ওয়ারদূন আসরার পর্ব-১৩

0
1134

#ওয়ারদূন_আসরার
#লাবিবা_ওয়াহিদ
|| পর্ব – ১৩ ||

———————————
সক্কাল সক্কাল দরজা দিয়ে কেউ একজন মেয়ে একটা ইয়ায়া বড় লাগেজ টেনে ভেতরে ঢুকছে। যীনাত সবে নামাজ সেরে বাইরে বেরিয়েছে এবং এসে দেখে একটা মেয়ে মামা,মামী,দাদু,ঠাম্মি,বড়দা, দাভাই বলে চেঁচানো শুরু করেছে। যীনাত ভ্রু কুচকে মেয়েটার দিকে তাকালো। দেখতে বেশ স্মার্ট এবং সুন্দর। মল্লিকা দেবী তড়িঘড়ি করে রুম থেকে বেরিয়ে এসে মেয়েটাকে দেখে চোখ কপালে তুলে ফেলে। মল্লিকা দেবীকে মেয়েটা দেখতেই দৌড়ে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে এবং মল্লিকা দেবীও!

– ওহ মামী কেমন আছো তুমি? ইউ নো দ্যাট হাউ মাচ মিস ইউ?

– ওরে আমার মা টা আমিও তোকে অনেক মিস করি! আমাদের সাথে থাকলে কি হয় তোর বলতো? কতো করে বলি আমাদের সাথে থাক তা না সে হোস্টেলে থাকবে।

– আচ্ছা যাও এখন থেকে এখানেই থাকবো!

মল্লিকা দেবী চোখ চিকচিক করে বলে,”সত্যি?”

– হ্যাঁ গো মামী ৩ সত্যি এখন বলো যার বিয়ে সে কোথায় হুম? যার বিয়ে তার খবর নাই পাড়া প্রতিবেশীর ঘুম নাই তাইনা?

মল্লিকা দেবী মৃদ্যু হাসলেন। তারপর যীনাতের দিকে চোখ যেতেই দেখলো যীনাত দূরে দাঁড়িয়ে শান্ত দৃষ্টিতে তিশানারর(স্নিগ্ধার নাম বদলে তিশানা রাখা হলো) দিকে তাকিয়ে। মল্লিকা দেবী বলে উঠে,”আরে যীনাত যে এতো সকালে ঘুম ভেঙেছে নাকি? আর ওখানে কেন দাঁড়িয়ে আছো এখানে আসো!”

যীনাত কিছুটা ইতস্ততবোধ নিয়ে মল্লিকা দেবীর কাছে আসে। তিশানা এতোক্ষণ যীনাতের দিকে খেয়াল না করলেও এবার তিশানা হা করে যীনাতের দিকে তাকিয়ে আছে৷ পরে অবাক হয়ে মল্লিকা দেবীকে প্রশ্ন করে,”আচ্ছা মামী এই মেয়েটা কে?”

– ওহ ও হলো যীনাত। ওইযে তোকে বলেছিলাম মনে আছে?

তিশানা কিছু একটা মনে করে জিবহায় কামড় দিয়ে বলে,”ওহ সরি বিষয়টা মাথাতেই ছিলো না। সে যাইহোক আমি তিশানা চ্যাটার্জি।”(হাত বাড়িয়ে)

যীনাত উত্তরে শুধু হাসলো! যীনাতের এমন চুপ থাকা দেখে তিশানা ভ্রু কুচকে মল্লিকা দেবীর দিকে তাকায়। মল্লিকা দেবী তিশানার ইশারা বুঝতে পেরে বলে,”আসলে ও খুবই চুপ থাকে বেশি কথা বলে না তার উপর তুই নতুন এসেছিস একটু সময় তো লাগবেই!”

– ওওওও আচ্ছা থাক সমস্যা নেই আমি ঠিকই মিলে যাবো কি বলো? হিহি!

তিশানা বেশ মিশুক মেয়ে সেটা যীনাত বেশ বুঝতে পারছে। এবার হয়তো একজন সঙ্গী পাবে যীনাত। ভালো তো হলো সবটা কি বলেন পাঠকগণ? সে যাইহোক তিশানা যীনাতের থেকে চোখ ফিরিয়ে মল্লিকা দেবীর দিকে তাকিয়ে বলে,”আচ্ছা নানুমনি কোথায়?”

– সে তো এখনো ঘুমোচ্ছে। আসলে প্রতিরাতে স্লিপিং পিল খেয়ে ঘুমায় তো তাই ভোর সকালে উঠতে পারে না। তুই যা তোর রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে রেস্ট নে পরে আসিস। যীনাত চাইলে তুমিও ওর সাথে যেতে পারো!(মুচকি হেসে)

বলেই মল্লিকা দেবী রান্নাঘরের দিকে চলে যায়। একজন সার্ভেন্ট আগেই তিশানার লাগেজ তার রুমে দিয়ে এসেছে। তিশানা মুচকি হেসে যীনাতের হাত ধরে নিজের রুমে নিয়ে আসে। রুমটা তালাবদ্ধ থাকতো তাই এই রুমে যীনাত আসতো না হয়তো তিশানা নেই তার জন্যই বন্ধ থাকতো। তিশানা যীনাতকে বেডে বসিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলো। তারপর ওয়াশরুম থেকে এসে যীনাতের সাথে জমিয়ে গল্প করতে লাগে। যীনাত প্রথমে “হুম, হ্যাঁ, না” এগুলো বললেও আস্তে আস্তে মিশে যায় তিশানার সাথে। বলা যায় তিশানা যীনাতের ফ্রেন্ড হয়ে গেছে।

জাইফ রুম থেকে বেরিয়ে যীনাতের রুমে চেক করে দেখলো যীনাত রুমে নেই। জাইফ ভ্রু কুচকালো, সকাল মেয়েটা গেলো কোথায়? ভেবেই জাইফ সিঁড়ির দিকে যাচ্ছিলো ওমনি খেয়াল করলো তিশানার রুম খোলা। ব্যাপার কি তা দেখতে ভেতরে ঢুকে দেখে যীনাত আর তিশানা গল্প করতে ব্যস্ত। জাইফ অবাক হয়ে গেলো এতো সকালে তিশানাকে দেখে। তিশানার দরজার দিকে খেয়াল যেতেই দেখলো জাইফ হা করে দাঁড়িয়ে৷ তিশানা অত্যন্ত খুশি হয়ে “দাভাই” বলে দৌড়ে জাইফকে গিয়ে জড়িয়ে ধরে। এভাবে জড়িয়ে ধরাটা যীনাতের কোথায় গিয়ে যেনো লাগলো। জাইফ তিশানাকে ছাড়িয়ে অবাক হয়ে বলে,”তুই কখন এলি চিন্টু!”

– উফফফ দাভাই দ্যাট’স নট ফেয়ার! আবার তুই আমাকে চিন্টু বলছিস? মান-সম্মান আর রাখলি না। দেখছিস না মেয়েটা এখানে আছে।

জাইফ যীনাতের দিকে একবার আড়চোখে তাকিয়ে বলে,”তো কি হইসে? আমি তোর জম্মের পর থেকেই তোকে চিন্টু বলে এসেছি এন্ড এখনো বলব! কজ তোকে এই চিন্টু নামেই বেশি স্যুট করে!”

– কচু করে!(ভেংচি কেটে)

জাইফ তিশানার মাথায় গাট্টি মেরে বলে,”ভেজে খা!”

– উফফফ দাভাই! ভালো হচ্ছে না কিন্তু! ওই যীনাত কিছু বল না কি শুরু করেছে দেখেছিস?

যীনাত হেসে বলে,”আমি কি করবো?”

– ঠিকই তো ও কি করবে? আমাদের ভাইবোনদের মধ্যে ওকে কেন হাত ধরে ঢুকাচ্ছিস?

– তোমার জ্বালায় আমার মাথার তাড় ছিড়সে!

– আমার জ্বালায় না তোর মাথায় অনেক আগে থেকেই স্ক্রু ঢিলা আছে।

জাইফের কথায় তিশানা রেগে জাইফকে ইচ্ছা মতো কিলঘুষি দিতে থাকে। আর যীনাত সেখানে বসে হেসেই চলেছে৷ জাইফ যে এমন মজার মানুষ সেটা যীনাতের অজানা ছিলো। জাইফ তিশানার কিল খেতে খেতে বলে,”তোর ওই লতীর মতো হাত দিয়ে মেরে নিজের হাত ভাঙিস না!”

তিশানা চরম রেগে বলে,”কি বললি তুই আমার হাত লতীর মতো তোকে তো আজ আমি মেরেই ফেলবো! এক সেকেন্ড শুন জানিস সেদিন কি হইসে?”(শয়তানি হাসি দিয়ে)

– কি আবার হলো তোর বিয়ে নাকি?

– উফফফ ধুর! পুরো টা তো শুনবা নাকি?

– আচ্ছা বল।

– তোর জ্বালায় আমার ক্লাসের কত্তোগুলা মেয়ে তোর নাম্বার চেয়েছে জানিস? আমার বেস্টফ্রেন্ড তিন্নি পর্যন্ত আমায় পাগল করে ছাড়ছে। এখন তুই কি বলিস ওকে নাম্বার দিবো?

জাইফ একবার যীনাতের দিকে তাকালো যীনাত কিছুটা ক্ষুব্দ হয়ে জাইফের দিকে তাকিয়ে আছে। জাইফ মনে মনে ভাবছে,”বইন বউয়ের সামনে এগুলো কেউ বলে? এখন বউ কেমনে তাকিয়ে আছে দেখলেই ভয়ে বুক কাঁপে!”

– কি রে কোথায় হারিয়ে গেলি!

– কাউকে নাম্বার দিসিস তো তোরে কি করবো দেখে নিস!

– ওওও তাই? আমি তো দিবোই! দেন তুমি ওদের কেমনে সামলাবা সেটা তুমি ভালো জানো! সে যাইহোক আজ তিন্নি আসবে।

– কিহ পাগল না পেট খারাপ? ওই পাগল কে বাসায় আমি কিছুতেই ঢুকতে দিবো না!

– ওই ছ্যাড়া আমার বেস্টফ্রেন্ড রে একদম পাগল বলবি না!

– পাগল বলবো না তো কি ছাগলি বলবো?

বলেই জাইফ রেগে মেগে চলে গেলো। আর তিশানা সেখানে দাঁড়িয়েই হেসে চলেছে। এই তিন্নি মেয়েটা কেমন হবে যীনাত তা বুঝতে পারছে না। তিশানা হাসতে হাসতে যীনাতের পাশে এসে বসে।

– আচ্ছা তিশানা এই তিন্নি কে?

– ওহ তিন্নির কথা বলছো? সে আমার বেস্টফ্রেন্ড আর রুমমেটও বলা যায়। আর বলিও না গো তিন্নি সহ ক্লাসের অর্ধেক মেয়েই পাগল দাভাইয়ের জন্য। সারাক্ষণ নাম্বার আর কথা বলিয়ে দেয়ার জন্য কানের সামনে ঘ্যানঘ্যান করে। আজ এই বাড়িতে আসার আগে তিন্নি বলে দিয়েছে সে আজই চলে আসবে দাভাইয়ের জন্য।

-“এ আবার কেমন বিপদ রে বাবা! সত্যি-ই সুন্দর ছেলেদের এই এক জ্বালা কতশত মেয়ে পিছে পিছে ঘুরবে।” মনে মনে বললো যীনাত।

– কি ভাবছো?

– কই কিছু না!

– তুমিও কি দাভাইকে পছন্দ করো?(ভ্রু কুচকে)

যীনাত চোখ বড় বড় করে বলে,”এ তুমি কি বলছো?”

তিশানা ফিক করে হেসে দিয়ে বলে,”আরে আমি তো জাস্ট মজা করছিলাম যাইহোক এখন তো মেয়বি ব্রেকফাস্ট এর সময়। চলো নিচে যাই।”

যীনাত সম্মতি জানাতেই দুজন একসাথে নিচে আসে। সকলে তিশানাকে পেয়ে তাকে নিয়েই মেতে উঠেছে। বিশেষ করে কমলা দেবী। কমলা দেবী তিশানাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয়। তিশানা কমলা দেবীকে সামলে বলে,”আরে নানুমনি তুমি কাঁদছো কেন? আমি তো কথা দিয়েছি তুমি সব ঠিক রাখলে আসবো দেখো আমি এসেছি। এবার প্লিজ এভাবে কেঁদো না।”

– তুই আর মাইয়ার একমাত্র রত্ন। তুই ক্যামনে ওইদিন আরে ওইসব কইতে পারলি? জানোস না তোরে ছাড়া আই কিরাম থাকি?

– তুমি দোষ করেছো তাই ওভাবে বলতে বাধ্য হয়েছি নাহলে তো সবার মান-সম্মান ডুবাতা! এখন এখানে আসছি আরেকবার যদি উলটা পালটা শুনি তাহলে আবার বাড়ি ছেড়ে চলে যাবো।

– না না আই কিছু করুম না আই ভালা হয়ে গেছি।

তিশানা মুচকি হাসে। তারপর সবাই একসাথে ব্রেকফাস্ট করতে বসে। খাওয়ার মাঝেই নিকেশ দেব কথা তুকে,”স্বর্না কি আসবে না?”

– বাবা স্বর্ণা বিয়ের আগের দিন আসবে। বললো কোনো পরিক্ষায় আটকে গেছে তাই এখন তার নাকি আসা সম্ভব না।(জাইফ)

– ওহ তাহলে আস্তে ধীরেই আসুক এতো তাড়াহুড়োর দরকার নেই!(নিকেশ)

– কিন্তু বড় ভাইয়ের বিয়েতে যদি বোনই না থাকে তাহলে কেমনে হয়?(মল্লিকা দেবী)

– ওহ মা বিয়েটা পরের হিসেব আগে স্টাডি!(রিকেশ)

মল্লিকা দেবী আর কিছু বললেন না। এভাবে খাওয়া দাওয়া শেষ করে যে যার রুমে চলে গেলো। তিশানা অনেক ভোরে উঠায় রুমে গিয়ে লম্বা একটা ঘুম দেয় আর যীনাত নিজের রুমে চলে আসে।

রুমে আসতেই জাইফ যীনাতের রুমে আসে নিজের হাতা ঠিক করতে করতে।

– শুনো আজ থেকেই মেহমান আসা শুরু করবে তাই তোমার রুমে আসাটা কেউ দেখলে তা ভালো চোখে নিবে না এন্ড আমাদের সন্দেহ করতে পারে তাই সবসময় নিজের কাছে ফোন রাখবা আর দাদু কে ফোনের ব্যাপারে আমি বলে দিয়েছি দাদু বলেছে সবসময় যেনো তোমার সাথেই রাখো ফোন। তাই কোনো সমস্যা হবে না। প্রতিদিন ফোনে কথা বলবো আর কিছু লাগলে আমাকে ফোনেই বলবা আমি তোমার যা লাগে তা ম্যানেজ করে দিবো কেমন?

যীনাত মাথা নাড়ায়। যীনাতের এই শান্ত স্বভাবটা জাইফের বেশ পছন্দের। তারপর জাইফ যীনাতকে বিদায় জানিয়ে অফিসে চলে গেলো। জাইফ যেতেই যীনাত দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে তারপর বারান্দায় চলে যায় নিজের সখের গড়া ফুলগাছ গুলোর সাথে সময় কাটাতে। যীনাতের গোলাপ অনেক পছন্দের তাই অনেক গুলো গোলাপের গাছ টবে করে নিজের বারান্দার পাশে রেখেছে। এতে করে বারান্দার সৌন্দর্য দ্বিগুণ বেড়ে যায়।

বিকালের দিকে তিন্নি নামের মেয়েটা আসে। তিন্নি আর তিশানার গলায় গলায় ভাব। যীনাত শুধু দেখে কিছু বলে না। তিন্নি আসার পর তিশানাকে পাগল করে চলছে জাইফের কই? কখন আসবে? তার নাম্বার; ব্লা ব্লা ব্লা! যীনাতের বিরক্তি লাগছে তবুও মুখে প্রকাশ করে না। এদিকে জাইফের সাথে ঠিকই টেক্সটে কথা বলছে। যীনাতই জাইফকে বলে তিন্নি এসেছে এবং তাকে খোঁজ করছে। এটা শুনে জাইফ বললো আজ দেরি করে বাড়ি ফিরবে। কারণ সারাদিনের পরিশ্রমে সে বেশ ক্লান্ত এখন বাসায় গিয়ে এক্সট্রা প্যারা সে সহ্য করতে পারবে না। জাইফ সিদ্ধান্ত নিলেও তার আর পূরণ করা হলো না৷ তার আগেই মল্লিকা দেবী জরুরি কাজের জন্য তাড়াতাড়ি আসতে বলেছে অবজ্ঞা তাকে যেতেই হবে।

অবশেষে ৭টা বাজে জাইফ বেরিয়ে পরে অফিস থেকে এবং বাসায় দ্রুত পৌঁছায়। জাইফকে দেখে তিন্নির মুখে বিশ্বজয়ের হাসি। জাইফ একবারের জন্যেও তিন্নির দিকে না তাকিয়ে নিজের রুমে চলে যায়। যীনাত তখন নিজের রুমের বেলকনিতে বসে হাজারো তারার মাঝে সেই অপরূপ চাঁদকে দেখছিলো। হঠাৎ জাইফের কন্ঠ পেয়ে এদিক সেদিক তাকায়। তারপর পাশের বেলকনির দিকে খেয়াল করতেই দেখে জাইফ কাচের রেলিং এর সাথে দু হাত দিয়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে। যীনাত চট করে দাঁড়ায় এবং বলে,”আপনি কখন আসলেন?”

– এইতো ১০ মিনিট হলো তা একা একা?

– একদিন বলেছি না আমার একাই ভালো লাগে।

– কিন্তু আমার তোমাকে একা দেখতে ভালো লাগে না বুঝলে? নিচে যাও আর সবার মাঝে থাকো ভালো লাগবে।

– কিন্তু…

– কোনো কিন্তু না যাও! আমিও ফ্রেশ হয়ে যাচ্ছি।

জাইফের কথা ফেলতে না পেরে যীনাত নিচে চলে গেলো। নিচে গিয়ে দেখে সকলে একসাথে আড্ডা দিচ্ছে একমাত্র নিকেশ, মল্লিকা দেবী আর দেবনাথ দেব বাদে। টপিক হলো রিকেশের বিয়ে। যীনাত একটা সোফায় গিয়ে বসে আর চুপচাপ সবার কথাবার্তা শুনছে আর সবটা বোঝার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তিন্নি কিছুক্ষণ ধরে এদিক সেদিক তাকিয়ে কাউকে খুজছে তা দেখে রিকেশ বলে,”কি তিন্নি কাউকে খুঁজছো?”

– না দাভাই এমনি।

কমলা দেবী পান খাচ্ছে আর খুচিয়ে খুচিয়ে তিন্নিকে লক্ষ্য করছে। তিন্নিকে কখনোই সে দেখতে পারেনা। তিন্নির না চালচলন ভালো আর না কাজ! কমলা দেবী আপাতত তিন্নিকে ভাগানোর কথা ভাবছে কারণ সে যে সুবিধার নয় তা কমলা দেবী হারে হারে বুঝে। কিছুক্ষণ পর জাইফও আসলো এবং সোজা গিয়ে যীনাতের পাশে বসে পড়ে। এতে তিন্নি নিমিষেই মুখ গোমড়া করে ফেলে। কারণ সে তার নিজের পাশে জাইফের জন্য জায়গা রেখেছিলো জাইফকে নিজের পাশে বসাবে বলে কিন্তু তা আর হলো কই? এরকম নানা চিন্তা করতে করতে সে উঠে এসে যীনাতের কানে ফিসফিস করে বলে,”যীনাত আমাকে জাইফদার পাশে বসতে দাও তুমি আমার জায়গায় যাও প্লিজ প্লিজ প্লিজ!”

কথাটা জাইফও বেশ শুনতে পেলো এবং সকলের আড়ালে যীনাতের হাত ধরে ইশারায় “না” করে। যীনাত পরে গেলো মহা ঝামেলায় কি করবে এখন সে? এমন সময়ই কমলা দেবী বলে উঠে,”ওই ছ্যাড়ি কি কইলি রে তুই ওর কানে ফিসফিসাইয়া আগোও হুনা আরাও হুনি!”

এবার তিন্নি পরে গেলো বিপাকে। বুড়ী যেভাবে পেচিয়ে ধরেছে তাকে তার এখন আস্ত নেই। তিন্নির বলার আগেই জাইফ বলে উঠে,”ঠাম্মি তিন্নি আমার পাশে বসতে চায় তাই যীনাতকে বলছে যেনো সে উঠে তার জায়গায় গিয়ে বসে!”

এবার কমলা দেবীকে পায় কে। কোমড়ে আঁচল গুজে রেডিওর মতো বলা শুরু করে,”আগেই তিশানা তোরে কইয়া রাহি এহন আরে কিছুই কইতে পারবি না! আর ওই মাইয়া তুই এইহানে কি বিয়া খাইতে আইসোস নাকি লাইন মারতে আইসোস? কি হ্যাঁ কি? জাইফের লগে বহার অনেক সখ তোর? ক্যান রে আর জাইফের লগে তোর এতো কিয়ের পিরিত!! যা নিজের জায়গায় নইলে এহনি তোরে বাইত থেইকা বাইর কইরা দিমু! আর যীনাত তুই এইহান থেইকা উডবি না! তোরে এইহান থেইকা কেডা সরায় এইডা আইও দেইখা ছাড়মু।”

তিশানা এবার আর কমলা দেবীকে কিছু বলে না কারণ কমলা দেবী যেমন অন্যায় করতে জানে তেমনই অন্যায় দেখলে নাকানিচুবানি খাওয়াতেও জানে। আর এবার তো অন্যায় দেখেছে। এখন যদি নিজের বেস্টফ্রেন্ডের হয়ে কথা বলতে যায় পিঠের ছাল তুলে দিবে! আর তিন্নিটাও অতিরিক্ত বোকা! এই কমলা দেবীর সাথে ন্যাকামির কি দরকার ছিলো?

তিন্নি রাগে, দুঃখে, ক্ষোভে আবার নিজের জায়গায় গিয়ে বসে আর জাইফ মুখ টিপে টিপে হাসে। কমলা দেবী জাইফের দিকে তাকাতেই জাইফ তাকে চোখ টিপ দেয় আর কমলা দেবী নিঃশব্দে হেসে দেয়। কমলা দেবীকে জাইফ আগেই বলে রেখেছিলো এই তিন্নির হাবভাবের কথা। তাই কমলা দেবী তা দেখা মাত্রই সোজা এ্যাকশন করেছে। সত্যি-ই বস এমন ঠাম্মি পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার!!

———————————-

চলবে!!!

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে