Friday, July 18, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1567



তোমার নেশায় আসক্ত ২ পর্ব-২২

0

#তোমার_নেশায়_আসক্ত
#সিজন:2
#পর্ব:22(ধামাকা প্রথম খন্ড)
#Suraiya_Aayat

বেশ অনেকখন ধরে আরূ জানলার দিকে একমনে তাকিয়ে আছে ৷ আজ ওর নতুন জীবনের প্রথম দিন , একটা নতুন মানুষের সাথে নতুন ভাবে নিজেকে মানিয়ে গুছিয়ে নেওয়ার যাত্রা শুরু, পরবর্তীতে জীবনের বাদ বাকি সময়টা কিভাবে কাটবে সেটা ও জানে না ৷ যার সঙ্গে নিজের জীবনটাকে বাঁধতে চলেছে আদেও তার সঙ্গে মিলেমিশে একটা ছোট্ট সুখী পরিবার গড়ে তুলতে পারবে কি তার ধারণাটুকু ওর ছোট্ট মস্তিষ্কে নেই ৷ ও নিজের জীবনটাকে যেভাবে পরিচালিত করতে চেয়েছিল জীবনটা সম্পূর্ণ তার বিপরীত দিকেই পরিচালিত হচ্ছে সেদিন থেকে যেদিন আরিশ সরাসরি ওর সঙ্গে বিয়েতে অমত করেছিল ৷

ঘড়িতে সময় এখন 11:05, বাড়িতে আত্মীয় স্বজনরা আসতে শুরু করেছে তার সঙ্গে শুরু হয়েছে জোর কদমে তোড়জোড় ৷ আরু এখন নিজের মনে মনে ভাবছে
__” এটা কি আমার করা উচিত হচ্ছে? এভাবে একটা মানুষকে ভালো না বেসে তোর সঙ্গে সারাটা জীবন কাটানোর নামে মিথ্যা পতিশ্রুতি দেওয়াটক কি অন্যায় অন্যায়ের নয়? তার সঙ্গে মিথ্যাচারিতা নয় ?”

একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে ব্যালকনির দিকে গেল গিয়ে সরাসরি হাত দিলো ক্যাকটাসের সেই গাছটাতে যেটা ও ওর 1 বছর বয়স থেকে দেখে আসছে ৷
ক্যাকটাস বরাবরই খুব প্রিয় আরূর ৷ ক্যাকটাস গাছটার বয়স আজ কুড়ি বছর প্রায় ৷

আরূর এখন বয়স 21 , ছোটবেলা থেকেই যখন অল্প অল্প কথা বলতে পারতো তখন ক্যাকটাসের এই গাছটা ও ওর বাড়িতে এনেছিলো ৷ সেদিন আরূর মা আর অনিকা খানরা family মিলে সেদিন পিকনিকে গিয়েছিলেন ৷

সেখানে আরূ আর আরিশ দুজনেরই গাছটাকে খুব পছন্দ হয়, তবে সেদিন আরিশের মনে ছিল একরাশ জেদ গাছটাকে পাওয়ার জন্য ৷ আর এদিকে ছোট্ট আরূও সমানভাবে ক্যাকটাস গাছটাকে নিজের কাছে রখার জন্য হাত-পা নাড়িয়ে নানান ভাবে তা বোঝানোর চেষ্টা করছিল , আরু তখন 1 বছর বয়সী, আর আরিশের তখন 4 ৷

হঠাৎ আরু যখন কেঁদে ফেলেছিল ছোট্ট আরিশ তখন একবার আরূর দিকে তাকিয়ে গাছটাকে আরূ কে দিয়ে দেওয়ার জন্য ঈশারা করেছিল ৷ সেদিন অনিকা খান অনেক বেশি অবাক হয়েছিলেন আরিশের কাজে কারণ আরিস বরাবরই খুব জেদি, যেটা চাই সে ,সেটাকেই নিজের করে ছাড়ে কিন্তু সেই দিনের ঘটনাটা ছিল ব্যতিক্রমী একটা ঘটনা ৷ আরূ বেশ কয়েকবার ওর আম্মুর কাছ থেকে শুনেছি এই ঘটনা তারপর থেকেই আরিশের উপর ক্রাশ খেয়েছে ৷ যে ওর ইচ্ছা-অনিচ্ছাটাকে এতটা বোঝে এতটা গুরুত্ব দেয় তাকে দেখার বরাবর ইচ্ছা ছিল আরুর, তবে এত বছরেও আরিশকে দেখা হয়ে ওঠেনি ওর……তার পর থেকে অদ্ভুদ একটানে প্রতিবছর একটা করে ক্যাকটাস কিনতো আরিশ, আর কথা দিয়েছিল ঘরের একটা দেওয়ালে যেদিন 20 টা ক্যাকটাসের রাশি পূরন হবে সেদিন হবে ওর অপেক্ষার অবসান,,,,আর আজ ওর অপেক্ষার দিন শেষ ৷

সেখানে বেশ কিছুখন সময় কাটানোর পর হঠাৎ দরজায় নক করতেই ধীর পায়ে গিয়ে আরু দরজাটা খুলতেই দেখল ওর বাবা আরমান সাহেব এসেছেন আর সাথে ওর মা ৷

__” বাপি তুমি এই সময় , কিছু বলবে?”

আরমান সাহেব আরুর মাথায় হাত রেখে কাঁদো কাঁদো হয়ে বললেন,,,,
__” কেন এতটা কষ্ট একা নিজে সহ্য করলি মা একবারও কি আমাদেরকে বলতে পারতি না তাহলে আমরা তো চেষ্টা করে দেখতাম নাকি ৷ এতটা স্বার্থপর হয়ে গেলি যে নিজের কষ্টের কথাটা নিজের বাপির সাথে শেয়ার করিসনি , এতোটাই পর হয়ে গেলাম আমি? আজ তোর মা আমাকে না বললে আমি তো জানতেই পারতাম না ব্যাপারটা ৷ কেন এরকম করছিস তুই ? তুই যদি চাস আমি আবার আরিশের কাছে গিয়ে ওকে অনুরোধ করবো, দরকার হলে ওর পায়ে পড়বো কিন্তু আমার মেয়েকে সারা জীবনের জন্য এভাবে কষ্টে দেখতে পারবোনা আমি ৷”

আরু মুখে এক চিলতে হাসি রেখে বলল,,,,
__” তার কোনো প্রয়োজন হবে না , আমি আমার জীবনের সিদ্ধান্তটা নিয়ে ফেলেছি, আর তাছাড়া জীবনের এমন একটা মুহূর্তে এসে আমি নতুনভাবে কোন ভাবেই আমার পতিশ্রুতি ভাঙতে পারি না , তাহলে তো আমার কথার কোন দামই থাকে না, আর তাছাড়া আমি এরকম করলে আসফিকে ঠকানো হয়, উনি নিজেই বিয়ের প্রস্তাবটা দিয়েছেন, আমি কি করে উনার মনটাকে নিয়ে এভাবে ছিনিমিনি খেলি বলো!”

__” তুই যে আশফিকে ভালো না বেসে বিয়ে করছিস সেটা কি অন্যায় নয় ওর প্রতি? ”

__” পরেরটা পরে ভাবা যাবে আপাতত জীবনটা যেভাবে চলতে চাইছে সেভাবেই এগিয়ে যাই ৷ আর তুমি চিন্তা করো না একটা সময় আমি নিজেও ঠিক মানিয়ে নেব ৷ নিজেকে অনেক গুছিয়ে নিয়েছি আর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে স্মৃতিগুলোও মুছে যাবে হয়তো কোন না কোন একদিন ৷”

আরমান সাহেব আরুকে বুকে জড়িয়ে নিলেন , ওনার চোখে জল আর আরুর মাও নীরবে চোখের জল ফেলছেন মেয়েকে কষ্ট পেতে দেখে ৷

আরুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন,,,,,
__” স্মৃতি ভালো হোক বা খারাপ হোক তা কখনো আমাদের জীবন থেকে মুছে যায় না, কোনো না কোনোভাবে পরে আঘাত দেয় , তেমনি তোর জীবনের এত বড় একটা খারাপ স্মৃতি তা কখনোই ভুলতে পারবি না তুই ৷ এখনো সময় আছে ভেবে দেখ আরু মা ৷ আমি বাবা হয়ে নিজের মেয়ের কষ্টটাকে কোনভাবেই দেখতে পারবোনা ৷”

আরু ওর বাবার থেকে সরে এসে বললো,,,,
__” দেখো আমি কত খুশি আছি , তোমরা কাদছো কেনো তার কারণ আমি বুঝতে পারছি না ৷ তোমারাও আমার খুশিতে খুশি হও , আর তোমরা যদি এভাবে কাদো তাহলে আমি কি করে হ্যাপি থাকি বল ! আর আশফি অনেক ভালো মানুষ, আমার যথেষ্ট কেয়ার করে আর খুব ভালোও বাসে তাই আমার আগামী জীবন অত্যন্ত সুখের হবে এটা ধরে নিও ৷ আর তোমরা কষ্ট পেয়ো না , তোমরা কষ্ট পেলে তোমাদের থেকে আমি বেশি কষ্ট পাবো ৷ প্লিজ এবার একটু হাসো ৷”

ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও আরূ নিজের মুখে মিথ্যাটা হাসিটা ফুটিয়ে তুলল তার সাথে আরমান সাহেব আর ওর মাকেও বাধ্য করলো ওর সঙ্গে ওর মিথ্যা হাসিতে শামিল হওয়ার জন্য ৷
জীবনটা হয়তো এরকমই, কিছু কিছু সময় মুখের মিথ্যা হাসিটাকেকে ফুটিয়ে তুলতে হয় কোনক্রমে ঘটনাটাকে বার হওয়ার জন্য তভে ভিতর থেকে তা গভীর ক্ষত রেখেই দেই , সেটা অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও ৷

দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেল, বাসা মানুষজনে পুরোপুরি পূর্ণ , সকলেই মোটামুটি চলে এসেছেন আল পার্লারের লোকও চলে এসেছে সাজাতে ৷ তারা আরুকে সাজচ্ছে আর সানা ওর পাশে বসে আছে আর বারবার মিচকি মিচকি হাসছে একবার ফোনের দিকে তকিয়ে আর একবার আরুর দিকে তাকিয়ে ৷ হাজারো দুঃখের মাঝেও যেনো এটা আরুর কাছে অত্যন্ত বিরক্তিকর লাগছে, কোন কারন ছাড়াই এভাবে হাসার মানে খুঁজে পায়না আরু ৷ না পেরে বলে উঠলো,,,,,,

__” কিরে তুই এভাবে হাসছিস কেন?”

সানা এবার জোরে হো হো করে হেসে ফোনটা আরুর দিকে ধরে বললল,,,,,
__” এই দেখ এই জন্য হাসছি ৷”

আরূ ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখল আরিশ এর ছবি, সম্ভবত সেটা কক্সবাজারেরই হবে ৷ বিচের ধারে দাঁড়িয়ে রয়েছে একটা শর্টস পরে আর গায়ে সাদা রঙের টি শার্ট আর হাতে চিকেন বারবিকিউ ৷ ছবিটা ফানি মুডেই তুলেছে ৷ দেখতে খুবই কিউট লাগছে পিকটাতে ৷

সানা এবার ছবিটা সরিয়ে ভিডিওটা অন করলো, তা অন করতেই ভিডিওটা চালু হলো,,,,, আরিশ গান করছে, আরি এমনিতেই আরিশের গাওয়া গানে আরু আসক্ত ৷

__”সুন্দরা সুন্দরা
ও হাসিনা বাড়ি সুন্দরা সুন্দরা
ম্যানে দেখা উসে হুয়া যো পাগল বাস পাল ভার মে ৷
আকে বাসি ও মেরে মান মে উসকি কামি হে আব জীবন মে
ও দূর কাহি মেরি নাজরো মে
ক্যায়া ওসে বাতা দু ৷
সাছ কেহ রাহা হে দিবানা
দিল ,দিল না কিসি সে লাগানা,,,,,,

গানটা শেষ করে আরিশ বললো,,,,,
__” ডেডিকেটিং ইট টু মাই সানশাইন , আই লাভ ইউ ৷ আর বেশি অপেক্ষা করাবো না তোমাকে ৷ লাভ ইউ, এন্ড আই এম কামিং ৷”

গানটা শুনেই আরূর চোখ দিয়ে টপটপ করে জল গড়িয়ে পড়ল ৷

__” সত্তিই উনি কতোটা ভালোবাসতে,পারেন, যদি এটা আমি পেতাম ৷ বাট সব ভালো তো সবার কপালে থাকে না তাই আমার ও নেই ৷ উনি যাকে ভালোবসেন সে সত্তিই অনেক লাকি ৷ “( মনে মনে )

__” কি হলো আপু আপনি কাদছেন কেন?আপনার মেকআপ তো সব নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ৷”

__” ওপস সরি,,,, আসলে চোখটা একটু জ্বালা দিয়ে উঠলো তাই ৷”

__” এখন কাদবি কেদে নে পরে তোর জামাই এলে সে সুযোগ আর পাবি না ৷”(কথাটা বলে সানা মুচকি মুচকি হাসতে লাগলো ৷)

আরু ঘরের মধ্যে বসে আছে আর সানা একটু বাইরে গেছে কিছুক্ষণ আগে , আরূর মা ওকে ডেকেছেন সেই কারণে ৷

ইনূকেও আজকে কেমন মনমরা লাগছে , সেই কখন থেকে ঝিমিয়ে বসে আছে, ইনুকে এভাবে দেখে আরূর ও ভালো লাগছে না , ওর নিজরই মন খারাপ….
একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে নিত্যদিনের মতো প্রায়ই চোখের কোনে জমে থাকা জলটা আঙ্গুল দিয়ে আলতো করে মুছে নিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস নিতেই আরুর ফোনটা বেজে উঠলো,,,,
ভাবলো যে আশফি ফোন করেছে তাই বিরক্তি নিয়ে ফোনটা হাতে নিতেই দেখলো রহযে আরিশের কল,,,,মুহূর্তের মধ্যে মনের মাঝে অজানা এক ঝড় বয়ে গেল,,,,
কাঁপা কাঁপা গলায় বলতে লাগল,,,,,
__” উনি হঠাৎ কি জন্য ফোন করেছেন? আমাকে সম্পূর্ণরূপে শেষ না করে দিয়ে কি উনি শান্তি পান না,,,,!”

কথা গুলো ভাবতে ভাবতেই ফোনটা কেটে গেল ৷
__” যাহ ফোনটা কেটে গেল, এবার আমি কি করবো? ওনাকে কি আমি ফোন করবো নাকি অপেক্ষা করবো ওনার কলের ! কিন্ত উনি যদি রাগ করে আর ফোন না করেন তখন আমি কি করবো?”

এই সব কথা গুলো আরূ নিজের মনে বলতে লাগলো,,,
তবে আর বেশি কিছু ভাবতে পারলো না তার আগেই আবার ফোনটা বেজে উঠলো,,,,এবার আর ফোন ধরতে দেরি করলো না আরূ, তাড়াতাড়ি ফোনটা ধরে বলল,,,,
__” হ্যালো ৷”

__” তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে আজকে , একদম মায়াবতী ৷”

কথাটা শুনে আরূর মনের মাঝে উথাল পাথাল হতে লাগলো,,,
__” আপনি কি এগুলো বলার জন্যই ফোন করেছেন?”

আরিশ হেসে বলল,,,,,
__”নাহ প্রেমালাপ করতে ৷ বাই দা ওয়া কাজের কথাই আসি ৷”

__” কি কাজ? আমার সাথে আপনার কোন দরকারি কাজের কথা থাকতে পারে তা আমার মনে হয় না, তাই আপনি এখন রাখতে পারেন, আমার তাড়া আছে, সবাই ডাকছে হলুদের জন্য ৷”

আরিশ এবার উচ্চস্বরে হেসে বলল,,,,,
__” হলুদের জন্য বেশ তাড়া দেখছি আপনার তা কখনো কি শুনেছ যে বর ছাড়া হলুদ হয়?”

__” মাআনে কি বলললছেন এসব আপনি !”( ভয়ে তুতলিয়ে বললল,,,,)

__” আপনার এখনো একটা কাজ ডিউ আছে আমার কাছে ৷”

__” কি কাজ?”(অবাক হয়ে )

__” ওই যে জোরো র কাছ থেকে আপনাকে সেভ করলাম তাই আপনি বলেছিলেন যে আমি যা বলবো আপনি তাই করবেন ৷”

__” তো ! কি হয়েছে?”(ভয় পেয়ে)

__” এত তাড়াতাড়ি সব ভুলে গেলেন!”

__” না কীছ্ছু ভুলিনি ,তবে আপনি যা চান তা এখন সম্ভব নয় ৷”

__” কেন সম্ভব নয়!”

__” আপনি কি পাগল হয়ে গেছেন , আমি এখন আপনার ঘর পরিষ্কার করতে যাবো? লাইক সিরিয়ায়লি !”

__” ওয়াও আমার ডাইলগ আমার কাছে, আই লাইক ইট ৷ বাট আমি যখন চেয়েছি যে আপনি এখন আমার ঘর পরিষ্কার করবেন তো এখনই করবেন ৷”

__” নেশা করেছেন যে এসব ফালতু কথা বলছেন!”

__” তোমার নেশায়ই যে আসক্ত !”

__” মানে?”

__”নাথিং, বাট আপনাকে আমি আর 30 মিনিট সময় দিচ্ছি তার মধ্যে আপনি গিয়ে আমার রূমটা পরিষ্কার করে দিয়ে আসবেন ৷”

__” আপনি পৄথিবীর সবথেকে অভদ্র মানুষ তা কি জানেন?”

__” সবই তো আপনারই , সে যাই হোক, অভদ্রতামির এখনো কিছুই দেখেননি যখন শুরূ করবো এনজয় দ্যাট মোমেন্ট ৷ ”

__” আমি রাখছি ৷”

__” আচ্ছা তাড়াতাড়ি আসুন ৷”

__” আমি যাবো না আমার হলুদ আজ তা কি অজানা আপনার?”

__” চোখে চোখে কথা হবে ঠোঁটে ঠোঁট নাড়া দেবে আর ভালোবাসা ছাড়া কিছুই হবে না তাই তাড়াতাড়ি আসুন আর না আসলে কালকে নিউজে বড়োবড়ো লাইনের খবরে আসবে,,,,,
__” হলূদের অনুষ্ঠানে যেতে গিয়ে বর উধাও আর অনেক খোজাখুজির পর দেহ মিলল পদ্মা পারে ৷”

__” কি বলছেন এসব !” (ভয় পেয়ে)

__” যা বলছি ঠিক বলছি,,, আমার জেদ বজায় করতে আমি যেকোনো পর্যায়ে যেতে পারি ৷”

__” বাট আপনার বাসায় কেউ নেই আমি গিয়ে কি করবো ! আমার দিনটা এভাবে নষ্ট করবেন না প্লিজ আপনার দোহায় লাগে , আর আশফিকেও কিছু করবেনা, উনি খুব ভালো মানুষ ৷”

__” আমার থেকে ভালো মানুষ হতেই পারেন না , সে যাই হোক অলরেডি 2 মিনিট আপনি সময় নষ্ট করে ফেলেছেন ! আর আসবেন ঘরটা একটু পরিষ্কার করেই চলে যাবেন ৷”

__” আচ্ছা আমি আসছি ৷বাট আশফির কোন ক্ষতি করবেন না ৷ বাট বাসায় কেউ নেই আমার ভয় লাগছে ৷ আর তাছাড়া এখানে সবাই আমাকে খোজাখুজি শুরু করে দেব ৷ প্লিজ ৷”

__” তোমার আম্মুও জানে যে মেয়ে হলুদ মাখতেই গেছে তাই এসব ভাবনা বাদ দিন আর তাড়াতাড়ি আসুন ৷ আমার আবার ধৈর্য জিনিসটা কম, বেশিখন অপেক্ষা করালে পানিশমেন্ট টাফ হয়ে যাবে, তখন কিন্ত আপনি সহ্য করে পারবেন না ৷”

__” আমি আসছি ৷”

কথাটা বলে আরু তাড়াতাড়ি রুম থেকে বেরিয়ৈ গেলো ৷

আরিশ ফাঁকা ফটৗফ্রেমটার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে গাইতে লাগল,,,,,,
__” আমার এই বাজে স্বভাব কোনদিন যাবে না ৷”

#চলবে,,,,,,

#তোমার_নেশায়_আসক্ত
#সিজন:2
#পর্ব: 22(ধামাকা 2য় পর্ব)
#Suraiya_Aayat❤

.তাড়াহুড়ো করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল আরূ, বাড়ির গাড়ি নিয়ে আসেনি , আসলে যদি আবার কোন রকম সমস্যা হয় সেই কারণে ৷ গায়ে হলুদের পোশাক আর আরিশ ওকে সময় দিয়েছে মাত্র 30 মিনিট ৷ ফোন কেটে দেওয়ার সাথে সাথেই ছুটেছে আরূ, অলরেডি 5 মিনিট সময় নষ্ট করে ফেলেছে ও , আর মাত্র 25 মিনিট আছে ওর কাছে, আরিশের ধানমন্ডির বাসায় আরূ আগে কখনো যাইনি তাই জানেও না কোথায় যেতে হবে, কোনোক্রমে একটা সিএনজি নিয়ে তাতে উঠে পড়ল আরূ ৷

গাড়িতে উঠতেই দেখল ফোনে আরিশ লোকেশন পাঠিয়েছে তাই ওর আর অসুবিধা হলো না আরিশের বাড়ি খুজতে ৷ এই মুহূর্তে সানার কাছে ফোন করে জানতে চাইলে সানা হাজারটা প্রশ্ন করবে যে ও কোথাই , কেন হঠাৎ চলে গেলো, ব্লা ব্লা ,,,,, আর এত কিছুর উত্তর দেওয়া এখন আরূর পক্ষে সম্ভব নয় বলে আরিসের দেওয়া লোকেশনটা অনুযায়ী ড্রাইভারকে গাড়ি চালাতে বলল ৷

__” মামা এই লোকেশন টা যেতে কতক্ষণ লাগবে?”

উনি ফোনের দিকে এক পলক তাকিয়ে বললেন,,,,
__” 35 মিনিট মত লাগবে ৷”

আরূ হকচকিয়ে বলল,,,,
__” মামা প্লিজ একটু তাড়াতাড়ি পৌছাবেন, আমাকে তাড়াতাড়ি ওখানে পৌঁছাতে হবে ৷ এমারজেনসি ৷”

গাড়ির ড্রাইভার আরূর দিকে একটু বাকা চোখে তাকিয়ে বললেন,,,,,
__” দেখে তো মনে হচ্ছে তোমার আজকে হলুদ , তা বিয়ে বাড়ি থেকে পালাচ্ছো মেয়ে ?”

আরুর বলার মত আর কিছু নেই , চাইলেই তো আর এখন সবটা ড্রাইভার মামাকে বলা যায় না তার জন্য কোনোক্রমে বলল,,,,
__” মামা আমার একটা ইমার্জেন্সি কাজ পড়ে গেছে তাই যেতে হচ্ছে তা ছাড়া অন্য কিছু নয় ৷ সেখান থেকে ফিরে গিয়ে হলুদ হবে ৷”

__” ওহ আচ্ছা !”
ড্রাইভার ও যেন আরূর কথা বিশ্বাস করলেন না সেটা আরূ বেশ ভালই বুঝতে পারল ওনার হাবভাব দেখে ৷ তবুও এখন কে কী ভাবল না ভাবল তা নিয়ে এই মুহূর্তে ওর কোনো মাথাব্যথা নেই ৷

মনে মনে চিন্তা হচ্ছে এই ভেবে যে যদি 30 মিনিটের বেশি লেগে যায় আরিশের বাড়িতে পৌঁছাতে তাহলে দেরি হয়ে যাবে আর তাহলে আরিশ বলেছে টাফ পানিশমেন্ট দিবে , এটাসেটা ভেবে আরো মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে আরূর ৷ তাহলে কি পুরো বাসা পরিষ্কার করাবেন আমাকে দিয়ে ?”

কথাগুলো ভাবলেই আরূর গলা শুকিয়ে আসছে ৷

প্রায় তিরিশ মিনিট পর আরু আরিশের ধানমন্ডির বাসায় পৌঁছালো, অলরেডি পাঁচ মিনিট ও লেট, না জানি এই 5 মিনিটের সময় দেরির মাশুল ওকে কি করে দিতে হয় ৷
বাসার গেট খুলে ঢুকতেই দেখল বাসায় কোন আলো জ্বলছে না, বাইরে থেকে দেখে মনে হবে যে দীর্ঘদিন ধরে মানুষের বসবাস নেই সেখানে ৷ আরু এসব দেখে চমকে উঠলো, বাসাটা খুব বড় একদম ওর মনের মত কিন্তু আপাতত এই ভাবনাগুলোকে ফেলে রেখে ফোনের ফ্ল্যাশ টা জালিয়ে বাড়ির দিকে পা বাড়ালো আরু ৷
বাড়ির ঢোকার মেইন দরজাটা খুলতেই হঠাৎ ওর ফোনে ফোন আসতেই আরূ কেঁপে উঠলো,,,,, ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখল মি অভদ্র লেখাটা ভেসে আসছে৷

তাড়াতাড়ি করে ফোনটা ধরতেই আরিশ বলে উঠলো,,,,
___” ইউ আর 5 মিনিট লেট,,,,,,”

__” আপনি কি করে জানলেন?”

__” আপনার কি মনে হয় এটা আমার জন্য কি খুব টাফ আপনার প্রত্যেকটা পদক্ষেপের খবর নেওয়া ৷
সে যাই হোক পানিশমেন্ট কি হবে সেটা আমি পরে দেখে নেব আপাতত সিঁড়ি দিয়ে উঠে প্রথমে যে ঘরটা দেখতে পাবেন সেই ঘরটাতে যাবেন ৷”

আরূ কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,,,,
__” বাসায় কেউ নেই , কোন আলো জ্বলছে না আমার খুব ভয় লাগছে ৷”

আরিশ হো হো করে হেসে উঠলো ,,,,,,
__” আপনিও ভয় পান মিস আরুশি ?”

অন্ধকারের মাঝখানে আরিসের হাসির শব্দ শুনে আরুর সর্বাঙ্গ কেঁপে উঠলো, কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,,,,
__” আমিও মানুষ তাই ভয় না পাওয়ার কি আছে !”

__” হোয়াটএভার ! তাড়াতাড়ি এসে রুমটা পরিষ্কার করে দিয়ে তারপর যেখানে খুশি যান, আপনার তো আজকে আবার হলুদ !”

__” আমি আসছি ৷”
বলে ফোনটা কেটে দিল আরূ , ফোনের ফ্ল্যাশ জালিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উঠছে আর সরা শরীর ছমছম করছে, বাড়িতে একটা জনমানুষও নেই , সিঁড়ি বেয়ে উঠতেই দেখল প্রথমে একটা রুম , বুঝতে অসুবিধা হলো না যে আরিশ এটার কথাই বলেছে ৷

ধীর পায়ে রুমের দরজাটা খুলতেই নিস্তব্ধতার মাঝে প্যাচ প্যাচ করে দরজার আওয়াজ শুনে আরূ একটা শুকনো ঢোক গিলল….

রুমের ভিতরে ঢুকে দরজাটা হাত দিয়ে আলতো করে ঠেলে দিতেই দরজাটা ধাম করে বন্ধ হয়ে গেল , তাতে আরেকদফা চমকে উঠলো আরূ ৷ এখন সামনের দিকে তাকিয়ে দেখে চারিদিকে মোমবাতি জ্বলছে ছোট ছোট , পায়ের কাছে লাল রংয়ের গোলাপ ফুলের পাপড়িতে ভরা তা যেন যাওয়ার জন্য একটা সামনের দিকে রাস্তা তৈরি করে দিয়েছে ৷ মোমবাতির আলোতে ঘরের ফটো ফ্রেমের বর্ডারগুলো জ্বলজ্বল করছে,আর নাকে হালকা মিষ্টি সুগন্ধ ভেসে আসছে চারি পাশ থেকে…..

হঠাৎ ওর কাধের থেকে চুল সরিয়ে সারা পিঠে আর গলায় গরম নিশ্বাস পড়তেই চোখজোড়া বন্ধ করে নিল আরূ , ঠান্ডা শীতল হাত দুটো ওর হাতজোড়াকে শক্ত করে আবদ্ধ করে নিয়েছে ৷ আস্তে আস্তে ওর শরীরের সাথে লেপটে থাকা মানুষটার উষ্ণ ঠোটের স্পর্শগুলোও বেড়ে চলেছে, সারা শরীর থরথর করে কাপছে , পা দুটো যেনো ক্রমশ অবশ হয়ে আসছে ৷

গলায় আর সারা পিঠ জুড়ে উষ্ন ছোয়াগুলো যতই বেড়ে চলেছে আরূর শরীরের কম্পন এর মাত্রা ততই বেড়ে চলেছে ৷ হঠাৎ ওকে জড়িয়ে ধরে থাকা মানুষটি তার নেশা ভরা কন্ঠে বলে উঠলো,,,,,

আজ জিদ কার রাহা হে দিল,,,,,
আজ জিদ কার রাহা হে দিল,,,,,
ও মুঝমে তু হো ভি যা সামিল,,,,,
আজ জিদ কার রাহা হে দিল,,,,,

গলাটা শুনতেই আরূ আরূ চোখ দুটো খুলে ফেলল, এটা যে ওর প্রিয় মানুষটার কন্ঠ, যাকে ও নিজের থেকেও বেশি চায় , এটা তারই ছোয়া , কিন্তু আরিশ এখন সেখানে কি করে এলো এটা ভেবে আরু অবাক হয়ে যাচ্ছে ৷ আর পারছে না কোনভাবেই নিজেকে আটকে রাখতে না পেরে তাড়াতাড়ি করে আরিশের দিকে ঘুরতেই আরিশ আরূর কোমরটা ধরে আরূকে আরো নিজের কাছে নিয়ে আসলো ৷

__” আপনি এখানে কিভাবে ?”(কাঁপা কাঁপা গলায় ) আপনিতো কক্সবাজার ছিলেন আর এখানে কি করে এলেন ? আর আপনি তো ,,,,,,”

আরিশ আরুর ঠোটে আঙ্গুল দিয়ে চুপ করিয়ে দিয়ে বলল ,,,, ,
__” আজ আমি বলবো শুধু আর তুমি শুনবে আরু পাখি , শুধু শুনবে আর অনুভব করবে আমার ভালোবাসা…..”

__” আপনি এসব কি বলছেন? আর এসবের মানে কি ? আপনি আবার আমর সাথে মজা করছেন তাইনা ?”

আরূ নিজেকে আরিশের থেকে ছাড়াতে গেলে আরিশ আরূর চুলের মুঠি ধরে আরূকে ওর মুখের সামনে এনে বলল,,,,
__” ভালোবাসি আরুপাখি , অনেক বেশি ভালবাসি তোমাকে ৷ তোমার নেশায় যে আমি আসক্ত সেটা কি তুমি বোঝনা নাকি কখনো বুঝতে চাওনি , আমি এতবার বুঝেনা সত্ত্বেও তুমি কখনও বোঝনি তার পানিশমেন্ট হিসেবে তোমার কি কোনো শাস্তি প্রাপ্য নয়?”

আরিশের কথা শুনে আরূ যেন আকাশ থেকে পড়লো, কখনো আশা করিনি যে আরিশ এমনটা ওকে বলবে ৷ এতদিন শুধু ওই আরিশকে পাওয়ার আশায় ছিল , আজ আরিশ ও ওকে পেতে চাই সেটা ওর কাছে কল্পনার মত লাগছে সম্পূন্ন ৷
আজ আরুর চোখে জল তবে আজ তা দুঃখের নয় আনন্দের ৷ এই মূহূর্তটাকে কিভাবে ভাষায় প্রকাশ করবে তার বর্ণমালা হয়তো ওর শব্দ ভান্ডারে নেই….

আরূর চোখ থেকে কয়েক ফোটা নোনা জল গড়িয়ে পড়ল ৷
__” আপনি এসব কি বলছেন?”

আরিশ আরূর অশ্রূসিক্ত চোখের পাতায় ভালোবাসার পরশ একে বলল,,,,
__” নিজের জীবনের থেকেও তোমাকে বেশি ভালোবাসি আরুপাখি , নিজের জীবনের প্রতিটা মুহুর্তে তোমাকে চাই, তোমাকে নিজের করে পেতে চাই , ভালোবাসতে চাই , পৃথিবীর সমস্ত সুখ তোমার কাছে এনে দিতে চাই , নিজেকে তোমার কাছে সঁপে দিতে চাই , তোমার আসক্তিতে কেবল আমি থাকতে চাই , তা তুমি চাও বা না চাও ৷ তুমি শুধু আমার , শুধু আমার ৷ আমার সানশাইন শুধু আমার , আবরার আরিসের ৷”

আরু এবার আরিশকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে দিল অঝোরে , আরিসের বুকে কাঁদছে আর চোখ দিয়ে টপটপ করে অঝোর ধরায় জল গড়িয়ে পড়ছে, এমন অনুভূতি কখনো হয়নি , এতটা কষ্ট পাওয়ার পর যখন এতটা সুখ অনুভব করছে তখন আজও চোখের জলের ধারাটা বাধ মানতে চাইছে না কোনভাবেই ৷ এ আনন্দের সময়টাকে যে কিভাবে ভাষার প্রকাশ করবে তাও জানা নেই ওর ৷
আরিশ আরূকে নিজের বুকের সাথে আরো শক্ত করে চেপে ধরল ৷
__” ভালোবাসো না আমায়?”

__” না ভালোবাসি না আপনাকে, আপনি খুব পচা, খুব খারাপ , পৃথিবীর সব থেকে নিকৃষ্ট আর খারাপ মানুষ আপনি ৷ আপনি শুধু বারবার আমাকে কষ্ট দেন ৷ আপনার জন্য আমি কতটা কষ্ট পেয়েছি তা কি আপনি জানেন ? আপনি হলেন মিস্টার অভদ্র ৷”

আরিশ এবার মুচকি হেসে বলল,,,,,
__” এই মিস্টার অভদ্রটা যে কতটা দূর অবধি অভদ্র হতে পারে তার আজকে তোমাকে দেখাবো আমি ৷”

আরূ লজ্জা পেয়ে আরিসকে আরো শক্ত করে জাপ্টে জড়িয়ে ধরল,,,,

__” কি হলো আরুপাখি তাকাও আমার দিকে ৷”

আরূ লজ্জায় আরিশের দিকে তাকাচ্ছে না , লজ্জায় আরিশের বুকে মুখ গুঁজে রেখেছে ও ৷

__” কি হলো তাকাও, তুমি না তাকালে যে এই মিস্টার অভদ্রতা তার অফুরন্ত অভদ্রতমি গুলো শুরু করতে পারছে না ৷”

আরু আরিশের সাথে নিজেকে আরো মিশিয়ে নিলো ৷

__” বুঝেছি এভাবে হবেনা আরূপাখি, আমাকেই ব্যবস্থা করতে হবে ৷”
বলে আরূক কোলে তুলে নিলো ৷

আরূ ভয়ে চোখ বন্ধ করে আরিশের জামার কলার ধরে শক্ত করে জাপটে ধরেছে যদিও মানুষটার উপর বিশ্বাস আছে সম্পূর্ণ ৷

আরিশ আরূকে নিয়ে গিয়ে বিছানার মাঝে শুইয়ে দিল ৷ সম্পূর্ণ ফুলের পাপড়ি দিয়ে সাজানো বিছানা, এ এক অদ্ভুত রোমাঞ্চকর অনুভূতি যা ঘটছে ৷

__” কি হলো আরূপাখি তাকাও ৷”

আরূ চোখ বন্ধ করে মাথা নাড়ালো যার অর্থ ও চোখ খুলবে না ৷

__” যা করার আমাকেই যখন করতে হবে তখন দেরি কিসের ৷ আর আমার আবার ধৈর্য জিনিসটা কম কোনকিছুতেই বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে পারিনা তাই নিজের অধিকারটা নিজেই খাটাতে হবে বুঝতে পারছি ৷
বলে আরিশ আরূর কম্পমান ঠোঁট জোড়া দখল করে নিল ৷

আরিশ এমনটা করাই আরূ শক্ত করে আরিসের শার্টটা খামচে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে দিল আরিশকে সম্পূর্ণভাবে ৷ এ এক অদ্ভুত অনুভূতি যার সঙ্গে আরূ এর আগে পরিচিত হলেও তখন আরু সজ্ঞানে ছিল না তাই অনুভূতির স্বাদ টা এমনভাবে গ্রহণ করতে পারেনি তবে আজকে নিজেকে আরিশের ভালোবাসায় রাঙাতে চায়…….

বেশ কিছুক্ষণ পর আরিশ আরুকে ছেড়ে দিল , আর একই অবস্থানে থেকে আরূর ঠোঁটটা আলতো করে মুছে দিয়ে বলল,,,,,
__” ভালোবাসি ৷”

আরূ আরিশকে জাপটে জরিয়ে ধরে বলল..
__” এবার প্লিজ আলোটা জালান, আমার ভয় লাগছে ৷”

আরিশ কিঞ্চিৎ ভ্রু কুঁচকে বললো,,,,,
__”লাইক সিরিয়াসলি আরূপাখি তোমার অন্ধকারে ভয় লাগছে?”

__” ভয় লাগছে তাই প্লিজ ৷”

আরিশ এবার আরূর হাত ধরে বিছানা থেকে নামিয়ে দাঁড় করালো সেই দেওয়ালের সামনে যেখানে রয়েছে ওর কুড়ি বছর ধরে সাজানো ক্যাকটাসের রাশি, আর এই দিনটার অপেক্ষায় ছিল এতদিন ৷

রুমের আলোটা জ্বালাতেই আরুর চোখের ওপরে একগুচ্ছ আলোর রশ্মি এসে পড়তেই চোখটা বন্ধ করে নিল আরূ ৷ বেশ কিছুক্ষন পর নিজেকে স্থির করে নিয়ে সামনের দিকে তাকাতেই অবাক হয়ে গেল,
কাঁদো কাঁদো চোখে আরিশের দিকে তাকিয়ে বলল,,, __” এইগুলো তো !”

আরিশ আরূকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলল,,,, __” আপনার প্রিয় ক্যাকটাস ম্যাডাম , যেগুলো আমি দীর্ঘ কুড়ি বছর ধরে আপনাকে উপহার দেবো বলে সাজিয়ে রেখেছি ৷”

আরূ এবার কেঁদে ফেলল,,,,
__” এমন পাগলামো কেন করেন যাতে আমিও পাগল হয়ে যাই ৷”

আরিশ মুচকি হেসে বলল,,,,,
__” পাগলামো দেখতে চাও? ওয়েট !”
বলে আরুকে সামনের দিকে তাকাতে বলল,,,, আরু তাকিয়ে তো অবাক, ওখানে আরূর সব ছবি ফ্রেমভন্দি করা , যেখানে ওর সবস্মৃতি ক্যাপচার করা আছে ওর ছোট থেকে বড় বেলার সমস্ত ছবি সেখানে আছে ৷

__” কেমন লাগলো আমার পাগলামো আরূপাখি?”

আরূ চোখের জলটা মুছে বলল,,,,,
__” কেন এতটা ভালবাসেন আমায়? বলুন কেন? আমি তার উত্তর চাই ৷”

__” ভালোবাসার মানুষকে ভালোবাসবো এটাই তো স্বাভাবিক তাই না !”

__” তবে ওই ফটো ফ্রেম টা ফাঁকা রেখেছেন কেন? ”

__” ওই ফটো ফ্রেমটাতে যে ছবিটা দরকার ছিল সেটা আমি পেয়ে গেছি তাই এই মুহূর্তেই ছবিটা লাগানো সম্ভব নয় কালকের মধ্যে ছবিটা ঠিক জায়গায় পৌঁছে যাবে ৷ তবে আগে আমাদের হলুদটা সেরে নিই, তোমার তো আবার বিয়েযকরার অনেক শখ ….”

আরূ কাঁদো কাঁদো হয়ে বলল,,,,
__” আপনি আমাকে বিয়ে করবেন!”

আরিশ মুচকি হেসে বলল,,,,,
__” সেটা পরে দেখা যাবে ৷”

আরু ভ্রু কুঁচকে বললো,,,,
__” এটা আপনার কেমন উত্তর ৷”

আরিশ মুচকি হেসে টেবিলের উপরে থাকা হলুদের বাটিটা এনে আরুর দিকে ইশারা করে ওকে হলুদ মাখাতে বলল ৷
আরূ একটু অবাক হয়েই আরিশের মুখে হলুদটা মাখিয়ে দিল ৷

__” কি হলো আপনি কিছু বলছেন না যে, আপনি আমাকে বিয়ে করবেন না?”( দৃঢ় সুরে)

আরিশ আরুর পেটে হালকা করে স্লাইড করে কোমরটা জড়িয়ে ধরে নিজের কাছে এনে নিজের গালে থাকা হলুদটা আরুর মুখে মাখিয়ে দিল , আর বলল,,,,,
__” নাহ! ভালোবাসলেই যে কাউকে বিয়ে করতে হবে এটা আরিশ খানের ডিকসনারিতে লেখা নেই ৷”

আরিশের বলা না শব্দটা শুনে আরুর সমগ্র দুনিয়াটা পালটে গেল ,,,,,,,তাহলে আরিশ এতখন ওর অনুভূতিগুলো নিয়ে বরাবরের মতোই আজো মজা করলো?

আরিশ কে ধাক্কা মেরে দূরে সরিয়ে আরিশের গালে ঠাস করে একটা চড় মারলো আরু ৷

__” মানুষের অনুভূতির কি আপনার কাছে কোন দাম নেই ? সমস্তটাই কি ছেলে খেলা মনে করেছেন? এভাবে একটা মেয়ের অনভুতি নিয়ে খেলার অধিকার আপনাকে কে দেয় ? কোথায় পান সেই অধিকার?”

আরিশ মুচকি একটা হাসি দিয়ে আরুশির কাছে গিয়ে আচমকাই আরুকে কোলে তুলে নিল তারপরে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে নিজের সমস্ত ভার আরুর ওপর ছেড়ে দিয়ে আরুল গালে আলতো করে হাত দিয়ে বলল ,,,,,,,
__” অধিকার কাউকে দিতে হয় না , অধিকারটা নিজে তৈরি করে নিতে হয় আর সেটুকু সাহস আরিশ খানের আছে ৷”

আরু আরিশকে ধাক্কা দিয়ে সরাতে চাইলেও আরিশকে সরাতে পারল না তবুও চেষ্টা করল,,,,,

__” আপনি মানুষ নন , আপনার মন বলে কিছু নেই , মানুষের ভালবাসার কোন দাম নেই আপনার কাছে ৷ আপনি কারোর ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য নন ৷’
বলে ধাক্কা মেরে আরাশকে সরিয়ে দিতেই বিছানা থেকে নিচে নামতে গেল ৷ আরিশ আরুর কোমরে থাকা কোমর বন্ধনীটা শক্ত করে জড়িয়ে ধরে টান দিয়ে আটকাতে গেলেই পুঁথিগুলো সব ছিড়ে নীচে পড়ে গেল , আর আরুর পেটে আছড়ে গেছে অনেকটাই ৷

আছড়ে যাওয়ার জায়গা গুলো থেকে ছিটেফোটা রক্ত বের হচ্ছে আর জালা করছে প্রচন্ড…

আরু আরিশের চোখে চোখ রেখে কাদোকাদো হয়ৈ বলল,,,,
__” শুধু এটুকুই বলবো অন্যকে বারবার আহত করে নিজে সুখী হওয়া যায় না, আল্লাহ আপনাকে ভাল রাখুক এই কামনা করি ৷” বলে রুম থেকে বেরিয়ে যেতে গিয়ে দরজাটা খুলতে গেলেই দরজাটা আর খুললো না, অনেকবার চেষ্টা করছে দরজাটা খোলার তবুও পারছে না…..

আরিশ ধীর পায়ে আরুর কাছে গিয়ে আরুর চুলে মুখ ডুবিয়ে দিয়ে বলতে লাগলো,,,,,
__” এসেছো আমার ইচ্ছায় আর যাবেও আমার ইচ্ছায় তাই অযথা বেশি জেদ করে আমার থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করো না পরিণতিতে আমি ভয়ঙ্কর কিছু করে ফেললে তখন তার দায় আমাকে দিতে পারবে না তুমি ৷”

কথাটা শুনেই আরুর বুকের ভেতর ধক করে উঠলো,,,,
কি করবে এখন কিছুই বুঝতে পারছে না, না পারছে চলে যেতে আর না পারছে আরিশকে সহ্য করতে ৷

আরুকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আরিশ আবার কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় নিয়ে শুইয়ে দিলো আরুকে তারপর আরুর পেট থেকে শাড়িটা অল্প সরিয়ে কাটা জায়গায় মলম লাগায়ে দিলো ৷
কাছুখন পর আরুকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে আরুর গলায় মুখ ডুবিয়ে বলতে লাগলো,,,,
__” কখনো আমার থেকে পালিয়ে যাওয়ার সাহস দেখিওনা তাহলে তার পরিনতি হবে ভয়ংকর ৷এবার ঘুমিয়ে পড়ো আরুপাখি নাহলে কালকে বাসরের সময়ে আর ঘুমাতে পারবে না ৷”

আরু কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না, মানুষটা কে ও কখনই বুঝে উঠতে পারিনি আর এখন আরো বড্ড বেশি রহস্যময় লাগছে আরিশকে ৷ কখনো ভালোবাসছে আবার কখনো সাইকো টাইপের ব্যাবহার করছে ৷
যদিও বা ওর চোখে আজ আর ঘুম আসবে না, আরিশ এমনভাবে ওকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে আছে মনে হয় না যতক্ষণ না আরূ ঘুমাবে ততক্ষণ আরিস ওকে ছাড়বে, তবুও নির্ঘুম চোখে যে কতটা সময় পার করেছে তা ওর ধারনাতে নেই……

রাত12.30,,,,,

__” আন্টি কোনো চিন্তা করবেন না আমাদের কে নিয়ে ৷ও ঘুমাচ্ছে , আর কালকে সঠিক সময়ের মধ্যেই ও বাড়ি পৌঁছে যাবে, শুধু কালকের দিনের জন্য ওকে একটু সামলে রাখবেন তারপর ওর সব দায়িত্ব আমার……(আরূর দিকে তাকিয়ে)

__” আমার মেয়েটা তোমাকে অনেক ভালোবাসে বাবা, আর এই কদিনে ও অনেক কষ্ট পেয়েছে , তুমি একটু ওর খেয়াল রেখো ৷”(আরুর মা কাদতে কাদতে)

__” দোয়া করবেন যেন ভালো থাকি৷”

__” আমিন, দোয়া রইলো ৷”

আরিশ ফোনটা কেটে আরুর পাশে গিয়ে বসলো আরু আরুর মাথায় হাত বুলাতে লাগলো,,,,আজ আরিশের চোখের কোনেও জল,,,ভালোবাসার মানুষটাকে পাওয়ার অনন্দে ,দীর্ঘ প্রতিক্ষার অবসানে আজ আরুকে ও নিজের কাছে পেয়েছে ,,,,,,,
আরূকে জড়িয়ে ধরে ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো আরিশ,,,,
__” বড্ড বেশি ভালোবাসি আমার এই ছোট্ট আরূপাখিটাকে, তুমিই যে আমার অদ্ভুদ নেশা -আসক্তি ৷”

#চলবে,,,,,,

তোমার নেশায় আসক্ত ২ পর্ব-২০+২১

0

#তোমার_নেশায়_আসক্ত
#সিজন:2
#পর্ব:20
#Suraiya_Aayat

সন্ধের মধ্যে বিয়ে বাড়ি এসে পৌছালো আরূ আর সানা ৷
আরিশদের ধানমন্ডিরর বাসায় বিয়েটা হচ্ছে না, বিয়েটা একটা কমিউনিটি সেন্টার এই হচ্ছে ৷ ডেকোরেশন সম্পূর্ণ কমপ্লিট , চারিদিকে হলুদ, সাদা নীল , সবুজ নানান ধরনের মরিচ বাতি দিয়ে পরিপূর্ণ আর সম্পূর্ণটা ফুল দিয়ে ডেকোরেট করা , খুব সুন্দর ভাবেই সাজানো হয়েছে গোটা কমিউনিটি সেন্টারটা ৷ প্রান্তর এভাবে সাজানোর সামর্থ্য টুকু না থাকলেও আরিসের আছে সেইজন্য সমস্তটা নিজেই ব্যাবস্থা করেছে ৷ প্রান্তর বিয়ের সমস্ত খরচ আরিশের ৷ প্রান্তর মা কে আরিশ কথা দিয়েছিল যে সযত্নে নিজেই ওর দায়িত্বে প্রান্তের বিয়ে দেবে , ও ওর কর্তব্যপালনে একনিষ্ঠ…..

বিয়ে বাড়িতে এসে আরুর নিজেকে কেমন কেমন একটা লাগছে, আনকম্ফোর্টেবল ফিল করছে খুব কারণ এতদিন যাদের সঙ্গে চরম কথা কাটাকাটির মুখোমুখি হয়েছে আজ তাদেরই বিয়েতে অতিথি হিসেবে আমন্ত্রিত ও , যদিও প্রান্ত কখনো ওর সঙ্গে কোনো খারাপ ব্যবহার করেনি আর তা ছাড়া প্রান্ত যখন আরু কে নিজের বোন হিসেবে বিয়ের প্রথম কার্ডটা দিয়েছে তাই আর না করতে পারল না আরূ৷ ও আসতে না করলেও সানা জোর করে ওকে নিয়ে এসেছে ৷ সানার একটাই কথা যে ও না গেলে সানা নিজেও যাবে না ৷

শাড়ি পড়তে খুব একটা অভ্যস্ত নয় আরূ তবে পরতে ভালোবাসে না তেমনটা নয়, শাড়ি পড়তে খুব ও ভালোবাসে কিন্তু নিজে পরতে পারে না তাই পরার ইচ্ছাটুকু জাগলেও সেটাকে মাঝেমাঝে ধামাচাপা দিতে হয় ৷ কোন অকেশন হলে ওর আম্মুকে শাড়ি পরিয়ে দেয় অথবা নিজে পার্লার থেকে সেজে আসে , আজকের শাড়ি পরার কোন ইচ্ছা ছিল না আরুর, ওর আম্মুর একদফা জোর করে শাড়িটা পরিয়ে দিয়েছেন ৷ আজকে উনি বিয়ের শপিং করতে গিয়ে আরুর জন্য হলুদের দুটো শাড়ি কিনে এনেছিলেন তাই একটা শাড়ি আজকে আরূকে পরিয়ে দিয়েছেন প্রান্তর হলুদে আসার জন্য ৷ সম্পূর্ণ মায়াবতী লাগছে দেখতে ওকে ৷

চোখে মোটা করে দেওয়া কাজল, ঠোটে হালকা লাল রঙের লিপস্টিক, চুলগুলো সিঁথি করে তার খোঁপায় বেলি ফুলের মালা পরেছে , হাতে চুড়ি আর মুখে হালকা মেকআপ ৷
সানা ও শাড়ি পড়ে এসেছে, ওকেও দেখতে খুব সুন্দর লাগছে ৷

__” আরু চল প্রান্ত ভাইয়া আর মিথিলা আপুর সাথে দেখা করে আসি ৷ কে জানে হলুদ এখনো শুরু হয়েছে কি, ভাইয়া তো বললো এখনো শুরু হয়নি ৷ ”

আরু মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো ৷ ওরা দুজন প্রান্ত আর মিথিলার কাছে গেল , ওদের দুজনকে স্টেজে বসিয়ে রাখা হয়েছে ৷ পাশে একজন বয়স্ক ভদ্রমহিলা বসে আছেন উনি প্রান্তর মা সেটা আরূ বুঝতে পারলো ৷
আরূ আর সানা যেতেই প্রান্ত বলল,,,,,
__” কেমন আছো তোমরা?”

__” আলহামদুলিল্লাহ ভালো , আপনি কেমন আছেন ভাইয়া ! আর আপনাদের হলুদের প্রীতি ও শুভেচ্ছা ৷”(আরূ )

__” ভালো ভাইয়া বাট আপু কে তো আজকে সেই লাগছে ৷”(সানা)

প্রান্ত মুচকি হাসলো ৷

__” তুমি এসেছ তার জন্য ধন্যবাদ দিয়ে তোমাকে ছোট করবো না , তুমি আমার ছোট বোনের মতো , তাই খুব খুশি হয়েছি তুমি এসেছো ৷ মীট মাই উডবি ওয়াইফ মিথিলা জাহান ৷”

আরূ মুচকি হেসে বলল,,,,,
__” আসসালামুয়ালাইকুম আপু ৷”

__” ওয়ালাইকুম সালাম , তোমাকে এখানে দেখতে পেয়ে খুশি হলাম খুব ৷”

আরূ মুচকি হাসলো….

প্রান্ত ওর মাকে বলল,,,,
__” মা ও হচ্ছে আরূ ৷”

উনি তাড়াহুড়ো করে উঠে আরূর কাছে গেলেন, গিয়ে আরুর গালে হাত রেখে বললেন,,,,,
__” মাশাআল্লাহ , আমার ছেলে পছন্দ আছে ভালো ৷ সঠিক রত্ন কে বেছে নিয়েছে আমার ছেলেটা ৷খুব সুখী হও মা ৷”

আরূ কিছু বুঝতে পারল না উনি ঠিক কি বুঝাতে চাইছেন ৷ আরু একবার প্রান্তর দিকে তাকিয়ে প্রান্তর মায়ের দিকে মিথ্যা হাসি দিয়ে বললেন,,,,,,
__” আন্টি আপনি কি বললেন আমি ঠিক বুঝলাম না ৷”
প্রান্তর মা আর কিছু বলতে যাবে তখনই পিছন থেকে আরিস বলে উঠলো,,,,,,
__” আন্টি যে বোঝেনা তাকে কখনো বোঝানো সম্ভব না ৷ এমন অনেক কথা আছে যেগুলো মানুষের কানে পৌঁছালেও তারা হয়তো কথার গুরুত্ব দিতে জানে না তাই কি বোঝাতে চাইছে সেটাও তারা বুঝে উঠতে পারে না , এটা তাদের ব্যর্থতা আপনার নয় ৷”

কথাটা শুনতেই আরূ পিছন ঘুরে তাকিয়ে দেখল আরিস দাঁড়িয়ে রয়েছে ৷ বরাবরের মতোই আজকেও তার প্রিয় রঙে মানে সাদা রঙের পাঞ্জাবি , একটা ডেনিম প্যান্ট, চুলগুলো অগোছালো হয়ে রয়েছে বরাবরের মতোই , হাতে একটা ঘড়ি , মুখের দাড়ি গুলো সেভ করেনি , আর এভাবেই আরূ আরিশকে দেখতে পছন্দ করে , আরিশকে দেখে ওর চোখটা জুড়িয়ে গেল ৷ কোনরকম আরিশের থেকে চোখ সরিয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,
__” আন্টি আপনারা কথা বলুন আমি আসছি ৷”

আরূ চলে যেতেই আরিশ মুচকি হেসে প্রান্তর মা কে বলল,,,,,,
__” না জানি আমাকে কতো কিছু শিখিয়ে পড়িয়ে নিতে হবে আল্লাহ মালুম ৷”

__” ওরকম আগোছালো মেয়েরা একটু হয়, স্বামীর ভালোবাসা পেয়ে ঠিক হয়ে যাই ৷”

__” আমি যা ভালোবাসা দেবো তা নেওয়ার ক্ষমতা ম্যাডামের নেই, আমিও দেখবো আন্টি ওনার দৌড় কতদূর৷”

সানা প্রান্ত আর মিথিলার সাথে ছবি তুলছে আর আরু ওদের থেকে কিছুটা দূরে সরে গিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে…..

হঠাৎ ফোনের রিংটোনটা কানে ভেসে আসতেই ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখল আসফি ফোন করেছে ৷ বরাবরের মতোই আজো বিরক্তি সহকারে ফোনটা কানে দিতেই ওপাশ থেকে আসফি বলে উঠলো,,,,,,

__” আই এম সরি , আমি তোমার সাথে যেতে পারলাম না ৷ আসলে কি বলতো দুদিন পরেই তো আমাদের বিয়ে আর যেহেতু আব্বু-আম্মু চিটাগং থাকেন তাই আমাকেই সামলাতে হচ্ছে সব ৷ আজকে একটু কাজে ব্যস্ত ছিলাম , প্লিজ কিছু মনে করো না কালকে যাবো আমি…”

আসফি বিয়েতে আসবে কি না আসবে তাতে আরূর কিছুই যায় আসে না ৷ বিরক্তি নিয়ে কিছু বলতে যাবে তখনি কানে ছেলেমেয়েদের চেঁচামিচির আওয়াজ ভেসে আসলো, বুঝতে পারলো হলুদ শুরু হয়ে গেছে আর তা নিয়ে সকলের মাঝে আনন্দ ৷ দূর থেকে সানা কেও দেখতে পাচ্ছে আরু , ওদের মাঝে গালভর্তি হলুদ মেখে সেলফি তুলছে ৷

__” কোন সমস্যা নেই ৷ আচ্ছা আমি এখন রাখছি , এখানে চেচামেচি হচ্ছে খুব, আমি কিছু শুনতে পাচ্ছি না ৷”

বলে আসফি কে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আরূ ফোনটা কেটে দিলো…..

অনেকক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পা টা ধরে আসছে আর তাছাড়া ক’দিন ধরে শরীরটাও খুব একটা ভালো নেই , খুব দুর্বল লাগছে বলে আরূ গিয়ে সোফাতে বসল ৷ মাঝে মাঝে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে আর মাঝে মাঝে ফেসবুকে আরিশের আইডিটা দেখছে বারবার ৷ কিছুক্ষণ আগেই একটা পোষ্ট করেছে যেখানে ক্যাপশন দিয়েছে,,,,,
__” বিয়েবাড়ির হাজারো কাপলদের মধ্যে আমি একা দেবদাস 🙆🏻 ৷”

গাল ভর্তি হলুদ মেখে ছবিটা তোলা, তারমানে কিছুখন আগেই ছবিটা তুলেছে ৷
ছবিটা মারাত্মক লেভেলের সুন্দর তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই , তবে ক্যাপশনটা নিয়ে আরুর মাঝে বিরক্তি কাজ করছে ৷

__” আজকাল মানুষ মিথ্যা বলেই সবাইকে জ্বালাতে চাই, যেমনটা আমি জ্বলছি ৷”

কথাটা বলে রাগ করে ফোনটা অফ করে দিতেই হঠাৎ শাড়ির উপর কিছু ভেজা ভেজা অনুভব করতেই মুখ উঁচু করে দেখল যে ওইটার কাচুমাচূ ফেস করে দাঁড়িয়ে আছে, আর ওনার হাতে থাকা ট্রের গ্লাসগুলো ট্রেতে গড়াগড়ি খাচ্ছে আর সমস্ত জুস আরুর শাড়িতে পরেছে ৷ নানান ধরনের আর নানান কালারের জুস ওর শাড়িতে পড়ে শাড়িটাকে একটা বিচিত্র রং এনে দিয়েছে ৷

ও ওয়েটারর দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে বলল,,,
__” এটা কী করলেন ভাইয়া ৷ দেখে কাজ করতে পারেন না ৷”

__” সরি আপু ভুল হয়ে গেছে….”

__” এখন আর সরি বলে কি হবে , যা হওয়ার তা তো হয়েই গেছে ৷ আচ্ছা ওয়াশরুম টা কোথায় বলতে পারবেন ?”

__” উপরে তিনটে রুম আছে, তারমধ্যে দুটো রুমের পাইপলাইনে সমস্যা , তাই 3 নং রুমটা মানে 126 নম্বর রুমে যান ওই রুমটাতে পানি আসছে ঠিকঠাক ৷”

__” আচ্ছা…. তবে নেক্সট বার আর এইভাবে যেন কারোর গায়ে ফেলবেন না….”

__” আচ্ছা আপু ৷”

126 নম্বর রুমটা তিনতলায়, প্রান্তর বিয়ে টা হচ্ছে 2nd ফ্লোরে , তাই সিঁড়ি বেয়ে উঠে প্রথম ঘরটাই দেখল লেখা আছে 126 নম্বর ,তা দেখে আরু রূমটাই ঢুকল ৷

রূমটা সম্পূর্ণ অন্ধকার কিছু দেখা যাচ্ছে না তাই ফোনের ফ্ল্যাশ টা জালিয়ে সুইচ খোঁজার চেষ্টা করলো , অবশেষে হাতের কাছেই সুইচটা জ্বালিয়ে দেখল রুমটা ৷ ঘরে সোফার পাশে একটা ট্রলি পড়ে রয়েছে আর একটা সাদা রঙের শার্ট রাখা আছে সোফাতে ৷ কেউ যে রূমটাই থাকে তা আরু বুঝতে পারছে আর এভাবে না বলে একজনের রূমে এসে কিনচিত দ্বিধা কাজ করছে আরুর মাঝে , তবুও কোন উপায় নেই , তাই তাড়াতাড়ি করে ওয়াশরুমে গেল ৷

ওয়াশরুমে গিয়ে শাড়িটা ভালো হবে পানি দিয়ে ধুচ্ছে কিন্তু কিছুতেই জুসের কালারটা ওঠাতে পারছে না ৷ সব কালার একসাথে মিশে বাদামী রঙের একটা মিকসচার তৌরি হয়েছে ৷ বারবার দাগটা ওঠানোর চেষ্টা করেও উঠছেনা দেখে রিতিমতো বিরক্ত আরু ৷ এভাবে এই শাড়ি পরে তো আর বেশিখন থাকা যাই না তাই ভাবলো ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে সানার কাছে যাবে যদি সানা কোন ব্যবস্থা করে দিতে পারে ৷

আরু মাথা নিচু করে রুম থেকে বের হতেই একটা মিষ্টি পারফিউমের গন্ধ পেলো ,যেটা ও আগেও পেয়েছে ৷ তাহলে কি সাময়িকের জন্য ঘরের মালিক তার রুমে চলে এসেছেন, এখন যদি ঢুকেই উনি আরুকে দেখেন তাহলে না জিনি আরুকে কি ভাববেন এগুলোই ভাবছে আরূ ৷ আরূ আস্তে আস্তে সামনের দিকে তাকালো, তাকাতেই ওর বুকের ভিতর ধক করে উঠলো , সামনে আরিশ দাড়িয়ে রয়েছে হাতের উপর হাত রেখে , আর হলুদের বর্তমান সাজাটা রয়েছে, ৷ গালে মাখানো হলুদটা চেহারায় আরো দ্বিগুণ জেল্লা দিচ্ছে ৷ একটা ছেলে এতকা সুন্দর হতে পারে সেটা ও আরিশকে না দেখলে হয়তো কখনো জানত না….

দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে রয়েছে কেউ কিছু বলছে না ৷ আরিশ যে এবার ব্যাপারটার মজা নেবে সেটা আরূ বেশ ভালই বুঝতে পারছে , কিন্তু আরিশের কথার পরিপেক্ষিতে আরূ কি জবাব দেবে সেটা ওর জানা নেই কারণ এখন আরূর মুখে আগের মতো বুলি ফুটে না যে তৎক্ষণাৎ জবাব দিয়ে দেবে ৷ আর আরিশকে দেখলেমৗ কথাগুলো যেন ডানা মেলে উড়ে যায় কিছু বলতে পারেনা নির্বাক হয়ে যায় ৷

আরিশ ভ্রু নাচিয়ে বলল,,,,,
__” এই যে মিস আপনি এখানে কি করছেন?”

আরু একটা শুকনো ঢোক গিলে বলল,,,
__” আমি দরকারে এসেছিলাম ওয়াশরুমে , আমার শাড়িতে জুস পড়েছিল তাই পরিষ্কার করার জন্য এসেছিলাম তাছাড়া আমার আর কোন উদ্দেশ্য নেই..”

আরিশ আরুর কাছে গিয়ে দাঁড়ালো, আরুর দিকে তাকিয়ে দেখল যে ওর সমস্ত শাড়িটা ভিজে একাকার , মাঝে মাঝে শাড়ি দিয়ে টপটপ করে জল গড়িয়ে পড়ছে ৷ তা দেখে আরিশ বলে উঠলো,,,,

__” কি করে হলো এমন?”

__” ওয়েটার ভুল করে ফেলেছে ৷”

__” ওপস, তা আপনি এখন কি করবেন ?”

__” সানাকে বলছি যদি কোনভাবে ম্যানেজ করতে পারে…”

__” আমার কাছে শাড়ি আছে আপনি চাইলে আমার কাছ থেকে নিতে পারেন তবে হ্যাঁ আমার কিন্তু আবার ফেরত চাই ৷ আমি ওগুলো আমার বউয়ের জন্য কিনেছি , আপনাকে কিভাবে দিয়ে দিয়ে বলুন ৷”

কথাটা শুনে আরুর রাগ উঠে গেল , রেগে গিয়ে বলল ,,,,,
__” লাগবেনা আপনার শাড়ি, আর না লাগলে আপনার কোন হেল্প….”

বলে আরু চলে যেতে নিলেই আরিশ আরূর হাত ধরে এক ঝটকায় ওর সামনে এনে দাড় করালো ৷

__” এই মুহূর্তের জন্য নিজের জেদটাকে সংযত রাখুন, নাহলে আমার জেদটা যদি এখন চেপে বসে তাহলে জেদের বশে আমি যা করব আপনি কিন্তু সামলাতে পারবেন না নিজেকে…”

আরু কাঁপা কাঁপা গলায় ভয়ে ভয়ে বলল,,,,
__” মানেটা কি , আপনি কি আমাকে ভয় দেখাচ্ছেন?”

আরুর হাতটা ছেড়ে দিয়ে আরিশ হো হো করে হাসতে লাগলো,,,,
__” আপনি ভয় পান!”

আরিশ হেসেই চলেছে দেখে আরূর ভয়টা ক্রমশ বেড়েই চলেছে , চোখে জল চলে এসেছে , ভয়ে কয়েক ফোটা জল টপটপ করে চোখ থেকে গড়িয়ে পড়তেই হাত দিয়ে মূছে নিলো ৷
__” ভয় নেই , আই জাস্ট ওয়ান্ট টু হেল্প ইউ নাথিং এলস ৷ আর এই মুহূর্তে কারোর কাছ থেকে শাড়ি পাওয়া সম্ভব নয় ৷ তাই আর বেশি কথা না বাড়িয়ে সামনের ওয়াড্রবে শাড়ি রাখা আছে পরে নিন ৷ নাহলে এভাবে থাকলে শরীর খারপ করবে আর সামনেই আপনার বিয়ে ৷ আমি চাই না আপনি বিয়ের সময় অসুস্থ হয়ে পড়ুন ৷

আরু আরিশের মতিগতি কিছুই বুঝতে পারছেনা, এরকম ভাবে আগে কখনো দেখেনি আরিশকে, অদ্ভুত লাগছে আজকে ওর ৷ তাই আর কোন কথা না বাড়িয়ে কিছু না ভেবে সামনের ওয়ারড্রব এর দিকে এগিয়ে তা খুলতেই দেখল সম্পূর্ণতা তাকটা শাড়ি দিয়ে সাজানো ৷ প্রায় 10 থেকে 12 টা শাড়ি সেখানে রয়েছে ৷

আরু অবাক হয়ে আরিশের দিকে তাকিয়ে বলল,,,, __” এতগুলো শাড়ি আপনার কাছে?”

__” ওই যে বললাম না বউয়ের জন্য রেখেছি তবে আপনার এখন দুঃসময় বলে আপনাকে একটা পরতে দিচ্ছি , মনে করে কিন্তু ফিরিয়ে দিয়ে যাবেন আবার না হলে আমার বউ রাগ করবে….”

আরু আর কিছু বলল না, রাগের থেকে আজ অভিমানটাই যেন বেশি প্রকাশ পাচ্ছে ৷ বেছে বেছে
একটা কালো রঙের নিল ৷ শাড়িটা নিয়ে গুটিগুটি পায়ে আরিশের সামনে এসে দাড়িয়ে বলল,,,,,
__” আপনি একটু রুম থেকে যাবেন, আমি শাড়িটা চেঞ্জ করবো ৷”
আরিশ ভ্রু কুচকে বলল,,,,,

__” আমার রুম আমি এখান থেকে কেনো যাবো?”
বলে দেওয়ালের সাথে হেলান দিয়ে দাড়ালো ৷

__” দেখুন আপনি আমার সমস্যাটা বুঝুন, আপনি রুম থেকে না বের হলে আমি শাড়িটা পরবোব কিভাবে?”

__” ওয়াশরুমে যান ৷”

__” গোটা ওয়াশরুম ভিজে একাকার,তাই সেখানে নিয়ে গেলে এই শাড়িটাও ভিজে যাবে ৷”

__” আচ্ছা তাহলে আমার সামনেই পরূন ৷”

আরিশের কথা শুনে আরূর রাগটা রাগ উঠে গেল,,,আরিশের মতিগতি ওর কাছে ভালো ঠেকছে না তাই রেগে গিয়ে হাতে থাকা শাড়িটা আরিশের দিকে ছুড়ে মারলো ৷
__” লাগবেনা আপনার শাড়ি আর আপনার হেল্প ৷ আমি এক্ষুনি বাসায় চলে যাব ৷”

বলে রুম থেকে বেরোতে যাবে তখনই আরিশ আরুর হাত ধরে সামনে এনে আরুর কোমরটা জড়িয়ে ধরে হ্যাঁচকা টান দিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নিল ৷

__” শাড়ি না হয় নাই বা পরলেন তবে হলুদ টা তো মেখে যাবেন ৷ কেউ হলুদে আসবে আর হলুদ না মেখে ফিরে যাবে সেটা তো হতে পারে না, আর বিয়ের দায়িত্বটক যেহেতু আমার তাই এটুকু খেয়াল তো রাখতেই পারি ৷”
কথাটা বলে আরিশ আরুর চুলের খোপা থেকে বেলি ফুলের মালাটা টেনে খুলে দিল , দিয়ে খোপাটা খুলে দিন একটানে ৷ চুলগুলো ছেড়ে দিতেইতা সমগ্র পিঠে ছড়িয়ে পড়লো ৷ আরিশ চুলগুলো একত্রিত করে মুঠিবদ্ধ করে নিজের মুখের কাছে আরুর মুখটা এনে নিজের গালের হলুদটা আরুর গালে লাগিয়ে দিল ৷ আরু তো হতবাক আরিশৈর কাজে ৷ কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছে না , এদিকে আরিসের স্পর্শ পেয়ে সারা শরীর জুড়ে শিহরণ বয়ে যাচ্ছে ওর তার উপর এখন নিজে আরিশের সাথে মিশে আছে , কি করবে কিছুই বুঝতে পারছেনা ৷

আরিশ আরুকে নেশাগ্রস্থ কন্ঠে বলল,,,,
__” এখনো কি আমার প্রতি সেই একই অনুভূতি হয় নাকি অনুভূতি গুলোও আপনার মতো নিসতব্দ হয়ে গেছে ?”
আরুর চোখ দিয়ে টপটপ করে জল গড়িয়ে পরলো, কিছু বলার ভাষা নেই ওর ৷ যদি নিজের আবেগগুলোকে প্রকাশ করতে পারতা তাহলে হয়তো এতটা কষ্ট ওকে পেতে হতো না ৷ এক ধাক্কায় আরু আরিশকে নিজের কাছ থেকে সরিয়ে বলল,,,,,
__” এখন বুঝি সকল অনুভূতি সকলের জন্য নয়, অনেকে আছে যারা এগুলোর যোগ্যই না, যেমন আপনি ৷ ভুল মানুষকে নির্বাচন করার মত কষ্ট টুকু যদি আপনি বুঝতেন তাহলে হয়তো কখনও আমার অনুভূতিগুলো নিয়ে এমন বিদ্রুপ করতেন না ৷ তবে এটা আমার ব্যর্থতা যে আমি অনুভূতি প্রকাশে ব্যার্থ ৷

আরিশ এবার মুচকি হাসল আরূর কথা শুনে ৷
আরূর আর এক মূহুর্তও ইচ্ছা নেই আরিশের সামনে দাড়ানোর ৷ একবার আরিশের দিকে তাকিয়ে চলে যেতে নিলেই আরিশ বলে উঠলো…..

__” জীবনের রাস্তায় কেউবা সকল আবার কেউবা বিফল ৷ আজকে ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত অনুভব করছেন ঠিকই কিন্ত সবটা যখন একসাথে এনে ফিরিয়ে দেবো তখন সবটা গ্রহন করতে না পেরে আফশোষ করার জায়গা খুজে পাবেন না ৷

বরাবরের মতোই আরিশের কথার গুরুত্ব বুঝতে পারল না আরু তাই আর কোন কিছু না বলে চলে গেল ৷

চলবে,,,,,,,,

#তোমার_নেশায়_আসক্ত
#সিজন:2
#পর্ব:21
#Suraiya_Aayat

কালকে প্রান্তর হলুদের পর থেকে আরিশের প্রতি আরূর রাগটা বেড়ে চলেছে ৷ আরিশ সবসময় ওর অনুভূতি নিয়ে মজা করে তার ওপর কালকে ও যা করেছে একদম ঠিক করেনি বলে আরূ মনে করছে তাই আজকে বিয়ে বাড়ি যাবে না বলে ঠিক করেছে ৷ দ্বিতীয়বার আবার আরিশের সাথে দেখা হবে ওর বিয়ে বাড়ি গেলেই আর আরু আর কোনভাবে আরিশের মুখোমুখি হতে চায় না ৷
রাত সাতটা থেকে বিয়ের অনুষ্ঠান শুরু এখন বাজে 6:15, ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে নিল আরূ , তারপরে ঘুমানোর জন্য চোখটা বন্ধ করতেই ওর আম্মু এসে ওকে ডাকলো,,,,,
__” কিরে তুই এখনো ঘুমিয়ে আছিস? তুই আজকে বিয়ে বাড়ি যাবি না?”
আরূ বিরক্তি নিয়ে বললো,,,,
__” ওই বিয়ে বাড়ি আমার যাওয়ার কোন ইচ্ছা নেই যেখানে তোমাদের আরিশ আছে ৷ বিরক্তিকর মানুষ একটা ৷”
__” তা বললে তো শুনবো না যে আরিশের জন্য তুই বিয়ে বাড়ি যাবি না ৷ প্রান্ত এত আশা করে তোকে বলেছে যাওয়ার জন্য আর তুই না গেলে কেমন একটা দেখায় , আর তাছাড়া সানা একটু আগে ফোন করেছিল আমাকে ও বলেই দিয়েছে যে তোকে নিয়েই তারপর যাবে ৷ ও তো রেডি হয়ে গেছে অলরেডি , বাড়ি থেকেও বেরিয়েছে৷ ”
আরূ এবার উঠে বসে বলল,,,,
__” আম্মু আমি বললাম তো যাব না ৷”
__” সেই আমি অতশত কিছু জানিনা সানা যদি আসে তো তোকে নিয়েই যাবে সিওর থাক, এটুকুই জানি আমি ৷ ”
এই বলে উনি রূম থেকে বেরিয়ে গেলেন ৷

আরূ মুখে যতই বলুক যে ও আরিশকে দেখতে চাইনা বা ওর মুখোমুখি হতে চাই না কিন্ত ওর মন কখনো ওর মুখের কথার সাথে সায় দেইনি,,,,, ওর সামনে যদি আরিশকে অনন্ত কালের জন্য বসিয়ে রাখা হয় তাহলেও হয়তো ও দ্ধিধা বোধ করবে না ৷
কাল ওর হলুদ তাই আজ অনন্ত প্রিয় মানুষটাকে মন ভরে দেখার কোন সুযোগ ও ছাড়তে চাই না , তাই ও আজ যাবে বলে মনে মনে ঠিক করলো ৷

বিছানা থেকে তাড়াতাড়ি নেমে শাড়িটা নিয়ে ওর আম্মুর কাছে গেলো ৷
ওর আম্মু ওকে একটা টকটকে লাল শাড়ি পরিয়ে দিয়েছেন, তার সাথে আরু ম্্যচিং করে সব অরনামেন্টস পরেছে ৷ আরু হাতে চুড়ি গুলো পরতে পরতে ওর আম্মু বলে উঠল,,,,,
__” আই বেলি ফুলের মালাটা পরিয়ে দিই ৷”
কথাটা শুনতেই আরুর কালকের কথা মনে পড়ে গেল, শুকনো একটা ঢোক গিলে বলললো,,,
__” আমার বেলি ফুলের গন্ধ একদম সহ্্য হয় না, তাই আজকে আর পরবো না,,,,”
__” কালকেই তো বললি যে আজকেও বেলি ফুলের মালা দিবি খোপায় তাহলে ৷”
__” আম্মু রোজ রোজ তো সবার পছন্দটা একই থাকবে সেটা তো হতে পারে না তাই না ! আমার আজকে মন চাইছে না তাই পরবো না ব্যাস ৷”
__” কি জানি কি মতি গতি হয় তোর ৷”
কথাটা বলতে বলতেই নিচে গাড়ির হর্নের আওয়াজ পেয়ে আরুর মা বলে উঠলো,,,,
__” ওই দেখ সানা চলে এসেছে , তাড়াতাড়ি যা নাহলে আজকে কিন্তু তোকে বকা দেবে ও ৷”

আরূ আর কিছু না বলে সব জিনিসপত্র নিয়ে বেরিয়ে গেল ৷ বিয়ের কার্ড নিয়েছে 4 টে ৷ একটা প্রান্ত , একটা তুর্য ,একটা সাহেল আরেকটা আরিশকে দেবে ৷”
আরিসের কার্ড টা তে আরিসের নামটা আরূ নিজের হাতে লিখেছে, থাক না একটা নাম না জানা উদ্দেশ্যেহীন বিয়ের কার্ডে ওর হাতের স্পর্শ ৷
কার্ডগুলো নিয়ে তাড়াতাড়ি করে রুম থেকে বেরিয়ে গেল আরু ৷ দেরি হলে সানা আবার কথা শোনাতে ছারবে না , তাছাড়া শীতের রাত তাই তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে হবে বলেই বেরিয়ে গেল ও ৷ কালকে থেকে আবার নতুন একটা জীবন ৷
ওদের আসার আগেই বিয়ে হয়ে গেছে তাই বিয়ের পর্ব টা ওদের দেখার সুযোগ হয়নি ৷
__” ধূর আর একটু তাড়াতাড়ি আসলে বিয়েটা দেখতে পারতাম ৷”
আরূ সানার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে বলল,,,,
__” দোষটা কি আমার?”

__” হ্যাঁ ম্যাডাম অবশ্যই আপনারই, আপনি যদি আর পাঁচ মিনিট আগে থেকে রেডি হওয়া শুরু করতেন তাহলে হয়তো আমরা বিয়েটা একটুর জন্য মিস করার হাত থেকে বাচতাম ৷”

আরূ সানার দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে সামনের দিকে তাকাল, ও জানে সানার সাথে এ ব্যাপারে কথা বলে ওর কোন লাভ হবে না তাই ওর সাথে তর্ক করা মানে বৃথা….
__” তুই কি এখানেই দাড়িয়ে থেকে শোক পালন করবি নাকি প্রান্ত ভাইয়া আর মিথিলা আপুর সাথে দেখাও করবি কোনটা ?”
__” হমম চল,,,বাই দা ওয়ে আশফি ভাইয়া কোথায়? ওনাকে তো দেখছিনা ৷”
আরু একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে কিঞ্চিৎ জোরে বলে উঠলো,,,,,
__” আমি জানিনা উনি কোথায়…”
__” একটা ফোন করে দেখ ৷”
__” তার কোন প্রয়োজন নেই, ইচ্ছা হলে আসবে নাহলে আসবে না ৷”
সানা আরুর কথা শুনে মুচকি হসলো ৷
__” তুই কি এখনো দাঁড়িয়েই থাকবি নাকি ওদের কাছে যাবিও ৷”
__” হ্যাঁ চল…..”
ওখানে গিয়ে আরু দেখল ওদের দুজনকে, দেখে মনে হচ্ছে যেন মেড ফর ইচ আদার , দৃশ্যটা দেখে ওর চোখ জুড়িয়ে গেল…. আজ ওর জীবনটাও এমন হতে পারতো যদি আরিশ রাজি থাকতো ৷
আরু গিয়ে প্রান্তর হাতে গিফট টা ধরিয়ে দিল….
তার সাথে প্রান্তর হাতে ওর বিয়ের কার্ডটাও দিল ৷
__” ভাইয়া আমার বিয়েতে আসবেন কিন্তু , দাওয়াত রইলো , না আসলে রাগ করবো ৷”
প্রান্ত আরূর কাছ থেকে কার্ডটা নিয়ে বলল,,,,
__” কার্ডটা পেয়ে খুশি হলাম তবে বিয়েতে যেতে পারবো কি সেটা বলতে পারছি না ৷”
__” কেন ভাইয়া আপনি কি আমাকে নিজের ছোট বোনের মত মনে করেন না যে এমন কথা বলছেন ৷”
প্রান্ত মুচকি হেসে বলল,,,,,
__” আমি আর মিথিলা হানিমুনে সেন্ট মার্টিন যাচ্ছি কালকে তাই যেতে পারবো না ৷ আর আরিশ , তূর্য আর সাহেল ওরা তিনজনই আজকে কক্সবাজার যাচ্ছে, বিয়ের অনুষ্ঠান শেষে ৷ তাই ওরাও হয়তো যেতে পারবে না ৷”
কথাটা শুনে আরূর বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠলো, হাতে থাকা ফোনটাকে শক্ত করে চেপে ধরল , হাতটা দরদর করে ঘামছে, শরীরের মধ্যে অস্থিরতা কাজ করছে ৷ আরিশের প্রতি যতই রাগ করুক না কেন তবুও সবসময় ভেবেছে আরিশ নিশ্চই কিছু একটা করবে আর অবশেষে ও আরিশকে পাবে তবে আরিশের কক্সবাজারে যাওয়ার কথা শুনে আর কোন আশা ভরসা আরুর মাঝে নেই ৷
ওর সবসময় মনে হয় যে আরিশ ভালোবাসে কিন্তু ওর সঙ্গে মজা করে সবসময় , আর দেখতে চাই যে ও আরিশকে কতটা ভালোবাসে ৷ এই কথাগুলো সবসময় ওর মাথায় ঘোরে তবে বাস্তবে তার সত্যতা ওর জানা নেই ৷
আরূ মিথ্যা একটা হাসি দিয়ে বলল,,,,,
__” খুব খুশি হতাম যদি আপনারা সবাই আসতেন, তবে আপনাদের হানিমুনটাও অনেক বেশি ইম্পর্টেন্ট, আপনারা নিউলি মেরিড তাই একসাথে সময় কাটালে নিজেদেরকে আরো ভালোভাবে জানতে পারবেন , আর বুঝবেন নিজেকে ৷ আল্লাহ আপনাদের বিবাহিত জীবন সুখী করুক ৷ ”
__” তুমিও সুখী হয়ো তবে বিয়ের পর তোমার জামাইয়ের থেকে সাবধানে থেকে ও কিন্ত তোমাকে খুব ভালোবাসে মানে পাগলের মতো , তাই ওর ভালোবাসা কখনো ফিরিয়ে দিও না ,…..”
আরু অবাক হয়ে বলল,,,,,
__” আপনাকে এগুলো কে বলেছে ?”
__” মানুষের হাবভাব দেখলেই বোঝা যায় যে কে কেমন ৷ তাই বেশি ভালোবাসা দিলেও হয়তো তুমি কখনো ফেরাতে পারবেনা ৷”
বারাবরের মতই আরু কিছু বুঝলো না ৷
__” এতো রহস্য করে বলার কী আছে, সহজ ভাবে বললেই হয় ৷ যেমন উনি তেমনই উনার ফ্রেন্ড গুলো ৷ ওনাদের কথার মারপ্যাঁচ আমি কিছুই বুঝিনা ৷ অবশ্য আমার বুঝেও কিছু লাভ হবে বলে মনে হয় না ৷(মনে মনে)
মিথিলার সাথে কিছুখন কথা বলে আরু ওখান থেকে চলে এল….
__” কিরে তুই কোথায় যাচ্ছিস?”
__” তূর্য আর সাহেল ভাইয়াকে বিয়ের কার্ড দিতে যাচ্ছি ৷ যতই হোক তাদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক না হলেও একপ্রকার দ্বন্দ্বমূলক সম্পর্কে তাদের সাথে জড়িত ছিলাম তাই এটুকু তো করতে পারি…”
__” চল আমিও যাচ্ছি তোর সাথে?”
__” না তার দরকার হবে না , আমি একাই যাচ্ছি তুই এখানে থাক আমি একটু পরেই ফিরে আসছি…..”
আরু বেশ কিছুক্ষন এদিক ওদিক তাকিয়ে সাহেল আর তুর্যকে খুঁজতে লাগলো, অবশেষে দেখতে পেল ওদেরকে ৷ সাহেল ক্যামেরা হাতে তূর্যর কয়েকটা ছবি তুলে দিচ্ছে , তাই ওর আর অসুবিধা হলো না ওদের দুজনকে একসাথৈ খুঁজে নিতে ৷
সামনে এগিয়ে যেতে সাহেলের কাছে গিয়ে বলল,,,,,, __” ভাইয়া আপনার সাথে কি দুই মিনিট কথা বলতে পারি যদি আপনার কোন সমস্যা না থাকে!”
সাহেল আরূর দিকে তাকিয়ে আরূকে দেখে মুচকি হাসি দিয়ে বলল,,,,,
__” সিওর ৷বাট এনি প্রবলেম?”
তূর্য ও ওদের দিকে এগিয়ে গেল ৷ ওরা দুজনেই আরুর দিকে তাকিয়ে আছে যে আরূ কি বলবে ওদেরকে তা শোনার জন্য……
আরু ওদের দুজনের দিকে দুটো বিয়ের কার্ড এগিয়ে দিল ৷
__” ভাইয়া কাল আমার গায়ে হলুদ , আর পরশু বিয়ে, আপনাদের দুজনের দাওয়াত রইলো, আসবেন কিন্তু ছোট বোনের বিয়ে করে মনে করে ৷”
__” ধন্যবাদ বিয়েতে দাওয়াত দেওয়ার জন্য , যেতে পারবো কি সেটা বলতে পারছিনা, আজকে আমরা কক্সবাজার যাচ্ছি ৷”
আরু এক চিলতে হাসি নিয়ে বললো ,,,,,
__” মনে হলো দাওয়াত দেওয়া উচিত তাই দিলাম বাকিটুকু আপনাদের উপরে ৷”
কথাটা বলে আরূ ওখান থেকে চলে এলো…..
এবার আরিশকে বিয়েতে দাওয়াত দিলেই ওর কার্য সম্পন্ন হবে তবে প্রায় একঘন্টা হলো বিয়ে বাড়িতে এসেছে এখনো কোথাও আরিশকে দেখেনি ৷ ভাবলো কার্ডটা আরিশের রূমে দিয়ে আসবে ৷ সেই জন্য আরিসের রুমের দিকে গেল ৷
আরিশের রূমের দরজাটা হাট করে খুলে রাখা আছে তাই আরূ ভাবলো আরিশ হয়তো রুমেই আছে, বলে রুমের দরজাটা খুলে দেখল রুমে কোনো মানুষ নেই, আর আরিশের কোন চিন্হ নেই , বিছানার পাশে ট্রলিটা দেখে যেন আরেক দফা কেপে দিয়ে উঠলো আরু ৷ সত্যিই হয়তো আর কোনো আশা নেই ওর ৷ আরূর চোখের কোনে জল চলে এলো ,এখন চোখের কোনে জল জমে আশা ওর কাছে নিত্ত দিনের ঘটনা , আর তা মুহূর্তের মধ্যে টপটপ করে গড়িয়ে পড়ে টা তেও যেন অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে ও ৷
অন্ধকার রুম, আলো জ্বালালোনা আর ৷ প্রথম দিনে ঘরটাকে এতো পর্যবেক্ষণ করেছিল যে ঘরের প্রত্যেকটা কোনা কোনা ওর মনে আছে ৷ আরিসের বিছানার উপরে বিয়ের কার্ডটা রেখে চলে আসতেই কানে দরজা খোলার শব্দ ওর কানে ভেসে আসতেই আরূ সারা শরীর কেঁপে উঠলো ৷ এক সুগন্ধ ভেসে আসছে ওর নাঁকে, পারফিউমটা আরিসের, আরিশ সবসময় এই পারফিউম ব্যবহার করে সেটা আরূ জানে আর তাছাড়া আরিশের উপস্থিতি কখনো ওর বুঝে নিতে অসুবিধা হয় না ৷ তবে এখন মানুষটার মুখোমুখি হবে কি করে সেটাই ভাবছে আরু , তবুও এটা ভেবে খুশি হল যে বাড়িতে ফেরার আগে অন্তত মানুষটাকে একবার দেখতে পাবে ৷
আরূ স্থির দাঁড়িয়ে রয়েছে, আরিশের এর দিকে এখনো ঘুরে তাকায় নি ৷
ধীর পায়ে আরিস আরূর কাছে গেল , আরুর চুলে মুখ ঢুবিয়ে দিল আরিশ আর ওর চুলের ঘ্রাণ নিতে লাগলো ৷
হঠাৎ আরিশের এমন কাজে আরূর সমগ্র শরীর থরথর করে কাঁপছে, বুঝতে পারছে না যে আরিশ কি করতে চাইছে , আরিশকে বোঝা ওর পক্ষে কখনোই সম্ভব হয়নি আর আজো হচ্ছে না ৷
আরু কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,,,,,
__” আপনি কি করছেন এটা ! প্লিজ সরে যান ৷”
আরিশ এবার ওর ঠাণ্ডা হাত জোড়া আরূর গলায় স্পর্শ করতেই আরূ আরিশের হাতটা শক্ত করে চেপে ধরল ৷
__” প্লিজ সরে যান, এতটা কাছে আসবেন না ৷”
এবার আরিশ ওর আরেক হাতটা আরুর কোমরে শক্ত চেপে ধরে আরূকে ওর নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নিল ৷ আরূর পিঠটা আরিশের বুকে ঠেটে রয়েছে ৷ আরূ আরিশের এক হাত দিয়ে শক্ত করে চেপে ধরে আছে…..
আরূ যেন এক ঘোরের মধ্যে চলে যাচ্ছে ক্রমশ, নিজেকে আর আরিশের থেকে সরাতে ইচ্ছা করছে না ৷ হঠাৎ আরিশ ওর কানের কাছে ফিস ফিস করে বলে উঠলো,,,,,
__” বিয়ের কার্ডটা এখনো পেলাম না ৷”
কথাটা শুনতেই আরূ একদফা চমকে গেল , এই মুহূর্তে ওর ইচ্ছা করছে আরিশের গালে ঠাস ঠাস করে কয়েকটা চড় মারতে তবে চাইলেও মানুষ টাকে মারতে পারবেনা ৷ আরূ আরিশের যে হাতটা শক্ত করে চেপে ধরেছিল সেই হাতটা এক ঝটকায় ফেলে দিল ৷ আরিশের কাছ থেকে সরে এল আরু ৷
__” বিয়ের কার্ড চাইতে গেলে তার এতটা কাছে আসতে হয় জানতাম না মিস্টার আরিশ ৷”
আরিশ ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে আরূর দিকে এগিয়ে গিয়ে বললো,,,,
__” সবটাই যে আপনার নলেজে থাকা ডিকসানারির মতো হবে তার কোনো মানে হয় না মিস আরূ ৷ i’m ইউনিক ইউ নো ৷ ”
আরূ তাচ্ছিল্যের স্বরে একটা হাসি দিয়ে বলল,,,
__” কোন মানুষ যে এতটা যঘন্্য হতে পারে তা জানতম না ৷ বাই দা ওয়ে কাল আমার হলুদ আর পরশুদিন বিয়ে আসবেন কিন্তু, তাহলে খুশি হব ৷”
__” আমি না গেলে কি কোন কাজই পূরন হবে মিস আরুশি ? আমার কিন্ত মনে হয় না তা ৷”
__” নিজেকে অন্যের জীবনে এতটা গুরুত্বপূর্ণ কেন ভাবেন?”
__” না ভাবলে যে আপনি আজীবন নিরামিষ ই থেকে যাবেন থেকে যাবেন আর আপনাকে আমিষ বানানোর দায়িত্বটা যে,,,,!”
কথাটা আর পুরো বললো না আরিশ ৷
__” মজা করছেন তো, বেশ ! সে যাই হোক, আমি নিরামিষ নাকি বা আমিষ তা আপনার না ভাবলেও চলবে বাট বিয়েটা নিয়ে একটু ভেবে দেখবেন যে আসতে পারবেন কি ৷”
__” আলবাদ ভাববো , আপনি না বললেও যে দায়িত্বটা আমারই ৷”
আরিসের বলা কথাগুলো আরূ কিছুই বুঝতে পারছে না তাই কথাগুলো যেন ওর কাছে মজা বলে মনে হচ্ছে ৷আরূ বিরক্ত হয়ে চলে যেতে গেলেই আরিশ ওর হাতটা ধরলো,,,,
__” বিয়ের দাওয়াত দিলেন অথচ গিফটটা নেবেন না?”
আরূ শান্ত কন্ঠে বলল,,,,,
__” আপনার থেকে যা পেয়েছি সেটুকু মনে রাখতেই যেনো কষ্ট টা বেশি হচ্ছে তাই নতুন করে আপনার দেওয়া কিছু স্মৃতি করে রাখার মত ক্ষমতা আমার নেই ৷”
__” কিন্তু আমি যখন চেয়েছি গিফটটা আপনাকে দেবো তো আপনাকে নিতেই হবে ৷”
বলে আরূর কাছে গিয়ে আরুকে কোলে তুলে নিল,,, __” আরূ শক্ত করে আরিসের পাঞ্জাবির কলারটা চেপে ধরল ৷”
__”নামান আমাকে, কি করছেন আপনি ?”
আরুর কোন কথা না শুনে আরিশ আরূকে বিছানায় বসিয়ে দিল,,,,
ও নিজৈ মেঝেতে বসে আরূর পা থেকে জুতা জোড়া খুলে দিয়ে পকেট থেকে একজোড়া নুপুর বার করে আরূর পায়ে আলতো করে পরিয়ে দিলো ৷
আরূ ভাবেনি যে আরিশ এভাবে ওকে উপহার টা দেবে ৷
নুপুর পরানো শেষে আরিশ আরুর পায়ে আলতো করে ঠোট ছোয়ালো , আর আরু তাতে কেপে উঠলো ৷
__” এখন নুপুরেই সন্তুষ্ট হন, পরে ভালোবাসা গুলো যত্ন সহকারে নিলেই খুশি ৷”
__”মানে?”(কাদোকাদো হয়ে)
আরিশ আরূর কথা পাত্তা না দিয়ে বললল,,,,,
___” কক্সবাজার যাচ্ছি, ফিরে এসে হানিমুনে যাবো ইনশাআল্লাহ ৷ আমীন !”
বলে আরুর দিকে চোখ মেরে ট্রলিটা হাতে করে বেরিয়ে গেলো ৷
__” উনি এমন কেনো?কেনো আমার অনূভূতি গুলো বোঝেন না !কেনো?”
আরুর চোখ থেকে টপটপ করে জল গড়িয়ে পড়ছে অনবরত ৷

চলবে,,,,,

তোমার নেশায় আসক্ত ২ পর্ব-১৮+১৯

0

#তোমার_নেশায়_আসক্ত
#সিজন:2
#পর্ব:18
#Suraiya_Aayat

আরিশের আম্মু এবার আরিশের গালে হাত রেখে বললেন,,,,,,
__” কেন এমন করছিস ?”

__” আম্মু আমি কক্সবাজার যাচ্ছি প্রান্তর বিয়ের পরের দিন, 7 দিন পরে ফিরবো ৷ প্রান্ত হানিমুনে যাবে তাই আমি সাহেল আর তূর্য কক্সবাজার যাচ্ছি , অবশ্য প্রান্ত হানিমুনে সেন্ট মার্টিন যাচ্ছে তাই আমরা কক্সবাজার যাচ্ছি ৷”

আরিশের আম্মু অবাক হয়ে বললেন,,,,
__” কি বলছিস তুই এসব ! মাথা খারাপ হয়ে গেছে তোর?”

__” মাথা খারাপের কিছু হয়নি,আমি একদম ঠিক আছি ৷”

__” আরুর বিয়ে আর 5 দিন পর আর আর তুই এসব কি বলছিস?”

__” আরু ম্যাডামের বিয়ে করার শখ জেগেছে উনি করছেন, আমার কি ! উস্কা শাদি হে তো মে কেয়া কারু?🤷🏻

__” তোর মাথা খারাপ হয়ে গেছে , তাই এসব বলছিস ৷”
__” চিল আম্মু ৷”

অনিকা খান আরিশের দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে বেরিয়ে গেলেন ৷

সকাল বেলা আরূ ঘুমাচ্ছে তখন ফোনের রিংটোন এর আওয়াজ আরূরকানে পৌঁছাতেই ঘুমটা ভেঙে গেল ওর ৷

__” এত সকালে যে আমার ঘুমের বারোটা বাজিয়েছে আজ আমি তার বারোটা বাজাবো ৷”
বলে ফোনের দিকে তাকাতেই দেখল আশফি ফোন করেছে , আরূর এখন ইচ্ছা করছে ওর নিজের মাথার চুল নিজেই ছিড়তে , কেন যে নাম্বারটা আশফিকে দিয়েছিলো এই ভেবে ৷

__” এই লোকটা আমারে পাগল করে দিবে, উঠতে গেলে ফোন , বসতে গেলে ফোন, ঊফফ বিরক্তিকর ৷”

বিরক্তি নিয়ে ফোনটা হাতেই ধরে রইল তবে তুললো না আরু, কিছুক্ষণ পর ফোনটা বাজতে বাজতে বন্ধ হয়ে গেল….

আবার পরমুহূর্তেই আবার আশফির থেকে কল আসতেই এবার চরম পর্যায়ের বিরক্তি কাজ করছে আরুর মধ্যে , রেগে গিয়ে ফোনটা সুইচ অফ করে আবার ঘুমিয়ে পড়ল….

চোখটা বন্ধ করে দুমিনিট শান্ত হয়ে ঘুমিয়ে থাকতেই চোখে ঘুম ঘুম ভাবটা যখন প্রায় চলে এসেছে তখন দরজায় নক পড়ার শব্দে আরূর পুনরায় ঘুম ভেঙে গেল ৷

__” উফ এত সকালে আবার কেন বিরক্তি করে?”

ঘুমঘম কন্ঠে বলল,,,,,
__” কি হয়েছে টা কি আম্মু ?”

__” আরূ মা দরজাটা খোল, তোর অনিকা আন্টি এসেছেন তোর সাথে দেখা করতে ৷”

অনিকা খানের এসেছে কথাটা শুনেই আরূর যেনো হুস ফিরে এলো ,
__”. তাহলে উনি কি বিয়েতে রাজি ৷”

না না আর কিছুই ভাবতে পারছে না আরু, এক ঝটকায় উঠে গেল , ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল সকাল সাড়ে আটটা , হঠাৎ এত সকালে উনি কেন এসেছেন তা নিয়ে কৌতুহল আছে ওর মধ্যে ৷

আরূ দরজা খুলে দেখল ওর আম্মু দাঁড়িয়ে আছে,

__” তোর আন্টি তোর সাথে দেখা করতে এসেছে, 5 মিনিটের মধ্যে নিচে নেমে আয় ৷”
কথাটা বলে উনি চলে গেলেন , ওনার মুখ দেখে আরু কিছুই বুঝতে পারলেন না যে উনি খুশি নাকি , অখুশি ৷ সম্পূর্ণ নিউট্রাল ৷

তাড়াতাড়ি করে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলো আরূ ৷

__” কেমন আছো আরিশ?”

__”আলহামদুলিল্লাহ ভালো, তুমি কেমন আছো?”

__” ভালো না থেকে পারি , তোমাদের জন্য তো ভালো থাকতে হবে তাইনা ৷”

__” সে অবশ্যই, খারাপ থাকলে কি আর জীবনটা এগোবে ?”

__” বিয়েতে তুমি রাজি তো? না রাজি হলেও এখন আর কিছু করার নেই, বিয়েটা তোমাকে করতেই হবে ৷”
__” আরে তুমি তো দেখছি আগের থেকে এখন আরো বেশি ভাবতে শুরূ করে দিয়েছো ৷”

__” তুমি তো জানো যে আমি কতোটা ফাস্ট তাই আমাদের বিয়ের ব্যাপারটা নিয়ে আরো বেশিই ভাবছি ৷”
__” চিন্তা কোরো না একদম সব ঠিকঠাক হবে ৷”

__” হাহ, চিন্তা না তবে বড্ড বেশিই ব্যাকুল হয়ে পড়ছি দিনদিন ৷”

__” সব হবে বেশি ভেবোনা এটা নিয়ে ৷”

__” বাই দা ওয়ে আমি একটু কক্সবাজার যাচ্ছি পরশু ৷”

__” তাহলে বিয়ে ?”

__” ওই যে তুমি বললে যে হবে , তাহলে এখন নিজেই এতো চিন্তা করছো কেনো?”

__” একদম ঠিক বলেছো ৷”

কথাটা বলে দুজনেই হাসতে লাগলো ৷

বিগত কয়েক মিনিট ধরে অনিকা খান নিঃশ্চুপ হয়ে আরুর সামনে বসে আছে , সম্পূর্ণ পরিবেশটা থমথমে, যেমনটা কোন বড় ঝড় আসার আগে পরিবেশ টা হয় ঠিক তেমনি , আরু কিছুই বুঝতে পারছে না যে উনি কি বলবেন, ওনার মুখের রিয়াকশন জিরো ৷

হঠাৎ আরূ যেই কিছু বলতে যাবে তখনই অনিকা খান একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলতে শুরু করলেন,,,,,
__” আমি তোর কাছে ক্ষমা চাইছি রে মা , তোর সাথে আমরা যা করেছি অন্যায় করেছি , আমি সত্যিই বুঝিনি যে আমার ছেলেটা এমন একটা সিদ্ধান্ত নেবে৷ কিভাবে যে কি হয়ে গেল আমি নিজেও জানিনা, যদি জানতাম যে ও এভাবে বিয়ের জন্য না করবে তাহলে এই কথাটা কখনো ওর কানে পৌঁছে দিয়ে দিতাম না ৷”

আরু অনিকা খানের হাতে হাত রেখে বললেন,,,,,,
__” এইসব বলে আমাকে ও লজ্জিত করবেন না আন্টি , দেখো যা ছিল সেটা তোমাদের স্বপ্ন ছিল আর স্বপ্নটাকে বাস্তবায়িত করাটা কঠিন , তাই একটা কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখিন না হলে বোঝা যায় না স্বপ্ন কে বাস্তবায়িত করার সত্ততা ৷ তাই দোষটা আমার কারোর নই, আমার কপালে যেটা ছিল সেটাই হওয়ার আর সেটাই হচ্ছে ৷”

__” নতুন জীবনে সুখী হোস মা, আশা করি আশফি বাবা খুব তোকে ভালো রাখবে , অনেক ভালোবাসবে তোকে, দোয়া করি তোর জীবন সুখের হোক ৷”

কথাটা শুনতে আরূর বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠলো , অনেকক্ষণ ধরে একটা ক্ষীন আশা নিয়ে বসে ছিল ও যে উনি হয়তো কোনো ভালো খবর দিতে এসেছেন , কিন্ত তা নয় , উনি যে আরূর নতুন জীবনের শুভকামনা করতে এসেছেন সেটা ওর ধারণাতেও আসেনি ৷ আরুর চোখের কোনে জল চলে এলো তবুও সেটা সকলের সামনে দেখালে হবে না তাহলে হয়তো সবাই বুঝে যাবে যে বিয়ে টা ও মন থেকে করছে না ৷

__” দোয়া করো আন্টি যেন সুখী হই ৷”

__” আলহামদুলিল্লাহ….”

রাতের বেলা বাইরে কনকনে শীত , মাঝে মাঝে ঠান্ডা হাওয়া বয়ে যাচ্ছে, চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার , বাড়ির সামনে সোডিয়ামের আলোটা মিটমিট করে জ্বলছে, মাঝে মাঝে আশেপাশের কয়েকটা কুকুরের ঘেউঘেউ আওয়াজ শোনা যাচ্ছে , শুনশান জনমানবহীন রাস্তা দিয়ে কয়েকজন কাঁপতে কাঁপতে হেঁটে চলেছে গন্তব্যের উদ্দেশ্য ৷ বেলকনির কাচের দেওয়ালটায় জমে থাকা কুঁয়াশাগুলো শিশিরবিন্দু আকারে টপটপ গড়িয়ে পড়ছে ৷

অনেকক্ষণ ধরেই প্রকৃতির এই সমস্ত গতিপ্রকৃতি কে খুব গভীরভাবে লক্ষ্য করছে আরূ ৷
কাচের দেওয়াল জমে থাকা কুয়াশা গুলো যখন শিশিরবিন্দু আকারে টপটপ করে ঝরে পড়ছে তখন ব্যাপারটা আরূর বেশ ভালো লাগছে, এই মন খারাপের মাঝেও যেনো কিঞচিত আনন্দ দিচ্ছে ওকে ৷ এর আগে অনেকবার এরকম দৃশ্য দেখার সৌভাগ্য হয়েছে ওর তবে আজকের অনুভূতিটা অন্য রকম ৷

কিছুটা এগিয়ে গিয়ে আলতো স্পর্শে কাচের দেওয়ালে একরাশ ভালোবাসা নিয়ে আঙ্গুল দিয়ে লিখলো A R I S H শব্দটা ৷ স্বপ্নটা পূরণ করেই আরিশের নামের থেকে কিছুটা দূরে যখন আরূশি নামটা লিখতে যাবে তখনই নামটাই একবার চোখ বোলাতেই দেখল যে নামের বর্ণমালা গুলো ঠিক তার আগের স্বাভাবিক অবস্থাতাতে নেই, শিশির বিন্দু গুলো টপটপ করে ঝরো ঝরে পড়ছে , অর্থাৎ মানুষটাকে চাইলেও হয়তো নিজের জীবনে ধরে রাখতে পারবে না আরূ , আর সে অধিকারটাও যে ওর নেই তাই বৃথা আর আরূশি নামটা লিখতে গিয়েও লিখলো না ৷ কি করবে ও লিখে যেখানে ভালোবাসাটাই একতরফা ৷

আর কয়েকদিন বাদেই অন্য কারোর হয়ে যাবে আরূ, কথাটা ভাবতেই শিউরে উঠল ও , নিজেকে আরিশের সাথে কল্পনা করেছিল , ভাবতে চেয়েছিল আরিশকে নিয়ে আরো বেশি বেশি করে , ভালোবাসতে চেয়েছিল কিন্তু আজ সব কিছই কল্পনার দোরগোড়ায় নাম লিখিয়েছে ৷

কিছুক্ষণ নীরব থেকে অঝোরে কেঁদে দিল আরূ ৷

__” কেন ভাবছি আমি ওনার কথা ? কেন ভুলতে চাইছি তবুও পারছি না ? কেন ঘৄনা করতে পারছি না ? আর কেনই বা এই আশফি নামক মানুষ টাকে মেনে নিতে দ্বিধা বোধ হচ্ছে? কেন ? কেন ? কেন? সব কিছুর উত্তর চাই আমার !
দিনদিন উনি নামক নেশাটা আরো বেশি করে আমার আসক্তিতে পরিনত হচ্ছে, ওনার প্রতে্কটা ছোঁয়া, ওনার শরীরের সেই মিষ্টি ঘ্রান, আলতো স্পর্শের সেই প্রেমানুভূতি , ওনার গলার সেই গান, সব ,সব কিছুই যে আজ আমার আসক্তি ৷
দিন দিন ওনার প্রতি ভালোবাসা কমার বদলে বেড়েই চলেছে , মন খারাপের রাজ্যের মেঘগুলো ক্রমে ক্রমে বিস্তার লাভ করলেও ভালোবাসার অনুভুতি দ্বিগুন হয়েছে ৷কেন এতোটা ভালোবাসি ওনাকে! আর যদি এতটা ভালোবাসলাম ই তখন কেন এতো দেরিতে ? আগে কি ওনার জীবনে আসতে পারতাম না ৷(আরু ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাদছে আর বলছে )

আরু এবার দৌড়ে ঘরের মধ্যে গেল গিয়ে ফ্লোরে ধপ করে বসে পড়ল ইনুর সামনে ৷

ইনুর খাঁচার ভিতর আলো জ্বলছে যাতে এই শীতেও কিছুটা গরম অনুভুতি আসে ওর ৷ ওরা যেহেতু কথা বলে নিজের ভাবটা কে প্রকাশ করতে পারে না তাই জন্যই মানুষরাও যদি ওদের অনুভূতিটাকে না বুঝে তাহলে তারাও তো এক প্রকার অবলাদের খাতায় না লেখাই ৷ যদিও বা কথা বলার মতো সৌভাগ্য টা ইনুর থাকলে আর অন্য সমস্ত পাখিদের নেই তাই তাদের কষ্টটা আরু বোঝে, তাই ওর জন্য এ ব্যবস্থা করেছে যাতে শীতে ওকে কষ্ট পেতে না হয় ৷

ইনু এই শীতে সামান্য উত্তাপ পেয়ে যেন ঘুমের ঘোরে কাতার প্রায় ৷

আরু কাঁদতে কাঁদতে বলল ,,,,
__” তুই বলনা কেনো আমি ওনাকে এতোটা ভালোবাসি, আর কি এর ব্যাখা !”

আরূর কান্নার আওয়াজে ইনু জেগে উঠলো, হঠাৎ করে এমন হওয়াতৈ ইনূ নিজেও যেন হতবাক ৷

__” কি রে বলনা , চুপ করে আছিস কেন ? কেন এত ভালোবাসি ? তুই ই তো সবার প্রথমে আমাকে বুঝতে শিখিয়েছিলি যে এটক ভালোবাসার অনুভূতি তাহলে তূই এখন চুপ কেনো?”

__”…………৷”

__” আমি থাকবো কি করে উনাকে ছাড়া? এতটা ভালোবেসে কীভাবে দূরে সরে যাবো?”

ইনু চুপ করে রয়েছে আর এদিক ওদিক তাকাচ্ছে, আজ ও নিজেও যেন ভাষা হারিয়ে ফেলেছে কিছু বলার ৷ একজন মানুষের মতো যদি ও শান্তনা দিতে পারতো তাহলে ও নিজের চেষ্টার হয়তো ত্রুটি রখতো না ৷

আরূ কাঁদতে কাঁদতে বলল,,,,,
__” অন্যসময় এত কথা বলিস তাহলে আজকে কি হচ্ছে তোর? আমার প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিস না কেন বল? বল ! বল বল ! ”

আরু দেওয়ালে মাথা দিয়ে অঝোরে কাঁদতে লাগলো আর রইলো ইনুর উওরের অপেক্ষায়…..

সত্যি ভালোবাসা গুলো এমনই হয় , তা কখনো বা আনন্দদায়ক আবার তার থেকেও আরো বেশি বেদনাদায়ক ৷

#চলবে,,,,,,

#তোমার_নেশায়_আসক্ত
#সিজন:2
#পর্ব:19
#Suraiya_Aayat

মন খারাপ করে একমনে ছাদের এক কোণায় দাঁড়িয়ে আছে আরূ, আজকাল মনটা এমনিই ভাল থাকে না তার পরই দুপুরবেলা কলেজ থেকে ফিরে মুডটা যেন আরো বেশি খারাপ হয়ে গেছে…..আগের মতো যেন প্রান খুলে হাসতেও ভুলে গেছে,,,,এখন যেনো মুখের হাসিটাও অতীত ৷
পাশে ইনু খাঁচার মধ্যে রয়েছে আর আপন মনে পেয়ারা খাচ্ছে যেটা কিছুক্ষন আগে ভার্সিটি থেকে ফেরার পথে তিথি আরুকে দিয়েছে ইনুকে দেওয়ার জন্য ৷

একবার ইনুর দিকে তাকিয়ে সামনের বড়ো বড়ো বিলডিং গুলোর দিকে তাকিয়ে রইল আরু,,,,,,সূর্যটা দূর থেকে যেনে আরুর সাথে লুকোচুরি খেলছে, কখনো জোরে কিরন দিচ্ছে আবার কখনো বা ধীমে ,তা দেখে রিতীমতো বিরক্ত আরূ ৷

দিন দিন আরিশের উপর অভিমানের পাহাড় টাও অতিব প্রশস্ত হয়ে চলেছে তবুও অভিমান ভাঙ্গানোর জন্য মানুষটা ওর উপরে ওর কোন অধিকারে নেই যে তার সামনে গিয়ে আলতো করে তার শার্টের কলারটা ধরে তার বুকে মুখ লুকিয়ে সামান্য ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে নিজের অভিমানটা প্রকাশ করবে ৷

ভার্সিটিতে গিয়ে যা যা হয়েছে তাতে রীতিমতো বিরক্ত আর তার কষ্ট এখনো পাচ্ছে আরূ….

________________❤

সবে ক্লাস শেষ হয়েছে, আরূর সাথে তিথি রয়েছে সানা আজকে আসেনি ৷ সন্ধ্যাবেলা প্রান্তর হলুদে যাবে বলে শপিং করতে গেছে , তাছাড়া সামনে নাকি ওর কাছের কারোর একটা বিয়ের অনুষ্ঠান আছে সেইজন্য সেখানে জমজমাটি সাজবে বলে কেনাকাটা করছে , সেই কথা শুনে আরূ ও আর কিছু বলেনি ৷ ওর নিজের বিয়ের কেনাকাটা এখনো বাকি আছে তবে তা নিয়ে ওর মাঝে কোন উদ্বেগ কাজ করছে না,ও ওর আম্মুকে বলেছে যেন উনার পছন্দমত শপিং গুলো করে আনে , ওর চোখজোড়া নাকি সবসময় ভুল জিনিসকে নির্বাচন করে ৷

ক্লাস থেকে বেরিয়েছি আরূ আর তিথি ৷ দুজনের টুকটাক কথার মাঝে আরু তিথির হাতে ওর বিয়ের কার্ড টা ধরিয়ে দিলো ৷ তিথি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো কার্ড টার দিকে যেনো বিশ্বাস করতে পারছে না যে কি হচ্ছে ৷
তিথি অবাক হয়ে বলল,,,,,
__” এটা কার বিয়ের কার্ড?

__” ওপরে আমার নাম লেখা আছে তারমানে নিশ্চই আমারই হবে নো ডাউট ৷”

__” হঠাৎ বিয়ে ? আর কার সাথে বলিস নাই তো !”

__” সে অনেক লম্বা কাহিনী, তোকে আমি অন্যদিন,,,,,,”
এই অবধি কথাটুকু বলে আরু আর কিছু বলতে পারলো না ,তার আগেই পাশ থেকে কেউ ঢেকে উঠলো , আরূ পাশ ফিরে দেখল তূর্য দাঁড়িয়ে আছে,,,,আরু শান্ত কন্ঠে বলল,,,,
__” ভাইয়া কিছু বলবেন?আই মিন কোন দরকার ?”

__” দরকার তো ছিলো তবে আমার না আরিশের ৷ বাই দা ওয়ে আ্যটম বোমা আজকে পটকা বাজি ব্যাপারটা ঠিক হজম হচ্ছে না ৷”
আরু এই মুহূর্ত তূর্যর কথা শোনার প্রয়োজন বোধ করছে না , আরিশ ওকে কি বলবে তা অধিক গুরুত্বপূর্ণ ওর কাছে ৷

__” আরিশ ভাইয়া কোথায় আছে সেটা বললে আই থিঙক বেশী সুবিধা হতো ভাইয়া ৷”

তুর্য খানিকটা অবাক হলো আরূর এরকম শান্ত রুপ দেখে , ও ভেবেছিল কথাটা বলতেই হয়তো আরূ রেগে যাবে কিন্ত তেমনটা হলোনা ৷ সে যাই হোক তবে তা নিয়ে তূর্যর কোনো মাথাব্যথা নেই ৷

__” ক্যান্টিনে আছে ৷ 2nd ফ্লোরে ৷(যেহেতু NSU এর বিরাট ক্যান্টিন তাই তূর্য আরুকে না বললে আরূর ওকে খুঁজেতে অনেক সময় লাগবে তাই )

আরূ তিথির দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,
__” তুই গাড়িতে গিয়ে বস 2 মিনিটের ব্যাপার আমি এক্ষুনি চলে আসব ৷”

__” আচ্ছা ঠিক আছে তাড়াতাড়ি আই ৷”
এই বলে আরূ তুর্যকে আর কিছু না বলে সেকেন্ড ফ্লোরে চলে গেল ৷ আরিস সেখানে আড্ডা দিচ্ছে সাহেলের সাথে , প্রান্ত হয়তো বিয়ের চাপে আজকে কলেজে আসতে পারেনি ৷

আরু আরিশকে দেখেই থেমে গেল , একতরফা ভালোবাসর ঝড় বয়ে যাচ্ছে মনের মধ্যে , এই মানুষটাকেই ও কত ভালবাসে, যার জন্য দিনরাত চোখের জল ফেলেই চলেছে ৷
যে ভালোবাসা পাই জীবনটা তার জন্য সুখের আর যে ভালোবাসাটা পাই জীবনটা তার জন্য দুঃখের ৷

এতটা রাস্তা আরু দৌড়ে দৌড়ে এসেছে আরিশকে দেখার উত্তেজনায়, তবে এখানে এসে যেন পা দুটো আর চলতে চাইছে না থেমে রয়েছে, ধীর পায়ে আস্তে আস্তে আরিশের কাছে গেল, নিচের দিকে তাকিয়ে আছে আরু ৷ আরূ এগিয়ে যেতেই আরিশ সাহেলকে ইশারা করলো সেখান থেকে বেরিয়ে যেতে ৷
সাহেল চলে যেতেই আরিশ আরূর দিকে তাকালো, আরূকে আসতে দেখে আরিশ ওর মুখের চওড়া হাসিটাকে ক্রমশ সংকুচিত করে একটা টেডি স্মাইল দিল…..

আরূ আরিশের কাছে গেছে , আরিশের চোখে চোখ মেলানোর সাহসটুকু ওর মধ্যে নেই , হয়তো তাকালেই বেশি আবেগাআপ্লুত হয়ে পড়বে , হয়তো আরিশের অগোচরে কয়েক ফোঁটা জল ও গড়িয়ে পড়বে চোখ থেকে…..

আরিশ এবার উঠে দাঁড়িয়ে আরূর সামনে গিয়ে দাঁড়ালো , খানিকটা ঝুকে গেল আরিশ আরূর দিকে ৷
আরূর বুকের ভিতর এখন টিপটিপ করছে, কি বলতে চাইছে আর কিই বা করতে চাইছে আরিশ তার কিছু বুঝতে পারছে না আরু , তবুও আগের মতোই মাথা নিচু করে চোখ বন্ধ করে রয়েছে ৷

__” এই যে আপনি তাকাচ্ছেন না যে আমার দিকে, মাথা নিচু করে আছেন কেন? তাকান !”

আরু কিছু বলছে না মাথা নিচু করেই আছে আগের মতো ৷

__” কি হলো তাকান !”

আরূর কোনো পরিবর্তন নেই , আরূ এবার মুখ ফুটে বলল,,,,
__” আপনার কি দরকার আছে তাড়াতাড়ি বললে আমার সুবিধা হয় ৷”

__” আচ্ছা , ম্যাডামের অনেক তাড়া দেখছি ৷ তা বিয়ের প্ল্যানিং চলছে বুঝি !”

__” আমার বিয়ের প্ল্যানিংটা আমি কিভাবে করছি সেটা কি আপনাকে জানাতে হবে ?”

__” ওকে সরি, ভেরি সরি ৷ সত্তিই তো তা কেনো আমাকে জানাতে যাবেন ! সে যাই হোক বিয়েতে ইনভাইট করলেন না তো , একা একাই বিয়েটা সেরে ফেলার ধান্দায় আছেন নাকি ? বিয়ের কার্ড এখনো পেলাম না তো !”

আরূ ভেবেছিল আরিশ অন্য কিছু বলবে তবে আরিশ যে এভাবে ওর কাছে ওর বিয়ের কার্ড চাইবে সেটা বুঝতে পারেনি ও , তাই রেগে গিয়ে বলল,,,,

__” যেচে নিমন্ত্রিত হতে চাইছেন?”

__” যদি বলি হ্যাঁ , আর বিয়েতে ইনভাইট না করলে তো আর বিয়ে করতে যাওয়া যায়না আইমিন কোন বিয়ের অনুষ্ঠানে যাওয়া যায় না সেটাই বলতে চাইছিলাম আরকি ৷”

রাগে-দুঃখে অভিমানে আরূর চোখের কোনে জল জমে এল , অশ্রু ভরা চোখে আরিশের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,
__” নিশ্চয় ইনভাইট করব , একদম নিশ্চিন্ত থাকবেন….আর হ্যাঁ আসবেন কিন্ত নাহলে কষ্ট পাবো ৷আর দোয়া করবেন যেন নতুন জীবনে সুখী হয় ৷”

__” আমিন !” (কথটা একটু টেনেই বলল)

আরূ চলে যেতে লাগল , চোখের কোনে জমে থাকা জলটা জামার হাতা দিয়ে কোনক্রমে মুছে নিল….
আরূ ক্রমশ দূরে চলে যাচ্ছে আরিসের নজর থেকে অনেক দূরে , দরজার শেষপ্রান্তে যেতেই আরু পিছন ঘুরে আরিশকে বলল,,,,,
__” আই হেট ইউ ৷”(জোঁরে চেচিয়ে বলল)

আরিশ শুধু মুচকি হাসছে….
_______

কথাগুলো ভাবছে আর আরুর মনটা ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যাচ্ছে,যাকে বিয়ে করে সংসার করতে চেয়েছিল আজ তাকেই নিজের বিয়েতে ইনভাইট করতে হবে এর থেকে কষ্টের আর কিছু হতে পারে না….

আরু অনেকক্ষণ ধরে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে, নিস্তব্ধ সম্পূর্ণ , ইনুও হয়তো এমন আরুকে এর আগে কখনো দেখিনি তাই এবার
জোরে জোরে চেঁচিয়ে বলল,,,,,,
__” আরু কথা বল, আরু কথা বল ৷”

আরু না পেরে এবার ফুঁপিয়ে ওঠে ইনুকে বলল ,,,,
__” সমস্যাটা কি তোর ? আমার নিস্তব্ধতা কি তো সহ্য হচ্ছে না ? এতদিন ধরে সবাই বলতো আমি খুব কথা বলি, খুব চঞ্চল , বেখেয়ালি ! এখন যখন সমস্ত বেখেয়ালিপনা, সমস্ত চঞ্চলতার স্বাধীনতাকে ছেড়ে দিয়ে যখন শান্ত হয়ে গেছি তখন কেন বিরক্ত করছিস আমাকে ? বুঝেছি তোর ও সবার আমার সাথে থাকতে ভালো লাগছে না তাই, তো তুইও চলে যা , আমি তো তোকে আটকে রেখেছি তাই না ! যা তুই মুক্ত ৷”
এই বলে আরুর ইনুর খাঁচার দরজা খুলে দিল ৷

খাঁচার দরজা খুলে দিয়েছে তবুও ইনু খাঁচা থেকে বার হচ্ছে না, ওউ হয়তো চায় আরূর দুঃখের শামিল হতে কিন্তু আজ ও নিজের সমস্ত কথা ভাষায় প্রকাশ করতে পারে না বলে হয়তো আরুও ওকে মুক্তি দিতে চাইছে ৷

ইনূ আরূর দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে খাঁচার অপর দিকে তাকিয়ে রইলো ৷

__” কিরে আরু মা এত চেচামেচি কিসের?”

আরূর মা বলতে বলতে আসলো,,,,,

আরু একবার ফুপিয়ে ফুপিয়ে বলতে লাগল,,,,
__” তুমিও চলে এসেছে? বুঝেছি তোমরা চাও না আমি একটু একা থাকি তাইনা….?”

__” তুই খামোখা আমার উপর রাগ দেখাচ্ছিস কেন ? আমি কি করলাম? আর কি হয়েছে বল!”

__” না তোমরা কিছুই বোঝোনা আর কিছুই করোনি, শুধু আমিই করি সব দোষ , আমি ৷”

আরুর মা এবার কেঁদে ফেললেন তা দেখে আরূর এবার নিজের মধ্যে অনুশোচনা হতে লাগল ,
নিজেকে ক্রমশ শান্ত করে বলল,,,,
__” না আই এম রিয়েলি সরি আম্মু , আমার মাথার ঠিক নাই ৷”

ঈনি আর কিছু না বলে কাদতে কাদতে বললেন,,,, __” আমিতো শুধু তোকে বলতে এসেছিলাম যে আজকে তোর বিয়ে বাড়িতে যাওয়ার দরকার নেই , ওখানে আরিশ ও যাবে গেলেই তোর মন খারাপ হবে ৷”

__” এখানে আরিশ আছে, ওখানে আরিশ আছে, এই ঢাকায় আরিশ আছে, এই পৃথিবীতে আরিশ আছে, সব জায়গায় তোমাদের আরিশ আছে ৷ আর এই আরিশের জন্য আমি পৃথিবী ছেড়ে দিই !”

আরূর কথা শুনে উনি আর সেখানে দাঁড়াতে পারলেন না, চলে গেলেন ওখান থেকে ৷ এই কদিনে মেয়েটার মধ্যে এত পরিবর্তন হয়েছে যে উনি উনার সারা জীবনেও দেখেননি ৷

চলবে,,,,,,,,

তোমার নেশায় আসক্ত ২ পর্ব-১৬+১৭

0

#তোমার_নেশায়_আসক্ত
#সিজন:2
#পর্ব:16
#Suraiya Aayat

তাড়াতাড়ি করে আরিশদের বাড়িতে থেকে ফিরে দৌড়ে নিজের রুমের দিকে গেল আরূ ৷ তাড়াতাড়ি করে ওয়াশ রুমে ঢুকেই হড়হড় করে বমি করে দিল , চোখ মুখ সব জ্বালা করছে , সমস্ত শরীর জুড়ে বিক্ষিপ্ত এক অনুভূতি হচ্ছে, দুর্বল দুর্বল লাগছে নিজেকে ৷
ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এসে কাঁপতে কাঁপতে ফ্লোরে বসে গেল আরু ৷
বাইরে ঘোর অন্ধকার , শীতের দিনের সন্ধ্যা তো সেই কারণে চারিদিকে ঘন কুয়াশা জমেছে ৷ ঘন কুয়াশার কিছু অংশ খুলে থাকা বেলকনির দরজা দিয়ে ঘরের ভিতরে এসে সমগ্র ঘরটা জুড়ে শীতল অনূভুতি জাগাচ্ছে ৷ ঠাণ্ডা ফ্লোরে বসে পড়ল আরু ৷ ক্রমে ক্রমে কেঁপে কেঁপে উঠছে আর অদ্ভুত এক বেদনায় জর্জরিত হচ্ছে ৷
হঠাৎ করেই হাউ হাউ করে কেঁদে দিল আরূ ৷ জীবনে প্রথম এমন এক অনুভূতি হচ্ছে যেখানে নিজেকে খুবই নিকৄষ্ট মনে হচ্ছে ৷এমনটা আগে কখনো হয়নি , আসলে সেইভাবে জীবনে কাউকে কখনো ভালোবাসার কথা ভাবেনি আরূ তাই হয়তো কষ্টটা আরো বেশি ৷

ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদতে কাদতে বলে উঠলো,,,,
__” আমি কি এতটাই খারাপ যে উনার পক্ষে আমাকে বিয়ে করো সম্ভব নয় ৷”
পরখনেই বলে উঠলো,,,,
__” না না এটা আমি কি বলছি , উনি তো অন্য কাউকে ভালোবাসেন ! কেন আমার সাথে এরকম হলো ? কেন উনি আমার জীবনে এলেন এবং ক্ষণিকের মধ্যে সমস্ত জীবনটাকে উথালপাথাল করে দিলেন ? আমি কি এতটাই খারাপ? আর যদি আমাকে ভালো নাই বাসেন তাহলে কেন বারবার আমাকে এতোটা নিজের কাছে টেনে নিয়েছেন , চাইলেই তো পারতেন আমাকে দূরে সরিয়ে দিতে তবে কেন এমন আবেগে জড়ালেন আমাকে ? কেন ?কেন ?কেন? কেন? আমার সাথেই কেন এমন হতে হল… আমার জীবনের গল্পটা অন্য হলেও তো পারতো !”

কথাগুলো বলছে আর অনবরত আরূর চোখ দিয়ে টপটপ করে জল গড়িয়ে পড়ছে, জীবনের এমন একটা পর্যায়ে এসে ও যেখানে নিজেকে গুছিয়ে নেওয়ার কথা ভেবেছিল, একজনের হাত ধরে চলতে চেয়েছিল আর যেদিন বুঝেছিল তার অনুভূতি টা সামান্য কোন অনুভূতি নয় এটা একটা ভালোবাসার অনুভূতি , যার কারণে দীর্ঘ এক সপ্তাহ ধরে নির্ঘুম রাত কাটিয়েছে , একজন কল্পনাবিলাসীর তালিকায় নিজের নাম লিখিয়েছে , আজ সব স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেল ৷

আরু কাঁদতে লাগল অনবরত ৷ চোখগুলো চোখ থেকে অনবরত জল গড়িয়ে পড়ছে টপটপ করে ৷ এমনভাবে কখনো কাঁদেনি ও…..

হঠাৎ দরজায় নক করতেই আরূর সমগ্র শরীর কেঁপে উঠল,,,,,,
__” আরু মা আমার , দরজা খোল ৷ দরজা বন্ধ করে কি করছিস তুই? দরজা খোল মা , দেখ আমি এসেছি , তোর সাথে কিছু কথা আছে আমার ৷ আম্মূ দরজাটা খোলো ৷”(কাঁদোকাদো গলায়)

আরু বুঝতে,পারলো ওর আম্মু চলে এসেছে, এবার নিজের মুখ চেপে কাঁদতে লাগল ও , এখন জোরে জোরে কাঁদতে পারবে না তাহলেই ওর আম্মু শুনে ফেলবে আর তখন উনিও ওর সাথে কষ্ট পাবে ৷ নিজেকে সামলাতে মুখটা চেপে রেখে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাদছে ৷ নিজেকে ক্রমাগত সামলানোর চেষ্টা করছে তবুও যেন পারছে না , কিন্তু ওকে যে পারতেই হবে , এতটা অধিকার নিয়ে যখন কান্না করতে পেরেছে তখন সেই অধিকার দিয়ে আবার কান্না থামাতেও পারবে ও ৷ তাড়াতাড়ি করে দৌড়ে ওয়াশরুমে গিয়ে চোখেমুখে জল দিল, নিজের মুখটা আয়নায় বারবার দেখছে তবুও যেন আগের মত স্বাভাবিক চেহারায় ফিরতে পারছেনা ৷ অনবরত চোখেমুখে জল দিয়েই চলেছে তবুও স্বাভাবিক হচ্ছে না দেখে আবার ফুঁপিয়ে কাঁদতে শুরু করল ৷

__”আমি কেনো পারছি না ! এবার আমি আম্মুকে কি বলবো? কি করে বোঝাবো যে আমি ওনাকে অনেক ভালবাসি , উনি যে আমার অদ্ভুত এক আসক্তি ৷”

পরমুহূর্তে আবার নিজের মনকে বোঝালো,,,,,
__” আরু তোকে যে পারতেই হবে, ইউ হ্যাভ টু ডু ইট ৷”

আরু বেশ কিছুক্ষন সময় নিয়ে নিজেকে কোনক্রমে সামলে বেরিয়ে এলো, তবে মুখে একটা মিথ্যা হাসি নিয়ে ৷ মুখে হাসিটা এনে আয়নাতে মুখটা একবার দেখে নিল ৷
এমনটা হয়তো আগে কখনও করার প্রয়োজন হয়নি ওর ৷ ভালোবাসা ওর জীবন টাকে সম্পূর্ণ পরিবর্তন করে দিয়েছে….

আরু দরজাটা খুলে নিয়ে শান্ত হয়ে ধীর পায়ে বিছানায় বসলো,,,,
মাথাটা নীচু করে আছে , মাথাটা উঁচু করে তোলার ক্ষমতা ওর নেই , ওর চোখ মুখ দেখলেই ওর আম্মু বুঝতে পারবে যে এতক্ষণ ধরে কান্না করেছে তখন আবার হাজারো প্রশ্ন করবে আর সেগুলোর সম্মুখীন হওয়ার ক্ষমতাটুকু আরুর মাঝে আর নেই , সবচেয়ে বড় কথা হলো কি উত্তর দেবে সেটাই ওর জানা নেই ৷

আরুর মা রূমে ঢুকে তাড়াতাড়ি করে আরূর পাশে গিয়ে বসলেন , তারপর আরূর মুখে হাত রেখে বললেন,,,,,

__”দেখ মা যা হয়েছে ভুলে যা , আমাদেরই ভুল এইভাবে আগে থেকে তোদের বিয়েটা ঠিক করা ৷ আর এটাতো ঠিক তাই না যে একজনের অনুভূতিটা কোনভাবেই পাল্টানো যায় না , আমি যদি জানতাম যে এরকম দিনের মুখোমুখি হতে হবে তো কখনই এমনটা করতাম না ৷ কেবলমাত্র স্বপ্ন দেখেছি, স্বপ্ন যে আগে কখনো বাস্তবে পরিণত হবে কি সেটা নিয়ে কোনো রকম কোনো সংশয় রাখিনি কখনো, সেই জন্যই হয়তো আজ এরকম দিন দেখতে হলো ৷ “(উনিও কাঁদো কাঁদো গলায় বললেন ৷ উনিও মন থেকে প্রচন্ড ভেঙে পড়েছেন ৷ যখন থেকে আরূ আর আরিশ স্বাভাবিক জ্ঞান বুদ্ধি সম্পন্ন হয়েছে তখন থেকে ওদের বিয়েটা নিয়ে কত স্বপ্ন দেখেছে দুই পরিবার, তখন এটা ভাবেনি যে পরে কি হতে পারে ৷

আরু ক্রমশ নিজেকে স্বাভাবিক করে বলল,,,,,
__” আমি কিছু মনে করিনি আম্মু , আমার তো শরীর খারাপ লাগছিল বলে আমি চলে এলাম , আর এগুলো হতেই পারে, ইটস নরমাল ৷ আর তুমি কি ভাবলে আমি ওনাকে পছন্দ করি? একদম নয় ,আমি তো ওনাকে দু’চোখে সহ্য করতে পারি না , ওনার সাথে যে কত ঝামেলা করি তার ঠিক নেই, আর উনি যা করেছেন ঠিক করেছেন , বেশ করেছেন , আমি কারোর যগ্্যই নই ৷”
কথাটা বলে আরু আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না, ও ওর মাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগল হাউহাউ করে ৷ ওর কান্না দেখে ওর মাও ক্রমাগত কাদছেন ৷ উনি এটা ভেবেই কষ্ট পাচ্ছেন যে যখন ওনার মেয়েটা ভালোবাসা আবেগ এই সমস্ত জিনিস গুলো কে বুঝতে শিখেছে তখনই ওর ভালোবাসায় ব্যর্থতার ছাপ ৷ উনি নিজেকে আর ঠিক রাখতে পারছেন না ৷

__” তুই কাঁদিস না, দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে, তুই চিন্তা করিস না…..”

আরু কাঁদতে কাঁদতে ওর আম্মুকে বলল,,,,,
__” আম্মু তুমি এ কথাটা বাপিকে জানিও না তাহলে বাপি খুব কষ্ট পাবে আর ভেঙে পড়বে , আমি চাইনা আমার কারণে কেউ কষ্ট পাক ৷”

_”তোর কারনে কিছুই নয়, যা হয়েছে সব আমাদের কারনেই হয়েছে , আমাদের ব্যাপারটা নিয়ে ভাবা উচিত ছিল ৷”

আরু আর কিছু বলছে না ,বলার আর কোন ভাষাও নেই ওর ৷ কেবলই কেদেই চলেছে ৷ এরপরে ওর জীবনে কি ঘটতে চলেছে হয়তো তার নিয়ন্ত্রণ আর ওর নিজের মধ্যেই নেই , হয়তো বিতৃষ্ণা চলে এসেছে নিজের প্রতি ৷ একটা মানুষ ওর জীবনে এসে ওর জীবনটাকে এভাবে পাল্টে দেবে সেটা ও কখনো ভাবেনি….

🧡

__” কি হয়েছে তোমার আম্মু? তুমি এমন করছ কেন? আর আমার মনে যেটা আছে আমি সেটাই বলেছি, আমি ওনাকে বিয়ে করে মনে মনে অন্য একজনকে ভালোবাসতাম সেটা কি উনার প্রতি অন্যায় হতোনা তুমি বলো ?”

__” তোর সাথে আমার কোন কথা নেই, তুই বেরিয়ে যা ৷ আর এক মুহূর্তও আমার চোখের সামনে থাকবি না , বেরিয়ে যা….”

__” কিন্তু তুমি আমার অবস্থাটা বোঝার চেষ্টা করছো না !”

__” বললাম না তুই চলে যা ৷”

কথাটা শোনামাত্র আরিশ আর একমুহূর্তও দাঁড়ালো না বেরিয়ে গেল ৷ ও জানে ওর আম্মুর এখন মাথার ঠিক নেই যা বলবে তাতেই রেগে যাবে , তাই আর বেশি কথা বাড়ালোনা আরিশ , যা হয় পরে দেখা যাবে ৷

🧡

কালকের অনেক কান্নাকাটি করার পর রাত্রে অত্যন্ত মাথা ব্যাথা করছিল আরুর তারপর ঘুমানোর পর ঠিক হয়েছে ৷ সকালবেলা উঠেও মাথাটা কেমন ঝিমঝিম করছে ৷
__”কালকের ঘটনাটার পর অনিকা খান ফোন করে অনেক বার ক্ষমা চেয়েছেন ওনার ছেলের কার্যকলাপের জন্য, তবুও উনার যে কোন দোষ নেই , উনি নিজের মনের কথাটাই জানিয়েছেন , সত্যি উনি যাকে ভালোবাসেন সে সত্যিই অনেক লাকি ৷”

কথাটা বলে মিথ্যা একটা হাসি দিয়ে ওয়াসরুমে যেতে গেলেই ওর ফোনটা বেজে উঠল ৷
আজকের দিনটা যদি অন্যরকম হতো তাহলে হয়তো কালকেই আরিশকে নিজের ভালবাসার কথাটা জানিয়ে দিত আর ফোনটা হয়তো এখন আরিসের ই হতো আর আরুও তখন ব্যস্ততা নিয়ে নিজেও ছুটে যেত ফোনটা ধরার জন্য ৷ কিন্তু তেমনটা তো চাইলেও আর হওয়ার নই ৷ধীরপায়ে গিয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখল সানা কল করেছে , মুচকি একটা হাসি দিয়ে ফোনটা ধরতেই সানা বলে উঠলো,,,,,,

__” আর ইউ ওকে আরূ?”

__”ইয়াহ, আই এম ফাইন, আমার আবার কি হবে!”

__” নাহ মানে কালকে যেটা হলো সেটার জন্যই বলছি ৷”
__” আরে আমি কিছু মনে করিনি , এটাই নরমাল ৷ আর আমিতো জানি আমি কারো যোগ্য নয় সেই কারণেই হয়তো এমনটা,,,,,,,,
সে সব কথা বাদ দে , তুই আজকে ভার্সিটি যাচ্ছিস তো?”

__” আমি তো সেটা জানার জন্যই তোকে ফোন করেছিলাম ৷”( মনমরা হয়ে )আমি ভাবলাম তুই হয়তো যাবি না ৷”

__” হাস, আমিতো যাবোই আর তুইও যাবি ,না গেলে মার দিবো তোকে ৷”

__” আচ্ছা যাব ৷”

__” তাহলে ভার্সিটিতে দেখা হচ্ছে ৷ আর আন্টিকে বলিস যেনো ব্যাপারটা নিয়ে মন খারাপ না করে , আর ওনার উডবি বৌমার জন্য যেন সমস্ত ভালোবাসা তুলে রাখে যেগুলো এতদিন আমার জন্য রেখেছিলেন ৷ আর আরিশ ভাইয়ার উপর যেনো রাগ করে না থাকেন ৷”

__” আম্মু কথাটা মেনে নিতে পারছে না ৷”

কথাটা শুনে আরু একটা দীর্ঘশ্বাস নিল তার সাথে চোখ থেকে এক ফোঁটা জল ও গড়িয়ে পড়লো ৷

🧡

আরু ওর মায়ের সাথে কথা অনেক কাটাকাটি করে, অনেক আবেগের যুদ্ধ করে তারপর আজকে ভার্সিটিতে এসেছে ৷ উনি আরুকে বারবার আসতে বারণ করেছিলেন কারণ কালকে যা হয়েছে তারপরে আরূ অনেকটা অসুস্থ হয়ে গেছে , একদিনেই আরুর চোখ মুখ আর চেহারার পরিবর্তন ঘটে গেছে তা যে কেউ দেখলেই বুঝতে পারবে…..

ভার্সিটিতে এসে ভার্সিটির মাঠে সবুজ ঘাসের উপরে একমনে চুপচাপ বসে আছে আরু , সানা আর তিথি এখনো আসেনি ৷ অন্য দিন হলে হয়তো এতখন চুপচাপ না থেকে ফোনটা বার করে কার্টুন দেখতে আরম্ভ করে দিতো আরূ, কিন্ত অন্যদিনের তুলনায় আজকের দিনের পার্থক্যটা অনেক বেশি, অনেকটাই বেশি ৷ নিজেকে অনেকটাই পরিবর্তনশীল লাগছে ওর, এত নিরবতার মাঝে নিজেকে কখনো অনুভব করেনি ৷ ওর কাছে এখন মনে হচ্ছে সমগ্র পৃথিবীটাই যেনো নিরব কিন্তু এটা যে ভুল ধারণা ! সারা পৃথিবী চলমান থাকলেও নিস্তব্ধ হয়ে গেছে কেবল ও নিজেই , আর তা ও বুঝতে পারছে কিন্তু স্বীকার করছে না , স্বীকার করলেই যে দুর্বল হয়ে পড়বে, আর তা হলে কখনোই ওর পক্ষে আরিশকে ভোলা সম্ভবপর হয়ে উঠবে না……

হঠাৎ পিছন থেকে একটা পুরুষালী কন্ঠস্বর পেয়ে সামান্য কেঁপে উঠলো আরু ৷ আরিশের গলার আওয়াজ না হলেও অন্য কোন একজন ছেলে যে ওকে ডাকছে এখন সেটা ও ভালোই বুঝতে পারছে৷ পিছনে ঘুরে তাকিয়ে দেখল একটা ছেলে দুই হাত পিছনে রেখে দাঁড়িয়ে আছে ৷ তাকে দেখে তৎক্ষণাৎ তারাতারি উঠে দাঁড়ালো আরূ ৷

আরূ উঠে দাঁড়াতেই ছেলেটা আমতা আমতা করে বলল,,,,,,
__” একচুয়ালি আমার তোমার সাথে কিছু কথা আছে, সেটা বলার জন্য তোমাকে ডাকলাম ৷

__” হমম ভাইয়া বলুন কি বলবেন ৷”

ছেলেটা এবার পিছন থেকে হাত দুটো সামনে এনে হাতে থাকা গোলাপ ফুলটা আরুর দিকে ধরল ৷

__” আই লাভ ইউ এন্ড আই ওয়ান্ট টু ম্যারি ইউ ৷ উইল ইউ ম্যারি মি ৷(একনাগাড়ে কথা গুলো বলে ফেলল)

হঠাৎ করে এমন কিছু যে হবে সেটা ও ভেবে উঠতে পারেনি , আর এত কিছু কিভাবে হলো কিছুই বুঝতে পারছে না আরু ৷ ছেলেটাকে না ও কখনো দেখেছে আর না ওকে চেনে , ইভেন ভার্সিটিতেও কখনো দেখিনি আরু তাকে ৷ তবে অন্যদিন হলে হয়তো আরু এখনই গোটা কতক চড় বসিয়ে দিত তার গালে তবে এখন পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন, তাই শান্ত স্বরে বললল,,,,,,

__” ভাইয়া আপনি এসব কি বলছেন? আর আমি আপনাকে চিনিও না, কিভাবে কি ?”

__” তুমি আমাকে চিনবে না এটাই স্বাভাবিক কিন্তু আমি তোমাকে চিনি প্রায় 2 মাস ধরে, এতদিন তোমাকে ফলো করেছি আর তোমাকে খুব ভালো লেগেছে , তাই আজকে অনেক সাহস নিয়ে বলতে এসেছি ,তাই প্লিজ না করোনা ৷”

আরু আর কিছু বলতে যাবে তখন হঠাৎই দেখল ভার্সিটির গেট দিয়ে আরিশ আর প্রান্ত ঢুকছে ৷

ওরা দু’জনই আরুর দিকে তাকিয়ে আছে ৷ আরুর নজর আরিশের দিকে আর আরিশের ও ৷আরিশকে দেখে কালকের সমস্ত কথা আবার মনে পড়ে গেল আরুর ৷ পুরনো কথাগুলো আবার যেন দগদগ করে উঠতে লাগলো আবার , তাই সামান্য আরিশের প্রতি রাগ আর অভিমান নিয়ে আরিসের থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটার কাছ থেকে ফুলটা নিয়ে নিল, তারপরে সামান্য জোরেই বলল,,,,,
__” আমিও আপনাকে বিয়ে করতে চাই….”

__” সত্যি !”

__” হমমম ৷”

__” থ্যাঙ্কস আ লট , তুমি এত তাড়াতাড়ি আমাকে মেনে নেবে আমি সেটা কখনো ভাবি নি , বাই দ্যা ওয়ে আমি আশফি ৷”

__” আমি আপনাকে বিয়ে করতে চাই খুব তাড়াতাড়ি আই মিন এক সপ্তাহের মধ্যেই তাই আমি চাই আপনি আজকেই আমার বাড়িতে গিয়ে আমার বাড়ির লোকের সাথে কথা বলবেন বিয়ের ব্যাপারে ৷”

__” সিউর ৷ আমিতো তোমাকে বিয়ে করতেই চাই তাই যত তাড়াতাড়ি হোক ততই ভালো তবে কালকে গেলে তুমি কি রাগ করবে?”

__” আপনার প্রতি রাগ করলে আমার চলবে না, ভালোবাসা দিয়ে সবটা শুরূ করতে হবে তাই যত তাড়াতাড়ি পারেন তত ভালো হয় ৷”( আরিশকে শুনিয়ে)

কথাগুলো প্রান্তর কান অবধি পৌছালো তবে খুব একটা হজম হলো না তাই তাড়াতাড়ি করে ওদের সামনে এগিয়ে গেলো আরিশ আর প্রান্ত ৷ দুজনে এগিয়ে আসতেই আরু আর আশফি দুজন সামনের দিকে তাকালো….

প্রান্ত সামনে আরিশের পিছনে দাঁড়িয়ে আছে , পকেটে হাত রেখে দেখছে যা যা হচ্ছে ৷ ওকে এখন দেখে মনে হচ্ছে যে ওর থেকে নিশ্চিত আর কুল মানুষ এই পৃথিবীতে নেই, টর্নেডো ঝড় ওর ওপর দিয়ে গেলেও ও স্বাভাবিক অবস্থায় থাকবে, পুরো চিল মুডে আছে ৷

__” তোমরা কি খুব বিজি? আসলে একটা দরকার ছিল ৷”(প্রান্ত)

আশফি আরূর দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,
__” উনাকে তো ঠিক চিনলাম না, কে উনি?”

আরু আশফির কথার উত্তর না দিয়ে প্রান্তকে বলে উঠলো,,,,,
__” জ্বী ভাইয়া ৷ আপনি কি কিছু বলবেন , মানে জরুরী কিছু?”

__”হ্যাঁ দরকারি কিছুই ৷”
কথাটা বলে প্রান্ত ওর হাতে থাকা কার্ডটা আরুর হাতে দিল ৷
__” পরশুদিন আমার বিয়ে, তুমি এসো প্লিজ ৷ বিয়ের প্রথম কার্ড এটা , তোমাকেই দিলাম ছোট বোন মনে করে ৷ এসো কিন্তু ভালো লাগবে আসলে…..”

__” প্রথম কার্ডটা আমাকে দিলেন ! বেশ ভালো , তবে আমাকে একা দিলেন যে আমার উডবিকে দেবেন না?”

প্রান্ত অবাক চোখে তাকিয়ে বলল,,,,,,
__” তোমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে?”

__” হ্যাঁ ভাইয়া আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই আমাদের বিয়ে ৷ দোঁয়া করবেন ৷”

প্রান্ত এবার হতভম্ব হয়ে আর খানিকটা রাগী চোখে পিছন ঘুরে আরিশের দিকে তাকালো, আরিশ এখনো আগের মতই ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে,
ওর হাবভাব দেখে কিছুই বুঝতে না পেরে আরূর দিকে তাকিয়ে মিথ্যা একটা হাসি দিয়ে বলল,,,,,,
__” আসলে সরি আমি জানতাম না তো তাই ৷ বাই দ্যা ওয়ে তুমিও এসো আশফির কাঁধে হাত রেখে ৷”

__” নিশ্চয়ই যাবো ভাইয়া , ভালো লাগলো আপনাদের সাথে পরিচয় হয়ে ৷”

__” আসবেন কিন্তু , আমার খুব ভালো লাগবে আপনারা বিয়েতে আসলে ৷”

__” নিশ্চয়ই যাবো , আপনার যখন এত কষ্ট করে ইনভাইট করেছেন তখন তো যেতেই হয় ৷”

প্রান্ত আর দাঁড়ালোনা, আরিশের দিকে সামান্য রাগী চোখে তাকিয়ে চলে গেলো ৷

আরিশ যেতে গিয়ে আবার পিছন ঘুরে আরুকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,

__” মিস আরুশি যা করার একটু তাড়াতাড়ি করবেন,আমার আবার ধৈর্য জিনিসটা কম বেশিদিন ওয়েট করতে পারিনা ৷ ”

আরু হতভম্ব হয়ে রইল আরিসের কথাটা শুনে ৷ ও কিছুই বুঝল না আরিশের কথার মানে টা ৷

চলবে,,,,,,,

#তোমার_নেশায়_আসক্ত
#সিজন:2
#পর্ব:17
#Suraiya_Aayat

ভার্সিটি থেকে বাড়ি এসে আরূ রুমে বসে আছে, বিছানার উপর বসে দুহাত দিয়ে বিছানার চাদরটা কে শক্ত করে মুঠি করে ধরে আছে , সারা শরীর জুড়ে অস্থিরতা বিরাজমান , এই শীতেও দরদর করে ঘামছে আর বারবার কেবল মনে পড়ছে পুরনো স্মৃতিগুলো ৷ কেন ভুলতে পারছেনা আরিশকে ! ওকে তো ভুলতেই হবে ৷ জেদের বশে নিজের জীবনের এত বড় একটা সিদ্ধান্ত কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই নিয়ে ফেলেছে ও ৷ যাকে চেনে না, জানে না , সে কি করে, কোথায় থাকে , তার সম্পর্কে কোন বিন্দুমাত্র হিতাহিত ধারনা টুকুও আরূর নেই, এমনকি যখন বিয়েতে হূট করে রাজি হয়ে গেল তখন নামটাও যানতো না , সেই পরিস্থিতিতে আসফির সঙ্গে বিয়েতে রাজী হয়ে গেছে আরু ৷ আসলে ওর আরিশকে দেখে যেন মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছিলে তাই সেই মুহূর্তে মাথায় যেটা এসেছে সেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে ও ৷
মানুষ সবসময় বলে যে আবেগের বশে কোন কাজ করলে পরে সেই ব্যাপারটা নিয়ে রিগ্রেট করতে হয় কথাটা যেন আজকে আরু বেশ ভালই উপলব্ধি করতে পারছে, আর তার সত্যতা টা বুঝতে পারছে…

ভার্সিটি থেকে আসার সময় আসফি খানিকটা জোর করেই আরুর কাছ থেকে ওর ফোন নাম্বার টা নিয়েছে , যদিও বা আরূর দেওয়ার কোনো ইচ্ছা ছিল না তবুও অনেকটা বাধ্য হয়েই ওকে দিতে হয়েছে , যতই হোক আরিশের সামনে আসফিকে নিজের উডবি বলে পরিচয় দিয়েছে এমনকি এক সপ্তাহের মধ্যে বিয়ে করবে বলেও জানিয়েছে , আর কথাটা যখন বলেছে ওকে রাখতেই হবে তাই সামান্য কিন্তু কিন্তু করে হলেও নাম্বারটা ওকে দিতে হলো আশফিকে ৷

আরু বাড়ি পৌঁছাতেই আসফি কল করেছে এটা জানতে যে ও ঠিকমতো বাড়ি পৌঁছেছে কি না , তারপরে আশফির নাম্বারটা সেভ করারো প্রয়োজন বোধ করেনি আরূ….

আরিসের বলা শেষের কথাটার অর্থ এখনো উদ্ধার করে উঠতে পারল না, কি বোঝাতে চাইল সেটাও বুঝলো না ৷

__” উনি কি বুঝাতে চেয়েছেন সেটা আমার ভেবে কি লাভ , কোন দরকার নেই আমার জানার বা বুঝার ,উনি যদি নিজের মানুষ ভালোবাসার মানুষকে বিয়ে করতে পারেন আর আমাকে প্রত্যাখ্যান করতে পারেন তাহলে আমি কেন পারিনা !”
আরূ আর কোনরকম দেরি না করে তাড়াতাড়ি রুম থেকে বেরিয়ে গিয়ে ওর আব্বু আম্মুর রুমে গেল….

শীতের দিন তাই সন্ধ্যাটা তাড়াতাড়ি হয়ে যায়, ভার্সিটিতে পাঁচটা অবধি ক্লাস করে বাড়ি আসতে আসতে অলরেডি চারিদিকে অন্ধকার নেমে আসে তাই এই মুহূর্তে ওনারা দুজন ওনাদের নিজেদের রুমে থাকবে এটাই স্বাভাবিক ৷

দুজনে রুমে বসে কোন একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করছেন সেই মুহূর্তে আরূ গিয়ে পৌঁছল…

আরমান সাহেব সামান্য চমকে উঠলেন আরূর উপস্থিতিতে ৷ উনারা এতক্ষণ আরুকে নিয়ে কথা বলছিলেন ৷ এরপর ওর জীবনে কি হবে তা কিছুই উনারা জানেন না, সে নিয়ে খুবই চিন্তিত না ওনারা , তাছাড়া এত বড় একটা আঘাত মেয়েটা একা মুখ বুজে সহ্য করে যাচ্ছে কাউকে কিছু বলছে না এতে ওর যে কষ্ট হচ্ছে তা উপলব্ধি করার ক্ষমতা টুকু উনাদের আছে ৷

__” আরু মামনি তুমি কি কিছু বলবে?”

আরূ গিয়ে ওর আব্বুর পাশে গিয়ে বসল মাথা নিচু করে তারপরে কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,,,,,
__” আমি বিয়ে করতে চাই বাপি ৷”

কথাটা শুনে ওনারা দুজন বেশ অবাক হলেন তা তাদের মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে ৷

আরূর মা আমতা আমতা করে বললেন,,,,
__” এসব তুই কি বলছিস মা !”

আরূ এবার রেগে গেল তারপরে সামান্য চেঁচিয়ে বলল ,,,,,,
__” কেন বিয়ে করাটা কি অন্যায়ের নাকি অপরাধের কোনটা যে আমি বিয়ে করতে পারব না বা আমি বিয়ে করার কথা বললে সেটা ভুল যে তোমরা বিশ্বাস করতে পারছ না ৷ নিজেরা তো আমার বিয়ে দেওয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগে ছিলে এবার আমি যখন নিজে বিয়ে করার কথা জানাচ্ছি তাহলে প্রশ্নবোধক চিহ্ন টা কেন আসছে? কেন নিজের জীবনটাকে নিজের মতো করে উপভোগ করতে পারব না আমি? সারাজীবন তোমাদের কথা শুনে চলে এসেছি আর তোমরা যে সব সময় যে সিদ্ধান্তটা নেবে সেটাই সব সময় ঠিক হবে তার কোনো মানে হয় না, আমার কথার ও তো একটা গুরুত্ব থাকা দরকার তাই নয় কি ? ”
(একনাগাড়ে কথাগুলো বলে দিলো আর এখন মনের মাঝে যা আসছে সেটাই বলে দিচ্ছে ও , কোন রকম কোন দ্বিধা ছাড়াই ৷)

__” আসলে আমি সেভাবে বলতে চাইনি রে মা , হঠাৎ করে এত বড় একটা সিদ্ধান্ত নিচ্ছিস তো সেই জন্যই বললাম ৷”

আরমান সাহেব আরূর মা কে থামিয়ে দিয়ে বলতে আরুর মাথায় হাত বুলাতে লাগলেন,,, ,
__” তোর কি কাউকে পছন্দ?

__” হ্যাঁ বাপী , আমার একজনকে পছন্দ আর আমি তাকে বিয়ে করতে চাই আর সেটা খুব তাড়াতাড়ি পারলে এই এক সপ্তাহের মধ্যেই ৷”

কথাটা শুনে আরমান সাহেবের মুখে কিঞ্চিৎ হাসি ফুটে উঠল আর একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন উনি ৷উনি আরূর কথাটা বিশ্বাস করেছেন কারণ আরূর কথা মতো আরূর মা আরূর বাবাকে কথাটা জানায় নি যে ও আরিশকে কতকা ভালোবাসে আর কতটা আরিশকে চাই ৷

__” তুই যা বলছিস তাই হবে মা ৷তবে ছেলেটাকে আমাদের সাথে এখনো পরিচয় করালি না তো ৷”

__” উনার নাম আসফি রহমান , উনি একজন ইঞ্জিনিয়ার , উত্তরাতে উনার বাড়ি, আশা করি তোমাদের কোনো আপত্তি থাকবেনা ৷”

__” এটা আর বলতে বাকি রাখে না মা ৷”

__” তাহলে বিয়েটা তাড়াতাড়ি ঠিক করো আমি ওনাকে কালকে আসতে বলেছি….”

কথটা বলে আরু নিজের রুমে চলে গেল….

আরুর মা আরুর ববার সামনে মুখে মিথ্যা হাসি ফোটালেন কারন উনি তো জানেন যে ওনার মেয়ে কতটা ভালবাসেন আরিশকে , তাই আরূ যে জোর করেই বিয়েটা করছে আরিশকে ভোলার জন্য বাধ্য হয়ে তা উনি বেশ ভালোই বুঝতে পারছেন ৷ তবে এভাবে কি ভালো থাকা সম্ভব ? এভাবে কি একসাথে দুটো মনের বলিদান দেওয়া নই ?

আরমান সাহেব ঘুমিয়ে পড়তেই আরুর মা ফোনটা নিয়ে বেরিয়ে এলেন রুম থেকে , রাত প্রায় 11:00 প্রায় ৷ এতক্ষণ আরমান সাহেব ওনার সাথে কথা বলছিলেন আর তাছাড়া এই মুহূর্তে কোথাটা শোনা মাএই অনিকা খানকে ফোন করলে উনি হয়তো রাগ করতেন তাই উনি এতখন অপেক্ষা করছিলেন আরমান সাহেবের ঘুমানোর ৷

বেশ কয়েকবার রিং হলেও ফোনটা কেউ ধরল না দেখে উনি মনে মনে ভাবলেন,,,,
__” এত রাত্রে হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছে তাই সকালেই কথাটা জানাবো, বলে উনিও ঘুমিয়ে পড়লেন….”

__” হ্যাঁ আপনি কোথায়?”

__” আমি তো তোমাদের বাসার সামনে দাঁড়িয়ে আছি প্রায় কুড়ি মিনিট ধরে ৷”

আরু মনে মনে,,,,,
__” বলদ একটা ৷”

__” কুড়ি মিনিট ধরে কেন দাঁড়িয়ে আছেন, আমাকে ফোন করতে পারেননি?”

__” তোমার ফোনে আমি অন্তত 35 বার মিসড কল দিয়েছি কিন্তু তুমি ফোনটা ধরোনি তাই আরকি ৷”

আরু এবার ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখল 37 টা মিসডকল , অবাক হয়ে নিয়ে আবার ফোনটা কানে নিয়ে সামান্য মিষ্টি সুরে বলল,,,,,
__” আসলে আমি ব্যস্ত ছিলাম ৷ আপনি ভিতরে আসুন, আমার আব্বু আম্মু দুজনেই বাসায় রয়েছে…”

__” আচ্ছা আমি আসছি কিন্তু আমার না কেমন ভয় ভয় লাগছে ৷”

আরূর ইচ্ছা করছে এখন আশফিকে স্টুপিড, গাধা, গরু সবকিছু বলতে কিন্তু তবুও নিজেকে সংযত করে নিয়ে বললো,,,,
__” বেশী কথা না বলে তাড়াতাড়ি আসুন ৷”

____________❤

আসফি আর আরমান সাহেব অনেকক্ষণ ধরে ওদের বিয়ে নিয়ে আলোচনা করলেন ৷ আশফিকে ওনার বেশ পছন্দ হয়েছে ৷
__” আঙ্কেল আমার বাবা-মা চিটাগং থাকেন তাই উনারা বিয়ের দিন উপস্থিত হবেন ৷”

__” কোন সমস্যা নেই বাবা , তবে আজকে তোমাদের ইংগেজমেন্ট হয়ে গেলে ভালো হতো নয় কি !”

__” না না আমাকে আজকে না , হলুদের দিন এঙ্গেজমেন্ট টা হলেই ভাল হয় ৷”

__” আচ্ছা ঠিক আছে…..”

__” তার মানে আগামী 28 শে ডিসেম্বর তোমাদের বিয়ে ৷”

__” হমম আঙকেল ৷”

আসফি বাড়ি চলে যেতেই আরূর মা অনিকা খানকে ফোন করতেই ফোনটা সুইচ অফ বললো….
উনি যেন সব আশাভরসা হারিয়ে ফেললেন ,উনা এখনো হাল ছাড়েননি , কেন জানিনা উনার বারবার মনে হচ্ছে যে হয়তো ভালো কিছু হলেও হতে পারে কিন্তু তেমনটা তো কিছুই হচ্ছে না দেখে উনি বার বার আশা হারিয়ে ফেলেছেন ৷

আরও কিছুক্ষণ পর ফোন করতে উনি ফোনটা ধরলেন ৷

__” কিরে তোকে কতক্ষণ ধরে ফোন করছি তুই জানিস ? আমার আরূর বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে, কিছু একটা কর না , আমি এখনো আশা ছাড়িনি কিছু হলেও হতে পারে আরিশকে বুঝিয়ে ৷”

উনি জানেন যে এরকমটা সম্ভব নয় , একটা মানুষের অনুভূতিকে কখনোই পরিবর্তন করা সম্ভব নয়, আর তার ওপর বিয়ের মত একটা সম্পর্ক তো অনেক বড় ব্যাপার , তবুও সান্ত্বনা দিচ্ছেন নিজের মনকে যে আরিশকে বললে যদি আরিশ মেনে যায় , তাই কোন কিছুই বলতেই উনি ছাড়ছেন না ৷

__” এটা কি বলছিস আরু মামনির বিয়ে? মানে হঠাৎ করে এক দিনের মধ্যে কিভাবে কি?”

এর পরে উনি অনিকা খানকে সবটা বললেন প্রথম থেকে,,,,,

__” আমি আমার ছেলেকে বোঝাবো ,নিজের সাধ্যের বাইরে চেষ্টা করবো , তবুও আরূ মামনি কে হারাতে পারবো না আমরা ৷”

বলে উনি ফোনটা কেটে দিলেন, তাড়াতাড়ি করে এখন বাড়ি থেকে বের হচ্ছেন আরিশের কাছে যাবেন তাই ৷
উনাকে এমন হুড়মুড়িয়ে তাড়াহুড়ো করে বেরোতে দেখে সানা জিজ্ঞাসা করল,,,,,

__” আম্মু তুমি কোথায় যাচ্ছ?”

__” তোর ভাইয়ার কাছে, আজ ওর একদিন কি আমার একদিন….সবকিছুর আজকে একটা বোঝাপড়া হবে, এভাবে আর চলবে না ৷”

পড়ন্ত বিকালের কমলা আভার সূর্যের কিরন আরিশের ব্যালকনির সাদা পর্দা ভেদ করে গোটা ঘরকে অদ্ভুত এক রঙে রাঙিয়ে তুলেছে ৷

হাতে থাকা ক্যাকটাসটা নিয়ে ঘরের একদিকের দেওয়ালে যেখানে 19 টা ক্যাকটাসের সমাহার আর 1 টা রাখলেই ফাঁকা জায়গাটি পূরন হবে তাতে আলতো করে রেখে দিলো ওর কালেকশানের শেষ ক্যাকটাসটি ৷

__” কথা দিয়েছিলাম যে সঠিক সময়ে জায়গাটা পূরন করবো, আমি আমার কথা রেখেছি ৷ ”

কথাটা বলে বিছানার ওপরে থাকা গিটারটা নিয়ে ব্যালকনিতে থাকা বিন ব্যাগটায় বেশ আয়েশ করেই বসলো আরিশ,,,,,,
শুকনো কন্ঠে গানটা ধরলো,,,,,,

আমার সকল আভিযোগে তুমি,,,,,
তোমার মুখের মিষ্টি হাসিটা কি আমি,,,,
আমার না বলা কথার ভাজে
তোমার গানের কতো সুর ভাসে
তোমার নিয়ে আমার লেখা গানে
অযথা কতো স্বপ্ন বোনা আছে
আমার হাতের আঙুলের ভাজে
তোমাকে নিয়ে কতো কাব্য রটে হে
ভুলিনিতো আমি ,তোমার মুখে হাসি,
আমার গাওয়া গানে তোমাকে ভালোবাসি
আসো আবারো কাছে
হাতটা দিয়ে পাশে
তোমায় নিয়ে যাবো আমার পৄথিবীতে…..
এ হে,,,,,,,,এএএএএএ
এই পৄথিবীতে,,, ওহো হো !”

আরিসের গান শুনে যেন প্রকৃতি ও যেনো আরিশের গানের সুরে আসক্ত হয়ে যায় , এতোটা মধুর কন্ঠে গানটা ও গায় যে যে কেউ ওর গানের প্রতি আসক্ত হতে বাধ্য যেমনটা আরুও হয়েছিল ৷ তবে সমগ্র আরিশ মানুষটাই আরুর কাছে এক প্রকার আসক্তি ৷ আর একটা মানুষের প্রতি আসক্তি চাইলেই কি কমানো যায় ? হয়তো বা নয় !

গানটা শেষ হতেই ফোনের রিংটোন টা বেজে উঠতেই আরিশ প্যান্টের পকেট থেকে ফোনটা বার করে নিয়ে কানে ধরতেই অপর পাশ থেকে অত্যন্ত উত্তেজিত হয়ে প্রান্ত বলে উঠল ,,,,,,
__” আন্টির তোর রুমে যাচ্ছে, আমি কোন ভাবেই আটকাতে পারলাম না আন্টিকে , জানি না এরপর কি হবে !

__” আসতে দে ৷”(মুচকি হেসে)
বলে ফোনটা কেটে দিল আরিশ ৷
একটা মিস্ট্রিয়াস স্মাইল দিয়ে বেলকনির রেলিং ধরে তাকিয়ে রইল বাইরের দিকে…..

__” আরিশ কোথায় কোথায় তুই ? আজ তোকে আমার প্রশ্নের জবাব দিতেই হবে, তোকে আমার কথা মানতেই হবে সে তুই চাস আর না চাস ৷”
কথাটা বলে উনি হুড়মুড় করে আরিশের রুমে ঢুকে গেলেন, এর আগে কখনো আরিশের এই বাসার রুম উনি দেখেননি তাই উনি জানেন ও না যে রূমটক ঠিক কেমন আর কিই ব আছে !”

আরিশের রুমে পা রাখতেই দরজাটা হাত দিয়ে আলতো করে ছেড়ে দিতেই ধক করে বন্ধ হয়ে গেল দরজাটা ৷ গোটা ঘর অন্ধকার , আর সূর্যের আলোটা ঘরের মধ্যে প্রবেশ করে চারিদিকের দেওয়ালে থাকা ফটোগুলো যেন ঝকমক করছে , সামনের দিকে তাকাতেই দেওয়কলে আটকে রাখা ফটোটা দেখে উনি থমকে গেলেন, উনি অবাক হচ্ছেন সবকিছু দেখে ৷ ওই ফটো ফ্রেম টা থেকে চোখ সরিয়ে রুমটা ভালো করে চোখ বোলাতেই ওনার সমগ্র শরীর শিউরে উঠল, এটা কি সত্যি দেখছেন উনি নাকি এটা কোন কোন আজগুপি গল্প…..

উনি চুপচাপ রুম টা ভালো করে দেখছেন, দেওয়াল জুড়ে আটকে রাখা ছবিগুলো যেন বাস্তব হয়ে ফুটে উঠছে সেখানেই…..

আরিস প্যান্টের পকেটে হাত ঢুকিয়ে ধীর পায়ে রুমের দিকে গেলো,,,,,
হঠাৎ রুমের ভিতরে আরিশের ছায়ামূর্তি দেখে উনি ছলছল চোখে আরিশের দিকে তাকালেন ৷
কাপাকাপা গলায় বললেন,,,,
__” আব্বু এগুলো কি ?”

__” তোমার বৌমা ওরফে আবরার আরিশ খানের ঊডবি বউ, তোমার পছন্দ হয়নি ৷”

উনি কাঁদতে কাঁদতে বললেন,,,,,
__” মাশাআল্লাহ !”

আরিশকে জড়িয়ে ধরে উনি কেঁদে উঠলেন ৷আরিশের ঠোঁটের কোনেও এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলো ৷

চলবে,,,,,,,,

তোমার নেশায় আসক্ত ২ পর্ব-১৪+১৫

0

#তোমার_নেশায়_আসক্ত
#সিজন:2
#পর্ব :14
#Suraiya_Aayat

এক সপ্তাহ পর,,,,,,

এই এক সপ্তাহ ধরে আরুর চোখে বারবার ভেসে উঠেছে আরিশের সাথে কাটানো মুহূর্তগুলো ৷ কিভাবে ঝগড়া থেকে শুরু হয় ওদের আলাপ আর আজ অদ্ভুত এক নেশায় আসক্ত ও নিজেই ৷ সেই রাতের পর থেকে আর ওর পক্ষে সম্ভব হয়নি না আরিস এর স্পর্শগুলো কে উপেক্ষা করার , আর না পেরেছে নিজের মনে আরিশের উপস্থিতিকে অগ্রাহ্য করতে , তবে এই অদ্ভুত আসক্তির মূল কারণটা কি তা ও বুঝেও বুঝতে চাইছে না ৷ হঠাৎ করে কিছুক্ষন কাটানো সময়ের ভিত্তিতে কি একটা মানুষের অনুভূতিগুলো এভাবে পাল্টানো সম্ভব ! আরূ যেনো বুঝেও কিছু বুঝতে চাইছে না ৷

এতদিন ভার্সিটি বন্ধ ছিল আর আরিশদের এক্সাম চলছিল ,আজকে আরিশের শেষ exam ৷
আরুর খুব ইচ্ছা হচ্ছিল একবার আরিশকে কল করে জানার যে কেন এমন হচ্ছে ওর , চাইলেও কেন সবটা ভুলতে পারছে না ৷

কললিস্টের একেবারে শেষে থাকা আরিশের নাম্বারটাকে টেনে এনে কল লিস্টে সবার উপরে এনেছে বাকি সব কলের হিসট্রি ডিলিট করে, তাতে যেন নিজের অজান্তেই অদ্ভুত এক প্রশান্তি অনুভব করছে ও ৷

বারবার ইচ্ছা জাগছিল যে একবার কল করে আরিশের কাছে ওর কাঙ্খিত প্রশ্নের উত্তর জানতে কিন্ত ও তো চাইলেও তা পারবে না কারন এটা খুব আশ্চর্যনীয় লাগবে আরিশের কাছে , আর তাছাড়া ওর যেমনটা অনুভুতি হচ্ছে আরিশের তো তেমনটা অনুভুতি নাও হতে পারে,,,, এগুলো ভেবেই নিজেকে শান্ত রেখৈছে আরু ৷
তবে এই অদ্ভুত অনুভূতি যার ব্যাখ্যা ওর কাছে নেই তা আরিশের কাছে আছে ৷ তাহলে তার উত্তর কি একমাত্র আরিসই দিতে পারবে ?

কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই নিচে ব্রেকফাস্ট করার জন্য চলে গেল আরু…..

ডাইনিং টেবিলে বসতেই ওর আব্বু আর মায়ের কিছু কথা কানে পৌছোল ৷

__” আমরা কিন্তু বিকাল বেলায় ফিরে চলে আসবো,আরিশ যদি রাজি না হয় তাহলে তো আমাদের আর কিছু করার নেই ৷”

__” তুমি হাল ছাড়ছো কেন আমার মনে হয় না যে না আরিশ বাবা না করবে , আমার এইটুকু বিশ্বাস আছে৷”

__” দেখো কি হয় ৷ আল্লাহ যা চান তাই হবে তা তো আমরা চাওলেও খন্ডাতে পারবো না ৷”

ওদের কথার কোন হাতামাথা কোন কিছুই বুঝতে পারছেনা আরু ,তাই না বুঝতে পেরে জিজ্ঞাসা করে উঠলো,,,,,
__” তোমরা কিসের কথা বলছো বাপি?”

আরমান সাহেব সামান্য নিশ্চুপ হয়ে বললেন,,,,,
__” সেটা না হয় পরেই জানতে পারবে, সবাই যখন জানবে তুমিও তখন জানবে ৷”

__” তবুও আমাকে এখন বললে সমস্যা কোথায়?”

আরমান সাহেব এবার রেগে গিয়ে বললেন ,,,,,,
__” সব সময় ফাইজলামি ভালো লাগে না আরু ৷”

আরূ ওর বাবার কথা শুনে ভয় পেয়ে গেল ৷ আরমান সাহেব সাধারণত কখনো ওর সাথে রেগে কথা বলেন না, নিশ্চয়ই উনি খুব চিন্তিত সেই কারণেই ওর সাথে এমন ব্যবহারটা করল , ঐরকমটা নিজেকে বোঝালো আরু ৷

__” আহা তুমি ওকে বকছো কেন ! ওকে বকলেই কি সব ঠিক হবে, দেখোই না আগে কি হয় ৷”

আরু চুপ করে খেতে শুরু করল , পুনরায় কথা বলার সাহস পেলো না আর তবে মনে মনে কিঞ্চিত খারাপ লাগাটাও কাজ করছে ওর….

ব্রেকফাস্ট শেষে আরূ যখন নিজের রুমে যেতে গেল তখন কিছু একটা ভেবে থেমে গেল ৷

__” আম্মু তোমরা কি কোথাও যাবে?”

__” আমি একটু পর তোর অনিকা আন্টির বাড়িতে যাব ৷”

__” তোমার কি সব সময় যাওয়া লাগে আন্টির বাড়ি ?”

__” শুধু আমি একা না তুই ও যাবি মানে আমরা সবাই যাচ্ছি , আর যাওয়াটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ , আর তাছাড়া আজকে আরিশের লাস্ট এক্সাম তাই ও. আজকে বাসায় আসবে ,আর তোর আণ্টি দাওয়াত দিয়েছে ৷”

আরু আর কিছু বলল না চুপচাপ নিজের রুমে গেল ৷ আজকে ওউ যাবে আরিশদের বাড়িতে, এটাই ওর কাছে একমাত্র সুযোগ নিজের কাঙ্ক্ষিত প্রশ্নের উত্তর জানার, তার ফলাফল পজেটিভ আর নেগেটিভ যেটাই হোক না কেনো ৷ তবে উত্তরটা জানা ওর খুবই প্রয়োজনীয় ৷

সানার রুমে বসে আছে আরু অনেকক্ষণ ধরে , আজকে ভিষন শান্ত হয়ে বসে আছে অন্য দিনের তুলনায় ৷ আসার সময় সানার সাথে একবার দেখা হয়েছিল , তখন সানা নিচে ওর আম্মুর হাতে হাতে কাজ করে দিচ্ছিল তাই আরূ ওকে আর ডেকে বিরক্ত করে নি ৷ চুপচাপ সানার রুমে এসে বসে আছে…..

আরুর খুব ইচ্ছা করছে এখন আরিসের রুমে ঢুকে সমগ্র রুমটা আরেকবার দেখতে যদিওবা চাইলেও সেটা সম্ভব নয়….

যতক্ষণ না সানা আসছে ততক্ষণ ওর সেখানে চুপচাপ বসে থাকা ছাড়া কোন উপায় নেই ৷ আরু বসে বসে বোর হচ্ছে তাই ফোনটা অন করে ফেসবুকে লগ ইন করতে সার্চ লিস্টে গিয়ে প্রথমে থাকা নামটা ক্লিক করতেই একাউন্ট টা চলে এলো ৷

[ আবরার আরিশ খান ]
[নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি]
[ফলোড বাই 15000 পিপল]
[হবি : সিঙ্গিং ]

প্রোফাইল পিকচারের লাস্ট আপডেট আছে 24 শে নভেম্বর , মানে এক্সামের বেশ কয়েক দিন আগেই ৷আর তাতে মেয়েদের হাজার হাজার লাইকস আর কমেন্টস, বেশিরভাগ মেয়েরাই হল ওর ভার্সিটির মেয়ে, তাদের কমেন্ট গুলো পড়লে ওর নিজের খুব বিরক্তি লাগে, সব কটাই বাবু , সোনা, জান ছাড়া কথা নেই ৷

__” একটা মানুষকে এতটা সুন্দর কেন হতে হয় ! আর এই মেয়েগুলোও কেমন গায়ে পড়া টাইপের ৷ সুন্দর ছেলে দেখতে আর হুশ থাকে না….”

তাড়াতাড়ি করে ফেসবুক থেকে বেরিয়ে আসল ও ৷ এই এক সপ্তাহে আরিশের প্রোফাইল টা যে কতোবার সার্চ করেছে তা ওর নিজেও জানা নেই ৷ বলতে গেলে আরিসের প্রোফাইলের A টু Z সমস্তটাই ওর মুখস্থ হয়ে গেছে প্রায়….

ঘড়ির দিকে তাকালো আরূ ৷ দেড়টা বাজে , একটাই সবার এক্সাম শেষ হয়ে যাওয়ার কথা আর ভার্সিটি থেকে ওদের বাড়ি আসতে সময় লাগে আধঘণ্টা মতো তাই আর এক্ষুনি যে আরিশের পৌঁছে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে সেটা বুঝতে পারছে আরু ৷ কিন্ত কিভাবে আরিস এর মুখোমুখি হবে সেটাই বুঝে উঠতে পারছে না….

সানা একটা ট্রে তে করে 2 গ্লাস কোলড্রিংস এনে বেডের উপর রাখলো , আর হাতে একটা গ্লাস ধরিয়ে দিয়ে নিজে একটা গ্লাস হাতে নিলো …..

সানা লক্ষ করল আরু আজকে চুপচাপ ৷ আরুর নীরবতা টা যেন ও আজ মানতে পারছে না ৷ না পেরে সানা বলে উঠলো,,,,,,
___” একটা কথা কি জানিস তো তোকে চুপচাপ থাকলে একদম সটুপিড লাগে ৷”

কথাটা শুনতেই আরু একটু থতমত খেয়ে গেল , সত্যিই আজকাল ওর নিজেকেই খুব অবাক লাগছে, গোটা এক সপ্তাহ ধরেই যেন এক অন্য আরু কে দেখছে আর চিনছেও, যার সঙ্গে আগে নিজের কখনো মিল পাইনি….

__” এমনি তেই ভালো লাগছে না….”

__” ভাইয়ার আজকে এক্সাম শেষ , আজকে ও বাড়ি ফিরবে ৷”

আরিশ কে নিয়ে কথা উঠতেই আরু সুযোগ পেয়ে গেল ওর প্রশ্নটা করার তাই আর বেশী জটিলতার সৃষ্টি না করে সানাকে বলে উঠল,,,,,,,

__” আরিশ ভাইয়াদের তো এতখনে exam শেষ !”

__” হ্যাঁ , বাট ভাইয়ার ফিরতে লেট হবে ৷”

আরু সানার কথার পরিপেক্ষিতে কিছু বলল না আর ,চুপচাপ শুনে গেল ৷

সানা ফোনটা হাতে নিয়ে একটা ছবি বার করে আরুকে দেখালো ৷

__”আপুটা কত সুন্দর তাই না !”

ছবিটা দেখে আরু চমকে গিয়ে বললো,,,,,
__” এই আপুটা কে?”

__” ভাই আজকে এই আপুটাকে দেখতে গেছে , ওর বেশ পছন্দ হয়েছে তাই আমাকে পিকটা পাঠালো ৷ আমাকেও জিজ্ঞাসা করছে পছন্দ কিনা ৷ আমার তো দারুণ লেগেছে কি সুন্দর পুতুলের মতো ৷ মাশাআল্লাহ ৷”
কথাটা শুনতেই আরূর বুকের ভিতর মোচড় দিয়ে উঠলো,,,, কিন্তু কিন্তু করে কথটা ঘুরিয়ে বলল,,,,,

__” আরিশ ভাইয়া বিয়ে করছেন জানাসনি তো?”

সানা মুচকি হেসে বলল,,,,,
__” প্রান্ত থেকে ভাইয়ার সাথে আপুটার বিয়ে হবে তাই পছন্দ করতে গেছে ৷”

আরু মুচকি হেসে বললো,,,,,
__” সত্যিই খূব সুন্দর, আরিশ ভাইয়ার চয়েজ আছে ৷”
আরু একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিল, কিছুক্ষণের জন্য কথাটা শুনে ভয় পেয়ে গিয়েছিল ও ৷

বেশ অনেক্ষণ হলো আরিশ বাড়ি ফিরেছে ৷ নিচে এখন সবাই গল্প-গুজবে ব্যস্ত, সানাও নিচে রয়েছে শুধুমাএ আরিশ আর আরু উপরে রয়েছে ৷ কিছুক্ষণ পরেই হয়তো ওরা বাড়ি ফিরে যাবে তাই আরু আর বেশী দেরী করলো না , দেরি করলে আরিশের থেকে নিজের প্রশ্নের উত্তরটা জানতে পারবে না তাই জন্য আর এক মূহূর্তও দেরি না করে আরিশের রুমের দিকে পা বাড়ালো…..

কোনরকম আরিসের পারমিশন না নিয়ে ওর রুমে ঢুকে পড়ল আরু ৷ বিছানার উপর বসে টাওয়াল দিয়ে মাথাটা মুচছে আরিশ ,ভেজা মুখে বিন্দু বিন্দু জল জমে আছে , মাথার চুল গুলো থেকে টপটপ করে জল ঝরে পড়ছে মাঝে মাঝে , গায়ে সাদা রংয়ের shirt টা যেন আরিশের সৌন্দর্যটাকে দ্বিগুন বাড়িয়ে দিয়েছে…..

আরু মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে আরিশের সামনে,
আরিশ অবাক হয়ে ভ্রু কুঁচকে বললো,,,, ,
__” কারোর রুমে ঢোকার আগে পারমিশন নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করেন না বুঝি ? হোয়াট এভার ! তা আপনি কিছু বলবেন?”

আরু কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,,,,
__”আমি আপনার কাছে একটা প্রশ্নের উত্তর জানতে এসেছি , উত্তরটা পেলেই চলে যাব ,তাই আপনিও বেশি জটিলতা সৃষ্টি না করে সরাসরি উত্তরটা দিলে খুশি হয় ৷”

তোয়ালেটা বিছানার উপর রেখে আরিস কয়েক কদম এ গিয়ে আরুর কাছে চলে এল ৷
__” তা কি প্রশ্ন আপনার শুনি ? যদি জানি তাহলে নিশ্চয়ই উওর দেবো ৷”

প্রশ্নটা আরু করবে কিন্তু এখন ওর ভয়ে হাত-পা কাঁপছে , যতটা সাহস নিয়ে এসেছিল ততটা সাহসের এক বিন্দু মাত্রও নেই আর , কিভাবে বলবে কিছুই বুঝতে পারছে না , চুপচাপ ঠায় দাঁড়িয়ে রয়েছে ৷

আরিশ হালকা স্বরে বলল,,
__” কি হলো বলুন কি প্রশ্ন আছে আপনার ?”

__” ……”

__” কি হলো বলুন ৷”

__”…..”

__” যদি কিছু না বলার থাকে তাহলে প্লিজ আপনি এখন আসতে পারেন ৷”

__” আমার আপনার প্রতি এক অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে সেই রাতের পর থেকে , আপনার স্পর্শ গুলো আমি কোনোভাবেই ভুলতে পারছিনা, না ভুলতে পারছি আপনার সাথে কাটানো সেই মুহূর্তগুলো, বারবার সেই স্মৃতিগুলো ভেসে উঠছে আর অদ্ভুত এক অনুভূতি কাজ করছে আপনার প্রতি তবে সে অনুভুতির কারণটা আমি জানিনা তাই আপনি যদি জানেন আমার এ অনুভুতির কারন তাহলে বলেন কারন আমি আর এভাবে এই দোটানা নিয়ে সময় পার করতে পারছি না, কষ্টকর হয়ে উঠছে দিন দিন ৷ “(চোখ বন্ধ করে)

আরিশ পকেটে হাত দিয়ে বলল,,,,,,
__” তা ঠিক কেমন অনুভূতি মিস আপনার আমার প্রতি?”

আরূ আগের মত চোখ বন্ধ করে রেখে বলল,,,,,
__” সেটা ঠিক কেমন অনুভূতি আর কি কারণে সেই অনুভূতি তা জানলে আমি কি আপনার কাছে আসতাম আর না আপনার কাছে তার উত্তর চাইতাম…!”

__” ওহ আচ্ছা, তা আপনি চোখটা না খুললে আমি তার উত্তরটা দেবো কিভাবে !”

__’ না আমি চোখ বন্ধ করেই থাকবো, খুলবো না, আপনি তাড়াতাড়ি বলুন , আমি উত্তরটা নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যাচ্ছি ৷”

আরিশ এবার এক ঝটকায় আরুর কোমরটা জড়িয়ে ধরে নিজের সাথে আরূ কে মিশিয়ে নিল….

আরু আচমকাই আর ভয়ে চোখটা খুলে ফেলল , আরিশের এখন ওর উপর নজর স্থির, আর আরুর ও ৷ আরুর সমগ্র শরীর জুড়ে যেন অদ্ভুত শিহরণ বয়ে যাচ্ছে , আর ঠিক তেমনটাই অনুভূতি হচ্ছে যেমনটা এইকদিন হয়ে এসেছে…..

আরিশ ওর বাম হাতটা আস্তে আস্তে আরূর গলায় স্পর্শ করতেই আরূ শক্ত করে আরিশের shirt টা খামচে ধরল ৷ হার্ট বিট টাও ক্রমশ বাড়ছে, ঠোটজোড়া কাপছে আর শরীরটাও যেনো ক্রমশ ঝিমিয়ে আসছে ৷

আরিশ আরুর কানের কাছে ফিসফিস করে বলল,,,, __” এমনটাই অনুভূতি কি যেমনটা এখন হচ্ছে ৷”

আরু চুপ করে আছে , কিছু বলছে না ৷

__” আমি যদি এখন আমার ঠোট দিয়ে আলতো করে আপনার কম্পমান ঠোঁট দুটোকে স্পর্শ করি তাহলে কি আমাতেই হারিয়ে ফেলবেন নিজেকে ? ”

কথাটা শুনে আরু আরিশকে দূরে সরিয়ে দিল,মনে মনে লজ্জা পাচ্ছে খুব আরিশের কথা শুনে তবুও এখন তা আরিশের সামনে প্রকাশ করবে না ৷

__’ কি বলছেন এগুলো আপনি?”

আরিশ ডেভিল মার্কা হাসি দিয়ে বলল,,,,,,
__” যেমনটা আপনি আপনার ফিলিংস এর বর্ণনা দিলেন আমিও ঠিক তেমনি প্রাক্টিক্যালি সব কিছু করে দেখালাম, কেন বুঝতে পারেন নি ? এবার কি থিওরিটিক্যালি বুঝিয়ে দিতে হবে ?”

আরু দূরে সরে গিয়ে এক পা এক পা করে পিছিয়ে যেতে যেতে বললল,,,,,,
__” এই আপনি নামটা মি ঃ অভদ্রটা খুব বাজে, খুবই বাজে , আর লুচু প্রকৄতির মানুষ ৷”
কথাটা বলে তাড়াতাড়ি করে বেরিয়ে গেল আরু…..

আরিশ একটা টেডি স্মাইল দিল তারপর আলতো করে হাত দিয়ে চুল গুলো ঝেড়ে নিয়ে তোয়ালেটা নিয়ে ব্যালকনিতে চলে গেল…….

আরু দৌড়ে গিয়ে সানার রুমের দরজা লক করে দরজায় মাথা দিয়ে বসে পড়ল,,,,,,
__” এটা কি আমার মিঃ অভদ্র নামক আসক্তি, যা থেকে মুক্তি পাওয়ার একমাএ উপায়ই ” উনি সম্মোধনকারী ব্যাক্তিটি ৷” আমি কি ওনাতেই আসক্ত হয়ে পড়েছি ?
তাহলে কি #তোমার_নেশায়_আসক্ত ৷”

#চলবে,,,,,,,,

#তোমার_নেশায়_আসক্ত
#সিজন:2
#পর্ব:15
#Suraiya_Aayat

আরূর অনুভূতি বলছে যে আরিশ ওকে ভালোবাসে ৷ আর ও নিজেও ধীরে ধীরে তাহলে আরিশকে ভালোবাসতে শুরূ করেছে ৷
কথাগুলো ভাবতেই আরূর হার্টবিট আরো বেড়ে গেল, সারা শরীর থরথর করে কাঁপছে , অদ্ভুত এক অনুভূতি ওর সমগ্র শরীরে শিহরন বইয়ে দিচ্ছে….

চোখ বন্ধ করে মুহূর্তগুলোকে পুনরায় ভাবার চেষ্টা করতেই হঠাৎ দরজায় নক পড়তেই আরূ চমকে উঠলো….

__” কিরে তুই রূমের দরজা বন্ধ করে কি করছিস ? নিচে সবাই তোকে ডাকছে ৷”

আরূ তাড়াতাড়ি করে দরজাটা খুলে দেখল সানা দাঁড়িয়ে আছে ৷

__” কি জন্য ডাকছে আমাকে?”

__” এটা আমি কি করে বলবো ! তাড়াতাড়ি চল এখন আবার আমাকে ভাইয়া কেউ ডাকতে যেতে হবে ৷”

__” কোন সিরিয়াস ব্যাপার নিয়ে কিছু?”

সানা মুচকি মুচকি হেসে বলল,,,,,,
__” নীচে গেলেই দেখতে পাবি ৷”

আরুর মনে এবার চিন্তাটা ঘন মেঘের মতো জমা হয়ে এলো ৷
প্রথমে তো ওর বাপি আর মা ও কিছু নিয়ে আলোচনা করছিলো যা ওকে জানাইনি আর এখন আবার কোন একটা ব্যাপারটা নিয়ে আলোচনা হবে ৷ চিন্তায় পড়ে গেল আরু ৷ ব্যাপারটা আসলে কি সেটা জানতে যতটা না উত্তেজনা কাজ করছে তার থেকেও বেশি ভয় কাজ করছে মনের মাঝে৷

নীচে সবাই একত্রিত হয়ে রয়েছে আর আরূও সোফার এককোনে বসে আছে আর ওর সামনে বসে থাকা আরিশের দিকে মাঝে মাঝে সকলের আড়ালে আড় চোখে তাকাচ্ছে,,,,,,,

__” আম্মু তুমি কি আমাকে কিছু বলবে মানে হঠাৎ করে এভাবে ডেকে আনলে সেজন্য আর কি !”

__” হ্যাঁ তোকে ঢেকেছি তার মাঝে থাকা কারনটা হলো তোর বিয়ের ব্যাপার নিয়ে কিছু কথা বলতে চাই ৷”

আরিশের বিয়ের কথা শুনে আরুর সমগ্র শরীর জুড়ে যেন উথাল পাথাল হয়ে গেল, নিজের কানকে যেন বিশ্বাস করতে পারছে না ৷ এইকদিন যার প্রতি এক অদ্ভুত অনুভুতিতে জর্জরিত ছিল আর আজ যখন বুঝতে পারে যে সেটা ভালোলাগা নয় বরং দিন দিন ভালবাসায় পরিনত হচ্ছে তখন আজকেই তার বিয়ের সংবাদ সমগ্রটা ওলট পালট হয়ে যাচ্ছে ওর ৷ শক্ত করে নিজের জামাটা খামছে ধরলো , আজানা এক ভয় ও কাজ করছে মনের মাঝে যে যদি আরিশ রাজি হয়ে যাই তাহলে তো সবটা শুরু হওয়ার আগেই শেষ হয়ে যাবে ৷আরিশের কথায় ঘোর ভাঙলো ওর ৷

__” লাইক সিরিয়াসলি আম্মু, আমার বিয়ের কথা ! আমার এখনো বিয়ের বয়স হয়েছে?”

__” দেখ আরিশ আব্বু আমরা মজা করছি না , ব্যাপারটা নিয়ে আমরা সিরিয়াস ৷(আফজাল সাহেব )

__” আমরা তোর বিয়ে ঠিক করেছি ৷”(অনিকা খান)

__” আর ইউ কিডিং উইথ মি ?”(আরিশ)

__” আমরা আরূ মার সঙ্গে তোর বিয়ে ঠিক করেছি ৷”

আরু ছলছল চোখে তাকালো, কথাটা শুনেই মনের মাঝে অদ্ভুত এক প্রশান্তি কাজ করছে ওর , তাহলে ওর কাঙখিত আশা কি পূরন হতে চলেছে ! আরিশকে ও নিজের করে পাবে ৷ আরু আরিশকে নিয়ে ভাবতে চাই খুব বেশি করেই ভাবতে চাই ৷
আরূ চুপ করে আছে বলার ভাষাটাও যেনো হারিয়ে ফেলেছে , কি বলবে ও কিছুই বলার নেই ওর ৷

কথাটা শোনমাএই আরিশ অদ্ভুদ এক দৄষ্টিতে আরুর দিকে তাকালো, দেখতে পেলো আরুর চোখ ছলছল করছে ৷

__” বাট আমি তো তোমাদের আরুকে বিয়ে করতে পারবো না আম্মু ৷”

কথাটা শুনে যেনো আরূর দুনিয়া ঘুরে গেলো ৷ এসব কি বলছে আরিশ , তাহলে কি ওর ধারনাটা ভুল, ওর আরিশের প্রতি ভালোবাসাটা একতরফা , আরিশ কি ওকে ভালোবাসেনা ?
কথাগুলো বারবার মনে আসছে আরূর ৷ চোখ ফেঁটে অঝোরে জল বেরিয়ে আসতে চাইছে তবুও নিজেকে সংযত করে রাখতে হচ্ছে ৷

__” এসব তুমি কি বলছো আরিশ ৷ আর তোমাদের বিয়েটা যে আমাদের স্বপ্ন , তুমি এরকম বলতে পারো না ৷”(আরমান সাহেব )

আরিশ মুচকি হেসে আরূর দিকে একপলক তাকিয়ে বলল,,,,,
__” সব স্বপ্নকে কি সবসময় পূরন হতে দেখেছেন?”

আরমান সাহেব চুপ হয়ে গেলেন, উনিও এতোদিন এটার ভয় পেয়েই চুপ ছিলেন ৷

__” কিন্ত আরু মকে বিয়ে করতে তোর সমস্যা কোথায়? ওকে দেখতে মাশাআল্লাহ, আল্লাহ এরকম মেয়ে কতজন কে দেই বলতো !আর আমাদেরকে যথেষ্ট ভালোবাসে ৷”(অনিকা খান )

__” বাট আমার পক্ষে ওনাকে বিয়ে করা পসিবল নয়!”

আরু আর চুপ থাকতে পারলো না, নিজেকে আজ বড্ড অপমানিত ফিল হচ্ছে ওর , এরকম টা আগে কখনো হয়নি ৷ তাই না পেরে কাপা কাপা গলায় বলে উঠলো,,,,,,
__” পারবেন না ঠিক আছে তবে কারনটা জানালে খুশি হতাম আর নিজের মধ্যে থাকা ক্রটিগুলোকে ভালো করে উপলব্দি করতাম যাতে দ্বিতীয়বার আর এরকমটা না হয় ৷”

__” কারনটা অবশ্যই জানাবো ,আর এমনিতেও আমার exam শেষ আমি বাড়িতেও জনাতাম ৷ আমি একজন কে ভালোবাসি আর তাকেই বিয়ে করতে চাই ,তাই আমার পক্ষে অন্য কাউকে বিয়ে করা সম্ভব নয় ৷”

কথাটা শুনে আর কিছু না বলে আরিশের মা রেগে ওখান থেকে উঠে গেলেন হয়তো কান্নাটা আর আটকে রাখতে পারছেন না ৷

__” তুই কি এগুলো ভেবে বলছিস!”(আফজাল সাহেব)

__” হমম বাবা ৷”

আরুর মা র চোখেও জল, এবার উনি কি করবেন কিছুই বুঝতে পারছেন না ৷ আরুর দিকে একবার তাকাতেই দেখলেন আরুর চোখ থেকে টপটপ করে কয়েকফোটা জল গড়িয়ে পড়ছে অনবরত ৷ এই প্রথম উনি ওনার মেয়কে এমন নিশ্চুপ ভাবে কাদতে দেখলেন , এর আগে আরু যতবার কেদেছে তখন সারা বাড়ি মাথায় করে রেখেছে ৷ মানুষ যখন ভীষনভাবে কষ্ট পায় তখন হয়তো এমনভাবেই নিশ্চুপ হয়ে যাই ৷ মেয়েকে এভাবে কাদতে দেখে ওনার মনটা জ্বলে উঠছে বারবার ৷আরূ যে ব্যপারটাই এতটা আঘাত পাবে ত হয়তো উনি ওনার ধারনাতেও আনেননি ৷ এটা একটা মেয়ের জন্য কতটা অপমানের তা উনি বেশ ভালোই বুঝতে পারছেন ৷

আরূ আর পারছে না ওখানে সবার মুখোমুখি বসে থাকতে , ওর আলাদা ভাবে একটা জায়গায় প্রয়োজন যেখানে ও মন ভরে কাদবে ৷ তাই না পেরে বলে উঠলো,,,,,,
__”আম্মু আমার শরীরটা ভালো লাগছে না, ভীষন বমি বমি পাচ্ছে, আমি বাসায় যাচ্ছি, তোমরা পরে চলে এসো ৷”

__” সে কি , আমিও যাচ্ছি তোর সাথে, আর আমাদের ও তো ফিরতে হবে ৷”

__” না না আম্মু আমি পারবো, তোমরা বরং নিজেদের স্বপ্নটাকে নতুন করে সাজিয়ে গুছিয়ে আবার এসো, যাতে পুনরায় স্বপ্নভঙেগর বেদনায় কাতরাতে না হয় ৷”(আরিশের দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে)

কথাটা বলে আর এক মুহূর্তও দেরি না করে আরূ তাড়াতাড়ি করে বেরিয়ে গেলো, হয়তো ওদের মুখোমুখি হওয়ার সাহস ওর আর নেই ৷ নিজেকে আজ ডানাবিহীন পাখির মতোই নিশ্চল লাগছে ৷

আরুর মা চোখের জলটা মুছে আরিশের দিকে মুচকি হেসে বললেন,,,,,,
__”আমি তোমার সিদ্ধান্তকে সম্মান করি বাবা, আমরাও ভালোবেসে বিয়ে করেছি তাই সবটা বুঝি যে ভালোবাসার মানুষটাকে পাওয়ার আকাঙখাটা ৷ তুমি সুখী হও বাবা , আল্লাহ ভালো করূক ৷ আশাকরি সেরা জিনিসটাই তুমি পছন্দ করবে তাই চয়েজ নিয়ে বলার আর কিছুই রইলো না ৷ আর অবশ্যই খারাপো একটু লাগছে তবে সময়ের পরিবর্তনের সাথে হয়তো সবটাই,ঠিক হয়ে যাবে আর থেকে যাবে খারাপ সমৄতিগুলো ৷ আর আল্লাহ হয়তো আরূকে অন্য একজনের জন্যই পাঠিয়েছেন তাই হয়তো স্বপ্নটা এখানেই থেমে রইলো ৷”

__”আমি সত্তিই খুব দুঃখিত আন্টি বাট আমার চাওয়া পাওয়ার ও তো দাম থাকে তাইনা ৷”

__” অবশ্যই থাকে ,আর আল্লাহ তোমার ভালো করূক এটাই চাই ৷”

__”দোয়া করবেন যেনো জীবনের সঠিক সময়ে সঠিক মানুষটাকেই পাই ৷”(মুচকি হেসে)

চলবে,,,,,,

তোমার নেশায় আসক্ত ২ পর্ব-১৩

0

#তোমার_নেশায়_আসক্ত
#সিজন:2
#পর্ব:13
#Suraiya_Aayat

কোনরকম বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে আরু বাসায় সামনে এলো , শরীরটা ইতিমধ্যে ঠান্ডায় কাঁপছে তার উপরে মাঝে মাঝে বিদ্যুতের ঝলকানিতে চমকে উঠছে ও ৷ বারবার চোখের সামনে একটাই দৃশ্য ভেসে উঠছে , আর আরিশের স্পর্শগুলো কে বারবার অনুভব করার চেষ্টা করছে ৷ মুহূর্তগুলোকে বারবার স্মৃতিচারণ করতেও যেন আজ ওর মাঝে বিরক্তি কাজ করছে না ৷ কেন এ অদ্ভুত অনুভূতি ও নিজেও জানেনা ৷ এই প্রথম কোন পুরুষের ছোঁয়া পেয়েছিল তাও আবার এতটা গভীর ভাবে পাবে তা ভাবেনি ৷ মাথায় হাজারো সমস্ত চিন্তাভাবনা করছে আর বারবার মনের মাঝে উদয় হচ্ছে অদ্ভুত এক অনুভূতি আরিসের প্রতি , যা আগে কখনো হয়নি ৷
__” এর কারণ কি ? তাহলে কি আমি ওনাকে,,,,,,”
পর মুহূর্তে আবার আরু নিজের মনে মনে বলতে লাগল,,,,,,
__” না না , আমি এসব কি বলছি , ইউ আর স্টুপিড আরু ৷”

কথাটা কে বারবার উপেক্ষা করার চেষ্টা করছে ৷ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ভোলার জন্য আরু আর দেরি না করে কাঁপা কাঁপা হাতে কলিং বেলটা বাজালো….

চটজলদি করে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই আরুর আম্মু দরজাটা খুলে দিল…..
দরজা খুলতেই ঝাঁজালো কন্ঠে উনি গর্জে উঠলেন,,,
__” তুই এভাবে ভিজলি কেন ? এত বৃষ্টির মধ্যে আর একা একাই বা এলি কেন, যদি রাস্তায় কোন বিপদ-আপদ হতো তাহলে কি হতো ? আর এত রাত্রে তোর যে জ্বর কাশি হবে তার কি কোন খেয়াল আছে! এমনিতে তোর জ্বর হলে সে তো আর ভালোবেসে ফিরে যেতে চায় না তাতো জানি তার পরেও কেন এরকম বাচ্চাগুলো করিস !”

আরু দু হাত দিয়ে নিজের সারা শরীরটাকে ঢাকার চেষ্টা করছে আর ঠান্ডায় থরথর করে কাঁপছে , ভেজা চুলগুলো থেকে টপটপ করে জল গড়িয়ে পড়ছে আর বেশিরভাগ জলটাই শরীর শুষে নিয়ে শরীরের তাপমাত্রা কমছে….

আরু কাঁপতে কাঁপতে বলল,,,,
__” তুমি কি আমাকে ঢুকতে দেবে না কি এভাবেই কথা শোনাবে কোনটা ?”

উনি বুঝলেন যে কিছু বলে আর লাভ নেই এর থেকে বরং এর পর আরুর যে অনাগত জ্বর কাশি আসছে তার সাথে মোকাবেলা করার জন্য প্রস্তুত হওয়াই ভালো , তাই উনি আর কিছু না বলে দরজার সামনে থেকে সরে দাঁড়ালেন ৷ উনি সরে আসতেই আরু চম্পট দৌড় দিল , দৌড়ে দৌড়ে রুমে গিয়ে দরজা আটকে থিতু হলো ৷

আরূর মা দরজা দিয়ে গজগজ করতে করতে বললেন,,,,,,,,
__” যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই মেয়েকে আমি আরিশের হাতে তুলে দিতে চাই এইভাবে আর কতদিন চোখে চোখে রাখব বলো তো ! বিয়ে করলে তখন পরিবর্তন আসবে আর ঠিক হয়ে যাবে সব, এভাবে চিন্তায় চিন্তায় তো শেষ হয়ে যাচ্ছি ৷”

আরমান সাহেব গালে হাত রেখে চিন্তার সুরে বললেন,,,,,
__” মেয়েটা বড্ড চঞ্চল , এভাবে সামলানো যায় না ৷ আমার এখন তাই মনে হচ্ছে , আরিশকে কথাটা জানাতে হবে ৷ তাছাড়া আরিস নিজেও এখন যথেষ্ট ম্যাচিওর , আশা করি ওর কোন আপত্তি থাকবেনা ৷ আর যদি আরিশ এখন বিয়ে না করতে চাই তাহলে তো অন্য কোথাও আরু মায়ের বিয়ে,,,,,,”

__” না না এটা তুমি কি বলছো, আমাদের দুই পরিবারেই কত ইচ্ছা বল তো যে ওদের দুজেন চারহাত এক করে দেবো ৷ আর তুমি সেখানে অন্য কোথাও,,,,, না না এমনটা বলো না , পারলে আমারা কয়দিন অপেক্ষা করব আরিশের জন্য তারপর না হয় বিয়ে দেবো ৷”

__” এরকম বলে নিজের মনকে সান্তনা দিবে ঠিক আছে তা বলে নিজের মেয়েটার চঞ্চলতা কিভাবে কামাবে ? কতদিন আর এভাবে চিন্তায় চিন্তায় সারা রাত জাগবে বল ৷”

আরূর মা চুপ হয়ে গেলেন, সত্যিই ওনার কথাটা গ্রহণযোগ্য একেবারে ফেলে দেবার মত নয় , তাছাড়া মেয়েদের নিরাপত্তা নিয়ে বর্তমানে যথেষ্ট ত্রুটি আছে সমাজে, আর আরূ যখন-তখন রাতবিরেতে একা একাই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় , মেয়েটাকে নিয়ে চিন্তাভাবনার আর শেষ নেই…..

তাড়াতাড়ি করে ওয়াশরুমে গিয়ে ড্রেস চেঞ্জ করে এসে একটা প্লাজো আর একটা টপ পরে ব্ল্যাঙ্কেট এর মধ্যে ঢুকে গেল আরূ ৷ চুলগুলো এখনো ভিজে , মাথাটাও ধরেছে বেশ , এখন একটু কফি হলে মন্দ হতো না তবে এখন কফি খেতে গেলেই শুনতে হবে ওর মায়ের কাছে হাজারো বকুনি সেই কারণে সেই কথাটা দ্বিতীয়বার ভেবে দেখছে না আরূ…..

তখনই দরজায় নক করার শব্দ শুনে আরুর টনক নড়লো ৷

__” কিরে দরজা বন্ধ করে কি শুয়ে পরেছিস নাকি ? ওষুধ খাসনি তুই এখনো , রাত্রে আবার জ্বর হবে তখন কি হবে ! আর আজকে আমি তোর সাথে ঘুমাবো ৷”

আরু রুম থেকে চেঁচিয়ে বলল,,,,,,
__” না তোমাকে শুতে হবে না , আর আমি একদম ঠিক আছি তুমি যাও তো , আমার এখন ঘুম পাচ্ছে ৷”

আরুর মা অনেক জোর করা সত্ত্বেও আরু ওনাকে রুমে আসতে দেননি,ওনার নিজের রুমে পাঠিয়ে দিলেন ৷ তারপর গুটি গুটি হয়ে শুয়ে পড়ল আরু ৷

ঘড়ির কাটা স্থান পরিবর্তন করার সাথে সাথে যেমন সময়টা এগিয়ে যাচ্ছে তেমনি আরুর শরীরের তাপমাত্রাটাও ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছে ৷

চোখ দুটো ছোট হয়ে আসছে , মাঝেমাঝেই চোখের কোনে দিয়ে টপটপ করে জল গড়িয়ে পড়ছে ,গলাটা ধরে আসছে বেশ……
কিছুক্ষণের মধ্যেই আরূ জ্ঞান হারালো……

রাত আড়াইটা,,,,,

বেলকনিতে দাঁড়িয়ে-থাকা অন্ধকারে মানুষের ছায়ামূর্তিটা রুমের ভিতরে প্রবেশ করল নির্দ্বিধায় যেন এই সময়টায় তার খুবই প্রয়োজন, সেই যে আরুর এ রোগের ঔষধ ৷

ধীর পায়ে এগিয়ে বিছানায় আরূর পাশে বসলো….

ঘরের ভেতর জ্বলতে থাকা লাল রঙের ডিম লাইটের আলোটা আরুর মুখের উপর সামান্য পড়তেই মুখটা বেশ স্পষ্ট বোঝ না গেলেও সামনের মানুষটির যেন আরূকে বুঝে নিতে অসুবিধা হচ্ছে না, এই অন্ধকারের মাঝেও আরু তার কাছে দৃশ্যমান বলেই মনে হচ্ছে ৷

তার ঠান্ডা শীতল হাত দুটো ধীরে ধীরে আলতো করে আরুর গলায় স্পর্শ করতেই আরূ সামান্য কেঁপে উঠল শিহরণে….
পরম আবেশে গলায় হাতদুটো রেখে আরূর কাছে এগিয়ে গেল, আরূর মুখের কাছে নিজের মুখটা নিয়ে গিয়ে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে সে , তার গরম নিশ্বাসগুলো আরূর মুখের উপর পড়ছে, মাঝে মাঝে তা চোখের দু পাতার উপর পরতেই চোখ দুটো হালকা কেঁপে কেঁপে উঠছে…..

ধীরে ধীরে তার নিজের ঠোঁট জোড়া দিয়ে আরূর ঠোঁটজোড়া কে দখল করে নিল , পরম আবেশে জড়িয়ে রেখেছে ঠোঁটজোড়া , দেখে মনে হচ্ছে যেন পুরনো সব ভালোবাসা আজ আরূকে ফিরিয়ে দিচ্ছে….

আজ তার একাকি ভালবাসার উষ্ণ ছোঁয়ায় শিহরন বইছে আরুর সমগ্র শরীর জুড়ে…..

বেশ কিছুক্ষণ পর আরূকে ছেড়ে দিয়ে নিজের বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে আরুর ঠোটজোড়া আলতো করে মুছে দিল ৷ পকেট থেকে ইনজেকশনের সিরিঞ্জটা বর করে তা আরুর হাতে পুষ করে দিল ৷ এই মুহূর্তে আরূ জেগে থাকলে হয়তো সারা বাড়ি মাথায় করে বেড়াতো , ইনজেকশন জিনিসটাকে খুব ভয় পায় ও…..
আরূর দিকে বেশ অনেকক্ষণ ধরে এক দৃষ্টিতে চেয়ে রইল , আরূর মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে আরুর থুতনীতে থাকা হালকা কালো তিলটাতে (যেটা খুব কাছ থেকে গভীরভাবে দেখলেই বোঝা যাবে) নিজের ঠোট ছোঁয়ালো ৷ ঘুমন্ত আরূর বেশ কয়েকটা ছবি তুলে নিয়ে ছবিগুলো দেখে মুচকি হেসতে লাগলো ৷
আরুর কানের কাছে নিজের মুখটা নিয়ে গিয়ে বলল ,,,,,,,
__” ভালোবাসি আরুপাখি ৷”
কথাটা বলে বেরিয়ে গেল রুম থেকে ৷

সকালের প্রথম সূর্যের আলোটা আরুর মুখের ওপর এসে পড়তেই চোখের পাতা দুটো তার উত্তাপ হয়তো আর সহ্য না করতে পারলো না, চোখ দুটো খুলে শান্ত দৄষ্টিতে তাকালো আরু…..

কাল সারারাত বৃষ্টি হওয়ার পর বাইরের সমস্ত টা ঝলমলে আর প্রানবন্ত ৷ সূর্যটাকে আজকে দেখে মনে হচ্ছে যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে নতুন করে ৷ গাছপালাগুলো নিজেদের আগেকার সেই প্রাকৃতিক মহিমা খুঁজে পেয়েছে ৷ শীতের দিনের ঘাসের ওপরে জমে থাকা শিশির সঙ্গে বৃষ্টির ফোঁটাগুলোও আজ ভিড় জমিয়েছে অজানা এই উদ্দেশ্যে ৷ বৃষ্টির প্রথম ফোঁটা মাটিতে পড়তেই মাটির অদ্ভুদ যে ঘ্রান সৄষ্টি হয় তা সময়ের সাথে মিলিয়ে গিয়ে কর্দমাক্ত মাটির নিজস্ব ঘ্রানটাকে নতুন করে সৃষ্টি করেছে….

প্রকৃতিটা কতই অদ্ভুত তাই না কখনো রোদ কখনো বৃষ্টি আবার কখনো বা ঘন কুয়াশা….

কথাগুলো মনে আসতেই আরূ মুচকি হেসে উঠলো ৷ প্রকৃতির আসল রূপটা ভালোভাবে উপলবদ্ধি করতে পারছে ও ৷
কালকে রাতের জ্বর জ্বর ভাব টা ও আর নেই, মাথা ব্যাথাও কমে গেছে , অনেক ফুরফুরা লাগছে এখন নিজেকে ৷
রাতে ও নিজে ওষুধ খাইনি কখন জ্ঞান হারিয়েছে তার নিজেরও জানা নেই তবুও কি করে এতটা সুস্থ হল ও তা নিজেও জানেনা ৷ অসুস্থতা ব্যাপারটা নিয়ে আর বেশি কিছু ভাবতে চাইনা তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সেটা নিজের মন থেকে ঝেড়ে ফেলে ধীর পায়ে ব্যালকনির দিকে হেটে গেল….

বেলকুনিতে ফুলগাছের টবগুলোতে জল জমে আছে , গোলাপ ফুলের পাপড়ি গুলোতে ফোঁটা ফোঁটা জলবিন্দু দেখা দিচ্ছে আর ফুলের মাঝে জমে থাকা জলে ফুলের রেণু গুলো ভেসে উঠছে ৷ জলটাই হাত দিতেই সমস্ত রেনূ ওর হাতে এসে ভিড় জমাচ্ছে , ব্যপারটাই আরূ আনন্দ পাচ্ছে বেশ ৷

বেলকনি রেলিং ধরে চোখ বন্ধ করে দীর্ঘ শ্বাস নিতেই অদ্ভুত এক প্রশান্তি অনুভব করছে আরু ৷ আজ হয়তো প্রথম এমন একটা দিন যেদিন ও নিজে তাড়াতাড়ি উঠেছে আর প্রকৃতির যে আসল সৌন্দর্য সেটাকে উপভোগ করছে….

কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে প্রকৃতিতে মনোনিবেশ করতেই চোখে ভেসে উঠল কালকের বর্ষনের সেই রাতের কথা ৷ কথটা মনে পরে গেল , আরে তার সাথে আরিশের সেই উষ্ণ ছোঁয়া আর তার অল্প বকুনি ৷

তাড়াতাড়ি করে চোখ দুটো খুলে ফেললো আরূ ৷

__” আমার এমনটা হচ্ছে কেন? বারবার উনার কথায় কেন মনে পড়ছে ? সেই ভাবনা থেকে বের হওয়ার উপায় কি?”

__”ভালোবাসা ভালোবাসা…..”

কথাটা শুনতেই আরূ অবাক হয়ে পিছন দিকে ঘুরল , তাকিয়ে দেখল ইনু ওর দিকে তাকিয়ে ঘাড়টা এপাশ ওপাশ করছে….

আরু মুচকি হেসেই ইনুর কাছে গেল….

ইনু হলো আরূর পোষা তোতা পাখি , যাকে আরূ বেশ কয়দিন হলো ওর বাড়িতে এনেছে, এই কয়দিনে ইনুর সাথে ওর ফ্রেন্ডশিপ টা খুব ভালো হয়েছে ৷ একটা মানুষ আর জন্তুর মধ্যে এতটা ভালো সম্পর্ক হতে পারে সেটা আরু জোরে আর আরিশকে দেখে বুঝেছিলো ৷ কুকুরকে ও প্রচন্ড ভয় পায় তাই তাকে পোষ মানানোর কথা দ্বিতীয়বারের ভাবেনি, তাই আরিশের বাড়ি থেকে ফেরার পরই সেদিনই ওর বাবাকে বলে তোতা পাখি টা নিয়েছিল মার্কেট থেকে ৷ পাখিটা আগে থেকেই প্রচন্ড কথা বলে ৷ অবসর সময়ে আরু ওর সাথে কথা বলে সময় পার করে ৷ দিন শেষে নিজের জমিয়ে রাখা সমস্ত অভিযোগের কথাটুকূ ইনুকে জানায়….

__” তুই এটা কি বলছিস, আর ভালোবাসা মানে তুই কি বুঝিস?”

ইনু ঘাড় ঘুরিয়ে এ দিক ওদিক তাকিয়ে আবার একই কথা বলল,,,,,
__” ভালোবাসা ভালোবাসা….”

__” সত্যিই কি তাই ! যদি এমনটাই হয় তাহলে আমি কেন সেটা বুঝতে পারছি না , আর এই অদ্ভুত অনুভূতি মানে কি? আমি কি তাতেই আসক্ত……”

কথাটা ইনুকে বলে মেঝেতে বসে পড়ল, দেওয়ালের সাথে মাথা ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে সেখানেই বসে রইল,, কতটা সময় যে ওভাবেই আরু পার করলো তা ও জানে না ৷

চলবে,,,,,,,

তোমার নেশায় আসক্ত ২ পর্ব-১২

0

#তোমার_নেশায়_আসক্ত
#সিজন:2
#পর্ব:12(দ্বিতীয় খন্ড)
#Suraiya_Aayat

হৃদয়ের টাকায় কেনা খাবারগুলো ওরা সব গরিব এতিমদের মাঝখানে বিলিয়ে দিল ৷ তারপরে আরু সানা আর আর তিথি ওরা তিনজন বাড়ি ফেরার পথে এগোতেই সানা কথার মাঝখানে বলল…
__” শোন তুই কিন্তু আর হৄদয় ভাই এর সাথে কথা বলবি না ৷ ভাইয়া খুব একটা ভালো মানুষ নন , মেয়েদেরকে টিস করা , উত্ত্যক্ত করা , বিরক্ত করা ভাইযয়ার স্বভাব, আর এই নিয়ে ভার্সিটিতে বহুবার ঝামেলা হয়েছে ৷ আরিশ ভাইয়া এই সমস্ত একদম পছন্দ করে না তাই দুজনের মাঝে মনোমালিন্য ৷ আই থিঙ্ক তুই আমার কথা মেনে চলবি আর তার সাথে তুই ওনাকে সরাসরি জানিয়ে দিবি যে তোর সঙ্গে ওনার ফ্রেন্ডশিপ করা নিয়ে প্রবলেম আছে , তাই তুই ওনার সঙ্গে ফ্রেন্ডশিপ করতে পারবি না ৷”

__” হমম সারা পৃথিবীর সব মানুষ খারাপ আর তোর ভাইয়া তো ধোয়া তুলসী পাতা তাই না যে উনি যা করবে আমাকেও তাই করতে হবে ৷ আর বাইদাওয়ে এমনিতেও উনার সাথে ফ্রেন্ডশিপ করার কোন ইচ্ছা নেই আমার আর আজকে যা হয়েছে তারপর আমার মনে হয় না উনি দ্বিতীয়বার আর আমার সাথে কথা বলতে আসবেন ৷”

__” তবুও তোকে আমি সাবধান করে দিচ্ছি আশা করি তুই আমার কথা রাখবি ৷ তুই ওনাকে ইগনোর করলে আমার মনে হয় না যে উনি আর তোর সাথে কথা বলতে আসবেন কারন একটা মেয়ের সাথে একটা ছেলে ফ্রেন্ডশিপ বজায় রাখার জন্য কখনো ছেলেটা মেয়েটার হাতে পায়ে ধরবে না , আর হৃদয় ভাইয়া তো তেমন নয় , আর আমি ওনাকে খুব ভালভাবেই চিনি ৷”

__” হ্যাঁ মনে রাখবো জানু, তোমার কথা কি আমি কখনো ফেলতে পারি বল! আর তোমার কোন কথাটা আমি শুনি না বলো !”

__” হমম তাই ই শুনলে তো আমার আর কোন চিন্তাই থাকতো না তাই না ?”

__” 😁 ৷”

আজকে আকাশটা কালো মেঘের ঘনঘটায় আচ্ছন্ন , চারিদিকের একরাশ কালো মেঘ জমাট বেঁধে এসেছে, হয়তো মুষলধারে বৃষ্টি নামবে খুব শীঘ্রই ৷

এই মুহুর্তে আরুর খুব ইচ্ছা করছে পায়ে নূপুর পড়ে একটা সাদা শাড়ি আর নীল রঙের চুড়ি পরে কাদামাখা ঘাসের ওপরে দাঁড়িয়ে নিজের দুবাহু প্রসারিত করে জমাটবাঁধা ঘন কালো মেঘের কাছে নিজের হাজার অভিযোগ জানাতে আর এটাও প্রশ্ন করতো যে কেন এভাবে হঠাৎ বর্ষণে সে সমস্তটাকে ভিজিয়ে দিয়ে যায় !সেটা আরূর খুব জানতে ইচ্ছা করে ৷

কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই জানলা থেকে চোখ সরিয়ে নিল আরু,মনোযোগ দেওয়ার চেষ্টা করছে ক্লাসে, তবুও হচ্ছে না ৷

সামনের ব্ল্যাকবোর্ডের দিকে তাকিয়ে আছে বহুক্ষন, কোন কিছুই যেনো কানে যাচ্ছে না কারন হলো মনোনিবেশের অভাব ৷
এখন ওর খুব ইচ্ছা করছে ওর স্যারকে সরিয়ে তার স্থান দখল করে ব্ল্যাকবোর্ড এ বর্ণমালার দৃশ্যগুলো সৃষ্টিকারী চকটাকে দুই আঙুলের মাঝে নিয়ে হাজারো আঁকিবুঁকি করতে আর নিজের মনের ভাব প্রকাশ করতে ৷ আদতে তেমনটা কি সম্ভব !

হঠাৎ বাইরে ছমছম শব্দ করে বৃষ্টি নামতেই মাটির অদ্ভুত সুন্দর গন্ধ আরুর নাকে পৌঁছাতেই মনটা যেন বারবার উতলা হয়ে পড়ছে ওর মুষলধারে বৃষ্টিতে ভেজার জন্য, বৄষ্টি টা যে ওকে বড্ড টানছে ৷ আজ হয়তো ওর বহুদিনের ইচ্ছাটা পূরণ হতে চলেছে, আর সেখানে বাধা সৃষ্টিকারী হিসাবে থাকবে না কেউ ৷

আকাশের ঘন কালো মেঘ দেখে আজকে সানা আসেনি , বৃষ্টির দিনটা খুব একটা পছন্দ করে না ও ,আর এটা আরুকে অবাক করে খুব ৷ এই ভাবে একটা মানুষ বৃষ্টির মতো একটা সৌন্দর্যময় জিনিসকে কিভাবে উপেক্ষা করতে পারে সেটা ওর ক্ষুদ্র মস্তিষ্কে ধারণাতে আসেনা….
তবে আজকের এই ঘন কালো মেঘের বর্ষণ কি কোন বার্তা সংকেত বহন করে নিয়ে আসছে যা আরু স্মৃতির অগোচরে আর ধরাছোঁয়ার বাইরে !

কিছুক্ষণ পর ক্লাস শেষ হতেই ছাতা টা হাতে নিয়ে বাইরে এসে দাঁড়াতেই দেখল বৃষ্টির ধারা ক্রমশ বেড়েই চলেছে ৷ জীবনে এমন সময়ে যদি আরু এই মুহূর্তটাকে উপেক্ষা করে তাহলে জীবনটাকে উপভোগ করা হবে না , তাই আরূ আর কোন কিছু না ভেবে বৄষ্টির কাছে নিজেকে সমর্পণ করে দিল ৷ ছাঁটে শরীরের অনেক অংশই ভিজে যাচ্ছে তবে আরু আর নিজেকে আটকাতে চাইছে না কারন এমনই একটা সৌন্দর্য উপভোগ করতে চেয়েছিল ও , আর তা থেকে নিজেকে কিভাবে আটকায় ?

কিছুটা দূরে এগিয়ে যেতেই দেখল ওর বাড়ি থেকে পাঠানো গাড়িটা দাঁড়িয়ে রয়েছে আর ড্রাইভার আমেজে চা খাচ্ছেন দোকানে , এটাই হলো সুযোগ ! তাই আর কোনো রকম কোনো দেরি না করে ব্যাগটা গাড়ির মধ্যে রেখে চম্পট দৌড় দিল, তবে তার আগে গাড়িতে চিরকুট রেখে এসেছে যাতে লেখা আছে যে ড্রাইভার আঙ্কেল আপনি বেশীক্ষন অপেক্ষা করবেন না আমার জন্য কারণ আমি তারাতারি বাড়ি পৌঁছে যাব ৷

বেশ কিছুক্ষণ দৌড়ানোর পর সামান্য থিতু হলো আরু, এখন সবার ধরাছোয়ার বাইরে ও ৷ পায়ে থাকা জুতো গুলো খুলে হাতে নিয়ে হাঁটতে লাগলো , এই জিনিসটা বড্ড ভালো লাগে , খালিপায়ে হাটতে বেশ লাগে তবে কখনো শীতের সকালের শিশির ভেজা ঘাসে পা রেখে হাটা হয়নি কারণ ওর ঘুমই ভাঙ্গে না যে সকালের সৌন্দর্যকে উপভোগ করবে ৷

নির্জন রাস্তার একপাশ দিয়ে হাঁটছে আর আপন খেয়ালে গুনগুন করে গানের সুর তুলেছে, মাঝেমাঝে হাত দুটোও মেলে দিচ্ছে ৷ আজকে যেন নিজেকে এই বৃষ্টির কাছে সমর্পণ করে দিয়েছে , কোন বাধা ধরা ওকে ছুঁতে পারবে না , তবে আনন্দটা যেন আর বেশিক্ষণ রইল না ৷ রাস্তা সব নোংরা জল ওর জামাই এসে পড়াই রেগে গিয়ে আরূ বলতে লাগলো,,,,,
__” রাস্তায় দেখে গাড়ি চালাতে পারেন না ?”সামনের দিকে তাকিয়ে দেখল হৃদয় দাঁড়িয়ে আছে৷

ওকে দেখে মুডটাই বিগড়ে গেল আরুর,,,,,
__” এই যে ভাইয়া আপনি এটা কি করলেন ? আমার জামাটা সম্পূর্ণ নোংরা করে দিলেন তো , চোখ কি বাড়িতে রেখে আসেন নাকি ? ”

__” আসলে আমি খুব ব্যস্ত ছিলাম তাই তাড়াহুড়ো এর মধ্যে আর দেখতে পাইনি, তাছাড়া রাস্তা অন্ধকার কিছুই দেখাও যাচ্ছে না তাই ভুল করে হয়ে গেল ৷”

হৃদয়ের কথার পরিবর্তে আরূ কিছু বলতে যাবে তার আগে হঠাৎ চোখ পড়ল দূরে একটা ছাউনির নিচে আরিশ দাঁড়িয়ে আছে ৷
হয়তো ছাতা আনেনি সেই কারণেই বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচাতেই ও সেখানে স্হির , না হলে হয়তো বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে চলে যেতো নিজের মন্তব্যের উদ্দেশ্যে ৷আরু ও হঠাৎ খেয়াল করলো যে আরিশের চোখটা ওর দিকেই আর তা দেখে তখনই ওর মনে হলো,,,,,,
__”ওনাদের তো তিনদিন পরে এক্সাম তাহলে উনি এত আজ এখানে কি করছেন ? যা করে করুক তাতে আমার কি ! হোয়াটএভার ৷(আরু মনে মনে)

হঠাৎ একটা কথা ওর মনে পড়ল জে সানা ওকে বলেছিল যে আরিশের সাথে হৃদয়ের তীব্র শত্রুতা তাই আরিশকে অপমান করতে গেলে হৃদয় কে বাহবা দিতে হবে তা ছাড়া আর কোন উপায় নেই ৷ তাই না পেরে হৃদয় কে বলল,,,,

__” ভাইয়া প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছে তো আর আমার গাড়িটা আসেনি তাই আপনি কি আমাকে একটু লিফ্ট দেবেন?”

__”কেন নয় অবশ্যই ৷”

কথাটা বলার পরপরই আরূ হৃদয়ের গাড়িতে উঠে গেল আরিশকে দেখিয়ে ৷ হৃদয় প্রচন্ড speed নিয়ে গাড়ি চালিয়ে চলে গেল , ও আরিশকে এতক্ষণ দেখেনি ৷

গাড়ি কিছুদূর যেতেই আরূ বলে উঠলো,,, ,
__” ভাইয়া থামান , আমি নামবো ৷”

__” কেন তুমি নামবে কেন ? তাছাড়া তোমার বাসা তো এখনো আসেনি তাহলে !”

__” আমার বাসা অবধি আপনার যাওয়া লাগবে না, আপনি এখানেই আমাকে নামিয়ে দিন ৷”

আরু বেশ কয়েকবার হৃদয়কে বললেও হৃদয়ে গাড়ি থামাল না অবশেষে কোন এক নির্জন জায়গায় নিয়ে গাড়িতে থামাল….

__” কি হলো আপনি এখানে গাড়ি থামালেন কেন?”

হৃদয় গাড়ি থেকে নেমে আরূর কাছে গিয়ে বলল ,,,,
__”বেবি তুমি কি মনে করো আমি তোমাকে বাসায় দিয়ে আসতাম , সত্যি হাস্যকর ব্যাপার স্যাপার সব ! তোমার মত মেয়েকে হৃদয় খান তার গাড়িতেও উঠাই না , আমিতো শুধু তোমার সাথে বাসর করার জন্য এনেছি এখানে ৷”

কথাটা শুনে আরু চমকে গেল , রাগ কন্ট্রোল করতে না পেরে ঠাস করে একটা চড় মারল ওকে ৷
__” সত্যিই আপনি এত নিচু মনের মানুষ সেটা আমরা আগে বোঝা উচিত ছিল, সানার কথাটা শোনা উচিত ছিল আমার ৷”

কথাটা শুনে হৃদয় উচ্চস্বরে হেসে বলল,,,
__” তুমি কি মনে করো যার জন্য আমি মার খেয়ে টানা 7 দিন হসপিটালে ভর্তি ছিলাম আমি তাকেইলিফ্ট দেবো ৷”

কথাটা বলতে বলতেই হঠাৎ একটা চিরচেনা কন্ঠসর কানে আসতেই হৃদয় সেদিকে তাকিয়ে দেখল,,,,,

__” কিরে এত রাত্রে দুজন এখানে ? জিএফ নাকি আইমিন আমাদের ভাবি নাকি ?”

আরু আরিসের কথা শুনে অবাক হলো , হঠাৎ করে আরিস এসব কি বলছে , আর এই মুহূর্তে ও আরিশকে সত্যিটা বললেও হয়তো আরিশ কোনো কিছু বিশ্বাস করবে না তাও আরূ বলল,,,,
__” ভাইয়া আপনি ভুল ভাবছেন আর উনি তো আমাকে খারাপ কথা বলছেন ৷”

আরূকে আর কিছু বলতে না দিয়ে হৃদয় আরিশের দিকে তাকিয়ে বলল ,,,,,,
__” কি আজকে আবার আমাকে মারবি তাই তো ? যার কারনে মারবি তাকেই শ্পরষ করে খুবলে খাবো, দেখি তুই কী করিস ৷”
কথাটা বলে যেই আরূর ওড়নাটা ধরে টানতে যাবে তখনই আরিস হৃদয়ের হাত ধরে ফেলল , তারপর আর কোন কথা না , লি দে দানা দান ৷
আরিশ হৃদয়কে এমন মার মারল তাতে মনে হয় না একমাস বিছানা ছেড়ে উঠতে পারবে, হয়তো এরপর আরূ অথবা অন্য কোন মেয়ের দিকে খারাপ নজরে দেখার কথা একবার হলেও ভাববে…..

হৃদয় অলরেডি মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে , আরিশ পকেট থেকে ফোনটা বার করে এম্বুলেন্স ডাকতেই দু মিনিটের মধ্যে এম্বুলেন্স এসে হৃদয় কে নিয়ে চলে গেলো ৷ সবকিছু এত তাড়াতাড়ি হল যেন মনে হচ্ছে সবই আগে থেকে ঠিক করা , আর এম্বুলেন্সটাও যেনো আগে থেকে ডেকে আনা হয়েছিল হৃদয় কে নিয়ে যাওয়ার জন্য…..

এখন ফাঁকা নির্জন রাস্তার মাঝখানে শুধু আরূ আর আরিশ , নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে চারপাশে, আর বিদ্যুতের ঝলকানি তে মাঝে মাঝে আরূর ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠার দৃশ্যটা ভেসে উঠছে ৷

আরূ ভাবেনি ঠিক এমনটা হবে ৷ আর ও আরিশকে না দেখিয়ে হৃদয়ের সাথে না আসলেও পারতো ৷ আরিশকে ছোট করার জন্য এত কিছু করল আর আজ সেই আরিসে ওকে এত বড় সর্বনাশ এর হাত থেকে বাঁচালো ৷ মাঝে মাঝে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাদতে কাদতে হেচকি উঠছে আরূর ৷ হঠাৎ নিজের গালে ধাম করে চড়ের তীব্র ব্যাথা পেতেই কান্নার তীব্রতা বেড়ে গেল ৷ বৃষ্টির ফোঁটাগুলো চোখের জল দিয়ে ধুয়ে মুছে নিয়ে যাচ্ছে…

আরিশ ঠাস করে একটা চড় মারলো ,মেরে বলতে লাগলো,,,,
__” দেখানোর জন্যে এমন কিছু করো যাতে তোমার ভালো হয় তবে এমন কিছু করো না যে নিজের সতীত্ব বিসর্জন দিতে হয় ৷”
বলে পিছু ফিরে চলে যেতে লাগলো আর আরূ তখন ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলল,,,,
__” আমি কি জানতাম যে উনি এতটা খারাপ , এতটা বাজে এতটা পচা ৷ আর এর জন্য আপনি আমাকে মারতে পারলেন ?”

আরূশির কথা শুনে আরিশ আরূর দিকে ঘুরে পকেট এ্ হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে থেকে বললো,,,,
__” লাইক সিরিয়াসলি ! এত বড় অন্যায় করার পরেও এখন আবার আমাকে দোষ দিচ্ছ যে কেন তোমাকে চড় মেরেছি? তুমি কি বুঝতে পারছ না যে কেন চড় মেরেছি নাকি আরেকটা দিলে বুঝবে কোনটা ৷”

আরু গালে হাত রেখে কাঁদতে কাঁদতে বলল,,,,
__” আমাকে ঠিকঠাক করে বললেই তো হতো এভাবে কেউ একটা মেয়েকে চড় মারে ? আমার আম্মু তাই মারেনি কখনো আর আপনি মারলেন ,আপনি খারাপ ৷”

আরুর কান্ড দেখে আরিশ হাসবে নাকি কাদবে কিছুই বুঝতে পারছেনা……

আরিশ এবার ওর আর আরুর মাঝের দূরত্বটা কমিয়ে ওর কাছে এসে বললল,,,,,,
__” তাহলে এখন কি করনীয় ?”

__” ছোটদের কে কেউ মারলে কি করে?”

আরিশ হঠাৎ করে আরুর গালে আলতো করে ঠোঁট ছোয়ালো ৷ এতে আরুর সারা শরীর জুড়ে শিহরন বয়ে গেল, আর অদ্ভুত এক অনুভূতি কাজ করতে লাগলো আরিশের প্লতি যা কখনো হয়নি ৷ আরূশি কিছু বলার ক্ষমতা পাচ্ছে না ,সবটাই যেনো হারিয়ে ফেলে নিজেকে শূন্য মনে হচ্ছে ৷
.আরিশ এবার সরে এসে ওর বৄদ্ধাঙগুল দিয়ে আরূশির গালে হালকা করে স্লাইড করতে লাগলো যে গালে চড় মেরেছে,,,,আর আরু শিউরে উঠছে ক্রমাগত ৷আরিশের ছোয়াতেই নিজেকে হারিয়ে ফেলছে বারবার ৷
__” এতেও যদি আপনার না হয় তাহলে ললিপপ কিনে দেবো, তাও আপনি কান্না থামান ৷”

ললিপপ এর কথা শুনে আরূর নিমেশেই রাগ উঠে গেল কারণ ও এতটা বাচ্চা নয় যে ললিপপ কিনে দিতে হবে কান্না থামানোর জন্য , আরিশ যে এটা বিদ্রুপ করে বললে সেটা ও ভালোই বুঝেছ তাই মুখ ভাঙচি দিয়ে আরিশের থেকএ দূরে সরে গিয়ে বলল,,,, __” লাগবেনা আপনার ললিপপ আর আপনার ভালোবাসা ৷ সব নিজের বউকে বউয়ের জন্য রেখে দিন , আপনি খারাপ , আপনি আমাকে মেরেছেন, আর সুযোগ নিয়ে গালে ,,,,,,,,,”

কথাটা বলে থেমে গেল আরূ ৷

__” গালে কি ?বলেন গালে কি ?”

আরু পিছন করে চলে যেতে লাগলো আর আরিশের উদ্দেশ্যে জোরে চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলতে লাগলো,,,,,
__” এই যে আপনি নামক মিঃ অভদ্রটা হলেন একটা লুচু ৷”

__” আমি কেমন আর কতটা লুচু সেটা আমার বউকেই বোঝাবো আর আরো কি কি করতে পারি করে দেখাবো ৷ আর একা যেওনা রাস্তায় হৃদয় আছে ৷”

আরু আরো একবার আরিশের দিকে তাকিয়ে বলল ,,,,,,
__” সে অন্তত আপনার থেকে ভালো, আমাকে চড় মেরে কান্না থামানোর জন্য ,,,, ধূর ৷”
বলে গটগট করে হাটতে হাটতে চলে গেলো ৷

আরিশ ততক্ষণ সেই চলমান আরুশির দিকে তাকিয়ে ছিলে যতক্ষণ অন্ধকারে সৄষ্টি হওয়া আরুর ছায়মূরতি টা ওর চোখের সামনে থেকে অদৃশ্য হয়ে যায় ৷

আরু চলে যেই ফোনটা বার করে কল করলো,,,,
__”সঠিক সময়ে খবরটা দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ ৷”

বৃষ্টির জলে ভেজা মাথার চুল গুলোকে আলতো করে হাত দিয়ে আলতো করে ঝেড়ে নিয়ে মুখের টেডি smile নিয়ে পকেটে হাত রেখে বাড়ির দিকে রওনা দিল ৷

চলবে,,,,,,

তোমার নেশায় আসক্ত ২ পর্ব-১১

0

#তোমার_নেশায়_আসক্ত
#সিজন:2
#পর্ব:11
#Suraiya_Aayat

সানা আজকে কলেজে এসেছে ,,,,,তবে আজ কলেজে এসে আরুকে খুজতেই অনেকটা টাইম পার করে ফেলেছে,,সবজায়গায় খুজেছে তবে পাইনি কোথাও ৷
সানা বাধ্য হয়ে এবার আরুর কাছে ফোন করলো ৷ অন্যদিনের মতো ও আজকে সকালে আর আরুকে ফোন করেনি তার কারণ আরুর উপর কিছুটা হলেও ওর রাগ ছিল আরিশকে নিয়ে মিথ্যা বলার কারনে ৷ সানা জানতো যে আরিশ এরকমটা করতেই পারে না তবুও এক মুহূর্তের জন্য হলেও সন্দেহ হয়েছিল আরিশের উপরে পরে কিন্তু পরে যখন জানতে পারলো যে আরূ যে ছবি গুলো দেখিয়েছে সমস্ত টাই মিথ্যা , তখন আরুর উপর প্রচন্ড রাগ হচ্ছিল ওর ,সেই কারণে আজকে সকালবেলা আর ফোন করেনি….
বাধ্য হয়ে না পেরে বিরক্তি সহকারে ফোনটা হাতে নিয়ে আরূর ফোনে ফোন দিতেই দুইবার থেকে তিনবার রিঙ বাজতেই ফোনটা ধরলো আরূ ৷
আরূ উত্তেজিত হয়ে বলল ,,,,,
__” সামনের দিকে তাকা আমি এখানে ৷”

সানা বুঝতে পারল যে আরূ ম্যাডাম চলে এসেছে আর তাই এখন সেই সংকেত বার্তাই ওকে প্রেরন করছে , আর তার সাথে ওর রিগ্রেটও হচ্ছে এটা ভেবে যে এতখন ধরে রাগ দেখিয়েও শেষে এসে সবটাই বিফলে ৷
বিরক্তি নিয়ে পিছন দিকে ঘুরতেই দেখল আরূ হাত উচিয়ে ওকে ঈশারা করে ডাকছে….

আরারু সাথে একটা মেয়েকেও দেখলো সানা, মেয়েটার হাবভাব , চালচলন দেখে সানার যথেষ্ঠ শান্ত মনে হচ্ছে তবে আরুর সাথে ওর ফ্রেন্ডশিপ কি করে হলো সেটা বুঝতে পারছে না , মানে আরুর সাথে ফ্রেন্ডশিপ হওয়াটা কারো হয়তো কারোর জন্য নেহাতই কাকতালীয়ভাবে ছাড়া আর কখনোই কোনভাবে সম্ভব নয়…..

সানা ওখানেই ঠাই দাঁড়িয়ে রইলো,, আরূর কাছে গিয়ে খোশমেজাজে আলাপচারিতা করার কোন ইচ্ছা ওর নেই, তবে সানা না করলেও আরূ যে করবেই তা ওর মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে ৷

__” এই দেখ এটা আমার নতুন ফ্রেন্ড তিথি ,,,,,৷”

__” হাই , আই এম তিথি ৷”

__” hlw আমি সানা ৷”

__” আরুর থেকে তোমার কথা অনেক শুনেছি, তবে তা শুনে তোমাকে একদমই ওর মতো মনে হয়নি ৷”

__” তোরা কি এখানেই সব গল্প করবি নাকি ক্লাসে গিয়েও কিছু বলবি !”

__” ওকে চল ৷”(তিথি)

__”এই মেয়েটা এত শান্তশিষ্ট আর এ আরূর সাথে যেচে ফ্রেন্ডশিপ করতে গেছে , হোয়াই ? এর মাথায় কি ঘিলু নাই,? তার ছিড়া? এ মেয়ের জীবন ত্্যনাত্্যনা হইয়া যাবে ৷ আল্লাহ তুমি এই মেয়েরে সুবুদ্ধি দিয়ো ৷(সানা মনে মনে )

ওরা ক্লাসে ঢোকার কিছুখন পরই ক্লাস শুরূ হইছে, তাই সানা তিথির সাথে বেশি কথা বলার সুযোগ পাই নাই ৷
টিচার নিজের মতো পড়াচ্ছেন আর সানা তখন সুযোগ পেয়ে ফিসফিস করে তিথিকে বললল,,,,,
__” আচ্ছা তোমার সাথে আরুর ফ্রেন্ডশিপ কিভাবে হলো ৷”

__” ধপ করে ওর পাশে বসে ৷”(তিথি অন্যমনস্ক হয়ে)

__” এটা কেমন কথা !”

__” ওপস সরি, আসলে sirকি পড়াচ্ছিলেন তাই ফলো করছিলাম আরকি , তাই তুমি কি বললা শুনিনাই ৷”

__” ইটস ওকে,,,বাট তোমার সাথে ওই পাগলটার ফ্রেন্ডশিপ হলো কিভাবে ৷”

__” আরে আর বলোনা class এ লেট হয়ে গিয়েছিলাম তাই টিচার আর ক্লাসে এলাও করেননি তাই বাধ্য হয়ে ওর পাশে বসলাম তারপর গল্প শুরূ ৷”

__” তুমি কি যানো ও কেমন ?

__” একদিনের পরিচয়ে এটুকু বুঝেছি যে প্রচুর কথা বলে কিন্ত খুব ভালো মনের মানুষ ৷”

__” ঠিক ই বলেছো বাট মাঝে মাঝে অনেক দুষ্টুমি ও করে ৷ কালকে কি করছে জানো?”

__” কি?”

__” আমার ভাইয়া তার ফ্রেন্ড এর জিএফ র কান্না থামানোর জন্য ওই আপুর কাছে ছিলো আর ও সেই সব পিক নিয়ে আমার আম্মুকে দেখিয়েছে,,,,,আর বলেছে যে ভাইয়ার মতো এত ভালো মানুষ কি করে প্রেম করে? ভাইয়াও অনেক সেয়ানা ব্লা ব্লা,,,,,,,”

__” ওহ আল্লাহ তাহলে কালকের ওই ভাইয়াটা তোমার ভাই?”

__” হমমম,বাট তুমি হঠাৎ এমন বলছো কেন?”

.__” আরে আমি তো দেখলাম যে ও পিকটা তুললো আর আমি আসক করতেই বললল যে দরকারি ৷”

__” এই তোরা দুজন কি এতো বলছিস রে আমাকেও বল ৷”

__” আসলে ও বলছিলো যে আরু খুব ভালো ৷”(তিথি )

__” সত্তি মানে সানা আমারে ভালো বলেছে,ওই হো মে তো খুশিসে নাচুঙগি ৷”

সানা তিথির দিকে বাকা চোখে তাকালো ৷আর তিথিও দাত বার করে করুন সুরে হাসছে🙂৷

কালকে থেকে আরিশের exam তাই সারাদিনের বেশিরভাগ সময়টাই পড়াশোনা নিয়ে আছে ৷ ওর friend দের কোন হেল্প লাগলে সবাই ওর কাছেই আসে , তবে আজ অব্দি কেউ আরিশের রূমে ঢোকেনি তা একটাই কারন ওরা যানে যে অযিশ কখনো এলাও করবে না ৷ ওদের খুব দেখার ইচ্ছে যে এমন কি আছে আরিশের রূমে যে কারনে ও কাউকে ওর রুযে ঢুকতে দেয় না ৷ তবে এত ইচ্ছা সত্বেও আরিশ চায়না তাই ওরা কখনো আরিশকে জোর করেনি ,তার কারন ওরা যানে যে আরিশ যা কিছু বলে বা করে তা ভেবেচিন্তেই করে ৷

Exam এর শুরূটাই math দিয়ে ৷প্রান্তর একটা math problem সলভ না হওয়াই আরিশে রূমের দরজায় টোকা দিল ৷ সঙ্গে সঙ্গে ওপাশ থেকে উওর এলো,,,,
__” ওয়েট,কামিং ৷”

কথাটা শোনামাএই প্রান্তর মুখে একচিলতে হাসি ফুটে উঠলো , আজকে ওর সত্যিই খুব জানতে ইচ্ছা করছে যে আরিশের রুমটায় কি আছে , আর আজকে যদি আরিশের কাছে এটুকু ছোট্ট আবদার করে তাহলে আরিশ কি ওকে ঐই আবদার থেকে বঞচিত করবে ! এসব কল্পনা জল্পনা করতে করতেই আরিশ রূম থেকে বেরিয়ে এলো ৷

__” কিছু বলবি ?”

__” এই math টাই একটু প্রবলেম হচ্ছে ,মিলছে না অনেকখন ধরেই ট্রাই করছি ৷”

__” আরিশ একবার খাতাটাই থাকা প্রশ্নের দিকে চোখ বুলাতেই খাতাটা নিয়ে ফটাফট math টা সলভ করে ফেললল আর খালি মুখে বলছে,,,,এর পর এই হবে তারপর এই আর এরপর এভাবে ব্যাস , ইজি ৷”

__” উই আর নট সেম ব্রো এন্ড দ্য৷টস হোয়াই ইউ আর ক্লাস টপার ৷”

প্রান্তর কথার পরিবর্তে আরিশ কেবল মুচকি হাসলো বরাবরের মতো ৷

__” একটা কথা বলবো আরিশ কিছু মনে করবি না তো ?”
__” কয়টা থাপ্পড় খেলে সোজা হবি বলতো !”

__” হিহি 😁 ৷”

__” দাঁত না বার করে তাড়াতাড়ি বল ৷”

__” তোর রুমটাই আজকে একটু ঢুকতে দিবি মানে কি এমন আছে দেখতাম আরকি 😩😖 ৷”

__” ওকে কাম ৷”

প্রান্তর যেনো আরিশের বলা কথাটা বিশ্বাস হলো না,,,,,অবাক হয়ে বলল ,,,,
__” আর ইউ কিডিং ঊইথ মি ?”

আরিশ রুমের দরজা খুলে দিয়ে বললল,,,,
__” নাউ এন্টার ৷”

সাহেলের যেনো এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না তবে কৌতুহলের শেষ নেই রূমটা নিয়ে তাই সুযোগ ও কোনভাবেই ছাড়তে চাইনা ৷ প্রান্ত ধীরপায়ে রূমে ঢুকতেই আরিশ দরজাটা বন্ধ করে দিলো ৷

প্রান্ত রুমের ভিতর ঢুকে চমকে গেলো,,,,,
__” আরিশ এগুলো কি? ”

__” আমার বউ ৷”

__” মানে এই মেয়েটা ! সত্তি নাকি আমি স্বপ্ন দেখছি কোনটা ! আর সারা ঘর জুঁড়ে এতোকিছু , আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না ৷”.

__” ভালোবাসা বুঝিস ! ও হলো তাই ,,,,আমার প্রানভ্রমর, আমার আকাশের জয়ন্ত নক্ষত্র , আমার জোছনা রাতের চাঁদ , যাকে নিজের থেকেও বশি ভালোবাসি আমি ৷ আমার ছোট্ট পাখি ৷”

__” বাট কিভাবে এতকিছু?”

__” রুমে ঢুকতে দিয়েছি এটাই অনেক ,আর বাদবাকিটা পরে বলবো ৷ এগুলো তোর আর আমার সিকরেট ৷ কেউ জানলে তোর খবর আছে ৷”

__” আমি কাউকে বলবো না বাট দোস্ত আমার এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না ৷”

__” তুই এখন যা আমার অনেক পড়াশোনা বাকি,,,,,বাট একবার ঢুকতে দিয়েছি বলে বারবার নয় ৷”

__” ওকে 😁 ৷”

প্রান্ত রূম থেকে বেরিয়ে গেল ৷
আরিশ pant এর পকেটে নাত রেখে সামনের ছবিটার দিকে তাকিয়ে বললল ,,,,,,
__” আর বেশিদিন অপেক্ষা করাবোনা নিজেকেও আর তোমাকেও ৷ এই তুমি নামক নেশাটাই তো বারবার পাগল হয়ে যাচ্ছি , আচ্ছা তুমিই বলো এভাবে কি আর থাকা যাই ! #তোমার_নেশায়_যে_আমি_আসক্ত তা কি তুমি জানো না ?”

#চলবে,,,,,,

তোমার নেশায় আসক্ত ২ পর্ব-১০

0

#তোমার_নেশায়_আসক্ত
#সিজন:2
#পর্ব:10
#Suraiya_Aayat

শেষের ক্লাসকাই আরূ যেন আর বসে থাকতে পারছে না ৷ওর মনটা আনছান করছে বাড়ি যাওয়ার জন্য , গিয়ে ওর আম্মুকে কখন ছবিটা দেখাবে আর আরিশের নামে গোটা কতক বাণী শুনিয়ে দেবে ওর মাকে ৷ আর এটাও ঠিক করে রেখেছে যে কথা বলা শেষে একটা ডায়লগ দেবে যাতে নিজেকে একটু সেরা প্রমাণিত করা যায়,,,,,,,
__” তোমরা সবসময় আমাকে নিয়েই বলো , দেখো এখন উনিও ধোয়া তুলসী পাতা নয় , ওনার থেকে তোমার মেয়ে আরুশি অনেক ভালো ৷ আল্লাহ এসি লারকি সাব কো দে …”

কথাগুলো মনে মনে আরূ যতবার ভাবছে ততবার ভেবেই যেন তিড়িং বিড়িং করে লাফাতে ইচ্ছা করছে ওর, আর বারবার ওর মায়ের মুখে রিয়েকশন টা ভাবার চেষ্টা করছে যে ছবিটা দেখে ওর মায়ের রিয়াকশন টা ঠিক কেমন হবে ৷

বাম হতটা Bench এর ওপর রেখে ডান হাত দিয়ে অস্থিরতায় bench এর ওপর ডান হাতের আঙ্গুল গুলো বারবার তিড়িংবিড়িং করে লাফাচ্ছে যেযনটা তবলা বাজানোর সময় হয় ৷ ওর অস্থিরতা দেখে তিথি না পেরে বলেই ফেলল ,,,,,,,
__” কিরে তুই এমন করছিস কেন ? কোন কিছু নিয়ে চিন্তিত ? ক্লাসে তো তোর একদম মনোযোগ নেই ৷”

আরু বিরক্তি নিয়ে বললো,,,,,,
__” এই টাকলু টার ক্লাস টা যে কখন শেষ হবে বুঝতেই পারছি না ৷”

__” এভাবে কেউ বলে! নাউজুবিল্লাহ ৷”

আরূ মুখ টিপে হেসে বলল,,,,,
__” পরে এই নাউজুবিল্লাহ যদি আমি আলহামদুলিল্লাহতে চেঞ্জ না করেছি তো আমার নামও আরূ নয় ৷ আমার সাথে আর দুদিন থাক সব ঠিক হয়ে যাবে…”

তিথি অবাক চোখে ওর দিকে তাকাল কিন্তু ততক্ষণে অলরেডি ক্লাস শেষ, টিচার রুম থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন ৷

আরু ব্যাগটা কাঁধে নিতে নিতে বলল ,,,
__”কত পার্সেন্ট মার্কস পেয়েছিস ফাইনাল এক্সামে?”

তিথি মাথানিচু করে বলল,,,,,,
__” সেভেন্টি পারসেন্ট ৷”

আরু একটু ভাব নিয়ে বলল,,,,,,
__” সারাবছর আমি ফাজলামো করে ফাইনালে গিয়ে 78 পার্সেন্ট মার্কস নিয়ে আসি , নট সো গুড নাম্বার বাট আমি এতেই খুশি ৷ বলছিতো দুদিন আমার সাথে থাক সব কিছুর সাথে মানিয়ে শিখে যাবি…”

তিথি হঠাৎ অন্যমনস্ক হয়েই বললো,,,,,,
__” আল্লাহ সবকিছুরই একটা ব্যবস্থা করে রাখে,তাই একদিন এমন একজন আসবে যে তার জন্য তুই নিজেই নিজেকে চেঞ্জ করে ফেলবি ৷”

আরু লাফাতে লাফাতে বললল,, ,,
__” কাশ এমন দিন আসতো তাহলে আমার নিজেকে আর নিজেই পাল্টাতে হতো না সে চেনজ করে নিত, বাট আমিতো জানি এমন কেউই আসবে না যে তার জন্য নিজেকে আর পাল্টাতে হবে, বাট আমি নিজেকে change করতে চাই ,তারই হতে চাই, বাট সেটা কবে? ওনলি আল্লাহ নোস ৷”
এই বলে আরু মুচকি হেসে রুম থেকে বেরিয়ে……..

তিথির হাত ধরে ভার্সিটির গেটটা পার করতে না করতেই ততক্ষণে তিথির বাড়ির এড্রেসটাও আরুর জানা হয়ে গেছে, তিথির বাসা আর ওর বাসার 15 মিনিট আগে ৷
তাই দুজনে ঠিক করল এবার থেকে একসঙ্গে বাড়ি যাবে….

গেট পার করে বাইরে গিয়ে দাঁড়াতেই দেখল আরুর বাসা থেকে গাড়ি পাঠিয়েছে….
__” চল আমার সাথে, আমার গাড়িতে করে তোর বাসায় লিফ্ট দিয়ে দিচ্ছি ৷”

__”ওকে চল ৷”

গাড়িতে উঠে আরু ড্রাইভার কে বলল,,,,,
__” পলাশ তোকে এর পরদিন থেকে আর আসতে হবে না ৷”

__” কেন আরু আপি আমি কি কোন ভুল করে ফেললাম?”

__” আমি আমার এই ফ্রেন্ড এর সাথে বাসায় যাব রোজ তাই ৷” (সনার বাড়ি অপোজিটে )

__” কিন্তু ৷”

__” কোন কিন্তু নয় , আমি যা বলছি সেটাই ফাইনাল ৷ এটা আবার বাসার কাউকে বলার দরকার নাই…”

__” আপি তবুও কেমনে কি?”

__” তোর জিএফটা কিন্ত সেই, ইচ্ছা করে না ওর সাথে ঘুরতে যেতে?”

পলাশ লজ্জা পেয়ে গেল,,,,,,

__” থাক থাক আর লজ্জা পেতে হবে না, আমি সব জানি,,,,, রোজ বিকালে এই গাড়ি করে ওকে নিয়ে ঘুরতে যাবি ,ঠিকাছে?”

__” আচ্ছা আপি ৷”

__” বাট হ্যাঁ বাড়িতে কিন্ত কেউ না জানে, জানলে তোর খবর আছে ৷”

বাড়ি ফিরে আরু গাড়ি থেকে নেমেই ছুটল বাসার ভিতরে , ও খুব এক্সাইটেড এই ছবিগুলো নিয়ে, তা তার যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওর আম্মুকে দেখানোর জন্য ভিষন উত্তেজিত ৷

বাড়িতে ঢুকেই চেঁচাতে লাগলো,,,

__” আম্মু , আম্মু কোথায় তুমি ? তোমার কে আমি আজ এমন কিছু দেখাবো যা দেখলে তুমি পাগল হয়ে যাইবা ৷”

__” ——-”

__” আম্মু ! কোথায় তুমি ?”

আরমান সাহেব নিজের রুম থেকে বেরিয়ে এসে বললেন,,,,,,
__” তোর আম্মু তো একটু তোর অনিকা আন্টির বাসায় গেছে , এখনো ফেরেনি মানে আসতে হয়তো লেট হবে ৷”

__” কি বলবো নি ? বাড়িতে নেই মানে ? আম্মু এখন বাড়িতে না থাকলে কি করে হবে !”

__” জানিস তো আসলে আর ফিরতে চায় না ৷”

আরু চিন্তায় পড়ে গেল কথাটা শুনে তারপর মাথায় অনেক আইডিয়া চলে এলো ৷
আরু প্রথমে কথাটা শুনে অবাক হলেও হঠাৎ মাথায় একসাথে অনেক কিছু ভাবনাচিন্তা ঘুরতেই জোরে বলে উঠলো,,,,,,
__” আচ্ছা আমিও আসছি ৷”বলে তারাহুরো করে বেরিয়ে গেল ৷

__” কিরে তুই আবার কোথায় যাচ্ছিস?”

__” ওই যে অনিকা আন্টির বাড়ি…”

__” মেয়েটাও হয়েছে মায়ের মত ৷” বলে উনি খবরের কাগজটা নিয়ে পড়তে বসে গেলেন ৷

আরু যাচ্ছে আর ভাবছে যে,,,,,,
__” যাক ভালোই হলো, একসাথে দুজনকেই বলা হয়ে যাবে, একসাথে দুজনে মুখের রিয়াকশন টা দেখতে পারবো ওয়াও এর থেকে সুন্দর মোমেন্ট আর কি হতে পারে ৷ আল্লাহ তুমি গ্রেট, আমাকে কত্তো ভালোবাসো আর হেল্প করো …..”

__” আন্টি ছবিগুলো আমি আজকেই কলেজে তুলেছি আর সানা গেলে ওউ দেখতে পেত ৷ আর আমি আজ না গেলে তো জানতেই পারতাম না যে আরিশ ভাইয়ার মতো মানুষও প্রেম করে ৷ বাবা উনারও গার্লফ্রেন্ড আছে ৷ ভাবা যাই ৷”

আরিসের গার্লফ্রেন্ড আছে কথাটা শোনার থেকেও উনি আরো বেশি অবাক হলেন যখন আরু আরিশকে ভাইয়া বলে ডাকলো ৷

__” কি বললি মামনি তুই! ভাইয়া ! কে তোর ভাইয়া?”

__”আমিতো আরিশ ভাইয়ের কথা বলছি ৷”

__” ওকে ভাইয়া বলবি না একদম ৷”

_,” কেন ভাইয়া বললে সমস্যা কি ?আর ভাইয়াকে ভাইয়া বলবো না তো কি বলবো ?” (বাঁকা চোখে তাকিয়ে)

_,” আরে তুই ছাড় না ,আরূ তুলে এনেছে ছবি গুলো ভালো করে দেখ , ওখানে তো পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে যে আরিশ মেয়েটার চোখের জল মুছে দিচ্ছে , তাহলে সত্যিই কি আরিশের সাথে মেয়েটার কোন সম্পর্ক আছে ? ”
কথাটা বলে দুজন দুজনের দিকে মুখ করে তাকালো ৷

অনিকা খান এবার রেগে গেলেন , তাড়াতাড়ি করে আরিশ এর কাছে ফোন দিল….
_____________________

ভার্সিটি থেকে কিছুক্ষণ আগেই বেরিয়েছে আরিশ, তূর্য ড্রাইভ করছে আর ওরা তিনজন বসে আছে গাড়িতে৷

হঠাৎ ফোন আসছে ফোনটা ধরতেই দেখলে ওর মায়ের ফোন , তা দেই মুখে হাসি ফুটে উঠল….

অনিকা খান বেশ রেগে বললেন…..

__” তোর সাথে যে মেয়েটা এখন বসে আছে সেই মেয়েটার কাছে ফোনটা দে ৷”

হঠাৎ ওর মায়ের এমন কথায় আরিশ প্রথমত খেয়ে গেল , কিছুই বুঝে উঠতে পারল না , অবাক হয়ে বললো ,,,,,
__” এসব কি বলছ তুমি আর এখানে মেয়ে আসবে কোথা থেকে ?”

__” আমি জানি তোর সাথে এখন একটা মেয়ে আছে যাকে ভার্সিটিতে গিয়ে চোখেতে জল মুছে দিয়েছিলি ৷ তার কাছেই দে….”

আরিশ এবার বুঝতে পারল যে ওর আম্মু কি বোঝাতে চাইছে, বেশি কিছু আর না বলে হাতটা সাহেলের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে ওর হাতে ফোনটা দিয়ে দিল ৷

সাহেল ইশারা করে আরিশকে জিজ্ঞাসা করল,,,,,,
__” আমাকে দিচ্ছিস কেন আন্টির ফোন?”

আরিশ জোরেই বলল,,,,,
__” আম্মুর কথা বলতে চাই তাই৷”

__” আমার সাথে ?”(অবাক হয়ে)

__” হমমম ৷”

সাহেল ফোনটা কানে ধরতেই অপর দিক অনিকা খান বেশ ঝাঁজালো কণ্ঠে বলে উঠলেন,,, ,,,,

__” কি বলে তুমি আমার ছেলেকে বশ করেছো হমমম, আমার এত শান্ত শিষ্ট ছেলেটা তোমার মত একটা মেয়ের পাল্লায় পড়লো কি করে? জানি আমার ছেলেটা কেমন বিগড়ে গেছে এখন, সব তোমার জন্য ৷ বলে আরো অনেক কিছুই সাহেলকে শোনাতে লাগলেন ৷

আরিশ আবার জোরে বলে উঠলো,,,,,,
__” তোহার কথা বলছে আম্মু , তাই সব সত্তিটা বল ৷”

সাহেলের আরিশ কথাটা শুনেই হয়ে গেল, তারপরে আরিশের আম্মুকে সবটা জানালো ৷

আরিশের মা এখন আরিশের সাথে বেশ শান্ত ভাবে কথা বলে কলটা কেটে দিলেন ৷

ফোনটা হাতে নিয়ে আরিশ মনে মনে ভাবছে,,,,,,
__” ব্রিলিয়ান্ট এন্ড এক্সপেক্টেড ,এই জন্যই তো এতো ভালোবাসি বউ ৷”
_______________

ফোনটা রেখে অনিকা খান স্বস্তির নিঃশ্বাস নিয়ে বললেন,,,,,
__” আমি জানতাম আমার ছেলে এমনটা কিছুতেই করতে পারে না ৷”

আরু অবাক হয়ে বললো,,,,
__” মানেটা কি?”

__” আরে ওটা ওর ফ্রেন্ড সাহেল এর গার্লফ্রেন্ড৷”

কথাটা শুনে আরু ও যেন আকাশ থেকে পড়ল,
আর যেন কথাটা বিশ্বাস হলো না ও তাই বলল আনটি মিথ্যা কথা বলছেন উনি , হয়তো শিখিয়ে দিয়েছেন না হলে লোকের গার্লফ্রেন্ডের চোখে জল কেন মুছতে যাবে উনি?

আরুর মা ধমক দিয়ে বললেন,,,,,
__” আরিশ যখন বলেছে যে ওটা সাহেলের প্রেমিকা তখন তাই৷ তুই বেশি কথা বলিস না আর ৷”

দুইজনের এমন কর্মকাণ্ডে আরু যেন বোকা বনে গেলো , মনে মনে আরিশ কে এখন হাজারো গালাগালি দিচ্ছে, কত আশা নিয়ে ছবিগুলো তুলেছিল সবকিছু মাঠে মারা গেল……

রাত দুটো,,,,,

পড়াশোনা শেষ করে আরিস মন দিয়ে ফটো ফ্রেম টাতে ছবিটা ঠিকঠাক করে গুছিয়ে রেখে দেওয়ালের সঠিক সেই নিরধরিত জায়গায় ফটো ফ্রেমটা আটকালো ৷

আরিশ মুচকি হেসে বলল,,,,
__” আর একটা ফ্রেম ফাঁকা আছে তবে তা আমাদের দুজনের একসঙ্গে ছবি ছাড়া অসম্পূর্ণ আর তার জন্য তোমাকে আমার কাছে আসতে হবে , এতটাই কাছে আসতে হবে যে যাতে আমার শরীরের সাথে তোমার শরীর মিশে যাই, এতটাই ভালোবেসে মুহূর্তটা তৌরি করতে হবে যাতে চাইলেও তুমি তা ভুলতে না পারো…
যেদিন তোমার ভালোবাসা তুমি আমার কাছে প্রকাশ করবে সেদিন ভালোবেসে তোমাকে কাছে টেনে তোমার ঠোঁটদুটোকে আলতো করে আমার ঠোটদুটো দিয়ে স্পর্শ করবো সেই ছবিটাই ফুটে উঠবে ৷ হাজারো ভালোবাসার স্মৃতি হয়ে থাকবে , যতোই হোক আমার একটাই মাত্র বউ ৷
আর আজ সবকিছুর পানিশমেন্ট বিয়ের পরে সুদে আসলে উসুল করে নেব ৷ বি রেডি ফর দ্যাট ৷

#চলবে,,,,,,

তোমার নেশায় আসক্ত ২ পর্ব-০৯

0

#তোমার_নেশায়_আসক্ত
#সিজন:2
#পর্ব:9
#Suraiya_Aayat

আরূ আজকে বেশ দেরি করে ঘুম থেকে উঠেছে, অন্যদিন ওকে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠতে হয় সানার জন্য কারণ যতক্ষণে ও ঘুম থেকে উঠে ততক্ষণে সানা কলের পর কল করেই যাই ওকে রেডি হওয়ার জন্য ৷ আর ঘুমের মাঝে বারবার কল আসলে তা অত্যন্ত বিরক্তিকর একটা অনুভূতি সেই কারণে আরোশী নিজের প্রিয় ঘুমের আত্মসম্মান বিসর্জন না দিয়ে তাড়াতাড়ি উঠে পড়ে রোজ ‌ ৷ রাতে আবার তারাতারি ঘুমিয়ে পড়ে কারণ ও হলো চিরকালের ফাঁকিবাজ,পড়তে বসতে ইচ্ছা করে না ওর ৷ রাতে টিউশন থেকে ফিরে কোনরকম পড়াগুলো একবার চোখ বুলিয়ে ফোন নিয়ে বসে যায় ৷ ওর এসব কাজৈ ওর বাড়ির লোক সকলেই অভ্যস্থ প্রায় ৷ বলতে গেলে ওনারাও হাঁপিয়ে গেছেন এসব দেখে ৷ তবে এসব ব্যাপার যেন আরূ গায়ে মেখে নেয় না খুব একটা……
তবে রেজাল্ট যে খুব খারাপ হয় তেমনটাও নয় , প্রায় 75 কিংবা 78 % চলে আসে তাতেই ও খুশি…

বিছানা থেকে উঠে বসেছে তবে ঘুমটা যেন আজকে এখনো ছাড়ছে না, কালকে রাতেও বেশ তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়েছে, ওর আলাদা বাবুসোনা থাকলে তখন হয়তো অন্যরকম কিছু হতো….

কালকের কোনো ঘটনা আরূ ওর মাকে বলে নি, এমনকি আরিস যে ওকে এতটা রাস্তা বাড়ি পৌঁছে দিয়ে গেছে সেটাও বলে নি, বললে হয়তো ওর মা হাজারখানা প্রশ্ন করে বসতো সেই কারনে…..

অন্য দিন যেখানে 15 মিনিটের মধ্যে রেডি হয়ে যায় আজকে আরূ সেখানে আধঘন্টা সময় পার করলো আলসেমি করে,ও জানে যে আজকে প্রথম ক্লাসটা নির্ঘাত মিস করবে তাতে কি ওর প্রিয় ফোনটা তো আছে ওর সাথে……আর আজকে আবার সানা ও যাবে না ৷

আরূ একটা নর্মাল গাউন পরেছে আর সাথে জিন্সের প্যান্ট , স্ট্রেইট চুলগুলো ছেড়ে দিয়েছে যেগুলো কাঁধ ছাড়িয়ে কোমর অব্দি পড়েছে, ঠোটে হালকা গোলাপী রঙের লিপস্টিক আর কানে একটা নরমাল ঝুমকো পরেছে , আর হাতে নীল রঙের কাঁচের চুড়ি পড়েছে, কাঁধে ব্যাগটা নিয়ে নিচে নেমে এলো ব্রেকফাস্ট করার জন্য…..

ব্রেড এ একবার কামড় দিতেই ওর মায়ের প্রশ্ন ছুটে এলো ওর দিকে,,,,,,
__” কিরে ড্রাইভার বলল তুই নাকি কালকে একা একা হেঁটে বাড়ি এসেছিস, এটা কি সত্যি আরূ ?”

__” হ্যাঁ সত্যি ৷ “(ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে )

আরমান সাহেব ধমক দিয়ে বললেন,,,,,
__” এগুলো কি ছেলেখেলা পেয়েছো তুমি , এত রাতে একটা একলা মেয়ে কিভাবে আসলে….”

__”তো কি হয়েছে আমি যথেষ্ট বড় হয়েছি একা আসতেই পারি এতে কোন প্রবলেম আছে তা আমি দেখছি না ৷”

আরুর মা এবার জোরে ধমক দিয়ে বললেন ,,,,,
__”আজকালকার সমাজ নিয়ে তোর কোন ধারনা আছে যে এসব কথা বলছিস , যদি তোর কোন একটা বিপদ হত তাহলে কি হতো বলতো !”

এদিকে আরমান সাহেব আর এদিকে আরুর মা দুজনে মিলেই সমানতালে আরুকে বকে যাচ্ছে, তাই আরু এবার বাধ্য হয়ে বলল,,,,,
__” আমি একা আসিনি, উনি আমাকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে গেছে সেফলি ৷”

ওনারা দুজনে অবাক হয়ে একসঙ্গে বললেন,,,,,
__” কে?”

__” কে আবার তোমার প্রিয় কলিজার বান্ধবী আইমিন অনিকা আন্টির ছেলে, কি যেন নাম উনার ? হোয়াটএভার ! আমার জানার কোন ইচ্ছা নেই ৷”
বলে আরিশকে হাজারো বকা দিতে দিতে বেরিয়ে গেল আরু ৷

আরু চলে যেতেই আরুর মা মুচকি মুচকি হাসছেন,,,

__” কিগো কিছু বুঝলে?”

__” আমার তো মনে হচ্ছে এখন ব্যাপারটা আরও সহজ হয়ে গেল ৷”

__” হ্যাঁ তাইতো দেখছি, আমি আজকেই অনিকার বাড়িতে গিয়ে ওকে খবরটা দেব ৷”

আরমান সাহেব অবাক হয়ে,,,,,,
__” খবর দেওয়ার জন্য বাড়িতে যাওয়ার কি দরকার , ফোনে বললেই তো হয় !”

__” আরে তুমি বুঝনা কেন এত বড়ো খুশির খবর ওর বাড়িতে না গিয়ে বললে হয় , দুজনে একসাথে গলা মিলাবো না !”

বলে উনি হাসতে হাসতে নিজের মনে কিছু বিড়বিড় করতে করতে রুমে চলে গেলেন ৷

আরমান সাহেব বিড়বিড় করে বললেন,,,,
__” বান্ধবীর সাথে দেখা করার সুযোগ পেলেই হয়…”

যেমনটা আরু ভেবেছিল ঠিক তেমনটাই হলো, ভার্সিটিতে ঢুকতে প্রায় কুড়ি মিনিট লেট করেছে ও , ক্লাস 40 মিনিটের হয় তারমানে এখনো ওকে একা একা আরো কুড়ি মিনিট বসে থাকতে হবে , তাই আর অপেক্ষা না করে কিছু ভার্সিটির সবুজ ঘাসের উপরে ফোনটা নিয়ে বসে পড়ল, পারলে ঘাসের ওপর শুয়ে পড়ে শুধু মান সম্মানের খাতিরে তা করছে না, ফোন পেলে আর কিছু চাইনা ওর….

ইউটিউবটা অন করে এখন horried henry দেখছে আরূ ৷ এই কার্টুনটা ওর বড্ড বেশি পছন্দের ৷ সেখানে হ্যানন্ড্রি নামক চরিত্রের সাথে নিজের অনেক মিল পাই বলেই হয়তো বেশি ভালো লাগে ওর কাছে ৷ Handry নিজেকে যেমন পৃথিবীর সবথেকে বদমায়েশ আর দুষ্টু বলে মনে করে তবে আরুশি সরাসরি নিজেকে ত না মনে করলেও মাঝে মাঝে ওর মন থেকে এমনটাই ফিল আসে….

বেশ মনোযোগ দিয়ে ভিডিওটা দেখছে, আর ভিডিওটার প্রত্যেকবারের ঘটনার সাথে আরুর মুখের রিএকশনটাও কেমন চেঞ্জ হচ্ছে , কখনো বা হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে আবার কখনোবা Handry র জন্য দুঃখ পাচ্ছে ৷
হঠাৎ পাশ দিয়ে একটা মেয়ের জোরে দৌড়ে সামনের দিকে ছুটে যেতেই মনোযোগে কিছুটা হলেও ব্যাঘাত ঘটলো ৷ একবার ফোন থেকে চোখ সরিয়ে পিছনে তাকিয়ে দেখল একটা মেয়ে দূরে দাঁড়িয়ে রয়েছে ওদের রুমের সামনে হয়তো প্রফেসর স্ট্রাইক্টলি রুমে ঢুকতে বারণ করে দিয়েছেন লেট হওয়ার জন্য , তবে আরু এমনটা করেনি , ঢুকতে দেবেনা ও জানে তাই আর চেষ্টা করেও দেখেনি একবারো….

আবার মেয়েটার থেকে চোখ সরিয়ে পুনরায় ফোনের দিকে মন দিতেই হঠাৎ মনে হল পাশে কেউ ধপ করে বসে পড়েছে….
চোখ ঘুরিয়ে তাকাতেই দেখলো ওই মেয়েটি ওর পাশে এসে বসে আছে মুখটা কাচুমাচু করে….

__” কি হইছে এমন করে আছো কেন ? জানি রুমে ঢুকতে দেয়নি তাইনা !”

__” হমম, তোমাকেও দেয়নি রুমে ঢুকতে?”

__” আরে না আমি তো নিজেই ঢুকিনি , আমি জানি উনি অপমান করবেন আর তাই উনার কথা শুনার কোন ইচ্ছা আমার নেই ৷”

__” তুমি তো বেশ বুদ্ধিমান, যদি আমারও এমন বুদ্ধি থাকতো !”

__” 😎,সে তো আমি হবোই ৷ বাই দ্যা ওয়ে তোমাকে আজকে আমি ফার্স্ট দেখছি ৷”

__” ওহ আমি তিথি আর তুমি?’

__” আমি আরুশি , আরু বলে ডাকতে পারো৷”

ক্ষনিকের আলাপেই দুজনের বেশ বন্ধুত্ব হয়ে গেল , আরু খুব সহজেই কারও সঙ্গে বন্ধুত্ব করে নিতে পারে কিন্তু সেটা সবার সাথে করে না….

দুজনে বেশ কিছুক্ষন বকবক করার পর ক্লাস রুমের দিকে এগিয়ে যেতেই হঠাৎ আরু থেমে গেল….
ওর চোখ গেল দূরে রেলিং এ হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটার দিকে , যার চোখ থেকে অনবরত জল গড়িয়ে পড়ছে আর আরিশ সযত্নে তা মুছে দিচ্ছে….
মুহূর্তের মধ্যে যেন ঝটকা খেলো আরু, হয়তো এমন টা দেখার জন্য প্রস্তুত ছিল না ৷

__” কি হল তুই দাঁড়িয়ে পড়লি যে, ক্লাসে যাবিনা ? চল না হলে কিন্তু মিস হয়ে যাবে ৷”

__” ক্লাসে তো যাবোই তার আগে একটা পিক তুলে নিই ৷” বলে bag থেকে ফোনটা বার করে আরিশ আর মেয়েটির একসাথে পিক তুলে নিল বেশ কয়েকটা ৷
__” এগুলো কি হবে? আর কার পিক তুললি ?”

__” মি, অভদ্রের পিক,,, হায় মেরি জান ,মেরি প্রান মি অভদ্র ৷”(বলে হাসতে লাগলো ৷)
|
|
|
ক্লাস রুমের মধ্যে বসে আছে আরূ আর নিজের মনে মনে ভাবছে,,,,,
__” অনিকা আন্টির এই গুণধর পত্র প্রেম করে তা আম্মুকে জানাতে হচ্ছে , তাহলে আম্মুর ওনার সম্বন্ধে ভুল ধারণাটা ভেঙ্গে যাবে ৷ এটা বুঝবে যে যতটা ভদ্র আর মহান মনে হয় ততটা নয়….আর কালকে আমাকে ওভাবে ভয় দেখানো হাহ,,, আর ঘর পরিষ্কার নেভার ৷”

__”কথাটা এখন অনিকা আন্টি আর আম্মুর কানে পৌঁছে দিলেই কেল্লাফতে…ইয়া হু ইউ আর গ্রেট আরু ৷”

__”কিরে মনে মনে এতো হাসছিস কেন তুই?”

__” আরে কিছু না এমনিই হঠাৎ একটা জিনিস মনে পড়তেই বেশ হাসি পেল ৷ ”

__” আচ্ছা তুই আবার একটু পড়াশোনা কনসেনট্রেট কর ৷”

__” বাই দা রাস্তা তুই কি খুব পড়াকু স্টুডেন্ট!
যদি এমনটা হয়ে থাকিস তাহলে তোর সাথে আমার আড়ি ,কারণ আমি এত পড়াশোনা করি না…”

__” 🙄 ৷”

|
|
|

__” আরে তুমি কেঁদো না , তোমার মত এই পিচ্চি বোনটার চোখের জল দেখে কিন্ত খারাপ লাগছে আমার ৷
আচ্ছা আমি সাহেলকে অনেক কথা শোনাবো, আগে বাসায় যাই ৷”

__”মেয়েটা কাঁদতে কাঁদতে বলল,,,,,,”
__”ভাইয়া আপনি কিন্তু কিছু বললেন না ওকে, আর দোষটা তো আমারই….”

__”আচ্ছা সে না হয় কিছু বললাম না, তবে এভাবে মান অভিমান করে আর কতখন?”

__” ও তো রাগ করেছে ভাইয়া আমি কি করবো বলুন তো?”

__”আমার কাছে এই সমস্যার সহজ সমাধান আছে তুমি চাইলে বলি ৷”

__” ভাইয়া আপনাকে কি আবার নতুন করে সব বলতে হবে!”

আরিশ মুচকি হেসে বলল,,,,,
__” নাহ থাক তবে এখন তুমি ওর সামনে গিয়ে মুচকি একটা হাঁসি দেবে আর তারপরে গিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরবে আর ছাড়তে চাইলেও ছাড়বে না ঠিক আছে !”

মেয়েটা মুচকি হেসে বলল,,,,,
__” ওকে ভাইয়া….আর বরাবরের মতো ধন্যবাদ ৷”

কথাটা বলে মেয়েটা চলে গেল…..

আরিশ মুচকি হেসে প্রিন্সিপালের রুমে ঢুকে গেল,,,,,

আজকে ও কলেজে এসেছে কারণ প্রিন্সিপাল একবারে এক্সামের আগে ওদেরকে দেখা করতে বলেছিলেন সেই কারণে ৷ এসে তোহাকে কাঁদতে দেখে জানতে পারলো যে সাহেলের সাথে ঝমেলা হয়েছে কাল রাতে তোহা কল রিসিভ করেনি তাই ,তাই নিয়ে ওদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়েছে, তারপরে তোহা কাঁদলেই আরিস ওর চোখের জল মুছে দিল ৷ আর সাহেল আর তোহা ওদের দুজনের মধ্যে যতবার ঝগড়া হয়েছে ততবারই সমস্যার সমাধান করেছে আরিশ ৷ তোহা আরিশকে নিজের বড় ভাইয়ের মত সম্মান করে আর ওকে খুব মান্য করে ৷

চলবে,,,,,,,,