদ্দেশ্যে বলতে লাগলো-;

-:দেখো দেখো খুব তো বলতে যে আমি নাকি তোমার মেয়েকে বিনা কারণে সন্দেহ করি সবসময়,,,এবার দেখেছো তো কেন আমি তাকে বারবার সন্দেহ করতাম।

নজরুল সাহেবের কথায় তার স্ত্রী প্রচন্ড পরিমানে ক্ষেপে গেলেন তার উপর,,,,রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলতে লাগলো-;

-:এই চুপ করো তুমি,,,বেশি বকরবকর করোন না,,, এই বয়সে প্রেম করবে না তো কি তোমার মত টাকলু বয়সে প্রেম করবে যত্তসব।

-:কি এখনো তুমি আমার ভুল ধরে যাবে,,,নিজের মেয়েকে শাসন না করে,,, আমার ওপর চিল্লাচ্ছে তুমি।(অসহায় ভাবে)

-:এতে আমি আমার মেয়ের কোন ভুল‌ই দেখতে পারছিনা।

-:কিইইইইইই??

এবার আবির বলে উঠলো-;

-:তোমাদের সাথে আমার কিছু কথা ছিল।

-:হ্যাঁ বল তুই কেন বাদ যাবি,,, তুইও একটা বোম ফাটিয়ে ফেল,,তোর বোনের মতন।শেষে কোনদিন আমরা বাড়িসুদ্ধ না উড়ে যায় তোদের বোম ফাটানোর চক্করে।

-:আহ তুমি চুপ করবে,,সবসময় বেশি বকবক করো তুমি,,,বল বাবা তুই কি বলছিস বল।

-:আসলে আমি তিথির বিয়ের ব্যাপারে কথা বলতে চাইছি,,,আমি সব খোঁজ খবর নিয়ে দেখলাম নিলয় ছেলেটা ভালো,,ও চৌধুরী গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ এর একমাত্র ওনার আর তাছাড়াও বুড়ি আর নিলয় একে অপরকে ভালোবেসে।আর বুড়িও চাই এই বিয়েটা করতে,,,তাই আমি চাই এই বিয়েটা হোক।এবার বল তোমাদের কি মত এই বিষয়ে।

-:আমারতো….

নজরুল সাহেবকে আর কিছু বলতে না দিয়েই ওনার ফাস্ট বোলার সহধর্মিনী বলে উঠলেন-;

-:একদম ঠিক ডিসিশান নিয়েছিস তুই,, আমিও তোর ডিসিশনে একমত।তুই বরং এক কাজ কর কালকে ওদের দুপুরে দাওয়াত দে,,,সেখানে আমরা এই বিষয়ে কথা বলবো ক্ষন।আর তাছাড়া বিয়ের ডেট‌ও ঠিক করতে হবে,,,তাই ওরা এলে ওদের সামনে এসব বিষয়ে আলোচনা করতে সুবিধা হবে বেশি,,,কি বলিস।

-:হ্যাঁ আমিও তাই ভাবছিলাম,,,আমি বরং ফোন করে তাদের জানিয়ে দিবো।(আবির)

-:মামি আমার একটা কথা ছিল।

-:হ্যাঁ মামণি বল কি বলবি তুই??

-:আসলে বলছি যে নিশি যতদিন না পুরোপুরি সুস্থ হচ্ছে ততদিন পর্যন্ত আমি বিয়ে করবো না।। আমি চাই আমার বিয়েতে আমার একমাত্র বেস্টু উপস্থিত থাকুক,,, তাকে ছাড়া আমি কিছুতেই বিয়ে করব না।

-:আচ্ছা সে হবে ক্ষন,,,আগে তারা আসুক কাল,,, কথাবার্তা হোক তারপর এই বিষয়ে না হয় আলোচনা করব।

-:ওকে মাই ইয়ং বিউটিফুল লেডি।

তিথির কোথায় তিথির মামী খুশিতে গদগদ হয়ে গেলেন।উনার একটা দুর্বল পয়েন্ট আছে ওনার বিউটির প্রশংসা যেই করবে তাকে তিনি মৃত্যুর আগে পর্যন্ত ভালোবেসে যাবেন।এদিকে নজরুল সাহেব অনেকক্ষণ ধরে তাদের কথাবার্তা শুনছিলেন চুপ থেকে এবার আর চুপ না থেকে বলেই ফেললেন-;

-:বলি আমি যে এই বাড়িতে থাকি,তা কি কারোর মনে আছে নাকি সে টাও কারোর মনে নাই?? আমারও তো ডিসিশন নেওয়ার হক আছে,,,যত‌ই হোক আমি এ বাড়ির কর্তা,,কিন্তু আমি আমার ডিসিশনের কোন ভ্যালুই দেখতে পারছিনা।

-:উফফফ,, শুরু করে দিল টাকলা।

তিথির কানে ফুসুর ফুসুর করে বললেন মামি। মামীর কথায় তিথি অনেক কষ্টে নিজের হাসি থেকে কন্ট্রোল করল।

-:হ্যাঁ তা বল,,বল কি বলবে তুমি বলে ফেল।(মামি)

-: হ্যাঁ বাবা অবশ্যই তুমি মত না দিলে কি করে হবে।

-: হ্যাঁ হ্যাঁ মামা বলে ফেল।

নজরুল সাহেব কিছুটা সংকোচ নিয়ে বলতে লাগলেন-;

-:না মানে আমি বলছিলাম কি বিয়েটা কি এখন‌ই….

-:শোন যা বলবে ভেবে বল,,,ঠিক আছে।???

-:??? হ্যাঁ হ্যাঁ।আসলে আমি বলছিলাম,,এই বিয়েতে আমি খুবই খুশি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিয়েটা হয়ে গেলেই বাঁচি হাহাহাহা।

-:??? ঠিক আছে এবার চুপচাপ ঘরে গিয়ে শুয়ে।

-:???? ঠিক আছে,,যাচ্ছি।

নজরুল সাহেবের এমন রিএকশনে তিথি আর আবিরের প্রচণ্ড রকমের হাসি পাচ্ছিল খুব কষ্টে নিজেদের হাসিটাকে কন্ট্রোল করেছে তারা।নজরুল সাহেব যতই সাহসী লোক হোক না কেন বউয়ের সামনে ভিজে বিড়াল।(তাইতো,,আমার পাঠিকাদের‌ও কি এক‌ই মত আমার মতন???)
.
.
?
.
.

এদিকে নিলয় প্রচন্ড রেগে আছে ৫০০+কল করে ফেলেছে অলরেডি তিথির ফোনে।কিন্তু এই মেয়ের কোন খেয়ালই নেই সেদিকে।কতটা কেয়ারলেস হলেই এমনটা করতে পারে কেউ। মানছে আজকের বিষয়টা তাকে না জানিয়ে ভুল করেছে সে কিন্তু সে তো সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিল তিথিকে।তাইতো নিলয় তাকে কিছুই জানায়নি এই বিষয়ে।কিন্তু নিলয় কি করে বুঝবে যে তিথি কে এমন সারপ্রাইজ দাওয়ায়,,তিথি তাকে এত বড় একটা বাঁশ খাওয়াবে।রাগ করেছে ঠিক হয়েছে তাই বলে ফোনটাও ধরবেনা,,কি জ্বালা।

ব্যাস নিলয় ধৈর্য্যের বাঁধ এবার ভেঙে গেছে আর কোনো কিছু না ভেবেই গাড়ির চাবিটা নিয়ে নিচে নেমে গেল,,,উদ্দেশ্য তিথির বাড়ি হামলা করা,,, তবে সেটা শুধুমাত্র তিথির বেডরুম,,বাড়ি তে হামলা করা মানে নিলয়ের আর জীবনেও তিথিকে বিয়ে করা হবে না।কারণ তার যেই ভুসি মার্কা শালা মহাশয় আছে তার দিয়ে কোনো বিশ্বাস নেই,,,সবসময় পারমানবিক বোমা নিয়ে রেডি থাকেন তিনি,,,যেখানেই প্রেম দেখবেন সেখানেই ছুঁড়ে মারবেন।তাই নিলয়ের কোন রিক্স নিতে চায় না,, তার শালা কে নিয়ে।
.
.
?
.
.

এদিকে তিথির ভাবতেই অবাক লাগছে যে তার পরিবার কত সহজেই নিলয় এবং তার সম্পর্কটা কে মেনে নিয়েছে।প্রথমে একবার ভেবে ছিল নিলয় কে ফোন করে ব্যাপারটা জানাবে,,,, কিন্তু পরক্ষনেই নিলয়ের সকালের চিটিংবাজির কথা মনে পড়ে গেল,,,তাই তার উপরে রাগ করে তাকে ফোন করেনি।শুধুমাত্র নিশিকেই খুশির খবরটা জানিয়েছে,,,নিশি খবরটা শুনে খুব খুশি হয়েছে।তারপর নিশির সাথে কিছুক্ষণ গল্প করে,,তিথি ঘুমিয়ে পরল।
.
.
?
.
.

রাত তখন দুটো,,,খুচ খুচ আওয়াজে তিথির ঘুম ভেঙে গেল,,,চোখ খুলে তাকাতেই দেখলো একজোড়া রাগী চোখ তার দিকে তাকিয়ে তিথি চিৎকার করতে যাবে অমনি……
.
.
.
.
[বাকিটা নেক্সট পর্বে]

তোমাকে আমার প্রয়োজন পর্ব-১৭

0

#তোমাকে আমার প্রয়োজন??
#মেঘ পরী?☘️

??পর্ব-17??
.
?
.

আবির বসে বসে ম্যাগাজিন পরছিল,,তখনই খেয়াল করলো যে নিশি পাশে থাকা পানির গ্লাসটা ধরার চেষ্টা করছে,,, আবির সঙ্গে সঙ্গে নিশির হাত থেকে গ্লাসটা নিয়ে পাশের টেবিলে রাখল তারপরে নিশিকে আস্তে করে তুলে,,,পানি খাইয়ে দিল তাকে।

পানি পান করার পর নিশি আস্তে করে তিথিকে ডাকতে লাগলো।আবির নিশির দিকে তাকিয়ে বলল-;

-:কি লাগবে আমায় বল,,আমি হেল্প করছি।

নিশি আবিরের কথায় কান না দিয়ে আবার তিথিকে ডাকতে লাগলো,,,আবির নিশি কে বলল-;

-:বুড়ি একটু আগেই ঘুমিয়েছে,,তুই আমায় বল,,কি লাগবে তোর।

-:না ঠিক আছে,, কিছু লাগবেনা,,

এই বলে নিশি আস্তে করে শোয়ার চেষ্টা করলো,, কিন্তু ব্যথার কারণে শুতে পারল না,,,তা দেখে আবির তাকে ধরে আস্তে করে শুইয়ে দিল।

-: আর কিছু লাগবে।

-:ধন্যবাদ,আমার কিছু লাগবেনা।

আবিরের একটা ফোন আসায়,,সে বাইরে গেল কথা বলার জন্য।যাওয়ার আগে তিথি কে ডেকে দিয়ে গেল,,যদি নিশির কিছু লাগে তার জন্য।তিথি নিশির কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করল,,,তার কিছু লাগবে কিনা।নিশি মাথা নাড়িয়ে হ্যা বলল।তারপর আস্তে করে বলল-;

-:আমাকে একটু ওয়াশ রুমে নিয়ে যাবি??

-: হ্যাঁ,,,আমার হাত ধরে আস্তে আস্তে ওঠ।

তিথি নিশিকে আসতে করে তুলতে লাগলো,, তখনই আবির রুমে ঢুকে তা দেখে উত্তেজিত হয়ে বলে উঠলো-;

-:আরে ওকে তুলছিস কেন,,এইভাবে??

-:ভাইয়া ও একটু ওয়াশরুমে যাবে।

আবির এবার বুঝতে পারলে কেন নিশি তিথিকে ডাকছিল।আবির এগিয়ে এসে বলল-;

-:আমি হেল্প করছি,,,তুই একা পারবি না।ওর হাতে পায়ে ব্যান্ডেজ করা।

এই বলে যেই নিশির গায়ে হাত দিতে যাবে,,ওমনি নিশির নিজের দুর্বল হাত দিয়ে আবিরের হাত সরিয়ে দিল এক ঝটকায়। তারপর তিথি দিকে তাকিয়ে বলল-;

-:তুই কি পারবি না পারলে থাক আমি যাব না।

-:না,,,না আমি পারবো,,,তুই চল।ভাইয়া তোকে যেতে হবে না।

আবির আর কিছু বলল না,,,সে বুঝতে পেরেছে নিশির মনে যে ক্ষত সে তৈরি করেছে তা সহজেই সারবে না।তিথি আস্তে করে নিশিকে ধরে ওয়াশ রুমে নিয়ে গেল।
.
.
?
.
.

আজ প্রায় পনের দিন হতে চলল,,,,নিশি হসপিটালে ভর্তি ছিল।আজকে নিশিকে ছুটি দেওয়া হবে।এতদিন তিথি আর আবির বাড়িতে যায়নি বললেই চলে,,,সারাদিন নিশির আশেপাশে থেকেছে দুজনে।এর মাঝে নিলয় বেশ কয়েকবার এসেছিল নিশিকে দেখার বাহানায় তিথির সাথে দেখা করে গেছে।

আবির নিশির হাতের এবং পায়ের ব্যান্ডেজ গুলো খুলে ওষুধ লাগিয়ে আবার নতুন ব্যান্ডেজ করেদিল।এই কদিন আবির নিশির সমস্ত ট্রিটমেন্ট করেছে নিজের হাতে।আজ তাকে ছুটি দেওয়া হবে বলে সে সমস্ত পেপার রেডি করে রেখেছে আগে থেকেই।আজকের নিশির ছুটি হবে তাই নিশির বাবা মা আর তিথির মামা-মামী সবাই এসেছে হসপিটাল।

নিশিকে চেকআপ করা হয়ে গেল আবির নিশির বাবা কে উদ্দেশ্য করে বলল-;

-:আঙ্কেল আমি ড্রেসিং করে নতুন ব্যান্ডেজ লাগিয়ে দিয়েছি এবার সপ্তাহে একবার ব্যান্ডেজ খুলে ড্রেসিং করতে হবে,,,তার জন্য ওকে হসপিটালে আসতে হবে না,,,আমি বাড়িতে গিয়ে ওর ড্রেসিং করিয়ে আসবো।

-:ঠিক আছে বা….

তাওহীদ সাহেবকে আর কিছু বলতে না দিয়ে নিশি বলে উঠলো-;

-:আব্বু বলছি কি তোমার সাথে আমার একটু কথা আছে,,, খুব জরুরি।যদি সবাই বাইরে যেতে তাহলে একটু ভালো হতো।

নিশির কথা শুনে সবাই আর কিছু না বলে বেরিয়ে গেল।তারপর নিশি তার বাবাকে বললো-:

-:আব্বু বলছি যে তুমি কোন মহিলা ডাক্তার কে ঠিক করো,,,আমাকে চেকআপ করানোর জন্য।

-:কি বলছিস এইসব এতদিন ধরে আবির তোর চেকআপ করে এসেছে,,,এখন যদি তুই অন্য ডাক্তার দেখাস তাহলে সে কি ভাববে।

-:আব্বু তুমি আমাকে ভুল বুঝছো আমি সেই ভাবে কথাটা বলতে চাইনি দেখো আমার জন্য তাদের অনেক সময় নষ্ট হয়েছে,,তাই আমি চাইনা তারা আমার জন্য আর নিজেদের সময় নষ্ট করুক,,,,আর তাছাড়া আমি আনইজি ফিল করি ভাইয়ার কাছে তিনি ড্রেসিং করাতে,,,তাই বলছি একজন মহিলা ডাক্তার ঠিক করো তুমি।আর এই বিষয়ে আমি কোন কথা বলতে চাই না।।

নিশির বাবা আর কোন কথা না বলে বাইরে বেরিয়ে,,,আবিরের কাছে গিয়ে বললেন-;

-:বাবা আবির বলছি যে তুমি কি কোনো ভালো মহিলা ডাক্তার ঠিক করে দিতে পারবে,, নিশির জন্য??

-:কেন আঙ্কেল কি হয়েছ??(বেশ চিন্তিত গলায় বলল)আমি আছি তো আমি গিয়ে সপ্তাহে একদিন করে চেকআপ করে আসবো।

-:সে তো হলে আমাদের অনেক উপকার হতো। কিন্তু আসলে নিশি বলছিল ওর জন্য তোমাদের অনেক সময় নষ্ট হয়েছে তাই আর ও চায়না তোমাদের কোন সময় নষ্ট হক ওর জন্য।আর তাছাড়া ও আনকম্ফোর্টেবল ফিল করে,,, তোমার কাছে,,,তাই…

-:আঙ্কেল এতদিন ওকে আমি ট্রিটমেন্ট করেছি,, এখন যদি অন্য কেউ ওর ট্রিটমেন্ট করে তাহলে প্রবলেম হতে পারে।তাই আমি চাই না ওকে অন্য কেউ ট্রিটমেন্ট করুক,,,তাই আমিই ওর ট্রিটমেন্ট করবো।আমি এই বিষয়ে আর কথা বলতে চাইছি না,,,ক্ষমা করবেন।

এই বলে আবির আর কোন কথা না বলে চলে গেল।নিশি বাবা নিশির কাছে এসে,ব্যাপারটা বলল,,যেই নিশি কিছু বলতে যাবে অমনি রুমে আবির ঢুকলো পড়লো,,তারপর নিশির বাবাকে বলল-;

-:আঙ্কেল এই যে নিশির রিপোর্টস।আর নেক্সট উইকে আমি গিয়ে ওকে চেকআপ করে আসবো।

-:তার কোন দরকার নেই।

নিশা আস্তে করে বলে উঠলো।

-:তোমার দরকার না হতে পারে কিন্তু একজন ডাক্তার হিসেবে আমার এটা কর্তব্য।আর ডাক্তার জেন্ডার হিসেবে ডিফারেন্স করা যায় না।বেশিরভাগ সিজার মেইল ডক্টররা করে আর তাছাড়া তোমাকে প্রথম থেকে আমি চেকআপ করে আসছি,,, সুতরাং এর পরেও আমি তোমার চেক‌আপ করব।আর আমার সময় কোথায় নষ্ট হচ্ছে সেইটা তোমাকে না ভাবলেও চলবে।আমি আর এই বিষয়ে কোন কথা শুনতে চাইছি না,,ইস দ্যাট ক্লিয়ার নিশি।

নিশি আর কিছু বলল না আবিরের দিকে একবার মুখ ভেংচি দিয়ে মাথা নিচু করে বসে র‌ইলো।আবির তা দেখে হেসে দিল। তারপর নিশিকে বাড়ি নিয়ে যাওয়া হল।
.
.
?
.
.

রাতে তিথির ফোনের রিংটোন ঘুম ভেঙে গেল,,,ফোন চেক করেতে দেখলো নিলয়ের ফোন,,,ফোনটা রিসিভ করতেই নিলয় বলে উঠলো-;

-:ঘুমাচ্ছিলে পাখি??

-:হ্যাঁ আপনি কি করছেন।

-:তোমার সাথে ফোনে কথা বলছি।

নিলয়ের জবাব শুনে তিথি মুচকি হেসে বলল-;

-:সে তো এখন করছেন,,,ফোন করার আগে কি করছিলেন??

-:বেশি কিছু না অফিসের কিছু ইম্পর্ট্যান্ট ফাইল চেক করছিলাম।ও বাই দ্যা ওয়ে নিশি কেমন আছে এখন??

-:ভালো আছে।

-:ভেরি গুড।তুমি আর তোমার ভাইয়া একদম সেম ক্যাটাগরির,,, এতটা মিল কি করে সম্ভব।

-:কেন কেন।

তিথি বেশ আগ্রহী হয়ে জিজ্ঞাসা করল।

-:এই তোমরা দুই ভাইবোনই ভালোবাসার মানুষদের মন ভেঙে দিতে দুমিনিট ও ভাবোনা।

-:ও তাই বুঝি।আমি কি আপনাকে জেনে শুনে কষ্ট দিতাম নাকি,,তখন তো আমি বুঝতাম না। পরে যখন আপনার ভালোবাসাকে বুঝতে পারলাম তখন তো আমি আপনার কাছে গিয়ে আমার মনের কথাগুলো যে আপনাকে বললাম,,,তার বেলা কিছু না।(কিছুটা মন খারাপ)

-:করে আরে পাখি,,,মন খারাপ করছো কেন।হ্যাঁ আমি মানছি তুমি আমার কাছে এসেছ কিন্তু নিশি সে তো বেচারী এখনো তোমার ভাইয়ের মন পেল না।

-:পাবে,,,সে ও পাবে,,,আমি আমার বেস্টুর গোমরা মুখ দেখতে পারবো না।তার জন্য আমি একটা প্ল্যান ঠিক করে রেখেছি।

-:কি প্ল্যান শুনি।

-:আগে নিশি সুস্থ হোক,,,তারপর ভাইয়ার মনে কি করে নিশিফুল ফোটাতে হয়,,তা আমি খুব ভাল করেই জানি।

-:হ্যাঁ তুমি ছাড়া আর কেই বা এমন চমৎকার চমৎকার আইডিয়া ভাবতে পারবে।

-:???আই নো।

-:আচ্ছা শোনো কালকে তোমার মামা,,মামি আর ভাইয়া বাসায় থাকবে তো??

-:হ্যাঁ কিন্তু কেন??

-:কিছু না এমনি জিজ্ঞাসা করলাম।

-:ও

-:আচ্ছা এবার ঘুমিয়ে পরো,,গুড নাইট।

এই বলে নিলয় ফোন কেটে দিল,,,তিথিও আর কিছু না ভেবে ঘুমিয়ে পড়ল।

.
.
?
.
.

আজ রবিবার তাই সবাই বাড়িতে আছে,,,তিথি সবে ঘুম থেকে উঠে,,,ডাইনিং টেবিলে বসে সকালে নাস্তা করছে,,,,মামা আর আবির সোফায় বসে খবর দেখছে আর মামি রান্নাঘরে।এমন সময় কলিং বেল বেজে উঠলো।তিথির মামা গিয়ে দরজাটা খুলতেই অবাক হয়ে গেল,,,সামনে থাকা ব্যক্তিকে দেখে।এদিকে তিথি পরোটা চিবাতে চিবাতে,,, তার মামাকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগল-;

-:মামা কে এসছে গো এই ভোরবেলায়।

এই বলে আবার নিজের খাবার খেতে ব্যস্ত হয়ে পরলো,,,বাইরে থাকা ব্যক্তি ঘরে প্রবেশ করলো।তিথি খাবার খেতে খেতে মাথাটা উপরে তুলতেই সামনে থাকা ব্যক্তিটির দিকে তাকিয়ে মাথা ঘুরে যাওয়ার কল হয়েছে,,,,কারণ সেই ব্যক্তি আর কেউ নয় স্বয়ং নিলয়।কিন্তু পাশের মানুষটাকে চিনতে পারল না তিথি।নিলয়ের খুব হাসি পাচ্ছিল,,, তিথি ফেসের অমন রিয়াকশন দেখে।নিলয়কে দেখে আবির সঙ্গে সঙ্গে উঠে,,,তাদের বোসতে দিল।তিথির মামি রান্নাঘর থেকে এসে তাদের দিকে অবাক,,,কিছু বলতে যাবে তখনি নিলয়ের সাথে আসা লোকটি বলে উঠল-;

-:সরি আপনাদের কিছু না বলে,,এইভাবে চলে আসার জন্য।

-:না না এতে সরি বলার কী আছে।(মামা)

-:আসলে আমরা এখানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজের জন্য এসেছি।

-:কি কাজ??(আবির)

সবাই কথা বলছে কিন্তু এদিকে তিথির কোন খেয়ালই নেই সে এখনো গালের ভিতরে অর্ধেক পরোটা নিয়ে হাঁ করে নিলয়ের দিকে তাকিয়ে আছে।তিথির এমন কাণ্ড দেখে মামির তিথিকে ঝাড়ি দিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে উঠলো-;

-:তাড়াতাড়ি ওঠ,,সবাই কি ভাববে এভাবে বসে আছিস কেন??

মামীর কথায় তিথির এতক্ষণে হুশ হল,,,তারপর সঙ্গে সঙ্গে বেসিনে গিয়ে হাত মুখ ধুয়ে এল।

-:আমি মিস্টার রিয়াদ হোসেন নিলয়ের মামা।আসলে নিলয়ের বাবা মা অনেক আগেই মারা গিয়েছে,,তাই আমাকেই আসতে হল ওর সাথে। আসলে আমার ছেলেটা আপনার বাড়ির মেয়েকে খুব পছন্দ করে,,আর তাকে বিয়ে করতে চাই। তাই আমিও দেরি না করে আপনাদের কাছে চলে এসেছি।আপনারা যদি কিছু মনে না করেন তাহলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমরা আপনার মেয়েকে,,আমাদের ঘরের বউ করে নিয়ে যেতে চাই।

রিয়াদ হোসেনের কথা শুনে,,, আবির উঠে দাঁড়ালো,,,বসা থেকে,,,তারপর…..

???? তারপর আর কিছু নাই।বাকিটা নেক্সট পর্বে জেনে নিবেন।???
.
বাই দ্যা রাস্তা??,,আবির কি বিয়েতে রাজি হবে না নাকি?????কি জানি!!যেভাবে উঠে দাঁড়ালো।??

? আরেকটি ইম্পর্টেন্ট কথা কথা,, গতপর্বে আমার এক জায়গায় মিসটেক হয়েছিল,, আমি ভুল করে,,,ফিমারকে হাতের হাড় বলেছিলাম,, কিন্তু সেটা পায়ের হাড় হবে।একচুয়ালি ফিমার কাম টুগেদার অ্যাট দা নি পয়েন্ট।সুতরাং ওইটা Ulna হাড় ভেঙেছে হবে,,একটু কারেকশন করে নিবেন,,মনে মনে।???আর ধন্যবাদ আমার ভুলটা কে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য,,,,এমন করে আমার ভুলটাকে ধরো যাতে আমি পরবর্তীকালে কারেকশন করতে পারি।????
.
.
.
.
[বাকিটা নেক্সট পর্বে]

তোমাকে আমার প্রয়োজন পর্ব-১৬

0

#তোমাকে আমার প্রয়োজন??
#মেঘপরী??

??পর্ব-১৬??
.
?
.

হসপিটালের সামনে গাড়ি থামতেই আবির নিশিকে কোলে তুলে নিয়ে,,,দ্রুত পায়ে হাঁটতে লাগলো।নিশি রক্তে আবিরের পুরো জামা ভিজে গিয়েছে।নিশি মাথায় প্রচন্ড পরিমানে আঘাত পেয়েছে।এদিকে আবিরের পিছনে তিথি কাঁদতে কাঁদতে দ্রুত পায়ে হাঁটছে,,,ও কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না নিশির এমন অবস্থা।আবির নিশিকে নিজের হসপিটালে এনেছে,,,যাতে ট্রিটমেন্ট খুব দ্রুত শুরু করা যায়।

আবির হসপিটালে ঢুকেই নার্সকে আর্জেন্ট OT রেডি করতে বলল। তারপর নিশিকে স্ট্রেচারে শুয়ে দিল,,,আর নিজেও খুব দ্রুত পোশাক চেঞ্জ করে নিল।কারণ নিশির অপারেশন আবির নিজের হাতে করবে,,, ও কোন রিক্স নিতে চায় না এই মুহূর্তে।নার্সরা নিশিকে OT তে নিয়ে গিয়েছে।

আবির যেই OT ঢুকবে,,,,তখনি তিথি আবিরের হাতটা ধরে ফেলল,,তারপর আবিরের দিকে অসহায় নজরে তাকিয়ে,,,কাঁপা কাঁপা গলায় বলে উঠলো-;

-:প্লিজ ভাইয়া নিশি কে তুই বাঁচিয়ে দে,,,প্লিজ ভাইয়া।নিজের ব্যক্তিগত রাগটা তুই নিশির উপর পড়তে দিস না,,,,তোর কাছে আমি হাত জোড় করছি।

-:তিথি!!কি বলছিস তুই এইসব??নিজের পার্সোনাল রাগ বলতে তুই কি বুঝাতে চাইছিস??আর তাছাড়া সবার আগে আমি একজন ডাক্তার সুতরাং পেশেন্ট শত্রু কিংবা বন্ধু যেই হোক না কেন,,,সবার আগে তাকে বাঁচানোর আমার কর্তব্য,,,মনে রাখিস কথাটা,,,,আর আমি আমার সাধ্যমত চেষ্টা করব নিশিকে বাঁচানোর।

এই বলে আবির যেতে গিয়ে,, আবারও থেমে যায়,,,তারপর তিথির দিকে ছল ছল চোখে তাকিয়ে বলে উঠলো-;

-:আমি অতটাও অমানুষ নই,,,যে আমি ওকে বাঁচাতে চাইবো না।।আর বিশ্বাস কর আমি চাইনি ওর এমন অবস্থা হোক।।

আর কিছু বলতে পারল না আবির,,, তাড়াতাড়ি অপারেশন থিয়েটারে ঢুকে গেল।তিথি নিশির এমন অবস্থা কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না,,,পাশে থাকা বেঞ্চে বসে,,,হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো।কিছুক্ষণ পর তার মনে হল নিশির বাবা-মাকে খবরটা জানানো দরকার,,,তাই সে আর দেরি না করে নিশির বাবা মা এবং তার মামা মামিকে ফোন করে সব জানিয়ে দিল।।
.
.
?
.
.

দেড় ঘন্টা যাবৎ সবাই ওটির সামনে অপেক্ষা করছে,,,তিথি খবর দেওয়ার এক ঘণ্টার মধ্যেই নিশির বাবা মা এবং তিথির মামা মামি হসপিটালে চলে আসে।নিশির মার অবস্থা খুবই শোচনীয়,,,বারবার নিজের জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে। তিথির মামি নিশির মার পাশে বসে আছে,,, নিশির মাকে সেলাইন দিয়ে অন্য একটা ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে।এদিকে তিথির অবস্থাও ভীষণ খারাপ কাঁদতে কাঁদতে বেচারি হেঁচকি তুলে ফেলেছে।

তখনই ওটির উপরে থাকা লাল লাইটটা নিভে গেল,,,আর ওটির দরজা খুলে আবির বেরিয়ে এলো।আবিরকে বের হতে দেখে সবাই উঠে দাঁড়ালো,,তিথিতো দৌড়ে গিয়ে আবিরের হাত ধরে,,জিজ্ঞাসা করতে লাগলো,,,কোনমতে নিজের কান্না চেপে রেখেছে সে,,

-:ভা…ভাইয়া এ ভাইয়া নি..নিশি কেম…ন আছে রে??ও..ও ঠিক আছে তো।ও..ও সুস্থ হয়ে যাবে তো??

আবির কিছু বলছে না চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে।আবিরকে চুপ করে থাকতে দেখে,,নিশির বাবা এগিয়ে এসে আবির কে জিজ্ঞেস করল-;

-:বাবা আবির আমার মেয়েটা ঠিক আছে তো?? ওর কিছু হয়নি তো।

-:ভাইয়া,,,,ভাইয়ারে কিছুতো বল,,তুই চুপ করে আছিস কেন এমন।

এই বলে আবিরের হাত ধরে তিথি আবিরকে ঝাকাতে লাগলো,,কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবির বলল-;

-:অপারেশন সাকসেসফুল।।তবে 24 ঘন্টার মধ্যে যদি জ্ঞান না ফেরে,,,তা…তাহলে…

-:তাহলে!!(তিথি)

-:তাহলে she will go into a coma।

কথাটা শোনামাত্র নিশির বাবা শব্দ করে কেঁদে উঠলেন।তিথি আবিরের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো-;

-:কিসব যাতা বলছিস ভাইয়া,,তুইতো এক্ষুনি বললি অপারেশন সাকসেসফুল,,,তা..তাহলে এ..এইসব..

-:আসলে প্রচুর পরিমাণে ব্লাড বেরিয়ে গিয়েছে নিশির মাথা থেকে।আর শরীরের অনেক জায়গায় খুব ডিপ ইনজুরিও হয়েছে।খুব জোরে অ্যাকসিডেন্ট হওয়ার জন্য,,,বাঁ পায়ের এঙ্কেল আর ডান হাতে ফিমার এই দুটো হাড় ভেঙে গিয়েছে।ক্ষতগুলো খুব গভীর হয়েছে ২৪ ঘন্টা না গেলে কিছুই বলা সম্ভব না।

-:আমি অত কিছু জানতে চাইছি না,,তোর কাছ থেকে।আমি শুধু চাই,,,তুই নিশিকে সুস্থ করে তোল,,সেটা যেভাবেই হোক।বুঝতে পেরেছিস তুই।।

-:তিথি শান্ত হ তুই,,আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।

-:বাবা একমাত্র তুমিই ভরসা,,আমার মেয়েটাকে তুমি সুস্থ করে তুলো বাবা,,,আমি তোমার কাছে হাত জোড় করছি।(নিশির বাবা)

-:একি করছেন আংকেল!!!আমি আমার যথাসাধ্য চেষ্টা করছি এবং করব।।প্লিজ আপনি এমন করবেন না।

-:হ্যাঁরে অ্যাক্সিডেন্টেটা কিভাবে হলো।নিশি তো তোদের সাথেই ছিল।

বাবার এমন কথায় আবির চুপ হয়ে গেল,,, কিছুই বলতে পারল না,,মাথা নিচু করে রইল।আবির কে চুপ করে থাকতে দেখে তিথি আবিরের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগল-;

-:আসলে মামা আমার নিশি খুব সরল মনের মানুষ কি না,,,তাই জিনিস চিনতে ভুল করে ফেলেছিল।বোকাটা ফুল ভেবে,,কাটা তুলতে গিয়েছিল।

তিথির এমন কথায় আবির অপরাধীর ন্যায় দৃষ্টিতে তিথির দিকে তাকালো।

-:মানে!!(মামা)

এবার নিলয় কিছু বলতে যাবে,,তখনি ওটি থেকে একজন নার্স এসে আবিরকে কিছু একটা বলল,,সেটা শুনেই আবির চলে গেল।কিছুক্ষণ পর ফিরে এসে জানালো যে নিশির অবস্থা ইম্প্রুভ করছে।খুব শীঘ্রই নিশির জ্ঞান ফিরতে পারে।আবিরের কোথায় সবাই কিছুটা নিশ্চিন্ত হলো।
.
.
?
.
.
রাত আটটা,,,নিশির কিছুক্ষণ আগে জ্ঞান ফিরেছে।তাই প্রথমে তার বাবা মাকে দেখতে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে,,,যেহেতু দুজনের বেশি এলাও করা হচ্ছে না।তিথির মামা গিয়েছে পাশের ফার্মেসি থেকে নিশির জন্য মেডিসিন আনতে,,আর মামি একটু ওয়াশরুমে গিয়েছে,,,তাই তিথি একাই বসে ছিল,,কেবিনের বাইরে।হঠাৎ কেউ একজন এসে তিথিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল,,,আচমকা এমন জড়িয়ে ধরায় তিথি কিছুটা ভয় পেয়ে গেল।তারপর পাশ ফিরতেই নিজের প্রিয় মানুষটিকে দেখতে পেল। ব্যাস এবার আর নিজের ভেতরে জমিয়ে রাখা কান্নাটাকে আটকে রাখতে পারল না তিথি,,,,নীলয়কে জড়িয়ে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো।

আসলে নিলয় তিথির ফোনে অনেক বার ফোন করেছে,,,কিন্তু তিথি রিসিভ‌ই করছিল না।প্রতিবার পরীক্ষা শেষে,,তিথিকে ফোন দেয় নিলয়,,,কিন্তু আজ তিথির ফোনে রিসিভ না করাই,,,প্রচুর টেনশন পড়েগিয়েছিল।তাই আর টাইম নষ্ট না করে,,অফিস থেকে সোজা তিথির বাসায় গিয়ে পৌঁছালো,,সেখানে গিয়ে দেখল তিথিদের বাসায় তালা চাবি মারা।পরে তিথিদের পাশের বাসা থেকে জানতে পারল যে তিথির মামা মামীরা হসপিটালে গিয়েছে,,কার নাকি অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে।ব্যাস নিলয়ের টেনশন আরো বেড়ে গেল,,,তাই আর দেরি না করে হসপিটালের অ্যাড্রেসটা জেনে নিয়ে নিলয় সেখানে এসে হাজির হলো।তারপর রিসিপশনিস্ট এর কাছ থেকে জানতে পারলো যে তিথিরা সেকেন্ড ফ্লোরে আছে,,নিলয় আর সময় নষ্ট না করে সেকেন্ড ফ্লোরে গিয়ে দেখল তিথি একা বেঞ্চে বস আছে।

নিলয় তিথিকে কান্না করতে দেখে,,ভয় পেয়ে যায়,,,তিথিকে নিজের কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে,, তার গালে নিজের দুই হাতে রেখে জিজ্ঞেস করল-;

-:কি হয়েছে পাখি??এমন ভাবে কান্না করছো কেন??তোমার কিছু হয়নি তো??তুমি ঠিক আছো তো??

কিন্তু তিথি কোনো কিছুরই উত্তর দিতে পারছেনা,,,কান্নার কারণে সবকিছু এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।নিলয় তিথি আবারও জড়িয়ে ধরল শক্ত করে,,তারপর শান্ত গলায় জিজ্ঞাসা করল-;

-:কি হয়েছে আমায় বলো।না বললে বুঝবো কি করে,,, আমার পাখিটা কেন কান্না করছে।

তিথি এবার হেচকি তুলতে তুলতে বলল-;

-:নিশি….নিশির এ…এক্সিডেন্ট করেছে।।

নিলয় কিছুটা অবাক হয়ে,,জিজ্ঞাসা করল-;

-:ঐদিন তোমার সাথে যে মেয়েটা এসছিল,,সেই মেয়েটা??

-:হ..হুম।

-:ও মাই গড!!কিন্তু কিভাবে??

তারপর তিথি আস্তে আস্তে সব ঘটনা বলল নিলয়কে।নিলয় কিছু বলতে হবে,, তখনই নিশির বাবা এবং মা কেবিন থেকে বারিয়ে আসলো।নিশির বাবা নিলয় কে দেখে অনেকটাই অবাক হয়ে গেল,,তারপর নিলয়কে জিজ্ঞেস করল-;

-:আরে স্যার আপনি!!আপনি এখানে কি করছেন??

নিলয় কি বলবে ভেবে পাচ্ছিল না তাই কিছুক্ষণ ভেবে বলে উঠলো-;

-:আ..আসলে আপনি তাড়াহুড়ো করে অফিস থেকে চলে আসায়,,,আমি খোঁজ নিয়ে জানতে পারি আপনার মেয়ের একসিডেন্ট হয়েছে,,তাই এখানে আপনার মেয়েকে দেখতে এলাম।কেমন আছে এখন??

-:জি স্যার ভালো আছে,,তবে ক্ষতগুলো খুব গভীরে ।

আসলে নিশির বাবা নিলয়ের অফিসের ম্যানেজার।তিথি এবার এগিয়ে এসে বলল-;

-:আমি কি এখন দেখা করতে পারি নিশির সাথে,,আঙ্কেল।

-:হ্যাঁ..হ্যাঁ যাও তুমি গিয়ে দেখে এসো।

তিথি যেতে নিলেই,,নিলয় নিশির বাবার দিকে তাকিয়ে বলল-;

-:মিস্টার তাওহীদ আমারও একবার আপনার মেয়ের সাথে দেখা করা উচিত,,তাই আমি বরং উনার সাথে যায়।

-:ঠিক আছে স্যার।

তিথি কেবিনে ঢুকেই দেখল,,,নিশি শুয়ে আছে বেডে,,,হাতে পায়ে মাথায় ব্যান্ডেজ করা।নাকে পাইপ ঢুকানো।নিশিকে এমন অবস্থায় কোন দিন দেখবে,,,তিথি ভাবতেই পারেনি।নিশির এমন অবস্থা দেখে,,তিথি আবারো কেঁদে ফেলল।নিলয় তিথিকে ধরে নিশির সামনে থাকা চেয়ারে বসালো।নিশি তিথির দিকে তাকিয়ে একটু হাসার চেষ্টা করল,,,তিথি নিশির হাত ধরে কান্না মিশ্রিত গলায় জিজ্ঞাসা করল-;

-:কেমন আছিস এখন??ব্যাথা করছে খুব তাই না??

নিশি কিছু একটা বলতে চাইছে,,,তাই তিথি নিশির কাছে নিজের কান নিয়ে গেল,,নিশি আসতে আসতে বলল-;

-:ভালো আছি এখন।কাঁদিস না আর।তোদের প্রচুর কষ্ট দিয়ে ফেললাম নারে,বেকার আমার জন্য তোদের নিজেদের সময় নষ্ট করতে হলো।।

তিথি এবার রেগে গিয়ে,,,নিশি কে বলল-;

-:হ্যাঁ প্রচুর কষ্ট পেয়েছি আমরা??কি করে পারলি এমন কাজ করতে??অত ছুটতে তোকে কে বলেছিল,,,তাও আবার যার জন্য তোর এমন অবস্থা সে তো দিব্যিই ভালো আছে।

তিথি আবির কে উদ্দেশ্য করেই কথাগুলো বলেছে।তিথির এমন কথা শুনে আবিরের নিজের মনে অপরাধবোধ কাজ করতে লাগলো।আবির কেবিনের মধ্যেই ছিল এতক্ষন।।যেখান থেকে নিশির জ্ঞান ফিরেছে তখন থেকেই নিশির পাশে ছিল আবির।নিলয়কে দেখে কিছুটা অবাক হয়েছিল প্রথমে,,,তারপরে ভাবল যেহেতু নিশির বাবা তাদের অফিসে কাজ করে তাই,,,হয়তো নিশিকে দেখতে এসেছে।

-: চুপ কর প্লিজ,,,এমন কথা বলিস না।

-:কেন বলব না,,,আরে যার জন্যে তোর আজ এই অবস্থা,, সে তো কোনোকালেই তোর যোগ্য ছিল না।

-:তিথি প্লিজ!!(কান্নাজড়িত গলায়)

এবার তিথি চুপ করে গেল।হঠাৎ নিশির নীলয়ের দিকে নজর গেল।নিলয়ের দিকে তাকিয়ে নিশি হাসার চেষ্টা করলো,,নিলয় মুচকি হেসে নিশির মাথায় হাত বুলিয়ে দিল,,তারপর নিশিকে জিজ্ঞাসা করল-;

-:ভালো আছো??

-:জ্বি,,ভাইয়া।

-:ভেরি গুড,,এখন রেস্ট এ থাকো ওকে।

নিশি মাথা নাড়ালো।আরো কিছুক্ষণ কথা বলার পর নিলয় চলে গেল।
.
.
?
.
.

রাতে তিথির মামা মামী,,আর নিশির মা-বাবা যে যার বাসায় চলে গেল।নিশির বাবা-মা যেতেই চাইছিল না,,আবির অনেক কষ্টে তাদেরকে বাসায় পাঠিয়েছে।কিন্তু প্রবলেম হচ্ছে তিথিকে নিয়ে,,, তাকে কিছুতেই বাসায় পাঠানো যাচ্ছে না।তাই একমাত্র তিথি আর আবির হসপিটালে থেকে গেল,,নিশির কাছে।রাতে তিথি নিশির কেবিনের পাশে থাকা সোফায় উপর শুয়ে আছে আর আবির নিশির বেডের পাশে একটা চেয়ার নিয়ে,,, বসে বসে ম্যাগাজিন পড়ছিল।হঠাৎ নিশি একটু নড়াচড়া করে উঠলো,,তারপর….
.
.
.
[বাকিটা নেক্সট পর্বে

তোমাকে আমার প্রয়োজন পর্ব-১৫

0

#তোমাকে আমার প্রয়োজন??
#মেঘ পরী??

??পর্ব-১৫??
.
?
.

নিচে গিয়ে তিথি ডাইনিং টেবিলে খাবার সার্ভ করলো।নিলয় নিচে নেমে চেয়ার টেনে বসে পরলো আর তিথিকে হাত ধরে টেনে নিজের কোলে বসিয়ে দিল।তিথি নিলয়ের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাতেই,,নিলয় মুচকি হেসে বলল-;

-:আজকে আমরা একসাথে,,একই প্লেটে খাব।

-:কিন্তু..

তিথি কে থামিয়ে দিয়ে বলল-:

-:কোন কিন্তু নয়।প্রথমে আমি তোমাকে খাইয়ে দেবো তারপর তুমি আমাকে খাইয়ে দেবে,,ওকে।।

-: আপনার তো খিদে পেয়েছে।আপনি বরং আগে খান,,, তারপর না হয় আমি খাব।

-:চুপ!!আমি যেটা বলছি সেটাই হবে।নাও ওপেন ইওর মাউথ,,হা করে পাখি,,কতক্ষণ ধরে থাকবো, হাত ব্যাথা করবে তো এবার।

তিথি আর কোন কিছু না বলে হা করলো। বিরিয়ানির দিকে তাকিয়ে নিলয় বলে উঠলো-;

-:বাহ খুব সুন্দর ঘ্রাণ আসছে তো।দেখে তো মনে হচ্ছে বিরিয়ানিটা খুব মজার হবে খেতে।।

তারপর নীলয় তিথি কে খাইয়ে দিল।তিথির খাওয়া শেষে হলে আর একটু বিরিয়ানি প্লেটে নিয়ে নিল।তারপর নিলয়ের দিকে এক লোকমা খাবার তুলে ধরতেই নিলয় গপ করে সেটা খেয়ে ফেলল।খাওয়ার সাথে সাথেই নিলয় চোখ বন্ধ করে ফেলল।নীলয়ের চোখ বন্ধ করা দেখে তিথি মনে মনে কিছুটা ভয় পেল,,তিথি ভাবছে হয়তো নিলয়ের খাবারটা পছন্দ হয়নি।তাই নিলয়ের দিকে তাকিয়ে আস্তে করে জিজ্ঞাসা করল-;

-:কি হলো খাচ্ছেন না কেন??খাবার মজা হয়নি।

নিলয় আস্তে করে চোখটা খুলে,,তিথি হাত দুটো নিজের সামনে আনলো,,তারপর দুই হাতের তালুতে চুমু দিয়ে তিথির দিকে তাকিয়ে বলল-;

-:আমার বাচ্চাটা এত সুন্দর খাবার বানায় তা আগে জানতাম না তো।খুব সুন্দর খেতে হয়েছে বিরিয়ানিটা,,,পাখি আরো দাও খুব খিদে পাচ্ছে আমার।

নিলয়ের কথায় তিথি খুব খুশি হলো,,,তারপর প্লেটে আরেকটু বিরিয়ানি তুলে,,,নিলয় কে খাইয়ে দিতে লাগলো।অন্যান্য দিনের তুলনায় নিলয় আজ অনেক বেশি খেয়ে ফেলেছে।

খাওয়া শেষে নিলয় তিথিকে নিয়ে উপরে চলে গেল।তারপর তিথিকে খাটে বসিয়ে,,,তিথির কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ল। তারপর তিথির দিকে তাকিয়ে বলল-;

-:পাখি আমার মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দাও তো।কতোদিন আমি নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারিনি,, আজ একটু ঘুমাবো।

এই বলে তিথির হাত নিজের মাথার উপরে রেখে,,,তিথির পেটে মুখ গুঁজে,, চোখ বন্ধ করে,,শক্ত করে দুহাতে জড়িয়ে ধরল তিথিকে।সকাল থেকে নিলয় এমন হুটহাট আক্রমণে,,তিথি বারবার কেঁপে উঠছে।তিথি কাঁপা কাঁপা হাতে নিলয়ের চুলে হাত দিল,,,তারপর আস্তে আস্তে চুলে হাত বোলাতে লাগলো।কিছুক্ষণের মধ্যেই,,, নিলয় গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে গেল।

তিথি নিলয়ের দিকে আছে একধ্যানে তাকিয়ে আছে,,,কি নিষ্পাপ মুখ।ঘুমন্ত অবস্থায় দেখতে একদম বাবুদের মত লাগে আর জেগে থাকলে একটা আস্ত ডেভিলে পরিণত হয়।এই মানুষটা তাকে ভালোবাসে,,এতটাই ভালোবাসে যার কোন তুলনা হয় না।এ কথা ভাবতেই তিথির মনে এক অজানা ভালোলাগা কাজ করছে। আবার সকালের কথা মনে পড়তেই তিথির মুখ লজ্জায় লাল নীল হয়ে উঠল। ‌
.
.
?
.
.

বিকেল পাঁচটায় বাসার সামনে তিথিকে নামিয়ে দিলে নিলয়।যেহেতু বাড়িতে আগে থেকেই বলা ছিল,,তাই কেউ তেমন কোনো প্রশ্ন করেনি তিথিকে।রাতে ডিনার করে তিথি শুয়ে শুয়ে,, নিলয়ের কথা ভাবছিলাম,,,তখনই তিথির মোবাইলে রিংটোন বেজে উঠলো।ফোনটা রিসিভ করতেই,,ওপাশ থেকে নিলয় ঘুমঘুম কন্ঠে বলে উঠলো-;

-:পাখি ঘুমিয়ে পড়ো,,,আমার কথা আর ভাবতে হবে না।

নিলয়ের কথায় তিথি অবাক হয়ে গেল,,,কিছু বলতে যাবে তখনই নীলয় আবার বলে উঠল-;

-:এতো অবাক হচ্ছ কেন পাখি।তোমার মনের খবর আমি জানবনা তো কে জানবে শুনি।

-:আপনি কি করে জানলেন,,আমি এখন কি ভাবছি।

-:জানি জানি আমি সব জানি,,এখন চুপ করে ঘুমিয়ে পড়ো অনেক রাত হয়েছে। কাল আবার কথা হবে,,ওকে।

এই বলে ফোনটা কেটে দিলো,,এদিকে তিথি মনে মনে নিজেই বলে উঠলো-;

-:আশ্চর্য এখন আমার মনের কথা জেনে যাচ্ছে,,,omg কি হবে এখন।

তারপর আর কিছু না ভেবে ঘুমিয়ে পড়ল।
.
.
?
.
.

আস্তে আস্তে দিন যেতে লাগল,,,এদিকে তিথি আর নিলয়ের সম্পর্কটাও আরও গারো হয়ে উঠলো।আর নিশি!!সে তো অনেকবার চেষ্টা করেছিল নিজের মনের কথাগুলো আবিরকে বলার কিন্তু বারবারই ব্যর্থ হয়েছে।তাই সে ঠিক করে ফেলেছে আর কিছুদিন পর তাদের ফাইনাল এক্সাম শুরু হবে আর যেদিন এক্সাম শেষ হবে,, ওইদিনই সবার সামনে সে আবিরকে তার মনের কথাগুলো জানাবে।

এদিকে পরীক্ষা কাছে চলে আসায়,,,তিথি নিলয়ের সাথে কথা বলা প্রায় বন্ধই হয়ে গিয়েছে।। সারাদিন নিজেকে পড়াশোনায় ব্যস্ত রেখেছে এখন সে কারণ তার এখনো পুরো সিলেবাস কমপ্লিট হয়নি।যদি পরীক্ষায় বাজে মার্কস আসে তাহলে বাড়িতে বকা তো খাবেই তার সাথে নিলয়ের সামনে তার প্রেস্টিজ পুরো জলে ভেসে,, ফেলুদা হয়ে যাবে।তাই সে মন লাগিয়ে পরছে।নিলয় সারাদিনে একবার ফোন করে তিথির খোঁজ খবর নেয়,,তাও আবার পাঁচ মিনিটের বেশি কথা বলে না,,,কারণ সে নিজেও চায় তিথি যেন এখন কোনমতেই নিজের সময় নষ্ট না করে।

দেখতে দেখতে তিথির পরীক্ষার দিন চলে এলো,,,আবির তাকে পরীক্ষা সেন্টারে পৌঁছে দিয়ে এসেছে।তিথি আর নিশীর সিট পরপর পড়েছে,,,তাই নিশি তিথিদের সাথেই যায়।।আবার পরীক্ষা শেষ হলে আবির এসে ওদের নিয়ে যায়।

এইভাবে পরীক্ষাগুলো শেষ হতে লাগলো একটার পর একটা।প্রতিটি পরীক্ষায় তিথির বেশ ভালই হয়েছে।কাল তিথির শেষ পরীক্ষা,,,এটা ভাবতেই তিথি মন নেচে নেচে উঠছে,,,অনেকক্ষণ ধরে ফোনটা নিয়ে নাড়াচাড়া করার পর,,,নিলয়ের নাম্বারে ডায়াল করলো,,,কিছুক্ষণ রিং হতেই অপর পাশ থেকে নিলয় ফোনটা রিসিভ করল-;

-:পাখি তুমি এখন এত রাতে আমাকে ফোন করেছ কেন??কোন সমস্যা হয়েছে।

-:না…না এমনি ফোন করেছিলাম।

-:হোয়াট,,কাল তোমার পরীক্ষা আর আজ তুমি এত রাতে না ঘুমিয়ে আমাকে ফোন করছ।(কিছুটা ধমক দিয়ে বলল নিলয়)

-:আমার বুঝি আপনার সাথে কথা বলতে একটুও ইচ্ছে করে না,,,কতদিন কথা হয়না,,,তা কি কারোর খেয়াল আছে,,সবাই সারাদিন ব্যস্ত আমাকে বকতে।(কিছুটা অভিমানী স্বরে বলে উঠলো)

-:পাখি আমি তা বলেছি নাকি কিন্তু কাল তোমার পরীক্ষা।তোমার এখন ঘুমানো উচিত,,নইলে শরীর খারাপ করবে তো।

-:আমিতো শুধু এটা জানানোর জন্য ফোন করেছিলাম যে কেউ একজন বলেছিল আমার পরীক্ষা শেষ হলে,,সে নাকি আমাকে নিয়ে ঘুরতে যাবে।তার কি সেটা মনে আছে,,,এটা জানার জন্যই ফোনটা করা।।

নিলয় তিথির কথা শুনে,,,মুচকি হেসে বলে উঠলো-;

-:আমার জানকে আমি যখন কথা দিয়েছি তখন তাকে নিয়ে অবশ্যই ঘুরতে যাব।

নিলয়ের কথা শুনে তিথি খুশিতে গদগদ হয়ে বলে উঠলো-;

-:সত্যি!!আপনার মনে আছে তাহলে।তবে কাল পরীক্ষা শেষ হলেই পরের দিন যাব কিন্তু আমরা ঘুরতে।।

-;ঠিক আছে বাচ্চা,,এখন তুমি চুপচাপ ঘুমাও দেখি।

-:ওকে বাই।

এইবলে তিথি শব্দ করে ফোনে একটা কিস দিয়ে ফোনটা রেখে দিল,,,,তিথির এমন কাণ্ড নিলয় কিছুটা হাসে,,, মনে মনে বলে উঠল-;

-:পাগলি একটা,,খুব ভালোবাসি পাখি।।
.
.
?
.
.

আজ তিথিদের পরীক্ষার শেষ দিন,,তাই আজ নিশি মনে পুরোপুরি ঠিক করেই ফেলেছে যে আজ সে সবার সামনে আবির কে প্রপোজ করবে।তাই সে নিজের বাগানের একগুচ্ছ লাল গোলাপ আবিরের জন্য নিয়ে এসেছে।রীতিমত আজও আবির তাদেরকে সেন্টারে ছেড়ে,,,নিজের হসপিটালে চলে গেল।পরীক্ষা শেষ হলে আবার তাদের নিতে আসবে।

তিথীরা সবেমাত্র পরীক্ষার হল থেকে বের হলো,,,সব ছাত্র-ছাত্রীরা আজ বেজায় খুশি কারণ আজ তাদের পরীক্ষা শেষ এবার তারা একটা লম্বা ছুটি পাবে।তিথিও বেশ খুশি কারণ সেও ঘুরতে যাবে নিলয়ের সাথে।

তিথি অনেকক্ষণ ধরে লক্ষ্য করছে যে নিশি কোন একটা বিষয় নিয়ে খুব ভাবছে আর বারবার নিজের ব্যাগে কি যেন একটা দেখছে।তিথি এবার নিশির কাছে গিয়ে,,,নিশির মাথায় একটা চাটি মেরে জিজ্ঞাসা করল-;

-:কিরে পেত্নী বারবার কি দেখছিস ব্যাগে,,,কি চুরি করে নিয়ে এসেছিস দেখি একবার।

-:আরে না…না কিছু…কিছু নেই ব্যাগে।

এইবলে তিথির হাত থেকে এক প্রকার ছিনিয়ে নিল ব্যাগটা।।এবার তিথির কৌতুহল বেড়ে গেল।

-:কিছু নেই বললেই হল,,,কিছুতো একটা লুকাচ্ছিস তুই আমার কাছ থেকে আর সেটা আমি দেখেই ছাড়বো।

এই বলে নিশির কাছ থেকে টেনে-হিঁচড়ে ব্যাগটা কেড়ে নিল,, ব্যাগটা খুলতেই তিথি অবাক হয়ে গেল কারণ ব্যাগের মধ্যে আবিরের জন্য আনা নিশির বাগানের সেই একগুচ্ছ লাল গোলাপ ফুল রাখা ছিল।

তিথি নিশির দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই,,নিশি বলে উঠলো-;

-:আজ আমি ওকে আমার মনের কথা বলব,,,তাই এ..এইটা এনেছি।

-:এই ওটা আবার কে?????।

-:তুই বুঝি জানিস না ওটা কে??(লজ্জা পেয়ে কথাটা বলল নিশি)

-:ওহো এতদূর।এই নিশি সত্যি করে বলতো তুই পরীক্ষাগুলো ভালো ভাবে দিয়েছিস তো,,,মানে পাস করতে পারবি তো।তুই যদি পাস না করেছিস,, তাহলে ভাইয়া তোর দিকে মুখ ফিরেও তাকাবেন।

-:তিথি আমি অতটাও খারাপ স্টুডেন্ট নয়।আর সব পরীক্ষা আমার ভালোই হয়েছে।

-:ঠিক আছে,,ঠিক আছে।ওই দেখ,,,ভাইয়া চলে এসেছে,,এখন চল তাড়াতাড়ি।

তিথি এগিয়ে যেতেই,,নিশি তিথির হাত ধরে ফেলল,,,তারপর তিথির দিকে করুন চোখে তাকিয়ে বলল-;

-:তিথু আবির ভাইয়া আমার মনের কথা বুঝতে পারবে তো।

-:আরে পারবে না মানে,,এত বছর ধরে তুই ভাইয়াকে নিস্বার্থভাবে ভালবেসে গেছিস।তোর কথা বুঝবে না,,তাই কখনো হয়।আর বাই দ্যা রাস্তা তুই নিজের হবু বর কে ভাইয়া ভাইয়া কি বলছিস,,,আরে সুয়ামি বলে ডাক।

-:তিথি??

-:আচ্ছা আচ্ছা এবার তো চল।

তিথি,,,নিশি সেন্টার থেকে বের হতেই আবির জিজ্ঞেস করলো

-:কিরে বুড়ি পরীক্ষা কেমন হলো তোর,,ভালো করে লিখেছিস তো।

-:হ্যাঁ ভাইয়া

এবার আবির নিশির দিকে তাকিয়ে বলল-;

-:আর তুই,,,তুই লিখেছে সবকিছু।

-:জ্বি।।

-:ভেরি গুড,,আজকে তোদের শেষ পরীক্ষা ছিল,,তাই তোরা আজ যা খেতে চাইবি,,তাই খাওয়াবো তোদের।

এই বলে আবির পিছনে ফিরতে নিলে নিশি আবিরকে ডাক দিল,,,আবির পিছনে ফিরে তাকাতেই,,,নিশি আবিরের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে,,,একগুচ্ছ লাল গোলাপ আবিরের সামনে ধরল,, তারপর বলতে লাগলো-;

-:ছোটবেলায় যখন তোমায় প্রথম চিনলাম,,ডেকেছিলাম তোমায় ভাইয়া বলে।যখন আমার বয়স তেরো,,,হঠাৎ একদিন নীল পাঞ্জাবি আবৃত অবস্থায় তোমায় দেখে আমার কিশোরী মনের এক কোণে ছোট্ট একটা কেটেছিল দাগ ভালোলাগার।সেদিন উপলব্ধি করতে পেরেছিলাম যে তোমাকে ভাইয়া বলে ডাকাটা,,আমার জীবনের চরম ভুল ছিল।কিন্তু তখন অতটাও গুরুত্ব দিইনি আমি এটাকে।

কিন্তু আমার হৃদয়ের গহীনে কখন যে এই ভালোলাগাটা ভালবাসায় পরিনত হয়েছিল বলতে পারব না।কিন্তু এটা আমি নিশ্চিত হয়েছিলাম সেইদিন যেইদিন তোমাকে অন্য মেয়ের সাথে হেসে কথা বলতে দেখেছিলাম,,,তিথির জন্মদিনের পার্টিতে।সেদিন থেকে আজও পর্যন্ত ভালোবেসে গেছি তোমাকে নিঃস্বার্থভাবে।বিশ্বাস করো কোনদিন তোমাকে জানাতে চাই নি,,আমার মনের কথা।ভেবেছিলাম নিজের মনের কোণে থাক না চাপা আমার গোপন ভালোবাসা,,,কি দরকার বাইরের পৃথিবী কে জানানো আমার ভালবাসার মানুষটার কথা।

কিন্তু আমি নিরুপায়।।আমি পারবো না অতটাও ভালো হতো কারণ তুমি হীনা আমি যে একেবারে শুন্য।বানাবে কি আমাকে তোমার বউ,,কিচ্ছু চাই না বিশ্বাস করো,,,শুধু দিনশেষে একটুখানি ভালোবাসা দিলেই চলবে। প্লিজ ফিরিয়ে দিও না,,, আজ ফিরিয়ে দিলে যে আমি পুরো ভেঙে পড়বো।আই লাভ ইউ,,,,,আই লাভ ইউ সো মাচ।।তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচবো না,,,আমাকে….

আর কিছু বলতে পারল না নিশি তার আগেই আবির প্রচন্ড জোড়ে একটা থাপ্পর মারল নিশির গালে।এতক্ষন রাস্তার সবাই তাদের দিকে তাকিয়েছিল।হঠাৎ আবিরের এমনভাবে চড় মারায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা,,,,মানুষগুলো অবাক হয়ে আবিরের দিকে তাকিয়ে আছে,,,সাথে তিথি নিজেও প্রচন্ড পরিমানে অবাক নিজের ভাইয়ের এমন কাজে।কিছু বলতে গেলে,,আবির তাকে হাত দিয়ে থামিয়ে দেয়,,তারপর নিশির হাত ধরে টেনে দাঁড় করিয়ে,,আরেকটা চড় মারে নিশির অন্য গালে।।নিশি গালে হাত দিয়ে ছল ছল চোখে আবিরের দিকে তাকিয়ে আছে।কিন্তু আবিরের সেদিকে কোনো খেয়াল নেই,,,সে রক্তলাল চোখে নিশির দিকে তাকিয়ে আছে,,তারপর একটা প্রচন্ড জোরে হুংকার দিয়ে উঠল-;

-:শাট আপ!!আই সে জাস্ট শাট আপ।

আবিরের এমন হুঙ্কারের নিশি কেঁপে উঠলো।। তার চোখ থেকে জল গড়িয়ে পরল আপনা আপনি।আবির আবার চেঁচিয়ে বলতে লাগলো-;

-:how dare you!!আমাকে এইসব বলার সাহস তোকে কে দিয়েছে।কি যোগ্যতা আছে তোর আমার ব‌উ হবার,,,তোকে আমি তিথির মতই আমার বোন ভাবি।আর তুই!!তোর মনে এসব চলছিল অসভ্য বেয়াদব মেয়ে কোথাকার।তোর বাবার টাকা আছে বলে কি তুই নিজেকে আমার যোগ্য মনে করিস।যেমন তেমন ভাবে পাস করে তো প্রতিটা ক্লাসে উঠিস,,সারাদিন বাবার টাকায় ঘুরে বেড়াস,,,তোদের মত মেয়েদের কাছ থেকে আর কিই বা আসা করা যেতে পারে,,তোরা তো এমনি হোস।পড়াশুনা বন্ধ করে সারাদিন ঘুরে বেড়াস এদিক ওদিক আর বিভিন্ন ছেলেদের সাথে প্রেম করে বেড়াস,,, নিজেদের সময় কাটানোর জন্য।আয়নায় একবার নিজের রুপটাকে দেখেছিস,,তুই না রুপে আর না গুনে,,,কোন‌ও দিক দিয়ে আমার যোগ্য নোস।আর…

-:ব্যাস ভাইয়া এবার চুপ কর তুই।অনেক বলে ফেলেছিস,,আর নয়।।

তিথি চেঁচিয়ে উঠলো-;

-:কি জানিস তুই ওর সম্পর্কে ছোটবেলা থেকে আমি দেখে আসছি ওকে,,,তাই তোর থেকে ওকে আমি বেশি ভালো করে জানি।।যেখান থেকে ও বুঝতে শিখেছে যে ও তোকে ভালবাসে সেখান থেকে ও নিঃস্বার্থভাবে এতটা বছর শুধু তোকেই ভালোবেসে গেছে।কত ছেলে ওকে প্রপোজ করেছে তা তোর ধারণা নেই কিন্তু ও কারোর দিকে তাকায় নি শুধুমাত্র তোর জন্য।আর তুই আজকে এতগুলো লোকের সামনে এইভাবে ওকে হেনস্তা করতে পারলে।তোর কাছ থেকে আমি এমনটা আশা করিনি।আই হেট ইউ ভাইয়া,,,আই হেট ইউ।

তিথি আর কিছু বলতে পারল না তার আগেই,,,নিশি নিজের চোখের জল মুছতে মুছতে দৌড়ে চলে গেল ওদের সামনে থেকে,,,তিথি নিশিকে অমন দৌড়াতে দেখে চেঁচিয়ে নিশিকে ডাকতে লাগলো কিন্তু কোন দিকে না তাকিয়েই নিশি দৌড়াতে লাগলো,,, রাস্তার মাঝখান থেকে। মেইনরোড হওয়ায় সেখানে তখন বিভিন্ন গাড়ি চলাচল করছিল।হঠাৎ একটা গাড়ি এসে নিশিকে ধাক্কা মারে বেরিয়ে গেল,,,নিশি ছিটকে পড়ল রাস্তার এক পাশে,,পুরো রাস্তা রক্তে ভরে গেল মুহুর্তেই।

আবির,,,তিথি দুজনেই কিছুক্ষণের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেল।হঠাৎ করে এমন কিছু হবে,,,কেউ বুঝতেই পারিনি।হঠাৎ তিথি নিশি বলে চেঁচিয়ে উঠলো,,,আবির দৌড়ে সেখানে গিয়ে দেখল নিশির অবস্থা খুবই ক্রিটিক্যাল,,, এক্ষুনি হসপিটালে এডমিট করতে হবে।তাই সময় নষ্ট না করে নিশিকে কোলে তুলে নিজের গাড়ির দিকে এগিয়ে গেল।নিশির প্রচুর ব্লিডিং হচ্ছে,,,তিথি ক্রমাগত কান্না করেই যাচ্ছে আর নিশিকে ধরে গাড়ির পিছনে বসে আছে,,,এদিকে আবির কাঁপা কাঁপা হাতে দ্রুত ড্রাইভ করছে।
.
.
.
.
.
[বাকিটা নেক্সট পর্বে]