Friday, July 18, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1566



তোমার নেশায় আসক্ত ২ পর্ব-৩৩ | বাংলা ভালোবাসার গল্প

0

#তোমার নেশায় আসক্ত
#সিজন:2
#part33
#Suraiya Aayat

ঘড়িতে এখন সময় দশটা আর ভার্সিটিতে যাওয়ার সময় হয়ে এসেছে ৷ হাতের ঘড়িটার দিকে একবার তাকিয়ে পুনরায় সামনের দিকের গাছগুলোর দিকে তাকালো ৷ হালকা হওয়ায় বারবার দুলছে গাছগুলো আর পাখিগুলোও বেশ আয়েশ করে বসে আছে সেখানে ৷
দশটা বাজে , মেয়েটা ভার্সিটিতে যাবে তবুও মেয়েটার দেখা নেই দেখে আরিশ এবার গলা ছেড়ে জোরে ডাক দিল
,_” আরূপাখি ৷”

_____

__” আরু পাখি কোথায় তুমি?

তৎক্ষণাৎ না হলেও কথাটা শুনে কিছুক্ষণের মধ্যেই আরূ খানিকটা ছুটে রুমের ভিতরে প্রবেশ করল ৷

. আপনি আমাকে ডেকেছেন?

আরিশ ওর দিকে তাকিয়ে খানিকটা ভ্রু কুঁচকে বললো আচ্ছা তুমি ভার্সিটিতে যাবে না?

আরোশী কিঞ্চিৎ মুখ গোমড়া করে বললো
নাহ যাব না আজকে ভালো লাগছে না ৷

আরূর কথাটা শুনে আরিশের কপালটা খানিকটা কুচকে এলো, মেয়েটা বড্ড অগোছালো আর ভার্সিটিতে বড্ড অনিয়মিত যায় তা নিয়ে আরিশের চিন্তার শেষ নেই ৷ ভার্সিটি তে কতগুলো লোক ছাড়া আর কেউ জানে না যে আরু ওর ওয়াইফ পরবর্তীতে যখন সবাই জানবে তখনও এমনটা হলে সমালোচনার আর শেষ থাকবে না ৷

আজকে আপনার ভার্সিটিতে না যাওয়ার কারনটা কি জানতে পারি?

আরু মুখ গোমড়া করে বিছানায় বসে বললো
সব দিন কি আর ভার্সিটিতে যাওয়ার মুড থাকে আপনিই বলুন!

আরিশ ওর কাছে গিয়ে ওর পাশে বসলো তারপরে ওর গলায় আলতো করে স্পর্শ করতেই আরু চমকে উঠলো ৷
আরিশ আরূকে ক্রমশ নিজের কাছে টেনে নিতেই আরূ চট করে দূরে সরে গেল ৷

আরে আমি তো ভার্সিটিতে যাবো , আমিতো মজা করছিলাম আপনার সাথে ৷ দেখুন আমি তো রেডি ও হয়েজি শুধু আপনি এখন আমাকে ড্রপ করে দিয়ে আসবেন সেই অপেক্ষাতেই তো আছি ৷
বলে দাঁত বার করে হাসতে লাগলো ৷

আরিশ আরূর নাকটাকে আলতো করে ছুয়ে দিয়ে বলল
দ্যাটস লাইক এ গুড গার্ল ৷

আরূ চলে যেতে গিয়ে আরিসের দিকে আলতো করে ঘুরে বললো
আজকাল আমাকে আপনার থেকে দূরে সরানোর জন্য বেশ ভালই পদ্ধতি অবলম্বন করছেন , তা কি ঠিক করছেন ?

আরিশ মুচকি হেসে বলল
তারমানে আমার বউটা ভালোবাসা চাই তাইতো !বলে আরূ দিকে চোখ মারল ৷

আরু আরিশের দিকে তাকিয়ে মুখ ভাঙচিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল ৷

আরিশ মুচকি হেসে টেবিলের উপর থেকে গাড়ির চাবিটা রেখে ড্রয়ারের মধ্যে থেকে চাবিটা নিতেই ড্রয়ারের মধ্যে থাকা ভাঙ্গা কাচের চুড়ি গুলো চোখে পড়তেই মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠল ৷ চুড়িগুলো কে দেখে ওর সেই দিনের কথা মনে পড়ে গেল যে দিন প্রথম চুড়িগুলো কিনে আরূ সারা রা বাড়িময় আনন্দে ছুটছিলো, তখন পড়ে গিয়ে চুড়িগুলো ভেঙে গিয়েছিল আর খানিকটা ওর হাতে গেথে গিয়েছিলো তার জন্য বেশ গলগল করে রক্ত বেরিয়েছিল অনেকক্ষণ ৷ আরিস লুকিয়ে দেখেছিল সবটা তবে ভেঙে যাওয়া চুড়িগুলোর প্রতি আরূর ভালোবাসা থাকলেও তা দেখানোর সুযোগ তখন পায়নি তার আগেই ওর আম্মু ওকে হাত ব্যান্ডেজ করে দেওয়ার জন্য সেখান থেকে নিয়ে গিয়েছিল ৷ আরিশ একবার চুড়ি গুলোর দিকে তাকিয়ে দেখলো ৷

আরিশ চুড়িলোকে কুড়িয়ে নিয়ে নিজের কাছে রেখে দিয়েছিল ৷ আজো সেই চুড়ি ওর কাছে একইভাবে রয়েছে যত্ন সহকারে ৷ প্রিয় মানুষের শখের জিনিস টাকে যত্ন করে তুলে রেখেছে যাতে পরে কখনো একসময় সেগুলো দেখিয়ে পুরনো স্মৃতিগুলো সমস্ত টা মনে করাতে পারে ৷

মুচকি হেসে গাড়ির চাবিটা নিয়ে আরিশ বেরিয়ে গেল ৷ আজকে অফিসে যাবে ৷ ভার্সিটি তে জয়েন হওয়ার কথাটা এখনো জানায়নি আরুকে, ওটা বলে আরুকে সারপ্রাইজ দিতে চাই ও ৷

💔

ভার্সিটির সামনে আরিশ গাড়িটা থামালো ৷

আরিশ লক্ষ্য করছে আরূ গাড়ী থেকে নামছে না অথচ বেশ কিছুক্ষণ ধরে ওর দিকে কাচুমাচু করে তাকিয়ে আছে , আর ওর মুখের এমন করুণ অবস্থা দেখে আরিশ বলে উঠল
কাহিনী কি?

আরু একবার ধীমে কন্ঠে বলল
আমার একটা কথা বলবো কিছু মনে করবেন না তো?

আমি আবার কী মনে করবো আরূপাখি , তোমার যা মন চায় তাই বলো ৷

আসলে আমি আমার বাড়িতে যাব আজ ৷

আরিশ এবার খানিকটা মজা করেই বললো
ও শ্বশুর বাড়িতে যাবে সে তো খুব ভালো কথা আমিও তো চাই যে তুমি ভার্সিটি শেষ করে আমার সাথে আবার আমার বাসায় চলো ৷

ওহ সবসময় এভাবে মজা করেন কেন বলুন তো আমি আমার নিজের বাসায় যেতে চাই ৷

আমিতো তোমাকে সেই কথাই বলছি ৷

আরু এবার খানিকটা কাঁদো কাঁদো হয়ে বলল
আপনি আমাকে যেতে দেবেন না তাইতো?

আরিশ এবার আরূকে জড়িয়ে ধরে বলল
আমি কি সে কথা একবারও বলেছি আরূপাখি , যে তুমি সেখানে যেওনা ৷

উঁহু সেটা হচ্ছে না আপনিও আমার সাথে যাবেন দ্যাটস ফাইনাল ৷

আমি তো আজকে যেতে পারব না আরুপাখি ৷

কেন যেতে পারবেন না?

আমার একটু কাজ আছে সেই কারণে ৷

আরুশি রেগে গিয়ে গাড়ি থেকে নেমে আরিসের দিকে তাকিয়ে মুখ ভাঙচিয়ে বলল
হ্যাঁ হ্যাঁ জানি আপনার তো আবার অনেক কাজ কি না সবই জানা আছে আমার ৷ যাবেন হয়তো আপনার প্রেমিকার সাথে দেখা করতে, আমি বাড়ি নেই তাই না সেই সুযোগে ভালোই চলবে সব ৷

আরিশ আরূর দিকে চোখ মেরে বললো
এত কড়া কড়া সত্যি কথাগুলো তুমি এত সহজে কিভাবে বুঝে যাও বলোতো?

আরূ এবার রেগে ভার্সিটির ভিতর ঢুকে গেল ৷

ওদের দুজনের কান্ড দূর থেকে দেখতে জেরিন,মনে রয়েছে একরাশ বিরক্তি আর প্রবল হিংস্রতা আরিশকে পাওয়ার ৷

আরু ক্লাসরুমে বসে আছে ওর পাশে জেরিন গিয়ে বসতেই আরু বলে উঠলো
তোমাকে তো ঠিক চিনলাম না!

আমাকে না চেনারই কথা কারণ আমি তোমার সিনিয়ার আমি আরিশদের ব্যাচের ৷

একটা অচেনা মেয়ের মুখ থেকে আরিসের নামটা শুনে আরু রেগে গেল ৷ আর যতই হোক অন্য কোন মেয়ের মুখ থেকে নিজের জামাইয়ের নামটাও কখনো শুনতে চায় না ও , এতে ওর বড্ড হিংসা হয় ৷

আরু এবার খানিকটা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বলল
ওহ, তা বেশ , আপনি কি আমাকে কিছু বললেন?

জেরিন মুচকি হেসে বললো
সেরকম কিছুই না তোমার সাথে একটু পরিচিত হতে এলাম আর কি !

হঠাৎ করে অচেনা একটা মেয়ে ওর সাথে পরিচিত হতে চাইছে ব্যাপারটা যেন আর ঠিক হজম হচ্ছে না , মেয়েটার যে নিশ্চয়ই কোনো মতলব আছে সেটাও বেশ ভালই বুঝতে পারছে তাই না পেরে আরু বললো

ভার্সিটিতে এত মেয়ে থাকতে আমার সাথে পরিচয় হতে এসেছেন কাহিনী কি বলেন তো !

আরূর কথা শুনে জেরিন ঘোবড়ালো না বেশ কনফিডেন্সের সাথে উত্তর দিলো
আমি জানি তুমি আরিশের ওয়াইফ সেই জন্যই তোমার সাথে পরিচিত হতে আসছি, পুরো ভার্সিটির ক্রাশবয় যে তার ওয়াইফ তুমি তাই তোমার ব্যাপারে জানার কৌতূহল টা বড়োই ৷

আরু এবার চোখ দুটো ছোট ছোট করে বলল
ওহ

আরু এর পরে বলল যে ওর বাসা কোথায় ওর নাম কি এসব কথা ৷ কথায় কথায় জেরিন বলে উঠলো

আরিশ তোমাকে এত ভালো কেন বাসে তার কারণটা কি জানো ?

আরু ভ্রু কুঁচকে বললো
ভালোবাসার জন্য কোন কারণ হয় নাকি আগে তো জানতাম না !

জেরিন এবার একটা রহস্যময় হাসি দিয়ে বলল
কোন কিছু কোন কারণ ছাড়া ঘটে না আরু আর সেটা যদি তুমি বুঝতে ! সো স্যাড ৷
বলে চলে গেল ৷

জেরিনের কথার আগামাথা কিছুই বুঝলা না ও তবে একটা জিনিস ভেবেই ওর রাগ হচ্ছে যে মেয়েটা আরিশের ব্যাপারে অনেক কিছুই জানে ৷ আর ওর জামাইয়ের ব্যাপরে একটা অন্য মেয়ে কেন এত কিছু জানবে সেই বিষয় নিয়ে ওর মনে একরাশ রাগ এর সৃষ্টি হয়েছে ৷

গাড়িটা আপন গতিতে চলছে আর গাড়িতে বসে আছি আরিসা আর আরূ ৷আরিশ গাড়ি চালাচ্ছে তবে মাঝে মাঝে আরুর দিকে তাকাচ্ছে আর দেখছে যে আরু বেশ চুপচাপ আর একটু অন্যমনস্ক হয়ে আছে৷ ব্যাপারটা আরিশের কাছে বড্ড সংকোচজনক পধ

এনি প্রবলেম আরুপাখি ?

আরিসের কথা শুনে আরূ এবার নিজের রাগটাকে প্রকাশ করার জন্য বলে উঠলো
জেরিন কে?

আরিশের থেকে জেরিন নামটা শুনে মুচকি একটা হাসি দিলো আর সেই হাসি দেখে আরুর গা পিত্তি জ্বলে যাচ্ছে ৷

আরু রেগে বলল
একটা মেয়ের নাম নিয়েছি তাই এত খুশি খুশি হয়ে হাসার কারণটা ঠিক বুঝলাম না যদি একটু বুঝিয়ে বলেন ৷

আরিশ নিজের হাসিটাকে ক্রমশ কন্ট্রোল করে আনার চেষ্টা করে বলল
বিগত পাঁচ বছর ধরে জেরিন আমার উপর ক্রাশ খায় তারপর,,,

আরু আর কিছু শোনার প্রয়োজন বোধ করলো না, আরিশকে থামিয়ে দিয়ে বলল
এর বেশি আর কিছু শুনতে চাই না এখানেই আপনি কথাটাকে থামালে ভালো হয় ৷
বলে আরিশের থেকে মুখ ফিরিয়ে জানলা দিয়ে বাইরের দিকে তাকালো ৷

চলবে

তোমার নেশায় আসক্ত ২ পর্ব-৩২ | বাংলা ধারাবাহিক গল্প

0

#তোমার_নেশায়_আসক্ত
#সিজন:2
#পর্ব:32
#Suraiya_Aayat

প্রফেসারের রুমে বসে আছে আরিশ আর ওকে ঘিরে বসে আছে সবাই, এর আগে কেউ এতোবড়ো সুযোগ পাইনি,যদিওবা সবাই আরিশের মতো মেধাবী নয়, এত বড়ো একটা সুযোগ পেয়েও এর আগে কেউ সুযোগটা হাতছাড়া করেছে তা কেউ দেখেনি ৷ আজ সবাই আরিশকে নিয়ে গর্বিত যে এমন একটা প্রতিভাবান ছাত্র ওদের ভার্সিটি তে প্রফেসার হিসাবে যোগ দেবেন, এর আগে NSU তে এতো অল্প বয়সী তরুন প্রফেসার হিসাবে কেউ যোগ দেইনি ৷

__” এবার সিগনেচার করে আমাদের ভার্সিটির একজন হিসাবে যোগদান করো মাই সন ৷”

আরিশ একটা টেডি smile দিয়ে সিগনেচারটা করে দিলো ৷

প্লিন্সিপাল sir উনি আরিশকে বুকে জড়িয়ে নিলেন ৷
__” তুমি যে আমার কথাটা রেখেছো তাতে আমি glad আরিশ ৷ আই হোপ ইউ উইল গিভ ইউর বেস্ট ৷”

__” সিওর sir ৷”

আরিশ রূম থেকে বেরিয়ে এসে গাড়ির চাবিটা আঙলের ফাকে ঘোরাতে লাগলো,,,,,,
__” তুম মীলে দিল খিলে ওর জি নে কো কেয়া চাহিয়ে ৷”(হালকা কন্ঠে গাইতে গাইতে গাড়ির দিকে যেতেই পিছন থেকে একটা মেয়েলি কন্ঠ আরিশের কানে ভেসে আসতেই আরিশ একটা মিচকি হাসি দিল )

__” congrats ভাইয়া,,,,,ওপস এখন তো আপনি আবার কলেজের প্রফেসর কিনা ৷”

আরিশ সামনে ঘুরে বলল,,,,
__” ইয়াহ,আপাতত এটাতেই নিজেকে অভ্যস্ত করতে শিখুন মিস জেরিন ৷”

জেরিন খানিকটা আরিশের এগিয়ে গিয়ে বললো
__” অপেক্ষার প্রহর গুনতে গুনতে আজ এই পরিনতিতে, মাইট প্লেজার টু মাইসেলফ ফর বিং হেয়ার ৷”

__” মনে হয় যে কখনো এই অপেক্ষার প্রহর শেষ হবে?”

_,” না হওয়ার কি আছে, ছলাকলা করেও তো এমন অনেক কিছুই পাওয়া যাই যেগুলো কখনো পাওয়ার কথায় ছিলো না , তাইনা আরিশ ভাইয়া ৷”(খানিকটা হেসে)

__” এত ফালতু বকে ক্লান্ত হওনা ? আইমিন এখনো আশাটা রাখো যে আরিশ খান তোমার হবে!”

__” ছিনিয়ে নিতে আমি জানি কিন্ত কখনো তার প্রয়োজন পড়বে কি জানি না, বাট দরকার পড়লে অবশ্যই ছিনিয়ে নেবো ৷”

__” Carry on Sweetheart😚 .”(কথাটা বলে আরিশ শিস দিতে দিতে গাড়ি নিয়ে চলে গেলো ৷)

আরিশ চলে যেতেই জেরিন আর নিজেকে আটকে রাখতে পারতে না, ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো জেরিন ৷
বিগত তিন বছর ধরে আরিশকে একই কথা বলে আসছে যে ও আরিশকে ভালোবাসে কিন্ত আরিশ কখনো ওর কথা কানে নেইনি ৷ কারন ওর যে কেবলমাত্র ওর সানসাইনকেই দরকার আর কাউকে না ৷

💓

কক্সবাজার থেকে ফিরে এসে একটু ফ্রেশ হয়েই আরু ঘুমিয়ে পড়েছে ৷ আরিশ ওকে বাড়িতে নিমিয়ে দিয়েই ভার্সিটি তৈ চলে গেছে ৷

বাইরে মৃদু শীতল হাওয়াটা জানলার পর্দা গুলোকে বারবার অগোছালো করে দীচ্ছে ভীষন ৷ পেট থেকে শাড়িটা অলতো করে সরে গেছে আর আরুর সেদিকে কোন খেয়ালই নেই, মেয়েটা বারাবরই খুব ঘুম কাতুরে স্বভাবের ৷ ক্ষনে ক্ষনে হাওয়াটা আরুর সমগ্র শরীর জুড়ে বয়ে যেতেই আরু কম্বলটা শরীরে টেনে নিয়ে শরীরকে ঢেকে ফেলল ৷

আরুর মুখের ওপর পড়ে থাকা চুলটা কে আরো অগোছালো করতে কেউ একজন আঙুল দিয়ে তা আরো মুখের ওপর ছড়িয়ে দিতেই তা সমগ্র মুখজুড়েই বিক্ষিপ্ত ভাবে ছেয়ে গেল ৷ আরূ বিরক্তি ধিয়ে কিছুটা নড়ে উঠতেই সামনে থাকা ব্যাক্তিটার মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলো , যেনো আরূকে বিরক্ত করায় সে নিজের অনন্দ খুজে পাই ৷

কিছুখন থেকে এবার তার ঠান্ডা হাতজোঢ়া দিয়ে আরুর মুখে আলতো করে ঠেকাতেই আরূ কেঁপে উঠলো, আচমকাই ওর ঘুমটা ভেঙে গেল ৷

হঠাৎই এমন কিছু হওয়াতে আরু শিউরে উঠলো,হুড়মুড় করে উঠে বসে সামনে তাকাতেই দেখল আরিশ হাতে হাত রেখে দাড়িয়ে আছে ৷
আরিশ কে দেখে যেনো আরু প্রান ফিরে পেলো, তাড়াতাড়ি খরে বিছানা থেকে নেমে আরিশকে শক্ত করে জড়িয়ে করে বড়ো বড়ো নিশ্বাস নিতে লাগলো ৷

আরিশ আরুর মাথায় আলতো করে হাত ছোঁয়াতেই আরু বলে উঠলো
__” আমি অন্য একজনের হাতের ছোঁয়া পেলাম কিন্তু তাকিয়ে দেখলাম যে আপনি , এটা কি করে সম্ভব?”

আরিশ হালকা হেসে বলল
__” আমার ছোঁয়া গুলোও আজকাল তোমার বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে আরুপাখি !”

আরু আরিশের কাছ থেকে সরে আরিসের দিকে তাকিয়ে বলল
__” এমনটা নয় তবে , কেমন এটা অদ্ভুত সেই ছোঁয়া,তা আপনার ভালোবেসে ছুঁয়ে দেবার মত নয় , একেবারে অন্যরকম ৷”

আরিশ আরুর দিকে চোখ টিপ মেরে বলল
__” আমার থেকেও বুঝি আরো বেশি ভালোবাসা আছে সেই ছোয়াই ?”

আরু রাগী চোখে তাকিয়ে বলল
__” একদম মজা করবেন না ঠিক আছে! আমি কী কখনো না বলেছি তা , আর আপনিই তো আমার সব ৷”
(বলে আরু আরিশ কে জরিয়ে ধরল)

আরিশও মুচকি হেসে আরুকে জড়িয়ে ধরলো ৷

💓

সন্ধ্যা 6.30,,,,,

আরিশ laptop নিয়ে কাজ করছে একমনে, রূমে আরু নেই, মেয়েটা সেই কখন রুম থেকে বেরিয়েছে এখনো আসার নাম নেই ৷ আরিস একবার দরজার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে নিলো, তাকিয়ে দেখল আরু এখনো আসছেনা আর তা দেখে আরিশ আবার ল্যাপটপ দেখায় মন দিলো ৷

হঠাৎ কারোর সিঁড়ি বেয়ে ওপরে ওঠা শব্দ পেয়ে আরিশ বুঝতে পারল যে আরু আসছে ৷ মেয়েটা আজকে রুমে আসলে আরিশ বকা দিবে ৷ আরূ পড়াশোনাটা একেবারেই ছেড়ে দিয়েছে, পড়াশোনায় আর মন নেই , কতদিন আগে বইটা শেষ হাত দিয়ে স্পর্শ করেছে তা ওকে জিজ্ঞাসা করলে তাও বলতে পারবে না আরূ ৷

আরু রুমে ঢুকে হাসিমুখে হাতে থাকা পকোড়ার প্লেটটা আরিশের সামনে ধরলো ৷

আরীসের সামনে ধরতেই আরিশ ভ্রূ কুঁচকে বলে উঠলো
__” কি এটা?”

__” আপনার জন্য গরম গরম পকোড়া বানিয়ে নিয়ে এলাম ৷”

আরিশ এবার ল্যাপটপ বন্ধ করে আরূর দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে বলল
__” তা আপনার পড়াশোনার খবর কি আমাকে একটু জানাবেন? সামনের মাসে তোমার সেমিস্টার,আর তুমি সেখানে পড়াশুনা বাদে কিচেনে রান্না করছো !এগুলো কিন্তু আমি একদম টলারেট করবো না আরুপাখি ৷”

আরূ আরিশের দিকে তাকিয়ে মুখ ভেংচি দিয়ে বলল __” আপনি কি করলেন আর না করলেন তাতে আমার বয়েই গেল, এসব কথা বাদ দিন ৷ পকোড়া গরম গরম আছে এখন খেয়ে নিন না হলে ঠাণ্ডা হয়ে গেলে একদম ভালো লাগবে না ৷”

আরিশ খানিকটা রাগী গলায় বলল
,,” এসব ফাজলামো বাদ দিয়ে 5 মিনিটের মধ্যেই যেন তোমাকে বই নিয়ে পড়তে দেখি আরুপাখি , নাহলে তোমার একদিন কি আমার একদিন ৷”

আরু আরিশের দিকে তাকিয়ে জোরে জোরে বলল,,,
__” আমার দ্বারা এসব হবে না তাই আমার থেকে নেক্সট টাইম আর এসব কিছু আশা করবেন না এটাই বেটার হবে ৷”

আরিশ আগের থেকে আরও দৃঢ় কণ্ঠে বলে উঠলো __” আর মাত্র তিন মিনিট তার মধ্যে যদি তুমি নিজে থেকে পড়তে না বসো তাহলে আমাকে অন্য ব্যবস্থা নিতে হবে ৷”

__” তাহলে কি করবে তুমি ?”(রেগে গিয়ে)

__” সংসার করবো !”

আরিশ এবার রেগে গিয়ে আরূকে কোলে তুলে নিয়ে বিছানার ওপর ফেলে দিলো,,,,,আরিশের এমন কাজ দেখে আরু অবাক, হঠাৎ এমন কি বলে ফেললল ও যাতে আরিশ রাগ করছে !

__” সংসার করতে গেলে তো আগে একটা বাচ্চার দরকার হয়, চলো একটা বেবি নিই তারপর তুমি জমিয়ে সংসার করো ৷”

কথাটা বলে আরুর দিকে এগোতেই আরূ ফুপিয়ে কেদে উঠলো ৷

__” আপনি এরকম বলছেন কেন হ্যাঁ, আমি কি তা বলেছি ৷”

__” আর ফাজলামো করবে ! ”

__” নাহ ৷” (কাদতে কাদতে)

__” পড়াশোনা করবে?”

__” হ্যাঁ ৷”

কথাটা বলতেই আরিশ মুচকি হেসে আরুর কপালে ভালোবাসার পরশ একে বলল…
__” ভালো করে পড়াশোনা করো, তারপর বেবি হবে সংসার হবে সবই হবে ৷”

__” মিঃঅভদ্র ৷”(চোখ মুছে)

#চলবে,,,,,
.

তোমার নেশায় আসক্ত ২ পর্ব-৩১

0

#তোমার_নেশায়_আসক্ত
#সিজন:2
#পর্ব:31
#Suraiya_Aayat

হঠাৎ আরিশের ফোনে ফোন আসতেই আরিশ ওর ফোনটা ধরল ৷ এতক্ষণ ধরে ও ঘুমাইনি , আরূ ঘুমিয়ে পড়েছে তবে ও ক্রমাগত আরুশির মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর আরুর দিকে এক নজরে তাকিয়ে আছে , হঠাৎ করে ফোনের রিং টা বেজে ওঠতেই মনোযোগে কিছুটা হলেও ব্যাঘাত ঘটলো ৷

ফোনটা হাতে নিতেই দেখল প্রিন্সিপালের নামটা ভেসে উঠছে ৷ উনার থেকে হঠাৎ কলটা আসছে দেখেই আরিশের ভ্রু জোড়া কুঁচকে এল……
কোনরকম আর কোন দ্বিধা না রেখে নরম সুরে হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে প্রিন্সিপাল খানিকটা দৃঢ় কণ্ঠে বলে উঠলেন

__” তোমার নামে একটা ভার্সিটিতে নোটিশ এসেছে ৷”

আরিশ খানিকটা থতমত খেয়ে বললো
__” কোথা থেকে ?”

__”নিউইয়র্কে র কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি থেকে ৷ ওখানে তোমার চান্স হয়েছে রিসার্চ এ জন্য , যা তুমি এতদিন ধরে চেয়ে এসেছো ৷”

কথাটা শুনে আরিস এর খুশি হওয়া উচিত নাকি চুপ করে থাকা উচিত সেটা ও বুঝতে পারছে না ৷ ছোটবেলা থেকেই ওর ইচ্ছা কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি তে পড়াশোনা করার , সেইজন্যই এতোদিন ধরে এতো খাটাখাটনি করে পড়াশুনা করে এসেছে কিন্তু এই মুহূর্তে সবথেকে অবাক হল প্রিন্সিপালের বলা কথা শুনে , উনার কথা অনুযায়ী নোটিশটা ইউনিভার্সিটি থেকে মেইল করে এসেছে সেখানে এডমিশন নেওয়ার জন্য কিন্তু এডমিশন এর কোন ফর্মই আরিশ ফিল আপ করেনি , তাহলে সেখান থেকে কিভাবে কোন নোটিশ আসতে পারে আর প্রিন্সিপালের এমন কথা বলার কারণটা আরিশ বুঝতে পারছে না ৷

আরিশ একটু কিন্তু কিন্তু নিয়ে বলল
__” কিন্তু স্যার আমি যে সেখানে অ্যাপ্লিকেশন করিনি যে আমি সেখানে পড়ার জন্য সিলেক্টেড হবো ৷”

উনি খানিকটা মুচকি হাসলেন , আরিসের কথাটা বিশ্বাস করতে উনার কষ্ট হচ্ছে যেনো,আর এটাই স্বাভাবিক আরিশের এর মত একটা স্টুডেন্টের সেখানে এপ্লাই করা উচিত কিন্তু আরিস এর কথাগুলো উনার কাছে এখন মিথ্যা বলে মনে হচ্ছে ৷

উনি খানিকটা তাচ্ছিল্যের স্বরে হেসে বলল
__” তোমার তো এটাই ইচ্ছা ছির আরিশ যে তুমি ওখানেই পড়বে ৷ আর তাছাড়া তুমি কোথায় পড়বে না পড়বে সেটা তোমার একান্তই ব্যক্তিগত ব্যাপার আমরা তাতে কখনো হস্তক্ষেপ করতে পারি না তবে এভাবে প্রিন্সিপালের সাথে মিথ্যা কথা বলাটা ব্যাপারটা একটু কেমন না আরিশ !”

প্রিন্সিপালের কথাটা শুনে আরিশ একদফা শিঁউরে উঠলো ৷ প্রিন্সিপালের সাথে এতদিনে আরিশের যা সম্পর্ক তাতে উনি কখনো আরিশের সঙ্গে এই ধরনের ভঙ্গিতে কথা বলেননি , ওর কথাটা যে প্রফেসর বিশ্বাস করছেন না এটা আরীশ ভালোই বুঝতে পারছে, হয়তো আজ এই প্রথমবারের মথো উনি আরিশকে অবিশ্বাস করলেন ৷ আর সেই কারনেই আরিশের বেশি বেশি খারাপ লাগা কাজ করছে ৷

ইরিশ এবার একটু থতমত খেয়ে বললো
__” স্যার বিলিভ মি আমি এপলাই করিনি যে আমি সেখানকার জন্য সিলেক্টেড ৷ আর আমি তো দেশের বাইরে কোথাও যাব না সেটা এক বছর আগেই ঠিক করে নিয়েছিলাম হয়তো সেটা আপনাদের জানাইনি ৷”

প্রিন্সিপাল এবার একটু বেশ নরম সুরেই বললো ,,” তাহলে তুমি কি চাও আরিশ !”

__” স্যার আপনি তো আমার পার্সোনাল ব্যাপার নিয়ে সবই জানেন , আপনি তো এটাও জানতেন যে আমার ওয়াইফ আরুশিকে আমি কতটা ভালোবাসি , সবকিছুই আপনাকে শেয়ার করেছি নিজের কাছের মানুষ ভেবে, তাছাড়া আমি নিজের বাড়ি থেকে ধানমন্ডিতে আলাদা থাকি প্রায় 5 থেকে 6 বছর হতে চলল, এতদিন পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন তা নিয়ে আম্মু অনেক মন খারাপ করে আর এখন আমার নিজের ওয়াইফ আছে একটা ফ্যামিলি গড়ে উঠেছে সেই কারণেই আমি ভেবেছিলাম ধানমন্ডি থেকে শিফট হয়ে উত্তরার বাসাতে সবার সাথে থাকবো ৷ আর একথাটা তো আপনার কাছে অজানা নয় আর আপনি তো এটাও জানেন যে আমি NSU তে প্রফেসরি করার সিদ্ধান্তটা আপনাকে অনেক আগেই জানিয়েছিলাম , তবে আজকে আপনি অবিশ্বাসের কন্ঠ নিয়ে আমার দিকে প্রশ্নটা ছুড়ে দিলেন তা নিয়ে খানিকটা হলেও আফসোস হচ্ছে যে এতদিনেও আপনাদের বিশ্বাস গড়ে তুলতে পারলাম না ৷”

প্রফেসর খানিকটা আবেগী হয়ে বললেন
__” তেমনটা নয় আরিশ ৷ তুমি তো জানো আমি তোমাকে কতটা ভালোবাসি , নিজের ছেলের মতোই স্নেহ করি , তোমার থেকে অবশ্যই নিজের মনের মত কিছুই আশা করি আমি ৷ তুমি কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি তে রিসার্চ করো তা নিয়ে আমার কোন সমস্যা নেই তবে খারাপ লাগলো এটাতেই যে তুমি আমাকে জানাও নি , এটা ভেবে খানিকটা হলে আমি কষ্ট পেয়েছি ৷ আমি নিজেও চাই যে তুমি দেশে থেকে আমাদের ইউনিভার্সিটিতে প্রফেসরি করো ৷ আর NSU তে যদি তোমার ভালো না লাগে তাহলে না হয় পরে ফরেন কান্ট্রি তে চলে যেও আমি আটকাবো না , আর তোমার iq যা তাতে কোন সমস্যাও হওয়ার কথা না কোথাও এডমিশন নিতে ৷ আর যা করবে তা একান্তই তোমার নিজের চয়েজ, যদিও বা একজন প্লফেসর হয়ে তোমাকে এটা বলা আমার সাজে না যে ভালো কিছু ছেড়ে তুমি এটাকে বেছে নাও, তবুও আমাকে এটুকু স্বার্থপর হতে হচ্ছে কারন আমি যে তোমাকে এদেশে থেকে দেশের ভালো কিছু করার জন্য দেখতে চাই ৷”

আরিশ মুচকি হেসে বলল
__” আমার দেশকে আমি ভালোবাসি তাই আমি চাইব নিজের দেশে থেকে নিজের দেশকে প্রতিষ্ঠিত হিসেবে রিপ্রেজেন্ট করার , তাই আমি কোথাও যাবো না sir যদিও এটা আমার কাছে একটা বিগ অপরচুনিটি টু মেক মাইসেল্ফ as a সাকসেস পারসন ৷তবুও আমি NSU তেই থাকবো ৷”

প্রিন্সিপাল একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বললেন __” নোটিশটা আজকের মধ্যেই তোমাকে ক্যানসেল করতে হবে আরিশ নাহলে তুমি NSU তে কোয়ারিফায়েড করতে পারবে না ৷ এটা ইউনিভার্সিটির রুলস ৷”

আরিশ জানে যে এটা কোন রুলস না, প্রিন্সিপাল আরিশ কে NSU থেকে হারাতে ভয় পাচ্ছেন আর তাছাড়া ও নিজেও যখন যেতে চাইনা তাই অযথা প্রিন্সিপালকে দুশ্চিন্তার মাঝে রাখতে চাইনা তাই ও বলল
__” আমি কক্সবাজারে আছি, বাট ওকে স্যার আমি আসছি ৷”

__” এমন দিনেই এই নোটিশটা আসলো দেখা তুমি ঘুরতে গিয়ে আনন্দ করতে পারলে না ৷ তা আজকে কতদিন গেছো?”

__” একদিন sir ৷”

__” আই এম রিয়েলি সরি আরিশ ,এভাবে তোমাদের ভালো সময়টা নষ্ট করলাম ৷ একদিন ঘুরেই ফিরে আসতে হচ্ছে তোমাদের ৷”

আরিশ মুচকি হেসে বলল
__” ঘোরাঘুরি সারা জীবন থাকবে তবে জীবনের এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ সময় সব সময় পাওয়া যাবে না , আমি আসছি sir ৷”

কথাটা শেষে ফোনটা কেটে দিলো আরিস ৷ একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে আরূর দিকে তাকালো ৷ মেয়েটার মুখের উপর চুলগুলো আছড়ে এসে পড়েছে , আরিশের মায়াবতী ৷
এই মুহূর্তে মেয়েটাকে ঘুম থেকে জায়গাতেও ইচ্ছা করছে না ওর তবুও এখন না চাইলেও যে একে জাগাতে হবে ৷
এখন যে ওদেরকে ধানমন্ডিতে ফিরতে হবে, কাজটা অত্যন্ত এমার্জেন্সি ৷

আরুর মুখের উপর পড়ে থাকা চুলগুলো খানিকটা সরিয়ে দিতেই আরু কেঁপে উঠলো খানিকটা ৷ আরিশ আরুর কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে ফিসফিস করে বলতে লাগল
__”এই যে সানশাইন আমাদের যে এখন ফিরতে হবে ৷”

আরূ আধো আধো গলায় বলল
__” সবই তো বুঝলাম ,তা এখনই কেন ফিরে যাব আমরা ! যদিও বা সূর্যমামাটা যে আজকে কেন এমন করছে জানিনা, আমি কিন্তু তাকে খুব বকা দিয়েছি আজকে এমন করার জন্য ৷ প্লিজ আপনি সূর্যিমামার উপর রাগ করবেন না ৷”
কথাটা বলে আরু আবার চোখ দুটা বন্ধ করতেই আরিশ আরূকে কোলে তুলে নিল ৷ ঘুমের মধ্যেও আরূ বুঝতে পারছে যে আরিস ওকে কোলে তুলে নিয়েছে ৷ বেশ শক্ত করে আরিশের গলাটা জড়িয়ে ধরেছে আরু ৷

আরিশ ওকে কোলে তুলে নিয়ে ব্যালকনির দিকে গেল ৷ বাইরে প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছে, সমুদ্রটা যেন উত্তাল হয়ে গিয়ে প্রবল গর্জনে ফেটে পড়ে তার নিজের ক্ষোভটাকে প্রকাশ করছে এই অনাগত বৃষ্টিকে যে সে কেন এসেছে তাকৈ এভাবে উত্তাল করতে ৷ সে নিজেও হয়তো চাই না ৷”

হালকা ছিটে ফোঁটা বৃষ্টির ছাঁট আরিশ আর আরুকে আলতো করে ভিজিয়ে দিচ্ছে অল্প অল্প করে ৷ এখনো দুজনে একসঙ্গে কক্সবাজারের সী বিচে গোসল করতে পারেনি, পড়ন্ত বিকালে হালকা তপ্ত বালিতে নিজেদের পা টাকে ভেজাতে পারেনি ,এটাই হয়তো সবথেকে বড়ো আফশোষের তাই এখন না হয় এই বৃষ্টির ফোটার মাঝেই তার অপূর্ণতাটাকে পূরণ করুক ৷

আরু চোখ খুলে খানিকা মিনতির চোখে আরিশের দিকে বলল
__” আপনি আমাকে এভাবে ভিজিয়ে দিচ্ছেন!”

আরিশ আরূকে কোল থেকে নামিয়ে দিয়ে নেশাগ্রস্ত চাহনিতে আরূর গলায় নিজের হাত দিয়ে
আলতো করে আরূকে নিজের কাছে টেনে এনে নিজের ঠোঁটদুটো দিয়ে আরুশির ঠোঁট দুটোকে আলতো করে স্পর্শ করে আরিশ সরে এলো , মুখটা খানিকটা কাচুমাচু করে বলল
__” আগের মতো স্বাদটা পেলাম না আরুপাখি ৷”

আরুশি আরিশের এমন কান্ডে যেনো ও নিজেও হতবাক ৷ আরিশের দিকে খানিকটা অবাক চোখে তাকিয়ে আছে আরু ৷

আরিশ পুনরায় আরূর ঠোঁট জোড়া দখল করে নিল আর বেশ কিছুক্ষণ পর ছেড়ে দিয়ে ওর বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে আরূর ঠোঁটটাকে আলতো করে মুছে দিয়ে বলল
__” এবার স্বাদটা পেলাম আরূপাখি ৷”

কথাটা বলে আরূকে বুকে জড়িয়ে নিল আরিশ ৷

আরু ছলছল চোখে আরিশের দিকে তাকিয়ে বলল
__” আমরা সত্তিই অমরা এখন ফিরে যাবো !”

__” হমমম আরুপাখি, দরকারি কাজে এখনই ফিরতে হবে বাট আমরা আবার আসবো ৷”

__” হুমমম ৷”
কথাটা বলে আরিশের বুকে মুখ মাথা রাখলো ৷

💓

ওরা ফিরে যাচ্ছে ৷ আরু হোটেল থেকে বেরিয়ে সিএনজি তে বসে আছে, বৃষ্টির মাত্রাটা কমলেও পুরোপুরি থামেনি ৷
আরুশি হোটেল থেকে বেরোবার সময় হোটেলের ফরমালিটি অনুযায়ী আগের সেই মেয়েটা যখন আরুকে আসতে বলল আরু তখন শুধু মেয়েটার দিকে একপলক তাকিয়ে সামনে হেঁটে গেল , কিছু বলল না ,মনটা ওর ভালো নেই, মন ভালো থাকলে হয়তো মেয়েটাকে কয়েকটা কথা শুনিয়ে দিতো ৷
মেয়েটাও অবাক হয়নি তা নয় , সেও বেশ ভালোই অবাক হয়েছে আরুর কাজে ৷

রুমের চাবিটা বেডের টেবিলের ওপরে রাখতেই আয়নার দিকে আরিশের চোখ পড়লো, তাতে গলায় আচড়ের দাগটা স্পষ্ট ৷ কালকে রাতে আরুশিই ভালোবেসে দিয়েছে, কথাটা ভাবতেই আরিশ মুচকি হাসলো ৷
রূম থেকে বেরোনোর আগে একটু থেমে গিয়ে রূমটাই আর এক পলক তাকিয়ে একটা ডেভিল smile দিয়ে নিজের মনে বলতে লাগল
__” Welcome to Arish khan’s battel ground 😈”

চলবে,,,,

তোমার নেশায় আসক্ত ২ পর্ব-৩০

0

#তোমার_নেশায়_আসক্ত
#সিজন:2
#পর্ব:30
#Suraiya_Aayat

হালকা মেঘাচ্ছন্ন দিনে সূর্যটা মাঝে মাঝে উঁকি দিচ্ছে ৷ সকাল আটটার সময় সূর্যিমামার এরকম অনিশ্চিয়তা দেখে আরূর মুখে ঘন মেঘের ছায়া পড়ে গেল যেন ৷ সূর্যমাযার অবস্থান দেখার জন্য একবার কম্বল থেকে মুখ বার করে মাঝে মাঝে উঁকি দিয়ে দেখছে যে বাইরের কেমন অবস্থা , দেখেই মনটা খারাপ হয়ে যাচ্ছে ওর, দেখে আবার কম্বলের মধ্যে মুখ ঢুকিয়ে নিচ্ছে ৷
হাড় কাঁপুনি শীতেও যে এই বৃষ্টি নামক বস্তুটা অবাঞ্ছিত ভাবে যে কেন এসে শীতের মাত্রা টাকে আরো দ্বিগুন করে দেয় সেটা আরূ জানতে চাই ৷

আরূ এবার বিরক্তি নিয়ে বললো
__” সূর্যি মামা তুমি যে এখন আমাকে এভাবে ফাঁকি দেবে তা আগে বললেই হতো , আমরা না হয় কয়েকদিন আগেই আসতাম ৷”

তৎক্ষণাৎ আরু নিজের মাথায় একখান চাটি দিয়ে বলতে লাগলো
__” তুইও না একদম স্টুপিড আরু ৷ বিয়েই তো করলি একদিন আগে তাহলে কয়েকদিন আগে কেমনে আসতিস কক্সবাজার হানিমুন করতে! আজকাল তোর বুদ্ধি সুদ্ধি যে লোপ পাচ্ছে সেটা বোঝাই যাচ্ছে , বয়স বেড়েছে কিনা !”
আরিশের ডায়লগ কপি করে ৷

আরিসের ডায়লগ টা কপি করে দুই হাত দিয়ে মুখ চেপে মিটিমিটি হাসছে ৷ আর মাঝে মাঝে আরিসের মিমিক্রি করে ওর বেশ মজা লাগে, যদিও আরিশের মত ঠিক তেমন টা হয় না তবুও চেষ্টা করে ৷ এই ভেবে যে যখন আরিশ অফিসে থাকবে বা বাইরে থাকবে আর আরিশের অনুপস্থিতি যখন খুববেশি অনুভব করবে তখন আরিশের মিমিক্রি করলে ওর মনে হবে যে আরিশ ওর সাথে আছে ৷ কথাটা ভেবে আরোশী এখন থেকেই প্র্যাকটিস করে ৷ মাঝে মাঝে প্র্যাকটিস করতে করতে আরিশের লাইক সিরিয়াসলি ডায়লগটাও যেখানে সেখানে ঝেড়ে দেয় ৷

আরু মুখ ভ্যাংচিয়ে বললো
__” উনার ডায়লগ কপি করার অধিকারটা শুধু আমার আর কারো নয় ৷’
বলে আবার কম্বলের মধ্যে মুখ লুকালো ৷

চোখটা বন্ধ করে আবার খানিকটা ঘুমোনোর চেষ্টা করলে দরজার প্যাচপ্যাচে আওয়াজে কম্বল থেকে পুনরায় মুখটা বার করে আরিশের দিকে তাকালো ৷
খানিকটা ফিকে কণ্ঠে বলে উঠলো
__”আপনি এত সকালে ঠান্ডার মধ্যে আবার গোসল করতে গেলেন কেন….?”

আরিশ টাওয়েলটা আরূর মুখের ওপর ফেলে দিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে হাত দিয়ে চুল গুলো আলতো করে ঝাড়তে লাগলো ৷

__” কালকে রাতের কথা ভুলে গেলে ? কিছুই দেখছি আজকাল আর মনে থাকছে না তোমার ৷ পুনরায় প্র্যাকটিক্যালি সব করালে কি আবার সবকিছু মনে পড়বে ?”
কথাটা বলে আরূর দিকে চোখ মারলো ৷

আরু খানিকটা রেগে গিয়ে বলল
__” এই ভিজে টাওয়েলটা আমার মুখের উপর কি না ফেললেই হতো না !”

আরিস আরূর কাছে এসে আরূর মুখের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে বলল
__” একদম হ্যাঁ ৷ সকাল সকাল তোমাকে বিরক্ত না করলে যে আমার সকালটা অসম্পূর্ণ আরূপাখি ৷”

__”সেটাইতো প্যাচাল ৷ আমাকে যা খুশি করলেও তো আমি কিছু বলি না তাই জন্যই তো আপনি পার পেয়ে যান ৷”
বলে টাওয়ালটা আরিশের মুখে পুনরায় ছুড়ে মারলো ৷
আরিশ হাসতে হাসতে টাওয়েলটা মুখের উপর থেকে সরিয়ে হালকা কন্ঠে বলল কন্ঠে বলল
__” গোসলটা সেরে নেওয়া ব্রেকফাস্ট করতে হবে ৷”

আরু পুনরায় কম্বলের মধ্যে মুখ লুকিয়ে বলল
__” এত সকালে গোসল করা আমার পক্ষে সম্ভব নয় তাই আমাকে ক্ষমা করেন ৷”

আরিস ওর ঠান্ডা হাতটা কম্বলের ভিতরে ঢুকিয়ে আরুর পেটে আলতো করে স্পর্শ করতেই আরূর সারা শরীর কেপে উঠলো ৷আরিশের প্রতিটা স্পর্শ যেমন আরুর সারার শরীর জুড়ে শিহরণ জাগায় তেমনি ওকে আরো কড়া নিষেধাজ্ঞা গুলো দেয় বারবার জানিয়ে দেয় ৷ যেমন এখন আরিশ ওকে ওর ঠান্ডা হাতের স্পর্শটা দিয়ে বোঝাতে চাইল যে
__” আরুপাখি এখন গোসল করে নাও , না হলে তোমার গোসল করার মতো কারনটা দ্বিতীয় আবার হবে ৷”

ঝটপট করে আরু উঠে-পড়ে হাঁটু ভাঁজ করে হাটুতে মুখ গুঁজে চোখ মুখ খিচে বলতে লাগলো
__” কেন সকাল সকাল এভাবে টর্চার করছেন বলুন তো !”

__”আমার তো মনে হচ্ছে তুমি এখনো চাইছে যে টর্চার গুলোই করি তার জন্যই তো এখনও উঠলে না আর গোসলও করতে গেলে না ৷ তুমি যদি বল তো আবার !”

কথাটা কানে পৌঁছতেই আরু আর একমূহূর্ত দেরী করলো না বিছানা থেকে নেমে যেতে, তাড়াতাড়ি নেমে গিয়ে বলল
__” আমি তো গুড গার্ল তাই না ! আমিতো সকাল সকাল কারণে-অকারণেই গোসল করি , কারন আমার মাথার তো তার ছিরা , বুদ্ধিহীন পাবলিক , তাই আর কি ! আর আমি তো অনেক লাকি যে আপনার মত এত জ্ঞানী একজন জামাই পেয়েছি আর আমি ধন্য হয়ে গেছে ৷”
বলে একটা মিথ্যা হাসি দিয়ে পা টিপে টিপে আরিশকে বকতে বকতে ওয়াশ রুমে ঢুকে গেল……

আরিশ মুচকি হেসে সাদা রঙের পাঞ্জাবি টা পড়ে নিল…..

যতক্ষণ আরোশী গোসল করছে ততক্ষণ আরিশ খাবারটা অর্ডার করে দিয়েছে ‌ ৷ খাবার চলেও এসেছে একটু আগে ৷আরিশ ওর জামাটা নেওয়ার জন্য লাগেজ গুলোর দিকে এগিয়ে যেতেই হঠাৎ দরজায় টোকা পড়ল ৷ আরিশ একটু এগিয়ে গিয়ে দরজাটা খুলে দিতেই তাকিয়ে দেখল আশফি আর ওর ওয়াইফ ৷

__” কি ব্যাপার তোমরা এতো সকাল সকাল !”(মুচকি হেসে)

রিতা : ভাইয়া আজকে আমরা ঢাকায় ফিরে যাচ্ছি , তাছাড়া আপনাকে কি বলে যে ধন্যবাদ দেব নিজেও জানিনা ৷ আপনি যেদিন আমাকে ফোন করে আশ্বস্ত দিয়েছিলেন যে বিয়েটা আমার আশফির সাথেই হবেই সেদিন মনে অনেকটা সাহস পেয়েছিলাম আর তার পরিণতিতে আজ আমাদের ভালবাসাটা সার্থক হয়েছে ৷ আপনার কৃতজ্ঞতা আমি কখনো ভুলব না ভাইয়া ৷”

__” আমি যদি তোমার বড় ভাইয়া হতাম তাহলে একই কাজটা করতাম ৷ প্রত্যেক ভালোবাসা কে মিলানোর একটা সুযোগ যদি আমি পাই তাহলে সেই সুযোগটা কখনো হাতছাড়া করতে চাইনা আমি, তাই তোমাদের যখন সাহায্যের প্রয়োজন ছিল সাহায্য করেছি আর ভবিষ্যতেও করব তা নিয়ে নিশ্চিন্তে থাকো ৷”

__” সে তো জানি ভাইয়া যে অপনি পাশে থাকবেন , তাই আপনার কাছে কৃতজ্ঞতার শেষ নেই ৷”

আরিশ কিছু বলল না মুচকি হাসলো ৷

__” আচ্ছা ভাইয়া তাহলে আমরা আসি ৷ একচুয়ালি সারে দশ টায় ফ্লাইট , আর এখান থেকে এয়ারপোর্ট যেতে প্রায় 45 মিনিট লাগবে তাই আরকি ৷ ঢাকা ব্যাক করলে আপনার সাথে দেখা হবে ৷”(আসফি)

__”ইনশাল্লাহ খুব শীঘ্রই আবার দেখা হচ্ছে , সাবধানে যেও ৷”

আসফি আর রিতা দুজনেই চলে গেল ৷
আরিশ দরজার দিয়ে বিছানার গিয়ে বসতেই দেখল আরু থর থর করে কাঁপতে কাঁপতে ওয়াশরুম থেকে বেরোচ্ছে ৷

আরিশ আরুর দিকে এক পলক তাকিয়ে একটা টেডি স্মাইল দিয়ে বলল
__” এখন ফ্রেশ লাগছে তাই না !”

আরু কাঁপতে কাঁপতে বলল
__” কে এসেছিল সেটা কি জানতে পারি?”

আরিশ একটু দুষ্টামি করে বলল
__” সেই ওই মেয়েটা এসেছিল যে মেয়েটা আমাকে ফুল দিতে চেয়েছিল কিন্তু তুমি তাকে দিতে দাওনি ৷”

আরুশি আরিশের দিকে বাঁকা চোখে তাকিয়ে আর খানিকটা রাগী কন্ঠে ঝাঝিয়ে বলল
__ “ওই মেয়েটা আবার কেন আসতে গেল? ওর সাহস তো কম নয় ! আজ ওর একদিন কি আমার একদিন ৷”
কথাটা বলে রেগে মেগে দরজা দিয়ে দিকে যেতে গেলেই আরিশ আরুকে আটকে নিল ৷ দুই হাত দিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল নিজের সাথে ৷

আরূ রেগে গিয়ে বলল
__” আপনি ছাড়ুন আমাকে , আজকে ওর একটা ব্যবস্থা আমি করেই ছাড়বো , না জানি কত মেয়ের জামাইয়ের সাথে এরকম করেছে ও ৷”

আরিশ আরুর কাঁধে থুতনি রেখে বলল
__” আমাকে অন্য মেয়ের সাথে দেখলে জ্বলে তাই না?”

আরিশের বলার ধরন শুনে আরু বুঝতে পারল যে আরিস এবার সুযোগের সদ্ব্যবহার করে ব্যাপারটা নিয়ে মজা করবে তাই আরিশ এর দিকে ঘুরে ওর দুই হাত দিয়ে আরিশের গলাটা জড়িয়ে ধরে বলল
__” আজ্ঞে না মহাশয় , আমার জ্বলে না , আমার তো এটা ভাবলেই ভালো লাগে যে আমার জামাইয়ের ফেসবুকে কত ফ্যান ফলোয়ার , কত লোক তাকে ফলো করে , গোটা কলেজের ক্রাশ , আবার কক্সবাজারে হানিমুনে রিসোরটের এর মেয়েও তাকে দেখে ক্রাশ খায় তাই এমন একটা জামাই পেয়ে খুব প্রাউড ফিল হয় আমার আর মনে মনে খুব ইচ্ছা যায় যে এত ফেমাস জামাই আমি কি সামলাতে পারবো ! ওর থেকে বরং নতুন নরমাল একটা জামাই খুজি৷”

আরিশ এবার আরূর গলায় আলতো করে ঠোঁট বুলিয়ে বলল
__” এভাবেই ভালোবেসো আমায় সবসময় ৷”

আরু আরিশের চোখে চোখ রেখে বলল
__” আজকে কামড়ে নিলেন না যে !”

__” কামড়ানো ছাড়াও ব্যথা দেওয়ার অনেক উপায় থাকে আরুপাখি , আশা করি তুমি সেগুলো খুব ভালো করেই জানো ৷”

আরু আরিশকে ধাক্কা মেরে বিছানায় বসে পড়ল
__” সবসময় আজাইরা কথা না বললে আপনার যে শান্তি হয় না সেটা আমি জানি , তবে এখন কি আমরা ব্রেকফাস্ট করতে পারি মহাশয়?”

__” অবশ্যই তবে এখনো যে একটা কাজ বাকি আছে আরুপাখি ৷”

আরোশী অবাক চোখে তাকিয়ে বলল
__” এখন আবার আরো কি কাজ?”

__” তুমি কিন্তু আমাকে এখনো বললে না যে তুমি আমাকে ভালোবাসো ৷”

আরু মনে মনে ভাবছে
__” এই ছেলে বলে কি ! যাকে ভালোবেসে আমি পাগল প্রায় ,আর এর আগেও অনেকবার বলেছি ভালবাসি ,তাহলে আবার কেন শুনতে চাইছে ! সত্তিই মন থেকে বলছে নাকি বরাবরের মতো ফাজলামি করতাছে আল্লাহ মালুম ৷”

__” আমি আপনাকে ভালোবাসি কিনা সেটা আপনি কি জানেন না?”

__” জানি তবে আমি চাই দিনের শুরুতে তুমি আমাকে বলো ভালোবাসি আর অবশ্যই সেটা অত্যন্ত রোমান্টিক মুডে হতে হবে ৷ এটা তোমাকে রোজ সকালে বলতে হবে, বলবে তো তুমি?”

__” না বলে উপায় আছে, বলতেই হবে আমি জানি ৷”(বাকা চোখে তাঅআয়ে)

__” প্রমিস করো বলবে ৷”

__”আরে বাবা বললাম তো যে বলবো রোজ সকালে যে আমি আপনাকে ভালোবাসি ৷ আর এটা বলতে আমার প্যারা লাগে না বরং ভালই লাগে ৷এটা বলে যদি আপনার ওই পাত্থার দিলে আমার জন্য একটু ভালবাসার উদয় হয় তাহলে লাভ টরচার গুলো কম সহ্য করতে হয় আরাকি ৷”

আরিশ মুচকি হেসে বলল
__”তাহলে প্রমিস করতেছে কিন্তু তুমি আমাকে যে রোজ সকালে বলবা যে তুমি আমাকে ভালোবাসো ৷”

আরু বাঁকা চোখে তাকিয়ে বলল
__” বললাম তো যে বলবো ৷”

আরিশ একটা ডেভিল স্মাইল দিয়ে বলল
__” তাহলে এখন থেকে পানিশমেন্ট এর জন্য রেডি হও আরুপাখি ৷”

আরুশির হাতে যে খাবারটা ছিল সে খাবারটা অবাক এর চরম পর্যায়ে পৌঁছে যাওয়াতে হাত থেকে পড়ে গেল , আর আরু আরিশের দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে বলল
__” এই তো বললাম আমি আপনাকে ভালোবাসি এখন আবার কিসের পানিশমেন্ট? আজিব তো!”

__” তুমি কি ভুলে গেছো আরুপাখি , যে তুমি নিজেই বলেছিলে যে তুমি আমাকে যখনি বলবে যে তুমি আমাকে ভালোবাসো তার পরিবর্তে পানিশমেন্ট পাবে ৷ তারমানে তুমি রোজ সকালে যখন আমাকে বলবে ভালোবাসি তখনই আমি রোজ তোমাকে আমার পানিশমেন্ট গুলো দেবো ৷ “(চোখ মেরে)

আরোশী মনে মনে
__” এমন বজ্জাত ছেলে আমি আগে কখনো দেখি নাই ,সব সময় আমার কথার মারপ্যাঁচে আমাকেই ফাসায় ৷”

আরুশি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল
__”বয়েই গেছে আমার আপনার পানিশমেন্ট নিতে ৷”

__” সে তো পরে দেখা যাবে যে নেবে নাকি নেবেনা ৷”

💓

বাইরে প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছে , বৃষ্টির কারণে দুজনেই আজকে বাইরে বের হতে পারেনি ঘুরতে ৷ আরিশের বুকে মাথা রেখে আরু ঘুমিয়ে আছে , আর আরিশ এক দৄষ্টিতে আরুর দিকে তাকিয়ে আছে ৷ বাইরে বৃষ্টির ঝিরঝির শব্দটাও যেন আরো বেশি রোমাঞ্চকর করে তুলেছে আরিশের অনুভূতিটাকে ৷

হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠতে আরিশ ফোনটা ধরলো ৷

#চলবে,,,,

তোমার নেশায় আসক্ত ২ পর্ব-২৯

0

#তোমার_নেশায়_আসক্ত
#সিজন:2
#পর্ব:29
#Suraiya_Aayat

আরিশ আরুকে কোলে করে রুমে নিয়ে এসে বিছানায় বসালো….
আরূ আরিশের দিকে তাকিয়ে দেখল যে আরিশ কেমন একটা অদ্ভুত দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে আছে৷ আরূ একটু অবাক চোখে তাকিয়ে বলল,,,
__” কি হলো আপনি আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?”

আরিশ এবার একটা ডেভিল স্মাইল দিয়ে আরূর চুলের মুঠি ধরে নিজের কাছে নিয়ে আসলো , এনে আরুর গলায় একটু বেশ জোরেই কামড়ে দিল….

ব্যথায় আরূর চোখে সামান্য জল চলে এলো ৷ মানুষটার মতিগতি বোঝা ওর পক্ষে অসম্ভব , কখন যে কি চাই কিছুই বোঝা যায় না ৷

আরিশ ওভাবে কামড়ে ধরে আছে আরূ আর সহ্য করতে না পেরে বললো,,,,
__” আমার লাগছে প্লিজ ছাড়ুন ৷”

আরিশ আরূর থেকে সরে এসে আলতো করে আরূর গলায় কামড় দেওয়ার জায়গাটায় ঠোঁট ছোঁয়ালো ৷

আরূর চোখের কোনে জল গুলো চিকচিক করছে তা আরিশের চোখে বেশ দৃশ্যমান ৷ কামরটা একটু জোরেই দিয়েছে….

আরিশ এবার সামান্য দৃঢ় কণ্ঠে বলল,,,,
__” এবার চোখে জল আসছে তাই না ! খুব কান্না পাচ্ছে ?”

আরিসের এমন কথার মানে আরূ বুঝতে পারল না ৷ ওর এরকম ব্যবহার সাথে ওর কান্নার সম্পর্ক কি সেটা আরূর কাছে অজানা ৷

চোখ থেকে নোনা জল গুলো টুপ টুপ করে গড়িয়ে পড়ার আগেই চোখটা নামিয়ে নিল আরূ ৷

চোখটা নামিয়ে বেশ কয়েকবার পলক ঝাপকাতেই চোখের নোনা জল চিবুক দিয়ে গড়িয়ে পড়তেই বেশ বড় একটা ধাক্কা খেলো আরূ ৷ ধাক্কা খেয়ে বিছানার উপর পড়ে যেতে যতক্ষণ এর মধ্যে ও নিজে হকচকিয়ে উঠলো তার আগেই দেখল আরূ ওর হাত জোড়া দিয়ে ওকে বন্দি করে রেখেছে , আর ওর মুখের সামনে ঝুঁকে আছে , মুখে রাগের আভা স্পষ্ট ৷

হঠাৎ করে মানুষটার মধ্যে এমন কি হয়ে গেল যে জন্য কখন থেকে ওর সাথে এরকম ব্যবহার করেই চলেছে ৷

আরিসের ব্যাপার-স্যাপার ও কিছুই বুঝতে পারছে না তবে ওর এমন ব্যবহার যে আরুকে বারবার কষ্ট দিচ্ছে সেই কষ্টটা অনুভব করতেই আরু এবার ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো ৷

আরিশ আরূর মুখের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে বলল,,
__” একদম চুপ , চোখ দিয়ে যেন এক ফোটা জল আর মুখ থেকে ফুপিয়ে কাদার আওয়াজ না আসে ৷”

ভয়ানক লাগছে আরিশকে ৷ আরু স্তব্ধ হয়ে গেছে , পারছে না ফুঁপিয়ে শব্দ করে কাঁদতে , তবে চোখের লোনা জল গুলো আর বাঁধ মানছে না , সেগুলো অনবরত টুপ টুপ করে গড়িয়ে পরছে ৷

আরিশ এবার আরুর গলায় আলতো করে স্পর্শ করে বলল
__” তোমার ওই চোখে যেন কখনো আর আমি জল না দেখি, আর মুখ থেকে জল যেন কখনো ফুঁপিয়ে কান্নার আওয়াজ না পায় , যদি পাই তো তোমার একদিন কি আমার একদিন ৷ তুমি এর আগে কখনো কাঁদো নি এমনকি কাদার প্রয়োজন পড়েনি কখনো ৷ আমি তোমার জীবনে আসার পর থেকে তোমার চোখ থেকে হাজারো অশ্রুকনা বেরিয়ে এসেছে আর সে প্রত্যেকটা অশ্রুবিন্দু যেন আমার বুকে পাথরের মত ভর করেছে সুতরাং তোমারে কষ্টের দায়ভার সম্পূর্ণ আমার ৷ আমি চাইনা আমার জন্য অন্তত তুমি কখনো কষ্ট পাও , আর না কারো জন্য ৷
তোমার চোখ থেকে অশ্রু ঝরলে তোমার যতটা না কষ্ট হয় তোমার থেকে আমার আরো বেশি কষ্ট হয় আরুপাখি, তাই ভুলেও আর কখনো এই চোখ থেকে যেন আমি জল গড়িয়ে পড়তে না দেখি ৷ আমার উপর অভিমান রাগ যা-ই থাকুক প্রকাশ করবে আমার কাছে কিন্তু কখনো কাঁদবে না , এমনকি যেদিন আমি থাকবো না সেদিনও,,,,

কথাটা বলার সাথে সাথে আরু আরিসের মুখটা চেপে ধরল ৷ তাড়াতাড়ি আরিশকে জড়িয়ে ধরলো ৷ আরিশের বুকে মাথা রেখে বলল ,,,,
__” আপনি সবসময় এমনটা কেন বলেন ? আপনি জানেন না যে আপনার মুখ থেকে এমন কথা শুনে আমার কষ্ট হয় ! প্লিজ কখনো এমন বলবেন না , আর আমি কাঁদলে আপনিতো কান্নার থেকে হাজার গুন বেশি ভালবাসা আমাকে ফিরিয়ে দেন তাই এটুকু কান্নাতে আমি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি কারণ আপনি কান্নার পরিবর্তে একরাশ ভালোবাসা এনে দেন আমার কাছে ৷ এর থেকে বড় চাওয়া-পাওয়ার আমার কাছে কিছুই হতে পারে না…”

আরিশ আরুর মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,,,,
__” তবুও বুকের বাম পাশটায় বড্ড আঘাত করে আরূপাখি তা যদি তুমি বুঝতে…”

আরু এবার আরিশের থেকে সরে এসে চোখের জলটা মুছে বলল
__” তাই বলে আপনি এভাবে কামড়ে দেবেন? জানেন আমি কত ব্যথা পেয়েছি !”

আরিশ আরুর দিকে চোখ টিপে বলল ,,,
__” একদিন এই সমস্ত কাজ কর্মের প্রতিই তুমিও আশক্ত হবে , সেদিন বুঝতে পারবে এই সমস্ত কাজ কর্মের গভীর তাত্পর্যতা ৷”

আরু চোখের জল মুছে বলল,,,
__” বুঝতে আমার বয়েই গেছে , আর বাই দ্যা ওয়ে আমি কিন্তু জানি আমার মিস্টার অভদ্রটা আমাকে কতটা ভালবাসেন , তবে তিনি যদি এখন আর কোন কথা না বাড়িয়ে আমাদের লাঞ্চের জন্য যেটা এনেছেন সেটা যদি আমাকে খাইয়ে দেন তাহলে আমি বেশি খুশি হতাম ৷”

আরিশ আরুর দিকে মুচকি হেসে বলল,,
__” আমার বউটা যে অনেক বোঝে ৷”

আরু দাঁত বার করে হেসে বললো
__” এটুকু তো বুঝতেই হয়……”

দুজনে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে রয়েছে একে অপরের হাতে হাত রেখে আর সমুদ্রের নোনা জলটা পা দুটোকে ভিজিয়ে দিচ্ছে বারবার, আর এই মুহূর্তের সাক্ষী রয়েছে পশ্চিম দিগন্তে অস্ত্রগামী সূর্যটা ৷

আরূ আরিসের দিকে তাকিয়ে বলল
__” চলুন নিজেদের ভালোবাসার নামটা সমুদ্রের খাতায় লিপিবদ্ধ করি ৷”

__” কিভাবে আরুপাখি ?”

কথাটা বলার সাথে সাথে আরূ আরিশের হাতটা ধরে যেখানে দাঁড়িয়ে ছিল সেখান থেকে কয়েক পা পিছিয়ে গিয়ে তীরের কাছে এসে দাঁড়ালো , তারপরে খানিকটা ঝুকে সমুদ্রের বালিতে ভালোবাসার চিহ্নটা অঙ্কন করতে গেলেই সমুদ্রের জল এসে সেটাকে ভাসিয়ে লন্ডভন্ড করে দিল ৷
আরু কাচুমাচু ফেস আরে আরিশের দিকে তাকালো ৷

আরিস মুচকি হেসে আরুর কাছে গিয়ে বলল
__” নাও এবার শুরূ করো ৷”

আরু লাভ সাইন এর এক দিকটা অঙ্কন করতেই অপর দিকটা আরিশ অঙ্কন করে দিল ৷ দুজনের আঙুল দুটো পরস্পর স্পর্শ করতেই ভালোবাসা দুটো মিলেমিশে একাকার হয়ে গেল ‌৷”

আরু আরিশের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,
__” ভালোবাসাটা এক হলো ৷”

__” একাকি ভালোবাসিটা সর্বদা অসম্পূর্ণ থেকে যায় কিন্ত যদি ভালোবাসাটা দুজনের পক্ষ থেকেই হয় তাহলে সেই ভালোবাসার পূর্ণতা পায় ৷ এটাই প্রকৃতির নিয়ম ৷”

আরিশের দিকে আবেগআপ্লুত চোখে তাকিয়ে বলল __” আপনি এত কিছু কি করে বোঝেন?”

আরিশ খানিকটা মজার ছলে বলল
__” বয়সটা কম নাকি ? 26 বছর বয়স হলো তাইনা !”
কথাটা বলে আরুশির দিকে চোখ মারলো ৷

আরূ জিভ ভাঙচিয়ে সামনের দিকে দৌড়ে গেল গিয়ে দেখল কয়েকজন মিলে আসর বসিয়েছে একটা আড্ডার, সেখানে একজনের হাতে গিটার দেখে আরুশি তাদের মাঝে গিয়ে বলে উঠলো
__” ভাইয়া গিটারটা একটু পাওয়া যাবে?”

আড্ডার মধ্যে থাকা ছেলেমেয়েগুলো আরূশির দিকে খানিকটা অবাক চোখে তাকাল ৷ তার মধ্যে থেকে একটা ছেলে আরুশিকে উদ্দেশ্য করে বলল
__” আপনি কি গিটারটা নিবেন আই মিন গান করবেন বলে চাইছেন কি ?”

আরুশি হাত নাড়িয়ে বোঝালে যে গান করবে না ৷
__” আরে ভাইয়া যে গান করবে আমি তাকে আনছি ৷”
বলে আরিস এর কাছে গেল ৷

__”আপনি এখন একটা গান উপহার দেবেন আমাকে ৷”
আরিশের হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে যেতে যেতে বলল,,,,
__” গান আবার কিভাবে উপহার দেয় আরুপাখি?
আর কোথায় নিয়ে যাচ্ছো তুমি আমাকে ?”

__” আপনাতে আসক্ত হওয়ার একটা উপায় খুঁজে বার করছি , না করতে পারবেননা ৷”

কথাটা বলে আরূ আরিশকে ওদের মাঝখানে নিয়ে গেল ৷

সামান্য ভ্রু কুঁচকে আরিশ আরুর দিকে তাকিয়ে বলল ,,,,
__” মানে কি আরুপাখি ?”

আরুশি মুচকি হেসে সেই ছেলেটি কে উদ্দেশ্য করে বলল ,,,
__” ভাইয়া এই যে ইনি আমার জামাই, খুব ভালো গান করেন ৷”

আরিশ আরূর দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে বলল
__” লাইক সিরিয়াসলি আরূপাখি, আমি এখন বিচের ধারে রোমিওর মত গিটার হাতে গান গাইবো?”

আপনার আরূপাখির জন্য এটুকু করতে পারবেন না?
বলে গিটারটা আরিশের হাতে ধরিয়ে দিল ৷

__” আমার সানশাইন যখন বলেছে তখন আর না করে উপায় আছে কি ! তার কথা যে শিরোধার্য…”

বলে গিটার টা হাতে নিয়ে গান ধরল,,,,,,,

__” ওগো তোমার আকাশ দুটি চোখে
আমি হয়ে গেছি তারা ৷

ওগো তোমার আকাশ দুটি চোখে
আমি হয়ে গেছি তারা ৷

এই জীবন ছিল নদীর মত গতিহারা,

এই জীবন ছিল নদীর মতো দিশেহারা,

ওগো তোমার আকাশ দুটি চোখে
আমি হয়ে গেছি তারা ৷”

আরিশ আরূর চোখে চোখ রেখে গানটা গাইলো ৷ আরিশের গলায় গানটা শুনে আরুর মনে একটা প্রশান্তির ঝড় বয়ে চলেছে ক্রমাগত ৷

গান শেষ হতেই চারিদিকে সবাই হাততালিতে দেওয়াতে মেতে উঠলো ৷ আরূ যেন এতখন একটা ঘোরের মধ্যে চলে গিয়েছিল, সকলের হাত তালির আওয়াজ শুনে ঘোর ফিরলো ওর, খানিকটা চমকে উঠে ও নিজেও হাততালি দিল ৷

চারিদিক থেকে সবাই ভলছে,,,,
__” ভাইয়া আরেকটা, প্লিজ ভাইয়া আরেকটা ৷”

আরিশ গিটারটা ওদের একজনের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল ,,,
__” আর না, আমার সানশাইন চেয়েছিল তাই ওর কথা রাখতেই গাইলাম ৷”

ওই ভিড়ের মধ্যে বসে থাকা একটা মেয়ে বলে উঠলো,,,,
__” ভাইয়া আপনি এত সুন্দর গান করেন আপনাকে টিভিতে কখনো দেখিনি তো !”

কথাটা শুনে আরিশ হো হো করে হেসে উঠে বলল,,,,
__” গানটা আমার ভালবাসা, আর এটাকে কখনো পেশা হিসাবে ভাবেনি ৷”

ওদের মধ্যে থেকে একটা ছেলে বলে উঠলো,,,,,
__” আপনি এতো ভালো গান করেন আপনার একটা অটোগ্রাফ তো নিতেই হয় ভাইয়া , প্লিজ না করবেন না ৷”

আরিশ হেসে ওঠে বলল,,,,
__” আচ্ছা ঠিক আছে দাও ৷ এটা ভেবে দিচ্ছি যে পরে মনে রাখবে যে ভাইয়াটার সাথে কক্সবাজারে গিয়ে দেখা হয়েছিল ৷”

__” আচ্ছা ৷”(ছেলেটা মুচকি হেসে)

আরিশ ছেলেটার হাত থেকে খাতাটা নিয়ে তাতে ওর অটোগ্রাফ দিল ৷

আরু শুধু অবাক চোখে তাকিয়ে দেখছে সকলের কান্ড ৷ সত্যিই ওর নিজেরও খুব ভালো লাগছে আজ ৷
আরিস অটোগ্রাফের শেষে ছেলেটা একবার অটোগ্রাফের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে আরিশের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,

__” ভাইয়া আপনার নাম কি আরশিয়ান?”

আরিশ আরূর দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,
__” এটা আমি আর আমার সানশাইনের একসাথে নাম ৷”

আরু অবাক চোখে আরিশের দিকে তাকালো ৷ আরিশ ওকে নিয়ে কত ভাবে এ সমস্ত কথা ভালো লাগে ৷

ছেলেটা আরিশের সাথে হাত মিলিয়ে বলল,,,,,
__” আপনার সাথে পরিচয় হয়ে খুব ভালো লাগলো ভাইয়া, আর ভাবী আপনি অনেক লাকি , ভাইয়া আপনাকে অনেক ভালোবাসে ৷”

ছেলেটার কথা পরিবর্তে আরূ কেবল মুচকি হাসলো৷
.
আরুপাখি এবার যাওয়া যাক?
.
হমম ৷

আরু আরিশের হাতে হাতে রেখে চলে গেল ৷ দলবদ্ধ হয়ে থাকা মানুষগুলোকে অবাক হলো আজ একটা দম্পতির ভালোবাসা দেখে , সত্যি ভালোবাসাটা কে কত ভাবে সাজানো যায় তাই এ আরশিয়ান দম্পতি হরো তার একটা প্রকৃত উদাহরণ ৷

#চলবে,,,,,

তোমার নেশায় আসক্ত ২ পর্ব-২৮

0

#তোমার_নেশায়_আসক্ত
#সিজন:2
#পর্ব:28
#Suraiya_Aayat

আরিশ আর আরূ কক্সবাজারে ফ্লাইট থেকে নেমে এয়ারপোর্টের বাইরে লাগেজ নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে ৷ যে হোটেলে আরিশ বুক করেছে সেই রিসোর্ট থেকেই গাড়ি এসে ওদের কে নিয়ে যাবে ৷ আরূ ইতিমধ্যে অনেকটাই ক্লান্ত, শরীরটা কেমন ম্যাজম্যাজ করছে তার ওপরে ঘুম ঘুমও পাচ্ছে খুব ৷ সারাটা ফ্লাইট ঘুমিয়ে কাটিয়েছি আরূ আরিশের কাঁধে মাথা রেখে ৷

প্রায় 10 মিনিট হয়ে গেল কিন্তু রিসোর্ট থেকে কোন গাড়ি পাঠালোনা আর আরূ তাতে রীতিমতো বিরক্ত ৷

আরিশ আরুর মুখের দিকে তাকালো, তাতে বিরক্তিতার ছাপ স্পষ্ট ৷ আরিশ আরুকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,
__” বিরক্ত হচ্ছ তাই না? আমি যতদূর জানি আমার বউটার টাইম জ্ঞান সম্বন্ধে সঠিক ধারণা আছে তাই এটুকু বিরক্ত হওয়া তার ক্ষেত্রে জায়েজ ৷”

আরু মুখে এক চিলতে হাসি নিয়ে আরিশের ধরে হাতটা আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল,,,,
__” কিছুটা বিরক্ত হচ্ছি তবে আপনার উপস্থিতিতে তা জানান দিচ্ছে না , বেশ ভালই লাগছে ৷”

আরিশ আরূর কথার বিপরীতে পাল্টা মুচকি হাসি দিলো ৷ আর বেশিক্ষণ ওদেরকে দাঁড়াতে হলো না, কিছুক্ষণের মধ্যেই রিসোর্ট থেকে একটা সিএনজি পাঠিয়ে দিয়েছে ৷

ওরা যাবে ” মারমেইড ইকো রিসোর্ট ” ৷আরিশ আগে থেকেই রিসোর্টের একটা স্পেশাল রুম বুক করে রেখেছে ওদের জন্য ৷

ওখানে আশফি আর ওর বউ ও আছে ওই রিসোর্টে, অবশ্য আরিশ ই ওদের জন্য রিসোর্ট এর ব্যবস্থা করে দিয়েছে ৷ সেখানে গিয়ে আশফি আর আশফির বউকে দেখে আরুর মুখের রিয়াকশন টা কেমন হবে সেটা ভাবলেই পেট ফেটে হাসি বের হয়ে আসছে আরিশের তবুও এই মুহূর্তে নিজেকে কন্ট্রোল করে রেখেছে, পরে মজা নেবে ব্যাপারটা নিয়ে ৷
তবে আরূ এখনো জানে না যে আসফি আরিশের কথা মত সমস্ত কাজ করেছে, যখন সেটা জানবে তখন যে আরিশ এর অবস্থা বেহাল হবে সেটা আরিশ জানে আর তার জন্য ও সম্পূর্ণ প্রস্তুত ৷না হয় খেলো বউ এর কাছে খানিকটা বকা ৷

এয়ারপোর্ট থেকে প্রায় 45 মিনিটে সিএনজি করে আসার পর ওরা রিসোর্টে পৌঁছে গেল ৷

আরূ রিসোর্টের চারিপাশটা ভালোভাবে তাকিয়ে দেখতেই খুব অবাক হয়ে গেল , রিসোর্টটা একদম প্রকৃতির মাঝখানে, চারিদিকে গাছপালায় পরিপূর্ণ আর সমুদ্রের ঢেউ এর আওয়াজ কানে ভেসে আসছে , পাখিদের কিচিরমিচির আওয়াজ শোনা যাচ্ছে আর সবথেকে আকর্ষনীয় জিনিস হল রিসোর্টের রুম গুলো যা সম্পন্ন বাঁশের তৈরি আর বাইরে থেকে দেখতে অনেকটা আকর্ষণীয় লাগছে আরূর কাছে ৷ ভেতর থেকে সেটা ঠিক দেখতে কেমন হবে সেটা আরূর ক্ষুদ্র মস্তিষ্কের ধারণাতে চলে এসেছে , তবে এটুকু ভেবে ভাল লাগছে যে আরিশ সব সময় ওর জন্য বেস্ট জিনিসটাই করে এবং করে এসেছে এবং ভবিষ্যতেও করবে তা নিয়ে কোনো প্রশ্ন রাখে না ৷

রিসোর্টে ঢুকতেই রিসোর্টের গেটে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটি ওদের অভ্যর্থনা জানানোর জন্য ফুল নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে , আর তাতে আরূর ভ্রু জোড়া কিঞ্চিৎ কুচকে এলো ৷ ও নিজে মেয়েটার কাছ থেকে ফুল নেবে এটা স্বাভাবিক কিন্তু মেয়েটা আরিশকে ফুল দেবে ব্যাপারটা যেন কোনোভাবেই ওর কাছে গ্রহণযোগ্য বলে মনে হচ্ছে না , আর যাই হোক মেয়েটার কাছ থেকে আরিশকে ফুল নিতে দেবে না বলেই মনে মনে ভেবে রেখেছে ৷ আরু আরিশের হাতটা ধরে সামনের দিকে এগিয়ে যেতেই মেয়েটা আরূর হাতে ফুল দিল ৷ আরূ ফুলটা নিল তবে ও
লক্ষ্য করল যে মেয়েটা ওকে ফুল দিতে গিয়ে আরিশের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছে ৷ আরূ আরিশের মুখের রিয়েকশান দেখার জন্য আরিশের দিকে তাকালো,মেয়েটা আরিশের দিকে তাকিয়ে আছে কি না সেদিকে অবশ্য আরিশের কোন ধ্যান জ্ঞান নেই ৷

মেয়েটা এবার আরিশকে ফুল দিতে গেলেই আরু খপ করে মেয়েটা হাত থেকে ফুল টা টেনে নিয়ে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,

__” অন্যের জামাইয়ের হাতে ফুল দিতে খুব ভালো লাগে তাইনা ! যেই উনি একটা সুন্দর ছেলে দেখেছে সেই হাতে ফুল দিতে ইচ্ছা করছে ওনার ৷”

মেয়েটাও আরূর কথা শুনে খানিকটা থতমত খেয়ে গেল কারণ এর আগে এত জনকে ফুল দিয়েছে তবে কখনো এমন কথা শুনতে হয়নি তাকে তবে আরু যা বলেছে সেই কথাগুলো খানিকটা মেয়েটার গায়ে লেগেছে তার কারণ মেয়েটা হ্যাংলার মতো করে আরিশের দিকে তাকিয়ে ছিল ৷ সাময়িকের জন্য হলেও আরিশের উপর ক্রাশ খেয়ে ছিল মেয়েটা তবে আরুর জন্য তা নিমেষেই হজম হয়ে গেল….

আরু তৎক্ষণাৎ আরিশের হাত ধরে সামনের দিকে হাঁটা দিল, কিছুটা দূরে যেতেই আরিসে ফিক করে হেসে ফেললো, এতখন হাসিটা চেপে রেখেছিল, কারন একেই আরু মেয়েটাকে যা ডোজ দিয়েছে তার ওপর ও হাসলে মেয়েটা হয়তো লজ্জায় জবটাই ছেড়ে দিত….

আরিসকে হাসতে দেখে আরূ বলে উঠলো,,,,,
__” খুব মজা পেয়েছেন তাই না ! খুব হাসি পাচ্ছে আপনার, তাতো হবেই , একটা মেয়ে ফুল দিচ্ছে কিনা! আমার থেকে যদি অন্য কারো দিকে তাকিয়েছেন তাহলে আপনার চোখ দুটো তুলে নিয়ে আমি ফুটবল খেলবো বলে দিলাম ৷”

আরিশ অবাক হয়ে আরুর দিকে তাকিয়ে বলল,,,
__” সেই ভুলটা করি মহারানী ! আমার চোখ দুটো যে আমার কাছে বড্ড প্রিয় , এই চোখ দুটো না থাকলে তোমাকে দেখবো কি করে বলোতো !’

__” কথাটা যেন মনে থাকে ৷”

ওরা ওদের রিসোর্টের রুমের দিকে যেতে গেলেই পিছন থেকে একটা পুরুষালী কণ্ঠ পেতেই ওরা দুজন তাকিয়ে দেখল আসফি আর ওর বউ দাঁড়িয়ে রয়েছে ৷

আশফি ওদের দিকে এগিয়ে এসে আরিসের হাতে আরিশের রুমের চাবিটা দিয়ে বলল,,,
__” ভাইয়া তোমার জন্যই এতক্ষণ ওয়েট করছিলাম ৷”

আরিশ আশফীর কাঁধে হাত রেখে বলল,,,
__” তো কেমন লাগছে আসফি ! ভালো করে ঘুরছো তো?”

আসফি লাজুক চোখে তাকালো ওর বৌয়ের দিকে, তাকিয়ে বলল ,,,,,
__” হ্যাঁ ইনশাল্লাহ ভালোই ঘুরছি ভাইয়া তবে আমরা কালকেই ব্যাক করবো ৷”

__” এত তাড়াতাড়ি…”

__” হ্যাঁ ভাইয়া অফিসে চার দিনের ছুটি নিয়েছিলাম অলরেডি দুইটা দিন তো কাটিয়েই ফেললাম ৷”

__” আচ্ছা ঠিক আছে যেটা ভালো মনে করো , বাই দ্যা ওয়ে রাতে ডিনারটা একসাথে করবো ৷”

__” আচ্ছা ভাইয়া ৷”

আসফি আরুর দিকে তাকিয়ে আরূ কে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,
__” হ্যাপি ম্যারেজ লাইফ ভাবি ৷”

আরু ভ্রূ জোড়া কুঁচকে খানিকটা বাঁকা চোখে আশফির দিকে তাকালো , তাকিয়ে বলল,,,,
__” সেম টু ইউ ৷ ”

এই প্রথম হয়ত এমন হচ্ছে যেখানে কোন মেয়ের সঙ্গে যার বিয়ে হওয়ার কথা ছিল সে তাকেই বিয়ের শুভকামনা জানাচ্ছে ৷ দেখতে হবে তো ও কার বউ , আবরার আরিশ খানের বউ , তাই নাথিং ইজ ইম্পসিবল ৷ যেকোনো সময় যেকোনো কিছু হতে পারে যেমনভাবে ওদের বিয়েটা হল , তাই এ সমস্ত ছোটখাটো চমক পাওয়ার জন্য আরূ এখন অলয়েজ রেডি ৷ অবশ্য ব্যাপারগুলোতে এখন বেশি মজা পায় কারণ এগুলো এক একটা সারপ্রাইজ এর মত লাগে ওর কাছে ৷

আরিশ আশফিকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,
__” অনেকক্ষণ ধরে জার্নি করে এসেছি এখন আমি রুমে যাচ্ছি ৷”

__” আচ্ছা ভাইয়া ৷”

রুমে গিয়েই আরূ ধপ করে বিছানার উপর শুয়ে পড়ল ,চোখ বন্ধ করে দিয়ে হয়তো সারা দিনের ক্লান্তি দূর করার চেষ্টা করছে ৷

আরিশ কোমরে হাত রেখে ওর দিকে তাকিয়ে বলল,,,,
__” এই যে সানশাইন তুমি এসেই এভাবে শুয়ে পড়লে যে ?”

__” আমার খুব টায়ার্ড লাগছে , প্লিজ আমি এখন একটু ঘুমাই ৷”

__” লাঞ্চ করবে না ? লাঞ্চ টাইম তো হয়েই গেল ,
আর ড্রেসটাও তো চেঞ্জ করোনি তুমি এখনো ৷”

__” প্লিজ একটু ঘুমাই ৷”
কথাটা বলে আরূ ঘুমিয়ে পড়লো ৷

আরিশ কি বলবে নিজেই কিছু বুঝতে পারছে না, মেয়েটার কথার উপরে কিছু বলতেও পারেনা ও , সব সময় আরুশি কিসে ভালো থাকে সেটাই ভাবতে চাই ও ৷ এখন যদি ক্ষনিক সময়ের জন্য ঘুমিয়ে কিছুটা ক্লান্তি দূর করতে পারে তো থাক না……

তবে খুব বেশিক্ষন আরূর ঘুম হলো না , সারাদিনের এত ক্লান্তি তারপরে এসে নাওয়া-খাওয়া কিছুই না করে ঘুমিয়ে পড়েছে তাতে কি আর লম্বা ঘুম হয় !….

পিট পিট করে চোখ দুটো খুলল আরু, খুব একটা খারাপ ঘুম হয়নি ওর ,এখন বেশ খানিকটা রিলিফ ফিল হচ্ছে ঘুম থেকে উঠে ৷ চারিপাশে তাকিয়ে দেখল সম্পূর্ণটা ঘরটা ফাঁকা পড়ে আছে তবে আরিশকে কোথাও দেখতে পাচ্ছে না আরু ৷

তাড়াতাড়ি বিছানা ছেড়ে উঠে সারা রুমটা ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলো আরু ৷ হঠাৎ করে চোখটা আটকে গেল ব্যালকনির দিকে , সেখান থেকে সমুদ্র দেখা যাচ্ছে তবে তাকে আড়াল করে রেখেছে বেশ কয়েকটা গুল্ম জাতীয় গাছ, তবুও তার মাঝ থেকে সমুদ্রের অনুভূতি নেওয়াটা আটকে থাকছে না কোনোভাবেই ৷
পিছন থেকে আরিশ এর কন্ঠে পেতৈই আরু ঘুরে দেখল আরিশ টাওয়ালটা দিয়ে ওর মাথায় ভিজৈ চুল গুলোকে ভাল করে মুছছে ৷

__” কি করছো আরুপাখি তুমি এখানে?”

__” আপনাকেই খুঁজছিলাম ,খুঁজতে খুঁজতে এখানে চলে আসলাম ৷ কি সুন্দর দৃশ্য তাইনা !”

__” সত্যি খুব সুন্দর তবে তুমি এখন সাওয়ার নিয়ে নাও ফ্রেশ লাগবে তারপরে আমরা লাঞ্চ করতে যাবো ৷ যদিওবা লাঞ্চ টাইম ওভার হয়ে গেছে এখন তিনটা বাজে তবুও রিসোর্টের ক্যান্টিনে কিছু না কিছু তো পেয়েই যাবো ৷”

__” আচ্ছা যাচ্ছি , বলে আরূ যেতে গেলেই আরিশ ওর হাতটা ধরে ফেলল,,,,

__” আমি নিরামিষ আরুপাখি?”

কথাটা শুনতেই আরুর চোখ গুলো বড় বড় হয়ে গেল, তাহলে আরিশ ওর কথাটা শুনতে পেয়েছে ৷ আর এই নিরামিষ শব্দের তাৎপর্য কতটা সেটা হয়তো আরিশ খুভ ভালভাবেই জানে ৷নিজের ওপর নিরামিষের এত বড় একটা তকমা আরিশ কখনোই মেনে নেবে না. ৷”

আরু খানিকটা শুকনো ঢোক গিলে আরিশের দিকে ফিরে বললো,,,,
__” এসব আবার কি কথা ! মানুষের আবার আমিষ নিরামিষ বলে আবার কিছু হয় নাকি?”

আরিশ এবার আরূর হাতটা টেনে এনে আরূর মুখের উপর পড়ে থাকা চুলগুলোকে কাধের এক সাইডে এনে ফেলে দিল , তারপরে মুখে হাত দিয়ে হাল্কা স্লাইড করতে করতে বলল,,,,
__” একোরর্ডিং টু মাই বউ আইএম নিরামিষ, অবশ্য তার এত চিন্তার কোন কারণ নেই ৷ কেমিস্ট্রির কনভারশানের মতো তার বরটাও যেকোনো সময় নিরামিষ থেকে আমিষে কনভার্ট হয়ে যেতে পারে , তবে সেই পরিস্থিতিটাকে সহ্য করার জন্য আমার বউটা তৈরি তো !”

আরুশি বোকাবোকা ফেস করে বলল,,,,
__” এসব কি কথা , আর আমি এসব মোটেও বলিনি ৷”

__” বাট আমি তো কানে শুনেছি সে তুমি যাই বলো না কেনো , তোমার এটুকু ইচ্ছা তো পূরণ করতেই পারি তাইনা !”

আরূ বুঝতে পারলো যে আরিশ এখন রোমান্সের মুডে তবে ও নিজে এখন নেই তাই আরিশ ওর কোমরটা জড়িয়ে ধরে কাছে টানতে গেলেই আরূ বলে উঠল,,, __” ওই দেখুন আশফি ৷”

আরিশ সেদিকে তাকাতেই আরু সুযোগ পেয়ে দৌড়ে ওয়াশ রুমে ঢুকে গেল ৷

আরিশ জোরে হো হো করে হাসতে হাসতে বলল,,,,
__” কতক্ষণের জন্য পালিয়ে থাকবৈ সানশাইন সেই তো আমার কাছেই ফিরে আসতে হবে ৷”

আরু ওয়াশ রুমের ভিতরে ঢুকেছে , বুকের ভিতরে ধুক ধুক করছে ৷ আরিস এখন যে এখন যেকোনো লেভেলের রোমান্টিক মুডে চলে যেতে পারে সেই ধারণাটুকু আরুর আছে ৷ এখন মনে মনে নিজেকেই বকা দিচ্ছে এই বলে যে কি দরকার ছিল আরিশকে নিরামিষ বলে মিথ্যা কথা বলার ৷ এমনিতেই আরিশ যা পাগলামো করে তাতে আরূ নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারে না আর না পারে আরিশকে বাধা দিতে তার ওপরে ও আবার আরিশকে নিরামিষ বলেছে ৷

আরিস টাওয়েলটা ঘরে রেখে একটা নেবি ব্লু কালারের শার্ট পরে নিল, সাদা রঙের ড্রেস ছাড়া অন্য রঙের ড্রেস খুব একটা পরে না তবে আরুর জোরাজুরিতে বেশ কয়েকটা কালারফুল শার্ট এনেছে….

বেশ অনেকক্ষন ধরে শাওয়ার নেয়ার পর আরূ রুমে এসে দেখল আরিস রুমে নেই , বিছানার উপর ফোনটাও রেখে গেছে , তারমানে আরিশ নিশ্চয়ই খাবার অর্ডার দিতে গেছে বা কোন দরকারে বাইরে গেছে ৷ টাওয়েলটা বিছানার উপর রেখে ফোনটা হাতে নিয়ে ব্যালকনিতে চলে গেল ৷ শাড়ি পরেছে নীল রঙের , আরিশের সাথে ম্যাচ করেই পরেছে ৷ আরু নিজে আগে শাড়ি পরতে পারতো না তবুও বিয়ের আগে নিজে শাড়ি পড়াটা শিখে নিয়েছে তার কারণ নাহলে বিয়ের পর ওকে আশফির থেকে শাড়ি পড়তে হতো ৷ এই ভাবনাটা ভেবেই তাড়াতাড়ি শিখে ফেলেছে যাতে আশফিকে শাড়ি না পরাতে হয় ৷

এখন ওর আম্মুর কাছে কল দেবে, কালকের পর থেকে একবারও কল করার সুযোগ পায়নি ও ৷ তৎক্ষণাৎ ওর আম্মুকে ফোনটা করতেই উনিও সঙগে সৄঙগে কলটা ধরলেন ৷

__” কেমন আছো আম্মু?”

আরুর মা আরুর কণ্ঠস্বর শুনেই আরো জোরে জোরে কেঁদে ফেললেন , এর আগে কখনো মেয়েটাকে এত দূরে রেখে উনি একটা দিনও পার করেন নি , সেখানে আজকে একটা দিন উনি মেয়েটাকে ছেড়ে আছেন , সারা হৃদয় জুড়ে হাহাকারের বন্যা বইছে ৷

ওর মায়ের কান্নার আওয়াজ শুনে আরূর নিজেও চোখের কোনেও জল জমে এলো ৷

__” তোকে ছাড়া কি করে ভাল থাকি বল , এর আগে কি কখনো তোকে ছাড়া থেকেছি আমি !”

আরো বেশি ইমোশনাল হওয়ার আগে আরু নিজের চোখের কোন থেকে জলটা মুছে নিয়ে খানিকটা দৄঢ কন্ঠে বলল ,,,,,,
__”একটা দিন পার হয়ে গেল নিজের মেয়েকে একটা ফোন করার প্রয়োজন বোধ করোনি আর বলছো আমকে মিস করেছো ৷”

উনিও খানিকটা আবেগ মাখা কন্ঠে বলে উঠলেন,,,,,
__” বিয়ে বাড়ির পরিবেশ , তাছাড়া নতুন একটা জায়গা নিজেকে মানিয়ে নিতে সময় লাগবে সেই জন্যই আর ফোন করিনি অপেক্ষা করেছি তোর কলের ,যে তুই ফ্রি হলে ফোন করবি ৷”

__” না চাইতেও তো তোমরা অনেক কিছুই ভেবে ফেল, আর তার পরিনামে আমাকে কষ্ট পেতে হয় ৷”

__” তুই তোর আম্মুর উপরে রাগ করেছিস মা ?”

আরু একবার জোরে কেঁদে দিয়ে বলল,,,,,
__” রাগ না অভিমান ৷ তোমরা নিজের মেয়েটার একটা খবর নেওয়ার সময় পেলে না হমম ৷”

আরুর মা নিজের চোখের কোনে জল টা মুছে নিয়ে বলল,,,,,
__” আমিতো জানি আরিশ বাবা তোকে কখনো কোনো কষ্ট পেতে দেবে না , ও তোকে খুব ভালবাসে তাই আমরা এতটা নিশ্চিন্তে থাকতে পারছি ৷ তাছাড়া তোরা কক্সবাজার গেছিস তাই আর কল করিনি ৷”

__” হ্যাঁ আম্মু , এই তো কিছুক্ষণ আগেই এসে পৌছালাম৷”

__” সব সময় আরিসের সাথে সাথেই থাকবি আর ওর কথার অবাধ্য হবি না ৷”

__” বাপি কেমন আছে আম্মূ? বাপি কি আমাকে মিস করছে না ?”

__” তোর বাপি তো কালকে থেকেই মন খারপ করে বসে আছে, লুকিয়ে কাদছে মাঝে মাঝেই ৷”

__” আম্মু আমিও তোমাদেরকে খুব মিস করছি ৷”

আর কিছুখন কথা বলে আরূ ফোনটা রেখে দিল ৷

ফোনটা কেটে দিয়ে আরূ চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে সমুদ্রের দিকে , না চাইতেও চোখ থেকে কয়েক ফোটা নোনাজল গড়িয়ে পড়ল এটা ভেবে যে ওর জীবনের সব কিছুই অপ্রত্যাশিত ভাবে হয় , না চাইতেও সব হয়ে যাই ,তার জন্য আল্লাহর কাছে সত্যিই হাজারো শুকরিয়া জানায় ও ৷

চোখ থেকে টুপ টুপ কয়েক ফোটা জল গড়িয়ে পড়তেই কাধে আরিশের ঠোঁটের গভীর স্পর্শ আর পেটে ঠান্ডা হাতের ছোয়া পেতেই আরু তাড়াতাড়ি করে চোখের জলটা মুছে নিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করলো ৷

হঠাৎ করে আরিশ ওর কাঁধে জোরে কামড়ে নিতেই আরূ আহ করে শব্দ করে উঠল ৷ আরিশের দিকে ঘুরে রাগী চোখে তাকিয়ে বলল,,,,
__” এমনটা কেউ করে ! ব্যাথা পাই তো আমি ৷”

__” ব্যথা দেওয়ার মতো আমি অনেক কিছুই করি তা তো তুমি জানোই ৷”

কথাটা বলে আরিশ আরূকে কোলে তুলে নিল ৷

#চলবে,,,,,,,

গল্পটা ভালো লাগছে তো?😕

তোমার নেশায় আসক্ত ২ পর্ব-২৭

0

#তোমার_নেশায়_আসক্ত
#সিজন:2
#পর্ব:27
#Suraiya_Aayat

ঘড়িতে সকাল সাড়ে আটটা ,,,,,,
কালকে রাত্রে ঠিকঠাক ঘুম হয়নি ওদের দুজনের কারোরি তাই উঠতে অনেকটা দেরি হয়েছে ৷ শীতের সকাল আর ঠাণ্ডা পরিবেশে বেলা করে ঘুম থেকে উঠার মজাটাই আলাদা ৷

হঠাৎ ঘেউ ঘেউ করে শব্দ হতেই আরুর ভয়ে ঘুমটা ভেঙে গেল ৷
তাড়াতাড়ি হকচকিয়ে ঘুম থেকে উঠে চারিপাশে একবার তাকিয়ে দেখল তবে কিছু দেখতে পেল না তবে বুঝতে পেরেছে যে রুমের মধ্যে কোথাও জোরো রয়েছে ৷
জোরোকে সামনে দেখতে না পেলেও ওর ঘেউ ঘেউ টা শুনে আরু কেপে উঠলো ৷

আরু আরিসকে ডাকতে লাগল,,,,

__” এই যে শুনছেন, দেখুননা কোথায় আপনার এই কুকুরটার রয়েছে আর ঘেউ ঘেউ করে ডাকছে , আমার খুব ভয় লাগছে ৷ কি হলো উঠুন ৷(ভয়ে ভয়ে)

__” কিছু হবে না আরুপাখি , জোরো তোমাকে কিছু বলবেনা, তুমি ঘুমাও ৷ ”
কথাটা বলে আরূর হাতটা টেনে আরূকে নিজের সাথে জড়িয়ে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ল আরিশ ৷
আরিশের সংস্পরশে থাকায় ভয়টা কিছুটা কমলেও সম্পূর্ণ যায়নি , ওর কেবলই মনে হচ্ছে এই বুঝি জোরো ওর পায়ে জোরে কামড়ে দিল ৷ কথাটা ভাবতেই পা দুটোকে গুটিয়ে নিল আরূ ৷ সম্পূর্ণ আরিশের মাঝে মিশে আছে ও ৷

হঠাৎ করে আবার জোরোর ঘেউ ঘেউ আওয়াজ শুনতেই আরূ আবার শক্ত করে আরিসকে জড়িয়ে ধরলো ৷

আরূ ভয়ে আরিশের পিঠের অনেক জায়গায় খামছে নিয়েছে ৷ আচড় পেয়ে আরিশ আহ করে উঠলো ৷
__” আরূপাখি ঘুমাচ্ছো না কেন , বললাম তো জোরো কিছুই করবে না ৷”

আরূ দেখল যে আরিশ সম্পূর্ণ ঘুমের ঘোরে আছে আর ব্যাপারটাকে ক্যাজুয়ালি নিচ্ছে , আর ওর কথার কোন গুরুত্ব দিচ্ছে না তাই আরূ রাগে আর অভিমানে এবার ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো,,,,,

আরুর কান্নার আওয়াজ শুনে আরিশ হকচকিয়ে উঠে বলতে লাগলো,,,,
__” কি হলো আরুপাখি তুমি কাঁদছো কেন?”

আরু কাঁদতে কাঁদতে বলল,,,,,
__” আপনাকে আমি সেই থেকে বলছি যে জোরো আছে , কতবার বললাম , আপনি আমার কথা কানেই নিচ্ছেন না ৷ আপনি তো জানেন যে আমার ওকে খুব ভয় লাগে তাও আপনি আমার কথার কোন গুরুত্ব দিচ্ছেন না ৷”(কাদতে কাদতে)

আরিশ এবার হো হো করে হেসে উঠলো,,,,
__” আরে পাগলি এর জন্য আবার কেউ কাঁদে বল ! আচ্ছা ওয়েট ৷”
বলে আরুর হাতের আঙুলগুলো নিজের হাতের আঙুল দিয়ে মুঠি বদ্ধ করে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল,,,,,,
__” এবার একটা ডিপ ব্রেথ নাও আর চোখ দুটো বন্ধ করো ৷”

আরু পিট পিট করে তাকাতে তাকাতে চোখজোড়া বন্ধ করলো, হঠাৎই কানের কাছে কোন কিছুর ফোসফোস করে আওয়াজ পেতেই আরূ পিছন দিকে তাকিয়ে দেখল ওর গায়ের সাথে গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে রয়েছে জোরো , লাফিয়ে উঠে শক্ত করে আরিশকে জড়িয়ে ধরে জোরে জোরে কেঁদে উঠলো ৷

__” আপনি খুব খারাপ , খুব পচা , আপনাকে আমি বললাম যে আমি ভয় পাই তাও আপনিও আমার কাছে এনেছেন ওকে..”

আরিশ আরুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলতে লাগলো,,,,,
__” জোরো আমাদের ফ্যামিলি মেম্বার এর মতোই আরূপাখি , ওকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই, ও তোমার কোন ক্ষতি করবে না ৷ ”

আরু একবার লুকিয়ে জোরোর দিকে তাকিয়ে ভয়ে আরু আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো আরিশকে ৷

__” প্লিজ আপনি ওকে যেতে বলুন, আমার খুব ভয় লাগছে ৷প্লিজ ৷”

__” আরে কিছু হবে না বললাম তো ৷”

__” না না আপনি ওকে যেতে বলুন ৷”( কাঁদতে কাঁদতে)

আরিশ একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে ইশারা করতেই জোরো বেরিয়ে গেল রুম থেকে…..

__” চোখ খোল জোরো চলে গেছে ৷”

__” নাহ , আমার ভয় লাগছে ৷”

আরিশ আরুর ঘাড় থেকে চুলগুলো সরিয়ে গলায় আলতো করে ঠোঁট ছুইয়ে বলল,,,,,

__” তুমি ওকে খামোখা ভয় পাও ,ওরা পশু ওদেরকে তুমি যতটা ভালবাসবে তার থেকেও বেশি ভালোবাসা ওরা তোমাকে দেবে , আর তুমি ওদেরকে যদি আঘাত করো তাহলে ওরাও তোমাকে আঘাত করবে, তাই তোমাকেও জোরোর সাথে স্বাভাবিক ভাবে মিসতে হবে ৷”

__” I will try….”

__” তা আমি কি এখন কিছু ট্রাই করবো ?”(চোখ মেরে)

__” ধ্যাত ৷” বলে আরিশকে ছাড়িয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো ৷

💓

এয়ারপোর্টে দুজনে বসে আছে গন্তব্য কক্সবাজার ৷ ফ্লাইট এখনো এক ঘন্টা লেট , খুবই বিরক্ত বোধ করছে ওরা, দুজনই বসে বোর হচ্ছে , সারা দিনের ক্লান্তিতে আরু ক্লান্ত, আরিশের কাধে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো…..

এয়ারপোর্টে আসার আগে আরিশ নিজের বাসায় গিয়েছিল সকলের সাথে দেখা করার জন্য ,
সেখানে গিয়ে আরূ এক প্রকার লজ্জার সম্মুখীন হয়েছে সকলের সামনে, সানার জন্য ৷

__” আম্মু কিছু খেতে দাও ক্ষুধা লাগছে ৷”(আরিশ বাড়িতে ঢুকে)

আরিশের মা বেরিয়ে এসে দেখল আরিশ আর আরু দাঁড়িয়ে রয়েছে , আর আরূর মুখে লজ্জার ছাপ স্পষ্ট, তবে আরিশ চিরকালের মতো চিল ৷

ফট করে সানা এসে বলল,,,,
__” কাল রাতের পর তুই এত টায়ার্ড হয়ে গেলি যে সকাল হতে না হতেই ক্ষুধা লাগছে , কই আমিতো তোকে এত সকালে কখনো খেতে দেখি নি আগে ৷”

কথাটা শুনে যেন আরুর চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল, কোথায় কি বলতে হয় সেটা যে মেয়েটা কবে শিখবে সেটা এখন আরূ মনে মনে ভাবছে, তবে সানা মজা করেই বলেছে ৷

__”সানা কি হচ্ছে কি ৷ আরু মা নতুন বউ ও কেন রান্না করবে ! যতদিন আমি বেঁচে আছি তোরা দুজন কিচেনেই যাবি না , আমি করে দেবো সব ৷”

__” আরে আম্মু আমি তো মজা করে বললাম, আর ও তো আমার বেস্ট ফ্রেন্ড , এটুকু মজা তো করতেই পারি ,তার ওপর এখন আমার ভাবি সে ৷”

__” আম্মু 11.30টাই আমাদের ফ্লাইট, লাগেজ গাড়িতে আছে, তুমি তাড়াতাড়ি ব্রেকফাসট টা দাও , আমি ততখন আব্বুর সাথে দেখা করে আসি ৷”

__” আচ্ছা যা আমি ততখন আমার মেয়েটার সাথে কথা বলি ৷”

আরিশ আরুর দিকে চোখ মেরে মুচকি হেসে চলে গেল ৷

অনিকা খান আরুর কাছে যেতেই আরু ওনাকে সালাম করতে গেলেই উনি আরুকে থামিয়ে দিয়ে বললো ,,,,,
__” এসব কি করছিস, আর আমি কি বলেছি আমাকে সালাম করতে, সন্তানদের স্থান সবসময় মায়ের বুকে হয় ৷ ” কথটা বলে উনি ওকে জড়িয়ে ধরলেন ৷

__” জানিস আরু মা যখন তুই বিয়ের জন্য না করে দিয়েছিলিস তখন আমরা সবাই খুব ভয় পেয়ে গেছিলাম, আর বারবার এটা মনে হচ্ছিল যেন আমাদের দুঃস্বপ্নটা যেন সত্যি না হয়ে যাই, তবে আল্লাহ চেয়েছেন যে তোরা দুজন দুজনের তাই আজ একে অপরের সঙ্গে ৷”

আরু মুচকি হেসে বলল,,,,
__” আর সেই জন্যই তো তুমি আমার মা ৷”

অনিকা খান চোখের জল মুছে আরূর কপালে ভালোবাসার পরশ একে দিল ৷

__”তুই আর সানা ততখন কথা বল আমি এক্ষুনি তাদের ব্রেকফাস্ট দিচ্ছি ৷ আর কক্সবাজারে পৗছে গিয়ে তোর আম্মুকে একটা কল করিস ও বেচারি কালকে থেকে কেদে কেদে একাকার ৷”

ওর মা এর কতটা শুনে আরূর বুকের ভিতর হাহাকার শুরু হয়ে গেল ৷ এই প্রথম এমন কিছু হচ্ছে যে ওকে নিজের ফ্যামিলি ছেড়ে এতটা দূরে আসতে হয়েছে, এর আগে আরু কখনও ওর আম্মুকে ছাড়া সময় কাটায় নি, এমনকি একমুহুর্তও ভাবেনি ৷ আগে যখন ওনারা আরূর বিয়ের কথা বলতো তখন আরূ খুর রেগে যেত বিয়ের কথা শুনে আর চেঁচামেচি করে সারা বাড়ি মাথায় করতো, তারপর ওর আম্মু ওকে শান্ত করতে না পেরে কেঁদে দিতেন আর বলতেন,,,,,

__” আমরা কি আর সাধে বিয়ের কথা বলি ! এটাই যে মেয়েদের জীবনের নিয়তি ৷”

কথায় বলে মেয়েদের নিজের ঘর বলে কিছু হয়না কথাটা যেন আজকে বড্ড বিশ্বাস করতে ইচ্ছা করছে আরূ , কারণ কুড়িটা বছর যেটা নিজের বাড়ি বলে ভেবে এসেছে আর আজ এখন সেটাকে পর করে চলে এসেছে অন্য একটা বাসায় ৷ অন্য একজনের সঙ্গে, অন্যের বাড়িতে নিজের জীবনটাকে পার করতে হবে , ঐগুলোই ভাবছে ৷ যদিওবা আর অন্য সকলের মত আরিশের ফ্যামিলি নয় ৷আরুকে আরিশের মা নিজের মেয়ের মতোই ভালোবাসেন , তবুও কোথাও যেন একটা মাতৃস্নেহের হাহাকার থেকেই যায় ৷

আর দেরি না করে আরু ওর আম্মুর কাছে যেই ফোন করতে যাবে তখনই সানা ওর হাতটা ধরে টেনে এনে সোফায় বসালো ৷

আরূ সানার দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,
__” কিরে হঠাৎ করে এভাবে টেনে আনলি কেন?”

__” বস , তোর সাথে অনেক কথা আছে ৷”

আরু অবাক হয়ে বলল,,,,
___” কি কথা ?”

সানা চোখের চশমাটা চোখ থেকে নাকের ডগায় নামিয়ে নিয়ে আরুর দিকে দুষ্টু হেসে বলল,,,
__” কাল রাতে ঠিক কি কি বললি,,, আই মিন আমার ভাইয়া যা রোমান্টিক, তা কোন পর্যায় থেকে শুরু করলি?”

আরূ সানার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে বলল,,, __” __”এসমস্ত কি কথা সানা ! আর তুই যথেষ্ট শান্তশিষ্ট ছিলি হঠাৎ করে এত চেঞ্জ কি ব্যাপার বলতো?”

__” কোন ব্যাপার নেই রে এমনি romantic সিন তো তাই জানতে ইচ্ছা করছে খুব ৷”

__” একটা থাবড় দিবো বলেদিলাম ৷”

__” আচ্ছা বেশ , বাসরের কথা বলতে না হয় লজ্জা পাচ্ছিস বাট এটা তো বলবি যে ভাইয়া তোকে হঠাৎ এমন কি বলল যে তুই পাঁচ মিনিটের মধ্যে বিয়ের জন্য রাজি হয়ে গেলি ?”

আরু একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলল,,,,
__” উনি যা বলেছেন তাতে আমার আর সাহস হয়নি উনাকে প্রত্যাখ্যান করার ৷”

সানা এবারের উত্তেজনার সাথে আরূর দিকে তাকিয়ে বলল,,,,
__” কি হয়েছে বল বল….”

সেদিন….

কাজী সাহেব সহ সবাইকে রুম থেকে বাইরে বার করে দিয়ে আরিশ রুমের দরজাটা দিতেই আরু আরিশের দিকে রাগী চোখে তাকালো ৷

আরূ রেগে গিয়ে বললো,,,,,
__” সব কিছুকে কেন মজার ছলে নেন?আর সব সময় আপনার মজা কি না করলেই না ৷ বিয়ের আসরে আমাকে মজার পাত্র না করলে কি আপনার শান্তি নাই ?”

আরিশ আরুর কোন কথা শুনলোনা , কেবল আরুর দিকে এগোচ্ছে , মুখে কোন কথা নেই ওর ৷ চোখে ওর আরুর প্রতি এক ধরনের অদ্ভুত নেশা রয়েছে আরূকে সারা জীবনের মতো নিজের করে পাওয়ার নেশা, আর আগে এমনটা কখনও দেখেনি আরূ ৷ আরূ খানিকটা ভয় পেয়ে গেল , ও নিজেও ভয়ে পিছাতে পিছাতে বিছানার উপর পড়ে গেল ৷

আরিস আরূর দুই পাশে আর হাত দিয়ে আটকে রেখে আরূর দিকে ঝুঁকে গিয়ে বলল,,,,

__” বলো ভালোবাসো কি না?”

__” কক্ষনো না ৷ আপনাকে আমি ভালোবাসিনা আর আমি কখনো বিয়ে করবো আপনাকে ৷ ভালোবাসা জিনিসটা আপনার জন্য নয়, আপনি ভালোবাসার মর্যাদা দিতে জানেন না ৷ মন বলে আপনার কিছু নেই ৷”

__” কবুল কবুল কবুল , আমি তিনবার বলেছি তুমি তিনবার বলো ৷ হাতে বেশি সময় নেই, দু মিনিট অলরেডি নষ্ট হয়ে গেছে , আর তিন মিনিট আছে ৷”

আরু এবার আরিশ কে ধাক্কা দিয়ে ঠাস করে একটা চড় মারলো,, ,
__” কি মনে করেছেন কি আপনি নিজেকে, আপনি যা বলবেন তাই হবে , আমার অনুভূতির কোনো মূল্য নেই ? আপনি যখন বলবেন তখনই আমাকে তাই করতে হবে নাকি , আপনাকে বিয়ে তো দূর আপনাকে এই মুহূর্তে আমি সহ্য করতে পারছিনা , আমার জীবন থেকে চলে যান আপনি আর কখনো যেন না দেখতে হয় আপনাকে ৷”
কথাটা বলতে বলতে আরূর চোখে জল চলে এলো , না বলতে চাইলেও বলে ফেলল ৷

আরিশ এবার মুচকি হেসে বলল,,,,
__” আমি তোমার জীবন থেকে চলে গেলে তুমি খুশি তো !”

__” বললাম তো খুশি, এক কথা কতবার বলতে হয় আপনাকে ? আপনার মুখটা যেন আমাকে কখনো না দেখতে হয় ৷ বূঝেছেন?”

আরিশ আরূর কাছে গিয়ে আরূর গালে আলতো করে হাত রেখে বলল ,,,,
__” ইনশাআল্লাহ তুমি আর আমাকে কখনো দেখতে পাবে না ৷ তোমার চোখের সামনে থেকে কেন সকলের চোখের সামনে থেকে দূরে চলে যাবো আমি ৷”

কথাটি শুনতেই আরূর বুকের ভিতর মোচর দিয়ে উঠল , হঠাৎ এরকম কথা বলছো কেন আরিশ ?

কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,,,,
__” কি করবেন আপনি?”

আরিশ মুচকি হেসে বলল,,,,
__” তুমি ছিলে আমার জীবনের শেষ চাওয়া যেটা আমি আল্লার কাছে সবসময় চাইতাম , তোমাকে যখন পেলাম না তখন আর,,,,!”

কথাটা বলেই আরিশ থেমে গেল,,,,
__” কি আর !”

__” এমন কিছুই করবো যাতে সারা পৃথিবীর কেউ আর আমাকে না দেখতে পাই , ভালো থেকো আরুপাখি ৷”

কথাটা বলে আরিশ পিছন ঘুরে নিজের মনে মনে একটা ডেভিল smile দিল ৷

আরূ আরিশের হাতটা ধরে বলল ,,,,,
__” ইমোশোনাল ব্ল্যাকমেইল করছেন?”

__” যেটা ভাববে সেটাই ৷”

__” দেখুন আপনি প্লিজ এমন কিছু করবে না ৷”

__” আমি আমার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি আরূপাখি ৷”

__” দেখুন আমি যা বলেছি রাগের মাথায় বলেছি ৷”

__” সরি এই কথাটা রাখতে পারলাম না ৷”

__”আমি আপনাকে বিয়ে করবো !”

আরিশ একটা টেডি smile দিয়ে বলল,,,,,
__” তুমি আমার fillings নিয়ে মজা করছো এখন?”

__” আমি আপনার মতো ছলনা জানি না ৷”

__” তাহলে আমাকে ছুয়ে বলো যে আমাকে বিয়ে করবে !”

__” আপনাকে ছুয়ে বললাম ৷”

আরিশ এবার হো হো করে হেসে উঠে বলল,,,,
__” কথা দিয়েছো বিয়ে তো করতেই হবে ৷ আর আমি এতখন মজা করছিলাম ৷ সোজা আঙ্গুলে ঘি না উঠলে আঙ্গুল বাঁকাতে হয় সেটাই করলাম আরকি ৷ আর তুমি যদি বিয়ে না করতে তাহলে সবার সামনে দিয়ে তোমাকে তুলে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করতাম , সেটুকু সাহস আবরার আরিস খানের আছে ৷ তোমাকে যখন ভালোবেসেছি তখন শেষ অব্দি নিজের করেই ছাড়বো এটাই জানি শুধু, ৷”

আরিসের কথা শুনে আরূ তো অবাক , তার মানে এতক্ষণ ধরে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে ওকে রাজি করিয়েছে আরিশ ৷ ইচ্ছা করছে এখন আরিশ নামক মানুষ থেকে সম্পূর্ণ লন্ডভন্ড করে দিতে ৷

আরিশ আরুর নাকটা টেনে দিয়ে বলল ,,,,
__” 5 মিনিট আর 15 সেকেন্ড বাকি আরূপাখি, আশা করি কথার খেলাপ হলে কাজটা ভাল হবেনা, তখন আমাকে ইউনিক স্টাইলেই বিয়েটা করতে হবে , তাই তাড়াতাড়ি কবুল বলে বিয়েটা করে ফেলো ৷ আর তুমি না গুড গার্ল !”

কথাটা বলে আরিশ রূম থেকে বেরিয়ে গেলো ৷

আরুর মুখ থেকে সমস্ত কথা শুনে সানা তো অবাক এর চরম সীমায় ৷

__” আমার ভাইয়া কতো বুদ্ধি মাথায় নিয়ে ঘোরে তা আজ জানতে পারলাম ৷ ”

আরূ একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলল,,,,
__” ওনাকে আমি কবে যে ঠিকভাবে বুঝতে পারবো আমি জানি না ৷ উনি হলেন মিঃ অভদ্র ৷”

সানা মুখ টিপে হেসে বলল,,,, সে তুই যাই বলিস না কেন, ভাইয়া খুব রোমান্টিক বল !”

__” রোমান্টিক না ছাই , নিরামিষ উনি , সব কিছু জোর খাটিয়ে না হয় কোন না কোন কথার ছলে আমাকে ঠিক মানিয়ে নেন ,আর আমিও বাধ্য মেয়ের মতো রাজি হয়ে যাই ৷”

আরিশ নীচে নামতে নামতে আরু নিরামিষ কথাটা বলতেই আরিশের কানে গেলো তা ৷ একটা ডেভিল smile দিয়ে বলল,,,,,,

__” এখন দেখছি একটু আমিষ হতেই হই😉৷”

💓

এক ঘন্টা ধরে ফ্ল্যাইটের লেট হওয়ার কারনে ওরা বসে ছিল বোর হয়ে ৷ অবশেষে বারোটার সময় প্লেনে উঠে কক্সবাজার গেল ৷

উদ্দেশ্য: মধুচন্দ্রিমা ৷😉

চলবে,,,,,,

তোমার নেশায় আসক্ত ২ পর্ব-২৬

0

#তোমার_নেশায়_আসক্ত
#সিজন:2
#পর্ব:26
#Suraiya_Aayat

অনেকখন ধরে আরিশের ফোনটা বেজেই চলেছে, তবুও আরিশ ফোনটা তুলছে না কারন সে তো হূইক্সির বোতলটা শেষ করতেই বেশি ব্যাস্ত ৷ পাশে ওর শরীরের সাথে ঘেষ লাগিয়ে থাকা মেয়েটা মাতাল কন্ঠে বলে উঠলো,,,,,
__” বেবি তো ফোনটা কখন থেকেই বেজে চলেছে, তুমি কি তুলবেনা ?”

আরিশ হো হো করে হেসে উঠে বলল,,,,
__” করেছে হয়তো আবার ন্যাকা কান্না করার জন্য,বাকওয়াস বকবে আর ফালতু ভালোবাসার কথা বলবে, ইমোশোনাল ব্ল্যাকমেইল করার চেষ্টা করবে , কিন্ত নাহ, নাহ ! আমি তাতে একদম গলছি না, শুনতে শুনতে বোর হয়ে গেছি ৷”

__” তোমার সো কল্ড বউ ৷” বলে মেয়েটা উচ্চস্বরে হাসতে লাগলো ৷”

কথাগুলো বলতে বলতেই কলটা কেটে গেল ৷

ওপর পাশে আরূ চোখের কোনে জমে থাকা জলটা মুছে আবার কল করলো ৷

__” দূর এতো বড্ড জালাচ্ছে , না পাই বাড়িতে শান্তি আর না পাই বাইরে শান্তি ৷ বেবি আমি এখন আসছি কেমন,,,,,কালকে রাতে অনেক এনজয় করবো, আর আমার ওই সো কল্ড ওয়ালা বউটাকে ওর নিজের বাসায় দিয়ে আসবো বুঝলে,,,,ওর জন্য লাইফটা এনজয় ই করতে পারিবনা খালি বিরক্ত করে ৷”

মেয়েটা আরিশের গালে কিস করে বলল,,,,
__” বাই বেবি ,সি ইউ সুন ৷”

হাতে আর একটা নতুন হুইক্সির বোতল নিয়ে টলতে টলতে আরিশ বার থেকে বেরোচ্ছে আর কিনচিত গোঙানি শব্দতে গাইছে,,,,,

__” কারো এক দিন হবো ,কারো এক রাত হবো,
এর বেশি কারো রূচি হবে না,
আমার এই বাজে স্বভাব কোনদিন যাবে না ৷”

কাপাকাপা হাতে গাড়ির দরজাটা খুলতেই পাশ থেকে একজন বয়স্ক ভদ্রলোক বলে উঠলেন,,,,
__”এসব,ছাইপাশ না খেলেই নই ?

আরীশ ফিকে হেসে বলল,,,,
__” এটাই যে আসক্তি, এটাই যে আমার নেশা, আগে ছিলাম আমার সানসাইনের প্রতি আসক্ত আর এখন হাতে এই বোতলটা দেখছেন তো এটাই তো আমার নেশা ৷ ”

কথাটা,বলে গাড়িতে উঠতে গেলেই লোকটি পুনরায় বলে উঠলো,,,,

__” নিজের বউটার মুখটা কি একবারো ভেসে ওঠেনা যখন এসব বাজে নেশায় নিজেকে আসক্ত করো ৷”

আরিশ এবার হো হো করে হেসে উঠলো তা দেখে লোকটি বলে উঠলেন,,,,

__” হাসছো যে !”

__” প্রিয় মানুষের ভালোবাসা না পাওয়া দুঃখ টা কি কখনো আপনাকে কুরে কুরে খেয়েছে ?”

উনি খানিকটা ভড়কে গেলেন আরিশের কথা শুনে,,,,
__” মানে ঠিক বুঝলাম না !”

__” আমার বউ আমাকে ভালোবাসে না, না জানি কি অন্যায় আর অপরাধ করে ফেলেছিলাম তার ফল এখনো ভোগ করছি ৷ তাই আমাকে ভালোবাসে না, আর না সে আমাকে চাই ৷ কখনো ভালোবেসে কাছেও টেনে নেইনি, আমি চেয়েও পারি না কারন তার মনে হতেও পারে যে আমি তার ওপর জোর খাটাচ্ছি ৷ তাই আমিও তাকে জোর করতে চাইনা আর সেও আমাকে কখনো কাছে টেনে নেই না ৷ বুঝেছেন আঘাতটা ঠিক কোথায় লাগে ! ”

কথাটা শুনেই উনি মাথটা নীচু করে নিলেন ৷
গাড়িতে উঠে দরজাটা টেনে দিল আরিশ, চোখের কোনে জমে থাকা জলটা চিকচিক করছে,,,,,

__” সবার জীবনের গল্পটা এক হয় না আঙকেল, তেমনি আমারটাও খানিকটা অপ্রিয় গল্প ৷”

কথার শেষে গাড়িটা চালিয়ে আরিশ চলে গেল,,,,
গাড়ি চালাচ্ছে আর হুইক্সির বোতলটাতে এক,সিপ নিচ্ছে,,,,,চোখের কোনে জমে থাকা জলটা ক্রমশ গাঢ়ো হয়ে আসছে,,,,,

কান্নামাখা কন্ঠে আরিশ বলে উঠলো,,,,,
__” আজ আমার জীবনের গল্পটাও অন্যরকম হতো যদি আমার আরুপাখি আমাকে ভালোবাসতো, তবে সব চাওয়া তো আর পূরন হয় না, কিছুটা হলেও অপূর্ন থেকে যাই ৷”

কথাটা শেষ করতেই গাড়ি ডিসব্যালেনস হয়ে ধাক্কা মারলো সামনের গাছটাই,,,,,

__” ভালো থেকো আরূপাখি ৷”

আরূ জোরে চেচিয়ে উঠে বললো,,,,,,
__”নাহ ,এটা হতে পারে না, উনি শুধু আমার, শুধু আমার, আমি ওনাকে অনেক ভালোবাসি, অনেক অনেক,নিজের থেকেও বেশি, উনার কিছ্ছু হতে পারে না, কিছু না ৷”

কথাটা বলে সামনের দিকে তকিয়ে দেখল সারাটা রূম পুরো ফাকা, কোথাও আরিশ নেই ৷ আরিশকে আরু দেখতে না পেয়ে আরূ কাদতে কাদতে বেলকনিতে দেখতে গেলো যে আরিশ আছে কি না,,, চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় নোনাজল গুলো গড়িয়ে পড়ছে,,,,সত্তিই কি আজ ও নিজের সামান্য অভিমানটাকে বজায় রাখতে গিয়ে মানুষটাকে হারিয়ে ফেলেছে?

আরিশকে বেলকনিতে খুজে না পেয়ে আরু দৌড়ে রূম থেকে বেরিয়ে গেলো, সারা করিডোর অন্ধকার কোথাও কিছু দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না, এমনকি কোন মানুষের উপস্থিতিও না , পাগলের মতো ছুটছে আরূ আর শুধু মনের মধ্যে একটাই চিন্তা ,তার প্রিয় মানুষটা কোথাই, ও কি তাকে সত্তিই হারিয়ে ফেলেছে ?

হঠাৎ আরিশের বুকের সাথে গিয়ে ধাক্কা খেলো আরূ,
আরিশের উপস্থিতি বুঝতে পেরে শক্ত করে আরিশকে জড়িয়ে ধরে অনবরত কাদতে লাগলো ৷
__” আমি অভিমান করে আপনাকে একটু দূরে সরিয়ে দিয়েছি বলে আপনি রাগ করো আমাকে আপনার জীবন থেকে এতোটা দূরে সরিয়ে দেবেন! এটা আপনি কি করে পারলেন বলুন ! বলুন কি করে পারলেন ৷”

আরিশ খানিকটা ঘাবড়ে গিয়ে বললো,,,,
__” এগুলো তুমি কি বলছো আরূপাখি , আর আমি তোমাকে কোথাই দূরে সরিয়ে দিয়েছি, তুমি তো আমার কাছেই আছো , আমার সাথে মিশে ৷”

আরুশি আরিশের বুক থেকে মাথা তুলে আধোআধো চোখে আরিশের দিকে পিটপিট করে তাকালো, দু হাত দিয়ে আরিশের গালে স্পর্শ করে বলল,,,,,
__” আপনার কিছূ হয়নি তো, আপনি ঠিক আছেন তো?

আরিশ ভ্রূ কুঁচকে বলল,,,,
__” কেন আমার কিছু হলেই বুঝি তুমি খুশি হতে আরূপাখি ৷”

আরু আরিশের মুখটা চেপে ধরে বলল,,,,
__” একদম ফালতু কথা বলবেন না , আপনি কি জানেন যে আমি কতটা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম ৷ আপনি খালি আমাকে কষ্ট দেন ৷”( আরিশের বুকে মাথা রেখে কাদতে লাগলো )

আরিশ মনে মনে,,,,,

আল্লাহ মালুম কি স্বপ্ন দেখেছে যে এমন করছে তবে কি দেখেছে তা জানার আমার কোন ইচ্ছা নেই, প্রিয় মানুষটা অমিমানের মাঝে লুকিয়ে থাকা ভালোবাসাটা বুজেঝে এটাই যথেষ্ট ৷

__” না জানি কি কি আজগুবি স্বপ্ন দেখো আর রাত বিরেতে এমন পাগলামো করো ৷”

আরু আরিশের থেকে সরে এসে চোখের জলটা মুছে বলল,,,,
__”হ্যাঁ এখন তো আমাকে পাগল ই মনে হবে, নতুন একজনকে পাইছেন যে ৷”

__” কি যা তা বলছো এসব, তুমি নাজানি কি স্বপ্ন দেখেছো আর আমাকে এখন রাগ দেখাচ্ছো ৷ আচ্ছা যা দেখেছ তা তোমার দুঃসবপ্ন , চলো এখন ঘুমাবে চলো ৷”
কথাটা বলে আরিশ রূমের দিকে যেতে গেলেই আরূ একহাত দিয়ে আরিশের শার্টটা খামছে ধরে ফুপিয়ে ফুপিয়ে বলতে লাগলো,,,,
__” আপনি আমার ওপরে রাগ করেছেন তাই না?”

আরিশ পিছন ঘুরে বলল,,,,,
__” আমি কি তোমার ওপর কখনো রাগ করতে পারি বলো?আমার ছোট্ট আরূপাখিটাকে যে আমি অনেক ভালোবাসি ৷”

__” তা আমার থেকে দূরে দূরে থাকছেন কেন? আমি কি আপনার ওপর এটুকু অভিমান ও করতে পারবো না যে আপনি তাই বলে এভাবে আমাকে এড়িয়ে চলবেন ৷”

__” বুঝেছি আমার বউটার ও এখন প্রেম প্রেম পাচ্ছে,,,,তাইতো!”(আরুর কানে ফিসফিস করে)

আরূ লজ্জায় আরিশের বুকে মুখ লুকালো ৷
__” এভাবে এতটা লজ্জা না দিলেই কি নই ?”

আরিশ আরুকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে কোলে তুলে নিয়ে আরূকে বলল,,,,,

__” এত প্রেম প্রেম পেলে কি আর এই অস্থিরতা নিয়ে থাকা যাই বলো !”

আরিশ আরূকে কলে নিয়ে ওর বিছানায় বসালো,,,,
আরিশ ওর শার্টের পকেট থেকে আর একটা নূপূর বার করে আরুর পায়ে পরিয়ে দিতে গেলেই আরূ বলে উঠলো,,,,,

__” আপনি এটা কি করছেন! আর আমার পায়ে আপনি হাত দিচ্ছেন কেন? ”

__” ভালোবেসে স্ত্রী স্বামীর পায়ে সালাম করলে সেটা যদি মান্য করা যায় তাহলে একজন স্বামী কেন পারবে না তার স্ত্রীর পায়ে হাত দিতে ?”

আরু মুগ্ধ নয়নে আরিশের দিকে তাকিয়ে আছে, সত্তিই মানুষটা ইউনিক, সকলের থেকে এক্কেবারে আলাদা এক কথায় কাল্পনিক এক চরিত্র ৷”

আরিশ আরূর পায়ে নূপূরটা পরিয়ে দিয়ে বলল,,,,
__” কখনো যেনো পা থেকে খুলতে না দেখি যদি খুলতে দেখেছি তো,,,,”

__” পানিশমেন্ট ৷”(আরিশের মুখ থেকে যেন কথাটা কেড়ে নিয়ে আরূ বলে দিল ৷)

__” অনেক কিছুই বোঝো দেখছি,,, তা বেশ, মাঝেমাঝে কিছু জিনিস একটু সহজে বূঝে ফেলা ভালো তাতে জীবনের অলিখিত অংকগুলো যেনো খানিকটা সোজা হয়ে যাই ৷ সে সব কথা থাক এখন তুমি ঘুমাও অনেক রাত হলো, কাল আবার সকালে ফ্লাইট আছে ৷”

__” আপনার ভালোবাসা নামক পানিশমেন্ট টা কি আমি পাবোনা নাকি আমার পানিশমেন্ট এর জন্য আপনি আমাকে অপেক্ষারতর তালিকায় নাম লিখিয়েছেন কোনটা ?”(আবেগ মিশ্রিত হয়ে)

আরিশ মুচকি হেসে বলল,,,,,
__” কালকে কক্সবাজার যাবো তাই তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ো আরুপাখি ৷”

আরিশের কথার কোন গুরুত্ব না দিয়ে আরূ আবার বলতে শুরূ করলো,,,,,
__” কি হলো বলুন , পানিশমেন্টটা কি আমি পাবো না?”

আরিশ আরূর কানে ফিসফিস করে বলল,,,,
__” ভালোবেসে কাছে টেনে নিচ্ছো, পরে হাজার আফসোসের মাঝে অভিযোগ এনোনা যেনো !”

আরু আরিশের শার্টের কলার খামছে ধরে বলল,,,,
__” কিছু ভালোবাসা পেতে গেলে যে কিছুটা অভিযোগ করতেই হই !”

__” তাহলে অভিযোগের খাতাতে নিজেদের নাম লেখানো যাক কি বলো ৷”

আরুশি লজ্জায় মুখ লুকালো ৷

ভালোবাসা দিয়েই শুরূ হলো অভিযোগের প্রারম্ভ ৷

#চলবে,,,,,,,,

তোমার নেশায় আসক্ত ২ পর্ব-২৪+২৫

0

#তোমার_নেশায়_আসক্ত
#সিজন:2
#পর্ব:24(বিবাহ পর্ব ধামাকা)
#Suraiya_Aayat

আরূর সম্পূর্ণ সাজ কমপ্লিট, একটা লেহেঙ্গা পড়েছে,হাতভর্তি চুরি , আর তারসাথে ম্যাচ করে অর্নামেন্টস পরেছে , একটু গাঢ় মেকআপ, সম্পূর্ন অপ্সরীর মত লাগছে আরূকে দেখতে, তবে সব কিছুর মাঝে একটা কমতি থেকেই গেছে, আর সেটা হলো ওর পায়ে থকা নুপুর , এক পায়ে নুপুর আছে আর এক পায়ে নুপুর নেই কারণ আরেকটা নুপুর তো আরিশের কাছে ৷ আরিশ বলেছে যে সন্ধ্যাবেলা যখন বিয়ের দাওয়াতে আসবে তখন নুপুর টা নিয়ে আসবে ৷

আরিশকে অনেকবার বললেও আরিশ নূপুরটা দেইনি ৷ আরু মনে মনে আরিশকে হাজারো বকা দিচ্ছে,

__” নির্লজ্জের মত আমার বিয়েতে আসবে , কতবার বললাম বিয়েতে আসবেন না তবুও আসবেই , বুঝেছি যতক্ষণ না আমাকে সম্পূর্ণ শেষ করে দেয় ততক্ষন তো না শান্তি নেই ৷ যখন আমার বিয়ে হয়ে যাবে তখন ঐ নুপুর টা দিতে আসবেন তার সাথে কাটা ঘায়ে এত নুনের ছিটা দিয়ে দেবেন,,,মনটা আর এক দফা ভেঙে চলে যাবেন….”

পার্লারের মেয়েটা আরূ কে সাজানো শেষে আরূকে বলে উঠলো,,,,
__” এ কি আপু তোমার পায়ে আর একটা নুপুর কই? আরেকটা কোথায় গেল?”

আরূ চমকে গিয়ে পায়ের দিকে একবার তাকিয়ে নিয়ে থতমত খেয়ে মেয়েটাকে বলল,,,,

__” ওহ তাইতো , আসলে ওটা হারিয়ে গেছে ৷”

__” আপু তোমার নুপুর হারিয়ে গেছে তুমি এতক্ষণ খেয়াল করনি? একটা নূপুর পরে আছো , তুমি বরং নুপুর টা খুলে ফেল, একটা নুপুর পরার থেকে খুলে ফেলায় বেটার ৷”

আর যা কিছুই হোক আরিসের দেওয়া এই চিহ্নটা নিজের থেকে কখনো আলাদা করবে না আরূ তাই ও বলে উঠলো,,,,,
__” না থাক কোন সমস্যা নেই , একটাই পড়ে থাকি আর আরেকটা নুপুর ঘরে এদিকে ওদিকে কোথাও আছে হয়তো আমি খুঁজে নিচ্ছি ৷”

আরুর এরকম একটা কথা শুনে পার্লারের মেয়েগুলো আর কিছু বলল না, সম্পূর্ণ সাজটা একবার ঠিক করে দিয়ে ওরা রুম থেকে বেরিয়ে গেল ৷
আরূ ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল 6:15 বাজে, কিছুক্ষণ পরেই সাড়ে ছটা বাজবে আর তখনই ওর কাবিন ৷

সময়টা যত এগিয়ে যাচ্ছে বুকের ধুকপুকানিটাও ততই বেড়ে চলেছে মনে হচ্ছে যেন হৃদয়টা খুলে এক্ষুনি বাইরে বেরিয়ে এসে ছটফট করবে ৷ আজ নিজের প্রিয় মানুষের থেকে চিরকালের মতো আলাদা হয়ে যাওয়ার বেদনা টা বড্ড বেশি আঘাত করছে ওকে, বছরশেষের সাথে ওর জীবনের পূরোনো সব মূছে নতুন মুহূর্তভাবে সবকিছু শুরু হবে…..

একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বিছানার ওপর বসতেই চোখ থেকে টপটপ করে কয়েক ফোটা জল গড়িয়ে পড়ল নিজের অজান্তেই , তাড়াতাড়ি করে হাত দিয়ে ঝটপট করে মুছে নিল , এখন ওকে কেউ কাঁদতে দেখলে তা নিয়ে হয়তো আবার হাজারো প্রশ্ন করবে , তা নিয়ে পুরো বিয়ে বাড়ি শোরগোল পড়ে যাবে ৷ আসলে এটাই হল সমাজের বাস্তবতা, কখনো একটা কোন খুত পেলে সেটাকে নিয়ে ছোট থেকে কিভাবে বড়ো কোন জটিল বিষয় বানাতে হয় তা এই সমাজের মানুষজন ভালোই জানে , তাই কাউকে কোন রকম কিছু বলে সুযোগ করে দেওয়াটা নিজের পায়ে কুড়াল মারার মতোই ৷ তাই চুপচাপ স্থির হয়ে খাটের উপরে বসে রইল ৷ কিছুক্ষণের মধ্যেই ওর কাজিন রা সবাই হাসতে হাসতে রুমের মধ্যে এলো ৷ ওরা সবাই রুম থেকে বেরিয়ে গেছিল যখন চারিদিকে বর আসছে বর আসছে ধ্বনিতে ফেটে পড়ছিল তখন ৷ আর তিথি আর সানা দুজনের গিয়েছিল তবে ওর কাজিন রা ফিরলেও ওরা ফেরেনি দেখে আরূ খুব বিরক্ত হলো ৷

মনে মনে ভাবতে লাগল,,,,,
__” ওই ভ্যাবলা আশফিকে দেখার মাঝে এত উৎসাহ কিসের সেটাই বুঝিনা ৷”

আরু চুপচাপ বসে আছে তখনই ওর কাজিন দের মধ্যে থেকে একটা কাজিন বলে উঠলো,,,
__” জিজু কিন্তু আমাদের সেই লেভেলের মানে চরম লেভেলের হ্যান্ডসাম যাকে বলে ৷ আমি তো দেখেই ক্রাশ খেয়ে ফেলেছি , ফেসবুকে রিকুয়েস্ট দিয়েছি দেখলাম সঙ্গে সঙ্গে একসেপ্ট করেছেন ৷ ফেসবুকের ছবিগুলো পুরোই মার ডালা…”

কথাটা শুনে আরূর মধ্যে কিঞ্চিত খটকা লাগলো , তবুও এখনই ওদের সামনে অবাক হলে ব্যাপারটা ভালো দেখায় না তাই ক্রমশ স্বাভাবিক রাখল নিজেকে ৷ আশেপাশের ওর কাজিন রা প্রায় সবাই ওর হবু জামাইকে নিয়ে প্রশংসায় পঞ্চমুখ ৷ আরূ মনে মনে ভাবছে যে আশফির মাঝে এমন কি খুঁজে পেল ওরা যে এত প্রশংসা করেই চলেছে, কই ও নিজে তো কখনো আশফির প্রতি এতটা আকর্ষিত হয় নি, এর থেকে আর বেশি কিছু ভাবতে পারলো না আরূ কারণ তখন কাজী সাহেব ওর রুমে ঢুকে পড়েছেন….

কাজি সাহেবকে দেখেই ওর বুকের ভিতর ধক করে উঠলো, ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল একদম ঠিক সাড়ে ছটা বাজে , উনি যেন এক মুহূর্তও দেরি করেননি ৷
এই মুহূর্তে আরূর মনে হচ্ছে যে এই বিয়েটা দেওয়াই যেন কাজী সাহেবের জীবনের মূল উদ্দেশ্য , এমনটাই লাগছে ওর কাছে এখন….

কাজী সাহেব এশে আরুর সামনে বসলেন , বসে চোখের চশমাটা সামান্য ঠিক করে নিয়ে আরূশিকে রেজিস্ট্রি পেপারের সই করার জায়গাটায় সই করতে বললেন ৷ আরূ আর কোনো দিকে না তাকিয়ে সরাসরি সই করে দিল , পাশে মানুষটার করা সইয়ের দিকে তাকানোর প্রয়োজন বোধ করেনি ও,……

পেপারে সই করা হয়ে গেলেই কাজী সাহেব আরুশিকে বলে উঠলেন,,,,,,
__” বিনতে আরুশি রহমান আপনাকে ধানমন্ডি নিবাসী আফজাল খান এর পুত্র আবরার আরিস খান নগদ 25 লাখ টাকার দেনমোহর দিয়া আপনাকে বিবাহের প্রস্তাব দিয়েছেন আপনি কি কবুল, যদি কবুল হন তাহলে বলেন কবুল ৷”

কথাটা শোনামাত্র আরূর বুকের ভিতর মোচড় দিয়ে উঠলো , এটা কি শুনল ও ! আরিশ ওকে বিয়ে করবে মানে ও যাকে ভালোবাসে সে ওকে বিয়ে করার প্রস্তাব দিয়েছে , বিয়ে করার জন্য বর সেজে সেখানে এসেছে, কথাটা ওর বিশ্বাসই হচ্ছে না , এটা যেন অবাস্তবের মতো লাগছে ওর কাছে , এখন হয়তো বিয়ে বাড়ির প্রত্যেকটা মানুষ কথাটা ওকে বুঝাতে চাইলেও ও বিশ্বাস করবে না যতক্ষণ না আরিশ নিজের মুখে আরূকে বলবে ৷

আরু অবাক, এতটাই অবাক যে মুখ থেকে কোন আর কথা বের হচ্ছে না , যে মেয়ে আগে একটা মুহূর্তও কথা না বলে থাকতে পারতো না সেই মেয়েই আজ মুখের বুলি হারিয়ে ফেলেছে , সেটা ওর নিজেরই বিশ্বাস হচ্ছে না , কি বলবো কোন ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না , চোখের কোনে আনন্দে জল চলে এসেছে , এ আনন্দ ও কিভাবে প্রকাশ করবে সেটা ও জানেনা ও, আচ্ছা এটা কোন স্বপ্ন নই তো? এগুলোই ভাবছে ও…

আরূ এবার কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,,,,
__” এইটা আপনি কি বলছেন আমার তো !”

তখনই ওর চিরচেনা সেই পরিচিত কন্ঠটা থেকে কিছুটা উঁচু স্বরে আওয়াজ ভেসে এলো,,,

__” হ্যাঁ তোমার আবরার আরিশ খানের সাথেই বিয়ে হওয়ার কথা , আবরার আরিশ খানই তোমাকে বিয়ে করতে এসেছে ৷ আর নিজেই তো বিয়ে করার জন্য ইনভাইট দিলা , আর এখন বলছ যে অন্য কাউকে বিয়ে করবা, এটা কিভাবে মেনে নিই আরূপাখি বল ৷
এভাবে বিয়ে আসরে একটা ছেলেকে কথা দিয়ৈ তাকে প্রত্যাখ্যান করে দেওয়া এটা কি একটা ছেলের জন্য অপমানের নই ? বল!
( ভ্রু জোড়া নিচিয়ে কথাগুলো বলল )

আরিশের কথাগুলো শুনে আরূর মনে হলো যেন আগে যেমনটা আরিশ ওর মনটা কে ভেঙেছে আজও ঠিক সেই পরিকল্পনাতেই আছে , তাই আরিশ কথাটা বললেও ওর আরিশের বলা কথাটা যেন এখন আর ওর কাছে বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে হচ্ছে না , এবার অভিমান আর রাগ নিয়ে কিছুটা দৃঢ়স্বরে কাজী সাহেব কে বলে উঠলো,,,,,
__” আমি ওনাকে বিয়ে করব না ,আর আমার সঙ্গে ওনার বিয়ের হওয়ার কথা নয় , আমার যার সঙ্গে বিয়ে হওয়ার কথা তিনি কোথায় ? উনাকে কেন এখানে আনা হয়নি! আর এই মানুষটাকে কেন এনেছেন, আমি কি তাকে বিয়ে করতে চেয়েছি? আমি তাকে বিয়ে করতে চাই না , তাই যার সঙ্গে আমার বিয়ে হওয়ার কথা ছিল তাকে নিয়ে আসুন অন্যথায় আমি বিয়ে করবো না ৷”

আরুর কথা শেষে সানা আর তিথি বলে উঠলো,,,
__” এটা তুই কি বলছিস, তুই তো ভাইয়াকে ভালোবাসি তাহলে এখন এমন টা বলছিস কেন?”

আরূ একটা তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলল,,,,
__” ভালোবাসা জিনিসটা ঠিক উনার নামের সাথে গ্রহণযোগ্য নয় , সম্পূর্ণ বিপরীত শব্দ ওনার সাথে ৷ উনি ভালোবাসা পাওয়ারই যোগ্যতা রাখেন না কারণ কাউকে ভালোবাসলে ভালবাসার দাম দিতে হয় আর উনি তা দিতে শেখেননি ৷ ”

আরিশ এবার একটা টেডি smile দিয়ে কাজী সাহেব আর ঘরের মধ্যে থাকা সকলকে উদ্দেশ্য করে বললো,,,,,
__” আপনারা 5 মিনিটের জন্য একটু বাইরে গিয়ে অপেক্ষা করুন , 5 মিনিট পর আমি যখন রুমে থেকে বেরিয়ে আসবো তখন কাজি সাহেব আপনি রুমে আসবেন আর এসে বিয়েটা পড়িয়ে দেবেন ৷”

সবাই একে অপরের দিকে তাকা তাকি করতে লাগলো , এর আগে কখনো এমনটা বিয়ে হয়তো কেউ দেখেনি ৷ কেউ কিছুই বুঝতে পারছে না যে আরিশ ঠিক কি করতে চাইছে ৷ আরুর কাজিসহ সবাই অবাক হয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল , সানা আর তিথি মুচকি মুচকি হাসছে , রুম থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আগে তিথি আরূর দিকে ইশারা করে বললো,,,,
__” সোজা আঙ্গুলে ঘি না উঠলে আঙুলটা যখন ব্যাকাতে হয় তখন এরকমই হয় ৷”

সানা আরিশকে কে উদ্দেশ্য করে বলল,,,
__” ভাইয়া বেস্ট অফ লাক , জানি যদিওবা এই পাঁচটা মিনিট সময় তোর জন্য একটা বছরের মতো বড় হবে , সো এনজয় ইউর টাইম ৷”

আরিশ আরূর দিকে তাকিয়ে একটা ডেভিল স্মাইল দিয়ে বলল,,,,,
__” তোর ভাবিকে বলে দিস যে তার জামাই তেমন একটা সুবিধার নয়, চাইলেই অনেক কিছুই করতে পারে ৷”

কথাটা শুনে সানা আর তিথি মুখ টিপে হেসে চলে গেল বাইরে…..

বাইরে সবাই অপেক্ষা করছে কখন 5 মিনিট হবে সেই অপেক্ষায় , আর তারপরে কখন কাজি বিয়েটা পড়াবেন ৷ পাঁচ মিনিট পরে কি সেটা দেখার জন্যই সবাই উৎসুক হয়ে বসে আছে ৷ নিচে সবার কানে খবরটা পৌঁছে গেছে , আরূর মা আর অনিকা খান দুজন দুজনের হাত ধরে বসে আছেন ভয়ে ৷

__” তুই এত চিন্তা করছিস কেন?”

__” চিন্তা এমনি আর হচ্ছেনা , আমার মেয়েটা খুব জেদী, ও যদি এখন বিয়ে টা না করে তাহলে কি হবে?”

অনিকা খান মুচকি হেসে বললেন ,,,
__” আমার ছেলেটা কে কি তুই চিনিস না?”

আরুর মা মুখৈ কিঞ্চিৎ হাসি নিয়ে বললেন,,,,
__” মেয়ের মা তাই চিন্তা টাও বেশি তবে তোর কথা শুনে এখন খানিকটা রিলেক্স লাগছে ৷”

__” চিল বেয়ান সব ঠিক হবে ৷”

কথাটা বলে দুজনেই হো হো করে হাসতে লাগলেন ৷ এটা হচ্ছে সেই সময়কার খুশি যখন দুই বেস্ট ফ্রেন্ড গভীর একটা সম্পর্কে পরস্পরের সাথে আরো গভীর সম্পর্কে যুক্ত হয়ে যায় ৷

সেকেন্ডের কাঁটাটা 12 টার ঘরে পৌঁছতেই সবাই আগ্রহ নিয়ে দরজার দিকে তাকাতেই দেখল আরিশ দরজা খুলে দাড়িয়ে আছে ৷

আরিশ কাজী সাহেব কে বললেন,,,,
__” এবার আপনি জান ৷’

কাজী সাহেব খানিকটা থতমত খেয়ে রুমে ঢুকলেন, ওনার পিছনে সবাই ঢুকলো এর পরে কি হয় তা দেখার জন্য ৷

উনি আবার বিয়ে পড়ানো শুরু করলেন,,,,

__” বিনতে আরূশি রহমান , ধানমন্ডি বাসী আফজাল খান এর পুত্র আবরার আরিশ খান নগদ 25 লক্ষ টাকার দেনমোহর ধার্য করিয়া আপনাকে বিবাহের জন্য প্রস্তাব দিচ্ছে, আপনি কি এ বিবাহে কবুল?”

__” জ্বী আমি কবুল ৷”

__” তাহলে তিনবার বলেন কবুল,,,,,”

__” কবুল , কবুল , কবুল ৷”

__” সকলে বলেন আলহামদুলিল্লাহ ৷”

সবাই একসাথে মুচকিহেসে বলল,,,
__” আলহামদুলিল্লাহ ৷”

সবাইতো অবকের চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে, মানে যে আরূশি এতক্ষণ ধরে বিয়ের জন্য আমত করছিল সেই আরূশি এখন সম্মতিতে বিয়ে করছে দেখে সবাই অবাক হয়ে গেল…

বিয়ে পড়ানো হয়ে গেলে কাজী সাহেব রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন, উনি বেরিয়ে যেতেই সবাই আরুশিকে ঘিরে ধরল জানার জন্য যে কি এমন হলো যে আরূ বিয়ে করতে রাজি হয়ে গেল ৷

আরূ বিরক্তি নিয়ে বললো,,,,
__” কিছু হয়নি উনি বললেন রাজি হয়ে গেলাম আর কিছু না ৷”

আরূকে আর কেউ বেশি ঘাটালো না তবে সবার মধ্যে এখন চরম কৌতুহল এটা নিয়ে যে এত সহজে আরূ কিভাবে রাজি হয়ে গেলো , যৈখানে আরূ এতটা একগুয়ে আর জেদি ৷ আরূ কেমন তা সকলেরই কমবেশি জানা….

বেশ কিছুক্ষণ পর ওর কিছু কাজিন রুম থেকে বেরিয়ে গেল আর সানা আর তিথি আরূর পাশে বসে আছে , আর আরূ এখন ওর রাগি দৃষ্টি ওদের দিকে নিক্ষেপ করছে ৷
আরূকে এভাবে দেখে সানা আর তিথি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল,,,,
__” আমরা তো কিছুই জানিনা ৷”

আরূ আর কিছু বলতে যাবে তখনই সাথে সাথে আরুর ফোনটা বেজে উঠতেই ফোনের স্ক্রিনে মিস্টার অভদ্র নামটা ফুটে উঠতে তিথি বলে উঠল,,,,
__” নে তোর মিঃ অভদ্র জামাই ফোন করেছে , বাসরের আগে কিছুক্ষণ প্রেম আলাপ করে নে ৷আমরা আর থেকে কি করবো? তুই কথা বল ৷”

কথাটা বলে ওরা রুম থেকে বেরিয়ে গেল ৷

আরু ফোনটা কানে নিয়ে ধরে আছে কিছু বলছে না রাগে , অপর দিক থেকে আরিশ বলে উঠলো ন,,,
__” কি বলেছিলাম মিসেস আবরার আরুশি যে আমি যা চাই তাই পাই ৷ আর বিয়েটা সবাইকে কেমন চমকে দিয়ে করলাম বলুন, যতই হোক আইএম ইউনিক ইউ নো ৷”

আরিশের কথা শুনে আরূ রেগে বলে উঠলো,,,,,
__” আপনাকে আমি দেখে নেব , আপনাকে আমি ছাড়বো না বলে দিলাম ৷”

আরিস আরূকে রাগানোর জন্য বলল ,,,,
__” আমি ও তো চাই আপনি আমাকেই দেখুন শুধু, আর শুধু আমাকেই কেন সম্পূর্ণ আরিশ খানকেই দেখুন, তার মাথা থেকে পা অবধি দেখুন ভালো করেই দেখুন আর আমাকেই ছাড়বেন কেন পারলে আরও জোরে চেপে ধরে রাখবেন ৷ তবে অবশ্যই আপনার পানিশমেন্ট টা কিন্ত পাওনা রইল, সময়ের সাথে সাথে পানিশমেন্ট পেয়ে যাবেন ৷ আর বাই দ্যা ওয়ে আজ কিন্তু আমাদের বাসর রাত ৷ বাসর রাত মানে বুঝেন তো? মানে কি কি হয় ! আই মিন শুধু আমি আর তুমি কেউ থাকবে না সেখানে , তাই বি প্রিপেয়ার ফর দ্যাট ৷”

আরিশের কথা শুনে আরূ রেগে গিয়ে ফোনটা কেটে দিলো,,,, মানুষটার সাথে তর্ক করাই বেকার, তবে মনের মধ্যে এখন হাজারো রাগের মাঝেও এক প্রকার প্রশান্তি অনুভব করছে, এত মান-অভিমান দুঃখ কষ্টের পর নিজের মনের মানুষটাকে নিজের করে পেয়েছে সারা জীবনের মতো , তার সাথে সারাটা জীবন কাটাবে তাকে একান্ত নিজের করে পাবে , মানুষটা যে শুধু তারই , কথাটা ভেবে আরুর মুখের কোনে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠল…

💓

আরিশ বসে আছে আরূর পাশে আর তূর্য আর সাহেল ও বসে আছি ওদের সাথে , মাঝে মাঝে এটা ওটা নিয়ে আরিসের সাথে মজা করছে ওরা ৷ তখনই হঠাৎ সামনে পরিচিতি কণ্ঠ ভেসে আসতেই আরিশ চমকে গিয়ে ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরল তাকে ৷

__” তুই কি ভেবেছিলি যে তোর বিয়ে আর আমি আসবো না এটা কখনো হতে পারে ! ওরে তোরাই তো আমার সব , তোরা ছাড়া আমার আর কে আছে বলতো ৷ নিজের প্রিয়জনের খুশির সময় যদি শামিল না হতে পারি তাহলে আমরা তার কেমন প্রিয়োজন ৷”

আরি শক্ত করে প্রান্তকে জড়িয়ে ধরে বলল,,,
__” অনেক ধন্যবাদ তোকে, তুই এসেছিস এটাই অনেক ৷”

প্রান্ত আরিসের পিঠে একটা চাপড় মেরে বলল ,,,,
__” ধন্যবাদ কিসের রে শালা, তোকে এক্ষুনি মেরে বৃন্দাবন পাঠাবো , যদি thank u বলিস ৷
আর আমার থেকে তো তোর ভাবীর এক্সাইটমেন্ট আরো বেশি , সেই বিকাল থেকে সাজতে বসেছে যতোই হোক একমাত্র দেবরের বিয়ে বলে কথা ৷”

কথাটা শুনে আরিস মিথিলার দিকে তাকিয়ে বলল,,, __” থ্যাংক ইউ ভাবি ,থ্যাংক ইউ সো মাচ ৷”

প্রান্ত আরিশকে বলে উঠল,,,,
__” তোর জন্য আমার হানিমুন cancel হলো, তা হানিমুনে একসাথে যাচ্ছি তো নাকি ? নাকি ওটাও তুই একা একাই যাবি?”

__” আমার হানিমুনে কাউকে এলাও না, ইভেন তোকেউ না , তাই আমি আর আমার আরূপাখি একাই যাব ৷ তোরা অন্য জায়গায় যা পরে যখন খোকা-খুকি হবে তখন ভেবে দেখা যাবে ৷”

কথাটা শুনে প্রান্ত আর মিথিলা দুজনেই হেসে উঠলো , তার সাথে আরিশ তুর্য আর সাহেল ও ওদের সাথে যোগ দিল ৷ সত্যি ভালোবাসার পূর্ণতা কতই না আনন্দদায়ক তা বাস্তব জীবনে না ঘটলে কখনো বোঝা যায় না….

আরূ ওর বাড়ি থেকে বিদায় নেওয়ার সময় অনেক কান্নাকাটি করেছে , অবশ্য এটা সব মেয়ের ক্ষেত্রেই অত্যন্ত দুঃখের একটা মুহূর্ত , আর সেই মুহূর্তেও আরিশ ওকে নিয়ে মজা করতে ছিড়েনি ৷ সেই মুহূর্তে আরিশ আরুর কানে কানে বলেছে,,,,
__” এখনে যত পারো কাদো, পরে আর কাদার সুযোগ পাবে না , কারণ ভালোবাসা পেয়ে আর কিছুই মনে থাকবে না ৷”

সেই মুহূর্তের আরিশের কথাটাকে গুরুত্ব দেয়নি আরূ তবে এখন আরিশের পাশে বসে থেকে ওর কথাটার গুরুত্ব টা বুঝতে পারছে ৷ গাড়িতে আরিশ আর ও সম্পূর্ণ একা , গাড়িতে উঠার আগে অলরেডি ওকে অল দ্যা বেস্ট জানিয়েছে আরিশের ফ্রেন্ডরা ৷ ওদের সাথে তাল মিলিয়ে আরিশো বলেছে যে,,,,
__” সুখবর নিয়েই আসবে ৷”

ওরা সবাই ই একই পরযায়ের ৷

হঠাৎ গাড়িটা অন্য রাস্তায় দিকে ব্যাক করতেই আরু বলল,,,
__” কি হল এ রাস্তা দিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন কেন , এটা তো আপনার ধানমন্ডির বাসার রাস্তা ৷”

আরিশ আরূর দিকে তাকিয়ে চোখ মেরে বলল,,,,
__” একলা বাড়ি , ফাঁকা ঘর , চারিদিকে নিস্তব্ধতা, পর্দার আড়ালে জোছনা রাতে হালকা চাঁদের আলো, আর শুধু তুমি আর আমি , আর আমাদের বাসর রাত , ওহ আলাদাই ফিলিংস , আই এম সো এক্সাইটেড, তআর তুমি আমার থেকেও বেশি এক্সাইটেড, না বললেও বুঝি😎 ৷”

আরিসের কথা শুনে আরুশির ইচ্ছে করছে এখুনি আরিশকে গাড়ি থেকে ধাক্কা মারতে,তবে চাইলেও তা সম্ভব নয় ৷

__” আপনার ড্রিম এগুলো,,,বাস্তবে সব প্ল্যানে আমি পানি ঢেলে দেবো ৷”

__” দেখা যাবে আরূপাখি ৷”

চলবে,,,,,

#তোমার_নেশায়_আসক্ত
#সিজন:2
#পর্ব:25
#Suraiya_Aayat

গাড়িটা নিয়ে আরিশ ওর বাসার সামনে এসে দাঁড়াল , আরিশ প্রথমে গাড়ি থেকে নেমে আরূর হাতটা ধরে ওকে গাড়ি থেকে নামল ৷ আরূকে হাত ধরে গেটের সামনে নিয়ে যেতেই আরূ একদফা চমকে গেল কারণ কালকে রাতে বাসাটা যেমন দেখেছিল আজকে সম্পূর্ণ তার বিপরীত ৷ চারিদিকে মরিচ বাতিতে সাজানো , রংবেরঙের আলো তে সারা বাড়ি ঝিলমিল করছে , বাসায় ঢোকার মাঝখানের রাস্তার দুই ধারে মোমবাতি দিয়ে সাজানো ৷ পুরো বাড়িতে মরিচ বাতি জ্বলছে , আরীশের বেলকনিতে বেশকিছু মোমবাতি রাখা রয়েছে ৷আজকে বাড়িটাকে চেনার উপায় নেই ৷ কালকে রাতে মনে হচ্ছিল একটা জনমানব শূন্য ভুতুড়ে বাড়ি সেই বাড়িতে আজ রং বেরঙের আলোর সজ্জায় সজ্জিত হয়ে এক অপরূপ সৌন্দর্য নিয়েছে….

আরিশ আরূর দিকে মুচকি হেসে তাকিয়ে বলল,,,
__” কেমন লাগলো আরুপাখি?”

আরুর বাড়ির সাজানো টা খুব পছন্দ হয়েছে তাছাড়া ওর কাছে সবথেকে আকৃষ্ট হলো আরিশ নামের ব্যক্তিটা ৷ আরূর সাজানোটা খুব পছন্দ হয়েছে তবুও তার সৌন্দর্য এখন আরিশের সামনে দেখাতে চায় না আরু , এখনো আরিশকে কিছু শাস্তি দেওয়া বাকি আছে ওর….

আরিশের দিকে মুখ ভ্যাংচিয়ে বললো,,,,
__” আপনি যেমন আপনার বাড়িও এমন পচা, কোনটাই ভালো না ৷”

আরিশ আরূকে কোলে নিয়ে বলল,,,,,
__” সে যাই হোক আমার বাসা পচা আমিও পচা সব ওকে তবুও তো সেই পচা মানুষের সাথেই এই পচা বাড়িতে ,পচা ঘরে ,পচা বিছানায় রাত পার করতে হবে ,আর সারাটা জীবনও পার করতে হবে ৷ তাই তোমার এসব অভিযোগ মেনে নিলাম বউ ৷

আরিশের এমন আবেগমাখা কথা শুনে আরূর মনে প্রশান্তির অদ্ভুত এক ঝড় বয়ে গেল ৷

আরূর মনে মনে বলল,,,,,
__”এই পচা মানুষটার সাথেই যে আমি নিজের সারাটা জীবন কাটাতে চাই , ভালোবাসতে চাই, তার সেই ছোট্ট হৄদয়টা জুড়ে বিরাজ করতে চাই ৷”

আরিশ আরুকে কোলে তুলে নিয়েছে আর আরূ আরিশের গলাটা জড়িয়ে ধরে রেখেছে শক্ত করে আর ছলছল চোখে আরিশের দিকে তাকাচ্ছে , মানুষটাকে দেখলেই যেন সমস্ত পিপাসা মিটে যাই ওর ৷

আরিশ সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠছে আর আরু ওর কোলে, আরিশের দিকে একনজরে তাকিয়ে আছে ক্রমাগত ৷
__” নিজের বরের ওপর কেউ এত নজর নেই?

আরূ থতমত খেয়ে বলল,,,,,
__” কে বলল আপনাকে আমি আপনার দিকে তাকিয়ে আছি?মোটেও আমি আপনার দিকে তাকিয়ে নেই ৷”

__” That means তুমি ট্যারা ৷”

__” আরু আরিশের দিকে মুখ ভ্যাংচিয়ে বলল,,,,,,

__” আপনি ট্যারা আপনার বউ ট্যারা ৷”

__” সেটাই তো বলছি আমি যে আমার বউ ট্যারা ৷”

__” এত প্যারা দেন কেন আমাকে শান্তিতে থাকতে দেন না এক মুহূর্তও ৷”

__” প্যারা তো সবে সুরূ সানশাইন , এখনো তো কিছুই দেখলেনা ৷”

আরূর মনে মনে ভয় পাচ্ছে এই ভেবে যে আরিশ ওকে কি পানিশমেন্ট দেবে এই ভেবে ৷

আরিশ আরূকে নিয়ে ওর রূমে গেল ৷রূমে ঢুকতেই আরূশি একদফা অবাক হলো,,,,আরিশের রূমটা একদম নরমাল,, সারা বাড়িটা যেভাবে আলোয় ঝলমলে আর রূমটা একদমই নয় ৷ আরূ আরিশের ভাবগতিক কিছুই বুঝতে পারছে না, মানুষটাকে ও কবে সঠিকভাবে জানবে আর বুঝবে সেই দিনটার জন্য দীর্ঘ প্রতিক্ষায় অপেক্ষারত ও ৷

ব্যাপারটা ওর কাছে খুব অবাক জনক লাগলেও তবুও তার ভাবভঙ্গির কোনটাই মুখে প্রকাশ করলো না কারণ এই মুহূর্তে আরিশকে যদি প্রশ্নটা জিজ্ঞাসা করে যে সারা বড়ি এতো সুন্দর করে সাজালেও ঘরটাকে সাজাইনি কেন তাহলে আরিশ ওর দুষ্টুমি গুলো করার জন্য আরও বেশি সুযোগ পেয়ে যাবে আর সেই সুযোগ আরু এই মুহূর্তে দিতে চায়না , তাই নিজের এই মুহূর্তে নিজের অবাক হওয়া টাকে আটকে রেখে চুপ করে রইলো ও ৷

আরিশ আরূকে কোল থেকে নামিয়ে দিয়ে মুচকি হেসে জিজ্ঞাসা করল,,,,,,
__” কি পছন্দ হয়েছে নিজের রুমটা?”

আরূ আরিশের কথার কোন উত্তর না দিয়ে আরিসকে বলল,,,,,
__” আমি কি আজকে সারাদিন এভাবেই থাকবো নাকি ড্রেসটাও চেঞ্জ করবো ৷”

আরিশ হালকা হেসে বলল রুমের ভিতরে থাকা বড় ওয়াড্রবটার দিকে এগিয়ে গিয়ে তার থেকে একটা সাদা রঙের শাড়ী বার করে আরূকে দিল ৷ সাদার মধ্যে শাড়িটা এত সুন্দর কারুকার্য করা যে তা দেখলে যেকোনো মেয়েরই পছন্দ হবে , আর আরিশের কথার মতো শাড়িটা সত্তিই ইউনিক একদম ৷ এর আগে আরূ এই ধরনের শাড়ি দেখেনি ৷

আরিশ ওয়াড্রপের দরজাটা সম্পূর্ণ খুলে দিয়ে আরূকে সেদিকে তাকাতে বলল,,,,

আরু অবাক চোখে তাকিয়ে দেখল যে এতবড়ো ওয়াড্রব জুড়ে শুধু শাড়ি আরা শাড়ি ৷ ঘটনাটা ওর চোখে অত্যন্ত আশ্চর্যজনক কারন আরূ নিজেও কখনো এতগুলো শাড়ি কেনেনি আর এতগুলো শাড়ি কেনার কথা হয়তো কখনো ভাবেওনি ৷

একটা ছেলে হয়ে কতোটা সৌন্দর্য নিয়ে আরুর চাওয়াপাওয়া গুলোকে ভালোবেসেছে,,,, কতগুলো ভাবতেই আরুর অবাক লাগছে ৷ মানুষ টা সত্যিই কতোটা ওকে ভালবাসে , ওর ছোট ছোট আশা ইচ্ছে গুলো পূরণ করে যেগুলো আরূ নিজেও হয়তো কখনো ভেবে দেখেনি ৷

চাইতে না চাইতে আরুর চোখে বারবার জল চলে আসে আরিশের সব কর্মকাণ্ডে ৷ আরিশ ওকে যতটা ভালোবাসে ও নিজেও হয়তো কখনো নিজেকে এতটা ভালোবাসেনি ৷ তাহলে হয়তো ভালোবাসার সংজ্ঞাটা এখনো বুঝে উঠতে পারিনি আরূ , আরিশের হাত ধরে পথ চলতে চলতেই হয়তো ভালোবাসার সংজ্ঞাটা বুঝাবে আর আরু সেই দিনের জন্য অপেক্ষা করতে রাজি ৷

আরু এই মুহূর্তে নিজেকে সংযত করে নিল শুধুমাত্র আরিশ কে পানিসমেন্ট দেবে তাই ৷ তারপর নিজের সমস্ত আবেগ অনুভূতি গুলোকে আরিসের সামনে প্রকাশ করবে যেমনটি আরিশ করে চলেছে এখন ৷

আরিসের হাত থেকে শাড়ীটা নিয়ে ওয়াশ রুমে চলে গেল আরূ ৷

আরিশ মনে মনে বলতে লাগল,,,,
__” বউকে কষ্ট দেওয়ার সময় মনে থাকেনা এবার ঠেলা সামলা ৷”
কথাটা ভেবে রুম থেকে বেরিয়ে গেল আরিশ ৷

শীতের দিনে রাত, চারিদিকে ঠান্ডা আবহাওয়ার মাঝে ঠাণ্ডা জলটা মুখে দিতেই ওর সারা শরীর জুড়ে শীহরন বয়ে গেল ৷ শীতকালে ঠান্ডা জলের স্পর্শ পেয়েও খুব একটা খারাপ লাগছে না ৷ সারাদিনের ধকলে শরীরটাও ক্লান্ত তাই ভাবল গোসল করবে, ঝট করে শাওয়ারটা অন করতেই শাওয়ারের জল ওর সারা শরীরটাকে ভিজিয়ে দিল ৷ সারা শরির জুড়ে শীতল অনুভুতির সাথে ক্রমশ তাল মেলাচ্ছে ওর আবেগমাখা অনুভীতিগুলো ৷

পাঞ্জাবির হাতাটা ভাজ করে হাতে থাকা ঘড়িটার দিকে তাকাল আরিশ, সময় ক্রমশ এগিয়ে চলেছে তবে আরূর ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসার নাম নেই, বিগত কুড়ি মিনিট ধরে বসে আছে আরিশ আর অপেক্ষা করছে আরিশ তবুও মেয়েটা এখনও ওয়াশরুম থেকে বেরোচ্ছে না ৷ পাশে ট্রে তে রাখা খাবারটাও ক্রমশ ঠান্ডা হয়ে আসছে ৷ কিছুক্ষণ আগে যে গরম খাবার থেকে ধোঁয়া উঠেছিল সেই ধোঁয়া যেন শীতের হিমেল হাওয়াই ভাসিয়ে নিয়ে গেছে ৷

আরিশ এবার একটু দৄঢ় কণ্ঠে বলে উঠলো,,,,,
__” আরূপাখি আর কতক্ষণ ! প্রায় 40 মিনিট হয়ে গেল তুমি সেই ওয়াশরুমে ঢুকেছ তার পরে কি আর বের হতে ইচ্ছা করছে না, নাকি আমি না গেলে তুমি বেরোবে না ৷ আমার কিন্ত প্রেম প্রেম পাচ্ছে ৷

কথাটা বলা মাত্রই আরুশি ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এলো, পরনে আরিসের দেওয়া সাদা শাড়িটা , মুখে কোন মেকাপ ছাড়া সৌন্দর্যটা যেন দ্বিগুণ হয়ে গেছে ৷ ভিজে চুল থেকে টপটপ করে জলগুলো ফ্লোরে পড়ছে আর শাড়ির আঁচলটা ক্রমশ মাটিতে নেতিয়ে যাচ্ছে তবে আরুশিল সেদিকে খেয়াল নেই , সে তো এখন তার দুই হাত দিয়ে এই ঠান্ডার জড়তা টাকে কাটাতে নিজের শরীরটাকে ঢাকতে ব্যস্ত , তবু যে এটা করে এই প্রবল শীতের প্রবল কাঁপুনিটাকে নিজের অয়ত্তে আনা সম্ভব নয় সেটা হয়তো এখন তার বোধগম্য নয়….

আরিশ আবার উঠে আরুর কাছে গিয়ে নিজের গরম হাড়জোড়া আরুশির মুখে স্পর্শ করতেই আরু আবেগে চোখ দুটো বন্ধ করে নিল…..

__” এত এত রাত্রে গোসল কেন করলে সানশাইন?”

আরু চোখ জোড়া বন্ধ করে রেখেই বলল,,,,
__” নিজেকে কেমন একটা অগোছালো মনে হচ্ছিল , পানির ছোঁয়াতেই নিজেকে খুঁজে নিতে চাইছিলাম ৷”

আরিশ মুখে কিঞ্চিত হাসির রেখা ফুটিয়ে তুলে আরুকে বিছানায় বসালো তারপরে আরূর হাতে থাকা তোয়ালেটা নিজে নিয়ে পরম যত্নে আরূর ভিজে চুলগুলো মুছে দিতে লাগলো ৷

__” আমি যে আমার এই অগোছালো আরূপাখিকেই বেশি পছন্দ করি কারণ আমি যে চায় তাকে আমি নিজের মতো করে পরিপাটি করি , কারণ তাকে ভালোবাসার সমস্ত দায়িত্বটা যে আমার ৷”

আরুশি অজান্তেই মুচকি একটা হাসি দিল আরিশকে লুকিয়ে ৷ আরিশের কথার বিপরীতে তার উত্তরটা যেন ওর কাছে বড্ড কঠিন , মুখে হাসি ফুটিয়ে তোলা ছাড়া আর কোন উপায় নেই কারণটা ও নিজেই কখনো ভেবে দেখেনি কখনো ৷ প্রিয় মানুষটার কাছে নিজেকে সম্পূর্ণ সপে দিয়ে নিজেকে বড্ড বেশি আবেগি অনুভব করছে, এতটা ভালবাসা হয়তো আগে কখনো পাওয়া হয়ে ওঠেনি ৷ প্রিয় মানুষের ভালবাসাটাকে অনুভব করার মতো প্রশান্তি আর কোন কিছুতেই নেই ৷

আরুর চুলটা যত্ন সহকারে মুছিয়ে অরিশ আরুকে নিজের দিকে ঘোরালো….
মুখের ওপর পড়ে থাকা চুলটা আরুর কানে গুজে দিয়ে বলল,,,,

__” এমনটা আর কখনো করবে না , করলে কিন্তু আমি রেগে যাব….”

__” আপনি রেগে গেলেন বা না গেলেন তাতে আমার বয়েই গেল ৷”

__” যখন পানিশমেন্টটা ভালোভাবে পাবে তখন কথাটা বারবার মনে আসবে, তখন মনে হবে আগ বাড়িয়ে পানিশমেন্ট টা কেন নিতে গেলাম ৷ একসাথে সমস্তটা নিতে পারবে না আরুপাখি তাই এমনটা করো না আর ৷”

আরু আরো অবাক হয়ে আরিশের দিকে তাকালো, __” এমন ভাবে কি কখনো আমি ভেবে দেখেছি ?”(আরু মনে মনে)

__” এই যে সানশাইন হা করো এবার ৷”

আরিশের কথাই চমকে খিয়ে আরূ দেখল আরিশ ওর মুখের সামনে এক চামচ নুডুলস ধরে আছে ৷
আরিশের হাতে নুডুলসটা দেখে আরু সামনে থাকা বাটিটার দিকে তাকালো,,,,

নুডুলসটা থেকে হালকা গরম ভাব,আসছে , তার মানে একটু আগেই যে নুডুলসটা বানানো সেটা বেশ ভালই বোঝা যাচ্ছে,তবে ওর কিছুটা অনিয়মের জন্য তা ঠান্ডা হওয়ার পথে…..

আরূ মুখ বাঁকিয়ে আরিসের থেকে নুডুলস এর বাটিটা নিতে গেলেই আরিশ বলে উঠলো,,,,
__” প্রথমটা আমি দেবো তারপর চাইলে নিজে খাবে তার আগে নয় ৷ নাও হা করো তাড়াতাড়ি করে ৷”

আরু মনে মনে ভীষণ খুশি , আরিশের এমন কাজে ও খুব অস্থির হয়ে যাই ৷ বাস্তবে তা এতটাই ভালোবাসা পেতে চেয়েছিল আরিশ এর কাছ থেকে আর যখন তা সত্যি হচ্ছে তাহলে কেন নিজে থেকে এভাবে ফিরিয়ে দিতে চাইছে সেটা ও জানে না ৷ এটা কি ওর ক্ষনিকের অভিমান থেকে !

__” চুপচাপ আর কোন কথা না বাড়িয়ে তাড়াতাড়ি হা করো আরুপাখি ৷”
আরু আর কোন কথা বাড়ালো না, চুপচাপ আরিশের হাত থেকে খেয়ে নিলো ৷ আরুকে এক চামচ খাইয়ে দিয়ে আরুর হাতে নুডুলস এর বাটিটা ধরিয়ে দিল ৷

__”নাও এবার তুমি খাও ৷”

আরূ আরো দু চামচ খেতেই মুচকি হসলো,,,,আসলে নুডুলসটা খুব মজার তবে এটা কি আরিশ বানিয়েছে তা জানার জন্য আরিশকে একটু ঘেটে দেখল আরু ৷

__” তা এতো রাতে খাবার অর্ডার দেয়ার কি দরকার ছিল ? আমারটা আমি নিজেই বানিয়ে নিতে পারতাম ৷”

__” আজ্ঞে না , খাবারটা আমি বানিয়েছি , এখন বলেন কেমন লাগলো,আসলে সেভাবে রান্না পারি না, 1st টাইম বানালাম ৷”

একটা পুরুষ মানুষ এতটা ভাল রান্না করতে পারে সেটা আগে জানতো না আরু তবে আরিশ ওর জন্য প্রথম বার কিচেনে গিয়ে নিজের হাতে বানিয়েছে প্রথমবার এটা ভেবেই ভালো লাগছে ৷

__” আমার জামাইতো দেখছি multi-talented ৷”( মনে মনে)

__” এত লাফালাফি করার কিছু হয়নাই, খুব একটা ভাল হয়নি ৷ আপনার যদি এতই জানার ইচ্ছা হয় যে এটা কেমন খেতে হয়েছে তাহলে আপনিই না হয় এক চামচ খেয়ে দেখেন যে কেমন হয়েছে ৷”

নুডুলস এর বাটিটা থেকে নুডুলস নিয়ে আরিশের মুখের সামনে দিতেই আরিশ মুচকি হেসে খেয়ে নিলো ৷

__” আরিশ মুচকি হেসে বললো, সত্যিই খারাপ হয়েছে, কেমন একটা লাগছে খেতে যেনো , আজিব আজিব ৷”

(এটা সত্তি যে নিজের রান্না নিজেরই কখনো পছন্দ হয় না, আরিশের ও যেমন রুচিতে ধরে নাই তেমনটা লেখিকার ও ৷”)

আরু আরিশের দিকে বাঁকা চোখে তাকিয়ে বলল,,,,

__” এত খারাপ খাবার তো আমি একা খেতে পারিনা, তাই আপনিও খান আমার সাথে ৷”

__” তুমি খাইয়ে দিলে খাবো নাহলে না ৷”

__” পারবোনা ৷”

__” তাহলে আমিও খেলাম না, আমারো বয়েই গেলো ৷”
আরু এবার ফিক করে হেসে ফেলে বলল,,,,
__”আমার ডাইলগ আমাকেই?”

__” তুমিও তো দাও আমার ডাইলগ ওই যে ” লাইক সিরিয়াসলি ৷”

__” হোয়াটএভার ৷”

__”আবার !”

__” মিঃঅভদ্র ৷”

__” 😎 ৷”

আরু জানে যে আরিশ নিজেও সারাদিন কিছু খাইনি , যে মানুষটা ওকে এত ভালবাসে সে যে ওকে রেখে কখনো খেয়ে নেবে সেটা আরূ কখনোই বিশ্বাস করবেনা, এমনকি আরিশ বললেও না ৷ তাই নিজেও খেলো আর আরিশকেও খাওয়ালো ৷ এটাই হয়তো দুজন দুজনের প্রতি ভালোবাসা , আর আন্ডারস্ট্যান্ডিং…..(প্রতিটা সম্পর্কে এমনটাই হওয়া উচিত)

আরুর খাওয়া শেষ হয়ে গেলে আরিশ বললো,,,,
__” তুমি এখন ঘুমিয়ে পড়ো আরূপাখি,কালকে অনেক ধকল যাবে ৷ আর ঘুমিয়ে বেশি বেশি এনার্জি কালেক্ট করে নাও, আমার দেওয়া পানিশমেন্ট গুলো এখনো বাকি আছে যে ৷”(কথাটা বলৈ আরুর দিকে চোখ মারলো)

আরূর খুব হাসি পাচ্ছে আরিশের কান্ড দেখে , ও কিছুই বুঝতে পারছেনা আরিশের কথার মানে ৷ তবে আজকে কোনো পানিশমেন্ট দেবে না শুনে আরু এভার একটু মুড নিয়ে বললো,,,

__” আপনি কি এখানেই ঘুমাবেন ? না আপনি যদি তেমনটা ভেবে থাকেন তাহলে তেমনটি হচ্ছে না ৷ আপনি আমার সাথে ঘুমাবেন না, অন্য কোথাও গিয়ে ঘুমান ৷”

আরিশ মুচকি হেসে ব্যালকনিতে চলে গেল ৷

আরুর আরিশের রিয়েকশানটা যেন ঠিক হজম হলো না ৷ আরুকে নিজের করে পাওয়ার জন্য যে আরিশ এত কিছু করলো আর সে এত সহজে নিজের বাসর রাতে আরূর কথাটা এতো সহজ ভাবে মেনে নিলো ! কথাটা যেন ঠিক বিশ্বাস হলো না আরিশের , তার ওপরে সারা রাস্তায় আরিশ বলতে বলতে এসেছে যে আজ ওদের বাসর রাত ৷আর পানিশমেন্ট হিসাবে একরাশ ভালোবাসা এনে দেবে আরুকে ৷

__” তার মানে কি উনি আমার উপর রাগ করেছেন? নিজের অভিমান গুলোকে দেখাতে গিয়ে কি নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে নিজের থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছি ?আমি কি আমার কথাতে ওনাকে আঘাত দিয়ে ফেললাম?”

কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই একরাশ ঘুম আরুর দুচোখে ভর করলো ৷

বেলকনির রেলিং এর হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আরিস , চোখ দুটো রুমে থাকা তার প্রেয়শীর দিকে ৷ আরুর দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে মনে মনে বলতে লাগল,,,,

__” তোমার কি মনে হয় না আরুপাখি যে এত কিছু করে তোমাকে কষ্ট দিয়ে তোমাকে বিয়ে করার পর আজ বাসর রাতে বাসর করার জন্য তোমার ওপর নিজের স্বামীর অধিকারটা খাটাতে পারতাম না? আমি কি জোর করতে পারতাম না তোমাকে নিজের করে নিতে? জোর না করে হলেও তোমাকে মানিয়ে নিয়ে তোমার ওপর অধিকার ফলাতে পারতাম , কিন্তু আমি যে তেমনটা চাইনা ! এতটা কঠিন রাস্তা পার করে যখন তোমাকে পেয়েছি তখন পাওয়ার পর এতটা ভালোবাসা দেওয়ার অযুহাত দিয়ে তোমার থেকে কোন কিছুই পেতে চাইনা আমি ৷ আর আমি যদি তোমার ওপর জোর খাটাতাম তাহলে তোমার একটা সময় হলেও মনে হতো যে আজ রাতের ভালোবাসাটা তুমি দিতে না চাইলেও আমি তোমার কাছ থেকে জোর করে নিয়েছি ৷ সব সময় জোর করে সব কিছু পাওয়া গেলেও মন থেকে কখনো তার সাই দেওয়া যায়না ৷ আজ রাতের পর তুমিও বুঝবে যে তুমি আমার প্রতি কতোটা আসক্ত,,,,,যেমনটা আমি তোমাকে চাই তেমনটা তুমি চাও ৷ চাইলেও কা কখনো এই আসক্তি থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে?আমাতেই ফিরতে হবে তোমাকে ৷
এবার ভালোবাসাটা হবে অন্য যেখানে তুমি নিজেই তোমার ভালোবাসা দিয়ে তোমার মিঃ অভদ্র নামক অদ্ভুত আসক্তিটাকে কাছে টেনে নেবে ৷ আমাকে একবার তোমার নেশায় আসক্ত করে তুমি ভালোবেসে তোমার কাছে টেনে নাও তারপর তুমি আর সেই সুযোগটা পাবে না তার কারন তোমার এই. মিঃ অভদ্রটা নিজে থেকেই তোমাকে ভালোবেসে কাছে টেনে নেবে বারাবার ৷ এটাই যে আসক্তি ৷”

#চলবে,,,,

ব্যাপরগুলো বেশ অবেগী না?

তোমার নেশায় আসক্ত ২ পর্ব-২৩ (বিবাহ পর্ব)

0

#তোমার_নেশায়_আসক্ত
#সিজন:2
#পর্ব:23( বিবাহ পর্ব 1)
#Suraiya_Aayat

আরূ সকাল বেলায় ঘুম থেকে উঠতেই দেখল আরিশ ওকে জাপ্টে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে, মাথার চুলগুলো তা কপাল বেয়ে খানিকটা আছড়ে পড়ছে ৷ আরিশ কতটা বিরক্তি বোধ করছে সেটা আরু জানে না তবে ওর খুব বিরক্ত লাগছে ৷ আলতো করে হাত দিয়ে ঠিক করে দিতে গেলেই কালকের পুরনো সব কথা মনে পড়ে গেল ওর ৷ কালকে আরিশের বলা কথাটাই সব থেকে বেশি কষ্ট পেয়েছে যখন আরিস ওকে বলেছে যে ও আরুকে বিয়ে করতে পারবে না ৷ এটা নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো আরিশের কাছ থেকে প্রত্যাক্ষিত হল ও আর এটা একটা মেয়ের জন্য চূড়ান্ত সীমার অপমান ৷ আরূ চেয়েও অভিমানে হাতটা নামিয়ে নিল ৷
পরমুহূর্তেই যেন বিরক্তিটা আরো জোরালো হলো ৷ চুলগুলোকে যতক্ষণ না আলতো করে হাত দিয়ে সরিয়ে দিচ্ছে ততক্ষণে যেন ওর অস্বস্তিটা কাটছে না, যদিও বা কালকে রাতে আরিসের এতটা কাছে আসার পর এটুকু অধিকার ও খাটাতেই পারে সেটা আরিশ চাক বা না চাক ৷

এবার খানিকটা উদ্বেগ নিয়ে আরিসের চুলগুলো সরাতে গেলেই আরিশ আরুকে জড়িয়ে ধরে অনেকটা নিজের কাছে নিয়ে চলে আসলো ৷
আরিশ চোখ খুলে বলতে লাগলো,,,,,
__” একটা মেয়ে হয়ে একটা ছেলের ভার্জিনিটি নিয়ে এভাবে ছিনিমিনি খেলতে তোমার একবারো মনে মায়া হলোনা আরুপাখি? আমার ঘুমের ঘোরের সুযোগ নিতে চাইছিলে তুমি ৷ কি লজ্জার ব্যাপার আমি এবার সকলের সামনে মুখ দেখাবো কি করে !”

আরূ চোখ বড় বড় করে অবাক হয়ে গেল,,,,,
__” এ ছেলে বলে কি?একেতো আমি ওনার কপালের উপর পড়ে থাকা চুলগুলোকে ঠিক করে দিতে চাইছিলাম আর সেখানে আমি নাকি ওনার ভার্জিনিটি নিয়ে টানাটানি করছি ৷”(মনে মনে)
চরম বিরক্তি নিয়ে বললো আরু আরিশকে ধাক্কা মারলো, ধাক্কা মেরে চটপট বিছানা থেকে নেমে পড়ল ৷

__” আপনার মত লুচু একটা ছেলের ভার্জিনিটি আছে কি তা নিয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে ৷”

আরিশ এবার উঠে বসে হাই তুলতে তুলতে বলল,,,, __” ভার্জিনিটি আর নষ্ট করলাম কোথায় , তুমি তো কিছুই করতে দিলা না ৷”

আরুর ইচ্ছা করছে এই মুহূর্তে গিয়ে আরিসের মাথার চুলগুলো টেনে ছেড়ে দিতে, সব সময় ওর কথার জালে ওকেই ফাসায়….

আরিস আরূর দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচিয়ে বলল,,,,
__” কি হল চুপ করে আছো কেন, বল তুমি কি কিছু করতে দিয়েছো?”

__” আপনার মনে তো শুধু আমি নেই , হাজারো নারীর সমাবেশ , তাই সকলের মাঝখানে আমাকে গুলিয়ে ফেলছেন আর তাদের পর্যায়ে আমাকে তুলনা করছেন মিঃ আরিশ ৷”

আরিশ এবার উঠে গিয়ে আরূর দেওয়া বিয়ের কার্ড টা হাতে তুলে নিয়ে এদিক ওদিক করে দেখতে দেখতে আরূকে বলল,,,,
__” এটা তোমার বিয়ের কার্ড না ?”

__” শুধু আমার না, আমার আর আশফির বিয়ের কার্ড ৷”

__” তোমার বিয়ে, তাহলে আজ তুমি এখানে কি করছো? বিয়ের আগের দিন রাতে একা একটা পর পুরুষের সাথে সারা রাত কাটিয়েছ,,, তওবা তওবা আস্তাগফিরুল্লাহ , নাউজুবিল্লাহ ৷ সে যাই হোক আমার বউ আমার কাছে থাকলে সমস্যা নেই যদি আমার কাছে না থাকতে তাহলে তোমার খবর ছিল ৷”

আরু রাগ মিশ্রিত চোখে আরিশের দিকে তাকালো, আরিশের কথার ভাষা বোঝার ক্ষমতা ওর নেই ৷ মানুষটা যেমন জটিল তেমনি জটিল তার সমস্ত কথোপকথন ৷ কখনো আরূ তা বুঝে উঠতে পারেনি সবসময় কথার মারপ্যাঁচে আর ওকে বোকা বানায়, যেমনটা এখন ওকে বোকা বানিয়েই চলেছে ৷

__” আপনার লজ্জা করেনা এক মুখে 10 রকম কথা বলতে ৷”

__” লজ্জা! সেটা আবার কি জিনিস ? লজ্জা নামক জিনিসটা আমার ডিকসনারিতে নেই আরূপাখি ৷ আর এমনিতেও লজ্জাটা আমার ঠিক আসে না তো তাই ঠিক জানিনা বিষয়টা কি ৷”

__” ইডিয়ট ৷”

__” তোমার বর ৷”

__” একদম আমার বরকে নিয়ে উল্টোপাল্টা বলবেন না ,সে আপনার মতো না ৷”

__” এই তো দেখেছো তুমি আমাকে কতোটা ভালোবাসো , এই জন্য আমিও তো তোমাকে এত্তগুলো ভালোবাসি ৷”

__” বিয়ে যখন করবেন না এতো নাটক করা বৄথা আপনার ৷ সে যাই হোক আপনাকে যেনো আমার বিয়েতে না দেখি ৷”
কথাটা বলে আরূ চলে যেতে নিলেই আরিশ বলে উঠলো,,,,,
__” এই যে মিস আপনার বাপকে বলবেন সে যেন ভালোভালো ডিস রান্না করে , আমরা কিন্ত খেতে যাবো ৷ আর ভালো খেতে না দিলে সারাজীবন তোমার বাপের বদনাম গাইবো এটা মনে রেখো ৷”

__” আপনার মুখটাও যেনো আমি আর দ্ধিতীয়বার না দেখি আমি ৷”

__” উহহহ, বললেই হলো,,,নিমন্ত্রণ দিয়েছে আর আমি যাবো না এটা কখনো হয়! কথাটা তোমার বিয়ের পর বললে মানতে পারতাম বাট এই মূহুর্তে আর মানতে পারছি না , রিয়েলি সরি টু সে ৷”

__” উফফফফ,,, বিরক্তিকর ৷”
কথাটা বলে আরু বেরিয়ে গেল ৷
আরু চলে যেতেই আরিশ বিছানায় হেসে গড়াগড়ি দেওয়ার অবস্থা ৷
কোনক্রমে হাসিটাকে থামিয়ে বেলকনিতে গিয়ে ফোনটা ধরালো ৷
__” তূর্য তোর ফোনে একটা ছবি পাঠিয়েছি ওটা ভালোকরে বাধিয়ে দে ফটোফ্রেমে, আমি আমার ঘরে লাগাবো ৷”

তূর্য ছবিটার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে বলল,,,,
__” দোস্ত এটা আমি কি দেখছি ৷ তুই আর এই মেয়েটা তাও আবার এভাবে , মানে কিভাবে কি?”

অরিস মুচকি হেসে বলল,,,,,
__” তোর ভাবি ৷”

কথাটা শুনে তূর্যর জন্য মাথাটা চক্কর দিতে লাগলো,,,, যেই মেয়েটার সাথে একদিন ওরা ঝামেলা করেছে , ইভেন এতদিন আরিশ যে মেয়েকে পাত্তা দেয়নি তাকে ই আরিশ বিয়ে করবে ব্যাপারটা যেন ঠিক হজম হচ্ছে না তূর্যর ৷
তূর্য আমতা আমতা করে বলল,,,,,
__” কিন্তু ওর তো আজ বিয়ে ৷”

__” হমমম , বিয়ে আজ তারমানে বিয়ে তো হবেই ৷”

__” তাহলে তুই এসব বলছিস কেন?

__” অতশত জানিনা তুই আর সাহেল তাড়াতাড়ি দুপুরের মধ্যে ফিরে আয় সন্ধ্যাবেলা আমার বিয়ে বরযাত্রী হিসেবে আমার সাথে তোরা না গেলে আমার বিয়ের আনন্দটাই মাটি ৷ আর শালা প্রান্ত তো হানিমুনে চলে গেছে এখন আর কী করার ৷ তোরা তো আসছিস নাকি !”

তূর্য আনন্দে লাফিয়ে উঠে বলল,,,,,
__” আর আমরা আসবো না মানে সেটা কখনো হয় নাকি , এক্ষুনি আসছি আমরা ৷ তুই ফোন রাখ সাহেল কে খবরটা দিই ৷”

কথাটা বলেই আরিশ ফোনটা রেখে দিল ৷ আরিশ মুচকি হাসছে,,,,,
ফোনটা বিছানার ওপর রাখতেই আবার ফোনে ফোন আসলো,,,,,,
ফোনের দিকে সানশাইন নামটা ভেসে আসতেই উচ্চস্বরে হেসে উঠলো আরিশ ৷
__” কি হলো , আমার বাড়ি থেকে এক পা বাইরে রাখতেই আমাকে মিস করতে শুরূ করে দিয়েছো তাইনা ?”

__” ফালতু কথা কম বলেন কাজের কথাটা শোনেন ৷”

__” বলো জান ৷”.

__” উফফফ, আপনার রুমেই কোথাও আমার পায়ের একটা নূপূর খুলে পড়ে গেছে আপনি একটু ওটা নিয়ে নীচে আসবেন ? প্লিজ ৷”

__”আমার দেওয়া জিনিসকে এতোটা ভালোবাসো !ওয়াও ইমপ্রেসিভ ৷”

__”দেবেন কি বলুন ৷”

__” একটা শর্তে দিতে পারি যদি আপনি রাজি থাকেন তো ৷”

__” কি?”(ভ্রু কুচকে )

__” আগে বলুন আমাকে ঘৄনা করেন ৷ বাট এখন ঘৄনা করি বলে পরে ভালোবাসি বললে কিন্ত পানিশমেন্ট পেতে হবে ৷”

__” আমার বয়েই গেছে আপনাকে ভালোবাসি বলতে, আমি তো আপনাকে ঘৄনা করি , শুধু ঘৄনা করি ৷”

__” পানিশমেন্ট পাওয়ার জন্য রেডি থাকুন ৷ আজকে সুধে আসলে উশুল করে নিব ৷ বাট নূপুরটা রাতে পাবেন, এখন আমি এত কষ্ট করে সিড়ির ধাপ বেয়ে নীচে নামতে পারবো না, আমি সামান্য এটুকু কাজ করে নিজের এনার্জি লস করতে চাইনা ৷ তাই যেখানে আছেন ঐখান থেকেই বাসায় ফিরে যান, আর যা হবে তার জন্য প্রস্তুত হও ৷ লাভ ইউ সানশাইন ৷”

বেশকিছুখন আরিশের রূমের দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে এবার ফুপিয়ে কেদে উঠলো আরু ৷

__” কেন উনি সবসময় আমার সাথে এমনটা করেন, আমার ফিলিংস এর কোন ভ্যালু নেই ওনার কাছে ৷ উনি খুব খারাপ আর এক বালতি পচা ৷”

কথাটা বলে আরু কাদতে কাদতে বাসার দিকে হাটা দিল ৷

#চলবে,,,,,,

#তোমার_নেশায়_আসক্ত
#সিজন:2
#পর্ব:23(বিবাহ পর্ব 2)
#Suraiya_Aayat

একটা সিএনজি করে আরূ বাড়ি ফিরেছে ৷ বাড়ির সামনে এসে দাঁড়িয়ে ওর বুকের ভিতর ধক ধক করছে,বারবার শুধু এটাই ভাবছে যে এরপর বাড়ির লোকের সন্মুখিন হবে হবে কিভাবে? আর সারাটা রাত ও কোথায় ছিল তার জবাব ই বা ও কি করে দেবে! হাত পা যেনো আর সামনের দিকে এগোতে চাইছেনা,,,, তবুও এই পরিস্থিতির সম্মুখিন যে ওকে হতেই হবে তাই আর বেশি দেরি করে লাভ নেই দেখে একটু সাহস নিয়ে বাড়িতে ঢুকলো ৷
বাড়ির ভিতর ঢুকতেই দেখল সব আত্মীয় স্বজনদের ব্যাবহার অন্তত স্বাভাবিক , তা দেখে আরুর ভ্রু জোড়া কুচকে এলো ৷ সবাই ওকে দেখে ওর কাছে এগিয়ে এলো,,,,,
ওকে আসতে দেখেই ওর কাজিন রাহী এগিয়ে এসে বললল,,,,,
__” আপু তুমি কেমন আছো?”

__” আমি তো ভালো আছি বাট হঠাৎ এমন কথা জিঞজাসা করছিস যে?”

__” কালকে রাতে তুই যে হসপিটালে ছিলি তার জন্য আমরা তো চিন্তাই চিন্তাই ঘুমাতেই পারিনি ৷”(আরুর ফুপি)

__”আমি আর অসুস্থ আর হসপিটাল !”(অবাক হয়ে)

__” হমমম তুই তো কালকে হসপিটালেই ছিলি, আর তুই এখন যথেষ্ট ক্লান্ত আর সারাটা দিন অনেক ধকল যাবে তোর ওপর তাই এখন রুমে গিয়ে রেষ্ট নে ৷”(আরুর মা কথার সামাল দিতে তৎক্ষণাৎ এসে বললেন )

আরু বুঝতে পারলো যে কিছু একটা ঘটেছে আর তা বেশ বড়োশড়ো ৷ তাই আর বেশি কথা না বাড়িয়ে আরু ঘরে চলে গেল ৷

রূমে গিয়ে মাথা নীচু করে বসে আছে আরু আর সাথে সাথে কোথা থেকে সানা এসে বলল,,,,
__” কিরে তুই এখন কেমন আছিস?”

__” আমি ভালো আছি তা আ আমাকে দেখে বুঝতে পারছিস না! আর. হঠাৎ এমন প্রশ্ন করার মানে কি?”

__” বাহ রে, এটা আবার কেমন প্রশ্ন? যা হয়েছে আমিতো তার পরিপ্রেক্ষিতেই বলছি ৷ কালকে রাত্রে যখন তোকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না তখন হঠাৎ আসফি ভাইয়াই তো ফোন করে বলেছিলেন যে তুই খুব অসুস্থ তাই হসপিটালে নিয়ে গেছেন উনি, আর স্যালাইন চলছে রাত্রি বাড়ি ফিরতে পারবি না সকালে ভাইয়াই তোকে বাসায় পৌঁছে দেবে ৷”

আরূ ও সানার কথা শুনে অবাক হয়ে গেল, আশফি যে কেন এরকম বলল সেটা ও বুঝতে পারছে না কিন্তু সানা যে আসল সত্যিটা জানে না সেটা আরু ভাবলো তাই আসল কথাটা সানার কাছে স্বীকার করল না, করলেই হাজারো প্রশ্ন উঠবে তখন ৷তবে পরে আশফির কাছ থেকে ও জানবে যে আশফি কেন মিথ্যা বললো ৷

হঠাৎ আরু দৌড় দিল ওয়াশরুমে,,,,,সানা আরুর পিছন পিছন গিয়ে দেখলো আরু বমি করছে আর তা দেখে সানা তাড়াতাড়ি রুম থেকে বেরিয়ে গেল ৷

সানা গার্ডেন এ গিয়ে আরিশকে ফোন করলো,,,,
__” ভাইয়া আরু বাসায় এসেছে আর আসামাএই বমি করে দিয়েছে ৷”

আরিশ মুচকি হেসে বলল,,,,
__” তোর ভাবীর খেয়াল রাখ যাতে রাতে আবার অজান না হয়ে যাই ৷”

__” ভাইয়া এখনই এতো কিছু?(অবাক হয়ে)

__” একটা থাবড় দিবো,,, ছোট হয়ে বড়োদের মতো কথা বলিস ৷ ”

__”ছোট কোথায় আমারো তো বিয়ের বয়স হয়েছে তা তোর চোখে পড়ে না !”

__” তোর খুব শীঘ্রই একটা ব্যাবস্থা করছি ওয়েট ৷ বাই দা ওয়ে আরুপাখির একটু খেয়াল রাখিস ৷ আর ওকে আপাতত ঘুমাতে বল আর উঠলে আমাকে একটু ফোন করিস ৷”

__” আচ্ছা ভাইয়া ৷ আর বাই দা ওয়ে বেষ্ট অফ লাক ফর রাত্রিবেলা ৷”(চোখ মেরে).

__” সেটা কি তুই বলবি তারপর ৷”

__” 😁 ৷”

ওয়াশরুম থেকে আরু বেরিয়ে এসে বিছানায় ধপ করে বসে পড়লো,,,, মাথার মধ্যে কেমন ঝিমঝিম করছে আর শরীরটাও দূর্বল লাগছে,,, এগুলো এতদিন খাওয়া দাওয়ার অনিয়মের ফল তা এখন ভালোই বুঝতে পারছে আরু ৷
চোখটা বন্ধ করলেই এখুনি একরাশ ঘুম এসে ভর করবে আর তাছাড়া এখন ও ঘুমাতে চাই না ওর কিছু কাজ বাকি আছে সেগুলোই করার জন্য উঠে দাড়াতেই পেটের ভিতর মোচড় দিয়ে উঠতেই আর ক্ষমতায় কুলালোনা সামনে এগিয়ে যাওয়ার তাই না পেরে বিছানায় শুয়ে পড়লো ৷
ওর আরিশের মায়ের সাথে কিছু দরকারি কথা ছিলো সেগুলোই বলতো ৷

__” আসফি congrats ৷Happy marriage life ৷”

__” ধন্যবাদ ভাইয়া, আপনি না থাকলে বিয়েটা হয়তো এতদূর এগোতো না ৷”

__” হাস,,,আল্লাহ আমাকে উছিলা করে পাঠিয়েছে মাএ আর কিছুই না ৷ বাই দা ওয়ে ফ্লাইট কটাই ?”

__” ভাইয়া রাত 8.45 এ ৷ আর আপনারা কখন আসছেন?”

__” আমি আজকে এখানে একদফা বাসর সেরে দুদফা বাসরটা কক্সবাজারেই করবো ইনশাআল্লাহ ৷ ”

__” বাট ভাইয়া অসংখ্য ধন্যবাদ ,আমাদের পাশে থাকার জন্য ৷ ”

__” এবার কিন্ত আমি রেগে যাবো,,, এসব বাদ দাও কালকে দেখা হচ্ছে কক্সবাজার ৷”

__” ইনশাআল্লাহ ৷”

কথাটা বলে আরিশ ফোনটা কেটে দিলো ৷ কালকে রাত্রে আশফি আর ওর গালফ্রেন্ডের বিয়ের ব্যাবস্থা করেছে আরিশ তাদের পরিবারের অমতেই ৷ এজন্য হয়তো আশফি সারাজীবষ ৠনী হয়ে থাকবে আরিশের কাছে ৷

ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো 5.25 বাজে,,,,,
6.12 তে ওর আর আরূর কাবিন ৷ জীবনের ভালোবাসার মানুষটাকে একান্তে পাওয়ার চূড়ান্ত আর শেষ ধাপে আরিশ , এখান থেকে আর কখনো পিছু পা হতে চাইনা ও ৷
তূর্য আর সাহেল দুজনে 1 ঘন্টা আগেই ফিরেছে ৷ দুজনের আনন্দের শেষ নেই ৷ ওদের তো বিশ্বাসই হচ্ছে না যে আরিশের বিয়ে ৷

টাওয়ালটা নিয়ে ওয়াশরুমে ঢূকে গেল আরিশ ৷শাওয়ারটা অন করতেই সারা শরীর ঠান্ডা জলে ভিজে গেললল,,,,এই শীতেও ওর শরীরে ঐকরাশ কাঁপুনি নেই আছে আরূর দেওয়া একরাশ ভালোবাসার ছোঁয়া ৷ চোখ বন্ধ করে কালকের সব কথা গুলো বারাবার ভাবতে চেশষ্টা করছে ৷ বারাবার কেবলই মনে পড়ছে আরুশির কম্পমান ঠোঁটজোড়া কিভাবে নিজের আয়ত্তে এনেছিলো ও আর কতটা গভীরভাবে আরুশিকে ছুতে পেরেছে ও ৷
আরমাত্র কিছুখনের অপেক্ষা তারপর ওর প্রেয়শী চিরকালের মতো ওর ৷ সারাজীবন বুকের মাঝে আগলে রাখবে ও ৷

আরিশ শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে এসে রুমে এসে ঢুকতেই ফোনটা হাতে তুলে নিল, কল করলো আরুশি এর কাছে ৷

আরূ সেই সকাল বেলা ঘুমিয়ে ছিল তারপর থেকে আর ঘুম থেকে ওঠেনি , একেবারে যখন উঠেছে তখন বিকাল চারটে তারমধ্যে পার্লার থেকে লোকজন চলে এসেছে সাজানোর জন্য,তাই আর বেশি সময় পাইনি আরিশের মায়ের সাথে কথা বলার জন্য ৷
যেটুকু সময় পেয়েছে সেটুকু সময়ের মধ্যে আরিশের প্রতি নিজের অভিযোগ জানিয়েছে অনিকা খানকে ৷

উনি ঘরে বসে ছিলেন তখন আরু উনার পাশে গিয়ে বসলেন,,,,

__” কেমন আছিস মা এখন?”

__” আলহামদুলিল্লাহ্ আমি ভালো আছি আন্টি, তোমার সাথে আমার একটা কথা ছিল ৷”

__” কি কথা আরু মা ৷”

__” আসলে আন্টি আমি কালকে সারারাত ওনার সাথে মানে তোমার ছেলে আরিশের সাথে ছিলাম ৷ তো উনি জানিয়েছেন যে উনি আমাকে ভালোবাসেন , তারপর আমাকে হলুদ ও দিয়েছেন উনি, আর বললেন যে ভালবাসলে যে বিয়ে করতেই হবে সেটা ওনার ডিকশনারিতে নেই, উনি আবার আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছেন যেখানে উনি নিজেই প্রথমে নিজের ভালোবাসাটাকে ব্যক্ত করেছেন ৷ আন্টি তুমি বল এখানে আমার কি দোষ , একটা মানুষের মনটাকে আর কতবার টুকরো টুকরো করে ভাঙলে উনি শান্তি পায় ৷”

__” একটা কথা মনে রাখিস যে ভাঙে জোড়াটাও কিন্ত আবার সেই দিতে জানে তাই অপেক্ষা কর ৷’

উনি আরুকে আর কিছু বলতৈ না দিয়ে একটা জুয়েলারি বক্স বার করে তা থেকে হারটা বকর করে আরুর গলায় পরিয়ে দিলেন৷

__” একি আন্টি তুমি এটা আমাকে দিচ্ছ যে তুমি তো এটা !”

__” হ্যাঁ আমি এটা আমার ছেলের বউয়ের জন্য বানিয়ে ছিলাম তবে আমার ছেলের বৌয়ের জায়গায় আমি সবসময় তোকেই ভেবেছি তাই এটা যদি তোকে না দিয় আমি অন্য কাউকে কিভাবে দিব বল ৷”

উনি অনেক জোর করলেন হারটা নেওয়ার জন্য তাই আর আরু না করতে পারল না ৷

পার্লারের লোকজন এখন আরুকে সাজাচ্ছে আর তখনই আরুর ফোনে ফোন আসলো,,,,

__” আপু এখন সাজাচ্ছি তাই ফোনটা না ধরলেই ভালো হয় ৷”

__” কিন্তু আপু যদি জরুরি কল হয় তাহলে !”

__” আচ্ছা আপনি শুধু হ্যাঁ হু করবেন তার বেশি নয় ৷”

__”আচ্ছা ঠিক আছে ৷”

আরু ফোনটা হাতে নিতেই দেখলে আরিসের ফোন ৷ সকলের সামনে ফোনটা ধরবে বলে এতটা হুজুগ নিয়ে বলল আর এখন কলটা না ধরে ফোনটা কেটে দিতেও পারছে না, তাই না পেরে ফোনটা কানে ধরতেই অপর পাশ থেকে আরিশ বলে উঠলো,,,
__” আরূপাখি তোমার শরীরটা খারাপ ?”

__” হুমম ৷”

__” তুমি বমি করেছো?”

__” হমম ৷”

__” এখন ঠিক আছ তুমি ?”

__” হুমম ৷”

__” তুমি আমাকে অনেক ভালোবাসো তাইনা ? ”

__” হমম ৷”(চটজলদিতে )

__” দেখেছো তুমি আমাকে ভালোবাসো কিন্ত তুমি আমাকে বলেছিলে যে তুমি কখনো বলবে না যে তুমি আমাকে ভালোবাসো , বাট এখন তুমি বলেই ফেললে ভালোবাসো তার মানে পানিশমেন্ট তোমাকে পেতেই হবে ৷ পানিশমেন্ট এর জন্য রেডি থাকো আরুপাখি ৷ আর কংগ্রাচুলেশন আমার বাবুর আম্মু হওয়ার জন্য ৷”
কথাটা শুনে আরূরর চোখ বড় বড় হয়ে গেল , কারণ ওদের মাঝে এমন কিছুই হয়নি যে তার জন্য আরিশ এই কথা বলবে, শুধুমাত্র একটা ঘটনার ভিত্তিতে আরিশ এসব বলছে ৷ এর থেকে আরূ আরো বেশি কিছু শোনার আগেই ফোনটা কেটে দিল ৷ আরিশ ফোনটা কেটে দিয়ে হো হো করে হাসতে লাগলো ৷সত্তিই মেয়েটাকে ও কোনদিন পাগল না করে দেই ৷

#চলবে,,,,,