তোমাকে আমার প্রয়োজন পর্ব-১৭

0
2137

#তোমাকে আমার প্রয়োজন??
#মেঘ পরী?☘️

??পর্ব-17??
.
?
.

আবির বসে বসে ম্যাগাজিন পরছিল,,তখনই খেয়াল করলো যে নিশি পাশে থাকা পানির গ্লাসটা ধরার চেষ্টা করছে,,, আবির সঙ্গে সঙ্গে নিশির হাত থেকে গ্লাসটা নিয়ে পাশের টেবিলে রাখল তারপরে নিশিকে আস্তে করে তুলে,,,পানি খাইয়ে দিল তাকে।

পানি পান করার পর নিশি আস্তে করে তিথিকে ডাকতে লাগলো।আবির নিশির দিকে তাকিয়ে বলল-;

-:কি লাগবে আমায় বল,,আমি হেল্প করছি।

নিশি আবিরের কথায় কান না দিয়ে আবার তিথিকে ডাকতে লাগলো,,,আবির নিশি কে বলল-;

-:বুড়ি একটু আগেই ঘুমিয়েছে,,তুই আমায় বল,,কি লাগবে তোর।

-:না ঠিক আছে,, কিছু লাগবেনা,,

এই বলে নিশি আস্তে করে শোয়ার চেষ্টা করলো,, কিন্তু ব্যথার কারণে শুতে পারল না,,,তা দেখে আবির তাকে ধরে আস্তে করে শুইয়ে দিল।

-: আর কিছু লাগবে।

-:ধন্যবাদ,আমার কিছু লাগবেনা।

আবিরের একটা ফোন আসায়,,সে বাইরে গেল কথা বলার জন্য।যাওয়ার আগে তিথি কে ডেকে দিয়ে গেল,,যদি নিশির কিছু লাগে তার জন্য।তিথি নিশির কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করল,,,তার কিছু লাগবে কিনা।নিশি মাথা নাড়িয়ে হ্যা বলল।তারপর আস্তে করে বলল-;

-:আমাকে একটু ওয়াশ রুমে নিয়ে যাবি??

-: হ্যাঁ,,,আমার হাত ধরে আস্তে আস্তে ওঠ।

তিথি নিশিকে আসতে করে তুলতে লাগলো,, তখনই আবির রুমে ঢুকে তা দেখে উত্তেজিত হয়ে বলে উঠলো-;

-:আরে ওকে তুলছিস কেন,,এইভাবে??

-:ভাইয়া ও একটু ওয়াশরুমে যাবে।

আবির এবার বুঝতে পারলে কেন নিশি তিথিকে ডাকছিল।আবির এগিয়ে এসে বলল-;

-:আমি হেল্প করছি,,,তুই একা পারবি না।ওর হাতে পায়ে ব্যান্ডেজ করা।

এই বলে যেই নিশির গায়ে হাত দিতে যাবে,,ওমনি নিশির নিজের দুর্বল হাত দিয়ে আবিরের হাত সরিয়ে দিল এক ঝটকায়। তারপর তিথি দিকে তাকিয়ে বলল-;

-:তুই কি পারবি না পারলে থাক আমি যাব না।

-:না,,,না আমি পারবো,,,তুই চল।ভাইয়া তোকে যেতে হবে না।

আবির আর কিছু বলল না,,,সে বুঝতে পেরেছে নিশির মনে যে ক্ষত সে তৈরি করেছে তা সহজেই সারবে না।তিথি আস্তে করে নিশিকে ধরে ওয়াশ রুমে নিয়ে গেল।
.
.
?
.
.

আজ প্রায় পনের দিন হতে চলল,,,,নিশি হসপিটালে ভর্তি ছিল।আজকে নিশিকে ছুটি দেওয়া হবে।এতদিন তিথি আর আবির বাড়িতে যায়নি বললেই চলে,,,সারাদিন নিশির আশেপাশে থেকেছে দুজনে।এর মাঝে নিলয় বেশ কয়েকবার এসেছিল নিশিকে দেখার বাহানায় তিথির সাথে দেখা করে গেছে।

আবির নিশির হাতের এবং পায়ের ব্যান্ডেজ গুলো খুলে ওষুধ লাগিয়ে আবার নতুন ব্যান্ডেজ করেদিল।এই কদিন আবির নিশির সমস্ত ট্রিটমেন্ট করেছে নিজের হাতে।আজ তাকে ছুটি দেওয়া হবে বলে সে সমস্ত পেপার রেডি করে রেখেছে আগে থেকেই।আজকের নিশির ছুটি হবে তাই নিশির বাবা মা আর তিথির মামা-মামী সবাই এসেছে হসপিটাল।

নিশিকে চেকআপ করা হয়ে গেল আবির নিশির বাবা কে উদ্দেশ্য করে বলল-;

-:আঙ্কেল আমি ড্রেসিং করে নতুন ব্যান্ডেজ লাগিয়ে দিয়েছি এবার সপ্তাহে একবার ব্যান্ডেজ খুলে ড্রেসিং করতে হবে,,,তার জন্য ওকে হসপিটালে আসতে হবে না,,,আমি বাড়িতে গিয়ে ওর ড্রেসিং করিয়ে আসবো।

-:ঠিক আছে বা….

তাওহীদ সাহেবকে আর কিছু বলতে না দিয়ে নিশি বলে উঠলো-;

-:আব্বু বলছি কি তোমার সাথে আমার একটু কথা আছে,,, খুব জরুরি।যদি সবাই বাইরে যেতে তাহলে একটু ভালো হতো।

নিশির কথা শুনে সবাই আর কিছু না বলে বেরিয়ে গেল।তারপর নিশি তার বাবাকে বললো-:

-:আব্বু বলছি যে তুমি কোন মহিলা ডাক্তার কে ঠিক করো,,,আমাকে চেকআপ করানোর জন্য।

-:কি বলছিস এইসব এতদিন ধরে আবির তোর চেকআপ করে এসেছে,,,এখন যদি তুই অন্য ডাক্তার দেখাস তাহলে সে কি ভাববে।

-:আব্বু তুমি আমাকে ভুল বুঝছো আমি সেই ভাবে কথাটা বলতে চাইনি দেখো আমার জন্য তাদের অনেক সময় নষ্ট হয়েছে,,তাই আমি চাইনা তারা আমার জন্য আর নিজেদের সময় নষ্ট করুক,,,,আর তাছাড়া আমি আনইজি ফিল করি ভাইয়ার কাছে তিনি ড্রেসিং করাতে,,,তাই বলছি একজন মহিলা ডাক্তার ঠিক করো তুমি।আর এই বিষয়ে আমি কোন কথা বলতে চাই না।।

নিশির বাবা আর কোন কথা না বলে বাইরে বেরিয়ে,,,আবিরের কাছে গিয়ে বললেন-;

-:বাবা আবির বলছি যে তুমি কি কোনো ভালো মহিলা ডাক্তার ঠিক করে দিতে পারবে,, নিশির জন্য??

-:কেন আঙ্কেল কি হয়েছ??(বেশ চিন্তিত গলায় বলল)আমি আছি তো আমি গিয়ে সপ্তাহে একদিন করে চেকআপ করে আসবো।

-:সে তো হলে আমাদের অনেক উপকার হতো। কিন্তু আসলে নিশি বলছিল ওর জন্য তোমাদের অনেক সময় নষ্ট হয়েছে তাই আর ও চায়না তোমাদের কোন সময় নষ্ট হক ওর জন্য।আর তাছাড়া ও আনকম্ফোর্টেবল ফিল করে,,, তোমার কাছে,,,তাই…

-:আঙ্কেল এতদিন ওকে আমি ট্রিটমেন্ট করেছি,, এখন যদি অন্য কেউ ওর ট্রিটমেন্ট করে তাহলে প্রবলেম হতে পারে।তাই আমি চাই না ওকে অন্য কেউ ট্রিটমেন্ট করুক,,,তাই আমিই ওর ট্রিটমেন্ট করবো।আমি এই বিষয়ে আর কথা বলতে চাইছি না,,,ক্ষমা করবেন।

এই বলে আবির আর কোন কথা না বলে চলে গেল।নিশি বাবা নিশির কাছে এসে,ব্যাপারটা বলল,,যেই নিশি কিছু বলতে যাবে অমনি রুমে আবির ঢুকলো পড়লো,,তারপর নিশির বাবাকে বলল-;

-:আঙ্কেল এই যে নিশির রিপোর্টস।আর নেক্সট উইকে আমি গিয়ে ওকে চেকআপ করে আসবো।

-:তার কোন দরকার নেই।

নিশা আস্তে করে বলে উঠলো।

-:তোমার দরকার না হতে পারে কিন্তু একজন ডাক্তার হিসেবে আমার এটা কর্তব্য।আর ডাক্তার জেন্ডার হিসেবে ডিফারেন্স করা যায় না।বেশিরভাগ সিজার মেইল ডক্টররা করে আর তাছাড়া তোমাকে প্রথম থেকে আমি চেকআপ করে আসছি,,, সুতরাং এর পরেও আমি তোমার চেক‌আপ করব।আর আমার সময় কোথায় নষ্ট হচ্ছে সেইটা তোমাকে না ভাবলেও চলবে।আমি আর এই বিষয়ে কোন কথা শুনতে চাইছি না,,ইস দ্যাট ক্লিয়ার নিশি।

নিশি আর কিছু বলল না আবিরের দিকে একবার মুখ ভেংচি দিয়ে মাথা নিচু করে বসে র‌ইলো।আবির তা দেখে হেসে দিল। তারপর নিশিকে বাড়ি নিয়ে যাওয়া হল।
.
.
?
.
.

রাতে তিথির ফোনের রিংটোন ঘুম ভেঙে গেল,,,ফোন চেক করেতে দেখলো নিলয়ের ফোন,,,ফোনটা রিসিভ করতেই নিলয় বলে উঠলো-;

-:ঘুমাচ্ছিলে পাখি??

-:হ্যাঁ আপনি কি করছেন।

-:তোমার সাথে ফোনে কথা বলছি।

নিলয়ের জবাব শুনে তিথি মুচকি হেসে বলল-;

-:সে তো এখন করছেন,,,ফোন করার আগে কি করছিলেন??

-:বেশি কিছু না অফিসের কিছু ইম্পর্ট্যান্ট ফাইল চেক করছিলাম।ও বাই দ্যা ওয়ে নিশি কেমন আছে এখন??

-:ভালো আছে।

-:ভেরি গুড।তুমি আর তোমার ভাইয়া একদম সেম ক্যাটাগরির,,, এতটা মিল কি করে সম্ভব।

-:কেন কেন।

তিথি বেশ আগ্রহী হয়ে জিজ্ঞাসা করল।

-:এই তোমরা দুই ভাইবোনই ভালোবাসার মানুষদের মন ভেঙে দিতে দুমিনিট ও ভাবোনা।

-:ও তাই বুঝি।আমি কি আপনাকে জেনে শুনে কষ্ট দিতাম নাকি,,তখন তো আমি বুঝতাম না। পরে যখন আপনার ভালোবাসাকে বুঝতে পারলাম তখন তো আমি আপনার কাছে গিয়ে আমার মনের কথাগুলো যে আপনাকে বললাম,,,তার বেলা কিছু না।(কিছুটা মন খারাপ)

-:করে আরে পাখি,,,মন খারাপ করছো কেন।হ্যাঁ আমি মানছি তুমি আমার কাছে এসেছ কিন্তু নিশি সে তো বেচারী এখনো তোমার ভাইয়ের মন পেল না।

-:পাবে,,,সে ও পাবে,,,আমি আমার বেস্টুর গোমরা মুখ দেখতে পারবো না।তার জন্য আমি একটা প্ল্যান ঠিক করে রেখেছি।

-:কি প্ল্যান শুনি।

-:আগে নিশি সুস্থ হোক,,,তারপর ভাইয়ার মনে কি করে নিশিফুল ফোটাতে হয়,,তা আমি খুব ভাল করেই জানি।

-:হ্যাঁ তুমি ছাড়া আর কেই বা এমন চমৎকার চমৎকার আইডিয়া ভাবতে পারবে।

-:???আই নো।

-:আচ্ছা শোনো কালকে তোমার মামা,,মামি আর ভাইয়া বাসায় থাকবে তো??

-:হ্যাঁ কিন্তু কেন??

-:কিছু না এমনি জিজ্ঞাসা করলাম।

-:ও

-:আচ্ছা এবার ঘুমিয়ে পরো,,গুড নাইট।

এই বলে নিলয় ফোন কেটে দিল,,,তিথিও আর কিছু না ভেবে ঘুমিয়ে পড়ল।

.
.
?
.
.

আজ রবিবার তাই সবাই বাড়িতে আছে,,,তিথি সবে ঘুম থেকে উঠে,,,ডাইনিং টেবিলে বসে সকালে নাস্তা করছে,,,,মামা আর আবির সোফায় বসে খবর দেখছে আর মামি রান্নাঘরে।এমন সময় কলিং বেল বেজে উঠলো।তিথির মামা গিয়ে দরজাটা খুলতেই অবাক হয়ে গেল,,,সামনে থাকা ব্যক্তিকে দেখে।এদিকে তিথি পরোটা চিবাতে চিবাতে,,, তার মামাকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগল-;

-:মামা কে এসছে গো এই ভোরবেলায়।

এই বলে আবার নিজের খাবার খেতে ব্যস্ত হয়ে পরলো,,,বাইরে থাকা ব্যক্তি ঘরে প্রবেশ করলো।তিথি খাবার খেতে খেতে মাথাটা উপরে তুলতেই সামনে থাকা ব্যক্তিটির দিকে তাকিয়ে মাথা ঘুরে যাওয়ার কল হয়েছে,,,,কারণ সেই ব্যক্তি আর কেউ নয় স্বয়ং নিলয়।কিন্তু পাশের মানুষটাকে চিনতে পারল না তিথি।নিলয়ের খুব হাসি পাচ্ছিল,,, তিথি ফেসের অমন রিয়াকশন দেখে।নিলয়কে দেখে আবির সঙ্গে সঙ্গে উঠে,,,তাদের বোসতে দিল।তিথির মামি রান্নাঘর থেকে এসে তাদের দিকে অবাক,,,কিছু বলতে যাবে তখনি নিলয়ের সাথে আসা লোকটি বলে উঠল-;

-:সরি আপনাদের কিছু না বলে,,এইভাবে চলে আসার জন্য।

-:না না এতে সরি বলার কী আছে।(মামা)

-:আসলে আমরা এখানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজের জন্য এসেছি।

-:কি কাজ??(আবির)

সবাই কথা বলছে কিন্তু এদিকে তিথির কোন খেয়ালই নেই সে এখনো গালের ভিতরে অর্ধেক পরোটা নিয়ে হাঁ করে নিলয়ের দিকে তাকিয়ে আছে।তিথির এমন কাণ্ড দেখে মামির তিথিকে ঝাড়ি দিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে উঠলো-;

-:তাড়াতাড়ি ওঠ,,সবাই কি ভাববে এভাবে বসে আছিস কেন??

মামীর কথায় তিথির এতক্ষণে হুশ হল,,,তারপর সঙ্গে সঙ্গে বেসিনে গিয়ে হাত মুখ ধুয়ে এল।

-:আমি মিস্টার রিয়াদ হোসেন নিলয়ের মামা।আসলে নিলয়ের বাবা মা অনেক আগেই মারা গিয়েছে,,তাই আমাকেই আসতে হল ওর সাথে। আসলে আমার ছেলেটা আপনার বাড়ির মেয়েকে খুব পছন্দ করে,,আর তাকে বিয়ে করতে চাই। তাই আমিও দেরি না করে আপনাদের কাছে চলে এসেছি।আপনারা যদি কিছু মনে না করেন তাহলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমরা আপনার মেয়েকে,,আমাদের ঘরের বউ করে নিয়ে যেতে চাই।

রিয়াদ হোসেনের কথা শুনে,,, আবির উঠে দাঁড়ালো,,,বসা থেকে,,,তারপর…..

???? তারপর আর কিছু নাই।বাকিটা নেক্সট পর্বে জেনে নিবেন।???
.
বাই দ্যা রাস্তা??,,আবির কি বিয়েতে রাজি হবে না নাকি?????কি জানি!!যেভাবে উঠে দাঁড়ালো।??

? আরেকটি ইম্পর্টেন্ট কথা কথা,, গতপর্বে আমার এক জায়গায় মিসটেক হয়েছিল,, আমি ভুল করে,,,ফিমারকে হাতের হাড় বলেছিলাম,, কিন্তু সেটা পায়ের হাড় হবে।একচুয়ালি ফিমার কাম টুগেদার অ্যাট দা নি পয়েন্ট।সুতরাং ওইটা Ulna হাড় ভেঙেছে হবে,,একটু কারেকশন করে নিবেন,,মনে মনে।???আর ধন্যবাদ আমার ভুলটা কে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য,,,,এমন করে আমার ভুলটাকে ধরো যাতে আমি পরবর্তীকালে কারেকশন করতে পারি।????
.
.
.
.
[বাকিটা নেক্সট পর্বে]

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে