Friday, July 18, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1568



তোমার নেশায় আসক্ত ২ পর্ব-০৮

0

#তোমার_নেশায়_আসক্ত
#সিজন:2
#পর্ব:8
#Suraiya_Aayat

জোরো পিছন থেকে ঘেউ ঘেউ করছে আর আরূও আরিশের জ্যাকেটটা খামছে ধরে রেখেছে, আর চোখ মুখ খিচে রেখে দিয়ে আরিশের বুকে মাখা রেখে দিয়েছে…..
আরিশ একটা টেডি স্মাইল দিল…..
হঠাৎ জোরো আরুর পায়ের কাছে মুখ নিয়ে আসতেই আরু আরিশকে আঁকড়ে ধরল দেখে যেন বহু যুগ পরে আজকে ফিরে পেয়েছে আরিশকে….
আরিশ ইশারায় জোরোকে কিছুটা দূরে সরে যেতে বলতেই জোরোও আরিশের ঈশারা বুঝে কিছুটা দূরে সরে গিয়ে চুপ করে থাকলো…..

অনেকক্ষণ হয়ে গেল জোরো শান্ত হয়ে গেছে তবে আরু এখনও ভয়ে আরিশকে ছাড়ছেনা….
আরিস প্যান্টের পকেট থেকে হাত টা বার করে হাতটা সামান্য উঁচু করে ঘড়ির দিকে একবার চোখ রাখলো ,তারপর বললল,,,,,,
__”এই যে ম্যাডাম শুনছেন ! বিগত আট মিনিট ধরে আপনি আমাকে এভাবেই জড়িয়ে ধরে রখেছেন, তা ছাড়বেন না নাকি, নাকি ভালো লাগছে এভাবে থাকতে….”

আরিসের কথাটা শুনে আরু বুঝতে পারল যে ও এতক্ষণ ধরে আরিশকে জড়িয়ে রয়েছে , ওভাবেই জড়িয়ে ধরে কত যে সময় সময় পার করেছে তার খেয়াল টুকুও নেই তবে যতক্ষণ ও আরিশের সংস্পর্শে ছিল ততক্ষণ নিজেকে সেব ফিল হয়েছে…..

আরু থতমত খেয়ে বললো,,,,,
__” আপনার এই বেয়াদব কুকুরটার জন্য এরকমটা হলো , না হলে আমার কোন শখ ছিল না এতক্ষণ ধরে আপনাকে জড়িয়ে ধরে থাকার ৷”

জোরো যেন আরূর কথা বুঝতে পেরে আরূর কাছে এসে ঘেউ ঘেউ করতেই আরূ ভয় পেয়ে পুনরায় আরিশকে জড়িয়ে ধরলো আগের তুলনায় আরো বেশি শক্ত করে ৷ এবার ভয়ে আরুর চোখের জল চলে এলো,চোখের জলটা চোয়াল বরাবর গড়িয়ে পড়ছে আর আরিশের টিশার্টটা ভিজে যাচ্ছে ক্রমাগত…..

আরু কাঁদতে কাঁদতে বলল,,,,,,
__” প্লিজ আপনার এই কুকুরটাকে সরান এখান থেকে ,আর আমাকে প্লিজ বাড়িতে দিয়ে আসুন ৷ (আরিশের জ্্যকেট খামছে ধরে)৷

__” কিন্তু আমি তো জানি যে কেউ একজন বলেছিল ,আমাকে তার বাড়ির ঠিকানা বলার প্রয়োজন বোধ করে না ,সো হোয়াট ক্যান আই ডু?”

__” আমি বলছি তো, আপনি প্লিজ আমাকে বাসায় দিয়ে আসেন আর এই কুকুরটাকে আমার কাছ থেকে সরান ৷” (আগের তুলনায় আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে ৷)

__” তা আপনি ছাড়লে তারপর তো আপনাকে আমি বাড়িতে দিয়ে আসবো নাকি ! নাকি এভাবেই সারা রাস্তা হাঁটবেন আমাকে জড়িয়ে ধরে…”

আরু আরিশকে ছেড়ে চোখটা মুছে আরিশের এক পাশে দাঁড়ালো , একদম জোরোর অপজিটে , যাতে জোরো ওর কাছে আসতে না পারে ৷
আরু আগে কখনো কুকুরকে এত ভয় পেত না যতটা না এখন পাই ৷ একবার ওর ছোটবেলায় ওদের বাড়িতে একজন গেস্ট এসেছিলেন সঙ্গে কুকুর নিয়ে ,কুকুরটা বিদেশি আর দেখতেও বেশ কিউট ছিলো তাই সেই কুকুরকে আদর করতে গিয়ে সেই কুকুরটা ওকে কামড়ে দিয়েছিল তারপর থেকেই কুকুরের প্রতি ওর যত ভয়….

__” কি হলো চলুন, এভাবে দাঁড়িয়ে থাকলে হবে , আমাকেও তো আমার বাসায় ফিরতে হবে তাইনা !”

__” আগে আপনি চলুন তারপর আমি আপনার সাথে সাথে যাচ্ছি ৷”

আরিশ আর কিছু না বলে হাঁটতে শুরু করল ৷ আরু ওর পাশে হেঁটে যাচ্ছে তবে প্রচন্ড ভয় লাগছে মনে , মাঝে মাঝে আরিশ কে পার করে উঁকি মেরে দিখছে যে জোরো ওর থেকে ঠিক কতটা দূরে আছে….

__” সমস্যা কি? এভাবে উঁকিঝুঁকি মারছেন কেন ? এরকম করলে তো জোরো আরও আপনার দিকে তেড়ে আসবে ৷”

আরুশি এবার কাঁদো কাঁদো হয়ে বলল,,,,,
__’ আপনার হাতটা আমি একটু ধরতে পারি, যদি কিছু মনে না করেন ৷ আসলে আমার খুব ভয় লাগছে….’

__’ হমমম ,বাট বাই দ্যা ওয়ে আমি আপনাকে এতোটা হেল্প করতে যাব কেন বলুনতো ? মানে আপনাকে এতটা পথ পায়ে হেটে আপনার বাড়ি অব্দি আপনাকে পৌঁছে দিয়ে আমার কি লাভ হবে বলতে পারেন?”

আরু কাচুমাচু ফেস করে বলল,,,,,,
__” একটা অসহায় মেয়েকে এত রাতে একটু বাড়িতে আসবেন তাতে আবার লাভ-ক্ষতি দেখছেন ! কেমন মানুষ আপনি হুঁ !”

আরিশ এবার আরুশির কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল,,,,,,,
__” তাহলে আপনি আপনার মতো বাসায় একা একা যান, আর রাস্তায় জোরোর মতো আরো বিশ খানা কুকুর আছে তাই বলছিলাম আর কি ৷”

কথাটা শুনে আরু খুব ভয় পেয়ে গেল, আমতা আমতা করে বলল ,,,,,
__” কি কি কি চান আপনি?”(তুতলিয়ে)

আরিস পাগল করা একটা হাসি দিয়ে বললল,,,,,,
__” যা বলবো যেকোন মূল্যে আপনাকে দিতে হবে ৷ যা চাই তাই দেবেন তো আপনি..?.”

__” কি কি কি চাই আপনার?”

__” তোমাকে চাই ৷”

কথাটা শুনে আরূর চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেল,,,,,, তাড়াতাড়ি আরিশের কাছ থেকে কিছুটা দূরে সরে এসে বললো ,,,,,,
__” এসব কি বলছেন আপনি? আমাকে চাই মনেটা কি ?”

হো হো করে হাসতে হাসতে বলল ,,,,,,,
__”আপনি ভাবলেন কি করে যে আমি আপনাকে চাইবো, লাইক সিরিয়াসলি !
বয়েই গেছে আমার আপনাকে চাইতে , আমি তো চাই আপনি একদিন আমার বাড়িতে এসে আমার বেডরুমটা সযত্নে পরিষ্কার করে দেবেন, যেটা সব সময় পরিস্কারই থাকে ৷”

আরুশি এবার আরিশের কথা শুনে হাফ ছেড়ে বাঁচল, তারপরে একটু ঝাঁঝ নিয়ে বলল,,,,,,
আপনার ঘর আমি কেন পরিষ্কার করতে যাবো হ্যাঁ!আর তাছাড়া আমাকে দেখে কি আপনার কাজের বুয়া বলে মনে হয় যে আমি আপনার ঘর পরিষ্কার করতে যাব ৷”

__” ওকে ঠিক আছে তাহলে আপনি একাই বাড়ি চলে যান আর মাঝ রাস্তায় আপনার কিছু হলে আমাকে কিছু বলতে আসবেন না ৷”
বলেই আরিশ যখন চলে যেতে যাবে আরূ তখন আরিশের হাত দুটো আঁকড়ে ধরল ৷

__” এই না আপনি যাবেন না, আমি তো মজা করে বলছিলাম৷”( মুখে মিথ্যা হাসি ফুটিয়ে)
“__ আচ্ছা আপনার কথা রাখতে আপনার বেডরুম আমি একদিন পরিষ্কার করে দেবো তবে আপনি আপনার বেডরুমে আমাকে ঢুকতে দেবেন ! মানে আপনি তো কাউকে এলাও করেন না ৷”

আরিশ ভ্র কুঁচকে বললল,,,,,,
__” আমার বউ ছাড়া ওই ঘরে কাউকে ঢোকানোর ইচ্ছা আমার নেই তবে কাজটা তো আপনাকে দিয়েই করাতে হবে তাই ৷ আর সব সময়ের জন্য তো ঢুকতে দিচ্ছি না একদিনের জন্যই দিচ্ছি জাস্ট টু ক্লিন মাই রুম , নাথিং এলস…”

আরুশি মাথা নিচু করে বলল ,,,,,,
__” ওকে ৷”

__” এবার কি আমরা যেতে পারি মিস?”

__” তবে আমার নাম মিস নয় , আমার একটা সন্দর ধাম নাম আছে, আমার নাম বিনতে আরুশি রহমান সবার আরু বলেই ডাকে ৷”

__” আপনার নামটা সুন্দর নাকি বিশ্রি তা কি আপনি ঠিক করবেন ! হোয়াট এভার ৷” (ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে)

আরু আরিশের কান্ড দেখে মুখ ভাঙালো ৷ এই প্রথম আরু এমন কাউকে দেখতে যে ওকে সম্পূর্ণরূপে ইগনোর করছে, এর আগে কেউ এমন টা করেনি বরং সবার ওর সঙ্গে কথা বলার জন্য উতলা হয়ে যায় কিন্তু আরিশ তেমনটা নয়….

সারা রাস্তায় আরু আর কিছু বলেনি ৷ প্রায় 15 মিনিট হাঁটার পর ওরা আরুশির বাড়ির সামনে চলে আসতেই আরু আর বেশি কাছু না ভেবে দৌড় দিল বাড়ির দিকে ….

আরিস ওপরের ঠোট দিয়ে নিচের ঠোটটা আঁকড়ে ধরে মুচকি মুচকি হাসছে ৷
বিপরীত পথে হাঁটতে হাঁটতে ফোনটা বার করে কল দিল….

বাড়িতে ঢুকেই আরূ দৌড়ে ওর বিছানায় গিয়ে ব্যাগটা রেখে ওখানে বসে পড়ল, আজকে ও যা ভয় পেয়েছে তা বলার বাইরে ৷ হঠাৎ করে ব্যাগের ভিতর ফোনটা বাজতেই ফোনটা বার করে দেখল আননোন নাম্বার থেকে ফোন এসেছে ৷

ফোনটা ধরতেই অপর পাশ থেকে বলতে লাগলো,,,
__” কাউকে বাড়ি পৌঁছে দিলে থ্যাঙ্ক ইউ টুকু যে বলতে হয় সেটুকু বোধ হয় আপনার ডিকশনারিতে নেই ৷”

হঠাৎ আরিশের গলার আওয়াজ শুনে থতমত খেয়ে গেল আরু,,,,
__” আপনি আমার নাম্বার পেলেন কোথা থেকে?”

__” নাম্বার পেলাম কোথা থেকে দ্যাট ইজ নট ইম্পর্টেন্ট , আপনি আমাকে থ্যাংক ইউ জানালেন না সেটা ইম্পর্টেন্ট ৷ কেউ হেল্প করলে তাকে থ্যাংকিউ জানাতে ভুলবেন না নেক্সট বার ৷ আর যদি বলেন নাম্বারটা কোথা থেকে পেয়েছি তাহলে আমি বলব কলেজ থেকে পেয়েছি কারণ নতুন ব্যাচের স্টুডেন্টদের সব দায়িত্ব আমাদের ওপর তাই ফোন নাম্বারগুলো ফোনে সেভ করাই থাকে তাই সেখান থেকে আপনার নাম্বারটা খুঁজে নিতে অসুবিধা হলো না, না হলে আমি আমার ফোনে আপনার নাম্বার কেন রাখতে যাব হমম !
আই এম নট এ সাইকো ৷”
বলে ফোনটা রেখে দিল,,,,,,

আরিসের গলায় সাইকো কথাটা শুনেই আরুশির বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠলো , অদ্ভুত এক আশক্তি আছে আরিসের কথার মাঝে যা শুনলে নিজেকে হারিয়ে ফেলতে ইচ্ছা করে আরূর….

চলবে,,,,,,

তোমার নেশায় আসক্ত ২ পর্ব-০৭

0

#তোমার_নেশায়_আসক্ত
#সিজন:2
#পর্ব:7
#Suraiya_Aayat

প্রায় এক সপ্তাহ হয়ে গেল প্রান্তর মা সুস্থ হয়েছেন , উনাকে বাড়ি শিফট করা হয়েছে হসপিটাল থেকে ৷ আরিশ ওদের ধানমন্ডির বাসায় প্রান্তর মাকে রাখতে চেয়েছিল কিন্তু একেই প্রান্ত আরিশের কাছে থাকে ওর সব দায়িত্ব আরিশের ই বলতে গেলে প্রায়ই আর তার ওপরে ওর মা আসলে তার একটা দায়িত্বভার আরিশের উপর চাপবে সেই কারণে প্রান্ত ওর মাকে আরিশদের ধানমন্ডির বাসায় রাখেনি , ওর নিজের বাড়িতেই পাঠিয়েছে তবে সঙ্গে একটা আয়া রেখেছেন ওর মায়ের দেখাশোনা করার জন্য ৷ বিয়ের ব্যাপারটা নিয়ে প্রান্ত এখনো কিছুই ভাবছে না তবুও আরিশ ওর বিয়ে দেবে ৷ সামনে ওদের টেস্ট এক্সাম তাই ওদের exam শেষ হলে প্রান্তর বিয়েটা দেবে বলে ঠিক করেছে আরিস ৷

এই এক সপ্তাহের মধ্যে আরিসের সঙ্গে আরূর খুব কমই দেখা হয়েছে যেহেতু আরিসের কলেজে এক্সাম সেই কারণে খুব একটা আসতে পারছে না , আর তা নিয়ে প্রিন্সিপাল ও কোন সমস্যা করেননি আর কারণ উনি জানেন আরিশ কলেজে আসলেও বা কি আর না আসলেও বা কি ওই টপার হবে বরাবর যেমনটা হয়ে আসছে ৷

হাতে ফোনটা নিয়ে বসে আছেন অনিকা খান, তার সামনে বসে আছেন আফজাল খান ৷ দুজনের মুখেই চিন্তার ছাপ , ভাবছেন শুধু এটাই জানিস যে আরিশকে বিয়ের কথাটা বলবে কিভাবে?যদি কথাটা শুনে উল্টে রেগে যায় তাহলে ওকে সামলানো খুব মুশকিল…..

অনিকা খান ভীতু ভীতু চোখে আফজাল খান এর দিকে তাকিয়ে বললেন ,,,,,,
__”কথাটা কি আমাকেই বলতে হবে , তুমি বললে কি হয় না ?”

__”ও আমার থেকে তোমার কথা শুনবে বেশি, জানোই ও তো তোমার কথা কখনো ফেলতে পারে না ৷”

অনিকা খান শুকনো গলায় ঢোঁক গিলে সানার দিকে তাকালেন,,,,,,,

__”সানা মা তুই বল তোর ভাইয়াকে ,ও তো তোকে খুব ভালোবাসে, তোকে কিছু বলবে না ৷ ফোনটা তুই কর ৷”
ঊনি সানার হাতে ফোনটা দিতে চাইলেই সানা ওখান থেকে উঠে গেল ৷

__”আমার মাথা খারাপ যে আমি ওকে ফোন করে বলবো ওর বিয়ের কথা ৷ ওর উপরে কথা বলার কোনো সাহস নেই আমার আর সেখানে বিয়ের প্রস্তাব দেবে তো আমার কাছে আসমান থেকে ধপাস করে পড়ার মত অবস্থা ৷”

আফজাল খান এবার মিনতির সুরে বললেন,,,,,
__” ফোনটা তুমিই করো,কথাটা যখন বলতেই হবে তখন দেরি করে লাভ নেই , তুমি একবার শুরু করো তারপর আমি তোমার সাথে গলা মিলাবো চিন্তা নেই৷”

অনিকা খান এবার ফোনটা হাতে নিয়ে আরিশের ফোনে কাছে ফোন দিল ৷ হাতটাও ওনার রীতিমতো কাঁপছে ফোনটা ধরে , অন্যদিন এমন হয় না কারণ রোজ রোজ তো আর আরিশকে বিয়ের প্রস্তাব দেন না ৷”

প্রথমবার ফোনটা করতে বেশ কয়েকবার রিং হলো তবে অপর পাশ থেকে কেউ ফোনটা তুললো না দেখে অনিকা খান একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিয়ে বললেন,,
__” ও হয়তো ঠিক পড়াশোনা করছে ,সামনে এক্সাম তাই হয়তো ফোনটা ধরছেনা, না হলেও ঠিকই ধরতো৷
দ্বিতীয়বার ফোন দিতেই বেশ কয়েকবার রিং হওয়ার পর কল কেটে যাওয়ার পূর্বেই ফোনটা ধরল আরিশ ৷
__”বলো আম্মু কিছু বলবে?”

উনি আমতা আমতা করে বললেন ,,,,,,
__” কোথায় ছিলি আব্বু এতখন, তোকে ফোন করেছিলাম আমি ৷”

__”জোরো কে নিয়ে হাটতে বেরোচ্ছিলাম তাই রেডি হচ্ছিলাম ,আর বাইরে এখন ভালোই কুয়াশা তো তাই আরকি ৷ ”

__” ওহ আচ্ছা ৷”

বেশ কিছুদিন হল আরিশ জোরোকে ওর নিজের কাছে এনেছে, রোজ রাতে আরিশ একবার হাঁটতে যায়, তবে তূর্য , সাহেল আর প্রান্তকে যেতে বলে,তবে ওরা যায় না , বাড়ি বসে ফোন চালাতেই ব্যাস্ত থাকে সেই কারণে ও একাই যাই , আর এক্ষেত্রে জোরোই ওর পারফেক্ট হাটার পার্টনার ওর কাছে ৷ তাছাড়া জোরোকে খুব ভালোবাসে আরিশ সেই কারণে নিয়ে এসেছে পারলে নিজের ঘরের মধ্যে থাকা একুরিয়ামটাও নিয়ে চলে আসতো….
তবে অত বড় একুরিয়াম টাকে তো আর তুলে আনা যায়না সেই কারণে আর আনেনি…

__” কিন্ত এখন প্রায় শীতকাল , তোর যাওয়াটা কি খুব দরকার ছিল?’

আরিশ মুচকি হেসে বললল,,,,
__” এটাই আমার আসক্তি ৷”

অনিকা খান কিছু বুঝতে না পেরে বললেন,,,,
__” কি বললি কিছুই তো বুঝলাম না ৷”

আরিশ মুচকি হেসে বলল,,,,,,
__” কিছু না ৷”

__ওহহ ৷”

__” তা তুমি কি এখন কিছু বলবে? নাহলে আমি তোমাকে পরে কল ব্যাক করতাম আরকি ৷”

উনি উত্তেজিত হয়ে বললেন,,,,,,,
__” না না কোন দরকারি কথা নেই, এমনিই কল দিছিলাম আরকি ৷”

__” ওকে ৷”

কল কেটে দিতেই আফজাল খান রাগি চোখে তাকালেন,,,,
__” ছেলেটা তো জিজ্ঞাসা করছিল যে তুমি কিছু বলবা কিনা , তা কেন মিথ্যা কথা বললে যে তোমার কিছু বলার নেই ?”

__” আরে ও এখন বাড়ি থেকে বের হচ্ছে তাই এখনি বললে যদি মেজাজটা বিগড়ে যায় তাহলে না জানি রাস্তার লোককে বেধড়ক পিটিয়ে দেয় ,আমাকে তো জনগণের কথাও ভাবতে হবে তাইনা !”

অনিকা খানের ফাজলামি করা কথা গুলো শূনে আফজাল খান হতাশ হয়ে আর কিছু না বলে রুমে ফিরে গেলে ৷ সমস্ত চিন্তার ভার এসে পড়ল এখন অনিকা খানের মাথায় , কিভাবে যে উনি কথাটা আরিশকে বলবে সেটাই বুঝে উঠতে পারছেন না,,,,

জনশূন্য রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছে আরিশ আর জোরো ৷
শীতের রাত তাই রাস্তায় মানুষ জনের খুব একটা দেখা মিলবে না ৷ অন্যদিন যখন হাটতে আসে তখন খালি হাতেই আছে তবে আজকে জোরো ওর সাথে প্রথম এসেছে তাই গিটারটা নিয়ে এসেছে, তাছাড়া ওরা বন্ধুরা মিলে যখন আসতো তখন প্রায়ই গিটারটা নিয়ে আসত কারন ওরা আরিশের গলায় গান শুনতে খুব ভালোবাসে, আর দিনের শেষে যদি আরিশের গলায় একটা গান দিয়ে তা না শেষ হয় তাহলে তো জমে যাই ৷

ওরা হাটতে হাটতে অনেকটা দূরে এসেছে ৷ রাস্তার ধারে যেখানে বড়ো ঝিলটা রয়েছে সেখানে পাঁচিল দিয়ে রেলিং করে দেওয়া আর পাশে বসার জন্য অনেক জায়গা রয়েছে, জোরোও ক্লান্ত হয়ে গেছে বেশ সেখানেই বসলো ওরা ৷ সাথে গিটার এনেছে আরিশ আর এই মুহূর্তে একটা গান হলে মন্দ হয় না….

জোরোও আরিশের পাশে বসে আছে শান্ত হয়ে , আরিশ গিটারটা নিয়ে গান ধরল,,,,,

__” আমি একলা হলেই বুঝতে পারি ভালোবাসি কতো,
একটা তুমি আছো বলেই ভালো আছি এতো,,,,
একটা তুমি আছো বলেই ভালো আছি এতো ৷”

আরুশিও একই রাস্তা দিয়ে হেঁটে বাড়ি ফিরছিল , আজ ওর টিউশানি ছিল তাই সেখান থেকে ফিরছে ৷ অন্যদিন গাড়ি করেই ফেরে , তবে আজ মাঝ রাস্তায় গাড়ি খারাপ হয়ে যাওয়ার কারনে মাঝরাস্তায় নিজে নিজেই একা হেঁটে আসছে ৷ আর তাছাড়া যেখানে গাড়িটা খারাপ হয়েছে সেখান থেকে আরূর বাড়ি বেশি দূরে নয় ৷
এখন রাত সাড়ে নটায় বাজে প্রায় ,অন্যদিন আটটা বাজলেই বাড়ি পৌঁছে যায় তবে আজকে বেশ অনেকটাই লেট হয়ে গেছে ৷

হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ একটা সুরেলা কণ্ঠ কোথা থেকে ওর কানে ভেসে আসতেই আরূশি থমকে গেল ৷ গানটা শোনার জন্য যতই এগিয়ে যাচ্ছে ততই যেন নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছে আরু ৷আরিশের গান শুনে যেমনটা আশক্তি তৈরি হয়েছিল ওর মাঝে ঠিক তেমনটাই অনুভূতি কাজ করছে এখন…..

যতই এগিয়ে যাচ্ছে ততই যেন গানটা আরো বেশি শুনতে ইচ্ছা করছে ….

হঠাৎ করে আরিশ শুনতে পেলো কোন এক মেয়েলি কন্ঠের চেঁচামেচির আওয়াজ ,তা দেখার জন্য পাশ ফিরে দেখতেই দেখল একটা মেয়ে দৌড়ে দৌড়ে আসছে ওর দিকেই আসছে আর জোরো মেয়েটাকে তাড়া করছে , অনেকটা দূরেই রয়েছে বলে ওর কাছে আরূর মুখটা স্পষ্ট নই ৷

__” বাঁচাও !”

কথাটা বলতেই আরিশের কাছে ছুটে এসে আরিশকে জড়িয়ে ধরলো আরূ,,,,,,আরূর মাথাটা আরিশের বুকে,,,বড়ো বড়ো শ্বাস নিচ্ছে আর হাপাচ্ছে আরূ৷
না পেরে নিজের মাথাটা সম্পূর্নরূপে আরিশের বুকে রাখল, হাত দিয়ে আরিশের কোটটা শক্ত করে চেঁপে ধরে রেখেছে, যেনো ছাড়লেই আরিশ পালিয়ে যাবে ৷

#চলবে,,,,,,

তোমার নেশায় আসক্ত ২ পর্ব-০৬

0

#তোমার_নেশায়_আসক্ত
#সিজন:2
#পর্ব:6
Suraiya_Aayat

ক্যান্টিনে ওরা তিনজন বসে আছে সামনে রয়েছে ধোঁয়া ওঠা কফি আর কিছু কুকিজ ৷ আজকে অনেক রাত জাগার কারণে মাথাটা প্রচন্ড ব্যথা তাই এই মুহূর্তে কফিটায় ওদের জন্য সবথেকে বেস্ট একটা জিনিস ৷

আরিশ গরম কফির মগটা হাতে তুলে নিয়ে কফিতে চুমুক দিতেই নিজৈকৈ সম্পুর্ন ফুরফুরে ফিল করলো ৷ এরপর আবার প্রান্তর মাকে হসপিটালে দেখতে যেতে হবে তাই প্রিন্সিপালের কাছ থেকে আগে থেকেই পারমিশন নিয়ে এসেছে আরিশ…..

সাহেল আর তূর্য দুজন দুজনের সাথে কথা বলছে আর আরিশ তখন ওদের কথার মাঝে বললল,,,,,
__” তূর্য যা মেয়েটাকে সরি বলে আয় ৷”

আরিশের কথা শুনে তূর্য 440 ভোল্ট এর শক খেলো যেন ,অবাক লাগছে প্রচন্ড রকম , আরিশ ওকে ওই মেয়েটার কাছে সরি বলতে বলছে এটা শুনে ওর অবস্থা দফারফা ৷

সাহেল আরিশের কথা শুনে তূর্যর দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে ৷

তূর্য ধিমে কন্ঠে বলল,,,,,
__” দোস্ত আর ইউ সিরিয়াস! মানে তুই আমাকে সরি বলতে বলছিস তাও ওই মেয়েটার কাছে ?”

আরিশ কফিতে এক সিপ নিয়ে বলল,,,,,
__” না বলার কী আছে…আর নিজের দোষটা তো স্বীকার করবি যে সেদিন ভুলটা ওর না তোর ছিল ৷

__”তাই বলে আমাকে সরি বলতে হবে ? আমি পারবো না ৷”

আরিশ হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,
__” আর তিন মিনিট আছে , তিন মিনিট পর আমার কফিটা পুরো ফিনিস হয়ে যাবে , 5 মিনিটের মাথায় তুই তোর নিজের কফিটা শেষ করে ক্যান্টিন থেকে বার হয়ে ওই যে দূরে দেখতে পাচ্ছিস শিউলি ফুল গাছের পাশে মেয়েটা দাড়িয়ে রয়েছে সানার সাথে ওকে সরি বলে চলে আসবি ৷ উইথআউট এনি আরগিউ ৷
ইউর টাইম স্টার্ট নাও ৷”

তূর্য বুঝতে পেরেছে যে আরিশ ওকে সময় দিয়ে দিয়েছে তখন সেই সময়ের মধ্যে ওকে কাজ করতে হবে না হলে ওর রেহাই নেই ৷ আরিশ সব সহ্য করতে পারে কিন্তু কোন অপরাধ সহ্য করতে পারে না এটা ওরা সবাই জানে ৷ প্রথম যখন ঘটনাটা ঘটেছিল আরিশ তূর্যকে কিছু বলেনি দেখে তুর্য অনেক অবাক হয়েছিল কারণ আরিশ সচরাচর এরকমটা করেনা তবে এমন কোন দিন আসবে যেদিন ওকে আরুর কাছে সরি বলতে বলবে সেটা তূর্য জানত বেশ ভালোভাবে…

তুর্য মাথাটা নিচু করে বললো,,,,
__” ওকে….”

বাইকের চাবিটা হাতে নিয়ে বাইকের সাথে কিঞ্চিৎ হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আরিস , সামনে কি ঘটছে তাই দেখছে ও ৷ এক মিনিট হলো তুর্য আরুশির কাছে গেছে গিয়ে আরিশের কথামতো সরি বলছে…

হঠাৎ তূর্যকে দেখে আরুশির মেজাজটাই বিগড়ে গেল , বেশি মেজাজ নিয়ে বলল ,,,,,
__”আপনি আবার এখানে চলে এসেছেন? আজকে কি গোটা ভার্সিটির সামনে ঝগড়া করার ধান্দায় আছেন নাকি!”

__” এই মেয়ে শোনো তোমার সাথে ঝগড়া করার কোন ইচ্ছা বা মুড আমার কোনটাই নেই শুধুমাত্র আরিশ তোমাকে সরি বলতে বলেছে বলে আমি সরি বলতে এসেছি না হলে তোমার কাছে কখনো সরি বলতে আসতাম না ৷”

আরু একটু ভাব নিয়ে বলল,,,,,
__” তা যিনি আপনাকে সরি বলতে পাঠিয়েছেন উনি নিজেই তো এখনও সরি বলে নাই , ভীতুর ডিম একটা ৷ তবে আপনার সরিটা এক্সেপ্টেবল নয় কারন উনি কিন্তু এখনো যেহেতু আমাকে সরি বলেননি আর আপনাকেও তো উনিই পাঠিয়েছেন ৷ তাই দুজনেরটাই পেন্ডিং আছে ৷”

তূর্য এবার রেগে বলল,,,,,
__” এই মেয়ে শোনো না মানলে আমার বয়েই গেল ৷ আর তোমাকে আরিশ আবার সরি বলতে যাবে কেন?”(তাতে আমার বয়েই গেলো এটা লেখিকা আর লেখিকার ফ্রেন্ডদের কমন ডাইলগ 🙉)

__”উনি আমার সাথে মিস বিহেভ করেছেন তাই , আর একটা মেয়ের সাথে মিস বিহেভ করলে তাকে সরি বলতে হয় সেটুকু মেনারস বুঝি ওনার মধ্যে নেই ?”

সানা আরুর হাতটা চেপে ধরে বলল,,,,
__” তুই এ সব কি বলছিস ! আর ভাইয়া কখনই বা তোর সাথে মিস বিহেভ করলো?”

__” সানা তুই থাম , যেটা জানিস না সেটা নিয়ে কথা বলিস না ৷ উনি আমার সাথে মিস বিহেভ করেছেন তাই সরি বলবেন দ্যাটস ইট ৷”

তূর্য হো হো করে হাসতে হাসতে বলল,,,,,,
__” তুমি সারাজীবন স্বপ্নই দেখে যাও আরিসে কাছ সরি শোনার জন্য , আমি চললাম ৷”
বলে ওদের ওখান থেকে চলে গেলে ৷

আরু ওর ডানদিকে ঘাড়টা ফিরিয়ে দূরে আরিশের দিকে তাকিয়ে দেখলো আরিশ গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে ফোন নিয়ে ব্যস্ত ৷ দৃশ্যটা দেখে ওর রাগে গা পিত্তি জ্বলে যাচ্ছে ৷

__” উনি যতক্ষণ না আমাকে সরি বলবেন আমি ততক্ষণ কোথাও যাবো না ৷”

__” তুই যদি ভাইয়ার কাছ থেকে সরি শুনতে চাস তাহলে আজীবন এখানেই দাঁড়িয়ে থাক তারপরে একটা সময় আসবে যখন তুই না খেতে পেয়ে এখানে কংকাল হয়ে ধুলিস্যাৎ হয়ে যাবি , তাও ভাইয়া তোকে কখনো সরি বলবে না ৷ আর ও সরি বলার মতো কখনো কোনো কাজও করে না যে সরি বলবে তাই এগুলো তোর মাথা থেকে ঝেড়ে বার করে দে ৷”

__” এত দেমাগ কিসের উনার? অন্যায় করেছে সরি উনাকে বলতেই হবে সে যে করেই হোক ৷”

__” কি এমন করেছে ভাইয়া বল আমাকে ৷”

এরপরে আরু আরিশের বেডরুমে ঢুকে যা যা হয়েছে সমস্তটাই বলল,,,,,

সানা ওর কথা শুনে রেগে বললল,,,,
__” তোকে আমি বলেছিলাম না ভাইয়ার বেডরুমে ঢুকেতে না , তার সত্বেও তুই কেন ঢুকেতে গেলি আমি বারবার বারণ করা সত্ত্বেও ৷ তুই আমার কথার অমান্য করেছিস আর তাছাড়া ভাইয়া যা করেছে ওর কোনো ভুল নেই এতে ৷ ও তোকে ভালোই ভালোই রুম থেকে বেরিয়ে যেতে বলেছে তুই তাও ওর কথা শুনিস নি ৷আর ও তোকে কিছু বলেনি , শান্ত মাথায় বলেছে এটাই অনেক , ও ওর ঘরে কাউকে এলাও করে না দরকার ছাড়া, ইভেন ওর ফ্রেন্ডকেও না ৷ ”

আরু বুঝতে পারল ওদের দুই ভাইবোনের সাথে পারা যাবে না তাই রাগে গজগজ করে সামনের দিকে হাঁটতে হাঁটতে বলল,,,,,
__” হ্যাঁ এখন তো সব আমারই দোষ , ভালো ভালো , একদিন উনি যদি আমার কাছে সরি না বলে তাহলে আমার নাম ও আরু নই হ্যাঁ……”
|
|
|
|
কিছুক্ষণ আগে প্রান্তর মা র জ্ঞান ফিরে এসেছে, ডাক্তাররা ওনার সঙ্গে দেখা করার জন্য সবাইকে এলাও করছেন ৷ প্রান্ত এতক্ষণ ওখানেই ছিল তবে এখন আরিশ দেখা করার জন্য রুমে ঢুকেছে….

রুমে ঢুকে দেখল প্রান্তর মা চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে, আরিশ ওনার বেডের পাশে থাকা টুলটা নিয়ে বসল তারপর প্রান্তর মায়ের হাতে হাত রাখতেই উনি চোখ খুললেন ৷

__” আপনি জেগে আছেন আন্টি ! আমি ভাবলাম আপনি হয়তো ঘুমিয়ে আছেন তাই এলাম, আপনার ঘুমের বিঘ্ন ঘটেছে চাইনি আমি…”

উনি আধো আধো কণ্ঠে বললেন,,,,
__” আল্লাহর রহমতে এখন ভালো আছি বাবা ৷ তুমি যদি সময়মতো আমাদের সাহায্য না করতে তাহলে কিভাবে যে কি হত আল্লাহ মালুম”…

আরিশ মুচকি হেসে বললেন,,,
__” সবকিছু আল্লাহর ইচ্ছা আমি শুধু উনার উছিলা মাত্র…”

উনি আরিসের গালে আলতো করে হাত বুলিয়ে বললেন,,
__” আল্লাহ তোমাকে অনেক ভাল রাখুক, সুখে রাখুক, তোমার সকল ইচ্ছা পূর্ণ হোক বাবা ৷”

আরিশ মুচকি হেসে বলল ,,,
__”দোয়া করবেন আমি যেন আমার জীবনের সবথেকে প্রিয় মানুষটা কে নিজের করে পায় ৷”

কিছুখন পরে উনি একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বললেন,,,,
__” আমার বড় চিন্তা হয় বাবা তোমাদের সবাইকে নিয়ে , তোমাদের এখন বয়স হয়েছে নিজের জীবনটাকে গুছিয়ে নেওয়ার , তাই তাড়াতাড়ি করে একটা বিয়ে করো বাবা , তারপরে নিজের প্রিয় মানুষটার সঙ্গে সুখে থাকো ৷ আমি যতদিন বেঁচে আছি তার আগেই প্রান্তর বিয়েটা দেখে যেতে চাই ৷এটাই আমার শেষ ইচ্ছা বাবা ৷”

__” ইনশাল্লাহ সব হবে শুধু আপনি সুস্থ হয়ে উঠুন, তারপর আমি নিজে দায়িত্ব নিয়ে ধুমধাম করে প্রান্তের বিয়ে দেবো ৷”

আরিশের কথা শুনে ওনার চোখ থেকে কয়েক ফোটা নোনা জল গড়িয়ে পড়ল ৷ আরিশের মত একটা ছেলেকে পেয়ে বড্ড আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছেন উনি, আর ভাবছেন যে এখনকার দিনেও এমন কোন মানুষ আছেন ৷রাত তিনটে,,,,,, গভীররাত যাকে বলে ৷
সকলের চোখে ঘুম থাকলেও আজ আরিশের চোখে যেন ঘুম নেই , ঘুম কেড়ে নিয়েছে তার মনের সেই রাতজাগা উড়ন্ত পাখিটা সেটা হয়তো ওকে দেখলেই বোঝা যাবে এই মুহূর্তের অবস্থায়….

এত রাতে হয়তো তুর্য আর সাহেল নাক ডেকে ঘুমচ্ছে , কি হচ্ছে তার কোনো কিছুরই ওদের খেয়াল নেই….

দক্ষিন দিকের দেওয়ালে জ্বলতে থাকা ডিম লাইটটা বিছানা থেকে নেমে অফ করে দিয়ে একহাতে গিটারটা ধরে সামনের দিকে এগিয়ে গিয়ে সাদা ধবধবে পর্দাগুলো একটানে সরিয়ে দিল আর মুহুর্তের মধ্যে জোছনা রাতের চাঁদের আলো চোখে পড়েতেই ওর চেহারাকে উজ্জ্বল করে তুলছে আরো ৷ এক অপূর্ব সৌন্দর্য কাজ করছে ওর মধ্যে , কোন কবি বা সাহিত্যেক এই দৄশ্যটা দেখলে হয়তো তাদের লিখিত চন্দ্রিমা বিলসীর রাতের কবিতায় আরিশের স্থান দিতেন ৷

মাঝে মাঝে হালকা হাওয়া এসে ওর সাদা ধবধবে শার্ট টা ভেদ করে সম্পূর্ণ শরীর ছুঁয়ে যাচ্ছে, চুলগুলো বাতাসের হাওয়ায় নিজেরা নিজেদের মাঝে খেলা করায় ব্যস্ত , তাদেরকে আঙ্গুলের স্পর্শ দিয়ে আরিশ দমিয়ে রাখতে চায় না তাই হয়তো স্বাধীনভাবেই বিচরণ করতে মত্ত তারা, মুখের খোচা খোচা দাড়ি গুলোও আজ মানিয়েছে বেশ…..

বেলকনির রেলিং এ হেলান দিয়ে গিটারের তারটাতে প্রথমবার স্পর্শ করতেই অদ্ভুত এক নেশাগ্রস্থ ছন্দের সৄষ্টি হলো যেমনটা আরুশি হয়েছিল আরিশের গান শুনে , একুরিয়ামে মাছ গুলোও যেন ওর গান শোনার জন্য তাদের লাফালাফিটাকে দমিয়ে রাখতে পারছে না , তারাও আরিশের মতো তাদের রাত্রিবেলায় চোখের ঘুমটা হারিয়েছে অনেক আগেই…..

গানের তালে তালে মিউজিক টা বাজিয়েই চলেছে আরিশ ৷

” বলতে যেয়ে মনে হয়
বলতে তবু দেয়না হৃদয়
কতটা তোমায় ভালোবাসি ৷
চলতে গিয়ে মনে হয়
দূরত্ব কিছু নয়
তোমারই কাছেই ফিরে আসি,
তুমি , তুমি, তুমি শুধু
এই মনের আনাচে কানাচে,
সত্যি বলোনা
কেউ কি প্রেমহীনা কখনো বাঁচে ৷
তুমি তুমি তুমি শুধু এই মনের আনাচে কানাচে
সত্যি বল কি না কেউ কি প্রেমহীনা কখনো বাঁচে
বলতে যেয়ে মনে হয়,
বলতে তবু দেয় না হৄদয়
কতোটা তোমায় ভালোবাসি

মেঘের খামে আজ তোমার নামে
উড়ো চিঠি পাঠিয়ে দিলাম ,
পড়ে নিও তুমি মিলিয়ে নিও
খুব যতনে তা লিখেছিলাম (2)
ও চাই পেতে আরো মন
পেয়েও এত কাছে ৷

বলতে যেয়ে মনে হয়
বলতে তবু দেয় না হৃদয়
কতটা তোমায় ভালোবাসি……”(গল্পের থিম song🤗)

জোছনা রাতটাও হয়তো আরিশের এই গানটা মনোযোগী হয়ে শুনেছে ৷ গানটা শেষ হওয়ার সাথে সাথেই পরিবেশটা কেমন থমথমে হয়ে গেল, ভোরের আগমনেরই আভাস ৷ আকাশের উজ্জ্বল চাঁদটাকেও এখন বিদায় নিতে হবে তা নিয়ে হয়তো তার আক্ষেপ , সে নিজেও যদি আরেকটু সময় পেত তাহলে হয়তো আরিশের সাথে রাত্রি বিলাস করতো ৷

গানটা শেষ হতেই আরিশ ওর ওপরের দাঁত দিয়ে নিচের ঠোঁটটাকে আঁকড়ে ধরে মুচকি একটা হাঁসি হেঁসে পকেট থেকে ফোনটা বার করে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে মাতালকরা একটা হাসি দিল ,,,,,
ফোনের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো,,,,

__”আমিও যেমন তোমাতে আসক্ত তেমনি তুমিও হবে আমাতে আসক্ত, সেই দিনেরই অপেক্ষায় আমি ৷”

চলবে,,,,

তোমার নেশায় আসক্ত ২ পর্ব-০৫

0

#তোমার_নেশায়_আসক্ত
#সিজন:2
#part:5
#Suraiya_Aayat

সকালবেলা আরু আর ওর মাকে বাড়ি ফেরানোর জন্য ওর আব্বু গাড়ি পাঠিয়ে ছিলেন তবে গাড়ির ড্রাইভারকে একাই ফিরে যেতে হয় , উনি ওদের দুজনকে নিয়ে যেতে পারেননি তার একমাত্র কারণ হলো আরুর মা সঙ্গে সঙ্গে ওনার স্বামী কে ফোন করে বললেন,,,,,,
__” একটা বেলার তো ব্যাপার , তুমি একটু অফিসে গিয়ে খেয়ে নাও প্লিজ, আমি কি সব সময় ওর বাড়িতে এসে থাকি বলো!”

কথাগুলি উনি এত আদুরে কণ্ঠে বললেন যে আরমান সাহেব আর না করতে পারলেন না , বরাবরই এমনটা করেই ওনাকে মানান কোনকিছুর উদ্দেশ্যে ৷ বয়স বাড়লেও স্বভাবগুলো বাচ্চাদের মতই ৷ তিনিও আর না করতে পারলেন না , ওনাকে মানতে হলো হাসিমুখে ৷ বউয়ের কথার ওপর উনি কোন কথা বলতে পারেন না, তার মানে এটা নয় যে উনি ভয় পান, উনি ভালোবাসাকে গুরুত্ব দেন তাই কোন ভালো কাজৈ মানা করেন না ৷

__”আচ্ছা তাড়াতাড়ি ফিরে আসবো আর তুমিও ঠিকঠাক খাওয়া দাওয়া করো ৷”

__”আমার আরু মা কেউ নিয়ে আসবে, ও যেন আবার থেকে না যায় , নাহলে কিন্তু আমি নিজেই নিতে চলে যাবো ৷”

__” তোমার মেয়ে কোন দিন কোথায় গিয়ে থেকেছে তুমি বলো ! কালকে অনেক কষ্ট করে আমি রাখতে পেরেছি এটাই আমার কপাল ৷ না জানি বিয়ে হয়ে গেলে শ্বশুরবাড়ি কেমন করে থাকবে !”

আরূ এসে বলল,,,,,
__”হ্যাঁ এখন তো এই সমস্ত কথাই বলবে, বিয়ে দেওয়ার তো তাড়া লেগে গেছে তাইনা ! আমি তো এখন বিরাট কি বোঝা হয়ে গেছি না তোমাদের কাছে, ভালো ভালো আমিও যেদিন চাকরি পাব সেদিন আমিও একা একাই থাকবো , তখন দেখো কেমন লাগে ৷”

__” এই দেখো আমার আরূ মা রাগ করছে ৷”

আরূ আর কিছু না বলে চলে গেল ,,,

_,”এই মেয়েটাকে নিয়ে আমি আর পারিনা, কথার আগামাথা না জেনেই কি বলে নিজেও জানেনা ৷”

__”আরমান সাহেব হো হো করে হেসে বললেন এখনো তো ও বাচ্চা এসব কিছুই বোঝেনা ৷”

__”সেটাইতো সমস্যা আমরা সবকিছু সহ্য করছি বলে আরিশ ও যে সবটা মুখ বুজে সব সহ্য করবে তা কিন্তু নয় ৷”

__”হমম ,সেটাই ৷”

__”শোনো না, আমি অনিকা কে বলেছি ওদের বিয়ের কথাটা ৷”

__” কি বললো অনিকা আপা?”

__”ও তো রাজি কিন্ত ও আরিশকে নিয়ে ভয় পাচ্ছে, আরিশকে এখনো কিছু জানাইনি ও ৷”

__” আমাদের কি তাহলে সামনা সামনি কথা বলা উচিত?”

__” আরু কি রাজি হবে?”

__” ওরা পরস্পরের সাথে কথা বললে আমার মনে হয় ওরা না করতে পারবে না ৷”

__” তা ঠিক, তবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিয়েটা হলেই ভালো হয় ৷ অনিকা বড্ড তাড়া দিচ্ছে আমাকে ৷ ওর ও আরিশকে নিয়ে চিন্তা হয় আর ছেলেটা একা না জানি কেমন ছন্নছাড়ার মতো থাকে, আরু ওর জীবনে গেলে ও ওর জিবনটাকে গুছিয়ে নেবে আর আরূ ও সবকিছু বুঝবে আশাকরি ৷”

__” আচ্ছা দেখছি কি করা যাই ৷”

আরু আর সানা দুজনেই ক্যাম্পাসের মাঠদিয়ে হাঁটছে আর দুজনই চুপচাপ আছে কেউ কোনো কথা বলছে না ৷ আজকে আরুকে চুপচাপ দেখে সানাও আর কিছু বলল না , ওকে কিছু বললে হয়তো আবার বকবক করা শুরু করে দেবে…

কালকে ওত রাত্রে আরিশ কোথায় বেরিয়ে গেছিল তাড়াহুড়ো করে তা নিয়ে আরুর মনে অনেক কৌতুহল রয়েছে , ওর অনিচ্ছা সত্ত্বেও খুব জানতে ইচ্ছা করছে ৷ আর একটা কথায় মনে আসছে বারবার যে ফোনটা না আসলে গানটা হয়তো আরো কিছুক্ষণ চলত , আরো কিছুক্ষন গানটা শোনার সৌভাগ্য হতে পারতো ওর ৷

কথাটা সরাসরি সানাকে আরূ বলতে পারছে না বললে তাহলে হয়তো সানা অন্যকিছু ভেবে বসবে যা আরূ একদমই চায়না ৷

আরূ একটু বুদ্ধি খাটিয়ে বলল,,,,,
__” সানা কালকে রাত্রে আমি যখন তোর রুমে ঘুমাতে চলে আসলাম তারপরে গাড়ির আওয়াজ শুনলাম ৷ আঙ্কেল কি এত রাত্রে কোথাও গেছিলেন?”

সানা একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলল,,,,,,
__” আব্বু কোথাও যায়নি , আব্বু বাসায় ছিল তবে ভাইয়া গেছিল ৷”
সঙ্গে সঙ্গে আরূ উত্তর দিল,,,,,
__” এত রাত্রে কোথায় গেছিলেন হঠাৎ?”

__”ভাইয়া ধানমন্ডির বাসায় থাকে সেই বাসায় প্রান্ত ভাইয়া ও থাকে ৷ প্রান্ত ভাইয়ার মা খুব অসুস্থ তাই ওনাকে হসপিটালে এডমিট করতে হতো আর প্রান্ত ভাই উনার আম্মুর সাথে থাকেন সেই কারণেই ভাইয়া তাড়াহুড়ো করে গেল ৷

__”কেন ওনার আব্বু কি মারা গেছেন?”

__”না ঠিক তেমনটা নয়, তবে প্রান্ত ভাইয়ের আব্বু উনার মায়ের উপর খুব অত্যাচার করতেন বলে প্রান্ত ভাইয়া ওনার মাকে নিয়ে আলাদা হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারপর থেকে ওনাদের সংসারের যাবতীয় খরচ বহন করে আরিশ ভাইয়া ৷ আর সব থেকে বড় কথা কি জানিস আজ পর্যন্ত ভাইয়া ওর নিজের হাত খরচা বাবদ যাবতীয় টাকা কোন কিছুই আব্বুর কাছ থেকে নেই না ,সমস্তটা নিজের টাকায় চালাই৷”

আরূ কথাগুলো শুনল , কিছু বলছে না , তবে নিজের মনে মনে অবাক লাগল খুব….

হঠাৎ করে সানা বলে উঠলো,,,,,,
__” আরূ ওই তো ওখানে ভাইয়া , তুই কি যাবি ?আমি যাচ্ছি, আমি একটু ভাইয়ার কাছ থেকে জেনে আসি যে আণ্টি কেমন আছেন!”

আরূ কিছু একটা ভেবে বলল,,,,,
__” আচ্ছা চল আমিও যাচ্ছি ৷”

ওরা দুজন আরিশেরর কাছে গেলে, সেখানে তূর্য কে দেখে আরূর মাথাটা গরম হয়ে গেল এমন একটা পরিস্থিতিতে আরূ কিছু বলতে চাইছে না তাই ওদের থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়াল ৷

আরিশ আরুর দিকে এক নজর তাঁকিয়ে সানার সাথে কথা বলায় ব্যস্ত হয়ে গেল ৷

সানা আরিশের সাথে কথা বলছে আর আরিশ মাঝে মাঝে আরুর দিকে তাকাচ্ছে, দুজনে চোখাচোখি হতেই আরু চোখ সরিয়ে নিচ্ছে বারবার….

সাহেল: দোস্ত চল এবার এক কাপ কফি খেয়ে আসি, মাথাটা ধরেছে খুব ৷

তূর্য: আমারও এমনিতেও খুব খিদে পেয়েছে , তাহলে কিছু খেয়ে আসি নাহলে আমি এখানেই উল্টাইয়া যাব , তারপরে আবার আণ্টিকেও তো দেখতে যেতে হবে ৷

আরিশ পকেট থেকে রুমাল টা বার করে কপালে জমে থাকা বিন্দু বিন্দু ঘাম গুলো মুছে নিয়ে ওদের সামনে যাওয়ার জন্য ইশারা করলো ৷

ওরা চলে গেল, সানার আর আরু দাড়িয়ে আছে আরিশের সামনে ৷ আরিশ পকেটে হাত রেখে ওদেরকে চলে যাওয়ার জন্য ইশারা করলো, তাতে আরূ ভাবল আরিশ হয়তো ওর সাথে একান্তে ওকে কিছু কথা বলবে তাই সানা যাচ্ছে তবুও আরূ চুপচাপ দাঁড়িয়ে রয়েছে ৷

আরিশ আরূকে ইশারা করে বললো,,,,,
__” আর ইউ স্পেশাল টু মি? যে জন্য দাঁড়িয়ে আছো এখনো ৷”
আরিসের কথা শুনে আরূ একটু থতমত খেয়ে গেল, নিজের অবাক হওয়াটা এইমুহূর্তে আটকাতে হবে তাই তেজ দেখিয়ে বললো,,,,,
__” বয়েই গেছে আপনার স্পেশাল মানুষ হতে ৷”বলে চলে গেল,আরিশ কিছু বলছো না ৷ মুখে এক চিলতে হাসি নিয়ে চুলগুলোকে ঠিকঠাক করে নিয়ে এগিয়ে গেল ৷

#চলবে,,,,,

তোমার নেশায় আসক্ত ২ পর্ব-০৪

0

#তোমার_নেশায়_আসক্ত
#সিজন:2
#পর্ব_4
#Suraiya_Aayat

ওরা সবাই খেতে বসেছে ৷ আরিশ নিচে নেমে এসেছে,সানা ডাকতে গিয়েছিল ৷ আরিশ আর আরু মুখোমুখি বসেছে, আরূ আরিশের দিকে মাঝে মাঝে তাকাচ্ছে আর নিজের মনে মনে বিড়বিড় করে চলেছে আর আরিশকে হাজারো কথা শোনাচ্ছে ৷

__”আরিস আব্বু তুই কেন বেকার সকলের থেকে আলাদা থাকিস বলতো!তুই এখানে থাকিস না বলে তোর মা কত মন খারাপ করে জানিস !”

আরিশ হাসিমুখে বলল,,,,,,
__” একচুয়ালি আন্টি যখন সময় হবে আমি নিশ্চয়ই আমার ফ্যামিলির সঙ্গে থাকবে তবে এখন জীবনটাকে নিজের মত করে কাটাতে চাইছি তাই আর কি ! এখনো তো জীবনের অনেকটা সময় বাকি আছে ,তাই সময় ও আছে ৷ পরেরটা না হয় পরে ভাবা যাবে ৷”

অনিকা খান খাবারের প্লেট গুলো সাজাতে সাজাতে বললেন,,,,,
__” আমিও চাই ও আমাদের সঙ্গে থাকুক তবে নিজের সুখ আর আনন্দটাকে বিসর্জন দিয়ে নয় ৷ ও যেটাতেই হ্যাপি থাকবে বলে মনে করে সেটা তেই থাকুক ৷

__”আম্মু আব্বু বাড়ি আসবি কখন?”

__”তোর আব্বু আজকে তাড়াতাড়ি আসবে যতই হোক নিজের ছেলে বাড়ি এসেছে বলে কথা ৷ তোর আব্বু তো মাঝে মাঝেই আমাকে না নিয়ে তোর সাথে দেখা করতে চলে যায় আমাকে নিয়েও যায় না ৷”

__”তাতে মন খারাপ করার কি আছে , তুমি আর সানা তো যেতে পারো ৷”

সানা ভ্রু কুঁচকে বললো,,,,,,
__” আমি কি ঠিক শুনছি ভাইয়া মানে তুই আমাকে বলছিস, আগে তো কখনো বলিসনি ৷”

__”আগে বলিনি মানে তুই যে যাবিনা তার তো কোনো মানে নেই তাই না ! স্টুপিড একটা ৷”

__” হাহ😏 ৷”

__”আচ্ছা অনেক কথা হলো এবার তাড়াতাড়ি খাবারটা সার্ভ করি নাহলে ঠাণ্ডা হয়ে যাবে ৷”

অনিকা খান চৌকো পরটা টা আরুর প্লেটে তুলে দিতেই আরু তো খুশীতে আত্মহারা হয়ে গেল ৷ পরোটাটা আরিশের প্লেটে দিতে গেলেই আরিশ বলে উঠলো,,,,,,
__” হোয়াট ইজ দিস , কি এটা ?আর আমাকে দিসো কেন?”

__” আরে এটা হল চৌকো পরোটা, আরূশির খুব পছন্দের , তুইও খা তোর ও খুব ভালো লাগবে ৷”

__” সকলের পছন্দ আর আমার পছন্দ যে সমান হবে সেটা সব সময় ম্যাটার করে না ৷”আরূর দিকে বাঁকা চোখে তাকিয়ে ৷

__” আরূ ও আরিশকে খোঁচা মেরে বলল,,,,,
__” সবার সব ভালোকিছু কি আর সহ্য হয়? হাহ ৷”

আরিশ আর আরূশির সাথে কোন রকম কোন তর্কে যেতে চাইছে না , এগুলো ও একদম পছন্দ করে না তার জন্য আর কোন কথা না বাড়িয়ে নিজেই নিজের খাবারটা বেড়ে খাওয়া শুরু করে দিল ৷

আরিশের কান্ড দেখে আরূ রেগে তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠলো ৷ ও ভেবেছিল আরিশ ওর কথার বিপরীতে আর একটাও কথা বললে ওর সঙ্গে তুমূল ঝগড়া করবে কিন্তু সেটা আর হল কই…..!
|
|
|
বিকালবেলা সানা আর আরূ দুজনেই ছাদে এসেছে ৷ সানা এক বাটি মুড়ি ঝাল ঝাল করে মাখিয়ে এনেছে আর 2 কাপ কফি করে এনেছে , দারুন জমবে বিকেলের আড্ডাটা ৷

আরু ছাদের ধার দিয়ে হাঁটছে হঠাৎ চোখ গেল নিচে থাকা আরিশের দিকে ৷ সেখানে আরিশ ওর পোষা কুকুরটাকে পেডিগ্রি খাওয়াচ্ছে অত্যন্ত যত্নসহকারে ৷
আরূ একপলক তা দেখে মুখ ভাঙচি দিয়ে সানার কাছে চলে এলো ৷

সানার কাছে বসতেই সানা বলে উঠলো,,,,,
__” একটা কথা বলবো তোকে?”

__”হ্যাঁ বল ৷”

__”তুই সব সময় ভাইয়ের সাথে পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়া করতে যাস কেন বলতো! ভাইয়া খানিকটা শান্ত মেজাজের , সহজে রেগে যায় না তবে একবার মেজাজ গরম হয়ে গেলে ওর কাছে কেউ যাওয়ার সাহস পাই না কেউ আর, ওর ফ্রেন্ডরাও কন্ট্রোল করতে পারে না কেউ ৷ ভাইয়া তোকে এখনো কিছু বলেনি এটাই আমি অবাক হচ্ছি ৷”

আরূ মুখ ভাঙছি দিয়ে বলল,,,,,
__” আমারো না ওনার সাথে কথা বলতে ভালো লাগে না আর না লাগে ঝগড়া করতে, আমি ওনাকে সহ্্য করতৈ পারি না ৷ তবে উনাকে আমি টাইট দিয়েই ছাড়বো ৷”

_,”ভুলেও সে কথা ভাবিস না তাহলে জোরো র একদিনের ফ্রি খাবার হয়ে যাবি তুই. ৷”

আরো ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলল,,,,
__”জোরো টা আবার কে?”

ওই যে তুই ওখানে দেখলি যে ভাইয়া একটা কুকুরকে পেডিগ্রি খাওয়াচ্ছে সেই কুকুরটা হলো জোরো , ভাইয়া ওকে ইউ কে থেকে এনেছে , ও যখন ইউকে গিয়েছিল ট্রিপে তখন ই এনেছিল ৷”

জোরোর. খাবার হওয়ার কথাটা শুনে আরূ একটু ভয় পেয়ে গেল তাই ভয়ে ভয়ে ঢোক গিলে বলল,,,,
__” ছারনা, বাদদে ওসব , আর তাছাড়া তুই এখন উনার কথা কেন টেনে নিয়ে আসছিস বলতো !”

__”আচ্ছা, বাদ দে….”
|
|
|
আরুর আজকে আরিশের বাড়িতে থাকার কোন ইচ্ছা ছিল না শুধুমাত্র ওর মা আর আর অনিকা আন্টির জোরাজুরিতেই থেকেছে ৷ ওনারা দুজনেই স্কুল থেকে বেস্ট ফ্রেন্ড সেই কারণে বিয়েটা দুজনে কাছাকাছি করেছে যাতে প্রত্যেক সপ্তাহে সপ্তাহে দুজনে দেখা করতে যেতে পারে ,আর যোগাযোগটাও বজায় থাকে৷
উনারা 2 ফ্রেন্ড প্রত্যেক সপ্তাহে একবার করে শপিং এ জান আর খাওয়া-দাওয়াও করেন এই জিনিসটা মিস হয় না কখনো ৷ উনাদের দুজনের সম্পর্ক দেখে আরুর চোখদুটো জুড়িয়ে যায়…

আজকে সানার সাথেই ঘুমাবে আরূ সেই কারণেই রুমের দিকে যাচ্ছিল , আরিসের রুমটা পার করেই সানার রুমে যেতে হয় ৷
অন্ধকারের মধ্যে আরূর সাদা রঙের প্লাজোটা জ্বলজ্বল করছে ৷ ক্রাশকে পটাতে গিয়ে সব সাদা রঙের ড্রেস নিয়ে এসেছে তাই সেগুলো পরা ছাড়া আর কোন উপায় দেখছে না আরু ৷ সানার ড্রেস পরার উপায় নেই কারণ সানা ওর থেকে অনেকটাই লম্বা তাই ওর ড্রেসগুলো পরলে সব মাটিতে ছড়াছড়ি যাবে, তাই কষ্ট করে একদিনে হলেও সাদা রঙের পোশাকটাই পরতে হয়েছে ওকে ৷

আস্তে আস্তে হেঁটে হেঁটে আসছে আরু ৷ ও প্রচন্ড ভূতের ভয় পায় , এতদিন ধরে ভুতের কথা শুনেছে তবে আজ অব্দি দেখেনি কখনো ,যদি কখনো দেখতো তাহলে হয়তো উল্টে পড়ে থাকত ৷

আরিসের রুমের সামনে দিয়ে আসতে আসতে হঠাৎ করে গিটারের টুংটাং আওয়াজ কানে ভেসে আসতেই পাদুটো যেন সামনের দিকে আর এগোলো না ৷
ওখানেই থ হয়ে দাড়িয়ে আছে আরু ৷ গিটারের ছন্দময় সুরের সঙ্গে গলার আওয়াজটাও এত সুন্দর ভাবে মিশে গেছে যে না চাইতেও যে কেউ সেখানে স্তব্ধ হয়ে যেতে বাধ্য ৷

__” তুম কিউ চালে আতে হো ৷
হার রোজ মেরি খাবো মে,
চুপকে সে আভি যাও ,
একদিন মেরি বাহো মে ৷
তেরেহি স্বপ্নে আন্ধেরো মে উজালো মে
কোয়ি নাশা হে তেরি আখোকি পেয়ালো মে
তু মেরে খাবো মে , জাবাবো মে ,সাওয়ালো মে
হার দিন যো রাতো মে মিলাতা হু খায়ালো মে
কেয়া মুঝে পেয়ার হে,,,,,,
কেসা ঘুমার হে ৷ ”

গানের সুরের তালের সাথে এতক্ষণ নিজেকে হারিয়ে ফেলেছির আরু তবে হঠাৎ গানটা থেমে যেতেই সেই গানের ঘোর থেকে বেরিয়ে এলো আরু ৷
নিজের মনে মনে বিড় বিড় করে বললো,,,,,
__” কি হল থেমে গেল কেন?”

তখন ভিতর থেকে আরিশ এর কন্ঠটা শুনতে পেল তবে তা অত্যন্ত উত্তেজিত কণ্ঠে , হয়তো কোন ব্যাপার নিয়ে একটু বেশিই উত্তেজিত হয়ে পড়েছে….

___”তুই চিন্তা করিস না , আমি এক্ষুনি আসছি কিছু হবে না আন্টির ৷”

__”,,,,,,,,,,,,”

__”তুই কাঁদছিস কেন, একদম কাঁদবিনা আমি আছি তো , এক্ষুনি আসছি ৷ আমার পৌছাতে আধঘন্টা মত লাগবে কোন চিন্তা করবিনা একদম….”

তাড়াতাড়ি করে আরিশ হন্তদন্ত হয়ে কোনরকম রুম থেকে নিজের ওয়ালেট আর মোবাইলটা নিয়ে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে গেল , আর আরু তা বুঝতে পেরে আরিশের ঘরের দরজার পাশে থাকা পর্দার কাছে লুকিয়ে গেছে…..

আরিশ সিঁড়ি দিয়ে নেমে ওর আম্মুর রুমের দরজা ধাক্কা দিতেই ওর আম্মু বেরিয়ে আসতেই কিছু একটা বলল আর তার পর হনহন অরে বেরিয়ে গেল ৷ সেটা আরু উপর থেকে দেখছে ৷

__”হঠাৎ কি এমন হল যে এভাবে এত রাতে বেরিয়ে গেলেন, হয়তো গার্লফ্রেন্ড কোন বিপদে পড়েছে তাই হেল্প করতে গেছে ৷ আমার তাতে কি বলে রুমে চলে গেল , তারপর শান্তির একটা ঘুম দেওয়ার জন্য শুয়ে পড়লো ”

তাড়াতাড়ি করে বাইকটা নিয়ে কোন রকম ভাবে বেরিয়ে গেল আরিশ ৷ আনিকা খান হতাশা নিয়ে ফিরে গেলেন ঘরে……

আফজাল সাহেব: কি হয়েছে এত রাত্রে আরিশ তোমাকে ডাকল?

__”আসলে প্রান্তের মায়ের অবস্থা খুব খারাপ ইমিডিয়েট অপারেশন করার প্রয়োজন না হলে হয়তো বাঁচবেন না সেইজন্য আরিশ তাড়াতাড়ি গেল , যাওয়ার আগে বলল দু লাখ টাকার যেন বিকাশ করে দেয়, ওর কাছে আপাতত এতো টাকা নেই….”

আমি এখুনি বিকাশ করে দিচ্ছি, এই প্রথম আমার ছেলে আমার কাছ থেকে কিছু চাইলো আর তাছাড়া প্রান্তর মাকে বাঁচানোটা আগে দরকার ৷
আরিশকে তো আমি এর আগে কতবার বলেছি নিজের হাত খরচা টা যেন আমার কাছ থেকেই নেই তবে কখনো তো আমার কাছ থেকে একটা টাকাও নেইনি, শুধু বলে,,,,
__” যেদিন আমি তোমাদেরকে দিতে পারবো সেদিন তোমাদের কাছ থেকে আমিও নেব তার আগে নয় ,আগে নেওয়ার যোগ্যতাটুকু হোক ৷”

অপারেশন থিয়েটারের সামনে দাঁড়িয়ে আছে আরিশ ওর পাশে রয়েছে সাহিল , প্রান্ত আর তূর্য, চারজনের মুখেই চিন্তার ছাপ ৷ প্রান্ত কখন থেকে কান্না করেই চলেছে , একমাত্র ওর মা ছাড়া এই পৃথিবীতে আর কেউ নেই ওর, ওর বাবা মদ খেয়ে বাড়ি এসে অত্যাচার করতেন তাই আলাদা হয়ে গেছে ওর মাকে নিয়ে ৷

ওর মায়ের অবস্থা খারাপ বুঝতেই প্রান্ত তাড়াতাড়ি ওর মাকে হসপিটালে ভর্তি করেছে তবে পর্যাপ্ত টাকা ছিল না বলে ডাক্তাররা অপারেশন করতে রাজি হননি ,তখন আরিশ ইমিডিয়েট 50000 টাকা পেমেন্ট করেছে, আর পরে আরো দিচ্ছে আপাতত ওর কাছে নেই তা শুনে ডাক্তাররা রাজি চাইনি , তবুও অনেক জোর করে অপারেশন থিয়েটারে পাঠিয়েছে আরিশ ৷

অপারেশন চলছে হঠাৎ ফোনে মেসেজের আওয়াজ হতেই ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখতেই একরাশ হাসি ফুটে উঠল ওর মুখে ,তাড়াতাড়ি কাছাকাছি বিকাশে গিয়ে টাকা তুলে নিল ,যদিওবা এত রাতে এতকিছু সব খুব মুশকিল ৷

টাকাটা নিয়ে প্রান্তের পাশে বসে টাকাটা ওর হাতে ধরিয়ে দিল ৷ এতগুলো টাকা হঠাৎ একসাথে পেয়ে প্রান্ত আরিশকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে দিল৷ সব সময় ওর এবং ওদের সবার বিপদে আরিশ ওদের পাশে দাঁড়িয়েছে, কখনও দ্বিধাবোধ করেনি ৷
আজকে ওর মায়ের এত বড় অপারেশনের জন্য এত টাকা দিচ্ছে তার ঋণ কিভাবে প্রান্ত শোধ করবে তা প্রান্ত ও নিজেই জানে না ৷

__”তোর এ ঋণ আমি এ জীবনে কিভাবে শোধ করবো আমি তা নিজেও জানিনা ৷”

আরিশ মেজাজ নিয়ে বললল:
__” টাকার অভাবে কি নিজের মাকে মেরে ফেলবি ৷”
আণ্টি কি শুধু তোর একার,আমাদের কেউ নয়! তাই এখন এসব আর না বলে তাড়াতাড়ি করে টাকাটা পেমেন্ট করে আয় ৷”
প্রান্ত আর এক মুহূর্তও দেরি করল না, টাকাটা অপারেশন থিয়েটারে জমা করে দিয়ে আসল….

চেয়ারে মাথাটা ঠেকিয়ে চোখটা বন্ধ করে একটা দীর্ঘ শ্বাস নিচ্ছে আরিশ ৷ অপারেশন সাকসেসফুল , প্রান্তর মা এখন ভালো আছেন তবে এখনও জ্ঞান ফেরেনি…..
তূর্য ,সাহেল দেখা করতে গেছে ৷ আরিশ দূর থেকেই একপলক দেখেছে ৷
|
|
আরু ঘুমিয়ে আছে , আর স্বপ্নের মধ্যেও যেনো গিটারের আওয়াজ টা বারবার ওর কানে ভেসে আসছে ৷ আরিসের গানটা একটা নেশা ধরিয়ে দিয়েছে ওকে, তা কি কেবল অন্য কিছু দিয়ে যাবে নাকি পুনরায় আরিশের একটা গান শুনে তাতে আবার আসক্ত হবে এগুলোই মাথায় আসছে বারবার ৷

Suraiya Aayat
চলবে,,,,,,,

তোমার নেশায় আসক্ত ২ পর্ব-০৩

0

#তোমার_নেশায়_আসক্ত
#সিজন:2
#পর্ব:3
#Suraiya_Aayat

__”আমি যাব না আপনি কি করেন আমিও দেখি ৷” বলে আরু আরিশের বিছানায় গিয়ে বসে গেল ৷

__”আচ্ছা পাগলের পাল্লায় পড়লাম তো !”

কথাটা শোনা মাত্রই আরূর মাথাটা গরম হয়ে গেল, সাথে সাথে উঠে আরিসের শার্টের কলার ধরে ফেলল ,শার্টের কলারটা ধরতেই আরিশ আরূর অনেকটা কাছে চলে এসেছে, অনেকটাই কাছে ৷
দুজনে কাছাকাছি চলে আসতেই আরু থতমত খেয়ে গেল , ও বুঝতে পারেনি যে ব্যাপারটা ঠিক এমন হবে তাই তাড়াতাড়ি করে আরিশ কে ছেড়ে দিল….

আরিশ এই সমস্ত ব্যবহার একদমই পছন্দ করে না , তাও আবার এই মেয়েটার সাহস দেখে অবাক হয়ে যাচ্ছে , সরাসরি ওর জামার কলার ধরেছে ৷

আগেরবার ভার্সিটির একটা ছেলে ওর কলার ধরেছিল বলে তার পরিনতিতে ছেলেটা প্রায় দু’সপ্তাহ হাসপাতালে ভর্তি ছিল ৷ কথাটা মাথায় আসতেই ওর হাতদুটো মুঠিবদ্ধ করল তবে মেয়েদের কে ও যথেষ্ট শ্রদ্ধা করে তাই চাইলেও ও আরুকে ওই ছেলেটার মত পরিণতি করতে পারবেনা….

মাথায় রাগটা উঠে আছে তবে এখন রাগটাকে আর বেশি দেখাতে চাইছে না ও, তাহলে আরু ভয় পেয়ে যাবে সেই কারণে ৷
শান্ত কন্ঠেই আরুকে বলল,,,,,
__” কাউকে পাগল বললেই সে পাগল হয়ে যায় না , যদি না সে নিজেকে মনে করে ৷”

আরিশ মিষ্টি কথায় কড়া জবাব যাকে বলে তাই বলল আরুকে ৷

আরু আর বেশি কিছু বলতে যাবে তার আগে আরিশের ফোনে ফোনটা বেজে উঠলো ৷ টুংটুং আওয়াজ হতেই পকেট থেকে ফোনটা বার করলো আরিশ ৷

__” হ্যাঁ তুর্য বল ৷”

__”দোস্ত তুই ফিরবি কখন?সাহেল এখনো বাড়ি ফিরল না, তাছাড়া প্রান্তটা শুনলাম আজকে ফিরবে না কালকে সরাসরি বাসা থেকে ভার্সিটি যাবে, আমার একা একা ভাল লাগতাছে না ৷”

আরুর দিকের রাগি চোখে তাকিয়ে বলল ,,,,,,
__”রহিমা খালার সাথে গল্প কর যদি ভালো না লাগে ৷”

আরিশের কাছ থেকে এমন একটা উত্তর পেয়ে তুর্য বুঝতে পারল যে কিছু একটা হয়েছে ৷

__”দোস্ত এত রেগে আছিস কেন?
এমন করে কথা বলতাছস কেন?”

__” হমমম ৷”

__”কি কারনে রাগ করে আছিস আমারে বল , কেউ কি তোকে কিছু বলছে ? শুধু একবার তার নামটা বল গিয়ে হাত-পা ভেঙে দিয়ে চলে আসব ৷”

__”আমি এখন রাখছি তূর্য , টেককেয়ার ইউরসেল্ফ যতক্ষণ না আমি বাসায় যাচ্ছি….”

আসলে আরিশের সাথে তুর্য , প্রান্ত আর সাহেলের ফ্রেন্ডশিপটা এমন যে ওর মুডটা ঠিক কখন কেমন সেটা আরিস এর কথা বলার ধরন শুনলেই ওরা বুঝতে পারে , তাছাড়া আরিশ সব সময় ওদের খেয়াল রাখে কখনো কোন বিপদে পড়তে দেয় না , আর আরিশ যদি কোন বিপদে পড়লে তাহলে ওরা ঝাঁপিয়ে পড়ে ৷

প্রথমত আরু যাকে নিজের ক্রাশ বলে ভেবেছিল এখন তাকেই নিজের চরম শত্রু হিসেবে দেখছে ও, আর তার ওপরে তূর্যর নামটা আবার শুনে সকালের সব কথা মনে পড়তেই ওর পুরোনো সব রাগ আবারো জেগে উঠলো ৷

আরিসের ফোনটা কাটা মাত্রই আরু বলে উঠলো,,,,, __”নিজের ফ্রেন্ড কে সঠিক শিক্ষা দিতে পারেন না ? আমার আমার তো প্রথমেই মনে হয়েছে আপনিও উনার মতই, আর এখন আমি তা সিওর ৷ আপনাকে দেখেই বোঝা যায় আপনি কেমন ৷
যখন আপনার ফ্রেন্ড গোটা ভার্সিটির মাঝে একটা মেয়েকে এভাবে অপমান করল আর আপনি তো একটা কথাও বললেন না আর না কোনো প্রতিবাদ করলেন ৷ আপনি ওরকম ওনার মতোই মেয়েদের কে টিস করেন আর মেয়েরা সব সহ্য করে শুধু আপনি সিনিয়র বলে ৷ সানা বলছিল আপনি নাকি ওদের মতো নয় তার নমুনা তো দেখতেই পাচ্ছি ৷

রাগের মাথায় আরু যা তা বলে দিল , একেই নিজের ক্রাশকে নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে দেখেছে তার ওপরে আবার ওকে রুম থেকে বের করে দিয়েছিল সেই রাগ আরো চেপে বসেছে ওকে ৷

আগেই বলেছি যে আরিস কখনো নিজের সম্বন্ধে কটু কথা সহ্য করতে পারে না আর না পারে নিজের ফ্রেন্ড দের কে নিয়ে তাই প্রত্যেক বারের মত এবারও আরুশির কথা বলাটা যেন আর সহ্য হলো না ৷

মুহূর্তের মধ্যে আরুর হাতটা মোচড় দিয়ে ঘুরিয়ে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নিল ,আরুর পিঠটা এখন আরিশের বুকের সাথে লেপ্টে আছে , আর আরুর হাতটাও শক্ত করে ধরে আছে….

হঠাৎ করে এমন হওয়াতে আরূ ভয় পেয়ে গেল, এতক্ষণে যা রাগ দেখিয়েছে সব যেন নিমেষেই পানি হয়ে গেছে….

আরিশ শান্তকণ্ঠে আরুশির কানে কানে বলল,,,,,,
__” ডোন্ট ডেয়ার টু সে এনিথিং রং এবাউট মি and মাই ফ্রেন্ড ওকে ডিয়ার,,,,আইদার আই উইল কিল ইউ ৷”

কথাগুলো আরিশ যেমন ভাবে বলল তার যে হৃদয় ছোঁয়া , অদ্ভুত মায়া আছে কথাগুলোর মাঝে ৷ কেউ তাল কথার মায়ায় আসক্ত হতে বাধ্য ৷ কিছুখনের জন্য ও আরিশের কথায় মাঝে হারিয়ে গিয়েছিল ৷

আরিস আরুর মুখের উপর পড়ে থাকা চুলগুলোকে ফু দিয়ে আরও উড়িয়ে দিল ,এতে আরুশির সারা শরীর জুড়ে শিহরন বয়ে গেল মুহূর্তের মধ্যেই ৷এমনটা ওর সাথে আগে কখনো হয়নি এই প্রথম কোনো এরকম একটা অদ্ভূত অনুভুতিতে জর্জরিত ও ৷

আরুশির হাতটা আগের মতো ধরে রেখেই সাথে সাথে শান্ত আর নেশাভরা কণ্ঠে বলল ,,,,,,,,
__”নাও গেট লস্ট ৷”

আরুশি আরিশের দিকে অদ্ভুত এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে , কোনো কিছু না বলে রুম থেকে বেরিয়ে গেল ও ৷ আসলে সেই মুহূর্তে ওর কি বলা উচিত ও নিজেই জানে না ৷

সিঁড়ি দিয়ে নামছে আর এক ঘোরের মধ্যে আছে আরু, ওর সাথে কি হচ্ছে নিজেও বুঝতে পারছে না ৷

আরু চলে যেতেই আরিস একটু টেডি smile দিল তারপর চলে গেল ওর সব থেকে প্রিয় ব্যালকনিতে ৷ প্রত্যেকবার বাসায় ফিরে ও প্রথমে ব্যালকনিতে যায়,ওটা ওর কাছে সব থেকে প্রিয় জায়গা ৷ কেন জানিনা জায়গাটার প্রতি অদ্ভুত এক ভালোবাসা আছে ওর ৷ একুরিয়ামের জলের ঢেউয়ের সাথে খেলতে থাকা মাছগুলোই যেন ওর একান্ত সঙগী বলে মনে হয় , ওদের সাথে ভাব বিনিময় করে তবে ওরা তা কতটা বুঝে উঠতে পারে তাও ঠিক স্মৃতিগোচর হয় না আরিশের ৷

আরুশি গিয়ে ধপ করে সানার বিছানার উপর বসে পড়ল, আগের মতোই চুপচাপ ৷ সানা অনেকক্ষণ ধরে লক্ষ্য করছে যে আরু চুপচাপ আছে ৷
কোলের উপরে বাটিতে রাখা পপকর্ণ গুলো এতক্ষণ ধরে খাচ্ছিল আর আরুশিকে লক্ষ্য করছিল সানা , তবে এখন আরুর ভাবসাব দেখে ওর ঠিকঠাক লাগছে না,হলো টা কি !

পপকর্ণ এর বাটিটা কে এক সাইডে রেখে আরুর পাশে গিয়ে বসল, তাতেও আরূর ভাবভঙ্গীর কোন পরিবর্তন হলো না তাই না পেরে আরূর কাঁধে আলতো করে স্পর্শ করতেই আরোশী চমকে গেল ৷
__”কিরে এতক্ষণ ধরে কি ভাবছিস আনমনা হয়ে ?”

__”ক্রাশের কথা ৷”

__” হা হা তোর ক্রাশ এর কথা ! ” বলে মুখটা হাত চেপে মুচকি মুচকি হাসতে লাগল সানা ৷

এতক্ষণ আনমনা হয়ে কথাগুলো ভাবছিল আরূ তবে এখন সানার হাসিতে ওর চেতনা ফিরে এলো, সঙ্গে সঙ্গে রেগে গিয়ে বলল ,,,,,,,
__” আমার চোখে দেখা এই পৃথিবীতে সবচেয়ে খারাপ মানুষের তালিকায় উনার নামটা সবার উপরে থাকবে, হি ইজ আ বিগ টাইপ অফ ডেভিল ৷ বাজে লোক, খারাপ লোক , পচা লোক ৷”

সানা তো আরুর কথা শুনে অবাক ৷ তার মানে ওরা দুজন দুজনের মুখোমুখি হয়েছে আর প্রথম দেখাতেই দুজন দুজনের সাথে যে কোনো ঝামেলা বাঁধিয়েছে তা সানার আর বুঝতে বাকি নেই , তবে ওদের দুজনের ক্যাটফাইট টা নিজের চোখে দেখলে বড্ড বেশি ইনজয় করতে সানা, তবে মিস হয়ে গেল ওর ৷

কথাগুলো বলেই আরূ নিচে চলে গেল…..
__”আর বলিস না আমার মেয়ের কথা, তোর মত আমার মনেও এটা বড় প্রশ্ন যে হঠাৎ আজকে সাদা রঙের ড্রেস কেন পড়ে এলো ?”

__”সত্যিই তো ভাবার বিষয় , কি হলো আমার আরু মামনির ! তার দেখ হয়তো কাউকে ভালো লেগেছে আর তার সাদা রঙ পছন্দের ৷ ”
কথাটা বলেই দুজনেই মুখ চেপে হাসতে লাগল ৷

ওদের কথাগুলো আরুর কানে পৌঁছেছে ৷ সত্যিই ওর অজানা ক্রাশ কে ও খুব পছন্দ করত তবে ক্রাশ যে বাঁশের মতো পরিণত হবে সেটা ভেবেনি কখনো ৷ এখন রাগ লাগছে ওর এসব কথায় ৷
কথায় আছে ক্রাশ নামক জিনিসটা হল বাঁশ এর মতো , সেটা আরু আজকে হাড়ে হাড়ে বুঝতে পারছে ৷
আরু রেগে গিয়ে বলল ,,,,,,
__”আমার ড্রেস নিয়ে তোমরা মজা করছ তাইনা?”

অনিকা খান আরুর কাছে গিয়ে,,,,,,
__” আমার মামনি কে নিয়ে আমি কখনো মজা করতে পারি এমন টা হয়েছে কখনো !”

__”থাক থাক অনেক হয়েছে, সবই দেখেছি আর শুনেছিও ৷ আমাকে কিছু বোঝাতে এসো না ৷ আন্টি আমার খুব খিদে পেয়েছে আমি বাড়ি যাব তাড়াতাড়ি খেতে দাও নাহলে আমি এক্ষুনি চলে যাচ্ছি ৷”

__”এটা কোন কথা ? তুই আজকে বাড়ি যাবি একথা ভুলে যা ,আজকে তোরা দুজনেই আমাদের বাসায় থাকবি ৷ ”

__” ইমপসিবল , আমি এখানে থাকবোই না ৷”

__” আমার কথা তুই রাখবি না ? তুই না বলিস আমি তোর আরেক মা তাহলে !”

__” থাক না মা !( আরুর মা করুন স্বরে বলল)

__” খেতে দেবে কি না ?”

__” তার মানে থাকবি তাইতো ?”(খুশি হয়ে).

__” হমমম ৷”😒

চলবে,,,,,,,,

তোমার নেশায় আসক্ত ২ পর্ব-০২

0

#তোমার_নেশায়_আসক্ত
#সিজন:2
#part:2
#Suraiya_Aayat

বেশ অনেকক্ষণ হলো আরূ সানাদের বাড়িতে এসেছে আর অপেক্ষা করেই যাচ্ছে তার সেই না-দেখা ক্রাশকে শুধু চোখের সামনে দেখার জন্য ৷ অনেকদিন ধরে ছেলেটার উপর ক্রাশ খেয়ে বসে আছে আরূ তবে তাকে আজ অব্দি নিজের চোখে দেখেনি কথাটা ভাবলেই আরুর বুকের ভিতরটা ফাইটা যাই ৷

মনের ভিতর কেমন একটা আনচান আনচান করছে আরুর , কখন যে দেখবে তার সেই ক্রাশকে সেটাই ভাবছে ও তবে শুনেছে যে তার নাকি সাদা রঙ অতি পছন্দের তাই বেছে বেছে একটা সাদা রঙের গাউন পরেছে, সাদা রঙের থ্রি পিস পরলে কেমন উদ্ভট লাগবে তাই সেটাতে একবার হাত দিয়েও দেখেনি ও যদি ফাস্ট ইমপ্রেশন খারাপ হয়ে যায় তখন !

বাড়ি থেকে বের হওয়ার আগে অলরেডি ওর আম্মু রুবিনা রহমানের কাছ থেকে কিছু শ্রুতিবাক্য শোনা হয়ে গেছে ওর ৷

রুবিনা :কি রে তুই হঠাৎ সাদা রঙের এমন একটা উদ্ভট ড্রেস পরেছিস কেন? তুই কি কোন শোকসভায় যাচ্ছিস?বলিস নি তো, তোর তো অনিকাদের বাড়িতে যাওয়ার কথা ছিল তবে !

আরু বাঁকা চোখে তাকিয়ে বলল :আম্মু তুমিও ! লাইক সিরিয়াসলি ! আমি যদি একটা সাদা থ্রি পিস পরতাম তাহলে তুমি তুমি অবশ্যই বলতা যে আমি একটা শোকসভায় যাচ্ছি বাট আমি একটা ডিজাইনার গাউন পরেছি সেটা তোমার কাছে উদ্ভট লাগতাছে? এই ড্রেসটাই আমাকে যে সুন্দর লাগতাছে সেটা তোমার চোখে পড়ে নাই !

রুবিনা রহমান সামান্য ভ্রু কুঁচকে আরুর দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,
__” তা হঠাৎ সাদা রঙের ড্রেস ব্যাপারটা কি ? নিশ্চয়ই কোনো ব্যাপার আছে না হলে আমার মেয়ে তো কখনো এই রঙের ড্রেস পড়বে না, তাও আবার কোথাও যেতে গিয়ে ৷”

__”তুমি কি বলতে চাইছো আম্মু যারা সাদা রঙের ড্রেস পরতে পছন্দ করে তারা মানুষ না !”

আরুর মা এবার অবাক চোখে আরূর দিকে তাকিয়ে বললেন ,,,,,,
__”এটা কি তুই নাকি অন্য কেউ , আমি তো বিশ্বাসই করতে পারছি না ‌৷ তুই আমার আরু মা তো?”

আরু বাঁকা চোখে ওর মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,,,
__” কেন কি হয়েছে , না বিশ্বাস করার কি আছে! তোমার কি আমাকে এলিয়েন বলে মনে হচ্ছে !”

না আসলে ঠিক তেমনটা নয়, আমারতো মনে আছে যে আমার মেয়ে এই সাদা রঙের ড্রেস পরবে না বলে কি কান্ডটাই না করেছিল তার কাজিনের বিয়েতে ৷

আরু মনে মনে,,,,,,
__”এই সেরেছে আম্মু এটা এখনো মনে রেখেছে ৷আম্মু যদি এটা আমার ক্রাশের সামনে বলে দেয় তখন তো ফাস্ট ইমপ্রেশনটাই খারাপ হয়ে যাবে ৷”

আরু এবার বলল,,,,,
__” আম্মু তুমিও না কেন আবার এইসব পুরনো কথা তুলছো বুঝিনা ৷”

__”বাবা সে স্মৃতি কি আর ভোলার কান্ড যে আমি ভুলে যাব , কখনোই ভুলবো না আমি ৷
আয়রার গায়ে হলুদের দিন সবার জন্য যখন সাদা ড্রেস অর্ডার করা হয়েছিল তখন তুই সাদা ড্রেস পছন্দ করতিস না বলে তুই প্রত্যেকটা জামা কেটে কেটে ট্রলিতে ভরে তোর মামার কাছে পারসেল পাটিয়েছিলি ,তার তাতে লেখা ছিল,,,,,
__”ডোন্ট ডেয়ার টু ওয়্য৷র দিস টাইপ অফ হোয়াইট কালারড ড্রেস ৷তোমার আরু মা ৷”

__”তোর মামাতো কিছু মুহূর্তের জন্য শোক কাটিয়ে উঠতে পারেনি , বেশ অনেকখন লেগেছিল নিজেকে সামলাতে ৷ ওই জায়গায় অন্য মানুষ হলে হয়ত তোর গালে ঠাস ঠাস করে চড় পড়ে যেত কতগুলো কিন্তু তোর মামা তোকে খুব ভালোবাসেন বলে তাই কয়েকশো জামা কেটে কেটে কুচি করলেও সব মুখ বুজে সহ্য করে নিয়েছিলেন , আবার নতুন করে হলুদ রঙের ড্রেস অর্ডার করেছিলেন ৷ ”

__”তো ৷”( ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে)

__”তো কিছুই না , আমিতো জানি আমার মেয়ে কি ৷”

আরু এবার নিজেকে নর্মাল করে ব্যস্ততা নিয়ে বলল,,,,,,
__” মানুষ চেঞ্জএবেল আম্মু আর আমি মনে করি মানুষের দিন দিন নিজের মাইনডটাকে বদলাতে পারে সেটা নিয়ে অবাক হওয়ার কিছুই নেই, আমার ইচ্ছা হচ্ছে সাদা রঙের ড্রেস পরার আমিও পড়েছি ৷”
বলে তাড়াতাড়ি করে ওখান থেকে চলে গেল গিয়ে গাড়িতে উঠে পড়লা কারণ ও জানে সেখানে আর বেশিক্ষণ থাকলে ওর আম্মু পুরনো কাসুন্দি ঘেঁটে আবার অনেক কিছু বলতে শুরু করবে যাতে করে ওর প্রেস্টিজ ডাউন হবে আর ওর লাভের লাভ কিছুই হবে না ৷”

__”মেয়েটার কি হয়েছে আল্লাহ মালুম ৷”

ওদের গাড়ি চলছে আর আরু মনে মনে অনেকক্ষণ ধরে একটা কথা ভাবছে তা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওকে ওর আম্মুকে বলতেই হবে না হলে বড় কিছু ঘোটালা হয়ে যাবে ৷

আরু ওর আম্মুর হাতে গুতো দিয়ে বলল,,,,
__” ও আমার পিয়ারি আম্মু শোনো না ৷”

আরূর মা বিরক্ত হয়ে বললেন,,,,,
__” কি বল ৷”

__”তুমি ওখানে গিয়ে আবার এসমস্ত কথা বলবে না তো?”(কাচুমাচু ফেস করে )

__”কেন বলতে হঠাৎ এই সমস্ত কথা বলছিস? আর নতুন করে বলবো কি তোর কীর্তিকলাপ তো তোর অনিকা আন্টির আর জানতে আর বাকি নেই ৷”

আরূ উত্তেজিত হয়ে বলল,,,,,
__” সেখানে তো কোন সমস্যা নেই , সমস্যা হলো ওই যে আমার ক্রাশ ৷”
বলেই মুখটা হাত দিয়ে চেপে ধরল ৷ আর একটু হলেই আসল কথাটা পেট থেকে বার হয়ে যাচ্ছিল ওর ৷

__”ক্রাশ মানে ঠিক বুঝলাম না , কি বলতে চাইলি৷”

__”আমি বলতে চাইছিলাম যে আব্বু বারবার তোমার উপর ক্রাশ খাই আর নতুন করে প্রেমালাপ শুরূ করে ,হাউ রোমেন্টিক ৷”

উনি বাঁকা চোখে তাকিয়ে আর কিছু বললেন না , উনি আর ওনার মেয়ের সাথে কোন কথা বাড়ালেন না কারণ ওনার মেয়েকে এত বছরেও উনি বুঝতে পারলেন না যে ও কি চায় , এত মুড সুইং হয় যে ওর চাওয়া পাওয়া গুলো বোঝা মুশকিল ৷

এতক্ষণ ধরে এই সমস্ত কথাগুলো ভাবছিল আরূ হঠাৎ পেছন থেকে সানার গলার আওয়াজ শুনেই ও চমকে উঠলো ৷

__” উনি চলে এসেতেন?”(উত্তেজিত হয়ে)

__”না এখনো আসেনি তবে আর কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে আসবে , আর তুই এতখন কি ভাবছিলি?কখন থেকে ডেকেই যাচ্ছি আমি, তোর কোন সাড়া শব্দই নেই ৷”

আরু দাঁত বার করে হেসে বলল,,,,,
__” কই কিছুনা ৷”

__’বাই দ্যা ওয়ে আম্মু তোর জন্য চৌকো পরোটা বানাচ্ছে ৷”

__”নীচে নেমেই আন্টিকে একটা চুমু দেবো ৷”

সানা মনে মনে,,,,,
__”তুই নিজেও পাগল আর তোর সাথে আমার আম্মুও ,নাহলে কে চৌকো পরোটা খেতে চাই আর কে বানাতে চাই ৷😵”

__” সানা আমাকে একটু আমার ক্রাশের ঘরে নিয়ে যাবি , আইমিন তোর ভাইয়ার রুমে ৷ আজ অব্দি তোমাকে তো নিয়ে গেলি না (মুখ ভাঙছি দিয়ে ) তাই আজকে তো নিয়ে যেতেই পারিস ৷🤗”

__”না একদমই না , ভাইয়া ওর রুমে কাউকে এলাও করে না , ইভেন আমি নিজেও খুব একটা যাই না শর রুমে , আম্মু গিয়ে মাঝে মাঝে পরিষ্কার করে আসে রুমটা ৷”

__”কি আছে এমন ঐ রুমে যে কাউকে এলাও করে না ৷”
__”এমনিই দেয় না , কারন ভাইয়া পছন্দ করে না তাই, আমি এর থেকে বেশী আর কিছু জানি না…”

__”কিন্তু আমিতো যাবোই ৷”

__”একদমই নয় , এখানে চুপ করে বসে থাক যতক্ষণ না ভাইয়া আসছে…”

__”আচ্ছা আমি একা একা বসে বোরিং ফিল করছি তাই আয় তোর সাথে গল্প করি ৷” বলে সানার হাত ধরে ওর পাশে বসিয়ে দিল ৷

মুহুর্তের মধ্যে সানার সারা শরীর জুড়ে যেন ঝড় বয়ে গেল , আরু ওর সাথে গল্প করবে মানে ওর জীবন তেজপাতা ৷ মহীয়সী নারীদের মতো জ্ঞান দেয় ও যা সানার একদম ভালো লাগেনা তবুও বাধ্য হয়ে মাঝেমাঝে শুনতে হয় , তবে আজকে কোন মতেই না ৷”
__”আরে তোর সাথে কথা বলতে বলতে আমি তো ভুলেই গেলাম যে আম্মু আমাকে জিজ্ঞাসা করতে পাঠিয়েছিল যে তোর পরোটাতে ঘি দেবে কি না ৷”

আরু দাত বার করে হেসে ওকে টাটা করার ইশারা করে বলল,,,,,
__”দিতে বল, আজকে কেন জানি না ঘি জিনিসটার প্রতি আমার প্রেম প্রেম পাচ্ছে ৷”

কথার কথাটা শোনা মাত্রই সানা আর দাঁড়ালো না , ওই রুমে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বেরিয়ে যাওয়াই ওর পক্ষে মঙ্গল ৷

সানা রুম থেকে বেরিয়ে যেতেই আরু বিজয়ের হাসি দিল ,,,,,,,,
__”ইয়াপ আমি সাকসেসফুল ৷ আমি জানি তো তুই আমাকে যেতে দিবি না তাই আমাকে নিজেই ব্যবস্থা করতে হলো আমার ক্রাশের রুমে যাওয়ার জন্য ৷ আমাকে দেখতেই হবে কি এমন আছে যার জন্য কাউকে এলাও করে না ৷ অবশ্য ইন ফিউচার রুমটা তো আমারো হতে পারে তাইনা ! “কথাটা বলে আরু লজ্জায় মুখ ঢাকলো ৷

আরু দরজা খুলে আসতে আসতে করিডোর দিয়ে কিছুটা দূরে এগিয়ে যেতেই একটা রুম দেখতে পেল৷ দরজাটা বাইরে থেকে আটকানো ৷
এর আগে অনেকদিন ও সানাদের বাড়িতে এসেছে তবে কখনই রুমটায় যাওয়া হয়নি ওর, তাই ওটাই ভাবলো সেইরুম ৷ধীর পায়ে রুমের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো তারপরে কোনো কিছু না ভেবেই দরজাটা খুলে ভিতরে ঢুকে গেল….
ভিতরে ঢুকতেই আরু অবাক কারণ বাইরে থেকে রুমটা যতটাই ছোট মনে হচ্ছিলো ভেতর থেকে ঠিক ততটাই বড় , রুমটা সম্পূর্ণরূপে পরিপাটি করে গোছানো রয়েছে , দেওয়ালগুলো সাদা , ঘরের পর্দা গুলোও সাদা , ঘরের একপাশে লম্বা বুকশেলফ রয়েছে আর তাতে অজস্র বইয়ের সমাহার, এদিক ওদিক তাকাতেই ওর চোখ গেল ফ্লাওয়ার ভাস টার দিকে , সেখানে সাদা রঙের অর্কিড ফুলগুলো ওকে ভীষণভাবে আকৄষ্ট করছে ৷ বরাবরই অর্কিড ওর ভীষণ প্রিয় , তবে এর আগে কখনো সাদা রঙের অর্কিড ও দেখেনি তাই ফুলগুলো দেখতেই তাড়াতাড়ি করে ফ্লাওয়ার ভাসটার কাছে গিয়ে ফুলদানিটা হাতে জড়িয়ে নিয়ে ফুলগুলোর ঘ্রাণ নিতে লাগলো ৷ অপূর্ব যাকে বলে এককথায় ৷

__” সামথিং ইজ ডিফারেন্ট ইন ইউ মাই ডিয়ার ক্রাশ ৷হুইচ আই লাইক ইট ৷”

ফুলগুলো একদম সতেজ তা সেগুলো দেখেই বুঝতে পারল আরু ৷ হয়তো তিনি আসবেন বলেই নতুন করে ই ঘরটা পরিপাটি করে রাখা হয়েছে, ফুলগুলোকেও চেঞ্জ করা হয়েছে৷

ফুলদানিটা রেখে ব্যালকনির দিকে তাকাতেই দেখলো বিরাট বড় একটা অ্যাকোয়ারিয়াম আর তাতে অজস্র রংবেরঙের মাছ , তা দেখে আরুর মনটা খুশি হয়ে গেল ৷ ওর বাড়িতে অ্যাকোরিয়াম নেই কারণ ও জিনিসের যত্ন করতে পারেনা তাই মাছগুলোকে আনলে মাছগুলো যে অনাহারে মরবে তা ‌ও জানে , সেই কারণে আর ওর আম্মু আনতে দেয় না ৷ তাছাড়া উনিও সারাদিনের বাড়ির কাজের ব্যস্ততায় মাছ গুলোর পরিচর্যা করতে পারবেন না বলে সে কথা আর দুবার ভেবে দেখেননি…

অ্যাকোরিয়ামটাতে হাত দিয়ে আলতো করে স্পর্শ করতেই একটা গোল্ডফিশ এসে ওর আঙুল বরাবর কাঁচটা যেখানে স্পর্শ করেছে সেখানে গোল্ডফিশটা মুখ ঠেকালো…..

মাছটা মুখটা ঠেকাতেই আরু খুশিতে ডগোমগো হয়ে গেল, ভীষণ ভালো লাগছে ওর ৷
__” পছন্দ আছে বেশ , একদম অন্যরকম একজন মানুষ ৷”

একুরিয়ামের কাছে বেশ কিছুক্ষণ থেকে রুমের ভেতর ঢুকলো ও , চোখটা এদিক ওদিক ঘুরছে আর সবকিছু পরখ করে দেখছে , যে মানুষটা কে ও চেনে না ,জানে না সে মানুষটা সম্বন্ধে জানার জন্য ওর আগ্রহের শেষ নেই ৷
হঠাৎ চোখ পড়ল আলমারির ওপর রাখা গিটারটার দিকে ৷

গিটারটার দিকে চোখ পড়তেই আরূর মনে প্রবল ইচ্ছা জাগল সেটা বাজানোর জন্য , কিন্তু ও তো বাজাতে পারে না !

__”না পারলে সমস্যা কোথায় ? প্রয়োজনে শিখব ৷
আর কবি বলেছেন যে,,,,,
” পারিবোনা একথাটি বলিওনা আর,
একবার না পারিলে দেখো শতবার ৷”

আরু তুইও চেষ্টা পারবি , লেটস ট্রাই ৷”

কথাটা নিজে নিজেই বলে গিটারটা পাড়ার চেষ্টা করল তবে হাতটা ওর পৌঁছাচ্ছে না গিটার অব্দি , ওর হাইট অনেকটাই শর্ট তাই হাতটা গিটার অব্দি পৌঁছাচ্ছে না দেখে আরু বললো,,,,
__”আঙুর ফল টক ৷ তাই আরুপাখি ওসব কিছু তোমার জন্য নয় বাবু ৷”

বলে গিটারটার ভাবনা ছেড়ে দিল ৷

অনেকক্ষণ ধরে রুমটা ঘোরাঘুরি করে দেখছে ও তাই একটু ক্লান্ত হয়ে পড়েছে, চারিদিকে সব সাদা সাদা দেখতে দেখতে ৷
__” কোন মানুষের এসব পছন্দ হয় কেমনে ?” এই বলে বিছানায় শুয়ে পড়ল হাত-পা ছড়িয়ে দিয়ে ৷

নিজের রুমে ঢুকতে যাবে তখনই রুমের ভিতরে দরজাটা সামান্য খোলা দেখে আরিশের ভ্রূ জোড়া আপনা আপনিই কুঁচকে এল, আর ভাবতে লাগলো রুমের দরজাটা কেন খোলা ৷ সাধারণত ওর আম্মু বা সানা রুমে আসলেই দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে যাই, তাহলে কি ভেতরে কেউ আছে?

তাড়াতাড়ি করে রুমের ভিতরে ঢুকে গেল আরিস, ঢুকতেই দেখলো একটা মেয়ে বিছানার উপর সটান হয়ে হাত-পা ছড়িয়ে শুয়ে আছে , দেখতে কিছুটা অদ্ভুত লাগলেও মাথাটা এবার ওর বিগড়ে গেল ৷
কারণ ওর রুমে ঢুকে ওর জিনিসপত্রে টাচ করার মতো কাজ সাধারনত বাইরের লোকরা করে না ৷ এখনো আরূর মুখটা দেখেনি ও ৷

__”এই মেয়ে কে তুমি আর এভাবে অন্যের রুমে না বলে ঢোকার সাহস তুমি কোথা থেকে পেলে ?”

হঠাৎ একটা চেনা পুরুষালী কন্ঠ শুনে আরূ চমকে গেল, গলার স্বরটা যেন কোথায় শুনেছে ও তবে মনে করতে পারছেনা এখন ৷ তাড়াতাড়ি করে উঠে দেখতেই আরিশ কে দেখতে পেল ও ৷

__”আপনি এখানে ! আপনি এখানে কি করছেন ?দেখতে দেখতে আমার পিছু নিয়ে নির্লজ্জর মতো এখানে এসেছন ৷”

আরূকে এখানে আর এভাবে দেখে আরিশ অবাক হলো একটু,,,,,,

__”আর ইউ ক্রেজি , মানে মাথার একটা তার ছেঁড়া নাকি ? আজব ! আমার রুমে ঢুকে আমাকেই বলছেন যে অন্যর রুমে কেন ঢুকেছি, লাইক সিরিয়াসলি !”

আরিশের কথা শুনে আরূ একটু থতমত খেয়ে গেল, তাহলে এটা কি ওর সেই ক্রাশ যাকে দেখার জন্য আরু এতক্ষণ ধরে পাগল হয়েছিল , তবে এখন আর পাগল হতে ইচ্ছা করছে না,এখন ওর রাগটা সপ্তম আসমানে ছাড়িয়ে গেছে ৷
হঠাৎ মনে পড়ল কলেজে আরিশ ওকে একবার দেখে অ্যাটিটিউড দেখিয়ে গাড়িতে উঠে পড়েছিল ৷ আর আরু কারোর অ্যাটিটিউড সহ্য করে না একদম ৷

আরিসের সামনে গিয়ে বলল,,,,
__” আমি যদি জানতাম এটা আপনার রুম , যদি জানতাম তাহলে আমি কখনোই আসতামনা ঠিক আছে ৷”

__” তা আপনি এখন যখন জেনে গেছেন আশা করি আপনার এই রুমে আর কাজ নেই তাই আপনি যেতে পারেন…”

আরিসের কথাগুলো যেন এখন ওর কাছে ঠিক কাটা ঘায়ে নুনের ছিটার মত লাগছে ৷

__”আপনার মত বেয়াদব এর সাথে আমার কথা বলার কোন ইচ্ছা নেই ৷ আপনার নিজের অ্যাটিটিউড নিজের পকেটে রাখেন ৷”

আরুর থেকে এত কিছু শোনার পরেও আরিশ শান্তকণ্ঠে বলল,,,,,,
__” আচ্ছা আপনি এখন এই রুম থেকে যেতে পারেন, আমি আমার রুমে কাউকে এলাও করি না, তাই যত তাড়াতাড়ি যাবেন তত তাড়াতাড়ি আপনার জন্যই মঙ্গল ৷”

__”কী করবেন এখান থেকে না গেলে, কি করবেন , আমি যাব না দেখি আপনি কি করেন ৷”
বলে বিছানায় হাত পা গুটিয়ে বসে পড়ল ৷

__”ভারী পাগলের পাল্লায় পড়লাম তো !”

Suraiya Aayat
চলবে,,,,,

কেমন লাগছে ওদেরকে ?😁

তোমার নেশায় আসক্ত ২ পর্ব-০১

0

#তোমার_নেশায়_আসক্ত
#সিজন:2
#সূচনা_পর্ব
#Suraiya_Aayat

প্রথম দিন ভার্সিটি এসেই একটা ছেলের সাথে তুমুল ঝামেলা বেধে যায় আরুর ৷ ভার্সিটির গেটের সামনে একটা ছেলে আর মেয়ের তুমুল ঝগড়া দেখে সবাই তকিয়ে তাকিয়ে দেখছে ৷
আরূর খুব বিরক্ত লাগছে এখন ,একে তো এই ছেলেটা দোষ করেছে তার ওপর উল্টে ওর ওপরেই গালাবাজি করছে, মেজাজটা ক্রমাগত খারাপ হয়ে যাচ্ছে ওর , তবে ওউ ছেড়ে দেওয়ার পাত্রী নয় ৷

__” মহা মুশকিল ! এই মেয়েটা দেখছি পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়া করছে ৷”

__”আমি কোথায় ঝগরা করছি , আপনি নিজের দোষটা স্বীকার করলেই তো আর ঝগড়াটা হয় না , আর এভাবে এখানে চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে লোকজন জড়ো করে খুব মজা পাচ্ছেন আপনি ?”

তূর্যর এবার নিজের মাথার চুল নিজেই ছিড়তে ইচ্ছা করছে , একটা মেয়ের সাথে ঝগড়া করায় পাল্লা দিতে গেছে , ও ৷
__” এতদিনের শোনা প্রবাদটা যেন আজকে আমার কাছে সত্যি মনে হচ্ছে যে মেয়েদের সাথে কথাই আর ঝগরায় পারা যায় না….”

আরু এবার আঙ্গুল উঁচিয়ে তুর্যর দিকে এগিয়ে গিয়ে বললো ,,,,,,,
__”আপনি আমাকে ঝগড়ুটে বলেন কোন সাহসে ? আমাকে দেখে কি আপনার ঝগড়ুটে মনে হচ্ছে,আমার মুখে কি ঝগড়ুটে লেখা আছে ? আর দেখুন তো আপনার জন্য আমার ওড়নাটা কতটা ছিড়ে গেছে তার বেলা কিছু নয় নাকি ?”

__”এই মেয়ে শোনো একদম ফালতু কথা বলবে না ঠিক আছে, বেশি ঝামেলা করলে এক্ষুনি আরিশকে ডেকে আনবো তারপর ও তোমার টাইট দেবে তখন দেখো কেমন লাগে তাই আমার সাথে বেশি লাগতে এসো না ফলাফল ভাল হবে না ৷”

আরুর পাশের সানা দাঁড়িয়ে রয়েছে আর যা যা হচ্ছে সব দেখছে ৷ চোখের চশমাটা সামান্য ঠিক করে নিয়ে মাথা নিচু করে আছে ও ৷ এদের সকলকে খুব ভালো করে চেনে ও এমনকি ব্যাক্তিগতভাবেও , তাই এদের সামনে কিছু না বলাই ভালো, কিছু বললে পরে ওর খবর আছে ৷

আরুর সাথে তুমুল কথা কাটাকটি হচ্ছে তূর্যর আর সবটা দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখছে সানা ৷ আরুর হয়ে কিছু বলছে না দেখে আরু বললো,,,,,,
__” কিরে তুই এরকম হ্যাবলার মতো দাঁড়িয়ে আছিস কেন দেখতে পাচ্ছিস না আমাকে কত কথা শোনাচ্ছে ! নাকি প্রথমদিন ভার্সিটিতে এসে মুখের বুলি হারিয়ে ফেলেছিস ! অন্য সময় তো আমার মাথা খেয়ে ফেলিস ৷”

সানা অবাক চোখে আরুর দিকে তাকালো ,তাকিয়ে বলল,,,,
__”আমি তোর মাথা খেয়ে ফেলি ?”
কথা গুলো শুনে অবাক হয়ে গেল ও , কথাগুলো যেন ঠিক হজম হলো না সানার কারন আরু সারাদিন এত বকবক করে যে সানা তাতে অতিষ্ঠ, আর সানা যথেষ্ট শান্তশিষ্ট আর চুপচাপ ৷ আরু যা বকবক করে তা সব সময় মুখ বুজে শোনে ও ৷ তবে এখন আরু হাজারটা গালাগালি দিলেও এদের সামনে অন্তত সানা কিছু বলবেনা কারণ এরা হলো সিনিয়ার আর এদের কাছে টার্গেট হওয়ার কোন ইচ্ছা ওর নেই ৷

ওদের ক্যাচাল শুনে প্রান্ত এসে তূর্যর কাছে এসে বলল,,,,,
__” এখানে এত ক্যাচাল কিসের ? আর এই মেয়ে এত চিল্লাপাল্লা করতাছো কেন?”

__”আর বলিস না ভাই মেয়েটা সমানতালে ঝগড়া করেই চলেছে, আমি এক্ষুনি আরিশের কাছে গিয়েই এই মেয়ের নামের বলবো যাতে ওকে টাইট দেই ৷”

__”আরে এসব এসব মেয়েদেরকে ক্যাচালের মাঝে আরিশকে টানছিস কেন , জানিস তো ও এইসব পছন্দ করেনা , আর নিজেরা নিজেরাই মিটিয়ে নিলেই তো হয় ৷”

__”আপনার বন্ধু করছে ক্যাচাল ,এক্ষুনি আমাকে সরি বলতে বলুন ৷”

__”আমি আপনাকে কেন স্যরি বলবো হ্যাঁ ! আমার কি দোষ?”

পিছন থেকে প্রান্তকে সাহেল ডেকে উঠল ,,,,,,,
__”তাড়াতারি আই আরিশ ডাকতাছে তোদেরকে ৷”

প্রান্ত তূর্যকে ধাক্কা দিয়ে বলল,,,,,
__” তারাতারি সরি বল না হলে আজকে কপালে দুঃখ আছে ৷”

আরু একটু এগিয়ে গিয়ে বলল,,,,
__” সরি বলুন না হলে আমি কিন্তু বড়োসড়ো ঝামেলা করব ৷”

__”তোমাকে আমি দেখে নিব ৷”

__”আরু তুই এবার একটু বেশিই বাড়াবাড়ি করছিস না ?”
সানার দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে,,,,,
__”তুই থমবি ৷”

ওদের কথার মাঝে তুর্য সরি না বলে চলে গেল ৷

আরু সামনে তাকাতেই ওদের কাউকে দেখল না তবে সবাই কেমন ভ্যাবলার মতো ওদের দুজনের দিকে তাকিয়ে রয়েছে ৷ ওর রাগ এখন চূড়ান্ত সীমায় , সরি না বলে চলে গেল ৷

__”কোথাকার না কোথাকার আরিশ আমাকে তার ভয় দেখাই, সে নাকি আবার আমাকে সোজা করবে, হাহ , যদি ভুল টা আমার হতো তাহলে আমি মেনে নিতাম তবে এই ছেলেকে যদি আমি টাইট না দিয়েছি তো আমার নামও আরু নয় ৷ আজই আমি প্রিন্সিপালের কাছে ওর নামে বিচার দিব, কলেজের মেয়েদেরকে এভাবে উত্তক্ত করা দেখাচ্ছি মজা ৷”

তূর্য চলে যেতেই সানা যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো, দীর্ঘশ্বাস নিয়ে আরূকে ইশারা করে বললো,,,,,
__” শেষ?”

__”তুই আর একটাও কথা বলবি না , আমার হয়ে কিছু বললি না তোর সাথে আমি কথাই বলব না যা ৷” বলেই মুখ ভাঙচি দিয়ে ক্লাসে চলে গেল……
|
|
|
কোকের বোতল টা শেষ করে খালি ক্যানটা হাত থেকে আলতো করে ফেলে দিল আরিশ, এতক্ষণ ধরে যা যা হচ্ছিল সবটাই ওর চোখে পড়েছে, ফালতু প্যাচাল এর মধ্যে ও যায় না তাই দূর থেকেই দেখছিল ওদেরকে ৷ ঝগড়া বাড়ছিল তাই প্রান্তকে পাঠালো তূর্যর কাছে ৷
ওরা দুজন আরিসের কাছে গেল….

__”দোস্ত আমি তোকেই খুজতেছিলাম , ভার্সিটির একটা নিউ student আজকে প্রথম আইসাই ক্যাচাল শুরূ কইরা দিসে ৷ মেয়েটাকে তো ইচ্ছা করতাছে যে থাপড়াইয়া দিই ৷”

আরিশ প্রকেট থেকে সানগ্লাস টা বার করে চোখে দিয়ে চুল গুলোকে হাত দিয়ে আলতো করে ঠিক করে নিল, তারপর বলল ,,,,,,,
__”নিজের দোষটা কেন স্বীকার করিস না,করলে তো আর কিছু হয়না বলেই চলে গেল ৷”

প্রান্ত আর রিফাত ওরা আবাক হলো না আরিশের কথা শুনে কারণ ওরা জানে যে আরিস লজিক ছাড়া কখনও কথা বলে না ৷

আসলে দোষটা তূর্যরই ছিল,ও হলো আজীবন সিঙ্গেল আর ভার্সিটির 2 টো দিন হয় ওর কাছে মেয়ে পটানোর দিন,এই দুটো দিন আসে শুধুমাত্র মেয়ে পটানোর জন্য ৷ তাই হাতে ঘড়ির সাথে সবসময় একটা আংটা জাতীয় বস্তু আটকে রাখে যাতে কোনো মেয়ের ওড়না বা ওর ঘড়ির সাথে আটকে যাই আর তাই হলো আজ ৷ আরুর ওড়নাটার সাথে আটকালো ওটা ,আর ওড়না ধরে টান দিতেই আরূ গলায় সামান্য আঘাত পেল আর ওর ওড়নাটাও খানিকটা ছিড়ে গেছে ৷

এর আগেও অনেকের সাথে আটকে গেছে তবে কেউ ততটাও গুরুত্ব দেয়নি ব্যাপারটা নিয়ে কারণ সবাই তো আর আরূ নয়……

আরিশ হলো গোটা ভার্সিটির ক্রাশ সব মেয়েরাই বলতে গেলে পাগল প্রায় , দেখতে মাশআল্লাহ, কারও সঙ্গে তুলনা করা যায় না, আরিশ ওর নিজের মতোই অতুলনীয় ৷

আর এদিকে আরূ হলো 19 বছর বয়সী একটা যুবতী, অত্যন্ত প্রাণোচ্ছল আর কখনো অন্যায় সহ্য করে না মুখের উপরে সমস্ত কথাগুলো বলতে পছন্দ করে, ওর বাবা-মায়ের চিন্তার শেষ নেই ওকে নিয়ে ৷
|
|
|
ক্লাসে বসে আছে আরূ, আর সানা,প্রথম দিন তাই খুব একটা কথা বলছেনা কারোর সাথে , তাই সেইভাবে কোন নতুন ফ্রেন্ড হয়নি ওর , আর তাছাড়া প্রথম দিন ভার্সিটি তে এসেই আরু যা করলো তারপরে ওর সাথে কথা বলতেই সবাই ভয় পাচ্ছে ৷

হাতে থাকা ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে দেখল এগারটা পাঁচ বাজে , ক্লাস শুরু হওয়ার কথা 11 টা থেকে তবে আরো 5 মিনিট হয়ে গেল তাও কোন টিচার আসলোধা দেখে আরু জোরে জোরে সানাকে বলল,,,,,
__”এখানে রুলস বলে কি কিছু নেই নাকি ? কটা বাজে এখন তার খেয়াল আছে? টাইম জ্ঞান বলে কিছু নেই নাকি, শুধুমাত্র আমার ছোটবেলা থেকে এখানেই পড়ার ইচ্ছা ছিলো ভর্তি হলাম নাহলে কখনোই আসতামনা ৷”

সানা আরুকে ইশারা করে চুপ করতে বলল,,,,

__”কেন চুপ করব হ্যাঁ! ঠিকঠাক টাইমে পরিচয়পর্বটা সারা যায় না ? এমনিতেই যা স্টুডেন্ট দেখলাম কলেজে এসে, এক একজনের যা ব্যবহার তা আর কি বলব !”

সানা আবার ইশারা করল আরুকে চুপ করে সামনের দিকে তাকাতে ঈশারা করলো,,,,,,,
সামনের দিকে তাকাতেই দেখল যে 4 জন ছেলে দাঁড়িয়ে রয়েছে…..
তারমধ্যে তূর্য কে দেখেই ওর মেজাজ বিগড়ে গেল
আরো ৷ আরু কিছু বলবে তার আগেই সানা বলে উঠলো ,,,,,,
__”এরা সিনিয়ার, টিচাররা এদেরকে চোখ বুজে বিশ্বাস করেন তাই সকালে যা হয়েছে সব ভুলে যা এখন চুপচাপ থাক আর এরা যা বলবে তাই শুনে চল ৷”
আরু সানার দিকে তাকালো,সানার মুখের দিকে তাকিয়ে আর কিছু বলল না,সানা ইশারা করে ওকে অনেক কাকুতি-মিনতি করছে যাতে আর কিছু না বলে একেই প্রথম দিনে অনেক কান্ড ঘটিয়ে ফেলেছে ও ৷ তবে এরা সিনিয়র না হলে ক্লাসের সবার সামনে তূর্যকে আলুভাজার মতো ভাজা ভাজা করে রেখে দিত ৷

আরুর কর্মকান্ড দেখে আরিশের ভ্রু দু-দুটো সামান্য কুঁচকে এল তবুও অবাক হলো না খুব একটা, সকালে যা দেখেছে তাতে ওর আইডিয়া হয়ে গেছে কিছুটা হলেও আরু সম্বন্ধে ৷

তূর্য ফিসফিস করে আরিশের কানে বলল ,,,,
__”ওই মেয়েটা , ওই মেয়েটার সাথেই সকালে ঝামেলা হয়েছে , আজকে দেখে ওকে কেমন মজাটাই না দেখায় ৷”

আরিশ কিছু বলল না , চুপ করে আরুর দিকে তাকিয়ে আছে আর ওকে দেখছে ভালোভাবে , সবার এটেনশন এখন আরিশের দিকে কারন সবার সামনে এমন একটা হ্যান্ডসাম ছেলে থাকতে কেন সবাই অন্য কাজে মনোযোগ দেবে , তার থেকে বরং আরিশের দিকে তাকিয়ে থেকে ক্রাশ খাওয়া টা কেই সবাই এখন গুরুত্বপূর্ণ কাজ বলে মনে করছে….আরিশ আরূর দিকে তাকিয়ে আছে আর আরুর গতি প্রকৃতির দিকে নজর রাখছে,,,,,,

আরু লক্ষ্য করল যে আরিশ ওর দিকে তাকিয়ে আছে,ওর এখন বিরক্তি লাগছে আরিশকে দেখে , আরিশকেও তূর্যর মতোই ভাবছে আরু, যদিও আরিশ তেমনটা নয় , মেয়েদেরকে যথেষ্ট রেসপেক্ট করে তবে ওকে কেউ আঘাত করে কথা বললে তা সহ্য করতে পারে না ৷ আর তাছাড়া ভার্সিটির টিচারদের কাছে অত্যন্ত বিশ্বাসযোগ্য , প্রত্যেকবারের টপার ও ৷

আরু আরিশের দিকে তাকিয়ে একবার সানার কানের ফিসফিস করে বললো ,,,,,,
__”দেখ ছেলেটা কেমন হ্যাংলার মতো আমার দিকে তাকিয়ে আছে, জীবনেও মনে হয় মেয়ে দেখে নাই৷”
সানা ভয়ে ঢোক গিলে বলল,,,,,
__” আরূ ক্লাসে এটেনশন কর ৷”

আরিশ যখন আরুর দিকে তাকিয়ে ছিল তখন আরু ও একবার তাকালেই দুজনের চোখাচোখি হতেই আরিশ আরুর থেকে চোখ সরিয়ে নিল ৷

প্রান্ত বলে উঠলো,,,,
__” আমরা তোমাদের সিনিয়ার তাই আমাদেরকে সবসময় মান্য করে চলবে, আর কোন প্রবলেম হলে আমাদেরকেই বলবে আমরা তা সলভ করার চেষ্টা করবো ৷
ও আরিশকে লক্ষ্য করে বললো,,,,,
__” তুই আবার কিছু বল ৷”

আরিশ সকলকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,
__” আমাদের কলেজের একটা রেপুটেশন আছে তা যেন কোনোভাবেই নষ্ট হয় তার দায়িত্ব কলেজের স্টুডেন্ট দের আর তার সঙ্গে আমাদেরও তাই এমন কিছু করবেনা কেও, আশাকরি কলেজের নামটা খারাপ হবে না তোমাদের জন্য ৷”

__” নিজেরা খারাপ , নিজেদের জন্য কলেজের রেপুটেশন নষ্ট হয় উনারা আবার অন্যকে জ্ঞান দেয় ৷ এতো দেখি ভূতের মুখে রাম রাম এর মত শোনাচ্ছে কথাগুলো ৷”(আরু )

কথাগুলো শেষে হতেই সবাই নিজেদের পরিচয় দিচ্ছে, এবার এলো সোনার পালা ৷

__”সানা খান , আমার বাড়ি ধানমন্ডি 32 তে ৷

আরূশি উঠে দাড়িয়ে বললো,,,,
__” বিনতে আরূশি রহমান,তবে ঢাড়ির ঠিকানা বলাটা আপনাদের কাছে আমি প্রয়োজন বোধ করছি না ৷”
বলে রাগ দেখিয়ে বসে পড়লো ৷

একে এটা সকলের পরিচয়পর্ব নিয়ে ওরা রুম থেকে বেরিয়ে গেল…..

__” লোফার এক একটা ৷”

__”তুই যেটা ভাবছিস সেটা হয়তো না , আরিশ ভাইয়া আর সবার মত নয়…”

__”হাহ, জানা আছে সব যে কে কেমন….ওই জন্যই তো নিজের বন্ধুরা দোষ করল তাও কিছু বলল না , কি করে বলবে, নিজেও হয়তো মেয়েদের এভাবেই টিস করে ৷”

__” আরু থাম ৷”

__”😏 ৷”
|
|
|
ভার্সিটি ছুটি হয়ে গেছে, সানা আর আরূ গেট থেকে বেরোচ্ছে আরও দূর থেকে লক্ষ্য করল যে আরিশ তূর্য আর প্রান্তকে কিছু বুঝিয়ে গাড়ির চাবিটা নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ৷

আরিস আরুর দিকে এক পলক তাকিয়ে গাড়িটা নিয়ে চলে গেল……

__”এটিটিউড দেখাচ্ছে😏 অ্যাটিটিউড মাই ফুট , এরকম ছেলে আরুর পিছনে হাজারটা ঘোরে ৷” (আরু)

আরুর কথা শুনে সানা সামনের দিকে তাকিয়ে দেখল আরিশ গাড়িটা নিয়ে চলে গেছে ৷

__”ওসব কথা ছাড় , এখন বল আজকে আমাদের বাড়িতে আসছিস তো?”

__”হ্যাঁ আসছি জানু, আমি না গেলেও আম্মু নিয়ে যাবে জোর করে ৷”

__”তাড়াতাড়ি আসিস আজকে ভাইয়া বাড়িতে আসছে ৷”

__”তোর এই ডেভিল ভাইয়াটা ঠিক কে তা এত বছর ধরে না জানা আমি, এত বছর ধরে তোদের বাড়িতে যাচ্ছি তবুও তোর ভাইয়াকে একবার চোখে দেখলাম না , তবে আজকে দেখব ফাইনালি ৷ যার কথা শুনে আমি ক্রাশিত আজ তাকে নিজের চোখে দেখবো , মাজা আগায়া ৷”

সানা মুচকি মুচকি হাসছে আর মনে মনে বলছে,,,,,,
__” দেখিস দেখিস, ক্রাশ কে দেখে চমকের আর শেষ থাকবে না ৷”

সানা চুপ করে আছে তা দেখে আরু সানা কে ডেকে বলল,,,,,
__” কিরে চুপ করে কি ভাবছিস?”

সানা চমকে গিয়ে বললো,,,,,
__” কিছুই না, ভাবছিলাম যে ভাইয়া আজকে অনেকদিন পর বাড়ি আসছে ৷”

__”তা তোর ভাইয়া তোদের সঙ্গে থাকে না কেন?”

ভাইয়া নিজের লাইফটাকে নিজের মত ইনজয় করতে চাই আর তাছাড়া ধানমন্ডির বাসাটা ফাঁকা পড়ে আছে তাই ভাইয়া ওখানেই থাকে ৷”

__”ও আচ্ছা, তা একা থাকে?…”

__”নাহ,ভাইয়ার ফ্রেন্ডরাও থাকে ওর সাথে ৷”

__”ও মাই গড, আমার ক্রাশ আমার এলাকাতেই থাকে আর আমি কিছু জানিই না , হাউ ডাফার আই এম ”

সানা ওর কথা শুনে হাসলো এই ভেবে যে সবে তো শুরূ ৷
|
|
|
বাসায় ফিরে একঘন্টা ধরে শাওয়ার নিল আরিশ , শাওয়ার শেষে ওয়ারড্রব থেকে সাদা রংয়ের শার্ট টা বার করে পড়ে নিল আর তার সাথে একটা ডেনিম পরেছে ৷
আজ অনেকদিন পর বাড়ি যাচ্ছি ও, ওর আম্মু আর আব্বুকে প্রায় প্রায় ওকে যেতে বলে তবে সময়ের অভাবে যেয়ে উঠতে পারে না , তাছাড়া ভার্সিটি শেষ হলে অফিসের দেখাশোনা ওকেই করতে হবে তাই একটু বেশিই এনজয় করে নিচ্ছে আরিশ ৷ ওই যে বলেনা __” জিন্দেগি না মিলেগা দুবারা ৷”

চুল থেকৈ এখনো টপটপ করে জল পড়ছে তা হাত দিয়ে সামান্য ঝাড়া দিয়ে ফ্লাক্স থেকে কফিটা কফির মগে নিয়ে ব্যালকনিতে চলে গেল আরিশ ৷

সাহেল আর প্রান্ত দুইজনের কেউ এখনো ফেরেনি৷ সাহেল আর ওর গার্লফ্রেন্ডের আজ প্রেমের একবছর পূর্ণ হলো তাই হয়তো সেলিব্রেট করছে একসাথে ৷আর প্রান্ত ও আজকে একটু ওর বাসায় গেছে, ওর আম্মু একটু অসুস্থ তাই , আর ওর পারিবারিক অবস্থাও খুব একটা ভালো নয় তাই আরিশ ওদের দায়িত্ব নিয়েছে , তাই জন্য প্রান্ত আরিশের কাছে কৃতজ্ঞ,তবে আরিশ এসব বাহবা একদম পছন্দ করে না ৷ আর তুর্য কলেজ থেকে এসেই নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে ,এখনো ওঠেনি ৷

কফিটা শেষ করেই বাইকের চাবিটা নিয়ে বেরিয়ে গেল আরিশ ৷

Suraiya Aayat
চলবে,,,,,,,

ওয়ারদূন আসরার পর্ব-২৫ এবং শেষ পর্ব

1

#ওয়ারদূন_আসরার
#লাবিবা_ওয়াহিদ
|| শেষাংশ ||

জাইফ বলে,”না পিতা আমার স্ত্রী সেখানে একা আছে। না জানি কি অবস্থায় আছে সে।”

বাদশাহ মুখ গোমড়া করে ফেলে তারপর বলে,”আচ্ছা তুমি যাও কিছুদিন পর আমরা নিজে তোমাদের দুজনকে স-সম্মানে এখানে নিয়ে আসবো!”

জাইফ যীনাতে রুমে এসে লাইট জ্বালিয়ে যা দেখলো তা দেখার জন্য সে একদমই প্রস্তুত ছিলো না। যীনাত আরামসে কতো কি খাচ্ছে আর তার সামনে কতো ধরণের খাবার পরিবেশন করা! এক অবয়ব যীনাতকে বাতাস করছে পাখা দিয়ে, আরেক মেয়ে অবয়বী যীনাতের পা টিপে দিচ্ছে আর তার কিছুটা সামনে কয়েকটা অবয়ব ডিস্কো ডান্স দিচ্ছে। যীনাত সেসব নাচ দেখছে আর তৃপ্তি করে খাচ্ছে। ২দিন ধরে তাহলে ম্যাডাম এভাবে ছিলো আর জাইফ এখানে চিন্তায় চিন্তায় মরছে। আলো দেখতেই যীনাত বেলকনির দিকে তাকায় এবং দেখে জাইফ দাঁড়িয়ে। যীনাত আনন্দের চোটে খাবার ফেলে জাইফের দিকে দৌড়ে গিয়ে জাইফকে জড়িয়ে ধরলো। অবয়কগুলো সাথে সাথে অন্যদিকে ফিরে গেলো লজ্জায়। জাইফও মুচকি হেসে যীনাতকে জড়িয়ে ধরে শক্ত করে। যীনাত চোখ বন্ধ করে হাজারো অনুভূতি নিয়ে বলে,”আপনি ফিরেছেন জাইফ! আপনাকে ছাড়া একেকটা প্রহর আমার ১বছর সমান লাগছিলো। কেন ৩দিন সময় নিলেন বলুন তো তাও এই বন্ধ, অন্ধকার ঘরে ফেলে?”

জাইফ যীনাতের ঘাড়ে নিজের নাক ঘষলো এতে যীনাত শিউরে উঠলো এবং জাইফের শার্ট খামচে ধরলো। জাইফ যীনাতের ঘাড়ে নাক ডুবিয়ে বলে,”এমন বউকে একা ফেলে যাওয়ার প্রশ্নই উঠে না বউ! কি করবো বলো আব্বুজান আম্মুজান ছাড়লো না নয়তো কালকেই চলে আসতাম। কিন্তু এখানে এসে তো দেখি রাজ্য চালাচ্ছো!”(ঘোরলাগা কন্ঠে)

জাইফের শেষের কথায় যীনাত ফিক করে হেসে দেয় এবং নিজেকে ছাড়াতে নিতেই জাইফ নিজের সাথে জড়িয়ে ধরলো। জাইফের গরম নিশ্বাস যীনাতের কাঁধে আছড়ে পড়ছে যা তাকে পাগল করে ছাড়ছে।

– জা… জা… জাইফ কি করছেন কি ছাড়েন এখানে অনেকেই আছে।

সাথে সাথে জাইফ যীনাতকে ছেড়ে দিলো। সে খেয়ালই করেনি রুমে আরও অবয়বরা ছিলো। তাদের দিকে তাকিয়ে দেখে তারা আগে থেকেই অন্যদিকে ফিরে আছে। জাইফ হাসলো সাথে যীনাতও। জাইফ বলে,”তা ম্যাডাম এরা তোমার কথা কি করে শুনছে হুম?”

– আমি নিজেই তো জানিনা। মনে মনে বলেছিলাম যে এদের যদি চোখের ইশারায় নাচাতে পারতাম। এটা বলার পর অটোমেটিক এরা নাচতে শুরু করছিলো। প্রথমে কিছুই বুঝিনি। যখন দেখলাম এগুলায় মজা পাচ্ছি তাই সেসব ভাবনা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে এদের কান্ড দেখছিলাম। পরে খুদা লাগলো ওরা নিজেরাই কোথা থেকে জানি খাবার নিয়ে হাজির হয় আবার…. আবার….

-(বলতে না দিয়ে) হ্যাঁ হ্যাঁ বুঝেছি।

– কি বুঝলেন?(ভ্রু কুচকে)

– তোমার মাথায় যেই মণিটা আছে সেটার জন্যই এসব হচ্ছে। তুমি ওদের দিয়ে যা ইচ্ছা করাতে পারো ওরা খুশিমনেই আপনার সেবা করবে ম্যাডাম!(হেসে)

যীনাত একবার জাইফের দিকে তো আরেকবার অবয়বগুলোর দিকে তাকায়। এদের সাথে তার বেশ ভালো বন্ধুত্ব হয়েছে। যীনাত তাদের বলে যেনো তারা ইসলাম গ্রহণ করেই তার কাছে ফেরত আসে। অবয়বগুলো মাথা নেড়ে একসাথে চলে গেলো। জাইফ হ্যাবলার মতো তাকিয়ে বলে,”ওদের মতো শয়তান পূজারী হবে কিনা মুসলিম? মাথা ঠিক আছে তোমার?”

– হ্যাঁ ঠিক আছে। আমি ওদের থেকে সব শুনেছি। ওরা বলেছে সর্দার তাদের উপর নাকি অনেক জোরজবরদস্তি করতো, নির্যাতন করতো তাই তারা বাধ্য হয়ে শয়তানকে পূজা করতো। আমার উপর ভরসা রাখুন আমি শিওর ওরা মুসলিম হবে।

এভাবে আরও একমাস কেটে যায়। আজ ৩ মাসের কাছাকাছি হলো নিকেশ জাইফ বা যীনাতের সাথে কথা বলেনা। মল্লিকা দেবী জাইফের সাথে কথা বললেও যীনাতের সাথে কথা বলেনা। দেবনাথ দেব বুঝতে পারে অবস্থা খারাপের দকে যাচ্ছে। তাই আর দেরি না করে সে সিদ্ধান্ত নিলো নিকেশের সাথে কথা বলবে বুঝাবে নয়তো হিতে-বিপরীত হতে পারে। দেবনাথ দেব নিকেশের কক্ষের দরজার কাছে এসে দাঁড়ায় এবং বলে,”আসবো নিকেশ!”

নিকেশ তখন কিছু ফাইল চেক করছিলো, দরজার দিকে তাকিয়ে বলে,”আরে বাবা আসেন আসেন পারমিশন নিচ্ছেন কেন.. আসেন বসেন!”

দেবনাথ দেব এসে বসলো তারপর বলে,”কি করা হচ্ছ”

– এইতো বাবা ফাইল চেক করছিলাম তা তুমি হঠাৎ এইসময়ে আমার রুমে কি মনে করে বাবা?

– কেন আসতে পারনা বুঝিনা?

– না তা নয়। কোনো প্রয়োজন হলে আমায় বলতে আমি যেতাম তোমার কাছে।

– তার প্রয়োজন হয়নি তাই নিজেই এসেছি এখন শুন আসল কথা শুন।

– জ্বী শুনছি।

– জাইফের আসল পরিচয় জানিস?

নিকেশ চোখ বড় বড় করে বলে,”মানে?”

– মানে হলো জাইফ তোর আসল ছেলে না সে একজন মুসলিম ঘরের ছেলে।

– মানে কি বাবা এসব তুমি কি বলছো?

– ঠিকই বলছি শুন মন দিয়ে। তোর মনে আছে ইউনুসের কথা? জাইফ তার সুসম্পর্কের ভাইপো। ওদের ব্যক্তিগত ঝামেলার কারণে জাইফকে মেরে ফেলার হুমকি আসে তাই একপ্রকার বাধ্য হয়ে তারা তোর মৃত্যুসয্যা ছেলের জায়গায় জাইফকে রেখেছিলো।

বলেই দেবনাথ দেব থামলো। নিকেশ চমকে গেলো। তার মানে জাইফ তার আসল ছেলে না? তাহলে তার আসল ছেলে কোথায়?

– জাইফ যদি আমার ছেলে না হয় তাহলে আমার ছেলে কোথায়?

– আমি জানি।

জাইফের কন্ঠ পেতেই নিকেশ আর দেবনাথ দেব একসাথে দরজার দিকে তাকায়। জাইফ রুমে ঢুকতে ঢুকতে বলে,”আমি জানি আপনার আসল ছেলে কোথায় আছে।”

– কোথায় আছে তা তুই কি করে জানলি?

– আমার দাদীমা বলেছে তাই। আপনার ছেলে আর কেউ নয় সোভন।

দেবনাথ দেব আর নিকেশ চোখ বড় বড় করে জাইফের দিকে তাকায়। তারা কোনো হিসাবই মেলাতে পারছে না তা জাইফ তাদের চাহনীতেই বুঝতে পারে। জাইফ আবার বলা শুরু করে,”আমার কথায় বিশ্বাস না হলে আমি কাকামনিকে কল করছি জেনে নাও।”

বলেই জাইফ কমলা দেবীর ছেলেকে কল করে এবং বলে,”আরে জাইফ যে কেমন আছিস!”

– কাকামনি একটা কথা জিজ্ঞেস করার ছিলো।

বলেই জাইফ লাউডস্পিকারে দিলো।

– হ্যাঁ বল কি বলবি।

– তুমি সোভনকে কোথায় পেয়েছো?

কাকামনি সাথে সাথে চুপ হয়ে যায়। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পরেও যখন দেখলো কাকামনি চুপ তখন জাইফ আবার বলে,”কাকামনি প্লিজ বলো চুপ করে থেকো না!”

কাকামনি সোজাসাপ্টা বলে,”আমার ছেলেকে কোথায় পাবো মানে কি জাইফ? এগুলো কোনো প্রশ্ন হলো?”

এবার দেবনাথ দেব ধমক দিয়ে বলে,”তাহলে তখন চুপ করে ছিলি কেন সত্যি টা বল!”

দেবনাথ দেবের ধমকে কাকামনি চুপসে যায়। অনেকক্ষণ পর গিয়ে বলা শুরু করে,”সেদিন আমি আর মিষ্টি বেরিয়েছিলাম ঘুরতে একটা পার্কে। হঠাৎ একটা ফুটফুটে বাচ্চাকে এক ঝোপের পিছে কান্নারত অবস্থায় পাই। বাচ্চাটা এতোই মায়াবী ছিলো যে তাকে দূরে ঠেলে দিতে পারেনি মিষ্টি তখনই তাকে আগলে নেয়। সেই বাচ্চাটি-ই আজকের সোভন। জানিনা ওর পরিচয় কি তবে আমি ওকে নিজের ছেলের থেকে কম ভালোবাসি না। প্লিজ মামা আমাদের থেকে সোভনকে কেড়ে নিও না।!”(মিনুতি সুরে)

নিকেশ চোখ বুজে একটা দীর্ঘশ্বাস নেয়। কাকামনির কল কেটে দেয় জাইফ। জাইফ বলে,”এভার বিশ্বাস হলো তো।”

নিকেশ কিছু বললো না। জাইফ আবার বলে,”দাদু সোভন যখন জম্মেছিলো ওর না শ্বাসকষ্টের সমস্যা ছিলো, তার জন্যই না ও আইসিউতে ছিলো?”

দেবনাথ দেব মাথা নাড়ায়। জাইফ সোভনকে ডেকে পাঠায়। সোভন কিছুক্ষণের মাঝেই চলে আসলো।

– ডেকেছিস দাভাই?

– হ্যাঁ শুন তোর কি শ্বাসকষ্টের কোনো প্রব্লেম আছে?

– হ্যাঁ আছে তো। মা বলতো আমার জম্ম থেকেই নাকি এই শ্বাসকষ্টের সমস্যা!

নিকেশ এবার আর বিশ্বাস না করে পারলো না কারণ তাদের পুত্রেরও জম্ম থেকে শ্বাসের সমস্যা ছিলো। হঠাৎ পুরোপুরি সুস্থ হওয়ার আনন্দে কারোই কোনোদিকে খেয়াল ছিলো না। নিকেশ অস্ফুটস্বরে বলে উঠে,”সোভন!”

সোভন অবাক হয়ে নিকেশের দিকে তাকায় কারণ নিকেশের চোখে জল টলমল করছিলো। নিকেশ এসে জড়িয়ে ধরে সোভনকে। সোভন আগা মাথা কিছু-ই বুঝতে পারছে না কি হচ্ছে কি তার সাথে। কিছুক্ষণ পরে সোভনকে সবটা বুঝিয়ে দেয়া হয় আর সোভন সবটা জেনে হা হয়ে যায়। কি শুনছে সে এসব? বাড়ির সকলে জেনে যায় জাইফ তাদের আসল সন্তান নয়। যীনাত আর জাইফ একপাশে চুপচাপ দাঁড়িয়ে সকলের আনন্দ দেখছে। এ যেনো এক হারিয়ে যাওয়া সুখ ফিরে এসেছে। যীনাত বলে,”সত্যি সত্যিই কি বাদশাহ আর আপনার মা আসবেন!”

– হুম আমি খবর পেয়েছি তারা কিছুক্ষণের মাঝেই চলে আসবে তারপর তুমি আমি চলে যাবো এক আনন্দময় সুখের রাজ্যে।

যীনাত কিছু বললো না। হ্যাঁ সত্যি সত্যি-ই কিছুক্ষণ পর একজন বোরকা হিজাব পরিহিত মহিলা সদর দরজা দিয়ে প্রবেশ করলো। যীনাত না চিনলেও জাইফ তাকে ঠিকই চিনেছে। মহিলাটি আর কেউ না হাজেরা। হাজেরা সকলকে সালাম দিয়ে বলে,”আমি জাইফের আসল মা আর(সদর দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা সুলায়মানকে দেখিয়ে দিয়ে) সে হলো জাইফের পিতা আমার স্বামী।”

বাদশাহ ভেতরে প্রবেশ করছে না দেখে দেবনাথ দেব জিজ্ঞেস করেন,”উনি ওভাবে বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন কেন?”

– আসলে ভুলত্রুটি মার্জনা করবেন এখানে নারীরা বেপর্দায় আছেন দেখে তিনি এখানে আসতে অস্বস্তিবোধ করছেন।

দেবনাথ দেবসহ সবাই হাজেরার ব্যবহারে মুগ্ধ। দেবনাথ দেব মল্লিকা দেবী আর তিশানাকে বললো ভেতরে চলে যেতে তাই তারা চলে যায়। জাইফ তখনই যীনাতের মুখ ওড়না দিয়ে ঢেকে দেয়। বাদশাহ ভেতরে প্রবেশ করলো যদিও এটা হিন্দুবাড়ি বলে তার বেশি অস্বস্তি লাগছিলো কিন্তু খারাপ দেখায় বলে বাধ্য হয় ভেতরে আসতে। দেবনাথ দেবের সাথে এবং নিকেশের সাথে কুশল বিনিময় করলো। তারপর বলে, “আপনাদের ধন্যবাদ বলে ছোট করতে চাইনা কারণ আপনারাও আমাদের সন্তানের আরেক পরিবার। এতোদিন তাকে পরিবারের একজন হিসেবে গড়ে তোলার জন্য আমরা আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞ এবং আপনারা আমাদের জাইফের প্রাণ রক্ষা করেছেন।।

– এভাবে বলবেন না আমরা তো এতোদিন ভেবে এসেছিলাম যে জাইফই আমাদের ছেলে আজ-ই তো সব সত্যি টা জানতে পারলাম।(কিছুক্ষণ চুপ থেকে) আমরা তাকে কতোটুকু শিক্ষা দিতে পেরেছি তা জানিনা তবে জাইফের ব্যবহার আচরণ দৃঢ়তা খুবই প্রখর। আমরা সকলেই তার আচরণে মুগ্ধ। আপনারা সত্যি-ই ভাগ্যবান/ভাগ্যবতী যে উপরওয়ালা আপনাদের এখনকার যুগে এতো ভদ্র একজন পুত্র দিয়েছেন।

উভয়ই মুচকি হাসেন তারপর বলে,” আমাদের ছেলে বলছেন আপনাদের ছেলে নয় বুঝি?”

– সে তো অবশ্যই। ওর মুখে এতোদিন বাবা ডাকটা শুনতাম এখন হয়তো আর সম্ভব না।

জাইফ নিকেশের কাছে গিয়ে তাকে জড়য়ে ধরে বলে,”কে বলেছে শুনবে না তুমি যে আমার বাবা! তোমায় তো ছোটবেলা থেকেই বাবা বলতাম, তোমার আঙুল ধরেই হাটতে শিখেছি আস্তে আস্তে এই পর্যায়ে এসেছি।”

নিকেশ পিঠে হাত বুলিয়ে বলে,”আমায় ক্ষমা করে দিস বাবা না জেনে তোর সাথে অনেক খারাপ ব্যবহার করে ফেলেছি!”

জাইফ নিকেশকে ছেড়ে বলে,”কোথায় কার সাথে কি ব্যবহার করেছো?? তুমি আমার বাবা হও তাই তোমার অধিকার আছে আমার উপর অভিমান করার।”

সকলে মুদ্ধ হয়ে দেখছে জাইফের আচরণ। একটা ছেলে আদৌ এতোটা সুশীল হয়? নিকেশ যীনাতের কাছেও ক্ষমা চায়। যীনাত বলে,”ছি ছি আংকেল কি বলছেন আপনি এসব আপনি আমার গুরুজন। পরিবার হারিয়ে আপনাদের মতো একটা পরিবার পেয়েছি তো আর কি দরকার আমার?”

নিকেশ যীনাতের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। যীনাতের আচরণে মুগ্ধ হয় জাইফের বাবা-মা। তাদের ছেলে যে বেছে বেছে হিরার টুকরাকেই বউ করেছে। বাদশাহ তাদের বলে যে আজই তারা জাইফ আর তাদের পুত্রবধুকে নিয়ে যাবে। কেউ আর জোর করেনি কেন-ই বা করবে এতোদিন পর তারা তাদের ছেলেকে কাছে পেতে চাইছে এতে তাদের কোনোরকম আপত্তি নেই।

ফুলভর্তি বিছানায় বধু সেঁজে গুটিশুটি হয়ে বসে আছে যীনাত আর তার কোলে চোখ বুজে শুয়ে আছে জাইফ। আজ যে তাদের আনন্দের রাত। জাইফ হঠাৎ বলে উঠে,”বউ!”

– বলুন সাহেব!

– আমাদের ১ম বিয়ের বাসর হয়নি তাইনা!

যীনাত কিছু বললো না। জাইফ এবার চোখ খুলে দেখে তার বউটা লজ্জায় লাল হয়ে গেছে। তা দেখে জাইফ হেসে বলে,”ওরে বাবা আমার বউটা তো আলুরদম হয়ে গেছে। মন তো চাচ্ছে টুপ করে গিলে ফেলি তোমায়!”

– যাহ ফাজিল মুখে কি কিছুই আটকায় না?

জাইফ হাসলো। তারপর বলে,”কখনো তোমায় একাকী ফিল করতে দিবো না বউ। সারাজীবন তোমার পাশে ছায়ার মতো থাকবো, কোনো কষ্ট তোমায় আমি পেতে দেবো না।”

জাইফ উঠে যীনাতকে জড়িয়ে ধরলো আর যীনাত পরম আবেশে চোখদুটো বন্ধ করে বুকে মাথা রাখলো। শত বাধা বিপত্তির পর আজ তাদের অবাস্তব ভালোবাসা পূর্ণতা পেলো।

সমাপ্ত🖤

(পুরো গল্পটা কেমন লেগেছে জানাবেন। এই টাইপ গল্প আমি এই প্রথমবার লিখেছি তাই আপনাদের সকলের গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি। ভুল হলে আমার ভুলগুলো ধরিয়ে দিবেন ধন্যবাদ। আপনারা চাইলে ইন শা আল্লাহ খুব দ্রুত নতুন গল্প নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হবো আল্লাহ হাফেজ)

ওয়ারদূন আসরার পর্ব-২৪

0

#ওয়ারদূন_আসরার
#লাবিবা_ওয়াহিদ
|| পর্ব – ২৪ ||

সহকারীর ছদ্মবেশ ধরা অবয়কটি একটা গভীর জঙ্গলের গোরস্তানে আসলো। সেখানের কিছুটা দূরেই একটা ছোট টিনের ভাঙ্গা ঘর। চোখের পলকে সহকারী সেখানে গেলো। ভেতরে গরম লোহার শিকল পরা আসল সহকারী আধমরা হয়ে পড়ে আছে। নকল সহকারী একটা শয়তানি হাসি দিয়ে এক মানুষ রূপ ধারণ করলো। এতোটাই নিষ্পাপ তার চেহারা কেউ বলবে না এটা তার আসল চেহারা নয়। ওয়ারদূন আসরারই এইসব করছে আর তার সবকিছুর পেছনে আছে জাইফ। জাইফই সব ওয়ারদূন আসরারকে দিয়ে করাচ্ছে। ওয়ারদূন আসরার সহকারীর পাশে এক হাটু গেড়ে বসে মুখে টু টু শব্দ করে অসহায় ভঙ্গিতে বলছে,”ইশশরে বেচারা কি কষ্টই না হচ্ছে তোর তাইনা। আমি জানিস তোকে এভাবে কষ্ট দিতে চাইনি কিন্তু কি করবো বল তোদের মতো শয়তানের সাথে ইকটু আকটু যে দুই নাম্বারি করতেই হয়। সে যাইহোক তোকে যে এখনো মেরে ফেলিনি সেটা তোর ভাগ্য বুঝেছিস? আরও কিছুদিন এইভাবে বন্দি থাক তোর বাকি কাজ না হয় আমি করে দিবো।

বলেই হাসতে লাগে। এভাবেই কিছুদিন ওয়ারদূন আসরার সহকারী সেজে নানান কুবুদ্ধি দিয়েছে সর্দারকে। ওয়ারদূন আসরারের বুদ্ধি, যুক্তি এবং অভিনয় এতোটাই নিখুঁত যে সর্দার নিজেও তার খুঁত ধরতে অক্ষম। জাইফ দূর থেকে সবটা পরিচালনা করছে আর হাসছে। জাইফের বাবা মা আতংকিত হয়ে সেদিন জাইফের সাথে যোগাযোগ করেছে,”পুত্র এসব কি ইফ্রিত সর্দার যুদ্ধ ঘোষণা করেছে এখন আমরা কি করবো?”

– আপনারা নিশ্চিন্তে থাকুন আর সবটা আমার উপর ছেড়ে দিন।

– কিন্তু তুমি কি করবে পুত্র?

– আব্বুজান আমার উপর ভরসা রাখুন। আল্লাহ আমাকে উত্তম পরিকল্পনা দিয়েছেন আমি তার যথাযথভাবে পালন করবো আপনারা আপাতত যুদ্ধের জন্য তৈরি হন। এই যুদ্ধই হবে জীবনে দেখা সবচেয়ে ভয়ানক যুদ্ধ।

জাইফ যতোই দুশ্চিন্তা করতে বারণ করুক না কেন বাদশাহ সুলায়মান এবং তার স্ত্রী হাজেরার চিন্তা এক বিন্দু পরিমাণও কমছে না। একটা যুদ্ধ মানে কতোগুলো প্রজা সৈন্যের প্রাণ সংকটে থাকা তাদের নিহত হওয়া আরও কতো কি। কিন্তু জাইফের মনে কি চলছে সেটা একমাত্র জাইফ-ই ভালো জানে।

প্রায় ৭দিন পর ইফ্রিত সর্দার নিজের বিরাট সৈন্যদল নিয়ে মারিত রাজ্যে আক্রমণ চালায়। সেদিন আকাশ ছিলো মেঘলা বাইরে অনেক ঝড় হচ্ছে দেখে যীনাত ঘরেই বসে আছে। হঠাৎ লাইট চলে যায় আর পুরো রুম ঘুটঘুটে অন্ধকারে ছেয়ে যায়। যীনাত প্রথম ভয় পেলেও আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যায়। হঠাৎ যীনাত কারো কন্ঠসর শুনতে পেলো সাথে সাথে ভয়ে শিউরে উঠলো। জাইফ বলে,”ভয় পেয়ো না এটা আমি তোমার জাইফ।”

– আ… আপনি? আপনি কোথায় আর লাইট চলে কেন গেলো?

– আমি বন্ধ করেছি তাই আর আমি এখন অদৃশ্য হয়ে আছি আমক্র রাজ্যে ঘোর বিপদ আমাকে সেখানে যেতে হবে।

– মামানে? আপনি একা কেন আমিও আপনার সাথে যাবো। আমি এখানে থাকবো না।

– না যীনাত পাগলামি করো না। তুমি কি চাও না যে তোমার পরিবার এভাবে ধ্বংস করেছে তার কঠিন শাস্তি হোক? যে বাবা মায়ের থেকে এক সন্তানকে এতো বছর ধরে আলাদা রেখেছে চাওনা তার কঠিন সাজা হোক?

যীনাত চুপসে যায় আর মাথা নিচু করে ফেলে। তারপর মৃদ্যু সুরে বলে,”হ্যাঁ চাই মনে প্রাণে চাই!”

– হুম আমি তোমার থেকে ঠিক এই উত্তরটাই আশা করেছিলাম এখন আমি যা যা বলি মন দিয়ে শুনো।

– হ্যাঁ বলুন আপনি।(মনোযোগী হয়ে)

– আমি যাওয়ার পরও এখানে এমন লাইট থাকবে না। যতোক্ষণে না আমি যুদ্ধের ময়দানে যাচ্ছি আর ফিরে আসছি ততোক্ষণে তুমি এই ঘরে নানান ধরণের অস্তিত্ব পাবা। অনেক অবয়ক তোমায় বিভিন্ন ভাবে ভয় দেখানোর চেষ্টা করবে কিন্তু তুমি একদম ভয় পাবে না আল্লাহর উপর ভরসা রেখো। আর হ্যাঁ অয়বকগুলো আমার গলার সরের মাধ্যমেও তোমাকে তাদের ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করবে কিন্তু সাবধান যীনাত ভুলেও তাদের ডাকে একদম সাড়া দিবে না এতে অনেক বড় বিপদ হবে। আমি যখন আসবো তখনই এই ঘরের আলো জ্বলবে এবং তোমায় একটা কথা বলবো যেটা ****** বুঝতে পেরেছো তো? আর হ্যাঁ তোমার এই পরিস্থিতিতে নূরা’স কোনোভাবেই তোমায় সাহায্য করতে আসবে না সবটাই তোমার বুদ্ধিমত্তার উপর নির্ভর করছে কারণ লড়াইটা তোমার একার।

যীনাত মাথা নাড়ায়। জাইফ অদৃশ্য ভাবেই যীনাতকে জড়িয়ে ধরে এবং তার শীতল দুটি ঠোঁট যীনাতের কপালে ছুঁয়ে চলে যায় জীবন-মরণের লড়াইয়ে। জাইফ যাওয়ার পরপরই রুমটা কেমন ঠান্ডা হতে থাকে আর পরিবেশ অস্বাভাবিক হয়ে উঠে। রুমটা এতোই ঠান্ডা যে যীনাত শীতে শিউরে শিউরে উঠছে। হঠাৎ ধুরুম-ধারুম কিছু শব্দ পাচ্ছে যীনাত। আবার এক মেয়ের আর্তনাদ কানে ভেসে আসে যীনাতের কানে, কি ভয়ংকর কান্না কান ফেটে যাওয়ার উপক্রম৷ যীনাত সবকিছু থেকে নিজেকে সামলে রাখছে আর জাইফের আসার অপেক্ষা করে যাচ্ছে এবং আল্লাহর দরবারে দোয়া করছে যেনো খুব শীঘ্রই তাদের বিপদমুক্ত করে। মেয়েটা কেঁদে চিৎকার করে বলে,”যীনায়ায়ায়ায়ায়াত আমায় বাচাও আমি অনেক বড় বিপদে আছি বাচাও আমাকে ওরা আমাকে মেরে ফেলবে।”

যীনাত সেই মেয়ে কন্ঠটি শুনেও না শুনার ভান ধরে থাকে আর মনে মনে যতো দোয়াদুরূদ আছে পড়তে থাকে। এমন সব লোমহর্ষক শব্দ এবং কন্ঠ শুনছে যীনাত ভয়ে অন্ধকার ঘরটাতে চোখ বুলিয়ে দোয়া পড়ছে। হঠাৎ জাইফের কন্ঠ যীনাত শুনতে পেলো। যীনাত যেনো খুশি হয়ে গিয়েও আবার চুপ মেরে গেলো কারণ হঠাৎই তার জাইফের বলা কথা গুলো মনে পড়ে যায়। যীনাত মনে মনে ভাবছে,”খচ্চর ভূতসমাজ! তোরা আমাকে কি ভয় দেখাবি হ্যাঁ? এর আগেও এমন অনেক ঘটনার সম্মুখীন হয়েছি আর তোরা আসছোস আমাকে ভয় দেখাতে। একেকটাকে যদি চোখের ইশারায় নাচাতে পারতাম তাহলে কলিজা টা ঠান্ডা হতো।”

যীনাতের ভাবা অনুযায়ী আচমকা রুমে ডিস্কো লাইট জ্বলে উঠে। লাইটে বিভিন্ন কালার নিয়ে গোলগোল ঘুরছে একদম পার্টি লাইটের মতো। আর যীনাতের সামনে অনেকগুলো কুৎসিত চেহারার অবয়ক যেভাবে পারছে সেভাবেই নেচে চলেছে। যীনাত হ্যাবলার মতো শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে। যীনাত যেদিকে তাকাচ্ছে সেদিকে গিয়ে অবয়কগুলো ধুমসে নাচছে গান বা মিউজিকের শব্দ ছাড়াই। এসবের মাঝে যীনাত ফিক করে হেসে দিলো। ইতিহাসে এই প্রথম সে এমন ভূত মানে জ্বীনদের নাচতে দেখলো।

দুইদিন পর,,

– জাইফ তোরে আমি ছাড়বো না আমার লোক তোর বউকে এতোক্ষণে মেরে হয়তো রক্তও পান করে ফেলেছে হু হা হা!!

জাইফ হেসে বলে,”তোর লোক মারবে আমার বউকে ভাবলি কি করে? দেখ গিয়ে আমার বউ কেমন ভাবে তোর লোকদের নাকে দড়ি দিয়ে নাচাচ্ছে।”

সর্দার অবাক হয়ে জাইফের দিকে তাকায়। পরে জাইফের কথা বিশ্বাস না করে যীনাতের অবস্থা দেখতে সে নিজের চোখ বন্ধ করে ফেলে। চোখের সামনে নিজের লোকদের এভাবে নাচানাচি করে বিনোদন দিতে দেখে সর্দারের হেঁচকি আর কাশি দুটো একসাথেই উঠে গেলো। এদিক দিয়ে সর্দার প্রায় হেরে যাওয়ার পথে। ভেবেছিলো জাইফের দুর্বলতাকে নিজের গাতে মুঠিতে রেখে যীনাতের মাধ্যমেই রাজ্য জয় করবে কিন্তু তাও তো হলো না। যুদ্ধেও যে সে আর জিতবে মনে হয়না। সে প্রাণপনে শয়তানের কাছে প্রার্থনা করছে। জাইফ তখনই সর্দারের নাক বরাবর দেয় এক লাথি। লাথি খেয়ে সর্দার ছিটকে দূরে চলে যায় আর তাকে ওয়ারদূন আসরার এসে ধরে। ওয়ারদূন আসরার শয়তানি হাসি দিয়ে বলে,”এখন তুই আমার স্বীকার।”

সর্দার একটা শুকনো ঢোক গিললো। আজ আর তার রক্ষ্যে নেই। দারুণভাবে মারিন রাজ্যের জয় হলো। বাদশাহ দূর থেকে আকাশে জয়ের আভা স্পষ্ট দেখতএ পারছে। বাদশাহ খুশি খুশি হয়ে হাজেরাকে বলে,”হাজেরা দেখো দূর আকাশে! আমাদের জয় হয়েছে আমাদের পুত্র বীরত্বের পরিচয় দিয়েছে আজ অনেক বড় বীরত্ব! আমাদের মাঝে আর কোনো বিপদ নেই, ভয় নেই, দুঃখ বেদনা নেই।”

স্বামীর দিকে তাকিয়ে আনন্দের হাসি হেসে মাথা নাড়ায় হাজেরা। আজ যে তাদের বিজয়ের দিন, সুখের উল্লাসের ছলকানি সকলের মাঝে বিরাজ করছে। জাইফ যুদ্ধের ময়দান থেকে নিজের দলবল এবং ওয়ারদূন আসরার কে নিয়ে রাজকীয় ঘোড়ায় প্রাসাদের দিকে যাচ্ছে। রাজ্যের বাচ্চারা মহিলা পুরুষরা তাদের রাস্তার দু’পাশে দাঁড়িয়ে রাজপুত্রকে প্রাণভরে দেখছে আর বৃদ্ধরা তাকে দোয়া দিচ্ছে। জাইফ সকলের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে হাত দিয়ে ইশারায় সালাম দিচ্ছে। অবশেষে তারা প্রাসাদে এসে পোঁছায়। সদর দরজায় আসতেই দু’পাশ থেকে দাসদাসীরা তাদের উপর ফুল ছড়িয়ে দিচ্ছে আর দূরে পুত্রের অপেক্ষায় রাজকীয় পোশাক পপরিহিত অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে বাদশাহ সুলায়মান এবং তার অর্ধাঙ্গিনী হাজেরা। জাইফ তাদের কাছে এগিয়ে মুচকু হেসে সালাম করলো। বাদশাহ জাইফকে জড়িয়ে ধরে বলে,”তুমি পেরেছো পুত্র তুমি পেরেছো আমরা সত্যি-ই তোমার জন্য গর্বিত পুত্র। এখন থেকে তোমাকে আর আমরা আলাদা থাকতে দেবো না।”

———————————

চলবে তো???