ওয়ারদূন আসরার অতিরিক্ত অংশ

0
1120

#ওয়ারদূন_আসরার
#লাবিবা_ওয়াহিদ
|| অতিরিক্ত অংশ ||

তিশানা বারবার যীনাতকে কল করছে কিন্তু যীনাতকে ফোনে পাচ্ছে না। তিশানা তো কেঁদেই চলেছে আর আনুস্কা তিশানাকে সামলানোর চেষ্টা করছে।

– আমি কিভাবে শান্ত হবো বৌদি বলতে পারো? নানাদুকে কথা দিয়েছি যীনাতকে চোখে চোখে রাখবো এখন যীনাতকেই তো হারিয়ে ফেললাম।(কাঁদতে কাঁদতে)

– আমি তো বুঝতে পারছি তিশানা কিন্তু এভাবে কাঁদলে চলে বলো ঠান্ডা মাথায় তো যীনাতকে খুঁজতে হবে নাকি?

তিশানার কানে যেনো কোনো কথাই যাচ্ছে না। সে ডুকরে কেঁদে উঠলো। এমন সময়ই একপ্রকার দৌড়ে জাইফ তাদের কাছে এলো এবং হাপাতে হাপাতে বলে,”যী.. যীনাত কোথায়?”

জাইফের কথায় আরও কান্নায় ভেঙে পড়ে তিশানা। এভাবে তিশানাকে কাঁদতে দেখে জাইফ ধমকের সুরে বলে,”থামা তো কান্নাকাটি যা জিজ্ঞেস করেছি তার উত্তর দে যীনাত কিভাবে নিখোঁজ হলো?”

জাইফের ধমক খেয়ে তিশানা ভয়ে চুপসে গেলো তারপর ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বলে,”আমি আর বৌদি সামনে এগোচ্ছিলাম আর যীনাত পিছে ছিলো। যীনাতের কথা মনে হতে যেই পিছে ফিরে যীনাতকে ডাকবো ওমনি দেখি যীনাত নেই। এর বেশি আমি কিচ্ছু জানিনা!”

জাইফের মনে একটা ভয় নাড়া দিলো। তবুও নিজেকে সামলে উত্তর দেয়,”ঠিক আছে আমি ওকে খুঁজে নিয়ে আসছি তুই আর বৌদি ওই রেস্টুরেন্টে গিয়ে বস আর হ্যাঁ বাড়ির কেউ যেনো কিছু না জানে।”

বলেই জাইফ আর এক মুহুর্ত দেরি না করে সেখান থেকে চলে গেলো। কিন্তু যীনাতকে সে কই খুঁজবে?

যীনাতকে টানতে টানতে এক গভীর জঙ্গলে নিয়ে আসে কিশোর। যীনাত এক হাতে নিজের মুখের বাধন খোলার চেষ্টা করছে কিন্তু এতো জোরে গিট্টু দিয়েছে এক হাত দিয়ে খুলতে পারছে না চেঁচাতেও পারছে না। যীনাতের বাম হাত দিয়ে ডান হাত কিশোরের হাত থেকে বৃথা চেষ্টা করে যাচ্ছে। কিশোর যীনাতকে একটা ভাঙ্গা খড়কুটোর ঘরে এনে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় আর যীনাত তাল সামলাতে না পেরে কাঁদামাটির মেঝেতে হুঁমড়ি খেয়ে পড়ে। কিশোর যীনাতের কাছে দুই হাটু গেড়ে বসে পাগলের মতো হেসে হেসে বলে,”কি যীনাত বলেছিলাম না তোকে যখন আমার হাতে পরবি তখন তোকে আমার হাত থেকে কেউ বাচাতে পারবে না কথাটা মিলেছে তো?”

যীনাত নিজের এক পা দিয়ে কিশোরকে লাথি দিতে গেলেই কিশোর যীনাতের পা ধরে ফেলে তারপর একটা শয়তানি হাসি দিয়ে বলে,”হাত পা একটু বেশি-ই চলে তোর তাইনা?”

বলেই যীনাতের পায়ে খুব জোরে মোচড়ে দিলো। মুখ বাধা থাকায় চিল্লিয়ে উঠতে পারলো না। তার এই আর্তনাদ চাপাই হয়ে গেলো। যন্ত্রণায় শুধু কাঁতরাচ্ছে যীনাত। আর চোখ দিয়ে অনবরত জল গড়িয়ে পড়ছে। কিশোর উঠে তার গায়ে থাকা ময়লা পোশাক টা খুলে এক পা এক পা করে যীনাতের দিকে এগোতে থাকে। যীনাত সেই অবস্থাতেই দু’হাতে ভর করে পেছোচ্ছে। কিশোর অট্টহাসি দিয়ে বলে,”আজ তোকে আমার হাত থেকে কেউ বাচাতে পারবে না যীনাত। আজ তোকে আমি খুবলে খাবো!”

বলেই যেই যীনাতকে ধরতে যাবে ওমনি কিশোর ছিটকে পড়ে। যীনাত তখন চোখমুখ খিচে ছিলো। সব নিরব দেখে যীনাত পিটপিট করে চোখ খুলে কিশোর থেমে কেন গেলো। দূরে তাকিয়ে দেখলো জাইফ আর কিশোরের মাঝে ধস্তাধস্তি চলছে। জাইফকে দূরে ধাক্কা দিতেই জাইফ কিছুটা ছিটকে দূরে চলে যায়। কিশোর তৎক্ষনাৎ নিজের আসল রূপে ফিরে। কিশোরের আসল রূপ দেখে যীনাত যেই জ্ঞান হারাবে তখনই নূরা’স যীনাতের পিছে দিয়ে এসে যীনাতকে নিজের লেজ দিয়ে পেচিয়ে নেয়। এতে যীনাতের কষ্ট, ভয়, খারাপ লাগা সব যেনো চলে যেতে থাকে। যীনাত আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হয়। কিশোরের চেহারা কুচকুচে কালো একদম পোড়া মাংসের মতো। তার তার চোখ দিয়ে অনবরত গলগল করে সাদা সাদা ফ্যানা বেরোচ্ছে। আর পুরো শরীরে ময়লা কালো কুচকুচে পশমে ভরা। তা দেখে কোনো সাধারণ মানুষ নিজেকে সামলে রাখতে পারতো না। যীনাতের পাশে নূরা’স থাকায় তার ভয়গুলো চলে যায় তবুও বারবার শুকনো ঢোক গিলছে যীনাত। জাইফ এবার শূন্যে উঠে যায় এবং সে নিজেও নিজের আসল রূপে ফিরে আসে। কিশোরের যেমন কুৎসিত রূপ জাইফ তার বিপরীত। জাইফের সৌন্দর্য আরও চারগুণ প্রকাশ পেলো তার আসল রূপে। জাইফের সৌন্দর্যের ঝলকে অন্ধকার কুড়েঘরটা যেনো পবিত্র আলোয় ঘরটা খা খা করছে। জাইফের মাথায় এক অন্যরকম সুন্দর মুকুট যেটার সৌন্দর্য প্রকাশ করার কোনো ভাষা নেই। মুকুটটি দেখে কিশোর হেসে বলে,”ওও তাহলে তুই-ই রাজকুমার? যাক ভালোই হয়েছে এখন দেখ কিভাবে তোর বিনাস আমার হাতে হয়!”

জাইফের এমন রূপ আর কান্ড দেখে যীনাত এমনেই অবাক হয়েছিলো তারপর যখন শুনলো জাইফই রাজকুমার তখন তো অবাকের চরম পর্যায়ে চলে যায় যীনাত। এর মানে এতোদিন ওয়ারদূন আসরার যেই রাজকুমারের খোঁজে ছিলো সেটা আর কেউ না যীনাতেরই জীবনসঙ্গিনী জাইফ!! যীনাত হা করে জাইফের দকে তাকিয়ে রয়।

জাইফ ভিলেনি একটা হাসি দিয়ে বলে,”হ্যাঁ ঠিক ধরেছিস আমি-ই রাজকুমার এখন কে কার হাতে বিনাস হবে সেটা না হয় সময় বলবে? আর তুই আমার কলিজার উপর এতোদিন অনেক অত্যাচার করেছিস, তুই আমার যীনাতকে যতোটা না আঘাত করেছিস তার প্রতিটা আঘাত তোকে দ্বিগুণে গুণে গুণে দিবো।”

বলেই জাইফ কিছু ফুল কিশোরের দিকে ছুড়ে মারে। কিশোর অট্টহাসি দিয়ে বলে,”হাহাহাবতুই তো দেখছি আমাকে ফুল দিয়ে স্বাগতম করছিস আবার বলিস আমায় আঘাত করবি হা হা হায়ায়ায়া!”

জাইফ মুচকি হেসে বলে,”আগে আগে দেখ কি হয়!”

কিশোর তখনো হেসে চলছিলো হঠাৎ তার মনে হলো তার শরীরের কিছু কিছু অংশ ঝলসে যাচ্ছে। কিশোর তৎক্ষনাৎ হাসি থামিয়ে নিকের দিকে তাকালো এবং দেখলো তার শরীরে যেসব জায়গায় ফুল ঘেষে চলে গেছে সেসব জায়গা ভয়ংকর ঘায়ে পরিণত হয়েছে তার যন্ত্রণা মৃত্যুযন্ত্রণার থেকে ভয়ংকর! কিশোর সাথে সাথে ভয়ংকর প্রাণির ন্যয় আর্তনাদ দেয়। যীনাত ভয়ে গুটিশুটি হয়ে সাপটাকে জড়িয়ে ধরেছে। প্রায় কিছুক্ষণ কিশোর সেই জ্বালা সহ্য করলো কিন্তু এতে জাইফের মন ভরলো না তাই সে বিজলির শক খাওয়ালো কিশোরকে। বিজলির শক খাওয়ায় কিশোর নিজের বাকশক্তি হারিয়েছে। সে মেঝেতে পড়ে পানি ছাড়া মাছের মতো কাতরাচ্ছে। জাইফ নিজের ডান হাত উঁচু করতেই ওয়ারদূন আসরার তার হাতে আসলো। যীনাত অবাক হয়ে তাকালো ওয়ারদূন আসরারের দিকে। ওয়ারদূন আসরার তখনই জাইফের হাত থেকে নেমে এক ভয়ংকর বিশাল প্রাণীতে পরিণত হলো এবং লোমহর্ষক গর্জন দিয়ে উঠে। এতো বড় প্রাণী দেখে কিশোরের যায় যায় অবস্থা। ওয়ারদূন আসরার কিশোরকে হা করে মুখে পুড়ে নিলো তারপর আচ্ছাশিড় চিবুতে থাকে। অনেকক্ষণ চিবিয়ে থু থু ফেলার মতো করে সে কিশোরকে ফেলে দেয়। তখন কিশোরের অবস্থা অনেকটা খারাপ। ওয়ারদূন আসরার বলে,”তোদের মতো শয়তানকে আমি খেয়ে হজম করিনা। তোদের কে তো আমার ভয়ংকর আগুনে মরতে দেখতে পছন্দ করি!”

বলেই ওয়ারদূন আসরার বড় বড় আগুনের গোলা কিশোরের উপর ফেললো। কিশোর চিল্লিয়ে উঠলো আর মুহূর্তেই পুড়ে ছাই হয়ে গেলো। জাইফ শূন্য থেকে মাটিতে পা রাখলো এবং নিজের আসল রূপ ছেড়ে নরমাল রূপে আসলো এবং একপ্রকার ছুটে যীনাতের কাছে এলো। ওয়ারদূন আসরারও নিজের আগের রূপে ফিরে উড়ে উড়ে যীনাতের কাছে আসলো। যীনাতের পা এমন ভাবে মোচকে দিয়েছে শয়তান টায় যে যীনাত নড়তে অব্দি পারছে না শুধু ছলছল চোখে সবাইকে দেখছে। ওয়ারদূন আসরার জাইফকে বললো যেনো একটা পাত্রে পানি নিয়ে আসে। ওয়ারদূন আসরারের কথা অনুযায়ী জাইফ বাতাসের গতিতে গিয়ে চোখের পলকে ফিরে আসে পাত্রে পানি নিয়ে। ওয়ারদূন আসরার নিজের গা থেকে একটা পাঁপড়ি আলাদা করে সেই পানিটাতে রেখে পানিতে মিশিয়ে দেয় তারপর বলে,”যীনাত এই পানীয় টা খাও।”

জাইফ যীনাতকে সযত্নে পানীয়টা খাইয়ে দেয়। মুহূর্তেই যীনাত নিজের সেই পা নড়াচড়া করতে পারলো এর মানে ব্যথা সেরে গেছে। যীনাত তখনই ওয়ারদূন আসরারকে দু’হাতে নিয়ে কেঁদে উঠে।

– আপনি কোথায় চলে গিয়েছিলেন ওয়ারদূন আসরার? জানেনা আপনার জন্য কতোটা চিন্তা হচ্ছিলো? কেন আমাকে একবারের জন্যেও দেখা দিলেন না কেন হুট করে চলে গিয়েছিলেন? যখন থেকে আমার স্মৃতি ফিরেছে আমি আপনাকে অগণিত স্মরণ করেছি কেন আপনি কোনোরকম সাড়া দিলেন না বলুন?

ওয়ারদূন আসরার কোনো জবাব দিলো না। জাইফ ওয়ারদূন আসরারকে যীনাতের হাত থেকে ছাড়িয়ে আবার ওয়ারদূন আসরারকে নিজের ডান হাতে নিয়ে হাত মুঠিবদ্ধ করে ফেলে এবং ওয়ারদূন আসরার অদৃশ্য হয়ে যায়। জাইফ যীনাতকে বুকে আগলে নেয়৷ যীনাতের চোখের সামনে ভেসে উঠতে কিছুক্ষণ আগের সব ঘটনা আর জাইফের মনে পড়ছে যীনাতের তখনকার কথা৷ জাইফ যদি আরেকটু দেরি করতো তাহলে যীনাতকে শয়তানটা কি অবস্থা করতো ভাবতেই জাইফের গায়ে কাটা দিয়ে উঠছে। ভাগ্যিস যীনাতের মাথায় মণিটা ছিলো। সেটার জন্যে নূরা’দের মাধ্যমে যীনাতের অবস্থান পেয়েছিলো। হ্যাঁ যীনাত কখন কোথায় যায় সেটা জানার জন্য যীনাতের মাথায় মণিটা রাখা হয়েছে যীনাতের অজান্তে। এবং কোনো বিপদ হলেও সেই মণির মাধ্যমেই সেই আভাস সবাই পেয়ে যায়। আর মণিটার সুরক্ষিত জায়গা হলো যীনাতের মাথা। এর ফলে কেউ জানতে পারবে না সেই বিশেষ অমূল্য মণিটা কোথায় আছে।

আজকে ওয়ারদূন আসরারই তাকে রক্ষা করলো।

———————————

চলবে!!!

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে