Friday, July 18, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1569



ওয়ারদূন আসরার পর্ব-২৩

0

#ওয়ারদূন_আসরার
#লাবিবা_ওয়াহিদ
|| পর্ব – ২৩ ||

কমলা দেবী একপ্রকার ধমক দিয়ে যীনাতকে বলে,”তোর সাহস কেমতে হয় আর নাতিরে এমনে জড়াইয়া ধরণের? ছ্যা ছ্যা ছ্যা ঠাকুর তুমি আরে কি দেহাইলা। এই মাইয়ারে কতো ভালা ভাবতাম আর এই মাইয়া কিনা আর নাতির দিকে এমনে নজর দিলো? আর তো তোরে পথম থেইকাই সইয্য হইতো না ভালা হইসিলাম কিন্তু এহন বুজবার পারতাসি আই কি ভুল করসি। যার জম্মের ঠিক নাই হেয় আবার কেমতে ভালা হইবো!

শেষের কথায় জাইফ চেঁচিয়ে বলে,”ঠাম্মি!!”

যীনাত ছলছল চোখে কমলা দেবীর দিকে তাকালো। শেষ পর্যন্ত কিনা তার জম্ম ঠিক আছে কিনা সেই প্রশ্ন তোলা হলো? আল্লাহ এসব শুনানোর আগে মৃত্যু কেন দিলে না?

এসবই ভাবছে গালে হাত দিয়ে। যীনাতের রুম থেকে চিৎকার চেঁচামেঁচি শুনে সকলেই উপস্থিত হলো। কমলা দেবী বলে,”তুই চুপ কর ছ্যাড়া আর কতো এই মাইয়ারে বাচাইয়া রাখবি হ্যাঁ আইজ আমি এর হেস্তনেস্ত কইরাই ছাড়ুম। আর এই চরিত্রহীন মাইয়া তুই…”

কমলা দেবীর কথার মাঝে দিয়ে দেবনাথ দেব ধমকের সুরে বলে,”কমলা!! মুখ সামলে কথা বলো তুই কাকে কি বলছিস ভেবে বলছিস তো? সব জায়গায় সবসময় এতো বাড়াবাড়ি কিসের তোর? সাহস তো কম না তুই ওকে চরিত্রহীন বলছিস!”

– দেখ দাদা আর লগে লাগতে আহিস না। আমি নিজের চোখে কিছু না দেখলে তো কইতাম না। তোমরা কি তোমাগো পোলা আর এই মাইয়ার খোয রাহো? আইজ জানো কি করসে এইদুইটাই ছি ছি ছি রুচিতে বাধছে আর কইতে।

– দেখো ঠাম্মি ভনিতা না করে সোজাসাপটা বল কি হয়েছে এখানে শুধু শুধু দাঁড়িয়ে থাকার মানে হয়না।

– হেইডা তোর গুনবতী দাদারে জিগা কি করসে আর এই মেয়ে আইজ তোর গায়ে ৪০ঘা চাবুক লাগাইয়া এই বাড়ি থেইকা বাইর করমু।

সবাই অবাক হয়ে কমলা দেবীর দিকে তাকায়। এবার নিকেশ বলে,”পিসি তুমি অন্যায় করতে পারো না। তুমি আমাদের বলো কি করেছে ওরা!”

– এই মাইয়া তোর পুতরে জড়াই ধইরা ছিলো আই নিজ চক্ষে দেখসি।

সবাই অবাক হয়ে একবার জাইফের দিকে তাকায় আরেকবার যীনাতের দিকে। যীনাত নিচের দিকে তাকিয়ে নিঃশব্দে কেঁদে চলেছে গালে হাত দিয়ে। জাইফের যেনো কোনোরকম হেলদোল নেই সে নিজেকে শক্ত রেখেছে। যীনাতের হাত ধরে কমলা দেবী যেই টান দিবে ওমনি কমলা দেবীর হাত দেবনাথ দেব ধরে ফেলে এবং বলে,”যীনাতকে ছাড়ো!”

– মানে কি দাদা ও অন্যায় করসে আর আই এরে ছাড়ি দিমু ভাবলি কেমনে?

– যীনাত কোনো অন্যায় করেনি কারণ যীনাত জাইফের বিবাহিতা স্ত্রী।

এই কথা শুনে সকলের অবস্থা দেখার মতো বিশেষ করে সোভন আর কমলা দেবী। কমলা দেবী চমকে বলে,”মানে কি কবে অগো বিয়া অইলো আর আরা তো কেউ জানতাম না অগো বিয়া হইসে।”

– আগে জানতে না এখন তো জানলা। এখন আশা করছি যীনাতকে চরিত্রহীন বলে গালি দেয়ার অধিকার তোমার নেই।(চোখমুখ গরম করে জাইফ)

কমলা দেবীর হাত থেকে যীনাতের হাত ছাড়িয়ে দেবনাথ দেব নিজের কাছে যীনাতকে রাখলো। যীনাত তো তখনো কেঁদেই চলেছে। কমলা দেবী আবার চেঁচিয়ে বলে,”না না না আই এই বিয়া মানিনা! আগো পুতের লগে এমন একটা মাইয়ার বিয়া হইসে যার না আছে যাতপাত আর না আছে জম্মের ঠিক! না না না একদম মানিনা আই বিয়া।”

জাইফ রাগে চিল্লিয়ে উঠলো। সকলে জাইফের রাগ দেখে কিছুটা ভয় পেয়ে গেলো। দেবনাথ দেব তো চোখ গরম করে কমলা দেবীর দিকে তাকিয়ে আছে। জাইফ রাগে টি-টেবিলের উপরের কাঁচটা জোরে আছাড় দিয়ে ভেঙ্গে ফেললো। সবাই ভয়ে কিছুটা কেঁপে উঠলো। এই প্রথম জাইফের এমন রাগ সবাই দেখলো। জাইফ হুংকারের সুরে বলে,”ঠাম্মি তুমি কতোটুকু জানো ওর সম্পর্কে যার জন্য বারবার ওকে এই উপাধি দিচ্ছো? কি হলো চুপ কেন এন্সা মি!!(চিল্লিয়ে) তুমি জানো যীনাতের বাবা একজন সরকারী কর্মকর্তা ছিলো। ওর বড় জেঠা ছিলো ভার্সিটির একজন প্রফেসর। পুরো পরিবার ছিলো উচ্চ শিক্ষিত কিন্তু বোম ব্লাস্টের জন্য পুরো পরিবার ধ্বং হয়ে গেছে। শুনতে পেরেছো আমার কথা? ধ্বংস হয়েছে গেছে দুর্ঘটনায়!!”

রিকেশ জাইফের কাছে গিয়ে জাইফকে ঠান্ডা করার চেষ্টা করে। সবাই সবটা শুনে কেমন অপরাধবোধ করছে। কারণ এক মুহূর্তের জন্য তারা মুখে প্রকাশ না করুক তাদের মনে যীনাতের জন্য কিছুটা হলেও ঘৃণা জম্মেছিলো। কিন্তু মেয়েটা পরিবার হারিয়ে যে কতোটা অসহায়ভাবে ছিলো সেটা ভুলে গেছে। সত্যি তার এরূপ কাজে তারা ভীষণ লজ্জিত। যীনাত তখনো ফুঁপিয়ে কাঁদছে। হঠাৎ মল্লিকা দেবী বলে উঠলেন,”কিন্তু একজন সনাতন ধর্মের ছেলের সাথে এক মুসলিম মেয়ের বিয়ে কি করে হলো?”(অবাক হয়ে)

– জাইফ নিজেও ইসলাম গ্রহণ করেছে।

এটা শুনে শুরু হলো কমলা দেবীর চেঁচামেচি। সে জানতো না যীনাত মুসলিম তার উপর জাইফ যে ইসলাম গ্রহণ করেছে এখন তো কথাই নেই। ভাঙ্গা রেডিওর মতো চেঁচামেচি করে যাচ্ছে তো যাচ্ছেই। জাইফ রিকেশকে ইশারায় ইনজেকশনের কথা বললো। রিকেশ মাথা নাড়িয়ে কমলা দেবীকে টেনেটুনে নিচে নিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর অটোমেটিক কমলা দেবীর চিল্লানো বন্ধ হয়ে গেলো। নিকেশ জাইফের সাথে কথা না বলে চলে যেতে নিলে জাইফ এসে আটকায়।

– বাবা এভাবে কেন মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছো?

– তুই আমায় বাবা ডাকবি না তোর বাবা ডাকার কোনোরকম অধিকার নেই। যখন অন্য ধর্ম গ্রহণ করবি তখন মনে ছিলো না তোর মা আছে বাবা আছে? হুট করে এভাবে অন্য একটা মেয়ের জন্য নিজের ধর্মকে বিসর্জন দিলি ছিহ! এখন আমি সমাজে কি করে মুখ দেখাবো হ্যাঁ.. কি করে?

– বাবা প্লিজ আমার কথা…

– আবার বাবা বলেছি না আমাকে বাবা ডাকবি না। মল্লিকা চলো এখান থেকে। ছেলে এখন বড় হয়েছে সে এখন তার নিজের সিদ্ধান্ত একাই নিতে জানে তার মা-বাবাকে বলার প্রয়োজনবোধ করেনা।

বলেই নিকেশ জাইফের পাশ কাটিয়ে চলে গেলো আর মল্লিকা দেবী জাইফের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে নিজেও চলে গেলো। আস্তে আস্তে সবাই চলে গেলো শুধু দেবনাথ দেব থেকে গেল। জাইফ কষ্টে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রয়। দেবনাথ দেব জাইফের কাধে হাত রেখে বলে,”চিন্তা করিস না সব ঠিক হয়ে যাবে। আসলে ওরা তোর মা বাবা এমন বড় ধাক্কা সামলাতে পারেনি তাই কিছুটা অভিমান করেছে। কিছুদিন পর দেখবি এমনি-ই সব ঠিক হয়ে যাবে আর আমি তো আছি নাকি? তুই এখন যীনাতকে সামলা। যীনাতের পাশে ছায়া হয়ে দাঁড়া এবং ওকে সময় দে ভালো লাগবে।”

বলেই দেবনাথ দেব চলে গেলেন। জাইফ কিছুক্ষণ চুপ থেকে যীনাতের কাছে গিয়ে বলে,”শুয়ে পরো গিয়ে।”

– কি.. কি.. কিন্তু!

– আমিও তোমার সাথে শুবো আসো।

যীনাত আর অমত করলো না জাইফের সাথে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।

– নায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়া কে মারলো আমার সৈন্যদের কার এতো বড় সাহস!!?

বলেই হাতে থাকা ওয়াইনের গ্লাসটা সামনে থাকা কারুকাজ করা আয়নায় ছুঁড়ে মারলো। রাগে যেনো তার গায়ে দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে। সআমনে থাকা অবয়ক টা কেঁপে উঠে বলে,”আপনি শান্ত হন সর্দার।”

– কি করে শান্ত হবো কি করেএএএ? ওয়ারদূন আসরারও হাত থেকে ছুটে গেলো আর ওই রাজকুমারকে তো খুঁজেই পাইনা। তাহলে কে বারবার আমার পরিকল্পনায় বা হাত ঢুকায়?? ওই মেয়ে কেন বারবার বেচে যায়?

– আমার কাছে একটা পরিকল্পনা আছে আপনি যদি অনুমতি দেন তাহলে আমি আপনায় ধারণা দিতে পারি।

– যা পারো বলো তবে ভালো কিছু হতে হবে।

– ঠিক আছে আপনি শান্ত হোন আর শুনুন। আপনি মারিন রাজ্যে যুদ্ধ ঘোষণা করুন। যুদ্ধতে নিশ্চয়ই কোনো না কোনো ভাবে রাজকুমার আর সেই ওয়ারদূন আসরার আসবে। সেখান থেকে আমরা তাদের দুজনকে পেয়েও গেলাম আবার রাজ্যটাও আমাদের অধীনে চলে আসলো কি বলেন?

সহকারীর(অবয়ক) কথায় সর্দার কিছুক্ষণ ভেবে হেসে উত্তর দিলো,”হ্যাঁ তুমি মন্দ বলোনি তুমি এর জন্য পুরস্কার পাবে এখন তুমি আসতে পারো।”

সহকারী বেরিয়ে গেলো সর্দারের কক্ষ থেকে। আর সর্দার ভেতরে থেকে হু হা করে হেসে উঠে এবং বলতে লাগে,”রাজকুমার এবার তুই কোথায় পালাবি তোকে তো আমার আমার হাতে আসতেই হবে। তুই নিজেই তো আমার হাতে এসে ধরা পরবি।”

বলেই অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো। কক্ষের বাইরে কেউ একজন ঠোঁটে একটা শয়তানি হাসি ঝুলিয়ে ভাবে,”আমার ফাঁদে শেষ পর্যন্ত পা দিলি৷ শালা বলদ মাথামোটা সর্দার। যেভাবে বুঝালাম সেভাবেই বুঝলো বলদ টায়। এখন দিন গুণতে থাক, যতো ইচ্ছা আরাম আয়েশ কর তুই!”

বলেই সহকারী চলে গেলো অন্যস্থানে।

————————————-

চলবে!!!

ওয়ারদূন আসরার পর্ব-২২

0

#ওয়ারদূন_আসরার
#লাবিবা_ওয়াহিদ
|| পর্ব – ২২ ||(রহস্য ফাঁস)

– তিশানা!

– হ্যাঁ বৌদি বলো।

– আমার কি মনে হয় জানিস?

– কি?

– জাইফ আর যীনাতের মধ্যে কিছু একটা চলছে।

– মানেহ? তোমার মাথা কি পুরো গেছে?

– আরে না সত্যি বলছি। আর তার চেয়ে বড় কথা ও জানলো কি করে আমরা যীনাতকে নিয়ে বেরিয়েছি + ও নিখোঁজ! তুই বা আমি তো জাইফকে ফোন করে বলিনি যীনাতের কথা।

এবার তিশানা ভাবতে লাগে হ্যাঁ সত্যি তো। জাইফ জানলো কি করে যে যীনাত নিখোঁজ হয়েছে আর এখানেই বা আসলো কি করে? ঠিকানা জানারও তো কথা নয়। আনুস্কা আবার বলা শুরু করে,”যখন শুনেছে যীনাতের নিখোঁজ হওয়ার কথা জাইফ শুনলো তখনই আমি জাইফের চোখে কোনো কিছু হারানোর ভয় স্পষ্ট দেখেছি। এবং বাড়িতেও অনেকবার খেয়াল করেছি ওদের কথাবার্তা, আচার-আচরণ সবটা। কিন্তু ডাউট ছিলো তাই কাউকে কিছু বলিনি এবং আজ তোমায়ও বলতাম না বাট না বলে থাকতে পারছিলাম না।”

– না ভাবি তুমি মন্দ বলোনি বিষয়টা আমিও খেয়াল করেছি কিন্তু পাত্তা দিতাম না। আমারও এখন মনে হচ্ছে ওদের দুজনের মাঝে কিছু না কিছু আছেই। যাইহোক দাভাই আসুক তুমি আমি একসাথে পেচিয়ে ধরবো।

– হ্যাঁ সেই ভালো। দু’জন একসাথে ধরলে না বলে থাকতে পারবে না।

তারপর দুজন মিলে প্লান করলো কিভাবে সত্যটা বের করবে। তখনই জাইফ যীনাতকে নিয়ে ফিরলো। যীনাতের চোখ মুখের অবস্থা দেখে তিশানা আনুস্কার মনে ভয় ঢুকে যায়। দুজন জাইফের প্রশ্নের কথা ভুলে যীনাতের কি হয়েছে জানতে চাইলো কিন্তু জাইফ কিছু বললো না শুধু এইটুকু বললো বাড়ি গিয়ে সব বলবে।

যীনাত শান্ত দৃষ্টিতে জাইফের দিকে তাকিয়ে আছে কারণ সে জানতে চায় জাইফের সবকিছু। কেন সে একজন জ্বীন হয়ে এই হিন্দু পরিবারে থাকতো কিভাবে কি হলো সবটা সে জানতে চায়। জাইফ কিছুক্ষণ নিরব থেকে বলে,”আমি তোমায় সবটা বলবো, তোমার সবটা জানার অধিকার আছে কারণ তুমি আমার বিবাহিতা স্ত্রী!”

বলেই জাইফ থামলো। এখন তারা আছে সেই নদীর পারে। এই নদীর পারটা বেশ পবিত্র এবং জাইফের সবচেয়ে বড় সুরক্ষিত জায়গা। এখানে তার অনুমতিতে সব হয়। জাইফ আবার বলা শুরু করে,

– আমি জাইফ আহরার ইজায। জ্বীনরাজ্যের বাদশাহ সুলায়মান এবং তার স্ত্রীর একমাত্র সন্তান। আমি যখন ৫মাসের ছোট শিশু ছিলাম তখনই হঠাৎ আমাদের রাজ্যে এক বিপর্যয় চলে আসে। ইফ্রিত জ্বীনরা জানতে পারে আমি অঢেল শক্তির অধিকারী হবো। সেই সুবোধে যদি তারা আমায় তাদের শয়তানের কাছে বলি দিতে পারে তাহলে তারা আরও হাজারগুণ শক্তিশালী হয়ে যাবে। তার উপর ছিলো ওয়ারদূন আসরার। বলা যায় এক ঢিলে দুই পাখি মারতেই তারা আমাদের রাজ্য আক্রমণ করে। সে কি এক লোমহর্ষক যুদ্ধ ছিলো। শেষে আমার দাদীমা রাজমাতা ফিরোজি আমাকে একটা হিন্দু পরিবারের সন্তানকে বদল করে আমাকে তার জায়গায় দিয়ে দেয়। সেই সন্তানটা আইসিউতে জীবনের সাথে পাঙ্গা লড়ছিলো তাই কেউ-ই তার চিকিৎসা চলাকালীন তাকে দেখতে পায়নি। আমার দাদীমা সেই সুযোগটাই নিলো। সেই সন্তানকে দাদীমা সম্পূর্ণ সুস্থ করে দেয় এবং এক বিশ্বস্ত সহকারীর মাধ্যমে সে ছেলেটাকে আরেক পরিবারে পাঠিয়ে দেয়। বাকি ছিলো ওয়ারদূন আসরার। ওয়ারদূন আসরারকে ঠিক কোথায় লুকিয়ে রেখেছিলো সেটা আমি জানিনা তবে এইটুকু শুনেছি ওয়ারদূন আসরার নিজেকে খুব শক্তভানে গুটিয়ে নিয়েছিলো। আস্তে আস্তে আমি বড় হতে লাগি সেই হিন্দু পরিবারে। ও হ্যাঁ আরেকটা কথা। আমার এক চাচা ছিলো দাদুর বন্ধু। সেই সুবাধে দাদুকে সে জানিয়েছে আমি মুসলিম ঘরের ছেলে এবং অনেকটা বিপদে পরেই আমাকে অদলবদল করেছে এরকম ভাবে ভেঙে বলে। দাদু তাকে জানায় যেনো সে নিশ্চিন্তে থাকে সে বেচে থাকতে আমার গায়ে কোনো আচ লাগতে দিবে না। আমি যখন ১০ বছর বয়সী হই তখন থেকে অদ্ভুর অদ্ভুত স্বপ্ন দেখতে শুরু করি। বলা যায় সেই স্বপ্নগুলোর মাঝেই আমি আমার পরিচয়, শক্তি সব সম্পর্কে জানতে পারি। শুনতে অদ্ভুত লাহছে তাইনা? তবে এটাই সত্যি। স্বপ্নের মাঝেই সবার সম্পর্কে অনেককিছু জানতে পারতাম। এভাবে আমি তোমার সাথে বিয়ের হওয়ার আগ পর্যন্ত তেমন কিছুই হয়নি। তোমার বিয়েতে এটেন্ড করার আগেই কোনো এক বিশেষ কারণে আমার পরিচয়, শক্তি স্মৃতি থেকে মুছে যায়। কিন্তু আমার নতুন স্মৃতিতেও আমি আমার প্যারানরমাল প্রব্লেম ফেস করতাম।তোমার সাথে খুবই অদ্ভুতভাবে আমার বিয়ে সম্পূর্ণ হয়। আস্তে আস্তে তোমায় ভালোবেসে ফেলি কি করে আমি জানিনা। আর সেদিন ঘুমের মাঝে হঠাৎ-ই আমায় ওয়ারদূন আসরার আমার স্মৃতি ফিরিয়ে দেয় এবং বলে যেনো আমি তাকে নিজের হাতে নিয়ে আসি নইলে খুব বড় বিপদ হয়ে যাবে। তখনই আমি আমার শক্তি দ্বারা ওয়ারদূন আসরারকে নিজের কাছে নিয়ে আসি। তখনই তোমার বিপদ হয় এবং আমি তোমায় গিয়ে রক্ষা করি এমন কি তোমার ভাই কে যে বা যারা মেরেছে তাদেরও আমি সেই রাতে শেষ করে দেই চিরতরে।(চোখ মুখ গরম করে)

যীনাত চমকে জাইফের দিকে তাকায় তারপর কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,”আ…আমার ভাভাই!!”

– হুম তোমার ভাইকে ইফ্রিতদের সর্দারের এক দূতই তাকে হত্যা করে।

যীনাত ছলছল চোখে জাইফের দিকে তাকালো। তার প্রিয় ভাইটার কথা যে বড্ড মনে পরছে সাথে তার পুরো পরিবারকে। জাইফ যীনাতের চোখ মুছে দিয়ে বলে,”এভাবে কেঁদো না সবটাই যে আল্লাহ’র ইচ্ছা। আর তোমার পরিবারকে যেদিন বোম ব্লাস্ট করে মারা হয় সেদিন তুমিও সাথে মরতে যদি না ওয়ারদূন আসরার তোমাকে বাহিরে নিয়ে আসতো।”

যীনাতের বিস্ময়ের সাথে জাইফের দিকে তাকিয়ে বলে,”মানে?”

– তোমার নিশ্চয়ই মনে আছে তুমি যখন সদর দরজার কাছে এসেছিলে তখন একটা ফুটফুটে বাচ্চাকে দেখেছিলে?

– হ্যাঁ তো?

– সেটা আর কেউ না ওয়ারদূন আসরার ছিলো। ওয়ারদূন আসরার এর পাওয়ার অনেক অনেক বেশি যা আমাদের ধারণার বাইরে।তাইতো এটা আমাদের রাজ্যের অমূল্য সম্পদ এবং তাকে সুরক্ষার সাথে রাখতে হয়।

যীনাত অবাক হয়ে জাইফের দিকে তাকালো। তার মানে সেদিন যদি ওয়ারদূন আসরার না আসতো তাহলে সেও…. সত্যি আল্লাহ চাইলে কি না করতে পারে কিন্তু যীনাত যে নিজের পরিবারকে হারিয়ে ফেলেছে চিরতরে৷ হঠাৎ তার সাপটার কথা মনে পড়ে যায়। যীনাত উৎসুক হয়ে জিজ্ঞেস করে,”আচ্ছা সাপটা কে? কেন আমাকে সবসময় সে সাহায্য করে?”

জাইফ মুচকি হেসে বলে,”ওটা আমারই পোষা জ্বীন নূরা’স। আমি চলে আসার পর সর্দার তাকে অনেক কুৎসিত করে দেয় তাদের জাদু দিয়ে৷ সে ভয়ে আমার ধারে কাছে আসতো না যদি আমি তাকে ভুল বুঝে মেরে ফেলি তাই। কিন্তু অদ্ভুত বিষয় কি জানো। সে নাকি তোমাকে আর আমাকে একসাথে পেতেই যখন চলে যেতে নিতো এমন সময়ই অদ্ভুত কারণে সে আবার আগের মতো রূপসী হয়ে যায়। আর যখন থেকে তোমার হাতে ওয়ারদূন আসরার ছিলো তখন থেকেই সে তোমায় দূর থেকে হেফাজত করতো। তার সবচেয়ে বড় কাজ তোমার কষ্টগুলো ভুলিয়ে দেয়া। যখন তুমি তোমার পরিবার হারিয়েছো তখন থেকেই সে তোমার কষ্টগুলো বিষের মতো শুষে নিতে থাকতো তাই তোমার নিজেকে হালকা লাগতো। আর সেদিন যখন তুমি তাকে দেখলা তখন তোমার মাথায় তার মণিটা ঢুকানোর পর….

-(থামিয়ে দিয়ে) মণি মানে?

জাইফ তখনই যীনাতের মাথা থেকে বের করে নিজের হাতে রাখলো। যীনাত অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে মনিটার দিকে। আল্লাহ জানে আর কতো তার জন্য চমক রয়েছে, এগুলোই যে সে হজম করতে পারছে না। মনিটা সত্যি-ই দারুণ। জাইফ মনিটা আবার যীনাতের মাথায় ঢুকিয়ে দেয়। এতে যীনাতের মাথা কেমন চক্কর দিলেও যীনাত নিজেকে সামলে নেয়। জাইফ আবার বলা শুরু করে,”মনিটা ঢুকানোর ফলে তোমার আগের জমানো কষ্টগুলো আবার ঝেকে বসে তোমার মনে তাই তুমি সেইরকম ভাবে ভেঙে পড়েছিলে। কিন্তু দেখো এখন সব ঠিক আছা আলহামদুলিল্লাহ।”

– আচ্ছা আমার সাথে এমন প্যারানরমাল ঘটনা কেন ঘটছে আমি যে সামান্য একজন মানুষ।

– হ্যাঁ তুমি মানুষ কিন্তু তুমি মন থেকে আল্লাহ বিশ্বাসী, ইমানদার, সৎ এবং ঠান্ডা স্বভাবের৷ যা ফলে একমাত্র বিশ্বাসী হিসেবে ওয়ারদূন আসরার তোমায় বেছে নিয়েছিলো তাইতো তোমার গোলাপ ফুলের টবে কোনো এক গোলাপের মাঝে নিজেকে গুটিয়ে রেখেছিলো এবং সময় বুঝে তোমার সাথে বন্ধুত্বও করে নিয়েছিলো।

– আপনি তো দেখছি সব জানেন।

জাইফ শুধু মুচকি হাসলো তারপর বলে,”তোমার পেটে কি আর কোনো প্রশ্ন আছে?”

– হুম আছে।

– তো বলে ফেলুন ম্যাডাম আমি আপনার উত্তর দেয়ার অপেক্ষায় রইলাম।

– দাদু কি জানে আপনি একজন জ্বীন।

– নাহ কেউ জানেনা একমাত্র তুমি ছাড়া। এখন কি আমায় ছেড়ে চলে যাবে আমার পরিচয় জেনে?(মলিন সুরে)

যীনাত মুচকি হাসি দিয়ে জাইফকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে,”কখনোই না এমন একজন হৃদয়হরণ রাজকুমারকে ছাড়া যে আমার জীবন্টাই বৃথা। যার জন্য এতো এতো লড়াই করলাম তাকে ছেড়ে দেয়ার জন্য এতোটা পথ লড়াই করেছি নাকি? যদি আপনি নামক জীবনসঙ্গী টা না থাকতো তাহলে আমি সেই কবেই তো পরাপারে চলে যেতাম।”

জাইফ একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে যীনাতকে নিজের সাথে আরও শক্ত ভাবে জড়িয়ে ধরে বলে,”তাহলে ভালোবাসো আমায়?”

– নিজের থেকেও বেশি।

জাইফ চোখের পলকে যীনাতকে বুকে নিয়েই যীনাতের রুমে এসে পৌঁছালো। কমলা দেবী জাইফের রুমেই যাচ্ছিলো হঠাৎ কি মনে করে যেনো যীনাতের রুমে উঁকি দিলো। দুর্ভাগ্যবশত যীনাতের রুমের দরজা খোলা ছিলো। উঁকি দিয়ে জাইফ আর যীনাতকে একসাথে দেখে কমলা দেবীর চোখ চড়কগাছ। সে দ্রুত দরজা মেলে ঘরে ঢুকে জাইফ যীনাতকে আলাদা করে যীনাতের গালে জোরে চড় বসিয়ে দিলো।

———————————-

ওয়ারদূন আসরার অতিরিক্ত অংশ

0

#ওয়ারদূন_আসরার
#লাবিবা_ওয়াহিদ
|| অতিরিক্ত অংশ ||

তিশানা বারবার যীনাতকে কল করছে কিন্তু যীনাতকে ফোনে পাচ্ছে না। তিশানা তো কেঁদেই চলেছে আর আনুস্কা তিশানাকে সামলানোর চেষ্টা করছে।

– আমি কিভাবে শান্ত হবো বৌদি বলতে পারো? নানাদুকে কথা দিয়েছি যীনাতকে চোখে চোখে রাখবো এখন যীনাতকেই তো হারিয়ে ফেললাম।(কাঁদতে কাঁদতে)

– আমি তো বুঝতে পারছি তিশানা কিন্তু এভাবে কাঁদলে চলে বলো ঠান্ডা মাথায় তো যীনাতকে খুঁজতে হবে নাকি?

তিশানার কানে যেনো কোনো কথাই যাচ্ছে না। সে ডুকরে কেঁদে উঠলো। এমন সময়ই একপ্রকার দৌড়ে জাইফ তাদের কাছে এলো এবং হাপাতে হাপাতে বলে,”যী.. যীনাত কোথায়?”

জাইফের কথায় আরও কান্নায় ভেঙে পড়ে তিশানা। এভাবে তিশানাকে কাঁদতে দেখে জাইফ ধমকের সুরে বলে,”থামা তো কান্নাকাটি যা জিজ্ঞেস করেছি তার উত্তর দে যীনাত কিভাবে নিখোঁজ হলো?”

জাইফের ধমক খেয়ে তিশানা ভয়ে চুপসে গেলো তারপর ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বলে,”আমি আর বৌদি সামনে এগোচ্ছিলাম আর যীনাত পিছে ছিলো। যীনাতের কথা মনে হতে যেই পিছে ফিরে যীনাতকে ডাকবো ওমনি দেখি যীনাত নেই। এর বেশি আমি কিচ্ছু জানিনা!”

জাইফের মনে একটা ভয় নাড়া দিলো। তবুও নিজেকে সামলে উত্তর দেয়,”ঠিক আছে আমি ওকে খুঁজে নিয়ে আসছি তুই আর বৌদি ওই রেস্টুরেন্টে গিয়ে বস আর হ্যাঁ বাড়ির কেউ যেনো কিছু না জানে।”

বলেই জাইফ আর এক মুহুর্ত দেরি না করে সেখান থেকে চলে গেলো। কিন্তু যীনাতকে সে কই খুঁজবে?

যীনাতকে টানতে টানতে এক গভীর জঙ্গলে নিয়ে আসে কিশোর। যীনাত এক হাতে নিজের মুখের বাধন খোলার চেষ্টা করছে কিন্তু এতো জোরে গিট্টু দিয়েছে এক হাত দিয়ে খুলতে পারছে না চেঁচাতেও পারছে না। যীনাতের বাম হাত দিয়ে ডান হাত কিশোরের হাত থেকে বৃথা চেষ্টা করে যাচ্ছে। কিশোর যীনাতকে একটা ভাঙ্গা খড়কুটোর ঘরে এনে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় আর যীনাত তাল সামলাতে না পেরে কাঁদামাটির মেঝেতে হুঁমড়ি খেয়ে পড়ে। কিশোর যীনাতের কাছে দুই হাটু গেড়ে বসে পাগলের মতো হেসে হেসে বলে,”কি যীনাত বলেছিলাম না তোকে যখন আমার হাতে পরবি তখন তোকে আমার হাত থেকে কেউ বাচাতে পারবে না কথাটা মিলেছে তো?”

যীনাত নিজের এক পা দিয়ে কিশোরকে লাথি দিতে গেলেই কিশোর যীনাতের পা ধরে ফেলে তারপর একটা শয়তানি হাসি দিয়ে বলে,”হাত পা একটু বেশি-ই চলে তোর তাইনা?”

বলেই যীনাতের পায়ে খুব জোরে মোচড়ে দিলো। মুখ বাধা থাকায় চিল্লিয়ে উঠতে পারলো না। তার এই আর্তনাদ চাপাই হয়ে গেলো। যন্ত্রণায় শুধু কাঁতরাচ্ছে যীনাত। আর চোখ দিয়ে অনবরত জল গড়িয়ে পড়ছে। কিশোর উঠে তার গায়ে থাকা ময়লা পোশাক টা খুলে এক পা এক পা করে যীনাতের দিকে এগোতে থাকে। যীনাত সেই অবস্থাতেই দু’হাতে ভর করে পেছোচ্ছে। কিশোর অট্টহাসি দিয়ে বলে,”আজ তোকে আমার হাত থেকে কেউ বাচাতে পারবে না যীনাত। আজ তোকে আমি খুবলে খাবো!”

বলেই যেই যীনাতকে ধরতে যাবে ওমনি কিশোর ছিটকে পড়ে। যীনাত তখন চোখমুখ খিচে ছিলো। সব নিরব দেখে যীনাত পিটপিট করে চোখ খুলে কিশোর থেমে কেন গেলো। দূরে তাকিয়ে দেখলো জাইফ আর কিশোরের মাঝে ধস্তাধস্তি চলছে। জাইফকে দূরে ধাক্কা দিতেই জাইফ কিছুটা ছিটকে দূরে চলে যায়। কিশোর তৎক্ষনাৎ নিজের আসল রূপে ফিরে। কিশোরের আসল রূপ দেখে যীনাত যেই জ্ঞান হারাবে তখনই নূরা’স যীনাতের পিছে দিয়ে এসে যীনাতকে নিজের লেজ দিয়ে পেচিয়ে নেয়। এতে যীনাতের কষ্ট, ভয়, খারাপ লাগা সব যেনো চলে যেতে থাকে। যীনাত আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হয়। কিশোরের চেহারা কুচকুচে কালো একদম পোড়া মাংসের মতো। তার তার চোখ দিয়ে অনবরত গলগল করে সাদা সাদা ফ্যানা বেরোচ্ছে। আর পুরো শরীরে ময়লা কালো কুচকুচে পশমে ভরা। তা দেখে কোনো সাধারণ মানুষ নিজেকে সামলে রাখতে পারতো না। যীনাতের পাশে নূরা’স থাকায় তার ভয়গুলো চলে যায় তবুও বারবার শুকনো ঢোক গিলছে যীনাত। জাইফ এবার শূন্যে উঠে যায় এবং সে নিজেও নিজের আসল রূপে ফিরে আসে। কিশোরের যেমন কুৎসিত রূপ জাইফ তার বিপরীত। জাইফের সৌন্দর্য আরও চারগুণ প্রকাশ পেলো তার আসল রূপে। জাইফের সৌন্দর্যের ঝলকে অন্ধকার কুড়েঘরটা যেনো পবিত্র আলোয় ঘরটা খা খা করছে। জাইফের মাথায় এক অন্যরকম সুন্দর মুকুট যেটার সৌন্দর্য প্রকাশ করার কোনো ভাষা নেই। মুকুটটি দেখে কিশোর হেসে বলে,”ওও তাহলে তুই-ই রাজকুমার? যাক ভালোই হয়েছে এখন দেখ কিভাবে তোর বিনাস আমার হাতে হয়!”

জাইফের এমন রূপ আর কান্ড দেখে যীনাত এমনেই অবাক হয়েছিলো তারপর যখন শুনলো জাইফই রাজকুমার তখন তো অবাকের চরম পর্যায়ে চলে যায় যীনাত। এর মানে এতোদিন ওয়ারদূন আসরার যেই রাজকুমারের খোঁজে ছিলো সেটা আর কেউ না যীনাতেরই জীবনসঙ্গিনী জাইফ!! যীনাত হা করে জাইফের দকে তাকিয়ে রয়।

জাইফ ভিলেনি একটা হাসি দিয়ে বলে,”হ্যাঁ ঠিক ধরেছিস আমি-ই রাজকুমার এখন কে কার হাতে বিনাস হবে সেটা না হয় সময় বলবে? আর তুই আমার কলিজার উপর এতোদিন অনেক অত্যাচার করেছিস, তুই আমার যীনাতকে যতোটা না আঘাত করেছিস তার প্রতিটা আঘাত তোকে দ্বিগুণে গুণে গুণে দিবো।”

বলেই জাইফ কিছু ফুল কিশোরের দিকে ছুড়ে মারে। কিশোর অট্টহাসি দিয়ে বলে,”হাহাহাবতুই তো দেখছি আমাকে ফুল দিয়ে স্বাগতম করছিস আবার বলিস আমায় আঘাত করবি হা হা হায়ায়ায়া!”

জাইফ মুচকি হেসে বলে,”আগে আগে দেখ কি হয়!”

কিশোর তখনো হেসে চলছিলো হঠাৎ তার মনে হলো তার শরীরের কিছু কিছু অংশ ঝলসে যাচ্ছে। কিশোর তৎক্ষনাৎ হাসি থামিয়ে নিকের দিকে তাকালো এবং দেখলো তার শরীরে যেসব জায়গায় ফুল ঘেষে চলে গেছে সেসব জায়গা ভয়ংকর ঘায়ে পরিণত হয়েছে তার যন্ত্রণা মৃত্যুযন্ত্রণার থেকে ভয়ংকর! কিশোর সাথে সাথে ভয়ংকর প্রাণির ন্যয় আর্তনাদ দেয়। যীনাত ভয়ে গুটিশুটি হয়ে সাপটাকে জড়িয়ে ধরেছে। প্রায় কিছুক্ষণ কিশোর সেই জ্বালা সহ্য করলো কিন্তু এতে জাইফের মন ভরলো না তাই সে বিজলির শক খাওয়ালো কিশোরকে। বিজলির শক খাওয়ায় কিশোর নিজের বাকশক্তি হারিয়েছে। সে মেঝেতে পড়ে পানি ছাড়া মাছের মতো কাতরাচ্ছে। জাইফ নিজের ডান হাত উঁচু করতেই ওয়ারদূন আসরার তার হাতে আসলো। যীনাত অবাক হয়ে তাকালো ওয়ারদূন আসরারের দিকে। ওয়ারদূন আসরার তখনই জাইফের হাত থেকে নেমে এক ভয়ংকর বিশাল প্রাণীতে পরিণত হলো এবং লোমহর্ষক গর্জন দিয়ে উঠে। এতো বড় প্রাণী দেখে কিশোরের যায় যায় অবস্থা। ওয়ারদূন আসরার কিশোরকে হা করে মুখে পুড়ে নিলো তারপর আচ্ছাশিড় চিবুতে থাকে। অনেকক্ষণ চিবিয়ে থু থু ফেলার মতো করে সে কিশোরকে ফেলে দেয়। তখন কিশোরের অবস্থা অনেকটা খারাপ। ওয়ারদূন আসরার বলে,”তোদের মতো শয়তানকে আমি খেয়ে হজম করিনা। তোদের কে তো আমার ভয়ংকর আগুনে মরতে দেখতে পছন্দ করি!”

বলেই ওয়ারদূন আসরার বড় বড় আগুনের গোলা কিশোরের উপর ফেললো। কিশোর চিল্লিয়ে উঠলো আর মুহূর্তেই পুড়ে ছাই হয়ে গেলো। জাইফ শূন্য থেকে মাটিতে পা রাখলো এবং নিজের আসল রূপ ছেড়ে নরমাল রূপে আসলো এবং একপ্রকার ছুটে যীনাতের কাছে এলো। ওয়ারদূন আসরারও নিজের আগের রূপে ফিরে উড়ে উড়ে যীনাতের কাছে আসলো। যীনাতের পা এমন ভাবে মোচকে দিয়েছে শয়তান টায় যে যীনাত নড়তে অব্দি পারছে না শুধু ছলছল চোখে সবাইকে দেখছে। ওয়ারদূন আসরার জাইফকে বললো যেনো একটা পাত্রে পানি নিয়ে আসে। ওয়ারদূন আসরারের কথা অনুযায়ী জাইফ বাতাসের গতিতে গিয়ে চোখের পলকে ফিরে আসে পাত্রে পানি নিয়ে। ওয়ারদূন আসরার নিজের গা থেকে একটা পাঁপড়ি আলাদা করে সেই পানিটাতে রেখে পানিতে মিশিয়ে দেয় তারপর বলে,”যীনাত এই পানীয় টা খাও।”

জাইফ যীনাতকে সযত্নে পানীয়টা খাইয়ে দেয়। মুহূর্তেই যীনাত নিজের সেই পা নড়াচড়া করতে পারলো এর মানে ব্যথা সেরে গেছে। যীনাত তখনই ওয়ারদূন আসরারকে দু’হাতে নিয়ে কেঁদে উঠে।

– আপনি কোথায় চলে গিয়েছিলেন ওয়ারদূন আসরার? জানেনা আপনার জন্য কতোটা চিন্তা হচ্ছিলো? কেন আমাকে একবারের জন্যেও দেখা দিলেন না কেন হুট করে চলে গিয়েছিলেন? যখন থেকে আমার স্মৃতি ফিরেছে আমি আপনাকে অগণিত স্মরণ করেছি কেন আপনি কোনোরকম সাড়া দিলেন না বলুন?

ওয়ারদূন আসরার কোনো জবাব দিলো না। জাইফ ওয়ারদূন আসরারকে যীনাতের হাত থেকে ছাড়িয়ে আবার ওয়ারদূন আসরারকে নিজের ডান হাতে নিয়ে হাত মুঠিবদ্ধ করে ফেলে এবং ওয়ারদূন আসরার অদৃশ্য হয়ে যায়। জাইফ যীনাতকে বুকে আগলে নেয়৷ যীনাতের চোখের সামনে ভেসে উঠতে কিছুক্ষণ আগের সব ঘটনা আর জাইফের মনে পড়ছে যীনাতের তখনকার কথা৷ জাইফ যদি আরেকটু দেরি করতো তাহলে যীনাতকে শয়তানটা কি অবস্থা করতো ভাবতেই জাইফের গায়ে কাটা দিয়ে উঠছে। ভাগ্যিস যীনাতের মাথায় মণিটা ছিলো। সেটার জন্যে নূরা’দের মাধ্যমে যীনাতের অবস্থান পেয়েছিলো। হ্যাঁ যীনাত কখন কোথায় যায় সেটা জানার জন্য যীনাতের মাথায় মণিটা রাখা হয়েছে যীনাতের অজান্তে। এবং কোনো বিপদ হলেও সেই মণির মাধ্যমেই সেই আভাস সবাই পেয়ে যায়। আর মণিটার সুরক্ষিত জায়গা হলো যীনাতের মাথা। এর ফলে কেউ জানতে পারবে না সেই বিশেষ অমূল্য মণিটা কোথায় আছে।

আজকে ওয়ারদূন আসরারই তাকে রক্ষা করলো।

———————————

চলবে!!!

ওয়ারদূন আসরার পর্ব-২১

0

#ওয়ারদূন_আসরার
#লাবিবা_ওয়াহিদ
|| পর্ব – ২১ ||
“জাইফ স্পেশাল”

– হ্যাঁ ঠিক ধরেছিস আমি-ই রাজকুমার। রাজকুমার জাইফ আহরার ইজায!

অবয়কগুলো বড় বড় চোখ করে জাইফের দিকে তাকালো এবং বারবার ঢোক গিলতে থাকে কারণ যে তাদের একই হাতে চারজনের গলা ধরতে পারে সে কতোটা ভয়ানক হতে পারে!

– তোদের সাহস তো কম না তোরা আমার কলিজায় হাত দিতে এসেছিস? তোদের ওই রামছাগল সর্দারের কথায় তাইতো? তোদের সর্দারের এতো সাহস কই থেকে জুটলো?

– দেখ রাজকুমার তুই কিন্তু ভুল করছিস সর্দার তোকে হাতে পেলে আস্ত রাখবে না তাই আমাদের ছেড়ে দে নইলে তোর বিপদ ঘনিয়ে আসবে।

জাইফ তাচ্ছিল্যের সুরে বলে,”তোদের শয়তান পূজারী সর্দার আমার ছায়াও মুড়াতে পারবে না আর তোরা সেই সর্দারের ভয় দেখাচ্ছিস? আর তোদের সর্দার কি করলো না করলো তা ভেবে আমার কোনোরকম মাথা ব্যথা নাই। তোরা যেহেতু আমার আসল পরিচয় জেনেছিস + আমার কলিজায় হাত দেয়ার চেষ্টা করেছিস সেহেতু তোরা আজ এখান থেকে বেচে ফিরবি না।”

বলেই জাইফ চোখ বন্ধ করে বিড়বিড় করে কি জানি পড়লো তারপর হাত দিয়ে অবয়কগুলোর গলা আরও চারগুণ জোরে ধরতেই সবগুলো গোঙানির শব্দে ভৎস্ম হয়ে যায়। পরিবেশ স্বাভাবিক হয়ে গেলো কিন্তু জাইফ এখনো রাগে ফুসতে থাকে। চোখ বন্ধ করে হাত দুটো মুঠিবদ্ধ করে রাগ কান্ট্রোল করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। তারপর চোখ খুলে যীনাতের দিকে তাকালো। যীনাতকে কি মায়াবী লাগছে ঘুমন্ত অবস্থায়। এদিকে রুমের মাঝে এতো কিছু ঘটে গেলো তার কি খেয়াল আছে? থাকবে কি করে সে যে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন! জাইফ যীনাতের ঘরের বেলকনি তে গেলো। দূরে তাকিয়ে একজনকে দেখতে পেলো। সেটা আর কেউ না সেই ৭ মাথাওয়ালা সাপটা। কিন্তু সাপটা এদিকে আসতে পারছে না। জাইফ চোখের পলকেই সেই সাপটার সামনে এসে দাঁড়ালো। সাপটা প্রথমে জাইফকে দেখে অবাক হলেও পরে খুশিতে তাদের চোখমুখ জ্বলজ্বল করে উঠে। জাইফের গালে, মুখে তারা তাদের জিবহা দিয়ে আলিঙ্গন করতে থাকে। সাপগুলার পাগলামি দেখে জাইফ হেসে দেয় এবং বলে,”আরে হয়েছে হয়েছে নূরা’স। আর কতো এমন করবি হুম আমি তো আর হারিয়ে যাচ্ছি না!”

সাপগুলো জাইফের কথায় স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়ায়। এবং আস্তে আস্তে জাইফের সমান হয়। জাইফ সাপগুলোর মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,”ধন্যবাদ তোদের আমার অগোচরে যীনাতের এতোটা খেয়াল রাখার জন্য নূরা’স। তোরা সত্যি-ই আমার অনেক কিছু। কিন্তু তোরা এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?”

সাপগুলো একে অপরের দিকে তাকিয়ে জাইফের দিকে তাকায়। জাইফ তাদের চাহনী বুঝতে পেরে চোখ বন্ধ করে বিড়বিড় করে কিছু একটা পড়লো। তারপর মাঝের সাপটার মাথায় হাত রাখতেই তারা তাদের বাকশক্তি ফিরে পায়। বড় মাথাওয়ালা সাপটা বলে উঠে,”বাড়িটায় হিন্দু জ্বীনরা বসবাসরত রয়েছে তারা আমাকে ঢুকতে দিচ্ছে না তাই এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে বাধ্য হয়েছি।”

জাইফ খুব সূক্ষ্মভাবে বাড়ির দিকে তাকায়। হ্যাঁ কিছু জ্বীন আছে সেখানে। জাইফ চোখের পলক ফেলতেই তারা চলে গেলো। তারা চলে যেতেই রাস্তা ফাঁকা হয়ে যায়। জাইফ বলে,”এখন থেকে এবাড়িতে ঢুকতে কেউ বাধা দিলে বলে দিবে তুমি ‘রাজকুমারের পোষা প্রাণী।”

সাপগুলো মাথা নাড়ালো তারপর বলে,”আচ্ছা কুমার আপনার কি সব মনে পরেছে?”

জাইফ মুচকি হেসে মাথা নাড়ায় তারপর গম্ভীর হয়ে বলে,”আমাদের এখানে একসাথে থাকাটা ঠিক নয় তুমি জায়গাটা প্রস্থান করো কেউ যদি দেখে ফেলে সমস্যা সৃষ্টি হবে। আর হ্যাঁ আমি-ই যে রাজকুমার এটা আরও কিছুদিন লুকিয়ে রাখতে হবে।”

সাপটি মাথা নাড়িয়ে সেখান থেকে চলে গেলো। জাইফ আবারও চোখের পলকের যীনাতের রুমে এসে প্রবেশ করে। যীনাত তখনও ঘুমোচ্ছে। জাইফ এই সুযোগে আস্তে ধীরে যীনাতের মাথার কাছে গিয়ে বসে এবং যীনাতের মাথায় স্বাভাবিকভাবে হাত বুলাতে থাকে। হাত বুলাতে বুলাতেই যীনাতের মাথা থেকে সেই মণিটা বেরিয়ে জাইফের সামনে আসলো। জাইফ প্রথমে অবাক হলেও পরে পুরো রুমটা এমন মায়া করে যাতে জাইফের অনুমতি ছাড়া দ্বিতীয় কেউ এই ঘরে প্রবেশ করতে পারবে না, দেখতেও পারবে না রুমে কি হচ্ছে এমনকি শুনতেও পাবে না। জাইফ মণিটা নিয়ে মেঝেতে বসলো আর মনিটা জাইফের সামনে শূন্যে ভেসে আছে। জাইফ আবার বিড়বিড় করে কিছু পড়তেই মণিটাতে কিছু স্পষ্ট দেখতে পেলো। সেটায় দেখা যাচ্ছে এক যুবতীকে। সেই যুবতী আর কেউ নয় যীনাত। যীনাতের পুরো অতীত জাইফ ঘেটে ঘেটে মণিটাতে দেখতে পেলো। ওয়ারদূন আসরার যীনাতের কাছে ছিলো দেখতেই অবাক হয়ে গেলো জাইফ। এই জন্যই তাহলে শয়তানগুলা যীনাতকে নিয়ে এমন উঠেপড়ে লেগেছিলো? জাইফ ফুয়াদের সেই দুর্ঘটনা এবং যীনাতের আগের বিয়ের রাতের সবটা দেখতে শুরু করে।

যীনাত যখন নিজের রুমে সাজছিলো তখন জানালার কার্নিশে ভর করে কেউ একজন তাকে মুগ্ধতার মাখে দেখছিলো। আর সেটা ছিলো সর্দারের এক দূত। ফুয়াদ বাগানে কিছু কাজে গিয়েছিলো তখন যীনাতের জানালার কাছে কারো ছায়া দেখতেই চেঁচিয়ে বলে,”কে? কে ওখানে?”

ফুয়াদের কথায় অবয়কটার মনোযোগ ভাঙে সাথে তার রাগ মাথায় চড়ে বসে। এতোটাই রেগে যায় যে ছাদের রেলিং এর এক অংশ দুইহাত দিয়ে ভেঙে ফেলে যা দেখে ফুয়াদ ভয়ে থরথর করে কেঁপে উঠে। সে বুঝে যায় এটা কোনো মানুষ নয়। ভয়ে যেই পালাতে নিবে ওমন সময়ই সেই বড় সিমেন্টের স্থাপনাটা ফুয়াদের মাথা বরাবর ছুড়ে মারে আর সেখান থেকে চলে যায় এবং ফুয়াদ ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করে।

যীনাতের হবু স্বামী মাহিন বন্ধুদের সাথে ঠাট্টা মজা করতে করতে যাচ্ছিলো যীনাতের বাসার দিকে, এমন সময়ই যে ড্রাইভার মানে মাহিনের বন্ধু ছিলো সে বলে উঠে,”ভাই বাড়ির ব্রেক করতে পারছি না!”

– মানে কি?

– হ্যাঁ ভাই অটোমেটিক কি করে যেনো স্পিড বেড়ে যাচ্ছে।

মাহিন বন্ধুকে সরিয়ে স্পিডওয়াচে দেখে হ্যাঁ সত্যি! ৯৫, ১২০, ১৫০ এ চলে গিয়েছে। সকলে ভয় পেয়ে যায় এবং তাড়াতাড়ি ব্রেক করার চেষ্টা করে। এতোই চেষ্টা করলো যে ব্রেক করার টপ টা হাতে চলে আসে। শেষে উপায় না পেয়ে সবাই আল্লাহকে ডাকতে থাকে কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না। একটা বড় দেয়ালের সাথে গাড়িটা ধাক্কা খেয়ে সবটা দুমড়ে মুচড়ে যায়।

জাইফ শান্ত দৃষ্টিতে সবটা দেখলো। তারপর ফুয়াদকে যে মেরেছে তাকে চোখ বন্ধ করে খুঁজতে থাকে এবং পেয়েও যায়। সাথে সাথে জাইফের চোখদুটো আগুনে রূপ ধারণ করে। জাইফ অদৃশ্য হয়ে বাতাসের সাথে মিলিয়ে গেলো। কিছুক্ষণ পর ফিরেও আসলো এবং একটা ঢোকর দিলো। তারপর মণিটা যীনাতের মাথায় খুবই সাবধানে ঢুকিয়ে নিজের ঘরে চলে যায়। ঘরে গিয়ে ওযু সেরে কুরআন তিলওয়াত করতে বসলো। জাইফের কন্ঠে কুরআন তিলওয়াত এতো মধুময়ভাবে ধ্বনি হচ্ছে যে কুরআন তিলওয়াত যীনাত ঘুমন্ত অবস্থায় শুনলো এবং ঘুমের ঘোরে ঠোঁটে হাসি ফুটালো। আযান পর্যন্ত জাইফ কুরআন তিলওয়াত করলো তারপর যীনাতকে গিয়ে ডেকে তুললো নামাজ পড়ার জন্য এবং নিজের রুমে চলে গেলো। যীনাত হা হয়ে শুধু দেখলো জাইফ এই সময়ে উঠেছে??
তারপর বেশি কিছু না ভেবে ওযু করতে চলে যায়। জাইফ অদৃশ্য হয়ে মসজিদে গিয়ে নামাজ আদায় করে। অনেকদিন পর মসজিদে নামাজ পড়ে জাইফ আলাদা তৃপ্তি পাচ্ছে। যীনাত নামাজ শেষে জাইফের রুমে আঁকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করলো জাইফ কি করছে জানার জন্য কিন্তু জাইফ যে রুমেই নেই। যীনাত আরেকদফা অবাক হলো। হঠাৎ পেছন থেকে কেউ বলে উঠে,”কাকে খুঁজছো?”

যীনাত ধড়ফড় করে পিছে ফিরে দাঁড়ায় এবং জাইফকে দেখে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। জাইফ ভ্রু কুচকে বলে,”এতো লাফালাফির কি আছে মনে হচ্ছে যেনো চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়েছো!”

যীনাত চোখ গরম করে বলে,”কি বললেন?”

– কিছু না। আমার রুমে এভাবে উঁকি দিচ্ছো কেন হুম? আবার মনে মনে কি মতলব আঁটছ?

– কককই কিসের মতলব আমি তো জাস্ট দেখতে চাইছিলাম আপনি কি করেন কিন্তু আপনি তো এখানে। আচ্ছা কোথায় গিয়েছিলেন?

– মসজিদে নামাজ পড়তে গেছিলাম।

যীনাত চোখ বড় বড় করে বলে,”মামানে? কেউ দেখলে….”

-(বলতে না দিয়ে) আরে কেউ দেখেনি নিশ্চিন্তে থাকো এখন শুনো।

– হুম।

– হাটতে বের হবা? ভোরে আমাদের পেছন দিকের সরু পথটায় হাটতে অনেক ভালো লাগে।

যীনাত যেই “হ্যাঁ” বলবে ওমনি তার সেইদিনের কিশোরের পাগলামির কথা মনে পরে যায়। আবার যদি কিশোর যীনাতকে তাড়া করে, তখন তো আর রক্ষা নেই। সেই ভেবেই যীনাতের গায়ে ভয়ে কাটা দিয়ে উঠলো। যীনাত কিছুটা অস্বস্তি নিয়ে বলে,”আমার খারাপ লাগছে তাই যাবো না আপনি যান।”

জাইফ যেনো কিছু একটা আঁচ করতে পারলো তারপর নিজের রুমে চলে গেলো কিছু না বলে। যীনাত জাইফের যাওয়ার দকে তাকিয়ে ভাবতে লাগে,”আচ্ছা উনি কি রাগ করলো?”

এভাবে বেশ কিছুদিন কেটে যায়। জাইফ যীনাতের সাথে দেখা করা তো দূর কথা অব্দি বলেনা। এতে যীনাত অনেকটাই কষ্টে সময় পার করছে। বারবার নিজের নির্লজ্জ মন জাইফের কাছে ছুটে যাওয়ার তাড়া দিচ্ছে কিন্তু কোনো এক সংকোচবোধ থেকে যেতে পারে না। যীনাতকে মনমরা থাকতে দেখে আনুস্কা বলে,”কিগো যীনাত এভাবে মুখ ভার করে আছো কেন?”

– তেমন কিছু না দি বাদ দাও।

– নাহ কিছু তো একটা হয়েছে বলো বলো কি হয়েছে।

যীনাতকে কয়েকবার জোর করেও আনুস্কা যীনাতের মুখ থেকে একটা শব্দ পর্যন্ত জানতে পারলো না। ভাঙবে তবুও মচকাবে না এমনটাই যীনাত। আনুস্কা শেষে নিরাশ হলো।

জাইফ সেই নদীর ধারে আসলো এবং সেখানে বসে কিছু একটা বিড়বিড় করে পড়লো আর সাথে সাথে তার সামনে ইয়ায়া বড় চতুর্ভুজ আকৃতি মেঘ শূন্যে ভেসে উঠলো আর সেটায় মৃদু মৃদু কিছু প্রতিবিম্ব ভেসে উঠে। সেসব প্রতিবিম্বে একজন মহিলা আর একজন পুরুষ। তারা নড়াচড়া করছে। মহিলাটা জাইফকে দেখে চোখের বাধ আটকাতে অক্ষম হলো। কাঁপা কাঁপা খুবই মমতার সুরে বলে উঠে,”জাজাজাইফ পুত্র আমার!”

জাইফ হেসে মাথা নাড়িয়ে সালাম দেয় এবং তারা সালামের উত্তর নেয়। তারপর জাইফ বলে,”হ্যাঁ আম্মাজান তোমার পুত্র যে সেই ছোটবেলায় কোনো এক অজানায় হারিয়ে গেছিলো।”

এবার মহিলার পাশে থাকা পুরুষটাও হু হু করে কেঁদে উঠে এবং বলে,”পুত্র আমাদের ক্ষমা করে দিস। আমরা চাইনি তোর সাথে এতো বড় অন্যায় করতে। কিন্তু কি বলবো বল সবাই যে আমরা পরিস্থিতির স্বীকার ছিলাম। তুই-ই বল বাবা কোন বাবা-মা নিজের সন্তানের বিচ্ছেদ সহ্য করতে পারে?”

– না আব্বাজান এখানে তোমাদের কোনো দোষ ছিলো না। আমি সবটা জানি আব্বাজান তাই তোমরা আমার কাছে ক্ষমা চেয়ে আমার কাছে নিজেকে ছোট করে দিও না। পরিস্থিতি কখন ঠিক কোন পর্যায়ে চলে যায় সেটা একমাত্র আল্লাহ ভালো জানে।

– হ্যাঁ পুত্র ঠিক বলেছিস। দেখেছি হাজেরা আমাদের পুত্র কতোটা বড় এবং কতোটা বুদ্ধিমান ন্যায় পরায়ণ হয়েছে।

বাবা-মা জাইফকে প্রাণ ভরে দেখছে আর জাইফ নিজের বাবা- মাকে। এ যেনো এক আনন্দের মিলন পরিবারের। প্রকৃতিও যেনো আজ তাদের আনন্দ অনুভব করছে। চারপাশে সো সো বাতাস বইছে। আর সেই বাতাসের সাথে তাল মিলিয়ে নদী সমান তালে স্রোতের মাঝে নেচে চলেছে। অনেকক্ষণ নিরবতা বিরাজ করলো তাদের মাঝে। নিরবতা ভেঙে বাদশা(জাইফের বাবা) বলে উঠলেন,”পুত্র ওয়ারদূন আসরার কোথায়? সে সুরক্ষিত তো? মনে রেখো এই ওয়ারদূন আসরার শয়তানদের হাতে পরলে অনেক বড় বিপদ ঘটে যাবে।”

জাইফ মুচকি হেসে নিজের হাত উঁচুতে নিতে তার হাতে চলে আসে এক অপরূপ সুন্দর গোলাপ। যে গোলাপের কাছে পৃথিবীর সব গোলাপ হার মানাবে এতোটাই তার সৌন্দর্য। গোলাপের মাঝে থেকে এক আলোকরশ্মি চারপাশে উচছে পড়ছে তা দেখে যেনো প্রকৃতিও মুগ্ধ। বাদশা এবং তার স্ত্রী ওয়ারদূন আসরারের দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকায়। তাদের দেখে ওয়ারদূন আসরার তাদের সালাম দেয় সাথে জাইফকেও। জাইফসহ তার বাবা মা সালামের উত্তর নেয়। জাইফহাত মুঠি করে ওয়ারদূন আসরার কে অদৃশ্য করে ফেললো। তার মা বাবা নিশ্চিন্ত হলেন ওয়ারদূন আসরার জাইফের কাছে রয়েছে দেখে৷ হঠাৎ মেঘে যেনো গর্জন দিয়ে উঠলো চারপাশের গাছপালাও শান্ত থেকে অশান্ত হয়ে গেলো। নদীর স্রোতও কেমন উতালপাতাল করছে। এ যেনো কোনো বিপদের আগাম আভাস। বাদশাহ চটজলদি বলে,”কোনো বিপদ হয়েছে পুত্র তুমি দ্রুতই প্রস্থান করে সেই ভয়ানক দুর্যোগ সন্ধান করো আল্লাহ তোমার সহায় হোক।”

বাদশাহর কথায় জাইফ মাথা নাড়িয়ে তাদের বিদায় দিয়ে দ্রুতই সেখান থেকে চলে যায়। তার মন বলছে যীনাতের কোনোরকম বিপিদ হবে/হয়েছে।

——————————–

চলবে!!!

ওয়ারদূন আসরার পর্ব-২০

0

#ওয়ারদূন_আসরার
#লাবিবা_ওয়াহিদ
|| পর্ব – ২০ ||

– জাইফ ঘুম ভাঙলো তোর ভাঙলে আম….

রিকেশ বলতে বলতে জাইফের রুমে এসে ঢুকলো। জাইফ তখন বসে কফি খাচ্ছিলো। কফি থেকে দৃষ্টি সরিয়ে জাইফ বলে,”হ্যাঁ কেন কিছু বলবি?”

– বলার জন্যই তো এলাম। এই আনুস্কা টা না বড্ড জ্বালাচ্ছে আমাকে। বলে কিনা সাগরের টকবগা রুইমাছ খাবে? মানে এতোটাও কেউ করে ভাই? আমি এই রাক্ষসীকে কি করে সামলাবো বলতো?

জাইফ ফিক করে হেসে দেয় তারপর বলে,”তো আনিয়ে নে এতে এতো অভিযোগ কিসের তোর?”

– স্বাধে কি আর অভিযোগ করি ভাই! রাত তো আমার জমপেশ খেলো এখন সকাল হতে না হতেই আমার গায়ে জল ঢেলে ঘুম থেকে উঠালো রুইমাছ খাবে না।(অসহায় ভঙ্গিতে)

জাইফ মুখ টিপে হেসে কফি খেতে খেতে বলে,”বিয়ে যখন করেছিস সামলা এই আমি বেশ আছি!”

– বুঝবা চান্দু বুঝবা যখন একটা কালসাপ কপালে জুটবে।

তখনই আনুস্কার ডাক পরে রিকেশের। আনুস্কা গহর থেকে চেঁচিয়ে বলছে,”ওই বজ্জাত বর তুই কই রে কোন জায়গায় আমার দুর্নামে মত্ত আপনি? উফফ আমার জিবহায় ইয়া বড় কামড় খেলাম! তাড়াতাড়ি আসেন রুমে নইলে কপালে আপনার দুঃখ আছে।”

আনুস্কা বলতে দেরী রিকেশ দৌড়ে যেতে দেরি নাই। রিকেশ যেতেই জাইফ হাফ ছেড়ে বাচলো। তারপর কোনো কিছু না ভেবে ডান পাশের থেকে বেডশিট উঠিয়ে নেয়। সেখানে যীনাত লম্বা হয়ে শুয়ে ছিলো। বেডশিট মোটা বিধায় ডান সাইডে যে কোনো মানুষ ছিলো সেটা বোঝাই যায়নি। রিকেশ আসার আগেই জাইফ যীনাতকে লুকিয়ে ফেলেছিলো। যীনাত ভয়ার্ত চোখে জাইফের দিকে তাকাতেই জাইফ একটা টেডি স্মাইল দিলো। আবার যেই যীনাতের দিকে যাবে ওমনি যীনাত জাইফকে জোরে একটা ধাক্কা দিয়ে বিছানা থেকে নেমে দৌড়ে নিজের রুমে চলে গেলো। যীনাতকে এমন বাচ্চাদের মতো দৌড়াতে দেখে জাইফ শব্দ করে হেসে দেয়। জাইফ সিঁড়ই দিয়ে নেমে মল্লিকা দেবীর কাছেই যাচ্ছিলো তখনই দেখে যীনাত কফি নিয়ে উপরের দিকেই আসছে আর তার চেহারায় ভয় স্পষ্ট। জাইফ কিছু না ভেবেই আবার নিজের রুমে ফিরে আসে আর দরজা ভিজিয়ে দেয়। তারপর বিছানায় গিয়ে ঘুমানোর ভান ধরে থাকে।

যীনাত নিজের ঘরে এসে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিতে লাগলো। আরেকটুর জন্য মনে হচ্ছিলো যেনো তার প্রাণটাই বেরিয়ে হাতে চলে আসতো। কখনো কোনো পুরুষ তার এতোটা কাছে আসেনি। আর জাইফ…. ভাবতেই যীনাতের গায়ে কাটা দিয়ে উঠছে। জাইফের এমন আচরণে যীনাত আরও বেশি ভয় পেয়ে যায়।

সকালে সবাই একসাথে নাস্তা করলো নতুন বউকে নিয়ে। যীনাত লজ্জায় একবারের জন্যেও জাইফের দিকে তাকাতে পারেনি। জাইফ আড়চোখে যীনাতের লজ্জামাখা চেহারা দেখে মুখ টিপে হাসছিলো আর খাচ্ছিলো! তিশানা জাইফের এমন মুখ টিপে হাসা খেয়াল করে এবং সাথে সাথেই বলে,”দাভাই তুই এভাবে পাগলের মতো হাসছিস কেন?”

জাইফ কথা ঘুরিয়ে বলে,”তোকে পেত্নির মতো লাগছে তো তাই।”

তিশানা রেগে জাইফের দিকে কাটা চামচ নিক্ষেপ করলো আর জাইফ সেটা খপ করে ধরে বলে,”ইশশ রে ভালো করে এবারও নিশানা লাগাতে পারলি না চো চ্যাড!”

– তুই কবে জানি আমার হাতে উদুম কেলানি খাস দাভাই! দাড়া তোর বউকে আসতে দে তারপর দেকজ তোর বউকে দিয়ে কেমন তোকে কাবু করি!

বউয়ের কথা শুনে যীনাত বিষম খেলো। আনুস্কা জলদি করে যীনাতকে পানি দিয়ে বলে,”তুমি ঠিক আছো যীনাত?”

যীনাত পুরো গ্লাসের পানি খতম করে কাশতে কাশতে বলে,”হ্যাঁ আমি ঠিক আছি।”

দেবনাথ দেব মুখ টিপে হাসছে আর জাইফ তো এবার আলাশের চাঁদ হাতে পেলো এমন অবস্থা। সেও যেনো নিজেকে তৈরি করে বলা শুরু করে,”আমার বউকে আমি নিজেই হাতের মুঠোয় রাখবো সে আবার আমায় কি কাবু করবে? সে তো মেয়বি আমার ধারে কাছে আসতেই ভয় পাবে, আমার চোখ গরম দেখলেই ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে দিবে আবার সে নাকি আমায় করবে কাবু? হা হা তিশু তোর মাথায় আসলেই স্ক্রু ঢিলা।”

জাইফের কথা শুনে লজ্জায় মাটিতে মিশে যেতে মন চাইছে যীনাতের। গলা দিয়ে আর খাবার নামানো সম্ভব হলো না তার। এখানে কতো গুরুজনরা আছে, দেবনাথ দেব, নিকেশ, কমলা দেবী আর মল্লিকা দেবী। কেন জানিনা এদের মাঝেই যীনাতের অবস্থা খারাপ হচ্ছে। এদিকে জাইফ রেডিওর মতো বলেই যাচ্ছে। যীনাত খাচ্ছে না দেখে সোভন বললো,”কি হলো আপনি খাচ্ছেন না কেন?”

জাইফ আড়চোখে যীনাতের দিকে তাকালো। সত্যিই বেচারী খাচ্ছে না জাইফ যা বলেছে যীনাতের সেসবই হজম হয়ে গেছে আবার কি খাবে?যীনাত ভ্যাবাচেকা খেয়ে বলে,”ইয়ে… হ্যাঁ আসলে আমার খাওয়া শেষ আমি উঠি!”

– কোথায় খাওয়া শেষ আপনি তো তেমন কিছুই খেলেন না।

সোভনের এমন কথা শুনে জাইফের গা পিত্তি জ্বলে যাচ্ছে। এই ভাইটাকেও তার এখন বিষের মতো লাগে। অন্যের বউয়ের দিকে নজর কেন দেয় তাও নিজের কাজিনের বউয়ের দিকে?

যীনাত ভালো লাগছে না বলে উঠে চলে গেলো। এদিকে জাইফ সোভনের জন্য রাগে ফুসতে লাগে। আনুস্কা সবটাই খুটিয়ে খুটিয়ে খেয়াল করলো কিন্তু প্রকাশ করলো না। যীনাত নিজের রুমে এসে আচ্ছাশির জাইফকে লবণ মরিচ দিয়ে ধুয়ে দিচ্ছে।

– পাইসে টা কি আমাকে, সকাল থেকে কি পরিমাণে জ্বালাচ্ছে ব্যাটায়! উফফ কতোগুলা মানুষের সামনে আমার সম্মান বিলিয়ে দিলো ধুর ধুর! এর থেকে রিভেন্সও নিতে পারিনা। কি করে নিবো তাকে দেখলেই তো অটোমেটিক ঠান্ডা হয়ে যাই মুহূর্তেই কেমন হাত পা কাঁপাকাঁপি অবস্থা হয়ে যায়।

এসবই ভাবছিলো যীনাত। কিন্তু তার পাশে কখন যে জাইফ এসে দাঁড়িয়েছে সেদিকে তার খেয়ালই নাই। জাইফ নিরবতা ভেঙে বলে,”তুমি যে ভীতু তাই আমার ভয়ে কাঁপাকাঁপি করো!”

যীনাত টাস্কি খেয়ে পাশে তাকায়। জাইফকে দেখে যীনাত দু’কদম পিছিয়ে যায়। আর সবচেয়ে বড় কথা যীনাতের মনের কথা জাইফ কি করে বললো?

যীনাত কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,”আ…আপনি এখানে?”

– হুম আমি কেন, কাকে আশা করছিলে?

– কাকাউকে ননা! আর আপনি আমাকে না বলে কয়ে ঘরে ঢুকেন কেন?

– না ঢুকলে জানতাম নাকি আমার বউটা এতোটা ভিতু।

– একদম আমাকে ভীতু বলবেন না আর আপনি আমার মনের কথা কি করে শুনেন?

– তুমি যদি জোরে জোরে বলো তাহলে আমি কেন যে কেউ-ই শুনবে! আর তুমি তো মুখে বলেছো মনে নয়।

এবার যীনাত নিজেই কনফিউশনে পরে গেলো। সত্যি-ই কি সে মুখে বলেছে নাকি মনে? কে জানে। জাইফ আরও কিছুক্ষণ থেকে অফিসের জন্য রেডি হতে নিকের রুমে চলে গেলো। যীনাতও যেনো হাফ ছেড়ে বাচলো। জাইফ তার আশেপাশে থাকলে যেনো নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে।

– কি খবর এনেছো পৃথিবী থেকে?

অবয়কটি মাথা নিচু করে বলে,”সর্দার পুরো পৃথিবীর মুসলিম পরিবার তন্ন তন্ন করে খুঁজেছি কিন্তু কোথাও রাজপুত্রের নাম নিশানাও খুঁজে পাইনি।”

সর্দার হাতের সামনে থাকা মানুষের মাথার কঙ্কাল হাতে নিয়ে আছাড় মেরে ভেঙে টুকরো টুকরো করে ফেলে। সর্দারের এমন রূপ দেখে অবয়কটার আত্মা কেঁপে উঠে আর থরথর করে কাঁপা-কাঁপি শুরু করে দেয়। সর্দার ভয়ংকর প্রাণীর মতো হুংকার দিয়ে বলে,”তাহলে কোথায় রাজকুমার হ্যাঁ? কোথায় তাকে লুকিয়ে রেখেছে ওই বুড়ী? বুড়ী তুই আমাদের হাতে মরেও আমাকে এতো বছর দজরে কুকুরের মতো নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরাচ্ছিস! তোরে মন চাচ্ছে খুবলে খেতে। তুই… (মাথায় হাত দিয়ে) আর তুই ভালো করে খুঁজে বের কর। আর যেই মানুষটার কাছে ওয়ারদূন আসরার তার খবর কি? সে কি সেই বিস্ফোরণে মরেনি?”

অবয়কটি মাথার ঘাম পায়ে ফেলতে ফেলতে বলে,”জানিনা হুজুর কিভাবে যেনো বেচে যায় মেয়েটা। আর মেয়েটার সাথে একটা হিন্দু ছেলের বিয়েও হয়েছে!”

বিয়ের কথা শুনে সর্দার পুরো ঘর ছিন্নভিন্ন করে ফেললো।

– আয়ায়ায়ায়ায়া নায়ায়ায়ায়ায়ায়া আমার একের পর এক পরিকল্পনা কি করে বিফলে যাচ্ছে কি করেএএএ!! আমি কিচ্ছু জানিনা! যেভাবেই হোক রাজপুত্র আর ওয়ারদূন আসরার কে চাই-ই চাই! যদি এনে না দিতে পারিস তাহলে তোদের মৃত্যু নিশ্চিত জেনে রাখ!(হুংকার ছেড়ে)

অবয়কটি কেঁপে বলে,”জজজজ্বী হুজুর!”

বলেই যেতে নিলো ওমনি সর্দার বলে উঠে,”আজকে রাতের মধ্যে মেয়েটার রক্ত পান করতে চাই। এর মানে বুঝেছিস তো?”

– মেয়েটাকে মেরে দিতে হবে?

– এইতো বুদ্ধিমানের মতো কথা এখন যা সময় নষ্ট করা আমি অপছন্দ করি।

বলেই হায়নার চেয়েও হিংস্রভাবে হাসতে থাকে সর্দার। অবয়কটি যাওয়ার অনুমতি পেতেই ভ্যানিস হয়ে গেলো।

যীনাত ঘুমিয়ে আছে তখনই তার ঘরে ৪টা অবয়ক তাকে ঘিরে হাজির হলো। সেই একই সময়ে জাইফের রুমে একটা সাদা রশ্মি উদয় হয় আর চট করে সেই রশ্মিটা জাইফের মাথায় ঢুকে গেলো।

অবয়কগুলো বিস্রিভাবে যীনাতকে দেখছে। তাদের যীনাতকে দেখে লোভ সামলাতে পারেনা এবং সিদ্ধান্ত নেয় যীনাতকে ভোগ করেই তারা যীনাতকে সর্দারের হুকুমে মেরে দিবে। যেই লালসার সাথে যীনাতের দিকে এগোতে থাকে এমন সময়ই কেউ বাতাসের বেগে এসে চারজন অবয়ককে একসাথে একই হাতে একসাথে গলা টিপে দেয়ালের সাথে বারি লাগায়। সামনের লোকটার সাথে তারা ধস্তাধস্তি করতে চেয়েও পারছে না। তাদের দম বন্ধ হয়ে আসছে। আস্তে আস্তে সামনের জন দৃশ্যমান হতে থাকে। অবয়কগুলো বিস্ফোরিত চোখে কাঁপা কাঁপা গলায় বলে উঠে,”রারারাজকুকুমার!!!”

———————————-

চলবে!!!

(ধামাকা কেমন লাগলো সবার?)

ওয়ারদূন আসরার পর্ব-১৯

0

#ওয়ারদূন_আসরার
#লাবিবা_ওয়াহিদ
|| পর্ব – ১৯ ||

জাইফ পিপাসায় পাগল হয়ে বেলকনিতে ছুটে গেলো আর যীনাতও তার পিছে পিছে। জাইফ হিংস্র সিংহের মতো গর্জে উঠলো। জাইফের চিৎকার এতোটা ভয়ংকর এবং আওয়াজ যে উপরের চাঁদকে লুকিয়ে রাখা মেঘ মিলিয়ে গেলো। চাঁদের আলো টা সোজাসুজি জাইফের উপর এসে পড়লো এবং আশেপাশে তীব্র আলোড়ন ছেয়ে গেলো আর জাইফ নিজের অজান্তেই শূণ্যে উঠে যায়। আলোর বেগ এতোই বেশি যে যীনাত চোখে হাত দিয়ে রাখতে বাধ্য হলো। জাইফের ছোট ছোট ঘা গুলো সেরে যেতে লাগে এবং জাইফের গলার হলুদ আভাটাও ধীরে ধীরে গলে গেলো। চাঁদের আলোয় জাইফের সৌন্দর্য আরও বেড়ে গেলো। আস্তে আস্তে জাইফ বেলকনিতে আসে এবং অচেতন হয়ে পড়ে যায়। সবটা স্বাভাবিক হতেই যীনাত পিটপিট করে চোখ খুললো এবং দেখলো জাইফ ফ্লোরে অচেতন হয়ে পড়ে আছে। যীনাত চটজলদি জাইফের কাছে গিয়ে জাইফের জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করে কিন্তু কিছুতেই কিছু হলো না। উপায় না পেয়ে যীনাত পানি নিয়ে এসে জাইফের মুখে ছিটালো এতে ধীরে ধীরে জাইফের জ্ঞান ফিরে এবং সে উঠে বসে। তার চোখে মুখে স্পষ্ট চিন্তার ছাপ ফুটে উঠেছে। যীনাত উত্তেজিত হয়ে বলে,”আপনি ঠিক আছেন তো?”

জাইফ নিচের দিকে তাকিয়েই মাথা নাড়ায়। যীনাত স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। তারপর আবার শান্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করে,”আপনার কি হয়েছিলো?”

জাইফ সংকোচ ছাড়াই বলে,”জানিনা!”

যীনাত কি বলবে বুঝতে পারছে না। জাইফের হঠাৎ এরকম কান্ড যীনাত স্বপ্নেও ভাবেনি। আচ্ছা তার সাথে কেন কোনো প্যারানরমান ঘটনা আছে? জাইফ তৎক্ষনাৎ বলে,”রুমে যাও।”

যীনাত ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলে,”মা…মানে!”

– তোমাকে রুমে যেতে বলেছি কোনোরকম প্রশ্ন করিও না যাও!

জাইফের কঠিন গলা শুনে যীনাত আর সেখানে থাকতে পারলো না। বাধ্য মেয়ের মতো নিজের চলে আসে এবং দেখে আনুস্কা এখনো আরামের ঘুম দিচ্ছে৷ বাড়িতে এতোবড় একটা কান্ড ঘটে গেলো কেউ ঘূণাক্ষরেও টের পেলো না। তবুও যীনাতের জাইফের জন্য মন কেমন কু ডাকছে? জাইফের আবার কোনোরকম বিপদ হবে না তো? এসব ভাবতে ভাবতে আল্লাহর কাছে সাহায্য চেয়ে সে আনুস্কার পাশে গিয়ে শুয়ে পড়ে।

জাইফ বিছানার সাথে হেলান দিয়ে বসে নিজের হাতের দিকে একমনে তাকিয়ে আছে। তার হাত একবার মুঠি করে আবার খুললো এবং দেখলো তার হাতে কিছু আলোকরশ্মি বিদ্যমান। সেই আলোকরশ্মির দিকে আনমনে তাকিয়ে বলতে শুরু করলো,”তুমি ঠিক ধরেছো যীনাত আমার সাথে অনেক প্যারানরমাল ঘটনা ঘটে আজ না দেখলে হয়তো কখনো জানতে পারতে না। কিন্তু আমি সবসময় সবার থেকে দূরে থাকি যেনো আমার এই সমস্যার জালে তারা কেউ ফেসে না যায়। জানিনা এটা আমার কেমন প্যারানরমাল প্রব্লেম! তবে এইটুকু বেশ ভালো বুঝতে পারি আমার এই পাওয়ার টা অনেক শক্তিশালী এবং ভয়ংকর নাহলে এতো দুরুত্বে থাকা আকাশের মেঘ আমার সামান্য চিৎকারের সাথে মিলিয়ে যেতো না। আর আমার হাতে…”

বলে চুপ করলো জাইফ তারপর একটা খালি বোতল দূরে খেয়াল করলো জাইফ। সেই খালি বোতলের দিকে একপলক তাকিয়ে কি মনে করে যেনো সেই বোতল বরাবর নিজের সেই আলোকরশ্মিতে থাকা হাতটা রাখলো। সাথে সাথেই সেই আলোকরশ্মি জাইফের হাত থেকে গিয়ে বোতলের উপর গিয়ে পড়লো আর সাথে সাথে অনেক শব্দের সাথে সেটা ব্লাস্ট হলো। ব্লাস্ট হতেই বোতলের টুকরা গুলো চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেলো। জাইফ নিজের এক আঙুল ঘুরাতেই যেনো সব টুকরো গুলোও জাইফের আদেশে ঘুরতে শুরু করে। জাইফ আঙুল যেদিকেই নিচ্ছে সেদিকেই টুকরো গুলো যাচ্ছে। এরকম করতে জাইফের কেন জানিনা বেশ তৃপ্তি লাগছে যেনো সে আগেও এসব করেছে৷ কিন্তু মনে কেন করতে পারছে না? এমন করতে করতেই ফজরের আযান দিয়ে দেয়। জাইফ সব স্বাভাবিক করে একটা দীর্ঘশ্বাস নেয়। তারপর কিছু না ভেবেই ওযু করতে চলে যায়।

পরেরদিন রাতে,,

আনুস্কা বধু সাজে ফুলেভরা বিছানায় ইয়া বড় একটা ঘোমটা দিয়ে চুপচাপ বসে আছেম কতোক্ষণ হয়ে গেলো এখনো রিকেশের আসার নামগন্ধ নেই। আনুস্কার রাগে মন চাচ্ছে নিজের চুল নিজেই ছিড়ে ফেলতে। আনুস্কা যা ভয়ানক রেগে আছে এতে করে রিকেশের যে কি হাল হয় সেটা ওপরওয়ালা ভালো জানেন। রিকেশ অনেক রাত করে আসলো আর আসতেই তার উপর হামলা চললো। রিকেশ “ও বাবাগো” বলতেই আনুস্কা মুখ চেপে ধরে এবং বল্ব,”ওই কাইষ্টা পোলা চুপ! তোর সাহস তো কম না তুই আমারে এতো রাইত পর্যন্ত বহাইয়া রাখসোস? এতোক্ষণ কোন মাইয়ার সাথে প্রেম করে আসছোস হ্যাঁ? ”

রিকেশ আনুস্কার হাত নিজের মুখ থেকে সরিয়ে বলে,”ওয়াট দ্যা হ্যাল! তোমার মাথা কি গেছে কিসব উল্টো পাল্টা বলছো তুমি? আমি আবার কার সাথে প্রেম করতে যাবো। আর তুমি যা কাল নাগিন তোমার জ্বালায় কোন কালে প্রেম করতে পারলাম!”

– ওই জলহস্তি চুপ কর! প্রেম করার খুব সখ হইসে না?প্রেমে করতে দেইনি বেশ করেছি এতে তোমার কোনো অসুবিধা? তখন তো কেউ ছিলে না এখন তুমি আমার লিগালি হাসবেন্ড ওকে? এখন আমাকে বুকে নিয়ে ঘুমাবা নইলে তোমাকে সোফায়ও ঘুমানোর জায়গা দিবো না।

– মানে কি হ্যাঁ? রুমটা আমার সেখানে আমি কোথায় ঘুমাবো না ঘুমাবো সেটা কি তুমি আমায় বুঝাবা!

– আপনার একার রুম না এখন থেকে এই রুম আমারও ওকে? এখন আসবেন নাকি…

বলেই আনুস্কা রিকেশের কলার টেনে বিছানার কাছে নিয়ে এলো এবং রিকেশকে ধাক্কা দিয়ে বেডে ফেলে দিলো। রিকেশ আনুস্কার হাত ধরে ছিলো যার ফলে আনুস্কাও তাল সামলাতে না পেরে রিকেশের উপর গিয়ে পড়লো। খুব ধস্তাধস্তির পর আনুস্কা রিকেশের বুকে আরামের ঘুম দিলো আর রিকেশ বেচারা এতোক্ষণ ধরে ছাড়াতে চেয়েও পারলো না। এখন আর কি করার বুকে নিয়েই ঘুমাও।

যীনাত খুব সকাল সকালই ঘুম থেকে উঠে নিচে চলে যায়। মল্লিকা দেবী অবাক না হয়ে পারেনা। যীনাত প্রতিদিন কেমনে এতো সকালে উঠে আর ওদিকে দেখো নিজের ছেলেমেয়েদের কখনো নিজে থেকে একদিনও জলদি উঠতে দেখেনি। মল্লিকা দেবী জাইফের জন্য কফি বানাচ্ছিলো তখনই যীনাত বলে উঠে,”আন্টি আমি কি আপনাকে কোনো ভাবে সাহায্য করবো? প্লিজ না করবেন না এই পর্যন্ত কখনোই আমাকে কোনো কিছু করতে দেননি এতে করে আমার বরিং লাগে।”

মল্লিকা দেবী হেসে বলে,”বাড়িতে এতো কাজের লোক থাকতে তোমাকে দিয়ে কাজ করাবো ভাবলে কি করে হুম?”

– তবুও কাজ করলে রেগুলার একটা এক্সারসাইজ হয়। আর সারাক্ষণ বসে থাকলে যেমন বরিংও লাগে তেমন শরীরে নানা রোগব্যাধি দেখা দেয়।

– ঠিক আছে মানলাম এতো করেই যখন বলছো তাহলে একটা ছোট উপকার করো!

যীনাত চোখমুখ চিকচিক করে বলে,”কি বলুন আমি রাজি আছি!”

যীনাতের হাতে এক কাপ কফি ধরিয়ে দিয়ে বলে,”এটা জাইফকে দিয়ে এসো মিনি যেতো কিন্তু মিনি পিসিমার কাছে গেছেন তার আপ্যায়ন করতে। তাই তুমি করে দেও।”

– ঠিক আছে।

বলেই যীনাত কফিটা নিয়ে আল্লাহকে ডাকতে ডাকতে জাইফের রুমের দিকে যেতে লাগে। সেদিন জাইফের এমন কঠিন বিহেভিয়ারে যীনাত ভয়ে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলো। এমন কি জাইফের সাথে সে দেখা অব্দি করেনি ভয়ে। যদি কোনো কারণে আবার চড় থাপ্পড় মেরে দেয়। এখন তো মল্লিকা দেবী তাকে বাঘের খাচায় পাঠাচ্ছে। নিজেকেই নিজে বকতে লাগলো যীনাত কেন যে মল্লিকা দেবীকে আগ বাড়িয়ে বলতে গেছিলো কাজ করার কথা এখন নিজেই তো ফাদে পড়ে গেলো। কথায় আছে না যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যে হয়।

এসব নানান চিন্তা করতে করতে যীনাত জাইফের রুমের সামনে এসে দাঁড়ায়। যেই নক করবে ওমনি খেয়াল করলো দরজা ভেজানো। বিসমিল্লাহ বলে যীনাত আস্তে করে ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করলো এবং গিয়ে দেখে জাইফ খালি গায়ে উবুড় হয়ে শুয়ে আছে। জাইফের বডি দেখে যীনাতের চোখ চড়কগাছ! এভাবে জাইফকে কখনো দেখেনি সে তাই এবার ভয় ছেড়ে নিজে লজ্জায় পড়ে গেলো। হঠাৎ মনে পড়ে গেলো কফির কথা৷ এখন কফি না খেলে তো কফি ঠান্ডা হয়ে যাবে। তাই যীনাত কাঁপা কাঁপা পায়ে বিছানার পাশের বেডবক্সে জাইফের কফিটা রাখলো এবং কিছুটা জোরে বলতে লাগে,”এইযে শুনছেন আপনার জন্য কফি এনেছি খেয়ে নিন নইলে ঠান্ডা হয়ে যাবে।”

জিয়াফ কিছুটা নড়াচড়া করে আবার ঘুমিয়ে গেলো। অনুরূপভাবে যীনাত একই ভাবে ডাকে এবং জাইফ নাড়াচাড়া দিয়েই ঘুমিয়ে পড়ে। এবার যীনাত প্রচুর বিরক্ত হলো। যীনাত যেই জাইফের কাধে হাত রাখতে যাবে ওমনি জাইফ যীনাতের হাত ধরে টান দেয় আর যীনাত টাল সামলাতে না পেরে সোজা জাইফের বুকে গিয়ে পড়ে। এমন কান্ড যীনাত কখনোই কল্পনা পর্যন্ত করতে পারেনি তাই চোখ দুটো রসোগোল্লার মতো করে জাইফের দিকে তাকিয়ে রইলো। জাইফের চোখে মুখে রাগি ভাব! যীনাতের সাথে সাথে হুস আসে এবং জাইফের উপর থেকে উঠতে যেতে চাইলে এক চুল পরিমাণও নড়তে পারলো না।

– এসব কি হচ্ছে ছাড়ুন!

– কেন ছাড়বো?

– দেখুন এটা কিন্তু ঠিক না ছাড়ুন আমায় কেউ এসে দেখে ফেললে ঝামেলা হয়ে যাবে!

– কি দেখবে?

যীনাত আবার বিরক্ত হয়ে কিছু বলতে নিলে জাইফ যীনাতকে ঘুরিয়ে পাশে ফেলে নিজে যীনাতের উপর উঠে। যীনাত আবার অবাক হয়ে তাকায়। এবং জাইফ রেগে বলে,”তোমার সাহস তো কম না তুমি আমাকে দুইদিন ধরে ইগনোর করেছো? এতো সাহস হঠাৎ কোথা থেকে উদয় হলো তোমার?”

যীনাত জাইফের কথার উত্তর না দিয়ে নিজেকে ছাড়াতে ছাড়াতে বলে,”এসব হচ্ছে কি? কেন এভাবে আমার কাছাকাছি আসছেন হ্যাঁ? ছাড়ুন আমাকে আমার কাজ আছে। আর কেউ দেখে ফেললে এলাহি কান্ড ঘটে যাবে।”

– তাহলে তাই হোক তবুও আজ তোমার প্রশ্নের উত্তর না নিয়ে ছাড়ছি না!

– পাগল নাকি আপনি।

হঠাৎ কেউ বাইরে থেকে কথা বলতে বলতে জাইফের রুমের দিকে আসলো।

———————————

চলবে!!!

ওয়ারদূন আসরার পর্ব-১৮

0

#ওয়ারদূন_আসরার
#লাবিবা_ওয়াহিদ
|| পর্ব – ১৮ ||

স্বর্ণা ধমক খেয়ে ভয়ে চুপসে গেলো। রিকেশ এক সার্ভেন্ট কে ডাকলো এবং বললো যেনো স্বর্ণাকে নিজের ঘরে রেখে বাইরে দিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয়। কিন্তু স্বর্ণা যেতে চাইলো না সে এখানে থাকবে। তার অমতেই সার্ভেন্টরা তাকে জোর করে নিয়ে যায়। যীনাত বুঝলো না এর মানে। আনুস্কা জিজ্ঞেস করে,”স্বর্ণা এমন কেন?”

রিকেশ উত্তর দেয়ার আগেই মল্লিকা দেবী ট্রে তে করে সরবত নিয়ে আসতে আসতে বলে,”স্বর্ণার মানষিক প্রব্লেম আছে। যখন সে ছোট ছিলো তখন ফ্লোরে পিছলিয়ে মাথায় বড়রকম আঘাত পায় যার কারণে সে এরকম আচরণ করে।”

যীনাত অবাক হয়ে মল্লিকা দেবীর দিকে তাকায়। সেদিন না মল্লিকা দেবী তাকে বললো আর এখন এই কথা বললো কেন? যীনাতের অবাক চাহনী দেখে মল্লিকা দেবী বুঝতে পারে তাই যীনাতকে উদ্দেশ্য করে বলে,”আমি তখনও জানতাম না স্বর্ণার এই সমস্যার কথা কিছুদিন আগেই জাইফ আমায় বলেছে! এতোদিন তো ভাবতাম আমার মেয়েটা আমি এতিম বলে এমন করতো কিন্তু আমার ধারণা যে সম্পূর্ণ ভুল!”

বলেই আঁচল মুখে ধরে কাঁদতে কাঁদতে চলে গেলো। কিছুক্ষণ নিরবতা পালন করলো সবাই তারপর রিকেশ মুখ খুলে বলে,”এইজন্যই আমরা কেউ স্বর্ণাকে কিছু বলতে পারিনা। ওর সব কথা চুপচাপ হজম করতে হয়। নইলে সজ্ঞানে কিছু বললে ওকে তো মাইরের উপরে রাখতাম।”

আনুস্কা চোখ মুছে ফেলে৷ তারপর তিশানা আর কিছু কাজিন মিলে কোথায় যেনো চলে যায়। কিছুক্ষণের মাঝে ফিরে আসে। তিশানার হাতে ইয়া বড় স্টিলের কারুকাজ করা বল। সেটায় আছে পানি আর গোলাপের পাঁপড়ি। তিশানা সেটা রিকেশদের সামনে রাখলো এবং বললো,”নতুন করে নিশ্চয়ই বোঝাতে হবে না এসব দিয়ে কি হবে তবুও বলছি। এই বলে একটা রিং ফেলবো আর তোমাদের মধ্যে যেকোনো একজন খুঁজে বের করবে। যেই খুঁজে বের করতে পারবে সেই জিতবে আর যে হারবে তার পক্ষ থেকে আমরা সবাই ট্রিট পাবো কি বলো সবাই?”

সবাই একসাথে ইয়েস” বলে উঠে। রিকেশ বলে,”আচ্ছা যা মানলাম এখন জাইফকে আন ওরে ছাড়া মজা হবে না। এভাবে চলে যাওয়া ঠিক হলো বলতো?”

তিশানা বলে,”আমি আর আরাদ দা যাচ্ছি দাভাইকে আনতে। ”

বলেই তিশানা আর আরাদ চলে গেলো জাইফকে আনতে। কিছুক্ষণ পর জাইফকে টেনে হিচড়ে নিয়ে আসা হলো। তারপরই আনুস্কার চোখ তিশানা ধরে আর রিকেশের চোখ সোভন ধরে। আর কমলা দেবী রিং টা এই বলে ফেলে হাত দিয়ে দুধের মাঝে গোলাকৃতি সৃষ্টি করে তারপর বলে,”এহন চোখ থেইকা তোরা হাত সরা।”

কমলা দেবীর কথামতো তিশানা আর সোভন রিকেশ, আনুস্কার চোখ থেকে হাত সরিয়ে ফেলে। তিশানা বলে,”লেট’স স্টার্ট আওয়ার কাপল!”

তিশানা বলতেই রিকেশ আর আনুস্কা দুধ পাঁপড়ির মাঝে হাত ঢুকিয়ে রিংটা খুঁজতে শুরু করে। দুজন রিং না খুঁজে হাতে হাতে মারামারি করছে তা দেখে সবাই মুখ টিপে হাসছে। যীনাত চুপচাপ ওদের কান্ড দেখছে। শেষে আনুস্কাই রিং টা পেলো আর খুশিতে আত্মহারা হয়ে ইয়েএএ” বলে চেঁচিয়ে উঠে। রিকেশ একটা দীর্ঘ দম ছাড়লো যেনো সে এতোক্ষণ রিং খুঁজতে নয় যুদ্ধ করছিলো। শেষ পর্যন্ত যুদ্ধের ময়দানে রিকেশ বেচারা হেরে কুপোকাত! আনুস্কার সাথে সকলেই চেঁচিয়ে উঠে আর হাসতে থাকে। যীনাতও হাসছে রিকেশের ইনোসেন্ট মার্কা ফেস দেখে। হঠাৎ সে নিজের হাতে ঠান্ডা কারো স্পর্শ পেলো! সাথে সাথে শিউরে উঠে যীনাত এবং হাতের দিকে তাকায়। তার হাতে কেউ হাত রেখে আর সেই “কেউ” টা আর কেউ নয় জাইফ। যীনাত চোখ বড় বড় করে জাইফের দিকে তাকালো। কিন্তু জাইফ রিকেশদের দিকে তাকিয়ে। এমন ভাব ধরে আছে যেনো যীনাতের দিকে তার কোনো খেয়ালই নেই। সে রিকেশদের দিকে তাকিয়ে হাসছে, কথা বলছে যেনো সবটা স্বাভাবিক! যীনাত চোখ সরিয়ে নিয়ে আস্তে ধীরে হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতে থাকে কিন্তু জাইফ ছাড়ার বদলে আরও শক্ত করে ধরে। যীনাত শুধু সবার দিকে তাকাচ্ছে আর হাত ছাড়ানোর বৃথা চেষ্টা করে যাচ্ছে। যদি কেউ দেখে ফেলে তাহলে তো সর্বনাশ! শেষে উপায় না পেয়ে হাতটা লুকিয়ে রাখলো যাতে কেউ দেখতে না পায়। যীনাত যেনো লজ্জায় মরে যাচ্ছে। এতো মানুষের সামনে এভাবে জাইফ তার হাত ধরবে হুট করে যীনাত তো কল্পনা অব্দি করেনি। তবে আগেও ধরেছিলো কিন্তু আজকে তো অনেক বেশি মানুষ!

তিশানা- ইয়েএএ বড়দাভাই আমাদের সবাইকে খাওয়াবে। হুররেএএএ!

রিকেশ- ও ভগবান! আমি ফকির হয়ে গেলাম এবার।

– ওই কিপটার গুরু এতো বড় বিজন্যাস কইরা কি মশা মারিস যে সামান্য কটা টাকা আমাদের জন্য খরচ করলে ফকির হয়ে যাবি?

– তোরা তো একেকটা হাতির চেয়ে কম না তোদের খাওয়ানো মানে রাস্তায় বসে ভিক্ষা করা একই ব্যাপার!

তিশানাসহ সবাই সেইরকম ক্ষেপে উঠে তারপর সব একসাথে বলে,”ওওওও তাইই ঠিক আছে দেখি তোর ফুলসজ্জার খাট কে সাজায়!”

– আমি কি তোদের সাজাতে বলেছি রুম যেমন আছে তেমনই থাক তাতে আমার কি?

– তাহলে তোর বউকে আর তোর কাছে যেতে দিবো না দেখিস!

– ওরে রাস্তায় ফেলে আসলেও আমার কিছু যাবেও না আসবেও না!!!

এবার আনুস্কা চরম লেভেলের ক্ষেপে গেলো। দুই হাত কোমড়ে গুজে যেই কড়া কথা শুনাতে যাবে তার আগেই কমলা দেবী রিকেশের এক কান ধরে উঠিয়ে নেয়। রিকেশ ব্যথায় জোরে চেঁচিয়ে বলে,”আহ ঠাম্মি ছাড়ো লাগছে!!”

– তুই কইলি কি বদমাইশ আর নাতবউরে রাস্তায় ফেলাইয়া আইবি? এতো সাহস তোর তোরে বিয়ে দিসি কি আর নাতবউকে কষ্ট দেয়ার জন্য হ্যাঁ? মুখপড়া, বদমাইশ পোলা!!!

– ঠাম্মিইইই ভালো হচ্ছে না কিন্তু কান ছাড়ো!

– আগে নাতবউয়ের কাস থেইকা ক্ষমা চাইবি হেয় যদি তোরে ক্ষমা করে তইলেই তোরে ছাড়ুম!!

– এ কেমন বিচার ঠাম্মি!

তিশানা হাত তালি দিয়ে বলে,”এই না হলে আমার নানুমনি!! এক্কেবারে ঠিক সময়ে ঠিকরকম বাশ! হু এখন বুঝো চান্দু আমাদের সাথে লাগার ফল খুব তো বড় বড় কথা বলছিলে এখন কানমলা খাও!!”

বলেই হাসতে থাকে। কমলা দেবী আরও জোরে কান ধরতেই রিকেশ চিল্লিয়ে বলে,”আচ্ছা আচ্ছা ক্ষমা চাচ্ছি, আনুস্কা বউ সরি আর কখনো কিছু বলবো না!!”

আনুস্কা কিছুটা ভাব দেখিয়ে বলে,”সরিতে কাজ হবে না!”

– আবার কি করতে হবে বউ?(অসহায় সুরে)

– সকলকে ট্রিট দিতে তাও অনেক বড়।

– আচ্ছা আচ্ছা ডান এখন তো ঠাম্মিকে বলো কান ছাড়তে!

কমলা দেবী সাথে সাথে কান ছেড়ে দেয়। তিশানা আনন্দে আনুস্কাকে জড়িয়ে ধরে বলে,”থ্যাংক ইউ থ্যাংক ইউ থ্যাংক ইউ সোওঅঅঅঅ মাচচচচ বৌদী! তুমি আমাদের বেস্ট বৌদি!!!!”

– উহু এগুলা তে চলবে না আমাদের ফুলসজ্জা উপলক্ষ্যে পুরো ঘর খুব সুন্দর করে সাজাতে হবে ডান?

– ইয়াপ ডান!

রিকেশ নিজে মুখটাকে বাংলার পাচের মতো করে কান ডলতে ডলতে বলে,”ঠাম্মি এতোগুলা ছোট মানুষদের সামনে তুমি আমার ইজ্জত আর রাখলা না!”

– কি কইলি তুই বদমাইশ!!(চোখ গরম করে)

রিকেশ ভয়ে কাচুমুচু হয়ে একটা লম্বা হাসি দেয়ার চেষ্টা করে বলে,”ইয়ে মানে মজা করছিলাম!”

রিকেশের কান্ডে সকলে হেসে দেয়। হঠাৎ জাইফ বলে উঠে,”আচ্ছা তিশানা তোর না কোন ফ্রেন্ড আসছিলো নাম কি যেনো উমমম… ও হ্যাঁ তিন্নি। ওকে তো দেখছি না!”(ভ্রু কুচকে)

– আর বলিস না ওর কে যেনো অসুস্থ তাই বাসাতে চলে গেছে।

তিন্নি চলে গেছে শুনতেই যীনাতের মনে এক অজানা স্বস্তি অনুভব করলো কিন্তু কেন বুঝতে পারলো না।

আরও কিছুক্ষণ আড্ডা মাস্তি করে যীনাতের সাথে আনুস্কাকে পাঠিয়ে দিলো যেনো আনুস্কা ফ্রেশ হয়ে সব চেঞ্জ করে রেস্ট নিতে পারে। এমনিতেই কিছুদিন অনেক ধকল গেছে সবার। আজ তাদের কালরাত্রি তাই বর-কনে একসাথে থাকতে পারবে না এমনকি একে অপরকে দেখতেও পারবে না। এতে নাকি তাদের অমঙ্গল হয়। আনুস্কা চাইলে তিশানার সাথে থাকতে পারতো কিন্তু আনুস্কা আবদার করেছে যে আজ সে যীনাতের কাছেই থাকবে। তাই যীনাত আনুস্কাকে নিজের রুমে নিয়ে আসে। রুমে আসতেই আনুস্কা গিয়ে চেঞ্জ + ফ্রেশ হতে ওয়াশরুম ঢুকলো। আর যীনাত নিচে চলে গেলো আনুস্কার জামাকাপড় আর জরুরি জিনিসপত্র আনতে।

হাতে একটা জামদানী শাড়ি আর কিছু প্যাকেট নিয়ে যীনাত রুমের দিকে যাচ্ছিলো ওমনি তাকে কেউ পেছন থেকে ডাকলো।

– এইযে মিস!

যীনাত থেমে যায় এবং পিছে ফিরে তাকায়। এইটা সেই ছেলেটা মানে সোভন যে তার দিকে তাকিয়ে ছিলো। যীনাত কিছুটা দ্বিধা নিয়ে বলে,”জ্বী বলুন!”

– বৌদি কি আপনার ঘরে?

– হ্যাঁ কেন শুনেন নি?

– ওহ হ্যাঁ শুনেছি কিন্তু ভুলে গেছিলাম সরি।

– ওহ।

বলে যীনাত রুমের দিকে যেতে নিতেই আবার পিছু ডাকলো সোভন। প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে সে আবার পিছে ফিরলো কিন্তু বিরক্তি টা মুখে প্রকাশ করলো না।

– একটা কথা জিজ্ঞেস করবো!

– জ্বী..

– আপনি কি সবসময়ই মাথায় ওড়না পেঁচিয়ে রাখেন?

সোভনের কথায় যীনাত চরম বিরক্ত হয়ে যায়। তারপর নিজেকে সংগত করে বলে,”জ্বী আর কোনো প্রশ্ন?”

– নাহ সরি এমন প্রশ্ন করার জন্য আর ডিস্টার্ব করার জন্য বাই।

বলেই পিছে ফিরে হাত দিয়ে খুশিতে বিড়বিড়িয়ে “ইয়েস, ইয়েস” করতে করতে নিচে চলে গেলো আর যীনাত বেকুবের মতো সেখানে দাঁড়িয়ে ভাবতে থাকে,”আজব ছেলে তো! প্রশ্নও করলো আবার সরিও বললো! এতোই যখন সরি বলার ছিলো তাহলে প্রশ্নই বা কেন করলো আজিব!”

ভ্রু কুচকে যীনাত নিজের রুমে চলে গেলো। জাইফ নিজের রুমের দরজা কিছুটা ফাঁক করে সবটা দেখলো এবং কোনো দ্বিধা ছাড়াই যীনাতের মনের ভেতরের বকরবকর শুনে ফেললো। প্রথমে সোভনের জন্য রাগ লাগলেও এখন নিজেই অবাক হয়ে গেলো! সে কিভাবে যীনাতের মনের কথা শুনলো? কেমনে পসিবল এটা?? মাঝে মধ্যে নিকের শরীরে টুকটাক পরিবর্তন লক্ষ করেছে জাইফ কিন্তু তেমন একটা পাত্তা দেয়নি আর আজ কি হলো? ভেবে পাচ্ছে না জাইফ। ঠাসসস করে দরজা টা লাগিয়ে দেয় সে। মাথা যন্ত্রণা করছে তার কিছুটা ঘুম দরকার তার। তাই বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো আর সাথে সাথেই ঘুমের দেশে তলিয়ে গেলো।

যীনাত আনুস্কার জন্য আনা জামদানী শাড়ি আর প্যাকেট গুলো নিয়ে ঘরে ঢুকলো। ততোক্ষণে আনুস্কা সব চেঞ্জ করে একটা লম্বা শাওয়ার নিয়ে যীনাতের একটা থ্রি পিস পড়ে বেরিয়েও পড়েছে। যীনাতকে দেখে মুচকি হাসি দেয়। যীনাতও মুচকি হাসে তারপর হাতে থাকা সব বেডে রেখে বলে,”আন্টি বলেছে যেনো তুমি এগুলো পড়ো।”

– ওও আচ্ছা ওয়েট পড়ছি তুমি দরজাটা লক করে আসো।

যীনাত দরজা লক করে বেলকনিতে চলে যায় আর দূরের পরিবেশ মনোযোগ দিয়ে দেখছে। হালকা মৃদ্যু ঠান্ডা বাতাস যীনাতকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাচ্ছে। যীনাত পরম আবেশে চোখ বুজে ঠান্ডা বাতাসটা অনুভব করতে থাকে৷ প্রায় কিছুসময় পরেই রুম থেকে আনুস্কার কন্ঠ ভেসে আসে তাই যীনাত ঘরে চলে আসে এবং দেখে আনুস্কা শাড়ি পড়ে ফেলেছে। যীনাত মুচকি হেসে বলে,”তোমাকে মাহ শা আল্লাহ অনেক কিউট লাগছে!”

আনুস্কা আনন্দিত হয়ে বলে,”সত্যি! তবে এই “মাহশাআল্লাহ” কি যীনাত?(ভ্রু কুচকে)

– এটা একটা আরবি শব্দ কোনো সুন্দর বা ভালো কিছু দেখলে আমি সঙ্গে সঙ্গেই মাহশাল্লাহ বলে থাকি!

– ওওও আচ্ছা বেশ বুঝেছি। তবে তুমি আমার থেকে সবসময় কিউট জানো?

– কি যে বলোনা তুমি!

এমন সময়ই মিনি ডাকলো খাবারের জন্য। আনুস্কাকে যীনাত বললো কিছুক্ষণ পরে যাবে তাই আনুস্কা মিনির সাথে খেতে নিচে চলে যায়। যীনাত চটজলদি ওযু করে রুমে এসে নামাজ সেরে ফেলে। নামাজ শেষে যীনাতও নিচে চলে যায়। সবার সাথে খেতে বসে তবে কোথাও জাইফকে খুঁজে পেলো না। এতে যীনাত কিছুটা হতাশ হয় আবার রেগেও থাকে কারণ পুরোটা সময় সোভন যীনাতের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে খেয়েছে।

রাতের বেলা যীনাত এপাশ ওপাশ করছে কিন্তু কিছুতেই ঘুম আসছে না তার। এদিকে যীনাতের পাশে আনুস্কা বেঘোরে ঘুমোচ্ছে কিন্তু যীনাতের চোখে ঘুম নেই। সেই আড্ডার পর থেকে একবারের জন্যেও যীনাত জাইফকে দেখেনি। কেন জানিনা খুব কষ্ট লাগছে তার। কেন জাইফ একবারের জন্যেও তার সাথে দেখা করলো না? ফোনটাও কয়েকবার চেক করেছে জাইফ কোনো কল বা মেসেজ দিবে এই আশায় কিন্তু কিছুই হলো না।

এদিকে জাইফের বারবার গলা শুকিয়ে আসছে। এই পর্যন্ত ৭লিটারের পানি খতম করেছে সে তবুও যেনো তার তৃষ্ণা মিটছে না। বড় এক কোলাকোলার বোতল সমান পানি আবার ঢকঢক করে গিললো। তবুও তার পিপাসা মিটছে না। এখন সে কি করবে পাগলের মতো তার আচরণ তবুও সে নিজেকে যথেষ্ট সংগত রাখার জন্য করছে কিন্তু সে পারছে না। জাইফ গলায় হাত দিয়ে জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে থাকে আর এদিক সেদিক পাগলের মতো তাকাচ্ছে।

যীনাত হঠাৎ জাইফের রুম থেকে ধুরুম ধারুম শব্দ শুনতে পায় আর সাথে সাথেই উঠে বসে। তারপর কোনোদিক চিন্তা না করে ওড়নাটা নিয়ে একপ্রকার দৌড় লাগায় জাইফের রুমের দিকে। জাইফের রুমের দরজা ভেজানোই ছিলো ভেতরে গিয়ে দেখতে পায় পুরো রুম পানিতে ছড়াছড়ি আর জাইফ গলায় হাত দিয়ে ছটফট করছে। যীনাত চটজলদি জাইফের কাছে গিয়ে জাইফের গলা থেকে তার হাত সরিয়ে দেখতে পেলো জাইফের গলাটা সম্পূর্ণ হলুদ রঙে ছেয়ে গেছে। যীনাত কছুটা আতকে উঠে জাইফের গলার এমন রূপ দেখে। শুধু তাই নয় জাইফের ফুল বডি বরফের মতো ঠান্ডা হয়েছে যা কোনো সাধারণ মানুষ এই তাপমাত্রায় বেচে থাকতে পারবে না। এর মানে কি জাইফ মানুষ না? না সে কি করে হবে এসব ভুল ধারণা মনের মধ্যে শুধু শুধুই ভয়ের আছড় দিচ্ছে। যীনাত কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না কারণ হলুদ কালারটা লাইটের মতো চিকচিক করছে।

———————————

চলবে!!!

ওয়ারদূন আসরার পর্ব-১৭

0

#ওয়ারদূন_আসরার
#লাবিবা_ওয়াহিদ
|| পর্ব – ১৭ ||

ফজরের আযানের সময় যীনাতের ঘুম ভেঙে গেলো। পাশে ফিরতেই খেয়াল করলো জাইফ গভীর ঘুম দিচ্ছে। যীনাত একটা মুচকি হাসি দিয়ে বিছানা থেকে উঠে ওয়াশরুম চলে যায় ফ্রেশ হতে। ওযু সহ করে বেরিয়ে আসলো এবং মাথায় ওড়নাটা ভালোভাবে পেচিয়ে নেয়। তারপর জাইফকে আস্তে আস্তে ডাকতে লাগে,”এইযে শুনুন!”

———————

– এইযে??? উঠুন!

——————–

এবার যীনাত সাহস করে জাইফের কাধে হাত দিয়ে একপ্রকার ঝাকিয়ে বলে,”এইযে শুনছেন? উঠুন নামাজের সময় হয়ে গেছে।”

জাইফ ঘুমের ঘোরে ” হুম” বলে অন্যদিকে ফিরে আবার ঘুমিয়ে যায়। এবার যীনাতের মাথায় রাগ চেপে বসে। এখন উঠাবে কি করে জাইফও যে নাছোড়বান্দা এতো সহজে উঠবে না। পরে উপায় না পেয়ে যীনাতের ওড়নায় থাকা ছোট ছোট ঝুলি দিয়ে জাইফের নাকে শুড়শুড়ি দিতে লাগে। জাইফ জোরে একটা হাঁচি দিয়ে লাফ দিয়ে উঠে বসে। জাইফের কান্ডে যীনাত ফিক করে হেসে দেয়। জাইফ গাল ফুলিয়ে বলে,”এটা কি হলো?”

– কোথায় আবার কি হলো?(বুঝেও না বুঝার ভান ধরে)

– এইযে এভাবে শুড়শুড়ি দিয়ে কেউ ঘুম থেকে উঠায়?

– তো আপনি বুঝি ভালো কথায় ঘুম থেকে উঠেছেন? তাই উপায় না পেয়ে এভাবেই উঠালাম। আসলে কথায় আছে না “সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে আঙুল বালা করতে হয়!”।

– এই বলে এভাবে আমার ঘুমে জল ঢালবা?

– ওয়াশরুম থেকে মগভর্তি ঠান্ডা পানি এনে যে আপনার উপরে ফেলিনি এটা আপনার সৌভাগ্য! অনেক দেরি করেছেন এখন যান গিয়ে ওযু করে আসেন একসাথে নামাজ পড়বো।

জাইফ নাক, গাল ফুলিয়ে হনহন করে ওয়াশরুম চলে গেলো। আর যীনাত মুখ টিপে হেসেই চলেছে। জাইফ আসলেই দুইজন একসাথে নামাজ আদায় করে। যীনাত মোনাজাতে আল্লাহর দরবারে অসংখ্য শুকুরিয়া আদায় করলো তার স্মৃতি ফিরিয়ে দেয়ার জন্য। নামাজ শেষ হতেই জাইফ কিছু না বলে নিজের রুমে গিয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়লো। যীনাত বেলকনিতে দাঁড়িয়ে জাইফের ঘরে জাইফকে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখছে আর হাসছে। ছেলেটা সত্যি-ই একটা পাগল! এমন ঘুমকাতুরে কেউ হয়? তবে এতোদিনের খাটনি কি কম? অনেক খেটেছে বেচারা তাই হয়তো ক্লান্ত। হঠাৎ যীনাতের দরজায় নক পড়লো। যীনাত তড়িঘড়ি করে গিয়ে দরজা খুললো এবং দেখলো মল্লিকা দেবী দাঁড়িয়ে। যীনাত মুখে একটা হাসি ফুটিয়ে বলে,” আরে আন্টি আপনি?”

– হুম আমি তা যীনাত এখন কেমন আছো তুমি? রাতে কাজ করায় এতো ব্যস্ত ছিলাম যে তোমার খবরটা অব্দি নিতে পারিনি তাই এই ভোরেই তোমার কাছে ছুটে এসেছি।

– আমি ঠিক আছি আন্টি। তা সবাই কি এখনো আসেনি?

– না এখনো আসেনি ঘন্টাখানেকের মাঝে ওরা রওনা দিবে। আর তুমি কি কিছু খাবে খেলে আমার সাথে এসো!

– না আন্টি এখন রুমেই থাকবো আপনি যান। আমাকে নিয়ে একদম চিন্তা করবেন না।(মুচকি হেসে)

মল্লিকা দেবী মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে যীনাতের থুতনীতে হাত ছুয়ে চলে গেলো। মল্লিকা দেবী চলে যেতেই যীনাত দরজা লাগিয়ে দেয় আর তড়িঘড়ি করে বারান্দায় চলে যায়। এখনো চারপাশের অন্ধকার ঠিক ভাবে কাটেনি। চারপাশে পাখিদের গুণগুণে বুঝিয়ে দিচ্ছে সকাল হতে যাচ্ছে। আকাশে অস্পষ্ট নীল আভা! আবছা আলোয় বেশি দূর দেখা যাচ্ছে না।

যীনাত বেলকনি চুপচাপ বসে সূরা ইখলাস আর আয়াতুল কুরসি পড়লো তারপর ওয়ারদূন আসরার কে স্মরণ করতে থাকে৷ কিন্তু কোনোরকম সাড়াশব্দ নেই। যীনাত আবার চেষ্টা করলো এবারও সব বিফলে গেলো। কয়েকবার চেষ্টা করেও ওয়ারদূন আসরার এর নাম নিশানাও পেলো না। যীনাত হতাশ হলো কারণ ওয়ারদূন আসরারই তাকে অনেক কিছু জানাতে পারতো আর সাপটা? সে তো তার কথাই বুঝতে পারেনা। হয়তো তারা আরবি বুঝে কিন্তু যীনাত তো আরবি ভাষায় দক্ষ নয়। যীনাত প্রথম থেকে একে একে সবটা ভাবতে শুরু করে। হঠাৎই মনে পড়ে যায় একটা কথা। যদি কিশোর মারাই যেতো তাহলে এতো বছর পর পাগল হয়ে কি করে ফিরে আসলো? কেন সে এভাবে পাগলের মতো ঘুরছে? আর যীনাত যতোটুকু জানে কিশোর একজন কালোজাদুকর এবং তার বিভিন্ন ভয়ংকর এবং খারাপ জ্বীনের সাথেও পরিচয় আছে। আচ্ছা তারা তাকে বাচিয়ে দেয়নি তো? কিন্তু কিশোর কে মারার চেষ্টা করলোই বা কে? কারো তো এতো সাধ্য নেই কিশোরের মতো একজন শয়তান পূজারীকে মারার। প্রশ্ন! সব জায়গাতেই প্রশ্ন আছে কিন্তু তার উত্তর মিলছে না। কবে পাবে সব প্রশ্নের উত্তর? এখনো কি সবটা জানার সঠিক সময় আসেনি? যীনাতের মনে পরে যায় ওয়ারদূন আসরারের একটা কথা,”আমাকে রাজকুমারকে খোজার বিশেষ দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। কিন্তু আমি কি আদৌ সক্ষম হবো সেই বিষয়ে ভাবাচ্ছে। আমি কখনো হারিয়ে গেলেও আমাদের রাজকুমারই আমাকে ফিরিয়ে আনতে পারবে যেখানেই থাকি না কেন। কিন্তু সে কোথায় তাও জানিনা!”

হ্যাঁ রাজকুমার! কিন্তু এখন সে রাজকুমারকে পাবে কোথায়? এসব নানান চিন্তাভাবনা তার মাথায় জট পাকিয়ে রেখেছে। যীনাতের ভাবার মাঝেই কখন যে সকাল হয়ে গেলো সে টেরই পেলো না। হঠাৎ খুব বাজনা আর শাক বাজার আওয়াজে যীনাতের ধ্যান ভাঙে এবং বারান্দা দিয়ে দেখে বর-কনেকে নিয়ে বাড়ির সদর দরজার দিকে যাচ্ছে। যীনাত তখনই রুম থেকে বেরিয়ে আসলো। যীনাত বেরোতেই খেয়াল করে জাইফ ধূসর রঙের একটা টিশার্ট পরে চোখ কচলাতে কচলাতে নিচের দিকে যাচ্ছে। যীনাত উপরে দাঁড়িয়েই নিচের কাহীনি দেখতে লাগে। আনুস্কা আর রিকেশ বর-কনে সাজে আর তাদের সামনে মল্লিকা দেবী তাদের সযত্নে বরণ করছে। আশেপাশের মহিলা রা উলু দিচ্ছে আর একজন শাক বাজাচ্ছে। সকল রীতি শেষ করে বর-কনে কে ভেতরে আনা হলো। আপাতত লিভিং রুমের ফ্লোরে বিছানো বড় মোটা তোশকে বসলো তারা এবং তাদের চারপাশে তাদের কাজিনস, ফ্রেন্ডস আর কমলা দেবী। জাইফও বসলো রিকেশের পাশে। সকলেই জাইফকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে কেন সে বিয়েতে অনুপস্থিত ছিলো। জাইফ কোনোরকমে সকলকে অফিসের কাজের বাহানা দিয়ে বুঝালো পরে আর কেউ কিছু বলে না। যীনাত উপর থেকে স্পষ্ট শুনতে না পেলেও এইটুকু বুঝলো বিয়েতে না যাওয়ার জন্যই প্রশ্ন করতে হয়তো। সকলে বেশ আড্ডা দিচ্ছে আর যীনাত উপর থেকে দেখছে সবটা। নিচে গেলে নানান মানুষদের আনাগনায় তার অস্বস্তি ফিল হবে ভেবে সে আর নিচে যায়নি। হঠাৎ তার কাধে কেউ হাত রাখলেই যীনাত চমকে পিছে ফিরে তাকায় এবং দেখে তিশানা দাঁড়িয়ে।

– আরে তিশানা!

– হুম আমি এখানে কেন একা একা দাঁড়িয়ে আছো নিচে চলো।

– নাহ আমি এখানেই ঠিক আছি।

– হুম তা তো দেখতেই পাচ্ছি। চলো বলছি এখানে একা দাঁড়িয়ে কোনো কাজ নেই।

বলেই একপ্রকার জোর করেই যীনাতকে নিচে নিয়ে আসে। যীনাতকে দেখে জাইফের কাজিনদের মধ্যে একজন বলে উঠে,”এটা কে রে?”

রিকেশ জবাব দিলো,”দাদুর বন্ধুর নাতিন আর আমার বোনও বলা যায়।”

– ও আচ্ছা।

তারপর তিশানা একে একে সকলের সাথে যীনাতকে পরিচয় করিয়ে দেয়। এর মাঝে সোভন(কমলা দেবীর ছেলের বড় ছেলে) যীনাতের দিকে কেমন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। যীনাত প্রথমে ব্যাপারটা খেয়াল করলেও বিষয়টা তেমন পাত্তা দিলো না। অনেকক্ষণ পর আবারও দেখলো এবং সাথে সাথে চোখ নামিয়ে ফেলে। কমলা দেবী বলে,” আনুস্কা তুই কিন্তু আর সতীন তাই আর লগে ঠিক কইরা কথা কবি!”

রিকেশ অবাক হয়ে বলে,”ওগো কমলা সুন্দ্রী তুমি আবার কবে আমারে সোয়ামি কইরা ডাক দিলা?”

– যাহ বদ পোলা তোরে আমি সোয়ামী কইনা দেইখা তুই কি আর সোয়ামী না?

– কয়ডা লাগে তোমার কমলা রানী?(জাইফ)

জাইফের কথায় সবাই হেসে দিলো। কমলা দেবী বলে,”যেইডা ভাল্লাগবো ওইডাই লাগে বুজ্জিস?”

আনুস্কা এবার মজার সুরে বলে,”আমাদের বাসররাতে তোমারে ঢুকতে দিমু না গো সতীন!”

আনুস্কার কথায় সবাই আরও জোরে জোরে হেসে দিলো। আনুস্কার এতোক্ষণে ধ্যান আসলো, আসলে সে বললো কি এসব? ভেবেই লজ্জায় মাটিতে মিশে যেতে ইচ্ছা করছে আনুস্কার। এতো মানুষের সামনেও তো তার কিছুটা নিজেকে সামলে নেয়া উচিত। রিকেশ কি তাকে সাধে বলদি বলে।

এদিকে বেচারা রিকেশও লজ্জায় পরে যায় আনুস্কার কথায়। তারপর মুহূর্তেই আড়চোখে রাগি দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো আনুস্কার দিকে। আনুস্কা রিকেশের চাহনীতে ভয়ে কাচুমুচু হয়ে আবার চোখ ফিরিয়ে নিয়েআথা নিচু করে ফেলে। এমন সময়ই স্বর্ণা সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে বলে,”সরি গাইস সরি আসলে ফ্রেশ হতে কিছুটা লেট হয়ে গেলো।”

মল্লিকা দেবী মেয়ের কাছে এগিয়ে আসতে চাইলে স্বর্ণা মল্লিকা দেবীকে পাত্তা না দিয়ে পাশ কাটিয়ে চলে আসে এটা কারো দৃষ্টি-ই এড়ায়নি। কমলা দেবী রেগে বএল,”ওই ছ্যামড়ি মায়ের লগে কথা ক্যান কস না তুই?”

– ওহ কাম অন ঠাম্মি তোমাকে কে বললো আমি মমের সাথে কথা বলিনা?

– তইলে তার এড়ায় আইলি ক্যান?

স্বর্ণা একপলক মল্লিকা দেবীর দিকে তাকিয়ে আবার কমলা দেবীর দিকে ফিরে বলে,”ওহ সরি খেয়াল করিনি।”

স্বর্ণার কথায় মল্লিকা দেবী বেশ অপমানিত হলো। এ কেমন মেয়ে যে নিজের মাকে এভাবে অপমান করে? মল্লিকা দেবী মাথা নিচু করে সেখান থেকে চলে গেলো। এতে যেনো স্বর্ণার কোনোরকম মাথা ব্যথা নেই। যীনাত চোখের সামনে সবটা দেখেও কিছু বলতে পারলো না। সে ভেবে নিয়েছে স্বর্ণাকে ভালোভাবে বুঝাবে কিন্তু কি করে? জাইফ রেগেমেগে সেখান থেকে হনহন করে উপরে চলে গেলো৷ এই স্বর্ণা নিজেকে কি মনে করে যে উঠতে বসতে তার মাকে কথা শুনাবে! রিকেশও চরম ক্ষেপে আছে স্বর্ণার উপর কিন্তু সে পারলো না সেখান থেকে উঠে যেতে। সবাই চুপ থাকলেও আনুস্কা মুখ খুললো,”দেখো ননদীনি তুমি আমার থেকেও অনেকটা ছোট তাই তোমাকে কিছু কথা বলছি, যে মা তোমাকে ১০মাস ১০দিন পেটে ধরেছে হাজারো কষ্ট ব্যথা যন্ত্রণা সহ্য করে তোমায় প্রসব করেছে তাকে কি করে তুমি এভাবে অপমান করতে পারলে? আর জম্মের কথা তো বাদই দিলাম খাইয়ে পড়িয়ে কতো কষ্টে তোমায় এই বয়সে নিয়ে এসেছে ভাবতে পারছো? একজন মা কতোটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা তারাই বুঝে যাদের মা নেই সেখানে তোমার মা থেকেও তাকে এভাবে অবহেলা করছো অপমান করছো একটিবারের জন্যেও লজ্জা করলো না?”

আনুস্কা কথাগুলো বলার সময়ই তার চোখ বেয়ে পানি ঝরে গেলো। তারও যে মা নেই। মায়ের স্নেহ, ভালোবাসা যে কতো করে চায় সেটা একমাত্র সেই ভালো বুঝে। যীনাতেরও মনে পড়ে গেলো তার মায়ের কথা।

স্বর্ণা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে,”জাস্ট শাট আপ ভাবি এতো জ্ঞানের আমার দরকার নেই ওকে। তুমি মাত্র এই বাড়িতে পা দিয়েছো কতোটুকু জানো তুমি ওই মহিলার ব্যাপারে? আর এখনো এক ঘন্টাও পার হয়নি বাড়িতে এসেছো এতেই এতো চ্যটাং চ্যটাং কথা বলছো? লিমিটের মধ্যে থাকার চেষ্টা করবা। আমার মা আমি করবো না করবো সেটা আই থিংক আমি তোমার থেকে শিখবো না। সব কিছু বোঝার ক্ষমতা আমার যথেষ্ট আছে ওকে?

স্বর্ণার কথায় রিকেশ আরও ক্ষেপে যায় এবং জোরে ধমক দিয়ে বলে,”স্বর্ণা!!!”

———————————

চলবে!!!

ওয়ারদূন আসরার পর্ব-১৬

0

#ওয়ারদূন_আসরার
#লাবিবা_ওয়াহিদ
|| পর্ব – ১৬ ||

এভাবে প্রায় কিছুদিন যীনাত সেই ছেলেটাকে নিজের পিছু নিতে দেখেছে। একদিন তো ছেলেটা কোনোরকম কথা ছাড়াই যীনাতের হাত ধরে টেনে কোথাও নিয়ে যেতে চাচ্ছিলো। যীনাতের ধৈর্যের বাধ ভেঙে গেছিলো তাই রেগে এক চড় মেরে দিয়েছিলো ছেলেটাকে।

– কে আপনি আপনার সাহস কি করে হয় আমার হাত ধরে নিয়ে যাওয়ার। মেয়ে মানুষ দেখলে কি গায়ে পরতে মন চায়? চরিত্রহীন লোক একটা!! এতোদিন ফলো করছিলেন আর আজ কিনা… ছিহ!!!

বলেই পাশ কেটে চলে যাচ্ছিলো ওমনি ছেলেটা আবার যীনাতের হাত ধরে আটকায়। ছেলেটার চোখে মুখে রাগ স্পষ্ট!

– খুব তেজ না তোর? তুই আমার বুঝলি তুই শুধু আমার। আর সেই আমাকেই চড় মেরে অপমান করেছিস? তোকে ছুয়েছি বেশ করেছি আরও ছুবো দেখি তুই কি করতে পারিস।

বলেই জোরজবরদস্তি করে একটা মাইক্রোবাসে উঠিয়ে কোনো এক জায়গায় চলে গেলো।

যীনাতকে একটা ফার্মহাউজে নিয়ে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় আর যীনাত তাল সামলাতে না পেরে ফ্লোরে পরে গেলো। ছেলেটা পাগলের মতো হেসে বলে,”তুই আমার যীনাত এই কিশোর নারায়ানের! তোকে এতো জলদি ছেড়ে দিবো ভাবলি কি করে? আজ তোকে ৭জম্ম সামনে রেখে বিয়ে করবো!

যীনাত উঠে দাঁড়িয়ে আবার চড় মেরে বসলো কিশোরকে! এবার কিশোর রাগ সামলাতে না পেরে যীনাতকে নিজের সমস্ত শক্তি দিয়ে জোরে আরেক চড় মারে। যীনাত তাল সামলাতে না পেরে আবার ফ্লোরে পড়ে যায়। এতোটাই জোরে ছিলো চড় টা যার কারণে ঠোঁট কেটে রক্ত বেরিয়ে যায়। কিশোর এবার যীনাতের মুখোশ টান দিয়ে ছিড়ে ফেলে যার ফলে মুখোশে থাকা কিছু পিন যীনাতের কানে, গালে আর মাথায় ঢুকে ঢুকে বেরিয়ে যায়। যীনাত যন্ত্রণায় “আল্লাহ” বলে চিৎকার করে। কিশোর পাগলের মতো হেসে বলে,”যতো পারিস চেচা আজ তোর আল্লাহও তোকে আমার হাত থেকে বাচাতে পারবে না আর না ওই ওয়ারদূন আসরার!”

‘ওয়ারদূন আসরার’ শুনে যীনাত থমকে অবাক দৃষ্টিতে তাকালো কিশোরের দিকে। কিশোর কি করে জানলো ওয়ারদূন আসরারের কথা? যীনাতের মুখের ভাবভঙ্গি দেখে হাসতে হাসতে বলে,”তুই কি ভেবেছিস আমি কিছুই জানিনা? হাহা আমি সব জানি তাইতো তোকে বিয়ে করে আপন করতে চাই! এতে করে তুইও আমার হয়ে গেলি সাথে সেই ওয়ারদূন আসরারের শক্তিও আমার”

– জীবনেও না তোর মতো জানোয়ারকে কোনোকালেই বিয়ে করবো না। আর না ওই ওয়ারদূন আসরার তোকে দিবো! তুই মরবি জানোয়ার মরবি তুই!

কিশোর হেসে পকেট থেকে মরিচের গুড়া বের করে যীনাতের ক্ষতগুলোতে চাপ দিয়ে ধরলো। যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে যীনাতের গোঙ্গানি ছাড়া আর কোনো শব্দই যেনো আসছে না। যীনাতের আর্তচিৎকার যেনো চার দেয়ালের সাথে ক্রমশ বারি খাচ্ছে আর জোরে জোরে প্রতিধবনি সৃষ্টি হচ্ছে। যীনাত এতো যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে অজ্ঞান হয়ে গেলো। কিশোর হাসতে হাসতে যীনাতের মাথার কাছে হাটু গেড়ে বসে কিছুটা ন্যাকামি করে বলে,”আহারে আমার জানটা কতো কষ্ট পাচ্ছে। আমি তোমাকে কষ্ট দিতে চাইনি জান কিন্তু কি করার বলো তুমি-ই তো আমাকে রাগিয়ে দাও। যদি ঠিকঠাক ভাবে বিয়েতে রাজি হয়ে যেতে তাহলে তো তোমার এই হাল হতো না বলো।[এবার নিজের চোখমুখ ক্রমশ লাল করে বলা শুরু করে] তুই আমার না তো কারো না। আর ওই ওয়ারদূন আসরার আমার চাই। তোকে দেখেই আমি বুঝে ফেলি তোর কাছেই ‘ওয়ারদূন আসরার’ দেখেছিস আমি কতোটা পাক্কা খেলোয়াড়? সর্দার কে এই ওয়ারদূন আসরার তুলে দিতে পারলেই সে আমাকে আমার কালোজাদুতে আরও শক্তিশালী করে ফেলবে এবং আমি শয়তানের খুব কাছাকাছি যেতে পারবো!!”

বলেই জোরে জোরে হাসতে থাকলো। পরেরদিন বিকালের দিকে যীনাত চোখ খুলে নিজেকে একটা বিছানায় আবিষ্কার করলো! কষ্ট করে উঠে বসতেই মুখের জ্বালা গুলোতে কিছুটা ভ্রু কুচকে ফেলে। এমন সময়ই কিশোর রুমে ঢুকে হাতে কয়েকটা প্যাকেট নিয়ে।

– জান তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও পুরোহিত চলে আসবে কিছুক্ষণের মাঝে আমাদের বিয়ে টা তো করতে হবে নাকি?

– আমার প্রাণ থাকতে কখনো তোর মতো অমানুষকে আমি বিয়ে করবো না তার উপর ভিন্ন ধর্মের কোনো ছেলেকে!

কিশোর স্বাভাবিকভাবে হেসেই বলে,”কিছুই যে করার নেই জান এখন তুমি যা ইচ্ছা বলতে পারো কিচ্ছু বলবো না তবে বিয়েটা হওয়া জরুরি!”

যীনাত থু থু ফেলার ভঙ্গি করে বলে,”থুহ! তোর মতো একটা জানোয়ার অমানুষকে বিয়ে করবো? এর থেকে আমার মরণও বেশ ভালো।

এবার কিশোরের মাথায় রাগ চটে গেলো। সে যীনাতের চুলের মুঠি ধরে খাটের কর্ণারের সাথে দেয় জোরে বারি। যীনাত চেচিয়ে উঠে ব্যথায়। কপাল বেয়ে অনবরত রক্ত ঝড়ছে তা দেখে যেনো পৈশাচিক আনন্দ পাচ্ছে কিশোর।

– আরও বল আমি অমুক তমুক! তুই আমায় বিয়ে করবি না তো তোর ঘাড় করবে।

বলেই প্যাকেট থেকে একটা ইঞ্জেকশন বের করে সেটায় মেডিসিন দিয়ে যীনাতের রাতের পালস এ ইঞ্জেকশন টা খুব জোরে ঢুকিয়ে দেয়। যীনাত আবার চিল্লিয়ে উঠলো যন্ত্রণায়। ইনজেকশন টাতে ছিলো প্যারালাইজড করার মেডিসিন।

(এরপরের ঘটনা ট্রেইলার এবং যীনাতের স্বপ্নে আপনারা জেনেছেন)

যীনাতের দুইদিন নিখোঁজ দেখে ফয়েজ পুলিশের কাছে ডায়েরি করে। পুলিশ চারপাশে ইনফর্মার লাগিয়ে দেয়। ৩দিন পর একজন ইনফর্মার জানায় মালিবপুর গ্রামের একজন লোক নাকি একটা ছেলের সাথে যীনাতকে দেখেছিলো। সেই খবর পেতেই সকলে এই ফার্মহাউজে চলে যায়। সেখানে কাউকে দেখতে পায়না তবে এক রুমে তীব্র এসির মাঝ থেকেই যীনাতকে উদ্ধার করে তারা। যীনাতের হাত পা পুরো শরীর ঠান্ডার বরফে পরিণত হয়েছিলো। মেয়ের এমন হাল ফয়েজ সহ্য করতে পারেনা। সেদিন যীনাতের বাচার এক পার্সেন্ট চান্স ছিলো না তবুও পুলিশ তাদের ভালো এবং উন্নতমানের একটা হসপিটালে এডমিট করায়। যীনাতের অবস্থা এতোটাই খারাপ ছিলো যে সব ডাক্তারই আশা ছেড়ে দিয়েছেন কিন্তু ফয়েজ আর পুলিশ কমিশনারের অনুরোধে তারা চিকিৎসা করতে বাধ্য হয়। তারা তো অনেক আগেই ধরে নিয়েছে যীনাত বাচবে না তবুও লাইফ সাপোর্টে রাখা হলো কিছুদিন। কিন্তু কাজ কিছুতেই হচ্ছে না। তবে অদ্ভুত ভাবে যীনাত বেচে ফিরে কিন্তু কি করে কেউ বুঝতে পারেনা। সকল ধরণের চিকিৎসা দেয়া হয়। ফয়েজ আর তার ভাইরা মিলে বাইরের থেকে ডাক্তার আনায় যাতে যীনাতকে সুস্থ করতে পারে। যীনাতের ক্ষত ছাড়াও তারা যীনাতের রক্তের সাথে প্যারালাইজড এর মেডিসিন পায়। কিন্তু সেটা পরের দিনই আকর্ষিক ভাবে গায়েব হয়ে যায়। ব্যাপারটায় প্রতি ডাক্তারই অবাক হয়ে যায়। এদিকে পুলিশ কমিশনার ফার্মহাউজের মালিকের খোঁজ নিয়ে জানতে পারে যে তার নাম কিশোর নারায়ান এবং সে দুইদিন আগেই এক বড় রোড এক্সিডেন্টে মারা যায়। ভার্সিটির চারপাশের সিসিটিভি ফুটেজ থেকে জানা যায় কিশোর নারায়াণ অনেকদিন ধরেই যীনাতকে ফলো করেছে এবং যীনাতকে নিয়েও যাচ্ছিলো। এটা দেখে কারো বুঝতে বাকি নেই এসবের পিছে কে আছে। তবে এখন আর কিছুই বলার নেই কারণ যে অপরাধী সে আগেই রোড এক্সিডেন্টে মারা যায়।

একসপ্তাহ পরে যীনাত কোমায় চলে যায়। প্রায় ৭মাস পর জ্ঞান ফিরেছে। যীনাত যখন সুস্থ হলো তখন যীনাত সকলকে শুধু এইটুকুই জিজ্ঞেস করতো,”আচ্ছা আমার কি হয়েছিলো? আমি হসপিটালে কেনো?”

যীনাতের এমন ব্যবহারের কারণে ডাক্তার রা জানায়, “মাথায় গুরুতর আঘাতের কারণে বিগত কিছু মাসের কথা তার স্মৃতি থেকে মুছে গেছে। তাই আপনারা কেউ কখনো তাকে সেসব কিছু মনে করাতে যাবেন না নাহলে বড় কোনো সমস্যা ঘটে যেতে পারে।”

ডাক্তারের কথায় সকলেই ভয় পেয়ে যায় তাই যীনাতের ভালোর জন্য কেউ আর যীনাতকে কোনো প্রশ্ন করেনি।

★বর্তমান★

যীনাত ধীরে ধীরে চোখ খুকে নিজেকে নিজের রুমে আবিষ্কার করলো। আস্তে আস্তে চোখ মেলে উঠে বসে। হঠাৎ মাথায় বিজলির মতো শক খায় যেনো। সাথে সাথে দু’হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরে চোখ বুজে। দু এক মিনিট সেভাবেই থাকে তারপর স্বাভাবিক হতেই আস্তে আস্তে তার সব মনে পড়ে যায়। হ্যাঁ যীনাতের স্মৃতিশক্তি ফিরেছে। এমন সময়ই জাইফ খাবার হাতে নিয়ে যীনাতের ঘরে প্রবেশ করলো। যীনাতকে বসে চারপাশে তাকাতে দেখে জাইফ চটজলদি খাবারটা রেখে যীনাতকে গিয়ে জড়িয়ে ধরে বলে,”আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি তিনি তোমাকে সুস্থ রেখেছে। কিছুক্ষণের জন্যে তো মনে হচ্ছিলো আমার প্রাণটাই বেরিয়ে যাচ্ছিলো।”

যীনাত চুপটি করে জাইফের বুকে মাথা রেখে বসে আছে। কেন জানিনা জাইফের বুকে সে অনেকটা শান্তি উপভোগ করছে। এটা আবার কেমন অনুভূতি? জাইফ যীনাতকে ছেড়ে বলে,”তুমি কই ছিলে যীনাত? জানো কতোটা টেনশন হচ্ছিলো আমার? আর তুমি বাগানে সেন্সলেসই বা কেন ছিলে?”

জাইফের কথা এড়িয়ে গিয়ে যীনাত জিজ্ঞেস করে,”আপনি রিকেশ ভাইয়ার বিয়েতে যাননি?”

– গিয়েছিলাম! দাদু পাঠিয়ে দিসে আমাকে তোমার কাছে যদি কিছু প্রয়োজন হয় আর আমার নিজেরও সেখানে মন টিকছিলো না তোমায় নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলাম তাই….

– হুম বুঝেছি তা আমার প্রতি এতো কেয়ারিং এর মানে কি বলতে পারেন?

যীনাতের কথায় জাইফ কিছুটা থতমত খেয়ে ফেলে। হাসি মুখটা নিমিষেই মলিন হয়ে যায়। বেচারা চিন্তায় পরে যায়, কি বলবে যীনাতকে? কিছুক্ষণ চুপ থেকে শান্ত কন্ঠে বলে,”তুমি আমার অর্ধাঙ্গীনি! তাই তোমার ভালো খারাপ দেখার দায়িত্ব এবং অধিকার দুটোই আমার আছে। তাই তোমাকে নিয়ে চিন্তা, কেয়ার করবো না তো কাকে নিয়ে করবো হুম?”

যীনাত একটা মিষ্টি হাসি দেয়। আর জাইফও সেই হাসির সাথে তাল মেলায়। তারপর হাসি ছেড়ে বলে,”অনেক কথা বলা হয়েছে এখন খেতে হবে আসো। সেন্সলেস অবস্থায় তোমায় তো মনে হচ্ছিলো তোমার শরীর দুর্বল।”

জাইফ নিজ হাতে খুবই যত্নে যীনাতকে খাইয়ে দিতে থাকে। জাইফের কেয়ারগুলো যীনাতের অনেকটা ভালো লাগে আর ওদিকে কিশোরের অত্যাচারের কথা মাথায় আসলেই ভয়ে শিউরে উঠে। তবুও যীনাত নিজেকে যথাযথ ভাবে সংগত করার চেষ্টা করে যাচ্ছে যাতে করে তার মাঝে কি চলছে সেটা বাহিরে কেউ যেনো বুঝতে না পারে।

রাতে যীনাত বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ করে ভাবছে ওয়ারদূন আসরার এর কথা। সে এখন কোথায় আছে? সে সুস্থ হওয়ার পর থেকে তো তাকে সেই ড্রয়ারে পায়নি যীনাত। তাহলে কোথায় চলে গেলো? কার কাছে আছে সে সুরক্ষিত কিনা, যীনাতের সাথে দেখা কেন করছে না এসবই মাথায় ঘুরঘুর করছে। ওয়ারদূন আসরার তো তার প্রকৃত বন্ধু ছিলো। এমন বন্ধু পাওয়া বড়ই মুশকিল। আচ্ছা এই সাপটার সাথে ওয়ারদূন আসরারের কোনো যোগাযোগ আছে? যদি থাকে তাহলে তো একমাত্র সাপটাই বলতে পারবে ওয়ারদূন আসরার কোথায়। কিন্তু সাপটাকে কই পাবে সে?

এসব আকাশ পাতাল ভাবছে যীনাত। হঠাৎ খট করে কেউ তার রুমের দরজা খুললো। যীনাতের কানে শব্দ আসতেই সে লাফ দিয়ে উঠে বসে এবং উত্তেজিত হয়ে বলে,”কে, কে ওখানে?”

জাইফ ফোনের ফ্ল্যাশ নিজের দিকে দিয়ে বলে,”আমি হলাম ভূত! এসেছি তোমায় ঘাড় মটকাতে।”(ভারি কন্ঠে)

জাইফের ফাইজলামিতে যীনাত ফিক করে হেসে দেয়। জাইফ দরজা লক করে লাইট জ্বালিয়ে যীনাতের পাশে এসে বসলো।

– কেউ আসেনি এখনো?

– এতো তাড়াতাড়ি আসবে না এখনই হয়তো ওদের বিয়ে শুরু হয়েছে।

– ওওও আন্টি???

– ঘুমিয়ে পড়েছে সব চেক করেই এসেছি বুঝলে?

যীনাত মুচকি হাসে। জাইফ আবার জিজ্ঞেস করে,”এখনো জেগে আছো যে? আমি তো ভাবলাম ঘুমিয়ে পড়েছিলে!”

– এমনিহ ঘুম আসছিলো না।

এভাবে অনেকক্ষণ দুজন মিলে গল্প করলো। যীনাত গল্প করতে করতেই ঘুমিয়ে গেলো। যীনাতের ঘুমন্ত চেহারা দেখে জাইফের বেশ ইচ্ছে করছে যীনাতকে নিজের বুকে আগলে রাখতে। জাইফ যীনাতের আরেক পাশে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।

———————————

চলবে!!!

ওয়ারদূন আসরার পর্ব-১৫

0

#ওয়ারদূন_আসরার
#লাবিবা_ওয়াহিদ
|| পর্ব – ১৫ ||

– যীনাত, যীনাত?পূর্ণা এসেছে তোকে নিতে!(চেঁচিয়ে)

– আসছি আম্মা ওকে বসতে বলো।

যীনাতের মা আর কথা বাড়ায় না। যীনাত ভালোভাবে হিজাব বেধে ব্যাগ নিয়ে রুমের বাইরে চলে আসে এবং মাকে বিদায় জানিয়ে পূর্ণাকে নিয়ে ভার্সিটির দিকে রওনা হয়। দুজন মিলে কথা বলতে বলতে হাটছে এমন সময়ই পূর্ণা পিছে আড়চোখে তাকায় এবং দেখতে পায় একটা ছেলে তাদেরকেই ফলো করছে। পূর্ণা যীনাতের হাত শক্তভাবে ধরে বলে,”যীনাত দেখ এই ছেলেটা আজকেও আমাদের পিছু নিয়েছে কে এই ছেলে যে আমাদের সবসময় পিছু নেয়?”

যীনাত আড়চোখে পিছে ফিরে দেখে সত্যিই তাদের পিছে কেউ আসছে। তবুও যীনাত বলে,”তোর কেন মনে হচ্ছে এই ছেলেটা আমাদের পিছু নিচ্ছে?”

– মনে হচ্ছে মানে? আমি ১০০% শিওর পিছু নিচ্ছে এর আগেও কয়েকদিন খেয়াল করেছি তোকে না মাত্রই বললাম।

– কিন্তু আমার মনে হচ্ছে না সে পিছু নিচ্ছে। আর রাস্তা টা আমাদের একার না এখানে অনেক মানুষই চলাফেরা করে। একেকজনের গন্তব্য একেক জায়গায়!

– আচ্ছা মানলাম তোর কথা তাহলে প্রতিদিন ভার্সিটি পর্যন্ত কেন যাবে? আবার ছুটি হলেও কেন তোর বাসা পর্যন্ত যাবে বল? সে নিশ্চয়ই তোর আত্নীয় লাগে না যে তোর বাসার আশেপাশে থাকবে। দেখ বোন দুনিয়াটা এতো সহজ ভাবিস না! কার কি উদ্দেশ্য সেটা জানা বেশ মুশকিল তার আগেই আমাদের সতর্ক হতে হবে।

এবার যীনাত চিন্তায় পড়ে গেলো। ছেলেটাকে খেয়াল করেনি এমন টা নয়। যখন কোনো কাজে একা বা কারো সাথে বের হয় তখনই তার পিছে ছেলেটাকে দেখে তাও সবসময়। তবুও যীনাত এখন আর মাথা ঘামাতে চাচ্ছে না। এতোদিন পরিক্ষার অনেক ধকল গেছে তার উপর দিয়ে এখন রেজাল্ট কি হবে আপাতত সেটা নিয়ে ভাবতে চায়।

– আচ্ছা ঠিক আছে বাদ দে এসব কথা। এখন চল এমনেই আমাদের দেরি হয়ে যাচ্ছে আরও দেরী হলে রেজাল্ট পেতে অসুবিধা হবে।

পূর্ণা আর কথা বাড়ায় না। তারপর দুইজন পা চালিয়ে ভার্সিটিতে চলে যায়। ভাগ্য ভালো দুজন ঠিক সময়ে গিয়ে পৌঁছিয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ যীনাতের ভালো রেজাল্ট এসেছে তাই সে খুশিমনেই ভার্সিটির গেট দিয়ে বের হচ্ছিলো এমন সময়ই কারো সাথে ধাক্কা খায়। এইটা সেই ছেলে যে যীনাতের পিছু নিয়েছিলো তা ছেলেটার পোশাক দেখেই বুঝেছে যীনাত আর পূর্ণা! ছেলেটা অপলক ভাবে যীনাতের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে যীনাতের পাশ কেটে চলে যায় পূর্ণা বা যীনাতকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে। উভয়ই ছেলেটার ব্যবহারে অবাক হয়। পূর্ণা বলে,”যীনাত আমার ছেলেটাকে একদম সুবিধার লাগছে না। এর কোনো মতলব নেই তো?”

– আল্লাহ ভরসা আর তিনি-ই ভালো জানেন।

বলেই পূর্ণাকে নিয়ে রিক্সায় উঠে পড়ে। ছেলেটাকে নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তায় পড়েছে যীনাত। কে এই ছেলে যে সবসময় তার পিছে বা আশেপাশে থাকে? সারা রিক্সায় যীনাত এসবই ভেবে গেলো। তারপর পূর্ণাকে বিদায় জানিয়ে বাসায় চলে আসে। ওহ হ্যাঁ পূর্ণা হচ্ছে যীনাতের বড় চাচার মেয়ে। যীনাত তার মা-বাবাকে রেজাল্ট জানিয়ে নিজের ঘরে চলে আসে এবং ফ্রেশ হয়ে নেয়। ফয়েজ অলরেডি পুরো এলাকার সকলকে মিষ্টি খাওয়াতে ব্যস্ত হয়ে পরেছে। যীনাত টেবিলের ড্রয়ারের লক খুলে সেখান থেকে একটা গোলাপের মতো কলম হাতে নেয় এবং মুচকি হেসে সেই কলমকে সালাম দেয়। কমলার মাঝে যেনো তখনই জান আসে এবং সেই কমলের ফুলটাকে চোখ মুখ স্পষ্ট হয়। সেও মুচকি হেসে সালামের উত্তর নেয় এবং বলে,”কি খবর হুম? আজ খুব খুশি খুশি দেখাচ্ছে?”

– আলহামদুলিল্লাহ ভালো একটা ফলাফল এসেছে তাই হাসছি।

– আল্লাহর উপর ভরসা করলে সব সম্ভব তোমাকে আমি বলেছি না?

যীনাত মাথা নাড়ায়। তারপর আবার মুখ গোমড়া করে ফেলে। গোলাপটি বলে,”কি হলো?”

– কিছু না আজ একটা ছেলেকে খেয়াল করলাম আমার পিছু নিয়েছে। শুধু আজ নয় ইদানীং লক্ষ করছি কিন্তু কেন বিষয় টা বুঝতে পারছি না।

গোলাপটি নিশ্চুপ হয়ে ভাবতে থাকে তারপর বলে,”সাবধানে চলেফেরা করো!”

– হুম। আচ্ছা তুমি কি সত্যিই জ্বীনদের স্পেশাল কিছু?

– সেটা এখন তোমাকে বলবো না তবুও বলছি আমি যার হাতে পড়বো তার বড় কিছুতেও সাফল্য আসতে বাধ্য। তবে তোমাদের মাঝে যেমন খারাপ ভালো আছে আমাদের মাঝেও রয়েছে ভালো খারাপ। আর খারাপের মাঝে সবচেয়ে খারাপ জাতি হচ্ছে ইফরিত জ্বীন! এরা শয়তানের থেকেও ভয়ংকর এবং শক্তিশালী। আমাদের গোত্র মারিন জ্বীন। আমরা উত্তম গোত্র জ্বীনজাতির মাঝে এবং আমি তাদের-ই সম্পদ! কিন্তু আমাকে ইফরিত জ্বীন রা খারাপ ভাবে ব্যবহার করতে চাইছে ভেবে আমাকে যে আগলে রাখতেন সে তোমার কাছে আমায় দিয়ে গেছে যাতে তারা আমাকে তাদের হাতে না পায়।

– আচ্ছা তুমি একটা গোলাপ….

-(বলতে না দিয়ে) ‘ওয়ারদূন আসরার’ আমার নাম ওয়ারদূন আসরার।(রাগি ভাব নিয়ে)

যীনাত কিছুটা ভীতু হয়ে বলে,”আচ্ছা আচ্ছা মানলাম তোমার নাম ‘ওয়ারদূন আসরার’ কিন্তু এর মানে তো গোলাপ রহস্য? গোলাপ রহস্য আবার কারো নাম হতে পারে কি?”

– নিশ্চয়ই পারে এবং আমি কোনো সাধারণ গোলাপ নই। আমার মাঝের রহস্যের মাত্র ৫ শতাংশ তুমি জানক আর বাকি ৯৫ শতাংশই তোমার অজানা। তবে সবকিছু এতো জানতে চেয়ো না পরিস্থিতি কখন কোনদিকে যায় সেটা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেনা।

– হুম। আচ্ছা তোমাকে কেউ উদ্ধার করতে আসবে না?

– আসবে তো আমাদের রাজকুমার! সে যে আমার মতোই কোথায় যেনো হারিয়ে গেছে।(মুখ গোমড়া করে)

– হারিয়ে গেছে মানে?

– সেটা আমিও বলতে পারছি না তোমায়। রাজকুমার যখন ছোট ছিলো তখনই ইফরিত জ্বীনরা আমাদের রাজ্যে আক্রমণ করে যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে আমাদের রাজকুমার নিখোঁজ হয়ে যায়। অনেক গুণী ব্যক্তিরা বলেন তাকে নাকি নিরাপদ স্থানে রাখা হয়েছে। আবার অনেকেই বলে ইফরিত জ্বীনরা তাকে মেরে ফেলেছে। কিন্তু ইফরিত জ্বীনরা নিজেরাই তাকে আর আমাকে হন্য হয়ে খুঁজছে তার মানে নিশ্চয়ই তারা তাকে নেয়নি অথবা মারেনি। সেই ভরসায় আমি এখনো টিকে আছি। জানিনা রাজকুমার কোথায় আছে কেমন আছে।

যীনাত চুপচাপ থাকে। এমন সময়ই যীনাতের দরজায় কেউ কড়া নাড়লো। কড়ার শব্দে গোলাপ্টা স্বাভাবিক কলম হয়ে গেলো আর যীনাত চটজলদি কলম টা লুকিয়ে রেখে দরজা খুলতে যায়। দরজা খুলে দেখে ফুয়াদ হাসিমুখে দাঁড়িয়ে। ফুয়াদের খুশির কারণ বুঝতে বাকি নেই যীনাতের।

– আপুউউউইইই তোকে এত্তোগুলো অভিনন্দন কত্তো ভালো রেজাল্ট করেছিস তুই জানিস?

– আমি জানবো না?

– সেই উপলক্ষ্যে……

– মিষ্টি খাওয়াতে হবে তাইতো?

– উহু!

– তো কি?

– মিষ্টি তো আব্বুজান খাওয়ালোই আমরা নাহয় পিঠা খেয়ে আসি জানিস মরিয়ম চাচীর পিঠা বেশ সুস্বাদু!

– তাহলে তো খাওয়াই যায় কি বলিস?

– হুম কিন্তু এখন মনে হয়না বেচবে সন্ধ্যায় গেলে কেমন হয়?

– আম্মুজান তো বকবে!(মুখ গোমড়া করে)

– তাও ঠিক। আচ্ছা পূর্ণা আপুকেও সাথে নিলে কেমন হয়?

– পূর্ণা তখন তো কোচিং এ যায়।

– ওহ(মুখ গোমড়া করে) তাহলে নাহয় লুকিয়েই যাবো।

– পাগল হয়েছিস? বাসায় জানাজানি হলে আম্মা আস্ত রাখবে না।

– সেসব কিছু জানিনা আজ সন্ধ্যাতেই যাবো ব্যাস!

– দেখা যাক।

– নো দেখাদেখি তোকে আমি পারলে টেনে হিঁচড়েই নিয়ে যাবো বলে দিলাম।

বলেই ফুয়াদ হনহন করে চলে গেলো এদিকে যীনাত কি করবে ভেবে পায়না। শেষে সন্ধ্যার সময়ই ফুয়াদকে নিয়ে পালিয়ে চলে গেলো পিঠা খেতে। ফুয়াদ আর যীনাত বেশ তৃপ্তি করে খাচ্ছে। এদিকে ফুয়াদের মুখের এক্সপ্রেশন টাও দেখার মতো। পিঠা খেতে খেতেই যীনাতের হঠাৎ দূরে খেয়াল গেলো যে আবারও সেই ছেলেটা। ছেলেটাকে দেখে যীনাতের গলা দিয়ে আর পিঠা নামলো না। অর্ধেক খেতেই যীনাত বলে উঠে,”চল বাসায় যেতে হবে।”

– কেন আরেকটু থাকি না প্লিজ!

– না ফুয়াদ এতোক্ষণ তোর অনেক আবদার শুনেছি এখন চল আর সম্ভব না।

– কিন্তু আমার পিঠা….?

– বাসায় নিয়ে চল বাসায় খাবি এখানে আর এক মুহূর্তও থাকা যাবে না।

বলেই টাকা দিয়ে ফুয়াদের হাত ধরে টেনে নিয়ে বড় বড় কদম ফেলে হাটতে শুরু করে যীনাত। বেচারা ফুয়াদ যীনাতকে ধরতেই পারছে না এতো তাড়াতাড়ি হাটার কারণে। শেষে না পেরে দৌড়ে যীনাতের পাশে এসে হাটা শুরু করে আর বলে,”আরে আস্তে হাটো এভাবে হাটছো কেন?”

– এমনি তাড়াতাড়ি বাসায় চল নইলে দুইটারই কপালে দুঃখ আছে।

– সে নাহয় বুঝলাম….

এভাবে ফুয়াদ বকর বকর করছিলো হঠাৎ যীনাত তার পিছে সেই ছেলেটাকে দেখতে পায়। এর মানে এবারও তাদের পিছু নিয়েছে? যীনাত পারছে না এক দৌড়ে বাসায় চলে যায় কিন্তু আশেপাশের মানুষের জন্য পারলো না। ১০ মিনিটের রাস্তায় দুজন ৫মিনিটে চলে আসে। বাসায় আসতেই দুজনেই কানমলা খেলো মায়ের হাতে এভাবে একা একা বের হওয়ার জন্য।

———————————-

চলবে!!!
(এটা যীনাতের অতীত। গঠনমূলক মন্তব্যের প্রত্যাশায় রইলাম)

বিঃদ্রঃ গল্পটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক এর সাথে বাস্তবের কোনো মিল নেই।