Thursday, July 17, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1570



ওয়ারদূন আসরার পর্ব-১৪

0

#ওয়ারদূন_আসরার
#লাবিবা_ওয়াহিদ
|| পর্ব – ১৪ ||
_________________________________
যীনাতের চারপাশে টকটকা লাল গোলাপের পাঁপড়ি শূন্যে ভাসছে। যীনাত বেশ খুশি মনে সবটা দেখছে। হঠাৎ যীনাতের চারপাশ থেকে পাপড়ি গুলো ভেসে একটা কাঠির মতো কিছুতে গিয়ে বসতে লাগে। আস্তে আস্তে সব পাপড়ি মিলে এক লাল টকটকা গোলাপে পরিণত হয়! এতো সুন্দর গোলাপ যীনাত আগে কখনো দেখেনি।গোলাপ টা যীনাতের হাতে চলে আসে।

হঠাৎ যীনাতের ঘুম ভেঙে গেলো। আশেপাশে তাকিয়ে ভাবে,”আমি কি তাহলে স্বপ্ন দেখছিলাম? ওটা আবার কেমন গোলাপ? ধুর এসব ভেবে কাজ নেই নামাজটা আগে শেষ আসি।”

সব মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে যীনাত চলে গেলো ওযু করতে। ওযু শেষ করে নামাজ আদায় করে নেয়। তারপর চলে যায় নিচে। সবাই দৌড়াদৌড়ি করছে বিভিন্ন কাজে। এমন হওয়ারই কথা আজ যে রিকেশের বিয়ে তাই এই ভোর সকালে থেকেই একেকজন একেক কাজে বিজি। যীনাত জাইফের রুমের দিকে তাকিয়ে দেখে জাইফের ঘর এখনো বন্ধ। যীনাত বেশি কিছু না ভেবে নিচে চলে আসে এবং সবার কাজ দেখতে থাকে। একদিকে খেয়াল করলো কমলা দেবী একজায়গায় বসে সবার কাজ পরিচালনা করছে। যীনাত মুচকি হেসে কমলা দেবীর কাছে গিয়ে বসে। কমলা দেবী একপলক যীনাতের দিকে তাকিয়ে আবার কাজে মনোযোগী হয়।

– ঠাম্মি।

– কইয়া ফেল।

– একা বসে আছো খারাপ লাগছে না?

কমলা দেবী হেসে বলে,”কই একলা বইয়া রইসি দেহোস না কামের লেইগা কেমন চিল্লান লাগতাসে।”

– তবুও একাই তো!

– হ তাও ঠিগ। যা এহন খাইয়া আয়।

– না তোমার সাথে খাইবো গো কমলা রানী!

কমলা দেবী হেসে বলে,”যাহ মাইয়া রানী কইয়া লজ্জা ক্যান দেস?”

– লজ্জা কেন দিবো গো কমলা রানী আমি তো সত্যি কথাই কইলাম! এখন সত্যি বললেও দোষ বুঝি?

– নাহ দোশ ক্যান হইবো আচ্ছা তুই এইহানের কাম গুলা দেখ আই পাকের ঘর থেইকা দেইখা আহি ওইহানে সব ঠিকাছে কিনা।

– ঠিক আছে।(মুচকি হেসে)

যীনাতকে বসিয়ে রেখে কমলা দেবী রান্নাঘরের দিকে চলে গেলো। কমলা দেবী রান্নাঘরে গিয়ে দেখে তিন্নি এক মিনির থেকে জোর করে কফি নিচ্ছে। কমলা দেবী ভ্রু কুচকালো এবং তখনই তিন্নিদের দিকে গেলো।

– কিরে মিনি এই লতী মাইয়ায় তোর থেইকা এমন কাড়াকাড়ি লাগাইসে ক্যান রে? ব্যাপার কি?

কমলা দেবীকে দেখে তিন্নি ভয়ে একটা শুকনো ঢোক দেয়। মিনি বলে,”দেহো না কর্তামা এই দিদি ছোডদার কফি নাকি নিজে হেরে দিয়া আইবো এহন তুমিই কও হেরে কেমনে দিমু?”

তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে কমলা দেবী। এতো বড় সাহস সে কিনা জাইফের রুমে যাবে জাইফের কফি দিয়ে আসতে? এটা কমলা দেবী বেচে থাকতে কোনোভাবেই যেতে দিবে না। কমলা দেবী কোমড়ে দু’হাত দিয়ে রেগে বলে,”ওই লতী মাইয়া তোর শিক্ষা হয়নাই ওইদিনের কথাতে নাকি তোর আরও মলম লাগবো? মিনি তুই কফিডা ওর থেইকা লইয়া জাইফরে দিয়া আয় আমি এর ব্যবস্থা করতাসি!”

কমলা দেবীর কথা মতো মিনি তিন্নির হাত থেকে কফিটা কেড়ে নিয়ে চলে গেলো জাইগের ঘরে। আর কমলা দেবী তিন্নি কে নিয়ে চলে গেলো বাইরে কাজ করাতে। এই মেয়েরে কাজ না দিলে এই মেয়ে আবার জাইফের ধারে কাছে ঘেষার চেষ্টা করবে যা কোনোভাবেই কমলা দেবী চাননা। তাই গাধার মতো খাটাতে থাকে তিন্নিকে। তিন্নি বেচারী কাজ করতে করতে শেষ আর উপরের বেলকনি থেকে জাইফ তিন্নির গাধার খাটুনি দেখছে, হাসছে আর কফি খাচ্ছে। তিন্নির কুকলাপ সব মিনি জাইফকে বলেছে। তিন্নি মনে হয়না দ্বিতীয় বার আর এ মুখো হবে।

৩ ঘন্টা পর রিকেশের হলুদ এবং গোসল শেষ হলো। যীনাত দূর থেকে চুপচাপ সব দেখেছে। বেশ মজা করছে সবাই মিলে। এভাবে মজা টজা শেষ করে সকল রীতি শেষ করে সবাই যে যার রুমে চলে গেলো ফ্রেশ হতে। যীনাত রুমে গিয়ে আর বের হয়না কারণ জাইফ বলেছে যেনো সে রুমের মাঝেই থাকে। খাবারও মিনি এসে দিয়ে যায়। জাইফ সকল কাজ সামলাতে অনেক বেশি বিজি তার এখন আর কোনো দিকেই খেয়াল নেই। যতোই হোক ছোট ভাই বলে কথা তার উপর এতো বড় আয়োজন তো আর মুখের কথা নয়! যীনাতের বিকালের দিকে বরিং লাগছিলো তাই সে বেরিয়ে পড়ে রুম থেকে। রুমে থেকে বেরিয়ে বাগানের দিকে যায়। সেখানে খেয়াল করে একটা লাকরির দরজা। মূলত এটাই পেছনের দরজা। যীনাত কৌতুহলবশত সেই দরজা দিয়ে বাইরে বের হয়ে যায়। জায়গাটা বেশ নির্জন। মাঝে দিয়ে সরু রাস্তা আর দুপাশে গাছপালা। এই বাড়ির আশেপাশে কোনো বাসা বাড়ী নেই। আর এই রাস্তাটা হাটার জন্য বেস্ট! যীনাতও হাটছে। হাটতে হাটতে কতোটা দূরে চলে আসে তার নিজেরই খেয়াল নেই। হঠাৎ খেয়াল করে দূরে এক পাগল মাথা চুলকাতে চুলকাতে কিসব হাবিজাবি বলে চেঁচাচ্ছে। যীনাত সামান্য ভ্রু কুচকালো। পাগলটা যীনাতকে দেখতেই কিছুটা এগিয়ে আসলো আর যীনাতকে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো তার ইয়ায়া বড় বড় ময়লা লাগা চুল চুলকাতে চুলকাতে! হঠাৎ সে জোরে বলে উঠে,”যীনাত! তোরে আমি পাইসি এইবার তোরে আমার হাত থেকে কেউ-ই বাচাতে পারবে না কেউ নায়ায়ায়া!!”

বলে দৌড়িয়ে যীনাতের দিকে আসতে লাগে। যীনাতও ভয় পেয়ে যায়। এই পাগল তাকে কি করে চিনলো? যখনই দেখলো পাগলটা যীনাতের দিকে আসছে তখনই যীনাত পিছে ফিরে প্রাণপাত ছুটতে লাগলো।কিন্তু পাগলটা তার পিছুই ছাড়ছে না বারবার চেঁচিয়ে বলছে,”দাঁড়া যীনাত দাড়া এভাবে আমাকে ছুটাইস না নইলে তোর কপালে ভিষণ রকম দুঃখ আছে! তোরে বলসি থামতে! থাম তুই!!! যীনায়ায়ায়ায়াত দাড়ায়ায়ায়ায়া!!!”

কিন্তু যীনাত একবারের জন্যেও দাঁড়ায় না সে যেভাবে পারছে ছুটছেই। ছুটতে ছুটতে একসময় যীনাত কিছুর সাথে উষ্টা খেয়ে পড়ে যায় এবং পায়ে খুব ব্যথা পায়। যীনাত কিছুটা শব্দ করে “আহহ” বলে উঠে। আবার পায়ের দিকে না তাকিয়ে পিছে ফিরে এবং দেখে পাগল তার দিকেই আসছে। যীনাত হাত দিয়ে লেসড়ে লেসড়ে পিছের দিকে যেতে লাগে আর বারবার আল্লাহকে স্মরণ করতে লাগে। এমন বিপদে একমাত্র তাকে আল্লাহ-ই বাচাতে পারে। পাগল টা যীনাতের পায়ের সামনে এসে দাঁড়ায় এবং হাটুতে দু হাত রেখে হাপাতে লাগে। হাপাতে হাপাতেই পাগলটা বলে উঠে,”আর পালা পালা পালা খুব করে পালা!”

বলেই হেহে করে পাগলের মতো হাসভহে আর হাত তালি দিচ্ছে। এদিকে যীনাত ভয়ে থরথর করে কাপছে। বারবার ঢোক গিলছে যীনাত তার প্রচন্ড তৃষ্ণাও পেয়েছে। পাগলটা আবার হেসে হেসে বলে,”সেদিনও তুই এভাবে ভয় পেয়ে ছিলি আর পানি পানি করছি আজও হিহিহি!!”

পাগলের কথার আগা মাথা কিছুই বুঝলো যীনাত! কি বলছে এই পাগল? এর আগেও কি এই পাগলটার সাথে তার দেখা হয়ে হয়েছিলো? নাহ কখনো দেখা হয়নি তো যীনাতের তাহলে?

– এখন আমাকে ‘ওয়ারদূন আসরার’ দে নইলে তোকে আমি তুলে নিয়ে বিয়ে করবো তারপর তোকে ভোগ করে ডোবায়….

বলেই আবার পাগলের মতো হাসতে থাকে তাও অনেকটা জোরে। যীনাত হা হয়ে পাগলটার দিকে তাকিয়ে আছে। ‘ওয়ারদূন আসরার’ মানে? সে কিভাবে জানলো ওয়ারদূন আসরার এর কথা আর ওয়ারদূন আসরার কোথায় সেটা যীনাত কি করে জানবে? আর পাগল টা তাকে বিয়ে করে ভোগ করবে মানে কি? আল্লাহ এ কোন মুসিবতে ফেললে?

যীনাতকে চুপ থাকতে দেখে পাগল্টা হুংকার দিয়ে যেই যীনাতের হাত ধরতে নিবে এমন সময়ই কোনো এক অদৃশ্য দেয়ালের ফলে পাগলটা দূরে ছিটকে পড়ে। পাগলটা হাতে আর পায়ে কিছুটা চট পায়। তারপর আবার উঠে দাঁড়ায় আর যীনাতের দিকে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকায়। যেই আবার যীনাতের দিকে আসতে নিবে ওমনি তার পথ আটকে দাঁড়ায় সেই ১৭ ফিটের ৭ মাথাওয়ালা সাপটা। যীনাত চোখ বড় বড় করে সাপটার দিকে তাকায়। এই সাপ আবার কোথা থেকে এলো আর কেন-ই বা এলো। ৭ মাথার ৭টা ছোবলের হাত থেকে অনেক কষ্টে পাগলটা পালিয়ে পালিয়ে রক্ষা পায়। কিন্তু এরকম আর কতোক্ষণ! এর একটা ছোবল তার গায়ে লাগলে আজ তার মৃত্যু নিশ্চিত। সাপটা আবার ছোবল দেয়ার আগেই পাগলটা পালিয়ে যায় আর জোরে জোরে বলে,”যীনাত আজ তুই আমার হাত থেকে বাচলেও পরে নিস্তার পাবি না কারণ আমি তোর জমরাজ! জমরাজ যাকে টার্গেট করে তার প্রাণ সে যেকোনো মূল্যে নিয়েই ছাড়ে!”

বলেই চলে যায়। যীনাত অবাক হয়ে পাগলটার কথা শুনে। এর মানে কি পাগলটা হিন্দু? এই পাগলটা আরেকটু হলেই যীনাতকে শেষ করে ফেলতো। যাইহোক আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন। ভেবে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। কিন্তু স্বস্তি আসলো কোথা থেকে সাপটা তো তার দিকেই আসছে। সাপটা-ই যে আজ তার প্রাণ বাচিয়েছে। তবে সাপটা যে কোনো সাধারণ সাপ নয় সেটা যীনাত এমন অবাস্তব সাপ দেখেই বুঝে গেছে। সাপটা এমন ভাব করছে যেনো সে যীনাতের গোলাম! যীনাত হা হয়ে সাপটার দিকে তাকিয়ে রয়। সাপটা কিছুই বলছে না শুধু “হিসস হিসস” করেই চলেছে। হঠাৎ সাতটা মাথাই একসাথে পেচিয়ে গেলো তা দেখে যীনাত ফিক করে হেসে দেয়। সাত মাথাওয়ালা সাপ টা যেনো চাঁদ হাতে পেয়েছে। তারা চেয়েছিলোই যেনো তাদের মালিক কোনো কারণে কষ্ট না পায়। আরও বিভিন্ন ভাবে সাপটা হাসায় যীনাতকে। দূর থেকে কিছু একটা তাদের অপলক ভাবে দেখছে। শেষে সেই অদৃশ্য জিনিসটা বলছে,”নাহ আমি কোনো ভুল মানুষকে দায়িত্ব দেইনি।”

বলেই সে হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো। যীনাত হঠাৎ থেমে গিয়ে ভাবতে লাগে সে তো সাধারণ মানুষ তাহলে একজন সাধারণ মানুষকে একটা অবাস্তব সাপ কি করে তার কথা শুনছে তাকে হাসাচ্ছে তাকে রক্ষা করছে? কৌতুহলবশত জিজ্ঞেস করে,”আচ্ছা আপনারা কারা? কেন আমায় এভাবে ফলো করছেন?”

৭টা মাথা একে অপরের দিকে তাকালো মনে হয়না কেউ কিছু বুঝেছে। যীনাত বেশ বুঝলো ওরা তার কথার কিছুই বুঝেনি। কিন্তু এতোক্ষণ কি করে বুঝলো? আচ্ছা যাইহোক পরে এই সাপের রহস্য জানা যাবে তবে ওই পাগল টা কে ছিলো? তার কথাবার্তায় যা যীনাত বুঝেছে তাতে মনে হচ্ছে পাগলটা হিন্দু। আর তাকে হাসিল কেন করতে চায়?

সাপগুলো যেনো যীনাতের মনের কথা পড়তে পারলো আরামসে। তারপর সবচেয়ে বড় মাথা ওয়ালা সাপটা যীনাতের কপালে তার মাথা ছোঁয়াতেই যীনাত সেন্সলেস হয়ে গেলো! কিন্তু মজার বিষয় হলো যারা যীনাতের মুখের কথা বুঝলো না তারা মনের কথা বুঝলো কি করে? এ আবার কেমন অদ্ভুত শক্তি?

———————————-

চলবে!!!

(পরের পর্বে ছোট একটা চমক আছে আশা করছি ভালো লাগবে।)

ওয়ারদূন আসরার পর্ব-১৩

0

#ওয়ারদূন_আসরার
#লাবিবা_ওয়াহিদ
|| পর্ব – ১৩ ||

———————————
সক্কাল সক্কাল দরজা দিয়ে কেউ একজন মেয়ে একটা ইয়ায়া বড় লাগেজ টেনে ভেতরে ঢুকছে। যীনাত সবে নামাজ সেরে বাইরে বেরিয়েছে এবং এসে দেখে একটা মেয়ে মামা,মামী,দাদু,ঠাম্মি,বড়দা, দাভাই বলে চেঁচানো শুরু করেছে। যীনাত ভ্রু কুচকে মেয়েটার দিকে তাকালো। দেখতে বেশ স্মার্ট এবং সুন্দর। মল্লিকা দেবী তড়িঘড়ি করে রুম থেকে বেরিয়ে এসে মেয়েটাকে দেখে চোখ কপালে তুলে ফেলে। মল্লিকা দেবীকে মেয়েটা দেখতেই দৌড়ে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে এবং মল্লিকা দেবীও!

– ওহ মামী কেমন আছো তুমি? ইউ নো দ্যাট হাউ মাচ মিস ইউ?

– ওরে আমার মা টা আমিও তোকে অনেক মিস করি! আমাদের সাথে থাকলে কি হয় তোর বলতো? কতো করে বলি আমাদের সাথে থাক তা না সে হোস্টেলে থাকবে।

– আচ্ছা যাও এখন থেকে এখানেই থাকবো!

মল্লিকা দেবী চোখ চিকচিক করে বলে,”সত্যি?”

– হ্যাঁ গো মামী ৩ সত্যি এখন বলো যার বিয়ে সে কোথায় হুম? যার বিয়ে তার খবর নাই পাড়া প্রতিবেশীর ঘুম নাই তাইনা?

মল্লিকা দেবী মৃদ্যু হাসলেন। তারপর যীনাতের দিকে চোখ যেতেই দেখলো যীনাত দূরে দাঁড়িয়ে শান্ত দৃষ্টিতে তিশানারর(স্নিগ্ধার নাম বদলে তিশানা রাখা হলো) দিকে তাকিয়ে। মল্লিকা দেবী বলে উঠে,”আরে যীনাত যে এতো সকালে ঘুম ভেঙেছে নাকি? আর ওখানে কেন দাঁড়িয়ে আছো এখানে আসো!”

যীনাত কিছুটা ইতস্ততবোধ নিয়ে মল্লিকা দেবীর কাছে আসে। তিশানা এতোক্ষণ যীনাতের দিকে খেয়াল না করলেও এবার তিশানা হা করে যীনাতের দিকে তাকিয়ে আছে৷ পরে অবাক হয়ে মল্লিকা দেবীকে প্রশ্ন করে,”আচ্ছা মামী এই মেয়েটা কে?”

– ওহ ও হলো যীনাত। ওইযে তোকে বলেছিলাম মনে আছে?

তিশানা কিছু একটা মনে করে জিবহায় কামড় দিয়ে বলে,”ওহ সরি বিষয়টা মাথাতেই ছিলো না। সে যাইহোক আমি তিশানা চ্যাটার্জি।”(হাত বাড়িয়ে)

যীনাত উত্তরে শুধু হাসলো! যীনাতের এমন চুপ থাকা দেখে তিশানা ভ্রু কুচকে মল্লিকা দেবীর দিকে তাকায়। মল্লিকা দেবী তিশানার ইশারা বুঝতে পেরে বলে,”আসলে ও খুবই চুপ থাকে বেশি কথা বলে না তার উপর তুই নতুন এসেছিস একটু সময় তো লাগবেই!”

– ওওওও আচ্ছা থাক সমস্যা নেই আমি ঠিকই মিলে যাবো কি বলো? হিহি!

তিশানা বেশ মিশুক মেয়ে সেটা যীনাত বেশ বুঝতে পারছে। এবার হয়তো একজন সঙ্গী পাবে যীনাত। ভালো তো হলো সবটা কি বলেন পাঠকগণ? সে যাইহোক তিশানা যীনাতের থেকে চোখ ফিরিয়ে মল্লিকা দেবীর দিকে তাকিয়ে বলে,”আচ্ছা নানুমনি কোথায়?”

– সে তো এখনো ঘুমোচ্ছে। আসলে প্রতিরাতে স্লিপিং পিল খেয়ে ঘুমায় তো তাই ভোর সকালে উঠতে পারে না। তুই যা তোর রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে রেস্ট নে পরে আসিস। যীনাত চাইলে তুমিও ওর সাথে যেতে পারো!(মুচকি হেসে)

বলেই মল্লিকা দেবী রান্নাঘরের দিকে চলে যায়। একজন সার্ভেন্ট আগেই তিশানার লাগেজ তার রুমে দিয়ে এসেছে। তিশানা মুচকি হেসে যীনাতের হাত ধরে নিজের রুমে নিয়ে আসে। রুমটা তালাবদ্ধ থাকতো তাই এই রুমে যীনাত আসতো না হয়তো তিশানা নেই তার জন্যই বন্ধ থাকতো। তিশানা যীনাতকে বেডে বসিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলো। তারপর ওয়াশরুম থেকে এসে যীনাতের সাথে জমিয়ে গল্প করতে লাগে। যীনাত প্রথমে “হুম, হ্যাঁ, না” এগুলো বললেও আস্তে আস্তে মিশে যায় তিশানার সাথে। বলা যায় তিশানা যীনাতের ফ্রেন্ড হয়ে গেছে।

জাইফ রুম থেকে বেরিয়ে যীনাতের রুমে চেক করে দেখলো যীনাত রুমে নেই। জাইফ ভ্রু কুচকালো, সকাল মেয়েটা গেলো কোথায়? ভেবেই জাইফ সিঁড়ির দিকে যাচ্ছিলো ওমনি খেয়াল করলো তিশানার রুম খোলা। ব্যাপার কি তা দেখতে ভেতরে ঢুকে দেখে যীনাত আর তিশানা গল্প করতে ব্যস্ত। জাইফ অবাক হয়ে গেলো এতো সকালে তিশানাকে দেখে। তিশানার দরজার দিকে খেয়াল যেতেই দেখলো জাইফ হা করে দাঁড়িয়ে৷ তিশানা অত্যন্ত খুশি হয়ে “দাভাই” বলে দৌড়ে জাইফকে গিয়ে জড়িয়ে ধরে। এভাবে জড়িয়ে ধরাটা যীনাতের কোথায় গিয়ে যেনো লাগলো। জাইফ তিশানাকে ছাড়িয়ে অবাক হয়ে বলে,”তুই কখন এলি চিন্টু!”

– উফফফ দাভাই দ্যাট’স নট ফেয়ার! আবার তুই আমাকে চিন্টু বলছিস? মান-সম্মান আর রাখলি না। দেখছিস না মেয়েটা এখানে আছে।

জাইফ যীনাতের দিকে একবার আড়চোখে তাকিয়ে বলে,”তো কি হইসে? আমি তোর জম্মের পর থেকেই তোকে চিন্টু বলে এসেছি এন্ড এখনো বলব! কজ তোকে এই চিন্টু নামেই বেশি স্যুট করে!”

– কচু করে!(ভেংচি কেটে)

জাইফ তিশানার মাথায় গাট্টি মেরে বলে,”ভেজে খা!”

– উফফফ দাভাই! ভালো হচ্ছে না কিন্তু! ওই যীনাত কিছু বল না কি শুরু করেছে দেখেছিস?

যীনাত হেসে বলে,”আমি কি করবো?”

– ঠিকই তো ও কি করবে? আমাদের ভাইবোনদের মধ্যে ওকে কেন হাত ধরে ঢুকাচ্ছিস?

– তোমার জ্বালায় আমার মাথার তাড় ছিড়সে!

– আমার জ্বালায় না তোর মাথায় অনেক আগে থেকেই স্ক্রু ঢিলা আছে।

জাইফের কথায় তিশানা রেগে জাইফকে ইচ্ছা মতো কিলঘুষি দিতে থাকে। আর যীনাত সেখানে বসে হেসেই চলেছে৷ জাইফ যে এমন মজার মানুষ সেটা যীনাতের অজানা ছিলো। জাইফ তিশানার কিল খেতে খেতে বলে,”তোর ওই লতীর মতো হাত দিয়ে মেরে নিজের হাত ভাঙিস না!”

তিশানা চরম রেগে বলে,”কি বললি তুই আমার হাত লতীর মতো তোকে তো আজ আমি মেরেই ফেলবো! এক সেকেন্ড শুন জানিস সেদিন কি হইসে?”(শয়তানি হাসি দিয়ে)

– কি আবার হলো তোর বিয়ে নাকি?

– উফফফ ধুর! পুরো টা তো শুনবা নাকি?

– আচ্ছা বল।

– তোর জ্বালায় আমার ক্লাসের কত্তোগুলা মেয়ে তোর নাম্বার চেয়েছে জানিস? আমার বেস্টফ্রেন্ড তিন্নি পর্যন্ত আমায় পাগল করে ছাড়ছে। এখন তুই কি বলিস ওকে নাম্বার দিবো?

জাইফ একবার যীনাতের দিকে তাকালো যীনাত কিছুটা ক্ষুব্দ হয়ে জাইফের দিকে তাকিয়ে আছে। জাইফ মনে মনে ভাবছে,”বইন বউয়ের সামনে এগুলো কেউ বলে? এখন বউ কেমনে তাকিয়ে আছে দেখলেই ভয়ে বুক কাঁপে!”

– কি রে কোথায় হারিয়ে গেলি!

– কাউকে নাম্বার দিসিস তো তোরে কি করবো দেখে নিস!

– ওওও তাই? আমি তো দিবোই! দেন তুমি ওদের কেমনে সামলাবা সেটা তুমি ভালো জানো! সে যাইহোক আজ তিন্নি আসবে।

– কিহ পাগল না পেট খারাপ? ওই পাগল কে বাসায় আমি কিছুতেই ঢুকতে দিবো না!

– ওই ছ্যাড়া আমার বেস্টফ্রেন্ড রে একদম পাগল বলবি না!

– পাগল বলবো না তো কি ছাগলি বলবো?

বলেই জাইফ রেগে মেগে চলে গেলো। আর তিশানা সেখানে দাঁড়িয়েই হেসে চলেছে। এই তিন্নি মেয়েটা কেমন হবে যীনাত তা বুঝতে পারছে না। তিশানা হাসতে হাসতে যীনাতের পাশে এসে বসে।

– আচ্ছা তিশানা এই তিন্নি কে?

– ওহ তিন্নির কথা বলছো? সে আমার বেস্টফ্রেন্ড আর রুমমেটও বলা যায়। আর বলিও না গো তিন্নি সহ ক্লাসের অর্ধেক মেয়েই পাগল দাভাইয়ের জন্য। সারাক্ষণ নাম্বার আর কথা বলিয়ে দেয়ার জন্য কানের সামনে ঘ্যানঘ্যান করে। আজ এই বাড়িতে আসার আগে তিন্নি বলে দিয়েছে সে আজই চলে আসবে দাভাইয়ের জন্য।

-“এ আবার কেমন বিপদ রে বাবা! সত্যি-ই সুন্দর ছেলেদের এই এক জ্বালা কতশত মেয়ে পিছে পিছে ঘুরবে।” মনে মনে বললো যীনাত।

– কি ভাবছো?

– কই কিছু না!

– তুমিও কি দাভাইকে পছন্দ করো?(ভ্রু কুচকে)

যীনাত চোখ বড় বড় করে বলে,”এ তুমি কি বলছো?”

তিশানা ফিক করে হেসে দিয়ে বলে,”আরে আমি তো জাস্ট মজা করছিলাম যাইহোক এখন তো মেয়বি ব্রেকফাস্ট এর সময়। চলো নিচে যাই।”

যীনাত সম্মতি জানাতেই দুজন একসাথে নিচে আসে। সকলে তিশানাকে পেয়ে তাকে নিয়েই মেতে উঠেছে। বিশেষ করে কমলা দেবী। কমলা দেবী তিশানাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয়। তিশানা কমলা দেবীকে সামলে বলে,”আরে নানুমনি তুমি কাঁদছো কেন? আমি তো কথা দিয়েছি তুমি সব ঠিক রাখলে আসবো দেখো আমি এসেছি। এবার প্লিজ এভাবে কেঁদো না।”

– তুই আর মাইয়ার একমাত্র রত্ন। তুই ক্যামনে ওইদিন আরে ওইসব কইতে পারলি? জানোস না তোরে ছাড়া আই কিরাম থাকি?

– তুমি দোষ করেছো তাই ওভাবে বলতে বাধ্য হয়েছি নাহলে তো সবার মান-সম্মান ডুবাতা! এখন এখানে আসছি আরেকবার যদি উলটা পালটা শুনি তাহলে আবার বাড়ি ছেড়ে চলে যাবো।

– না না আই কিছু করুম না আই ভালা হয়ে গেছি।

তিশানা মুচকি হাসে। তারপর সবাই একসাথে ব্রেকফাস্ট করতে বসে। খাওয়ার মাঝেই নিকেশ দেব কথা তুকে,”স্বর্না কি আসবে না?”

– বাবা স্বর্ণা বিয়ের আগের দিন আসবে। বললো কোনো পরিক্ষায় আটকে গেছে তাই এখন তার নাকি আসা সম্ভব না।(জাইফ)

– ওহ তাহলে আস্তে ধীরেই আসুক এতো তাড়াহুড়োর দরকার নেই!(নিকেশ)

– কিন্তু বড় ভাইয়ের বিয়েতে যদি বোনই না থাকে তাহলে কেমনে হয়?(মল্লিকা দেবী)

– ওহ মা বিয়েটা পরের হিসেব আগে স্টাডি!(রিকেশ)

মল্লিকা দেবী আর কিছু বললেন না। এভাবে খাওয়া দাওয়া শেষ করে যে যার রুমে চলে গেলো। তিশানা অনেক ভোরে উঠায় রুমে গিয়ে লম্বা একটা ঘুম দেয় আর যীনাত নিজের রুমে চলে আসে।

রুমে আসতেই জাইফ যীনাতের রুমে আসে নিজের হাতা ঠিক করতে করতে।

– শুনো আজ থেকেই মেহমান আসা শুরু করবে তাই তোমার রুমে আসাটা কেউ দেখলে তা ভালো চোখে নিবে না এন্ড আমাদের সন্দেহ করতে পারে তাই সবসময় নিজের কাছে ফোন রাখবা আর দাদু কে ফোনের ব্যাপারে আমি বলে দিয়েছি দাদু বলেছে সবসময় যেনো তোমার সাথেই রাখো ফোন। তাই কোনো সমস্যা হবে না। প্রতিদিন ফোনে কথা বলবো আর কিছু লাগলে আমাকে ফোনেই বলবা আমি তোমার যা লাগে তা ম্যানেজ করে দিবো কেমন?

যীনাত মাথা নাড়ায়। যীনাতের এই শান্ত স্বভাবটা জাইফের বেশ পছন্দের। তারপর জাইফ যীনাতকে বিদায় জানিয়ে অফিসে চলে গেলো। জাইফ যেতেই যীনাত দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে তারপর বারান্দায় চলে যায় নিজের সখের গড়া ফুলগাছ গুলোর সাথে সময় কাটাতে। যীনাতের গোলাপ অনেক পছন্দের তাই অনেক গুলো গোলাপের গাছ টবে করে নিজের বারান্দার পাশে রেখেছে। এতে করে বারান্দার সৌন্দর্য দ্বিগুণ বেড়ে যায়।

বিকালের দিকে তিন্নি নামের মেয়েটা আসে। তিন্নি আর তিশানার গলায় গলায় ভাব। যীনাত শুধু দেখে কিছু বলে না। তিন্নি আসার পর তিশানাকে পাগল করে চলছে জাইফের কই? কখন আসবে? তার নাম্বার; ব্লা ব্লা ব্লা! যীনাতের বিরক্তি লাগছে তবুও মুখে প্রকাশ করে না। এদিকে জাইফের সাথে ঠিকই টেক্সটে কথা বলছে। যীনাতই জাইফকে বলে তিন্নি এসেছে এবং তাকে খোঁজ করছে। এটা শুনে জাইফ বললো আজ দেরি করে বাড়ি ফিরবে। কারণ সারাদিনের পরিশ্রমে সে বেশ ক্লান্ত এখন বাসায় গিয়ে এক্সট্রা প্যারা সে সহ্য করতে পারবে না। জাইফ সিদ্ধান্ত নিলেও তার আর পূরণ করা হলো না৷ তার আগেই মল্লিকা দেবী জরুরি কাজের জন্য তাড়াতাড়ি আসতে বলেছে অবজ্ঞা তাকে যেতেই হবে।

অবশেষে ৭টা বাজে জাইফ বেরিয়ে পরে অফিস থেকে এবং বাসায় দ্রুত পৌঁছায়। জাইফকে দেখে তিন্নির মুখে বিশ্বজয়ের হাসি। জাইফ একবারের জন্যেও তিন্নির দিকে না তাকিয়ে নিজের রুমে চলে যায়। যীনাত তখন নিজের রুমের বেলকনিতে বসে হাজারো তারার মাঝে সেই অপরূপ চাঁদকে দেখছিলো। হঠাৎ জাইফের কন্ঠ পেয়ে এদিক সেদিক তাকায়। তারপর পাশের বেলকনির দিকে খেয়াল করতেই দেখে জাইফ কাচের রেলিং এর সাথে দু হাত দিয়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে। যীনাত চট করে দাঁড়ায় এবং বলে,”আপনি কখন আসলেন?”

– এইতো ১০ মিনিট হলো তা একা একা?

– একদিন বলেছি না আমার একাই ভালো লাগে।

– কিন্তু আমার তোমাকে একা দেখতে ভালো লাগে না বুঝলে? নিচে যাও আর সবার মাঝে থাকো ভালো লাগবে।

– কিন্তু…

– কোনো কিন্তু না যাও! আমিও ফ্রেশ হয়ে যাচ্ছি।

জাইফের কথা ফেলতে না পেরে যীনাত নিচে চলে গেলো। নিচে গিয়ে দেখে সকলে একসাথে আড্ডা দিচ্ছে একমাত্র নিকেশ, মল্লিকা দেবী আর দেবনাথ দেব বাদে। টপিক হলো রিকেশের বিয়ে। যীনাত একটা সোফায় গিয়ে বসে আর চুপচাপ সবার কথাবার্তা শুনছে আর সবটা বোঝার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তিন্নি কিছুক্ষণ ধরে এদিক সেদিক তাকিয়ে কাউকে খুজছে তা দেখে রিকেশ বলে,”কি তিন্নি কাউকে খুঁজছো?”

– না দাভাই এমনি।

কমলা দেবী পান খাচ্ছে আর খুচিয়ে খুচিয়ে তিন্নিকে লক্ষ্য করছে। তিন্নিকে কখনোই সে দেখতে পারেনা। তিন্নির না চালচলন ভালো আর না কাজ! কমলা দেবী আপাতত তিন্নিকে ভাগানোর কথা ভাবছে কারণ সে যে সুবিধার নয় তা কমলা দেবী হারে হারে বুঝে। কিছুক্ষণ পর জাইফও আসলো এবং সোজা গিয়ে যীনাতের পাশে বসে পড়ে। এতে তিন্নি নিমিষেই মুখ গোমড়া করে ফেলে। কারণ সে তার নিজের পাশে জাইফের জন্য জায়গা রেখেছিলো জাইফকে নিজের পাশে বসাবে বলে কিন্তু তা আর হলো কই? এরকম নানা চিন্তা করতে করতে সে উঠে এসে যীনাতের কানে ফিসফিস করে বলে,”যীনাত আমাকে জাইফদার পাশে বসতে দাও তুমি আমার জায়গায় যাও প্লিজ প্লিজ প্লিজ!”

কথাটা জাইফও বেশ শুনতে পেলো এবং সকলের আড়ালে যীনাতের হাত ধরে ইশারায় “না” করে। যীনাত পরে গেলো মহা ঝামেলায় কি করবে এখন সে? এমন সময়ই কমলা দেবী বলে উঠে,”ওই ছ্যাড়ি কি কইলি রে তুই ওর কানে ফিসফিসাইয়া আগোও হুনা আরাও হুনি!”

এবার তিন্নি পরে গেলো বিপাকে। বুড়ী যেভাবে পেচিয়ে ধরেছে তাকে তার এখন আস্ত নেই। তিন্নির বলার আগেই জাইফ বলে উঠে,”ঠাম্মি তিন্নি আমার পাশে বসতে চায় তাই যীনাতকে বলছে যেনো সে উঠে তার জায়গায় গিয়ে বসে!”

এবার কমলা দেবীকে পায় কে। কোমড়ে আঁচল গুজে রেডিওর মতো বলা শুরু করে,”আগেই তিশানা তোরে কইয়া রাহি এহন আরে কিছুই কইতে পারবি না! আর ওই মাইয়া তুই এইহানে কি বিয়া খাইতে আইসোস নাকি লাইন মারতে আইসোস? কি হ্যাঁ কি? জাইফের লগে বহার অনেক সখ তোর? ক্যান রে আর জাইফের লগে তোর এতো কিয়ের পিরিত!! যা নিজের জায়গায় নইলে এহনি তোরে বাইত থেইকা বাইর কইরা দিমু! আর যীনাত তুই এইহান থেইকা উডবি না! তোরে এইহান থেইকা কেডা সরায় এইডা আইও দেইখা ছাড়মু।”

তিশানা এবার আর কমলা দেবীকে কিছু বলে না কারণ কমলা দেবী যেমন অন্যায় করতে জানে তেমনই অন্যায় দেখলে নাকানিচুবানি খাওয়াতেও জানে। আর এবার তো অন্যায় দেখেছে। এখন যদি নিজের বেস্টফ্রেন্ডের হয়ে কথা বলতে যায় পিঠের ছাল তুলে দিবে! আর তিন্নিটাও অতিরিক্ত বোকা! এই কমলা দেবীর সাথে ন্যাকামির কি দরকার ছিলো?

তিন্নি রাগে, দুঃখে, ক্ষোভে আবার নিজের জায়গায় গিয়ে বসে আর জাইফ মুখ টিপে টিপে হাসে। কমলা দেবী জাইফের দিকে তাকাতেই জাইফ তাকে চোখ টিপ দেয় আর কমলা দেবী নিঃশব্দে হেসে দেয়। কমলা দেবীকে জাইফ আগেই বলে রেখেছিলো এই তিন্নির হাবভাবের কথা। তাই কমলা দেবী তা দেখা মাত্রই সোজা এ্যাকশন করেছে। সত্যি-ই বস এমন ঠাম্মি পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার!!

———————————-

চলবে!!!

ওয়ারদূন আসরার পর্ব-১২

0

#ওয়ারদূন_আসরার
#লাবিবা_ওয়াহিদ
“১২”
__________________________________
জাইফ চোখ মুখ লাল করে খুবই যত্ন করে যীনাতের পায়ে বরফ ডলে দিচ্ছে আর যীনাত কিছুক্ষণ পর পর ব্যথায় ভ্রু কুচকাচ্ছে। নিচে থেকে চিৎকার-চেঁচােমেচির শব্দ কানে ভেসে আসছে যীনাতের। যীনাতের এগুলো সহ্য না হওয়ায় জাইফকে বলে,”শুনুন!”

জাইফের কোনো উত্তর নেই। যীনাত বুঝতে পারে জাইফ তার উপর রেগে আছে তবুও বলে,”দেখুন শুধু শুধু চেঁচামেঁচির কোনো মানে হয়না আপনি ওদের বলুন যেনো দাদীর সাথে কোনোরকম তর্ক না করে।”

– জাস্ট শাট আপ যীনাত! এতো সহজ সরল হওয়াও ভালো না। তুমি ভাবতে পারতাসো আজ সিঁড়ি থেকে পরে গেলে তোমার অবস্থা কি হতো? তবুও বলছো ঠাম্মিকে কিছু বলতে না? আমাকে তো তখন কিছু বলতে দিলা না এখন ওরা বলছে বলুক না!!

– আমি জানি আপনি আমার উপর রেগে আছেন। কিন্তু কেন ঠাম্মির দিকটা বুঝে উঠতে পারছেন না? আমি যতোটুকু বুঝেছি ঠাম্মি তার স্বামী এবং সন্তানের শোকে এমন হয়ে গেছে। পারলে দাদু বা আঙ্কেল কে জিজ্ঞেস করুন! তার সাথে মিশুন, মন খুলে কথা বলুন ঘুরাঘুরির মাঝে রাখুন দেখবেন সব ইন শা আল্লাহ ঠিক হয়ে যাবে। আর দাদুর থেকে যতোটুকু শুনেছি আর বুঝেছি আপনি অনেক ঠান্ডা স্বভাবের এবং চিন্তা-চেতনাও আছে। তাই রাগের মাথায় কিছু করবেন না সেটা আপনার প্রতি আমার বিশ্বাস।

যীনাতের মুখে “বিশ্বাস” শব্দ টা শুনে জাইফ যেনো বরফের মতো গলে গেলো। সত্যিই কি যীনাত তাকে বিশ্বাস করে?

– তুমি আমাকে সত্যি-ই বিশ্বাস করো?

যীনাত মুচকি হেসে মাথা নাড়ালো। জাইফ একটা টেডি স্মাইল দেয়। তারপর যীনাতের পায়ে বরফ ডলে বরফের ব্যাগ টা নিয়ে জাইফ নিচে থেকে আসে যীনাতের জন্য খাবার নিতে। নিচে এসে দেখে দেবনাথ দেব আর রিকেশ কমলা দেবীর সাথে কথা কাটাকাটি করছে আর আনুস্কা সাইডে চুপচাপ দাঁড়িয়ে। সে দেবনাথ দেবের জন্য চুপ করে আছে। যতোই হোক হবু দাদাশশুড় বলে কথা তার সামনে তার বোনকে কিছু বলা নিশ্চয়ই ভালো দেখাবে না। নইলে আনুস্কা চুপ থাকার মানুষ না। জাইফকে দেখতেই দেবনাথ দেব বলে,”তোমাকে আগেই বলেছিলাম কমলাকে এখানে এনো না।”

জাইফ কারো সাথে কোনোরকম কথা না বলে কিচেনের দিকে চলে গেলো। গিয়ে দেখে তার মা মল্লিকা দেবী মুখ গোমড়া করে রান্না করছে আর পাশে মিনি তাকে সাহায্য করছে। জাইফ বরফের ব্যাগ টা রেখে মল্লিকা দেবীকে বলে,”মা প্লেটে খাবার সাজিয়ে দাও তো!”

– কেন?(অবাক হয়ে)

– যীনাতের জন্য। পায়ে ব্যথার জন্য আগেই খাওয়া উচিত। খাওয়ার পর কিছু মেডিসিন নিতে হবে তাহলে পায়ের ব্যথাটা মোটামুটি কমবে।

– ওহ হ্যাঁ ঠিকই বলেছিস! মিনি খাবার রেডি কর।

মিনি মাথা নাড়িয়ে খাবার বাড়তে শুরু করে একটা প্লেটে। মল্লিকা দেবী একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,”মেয়েটা মাত্রই স্বাভাবিক হলো আর এমন সময়ই এই বিপদ চলে আসে। পিসির আর বুঝ হলো না”

– হবে বলেও মনে হয়না। সে যাইহোক তোমাদের আর ওনাকে চিন্তা করা লাগবে না আমি আছি তার চিন্তা করার জন্য।

বলেই খাবারটা নিয়ে যীনাতের রুমে চলে গেলো। এখন জাইফের মাথায় কি চলছে সেটা একমাত্র জাইফই ভালো জানে। জাইফ দেবনাথ দেব আর রিকেশকে চেচামেচি করতে নিষেধ করে উপরে চলে গেলো। কমলা দেবী এখনো রাগে ফুসছে তার আধিপত্য কি আর হবে না?

জাইফের হাতে খাবার দেখে যীনাত জিজ্ঞেস করে,”খাবার কার জন্য?”

– এখানে তোমাকে ছাড়া তো আর কাউকে আমি দেখছি না।

যীনাত হাসলো তারপর বলে,”এই অসময়ে খাবার কেন?”

– অসময়ে পায়ের বেহাল অবস্থা করেছেন তাই অসময়টা ঠিকসময় আপাতত বলা যায়।

যীনাত মুখ গোমড়া করে বলে,”খোটা দিচ্ছেন আমায়?”

জাইফ নিঃশব্দে হেসে বলে,”খোটা কেন দিতে যাবো? যাইহোক হা করুন আমি খাইয়ে দিচ্ছি।”

যীনাত অয়াবক হয়ে বলে,”আপনি খাইয়ে দিবেন মানে কি? আমার হাত আছে আমি-ই খেতে পারবো।”

– উহু আমি খাইয়ে দিবো।

বলেই এক লোকমা জোর করে যীনাতের মুখে পুরে দিলো। যীনাত চাবাতে চাবাতে বলে,”আমার পায়ে চট লেগেছে হাতে না তাহলে এগুলোর মানে কি?”

– “মানে” শব্দ টা সবজায়গায় খাটে না বুঝলে। আর আমি কোনো পরপুরুষ না যে তোমাকে খাইয়ে দিতে পারবো না। আমি তোমার হাসবেন্ড তাও ইসলামিক রীতিতেই।

বলেই আরেক লোকমা মুখে পুরে। যীনাত ভেংচি কেটে বিড়বিড় করে বলে,”উহ! আসছে আমার হাসবেন্ড জীবনে একসাথে নামাজ পড়লো না আবার অধিকার দেখাতে আসে!”

– শিখিয়ে দাও ঠিকই পড়বো একসাথে!

যীনাত চোখদুটো বড় বড় করে বলে,”মানেহ? আপনি তো অন্য ধর্মা…”

– তুমি আসলেই বোকা। এতো হাদিস জানো এইটা জানো না যে কোনো অন্য ধর্মের কাউকে বিয়ে করা জায়েজ না? তাইতো আমি গোপনে ইসলাম গ্রহণ করেছি আর তার এক সপ্তাহ পরেই তোমায় বিয়ে করেছি!!

যীনাত চোখ বড় বড় করে জাইফের দিকে তাকায়। কি বলছে সে এসব?

– শুধুমাত্র আমাকে বিয়ে করার জন্য ইসলাম গ্রহণ করেছেন?

– বলা যায় তাই! দাদুও অমত করেনি বরং জোর করেছে। আমি বুঝিনি কেন তবে সে বললো সঠিক সময়ে জানতে পারবো কিন্তু সেই সময় কবে আসবে তা আমি জানিনা!!

যীনাত অবাক হয়ে জাইফের দিকে তাকায় আর ভাবে জাইফের সাথে তার অতীতের কোনো সম্পর্ক নেই তো অথবা তার জীবনের সাথে? নাহলে ঘুরে-ফিরে এতো বাধা বিপত্তির পরেও কি করে সেই জাইফের সাথেই তার বিয়ে হলো? বিষয়টা অনেক ভাবাচ্ছে যীনাতকে! আচ্ছা দাদু কি তাকে সত্যি টা বলতে পারবে? হ্যাঁ এখন তার দাদুই একমাত্র ভরসা।

– কোথায় হারিয়ে গেলে? খাও জলদি মেডিসিন তো নিতে হবে নাকি?

যীনাতের ধ্যান ভাঙতেই সে খাওয়ায় মনোযোগ দিলো। খাওয়া শেষে মেডিসিন খাইয়ে জাইফ চলে যেতে নিলে যীনাত আটকিয়ে বলে,”আজ আমার সাথে নামাজ পড়বেন?”

জাইফ পিছে ফিরে বলে,”তোমার না পায়ে ব্যথা?”

– ও কিছু হবে না। আপনি যোহরের আযানের সময় পুরোপুরি পরিপাটি হয়ে আমার রুমে চলে আসবেন একসাথে নামাজ আদায় করবো।

জাইফ যেনো খুশিতে আত্মহারা হয়ে যায়। তারপর নিজের সম্মতি জানিয়ে চলে গেলো। যীনাত খুব খুশি হয় এই ভেবে নিজের স্বামী অন্য ধর্মের নয় আর জাইফের প্রতি তার আরও হাজারগুণ ভালোলাগা কাজ করছে। সত্যি-ই জাইফ অনেক দায়িত্ববান এবং সুশীল একজন যুবক। আল্লাহ-র দরবারে সে আরও গভীরভাবে শুকুরিয়া আদায় করার জন্য একসাথে নামাজে দাঁড়াবে এবং দুজনের আগমন বিপদ হতে রক্ষা পেতে সাহায্য চাইবে।

যোহরের সময় জাইফ পুরো পরিপাটি হয়ে যীনাতের রুমে প্রবেশ করে এবং দরজা লক করে দেয় যাতে কেউ যীনাতের ঘরে খোঁজ করতে আসলে তাকে নামাজরত অবস্থায় না দেখতে পায়।সেইসময় যীনাত খুড়িয়ে খুড়িয়ে ওযু করে ওয়াশরুম থেকে বের হচ্ছিলো। জাইফকে দেখে একদম হা হয়ে যায়। সাদা পাঞ্জাবি আর টুপিতে জাইফকে কোনো রাজপুত্রের থেকে কম সুন্দর লাগছে না। একটা ছেলে কি করে এতোটা সুন্দর হতে পারে তা যীনাতের অজানা। জাইফ যীনাতের হাত ধরে নিয়ে বিছানায় বসালো। যীনাত ভালো করে ওড়না মাথায় পেচিয়ে নেয়। জাইফ কিছুটা অস্বাভাবিক হয়ে বলে,”নামাজ পড়তে পারবে তো ঠিকমতো?”

যীনাত মুচকি হাসি দিয়ে মাথা নাড়ায় যে সে পারবে! যীনাতের মুচকি হাসিটা যেনো জাইফের কলিজা ঠান্ডা করে দেয়। যীনাত জাইফের সাহায্যে জায়নামাজ টা বিছিয়ে নেয় কিন্তু এক জায়নামাজে কি করে দুইজন নামাজ আদায় করবে? পরে উপায় না পেয়ে জাইফকে জায়নামাজ দিয়ে ওড়না দিয়ে নামাজে দাঁড়ালো যীনাত এবং জাইফকে অক্ষরে অক্ষরে শিখিয়ে দিলো কিভাবে কি করতে হবে। জাইফও যেনো খুবই স্বাচ্ছন্দ্যে শিখে ফেলে। যীনাত অবাক না হয়ে পারলো না যেনো জাইফ আগেও নামাজ আদায় করেছে! সবকিছু মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে একসাথে নামাজ আদায় করে। যীনাত এবং জাইফ উভয়ের মনেই যেনো এক অজানা ভালোলাগা কাজ করছে কিন্তু কেউ-ই প্রকাশ করে না।

জাইফ কারো সাথে কথা বলতে বলতে কমলা দেবীর রুমে গেলো। তখন কমলা দেবী পান মুখে পুরে নিচ্ছিলো। জাইফ কিছু না বলেই কমলা দেবীর কানে ফোন দিয়ে বলে,”কথা বলো!”

কমলা দেবী কানে ফোন ধরতেই ওপাশ থেকে কিছু কথা বললো যার কারণে কমলা দেবীর হাত থেকে ফোনটা পড়ে গেলো। পড়ে যাওয়ার আগে জাইফ খপ করে ফোন টা ধরে ফেলে। কমলা দেবীর এতোদিকে হুস নেই সে এক দিকে তাকিয়েই কেঁদে চলেছে। জাইফের খারাপ লাগলেও কিছু বলেনা চুপ থাকে কিন্তু তবুও নিজেকে শক্ত করে বএল,”আশা করছি এবার থেকে এমন কিছু করবা না যেটা অন্যের মনে আঘাত হানে!”
বলেই জাইফ চলে গেলো।

সেদিনের পর থেকে কমলা দেবী চুপ করে থাকে কারো সাথে আগের মতো অন্যায় আবদার করে না তবে সকলেই তাকে সময় দেয় তার সাথে সুখ অসুখ শেয়ার করে। এমনকি একেকজন একেকবার তাকে ঘুরতেও নিয়ে যায়। কমলা দেবী কোনো কারণে কষ্টে ভুগলেও সবার এতোটা মিশামিশিতে সে প্রাণখুলে হাসে মিশে তবে আগের মতো অন্যায় কিছু করে না। সে এখন নিজেকে মানিয়ে নিয়েছে। তার এতোদিনের ভালোমানুষী কোনো এক জায়গায় হয়তো হারিয়ে ফেলেছিলো নিজের অজান্তে কিন্তু সে তা ফিরে পেয়েছে। এমনকি যীনাতের কাছেও সে ক্ষমা চেয়েছে! দেব পরিবারে যেনো খুশির আমেজ! এই খুশিতে আরও এক খুশি নিয়ে আসলো সেটা হলো রিকেশের বিয়ে! রিকেশের বিয়ের কিছুদিন আগে কমলা দেবী আড়ালে জাইফকে বলে,”এইবারও কি আইবো না আর উপ্রে রাগ কইরা? আই তো ভালা হইয়া গেসি!”

জাইফ উত্তরে শুধু মুচকি হাসি দেয় এবং বলে,”আসবে গো ঠাম্মি সাথে তোমার জন্য আরেকটা সারপ্রাইজও আছে।!”

“সারপ্রাইজ” শুনে কমলা দেবীর মুখ খুশিতে চিকচিক করে উঠে। জাইফ নিঃশব্দে হাসলো।

———————————–

চলবে!!!

(তোহ? গঠনমূলক মন্তব্য পাবো কি?)

ওয়ারদূন আসরার পর্ব-১১

0

#ওয়ারদূন_আসরার
#লাবিবা_ওয়াহিদ
“১১”
__________________________________
– আচ্ছা দাদু আপনার সাথে দাদীকে তো দেখি না সে কোথায়?

দেবনাথ দেব শুকনো একটা হাসি দিয়ে বলে,”উর্মিলা আরও ৭ বছর আগে মারা গেছে।”

দেবনাথ দেবের কথা শুনে মুহূর্তেই যীনাতের মন খারাপ করে ফেলে। দেবনাথ দেব মুচকি হেসে বলে,”আমার জীবনের কাহীনি শুনবে?”

যীনাত কাধ থেকে মাথা উঠিয়ে কিছুটা উত্তেজিত হয়ে বলে,”হ্যাঁ শুনবো বলুন!”

দেবনাথ দেব একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলা শুরু করে,”যখন ভার্সিটি লাইফে ছিলাম তখন এক মুসলিম মেয়েকে বেশ মনে ধরেছিলো। কিন্তু মেয়েটা ছিলো এতিম। তার ভাইকে নিয়েই ছিলো তার পরিবার। খুবই কষ্টে অর্থ উপার্জন করে কোনোরকমে সংসার চালাতো। মেয়েটার করুণ অবস্থা দেখে সকলেরই কমবেশী নিজেদের অজান্তেই চোখে জল চলে আসতো। আমার বেলাতেও ব্যাতিক্রম হয়নি। আমি মেয়েটাকে ভালোবাসতাম এবং তখন তাকে চাইছিলাম নিজের করে নিতে তাকে ওভাবে আর কষ্টে দেখতে পারতাম না। তাই সিদ্ধান্ত নিলাম মেয়েটিকে বিয়ে করবো। কিন্তু তার আগেই আমার পরিবার জেনে যায় আমি এক মুসলিম মেয়েকে পছন্দ করি। সেদিন বাবা-মা তাদের দিব্বি কেটে বলেছিলো যেনো আমি আমার মরণের আগ পর্যন্ত অন্য কোনো ধর্ম গ্রহণ না করি। তাই হলো আমি আর মেয়েটার মুখোমুখি হলাম না। কিছুদিনের মাঝেই খুবই ঘরোয়াভাবে উর্মিলার সাথে আমার বিয়ে সম্পূর্ণ হয়।”

– তারপর? ওই মেয়েটা?

– আমার বিয়ের তিন বছর পরে মেয়েটাকে কারা যেনো র‍্যাপ করে ডোবায় ফেলে দেয়। আর তার ভাই বোনের এমন মৃত্যু সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।

বলেই থামলেন দেবনাথ দেব। যীনাতের চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়লো। ইশশশ মেয়েটা কতোই না কষ্ট করেছে জীবনে তবুও ভাগ্যের কেমন লীলাখেলা। সবটাই যে আল্লাহ-র কাছে! তার হাতেই সব।

যীনাত অনেকক্ষণ ধরেই জাইফকে আশেপাশে দেখছে না কিন্তু কেন কোথায় সে তা জানেনা। জাইফের কি একবারও তার কথা মনে পড়ছে না? একবারও কি মনে পড়ে না যীনাতের সাথে তার একবার হলেও দেখা করা উচিত? একরাশ অভিমান ভর করলো যীনাতের মনে জাইফের জন্য। দেবনাথ দেব কে কিছুটা ইতস্ততবোধ থেকে বলে,”আচ্ছা দাদু ‘উনি’ কোথায়?”

দেবনাথ দেব প্রথমে বুঝতে পারেনা এই ‘উনি’ টার মানে। পরে বুঝতে পেরে মুচকি হেসে বলে,”রিকেশের সাথে কমলার কাছে গেছে কমলাকে নিয়ে আসতে!”

কমলা দেবী আসবে শুনে যীনাতের খুশি দেখে কে।

– দেখো ঠাম্মি তোমাকে ওই বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছি ঠিকি কিন্তু একদম ভদ্রভাবে থাকবা।(জাইফ)

– ওই ছ্যাড়া তুই আর ছোড হইয়াও আরে শিখাস আই কোনহানে কিরাম ব্যবহার করুম!

– হ্যাঁ শেখাবো দরকার হলে তাও করবো। তবে যা বলছি তা অক্ষরে অক্ষরে শুনো নইলে চান্দু তোমার কপালে ঠ্যালাঠ্যালি লাগবে।(জাইফ)

– ও ঠাকুর গো কি দিন দেহাইলা এমন কচি পোলায় কিনা আরে ধমকায়। দড়ি ফেলাও আই উইঠা যাই গোওওও।

– দেখো ঠাম্মি তোমার এইসব ন্যাকামি আমার সামনে করবা না। এতোই উপরে যাওয়ার সখ হলে আমাকে বলো আমি তোমাকে উপরে পাঠানোর ব্যবস্থা করি কি বলো?(জাইফ)

– মানেহ? ও সোয়ামি তুমি এইডা কইলা কিতা তুমি আরে উপরে পাঠাইবা?(অবাক হয়ে)

– দরকার হলে তাই।

বলেই জাইফ প্যাকেটের থেকে ইনজেকশন টা বের করলো। ইনজেকশন দেখে কমলা দেবীর যায় যায় অবস্থা। এসির মাঝেও তিনি গড়গড় করে ঘেমেই চলেছে। কমলা দেবীকে ঘামতে দেখে রিকেশ হেসে বলে,”বুঝলি ভাই আমাদের ঠাম্মির ঘামানোর রোগ হইসে তারে ইমিডিয়েটলি চেকআপ করাতে হবে!”

– চেকাপ করানোর কি আছে আমার হাতের এই মেডিসিন দিয়েই ঠাম্মির সব ভিমরতি ছাড়াবো কি বলো কমলা রানী?

– এএএএইই নানানানানানা আরে এইডি দেওন লাগতো না আই সব কথা হুনুম!!

– এইতো বুড়ী আসছে লাইনে।

বলেই রিকেশ হেহে করে হেসে দিলো। তারপর দুই ভাই মিলে কমলা দেবীকে বাড়িতে নিয়ে আসে। কমলা দেবীকে আসতে দেখে মল্লিকা দেবী তার সেবা করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। নিচে চেঁচামেচির শব্দ শুনে যীনাত নিজের ওড়না ঠিক করতে করতে রুম থেকে বের হতে নিলো ওমনি জাইফের সাথে বড়সড় ধাক্কা খায়। তাল সামলাতে না পেরে যীনাত পড়ে যেতে নেয় তার আগেই জাইফ যীনাতের কোমড় ধরে তাকে পরে যাওয়ার হাত থেকে বাচায়। যীনাত ভয়ে ততোক্ষণে চোখ মুখ খিচে ছিলো। জাইফ মুগ্ধ নয়নে যীনাতের ভীতু ফেস টা দেখছে। যীনাত পড়লো না ভেবে পিটপিট করে তাকালো এবং দেখলো জাইফ তাকে ধরে আছে। যীনাত সাথে সাথেই উঠে দাঁড়ায় এবং নিজেকে স্বাভাবিক করতে চেষ্টা করছে। জাইফ যীনাতের দিকে তাকিয়ে দেখে যীনাত কেমন যেনো লাল হয়ে আছে। কিন্তু কেন? এভাবে হঠাৎ লাল….এক মিনিট যীনাত কি লজ্জা পেয়েছে? ভেবেই মুচকি হাসে জাইফ তারপর গলা পরিষ্কার করে বলে,”দেশেশুনে চলাফেরা করো নইলে এখন পরে কোমড় তো ভাঙতে।”

যীনাত প্রচুর লজ্জায় বলে,”পরে থেকে খেয়াল রাখবো।”

জাইফ মুচকি হাসলো তারপর বলে,”কোথায় যাওয়া হচ্ছিলো?”

– নিচে সোড়গোল শুনলাম তাই….

– এখন যাওয়ার প্রয়োজন নেই তুমি ঘরেই থাকো।

– হুম।

জাইফ চলে গেলো নিজের রুমে। যীনাত থামায় নি কি-ই বা বলে থামাবে?

আনুস্কা রিকেশের সাথে নিকেশ ম্যানশনে আসলো। আনুস্কা প্রথমে সকলকে সালাম করে। কমলা দেবীকে প্রনাম করতে গেলেই সে কিছুটা পিছে ফিরে যায়। এতে আনুস্কা নিঃশব্দে হাসলো কারণ সে ভালো করেই জানে কমলা দেবী কিরকম। নিকেশ, দেবনাথ দেব আনুস্কার সাথে দেখা করেই যে যার কাজে চলে যায়। আনুস্কা সেই ফাকে বলে,”ঠাম্মি গুরুজনদের পা ছুয়ে প্রনাম করতে হয় জানেনা না?”

কমলা দেবী তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে বলে,”ওই ছ্যাড়ি আরে এইডি কস ক্যান? তোর কাছে কি আই কৈফিয়ত চাইসি চেন্না মাইয়া!”

– আমি চেন্না হইলে আন্নেও চুন্না বুড়ি!

– কি কইলি তুই আরে? তোরে তো আই বেগুন দিয়া ধুমু।

– তুমি আমারে বেগুন দিয়া ধুইলে আমি তোমারে বেগুনের সাথে ভাজমু!

– আচ্ছা বেয়াদব মাইয়া তো তুই! ওই রিকু এই বেয়াদবটারে তুই বিয়া করিস না মারা পড়বি!

– ওই বুড়ী তুমি এখন আমার বরের দিকে নজর দিসো ক্যান? আমি বিয়া করমুই এই বাড়ির বড় বউ আমি হমুই হইয়াই তোমারে জম্মের শিক্ষা দিমু!! তোমার মতো ত্যাড়া রে সোজা করার ল্যাইগা আমি একাই যথেষ্ট।

রিকেশ হা করে আনুস্কার দিকে তাকিয়ে আছে। এই মেয়ে তো দেখছি কমলা দেবীর থেকেও ড্যাঞ্জারাস!! যাক কমলা দেবীর অন্যায় আবদার তাহলে আনুস্কাই কমাতে পারে!

– ওই ছ্যাড়ি কি কইলি তুই? আই ত্যাড়া? তুই ত্যাড়া তোর চৌদ্দগেরাম ত্যাড়া ফইন্নি। রাস্তার মাইয়া হইয়া আরে ধমকাস এত্তো বড় সাহস!!

– সাহসের দেখলা কি তুমি বুড়ী। বিয়ে হয়ে আসতে দাও তারপর দেখো ঠ্যালার নাম বাবাজী কারে কয়।

বলেই আনুস্কা রিকেশের কাছে এবং বলে যেনো রিকেশের রুম দেখায়। রিকেশও বাধ্য হয়ে নিজের রুমে আনুস্কাকে নিয়ে গেলো। আর কমলা দেবী এদিকে রাগে ফুসতে লাগে। যেভাবেই হোক আজ আনুস্কাকে সে শাস্তি দিয়েই ছাড়বে। এমন শাস্তি দিবে যে আনুস্কা দ্বিতীয়বার আর এই মুখো হবে না। এমন কিছু শয়তানি বুদ্ধি কমলা দেবী ভাবতে থাকে। যেহেতু জাইফ এখন নিজের রুমে সেহেতু কমলা দেবীকে কেউ কিছু বলতে পারবে না। কমলা দেবীর হঠাৎ নিজের পায়ে দেয়ার সরিষার তেলটার কথা মনে পড়ে। কাউকে কিছু না বলে তিনি হেটে হেটে নিজের রুমে যায় এবং তেলের বোতল টা নিয়ে আসে। তেলের বোতলের মুখ খুলে সিঁড়ির দিকে যায় এবং এক সিঁড়িতে তেল ঢেলে দেয় যেনো আনুস্কা পরে নিজের কোমড় ভাঙে।

খুবই গোপনে সব কাজ সেরে মিনিকে ডাকে যেনো তার পায়ে তেল মালিশ করে দেয়। মিনিও কমলা দেবীর কাছে বাধ্য হয়ে তেল মালিশ করা শুরু করে। কমলা দেবী কিছুক্ষণ পর পর হাসছে যা মিনির চোখ এড়ালো না। দুর্ভাগ্যবশত সেই তেলের সিড়িতে যীনাত পা পিছলিয়ে পড়ে যায়। ভাগ্য ভালো সিড়ি থেকে পড়ে যায়নি তার আগেই রেলিং ধরে নিজেকে সংগত করেছে যীনাত। তবে পায়ে ভিষণভাবে চোট পেয়েছে যীনাত। কমলা দেবী সিড়ির দিকে তাকিয়ে বেক্কল বনে গেলো। তার বাধা ফাদে দেখছি যীনাত এসে সব লন্ডভন্ড করে ছাড়লো! তবুও কমলা দেবী হাসলো এই ভেবে যীনাতের উপরও শোধ নিতে পেরেছে। মিনি যীনাতের অবস্থা দেখে যেই যেতে নিবে তার আগেই বলে,”ওই ছ্যাড়ি যাস কই? আগে আর পায়ে তেল মালিশ কর তারপরে যা মন চায় করিস!”

– কিন্তু দিদিমনি?

– হেরে দেহার ল্যাইগা মানুষ আছে তুই কাম কর!

কোনো “ধরাম” শব্দ শুনে সবাই সিঁড়ির দিকে আসে। জাইফও রুম থেকে বেরিয়ে আসে কিসের শব্দ তা দেখার জন্য। এসে যা দেখে তা দেখার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না। জাইফ একপ্রকার ছুটে যায় যীনাতের কাছে পিছে রিকেশ আর আনুস্কাও। যেই তেলের সিঁড়িতে পা দিবে তার আগেই যীনাত জাইফকে থামিয়ে দেয় এবং বলে,”এখানে তেল আছে সাবধানে নামুন!”

———————————

চলবে!!!

(গঠনমূলক মন্তব্যের প্রত্যাশায় রইলাম।)

ওয়ারদূন আসরার পর্ব-১০

0

#ওয়ারদূন_আসরার
#লাবিবা_ওয়াহিদ
“১০”

———————————
১মাস পুরোপুরি ভাবে পূর্ণ হলো। যীনাত ফজরের নামাজ পড়ছিলো এমন সময়ই মনে চারপাশটা সুগন্ধিতে ভরে যাচ্ছে। যীনাত পরম আবেশে চোখদুটো বন্ধ করে ফেলে। যীনাত “হিস হিস” শব্দ পাচ্ছে তবুও এতোটা আরামে চোখ খুলতে মন চাইলো না। যতোই নিশ্বাসের সাথে ঘ্রাণ টা নিচ্ছে ততোই যেনো মনের মাঝে হাজারো কষ্টের পাহাড় যেনো গলে যাচ্ছে। আস্তে আস্তে যীনাত স্বাভাবিক হয় এবং চোখ মেলে তাকায়। নামাজ শেষে যীনাতের মন বেশ ফ্রেশ হয়ে গেছে। সে মুচকি হেসে মল্লিকা দেবীকে গিয়ে ডাকলো! যীনাতকে স্বাভাবিক দেখে মল্লিকা দেবী লাফ দিয়ে উঠে বসে এবং যীনাতকে জড়িয়ে ধরে বলে,”মা তুই আবার আগের মতো হয়ে গেছিস? জানিস এখন আমার কতোটা আনন্দ লাগছে। ঠাকুর মুখ তুলে চেয়েছেন।”

যীনাত মুচকি হেসে বলে,”আমি ঠিক আছি আন্টি আর দুঃখিত এতোদিন তোমাদের এভাবে কষ্টে ফেলার জন্য।”

– ওমা ছি ছি এ তুই কি বলছিস? এরকমটা অস্বাভাবিকের কিছু না। তোর পরিবার হারিয়েছে তো কি হয়েছে আমরা তো আছি নাকি? পাগলি মেয়ে একটা এখন চল সকলকে তো জানাতে হবে হুম?

যীনাত উত্তরে মুচকি হাসে। তার ভেতরে কি চলছে সেটা যীনাতই ভালো জানে। যীনাতের মনে যে হাজারো প্রশ্ন! কবে পাবে সে এসবের উত্তর?

যীনাতকে পরম যত্নে খাইয়ে দিচ্ছে মল্লিকা দেবী আর দেবনাথ দেব। যীনাত মুচকি হেসে তাদের সাথে কথা বলছে আর হাসছে। দূর থেকে জাইফ মুগ্ধ নয়নে যীনাতকে দেখছে। আজ যীনাতকে অপরূপ লাগছে সেই মিষ্টি হাসিতে। ইশশ কতোই না অপেক্ষা করছিলো যীনাতের এই হাসিটার জন্য। জাইফের মুখেও তৃপ্তির হাসি। যীনাতের হাসিতেই যেনো নিজের সুখ খুঁজে পাচ্ছে। দিনরাত চিন্তায় ছিলো যীনাতকে নিয়ে এমন কি নির্ঘুম রাত কাটিয়েছে তার জন্য। আচ্ছা সে কি যীনাতের প্রেমে পড়ে গেলো? আদৌ কি তাই? এটা কি প্রেম নাকি ভালোবাসা? আচ্ছা আদৌ প্রেম আর ভালোবাসা কি এক? নাহ প্রেম আর ভালোবাসা দুটোর মাঝেই যে বিশাল তফাৎ!

এসবই ভেবে চলেছে জাইফ তবুও মনে কোনো এক কোণে কেউ যেনো বলছে,”আমি যীনাতকে ভালোবাসি।”

এমন সময়ই রিকেশ এসে জাইফকে ধাক্কা দিয়ে জাইফের ধ্যান ভাঙায়। জাইফ কিছু অপ্রস্তুত হয়ে বলে,”কিছু বলবি?”

– হুম আনুস্কা যীনাতের কথা শুনে বাড়িতে আসতে চাইছে। এখন কি করি বলতো?

– সমস্যা কি আসুক!

– আরে ভাই সমস্যা সেটা না এখন আনুস্কা যদি আসে সে অবশ্যই ঠাম্মিকে চাইবে তখন কি উত্তর দিবো বলতো? আর ঠাম্মি যদি আনুস্কাকে উলটা পালটা কিছু বলে তাহলে তো সব নদীতে যাবে।

– আহা! এতো টেনশনের কি আছে ঠাম্মিকে আনলে ক্ষতি কি? কিছুই হবে না আমার উপর বিলিভ রাখ।

– তুই কি করবি?

– সবটা আমার উপর ছেড়ে দে যাইহোক শুনো সবাই আজ আমাদের হবু বৌদি এবং কমলা রানী দুইজনই বাসায় আসছে তাদের সেবাযত্নের ত্রুটি রেখো না।

বলেই জাইফ রিকেশকে নিয়ে নিজের রুমে চলে আসে। রুমে এসে জাইফ কিছু একটা খোঁজা শুরু করে ড্রয়ার খুলে। রিকেশ বুঝতে না পেরে জিজ্ঞেস করলো,”কিরে কি খুজছিস তুই?”

– ভিমরতি ছুটানোর ওষুধ!

– মানে?(অবাক হয়ে)

জাইফ উত্তরে শুধু মুচকি হাসে তারপর একটা প্যাকেট বের করে রিকেশকে ইশারায় কাছে ডাকে। রিকেশ জাইফের সামনে এসে বলে,”কি আছে এতে?”

জাইফ কিছু না বলে সেটা থেকে একটা ইনজেকশন আর মেডিসিন বের করে। ইনজেকশন দেখে রিকেশ অবাক হয়ে বলে,”ভাই তুই বিজন্যাস ছেড়ে কবে থেকে আবার ডাক্তারগিরি শুরু করলি?”

– কারো ভিমরতি ছুটানোর জন্য মাঝে মধ্যে ডাক্তারি ক্ষতি কিসের?

রিকেশ চেহারা দেখে বুঝা গেলো রিকেশ জাইফের কথার আগা মাথা কিছুই বুঝেনি। জাইফ মুচকি হেসে বলে,”এই ইনজেকশনই পারবে ঠাম্মিকে সোজা করতে। দাদু বলেছিলো যে ঠাম্মি নাকি ছোট থেকে ইনজেকশন অনেক ভয় পায়।”

– সত্যি কাজ হবে তো?

– হুম এখন চল!

– দাদু আমার সাথে গল্প করবে?

– ওমা কেন নয় চল শুরু করি!

বলেই দেবনাথ দেব যীনাতের পাশে এসে বসে আর যীনাত দেবনাথ দেবের কাধে মাথা রেখে জিজ্ঞেস করে,”আচ্ছা দাদু কোনো কিছুতেই ভেঙে পড়া কি ঠিক?”

– একদম না। ভেঙে পড়া মানে তুই জীবনের সাথে লড়ে হেরে গেছিস। জীবনে হাজারো বিপদ বাধা আছে। আর সকলের উচিত সেই বাধা বিপদ বীরত্বের সাথে পার করা। ভেঙে পড়া শুধু ক্ষতি করতে পারে বাচাতে নয়। আর কখনো এভাবে ভেঙে পড়বে না যীনাত। সামনে অনেক পরিক্ষা তোমায় দিতে হবে তবে মনে রেখো সকল পরিস্থিতিতে সবসময় ঠান্ডা মাথায় ভাবা উচিত।

– হুম দাদু!

– কি এইহানে কি করোস তোরা? দেখতে আইসোস আই মরসি না বাচ্চি?

– ওগো কমলা বউ তোমারে ছাড়া ভাল্লাগে না গো তাই আইলাম।(রিকেশ)

– ওই ছ্যামড়া কয়বার কমু তোরে যে আরে বউ কইবিনা! আই কারো বউ না আর তুই তো এহন আরে রাইখাই বিয়া করতে যাস তো যা না হেনে আইসোস ক্যান?

– তুমি-ই তো কও বউ আমি তোমাগো সতান তাই ভাবলাম তোমার লেইগা সতীন আইনা ঘরে উঠাই!!

– ওই চুপ কর!!

– ওগো ঠাম্মি তোমাকে আমি নিতে আসছি তুমি দাভাইয়ের কথা শুইনো না!

জাইফের কথায় কমলা দেবী যেনো ইকো হয়ে গেলো। শাড়ির আচল দিয়ে চোখ মুছলো। রিকেশ জাইফ ভালো ভাবে দেখলো কিন্তু কমলা দেবীর চোখে জল নাই। তবুও দুইজন কিছু বলে না কারণ তারা জানে এই জনমে তাদের কমলা দেবীর চোখের জল দেখতে পারবে না। কমলা দেবী কাঁদআ আর ১০ তলা বিল্ডিং থেকে লাফ দেয়া একই ব্যাপার। কমলা দেবী ন্যাকামি সুরে বলে,”ওগো সোয়ামি গোওওওও!! তুমি সাড়া আরে কেউ ভালোবাসে না আর খবরও লয়না! হুদাই কি তোমারে সোয়ামি কই! ওগো সোয়ামি তুমি….১মিনিট এই রিকু হ্যানে আইয়া ব তো!!”

কমলা দেবীর কথামতো রিকেশ কমলা দেবীর পাশে গিয়ে বসলো।

– কিমুন আছু” এইডার এংরেজি কি রে ক তো! আস্পলে হইসে কি বুড়ী হয়ে গেসিতো তাই ভুইল্লা হজম কইরা লাইসি সব!

জাইফ ফিক করে হেসে দেয় কমলা দেবীর কথায়। যেই কমলা জীবনে ক, খ-ই পড়লো না ভয়ে আবার সে আবার বলে পড়সে। না হেসে থাকা যায়না। দেবনাথ দেব জাইফকে বলেছে কমলা দেবী নাকি সবসময় ১ এর পরে ৭ বলতো আর কখনো পড়াশোনার ধারে কাছেও যেতো না। জাইফের হাসি দেখে কমলা দেবী ক্ষেপা হয়ে বলে, ওই ছ্যাড়া হাসোস ক্যান? তোগো জুগ আর আগো জুগের ভিত্রে তফাৎ আসে যা তুরা বুজবি না। তোরা কি ভাবোস আই লেহাফড়া করিনাই অশিক্ষিত? পারলে মোর পরিক্ষা ল আই তোরে সব কমু!”

– আচ্ছা তাহলে বলো একের(১) পরে কি?

– সাইত(৭)। দেখসোস আই ফারি আর তোরা কস আই অশিক্ষিত!!

এবার রিকেশ জাইফ একসাথে হেসে উঠে!! বুড়ো বয়সেও চাপা মারা স্বভাব কাটেনি! জাইফ বলে,”বুঝলাম তুমি অতি শিক্ষায় গুণবতী এখন দাভাইকে কি বলতে চাও ঝটপট বলে ফেলো!”

কমলা দেবী একটা ভাব নিয়ে বলে,”দেখসোস আমি ফারি আগেই কইসিলাম কিন্তু তোরা আর কথা হুনোস নাই। সে যাইহোক রিকু ক ওইডার মানে কি?”

– হাউ আর ইউ?(how are you)

– আরেকবার ক বুজিনাই।

– হাউ আর ইউ?(how are you)

– আরে সুন্দর কইরা ক বুঝি না তো!!

– আরে বইন হা..উ আ…র ই…উ?

– কানে বাজে বুজিনা!

– হাউ আর ইউ!!

– ধীরে ধীরে ক..!!

– হা……উ আ……….র ই………..উ!

– আরেকটু জোরে ক এমনে আস্তে কইলে কেমনে হুনুম?

– আরে বুড়ী রেএএএএএ!!! আমি কইসি হাউ আর ইউউউউউউ!!!!(বিরক্ত হয়ে চিল্লিয়ে)

কমলা দেবী কানে হাত দিয়ে বলে,”ওমাগো ওই ছ্যাড়া আমি কি বয়ড়া যে এমনে ভাল্লুকের মতো চিল্লাস ধীরে সুস্থে কইলেই তো হুনি নাকি?”

বেচারা রিকেশ অসহায় দৃষ্টিতে জাইফের দিকে তাকায় এবং ইশারা দিয়ে বুঝায়,”এরে কি করা যায়?”

জাইফ হাসতে হাসতে মরে যাচ্ছে একেবারে। বুড়ী সেইরকম নাকানিচুবানি খাইয়ে রাস্তায় ছেড়ে দিচ্ছে রিকেশকে। এভাবে অনেকক্ষণ বোঝানোর পর কমলা দেবী বুঝেছে। আর এদিকে রিকেশের অবস্থা নাজেহাল!!

– ও আচ্ছা খাড়া কইতাসি।

বলেই কমলা দেবী গলা ঝাড়লো তারপর জাইফের দিকে ফিরে গলা পরিষ্কার করে বলে,”সোয়ামি হাঊয়ার য়ুউউউউউ!”””

———————————-

চলবে!!!

ওয়ারদূন আসরার পর্ব-০৯

0

#ওয়ারদূন_আসরার
#লাবিবা_ওয়াহিদ
“০৯”

———————————

যীনাত জ্ঞান হারাতেই মাঝের সাপের মাথার চিকচিক করা বড় মনিটা কিছু যাদুমন্ত্রের মাধ্যমে যীনাতের মাথায় মনিটা ঢুকিয়ে দেয় তারপর তাদের জিবহা দিয়ে যীনাতের গালে এবং জাইফের গালে আলিঙ্গন করে সেখান থেকে চলে গেলো। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতেই জাইফ নড়েচড়ে উঠে। তারপর পাশে যীনাতের দিকে তাকাতেই দেখে যীনাত সেন্সলেস হয়ে পড়ে আছে। তা দেখে জাইফের মনে অজানা ভয় নাড়া দিলো। তাড়াতাড়ি যীনাতের দিকে ফিরে যীনাতের গাল থাপ্রে যীনাতের জ্ঞান আনার চেষ্টা করে কিন্তু কিছুতেই কিছু হলো না!

– যীনাত, এই যীনাত উঠুন! কি হয়েছে আপনার আপনি জ্ঞান হারালেন কি করে? উফফ শিট! এক মুহূর্তে কি করে সেন্সলেস হলো আর আমি-ই বা টের কেন পেলাম না?? এখন কি করবো?

জাইফ যীনাতকে কোলে করে গাড়িতে নিয়ে আসে এবং নিজে ড্রাইভিং সিটে বসে যীনাতের সিটবেল্ট লাগিয়ে দেয়। যেই গাড়ি স্টার্ট দিবে এমন সময়ই জাইফের ফোন আসে। জাইফ তড়িঘড়ি করে ফোন রিসিভ করে।

– আরে ওই জাইফ তুই আর যীনাত কোথায় উদয় হয়ে গেলি জানিস কতোটা টেনশনে আছি তার উপর নিজের বডিগার্ড দের আমাদের এখানেই রেখে গেছোস? যীনাত কোথায় আ…

রিকেশ আর কিছু বলার আগেই জাইফ শান্ত কন্ঠে বলে,”দাভাই যীনাত সেন্সলেস হয়ে গেছে আমি এখন ওকে হসপিটাল নিয়ে যাচ্ছি। চাইলে আসতে পারিস!”

বলেই রিকেশকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে জাইফ ফোন কেটে দেয় আর রিকেশ হ্যালো হ্যালো করেই যাচ্ছিলো। জাইফ তড়িঘড়ি করে স্পিড কিছুটা বাড়িয়ে শহরের একটা হসপিটালে যীনাতকে নিয়ে চলে আসে এবং সেখানেই যীনাতকে এডমিট করে। রিকেশ জাইফের বডিগার্ড দের দিয়ে জাইফের লোকেশন ট্রেক করে তারাও চলে আসে সাথে আনুস্কাও এসেছে। আনুস্কা জানে যীনাতের সব কথা রিকেশ আগেই বলে দিয়েছে।

জাইফ কেবিনের সামনে পায়চারি করছে আর বারবার কেবিনের কাচের ভেতর দিয়ে দেখার চেষ্টা করছে ডাক্তার তার কাছে আসছে কিনা। ভেতরে যীনাতের চেকআপ চলছে৷ এমন সময়ই রিকেশ, আনুস্কাসহ বডিগার্ডরাও চলে এসেছে। রিকেশ জাইফের কাছে এসে উত্তেজিত হয়ে বলে,”কি হয়েছে যীনাতের কিভাবে সেন্সলেস হলো?”

– আমিও বুঝতে পারছি না দাভাই কিভাবে কি হলো হঠাৎ করেই সেন্সলেস হলো। এখন ডক্টর চেকআপ করছে ডক্টরই ভালো বলতে পারবে সবটা।

জাইফের কথার মাঝেই ডাক্তার কেবিন থেকে বের হয়ে আসে। জাইফ রিকেশের কাছ থেকে ডাক্তারের কাছে এসে বলে,”ডক্টর কি বুঝতে পারলেন?”

– দেখুন চিন্তার কোনো কারণ নেই। বেশি ভয় পাওয়ার কারণে জ্ঞান হারিয়েছে। কিছুক্ষণের মাঝেই সেন্স ফিরবে।

– থ্যাংকস ডক্টর।

ডক্টর মুচকি হাসি দিয়ে চলে গেলো। এতোক্ষণে সবাই যেনো স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়লো।

– যাক সব ঠিক আছে।(আনুস্কা)

– জ্বী হবু বৌদি।

আনুস্কা হেসে দেয় জাইফের কথায়। জাইফ দরজার গ্লাস দিয়ে যীনাতকে দেখছে। কেমন নিষ্পাপ লাগছে যীনাতকে। পুরো মায়াবী চেহারা পৃথিবীর সব মায়া যেনো যীনাতের চেহারায় এসে ভর করছে। যীনাতের দিকে এভাবে অপলক ভাবে তাকানো দেখে আনুস্কা জাইফকে একটা ধাক্কা দিয়ে বলে,”কি ঠাকুরবো, এভাবে কি দেখছেন? প্রেমে-ট্রেমে পড়লেন নাকি?”

জাইফ নিঃশব্দে হাসলো। রিকেশ আনুস্কার কান ধরে টেনে বলে,”এই তোর সিরিয়াস টাইমেও চুলকানি গেলো না?”

আনুস্কা রিকেশের হাত থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না তাই রেগে বলে,”ওই ছাড়ো আমাকে এভাবে কেউ হবু স্ত্রীর কান ধরে? আহ!! ছাড়ো আমার মান-সম্মান যে সব গেলো!!”

– রাখ তোর মান-সম্মান! ভেবেছি এতোদিনে শুধরে গেছিস কিন্তু একদমই বদলাসনি৷ লোকে ঠিকই বলে, “কুকুরের ল্যাজ কখনো সোজা হয়না যেমনটা তুই!”

– একদম আমাকে তুই-তোকারি করবে না।(রিকেশের হাত থেকে নিজের কান ছাড়িয়ে।) আর আমাকে কুকুরের ল্যাজ বললা এতো সাহস তোমার!! একবার বিয়ে হতে দাও সবকিছুর শোধ শুধে আসলে ঘুষে নিবো।

– ছ্যাহ ঘুষ খাবি ছি ছি ছি! যা সর তোর সাথে আমার বিয়ে ক্যান্সেল করে দিবো।

– এরকম করার দুঃসাহস করলে পিঠের ছাল তুলে দিবো মনে রেখো।

– এই তোরা কি শুরু করেছিস বলতো আর দাভাই! তুই কি বললি,”ভেবেছি আগের থেকে শুধরে গেছিস” এটার কি তোরা একে অপরকে আগে থেকেই চিনিস?(ভ্রু কুচকে)

আনুস্কা জাইফের পিছে লুকিয়ে বলে,”হ্যাঁ গো ঠাকুর প! সেই ভার্সিটি লাইফ থেকে এর পিছে ঘুরসি কখনো পাত্তা পর্যন্ত দেয়নি হুহ!”

– তো বৌদি আপনাকে যে পাত্তা দেয়নি সে আপনাকে বিয়ে করতে রাজি হলো কেন?(ভ্রু কুচকে)

– আরে ভাই আমি জানতাম নাকি এটাই সেই আনুস্কা! এমন হলে তো আমি কখনোই রাজি হতাম না।

– হইসে আপনার আর এমন চেটাং চেটাং কথা বাদ দেন! রেস্টুরেন্টে তো ঠিকই বলেছেন আমায় বিয়ে করবেন, এই করবেন, সেই করবেন ব্লা ব্লা ব্লা আর এখন আসছেন লোক দেখানো কথা শুনাতে হুহ খচ্চর ছেলে!।

– দেখ আনুস্কা আর একবার যদি মুখ খুলেছিস তাহলে হসপিটালের ডক্টর দিয়ে তোর মুখ সেলাই করে দিবো।

– নিখুচি করেছি আপনার সেলাইয়ের! ঘোড়ার আন্ডা টাই করার মুরোদ আছে আপনার।

এদের দুজনের ঝগড়ায় জাইফ পেটে হাত দিয়ে হাসতে হাসতে শেষ। কি কিউট তাইনা এমন দুষ্টু মিষ্টি ঝগড়া? আচ্ছা যীনাতের সাথেও যদি এমন ঝগড়া করে? কখনো তো যীনাতকে রাগী ফেসে দেখেনি তাহলে এবার থেকে টুকটাক ঝগড়া করলে কেমন হয়? এগুলোই আনমনে ভাবছিলো আর মুচকি মুচকি হাসছিলো জাইফ।

সেন্স ফিরতেই যীনাতকে নিয়ে জাইফ বাসায় আসে। জ্ঞান ফেরার পর থেকে যীনাত কারো সাথে একটা কথাও বলেনি শুধু এইটুকু বলেছে,”আমি বাড়ি যাবো!” তাই কেউ আর জোর করেনা রিকেশ আনুস্কাকে ড্রপ করতে চলে যায় আর জাইফ যীনাতকে নিয়ে বডিগার্ডস রা চলে আসে। যীনাত কারো সাথে কোনোরকম কথা না বলে নিজের রুমে চলে যায় এবং দরজা লাগিয়ে ফ্লোরে বসে ডুকরে কেঁদে উঠে। জাইফ যীনাতের আচরণ কেন যেনো হজম করতে পারছে না। মল্লিকা দেবী যীনাতকে এভাবে চলে যেতে দেখে জাইফের কাছে এসে বলে,”কিরে কি হলো সকালে তো খুব হাসিখুশি-ই দেখলাম এখন ওর এই অবস্থা কেন?”

– আমি জানিনা মা হঠাৎ-ই এমন করছে!(সেন্সলেস হওয়ার কথাটা জাইফ তার মাকে বললো না।)

– ওমা সেকি বলছিস! আচ্ছা যীনাতের কি তার পরিবারের কথা মনে পড়ছে?

জাইফ এতোক্ষণে ধ্যানে এসে বলে,”হ্যাঁ মা পরিবারের কারণেও এমন হতে পারে।”

– হে ঠাকুর! জাইফ ওকে একা থাকতে দিস না মেয়েটা বড্ড আবেগী কি থেকে কি করে ফেলে বলা যায়না।

মল্লিকার কথায় জাইফের মনে এক অজানা ভয় নাড়া দিলো কিন্তু এখন যীনাতের কাছে যাওয়া টা কি ঠিক হবে? মাঝে মধ্যে টুকটাক একা রাখাও শ্রেয় আর যীনাতকে যতোটুকু চিনেছে তাতে উলটা পালটা কথা যীনাত তো স্বপ্নেও ভাবে না। তবুও কোনো এক জায়গায় এসে জাইফের হিসাব মিলছে না। সে যাইহোক এখন সে নিজেও ক্লান্ত তাই ঞ্জ্জের রুমে চলে গেলো।

এভাবে টানা কয়েকদিন কেটে গেলো। যীনাত কারো সাথেই মিশে না সারাক্ষণ কান্না করে নয়তো পাথরের মতো বসে থাকে। আবার মাঝে মধ্যে “মা, আব্বাজান, ফুয়াদ” বলে চিৎকার দেয় আর ডুকরে কেঁদে উঠে। যীনাত দিনদিন মানসিক ভাবে যেমন ভেঙে পড়ছে তেমনি খাওয়া দাওয়াও ঠিক মতো করছে না। পরিবারের সবাই চিন্তায় পড়ে যায় হঠাৎ মেয়েটার কি হলো যার জন্য এভাবে ভেঙে পড়ছে। এতোদিন তো ঠিকই ছিলো।৷ বেশি চিন্তা হচ্ছে জাইফ আর দেবনাথ দেব এর। দেবনাথ দেব ডাইরেক্ট বলে দিয়েছে প্রতি রাতে যেনো মল্লিকা দেবী যীনাতের পাশে ঘুমান। মল্লিকা দেবীও মেনে নেয় কারণ যীনাতকে সে মেয়ের চোখে দেখে তারও যে যীনাতের এরূপ ব্যবহার সহ্য হয়না। এভাবে প্রায় ১ মাস জেটে যায়।

———————————

চলবে!!!

ওয়ারদূন আসরার পর্ব-০৮

0

#ওয়ারদূন_আসরার
#লাবিবা_ওয়াহিদ
“০৮”

———————————-

– যীনাত উঠো! তুমি যা যা সংকেত পাচ্ছো সবটাই তোমার অতীতের সাথে মিশে আছে। নিজের অতীত ঘেটে দেখো তাহলেই সকল প্রশ্নের উত্তর তুমি পেয়ে যাবা।

যীনাত লাফ দিয়ে ঘুম থেকে উঠে। আজকের টা আবার কেমন স্বপ্ন? যীনাত উঠে আশেপাশের কি ধ্যান দিতেই শুনতে পায় আযানের ধ্বনি দূর থেকে ভেসে আসছে। যীনাত তাড়াতাড়ি গিয়ে অযু করে নামাজ আদায় করে নেয় এবং খুব ভোরেই জাইফের ঘরে নক করে। জাইফ তখনো ঘুমোচ্ছে। দরজার করাঘাতে জাইফের ঘুম ভেঙে যায় এবং কিছুটা বিরক্তি নিয়ে উঠে দরজা খুলতে যায়। দরজায় যীনাতকে দেখে জাইফের ঘুম উড়ে যায়।

– কি হলো যীনাত আপনি এই ভোরে আমার রুমে কোনো সমস্যা হয়নি তো?

– না তেমন কিছু না আপনি একটু আমায় হুজুরের নাম্বার টা দিন! হুজুরের নাম্বার টা যোগার করেছেন?

– হ্যাঁ আমি তো তোমায় সকালে দিবো ভেবে ঠিক করেছিলাম।

– আমাকে এখনই এই মুহূর্তে দিতে পারবেন প্লিজ!

– কেন যীনাত কোনো সমস্যা? থাকলে আমায় বলুন আমার দুশ্চিন্তা হচ্ছে।

– চিন্তার কোনো কারণ নেই। হুজুরের কথা অনেক মনে পড়ছে তাই চাইছি।

– সত্যিই কি তাই?(ভ্রু কুচকে)

– হুম হুজুরকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছি তো তাই তর সইছে না।

– ওহ ওকে ওয়েট।

বলেই জাইফ ফোন থেকে নাম্বার টা দিয়ে দিলো। যীনাত নাম্বার পেতেই ‘ধন্যবাদ’ দিয়ে চলে যায়। জাইফ সেখানে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে দরজা লক করে আবার বেডে এসে শুয়ে পড়ে।

যীনাত ভোর ৬টা বাজেই হুজুরকে কল দিলো। হুজুর কল দিতেই যীনাত সালাম দেয় হুজুর সালামের উত্তর দিয়ে বলে,”কে?”

– হুজুর আমি যীনাত।

– আরে যীনাত মা কেমন আছো তুমি?

– আলহামদুলিল্লাহ হুজুর আল্লাহ যেরকম রেখেছেন।

– ওহ যাক আলহামদুলিল্লাহ! কিন্তু এই ভোরে কেন কল করেছো? ওখানে কি কোনোরকম সমস্যা হচ্ছে?

– না হুজুর তেমন কিছু না আমি শুধু কিছু প্রশ্নের উত্তর জানতেই কল করেছি।

– কিসের উত্তর কিসের প্রশ্ন?

যীনাত সেই রাতের স্বপ্ন এবং গত রাতের স্বপ্নসহ সবটা খুলে বললো হুজুরের কাছে। যীনাতের কথা শুনে হুজুরও বেশ চিন্তায় পড়ে যায়। পরে সে কিছুক্ষণ ভেবে বলে,”যীনাত জানো তো সব প্রশ্নের সবসময় পাওয়া যায় না। কিছু উত্তর সঠিক সময় আসলে পাওয়া যায়। তাই ধৈর্য ধরো সময় আসলে সব সত্যি তোমার চোখের সামনেই প্রকাশ পাবে।”

– সত্যি?? কিসের সত্যি হুজুর! আর ওই “গোলাপ রহস্য” কি হুজুর? এটার সাথে আমার জীবনের কিসের গুরুত্ব? কোন গোলাপের কথা হচ্ছে এখানে?

– সময় আসুক সব জানতে পারবে।

বলেই হুজুর কল কেটে দেয়। এপাশ থেকে যীনাত “হ্যালো, হ্যালো” করেই যাচ্ছে। তারপর কান থেকে ফোন নামিয়ে ভাবে,”এটা আবার কিসের রহস্য?”

– আরে ওই বেয়াদব গুলা! পাক্কা ৪দিন বাইন্দা রাখসোস আরে আই কি মানুষ না? আই কি হনুমান আরে ওইইইইই আমারে ছাড় বাপ ছাড়!! আর কতো আরে বাইন্দা রাখবি!! ঠাকুর এইডির উপ্রে গজব ফেলাও দেহো তুমি দেহো আর মতো বুড়িরে সব মিল্লা কিরাম অত্যাচার করতাসে।

রিকেশ দরজা কিছুটা ফাঁক করে শুধু মাথাটা বের করে বলে,”ওগো কমলা বুড়ী নিজে যেদিন শুধরাইবা ওইদিনই তুমি ছাড়া পাইবা!”

– রাখ তোর শোধরানি আরে ছাড় তারপর দেখ তোর পিঠের ছাল কেমনে উঠাই শা**** হারামী!!

– সে তুমি যাই কও খাও দাও ঘুমাও আমি গেলাম।

বলেই রিকেশ চলে গেলো আর কমলা নিজের মতো চেঁচাচ্ছে। আজ প্রায় ৪দিন হলো কমলা দেবীকে বেধে নিজের রুমে ঘর বন্দি করে রেখেছে। এদিকে রিকেশের এক বিজনেস পার্টনারের মেয়ের সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছে। মেয়েটার নাম আনুস্কা। দেখতে বেশ মিষ্টি এবং ভদ্রও। বিয়ের ডেট সামনের ২৪ ফাল্গুণের দিকে ফেলা হয়েছে। আনুস্কা নাকি আগে থেকেই রিকেশকে পছন্দ করতো কিন্তু কখনোই বলতে পারতো না। শেষে যখন শুনলো রিকেশের বিয়ের জন্য মেয়ে খোঁজা হচ্ছে তখন লজ্জাশরমের মাথা খেয়ে নিজের বাবাকে বলে দেয়। শেষে আনুস্কার বাবা-ই তাদের বাসায় বিয়ের প্রস্তাব পাঠায়। মল্লিকা দেবী আনুস্কার ছবি দেখে বেশ পছন্দ করে এবং রিকেশ মায়ের সাথে সহমত হয়। তবে রিকেশ বলেছে মিট করবে আলাদা দুই পরিবারই সম্মতি দেয় কারণ লাইফ টা ওদের! সারাজীবন কাটানোর আগে দুইজন দুইজনকে চেনা-জানা জরুরি। পরেরদিনই যাবে রিকেশ দেখা করতে।

রাতে,

খাওয়া দাওয়া শেষে যীনাত জামা-কাপড় ভাজ করছিলো ওমন সময় রিকেশ আর জাইফ এসে বলে,”আসবো?”

যীনাত মাথায় ওড়না দিয়ে বলে,”আরে দাভাই আসুন!”

রিকেশ মুচকি হেসে রুমে প্রবেশ করে আর তার পিছে জাইফ। যীনাত দুইজনকে বসতে দিয়ে নিজে দূরের এক সোফায় বসে বলে,”হঠাৎ বোনের ঘরে কি মনে করে?”

রইকেশ মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলে,”কিছু বলবো তাই আর কি!”

যীনাত মুচকি হেসে বলে,”বলুন কি বলবেন!”

– তুমি তো জানোই আমার বিয়ে ‘আনুস্কা’ নামের এক মেয়ের সাথে ঠিক করা হয়েছে। কাল আমরা দেঝা করবো সো ভাবছি জাইফ আর তোমাকেও সাথে নিয়ে যাবো। একদিক দিয়ে তোমার ঘুরাঘুরিও হবে আবার আনুস্কার সাথে দেখাও করতে পারবে!

যীনাত আড়চোখে জাইফের দিকে তাকালো জাইফ তখনো তার দিকে তাকিয়ে। জাইফের দিকে ভালোভাবে তাকাতেই জাইফ চোখ দিয়ে ইশারা করে যেনো রাজি হয়৷ যীনাত জাইফের ইশারা বুঝে বলে,”ঠিক আছে যাবো।”

রিকেশ মুচকি হেসে আরও কিছুক্ষণ কথা বলে চলে গেলো৷ জাইফ রিকেশের পিছে গেলো না সে চুপচাপ যীনাতের পাশে এসে বসে এবং বলে,”অনেকদিন ধরে বাসায় আছো তাই ভাবলাম একটা সুযোগ যেহেতু এসেছে সেহেতু তোমাকে কোথাও নিয়ে যাই। এতে মন ফ্রেশ লাগবে।”

যীনাত চোখ দুটো চিকচিক করে বলে,”তাহলে ভাইয়াকে আপনিই বলেছেন?”

জাইফ যীনাতের দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে মাথা নাড়ায়। যার অর্থ “হুম”।

জাইফ কালকে বের হওয়ার সময়সূচি বলে দিয়ে নিজের রুমে চলে গেলো আর যীনাত সেখানে বসেই আল্লাহ-র দরবারে লাখো শুকুরিয়া আদায় করলো এতো বিপদের পরেও এমন উত্তম স্বামী তাকে দেওয়ার জন্য যে কিনা স্বামী হয়ে নয় বন্ধুর মতো পাশে থাকে, তাকে বোঝার চেষ্টা করে।

পরেরদিন,,

যীনাত পুরো পর্দা করে বেরিয়েছে কারণ জাইফের হুকুম। জাইফের বডিগার্ড ড্রাইভ করছে, তার পাশে রিকেশ আর পিছে জাইফ, যীনাত। যীনাত আনন্দের সাথে জানালা দিয়ে বাহির টা দেখছে আর জাইফ একবার ফোন টিপছে এবং কিছুক্ষণ পরপর যীনাতের দিকে তাকাচ্ছে। প্রায় ঘন্টাখানেক এর মাঝে একটা রেস্টুরেন্টের সামনে এসে গাড়ি থামলো। রেস্টুরেন্ট বললে ভুল হবে এটা একটা ফাইভ স্টার হোটেল। যীনাত ভেতরে গিয়ে একদম হা হয়ে গেলো। এতো বড় এবং এতো সুন্দর হোটেলে যীনাত কখনো যায়নি। এই হোটেল টা সেদিন যীনাত ম্যাগাজিনে দেখেছিলো। সত্যি-ই ধনীদের তেজই আলাদা। রিকেশ সামনে সামনে হাটছে আর জাইফ এবং যীনাতের সামনে কয়েকটা বডিগার্ড। যীনাতের বেশ লজ্জা লাগছে এই ভেবে জাইফ যীনাতের হাত ধরে হাটছে। এই প্রথম জাইফ যীনাতের হাত ধরেছে তাই যীনাতের অনুভূতিটা বলা মতো নয়। জাইফকে যতো দেখে যীনাত ততোটাই অবাক হয়ে যায় এটা ভেবে এই ছেলে এতোটা পারফেক্ট কি করে হয়? যেমন তার চোখ ঝাঝালো রূপ তেমনি তার আচরণ, জ্ঞান-বুদ্ধি এবং ভদ্রতা। যা যীনাতকে মুগ্ধ না করে পারেনা। জাইফ হঠাৎ থেমে যায় এবং যীনাতকেও থামতে ইশারা করে। তারপর যীনাতের হাত ধরে কয়েক কদম পিছিয়ে যীনাতকে নিয়ে দেয় এক দৌড়! যীনাত অবাকের চরম পর্যায় চলে গেলো। দৌড়াতে দৌড়াতে জিজ্ঞেস করে,”হলো কি এভাবে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন?”

– পরে বলছি।

বলেই যীনাতকে নিয়ে গাড়িতে উঠে বসে এবং ড্রাইভিং স্টার্ট দেয়। যীনাত বলেই যাচ্ছে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন? রিকেশ ভাইয়া চিন্তা করবে আরও অনেক কিছু। জাইফ প্রথমে চুপ থাকলেও পরে বলে,”ওহ কাম অন যীনাত! ওরা ফাস্ট মিট করছে সেখানে ওদের একান্তে সময় কাটানো উচিত। আমরা কেন-ই বা কাবাব মে হাড্ডি হতে যাবো বলোতো? তাই ওরা ওদের মতো টাইম স্পেন্ড করুক আমরাও আলাদা টাইম স্পেন্ড করি তোমাকে নিয়ে ঘুরি কি বলো?”(যীনাতের দিকে ফিরে)

যীনাত ভাবলো সত্যিই-ই তো। তাদের মাঝে গিয়ে বসে থাকলে নিশ্চয়ই আনুস্কা অস্বস্তিবোধ করবে। এসবই আকাশ পাতাম ভাবছিলো যীনাত। জাইফ আর কিছু বললো না। একসময় চারপাশে ইট-বালির দালান ছেড়ে সবুজে ঘেরা রাস্তায় গাড়ি চলতে লাগলো জাইফ। পরিবেশ টা বেশ শান্ত এবং মনোমুগ্ধকর। যীনাত হা হয়ে জানালা দিয়ে বাহির টা দেখছে। যীনাত খেয়াল করে দূরে দূরে কয়েক কাপল বসে আছে, আবার কিছু দূরে দেখা যায় কাপল রা হাট ধরে হাটছে। মনে হচ্ছে যেনো জায়গাটা কাপলদের জন্যই। জাইফ গাড়ি ঘুরিয়ে একটা নদীর পাড়ে এসে থামালো। যীনাত গাড়ি থেকে নেমে জায়গায় ভালোভাবে চোখ বুলিয়ে নিলো। চারদিকে সবুজ আর সবুজ তার মাঝ দিয়ে বয়ে চলেছে এক ছোট্ট নদী। সত্যি-ই প্রকৃতির সুন্দর্য সবকিছুকে হার মানায়। জাইফ আবার যীনাতের হাত ধরে নদীর কিছুটা কাছাকাছি আসে এবং সবুজ নরম ঘাসের উপর বসে। যীনাত সুন্দর্য দেখছে এর মাঝে জাইফ যীনাতের দিকে তাকিয়ে বলে,”পছন্দ হয়েছে?”

– ভীষণ!! জায়গাটার যতো প্রশংসা করি না কেন শেষই না।

জাইফ মুচকি হেসে সামনের দিকে তাকায় তারপর বলে,”যখন ছোট ছিলাম তখন গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার পথে এই জায়গা টা দেখতে পাই এবং বেশ পছন্দের জায়গাও হয়ে যায়। তখন থেকে সুখে দুঃখে এখানে এসে সময় কাটাই। জায়গা টা খুব টানে আমায় জানো কিন্তু কেন বুঝিনা।”

যীনাত মুচকি হেসে জায়গাটা চুপচাপ দেখছে। হঠাৎ পরিষ্কার আকাশ কেমন মেঘলা হয়ে চারদিকটা অন্ধকার করে ফেলে। যেনো এখনই বৃষ্টি নামবে! যীনাত বৃষ্টির আভাস বুঝতে পেরে আকাশের দিকে তাকিয়েই জাইফের কাধে হাত রেখে বলছে,”শুনুন মনে হচ্ছে বৃষ্টি হবে এখান থেকে চলে যাওয়াই ভালো হবে!”

কিন্তু সেগুড়ে বালি। জাইফ টু শব্দও করলো না। জাইফকে চুপ থাকতে দেখে যীনাত আবার একপ্রকার ঝাকিয়ে বলে,”কি হলো শুনতে পাচ্ছেন না!”

বলেই যেই জাইফের দিকে তাকালো ওমনি যীনাত চোখ দুটো রসোগোল্লার মতো করে ফেলে। কারণ জাইফ আগের মতোই নদীর দিকে মুচকি হেসে তাকিয়ে কোনোরকম নড়াচড়া নেই। যেনো একটা স্টাচু তার পাশে বসে! যীনাত কাঁপা কাঁপা হাত নিয়ে জাইফের নাকের কাছে আঙুল দিয়ে দেখলো নিশ্বাস চলছে কিনা? হ্যাঁ নিশ্বাস চলছে কিন্তু তবুও এভাবে স্টাচুর মতো কেন? যীনাত আরও ঝাকাচ্ছে জাইফকে কিন্তু জাইফ আগের মতোই আছে। এমন সময়ই দূরে খুব জোরে বজ্রপাত হলো। বজ্রপাতের শব্দ এতোটাই তীক্ষ্ণ যে যীনাত কানে হাত চেপে ধরে ভয়ে। হঠাৎ নদীর থেকে কেমন টুকটাক শব্দ হচ্ছে। যীনাত চোখ মেলে নদীর দিকে তাকায়। হঠাৎই সেই নদী থেকে ১৭ ফুট বড় ৭মাথার সাপ উঠে আসে। তাদের গায়ের রঙ অনেকটাই বিস্রী আর তাদের জিবহা টা বাদামী রঙয়ের, যেমন বিস্রী তেমনি লমহর্ষক। এদের দেখে কোনো সাধারণ মানুষ জ্ঞান নিয়ে থাকতে পারবে না। তারা যীনাতের দিকেই ফিরে আছে। যীনাত ভয়ে চিৎকার দিবে এমন সময়ই মনে পড়ে যায় তার বাবার বলা একটা কথা।

-“যীনাত মা ভয়কে জয় করা শিখ কারণ তুই যদি কোনোভাবে কিছু দেখে ভয় পাস তাহলে সে তোর ক্ষতি করবে। আর যদি সাহসীকতার সাথে সবকিছু হ্যান্ডেল করিস তাহলে সবটাই তোর জন্য সহজ হবে। মনে রাখবি ‘ভয়’ পারে শুধু ক্ষতি করতে, বাঁচাতে নয়।”

যীনাতের কথাগুলো মনে করতেই নিজের মধ্যে সাহস আনার চেষ্টা করে কিন্তু এমন লমহর্ষক প্রাণী দেখে কোন সুস্থ মানুষ চুপ করে বসে থাকতে পারে। নাহ এখানে শুধু তার একার প্রাণ নেই এখানে জাইফও আছে আর জাইফের দায়িত্ব খুবই ভরসা করে দাদু তাকে দিয়েছে। তার বিশ্বাসের খেয়ানত করতে পারবে না। যীনাত উঠে দাঁড়ায় এবং জাইফকে টেনে গাড়ির দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে কিন্তু জাইফকে এক চুল পরিমাণও সরাতে পারে না। কি করে পারবে তার থেকেও অনেক ভারী তার উপর জিম বডি! কখনোই যীনাতের একার পক্ষে সম্ভব না জাইফকে সরানো। এবার যীনাত কি করবে? নিজেও ভয় পেতে পারছে না আবার জাইফকেও এখানে ফেলে রাখতে পারছে না। দূরে আবার জোরে বজ্রপাত হলো। হঠাৎ সাপটার একদম মাঝের মাথাটা জাইফের মাথার সামনে এসে তাদের নাক ছুঁয়ে নেয়। যীনাত তখনো জাইফকে শক্ত করে ধরে আছে আর বারবার সাপটাকে সরানোর চেষ্টা করতে থাকে কিন্তু পারছে না। শেষে সাপটা আবার আগের জায়গায় চলে যায় আর খুব অদ্ভুতভাবে শব্দ করে। এতে করে সাপটার একদম মাথার উপর থেকে আকাশের মেঘগুলো গোল হয়ে সরে যেতে থাকে আর সাপটার উপর খুব সুন্দর আলোকরশ্মি পড়তে থাকে। আস্তে আস্তে সাপটার রঙ পাল্টাতে থাকে আর সাপের শরীর থেকে এতো তীব্র আলোকরশ্মি বের হতে থাকে যে যীনাত চোখ খুলে রাখতে পারেনা। যখন আলোকরশ্মি কমে গেলো তখন আস্তে আস্তে যীনাত চোখ মেললো এবং দেখে এক অপরূপ সুন্দর সাপ তাদের সামনে! সাপটার সুন্দর্য চোখে তাক লাগার মতো। সাপটার সাথে সাথে নদীর পানিটা এতোটা স্বচ্ছ হয়েছে যে পানির নিচের পাথর গুলো স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। যীনাত তখনো ভয়ে কাঁপছে। ৭মাথা ওয়ালার মাঝের যে মাথাটা আছে সে কিছু ইশারা করতেই যীনাত জ্ঞান হারিয়ে ফেললো।

———————————

চলবে!!!

(গঠনমূলক মন্তব্যের প্রত্যাশায় রইলাম।)

ওয়ারদূন আসরার পর্ব-০৭

0

#ওয়ারদূন_আসরার
#লাবিবা_ওয়াহিদ
“০৭”

———————————

কমলা দেবী চুপচাপ মাথা নিচু করে বসে আছে আর তার সামনে দুহাতে হাত গুজে দাঁড়িয়ে আছে রিকেশ আর জাইফ। রিকেশ অসহায় সুরে বলে,”জাইফ”

– বলে ফেল।

– আমাদের আদরের ঠাম্মির কি করা যায় বলতো?
আমার সাথে ১ম, ১ম যেই মেয়েরর বিয়ে ঠিক হয়েছিলো সেদিন ওই মেয়েকে রামধোলাই খাইয়ে বিদায় করসে। নইলে এতোদিনে বউ বাচ্চা নিয়ে সুখে থাকতাম।

কমলা ভ্রু কুচকে জাইফ আর রিকেশের দিকে তাকায়।তারপর চিল্লিয়ে বলে,”এই এই তোরা কি কইতাসোস রে? আর এই গান থামা আমার মাথা ডা মনে হইতাসে ছিড়া গেলো। কানের থেকে এই তাড়ের মতো এইডি সরা ধুর ধুর!”

বলেই কমলা দেবী নিজের বাধা হাত খোলার চেষ্টা আছে। যীনাত আরেকবার নিচে নামতেই কমলা দেবী তার পোড়া হাত দিয়েই যীনাতকে খুব জোরে চড় মেরেছিলো তাই কমলা দেবীকে দেবনাথ দেব রেগে সার্ভেন্ট দিয়ে হাত পেছনের দিকে নিয়ে বেধে দেয়ার আদেশ দিয়েছে। আর জাইফ রিকেশ এক্সট্রা ভাবে কিছু হিন্দি গান ছেড়ে হেয়ারফোন কমলা দেবীর কানে লাগিয়ে দিয়েছে তাও অনেকটা সাউন্ড বাড়িয়ে যাতে করে তার কানের সামনে কেউ চিল্লিয়ে কথা বললেও যেনো শুনতে না পায়। আর যেই গান ছাড়া হয়েছে তা কমলা দেবী একদম সহ্য করতে পারে না। তাই রিকেশ আর জাইফ কি বললো কমলা দেবী তা শুনতে অক্ষম। রিকেশ গালে হাত দিয়ে বলে,”চিল্লাও ঠাম্মি চিল্লাও তুমি আমাদের কথা আগাও বুঝতে পারবা না আর গোড়াও না। তুমি আমার বোনের গায়ে হাত তুলসো না এখন বুঝো ঠ্যালার নাম বাবাজি কারে কয়।”

– আচ্ছা ঠাম্মিকে নাকি এর আগেও এমন কয়েক ধরণের শাস্তি দেয়া হয়েছে তবুও কেন উনি এমন?

– আর বলিস না ভাই! তুই যখন দেশের বাইরে ছিলি তখন তো কাকামনিরা ছিলো। মানে কি বলবো ওনার অত্যাচারে কাকীমনির নাজেহাল অবস্থা ছিলো। তাই কাকামনি দেশের বাইরে যেতে বাধ্য হইসে। আর একবার তো ঠাম্মিকে শশ্মান ঘাটেও রেখে আসছিলো যেনো কিছুটা হলেও ঘাড়ে থাকা ভূত নামে তবুও কাজ হয়নি। আর জানিস একবার তো স্বর্ণার গায়ে এত্তোগুলা তেলাপোকা ছেড়েছিলো তাইতো স্বর্ণা ভুলেও এই বাড়িতে পা দেয়না।

এবার জাইফ না হেসে পারে না হো হো করে হেসে দেয় তাও অনেকটা জোরে। জাইফের হাসি দেখে কমলা দেবী চোখ মুখ ফুলিয়ে বলে,”ওই ছ্যাসড়া তুই ওরে কি কইসোস যার লাগি হেয় এমনে হাসতাসে? সত্যি কইরা ক নইলে তোরে জুতা দিয়া উষ্টামু!”

কমলা দেবীর কথায় জাইফ আরও হেসে দেয়। হাসির বাধ যেনো মানে না তার। এতোটা ঘাড়ত্যাড়া আদৌ কি কোনো মানুষ হতে পারে তাও এই শেষ বয়সে?

– আর তোর হবু স্ত্রী-র সাথে কি করেছে!

রিকেশ অসহায় সুরে মুখটাকে প্যাচার মতো করে বলে,”মা ওকে বলেছিলো একদিন এসে থেকে যেতে তো একদিন আসলো সেদিনই ঠাম্মি ওরে ষাড়ের মতো খাটাইসে! ঠাম্মিকে থামতে বললেও বলে, আগে দেখে তো নিবো যে আগো নাতবউ কিরাম কামের নইলে যে ফু দিলে উইড়া যাইবো। সারাদিন কাজ করে বেচারী কোনোরকমে পালাইসে। পরের দিন তাদের বাসা থেকে তার বাবা এসে বিয়ে ভেঙে দেয়।”

জাইফ হাসতে হাসতে কমলার দিকে তাকিয়ে বলে,”বুড়ি তোমার কথার জোর আছে বলতে হবে।(আমার বউটারেও আজ জম্মের কাজ করাইসে! আমার কি টাকার অভাব? উফফফদ এখন ওই মেয়েটাকে কি জবাব দিবো? ঠাম্মি তুমি আমার মান-সম্মান আর রাখলা না! মেয়েটা কতো বিপদের মাঝে দিয়ে গেছে সেটা নিজ চোখে দেখেছি ঠাম্মি তুমি দেখলে তোমার রিয়েকশন কি হতো তবে দাভাইয়ের হেস্তনেস্ত করতে হবে)

– দাভাই শুন!

– হুম বল!

– এক কাজ করি ঠাম্মি এখানে থাকুক আর তুই বিয়েটা সেরে ফেল নইকে সারাজীবন তোরে সিঙ্গেলই মরতে হবে।

– উমম… মনের মতো কথা বললি ভাই! এনার জন্য কি আমার সাত জম্ম নষ্ট করুম নাকি?

জাইফ হাসে তারপর বলে,”ঠাম্মি এখানেই থাকুক চল আমরা গিয়ে ব্যাপার টা বাবা মাকে জানাই।”

– তা মন্দ বলিস নি চল!

তারপর দুইভাই মিলে চলে গেলো। কমলা দেবী চেঁচাতে চেঁচাতে কখন কাত হয়ে ঘুমিয়ে গেলো বুঝতে পারেনা। জাইফ সকলকে রিকেশের বিয়ের ব্যবস্থার কথা বলে উপরে চলে আসে। নিজের রুমে যাওয়ার আগে যীনাতের রুম একবার চেক করে নিলো। রুম অন্ধকার দেখে জাইফের মনে কেমন কু ডাকলো তাই আর দেরি না করে ভেতরে চলে যায় কারণ যীনাতকে সে একা রাখতে চায়না। সারাঘরে খুজেও যীনাতকে পায়না হঠাৎ বেলকনিতে একটা ছায়া চোখে পড়তেই সেদিকে যায় এবং বেলকনিতে গিয়ে দেখে যীনাত এক কোণে চুপচাপ বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। যীনাত কারো উপস্থিতি বুঝতে পেরে দরজার দিকে তাকায় এবং জাইফকে দেখে একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। তারপর আবার আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে,”আপনি এখানে?”

– হুম এভাবে একা কেন বসে আছেন বলেছিলাম না মা অথবা অন্য কারো সাথে সময় কাটাতে।

– আমি বেশিরভাগ সময় একা থাকতেই পছন্দ করি। একাই পৃথিবীতে এসেছি আবার একাই চলে যাবো। এর মাঝে মায়া বাড়িয়ে কি লাভ বলুনতো?(আনমনে)

জাইফ শান্ত দৃষ্টিতে যীনাতের দিকে তাকিয়ে রয় তারপর বলে,”ঠাম্মির জন্য রাগ করছেন?”

– মোটেই না। তিনি আমার গুরুজন হন তাই তিনি কি করলেন তা নিয়ে আমার কোনোরকম মাথা ব্যথা নেই। আর কি কারণে চড় মারলেন তা জেনেও আমার কোনোরকম কাজ নেই।

– সব মানুষকে এভাবে প্রশ্রয় দেয়া ঠিক না যীনাত।

– প্রশ্রয় নয় সম্মান। তাকে সম্মান করি আর সম্মান, প্রশ্রয় এক নয়। আর উনি অন্যরকম সেটা আমি প্রথমদিনই বুঝেছি।

– আপনি মানুষটা সত্যিই অদ্ভুত যীনাত। কি করে পারেন এতো কষ্ট মুখ বুজে সহ্য করতে? আপনাকে দেখে মনেই হয়না ভেতরে পাহাড়সম যন্ত্রণা বেদনা লুকিয়ে রেখেছো।

যীনাত ছলছল চোখে একটা হাসি দিয়ে বলে,”কষ্টটা সবাইকে দেখাতে নেই এতে করে অন্যরা দুর্বলতা খুঁজে পায় এবং আরও আঘাত দেয়। তাই নিজেকে সংগত রাখার চেষ্টা করি।”

জাইফ কি বলবে বুঝতে পারছে না। যীনাতের প্রতিটা কথার মাঝে আলাদা যুক্তি আছে যা তাকে চুপ করতে বাধ্য করে। তবে জাইফের মনে একটা প্রশ্ন থেকে গেলো তবে সে এখন সেই প্রশ্ন টা করে যীনাতকে দ্বীধায় ফেলতে চাইছে না। তাই কিছু না বলে জাইফ নিজের ঘরে চলে যায় ফ্রেশ হতে। ফ্রেশ হয়ে আলমিরাতে হাত দিতেই দেখে একটা শপিং ব্যাগ। জাইফের এতোক্ষণে মনে পড়ে। তারপর একটা টিশার্ট পরে ব্যাগ টা নিয়ে যীনাতের কাছে আবার আসে এবং যীনাতের দিকে শপিং ব্যাগ টা এগিয়ে দেয়। যীনাত চোখের সামনে শপিং ব্যাগ দেখে পাশে তাকায়। জাইফ মুচকি হেসে ব্যাগটা যীনাতের হাতে দিয়ে বলে,”আপনার জন্য।”

যীনাত শপিং ব্যাগ এপিট ওপিট করে বলে,”কি আছে এটায়?”

– নিজেই খুলে দেখুন।

যীনাত কিছুটা অস্বস্তিবীধ করে তারপর ব্যাগটা জাইফকে ফিরিয়ে দিয়ে বলে,”আমি পারবো না এটা নিতে।”

– কেন?(অবাক হয়ে)

– এমনি।

জাইফ যীনাতের হাতে আবার ব্যাগটা ধরিয়ে দিয়ে বলে,”কেউ কাউকে কিছু উপহার দিলে সেটা ফেরাতে নেই তাই চুপচাপ খুলে দেখুন।”

– আমি পারবো না প্লিজ বুঝুন।

– উহু কিছু বুঝতে চাইনা।

একপ্রকার জোর করে শপিং ব্যাগে থাকা গিফট বক্সটা খুলালো। যীনাত প্যাকেট টা খুলে অবাক হয়ে তাকায় কারণ জাইফ যীনাতকে একটা ফোন দিয়েছে। যীনাত ফোনটা এপিট ওপিট করে দেখে বেশ ভালো করে বুঝে যায় যে এটা অনেক দামী ফোন। যীনাত বলে,”এতো দামী ফোনের কি দরকার ছিলো?”

– উমহ! আমার বউকে কি কমদামি ফোন দিবো নাকি?

জাইফের মুখে ‘বউ’ শুনে যীনাত অবাক হয়ে তাকায়। যীনাতের তাকানো দেখে জাইফ বেশ বুঝে সে কি আবোলতাবোল বলেছে। জাইফ বেচারা নিজেও অস্বস্তিতে পড়েছে। মাথায় হাত দিয়ে কিছুটা বোকামি সুরে বলে,”ইয়ে মানে আপনাকে কমদামি উপহার কেন দিতে যাবো?”

যীনাত এবার ফিক করে হেসে দেয়। যীনাতের হাসিতে যেনো মুক্ত ঝড়ছে। জাইফ চুপচাপ যীনাতের হাসি দেখছে। যীনাত হাসি থামিয়ে বলে,”আপনি না একটা পাগল।”

-“আপনার হাসিটার জন্য পাগল হয়েছি।”(বিড়বিড় করে)

– কিছু বললেন?

– কই কিছু না তো। শুনুন আমি আমার নাম্বার সেভ করে দিয়েছি যখন আপনায় কল দিবো রিসিভ করবেন। আর হ্যাঁ এই ফোনের ব্যাপারে এখন কাউকে জানাওর দরকার নেই যতোটা পারেন লুকিয়ে রাখবেন কেমন? আমি দাদুকে পরে আপনাকে দেয়া ফোনের কথা জানিয়ে দিবো।

– আচ্ছা ঠিকাছে।(হঠাৎ কিছু একটা মনে পড়তেই) আচ্ছা হুজুরের নাম্বার টা কি আপনার কাছে আছে?

– আই থিংক নেই। দাদুর কাছে থাকলেও থাকতে পারে। কেন কিছু জরুরি?

– অনেকটা সেরকমই আচ্ছা আপনি কালকের মধ্যে নাম্বার টা জোগাড় করে দিতে পারবেন?

জাইফ কিছুক্ষণ ভেবে বলে,”ঠিক আছে এখন আপনি ঘুমান।”

বলেই জাইফ যীনাতের দরজা ভিজিয়ে চলে গেলো। যীনাত মুচকু হেসে দরজার দিকে তাকায় তারপর বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ে।

পরেরদিন,

নাস্তা করার সময় যীনাত কমলা দেবীকে না দেখতে পেয়ে মল্লিকা দেবীকে বলে,”আচ্ছা আন্টি ঠাম্মি কোথায়?”

মল্লিকা দেবী কিছু বলার আগেই রিকেশ বলে উঠে,”তিনি তার সঠিক স্থানেই আছে।”

বলেই ফিক করে হেসে দেয়। তারপর আবার দেবনাথ দেবের দিকে তাকাতেই হাসি থামিয়ে ফেলে। দেবনাথ দেব কালকের বিষয়টার জন্য যীনাতের দিকে তাকাতে অব্দি পারছে না তার নিজেকে অনেকটা অপমানবোধ লাগছে তার বোনের জন্য। সে যে প্রতিজ্ঞা করেছিলো যে যীনাতকে কোনোরকম কষ্ট পেতে দেবে না। যীনাত বিষয়টা খেয়াল করলো যে কাল থেকে দেবনাথ দেব কথা বলা তো দূর একবার ফিরেও তাকাচ্ছে না। এটা দেখে যীনাতের বেশ মন খারাপ হয়ে গেলো। কেন সে এমন করছে? সে কি কোনো কারণে যীনাতের উপর রেগে আছে?

ব্রেকফাস্ট শেষে যে যার রুমে চলে যায়। জাইফ অফিস যাওয়ার আগে যীনাতকে বলে চলে যায়। সারাদিন যীনাত মিনি সহ আরো কয়েকজনের সাথে সময় কাটায় তাদের একে অপরের কাজ দেখে। দুপুরে জাইফ যীনাতকে কল দেয় এবং খোঁজখবর নেয় কি করেছে, খেয়েছে কি না, কোনো সমস্যা হচ্ছে কিনা এগুলোই! সারাদিনে যীনাত একবারের জন্যেও কমলা দেবীকে দেখেনি। হঠাৎ কোন ঝড় এসে তাকে নিয়ে গেলো? পুরো বাড়ি সুনশান। মল্লিকা দেবী গেছেন রিকেশের জন্য মেয়েদের পিকস কালেক্ট করতে। দেবনাথ দেব নিজের ঘরে বসে পত্রিকা পড়ছিলেন এমন সময়ই এক পা এক পা করে দেবনাথ দেবের রুমের সামনে এসে দাঁড়ায়। তারপর কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,”আসবো দাদু।”

দেবনাথ দেব পত্রিকা রেখে বলে,”আরে যীনাত যে আসো।”

যীনাত ছোট ছোট পায়ে আসে।

– তা হঠাৎ এই অধমকে মনে পড়লো?

– এগুলো আপনি কি বলছেন দাদু আপনি তো আমার গুরুজন!(মুখ গোমড়া করে)

দেবনাথ দেব হাসলো তারপর যীনাত মাথা নিচু করে বলে,”দাদু আপনি কি কোনো কারণে আমার উপর রেগে আছেন?”

– কোথায় আর কেন-ই বা রাগ করবো?

– আমি তো জানিনা। আপনি কাল থেকে কথা বলা তো দূর তাকানও না।

দেবনাথ দেব শান্ত সুরে বলে,”তেমন কিছু নয় যীনাত। আসলে নিজের মধ্যে একটা অপরাধবোধ কাজ করছিলো তাই খারাপ লাগতো?”

– কিসের অপরাধবোধ দাদু?

– তোমায় এই বাড়িতে আনার আগে তোমার শিক্ষক কে কথা দিয়েছিলাম এই বাড়িতে কারো দ্বারাই তোমায় কষ্ট পেতে দেবো না। সেখানে নিজের বোনই চোখের সামনে তোমায় আঘাত করেছে, খাটিয়েছে।

বলেই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে দেবনাথ দেব। যীনাত কিছুটা মুচকি হেসে দেবনাথ দেবের পায়ের কাছে বসে বলে,”এখানে আমার কোনো অভিযোগ নেই দাদু। আপনি আপনার নাতি আমার অনেক উপকার করেছেন তার জন্য আমি আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। আর ঠাম্মির কথা বলছেন? উনি কিছুটা অন্যরকম তবে তিনি মানুষটা ভালো। তার বিচার-বিবেচনা সবার থেকে আলাদা তো তাই আপনাদের কাছে তার অপরাধটাই চোখে পড়ে। চিন্তা করবেন না একদিন বুঝতে পারবেন আর ঠাম্মিকে এখন যেখানেই রাখুন না কেন ফিরিয়ে আনুন তাকে মিস করছি।”

– না যীনাত তুমি কমলাকে যতোটা সহজভাবে নিচ্ছো ও ততোটাও সহজ নয়। আর রিকেশের বিয়েটা আগে দেই তারপর ওকে আনবো এর আগে সম্ভব নয়।

– কেন উনি তো গুরুজন ওনার তো বিয়েতে থাকতে হবে।

– না যীনাত বিয়েতে থাকা মানে আবার রিকেশের বিয়ে ভাঙবে তাই আমি এবার এসব ঝামেলা চাইছি না। সে যাইহোক বাদ দাও ওর কথা, জাইফ কি কোনোরকম কটুকথা বলেছে তোমায়?

– এমা ছি ছি কি বলছেন দাদু। উনি মানুষটা আমার কাছে ফেরেশতার থেকে কম লাগেনা। বেশ ভালো আর অনেকটা দায়িত্ববান।

যীনাতের মুখে দেবনাথ দেবের মুখে হাসি ফুটলো। হ্যাঁ তার ভাবনা বিফলে যায়নি। জাইফ ছোট থেকেই দায়িত্ব জ্ঞান সম্পন্ন। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। দেবনাথ দেব বেশ আদর- যত্নেই জাইফকে বড় করেছে। জাইফের চিন্তা-চেতনা, ভাবভঙ্গির জন্য আজ সে একজন সফল বিজন্যাসমেন! তার সামনে, পিছে, আশে, পাশে বডিগার্ড থাকে। দেবনাথ দেব যীনাতের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,”ভাগ্য করে এমন একজন নাতবউ পেয়েছি। জানো আমি তোমার মতো করেই একজন খুঁজতাম আমার জাইফের জন্য দেখো উপরওয়ালা মিলিয়ে দিয়েছেন তাও রিকেশের আগে। এটা নিয়ে আমার কোনোরকম অভিযোগ নেই। আমার জাইফের দায়িত্ব এখন তোমার হাতে যীনাত এখন নিজের দায়িত্ব কিভাবে পালন করবে সেটা তোমার হাতে ছেড়ে দিলাম কারণ জাইফের প্রতি যতোটা আস্থা আমার আছে ততোটা তোমার প্রতিও আছে।”

দেবনাথ দেবের কথায় যীনাত নিচের দিকে তাকিয়ে শুধু একটু মুচকি হাসলো। আজ সত্যিই তার কাছে পুরোটা নিজের পরিবারের ছেলে লাগছে। হ্যাঁ তাকে পারতেই হবে এই পরিবারের সকলকে আপন করে নিতে।

———————————

চলবে!!!

ওয়ারদূন আসরার পর্ব-০৬

0

#ওয়ারদূন_আসরার
#লাবিবা_ওয়াহিদ
“০৬”

——————————–

– আসতে পারি?

সবে নিচে থেকে নাস্তা করে রুমে আসলো যীনাত। কারো কন্ঠ শুনে পছে ফিরে তাকায় এবং দেখে জাইফ একটা কিউট হাসি দিয়ে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে। যীনাত তাড়াতাড়ি মাথায় ওড়না দিয়ে বলে,”জ্বী আসুন। কিছু বলবেন?”

– উমম… হ্যাঁ কিছু বলার জন্যই মূলত আপনার রুমে আসা।

– বলুন।

– অফিস যাচ্ছি নিজের খেয়াল রাখবেন আসতে আসতে ৭-৮টা বাজবে।

যীনাত অবাক হয়ে বলে,”আ.. আমায় কেন বলছেন?”

– কারণ আপনি এখন আমার সহধর্মীনি। তাই আপনার সবকিছু জানার অধিকার আছে আর আপনাকে বলাটাও আমার দায়িত্ব। সে যাইহোক দুপুরে সময়মতো খেয়ে নিবেন। একা ফিল হলে মা অথবা মিনিকে ডেকে আনবেন তাদের সাথে সময় কাটালে ভালো লাগবে। যাইহোক বাই।

– আল্লাহ হাফেজ।

– ওহ সরি আল্লাহ হাফেজ।

বলেই মুচকি একটা হাসি দিয়ে জাইফ চলে গেলো৷ যীনাতও হেসে দিলো। ২ দিনও হলো না তবুও এতোটা কেয়ারিং, সত্যিই অনেকটা দায়িত্ববান জাইফ। কিন্তু তাদের বিয়েটা পরিস্থিতির চাপে পড়েই হয়েছে তবুও জাইফ এতো স্বাভাবিক কি করে হলো? যীনাতও কি আদৌ স্বাভাবিক হতে পারছে নাকি জাইফ নিজেই তার ব্যবহারের মাধ্যমে তাকে বাধ্য করেছে সবটা স্বাভাবিক ভাবে নিতে? এসবই আকাশ পাতাল ভেবে চলেছে যীনাত।

তারপর এতোকিছু না ভেবে নিজের বাবার চিঠিটা নিয়ে বারান্দায় চলে গেলো আর বারবার পড়তে থাকে। হঠাৎ কাল রাতের কথা মনে পড়ে।

– আচ্ছা আমাকে কে প্যারালাইজড করেছিলো? আর ওই ছেলেটাই বা কে চেহারা কেন স্পষ্ট মনে পড়ছে না আমার? আদৌ কি এটা স্বপ্ন? আর ‘ওয়ারদূন আসরার’ কি? হুজুরের থেকে যতোটুকু আরবি ভাষা শিখেছি তার মাঝে এইটুকু অর্থ বুঝতে পারছি যে ওয়ারদূন মানে গোলাপ আর আসরার মানে রহস্য। এটা আবার কেমন রহস্য? গোলাপের রহস্য? গোলাপের সাথে কিসের সম্পর্ক? সব কেমন ঘোলাটে লাগছে। না মাথায় প্রেশার দিতে পারছি না। আচ্ছা কোনো ভাবে যদি হুজুরের সাথে সবটা বললে কেমন হয়? কিন্তু তার সাথে কথা কি করে বলবো আমার তো একটা ফোনও নেই। কি করা যায় এখন?

যীনাত ভাবছে আর দাঁত দিয়ে নখ কাটছে আবার এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। হঠাৎ মাথায় আসলো দাদুকে বললে তো মন্দ হয়না কারণ সে প্রথম থেকেই সবটা জানেন আর হুজুরের সাথেও যোগাযোগ করিয়ে দিতে পারবেন।

যেই ভাবা সেই কাজ! যীনাত দেবনাথ দেবের ঘরেএ দিকে যান। দেবনাথ দেবের রুমে দাঁড়িয়ে কয়েকবার উঁকিঝুঁকি দিয়ে দেখলো দেবনাথ দেব ভেতরে নেই। এবার যীনাত হতাশ হলো কি করবে এখন সে? হতাশ হয়ে পিছে ফিরে দেখে কমলা দেবী মুখে পান চিবুচ্ছে আর যীনাতের দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে। এবার যীনাত শেষ!

– কি ছোকড়ি তুই আর দাদার ঘরের সামনে কিয়ারোস? তোর মতলব তো আমার ভালো ঠেকতাসে না।

– ঠাম্মি আমি আসলে…

– রাখ তোর তোতলাইন্না কথা। কিল্লাই হ্যানে আইসোস হেইডা ঠিক কইরা কো নইলে তোরে ডবাতে নিয়া চুবামু।

– আমি দাদুকে খুঁজতে আসছি।(এক নিশ্বাসে বলে ফেলে)

– এএএএএএহ দরদ উতলায় পড়ে রে! তোর দাদু কি তোর ল্যাইগা বইয়া থাকবো? এহন ক দাদারে ক্যান বিসরাস?

– এমনি।

– অ এমনি কইলে সব অইবো না। বাড়িত জায়গা দিসি বইল্লা এই না যে কাউয়ার মতো সারাদিন ঘুরঘুর করবি। এই বাইত থাকতে হইলে কাম কইরা খাওন লাগবো।

– কি করতে ঠাম্মি?

– হো এহন আয়সোস তুই লাইনে। হুন পুরা বাড়ি ধোয়া মুছা করবি নইলে দুপুরকার খাওন খাইতে পারবি না।

যীনাত কোনোরকম দ্বিমত না জানিয়ে হ্যাঁ বলে। কমিলা দেবীর কথার নড়চড় হলে খবর আছে সেটা যীনাত বেশ ভালো জানে। পাশ থেকে মিনি বলে,”ঠাকুমা আই যাই দিদিমনিরে দিয়া কাম কেন করাইবেন হেতি তো আমাগো অতিথি।”

– এএএএএহ অতিথি! ঘোড়ার ল্যাজের অতিথি। তুই যা নইলে বাশি খাওন পাক্কা ৭দিন খাইবি।

মিনি একটা ঢোক গিলে আর কিছু বলতে পারে না। অসহায় দৃষ্টিতে যীনাতের দিকে তাকাতেই যীনাত আশ্বাস দেয় সে পারবে। যীনাতকে এখনো দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কমলা দেবী চিল্লিয়ে বলে,”এই ছ্যামড়ী কাম কর যাইয়া হেনে খাম্বার মতো দাড়াইয়া আছোস কি আমার রূপ দেখতে?”

যীনাত কোনো কথা না বাড়িয়ে কাজে লেগে পড়ে। এভাবে দুপুর ২টা বেজে যায়। তবুও যীনাত শেষ করতে পারেনি। এতো বড় বাড়ি তার কি এতো সাধ্য আছে যে পুরো বাড়ি একা মোছামুছি করার? অনেক সার্ভেন্ট রা সাহায্য করতে চাইলেও পারে না কারণ কমলা দেবীর কড়া হুকুম যীনাতকে সাহায্য করা যাবে না। যীনাতের জান যায় যায় অবস্থা তবুও ধৈর্য্য ধরে করছে। কমলা দেবীর জন্য যীনাত নামাজটাও পড়তে পারে না। কারণ এই বাড়ির সবাই মুসলিম জানলেও কমলা দেবী জানে না। সে জানলে বাড়িতে আগুন লাগাতেও দ্বিধাবোধ করবে না তাই কেউ কিছু বলেনি। যীনাতের যেনো সবকিছু অন্ধকার লাগছে তবুও কোনোরকম অভিযোগ করলো না।

কমলা দেবী পায়ের উপর পা তুলে চা খাচ্ছে আর যীনাত ফ্লোর মোছায় ব্যস্ত এমন সময়ই বাসায় দেবনাথ দেব আর জাইফ বাসায় প্রবেশ করলো। তাদের দুইজন কে দেখে কমলা দেবী একপ্রকার লাফ দিয়ে উঠতে নেয় ওমনি গরম চা তার হাতে গিয়ে পড়ে আর সে “ঠাকুর গোওওওও” বলে চেঁচিয়ে উঠে। জাইফ দৌড়ে আসে কমলা দেবীর কাছে এবং যীনাতকে কাজ করতে দেখে তার মাথায় আগুন ধরে গেলো সাথে দেবনাথ দেবেরও। দুইজনই বেশ ভালো করে জানে কমলা দেবী ছাড়া আর কারো সাহস নেই এভাবে যীনাতকে দিয়ে কাজ করানোর। দেবনাথ দেব একপ্রকার হুংকার ছেড়ে বলে,”কমলা!! তোর সাহস কি করে হয় মেয়েটাকে দিয়ে কাজ করানোর!!”

– দাদু সেসব পরে দেখা যাবে আগে তোমার কমলা ফুলটুশির ব্যবস্থা করো। অনেক টুকু পুড়ে গেছে।(জাইফ)

যীনাত চটজলদি রান্নাঘরে গেলো আর একটা বরফের ব্যাগ নিয়ে কমলা দেবীর কাছে আসে। কমলা দেবীর হাত ধরতেই কমলা দেবী চিল্লিয়ে বলে,”ওই ছ্যাড়ি তোর ওই অপবিত্র হাত দিয়ে আরে ছুবি না। নইলে…”

বলেই যেই জাইফের দিকে তাকালো ওমনি সে ভয়ে চুপসে গেলো। এই বাড়িতে কমলা দেবী একমাত্র জাইফকেই ভয় পায় কারণ জাইফ তার চেয়েও হাজারগুণ ত্যাজি এবং বদমেজাজি। যতোই শান্তশিষ্ট থাকুক না কেন একবার রেগে গেলে আর রক্ষে নেই। আপাতত জাইফের চোখের রঙ রক্তবর্ণ ধারণ করেছে তাই কমলা চাইলেও কিছুই বলতে পারছে না। যীনাত কোনোদিকে খেয়াল না করে চুপচাপ কমলা দেবীর হাতে বরফ ডলতে ব্যস্ত। এর মাঝে মিনি কমলা দেবীর কুকীর্তি সব বলে দিয়েছে জাইফ আর দেবনাথ দেবকে। দুজনে এসব শুনে আরও রেগে গেলো। মিনি যেনো আবার শান্তি পেলো সবটা তাদের বলে। মিনিকে যে আপু বলেছে বোন ধরে নিয়েছে তার প্রতি কি করে মিনি অন্যায় অবিচার সহ্য করবে? কখনোই করবে না।

যীনাত খুবই যত্ন সহকারে বরফ ডলে দেয় এতে করে কমলা দেবীর জ্বালাটা অনেকাংশই কমে গেলো তবুও কোনোরকম কথা বললো না এবং যীনাতের প্রশংসাও না। তার মনে যে যীনাতের জন্য আরও হাজারটা ক্ষোভ জম্মে গেছে কারণ যীনাতের জন্যই আজ তার হাত পুড়েছে এবং জাইফের চোখে খারাপ হয়েছে৷ এটা সে কিছুতেই মেনে নিবে না কিছুতেই না! যীনাত ডলতে ডলতে বলে,”এখন কেমন লাগছে ঠাম্মি?”

কমলা দেবী জাইফের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে বলে,”ভালো!”

কমলা দেবীর ভালো বলতে দেরি কিন্তু জাইফের কড়া কথা বলতে দেরি নেই। জাইফ চোখদু’টো রক্তবর্ণ করে বলে,”যীনাত আপনি ঘরে যান।”

– কিন্তু আমার কাজ….

– নো মোর এক্সকিউজ! আপনাকে রুমে যেতে বলেছি যাবেন এক্সট্রা কথা আমার পছন্দ না।

জাইফের কঠিন সুর শুনে যীনাত একপ্রকার বাধ্য হয়েই উপরে চলে গেলো। এদিকে কমলা দেবী ভয়ে চুপ করে আছে আর বারবার ঢোক গিলছে। জাইফ প্রচন্ড শান্ত সুরে বলে,”তা কমলা রানী তুমিই কি ওরে এই বাড়িতে জায়গা দিয়েছো? এই বাড়ি কি তোমার নাকি তোমার শশুড়ের যে তোমার নামে দলিল করে গেছে?”

জাইফের শান্ত সরের কথাগুলো যেনো কমলা দেবীর গা জ্বালিয়ে ছাড়লো। সে একপ্রাণ রেগে বলে,”এইডি তুই কি কস? আই আর ভাইয়ের বাইত থাহি তবুও তোরা আরে খোডা দিয়া কথা কস?”

– তোমার কাছে খোটা মনে হলে খোটাই বুঝে নাও। তোমার সাহস কি করে হয় ওই মেয়েটাকে দিয়ে এতো কাজ করানোর? ওকে কি তুমি কামাই করে খাওয়াচ্ছো যে হুকুমগিরি বসাইসো বাড়িতে?

– আই কামাই করি না কিন্তু তোরা তো করোস! তোগো কষ্টের পয়সা দিয়া ওই মাইয়া পায়ের উপ্রে পা তুইল্লা বইয়া খাইবো ক্যান?

– আর এই টাকা দিয়ে তুমিও তো বসে বসে খাচ্ছো তুমি কি এমন কাজ করো এই বাড়িতে?

– মানেহ!! এই কথা তুই কইতে পারলি? ও ঠাকুর গো কি দিনকাল দিলা গো ভাইয়ের বাড়িতে থাকতে গেলেও এমন খোডা হুনতে হয়।(ন্যাকা সুরে)

– ওই একদম ন্যাকামি করবা না নিজেকে এতোটাও চালাক ভাবিও না। তুমি যেমন বসে বসে খাবা ওই মেয়েটাও বসে বসেই খাবে। আমাদের এতো টাকার অভাব পড়েনি যে একজন কে বসিয়ে খাওয়াতে পারবো না আর তুমি তো একজন বাচ্চা হাতির সমান! তুমি একাই ৫জনের ঘাড়ে চেপে খাও।

– এই তুই কি কইলি আই হাতি!! এত্তো বড় কথা তুই কইতে পারলি?? ওই দাদা দেখ তোর নাতি আমারে এইডি কি কয় তুই এরে কিছু কো!!

– আমি আর কি বলবো কমলা তুমি নিজে যা করেছো আমার তোমার দিকে তাকাতেই অসহ্য লাগছে! একটা এতিম মেয়ের সাথে কিভাবে এমন আচরণ করতে পারলা তুমি হ্যাঁ?

– আরে তোরা যারে নিয়া এতো দৌড়াইতাসোস দেখ গা এর জম্মের ঠিক আছে কিনা তারপর আরে কইতে আইবি সবগুলা নিম্ন জাতের খারাপ তোরা সব!!

এবার জাইফের রাগ চরম মাত্রই চলে গেলো। আজ যদি কমলা দেবী জাইফের গুরুজন না হতো তাহলে জাইফ যে তারে কি করতো সেটা জাইফ নিজেও ধারণা করতে পারছে না। চোখ বন্ধ করে এবং হাত দু’টো মুঠিবদ্ধ করে জাইফ রাগ কমানোর বৃথা চেষ্টা করে যাচ্ছে। তারপর নিজেকে কিছুটা সামলে নিয়ে একয়াতা শয়তানি হাসি দিয়ে কমলা দেবীকে বলে,”তাহলে তোমার সখের জামাই তোমারে ঠ্যাঙের নিচে কেন রাখতো কমলা?”

কমলা দেবী আরও রেগে বলে,”ওই চুপ কর কি কস তুই এইডি?”

– উহু আমি চুপ করবো না! আচ্ছা কমলা রানী তোমার ওইদিনের কথা মনে আছে?

– কোন্ডা?

জাইফ হাত দিয়ে কিছু ইশারা করতেই কমলা দেবী সেইরকম ঘাবড়ে গেলো এবং প্রচন্ড তৃষ্ণায় বলে উঠলো,”মিমিনি আরে পানি খাওয়া তো!”

——————————–

চলবে!!!

(গঠনমূলক মন্তব্যের প্রত্যাশায় রইলাম।)

ওয়ারদূন আসরার পর্ব-০৫

0

#ওয়ারদূন_আসরার
#লাবিবা_ওয়াহিদ
“০৫”

——————————-

জাইফ ছুটে গিয়ে দেখে দরজা লক করা। বেশি দেরি না করে জাইফ আবার নিজের ঘরে যায় এবং যীনাতের রুমের ডুপলিকেট চাবিটা নিয়ে দরজা খুলে। লাইট জ্বালিয়ে দেখে যীনাত কাতরাচ্ছে পানি, পানি করে। জাইফ তাড়াতাড়ি করে যীনাতকে গিয়ে পানি খাওয়ালো। যীনাত পানি খেয়ে কিছুটা শান্ত হয় এবং জাইফের বুকে ঢলে পড়ে। যীনাতের গায়ে হাত দিতেই জাইফ চমকে যায়। যীনাতের গা আগুনের মতো গরম হয়ে আছে তার মানে নিশ্চয়ই জ্বর এসেছে গায়ে। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে তো ভালোই ছিলো হঠাৎ এমন গা কাঁপিয়ে জ্বর কেন এলো? জাইফ যীনাতকে শুইয়ে দিয়ে মেডিসিন আনার জন্য উঠতেই যীনাত জাইফের হাত ধরে আটকায় এবং জ্বরের ঘোরে বলতে লাগে,”প্লিজ আমাকে ছেড়ে যাবেন না আমার খুব লাগছে। যাবেন না প্লিজ আমার সাথে থাকুন।”

জাইফের এবার যীনাতের প্রতি বড্ড মায়া লাগছে। কিন্তু হঠাৎ এমন গা কাঁপানো জ্বর আসলো কেন? শেষে উপায় না পেয়ে জাইফ যীনাতের পাশে শুয়ে পড়ে। জাইফের প্রথমে অস্বস্তি লাগলেও এখন অস্বস্তি ভুলে চিন্তায় পড়ে গেছে। যীনাত জাইফকে টেনে জাউফের বুকে বাচ্চাদের মতো ঘুমিয়ে পড়ে আর বারবার বলছে,,”ওরা আমাকে মেরে ফেলবে আমি কোথাও যাবো না। আমাকে একা ফেলে যাবেন না।”

যীনাতের কথায় জাইফ শক্ত করে বুকের সাথে চেপে ধরে যাতে কিছুটা হলেও যীনাতের জ্বর কমে। এছাড়া আর কোনো উপায়ই দেখছে না সে। পরে নিজেও ঘুমিয়ে পড়ে যীনাতের সাথে।

পাখিদের কিঁচিরমিঁচিরে যীনাতের ঘুম ভাঙে। পিটপিট করে চারপাশে একটু আকটু তাকায় তারপর আবার ঘুমাবে ওমনি ফিল করে কোনো এক শক্ত কিছুর উপর সে শুয়ে আছে। চোখ খুলে দেখে জাইফকে সে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ঘুমিয়ে ছিলো। যীনাত লাফ দিয়ে উঠে বসলো আর চোখ বড় বড় করে জাইফের দিকে তাকিয়ে রয়। জাইফ চোখমুখে বিরক্তি ভাব নিয়ে কিছুটা নড়েচড়ে আবার ঘুমিয়ে পড়ে। যীনাত চুপচাপ মনে করার চেষ্টা করতে লাগে কাল রাতে ঠিক কি হয়েছিলো। সবটা মনে পড়তেই যীনাত যেনো লজ্জায় মাটিতে মিশে যাচ্ছে। কি রকম বেহায়াপনা করেছে সে কাল রাতে। এখন জাইফ তাকে কি ভাববে? সব মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে জাইফকে ডাকতে শুরু করে কারণ যদি জাইফকে যীনাতের রুমে কেউ একজন দেখতে পায় তাকে সমূহ বিপদ।

– এইযে শুনুন!

—————

– এই উঠুন ভোর হয়ে গেছে!

—————-

এবার যীনাতের মাথায় যেনো রাগ উঠে যায়। মন চাচ্ছে কান টান দিয়ে ঘুম থেকে উঠাতে। কিন্তু না এগুলো করলে আরও মান সম্মান যাবে। তাই আরও কিছুক্ষণ ডাকে কিন্তু জাইফের কোনো রেসপন্সই নেই। তাই যীনাত আর দেরি না করে ওয়াশরুমে গিয়ে ওযু করে আসে। ফজরের নামাজ কাযা ছিলো। মোনাজাত শেষ করে বিছানার দিকে তাকাতেই দেখে জাইফ এক হাত মাথায় দিয়ে শুয়ে কাত হয়ে যীনাতের দিকেই তাকিয়ে আছে। যীনাত সাথে সাথে চোখ নামিয়ে ফেলে এবং জায়নামাজ ভাজ করায় মনোযোগী হলো।

যখন যীনাত মোনাজাত করছিলো তখনই হঠাৎ জাইফের ঘুম ভেঙে যায়। জাইফ এদিক ওদিক তাকিয়ে যীনাতকে মোনাজাতরত অবস্থায় দেখে। মোনাজাত ধরার পরেও কোনো মেয়েকে এতোটা অপরূপ লাগে সেটা আগে কখনো ভাবেনি জাইফ। যীনাতের জন্য জাইফের মন এতো কেন টানছে সেটা জাইফ জানেনা। হয়তো এটাই পবিত্র বন্ধনের শক্তি।❤️

যীনাত আবার যখন তাকালো দেখতে পেলো আগের মতো করেই জাইফ তার দিকে তাকিয়ে। যীনাত নিচের দিকে তাকিয়ে বলে,”এভাবে কি দেখছেন?”

জাইফ যীনাতের প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে বলে,”একটা কথা বলি?”

– জ্বী বলুন।

– নামাজরত অবস্থায়ও কি কোনো মেয়েকে এতোটা অপরূপ লাগে?

এবার যীনাত আরও লজ্জায় পড়ে গেলো। এই প্রশ্নের উত্তর কি আদৌ তার কাছে আছে? যীনাত বেশ বুঝলো জাইফ কোনো এক ঘোরের মাঝে আছে তাই গলা ঝেড়ে বলে,”দেখুন আপনাকে কেউ আমার রুমে দেখলে কেলেঙ্কারি বেধে যাবে।”

এতোক্ষণে জাইফের ধ্যান ভাঙে এবং চটজলদি উঠে বসে। তারপর বলে,”সরি সরি সরি আসলে আমার খেয়াল ছিলো না আমি এখুনি যাচ্ছি।”

বলেই বেডসাইড থেকে চাবির গোছা টা নিয়ে যীনাতের পাশ কাটিয়ে যেই চলে যেতে নিবে ওমনি দাঁড়িয়ে গিয়ে যীনাতের সামনে আসে এবং কোনো কথা না বলে যীনাতের কপালে হাত দিয়ে টেম্পারেচার চেক করে। নাহ সবকিছু স্বাভাবিক।

– আপনি আমার কপালে হাত দিলেন কেন?

– কাল আপনার হাড় কাঁপানো জ্বর এসেছে ম্যাডাম তাই টেম্পারেচার চেক করছিলাম স্বাভাবিক আছে কিনা নইলে ডক্তরকে কল দিয়ে আনাতাম।

– ওহ।

– যাইহোক কাল রাতে হঠাৎ তোমার ওই অবক্সথা কি করে হলো? আর জ্বরই বা কেন আসলো? কোনো কিছু নিয়ে কি ভয় পেয়েছিলে?

যীনাতের হঠাৎ কাল রাতের স্বপ্নের কথা মনে পড়ে যায়। ভয়ে একটা ঢক গিলে যীনাত, হয়তো সেই স্বপ্ন নিয়ে অতিমাত্রায় ভয় পেয়েছিলো যীনাত তাই হয়তো এভাবে জ্বর এসেছিলো। যীনাত স্বপ্নের ব্যাপারটা লুকিয়ে বলে,”আমিও বুঝতে পারছি না তবে এখন ঠিক আছি।”

– ওহ ঠিক আছে তুমি নিজের খেয়াল রেখো আমি গেলাম।

বলেই জাইফ নিজের রুমে চলে গেলো। জাইফ চলে যেতেই যেনো হাফ ছেড়ে বাচে যীনাত। তারপর বারান্দার থাই গ্লাস খুলে বারান্দায় চলে গেলো যীনাত। আজকে সকালটা বেশ মধুর লাগছে যীনাতের মনের বোঝা যেনো অনেকটাই হালকা হয়ে গেছে। ঠান্ডা পরিবেশ, ফ্রেশ হাওয়া। সকালের বাতাসটা পুরোই দূষিতমুক্ত। মন খুলে নিশ্বাস নেয়া যাচ্ছে। হঠাৎ যীনাতের ছোটবেলার বাবার সাথে কাটানো সময় মনে পড়ে আর সাথে সাথেই চোখ বেয়ে কয়েক ফোটা জল গড়িয়ে পড়ে। যীনাত হঠাৎ অনেক ফুলের সুবাস পাচ্ছে। নিচের দিকে তাকিয়ে দেখে গন্ধরাজ ফুলের বাগান। আর কিছুটা দূরে শুধুই গোলাপ আর গোলাপ। এতো ফুল দেখে যীনাতের খারাপ লাগা গুলো নিমিষেই ভালো লাগায় পরিণত হলো৷ যীনাত কিছুক্ষণ বারান্দায় কাটিয়ে রুমের বাইরে চলে আসে। নিচে নামতেই দেখে মিনি এক কাপ চা আর এক কাপ কফি নিয়ে যীনাতের দিকেই আসছে। যীনাতকে দেখে মিনি যীনাতের সামনে দাঁড়িয়ে বলে,”আরে দিদিমনি আন্নে এইহানে আই তো আন্নেরেই এই চা দিতে যাইতাম যাইহোক লন এই চা আই এই কোপি ছোটদাদারে দিয়া আহি।”

যীনাত মুচকি হেসে চা টা নিয়ে বলে,”ওটা কোপি হবে না মিনি আপু কফি হবে।”

মিনি বিস্ফোরিত চোখে যীনাতের দিকে তাকায়। যীনাত মিনির এমন দৃষ্টির মানে বুঝতে পারলো না।

– এ আন্নে কি কইলেন দিদিমনি? আই এই বাড়ির কামের মাইয়া আমারে আপু কওয়া লাগতো না আই আন্নের ছোড!

– আপু কি শুধু বড়দের বলতে হয় হও তুমি আমার ছোট বা বড় তোমায় আমি আপু বলেই ডাকবো। আর কি বললে তুমি এ বাড়ির কাজের মেয়ে? এটা বলা ঠিক নয় আমি তো তোমায় এই পরিবারের একজনই মনে করি!

মিনি ছলছল চোখে যীনাতের দিকে তাকায়। সত্যি এতো সম্মান কখনো তাকে কেউই দেয়নি। দূর থেকে দেবনাথ দেব এবং মল্লিকা দেবী সবটা দেখতে পায়। যীনাত নিজের হাত দিয়ে মিনির চোখ মুছে বলে,”বোকা মেয়ে কাঁদছো কেন?”

– নাহ এমনি দিদিমনি যাইহোক আমি যাইয়া ছোট দাদারে কোপি ইয়ে মানে কফিডা দিয়া আহি।

বলে মিনি চলে গেলো। যীনাত হাসলো তারপর চা টা সোফায় বসে খেতে লাগে।

এইদিকে,

– আমু দাদা?

জাইফ পিছে না ফিরেই বলে,”হ্যাঁ আয়।”

জাইফকে দেখে মিনি যেনো একটা শক খায়।

– দাদা আন্নে এত্তো হজ্ঞালে ঘুম থেকে উইঠা পড়লেন?(অবাক হয়ে)

– কেন উঠতে পারিনা?

– না তা নয় আন্নে তো অফিস যাওয়ার আগে উডেন আর ততোক্ষণে কফি ঠান্ডাও হইয়া যায়।

– সে যাইহোক আজ উঠলাম। কফিটা রেখে চলে যা।

– আইচ্ছা।

বলেই কফিটা রেখে দরজা দিয়ে বেরিয়ে যাবে এমন সময় দরজার সামনে দাঁড়ায় এবং পিছনে ফিরে। মিনির তাকানো দেখে জাইফ বলে,”কিছু বলবি?”

মিনি মাথা নাড়ায়। জাইফ কফিটা নিয়ে এক চুমুক দিতে দিতে বলে,”বলে ফেল কি বলবি?”

– জানেন দাদা নতুন যেই দিদিমনিডা আইসে না হ্যায় অনেক ভালা মনের মানুষ।

– হঠাৎ এই কথা বললি কেন?

– আমি হের থেইক্কা অনেক ছোড তবুও আমারে আপু কইয়া ডাকসে জোর গলায় একবারও কথা কয়নাই। এইহানে এতোদিন ধইরা আছি আন্নে আর দিদিমনি ছাড়া কেউ ভালো কইরা আম্র লগে কথা কয়নাই।

মিনির কথায় জাইফ একটা তৃপ্তির হাসি দেয় তারপর বলে,”আর কিছু বলবে?”

– না জাইগা।

বলেই মিনি চলে গেলো আর জাইফ চুপচাপ কফি খাচ্ছে আর যীনাতের কথা বলছে। কফি শেষ করে কফির মগটা নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।

যীনাতের খাওয়া শেষেই হঠাৎ শিড়ি থেকে শব্দ শুনতে পায়। যীনাত কাপটা টি-টেবিলে রেখে শিড়ির দিকে তাকায়। দেখে এক সার্ভেন্ট শিড়ি মুছছিলো ভুলবশত পানির বালতিটা তার পায়ে লেগে পড়ে যায়। সার্ভেন্টটি কিছুটা ব্যথা পেলেও নিজেকে সামলে নেয় আর ভয়ার্ত দৃষ্টিতে বালতিটার দিকে তাকিয়ে আছে। সে নির্ঘাত আজ কমলা দেবীর থেকে রাম-ধোলাই খাবে। যীনাত এসে সবটা দেখে তারপর বলে,”তুমি ঠিক আছো তো?”

সার্ভেন্টটি কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,”জি দিদিমনি আর আমারে ক্ষমা করেন আমি আসলে বুঝতে পারিনাই।”

আরও অনেক আকুতি মিনুতি করতে থাকে। বেচারী বেশ ভয় পেয়ে আছে সেটা যীনাত বেশ ভালোই বুঝতে পেরেছে। এমন সময়ই মিনি শিড়ি দিয়ে নেমে আসছিলো এমন সময় সবটা দেখে বলে,”এইডি তুই কি করলি এহন কর্তামায় তো অনেক বকবো।”

– মিনি আপু এগুলো না ভেবে সাবধানে ওনাকে নিচে নিয়ে আসো তো। উনি পায়ে ব্যথা পেয়েছে।

মিনি যীনাতের কথামতো খুব সাবধানে মেয়েটাকে নিয়ে নিচে আসে ততোক্ষণে যীনাত একটা চেয়ার আনে এবং মেয়েটাকে বসায়। যীনাত মেয়ে হাটুর কাছে হাটুগেড়ে বসে বলে,”মিনি আপু তুমি একটু ফাস্ট এইড বক্স টা নিয়ে আসো তো।”

মিনি মাথা নাড়িয়ে বক্স আনতে চলে গেলো। উপর থেকে জাইফ সবটা দেখছে এবং শুনছে। যীনাত মেয়েটার পা ধরতে নিতেই মেয়েটা পা সরিয়ে বলে,”ছ্যা ছ্যা ছ্যা দিদিমনি আন্নে আমার মালিক হোন আন্নে আমার পা ধরতে পারেন না।”

– আমি কারো মালিক নই যিনি উপরে আছেন তিনিই সর্বশ্রেষ্ঠ মালিক। একমাত্র তাকেই মালিক বলে সম্মোধন করবে তার নিকটে কেউ নয়। এখন পা টা দাও দেখি।

বলেই একপ্রকার জোর করে পা টা নিজের হাটুতে নেয়। দেখে পায়ের একসাইড ফুলে নীল আকার ধারণ করেছে৷ মিনি মেডিসিন বক্স আনতেই যীনাত পায়ে মলম মালিশ করে দেয় আর মেয়েটাকে বলে দেয় যেনো রেস্ট করে। তারপর যীনাত আর মিনি মিলে শিড়ি আর ফ্লোরের পানি পরিষ্কার করে যাতে করে মেয়েটাকে বকা শুনতে না হয়। সবটা খুব গভীর মনোযোগ দিয়ে দেখলো জাইফ তাও অবাক হয়ে। এতোটা বিনয়ী?

——————————-

চলবে!!!

(গঠনমূলক মন্তব্যের প্রত্যাশায় রইলাম ধন্যবাদ)