তোমাকে আমার প্রয়োজন পর্ব-৩৪

0
1798

#তোমাকে আমার প্রয়োজন ??
#মেঘ পরী??

??পর্ব-৩৪??
.
?
.

আজ তিথিরা বোটানিক গার্ডেন্সে ঘুরতে যাবে।এই পার্কটি সর্বপ্রথম UNESCO World Heritage মনোনয়নপত্র পার্ক। সিঙ্গাপুরের পুরোটা কংক্রিট জঙ্গল মনে হলেও এই পার্কটি এই ধারণাটা কে সম্পূর্ণ বদলে দেয়। এটি যেন ইট-পাথরের জঙ্গলের মাঝে এক টুকরো সত্তিকারের জঙ্গল।এই পার্কে সিঙ্গাপুরের বিভিন্ন প্রজাতির গাছ এবং পশু পাখি বাস করে। এখানে প্রায় সাত হাজার প্রজাতির গাছ এবং পশু পাখি রয়েছে। এই বোটানিক গার্ডেন বিভিন্ন অংশে বিভিন্ন প্রজাতি ভেদে বাগান রয়েছে।যেমন অর্কিড গার্ডেন,,রেইন ফরেস্ট,,,জিনজার গার্ডেন,, চিল্ড্রেন গার্ডেন্স ইত্যাদি।

এই জায়গাটা তিথির খুব পছন্দ হয়েছে। এখানে তারা অনেক গুলো ছবি তুললো,,,গ্ৰুপ ফোটো আর কাপেল ফটোও তুললো।

এরপর ওরা গেল এসপ্লান্ডে পার্কে।এই পার্কের খোলামেলা পরিবেশে যেকোন পর্যটককে আকর্ষণ করবে।এখানে আছে তান কিম সিঙ্গ ঝর্না অত্যন্ত সুন্দর।এখানে বিনোদন কেন্দ্রের শেষে তৈরি করা হয়েছে লিম বো সিঙ্গ মেমোরিয়াল।এখানে আরো একটি সুন্দর জিনিস দেখার আছে চমৎকার একটি কম্প্লেক্স যা নকশা করেছে ব্রিটিশ ড্রাফটসম্যান মাইকেল হুইল ফোর্ট। এই কমপ্লেক্সে খোলা আকাশের নিচে রয়েছে থিয়েটার,,প্রদশর্নী জায়গা,,পাঠাগার,, শপিং সেন্টার সব মিলিয়ে এটি যেন একটি মনোরম প্যাকেজ।

এরপর ঘুরতে গেল তারা গার্ডেনস বাই দা বে।এটি তিনটি অংশে বিভক্ত বে সেন্ট্রাল,,বে সাউথ এবং বে ইস্ট।এটি একটি বাগান যা ওয়াটারফ্রন্ট রোডের সাহায্যে বাকি দুটি অংশকে যুক্ত করেছে।এর মধ্যে বে সাউথ সবচেয়ে বড় যেখানে রয়েছে বিভিন্ন গ্রীষ্মমণ্ডলীয় গাছ এবং গাছ সদৃশ কিছু কাঠামো,,যেগুলো লম্বায় প্রায় 50 মিটাররাতের বেলায় এসব কাঠামো থেকে বিভিন্ন রং এর আলো বেরিয়ে এসে আশপাশের পরিবেশ ঝলমল করে তোলে,, দেখে মনে হয় বিরাট আলোকসজ্জা।

এতগুলো জায়গা ঘুরতে ঘুরতে তিথি দের অনেক দেরি হয়ে গেল,,তাই তারা হোটেলে ব্যাক করলো।তিথি প্রচুর টায়ার্ড তাই না খেয়ে শুয়ে পড়লো।

এইভাবে সিঙ্গাপুরে তাদের দিনগুলো বেশ ভালোই কাটে গেল।একে পাঁচটা দিন অতিবাহিত হয়ে গেল।এই পাঁচ দিনে তারা তিন শতাধিক প্রজাতি নিয়ে 69 একর জমি ওপর গঠিত সিঙ্গাপুর চিড়িয়াখানা(16% বিপন্ন প্রায় প্রজাতি যেগুলি রেড ডাটা বুক তালিকায় রয়েছে সেই সকল প্রজাতির প্রাণী এই চিড়িয়াখানায় দেখা যায়। যেমন-:: শ্বেত ভাল্লুক,,শ্বেত বাঘ,,কোয়ালা,, রেড পান্ডা ইত্যাদি ),,,, রিভার সাফারি,,, নাইট সফরি (এটির বৈশিষ্ট্য হলো এই সফরি শুধুমাত্র রাতের বেলায় জীবজন্তু দেখা যায় যা ট্রামে করে চড়ে পর্যটকদের দেখতে হয়),,, দক্ষিণ এশিয়ায় অন্যতম সেরা পান্ডা সো,, সিঙ্গাপুর ফ্লাইয়ার(এটি অবস্থিত মেরিনা বে তে)।

এই সিঙ্গাপুর ফ্লাইয়ার সবচেয়ে আকর্ষণীয় জিনিস হচ্ছে ফ্লাই হুইল বা নাগরদোলা।এটি 165 মিটার উচ্চতা। এটির মাধ্যমে পুরো সিঙ্গাপুর শহর কে দেখা যায়।এখানে উঠার সময় তিথি এবং নিশি প্রায় কান্না করে ফেলেছিল,,কারণ এত উঁচুতে উঠতে তাদের খুব ভয় করছিল। কিন্তু পরে ফ্লাই হুইল চলতে শুরু করার পরতাদের ভয়টা আস্তে আস্তে কেটে যায় এবং তারা সিঙ্গাপুর শহরের সৌন্দর্য থাকে খুব সুন্দরভাবে উপভোগ করতে লাগলো।ফ্লাইয়ারটি যেহেতু তিনটি স্তর নিয়ে গঠিত রেস্টুরেন্ট,, দোকান এবং অন্যান্য সেবা। তাই তারা এখানকার রেস্টুরেন্ট থেকে ডিনার সেরে নিয়েছিল।

এছাড়াও তারা মারলায়ন পার্ক ও পর্যবেক্ষন করেছে।মারলায়ন কে সিঙ্গাপুরের প্রতীক ধরা হয়।এটি পৃথিবীর সকল পর্যটকদের স্বাগতম জানাই। এখানকার সবচেয়ে অন্যতম বৈশিষ্ট্য মেরিনা বে মূর্তি। মারলিন বা সিংহ মৎস্য হচ্ছে সিঙ্গাপুরীদের গর্বের প্রতীক,,, বীরত্বের প্রতীক। কথিত আছে বহু বছর পূর্বে যখন সিঙ্গাপুর তেমাসেক বা সমুদ্র নগরী নামে পরিচিত ছিল তখন একবার প্রচন্ড এক সমুদ্রিক ঝড় ওঠে। এমত অবস্থায় যখন সিঙ্গাপুর বাঁশি নিজেদেরকে ভগবানের কাছে সপে দেয় ঠিক সেই মুহূর্তে সমুদ্রের বিশাল জলরাশি ভেদ করে সিংহ মৎস্য নামক এক জীব উঠে আসে এবং তাদের রক্ষা করে। সেখান থেকে তারা মারলায়ন নামক সিংহ মৎস্য সিঙ্গাপুরিদের বীরত্বের প্রতীক হয়ে ওঠে। রাতে এখানকার রেজার লাইট শো পৃথিবী বিখ্যাত।

এইসব কিছু দেখতে দেখতে পাঁচ দিন অতিক্রান্ত হয়ে যায়।হাতে মাত্র দুদিন তার মধ্যে একদিন মেরিনা বে স্যান্ডস দেখতে যাবে আর লাস্ট দিনে শপিং করবে বাড়ির জন্য।

এদিকে ভালোবাসা,,খুনশুটি এবং হাসিখুশির মধ্য দিয়ে তিথি আর নিলয়ের দিনগুলো খুব সুন্দরভাবেই অতিক্রান্ত হচ্ছে।এর মাঝে একবার আবির নিশিকে আপন করে নিতে চেয়েছিলো কিন্তু নিশির নিষেধাজ্ঞা এবং কিছু কড়া কথায় সেদিন আবিরকে খুব কষ্ট দিয়েছিল।তাই আবির সেদিনের পর থেকে নিশিকে যথাসম্ভব এড়িয়ে চলছে।প্রয়োজন ব্যাতীত কোনো কথাই তার সাথে বলছেনা,,,যা নিশি কে বড্ড পোড়াচ্ছে।

আজ ষষ্ঠতম দিন আজ তারা মেরিনা বে স্যান্ডস ঘুরতে যাবে।এটি সিঙ্গাপুরের সবচেয়ে আকর্ষণীয় এবং দর্শনীয় স্থান। এটি সিঙ্গাপুরের একটি অত্যাধুনিক রিসোর্ট কমপ্লেক্স।এই মেরিনা বে স্যান্ডস বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল কমপ্লেক্স এর মধ্যে একটি। এখানে রয়েছে একটি হোটেল বিভিন্ন ব্র্যান্ডের শোরুম,, আর্ট সায়েন্স মিউজিয়াম,, রেস্টুরেন্ট,, কনভেনশন সেন্টার,, থিয়েটার আর রয়েছে একটি শপিং মল যার মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে নদী আকারের একটা ছোট জলাশয়।এইগুলো ঘোরার পর তারা মেরিনা বে স্যান্ডস স্কাই পার্কে গেল।এটি একটি খুব উঁচু স্থান যার উপর থেকে পুরো সিঙ্গাপুর শহর দেখা যায়। সমস্ত সিঙ্গাপুর দেখার এই ডেক এবং ইনফিনিটি পুল অবস্থিত একটি জাহাজের মধ্যে। মেরিনা বে সেন্ডস স্কাই পার্ক দেখতে পুরো জাহাজের মতন। পুরো ডেকে জলে ভর্তি,,, এখানে পর্যটকরা সুইমিং করতে পারে।এবং এই জাহাজ আকৃতি সুইমিং পুলটি রিসোর্ট সমেত প্রচন্ড উঁচু স্থানে অবস্থিত। নিলয় এবং আবির এই পুলে সুইমিং করলো কিছুক্ষন যেহেতু সুইমিং কস্টিউম ছাড়া এই পুলে এলাও না তাই নিশি এবং তিথি কেউই এই পুলে নামলো না।

সেখান থেকে তারা রেস্টুরেন্টে গেল দুপুরে লাঞ্চ করতে তিথি নিজের জন্য এক প্লেট ওয়াইট রাইস,,এক প্লেট চিলি ক্র্যাব আর নিলয় লাকসা আর হ্যাকিং প্রণ মি অর্ডার করলো।নিশি এক প্লেট ফিশ হেড কারি উইথ প্লেন রাইস আর আবির তার জন্য ওয়েস্টার ওমলেট আর এক প্লেট কায়া টোস্ট অর্ডার করলো। তারপর তারা লাঞ্চ করে হোটেলে ফিরে গেল।এর মাঝে আবির একবারও নিশির সাথে কথা বলিনি।নিশি দু-একবার কথা বলার চেষ্টা করেছে কিন্তু আবির এড়িয়ে গেছে।

পরেরদিন তাদের সিঙ্গাপুরের লাস্ট দিন। তাই তারা একসাথে শপিং করতে বের হলো। ভিভো সিটি নামক শপিংমলে তারা শপিং করবে। সেখান থেকে তিথি তার এবং নিলয়ের পরিবারের জন্য কিছু শপিং করল আর নিশিও নিজের বাবা,মা আর শশুড়বাড়ির জন্য কিছু শপিং করে নিল।

পরেরদিন সকালে তাদের ফ্লাইট তাই তারা দেরি না করে তাড়াতাড়ি খেয়ে শুয়ে পরল।রাতে যে যার প্যাকিং করে নিল। পরের দিন সকালবেলা নটার সময় তারা বেরিয়ে গেল হোটেল থেকে আর এক ঘন্টার মধ্যে তারা তাদের এই স্বপ্নের শহর কে বিদায় জানিয়ে উড়ান দিল নিজেদের দেশের উদ্দেশ্যে।

.
.
.
.
[বাকিটা নেক্সট পর্বে]

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে